Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(21-09-2022, 11:36 PM)Boti babu Wrote: অনেকের ভালো লাগবে অনেকের ভালো লাগবে না । কিন্তু তুমি একটা চটি গল্পকে কোনও কিছুর চিন্তা না করে যে ভাবে উপন্যাসের রুপ দিলে । সে জন্য মন থেকে তোমাকে সেলামমমম। এই ভাবে এগিয়ে যাও সব সময় পাসে আছি থাকবো।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সত্যিই প্রথমে চটিতেই সীমাবদ্ধ রাখতে চেয়েও কখন যে এটার প্লটে টার্ন নিয়ে এসেছি নিজেও জানি না। তবে সবার ভালো লাগছে দেখে আমার নিচেকে একটু হলেও সার্থক মনে হচ্ছে।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(22-09-2022, 02:18 AM)Arpon Saha Wrote: হারিয়ে যাইয়েন নাহ আপনার লেখার হাত ও চিন্তাশক্তি চমৎকার আশা করি এই গল্পের পর আরো ভালো গল্প নিয়ে আমাদের উৎসুক পাঠকবৃন্দের সম্মুক্ষে হাজির হবেন।
না না হারিয়ে যেতে চাই না।
এটা শেষেই নতুন কিছু আসবে অবশ্যই আসবে।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Posts: 784
Threads: 0
Likes Received: 350 in 286 posts
Likes Given: 1,597
Joined: Feb 2022
Reputation:
15
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(25-09-2022, 06:47 PM)Ari rox Wrote: আপডেট এর আশায় রইলাম
লেখা শেষ করেছি...
আজ যদি রি চেক করে নিতে পারি তবে আগামীকাল অবশ্যই আপডেট আসবে।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
অবশষে...
অপেক্ষার প্রহর ফুরিয়ে আজ আসতে চলছে সবার অধীর আগ্রহের এই গল্পের অন্তিম পর্ব। আজ আর কোন টিজার দিলাম না, ভালো বা মন্দ যেটাই আছে সেটা না হয় গল্পেই জানা যাবে।
এই থ্রেডের সবচেয়ে বড় আপডেট নিয়ে রাতেই আসবে গল্পের সর্বশেষ পর্ব - সমাপয়েৎ
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
27-09-2022, 09:09 PM
(This post was last modified: 27-09-2022, 09:18 PM by nextpage. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
সমাপয়েৎ
রাই-রুদ্রের মা বাবা যখন হাসপাতালের তিন তলার অপারেশন থিয়েটার এর সামনে পৌঁছালো তখন ওটির সামনের দেয়ালে রক্তে মাখা শরীরটা ঠেস দিয়ে বসে থাকতে দেখে ছুটে যায় ওর কাছে। নিজের মাথায় মমতাময়ী মায়ের হাতের স্পর্শ পেতেই মাথা তুলে তাকিয়ে মাকে দেখে মায়ের কোলে মুখ গুজে দিয়ে পাগলের মত কাঁদতে থাকে রুদ্র। অঞ্জলি দেবী অবিনাশ বাবু ছেলে কে কান্না থামানোর জন্য সান্ত্বনা দিতে থাকে, পাশেই দেবীকা দেবী দাড়িয়ে আছে অশ্রুসিক্ত চোখ দুটো স্থির হয়ে আছে ওটির দরজার দিকে আর বিজয় চৌধুরী এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে পায়চারি করছে। এদিকে আসা যাওয়া করা বাকিরা জিজ্ঞাসা সূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে ওদের দিকে। এর মাঝেই এক নার্স ফার্স্ট এইডের বক্স নিয়ে এসেছে রুদ্রের কাছে, ওর শার্টের রঙ পাল্টে গেছে শুকিয়ে যাওয়া রক্তে। নার্স ভেবেছে রুদ্রের গায়েও হয়তো আঘাত