28-09-2022, 12:10 AM
লাইক & রেপু ডান
Romantic Thriller প্রতিশোধ: দ্যা রিভেঞ্জ (সমাপ্ত)
|
28-09-2022, 12:23 AM
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
28-09-2022, 02:25 PM
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
28-09-2022, 09:32 PM
আজকে আর গল্প আসবে?
28-09-2022, 10:35 PM
দশম পর্ব
দূর থেকে পাঁচিল ঘেরা বাগানবাড়ি আর তার বাইরের বড়ো গেটটা দেখে আনন্দে উত্তেজনায় বুকটা ধুকপুক করছিল তাথৈএর কিন্তু অকষ্মাৎ কিছু গুণ্ডা প্রকৃতির লোক তার গাড়ির সামনে এসে তার রাস্তা দাঁড়িয়েছে। গতকালই মিস্টার গুপ্তর সাথে দেখা করেছিল সে,
খোঁজ পেয়েছেন, জানতে পেরেছেন ও কোথায় থাকে?
ওই বাচ্চাগুলোর খোঁজ পেয়েছি, ওরা সবাই একটা কলোনিতে থাকে আর সেখানকার এক কলেজে পড়ে, সেদিন ওদের একজনের জন্মদিন ছিল তাই ওদের খাওয়াতে নিয়ে এসেছিল। আর ও কোথায় থাকে? বাচ্চাগুলোই বললো ওই কলোনির একটু ভিতরের দিকে একটা বাগানবাড়ি গোছের বাড়ি আছে ওখানে থাকে। আপনি দেখেছেন? না গিয়েছিলাম কিন্তু ওই এলাকার লোক ওই বাগানবাড়ির ধারেকাছে বাইরের কাউকে ঘেঁষতে দেয় না, অনেকটা দূর থেকেই ফিরে আসতে হয়েছে আমাকে। বাচ্চাগুলো ওর নাম বলেছে? হ্যাঁ বলেছে তো, ওরা "রয় দাদা" বলে ডাকে। খুব ভালো কাজ করেছেন, আচ্ছা আপনাকে যে আরেকটা কাজ বলেছিলাম সেটা করেছেন? ওটা কি জানতেই হবে আপনাকে? এবারে তাথৈ লক্ষ্য করলো ভদ্রলোকের চোখেমুখে ভয়ের ছাপ, যেন কাউকে ভয় পাচ্ছেন। একথা কেন বলছেন, কি জানতে পেরেছেন? না মানে ম্যাডাম। তাথৈ স্পষ্ট বোঝে মিস্টার গুপ্ত কিছু বলতে চেয়েও বলছেন না। কি বলতে চান স্পষ্ট বলুন। ম্যাডাম আপনি যার কথা বলছিলেন তাদের বাড়িটা চিনতেন? না, কখনো যাইনি কেন বলুনতো? কিছু লোকের সাথে কথা হয়েছে, বেশিরভাগই ওদের চেনে না, জানে না তবে খুব পুরনো বাসিন্দাদের কয়েকজন এখানো অল্প অল্প মনে রেখেছে ওদের বিশেষ করে ওই ছেলেটা কি যেন নাম? হ্যাঁ, অভয় ওর বাবা আর মাকে, ওনাদের খুব খাতির ছিল এলাকায়, খুবই সজ্জন মানুষ ছিলেন দুজনে। কিন্তু ওনাদের হয়েছিল কি? বাড়িতে আগুন লেগেছিল, তারা বলে শর্টসার্কিট হয়েছিল। কারো হাত থাকতে পারে? বলা মুশকিল তবে দুটো জিনিস খেয়াল করেছি কি? এক ওনাদের এক আত্মীয় থাকেন সেটা তো বলেছি আগে আপনাকে, ওই অভয়ের পিসি থাকেন তার সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম আগের বার যখন গিয়েছিলাম তখনও খেয়াল করেছিলাম আর এবারও করেছি কি? ভদ্রমহিলা জানেন ওদের কি হয়েছিল কিন্তু কারো ভয়ে লুকিয়ে যাচ্ছেন। কার ভয়ে বলে আপনার মনে হয়? সে উত্তর এখনো পাইনি। আর দ্বিতীয় জিনিস কি খেয়াল করেছেন? হয়তো কাকতলীয় হতে পারে কিন্তু যেখানে ওদের বাড়ি ছিল সেই জায়গাটায় এখন আপনার জ্যেঠু মিস্টার বীরেন ভট্টাচার্যের অফিস, আর শুনলাম অভয়ের বাবার সাথে নাকি আপনার জ্যেঠুর ঠিক সদ্ভাব ছিল না, ঝামেলা ছিল। হতবাক হয়ে যায় তাথৈ, তবে কি সাম্য সত্যি বলেছিল? ঠিক বিশ্বাস হয় না তাথৈএর তার দৃঢ় বিশ্বাস কোথাও ভুল হচ্ছে তার জ্যেঠুমণি এমন কাজ করতেই পারেন না, সেইদিন থেকে সে এই প্রার্থনাই করে এসেছে যে সাম্য যা বলেছে তা যেন মিথ্যা হয়। সে ঠিক করে আগে অভয়ের কাছে আসবে তার থেকেই জানবে সত্যিটা, তাই আজ সকাল হতে না হতেই সে একাই গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছে রাস্তার নির্দেশনা মিস্টার গুপ্তর থেকেই নিয়ে নিয়েছিল। "ওদিকে যাওয়া বারণ" তাথৈএর রাস্তা যারা আটকেছিল তাদেরই একজন তার গাড়ির জানালার কাছে এসে কথাটা বলে। কেন? কেন কথার উত্তর নেই। এখান থেকে ফিরে যান। ওই বাড়িতে কে থাকেন? একথার উত্তর না পেয়ে তাথৈ আবার প্রশ্ন করে: কি হলো বলুন এ বাড়িতে কে থাকেন? উত্তরে লোকটা বলে: এখান থেকে ফিরে যান। আমার ওখানে যাওয়াটা জরুরী। কিন্তু আপনাকে যেতে দেওয়ার হুকুম নেই। এবার আরেকজন জানালার কাছে এসে কথাটা বলে। প্লিজ ওনাকে আমার কথা বলুন, বলুন তাথৈ এসেছে তাহলেই... আর কিছু বলার আগেই ওদের একজনের ফোন বাজলো, কথা বলার পরে লোকটা তার সঙ্গীকে বললো: বস ওনাকে যেতে দিতে বললেন। এবার লোকটা তাথৈকে বললো: যান, তবে গাড়িটা গেটের বাইরে রেখে যাবেন, ওই দেখুন একটা বটগাছ আছে ওর তলায় গাড়িটা দাঁড় করিয়ে ভিতরে যান। বড়ো গেট