Thread Rating:
  • 47 Vote(s) - 3.53 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance বজ্রাঘাত (সমাপ্ত)
#21
১১।।


গলাটা শুকিয়ে উঠেছিল পৃথার... একটু থামে সে... বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়... ঘরের বড় আলো জ্বেলে ঘর থেকে বেরিয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে জল খায় একটু... ফিরে আসার সময় দেওয়ালে ঘড়িটার দিকে তাকায় সে... রাত আড়াইটে... ফিরে আসে ঘরে।

‘কটা বাজে জানো? আড়াইটেএএএ...’ ছবিটা উদ্দেশ্যে বলে ওঠে... ‘তোমার ঘুম পাচ্ছে?... প্লিজ... ঘুমিও না এখন... আর একটু থাকো... কাল তো রবিবার, বলো... বেলা করে উঠলেও হবে... তাই না? আর একটু থাকো, প্লিজ...’ বলতে বলতে এগিয়ে যায় ঘরের টেবিলের দিকে... ওখানে রেখে দেওয়া গ্লাসের মধ্যে আবার খানিকটা ওয়াইন ঢেলে নেয়... নিয়ে গ্লাসটাকে এক হাতে ধরে, অন্য হাতের মধ্যে সিগারেট প্যাকেট আর লাইটারটা নিয়ে বিছানার কাছে ফিরে আসে। বিছানার সাইড টেবিলটার ওপরে প্যাকেট আর লাইটারটা রেখে দিয়ে, ফিরে যায় দেওয়ালের কাছে, সুইচ বোর্ডের কাছটায়... বড় আলোটাকে নিভিয়ে ফের ধীর পায়ে এসে দাঁড়ায় বিছানার কাছে... ঘরটা নিলাভো স্বপ্নিল আলোয় আবার ডুবে যায়... গ্লাসের তরলে একটা চুমুক দিয়ে উঠে আসে বিছানায়... বালিশটাকে খাটের হেড বোর্ডের হেলানে রেখে নিজে ঠেস দিয়ে বসে তাতে আরাম করে... চোখ বন্ধ করে খানিক থেকে ফের চুমুক দেয় গ্লাসে... তারপর শুরু করে...

ওই রকম একটা চরম ক্লাইম্যাক্স হবার পর আমার সম্ভব ছিল না জেগে থাকার... ঘুমিয়েই পড়েছিলাম বোধহয়... আর এর মধ্যে আমার হলেও রিকির হয়নি সেটা তো জানিই, ও নিশ্চয়ই তারপর দিদির সাথে ইন্টারকোর্স করেছিল... অবভিয়াস সেটা... অবস্য সেটা আমার দেখার ব্যাপার নয়... আমি কিছু আর জানি না।

কতক্ষন ঘুমিয়েছিলাম জানি না, ঘুমের মধ্যে মনে হল কেউ যেন আমার বুকের একটা নিপিল নিয়ে চুষছে... প্রথমটা ভেবেছিলাম হয়তো স্বপ্ন দেখছি... সারা শরীরটা সিরসির করে উঠছিল... ভিষন ভালো লাগছিল, ইচ্ছা করছিল না চোখ খুলতে... বুকের ওপরে অনুভূতিটা আরো খানিকটা পেতে মন চাইছিল... খানিক পরে বুঝলাম, ওটা স্বপ্ন নয়... সত্যি... কিন্তু ঘুম ভাঙলেও চুপ করে শুয়ে থাকলাম আমি চোখ বন্ধ করে... একটুও না নড়াচড়া করে... কি ঘটে দেখার আশায়... একটু শীত শীত করছিল... নেকেড গায়ের ওপরে কোন চাঁদর না থাকার কারনে।

বুঝতে অসুবিধা হয় নি আমার, নিপিল যে চুষছে, সে আর কেউ নয়, রিকি... হাতের মুঠোয় আমার ওই টিনি ব্রেস্টটাকে কাঁচিয়ে, চেপে ধরে চুষে চলেছে জিভ বুলিয়ে নিপিলের ওপরে... ইচ্ছা করছিল হাত বাড়িয়ে ওর মাথাটাকে আরো ভালো করে চেপে ধরি নিজের বুকের ওপরে... কিন্তু অনেক কষ্টে সে ইচ্ছাটা দমিয়ে রাখলাম। রিকি বদলে নিল আমার বুকটাকে... চুষতে লাগল অপর নিপিলটা মুখে নিয়ে... সেই সাথে হাতের মধ্যে ব্রেস্টটাকে ধরে চটকাতে থাকলো আলতো হাতে... কোন বাধা দিলাম না আমি... ঘুমের ভান করে চুপ করে শুয়ে আরাম খেতে থাকলাম ওই ভাবে... শুধু আমার নিঃশ্বাসটার গভীরতা বেড়ে চলল ধীরে ধীরে... ওটা আমার বশে ছিল না আর তখন।

রিকি আমার বুকটা ছেড়ে হাতটাকে বাড়িয়ে দিল দুই পায়ের ফাঁকে... মুঠো করে ধরল আমার ওখানটা... ব্যথা হয়ে আছে জায়গাটা... হাত পড়তে যেন আরো ব্যথাটা বেড়ে গেল... প্রায় বলেই ফেলছিলাম ওখানে হাত না দিতে... কিন্তু অনেক কষ্টে আটকালাম নিজেকে... কিছু বলা মানেই তো বুঝে যাবে যে আমি জেগে রয়েছি... আটকে রাখলাম ঠিকই, কিন্তু রিকি বোধহয় বুঝতে পেরে গিয়েছিল যে আমার ঘুম ভেঙে গেছে... একটু ঝুঁকে আমার কানের কাছে মুখটা এনে ফিসফিস করে বলল, ‘আমি জানি তুমি জেগে আছ পৃথা... কিন্তু কোন আওয়াজ করবে না, কেমন... চুপ করে শুয়ে থাকো লক্ষ্মী মেয়ের মত... বুঝেছ?’

এবার আর চোখ বন্ধ করে রাখার কোন মানেই হয় না আমার কাছে, রিকি যখন বুঝেই গেছে যে আমি জেগে রয়েছি... তাই চোখ খুলে তাকালাম ওর দিকে... ঘরে বোধহয় আলো আর নেভানো হয় নি আগে, তাই ঘুম চোখ খুলতেই প্রথমে চোখটা ঘরের উজ্জল আলোয় ধাঁধিয়ে গেল একটু... বার দুয়েক চোখ পিটপিট করে আলোটা চোখে সইয়ে নিয়ে তাকালাম রিকির দিকে, ওর মতই ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘দিদি? দিদি কোথায়?’

ইশারায় অন্য পাশটায় দেখিয়ে দিল রিকি... মুখ ফিরিয়ে দেখি আমার অন্য দিকটায় শুয়ে দিদি অকাতরে ঘুমাচ্ছে... গায়ে ওপরে কম্বল জড়ানো, কিন্তু বোঝা যায় যে কম্বলের নীচে দিদির গায়ে একটা সুতোও নেই... কম্বলের ওপর থেকেই দিদির শরীরটা ফুটে উঠেছে... ফের ওর দিকে মুখ ফেরালাম... বললাম চাপা গলায়... ‘তুমি এই রকম করছ, দিদি যদি জানতে পেরে যায়? ও যদি জেগে যায়, তখন?’

‘সেই জন্যেই তো বললাম তোমাকে চুপ থাকতে...’ সেও চাপা গলায় উত্তর দেয় আমাকে। তারপর আবার প্রশ্ন করে... ‘কেন? তোমার ভালো লাগে নি... তখন?’

ওর দিকে ফিরে শুই আমি... রিকির চোখে চোখ রেখে খানিক তাকিয়ে থাকি... তারপর মাথা হেলাই... হ্যা...

রিকি হাত বাড়িয়ে আমার গালটা ধরে মুখটাকে একটু তুলে ধরে... নিজের মুখটা এগিয়ে এনে আমার ঠোঁটের ওপর চেপে ধরে ওর ঠোঁটটাকে... আহ্‌... কি ভালো যে লাগলো... আমি না বলতেও ফাঁক করে ধরলাম আমার মুখটাকে... ও আমার ঠোঁটটা ওর মুখের মধ্যে টেনে নিয়ে চুষতে থাকল... আমার মনে হচ্ছিল যেন আমি কোন স্বপ্ন রাজ্যে ভেসে চলেছি... চোখ বন্ধ করে রইলাম আমি... ও আমার নীচের ঠোঁটটা নিয়ে খানিক চুষলো, তারপর ওপরের ঠোঁটটা... তারপর আমার মুখের মধ্যে ওর জিভটাকে ঢুকিয়ে দিল... টাচ্‌ করল আমার জিভটাকে... আমি কেমন মন্ত্রমুগ্ধের মত নিজের জিভটাকে বাড়িয়ে দিলাম ওর দিকে... ও আমার জিভটাকে ওর মুখের মধ্যে পুরে নিয়ে চুষতে লাগল... খেলা করতে লাগল নিজের জিভের সাথে নিয়ে। রিকির হাতগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছিল আমার সারা শরীরে... আমার অ্যাস চিকস্‌ এর নরম তালটা ধরে টিপে ধরছিল কেমন সুন্দর করে... আরামে আমি নিজের কোমরটাকে এগিয়ে, বাড়িয়ে ধরলাম ওর কোলের কাছে... তলপেটের ওপরে শক্ত কিছুর টাচ্‌ পেলাম মনে হলো যেন... হাত নামিয়ে বোঝার চেষ্টা করতে গেলাম, কি?... হাতে ঠেকলো যেটা... উফ্‌... সারা শরীরটা কেমন করে উঠল... এটা... এটা তো রিকির পেনিস... আমার মেয়েলি ছোট্ট হাতের মুঠোর মধ্যে, শক্ত করে ধরলাম পেনিসটাকে... ইশ্‌... কি গরম ওটা... মনে হল যেন আমার হাতের তালুটা পুড়ে যাবে, এত গরম... তাও... ছাড়তেও পারছিলাম না... ওটাকে নিয়ে হাতের মুঠোর মধ্যেই অল্প অল্প নাড়াতে লাগলাম... ওপর নীচে করে... হাতের সাথে সাথে পেনিসের ওপরের ছালটা কেমন যেন হড়কে হড়কে নেমে যেতে লাগল... বেশ লাগছিল ওটাকে নিয়ে খেলা করতে... ওর মুখ থেকে জিভটা বের করে নিয়ে ফিসফিস করে জিজ্ঞাসা করলাম... ‘একটু দেখবো? ওটাকে?’

‘হুউ...’ ছোট্ট করে সন্মতি এল রিকির কাছ থেকে।

আমি উঠে বসলাম কুনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে খুব সাবধানে, যাতে কোন ভাবেই না দিদির ঘুম ভেঙে যায়... দেখি রিকিও আমার মতই তখনও নেকেড হয়েই রয়েছে... গায়ে কোন জামা নেই... আমি উঠে বসে ঝুঁকে পড়লাম ওর পায়ের কাছে... রিকি চিৎ হয়ে শুলো... ওর তলপেটের ওপরে একটা কালো সাপের মত পড়ে রয়েছে দেখি ওর পেনিসটা... ইস্‌... দেখেই কেমন করে উঠল শরীরটা যেন... হাত বাড়িয়ে দুটো আঙুল দিয়ে ওটাকে তুলে ধরলাম... তারপর আঙুল ছেড়ে মুঠো করে ধরলাম হাতের মধ্যে... ধরে একটু নাড়ালাম এদিক ওদিক... কেমন আমার হাতের মধ্যে বাধ্য হয়ে নড়তে লাগলো যেদিকে নিয়ে যেতে চাই সেই দিকেই... তারপর আস্তে আস্তে ওটার ছালটাকে ধরে নামাতে লাগলাম নীচের দিকে... মাথার দিকটায় দেখি কেমন ফুল ফোটার মত চামড়াটা সরে গিয়ে একটা পিঙ্ক রঙের গোল মাংসপিন্ড বেরিয়ে আসছে... মাথার ওপরটায় একটা ছোট্ট চেরা মত... চেরার ঠিক নীচ থেকে একটা চামড়া জুড়ে রয়েছে পেনিসের চারদিকের ছালটার সাথে... পুরো চামড়াটা সরে যেতে দেখি কেমন যেন দেখতে... অনেকটা যেন মাশরুমের মত... কিন্তু মাশরুমের মত রঙ নয়, বরং কালচে, পুরো পেনিসটা, আর মাথাটা মাশরুমের মতই গোল, নীচের দিকে একটা খাঁজ... তারপর আবার নেবে গেছে সোজা হয়ে... মুখ তুলে একবার দেখলাম রিকির দিকে... দেখি ও আমার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে... চোখাচুখি হতে চাপা গলায় জিজ্ঞাসা করল... ‘কেমন? জিনিসটা? পছন্দ হয়েছে?’

ওর দিকে তাকিয়ে একটা ছোট্ট করে স্মাইল দিলাম আমি... তারপর আবার তাকালাম হাতের মধ্যে ধরা পেনিসটার দিকে... মাথার ছোট্ট ছেঁদাটা দিয়ে কেমন একটু জল মত বেরিয়ে রয়েছে যেন... অন্য হাতের আঙ্গুল বাড়িয়ে মাথাটায় ঠেকালাম... ওই জল মতটার ওপরে... পেনিসটার মাথাটায় আমার আঙ্গুল পড়তেই কেমন কেঁপে উঠল রিকি... বুঝলাম ওই জায়গাটা নিশ্চয়ই খুব সেন্সিটিভ... নচেৎ এই ভাবে কেঁপে উঠবে কেন ও? জলটা হাতে লাগতে দেখি কেমন হড়হড়ে আর চটচটে... ওটাকে ওর পেনিসের মাথায় আলতো আঙ্গুলের ছোয়ায় মাখিয়ে দিতে লাগলাম... ছেঁদাটা দিয়ে যেন আরো খানিকটা জল বেরিয়ে এল... সেটাকেও বুলিয়ে দিতে লাগলাম পেনিসটার মাথায়... রস লেগে আলো পড়ে চকচক করতে লাগলো পেনিসের ওই পিঙ্ক রঙের মাথাটা... আবার মুখ তুলে তাকালার রিকির দিকে... ও তখনো আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে দেখি, হাত দুটোকে মাথার নীচে ধরে মাথাটাকে তুলে রেখে... ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম... ‘একবার মুখ দিয়ে দেখবো, কেমন?’

ইশারায় সন্মতি দিল ও ঘাড় নেড়ে।

আমি ফিরে তাকালাম পেনিসটার দিকে... তারপর সামনের দিকে ঝুঁকে বসলাম... একটা অদ্ভুত গন্ধ... খারাপ নয়... জিভটাকে বার করে বাড়িয়ে দিলাম পেনিসটার মাথা লক্ষ্য করে... আলতো করে ঠেকালাম ওটায়... রিকি কেঁপে উঠল যেন ফের... মুখ তুলে ওর দিকে একবার তাকালাম আমি... দেখি স্থির দৃষ্টিতে ও এদিকেই তাকিয়ে রয়েছে... মিচকি হাসলাম ওর দিকে তাকিয়ে, তারপর আমি মুখ ফিরিয়ে ফের নজর দিলাম ওর পেনিসের দিকে... জিভটাকে আরো বেশি করে এবার বের করে এগিয়ে দিলাম ওটার মাথার দিকে... একবার ভালো করে চেটে দিলাম মাথাটায়... আহ্‌... কানে এলো রিকির চাপা শিৎকার... মনে মনে বুঝতে পারলাম ওর ভালো লাগছে তার মানে... আরো উৎসাহিত হয়ে উঠলাম... আরো ঝুঁকে গেলাম... জিভটা দিয়ে এবারে পুরো মাথাটাকেই বোলাতে লাগলাম বারবার... ছেঁদা থেকে বেরিয়ে আসা রসটা জিভে লাগতে খারাপ লাগলো না মোটেই... চাটতে চাটতেই হটাৎ কি মনে হলো, হাঁ করে পেনিসের মাথাটাকে পুরে নিলাম মুখের মধ্যে... চুষতে লাগলাম মুখের মধ্যে পুরে... ওটার ওপরে জিভ চালিয়ে... রিকি হাত বাড়িয়ে খামচে ধরল আমার থাইটাকে... কিন্তু আমার সে দিকে খেয়াল নেই আর... মনের সুখে তখন চুষে চলেছি ওর পেনিসটাকে মুখের মধ্যে নিয়ে... হাতের আঙুলগুলো পেনিসের গায়ে বেড় দিয়ে ধরে ওপর নীচে করে নাড়াচ্ছি... রিকি নীচ থেকে কোমরটাকে তুলে তুলে ধরতে লাগলো আমার মুখের মধ্যে। একটা সময় মনে হল আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে, এই ভাবে মুখের মধ্যে পুরে রাখলে... ওটাকে বের করে দিলাম মুখ থেকে... ওটার মাথার থেকে একটা লালার সরু সুতো ঝুলে থাকলো আমার ঠোঁটের সাথে... হাতের পীঠ দিয়ে মুখের লালা মুছে তাকালাম ওর দিকে... হেসে চাপা গলায় জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আরাম লাগছিল তোমার?’

মৃদু হেসে চাপা গলায় উত্তর দিল, ‘ভিষন... থামলে কেন?’

‘নাঃ... হাফিয়ে গিয়েছিলাম...’ বলে উঠলাম আমি ফিসফিসিয়ে।

‘তাহলে থাক, আর করতে হবে না...’ বলল রিকি।

‘না, না, ঠিক আছে... আর একটু চুষি? বেশ লাগছে...’ প্রশ্ন করলাম রিকিকে।

ও হাসলো একটু... বলল, ‘ইচ্ছা করছে যখন... চোষ...’

নতুন উদ্যমে আবার মাথা নামিয়ে মুখের মধ্যে পুরে নিলাম পেনিসের মাথাটাকে... হাতের বেড়ে ওটাকে ধরে চুষতে লাগলাম আবার... চুষতে চুষতে হাতটা গিয়ে পড়লো ওর পেনিসের গোড়ার কাছটায়... ওখানটায় একটা কেমন নরম নরম কিছু ঠেকলো হাতে... পেনিসটাকে মুখ থেকে বের করে নজর ফেরালাম ওই জায়গাটায়... একটা থলি মত রয়েছে... নরম... ওখানকার চামড়াটা বেশ লুজ্‌... হাত বাড়িয়ে ওটা ধরতেই দেখি ওর ভেতরে শক্ত মত কিছু রয়েছে... হাত দিয়ে ধরে টিপতেই রিকি কঁক্‌ করে উঠল... তাড়াতাড়ি উঠে বসল ও... আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম... ‘এটা কি?’

ও হাসলো... বললো... ‘এটাকে বিচি বলে... এখানেই আমাদের মাল, মানে বীর্য তৈরী হয়ে জমা থাকে...’

‘বিচি!’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করি আমি... ‘বীর্য? সেটা আবার কি?’

হাসে রিকি... বলে, ওটাই তো আসল... ওই বীর্য থেকেই তো বাচ্ছা হয়... এই টুকুও জানো না? কলেজে পড়ো?’

ইশ্‌... কি লজ্জা লাগলো কি বলবো... সত্যিই তো... কলেজের মেয়ে আর এটা জানিনা... আসলে জানি না বলা ভূল... জানতাম ঠিকই... কিন্তু তখন কেন যে ভুলে গিয়েছিলাম... বোকার মত ওকে প্রশ্নটা করলাম... মাথা নামিয়ে বললাম, ‘না, মানে জানতাম, আসলে হটাৎ জিজ্ঞাসা করলে তো, তাই কেমন বোকা হয়ে গিয়েছিলাম... আসলে শুনেছি... কখনও দেখি নি তো চোখে তাই একটু গন্ডগোল হয়ে গিয়েছিল আর কি...’

‘হু... বুঝলাম... কিন্তু ওটাকে ধরে এত জোরে টেপাটিপি করলে তো মারা পড়বো আমি...’ বলে রিকি।

‘ও, তাই? সেটা অবস্য জানতাম না... খুব সেন্সিটিভ এটা, না?’ বিচিটাকে হাতের তালুতে ধরে আলতো করে টিপতে টিপতে প্রশ্ন করলাম আমি।

‘হু... খুব সেন্সিটিভ... যদি কেউ কখনও তোমাকে জোর করে কিছু করতে আসে, এটার ওপরে মারবে বা টিপে দেবে, সে আর তোমাকে কিছু করার সাহস করবে না, বা ক্ষমতাও থাকবে না, বুঝেছ?’

শুনে খুব খুশি হলাম আমি... ‘এই রকম একটা অস্ত্র তাহলে আছে আমাদের, মেয়েদের... বাহ! বেশ তো!’

‘হু, অস্ত্র ঠিকই... কিন্ত সেটা আবার সব সময় ব্যবহার করে ফেলো না যেন... তাহলে নিজেই আরাম থেকে বঞ্চিত থাকবে... বুঝেছ? খুব সাবধানে ব্যবহার করবে’ জ্ঞান দেবার মত করে বলে রিকি আমাকে। 

আমিও বাধ্য মেয়ের মত মাথা হেলাই... ‘ওটা আর একবার চুষবো?’ প্রশ্ন করি আমি।

হাসে রিকি... ‘প্রথম দিনেই এত ভালো লেগে গেছে? ঠিক আছে... আরো একটু চুষে নাও...’ ফিসফিসিয়ে বলে আমাকে।

আমি আবার মাথা নীচু করে পেনিসটাকে ধরে টেনে ছালটা ছাড়িয়ে মুখের মধ্যে পুরে নিই... বেশ লাগছিল চুষতে... বুঝতে পারি এই ভাবে চোষার ফলে রিকিও আরাম পাচ্ছে... আর একটা পুরুষ মানুষকে আরাম দিতে পারছি ভেবে নিজের কেমন গর্ব বোধ হচ্ছিল... নিজের ওপরে একটা কনফিডেন্স আসছিল যেন... মুখটাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে চুষতে থাকি পেনিসের মাথাটাকে মুখের মধ্যে পুরে নিয়ে।

হটাৎ ‘ওঁক’ করে কোঁকিয়ে ওঠে রিকি... আমি তাড়াতাড়ি পেনিসটাকে মুখ থেকে বের করে ওর দিকে প্রশ্ন ভরা চোখে তাকাই... ভাবি আবার কি ভুল করে ফেললাম রে বাবা...

ও বলে, ‘আস্তে... সাবধানে চোষো... আমাদের ওটার মাথাটা খুব সেন্সিটিভ... শোনো, যখন কোন ছেলেদের বাঁড়া চুষবে, তখন খেয়াল রাখবে যেন চোষার সময় তোমার দাঁতটা না লাগে বাঁড়ার মাথাটায়... বুঝেছ? তাতে আমাদের, মানে ছেলেদের খুব লাগে...’

শুনে আবার মাথা নাড়লাম... তারপর নীচু হয়ে পুরে নিলাম পেনিসটাকে ফের মুখের মধ্যে... এবার খুব সাবধানে চুষতে লাগলাম ওটাকে... খেয়াল রাখলাম কোনভাবেই যাতে না আমার দাঁতটা লেগে যায় মাথায়...

দূর... এত সাবধানে কিছু করা যায় নাকি... একটু বিরক্তই হয়ে উঠলাম... রিকির পেনিসটাকে মুখ থেকে বের করে দিয়ে উঠে বসলাম সোজা হয়ে...

রিকি প্রশ্ন করল, ‘কি হলো? হয়ে গেল? আর চুষবে না?’

‘নাঃ... কেন আরো চুষতে হবে?’ প্রশ্ন করলাম ওকে।

‘আচ্ছা... থাক... পরে অন্য সময় হবে’খন... এবার এসো তো... আর একবার চুদি তোমায়...’ বলে রিকি আমাকে টেনে নিল ওর বুকের ওপরে... আমিও দিব্বি দুই পা দুই দিকে রেখে ওর কোলের ওপরে উঠে পড়লাম... প্রায় থেবড়ে বসে পড়লাম ওর কোলে... আমার বাটএর নীচে খোঁচা মারছিল ওর পেনিসটা... কি বলবো তোমায়, অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছিল... আমি নিজের কোমরটাকে নাড়িয়ে ভালো করে সেট করে নিলাম ওর পেনিসটাকে আমার আস চিকস্‌ এর খাঁজের মধ্যে... তারপর ঝুঁকে গেলাম ওর দিকে আর একটু... রিমি হাত বাড়িয়ে আমার ব্রেস্টগুলো ধরে টিপতে লাগলো মনের সুখে... উমমম... গলা নামিয়ে গুঙিয়ে উঠলাম আমি... ওই ভাবে ব্রেস্টগুলো নিয়ে চটকালে, কার না আরাম হয়? আর ওপরে নিজের শরীরের নীচে ওর পেনিসের ছোঁয়া... আপনা থেকেই চোখ বন্ধ হয়ে এল আমার... বুকদুটো বাড়িয়ে দিয়ে ওর থাইয়ের ওপরে হাতের সাপোর্ট রেখে মাথাটা হেলিয়ে দিলাম পেছন পানে।

আমাকে ওই ভাবে চোখ বন্ধ করে আরাম পেতে দেখে বেশ উৎসাহিত হয়ে উঠল রিকি... ঝুঁকে একটা নিপিল মুখে তুলে নিয়ে চুষতে আরম্ভ করল ও... আহহহহহ... শিঁটিয়ে উঠলাম আরামে... সোজা হয়ে বসে ওর পীঠের ওপর হাত রেখে বোলাতে লাগলাম... বুকটাকে আরো এগিয়ে, বাড়িয়ে দিলাম ওর মুখের দিকে, প্রায় নিজের বুকটাকে ওর মুখের মধ্যে গুঁজে দেবার প্রচেষ্টায়।

রিকির হাতটা আমার থাইয়ের ওপরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল... হাত বোলাতে বোলাতে এগিয়ে নিয়ে এসে আমাদের দুজনের শরীর মধ্যে দিয়ে পায়ের ফাঁকটায় ঢোকানোর চেষ্টা করল ও... ‘ব্যথা তো... ওখানটায় খুব ব্যথা হয়ে রয়েছে...’ ফিসফিসিয়ে হাত না দিতে বারন করি ওকে।

‘তাহলে করবে কি করে?’ বুকের ওপর থেকে মুখ তুলে জিজ্ঞাসা করে রিকি।

‘থাক না... করার দরকার কি? ওদিকে দিদি যদি জেগে যায়... তার থেকে ছেড়ে দাও বরং...’ বলি রিকিকে। বলি, কিন্তু মিথ্যা বলবো না, তখন মনের মধ্যে আরো একবার ওই ইন্টারকোর্সের স্বাদটা পেতে ভিষন ইচ্ছাও করছিল... 

সেটা বোধহয় রিকিও বুঝতে পেরেছিল... বলল, ‘আচ্ছা, এক কাজ কর... আমি শুচ্ছি... তুমি বরং এই ভাবেই আমার ওপরে উঠে থেকে করার চেষ্টা করো...’

ও বলতেই আমার মনে পড়ে গেল এই ঘরে তখন ঢোকার সময় দিদিকে দেখেছিলাম কি ভাবে ও রিকির কোমরের ওপরে বসে করছিল... মনে পড়তেই ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগলো আমার... বেশ দিদির মত করা যাবে’খন... মনে মনে ভাবলাম আমি... মাথা হেলিয়ে বললাম, ‘হ্যা, সেই ভালো বরং... ওই ভাবেই একবার চেষ্টা করে দেখি, করতে পারি কি না... তুমি বরং শুয়ে পড়ো চিৎ হয়ে...’ বেশ বিজ্ঞের মত বলে উঠলাম আমি... বলে ওর শরীর থেকে নেমে বসলাম পাশে। 

রিকি একটু দিদির কাছ থেকে একটু সরে শুয়ে পড়ল চিৎ হয়ে, মাথার নীচে বালিশটা টেনে নিয়ে... একবার তাকালাম দিদির দিকে... দিদির নিঃশ্বাস পড়ছে এক ভাবে... মানে দিদি সত্যিই ঘুমাচ্ছে... রিকির দিকে তাকালাম... রিকি চোখটাকে একবার বন্ধ করে ফের তাকালো আমার দিকে... যেন চোখের ইশারায় আমাকে আস্বস্ত করল সে... আমিও মাথা নেড়ে হাঁটুর ওপরে ভর রেখে উঠলাম... তারপর খুব সাবধানে একটা পা তুলে রিকির কোমরের ওপর দিয়ে নিয়ে গিয়ে রাখলাম ওর শরীরের ওপাশটায়... খেয়াল রাখলাম যাতে কোনভাবেই না আমার পা ঠেঁকে যায় দিদির গায়ে... তারপর নিজের শরীরটাকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে পা মুড়ে বসলাম ওর কোমরের ওপরে আবার আগের মত করে... আমার শরীরের নীচে তখন রিকির পেনিসটা ফের ঢুঁ মারছে... ঠিক আমার ভ্যাজাইনার মুখটার সাথে ঠেঁকে... চাপ দিতেই বুঝলাম আমার ওখানকার মুখটায় বেশ ব্যথা এখনও... আমি মুখটাকে কাঁচুমাচু করে কোন নিঃশব্দ ইশারায় ওকে বললাম, ‘ওখানে এখনো ব্যথা তো!’

