Thread Rating:
  • 96 Vote(s) - 2.71 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romantic Thriller প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ (সমাপ্ত)
(25-10-2022, 09:01 PM)Arpon Saha Wrote: কাল পরশু আপডেট দিয়ে পুষিয়ে দেও দাদা

এইবারেই বড়ো দিতাম তবে একটা ছোট প্রবলেমের জন্য পারিনি, তবে এবার বেশি অপেক্ষা করতে হবে না।  Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
[+] 1 user Likes Monen2000's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
আপডেট কবে আসিবে ভ্রাতাশ্রী
Like Reply
(26-10-2022, 04:12 PM)Arpon Saha Wrote: আপডেট কবে আসিবে ভ্রাতাশ্রী

এবারে বেশী দেরী হবে না। তাড়াতাড়ি আসবে।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
Ato taratari climax kano??? Besh sundar cholche to!!aro kichu twist anun na!!! Ato bhalo plot ta eto taratari sesh hole ami at least khub dukkho pabo!!
[+] 1 user Likes Debartha's post
Like Reply
(26-10-2022, 11:30 PM)Debartha Wrote: Ato taratari climax kano??? Besh sundar cholche to!!aro kichu twist anun na!!! Ato bhalo plot ta eto taratari sesh hole ami at least khub dukkho pabo!!

না কেউ দুঃখ পাক সেটা আমি চাই না এবং এবার যে আপডেট দেবো সেটার পরে মনে হয় না আর দুঃখ থাকবে বলে।  Namaskar Namaskar 
আর ক্লাইম্যাক্স তো আনতেই হবে, একটা না একটা সময় তো শেষ হবেই যদিও তার জন্য এখনো কম করে দুটো কি তিনটে পার্ট লাগবে তাই মনে হয় পুষিয়ে যাবে।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
Dada golpo ta ki sesh kore deben.. R ektu cholte parto na?
[+] 1 user Likes Dushtuchele567's post
Like Reply
(27-10-2022, 08:03 AM)Dushtuchele567 Wrote: Dada golpo ta ki sesh kore deben.. R ektu cholte parto na?

আরো কয়েকটা পার্ট আপডেট আসবে তবে সেটা একসাথেই দেওয়ার চেষ্টা করছি।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
(27-10-2022, 10:31 AM)Monen2000 Wrote: আরো কয়েকটা পার্ট আপডেট আসবে তবে সেটা একসাথেই দেওয়ার চেষ্টা করছি।

Ohh
Like Reply
Namaskar এর পর আরেকটা গোয়েন্দা থ্রিলার কনসেপ্টের গল্প হোক। আর যারা উগ্র যৌনতা বা অজাচর পছন্দ করে তাদের জন্য আপনি না।
Namaskar
[+] 1 user Likes Arpon Saha's post
Like Reply
(27-10-2022, 10:16 PM)Arpon Saha Wrote: Namaskar এর পর আরেকটা গোয়েন্দা থ্রিলার কনসেপ্টের গল্প হোক। আর যারা উগ্র যৌনতা বা অজাচর পছন্দ করে তাদের জন্য আপনি না।
Namaskar

গোয়েন্দা গল্প লেখার যোগ্যতা আমার বোধহয় নেই কারণ গোয়েন্দা গল্পে যে কজনকে আমার সবথেকে বেশী ভালো লাগে তাদের কাছে আমি কেন অনেকেই কিছু না, তবুও দেখি চেষ্টা করবো।   Namaskar 
আর এটা ঠিক বলেছেন যে যারা উগ্ৰ সেক্স পছন্দ করেন তাদের জন্য আমার গল্প নয়।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
                               ট্রেলার

তাথৈএর সাথে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে র‌ওনা দেয় অভয়,  বারবার বলা সত্ত্বেও তাথৈ কিছুতেই অভয়কে ছেড়ে যেতে চায় না।
কিন্তু ওদের পিছনে সমানে ধাওয়া করে চলছে বীরেন ভট্টাচার্যের দলের লোকজন, কিছুতেই ওদের পিছু ছাড়াতে পারছে না অভয়।
তবে কি পালাতে ব্যর্থ হবে অভয়? তবে কি আবার ধরা পরে যাবে?

জানতে নজর রাখুন পরবর্তী পর্বে 

শীঘ্রই আসছে "প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ" এর পরবর্তী পর্ব।

লাস্ট আপডেটটা বড়ো দিতে চেয়েও হয়নি একটা প্রবলেমের জন্য পারিনি তবে বলেছিলাম খুব বেশি অপেক্ষা করতে হবে না ক্লাইম্যাক্স সহ তাড়াতাড়ি আপডেট আসবে কিন্তু ক্লাইম্যাক্স না হলেও এবার বড়ো আপডেট আসছে, আশা করি এবার সবার ভালোই লাগবে।
কিন্তু গল্প ভালো লাগলে রেপুটা দেবেন প্লিজ এটুকু না পেলে লিখতে মন চায় না। তবে যারা শুরু থেকে পাশে থাকছেন তাদের ধন্যবাদ।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
[+] 8 users Like Monen2000's post
Like Reply
লাইক রেপু অবশ্যই দেই। আর গোয়েন্দা থ্রিলার টাইপ লেখা শুরু করে দিন আপনার সাপোর্ট এ আছি সবসময়।
চেষ্টা করে যান দাদা অবশ্যই সফল হবেন।
[+] 1 user Likes Arpon Saha's post
Like Reply
অপেক্ষায় থাকলাম
horseride আমাকে আমার মত থাকতে দাও horseride
[+] 1 user Likes Boti babu's post
Like Reply
(28-10-2022, 01:28 AM)Arpon Saha Wrote: লাইক রেপু অবশ্যই দেই। আর গোয়েন্দা থ্রিলার টাইপ লেখা শুরু করে দিন আপনার সাপোর্ট এ আছি সবসময়।
চেষ্টা করে যান দাদা অবশ্যই সফল হবেন।

ধন্যবাদ Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
(28-10-2022, 03:15 AM)Boti babu Wrote: অপেক্ষায় থাকলাম

Namaskar Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
                           অষ্টাদশ পর্ব

কয়েকটা স্টেশন বেরিয়ে গেল, অভয় জানে পরের স্টেশনটা একটা জংশন, সেখানে ট্রেন বেশ খানিকক্ষণ দাঁড়াবে ওখানেই যা করার করতে হবে, অভয় আস্তে আস্তে তাথৈএর গলা থেকে চেনটা খুলে নিজের পকেটে রাখে তারপর অপেক্ষা করতে থাকে, কিছুক্ষণ পরে জংশনে ঢোকার একটু আগে তাথৈএর মাথাটা ধরে নিজের কাঁধ থেকে সরিয়ে সিটের পিছনে হেলান দিয়ে রেখে দিলকাজটা খুবই আস্তে আর সাবধানে করলো যাতে তাথৈ জেগে না যায় তারপর উঠে সামনে এগিয়ে গেটের কাছে এল এবং ট্রেনটা গতি কমিয়ে প্লাটফর্মে ঢুকতেই সে রানিং ট্রেন থেকে নেমে গেল,আস্তে আস্তে হেঁটে টয়লেটে ঢুকলো তারপর একটা ইউরিনালে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে চেনটা বার করে ভালো করে লকেটটাকে দেখতে শুরু করলো লকেটটা হার্ট আকৃতির, হাতের বুড়ো আঙুলের থেকে একটু ছোটো সাইজের কিন্তু মোটা, ভালো করে দেখে বুঝলো লকেটটা নীরেট নয় ওর দুটো আলাদা পার্ট একসাথে লাগানো যেন একটা ছোটো বাক্স, অভয় খোলার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না তারপর চোখের আরও কাছে এনে দেখতে শুরু করতেই একটা জিনিস দেখলো, লকেটটার পিছনে একটা ছোট্ট বোতামের মতো কিছু আছে, সেটাতে একটু জোরে চাপ দিতেই লকেটটা দুভাগে ভাগ হয়ে খুলে গেল আসলে ওটা লকেটের আকারে একটা ছোট্ট বাক্স।
অভয় দেখলো ওর সন্দেহ ঠিক লকেটের ভিতরে আধুনিক মাইক্রো সিমকার্ডের সাইজের একটা ছোট্ট ওয়্যারলেস্ ডিভাইস, অভয় ডিভাইসটা বার করে নিয়ে সেটা বুক পকেটে রেখে আবার লকেটটা বন্ধ করে চেনটা প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে নিল। টয়লেট থেকে বেরিয়ে আসতে যাবে কিন্তু বাধা পেল সামনে দরজার সামনে তিনজন লোক দাঁড়িয়ে আছে এরাই ওদের পিছনে ধাওয়া করছিল, টয়লেটে আরও দুজন ছিল ওরা সাধারণ প্যাসেঞ্জার, ওরা বেরিয়ে যেতেই লোকগুলো দরজা ছেড়ে এগিয়ে এল।
এতক্ষণ ধরে আমাদের পিছনে ধাওয়া করছো কেন? অভয় জিজ্ঞেস করলো
দাদা বলেছে ভালো ভাবে যেতে চাইলে ঠিক আছে নাহলে মেরে ফেলে দিতে। ওদের একজন বললো।
কিন্তু তোমাদের পক্ষে দুটোর একটাও সম্ভব নয়।
তাই নাকি? কথার সাথে ওদের দুজনের হাতে একটা পিস্তল চলে এল।
অভয়ের মুখে একটা ব্যাঙ্গের হাসি দেখা গেল, তিনজন এগিয়ে এল একজন অভয়ের কলার চেপে ধরতেই চোখের পলকে অভয় ওর হাতটা ধরে মুড়িয়ে ঘুরে ওর পিছনে চলে গেল তারপর ঠেলে একজনের গায়ের উপর ফেললো ফলে দুজনেই অপ্রস্তুত হয়ে গেল আর তৃতীয় জন একটু অন্যমনস্ক এই সুযোগে অভয় সোজা একটা পা ভূমি থেকে সমকোণে এবং লাথিটা মারলো সোজা লোকটার মাথায় কিছু বোঝার আগেই লোকটার পিস্তল ছিটকে পরে গেল আর লোকটা নিজেও নীচে পরে গেল এবার বাকি দুজন এগিয়ে আসতেই পিস্তলধারীর কবজি ধরে ঘুরে আবার পা তুলে অপরজনের চোয়ালে লাথি মারলো সে ছিটকে পরলো আর পিস্তলধারীর কবজিতে জোরে চাপ দিল "আঃ" করে লোকটা পিস্তল ফেলে দিল এবার হাতটা মুড়িয়ে পিছনে নিয়ে গিয়ে মাথায় পিছন দিকটা ধরে সোজা একটা ইউরিনালে ঠুকে দিল পরপর দুবার ফলে লোকটার মাথা ফেটে গলগল করে রক্ত বেরোতে থাকে তারপর লোকটাকে একটু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে একটু জায়গা করে একটু লাফিয়ে একটা লাথি কষালো তলপেটে ওক্ করে লোকটা নীচে পরে গেল আর উঠতে পারলো না, এবার তৃতীয় লোকটা যদিও সে উঠলো না অবাক এবং ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে র‌ইলো যেন বিশ্বাস করতে পারছে না যে এক্ষুনি এখানে কি হলো।
অভয় ওর কাছে এল বললো: বলেছিলাম না আমাকে মারা তোদের দ্বারা সম্ভব নয়, যাইহোক ইচ্ছা থাকলেও তোদের এখানে মারতে পারবো না কারণ এটা পাবলিক টয়লেট ওরা দুজন অজ্ঞান হয়ে গেছে তোকেও তাই করে রেখে যাবো যদি তোর জ্ঞান আগে ফেরে তো ওদের নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাস।
কথাটা বলেই লোকটার মাথার পিছন দিকে একটা মোক্ষম আঘাত করলো হাতের চাড় দিয়ে লোকটা অজ্ঞান হয়ে পরে গেল, এবার শার্টের পকেট থেকে ডিভাইসটা বার করে টয়লেটে ফেলে বাইরে বেরিয়ে এল, তবে এই সময়ের মধ্যে টয়লেটে কেউ ঢোকেনি তার মানে বাইরে কেউ আছে যারা ঢুকতে দেয়নি অত‌এব সাবধান হতে হবে। ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে এল অভয় একটা দোকানে গিয়ে একটা জলের বোতল নিল আর দুজনের খাবার জন্য স্যান্ডউইচ সকাল থেকে দুজনেরই পেটে কিছু পরেনি, বেলা অনেক হয়ে গেছে, দোকানের পাশেই দেখে একজন আমড়া মাখা বিক্রি করছে মনে পরলো তাথৈ খুব পছন্দ করে খেতে‌।
আমড়া মাখা কিনছে, এমন সময় অভয় খেয়াল করে সামনের লোকটা ওর পিছনে কিছু দেখে ভয় পায়,  হটাৎ পিছনে একটু অস্বাভাবিক কয়েকজনের গুঞ্জনের মতো কথাবার্তা কানে আসতেই চকিতে পিছনে ঘুরতেই দেখে একটা ছুরি ধরা হাত তার গলা লক্ষ্য করে এগিয়ে আসছে মুহূর্তে অভয় মাথাটা সরিয়ে আঘাতটা এড়িয়ে যায়, লোকটা প্রথমবারে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে দ্বিতীয়বার আঘাত করতে উদ্যত হয় কিন্তু অভয় এবারও আঘাতটা এড়িয়ে যায় এবং এবার লোকটার পেটে একটা লাথি মারে লোকটা ছিটকে কয়েকহাত পিছনে পরে যায়  তারপর আবার উঠে আঘাত করতে এলে অভয়লোকটার একটা পায়ের পাতার উপর পা দিয়ে প্লাটফর্মে ভূমিতে চেপে ধরে একটা জোরে ধাক্কা মারে ফলে লোকটা পিছনে হেলে যায় কিন্তু একটা পা অভয় আটকে রাখায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নীচে পরে যায় এবং একটা আর্তনাদে বোঝা যায় লোকটার পায়ের পাতার জয়েন্ট ভেঙে গেছে, এটা অভয়ের কমন টেকনিক, এটা সে প্রায়শই ব্যবহার করে এতে প্রতিদ্বন্দ্বীকে খুব সহজেই ঘায়েল করা যায় যেমন আজ করলো, এদিকে লোকটাকে পকেটমার বা চোর ভেবে প্ল্যাটফর্মের অন্য যাত্রীরা লোকটাকে ঘিরে মারতে শুরু করে, লোকটা পিস্তল বার করতে যাবে কিন্তু পারে না, খুব সম্ভবত প্লাটফর্মে লোকের ভিড়ের জন্য সে অভয়ের উপর পিস্তলের বদলে ছুরি বার করেছে কিন্তু এখন আত্মরক্ষার জন্য পিস্তল বার করে ফলে যাত্রীরা আরো ক্ষেপে গিয়ে ওকে আরো মারতে থেকে। অভয় যখন আমড়া মাখা নিয়ে দাম মেটাচ্ছে তখনই ট্রেন ছাড়ার হুইসেল দিল, চমকে উঠে অভয় তাড়াতাড়ি ছুট লাগায়।

