Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
অণুগল্প
এই কদিন হলো বেশ জমাটি ঠান্ডা পড়ে গেছে। ভোর রাত্তিরে ঘুম থেকে উঠতে বেশ কষ্টই হয় সরলের। কিন্তু কিছু করার নেই, ওর কাজটাই এমন, প্রায় রাত থাকতে থাকতেই উঠতে হয়। বাড়ি বাড়ি কাগজ বিলি করার কাজ করে ও। এক্কেবারে ঘড়ির কাঁটা ধরে সাড়ে তিনটের মধ্যে 'পয়েন্টে' পৌঁছতে হয়। তারপর নিজের হিসেবের কাগজ নিয়ে পাড়ায় ঢোকে ও। যদিও, সকাল সাড়ে ছ'টা - সাতটার মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যায় ওর। তারপর একবার ওর মালিক, শিবাদার বাড়ি গিয়ে বাকি কাগজপত্তর, বা কারো বাড়ি থেকে টাকাপয়সা দিলে, সেগুলো বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ি চলে যায়। গিয়ে স্নান খাওয়া সেরে অফিসে যায়। অফিস মানে সেটাও একজনের বাড়িই, ছোটকাদা - এখানের বেশিরভাগ বাড়ির কেবল কানেকশান ছোটকাদার কাছ থেকেই নেওয়া। সেখানের টুকিটাকি কাজ করতে হয় - কারো বাড়িতে লাইনের কোনো সমস্যা হলে দেখে আসা, বা, ওর দ্বারা সেটার সমাধান না হলে ইলেক্ট্রিশিয়ান বিশুদাকে খবর দেওয়া, কেবলের টাকা তোলা, এইসব। আর এর মধ্যেই, দুপুরবেলা আর বাড়ি ফেরে না সরল, ছোটকাদার বাড়িতে বসেই একটু পড়ার বই পড়ে নেয়, নোট দেখে নেয়। কখনও কখনও ঘুমে চোখ জুড়ে আসে…তখন মিনিট পনেরোর জন্য ঘুমিয়ে নিয়ে আবার পড়া শুরু করে দেয়। বারবার বাবার কথা মনে পড়ে "সারাক্ষণ মোবাইল, বন্ধুবান্ধব - এসব ছেড়ে পড়াশোনা কর। এখন সময় খুব খারাপ। চাকরি বাকরির অবস্থাও খারাপ। কী যে হবে…"।
তখন বুঝত না সরল। বাবা চলে যাবার পরে বোঝে। মানে, মানুষ সারাজীবন থাকে না… জন্মালে চলে যেতেই হয়, কিন্তু, বাবা! বাবা চলে যাবার পরে হাড়ে হাড়ে বুঝেছে সরল, যে, বাবা কতখানি ছিলেন! আগে যে নিজেদের নিম্নবিত্ত হওয়া নিয়ে ছোট লাগত, এখন বোঝে ওই মোটা চালের ভাতটুকু জোগাড় করতে গিয়ে বাবাকে কতটা দিশাহারা হতে হয়েছে। আহা রে! বাবাকেও সেই ভোর বেলা থেকেই আগুনের ধারে থাকতে হতো। সকালে কচুরি, আলুর দম, ডিম কষা আর বিকেলে চপ ভাজা হতো বাবা যে দোকানে কাজ করতেন সেখানে। কারিগর হিসেবে বাবার মোটামুটি সুনাম ছিল। ওর বন্ধুরা অনেকেই ওই দোকান থেকেই চপ কিনে খেত। আর পরে ওকে এসে বলত। মাঝেমাঝে অদ্ভুত হীনমন্যতাতেও ভুগত সরল এজন্য। আর এখন - গর্ব হয়। বাবা চলে যাবার পরে একদিন ওই দোকানের মালিক কাকুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল, উনি বলছিলেন "কালীদা মারা যাবার পর থেকে আমার খরিদ্দার ও কমে গেছে রে। অনেকেই বলে আগের মতো হচ্ছে না! মানুষটা এত কষ্ট পাচ্ছিল, বলে নি কোনোদিন!"
কান্না চেপে, কোনো মতে ঘাড় নেড়ে চলে এসেছিল সরল।
সত্যি, লাংসে ক্যান্সার হয়েছিল বাবার। চারিদিকে এত হাওয়া… তবু নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হতো। রোগা হয়ে গেছিলেন, বলতেন "ভাল তো রোগা হওয়া। আমাদের দোকানের উল্টোদিকেই তো একটা জিম আছে। কত টাকা নেয় জানিস? পনেরোশো টাকা! প্রতি মাসে! এত টাকা দিয়ে লোকে রোগা হতে যায়। আর আমি তো ফ্রিতেই রোগা হচ্ছি! হা হা!" এমনকি নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হলে বলতেন "পাম্প স্টোভে রান্না তো, ওইজন্যই একটু… ও কিছু নয়।"
ওই "ও কিছু নয়" টাই কাল হলো! যখন ধরা পড়ল, ততদিনে রোগটা ছড়িয়ে গেছিল অনেকটাই। সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা শুরুও হয়েছিল। কিন্তু তার মাসতিনেকের মধ্যেই…
আর, হঠাৎ করেই সরলও 'বড়' হয়ে গেল। এমনিতেই ওদের জমানো কিছু ছিল না সেভাবে। যেটুকু ছিল, সেটাও শেষ হয়ে গেল। তাই, বাধ্য হয়েই কাজ ধরতে হয়েছে সরলকে। মা আগে থেকেই দুই বাড়ি রান্নার কাজ করেন। এইভাবেই চলে যাচ্ছে। তবে এই ভাবে 'চলা' না, সরল ভাল ভাবে বাঁচতে চায়। তাই কষ্ট হলেও পড়াশোনা বজায় রেখেছে। ভাগ্যিস নাইট কলেজে ভর্তি হয়েছিল! তবে, সব ক্লাস করতে পারে না ও। সাড়ে ছ'টা নাগাদ কলেজ গিয়ে ন'টার মধ্যে বেরিয়ে পড়ে। দশটার মধ্যে না ঘুমোলে তিনটের সময় উঠে, সাড়ে তিনটের মধ্যে কাগজ আনার পয়েন্টে পৌঁছবে কি করে?
আজও রোজের মতোই কাগজ দিচ্ছিল বাড়ি বাড়ি। রবিবার গুলো একটু অন্যরকম হয়। কলেজ যেতে হয় না। কেবলের অফিস থেকে সোজা বাড়ি গিয়ে মায়ের সঙ্গে একটু গল্প করতে পারে। আর দশটার বদলে সাড়ে আটটা - ন'টা বাজলেই ঘুমিয়ে পড়ে ও।
কাগজ দেওয়া প্রায় শেষ, হঠাৎ হলুদ ফ্ল্যাট বাড়ির জানলা থেকে ওই বাড়ির কাকিমা ডেকে উঠলেন "এই যে ভাই, একবার আসবে?"
টাকা দেবার কথা আছে কি? কিন্তু শিবাদা তো কাগজের বিল পাঠায় নি? তবে অনেক বাড়ি থেকেই বিল না পাঠালেও টাকা দিয়ে দেয়, একদিন দুদিন পরে গিয়ে ও বিল দিয়ে দেয়। তেমনি কিছু হবে হয়ত।
তাড়াতাড়ি করে ঘরের সামনে এলো ও।
"কাকিমা, ডাকছিলেন?"
"হ্যাঁ, তোমার নাম কি গো? মানে, তুমি যখন কাগজ দেওয়া শুরু করো, শিবা বলেছিল বটে, একজন নতুন ছেলে আসবে। কিন্তু নামটা জানা হয়নি।"
"আমার নাম সরল বসাক, কাকিমা। আপনি কি আজ কাগজের টাকা দেবেন?"
"টাকা? না না, আমার মাসপয়লায় দেবার থাকে। তোমাকে দিয়েছিলাম তো এই মাসে।"
"ও হো, স্যরি কাকিমা, আমি ভুলে গেছিলাম।" মাথা চুলকে বলে ওঠে সরল। প্রায় একশোটা বাড়িতে কাগজ দিতে হয়… মনেই ছিল না।
কিন্তু, কাকিমাটা ডাকলেন কেন? একটু অবাক হয়েই তাকাল সরল।
উনি যেন বুঝে গেলেন ওর মনের কথাটা। তাই বললেন "তুমি তো পড়াশোনা করো, তাই না? শিবা বলেছিল। তোমাকে এটা দেবার জন্য ডাকলাম।"
তাকিয়ে দেখে, কাকিমার হাতে একটা চকোলেট!
"চকোলেট! কেন, কাকিমা?"
"শুনেছিলাম তোমার বাবা মারা গেছেন। বেশ আতান্তরে পড়েই কাজ শুরু করেছ। কতই বা বয়েস তোমার! আমার ছেলেটাও তোমার থেকে বড় হবে! ফেসবুকে দেখলাম, কাল 'ইন্টারন্যাশনাল মেনস ডে' ছিল। তাই ভাবলাম, একটা বাচ্চা ছেলে, যে বড় হবার আগেই সংসারের প্রয়োজনে 'বড়' হয়ে গেল, উপার্জনশীল হয়ে গেল, তাকে একটু থ্যাংকইউ বলি। ভাল থেকো, বাবা। বাবা নেই, মা তো আছেন। ওঁকে ভাল রেখো। নিজের যত্ন নিও। আর, পড়াশোনার জন্য কোনোরকম দরকার হলে আমাদের জানিও, কেমন?"
ছোট্ট একটা চকোলেট…কিন্তু… কী বিশাল! একজন মানুষের আশীর্বাদ আর ভালবাসা জুড়ে আছে যে তাতে।
আজকাল আর চোখে জল আসে না সরলের। তাও আজ গলার কাছটা যেন ভারী হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে, ওর মতো সাধারণ একজনকেও এভাবে কেউ আশীর্বাদ করতে পারেন?
এবার থেকে ও ও সবার পাশে থাকবে। এখন তো সবাই কেমন পালটে যাচ্ছে। মা বলেন, সবাই কেমন যন্ত্রের মতো হয়ে যাচ্ছে। সেখানে একটু ভাল ব্যবহার, একটু কথা বলা - এভাবেও যদি পাশে থাকা যায়…
আর অন্যের মন ভাল করে দিতে যে খুব বেশি কিছু প্রয়োজন হয় না, সদিচ্ছাটুকু ছাড়া, এই তো আজই বুঝে গেল ও…
রাস্তায় বেরিয়ে প্যাডেলে চাপ দিল ও।
ঝকঝকে সোনারঙা দিন আজ। ঠিক ওর কাণায় কাণায় ভরে যাওয়া মনের মতো একটা দিন…
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
পানিফল
হেমন্তের নরম সকালে মাঝে মাঝে শোনা যায় এই হাঁক, “পানিফল নিবেন গো, পানিফ-অ-অ-অ-ল...”
অভিজাত মানুষজন পানিফল কেনেন না, আর এই গলিতে বাস যত অভিজাত মানুষদেরই। সাইকেলের পিছনে ঝুড়ি-বাঁধা পানিফল-ব্যাপারি তবু এই গলিতে ঢোকে কেন কে জানে। ভুল করেই ঢোকে হয়তো, কিংবা ঢোকে বিক্রির ক্ষীণ আশায়। তবে আজ কেউ তাকে ডাকল। ডাকলেন মৃগাঙ্ক। রানি হঠাৎ লাফিয়ে উঠে বায়না ধরেছে “পাঁইফল খাব!”
অলকা তাকান পুত্রবধূর দিকে। তাঁর দুই ভুরুর মাঝে হালকা কুঞ্চনরেখা। সেটি আরও স্পষ্ট হওয়ার আগেই ধাঁ করে পানিফলওয়ালাকে ডেকে ফেলেন মৃগাঙ্ক।
কেনা তো হল, কিন্তু পানিফল ছাড়াবে কে? খোসা ছাড়ানোর হাঙ্গামা এড়াতেই ও জিনিস কদাপি কেনেন না অলকা। তা ছাড়া স্বাদ গন্ধ কিছুই যার মনকাড়া নয়, তা কিনবেনই বা কেন? অলকার কাজ কি কম পড়িয়াছে?
মৃগাঙ্কই ধুয়েটুয়ে এনে ফলগুলো বধূমাতার হস্তে অর্পণ করলেন এবং উজ্জ্বল মুখে বললেন, “নে ধর, খোসা ছাড়াতে পারবি তো?”
