অষ্টাদশ পর্ব
কয়েকটা স্টেশন বেরিয়ে গেল, অভয় জানে পরের স্টেশনটা একটা জংশন, সেখানে ট্রেন বেশ খানিকক্ষণ দাঁড়াবে ওখানেই যা করার করতে হবে, অভয় আস্তে আস্তে তাথৈএর গলা থেকে চেনটা খুলে নিজের পকেটে রাখে তারপর অপেক্ষা করতে থাকে, কিছুক্ষণ পরে জংশনে ঢোকার একটু আগে তাথৈএর মাথাটা ধরে নিজের কাঁধ থেকে সরিয়ে সিটের পিছনে হেলান দিয়ে রেখে দিলকাজটা খুবই আস্তে আর সাবধানে করলো যাতে তাথৈ জেগে না যায় তারপর উঠে সামনে এগিয়ে গেটের কাছে এল এবং ট্রেনটা গতি কমিয়ে প্লাটফর্মে ঢুকতেই সে রানিং ট্রেন থেকে নেমে গেল,আস্তে আস্তে হেঁটে টয়লেটে ঢুকলো তারপর একটা ইউরিনালে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে চেনটা বার করে ভালো করে লকেটটাকে দেখতে শুরু করলো লকেটটা হার্ট আকৃতির, হাতের বুড়ো আঙুলের থেকে একটু ছোটো সাইজের কিন্তু মোটা, ভালো করে দেখে বুঝলো লকেটটা নীরেট নয় ওর দুটো আলাদা পার্ট একসাথে লাগানো যেন একটা ছোটো বাক্স, অভয় খোলার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না তারপর চোখের আরও কাছে এনে দেখতে শুরু করতেই একটা জিনিস দেখলো, লকেটটার পিছনে একটা ছোট্ট বোতামের মতো কিছু আছে, সেটাতে একটু জোরে চাপ দিতেই লকেটটা দুভাগে ভাগ হয়ে খুলে গেল আসলে ওটা লকেটের আকারে একটা ছোট্ট বাক্স।
অভয় দেখলো ওর সন্দেহ ঠিক লকেটের ভিতরে আধুনিক মাইক্রো সিমকার্ডের সাইজের একটা ছোট্ট ওয়্যারলেস্ ডিভাইস, অভয় ডিভাইসটা বার করে নিয়ে সেটা বুক পকেটে রেখে আবার লকেটটা বন্ধ করে চেনটা প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে নিল। টয়লেট থেকে বেরিয়ে আসতে যাবে কিন্তু বাধা পেল সামনে দরজার সামনে তিনজন লোক দাঁড়িয়ে আছে এরাই ওদের পিছনে ধাওয়া করছিল, টয়লেটে আরও দুজন ছিল ওরা সাধারণ প্যাসেঞ্জার, ওরা বেরিয়ে যেতেই লোকগুলো দরজা ছেড়ে এগিয়ে এল।
এতক্ষণ ধরে আমাদের পিছনে ধাওয়া করছো কেন? অভয় জিজ্ঞেস করলো
দাদা বলেছে ভালো ভাবে যেতে চাইলে ঠিক আছে নাহলে মেরে ফেলে দিতে। ওদের একজন বললো।
কিন্তু তোমাদের পক্ষে দুটোর একটাও সম্ভব নয়।
তাই নাকি? কথার সাথে ওদের দুজনের হাতে একটা পিস্তল চলে এল।
অভয়ের মুখে একটা ব্যাঙ্গের হাসি দেখা গেল, তিনজন এগিয়ে এল একজন অভয়ের কলার চেপে ধরতেই চোখের পলকে অভয় ওর হাতটা ধরে মুড়িয়ে ঘুরে ওর পিছনে চলে গেল তারপর ঠেলে একজনের গায়ের উপর ফেললো ফলে দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে গেল আর তৃতীয় জন একটু অন্যমনস্ক এই সুযোগে অভয় সোজা একটা পা ভূমি থেকে সমকোণে এবং লাথিটা মারলো সোজা লোকটার মাথায় কিছু বোঝার আগেই লোকটার পিস্তল ছিটকে পরে গেল আর লোকটা নিজেও নীচে পরে গেল এবার বাকি দুজন এগিয়ে আসতেই পিস্তলধারীর কবজি ধরে ঘুরে আবার পা তুলে অপরজনের চোয়ালে লাথি মারলো সে ছিটকে পরলো আর পিস্তলধারীর কবজিতে জোরে চাপ দিল "আঃ" করে লোকটা পিস্তল ফেলে দিল এবার হাতটা মুড়িয়ে পিছনে নিয়ে গিয়ে মাথায় পিছন দিকটা ধরে সোজা একটা ইউরিনালে ঠুকে দিল পরপর দুবার ফলে লোকটার মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত বেরোতে থাকে তারপর লোকটাকে একটু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে একটু জায়গা করে একটু লাফিয়ে একটা লাথি কষালো তলপেটে ওক্ করে লোকটা নীচে পরে গেল আর উঠতে পারলো না, এবার তৃতীয় লোকটা যদিও সে উঠলো না অবাক এবং ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে রইলো যেন বিশ্বাস করতে পারছে না যে এক্ষুনি এখানে কি হলো।
অভয় ওর কাছে এল বললো: বলেছিলাম না আমাকে মারা তোদের দ্বারা সম্ভব নয়, যাইহোক ইচ্ছা থাকলেও তোদের এখানে মারতে পারবো না কারণ এটা পাবলিক টয়লেট ওরা দুজন অজ্ঞান হয়ে গেছে তোকেও তাই করে রেখে যাবো যদি তোর জ্ঞান আগে ফেরে তো ওদের নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাস।