পরপর হুইসেলের শব্দে তাথৈএর ঘুমটা ভেঙে যায়, কয়েকসেকেণ্ড সময় নেয় সে বুঝতে যে কোথায় আছে তারপর পাশে তাকিয়ে দেখে অভয় নেই অন্য লোক বসে, চমকে ওঠে তাথৈ এদিকে ওদিকে অভয়কে খুঁজতে থাকে, সে যেখানে বসে ছিল তার সামনে একটা গেট সেখানে যায় কিন্তু অভয়কে দেখতে পায় না, কামরায় এক বৃদ্ধ দম্পতি ছিল তারা জিজ্ঞেস করে "তুমি কি কাউকে খুঁজছো মা?"
হ্যাঁ, আমার পাশে আমার হাজবেন্ড ছিল।
তোমার হাজব্যান্ড?
হ্যাঁ। বলে তাথৈ অভয়ের একটা বর্ণনা দিল, এটা শুনে অপরদিকে একজন লোক বললো: এরকম একজন তো ট্রেন প্লাটফর্মে ঢুকতেই রানিং ট্রেন থেকে নেমে গেল অনেকক্ষণ হয়েছে।
বুকটা কেঁপে উঠলো তাথৈএর অভয় অনেকবার ওকে বলেছে বাড়ি ফিরে যেতে কিন্তু ও যায়নি তাই কি অভয় ওকে ছেড়ে চলে গেল, একজন বললো: আপনি ফোন করে দেখুন না।
ওর ফোন বন্ধ আছে।
তাহলে এখন কি করবেন?
তাথৈ ঠিক করলো সে ট্রেন থেকে নেমে যাবে, এদিকে ট্রেন গতি বাড়িয়েছে সে গেটের কাছে গিয়ে লাফ মারতে চাইলো কিন্তু গেটে থাকা কয়েকজন তাকে আটকে দিল "কি করছেন কি ম্যাডাম" ট্রেন প্লাটফর্ম ছেড়ে এসেছে এখন কিভাবে নামবেন?"
দেখুন আমাকে নামতে হবে, ছেড়ে দিন।
একজন মহিলা বললেন: কেমন স্বামী কে জানে?
তাথৈএর চোখ ফেটে জল আসতে চায় সে খালি এক কথা বলে যাচ্ছে: ছেড়ে দিন, নামতে দিন। কিন্তু গেটের লোক তাকে আটকে দেয়, সে ভেবে পায়না এখন কি করবে, অভয় কেন ছেড়ে গেল তাকে।
এ কি ঘুম ভেঙেই আবার হাইজাম্প মারতে ছুটেছো নাকি?
পিছনে অভয়ের পরিচিত গলার স্বর শুনে তাথৈ ঘুরে দেখে অভয় একহাতে একটা প্যাকেট আর একটা বড়ো জলের বোতল আর অপর হাতে ট্রেনের হ্যাণ্ডেল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এবার অভয় তাথৈএর কাছে এগিয়ে যায় কামরার সবাই হৈহৈ করে ওঠে "আপনি কেমন লোক মশাই, নিজের স্ত্রীকে একা রেখে নেমে গিয়েছিলেন, এদিকে উনি রানিং ট্রেন থেকে লাফ মারতে চাইছেন" ইত্যাদি ইত্যাদি।
অভয় কোনোভাবে ওদের বুঝিয়ে তাথৈএর দিকে তাকায়, তাথৈও একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে, সিটে এখন অন্য লোক বসে আছে তাই দুজনে কামরার অপরদিকে গেটের কাছে আসে একদিকে গেটে লোক থাকলেও অপরদিকে ফাঁকা।
তুমি কোথায় গিয়েছিলে? জিজ্ঞেস করে তাথৈ
এইতো জল আর খাবার আনতে। তারপর পকেট থেকে চেনটা বার করে তাথৈকে দিয়ে বলে: এই নাও এটা আমি একটু নিয়ে গিয়েছিলাম দরকার ছিল।
তাথৈ এক ঝটকায় চেনটা ফেলে দিতে চায় কিন্তু অভয় ধরে থাকায় তা হয় না তারপর একটু রাগী গলায় বলে: দরকার নেই চেন, তুমি আমাকে না ডেকে কেন গিয়েছিলে? জানো আমি কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
তাথৈ..
চোখ খুলে তোমাকে দেখতে পেলাম না, ওনারা বললো তুমি রানিং ট্রেন থেকে নেমে গেছো তাই..
তাই তুমি ভাবলে আমি তোমাকে একা ফেলে রেখে চলে গেছি আর তখনই তুমি হাইজাম্প মারতে ছুটলে তাইতো?
তাথৈ অভয়ের বুকে মুখ লুকালো বললো: আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
তাথৈ.. তুমি এটা ভাবলে কিভাবে যে আমি তোমাকে একা ছেড়ে রেখে যাবো?
তাথৈ কোনো কথা না বলে চুপ করে দুহাতে অভয়কে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুঁজে থাকে অভয় বলে চলে আমি যখন একবার বলেছি যে তোমাকে ছেড়ে যাবো না তখন তুমি আমাকে ছেড়ে না গেলে বা আমার মৃত্যু আমাকে না নিয়ে গেলে আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না।
আমি তোমাকে কখনো ছেড়ে যাবো না আর মৃত্যুও আমাদের আলাদা করতে পারবে না।
অভয় একহাতে তাথৈকে নিজের বুকে টেনে নেয়, কিছুক্ষণ পরে বলে: এই নাও খাবার এনেছি আর একটা জিনিস আছে কলেজে তুমি খেতে ভালোবাসতে এখনো বাসো কি না জানিনা, আমড়া দেখে তাথৈএর মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

নিজের অফিসে আজ তেমন কাজের চাপ নেই অমিয়র, যেটুকু আছে সেটাই ধীরে সুস্থে করতে থাকে, এমন সময় অফিসের এক কলিগ এসে বলে: অমিয় তোর সাথে একজন দেখা করতে এসেছে।
কে?
একটা মেয়ে?
মেয়ে?
দেখ তোর গার্লফ্রেন্ড বোধহয়।
তার যে কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই এটা তার থেকে ভালো আর কে জানে, সেই কোন ছোটোবেলায় একজনকে ভালো লেগেছিল, মেয়েটার ইগো অহংকার বদমেজাজী সবকিছু ভালো লাগতো, প্রপোজ‌ও করেছিল কিন্তু মেয়েটা রিফিউজ করে দেয়, তাতে কষ্ট হলেও মানিয়ে নেয়, তারপর আর কোনো মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়ায়নি, এর অবশ্য আরেকটা কারন‌ও ছিল অভয়ের পরিণতি ,অভয় খুব ভালোবাসতো তাথৈকে বিনিময়ে কষ্টই পেতে হয়েছে ছেলেটাকে, এখনো মনে আছে অভয়ের তাকে বলা শেষ কথাটা "আমি যা ভুল করেছি তুই কোনোদিন করিস না অমিয়, কোনোদিন নিজের লেভেলের থেকে উঁচু লেভেলের কাউকে ভালোবাসিস না, কোনোদিন না"।
রিসেপশনে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই দেখিয়ে দিল কে এসেছে, তাকিয়েই বাকরুদ্ধ হয়ে গেল অমিয়, বৃষ্টি এসেছে পরনে নীল রঙের ফ্লাওয়ার প্রিণ্টের তাঁতের শাড়ি সাথে ম্যাচিং হাফ স্লিভ ব্লাউজ চুলটা খোঁপা করে বাধা।
আপনি এখানে? জিজ্ঞেস করে অমিয়।
বৃষ্টি উঠে দাঁড়ায়, একটু চুপ করে থেকে উত্তর দেয় বৃষ্টি: তোমার সাথে একটু দরকার ছিল।
কি দরকার?
একটু আলাদা যাওয়া যায়?
আসুন। অমিয় বৃষ্টিকে ক্যান্টিনে নিয়ে গিয়ে কোণের দিকে একটা ফাঁকা টেবিলে বসে বললো "এবার বলুন"।
তাথৈকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, ও কোথায় যেতে পারে তুমি জানো?
আপনার বোন কোথায় গেছে সেটা আমি জানবো কিভাবে?
তোমার সাথে তো ওর কথা হতো
বেশ কিছুদিন হয়নি, তার আগে ওই আমাকে এক জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল।
কোথায়? ওখানে ও যেতে পারে কি?
যেতে পারে তবে ওখানে ওকে ঢুকতে দিত না।
কেন?
জানিনা।
তাহলে কোথায় যেতে পারে?
আপনি ফোন করছেন না কেন?
তাথৈ এখন আমার সাথে তেমন কথা বলে না, আমার ফোন ধরে না।
কেন?
বৃষ্টি চুপ করে থাকে। অমিয় বলতে থাকে: আমি সত্যিই জানিনা তাথৈ কোথায় গেছে।
তুমি একবার ওকে ফোন করো না, তোমার ফোন ধরবে। অমিয় তাথৈকে ফোন করে কয়েকবার রিং হবার পর ওপাশ থেকে তাথৈএর গলা আসে "হ্যালো"
তাথৈ আমি অমিয় বলছি।
বল।
তুমি কোথায়?
কেন?
তোমার দিদি এসেছে তোমাকে খুঁজতে নাও কথা বলো
হ্যালো তাথৈ তুই কোথায়?
আমি বাইরে আছি।
কিন্তু কোথায়? কাউকে কিছু জানাসনি সবাই চিন্তা করছে।
আমি ঠিক আছি।
কোথায় তুই সেটা তো বল।
সেটা বলা যাবে না।
মানেটা কি?
মানে বলবো না।
তাথৈ তুই আমার উপর রেগে আছিস?
কেন রেগে থাকার মতো কাজ করিসনি কি?
তাথৈ... আমি যা করেছি।
ওই বিষয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না, আমি ঠিক আছি মাকে আর জ্যেঠিমাকে বলে দিস আমি পরে ওনাদের সাথে কথা বলে নেবো, এখন রাখছি।
ফোনটা রাখার পরে বৃষ্টি কিছুক্ষণ মাথা নীচু করে বসে থাকে।
আপনার এখন বাড়ি যাওয়া উচিত। অমিয় আস্তে করে বলে।
আমি খুব খারাপ মেয়ে তাইনা? সেইজন্যই তোমরা সবাই আমাকে ঘেন্না করো।
আপনি বাড়ি যান, মিস ভট্টাচার্য।
তুমিও এখনো আমাকে ক্ষমা করোনি তাই না?
কিন্তু আপনার ক্ষমার দরকার‌ই বা কেন? তাও আমার মতো একজন সাধারণ ছেলের।
বৃষ্টি খানিকক্ষণ চুপ করে একদৃষ্টিতে অমিয়র দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর "আমি আসছি বলে উঠতে যায়", কিন্তু অমিয় কথা বলতে শুরু করে।
আপনি আমাকে রিফিউজ করেছিলেন বলে আমার কোনো ক্ষোভ নেই, আমার আপনাকে ভালো লাগতো তার মানে তো এই নয় যে আপনার‌ও আমাকে ভালো লাগবে কিন্তু আপনারা আমার বন্ধুর সাথে যেটা করেছিলেন সেটা আমি কোনোদিন‌ও ভুলবো না।
সেদিন আমি অভয়ের সাথে যা ব্যবহার করেছিলাম সেটা আমার পিসির কথায়।
কিন্তু আপনার মনেও কি অভয়ের জন্য রাগ ছিল না?
আমাকে আরেকটা সুযোগ দেবে? আমি নিজেকে শোধরাতে চাই।
আমার বন্ধু আর ফিরে আসবে না মিস্, আর আমি যতবার আপনাদের দেখি ততবার ওর কথা মনে পরে।
কিন্তু ওর মৃত্যুর ব্যাপারে আমি কিছু জানিনা, ওটা দুর্ঘটনা।
সেটা আপনার কাছে কিন্তু ওই এলাকার অনেকেই জানতো যে ওটা দুর্ঘটনা ছিল না।