অলকা বাঁচলেন। যাক, কাজটা রানির ঘাড়ে পড়ল তা হলে। কিন্তু বাঁচার জো কি অলকার আছে? ফলগুলো হাতে পাওয়া মাত্র অদ্ভুত দ্রুততায় আঙুলে কাঁটা ফুটিয়ে ফেলল রানি। অলকা মনে মনে ‘বেশ হয়েছে’ ভেবেছেন কি ভাবেননি, রানির আঙুল নিয়ে হুলস্থুল বাধালেন মৃগাঙ্ক। আঙুলের শুশ্রূষাপর্ব মিটলে দেখা গেল পানিফল ছাড়ানোর কাজটি চেপে গেছে অলকারই ঘাড়ে।
অলকা নিরুপায়। গুমোর দেখিয়ে কাজটা ফেলে রাখলে অনভ্যস্ত হাতে মৃগাঙ্কই যাবেন পানিফল ছাড়াতে। জলখাবারের মেনুতে আজ ছুটি-স্পেশাল কচুরির তোড়জোড় চলছে, তার মাঝে পানিফলের খোসা ছাড়ানোর বরাত দিলে রান্নার মেয়ের গাল ফুলবে। অগত্যা নীরবে বধূমাতার মুণ্ডপাত করতে করতে অলকাকেই বসতে হল পানিফলের বিরক্তিকর খোসা বিয়োজনে।
একটু বাদে রানিসাহেবা হেলেদুলে এলেন, একটি পানিফল তুলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলেন এবং দেখতে দেখতে সহসা সোল্লাসে চেঁচিয়ে উঠলেন, “মা দেখেছ, পাঁইফল দেখতে একেবারে বাইসনের মাথার মতো! কাঁটা দুটো হল শিং আর এই এই জায়গাগুলো হল নাক মুখ চোখ। দেখো না, দেখো দেখো...”
মৃদু একটা ‘হুম্’ ছাড়া অলকার কাছ থেকে আর সাড়া না পেয়ে রানি এ বার ছুটল শ্বশুরের কাছে। মনশ্চক্ষে দেখতে পাচ্ছেন অলকা, রানির হাতে বাইসনের মাথা দেখতে দেখতে মৃগাঙ্ক ‘তাই তো! তাই তো!’ করে নিজের মাথাখানা দুলিয়েই চলেছেন। এ ছবি বড়ই গাত্রদাহকর। সে দাহ মাথায় পৌঁছেও যায় চট করে। ফলাফল, ক্ষণিকের মনোযোগহীনতা এবং সেই অবকাশে পানিফলরূপী বাইসনের তীক্ষ্ণ শিং গুঁতোয় খোদ অলকাকে।
কিন্তু অলকার তো মৃগাঙ্ক হেন শ্বশুর নেই, তাই বিক্ষত আঙুল টিপে ধরে নিজের ব্যথা নিজেকেই কমানোর চেষ্টা করতে হয়। এমনকি কোটাকুটি শেষ হলে নুন লঙ্কা মাখিয়ে প্লেটে সাজিয়ে ফলগুলো বধূমাতা সমীপে রেখেও আসতে হয়।
আজকাল প্রায়ই কপালে করাঘাত করেন অলকা। কী কুক্ষণে এ মেয়েকে পছন্দ করেছিলেন তিনি! ছবিতে মিষ্টি মুখখানি দেখে অলকাই গলেছিলেন বেশি। সেকেন্ড রাউন্ডে অর্থাৎ মেয়ে দেখা পর্বে মেয়ের মা-বাবার কথায় আর ব্যবহারে সর্বাধিক কাতও তিনিই হয়েছিলেন। পুকাইও অবশ্য এক দেখাতে পছন্দ করেছিল। তবে অলকার আগ্রহ আতিশয্যেই রানির পদার্পণ এ বাড়িতে। কিন্তু সে মেয়ে যে এমন ন্যাকাষষ্ঠী হবেন, তা কি তখন ঘুণাক্ষরেও বোঝা গেছিল?
মঞ্চে এ বার পা রাখল অলকার সুপুত্র, তথা রানিসাহেবার আর এক খিদমতগার, পুকাই। নিদ্রাভঙ্গ হয়েছে তার। হাই তুলতে তুলতে এসে অলকাকে বলল, “মা, চা।”
পানিফলজনিত জমে থাকা রাগঝাল এ বার ছেলের ওপরে ঝাড়লেন অলকা, “মা-কে কেন? বৌকে বলো না গিয়ে।” পুকাই অমনি হেসে বলল, “রানি করবে চা? তার চেয়ে বাবা আমিই এক কাপ জল মাইক্রোতে গরম করে খেয়ে নিই।” অলকা উত্তরে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, থেমে গেলেন, কারণ মঞ্চে তখন পুনঃপ্রবেশ ঘটছে রানিসাহেবার। মুখে টকাস টকাস শব্দ করতে করতে এসে অলকাকে জড়িয়ে ধরে এক পাক ঘুরে নিয়ে সাহেবা বললেন, “পাঁইফলটা এত সুন্দর মেখেছিলে মামণি, আমি সবগুলো খেয়ে ফেলেছি। তোমার জন্য একটাও রাখতে পারিনি। কাল লোকটা গেলে আবার কিনব, বেশ?”
অলকা দ্রুত স্থানত্যাগ করলেন। মাথাটা বড্ড তেতে উঠছে, ঠান্ডা না করলেই নয়। মনের গরল কারও কাছে উগরাতে পারলে একটু শান্তি হত, কিন্তু তা করবেন কার কাছে? মৃগাঙ্ককে কিছু বলার উপায় নেই। তাঁর মুখে এক কথা, “ও একটা বাচ্চা মেয়ে, নিজের বাবা-মাকে ছেড়ে আমাদের কাছে এসেছে। ওকে একটু আদর যত্ন না করলে চলে, বলো?”
চোখ ফেটে জল আসে অলকার। ধামাচাপা স্মৃতিরা সব ধামার তলা থেকে বেরিয়ে নাচানাচি শুরু করে দেয় মনে। রানির চেয়েও অল্প বয়সে মা-বাবাকে ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি এসেছিলেন অলকা। বাপসোহাগি বেটি তিনিও ছিলেন, কিন্তু... না থাক, সাত সকালে ও সব স্মৃতি কিছুতেই আজ মনে আনবেন না অলকা। শ্বশুরবাড়িতে যন্ত্রণা আর লাঞ্ছনা পাওয়াকে এ দেশের মেয়েরা ভবিতব্য বলে মানে, তিনিও মেনে নিয়েছেন। জ্বালা ধরে কেবল রানির প্রতি মৃগাঙ্কর এই আদিখ্যেতাগুলো দেখলে। তাঁর বেলায় মৃগাঙ্ক মুখে কুলুপ এঁটে থাকতেন কেন? সত্যি বলতে, অলকার যত না কষ্ট তখন হয়েছিল, মৃগাঙ্কর ব্যবহার দেখে এখন হয় তার চেয়ে ঢের বেশি।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
অলকার দুঃখ অলকার মেয়ে বকাইও বোঝে না। মেয়ের কাছে বৌমার নিন্দেমন্দ করে মন হালকা কোন শাশুড়ি না করে? অলকার সে পথও বন্ধ। মৃগাঙ্ক তবু মিষ্টভাষী, বকাই একেবারে কড়া দিদিমণি। সে নিজে কোনও নিন্দে শুনবে না, অলকাকেও করতে দেবে না। তার টেলিফোনিক চোখরাঙানিতে অলকা তটস্থ, “কিচ্ছুটি বলবে না তুমি রানিকে। বেশি দিন থাকবে না ও তোমার কাছে। পুকাই ট্রান্সফার হয়ে গেলে রানিও চলে যাবে। সেই ক’টা দিন রানির সব ছেলেমানুষি তুমি চোখ-কান বুজে ইগনোর করবে। জেনে রাখ, এইটাই সম্পর্ক ভাল রাখার একমাত্র উপায়...” এই হল তার মাকে জ্ঞানদান।
তবে অলকার মনটা আজ বড়ই চিড়বিড় করছে। সেলাই নিয়ে বসে পড়লেন তাই। ওই একটি কাজে ডুবে গেলে মাথাটা ঠান্ডা হয় তাঁর। স্ত্রীর মেজাজ বিগড়ে আছে বুঝে মৃগাঙ্ক খেতে পর্যন্ত চাইতে পারছেন না, শুধুই ঘুরঘুর করছেন। কিছু ক্ষণ পরে এসে জুটল পুকাই, বলল, “বুঝলে বাবা, আমাদের বাড়িটা শিল্পনিকেতন হয়ে উঠল। এক জন এ ঘরে সেলাইয়ে মেতেছেন, আর এক জন ও ঘরে বসেছেন আঁকতে।”
শুনে অলকার পড়ে আসা রাগ আবার টঙে চড়ল। রানিসাহেবা আঁকায় বসেছেন, তার মানে তাকে ডেকে ডেকে এনে খাওয়ানোর দায়িত্ব এ বার অলকার।
আঁকাআঁকির প্রতি দুর্বলতা ছিল বলে ছেলেমেয়েদের ছবি আঁকা শেখাবার পেছনে এক কালে অনেক খেটেছিলেন অলকা। তারা কেউ শিখল না, অথচ আজ পরের বাড়ির একটা মেয়ে এসে ছবি এঁকে এঁকে বাড়ি ভরাচ্ছে। তাও সে সব ছবি যদি দৃষ্টিনন্দন হত! রানির আঁকা ছবি মানেই হয় ট্যারাব্যাঁকা মানুষ, নয় ক্যানভাস জুড়ে উদ্দাম রঙের স্রোত। ওগুলো নাকি ছবি! চোখের কষ্ট আর রঙের পিছনে পয়সা নষ্ট। মৃগাঙ্ক তাঁকে বোঝান, “এ সব হল মডার্ন আর্ট, বুঝতে একটু ট্রেনিং লাগে।” সে কথা শুনে আরও রাগ হয় অলকার। অখাদ্য সব ছবিকে নাকি ট্রেনিং নিয়ে বাহবা দিতে হবে! নাহ, মনের জ্বলুনি কমাতে না পারলে আখেরে নিজেরই কষ্ট। অলকা এ বার তাই শাসন করেন মনকে, ‘যে যা করে করুক, তোমার অত দেখার দরকার নেই। তুমি নিজেকে নিয়ে থাকো।’
কিন্তু নিজেকে নিয়ে থাকার জো অলকার থাকলে তো! টপনটে তুলি গুঁজে ছুটে এল রানি। অলকা আর মৃগাঙ্ককে দু’হাতে ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে খাড়া করে দিল তার ইজেলের সামনে, তার পর শুধোল, “বলো, কেমন হয়েছে!”
পানিফলে অনুপ্রাণিত রানি এত ক্ষণ ধরে বাইসনের মাথা এঁকেছে। ছবি দেখে পেটটা হাসিতে গুড়গুড় করে উঠল অলকার— এই ছবি আঁকলেন এত ক্ষণ ধরে মহারানি! পুকাই এর চেয়ে অনেক ভাল ছাগল আঁকত ক্লাস থ্রিতে। মৃগাঙ্ক কিন্তু উদ্ভাসিত মুখে এ দিক ও দিক ঘাড় কাত করে দেখেই চললেন। বকাইয়ের কড়া নির্দেশ মেনে হাসি চেপে দুটো প্রশংসাবাক্য উগরে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে অলকা শুনতে পেলেন মৃগাঙ্ক বলছেন, “বাইসনের যে ন্যাচারাল দুর্ধর্ষতা আর তেজ, সেটা কিন্তু ভারী সুন্দর ফুটিয়েছিস চোখদুটোয়। এক্সেলেন্ট!”
ছেলের বৌকে আদর দিয়ে বাঁদর করার ব্রত নিয়েছেন মৃগাঙ্ক; অলকা কী করবেন? লোকে নাতিনাতনির সঙ্গে যে ঢঙে কথা বলে মৃগাঙ্ক তেমন করে কথা বলেন রানির সঙ্গে। সকালে তিনি পানিফলের ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান ইত্যাদি বোঝাচ্ছিলেন রানিকে। তিন হাজার বছর আগে থেকে নাকি লোকে পানিফল খায়; এমনকি, অতীতে কোনও কোনও জায়গার লোকজন গমের বদলে পানিফলের আটাকেই নাকি প্রধান খাদ্য হিসেবে খেত, তাও বলেছেন। পানিফলের আটা শুনে হাঁ হয়েছে রানি। অলকা তখনই বুঝেছিলেন বাড়িতে এ বার ‘পাঁইফল’-এর গুঁড়ো আসছে। হাড়ে হাড়ে চেনেন তিনি স্বামীকে। বিকেলে দেখা গেল মৃগাঙ্ক ঠিক খুঁজেটুঁজে ‘জলশিঙাড়া কা আটা’র প্যাকেট হাজির করেছেন। অলকার সহ্যের বাঁধ সত্যিই এ বার ভাঙব-ভাঙব। তিনি জানেন, ও জিনিস রান্নার কী ভয়ানক হ্যাপা। খুন্তি নাড়তে নাড়তে হাত ব্যথা হয়ে যায়। এই বৌয়ের জন্য আর কত ঝকমারি পোহাবেন তিনি!