লেগেছে, কিন্তু নার্স কে দেখে রুদ্র জানিয়ে দেয় ওর কোন কিছু হয়নি। ওর আঘাত টা শরীরের বাইরের হয়তো নেই তবে ভিতরের জখম বেশ বড়সড় সেখানের যন্ত্রণাটা হয়তো চোখে মুখে দেখা যাবে না কিন্তু বুকে কান পাতলে ঠিকই শোনা যাবে। হঠাৎ করেই ওটির দরজা টা খুলতেই উৎসুক মনে সবাই দরজার দিকে এগিয়ে যায়, দুজন নার্স বেড়িয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে যায় হাসপাতালে করিডোর ধরে। পেছন থেকে ওরা কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই নার্স দুটো কোথাও যেন হারিয়ে গেল আবার খানিক বাদেই দু হাত ভর্তি মেডিসিন আর নানা ধরণের সার্জিক্যাল ইকুইপমেন্ট সহ ওটিতে প্রবেশ করে। ওটির ভিতর বাহিরের ইঁদুর দৌড়টা বেশ কিছুক্ষণ ধরেই চলতে থাকে কখনো অক্সিজেন সিলিন্ডার কখনো রক্তের ব্যাগ কখনও বা অন্যান্য জিনিসের জন্য। আর প্রতিবার ওটির দরজা টা একটু খুলতেই অধীর আগ্রহে বসে থাকা মানুষ গুলো খানিকটা চঞ্চল হয়ে উঠে আর মনে মনে দুশ্চিন্তার পাল্লা একটু একটু করে ভারী হতে থাকে৷ সেই কখন রাই কে নিয়ে গেছে ওটিতে কিন্তু এখন পর্যন্ত ওর কোন খবর পাচ্ছে না রুদ্ররা। ভেতরে কি হচ্ছে কে জানে রাই কেমন আছে ওর কি হয়েছে সেটা বাড়ির মানুষেরা কেউ জানে না শুধু রুদ্রের মুখে এক্সিডেন্টের কথা শুনেই হাসপাতালে ছুটে এসেছে। ওখানে কি হয়েছিল সেটা তো একমাত্র রুদ্রই জানে কিন্তু এখন রুদ্রের যে অবস্থা ওকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করার মত অবস্থা নেই। তবে রুদ্রের গায়ে শার্টে লেগে থাকা রক্ত দেখে যদি কিছু চিন্তা করা যায় তবে সেটাতেই গা শিউরে উঠবে। রুদ্রের পাশেই ওর মা আর দেবীকা দেবী বসে আছে, ওদের বাবা করিডোর ধরে এ মাথা ও মাথা হাটাহাটি করছে। কারও মুখে কোন কথা নেই তবে প্রতিটা মানুষের চেহারায় আতংক আর দুশ্চিন্তার বলিরেখা স্পষ্ট হয়ে আছে। ওদের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দেয় যখন দেখে আরও একজন ডাক্তার ওটির পোশাক পড়ে ওদের দিকে এগিয়ে এসে ওটিতে প্রবেশ করে, সবার মনে এবার প্রশ্ন উঁকি দেয় গুরুতর কিছু হলো না তো রাইয়ের। সবার প্রশ্নভরা চোখ গুলো রুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে, রুদ্রের গলায় জমা হওয়া ক্লেদ গুলো কান্না হয়ে বেড়িয়ে আসে বাইরে।
রুদ্র কিছু মূহুর্তের জন্য যেন পাথরের মত হয়ে গিয়েছিল রাইয়ের গগনবিদারী আর্তনাদ শুনে। ওর দৃষ্টি সীমার কিছুটা সামনে খানিকটা হাওয়ায় ভেসে উঠা একটা দেহ আবার চকচকে পিচ ঢালা রাস্তায় ছিটকে পড়তেই চারদিকে মানুষের চিৎকার চেচামেচি শুরু হয়ে যায়। রাস্তায় পড়ে থাকা দেহটা থেকে কিছুটা দূরে কোন মতে ট্রাক টা থেমে যায় নইলে হয়তো আজ চাকায় পিষ্ট হয়ে যেত। সবটা দেখেও রুদ্র কি করবে সেটাই যেন বুঝতে পারছিলো না, পা গুলো যেন ওখানে মাটির সাথে জমে গিয়েছে। আশেপাশের মানুষ গুলো ভীড় জমিয়ে ট্রাকের ড্রাইভার কে ঘিরে ধরে চিৎকার করে শাসাচ্ছে। রুদ্র টলমল পায়ে কোন রকম শক্তি জুগিয়ে