কথাটা বলেই লোকটার মাথার পিছন দিকে একটা মোক্ষম আঘাত করলো হাতের চাড় দিয়ে লোকটা অজ্ঞান হয়ে পরে গেল, এবার শার্টের পকেট থেকে ডিভাইসটা বার করে টয়লেটে ফেলে বাইরে বেরিয়ে এল, তবে এই সময়ের মধ্যে টয়লেটে কেউ ঢোকেনি তার মানে বাইরে কেউ আছে যারা ঢুকতে দেয়নি অতএব সাবধান হতে হবে। ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে এল অভয় একটা দোকানে গিয়ে একটা জলের বোতল নিল আর দুজনের খাবার জন্য স্যান্ডউইচ সকাল থেকে দুজনেরই পেটে কিছু পরেনি, বেলা অনেক হয়ে গেছে, দোকানের পাশেই দেখে একজন আমড়া মাখা বিক্রি করছে মনে পরলো তাথৈ খুব পছন্দ করে খেতে।
আমড়া মাখা কিনছে, এমন সময় অভয় খেয়াল করে সামনের লোকটা ওর পিছনে কিছু দেখে ভয় পায়, হটাৎ পিছনে একটু অস্বাভাবিক কয়েকজনের গুঞ্জনের মতো কথাবার্তা কানে আসতেই চকিতে পিছনে ঘুরতেই দেখে একটা ছুরি ধরা হাত তার গলা লক্ষ্য করে এগিয়ে আসছে মুহূর্তে অভয় মাথাটা সরিয়ে আঘাতটা এড়িয়ে যায়, লোকটা প্রথমবারে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে দ্বিতীয়বার আঘাত করতে উদ্যত হয় কিন্তু অভয় এবারও আঘাতটা এড়িয়ে যায় এবং এবার লোকটার পেটে একটা লাথি মারে লোকটা ছিটকে কয়েকহাত পিছনে পরে যায় তারপর আবার উঠে আঘাত করতে এলে অভয়লোকটার একটা পায়ের পাতার উপর পা দিয়ে প্লাটফর্মে ভূমিতে চেপে ধরে একটা জোরে ধাক্কা মারে ফলে লোকটা পিছনে হেলে যায় কিন্তু একটা পা অভয় আটকে রাখায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নীচে পরে যায় এবং একটা আর্তনাদে বোঝা যায় লোকটার পায়ের পাতার জয়েন্ট ভেঙে গেছে, এটা অভয়ের কমন টেকনিক, এটা সে প্রায়শই ব্যবহার করে এতে প্রতিদ্বন্দ্বীকে খুব সহজেই ঘায়েল করা যায় যেমন আজ করলো, এদিকে লোকটাকে পকেটমার বা চোর ভেবে প্ল্যাটফর্মের অন্য যাত্রীরা লোকটাকে ঘিরে মারতে শুরু করে, লোকটা পিস্তল বার করতে যাবে কিন্তু পারে না, খুব সম্ভবত প্লাটফর্মে লোকের ভিড়ের জন্য সে অভয়ের উপর পিস্তলের বদলে ছুরি বার করেছে কিন্তু এখন আত্মরক্ষার জন্য পিস্তল বার করে ফলে যাত্রীরা আরো ক্ষেপে গিয়ে ওকে আরো মারতে থেকে। অভয় যখন আমড়া মাখা নিয়ে দাম মেটাচ্ছে তখনই ট্রেন ছাড়ার হুইসেল দিল, চমকে উঠে অভয় তাড়াতাড়ি ছুট লাগায়।
পরপর হুইসেলের শব্দে তাথৈএর ঘুমটা ভেঙে যায়, কয়েকসেকেণ্ড সময় নেয় সে বুঝতে যে কোথায় আছে তারপর পাশে তাকিয়ে দেখে অভয় নেই অন্য লোক বসে, চমকে ওঠে তাথৈ এদিকে ওদিকে অভয়কে খুঁজতে থাকে, সে যেখানে বসে ছিল তার সামনে একটা গেট সেখানে যায় কিন্তু অভয়কে দেখতে পায় না, কামরায় এক বৃদ্ধ দম্পতি ছিল তারা জিজ্ঞেস করে "তুমি কি কাউকে খুঁজছো মা?"
হ্যাঁ, আমার পাশে আমার হাজবেন্ড ছিল।
তোমার হাজব্যান্ড?
হ্যাঁ। বলে তাথৈ অভয়ের একটা বর্ণনা দিল, এটা শুনে অপরদিকে একজন লোক বললো: এরকম একজন তো ট্রেন প্লাটফর্মে ঢুকতেই রানিং ট্রেন থেকে নেমে গেল অনেকক্ষণ হয়েছে।
বুকটা কেঁপে উঠলো তাথৈএর অভয় অনেকবার ওকে বলেছে বাড়ি ফিরে যেতে কিন্তু ও যায়নি তাই কি অভয় ওকে ছেড়ে চলে গেল, একজন বললো: আপনি ফোন করে দেখুন না।
ওর ফোন বন্ধ আছে।
তাহলে এখন কি করবেন?
তাথৈ ঠিক করলো সে ট্রেন থেকে নেমে যাবে, এদিকে ট্রেন গতি বাড়িয়েছে সে গেটের কাছে গিয়ে লাফ মারতে চাইলো কিন্তু গেটে থাকা কয়েকজন তাকে আটকে দিল "কি করছেন কি ম্যাডাম" ট্রেন প্লাটফর্ম ছেড়ে এসেছে এখন কিভাবে নামবেন?"
দেখুন আমাকে নামতে হবে, ছেড়ে দিন।
একজন মহিলা বললেন: কেমন স্বামী কে জানে?
তাথৈএর চোখ ফেটে জল আসতে চায় সে খালি এক কথা বলে যাচ্ছে: ছেড়ে দিন, নামতে দিন। কিন্তু গেটের লোক তাকে আটকে দেয়, সে ভেবে পায়না এখন কি করবে, অভয় কেন ছেড়ে গেল তাকে।
এ কি ঘুম ভেঙেই আবার হাইজাম্প মারতে ছুটেছো নাকি?