সন্ধেবেলা অলকা পুজোয় বসেছেন, সেই অবসরে শ্বশুর আর বৌ চুপিসাড়ে গেল জলশিঙাড়ার হালুয়া রাঁধতে। কিন্তু রন্ধনকর্মটি যদি এতই সহজ হত! দেখতে দেখতে পোড়া গন্ধে মাতোয়ারা হল বাড়ি। পুজো মাথায় উঠল অলকার। আসন ছেড়ে উঠে এসে রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখেন, খুন্তি হাতে কড়াইয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন মৃগাঙ্ক আর মোবাইল ফোন দেখে দেখে নির্দেশ দিচ্ছে রানি। আজকের মতো রাগের কোটা বোধহয় শেষ হয়ে গিয়েছিল অলকার, এ দৃশ্য দেখে এ বার তাই হাসি পেল তাঁর।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
ডিনারে আজ অলকার তৈরি স্পেশাল ডেজ়ার্ট, ‘শিঙাড়া কা হালুয়া’। অলকা অবশ্য বলেন ‘পানিফলের পালো’। পালো খেয়ে রানি তো একেবারে আত্মহারা। এমন ‘ইয়াম্মি’ ডেজ়ার্ট সে নাকি জীবনে খায়নি। একটার পর একটা হালুয়ার বরফি চালান করে চলেছে মুখে। অলকা কোনও ক্রমে বাকিদের পাতে দুটো করে তুলে দিলেন। তাতে রানি একটু ভুরু কুঁচকোল ঠিকই, কিন্তু উঠে এসে অলকার গালে একটা চুমুও খেয়ে গেল।
বড় তৃপ্তি নিয়ে আজ শুতে এসেছেন মৃগাঙ্ক। জীবনটাকে এত পরিপূর্ণ রোজ রোজ মনে হয় না। চোখটা লেগে এসেছে এমন সময় দরজায় দুমদাম আওয়াজ। দরজা খুলতেই হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়ল রানি, বগলে তার বালিশ। সোজা এসে অলকাদের বিছানায় উঠতে উঠতে সে বলে, “আমি এখানে শোব। পুকাই খুব ইরিটেট করছে।”
“কেন রে, হলটা কী?” সন্তর্পণে জিগ্যেস করলেন মৃগাঙ্ক।
“পুকাই আমার বাইসনের ছবি বাজে বলেছে!” নাকের পাটা ফুলছে রানির। বিছানায় উঠে গুছিয়ে বসে পড়ে বলে, “তোমরা কে তোমাদের ছেলের কাছে শুতে যাবে বলো!”
গলার স্বরে সিদ্ধান্ত স্পষ্ট। কোনও পরামর্শ শুনতে সে রাজি নয়।
ধড়মড়িয়ে শয্যা ত্যাগ করেন মৃগাঙ্ক, “আ-আমি যাচ্ছি।”
ঘুম আসছে না অলকার। রাত গভীর হলে মানুষের চিন্তাভাবনার ধরনধারণ বদলে যায় বোধহয়, না হলে রানির যে ন্যাকামি, যে আহ্লাদেপনা সারা দিন অসহ্য ঠেকে তাঁর, সে সব কিছুকে এখন অন্য রকম মনে হচ্ছে কেন? নিজে তিনি শ্বশুরবাড়িতে যে ভাবে থাকার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, এই মেয়েটা নিঃসঙ্কোচে সেই ভাবে থাকে। এর বেশি কিছু করে কি? বিয়ের পর মৃগাঙ্কর সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি তাঁরও কিছু কম হয়নি। রাগ দেখিয়ে খাট থেকে নেমে মেঝেতে চাদর পেতে শুয়েছেন। এর বেশি কিছু করার সাধ্যই ছিল না অলকার। খিদে পেলেও শাশুড়িমাকে মুখ ফুটে বলতে পারতেন না। এই মেয়েটা অনায়াসে সে সব পারে। তাই কি রানির উপর এত বিরাগ তাঁর?
রানিকে একটা পানিফলের মতো মনে হচ্ছে এখন অলকার। আহ্লাদেপনার বদখত খোলসটার ভিতরে খুব সাদা সরল আর সবাইকে আপন করে নেওয়া একটা মন রানির নিশ্চয়ই লুকিয়ে আছে, না হলে এ সব কি পারা যায়?
শ্বাসপ্রশ্বাসের শব্দ শুনে মনে হচ্ছে রানি ঘুমিয়ে পড়েছে। খুব সাবধানে পাশ ফিরে বৌমার গায়ে একটা হাত রাখলেন অলকা। স্নেহের হাত।
সে হাতের স্পর্শে ঘুমের অতলে তলিয়ে যেতে যেতে রানির মনে হল, তার শাশুড়িটি আস্ত একটি ‘পাঁইফল’। ভুরুদুটোকে সব সময় কাঁটার মতো করে রাখলে কী হবে, মিষ্টি একটা শাঁস মাথার ভিতরে কোথাও ঠিক পোরা আছে!
মোনালিসা চন্দ্র
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
◾ উচ্চ শিক্ষিত এমন একজনকে চিনি, যার বিবাহিত জীবনের ১৩টা বছর শুধু একটা বাচ্চা নেয়ার চেষ্টায় কাটিয়ে দিচ্ছে। তার জীবনে সফলতা আছে কিন্তু পূর্ণতা নাই।
◾ ব্যাংকের এ,জি,এম এমন একজনকে চিনি, যার বউ দুইটা বাচ্চা রেখে আরেকজনের সাথে পালিয়ে গেছে। তার জীবনে সফলতা-পূর্ণতা সবই ছিলো, কিন্তু ভালোবাসাটা কপালে জুটেনি।
◾ এম,বি,এ পাশ করা একজনকে চিনি, পড়ালেখা শেষ করে ভালো কিছু করার জন্যে চলে যান দেশের বাহিরে , তারপর বিবাহের প্রস্তাব দেন ১৪ বছরের ভালোবাসার মানুষটির পরিবারে। শুধুমাত্র ছেলে প্রবাসী বলে বিবাহ দেননি। ভালো চাকুরী মানেই কি সব কিছু??
◾ প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করা এক মেয়ের গল্পটা জানি, কি নিদারুণ অত্যাচার সহ্য করে একদিন গলায় বিষ ঢেলে দিলো। ভালোবাসার জন্যে ঘর ছেড়েছিলো, সফলতা আসেনি কখনও।
◾ দেশ সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়েটার গল্পটা জানি। শুধু গায়ের রঙটা কালো বলে প্রেমিকের বাবা মায়ের হাজারো অবহেলার কথা মাথায় তুলে নিয়ে রিলেশনটা ব্রেকাপ করতে হয়েছিলো। সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড গলায় ঝুলিয়েও সে সুখী হতে পারছে না।
◾ ক্যারিয়ার গঠনের জন্য যে মেয়ে, তার বাবা মাকে বিয়ের কথা উচ্চারণ করতে দেয়নি, সে মেয়েটির শেষ পর্যন্ত বিয়েই হয়নি। টাকা পয়সা সব আছে কিন্তু স্বামী সংসার নেই।
◾ চাকুরী না পাওয়া তরুণের গল্পটাও করুণ। বেকার থাকার সময়ে প্রেমিকার বিয়ের আয়োজনটা থামাতে পারে নাই। চাকুরীটা হাতে পাওয়ার আগেই বাবা মারা গেলো। "সফলতা মানেই সুখ" বাক্যটা তার কাছে সম্পূর্ণ মিথ্যা।
◾ পুলিশের একজন এসপি-কে জানি, যিনি ভাগ্যের গেঁড়াকলে পড়ে; সন্তান হারিয়েছেন, স্ত্রীকে হারিয়েছেন, সংসার ও চাকুরি সব হারিয়ে, এখন ক্ষমতাহীন নিঃস্ব জীবন-যাপন করছেন। সফলতা তার জীবনে সুখ আনতে পারেনি।
◾ একজন প্রফেসরের সাথে আমার কথা হয়েছিলো। তিনি বলেছিলেন, "বিবাহের চার বছর পর থেকে স্বামী অসুস্থ। আজ বারো বছর হলো দুই সন্তান ও অসুস্থ স্বামী নিয়ে সংসার করছি। জীবনে কি পেলাম?" সবই ছিলো, ভালো চাকুরী, দুই সন্তান। শুধু অর্থই জীবনের সব কিছু, একথা তার কাছে হাস্যকর।
◾ এক পরিচিত বড় ভাই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হয়েও এখন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক এবং হোমিওপ্যাথিক কলেজের প্রভাষক।
◾ একজন এম এ(ফার্স্ট ক্লাস ১৬তম)এলএল বি পাশ করে ওকালতি প্রাকটিস ও কলেজের প্রভাষক পদ ছেড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক!
আসলে জগতে কে সুখে আছে? টাকায় সুখ দিয়েছে কয়জনকে? জীবনে সফলতা মানেই কি সুখ? একটা জীবনে সুখী হয়ে মারা গেছে ক'জন!!
সুখী দেখেছিলাম আমার এলাকার নসু পাগলাকে, সে এক বেলা পেট ভরে খেয়ে কি আয়েশী হাসিটাই না হেসেছিলো!! শুধু ভরা পেটেই যে সুখে থাকতে পারে তার চেয়ে সুখী আর কেও নাই!! আমরা যারা মানুষ, তাদের মন ভরে সুখ কখনো আসে না। আমরা কখনো পরিপূর্ণভাবে সুখী হতে পারি না। বাস্তবতা বড় ফ্যাকাশে, স্বপ্নের মতো রঙিন হয় না।
?একটু সুখের জন্যে অনেক কিছুর দরকার নেই। চলুন, আমরা মনটাকে একটু ভালো করি; ক্ষমতা ও অর্থের দম্ভ থেকে সরে আসি; হিংসা, লোভ, স্বার্থপরতা ত্যাগ করি; সৃষ্টিকর্তার তরে নিজেকে সপে দিই; আর কাউকে না ঠকাই✌
আমাদের জীবন সুখের হবে
_____collected
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
। মিনিট।
আরেকখানা মিনিট পাবি
এমনটা কে বললো তোকে ?
বাঁচতে হলে নে বেঁচে নে,
নিংড়ে নিয়ে মুহূর্তকে।
কাঁদার হলে নে না কেঁদে
হৃৎপিন্ড উজাড় করে
একটা ফোঁটা চোখের জলও
না রয়ে যায় কান্নাঘরে।
হাসিস যদি সবটুকু দে,
মন ভালো কর এক মিনিটে
জীবন বলে ভাবিস যেটা,
গড়া সেটা মিনিট ইঁটে।
এক লহমায় প্রেম করে নে
তুচ্ছ করে সময়শাসন
অতীত এবং আগামীকে
খামোখা দিস উচ্চ আসন।
ইতিহাসকে টেরিয়ে দেখিস,
মুহূর্তরা যায় যে বয়ে
এই মিনিটে করিস যে কাজ,
উঠুক সেটাই জীবন হয়ে।
লাভ কি হবে আগাম ভেবে,
পরের দিনের প্ল্যানটা করে
কেউ জানেনা থাকবি কিনা
রাত পোহালে কালকে ভোরে।
একটা করে মিনিট বাঁচুক
সেই মিনিটেই তীব্রভাবে
পরের মিনিট এলে তখন
সেটাও নিয়ে ভাবা যাবে।
আগের মিনিট চলে গেছে
ঠিক বা ভুলের হিসেব দিয়ে
খামোখা আর এই মিনিটে
করবি কি সে ভাবনা নিয়ে ?
ইচ্ছে হলে নাচ না এখন
ভাবার হলে খুব নে ভেবে
ষাটটা সেকেন্ড মাত্র শুধু
মিনিটটা তোর সঙ্গ দেবে।
কেউ জানেনা ব্যাংকে আছে
আর কখানা মিনিট পড়ে
একটা গোটা জীবন নিয়ে
এক মিনিটে দে না ভরে।
লেখায় : ভারতীয় দাদা
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
তবে সব শেষে এই ছবিটা থাক। ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলার ইভান পেরিসিকের পুত্র খেলা শেষে দৌঁড়ে আসে তার স্বপ্নের নায়ক নেইমারের দিকে। তাকে আটকানোর চেষ্টা করে সিকিউরিটি। নেইমার বারণ করে। খুদে ফ্যান এগিয়ে আসে নেইমারের দিকে। তাকে হেরে যাওয়ার সমবেদনা জানায় জুনিয়র ইভান। নেইমার জড়িয়ে ধরে খুদে ফ্যানকে। এক মুখ হাসি আর রোমাঞ্চ নিয়ে ফিরে যায় আগামী প্রজন্ম।
আগামীর মধ্যে সঞ্চারিত হোক এই উন্মাদনা। লড়তে থাকুক বিশ্ব এই বাহানায়। গ্রেনেড, গুলি, পারমাণবিক অস্ত্রের চেয়ে ফুটবলের ৯০মিনিট লড়াই করা স্বাস্থ্যকর। অক্ষয় থাক দ্যা বিউটিফুল গেম!
---- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
অসাধারণ একজন বাবার অসাধারণ চিন্তা ধারার গল্প!
""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""''""""""""
এক কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার সঙ্গে আজ আলাপ হলো। ভদ্রলোক অটোচালক। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়ে পাস করেছিলেন। কিন্তু সংসারের চাপে আর পড়াশোনা করা সম্ভব হয়নি। ভদ্রলোকের গায়ের রং বেশ কালো। লম্বা চেহারা, মাথায় সাদার থেকে কালো চুলের আধিক্য বেশি। সস্তার জামা-প্যান্ট পরেছিলেন, কিন্তু বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।
গল্প করতে করতেই জানতে পারলাম, ভদ্রলোকের এক মেয়ে। মেয়ে বি এড কমপ্লিট করে চাকরির পরীক্ষায় বসছে।
ভদ্রলোক হেসে বললেন, আমার মা যখন আমার বিয়ে দিয়েছিলেন তখন ফর্সা বউ এনেছিলেন। তার কারণ নাতি-নাতনি যাই হোক সে যেন ফর্সা হয়। কিন্তু আমার মায়ের সে ইচ্ছেতে জল ঢেলে দিয়ে আমার কন্যা আমার গায়ের রং পেলো। আমিও আদর করে তার নাম দিলাম কৃষ্ণকলি।
মেয়ে আমার সব কাজে পারদর্শী। লেখাপড়াতেও খুব ভালো।
ভদ্রলোক বললেন, মেয়ের বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজছি। গায়ের রং কালো বলে তেমন মনের মত পাত্র পাচ্ছিও না।
আমার মনে হলো, এই হোলো আমাদের সমস্যা। চামড়ার মেলানিনের পরিমাণের হেরফেরে সমস্ত গুন চাপা পড়ে গিয়ে সে হয়ে যাবে কম দামি। সহানুভূতির গলায় বললাম, চিন্তা করবেন না। আপনার মেয়ের এত গুন, ওর খুব ভালো বিয়ে হবে। দুমিনিট কথা বলার পরে অবশ্য বুঝলাম, উনি কারোর সহানুভূতি চান না।
ভদ্রলোক একটু হেসে বললেন, আসলে ওর একটা খুব ভালো সম্বন্ধ এসেছিল। বিয়ে ফাইনাল হয়ে গিয়েছিল। পাত্র সরকারি চাকরি করে। দেখতে শুনতে ভালো, ভালো ফ্যামিলি ওদের।
কিন্তু আমিই ভেঙে দিলাম বিয়েটা।
আমি অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, মানে কেন ভেঙে দিলেন? অনেক পণ চেয়েছিল নাকি?
ভদ্রলোক ঘাড় নেড়ে বললেন, না। এক পয়সাও নিতো না।
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, তাহলে?
ভদ্রলোক আমাকে চূড়ান্ত চমকে দিয়ে বললেন, আমার মেয়ে প্রতি মুহূর্তে অপমানিত হচ্ছিলো তাই।
আমি কিছুই না বুঝে বললাম, বুঝতে পারছি না দাদা।
ভদ্রলোক আক্ষেপের গলায় বললেন, আত্মীয়- স্বজন দিনরাত আমার কলিকে বলছিলো, তুই খুব ভাগ্যবতী, তুই খুব লাকি যে তোর অমন ফর্সা, সুদর্শন ছেলের সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে।
ছেলের বাড়ির দিকের আত্মীয়রাও নাকি বলেছে, তুমি খুব লাকি কৃষ্ণকলি , নাহলে তোমার এমন গায়ের রঙে অমন ছেলে পাওয়া দুষ্কর।
মেয়ে সেদিন প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে আমার কাছে এসে বললো, বাবা আমি এতটা ভাগ্যবতী হতে চাইনি। ছেলেও নাকি মেয়েকে ফোন করে বলেছে, কেমন লাগছে তোমার আমার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়ে? নিজেকে নিশ্চয়ই খুব লাকি মনে হচ্ছে!
এসব কথা শুনেই আমি ভেবে দেখলাম, আমার মেয়ে তার কপালের ভার নিজেই বইতে পারবে। এতটা ভাগ্যবতী হতে হবে না তাকে লোকের দয়ায়।
তাই বাড়ির সকলের অমতে গিয়েই আমি বিয়েটা ভেঙে দিলাম। যাদের মনে হবে, বিয়ে করে আমার মেয়েকে ভাগ্য ফিরিয়ে দিচ্ছে না, তাদের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেব। ভাগ্যবতী শব্দের ভার বহন করার দরকার নেই কলির।
যদি চাকরি পায় ভালো, নাহলে আরেকটা অটো কিনে দেব, ও চালাবে। নিজের ভাগ্য নিজে তৈরি করবে। কারোর দয়া লাগবে না ওর।
আমি অভিভূত হয়ে দেখছিলাম ভদ্রলোককে। বললাম, তো বিয়েটা ভেঙে দেবার পরে আপনার মেয়ের কি বক্তব্য?
ভদ্রলোক বললেন, মেয়ে আমার কানে কানে বলেছে, আমার বাবা বেস্ট। ভদ্রলোক বললেন, আরে ওর গায়ের রং আমার মতন, ভাবনাও আমার মতনই হবে না! লোকে আমাকে বলছে.. কন্যাদায়গ্রস্ত বাবার নাকি এত তেজ ভালো নয়! আমি বলেছি, কন্যা আমার কাছে দায় নয়, আমার অহংকার।
অকারণে লোকের করুণার পাত্রী হতে যাবে কেন? কি নেই ওর? সব আছে ওর। আমি ওকে সবটুকু দিয়ে মানুষ করেছি। কোনো অবহেলা পায়নি ও কোনোদিন।
আমি বললাম, বিশেষ করে ওর এমন বাবা আছে।
সত্যি বলতে কি ওই অদেখা কৃষ্ণকলির আদরে ভাগ বসাতে খুব ইচ্ছে করছিল।
কৃষ্ণকলিরা এভাবেই মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। কারোর দয়ায় সৌভাগ্যবতী না হয়ে, নিজের চেষ্টায় নিজের পরিচয় গড়ে নিক।
কলমে - বিপুল দত্ত
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
খুব বেশি জামাকাপড় তাঁর ছিল না। শোনা যায়, শুধুমাত্র দু’খানা কাপড় ছিল তাঁর। একটিকে ধোপাবাড়ি দেওয়া হলে তাঁকে কোনও কারণে কাপড় বদল করতে হলে বাধ্য হয়ে তাঁকে ধোপা বাড়িতে গিয়েই কাপড় বদলে আসতে হত ! এমন ঘটনা নিজেই প্রত্যক্ষ করেছিলেন সাহিত্যিক ও কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একদিন মুক্তারামবাবুতে শিবরামের মেসে গিয়েছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। একটা সভায় যাওয়ার কথা ছিল তাঁদের। তাঁকে শিবরাম বলেছিলেন, ‘‘আমার এই তক্তাপোশে পা তুলে বসো। কারণ এর তলায় কী কী জন্তু জানোয়ার আছে তা আমি জানি না। ঘাঁটাইনি কোনও দিন। সাপও থাকতে পারে। আমি আমার ড্রেসিং রুম থেকে আসছি।’’ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘‘সেটা কোথায়?’’ শিবরাম বলেছিলেন, ‘‘ওই যে রাস্তার ওপারে যে লন্ড্রিটা রয়েছে ওইটা। আমি ওখানে গিয়ে আমার এই ধুতি আর পাঞ্জাবিটা ছেড়ে দেব। আর যেটা কেচে এসেছে সেটা পরে চলে আসব। দুটো সেট। কোনও ঝামেলা নেই। বাক্সপ্যাঁটরা নেই। বুঝলে, একেই বলে আপনি আর কোপনি। জীবনটাকে হালকা করো। রেল কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেখেছ? ট্রাভেল লাইট।’’
ছোটদের জন্য লিখতেন, নিজের মনটাও ছিল একেবারে শিশুর মতো। নিজের খেয়াল খুশির রাজা।
খুদে পাঠকরাই ছিল তাঁর বন্ধু। বেজায় ভালবাসতেন ছোটদের। জীবনে কোনও দিন কারও নিন্দা করেননি, শুনতেও চাইতেন না | কেউ যদি কখনও এসে বলতেন, শিবরামদা আপনার নামে অমুকে খারাপ কথা বলে বেড়াচ্ছেন, সঙ্গে সঙ্গে শিবরামের উত্তর, ‘‘হতেই পারে না। আপনিই ভুল শুনেছেন।’’ বলেই তার হাত ধরে নিয়ে যেতেন খাওয়াতে।
নিজেকে সাহিত্যিক পরিচয় দিতেও সংকোচ। বলতেন, ‘‘ধুর ধুর আমি আবার সাহিত্যিক হলাম কবে? প্রেমেন, অচিন্ত্য, শরৎচন্দ্র, বিভূতিভুষণ এরা হলেন সাহিত্যিক। কত ভাল ভাল লেখেন! তাদের পাশে আমি!’’ নিজের সম্পর্কে বলতেন, ‘‘সার্কাসের ক্লাউন যেমন। সব খেলাই সে পারে, কিন্তু পারতে গিয়ে কোথায় যে কী হয়ে যায় খেলাটা হাসিল হয় না। হাসির হয়ে ওঠে। আর হাসির হলেই তার খেলা হাসিল হয়।’’
"গায়ের জোর নেই বলে রিকশা টানতে পারি না তার বদলে কলম টানি। কলমের ওপর টান আমার এইটুকুই।" একটু পেয়ারা সন্দেশ কিংবা রাবড়ি খাওয়ার জেদেই কলম ধরলেও কথা বলে তাঁর কালি। সেই কলমের নিপ হাস্যরস আঁকে। যার ছোয়ায় জীবন্ত হয়ে ওঠে হর্ষবর্ধন-গোবর্ধনরা। তাঁর লেখা কালজয়ী মানতে নারাজ খোদ তিনি। বরং তিনি ছোট লেখক। ছোটরা তাঁর লেখা পড়বে , এই ছিল তাঁর বাসনা।
শেষ বয়সে এসে বুঝতেন শরীরটা ভাল যাচ্ছে না | বলতেন "জিনিসপত্র সব বাঁধা হয়ে গেছে। এবার একটা ট্যাক্সি পেলেই চলে যাব।" হঠাৎ একদিন প্রবল জ্বরে দুর্বল হয়ে বাথরুমেই সংজ্ঞা হারান তিনি। সারারাত পড়ে ছিলেন সেখানেই। পরদিন জানাজানি হলে তাকে ভর্তি করানো হয় হাসপাতালে।
১৯৮০ সালের ২৮ আগস্ট সকাল। হাসপাতালের বেডে আচ্ছন্ন বাড়ি থেকে পালিয়ে’র নায়ক।
ডাক্তারবাবু জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘শিবরামবাবু, এখন কেমন লাগছে শরীর?’’
‘‘ফার্স্টক্লাস।’’
জড়ানো গলায় তখনও একই উত্তর।
আর তারপর পেয়ে গেলেন ট্যাক্সি | চলেই গেলেন শিবরাম |
জন্মদিবসে বিনম্র প্রণাম |
সংকলনে অহর্নিশ
তথ্য : আনন্দবাজার পত্রিকা
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
** একমুঠো আনন্দ **
রামপুরহাট থেকে দমদম ফিরছিলাম ট্রেনে। ভিড় তেমন ছিল না। এক মহিলা উঠলেন চকোলেট নিয়ে। ওরকম তো কতই ওঠে বিক্রেতা। কিন্তু মহিলার আঁচল ধরেই সামনে এলো এক ছোট ছেলে। বয়স আন্দাজ পাঁচ,সাড়ে পাঁচ হবে। মা কি বিক্রি করছে সেদিকে ছেলেটির খেয়ালই নেই। সে নিজের মতো করে ঘুরে ঘুরে যেন চারপাশ দেখছে। আমার ছেলের বয়সী আবার দেখতেও অনেকটা সেরকম। আমি ইশারা করতেই মায়ের আঁচল ছেড়ে আমার কাছে এলো। এসেই জিজ্ঞাসা, তুমি কি এখন নেমে যাবে ?