ভীড় ঠেলে রাইয়ের কাছে এগিয়ে যায়, রাইয়ের ডানদিকের চোখের চারপাশটা কেমন কালো হয়ে গেছে কপালের দিকটা থেতলে গিয়েছে। রক্তের ধারা বেয়ে চলেছে রাস্তায়। রুদ্র ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে রাইয়ের নাম ধরে চিৎকার করে ডাকতে থাকে কিন্তু রাইয়ের দিক থেকে কোন সাড়া নেই। অচেতন হয়ে পড়ে আছে পিচ ঢালা তপ্ত রাস্তায়। রাইয়ের মাথাটা নিজের কোলে তোলে নিতেই আঁতকে উঠে রুদ্র, কপালের জখমটা দেখে ওর নিজেরই অজ্ঞান হবার উপক্রম হয়। ওর দুহাত মূহুর্তেই রক্তে জবজবে হয়ে উঠে। বারবার ডেকেও রাইয়ের কোন সাড়া না পেয়ে রুদ্র খানিকটা ঘাবড়ে যায় কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। ভয় আর আতংকে রুদ্রের হাত পা থরথর করে কাঁপছে, কাঁপা হাতটা কোন রকমে রাইয়ের নাকের সামনে ধরতেই ধীর গতিতে চলা শ্বাস প্রশ্বাস টা অনুভব করতে পারে। রুদ্র চিৎকার করে ভীড় করে দাড়িয়ে থাকা মানুষ গুলোকে একটা গাড়ির ব্যবস্থা করতে বলে রাইকে হাসপাতালে নেবার জন্য৷ মূহুর্তের মাঝে কেউ একজন একটা অটো সিএনজি নিয়ে নিয়ে আসে৷ সবাই ধরাধরি করে রাইকে সেটাতে তুলে দেয়। রাইয়ের ওড়না টা ওর কপালে বেঁধে দিয়েছে ভীড়ের কেউ একজন। রুদ্র নিজের কোলে রাইকে জড়িয়ে ধরে অঝরে কাঁদতে থাকে, স্বপ্নেও যেটা ভাবে নি সেটাই আজ ঘটে গেল কিছুক্ষণ আগে। রুদ্র মনে মনে ভাবছে নিজের কৃতকর্মের ফল কেন এমন করে রাইকে পেতে হলো, রাইয়ের তো কোন দোষ ছিল না তাহলে কেন রাইয়ের সাথে এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল। শুধুমাত্র রুদ্রের জীবনের সাথে মিশে গিয়েই কি এভাবে রাই কে সেটার ফল ভোগ করতে হলো। সবটাই রুদ্রের নিজের জন্য ও কেন রাই কে আটকাতে পারলো না কেন ওকে নিরাপদে রাখতে পারলো না। রুদ্র এক নাগাড়ে ভগবান কে ডেকে যাচ্ছে যেন রাইয়ের কিছু না হয়, ও যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায়। হাইওয়ে ধরে দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে ওদের নিয়ে যাওয়া অটো সিএনজি টা। শহরের কাছেই একটা হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে পৌঁছাতেই স্ট্রেচারে করে রাইকে নিয়ে ডাক্তার আর নার্স রা ছুটে যায় ওটির দিকে, আর পেছন পেছন টলতে টলতে এগিয়ে যায় রুদ্র। রাইয়ের অবস্থা দেখে ডাক্তারদের মাঝে হুলস্থুল বেঁধে যায় দ্রুত ওটি রেডি করতে বলা হয়। রুদ্র যেন আর চলতে পারছে না ওর শরীরে আর কোন শক্তি অবশিষ্ট নেই নিজেকে সামলাতে ওটির সামনের দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে থাকার চেষ্টা করে কিন্তু ওর পা দুটো যেন বিদ্রোহ শুরু করেছে কোনমতেই নিজেকে দাঁড় করাতে না পেরে ফ্লোরেই বসে পড়ে। এক ফাঁকে মোবাইল করে দু বাড়িতেই খবরটা জানিয়ে দেয় রুদ্র।