পিছনে অভয়ের পরিচিত গলার স্বর শুনে তাথৈ ঘুরে দেখে অভয় একহাতে একটা প্যাকেট আর একটা বড়ো জলের বোতল আর অপর হাতে ট্রেনের হ্যাণ্ডেল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এবার অভয় তাথৈএর কাছে এগিয়ে যায় কামরার সবাই হৈহৈ করে ওঠে "আপনি কেমন লোক মশাই, নিজের স্ত্রীকে একা রেখে নেমে গিয়েছিলেন, এদিকে উনি রানিং ট্রেন থেকে লাফ মারতে চাইছেন" ইত্যাদি ইত্যাদি।
অভয় কোনোভাবে ওদের বুঝিয়ে তাথৈএর দিকে তাকায়, তাথৈও একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে, সিটে এখন অন্য লোক বসে আছে তাই দুজনে কামরার অপরদিকে গেটের কাছে আসে একদিকে গেটে লোক থাকলেও অপরদিকে ফাঁকা।
তুমি কোথায় গিয়েছিলে? জিজ্ঞেস করে তাথৈ
এইতো জল আর খাবার আনতে। তারপর পকেট থেকে চেনটা বার করে তাথৈকে দিয়ে বলে: এই নাও এটা আমি একটু নিয়ে গিয়েছিলাম দরকার ছিল।
তাথৈ এক ঝটকায় চেনটা ফেলে দিতে চায় কিন্তু অভয় ধরে থাকায় তা হয় না তারপর একটু রাগী গলায় বলে: দরকার নেই চেন, তুমি আমাকে না ডেকে কেন গিয়েছিলে? জানো আমি কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
তাথৈ..
চোখ খুলে তোমাকে দেখতে পেলাম না, ওনারা বললো তুমি রানিং ট্রেন থেকে নেমে গেছো তাই..
তাই তুমি ভাবলে আমি তোমাকে একা ফেলে রেখে চলে গেছি আর তখনই তুমি হাইজাম্প মারতে ছুটলে তাইতো?
তাথৈ অভয়ের বুকে মুখ লুকালো বললো: আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
তাথৈ.. তুমি এটা ভাবলে কিভাবে যে আমি তোমাকে একা ছেড়ে রেখে যাবো?
তাথৈ কোনো কথা না বলে চুপ করে দুহাতে অভয়কে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুঁজে থাকে অভয় বলে চলে আমি যখন একবার বলেছি যে তোমাকে ছেড়ে যাবো না তখন তুমি আমাকে ছেড়ে না গেলে বা আমার মৃত্যু আমাকে না নিয়ে গেলে আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না।
আমি তোমাকে কখনো ছেড়ে যাবো না আর মৃত্যুও আমাদের আলাদা করতে পারবে না।
অভয় একহাতে তাথৈকে নিজের বুকে টেনে নেয়, কিছুক্ষণ পরে বলে: এই নাও খাবার এনেছি আর একটা জিনিস আছে কলেজে তুমি খেতে ভালোবাসতে এখনো বাসো কি না জানিনা, আমড়া দেখে তাথৈএর মুখে হাসি ফুটে ওঠে।
নিজের অফিসে আজ তেমন কাজের চাপ নেই অমিয়র, যেটুকু আছে সেটাই ধীরে সুস্থে করতে থাকে, এমন সময় অফিসের এক কলিগ এসে বলে: অমিয় তোর সাথে একজন দেখা করতে এসেছে।
কে?
একটা মেয়ে?
মেয়ে?
দেখ তোর গার্লফ্রেন্ড বোধহয়।
তার যে কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই এটা তার থেকে ভালো আর কে জানে, সেই কোন ছোটোবেলায় একজনকে ভালো লেগেছিল, মেয়েটার ইগো অহংকার বদমেজাজী সবকিছু ভালো লাগতো, প্রপোজও করেছিল কিন্তু মেয়েটা রিফিউজ করে দেয়, তাতে কষ্ট হলেও মানিয়ে নেয়, তারপর আর কোনো মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়ায়নি, এর অবশ্য আরেকটা কারনও ছিল অভয়ের পরিণতি ,অভয় খুব ভালোবাসতো তাথৈকে বিনিময়ে কষ্টই পেতে হয়েছে ছেলেটাকে, এখনো মনে আছে অভয়ের তাকে বলা শেষ কথাটা "আমি যা ভুল করেছি তুই কোনোদিন করিস না অমিয়, কোনোদিন নিজের লেভেলের থেকে উঁচু লেভেলের কাউকে ভালোবাসিস না, কোনোদিন না"।
রিসেপশনে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই দেখিয়ে দিল কে এসেছে, তাকিয়েই বাকরুদ্ধ হয়ে গেল অমিয়, বৃষ্টি এসেছে পরনে নীল রঙের ফ্লাওয়ার প্রিণ্টের তাঁতের শাড়ি সাথে ম্যাচিং হাফ স্লিভ ব্লাউজ চুলটা খোঁপা করে বাধা।
আপনি এখানে? জিজ্ঞেস করে অমিয়।
বৃষ্টি উঠে দাঁড়ায়, একটু চুপ করে থেকে উত্তর দেয় বৃষ্টি: তোমার সাথে একটু দরকার ছিল।
কি দরকার?
একটু আলাদা যাওয়া যায়?
আসুন। অমিয় বৃষ্টিকে ক্যান্টিনে নিয়ে গিয়ে কোণের দিকে একটা ফাঁকা টেবিলে বসে বললো "এবার বলুন"।
তাথৈকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, ও কোথায় যেতে পারে তুমি জানো?
আপনার বোন কোথায় গেছে সেটা আমি জানবো কিভাবে?