একবার ফিরে দিদির দিকে তাকায় রিকি, তারপর ফিসফিসিয়ে বলে, ‘দেখ না চেষ্টা করে, খারাপ লাগবে না...’ বলে আমার দেহের নীচের দিকে হাত দুটোকে ঢুকিয়ে দিয়ে তুলে ধরে আমাকে একটু নিজের শরীর থেকে... তারপর চাপা গলায় বলে... ‘আমার বাঁড়াটাকে হাতে ধরে নিজের গুদের মুখে সেট করে নাও...’

আর বলতে হয় না আমাকে দ্বিতীয়বার... হাঁটুর ভরে নিজের শরীরটাকে একটু এগিয়ে নিই সামনের পানে... তারপর হাতটাকে নীচে ঢুকিয়ে ধরি ওর পেনিসটাকে মুঠো করে... এনে ঠেঁকাই আমার ওটার মুখটায়... একটু লাগে... মুখ তুলে তাকাই ওর দিকে... ঘাড় নাড়ে রিকি... বুঝি আমি ঠিকঠাকই করছি... মাথা নিচু করে ফের দেখার চেষ্টা করি পায়ের ফাঁকটায়... খুব একটা কিছু দেখা যায় না যদিও... আন্দাজ করে নিয়ে বার কতক ঘসে নিই ভ্যাজাইনার মুখে... ভেতরে ইতিমধ্যেই তখন রস জমে উঠেছে আবার... ওটার মুখ থেকে বেরিয়ে এসে পেনিসটার মাথাটায় মেখে যায় ওই রস... বেশ হড়হড়ে হয়ে ওঠে ওটার মাথাটা... কোমরটাকে আগুপিছু করে নিয়ে সেট হয়ে বসি... তারপর আলতো করে চাপ দিই শরীরের, পেনিসটার ওপরে... উফফফ... লাগে খুব... মুখ তুলে ফের তাকাই রিকির দিকে... নিঃশব্দ ইশারায় বোঝাবার চেষ্টা করি... ‘ব্যথা তো খুব... লাগছে... ঢোকাতে পারছি না...’

মুখ কাঁচুমাচু করে রিকিও অনুনয় করে ইশারায়... ‘দেখো না চেষ্টা করে... ঠিক পারবে...’

আবার মুখ ফেরায় নিজের পায়ের ফাঁকের দিকে... দমটাকে বন্ধ করে নিই এবার... তারপর পেনিসটাকে আমার ওখানকার মুখটার সামনে রেখে ঝট করে বসে পড়ি চাপ দিয়ে শরীরের... হড়কে ঢুকে যায় পেনিসটা আমার ভ্যাজাইনার মধ্যে এক ধাক্কায়... ‘ওওওও মাআআআআ...’ ব্যথায় কোঁকিয়ে উঠি প্রচন্ড জোরে...

ধড়মড় করে দিদি উঠে বসে বিছানায়... বড় বড় চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে আমাদের দিকে... আর আমরা চোর ধরা পড়ার মুখ করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি... দুজনেই... রিকির পেনিসটা আমার শরীরের মধ্যে সম্পূর্ণ ভাবে গেঁথে রয়েছে তখন।

‘এটা কি হলো? আমি ঘুমাচ্ছি, আর তার ফাঁকে দুজনে মিলে চোদাচুদি করছিস? লজ্জা করে না?’ আমার দিকে তাকিয়ে প্রায় খেঁকিয়ে উঠল দিদি...

আমি যে তখন কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না... তবে কি উঠে পড়বো রিকির ওপর থেকে? নাকি... প্রায় ফ্যাল ফ্যাল করে খানিক তাকিয়ে থেকে হটাৎ ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেললাম দিদির সামনে... প্রচন্ড ভয়ে আর লজ্জায়।

আমাকে ওই রকম কেঁদে উঠতে দেখবে, সেটা সম্ভবত দিদি ঠিক ঠাওর করতে পারে নি... উল্টে ওই কেমন ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল একটু... তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে আমার পীঠে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে সে, ‘এ বাবা, বোকা মেয়ে... কাঁদছিস কেন আবার... আমি আবার কি বললাম... আরে... চুপ কর চুপ কর... কাঁদার কি হল?’

আমি দু-চোখ ভরা জল নিয়ে বলতে থাকলাম, ‘সরি দিদি, আমার খুব অন্যায় হয়ে গেছে... আমি আর কক্ষনো করবো না... তুই বিশ্বাস কর... কি করে হল, আমি জানি না... হয়ে গেল... প্লিজ দিদি রাগ করিস না আমার ওপরে... আমি এক্ষুনি নেবে যাচ্ছি... প্লিজ দিদি... প্লিজ...’ বলে উঠে পড়তে গেলাম রিকির ওপর থেকে... রিকি বেচারা তো তখন না পারছে উঠতে, না পারছে শুয়ে থাকতে... ওর আরো অবস্থা খারাপ... দিদির কাছে এই ভাবে আমার সাথে ধরা পরে গিয়ে কি বলবে, সেটাই বোধহয় ভেবে পাচ্ছিলো না।

দিদি এগিয়ে এসে ধরে ফেলে, আমাকে উঠতে দেয় না রিকির ওপর থেকে... জড়িয়ে ধরে বলে... ‘দূর বোকা মেয়ে... আমি তো এমনি বললাম, চোদাচ্ছিস... বেশ করছিস... একশো বার চোদাবি... ইচ্ছা হয়েছে যখন তখন নিশ্চয়ই চোদাবি... আমাকে বলার কি প্রয়োজন? হু? আমি শুধু বলেছি কারণ আমি বাদ পড়ে যাচ্ছিলাম, তাই... সেই জন্য... পাগলী কোথাকার একটা...’ বলে আমার কাছে ঝুঁকে আমার ঠোঁটের ওপরে একটা ছোট্ট চুমু খেয়ে নেয় সে... হাত গুলো বাড়িয়ে আলতো হাতে আমার ব্রেস্টগুলো ধরে চাপ দেয়... একটু নেড়ে দেয় আদর করে...

রিকিও বোধহয় দিদির হাবভাব দেখে একটু ধাতস্থ হয়ে ওঠে... কিছু বলতে যায় ও... কিন্তু তার আগেই দিদি ওর দিকে ফিরে ওর কথা থামিয়ে দেয়... ‘থাক... তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না... যা বোঝার আমি ঠিক বুঝেছি... ও বাচ্ছা মেয়ে... কিন্তু তুমি ধাড়ী খোকা... ওকে নিশ্চয়ই সিডিউস করেছিলে করার জন্য... না?’

রিকি তবুও বলার চেষ্টা করে, ‘না... মানে...’

এবার দিদিও হেসে ফেলে ফিক করে... ‘আর মানে মানে করতে হবে না... পাশে এরকম একটা ডাগর শালী শুয়ে আছে... আবার সে কিনা ন্যাংটো হয়ে... তাকে তুমি চুদবে না... সেটাও আমাকে বিশ্বাস করতে বলো? আর যদি না করতে, তাহলে ভাবতাম, তুমি ইম্পোটেন্ট... বুঝেছ?’

এবার একটু সাহস পায় রিকি... হেসে বলে... ‘হ্যা... মানে... ওই আর কি...’

দিদি আমার দিকে ফেরে... ‘নে... ঢুকিয়েছিস যখন... এবার কর... চোদ শালাকে... নিঙড়ে নে ওর রস...’

আমিও এবার একটু সাহস পেলাম যেন... হাতটাকে রিকির বুকের ওপরে রেখে কোমরটাকে সামান্য তুলে ধরলাম ওপর করে... তারপর ফের নামিয়ে দিলাম শরীরটাকে রিকির ওপরে... আহহহহ... ওখানকার মুখটা বড্ড টাটিয়ে রয়েছে... আবার ভিষন ব্যথা লাগল... ব্যথার চোটে আমার ওখানকার ভেতরের রসও যেন শুকিয়ে যাচ্ছে মনে হল... দিদির দিকে ফিরে বললাম, ‘না রে দিদি... পারবো না... বড্ড ব্যথা করছে... ভিষন টাটিয়ে রয়েছে ওখানটা...’

দিদি এগিয়ে আমার বুকের একটা নিপিল মুখে নিয়ে একবার চুষে দিয়ে বলল... ‘এই তো দেখ, আমি তোর মাইয়ের বোঁটাগুলো চুষে দিচ্ছি... তাতে আরাম পাবি... কর না... আমি তো আছি...’

ও উৎসাহ দেয় ঠিক কথা... কিন্তু তবুও... আরো একবার চেষ্টা করতে গিয়ে দেখি, না, সম্ভব নয়... আজ কিছুতেই আর আমি পারবো না... বড্ড লাগছে ওখানে... ওকে বলি, ‘নারে দিদি... পারছি না... আজ থাক...’ বলে সত্যিই নেমে পড়ি রিকির ওপর থেকে... মুখ নামিয়ে দেখি সত্যিই আমার ওখানটা বেশ লাল হয়ে রয়েছে... সরে বসি ওদের কাছ থেকে তফাতে খানিকটা।

দিদি আর জোরাজুরি করে না আমাকে... আমি সরে যেতেই নিজেই চড়ে বসে রিকির ওপরে... একটু নিজের শরীরটাকে তুলে হাত দিয়ে রিকির পেনিসটা ধরে নিজের ভ্যাজাইনার মুখে সেট করে নেয়... তারপর পেছন দিকে পেছিয়ে গিয়ে বসে... ওর বসার কায়দায়, কেমন সট্‌ করে পেনিসটা ওর ওখানটায় ঢুকে যায় এক বারেই... দিদির মুখ দিয়ে একটা ভালো লাগার আওয়াজ বেরিয়ে আসে... ‘আহহহহ...’ রিকির উদ্দেশ্যে বলে ও, ‘ওহ্‌, কি বানিয়েছ গুরু জিনিসটাকে... আমার গুদটা যেন ভরে গেল আবার...’ তারপর আমার দিকে ফিরে বলল, ‘ইশ... মিস করলি তো... আর একবার আরাম পেতিস...’

আমি হেসে বলে উঠি... ‘না বাবা... কোন দরকার নেই... উফ্‌, কি যে লাগছিল কি বলবো তোকে... ওখানটা এখনও কি ভিষন টাটিয়ে রয়েছে...’

নিজের কোমরটাকে রিকির ওপরে চড়ে আগুপিছু করতে করতে বলে দিদি, ‘ও নিয়ে চিন্তা করিস না... প্রথমবার করলে ওরকম একটু আধটু ব্যথা হয়... কাল সকালে আমি ওখানে অ্যান্টসেপ্টিক ক্রীম লাগিয়ে দেব... ঠিক হয়ে যাবে...’ বলতে বলতে স্পীড বাড়ায় শরীর রগড়ানোর... ঝুঁকে পড়ে হাতদুটোকে ভর রাখে রিকির বুকের ওপরে... তীব্র বেগে শীলবাটার মত করে এগিয়ে পিছিয়ে চলে নিজের কোমরটাকে... আমি ওখানে বসে একবার দিদির দিকে তাকাই আর একবার রিকির দিকে... দুজনেরই মুখের ভাব দেখতে দেখতে বদলে যেতে থাকে যেন... বোঝাই যায়, ওরা দুজনেই ভিষন আরাম পাচ্ছে এই ভাবে করতে... কি মনে হয়... এগিয়ে গিয়ে দিদির দুলতে থাকা ব্রেস্টের একটায় হাত রাখি... দিদি মুখ তুলে তাকায় আমার দিকে... না থেমে হাঁফাতে হাঁফাতে বলে, ‘টেপ না... টেপ... চোষ বোঁটাগুলো... উফফফফ... বড্ড আরাম হচ্ছে রে... খুব জল ঝরছে গুদের থেকে... দেখ না দেখ... ওর কোলটা পুরো ভেসে গেছে আমার গুদের রসে... উমাহহহ... কি আরাম... এই জন্যই রিকিকে আজ রেখেছি এখানে... মনের সুখে চোদাবো বলে... বল... ভালো করি নি... তুই ও তো একবার বেশ চুদিয়ে নিলি... তোর ফার্স্ট টাইম... তোরও সিল ভেঙে গেল বল... আরাম পেয়েছিলিস না... হু?... জানি পেয়েছিলিস... আমিও যখন প্রথম করিয়েছিলাম... খুব আরাম পেয়েছিলাম... এবার থেকে দেখবি... আর লাগবে না তোর... শুধু আরাম পাবি... দেখবি কি আরাম হয় চোদালে... বারবার করাতে ইচ্ছা করবে আমার মত... উফফফফ... রিকি... নীচ থেকে তোলা দাও না... উফফফফ... মাগো... বড্ড আরাম হচ্ছে রে...’ পাগলের মত বকে চলে ও।

আমি দিদির এক নাগাড়ে ওই রকম পাগলের মত প্রলাপ বকে যাবার মধ্যেই, কি মনে হয় ওর পেছন দিকে চলে যাই, গিয়ে পেছনে থেকে দুই হাত বাড়িয়ে ওর বড় বড় ব্রেস্টদুটোকে হাতের মুঠোয় ধরে খুব জোরে জোরে টিপতে থাকি... তাতে বোধহয় দিদির আরো আরাম বেড়ে যায়... বেড়ে যায় ওর গলার আওয়াজ... ‘ইশশশশ... হ্যা তিতির হ্যা... কি সুন্দর করে টিপছিস মাইগুলো... টেপ টেপ... গায়ের জোরে টেপ... বোঁটাগুলো টেনে টেনে ধর না... উফফফফফ... মাআআআআ... আমার আবার খসছে... আহহহহহ... রিকি... কি ভিষন আরাম হচ্ছে গো... উমমমমম...’

হটাৎ রিকি দেখি আমাকে ইশারা করে সরে যেতে... আমিও ওর শরীরের ওপর থেকে সরে বসি সাইডে... হাত বাড়িয়ে দিদির কোমরটাকে ধরে এক ঝটকায় শুইয়ে দেয় বিছানায়... তারপর ওর পা দুটোকে তুলে ফাঁক করে ধরে নিজে সেট হয়ে বসে ওর সেই পায়ের ফাঁকে... নিজের পেনিসটাকে দিদির ওখানটার মধ্যে সেট করে রেখে কোমর দুলিয়ে চাপ দেয়... আর তারপর গদাম গদাম করে করতে থাকে দিদিকে... দিদি নিজের পা দুটোকে মুড়ে বুকের কাছে টেনে ধরে রাখে... আর রিকি প্রায় মিনিট তিনেক ধরে এক নাগাড়ে ওকে করে যায়... দিদি পাগলের মত মাথাটাকে এদিক ওদিক করে হেলাতে থাকে... সারা বিছানায় ছড়িয়ে থাকে ওর বড় বড় চুলগুলো... হটাৎ রিকি কেমন কঁকিয়ে ওঠে দেখি... আরো দুই একবার কোমর ওঠা নামা করিয়েই চেপে ধরে দিদির শরীরের সাথে... ওর বাটটা কেমন ঝিনিক দিয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছিল মাঝে মাঝেই... ওই ভাবে চেপে ধরে থাকা সত্তেও... দিদিও আরামে কেমন গোঁ গোঁ করে ওঠে রিকির সাথেই... তারপর দুজন দুজনের শরীরটাকে এক সঙ্গে চেপে ধরে রাখে বেশ খানিকক্ষন, শেষে রিকি এলিয়ে পড়ে দিদির ওপরে... দিদিও নিজের পা দুটোকে ছেড়ে মেলে দেয় দুই দিকে... রিকিকে নিজের বুকের ওপরে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে চুপ করে... আর আমি ওদের পাশে বসে দেখতে থাকি ওরা কি ভাবে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে হাঁপাচ্ছে... বুঝি যে ওদের দুজনেরই এক সাথে ক্লাইম্যাক্স হয়ে গেল। কেন জানি না... ভিষন ভালো লাগে আমার... দিদিকে এই ভাবে আরাম পেতে দেখে... এগিয়ে গিয়ে হাত বোলাতে থাকে ক্লান্ত দিদির মাথায়।

গ্লাস তুলে চুমুক দিতে গিয়ে দেখে পৃথা কথায় কথায় কখন গ্লাসটা খালি হয়ে গিয়েছে... ছবিটাকে বিছানায় রেখে উঠে পড়ে সে... এগিয়ে যায় টেবিলের কাছে... টেবিল থেকে বোতলটা তুলে গ্লাসে ঢালতে গিয়ে দেখে আর একটু খানিই অবশিষ্ট পড়ে রয়েছে বোতলে... আজ প্রায় পুরোটাই শেষ করে ফেলেছে ওয়াইনের বোতলটা... ফিরিয়ে রেখে দিতে গিয়েও আবার তুলে নেয় বোতলটাকে... বোতলের মধ্যের শেষ তরলটুকুও ঢেলে নেয় গ্লাসে... ‘দূর... আর এইটুকুই বা রেখে কি হবে... কাল আর একটা কিনে আনা যাবে’খন’... বলে গ্লাসটা নিয়ে ফিরে আসে বিছানার কাছে... উঠে হেলান দিয়ে বসে হেডবোর্ডটায়... গ্লাসের তরল চুমুক দিকে টেনে নেয় রেখে দেওয়া ছবিটাকে নিজের হাতের মধ্যে।
[+] 6 users Like bourses's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#22
১২।।


কথায় কথায় নেশাটা কমে এসেছিল... কিন্তু নতুন করে ওয়াইনটা পেটে পড়তেই আবার চাগাড় দিয়ে উঠলো সেটা...... বেশ হাল্কা লাগে মাথাটা... ভালো লাগাটা ছেয়ে থাকে মনের মধ্যে... সেই সাথে নিজেকে তার ভালোবাসার মানুষটার কাছে মেলে ধরতে পেরে নিজেকেও যেন খুব হাল্কা মনে হয় পৃথার... দরকার ছিল... এটার খুব দরকার ছিল... এই ভাবে ভেতরের সমস্ত কিছু উগরে দেওয়ার... মনে মনে ভাবে। হাতে ধরা ছবিটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে... কে জানে, এটা হয়তো এক ধরণের পাগলামীই তার... কিন্তু এই পাগলামীটাও তার একেবারেই নিজস্ব... সম্পূর্ণভাবে শুধুই তার... এ পাগলামী সে জানে এই চার দেওয়ালের মধ্যেই সীমা বদ্ধ থাকবে চিরদিন... বাইরের পৃথিবীর কেউ জানবেও না তার মনের মানুষের কথা হয়তো, কখনও। হয়তো এটাই প্রয়োজন, সমস্ত মানুষেরই... মনের মধ্যে কোথাও একটা এই রকম পাগলামী রেখে দেওয়ার... যাতে ভেতরের জমে থাকা সমস্ত ভার সেই মানুষটার কাছে উগড়ে দিয়ে নিজে হাল্কা হওয়া যায়।

ভালোবাসা... পৃথা কি সত্যিই কখনও ভেবেছিল যে ও কখনও কারুর প্রেমে পড়বে? কই, ভাবে নি তো? কতই না ঘুরেছে জীবনে... কতই না মানুষের সাথে আলাপ হয়েছে তার... হয়তো শারীরিক সম্পর্কও গড়ে উঠেছে কারুর সাথে... কিন্তু মন?... আগে তো কখনও সে এই ভাবে ভাবেই নি... নিজেও খুব সহজ খোলা মেলা জীবন কাটিয়েছে... সেই ভাবেই বড় হয়েছে ও... কিন্তু কি যে ঘটে গেল ছবির ওই মানুষটাকে দেখে কে জানে... তাও কি না এমন একজনের প্রেমে পড়ে গেল, যে নেই... যার কোন অস্তিত্বই নেই তার চারপাশে... তবুও সেই তাকেই সে মনটা দিয়ে ফেলল। ও জানে, মা যদি ওর এই পাগলামী জানতে পারে, কি যে করবে কে জানে... নাঃ, কেউ জানবে না... দ্বিতীয় কোন প্রানীও জানবে তার মনের কথা... কোনদিনও না... এ শুধু তার... শুধুই তার... হয়তো ছবির মানুষটাও জানতে পারবে না কখনো!

ভাবতে ভাবতে হাতের মধ্যে ধরা ছবিটার দিকে তাকায় পৃথা... গাঢ় গলায় বলে ওঠে... ‘তুমি শুনতে পাচ্ছো? বুঝতে পারছো কি করেছ আমার মনটার... হ্যা, হ্যা... এটাই সত্যি... আমি শুধু তোমার... এই তিতির শুধু তোমার... আর কারুর হবে না কখনও। জানি তুমি হয়তো বলবে, এখনও জীবনটা পড়ে রয়েছে... ভবিষ্যতে হয়তো আরো অনেকের সাথে আলাপ হবে... কারুর সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠতেই পারে... ব্যাগারা, ব্যাগারা... অনেক কিছুই বলতে পারো তোমার তিতিরকে, কিন্তু একটা জিনিস শুনে রাখ... যেই আসুক কখনও আমার জীবনে, কিন্তু তুমি... তুমি সারা জীবন আমার থাকবে... শুধুই আমার... আর কারুর না... আমার এই বুকের মধ্যে রেখে দেবো তোমাকে... এই ভাবে...’ বলতে বলতে ছবিটা চেপে ধরে নিজের পায়রার মত নরম বুকগুলোর ওপরে, পরম ভালোবাসায়... ধরেই থাকে চেপে নিজের বুকের সাথে।

নেশার প্রকপে বেশ ভারী হয়ে উঠেছে চোখদুটো... মেলে রাখতে কষ্ট হচ্ছে... বরং চোখগুলোকে বন্ধ করে মাথাটা বালিশে হেলান দিয়ে রাখলে বেশ ভালো লাগছে... তাই মাথাটাকে বালিশের ওপরে হেলিয়ে রেখে চোখ বন্ধ করে রাখে পৃথা... বিড় বিড় করে বলতে থাকে... ‘তুমি কি ভাবো? আমি বুঝতে পারি না? সব বুঝতে পারি... জানো... আমরা মেয়েরা না যেটা সহজেই বুঝে যাই... তোমরা সেটা ভাবতেই পারো না... বোঝা তো দূরের কথা... বুঝেছ? আরে বাবা... গন্ধটা? তোমার গায়ের গন্ধটা কোথায় যাবে?... প্রতিটা পল আমি অনুভব করি তোমার উপস্থিতি আমার চারপাশে... সত্যি... বলি না কেন? ইচ্ছা হয় না... ওটা একেবারে আমার ভেতরের অনুভূতি... হ্যা... নিশ্চয় ভাবছ নেশার ধুমকিতে ভুলভাল বকছি... না গো... নেশা হয়েছে ঠিকই... কিন্তু ভুল বকছি না... আমি বুঝতে পারি... যখনই ঘরে ফিরি... তুমি থাকো... ঠিক আমার কাছটাতে... তাই তো বিশ্বাস কর... আমার এতটুকুও একা থাকতে ভয় লাগে না এখানে... আমি তো জানি, আমার জন্য তুমি আছো... তাই না গো?’

মাথাটা বালিশ থেকে জোর করে প্রায় তুলে চোখ বন্ধ করা অবস্থাতেই হাতের গ্লাসটাকে মুখের কাছে এনে তরলে চুমুক দেয় সে... তারপর ফের পেছন দিকে হেলিয়ে রেখে বলে... ‘আচ্ছা... একটা প্রশ্ন করবো... বৌদি জানে আমার কথা... প্লিজ... বৌদিকে রাগ করতে বারণ করো, কেমন... আসলে কি জানো... আমি চাই নি কিন্তু এই ভাবে মনটা আমার তোমাকে দিয়ে ফেলি... কিন্তু কি করে যে কি হয়ে গেল... কে জানে? বৌদির কাছে না আমার হয়ে সরি বলে দিও... কেমন... বলো যে পৃথা একদম খারাপ মেয়ে নয়... ও খুব ভালো মেয়ে... সত্তি সত্তি খুব ভালো মেয়ে... তোমাকে খুব ভালোবাসে... বলো... হ্যা... প্লিজ বৌদিকে রাগ করতে বারণ করো... বলবে তো আমার হয়ে?’

খানিক চুপ করে থাকে পৃথা... তারপর ফের বলে ওঠে প্রায় অস্ফুট স্বরে... ‘খুব গায়ে পড়া মেয়ে ভাবছ... না? অবস্য তোমাকে দোষ দেওয়া যায় না... ভাবাটাই স্বাভাবিক... এই ভাবে তুমি না চাইতেও তোমাকে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে যাচ্ছি... এতে নিশ্চয়ই আমাকে ভিষন সহজ লভ্য একটা মেয়ে ভেবে নিয়েছ... ঠিক যেমন রমেশ ভেবেছিল... ভেবে... ও... তোমাকে তো রমেশের কথাই বলা হয় নি এখনও... আসলে বোলতাম ঠিকই... এবারেই তো রমেশের কথায় আসতাম... দাঁড়াও... একটা সিগারেট ধরিয়ে নিই আগে...’ বলতে বলতে ছবিটা বিছানায় রেখে উঠে বসে পৃথা... উঠে গিয়ে টেবিল থেকে সিগারেটএর প্যাকেটটা খুলে সিগারেট নিতে যায়... ‘এ বাবা... আর মাত্র তিনটে পড়ে রয়েছে... ঠিক আছে... এখন একটা খাই... কালকের পটির জন্য একটা থাকলেই হবে... সেখানে দুটো থাকবে... যথেষ্ট...’ সিগারেট ঠোঁটে লাগিয়ে লাইটার দিয়ে জ্বালিয়ে নেয়। কি মনে করে নিজের বুকের ওপরে হাত রাখে পৃথা... নরম বুকদুটোকে হাতের তালুতে ধরে ওজন নেবার মত করে তুলে ধরে সে... ‘বেশ ভারী হয়েছে ব্রেস্টদুটো... আজ তারিখ কত হলো? কে জানে... আজ আর ধুমকিতে মনেও পড়ছে না তারিখের কথা, আর সেই সাথে ক’দিন ধরে মাঝ মধ্যেই তলপেটটা কেমন টেনে খিঁচে ধরছে... মনে হচ্ছে খুব শিগগিরই শরীর খারাপ হবে...’ ভাবতে ভাবতে ফিরে আসে বিছানায়... সাথে অ্যাস্ট্রেটা আনতে ভোলে না...

বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে গ্লাস থেকে আরো খানিকটা ওয়াইনে সিপ করে সে... তারপর সিগারেটএ একটা টান দিয়ে ভালো করে উঠে বসে...

সেবার আমাদের চৌরিখ্যাঙ্গ বেস ক্যাম্প অবধি এক্সপীডিশন ছিল... হুমমমম... অগস্ট মাস ছিল বোধহয়... দারুন ওয়েদার ওই সময়টায় ওখানে... আমরা সব শুদ্ধু ছিলাম যত দূর মনে পড়ছে প্রায় জনা কুড়ির দল... চৌরিখ্যাঙ্গ জানো তো... ওটা এভারেস্টের সাউথের দিকে পড়ে... কত?... প্রায় ধরো সাড়ে পাচ হাজার মিটার হাইট হবে... নেপাল হয়ে যেতে হয়... দুর্দান্ত জায়গা... আমরা শুরু করেছিলাম ইয়োকসাম থেকে... সেখান থেকে স্যাচেন... তারপর বাখিম... বাখিম পৌছে ওখান থেকে যেতে হয়েছিল শোকা... শোকা থেকে ফেড্যাং হয়ে জংগ্রি... তারপর চৌরিখ্যাঙ্গ... একদম নির্ঝঞ্ঝাট গিয়েছিলাম, জানো... পথে কোন বিপদ আপদ, কিচ্ছু হয় নি। পুরো রুটটা আমরা কি দারুন মজা করতে করতে গিয়েছিলাম তোমাকে কি বলবো... এতটুকুও কষ্ট মনে হয় নি ওই পুরো পথটা... ওই টিমেই আমাদের টিম লিডার ছিল রমেশ... একেবারে স্টাউট চেহারা... একটু কম কথা বলতো... মাউন্টেনিয়ারিংএর ব্যাপারে একেবারে চৌখশ ছেলে... আর তুমি তো বুঝতেই পারছো... আমি কেমন বাচাল মেয়ে... সবার সাথেই হইহই করতে ভালোবাসি... এর পেছনে লাগছি... ওর পেছনে লাগছি... প্রত্যেককে খুব জ্বালাতাম... অবস্য তাতে কারুর আমার প্রতি কোন অবজেকশন ছিল না... বেশ এঞ্জয়ই করতো ওরা... বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল সবার সাথে... ওই টিমে তো দুজন সুইডিশ মেয়েও ছিল... আমার সাথে খুব ভালো সম্পর্ক তৈরী হয়ে গিয়েছিল। সবই ঠিক চলছিল... কিন্তু গন্ডগোলটা হল ফেরার সময়। জংগ্রি থেকে রুটটা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে... একটা ফিরে গেছে আবার ফেড্যাংএর দিকে আর ওখান থেকেই আর একটা রুট ঘুরে চলে গেছে গোয়েছালার দিকে। আমরা জংগ্রি এসে এগোবো... হটাৎ উঠল ঝড়... সে ঝড় তোমাদের এখানকার মত নয়... একবারে তুষার ঝড়... সে যে কি জিনিস না দেখলে বুঝতে পারবে না... চতুর্দিক সাদা... কিচ্ছুটি নজরে আসে না... কে যে কোথায় ছিটকে গেলাম সেই মুহুর্তে জানি না... যখন ঝড় থামলো তখন দেখি শুধু আমি আর রমেশ... আর কেউ কোথাও নেই... এদিকে অন্ধকার নেমে আসবে আর কিছুক্ষনের মধ্যেই... পাহাড়ে অন্ধকার নামে একেবারেই ঝুপ করে... বেশ বুঝতে পারছিলাম আমরা দুজনে যে আসল রুট থেকে সরে এসেছি... এখন ফেরত যাওয়া এই সময় সম্ভব নয়... রমেশ অনেক করে চেষ্টা করল রেডিওতে ওদের ধরতে... কিন্তু সিগন্যালও পাচ্ছিলো না... সে এক বিদিগিচ্ছিরি অবস্থা... আমি তো জীবনেও এই রকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়িনি... সেটাই আমার প্রথম বেস ক্যাম্প এক্সপীডিশন্‌... রমেশকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এখন কি হবে?’