কার ফোন ছিল? তাথৈ ফোন রাখতে জিজ্ঞেস করে অভয়।
অমিয়র কিন্তু কথা বললো বৃষ্টি।
অমিয় কেমন আছে?
তোমার বন্ধু তুমি আমার থেকে খোঁজ নিচ্ছো?
তোমার সাথে যোগাযোগ আছে তাই জিজ্ঞেস করছি।
আমাদের উপর রেগে আছে, বিশেষ করে বৃষ্টির উপরে।
বৃষ্টি ওকে কলেজে যা অপমান করেছিল।
তার জন্য নয়।
তবে?
বৃষ্টি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিল তাই, আচ্ছা অমিয়র সাথে তুমি দেখা করোনি?
না,
কেন? আমি যখন নিয়ে গিয়েছিলাম তখনও দেখা করোনি।
প্রথমবারে আমি সত্যিই ছিলাম না।
আর পরের বারে?
আমি ওর সাথে দেখা করলে ওর বিপদ বাড়তো, ঠিক যেমন.. অভয় কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেল।
ঠিক যেমন?  কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলে মনে হলো।
আরো একজন আছে যাকে তোমরা চেনো কিন্তু আমার সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য তাকে বিপদে পরতে হয়েছিল।
কে?
ওটা যখন পরিচয় করবে তখন নিজেই দেখে নিও।
ওরা দুইজন প্রায় চলেই এসেছে আর একটা স্টেশন পরেই নামবে, এইসময় তাথৈএর ফোন আবার বেজে উঠলো, নাম্বারটা দেখে তাথৈএর ভ্রুদুটো কুঁচকে গেল।
কে? জিজ্ঞেস করে অভয়
বাপি।
ফোনটা ধরে কথা বলো।
তাথৈ ফোনটা রিসিভ করে স্পিকার অন করে, যদিও ট্রেনের আওয়াজের জন্য খুব স্পষ্ট শোনা যায় না, তাথৈ ফোনটা অভয় আর ওর মুখের খুব কাছে ধরে "হ্যালো"।
তাথৈ? ধীরেন বাবুর গম্ভীর স্বর শোনা যায়।
বলো।
কোথায় তুমি?
বাইরে।
বাইরে কোথায়?
বলবো না।
তুমি কি ভেবেছো না বললে আমি জানতে পারবো না? তুমি এখন ট্রেনে আছো সাথে একটা ছেলে আছে।
জানোই যখন তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছো কেন?
তুমি ট্রেন থেকে নেমে সোজা বাড়িতে আসবে।
আমি যাবো না।
তাথৈ.. ধীরেন বাবু একটা ধমক দেন, তোমার সাহস অনেক বেড়ে গেছে।
এই সাহসটা আগে করলে হয়তো মাকে তোমার হাতে এত মার খেতে হতো না।
ওই ছেলেটার পাল্লায় পরে বাবার মুখে মুখে তর্ক করতে শিখেছো দেখছি।
না, তোমাদের সমস্ত অন্যায়ের কথা জানতে পেরেছি।
কি অন্যায় করেছি আমরা?
হিসাব করতে গেলে হয়তো শেষ হবে না তবে আপাতত একটাই বলছি, ষোলো বছর আগে অভয় আর ওর পরিবারের সাথে কি করেছিলে?
কিছুক্ষণ কোনো কথা আসে না তারপর ধীরেন বাবু বলেন: ওই ছেলেটা তোমার সাথেই আছে না, ফোনটা ওকে দাও।
কেন, যা বলার আমাকে বলো।
ফোনটা ওকে দাও।
বলুন মিস্টার ধীরেন ভট্টাচার্য। এতক্ষণে কথা বলে অভয়।
তুই আমার মেয়েকে আমার বিরুদ্ধে উসকাচ্ছিস তোকে আমি ছাড়বো না, কি ভেবেছিস বেঁচে যাবি?
যুদ্ধের শুরু তো আপনারা করেছিলেন, আমি তো শেষ করতে এসেছি।
তোর কি মনে হয় আমার কটা লোককে মেরে তুই বেঁচে গেছিস? তোর বাবাকে যেভাবে মেরেছিলাম আমরা, তোকেও সেইভাবেই মারবো।
এবার নয়, এবার আমার পালা।
বেশ দেখাই যাক তুই আমাদের মারিস না আমরা তোকে।
বেশ আপনি আপনার মতো চেষ্টা করুন।
বাপি.. তুমি.. তাথৈ কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু ধীরেন বাবু তাকে থামিয়ে দিয়ে নিজে বলতে শুরু করেন: শোনো তাথৈ, ওই ছেলেকে তো আমি মারবোই, কিন্তু আমি শুধু জানতে চাই তুমি ফিরে আসবে কি না?
বাপি তোমার গলায় আমি একজন ক্রিমিনালের স্বর শুনতে পারছি।
তাথৈ.. আবার ধমকে ওঠেন ধীরেন বাবু।
হ্যাঁ, আমি প্রথমে পুরো বিশ্বাস করিনি অভয়ের কথা কিন্তু এখন তোমার মুখেই শুনলাম তাই অবিশ্বাস করার প্রশ্নই ওঠে না।
তুমি যার হয়ে কথা বলছো সে আমাকে মানে তোমার বাবাকে আর জ্যেঠুমণিকে মেরে ফেলতে এসেছে।
কারণ তোমরা আগে ওর বাবাকে মেরেছো।
তুমি ওই ছেলেটাকে ছেড়ে বাড়ি ফিরবে কি না?
না, আমি অভয়কে ভালোবাসি আর ওর সাথেই থাকবো।
বেশ তবে আজ থেকে তুমি আমার জন্য মরে গেছো, আজ থেকে আমার কোনো মেয়ে নেই।
সে তো আমি কোনোদিন‌ও ছিলাম না, থাকলে আমাকে বুঝতে আমার কথা ভাবতে, তাহলে আমি যাকে ভালোবাসি তাকে আর তার পরিবারের ক্ষতি করতে না।
ফোনটা কাটার পরে তাথৈ কাঁদতে থাকে, অভয় ওকে বুকে টেনে নেয় "এখনো সময় আছে তাথৈ, আমাকে ছেড়ে তুমি ফিরে যাও, সেটাই ভালো হবে"।
যেতাম যদি আমার বাবা সৎ, ভালো মানুষ হতেন কিন্তু উনি তা নন।
তবুও উনি তোমার বাবা।
জানি।
তারপরও যাবে না?
উনি যদি নিজেকে শুধরে ফেলেন তাহলে যাবো, অবশ্যই যাবো কিন্তু আমি জানি উনি সেটা করবেন না।
আমি তোমার জীবনে ফিরে না এলেই বোধহয় ভালো হতো, অন্তত তোমার মনে তোমার বাবার জায়গাটা নষ্ট হতো না।
আমার মনে আমার বাবার জায়গা অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে যখন দিনের পর দিন আমার মাকে মার খেতে দেখেছি ,একা লুকিয়ে কাঁদতে দেখেছি।
অভয় আর কোনো কথা না বলে তাথৈকে নিজের সাথে চেপে ধরে, তাথৈ‌ও অভয়ের বুকে মুখ গুঁজে দেয়।

ট্রেন থেকে নেমে অভয় দেখে প্লাটফর্মে লোক গিজগিজ করছে, অভয় তাথৈকে সামনে রেখে নিজে পিছনে থাকে  চারিদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখে আস্তে আস্তে ভিড় ঠেলে এগোতে থাকে, কিন্তু ভিড়ের মধ্যে শত্রু চেনা কঠিন সেটা অভয় একটু পরেই বুঝতে পারলো সামনে দিয়ে অনেক লোক আসছে ট্রেন ধরবে বলে, ওদের মধ্যে কয়েকজনকে সন্দেহ হলো,ওরা কাছাকাছি আসতেই সাবধান হয়ে গেল যাতে ওরা অতর্কিতে আঘাত না হানতে পারে কিন্তু ওরা কিছু করার আগেই পিছন থেকে একজন পিঠে ছুরি মারলো, ছুরিটা গাঁথেনি আড়াআড়ি ভাবে চালিয়েছে ফলে অনেকটা কেটে গেল, ঘুরে দেখে একজনের হাতে ছোট একটা ছুরি সেটা সে আবার মারতে উদ্যত হলে অভয় ওর হাত ধরে নেয় কিন্তু পাশে আরেকজন আবার ছুরি চালায় এও শরীরে গাঁথে না কেটে যায়, এবার সামনে থেকে একজন এগিয়ে এলে অভয় ওকে এক লাথিতে ছিটকে ফেলে দেয় কিন্তু সেইসময় আরো একটা ছুরির আঘাত শরীরে পরে, এতক্ষন তাথৈ ব্যাপারটা লক্ষ্য করে "অভয়" তাথৈ আর্তনাদ করে ওঠে।
তাথৈ পালাও। বলার সঙ্গে সঙ্গে আরেকজন আঘাত করতে এলে অভয় ওর হাতটা ধরে ঘুরে গিয়ে পাশের একজনকে আরেকজনকে লাথিতে ছিটকে দেয়,তারপর যার হাত ধরেছে তাকে এক ধাক্কায় ফেলে দেয় তাথৈ তবুও দাঁড়িয়ে আছে দেখে ওর হাত ধরে দ্রুত ছুটতে থাকে কিন্তু ভিড় থাকায় বেশীদূর যেতে পারে না,ভিড়ের মধ্যে আরো একজন ছুরি হাতে এগিয়ে আসে একেও অভয় হাত ধরে তলপেটে কয়েকটা ঘুষি মেরে ফেলে দেয় এদিকে লোকজন ভয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে তখনই আরেকজন অভয়ের ডান বাহুতে ছুরি মারে কিন্তু একেও হাতটা ধরে ফেললেও ছুরির মুখটা বাহুতে গেঁথে যায় ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে।
তাথৈ ভয়ে আর্তনাদ করে ওঠে, অভয় ছুরি ধরা হাতটা ধরে গায়ের জোর প্রয়োগ করে হাতটা উপরে তুলতে থাকে এবং ছুরিটাও অভয়ের বাহু থেকে বেরিয়ে আসে এবার অভয় লোকটার পাঁজরে জোরে আঘাত করে লোকটা একটা আর্তনাদ করে নীচে পরে যায়, অভয় তাথৈকে আবার বলে: পালাও তাথৈ,
আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না।
কথা শোনো পালাও।
তাথৈ উত্তর না দিয়ে অভয়কে ধরে ওকে নিয়ে এগোতে থাকে স্টেশন থেকে বেরিয়ে বাইরে ভিড় কিছুটা কম, ওরা গতি দ্রুত করে কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শত্রুরা ঘিরে ফেলে অন্তত দশজন হবে কিন্তু এখানে ভিড় কম তাই লড়তে সুবিধা হবে অভয়ের, আরেকটা সুবিধা হলো যে কোনো কারনেই হোক এরা ছুরি ব্যবহার করছে পিস্তল নয়।
অভয় তাথৈকে নিজের পিছনে গার্ড করে নিজেকে প্রস্তুত করে নেয় শরীরের অনেক জায়গায় আঘাত লেগেছে রক্তে জামাটা অনেকটা জায়গায় লাল হয়ে গেছে, সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলে এদের মোকাবেলা করা অভয়ের কাছে কিছুই না কিন্তু এই মুহূর্তে তার সারা শরীরে একটু আগের আক্রমণের চিহ্নস্বরূপ অনেকগুলো কাটা জায়গা থেকে রক্ত পরছে তার উপর শরীরে পেইনকিলারের প্রভাব শেষ হয়ে আসছে শরীরে মার খাওয়ার ব্যাথা বাড়ছে কিন্তু তবুও লড়তে হবেই।
বাম দিক থেকে একজন এগিয়ে আসতেই অভয় একহাতে ওর কবজি ধরে অপর হাতে কনুই চেপে হাতটা লোকটার বুকের দিকে ঘুরিয়ে দেয় ফলে ছুরিটা তার নিজের বুকেই গেঁথে যায়, এবার একসাথে দুজন আসে অভয় একজনের হাতটা ধরে কবজিতে একটু মোচড় দিতেই লোকটার হাত থেকে ছুরিটা পরে যায় এবার অডয় সরে লোকটাকে নিজের গার্ড হিসেবে ব্যবহার করে তার ফলে অপরজন যে ছুরি মারতে এসেছিল তার ছুরি এই লোকটার বুকে ঢুকে যায়, কিন্তু তখনই সে ছুরিটা বার করে আবার অভয়কে আঘাত করতে যায় আগের জন নীচে পরে যায় অভয় ওকে ছেড়ে দ্রুত হাতে নীচ থেকে ছুরিটা তুলে নিয়ে লোকটার গলায় পরপর কয়েকবার গেঁথে দেয়, কিন্তু এরমধ্যেই আরো কয়েকজন এগিয়ে আসে এবং অভয়ের নিজের শরীরে পায়ে আরও কয়েকটা ছুরিকাঘাত হয়, রক্তে ভেসে যেতে থাকে অভয়ের শরীর পরমুহূর্তেই অভয় ওই লোকগুলোকেও ছুরির আঘাতে শেষ করে দেয়।
এখনো কয়েকজন আছে কিন্তু ওরা এগোতে সাহস পাচ্ছে না, এদিকে আঘাতে অভয়‌ও ঠিকমতো দাঁড়াতে পারছে না খোঁড়াতে থাকে তাথৈ এগিয়ে এসে ওকে ধরে, সাহায্য করে অভয় তাকিয়ে দেখে ওর চোখে জল, চোখেমুখে আতঙ্ক। একটু ধাতস্থ হয়ে অভয় ওদের দিকে এগিয়ে যেতেই একজন এগিয়ে এল কিন্তু অভয় আঘাতটা এড়িয়ে ঘুরে এর‌ও গলায় গেঁথে দেয় ছুরিটা, এটা দেখে বাকিরা আর এগোয় না কিন্তু অভয় এগিয়ে যেতেই ওরা পিছনে দৌড় লাগায় এই দেখে অভয় আর ওদের পিছু নেয় না ঘুরে  তাথৈএর কাছে আসে, তাথৈএর চোখেমুখে তখনও আতঙ্ক, ও দুহাতে অভয়ের গলা জড়িয়ে ধরে অভয় আস্তে আস্তে বলে: কি হয়েছে?
অভয়, তোমার অনেক রক্ত বেরোচ্ছে।
আমি ঠিক আছি।
না, তুমি এখ‌ন‌ই চলো।
কোথায়?
হাসপাতালে।
এখন সময় নেই, আমাকে বাড়িতে পৌঁছাতে হবে।
কিন্তু তুমি হাঁটতে পারছো না।
পারবো।
ঠিক আছে তাহলে আগে কাছাকাছি একটা ওষুধের দোকানে চলো, যেখানে যেখানে কেটে গেছে ওখানে ব্যান্ডেজ করতে হবে।

