Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,994 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
তাও মহুয়া ওকে ছাড়তেই চায় না। জামার কিছু অংশ জলে ভিজে ওঠে। বুকের ওপরে অশ্রুর সিক্ততা অনুভব করে ওর মুখ আঁজলা করে নিজের দিকে তুলে ধরে দানা। দানার দিকে ভিজে চোখে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলে, "চল না আমরা এইখান থেকে কোথাও চলে যাই।"
দানা মৃদু মাথা দোলায়, "কেন এত ভয় পাচ্ছো পাপড়ি?"
মহুয়া মৃদু ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "কেন ভয় পাই? তুমি বাড়ি থেকে বের হও আর আমার এক লিটার করে রক্ত শুকিয়ে যায়। ছেলেটা সময় মতন বাড়ি ফিরবে তো, পথে কিছু হল না তো। গত বার তাও তোমার হাতে পিস্তল ছিল..... এইবারে একেবারে সমুদ্রের মাঝে। কিছু হয়ে গেলে....."
কথাটা আর শেষ করতে পারল না মহুয়া। দানার প্রশস্ত ছাতির ওপরে মুখ লুকিয়ে কেঁপে ওঠে। ওর বুকের উত্তাপ নিজের চেহারায় মেখে নিয়ে নিজের ঠাণ্ডা দেহ খানি উষ্ণতায় ভরিয়ে বাঁচার প্রানশক্তি পুনরায় ফিরে পায়। এতক্ষণ মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁপতে কাঁপতে দানার প্রতীক্ষা করছিল।
মহুয়ার মুখখানি আঁজলা করে নিজের দিকে তুলে ধরে ওর চোখের জল মুছিয়ে দেয়। নরম গালে প্রেমিকের উষ্ণ আঙ্গুলের পরশে প্রান ফিরে পায় মহুয়া। দানা ওকে প্রবোধ উত্তর দেয়, "বেশিদিন নয় পাপড়ি। কঙ্কনা আর নাসরিনকে জালে জড়িয়ে ফেলেছি। ওদের ব্যাবহার করে সিমোন আর নয়নাকে জালে জড়াবো, তারপরে কাজ শেষ।"
একবার ভাবে ওকে কি সত্যি কথা বলে দেবে, কি কারনে কঙ্কনা আর নাসরিন ওকে খুন করতে চেয়েছিল? না থাক, পুরানো কথা না উঠানোই শ্রেয়। নিজের বিরুদ্ধে চক্রান্তের প্রতিশোধ আর মহুয়াকে নির্যাতনের প্রতিশোধ অনেক আগেই নিয়ে নিয়েছে দানা। এইবারে বাকি শুধু চার সাংঘাতিক হিংস্র মহিলা - কঙ্কনা দেবনাথ, নাসরিন আখতার, নয়না ওরফে শায়ন্তনি বসাক, আর সিমোন খৈতান। নাসরিনকে দেখে মনে হয় বেচারি কঙ্কনার সাথে পড়ে ফেঁসে গেছে। তবে সিমোন আর মোহন খৈতান ক্রোধে ফুঁসছে, যে কোন মুহূর্তে ওর ওপরে আক্রমন করতে পারে ওরা।
এতরাতে রুহির জেগে থাকার কথা নয়। ওর প্রথম কলেজ যাত্রা ঠিক ভাবে উপভোগ করতে পারলো না ভেবে দানার মন খুব খারাপ হয়ে যায়। কোন রকমে জামা কাপড় ছেড়ে ঘুমন্ত রুহিকে জড়িয়ে ধরে।
মহুয়াও না খেয়ে, ঠাকুরের মন্দিরের সামনে হত্যে দিয়ে বসেছিল। কিছুপরে মহুয়া ওকে এসে তুলে দিয়ে, খেতে ডাকে, "এই এসো রুটি হয়ে গেছে।"
সেই বিকেল থেকে পেটে কিছুই ঠিক ভাবে পড়েনি। খাওয়ার কথা একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিল। প্রেয়সীকে পাঁজাকোলা করে তুলে কোলে বসিয়ে নেয়, "কি খাওয়াবে?" বলেই ওর সুডৌল স্তন যুগলের মাঝে মুখ ঘষে দেয়।
ওর মাথার চুল আঁকড়ে বুকের ওপর থেকে মাথা উঠিয়ে বলে, "অনেক প্রেম দেখানো হয়েছে, এইবারে একটু কিছু পেটে দিয়ে আমাকে উদ্ধার করে দাও।"
একপ্রকার কোলের ওপরে বসিয়ে খেতে খেতে রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের ঘটনা বলি বলে। শুনতে শুনতে মহুয়ার গায়ে কাঁটা দিয়ে আসে, "বাপরে, একেবারে মাঝ সমুদ্রে আয়োজন?"
দানার উত্তর দেয়, "হ্যাঁ, ভীষণ কড়া নিরাপত্তা। সব বাইরে থেকে ভাড়া করে আনা রক্ষী, সবার হাতে বন্দুক।"
মহুয়া জিজ্ঞেস করে, "আর কি কি হয়েছিল?"
দানা মিচকি হেসে বলে, "উফফফ মাইরি কি সব মালের আয়োজন, সব বড় বড় মডেল অভিনেত্রী, সবাই উলঙ্গ হয়ে যোনি মেলে এরতার সাথে যৌন সঙ্গমে মত্ত। জানো রিচা কাকলী দিব্যা বৈশাখী সুমনা আরো কত নামকরা সব অভিনেত্রী আর মডেল এসেছিল। বুঝলে এরা সবাই আসলে টাকা চেনে, শরীর নস্বর, টাকাই আসল।"
মহুয়া কপট অভিমান দেখিয়ে বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ ওই উলঙ্গ অভিনেত্রী গুলোকে দেখো আর আমার বুকে শক্তিশেল বিঁধিয়ে দাও। মরে গেলে শান্তি পাও তাই না।"
দানা ওর কোমর বেশ জোরে জড়িয়ে ধরে আদর করে বলে, "সামনে শত উলঙ্গ অপ্সরা আসলেও তোমার কথা কি আর ভুলতে পারি পাপড়ি? তুমি মিষ্টি, তুমি অনন্যা, তুমি যে বুকের মধ্যে বাস করো।"
মহুয়া ওর মুখের মধ্যে রুটির টুকরো ঢুকিয়ে দিয়ে মৃদু ঝাঁঝিয়ে বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ অনেক প্রেম দেখান হয়েছে। এইবারে সত্যি করে বলো তো, আজ রাতে কার কার সাথে সহবাস করলে?" চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "একদম সত্যি বলবে।"
দানা রুটি চিবোতে চিবোতে বলে, "কি করব বল, ওইখানে যদি শুধু মদ নিয়ে বসে থাকতাম তাহলে সবার নজরে পড়ে যেতাম।"
মহুয়া ধমকে ওঠে, "কার সাথে করলে? কে কে ছিল।"
দানা ঢোঁক গিলে বলে, "রিচা আর দিব্যা।"
মহুয়া তিতিবিরক্ত হয়ে কোল থেকে উঠে পড়তে উদ্যত হয় কিন্তু দানার কঠিন বাহুপাশ কাটিয়ে ওঠা ওর পক্ষে সম্ভব নয়। যদিও শরীর বলে কোল থেকে উঠে পড়ো, কিন্তু মন কি আর চায় প্রেমিকের কোল থেকে উঠতে। এক হাতে দানার গলা জড়িয়ে কোমর উঠাতে চেষ্টা করে আর দানা আরো জোরে ওকে ধরে কোলে বসিয়ে দেয়।
মহুয়া ওকে জিজ্ঞেস করে, "সিমোন নিশ্চয় তোমাকে চিনে ফেলেছে?"
দানা উত্তর দেয়, "হতে পারেন তবে কঙ্কনাকে শাসিয়ে এসেছি।"
মহুয়া ওকে প্রশ্ন করে, "এরপরে কি করতে চলেছ?"
দানা উত্তর দেয়, "আগে নয়নাকে সাজা দিতে হবে তারপরে সিমোন। তবে এর মধ্যে বিশাল কিন্তু আছে।"
এইবলে দানা নিজের পরিকল্পনা মহুয়াকে জানায়। কঙ্কনাকে ব্যাবহার করে নয়নার বিরুদ্ধে সিমোনকে দাঁড় করাতে হবে। দুই শত্রু একে ওপরে বিরুদ্ধে দাঁড়ালে এক জন শেষ হয়ে যাবে, আর দ্বিতীয় জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেবে। তবে কঙ্কনা আর নাসরিনকে নিজে হাতে শেষ করতে চায় না, চায় কোন ফাঁদে পড়ে ওরা শেষ হয়ে যাক।
সকালে ঘুম ভাঙ্গে ছোট্ট রুহির আলতো চুমুতে, "ডাডা আমি স্তুলে যাবো না।"
ঘুম জড়ানো গলায় মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় শুইয়ে বলে, "কেন মা, কেন যাবি না?"
রুহি ওর গলা আরও কষে জড়িয়ে ধরে বলে, "তুমি চলো আমি যাবো।"
মহুয়া ঘরে এসে দেখে, মেয়ে আর বাপে কোলাকুলি করে গল্পে মেতেছে। রুহিকে উঠিয়ে দিয়ে বলে, "কি হলো, কলেজে যেতে হবে না?"
রুহি মাথা নাড়ায়, "না, দাবো না।"
দানাকে ঝাঁঝিয়ে ওঠে মহুয়া, "ওঠ তো, আর মেয়েকে তৈরি করো।"
দানা মাথা চুলকে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে, "যাঃ বাঃবা আমি কিছুই করলাম না আর আমি তোর জন্য বকা খেয়ে গেলাম।"
রুহি খিলখিল করে হেসে ফেলে। মাম্মা আর ডাডা যখন ঝগড়া করে তখন বেশ উপভোগ করে রুহি। বিশেষ করে মাম্মা যখন ডাডাকে মাঝে মাঝে আদর করে চড় চাপাটি দেয় তখন রুহির বেশ মজা লাগে। তিরিং তিরিং করে লাফিয়ে নেচে বলে, "বেশ হয়েছে বেশ হয়েছে।"
রুহিকে কলেজে ছেড়ে দিয়ে আগের দিনের মতন মহুয়া কলেজে বসে থাকে, আর পিন্টু গাড়ি নিয়ে গেটের বাইরে। মনার সাথে দানা বেড়িয়ে পড়ে হিঙ্গল গঞ্জের উদ্দেশ্যে। যতদিন না কঙ্কনা ওর কথা মতন কাজ করছে, ততদিন নাসরিনকে ছাড়া যাবে না। চাইলে ওই সমুদ্রে ওদের মেরে ফেলতে পারতো, কিন্তু তাতে সিমোন রাগিণী সবাই জেনে যেত মুখোশের আড়ালে জাহাজে দানাই ছিল। কঙ্কনাকে জ্যান্ত দেখে ওদের সেই সন্দেহ আর হবে না, হাতে কিছু সময় পেয়ে যাবে পরের পরিকল্পনা করার জন্য। কঙ্কনাকে বলা হয়েছে সিমোনকে কি কি বলতে হবে, কিন্তু কি ভাবে নয়নার ভাইকে অপহরন করবে সেটাই এখন ঠিক করে ওঠা হয়নি। এটাও জানা যায়নি, সিমোন মোহন ওর বিরুদ্ধে কি ষড়যন্ত্র করছে। সেটা অবশ্য কঙ্কনার দ্বারা জানা সম্ভবপর নয়, কারন কোষাধ্যক্ষ পদ চলে যাওয়ার পরে নিশ্চয় কঙ্কনা আর সিমোনের সম্পর্ক অনেকটা আদায় কাঁচকলায় পরিনত হয়েছে।
নাসরিনের জন্য জামা কাপড় কিনে নেয়। হিঙ্গলগঞ্জে গিয়ে মাছ ধরার নৌকায় উঠে নাসরিনের সাথে দেখা করে। নিচের একটা ছোট ঘরের মধ্যে নাসরিনকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। দরজার বাইরে তালা মারা, বাইরে আকরাম আর নাসির বসে। পালা করে গত রাতে নাড়ু, বলাই শক্তি এরা ছিল। দানা ওদের নির্দেশ দেয় যেন কোনোভাবে নাসরিনকে পালাতে না দেওয়া হয়, আর যেন ওর সাথে কোন রকমের অপব্যাবহার না করে।
ছেলে গুলো হেসে ওকে বলে, "মাইরি এত ডবকা সোমত্ত মাগীকে এইভাবে আমাদের কাছে ছেড়ে যাচ্ছিসন আর খালি বাঁড়া ধরে বসে থাকব সেটা হয় কি করে!"
