Posts: 340
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
পর্ব-০৬
রিয়া অসুস্থ। রাতে শরীরটা সামান্য গরম এবং হালকা মাথাব্যথা থাকলেও সে সেটাকে গুরুত্ব দেয় নি। ভেবেছিল ক্লান্তির কারণে এমন লাগছে। কিন্তু রাত না যেতেই, জ্বর বাড়তে থাকে, সেই সাথে মাথাব্যথা সহ্যের বাইরে চলে যায়।
সকালে শাহেদা বার কয়েকবার রিয়াকে ডেকেও কোনো সারা শব্দ না পেয়ে তার রুমে এসে দেখে রিয়ার এই অবস্থা। সে তাৎক্ষণিক রুদ্রমূর্তি ধারণ করে নানা কথা শোনাতে থাকে তাকে। কিন্তু যতই হোক নিজের পেটের সন্তান। সে রাগ ঝেড়ে ফেলে তখনি রিয়ার বাবাকে বলে ডাক্তার ডেকে আনে। রিয়াকে দেখে ডাক্তার অবশ্য বলেছে, "ভয়ের কিছু নেই। সামান্য জ্বর। ওষুধ দিয়ে যাচ্ছি, সময়মত খেলে দুই একদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবে।"
ডাক্তারের কথায় অবশ্য শাহেদা পুরোপুরি শান্ত হলো না। সে রিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করাবে এই নিয়ে রিয়ার বাবা মনোয়ার হোসেনের সাথে দুপুর থেকে তর্কাতর্কি করে যাচ্ছে।
মনোয়ার এক সময় বিরক্ত হয়ে বলল, "ডাক্তার-তো বলল, মেয়ের কিছু হয়নি। এতো অস্থির হয়ে যাচ্ছো কেনো?"
"অস্থির হবো না? বিকাল হয়ে গেলো, জ্বর কমার কোনো লক্ষণ নেই।"
"এতো অস্থির হলে হয়। একটু সময় তো দেওয়া লাগবে।"
"হাসপাতালে ভর্তি করলে সমস্যা কি?"
"কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু...!"
মনোয়ার কথা শেষ করলো না। সে জানে শাহেদাকে সে যতই বুঝাক সে শুনবে না। রিয়া তাদের একমাত্র সন্তান। অনেক সাধনার পরে তারা রিয়াকে পেয়েছে। রিয়া অসুস্থ হলে শাহেদা অস্থির হয়ে উঠে। যতক্ষণ রিয়া সুস্থ হবে না, ততক্ষণ তার এই পাগলামি কমবে না।
শাহেদা নানা কথা বলে গেলেও মনোয়ার সে সব কথায় উত্তর দিলো না। সে চুপচাপ শুনে গেলো শুধু। শাহেদা একটু শান্ত হলে সে বলল, "টেনশন করো না। এমন করলে হয়।"
শাহেদা হঠাৎ কেঁদে দিলো। সে বলল, "তোমার মনে নেই, ছোটবেলায় একবার জ্বর হয়ে মেয়েটা অবস্থা কতটা খারাপ হয়েছিলো। একমাস লেগেছিলো সুস্থ হতে। তারপর থেকে ওর জ্বর হলে আমার অনেক ভয় হয়। মনে হয়, এই বুঝি খারাপ কিছু হলো।"
"আহ! আবার কান্না শুরু করলে। এভাবে ভেঙে পড়লে হয়। আমাদের উচিত সবসময় শক্ত থাকা।" এটুকু বলে মনোয়ার খানিকটা এগিয়ে এসে শাহেদা বানুর পাশে বসল। তার হাত দুটো নিজের হাতের ভেতর নিলো। সেই স্পর্শে ভরসা ছিলো।
শাহেদা কান্না জড়ানো কন্ঠে বলল, "মেয়েটাকে একা একা কোথাও যেতে দিতে ইচ্ছে করে না আমার। এবারও কত বারণ করলাম। কিন্তু এমন ভাবে অনুরোধ করল। শেষমেশ ওকে আর না করতে পারলাম না।"
"মেয়ে তো আর ছোট নেই। বড় হয়েছে। সামনের বছরই লেখাপড়া শেষ হয়ে যাবে। বিয়ে দিতে হবে। তখন-তো আমাদের মেয়েকে ছাড়াই থাকতে হবে।"
মনোয়ারের এই কথায় শাহেদা আরো ভেঙে গেলো। সে বলল, "আমার মেয়েকে আমি কখনো বিয়ে দিবো না। আমার কাছেই রেখে দিবো সারাজীবন।"
"আচ্ছা। তাই হবে।" মনোয়ার এটুকু বলে শাহেদার কাঁধে হাত রেখে নিজের কাছে টেনে নিলো। সেও চায় না মেয়েকে চোখের আড়াল করতে। কিন্তু সে জানে, তা কখনোই সম্ভব না। শাহেদাও সেকথা জানে। কিন্তু কখনো কখনো মন কিছুতেই বুঝতে চায় না।
রিয়ার অসুস্থতার কথা শুনে পর দিন ইরিনা তাকে দেখতে এলো। সে এখন রিয়ার পাশে বসে আছে। এসেই রিয়াকে দেখে সে আঁতকে উঠল। মাত্র দুই দিনের জ্বরে কি অবস্থা হয়েছে মেয়েটার। চোখ ডুবে গেছে, মুখ শুকিয়ে গেছি।
রিয়াকে জ্বর যতটা না অসুস্থ করেছে, তারচে' বেশি তাকে অসুস্থ করে দিয়েছে তার মনের অসুস্থটা। সেই অসুখের কথা সে কাউকেই কিছু বলতে পারে না। এখন ইরিনাকেও বলবে না। ইরিনা সেদিন যা করলো সেটা তার কাছ থেকে রুদ্রকে আরও খানিকটা দূরে ঢেলে দিয়েছে। অবশ্য সে জানে, ইরিনা তার কথা ভেবেই রুদ্রের সাথে এই নিয়ে তর্কতর্কি করেছে। কিন্তু এর ফল এখন তাকেই ভোগ করতে হচ্ছে। সে আগে চাইলেই যখন তখন রুদ্রকে কল দিতে পারতো, মেসেজ দিতে পারতো, কিন্তু এখন? এখন সে কি করবে। তার এই জ্বরের ঘোরে সে রুদ্রের কথাই সবচে' বেশি ভেবেছে। যতবার রুদ্রের কথা ভেবেছে, ততবার রুদ্রকে বলা তার শেষ কথাগুলো মনে পড়েছে। রুদ্রের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করলেও সে এখন তাকে কল বা মেসেজ দিতে পারবে না। তাকে দেখতে ইচ্ছে করলে, সে তার সামনে যেতে পারবে না। এই কষ্টটা, এই অসুখটা তাকে আরো বেশি অসুস্থ করে দিয়েছে। এই যন্ত্রণা তাকে ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দিচ্ছে।
"তোকে দেখে মনে হচ্ছে, তুই দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ। কি অবস্থা করেছিস নিজের।" ইরিনা বলল।
"দুইদিন ধরে কিছুই খেতে পারছি না। মা সকাল দুপুর রাতে খাওয়া নিয়ে জোর করছে। কিন্তু মুখে কিছু দিলেই আমার বমি আসছে। খাবারের গন্ধ সহ্য হচ্ছে না।"
"ওষুধ খাচ্ছিস ঠিক মত?"
"না খেয়ে উপায় আছে? তুই তো জানিস আমার মা কেমন। আমি অসুস্থ হলে কতটা অস্থির হয়ে থাকে সারাক্ষণ।"
রিয়ার সাথে ইরিনা আরো খানিকটা সময় এটা সেটা নিয়ে গল্প করল। ইরিনা অবশ্য রিয়াকে কঠিন কিছু কথা বলতে এসেছিলো আজকে। কিন্তু রিয়াকে এভাবে দেখে সে আর সে-সব কথা মুখে আনলো না। আগে মেয়েটা সুস্থ হোক। তারপর সময় নিয়ে তাকে বুঝিয়ে কথাগুলো বলা যাবে। সন্ধ্যা হয়ে গেলে ইরিনা বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হলেও রুদ্র প্রথম দুইদিন ক্লাসে গেলো না। সে নিজেকে খানিকটা একা করে রাখলো। সেই ঝামেলার পরে সে কিছুদিন কারোই মুখোমুখি হতে চাচ্ছিলো না।
দুইদিন পর ক্লাসে যেতেই প্রথমে ফাহিমের সাথে দেখা হয়ে গেলো রুদ্রের। সে তাকে দেখেও না দেখার মত করে পাশ কাটিয়ে ক্লাসের শেষের দিকে একটা চেয়ারে বসল। এই মুহূর্তে সে ফাহিমের সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না। কিন্তু কিছুক্ষণ পর সে দেখল ফাহিম তার দিকেই হেঁটে আসছে। সে তাৎক্ষণিক তার ব্যাগ থেকে একটা বই বের করে সেটাতে মনোভাব দেওয়ার চেষ্টা করল।
ফাহিম হেঁটে এসে রুদ্রের চেয়ারের সামনে দাঁড়ালো। রুদ্র যে-ভাবে ছিলো সেভাবেই রইল। কিছুটা সময় দাঁড়িয়ে থেকে ফাহিম বলল, "রুদ্র!"
"উঁহু!" রুদ্র না তাকিয়ে উত্তর দিলো।
"সেদিনের ঘটনার জন্য আমি দুঃখিত।"
রুদ্র এবার বইয়ের থেকে চোখ সরিয়ে ফাহিমের দিকে তাকিয়ে নরম সুরে বলল, "সমস্যা নেই। "বন্ধুদের মধ্যে সময় অসময় দুই একটা কথা নিয়ে একটু মনমালিন্য হয়েই থাকে। সেটাকে ধরে রাগ করে থাকলে চলে না। আমি আমার কাজের জন্য তোর কাছেও দুঃখিত।"
"তুই রাগ করে নেই তো?"
"না, নেই।"
"আচ্ছা, থ্যাংকস।"
"ইটস ওকে।"
ফাহিম কথা শেষ করে বাইরে বেরিয়ে এলো। সে হেঁটে নিচে নামার সময় সিঁড়িতে ইরিনার সাথে দেখা হয়ে গেলো।
ফাহিমকে দেখেই ইরিনা বলল, "কোথায় যাচ্ছিস?"
"লাইব্রেরিতে যাচ্ছি।"
"ক্লাস করবি না?"
"হ্যাঁ, করবো। একটা বই নিছিলাম লাইব্রেরি থেকে সেটা দিয়ে আসছি।"
"আচ্ছা যা তাহলে।"
ফাহিম চলে যাচ্ছিল। সেই মুহুর্তে ইরিনা তাকে ডেকে বলল, "ফাহিম, রুদ্র আজকে এসেছে?"
"হ্যাঁ, ক্লাসে আছে।"
"রুদ্রের সাথে সেই ঘটনা নিয়ে কথা বলেছিস। নাকি পরে বলবি?"
"হ্যাঁ, বলেছি।"
"কি বলল?"
"সেই ঘটনার কারণে ও রেগে নেই।"
"যাক তাহলে ভালো। আচ্ছা যা তুই। তারাতাড়ি আসিস। ক্লাস শুরু হতে সময় বেশি বাকী নেই।"
"আচ্ছা।" এই বলে ফাহিম চলে গেলো।
ইরিনা ভেবেছিল ফাহিম আরো কিছু বলবে তাকে। কিন্তু সে বলেনি। সে গতকাল রাতে ফাহিমকে মেসেজ দিয়ে রুদ্রকে সরি বলতে বলেছে। সে জানে এটা বলাতে ফাহিম তার উপর কিছুটা অখুশি হয়েছে। কিন্তু সে এটাও জানে, দুই একদিন গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কারণ, ভালোবাসার মানুষের উপর মানুষ বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারে না। ফাহিম ও পারবে না তার বিশ্বাস।
ফাহিম লাইব্রেরিতে না গিয়ে ক্যান্টিনে চলে এলো। এই মুহুর্তে তার ক্লাস করার মত মন মানসিকতা নেই। ইরিনার কাছ থেকে সে এরকম ব্যবহার আশা করেনি। ইরিনা সবসময় তাকে অবহেলা করে। ছোট করে দেখে। এটা তার একটুও পছন্দ না। তবুও সে ভালোবাসে বলে সব মুখ বুঝে সহ্য করে নেয়। কিন্তু আর না। সে আর কারো কাছে ছোট হবে না।
এই মুহুর্তে ফাহিম নানা বিষয় নিয়ে ভাবছে, আর রাগে টগবগিয়ে ফুলছে। তার মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেলো কয়েক মিনিটের মধ্যেই। সে ক্যান্টিনে বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারল না। সেখান থেকে উঠে সোজা তার রুমের দিকে রওনা দিলো। সেই ঘটনার জন্য রুদ্রকে সরি বলতে বলার কারণে ইরিনার প্রতি তার রাগ হচ্ছে না। সে এমনিতেই রুদ্রকে সরি বলত। কিন্তু তার রাগ হচ্ছে অন্য সব কারণে। সেই ফাস্ট ইয়ার থেকে সে ইরিনাকে পছন্দ করে এবং সেকেন্ড ইয়ার থেকে সে ইরিনাকে ভালোবাসে। তাকে ভালোবাসার পর সে এই দুই বছরে কতবার নিজের ভালোবাসার প্রকাশ করেছে। কিন্তু কখনো ইরিনা সরাসরি তাকে কোনো উত্তর দেয় নি। আবার অপছন্দ করে সেটাও কখনো বলেনি। ইরিনার এই দ্বিধান্বীত থাকাটা ফাহিমের আর পছন্দ হচ্ছে না। কতদিন সে অপেক্ষা করবে। এইবার সে এই দ্বিধাহীন সম্পর্কে একটা সমাপ্তি চায়। সেটা সুন্দর হোক কিংবা অসুন্দর তাতে তার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এভাবে সে আর থাকতে চায় না। মানুষ একসময় বিরক্ত হয়েই যায়।
ক্যাম্পাস থেকে ফাহিমের মেসে হেঁটে যেতে বেশি সময় লাগে না। কিন্তু তার এই মুহুর্তে হাঁটতে ইচ্ছে করছে না বলে একট রিকসা নিলো। সে রিকসায় বসে ইরিনাকে মেসেজ করল, "ডু ইয়উ লাভ মি ওর নট?" মেসেজটা সেন্ড করে সে আরেকটা মেসেজ লিখল, "যদি ভালোবাসিস তাহলে সরাসরি উত্তর দিবি। আর যদি ভালো না বাসিস তাহলে সেটাও সরাসরি বলে দিবি। আমি হ্যাঁ কিংবা না এর মাঝে থাকতে চাই না। এটা আমাকে খুব বিরক্ত করছে।" এই মেসেজটাও সে সেন্ড করে বেশ কিছুক্ষণ পরে সে আরো একটা মেসেজ লিখল, "যদি আমাকে পছন্দ না করিস তাহলে সেটা সরাসরি বলে দে আমাকে, তোর সামনে আর কখনো আমি ভালোবাসা নিয়ে দাঁড়াবো না।"
দিন চলে গিয়ে রাত হয়ে গেলেও ইরিনার কোনো উত্তর এলো না। ফাহিম ধরেই নিলো ইরিনা তাকে আসলে ভালোই বাসে না। এতদিন সে শুধু আমাকে ব্যবহার করছে। ফাহিমের হঠাৎ রাগটা চলে গেলো। সে আর ইরিনার উপর রেগে নেই। সে এখন মুক্ত। সে আর কোনো দ্বিধাহীন সম্পর্কে নেই।
ফাহিমের রাতটা খুব বিচ্ছিরি ভাবে কাটলো। কিছুতেই তার ঘুম হলো না। সবকিছু নিয়ে সে খুব ডিপ্রেশন অনুভব করল। সে আজ থেকে আর ইরিনাকে ভালোবাসবে না। সে যতই নিজেকে এটা বলে বোঝাক তার মনের একটা অংশ কিছুতেই এই সত্যটা মেনে নিতে পারছে না।
সকাল হতেই ফাহিম ব্যাগ-ট্যাগ গুছিয়ে রেডি হলো গ্রামে যাবে বলে। অনেকদিন গ্রামে যাওয়া হয় না। সে ভেবেছিল সেমিস্টার ব্রেকে যে এক সপ্তাহ বন্ধ পেয়েছে সেই এক সপ্তাহ সে গ্রামে থাকবে। সেই কারণে রুদ্র তাকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বললেও সে সরাসরি না করে দেয়। কিন্তু যখন সে শুনে ইরিনা যাচ্ছে, সে আর নিজেকে বোঝাতে পারে নি। বাড়ি যাওয়া বাদ দিয়ে সে তাদের সাথে চলে যায়।
ফাহিম ভোরেই বাড়ির যাওয়ার উদ্দেশ্যে মেস থেকে বেরিয়ে গেলো। তার গ্রামের বাড়ি খুলনা। সে সায়দাবাদ থেকে বাসে উঠলো। গ্রামে সে পৌছালো একটার দিক। কিন্তু লন্স থেমে নামার সময় তার ফোন চুরি হয়ে গেলো। সে অন্যমনস্ক ছিলো বলে খেয়াল করেনি। বাসে উঠে যখন সে পকেটে হাত দেয় তখন দেখে পকেটে তার ফোন নেই। তখনি বাস ছেড়ে দিবে। সে একবার ভেবেছিলো, নেমে যাবে। কিন্ত পরক্ষণেই ভাবলো নেমে কোনো লাভ নেই। চোর তার জন্য বসে নেই যে সে গেলে তাকে ফোন ফেরত দিবে। সে পাশের লোকটার কাছ থেকে ফোন নিয়ে তার নিজের নাম্বারে দুইবার কল দিলো কিন্তু তার ফোন বন্ধ।
ফোন চুরি হয়ে যাওয়াতে প্রথম কিছুটা সময় তার খারাপ লাগলেও অদ্ভুত ব্যাপার এখন তার খারাপ লাগছে না। এমনিতেই অনেক পুরনো একটা ফোন। সে চাচ্ছিলো নতুন একটা কিনতে কিন্তু কেনা হয়ে উঠছিল না। নতুন ফোন কেনার জন্য সে প্রতি মাসে তার টিউশনির টাকা থেকে কিছু টাকা জমিয়েছে। এছাড়াও আরেকটা কারণে তার খারাপ লাগছে না। সেটা হলো, একটা দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। যত নষ্টের মূল এই ফোন। সে যে কয়দিন গ্রামে থাকবে সেই কয়দিন ফোন ব্যবহার করবে না। একবারে ঢাকা এসে নতুন ফোন নিয়ে সিম উঠাবে। ততদিনে সে একাই থাকতে চায়। একান্ত একা।
ফাহিম ঢাকা আসলো ছয়দিন পর। সে ভেবেছিল আরো দুই একদিন গ্রামে থাকবে কিন্তু যখনই তার বাবা রহমত মাস্টার শুনলো তার ক্লাস খোলা সে তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে ঢাকা পাঠিয়ে দিলো। অবশ্য ফেরার পথে হাজার দশেক টাকা তার হাতে গুজে দিয়ে তাকে একটা ফোন কিনে নিতে বলল। ফাহিম তার বাবাকে বলেছিল, "তার টাকার দরকার নেই। সে টিউশনির টাকা জমিয়েছে।" কিন্তু তার বাবা সেটা শুনলো না। সে তাকে বলল, "এমনিতেই তোকে তেমন কিছু দিতে পারিনা। এছাড়া তুই কষ্ট করে টিউশনি করিয়ে প্রতি মাসে কিছু হলেও বাসায় টাকা পাঠাস। তাই এই টাকাটা তোর জন্যই জমিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তোকে কিছু একটা কিনে দিবো।" বাবার এই কথার পরে সে আর কোনো কথা বলতে পারলো না। টাকাগুলো সে নিলো। বাসে আসতে আসতে ঠিক করল এবার সে ভালো একটা ফোন নিবে।
ফাহিম মেসে আসতেই সবাই তাকে দেখতে তার রুমে চলে এলো। সে খানিকটা অবাক হচ্ছে। কি এমন হয়েছে, যে সবাই তার আসার খবর পেয়ে এভাবে দেখতে আসছে। কিছুক্ষণ পর সবার এরকম উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ জানতে পারলো তার রুমেটের কাছ থেকে। সে বলল, "তোর কোনো খোঁজ নেই। কোথায় গেলি আমাকে জানিয়ে গেলি না। সকালে উঠে দেখি তুই নেই। ভাবলাম হয়তো টিউশনিতে গেছিস। তারপর পরের দিন তোর খোঁজ করতে তোর বন্ধুরা এলো। তোকে ফোনে পাচ্ছে না বলে সরাসরি মেসে এলো তোর খোঁজ নিতে। সবাই-কে তোর কথা জিজ্ঞেস করলো। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারলো না। আমি তখন রুমে ছিলাম না। আমি এসে শুনেই তোকে কল দেই। তোর ফোন বন্ধ। সবাই-ই তোকে কল দিতে থাকল। কেউ পেলো না। তারপর পরের দিন সকালেও একটা ছেলে তোর খোঁজে এলো। সেদিন বিকাল এবং রাতেও এলো৷ প্রতিদিন কেউ না কেউ তোকে জরুরি ভাবে খুঁজতে আসতে থাকল। তোর খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকল। আমরা তোকে বারবার ফোন করেও ব্যর্থ হচ্ছিলাম। অহ, যে ছেলেটা প্রায়ই তোর খোঁজে আসতো আজকে সকালেও এসেছিলো একবার।"
"কে এসেছিল? নাম বলেছে?"
"হ্যাঁ, রুদ্র নাম। রুদ্র ছাড়াও তোর ক্লাসের অনেকে তোকে বারবার খুঁজতে এসেছিল। কিন্তু রুদ্র ছেলেটা প্রায় প্রতিদিন আসতো।"
"আমি বাড়ি গেছিলাম। আর যাওয়া পথে আমার ফোন চুরি হয়ে যায়। এই কারণে নাম্বার বন্ধ ছিলো।"
"আমি একদিন পরেই বুঝেছিলাম। প্রথম লক্ষ করিনি। পরে খেয়াল করলাম তোর ব্যাগ নেই। কাপড়চোপড় নেই। তখন ভাবলাম, তুই হয়তো বাড়ি গেছিস। তবুও কোনো ভাবে তোর খোঁজ পাচ্ছিলাম না। তারচেয়ে বড় কথা সবাই তোকে খুঁজতে এভাবে আসছিল। তাই আমি সহ মেসের সবাই টেনশনে পড়ে গেলাম। সবাই ভাবছিল খারাপ কিছু হলো কি না তোর। যাক তুই সুস্থ আছিস এটাই স্বস্তির।"
ফাহিম বুঝে উঠতে পারছে না রুদ্র কেনো তাকে এতোবার খুঁজতে আসবে। কি কারণে? সে তখনো এটাকে অমলে না নিয়ে তার পরনে জামাপ্যান্ট পরিবর্তন করে গোসল সেরে লম্বা একটা ঘুম দিলো।
চলবে....