ও কিন্তু অদ্ভুত ভাবে মাথা ঠান্ডা করে রেখেছে দেখি... যেন কোন টেনশনই নেই ওর মধ্যে... কি রকম নিরুদ্বিগ্ন গলায় বলল, ‘ডোন্ট ওয়রি... একটা রাত একটু কষ্ট করতে হবে... কাল সকাল বেলায় আমরা আবার ঠিক রুটে ফিরে যাবো... এখন এগোনো সম্ভব নয়... আর কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্ধকার হয়ে যাবে... তখন এগুতে গেলে অনেক বিপদ... তার চেয়ে আজকের রাতটা এখানে ক্যাম্পিং করে কাটিয়ে দেওয়ায় যাবে’খন।’

ও টিম লিডার... তার ওপরে যথেষ্ট এক্সপীরিয়েন্সড্‌... তাই ওর ওপর নির্ভর করা ছাড়া আমার দ্বিতীয় পথও নেই... আমরা পীঠ থেকে সব মাল পত্র নামিয়ে ওখানেই টেন্ট খাটিয়ে ফেললাম... ও তাও বেশ কয়েক বার ট্রাই করে গেল রেডিও সিগন্যাল পাবার আশায়... কিন্তু কোথায় কি... ঝড় না হলেও, আবহাওয়া এতটাই খারাপ যে কিছুতেই সিগন্যাল পাওয়া যাচ্ছিল না... অগত্যা... সে রাতের জন্য তৈরী হলাম টেন্টে থাকার জন্য।

সাথে তো আমাদের ড্রাই ফুড থাকেই... সেটা দিয়েই মোটামুটি ডিনার করে নিলাম টেন্টের মধ্যে বসে... রমেশের হোভারস্যাকে রামের বোতল ছিল... ও মাঝে মধ্যেই একটু একটু করে মারছিল বোতলটার থেকে... আমি প্রথমে ঠিক চাইতে পারিনি... কিন্তু এত ঠান্ডা যে কি বলবো... মনে হচ্ছিল যেন হাত পা জমে যাবে... গায়ের ওপর অত মোটা সুট্‌ থাকা সত্তেও... ওই বাড়িয়ে দিল বোতলটা আমার দিকে... বলল... ‘এটার থেকে একটু মেরে নাও... ঠান্ডাটা কাটবে একটু...’

আগে কখনও কোনদিন লিকার টেস্ট করি নি... মুখে নিতেই মনে হল যেন বমি হয়ে যাবে... ইশ্‌... কি তেঁতো... ওই টুকু মুখে পড়তেই যেন মনে হল গলাটা জ্বলে গেল আমার... তাড়াতাড়ি রমেশের হাতে বোতলটা ফিরিয়ে দিয়ে বললাম, ‘ইশ্‌, কি বিচ্ছিরি খেতে... আমি খেতে পারবো না...’

রমেশ কিন্তু বোতলটা ফিরিয়ে নিল না আমার হাত থেকে... বলল... ‘যতই খারাপ লাগুক... তবুও... একটু একটু করে খাও... নয়তো এই ঠান্ডায় জমে যাবে... অসুধের মত করে অন্তত খেয়ে নাও...’

ও বলা সত্তেও, ভেবেছিলাম খাবো না... কিন্তু সত্যিই এত ঠান্ডা লাগছিল যে ওর কথা আর ফেলতে পারলাম না... বোতলটা নিয়ে ফের চুমুক দিলাম আরো একবার... মিথ্যা বলবো না... এবারে আর অতটা খারাপ লাগলো না... গন্ধটা নাকে লাগলো ঠিকই... কিন্তু টেস্টটা আগের মত অতটা বিচ্ছিরি মনে হল না... তারপর আরো বেশ কয়একবারই চুমুক মারলাম বোতল থেকে।

এরপর কথায় কথায় আরো কতবার যে চুমুক মেরেছি ওর হাত থেকে নিয়ে খেয়াল নেই... কিন্তু খানিক পর থেকেই বুঝলাম সেই আগের মত ঠান্ডা আর কিন্তু লাগছে না আমার... বরং মোটা পশমের জামার ভেতরে বডিটা বেশ হিটেড হয়ে উঠেছে... খুব বকবক করছিলাম, জানো... সেটা যে নেশার ধুমকিতে সেটা অবস্য বুঝিনি... মাথাটাও বেশ ভার ভার লাগছিল আমার... মনটা যেন খুব খুশি হয়ে গিয়েছে।

খানিক পর রমেশ আমাকে বলল, ‘শুয়ে পড়... শুধু শুধু বসে থেকে লাভ কি? কাল খুব সকালে বেরিয়ে পড়তে হবে...’

আমিও কোন দ্বিমত না করে শুয়ে পড়লাম স্লিপিংব্যাগটা খুলে নিয়ে... ওটার ভেতরে আর ঢুকলাম তখনই... কারণ রামের এফেক্টএ তখন গরম না লাগলেও, ঠান্ডাও লাগছে না আর। শুয়েই বোধহয় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম... যতই হোক... সারাদিনের পীঠের ওপর অতটা লোড নিয়ে ট্রেকিংএর ক্লান্তি তো আছেই... তার ওপর অতটা রাম পেটে গেছে... ভাবলাম পরে যদি ঘুম ভাঙে, ঠান্ডা লাগে, তাহলে না হয় ব্যাগের মধ্যে ঢুকে যাব’খন।

কতক্ষন ঘুমিয়েছিলাম বলতে পারবো না... হটাৎ মনে হল আমার জামার ফাঁক গলিয়ে বুকগুলো কেউ ধরে টিপছে... ধড়মড় করে উঠে বসার চেষ্টা করলাম আমি... কিন্তু পারলাম না... আমার শরীরের ওপরে তখন রমেশ চেপে বসে আছে... জোর করে শুইয়ে দিল আমাকে... দেখি কখন আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে জ্যাকেটের চেনটা টেনে নামিয়ে দিয়েছে... ভেতরের মোটা জামাটাও তুলে দিয়েছে গলা অবধি... ব্রাটাও খোলা... উদলা ব্রেস্টগুলো হাতের মুঠোয় ধরে জোরে জোড়ে চটকাচ্ছে... আমি চেষ্টা করলাম ওকে সরিয়ে দিতে... কিন্তু ওর শক্তির কাছে আমি যেন তুচ্ছ... আর তার ওপরে পেটে রামের প্রভাব... ইচ্ছা থাকলেও যেন হাত পায়ে সে জোর পাচ্ছিলাম না... বার বার করে চিৎকার করে ওকে বারণ করতে লাগলাম... আমার সাথে ওই রকম না করতে... কিন্তু ওর মধ্যে তখন যেন কি এক আসুরিক শক্তি ভর করেছে... আমার হাত দুটোকে মাথার ওপরে চেপে ধরে মুখ নামিয়ে একটা নিপিল মুখের মধ্যে পুরে নিয়ে চোঁ চোঁ করে চুষে যেতে থাকলো... উফফফ... কি বলবো তোমাকে জানি না... সেটা রামের এফেক্ট না চোষার... আমার সারা শরীরটা যেন আমার বশে নেই... কি অদ্ভুত ভালো লাগতে লাগল... মুখে যতই না না বলি না কেন... জোর করে বাধা দেবার শক্তি বা ইচ্ছা, কোনটাই যেন খুঁজে পাচ্ছিলাম না আমি... কেমন ওর কাছে নিজের শরীরটাকে ছেড়েই দিয়েছিলাম... আর সেই সুযোগে ও আমার ব্রেস্ট বদলে বদলে চুষে যেতে থাকলো আমার নিপিলগুলোকে... পরে কখন আমার হাত ছেড়ে দিয়ে হাতের মুঠোর ব্রেস্টগুলো চেপে ধরে চটকাতে শুরু করেছে জানি না... আমি কিন্তু হাত তুলেই রইলাম ওর মলেস্টেশনের কাছে... বাধা দেবার কথাও যেন ভুলে গিয়েছিলাম সেই মুহুর্তে... একটা ভিষন ভালো লাগা ছেয়ে ফেলেছিল আমার দেহটাকে।

এর ফাঁকেই ও আমার ট্রাউজারটা বেল্ট থেকে খুলে হিঁচড়ে টেনে নামিয়ে দেয় খানিকটা... একটা পায়ের থেকে খুলে নেয় ওটাকে... সেই সাথে প্যান্টিটাও খুলে ফেলে এক ঝটকায় ওই প্যান্ট খোলা পা দিয়ে... আমি তখন বাধা দেব কি... ওর সাথে যেন আমিও সঙ্গত করে যাচ্ছিলাম... শরীর থেকে পোষাকগুলো খুলে ফেলতে সাহায্য করছিলাম দেহটাকে তুলে ধরে... তখন আমার পরনের একটা পায়ে প্যান্টের পা আর প্যান্টির অংশটা আটকে রয়েছে... দুই দিকে আমার পা দুটোকে ধরে ছরিয়ে দিয়ে আমার ওপর আবার উঠে পড়ল... শুয়ে পড়ল বলা যেতে পারে আমার শরীরটার ওপরে... হাত বাড়িয়ে নিজের ট্রাউজারের চেনটাকে টেনে নামিয়ে দিয়ে বের করে নিয়ে এল ওর পেনিসটা... আমি বুঝতে পারছি এবার কি হতে চলেছে... কিন্তু বাধা দেবার চেষ্টাও করলাম না... ততক্ষনে আমার মধ্যে সেন্স ফিরে এসেছে... ভেবে দেখলাম... এখন যদি বাধা দিই... কোন ফল হবে না... ওই রকম একটা ডেসার্টেড জায়গায় কেউ নেই আমাকে বাঁচাবার... অথচ কাল রমেশের সাহায্যেই আমাকে ফিরতে হবে... তাই চুপ করে পড়ে রইলাম আমি... আর ও, ওর পেনিসটাকে আমার ভ্যাজাইনার মধ্যে ঢুকিয়ে দিল... আহহহহ... কোঁকিয়ে উঠলাম আমি... কি করবো... তখনও তো ওখানটা শুকনোই... সেই ভাবে তো ভেজেই নি... তাই ও ভাবে ঢোকাবার চেষ্টা করলে হয় না কি? 

রমেশও বোধহয় বুঝলো যে এ ভাবে হবে না... দেখি ফের উঠে বসল ও... তারপর আমার নীচের দিকে নেমে গিয়ে পা দুটোকে দুই দিকে টেনে আরো ফাঁক করে দিয়ে গুঁজে দিল ওর মুখটাকে আমার ওখানটায়... আহ্‌... ওখানে রমেশের মুখ পড়তেই যেন কারেন্ট মারল আমার শরীরের মধ্যে... আমি নিজের থেকেই পা দুটোকে বুকের কাছে টেনে তুলে ফাঁক করে মেলে ধরলাম ওর মুখের সামনে... রমেশ প্রাণ ভরে চুষে চলল আমার ভ্যাজাইনাটাকে... জিভ দিয়ে চেটে দিতে লাগল ওটাকে ওপর থেকে নীচ অবধি... জিভটাকে নাড়াতে লাগলো আমার ক্লিটটার ওপরে... আমার মনে হল যেন পাগল হয়ে যাব আরামে... আমি হাত বাড়িয়ে খামচে ধরলাম রমেশের মাথাটা আমার ওখানটায়... নিজেই কোমরটাকে তুলে ধরলাম নীচ থেকে... বুঝতে পারছিলাম... ওখান থেকে ভিষন ভাবে রস বেরুতে শুরু করেছে ততক্ষনে... হড়হড়ে হয়ে উঠেছে ওটার পুরো ভেতরটাই... শেষে নিজেই বলে উঠলাম... ‘আর চুষতে হবে না... নাও স্টার্ট ফাকিং মী... আই অ্যাম ওয়েট এনাফ... পুট ইট ইন্সাইড মী...’

এতটা বোধহয় ও’ও আশা করে নি... আমাকে এই ভাবে বলতে দেখে মুখ তুলে আমার দিকে তাকালো ও... তারপর আর দ্বিতীয়বার আর কিছু বলতে হল না... উঠে এসে নিজের পেনিসটাকে আবার সেট করল আমার ওখানটায়... এবারে আর লাগল না আমার, একেবারেই... এক নিমেশে ঢুকে গেল রমেশের পেনিসটা আমার ওখানটার মধ্যে... উফ্‌... ওই রকম একটা ফাঁকা জায়গায়... বরফের মাঝে... টেন্টের মধ্যে... সত্যিই বলছি... কি ভিষন ভালো লাগছিল করতে... যতটা পারলাম পা দুটোকে দুই পাশে মেলে ধরে ওর ইনসার্সনটা নিতে থাকলাম নিজের শরীরের মধ্যে... ওকে জড়িয়ে ধরলাম আমি দুই হাতে... পা দুটোকে কম্বোলের ওপরে ভর রেখে তুলে তুলে ধরতে লাগলাম কোমরটা ওর কোমরের দিকে... কিন্তু বেশিক্ষন সুখটা পেলাম না, জানো?... আমার হবার আগেই ও হটাৎ শক্ত হয়ে গেল... ঠেসে ধরল ওর কোমরটাকে আমার শরীরের সাথে... অনুভব করলাম গলগল করে ইজ্যাকুলাট করছে আমার মধ্যে... আমি পা দিয়ে ওর শরীরটাকে কাঁচি মেরে ধরলাম... চেষ্টা করলাম নিজের শরীরটাকে ওর সাথে যতটা সম্ভব ঘসে আরামটাকে নিয়ে আসা যায়... কিন্তু ও ইজ্যাকুলেট করেই কেমন নেতিয়ে গেল... কেমন যেন পুরো ব্যাপারটা শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে গেল... তারপর আমাকে ছেড়ে উঠে পড়ল।

আমি ওই ভাবেই আরো বেশ খানিকক্ষন শুয়ে রইলাম... মনে মনে ভাবলাম যদি আমাকে এই ভাবে দেখে আরো একবার করে... কিন্তু কোথায় কি... ও ওর স্লিপিং ব্যাগের মধ্যে ঢুকে শুয়ে পড়ল... একবারের জন্যও আমার দিকে ফিরে তাকালোও না।

আমি আস্তে আস্তে উঠে বসে একটা রুমাল বের করে ভ্যাজাইনাটাকে মুছে নিলাম... হড়হড়ে রসে ভরে গেল রুমালটা... সেটাকে ফেলে দিলাম ছুড়ে এক পাশে... তারপর জামা প্যান্ট পড়ে আমিও স্লিপিংব্যাগের মধ্যে ঢুকে শুয়ে পড়লাম... শুয়ে পড়লাম ঠিকই কিন্তু ঘুম আর এলো না... জেগেই কাটিয়ে দিলাম বাকি রাতটা।

সকালে উঠে রমেশ একেবারে নরমাল... যেন কিছুই ঘটে নি রাত্রে... রেডিও চালিয়ে সিগন্যাল পাবার চেষ্টা করল একটু... সিগন্যালটা পেয়েও গেল... আমাদের লোকেশন জানিয়ে মেসেজ করে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল... ‘নাও... গেট রেডী... উই হ্যাভ টু মুভ ফাস্ট... দে আর ওয়েটিং ফর আস...’ বলে নিজের হ্যাভারস্যাক গুছিয়ে নিতে লাগল...।

আমিও আর একটাও কোন কথা তুললাম না রাতের ব্যাপারে... চুপচাপ নিজের লাগেজ গুছিয়ে নিলাম... টেন্ট ভেঙে ফোল্ড করে আমরা রওনা হয়ে গেলাম টিমের উদ্দেশ্যে।

মুখে কিছু না বললেও, রমেশ নিশ্চয় ভেতর ভেতর একটু টেন্সডই ছিল... আমরা যখন টিমের সাথে মিট করলাম, ও দেখি একটু এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে আমাকে... কিন্তু আমি ব্যাপারটায় আর কোন গুরুত্ব দিই নি... কেনই বা দেবো... আমিও যেন কিছুই হয় নি, এই ভাবেই বাকিদের সাথে মিশে গিয়েছিলাম... কয়েক জন অবস্য আমাকে প্রশ্ন করেছিল যে রাত্রে কোন অসুবিধা হয়েছে কি না সেই জন্য... আমি এড়িয়ে গিয়েছি তাদের প্রশ্ন... কি হতো বলো তো ব্যাপারটা নিয়ে জল ঘোলা করে? আর এটা তো ঠিক, আমারও তো সমর্থন ছিল... প্রথম দিকে না হলেও... পরে তো আমিও রমেশের সাথে কোয়াপোরেট করেছি... মেলে দিয়েছিলাম নিজেকে ওর কাছে... ও সুখ দিতে পারেনি আমাকে, সেটা ওর অপারগতা... অ্যাম আই রং? হোয়াট ডু ইয়ু থিঙ্ক?

বাড়ি ফিরে যে একেবারে টেনশনে ছিলাম না তা বলবো না... মা’কে কিছু বলতেও পারছি না... অথচ এক্সপীডিশন থেকে বাড়ি ফিরতে প্রায় আরো দিন সাতেক লেগে গিয়েছিল... এর মধ্যে কোন কন্ট্রাসেপ্টভ পিল খাবো... সেটাও সম্ভব হয় নি। কিছু দিন পর পিরিয়েড হতে যেন নিশ্চিন্ত হলাম... একটা বিরাট বোঝা নেবে গিয়েছিল মাথা থেকে... আসলে যদিও জানি যে আমার মোটামুটি সেফ টাইমই চলছিল... আগের পিরিয়েডটা বেশ অনেক দিন আগেই হয়েছে... তবুও... টেনশন তো হয়ই... না? 

কথা বলতে বলতে বড় বড় হাই ওঠে পৃথার... হাতের গ্লাসের দিকে তাকিয়ে দেখে তখনও গ্লাসের নীচে একটু ওয়াইন পড়ে রয়েছে... কি মনে করে আর খায় না সেটা... গ্লাসটাকে কোনরকমে পাশে হেলে, রেখে দেয় বেডসাইড টেবিলটার ওপরে... সিগারেট অনেক আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল... তাই অ্যাশট্রেটাও ঠেলে কাছ থেকে খানিক দূরে সরিয়ে দেয় বিছানায়... তারপর হড়কে নেমে যায় নীচের পানে... বালিশটাকে কোন রকমে মাথার নীচে টেনে নিয়ে ঢলে পড়ে পাশ ফিরে... হাত পা ছড়িয়ে এলিয়ে দেয় শরীরটাকে নাইট ল্যাম্পের নিলাভো রঙে রাঙানো বিছানার ওপরে... জড়ানো গলায় কোনরকমে বলে ওঠে... ‘গুড নাইট সোনা... আর পারছি না... এবার একটু ঘুমাবো...’

ছবিটাকে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে হারিয়ে যায় গভীর ঘুমের রাজ্যে... ওই ভাবেই বেঁকে চুড়ে পড়ে থাকে বিছানার ওপরে... ঘরের নিলাভো আলোয় সাদা বিছানার ওপরে একেবারে জন্মদিনের পোষাকে... দেখে যেন মনে হতে লাগলো একটা নীল পরি শুয়ে রয়েছে রাতের শেষে।

ঘুমের মধ্যেই পৃথা শুনতে পায় একটা গভীর স্বর বহু দূর থেকে তার নাম ধরে খুব চাপা গলায় থেমে থেমে যেন ডাকছে... ‘তিতির... তিতির... ঘুমালে?’

‘উ...’ সাড়া দেয় পৃথা... ঘুমের মধ্যেই...

তার মনে হয় যেন স্বরটা তাকে বলছে... ‘এ ভাবে ঘুমালে হাতে ব্যথা হবে তো... ভালো করে শোও...’

‘হু...’ বলে ফিরে চিৎ হয়ে যায় পৃথা... বুকের মধ্যে তখনও ধরা থাকে ছবিটা।

তার মনে হয় কেউ যেন আস্তে আস্তে, খুব সাবধানে ওর বুকের ওপর থেকে হাত ছাড়িয়ে ছবিটাকে টেনে বের করে নিচ্ছে... হাতের মুঠো আলগা করে দেয় ঘুমের মধ্যেই... হাতগুলোকে শরীরের দুই পাশে মেলে ভালো করে শোয়... বিড়বিড় করে বলে... ‘আমি জানতাম তুমি আছো... আই ক্যান ফিল ইয়ু... তোমার গায়ের ওই ভিষন অ্যাট্রাক্টিভ ম্যানলী গন্ধটা... আই ক্যান স্মেল ইয়ু...’

বলে ঘুমের ঘোরে... কিন্তু কোন উত্তর পায় না...

‘ইয়ু আর স্টিল দেয়ার... না?’ ফের বিড়বিড় করে ওঠে পৃথা... নেশা আর ঘুম যেন জড়িয়ে ধরেছে তাকে... ‘টাচ মী... প্লিজ... জাস্ট টাচ মী ওয়ান্স... ওন মাই টিটি...’

পৃথার কথায় কি সত্যিই কোন কায়াহীন হাত ইতস্থতঃ করে তাকে ছুঁতে?

আবার ঘুমের মধ্যেই বলে ওঠে পৃথা... ‘প্লিজ হানি... প্লিজ... জাস্ট টাচ মাই টিট্‌... আই ওয়ান্ট টু ফীল্‌ ইয়ু ওন মী... প্লিজ...’

এবার যেন সত্যিই তার মনে হয় একটা হাতের ছোয়া লাগে মেলে রাখা বুকের একটায়... খুব আলতো... কিন্তু ভিষন ভাবে যেন সত্যি... চোখ বন্ধ থাকলেও ঠোটের ওপরে একটা নরম হাসি ভেসে ওঠে পৃথার... ‘হুম্‌... ইয়েস... জাস্ট লাইক দ্যাট... আহ্‌... আই ক্যান ফীল ইয়ু... নীড দেম... নীড মাই টিট্‌স...’

অশরীরি হাত আলতো চাপ দেয় যেন তার খোলা বুকে... ভিষন... ভিষন ভালো লাগায় ভরে যায় পৃথার মনটা... বিড় বিড় করে আবার বলে ওঠে সে... ‘নাও... সাক ইট... সাক মাই নিপি... আই ওয়ান্ট ইয়ু টু ডু দ্যাট... সাক ইট... লিক ইট উইথ ইয়োর টাং...’

পৃথার মনে হয় তার সুগঠিত বুকের একটা বোঁটা ভিজে ওঠে একটু... একটা অদ্ভুত উষ্ণ ভেজা ছোয়া লাগে নিজের বুকের বোঁটাটায়... ‘আহ্‌, আই লাভ ইয়ু হানি... লাভ ইয়ু...’ বলতে বলতে আরো গভীর ঘুমের মধ্যে ঢলে পড়ে সে... হারিয়ে যায় ঘুমের অতলে...

[+] 4 users Like bourses's post
Like Reply
#23
১৩।।


ঘুম ভাঙে বেশ বেলা করে পৃথার... খানিকক্ষন চুপ করে শুয়ে থাকে বিছানায়... মাথাটা এখনও বেশ ভার হয়ে রয়েছে... কালকে একটু বেশিই খাওয়া হয়ে গিয়েছিল ওয়াইনটা... চুপ করে শুয়ে ভাবতে থাকে... ‘নাঃ... উঠি... শুয়ে থাকলে হবে?’ ভাবলেও, আরো খানিকক্ষন শুয়েই থাকে বিছানায়... মাথা তুলে দেওয়ালের ঘড়িটা দিকে তাকায়... প্রায় সাড়ে দশটা... ইচ্ছা না করলেও প্রায় জোর করেই শরীরটাকে টেনে তুলে বসে... নামতে যায় বিছানার থেকে... ‘আরে? মশারী আবার কখন খাটালাম?’ অবাক হয় তার চারপাশে মশারী টাঙানো দেখে... মনে করতে পারে না কখন সে মশারী টাঙিয়েছে বলে... থ’ হয়ে খানিক বসে থাকে মশারীর দিকে তাকিয়ে... কিছুতেই মনে করতে পারে না সে কখন টাঙালো মশারীটা... তারপর কাঁধ শ্রাগ করে... ‘নাঃ... সত্যিই বড্ড নেশা হয়ে গিয়েছিল কাল রাত্রে... নিজেই কখন মশারী টাঙিয়েছি খেয়াল করতে পারছি না...’ ভাবতে ভাবতে মশারীর কোনটা তুলে বেরিয়ে আসে... দেওয়ালের কোনায় বাঁধা দড়ির ফাঁস টান দিয়ে খুলে দেয়। হাঁটা লাগায় বাথরুমের দিকে।

একটা গোল গলার সবুজ রঙের ঢোলা ব্যাগী টি-শার্ট চাপিয়ে নেয় আদুর গায়ের ওপরে... টি-শার্টটা এতই বড় যে সেটা তার পুরো শরীরটাই ঢেকে দেয় কাঁধ থেকে প্রায় থাইয়ের মাঝামাঝি অবধি... মনে হয় হেমের থেকে যেন গড়িয়ে বেরিয়ে এসেছে ফর্সা দুটো গোল পুরুষ্টু পা... টুথ ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে ফিরে আসে ঘরের মধ্যে... দরজার ছিটকিনিটা খুলে গিয়ে দাঁড়ায় বেডরুমের সাথে লাগোয়া ছোট্ট বারান্দাটায়... বাইরের আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে ছেড়া ছেড়া মেঘের দল... মেঘের আড়ালে রোদের লুকোচুরি... বেশ সুন্দর লাগছে বাইরেটা... একটা ঠান্ডা ভেজা হাওয়া বইছে... জোলো হাওয়াটা খোলা বারান্দায় দাঁড়ানো পৃথার সদ্য ঘুম ভাঙা চোখে মুখে যেন একটা নির্মল প্রলেপ বুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছে... দাঁত মাজতে মাজতে তাকিয়ে থাকে বারান্দার ঠিক সামনেই থাকা ঝাঁকড়া গাছটার পানে... ডালের ওপরে বসে দুটো শালিক কি রকম খুনসুটি করছে নিজেদের মধ্যে... তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকে ও।

শালিকদুটো যেন ওকে দেখতে পেয়েই লজ্জায় ফুড়ুৎ করে উড়ে পালিয়ে গেল কোথাও... ঘাড় তুলে বারান্দার গ্রীলটা ধরে একটু ঝুঁকে দেখার চেষ্টা করে পৃথা... শালিক দুটো কোথায় গেল, যদি দেখা যায়... পায় না দেখতে... বাড়ীর দেওয়ালটা তার দৃষ্টিটাকে আড়াল করে দিয়েছে... আর বার দুয়েক খোঁজার চেষ্টা করে সে, তারপর হাল ছেড়ে দিয়ে বারান্দা থেকে সরে এসে ফের ফিরে যায় বাথরুমে... ফেনা ভরা মুখটা ধুতে।

গুন গুন করে গান করতে করতে গিয়ে ঢোকে কিচেনে... চায়ের জলটা গ্যাস জ্বেলে চাপিয়ে দেয়... কিচেনের স্ল্যাবের ওপরে পেড়ে রাখে চায়ের কাপ, ছাঁকনি, চায়ের কৌটটা... অপেক্ষা করে চায়ের জলটা ফুটে ওঠার। গুন গুন করে গান করা ছেড়ে হটাৎই গলা তুলে গাইতে শুরু করে সে...
বিকশিত প্রীতি কুসুম হে
পুলকিত চিত কাননে ।। 
‘একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ, প্রানেশ হে,
আনন্দ বসন্ত সমাগমে ।।
জীবনলতা অবনতা তব চরণে ।
হরষীত উচ্ছসিত হে
কিরণমগন গগনে ।।