- না তো এখন নামবো না।
- তবে তোমার পাশে আমি একটু বসি?
এর মধ্যেই মা ঘুরে এদিকে এলো। সে ছেলেকে সামলে নিয়ে বলছে কি রে কি বলছিস তুই ?
আমি ব্যাগ থেকে একশো টাকা বের করে মায়ের হাতে দিয়ে বললাম, আমি চারটে চকোলেট নেব। ওর মা বললো, এই টাকায় তো অনেক চকোলেট হবে।
- তা হোক। আমি চারটেই নেব।
চকোলেটের জারটা আমার সামনে ধরলো। আমি চারটে তুলে নিলাম। ছেলেটা এদিকে বলছে আরো নাও,আরো নাও। খুব ভালো খেতে। চারটে চকোলেটের দুটো ওর হাতে দিয়ে বললাম, আগে তুই খা। তোর মুখ দেখে আমি বুঝে নেব কতটা ভালো চকোলেট।
- তুমি মুখ দেখে বুঝে নিতে পারো?
- হমম খুব পারি।
ওর মা ব্যস্ত হয়ে বললো ওকে আর দেবেন না চকোলেট। সারাদিন ওই খেয়ে যাচ্ছে বমি হয়ে যাবে। আমি ভাবছি,তাহলে কি দেওয়া যায় ওকে?
হঠাৎ আমার মনে হলো মল্লারপুরে বাইনার মোড় থেকে নতুন গুড়ের সন্দেশ কিনে ব্যাগে রেখেছি। খুব ভালো খেতে। গুড়ের অপূর্ব গন্ধ আর মুখে দিলেই মিলিয়ে যায়। তাই নিজে খেয়ে বাড়ির জন্য নিয়ে আসছিলাম। বাড়িতে প্রথমে ঠাকুরকে দেব তারপর প্রসাদ করে সবাই খাবো। সেই প্যাকেটটা বের করলাম। ছেলেটা এর মধ্যেই আমার পাশের সিটে বসে পড়েছে।
- তোমার মোবাইলে কার্টুন আছে?
ওর মা খানিক সঙ্কুচিত কৈফিয়ত দেওয়ার ভঙ্গিতে যেন বললো, যার হাতেই মোবাইল দেখবে সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়বে কার্টুন দেখার জন্য। একে নিয়ে আর পারিনা।
আমার মনে হলো একটা নিষ্পাপ শিশুর যা পাওয়ার কথা সেটা তো ওকেই আমরা, আমাদের সমাজ দিতে পারছি না।পরিবর্তে মা কে সেই বাচ্চা
কে নিয়ে বেরোতে হচ্ছে ফেরি করে জিনিস বিক্রি করতে। এ লজ্জা তো আমাদের সমাজের! যাহোক, ওকে একটা কার্টুন চালিয়ে দিলাম। আর প্যাকেট টা খুলে ওর সামনে ধরলাম। কি আনন্দ করে পরপর চারটে সন্দেশ খেয়ে নিল। অমন আনন্দ আর মুখ নাচিয়ে তাড়িয়ে তাড়িয়ে খেতে দেখে আমার মনটা খুশিতে কানায় কানায় ভরে গেল।এমন মায়া ভরা হাসি মুখ দেখলে কেটে যায় সব ক্লান্তি, বেড়ে যায় বাঁচার আনন্দ!সুখী হওয়ার এত শর্টকাট উপায় থাকতেও আমরা তা অবলম্বন করিনা কেন? মায়ের হাতেও দিলাম দুটো। আমিও একটা নিলাম ওদের সাথে সাথ দিতে। মা বললো ছেলেটাকে দুধ কিনে দিতে পারছে না, বেচাকেনা একদম ভালো নেই। সুখী হওয়ার লোভ ততক্ষনে আমাকেও পেয়ে বসেছে। ব্যাগ থেকে যথাসাধ্য বের করে তার হাতে দিলাম। বললাম দুধ আর মাছ কিনে দেবেন। আমার ছেলেটা যে মাছ বড় ভালোবাসে, সেই কথাটা মনে পড়ে গেল। এবার পনেরো মিনিটের কার্টুন দেখার ইতি হলো। মায়ের তাগাদা - এই এবার চল। দিয়ে দে কাকুকে মোবাইল। ছেলের কাতর মিনতি মা আর একটু থাকি না। কাকুটা খুব ভালো। বিশ্বাস করুন জীবনে অনেকবার শুনেছি 'ভালো' এই কথাটা। কিন্তু এমন সুন্দর করে সার্টিফিকেট তো কেউ দেয়নি !
মা টেনে নিয়ে গেল ছেলেটাকে। কিন্তু আমি মনে রেখে দিলাম স্মৃতিটা। থাকলো ঈশ্বরের প্রতি কিছু অভিযোগও। তুমি মঙ্গলময় ,কিন্তু ওই ছেলেটাকে রাস্তায় বের করে কার কি মঙ্গল হচ্ছে ?আমাদের সকলকে দুঃখ দিও, কষ্ট দিও, পরীক্ষা নিও কিন্তু কোন শিশুকে এই কঠোর বাস্তবের সম্মুখীন দাঁড় করিও না প্রভু। তোমার দেওয়া কষ্ট সইতে পারবো কিন্তু বাচ্চাদের এই কষ্ট যে অসহনীয়।এই সব ভাবনার ভিড়ে আনন্দের মাঝেও চোখ ঠেলে জল যেন বেগে বেরিয়ে আসতে চাইছিল। চলন্ত ট্রেনের জানলার দিকে তাকিয়ে নিবৃত করলাম নিজেকে।মনে হলো আমার ঠাকুরের জন্য বয়ে নিয়ে আসা সন্দেশ ঠাকুর নিজে শিশু বেশে এসে খেয়ে গেল।
-- কৌশিক চৌধুরী--
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(সংগৃহীত)
*গল্পের নাম -*আমার বিয়ে*
আমার বিয়ের জন্য আজ মেয়ে দেখতে যাবো।
আমার সাথে আমার বাবা মা, আমার এক কলিগ আর এক কাকাও যাবেন।
এই অব্দি ঠিক ছিলো কিন্তু না, আমার সাথে আরো যাবেন মামা-মামী, মাসি-মেসো, পিসি-পিসোমশাই, মামাতো ভাইবোন, মাসতুতো ভাইবোন, মার একবান্ধবী আর তার ছেলে আরো কয়েকজন যাবে যাদের আমি নিজেই ভালো করে চিনি না।
এত মানুষ দেখে আমি বাবাকে বললাম,
-- বাবা, এইসব কি! এতজন কেন?
বাবা মুখ গোমড়া করে বললো,
- আমি নিজেও জানি না। তোর মাকে জিজ্ঞেস কর।
আমি মাকে আলাদাভাবে ডেকে বললাম,
-- মা আমি তো মেয়ে দেখতে যাচ্ছি। মেয়ে তুলে আনতে তো যাচ্ছি না। আমি যতদূর জানি মেয়ের বাবা হাই কলেজের মাস্টার আর মেয়ের একটা ছোট ভাই আছে ক্লাস এইটে পড়ে। সেই হিসাবে ওরা মেয়ে দেখানোর নাম করে আমাকে কিডন্যাপ করার চান্স নেই। তাহলে শুধু শুধু এত সামরিক বাহিনী নিয়ে যাচ্ছি কেন?
মা কিছুটা রেগে বললো,
- তুই এতসব বুঝবি না। আমার একমাত্র ছেলের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে যাবো। এতজন নিয়ে যাচ্ছি কারণ মেয়ের কোন খুঁত(সমস্যা) থাকলে কারো না কারো চোখে নিশ্চয়ই পড়বে।
আমি এই মুহুর্তে কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। যাত্রা পথে মেয়ের বাড়ির জন্য বাবা দোকান থেকে যখন ১৫ কেজি মিষ্টি কিনছিলো তখন পিছন থেকে মা'র বান্ধবী বলে উঠলো,
~আরে জামাইবাবু, আপনার কি বুদ্ধি-শুদ্ধি জীবনেও হবে না? মেয়ে দেখতে যাওয়ার সময় এত মিষ্টি কিনে নিয়ে যাওয়ার কি দরকার? দেখা গেলো মেয়ে পছন্দ হলো না তখন মিষ্টি সাথে নিয়ে ফিরে আসাও যাবে না। তারচেয়ে বরং ৫কেজি মিষ্টি নিন।
বাবা আমতা আমতা করে বললো,
- এতজন মানুষ শুধু ৫কেজি মিষ্টি নিয়ে যাবো?
মা তখন বললো,
-- রিনা ঠিক কথা বলেছে। মেয়ে পছন্দ না হলে শুধু শুধু এতগুলো টাকার মিষ্টি জলেই যাবে।
আমার নিরীহ বাবা, মা'র উপর কখনোই কিছু বলার সাহস পায় না। তাই মা'র কথা মতই ৫কেজি মিষ্টি কিনলো। আমি বাবার চেয়েও আরো বেশি নিরীহ। মা'র উপর আমারও কিছু বলার সাহস নেই...
মেয়ে দেখার আগে সবাই ভরপেট খাওয়া দাওয়া করে নিলো। কারণ পরে মেয়ে পছন্দ না হলে খেয়ে নাকি তৃপ্তি পাওয়া যাবে না। তাই আগে খাওয়া-দাওয়া পরে মেয়ে দেখা।
খাওয়া শেষ করে সবাই যখন মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলাম তার কিছুক্ষণ পর মেয়ে আসলো। পরনে হলুদ শাড়ি আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিকে মেয়েটাকে ভয়ংকর রকমের সুন্দর লাগছিলো। মেয়েটা আমার পাশের সোফাতে মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে রইলো। এমন সময় আমার পিসি মেয়েকে বললো,
~মা, একটু হেঁটে দেখাও তো!
মেয়েটি মুচকি হেসে আমার পিসিকে বললো,
-আমি তো কিছুক্ষণ আগে হেঁটে এসেই এইখানে বসলাম। উড়ে উড়ে এসে তো আর বসি নি, যে এখন হেঁটে দেখাতে হবে!
মেয়ের কথা শুনে বাবা বললো,
- সাধু-সাধু, মেয়ে দেখছি বুদ্ধিমতী। মেয়ের কথায় যুক্তি আছে।
আমি বাবার হাতে চাপ দিয়ে বাবার কানে কানে বললাম চুপ থাকতে কারণ মা রেগে যাচ্ছে..
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
আমার বড়মাসি ওনার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে একটা পেন আর কাগজ বের করে মেয়ের হাতে দিয়ে বললো,
~ তুমি এক কাজ করো মা। তোমার ঠিকানাটা ইংলিশে এইখানে একটু লিখে দাও তো দেখি!
মেয়েটি আবারও মুচকি হেসে মাসিকে বললো,
- আমি ইংলিশে অনার্স করেছি আর আপনি বলছেন আমি যেন ইংলিশে আমার ঠিকানাটা লিখি। বিষয়টা কি আমার জন্য অপমানজনক না?
বাবা তখন বললো,
- না না মা, তুমি অপমানবোধ করো না। আসলে আমার এই বড় শালীকে বর পক্ষ যখন দেখতে এসেছিল তখন ইংলিশে ওর বায়োডাটা লিখতে বলেছিলো। তখন সে একলাইন লিখতে গিয়ে ৩বার কলম ভেঙেছিলো। এজন্যই হয়তো ও ভাবে সবাই ওর মতই কলম ভাঙবে। ও তো আর এটা বোঝে না সবাই তো আর ওর মত মাধ্যমিকে ইংলিশে দুইবার ফেল করে নি।
বাবার কথা শুনে মেয়েটি মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো আর আমি বাবার হাত চেপে ধরে বললাম, চুপ করো এইবার। বাড়ি ফিরলে মা তোমার ১২টা বাজাবে...
মা'র বান্ধবী রিনা আন্টি বললো,
~সবি ঠিক ছিলো কিন্তু মেয়েটা একটু বেঁটে-খাটো।
মেয়েটি তখন রিনা আন্টির পা থেকে মাথা অব্দি দেখে বললো, বেঁটে-খাটো বলে সমস্যা কি? আমাকে দিয়ে তো আর বাড়ির সিলিংফ্যান পরিষ্কার করাবেন না, যে আমাকে লম্বা হতে হবে। ২ ইঞ্চি হিল জুতো পরে চলাফেরা করলে বাকি মেয়েদের বেঁটেই মনে হয়। জুতো খুলে আমার পাশে এসে দাঁড়ালে দেখবেন আমার চেয়ে আপনি ১ইঞ্চি বেঁটেই হবেন!