দানা হেসে বলে, "এখন নয়, আগে কাজ হয়ে যাক তারপরে না হয় সবাই মিলে ওকে ভালো করে চুদিস।"
********* পর্ব পনেরো সমাপ্ত **********
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,994 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
ষোল
সাপের কোঠর (#০১)
দুপুর নাগাদ একবার কঙ্কনার হোটেলে গিয়ে ওর সাথে দেখা করে ওকে আবার সব কথা মনে করিয়ে দেয়। ওর হাতে এক সপ্তাহ সময়, এর মধ্যে কাজ না হলে আগে নাসরিনকে খুন করবে, তারপরে কঙ্কনাকে খুন করবে। কঙ্কনা জানে, যে পথেই পা দেবে, সেই পথে মৃত্যু অবশ্যাম্ভাবি। সিমোন রমলা সবার নজর বাঁচিয়ে এই শহরে এসেছিল ওই ক্লাবের যৌন সমাবেশে যোগদান করবে বলে। স্বপ্নেও ভাবেনি যে এইখানে এসে দানার সাথে দেখা হয়ে যাবে, আর ওদের অদৃষ্টে এই অঘটন ঘটে যাবে। কঙ্কনা ওকে জানায়, নাসরিনের সাথে কথা না বলতে পেরে ওর স্বামী আমজাদ বেশ চিন্তিত। দানা শাসিয়ে দেয়, সত্যি কথা জানালে ওর কপালে মৃত্যু আছে। কঙ্কনা জানায় বিকেলেই সিমোনকে ফোন করে দেখা করার কথা জানাবে।
প্রতিদিন বিকেলে একবার করে কঙ্কনার সাথে দেখা করে জেনে নেয় সিমোনের সাথে কথাবার্তা কতদুর এগিয়েছে। কঙ্কনা জানায়, সিমোন অতীব চটুল ধূর্ত মহিলা, ওকে অত সহজে বাগে ফেলা সম্ভব নয়। তবে নয়নার সম্বন্ধে সিমোন বেশ উৎসুক। কঙ্কনা জানায়, সিমোন নাকি একবার নয়নাকে ফোন করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু নয়না ওর ফোন উঠায়নি, তারপর থেকে সিমোন খুব ক্ষেপে যায় নয়নার ওপরে। ওদের সুহৃদ বন্ধু বিমান চন্দের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নয়নার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে প্রস্তুত। সেইসাথে যখন জানতে পারে যে দানা এর সাথে জড়িত, তখন পুরানো কথা ভুলে গিয়ে কঙ্কনার সাথে হাত মেলায় সিমোন। কঙ্কনা জানায়, ইতিমধ্যে সিমোনের কানে ওর পরিকল্পনার খবর তুলে দিয়েছে। এই খবর পেয়ে দানা মনে মনে খুব খুশি। এক সময়ে এই নয়না বিমানের সাথে এবং সিমোন মোহনের সাথে চক্রান্ত করে ওর মেয়েকে অপহরন করার ষড়যন্ত্র তৈরি করেছিল। এইবারে সবাই সবার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে গেছে। সবাইকে আরো একবার এক জায়গায় করতে পারলে জতুগৃহ দাহ করা যাবে।
দিন চারেক পরে কঙ্কনা জানায় যে সিমোন নাকি নাসরিনের সাথেও দেখা করতে চেয়েছে। সিমোন জানে একা কঙ্কনা ওর সুহৃদ বান্ধবী নাসরিন ছাড়া কোথাও বের হয় না। এই কয়দিনে এক কঙ্কনাকে দেখে ওর মনে সন্দেহ হয়, হয়ত এ দুই জনে ওর বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র করছে তাই ওদের একসাথে দেখা করতে চায়। দানা কিছুক্ষণ ভেবে বলে এক রাতের জন্য নাসরিনকে ওর হোটেলে ছেড়ে যাবে, সেই সময়ে যেন সিমোনকে হোটেলে ডেকে দেখা করিয়ে দেয়।
কথা মতন নাসরিনকে পঞ্চম রাতে হোটেলে ছেড়ে দেয় দানা। তবে সারা রাত হোটেলের বাইরে গাড়ির মধ্যে বসে পাহারা দেয়। সিমোনে নিশ্চয় ওদের সাথে দেখা করতে আসবে।
একঘণ্টা কেটে যায়, বারেবারে মহুয়া ফোন করে খবরা খবর জানতে চায়। দানা জানায়, কোন সন্দেহজনক লোকের সন্ধান তখন পর্যন্ত পায়নি। রাত বেড়ে ওঠে, কিন্তু সিমোনের গাড়ি অথবা মোহনের গাড়ির দেখা পাওয়া যায় না। চরম উৎকণ্ঠায় সারা রাত কেটে যায়, কিন্তু সিমোন ওদের সাথে দেখা করতে আসেনা। দানার মনে তখন সন্দেহ জাগে, কঙ্কনা আর নাসরিন কি তাহলে ওকে ভুলিয়ে আবার পলায়ন করেছে। সেই চিন্তা মাথায় ঢুকতেই দানার গায়ের রক্ত ফুটতে শুরু করে দেয়। হাতের কাছে পেয়েও ওদের ওপরে নিজের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়া হল না। চেয়েছিল এক আর ফল হল আরেক।
সকাল হয়ে যায়, একবার ভাবে হোটেলের কামরায় গিয়ে ওদের সাথে দেখা করবে। সত্যি কি ওরা পালিয়েছে? সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে মনাকে সঙ্গে নিয়ে লবিতে ঢোকে দানা। রিসেপশনিস্টকে ওদের কামরার নাম্বার দিয়ে বলে ওদের সাথে দেখা করতে এসেছে। রিসেপশনিস্ট ফোন করে কঙ্কনার কামরায়, কিন্তু ফোন বারেবারে বেজে যায়। রিসেপশনিস্ট জানায়, গতরাতে অথবা সকাল পর্যন্ত ওদের দুইজনের কেউই হোটেল ছেড়ে যায়নি। বেশ কয়েকবার ফোন করার পরেও যখন কেউ ফোন উঠাল না তখন রিসেপশনিস্টের সাথে দানার মনে সন্দেহ জাগে। কি হলো কঙ্কনা আর নাসরিনের? একরাতের মধ্যে এই সদর দরজা দিয়ে কি করে উধাও হতে পারে দুই মহিলা। নামকরা পাঁচতারা হোটেল, এদের নিরাপত্তা রক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়ে চেক আউট না করেই বেড়িয়ে যাওয়া কোন প্রকারে সম্ভব নয়।
হোটেলের ম্যানেজার চলে আসে ততক্ষণে। রমলার পত্রিকার নাম নিয়ে জানায় ওই পত্রিকার তরফ থেকে ওদের সাথে দেখা করতে এসেছে কিন্তু অনেকবার ফোন করার পরেও কারুর সারা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত হাউস্কিপিং স্টাফ কে সাথে নিয়ে ম্যানেজার আর দানা ওদের কামরায় যায়।
হোটেলের ম্যানেজার প্রথমে কলিং বেল বাজায়, ওইপাশ থেকে কোন সারা শব্দের আওয়াজ না পেয়ে দানা আর বাকিরা সবাই এক ওপরের মুখ চাওয়াচায়ি করে। হাউস্কিপিং স্টাফের লোক দরজার হাতলে হাত রাখতেই দরজা খুলে যায়। সেই দেখে সবাই স্থম্ভিত হয়ে যায়। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই ওদের নজরে পড়ে বিছানার ওপরে কঙ্কনার রক্তাক্ত দেহ। গলায় একটা ছুরির দাগ, শ্বাসনালী কেটে দেওয়া হয়েছে। পাশের সোফার ওপরে নাসরিনের মৃতদেহ, ওর শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলা হয়েছে। দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, বুঝতে দেরি হয় না এর পেছনে সিমোনের হাত। দুইজনকে একসাথে খুন করবে বলেই নাসরিনকে ডেকে পাঠিয়েছিল। এইকাজ ভাড়াটে গুন্ডার দ্বারা করানো হয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গে ম্যানেজার পুলিসে খবর দেয়। আধা ঘন্টার মধ্যেই হোটেল পুলিসে পুলিসে ছয়লাপ হয়ে যায়। নামকরা পাঁচ তারা হোটেল, এই খবর কোন রকমে একবার যদি প্রকাশ হয়ে যায় তাহলে হোটেলের নাম খারাপ হয়ে যাবে। ম্যানেজারের মাথায় হাত, এইদিকে পুলিস ততক্ষণে প্রাথমিক তদন্ত সেরে ফেলে। ওদের সঙ্গের কাগজপত্র ঘেঁটে ওদের পরিচয় উদ্ধার করে। দানা এর মাঝে ওইখান থেকে চুপিচুপি সরে যায়। একবার যদি পুলিসের সন্দেহ ওর ওপরে পড়ে তাহলে মুশকিল। ওর কাছে কোন প্রমান নেই যে এর পেছনে সিমোন খৈতানের হাত, কিন্তু ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে উল্টে পুলিসের সন্দেহ ওর ওপরে বেশি করে পড়বে।
বাইরে বেরিয়ে এসেই মহুয়াকে ফোন করে জানাতেই মহুয়া চমকে ওঠে। আর ওইখানে দাঁড়ায় না, সোজা বাড়ি ফিরে যায় দানা। বাড়িতে ফিরে দানা বিস্তারে মহুয়ায়কে সব ঘটনা জানায়। এই সময়ে ওইখানে থাকলে পুলিসের নজরে পড়ে যেত তাই গোলমালের মধ্যে কোনোরকমে গা ঢাকা দিয়ে ওইখান থেকে চলে এসেছে। তবে ওর দৃঢ় বিশ্বাস এর পেছনে সিমোনের হাত। রমলার কাজ এটা হতেই পারে না, কারন রমলা জানেনা যে নাসরিন আর কঙ্কনা এই শহরে এসেছে।
এমন সময়ে দানার ফোন বেজে ওঠে। ফোন তুলেই দানা স্তম্ভিত হয়ে যায়, সিমোন কি মনে করে ফোন করেছে?
মহুয়ার ফিসফিস করে ওকে বলে, "ফোন তুলে দেখো কি বলতে চায়। এইরাতেই কঙ্কনা আর নাসরিনের খুন, আর তারপরেই তোমাকে ফোন। ওদের মতিগতি সুবিধের বলে মনে হচ্ছে না জিত। দেখবে ঠিক তোমাকে দেখা করার জন্য ডাকবে। সাবধান জিত আমার কিন্তু মন বড় ছটফট করছে।"
সেটা অবশ্য দানারও করছে। এরপরে সিমোনে কি পদক্ষেপ নেবে সেটা জানাই গেল না। হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি শান্ত করে ফোন তুলে সিমোনকে জিজ্ঞেস করে, "কেমন আছেন মিসেস খৈতান?"
সিমোন মৃদু হেসে বলে, "আমি আর কেমন থাকতে পারি মিস্টার মন্ডল। ভালো মন্দ মিলে এক রকম আছি।"
হঠাৎ ফোন করার কারন জিজ্ঞেস করে দানা, "হঠাৎ কি মনে করে ফোন করা হল, মিসেস খৈতান?"
সিমোন হেসে উত্তর দেয়, "অত আদিখ্যেতা করে ফোনে বারেবারে মিসেস খৈতান বলে ডাকতে হবে না দানা। আমি আজকে বাগান বাড়িতে। এখন একাই আছি, এই একটু বিশ্রাম আর....."
ওই কথা শুনে ক্ষণিকের জন্য দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। বুঝতে দেরি লাগে না অতীব ধূর্ত হিংস্র নারী ওকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টায় আছে। মহুয়া কি করে এতসব বুঝতে পারে আগে থেকে? ওর নাক কি কুকুর? দানাও দেখতে চায় কতদুর এরা নাচতে পারে। বাগান বাড়িতে একা মানেই সিমোন আবার নতুন কোন ছেলেকে পেয়েছে নিজের কাম পিপাসা চরিতার্থ করার জন্য। এহেন কামুক নারীরা কখনই এক পুরুষে সন্তুষ্ট হতে পারে না, রোজ রাতে নতুন দামাল ষাঁড় চাই বিছানায়।
দানা হেসে সিমোনকে বলে, "আচ্ছা তাই নাকি? নতুন কাকে পেলে?"
সিমোন মিচকি হেসে উত্তর দেয়, "একা মানে সম্পূর্ণ একা দানা। (কণ্ঠে মধু ঢেলে) কিছু না এমনি, খুব একা লাগছিল তাই ফোন করেছিলাম।"
মহুয়া কটমট করে দানার দিকে তাকায়, এই মহিলা কত রঙ্গ না জানে। মহুয়া রাগে ওই দিকে ফুঁসতে শুরু করে দেয়। পারলে ফোনের মধ্যে ঢুকে সিমোনকে গলা টিপে হত্যা করে।
দানা ওকে আরো খেলিয়ে জিজ্ঞেস করে, "কেন সিমোন, যাওয়ার আগে কঙ্কনা নতুন কারুর ফোন নাম্বার দিয়ে যায়নি তোমাকে। কি ব্যাপারে ফোন করেছো বললে না তো?"
অতীব ছলনাময়ী সিমোন হেসে বলে, "কি যে বলো না তুমি। কঙ্কনা শহর ছেড়ে গেছে সে প্রায় এক বছর হয়ে গেল। (সঙ্গে সঙ্গে সিমোন উৎসুক হয়ে ওঠে) তুমি কি করে জানলে যে কঙ্কনা এই শহরে নেই?"
দানাও বাঁকা হেসে জবাব দেয়, "আমি কেন জানতে পারি না সিমোন? ফোন করেছিলাম, ফোন পাইনি, বাড়িতে গেছিলাম সেখানেও পাইনি।"
সিমোনের গলা কিঞ্চিত কেঁপে ওঠে, "ওর বাড়ি গিয়েছিলে মানে? তুমি ওর বাড়ি চেন?"
কিছুতেই বুঝতে দিতে চায় না যে আসলে কঙ্কনার সাথে ওর কোনোদিন দেখা হয়েছিল।
না, কঙ্কনার আসল বাড়ি চেনে না দানা। যেখানে প্রতিবার ওকে নিয়ে যেত সেটা অন্য কারুর বাড়ি আর সেই মালিক বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে বিদেশ চলে গেছে তাই সেই রহস্যের আর উত্তর পেল না দানা।
দানা এতক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছিল, কিন্তু সিমোনের চাপা কণ্ঠ স্বর শুনে দাঁড়িয়ে পরে জিজ্ঞেস করে, "সত্যি করে বলো সিমোন, কঙ্কনা কোথায়?"
পাল্টা হেসে জবাব দেয় সিমোন, "আগে দেখা কর তারপরে জানাবো।"
দেখা ওকে করতেই হবে। কঙ্কনা আর নাসরিনের মৃত্যুর পরে, কিছুতেই অনুধাবন করা যাচ্ছে না সিমোনের মাথায় কি চলছে। সেটা জানার জন্য ওর সাথে দেখা করা এক মাত্র পথ। ফোনে সেটা সম্ভব নয়, কিন্তু দেখা করলে ভীষণ কিছু একটা হবার আশঙ্কা আছে।
দানা একটু ভেবে চিন্তে ওকে বলে, "দেখো সিমোন, তোমার সম্বন্ধে অনেক কিছুই আমার জানা, সুতরাং যদি ভালোয় ভালোয় কঙ্কনার খবর দাও তাহলে খুব ভালো হয়।"
পাল্টা হেসে সিমোন জবাব দেয়, "সেটা আমিও জানি দানা। তবে কি জানো সব কিছু ফোনে বলা যায় না। আমি তোমার জন্য আমাদের পুরানো জায়গায় অপেক্ষা করছি। কঙ্কনার খবর জানতে হলে দেখা করো।"
দানা বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে মহুয়ার দিকে তাকায়। মহুয়া বুঝে উঠতে পারে না, দেখা করা ঠিক হবে না না দেখা করা ভালো। সিমোন যেমন ধূর্ত ছলনাময়ী নারী, দানাকে একা পেয়ে যদি প্রাণে মারতে চায় তাহলে মহুয়া সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে। আগে হলে দানার ভয় ডর থাকতো না, কিন্তু এখন পাশে প্রেয়সী আর কচি রুহি।
রুহিকে কোলের মধ্যে শক্ত করে ধরে দানার দিকে তাকিয়ে থাকে মহুয়া। কি করবে দানা? একা একা যাবে নাকি ওই সাপের গর্তে? নয়নার মতন এর ছোবল বিষাক্ত, চুপচাপ পড়ে থাকবে, তারপরে হঠাৎ করে ছোবল মারবে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে দানা উত্তর দেয়, "ঠিক আছে, আমি দেখা করবো।"
মহুয়ার চোখ ফেটে জল চলে আসে।
সিমোন মৃদু হেসে বলে, "সন্ধ্যের পরে আমাদের সেই পুরানো জায়গায় চলে এসো।"
ফোন ছাড়তেই মহুয়া ওকে ভয়ার্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, "কি করতে চলেছ?"