গানটা পৃথা বরাবরই বেশ ভালই গায়... আগে কলেজ কলেজে পড়ার সময় অনেক ফাংশানও করেছে... মায়ের মতই গানের গলা পেয়েছে ... মায়ের কাছেই তালিম নেওয়া... বাইরে কোথাও অবস্য কারুর কাছে যেতে হয়নি... রোজ সকালে মায়ের সাথে তানপুরাটা নিয়ে বসতো দুজনে... ভোরটা শুরু হতো ওদের দুজনের গানে... বাবা খুব পছন্দ করতো ওদের সকালবেলায় রেওয়াজ করাটা... উৎসাহ দিত সবসময় ওকে। পাড়ার লোক অবাক হয়ে যেত ওর এই রকম ছেলে মার্কা স্বভাব চরিত্রের মাঝে এমন মিষ্টি গানের গলা শুনে... বলতো, ‘সত্যিই তিতির, তোর গান না শুনলে তোকে দেখে কেউ ভাবতেও পারতো না যে এত সুন্দর তোর গানের গলা’। আসলে একটা অদ্ভুত দ্বৈত সত্তা নিয়ে চলে পৃথা... একাধারে সে যেমন কোমল নমনীয় আবার প্রয়োজনে অসম্ভব দৃঢ়চেতা, নিজের ওপরে অটল আত্মবিশ্বাসী... জীবনের প্রতিটা ছন্দের সাথে পা মিলিয়ে চলতে ভালোবাসে সে... একাধারে সে অত্যাধুনিক আবার অপর দিকে মূল্যবোধ হারায়নি কোন ভাবেই। তাই চট করে সবাই ওকে ঠিক মেলাতে পারেনা আর পাঁচটা সাধারণ মেয়েদের সাথে... আর সেটা দেখে মনে মনে বেশ উপভোগও করে সে লোকের এই রকম দ্বিধাগ্রস্থ মানসিকতাটার।

গানের মাঝেই খেয়াল করে চায়ের জল ফুটে উঠেছে... চা পাতা দিয়ে চাপা দিয়ে দেয়... গ্যাসটা নিভিয়ে রান্নাঘরের তাকের দিকে চোখ ফেরায় সে... ‘ইশ্‌, কি অবস্থা কিচেনের তাকগুলো... সময়ও পাচ্ছি না যে একটু ঘর দোর গুলো ঝাঁড় পোঁচ করবো...’ ভাবতে থাকে পৃথা। ‘একটা লোক দেখতেই হবে... না হলে বাড়ির সব কাজ একার দ্বারা সম্ভব নয়... কিন্তু পাবো কোথায়? বিশ্বাসী লোক ছাড়া আমার চলবে না... কারণ যেই কাজ করুক না কেন তার হাতেই থাকবে সংসারটা... আমাকে তো বেরুতেই হবে... আর যদি বিশ্বাসী না হয়... তাহলে আমার অ্যাবসেন্সএ ঝেড়ে ফাঁক করে দিয়ে চলে যাবে... না বাবা... ও রিস্ক নেওয়া যাবে না... তার থেকে কাজের লোক না থাকে তাও ভি আচ্ছা... দেখি, একবার সুশান্তকে বলে... না, না, সুশান্তকে বলাটা ঠিক হবে না... ও অনেক করেছে আমার জন্য... এবার যদি ওকে কাজের লোক খুঁজে দিতে বলি... ওটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে... তাছাড়া ওই বা কি করে অত দূরের থেকে কাজের লোক এখানকার জন্য পাবে... আরে বাবা, রিয়েলিটি বলেও তো একটা কথা আছে, না কি?’ আপন মনেই ভেবে চলে পৃথা।

চায়ের মাগটা নিয়ে ড্রইংরুমের সোফার ওপরে এসে বসে পৃথা... সকাল বেলায় ও বরাবরই চা’টা খায় একটা বড় মাগ’এ... এরপর একটা সিগারেট... এটা না হলে নাকি ওর পটি ঠিক মত হয় না... আর সেটা না হলে তো পুরো দিনটাই মাটি... পা দুটোকে সেন্টার টেবিলটার ওপরে তুলে দিয়ে ক্রশ করে রাখে... টি-শার্টটা হড়কে উঠে আসে উপরে দিকে... সুঠাম পুরুষ্টু থাইয়ের প্রায় পুরোটাই উন্মুক্ত হয়ে মেলে থাকে... সে দিকে কোন হুস থাকে না পৃথার... আর থাকবেই বা কেন... একা ফ্ল্যাটে কেই বা দেখতে যাচ্ছে ওকে, যে ও কি ভাবে রয়েছে... ঢেকে না খুলে? অর্ধেক সময় তো কিছু না পড়েই ঘুরে বেড়ায় ঘরের মধ্যে... এখন তাও তো গায়ে একটা কিছু চাপিয়েছে... এই না যথেষ্ট...

গরম চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবে পৃথা... ‘আচ্ছা... সত্যিই তো... আমার যত দূর মনে পড়ছে কাল আমি ঘুমিয়ে পড়ার সময় কই মশারী তো টাঙাইনি... তাহলে... না, না... নিশ্চয়ই টাঙিয়ে ছিলাম... হ্যা... সেটাই হবে... এখানে যা মশা... কাল এসি চালাই নি রাত্রে... তাই হয়তো এক সময় মশারী টাঙিয়েই শুয়ে পড়েছিলাম আবার... তা না হলে এতক্ষনে হয়তো আমাকে টেনেই নিয়ে চলে যেত মশা... জানলাটাও তো খোলা ছিল, না?... তবে?... আমিই টাঙিয়েছি... এখন মনে পড়ছে না... আর পড়বেটাই বা কি করে... কাল বেশ ভালই টেনে ছিলাম... কে জানে, বোতলে আর কিছু পড়ে আছে কি না... না থাকলে একটা এনে রাখতে হবে... অন্য দিন ফেরার পথে মেট্রো থেকে নেমেই যে দোকানটা আছে, সেখান থেকে কিনে আনি... কিন্তু এখানে কোথায় পাবো কে জানে.. আচ্ছা... একটা কাজ করলে হয় না... হেব্বি মজা হবে কিন্তু... অলোকবাবুকে জিজ্ঞাসা করলে কেমন হয় যে এখানে আশে পাশে কোথায় এফ-এল শপ আছে... আমি মদের দোকান খুজছি শুনলে নিশ্চয়ই আক্কেল গুড়ুম হয়ে যাবে ভদ্রলোকের... মুখটা কি রকম হবে?’ ভাবতে ভাবতেই হো হো করে হেসে ওঠে পৃথা। তার প্রানখোলা হাসিটা যেন পুরো ফ্ল্যাটের আনাচে কানাচে একটা মুক্ত বাতাসের মত ঘুরে বেড়াতে থাকে... ঘরের প্রতিটা কোনায় ধ্বনি-প্রতিধ্বনি হতে থাকে হাসির আওয়াজ।

চা খেতে খেতেই উঠে দাঁড়ায়... আধ-খাওয়া কাপটা সেন্টার টেবিলের ওপরে রেখে দরজার দিকে এগিয়ে যায়... লকটা খুলে সামান্য ফাঁক করে দরজার পাল্লাটা... পুরো খোলা সম্ভব নয়... দরজার আড়ালে যে ভাবেই থাকুক না কেন সে, কিন্তু এই পোষাকে বাইরে বেরোয় কি করে, কেউ যদি সেই মুহুর্তে সিড়ি দিয়ে ওঠে বা নামে? তখন? বা, অলোকবাবুও তো বেরুতে পারে তার ফ্ল্যাট থেকে... ভাবতে ভাবতে উঁকি মারে দরজার ওপাশে... মাটিতে সেদিনকার কাগজটা পড়ে থাকতে দেখে একটু সাবধানে নীচু হয়... তারপর হাত বাড়িয়ে কাগজটাকে নিয়ে চট করে উঠে দাঁড়িয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। ফিরে এসে আবার পুরানো জায়গায় বসে, পা দুটোকে সেন্টার টেবিলের ওপরে তুলে দিয়ে। চায়ের কাপটা হাতে তুলে নিয়ে খেতে খেতে চোখ বোলায় খবরের কাগজের হেডলাইনগুলো ওপরে... কয়এক’টা পাতা ওল্টাবার পর ‘নাঃ, সেই একই খবরের কচকচানি...’ মনে মনে বলে কাগজটাকে রেখে দেয় পৃথা, টেবিলের ওপরে। চায়ের কাপটা হাতে রেখেই দেহটাকে এলিয়ে দেয় সোফার ওপরে আড়াআড়ি ভাবে... চোখ দুটোকে বন্ধ করে চুপ করে বসে থাকে চায়ের কাপে ছোট ছোট সিপ করতে করতে।

শোবার ঘর থেকে মোবাইল বাজার আওয়াজ ভেসে আসে... রিংটোনের আওয়াজে চোখ মেলে তাকায়... ভুরু কুঁচকায়... ‘এখন আবার কে ফোন করছে?’ ভাবতে ভাবতে চায়ের কাপটা সেন্টার টেবিলের ওপরে রেখে উঠে দাঁড়ায়... শরীর বেঁকিয়ে হাত তুলে আড়মোড়া ভাঙে... মোবাইলটা বেজেই চলে একটানা... এবার একটু ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে যায় বেডরুমের দিকে... ঘরে ঢুকতেই চোখ পড়ে বেডসাইড টেবিলের ওপরে রাখা ছবিটার ওপরে... স্বগক্তির মতই বলে ওঠে, ‘মোবাইলটা বাজছে, ধরতে পারোনি? আমাকে উঠে আসতে হল সেই... যত্ত ফাঁকিবাজ... একটাও যদি কিছু আমাকে হেল্প করে... খালি চুপ করে থাকলে হবে?’ বলতে বলতে টেবিলের ওপরে ছবিটার পাশ থেকে মোবাইলটা তুলে নেয় হাতে... স্ক্রিনের ওপরে নামটা দেখবার আগেই কেটে যায় ফোনটা... ‘দূর বাবা... ফোনটা আবার কেটে গেল...’ ব্যাজার মুখে মিসড কলটা দেখার জন্য বোতাম টেপে... দেখে একটা অচেনা নাম্বার... ভুরুটা আরো কুঁচকে যায়... একবার ভাবে কল ব্যাক করবে, পরক্ষনেই সিদ্ধান্ত বদলায়... মোবাইলটাকে ফের রেখে দিয়ে যাবার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই ফের বেজে ওঠে মোবাইল... তাড়াতাড়ি করে তুলে কানে লাগায়... ‘হ্যালো...’।

ও প্রান্ত থেকে ভরাট পুরুষ কন্ঠস্বর ভেসে আসে... ‘হ্যালো, ইস দিস মিস মুখার্জি...’।

‘ইয়েস... পৃথা হেয়ার... মে আই নো হু ইজ অন দ্য লাইন প্লিজ...’

‘ওহ... হাই, মিস মুখার্জি... গুড মর্নিং... দিস ইজ প্রনব... প্রনব কর্মকার...’

‘সরি, মিঃ কর্মকার... আই কান্ট রেকগনাইজ ইয়ু... কুড ইয়ু প্লিজ লেট মী নো হাউ কাম ইয়ু...’

পৃথার কথা শেষ করার আগেই ও প্রান্ত থেকে প্রনব নামে ভদ্রলোক তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, ‘ইয়া, ইয়া, মিস মুখার্জি... আকচুয়ালি আই লুক আফটার দ্য ফ্ল্যাট হুইচ ইয়ু হ্যাভ টেকেন অন রেন্ট... সো...’

এবার পৃথার মনে পড়ে যায়, আরে, ঠিকই তো, এই ভদ্রলোকের কাছ থেকেই তো ও ফ্ল্যাটটা নিয়েছে ভাড়া... তাই তাড়াতাড়ি সে বলে ওঠে, ‘ও হ্যা, হ্যা, মিস্টার কর্মকার, সরি, মনে পড়েছে, ইশ, অ্যাই অ্যাম রিয়ালি সরি... আসলে হটাৎ করে ফোনটা পেতে ঠিক রিকল করতে পারিনি... আই অ্যাম এক্সট্রীমলি সরি, মিঃ কর্মকার...’

‘না, না, এ ভাবে বলবেন না... আপনিই বা কি করে মনে রাখবেন... আসলে আমার অন্য নাম্বারটা হয়তো আপনার কাছে সেভ করা আছে, এটা আর একটা নাম্বার থেকে ফোন করছি, আমারই অন্যায় হয়েছে একটা আননোন নাম্বার থেকে আপনাকে ফোন করা...’

‘ঠিক আছে, মিঃ কর্মকার, আমি না হয় এই নাম্বারটাও সেভ করে রেখে দেব’খন... তা...’ একটু থামে পৃথা... তারপর বলে, ‘তা... কিছু যদি না মনে করেন... হটাৎ করে আমাকে ফোন করছেন কেন, জানতে পারি?’

‘আসলে আমার আজকে সন্ধ্যেবেলায় আপনার ওখানে আসার কথা ছিল, কিন্তু বিশেষ কারণে সন্ধ্যেবেলায় হবে না, তাই যদি আজ, একটু পরেই আসি, তাহলে কি আপনার খুব অসুবিধা হবে, সেটা জানার জন্যই আমার ফোন করা... অবস্য আপনার অসুবিধা থাকলে না হয় অন্য দিন আসব’খন...’

‘ওয়েট ওয়েট মিঃ কর্মকার... জাস্ট আ সেকেন্ড... আমি ঠিক বুঝলাম না... আপনার আজকে সন্ধ্যেবেলায় আসার ছিল, মানে...?’ ভুরু কোঁচকায় পৃথা কথার মাঝে।

‘স্ট্রেঞ্জ... আমি আপনার ওখানে যাবো, সেটা আপনি জানেন না? কিন্তু আমার সাথে তো বেশ কিছুদিন আগেই সুশান্তবাবুর কথা হয়ে গিয়েছে যে, যে ডকুমেন্টএ আপনার কয়’একটা সিগনেচার করা বাকি আছে সেটা আমি গিয়ে করিয়ে নিয়ে আসবো... সরি মিস মুখার্জি... আমি জানতাম না যে ইয়ু আর নট অ্যাওয়াড় অফ ইট...’ বলে থামেন ভদ্রলোক।

এবার পৃথার অপ্রস্তুত হবার পালা, ‘ওহ হো, সরি মিঃ কর্মকার... সম্ভবত সুশান্ত বোধহয় ভুলে গিয়ে থাকবে আমাকে জানাতে... আই অ্যাম এক্সট্রিমলি সরি ফর...’

‘ওহ নো মিস মুখার্জি, হোয়াই ইয়ু আর ফিলিং ব্যাড আবাউট ইট... আই থিঙ্ক ইটস আ মিয়ার মিস কমুউনিকেশন... ওকে... নো প্রবলেম... আই শ্যাল মেক ইট অন সাম ওদার ডে... হোয়েন এভার ইয়ুল বি ফ্রী... হাউজ দ্যাট, মিস মুখার্জি?’

‘না, না, মিঃ কর্মকার, ইটস ওকে... ইয়ু ক্যান কাম ডাউন টুডে ইটসেলফ... আই অ্যাম ফ্রী... আপনি কখন আসতে চান বলুন... আই’ল বি দেয়ার...’ তাড়াতাড়ি বলে ওঠে পৃথা।

‘কিন্তু দেখুন মিস মুখার্জি... আমি চাইনা এ ভাবে এসে আপনাকে অপ্রস্তুতে ফেলতে... আসলে ডকুমেন্টটাতে আপনার সই না হলে রেন্ট এগ্রিমেন্টটা কমপ্লিট হচ্ছে না, তাই আসতে চাইছিলাম, বাট ইফ ইয়ু ডোন্ট লাইক মি টু কাম টু ইয়োর প্লেস... দেন আই ক্যান কাম ডাউন টু ইয়োর অফিস ওলসো... ইফ ইয়ু সে সো...’

‘না, না, মিঃ কর্মকার... একি বলছেন... আপনি আমার ল্যান্ডলর্ড... আপনি আসতে চাইছেন, সেখানে আমি আপনাকে বারণ করি কোন ধৃষ্টতায়... প্লিজ, মিঃ কর্মকার, সত্যি বলছি, আমি জানতাম না আপনার আসার কথা, তা না হলে ওই ভাবে আপনাকে প্রশ্ন করতাম না... আপনি আসুন না, আই অ্যাম টোটালি ফ্রী টুডে... আমার কোথাও বেরুবার নেই... আমিও চাই ডকুমেন্টেশন যদি কিছু বাকি থেকে থাকে সেটা কমপ্লিট করে নিতে... অ্যাজ আই ডোন্ট নো হোয়েদার ইয়ু নো অর নট, বাট আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু লুজ ইয়ুর প্লেস... সো...’

‘আরে দাড়ান দাড়ান মিস মুখার্জি... দ্য ফ্যাক্ট ইজ, আই অ্যাম নট ইয়োর ল্যান্ডলর্ড... আমি জাস্ট অর্নবের হয়ে ওর প্রপার্টিগুলোর দেখভাল করি, ব্যস, নাথিং এলস্‌... তাই, প্লিজ ডোন্ট কল মি ল্যান্ডলর্ড... ইটস টোটালি রং...’

ভুরু কোঁচকায় পৃথা, ‘ঠিক বুঝলাম না মিঃ কর্মকার... ইয়ু আর নট মাই ল্যান্ডলর্ড... মিন্স্‌? অর্নবের প্রপার্টি... মানে? ইয়ু ডোন্ট ওন দিস প্লেস?’

‘আপনি ঠিকই শুনেছেন মিস মুখার্জি... আপনি যে ফ্ল্যাটে রয়েছেন সেটা যদিও আমি আপনাকে ভাড়া দিয়েছি ঠিকই, কিন্তু ওটার মালিক আমি নই, ওটার মালিক অর্নব, অর্নব বাসু... আমি ওর হয়ে একটু দেখাশোনা করি ওর সমস্ত প্রপার্টিগুলো, ব্যস, এই আর কি... বাই দ্য ওয়ে... আপনি যখন বলছেন যে আজ এলে আপনার অসুবিধা নেই, তখন এক কাজ করি বরং, আমি আর একটু পর না হয় আপনার ওখানে চলেই আসি... সাক্ষাতেই সমস্ত কথা হবে’খন? কি বলেন মিস মুখার্জি? কোন অসুবিধা নেই তো?’

একটু আনমনা হয়ে পড়ে পৃথা, ঘাড় ঘুরিয়ে বেড সাইডের টেবিলের ওপরে থাকা ছবিটার লোকটিকে একবার দেখে নেয়, ‘অ্যা? হ্যা... ন্‌...না না, ঠিক আছে মিঃ কর্মকার... সেই ভালো... আপনি চলেই আসুন বরং... আমারও কিছু ব্যাপারে একটু ক্লারিফিকেশনএর প্রয়োজন আছে, সেটা আপনার কাছেই মনে হচ্ছে ক্লিয়ার হয়ে যাবে... বেশ, আপনি চলেই আসুন বরঞ্চ, আই’ল বি ওয়েটিং ফর ইয়ু...’

‘ওকে দেন, মিস মুখার্জি... থ্যাঙ্কস... আই’ল বি অ্যাট ইয়োর প্লেস উইদিন অ্যান আওয়ার... টিল দেন...’

‘উ... হু... ওকে... ঠিক আছে... রাখছি।’ ছবির মধ্যের লোকটির চোখে চোখ রেখে কলটা কেটে দেয় আনমনে। কথায় কথায় অনেক জিজ্ঞাস্য তার মাথার মধ্যে ভিড় করে আসছে। আজ মনে হচ্ছে অনেক কিছুর উত্তর সে পেয়ে যাবে... হ্যা... পেতেই হবে তাকে... এই সমস্ত উত্তরের থেকে তার অনেক কিছু নির্ভর করছে, যেটা তার থেকে ভালো আর কে জানে?

ক্রমশ...
[+] 5 users Like bourses's post
Like Reply
#24
(22-12-2018, 11:41 AM)naag.champa Wrote: এই গল্পটা বেশ ইন্টারেস্টিং লাগছে আমিও XOSSIP member ছিলাম কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আপনার এই গল্পটা আমি পড়িনি... আপনাকে একটাই অনুরোধ আপনি যদি font size টা একটু বড় করে লিখেন তাহলে ভালো হয়... চালিয়ে যান....

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে মতামত দেবার জন্য... আপনার অনুরোধে গল্পের ফন্টের সাইজ বাড়িয়ে দিয়েছি... আশা করি এবার পড়তে অসুবিধা হবে না... আগামী দিনেও আপনাদের মত পাঠকদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম...

এই ভাবে সাথে থাকবেন আশা রাখি... রেপু রইলো আপনার জন্য...
Like Reply
#25
(22-12-2018, 12:42 PM)ronylol Wrote: ধন্যবাদ দাদা । আর আগের সব গুলো পার্ট পোস্ট করে দিলে আরও ভালো হবে

কথামত আগের পার্ট গুলো পোস্ট করে দিলাম... এরপর থেকে নতুন অধ্যায় শুরু হবে আগামী ২৬শে তারিখ থেকে... আশা রাখবো আগামী পর্ব গুলিতে তোমাদের মতামত পাবার...

রেপু রইল ...
Like Reply
#26
Wow! দারুন আপডেট, প্রচন্দ উত্তেজক।
Like Reply
#27
(24-12-2018, 04:19 PM)bourses Wrote: কথামত আগের পার্ট গুলো পোস্ট করে দিলাম... এরপর থেকে নতুন অধ্যায় শুরু হবে আগামী ২৬শে তারিখ থেকে... আশা রাখবো আগামী পর্ব গুলিতে তোমাদের মতামত পাবার...

রেপু রইল ...

নতুন পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ।
Like Reply
#28
(24-12-2018, 11:13 PM)naag.champa Wrote: Wow! দারুন আপডেট, প্রচন্দ উত্তেজক।

udola.champa দিদি আপনাকে এখানে দেখে খুবই ভালো লাগছে । আশা করি আপনার থাকে ও নতুন লেখা পাবো এখানে । 
Like Reply
#29
(25-12-2018, 12:14 PM)ronylol Wrote: udola.champa দিদি আপনাকে এখানে দেখে খুবই ভালো লাগছে । আশা করি আপনার থাকে ও নতুন লেখা পাবো এখানে । 

একটা পুরান বন্ধুকে এখানে পেয়ে বেশ খুশি হলাম।

আমি এখন hindi forum এ একটা গল্প লিখছি... পড়ে দেখেতে পারেন।Shy

তবে হ্যাঁ, আমি একটা কথা নিসছই বলব যে আমার নতুন লেখক বন্ধু bourses এর লেখা বজ্রাঘাত জেন আমাকে মন্ত্র মুগ্ধ করে তুলেছে।

আজ সকালে বসে আমি এখন পর্যন্ত সবকটা আপডেট পড়লাম... 

নিসন্দেহ উনি বেশ ভাল লিখছেন... পরের আপডেটের অপেক্ষায় রইলাম  Heart Heart Heart
Like Reply
#30
(26-12-2018, 10:05 AM)naag.champa Wrote: একটা পুরান বন্ধুকে এখানে পেয়ে বেশ খুশি হলাম।

আমি এখন hindi forum এ একটা গল্প লিখছি... পড়ে দেখেতে পারেন।Shy

তবে হ্যাঁ, আমি একটা কথা নিসছই বলব যে আমার নতুন লেখক বন্ধু bourses এর লেখা বজ্রাঘাত জেন আমাকে মন্ত্র মুগ্ধ করে তুলেছে।

আজ সকালে বসে আমি এখন পর্যন্ত সবকটা আপডেট পড়লাম... 

নিসন্দেহ উনি বেশ ভাল লিখছেন... পরের আপডেটের অপেক্ষায় রইলাম  Heart Heart Heart

দিদি আমি বাংলাদেশের মানুষ হিন্দি টা জানা নেই তাই সেটা আর পড়া হবে না banana আপনার বাংলা লেখার অপেক্ষায় রইলাম ।
[+] 1 user Likes ronylol's post
Like Reply
#31
(26-12-2018, 10:05 AM)naag.champa Wrote: একটা পুরান বন্ধুকে এখানে পেয়ে বেশ খুশি হলাম।

আমি এখন hindi forum এ একটা গল্প লিখছি... পড়ে দেখেতে পারেন।Shy

তবে হ্যাঁ, আমি একটা কথা নিসছই বলব যে আমার নতুন লেখক বন্ধু bourses এর লেখা বজ্রাঘাত জেন আমাকে মন্ত্র মুগ্ধ করে তুলেছে।

আজ সকালে বসে আমি এখন পর্যন্ত সবকটা আপডেট পড়লাম... 

নিসন্দেহ উনি বেশ ভাল লিখছেন... পরের আপডেটের অপেক্ষায় রইলাম  Heart Heart Heart

আমার লেখা আপনার ভালো লেগেছে জানতে পেরে আমিও ভিষন খুশি হলাম... অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য... Heart
Like Reply
#32
১৪।।


দরজায় বেলের আওয়াজে সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় পৃথা। প্রনববাবুর আসার কথা শোনার পরই তাড়াতাড়ি স্নান সেরে ফ্রেশ হয়ে নিয়েছিল সে। 

‘ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই হ্যাংওভারটা কাটছিলই না প্রায় বলতে গেলে... অবস্য সেটা আর হবে নাই বা কেন? প্রায় ওয়াইনের পুরো বোতলটাই তো এক রাতের মধ্যে সাবাড় করে দিয়েছিলাম... তার ফল তো একটু হলেও ভুগতে হবে বৈকি...’ মনে মনে ভাবতে থাকে পৃথা, আলমারী খুলে একটা হাল্কা গোলাপী রঙের কুর্তি আর ঢোলা সালোয়ার বের করে পড়ে নিতে নিতে... মনের মধ্যে এক গুচ্ছ প্রশ্ন নিয়ে রেডি হয়ে থাকার জন্য। সদ্য স্নান করা ভিজে ঝাঁকড়া চুলগুলো একটা ক্লিপ দিয়ে মাথার ওপরে আটকে নেয় সে। ইচ্ছা না থাকলেও একটা ওড়না নিয়ে গায়ের ওপরে ফেলে রাখে, ভালো করেই জানে ওড়না ছাড়া কুর্তির ওপর দিয়ে ব্রা পড়া থাকলেও, বুকের বোঁটাগুলো কি রকম ফুটে উঠে থাকতে পারে তার, অপরিচিত আগুন্তুকের সামনে তাই সেই ভাবে থাকাটা যে দৃষ্টিকটু, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নিজের দৃষ্টিভঙ্গিতেও বাঁধে না কি সেটা? যতই নিজেকে দুঃসাহসিক প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করুক সে, আদতে তো তার ভেতরে সেই চিরন্তন বাঙালী মেয়ের নমনীয় লাজলজ্জা, ভালো, মন্দ, শিক্ষা, আত্মমর্যাদা... সমস্তটাই বিরাজমান।

বেল বাজতেই দ্রুত পায়ে বেডরুমের মধ্যে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায় সে, একবার ভালো করে নিজেকে দেখে নিয়ে ফিরে আসে ড্রইংরুমে, এগিয়ে যায় দরজার দিকে। আই হোলের মধ্যে চোখ রাখে পৃথা... নজরে আসে দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে। লম্বা, স্বাস্থবান... গোল মুখ, মুখে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, চোখে রোদচশমা। পরনে ধোপদূরস্ত সাদা পায়জামা পাঞ্জাবী। হাতের মধ্যে রোল করা একটা কাগজ। ভদ্রলোক বলেই মনে হয় পৃথার... ঠিক তথাকথিত বাড়িওলা মার্কা দেখতে নয়। নব ঘুরিয়ে দরজা খুলে দাঁড়ায় পৃথা।

দরজার খোলার আওয়াজে সচকিত হয়ে চোখ থেকে রোদচশমাটা নামিয়ে সামনের পানেই তাকিয়ে ছিলেন ভদ্রলোক সম্ভবত, তাই দরজা খুলতেই পৃথার সাথে চোখাচুখি হয় তাঁর... মৃদু হেসে দু-হাত তুলে নমস্কার করে বলে ওঠেন, ‘নমস্কার, আমি... আমিই প্রনব কর্মকার... আমার সাথে আপনার...’

ওনার কথা শেষ হবার আগেই পৃথা প্রতিনমস্কার জানিয়ে বলে ওঠে, ‘ও, হ্যা, হ্যা... নমস্কার... বুঝতে পেরেছি... আসুন, আসুন... ভিতরে আসুন...’ বলে সরে দাঁড়ায় দরজার থেকে... ভদ্রলোক পৃথার গা বাঁচিয়ে ঘরের মধ্যে পা রাখেন। 

পৃথা দরজা বন্ধ করতে গিয়ে দেখে পাশের ফ্ল্যাটের দরজাটা ততক্ষনে ফাঁক হয়ে গিয়েছে... ওপাশে অলোকবাবুর কৌতুহলী মুখ। পৃথার সাথে চোখচুখি হতে গাল চোঁয়ানো হাসি ঝরে পড়ে আলোকবাবুর, ‘কেউ এলো বুঝি?’