একটা ফাঁকা জায়গায় বসে ওষুধের দোকান থেকে আনা তুলো আর অ্যান্টিসেপটিক দিয়ে অভয়ের কাটা জায়গাগুলো পরিষ্কার করে দিতে থাকে তাথৈ, কিন্তু ওর চোখে জল।
তাথৈ, তুমি কাঁদছো? দেখলে তো আমার সাথে থাকাটা কত রিস্কের, এরপরও আমাকে ছেড়ে যাবে না?
তাথৈ কোনো কথা না বলে একটা কাটা জায়গায় একটু জোরে চাপ দেয়, অভয় "আঃ"করে ওঠে, তারপরেই হাসতে থাকে, তাথৈ এবার কাটা জায়গা গুলোতে ওষুধ লাগিয়ে তুলো দিয়ে টেপ লাগিয়ে দেয়। ওষুধ লাগানো হয়ে গেলে দুজনে বাস ধরার জন্য এগোতে যাবে কিন্তু এবার সামনে হাজির হন স্বয়ং ধীরেন বাবু আর জগা অবশ্যই একা নন, সাথে ওনাদের দলের লোক, ওনাদের দেখে দুজনেই থমকে দাঁড়িয়ে পরে।
কি ভেবেছিলি আমার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বেঁচে যাবি? আজ তোকে এখানেই কুঁপিয়ে মারবো। হুঙ্কার ছাড়েন ধীরেন বাবু।
বাপি তুমি?
দাদা পুলিশ। চাপা স্বরে একজন ধীরেন বাবুকে কথাটা বলতে তিনি দেখেন একজন পুলিশ অফিসার তাদের দিকে এগিয়ে আসছে কিন্তু ধীরেন বাবু ইশারায় চলে যেতে বললে অফিসারটি আর এগোননা চলে যান, বিষয়টা অভয়ের নজর এড়ায়না।
এবার ধীরেন বাবু অভয়ের উদ্দেশ্যে বলেন: বলেছিলাম না তোকে শেষ করবোই।
বাপি তার মানে আমি ঠিকই ভেবেছিলাম একটু আগে যারা ওকে মারতে এসেছিল ওদের তুমি পাঠিয়েছিলে।
ধীরেন বাবু কোনো উত্তর দেন না, কোমরের পিছনে থাকা পিস্তলটা বার করে আনেন, বলেন: এবার কোথায় পালাবি, তুই?
বাপি তুমি অভয়ের কোনো ক্ষতি করবে না।
তোমার সাথে আমার কোনো কথা নেই।
তাহলে আর কি চালান পিস্তল, এবার আগের বারের ভুল করবেন না। অভয় কথা বলে।
পিস্তল চালালে তো একবারেই শেষ হয়ে যাবি।
আপনি আবার সেই এক‌ই ভুল করছেন।
চিন্তা নেই এবার তোকে না মেরে এখান থেকে যাবো না ,তবে যদি তুই দাদার টাকার হদিশ দিয়ে দিস তাহলে একটা গুলি মেরেই তোকে শেষ করে দেবো।
আমি তো আগেই বলেছি সব টাকা আমি বিলিয়ে দিয়েছি।
তাহলে তো সব চুকেই গেল। বলে ধীরেন বাবঙ অভয়ের দিকে পিস্তল তাক করেন।
একটা কথা বলবো?
কি?
তাথৈ কি সত্যিই আপনার মেয়ে?
মানে? কি বলতে চাইছিস তুই?
না মানে যে বীরেন ভট্টাচার্য অতীন সান্যালের মতো লোকের সাথে আপনার মেয়ের ডিল করে আপনি এখনো তাকেই সাপোর্ট করে যাচ্ছেন তাই জিজ্ঞেস করলাম, নাকি আপনি জানতেন?
কি বলছিস তুই? কথাটা যে ধীরেন বাবু জানতেন না সেটা ওনার হাবভাব দেখেই বোঝা যায়।
ও তারমানে আপনি জানেন না।
ছোট দা কি করছেন ও আপনাকে কথায় ভোলাচ্ছে ওকে শেষ করুন। এবার জগা কথা বলে।
কিন্তু ধীরেন বাবু পিস্তল চালান না, অভয়ের উদ্দেশ্যে বলেন: তুই কিভাবে জানলি?
জানি, কিভাবে সেটা ইম্পরট্যান্ট নয় কিন্তু কথাটা সত্যি।
জগা আবার কথা বলে: দাদা ওকে শেষ করে দিন।
কিন্তু ধীরেন বাবু এবারও পিস্তল চালাচ্ছেন না দেখে জগা পিস্তল বার করে কিন্তু ধীরেন বাবু ওকে বারন করেন, তারপর অভয়ের কাছে এগিয়ে এসে বলেন: তুই যা বলছিস সেটা যে সত্যি তার প্রমাণ কি?
আছে কিন্তু এখন দেওয়া সম্ভব নয়।
কেন? তার মানে কথাটা সত্যি নয়।
বিশ্বাস করা বা না করা সেটা আপনার উপর।
অভয় কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগে জগা আবার কথা বলে: দাদা ও আপনাকে কথায় ভোলাচ্ছে, ওকে শেষ করুন, নাহলে আমি করছি। ধীরেন বাবু কিছু বলতে যাচ্ছিলেন হটাৎ পরপর তিনটে পিস্তলের আওয়াজ হয় আর ধীরেন বাবু আর্তনাদ করে উঠে পরে যেতে থাকেন কিন্তু অভয় কাছেই থাকায় তাকে ধরে ফেলে, দেখে ওনার পিঠে গুলি লেগে রক্ত বেরোচ্ছে।
বাপি.. তাথৈ চিৎকার করে কেঁদে ওঠে।
ধীরেন বাবু, অভয়‌ও চমকে ওঠে, সে দেখে গুলি চালিয়েছে সাম্য, সে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে এবার সে এগিয়ে এসে জগার পাশে দাঁড়ায়। ধীরেন বাবু মাটিতে পড়ে যান তাথৈ তার মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে কাঁদতে থাকে, ধীরেন বাবু সাম্যর দিকে তাকান।
হ্যাঁ আঙ্কেল, অতীন আমার পরিচিত ছিল তাই জানি আপনার দাদা মানে বীরেন আঙ্কেল ওর সাথে তাথৈএর ডিল করেছিলেন।
সাম্য, তোকে আমি ছাড়বো না তাথৈ উঠে সাম্যকে মারতে যেতেই অভয় হাত ধরে টেনে আটকে নেয়।
ছাড়ো আমাকে, ছাড়ো।
তোমাকে বলেছি তাথৈ আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু তুমি আমাকে রিফিউজ করেছিলে, তার শাস্তি তো পেতেই হবে তাই না?
তাথৈ অভয়ের হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে থাকে, কিন্তু অভয় হাত ছাড়ে না সাম্য আবার বলতে থাকে: তোমাকে বলেছিলাম আমি তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু তুমি আমাকে থাপ্পড় মেরেছিলে।
বেশ করেছি, এবার তোকে মেরেই ফেলবো, হাত ছাড়ো অভয় আজ ওকে আমি মেরেই ফেলবো। তাথৈ ঝংকার দিয়ে ওঠে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু পারে না।
সাম্য আবার ব্যাঙ্গ করে বলে: এই তাহলে সেই অভয়, এখনো বেঁচে আছে ও? ঠিক আছে কোনো প্রবলেম না এখানে ওকে মারবো তারপর তোমাকে তুলে নিয়ে যাবো।
কিন্তু তুমি ছোটোদাদাকে মেরেছো এটা বড়দা জানতে পারলে কিন্তু.. জগা কথাটা শেষ করতে পারে না সাম্য বলতে শুরু করে: কি করে জানবে? অভয়কে এখানেই মেরে ফেলে রেখে যাবো আর তাথৈকে আমার সাথে নিয়ে যাবো, তাহলে বলবে কে? আপনি? বলে হাসতে থাকে জগাও হাসতে থাকে।
এবার জগা কথা বলে উদ্দেশ্য ধীরেন বাবু: দাদা আপনাকে অনেকবার বললাম ওকে শেষ করে দিন শুনলেন না, সেদিন আপনি আমার মাথায় পিস্তল ধরেছিলেন তখনই ঠিক করেছিলাম আপনাকে মারবোহ কাজটা সাম্য করে দিল, আপনি আপনার দাদার কথায় কত কিছু করেছেন অথচ দেখুন তিনি আমাকে বলেছেন যাতে এই অভয়ের সাথে আপনার মেয়েকেও মেরে ফেলি কিন্তু আমার দয়ার শরীর আমি অভয়কে মেরে ওকে সাম্যর হাতে তুলে দেবো। বলে জগা অভয়ের দিকে পিস্তল তাক করতেই অভয় মুহূর্তে মাটিতে পড়ে একটা ডিগবাজি খাওয়ার ভঙ্গিতে জগার কাছে গিয়ে জগার একটা হাটুতে সজোরে একটা লাথি মারে, একটা আর্তনাদ করে জগা হাঁটুতে হাত দিয়ে কয়েক পা পিছিয়ে যায়, ওর হাত থেকে পিস্তল মাটিতে পরে যায়, চমকটা কেটে যেতেই সাম্য সহ জগার বাকি লোকগুলো কেউ পিস্তল কেউ কাট্টা জাতীয় বন্দুক বার করে।
অভয় জগার পিস্তলটা হাতে তোলে আর অপরহাতে কোমরে গোঁজা বীরেন বাবুর লোকদের থেকে আনা পিস্তলটা বার করে আনে এটা এতক্ষণ বার করেনি কিন্তু এখন উপায় নেই, দুহাতে দুটো পিস্তল নিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে, এদিকে গুলির আওয়াজে আশেপাশে যে অল্প সংখ্যক লোক ছিল তারাও পালিয়ে গেল, অভয়ের নিঁখুত টিপে জগার লোকগুলো একে একে খসে পরতে থাকে, ওরাও গুলি চালায় কিন্তু অভয় একজায়গায় দাঁড়িয়ে নেই ওদের ভাবনার থেকে অনেক দ্রুত জায়গা পরিবর্তন করছে তবুও দু তিনটে বুলেট হাত ঘেঁষে লেগে বেরিয়ে যায়, আবার রক্তে মাখামাখি হয়ে যায় ওর শরীর।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
[+] 9 users Like Monen2000's post
Like Reply
                            ঊনবিংশ পর্ব