তোমার সাথে তো ওর কথা হতো
বেশ কিছুদিন হয়নি, তার আগে ওই আমাকে এক জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল।
কোথায়? ওখানে ও যেতে পারে কি?
যেতে পারে তবে ওখানে ওকে ঢুকতে দিত না।
কেন?
জানিনা।
তাহলে কোথায় যেতে পারে?
আপনি ফোন করছেন না কেন?
তাথৈ এখন আমার সাথে তেমন কথা বলে না, আমার ফোন ধরে না।
কেন?
বৃষ্টি চুপ করে থাকে। অমিয় বলতে থাকে: আমি সত্যিই জানিনা তাথৈ কোথায় গেছে।
তুমি একবার ওকে ফোন করো না, তোমার ফোন ধরবে। অমিয় তাথৈকে ফোন করে কয়েকবার রিং হবার পর ওপাশ থেকে তাথৈএর গলা আসে "হ্যালো"
তাথৈ আমি অমিয় বলছি।
বল।
তুমি কোথায়?
কেন?
তোমার দিদি এসেছে তোমাকে খুঁজতে নাও কথা বলো
হ্যালো তাথৈ তুই কোথায়?
আমি বাইরে আছি।
কিন্তু কোথায়? কাউকে কিছু জানাসনি সবাই চিন্তা করছে।
আমি ঠিক আছি।
কোথায় তুই সেটা তো বল।
সেটা বলা যাবে না।
মানেটা কি?
মানে বলবো না।
তাথৈ তুই আমার উপর রেগে আছিস?
কেন রেগে থাকার মতো কাজ করিসনি কি?
তাথৈ... আমি যা করেছি।
ওই বিষয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না, আমি ঠিক আছি মাকে আর জ্যেঠিমাকে বলে দিস আমি পরে ওনাদের সাথে কথা বলে নেবো, এখন রাখছি।
ফোনটা রাখার পরে বৃষ্টি কিছুক্ষণ মাথা নীচু করে বসে থাকে।
আপনার এখন বাড়ি যাওয়া উচিত। অমিয় আস্তে করে বলে।
আমি খুব খারাপ মেয়ে তাইনা? সেইজন্যই তোমরা সবাই আমাকে ঘেন্না করো।
আপনি বাড়ি যান, মিস ভট্টাচার্য।
তুমিও এখনো আমাকে ক্ষমা করোনি তাই না?
কিন্তু আপনার ক্ষমার দরকারই বা কেন? তাও আমার মতো একজন সাধারণ ছেলের।
বৃষ্টি খানিকক্ষণ চুপ করে একদৃষ্টিতে অমিয়র দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর "আমি আসছি বলে উঠতে যায়", কিন্তু অমিয় কথা বলতে শুরু করে।
আপনি আমাকে রিফিউজ করেছিলেন বলে আমার কোনো ক্ষোভ নেই, আমার আপনাকে ভালো লাগতো তার মানে তো এই নয় যে আপনারও আমাকে ভালো লাগবে কিন্তু আপনারা আমার বন্ধুর সাথে যেটা করেছিলেন সেটা আমি কোনোদিনও ভুলবো না।
সেদিন আমি অভয়ের সাথে যা ব্যবহার করেছিলাম সেটা আমার পিসির কথায়।
কিন্তু আপনার মনেও কি অভয়ের জন্য রাগ ছিল না?
আমাকে আরেকটা সুযোগ দেবে? আমি নিজেকে শোধরাতে চাই।
আমার বন্ধু আর ফিরে আসবে না মিস্, আর আমি যতবার আপনাদের দেখি ততবার ওর কথা মনে পরে।
কিন্তু ওর মৃত্যুর ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা, ওটা দুর্ঘটনা।
সেটা আপনার কাছে কিন্তু ওই এলাকার অনেকেই জানতো যে ওটা দুর্ঘটনা ছিল না।
কার ফোন ছিল? তাথৈ ফোন রাখতে জিজ্ঞেস করে অভয়।
অমিয়র কিন্তু কথা বললো বৃষ্টি।
অমিয় কেমন আছে?
তোমার বন্ধু তুমি আমার থেকে খোঁজ নিচ্ছো?
তোমার সাথে যোগাযোগ আছে তাই জিজ্ঞেস করছি।
আমাদের উপর রেগে আছে, বিশেষ করে বৃষ্টির উপরে।
বৃষ্টি ওকে কলেজে যা অপমান করেছিল।
তার জন্য নয়।
তবে?
বৃষ্টি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিল তাই, আচ্ছা অমিয়র সাথে তুমি দেখা করোনি?
না,
কেন? আমি যখন নিয়ে গিয়েছিলাম তখনও দেখা করোনি।
প্রথমবারে আমি সত্যিই ছিলাম না।
আর পরের বারে?
আমি ওর সাথে দেখা করলে ওর বিপদ বাড়তো, ঠিক যেমন.. অভয় কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল।
ঠিক যেমন? কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলে মনে হলো।
আরো একজন আছে যাকে তোমরা চেনো কিন্তু আমার সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য তাকে বিপদে পরতে হয়েছিল।
কে?
ওটা যখন পরিচয় করবে তখন নিজেই দেখে নিও।
ওরা দুইজন প্রায় চলেই এসেছে আর একটা স্টেশন পরেই নামবে, এইসময় তাথৈএর ফোন আবার বেজে উঠলো, নাম্বারটা দেখে তাথৈএর ভ্রুদুটো কুঁচকে গেল।
কে? জিজ্ঞেস করে অভয়
বাপি।
ফোনটা ধরে কথা বলো।
তাথৈ ফোনটা রিসিভ করে স্পিকার অন করে, যদিও ট্রেনের আওয়াজের জন্য খুব স্পষ্ট শোনা যায় না, তাথৈ ফোনটা অভয় আর ওর মুখের খুব কাছে ধরে "হ্যালো"।
তাথৈ? ধীরেন বাবুর গম্ভীর স্বর শোনা যায়।
বলো।
কোথায় তুমি?