‘হ্যাঅ্যাঅ্যা...’ অলোকবাবুর কথা নকল করে সেই ভাবেই টেনে উত্তর দেয় পৃথা এক গাল হেসে... তারপর বলে, ‘এবার বন্ধ করি দরজাটা? আপনিও আপনার দরজাটা বন্ধ করে দিন, কেমন?’

‘ওহ... হ্যা, হ্যা... নিশ্চয়, নিশ্চয়...’ তাড়াতাড়ি বলে নিজের দরজাটা বন্ধ করে দেন অলোকবাবু, পৃথাও আর দেরি না করে দরজা বন্ধ করে ফিরে দাঁড়ায়। ভদ্রলোককে তখনও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শশব্যস্ত হয়ে বলে ওঠে, ‘আরে, আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন, বসুন বসুন...’ বলে সোফার দিকে হাত তুলে দেখায় সে। ভদ্রলোক দরজার কাছটায় নিজের পায়ের কোলাপুরী চটিটা খুলে রাখেন, দেখেই বোঝা যায় যথেষ্ট দামী চটিটা। ভদ্রলোক ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে গিয়ে বসে সোফায়, ঘাড় তুলে মুখ ফিরিয়ে দেখতে থাকে ঘরটাকে ভালো করে।

‘অনেক দিন পর এলাম, জানেন... কত যে স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এই ফ্ল্যাটে...’ এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখতে দেখতে বলে ওঠেন ভদ্রলোক।

ফ্রিজ থেকে জলের বোতল বের করে একটা গ্লাসে ঢেলে নিয়ে সেন্টার টেবিলের ওপরে রেখে ভদ্রলোকের উল্টো দিকের সোফায় বসতে বসতে পৃথা বলে, ‘ও, তাই... আগে খুব আসতেন বুঝি?’

হাতে ধরা কাগজের রোলটাকে নিজের পাশে, সোফার ওপরে রেখে টেবিলের ওপর থেকে জলের গ্লাসটা তুলে নিয়ে খানিকটা জল ঢকঢক করে খেয়ে নেন, তারপর গ্লাসটাকে ফিরিয়ে রেখে দিয়ে ভালো করে হেলান দিয়ে বসে পৃথার দিকে সোজাসুজি তাকান ভদ্রলোক, তারপর ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে বলেন, ‘বৃষ্টি হলেও গরমটা কমছে না একটুও, থ্যাঙ্কস, জলটার জন্য।’ তারপর যেন পৃথার কথার প্রশঙ্গ টেনে বলে, ‘হ্যা, ঠিক বুঝেছেন, অনেকবার এসেছি এই ফ্ল্যাটে... কতবার তার কোন হিসাব নেই... দিনের পর দিন, একটা সময় তো এইটাই প্রায় বলতে গেলে আমাদের ঘর বাড়ি ছিল... কখন আছি আর কখন নেই তার কোন ঠিক ছিল না... থাকলেই হল... এই রকমই ছিল ব্যাপারটা।’

ভদ্রলোকের কথার ফাঁকে ভালো করে আপদমস্তক দেখে নিচ্ছিল পৃথা। বেশ ফর্সা, আর ভালোই স্বাস্থবান, বরং বলা চলে বেশ হৃষ্টপুষ্ট আরকি, কিন্তু হাইটটা ভালো হবার ফলে খারাপ লাগে না, নয়তো একটু বেঁটে হলেই গোলগাল ফুটবলের মত লাগত। সেটা কেমন লাগতো ভাবতেই নিজের অসাবধানেই একটা হাসির ঝিলিক খেলে যায় পৃথার ঠোঁটের কোন। পরক্ষনেই ত্রস্ত হয়ে ওঠে সে, আশ্বস্ত হয়, ভদ্রলোক নিজের খেয়ালে থাকায় তার ওই মিচকি হাসিটা না দেখাতে পাওয়ায়। উঠে দাঁড়ায় সে। 

‘একটু চা খাবেন তো?’ প্রশ্ন করে পৃথা, কিচেনের দিকে এগুতে উদ্যত হয়।

হাত তুলে তাকে থামায় ভদ্রলোক তাড়াতাড়ি, ‘না, না, মিস মুখার্জি, এই অবেলায় আর চা করতে হবে না আপনাকে... শুধু শুধু আমার জন্য আবার কেন চা করতে যাবেন আপনি?’

‘আরে তাতে কি হয়েছে, আপনি এসেছেন কষ্ট করে, আর একটু চা করে দিতে অসুবিধা হবে আমার? আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি। আপনি একটু বসুন...’ বলে দ্রুত পা চালিয়ে কিচেনের দিকে চলে যায় সে। আগেই চায়ের সরঞ্জাম রেডি করে রেখে দিয়েছিল, গ্যাস জ্বালিয়ে চায়ের জলটা চাপিয়ে দেয়। তাক থেকে বিস্কিটের কৌটটা বের করে প্লেটে চার পাঁচটা বিস্কিট সাজায়। একটু অপেক্ষা করে চায়ের জলটা ফোটার। ভদ্রলোকের কথাগুলো ভাবতে থাকে সে ওখানে দাঁড়িয়ে। ‘আগে অনেক এসেছিলেন ভদ্রলোক, সেটাই তো বললেন... অবস্য আসতেই পারেন, সেটাই তো স্বাভাবিক, নয়কি, উনি তো সকালেই বললেন ওই অর্নব না কে... আচ্ছা... তবে কি...’

ভাবানার মধ্যেই চায়ের জল ফুটে ওঠার শোঁ শোঁ শব্দে চটকা ভাঙে... চায়ের পাতা চামচে মেপে দিয়ে নব ঘুরিয়ে বার্নারটা নিভিয়ে দেয়। কাপ, আরো একটা ডিস, আর ছাঁকনিটা জোগাড় করে স্ল্যাবের ওপরে রাখে। ট্রে’টাকে মুছে নেয় কিচেনের কাপড়টা দিয়ে।

‘আপনি শুধু শুধু চা’য়ের জন্য ব্যস্ত হলেন, মিস মুখার্জি... না হলেও চলতো...’ কানে আসে ভদ্রলোকের কথা ড্রইংরুম থেকে বলে উঠতে।

‘না, না, কোন অসুবিধা হচ্ছে না মিঃ কর্মকার, ঠিক আছে, এই তো হয়ে গেছে, এক্ষুনি আসছি...’ উত্তর দেয় পৃথা... দুটো চায়ের কাপে ঢেলে নেয় চা’টাকে, তারপর ট্রে’য়ের ওপরে চায়ের কাপ, প্লেট আর সুগার পট সাজিয়ে ফিরে আসে ড্রইংরুমে সে। সেন্টার টেবিলের ওপরে রাখা ফাঁকা জলের গ্লাসটাকে একটু পাশে সরিয়ে দিয়ে ট্রে’টাকে নামিয়ে বলে, ‘আমি কিন্তু র’টি করলাম, অসুবিধা হবে না তো আপনার?’

সোফার ওপরে সোজা হয়ে উঠে বসে বলে ওঠেন ভদ্রলোক, ‘আরে, না, না, নো প্রবলেম, এই এত বেলায় আপনি চা করেছেন, এটাই তো অনেক।’

‘না, এ আর এমন কি, এই টুকু তো চা’ই করা...’ কাপের মধ্যে পট থেকে এক চামচ চিনি নিয়ে দিয়ে বলে পৃথা, ‘এক চামচই তো?’

‘হ্যা, হ্যা, এক চামচই...’

হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপটা এগিয়ে দেয় পৃথা ভদ্রলোকের দিকে, উনিও সামনের দিকে ঝুঁকে প্লেটটা ধরে নেন। পৃথা বিস্কিটটা এগিয়ে দিয়ে নিজের কাপটা ট্রে থেকে তুলে নিয়ে নিজের সোফায় পিছিয়ে এলিয়ে বসে... ও চিনি ছাড়াই পছন্দ করে চা’টা খেতে... ছোট সিপ দেয় গরম চায়ের কাপে।

ভদ্রলোকও আবার নিজে পিছিয়ে বসে চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে চামচটা নেড়ে গুলতে থাকে চিনি... তাঁর মুখ দেখে পৃথার মনে হয় উনি সম্ভবত কিছু ভাবছেন, তাই কিছু না বলে ডান পায়ের ওপরে বাঁ পা’টাকে ক্রস করে রেখে চুপচাপ চা’য়ের কাপে চুমুক দিতে থাকে।

‘বাঃ, চা’টা বেশ ভালো তো?’ একটা সিপ দিয়ে বলে ওঠেন ভদ্রলোক।

পৃথার বুঝতে অসুবিধা হয় না এটা উনি আসলে চা’য়ের প্রশংসা করছেন না, কোন কথার বলার আছে, তাই এই ভাবেই শুরু করতে চাইছেন। কোন উত্তর দেয় না সে, পরের কথার জন্য অপেক্ষা করে চুপ করে।

‘আচ্ছা...’ গলাটাকে একটা খাকারি দিয়ে পরিষ্কার করে নেন ভদ্রলোক, ‘বলছিলাম, ইয়ে... মিস মুখার্জি... আপনি... মানে, আপনার এখানে থাকতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো?’

‘অসুবিধা? ঠিক কি ধরনের অসুবিধা বলতে চাইছেন বলুন তো?’ পালটা ঘুরিয়ে প্রশ্ন করে পৃথা।

‘না, মানে, এই আর কি... আপনি তো শুনেছি এই শহরে নতুন, তাই ওই আর কি, বলছিলাম যে...’ কুন্ঠিত গলায় বলেন ভদ্রলোক।

‘এ বাবা, অসুবিধা কি বলছেন... সত্যি বলতে কি আমি তো ভাবতেই পারিনি যে কোলকাতায় এসে এত সুন্দর একটা ফ্ল্যাট পেয়ে যাবো, আর সেটাও এত সহজে... বরং সে দিক দিয়ে বলতে গেলে আমি যথেষ্ট লাকি... এই রকম একটা সাজানো গোছানো ফ্ল্যাট, তাও আবার এত কম রেন্টএ, এ তো যে কোন কারুর কাছেই ভিষন লোভনীয়, তাই না?’ বলতে বলতে সোজা হয়ে উঠে বসে পৃথা।

‘হ্যা, সেটা সত্যি... কোলকাতায় এত কম রেন্টএ এমন একটা ফার্নিসড ফ্ল্যাট সচরাচর পাওয়া একটু দুষ্করই বটে... আসলে...’ বলতে বলতে থেমে যায় ভদ্রলোক।

‘আসলে?’ কথাটায় টান দেয় পৃথা।

‘না, মানে ওই আর কি... আসলে এই ফ্ল্যাটটা তো সহজে কেউ ভাড়া নিতে চাইছিল না, তাই কম রেন্টএই দিতে হল।’ কথাটা শেষ করেন ভদ্রলোক।

‘আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?’ এবার প্রশ্ন করে পৃথা।

‘হ্যা, হ্যা, বলুন না...’ ভদ্রলোক সশব্যস্ত হয়ে বলে ওঠেন।

‘না, মানে, আমি আগেও শুনেছি, এখন আপনিও বলছেন যে, এই ফ্ল্যাটটা নাকি সহজে কেউ ভাড়া নিতে চাইছিল না, কিন্তু এত সুন্দর একটা ফ্ল্যাট, আমি ঠিক মেলাতে পারছি না ব্যাপারটা...’ জিজ্ঞাসা করে পৃথা।

‘হ্যা, কিছুটা আপনি ঠিকই শুনেছেন... তবে আপনাকে আমি বলতেই পারি যে, যেটা শুনেছেন সেটা নেহাৎই একটা বাজে রটনা, আসলে সেই রকম কিছু কোন ব্যাপারই নেই... লোকে শুধু শুধুই বিনা কারণে উল্টোপাল্টা কথা শুনে ভয়ে ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিতে চাইতো না... নয়তো বলুন না, আপনার কি কোন অসুবিধা হচ্ছে এখানে... প্রায় এতো দিন তো থাকলেন... বলুন?’

‘না, তা হচ্ছে না ঠিকই... বরং আমি তো ভিষন ভাবে আপ্লুত, এই রকম একটা ফ্ল্যাট পেয়ে... কিন্তু তবুও... লোকে কি শুধু শুধুই ভয় পেতো?’ ফের জিজ্ঞাসা করে পৃথা। ‘আর তাছাড়া আমি শুনেছি আগেও বেশ কয়একটি ফ্যামিলি এসেছিল এই ফ্ল্যাটে, তারা নাকি দিন দুয়েকের বেশি থাকতেই পারেনি? সেটাই বা কেন?’

‘আসলে, তারা ঠিক আপনার মত এত ভালো ছিল না...’ কাঁচুমাচু মুখে উত্তর দেবার চেষ্টা করেন ভদ্রলোক।

‘আমার মত ভালো ছিল না? সেটা আবার কেমন কথা?’ অদ্ভুত লাগে প্রনববাবুর উত্তরে পৃথার।

‘ওহ... না, না, আমি ঠিক সেই ভাবে কথাটা বলতে চাই নি... প্লিজ ডোন্ট টেক ইট আদার ওয়াইজ... আসলে আমি বলতে চেয়েছি যে আপনি একেবারে নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ... একা থাকেন... তাই আর কি...’ কি বলবেন ঠিক বোধহয় বুঝে উঠতে পারেন না ভদ্রলোক।

‘আচ্ছা, সে না হয় বুঝলাম, কিন্তু আমাকে একটা কথা বলুন তো, আপনি তখন ফোনে বললেন যে আপনি ওই কি যেন নাম... অর্নব না কি... তার প্রপার্টিটা দেখাশোনা করেন... তাহলে কি এই ফ্ল্যাটটাও ওনারই?’ প্রশ্ন করে পৃথা।

কথার প্রসঙ্গান্তর ঘটতে বোধহয় একটু আশ্বস্ত হন প্রণববাবু, তাড়াতাড়ি করে বলে ওঠে, ‘হ্যা, ঠিকই তো... এ সব কিছুই অর্নবের, আমার কিছুই নয়, আমি শুধু অর্নবের হয়ে দেখাশোনা করি মাত্র...।’

‘ও, তা আপনার এই মিঃ অর্নব না কে, তিনি কি করেন, তিনি কি এই শহরেই থাকেন নাকি অন্য কোন শহরে অথবা বিদেশে থাকেন?’ হাত থেকে খালি চায়ের কাপটা ট্রেতে রাখতে রাখতে প্রশ্ন রাখে পৃথা।

নিজের খালি কাপটাও এগিয়ে রেখে দেন ট্রে’র ওপরে, তারপর সোফায় হেলে বসে পকেটে হাত ঢোকান প্রণববাবু, পরক্ষনেই কি মনে করে পৃথার দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘সরি, আমি একটা সিগারেট ধরাতে পারি... ইফ ইয়ু ডোন্ট মাইন্ড...’

‘হ্যা, হ্যা... নো প্রবলেম... প্লিজ... ক্যারি অন...’ বলে উঠে দাঁড়িয়ে সেন্টার টেবিলের ওপর থেকে সব কাপগুলো আর আগের জলের গ্লাসটাকে ট্রে’টার মধ্যে রেখে নিয়ে এগিয়ে যায় কিচেনের দিকে। সিঙ্কের মধ্যে এঁটো কাপ গুলো রেখে দিয়ে ফিরে আসে সে। আসার পথে বেডরুমে ঢুকে নিজের সিগারেটএর প্যাকেটটা আর লাইটারটা তুলে নেয়... প্রণববাবু সিগারেট ধরাচ্ছে দেখে তার নিজেরও সুবিধা হয়। সোফায় বসে প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ঠোঁটের কোনে ঝুলিয়ে লাইটার জ্বালায়... লাইটারটাকে সেন্টার টেবিলের ওপরে ফিরিয়ে রেখে দিয়ে হেলান দেয় সোফায়... এক রাশ ধোয়া ছাড়ে নাক মুখ দিয়ে। প্রণববাবুও সিগারেটএর ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে লক্ষ্য করতে থাকেন পৃথাকে। চোখা চুখি হয়ে গেলে তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে নেন। মিচকি হাসি খেলে যায় পৃথার ঠোঁটে... বুঝতে অসুবিধা হয় না তাকে এই ভাবে ওনার সামনে এত সহজ ভাবে সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে দেখে একটু অপ্রস্তুতই হয়েছেন ভদ্রলোক... এখনও পুরুষেরা মেয়েদের সিগারেট ধরাতে দেখলে প্রথমে একটা ঝটকা খায়... তাই বুঝেও কিছু বলে না সে, সিগারেটএ আর একটা লম্বা টান মেরে বলে ওঠে, ‘কই, বললেন না তো... আপনার এই অর্নব না কে, সে কোথায় থাকেন? এখানেই বা থাকেন না কেন?’

‘বলছি... তবে আমার মনে হয় তার আগে আমাদের আগে কাজটা সেরে নেওয়া উচিত, আসলে যে জন্য আসা আমার, সেটা ফেলে রেখে কি লাভ, তাই না...’ বলে পাশ থেকে রোল করা কাগজটা হাতে তুলে নিয়ে এগিয়ে দেন পৃথার দিকে।

পৃথা ওনার হাত থেকে কাগজের রোলটা নিয়ে খুলে ধরে চোখের সামনে...

‘ওই যে, দেখুন, তৃতীয় পাতার নীচে আপনার সইটা বাদ পড়ে গেছে, ওটা একটু করে দেবেন কাইন্ডলি...’ পৃথাকে কাগজটা মনোযোগ দিয়ে পড়তে দেখে বলে ওঠেন ভদ্রলোক।

‘আমি একবার চোখ বুলিয়ে নিতে পারি এটাতে?’ প্রশ্ন করে পৃথা।

‘হ্যা, হ্যা, নিশ্চয়ই... দেখে নিন না ভালো করে...’ তাড়াতাড়ি বলে ওঠেন প্রণববাবু।

রেন্ট এগ্রিমেন্টই বটে... পৃথা মুখার্জি আর অর্নব বাসুর মধ্যে... সাধারণতঃ আগডুম বাগডুম যা যা এই ধরনের এগ্রিমেন্টএ থাকে, তাই রয়েছে... তবে একটা জায়গায় গিয়ে সে থমকায়... ভালো করে পড়ে মুখ তোলে ভুরু কুঁচকে... ‘আচ্ছা... এখানে তো কোন রেন্ট ডিউরেশন মেনশন করেন নি... মানে বলতে চাইছি সাধারণত আমি যা শুনেছি, এই ধরনের এগ্রিমেন্ট সামথিং এগারো মাস বা ওই ধরনের একটা টাইম পিরিয়েডের মধ্যে হয়... কিন্তু সেটা তো এখানে নেই... ব্যাপারটা কি? আমার তো মনে হচ্ছে আগে যে এগ্রিমেন্টটায় আমি সই করেছিলাম সেটাতে একটা ওই ধরনেরই টাইম পিরিয়েড মেনশেন্ড ছিল... কিন্তু এটাতে তো দেখছি সেই ক্লজটা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেন?’

‘হ্যা... মানে... না... মানে... হ্যা, ওই আরকি... আপনি ঠিকই ধরেছেন... আগে যখন এগ্রিমেন্ট করার কথা হয়েছিল তখন ওই টাইম পিরিয়ডটা মেনশন্ড করা হয়েছিল, কিন্তু পরে আর কি ওটা আর রাখি নি...’ আমতা আমতা করে উত্তর দেন ভদ্রলোক।

‘রাখেন নি, সেতো দেখতেই পাচ্ছি... কিন্তু হোয়াই? কেন?’ কাগজের ওপরে চোখ বোলাতে বোলাতে ফের প্রশ্ন করে পৃথা।

‘না, ভাবলাম, আপনি বাইরের থেকে এসেছেন, আর তাছাড়া আপনার যখন এই ফ্ল্যাটটা এত ভালো লেগে গিয়েছে, তখন থাক না ওই সব... আপনার যত দিন খুশি... যত মাস... যত বছর খুশি আপনি থাকুন না এখানে... যেদিন ভালো লাগবে না... সেদিন না হয় ছেড়ে চলে যাবেন... আমাদের কোন আপত্তি নেই তাতে...’ অ্যাস্ট্রের মধ্যে সিগারেটএর বাড্‌সটা চেপে গুঁজে দিতে দিতে কোন রকমে উত্তর দেন প্রণববাবু, পৃথার চোখের দিকে না তাকিয়ে।

‘আমাদের?’ ভুরু কুঁচকে মুখ তোলে পৃথা।

‘না, মানে, সরি, আমার... ওই আর কি...’ তাড়াতাড়ি নিজের ভুলটা সংশোধন করে ওঠেন ভদ্রলোক। 

‘ভাড়া অ্যাপ্রিশিয়েষনএর ক্লজটাও তো দেখছি বাদ দিয়েছেন... কি মশাই... এই একই ভাড়ায় সারা জীবন থাকব নাকি আমি?’ এবার একটু হেসেই ফেলে পৃথা।

পৃথাকে হাসতে দেখে বোধহয় একটু মনে বল পান প্রণববাবু, তিনিও হেসে বলেন, ‘থাকুন না... আপনার তাতে কি... যদি মনে হয় বাড়াবেন, দেবেন’খন বাড়িয়ে... আপনার সুবিধা মত... আমি বলার কে?’ বলতে বলতে বুক পকেট থেকে একটা পেন বের করে খাপ খুলে, পেনটা বাড়িয়ে দেন পৃথার দিকে।

পৃথা হাতে ধরা সিগারেটএ একটা টান দিয়ে, সেটাকে অ্যাস্ট্রের ধারে রেখে হাত বাড়িয়ে প্রণববাবুর পেনটা নিয়ে নেয়... তারপর পাতা উল্টে তৃতীয় পাতায় গিয়ে সই করে, পৃথা মুখার্জি, সই এর নিচে তারিখে সেই দিনের উল্লেখ করতে ভোলে না... তারপর পেন আর কাগজের রোলটা ফিরিয়ে দেয় প্রণববাবুর হাতে, নিজে সোফায় আবার হেলান দিয়ে বসে আরাম করে, অ্যাস্ট্রের সাইড থেকে সিগারেটটা তুলে নিয়ে।

প্রণববাবু পৃথার হাত থেকে এগ্রিমেন্টটা নিয়ে ভালো করে রোল করতে থাকেন আবার, আর পৃথা উল্টো দিকের সোফায় হাতের আঙুলের ফাঁকে সিগারেটটা ধরে ওনাকে দেখতে থাকে চুপচাপ।

হটাৎ কেন জানা নেই, পৃথার গায়ে কেমন কাঁটা দিয়ে ওঠে... ঝট করে সে মাথা ঘোরায় ডাইনে, তারপর বাঁয়ে... তার মন যেন বলে ওঠে এই মুহুর্তে ঘরের মধ্যে শুধু সে আর প্রণববাবু নন, আরো একজন কোন তৃতীয় ব্যক্তি উপস্থিত রয়েছে... কিন্তু সেটা শুধু সে অনুভব করতে পারছে মাত্র, দেখতে পাচ্ছে না। ভুরু কুঁচকে যায় তার। তবে কি...

ক্রমশ...
[+] 4 users Like bourses's post
Like Reply
#33
দাদা এই পার্ট টাও পোস্ট করা হয়ে ছিলও xossip এ । তবে পূর্ব পড়া হলেও আবার ও বলবো আপনার লেখা দারুন ।
Like Reply
#34
(26-12-2018, 01:21 PM)ronylol Wrote: দাদা এই পার্ট টাও পোস্ট করা হয়ে ছিলও xossip এ । তবে পূর্ব পড়া হলেও আবার ও বলবো আপনার লেখা দারুন ।

ধন্যবাদ ভাইটু...
[+] 1 user Likes bourses's post
Like Reply
#35
১৫।।


হটাৎ করেই উঠে দাঁড়ায় পৃথা, দ্রুত পায়ে গিয়ে ঢোকে বেডরুমে, বেডসাইড টেবিলের ওপরে রাখা ছবিটাকে হাতে তুলে নিয়ে একবার দেখে, তারপর সেটা হাতে নিয়ে ফিরে আসে ড্রইংরুমে, সোফার ওপরে বসে ছবিটাকে সেন্টার টেবিলের ওপরে রেখে এগিয়ে দেয় প্রণববাবুর দিকে, বলে, ‘আচ্ছা, এই ছবিটা কাদের? এরা কারা? আমি এখানে আসার পর ছবিটাকে বেডরুমে দেখতে পাই, কিন্তু আর কোথাও এদের ছবি পাইনি... ইনিই কি...?’

পৃথার প্রশ্নের ফাঁকেই ছবিটাকে হাতে তুলে নিয়ে দেখতে শুরু করেছিলেন প্রণববাবু, তাই পৃথার কথা শেষ হবার আগেই বলে ওঠেন, ‘হু... এটাই অর্নব, আর ওর পাশে ওর স্ত্রী, লিন্ডা... এটা ওদের হানিমুনে গিয়ে তোলা ছবি... সম্ভবত অন্য কাউকে দিয়ে তুলিয়েছিল।’

কেন জানে না পৃথা, ওর বুকের মধ্যেটায় কেমন একটা ঝড় ওঠে... বুকের মধ্যে যেন হৃদপিন্ডটা অকারণেই কেমন ধক ধক করে বাজতে থাকে... গলার মধ্যেটায় কি কারনে যে শুকিয়ে ওঠে, বোঝে না সে... গলাটা একবার খেকারি দিয়ে ঝেড়ে নিয়ে বলে, ‘ও’... তারপর একটু চুপ থেকে ফের বলে ওঠে, ‘তা, এখন এনারা কোথায়?’

খানিক স্থির দৃষ্টিতে পৃথার পানে তাকিয়ে থাকেন প্রণববাবু, তারপর মাথা নেড়ে ধীর কন্ঠে বলেন, ‘সেটা এই ভাবে বলা সম্ভব নয়... সেটা বলার জন্য সময়ের প্রয়োজন... অনেকটা পিছিয়ে যেতে হবে আপনার এই উত্তরটা দেবার জন্য।’

প্রণববাবুর কথায় একটু বিস্মিত হয় পৃথা, ‘ঠিক বুঝলাম না... এনারা কোথায়, সেটা বলতে এতটা অসুবিধার কি রয়েছে এর মধ্যে?’

‘না, ঠিক অসুবিধা নয়, কিন্তু সেটা এক কথায় উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়... এই আর কি।’

‘আপনার যদি বলতে কোন দ্বিধা থাকে, তাহলে আপনাকে জোর করবো না, থাক তবে... আমারও যে খুব জানার প্রয়োজন তা নয়, জাস্ট কিউরিওসিটি বলতে পারেন... ঠিক আছে, অসুবিধা থাকলে বলতে হবে না... অবস্য আমার জিজ্ঞাসা করাটাই সম্ভবত একটু বাড়াবাড়িই হয়ে গেছে... আসলে অনেক দিন ধরেই আপনার এই অর্নববাবুর ছবিটা আমার বেডরুমে রয়েছে তো, প্রায় সবসময়ই চোখে পড়ে, তাই আর কি জিজ্ঞাসা করছিলাম, ঠিক আছে, নো প্রবলেম, আপনাকে কোন অসুবিধায় ফেলতে চাইনা আমি...’ বলে সোফায় হেলান দিয়ে ফিরে বসে পৃথা। মনে মনে বেশ নিরাশই হয়, কিন্তু মুখে সেই ভাবের প্রকাশ করে না।

আরো কিছুক্ষন চুপ করে ছবিটার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর আসতে আসতে সেটা নামিয়ে রাখে সেন্টার টেবিলটার ওপরে প্রণববাবু, ছবিটার সামনেটা ঘুরিয়ে দেয় পৃথার দিকে... পৃথারও চোখ গিয়ে পড়ে ছবির মধ্যের ছেলেটি, মানে অর্নবের ওপরে। তার মনে হয় যেন ছবির মধ্যে থেকেই তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে অর্নব, তাকেই যেন দেখছে... ঠোঁটের কোনে কি স্মিত একটা হাসি? না, না, ওটা নিশ্চয়ই ওরই মনের ভুল। ছবির দুজনকেই আরো ভালো করে একবার দেখে নেয় পৃথা, তারপর চোখ তুলে তাকায় প্রণববাবুর দিকে।

ততক্ষনে প্রণববাবু পকেট থেকে সিগারেটএর প্যাকেটটা বার করে নিয়েছেন হাতে, পৃথার সাথে চোখাচুখি হতে প্যাকেটটা খুলে এগিয়ে দিয়ে বলেন, ‘আমি দেখলাম আপনিও গোল্ড ফ্লেকই খান, তবে আপনারটা লাইট আর এটা রেগুলার কিংস, নেবেন নাকি?’