অভয়... তাথৈ অভয়ের অবস্থা দেখে চিৎকার করে ওঠে অভয় তাকিয়ে দেখে সাম্য জোরপূর্বক তাথৈকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, অভয় কোনোমতে খুঁড়িয়ে ওকে বাঁচাতে ছোটে ,ওকে আসতে দেখে সাম্য পিস্তল চালায় কিন্তু তাথৈ ওর হাতে আঘাত করায় লক্ষ্য মিস করে, সাম্য মিস করলেও অভয় করে না সাম্য মাটিতে লুটিয়ে পরে।
তাথৈ আর অভয় মাটিতে রক্তাক্ত অবস্থায় পরে থাকা ধীরেন বাবুর কাছে যায়, তার এখন মৃতপ্রায়।
বাপি.. তাথৈ আবার ধীরেন বাবুর কাছে বসে কাঁদতে কাঁদতে ডাকে। ধীরেন বাবু চোখ খোলেন, তার ঠোঁট নড়ছে যেন কিছু বলার চেষ্টা করছেন আস্তে আস্তে আওয়াজ বেরোয়: অ...ভ..য়।
অভয়ের পুরো শরীর রক্তে মাখামাখি আগের কাটা জায়গা থেকে আবার রক্তপাত শুরু হয়েছে তার উপরে নতুন আঘাত খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আস্তে আস্তে এসে ধীরেন বাবুর কাছে আসে ওনাকে ধরে তোলার চেষ্টা করে বলে: একটু সহ্য করে থাকুন আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি, তাথৈ ওনাকে ধরে তুলতে চেষ্টা করো।
না.. অনেক কষ্টে কথাটা বলেন ধীরেন বাবু, একটু ঢোঁক গিলে আবার বলতে থাকেন: অন্তত.. আমার মেয়েকে বাপির খুনির সাথে থাকতে হবে না।
বাপি...
অ...ভ...য় আমার অপরাধের শাস্তি আমার মেয়েটাকে দিও না।
ধীরেন বাবু এসব কথা পরে হবে, আপাতত হাসপাতালে চলুন।
আমার সময় শেষ, আমার মেয়েটাকে দেখো। আর কথা বলতে পারলেন না ধীরেন বাবু মৃত্যুর কোলে ঢলে পরলেন, তাথৈ চিৎকার করে নিজের বাবার মৃতদেহের উপরে কান্নায় ভেঙে পরলো।
অভয় তাথৈএর পাশে গিয়ে ওকে সান্ত্বনা দিতে থাকে, এমন সময় কয়েকটা পায়ের আওয়াজ পেয়ে সামনে তাকাতেই অভয় কপালে একটা জোরে আঘাত পেয়ে ছিটকে পরে হাত থেকে পিস্তলটা পরে যায়,  দেখে জগা দাঁড়িয়ে আছে আর আঘাতটা ওই করেছে পিস্তলের গ্ৰিপের তলা দিয়ে, কপালে কেটে রক্ত বেরোতে থাকে, এমনিতেই অভয় আগের রক্তপাতে কিছুটা দুর্বল তারপরেও তাড়াতাড়ি উঠতে যায় কিন্তু আবার থুতনিতে জগার ঘুষি খেয়ে ছিটকে পরে।
অভয়.. তাথৈ তাড়াতাড়ি ওর কাছে আসে, দুজনে দেখে জগার পিছনে আরো কয়েকজন পিস্তল তাক করে দাঁড়িয়ে আছে, জগা কথা বলে: তুই দাদাকে মারতে এসেছিলি এবার কি করবি? সেদিন বাণিজ্যনগরীতে আমাদের অপমান করেছিলি আজ তোকে মেরে প্রতিশোধ নেবো, দাদার আদেশ তোকে আর ওই তাথৈকে দুজনকেই শেষ করতে। বলে পিস্তল উঁচিয়ে ট্রিগার টিপতে যাবে কিন্তু তার আগেই অভয় হাতের কাছে একটা ছোট ইটের টুকরো পেয়ে সেটা জগার কপালে ছুঁড়ে মারে জগা আবার কপালে হাত দিয়ে পিছনে সরে যায় আর অভয় জগার হাতে এক লাথি মারে ফলে জগার পিস্তল ছিটকে পরে তখনই একটু দূর থেকে পরপর কয়েকটা পিস্তলের আওয়াজ হতে থাকে এবং জগার পিছনে যারা ছিল তারা মাটিতে লুটিয়ে পরতে থাকে।
কয়েকজন লোক পিস্তল হাতে ওদের ঘিরে ফেলে জগাও আতঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে এরা যে ওর নিজের দলের লোক নয় সেটা আর বলে দিতে হয় না। অভয়‌ও তাকিয়ে আছে, তাথৈ ওর কাছে ঘেঁষে অভয়কে শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
রয়। অতি পরিচিত কণ্ঠ শুনে চমকে ওঠে অভয়, আমিরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুখে হাসি ফোটে, আস্তে আস্তে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগিয়ে যায় আমির‌ও এগিয়ে আসে যেন কত বছর পর দুই বন্ধুর দেখা হলো এমনভাবে দুজনে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে।
তুমি ঠিক আছো? ব্যাগ্ৰভাবে জিজ্ঞেস করে অভয়।
তুমি কেমন আছো, কোথায় ছিলে এতদিন, তোমার ফোন বন্ধ কেন? এক নিশ্বাসে প্রশ্ন করতে থাকে আমির।
অভয় উত্তর দিতে যাবে এমন সময় একটা ধস্তাধস্তির আওয়াজ শুনে তাকিয়ে দেখে জগাকে চেপে ধরে আছে দুজন আর জগা নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছে, আমির হুকুম দেয়: বশির দেখছো কি ওকে এখনি শেষ করো 
দাঁড়াও। অভয়ের দৃঢ় কণ্ঠ, হাত ছাড়ো ওর।
দুজন হাত ছেড়ে দেয়, জগা অগ্নিদৃষ্টিতে অভয়কে যেন জ্বালিয়ে দিতে চায়, অভয় বলে: কি বলছিলি আমাকে মারবি তারপর তাথৈকে মারবি, যা ওর গায়ে হাত দিয়ে দেখা যদি ক্ষমতা থাকে ওকে টাচ করে দেখা। বলে জগার চোয়ালে এক ঘুষি মারে জগা কয়েক পা পিছিয়ে যায় কিন্তু এগিয়ে এসে এবার অভয়কে এক ঘুষি মারে, সঙ্গে সঙ্গে অভয়ের দলের লোকেরা পিস্তল উঁচু করে কিন্তু অভয় ওদের থামায়, তারপর আবার জগা মারতে এলে ওর হাতটা ধরে মোচড়িয়ে নিজে জগার পিছনে গিয়ে কোমরে এক লাথি মারে জগা হুমড়ি খেয়ে নীচে পরে, অভয়‌ও খোঁড়াতে থাকে, শরীরে আঘাত থেকে রক্তপাত চলছে, এবার আমিরের দিকে  হাত বাড়ায় সে, আমির বোঝে কি চাইছে, সে নিজের পিস্তলটা এগিয়ে দেয়, পরপর পিস্তলের  কয়েকটা কানফাটানো আওয়াজের সাথেই জগার দেহটা নিথর হয়ে যায়।
দুর্বল শরীরে আর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না কিন্তু পরে যাওয়ার আগেই আমির এসে ধরে নেয়, শুনতে পায় অভয় বলছে: আমির যে করেই হোক সরমা দেবী মানে তাথৈএর মা কে ভট্টাচার্য বাড়ি থেকে বার করে আনতে হবে।
হয়ে যাবে, চিন্তা কোরো না।
তারপর অভয় আস্তে আস্তে তাথৈএর কাছে যায় ও তখন আবি নিজের বাবার মৃতদেহের কাছে বসে কাঁদছে, অভয় ওর পাশে বসে কাঁধে একটা হাত রাখে, তাথৈ সঙ্গে সঙ্গে অভয়কে জড়িয়ে ধরে অভয়ের কাঁধে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙে পরে।

শ্মশানে যে ইলেকট্রিক চুল্লিতে ধীরেন বাবুর দেহ জ্বলছে তার সামনে তাথৈ আর সরমা দেবী বুকফাটা বিলাপ করছেন, তাথৈএর ফোন থেকে ওনাকে ডেকে বাড়ির বাইরে এনে এখানে আনতে অবশ্য কোনো অসুবিধা হয়নি, এখানে এসে মেয়েকে দেখে আর তআর সাথে স্বামীর মৃতদেহ দেখেই ভেঙে পড়েন তিনি, যতই স্বামী বেঁচে থাকতে মারধর করুক স্বামী তো, এতগুলো বছর একসাথে সংসার করেছেন, মা মেয়ের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে অভয় ,কপালে কাটা জায়গায় ব্যান্ডেজ লাগানো, গায়ের জামাটা খুললে আরো অনেক কেটে যাওয়ার চিহ্ন পাওয়া যাবে, সে গম্ভীর মুখে থাকলেও তার চোখেমুখে কষ্টের ছাপ স্পষ্ট, এই কষ্ট তাথৈএর জন্য তাকে কাঁদতে দেখার কষ্ট যদিও সে নীজেও ধীরেন ভট্টাচার্যকে মারতে চেয়েছিল হয়তো মারতো‌ও কিন্তু এখন তাথৈকে ওর বাবার জন্য কাঁদতে দেখে ওর সত্যিই ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ধীরেন বাবুর চিতা ভস্ম নদীতে বিসর্জন দেওয়ার সময় অভয় তাথৈএর সাথে যায়, বিসর্জন দেওয়ার পরে অভয় তাথৈকে বুকে টেনে নেয়, তাথৈও অভয়ের বুকে নিজের মুখ লুকিয়ে কেঁদে ভাসাতে থাকে।
রয়ের বাড়িতে বাগানের কাজ করছিল বিদিশা, সেই কখন আমির বেরিয়ে গেছে কোথায় গেছে কেন গেছে কিছু বলে যায়নি, কখন ফিরবে সেটাও না, এদিকে অমৃতাদেবী তাকে প্রশ্নে জর্জরিত করতে থাকেন প্রথমে রয়ের আর তারপর আমিরের ওরা কোথায় গেছে, কি করছে কখন ফিরবে ইত্যাদি, বলাবাহুল্য কোনোটার উত্তর‌ই বিদিশার কাছে নেই, ভাসা ভাসা উত্তর দিয়ে বাইরে বাগানে বেরিয়ে আসে সে।
বাগানে একটা ফুলগাছে জল দিচ্ছিল বিদিশা তার এখন সত্যিই চিন্তা হচ্ছে রয়ের জন্য ছেলেটা কোথায় গেল? যতই সে আমিরকে সান্ত্বনা দিক যে ওর কিছু হয়নি কিন্তু ওর নিজের মনেও ভয় বাড়তে থাকে বীরেন ভট্টাচার্য যে ধরনের লোক তাতে নিজের শত্রুকে যদি হাতে পান তাহলে ছেড়ে দেবেন না এটা হলফ করে বলা যায়। তার জন্য কত কিছু করেছে রয় তাকে রকির কবল থেকে উদ্ধার করেছে অতীনের হাতে মরা থেকে বাঁচিয়ে এনেছে, একটা আশ্রয় দিয়েছে সব থেকে বড়ো কথা নতুন জীবন শুরু করার রাস্তা ও কারণ দিয়েছে আর আজ সেই নিঁখোজ।
আনমনে এইসব‌ই চিন্তা করছিল বিদিশা, মাঝে কয়েকবার আমিরকে ফোন করেছিল কিন্তু আমির ধরেনি এতে চিন্তা ও ভয় দুটোই বেড়ে গেছে। হটাৎ একটি পরিচিত কণ্ঠে পরিচিত ডাক শুনে চমকে ওঠে বিদিশা
হ্যালো বিউটিফুল। বিদিশা তাকিয়ে দেখে রয় দাঁড়িয়ে আছে তার মুখে হাসি থাকলেও সেটা যেন হতাশার, নিজের কষ্টকে লুকোনোর। "রয়" বলে হাতের জলের ক্যানটাকে নীচে রেখে এক ছুটে এসে অভয়ের গলা জড়িয়ে ধরে "কোথায় ছিলে তুমি, তোমার মাথায় চোট লাগলো কিভাবে?"
বলছি, আগে বলো তুমি কেমন আছো?
আমি ঠিক আছি কিন্তু.. সব বলবো আগে মায়ের সাথে দেখা করে আসি।
বৌদি.. তাথৈ যে এখানে বিদিশাকে দেখে অবাক হয়েছে সেটা বোঝাই যায় শুধু তাথৈ নয় সরমা দেবীও বিদিশাকে দেখে অবাক হয়েছেন তেমনি বিদিশাও ওদের দেখে অবাক হয়েছে, সে অভয়ের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।
তোমাকে সব বলবো, আর তাথৈ তোমাকে বলেছিলাম না আমার সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য তোমার পরিচিত একজনকে বিপদে পরতে হয়েছিল।
কিন্তু সেটা যে বৌদি সেটা বলোনি তুমি।
হুমম তা বলিনি।
রয়, এই তাহলে তোমার সেই নিজস্ব কথা যেটা তুমি কাউকে বলোনি?