খুলে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে তাথৈ দেখলো রাস্তার একপাশে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে এই গাড়িটা তাথৈ চিনতে পারলো সেদিন রাতে রেস্টুরেন্টে এই গাড়ি করেই.... তাথৈ বুঝতে পারলো তার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেছে, মেইন গেট থেকে একটা পায়ে চলার নুড়ি পথ সোজা চলে গেছে, দুদিকে সুন্দর করে ছাটা সবুজ ঘাস তার উপর অনেক রকম ফুলগাছ টবে করে বসানো আছে, সে আস্তে আস্তে বাড়ির দরজার কাছে গেল দরজা বন্ধ আছে কলিং বেল বাজাতে যাবে এমন সময় পুরুষকণ্ঠে "হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?" শুনে চমকে পিছনে ফিরলো কয়েকহাত দূরে হাতে প্রুনিং নাইফ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। তাথৈএর পরনে সোনালী রঙের কাজ করা দুধ সাদা হাফ স্লিভ চুরিদার সাথে একইরকম পাজামা, দুহাতে অনেকগুলো রঙিন চুরি, মাথায় চুলটা হাফ-আপ, হাফ-ডাউন খোঁপা করা, উল্টোদিকে যে দাঁড়িয়ে আছে তার গায়ে একটা কালো ভেস্ট যার উপর লাল পাইপিং করা, আর কালো রঙের পাজামা পায়ে চপ্পল, হাতে প্রুনিং নাইফ, বোঝাই যাচ্ছে যে সে বাগানে কাজ করছিল। দুজনে একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো, তাথৈ বুঝলো সে চিনতে ভুল করেনি তার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সে অভয়।। তাথৈ আর নিজেকে সামলাতে পারলো না, এক ছুটে অভয়ের কাছে গিয়ে দুহাতে তার গলা জড়িয়ে ধরলো ,তারপর পাগলের মতো অভয়ের কপালে দুগালে চুম্বন দিতে থাকে, চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় জল পরছে, কাঁদতে কাঁদতে বলছে "জানতাম আমি জানতাম তুমি বেঁচে আছো, যে যাই বলুক আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল তুমি একদিন ফিরে আসবে আমার কাছে"। অভয় চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে তাথৈ আবার বললো: কি হলো অভয়, তোমার কি হয়েছিল? কোথায় চলে গিয়েছিলে তুমি? জানো আমি তোমাকে কত খুঁজেছি" তবুও অভয় কথা বলছে না দেখে তাথৈ বললো: কি হলো অভয় তুমি কথা বলছো না কেন? তারপর অভয়ের দুগাল ধরে বলে: বুঝেছি তুমি রেগে আছো আমার উপর, আচ্ছা আমি সরি বলছি এবার হয়েছে? কি হলো এবার কথা বলো, অভয় উত্তর দিল: হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?। তাথৈ অবাক হলো সে কিছু বলতে যাবে এমন সময় "এক্সকিউজ মি" শুনে সম্বিত ফিরে পেয়ে দেখে এতক্ষণ সে কল্পনার জগতে চলে গিয়েছিল, বাস্তবে সে এখনো একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। এবার তাথৈ বললো: তুমি হয়তো আমাকে চিনতে পারছো না আমি.. আমি জানি আপনি কে মিস্ তাথৈ ভট্টাচার্য, কিন্তু আপনি এখানে কেন সেটা জানিনা। আসলে আমি... তাথৈ তোতলাতে থাকে। আপনার বয়ফ্রেন্ড জানে যে আপনি আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন? কথাটা তাথৈএর বুকে তীরের মতো বিঁধলো, সে বললো: তুমি যাকে আমার বয়ফ্রেন্ড বলছো সে আমার বয়ফ্রেন্ড নয়। হুমম, অভয় একটা ব্যাঙ্গাত্মক শব্দ করলো। তাথৈ তাড়াতাড়ি আবার বললো: তুমি বিশ্বাস করো ও আমার বয়ফ্রেন্ড নয়। আমি কি বিশ্বাস বা না করি তাতে কি যায় আসে? বলতে বলতে সে একটু দূরে একটা জলের কল খুলে ভালো করে হাত পা আর মুখ ধুয়ে নিল তারপর ঘাসের উপর রাখা একটা ভি গলা ফুলস্লিভ টিশার্ট পরে "আসুন" বলে ঘরের ভিতরে ঢুকে গেল, তাথৈও ঢুকলো। চা না কফি? জিজ্ঞেস করলো ছেলেটা। চা। একটু পরেই ট্রে তে গরম জল, সুগার কিউবের ডিব্বা, দুধ এবং টি ব্যাগ নিয়ে এসে চা তৈরি করতে লাগলো, তাথৈ লক্ষ্য করলো ছেলেটা জিজ্ঞেস টরলো না যে তাথৈ কটা সুগার কিউব নেবে যেন সে আগে থেকেই জানে এমন ভাবেই দুটো কিউব মিশিয়ে একটা টি ব্যাগ কাপে দিয়ে তাথৈএর দিকে এগিয়ে দিল, তাথৈ নিয়ে একটা চুমুক দিয়ে বললো: তোমার মনে আছে যে আমি দুটো সুগার কিউব খাই চায়ে? সামনের ছেলেটা তখন নিজের জন্য চা তৈরি করে চুমুক দিতে যাবে, প্রশ্নটা শুনে চমকে তাথৈএর দিকে তাকালো, বললো: মানে? সুগার কিউব,আমি কটা সুগার কিউব নিই এটা খুব বেশি লোক জানে না। ছেলেটা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো: আন্দাজে চালিয়েছি, এবার বলুন আপনি এখানে কেন এসেছেন? তাথৈ মনে মনে বললো: আমি জানি তুমি অভয়, তবুও আমি দেখতে চাই তুমি কতদিন নিজেকে আমার থেকে লুকিয়ে রাখো, একবার শুধু জানতে পারি যে তুমি কেন নিজেকে লুকাচ্ছো। মুখে বললো: কেন আপনার অসুবিধা হয়েছে? তাহলে দুঃখিত। দুঃখিত হবার কিছু হয়নি কিন্তু এভাবে একজন অচেনা লোকের বাড়িতে এলেন.. নাকি প্লট দেখতে এসেছিলেন? প্লট? কিসের প্লট? কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাথৈএর দিকে তাকিয়ে ছেলেটা বললো: আপনি সত্যিই জানেন না নাকি না জানার অভিনয় করছেন? অভিনয় মানে? আপনার জ্যেঠুমণি এবং আপনার বাবা এখানকার লোকদের উচ্ছেদ করে এখানে একটা অ্যাপার্টমেন্ট বানাতে চান, আপনার আর আপনার কাজিনের নামে। এসব কি বলছো? যেটা সত্যি, অবশ্য এটা নতুন নয় এর আগেও অনেকলোকের অনেককিছু কেড়ে নিয়েছেন তারা। "আমি বিশ্বাস করি না" বেশ জোরের সঙ্গেই বললো তাথৈ। সেটা আপনার ইচ্ছা। প্রমাণ দিতে পারেন? এতক্ষণ তাথৈ তুমি করে কথা বলছিল এখন আপনি করে বলতে শুরু করলো। আপনাকে প্রমাণ দিতে আমি বাধ্য নই। প্রমাণ নেই তো দেবেন কোথা থেকে? আমার বাপি এবং জ্যেঠুমণি খুব ভালো মানুষ তারা কখনো কারো সাথে অন্যায় করতে পারেন না, আমি নিজে ওনাদের দুঃস্থ লোকেদের সাহায্য করতে দেখেছি। সব ভাঁওতাবাজি, বাইরের যে কোনো লোককে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন সত্যিটা জানতে পারবেন। ওরা তো আপনার অনুগত, আপনার শেখানো বুলিই আওড়াবে। কিন্তু আপনার জ্যেঠুমণি আর বাবা যদি এতই ভালো আর পরোপকারী হন তাহলে ওই গরীব লোকেরা ওনাদের বিরুদ্ধে যাবেই বা কেন? ওদের ব্রেন ওয়াশ করা হয়েছে। যে চোখ খুলে ঘুমায় তাকে জাগানো যায় না। নিজের বাবার নামে এরকম শুনে তাথৈ রেগে যায় সে একটু জোরেই বলে: আমার বাপি কারো সাথে কখনো কোনো অন্যায় করেন নি,বরঞ্চ যারা অন্যায় করে তাদের শাস্তি দেন, হয়তো এমনই কাউকে অন্যায়ের শাস্তি দিতে দেখেছেন তাই, আমার বাপি যদি কারো সাথে কিছু করে তার মানে সে কোনো খারাপ লোক ছিল কোনো খারাপ কাজ করেছে তাই বাপি তাকে শাস্তি দিচ্ছিল, আমার বাপি কোনো অন্যায় করতেই পারে না। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কোনো নিরপরাধ মানুষকে খুন করা, কারো জমি দখল করার জন্য পরিবার সহ কারো বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া এটা অন্যায় নয়? আপনি মিথ্যা বলছেন, আমার বাপি যদি কোথাও আগুন লাগিয়েও থাকে তাহলে হয়তো সেখানে কোনো খারাপ কাজ হতো বা খারাপ লোক থাকতো.. মিস তাথৈ ভট্টাচার্য... তাথৈকে চমকে দিয়ে রাগে প্রায় চিৎকার করে ওঠে ছেলেটা, কিন্তু মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নেয়, কয়েক সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে থেকে নিজেকে সামলে নেয়, নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে তারপর বলে: কারো সম্পর্কে কিছু না জেনে তাকে খারাপ লোক বলাটা ভদ্রতা নয়, আপনাকে প্রথমে ওদের থেকে আলাদা ভেবেছিলাম কিন্তু দেখছি আপনিও ওদের থেকে কিছু কম নন, আপনার পরিবার যা করে সেটা হয়তো আপনার কাছে খুবই সাধারণ বিষয় তাই ওটা আপনার চোখেও অন্যায় নয় হাজার হোক আপনি নিজেই তো ওই পরিবারের সন্তান নিজেও না জানি কত ছেলের সাথে অন্যায় করেছেন, তাদের জীবন বরবাদ করেছেন। এবারে তাথৈএর মনে আর কোনো সন্দেহ থাকে না যে তার সামনে যে বসে আছে সে অভয় ছাড়া আর কেউ হতেই পারে না, এই একইভাবে নিজের রাগকে বহুবার কন্ট্রোল করতে দেখেছে অভয়কে, এ অভয় ছাড়া আর কেউ নয়, সে বললো: আমি কোনোদিন কখনো কারো সাথেই কোনো অন্যায় করিনি। হয়তো করেছেন নিজের সুন্দর চেহারা আর মিষ্টি কথার জালে ফাঁসিয়ে না জানি কত ছেলের জীবন নিয়ে খেলেছেন, তাদের জীবন বিষিয়ে দিয়েছেন। আপনি আমাকে অপমান করছেন, আমি কখনো কারো জীবন নিয়ে খেলিনি। খেলেছেন, হয়তো আপনার মনে নেই কিন্তু হতেই পারে যে কারো একজনের বিশ্বাস ভেঙেছেন, আর সেটা আপনার কাছে এতটাই সাধারণ বিষয় যে সেটা আপনার চোখে অন্যায় নয় তাই ভুলে গেছেন অথচ যার সাথে করেছেন সে না বাঁচতে পারছে না মরতে। তাথৈএর কথা বন্ধ হয়ে গেল, সে মনে মনে ভাবছে: এসব কি বলছে অভয়? সে কার জীবন নিয়ে খেলেছে? কার বিশ্বাস নিয়ে খেলেছে, অভয়ের? কিন্তু অভয় এটা কেন ভাবছে অভয় তো জানে যে সে তাকে কতটা ভালোবাসে। আপনি