না বলে না পৃথা, সামনে ঝুঁকে এসে হাত বাড়িয়ে প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট টেনে বের করে নেয়... তারপর ঠোঁটের কোনে ঝুলিয়ে লাইটার জ্বালায়... তারপর ফের পিছিয়ে হেলান দিয়ে বসে সোফায়, পায়ের ওপরে পা’টাকে ক্রস করে তুলে রেখে... হাল্কা ধোঁয়া ছাড়ে মুখ থেকে।

প্রণববাবুও নিজের ধরানো সিগারেটএ একটা টান দিয়ে ভালো করে বসেন সোফাতে, তারপর বলতে শুরু করেন, ‘অর্নবের কথা বলতে গেলে আমাকে একটু পিছিয়ে যেতে হবে বেশ কিছু বছর। অর্নবের সাথে আমার বন্ধুত্ব এক বা দুই দিনের নয়, সেই ছোট বেলা থেকে। আমরা একই সাথে বড় হয়েছি। আমরা দুজনেই কিন্তু কেউই কোলকাতার ছেলে নই, আমাদের বাড়ি রায়পুর, ছত্তিসগড়ে, অবস্য এখন সেটা ছত্তিসগড়, আগে ছিল না। আমি সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে হলেও, অর্নবের বাবা কিন্তু যথেষ্ট বিত্তবান। রায়পুরে ওদের বিশাল বাড়ি রয়েছে। ওর বাবা একটা বিরাট ইস্পাত কারখানার মালিক, তাই ও কোনদিনই অভাব কি জিনিস, জানতো না। কিন্তু বড় লোকের ছেলে বলে যে বখে যাওয়া, তা কিন্তু নয়। বরং বলবো ও একেবারেই ওর বাবার স্বভাবের বিপরীত। হয়তো মায়ের মতই হয়ে থাকবে। খুব ছোটবেলায় মাকে হারায়। বাবা বিয়ে করেন আবার। অর্নবের সৎমা কিন্তু ওকে নিজের করেই টেনে নিয়েছিলেন, মায়ের অভাব কোনদিন বুঝতে দেন নি। অথচ বাবার কাছ থেকে ও সেই অর্থে ভালোবাসা বা স্নেহ পায় নি বললেই হবে। অর্নবের বাবা ছিলেন বরাবরই একটু অন্য স্বভাবের, ব্যবসা, অর্থ, প্রতিপত্তি... এই সবই বেশি ভালোবাসতেন কাকাবাবু, মানে অর্নবের বাবা। আমরা ওনাকে কাকাবাবুই বলতাম। ভিষন রাশভারী ছিলেন ভদ্রলোক। তাঁর কথাই শেষ কথা ছিল সর্বদাই। নিজের ব্যবসা নিয়েই থাকতেন সবসময়, সংসারের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা ওই টাকা দিয়েই খালাস হয়ে যেত। 

আমরা বড়লোক না হলেও আমার বাবা অনেক কষ্ট করে আমাকে সেই সময়ের শহরের সবচেয়ে ভালো ইংলিশ মিডিয়াম কলেজে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। অর্নবের সাথে আমার আলাপ কলেজে, একই ক্লাসে পড়তাম আমরা। খুব চৌখস ছেলে ছিল অর্নব... কি লেখাপড়ায়, আর কি খেলাধুলায়। কোনদিন সেকেন্ড হয় নি কোন পরীক্ষাতেই। মনে আছে, বোর্ড এক্স্যামেও ফার্স্ট হয়েছিল ও, ছবি বেরিয়েছিল কাগজে। কিন্তু তাতে ওর থেকে যেন আমরা মানে ওর বন্ধবন্ধবেরা বেশি গর্ব অনুভব করেছিলাম সেই ঘটনায়। ওকে নিয়ে অনেকদিন ধরে আমরা সবাই মিলে প্রায় উৎসবে মেতে উঠেছিলাম। খেলাধূলাতেও ও ছিল আমাদের ক্যাপ্টেন। কত ইন্টারকলেজ চ্যাম্পিয়নশিপে যে জিতিয়েছে আমাদের কলেজকে তার ইয়ত্তা নেই। তাই ও শুধু মাত্র আমাদের বন্ধুদের মধ্যেই নয়, ও ছিল আমাদের কলেজের শিক্ষকদের কাছেও অতি প্রিয়।

ধীরে ধীরে ক্লাস টুলেভ পাশ করলাম। যথারীতি খুব ভালো রেসাল্ট করল এবারের পরীক্ষাতেও। মনে আছে, কলেজে থাকতে মেয়েদের মধ্যেও ও ছিল হিরো। ওর কাছাকাছি আসার জন্য মেয়েদের মধ্যে রীতিমত প্রতিযোগীতা চলতো। আমরা দেখতাম আর মজা করতাম এই সব নিয়ে খুব। আসলে ওর চেহারাটা ভিষন সুন্দর ছিল, যত বয়স বেড়েছে, ততই যেন রাজপুত্রের মত দেখতে হয়ে উঠেছিল। যেমন লম্বা, তেমনি গায়েগতরে। ওই বয়সেই হাইট ছিল প্রায় ছয়ের ওপরে, সেই সাথে একেবারে পেটানো বেয়াম করা চেহারা। টকটক করছে গায়ের রং, তেমনি সুন্দর দেখতে, চোখ নাক মুখ কাটা কাটা... সত্যিই যেন রাজপুত্র। ওকে দেখলে মনে হত যেন পূর্ন যুবক। অথচ মনের মধ্যে কোন অহঙ্কার ছিল না কোন কিছু নিয়েই... এত যে বড়লোকের ঘরের ছেলে, কে বলবে দেখলে, আমাদের বাড়িই পড়ে থাকত নির্দিধায়... কতদিন হয়েছে দুপুরে কলেজ থেকে ফেরার পথে, চলে এসেছে আমাদের বাড়ি, মায়ের কাছ থেকে অক্লেশে ভাত চেয়ে খেয়ে গিয়েছে। আমারই এক এক সময় খারাপ লাগতো আমাদের বাড়ির সাধারণ খাবার ওকে খেতে দিচ্ছি ভেবে, কিন্তু ওর মধ্যে তা নিয়ে কোন হোলদোল ছিল না। ওই রকম সাধারণ খাবার, তাই একেবারে চেটেপুটে খেয়ে উঠে যেত। উল্টে মায়ের কাছে আমাকেই বরং মাঝে মধ্যে কথা শুনতে হতো যদি কোনদিন খাবার নিয়ে অশান্তি করেছি তো, অর্নবের দৃষ্টান্ত টেনে মা বলতো, ‘ওকে দেখে কিছু তো শিখতে পারিস...’। সত্যিই, ওকে দেখে অনেক কিছুই শেখার ছিল আমাদের। সেই সাথে ওর নির্ভিক মানসিকতা। ভাবতে পারবেন না, কি অক্লেশে ঝাপিয়ে পড়তে পারতো যদি কেউ কখনও কোন বিপদে পড়েছে শুনেছে। একবার আমাদের এক বন্ধু ফিরছিল কোচিং করে। বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। তখন বোধহয় ক্লাস টুয়েল্ভে উঠেছি... হ্যা, তাই হবে। তা, সেই বন্ধুটি তখন সদ্য প্রেমে পড়েছে, বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে ওদের সেই প্রেম পর্ব। আমরা, মানে বন্ধুরা ওদের এই ব্যাপারটা সবাই প্রায় জানতাম। বেশ উৎসাহও দিতাম ওকে এই নিয়ে। বুঝতেই পারছেন, তখন সদ্য কৈশোরে পা রেখেছি, তাই কাছের কেউ প্রেম করছে, সেটা জানার পর আমাদের অ্যাড্রেনিলের পরিমানও যেন বেড়ে থাকতো। ও মেয়েটির সাথে দেখা করে ফিরলেই আমারা প্রশ্নবানে জর্জরিত করে তুলতাম, জানার জন্য, কি বলল, কি করল, এই সব আর কি।’

বলতে বলতে প্রণববাবু থামেন একটু। পৃথার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলেন, ‘বোর করছি না তো? আসলে কি বলুন তো, এই সব কথাগুলো জমে ছিল বুকের মধ্যে। হটাৎ করে আপনার প্রশ্নে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।’

পৃথাও প্রত্যুত্তরে হাসে। ‘না, না... বোর হবো কেন, শুনতে ভালোই লাগছে। আমিই তো জিজ্ঞাসাটা করেছিলাম। বলুন আপনি...’

‘একটু জল হবে?’ পৃথাকে অনুরোধ করেন ভদ্রলোক।

‘হ্যা, হ্যা, নিশ্চয়... দাড়ান, আনছি এক্ষুনি...’ বলে উঠে দাড়ায় পৃথা। ‘ঠান্ডা দিই?’

কিচেন থেকে একটা গ্লাস এনে ফ্রিজ খুলে জল বের করে ঢেলে বোতলটাকে ফিরিয়ে ঢুকিয়ে রাখে আবার। ফিরে এসে প্রণববাবুর হাতে গ্লাসটা এগিয়ে দেয় পৃথা।

‘থ্যাঙ্কস্‌, আসলে কথায় কথায় তেষ্টা পেয়ে গিয়েছিল...’ হাসি মুখে বলে ওঠেন ভদ্রলোক।

উত্তরে শুধু স্মিত হাসে পৃথা, মুখ তুলে তাকায় দেওয়াল ঘড়িটার পানে, প্রায় দেড়’টা বাজে, বেশ বেলা হয়ে গিয়েছে। দুপুর বেলায় তার বাড়িতে অতিথি এসেছে, সেখানে না খাইয়ে ছাড়ে কি করে সে? মনে মনে ভাবে পৃথা। কিন্তু এখন রান্না করা সম্ভব নয়, ভদ্রলোককে এই ভাবে বসিয়ে রেখে, তার চেয়ে বরং কিছু অর্ডার করে দিলেই হয়। নিজের সিদ্ধান্তে নিজেই খুশি হয় পৃথা। প্রণববাবুর দিকে ফিরে বলে সে, ‘মিঃ কর্মকার, বেলা তো অনেক হলো, তাই বলছিলাম যে আজকে কিন্তু আপনি আমার এখানেই লাঞ্চ করে যাবেন।’

শুনে শশব্যস্ত হয়ে ওঠেন ভদ্রলোক, ‘এ বাবা, না, না, তা কি করে হয়? আমি তো শুধু মাত্র এগ্রিমেন্টাতে সই করাতেই এসেছিলাম। ছি ছি, দেখুন তো, কি অন্যায়, আমার জন্য আপনার বোধহয় অসুবিধা হয়ে গেল। সত্যিই তো, অনেক বেলা হয়ে গেছে। না, না। আজ বরং আমি উঠি। সই তো হয়েই গিয়েছে। আর একদিন না হয় আমি আসব’খন। তখন না হয় বাকি কথা হবে, কেমন?’ বলে উঠে দাঁড়াতে উদ্যত হন প্রণববাবু।

ওনাকে উঠতে দেখে হাঁ হাঁ করে ওঠে পৃথা, ‘না, না... উঠছেন কেন? আমি আমার জন্য বলিনি এ ভাবে। আর তাছাড়া এই দুপুর বেলায় আপনাকে না খাইয়ে ছাড়িই বা কি করে বলুন, যতই হোক, বাঙালী তো আমরা, নাকি? আমার মা শুনলে তো আমাকে এক হাত নিয়ে নেবে যদি আপনি এই ভাবে দুপুর বেলায় না খেয়ে চলে যান।’

ততক্ষনে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছেন ভদ্রলোক, ‘আপনি শুধু শুধু কুন্ঠিত হচ্ছেন মিস মুখার্জি, কোন অসুবিধা নেই এতে। আর তাছাড়া আজ দেখুন রবিবার, বাড়িতেও আমার ফ্যামিলি অপেক্ষা করছে আমার জন্য, সেখানে আমিই বা কি করে এখানে লাঞ্চ করে ফিরি বলুন। প্লিজ মিস মুখার্জি, অন্য আর একদিন না হয় খাওয়া যাবে’খন। আজকে বরং থাক।’

‘আমি বুঝতে পারছি যে আপনার ফ্যামিলি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে, হয়তো ফিরে গিয়েই ওনাদের সাথে আপনি লাঞ্চ করবেন বলেই ঠিক করেছিলেন, কিন্তু এ ভাবে আপনি যদি না খেয়ে আমার বাড়ি থেকে চলে যান, তাহলে আমারও তো ভালো লাগবে না, বলুন। প্লিজ, একটু আমাকে টাইম দিন, আমি এক্ষুনি কিছু অর্ডার করে দিচ্ছি। বেশি সময় লাগবে না, বিশ্বাস করুন।’ বলে ওঠে পৃথা।

‘না, না, আপনি ভুল বুঝছেন আমায়। আসলে সত্যিই আমার এখন যাবার দরকার। আমি বললাম তো, আমি আর একদিন না হয় আসব’খন। আগে থাকেতেই না হয় সেদিন ঠিক করে আসবো। প্লিজ, আজকে আর এটা নিয়ে জোরাজুরি করবেন না। সত্যিই, অনেকটাই বেলা হয়ে গিয়েছে কথায় কথায়।’

পৃথা বুঝতে পারে, আজ যদি প্রণববাবু ফিরে যান, তার অনেক কথাই না জানা থেকে যাবে, যেটা সে কিছুতেই হতে দিতে পারে না। তাকে জানতেই হবে এই অর্নব সম্বন্ধে সমস্ত না জানা কথা। জানতেই হবে। এবারে প্রায় হাত জোড় করেই দাড়িয়ে পড়ে সে প্রণববাবুর সামনে, ‘প্লিজ মিঃ কর্মকার, প্লিজ, ট্রাই টু আন্ডার্স্ট্যান্ড... আজ আমার জানার খুব প্রয়োজন এই অর্নববাবুর সম্বন্ধে... আই ওয়ান্ট টু নো এভরি ডিটেলস অ্যাবাউট হিম... তাই আপনার কাছে আমার একান্ত অনুরোধ, এক্ষুনি যাবেন না আপনি, প্লিজ ফিনিশ ইয়োর স্টোরি... প্লিজ...’

এবার যেন একটু চুপ করে যান ভদ্রলোক। এক দৃষ্টিতে খানিক তাকিয়ে থাকেন পৃথার পানে, তারপর ধীর কন্ঠে প্রশ্ন করেন, ‘কিন্তু কেন মিস মুখার্জি, হোয়াই ডু ইয়ু ওয়ান্ট টু নো অ্যাবাউট অর্নব? এই যে একটু আগেই বলছিলেন যে ইয়ু আর নট ইন্টারেস্টেড টু নো এনিথিং... দেন?’

প্রণববাবুর প্রশ্নে একটু অপ্রস্তুত হয় পৃথা, মাথা নিচু করে বলে, ‘সেটা আপনাকে আমি ঠিক বোঝাতে পারবো না, বাট ইটস ট্রু, দ্যাট আই ওয়ান্ট টু নো হিম, প্লিজ মিঃ কর্মকার, আপনি বসুন, টেল মি অ্যাাবাউট অর্নব।’

খানিক চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন প্রণববাবু, তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলেন, ‘বেশ, আপনি যখন অর্নবের ব্যাপারে এতটাই ইন্টারেস্টেড, দেন... ওকে... আমি বরং একটা আমার বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিই... কি বলেন।’

ভদ্রলোকের কথায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে পৃথার মুখটা... তাড়াতাড়ি ঘাড় হেলিয়ে বলে ওঠে, ‘হ্যা, হ্যা মিঃ কর্মকার, সেই ভালো... আপনি বরং জানিয়ে দিন, আমিও দেখি কিছু অর্ডার করে দিই... আপনি চাইনিজ খান তো?’

হেসে ফেলেন ভদ্রলোক, ‘রবিবারের দুপুরের মাংস ভাত ছেড়ে চাইনিজ... বেশ... তাই হোক... হয়তো এটাই ছিল আজকে আমার কপালে...’ বলে হা হা করে হেসে ওঠেন।

পৃথাও প্রণববাবুর হাসিতে হেসে ফেলে।

ক্রমশ...
[+] 4 users Like bourses's post
Like Reply
#36
১৬।।    

               
ড্রইংরুমে ছবিটা হাতে নিয়ে চুপ করে সেটার দিকে তাকিয়ে বসেছিল পৃথা। প্রণববাবু বাথরুমে গিয়েছেন কিছুক্ষন আগে, তাই ওই সময়টায় ছবিটাকে হাতে তুলে নিয়েছিল সে। ‘অর্নব, যাক, তোমার নামটা তাহলে এতদিনে জানতে পারলাম’ মনে মনে বলে পৃথা, ‘তুমি যে বিবাহিত, সেটা তো বুঝেইছি, ওটা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ ছিল না আগেও... কিন্তু নামটা জানার খুব ইচ্ছা ছিল... শুধু নাম নয়... আমি আরো জানতে চাই তোমার সম্বন্ধে... আরো... সব কিছু... জানি এটা একেবারেই আমার ছেলেমানুষি... আমার এই কৌতুহল তুমি জানতে পারলে নিশ্চয়ই হাসবে... রাগ করবে কি? কেন? রাগ করার কি আছে? আমার তোমার ব্যাপারে জানার ইচ্ছা হতেই পারে... কি? পারে না?... লিন্ডা... মানে তোমার বউ রাগ করবে তাতে? দূর... সেই বা জানছে কি করে? তাই না?... সত্যিই অর্নব... কি অদ্ভুত না? হয়তো তুমি কতওও দূরে কোথায় নিজের বউয়ের কাছে বসে রয়েছে... শুধু বসেই বা রয়েছ বলি কি করে? হয়তো এই মুহুর্তে আদর খাচ্ছ বউয়ের কোলে মাথা রেখে... আর তোমারই ফ্ল্যাটে বসে তোমার কথা চিন্তা করছে একেবারে অপরিচিত একটা মেয়ে... তুমি জানতেও পারছ না... থাকনা... নাই বা জানলে আমার কথা... আমিই শুধু না হয় জেনে রাখি তোমায়... কি মনে হচ্ছে তোমার? ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়? সে তো আগেই স্বীকার করে নিয়েছি... যেদিন প্রথম এই ফ্ল্যাটে ঢুকে দেখি তোমাকে, ছবিতে... সেদিনই যে প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম... সেটা তুমি পাগলামী বলো আর যাই বলো... এটা শুধুই আমার... শুধু আমার অনুভূতি... তুমি জানতেও পারবে না... অস্বীকার করবো না... একটু যে লিন্ডাকে হিংসা হয় না তা নয়... একটু কেন... বেশ হিংসা হচ্ছে... ইশ... ও কি লাকি বলো তো... তোমাকে সব সময় কাছে পায়... আর আমি শুধু তোমায় ছবিটাতেই দেখি... কোন দিনও পাব না তোমায়... না?’ ভাবতে ভাবতে কেমন যেন সিরসির করে শরীরটা... আবার সেই অদ্ভুত অনুভূতি... তার মনে হয়, কেউ যেন তার পেছনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে... তাকেই দেখে যাচ্ছে এক মনে... বারে বারে কেন যে এই ধরণের অনুভূতিটা তার হয় কে জানে... নিশ্চয়ই মনেরই ভূল।

গলার খ্যাকারিতে চটকা ভাঙে পৃথার... কখন প্রণববাবু বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে দাঁড়িয়েছেন কে জানে... লজ্জা পেয়ে যায় ও... গালের ওপরে লালিমার রেশ লাগে... হাতের ছবিটাকে তাড়াতাড়ি করে সেন্টার টেবিলের ওপরে রেখে দিয়ে প্রণববাবুর দিকে মুখ তুলে হাসে... সে হাসিতে যেন কোন বাচ্ছা মেয়ে লুকিয়ে কিছু করতে গিয়ে ধরা পড়ে যাওয়ার হাসি।

প্রত্যুত্তরে ভদ্রলোক মুচকি হেসে নিজের বসার জায়গায় ফিরে গিয়ে বসে পড়েন... ‘দেখছিলেন ছবিটা?’ প্রশ্ন করেন পৃথাকে।

‘হ্যা, মানে ওই আর কি...’ বলতে বলতে চোখ নামিয়ে নেয় পৃথা... লজ্জা করে এ ভাবে ধরা পড়ে যাওয়াতে।

হাতে লেগে থাকা জলটা রুমাল দিয়ে মুছতে মুছতে বলেন প্রণববাবু, ‘যেটা বলছিলাম তখন... তা সেই বন্ধুটি চুটিয়ে প্রেম করছে... আর আমরা মানে ওর সমস্ত বন্ধুরা ওকে উৎসাহ দিয়ে চলেছি... যত রকম ভাবে তাকে সাহায্য করা যায় সেটা করতে কারুর কোন বিরাম ছিল না... বেশ কাটছিল আমাদের... বাধ সাধল মেয়েটির দাদা... একদিন এসে বেধড়ক মেরে গেল ছেলেটিকে... সে বেচারা আমাদের কাছে এসে কাঁদো কাঁদো মুখে হাজির... প্রেমিকার দাদার হাতে মার খেয়ে ফিরেছে... আমরা তো শুনে খেঁপে উঠলাম... যতই হোক, এ যেন আমাদের সকলের একটা প্রেস্টিজ ফাইট... দল বেঁধে চললাম মেয়েটির দাদাকে শাসাতে... টগবগ করে ফুটছে তখন আমাদের রক্ত... কি সাহস... আমরা থাকতে কি না আমাদের বন্ধুর গায়ে হাত?’

‘খুব বন্ধু বৎসল ছিলেন আপনারা... না?’ হেসে প্রশ্ন করে পৃথা।

‘হ্যা, তা বলতে পারেন... তখন বন্ধুই ধ্যান জ্ঞান... সব কিছু... বোঝেনই তো... কিই বা বয়স তখন...’ হাসতে হাসতে উত্তর দেন ভদ্রলোক।

‘তারপর?’ তাড়া দেয় পৃথা।

‘তারপর আমরা সবাই মিলে গিয়ে দেখা করলাম মেয়েটির দাদার সাথে... কিন্তু সামনে দেখে তো আমাদের সবার অবস্থা খারাপ... এ যে দেখি একেবারে বেয়ামবীর... এই চেহারা... যেমনি বুকের ছাতি... তেমনি হাতের গুলি... তখন কে গিয়ে কথা বলবে সেটাই ঠিক করে উঠতে পারছিলাম না আমরা... প্রত্যেকেরই তখন উৎসাহে ভাঁটা পড়ে গিয়েছে... কেন এলাম সেটাই ভাবছি তখন... ঠিক সেই সময় অর্নব এগিয়ে গেলো লোকটির দিকে... কোমরে হাত রেখে লোকটির চোখে চোখ রেখে তর্ক করতে লাগল বন্ধুর হয়ে... এক কথা দু কথা বলতে বলতে শুরু হয়ে গেলো হাতাহাতি... অর্নবও কম যায় না... দুম করে দিল এক ঘুঁসি লোকটার নাকের ওপরে... গলগল করে রক্ত বেরুতে শুরু করে দিল... হটাৎ করে লোকটা একটা লাঠি নিয়ে চালিয়ে দিল... সেটা গিয়ে সোজা লাগল অর্নবের কপালে... আর একটু হলেই হয়তো ওর চোখটাতেই আঘাতটা লাগতো, কপাল গুনে সেটা হয় নি... কিন্তু বেশ ভালো মত কেটে গিয়েছিল... কিন্তু অর্নবকে কে থামায় তখন... সেই লাঠি নিয়েই বেধড়ক পেটাতে লাগল ওই রকম একটা বেয়াম করা লোককে... শেষে হার স্বীকার করতে বাধ্য করল... দুজনেরই তখন রক্তাক্ত অবস্থা... জামা কাপড় ছিড়ে রক্তারক্তি...’

‘সেই কাটা দাগটা বোধহয় এখনও রয়েছে কপালে...?’ খাটো গলায় প্রশ্ন করে পৃথা, ছবিটার দিকে তাকিয়ে।

‘হ্যা, ঠিক ধরেছেন... ভুরুর ওপরে ওই দাগটা থেকেই গেলো ওর...’ উত্তর দেন ভদ্রলোক।

‘খুব সেক্সি... দাগটা...’ গলাটাকে আরো খাদে নামিয়ে বলে ওঠে পৃথা।

‘অ্যা? কিছু বললেন?’ প্রশ্ন করে প্রণববাবু।

‘নাঃ... কিছু না... তারপর বলুন...’ মাথা নেড়ে বলে পৃথা।

‘পড়াশোনায় খুব ব্রিলিয়েন্ট ছাত্র ছিল অর্নব, জানেন... জয়েন্টএ ভালো র‍্যাঙ্ক করে আই আই টি কানপূরে কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংএ চান্স পেয়ে গিয়েছিল। ওখানেও খুব ভালো রেসাল্ট করেছিল... প্লেসমেন্ট পেলো ডাও’তে... কানাডায়।’ বলতে থাকেন প্রণববাবু। ‘কানাডায় চাকরিতেও খুব তাড়াতাড়ি উন্নতি করে ফেলেছিল... প্রায় বছর পাঁচেকের মধ্যেই চলে গেল সানফ্রান্‌সিস্কোতে... একেবারে কম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট কাম চিফ্‌ ইন্টিগ্রেটিং অফিসার হয়ে... দু হাতে কামাতে থাকলো... সেই সাথে বিশাল সন্মান।’ বলে একটু থামলেন ভদ্রলোক। পৃথাও কিছু না বলে চুপ করে রইলো।

‘এত পয়সা, এত সন্মান... কিন্তু বদলালো না অর্নব একটুও... নিয়ম করে আমাদের সবার সাথে যোগাযোগ রেখে যেত ওখান থেকে... প্রত্যেকের সাথে। এর মধ্যে বাবা মারা গেলেন ওর... আর তার কিছু দিন পর মা’ও। ইন্ডিয়াতে ফিরে সমস্ত সম্পত্তি বেচে দেবে ঠিক করল। অনেক করে বোঝালাম ওকে... ও’র বক্তব্য, কি হবে এখানে এত কিছু রেখে? ফিরবে তো না আর এখানে... ওর ইচ্ছা ছিল বিদেশেই সেটেল্ড করে যাবার... কিন্তু তবুও শেষে দুম করে আমাকে ধরে বসল... বলল, প্রণব, তোকেই দেখতে হবে আমার সব কিছু। আমার তো ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা... আরে... আমি বোঝাতে গেলাম যাতে ও না বিক্রি করে, কিন্তু তাই বলে আমাকে ফাঁসাবে, সেটা তো ভাবি নি... কিন্তু ও বললো, দেখ, তুই যদি না আমার এই প্রপার্টি দেখভাল করিস, তাহলে আমি বেচে দিয়ে চলে যাবো... এবার তোর সিদ্ধান্ত... আমি তা’ও অনেকবার বোঝাবার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ভবি ভোলার নয়... শেষে আমাকে ওর সমস্ত প্রপার্টির এক্সিকিউটর করে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি বানিয়ে দিয়ে ফিরে গেল বিদেশে।’

‘সেই থেকেই সামলাচ্ছেন আপনি?’ মৃদু কন্ঠে বলে পৃথা।

‘সেই রকমই বলতে পারেন।’ বলে ভদ্রলোক।

‘ওহ্‌, এই তাহলে আপনার বন্ধুর গল্প...’ বলে পৃথা... মনে মনে যেন একটু হতাশই হয় সে... হয়তো আরো কিছু আশা করেছিল সে।

টেবিলের ওপরে থাকা ছবিটার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন প্রণববাবু, ‘সেটা হলে তো ভালোই হত মিস মুখার্জি...’

‘মানে? সেটা নয়? আরো...’ বলতে যায় পৃথা।

পৃথার প্রায় মুখের কথা থেকেই বলে ওঠেন প্রণববাবু, ‘হ্যা, আরো... এবারে ফিরে গিয়ে আরো বেশি করে কাজে ডুবে গেল অর্নব। শুধু কাজ, কাজ আর কাজ। ওকে দেখার মত কেউ নেই। এমনিতেই দেখতে রাজপুত্রের মত ছিল, এই কদিন ওখানকার জল হাওয়ায় যেন আরো রূপবান হয়ে উঠল... কোন এক পার্টিতে আলাপ হল ওর সাথে লিন্ডার, লিন্ডা হেল্মস্ট্যাগ, সুইডেনএর মেয়ে...’

লিন্ডার নামটা শুনে একটু নড়ে চড়ে বসে পৃথা... চোখটা তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে তার।

‘অপরূপ সুন্দরী...’ ফের বলতে থাকেন প্রণববাবু, ‘সেটা হয়তো কিছুটা বুঝতে পেরেছেন ছবিতে দেখে... সামনে দেখলে সত্যিই চোখ ফেরানো মুস্কিল... ভগবান সম্ভবত অনেক সময় নিয়ে মেয়েটিকে গড়েছিলেন...’