দানা চোয়াল চেপে জিজ্ঞেস করে, "কি চাও তুমি। সারা জীবন গর্তে ঢুকে বেঁচে থাকি? একদিকে নয়না, একদিকে মোহন সিমোন। এরা বেঁচে থাকলে আমাদের জীবন দুর্বিষহ করে ছেড়ে দেবে।"
রুহিকে কোলের মধ্যে আঁকড়ে মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, "একটু শান্তি নেই জীবনে। যাচ্ছ যাও একটু সাবধানে যেও।"
সত্যি, একটার পর একটা ঝামেলা ওদের জীবনে লেগেই আছে। শুরু হয়েছিল দানার সাথে কিন্তু সেটা ছড়িয়ে পড়ল মহুয়া আর রুহির জীবনে। এখন পর্যন্ত মহুয়াকে সত্যি কথাটা বলতে পারেনি, কি কারনে কঙ্কনা আর নাসরিন ওকে খুন করতে চেয়েছিল।
চোখের জল মুছে দানাকে বলে, "ওইখানে যেতে দিতে একটা শর্তে পারি। তুমি আকরাম নাসির বলাই শক্তি সবাইকে সাথে নিয়ে যাও।"
দানা জানে সবাইকে সাথে নিয়ে গেলে সিমোন মুখ খুলবে না উল্টে অন্য কিছু চাল খেলবে। দানা একাই যাবে ঠিক করে, তবে সাথে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যাবে। রুহি জিজ্ঞেস করাতে সঠিক উত্তর দিতে পারে না দানা। বিমানের বাগান বাড়িতে ঢোকার আগে ওর কাছে বেরিয়ে আসার একটা সুচতুর পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু এইবারে সেই পরিকল্পনা নেই। এক প্রকার সাপের গর্তে মাথা ঢুকাতে চলেছে দানা কিন্তু নিরুপায়। মহুয়া আর রুহিকে বাড়িতে নামিয়ে দেয়। মনা আর পিন্টু বারেবারে ওর সাথে যাওয়ার কথা বলে কিন্তু দানা মানা করে দেয়। ওদের বাড়িতে থাকতে নির্দেশ দেয়, বলে দানার না ফিরে আসা পর্যন্ত যেন মশা মাছি যেন বাড়ির ত্রিসীমানায় না আসে।
সন্ধ্যের পরে একাই গাড়ি নিয়ে সিমোনের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। কোমরের পেছনে একটা পিস্তল দ্বিতীয় পিস্তল পায়ের গোড়ালিতে। যদি ওই বাড়িতে সিমোন ছাড়া আরও লোকজন থাকে, তাহলে দানার বেঁচে ফেরার আশঙ্কা আছে, আর যদি একা থাকে, তাহলে সিমোনেকে ওইখানে পুঁতে রেখে আসবে।
বড় রাস্তা ছেড়ে গ্রামের পথে বাঁক নিতেই দানার বুকের ধুকপুকানির মাত্রা বেড়ে ওঠে, কি হবে কি হবে। গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইলে মহুয়া আর রুহির ছবিটা দেখে। মোবাইল স্ক্রিনে ঠোঁট চেপে চুম্বন দেয় রুহি আর মহুয়াকে। আসন্ন উৎকণ্ঠায় জিব শুকিয়ে গেছে, কিন্তু দমে গেলে চলবে না। বাড়ির সামনে আসতেই দারোয়ান বড় লোহার গেট খুলে দেয়। এতদিনে দানার গাড়ি চিনে গেছে বাগান বাড়ির দারোয়ান। বাড়ির সামনে একটা মোটরসাইকেল আর সিমোনের গাড়ি দাঁড় করানো। মোটর সাইকেল দেখে বুঝতে দেরি হয় না সিমোন একা নয়, সাথে কোন পুরুষ সঙ্গী আছে। গাড়ি থেকে নেমে একটা সিগারেট ধরাতেই একটা ছেলে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে ওকে ভেতরে ডাকে। ছেলেটা দেখতে সুঠাম স্বাস্থ্যবান, বুঝতে দেরি হয় না নিজের কামক্ষুধা মেটানোর জন্য এই ছেলেকে ধরেছে সিমোনে। ছেলেটার ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত, পরনে শুধু মাত্র একটা প্যান্ট। দানা জানিয়ে দেয় সিগারেট শেষ করে ভেতরে আসবে। ছেলেটা জানায়, সিগারেট নিয়ে ভেতরে ঢুকলে কোন অসুবিধে হবে না। সেটা দানার অজানা নয়, এই বাড়ির শয়ন কক্ষে সিমোনের শরীর নিয়ে বহুবার সঙ্গমে মেতেছিল। ছেলেটার চোখ বাঁচিয়ে কোমরের পেছনে হাত দিয়ে পিস্তল দেখে নেয় আর মোবাইলে রেকর্ডের বোতাম টিপে ওদের বার্তালাপ রেকর্ড করার জন্য চালিয়ে দেয়। তারপরে ছেলেটার পেছন পেছন ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে। ছেলেটা ওকে বসার ঘরের সোফায় বসতে বলে বারের দিকে চলে যায়। কি নেবে জিজ্ঞেস করাতে দানা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় কিছু নেবে না। এই বাড়িতে কারুর ওপরে বিশ্বাস নেই, হয়ত মদের সাথে বিষ মিশিয়ে ওকে মেরে ফেলল। ছেলেটা মাথা দুলিয়ে একটা গেলাসে তরল পানীয় ঢেলে শয়ন কক্ষে ঢুকে যায়।
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,994 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
সাপের কোঠর (#০২)
কিছুক্ষণ পরে সিমোন গেলাস হাতে শয়ন কক্ষ থেকে বেড়িয়ে আসে। পরনে শুধু মাত্র একটা সাদা তোয়ালে। বুকের অর্ধেকের বেশি অনাবৃত, শরীর জড়িয়ে শুধু মাত্র পাছা কোন রকমে ঢেকে রাখা। বাকি অঙ্গ বস্ত্রহীন, হয়তো ইচ্ছে করেই দানাকে উত্তেজিত করার জন্য তোয়ালে জড়িয়েছে, কিম্বা সদ্য কামকেলি থেকে উঠে এসছে। তোয়ালে ভেদ করে সুগোল স্তন জোড়ার আকার পরিস্কার ফুটে উঠেছে। কাঁধের দিকে তাকালেই বোঝা যায় ব্রা পরা নেই, তোয়ালে ফুঁড়ে কঠিন স্তন বৃন্ত, দানার দিকে উঁচিয়ে হাতছানি দিয়ে ডাক দেয়। বক্ষ বিভাজনের অধিকাংশ উপচে বেড়িয়ে। গায়ের সাথে এক প্রকার লেপটে রয়েছে তোয়ালে। হাঁটার ফলে তোয়ালে মাঝে মাঝে সরে যায় ঊরুসন্ধি থেকে আর নরম সাদা প্যান্টি ঢাকা ফোলা যোনি দেশ দেখা যায়। দুই বাহু, দুই কাঁধ সম্পূর্ণ অনাবৃত, অবশ্য উপরিবক্ষে কামকেলির সেই চরম ছাপ নেই। মসৃণ ফর্সা পুরুষ্টু ঊরু যুগলের ওপরে ঘরের আলো পিছলে যায়। অবিন্যাস্ত চুল মাথার ওপরে একটা ক্লিপ দিয়ে আটকানো, তাও বেশ কিছুটা ওর গোল ফর্সা মুখের ওপরে এসে মুখ মন্ডল আরো লাস্যময়ী করে তুলেছে। ওর দিকে তাকিয়ে এক কামুকী হাসি দিয়ে ওর পাশের সোফার ওপরে বসে পড়ে সিমোনে। ছেলেটা কিছুক্ষণ পরে ঘর থেকে জামা পরে বেরিয়ে আসে।
সিমোনে ওর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলে, "ওকে সন্তু, তুমি যেতে পারো। আবার পরে ডাক দেব।"
সন্তু বেড়িয়ে যেতেই দানার দিকে তাকিয়ে হেসে জিজ্ঞেস করে, "কি হলো, এতদিন পরে সময় হলো আসার?"
দানা চোয়াল চেপে অল্প হেসে বলে, "দেখা করতে চাইলে দেখা করা যায় সিমোন!"
সিমোন ওর চোখে চোখ রেখে পা ভাঁজ করে সোফার ওপরে তুলে দেয়। পা ভাঁজ করার ফলে সিমোনের সুগোল দুই নরম পাছা সম্পূর্ণ দানার চোখের সামনে অনাবৃত হয়ে যায়। পাছার খাঁজের মাঝ দিয়ে ভিজে সাদা এক চিলতে কাপড়ে ঢাকা ফোলা নরম সদ্য মন্থিত যোনি দেখা পরে। যোনি রসে ভিজে সাদা প্যান্টি ফোলা নরম যোনির সাথে লেপটে যোনির আকার অবয়াব পরিস্ফুটিত করে তোলে। কোমরের নিচের প্রায় সবকিছু অনাবৃত দেখে দানার লিঙ্গের ছটফটানি বেড়ে ওঠে। কিন্তু দানা নিজের উত্তেজনা আয়ত্তে রেখে সিমোনের তীব্র যৌন আবেদনময় শরীর গোগ্রাসে গিলে নেয়। বাড়িতে কি শুধু এই ছেলেটা ছিল না আরো কেউ আছে? সঠিক জানা নেই। দানার ক্ষুধার্ত দৃষ্টি দেখে সিমোনের বুকের রক্ত কামোত্তেজনায় চঞ্চল হয়ে ওঠে। গেলাসে জিব ঠেকিয়ে চোখে কামুকী হাসি দিয়ে ইশারা করে, কি এত জুলুজুলু করে দেখছে? একসময়ে বিনা বাধায় এই শরীর ওর হাতের মধ্যে চলে যেত। ইচ্ছে মতন দানার ভারী পেশী বহুল শরীরের নীচে পরে থেকে কামক্রীড়াতে মেতে উঠতো।
সিমোন ওর দিকে বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, "হাতে এখন সময় আছে, বুকে তৃষ্ণা এখন বাকি আছে।"
দানা মাথা নাড়িয়ে হেসে বলে, "তুমি আর শুধরাবে না তাই না সিমোন। কি আলোচনা করতে চাও?"
সিমোন হাসিতে ফেটে পড়ে, হাসির চোটে স্তন জোড়া ভীষণ ভাবে দুলে ওঠে, "আমার খিদে এখুনি কেন মরতে যাবে দানা।" সঙ্গে সঙ্গে হাসি থামিয়ে বলে, "নয়নার মাথা আমার চাই, তবেই আমার খিদে মরবে, দানা।"
খিল খিল হাসির পরেই এহেন থমথমে কণ্ঠ শুনে দানা তীক্ষ্ণ চোখে সিমোনের চোখের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। মদের গেলাসে ছোট চুমুক দিয়ে দানাকে বলে, "বিমানের মৃত্যুর পেছনে আসলে নয়না দায়ী। সেটা তুমিও ভালো ভাবে জানো আমিও জানি। বিমান ওকে যে বাড়িটা দিয়েছে সেটা আমার ছিল। মোহনকে বলে ওই আড়াই কোটি টাকার বাড়ি নয়নাকে দিয়ে দিয়েছে। সেটা আমি কি করে সহ্য করি বলো? বিমানের মৃত্যুর পরে মোহন খুব ভেঙ্গে পড়েছে। কতবার বিমানকে বললাম, আরে বাবা, আজকাল বাজারে কত নতুন কচি মাগী এসেছে। রিচা দত্ত, সুনয়না ঘোষ, মল্লিকা সেন, আরো কত কচি উঠতি মেয়ে, এদের কাউকে পছন্দ করে মাগী বানিয়ে রাখুক। তা না, বাপ্পা নস্কর যেহেতু ওর গুদ মেরেছে, বিমান সেই গুদ চায়। কি কারন? না ভবিষ্যতে নয়নাকে ব্যাবহার করে বাপ্পাকে সরাবে। আর কি দুর্ভাগ্য দেখো, নিজেই....."
বলতে বলতে থেমে গেল সিমোনে। বিমানের মৃত্যুতে সত্যি কি সিমোন আহত, না ওর আড়াই কোটি বাড়ি নয়নার নামে হয়ে গেছে সেই জন্য আহত?
একটু থেমে দানাকে বলে, "কেন তুমি নয়নাকে আগলে রেখেছ দানা সেটাই বুঝতে পারছি না। তোমার সাথে আমাদের ব্যাবসায়িক সম্পর্ক, (চোখ টিপে কামুকী হাসি দিয়ে বলে) তোমার সাথে আমার সম্পর্ক মহুয়া আর নয়নার আগের তাই না? আমাদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি করে কি লাভ বলো?"
মহুয়ার সাথে সম্পর্ক সিমোনের আগের সেটা সিমোন জানে না। মনে মনে হেসে ফেলে দানা, মহুয়া আর রুহি ওর জীবন, ওর পৃথিবী ওর সব কিছু। সামান্য কয়েক কোটি টাকা উপার্জন করার জন্য দানা ব্যবসায় নামেনি, ওর আসল উদ্দেশ্য ছিল নিজের খুনের প্রতিশোধ নেওয়া, সেই করত করতে অনেকে জালে জড়িয়ে পরে আর এক এক করে সবার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়। নয়নাকে এই খৈতানেরা আক্রমন করুক সেটা দানা মনেপ্রানে চায়।
বেশ ভাবনাচিন্তা করার মেকি ভাব দেখিয়ে কিছু পরে দানা ওকে বলে, "দেখো সিমোন, নয়না এখন প্রচণ্ড সতর্ক হয়ে গেছে। সাদা পোশাকের পুলিস ওর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মোতায়ন করা হয়েছে। আমাদের সাথে আর বিশেষ সম্পর্ক নেই। শুধু শুধু আমার কথায় নয়না বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসবে সেটা নয়।"
সিমোন সোফার ওপরে একটু নড়েচড়ে বসে, যার ফলে তোয়ালে কোমরের প্রায় কাছে চলে আসে। ঊরুসন্ধি পর্যন্ত সম্পূর্ণ পেলব মসৃণ ঊরু জোড়া উন্মোচিত হয়ে যায়। দানার চোখ সিমোনের ঊরুসন্ধির দিকে চলে যায়। সিমোনের শরীরের আনাচে কানাচে দানার লোলুপ দৃষ্টি ঘোরাফেরা করে। সেই দেখে বাঁকা হেসে সিমোন ওকে বলে, "ইসস দানা, কেন মিথ্যে বলছ। তোমার মিসেস মাঝে মাঝেই ওর বাড়িতে যায় সেই খবর আমার কাছে আছে। তুমি চাইলে সব কিছু সম্ভব দানা। কিছু একটা করো।"
ওর বাড়ির ওপরে সিমোন যে নজর রাখবে সেটা আগে থেকেই অনুধাবন করেছিল তাই বাঁকা হাসি দিয়ে সিমোনকে বলে, "তুমি আর নয়না এক ধাতুর তৈরি মহিলা। কে কখন কাকে কি ভাবে মৃত্যু পথযাত্রী বানিয়ে দেবে তার নেই ঠিক।"
অনাবৃত উপরি বক্ষে একটু হাত বুলিয়ে, স্তন জোড়া আলতো চেপে সিমোনে কামুকী দিয়ে হিসহিস কণ্ঠে ওকে বলে, "এই বুকে এতদিনে এই দেখলে, দানা?"
অতীব যৌন উদ্রেক কারি ভঙ্গিমা দেখে দানা হেসে ফেলে, "অনেক কিছু দেখেছি সিমোন, আর অনেক কিছু বুঝেছি।"
সিমোন চোখ বেঁকিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা! কি কি দেখেছো?"
পায়ের ওপরে পা বদল করে বসে যায় সিমোন। তোয়ালে কোমর পর্যন্ত উঠে যায়, সামনের ভাঁজ খুলে যায়, হয়ত ইচ্ছে করেই এমন করেছে সিমোন। তোয়ালের দিকে খেয়াল নেই সিমোনের, অথবা দানাকে কামোত্তেজিত করার জন্য ইচ্ছে করেই প্যান্টি ঢাকা ঊরুসন্ধি ওর লোলুপ চোখের সামনে মেলে ধরেছে। সাদা ভিজে প্যান্টি ঢাকা ফোলা নরম যোনি দেশ একটু খানি লুকোচুরি খেলে ওর চোখের সামনে মেলে যায়। যোনি চেরার ওপরে চেপে বসে প্যান্টি। পুরুষ্টু ফর্সা ঊরু যুগলের মাঝে মন্মোহক নারী অঙ্গ দেখে দানার বুকের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে।
হঠাৎ মাথার চুল একটু ঝাঁকিয়ে সোফা ছেড়ে উঠে পড়ে সিমোনে। বারের দিকে ধীর পায়ে পাছা দুলিয়ে হেঁটে যায়। নিজের কামোত্তেজনা দাঁতে দাঁত পিষে সংবরণ করে সিমোনের চূড়ান্ত লাস্যময়ী শরীর দুই চোখে গোগ্রাসে গিলে ফেলে। প্যান্টের ভেতরে ওর লিঙ্গ দামাল হয়ে উঠেছে, মদ ছাড়াই সিমোনের হাসি আর চূড়ান্ত লাস্যময়ী দেহ দেখে দানার নেশা চড়ে গেছে।
বারে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে ওর দিকে তাকিয়ে কামুকী হাসি দিয়ে বলে, "তোমার জন্য গ্লেনফিডিক হুইস্কি আনিয়েছিলাম মিস্টার মন্ডল।"
সামনে ঝুঁকে যাওয়ার ফলে তোয়ালের নীচ থেকে সম্পূর্ণ ফর্সা সুগোল নরম পাছা জোড়া অনাবৃত হয়ে যায় দানার লোলুপ চোখের সামনে। পাছা দুলিয়ে দানাকে চরম কামোত্তেজিত করে তোলে সিমোন। দানাও শেষ পর্যন্ত সিমোনের সাথে ছলনা আর শরীরের খেলায় নেমে পড়ে। কঙ্কনা আর নাসরিনের খবর ওর চাই, যে করে হোক চাই। আর তার জন্য যদি সিমোনের সাথে ওকে উদ্দাম সঙ্গম করতে হয় তাও রাজি। সোফা ছেড়ে উঠে, সিমোনের পেছনে দাঁড়িয়ে ওর পিঠের ওপরে হাত রাখে দানা। দানার হাতের ছোঁয়া পেয়ে সিমোন ওর দিকে সরে আসে।
দানা একবারের জন্য সিমোনের মুখ থেকে রাতের ঘটনার সম্বন্ধে শুনতে চায়। ওর পকেটের মোবাইল তখন পর্যন্ত ওদের সংলাপ রেকর্ড করে চলেছে। দানার এক হাত নেমে যায় সিমোনের কোমরে। কোমরে হাত পেঁচিয়ে কাছে টেনে কানেকানে বলে, "কঙ্কনার কি খবর, সিমোন?"
সিমোনে বাঁকা হাসি দিয়ে দানার বুকের ওপরে নিজের স্তন চেপে ধরে বলে, "এখনো ওই কঙ্কনা আর নাসরিন কে নিয়ে পরে আছো কেন? ওরা এইখানে নেই, এইখানে আমি তোমার সামনে।" একটু থেমে চোরা হাসি দিয়ে বলে, "ঠিক কত জনের সাথে শুয়েছো তুমি?"
সিমোনের গোলাপি ঠোঁটের বাঁকা হাসি দানাকে তাতিয়ে দেয়। তোয়ালের তলায় হাত গলিয়ে, সিমোনের নরম পাছা জোড়া থাবার মধ্যে আলতো পিষে ধরে। কঠিন তপ্ত হাতের পরশে সিমোনের দেহ কেঁপে ওঠে, স্তন জোড়া চেপে ধরে দানার প্রশস্থ ছাতির ওপরে। প্যান্টের ভেতরে লিঙ্গ ছটফট করছে, কঠিন হয়ে দাঁড়িয়ে সিমোনের নরম তলপেটের ওপরে চেপে বসে যায়। নিজের দিকে টেনে ওর তলপেটে লিঙ্গ ঘষে সিমোনকে আর নিজেকে উত্তেজিত করে তোলে দানা। হাতের কাছে এত নরম কোমল শরীর পেয়ে নিজেকে আর আয়ত্তে রাখতে পারে না। সিমোন মদের গেলাস বারের টেবিলে রেখে দানার গলা দুই হাতে পেঁচিয়ে ওর চোখের দিকে চূড়ান্ত কামনা ভরা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। প্যান্টির ওপর দিয়ে নরম সুগোল পাছার ওপরে হাত বুলিয়ে, আর তলপেটে লিঙ্গ ঘষে শরীরের রক্ত গরম হয়ে যায়। ওর মুখের ওপরে সিমোনের তপ্ত শ্বাসের ঢেউ বয়ে চলে। দুইজনের চোখে নির্বাক অসীম কামক্ষুধা। আধা বোজা চোখে ঠোঁট জোড়া অল্প মেলে দানার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যায় সিমোন।
দানা মাথা নিচু করে ওর চোখের ওপরে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, "কঙ্কনা কোথায় সিমোন?"