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 340
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
পর্ব-০৭
নদী বেলকনিতে বসে একটা থ্রিলার বই পড়ছিল। এই মুহুর্তে একটা গুরুত্বপূর্ণ চ্যাপ্টারে আছে সে। ইমন নামে একটা লোক, তার সামনে বসে থাকা সাদা শার্ট পরা লোকটিকে অনুরোধ করছে তাকে যেনো সে এই মুহুর্তে মেরে ফেলে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, গত দুইদিন এই লোকটাই তাকে না মারার জন্য কম হলেও কয়েকশো বার অনুরোধ করেছে। তখন লোকটা তাকে বলেছিল, "আপনার ভয় নেই। আমি কাউকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হত্যা করি না। যতক্ষণ না কেউ তাকে হত্যা করার জন্য আমাকে বলবে, ততক্ষণ আমি তার কোনো ক্ষতিই করবো না।"
"প্লিজ, আমাকে মেরে ফেলুন। প্লিজ।" ইমন নামে লোকটা সাদা শার্ট পরা লোকটাকে আবার অনুরোধ করল। সাদা শার্ট পরা লোকটা অনেকক্ষণ কিছু একটা ভেবে টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা সাদা কাগজ এবং একটা কলম বের করে লোকটার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, "আমি আপনাকে আগেও বলেছি, আমি আপনাকে হত্যা করবো না যতক্ষণ না আপনি নিজে আপনাকে হত্যা করার জন্য আমাকে অনুরোধ করছেন ততক্ষণ।"
ইমন বলল, "আমাকে কি করতে হবে?"
সাদা শার্ট পরা লোকটা বলল, "এই কাগজে আপনি আপনার নাম এবং ঠিকান লিখে লিখুন, আপনি আত্মহত্যা করতে চান কিন্তু সাহস না থাকার কারণে করতে পারছেন না। তাই আপনি আমাকে অনুমতি দিচ্ছেন যাতে আমি আপনার ইচ্ছে পূরণ করি। এবং আপনার মৃত্যু জন্য কেউ দ্বায়ী নয়।"
ইমন আর কোনো কিছু ভাবতে চায় না। সে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চায়। তাই সে আর কিছু না ভেবে কাগজটা তার কাছে টেনে নিয়ে সাদা শার্ট পড়া লোকটার কথামতো সেখানে লিখল, "আমি ইমন। উত্তরা ১৬/এ নাম্বার বাসায় দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে থাকি। আমি সজ্ঞানে আমাকে হত্যা করার অনুমতি দিচ্ছি। আমার মৃত্যু জন্য কেউ দ্বায়ী নয়।"
ইমন লেখাটা শেষ করে কাগজটা তার সামনে বসে থাকা সাদা শার্ট পরা লোকটা দিকে এগিয়ে দিলো। লোকটা কাগজের টুকরোটা নিয়ে ভাজ করে তার পকেটে রাখতে রাখতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। পাঁচ মিনিট পরে সে আবার ঘরে ঢুকল। তার ডান হাতে একটা দঁড়ি, বাম হতে একটা ধারালো কুড়াল। সে এগিয়ে এসে দঁড়িটা দিয়ে ইমনের হাত পা চেয়ারের সাথে শক্ত করে বাঁধলো। তারপর ধারালো কুড়াল দিয়ে প্রথমে ইমনের ডান হাতের রগটা কেটে দিতেই লাল রক্তে ভেসে যেতে লাগল চেয়ার, টেবিল, ঘরের মেজেতে থাকা সাদা কার্পেট।
লাল রক্ত দেখে সাদা শার্ট পরা লোকটার মুখে বিচ্ছিরি একটা হাসি ফুটে উঠলো। সে পরক্ষণে উন্মাদ হয়ে গেল। কুড়ালে লেগে থাকা লাল রক্তটুকু লোকটা তার জিহবা দিয়ে চেটে রক্তের স্বাদ নিলো। এবং সেই সাথে খিলখিল করে পাগলের মত হাসতে থাকল।
নদী এই পর্যন্ত পড়ে বইটা বন্ধ করল। বইতে দেওয়া বর্ণনা পড়ে তার গাঁয়ের লোম সব দাঁড়িয়ে গেছে। ঠিক সেই সময় সে রাস্তার দিকে তাকাতেই আলিফকে হেঁটে আসতে দেখল। আলিফের পরনে একটা সাদা শার্ট। হাতে একটা ব্যাগ। আলিফ গেটের কাছে আসতেই চতুর্থ তালার বেলকনি থেকে নদী স্পর্শ দেখতে পেলো আলিফের সাদা শার্টে রক্ত লেগে আছে। এই দৃশ্যটা দেখতেই বইতে বর্ণনা করা সাদা শার্ট পরা সিরিয়াল কিলারের কাল্পনিক মুখটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠল। আলিফ!
তাৎক্ষণিক নদীর মনে হলো আলিফই বইয়ের সেই সিরিয়াল কিলার। সে মাত্রই একটা লোককে নির্মম ভাবে হত্যা করে এসেছে। পরক্ষণেই সে নিজেকে বোকা ভেবে আনমনে হেসে দিলো। সে কি সব ভাবছে। এই সব উদ্ভব সিরিয়াল কিলার সম্পর্কিত বই পড়ে দিনদিন সে পাগল হয়ে যাচ্ছে। এবং আজকাল সে সবাইকে সিরিয়াল কিলার ভাবতে শুরু করেছে। সে বেলকনি থেকে উঠে রুমে চলে গেলো। তারপর বইটা টেবিলে রেখে দিয়ে ফোন হাতে নিয়ে শুয়ে পড়ল। কিন্তু তার মাথা থেকে সাদা শার্ট পড়া সেই লোকটা গেলো না। সেই সাথে আলিফকে ওমন করে দেখার দৃশ্যটাও গেলো না।
বিকালে নদী আলিফকে মেসেজ দিলো, "ফ্রি আছেন?"
আলিফ মেসেজ পাওয়ার সাথে সাথে রিপ্লাই করল, "হ্যাঁ!"
"আমাকে একটু সময় দিতে পারবেন? এই ঘন্টাখানেকত মত।"
"হ্যাঁ পারবো। কোনো সমস্যা নেই।"
"জিজ্ঞেস করবেন না, কেনো সময় চাচ্ছি?"
"জিজ্ঞেস করার কি আছে। হয়তো আপনার কোনো একটা কাজে আপনাকে সাহায্য করতে হবে। আপনাকে সাহায্য করতে পারলে বরং আমি খুশিই হবো।"
"আপনি কি করে আমাকে এভাবে বুঝে ফেলেন?"
নদীর এই মেসের উত্তর আলিফ তাৎক্ষণিক দিতে পারলো না। প্রশ্নটা কঠিন না কিন্তু উত্তরটা অতোটা সহজ নয়।
আলিফের রিপ্লাই না পেয়ে নদী আবার মেসেজ দিলো, "কি হলো? প্রশ্নটা কি একটু কঠিন হয়ে গেলো?"
"না, আসলে আমিও ঠিক জানিনা। কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ মনে হয় আপনি এখন এটা বলতে চাচ্ছেন কিংবা এটা করতে চাচ্ছেন। বলতে পারেন অনুমান করে বলি এবং সেটা প্রায়ই আপনার ক্ষেত্রে সঠিক হয়ে যায়।"
"বাহ! আপনার সিক্স সেন-তো অনেক ভালো।"
"কখন সময় দিতে হবে। মানে কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?"
"আমি বিশ মিনিটের মধ্যে নিচে নামছি। আমি আসুন। দেখা হলে বলব।"
"আচ্ছা, আমি রেডি হয়ে এখনই নামছি।" মেসেজটা সেন্ড করে আলিফ কিছুক্ষণ বসে রইল। নদীর শেষ মেসেজটা সে আবার পড়ল, "দেখা হলে বলব।" সে জানে নদীর সাথে দেখা হলে তার সাথে মেসেজেই কথা বলতে হবে। এই কথাটা ভাবতেই সামান্য একটু মনটা খারাপ হলো কিন্তু সে সেই সব চিন্তা বাদ দিয়ে দ্রুত রেডি হতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
নদী এবং আলিফ রিকসায় বসে আছে। তাদের গন্তব্য বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্স। কাল নদীর মায়ের জন্মদিন। সে চাচ্ছে তার মায়ের জন্মদিনে তাকে একটা মোবাইল ফোন উপহার দিতে। সেজন্য দীর্ঘ দিন ধরে সে টাকা জমিয়েছে। নদী ঘরে বসে আউটসোর্সিং করে নিজের খরচ নিজেই চালায়৷ নিজের খরচের থেকে প্রতি মাসে সে কিছু টাকা জমিয়ে রাখতো তার মাকে একটা মোবাইল উপহার দিবে বলে। রিকসায় উঠেই আলিফের সাথে নদী এই কথাগুলো ছাড়াও তার অনেক কিছু আজ সে শেয়ার করেছে। আলিফের প্রতি নদীর বিশ্বাসটা দিনদিন বাড়ছে। নদী ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না কেনো এই মানুষটাকে এতোটা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে সে।
শহরের জ্যামে তারা রিকসায় বসে আছে। দশ মিনিটের মত রিকসা এক বিন্দুও সামনে এগোইনি। নদী কিংবা আলিফের আজকে এই জ্যামের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। তারা দুইজনেই চাচ্ছে আরো কিছুটা সময় তারা এভাবেই জ্যামের কারণে রিকসায় বন্দী হয়ে থাকুক।
"আপনি কখনো কাউকে হত্যা করার কথা ভেবেছেন?" নদীর এই মেসেজটা পড়ে আলিফ মোবাইলের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে নদীর দিকে তাকাতেই তাদের চোখাচোখি হলো। সে নদীর চোখ দেখেই বুঝলো, নদী কৌতুহলী এবং সে এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাচ্ছে।
"হ্যাঁ অনেকবার ইচ্ছে করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এখনো কাউকে হত্যা করতে পারিনি, তবে ভবিষ্যতে ইচ্ছে আছে। এখন পর্যন্ত আমার অতো সাহস হয়ে ওঠেনি।" আলিফ মেসেজটা সেন্ড করলো কিন্তু সে ভেবে পাচ্ছে না হঠাৎ নদী তাকে এই রকম একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার কারণ কি। সে আবার নদীর দিকে তাকালো। নদী তার দিকেই তাকিয়ে আছে। সে লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিলো। সে কেনো এই কাজটা করলো সে নিজেই বুঝতে পারলো না।
"ভবিষ্যতে কাউকে হত্যা করার ইচ্ছে আছে আপনার?"
নদীর এরকম অদ্ভুত প্রশ্নে আলিফ কিছুটা দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ল। সে তো কথাটা মজা করে বলেছে মাত্র। কিন্তু নদী কি সেটা সিরিয়াস ভাবে নিলো? তাছাড়া কি এমন হয়েছে যে কারণে আজ নদী তাকে এরকম প্রশ্ন করছে।
"কি হলো উত্তর দিচ্ছেন না কেনো?"
"এখনো জানিনা। কিন্তু ভবিষ্যতে কাউকে হত্যা করবো না এটার নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। মানুষ কোনো কিছুর নিশ্চয়তা দিতে পারে না। এমনও হতে পারে যে আপনাকে দিয়েই আমার খুনের হাতেখড়ি হলো।"
আলিফ মজা করে মেসেজটা দিয়ে নদীর দিকে তাকালো তার মুখের অভিব্যক্তি দেখার জন্য। কিন্তু সে চরম আশ্চর্য হলো। নদীর মুখ মলিন হয়ে আছে। চোখ দু'টো ভীতু। সে বুঝে উঠতে পারছে না কি এমন হয়েছে। সে আবার মেসেজ দিলো, "আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো? আপনি কি সত্যিই ভেবে বসেছেন আপনাকে আমি মেরে ফেলবো? আমি শুধু মাত্র মজা করে মেসেজটা দিয়েছি। ভয় পাচ্ছেন নাকি আমাকে?"
সামান্য কিছুটা সময় লাগল নদীর ঠিক হতে। সে বলল, "আপনাকে কেনো ভয় পাবো? হয়েছে কি জানেন...!" দুপুরের সেই ঘটনার কথা খুলে বলল নদী।
নদীর মেসেজ পড়ে আলিফ হাসি থামাতে পারছে না। সে হেসেই যাচ্ছে। নদীর রাগ হচ্ছে আলিফ তাকে নিয়ে এভাবে হাসছে বলে। সে বলল, "আপনি এভাবে হাসছেন কেনো? আসলে, আপনাকে ওভাবে দেখে আর তার আগ মুহুর্তে বইতে ওভাবে খুনির বর্ণনা পড়ে এক মুহুর্তে জন্য মনে হয়েছিল আপনি বইয়ের সেই সিরিয়াল কিলার।"
"আমি সিরিয়াল কিলার!" আলিফ হাসছে। নদী মন খারাপ করে অন্য দিকে ঘুরে তাকালো। নদী মন খারাপ করেছে দেখে সে মেসেজ দিলো, "আচ্ছা, সরি। আর হাসবো না। কিন্তু আমি সিরিয়াল কিলার আপনি এটা কি করে ভাবলেন? আমার মত একটা ভীতু কি-না সিরিয়াল কিলার হবে!"
"আচ্ছ, বললাম তো ভুল হয়েছে। কিন্তু আপনার শার্টে রক্ত লেগে ছিল কেনো?"
"আমি ক্লাস করে সবেমাত্র বের হয়েছি। সেই সময় মা আমাকে ফোন করে বলে বাসায় আত্মীয় এসেছে। ফেরার পথে আমি যেনো অবশ্যই বাজার থেকে মাংশ কিনে আনি। আমি মাংশ কিনতে গেলাম, কসাই মাংশ কাটছে। আমি পাশে দাঁড়িয়ে আছি। মোটামুটি ভীড়। হঠাৎ এক লোক এসে আমার শরীরে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। তারপর আর কি, তার হাতে পলিথিন ব্যাগ ছিল। ব্যাগটা এসে আমার জামার উপরে পড়তেই সাদা জামাটা লাল রক্তে রক্তাক্ত হয়ে গেলো।" মেসেজটা পাঠিয়ে সে আরেকটা মেসেজ লিখল, "ওটা মানুষের রক্ত ছিলো না। আপনি যেরকমটা ভেবেছেন।"
তারা বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্স পৌঁছে গেছে। শো-রুম ঘুরে ঘুরে নদীর সাথে আলিফ নানা ফোন দেখছিল। একটা শো-রুমে গিয়ে সেখানে ফাহিমকে দেখে আলিফ খানিকটা অবাক হলো। ফাহিম এখানে? সে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। গত পাঁচ দিন ফাহিমের খোঁজে রুদ্রের সাথে সে কয়েকবার তার মেসে গিয়েছে। ফাহিম সেখানে ছিলো না। তার ফোন বন্ধ। কোনো ভাবেই যার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না সে কি-না এখন তার চোখে সামনে।
ফাহিমের সামনে গিয়ে আলিফ বলল, "ফাহিম, তুই এখানে?"
আলিফকে এতোটা হকচকিয়ে যেতে দেখে ফাহিমও খানিকটা অবাক হলো। সে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে। সে বলল, "হ্যাঁ, কেনো? এখানে আসা কি বারণ?"
"আরে ধুর আমি কি সেটা বলছি? আসলে এই কয়দিন তোকে খুঁজতে খুঁজতে আমরা সবাই হয়রান। কোথাও তোর কোনো খোঁজ পাচ্ছিলাম না। তারপর তোর ফোন বন্ধ। তাই এই মুহুর্তে তোকে এখানে দেখে খানিকটা অবাক হয়েছি। সেকারণেই জিজ্ঞেস করলাম।"
ফাহিম কিছুটা সময় নিয়ে আলিফকে সব কথা খুলে বলল, কেনো তাকে কেউ খুঁজে পাচ্ছিল না। আলিফ সবটা শুনে বলল, "তুই এখনো কিছু শুনিস নি?"
"আমি কি শুনবো?" ফাহিম এবার খানিকটা বিস্ময় প্রকাশ করল।
"ইরিনার ব্যাপারে!"
"ইরিনা ব্যাপারে! কি হয়েছে ইরিনার।"
ইরিনার কথা শুনে ফাহিম বুঝে উঠতে পারছে আসলে কি হয়েছে। তার চোখে মুখে জিজ্ঞাস্য ভাব ফুটে উঠেছে।
"ইরিনা এক্সিডেন্ট করেছে। ও এখন হাসপাতালে ভর্তি আছে। সেই কারণেই তো তোকে খবরটা দেওয়ার জন্য তোর এতো খোঁজাখুজি। এছাড়া ইরিনা তোকে বারবার কল দিয়ে পাচ্ছিল না। তাই ও খুব ভয় পেয়ে গেছিল, তোর আবার কিছু হলো কি-না। তোর সাথে বারবার দেখা করার কথা বলছিল। তাই রুদ্র, সাত্যকি, আমিসহ তোদের ক্লাসের কয়েকজন এই কয়দিন তোকে নানা জায়গায় খোঁজার চেষ্টা করেছি।"
"কি বলিস? কীভাবে কি হয়েছে?" ফাহিমের মুখের অভিব্যক্তি এক মুহুর্তে পরিবর্তন হয়ে গেলো। চোখদুটো হঠাৎ কেমন গভীর হয়ে উঠল। সেখানে ঢেউ শুরু হয়েছে। ফাহিম নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করল।
আলিফ বলল, "চিন্তা করিস না অতো গুরুতর না।" ফাহিমকে আশ্বস্ত করল আলিফ।
"কিন্তু, কীভাবে কি হয়েছে? গুরুতর না হলে ও হাসপাতালে ভর্তি কেনো?" ফাহিম সবটা শোনার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
"আমি যতটুকু জানি সেটা হলো, ক্যাম্পাসের ভেতরকার একটা রাস্তার পাশ দিয়ে ইরিনা একা-একা হাঁটছিল। হঠাৎ ও রাস্তা পার হতে গেলে পিছন থেকে একটা বাইক চলে আসে। অবশ্য এখানে ইরিনারও ভুল ছিল। কারণ ও নিজে বলেছে, ও কিছুটা অন্যমনস্ক ছিল। খেয়াল করেনি। আশেপাশে না দেখে হঠাৎ রাস্তা পার হতে গিয়ে ভুলটা হয়েছে।"
"ইরিনার কি অবস্থা এখন?" ফাহিমের কন্ঠটা ক্রমশ ভাড়ি হয়ে উঠছে।
"ইরিনা এখন মোটামুটি সুস্থ। কিন্তু ওর পা মচকে গেছে, সে কারণে ডাক্তার সপ্তাহ খানেক হাসপাতালে থাকতে বলেছে। যদি পায়ের অবস্থার উন্নতি হয় তাহলে পরের শনিবারে ডিসচার্জ করে দিবে।"
"এছাড়া অন্য কোনো সমস্যা হয়নি?"
"কিছু জায়গায় আঘাত পেয়েছে। চামড়া ছিলে গেছে। এছাড়া ডান হাতের কবজিতে কিছুটা আঘাত পেয়েছে। তবে সেটা তেমন গুরুতর না।"
"গুরুতর না, গুরুতর না বলছিস কেনো বারবার। ঠিক কি হয়েছে আমাকে বল? আর বাইকে যে ছিল, তার অবস্থা কি?"
"দুইজনই কম বেশি আঘাত পেয়েছে। ইরিনা হঠাৎ রাস্তায় চলে আসাতে বাইক চালক ইরিনাকে দেখে তাৎক্ষণিক ব্রেক করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। সে বাইক নিয়ে পড়ে যায়। পিচের রাস্তা, সেই কারণে তার কনুই, হাঁটুসহ নানা জায়গার মাংশ উঠে গেছে। এছাড়া তার কি হয়েছে আমি ঠিক জানিনা।"
আলিফের কাছ থেকে হাসপাতালে ঠিকানা নিয়ে ফাহিম সেই মুহুর্তেই হাসপাতালে দিকে যাত্রা শুরু করল। সে যে এখানে একটা ফোন কিনতে এসেছিল সে তা ভুলেই গেলো আলিফের কাছ থেকে ইরিনার খবর শুনে। যে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে পৌঁছাতে চাচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব।
"কে ছিল?" ফাহিমের চলে যাওয়া দিকে আলিফ তাকিয়ে ছিল। সে নানা কথা ভাবছিল। সেই মুহুর্তে নদীর স্পর্শ পেয়ে সে ঘুরে তাকাতেই দেখল, নদী তার ফোনটা তার দিকে ধরে রেখেছে। ফোনের নোট প্যাডে একটা প্রশ্ন।
আলিফ পকেট থেকে ফোন বের করে তার নিজের ফোনে নোট প্যাডে লিখল, "ইউনিভার্সিটির একটা ফ্রেন্ড।" তারপর ফোনটা নদীর দিকে বাড়িয়ে দিতেই নদী লেখাটা পড়ল।
নদী আবার নিজের ফোনে টাইপ করল, "কোনো সমস্যা?" নদীকে এবার ফোনটা আলিফের দিকে ধরতে হলো না। সে ইতোমধ্যে পড়ে নিয়েছে।
সে লিখল, "না কোনো সমস্যা নেই।"
চলবে.....!
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,443 in 27,681 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
চমৎকার মিষ্টি গল্প ,
ডবল ডবল লাইক আর রেপু !!
Posts: 340
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
(06-12-2022, 06:51 AM)ddey333 Wrote: চমৎকার মিষ্টি গল্প ,
ডবল ডবল লাইক আর রেপু !!
ধন্যবাদ
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
•
Posts: 340
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
পর্ব -০৮
জানালার পাশের আম গাছটাতে দুইটা পাখি বসে আছে। তারা বিকাল বিলাস করছে। মাঝেমধ্যে গুনগুন করে গানও গাইছে৷ ইরিনা অনেকটা সময় শুয়ে পাখি দুটোকে দেখছে৷ কারণ এছাড়া তার আর কোনো কাজ নেই। সে চাইলেও শোয়া থেকে উঠে দৌড়ে কোথাও পালিয়ে যেতে পারবে না।
পাখি দুটোকে দেখে দুই-একবার ফাহিমের কথা মনে পড়েছে তার। ফাহিমের কথা মনে পড়তেই প্রচন্ড রাগ অনুভব করেছে সে। আস্ত একটা ইডিয়েট। এতোদিন হয়ে গেলো কোনো খোঁজ নেই। ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছে। পরক্ষনেই সে বুঝেছে আসলে ভুলটা তারই। জীবনে মাঝেমধ্যে অন্যকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে, নিজেদেরই সারপ্রাইজ হয়ে যেতে হয়। তার ক্ষেত্রেও এমনটা হয়েছে। সে চেয়েছিল কি, আর হলোটা কি? সে এখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। তার কি এখানে শুয়ে থাকাত কথা? সব দোষ ফাহিমের!