কিসের কথা বলছেন? আমি কার সাথে কি করেছি? সময় করে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখবেন, নিজের অতীতে ডুব দেবেন, মনে পড়লেও পড়তে পারে, বললাম তো আপনার কাছে সেটা সাধারণ ঘটনা কিন্তু যার সাথে করেছিলেন হয়তো তার জীবনটাই নষ্ট হয়ে গেছে, তার জীবন থেকে বিশ্বাস ভালোবাসা সব শেষ হয়ে গেছে। নদীর ঘাটে একটা সিঁড়িতে একা বসে আছে তাথৈ গতকাল থেকে তার মনটা ভালো নেই বুঝতে পারছে সে একটু খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছে অভয়ের সাথে তার রাগ কমাতে গিয়ে আরো বাড়িয়ে দিয়ে এসেছে। আসলে নিজের বাপির বিরুদ্ধে কথা শুনে মাথাটা গরম হয়ে গিয়েছিল তার উপরে অভয় একদম অপরিচিত মানুষের মতো ব্যবহার করছিল,একবার তো তাথৈএর মনে হয়েছিল যে সে ভুল করছে না তো এই ছেলেটা যদি অভয় না হয় তখন? কিন্তু এখন তাথৈ শতভাগ নিশ্চিত যে ওটাই অভয়, কিন্তু সে ভেবে পাচ্ছে না অভয় কেন তার সাথে এমন ব্যবহার করলো সে কি এমন করেছে, হ্যাঁ একটা ভুল করেছে অভয়কে জানিয়ে যেতে পারেনি যে তাকে বাইরে পাঠানো হচ্ছে পড়াশোনা করার জন্য, কিন্তু তারও কারণ ছিল, অভয় যদি জিজ্ঞেস করতো তাহলে নিশ্চয়ই বলতো, কিন্তু এখন সে কি করবে? অভয় তার উপর আগে থেকেই রেগে ছিল এখন তো আরো রেগে গেছে। আরেকটা কথা অভয় বলেছিল যে তার জ্যেঠুমণি আর বাপি কারো জমি দখল করার জন্য তার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল, কাদের বাড়িতে? অভয়দের? কিন্তু সেটা জানবে কিভাবে তাথৈ একবার মিস্টার গুপ্তকে ফোন করলো কিন্তু ফোন সুইচড অফ, ফোন রেখে সে ঘাটে চারিদিকে দেখতে লাগলো। ঘাটের অনেক জায়গায় অনেক কাপলরা বসে আছে, একে অপরের হাত ধরে, কোনো প্রেমিক তার প্রেমিকার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে, এইসবই সে দেখতে থাকে হটাৎ একটা কাপলকে দেখে তার চোখ আটকে যায় সেখানে দুজন কিশোর-কিশোরী বসে আছে দুজনের পরনেই কলেজ ড্রেস বোঝাই যাচ্ছে হয় কলেজ ছুটির পরে এসেছে না হয় পালিয়ে এসে প্রেম করছে কিন্তু তাথৈএর চোখ আটকালো অন্য কারনে ওরা দুজন একে অপরের ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে আছে, কিশোরী মেয়েটির চোখ বন্ধ সে তার প্রেমিককে বাধা তো দিচ্ছেই না উপরোন্ত তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে এতে খুব খুশি। ওদের দিকে দেখতে দেখতে তাথৈএর বহুকাল আগে এক বিকেলের কথা মনে পরে.. এই তুমি কি করছো এটা, বন্ধ করো। চোখ পাকিয়ে পাশে বসা প্রেমিক অভয়কে হুকুম করে কিশোরী তাথৈ। কেন কি হয়েছে? এক্ষুনি বন্ধ করো। না, আরেকটু এক্ষুনি বন্ধ করো বলছি, লোকে কি বলবে? আরে কি সমস্যা? আর এখানে লোক কোথায়? আর দেখলে তারা কিছু ভাববে না। তাই বলে তুমি বই নিয়ে প্রেম করতে আসবে? আর এসেই বই খুলে বসবে? কখনো শুনেছো কেউ প্রেম করতে এসে বই পড়ে? শোনো আমি বলি কি তুমিও একটা বই পড়ো সামনে পরীক্ষা, এইসব প্রেমের চক্করে যদি রেজাল্ট খারাপ হয় না তাহলে দুজনের বাড়ি থেকেই সবকটা বাটাম পিঠে পরবে একটাও নীচে পরবে না। তাহলে বাড়িতেই থাকতে পারতে প্রেম করতে আসার কি দরকার ছিল? তুমি না দিনদিন বড্ড ডেঁপো মেয়ে হয়ে যাচ্ছো। কি...ডেঁপো মেয়ে মানে?? এঁচোড়ে পাকা মানে বোঝো? তবে রে, আমি এঁচোড়ে পাকা আর তুমি কি? বলে তাথৈ অভয়ের পিঠে আর বাহুতে চটাস চটাস করে চড় মারতে থাকে। আঃ কি মেয়ে রে.. গুণ্ডা পুরো। কথা শুনে তাথৈ আরও রেগে যায় "আমি গুণ্ডা"বলে আরো কয়েকটা চড় বসিয়ে দেয় অভয়ের পিঠে। দেখ খালি মারছে এর থেকে তো ওই মেয়েটা ভালো ছিল ওর কাছে গেলেই ভালো হতো, কত ভালো ব্যবহার করে। "কোন মেয়েটা?" কথাটা শুনে চড় থামিয়ে জিজ্ঞেস করে তাথৈ। ওই যে কি যেন নাম তোমারই তো বন্ধু। কথাটার সাথে অভয়ের ঠোঁটের কোণে একটা হাসি ফুটে ওঠে ,তাতে যেন আগুনে ঘি ঢালে চকিতে তাথৈ অভয়ের শার্টের বুকের কাছটা খামচে ধরে বলে "তার আগে আমি তোমাকে খুন করবো আর নিজেও মরবো, দেখি তখন কার দিকে তাকাও" কথার পরে আবার যথেচ্ছভাবে চড়, চিমটি দিতে থাকে তাথৈ। অ্যাঁ.. আঃ তাথৈ.. কি ডেঞ্জারাস মেয়ে রে। হ্যাঁ... অসভ্য ছোটোলোক ছেলে, খালি অন্য মেয়ের দিকে নজর, আমার তোমার সাথে থাকাই ভুল হয়েছে, আমি চলেই যাবো। কথাটা বললেও তাথৈ যায় না শুধু অভয়কে ছেড়ে দিয়ে পাশে বসে