বাইরে।
বাইরে কোথায়?
বলবো না।
তুমি কি ভেবেছো না বললে আমি জানতে পারবো না? তুমি এখন ট্রেনে আছো সাথে একটা ছেলে আছে।
জানোই যখন তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছো কেন?
তুমি ট্রেন থেকে নেমে সোজা বাড়িতে আসবে।
আমি যাবো না।
তাথৈ.. ধীরেন বাবু একটা ধমক দেন, তোমার সাহস অনেক বেড়ে গেছে।
এই সাহসটা আগে করলে হয়তো মাকে তোমার হাতে এত মার খেতে হতো না।
ওই ছেলেটার পাল্লায় পরে বাবার মুখে মুখে তর্ক করতে শিখেছো দেখছি।
না, তোমাদের সমস্ত অন্যায়ের কথা জানতে পেরেছি।
কি অন্যায় করেছি আমরা?
হিসাব করতে গেলে হয়তো শেষ হবে না তবে আপাতত একটাই বলছি, ষোলো বছর আগে অভয় আর ওর পরিবারের সাথে কি করেছিলে?
কিছুক্ষণ কোনো কথা আসে না তারপর ধীরেন বাবু বলেন: ওই ছেলেটা তোমার সাথেই আছে না, ফোনটা ওকে দাও।
কেন, যা বলার আমাকে বলো।
ফোনটা ওকে দাও।
বলুন মিস্টার ধীরেন ভট্টাচার্য। এতক্ষণে কথা বলে অভয়।
তুই আমার মেয়েকে আমার বিরুদ্ধে উসকাচ্ছিস তোকে আমি ছাড়বো না, কি ভেবেছিস বেঁচে যাবি?
যুদ্ধের শুরু তো আপনারা করেছিলেন, আমি তো শেষ করতে এসেছি।
তোর কি মনে হয় আমার কটা লোককে মেরে তুই বেঁচে গেছিস? তোর বাবাকে যেভাবে মেরেছিলাম আমরা, তোকেও সেইভাবেই মারবো।
এবার নয়, এবার আমার পালা।
বেশ দেখাই যাক তুই আমাদের মারিস না আমরা তোকে।
বেশ আপনি আপনার মতো চেষ্টা করুন।
বাপি.. তুমি.. তাথৈ কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু ধীরেন বাবু তাকে থামিয়ে দিয়ে নিজে বলতে শুরু করেন: শোনো তাথৈ, ওই ছেলেকে তো আমি মারবোই, কিন্তু আমি শুধু জানতে চাই তুমি ফিরে আসবে কি না?
বাপি তোমার গলায় আমি একজন ক্রিমিনালের স্বর শুনতে পারছি।
তাথৈ.. আবার ধমকে ওঠেন ধীরেন বাবু।
হ্যাঁ, আমি প্রথমে পুরো বিশ্বাস করিনি অভয়ের কথা কিন্তু এখন তোমার মুখেই শুনলাম তাই অবিশ্বাস করার প্রশ্নই ওঠে না।
তুমি যার হয়ে কথা বলছো সে আমাকে মানে তোমার বাবাকে আর জ্যেঠুমণিকে মেরে ফেলতে এসেছে।
কারণ তোমরা আগে ওর বাবাকে মেরেছো।
তুমি ওই ছেলেটাকে ছেড়ে বাড়ি ফিরবে কি না?
না, আমি অভয়কে ভালোবাসি আর ওর সাথেই থাকবো।
বেশ তবে আজ থেকে তুমি আমার জন্য মরে গেছো, আজ থেকে আমার কোনো মেয়ে নেই।
সে তো আমি কোনোদিনও ছিলাম না, থাকলে আমাকে বুঝতে আমার কথা ভাবতে, তাহলে আমি যাকে ভালোবাসি তাকে আর তার পরিবারের ক্ষতি করতে না।
ফোনটা কাটার পরে তাথৈ কাঁদতে থাকে, অভয় ওকে বুকে টেনে নেয় "এখনো সময় আছে তাথৈ, আমাকে ছেড়ে তুমি ফিরে যাও, সেটাই ভালো হবে"।
যেতাম যদি আমার বাবা সৎ, ভালো মানুষ হতেন কিন্তু উনি তা নন।
তবুও উনি তোমার বাবা।
জানি।
তারপরও যাবে না?