এভাবে শুয়ে থাকতে তার একটুও ভাল লাগছে না। সকাল-সন্ধ্যা, সন্ধ্যা-রাত, রাত থেকে আবার সকাল। এভাবে কি সারাক্ষণ শুয়ে থাকা যায়? ইরিনার ভালো লাগছে না। প্রচন্ড একাকিত্ব অনুভব করছে। তার বোরিং লাগছে।
ইরিনার বাবা-মা কেউ-ই সারাদিনে কাজের কারণে হাসপাতালে আসতে পারে না। তার ইচ্ছে করে মাঝেমধ্যে তাদের সাথে গল্প করতে। কিন্তু সে ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছে, তার চাওয়ার মত করে সে তার বাবা-মায়ের সাথে সময় কাটাতে পারেনি। তারা সবসময় ব্যস্ত। ছোট থাকতে তার অনেক অভিমান হতো। এখন সেরকমটা হয় না। কিন্তু হাসপাতালে একা একা থাকাটা বড্ড কষ্টের। এই সময়টা অনন্ত তারা পাশে থাকুক এটুকু চায় ইরিনা।
ইরিনার বাবা-মা দুইজনেই চাকরি করে। তাই তারা আসতে পারে না। কিন্তু রহিমা খালা অবশ্যই তিনবেলা আসে। তার সাথে গল্পগুজব করে। সে খাবার নিয়ে আসে। ইরিনা হাসপাতালে খাবার খেতে পারে না। সে বাসার খাবার ছাড়া অন্য কোনো জায়গার খাবার অতোটা পছন্দ করে না। রহিমা খালা বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। সে তাকে খাইয়ে দিয়ে আবার চলে যায়। তখন সে আবার একা হয়ে পড়ে।
প্রথম দুই-তিন দিন রুদ্র, সাত্যকি, রিয়া সহ অনেকে তার সাথে প্রায়ই দেখা করতে আসতো। খানিকটা সময় থেকে গল্প করত। তার দিনের বোরিং সময়টা কেটে যেতো। পরে অবশ্য দিন যেতে থাকল, সেই সাথে তার বন্ধুদেরও আসা কমতে থাকল। সে অবশ্য বুঝে, সবাই সবার ব্যস্ততা নিয়ে ব্যস্ত। তবুও সে এটুকুতেই খুশি, অনেকে তাকে দেখতে এসেছে।
এই যে ইরিনাকে দেখতে হাসপাতালে তার অনেক বন্ধু এসেছে। সে জন্য সে সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। যতই হোক, সবাই ব্যস্ততার মধ্যেও তাকে নিয়ে ভাবে। তার ভালো-মন্দ চিন্তা করে। কিন্তু এই যে অনেকে এসেছে, তবুও সবসময় সে আরেকটা মানুষের আসার জন্য অপেক্ষা করেছে। প্রতিদিন সকালে ভেবেছে, আজ আসবে। কিন্তু রাতে সে হতাশ হয়েছে। সেই মানুষটা না আসার কারণে সে শূন্যতা এবং অপূর্ণতা অনুভব করেছে। বুকের ভেতর অদ্ভুত ভাবে ফাঁকা ফাঁকা লেগেছে তার। সে এই প্রথম বুঝতে পেরেছে, ফাহিমকে সে যতই পিছে পিছে ঘুরাক, গুরুত্ব না দিক, অবহেলা করুক কিংবা ভালোবাসি না বলুক, সে আসলে তাকেই পছন্দ করে, ভালোবাসে। পরিস্থিতি মানুষকে বুঝতে শেখায়। সেভাবেই এই প্রথম সে ফাহিমের প্রতি তার ভালোবাসাটা বুঝতে পেরেছে। যাকে সে একদমই দেখতে পারতো না, শেষমেশ কি-না তাকেই সে ভালোবাসে? এই বিষয়টা তার কাছে অদ্ভুত লাগে। মানুষ ঠিকই বলে, ভালোবাসা হুট করে হয়ে যায়। কখন, কীভাবে, কোথায়, কার প্রতি ভালোবাসা জন্মে যায় মানুষ তা জানেনা, বুঝতে পারেনা। মানুষ সত্যি বড় অদ্ভুত।
আজ বিকালে রুদ্রের আসার কথা। কিন্তু আসে নি। এখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছে। আসার সম্ভব নেই। আজকে রিয়াও তাকে দেখতে আসেনি। এই দুইজন না এলে তার মন খারাপ হয়। অভিমান হয়। যতই হোক, ভার্সিটিতে এই দুইজন তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। কেউ যদি তার কাছে তার সবচেয়ে কাছের এবং প্রিয় বন্ধুর নাম জানতে চায় তাহলে প্রথম যে দুইটা নাম তার মাথায় আসবে সেটা নিসন্দেহে রিয়া এবং রুদ্র। সে খুব করে চায় রুদ্র এবং রিয়া মধ্যে কিছু একটা হোক। তারা একে অন্যকে ভালোবাসুক। দুইজন সারাজীবন একসাথে থাকুক। সে সবসময় চায়, এই দুইটা মানুষ ভালো থাকুক। হাসিখুশি থাকুক।
রিয়া রুদ্রকে অসম্ভব ভালোবাসলেও রুদ্র রিয়াকে ভালোবাসে না। এই নিয়ে প্রায় রুদ্রের সাথে তার কথা হয়। প্রথম দিকে সে অনেকটা কনভিন্স করে ফেলেছিল রুদ্রকে। কিন্তু মাঝখান থেকে তরুর চিঠি এসে সবকিছু এলোমেলো করে দেয়। ইরিনার সব প্লান, পরিকল্পনায় পানি ঢেলে দেয়। এখন তো রুদ্র তরুর ব্যাপারে কোনো কথা শুনতেই চায় না। তার অবশ্য তরুর উপর কোনো রাগ নেই, ক্ষোভ নেই। কিন্তু এভাবে পরিচয় গোপন করে কেনো চিঠি লিখতে হবে? এই একটা জিনিস সে পছন্দ করে না। রুদ্র কষ্ট পাক, সে সেটা চায় না। তাই রুদ্রকে এমন কোনো ভুল করতে দিতে চায় না, যাতে সে কষ্ট পাবে ভবিষ্যতে।
প্রথম দিকে রুদ্র একবার বলেছিল ইরিনাকে, "জানিন ইরিনা, তরু চিঠিগুলো আমাকে ভেবে পাঠাচ্ছে না। চিঠিতে লেখা কথাগুলো আমার সাথে অনেকটা মিললেও বাকী অর্ধেক মিলে না। আমার কি মনে হয় জানিস, ভুল বশতা আমার কাছে চলে আসছে চিঠিগুলো। হয়তো ঠিকানায় কোনো গোলমাল হয়েছে। কিন্তু মেয়েটা কি সুন্দর করে চিঠি লিখে। কি সুন্দর গুছিয়ে কথা বলে। আর সবচেয়ে সুন্দর ওর হাতের লেখা। কেউ কি করে এতো সুন্দর করে লিখতে পারে? হ্যাঁ, পারে। কেউ এটা আগে বললে আমি বিশ্বাস করতা না। মানুষটা দেখতে কেমন হবে? যে এতো সুন্দর চিঠি লিখে, এতো সুন্দর করে কথা বলে, এতো সুন্দর করে কাউকে ভালোবাসে। সেই মানুষটা কেমন? তুই কল্পনা করে দেখ? ইরিনা, এই রকম একটা মানুষকে ভালোবাসতে তাকে দেখার প্রয়োজন হয় না। না দেখেই বোঝা যায় মানুষটা কেমন।"
অবশ্য রুদ্র প্রথম দিকে ইরিনাকে এই কথাগুলো বলেছিল। তখন সে নিজেই তরুর চিঠি পড়ে মজা পেতো। তার বন্ধুদের পড়ে শোনাতো। এভাবে প্রথম চার পাঁচটা চিঠি সে বন্ধুদের পড়ে শুনিয়েছে। সেই চিঠিগুলো স্বাধারণ ছিলো। তেমন বিশেষ কিছু ছিলো না সেখানে। কিন্তু তারপর আস্তে আস্তে কি হলো, কেউ জানেনা?
তরুর চিঠির কথা রুদ্র হঠাৎ বন্ধুদের সাথে শেয়ার করা কমিয়ে দেয়। তরুকে নিয়ে কথা বলা কমিয়ে দেয়। তারচেয়ে বড় ব্যাপার রুদ্র প্রায়ই কোনো একটা ভাবনায় ডুবে থাকে। যত দিন যেতে লাগল, এই সমস্যাটা তত বাড়তে থাকল। রুদ্র দিনদিন সবার থেকে দূরে সরে গেলো। একা একা থাকতে শুরু করল। সে সেই আগের মত রইল না। সবার সাথে হইচই, আড্ডা, দুষ্টুমি, মজা, ঘুরাঘুরি, এই সবকিছু থেকে রুদ্র খানিকটা দূরে সরে যায়। এটা সবাই লক্ষ করলেও এটা নিয়ে এই পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। কিন্তু পরিস্থিতি যেমনটাই হোক, পরিচয়হীন একটা মেয়ে, নিজেকে আড়ালে রেখে, এভাবে চিঠি দিয়ে যাচ্ছে। এটা ইরিনা পছন্দ করে না। ভালোবাসলে সামনে আসতে দোষ কি? কীসের এতো ভয়? এছাড়া চিঠিগুলো যে এই রুদ্রের জন্যই সেটা কেউই পুরোপুরি নিশ্চিত না।
ইরিনার এইখানেই সবচেয়ে বেশি আপত্তি। তরু যদি রুদ্রকে চিঠি না দেয়। চিঠিতে লেখা তার ভালোবাসা যদি রুদ্রের জন্য না হয়। কাকতালীয় ভাবে যদি অন্য কারো নামের সাথে রুদ্র নামটা মিলে যায়। তাহলে, তাহলে কি হবে? রুদ্র কীভাবে সবকিছু মেনে নিবে? এই চিন্তাটা ইরিনাকে প্রায়ই ভাবায়। যতই হোক, সে রুদ্রের ব্যাপারে অনেকটা যত্নশীল। তেমনি যত্নশীল রিয়ার ব্যাপারে। এই দুইজনের ব্যাপারে সে সবসময় চিন্তিত থাকে। কারণ সে তাদের ভালোবাসে।
এই রকম একটা মেয়ের কারণে রিয়ার প্রপোজাল ফিরিয়ে দেওয়া কোনো মানে হয়? ইরিনা রুদ্রের এই বোকামিটা মেনে নিতে পারে না। রুদ্র আস্ত একটা গাধা। তা না হলে এমনটা কেউ করে? আসলে আমার আশেপাশে সবাই গাধা। ইরিনা রুদ্রের কথা ভাবছিল। তার মধ্যে হঠাৎ ফাহিমের কথা মনে পড়তেই তার মুখে বিরক্তিকর একটা ভাব ফুটে উঠল। সে এখম ফাহিমের কথা ভাবতে চাচ্ছে না।
আম গাছে পাখি দুটো নেই। কোথায় গেছে? ইরিনা এটা নিয়ে ভাবছে। সেই মুহুর্তে মসজিদ থেকে এশার আজান ভেসে এলো। "সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আমি হাসপাতালে আরো একটা বোরিং দিন কাটিয়ে দিলাম!" ইরিনা এই কথাগুলো ভাবতেই তার ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।
সে শুয়ে শুয়ে আজান শুনলো। এই মসজিদের মুয়াজ্জিনের কন্ঠটা ভীষণ সুন্দর। এই কয়দিনে তার কন্ঠটা মুখাস্ত হয়ে গেছে। আজান শুনে তার ভাল লাগল। মন জুড়িয়ে গেলো। মন ভালো হয়ে গেলো।
ইরিনা এতোক্ষণ সত্যি খুব বিরক্ত ছিলো। এখন তার ভালো লাগছে। এই সন্ধ্যাটা তার ভালো লাগছে। সারাদিন অজস্র ভাবনা ভাবতে ভাবতে সে ক্লান্ত। এটা ছাড়া তার কোনো কাজও নেই। তাই সে ভেবে যায়। কতকিছু ভাবে তার ঠিক নেই। যখন যেটা মনে আসে সে ভাবে। কেউ তার পাশে থাকলে তার সাথে কথা বললে তার এই বোরিং সময়টা কেটে যেতো। তাকে এতো কিছু ভাবতে হতো না। কিন্তু আজ কেউ এলো না!
"আমি ক্লান্ত।" ইরিনা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। ঠিক সেই মুহুর্তে দরজা খোলার শব্দ পেতেই সে দরজার দিকে তাকালো। তার চোখ দুটো স্থির হয়ে রইল দরজায়। সে ঘনঘন কয়েকবার পলক ফেললো। সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এটা তার মনের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সে সারাক্ষণ ফাহিমের কথা ভাবে, তাই হয়তো এই মুহুর্তে সে দরজার সামনে ফাহিমকেই দেখছে।
ইরিনা চেষ্টা করেও মুখ দিয়ে কোনো কথা বের করতে পারছে না। মানুষ যখন হঠাৎ খুশি হয়ে যায় কিংবা প্রচন্ড রাগ করে তখন সে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারে না। একদম নিশ্চুপ হয়ে যায়। অবাক-চোখে শুধু তাকিয়ে থাকে। ইরিনার ক্ষেত্র তেমনটা হয়েছে। কিন্তু ফাহিম আসাতে সে কি প্রচন্ড খুশি হয়েছে, নাকি এতোদিন পর আসাতে অভিমান হচ্ছে? ইরিনা সে-সব জানেনা। সে এখন স্বাভাবিক হতে চায়। ফাহিমের সাথে ঝগড়া করতে চায়। তাকে মন ভরে বকতে চায়, মারতে চায়, আবার ভালোবাসতে চায়। এ কেমন অদ্ভুত অনুভূতি? ইরিনা নিজেকেই বুঝছে না। সে তার মনকে বুঝে উঠতে পারছে। এতোদিন একসাথে থেকেও আজ সে সম্পূর্ণ অচেনা।
ফাহিম বসে আছে। রুমে একটা চেয়ার ছিলো, সে সেটা টেনে নিয়ে ইরিনার পাশে এসে বসেছে। সে বলল, "কেমন আছিস?"
ইরিনা কোনো উত্তর দিলো না। সে বুঝে উঠতে পারছে না ফাহিমকে সে তুমি করে বলবে নাকি তুই। তার কেনো সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে? ফাহিম কি তাকে দেখে বুঝতে পারছে, যে সে কতটা নার্ভাস? ফাহিমের সামনে আমি কেনো নার্ভাস হচ্ছি? ইরিনার লজ্জা লাগছে। বুকের কম্পন ধীরে ধীরে বাড়ছে। সে লক্ষ করল, ফাহিমকে সুন্দর লাগছে। নীল রঙের একটা শার্ট পরে আছে সে। কী দারুণ লাগছে ছেলেটাকে। কতিদন পর তাকে দেখলাম। ইরিনা কথাগুলো ভাবলো।
"কিরে কেমন আছি এখন?" ইরিনার কোনো উত্তর না পেয়ে ফাহিম আবার বলল, "রাগ করে আছিস? কথা বলবি না আমার সাথে?"
ইরিনা এবারও চুপ। সে কথা বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না। ফাহিম বলল, "আমি কি অসময়ে এসে তোকে বিরক্ত করলাম? আমার কি চলে যাওয়া উচিত?"
"তুই কি মনে করিস? চলে যাওয়া উচিত নাকি কিছুক্ষণ থাকা উচিত?" অবশেষে ইরিনা বলল।
"আমি কি মনে করবো? তুই যেটাতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করিস আমি সেটাই করবো।"
"কেনো তোর নিজের কোনো ইচ্ছে নেই?"
"আমার আবার কি ইচ্ছে। আমি চাইলেই কি জোর করে কিছু করতে পারবো?"
"কিছুই করতে পারবি না?
"আসলে জোর করে কিছুই করা যায় না। কোনো কোনো সময় কিছু করতে গেলে সেটা আরো নষ্ট হয়ে যায়।"
"বাহ! ভালোই কথা শিখেছিস এই কয়দিনে।"
"সময় মানুষকে সবকিছু শিখিয়ে দেয়।"
"হ্যাঁ, এটা অবশ্য ঠিক বলেছিস। তা সময় তোকে ঠিক কি কি শেখালো?"
"বাদ দে এ-সব কথা। এখন বল, কেমন আছিস?"
"দেখতেই তো পারছিস কেমন আছি? জিজ্ঞেস করার কি আছে? নাকি ভদ্রতার দেখাচ্ছিস?"
"তোর কাছে যেটা মনে হয় সেটাই।"
ইরিনা কিছুটা সময় নিয়ে বলল, "হঠাৎ কি মনে করে এদিকে আসা হলো?"
"কেনো, এখানে আমার আসা কি বারণ ছিলো? আমি অবশ্য জানিনা। জানলে হয়তো এসে তোকে বিরক্ত করতাম না।"
"আমি সেটা বলিনি? এতোদিন পর হঠাৎ কেনো?
"সরাসরি জিগ্যেস করতেই তো পারিস, এতোদিন কোথায় ছিলাম, কেনো খোঁজ নেই, ফোন কেনো বন্ধ? তাহলে এতো জটিল করছিস কেনো কথোপকথন?"
ফাহিমের কথাটা শুনে মন খারাপ হলো ইরিনার। সে বলল, "এখন থেকে দ্রুত যেতে পারলেই কি খুশি?"
"আমি সেটা বুঝাইনি।"
"দ্রুত কথোপকথন শেষ করার কথা তো বুঝিয়েছিস?"
"আচ্ছা, আমরা কেনো একে অন্যের কথায় ভুল ধরছি? এতোদিন পর দেখা, ভালো করে কথা বলবো তা না শুধু একে অন্যকে কথার মারপেঁচে ফেলে দিচ্ছি। মনে হচ্ছে এই কয়দিনে আমাদের মাঝে অনেকটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাই আগের মত স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারছি না।"
ইরিনা মনোযোগ দিয়ে শুনলো। কথাগুলো শুনে সে হাসল। কেমন উদ্ভট সেই হাসি। ফাহিম বুঝলো না এই হাসির অর্থ কি। ইরিনা বলল, "ফাহিম, আসলে দূরত্ব বলতে কিছুই নেই। সবটাই মানুষের মনের কল্পনা। আমরা নিজেরাই মনে মনে সবটা ভেবে নেই। এখানে, কেউ ভেবে নেয় দূরত্ব বেড়েছে, কেউ ভেবে নেয় দূরত্ব কমেছে। তারপর যখন দু'জনের ভাবনায় বিরাট পার্থক্য দেখা দেয়। তখন দুইজন আলাদা হয়ে যায়। আসলে এখানে মূল ব্যাপারটা হচ্ছে, যে সময় একজন আরেকজনকে বুঝতে ব্যর্থ হয় তখন তারা নিজের মত করে ভেবে উপসংহার টেনে দেয়।"
ফাহিম কিছু একটা ভাবছে। হঠাৎ চেয়ার থেকে উঠে ঘরের জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। জানালার বাইরে একটা বড় আম গাছ। এখন সেখানে দুইটা পাখি বসে আছে। ফাহিম সেই পাখি দুটোর দিকে তাকিয়ে আছে। সে কতকিছু বলবে বলে এখানে এসেছিল। সারা পথ সব কথা মনের মধ্যে সাজাতে সাজাতে এসেছে। কিন্তু এখানে এসে সে সেই সব কথার মধ্যে একটা কথা বলতে পারে নি। সে অনেককিছু বলতে চায় ইরিনাকে। কীভাবে বলবে সে ভেবে পাচ্ছে না।
এতোক্ষণ ফাহিমের দিলে তাকিয়ে ছিল ইরিনা। তার দিক থেকে চোখ সরিয়ে সে বাইরে তাকাতেই বিকালে যেদুটি পাখিকে সে দেখেছিল, সেই দুটি পাখি সেই একই ডালে একই ভাবে বসে আছে। সে আশ্চর্য হলো। কখন এসেছে পাখি দুটো?
"ইরিনা!"
"হ্যাঁ বল।"
"তুই কি আমার উপর রেগে আছিস?"
"রেগে থাকবো কেনো? রাগ করার মত তুই কি কিছু করেছিস?"
"হ্যাঁ, করেছি। এই সে আমি এভাবে কাউকে কিছু না বলে নিরুদ্দেশ হয়ে গেলাম। ফোনটা বন্ধ করে রাখলাম। কেউ খুঁজে পেলো না। সবাইকে অযথাই চিন্তায় ফেলে দিলাম। তোর খবর নিলাম না। তোকে দেখতে আসতে এতোটা দেরি করে ফেললাম। আমার উপর রাগ করাটা স্বাভাবিক। প্লিজ তুই রাগ কর। রাগ করে আগের মত আমাকে বকাঝকার কর। কিন্তু প্লিজ, একটু স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা কর। এই তোকে আমি ঠিক বুঝ উঠতে পারছি না। কেমন অচেনা লাগছে।"
"একটা মানুষের সাথে সারাজীবন থেকেও কেউ কাউকে সম্পূর্ণ ভাবে চিনে উঠতে পারে না। আর আমাদের এই কয়দিনের বন্ধুত্বে কি সেটা সম্ভব?"
"তুই ভুল। মানুষকে বুঝতে, চিনতে সারাজীবন লাগে না যদি তারা মন থেকে একে অন্যকে বুঝতে চায়, চিনতে চায়। আর যদি তারা মন থেকেই সেটা না চায় তাহলে সাত জনমেও কেউ কাউকে চিনে উঠতে পারবে না।"
ইরিনা কিছু বলল না। ফাহিম ঠিকই বলেছে। যদি দুইজন দুইজনকে মন থেকেই ভালোবাসে তাহলে এক মুহুর্তেও একে অন্যকে সম্পূর্ণটা চিনে ফেলা যায়। ইরিনা কথার প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বলল, "জানালার বাইরে আম গাছে দুটো পাখি বসে আছে, দেখছিস?"
"হ্যাঁ, দেখেছি।"
"পাখি দুটোকে প্রায়ই ওখানে বসে থাকতে দেখি।" ইরিনা এটুকু বলে থামলো। ফাহিম জানে, ইরিনার কথা শেষ হয় নি। সে অন্য কিছু একটা বলতে চাচ্ছে। তাই সে চুপ করে অপেক্ষা করতে থাকল ইরিনার মূল কথাটা শোনার জন্য।
"তোকে একটা মেসেজ দিয়েছিলাম, দেখেছিস?"
"কি মেসেজ? কি লিখেছিলি?"
"ফাহিম তাহলে মেসেজ দেখেনি" ইরিনা মনে মনে বলল। সে বলল, "না, তেমন কিছু না।"
"আসলে হয়েছে কি..!" এটুকু বলতেই দরজা খোলার শব্দ শুনে দুজনেই দরজার দিকে তাকালো। ফাহিম তার কথা শেষ করতে পারলো না।
দরজা দিয়ে ইরিনার মা নাহার ঢুকল। সে খানিকটা হকচকিয়ে গেছে। তার দিকে তার মেয়ে এবং জানালার কাছে থাকা ছেলেটা এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো? জানালার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে সে চেনার চেষ্টা করল। তাকে খাটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। এই কয়দিনে ইরিনার প্রায় অনেক বন্ধুদের সাথে তার দেখা হয়েছে। ইরিনাকে দেখতে অনেকে এসেছে, সেই সুত্রে। ছেলেটাকে সে চিনল না। নাহার নিশ্চিত সে আগে কখনো এই ছেলেটাকে দেখে নি।
"আসসালামু আলাইকুম, আন্টি।" ফাহিম বলল।
"ওয়ালাইকুম আসসালাম।" নাহার সালামের উত্তর দিলো।
"আমি ফাহিম। ইরিনার বন্ধু। আমরা একই ডিপার্টমেন্টে পড়ি।"
"ওহ, আচ্ছা।" নাহার এটুকু বলে ইরিনার দিকে এগিয়ে গেলো।
নাহার ব্যস্ততা হয়ে পড়লো ইরিনার খোঁজ খবর নিতে। ইরিনার সাথে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলছে সে। হঠাৎ ফাহিম বলল, "আন্টি, আজ আমি আসি।"
নাহারকে কোনো কথা বলার সুযোগ দিলো না। ফাহিম আবার বলল, "ইরিনা, তাহলে আজ আমি যাই। অন্য কোনো সময় এসে আবার দেখা করে যাবো।"
"চলে যাবে কেনো। আমি বেশিক্ষণ থাকবো না। সরাসরি অফিস থেকে এসেছি মেয়েটাকে দেখেই বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তারপর আবার আসবো।"
ফাহিমকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলে সে এবার ইরিনাকে বলল, "আমি এসে তোমাদের বিরক্ত করলাম না তো?"