সিমোন জিব বের করে আলতো করে ওর ঠোঁট চেতে চাপা ফিসফিস কণ্ঠে বলে, "আগে নয়নার খবর দাও তারপরে আমি কঙ্কনার খবর দেবো। নয়নাকে আমার হাতে তুলে দাও, আর বাকিটা আমার ওপরে ছেড়ে দাও।"
সত্যি কি কঙ্কনা ওর পরিকল্পনা মতন কিছুই সিমোনকে জানায়নি? মাথাটা নামিয়েছিল ওই গোলাপি নরম ঠোঁটে একটা কামড় বসানোর জন্য। কিন্তু চুমুটা খেতে গিয়েও খেল না। মাথা ঝিমঝিম করছে। বিবেক আর বুদ্ধি একসাথে পরস্পরের সাথে যুদ্ধে নেমেছে। শেষ পর্যন্ত কি করবে দানা? "অশ্বথামা হত - ইতি গজ" চাল না দিলে এই ধুরন্ধুর দুই মহিলাকে পরাস্ত করা ওর একার পক্ষে অসম্ভব।
একহাতে সিমোনের সুগোল নরম পাছা জোরে চেপে ধরে, অন্য হাতে কোমর পেঁচিয়ে বাহু বেষ্টনীতে কঠিন ভাবে বেঁধে ওকে বলে, "মাথায় একটা জব্বর পরিকল্পনা আছে। (কিছুক্ষণ থেমে বলে) নয়নার প্রাণ ভোমরা ওর ভাইয়ের মধ্যে লুকিয়ে। তুমি যদি ওর ভাইকে অপহরন করতে পারো তাহলে খুব সহজেই নয়নাকে ফাঁদে ফেলতে পারবে।"
লাস্যময়ী সিমোন ওর বাহুপাশে ছটফট করে নিজেকে আরও বেশি করে দানার সাথে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করে, "কিন্তু ওর ভাইকে কি করে ধরবো? শুনেছি ওর ভাই মন্দ বুদ্ধি, বাড়ি থেকে বের হয় না। নয়না ওর ভাইকে চোখে চোখে রাখে সব সময়ে।"
তোয়ালে প্রায় খুলে যাওয়ার যোগাড়। একহাতে সিমোনের সুগোল নরম পাছার আয়েশ করে চটকে চলেছে, অন্য হাত তোয়ালের ভেতরে ঢুকিয়ে সিমোনের পিঠের ওপরে আদর করে নিজের দিকে টেনে ধরে। প্যান্টের ভেতরে ফুঁসে ওঠা লিঙ্গ, সোজা সিমোনের ঊরুসন্ধির কাছে গিয়ে ধাক্কা মারে আর কঠিন লিঙ্গের পরশে সিমোন বারেবারে নিজের ঊরুসন্ধি দানার ঊরুসন্ধির সাথে পিষে ধরে।
সিমোনের নধর লাস্যময়ী দেহ বেশ করে মর্দন করতে করতে বলে, "হ্যাঁ এটা সত্যি যে নয়না ওর ভাইকে চোখে চোখে রাখে। আমাকে কয়েকদিন সময় দাও। আমি ওর ভাইকে তোমার হাতে তুলে দেবার ব্যাবস্থা করে দেবো। যেদিন তুলে দেব সেইদিন রাতেই তুমি নয়নাকে ফোন করে জানিয়ে দেবে যে ওর ভাই তোমার কবলে। পরেরদিন এই বাড়িতে ডেকে এনে, অথবা যেখানে তোমার খুশি সেখানে ডেকে এনে ওর সাথে বোঝাপড়া করে নিও।"
দানার কঠিন বাহু বেষ্টনীর মাঝে ছটফট করে উঠে কামুকী ধূর্ত হাসি দিয়ে বলে, "দারুন পরিকল্পনা দানা। যেদিন তুমি আমার হাতে ওকে তুলে দেবে সেদিন আমি তোমাকে কঙ্কনার খবর দেব।"
দানার মাথা গরম হয়ে যায় ওই কথা শুনে, সঙ্গে সঙ্গে সিমোনের হাত পেঁচিয়ে ধরে চাপা হুঙ্কার দেয়, "আমার সাথে ছলনা করছ সিমোন? জানো তোমার মরণ কাঠি আমার হাতের মুঠিতে?"
হাত পেঁচিয়ে ধরার ফলে একটু ব্যাথায় সিমোনের ভুরু কুঁচকে যায়, সেই সাথে মরণ কাঠির কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে যায়। কিসের কথা বলতে চায় দানা, "এই দানা, প্লিজ, ছাড়ো লাগছে। আমি তোমাকে বলেছি তো কঙ্কনার খবর দেব। এত জোরে চেপে ধরলে হাড় মাংস এক হয়ে যাবে যে।"
দানা হেসে বাহু বেষ্টনী আলগা করে দেয়। ওর সামনেই একটা গেলাসে মদ ঢেলে ওকে ধরিয়ে দেয় সিমোন। মদে এক চুমুক দিয়ে সিমোনকে জিজ্ঞেস করে, "এইবারে বলো কঙ্কনার খবর।"
সিমোনে বাঁকা ধূর্ত হেসে একটু দূরে সরে গিয়ে বলে, "আমি ব্যাবসায়ী মানুষ। আগে কাজ তারপরে দাম।"
দানা চোয়াল চেপে ওকে বলে, "তোমার বিরুদ্ধে আমার কাছে অনেক তথ্য প্রমান আছে। বিমান আর মোহন আমার সামনে স্বীকার করেছিল যে তুমি মৈনাকের মৃত্যুর জন্য দায়ী। সেই আলোচনা আমার কাছে রেকর্ড করা আছে।"
সিমোন হেসে ফেলে, "কেন নিজেদের মধ্যে মারামারি করছি। তুমি যদি ওই টেপ নিয়ে পুলিসের কাছে যাও, একটা শুনানিতে ওই টেপ মিথ্যে বলে প্রমান করতে আমার এক মিনিট লাগবে না। তুমি কথা রাখো আমিও কথা রাখব।"
চোখ টিপে মদের গেলাসে চুমুক দিয়ে বলে, "তোমার ওপরে আমার কড়া নজর আছে ভুলে যেও না।"
বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, এত সহজে সিমোনের কাছ থেকে খবর বের করা যাবে না সেটা জানত। দানা যদি বুনো ওল, তাহলে সিমোনে বাঘা তেঁতুল! মদের গেলাস শেষ করে বিশেষ কথা না বাড়িয়ে বেড়িয়ে পড়ে। বুকের মধ্যে ধুকপুকানি বেড়ে ওঠে। সিমোনে ওর বাড়ির ওপরে নজর রেখে চলেছে। খুব শীঘ্র কাজ হাসিল করতে হবে, এক ঢিলে দুই পাখী মারতে হবে।
পরবর্তী পদক্ষেপ, কি ভাবে বুবাইকে ওই বাড়ি থেকে বের করে সিমোনের হাতে তুলে দেওয়া যায়। ময়নাকে ব্যাবহার করে নয়নার ভাই বুবাইকে ওর বাড়ি থেকে বের করে আনা সম্ভব। একবার আহত নয়না আর ক্ষুধার্ত হিংস্র সিমোনে মুখোমুখি হলে দুইজনা দুইজনকে খুন করে ফেলবে। ওর পথের কাঁটা সরে যাবে।
সিমোনের বাড়ি থেকে বেড়িয়েই মহুয়াকে ফোনে জানিয়ে দেয় ওর পরিকল্পনার কথা। মহুয়া সব শুনে আঁতকে ওঠে, শেষ পর্যন্ত এক নিরপরাধ ছেলের সাহায্যে নিয়ে নয়নাকে ফাঁসাতে চায় দানা? মন কিছুতেই মানতে চায় না মহুয়ার। দানা মহুয়াকে বুঝিয়ে বলে, নয়না মারা গেলে এই নিষ্ঠুর জগত ওর ভাইকে বাঁচতে দেবে না। আরো বলে সেই ছেলের কামুক প্রবৃত্তি যা তাতে ওর বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। কত কাজের মেয়ের সর্বনাশ করেছে নয়না আর তার ভাই তার ইয়ত্তা নেই। কাজের ছলে ওদের দেহ ভোগ করেছে বুবাই, টাকা দিয়ে সেই সব মেয়েদের চুপ করিয়ে দিয়েছে নয়না। সেদিন রাতে যদি দানা ওর বাড়িতে না থাকতো, তাহলে ওই বুবাইকে দিয়েই সঙ্গীতাকে ;., করাত নয়না। আর বুবাই যা খেপা ছেলে, সঙ্গীতাকে হয়ত আঁচড়ে কামড়ে খিমচে রক্ত মাংস হাড় বের করে দিত। সেই শুনেই মহুয়ার শরীর, বুবাই আর নয়নার প্রতি তীব্র ঘৃণায় জ্বলে ওঠে। দানাকে একপ্রকার আদেশ দেয় ওদের শেষ করে দিতে।
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,994 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
সাপের কোঠর (#০৩)
ময়নাকে এই ঝামেলার মাঝে টানতে চাইছিল না কিন্তু নিরুপায়, এ ছাড়া ওর কাছে আর কোন রাস্তা খোলা নেই ওর ভাইকে ওই বাড়ি থেকে বের করার জন্য। দানার সাথে ওর ভাই বের হবে না, সোজা নয়নাকে নিয়ে সিমোনের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। একমাত্র রাস্তা ওর ভাই। যদি সিমোনের হাতে ওর ভাই পরে তাহলে ভাইকে বাঁচাতে নিশ্চয় নয়না, সিমোনের কাছে ধরা দেবে।
এতদিন পরে দরজায় দানাকে দেখে ময়না অবাক হয়ে যায়। নয়নার গাড়ি চালানোর সময়ে একবার শুধু ফারহান আর ও মিলে ময়নার সাথে সঙ্গমে মেতেছিল, তারপরে ফারহান যদিও মাঝে মাঝে ময়নার কাছে আসতো, তবে দানা কোনোদিন আর আসেনি। ওকে দেখেই একটু অবাক হয়ে যায়। আসার কারন জিজ্ঞেস করেলে দানা জানায় বিশেষ প্রয়োজনে এসেছে। ময়নার প্রেমিক কৌশিক সেদিন বাড়িতেই ছিল। দানার সাথে আগে পরিচয় ছিল না, নয়না পরিচয় করিয়ে দেয় পুরানো বন্ধু বলে। দানার নাম শুনেই কৌশিক ওকে চিনতে পারে। মিচকি হেসে ওকে বলে যে ওর জন্য ময়নাকে হাতে পেয়েছে। সেই শুনে বেশ কিছুক্ষণ হাসাহাসি চলে।
কৌশিক ওর পিঠে চাপড়ে বলে, "তুমি না তুই না আপনি কি বলব ভেবে পাচ্ছি না। আজকাল অনেক বড়লোক হয়ে গেছিস। টিভিতে খবরের কাগজে এই কয়দিন তোর নামে বেশ খবর ছাপাছাপি হল।"
কৌশিককে "তুই" বলেই সম্বোধন করে দানা, "আরে না না, সেই রকম কিছু নয় রে। সব সময়ে মিথ্যের জয় হবে সেটা মেনে নিতে একটু কষ্ট। যাই হোক যেটা আসল কাজে এসেছিলাম সেটা এখন বলি।"
ময়নাকে সব কিছু খুলে বলতেই ময়নার চক্ষু চড়ক গাছ। দানা বলে কি? ওই মন্দ বুদ্ধি বুবাইয়ের সাথে সহবাস করে যাচ্ছে বটে, তবে একেবারে প্রেমের নাটক করতে হবে শুনে একটু ঘাবড়ে যায়। বর্তমান ঝামেলার জন্য বেশ কিছুদিন নয়নার বাড়িতে যাওয়া হয়নি। এরমাঝে কি ভাবে বুবাইকে বাড়ি থেকে বের করে আনবে সেটাই চিন্তার। কিন্তু নয়নাকে ধরতে হঠাৎ বুবাইয়ের সাহায্যের কি দরকার পড়ল সেটা ময়না বুঝতে পারল না। দানা ওকে বুঝিয়ে বলে নয়নার প্রান ভোমরা ওর ভাই বুবাই। বুবাই যদি সিমোনের হাতে পড়ে, তাহলে দিগ্বিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে যাবে নয়না, আর সিমোনের কাছে ধরা দেবে। ময়নাকে শুধু মাত্র বুবাইকে কোথাও নিয়ে যাবার ছলে ওই বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে আর সোজা সিমোনের হাতে তুলে দিতে হবে। অবশ্য তার জন্য মোটা টাকা দেবে দানা। ময়না টাকা চায় না, ম্লান হেসে ওর হাত ধরে জানিয়ে দেয় দানা যা বলবে সেটা করতে রাজি। তবে দানা এটাও জানায়, বুবাইকে ওই বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসার পরে ওকে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হবে। কৌশিক জানিয়ে দেয়, দানার কথা মতন বুবাইকে ওর হাতে তুলে দিয়ে ওরা কয়েকদিনের জন্য গা ঢাকা দিয়ে থাকবে।
দানা নিজেকে এর মধ্যে জড়াতে চায় না কিন্তু ময়নাকে আর সিমোনকে বলে এসেছে। কি ভাবে সরাসরি না গিয়ে বুবাইকে সিমোনের হাতে তুলে দেওয়া যায় সেটাই চিন্তায় মগ্ন। রাতের খাওয়ার পরে বারান্দায় বসে একটা সিগারেট ধরিয়ে সেই অঙ্ক কষে।
এমন সময়ে কাঁধের ওপরে প্রেয়সীর নরম হাতের ছোঁয়া পেয়ে সম্বিত ফিরে পায়। কাঁধ ঘাড় নরম আঙ্গুল দিয়ে টিপতে টিপতে মহুয়া ওকে জিজ্ঞেস করে, "শেষ পর্যন্ত বুবাইকে কেন এই ঝামেলার মাঝে টেনে আনছো?"
শেষ পর্যন্ত দানাকে সত্যি উজাগর করতেই হয়, না হলে মহুয়া কিছুতেই এই কাজে ওর সাথে সাথ দেবে না। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মহুয়াকে বলে, "যেদিন বিমানের খুন হল, সেদিন রাতে ওদের মুখে আমি শুনেছিলাম যে ওরা নাকি মেয়েকে অপহরন করতো।"
কথাটা কানে যেতেই মহুয়ার শরীর কেঁপে ওঠে। মুখ চাপা দিয়ে আঁতকে ওঠে, "কি বলছো?"
দানা ওর হাত ধরে পাশে বসিয়ে বলে, "হ্যাঁ, আর এই নয়নার সাহায্যে রুহিকে ওরা অপহরন করাতো, তাই নয়না আমাদের সাথে এতদিন ভালো সম্পর্ক রেখেছিল।"
মেয়েকে অপহরন করার কথা শুনেই মহুয়ার গায়ে কাঁটা দিয়ে। দাঁতে দাঁত পিষে ছলছল চোখে দানার দিকে তাকিয়ে নির্বাক হয়ে বসে থাকে। কি বলবে? কার দোষে ওর মেয়েকে এর মাঝে টেনে আনা হয়েছে? শেষ পর্যন্ত মাথা ঝাঁকিয়ে দানাকে বলে, "ওর রক্ত আমার চাই জিত।" দানার বুকের ওপরে কিল মেরে অস্ফুট চেঁচিয়ে ওঠে, "নয়না আর সিমোনের রক্ত আমার চাই, জিত।"
দানা ওকে জড়িয়ে ধরে বসে। বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে অনেকক্ষণ নিথর হয়ে পড়ে থাকে মহুয়া। ওর কপালে কি একটুকু শান্তি উপরওয়ালা লিখে যায়নি? ক্ষুধার্ত হায়নার কবল থেকে বেঁচে এসে কি শেষ পর্যন্ত সাপের কবলে পড়লো? কিন্তু এই বুকের মাঝে যতক্ষণ মুখ গুঁজে থাকে ততক্ষণ ওর হৃদয় জানে এই পৃথিবীতে কারুর সাধ্য নেই ওকে এই বুকের ওপর থেকে কেড়ে নিয়ে যায়।
দানা ওর হাত ধরে কোলের ওপরে বসিয়ে বলে, "কি করে বুবাইকে সিমোনের হাতে তুলে দেব সেটাই ভাবছি।"
একহাতে মহুয়ার কোমর জড়ানো, অন্য হাতের আঙ্গুলে সিগারেট। ধুয়ো নাকে যেতেই খুক খুক করে কেশে উঠে রেগে যায় মহুয়া, "আগে সিগারেট ফেলো।"
অগত্যা আধা খাওয়া সিগারেটটা দুর করে ফেলে দিতে হয়। কি করা যাবে কোলের প্রেয়সীকে রাগাতে পারে না যে।
মহুয়া চোখ মুছে ওর গলা জড়িয়ে বলে, "সরাসরি যেতে হবে না। তুমি সিমোনকে ময়নার খবর দিয়ে বল, সোজাসুজি ওর সাথে এই বিষয়ে কথা বলুক। সিমোনকে এটা বল, যেন ময়নাকে খুলে কোন বিষয়ে না জানায়। শুধু এটা জানাক যে একবার বুবাইকে দেখতে চায়। সেই সাথে তুমি সিমোনকে বল, যখন ময়না বুবাইকে নিয়ে সিমোনের কাছে যাবে, তখন সিমোন ময়নার কাছ থেকে বুবাইকে ছিনিয়ে নেবে। ব্যাস তাহলে তুমি এই প্রেক্ষাপটে কোথাও থাকবে না। সিমোনের কাজ হাসিল হয়ে যাবে আর তোমার কাজ হাসিল হয়ে যাবে। শুধু তোমাকে ময়নার ওপরে একটু নজর রাখতে হবে যাতে সিমোন ওকে না আক্রমন করে বসে।"
দানা মাথা নাড়িয়ে মহুয়াকে এক গাদা চুমু খেয়ে বলে, "তুমি না থাকলে আমার কি হতো বলো তো?"