উনি যদি নিজেকে শুধরে ফেলেন তাহলে যাবো, অবশ্যই যাবো কিন্তু আমি জানি উনি সেটা করবেন না।
আমি তোমার জীবনে ফিরে না এলেই বোধহয় ভালো হতো, অন্তত তোমার মনে তোমার বাবার জায়গাটা নষ্ট হতো না।
আমার মনে আমার বাবার জায়গা অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে যখন দিনের পর দিন আমার মাকে মার খেতে দেখেছি ,একা লুকিয়ে কাঁদতে দেখেছি।
অভয় আর কোনো কথা না বলে তাথৈকে নিজের সাথে চেপে ধরে, তাথৈও অভয়ের বুকে মুখ গুঁজে দেয়।
ট্রেন থেকে নেমে অভয় দেখে প্লাটফর্মে লোক গিজগিজ করছে, অভয় তাথৈকে সামনে রেখে নিজে পিছনে থাকে চারিদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে আস্তে আস্তে ভিড় ঠেলে এগোতে থাকে, কিন্তু ভিড়ের মধ্যে শত্রু চেনা কঠিন সেটা অভয় একটু পরেই বুঝতে পারলো সামনে দিয়ে অনেক লোক আসছে ট্রেন ধরবে বলে, ওদের মধ্যে কয়েকজনকে সন্দেহ হলো,ওরা কাছাকাছি আসতেই সাবধান হয়ে গেল যাতে ওরা অতর্কিতে আঘাত না হানতে পারে কিন্তু ওরা কিছু করার আগেই পিছন থেকে একজন পিঠে ছুরি মারলো, ছুরিটা গাঁথেনি আড়াআড়ি ভাবে চালিয়েছে ফলে অনেকটা কেটে গেল, ঘুরে দেখে একজনের হাতে ছোট একটা ছুরি সেটা সে আবার মারতে উদ্যত হলে অভয় ওর হাত ধরে নেয় কিন্তু পাশে আরেকজন আবার ছুরি চালায় এও শরীরে গাঁথে না কেটে যায়, এবার সামনে থেকে একজন এগিয়ে এলে অভয় ওকে এক লাথিতে ছিটকে ফেলে দেয় কিন্তু সেইসময় আরো একটা ছুরির আঘাত শরীরে পরে, এতক্ষন তাথৈ ব্যাপারটা লক্ষ্য করে "অভয়" তাথৈ আর্তনাদ করে ওঠে।
তাথৈ পালাও। বলার সঙ্গে সঙ্গে আরেকজন আঘাত করতে এলে অভয় ওর হাতটা ধরে ঘুরে গিয়ে পাশের একজনকে আরেকজনকে লাথিতে ছিটকে দেয়,তারপর যার হাত ধরেছে তাকে এক ধাক্কায় ফেলে দেয় তাথৈ তবুও দাঁড়িয়ে আছে দেখে ওর হাত ধরে দ্রুত ছুটতে থাকে কিন্তু ভিড় থাকায় বেশীদূর যেতে পারে না,ভিড়ের মধ্যে আরো একজন ছুরি হাতে এগিয়ে আসে একেও অভয় হাত ধরে তলপেটে কয়েকটা ঘুষি মেরে ফেলে দেয় এদিকে লোকজন ভয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে তখনই আরেকজন অভয়ের ডান বাহুতে ছুরি মারে কিন্তু একেও হাতটা ধরে ফেললেও ছুরির মুখটা বাহুতে গেঁথে যায় ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে।
তাথৈ ভয়ে আর্তনাদ করে ওঠে, অভয় ছুরি ধরা হাতটা ধরে গায়ের জোর প্রয়োগ করে হাতটা উপরে তুলতে থাকে এবং ছুরিটাও অভয়ের বাহু থেকে বেরিয়ে আসে এবার অভয় লোকটার পাঁজরে জোরে আঘাত করে লোকটা একটা আর্তনাদ করে নীচে পরে যায়, অভয় তাথৈকে আবার বলে: পালাও তাথৈ,
আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না।
কথা শোনো পালাও।
তাথৈ উত্তর না দিয়ে অভয়কে ধরে ওকে নিয়ে এগোতে থাকে স্টেশন থেকে বেরিয়ে বাইরে ভিড় কিছুটা কম, ওরা গতি দ্রুত করে কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শত্রুরা ঘিরে ফেলে অন্তত দশজন হবে কিন্তু এখানে ভিড় কম তাই লড়তে সুবিধা হবে অভয়ের, আরেকটা সুবিধা হলো যে কোনো কারনেই হোক এরা ছুরি ব্যবহার করছে পিস্তল নয়।
অভয় তাথৈকে নিজের পিছনে গার্ড করে নিজেকে প্রস্তুত করে নেয় শরীরের অনেক জায়গায় আঘাত লেগেছে রক্তে জামাটা অনেকটা জায়গায় লাল হয়ে গেছে, সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলে এদের মোকাবেলা করা অভয়ের কাছে কিছুই না কিন্তু এই মুহূর্তে তার সারা শরীরে একটু আগের আক্রমণের চিহ্নস্বরূপ অনেকগুলো কাটা জায়গা থেকে রক্ত পরছে তার উপর শরীরে পেইনকিলারের প্রভাব শেষ হয়ে আসছে শরীরে মার খাওয়ার ব্যাথা বাড়ছে কিন্তু তবুও লড়তে হবেই।
বাম দিক থেকে একজন এগিয়ে আসতেই অভয় একহাতে ওর কবজি ধরে অপর হাতে কনুই চেপে হাতটা লোকটার বুকের দিকে ঘুরিয়ে দেয় ফলে ছুরিটা তার নিজের বুকেই গেঁথে যায়, এবার একসাথে দুজন আসে অভয় একজনের হাতটা ধরে কবজিতে একটু মোচড় দিতেই লোকটার হাত থেকে ছুরিটা পরে যায় এবার অডয় সরে লোকটাকে নিজের গার্ড হিসেবে ব্যবহার করে তার ফলে অপরজন যে ছুরি মারতে এসেছিল তার ছুরি এই লোকটার বুকে ঢুকে যায়, কিন্তু তখনই সে ছুরিটা বার করে আবার অভয়কে আঘাত করতে যায় আগের জন নীচে পরে যায় অভয় ওকে ছেড়ে দ্রুত হাতে নীচ থেকে ছুরিটা তুলে নিয়ে লোকটার গলায় পরপর কয়েকবার গেঁথে দেয়, কিন্তু এরমধ্যেই আরো কয়েকজন এগিয়ে আসে এবং অভয়ের নিজের শরীরে পায়ে আরও কয়েকটা ছুরিকাঘাত হয়, রক্তে ভেসে যেতে থাকে অভয়ের শরীর পরমুহূর্তেই অভয় ওই লোকগুলোকেও ছুরির আঘাতে শেষ করে দেয়।
এখনো কয়েকজন আছে কিন্তু ওরা এগোতে সাহস পাচ্ছে না, এদিকে আঘাতে অভয়ও ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছে না খোঁড়াতে থাকে তাথৈ এগিয়ে এসে ওকে ধরে, সাহায্য করে অভয় তাকিয়ে দেখে ওর চোখে জল, চোখেমুখে আতঙ্ক। একটু ধাতস্থ হয়ে অভয় ওদের দিকে এগিয়ে যেতেই একজন এগিয়ে এল কিন্তু অভয় আঘাতটা এড়িয়ে ঘুরে এরও গলায় গেঁথে দেয় ছুরিটা, এটা দেখে বাকিরা আর এগোয় না কিন্তু অভয় এগিয়ে যেতেই ওরা পিছনে দৌড় লাগায় এই দেখে অভয় আর ওদের পিছু নেয় না ঘুরে তাথৈএর কাছে আসে, তাথৈএর চোখেমুখে তখনও আতঙ্ক, ও দুহাতে অভয়ের গলা জড়িয়ে ধরে অভয় আস্তে আস্তে বলে: কি হয়েছে?