"কি যে বলো আম্মু।" ইরিনা বলল।
"সমস্যা নেই আন্টি। আমি কাল আরেকবার এসে ইরিনাকে দেখে যাবো। দোয়া রইল। ওর দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক। এদিকে ইরিনার ক্লাস মিস যাচ্ছে।"
"হ্যাঁ, কিন্তু কি আর করা। মেয়েটা হঠাৎ দূর্ঘটনা ঘটিয়ে নিলো।" নাহার বলল।
"আম্মু, তুমি আবার মন খারাপ করছ।" ইরিনা বলল।
ফাহিম বাইরে বেরিয়ে এলো। সে কি করবে এখন সেটা ভাবছে। একটা কথা জিজ্ঞেস করতে সে ভুলে গেছে, ইরিনা মেসেজে তাকে ঠিক কি লিখেছিল? আর কবে মেসেজ দিয়েছিল? এই প্রথম চোরের উপর তার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। চোরটাই সবকিছু নষ্টের মূল। চোরকে মনে মনে গালমন্দ করে তার মনে পড়ল সে ফোন কেনার জন্য বেরিয়েছিল। সিমটাও উঠাতে হবে তাকে।
সে রিকসা ঠিক করে বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্স দিকে রওনা করল। যেতে যেতে তার মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ইরিনা হঠাৎ এভাবে মেসেজের কথা কেনো জিজ্ঞেস করল তাকে? সে কি লিখেছিল সেই মেসেজে? ফাহিম হতাশ হলো। এখন এটা জানার তার কাছে কোনো উপায় নেই। যদি ইরিনা আবার তাকে সেই একই মেসেজটা না দেয় তাহলে সে জানতে পারবে। কিন্তু সে জানে ইরিনা সেই মেসেজটা তাকে আর পাঠাবে না।
ফোন চোরের উপর ফাহিমের রাগটা ক্রমত বাড়তে থাকল। সে এখন তাকে সামলে পেলে, কি করতো সেটাই সে মনে মনে ঠিক করছে।
চলবে.....!
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,443 in 27,681 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
অপূর্ব লেখা , লাইক এবং রেপু !!
Posts: 340
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
(07-12-2022, 06:52 AM)ddey333 Wrote: অপূর্ব লেখা , লাইক এবং রেপু !!
ধন্যবাদ
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
•
Posts: 340
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
পর্ব-০৯
রুদ্র দৌড়ে এসে লিফটের সুইস চাপতেই প্রায় বন্ধ হওয়া লিফটের দরজা খুলে গেলো। দরজা খুলতেই ভিতরে সে রিয়াকে দেখতে পেলো। বেগুনি রঙের শাড়িতে রিয়াকে সুন্দর লাগছে। শুধু সুন্দর বললে ভুল হবে, রিয়াকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। রুদ্র একবার চিন্তা করল সে লিফটে না গিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠবে৷ কিন্তু সেটা অভদ্রতা দেখায়। তাই সে লিফটের ভেতরই ঢুকলো।
রিয়া লিফটের এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে। অন্য পাশে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র। তারা কেউ কারো সাথে কথা বলল না তবে তাদের চোখাচোখি হলো। একবার, দুইবার।
শাড়িতে রিয়াকে এর আগে কখনো দেখেনি রুদ্র। রুদ্র বারকয়েক অনিচ্ছা শর্তেও রিয়ার দিকে তাকালো। মেয়েটাকে সত্যিই সুন্দর লাগছে। সে একবার ভাবলো ভদ্রতার দেখিয়ে জিজ্ঞেস করবে, কেমন আছেন? কিন্তু দীর্ঘ দিন তাদের কথা হয় না বিধায় একটা জড়তা কাজ করলো রুদ্রের মধ্যে। সেই ঘটনার পর তাদের সেভাবে যোগাযোগ হয়নি। একবার দুইবার দেখা হলেও, রিয়া সূক্ষভাবে রুদ্রকে এড়িয়ে গেছে। রুদ্র তাতে কিছু মনে করেনি।
রুদ্র নানা কিছু ভেবে যেই সিদ্ধান্ত নিল রিয়াকে জিজ্ঞেস করবে কেমন আছেন। সেই সময়ই লিফটে দরজা খুলে গেলো। তারা দুইজনে চুপচাপ বেড়িয়ে একই পথে হেঁটে যেতে লাগল।
দুইজনকে একসাথে রুমে ঢুকতে দেখে ইরিনা বলল, "কিরে তোরা একসাথে?"
"লিফটে দেখা হয়েছে।" রুদ্র বলল।
"আমি আবার ভাবলাম...!" ইরিনাকে কথা শেষ করতে দিলো না রুদ্র।
"কি ভাবলি? তোর মাথার মধ্যে তো সব উলটা পালটা ভাবনা।"
"রুদ্র, তুই যা-ই বলিস, তোদের কিন্তু সুন্দর মানিয়েছে। একজন শাড়ি, অন্যজন পাঞ্জাবি। দেখে মনে হচ্ছে নতুন জামাই-বউ।" কথাটা বলেই ইরিনা হাসতে শুরু করল।
রিয়া কিছুটা বিব্রতবোধ করছে। এভাবে রুদ্রের সাথে তার দেখা হবে সে কখনো ভাবেনি। সে অবশ্য শাড়ি তেমন একটা পরে না। আজকে তার একটা প্রেজেন্টেশন আছে বিধায় তাকে শাড়ি পরতে হয়েছে।
রুদ্রও আজ ভীষণ অবাক হয়েছে। রিয়াকে আজই শাড়ি পরে আসতে হলো। এদিকে সেও কি-না আজই পাঞ্জাবি পরেছে।
"আজকে একটা প্রেজেন্টেশন আছে। সেই কারণে শাড়ি পরা।" ইরিনাকে ব্যখ্যা করার বৃথা চেষ্টা করলো রিয়া।
"হ্যাঁ, বুঝছি। আমাকে আর বোঝাতে হবে না।" ইরিনা ঠোঁট বাকিকে দুষ্টুমি ভঙ্গিতে কথাটা বলল।
"কেমন আছিস?" ইরিনা কিছুটা সময় চুপ থেকে প্রশ্নটা করল।
"ভালো।" দুইজনে একই সাথে উত্তর দিলো।
ইরিনা আবার হেসে ফেলল। সে ইচ্ছে করেই এমন ভাবে প্রশ্নটা করেছে যাতে দুইজন একই সাথে উত্তর দেয়।
"তুই কেমন আছিস?" রিয়া জিজ্ঞেস করল।
"দেখছিস না, আমি সুস্থ। কিন্তু ডাক্তারই সেটা বুঝতে চাচ্ছে না। আমাকে ডিসচার্জ করছে না।" ইরিনা হতাশ গলায় বলে গেলো। সে আরো বলল, "এখানে বেশিদিন থাকলে এরপরে আমাকে পাগলাগারদে ভর্তি করতে হবে।" কথাটা বলেই সে খিলখিল করে হেসে দিলো।
"এতো বুঝতে হবে না তোকে। ডাক্তার শখ করে তোকে এখানে রাখেনি। সুস্থ হলে তোকে এখান থেকে বের করে দিবে। তাই আগে ভালো মত সুস্থ হয়ে উঠ।" রুদ্র বলল।
"তাহলে কি আর করা। হাসপাতালেই ঘরসংসার খুলে বসতে হবে এখন।"
"ফাহিমের সাথে দেখা হয়েছে?" রুদ্র হঠাৎ কথার প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে জানতে চাইল।
"হ্যাঁ, গতকাল সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে এসেছিল। তুই জানলি কি করে?"
"আমাকে আলিফ বলল। বসুন্ধরায় ওর সাথে আকস্মিক দেখা হয়েছিল ফাহিমের। আলিফ একটা কাজে গিয়েছিল, এদিকে আলিফ গ্রামে যাওয়া সময় লন্সে ওর ফোন চুরি হয়ে যায়। তাই ও ঢাকায় ফিরেই গতকাল ফোন কিনতে গিয়েছিল বসুন্ধরায়।"
"কি বলিস? আমাকে এই ব্যাপারে কিছুই বলে নি আলিফ।"
রুদ্র যেটুকু আলিফের কাছ থেকে জেনেছে তার সবটাই ইরিনাকে খুলে বলল। ইরিনা শুনে খানিকটা অবাক হলো। ফাহিম তার এখানে এতোক্ষণ ছিল, একটা বারও তাকে কিছু ভেঙে বলে নি। এদিকে সে কি-না ফাহিমকে ভুল বুঝে রাগ করে ছিলো। ইরিনার এখন নিজের কাজের জন্য নিজের উপর রাগ হলো। সে চাইলেই ফাহিমের সাথে ভালো ভাবে কথা বলতে পারতো।
"কি হলো, কি ভাবছি এতো?" রুদ্র জানতে চাইল।
"কই কিছু না।" ইরিনা তাৎক্ষণিক উত্তর দিলো।
"নিশ্চয়ই ফাইমের কথা? একদম প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস।"
"কি যে বলিস।"
"কি আর বলবো? যা দেখার নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছি।"
"রিয়া, তুই এতো চুপচাপ কেনো?" ইরিনা টপিক পরিবর্তন করার জন্য কথাটা রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল।
"কি বলল? তোরা কথা বলছিস। তাই তোদের মাঝে কথা বলে বিরক্ত করতে চাচ্ছি না।"
"পাগল কোথাকার। এখানে তুই কি অপরিচিত কেউ? আমরা সবাই-ই বন্ধু। আগে কি হয়েছে সে-সব ভুলে যা। বন্ধুদের মধ্যে সামান্য ভুলবোঝাবুঝি হয়েই থাকে। সেটা মনে ধরে রাখতে হয় না। তুই কি বলিস রুদ্র।" রুদ্রকে দিকে ইঙ্গিত করে শেষ কথা বলল ইরিনা।
"হ্যাঁ।" ছোট্ট করে উত্তর দিলো রুদ্র।
"তুই কি এখনো সেটা ধরে বসে আছিস?" রিয়াকে জিজ্ঞেস করল ইরিনা।
রিয়া এই প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলো না। সে এখানে এই পরিস্থিতি অস্বস্তি বোধ করছে। সেই সাথে সে নার্ভাস। এমনিতেই রুদ্রের সামনে এলে সে কেমন জেনো চুপচাপ হয়ে যায়। তারপর দীর্ঘ দিন পরে সে রুদ্রকে কাছ থেকে এতোটা সময় ধরে দেখছে তাও পাঞ্জাবিতে। তার এখন ইচ্ছে করছে ড্যাবড্যাব চোখে দীর্ঘ সময় রুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকতে। কিন্তু সে তা করতে পারবে না সেটা সে ভালো করে জানে।
"কি হলো। তুই এতো গম্ভীর হয়ে আছিস কেনো?"
ইরিনা আবার জিজ্ঞেস করল।
"কই!" রিয়া নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল। সে আবার বলল, "ইরিনা, এখন আমি যাই। প্রেজেন্টেশন সময় হয়ে যাচ্ছে।" শেষ কথাটা সে মিথ্যা বলল। সে সময় নিয়ে এখানে এসেছে। তার প্রেজেন্টেশন এখনো ঘন্টা দুই বাকী। কিন্তু সে এখানে এভাবে থাকতে পারছে না। নার্ভাস, সেই সাথে বুকের মধ্যে একটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে সে।
"আরে কোথায় যাচ্ছিস। দাঁড়া। রুদ্রও ক্যাম্পাসে যাবে। একসাথে গেলেই হবে।" ইরিনা কথাটা বলে রদ্রের দিলে তাকিয়ে আবার বলল, "তুই কি বলিস রুদ্র?"
"আমার কোনো সমস্যা নেই। হ্যাঁ, আমিও এখন বেড়িয়ে যাবো, রিয়া চাইলে একসাথে যাওয়াই যায়।" রুদ্র বলল।
"তার দরকার নেই। আমি একাই চলে যেতে পারবো।" রিয়া বলল।
"এক যাবি মানে?" রিয়ার উত্তরে অপেক্ষা না করে সে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল, "কিরে রুদ্র। আমার বেস্টুকে ক্যাম্পাস পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারবি না?"
রুদ্র ইরিনাকে না করতে পারলো না। সে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ার।
ইরিনা বলল, "তাহলে তো হয়েই গেলো। আচ্ছা তাহলে তোরা যা এখন। সময় পেলে পরে আবার আসিস।"
"আচ্ছা। সময় মতো খাওয়া দাওয়া করবি। আর ওষুধ খাবি ঠিক মতো।" রুদ্র বলল।
"আচ্ছা, আচ্ছা। খাবো। তোরা সাবধানে যাস।"
রিয়া এবং রুদ্র বেড়িয়ে গেলো। লিফট দিয়ে নিচে নেমে হাসপাতালে সামনে দাঁড়িয়ে আছে তারা।
"আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। আমি এখান থেকে একাই চলে যেতে পারবো।"
"আমার কেনো কষ্ট হবে? আমি কি আপনাকে কোলে করে নিয়ে যাবো? রিকসাওয়ালা আমাদের নিয়ে যাবে।" রুদ্র পরিবেশটা খানিক সহজ করতে সামান্য রসিকতা করল।
রিয়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। যে চাচ্ছে রুদ্রের সাথে যেতে, আবার চাচ্ছে না। আসলে, রুদ্রের কথা ভেবে সে চাচ্ছে না। ইরিনার জন্যই হয়তো তার সাথে যেতে রুদ্র রাজি হয়েছে। নিজ ইচ্ছায় রাজি হয়নি। যদি সে এই কারণে বিরক্ত হয়। রিয়া উভয় সংকটে পড়ে গেলো। দ্বিধান্বিত হয়ে পড়লো।
"কি হলো। দাঁড়িয়ে আছেন যে?" রুদ্র বলল।
রিয়া এতোক্ষণ লক্ষ করেনি রুদ্র তাকে আপনি করে বলছে। হঠাৎ খেয়াল করতেই তার সামান্য মন খারাপ হলো। তাহলে রুদ্র কি আসলেই তাকে দূরে ঢেলে দিয়েছে। এখন কি তাকে বন্ধুও ভাবে না? রিয়ার মনে হঠাৎ এই প্রশ্নটা উদয় হলো। সে চাইলেও এটা সে রুদ্রকে জিগ্যেস করতে পারবে না। কিন্তু রুদ্রের মুখে আপনি শুনতে তার ভালো লাগছে না। তুমিই ভালো ছিলো। এই তুমি শোনার জন্য তার দীর্ঘ প্রতিক্ষা করতে হয়েছে। এখন আবার সেই ঘুরেফিরে রুদ্র আপনিতে চলে গেছে। রিয়ার এখন কিচ্ছু ভালো লাগছে না।
রিয়া মন খারাপ করে নানা কিছু ভাবছিল। এদিকে রুদ্র এর মধ্যে একটা রিকসা ঠিক করে ফেলেছে। সে এখন রিকসা নিয়ে রিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
"আপনি আগে উঠুন।" রুদ্র বলল।
রুদ্রের ভদ্রতায় রিয়া খুশি হলো। কিন্তু সমস্যা হলো রুদ্র যখন তার পাশে বসল। সে প্রচন্ড নার্ভাস হয়ে গেলো। ক্রমশ ঘামতে থাকল। সে বারবার টিস্যু দিয়ে মুখের ঘাম মুছতে থাকল। রুদ্র অবশ্য সেসব লক্ষ করল। কিন্তু সে এই নিয়ে কিছু বলল না।
তারা দুইজনে চুপচাপ অনেকটা পথ চলে এসেছে। কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলেনি। কি দিয়ে কথা শুরু করবে সেটাই কেউ বুঝে উঠতে পারছে না। অবশেষে হঠাৎ রিয়া বলল, "আমি পানি খাবো।"
রিয়ার আচমকা এই কথায় রুদ্র বিপদে পরে গেলো। সে আশেপাশে তাকালো, কোনো দোকান আছে কি-না দেখার জন্য। কিন্তু কোনো দোকান দেখতে পেলো না। সে বলল, "এখানে আশেপাশে কোনো দোকান দেখছি না।" রিয়াকে কথাটা বলে সে রিকসা মামাকে বলল, "মামা, সামনে কোনো দোকান বাঁধলে রিকসা একটু থামিয়েন।"
পাঁচ মিনিট অতিবাহিত হয়ে গেলো। কোনো দোকান কিংবা চায়ের স্টলও তাদের সামনে পড়লো না। রুদ্র রিয়াকে লক্ষ করেছে, মেয়েটার মুখ শুকিয়ে গেছে। সে ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে।
রিয়া আবার বলল, "প্লিজ, আমি পানি খাবো। আমার ভাল লাগছে না। শরীরটা খারাপ লাগছে। মাথা ঘুরছে। খুব পানি পিপাসা পেয়েছে।"
রুদ্র মহা ঝামেলায় পরে গেলো। সে এখন পানি কোথায় পাবে? সে রিয়াকে কিছু বলল না। সে রিকসাওয়ালাকে আবার বলল, "মামা একটু দ্রুত চালান।"
রিকসাওয়ালা রিকসার গতি কিছুটা বাড়িয়ে দিলো। তারা আরো কিছুটা সামনে গিয়ে একটা দোকানের দেখা পেলো। রুদ্র হাফ ছেড়ে বাঁচলো। সে রিকসা থেকে নেমে দোকান থেকে একটা ঠান্ডা পানি কিনে দ্রুত ফিরে এলো। সে পানির বোতলের মুখ খুলে রিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিলো। রিয়া ঢকঢক করে বোতলের অর্ধেকটা পানি খেয়ে ফেলল। রুদ্র রিয়ার দিকে এক সৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। পানি খাওয়া অবস্থায় মেয়েটাকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। কি মায়াময় চোখ। চোখের উপর দিয়ে কিছু অবাধ্য চুল এসে ঘামে মুখের সাথে লেগে আছে। কপালে ছোট্ট টিপ। কী ভীষণ সুন্দর। মায়াময়। রুদ্র একমুহূর্তে জন্য মুগ্ধ হলো। সুন্দর কিছু দেখে মানুষ খুশি না হতে পারলে, তার জীবনটাই বৃথা। রুদ্রের মুখে হাসি ফুটে উঠল। অতিরিক্ত সুন্দর কোনো কিছু দেখলে মানুষের মন ভালো হয়ে যায়। তার এই কথাটা মনে পড়লো। সে কোথায় জেনো লেখাটা পড়েছিল। আজ তার সাথেই কথাটা মিলে গেলো।
রিয়ার পানি খাওয়া শেষ হলে সে রুদ্রকে বলল, "আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।"
রিয়ার কথা শুনে রুদ্র ভাবনা থেকে ফিরে এলো। তখন সে অবাক হলো। সে রিয়াকে নিয়ে কি সব ভাবছিলো এতোক্ষণ। রুদ্রের হঠাৎ লজ্জা লাগছে। কিন্তু সে স্বীকার করলো, রিয়াকে এই অবস্থা ভীষণ সুন্দর লাগছে। কোমলপ্রাণ এক মানুষ।
"কেমন লাগছে এখন?" রুদ্র বলল।
"কিছুটা ভালো বোধ করছি।"
"আলহামদুলিল্লাহ।"
"আমরা কি এখানে কিছুটা সময় থামতে পারি?"
তারা রাস্তার পাশে একটা গাছের ছায়ায় নিচে আছে। রিয়া রিকসায় বসা। রুদ্র রাস্তায় তার পাশে দাঁড়িয়ে। রিকসাওয়ালা মামা কিছুটা দূরে রাস্তার পাশে বসে তাদের দুইজনকে দেখছে। সে এরকম যাত্রী আগে কখনো পায়নি। সে তাদের দুইজনকে বেশ খুটিয়ে দেখেছে এতোক্ষণ। দুইজনকে একত্রে ভালো লাগছে। ভালো মানিয়েছে। তার দেখে মনে হয়েছে, এই দুইজন একে অন্যের জন্যই সৃষ্টি। মেয়েটার চোখে ছেলেটার জন্য কী ভীষণ মায়া। এটা তার চোখ এড়িয়ে যায় নি। সে স্পষ্ট দেখতে পেয়েছে। তার এই রকম চাহনি চেনা। কারণ তার বিয়ের পরের দিন সে অসুস্থ হয়ে যায়। তখন সে তার বউটার চোখে তার জন্য ঠিক এই রকমই মায়া দেখেছিল। কয়দিনের পরিচয়ে মানুষ এতোটা ভালোবাসতে পারে, সে বিয়ে করার আগে ভাবতেই পারতো না। সেও তার বউটাকে ভীষণ ভালোবাসে। কেউ নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসলে তাকে ভালোনাবেসে থাকা যায় না।
রিকসাওয়ালা পাশ দিয়ে তাদের কথা শুনে বলল, "মামা, আপনারা চাইলে এইখানে পাঁচ দশ মিনিট বইসা থাকতে পারেন। আমার কোনো সমস্যা হইবো না। আমি বরং পাশে দোকান থেইক্কা এক কাপ চা খাইয়া আসি।" রিকসাওয়ালা কথাটা বলে চায়ের দোকানের দিকে হাঁটা শুরু করল।
রুদ্র রিকসার সাথে হালকা হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিয়া বসে আছে সিটে। সেখান থেকে সে রুদ্রকে দেখছে। মুখে খোচাখোচা দাড়ি। জলপাই রঙের একটা পাঞ্জাবি। হাতে ঘড়ি। সে দাঁড়িয়ে ফোন টিপছে। রিয়া বোঝার চেষ্টা করছে, তার জন্য সে বিরক্ত কি-না। রুদ্রকে দেখা মনে হচ্ছে না সে বিরক্ত। হঠাৎই রিয়ার ভয় একটু কমল। সে এতোক্ষণে ভয়ে ছিল, সে কোনো ভুল করে বসে কি-না। এই মানুষটার সামনে সে আর কোনো ভুল করতে চায় না। এই মানুষটাকে সে দূরে চলে যেতে দিতে চায় না। এই অল্প খানিকটা থাকলেই তার চলবে। এর বেশি তার কিছু চাই না। ভালোবাসায় লোভ করতে নেই। যতটুকু পাওয়া যায় ততটুকুতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
"আমাকে কি আপনি ভয় পান?" রুদ্র না তাকিয়ে রিয়াকে প্রশ্নটা করল।
"না!" এইটুকু বলতে রিয়ার কন্ঠ কেমন কেপে উঠল।
"আপনাকে দেখে সেটা মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আপনি খুব নার্ভাস। ভয়ের মধ্যে আছেন। আমাকে ভয় পাওয়া কিছু নেই। আমি খারাপ মানুষ না। আমি যে সম্পূর্ণ ভালো মানুষ সেটাও বলছি না। কিন্তু এটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, আপনি অসম্মান বোধ করবেন তেমন কিছুই করবো না আমি। এছাড়া আমি বাঘ ও না, ভাল্লুক ও না যে আমাকে দেখে এতো ভয় পেতে হবে।"
"আমি সেটা বোঝাতে চাই নি। আসলে...!"