মেয়ের বাবা-মা মেয়েকে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করছে মেয়ে যেন চুপ থাকে। কিন্তু মেয়ে ওনাদের কোন কথা কানেই নিচ্ছে না ।
বাবা তখন মেয়েকে বললো,
- সিলিংফ্যান পরিষ্কার নিয়ে তোমায় কিছু ভাবতে হবে না মা। তোমার শ্বাশুড়ি ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। এইকাজ তোমার শ্বাশুড়িই করতে পারবে।
মা তখন কিছুটা রেগে গিয়ে মেয়েকে বললো,
- তোমার মুখ যেভাবে চলে রান্নার হাতও সেভাবে চলে কি? রান্না বান্না কিছু পারো?
মেয়েটি মার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললো,
- আমি রান্না বান্না কিছুই পারি না। বাবার বাড়ি কষ্ট করে রান্না করা শিখবো পরে যদি শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সেই রান্না পছন্দ না হয় তখন তো আমার সব কষ্ট বৃথা হয়ে যাবে। তাই ঠিক করেছি বিয়ের পর শ্বাশুড়ির থেকেই রান্না শিখবো...
মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে মা উঠে দাঁড়িয়ে মেয়ের মা-বাবাকে বললো,
- মেয়ে আমাদের পছন্দ হয় নি। আগে মেয়েকে শিষ্টাচার শেখান কিভাবে বড়দের সাথে সম্মান করে কথা বলতে হয়।
মেয়েটি তখন মাকে বললো,
- পছন্দ হয় নি ভালো কথা। আপনারা আমাকে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে চলে যান। কোন সমস্যা নেই।
মা অবাক হয়ে বললো,
- মানে!
মেয়েটি দাঁড়িয়ে তখন বললো,
- এটা কোন কাঙ্গালী ভোজন না, যে আপনি দলবল নিয়ে এসে খেয়ে দেয়ে চলে যাবেন আর কোন দাম দেবেন না। আপনাদের জন্য আমার বাবার ১৮ হাজার টাকার বাজার করতে হয়েছে। আর আমার মা, মাসি মিলে ভোর সকাল থেকে সেগুলো রান্না করেছে। তাদের কষ্টের তো একটা দাম আছে নাকি? সেই হিসাবে আমাকে হয় ২৫ হাজার টাকা দেবেন নয়তো আপনার ছেলের সাথে আমাকে বিয়ে দিতে হবে।
আপনি আপনার ছেলের জন্য মেয়ে দেখতে আসবেন সেজন্য আপনি, আপনার ছেলে আর বড়জোর পরিবারের দুই একজন আসতে পারতেন। কিন্তু আপনি তা না করে চোদ্দগুষ্টি নিয়ে এসে হাজির হবেন এটা কেমন কথা?
আপনারা এতজন আসবেন শুনে আমার বাবা অন্যের থেকে টাকা ধার করে বাজার করেছেন। আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের মায়েদের কখনো সাহস হয় না একসাথে ৩ রকম পদের তরী-তরকারি রান্না করতে। কিন্তু আমার মা আপনাদের জন্য ৯ রকম পদের তরী-তরকারি রান্না করেছে যাতে আপনাদের খাওয়ার কোন সমস্যা না হয়। এত কিছুর পরে যখন আপনারা বলেন, "মেয়ে খাটো তাই পছন্দ হয় নি" কিংবা " মেয়ে রান্নাবান্না পারে না তাই মেয়ে পছন্দ হয় নি"
তখন মেয়ের বাবা মার কিংবা মেয়ের মনে কতটা কষ্ট হয় জানেন?
নেক্সট টাইম যখন ছেলের জন্য মেয়ে দেখতে যাবেন তখন দলবল না নিয়ে গিয়ে ছেলে আর আপনার পরিবারের ৩-৪ জন যাবেন। এতে মেয়ে পছন্দ না হলেও মেয়ের বাবা মার এতটা হয়রানি আর এতটা কষ্ট হবে না...
আমি বাবার হাতে চাপ দিতেই আমার নিরীহ বাবাটা হঠাৎ সাহসী হয়ে বললো,
- এই মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে। এই মেয়েকে দিয়েই আমি কয়কজনকে মনের মতন শিক্ষা দিতে পারবো। এই মেয়েকেই আমি আমার ছেলের বউ হিসাবে চাই। বিয়ে এখানেই হবে। আমার পরিবারের কেউ যদি *এই বিয়েতে বাধা দেয় তাহলে ৩য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে বলে দিলাম* l
।।লেখকের নাম বলবো না।।
কারণ নাম জানিনা
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
আমার মায়ের ফিরে পাওয়া জীবন ও আমি ---- ( কাল্পনিক নাম , সত্যি ঘটনা )
আমার লেখা নয় । ভাল লাগল তাই।
------------------------------------------
প্রায় তিন বছর আগে আমি আমার মায়ের বিয়ে দিয়ে আমার কর্মক্ষেত্র হায়দ্রাবাদে ফিরে এসেছিলাম ।
শুনতে কেমন একটা লাগছে তাই তো !
আমার ভীষণ ভালো লাগা থেকে এই কাহিনীর অবতারণা । মায়ের জীবনের শেষ পর্যায়ে মা তাঁর প্রাপ্য সুখের অন্তত কিছু টা হলেও নিজের চেষ্টায় ফিরে পেয়েছে , সেটাই আমার ভালো লাগার কারণ ।মায়ের জীবন হারিয়ে যেতে বসেছিল আমার অজ্ঞতার জন্য ।
বিয়ের পরদিন, মা আর মায়ের স্বামী কোলকাতা এয়ারপোর্টে আমাদের বিদায় জানাতে এসেছিল । এত দিনের দেখা মা কে সেদিন একদম অন্য মা বলে মনে হচ্ছিল ।
এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম -- আমার মা সৌমেন বাবুর সাথে হেঁটে যাচ্ছে। মুখে এক আকাশ হাসি , মনে বিশ্বাস ,আস্থা, ফিরে পাওয়া প্রেম,ভালো ভাবে বাঁচার আকুতি নিয়ে মা এগিযে যাচ্ছে সৌমেন বাবুর হাত ধরে । মনে হলো মা গাইছে মায়ের হারিয়ে যাওয়া প্রিয় গান -
" কুঁড়ি মোর ফুটে ওঠে তোমার হাসির ইশারাতে,
দখিন - হাওয়া দিশেহার
আমার ফুলের গন্ধে মাতে ॥"
ফ্লাইটে বসে মন টা কখনও বিষন্ন কখনো প্রসন্ন । ঠিক যেমন টা ফ্লাইটের জানালা দিয়ে দেখা মেঘের আলো আঁধার নিয়ে খেলা । এই ঘটনার আগে মায়ের ইচ্ছে ,মায়ের জীবনের একাকীত্বের যন্ত্রণা আমাকে তেমন ভাবে কোনদিনই ভাবাই নিই৷
সারা টা জীবন নীরবে কোনো এক মুহূর্তের ভুলের মাশুল দিয়ে যাচ্ছিল আমার মা । সেই ভুলের সুফসল আমি । আমি আজ সুপ্রতিষ্ঠিত শুধুমাত্র আমার মায়ের আত্মত্যাগের জন্য।
আজ বলতে দ্বিধা নেই, মায়ের জীবন যে ভাবে চলছিল, সেটাই স্বাভাবিক মনে হোত । মায়েরও একটা মন , ভালবাসা পাওয়ার ইচ্ছে থাকতে পারে বা একটা আত্মা ও নিজস্ব সত্তা থাকতে পারে , এসব কোন দিন ভাবি নিই৷
এখন মনে হচ্ছে , মা তার জীবনের হারিয়ে যাওযা় প্রেমের কিছু টা হলেও ফিরে পেয়েছে ।
আমার বিয়ে আজ থেকে পাঁচ বছর আগেই হযে গেছে ।আমার এক পূত্র সন্তান ও আছে ।
শুধু সুন্দরী বলে আমার মায়ের রূপ বর্ণনা করা যাবে না । আমার মা এখনও অপ্সরা সুন্দরী । দুধে - আলতা গায়ের রঙ , প্রায় পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চি লম্বা ,জোড়া ভুরুর নিচে টানা টানা চোখ, ঢেউ খেলানো ঘন কেশরাশি।
আমার মায়ের গলায় রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনতে শুনতে আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি ।
আমার লেখাপড়ার খরচের জন্য মা কে টিউশন করতে দেখতাম । ভালো ইংলিশ মিডিয়াম কলেজে পড়তাম । তারপর ভালো রেসাল্ট করে খড়গপুর আই আই টি থেকে বি টেক করে আজ আমি হায়দ্রাবাদে একজন প্রতিষ্ঠিত ইঞ্জিনিয়ার ।
বাবার কথা বলছি না কেন, সেটা ভেবে হয়ত অনেকে অনেক কিছুই ভাবছেন ।
আমার যখন এক বছর বয়স তখনই আমার বাবা তার ভালো লাগার অন্য বাসা খুঁজে চলে যান। শুনেছি মা প্রেম করেই বিয়ে করেছিল। খুব অল্প বয়সের প্রেম ছিল । মা ক্লাস নাইনে পড়ত । যার দেয়া উপাধি নিয়ে আমার পরিচয়, তিনি নাকি হিরোদের মত মোটর বাইকে ঘুরে বেড়াতেন। চেহারা ও নাকি হিরোদের মত ছিল। "হিরো অন বাইকের " সাথে মায়ের প্রেম হয ।
প্রতাপ আদিত্য রোডের বনেদী মুখার্জি বাড়ী আমার দাদুর । মা নাকি খুব সন্তপর্নে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করত । বাড়ীর একমাত্র মেয়ে ছিল আমার মা ।ভীষণ আদুরে ছিল বাড়ীর সবার ।ডাক নাম ছিল তুলতুল । কমলা গার্লসে পড়ত মা । হিরো অন বাইকের সাথে কলেজে যেতে যেতে প্রেম , দক্ষিণী তে গান শিখতে যাওয়ার পথে প্রেম , হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করার পরে যোগেশ চন্দ্র কলেজে যেতে যেতে প্রেম ।
হটাৎ একদিন কাউকে না বলেই মা বাড়ী থেকে উধাও । তারপর বিয়ে । একটা ভাড়া বাড়ীতে সংসার শুরু হল । "হিরো অন বাইকের "রোজগার খুবই সামান্য। দক্ষিণ কলকাতার এক সিনেমা হলের লাইট ম্যানের চাকরি । অসম প্রেমের ব্যর্থ সংসার । আমার আগমনে সংসারে আরো বিপর্যয় ঘনিয়ে এল ।
অভাব অনটন কে সঙ্গে নিয়ে চলার মানুষ আমার মায়ের তৎকালীন প্রেমিক ছিলেন না ।কারণ তিনি যে ছিলেন "হিরো অন বাইক ।" নতুন সঙ্গীনীর সন্ধান নাকি আমার জন্মানোর এক বছরের মধ্যে তিনি পেয়ে গিয়েছিলেন ।
উনি উড়ে গেলেন অন্য এক সুখের নীড়ে। মায়ের দু বছর চার মাসের দাম্পত্য জীবনের ইতি হযে গেল৷
মা কে আর আমাকে বাড়ীতে ফিরিয়ে আনলেন দাদু ।
দাদু দিদিমার আদরে বড় হতে লাগলাম ।
আমার বারো বছর বয়সে দাদু মারা গেলেন । ঠিক তার এক বছরের মাথায় দিদু ও চলে গেলেন ।
আমাকে নিয়ে মায়ের জীবন সংগ্রাম শুরু হল । তারপর আমিও বড় হলাম ,চাকরি পেয়ে বিয়ে করলাম ।আমিও মা কে ছেড়ে হায়দ্রাবাদে পাড়ি দিলাম ।
মা একাই ওই বাড়ীতে তে থাকত ।
রোজ রাতে একবার ফোনে কথা হোত । কোনদিন মাকে কোনো ব্যাপারে অভিযোগ করতে শুনি নিই৷
মা ফেস বুক করে , এটা জানতাম।
যাইহোক ,পরে জানা গেল , সৌমেন চট্টোপাধ্যায় নামে একা ভদ্রলোক মায়ের ফেসবুক ফ্রেন্ড । প্রায় একাত্তর ছুই ছুই বয়স । সৌম্যদর্শন পুরুষ ।উনি মার্কিন মুলুকে সায়েন্টিস্ট ছিলেন । বিপত্নীক , নিঃসন্তান । বালিগঞ্জের ফার্ন রোডের বাড়ীতে একা থাকেন । বিজ্ঞানী হলেও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্য ও সঙ্গীত প্রেমিক এবং এক বাস্তব বাদী সংবেদন শীল মানুষ ।
জীবনের উপান্তে এসে "ফেস বুকের" মাধ্যমে একজন আরেক জনের কাছাকাছি আসতে শুরু করেছিলেন সবার অলক্ষে।
হটাৎ এক সন্ধায় একটা আননোন নম্বর থেকে ফোন আমার কাছে ।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
17-12-2022, 11:27 AM
(This post was last modified: 17-12-2022, 11:27 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
গুরু গম্ভীর অথচ সম্ভ্রম জাগানো গলায় বললেন - কুড আই স্পিক টু মিস্টার সপ্তর্ষি রয়।
আমি বললাম - ইযেস ,স্পিকিং । ------- আপনি কে বলছেন ?