থাকে, অভয় আবার বইতে মন দেয়। একটু পরে ফোঁপানির আওয়াজ শুনে পাশে তাকিয়ে দেখে তাথৈ মাথা নীচু করে কাঁদছে.. অভয় জানে তাথৈ এরকমই এক্ষুনি রাগ দেখাচ্ছে তো পরমুহূর্তেই ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদছে, সে তাথৈকে বলে: আবার কাঁদছো কেন? আচ্ছা এই নাও বই বন্ধ করলাম। বলে সত্যি সত্যিই হাতের বইটা বন্ধ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে নেয় তবুও তাথৈএর কান্না থামছে না দেখে আবার বলে: এবার তো বইও বন্ধ করে দিয়েছি আবার কি হলো? "তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না" ফোঁপাতে ফোঁপাতে উত্তর দেয় তাথৈ। তাথৈ... তুমি জানো আমার বাবা-মায়ের পরে আমি যদি কাউকে সব থেকে বেশি ভালোবাসি তাহলে সেটা তুমি। তাহলে তুমি বললে কেন যে অন্য মেয়ের কাছে যাবে? আরে আমি তো মজা করছিলাম, তোমার মনে হয় আমি তোমাকে ছেড়ে অন্য কারো কাছে যাবো? তাথৈ চুপ করে থাকে অভয় আবার বলতে থাকে: আমি তোমাকে ছেড়ে কারো কাছে যাবো না। এবার তাথৈ অভয়ের একটা বাহু জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে বলে: তুমি চলে গেলে আমি মরেই যাবো। তাথৈ.. একটু জোরে নামটা নেয় অভয়, তারপর আবার শান্ত হয়ে বলে: বলেছি না এরকম বলবে না। এবার তাথৈএর ঠোঁটেও হাসির রেখা দেখা যায় সে সোজা অভয়ের দিকে তাকিয়ে আছে তার কান্না থেমে গেছে অভয়ও তার দিকে তাকিয়ে আছে দুজনের মনেইয়এক নতুন অনুভূতি, এক নতুন অজানা আকর্ষণ অনুভব করে, যেন কিছু একটা দুজনকে পরস্পরের কাছে টানছে, আস্তে আস্তে দুজনের মুখ এগিয়ে যায় আসন্ন মুহূর্তের জন্য তাথৈএর দেহমন এক অজানা অনুভূতিতে ভরে ওঠে সে দুচোখ বন্ধ করে অপেক্ষা করতে থাকে নিজের ঠোঁটে অভয়ের ঠোঁটের স্পর্শ পাওয়ার জন্য, উত্তেজনা বাড়তে থাকে সারা শরীরে শিহরণ জেগে ওঠে কিন্তু এখনো স্পর্শ পাচ্ছে না কেন? ব্যাঁ.......ব্যাঁ একটু দূরে হটাৎ একটা ছাগলের ডাকার আওয়াজটা শুনে দুজনেই সচকিত হয়ে ওঠে, তাথৈএর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে সে অভয়ের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু অভয় অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে একটু পরে তাথৈএর দিকে না তাকিয়েই বলে: আমি দুঃখিত জানিনা আমার কি হয়েছিল.. আমার এরকম করাটা উচিত হয়নি। তাথৈ অভয়ের মুখটা ধরে নিজের দিকে ঘোরায়। অভয় আবার বলে "আয়্যাম সরি তাথৈ"। তাথৈ একহাতে অভয়ের দুটো চোখ চেপে ধরলো তারপর একে একে অভয়ের দুটো গালে দুটো চুম্বন দিয়ে অভয়ের কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো: আপাতত এটাই নাও ওটা পরে হবে, যেদিন আমরা দুজনেই আঠারো বছরের হবো সেদিনই নাহয় আমাদের প্রথম কিসটা হবে। তারপর চোখ ছেড়ে দেয়, "আমি অপেক্ষায় থাকবো" মুখে হাসি নিয়ে বলে অভয়। নিজের মোবাইলে ক্যামেরায় তোলা মিস্টার গুপ্তর দেওয়া অভয়ের ছবিটার ছবি দেখতে থাকে তাথৈ তারপর ছবিটাকেই উদ্দেশ্য করে বলে: আমাদের প্রথম কিসটা এখনো বাকি আছে কিন্তু, মনে আছে তো? জানি তোমাকে আরও রাগিয়ে দিয়েছি, কিন্তু তুমিও তো কিছু বললে না খালি বলছো আমি তোমার সাথে কিছু করেছি যাতে তোমার জীবন নষ্ট হয়েছে কিন্তু আমি কি করেছি.... না.. আমাকে জানতেই হবে যে করেই হোক আমাকে জানতেই হবে যে আমি তোমার সাথে কি করেছি আর আমার বাপিই বা কি করেছে?। তাথৈ আবার মিস্টার গুপ্তকে ফোন করে কিন্তু ফোন এখনও বন্ধ। নিজের অফিসে ভাগ্নে রকি এবং আরো কয়েকজনের সাথে মিটিং করছিলেন বীরেন ভট্টাচার্য তার লক্ষ্য নিজেদের কনস্ট্রাকশন সহ অন্যান্য ব্যাবসা আছে সেগুলো দিয়ে নিজের ক্ষতির কিছুটা পূরণ করা। "শোন রকি", ভাগ্নেকে উদ্দেশ্য করে বললেন বীরেন বাবু, "প্রজেক্টটা আমরা পাবো এটা তো শিওর আর বাজেটও অনেক, তাই কোনো গাফিলতি বা ভুল কিন্তু বরদাস্ত করবো না, এখন থেকে এটাতেই পুরো মন দিয়ে কাজ করবে"। ঠিক আছে মামা। আমাদের পরিচিত সব ইনভেস্টরদের সাথে কথা হয়েছে তাদের সাথে শুধু ফর্মালিটির জন্য ডিল সাইন করতে হবে, তারা সবাই ইনভেস্ট করতে রাজী হয়েছে। ওই রঘু আর লাল্টুর জন্য আমাদের প্রফিট কমে যাবে ওদের একবার হাতে পাই মামা... এটা তো বুঝতেই পারছো যে কেউ বা কারা আমাদের পিছনে লেগেছে কিন্তু কে সেটা ধরতে পারছি না সে নিশ্চয়ই এবারও আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে তাই সজাগ থাকতে হবে। কিন্তু মামা কে ক্ষতি করতে চাইছে সেটা তো খুঁজে বার করতে হবে। সেটা হবে কিন্তু... বীরেন ভট্টাচার্য কিছু বলতে যাচ্ছিলেন এমন সময় ঘরের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলেন ধীরেন বাবু পিছনে জগা। "আয় ধীরেন আয়" বীরেন ভট্টাচার্য ভাইকে ঢুকতে দেখে বললেন "এই রকিকে বলছিলাম যে এবার মন দিয়ে কাজ করতে হবে, অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে" কিন্তু ধীরেন বাবু তাতে বিশেষ উৎসাহ দেখালেন না তিনি বেজার মুখে বললেন: একটা খারাপ খবর আছে দাদা। খারাপ খবর... কি? কন্ট্রাক্টটা আমরা পাইনি। ঘরের মধ্যে বাজ পরলেও বীরেন ভট্টাচার্য এতটা আশ্চর্য হতেন না তিনি একপ্রকার নিশ্চিত ছিলেন যে আগামী পাঁচতারা হোটেলের কনস্ট্রাকশনের কন্ট্রাক্টটা তারাই পাবেন, এত বছর সেটাই হয়ে এসেছে এই শহরে কোনো বড়ো কনস্ট্রাকশনের কাজ হলে সেটা তাদের কোম্পানি ছাড়া আর কারো কাছে যেত না, একে তো তিনি একজন মণ্ত্রী, তার উপর লোকবল অনেক আর তার ক্ষমতার কথা সবাই জানে তাই তিনি ছাড়া আর কাউকে কন্ট্রাক্ট দেওয়ার কথা কেউ ভাবেও না আর সাহসও হয় না। কিন্তু আজ এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হলো ধীরেন বাবুর কথাটা কেউই ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না। রকি: কি? আমরা পাইনি.. এটা কিভাবে সম্ভব? সম্ভব হয়েছে রকি, বললেন ধীরেন বাবু। কে পেয়েছে? কিভাবে? এই শহরে আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার সাহস কার আছে? ও ঠিক আছে যেই পাক... দেখে নেবো, মাথায় পিস্তল ঠেকালেই সব বাপ বাপ বলে কন্ট্রাক্ট ছেড়ে দেবে, আর তাও না ছাড়লে খালাস করে দেবো। এবারে জগা মুখ খোলে: যে পেয়েছে তার মাথায় পিস্তল ঠেকানো তো দূর তার মাথার একটা চুলও ছুঁতে পারবে না তুমি। কেন.. কে পেয়েছে? জিজ্ঞেস করে রকি। কিন্তু জগা উত্তর না দিয়ে বীরেন বাবুর গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে ঢোঁক গেলে। কি হলো জগাদা বলো কে পেয়েছে? আবার জিজ্ঞেস করে রকি। কিন্তু তাও জগা চুপ করে থাকে। "কে পেয়েছে ধীরেন?" গুরুগম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করেন বীরেন বাবু। দাদা কন্ট্রাক্ট পেয়েছে.... এআরসি ইন্ডাস্ট্রিজ। নামটা শুনে চমকে উঠলেন বীরেন ভট্টাচার্য তার মুখে একে একে ভয় রাগ ঘৃণা সবকিছুই প্রতিফলিত হলো। ধীরেন বাবু বলে চলেন: ওদেরই পুরো বিজনেসের একটা উইং কনস্ট্রাকশনের বিজনেস করে,সবথেকে বড়ো কথা ওদের মতো বড়ো ইন্ডাস্ট্রি নিজে বিড পেপার জমা দিয়েছে, পুরো দেশে ওদের সুনাম আছে তাই... রকি: কিন্তু একটা জিনিস বুঝতে পারছি না, ওরা বাণিজ্যনগরী ছেড়ে হটাৎ আমাদের শহরে এলো কেন? "কারন এই একটা শহরেই ওর আধিপত্য বাকি আছে, তাই এখন এই শহরে হাত বাড়িয়েছে" উত্তর দেন ধীরেন বাবু। "অর্ধেক শহরে" গম্ভীর কণ্ঠে বলেন বীরেন বাবু, একটু থেমে আবার বলেন "অর্ধেক শহরে অলরেডি দখল নিয়ে নিয়েছে" কি বলছো দাদা? ঠিক বলছি, তোর মনে আছে তাথৈ আর বৃষ্টির জন্য একটা অ্যাপার্টমেন্ট বানাতে চেয়ে একটা বস্তি খালি করতে চেয়েছিলাম। হ্যাঁ ,মনে আছে। "ওটা উচ্ছেদ করা যাবে না উপর থেকে অর্ডার এসেছে, আর এটা যে এই এআরসি র কাজ সেই কথাটা কানে এসেছে, আর এটাও কানে এসেছে যে ওই বস্তির লোকেদের সাহস খুব বেড়ে গেছে, ওই এলাকায় বাইরের লোক ঢোকা বারণ এমনকি পুলিশও ঢুকতে পারে না"। এসব কি বলছো দাদা? ঠিক বলছি। এবার কি করবে মামা? আপাতত আমাকে একা থাকতে দাও। সবাই জানে এটা হুকুম আর এই হুকুম অমান্য করার সাহস কারো নেই তাই সবাই বেরিয়ে গেল। "এআরসি এআরসি এআরসি আমার পথে পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই লোকটা" সবাই বেরিয়ে যেতেই রাগে ফেটে পড়লেন বীরেন ভট্টাচার্য। তার অনেকদিনের স্বপ্ন বাণিজ্যনগরীতে নিজের ব্যাবসার প্রসার বাড়ানো কিন্তু তিনি সফল হননি কারণ সেখানে তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই এআরসি, পুরো বাণিজ্যনগরী ওর হুকুমে চলে সেখানকার প্রতিটা লোকের মুখে তার নাম, দেশের ইয়াং বিজনেস টাইক্যুন অথচ বাইরের কেউ তাকে চেনে না, তার ছবি কোথাও বেরোয় না, কোনো বিজনেস পার্টি সে অ্যাটেণ্ড করে