"সমস্যা নেই। আমিও সেটা বলতে চাই না। কিন্তু এবার একটু স্বাভাবিক হলে ভালো হয়। এছাড়া আমরা-তো বন্ধুই।"
রুদ্রের শেষ কথটা শুনে রিয়ার ভালো লাগল। সে মারাত্মক খুশি হয়েছে। তার মুখ ঝলমলিয়ে উঠল মুহুর্তেই। রুদ্র তাহলে তাকে পর করে দেয় নি। রিয়ার এখন অনেক ভালো লাগছে। তার মনে হচ্ছে তার বুক থেকে একটা ভাড়ী পাথর নেমে গেছে। সে এখন বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পারছে।
"এখন আমরা কি যেতে পারি? আপনার-তো আবার প্রেজেন্টেশন আছে।"
রুদ্রের মুখে প্রেজেন্টেশনের কথা শুনে তার মনে পড়ে গেলো। সে এতোক্ষণে ভুলেই গেছিল এই ব্যাপারটা। সে বলল, "হ্যাঁ, এখন যাওয়া যায়।"
রুদ্র রিকসাওয়ালাকে ডেকে তাকে যেতে বলল। রিকসাওয়ালা রিকসা চালাতে চালাতে দুই একটা কথা বললো তাদের সাথে। সে-ও তার কথা জানালো। তার বউ'য়ের কথা। সে বাবা হতে যাচ্ছে, এই কথাটা আনন্দের সাথে শেয়ার করল। রিয়া এবং রুদ্রের সেইসব কথা শুনতে খারাপ লাগল না। তারাও আগ্রহ নিয়ে নানা কথা জিজ্ঞেস করলো তাকে।
রিকসা থেকে নেমে রিকসাওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে রুদ্র বলল, 'শুনুন, আমি আপনার উপর রেগে নেই। আপনি নিজে নিজে ভেবে বসে থাকবেন না যে আমি রেগে আছি।"
"ধন্যবাদ।" রিয়া হাসি জড়ানো মুখে বলল। রুদ্রের এইটুকু কথা তার জন্য অনেক।
এতোক্ষণ পরে মেয়েটার মুখে হাসি দেখে রুদ্রের ভালো লাগল। এতো সুন্দর হাসিটা কি-না সে এতক্ষণ নিজের মধ্যে রেখে গুরুগম্ভীর করে রেখেছিল মুখখানা। রুদ্র বলল, "আচ্ছা, আজ চলি। আপনার প্রেজেন্টেশনের জন্য শুভ কামনা।"
"আবারো ধন্যবাদ। অন্য কোনো সময় দেখা হবে।" শেষ কথাটা রিয়া হঠাৎ মুখ ফসকে বলে ফেলেছে।
"অবশ্যই। কোনো সমস্যা নেই।" রুদ্র বলল।
রিয়া মুখে হাসি নিয়েই চলে গেলো। রুদ্র কিছুটা সময় রিয়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। মেয়েটার হাসিটাও সুন্দর। সে আজ কতবার মেয়েটাকে মনে মনে সুন্দর বলেছে তার হিসাব নেই। সুন্দরকে সুন্দর বলা দোষের কিছু না!
সময় দ্রুত অতিবাহিত হতে থাকল। আজ বৃহস্পতিবার। কাল ক্যাম্পাস বন্ধ। হাতে কিছু কাজ জমে আছে, সে সেগুলো কাল করবে বলে ঠিক করলো রুদ্র।
ক্লাস করতে করতে রুদ্র নানা কথা ভাবছিল। ক্লাসে তার মনোযোগ নেই। ক্লাস শেষ হতেই সে বন্ধুদের সাথে কিছুটা সময় কাটিয়ে আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে এলো।
বাসায় ফিরতেই জাহানারা তাকে জানালো, "রুদ্র, গতকাল তোর নামে একটা চিঠি এসেছে।"
"কখন এসেছে?"
"গতকাল সন্ধ্যায়। আমি বাসায় ফিরছিলাম ঠিক তখনই।"
"সেই কথা তুমি আজ জানাচ্ছো আমাকে?"
"নানা কাজে ভুলে গেছিলাম বাবা।"
"কে পাঠিয়েছে?"
"তরু নামের কেউ। আগেও কয়েকবার মেয়েটার কাছ থেকে চিঠি এসেছে। কে রে মেয়েটা? প্রায়ই কি তোকে চিঠি পাঠায়?"
"পুরনো এক ফ্রেন্ড, মা। চিঠিটা কোথায় রেখেছ তুমি?"
"আমার রুমে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে আছে, গিয়ে সেখানে দেখ বাবা।"
রুদ্র আর কিছু না বলে দৌড়ে মায়ের রুমে গিয়ে চিঠিটা নিয়ে তার নিজের রুমে চলে এলো। দীর্ঘ দেড় মাস পরে তরুর চিঠি এসেছে। তার দীর্ঘ অপেক্ষা আজ সমাপ্তি হয়েছে। চিঠিটা হাতে নিতেই তার বুকটা খুশিতে ভরে উঠেছে। ঠোঁট হাসিটা লেগে আছে। সেই সাথে সম্পূর্ণ মুখেও। সে আজ খুশি। অনেক খুশি। অনেক দিন পর তার এতোটা ভালো অনুভূতি হচ্ছে। তরুর চিঠিগুলো তার কাছে নেশার মত। এগুলো ছাড়া তার বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে উঠে। সে এতোদিন নামমাত্রে বেঁচে ছিলো। যে বেঁচে থাকা অর্থহীন।
চলবে...!
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,443 in 27,681 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
এই গল্পের প্রেমে পড়ে গেছি !!
Posts: 340
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
(11-12-2022, 09:17 AM)ddey333 Wrote: এই গল্পের প্রেমে পড়ে গেছি !!
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
•
Posts: 340
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
পর্ব-১০
রুদ্র বেলা করে ঘুম থেকে উঠল। সকালে জাহানারা কয়েকবার ডেকে গেলেও রুদ্র উঠেনি। আজ শুক্রবার সে-কারণে তাকে ঘুম থেকে উঠার জন্য জাহানারা তারা দেয়নি। তবে এখন দুপুর বারোটা। ছেলেটা সকালে কিছু খায়নি। সে আবার ডাকতে এসে দেখল রুদ্র উঠেছে। কিন্তু তার চোখ টকটকে লাল। সে জিজ্ঞেস করল, "রাতে ঘুমাস নেই, বাবা?"
"একটা কাজ ছিল, মা। সেটা করতে করতে সকাল হয়ে গেছে।" রুদ্র মিথ্যে বলে। অবশ্য তার মা সেটা বুঝলো না। কারণ রুদ্র প্রায়ই রাত জাগে। ভার্সিটির কোনো কাজ থাকলে সেটা সে রাত জেগে শেষ করে।
"একবারে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নে। আজ শুক্রবার। একটু পরেই আজান দিবে।"
"আচ্ছা, আম্মু।"
জাহানারা চলে গেলে রুদ্র আবার আলস্য ভঙ্গিতে শুয়ে পরলো। বালিশের নিচে হাত দিতেই সেখানে তরুর চিঠিটা অনুভব করল। গতকাল রাতে সে চিঠিটার দিকে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে ছিলো। সেখানে পড়ার মত কিছু নেই। কয়েকটা শব্দ মাত্র। যা রুদ্রকে পুরো হতাশ করেছে। এই কারণে সে সারা রাত ঘুমাতে পারেনি। রাত জেগে তরুকে নিয়ে নানা কথা ভেবেছে।
সে চিঠিটা আবার খুলল। সেখানে তরু লিখেছে, "Rudro, I am sorry!" এটুকুই। হ্যাঁ, এইটুকু। কিন্তু এই চিঠির মানে কি? তরু কিসের জন্য সরি? রুদ্রের কাছে কোনো উত্তর নেই। সে তার সব প্রশ্নের উত্তর জানতে চায়। কিন্তু সে আগেও চেষ্টা করেছে। তার সেই চেষ্টায় কোনো লাভ হয় নি। একমাত্র তরুই পারে তার সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে। এছাড়া সে শুধু অপেক্ষা করতে পারে তরুর পরের চিঠির জন্য। সে চাইলেও অন্য কিছু করতে পারবে না। আসলে সত্যিই তার করার কিছু নেই। তাকে আবার অপেক্ষা করতে হবে। দীর্ঘ অপেক্ষা। এক সপ্তাহ। দুই সপ্তাহ। রুদ্র জানেনা তরুর পরের চিঠি কবে আসবে। আর আসবে কি-না সেটাও সে নিশ্চিত না। রুদ্রের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু তার কেনো কষ্ট হচ্ছে? তরু কে? কেনো তার জন্য কষ্ট হবে? কেনো?
মিলি ঘরে ঢুকল। সে এসেই অভিমান কণ্ঠে বলল, "ভাইয়া, আমি রাগ করে আছি!"
রুদ্র কিছু বুঝলো না। সে জিজ্ঞেস করে, "কে তোমার সাথে আবার দুষ্টু করেছে?"
"কেউ কোনো দুষ্টুমি করেনি।"
"তাহলে, রাগ করে আছ কেনো?"
"হ্যাঁ, আমি রাগ করে আছি। তোমার উপর অনেক রাগ করে আছি।" সে এতক্ষণ খাটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। সে এখন খাটে বসল। মুখ ভাড়। চোখমুখে রাগ আনার চেষ্টা করছে।
"আমার উপর? আমি আবার কি করলাম? আমি কি কোনো ভুল করেছি?" রুদ্র শিশুর মত ভঙ্গি করে জিজ্ঞেস করে।
"তুমি অনেক পঁচা হয়ে গেছে। আমাকে এখন আর ভালোবাসো না।"
"আমি আবার বুড়িটাকে ভালোবাসিনা? এই পঁচা কথা কে বলল তোমাকে?"
"কেউ বলেনি। আমি বড় হয়েছি। আমি এখন সবকিছু বুঝি।"
রুদ্র শোয়া থেকে উঠে মিলিকে টেনে কলের ভেতর টেনে নেয়৷ তারপর কপালে চুমু দিতে দিতে বলে, "আমি আমার বুড়িটাকে সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসি।"
মিলির রাগ কমল না। সে গালের উপর হাত দিয়ে বসে আছে রুদ্রের কোলে।
"কি হলো, রাগ কমেনি এখনো?" রুদ্র বলল।
"না, কমেনি। তুমি মিথ্যে করে বলছ, ভালোবাসি।" মিলি বলল।
"আমি মিথ্যে বলছি?"
"হ্যাঁ, মিথ্যে। তুমি এখন আর আগের মত আমার সাথে কথা বলো না। আমাকে আইসক্রিম কিনে দেও না। আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া।" মিলির কন্ঠে হাজারো অভিযোগ।
"এই কারণে আমার বুড়িটা রাগ করেছে? আচ্ছা আজকে বিকালে আমরা সবাই মিলে ঘুরতে যাবো, ঠিক আছে?"
মিলি মনে মনে খুশি হলেও সে দ্রুত সেটা প্রকাশ করল না। সে বলল, "আমাকে দুইটা আইসক্রিম কিনে দিতে হবে।"
"একসাথে দুইটা আইসক্রিম খেলে-তো ঠান্ডা লেগে যাবে। তখন কষ্ট হবে না বুড়িটার?"
"ঠান্ডা লাগবে না। আমাকে দুইটাই কিনে দিতে হবে।"
"আচ্ছা, দিবো। এবার রাগ কমেছে?"
"হ্যাঁ, কমেছে।" মিলির কথা শেষ হতেই সে রুদ্রের কোল থেকে নেমে চলে যেতে থাকে।
"আমিও কিন্তু রাগ করেছি।" রুদ্র বলল।
"আই লাভ ইউ ভাইয়া!" মিলি একরাশ হাসি নিয়ে রুদ্রকে বলল। রুদ্রের মুখে হাসি ফুটে এলো মুহুর্তেই।
রুদ্র গোসল করতে করতে নানা কথা ভাবল। আজকাল সে বাসায় খুব কম সময় দিচ্ছে। সারাক্ষণ বাইরে বাইরে, যতক্ষণ বাসায় থাকে নিজের ঘরে একা একা থাকে। অবশ্য, নানা কারণে সে কিছুটা ডিপ্রেশনে আছে। সবকিছু কেমন করে বদলে যাচ্ছে। দ্রুত বদলে যাচ্ছে। বদলে যাওয়াই নিয়ম।
রুদ্র ঠিক করল আজ যেহেতু শুক্রবার সে সবাইকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবে। তার মা জাহানারা, তার ছোট বোন, মিলি। তার দাদী, আলেয়া। আজ বিকালটা সে সবার সাথে কাটাবে। হাতে কিছু টাকা জমা আছে, সেটা আজ সে খরচ করবে। পরিবারের জন্য টাকা খরচ করার মত আনন্দ অন্য কিছুতেই নেই। এই আনন্দটুকু পাওয়ার জন্য মানুষ সারাজীবন এতো সংগ্রাম করে।
ক্লাস, প্রেজেন্টেশন, প্রজেক্ট, ফ্যামিলি, সবকিছু মিলিয়ে ব্যস্ততায় আবারও রুদ্রের সময় বয়ে যেতে লাগল। নদীর স্রোতের মত সে সময়ের ঢেউয়ে নিজেকে ছেড়ে দিয়েছে। পরিবারের দায়িত্ব ধীরে ধীরে তার উপর চলে আসতে শুরু করেছে। জাহানারার শরীরটা ভাল যাচ্ছে না। এদিকে তার দাদী আলেয়া সবসময় অসুস্থ থাকে। তার ছোট বোন নদী এখনো ছোট। বড় ছেলে হিসাবে তার দায়িত্ব সে অনুধাবন করতে পারছে। সে বুঝতে পারছে বছরখানেকের মধ্যে পরিবারের দায়িত্ব তার কাঁধে চলে আসবে। এদিকে এই সেমিস্টার ফাইনালের পর পরই ছয় মাসের ইন্টার্নি শুরু হবে। তখন ব্যস্ততা বেড়ে দিগুণ। মানুষের জীবনটাই অদ্ভুত। পৃথিবীতে অন্যের জন্য বাঁচতে হয়। তবে যারা এটায় অনন্দ খুজে পায়, তাদের চেয়ে সুখী আর কেউ হতে পারে না।
তরুর সেই ছোট্ট চিঠির পরে আর কোনো চিঠি আসে নি। সে যা ভেবেছিল সেটাই হয়েছে। তরুর ছোট্ট চিঠিটা দেখে যে কেউ বুঝবে এটাই তার শেষ চিঠি। কিন্তু এভাবে এটা শেষ হোক সে চায় নি। সে একটাবার চেয়েছিল, তরু নামে যে মেয়েটা তাকে চিঠি দেয় তার সাথে দেখা করতে। যে এতো সুন্দর চিঠি লিখতে পারে, এতো সুন্দর গুছিয়ে কথা বলে, এতো সুন্দর হাতের লেখা, সেই মানুষটা কেমন হবে, সেটা জানার তৃষ্ণা এখনো রুদ্রের মনের মধ্যে রয়েছে। সে সেই অনুভূতি জীবনের বাস্তবতার দোহাই দিয়ে চেপে রাখে। সেটাকে বের হতে দেয় না। প্রকাশ পেতে দেয় না। তরু জেনো তার জীবনে কোনো এক অমীমাংসিত রহস্য। সে ভুলে যেতে চায়। কিন্তু পারে কি না তা বোঝা যায় না।
একটা মানুষ কি করে এমন করে কোনো মানুষকে ভালোবাসতে পারে? তরুর চিঠিগুলো তার কাছে না এলে সে জানতেই পারতো না। কিন্তু সে একটা বিষয় ভেবে পায় না, তরু যে রুদ্রকে ভালোবাসে সে কেনো তরুর কাছ থেকে দূরে চলে গেলো। এমন কাউকে কি করে ভুলে গেলো। সে কোনো খোঁজই নিলো না। অভিমান করে মানুষ বলতেই পারে দূরে যাওয়ার জন্য তাই বলে দূরে চলে যেতে হবে? রুদ্র কি তরুর চোখে ভালোবাসা দেখতে পায় নি? আসলে যে ভালোবাসা পায় না, সে পাগলের মত ভালোবাসা খুঁজে বেড়ায়। আর যে ভালোবাসা পায়, সে নিজ ইচ্ছে সেটাকে হারায়। রুদ্রের প্রতি তার অনেক হিংসা হয়। রুদ্রের জায়গায় সে থাকলে সে কখনোই তরুকে ছেড়ে যেতো না। যতই তাকে দূরে ঢেলে দিক, সে তাকে আগলে রাখতো, ভালোবেসে কাছে রেখে দিতো।
তরুর কথা আর কখনো ভাববে না করেও দিনের অবসর সময়টুকু রুদ্র তরুর কথাই ভাবে। সে যতই নিজেকে দেখাক সে তরুর কোনো কিছু নিয়ে কেয়ার করে না। কিন্তু তার মনে আসলে ঠিক তার উলটো। সে তরুর চিঠি পড়ার প্রবল তৃষ্ণায় ভোগে। তরুর সাথে একবার দেখা করা ইচ্ছেটা তাকে খুরে খুরে শেষ করে দিচ্ছে। তরুর এবং রুদ্রের মধ্যে কি এমন হয়েছিল যে এতোটা ভালোবাসার পরেও বিচ্ছেদের দেয়াল টেনে ন
দিতে হয়েছে? সেটা জানার জন্য সে মরে যায়।
তরুর ব্যাপারে এরকম হাজারটা প্রশ্ন রুদ্রের মনে মধ্যে বাস করছে। কিন্তু তার কাছে সে সব কোনো প্রশ্নের উত্তর নেই। এই জীবনে তাকে কি এই বোঝাটা বয়ে বেঁচে থাকতে হবে? রুদ্র জানেনা। সে কিছু জানতে চায় না। এভাবে হলে, সে এভাবেই বেঁচে থাকবে। তরুর স্মৃতি সঙ্গে। তার চিঠিগুলোর সঙ্গে। মানুষ তাকে পাগল ভাববে, বোকা ভাববে, কিন্তু মানুষের ভাবনায় কখনো কারো জীবনের গতিপথ পরিবর্তন হয় না। জীবন যেদিকে যাওয়ার সে সেদিকেই যাবে।
আজ রুদ্রের শরীরটা ভালো না। সে আজ ক্লাসে যায় নি। সে বসে বসে সেই সকাল থেকে টিভি দেখছে। এছাড়া সে সকালে মিলিকে কলেজে দিয়ে এসেছিল, দুপুরে আবার গিয়ে নিয়ে এসেছে। মিলি অবশ্য এখন একাই কলেজে যায়। একাই আসে। কিন্তু মাঝেমধ্যে রুদ্র এগিয়ে দেয়। মিলি এটা খুব পছন্দ করে। রুদ্রেরও ভালো লাগে৷
টিভিতে একটা পুরনো মুভি হচ্ছে। মুন্না ভাই এমবিবিএস। সে আগেও এই মুভিটা দেখেছে। একবারের বেশি কিন্তু এখন আবার দেখতে তার মন্দ লাগছে না। সে গুরুত্বপূর্ণ একটা সিনে আছে, ঠিক সেই মুহুর্তে কলিংবেল বাজলো। সে বসা থেকে উঠল না। কিছুক্ষণ পরে আবার কলিংবেলের শব্দ হলে সে অনিচ্ছায় সত্ত্বেও উঠল। দরজা খুলে দিলো। দরজার বাইরে যে দাঁড়িয়ে আছে, সে তার পরিচিত। অনেক দিন না দেখলে মানুষটাকে তার মনে আছে। সে একটা সময় এই মানুষটার জন্য অপেক্ষা করতো।
"আজকে কি বুধবার?" রুদ্র হঠাৎ ভদ্রলোককে প্রশ্নটা করল। সে আসলে মনে মনে নিজেকে প্রশ্নটা করতে চেয়েছিল।
"জি স্যার, আজ বুধবার।" লোকটা ছোট্ট করে জবাব দিলো। সে আবার বলল, "স্যার আপনার জন্য একটা পার্সেল আছে।"
রুদ্র অবাক হলো। পার্সেল? তাহলে তরুর চিঠি না? সে লোকটাকে দেখে প্রচন্ড খুশি হয়েছিল। কিন্তু লোকটার কথা শুনে সে তাৎক্ষণিক হতাশ হয়ে গেলো।
লোকটা একটা মেমো এগিয়ে দিয়ে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলল, "স্যার এখানে, আর এখানে সাক্ষর করতে হবে।"
রুদ্র কাগজটা হাতে নিল। সে একটু আগে যতটা হতাশ হয়েছিল কাগজের উপর প্রেরকের নাম দেখে তারচেয়ে দিগুণ খুশি হয়ে উঠল।
রুদ্র সাক্ষর করে কাগজটা ভদ্রলোকের দিকে এগিয়ে দিলো। এবং সে তার ব্যাগ থেকে প্যাকেট করা একটা পার্সেল বের করে রুদ্রকে দিলো। রুদ্র পার্সেলটা নিলো। ভদ্রলোকটা চলে যেতে লাগল। হঠাৎ রুদ্র বলল, "এক্সকিউজ মি!"
ভদ্রলোকটা ঘুরে তাকালো। সে বলল, "স্যার, কোনো সমস্যা?"
"না, কোনো সমস্যা নেই। আসলে একটা প্রশ্ন ছিলো।"
"জি স্যার বলুন। উত্তর জানা থাকলে আমি অবশ্যই আপনাকে সাহায্য করবো।"
"এই পার্সেলে প্রেরকের কোনো ঠিকানা নেই। কোনো ভাবে কি ঠিকানা জানা সম্ভব? আসলে ঠিকানা জানাটা খুব জরুরি।"
"সরি স্যার। আসলে এটা কনফিডেনসিয়াল একটা ইস্যু। এছাড়া আমার কাজ শুধু প্রাপকেরা ঠিকানায় পার্সেল ডেলিভারি দেওয়া।"
রুদ্র কি বলব ঠিক করে নিচ্ছে। সে বলল, "কোনো ভাবে কি জানা সম্ভব? আসলে ঠিকানা জানা খুব জরুরি। এখানে একটা ভুলবোঝাবুঝি হয়ছে। একটা মিস্টেক হয়েছে।"
ভদ্রলোকটা উত্তর দিলো, "যেহেতু এখানে প্রেরকের ঠিকানা নেই, সেহেতু আপনি যদি আমাদের অফিসেও যান তাহলে সেখান থেকেও আপনাকে কোনো সাহায্য করতে পারবে না। তার মূল কারণ, প্রেরক নিজেই তার গোপনীয়তা বজায় রাখতে চাচ্ছে। তার অনুমতি ব্যাতিত অফিস থেকে কোনো ভাবেই তার কোনো তথ্য আপনাকে দিবে না। তারচেয়ে বড় আরেকটা কথা হলো, সে যদি তার ঠিকানা গোপন করেই পার্সেল পাঠায় তাহলে অফিসেও তার ঠিকানা পাওয়া যাবে এটার সম্ভাবনাও অনেক কম। "
লোকটার কথায় রুদ্র হতাশ হলো। সে তাকে আরো কিছুটা সময় নানা ভাবে বুঝিয়ে বলল। কিন্তু লোকটার কোনো কথায় কোনো আশার আলো দেখলো না রুদ্র। সে বলল, "হ্যাঁ, আপনার সকল কথা বুঝলাম। কিন্তু এটা জানার অধিকার আমার আছে, কে আমাকে পার্সেল পাঠাচ্ছে রেগুলার। কি অধিকার নেই।"
"সরি স্যার। আপনার বিষয়টা বুঝতে পারছি। আপনি চাইলে আমাদের অফিসে একবার খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। আশা করি তারা আপনাকে সাহায্য করতে পারবে।"
রুদ্র আর কিছু বলল না। ভদ্রলোকটা চলে গেলো। সে দরজা বন্ধ করে সরাসরি তার রুমে চলে এলো। সে মুভি দেখার কথা ভুলেই গেলো।
রুদ্র রুমে এসে পার্সেলটা খুলল। সেখানে সুন্দর একটা ঘড়ি এবং তার পাশে একটা চিরকুট। সে চিরকুটটা আগে খুলল। নীল রঙের চিরকুটে লেখা, "রুদ্র, তোর হাতটা ধরে এই পৃথিবীতে চিরকাল রয়ে যেতে পারলে রয়ে যেতাম। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সেই ভাগ্যটা দেয় না। যেমন আমাকে দেয়নি। তাই তোর জন্য এই ছোট্ট উপহার। তুই যখন এই ঘড়িটা পরবি তখন মনে করিস আমি তোর হাত ধরে আছি। তারপর আনন্দের পথ ধরে ছুটে চলিস। এভাবেই জীবনটা কাটিয়ে দিস। আমি জানি, আমার হাত ধরে তুই কখনো দুঃখ ভারাক্রান্ত পথের দিকে পা বাড়াবি না। এটুকু বিশ্বাস আছে আমার।"
চিরকুটটা পড়া শেষ হলে, রুদ্র ঘড়িটা হাতে পরলো। ঘরিটা তার পছন্দ হয়েছে। এটা তার নয়, নাকি তারই? এতোদিনে এটুকু অধিকার তৈরি হয়েছে নিশ্চয়ই। সে এই উপহারটুকু রাখতে পারে। তার জন্য না হলেও, এটা পাওয়ার অধিকার সে রাখে। যে রুদ্র তরুকে রেখে পালিয়ে গেছে, এটা সে পাওয়া যোগ্য নয়। হ্যাঁ, সে পাওয়ার যোগ্য নয়!