ভরাট গলায় খুব ধীরে ধীরে নিজের পরিচয় দিলেন । তারপর বললেন - আমি তোমার মায়ের সম্মতি তে ওনাকে বিয়ে করছি ।এই সিদ্বান্ত টা তোমাকে জানানো প্রয়োজন , তাই ফোন করেছি । আমি হতভম্ভ হযে চুপ করে ছিলাম । উনি আরো বললেন -- যদি সম্ভব হয় তুমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলে নিও । ভালো থেকো, গুড নাইট বলে ফোন টা রেখে দিলেন ।
এক নাম না জানা ঝড় অকল্পনীয় এক বার্তা দিয়ে কোনো উত্তরের অপেক্ষা না করে চট জলদি উবে গেল । বুকের ভেতর এক পারমাণবিক ফিউশন অনুভব করলাম । এই অচেনা স্বর মায়ের সাথে আমার স্থায়ী সম্পর্কের অবস্থান কে এলোমেলো করে দিয়ে চলে গেল। ফোনের কথা গুলো তখনও উষ্ণ ঝড়ো হাওয়ার মত কানের পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছিল ।
আমার মা তো আমারই । আমাকে বাদ দিয়ে মায়ের কোনো আলাদা অস্তিত্ব থাকতে পারে ,এ তো স্বপ্নেও কোন দিন ভাবি নিই৷ আমি আর মা তো একটা সরলরেখার দুটি প্রান্ত,সেই সরলরেখায় আর অন্য কোনো প্রান্ত তো হতে পারে না । তাহলে এই ভদ্রলোকের অবস্থান কোথায় হবে ।সম্পর্কের সরল রেখা কী ত্রিভুজের আকৃতি নেবে !!
আমার কী করা উচিৎ ভাবতে গিয়ে কূলকিনারা পাচ্ছিলাম না । মা কে ফোন করতে গিয়েও ফোন করতে পারলাম না ।
আমার মায়ের বিয়ে ! ! এতো কল্পনাতীত । আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব এদের কাছে কী জবাব হবে আমার । সেই রাতে আমার স্ত্রী রুপা কে কিছুই বলতে পারলাম । ঘুম এলো না । অস্থির হয়ে বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে রাত কেটে গেল ।
পরদিন সকালে রুপা কে সব বললাম । রুপা যে সমস্ত ব্যাপারটা এতটা সহজ করে দেবে আমি ভাবতেই পারি নি ।
রুপা বলল -- আচ্ছা ,তুমি তোমার নিজের জীবন , ক্যারিয়ার ছাড়া মায়ের জীবন ,শখ , ইচ্ছে একাকীত্ব নিয়ে কখনও কী কোন দিন ভেবে দেখেছো ? দিনের পর দিন ,বছরের পর বছর কী ভাবে মা শুধু তোমার কথা ভেবেছে। নিজের ভালো লাগার মত কোনো কিছুই জীবনে পান নিই৷ অল্প বয়সে প্রেম খুঁজতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন । এখন যখন জীবনের নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে চাইছে সেখানে তুমি বাধা হতে পারো না ।বাকি জীবনটা যদি মা একজন সঙ্গী পায় তোমার অসুবিধে কোথায়, সোসাইটির বা কোথায় অসুবিধে।
তুমি বছরের কটা দিন মা কে সময় দাও ,কতক্ষণ কথা বলার সময় পাও । তাঁর জীবনের প্রাইম টাইমে তিনি শুধু তোমার জীবন , তোমার ক্যারিয়ার নিয়ে ভেবেছেন। এখন তিনি যদি তার কথা বলার ,ভালোলাগার কোনো সঙ্গী পায়, আমাদের সম্পূর্ণ ভাবে তার পাশে দাঁড়ানো উচিৎ । মা বাঁচুক নিজের মত নতুন করে ।
রুপা এই কথা বলেই মা কে ফোন করে প্রথমই বললো - মা কনগ্রেচুলেশনন্স । মা আমি তোমার সাথে আছি । ডেট ঠিক করে জানাও আমরা সব্বাই বিয়ে তে থাকবো ।এত কঠিন কথা এত সহজে বলা যায় জানা ছিল না।
যথারীতি বিয়ের আগের দিন আমরা বাড়ী এলাম । পরের দিন ম্যারেজ রেজিষ্টারের অফিসে সবাই হাজির হলাম । মায়ের বিয়ে হল ।আমি আর রুপা উইটনেস হলাম ।আমার মা তখন নব বধূ । সুন্দর জড়ি বসানো নীল রংঙের বেনারসী শাড়ি ,মাথায় ছোট্ট ঘোমটা ।সিঁথিতে লাল টকটকে সিঁদুর । হাতে সোনার বালা । ৬৩ বছরের মা কে মনে হচ্ছিল একুশ বছরের নব বধু ।
মা আমার হাত টা নিজের হাতে চেপে ধরে কেঁদে ফেলল । আমি মা কে জড়িয়ে ধরলাম ।
শুধু একবার বল --- তুই রাগ করিস নি তো ? আমি বড্ড একা ছিলাম রে । উনি আমাকে বাঁচতে শিখিয়েছেন ।
মায়ের কথা গুলো হিমপ্রবাহ হয়ে আমার অনুভূতি কে হিমশীতল করে দিচ্ছিল।
আমি বললাম - আমি ভীষণ খুশি মা । আমি তোমার একাকীত্ব বা তোমার মনের কোনো খোঁজ রাখতে পারি নিই৷ আমাকে ক্ষমা করো । তুমি ভালো থাকবে মা ।
মা ভালো আছে । বেশ ভালো আছে । গত দু বছরে অনেক ঘুরে বেড়িয়েছে । সৌমেন বাবু বেড়াতে ভীষণ ভালোবাসেন । সামনে ইউরোপ ট্যুরে যাবেন ।
বলতে দ্বিধা নেই ,আমার মায়ের যে এমন একটা জীবন পাওয়া খুবই দরকার ছিল , সেটা রুপা না বোঝালে হযতো কোনো দিনই বুঝতে পারতাম না । মা যে একজন দুখী মানুষ , সে কথা কখনো ভেবে দেখি নিই৷ মায়ের মনের ক্ষত মা নিজেই দূর করেছেন ।
আমি এখন খুশি ,ভীষণ খুশি ।
পরিশেষে একটা কথা না বললেই নয় সেটা হলো জন্ম লগ্ন থেকেই আজ অবধি 'বাবা' শব্দটি আমার মুখের অনুচ্চারিত এক শব্দ ।বাবা ডাকে অভ্যস্থ না থাকায় আমি ওনাকেও মানে সৌমেন বাবু কে 'বাবা' ডাকতে পারি নিই৷
যত দিন বেচে থাকবো "মা " ডাক নিয়েই বেচে থাকবো ।আমার মা ভালো মা । সৌমেন বাবু এখন আমার একজন ভালো বন্ধু ।
লেখক:-
দিলীপ চৌধুরী
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
।ফুটবল।
প্রতি লিওনেল মেসির একটা কিলিয়ান এমবাপে থাকে।
যে তাকে মনে করিয়ে দেবে ,
জয়ের ঠিক পাশ ঘেঁষে পরাজয় বসে থাকে,
কখন যে ওরা নাম পাল্টাপাল্টি করবে ,
কোনো ঠিক নেই।
প্রতি আর্জেন্তিনা পিছু একটা সৌদি আরব থাকে,
যে বুঝিয়ে দেবে,
বিশ্ব-চ্যাম্পিয়ন মানে সর্বজয়ী নয়,
সুযোগের সদ্ব্যবহার করলে
তাকেও হারাতে পারে নামহীন কেউ।
জীবন তোমার কাঁধে ওইরকমই এক বা এক কোটি লোকের দায়িত্ব চাপিয়ে পেনাল্টি মারতে পাঠাবে কখনো।
তোমার সামনে নিশ্চিত হার, গ্যালারি প্রতিপক্ষ সমর্থকে ভরা,
আর কেউ নেই যে তোমার কাজটা করতে পারে।
তুমি হয়তো সীমান্তের এক সৈনিক, যে প্রথম অনুপ্রবেশকারীকে দেখেছো।
অথবা ডাক্তার, যে বুঝেছো এবারে জ্বরটা যেন অন্য অসুখ, অচেনা মহামারীর সংকেত,
কিংবা এত বড় কিছু না, রেলের ইঞ্জিন বা বাসের ড্রাইভারি সিট থেকে দেখছো,
অদূরে কাটছে পথ কলেজের কিশোরী।
তোমার হাতে বন্দুক, স্টেথোস্কোপ, স্টিয়ারিং।
অথবা তোমার পায়ে ফুটবল।
ওই রেফারির বাঁশি বাজলো। তুমি শট নিলে…
গোল হলে এমবাপে তুমি। যুগের নায়ক।
না হলে হ্যারি কেন। পরের জীবন বড় কষ্টদায়ক।
অবশ্য স্ট্রাইকারই নও সর্বদা,
কখনো গোলের আগে তুমি লাস্ট ম্যান।
একমনে বল দেখো, পেনাল্টি স্পটে আছে যেটা বসানো,
বুকে ধুকপুক বাড়ে, দুই হাত ছড়ানো তোমার,
কানে আসে কারো চিৎকার , কাম অন, কাম অন কিপার!
হঠাৎই প্রিয়জনের বায়োপ্সি পজিটিভ,
মেডিক্লেম নেই,
অথবা দুম করে চাকরিটা চলে গেছে,
সামনে মেয়ের পরীক্ষা ,
কলেজের ফি’জ দিতে হবে,
কিংবা এসব কিছু নয়,
বোনকে টিটকিরি মারে বলে প্রতিবাদ করতে যেতে হবে পাড়ার ক্লাবকে,
মোট কথা উল্টোদিকে প্রবল প্রতিপক্ষ,
গোল আগলে তুমি একা,
তোমায় ঠিক করে নিতে হবে ডাইনে না বাঁয়ে ঝাঁপাবে।
বাঁচাতে পারলে তুমি হিরো,
নয় গোল খেয়ে যাওয়া হেরো,
মাথা নিচু করে মাঠ ছেড়ে চলে যেতে হবে এইবারে..
আরেঃ, চললে কোথায়?
একখানা খেলা শেষ, টুর্নামেন্ট তো বাকি আরো।
হেরোর কান্না হোক,
অথবা চওড়া থাক বিজয়ীর হাসি
কালকে আরেকখানা দিন ।
জার্সিটা পরে ফেলো,
চলো আরেকটা দিন জীবনের ফুটবল তেড়ে খেলে আসি।
চলো চলো, সময় হয়েছে। কান পাতো, শোনা যায় রেফারির বাঁশি…
আর্যতীর্থ
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
# যমুনামাসির_মেসি
যমুনামাসির আজ দেখি উস্কোখুস্কো চুল, চোখের নিচে কালি। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করতে উত্তর এলো,
— কাইল সারারাত্তির ঘুম হয় নাই বৌদিদি। পাড়ার পোলাপানগুলা মাইক বাজাইছে, বাজি ফাটায় কী যে চিল্লামিল্লি করসে সে আর কওয়ার না। তা সকালে খোঁজ নিয়া জানলাম আমাগো দ্যাশের আর্জিনা ফুটবল খেলায় জিতসে হেই লাইগ্যা এতো চিল্লানো।
— ওহ তাই বলো। তবে আর্জেন্টিনা আমাদের দেশে নয়, ওটা একটা অন্য দেশ।
— কও কী! আর্জিনা আমাগো দ্যাশে থাকে না? তো ও জিতসে, আর আমাগো পাড়ার পোলাপান লাফায় ক্যান? এইডা তো ঠিক না।
অবস্থা বেগতিক। বললাম
— ব্যাপারটা একই। আমাদের দেশ খেলতে যায়নি, আর্জেন্টিনা গেছিলো। তাইই...