না, কোনো সাংবাদিক তার লাইভ ইন্টারভিউ নিতে পারে না, কে এই এআরসি কেমন দেখতে তার পরিবারে কে কে আছে সেটা বাইরের কেউ জানে না, যারা জানে তারা কারো কাছে মুখ খোলে না অথচ পুরো শহরের লোক তার নাম জানে কেউ তার নাম শুনলে আতঙ্কে প্রায় হার্টফেল করে তো কেউ দুহাত তুলে আশীর্বাদ করে। বানিজ্যনগরীর একটু বাইরের দিকে বিশাল বাংলো তার, বাংলো না বলে রাজপ্রাসাদ বলা ভালো যেটাকে সে সুরক্ষিত করে প্রায় দুর্গ বানিয়ে ফেলেছে ভিতরে সুরক্ষা তো আছেই তার উপরে ওই বাংলোকে ঘিরে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যারা বাস করে তারাও অচেনা, অজানা কাউকে ওদিকে যেতে দেয় না। বীরেন বাবু অনেক চেষ্টা করেছেন এই এআরসির সম্পর্কে জানতে, অনেক লোক পাঠিয়েছিলেন কিন্তু সবাই জাস্ট নিঁখোজ হয়ে গেছে, কয়েকজন ছোটোখাটো ব্যাবসায়ীকে লোভ দেখিয়ে নিজের সাথে নিয়েছিলেন বীরেন বাবু কিন্তু ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাদের শেষ করে দেওয়া হয়েছে। দুই বছর আগে একবার খোদ বীরেন বাবু নিজে গিয়েছিলেন তার সাথে দেখা করতে সাথে জগা এবং আরো কয়েকজন ছিল অফিসে ঢুকতে না পেরে বাংলোর দিকে গিয়েছিলেন কিন্তু ঢুকতে পারেননি, ভেবেছিলেন বাইরের লোকের সাথে কথা বলে খবর বার করবেন, এই আশায় এক চায়ের দোকানে ঢোকেন, ওখানে আরও অনেক লোক ছিল। এটা ওটা কথার পরে আসল কথা পাড়লেন কিন্তু সবাই কথা পাল্টে যেতে থাকে বা ছড়িয়ে যেতে থাকে, বীরেন বাবু ভেবেছিলেন টাকার লোভ দেখালে হয়তো কাজ হাসিল হয়ে যাবে তাই টাকার অফার করেছিলেন কিন্তু তার বদলে যেটা হয়েছিল সেটা আমৃত্যু তার মনে থাকবে, মুহূর্তের মধ্যে চায়ের দোকানে উপস্থিত প্রত্যেকের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র উঠে এল, এছাড়াও আশেপাশে থাকা বেশ কয়েকজন এগিয়ে এল তাদের হাতেও উদ্যত আগ্নেয়াস্ত্র, জগা আর তার সাথে যারা গিয়েছিল তাদের প্রত্যেকের কোমরে একটা পিস্তল গোঁজা ছিল সেটা তারা বার করতে যেতেই দেখলো তাদের প্রত্যেকের মাথা লক্ষ্য করে অন্তত ৫টা রাইফেল উদ্যত হয়ে উঠলো, এমনকি চায়ের দোকানির হাতেও একটা পিস্তল উঠে এসেছে আর সেটা সে সটান বীরেন বাবুর কপালে ঠেকালো, বীরেন বাবু অবাক অথচ সভয়ে দেখলেন এক নিরীহ চায়ের দোকানির মুখ মুহূর্তে একটা জাত খুনির মুখে বদলে গেল, দোকানি শীতল কণ্ঠে বললো: তোকে বিনা পয়সাতেই খবর দিচ্ছি তবে তার আগে একটা উপদেশ.. এখান থেকে চলে যা আর কোনোদিন এখানে আসবি না, এবার খবর.. এআরসির সাথে সেই দেখা করতে পারে যার সাথে এআরসি দেখা করতে চায় তার বাইরে কেউ দেখা করতে পারে না যদি কেউ করতে চায় তাহলে তাকে আর এই পৃথিবীতে দেখা যায় না, চল এবার যা এখান থেকে। বীরেন ভট্টাচার্যকে তারা জ্যান্ত ফেরত পাঠালো বটে তবে শাস্তিস্বরূপ প্রত্যেককে জামাকাপড় খুলিয়ে শুধুমাত্র নিম্নের অন্তর্বাস পরিয়ে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে এলাকা থেকে অনেকটা বাইরে বার করে দিল, ভাগ্য ভালো ছিল যে কোনো মিডিয়া ডাকেনি নাহলে সেদিনই তার সব সম্মান শেষ হয়ে যেত। বীরেন ভট্টাচার্য অপমান হজম করার লোক নন, তাই তিনি ঠিক করেছিলেন রাতে ওই এলাকায় হামলা করে তাদের যারা অপমান করেছে তাদের শেষ করবেন, যদি তাদের নাও পান তাহলে ওখানে যেপব বাড়িতে ঢুকে যারা থাকবে সবাইকে শেষ করবেন, এই উদ্দেশ্যে তিনি নিজের শহর থেকে দলের কয়েকজন লোককে ডেকে পাঠান, একটা ছোট্ট লজের রুমে সবাইকে নিয়ে হামলার প্ল্যান করছেন এমন সময় কোনোভাবে খবর পেয়ে সেখানে আগে হামলা চালায় এআরসির লোকেরা এই অতর্কিত হামলায় তার দলের প্রায় সবাইকে মেরে ফেলে ওরা কিন্তু অদ্ভুতভাবে বীরেন বাবু এবং জগাকে এবারও ছেড়ে দেয়, সেই থেকে আর ওদিকে পা বাড়াননি বীরেন বাবু.. আজকেও সেই রাতের ঘটনা মনে পরায় তার কপালে ঘাম দেখা যায়, পা কাঁপতে থাকে নেহাত চেয়ারে বসে ছিলেন নাহলে নির্ঘাত পরে যেতেন, লোকগুলো তার দলের লোকগুলোকে শুধু মারছিল না রীতিমতো নৃশংসভাবে মারছিল, যখন তাদের তাণ্ডব শেষ হয় তখন পুরো ঘরের মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছে, বীরেন বাবু আর জগার পুরো শরীর রক্তে মাখামাখি, দুজনেই ভয়ে আতঙ্কে থরথর করে কাঁপছেন। সেই এআরসি এখন তার শহরে হাত বাড়িয়েছে, তবে কি এতদিন তারসাথে যা যা হয়েছে