ঘন্টা তিনেক সময় পার করে ওটির দরজা খোলে ডাক্তার রা বেড়িয়ে আসে৷ ডাক্তার রা বেড়িয়ে আসতেই সবাই তাদের দিকে ছোটে যায় রাইয়ের অবস্থা জানার জন্য, ডাক্তার রা ওদের রুমে দেখা করতে বলে। রুদ্ররা সবাই ডাক্তার দের পেছন পেছন রুমে গিয়ে বসে, ডাক্তার রা ফ্রেশ হয়ে এসে টেবিলে বসতে বসতেই একজন এসে একটা ফাইল দিয়ে যায়। সেটাতেই চোখ বুলাতে থাকে ডাক্তার, এর মাঝে একটা ফিল্ম তুলে লাইট বক্সের সামনে রাখে দেখেই বুঝা যাচ্ছে এটা সিটি স্ক্যানের প্লেট, আরেকটা ফিল্ম বের করে সেটা এক্সরে প্লেট। একটার পর একটা কাগজ বের করছে আর সেটা নিয়ে নিজেদের মাঝে আলোচনা করে চলেছে ওদিকে রুদ্ররা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে রাইয়ের কন্ডিশন জানার জন্য৷ রুদ্রর অপেক্ষা করার ধৈর্যের বাঁধ যেন ভেঙে যাচ্ছে, ও আর নিজেকে শান্ত করে রাখতে পারছে না
-স্যার রাইয়ের কি অবস্থা, এখন কেমন আছে কিছু তো বলুন।
-(রুদ্রের দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো একটু ছোট করে কিছু একটা যেন ভেবে একটা বড় করে শ্বাস নেয় ডাক্তার) আপনি একটু শান্ত হোন, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি এরপরও রোগীর যে কন্ডিশন তাতে এখনো সেটা ফিফটি-ফিফটি পর্যায়ে আছে। ওনার মাথার আঘাত টা গুরুতর, ইন্টারনাল ব্লিডিং হয়েছে আর প্রচুর ব্লাড লস হয়েছে সেটা পুরো শরীরেই এফেক্ট করেছে আর ব্রেইনে আর কোন ড্যামেজ হয়েছে কিনা সেটা এখনি বলা যাচ্ছে না। আমরা ওনাকে ৭২ ঘন্টা অবজারভেশন রাখছি তারপর রোগীর অবস্থা বুঝে এগোতে হবে। তাছাড়া ওনার হাত পায়েও ফ্র্যাকচার হয়েছে পায়ে তেমন গুরুতর না হলেও হাতে প্লেট বসাতে হয়েছে। এখন আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন কিছু করার নেই, আপনারা সৃষ্টি কর্তাকে ডাকুন তিনিই সবকিছু ঠিক করতে পারেন।
-আমরা কি একবার ওর সাথে দেখা করতে পারি?
-আপাতত তো ওনার সেন্স নেই আর অপারেশনের ধকল আর মেডিসিনের প্রভাব কাটতে সময় লাগবে মে বি পুরোপুরি সেন্স আসতে দু তিন দিন সময় লাগতে পারে এর বেশি দেরি হলে কোমায় যাবার পসিবিলিটি হাই থাকে, আর আইসিইউ তে কাউকে ঢুকার পারমিশন দেয়া যাবে না। ৭২ ঘন্টা পর কেবিনে দিলে তখনি ওনার সাথে দেখা করতে পারবেন। এখন আপাতত আইসিইউ এর বাইরে থেকেই যতটুকু দেখা যায়।
-(পিছন থেকে ডাক্তারের টেবিলে দিকে এগিয়ে গিয়ে বিজয় চৌধুরী বলে উঠে) আমি কি ওকে অন্য কোন আরো ভালো হাসপাতালে শিফট করতে পারি? আমার জানাশোনা কিছু বড় বড় ডাক্তার আছে আমি ওদের কাছে ওকে নিয়ে যাবো। আমার মেয়েকে হসপিটালের বেডে এভাবে পড়ে থাকতে আমি দেখতে পারবো না। যে করেই হোক রাই কে আমি তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তুলবো। আপনারা বললেই আমি এ্যারেজম্যান্ট শুরু করবো। দরকার হলে ওকে বিদেশে নিয়ে যাবো তবুও আমার মেয়েকে আমি সুস্থ করে তুলবো।
-দেখুন আপনার মেয়েকে চাইলে আপনি নিয়ে যেতে পারেন আমরা বাঁধা দিতে পারি না। তবে রোগীর যে কন্ডিশন তাতে এতো টানাহ্যাঁচড়া রোগীরই ক্ষতি করবে। আমরা আমাদের বেস্ট টা দিয়েই চেষ্টা করবো আপনার মেয়েকে সুস্থ করে তুলতে। আমি বলি আপনি চাইলে এখানেই আপনার পরিচিত ডাক্তারদের সাথে কনসালট্যান্ট করাতে পারেন সেটাই বেটার হবে। বাকিটা আপনাদের ইচ্ছে।