মাসি কি বুঝলো জানিনা।কিছুক্ষন পর ঝাঁটা নিয়ে এসে ঝাঁট দিতে দিতে বললো
—আচ্ছা বৌদিদি মোড়ের মাথায় একডা বড়ো ছবি টাঙ্গাইসে না? ওই ছবিটা আর্জিনার?
—ওই দেশের লোক মেসির।
— ক্যামন নাম? পদবী নাই? বামুন?
— লিওনেল মেসি। কেন বামুন হলে তোমার কি সুবিধে?
মাসি ফিক করে হেসে বললো
— আমার না। ওই চাটুজ্জে বাড়ির মাইয়া টিনা মোবাইলে ওই মেসি পোলাডার ফটোরে চুমা খাইয়া ফোনে কারে য্যান কি কইতেছিলো! আমি তো ভাবসি ওর লগে ভাব ভালোবাসা আছে ঠিক। চেহারাখান তো ভালোই, ফর্সা ফর্সা মুখখান। টিনার লগে মানাইবো না? কি কও?
— হ্যাঁ সে তো মানাবেই। কিন্তু মেসির যে তিন ছেলে আছে। তোমার টিনার সাথে বিয়ে হলে ওঁর বউটার কি হবে?
মাসি চোখ কপালে তুলে। লম্বা জিভ কেটে বললো
— ছিঃ ছিঃ টিনার মায়েরে আইজই কইবো মাইয়ার বিয়া দাও। বিবাহিত লোকের লগে ভাব ভালোবাসা শুনলে ওর বাপ কাইটাই ফেলাবো ওরে।
হেসে বললাম
— ওঁকে তো আমিও ভালোবাসি।
মাসির কপালে তোলা চোখ এবার নেমে এলো।ভুরু কুঁচকে আমাকে কয়েক সেকেন্ড দেখে চলে গেলো ঘর থেকে। বেচারি কাল রাতে ঘুমোতে পারেনি, আজ রাতেও ওর ঘুম হবে কিনা সন্দেহ।
-- ️সোমাশ্রী পাল চন্দ --
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
অসাধারন একটি লেখা। আশাকরি ভালো লাগবে -
এক ভদ্র মহিলা পাসপোর্ট অফিসে এসেছেন পাসপোর্ট করাতে।
অফিসার জানতে চাইলেন- আপনার পেশা কি?
মহিলা বললেন, আমি একজন মা।
আসলে ,শুধু মা তো কোনো পেশা হতে পারেনা।
যাক, আমি লিখে দিচ্ছি আপনি একজন গৃহিনী।
মহিলা খুব খুশী হলেন। পাসপোর্টের কাজ
কোনো ঝামেলা ছাড়াই শেষ হলো। মহিলা সন্তানের চিকিৎসা নিতে বিদেশ গেলেন। সন্তান সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসলো।
অনেকদিন পরে, মহিলা দেখলেন পাসপোর্টটা নবায়ন করা দরকার। যেকোনো সময় কাজে লাগতে পারে। আবার পাসপোর্ট অফিসে আসলেন। দেখেন আগের সেই অফিসার নেই। খুব ভারিক্কি, দাম্ভিক, রুক্ষ মেজাজের এক লোক বসে আছেন।
যথারীতি ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে
অফিসার জানতে চাইলেন-
আপনার পেশা কি?
মহিলা কিছু একটা বলতে গিয়েও একবার থেমে গিয়ে বললেন-
আমি একজন গবেষক। নানারকম চ্যালেঞ্জিং প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করি। শিশুর মানসিক এবং শারিরীক বিকাশ সাধন পর্যবেক্ষণ করে,সে অনুযায়ী পরিকল্পণা প্রণয়ন করি। বয়স্কদের নিবিড় পরিচর্যার দিকে খেয়াল রাখি। সুস্থ পরিবার ও সমাজ বিনির্মাণে নিরলস শ্রম দিয়ে রাষ্ট্রের কাঠামোগত ভিত মজবুত করি। প্রতিটি মূহুর্তেই আমাকে
নানারকমের চ্যালেঞ্জের ভিতর দিয়ে যেতে হয় এবং অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তা মোকাবিলা করতে হয়। কারণ,আমার সামান্য ভুলের জন্য যে বিশাল ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
মহিলার কথা শুনে অফিসার একটু নড়ে চড়ে বসলেন। মহিলার দিকে এবার যেন একটু শ্রদ্ধা আর বিশেষ নজরে তাকালেন । এবার অফিসার জানতে চাইলেন-
আসলে আপনার মূল পেশাটি কি? যদি আরেকটু বিশদভাবে বলতেন।লোকটির
আগ্রহ এবার বেড়ে গেলো।
আসলে, পৃথিবীর গুণীজনেরা বলেন - আমার প্রকল্পের কাজ এতো বেশি দূরহ আর কষ্ট সাধ্য যে, দিনের পর দিন আঙুলের নখ দিয়ে সুবিশাল একটি দীঘি খনন করা নাকি তার চেয়ে অনেক সহজ।
আমার রিসার্চ প্রজেক্ট তো আসলে অনেকদিন ধরেই চলছে। সর্বক্ষণ আমাকে ল্যাবরেটরি এবং ল্যাবরেটরীর বাইরেও কাজ করতে হয়। আহার,নিদ্রা করারও আমার সময়ের ঠিক নেই। সব সময়
আমাকে কাজের প্রতি সজাগ থাকতে হয়। দুজন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অধীনে মূলত আমার প্রকল্পের কাজ নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে চলছে।
মহিলা মনে মনে বলেন,দুজনের কাউকে অবশ্য সরাসরি দেখা যায়না।
(একজন হলেন, আমার স্রষ্টা আরেকজন হলো বিবেক)
আমার নিরলস কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ আমি তিনবার স্বর্ণপদকে ভূষিত হয়েছি। (মহিলার তিন জন কন্যা সন্তান ছিল।)
এখন আমি সমাজবিজ্ঞান,স্বাস্থ্যবিজ্ঞান আর পারিবারিক বিজ্ঞান এ তিনটি ক্ষেত্রেই একসাথে কাজ করছি, যা পৃথিবীর সবচেয়ে জটিলতম প্রকল্পের বিষয় বলা যায়। প্রকল্পের চ্যালেঞ্জ হিসাবে একটি অটিস্টিক শিশুর পরিচর্যা করে মানুষ হিসাবে গড়ে তুলছি, প্রতিটি মুহুর্তের জন্য।
‘ঊষর মরুর ধূসর বুকে, ছোট্ট যদি শহর গড়ো,
একটি শিশু মানুষ করা তার চাইতেও অনেক বড়।‘
অফিসার মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে মহিলার কথা শুনলেন । এ যেন এক বিস্ময়কর মহিলা। প্রথমে দেখেতো একেবারে পাত্তাই দিতে মনে হয়নি।
প্রতিদিন আমাকে ১৪ থেকে ১৬ ঘন্টা আবার কোনো কোনো দিন আমাকে ২৪ ঘন্টাই আমার ল্যাবে কাজ করতে হয়। কাজে এতো বেশি ব্যস্ত থাকতে হয় যে, কবে যে শেষবার ভালো করে ঘুমিয়ে ছিলাম কোনো রাতে,তাও আমার মনে নেই। অনেক সময় নিজের আহারের কথা
ভুলে যাই।আবার অনেক সময় মনে থাকলেও সবার মুখে অন্ন তুলে না দিয়ে খাওয়ার ফুরসত হয়না । অথবা সবাইকে না খাইয়ে নিজে খেলে পরিতৃপ্তি পাই না। পৃথিবীর সব পেশাতেই কাজের পর ছুটি বলে যে কথাটি আছে আমার পেশাতে সেটা একেবারেই নেই। ২৪ ঘন্টাই আমার অন কল ডিউটি।
এরপর আমার আরো দুটি প্রকল্প আছে । একটা হলো বয়স্ক শিশুদের ক্লিনিক। যা আমাকে নিবিড়ভাবে পরিচর্যা করতে হয়।সেখানেও প্রতিমুহুর্তে শ্রম দিতে হয়।
আমার নিরলস কাজের আর গবেষণার কোনো শেষ নেই ।
আপনার হয়তো বা জানতে ইচ্ছে করছে, এ চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প পরিচালনায় আমার বেতন কেমন হতে পারে।
আমার বেতন ভাতা হলো- পরিবারের সবার মুখে হাসি আর পারিবারিক প্রশান্তি। এর চেয়ে বড় অর্জন আর বড় প্রাপ্তি যে কিছুই নেই।
এবার আমি বলি, আমার পেশা কি?
আমি একজন মা। এই পৃথিবীর
অতিসাধারণ এক মা।
মহিলার কথা শুনে অফিসারের চোখ জলে ভরে আসে। অফিসার ধীরে ধীরে চেয়ার ছেড়ে ওঠেন। নিজের মায়ের মুখ চোখের সামনে ভেসে ওঠে।তিনি খুব সুন্দর করে ফর্মের সব কাজ শেষ করে, মহিলাকে সালাম দিয়ে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেন। তারপর নিজের অফিস রুমে এসে একটি ধূসর হয়ে যাওয়া ছবি বের করে -ছবিটির দিকে অপলক চেয়ে থাকেন। নিজের অজান্তেই চোখের জল টপ টপ করে ছবিটির ওপর পড়তে থাকে।
আসলে "মা"-এর মাঝে যেন নেই কোনো বড় উপাধির চমক।বড় কোনো পেশাদারিত্বের করপোরেট চকচকে ভাব।কিন্তু কত সহজেই পৃথিবীর সব মা নিঃস্বার্থ ভাবে প্রতিটি পরিবারে নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।মাতৃত্বের গবেষানাগারে প্রতিনিয়ত তিলেতিলে গড়ে তুলছেন একেকটি মানবিক নক্ষত্র।
সেই মা সবচেয়ে খুশি হন কখন জানেন-
যখন সন্তান প্রকৃতই মানবিক মূল্যবোধ
নিয়ে ধনে নয়, সম্পদে নয়,বিত্তে নয়, ঐশ্বর্যে নয় শুধু চরিত্রে আর সততায় একজন খাঁটি মানুষ হয়।
---
নমস্কার....
কপি পোস্ট
@everyone
Posts: 11
Threads: 0
Likes Received: 8 in 7 posts
Likes Given: 121
Joined: May 2019
Reputation:
0
22-12-2022, 03:03 AM
(This post was last modified: 22-12-2022, 03:04 AM by kublai. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
dateline=\1671602858 Wrote:
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
যেদিন আমার বয়স হয়ে যাবে..
তুইও হবি সুন্দরী এক বুড়ি...
ভোরে উঠে morning walk যাবো..
alarm দিবি রোজ ৪ টে ২০..
তখন বুঝি সুগার হবে আমার,
কোলেস্টেরল বাড়বে বুঝি তোর..
কুঁচকে যাবে গায়ের চামড়া জানি,
আসবে কমে এই গায়ের জোর।
তাও ভীষন বাঁধন ছেঁড়া হবো..
দুর্গা পুজোয় দাঁড়িয়ে, ফুচকা খাবো..
লুকিয়ে গোলাপ খোঁপায় দেব গুঁজে..
সেই আদরে ভাবিস চোখটা বুজে...
বয়স বুঝি শুধুই সংখ্যা তবে,
বাষট্টিতেও বাইশ পাবি খুঁজে।।
আয়না ভর্তি চিটিয়ে বাসি টিপ,
চুড়ির গোছে সেফটি পিনটা আঁটা..
চূড়ান্ত এক গিন্নীপোনা মাখা,
পা থেকে তোর চুলের কাঁটা..।
তোরও থাকবে একটা বাক্স গোপন..
যেটা হয়তো আমারো খুব আপন..
প্রথম দেওয়া কিছু উপহার,
প্রথম পাওয়া কিছু অনুভূতি..
প্রথম যাওয়া হানিমুনের টিকিট..
প্রথম দেওয়া কিছু প্রতিশ্রুতি..
আর তোর প্রিয় "ঘুঙুর"..
বাক্সে যদি এসবই কিছু আছে,
ছুঁয়ে দেখিস.....
ওতে আজও যৌবন লেগে আছে..
আসবে হাসি পুরনো চ্যাট দেখে..
পুরনো দিনের গন্ধ পাবি,
দেখিস স্মৃতি মেখে..
তখন বুঝি আর "ওসব" হবে না..?
চুমু বুঝি হয়ে যাবে হামি?
কাঁপা হাতের স্পর্শ থাকবে একই,
স্পর্শটাই সারা জীবন দামী..
আমার কাছে বাষট্টিতেও বাইশ হয়ে থাকিস..
সেদিনও কিন্তু কাজল পরার অভ্যেসটা রাখিস..
ঐ কাজল চোখটা সর্বনাশী..
বলবে সেদিন ভালোবাসি..
|