সেটা বলতে পারো।
অভয়... বাইরে কথাবার্তার আওয়াজ শুনে অমৃতাদেবী এবং বিন্দু মাসি বেরিয়ে এসেছেন, অভয় গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে।
কোথায় ছিলি তুই, ওরা বলছিল তুই মিটিংয়ে গেছিস কিন্তু তোর ফোন কেন বন্ধ আর তোর কপালে ব্যান্ডেজ কেন? অভয়ের গায়ে নতুন জামা তাই তিনি শরীরের চোটগুলো দেখতে পেলেন না।
মা... মা আমি ঠিক আছি, আমার ফোনে চার্জ শেষ এবার সেদিন তাড়াহুড়োতে বেরিয়ে গিয়েছিলাম তাই চার্জার নিতে ভুলে গেছি।
কিন্তু তুই অন্য কারো ফোন থেকে আমার সাথে কথা বলিসনি কেন?
সেটা হয়নি মিটিংয়ের পরে খুব ক্লান্ত ছিলাম আর তাছাড়া নেট‌ওয়ার্কের প্রবলেম করছিল।
কিন্তু বাবু তোর কপালে কি হয়েছে? কথাটা বললেন বিন্দু মাসি।
অভয় এবার মাকে ছেড়ে বিন্দুমাসিকে জড়িয়ে ধরে বলে: ও কিছু না একটু ছোট্ট চোট লেগেছে।
বাবু.. অমৃতাদেবী ডাকেন কিন্তু তার দৃষ্টি তাথৈ আর সরমাদেবীর দিকে।
সরমা দেবী এগিয়ে আসেন তারপর দু হাত জোড় করে বলেন: একসময় আমরা পরস্পরের খুব ভালো বান্ধবী ছিলাম, কিন্তু আমার ভাসুর আর স্বামী তোমাদের সাথে যা করেছে সেটার ক্ষমা হয়না জানি কিন্তু তবুও আমি ক্ষমা চাইছি।
কিন্তু তোমার গায়ে সাদা থান কেন? আর তোমার সিঁথি খালি কেন?
কারণ আমার স্বামী তার পাপের সাজা পেয়েছেন, তিনি আর বেঁচে নেই।
সরমা দেবীকে এভাবে দেখে এই প্রশ্নগুলো বিদিশার মনেও জেগেছিল এখন উত্তর শুনে সে আমিরের দিকে তাকায়, আমির ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালে সে তাথৈএর কাছে গিয়ে তাকে সান্ত্বনার ভঙ্গিতে কাঁধে হাত দেয়, তাথৈ বিদিশাকে জড়িয়ে ধরে।
তোমার স্বামী যখন সাজা পেয়েছেন তখন তো আর কিছু বলার নেই আমার, এসো তোমরা ভিতরে এসো।
আমার আরেকটা অনুরোধ আছে, যদি রাখো।
কি বলো?
আমার মেয়েটা তোমার ছেলেকে খুব ভালোবাসে ওকে যদি তুমি... নিজের ছেলের ব‌উ করো।
অমৃতাদেবী তাথৈএর কাছে আসেন, তাথৈও দুহাত জোড় করে বলে : আমার বাবার জন্য আমি..
তোমার বাবা যা করেছেন সেটা তার সাথেই চুকে গেছে, কাজেই তার জন্য তোমাকে ভাবতে হবে না।
তুমি কি রাজী ওকে..আবার প্রশ্ন করেন সরমা দেবী।
শুধু আমি না অভয়ের বাবাও রাজী ছিলেন ওকে ঘরে আনার জন্য, পরিস্থিতির জন্য কাজটা দেরী করতে দেরী হয়েছে আর কিছু না। তাথৈ প্রণাম করতে যেতেই অমৃতাদেবী তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।
ওনারা ভিতরে চলে যাওয়ার পরে আমির অভয়কে জিজ্ঞেস করে: কি হয়েছিল বলোতো?
অভয় সব কথা খুলে বলে, আমির‌ও সব বলে এটাও বলে বশির‌ই ওকে বাঁচিয়েছে।
আমাকে কি করে খুঁজে পেলে?
তোমার গাড়িটা ওভারব্রিজ থেকে নীচে ফেলে দেয় ওরা ফলে আগুন লেগে যায় বা লাগিয়ে দেয় কিন্তু ওতে তোমাকে না পেয়েও আমি ভেঙে পড়লেও বিদিশা মানতে রাজী হয় না ও বারবার বলতে থাকে তুমি বেঁচে আছো, তাই তোমার খোঁজ চালাতে থাকি।
তারপর?
স্টেশনে বাথরুমে কয়েকজনের অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়ার খবর পাই তখনই ধারণা হয় ওটা হয়তো তোমারই কাজ আর তুমি হয়তো ফিরছো তার পরের সব স্টেশনে লোক থাকে যে কোনো অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই জানাতে।
বুঝলাম, তারপর?
তারপর একজন বলে একটা স্টেশনে একজনের উপর দশজনের মতো অ্যাটাক করেছে কিন্তু পেরে উঠছে না তখন আর বুঝতে অসুবিধা হয় না যে ওটা তুমি কারণ একা দশজনের সাথে লড়ার মতো খুব কম লোক‌ই আছে, আর তোমাকে লড়তে তো আমি নিজের চোখে অনেকবার দেখেছি তখনই আমি বেরিয়ে পড়ি আর বশিরকেও ডেকে নিই।
ধন্যবাদ, তোমরা না গেলে হয়তো আমার আর তাথৈএর লাশটা ধীরেন বাবুর পাশে পরে থাকতো।
এবার কি করবে? আমির জিজ্ঞেস করে।
বীরেন ভট্টাচার্যকে শেষ করবো আবার কি।
বস উনি এবার‌ও ভোটে দাঁড়াচ্ছেন, জিতলে সিএম হয়ে যাবেন। বশির জানায় অভয়কে।
কিন্তু উনি জিতবেন না, জেতা তো দূরে থাক ওনাকে ভোটে দাঁড়াতেই দেবো না, তবে তার আগে আরো একটা কাজ করতে হবে।
কি বস?
মাহমুদ আর উসমানকে খুঁজে বার করতে হবে, আমি মাহমুদকে বলেছিলাম বীরেন ভট্টাচার্যের আগে ওদের শেষ করবো, তুমি পারবে বশির ওদের খুঁজে বার করতে?
ওদের খোঁজ পেয়ে যাবেন।
গুড।
বশির চলে যাচ্ছিল, অভয় ডাকলো: বশির শোনো।
হ্যাঁ বস বলুন।
আমিরকে বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ। বলে বশিরকে জড়িয়ে ধরে অভয়, এতে বশির যেন বিষ্ময়ে হতবাক এবং অভিভূত হয়ে যায়।

বীরেন বাবু আপনি বরং এখন কিছুদিন পরিবারের দিকে নজর দিন, এবার নাহয় ইলেকশনে নাই দাঁড়ালেন। কথাটা শুনেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন বীরেন ভট্টাচার্য, নিজের চেয়ার থেকে উঠে এসে সামনে বসা লোকটার কলার ধরে চেয়ার থেকে তুলে বললেন: এই চ্যাটার্জি বীরেন ভট্টাচার্য কি করবে আর না করবে সে বিষয়ে আপনাকে জ্ঞান দিতে হবে না, বীরেন ভট্টাচার্য সেটাই করে যেটা সে নিজে ঠিক করে।
এই চ্যাটার্জি হলেন বীরেন ভট্টাচার্যের রাজনৈতিক দলের আরেকজন নেতা, বয়স আন্দাজ ৫৫ কি ৫৬ হবে, মাথায় ইতিমধ্যে টাক পরে গেছে, গায়ের রঙ শ্যামলা, গায়ে সাদা পাঞ্জাবি আর পাজামা, হাতের আঙুলে একাধিক আংটি। এবার ইলেকশনে বীরেন বাবু জিতলে তিনি সি‌এম হবেন তিনি নিশ্চিত‌ও ছিলেন যে তিনিই জিতবেন কিন্তু বর্তমানে এআরসি তার কবল থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় তার মনে ভয় ঢুকে গেছে তার উপরে তার ডানহাত স্বরূপ ভাই ধীরেন বাবু আর বাম হাত স্বরূপ বিশ্বস্ত অনুচর জগা মারা যাওয়ায় পুরোপুরি একা হয়ে গেছেন, এই অবস্থায় যেকেউ হলে ইলেকশনে দাঁড়ানোর আগে ভালো করে ভেবে নিত, কিন্তু তিনি বীরেন ভট্টাচার্য ভাঙবেন তবু মচকাবেন না, ক্ষমতা অর্জনের সুযোগ থাকলে তিনি সেটা কিছুতেই ছাড়বেন না, এদিকে যদি বীরেন বাবু ইলেকশন থেকে সরে দাঁড়ান তাহলে সিএম সবার চান্স সবথেকে বেশী এই চ্যাটার্জি বাবুর তাই তিনি সাহস করে কথাটা বলেই ফেললেন এতে যে বীরেন বাবু এতটা ক্ষেপে যাবেন সেটা তিনি আন্দাজ করতে পারেননি।
মিনমিন করে তিনি বলেন: বীরেন বাবু আপনি রেগে যাচ্ছেন কেন? আমি তো আপনার জন্যই বলছিলাম আপনার ভাই আর জগা একসাথে মারা গেলেন এখন আপনার মনমেজাজ..
আমার মন মেজাজ ঠিক আছে তার চিন্তা আপনাকে করতে হবে না, আর এটা ভাববেন না যে আমি কিছু বুঝিনা, আপনি কেন আমাকে সরে যেতে বলছেন খুব ভালো করে জানি।
চ্যাটার্জী ভয়ে ঢোঁক গিললেন, কিন্তু কোনো কথা বলতে পারলেন না।
বীরেন বাবু বলে চলেন: আমি ইলেকশনে দাঁড়াবো, জিতবো এবং সিএম এর গদিতে বসবো, দেখি কে আমাকে আটকায়?
কি...কিন্তু দলের অনেকেই আপনার বিরুদ্ধে, তারা চায়না যে এবার আপনি ভোটে দাঁড়ান।
যারা চায়না তাদের সব কটাকে নিয়ে আমার সাথে মিটিং ফিক্স করুন, তারপর আমি দেখছি, বুঝেছেন?
হ্যাঁ, আমি ব্যবস্থা করছি, কিন্তু দলে কানাঘুষো চলছে এআরসি আপনার বিরুদ্ধে আছে আর এআরসির ক্ষমতা কারো অজানা নেই তাই আগে ওর ব্যবস্থা করুন। চ্যাটার্জি বাবু উঠে বেরিয়ে গেলেন।
মামা, চ্যাটার্জি কথাটা ভুল বলেনি, এআরসির কথাটা ভুললে চলবে না কিন্তু? এবার রকি মুখ খোলে।
ভুলিনি রকি, এবার একটা এস্পার ওস্পার করতেই হবে কিন্তু আবার ওকে বস্তির বাইরে আনবো কিভাবে?
আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে।
কি প্ল্যান?
তোমার মনে আছে যখন ও আমাদের হাতে বন্দী ছিল তখন মাহমুদকে থ্রেট করেছিল যে পালাতে পারলে ওদের দুই ভাইকে আগে শেষ করবে, আমি শিওর এখন ও ওদের দুইজনকে খুঁজছে।
আমি বুঝেছি তোর কথা, ভালো আইডিয়া কিন্তু ও কি টোঁপটা গিলবে?
গিলবে, একবার ও বাইরে আসুক আর ফিরতে পারবে না।
কিন্তু যদি ও না আসে?
ও না এলে ওর পোষা কুকুরটা তো আসবে, ওকেই ধরবো কান টানলেই মাথা আসবে।
অতটা সোজা নয়, আগে একাই আমাদের চোখে ধূলো দিয়ে পালিয়েছে আর এখন তো ওর সাথে ওর পুরো দল থাকবে।
এছাড়া আর কোনো উপায় আছে তোমার কাছে?
বীরেন বাবুকে চুপ করে থাকতে দেখে রকি আবার বলে: একটু রিস্ক তো নিতেই হবে মামা আর তাছাড়া তুমিই তো বললে এবার একটা এস্পার ওস্পার করতেই হবে।
ঠিক আছে, তবে খুব সাবধানে এগোবি ও কিন্তু খুব ডেঞ্জারাস এক কাজ কর দলের সবাইকে নিয়ে যা।
দরকার নেই মামা।
যা বলছি শোন।
না মামা এতে ওর সন্দেহ হবে, আমি বেছে বেছে লোক নিয়ে নেবো।
শুধু একটাই কাজ বাকি যেভাবেই হোক এআরসির কাছে উসমান আর মাহমুদের লুকোনোর জায়গার হদিশ পৌঁছে দিতে হবে।
হয়ে যাবে, ও নিয়ে চিন্তা করিস না,তবে তোকে আরেকটা কাজ করতে হবে।
কি?
চ্যাটার্জি তো মিটিং ফিক্স করবে তারপর আমার সামনে সবাই রাজী হলেও পরে পিছনে ছুরি মারার সুযোগ খুঁজবে।
তাহলে কি করতে হবে?
ওদের সবার উপরে ২৪ ঘন্টা নজর রাখার ব্যবস্থা কর।
কিন্তু কেন?
যাতে এআরসি বা অন্য কেউ ওদের ভয় বা লোভ দেখিয়ে আবার আমার বিরুদ্ধে না নিয়ে যেতে পারে।
চ্যাটার্জীকেও?
হ্যাঁ।
ঠিক আছে আমি দেখছি।
আরেকটা কাজ বোধহয় তুই ভুলে যাচ্ছিস
কি মামা?
বিদিশা, ওর কোনো খোঁজ পেলি?
না, তবে আমি নিশ্চিত সেদিন অতীনের হাত থেকে এআরসি‌ই ওকে বাঁচিয়ে নিয়ে গেছে।
ওকে কোথায় রেখেছে খুঁজে বার করে শেষ করে দে।
ওই বস্তিতে নিজের বাড়িতেই ওকে রেখেছে আমি নিশ্চিত আগে এআরসিকে খতম করি তারপর বস্তিতে ঢুকে বিদিশাকে পুঁতে রেখে আসবো।