তার পিছনে এই এআরসি? এই এআরসি তার পিছনে লেগেছে? বীরেন বাবুর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যায় তিনি সেদিনের ঘটনা মনে করে শিউরে ওঠেন, বীরেন বাবু ভালো করেই জানেন যে এই এআরসির সাথে লড়ার ক্ষমতা তার নেই, তিনি নেতা হতে পারেন কিন্তু সেটা শুধু এই রাজ্যের, অথচ এআরসির দল দেশের সব শহরে ছড়িয়ে আছে, তার আধিপত্য শুধু এই শহরে তাও তার অর্ধেক নিয়ে নিয়েছে এআরসি। কিন্তু তিনি বীরেন ভট্টাচার্য এত সহজে হার মানবেন না তিনি টেবিলের উপরে রাখা ফোনটা তুলে কাউকে ফোন করেন তারপর স্পিকার চালু করে টেবিলে রাখেন একটু পরে ওপার থেকে একটা পুরুষ কণ্ঠ শোনা যায় "হ্যালো" অতীন আমি বীরেন ভট্টাচার্য বলছি। এতদিন পর আমাকে মনে পরলো কেন? তোমার অনেকদিনের শখ এই শহরে পোস্টিং নেওয়ার, আমি সেটা করতে পারি.. হঠাৎ... কিন্তু এই উপকারের বিনিময়ে আপনি কি চান? এআরসি। এআরসি? এআরসির সম্পর্কে সব খবর চাই, তুমি পুলিশের লোক ওর সম্পর্কে খোঁজখবর জোগাড় করতে হবে। আপনি জানেন আপনি কার সম্পর্কে কথা বলছেন? জানি। তাহলে এটাও জানেন যে ওর বিরুদ্ধে যারা স্পাইং করতে গেছে সবাই গায়েব হয়ে গেছে, বাণিজ্যনগরীতে রাজ করে ও, ওখানের কেউ ওর বিরুদ্ধে যাবে না। ও এই শহরে আছে। আপনি শিওর? পুরো না, আমার একটা কন্ট্রাক্ট ও ছিনিয়ে নিয়েছে, আমাকে একটা বস্তি উচ্ছেদ করতে দিচ্ছে না, ওই বস্তিতে বাইরের কেউ ঢুকতে পারে না খুব সম্ভবত ওখানেই ও আছে, এবং আমার পিছনে লেগেছে। বেশ.. আমি চেষ্টা করবো কিন্তু সফল হবো কিনা এখনই কথা দিতে পারছি না, কাজটা রিস্কি আর সফল হলে কি পাবো? আগে সফল হও। যদি হই তখন? কি চাও তুমি? আপনি জানেন। নিজের লিমিট ক্রশ কোরো না অতীন ,বৃষ্টি আমার মেয়ে। উঁহু আমার চয়েস পাল্টে গেছে বৃষ্টি নয় তাথৈ... আমার তাথৈকে চাই। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন বীরেন বাবু তারপর বলেন তোমার ট্রান্সফার অর্ডার তোমার হাতে চলে যাবে, যত তাড়াতাড়ি চলে আসো। বি দ্র: আশা করছি এই পর্বটা সবার ভালো লাগবে, আর ভালো লাগলে লাইক এবং রেপু দিয়ে পাশে থাকবেন।
আরো একটা কথা যাদের শুধু অজাচার বা সেক্স রিলেটেড গল্প পছন্দ তাদের উদ্দেশ্যে বলি এই গল্পে অজাচার বা সেক্স কোনোটাই তেমন নেই, তবুও যদি স্রেফ গল্প পড়তে ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই পড়ে দেখবেন, ভালো লাগলে লাইক এবং রেপু আর খারাপ লাগলে সেটাও কমেন্ট করে জানাবেন।
ধন্যবাদ।
I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
29-09-2022, 12:43 AM
উফফ জাস্ট ফাটাফাটি।
এই রকম একটা টুইস্ট এ ভরপুর পার্ট।।।।
29-09-2022, 12:46 AM
(29-09-2022, 12:43 AM)Akash78 Wrote: উফফ জাস্ট ফাটাফাটি। ধন্যবাদ । ভালো লাগলে লাইক এবং রেপু দিয়ে পাশে থাকবেন। I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
29-09-2022, 01:02 AM
অসাধারণ দাদা। অনেক সুন্দর হচ্ছে দাদা।
29-09-2022, 01:28 AM
Just aweeeesomeeeeee
29-09-2022, 02:29 AM
আজকের পর্ব টা একটু ছোট হয়ে গেলো। যাই হোক ব্যাপার না আগামী পর্ব বড় হবে।
29-09-2022, 07:53 AM
সবাইকে ধন্যবাদ,
ভালো লাগলে লাইক এবং রেপু দিয়ে দেবেন। I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
29-09-2022, 07:54 AM
(29-09-2022, 02:29 AM)Arpon Saha Wrote: আজকের পর্ব টা একটু ছোট হয়ে গেলো। যাই হোক ব্যাপার না আগামী পর্ব বড় হবে। শব্দলিমিটের জন্য বাদ দিতে হলো আর দুটো আপডেট দেওয়ার মতো লেখা এখনো শেষ করে উঠতে পারিনি। I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
29-09-2022, 01:06 PM
(29-09-2022, 12:00 PM)Jibon Ahmed Wrote: Excellent update dada ধন্যবাদ ভালো লাগলে লাইক এবং রেপু দিয়ে দেবেন। I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
29-09-2022, 03:01 PM
এই রকম রোমাঞ্চকর গল্প......... যা যৌনতা কেউ হার মানায়.... ❤️
29-09-2022, 03:44 PM
(29-09-2022, 03:01 PM)Crazy_guy69 Wrote: এই রকম রোমাঞ্চকর গল্প......... যা যৌনতা কেউ হার মানায়.... ❤️ ধন্যবাদ ভালো লাগলে লাইক এবং রেপু দিয়ে দেবেন I'm the King of Dark
&
I rule over all Devils
29-09-2022, 03:46 PM
Very good
|
« Next Oldest | Next Newest »
|