অবিনাশ বাবু এগিয়ে গিয়ে রাইয়ের বাবাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে। তারপর ডাক্তারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রুদ্ররা ডাক্তারের রুম থেকে বেড়িয়ে আইসিইউর ইউনিটের দিকে এগিয়ে যায়। আইসিইউর দরজার সামনের কাঁচের দরজা গলিয়ে রাইকে দেখার চেষ্টা করে সবাই, কিছুক্ষণ খোঁজার পর খেয়াল করে একপাশের একটা বেডে হাত পা মাথা সাদা ব্যান্ডেজে মোড়ানো একটা শরীর। হঠাৎ করে দেখে বুঝার উপায় নেই যে এটাই রাই। একপাশে ডিজিটাল মনিটরের ডিসপ্লেতে ওর পালস, হার্টবিট, বিপি এসবের রিডিং দেখাছে। ছোট হয়ে মুখটার উপরে অক্সিজেন মাক্স টা চেপে বসে আছে, আরও কয়েকটা তার জড়িয়ে আছে হাত সহ সারা শরীরে যেগুলো হয়তো জানান দিচ্ছে দেহটাতে এখনো প্রাণবায়ু অবশিষ্ট হয়ে আছে। পাশের স্ট্যান্ডেই স্যালাইন আর রক্তের ব্যাগ ঝুলছে, দূর থেকেই অনুভব করা যায় এই শরীরটার উপর দিয়ে কতটা ধকল গিয়েছে আর সামনেও যাবে। রাইয়ের এমন করুন অবস্থা দেখে রুদ্র আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, ওখান দৌড়ে চলে যায় সিঁড়ি দিকে ওকে ওমন করে ছুটতে দেখে অবিনাশ বাবুও ছেলের পেছন পেছন যেতে থাকে।
তিনদিন পর অবস্থার খানিকটা উন্নতি হলেও এখনো পুরোপুরি সেন্স ফিরছে না রাইয়ের যেটা ডাক্তারদের চিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। আরেকবার সিটি স্ক্যান, ইসিজি, এম আর আই সহ আরও কয়েকটা টেস্ট করেও কিছুই বুঝতে পারছে না। আপাতত দুদিন ধরে কেবিনেই রাখা হয়েছে রাইকে তবে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে ডাক্তার রা, এর মাঝে রাইয়ের বাবার পরিচিত দুজন ডাক্তার এসেও রাইয়ের সমস্ত রিপোর্ট দেখেছে রাইকেও চেকআপ করেছে। তারাও বলছে সবকিছু ঠিক আছে তবে আরও কিছুদিন রাইকে অবজারভেশনে রাখতে হবে। আজ সকালেই ভিজিটিং আওয়ারে রুদ্রের মা বোন আর রাইয়ের মা বোন রা এসেছে। এদিকে রুদ্র এ কদিন ধরে হাসপাতালেই আছে এত করে বলার পরেও ও আর বাসায় যায় নি। খাওয়া দাওয়া এক রকম ছেড়েই দিয়েছে, সারাক্ষণ একটা চেয়ারে বসে থেকে অপলক দৃষ্টিতে রাইয়ের দিকেই তাকিয়ে থাকে। সকালে এসেই অঞ্জলি দেবী ছেলেকে অনেক চেষ্টায় জোর করে এক গ্লাস জুস খাওয়াতে পেরেছে আর কিছুই ও মুখে তুলে নি। বাকিরা আসার পর রুদ্র পাশের একটা বেডে শুয়েছিল কখন যে চোখ গেছে কেউ খেয়াল করে নি। আরেকটু পর ভিজিটিং আওয়ার ওদের চলে যেতে হবে তাই গোছগাছ করে নিচ্ছে। রাইয়ের পায়ের কাছে বেডের দুপাশে বসে আছে তনু আর ছুটকি। নার্স এসেছে ড্রেসিং ট্রে নিয়ে রাইয়ের কপালের ক্ষত টা ড্রেসিং করার জন্য, কপালের ব্যান্ডেজ টা খুলে সেলাই করা জায়গাটা পরিষ্কার করে নতুন করে ব্যান্ডেজ করতে থাকে। নার্স রাইয়ের বিপি হার্ট বিট অক্সিজেন লেভেল চেক করতে থাকে এক এক করে। হঠাৎ করেই তনুর চোখে পড়ে রাইয়ের হাত পা নাড়াবার চেষ্টা করছে অল্প অল্প