নিজের রুমে বিছানায় শুয়ে বুকের উপর ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছিল অভয় হটাৎ একটা পায়ের আওয়াজ পেয়ে দেখে তাথৈ এসেছে চা নিয়ে।
আসো, 
এই নাও তোমার চা।
তুমি নিজে এলে না তোমাকে কেউ পাঠালো?
কেন আমি নিজে আসতে পারি না?
অবশ্যই পারো। অভয় তাথৈএর হাত থেকে পেয়ালা নিয়ে সেটা পাশে রেখে তাথৈএর হাত ধরে নিজের পাশে বসালো।
কিছু বলবে? তাথৈ জিজ্ঞেস করে, ওর মুখ শুকনো শুকনো, চোখের নীচে জলের দাগ, নিশ্চয়ই কাঁদছিল।
অভয় কিছু বলছে না দেখে তাথৈ আবার জিজ্ঞেস করে: কিছু বলবে?
কেন, না বললে আমার পাশে বসবে না?
না না সেটা কেন কিন্তু বাড়িতে বড়োরা আছে।
সেইজন্য? নাকি আমার উপর রেগে আছো।
তোমার উপর রেগে থাকবো কেন?
তোমার বাপির জন্য? 
আসলে মুখে যতই বলি যাই বলি বাপি তো।
আমার জন্যই আজ তোমাকে এত কষ্ট পেতে হচ্ছে, সেদিন যদি আমার বাবার পরিবর্তে আমি মারা যেতাম তাহলে হয়তো..
অভয়.. তাথৈ কথাটা শেষ করতে দেয় না অভয়ের মুখ চেপে ধরে। তোমাকে হারিয়েও যে কষ্ট পেতাম না এটা কি করে ভাবলে? তোমাকে হারালে হয়তো আমিও মরে যেতাম। তাথৈ অভয়ের বুকে মাথা রাখলো অভয় আলতো করে তাথৈএর মাথায় হাত বোলাতে থাকে।
আর কখনো এরকম বলবে না, বাবাকে হারিয়েছি এখন তোমাকে হারাতে পারবো না। তাথৈ প্রায় কেঁদে ফেলে কিন্তু নিজেকে সামলে নেয়।
তাথৈ, চা দিতে গিয়ে ওখানেই বসে গেলি, এদিকে আয় মা। সরমা দেবীর ডাকে দুজনেই চমকে ওঠে।
আসছি মা‌। তাথৈ উঠে যেতে চায় কিন্তু অভয় আবার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে। দুজনেই শোনে বিন্দুমাসির গলা: আহা এখানে আবার ওর কি কাজ, ওদের কথা বলতে দাও না।
কি করছো, মা চলে আসবে, ছাড়ো। তাথৈ হাত ছাড়িয়ে চলে যায়।
একটু পরে আমির ঘরে ঢোকে, অভয়ের জিজ্ঞাসু দৃষ্টির উত্তরে বলে: খবর আছে একটা।
সেটা তো বুঝতেই পারছি, নাহলে আর ওনাকে ছেড়ে আমার কাছে কেন?
আমির প্রথমে হতভম্ব আর তারপর বুঝতে পেরে লজ্জায় ওর দুটো কান লাল হয়ে যায় বলে: না সেরকম কিছু নয়।
দেখো ভায়া, আমাকে শেখাতে এসো না এসব আমার জানা আছে তবুও তোমার ভাগ্য ভালো।
আমির চুপ করে থাকে মুখে লাজুক হাসি নিয়ে, অভয় বলে চলে: আমি সত্যিই খুব খুশি তোমাদের জন্য, বিদিশা অনেক কিছু হারিয়েছে এবার হয়তো ওর পাওয়ার সময় এসেছে।
আমি কোনোদিন ভাবিনি এরকম হবে, কিভাবে যেন হয়ে গেল।
ওটা হয়েই যায়, প্ল্যান করে ভালোবাসা হয় না।
তোমার আর তাথৈএর কিভাবে হয়েছিল?
সে আরেক কেস, বললাম না তোমার ভাগ্য ভালো তাথৈএর মতো মেয়ের পাল্লায় পরলে আর দেখতে হতো না।
আমি এই ঠিক আছি।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস তোমরা সুখী হবে।
আমি পুরো চেষ্টা করবো ওকে সুখী রাখার।
আচ্ছা এবার বলো কি খবর এনেছো?
বীরেন ভট্টাচার্য ভোটে দাঁড়াচ্ছে কিন্তু পার্টির অনেকেই চায়না তাই..
তাই উনি কি করেছেন? ওদের হুমকি দিয়েছেন?
একটা মিটিং ডেকেছিলেন সেখানে সেটাই করেছেন নিশ্চয়ই।
খুব ভালো এটাই চাইছিলাম, এতে আমাদের সুবিধাই হবে।
ওনাদের মেরে ফেললে কি সুবিধা হবে?
মারবেন না।
তুমি শিওর?
মেরে ফেললে প্রবলেম বাড়বে তাই এখনই মারবেন না কিন্তু আমি নিশ্চিত ওদের সবার উপর নজর রাখা হবে।
তাহলে কি হবে এবার?
বীরেন ভট্টাচার্যের দলে ওনার পরেই যার জায়গা তার নাম যেন কি.. চ্যাটার্জি বলে কেউ তাইনা?
হ্যাঁ, বীরেন ভট্টাচার্যের পরেই ওনার জায়গা, যদি কোনো কারণবশত বীরেন বাবু সরে যান তাহলে উনি‌ই নেক্সট দাবীদার।
উনিও মিটিংয়ে ছিলেন নিশ্চয়ই?
হ্যাঁ।
একবার চ্যাটার্জীর সাথে কথা বলতে হবে, দরকার আছে।
তুমি নিজে যাবে?
উঁহু, ফোনেই কথা বলবো।
উনি শুনবেন?
শুনবেন, চ্যাটার্জী কোথায় আছে খোঁজ নাও।

নিজের একাধিক ফ্ল্যাটের একটা ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে একাকী বসে ছিলেন চ্যাটার্জী বাবু, মাঝে মাঝে মন খারাপ হলে একাকী থাকার জন্য এখানে আসেন তিনি আজ‌ও তাই এসেছেন আর বীরেন বাবু তাকে একপ্রকার হুমকি দিয়েছেন তিনি ভালো করেই জানেন বীরেন ভট্টাচার্য কেমন লোক, মানুষ খুন করা ওর কাছে জলভাত।
কত আশা করেছিলেন যে ভাইয়ের মৃত্যুর পরে বীরেন বাবু আর ভোটে দাঁড়াবেন না এবং তিনি হবেন পরবর্তী সিএম অথচ এখন...  বীরেন বাবুর জয় ঠেকায় কে? কেন যে এআরসি ওকে মারছে না কে জানে?
সামনে টেবিলে রাখা হুইস্কির বোতল থেকে কিছুটা গ্লাসে ঢেলে এক চুমুক দিলেন চ্যাটার্জী বাবু, কি করা যায় ভাবছেন এমন সময় ফোন বেজে উঠলো, বেজায় বিরক্ত হলেন তিনি, এখন আবার কে ফোন করলো?
হ্যালো, কে বলছেন? 
চ্যাটার্জী বাবু? 
একটা অচেনা পুরুষ কণ্ঠ শুনতে পান চ্যাটার্জী বাবু, তিনি বলেন: বলছি আপনি কে?
এআরসি।
নামটা শুনেই নেশা ছুটে যায় তার "এ...আর..সি মানে...মানে'
মানে মানে করার কিছু হয়নি আমি এআরসি বলছি।
কিন্তু আপনি আমার নম্বর..
জোগাড় করার উপায় আছে।
কিন্তু আমাকে ফোন করার কারণ..
কারণ আছে বলেই ফোন করেছি, আমি আপনার সাথে একটা ডিল করতে চাই।
ডিল.. কিরকম ডিল?
আমি জানি আপনি এবার ইলেকশনে জিতে সিএমের গদিতে বসতে চান কিন্তু বীরেন ভট্টাচার্য থাকতে সেটা সম্ভব নয় কি তাইতো?
হ্যাঁ.. মানে আপনি কিভাবে?
কিভাবে জানলাম সেটা বড়ো কথা নয়।
আপনি কি চাইছেন বলুন তো?
তার আগে আমি কি দিতে পারি সেটা বলি?
কি?
আমি আপনাকে সিএমের গদিতে বসাতে পারি।
চমকে উঠলেন চ্যাটার্জী বাবু তিনি ঠিক শুনছেন তো? কোনোমতে তোতলাতে তোতলাতে বলেন: কি...কিন্তু কিভাবে.. বী..বীরেন বাবু তো।
ওনাকে আমি সামলে নেবো কিন্তু আপনাকে সাহায্য করতে হবে।
কি..কি সাহায্য?
আপনাকে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে।
উনি জানতে পারলে আমাকে শেষ করে দেবেন।
সেই সুযোগ উনি পাবেন না এটা আপনাকে আশ্বস্ত করছি।
কি করতে হবে?
উনি আপনাদের দলের বেশ কয়েকজনকে মিটিংয়ে ডেকেছিলেন, খুব সম্ভবত আপনাদের সবাইকে হুমকি দিয়েছেন তাইতো?
হ্যাঁ,
এবার শুনুন আপনাকে কি করতে হবে,  আপনি শুধু সময় মতো তাদের এবং তাদের পরিবারকে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে উস্কানি দেবেন যাতে তারা পুরোপুরি বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে হয়ে যায়।
কিন্তু কেউ কি আমার কথা শুনবে?
আপনার অনুগতদের দিয়েই শুরু করবেন, তারা তো নিশ্চয়ই শুনবে।
আর বাকিরা?
তারাও করবে সে ব্যবস্থা আমি করবো।
কিন্তু এর বিনিময়ে আপনি কি চান?
আপনার সাথে সুসম্পর্ক, আমরা কেউ একে অপরের শত্রু ন‌ই তাই বন্ধু হতে ক্ষতি কোথায়? আপনি সিএম হয়ে আমাকে সাহায্য করবেন বিনিময়ে আমি আপনাকে তবে আপাতত আমাদের দুজনের এক‌ই শত্রু বীরেন ভট্টাচার্য, এবার বলুন আপনি রাজী কি না?
কিন্তু আপনি যে আমাকে ঠকাবেন না তার প্রমাণ কি?
এআরসি কখনও কথার খেলাপ করে না, আপনি যতক্ষণ আমার বন্ধু থাকবেন ততক্ষণ আমি আপনার কোনো ক্ষতি করবো না কিন্তু যদি শত্রুতা করেন তখন আমিও পিছু হটবো না।
আমি কি এখনই শুরু করে দেবো?
না, আমি ফোন করে জানিয়ে দেবো, গুড নাইট।
কাজটা কিন্তু সহজ নয়? অভয় ফোনটা রাখার প্রায় সাথে সাথেই প্রশ্নটা করে আমির।
কোন কাজটা?
ওই যে সবাইকে বীরেন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে নিয়ে যাওয়ার।
উপায় আছে আমির।
কি উপায়?
বলবো ,তবে আগে যে কাজে যাচ্ছি সেটা সেরে আসি।
কাজ? আমরা যাচ্ছি তোমার সেই বন্ধুর সাথে দেখা করতে, কি যেন নাম অমিয়।
হ্যাঁ।
কিন্তু ওর কাছে কি কাজ?
কিছু না, এমনই বন্ধুর সাথে দেখা করে আসি।