বক্সের নিচে রুদ্র একটা খাম দেখতে পেলো। আজকে একটার পর একটা সারপ্রাইজ। সে কি স্বপ্ন দেখছে? না এটা সত্যি। কোনো এক অলৌকিক কারণে সে আজ প্রচন্ড খুশি। সে চিঠি পড়ার জন্য তারাহুরো করল না। আজকের জন্য এটুকুই যথেষ্ট। চিঠি না-হয় অন্য কোনো দিন, অন্য কোনো সময় পড়া যাবে।
চলবে...!
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 340
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
পর্ব -১১
সাত্যকি একটা ক্যাফেতে বসে আছে। তার সামনে বসে আছে জয়। সে ছবি দেখে যা ভেবেছিল, তারচেয়ে মানুষটা একটু খাটো। নাকের নিচে একগুচ্ছ গোঁফ। গোঁফটা ঠিক মুখের সাথে মানাচ্ছে না। কেমন অদ্ভুত দেখাচ্ছে। ওভারল সবকিছু মিলে ভালো, সে মনে করল।
"আপনি স্বচ্ছন্দবোধ করছেন না বোধ হয়!"
জয়ের প্রশ্ন শুনে সাত্যকি বলল, " আসলে সেরকমটা না।"
"কি খাবেন বলুন?" জয় জিজ্ঞেস করলো।
"সরি, কিছু মনে করবেন না। আমি এখন কিচ্ছুই খাবো না।" সাত্যকি উত্তর দিলো।
"ক্যাফেতে এসে না খেয়ে চলে যাওয়াটা, কেমন দেখাবে না?"
"আপনি নিজের জন্য কিছু নিন। আসলে আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।"
"সেটা কি করে হয়? আপনি না খেলে আমি কি করে খেতে পারি!"
সাত্যকি কিছু একটা ভেবে জয়কে বলল, "আচ্ছা, আপনি যা খাবেন সেটাই অর্ডার করুন, আর আমি শুধু এক কাপ কফি নিবো, এর বেশিকিছু না। প্লিজ আর জোর করবেন না।"
"আচ্ছা, সমস্যা নেই।" জয় মাথা নেড়ে বলে ওয়েটারকে ডেকে খাবার অর্ডার করে দিলো।
জয়ের সাথে আজই সাত্যকির প্রথম দেখা। আগে অবশ্য দুই একবার ফোনে আলাপ হয়েছে তাদের। হঠাৎ একদিন সাত্যকির বাবা তাকে ফোন দিয়ে জয়ের কথা জানায়। ছেলেটা ভালো। সবাই পছন্দ করেছে। এখন তুই পছন্দ করলে বিয়ের কথা সামনে আগাবো আমরা। সাত্যকির বাবা ফোনে তাকে কথাগুলো বলে। সে ফোনে জয়ের একটা ছবি পাঠিয়ে দেয়। জয়ের ছবি দেখে সাত্যকির অপছন্দ হয় নি। কিন্তু একটা মানুষের ছবি দেখে সেই মানুষটার সম্পর্কে কতটুকু আর জানা সম্ভব। সে চেয়েছিল, জয়ের সাথে দেখা করে সে সিন্ধান্ত নিবে। কিন্তু সেই কথা তাকে বলতেই হয় নি। জয়ই তাকে জানায়, সে দেখা করতে চায়। যদি সাত্যকির কোনো সমস্যা না থাকে। সাত্যকি চেয়েছিল, তাই সে আর না করে নি।
"আমি এখন বিয়ে করতে চাই না। আমার অনার্স শেষ হতে কয়েকমাস মাত্র বাকী। তারপর মাস্টার করার ইচ্ছে আছে। কিন্তু বাবা যদি বিয়ের কথা বলে, আমি আমার বাবাকে না করতে পারবো না। আমি বাবার মুখের উপর কখনো কথা বলতে পারি না? ছোট বেলা থেকেই বাবা যা বলে এসেছে আমাকে তাই করতে হয়েছে। তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো, বাবাসহ আমার বাসার সবাই আপনাকে পছন্দ করেছে। আপনাদের পরিবারও ভালো। আমি জানি, বাবা যেহেতু আপনাকে পছন্দ করেছে, সেহেতু এখানে আমার পছন্দ অপছন্দের তেমন কোনো গুরুত্ব নেই। শেষ মুহুর্তে বাবার সিন্ধান্তই মেনে নিতে হবে আমাকে। প্লিজ, আপনি কিছু একটা করুণ।" সাত্যকির কন্ঠে করুণার সুর। একটানা কথাগুলো বলার কারণে তার গলা শুকিয়ে গেছে। টেবিলে থাকা পানির গ্লাসটা ধরে একবারে ঢকঢক করে পুরো গ্লাস খালি করে ফেলল সে।
"সাত্যকি!"
"জি বলুন।"
"যদি আমাকে আপনার পছন্দ না হয় তাহলে আমিও চাইনা এই বিয়েটা হোক? বাবা-মায়ের কথায় চোখ মুখ বন্ধ করে কোনো মেয়ের বিয়ে করা উচিত না, বলে আমি মনে করি। কারণ বিয়ের পর কোনো বাবা-মা সংসার করবে না। তাদের মেয়েকেই করতে হবে। তাই এখানে সর্বপ্রথম একে অন্যকে পছন্দ করাটা জরুরি। যাতে পরে এটা নিয়ে কোনো সমস্যা না হয়।" এটুকু বলে কিছুটা সময় থেকে জয় আবার বলল, "তাছাড়া যদি অন্য কোনো কারণ থাকে আপনার তাহলে আপনি চাইলে আমার সাথে নির্দ্বিধায় শেয়ার করতে পারেন। মানে আমি বুঝাতে চাচ্ছি, যদি আপনি অন্য কাউকে পছন্দ করে থাকেন তাহলে সেটা নির্দ্বিধায় আমাকে বলতে পারেন। আমি কিছু মনে করবো না। যতটা সম্ভব আমি আপনাকে সাহায্য করবো।"
"বিশ্বাস করুণ, আমার অন্য কোনো কারণ নেই। তাছাড়া আপনাকে অপছন্দ করার মত তেমন কিছু দেখছি না। কিন্তু আমি এই মুহুর্ত বিয়ে করতে চাচ্ছি না।"
"যাক ভালোই হলো। আসলে আমিও চাচ্ছি না।"
"কি, চাচ্ছেন না?" সাত্যকি কিছুটা অবাক হলো।
"বিয়ে করতে৷" জয় উত্তর দিলো।
জয়ের কথায় সাত্যকি অনেকটা আশ্বস্ত হলো। তার মুখে হাসি ফুটেছে। জয় সেটা লক্ষ করল। জয় বলল, "কিন্তু এখন চাচ্ছি না মানে এটা নয় যে বিয়ে করতে চাই না। আমি আসলে সব কথা সরাসরি বলতে পছন্দ করি। তাই সরাসরি বলছি আপনাকে।" জয় কিছুটা সময় নিলো। সে তার কথাগুলো গুছিয়ে নিলো। সে বলল, "দেখুন, আজকাল কম বেশি সবারই কোনো না কোনো অতীত থাকে। আমার যে একদমই নেই, এটা বললে মিথ্যে বলা হবে। আর আমি চাইনা কোনো নতুন সম্পর্কের শুরুটা হোক মিথ্যে দিয়ে। আমি এটাও চাইনা, এই কথাগুলো আপনি বিয়ের পরে কোনো ভাবে জানতে পারেন। কারণ তখন জানা, আর এখন জেনে সিন্ধান্ত নেওয়ার মধ্যে অনেক পার্থক্য।"
জয় থামল। সাত্যকিও কোনো কথা বলল না। সে জয়কে সময় দিলো তাকে তার কথা গুছিয়ে নিতে।
"একটা মেয়ের সাথে আমার রিলেশন ছিলো। অনেক দিনের। তিন বছরের মত। গত বছরই আমাদের ব্রেক আপ হয়ে যায়। মাস খানেকের মধ্যেই তার বিয়েও হয়ে যায়। আমি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এতোদিনে ভুলেও গেছি। তবুও আমি আরো কিছুটা সময় নিতে চাচ্ছি কারণ আমি চাইনা কাউকে ঠকাতে। যদি সম্পূর্ণভাবে কাউকে মন থেকে না চাইতে পারি তাহলে তার সাথে কোনো সম্পর্কে জড়ানো উচিত না, আমি এটা বিশ্বাস করি। এছাড়া আমাদের উচিত প্রতিটা সম্পর্ককে মূল্যায়ন করা। মানুষটাকে সম্মান করা। আরো একটা কারণ হলো, বিয়ে নিয়ে আমি তারাহুরো করতে চাচ্ছি না। যাকে বিয়ে করবো, তাকে আগে জানতে চাই, বুঝতে চাই। বয়সের সাথেসাথে মানুষের মধ্যে পরিপক্বতা আছে। তাই এখন ভুল করলে সেই ভুলটা শোধরানো সম্ভব হয়ে উঠে না। এই কারণে আমি তারাহুরো করে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিতে চাই না।"
সাত্যকি মুগ্ধ হয়ে জয়ের কথাগুলো শুনলো। মানুষটা কি সুন্দর গুছিয়ে কথা বলে। প্রথম দেখেই জয়কে যেরকম মনে করেছিল তার, সে হয়তো তারচেয়ে ভালো। একটা মানুষ যখন সম্পর্কে গুরুত্ব বুঝে, সম্পর্কটাকে মূল্যায়ন করতে জানে, তার সাথে চোখ বন্ধ করে সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়, এটা সাত্যকির বিশ্বাস। সে মনে করে, বর্তমানে যদি কেউ তাকে সম্পূর্ণ ভাবে ভালোবাসে তাহলে সেটা তার জন্য যথেষ্ট। অতীত নিয়ে তারও কোনো মাথাব্যথা নেই।
"কিছু বলছেন না যে?" সাত্যকিকে চুপচাপ থাকতে দেখে জয় জিজ্ঞেস করলো।
"অতীত নিয়ে আমিও ভাবিনা। আমরা ভুল করি। মানুষ মাত্রই ভুল করবে। মানুষ যখন কোনো সম্পর্কে সৎ থাকে, অটুট বিশ্বাস রাখে, একে অন্যকে বুঝে উঠে, তাহলে সেই সম্পর্কে কখনো ভাঙ্গন ধরে না।"
"আপনি ঠিক বলেছেন। আমি এটাই বিশ্বাস করি। আপনার চিন্তাভাবনা সাথে আমার অনেক মিল।" জয় কথাটা বলে হাসলো। সাত্যকি সেটা লক্ষ করল। সেও জয়ের হাসির সাথে তাল মিলিয়ে মুচকি হাসল।
তারা খেতে খেতে আরো বেশ কিছুক্ষণ গল্প করল। চলে যাওয়ার সময় হলে জয় একটা রিকসা ঠিক করে দেয় সাত্যকিকে। সাত্যকি বিদায় নিলে, রিকসা চলতে শুরু করে। তখনি জয় দৌড়ে এসে রিকসা থামিয়ে সাত্যকিকে বলল, "আমি কি বাসায় বলতে পারি, আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে?"
সাত্যকি কোনো উত্তর দিলো না। অবশ্য তার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন নেই। জয় তার মুখের হাসি দেখেই বুঝে গেছে সাত্যকি তাকে পছন্দ করেছে। সে আবার বলল, "বিয়ে নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। বিয়েটা পরেই হবে। আমি বাসায় কথা বলল।"
"ধন্যবাদ।" কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল সাত্যকি। তারপর সে আবারো জয়ের কাছ থেকে বিদায় নিলো। তবে এবার যাওয়ার আগে সে বলল, "এভাবে আর দৌড়ে আসবেন না। আমার নাম্বার-তো আছেই আপনার কাছে। যে কোনো সময় চাইলেই ফোন দিতে পারেন। সমস্যা নেই।"
জয় মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলো। ঠোঁটে হাসি। সাত্যকি চলে যাচ্ছে। জয় দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে বিদায় দিয়ে যাচ্ছে। সাত্যকিও দূর থেকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার মুখেও হাঁসি। চোখের আড়াল হওয়ার আগ পর্যন্ত জয় এক দৃষ্টিতে সাত্যকির চলে যাওয়া দেখল।
সাত্যকির সাথে কথা বলা ক্রমশ বাড়তে থাকলো। সময়ের সাথে তাদের সম্পর্ক অনেকটা গাড় হলো। দুইজন একে অন্যকে আরো খানিকটা জানলো। ভালোবাসতে শুরু করলো।
জয় আজকাল প্রায়ই অফিস শেষে সাত্যকির সাথে দেখা করতে আসে। সাত্যকিকে একদিন না দেখতে পেলে সে অস্থির হয়ে উঠে। সাত্যকি হলে থাকার কারণে জয় তার সাথে বিকাল কিংবা সন্ধ্যায় দেখা করতে এলে সাত্যকির বন্ধুদের সাথে প্রায় তার দেখা হয়ে যায়। এতোদিনে সে সবার নাম জেনে গেছে।
জয় একদিন সাত্যকিকে বলল, "তোমার বন্ধুগুলো চমৎকার। আজকাল এরকম বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।"
জয়ের কথা শুনে সাত্যকি অনেক খুশি হয়। তার মাথা থেকে একটা দুশ্চিয় দূর হয়ে যায়। আজকাল খুব কম মানুষই আছে যারা মেয়েদের ছেলে বন্ধদের সহজে মেনে নেয়। সেই অল্প কিছু মানুষের মধ্যে জয় একজন। অবশ্য জয় সহজে মেনে নেওয়া আরেকটা কারণ তার বন্ধুরাও ভালো। সে এরকম বন্ধু পেয়ে আসলেই ভাগ্যবান।
সাত্যকি খুশি মনে তার বন্ধুদের কথা প্রায়ই জয়কে জানায়। প্রায় চার বছর একসাথে কাটানো ভালো মুহুর্ত, আনন্দ, দুষ্টুমি, সবকিছু জয়ের সাথে সে শেয়ার করে। রুদ্রের কথা, ইরিনার কথা, ফাহিমের কথা, রিয়ার কথা একটু বেশি বেশি বলে। তার আরো কিছু বন্ধু আছে। কিন্তু সকল বন্ধুদের মধ্যে এই কয়জন একটু বেশি আপন। জয় সে-সব গল্প শুনে যায়। সাত্যকির আগ্রহ নিয়ে বলা কথাগুলো জয় মনোযোগ শ্রোতার মত করে শুনে। আসলে তার ভালো লাগে। সাত্যকির কথা শুনতে ভালো লাগে। সাত্যকি সারাক্ষণ তার কন্ঠে গুনগুন শব্দ করলেও জয়ের তা শুনতে ভালো লাগে। কখনো তার বোরিং লাগে না। কখনোই না। এটা কি ভালোবাসা?
সময়ের সাথে সাথে সাত্যকির বন্ধুদের সাথে জয়েরও বন্ধুত্ব হয়ে গেলো। তারা আজকাল একসাথে বসে আড্ডা দেয়। চা খায়। গল্পে মেতে উঠে। মজা করে, দুষ্টুমি করে। সাত্যকির বন্ধুরাও জয়কে মেনে নিয়েছে। সবাই-ই জয়কে পছন্দ করে। একজন বড় ভাইয়ের মত। সে আবার বন্ধুর মত। সবাই টুকটাক নিজেদের সমস্যা কথা জয়ের সাথে শেয়ার করে। জয় যতটা সম্ভব পরিস্থিতি, বাস্তবতা কিংবা সেই পরিস্থিতি কি করণীয় সেটা বুঝিয়ে বলে। একজন বড় ভাইয়ের মত ভরসা দেয়। নির্ভরতার বট বৃক্ষ হয়ে উঠে ক্রমশ সবার কাছে।
জয়ের জীবনে এমন পরিবর্তন দেখে সে নিজেই অবাক হয়। তার ছাত্রজীবন কেটেছে একাকিত্বে। সে খুব গোছানো স্বভাবের ছিলো। সবার সাথে মিশতে পারতো না। মন খুলে কারো সাথে কথা বলতে পারতো না। মূলত জয় অনেকটা ইন্ট্রোভার্ট টাইপের মানুষ ছিলো। তাই তার বন্ধুদের সংখ্যা কম ছিল। সবসময় একা একা থাকতে পছন্দ করতো। ক্যাম্পাসে আসতো, ক্লাস করে আবার চলে যেতো।
সেকেন্ড ইয়ারে উঠেই সে হুট করে একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে যায়। কাকতালীয় ভাবে তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে। দুইজন আলাদা মানুষ। একে অন্যের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন। আশ্চর্যের বিষয়, তাদের সম্পর্কটা তিন বছর ছিলো। ক্যাম্পাসের সবাই বলতো, এই সম্পর্ক ছ'মাসও ঠিকবে না। কিন্তু সবাইকে ভুল প্রমাণিত করে তাদের সম্পর্ক ঠিকলো তিন বছর। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। বর্তমানে জয়ে সেই সব নিয়ে আর ভাবে না। সে সাত্যকিকে পেয়েছে। সে একগুচ্ছ বন্ধু পেয়েছে। তার এখন প্রায়ই ইচ্ছে করে সাত্যকিদের সাথে ক্লাস করতে, ক্যাম্পাসে আড্ডা দিতে, হুটহাট পাগলামি করতে। কিন্তু সে পারে না৷ সে সেই সময়টা কাটিয়ে এসেছে। এবং নিজের ভেতর গুটিয়ে থেকে কাটিয়েছে। সে অবশ্য এটুকুতেই খুশি। এখন তার অনেকগুলো বন্ধু হয়েছে, ভালোবাসার মানুষ হয়েছে।
জয়ের এই পরিবর্তনটা শুরু হয় তখন থেকেই। বছরখানেক আগে তার ব্রেক আপ হলে সে সম্পূর্ণভাবে বদলে যায়। এদিকে জব লাইফে এসে নতুন পরিবেশে সাথে মানিতে নিতে হয় তাকে। প্রথম দিকে সে বিভীষিকার মধ্যে পড়ে যায়। কিন্তু সে আস্তে আস্তে সব কিছু গুছিয়ে নেয়। নিজেকে পরিবর্তন করতে শুরু করে। এবং অবশেষে সবকিছু মিলে সে নিজের স্বভাবটা পরিবর্তন করে ফেলে। মানুষের সাথে মিশতে শুরু করে। মন খুলে কথা বলতে শুরু করে। হাসিখুশি থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করে। সে জীবন থেকে অনেক কিছু শিখেছে। বাস্তবতার কঠিন সমীকরণ তাকে এক্সট্রোভার্ট হতে সাহায্য করেছে। সে জীবনের কাছে আর নিজেকে সমর্পণ করতে চায় না। মানুষ ভুল করে সেটা থেকে না শিখলে তাকে সারাজীবন কষ্টই পেতে হয়।
সাত্যকির পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার ব্যস্ততার কারণে বেশকিছু দিন সাত্যকি জয়ের সাথে দেখা করেনি। ফোনেও কথা বলা কমিয়ে দিয়েছে। জয় বুঝে। তবুও আজকাল সে চায় সাত্যকিকে দ্রুত বিয়ে করতে। তাকে সম্পূর্ণ ভাবে নিজের করে নিতে। তার নিজের কাছে নিয়ে আসতে চায়। এই সামান্য দূরত্ব সে সহ্য করতে পারে না। সে আর কোনো দূরত্ব চায় না। কোনো লুকোচুরি চায় না। কিন্তু পরক্ষণে সাত্যকিকে বলা তার কথাগুলো মনে পড়ে। সে তাকে কথা দিয়েছিল, পড়াশোনা শেষ হলেই সে বাসায় বিয়ের কথা বলবে। কিন্তু সে আর অপেক্ষা করতে পারছে না। সাত্যকি বুঝেনা কেনো, এই অপেক্ষা তাকে কতটা যন্ত্রণা দেয়। এটা নিয়ে জয়ের রাগ হয়। অভিমান হয়। তবুও সে অপেক্ষা করে। এই অপেক্ষায় মধ্যে যেমন যন্ত্রণা আছে, তেমন অদ্ভুত একটা আনন্দ আছে, ভালোবাসা আছে।
চলবে...!