করে, চোখের পাতা গুলো একটু নড়ে উঠছে শুষ্ক রুক্ষ ঠোঁটটা কেঁপে উঠছে বারবার। বিষয়টা নার্স কে জানাতেই উনি ডাক্তার কে ডাকতে বেড়িয়ে গেলেন। তনুর কথা শুনে বাকিরাও রাইয়ের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে, রাই যেন বার কয়েকবার চেষ্টা করছে চোখ মেলে তাকানোর শুকিয়ে যাওয়া ঠোঁট গুলো জিভে একটু ভিজিয়ে নেবার চেষ্টা করছে। এর মাঝেই ডাক্তার ছোটে এসেছে কেবিনে, রাইয়ের বিপি চেক করে ওর চোখের পাতা সড়িয়ে চেক করে নিচ্ছে উনি। ডাক্তারের চোখে মুখে একটা প্রশান্তির হাওয়া বয়ে যাচ্ছে এক এক করে ওর হাতটাকে বারবার মুঠো করে আবার মুঠো খুলে ঠিকমত রেসপন্স করছে কিনা সেটাও দেখার পর পায়ের মুভমেন্টও দেখে নিচ্ছে৷ বাকিরা সবাই অধীর আগ্রহে তীর্থের কাকের মতই ডাক্তারের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
-যতটা বুঝতে পারছি ওর সেন্স ফিরে এসেছে, বডি মুভমেন্টও বেটার পজিশনে আছে। আশা করি বাকিটাও ভালো হবে। তবে ওকে কিন্তু বেশি কথা বলতে দেয়া যাবে না, শরীর কিন্তু এখনো অনেক দুর্বল সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। ও যেন কোন কিছুতেই বেশি উত্তেজিত না হয় ওকে শান্ত রাখার চেষ্টা করবেন আর রোগীর সামনে কোন ধরনের কান্নাকাটি করবেন না। যেকোন প্রবলেম হলেই আমাকে ডাকবেন ঠিক আছে।
-(অশ্রুসিক্ত চোখে ডাক্তারের কাছে এসে উনার হাত দুটো ধরে নেয় দেবীকা দেবী) আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবো জানি না, আপনারা এত কষ্ট করে আমার মেয়েটাকে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করে গেছেন সেটার ঋন কি করে শোধ করবো জানি না।
-আরে না এটা তো আমার কাজ, এটার জন্য কোন ধন্যবাদ দিতে হবে না। আপনারা থাকুন আমি এখন আসি।
ডাক্তার নার্স চলে যেতেই সবাই গিয়ে রাইয়ের মাথার কাছে দাঁড়ায়, রাই এখনো পুরোপুরি চোখ মেলে তাকাতে পারে নি। ডান দিকের চোখের চারদিকের কালো দাগটা কমে আসলেও চোখটা এখনো হালকা ফুলে আছে। সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বা হাতটা কিছুটা তোলার চেষ্টা করে তনু কে কাছে আসার ইশারা করে রাই। তনু দিদির কাছে এগিয়ে যেতেই রাই শুষ্ক কন্ঠে অস্পষ্ট স্বরে রুদ্রের কথা জিজ্ঞেস করতেই তনু হাতের ইশারায় ওর ডান দিকে বেডের দিকে তাকাতে বলে। পাশ ফিরে তাকাতে রাইয়ের একটু কষ্ট হলেও ও চেষ্টা করে, ওপাশের বেডে জীর্ণশীর্ন হয়ে পড়ে থাকা রুদ্র কে দেখে রাইয়ের ভিতরটা আতকে উঠে। চোখ গুলো কেমন যেন কোটরের ভিতরে ঢুকে গেছে নিচের কালো দাগ টা কয়েকটা বিনিদ্র রাতের বয়ান দিয়ে যায়, গজিয়ে উঠা দাড়িতে কেমন এক উদ্ভ্রান্তের মত দেখা যাচ্ছে । মুখটা কেমন শুকনো লাগছে, চেহারার রঙ পাল্টে গেছে। ওকে একবার দেখেই যে কেউ অনায়াসে বলে দিতে পারবে যে কতদিন ধরে ওর নিজের শরীরের উপর দিয়ে নাওয়া খাওয়া ঘুম ছেড়ে দিয়ে কি অত্যাচার টাই না চালিয়ে গেছে। রুদ্র কে এমন ভাবে দেখে নিজের শরীরের যন্ত্রণা টা কমই মনে হয় মনের যন্ত্রণার