অভয়, তোমার অনেক রক্ত বেরোচ্ছে।
আমি ঠিক আছি।
না, তুমি এখনই চলো।
কোথায়?
হাসপাতালে।
এখন সময় নেই, আমাকে বাড়িতে পৌঁছাতে হবে।
কিন্তু তুমি হাঁটতে পারছো না।
পারবো।
ঠিক আছে তাহলে আগে কাছাকাছি একটা ওষুধের দোকানে চলো, যেখানে যেখানে কেটে গেছে ওখানে ব্যান্ডেজ করতে হবে।
একটা ফাঁকা জায়গায় বসে ওষুধের দোকান থেকে আনা তুলো আর অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে অভয়ের কাটা জায়গাগুলো পরিষ্কার করে দিতে থাকে তাথৈ, কিন্তু ওর চোখে জল।
তাথৈ, তুমি কাঁদছো? দেখলে তো আমার সাথে থাকাটা কত রিস্কের, এরপরও আমাকে ছেড়ে যাবে না?
তাথৈ কোনো কথা না বলে একটা কাটা জায়গায় একটু জোরে চাপ দেয়, অভয় "আঃ"করে ওঠে, তারপরেই হাসতে থাকে, তাথৈ এবার কাটা জায়গা গুলোতে ওষুধ লাগিয়ে তুলো দিয়ে টেপ লাগিয়ে দেয়। ওষুধ লাগানো হয়ে গেলে দুজনে বাস ধরার জন্য এগোতে যাবে কিন্তু এবার সামনে হাজির হন স্বয়ং ধীরেন বাবু আর জগা অবশ্যই একা নন, সাথে ওনাদের দলের লোক, ওনাদের দেখে দুজনেই থমকে দাঁড়িয়ে পরে।
কি ভেবেছিলি আমার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বেঁচে যাবি? আজ তোকে এখানেই কুঁপিয়ে মারবো। হুঙ্কার ছাড়েন ধীরেন বাবু।
বাপি তুমি?
দাদা পুলিশ। চাপা স্বরে একজন ধীরেন বাবুকে কথাটা বলতে তিনি দেখেন একজন পুলিশ অফিসার তাদের দিকে এগিয়ে আসছে কিন্তু ধীরেন বাবু ইশারায় চলে যেতে বললে অফিসারটি আর এগোননা চলে যান, বিষয়টা অভয়ের নজর এড়ায়না।
এবার ধীরেন বাবু অভয়ের উদ্দেশ্যে বলেন: বলেছিলাম না তোকে শেষ করবোই।
বাপি তার মানে আমি ঠিকই ভেবেছিলাম একটু আগে যারা ওকে মারতে এসেছিল ওদের তুমি পাঠিয়েছিলে।
ধীরেন বাবু কোনো উত্তর দেন না, কোমরের পিছনে থাকা পিস্তলটা বার করে আনেন, বলেন: এবার কোথায় পালাবি, তুই?
বাপি তুমি অভয়ের কোনো ক্ষতি করবে না।
তোমার সাথে আমার কোনো কথা নেই।
তাহলে আর কি চালান পিস্তল, এবার আগের বারের ভুল করবেন না। অভয় কথা বলে।
পিস্তল চালালে তো একবারেই শেষ হয়ে যাবি।
আপনি আবার সেই একই ভুল করছেন।
চিন্তা নেই এবার তোকে না মেরে এখান থেকে যাবো না ,তবে যদি তুই দাদার টাকার হদিশ দিয়ে দিস তাহলে একটা গুলি মেরেই তোকে শেষ করে দেবো।
আমি তো আগেই বলেছি সব টাকা আমি বিলিয়ে দিয়েছি।
তাহলে তো সব চুকেই গেল। বলে ধীরেন বাবঙ অভয়ের দিকে পিস্তল তাক করেন।
একটা কথা বলবো?
কি?
তাথৈ কি সত্যিই আপনার মেয়ে?
মানে? কি বলতে চাইছিস তুই?
না মানে যে বীরেন ভট্টাচার্য অতীন সান্যালের মতো লোকের সাথে আপনার মেয়ের ডিল করে আপনি এখনো তাকেই সাপোর্ট করে যাচ্ছেন তাই জিজ্ঞেস করলাম, নাকি আপনি জানতেন?
কি বলছিস তুই? কথাটা যে ধীরেন বাবু জানতেন না সেটা ওনার হাবভাব দেখেই বোঝা যায়।
ও তারমানে আপনি জানেন না।
ছোট দা কি করছেন ও আপনাকে কথায় ভোলাচ্ছে ওকে শেষ করুন। এবার জগা কথা বলে।
কিন্তু ধীরেন বাবু পিস্তল চালান না, অভয়ের উদ্দেশ্যে বলেন: তুই কিভাবে জানলি?