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,443 in 27,681 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
পাগল হয়ে যাবো
Posts: 340
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
(13-12-2022, 10:09 PM)ddey333 Wrote: পাগল হয়ে যাবো
কেনো ভাই কিসের জন্য পাগল হবে।
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,443 in 27,681 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
Posts: 340
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
পর্ব-১২
আজ নদীর জন্মদিন। আলিফ তাকে রাতেই বলে রেখেছে, ভোরে তারা ছাঁদে একসাথে সূর্যোদয় দেখবে। আলিফের কথামতো নদী এলাম দিয়ে রেখেছিল। ভোরে এলাম বাঁচতেই সে ঘুম থেকে উঠে, ফ্রেশ হয়ে, লুকিয়ে ছাঁদে চলে এসেছে। সে যখন ছাঁদে আসে তখন তার মা ঘুমিয়ে ছিলো। সে এমনিতেই সর্তকতার সাথে এসেছে, যাতে তার মা'র ঘুম না ভাঙে।
এই মুহুর্তে নদী ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে। আলিফের কোনো খোঁজ নেই। এতোক্ষণে তার চলে আসার কথা। ভোর হতে চলল। আলিফ কি তাহলে এখনো ঘুমিয়ে আছে? আলিফের নাম্বারে নদী বার কয়েকবার কল দিলো। আলিফ একবারও ধরলো না। নদীর হঠাৎ মন খারাপ হলো। আলিফ কি তাহলে আমাকে আসতে বলে নিজেই ভুলে গেছে? না, আলিফ এরকম কিছু করতেই পারে না। এই কয়মাসে সে আলিফকে যতটুকু চিনেছে, জেনেছে, ততটুকুতে সে নিশ্চিত আলিফ আজ আসবেই। এই বিশ্বাসটুকু অগোচরেই তার মধ্যে জন্ম নিয়েছে।
আলিফ ছাঁদে এলো তার পাঁচমিনিটের মধ্যেই। তার বাম হাতে একগুচ্ছ গোলাপ ফুল। শুধুই গোলাপ। তিন রঙের গোলাপ। নদীর গোলাপ ফুল প্রিয়। ভীষণ প্রিয়। গোপাল ফুল বলতে সে পাগল। সে বাইরে বেরুলে তার সামনে ফুলের দোকান পড়লেই সে গোপাল ফুল কিনে নিবে। কোনো কারণ ছাড়াই সে কিনে। তার ভালো লাগে। আলিফের অন্য হাতে ছোট একটা বক্স। নদী জানে সেই বক্সে কি আছে।
আলিফের হাতে এতোগুলা গোলাপ ফুল দেখে নদী তাৎক্ষণিক খুশি হয়ে গেলো। তার মুখে অপার্থিব খুশি এঁটে রইলো। আলিফ হেঁটে নদীর কাছে এলো। ফুলগুলো নদীর দিকে বাড়িয়ে দিতেই সেগুলো নিয়ে নিলো নদী।
নদী এবং আলিফ ছাঁদের এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে। দুইজনের চোখ দূরের আকাশের দিকে। কখন সূর্যের আলো এসে ভোরের আন্ধকার দূর করে দিবে সেটা দেখার অপেক্ষায় তাদের চোখ।
অনেক দূরের একটা বড় বিল্ডিং দেখা যাচ্ছে। দৃষ্টিসীমাকে আটকে দিচ্ছে মাঝে মাঝে একখণ্ড মেঘ এসে। উঁচু উঁচু বিল্ডিংয়ের মধ্য থেকে একটু পরপর দানব আকৃতির মেঘ বের হচ্ছে। তারা অপেক্ষায় আছে সূর্যের। অপরূপ দৃশ্যাবলীর সমারোহ। পূব আকাশে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ তাদের মনে হলো কোনো ষোড়শী লজ্জা পেয়ে গাল লাল হয়ে যাওয়ার মতো মেঘের একটা কিনারা লাল হয়ে উঠেছে। ঠিক লাল নয়, কমলা। দিনের শুরুতে ঘোষণা করা আনকোড়া সূর্যের আলতো রশ্মি এসে পড়েছে মেঘের গায়ে। এতটাই মৃদু আলো যে, মেঘ ভেদ করে সে আলো এপারে আসতে পারছে না। সেই সাদা মেঘের উপর কমলা রঙের আভার যে কী রূপ! এই রূপের বর্ণনা করতে কবিদের শব্দভান্ডার যথেষ্ট নয়।
আলিফ তার পকেটে থেকে একটা চিরকুট বের করে নদীকে দিলো।
"জীবনের সকল দুঃখ উড়ে যাক ফানুস হয়ে। চোখের ভেতর লুকিয়ে থাকা মেঘ কেটে যাক সূর্যের আগমনে। জীবনের আগামী প্রতিটা পথচলা হোক মায়াময়, ভালোবাসাময়।"
"শুভ জন্মদিন।"
নদী চিরকুটটা পড়লো। একবার, দুইবার। তারপর আলিফের দিকে তাকালো। তখক্ষণে সূর্যের আলোয় ছেয়ে গেছে চারপাশ। নদী কিছু বলল না। সে বলার মত কোনো ভাষা খুঁজে পেলো না।
আলিফ কিছুক্ষণ পর নদীকে আরেকটা চিরকুট দিলো। নদী সেটার নিয়ে ভাজ খুলে তাতে চোখ বুলালো।
"শুধু তোমার জন্য আমার এই ছোট্ট উপহার।"
নদী চিরকুটটা পড়ে আলিফের দিকে তাকালো। আলিফ এই প্রথম তাকে তুমি করে বলল। তুমি করে লেখা চিরকুটটা তার পড়তে মন্দ লাগল না। সে হয়তো এতোদিন এই তুমির অপেক্ষায়-ই ছিলো।
তার জন্য কি উপহার আছে সেটা বোঝার চেষ্টা করছে নদী। সে আলিফের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে।
আলিফ ধীরপায়ে নদীর পাশ থেকে সরে এসে তার মুখোমুখি দাঁড়ালো। তারপর সে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে নদীকে বলল, "আজ থেকে আমি তোমার ভাষায় তোমার সাথে কথা বলল। তোমার জন্মদিনে আমার পক্ষ থেকে এটা ছোট্ট উপহার।"
"তুমি! কীভাবে?" নদীর চোখেম বিস্ময়।
"আমি মাসখানেক ধরেই তোমার ভাষাটা শিখছি। সারপ্রাইজ দিবো বলে আগে জানাই নি।"
নদী প্রচন্ড খুশি হয়েছে। তার জন্য কেউ তার ভাষা শিখেছে এটা ভাবতেই তার প্রচন্ড ভালো লাগছে। সে কারো জীবনে এতোটা স্পেশাল? সারাটা জীবন সে মানুষের কাছ থেকে অবহেলা পেয়েছে। এই প্রথম তাকে কেউ এতোটা গুরুত্ব দিলো। তাকে স্পেশাল অনুভব করালো। নদীর চোখ বেয়ে হঠাৎ পানি বেরিয়ে এলো।
আলিফ বাকরুদ্ধ। নদীকে এভাবে কাঁদতে দেখে সে কি করবে বা কি বলবে তাৎক্ষণিক ভেবে পাচ্ছে না। সে কি কোনো ভুল করেছে? আলিফ ভেবে পাচ্ছে না, নদী এভাবে কাঁদছে কেনো? হটাৎ তার কি হয়েছে?
নদীর কাছে এসে আলিফ হাত দিয়ে নদীর চোখের পানি মুছে দিলো। কিন্তু নদীর কান্না থামলো না। আলিফের এই স্পর্শটুকু তাকে আরো এলোমেলো করে দিলো। এতোটা মমতা আলিফের স্পর্শে।
নদী আরো কিছুটা সময় কাঁদল। আলিফ সেই সময়টুকু নদীর পাশে নদীর হাত ধরে দাঁড়িয়ে রইল। আলিফ একমুহুর্তের জন্যও নদীকে অনুভব করতে দিলো না সে একা। আলিফের এই স্পর্শটুকু, সকালের সূর্যের মত করে নদীর বুকের মধ্যে আলো ছড়ালো। পুরো বুকটা একমুহূর্তে জন্য আলোয় আলোকিত হয়ে উঠল। অন্ধকারটুকু নিমিষেই যোজন বিয়োজন দূরে সরে গেলো।
নদী এখন অনেকটা স্বাভাবিক। স্থির। শান্ত। সে নিজেকে সামলে নিয়েছে। সে কেনো এভাবে কাঁদলো, তার ব্যাখ্যা আলিফ জানতে চাইলেও সে তাকে কিছুই বলল না। মনের মধ্যে লুকানো জীবনের কালো অধ্যায়টার কথা আলিফকে জানাতে চায় না সে। আলিফও জানলো না সে জাদুর কাঠির মত নদীকে ছুঁয়ে দিয়ে, এক মুহুর্তে জন্য তার বুকের সকল অন্ধকার দূর করে দিয়েছে। কিন্তু সে চাইলেও সারাজীবনের জন্য সেই অন্ধকার দূর করতে পারবে না।
তারা দুইজন ভোরের প্রথম আলোতে কেক কাটলো। নদীর মনে পড়ছে না তার জীবনে আগে কখনো এতোটা সুন্দর মুহূর্ত এসেছে কি না? নদী মনেও করতে চায় না। সে শুধু চায় এই সকাল, আলিফ, সূর্য, সবকিছু চিরকাল এভাবেই থাকুক। কিন্তু মানুষের সব চাওয়া কি পূর্ণতা পায়? পায় না!
নদী এখন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। আলিফ নদীর হাত ধরে আছে। অনেকক্ষণ। নদী কয়েকবার ছাড়িয়ে নিতে চেয়েছে কিন্তু সে কিছুতেই হাত ছাড়লো না। একটা সময় আলিফের হাতের মধ্যে থেকে নদীও আর তার হাতটা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো না। তারা দূরের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ভোরের অন্ধকার পুরোটা কেটে গেছে।
হঠাৎ নদী আলিফের দিকে তাকালো। আলিফও নদীর দিকে তাকালো। তারা কেবল একে অন্যর চোখের দিকে স্থির হয়ে তাকিয়ে রইল। দুইজনে দুইজনের চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করছে। এভাবে দীর্ঘ সময় তারা একে অন্যর দিকে তাকিয়ে রইল। দুই জনের মনের মধ্যে হাজারো এলোমেলো অবলা শব্দের ঝড় বয়ে গেলো। কিন্তু কেউ সেই ঝড়ের খবর জানলো না।
হঠাৎ আলিফ কিছু একটা ভেবে নদীর দিকে খানিকটা এগিয়ে এলো। নদী নির্বাক। সে কোনো বাঁধা দিলো না। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আলিফ যখন নদীর ঠোঁটে তার ঠোঁট ডুবিয়ে দিতে যাবে অমনি এরকম আকস্মিক ঘটনায় নদী কিছু বুঝতে না পেরে তার শরীরের সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো আলিফকে। তাৎক্ষণিক আলিফ হুড়মুড়িয়ে ছাঁদের এক কোনে পড়ে গেলো। শুধু পড়ে গেলো চলত, কিন্তু কে জানতো আলিফের ভাগ্য আজ প্রচন্ড খারাপ। সে যেখানে পড়লো সেখানে কিছু ভাঙ্গা ইট ছিলো। সে সেখানে পড়ে যেতেই তার মাথা ফেটে গেলো। মুহুর্তেই ফাঁটা জায়গা থেকে তরতর করে রক্ত বের হতে শুরু হলো। সেই রক্ত বন্ধ হওয়ার নাম নেই।
আলিফের উপর রাগটা নদীর দীর্ঘায়ু হলো না। সে এখন কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। সে এরকম কিছুই চাই নি। আলিফের ওরকম আকস্মিক ঘটনায় সে নার্ভাস হয়ে যায়। তখন সে কিছু না বুঝেই তাকে ধাক্কা দিয়ে বসে। কিন্তু এতো জোরে ধাক্কা দিবে সে কল্পনাও করেনি। তার এখন খারাপ লাগছে। এতোক্ষণে আলিফের শার্ট রক্তে ভিজে গেছে। আলিফ তার মাথায় ক্ষতস্থানে হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে। সে হতবাক হয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে আছে। সেও কিছু বুঝে উঠতে পারছে না, এক মুহুর্তে কি-সব হয়ে গেলো।
আলিফ কেনো ওরকমটা করলো সে জানেনা। হঠাৎ তার কি মনে হলো, আর তখনি সে কাজটা করতে গেলো। নেনো সেকেন্ডের মধ্যেই সবকিছু ঘটে গেলো। সে-ও এখন লজ্জিত। এরকম কিছু করার আগে নদীর অনুমতি নেওয়া দরকার ছিলো। সে এই কাজটা করার আগ মুহুর্তেও ভাবেনি সে এরকম কিছু করতে যাচ্ছে। সে হঠাৎ নিজেকেই বুঝে উঠতে পারছে না। তার এখন গিল্টি ফিলিং হচ্ছে। নদী তার সম্পর্কে কি ভাবছে এখন? সে কি আসলেই এতোটা জঘন্য। আলিফের সবকিছু কেমন জট বেঁধে যাচ্ছে। সে কি সবকিছু নষ্ট করে ফেললো। নদী কি করবে এখন? আমাকে কি ক্ষমা করতে পারবে? আলিফ নানা কিছু ভেবে যাচ্ছে।
আলিফ ভুলেই গেলো তার মাথা থেকে এখনো রক্ত বেরুচ্ছে। সে শুধু ভেবে যাচ্ছে, নদী তার সম্পর্কে এখন কি ভাবছে। তাকে কি ধরণের মানুষ মনে করছে। সে এই রকম না। এটা জাস্ট একটা ভুল। একটা এক্সিডেন্ট। আলিফের হঠাৎ কান্না পেয়ে গেলো। তার বুকের মধ্যে যন্ত্রণা হচ্ছে। মাথার যন্ত্রণা সে আমলেই নিলো না। তার এখন মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
নদী এই মুহুর্তে তার সকল রাগ ভুলে গিয়ে আলিফের মাথা থেকে রক্ত পড়া কীভাবে বন্ধ করা যায় সেটা ভেবে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সে তার উর্ণা দিয়ে আলিফের মাথা বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু তাতে রক্ত বন্ধ হয়েছে কি-না সেটা বোঝা যাচ্ছে না। উর্ণাটা যে রক্তে ভিজে যাচ্ছে সেটা কিছুক্ষণ পরেই বোঝা গেলো।
আলিফকে উদ্দেশ্য করে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে নদী বলল, "সরি।"
আলিফ কিছু বলল না। সে নদীকে অবাক করে দিয়ে কেঁদে দিলো। এতো বড় একটা ছেলে এভাবে কাঁদছে, নদীর এটা বিশ্বাস হচ্ছে না। সে আরো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো। আলিফের কি হলো? তার কি মাথায় ব্যথা হচ্ছে? নদী কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। সে এখন কি করবে? সে অসহায় বোধ করতে লাগল।
"কি হয়েছে? কাঁদছ কেনো? মাথায় যন্ত্রণা করছে?" নদী নানা প্রশ্ন করতে থাকলো আলিফকে। আলিফ তার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিলো না। উলটো তার কান্না আরো বেড়ে গেলো। সে আবার ছাঁদে বসে পড়লো। হাত দিয়ে চোখ দুটো আড়াল করে নিলো নদীর সামনে দিয়ে। সে একাধারে কেঁদেই যাচ্ছে।
নদী বিরাট ঝামেলায় পড়ে গেলো। তার এই পরিস্থিতিতে কি করা উচিত সে ঠিক করতে পারছে না। তার রাগ করা উচিত। কিন্তু সবকিছু কেমন উলটো ঘটছে। আলিফ কেনো এভাবে কাঁদছে? আলিফের কি হয়েছে? আলিফের কান্না দেখে নদীর ঠিক থাকতে পারছে না। তার বুকের মধ্যেও তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। তারও কান্না পাচ্ছে। তার কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে? তার তো রাগ করা উচিত, আলিফের যেটা করতে গেছিল সেটার জন্য। নদী সত্যি অসহায় হয়ে পড়লো। এদিকে সে আলিফের কান্না দেখতে পারছে না। আলিফ কেনো বুঝছে না, এভাবে কান্না করছে বলে তারও কষ্ট হচ্ছে।
"কি হয়েছে? প্লিজ, কিছু একটা-তো বলো? এভাবে কান্না করছ কেনো?" নদী হাত নেড়ে নেড়ে জিজ্ঞেস করতে থাকলো আলিফকে। কিন্তু আলিফ তা দেখলো না। আলিফ দুই হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে কান্না করছে।
নদীর এখন ইচ্ছে করছে সব মানুষের মত চিৎকার করে আলিফের সাথে কথা বলতে। কিন্তু সে পারছে না। সে কেনো এমন? সৃষ্টিকর্তা কেনো তাকে এই অক্ষমতা দিয়ে তৈরি করে? নদীর নিজের উপর রাগ হলো।
আলিফ এখনো চুপচাপ। এদিকে তার মাথা থেকে এখনো রক্ত বেরুচ্ছে। তার উচিত এখনই ডাক্তারের কাছে যাওয়া। কিন্তু আলিফ ছাঁদে বসে কান্না করছে। সে স্বাভাবিক হতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না। কেনো এমন হচ্ছে?
আলিফের সামনে নদী হাটু গেড়ে বসে পড়ল। আলিফের হাত দুইটা চোখ থেকে সরিয়ে নিয়ে চোখের অশ্রু মুঁছে দিলো নদী। তারপর সে আলিফকে বলল, "প্লিজ, এভাবে কান্না করো না। কি হয়েছে?" কথাগুলো নদীর চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করলেও সে কেবল তার নীরব ভাষায় বলতে পারল।
আলিফ কান্না থামালো। সে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বলল, "আমি খুব খারাপ তাই না? খুব খারাপ একটা কাজ করে ফেলেছি। আসলে, তখন যে কি হলো হঠাৎ আমার, আমি নিজেই বুঝতে পারিনি।" এটুকু বলেই আলিফের চোখ আবার অশ্রুসিক্ত হলো। সে অল্প কিছুটা সময় নীরব থেকে আবার সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে বলতে লাগল, "সরি, নদী। আমি সত্যি লজ্জিত। আমাকে এবারের মতো ক্ষমা করে দেও। আমি জানি, তুমি ভাবছ আমি সুবিধাবাদী মানুষ। এরকম সুযোগের আশায় ছিলাম। আর এখন একটু সুযোগ পেয়েই জঘন্য একটা কাজ করে ফেললাম। আসলে আমি এমন না। আমি এরকম কিছু করতে চাই নি। এক মুহুর্ত আগেও ভাবিনি এমন কিছু করবো। কিন্তু তখন যে কি হলো, মাথাটাই ঠিক ছিলো না। আমি বুঝতে পারছি আমি খুব খারাপ। জঘন্য। সরি....!"
নদী বলল, "আলিফ, এরকম বাচ্চাদের মত কেনো করছো? আচ্ছা, আমি কিছু মনে করিনি। হয়েছে? এবার তো কান্না বন্ধ করো।"
"আমি জানি তুমি অনেক কিছু মনে করেছ। আমাকে খারাপ ভাবছ। আমি খারাপ।"
"আহ! আমি বললাম তো আমি কিছু মনে করি নি। তবুও কান্না কেনো করছ? মাথায় যন্ত্রণা করছে? চলো, আগে ডাক্তারের কাছে যাই। এই সব নিয়ে পরেও কথা বলা যাবে।"
"না, আমি কোথাও যাবো না। আমার শাস্তি পাওয়ার দরকার। এটাই আমার শাস্তি।"
"এবার কিন্তু সত্যি আমার রাগ হচ্ছে। তুমি কি জানো, তুমি একদম ছোট্ট বাচ্চাদের মত করছ। এভাবে কেউ কান্না করে? আর, শাস্তি মানে কি? যা শাস্তি দেওয়া আমি দিবো, কিন্তু তার আগে সুস্থ হয়ে উঠতে হবে তোমাকে।"
"আমার নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে। আমি কাজটা ঠিক করি নি। আমি ভুল করেছি। আমি তখন কি ভাবছিলাম কে জানে। আমি খুব খারাপ একজন মানুষ হয়ে গেলাম তোমার কাছে। আমি খুব খারাপ। খুব।"
নদী হঠাৎ আলিফের গালে একটা চড় দিলো। আলিফ একদম চুপ হয়ে গেলো। হঠাৎ কান্না থামিয়ে দিলো। বড় বড় চোখ করে সে নদীর দিকে তাকিয়ে রইল।
নদী কেনো এমনটা করলো সে জানেনা। সে কিছুটা সময় নিয়ে বলল, "আবারও সেই এক কথা বলে যাচ্ছ। আমি বললাম তো আমি কিছু মনে করি নি। তাও কান্না করে যাচ্ছ। আমার রাগ হচ্ছে। তুমি যেটা করেছ, তারচেয়ে এখন যা করছ সেই কারণে রাগ বেশি হচ্ছে। এমনটা করলে সত্যি রাগ করবো আমি। আর কখনো তোমার সামনে আসবো না।"
"আচ্ছা, আমি আর কান্না করছি না।" কথাটা বলেও আলিফ আবার কেঁদে দিলো। তার এতো খারাপ লাগছে কেনো? সে ভয় পাচ্ছে নদী যদি তাকে ভুল বুঝে দূরে চলে যায়। এই ভয়ের জন্য তার কষ্ট হচ্ছে। সে নদীকে ছাড়া কীভাবে থাকবে, কখন যে সে নদীকে ভালোবেসে ফেলেছে সে জানেনা। নদীকে সে ভীষণ ভালোবাসে। এই মানুষটা তাকে ছেড়ে দিলে সে বাঁচতেই পারবে না।
আলিফকে অবাক করে দিয়ে নদী হঠাৎ তাকে জড়িয়ে ধরল। আলিফ যতটা সময় শান্ত না হলো সে এভাবেই তাকে বুকে ছড়িয়ে রাখলো।
পরিস্থিতি অনেকটা নদীর নিয়ন্ত্রণে এলো। সে আগে আলিফকে শান্ত করতে চায়। রাগটা না হয় পরেও দেখানো যাবে। কিন্তু এই অবস্থায় আগে আলিফকে ডাক্তার দেখানো উচিত।
আলিফ নিজেকে শান্ত করেছে। মাথা থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়েছে। তবুও আলিফের উচিত এখনই ডাক্তারের কাছে যাওয়া, তাই নদী বলল, "চলো।"
"কোথায়?" আলিফ জিজ্ঞেস করে।
"ডাক্তারের কাছে। ক্ষত স্থানে ড্রেসিং করে এখনই ব্যান্ডেজ লাগানো দরকার।"
"আমার কিচ্ছু হয়নি। আমি বাসায় গিয়ে পরিস্কার করে নিবো।"
আলিফের কথা নদী শুনলো না। সে তাকে জোর করে নিচে নামালো। তারপর ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো। অবশ্য এই ভোর সকালে ডাক্তারের পেতে তাদের কষ্ট-ই হলো।
ডাক্তার মাথায় ব্যান্ডেজ করে দিলো। সেই সাথে কিছু ব্যথার ওষুধ দিয়ে দিলো। তারা ডাক্তারের কাছ থেকে সরাসরি বাসায় চলে এলো। আলিফকে তার বাসার দরজা দিয়ে রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে, সে উপরের তলায় এসে ধীরে শব্দ বিহীন ভাবে দরজা খুললো। ভাগ্য ভালো তার মা তখনো ঘুমিয়ে ছিলো। সে নিশ্চিন্তে তার রুমে চলে গেলো।
নদীর এখন রাগ হচ্ছে। রাগটা অন্য কারণে। আজকের দিনেই এই রকম একটা ঘটনা ঘটতে হলো।
নদী শুয়ে আছে। সে ভাবছে তার ঠিক কার উপর রাগ করা উচিত। আলিফের ওরকম কাজের জন্য তার উপর রাগ করা যায়। কিন্তু এখন আলিফের প্রতি তার রাগ হচ্ছে না। আলিফ একদম বাচ্চা। বাচ্চাদের মত ওভাবে কান্না করতে পারে নদীর কল্পনাও করেনি। নদীর একটা মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে। এই মিশ্র অনুভূতির মানে কি? নদী কোনো উত্তর খোঁজার চেষ্টা করলো না। সে কিছুক্ষণ পরেই ঘুমিয়ে গেলো। তার ক্লান্ত লাগছে। রাতেও তার ভালো ঘুম হয় নি। তার এখন দীর্ঘ একটা ঘুম দরকার।
চলবে....
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 340
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
হাজারো স্বপ্ন বুনেছি আমি ভালোবাসা দিয়ে,,,,
সে স্বপ্নের মাঝে তুমি এলে প্রদীপ হাতে নিয়ে,,,
কত আশা আর কত যে কথা হয়নি তোমায় বলা,,
সব কথা কি বলে দিতে হয় একটুও বোঝোনা,,,
পারি দিতে চাই তোমায় নিয়ে স্বপ্নের সিংহাসনে,,,
যে খানে দু'জন চন্দ্র বিলাস করবো নদীর পাড়ে,,,
বলনা তুমি সঙ্গী হবে আমার জীবনে,,
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,443 in 27,681 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
24-12-2022, 12:18 AM
(This post was last modified: 24-12-2022, 12:19 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(23-12-2022, 11:23 PM)Bangla Golpo Wrote: হাজারো স্বপ্ন বুনেছি আমি ভালোবাসা দিয়ে,,,,
সে স্বপ্নের মাঝে তুমি এলে প্রদীপ হাতে নিয়ে,,,
কত আশা আর কত যে কথা হয়নি তোমায় বলা,,
সব কথা কি বলে দিতে হয় একটুও বোঝোনা,,,
পারি দিতে চাই তোমায় নিয়ে স্বপ্নের সিংহাসনে,,,
যে খানে দু'জন চন্দ্র বিলাস করবো নদীর পাড়ে,,,
বলনা তুমি সঙ্গী হবে আমার জীবনে,,
হয়নি সে সঙ্গিনী যদিও দোষ ছিল আসলে আমারই
পরের জন্মে হয়তো পেতেও পারি ওকে পুরোপুরি !!
কত বছর পেরিয়ে গেলো , আজও রোজ ও স্বপ্নে আসে
পনেরো হাজার কিলোমিটার দূরে বসে রোজ আমার চোখ ভাসে !!
Posts: 340
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
(24-12-2022, 12:18 AM)ddey333 Wrote: হয়নি সে সঙ্গিনী যদিও দোষ ছিল আসলে আমারই
পরের জন্মে হয়তো পেতেও পারি ওকে পুরোপুরি !!
কত বছর পেরিয়ে গেলো , আজও রোজ ও স্বপ্নে আসে
পনেরো হাজার কিলোমিটার দূরে বসে রোজ আমার চোখ ভাসে !!