মহুয়া মিচকি হেসে কানেকানে বলে, "এইখানে একা একা বসে ছিঁড়তে আর আটি বাঁধতে।" বলেই খিলখিল করে হেসে ফেলে।
ওই হাসি শুনে দানা আর থাকতে পারে না। মহুয়াকে কোলে তুলে ওদের মিলন কক্ষে ঢুকে পড়ে।
পরদিন সকালেই সিমোন ওকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে কবে দানা, নয়নার ভাইকে ওর হাতে তুলে দেবে। মহুয়ার সুচতুর পরিকল্পনা দানা সিমোনকে খুলে বলে। দানা জানায়, স্মিতা নামের এক মডেলের সাথে নয়নার ভাইয়ের বেশ ভালো সম্পর্ক। তাকে টাকা দিয়ে হাত করতে পারলে অতি সহজে বুবাইকে নিজের কবলে করা যাবে। একবার বুবাই সিমোনের কবলে পড়লে নয়নাকে বাগে ফেলা অতি সহজ হয়ে যাবে। এই পরিকল্পনা সিমোনের মনে ধরে যায়, জানিয়ে দেয় স্মিতা নামক মডেলের সাথে এই বিষয়ে কথা বলবে। সেই সাথে দানা এটা জানিয়ে দেয় যেহেতু স্মিতা বাইরের লোক, সিমোন যেন সব কিছু খলাখুলি ওর সাথে আলোচনা না করে বসে। সিমোনে সাঙ্ঘাতিক ধূর্ত মহিলা, দানাকে জানিয়ে দেয় ওর মাথায় সেই টুকু বুদ্ধি আছে কি ভাবে স্মিতার সাথে কথা বলবে আর কি ভাবে বুবাইকে বের করার পরিকল্পনা করবে। দানা মনে মনে খুব খুশি, এক এক করে ওর শত্রু সংখ্যা কমছে, তবে এখন ওর আসল শত্রু, নাসরিন আর কঙ্কনার হদিস পাওয়া গেল না। সিমোনকে জিজ্ঞেস করলেই বলে আগে বুবাই তারপরে ওদের খবর দেবে।
সেদিন বিকেলে ময়না ওকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে সিমোন ওকে ফোন করেছিল আর বুবাইকে নিয়ে বেড়াতে বের হবার কথা বলেছে। দানা ওকে বলে খুব সন্তর্পণে যেন বুবাইকে নিয়ে বের হয়, ঘুনাক্ষরেও যদি নয়না টের পেয়ে যায় যে এই ঘুরতে বের হবার পেছনে কোন দুরাভিসন্ধি আছে, তাহলে ময়নাকে মেরে ফেলতে ওর হাত কাঁপবে না একটুও। সেই সাথে এটাও জানায় কয়েকদিন ওর সাথে ভালো ব্যাবহার করতে যাতে বুবাই অথবা নয়নার কোন সন্দেহ না হয়। তারপরে চারদিন পরে ময়না যেন বেড়ানোর ছল করে বুবাইকে সঙ্গে নিয়ে বেড়িয়ে আসে। কথা মতন কাজে লেগে পড়ে ময়না।
চারদিন চাপা উৎকণ্ঠায় কেটে যায় মহুয়া আর দানার। সমুদ্র আর সুমিতার চলে যাওয়ার দুঃখ ভোলার জন্য নয়না কাজের মধ্যে ডুবে যায়। ময়না রোজদিন নয়নার বাড়িতে গিয়ে বুবাইয়ের সাথে বেশি করে সময় কাটাতে শুরু করে দেয়। সিমোন ওই দিকে আহত নরখাদক বাঘিনীর মতন বুবাইয়ের অপেক্ষায় দিন গোনে। ময়নার ঘন ঘন আসা যাওয়াতে নয়না একটু খুশি, এই ঝামেলার ফলে বুবাই খুব ভয় পেয়ে গেছিল, সব সময়ে নিজের ঘরের মধ্যে বন্দি থাকতো। ময়না খবর দেয় যে বুবাইকে নিয়ে বের হতে এইবারে কোন অসুবিধে নেই।
সেদিন সকালে সিমোনকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে ফাঁদ তৈরি, শুধু সিমোন বলে দিক কোথায় বুবাইকে নিয়ে আসতে হবে। উত্তরে সিমোন জানিয়ে দেয়, মোহনার দিকের বড় রাস্তায় উঠে বেশ কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পরে একটা সাদা রঙের গাড়ি দেখতে পাবে। বুবাইকে যেন গাড়িতে ছেড়ে ওরা চলে যায়। দানা জানিয়ে দেয়, স্মিতার সাথে আরো একজন থাকবে, আর কঙ্কনার খবর না পেলে বুবাইকে ওর হাতে তুলে দেবে না। যদি সিমোন কোন ছলনা করতে চায় তাহলে সোজা পুলিসকে ফোন করে ডেকে নেবে ওইখানে।
সব শুনে সিমোনে কুটিল এক হাসি দিয়ে বলে, "ইসস দানা, বড় ভুল করছ। পরিকল্পনা তোমার, আমি মানছি আমি স্মিতার সাথে দেখা করেছি কিন্তু তুমি যা পারো সেটা আমি পারি না ভাবলে কি করে। তোমার পরিকল্পনা রীতিমতন আমার মোবাইলে টেপ করা আছে। সুতরাং বেগরবাই করলে ওই টেপ পুলিসের হাতে চলে যাবে। নাও নাও দানা, নিজেদের মধ্যে বেশি মারামারি করে লাভ নেই। যত তাড়াতাড়ি পারা যায় নয়নাকে হাতের মুঠোর মধ্যে আমার চাই।"
দানা বুঝতে পেরেছিল এইরকম কিছু একটা হতে পারে। যে পথে সিমোনকে আক্রমন করতে চেয়েছিল সেই পথ ধরে যে সিমোন এগোবে না সেটা বলে দিতে হয় না।
নয়না নিজের শুটিংয়ে বেড়িয়ে গেছে। পরিকল্পনা মাফিক ময়না ওর বাড়িতে বিকেলে পৌঁছে যায়। এই কয়দিনে বুবাইকে রোজ স্বপ্ন দেখিয়ে গেছে যে একটা বড় পার্কে বেড়াতে নিয়ে যাবে। যদিও নয়নার বিশেষ ইচ্ছে ছিল না, তবুও বুবাইয়ের জেদের বসে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে যায়। স্মিতাকে ভরসা করা যায় না, তাই নিতাকে সঙ্গে যেতে নির্দেশ দেয়। নয়নার বাড়ি থেকে, বুবাই আর নিতাকে নিয়ে বের হতেই দানাকে ফোন করে দেয় ময়না। ওরা একটা ট্যাক্সিতে উঠে মোহনার দিকের বড় রাস্তা ধরে।
পকেটে পিস্তল, মহুয়ার কপালে একটা চুমু খেয়ে বেরিয়ে পড়ে দানা। নিজের গাড়ি নেয় না কারন নিতা আর সিমোন দুইজনে ওর গাড়ি ভালো ভাবেই চেনে। শক্তিকে দিয়ে অন্য একটা গাড়ি আনিয়ে নেয়। ময়নার বাড়ি থেকে কৌশিককে তুলে নিয়ে মোহনার দিকের বড় রাস্তা ধরে।
ময়না ওকে ট্যাক্সির নাম্বার মোবাইলে পাঠিয়ে দিয়েছিল, তাই বড় রাস্তায় পড়ার পরে ট্যাক্সি অনুসরন করতে ওদের অসুবিধে হয় না। ট্যাক্সির মধ্যে ময়না, নিতা আর বুবাই আর পেছনের গাড়িতে শক্তি, কৌশিক আর দানা। দানা শক্ত হাতে গাড়ি চালাতে চালাতে ঘনঘন সিগারেট টেনে চলে, বুকের মধ্যে চাপা উত্তেজনা। ট্যাক্সি হুহু বেগে মোহনার দিকে এগিয়ে চলেছে, বেশ কয়েক কিলোমিটার পার হয়ে যাওয়ার পরেও কোন সাদা রঙের গাড়ির দেখা নেই। দানার সন্দেহ হয়, একি হলো? নিতার হয়ত সন্দেহ হয়ে গেছে আর নয়নাকে ফোনে সব জানিয়ে দিয়েছে। নাকি সিমোন ওদের দেখে ফেলেছে আর তাই কোথাও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। সামনে পেছনে প্রচুর বাস ট্রাক গাড়ি ঘোড়া, এর মাঝে যদি ওদের কেউ অনুসরন করে চলে তাহলে বোঝার উপায় নেই।
বেশ কিছুপরে ট্যাক্সিটা হঠাৎ এক বাঁক নিয়ে একটা গ্রামের রাস্তায় নেমে পড়ে। দানা চমকে যায়, কি হল ব্যাপারটা। কৌশিক আর দানা মুখ চাওয়াচায়ি করে, এমন কথা ছিল না। সিমোনকে ফোন করবে কি করবে না। সিমোনকে ফোন করলে জেনে যাবে যে পেছনে অনুসরন করছে, সেটা জানাতে চায় না। আড়াল করে দেখতে চায় কতদুর কি হতে চলেছে। দানাও ওই গ্রামের রাস্তায় গাড়ি নামিয়ে দেয়। বেশ দুর থেকে গাড়িটাকে অনুসরন করতে করতে এগিয়ে চলে। নিতা নিশ্চয় এতক্ষণে ময়নার দুরাভিসন্ধি টের পেয়ে গেছে। একটু দুর যেতেই ট্যাক্সির সামনে একটা কালো রঙের গাড়ি এসে দাঁড়ায়। দানা দূরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে হাতে পিস্তল নিয়ে পাশের মাঠে নেমে পড়ে। ধানের মধ্যে গা ঢাকা দিয়ে ট্যাক্সির দিকে তিনজনে এগিয়ে যায়। ওদের কানে মেয়েলী কণ্ঠস্বরের চেঁচামেচির আওয়াজ ভেসে আসে। কয়েকজন দুষ্কৃতি গাড়ি থেকে নেমে ট্যাক্সির দিকে বন্দুক উঁচিয়ে এগিয়ে যায়। সবকটা লোকের মুখ কালো জালের মুখোশে ঢাকা, কাউকে চেনার জো নেই। প্রথমে ট্যাক্সির ড্রাইভারকে গাড়ি থেকে বের করে মাথার পেছনে এক ঘা মেরে অজ্ঞান করে দেয়। তারপরে পেছনের দরজা খুলে তিনজনকে টেনে বের করে। মুখোশে ঢাকা লোক গুলো এদিক ওদিকে তাকিয়ে ফোনে তুলে কারুর সাথে কিছু কথা বলে। দানা হলপ করে বলতে পারে ওইপাশের ব্যাক্তি, সিমোন ছাড়া আর কেউ নয়। ময়না আর নিতার চোখ বেঁধে, নাকের কাছে কিছু একটা শুকিয়ে দিয়ে অজ্ঞান করে দেয়। বুবাইকে অজ্ঞান করে দিয়ে কালো গাড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে দুষ্কৃতীরা অন্যপাশের রাস্তা ধরে চলে যায়। দানার কেমন খটকা লাগে, সিমোনে বলেছিল সাদা রঙের গাড়ি বড় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে, সেটা না হয়ে একটা কালো রঙের গাড়ি গ্রাম ছাড়িয়ে মাঠের মাঝে।
কৌশিক এক দৌড়ে ময়নার কাছে গিয়ে ওর চোখের বাঁধন খুলে দেয়। জল আনা হয়নি, কোন রকমে ময়নাকে কোলে তুলে শক্তির আনা গাড়িতে বসিয়ে ওরা চলে যায়। ট্যাক্সি চালক আর নিতাকে রাস্তার ধারে অজ্ঞান অবস্থায় ছেড়ে দেয় দানা। এই কিডন্যাপের খবর অন্তত সিমোনের আগে নয়নার কানে পৌঁছান উচিত। গাড়ি করে সোজা ওরা মহানগর ফিরে নদীর ওপাড়ে বড় রেলের স্টেশানে চলে যায়।
দানা একটা টাকা ভর্তি ব্যাগ ময়নার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, "তোরা কয়েক দিনের জন্য গা ঢাকা দিয়ে থাক। আমাকে যেন ভুলেও ফোন করিস না আর পারলে নিজেদের ফোন এই কয়দিনে ব্যাবহার করিস না। খবরের কাগজে চোখ রাখিস, এই ঝামেলার খবর কাগজে ছাপা হবেই সুতরাং ওই বুঝে তোরা আবার এই মহানগরে ফিরে আসিস।"
কৌশিক আর ময়নাকে ট্রেনে উঠিয়ে দানা বাড়ি ফিরে আসে।
চরম উৎকণ্ঠায় মহুয়ার জিভ শুকিয়ে, বারেবারে ঘর বাহির করে দানার অপেক্ষায়। বাড়ি ফিরেই মহুয়াকে সম্পূর্ণ ঘটনাবলী জানিয়ে নিজের অস্থিরতা ব্যাক্ত করে। এটা আবার সিমোনের কোন নতুন চাল, জায়গাটা ওদের বাগান বাড়ি থেকে অনেকদুরে, সাদা রঙের গাড়ির জায়গায় কালো রঙের গাড়ি। সিমোনে অথবা মোহনকে এই সময়ে ফোন করা ঠিক হবে না। দরকার পড়লে ওরা নিজেরাই ফোন করবে। দানা যে এর সাথে জড়িত সেটা যদি পুলিস জানতে পারে তাহলে বিশাল সমস্যা দেখা দেবে।
একটু পরেই মহুয়ার ফোন বেজে ওঠে। ওইপাশ থেকে নয়না আর্তনাদ করে ওঠে, "ভাইকে কেউ কিডন্যাপ করেছে, মহুয়া। প্লিস এসো....." বলেই কেঁদে ফেলে।
মহুয়া আর দানা মুখ চাওয়াচায়ি করে। ওর বাড়িতে এখন যাওয়া উচিত যদিও ওরা জানে কে অপহরন করেছে, তবে একটু সংশয় আছে সেই সম্বন্ধে। নয়নাকে হাতে না পাওয়া পর্যন্ত সিমোন ওর টেপ পুলিসের কাছে দেবে না। মহুয়া রাগে জ্বলতে থাকলেও ওকে শান্ত হতে অনুরোধ করে জানিয়ে দেয় ওরা কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাবে।
চিন্তা মগ্ন দানাকে জিজ্ঞেস করে, "কি করবে? সব চাল যে উলটো পড়ে গেল।"
দানা মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, "কি যে হয়ে গেল জানি না। সিমোন বলেছিল বুবাইকে হাতে পেলে আমাকে কঙ্কনার খবর দেবে। এখন সিমোনকে ফোন করা একদম যাবে না। ওর কথায় বিশ্বাস করা একদম উচিত হয়নি আমার।" একটু থেমে বলে, "এখন চল নয়নার বাড়িতে। পুলিসের সাহায্য এইবারে নিতেই হবে না হলে ওদের বাগে ফেলা যাবে না কিছুতেই। ভেবেছিলাম সিমোন আর নয়না সামনাসামনি হলে একে ওপরকে খুন করবে, কিন্তু এখানে মনে হচ্ছে কোন তৃতীয় ব্যাক্তির আগমন হয়েছে। তবে মোহন হলে ক্ষতি নেই কিন্তু অন্য কেউ হলে বড় মুশকিল।"
তৃতীয় ব্যাক্তি কে হতে পারে, শত চিন্তা করেও কিছুতেই দানা আর মহুয়া উদ্ধার করতে পারে না।
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,994 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
সাপের কোঠর (#০৪)
রুহিকে বাড়িতে রেখে দিয়েই মহুয়া আর দানা, নয়নার বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। নয়নার বাড়ির সামনে গিয়ে আকরামের সাথে দেখা হয়। আকরাম জানায়, বাড়িতে তখন পুলিস আসেনি, তবে ওর সেক্রেটারি আর ম্যানেজার এসে পৌঁছে গেছে। সবাই হয়তো দানা আর মহুয়ার অপেক্ষা করছে।
মহুয়াকে দেখে নয়না একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। কাঁদতে কাঁদতে বলে, "আমার অদৃষ্ট, আমার পাপের বোঝা আমার ভাইকে কেন পোহাতে হবে মহুয়া। আমার ভাই কারুর ক্ষতি করেনি মহুয়া, প্লিজ কিছু একটা করো।"
দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায় ওই কথা শুনে, টাকার জোরে কত কাজের মেয়ের সর্বনাশ এই মন্দ বুদ্ধি ছেলেটা করেছে তার ইয়ত্তা নেই। সেদিন দানা না থাকলে হয়ত সঙ্গীতাকে আঁচড়ে কামড়ে আধমরা করে দিত। মহুয়ার দুই চোখে আগুন ঠিকরে পড়ছে, যেন বলতে চায়, কোন একসময়ে সুযোগ পেলে আমার মেয়েকে অপহরনের চক্রান্ত করেছিলে তাই না?