অফিস থেকে বেরিয়ে সামনের চায়ের দোকানে একটু চা খেতে ঢুকলো অমিয়, ঢুকে দেখে সামনে বেঞ্চিতে একজন তার‌ই বয়সী ছেলে বসে আছে তাকে সে চেনে কি যেন নাম.. আমির, অমিয় এগিয়ে গেল।
চিনতে পারছেন? মিস্টার আমির?
পারছি অমিয় বাবু।
আপনি এখানে?
আপনার সাথেই দেখা করতে।
আমার সাথে কেন? শুনে বেশ অবাক হয় অমিয়।
দরকার আছে রে গাঁড়ল তাই আসতে হলো, হটাৎ পিছনে তৃতীয় ব্যক্তির আওয়াজ শুনে চমকে ওঠে অমিয়, দেখে আরেকজন দাঁড়িয়ে আছে এ‌ও তার‌ই বয়সী তবে এর মুখটা ভীষণ চেনা চেনা লাগছে, কিন্তু ঠিক মনে পড়ছে না।
ওরকম হাঁ করে কি দেখছিস গাঁড়ল? আবার এই "গাঁড়ল" কথাটা শুনে ধা করে মনে পরে যায়, এই কথাটা একজন‌ই ওকে বলতো..
অভয়.. তুই.. তুই..
যাক চিনতে পারলি তবে। অভয় এসে নিজের ছোটোবেলার বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে‌।
তুই কোথায় ছিলি এতদিন? কি হয়েছিল তোর সাথে?  আমার সাথে যোগাযোগ করিসনি কেন? বল উত্তর দে এক নিঃশ্বাসে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে অমিয়।
অভয় একটু হেসে বলে আস্তে আস্তে ভাই আগে শান্ত হয়ে বস সব বলছি তার আগে পরিচয় করিয়ে দি‌ই এই হচ্ছে আমির আর আমির এর কথা তো বলেছি এ হচ্ছে অমিয় আমার কলেজের বন্ধু।
হ্যাঁ আমি ওনাকে চিনি আগে কথা হয়েছে। বলে অমিয়।
তখন আমার কথাতেই ও তোকে আমার কাছে যেতে দেয়নি।
তার মানে তাথৈ ঠিক বলেছিল যে তুই ওই বস্তিতে থাকতি?
এখনও থাকি।
আমার সাথে দেখা করিসনি কেন? আমি কি তোর..
আমি তোর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী ভাই কিন্তু আমি তখন দেখা করলে তুই আর তোর পরিবার বিপদে পরে যেত তাই দেখা করিনি।
কিন্তু তুই এতদিন কোথায় ছিলি, আর কাকীম কেমন আছেন?
অভয় সব বলতে থাকে, অমিয়র পরিবারের সবার খবর নেয় বহুবছর পরে দুই বন্ধু আবার হাসি ঠাট্টায় মেতে ওঠে, এবার অবশ্য আমির‌ও ওদের সঙ্গে থাকে আমির আর অমিয়র মধ্যে বেশ ভাব হয়ে যায়।
একসময় অভয় বলে: তুই এখনো বৃষ্টিকে পছন্দ করিস তাই না?
বৃষ্টির সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই, আর তাছাড়া আমার কাছে আমার বন্ধুর মূল্য অনেক বেশী, ওরা তোর সাথে যা করেছে তার পরে তো..
আমি জানি তুই এখনো বৃষ্টিকে পছন্দ করিস, আর ও এখন তোর সাথে যোগাযোগ রাখছে।
তুই কিভাবে জানলি?
তাথৈ বলেছে।
তাথৈ? তুই আবার ওর সাথে?
হ্যাঁ, অভয় সব কথা ওকে বলে। শুনে অমিয় বেশ খুশীই হয়েছে বোঝা যাচ্ছে বলে:, যাক অবশেষে তোরা এক হলি।
এবার তুইও বৃষ্টিকে ক্ষমা করে দে।
অমিয় চুপ করে থাকে, কথা বলে না, অভয় বলে চলে: তুই ওর সাথে কথা বল, যদি মনে হয় ও বদলাবে না তাহলে তো কিছু করার নেই কিন্তু যদি মনে হয় যে ও বদলাতে পারে বা বদলাতে চাইছে তাহলে তোর উচিত ওকে একটা সুযোগ দেওয়া।

মসজিদে নামাজ শেষ করে বাইরে এসে জুতো পড়ছে মাহমুদ চারিদিকে সতর্ক এবং সন্ত্রস্ত দৃষ্টি যেন কোনো কিছু বা কারোর ভয় পাচ্ছে, এবার উসমান বেরিয়ে এল ওর চোখেমুখেও ভয়ের ছাপ স্পষ্ট। দুই ভাই আস্তে আস্তে একটু দূরে রাস্তার পাশে ফুটপাত সংলগ্ন করে রাখা নিজেদের জিপের দিকে এগোতে থাকে, হটাৎ উসমানের সন্দেহ হয় যে কেউ ওদের উপর নজর রাখছে, সে দ্রুত চারপাশের লোকদের উপর দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয় সব কিছু স্বাভাবিক তবুও সন্দেহটা যায় না।
কি দেখছো ভাইজান? দাদাকে প্রশ্ন করে মাহমুদ।
কেন জানি মনে হচ্ছে কেউ আমাদের ফলো করছে।
কথাটা শুনে মাহমুদ ও একবার চারিদিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয়, বলে: কেউ তো চোখে পরছে না হতে পারে এটা তোমার মনের ভুল।
হতে পারে তবে সতর্ক হয়ে থাকা ভালো, আমরা এআরসির সাথে শত্রুতা করেছি আর ও বীরেন বাবুর কবল থেকে বেঁচে বেরিয়ে এসেছে এবার আবার ও অ্যাটাক করবে।
কিন্তু রকি ভাই তো বললেন যে উনি আমাদের সুরক্ষা দেবেন।
এআরসির ক্ষমতা কত তুই জানিস না নাকি? তোর মনে হয় ওর সামনে বীরেন বাবু বা রকি নিজেদের ছেড়ে আমাদের কথা ভাববে?
আমার এখন তো মনে হচ্ছে আমরা ভুল করেছি।
আমারও সেটাই মনে হচ্ছে, চল তাড়াতাড়ি পা চালা। দুই ভাই হাঁটার গতি বাড়ায়, জিপের কাছে গিয়ে উঠতে যাবে দেখে আরেক বিপত্তি কিভাবে যেন জিপের একদিকের সামনে এবং পিছনের টায়ার পাংচার হয়ে গেছে, জিপের উল্টো দিকে গিয়ে দেখে একদিকের না জিপের সবকটা টায়ার‌ই পাংচার হয়ে গেছে।
ভাইজান এটা কিভাবে হলো? শঙ্কিত কণ্ঠে প্রশ্ন করে মাহমুদ।
আমরা ফেঁসে গেছি, এটা জেনে বুঝে করা হয়েছে।
এবার কি হবে?
পালা‌। বলে উসমান দৌড়াতে যাবে কিন্তু পারে না মসজিদের সামনে অনেক গরীব নিঃস্ব লোক বসে থাকে যারা ভিক্ষা করে দিন কাটায়, তাদের মধ্যেই বেশিরভাগ এখন পাল্টে গেছে হাতে পিস্তল নিয়ে ওদের দুইভাইকে ঘিরে ধরে বেশী না এই ৭-৮ জন, দুইভাই বিস্ফারিত চোখে ওদের দেখতে থাকে তারা বোঝে তাদের পালানোর সব রাস্তা বন্ধ।
কি ভেবেছিলি? এত সহজে পালিয়ে বেঁচে যাবি? প্রশ্নটা শুনে দুই ভাইয়ের নিঃশ্বাস ভয়ে প্রায় আটকে যাওয়ার অবস্থা, এই আওয়াজ তারা চেনে এটা আমিরের আওয়াজ, দুই ভাই শঙ্কিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে যে ৭-৮ জন ওদের ঘিরে রেখেছে তারা পিছু হটছে আর দুজন তাদের দিকে এগিয়ে আসছে, একজন আমির আর অপরজন নিঃসন্দেহে এআরসি ওরফে রয় যদিও সে চোখে গগলস্ পরে আছে মুখ একটা কালো স্কার্ফ দিয়ে ঢাকা গায়ে কালো জ্যাকেট যার হুডিটা মাথায় ঢাকা দেওয়া আছে, মুখ দেখা না গেলেও এই গগলস্ এই জ্যাকেট তাদের চেনা এটা এআরসি।
আর কোনো রাস্তা না দেখে দুই ভাই হাত জোড় করে মাটিতে হাঁটু মুড়ে বসে পরে এবং কেঁদে ফেলে, "আমাদের ভুল হয়ে গেছে, ক্ষমা করে দিন বস", "আমরা আর এরকম করবো না, আমাদের একটা সুযোগ দিন" দুইভাই কাঁদতে কাঁদতে আমির আর রয়ের পা জড়িয়ে ধরে, কিন্তু যখন আমির কথা বললো তখন পরিষ্কার বোঝা গেল যে এতে ওদের মন গলবে না। আমির কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু হটাৎ দুই ভাই উঠে দাঁড়িয়ে হাসতে শুরু করে যাকে বলে অট্টহাসি, একসময় হাসি থামিয়ে উসমান বলে: কি ভেবেছিলি আমরা এইভাবে প্রার্থনা করবো? আমি জানতাম তোরা আসবি আমাদের খুঁজতে।
কি বলছো ভাইজান? মাহমুদ সত্যিই অবাক হয়।
হ্যাঁ, ভয় পাস না মাহমুদ ওরা আমাদের কিচ্ছু করতে পারবে না বরং আজ এখানে ওরা দুজনেই শেষ হবে।
উসমানের কথাটা শেষ হতে না হতেই প্রায় ১৫ জন লোক ওদের সবাইকে ঘিরে ফেলে এমনকি যে ৭-৮ জন প্রথমে উসমান আর মাহমুদকে ধরেছিল তাদের‌ও এবং প্রত্যেকের হাতে অটোমেটিক পিস্তল ফলে আমির ও তার লোকেদের নড়াচড়া বন্ধ করতে হলো তারা অসহায়ের মতো পিস্তল ফেলে দাঁড়িয়ে র‌ইলো। এবার উসমানের দেখাদেখি মাহমুদ‌ও হাসতে শুরু করে "কি রে আমির, কি রে এআরসি.. মারবি না আমাদের? হ্যাঁ?" "মার... এখন মার আমাদের"

একটা জিপের আওয়াজ পেয়ে আমির ও রয় ঘুরে দেখে রকি এসেছে, আমির ও রয়ের চোখাচোখি হয় এবং দুজনের ঠোঁটের কোণে একটা হাসির রেখা দেখা দেয়। জিপ থেকে নেমে রকি ওদের দিকে এগিয়ে আসে।
রকি ভাই এই নিন আপনাদের আমানত। সহাস্যে কথাটা বলে উসমান
এআরসি.. রকির গলায় আনন্দের সীমা অতিক্রম করেছে ফাইনালি, আবার আমরা মুখোমুখি সেদিন ঠিক মতো আলাপ হয়নি।

বি দ্র: গত আপডেটটা একটু ছোটো হয়ে যাওয়ায় অনেকেই একটু মনক্ষুন্ন হয়েছিলেন, তখন বলেছিলাম যে ক্লাইম্যাক্স সহ বড়ো আপডেট তাড়াতাড়ি আসবে কিন্তু ক্লাইম্যাক্স না হলেও আরো দুটো আপডেট দিলাম আশা করছি ভালোই লাগবে।
ভালো লাগলে লাইক এবং রেপু দিয়ে দেবেন এবং খারাপ লাগলে সেটাও কমেন্ট করে জানাবেন।
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply
অনেক দিন পারে মন ভরে গেলো।।
Like Reply
এটা কি রকির ফাদ নাকি আদৌতে এআরসির ফাদ......আকর্ষণ.....
যাই হোক অনবদ্য আপডাট দূর্দান্ত অসাধারণ। সামনে আরো বড় চমকের আশায়। তবে এক্সপেক্ট করি হ্যাপি এন্ডিং হবে। এআরসি তার লক্ষ্য পূরণে সফল হবে। এআরসির জন্য শুভ কামনা।
[+] 1 user Likes Arpon Saha's post
Like Reply
(28-10-2022, 11:47 PM)Ari rox Wrote: অনেক দিন পারে মন ভরে গেলো।।

Namaskar
I'm the King of Dark
                &
I rule over all Devils
               devil2 devil2
Like Reply




Users browsing this thread: 14 Guest(s)