-----সকাল দুপুর সারাবেলা
তোমার ছবি আঁকি-----
????তুমি আমার ভালোবাসার????
পোষা ময়না পাখি।???
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
Posts: 340
Threads: 20
Likes Received: 311 in 181 posts
Likes Given: 323
Joined: Jun 2022
Reputation:
42
পর্ব -১৩
এখন দুপুর। রুদ্র বসে আছে ঘুড়ি কুরিয়ার সার্ভিসের মেইন অফিসে। সে সকালে এসেছে। অফিসের ম্যানেজারের আসার কথা সকাল দশ-টায়, কিন্তু সে এখনো আসে নি। বসে বসে অপেক্ষা করতে করতে এতোক্ষণে বিরক্ত হয়ে উঠেছে রুদ্র। সে উঠে গিয়ে অফিসের ডেস্কে বসা এক ভদ্রলোককে বলল, "আজ কি আপনাদের ম্যানেজার সাহেব আসবেন না?"
লোকটা তার কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে ছিলো। রুদ্রের প্রশ্ন শুনে সে রাগী চোখে তার দিকে তাকালো। এক কথা বলতে বলতে সে বিরক্ত। তবুও সে নিজেকে সংযত রেখে বলল, "স্যারের তো আজ আসার কথা। এখন স্যার আজ আসবে কি আসবে না, সেটা আমি কি করে বলি। যদিও স্যার আসে, তাহলে কখন আসবে সেটাও আমার পক্ষে জানা সম্ভব না। একমাত্র স্যারই ভালো জানেন, তিনি কখন আসবেন। আপনি আরেকটু অপেক্ষা করুণ।"
"আমি সেই সকাল থেকেই তো অপেক্ষা করছি।"
"এখন স্যার না এলে আমি কি করতে পারি? আমি সামান্য একজন কর্মচারী। স্যারদের ব্যাপার স্যাররাই ভালো জানেন।" লোকটা কথা শেষ করে তার কাজে মনোযোগ দিলো। রুদ্রের দিকে আর তাকালো না।
রুদ্র ফিরে এসে সোফায় বসল। সে ভাবলো আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখা যাক। কিন্তু এভাবে একা একা বসে থাকা খুব বিরক্তিকর। আলিফ এলে ভালই হতো। অন্তত আড্ডা দিলে সময়টা কাটানো যেতো। রুদ্রের চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ।
আজ সকালে আলিফকে ফোন দেয় রুদ্র। তখন আলিফের অবস্থার কথা শুনে রুদ্র রীতিমতো নির্বাক। প্রথমে রুদ্র ভেবেছিল, আলিফ তার সাথে মজা করছে। তার সাথে কুরিয়ার অফিসে আসবে না, সেই কারণে বাহানা করছে। কারণ তারা গত সপ্তাহেও তাদের এলাকায় যে ব্রাঞ্চটা আছে সেখানে গিয়েছিল। কিন্তু সেদিনও কোনো লাভ হয়নি।
সে-বার তারা যে ভদ্রলোকের সাথে কথা বলেছিল সে তাদের জানিয়েছিল, "চিঠিগুলো একবারে আমাদের কাছে জমা দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটা চিঠিতে নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ করা ছিলো। সেই তারিখ অনুযায়ী চিঠিগুলো আমরা ডেলিভারি করেছি। এভাবেই আমাদের নির্দেশনা দেওয়া ছিলো।"
"কোনো চিঠিতেই প্রেরকের ঠিকানা নেই। শুধুমাত্র নাম ছাড়া আর কিছুই নেই। প্রেরকের ঠিকানা জানা আমার জন্য খুব জরুরি। প্লিজ, আপনি কিছু করতে পারেন কি-না একটু দেখুন।" রুদ্র বলেছিল।
লোকটা কম্পিউটারে কীসব দেখে সে বলেছিল, "অনেক মাস আগের ঘটনা। চিঠিগুলো একদিনেই আমাদের কাছে জমা দেওয়া হয়েছিলো। একটা নির্দিষ্ট তারিখে। কোনো চিঠিতে প্রেরকের ঠিকানা নেই। যদি তখন কে চিঠিগুলো গ্রহণ করেছিল সেটা জানতে পারি হয়তো কিছু তথ্য পাওয়া সম্ভব। কিন্তু এটা অনেক মাস আগের ঘটনা, কে চিঠিগুলো গ্রহণ করেছিল সেটা জানা অসম্ভব। মূলত মেইন অফিস থেকে চিঠিগুলো আমাদের ব্রাঞ্চে আসতো, আমরা আপনার ঠিকানায় ডেলিভারি দিতাম। আপনি ওখানে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। তারা কোনো তথ্য দিলেও দিতে পারে।"
রুদ্র সবটা শুনে অনেক অবাক হয়েছে। সবগুলো চিঠি তরু একবারে পাঠিয়েছে। এক সাথে সে এতোগুলা চিঠি লিখেছে? কি করে সম্ভব? রুদ্র কোনো কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না। সে ভদ্র লোককে প্রশ্ন করেছিল, "সবগুলো চিঠি কি একবারে জমা দেওয়া হয়েছিল? মানে এই পর্যন্ত আমাকে ডেলিভারি করা চিঠি কি একবারে কুরিয়ার অফিসে জমা দেওয়া হয়েছিল?"
"জি, সেরকমই।"
"কিন্তু সর্বশেষ আমি গ্রহণ করেছি একটা পার্সেল।সেটা চিঠি ছিলো না। এটা নিশ্চয়ই চিঠিগুলো সাথে একবারে আপনাদের অফিসে জমা দেয় নি?"
লোকটা কম্পিউটার আবার কিছু একটা চেক করে বলল, "হ্যাঁ, পার্সেলটা আমরা গ্রহণ করি দুইমাস আগে।"
"কিন্তু পার্সেলটা তো দুই সপ্তাহ আগে আমাকে ডেলিভারি দেওয়া হয়।"
"পার্সেলের উপরে আমাদের গ্রাহক যে তারিখ উল্লেখ করেছিল আমরা সেই তারিখে আপনাকে ডেলিভারি দিয়েছি।"
"তাহলে দুই মাস আগে কে পার্সেলটা গ্রহণ করেছিল?"
"আমাদের এই ব্রাঞ্চে গত সপ্তাহেই পার্সেলটা আসে। আমরা তার পরের দিন আপনাকে ডেলিভারি করে দেই। পার্সেলেও প্রাপকের কোনো ঠিকানা দেখছি না। সরি, স্যার। আপনাকে আর কোনো ভাবে সাহায্য করা আমার পক্ষে সম্ভব না। "
রুদ্রের মাথায় তখনই আকাশ চেঙে পড়েছিল। তরুর ঠিকানা পাওয়ার যতটুকু আশা ছিলো, এখন তা-ও নেই। সে কি করে তরুকে খুঁজে বের করবে? তরুকে কোথায় খুজবে? তরু কোথায় আছে? কোথায়!
রুদ্র পরে আবার যোগাযোগ করেছে। অনেক রিকোয়েস্ট করেছে। অবশেষে একজন রুদ্রকে তাদের ম্যানেজারের সাথে দেখা করতে বলেছে। সেই ম্যানেজারের সাথে দেখা করতেই আজ সকালে ঘুড়ি কুরিয়ার সার্ভিসের অফিসে এসেছে। কিন্তু দুপুর চলে যাচ্ছে এদিকে ম্যানেজারের আসার সম্ভব নেই।
রুদ্র রাগে, ক্ষোপে, বিরক্ত হয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। বাইরে প্রচন্ড রোদের উত্তাপ। ভয়ংকর গরম। সে ঘেমে যাচ্ছে। তার বড্ড পানি পিপাসা পেলো। সে হেঁটে রাস্তা পার হয়ে একটা চায়ের দোকানের দিকে গেলো। সেই মুহুর্তে রিয়াকে দেখতে পেলো সে। রিয়া কুরিয়ারের অফিসের দিকে যাচ্ছে। সে একবার ভাবলো তাকে ডাকবে। কিন্তু ডাকলো না। রিয়া অফিসে ঢুকে গেলো। হয়তো কোনো পার্সেল এসেছে তার। এটা ভেবে রুদ্র চায়ের দোকানের ভেতর ঢুকে একটা ড্রিংক নিলো, তার সাথে একটা সিগারেট।
সিগারেট খাওয়ার অর্ধেক হতেই আলিফের কল এলো। রুদ্র ফোন রিসিভ করল।
"হ্যালো, রুদ্র।" আলিফ বলল।
"হ্যাঁ, আলিফ বল।" রুদ্র বলল।
"তরুর ব্যাপারে কিছু জানতে পেরেছিস?"
"না, ম্যানেজার আজকে আসেনি। সেই সকাল থেকে অপেক্ষা করে কোনো লাভ হলো না।"
"কই তুই এখন?"
"কুরিয়ারে অফিসের এদিকেই।"
"এলাকার দিকে কখন আসবি?"
"জানিনা, দেখি কখন আসি। তোর কি অবস্থা?"
"আলহামদুলিল্লাহ, ভালো।"
"আঘাতে কি অবস্থা? মাথায় ব্যথা আছে?"
"না, নেই। অনেকটা ভালো।"
"নদীর সাথে কথা হয়েছে?"
"দুই একটা কথা হয়েছে। কিন্তু আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি নদী রাগ করে আছে।"
"এমন কিছু করতে গেলি কেনো?"
"আমি কি ইচ্ছে করে করেছি। তখন যে কি হলো আমার আমি বুঝতেই পারিনি। আর এক মুহুর্তের জন্য আমার মনে হয়েছিলো নদী সেটাই চাচ্ছে। ওভাবে তাকিয়ে থাকা, নদীর চোখে কিছু একটা ছিলো। আমিও কি ভেবে কি করলাম তাৎক্ষণিক বুঝতেই পারি নি।" আলিফ থামলো। তারপর সে আবার বলল, "কি করবো রুদ্র? আমার ভালো লাগছে না। আমার খুব গিলটি ফিলিং হচ্ছে।"
"তুই এতো চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে।"
"আচ্ছা দেখি কি হয়।"
"আচ্ছা, দেখ। এখন রাখি তাহলে।"
"ওকে, ব্রাদার্স।"
কল কেটে দেওয়ার পরেও আলিফ ফোন কানের কাছে কিছুক্ষণ ধরে রাখল। সে কিছু একটা ভাবছে। তার ভাবা শেষ হলে সে নদীকে মেসেজ দিলো।
"নদী, আমি আমার কাছের জন্য লজ্জিত। প্লিজ, আমার উপর এভাবে রাগ করে থেকো না। আমার কষ্ট হচ্ছে।"
বিশ মিনিট পরে নদী মেসেজের রিপ্লাই করলো।
"আর কতবার সরি বলবে? আমি বলেছি, আমি কিছু মনে করি নি। যা হয়েছে ভুলে গেছি। তুমিও ভুলে যাও। এটাই ভালো হবে। তাহলে খারাপ লাগবে না।"
"আমি ভুলতে পারছি না। আমার কেবল মনে হচ্ছে আমি খারাপ একটা কাজ করে ফেলেছি। প্রথমে তোমার অনুমতি নেওয়ার দরকার ছিলো। কিন্তু তখন কেনো যে এরকম কিছু করতে গেলাম, বুঝে উঠতে পারিনি কিছুই।"
"তুমি বাচ্চাদের মত করছো, আলিফ। বারবার সরি বলছ, সেদিন কান্না করলে, এছাড়া তারপর বারবার সেই এক কথা বলে যাচ্ছ। প্লিজ, এটা আরো বিরক্ত করছে আমাকে। এই ব্যাপারটা আমরা এখানেই ভুলে যাই। আমি এই বিষয়টা নিয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছি না।"
আলিফ লিখলো, "আচ্ছা ঠিক আছে।" আলিফ আরো কিছু বলতে চেয়েছিলো। কিন্তু সে আর বলেনি। সে বুঝতে পেরেছে ওপাশের মানুষটা বিরক্ত হচ্ছে। সে নদীকে বিরক্ত করতে চায় না।
আলিফের বুকের মধ্যে আবার সেই ব্যথাটা শুরু হয়েছে। এই ব্যথাটা অদ্ভুত। প্রথম চিনচিন করে শুরু হয়। তারপর ধীরে ধীরে পুরো বুকটাতে ছড়িয়ে যায়। সর্বশেষ পুরো বুকটায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হয়। তার সেরকম হচ্ছে। সে কি করবে এখন? আলিফের সময়গুলো বড্ড বিচ্ছিরি ভাবে কাটতে থাকলো।
নদী বেলকনিতে বসে ছিল। আলিফের শেষ মেসেজ দেখে সে আর কোনো কথা বাড়ায়নি। সে বুঝে উঠতে পারছে না। আলিফের উপর রাগটা এখন নেই। তবুও আলিফের সাথে সে এই দুইদিন ভালো করে কথা বলতে পারে নি। কেমন একটা জড়তা কাজ করেছে তার মধ্যে। কেনো এমন হচ্ছে?
আলিফ এমন কিছু করবে সে ভাবতে পারে নি। সেই মুহুর্তে তার প্রচন্ড রাগ হয়েছিল। আলিফের কাছ থেকে সে সত্যিই এরকম কিছু আশা করে নি। সেই কারণে সে হঠাৎ ওভাবে আলিফকে ধাক্কা দিয়ে বসে। তাৎক্ষণিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছিল সে। তখন সে কিছুই পাবতে পারেনি।
নদী ঘরে চলে এলো। এখন প্রায় বিকাল। সে দুপুরে কিছুই খাই নি। তার ক্ষুধা লেগেছে, কিন্তু এখনও তার খেতে ইচ্ছে করছে না। তার মন ভালো নেই। একটুও ভালো নেই। সে কি কোনো ভুল করে ফেলেছে? আলিফকে এভাবে কাছে আসতে দেওয়া তার উচিত হয়নি। কিন্তু ছেলেটা কেমন করে তার কাছে চলে এসেছে সে বুঝতেই পারেনি। সে সেই কাছে আসাকে আটকাতে পারে নি। কিন্তু এখন তাকে আটকাতে হবে। আলিফকে সে ভালোবাসতে পারে না। তার ভাগ্যে ভালোবাসা বলতে কিছু নেই।
নদী শুয়ে পড়লো। একটা বালিশ টেনে নিয়ে সেটা দিয়ে মুখটা চেপে ধরল। সে কি কান্না করছে? হয়তো নিরব কান্না। যে কান্নার শব্দ শোনা যায় না। হয়তো ওই বালিশটা শুধু জানলো, নদীর বুকে গভীর ক্ষতবিক্ষত আরেকটা নদী লুকিয়ে আছে। যে নদীতে কোনো জোয়ার ভাটা নেই। কোনো আলো নেই। কোনো আনন্দ নেই। আছে শুধু একরাশ দুঃখ-কষ্ট!
নদীর চোখ ফুলে গেছে। লাল হয়ে উঠেছে। তার মা তার রুমে এলে সে তড়িঘড়ি করে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করলেও সে কিছুই লুকাতে পারলো না।
দুইদিন পর আকস্মিক ভাবে আলিফের সাথে নদীর সিঁড়িতে দেখে হয়ে গেলো। নদীকে দেখে আলিফ হাত নাড়িয়ে বলল, "তুমি কি সত্যি এখনো রাগ করে আছো? আমি মেসেজ দিলে আগের মত রিপ্লাই দেও না। সেদিন দেখা করতে বললাম, দেখা করলে না। আমাকে কি এইবারের মত ক্ষমা করে দেওয়া যায় না?"
"আমি রাগ করে নেই আলিফ। আমি শুধু আমাদের সম্পর্কটা বুঝতে নিজেকে সময় দিচ্ছি।" নদী সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে বলল।
"আমাদের সম্পর্ক!" আলিফ সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে এটুকু বলে থামলো। তারপর সে আবার বলল, "তুমি কি আমাকে পছন্দ করো না?"
নদী তাৎক্ষণিক উত্তর দিলো না। সে হেঁটে নিচে নেমে এলে আলিফও তার পিছে পিছে নিচে নেমে এলো। সিঁড়িতে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা নদীর উচিত মনে হয়নি।
নদী নিচে এসে আলিফকে বলল, "এখানে পছন্দ অপছন্দের চেয়ে বড় বিষয়, বয়সে আমি তোমার বড়। এছাড়া আরো বড় একটা সমস্যা আছে।" নদী সরাসরি আলিফকে বলতে পারলো না সে তাকে অপছন্দ করে। সে চেয়েছিল, এটাই বলবে কিন্তু তার মনকে সেটা বলতে রাজি করাতে পারেনি। কথাটা বলতে তার কষ্ট হচ্ছিল।
আলিফ বলল, "কি সমস্যা? আমি সবকিছু সামলে নিবো।"
"মানুষ চাইলেই সবকিছু করতে পারে না। মানুষ শুধু মুখেই বলতে পারে, সে সবকিছু সামলে নিবে। সবকিছু করতে পারবে। কিন্তু দিন শেষে দেখা যায়, সে কিছুই করতে পারে না। সমস্যা দেখে পালিয়ে যায়। শুধু শুধু আগ বাড়িয়ে সমস্যা মধ্যে নিজেকে জড়াতে চায় না।" নদী চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সে কিছুটা সময় তার কথা গুছিয়ে নিয়ে আবার বলল, "আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের বাইরে অন্য কোনো সম্পর্কে গড়ে উঠা সম্ভব না। তুমি এটা এখনই বুঝে উঠলে আমাদের দুইজনের জন্যই ভালো।"
"কেনো সম্ভব না? বয়স শুধু মাত্র অযুহাত। এছাড়া আমাদের বয়সের পার্থক্য মাত্র দুই বছর। এটা কোনো বড় বিষয় না। যদি অন্য কোনো সমস্যা থাকে তাহলে সেটা আমাকে বলতে পারো।"
নদী একবার ভাবলো সে সবকিছু আলিফকে খুলে বলবে। কিন্তু পরক্ষণেই সে সিন্ধান্ত পরিবর্তন করলো। সে কিছু বলল না।
"আলিফ, আমাকে তোমার পরিবার মেনে নিবে না। আমার মত একটা মেয়েকে তোমার পরিবার কেনো, কোনো পরিবার স্বইচ্ছায় মেনে নিবে না।" নদী এটুকু বলে থামলো। আলিফ কোনো কথা বলল না। নদী আবার বলল, "এখনো সময় আছে, আমরা চাইলেই এটা থেকে বের হতে পারি। এখনো দেরি হয়ে যায়নি।"
নদী কথা শেষ করে হাঁটা শুরু করল। আলিফ তাকে আটকালো না। সে পাথর হয়ে গেলো। সে দাঁড়িয়ে নদীর চলে যাওয়া দেখলো। সে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না এখন তার কি করা উচিত। নদী বলে গেলো, এখনো দেরি হয়নি। কিন্তু আলিফের জন্য অনেক দেরি হয়ে গেছে। সে নদীকে ভালোবাসে। এখন তার পক্ষে নদীকে চাইলেই ভুলে যাওয়া সম্ভব না।
নদীর সাথে আলিফের যোগাযোগ কমে এলো। নদী ইচ্ছে করেই কমিয়ে দিয়েছে। নদী দেখা করাও কমিয়ে দিলো। মাঝেমাঝে আলিফ নদীকে দেখার জন্য প্রবল তৃষ্ণা অনুভব করে বুকের গহীনে। সেখানে খাঁ খাঁ মাঠ। প্রচন্ড রোদের তাপে মাঠি ফেটে চৌচির। একবিন্দু পানি অভাবে মরে যাচ্ছে তার বুকের সব সবুজ অরণ্য। নদী কি তাকে একটু ভিজিয়ে দিতে পারে না? নদী হঠাৎ এমন কঠিন, রূর হয়ে গেলো কীভাবে? আলিফ কিছু বুঝে উঠতে পারে না। তার দিন কাটতে থাকে এক বিন্দু পানির অপেক্ষায়। একমাত্র নদীই পারে তাকে এই অবস্থা থেকে রক্ষা করতে।
আলিফ কতদিন ক্যাম্পাস যায় না, তার ঠিক নেই। ক্লাসের কোনো খোঁজ খবর নেয় না। তার ফোন আজকাল দিনের অর্ধেক সময় বন্ধই থাকে। রুদ্র প্রায় তাকে ফোন করে, কিন্তু সে রিসিভ করে না। সে বেলকনিতে বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে নদীকে দেখতে পেলে, সে ছুটে নদীর কাছে চলে যায়। কিন্তু নদীর শীতল জলে সে পা ভেজাতে পারে না। নদী কেমন যেনো বরফে পরিনত হয়েছে।
আলিফ নদীকে প্রায় মেসেজ দেয়। নদী যেইসব মেসেজের কোনো রিপ্লাই দেয় না। আলিফ মাঝেমধ্যে ফোন দেয়। কিন্তু সে জানে নদী ফোন রিসিভ করলেও কোনো কথা বলতে পারবে না। তবুও ফোন দেয়৷ ফোন দিতে ইচ্ছে করে। ফোন রিসিভ করলেই হবে, সে নিরবতার ভাষায় সবকিছু বুঝে নিবে। কিন্তু নদী ফোন রিসিভ করে না।
আলিফ একদিন মধ্যরাতে নদীকে দীর্ঘ একটা মেসেজ দিলো। একটা কবিতা। সে এই কবিতাটা রুদ্রের ডায়েরিতে পড়েছিল। তার আজ, এখন সেই লেখাটা ভীষণ মনে পড়ছে। তার মনে হচ্ছে, সেই লেখাটা একমাত্র তার জন্যই লেখা হয়েছে। তার মনের সকল কথা, সেই ছোট্ট লেখায় ফুটে উঠেছে। সে নদীকে যা বলতে চায়, সেটা এই লেখায় মধ্যেই আছে। সে লেখাটা মনে করার চেষ্টা করতেই, পুরো লেখাটা তার মাথায় ফুটে উঠলো। সে সেটা টাইপ করে নদীকে পাঠিয়ে দিলো।
খুব বাজে একটা স্বপ্ন দেখে নদীর ঘুম ভাঙে। সে আর ঘুমাতে পারে না। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আলিফ মেসেজ দিয়েছে। সে আলিফের মেসেজের রিপ্লাই না দিলেও প্রতিটা মেসেজ পড়ে। সে মেসেঞ্জারে ঢুকে আলিফের মেসেজটা পড়লো।
আমি তোমাকে চাই,
সকাল, দুপুর, রাত্রির মত করে।
আমি তোমাকে চাই,
মেঘেদের মত করে, বৃষ্টির মত করে।
আমি তোমাকে চাই,
আমার সকল সুখে, আনন্দে, দুঃখে।
আমি শুধু তোমাকে চাই,
আমার মন খারাপে, আমার একাকিত্বে!
আমি তোমাকে চাই,
আমার সকল চাওয়াতে, হাসিতে।
আমি শুধুই তোমাকে চাই,
আমার সকল ভালোবাসাতে!
নদী মেসেজটি তিনবার পড়ে ফেলল। তারপর তার চোখ থেকে অবাধ্য শিশুর মত অশ্রু বেরিয়ে এলো। আলিফ এমন কেনো? নদীর কান্না থামে না। সময়ের সাথে সেটা বাড়তে থাকে। তখন বাইরে থেকে ফজরের আজান ভেসে আসে। কিন্তু নদী তা শুনতে পায় না। সে গুঙিয়ে গুঙিয়ে কাঁদে। তার ছোট্ট বুকের ভেতর তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়।
চলবে...
===========================
পড়তে থাকুন চটি গল্প এ-র পাশা-পাশি ভিন্ন ধরনের গল্প ✒।
Keep reading chatty stories as well as different types of stories✒.
( Post By- Kam Pagol)
|