ঘর ভর্তি লোকজন, সেক্রেটারি আর ম্যানেজারের সাথে আরো বেশ কয়েক জন লোক এসে গেছে। সবার এক কথা, পুলিসে খবর দাও, আগে ওই স্মিতা নামের মডেল কে ধরা হোক তাহলেই কে অপহরন করেছে সেটা জানা যাবে। ময়নার সাথে যে দানার যোগাযোগ আছে সেটা নয়না জানে না। কিন্তু ময়নাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়, ইতিমধ্যে শহর ছাড়িয়ে, এই প্রদেশ ছাড়িয়ে ট্রেনে করে ওরা অন্য শহরে গা ঢাকা দিয়ে থাকার জন্য চলে গেছে। এখন পর্যন্ত কোন ফোন আসেনি। নিতা এক কোনায় চুপচাপ বসে। কি চলছে ওর মনে? হয়তো ভাবছে, আপদ বিদায় হয়েছে ভালোই হয়েছে।
মহুয়া আড় চোখে একবার দানার দিকে তাকিয়ে নয়নাকে ধরে সোফার ওপরে বসিয়ে বলে, "কি করে হলো এই সব একটু খুলে বলো তো?"
নয়না চোখের জল মুছে সব ঘটনা খুলে বলে, যার অধিকাংশ মহুয়ার জানা। নয়না শুটিংয়ে ব্যাস্ত ছিল, এই কয়দিনে বুবাইয়ের দিকে নজর দেওয়ার একদম সময় পায়নি। স্মিতা নামের মডেলটা বুবাইয়ের মনে ধরে যাওয়াতে ওকে বাড়িতে আসতে বলতো আর বুবাইয়ের সাথে সময় কাটানোর জন্য বেশ ভালো টাকাই দিত ওকে। সেদিন দুপুরে, বুবাইকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে স্মিতা। প্রথমে গররাজি হয় নয়না, অচেনা একজনের সাথে বুবাইকে ছাড়তে নারাজ, কিন্তু বুবাই নাছোড়বান্দা, শেষ পর্যন্ত কাজের মেয়ে নিতাকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার অনুমতি দেয়। বিকেলে নিতাকে সঙ্গে নিয়ে স্মিতা আর বুবাই কোথাও বেড়াতে বের হয়। ট্যাক্সি শহর ছাড়িয়ে বড় রাস্তা ধরলে নিতার সন্দেহ হয়। স্মিতা ওকে বলে শহরের বাইরে একটা বড় পার্ক আছে সেখানে নিয়ে যাবে বুবাইকে। নিতা চুপ করে থাকে, কিন্তু যখন স্মিতাকে কারুর সাথে ফোনে কথা বলতে শোনে তখন নিতার সন্দেহ বদ্ধমূল হয়ে যায় যে স্মিতার অভিসন্ধি অন্য কিছু। সেটা সত্য প্রমানিত করে কিছুপরেই ওদের ট্যাক্সির সামনে একটা কালো রঙের ভ্যান গাড়ি এসে দাঁড়ায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই গাড়ি থেকে জনা চারেক মুখোশ পরা ছেলে নেমে ট্যাক্সি চালকের মাথায় মেরে অজ্ঞান করে দেয়। তারপরে নিতাকে আর স্মিতাকে বেঁধে ফেলে, ওদের চোখ বেঁধে নাকের ওপরে রুমাল চপে অজ্ঞান করে দেয়। তারেপরে ওরা বুবাইকে নিয়ে কোথাও চলে যায়। ট্যাক্সি চালক আর নিতার জ্ঞান ফিরলে দেখে যে, সেই স্থানে স্মিতা নেই। ওদের কাছের ফোন, টাকা পয়সা যা ছিল সব ওই দুস্কৃতিরা নিয়ে চলে গেছে। ট্যাক্সি চালকের সাহায্যে বাড়ি পৌঁছেই নয়নাকে ফোন করে সব জানিয়ে দেয় নিতা। শুটিং ছেড়ে সঙ্গে সঙ্গে মহুয়াকে ফোন করে নয়না।
ওরা সবাই ফোনের অপেক্ষায় বসে। এক ঘণ্টা দুই ঘণ্টা করে মাঝ রাত হয়ে যায়। চরম উৎকণ্ঠায় নয়নার ওষ্ঠ শুকিয়ে কাঠ। চোখের জল আর ফুরানোর নাম নেই। মহুয়া যত ওকে শান্ত হতে বলে ততই নয়না কেঁদে ভাসিয়ে দেয়। দানা চুপচাপ গম্ভীর ভাবে সোফায় বসে ফোনের অপেক্ষা করে।
মাঝ রাতে নয়নার ফোন বেজে ওঠে। কাঁপা হাতে সবার দিকে তাকিয়ে নয়না ফোন উঠায়। অন্যপাশে এক অচেনা পুরুষের কণ্ঠস্বর ওকে বলে, "তোর ভাই ভালো আছে। যদি ওকে জ্যান্ত দেখতে চাস তাহলে আমার কথা মন দিয়ে শোন। তোর হিতৈষী বন্ধু বিশ্বজিৎ মন্ডলের কাছে মিস্টার মোহন খৈতানের প্রকল্পের যা কাগজপত্র আছে, সেই সব নিয়ে তমালগুড়ির রাস্তা ধর। ওই কাগজপত্র হাতে পেলে আমরা তোর ভাইকে ছেড়ে দেব। বাকি নির্দেশ মহানগর ছাড়ানোর পরে পাবি।"
আগন্তুকের নির্দেশ শুনে দানা আর মহুয়া যেমন স্থম্ভিত হয়ে যায় তেমনি নয়না অবাক হয়ে যায়। নয়না একবার মহুয়ার দিকে তাকায় একবার দানার দিকে। দানা ফাঁদে পড়ে গেছে, এটা যে সিমোন আর মোহনের কুটিল চাল সেটা বুঝতে একটুকু দেরি লাগলো না। এখন যদি দানা না বলে তাহলে নয়না প্রশ্ন উঠাবে, হয়ত মোহন সোজাসুজি বলে দেবে এই চক্রান্তের পেছনে দানার বুদ্ধি কাজ করছে। সমুদ্রের মৃত্যুতে নয়না একে ক্ষুদ্ধ আহত বাঘিনীর মতন ফুঁসছে, যদি জানতে পারে যে ওর ভাইয়ের এই অপহরনের পেছনে দানার হাত আছে, তাহলে দানা ঘোর বিপদে পরে যাবে। আর যদি দানা নয়নার সাথে কাগজ পত্র নিয়ে যায়, তাহলে ওর বেঁচে ফিরে আসার আশঙ্কা এক প্রকার নেই। ওইখানে নিশ্চয় সিমোনের সামনে পড়লে নয়নাকে সবকিছু খুলে বলে দেবে আর তখন দুইজনে একত্রে মিলে ওকে জ্যান্ত ছাড়বে না। মহুয়ার বুক কেঁপে ওঠে, সেই সাথে দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। ওর মাথার ওপরে কেউ যেন গরম তরল গলানো লোহা ঢেলে দিয়েছে। আগন্তুক যে মোহন খৈতান নিজে সেটা প্রমান হয়ে যায়। পুলিসের কাছে যাওয়া যাবে না, নয়নার সামনে মুখ খোলা যাবে না। ভীষণ উভয়সঙ্কটে পরে যায় মহুয়া আর দানা। পরস্পরের মুখ চাওয়াচায়ি করে চোখে চোখে ইঙ্গিতে কথা সারে।
মহুয়া জিজ্ঞেস করে, "কি করবে?"
দানা ইঙ্গিতে জানায়, "দাঁড়াও দেখি।"
ফোন ছেড়ে মাথা নিচু করে নয়না কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে, তারপরে মাথা নাড়িয়ে ওদের বলে, "মোহন খৈতানের প্রকল্পের কাগজ পত্র মানে ভাইয়ের কিডন্যাপের পেছনে ওদের হাত।" কাতর কণ্ঠে দানার দিকে তাকিয়ে বলে, "কি করবো দানা?"
দানা নিজেও জানে না কি করবে। ভীষণ উভয়সঙ্কটে পরে গেছে। যেদিকে পা রাখবে সেদিকে সাক্ষাৎ মৃত্যু। যদি এখুনি নয়নাকে আসল কথা খুলে বলে তাহলেও ওর নিস্তার নেই আর যদি ওর সাথে যায় তাহলেও নিস্তার নেই। দানার চিন্তামগ্ন রূপ দেখে মহুয়ার বুক কেঁপে ওঠে। এইবারে দানাকে একদম জালে আটকে ফেলেছে সিমোনে, এই জাল থেকে ছাড়া পাওয়ার কোন লক্ষন দেখতে পাচ্ছে না কেউই। দানা খানিকক্ষণ ভেবে চিন্তে ঠিক করে, কাগজ পত্র, বন্দুক পিস্তল লোকজন সাথে নিয়েই যাবে। তবে নয়নার চোখের আড়াল করে। আসলে দানা চায় সবাই শেষ হয়ে যাক, কিন্তু নয়না দেখে ফেললে লোকজন নিয়ে যেতে বাধা দেবে।
দানার কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে নয়না আরও বেশি বিচলিত হয়ে ওঠে। মহুয়ার হাত ধরে কাতর প্রার্থনা করে, "কি করবো বলে দাও।"
মহুয়ার চিন্তাশক্তি লোপ পেয়ে যায়। কি করবে ভেবে না পেয়ে উত্তর দেয়, "আমি জানি না নয়না।"
নয়না ওর হাত ধরে বলে, "এক বার শুধু একবার আমার ভাই ফিরে আসুক তারপরে ওদের আমি শেষ করে দেব।" কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পরে বলে, "প্লিজ, দানাকে বল মোহনের কাগজ পত্র নিয়ে আমার সাথে যেতে।"
দানা আলতো মাথা দুলিয়ে ইশারায় মহুয়াকে হ্যাঁ বলতে বলে। মহুয়া নয়নাকে বলে, "ঠিক আছে আমি ওকে বুঝিয়ে বলছি, তুমি ততখনে তৈরি হয়ে নাও।"
নয়না ঘরে ঢুকতেই, মহুয়া দানাকে একদিকে টেনে মনের আশঙ্কা ব্যাক্ত করে জিজ্ঞেস করে, "এইবারে কি হবে গো? যদি কাগজ পত্র না নিয়ে যাও তাহলে ওইখানে গিয়ে সিমোনে সব কিছু নয়নাকে বলে দেবে আর দুইজনে একত্র হয়ে গেলে আমরা বিপদে পড়ে যাবো। আর যদি নিয়ে যাও তাহলেও বিপদ।"
বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, কিছুক্ষণ ভেবে নিজের পরিকল্পনা জানায়, "আমি কাগজ পত্র আর নয়নাকে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছি। আমাদের যাওয়ার কিছুপরে তুমি বাকিদের আমাকে অনুসরন করতে বলে দেবে। বেশি চিন্তা করো না, পাপড়ি।"
মহুয়া ছলছল চোখে ওর দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে, কি বলে? চিন্তা করবে না? আশঙ্কায় উৎকণ্ঠায় এই দশ মিনিটে ওর গায়ের এক লিটার রক্ত শুকিয়ে গেছে আর ছেলেটা চিন্তা করতে বারন করে? মেয়েদের কি কোনোদিন বুঝেছে? ওর জামা খামচে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে মহুয়া, একটু পরেই নয়নাকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে যাবে। জানে না সকালে ফিরবে আদৌ না ফিরবে না। যদি না ফেরে তাহলে সোজা পুলিশ, কিন্তু ততক্ষণে ওর যা সর্বনাশ হওয়ার সেটা হয়েই যাবে। তাও সিমোন আর মোহনকে ছাড়বে না মহুয়া। বিমানের বাগান বাড়ি যাওয়ার চেয়েও এটা বেশি ভয়ঙ্কর। সেই সময়ে ওদের কাছে একটা পরিকল্পনা ছিল এইবারে ওদের কাছে কোন পরিকল্পনা নেই। জানেই না মোহন খৈতান কোথায় বুবাইকে লুকিয়ে রেখেছে, জানেই না ওদের সাথে কতজন লোক থাকবে। মহুয়া ওর বাজু শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে, হয়তো ছেড়ে দিলেই উড়ে চলে যাবে চিরতরে। বারেবারে এই যাওয়া আর নিতে পারছে না মহুয়া, রোজদিন দানা বাড়ি থেকে বের হলে ওর বুক কাঁপে, ঠিক ঠাক বাড়িতে ফিরবে তো?
নয়না জিন্স আর শার্ট পরে তৈরি, পায়ে জুতো গলায় স্কার্ফ দেখে মহুয়া আর দানার কিঞ্চিত সন্দেহ হয়। দূরে কোথাও বেড়াতে যাচ্ছে না যে একদম পুরুষ মার্কা পোশাক পরে যেতে হবে।
ওদের দিকে এগিয়ে এসে দানাকে জিজ্ঞেস করে, "তোমার কাছে পিস্তল আছে?"
দানা অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে, "তুমি পিস্তল নিয়ে কি করবে?"
চোয়াল শক্ত করে চোখের জল মুছে দানাকে উত্তর দেয়, "পিস্তল থাকলে দাও দানা।" তারপরে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বলে, "তুমি জানো না ভাইয়ের জন্য আমি কি করতে পারি। ভাইয়ের গায়ে হাত দিয়েছিল বলে আমি আমার বাবাকে ছাড়িনি। আর এরা পর, এদের মাথায় গুলি করে তবে ফিরবো।"
নয়নাকে ক্ষান্ত করে দানা বলে, "আমি সাথেই আছি, চলো। যা হবার সেটা দুইজনে একসাথে মোকাবিলা করবো আমরা।"
ওইদিকে সবাই জানে যে এক মরণ ফাঁদে পা রাখতে চলেছে কিন্তু সেই কথা কেউই মুখ থেকে বলতে চাইছে না।
বের হওয়ার আগে নয়না আর্ত চোখে মহুয়ার হাত ধরে বলে, "পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও মহুয়া। আমি তোমাদের বিরুদ্ধে ভীষণ এক ষড়যন্ত্রের অঙ্গ ছিলাম। এতদিনে বলার সাহস হয়নি। আসলে কি জানো, বাপ্পা নস্করকে সরানোর পরে আমাদের মতলব ছিল দানাকে সরানোর। যে কোন বাবা মায়ের প্রাণ তার সন্তানের মধ্যে আটকে থাকে। রুহিকে অপহরন করলে দানা ভেঙ্গে পড়বে, আর তখন ওকে দিয়ে যা কিছু করিয়ে নেওয়া যাবে।"
কথাটা কানে যেতেই মহুয়ার চোখে আগুন ঠিকড়ে বের হয়। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে অতীব জ্বলন্ত জ্বালামুখী শান্ত করে হিমশীতল কণ্ঠে উত্তর দেয়, "তুমি এই ষড়যন্ত্র করেছিলে সেটা আমি জানতাম। ভেবেছিলাম নিজে মুখে স্বীকার করবে, কোনোদিন কিন্তু করলে না। যাইহোক, এখন যাও, দেখ কি হয়।"
বাড়ি থেকে নীচে নেমে নয়না নিজের গাড়িতে ওঠে। দানা, আকরামের কাছ থেকে আরো দুটো পিস্তল চেয়ে নেয়। নিজের দুইখানা নয়নাকে দেবে আর নিজের কাছে দুই খানা রাখবে। খৈতানের মুখোমুখি হলে কে কার সাথে মিলে যাবে তার ঠিকানা নেই। যদি নয়না আর সিমোন মিলে যায় তাহলে নিজের আত্মরক্ষার জন্য বন্দুক চাই, আর যদি না মেশে তাহলে নয়না সিমোনকে মারবে তার জন্য ওকে বন্দুক দিতে হবে।
গাড়িতে ওঠার আগে মহুয়া ওর হাত শক্ত করে ধরে ছলছল চোখে বলে, "সকালে ব্রেকফাস্টে কি খাবে?"