একটু নড়ে বসে পৃথা... চোখ চলে যায় ছবির পানে... আড় চোখে একবার দেখে নেয় ছবির লিন্ডাকে... সত্যি... কথাটা অস্বীকার করা যায় না... কিন্তু... কিন্তু সেই বা কম কিসে? সেও তো সুন্দরী... সবাই তো তাই বলে? প্রণববাবুর কি তাই মনে হয় না? তার সামনে এই ভাবে অন্য একটা মেয়েকে সুন্দরী বলাটা ঠিক হজম করতে পারে না পৃথা... কিন্তু মুখটাকে যথা সম্ভব অভিব্যক্তিহীন করে রাখার চেষ্টা করে... বুঝতে দেয়না তার মনের মধ্যে গড়ে উঠতে থাকা মেয়েলী হিংসার রেশটুকু... আনমনে কপাল থেকে ঝুলে আসা চুলের গোছা নিয়ে পাকায় আঙুলের ফাঁকে...

‘অর্নবও তাই হয়তো প্রথম দেখাতেই চোখ ফেরাতে পারেনি... আর তাছাড়া সেও তো রূপবান... ওদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠতে বেশি সময় লাগেনি... সময় লাগে নি একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট হতে... তারপর থেকে প্রায় ওদের দেখা গিয়েছে সমস্ত জায়গায়... একে অপরের সাথে ঘুরে বেড়াতে... বেশ চলছিল ওদের প্রেমপর্ব... আমাকে অর্নব মাঝে মধ্যেই জানাতো ওদের কথা... ভালো লাগতো শুনে... ভাবতাম যাক, অর্নবটার একটা হিল্লে তো হলো। এরমধ্যে আমিও বিয়ে করলাম... ওকে খবর পাঠালাম আসার জন্য... কিন্তু ও আসতে পারলো না... অবস্য আসা যে ওর পক্ষে সম্ভব হবে না সেটা আমিও জানতাম... কারণ ও যা ব্যস্ত মানুষ, আর যা গুরু দ্বায়ীত্ব ওর ওপরে, সেখানে হটাৎ করে ইন্ডিয়ায় আসা ওর পক্ষে সম্ভব নয়। তাই কিছু মনেও করিনি। আমার বিয়ের পরে পরেই ও জানালো যে ও’ও লিন্ডাকে বিয়ে করতে চলেছে... করেও ফেলল তার পরই... ওই যে ছবিটা... ওটা ও আমাকেই পাঠিয়েছিল অ্যারাকানসাস থেকে... ওদের হানিমুনে গিয়ে...’

সিগারেটএর প্যাকেটটা হাতে তুলে এগিয়ে ধরে প্রণববাবুর দিকে... ভদ্রলোক প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট টেনে নিয়ে বলেন, ‘থ্যাঙ্কস্‌’, বলে ধরিয়ে টান দেন সিগারেটএ। পৃথাও একটা সিগারেট বের করে জ্বালায় ঠোটের ফাঁকে রেখে... ধোঁয়া ছেড়ে বলে, ‘তারপর...’

‘বছর গড়িয়ে যায়... ভিষন সুখি দুটো মানুষ... একে অপরকে ছেড়ে থাকার কথা চিন্তাও করতে পারে না... যেন মেড ফর ইচ আদার... সব চলছিল ঠিকঠাক... কিন্তু ভগবানের বোধহয় অন্য কিছু ভাবা ছিল... সহ্য হলো না ওদের এত প্রেম... হটাৎ করে ধরা পড়লো লিন্ডার শরীরের মধ্যে বাসা বেঁধেছে মারণ রোগ... হেপাটোসেলুলার কার্সিনোমা... সাধারণ ভাষায় যাকে বলে লিভার ক্যান্সার... যখন ধরা পড়লো... আর কিছু করার নেই... একেবারে লাস্ট স্টেজ... ধরা পড়ার পর আর মাস দুয়েক বেঁচে ছিল বোধহয় লিন্ডা... পাগলের মত চেষ্টা করেছিল অর্নব ওকে বাঁচাতে... কিন্তু পারলো না।’

শুনে স্তব্দ হয়ে যায় পৃথা... এটা সে কোন মতেই আশা করেনি... এই কিছুক্ষন আগেই মেয়েটিকে হিংসার চোখে দেখছিল ও... কিন্তু এটা শোনার জন্য কোন ভাবেই প্রস্তুত ছিল না... জলে ভরে আসে তার চোখদুটি... ধরা গলায় বলে, ‘কি বলছেন মিঃ কর্মকার? লিন্ডা মারা গিয়েছে?’

‘হ্যা মিস মুখার্জি... অর্নবদের দাম্পত্য জীবনের মেয়াদ ঠিক এক বছরের ছিল...’ মৃধু কন্ঠে বলেন প্রণববাবু।

ছি ছি... কত কিই না ভাবছিল সে... মনে মনে নিজের প্রতিই বিরক্ত হয় এই ভাবে না জেনে অন্য কারুর সম্বন্ধে কিছু ভেবে নেওয়ার জন্য... লজ্জিত হয় নিজের এই অভব্যতায়... মাথা নিচু করে চুপ করে বসে থাকে।

‘দুম করে চাকরীটা ছেড়ে দিল অর্নব তারপরই, জানেন... ছেড়ে দিয়ে সোজা চলে এলো ইন্ডিয়ায়... আমার সাথে যোগাযোগ করল... কি সান্তনা দেবো বলুন তো এই রকম একটা ঘটনার পর? অর্নব যেন একেবারে বদলে গেল... আগের সেই সদা চঞ্চল ছেলেটা কেমন চুপচাপ হয়ে গেল... বেশ কিছুদিন বসে রইল নিজের বাড়িতে, নিজেকেই বন্দি করে... অনেক বোঝাবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছিল না... বুঝতে পারছিলাম, ও কিছুতেই মন থেকে এই ভাবে লিন্ডার মৃত্যুটা মেনে নিয়ে পারছে না... আর সেটাই তো স্বাভাবিক। প্রায় বছর খানেক চুপচাপ বসে রইল বাড়িতে... আমি কত করে বললাম, ফিরে যখন এসেছিস, তখন না হয় তুইই তোর ব্যবসা পত্তর দেখাশুনা কর... তাতে ব্যবসারও ভালো হবে, আর মনটাও একটু ব্যস্ত থাকাতে ভালো থাকবে... কিন্তু রাজি করাতে পারিনি কিছুতেই।

সময়... সময় মানুষকে অনেক সাহায্য করে, জানেন মিস মুখার্জি... ধীরে ধীরে একটু একটু করে স্বাভাবিক হতে লাগল অর্নব... প্রথম দিকের সেই পাগল পাগল মনোভাবটাও একটু একটু করে কেটে যেতে লাগলো... আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম... নিজের পৈত্রিক ব্যবসাটা তখনও না দেখা শোনা করা শুরু করলেও, নিজেকে আর অতটা বন্দি করে রাখতো না... তবে মাঝে মধ্যেই নিরুদ্দেশ হয়ে যেত... বেরিয়ে পড়তো ব্যাগ গুছিয়ে... ঘুরে বেড়াতো নানা জায়গায়... হটাৎ হটাৎ করে চলে যেত যেদিকে মন যায় সেদিকে মাস দু-মাসের জন্য... আসলে সত্যি বলতে কি, টাকার তো কোনদিনও অভাব ছিল না, তাই সেদিকটায় ভাবতে হয়নি ওকে কখনও। ইচ্ছা হলেই বেড়িয়ে পড়তো... আবার বেশ কিছুদিন পর ফিরে আসতো। প্রথম প্রথম চিন্তা করলেও, পরে আর ওর এই নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তা করতাম না... ওকে ওর মতই থাকতে দিতাম... আমিই তখনও দেখাশোনা করে যেতাম ওর সমস্ত কিছু।’

কেন জানে না পৃথা, ওর ও অর্নবের এই পরিবর্তন শুনে ভালো লাগে... যেন একটু নিশ্চিন্ত হয় সে মনে মনে... ম্লান হেসে বলে, ‘যাক, তাহলে অর্নববাবু নিজেকে শেষের দিকে সামলে নিতে পেরেছিল যা’হোক...’ নিজের মনের মধ্যে তৈরী হওয়া খানিক আগের গ্লানিটার কিছুটা যেন প্রশমিত হয় প্রণববাবুর এই তথ্যে।

‘হ্যা, মোটামুটি সামলে নিতে পেরেছিল বলা যেতে পারে... আগের মত সবসময় হাসি ঠাট্টার মধ্যে না থাকলেও, প্রথম দিকে ফিরে একেবারে যে রকম ভেঙে পড়েছিল, সেটার থেকে নিজেকে বের করে নিয়ে এসেছিল অনেকটাই।’ বলে থামলেন ভদ্রলোক। তারপর একটু নিজেকে যেন গুছিয়ে নিয়ে আবার বলতে শুরু করেন, ‘হটাৎ একদিন দুম করে আমাকে বলল, প্রণব, চল, কোলকাতা যাবো... আমি তো শুনে আকাশ থেকে পড়লাম... বললাম, কোলকাতা? কেন? শুনে বলল, এ ভাবে চুপ করে বসে থাকতে ভালো লাগছে না রে, ওখানে গিয়ে একটা কিছু করবো... তুইও বৌদিদের নিয়ে চল আমার সাথে। ততদিনে আমারও বাবা মা গত হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু বৌ, বাচ্ছা, তাদের কলেজ, এ ভাবে হটাৎ বললে হয় নাকি? অনেক করে বোঝালাম, কিন্তু কে শোনে কার কথা... বরাবরই ও ওই রকম, একবার যখন মাথায় ঢুকেছে, তখন সেখান থেকে ওকে সরানো কার সাধ্য... শেষে সত্যিই একদিন আমরা সবাই মিলে চলে এলাম কোলকাতায়... ওখানকার ব্যবসা সব কিছু বিক্রি করে দিয়ে... হাতে বেশ ভালো কিছু টাকা পেয়েছিল... তাই দিয়ে ও এখানে একটা বড় কেমিক্যাল ফ্যাক্টারি শুরু করল... নিজে থাকার জন্য এই ফ্ল্যাটটা কিনেছিল আর আমাদের জন্য আর একটা ফ্ল্যাট কিনে দিল। চাইলে ও একটা বাড়িই কিনে নিতে পারতো, কিন্তু সে দিকে গেলো না, বলল, না রে প্রণব, আমার মত একার লোকের জন্য এই রকম ছোট ফ্ল্যাটই ভালো। নতুন ব্যবসায় আমাকে ওর পার্টনার করে নিল... ইনভেস্টমেন্ট ওর... আমাকে শুধু সাথে থাকতে হবে। অর্নবের দূরদর্শিতায় আর অধ্যবশায় ব্যবসা দেখতে দেখতে ফুলে ফেঁপে উঠল... দেখতে দেখতে বছর তিনেক গড়িয়ে গেল... আমাদের প্রডাক্ট প্রচুর বিদেশে যেতে লাগল...’

‘তাহলে এখন উনি কোথায়?’ চিন্তিত গলায় প্রশ্ন করে পৃথা।

‘সেই কথাতেই আসছি এবার... ঘটনাটা খবরের কাগজেও বেরিয়েছিল তখন... হয়তো দেখেও থাকবেন... সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল, একদিন এক ক্লায়েন্ট মিট করতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিল অর্নব... যাচ্ছিল বর্ধমানের দিকে... সেদিন আমারও সাথে যাবার কথা ছিল, কিন্তু সকাল থেকে আমার ছেলেটার ধূম জ্বর হওয়াতে আমি আর ওর সাথে যেতে পারিনি...’ বলে থামলেন প্রণববাবু।

উৎকন্ঠিত গলায় প্রশ্ন করে পৃথা... ‘তারপর? তারপর কি হলো প্রণববাবু?’

‘খুব বৃষ্টি পড়ছিল সেদিন... আমিও ওকে যেতে বারণ করেছিলাম, কিন্তু কথা শুনলে তো... হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল... আমার সামনে দিয়েই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল... আর তারপর...’

‘তারপর...’ গলা শুকিয়ে আসে পৃথার...

‘আর তারপর আর কোন খবর নেই...’ বলে চুপ করেন ভদ্রলোক।

‘মানে? খবর নেই মানে?’ একটু যেন গলার স্বরটা জোরে শোনায় পৃথার... ‘আবার কি উনি বেড়াতে চলে গিয়েছিলেন?’

‘নাঃ... এবারে আর বেড়াতে যাবার জন্য নিরুদ্দেশ নয়... রাস্তার ধারে ওর গাড়িটা পাওয়া যায়... জ্বলে কালো হয়ে গিয়েছিল... পরে পুলিশ তদন্ত করে জেনেছিল যে আশপাশের লোক দেখেছিল যে বৃষ্টির মধ্যে হটাৎ একটা বাজ পড়ে ওই গাড়িটার ওপরে... গাড়িটা তখন ওই রাস্তার ধারেই দাঁড়িয়ে ছিল সম্ভবত... কেন, তার উত্তর দেবার আর কেউ নেই... লোকজন দৌড়ে গিয়েছিল সাহায্য করার জন্য... কিন্তু ততক্ষনে সব শেষ... জ্বলেপুড়ে খাঁক হয়ে গিয়েছিল গাড়িটা...’ বলে চুপ করেন ভদ্রলোক।

গলার মধ্যেটায় কি একটা দলা পাকায় পৃথার... ঘরের মধ্যের সমস্ত কিছু যেন ঘুরছে চোখের সামনে... খুব কষ্ট করে বলে ওঠে সে, ‘আর... আর অর্নববাবু?’ কেমন যেন কান্নাটা ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে বুকের ভেতর থেকে তার, অনেক কষ্টে চেপে রাখে সে ভদ্রলোকের সামনে।

‘জানি না... গাড়িটা এতটাই জ্বলে গিয়েছিল যে অর্নবের বডিটাও আর পাওয়া যায় নি... একেবারে মুছে গেল বরাবরের জন্য... হারিয়ে গেল সে...’ বলে চুপ করেন প্রণববাবু।

পৃথাও থম মেরে চুপ করে বসে থাকে সোফায়... কথা সরে না তার মুখ থেকেও... এ কি করে সম্ভব... একটা গোটা জলজ্যান্ত মানুষের এই পরিণতি হতে পারে নাকি? কিছুতেই যেন মেলাতে পারে না সে... অর্নবকে নিয়ে সে কল্পনার জাল বুনেছিল ঠিকই, কিন্তু সেও জানতো যে সেটা অবাস্তব... সেটা ছিল নিছকই নিজের মত করে নিজেকে আনন্দ দেওয়ার... হয়তো সেটা ভালোবাসা নয়, সামান্য মোহো... হিংসা হয়েছিল লিন্ডার ভাগ্য দেখে এই রকম একটা মানুষকে নিজের করে পেয়েছে বলে ঠিকই... কিন্তু তাদের যে শেষে এই পরিণতি হয়েছিল সেটা সে কিছুতেই মানতে পারে না... না, না, একি করে হয়... একটা মানুষ এই ভাবে... 

দরজায় বেল বাজার আওয়াজ হয়... কিন্তু কানে যায় না পৃথার... ডুবে থাকে সে আপন চিন্তায়... আবার বেল বাজতে প্রণববাবু মৃদু গলায় বলেন, ‘মিস মুখার্জি... বেল বাজছে... সম্ভবত কেউ এসেছে...’

‘এ্যা? হ্যা...’ সম্বিত ফেরে পৃথার... ধীর পায়ে উঠে যায় দরজার দিকে... তখনও যেন ঘোরের মধ্যে রয়েছে সে... দরজা খুলে দেখে ওর অর্ডার দেওয়া খাবার নিয়ে একটি ছেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে দরজার ওপারে।
[+] 2 users Like bourses's post
Like Reply
#37
১৭।।


প্রণববাবু ঘুরে যাবার পর বেশ কিছুদিন কেটে গিয়েছে, এক সন্ধ্যায়, ফ্ল্যাটের দরজা খুলে ঘরে ঢোকে পৃথা তড়িঘড়ি... ‘ইশ... খুব ভুল হয়ে গেছে আজকে...’ মনে মনে ভাবে... সকালবেলায় বেরুবার সময় সাধারণত যে ব্যাগটা নিয়ে অফিসে যায়, সেটা আজকে নেয় নি, আর তার ফলে ছাতাটাও বের করতে ভুলে গিয়েছিল ওই ব্যাগটা থেকে। ফেরার পথে এই রকম ঝেঁপে বৃষ্টি নামবে কে জানতো... একেবারে চুপচুপে ভিজে গিয়েছে... কতক্ষন অটোর জন্য দাঁড়িয়েছিল... এমন জায়গায় অটো স্ট্যান্ডটা যে একটু যে শেডের তলায় দাঁড়াবে, তারও যো নেই... দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজতে হয়েছে ওকে...

পায়ের জুতোটাকে কোনরকমে খুলে হাতের ব্যাগটাকে সোফার ওপরে ছুড়ে দিয়ে বাথরুমের দিকে দৌড়ায়... এ ভাবে এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে ড্রইংরুমের মেঝেটা ভিজে নোংরা হয়ে যাবে শুধু শুধু... পরে তো তাকেই সেই কাদা পরিষ্কার করতে হবে। বাথরুমে যাবার পথেই জামার বোতামগুলো খুলতে থাকে দ্রুত হাতে, ঢুকেই বাথরুমের দরজাটাকে আলগোছে টেনে ভিজিয়ে রেখে গা’য়ের থেকে টেনে জামাটা খুলে ফেলে দেয় বালতিটার মধ্যে... হাত দেয় জিন্সের বোতামে... ভিজে গিয়ে একেবারে সেঁটে গিয়েছে পায়ের সাথে জিন্সটা... বোতাম আর চেন খুলে কোমর থেকে দেহটাকে বেঁকিয়ে চুরিয়ে নেড়ে নেড়ে টেনে নামায় শরীর থেকে প্যান্টটাকে... ‘ইশ... কি কুক্ষনেই না আজকেই জিন্স শার্ট পরে অফিসে গিয়েছিলাম... কুর্তি হলে তাও একটু হালকা হত... এতো একেবারে ভিজে ভারী হয়ে উঠেছে...’ জিন্সটারও জায়গা হয় বালতির মধ্যে... নজর পড়ে নিজের শরীরে পরে থাকে ব্রা প্যান্টির দিকে... ‘দেখ কি অবস্থা... ও গুলোও তো দেখছি ভিজে গিয়েছে... মরণ আর কি... বৃষ্টি হবার আর সময় হলো না... আর একটু পরে নামতে পারতো... ততক্ষনে বাড়ি পৌছে যেতাম... ক’দিন ধরেই গা’টা ম্যাজম্যাজ করছে, তার ওপর এই ভাবে ভিজলাম, জ্বর না আবার এসে যায়...’ হাত ঘুরিয়ে অভ্যস্থ হাতে ব্রায়ের হুকটা আলগা করতে করতে ভাবে পৃথা।

প্যান্টিটা খুলে দাঁড়ায় শাওয়ারের নিচে... কলটা খুলতেই ছাদের রিজার্ভারের জমা ঠান্ডা জল ছিটিয়ে পড়ে নগ্ন দেহের ওপরে... হটাৎ করে গায়ের ওপরে এসে পড়া ঠান্ডা জলে কাঁপুনি ধরে যায় তার... ‘উউউহুহুহুহু...’ করে চিৎকার করে ওঠে... ভিষন শীত করতে থাকে তার... হাত দুটোকে জড়ো করে ধরে বুকের ওপরে... একটু একটু করে জলের ঠান্ডা ভাবটা সয়ে যেতে থাকে শরীরের তাপমাত্রার সাথে... সেও স্বাভাবিক হয় যেন একটু... এবার ভালো করে জলের ধারার নীচে দাঁড়িয়ে শরীরের ওপরে জলটা নিতে থাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে... চোখদুটো বন্ধ করে রাখে আরামে... নিরাবরণ নিটোল তম্বী শরীরটা বেয়ে জলের ধারা মাথার থেকে নেমে ধেয়ে যায় মাটির দিকে।

বাথরুম থেকে বড় তোয়ালেটা সারা শরীরে জড়িয়ে বেরিয়ে এসে দাঁড়ায় ড্রইংরুমের মধ্যে... তোয়ালের খুঁটটা গুঁজে রাখে পায়রার মত দুটো নরম বুকদুটোকে ঢেকে রেখে... শেষ প্রান্তটা গিয়ে হাঁটুর অনেক ওপরেই শেষ হয়ে যায়... নিটোল কাঁধদুটো থাকে সম্পূর্ণ নিরাবরণ... ‘সর্বনাশ... বাইরের দরজাটাই বন্ধ করি নি? দেখেছ অবস্থা!’ বাইরের দরজাটার দিকে তাকিয়ে নিজের ভুলে আঁতকে ওঠে পৃথা... দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে ফাঁক হয়ে থাকা দরজাটার দিকে... হাতের চাপে ঢেলে দেয় দরজাটাকে... ইয়েল লকের খট করে আওয়াজ তুলে বন্ধ হয়ে যায় দরজাটা... ‘ইশ... দেখেছ কান্ড আমার... যদি কেউ ঢুকে পড়তো এখন? এ বাবা... আমিও তো একেবারে ন্যাংটো হয়ে চান করছিলাম...’ যেন নিশ্চিন্ত হতেই একবার উঁকি মারে আধো অন্ধকার কিচেনের মধ্যে... তারপর গিয়ে আলো জ্বালে বেডরুমে... ভালো করে চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে নেয় একবার... খেয়াল করে ঘরের লাগোয়া বারান্দার দরজার ছিটকিনিটার দিকে... ‘নাঃ... বাবাহঃ... কেউ ঢোকে নি... ইশ... কি ভুলটাই না করে বসেছিলাম...’ ঘুরে দাঁড়ায় আয়নার সামনে... নিজেই নিজেকে ভেঙচি কাটে আয়নার প্রতিফলনের মধ্যে দিয়ে... জানলার ওপারে তখন অঝরে ঝরে চলেছে বৃষ্টি।

কড়্‌... কড়্‌... কড়াৎ... মেঘে ঢাকা সন্ধ্যের কালো আকাশটাকে চিরে বিকট শব্দে বাজটা পড়ল... আকস্মিক বাজের শব্দে চমকে উঠলো পৃথা... তারপরই ঝুপ করে অন্ধকার হয়ে গেল... একটা নিশ্ছিদ্র কালো অন্ধকার ওকে যেন জড়িয়ে ধরল চতুর্দিক থেকে...

চুপ করে খানিক এক ভাবে দাঁড়িয়ে রইল ওখানটাতেই... একটু একটু করে অন্ধকারটা চোখের মধ্যে সয়ে আসতে লাগলো... জানলা দিয়ে আসা বাইরের সন্ধ্যের আলোয় অস্পষ্ট ভাবে চোখে পড়তে লাগলো ঘরের মধ্যেটা... ধীর পদক্ষেপে খুব সাবধানে বেডরুম থেকে বেরিয়ে এসে দাঁড়ালো ড্রইংরুমের মধ্যে... ‘ইশ... এখানেটা তো আরো বেশি অন্ধকার... নিশ্চয় বাজ পড়ে কোথাও কোন ট্রান্সফর্মার উড়েছে... নয়তো এই ভাবে কারেন্ট যেতো না...’ একা একা কথা বলে... হাতড়ে হাতড়ে এগিয়ে যায় কিচেনের দিকে... তাকের ওপর থেকে মোমবাতি আর দেশলাইটা পেড়ে জ্বালায় সেটি... মোমের নরম আলোয় ভরে যায় কিচেনটা... সাবধানে হাতে জ্বলন্ত মোমবাতিটা ধরে ফিরে আসে ড্রইংরুমে... এগিয়ে গিয়ে বাইরের দরজার লকটাকে তুলে দেয় ভালো করে... তারপর গুটিগুটি পায়ে মোমবাতির শিখাটাকে হাতের তেলোর আড়াল করে এগিয়ে চলে বেডরুমের দিকে। বেডরুমের সামনে এসে দাঁড়াতেই জানলা থেকে ঠান্ডা এক ঝলক বাতাস হৈ হৈ করে ঢুকে দুম করে নিভিয়ে দেয় মোমবাতিটাকে... ‘যাহঃ... দূর... ভাল্লাগে না...’ নিভে যাওয়া মোমবাতিটাকে হাতের মধ্যে ধরে স্বগক্তি করে পৃথা... সেটাকে বেডসাইড টেবিলের ওপরেই রেখে দিয়ে সুইচ বোর্ডের কাছে গিয়ে অফ্‌ করে দেয় ঘরের আলোটাকে তারপর এগিয়ে যায় ঘরের জানলাটার কাছে... জানলার পাল্লাদুটো খুলে দেয়... বাইরের থেকে ঠান্ডা বাতাসের সাথে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ছাট এসে লাগে ওর চোখে মুখে... ভালো লাগায় মনটা ভরে যায়... জানলার ফ্রেমটায় হাত রেখে মুখটাকে যথাসম্ভব বাড়িয়ে দেয় সামনের দিকে... মুখের ওপরে জলের ঝাপটা নিতে থাকে মনের আনন্দে।

ওই ভাবে থাকতে থাকতে আস্তে আস্তে মাথাটাকে হেলিয়ে জানলার ফ্রেমে ঠেস দিয়ে... অন্ধকার ঘরের মধ্যে একলা সে... কেমন যেন আস্তে আস্তে মনটা ভারী হয়ে ওঠে... প্রণববাবু ফিরে যাবার পর থেকেই মাঝে মধ্যেই আজকাল কিছু ভালো লাগে না তার... থেকে থেকে বুকের মধ্যেটায় একটা না চেনা বোঝা চেপে বসে যেন... হারিয়ে ফেলে নিজেকে এক দুঃসহ চাপা কষ্টের আবর্তে...