জানি, কিভাবে সেটা ইম্পরট্যান্ট নয় কিন্তু কথাটা সত্যি।
জগা আবার কথা বলে: দাদা ওকে শেষ করে দিন।
কিন্তু ধীরেন বাবু এবারও পিস্তল চালাচ্ছেন না দেখে জগা পিস্তল বার করে কিন্তু ধীরেন বাবু ওকে বারন করেন, তারপর অভয়ের কাছে এগিয়ে এসে বলেন: তুই যা বলছিস সেটা যে সত্যি তার প্রমাণ কি?
আছে কিন্তু এখন দেওয়া সম্ভব নয়।
কেন? তার মানে কথাটা সত্যি নয়।
বিশ্বাস করা বা না করা সেটা আপনার উপর।
অভয় কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগে জগা আবার কথা বলে: দাদা ও আপনাকে কথায় ভোলাচ্ছে, ওকে শেষ করুন, নাহলে আমি করছি। ধীরেন বাবু কিছু বলতে যাচ্ছিলেন হটাৎ পরপর তিনটে পিস্তলের আওয়াজ হয় আর ধীরেন বাবু আর্তনাদ করে উঠে পরে যেতে থাকেন কিন্তু অভয় কাছেই থাকায় তাকে ধরে ফেলে, দেখে ওনার পিঠে গুলি লেগে রক্ত বেরোচ্ছে।
বাপি.. তাথৈ চিৎকার করে কেঁদে ওঠে।
ধীরেন বাবু, অভয়ও চমকে ওঠে, সে দেখে গুলি চালিয়েছে সাম্য, সে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে এবার সে এগিয়ে এসে জগার পাশে দাঁড়ায়। ধীরেন বাবু মাটিতে পড়ে যান তাথৈ তার মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে কাঁদতে থাকে, ধীরেন বাবু সাম্যর দিকে তাকান।
হ্যাঁ আঙ্কেল, অতীন আমার পরিচিত ছিল তাই জানি আপনার দাদা মানে বীরেন আঙ্কেল ওর সাথে তাথৈএর ডিল করেছিলেন।
সাম্য, তোকে আমি ছাড়বো না তাথৈ উঠে সাম্যকে মারতে যেতেই অভয় হাত ধরে টেনে আটকে নেয়।
ছাড়ো আমাকে, ছাড়ো।
তোমাকে বলেছি তাথৈ আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু তুমি আমাকে রিফিউজ করেছিলে, তার শাস্তি তো পেতেই হবে তাই না?
তাথৈ অভয়ের হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে থাকে, কিন্তু অভয় হাত ছাড়ে না সাম্য আবার বলতে থাকে: তোমাকে বলেছিলাম আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু তুমি আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলে।
বেশ করেছি, এবার তোকে মেরেই ফেলবো, হাত ছাড়ো অভয় আজ ওকে আমি মেরেই ফেলবো। তাথৈ ঝংকার দিয়ে ওঠে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারে না।
সাম্য আবার ব্যাঙ্গ করে বলে: এই তাহলে সেই অভয়, এখনো বেঁচে আছে ও? ঠিক আছে কোনো প্রবলেম না এখানে ওকে মারবো তারপর তোমাকে তুলে নিয়ে যাবো।
কিন্তু তুমি ছোটোদাদাকে মেরেছো এটা বড়দা জানতে পারলে কিন্তু.. জগা কথাটা শেষ করতে পারে না সাম্য বলতে শুরু করে: কি করে জানবে? অভয়কে এখানেই মেরে ফেলে রেখে যাবো আর তাথৈকে আমার সাথে নিয়ে যাবো, তাহলে বলবে কে? আপনি? বলে হাসতে থাকে জগাও হাসতে থাকে।
এবার জগা কথা বলে উদ্দেশ্য ধীরেন বাবু: দাদা আপনাকে অনেকবার বললাম ওকে শেষ করে দিন শুনলেন না, সেদিন আপনি আমার মাথায় পিস্তল ধরেছিলেন তখনই ঠিক করেছিলাম আপনাকে মারবোহ কাজটা সাম্য করে দিল, আপনি আপনার দাদার কথায় কত কিছু করেছেন অথচ দেখুন তিনি আমাকে বলেছেন যাতে এই অভয়ের সাথে আপনার মেয়েকেও মেরে ফেলি কিন্তু আমার দয়ার শরীর আমি অভয়কে মেরে ওকে সাম্যর হাতে তুলে দেবো। বলে জগা অভয়ের দিকে পিস্তল তাক করতেই অভয় মুহূর্তে মাটিতে পড়ে একটা ডিগবাজি খাওয়ার ভঙ্গিতে জগার কাছে গিয়ে জগার একটা হাটুতে সজোরে একটা লাথি মারে, একটা আর্তনাদ করে জগা হাঁটুতে হাত দিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে যায়, ওর হাত থেকে পিস্তল মাটিতে পরে যায়, চমকটা কেটে যেতেই সাম্য সহ জগার বাকি লোকগুলো কেউ পিস্তল কেউ কাট্টা জাতীয় বন্দুক বার করে।
অভয় জগার পিস্তলটা হাতে তোলে আর অপরহাতে কোমরে গোঁজা বীরেন বাবুর লোকদের থেকে আনা পিস্তলটা বার করে আনে এটা এতক্ষণ বার করেনি কিন্তু এখন উপায় নেই, দুহাতে দুটো পিস্তল নিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে, এদিকে গুলির আওয়াজে আশেপাশে যে অল্প সংখ্যক লোক ছিল তারাও পালিয়ে গেল, অভয়ের নিঁখুত টিপে জগার লোকগুলো একে একে খসে পরতে থাকে, ওরাও গুলি চালায় কিন্তু অভয় একজায়গায় দাঁড়িয়ে নেই ওদের ভাবনার থেকে অনেক দ্রুত জায়গা পরিবর্তন করছে তবুও দু তিনটে বুলেট হাত ঘেঁষে লেগে বেরিয়ে যায়, আবার রক্তে মাখামাখি হয়ে যায় ওর শরীর।