কথাটা শুনে দানার নাকের পাটা ফুলে ওঠে, বুকের মাঝে প্রেয়সীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মহুয়া সর্বশক্তি দিয়ে দানাকে জড়িয়ে ধরে, যদি এটা ওদের শেষ দেখা হয় তাহলে ভোররাতে মা মেয়ে দুইজনে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবে। এই জীবনে যদি দানা এসে ওর হাত না ধরে তাহলে আর কারুর হাত ও ধরবে না।
বহুকষ্টে মহুয়াকে আলিঙ্গন পাশ থেকে ছেড়ে দিয়ে নয়নার সাথে গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ির স্টিয়ারিং দানার হাতে। মহুয়া অনেকক্ষণ ফ্লাটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, যতক্ষণ না রাতের অন্ধকারে দানার গাড়ি মিলিয়ে যায়। নয়না নির্বাক, দানা নির্বাক, মুখে কোন কথা নেই কারুর, দুইজনে চিন্তায় মগ্ন, কি হবে এরপরে। গাড়ি নিয়ে সোজা নিজের অফিসে যায়, সেখান থেকে খৈতানের প্রকল্পের কাগজপত্র নিয়ে আবার গাড়িতে ওঠে। হাতে একটু সময় আছে, তাই ধীরে ধীরেই গাড়ি চালাতে থাকে।
ঠিক সেই সময়ে আবার নয়নার ফোন বেজে ওঠে। নয়না আর দানা মুখ চাওয়াচায়ি করে, ইঙ্গিতে ফোন উঠাতে বলে নয়নাকে। ফোনে অন্য পাশের আগন্তুক ওকে নির্দেশ দেয়, "বিশ্বজিতের কাছ থেকে কি মোহন খৈতানের প্রকল্পের কাগজপত্র নিয়েছিস?"
নয়না উত্তর দেয়, "হ্যাঁ।"
আগন্তুক নির্দেশ দেয়, "তাহলে এইবারে বিশ্বজিতকে গাড়ি থেকে নেমে যেত বল। তোকে বলে দিয়েছিলাম একা আসতে। আমাদের সাথে কোন চালাকি করতে যাস না নয়না।"
কথাটা শুনে মনে হল ওদের কেউ অনুসরন করছে না হলে এতক্ষণ পরে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করতো না। গাড়ি আবার দানার অফিসে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। চরম উৎকণ্ঠায় নয়নার গলা শুকিয়ে গেছে, কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। একা যাওয়া ভীষণ বিপদ। দানা ওকে শান্ত করে বলে গাড়ির ডিকিতে বন্দী হয়ে ওর সাথেই যাবে। নিরুপায় নয়না দানার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে। গাড়ি ঘুরিয়ে অফিসের পার্কিংয়ে চলে যায়। নামার আগে নিজের দুটো পিস্তল নয়নার হাতে তুলে দিয়ে ভালো ভাবে বুঝিয়ে দেয় কি ভাবে গুলি চালাতে হবে। নয়না জানে একবার ওদের হাতে পড়লে ওর নিস্তার নেই সুতরাং যদি মরতে হয় তাহলে ওদের মেরে ফেলে তবেই মরবে আর সেই প্রস্তুতি নেয়। দানা ওকে আরো বলে, কোমরে অথবা পকেটে পিস্তল সবাই রাখে আর ওকে নিশ্চয় মোহনের লোকেরা পরীক্ষা করবে। পকেটে পিস্তল থাকলে অতি সহজে ধরা পরে যাবে, সুতরাং পিস্তল দুটো পায়ের গোড়ালিতে বেঁধে দেয়। এত নীচ পর্যন্ত কেউই আর পরীক্ষা করে দেখবে না, সুযোগ বুঝে যেন নয়না গুলি চালায়। দানা পাশেই থাকবে। চুপচাপ সব কথা মন দিয়ে শোনার পরে দানাকে কি বলবে ভেবে পায় না নয়না।
নয়নার ছলছল চোখ দেখে দানার শরীর রিরি করে জ্বলে ওঠে। একবার মনে হয় এইখানেই ওকে মেরে ফেলে দিক কিন্তু নিজের হাতে রক্ত মাখাতে চায় না। কিন্তু যদি সিমোন ওকে সব কিছু বলে দেয় তাহলে দানার নিস্তার নেই। খৈতানের প্রকল্পের কাগজ পত্র নয়নাকে দিয়ে গাড়ির ডিকির মধ্যে ঢুকে পড়ে। নয়না ডিকি বন্ধ না করে দানাকে ভেতর থেকে টেনে ধরে থাকতে বলে। আকরামের দেওয়া দুটো পিস্তল নিজের গোড়ালিতে বেঁধে গুটিসুটি মেরে গাড়ির ডিকিতে ঢুকে পড়ে। নয়না ওকে বলে, ওর কাছে যেমন নির্দেশ আসবে, সুযোগ মতন দানাকে জানিয়ে দেবে।
গাড়ি আবার চলতে শুরু করে দেয়, অন্ধকার দম বন্ধ হয়ে আসা ডিকির মধ্যে থেকে কিছুই বোঝা যায় না কোথায় যাচ্ছে। তমালগুড়ির রাস্তা মোহনের বাগান বাড়ির রাস্তা থেকে ভিন্ন দিকে, এইদিকে কোথায় নিয়ে যাবে সেটাই চিন্তা। একটাই ভরসা, ওদের পেছনে হয়ত এতক্ষণে আকরাম, নাসির শক্তি বলাই সবাই অনুসরন করছে। অবশ্য এই অনুসরনের বিষয়ে নয়নার অজানা।
অনেকক্ষণ গাড়ি চলার পরে নয়নার জোর গলা শোনা যায়, "মেটেবাড়ি পার করেছি।" কিছুপরে, "বাঁ দিকে গ্রামের মধ্যে ঢুকলাম। ...... সামনে একটা পুরানো ভাঙ্গা বাড়ি দেখতে পাচ্ছি। ...... পেছনে একটা গাড়ি আসছে। ......"
গাড়ি যেমন নাচানাচি শুরু করেছে সেটা থেকে অনায়াসে বোঝা গেল যে গাড়ি এবড়ো খেবড়ো রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলছে। কিছুদুর গিয়ে গাড়ি থেমে গেল। পাশে আরো একটা গাড়ির আওয়াজ শোনা গেল। অন্ধকারে ছোট বদ্ধ ডিকিতে দম বন্ধ হয়ে আসার যোগাড়।
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,994 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
সাপের কোঠর (#০৫)
একটা পুরুষের কণ্ঠ স্বর শোনা গেল, "একা এসেছিস?"
নয়না উত্তর দেয়, "হ্যাঁ।"
পুরুষের কণ্ঠস্বর প্রশ্ন করে, "কাগজ পত্র?"
নয়না চাপা কণ্ঠে গর্জে ওঠে, "আগে ভাইকে দেখি তারপরে।"
পুরুষ কণ্ঠ উত্তর দেয়, "ঠিক আছে। পেছনে আয়।"
কয়েকটা পায়ের আওয়াজ গাড়ির পেছনের দিকে এগিয়ে আসে, মনে হয় দুইজন। সঙ্গে সঙ্গে দানা, গোড়ালি থেকে পিস্তল বের করে হাতে নিয়ে তৈরি হয়ে যায়। কিছুক্ষণ সব নিস্তব্ধ, কি দেখল কে জানে তবে নয়নার সাথে ওই দুষ্কৃতীদের পায়ের আওয়াজ মিলিয়ে যায়। গোড়ালি থেকে দুটো পিস্তল বের করে হাতে তুলে নেয় দানা। অতি সন্তর্পণে ডিকি খুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে বেড়িয়ে আসে। সামনে একটা পুরানো ভাঙ্গা বিলেতি আমলের বাড়ি ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা। দেখে অনেকটা ভুতুরে বাড়ির মতন মনে হল। দুটো পিস্তলের ডগায় সাইলেন্সার লাগিয়ে হাতে পা টিপে টিপে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। ভাঙ্গা জানালার মধ্যে দিয়ে ভেতরের আলো দেখা পেয়ে সেদিকে এগিয়ে যায়। জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখে ভাঙ্গাচোরা বৈঠক খানায় মোহন আর চারজন ছেলে দাঁড়িয়ে। সবার হাতেই বন্দুক। বুবাইকে কোথাও দেখতে পায় না। দুইজন দুষ্কৃতি নয়নার মাথায় পিস্তল রেখে দাঁড়িয়ে।
আহত ক্ষুব্ধ নয়নার দিকে এগিয়ে এসে মোহন দাঁতে দাঁত পিষে গর্জে ওঠে, "শালী তোর জন্য আমার বন্ধু আজ মারা গেছে।"
নয়না পাল্টা সুরে বলে, "নিজের ক্ষমতায় কুলায়নি, শেষ পর্যন্ত ভাইকে হাতিয়ার করে আমাকে ধরলি? ভাবিস না তোরা বেঁচে যাবি।" বলেই বাঁকা হাসি দেয়।
মোহন ওর চুলের মুঠি ধরে ঝাঁকিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলে, "আজ তুই বাঁচবি না। তোকে শেষ করার জন্য এইখানে ডাকা।" বলে নয়নাকে চেপে ধরে মাটির ওপরে বসিয়ে দেয়।
আহত সাপের মতন ফুঁসে ওঠে নয়না, "আমার ভাই কোথায়?" ওর হাতের ফাইল গুলো মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে।
মাটি থেকে ফাইল গুলো উঠিয়ে এক এক করে দেখে মোহন ক্রুর হাসি দিয়ে বলে, "শালা মাদারচোদ দানা, আমার প্রকল্প হাতাতে গেছিল। তোর ভাইকে অপহরন করার পরিকল্পনা আসলে কার জানিস?"
দানা চোখ বন্ধ করে নেয়, এটা অবশ্যাম্ভাবি। মোহন অথবা সিমোন নয়নাকে বলেই দিত। নয়না ফুঁসে ওঠে, "মানে?"
অট্টহাসিতে ফেটে পরে মোহন খৈতান, হাতের পিস্তল নয়নার নাকের সামনে নাচিয়ে বলে, "তোর সুহৃদ বন্ধু, তোর হিতৈষী দানার ষড়যন্ত্র এটা।"
নয়নার চোখ জ্বলে ওঠে, মাথা ঝাঁকিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, "না, বিশ্বাস করি না। আগে বল, আমার ভাই কোথায়?"
পাশের একটা ছেলেকে মোহন নির্দেশ দেয় বুবাইকে আনতে। মোহন কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে হাসতে হাসতে বলে, "দানা তোর হিতৈষী, তোর সাথে আসেনি কেন? তোকে একাই আমার কাছে পাঠিয়েছে মরার জন্য? (চুকচুক করে মোহন) ইসসস আজকে রাতে তুই শেষ হবি আর আমার প্রকল্প গুলো আমার হাতে চলে আসবে।"
নয়না চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখে, হয়ত দানাকেই খুঁজছে ওর চোখ। দুই চোখে ভয়ঙ্কর আগুন নিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, "তোমরা তো ওর মেয়েকে অপহরন করতে চেয়েছিলে তাই না? আর সেটা আমার হাত দিয়েই করাতে। এটা ওর মাথার উপজ কোনোদিন হতে পারে না মোহন, এই পরিকল্পনা সিমোনের মাথার উপজ।"
ঠিক তখনি একটা ছেলে বুবাইকে নিয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। বুবাইয়ের পেছন পেছন হাসতে হাসতে সিমোন ঘরের মধ্যে ঢুকে পরে। সিমোনকে এইখানে দেখে একদিকে দানা আর অন্যদিকে নয়না, দুইজনে অবাক হয়ে যায়। ওরা ভাবতে পারেনি সিমোন নিজে এইখানে আসবে।
বুবাইকে দেখে নয়না কেঁদে ওঠে, "আমার ভাইকে ছেড়ে দাও। তোমার কথা মতন আমি তোমার প্রকল্পের কাগজ পত্র সঙ্গে নিয়ে এসেছি আর নিজেও এসেছি। জানি তুমি আমাকে আজ রাতে শেষ করে দেবে। কিন্তু সত্যি বলছি বিমানের মৃত্যুর পেছনে আমি দায়ী নই।"
বুবাইকে ছেলেটা ছেড়ে দিতেই এক দৌড়ে দিদির কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওর মুখে শরীরে হাত বুলিয়ে স্নেহ করে জিজ্ঞেস করে, "কিছু করেছে তোমাকে সোনা?"
বুবাই মাথা নাড়িয়ে সিমোনকে দেখিয়ে কেঁদে কেঁদে বলে, "মেরেছে আমাকে।"
হিংস্র নয়নার চোখ থেকে জলের জায়গায় রক্ত ঠিকরে বেড়িয়ে আসে। প্রাণপণ শক্তি দিয়ে বুবাইকে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে মোহনের দিকে রক্ত চক্ষু হেনে জিজ্ঞেস করে, "একে কেন মেরেছো? একি ক্ষতি করেছে তোমাদের?"
সিমোন চিবিয়ে চিবিয়ে হাসতে হাসতে বলে, "না না এ কোন ক্ষতি করেনি তবে শালা মাদারজাত ভাই তোর। যখন থেকে এসেছে বোকাচোদা ছেলে শুধু দুদু খাবে দুদু খাবে বলে কাঁদছে। অত বড় ছেলেটা শেষে কিনা আমার বুকে হাত দেয়? কোন আস্পর্ধায় আমার বুকে হাত দেয়।" ওর দিকে পিস্তল উঁচিয়ে গর্জে ওঠে, "তোদের দুটোকেই আজকে শেষ করে দেব।"
নয়না চকিতে গোড়ালি থেকে দুটি পিস্তল একসাথে বের করে "দুম দুম" "দুম দুম" করে পর পর মোহনকে আর সিমোনকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। দুটো গুলি মোহনের বুক এফোঁড় ওফোঁড় করে বেরিয়ে যায়। সিমোনে কাঁধে লাগে দুটো গুলি। অতর্কিত হামলায় মোহন কিছু বুঝতে পারে না কিন্তু ততক্ষনে গুলি ওর পেট বুক ফুঁড়ে বেড়িয়ে গেছে। বাকি ছেলেগুলো হিংস্র নয়নার রক্ত চক্ষু দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। ক্ষুদ্ধ নয়নার পিস্তল ওদের দিকে তাগ করা, এক পা নড়লে গুলি ওদের বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে যাবে।
রক্তাক্ত মোহন খৈতান মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আর সিমোন চিৎকার করে, "নাআআআ....." মোহনকে জড়িয়ে ধরে। রক্তাক্ত স্বামীর মাথা কোলে তুলে সিমোন নয়নার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে চেঁচিয়ে ওঠে, "তুই একে গুলি করলি?" বলেই পাশে একটা লাঠির মতন কিছু ছিল সেটা হাতে নিয়ে নয়নাকে মারতে উদ্যত হয়।
হিংস্র ক্ষুদ্ধ নয়না ফুঁসতে ফুঁসতে বাকিদের দিকে পিস্তল তাগ করে মোহনের দিকে এগিয়ে যায়। নয়নার হাতে দুটো পিস্তল দেখে সিমোনের চেহারা আতঙ্কে রক্ত শূন্য হয়ে যায়। দানা চুপচাপ জানালা দিয়ে দেখে যায়, এর মধ্যে একজন শেষ, একজন আহত একজন ক্ষুদ্ধ। ক্ষুদ্ধ নয়নাকে যদি সিমোনে না মারে তাহলে ওর মৃত্যু অবশ্যাম্ভাবী। এখন কেন শক্তি, নাসির বলাইদের দেখা নেই, বারেবারে ঘড়ি দেখে দানা। এতক্ষণে ওদের এইখানে এসে যাওয়ার কথা।
মোহন আর সিমোনের দিকে এগিয়ে যায় নয়না। রক্তাক্ত মোহনের গলার ওপরে পা তুলে মাটির সাথে পিষে ধরে নয়না গর্জে ওঠে, "আমার বাবা আমার ভাইকে মারতে গেছিল তাকে পর্যন্ত ছাড়িনি। তোকে কেন ছেড়ে দেব?"