জানলার ফ্রেমে মাথা রেখেই মৃধু স্বরে গুনগুন করে গান ধরে আপন মনে...
শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে
তোমারি সুরটি আমার মুখের ‘পরে, বুকের ‘পরে।।
পুরবের আলোর সাথে পড়ুক প্রাতে দুই নয়ানে-
নিশীথের অন্ধকারে গভীর ধারে পড়ুক প্রানে।
নিশিদিন এই জীবনের সুখের ‘পরে দুখের ‘পরে
শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে।
যে শাখায় ফুল ফোটে না, ফল ধরে না একেবারে,
তোমার ওই বাদল-বায়ে দিক জাগায়ে সেই শাখারে।
যা-কিছু জীর্ণ আমার, দীর্ণ আমার, জীবনহারা,
তাহারি স্তরে স্তরে পড়ুক ঝরে সুরের ধারা।
নিশিদিন এই জীবনের তৃষার ‘পরে, ভুখের ‘পরে
শ্রাবণের ধারার মতো পড়ুক ঝরে, পড়ুক ঝরে।।

কেন জানা নেই, পৃথার চোখের কোল দিয়ে আনমনে গড়িয়ে পড়তে থাকে নোনা জলের ধারা। গানটা শেষ করে চুপ করে আরো খানিকক্ষন ওই ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে বৃষ্টির ছাঁটের মুখে... চোখের উষ্ণ জলের সাথে মিশে যায় বৃষ্টির ঠান্ডা জল। ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কখন গায়ের থেকে তোয়ালেটা মাটিতে খসে পড়ে গিয়েছে, খেয়ালও নেই তার... ওই ভাবেই নগ্ন দেহে দাঁড়িয়ে থাকে সে বাইরের পানে তাকিয়ে। সেদিনের পর থেকে কিছুতেই সরিয়ে রাখতে পারছে না অর্নবকে মনের মধ্যে থেকে... একি হয়ে গেলো... একটা কল্পসুখের মধ্যে সে ভেসে ছিল, কিন্তু হটাৎ করে যেন তাকে টেনে হিঁচড়ে বাস্তবের কঠিন মাটির ওপরে আছড়ে ফেলে দিয়ে গেলেন ওই ভদ্রলোক... প্রণববাবু... তার জীবনের সব প্রাণচ্ছলতা যেন কি করে নিমেশে উবে গেল এক ফুৎকারে... তার মনে হচ্ছিল যেন জীবনের সমস্ত রঙ গন্ধ কেউ এক লহমায় মুছে দিয়ে গিয়েছে... একটা বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে তার। 

হটাৎ করে ওর সেই অস্বস্থিটা যেন ফিরে আসে... সিরসির করে ওঠে নগ্ন শরীরটা... মনে হয় অন্ধকার ঘরের মধ্যে কারুর উপস্থিতি... অনুভব করার চেষ্টা করে নিঃশ্বাসের মৃদু শব্দ... বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই পৃথার মধ্যে এই অনুভূতিটা আরো বেশি করে চেপে বসেছে... শুধু অনুভূতিই বা এখন আর বলে কি করে সে? হাতে গরম বেশ কিছু প্রমাণও তো পেয়েছে ইতিমধ্যেই। ওর জায়গায় যদি অন্য কোন মেয়ে থাকতো, ও নিশ্চিত, এতদিনে পাততাড়ি গুটিয়ে পালাতো ফ্ল্যাট থেকে সে। কিন্তু ও সেটা হতে দিতে পারে না। এত সহজে পিছিয়ে যাবার মেয়ে, পৃথা নয়। প্রথম প্রথম খেয়াল করতো ওর অনুপস্থিতিতে কিচেনে রাখা বিস্কিটের কৌটোটা হয়তো ঠিক জায়গায় নেই, বা ফ্রীজে রাখা রান্না করে রেখে দেওয়া খাবারের ঢাকাটা খোলা... গায়ে মাখেনি সেটা নিয়ে আগে, ভেবেছে হয়তো তারই ভুল, কিন্তু যত দিন গিয়েছে, ততই ব্যাপারটা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ কমে এসেছে। শেষে ইচ্ছা করেই দেখে রাখতো ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে কোনটা কি ভাবে রয়েছে, ফিরে দেখেছে যে, হ্যা, ঠিক যা ভেবেছে তাই, সরে গিয়েছে আগের অবস্থান থেকে খাবারের জিনিসগুলো। শুধু এটাই নয়, বাইরের থেকে ঘরে ঢুকলেই ওর মনে হতো যেন ওর অনুপস্থিতিতে ঘরের মধ্যে কেউ ছিল, দরজার চাবী ঘোরাবার আওয়াজে সরে গিয়েছে। প্রমাণস্বরূপ কতদিন হয়েছে ঘরে ঢুকে দেখেছে যে ফ্যানটাকে ঘুরতে, কিন্তু ও একেবারেই সুনিশ্চিত যে বেরুবার সময় ও সমস্ত সুইচ অফ করে দিয়েই বেরিয়েছিল। অস্বীকার করবে না পৃথা, প্রথম দিকে বেশ ভয় ভয়ই করতো তার, কিন্তু যত দিন গেছে, তত বুঝেছে, যেই থাকুক না কেন তার এই ফ্ল্যাটে, আর যাই করুক সে, কিন্তু তার ক্ষতি কক্ষনো করবে না... কেন জানে না পৃথা, একটা বিশ্বাস বুকের মধ্যে বাসা বেঁধে ছিল... তাই এটা নিয়ে কোন শোরগোলও আর করে নি, কতকটা ইচ্ছা করেই। বিশেষ করে সুশান্তকে তো এই ব্যাপারে কোন কথাই বলে নি ও। কারণ পৃথা জানতো যে সুশান্ত যদি এই সব ঘটনা জানতে পারে, আগে ওকে এই ফ্ল্যাটটার থেকে সরাবে, আর সেটা ও কোন মতেই চায় না... কেন চায় না, সেটা তো ওর থেকে আর ভালো কেউ জানে না। শুধু আগের মত বেখায়াল থাকে না। আজকাল চান করার সময় বাথরুমের দরজাটা বন্ধ করতে ভোলে না, বা রাত্রেও আগের মত একেবারে নগ্ন দেহে ঘুমায় না। শোবার সময় ব্রা প্যান্টি না পড়লেও, একটা পাতলা স্লিপ গায়ে তুলে নেয়। ব্যাপারটা ভৌতিক না কি অন্য কিছু, তার উত্তরও সঠিক ভাবে নেই ওর কাছে... প্রণববাবুর কাছ থেকে অর্নবের শেষ পরিসমাপ্তির কথা শোনার পরও যেন এখন একটা কোথাও ক্ষীণ আশা বুকের মধ্যে বাসা বেঁধে রয়েছে তার... 

তাই, এখনো ওই অনুভুতিটা হতেই শিরদাঁড়া দিয়ে কেমন একটা সিরসিরানি বয়ে যায় তার... মেয়েলি স্বজ্ঞায় হাতটা চলে যায় নিজের বুকের ওপরে... হাত পড়তেই খেয়াল হয় নিজের শরীরটা নিরাবরণ... তার অজান্তে কখন তোয়ালেটা শরীর থেকে খসে পড়ে গিয়েছে... একবার ভাবে তোয়ালেটা তুলে জড়িয়ে নেয় শরীরে... কিন্তু পরক্ষনেই সে ইচ্ছা ঝেড়ে ফেলে দেয় মনের থেকে... ওই রকম নগ্ন ভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে... ইচ্ছা করে নিজের এই নিটোল নগ্ন শরীরটাকে ঘরের মধ্যে উপস্থিত কায়াহীনের সামনে মেলে ধরে রাখতে... ইন্দ্রীয়টা সজাগ হয়ে ওঠে আরো... বোঝার চেষ্টা করে ঘরের মধ্যে থাকা দ্বিতীয় ব্যক্তির উপস্থিতিটাকে। 

হটাৎ কানে আসে ড্রইংরুম থেকে বেজে ওঠা মোবাইলের আওয়াজ... প্রায় চমকে ওঠে সে এই ভাবে হটাৎ করে আওয়াজ পেয়ে... ধড়াস করে ওঠে বুকের মধ্যেটায়... কিন্তু তারপরই হেসে ফেলে নিজের বোকামী দেখে... মাটির থেকে তোয়ালেটা হাতে তুলে নিয়ে ওই অবস্থাতেই দ্রুত এগিয়ে যায় মোবাইলের রিংটোনের আওয়াজ লক্ষ্য করে। অন্ধকারের মধ্যেই সোফাটার অবস্থান আন্দাজ করে হাতের মধ্যে ধরা তোয়ালেটাকে ছুড়ে দেয়... তারপর হাতড়ায় সেন্টার টেবিলের ওপরে মোবাইলটার জন্য... বেজেই চলেছে, কিন্তু কোথায় সেটা? বিরক্ত হয়ে ওঠে মনটা... পরক্ষনেই মনে হয় যে মোবাইলটা ব্যাগ থেকে বেরই করা হয় নি ঘরে ঢোকার পর... সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে এগোতে যায় সোফার দিকে... মনে পড়ে ঘরে ঢুকে সোফার ওপরেই ছুড়ে রেখে দিয়েছিল কাঁধের থেকে ব্যাগটা, গা’য়ের থেকে ভিজে জামা খোলার তাগিদে। ‘উফফফ্‌...’ যেতে গিয়ে পায়ে ধাক্কা লাগে সেন্টার টেবিলের কোনাটায়... আরো যেন বিরক্তি ছেয়ে ধরে মনের মধ্যে... ব্যথা পাওয়া জায়গায় হাত বোলাতে বোলাতেই এগিয়ে যায় সোফার দিকে... হাতের আন্দাজে কিছুক্ষন আগে ছুড়ে রাখা তোয়ালের নিচ থেকে টেনে বের করে ব্যাগটা... চেন খুলে তাড়াতাড়ি মোবাইলটা বের করে কলার নামের ওপরে চোখ রাখে পৃথা... ‘বাপী?...’ নিমেশে যেন মনের মধ্যে জমে থাকার শত বিরক্তি গুলো কোন এক জাদুর স্পর্শে উবে যায় সাথে সাথে... মুখটা চকচক করে ওঠে এক অপার্থিব ভালো লাগায়... কল রিসিভ করে কানে তোলে ফোনটাকে... ‘হ্যা বাপী... বলো...’ গলার স্বরে আদুরে আভাস মিশে যায়।

‘এতক্ষন কোথায় ছিলিস রে মা? সেই তখন থেকে ফোন বাজছে?’ ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসে পৃথার বাবার উদবিগ্ন স্বর।

‘আর বোলো না বাপী, এখানে এই কিছুক্ষন আগে ঝুপ করে লোডশেডিং হয়ে গেলো, তাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না ফোনটা... সেই জন্যেই তো ফোনটা তুলতে দেরী হলো...’ বলে পৃথা। ফোনটা কানে নিয়ে ফিরে আসে বেডরুমে... খাটের ওপরে বালিসটাকে টেনে বেডরেস্টে রেখে ভালো করে হেলান দিয়ে বসে বলে ‘হটাৎ তুমি ফোন করলে? তোমরা ঠিক আছো তো?’ এবার পৃথার উদবিগ্ন হবার পালা।

‘হ্যা রে মা, আমরা ঠিক আছি... আসলে তুই ফোন করিস নি আজকে সন্ধ্যেবেলায়, তাই তোর মা একটু অস্থির হয়ে উঠছিল, সেই জন্য ভাবলাম একবার ফোন করে দেখি... এই নে, মায়ের সাথে কথা বল...’ বোঝা গেল কথাগুলো বলে ফোনটা এগিয়ে দিলেন নিজের স্ত্রী’য়ের দিকে।

‘ইশ... সত্যিই তো... মাকে ফোন করতে একদম ভুলে গিয়েছি...’ মনে মনে ভাবে পৃথা। আসলে প্রতিদিনই নিয়ম করে অফিস থেকে ফিরে একবার মায়ের সাথে ফোনে কথা বলে পৃথা, এটা অবস্য ওর মায়েরই কড়া নির্দেশ... মেয়ে যতক্ষন না বাড়ি ফিরে ফোন করে, ততক্ষন যে ওনারা দুশ্চিন্তায় থাকে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। পৃথা এই নিয়ে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে, ও বড় হয়েছে, এখন এই রকম দুশ্চিন্তা করার কোন মানেই হয় না, কিন্তু তবুও, শোনেন নি ওর মা, মেয়ে যতই বড় হোক না কেন, তবুও, সে এত দূরে থাকে, সেখানে একবার ফিরে ফোন করলে যে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না সেটা ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মেয়েকে। অগত্যা, সেটাই দস্তুর হয়ে গিয়েছে কোলকাতায় আসা ইস্তক... প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে মাকে একবার ফোন করে কথা বলতেই হয় তাকে। কিন্তু আজকে বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েই সব কিছু গন্ডগোল হয়ে গিয়েছে... ভিজে জামা ছেড়ে চান করে হয়তো ফোন করতো, কিন্তু তার মধ্যে লাইটটাও গেছে নিভে... তাই মাথা থেকেই বেরিয়ে গিয়েছে ফোন করার ব্যাপারটা।

‘তুই কি রে তিতির? একটা ফোন করতে এত অনিহা... জানিস আমরা কত টেনশন নিয়ে বসে থাকি তোর ফোনের অপেক্ষায়... এটা আর কবে বুঝবি বলতো... একটা ফোন করতে পারিস না? বুঝবি বুঝবি... যখন মা হবি তখন বুঝবি যে বাবা মা কি রকম টেনশন করে সন্তানদের জন্য... আর কি ভাবে বোঝাবো তোকে...’ একের পর এক সুনামীর মত মায়ের অভিমান ভেসে এসে আছড়ে পড়তে থাকে পৃথার কানের মধ্যে... তাকে কিছু বলার সুযোগই দেন না...

শেষে একটু গলাটা তুলেই বলে ওঠে পৃথা, ‘আরে বাবা, তুমি থামবে? আগে শুনবে তো কেন ফোন করি নি...’

‘হ্যা, আর কি শোনাবি... ওই তো বলবি অফিসের এত কাজের চাপ যে ফোন করতেই ভুলে গিয়েছি... সেটাই তো হয় রে... সন্তান যখব বড় হয় তখন এই ভাবেই বাবা মায়েদের ভুলে যায় তারা...’ শেষে দিকে সম্ভবতঃ গলাটাই ধরে আসে পৃথার মায়ের...

‘আরে বাবা, না না, সে সব কিচ্ছু নয়... আজকে অফিস থেকে ফেরার পথে একেবারে ভিজে গিয়েছিলাম... তাই...’ আর কথা শেষ করতে পারে না পৃথা... তার আগেই প্রায় ঝাপিয়ে পড়েন তার মা, ফোনের মধ্যেই...

‘সে কি রে তিতির... তুই বৃষ্টিতে ভিজেছিস... কি করে?... কেন ছাতা ছিল না... তাও ভিজলি কি করে? এখনও ভিজে কাপড়েই রয়েছিস না কি রে? এ বাবা, সেটা আগে বলবি তো... ঠান্ডা লাগে নি তো? টেম্পারেচার নিয়েছিস... জ্বর এসে যায় নি তো?...’ এবার শুরু হয় উদবিগ্ন প্রশ্নের ধারা।

‘আরে না, সেই রকম কিছ নয়... আজকে ছাতাটা নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিলাম... তাই আসার সময় একটু ভিজে গিয়েছি... তাও অনেক আগে...’ বলে বোঝাতে যায় মাকে...

‘অনেক আগে ভিজেছিস... এখনও সেই ভিজে জামা কাপড়েই রয়েছিস নাকি? শিগগির ছেড়ে ফেল ভিজে কাপড় জামা... এই জন্যই চিন্তা হয় তোকে নিয়ে... তোকে বরাবর বলেছি ভিজে জামা কাপড়ে থাকবি না... এই জন্যই চাইনি দূরে গিয়ে একা থাকিস... কিন্তু শুনলে তো মেয়ে মায়ের কথা... আর শুনবেই বা কেন? মায়ের কথা তো... তার মূল্যই বা কতটুকু...’

‘তুমি এবার থামবে? নাকি ফোনটা রাখবো?’ এবার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে শুরু করে পৃথার... একে মনটা ভালো নেই, তার ওপরে মায়ের এই অনর্থক বকবকানি... ভালো লাগে?

এবার আর কোন কথা আসে না ফোনের ওপার থেকে... পৃথাও বোঝে ঝাঁঝিয়ে ওঠাটা একটু কাজ দিয়েছে হয়তো, আর তা না হলে অভিমানে মুখ ভার হয়েছে মায়ের... গলার স্বরটাকে স্বাভাবিক করে বলে সে, ‘না, মা, রাগ করছ কেন? আমি তো ভিজে জামা কাপড় সব ছেড়েই ফেলেছি... আর দেখ, চানও করে নিয়েছি সঙ্গে সঙ্গে... সত্যিই... বিশ্বাস করো...’

মেয়ের কথায় একটু আস্বস্থ হন ভদ্রমহিলা, গলাটা নামিয়ে বলেন, ‘ঠিক তো মা, চান করে নিয়েছিস তো... আজকে আর রাতে আর ফ্যান চালিয়ে শুস না... লক্ষ্মী মা আমার... দেখ... তুই ওখানে একা আছিস, খুব চিন্তায় থাকি রে মা...’

হেসে ফেলে পৃথা... ‘উফ্‌ এত চিন্তা করো না মাদার ইন্ডিয়া... তোমার তিতির এখন বড় হয়ে গেছে... সেই ছোট্টটি আর নেই... এখন নিজেই সব কিছু একা সমলাতে পারে... বুঝলে?’

‘ছাই বড় হয়েছিস... এখনও তো খাইয়ে না দিলে খাস না... সেখানে কত যে বড় হয়েছিস তা আমার জানা আছে...’ বলে ওঠেন পৃথার মা।

‘তুমি এখনও ঝগড়া করবে আমার সাথে?’ আদুরে গলায় বলে ওঠে পৃথা।

মেয়েকে এই ভাবে বলতে শুনে আর রাগ করে থাকতে পারেন না ওর মা, ‘না রে মা, রাগ নয়, চিন্তা হয়... একা একা থাকিস তো... তাই... একটু সাবধানে থাকিস, কেমন... আর যদি শরীর খারাপ লাগে ডাক্তার দেখিয়ে নিতে ভুলিস না... আমাদেরও সাথে সাথে ফোন করিস... এই নে... বাবা আবার ব্যস্ত হচ্ছে, কথা বল বাবার সাথে...’

হটাৎ ড্রইংরুমের আলোটা জ্বলে ওঠে... কারেন্ট চলে আসে... আগেই বেডরুমের আলোর সুইচটা নিভিয়ে রাখাতে ঘরের আলোটা আর জ্বলেনি তাই... তবুও ড্রইংরুমের থেকেই বেশ খানিকটা আলো এসে ঘরটাকে আলোকিত করে তোলে... ঘরের আলো জ্বালাবার আর খুব প্রয়োজন হয় না।

বাইরে তখনও নাগাড়ে বৃষ্টি হয়েই চলেছে... ঝিরঝিরে বৃষ্টির জলের ছাট এসে ঢুকছে ঘরের মধ্যে... পৃথা বিছানা ছেড়ে উঠে এগিয়ে যায় জানলার কাছে, শার্সিগুলো বন্ধ করে দেয় টেনে... দিয়ে ফিরে আসে বিছানায় আবার।

‘ভিজে গেছিস শুনলাম তোর মায়ের কাছে... এখন ঠিক আছিস তো?’ বাবার গলা পায় ফোনের মধ্যে।

‘হ্যা বাপী, আমি ঠিক আছি... তোমরা চিন্তা করো না...’ বলে থামে একটু, তারপর হটাৎ করে মনে পড়ে যেতে বলে ওঠে, ‘বাপী, তোমার প্রেশারের অসুধটা আনিয়েছিলে? ওটা তো শেষ হয়ে যাবার কথা এত দিনে।’

‘হ্যা, হ্যা, আনিয়ে নিয়েছি, তোকে আর ওখানে বসে আমার অসুধের কথা চিন্তা করতে হবে না রে মা... তুই একটু সাবধানে থাকিস, তোর মা বড্ড চিন্তা করে তোকে নিয়ে।’

‘হুম... আমার মা শুধু চিন্তা করে, আর আমার মিষ্টি বাপী এক্কেবারেই ভাবে না তার প্রিন্সেসকে নিয়ে, তাই তো?’ হাসতে হাসতে বলে বাবার কথার জবাবে।

‘না, মানে, আমারও চিন্তা হয় না যে তা নয়, তাও...’ আমতা আমতা করেন ভদ্রলোক।

‘থাক, জানা আছে আমার, আমার বাপীর কাছে আমি কি... আচ্ছা, এবার রাখো... কারেন্ট এসে গেছে...’ হাসতে হাসতে বলে পৃথা।

‘সেকি রে, এতক্ষন কারেন্ট ছিল না?’ প্রশ্ন করেন পৃথার বাবা।

‘না তো... আর সেই সাথে কি বৃষ্টি হচ্ছে বাপী কি বলবো... সেই সন্ধ্যে থেকে নেমেছে, সমানে চলছে... এই এত্তো বড় বড় ফোঁটা... জানলা বন্ধ করে দিতে হয়েছে, এত ছাঁট আসছে...’ হাত নেড়ে বলতে থাকে নিজের বাবাকে।

‘দেখিস মা, সাবধানে থাকিস... কেমন... এবার রাখি?’ বলেন ভদ্রলোক।

‘হ্যা, হ্যা, রাখো... তোমরাও সাবধানে থেকো... কেমন... লাভ ইয়ু বাপী... মাকেও চিন্তা করতে বারণ কোরো...’ বলে ফোনটা কেটে দেয় পৃথা।

‘নাঃ, আজ আর রাত্রে কিছু খাবো না... ভাল্লাগছে না... চোখগুলোও কেমন জ্বালা জ্বালা করছে, কে জানে, জ্বর আসবে কি না? মা শুনলে তো লাফাতো... ভাজ্ঞিস কিছু বলি নি... দেখি, শুধু একটু হরলিক্স গুলে খেয়ে শুয়ে পড়বো... কাল সকালে যা হোক দেখা যাবে’খন...’ ভাবতে ভাবতে উঠে দাঁড়ায় বিছানা ছেড়ে... মাথাটা কেমন ভার লাগে... হাতের তেলোটা উলটে ছোয়ায় কপালে, একটু যেন গরম মনে হয়। কিচেনে যাবে মনে করেও আর যায় না, বাথরুমের দিকে এগোয়। কোমডের ওপরে বসে হিসি করে হাল্কা হয় খানিকটা, তারপর উঠে হাতে জল নিয়ে পরিষ্কার হয়ে ফিরে আসে আবার বেডরুমেই। আসার পথে ড্রইংরুমের আলোটাও নিভিয়ে দেয়। মনে হয় কেমন যেন শীত শীত করছে... ঘরের ফ্যানটার রেগুলেটর ঘুরিয়ে একটু কমিয়ে দিয়ে কাবার্ড থেকে একটা গোল গলার টি-শার্ট বের করে পড়ে নেয় গায়ে... তারপর বালিশটা টেনে শুয়ে পড়ে বিছানায়... হাত বাড়িয়ে বেডসাইড টেবিলের ওপরে রাখা অর্নবের ছবিটায় একবার আলতো করে হাত বোলায়... ‘একটু পরে না হয় উঠে হরলিক্সটা করে নেবো’খন’ ভাবতে ভাবতে চোখ বন্ধ করে পৃথা।
[+] 3 users Like bourses's post
Like Reply
#38
১৮।। 


‘ওহ্‌ মা...’ চোখ বন্ধ অবস্থাতেই গুঙিয়ে ওঠে পৃথা... মাথার ওপরে ঠান্ডা জলের ধারা খারাপ লাগে না... কানে আসে চুল থেকে বালতির মধ্যে ঝরে পড়া জলের শব্দ... চোখটা খুলে দেখার চেষ্টা করে... কিন্তু পারে না... অসম্ভব ভারী হয়ে রয়েছে চোখের পাতাদুটো... ইচ্ছা করলেও খুলতে পারে না সে দুটোকে... আর সেই সাথে ঘরের মধ্যে জ্বলতে থাকা আলোটাও বড্ড চোখে লাগে তার... চোখ বন্ধ করে থাকাটাই বেশি ভালো লাগে... ঠোটদুটোও শুকিয়ে উঠেছে... জিভটা বের করে চেটে ঠোটটাকে ভিজিয়ে নেবার চেষ্টা করে সে... ‘আহ্‌... উম্‌...’ ফের গোঙায় পৃথা... মাথাটা মনে হচ্ছে যেন যন্ত্রনায় ছিঁড়ে যাচ্ছে একেবারে...

চোখ বন্ধ থাকলেও বুঝতে অসুবিধা হয় না সেই এই মুহুর্তে বিছানায় আড়াআড়ি ভাবে শুয়ে রয়েছে... পা থেকে গলা অবধি একটা চাঁদর টানা... মাথাটা ঝুলছে বিছানা থেকে বাইরের দিকে... আর কেউ একজন তার মাথাটাকে নিজের হাতের তেলোর মধ্যে পরম মমতায় ধরে রেখে তপ্ত কপালের ওপর দিয়ে ঠান্ডা জল ঢেলে চলেছে এক ভাবে... ঘাড়ের নীচে একটা তোয়ালে গোঁজা... হয়তো বিছানাটা যাতে না ভিজে যায়, সেই প্রয়াশে...

জলের ধারা বন্ধ হয় একটু পরে... যেই তার মাথাটা ধরে থাকুক, খুব সাবধানে নিজের কোলের ওপরে তুলে নিয়ে ঘাড়ের নিচ থেকে তোয়ালেটা টেনে বের করে মাথার জল মুছিয়ে দিতে থাকে পরম মমতায়... পৃথা মুখে কিছু না বলে চুপ করে চোখ বন্ধ করেই শুয়ে থাকে ওই ভাবে। মাথা মোছানো শেষ হলে সাবধানে আবার বিছানায় সোজা করে বালিশের ওপরে মাথাটা ফিরিয়ে শুইয়ে দেওয়া হয় তাকে... ভিজে তোয়ালে দিয়ে তার ঘাড়, মুখ আলতো হাতে মুছিয়ে দিতে থাকে আগুন্তুক... কে... কে সেবা করছে তার? মনে মনে ভাবার চেষ্টা করে পৃথা... কিন্তু মাথার মধ্যে এতই যন্ত্রনা হচ্ছে যে ইচ্ছা করে না সেটা নিয়ে বেশি চিন্তা করতে... চুপচাপ নিজের তপ্ত অসুস্থ শরীরটাকে সমর্পন করে দেয় আগুন্তুকের হাতে। ফ্যানের হাওয়াটা ভেজা চুলের ওপরে লেগে বেশ ভালো লাগে। চোখ বন্ধ করেই খেয়াল করে ধীরে ধীরে তার গায়ের থেকে চাঁদরটা কেউ সরিয়ে কোমর থেকে গায়ের টি-শার্টটা গুটিয়ে খানিকটা ওপর দিকে গুটিয়ে তুলে দিলো... মানে এখন তার উর্ধঙ্গ সম্পূর্ন উন্মুক্ত আগুন্তুকের সামনে... চুপচাপ অপেক্ষা করে সে পরবর্তি কি পদক্ষেপ নেয় সেটা দেখার... আদুল গায়ের ওপরে ভেজা তোয়ালের ছোঁয়া পায়... খুব আলতো হাতে তার সারা গা মুছিয়ে দিতে থাকে আগুন্তুক... নগ্ন নরম অথচ সুগঠিত বুকের ওপর দিয়ে তোয়ালের পরশটা বয়ে যায়... আনমনেই বোঁটাদুটো কেমন অসভ্যের মত শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে যায় বুকের ওপরে, আগুন্তুকের চোখের সামনে... কেমন যেন লজ্জা লাগে তার হটাৎ... লজ্জা লাগে কিন্তু তার সাথে অদ্ভুত একটা ভালো লাগাও মিশে থাকে... বাধা দেয় না... চুপ করে শুয়ে উপভোগ করে আরামের রেশটুকু... ‘উম্‌... আহ্‌’ ফের গুঙিয়ে ওঠে সে... মাথার মধ্যেটায় এখনও যেন যন্ত্রনায় ছিঁড়ে যাচ্ছে...

তোয়ালের ছোঁয়া সরে যায় শরীর থেকে... গায়ের টি-শার্টটা ফের নেমে দেহটাকে ঢেকে দেয় কোমর অবধি... চাদর ফিরে আসে গায়ের ওপরে গলা কাছটায়... এবার কপালের ওপরে এক টুকরো ভেজা কাপড়ের উপস্থিতি অনুভব করে পৃথা... একটা হাত... এলোমেলো হয়ে থাকা চুলের মধ্যে দিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগে... বিলি কেটে দিতে থাকে খুব ধীরে, আলতো হাতের ছোয়ায়... দূর থেকে যেন ভেসে আসে একটা স্বর... ‘তিতির... তিতির?’

‘উম্‌?’ চোখ বন্ধ করেই সাড়া দেয় পৃথা।

‘কষ্ট হচ্ছে, খুব?’ কানে আসে গাঢ় স্বরে করা প্রশ্ন।

‘মাথাটা... মাথাটায় ভিষন যন্ত্রনা করছে... আহ্‌...’ থেমে থেমে উত্তর দেয় পৃথা।

কপালের ওপরে কাপড়ের টুকরো পালটায়... ফের আর একটা নতুন জলে ভেজা টুকরো এসে লেপটে যায় তপ্ত কপালের ওপরে...

‘এই তো... আর একটু পরেই সকাল হয়ে যাবে... তখন সব ঠিক হয়ে যাবে...’ আশ্বাস দেয় অচেনা গলার স্বর... শুনে আর কিছু বলে না পৃথা... চুপ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে... কপালের পাশের রগের ওপরে চাপ পড়ে শক্ত আঙুলের... ‘আহ্‌... হুম্‌...’ ভালো লাগে এই ভাবে কপালের রগে টিপ দেওয়াতে...

একটু চুপ থেকে বলে ওঠে পৃথা... ‘খুব জ্বালাচ্ছি... না?’

এবারে কিন্তু আর কোন উত্তর আসে না... যদিও তখনও পৃথার কপালের ওপরে আগুন্তুকের হাতের ছোয়া লেগে রয়েছে... তাই জ্বরের মধ্যেও স্মিত হাসি খেলে যায় পৃথার ঠোঁটের ওপরে... ‘কি? উত্তর দেবে না?’ অত কষ্টের মধ্যেও শান্ত গলায় ফের প্রশ্ন করে সে।

কোন উত্তর আসে না... কিন্তু কপালের ওপর থেকে ভেজা কাপড়ের টুকরো বদলায়... মাথার চুলে অচেনা আঙুল বিলি কাটে... হাল্কা হাতের মুঠোয় চেপে চেপে ধরে চুলগুলো... টান দেয় অল্প অল্প... পৃথার আরাম হয় খুব এতে... চোখ বন্ধ করেই হাসি মুখে সেই আরাম উপভোগ করতে থাকে চুপটি করে শুয়ে... বোঝে, এখন আর কোন উত্তর সে পাবে না... কিন্তু তার যা বোঝার আজ সব বোঝা হয়ে গিয়েছে... পরম নিশ্চিন্তে আবার ঢলে পড়ে ঘুমের কোলে।

ক্রমশ...
[+] 4 users Like bourses's post
Like Reply
#39
Oboses prio lekhak k pire pelam??koto khujesilam sudu ami e jani.thanks for writing again??
Like Reply
#40
(26-12-2018, 11:26 PM)Odrisho balok Wrote: Oboses prio lekhak k pire pelam??koto khujesilam   sudu ami e jani.thanks for writing again??

তোমার মত পাঠককে ফিরে পেয়ে আমিও খুশি... আর কি রকম সমাপতন দেখ... আমার গল্পের নায়কও অদৃশ্য মানুষ... হা হা হা...

রেপু রইল...
Like Reply




Users browsing this thread: 3 Guest(s)