বলেই মোহনের মাথা লক্ষ্য করে আরো একটা গুলি করে, যার ফলে ওর মাথার খুলি গুঁড়িয়ে যায় আর সিমোনের কামিজ রক্তে ভেসে যায়।
মৃত মোহনের মাথা কোলে করে সিমোন আর্তনাদ করে ওঠে, "একি করলে তুমি? এই সব দানার ষড়যন্ত্র এইসব না হলে কি আর তোমার ভাইকে আমরা কিডন্যাপ করতে পারি? ওই আমাদের হাতে তোমার ভাইকে তুলে দিয়েছে।"
মোহন শেষ, সিমোন শেষ পর্যন্ত সত্য উজাগর করেই দিয়েছে। এইবারে দানাকে সামনে আসতেই হবে, নয়নার সম্মুখীন হতেই হবে, জানালার পেছনে আর লুকিয়ে থাকা নয়। তাল ঠুকে শেষ পর্যন্ত পিস্তল হাতে জানালা ভেঙ্গে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। জানালা ভাঙ্গার আওয়াজ শুনে নয়না, ছলছল চোখে একবার ওর দিকে তাকায়। দুই হাতের পিস্তল পাশের ছেলেগুলোর দিকে তাগ করে এগিয়ে আসে নয়নার দিকে।
বুবাইকে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে দিদিকে জড়িয়ে ধরে। ভাইকে দুই হাতে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে মাটিতে বসে পড়ে নয়না। পাশের ছেলে গুলো দানার দিকে এগিয়ে আসতে যায়, সঙ্গে সঙ্গে দানার হাতের পিস্তলের গুলিতে এক এক করে দুইজনে প্রান হারায়। বাকি দুইজন সেখান থেকে কোন রকমে পালিয়ে বাঁচে।
ছলছল চোখে নয়না এক হাতে পিস্তল এক হাতে ভাইকে জড়িয়ে একবার দানার দিকে তাকায়। তারপরে সিমোনের দিকে তাকিয়ে বলে, "আমাকে মারার ওর সম্পূর্ণ অধিকার আছে। আমি যদি ওর মেয়েকে অপহরন করতাম যেটা তোমরা করাতে চেয়েছিলে তাহলে কি ও আমাকে ছেড়ে দিত? কিন্তু আমার ভাই কেন সিমোন....." উত্তরের অপেক্ষা করে না নয়না। কথাটা শেষ করেই সিমোনের মাথা লক্ষ্য করে একটা গুলি করে ওর মাথার খুলি উড়িয়ে দেয়। প্রাণহীন সিমোন নিজের প্রাণহীন স্বামী মোহনের পাশে লুটিয়ে পড়ে।
দানার শ্বাস রুদ্ধ হয়ে যায়, এর পরের গুলি ওর মাথা অথবা বুক লক্ষ্য করেই হবে সেটা অজানা নয়। তবুও দানা নয়নার দিকে পিস্তল তাগ করে না। আহত হিংস্র বাঘিনী নয়নার চোখে চোখ রেখে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। দানাও জানে এই নারীকে এইখানে শেষ করে দেওয়া উচিত, নয়না বেঁচে থাকলে ওর সমুহ বিপদ, ওর পরিবারের সমুহ বিপদ।
নয়না আলতো মাথা ঝাঁকিয়ে ম্লান হেসে বলে, "সত্যি আমার মরে যাওয়াই উচিত, তাই না দানা? আমি বেঁচে থাকলে তুমি শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না। কিন্তু আমি মরে গেলে আমার ভাইকে কে দেখবে? তুমি দেখবে? না না....." বলতে বলতে বুবাইকে জড়িয়ে ধরে বুকের কাছে। বুবাই দিদিকে দুই হাতে জড়িয়ে কাঁধে মাথা গুঁজে দেয়। জল ভরা চোখে নয়না, একবার ভায়ের মাথায় চুমু খেয়ে ওর কানের ওপরে বন্দুক ধরে। স্মিত হেসে নয়না বলে, "আমি সত্যি ভীষণ পাপী, দানা। এই দেখো, আমি রুহিকে অপহরন করতাম আর অদৃষ্ট ঠিক আমার ভাইকে এদের হাতেই অপহরন করিয়ে সেই শাস্তি আমায় দিল। সমু আর সুমিতা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। এই পৃথিবীতে আমার জন্য আর কেউ অপেক্ষা করে নেই দানা। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি মরে গেলে আমার ভাইকে কেউ দেখবে না দানা।"
"দুম" একটা গুলি সোজা বুবাইয়ের মাথার খুলি ভেদ করে দেয়। দানার সর্বাঙ্গ কেঁপে ওঠে। বুবাই কেঁপে ওঠে, ফুটো মাথা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটে নয়নার সারা চেহারা আর জামা ভিজিয়ে লাল করে দেয়। চোখ বন্ধ করে মৃত ভাইকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে বেশ কিছুক্ষণ। দানা হাত থেকে পিস্তল ফেলে চুপচাপ স্থানুর মতন দাঁড়িয়ে থাকে। নয়না যে নিজের ভাইকে মেরে ফেলবে সেটা দানা স্বপ্নেও ভাবেনি। ভেবেছিল সিমোন অথবা মোহন হয়ত ওদের পৌঁছানর আগেই বুবাইকে মেরে ফেলবে।
ঠিক তখনি বাড়ির সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ায়। দড়াম করে সামনের দরজা খুলে শক্তি আকরামের সাথে পুলিস এসে প্রবেশ করে ঘরের মধ্যে। দানার শরীর পাথরের মতন শক্ত হয়ে যায়। মন থেকে চেয়েছিল নয়নার মৃত্যু হোক কিন্তু এইভাবে শেষ পর্যন্ত? দানা ধারনা করতে পারেনি যে নয়না নিজে হাতে নিজের ভাইকে হত্যা করবে। দানা ভেবেছিল সিমোন অথবা মোহনের হাতে নয়না আর তার ভাই খুন হবে আর কঙ্কনা আর নাসরিনের খুনে সিমোনেকে ফাঁসিয়ে দেবে। কিন্তু একা নয়না যে সবাইকে হত্যা করবে সেটা ওর ধারনার বাইরে ছিল, বিশেষ করে নিজে হাতে নিজের ভাইকে হত্যা করার ব্যাপারটা।
শক্তি ধীর পায়ে দানার পেছনে এসে দাঁড়িয়ে ওর হাতে মোবাইল তুলে দেয়। নিথর দানা, শক্তির হাত থেকে মোবাইল নিয়ে ওর দিকে তাকায়। শক্তি ইশারায় জানায় ফোনের অন্যপাশে মহুয়া। দানা মোবাইল তুলে মহুয়ার সাথে কথা বলে।
মহুয়া ওইপাশ থেকে চাপা গলায় বলে, "জিত নয়না আর বুবাইকে ফিরিয়ে নিয়ে এসো।"
দানা স্থম্ভিত হয়ে যায়। একি বলছে মহুয়া?
মহুয়া আবার দানাকে বলে, "জিত, প্লিজ নয়না আর বুবাইকে ফিরিয়ে নিয়ে এসো। যে করে হোক ফিরিয়ে নিয়ে এসো।"
নির্বাক দানা এক ভাবে সামনে বসা নয়নার দিকে তাকিয়ে থাকে। কোলে মৃত বুবাই, সারা শরীর ভাইয়ের রক্তে ভেসে গেছে নয়নার। দানা কোনোরকমে জিজ্ঞেস করে, "কি হয়েছে একটু বলবে?"
মহুয়া উত্তরে বলে, "তুমি যে করে হোক ফিরিয়ে নিয়ে এসো। বাড়ি এসো তারপরে সব বলছি।"
দানা শক্তির দিকে নিস্পলক নয়নে তাকিয়ে থাকে। শক্তি মাথা নাড়িয়ে কিছু বলতে চেষ্টা করে কিন্তু তার আগেই নয়না বলে ওঠে।
নয়না চোখ খুলে দানার দিকে তাকিয়ে বলে, "জানো দানা, জীবনে প্রচুর পাপ করেছি। সমু নেই, আমার ভালোবাসা আমার বন্ধু আমার সবকিছু - সেই রাতে হারিয়ে গেছে।" নিজের কানের ওপরে পিস্তল রেখে ছলছল চোখে বলে, "মহুয়া আর রুহিকে নিয়ে ভালো থেকো, দানা। আমি আমার সমুর কাছে চললাম।"
পুলিস ওর দিকে এগিয়ে যায় বিরত করতে। দানা হাত উঠিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, "দাঁড়াও, প্লিজ দাঁড়াও। সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।"
নয়না স্মিত হেসে জল ভরা চোখ বন্ধ করে মৃত বুবাইকে বুকের কাছে জড়িয়ে নিজের কানের ওপরে গুলি চালায় "দুম"। গুলিটা নয়নার মাথার খুলি ভেদ করে যায়, রক্তের ফিনকি বেড়িয়ে আসে। পুলিস, দানা আকরাম শক্তি সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। পুলিস কাউকেই বাঁচাতে পারে না।
দানা নিজের মাথা ধরে অনেকক্ষণ চুপচাপ ওইখানে বসে থাকে। ওর হাত থেকে মোবাইল মাটিতে পড়ে যায়। মোবাইলে মহুয়ার অস্ফুট আর্তনাদ শোনা যায়, "না......"
চারপাশে ছড়ানো মোহন খৈতানের প্রকল্পের কাগজ পত্র। শক্তি মনা এক এক করে সেই কাগজ পত্র গুলো উঠিয়ে ফাইল বদ্ধ করে। পুলিস নিজের কাজে লেগে পড়ে।
দানা কাঁপতে কাঁপতে মোবাইল তুলে মহুয়াকে বলে, "হঠাৎ কি হলো?"
মহুয়া চাপা আহত কণ্ঠে উত্তর দেয়, "নয়না, বড়দার মেয়ে, শায়ন্তনি। বড়দার ডান হাতের আঘাতের দাগ, কুড়ি বছর আগের ওর মেয়ের দেওয়া। বাড়ি আসো, বড়দা বসে আছেন, তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন।"
চোখের সামনে সব কিছু কেমন ঘোলাটে হয়ে যায় দানার। পুলিস ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব কিছু খুলে জানায়। সিমোনে আর মোহন, নয়নার ভাইকে অপহরন করেছিল। বুবাইকে ছাড়ার বদলে ওরা নয়নাকে খুন করতে চেয়েছিল আর চেয়েছিল দানার নামে যে সম্পত্তি আছে সেই গুলো হাতিয়ে নিতে। কিন্তু একা নয়না বাকি সবাইকে মেরে ফেলে আর সেটা চাক্ষুষ পুলিসের সামনেই হয়েছে। পিস্তলের কথা জিজ্ঞাসা করলে দানা জানায় ওর কাছে কোন পিস্তল ছিল না, নয়না কোথা থেকে পিস্তল যোগাড় করেছে সেটা ওর জানা নেই।
নয়নার মৃত্যু দানাকে বিশেষ নাড়া দেয়না তবে চোখের সামনে নিজের ভাইকে খুন করেছে সেটা দেখে দানা বেশ বিচলিত হয়ে ওঠে।
শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নয়না কি চেয়েছিল সেটাই বোঝা গেল না। অর্থ যশ প্রতিপত্তি, না প্রেম ভালোবাসা? কাকে বেশি ভালবাসতো নয়না ওরফে শায়ন্তনি বসাক? উত্তর আসে রক্তাক্ত লুটিয়ে থাকা শায়ন্তনি বসাকের ভগ্ন হৃদয় থেকে..... সমুদ্রকে ভালবাসতো শায়ন্তনি বসাক, আর অভিনেত্রী নয়না বোসের সুপ্ত ইচ্ছে ছিল রাজনৈতিক দলের নেত্রী হওয়ার। আর দূরে দানার বাড়িতে অপেক্ষায় এক পিতা, হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে কাছে পাবার আশায় হয়তো বসে আছে। এই ছলনাময়ী মহানগর প্রচুর আলেয়ায় ভরা। ওর বাড়িতে অপেক্ষারত এক আলোকের জ্যোতি, মহুয়া।
********** পর্ব ষোল সমাপ্ত **********
********** সমাপ্ত **********
Posts: 777
Threads: 0
Likes Received: 1,587 in 920 posts
Likes Given: 1,442
Joined: Jan 2021
Reputation:
187
পিনুরাম দাদার গল্পগুলো এক অমর সাহিত্যসৃষ্টি. তিনি চটি গল্পের ধরনই বদলে দিয়েছেন রগরগে উত্তপ্ত ঘটনার পাশাপাশি. এমন সাহিত্যই আশা করি দাদার নিকট হতে.
Posts: 1,886
Threads: 6
Likes Received: 6,325 in 1,869 posts
Likes Given: 2,644
Joined: Jun 2019
Reputation:
739
(17-01-2021, 10:54 AM)a-man Wrote: পিনুরাম দাদার গল্পগুলো এক অমর সাহিত্যসৃষ্টি. তিনি চটি গল্পের ধরনই বদলে দিয়েছেন রগরগে উত্তপ্ত ঘটনার পাশাপাশি. এমন সাহিত্যই আশা করি দাদার নিকট হতে.
অনেক অনেক ধন্যবাদ দাদা! বর্তমান গল্প "সুপ্তির সন্ধানে" আশা করি পড়ে দেখবেন !!!!!!
Posts: 777
Threads: 0
Likes Received: 1,587 in 920 posts
Likes Given: 1,442
Joined: Jan 2021
Reputation:
187
Posts: 6,494
Threads: 21
Likes Received: 6,994 in 3,702 posts
Likes Given: 12,097
Joined: Feb 2020
Reputation:
239
আর আমি যে অন্যের থ্রেডে অর্ধেকেরও কম পোষ্ট করে দুম করে থামিয়ে দেওয়া গল্পটার বাকি পর্বগুলো জোগাড় করে প্রতিদিন নিয়ম করে পোষ্ট করে সম্পূর্ণ করলাম সেই বেলা কেউ কিছুই বললো না !
Posts: 1,886
Threads: 6
Likes Received: 6,325 in 1,869 posts
Likes Given: 2,644
Joined: Jun 2019
Reputation:
739
(06-02-2021, 07:32 PM)Mr Fantastic Wrote: আর আমি যে অন্যের থ্রেডে অর্ধেকেরও কম পোষ্ট করে দুম করে থামিয়ে দেওয়া গল্পটার বাকি পর্বগুলো জোগাড় করে প্রতিদিন নিয়ম করে পোষ্ট করে সম্পূর্ণ করলাম সেই বেলা কেউ কিছুই বললো না !
এহে এমন বল না, তুমি তো এখন বাড়ির লোক, কত আর ধন্যবাদ জানাবো তাই ভালোবাসা জানাই !!!!!!
Reps Added +1
Posts: 8
Threads: 0
Likes Received: 4 in 4 posts
Likes Given: 4
Joined: Dec 2022
Reputation:
1
15-12-2022, 11:45 PM
(This post was last modified: 15-12-2022, 11:45 PM by Kiara Sanon. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
অসাধারণ একটা গল্প পড়লাম
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,442 in 27,681 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(06-02-2021, 08:20 PM)pinuram Wrote: এহে এমন বল না, তুমি তো এখন বাড়ির লোক, কত আর ধন্যবাদ জানাবো তাই ভালোবাসা জানাই !!!!!!
Reps Added +1
কত ন্যাকামো শালার , এখন তো আর ফোন ও তোলে না।
যাকগে , পিনুরামের একটা ইংরেজি গল্প দিচ্ছি ইংলিশ ফোরামে।
যারা ইচ্ছুক পড়তে পারেন , ব্যাটাচ্ছেলে ইংলিশ ফোরামটাও কাঁপাতো এক কালে !!!
•
Posts: 291
Threads: 10
Likes Received: 370 in 185 posts
Likes Given: 198
Joined: Oct 2021
Reputation:
41
(16-12-2022, 12:02 AM)ddey333 Wrote: কত ন্যাকামো শালার , এখন তো আর ফোন ও তোলে না।
যাকগে , পিনুরামের একটা ইংরেজি গল্প দিচ্ছি ইংলিশ ফোরামে।
যারা ইচ্ছুক পড়তে পারেন , ব্যাটাচ্ছেলে ইংলিশ ফোরামটাও কাঁপাতো এক কালে !!!
Retired korchea hoyto
•
Posts: 1,156
Threads: 0
Likes Received: 1,384 in 928 posts
Likes Given: 3,570
Joined: Apr 2022
Reputation:
146
এই একটা এমন গল্প যার উপর আরামসে একটা দুর্দান্ত ছবি বানানো যার। কি নেই এই গল্পে ।
আমাকে আমার মত থাকতে দাও
•
|