কাছে, ইহাই ভালোবাসা যেখানে বরাবরই নিজের থেকেও বেশি প্রাধান্য পায় নিজের ভালোবাসার মানুষটা। রাইয়ের চোখের কোনে জমতে থাকা অশ্রুবিন্দু গাল বেয়ে নামতে থাকে, ছুটকি উঠে গিয়ে নিচু গলায় দাদাকে জাগিয়ে তুলে। ছুটকির গলাটা কানে বাজতেই ধরমরিয়ে উঠে বসে রুদ্র, ভয়ে ভীত হয়ে ছোট হয়ে আসা চোখ দুটো নিয়ে আতংকিত হয়ে এদিক সেদিকে তাকাতে থাকে। ছুটকি দাদার সামনে থেকে সড়ে গিয়ে রাইয়ের দিকে ইশারা করে। ওদিকে তাকাতেই রাইকে আধখোলা চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখেই একটু আগের চঞ্চল হয়ে উঠা রুদ্রের শরীরটা যেন ওখানেই স্থির হয়ে গেছে। বেডে যেখানে বসে ছিল সেখানেই বসে আছে কিন্তু রুদ্রের পা দুটো একনাগাড়ে কেঁপে যাচ্ছে। সাদা হয়ে আসা দুটি চোখের অপলক দৃষ্টিতে রুদ্র রাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে ওকে দেখতে পারছে কিন্তু না পারছে কিছু বলতে না পারছে বেড ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে রাইয়ের কাছে আসতে। এ কদিনে যে নিজেকেই দ্বায়ী করে রেখেছে রাইয়ের এমন অবস্থার জন্য কোন মুখে এখন সে রাইয়ের কাছে গিয়ে দাঁড়াবে। ওদিকে রাই অপেক্ষা করে আছে কখন রুদ্র ওর পাশে এসে বসবে ওর হাত টা একটু ধরবে। দুটো রিক্ত শূন্য প্রাণ একে অন্যের বেদনায় মর্মাহত হয়ে অব্যক্ত হৃদয়ে নির্বাক মুখে অপেক্ষায় বসে আছে কে কখন কার কাছে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে মনে জমে থাকা সব ক্লেশ দূরে সরিয়ে শূন্যরেখায় মিলে যাবে দুটো প্রাণ। ওদের ওমন চুপ থাকতে দেখে অঞ্জলি দেবী বলে উঠে
-নাও সবাই চলো দেখি তো! ভিজিটিং আওয়ার তো শেষ হতে চললো (রাইয়ের দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় কিছু যেন একটা বলাবলি হয়ে গেল) আমরা এখন আসি রাতে আবার দেখতে আসবো আর ওদিকে টেবিলে খাবার রাখা আছে ইচ্ছে হলে খেয়ে নেয় যেন এখন। কিছু দরকার হলে ফোন করে জানাস কিন্তু।
ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে একে একে সবাই রুম থেকে বেড়িয়ে যায়, তখনো রুদ্র ওখানেই আগের মতই স্থির পাথরের মত বসে আছে। রাই এতক্ষণ দরজার দিকে তাকিয়ে ছিল এখন যেই রুদ্রের দিকে তাকালো ওর চোখে চোখ পড়তেই রুদ্র মাথা নিচু করে নেয়। কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই রুদ্র আড় চোখে রাইয়ের দিকে ফিরে তাকাতেই দেখে রাই অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে, মূহুর্তের চোখের আড়াল হতেই রুদ্রের পৃথিবীটা যেন এক নিমিষেই খালি খালি লাগতে শুরু করছে। বেড ছেড়ে ধীর পায়ে রাইয়ের বেডের পাশে রাখা টুলটা টেনে ইচ্ছে করেই একটু শব্দ করে বসে পড়ে। টুল টানার শব্দে চোখ খুলতেই দেখে রুদ্র একটু দূরে বসে আছে, চেহারার কি অবস্থা করে রেখেছে রুদ্রের চোখের মুখের অবয়বে উন্মাদ পাগলের মত দেখাচ্ছে। বা হাতের আঙুল নাড়িয়ে রুদ্র কে কাছে এসে বসার জন্য ইশারা করে রাই, কিন্তু রুদ্র ঠায় ওখানেই বসে আছে আর অপলক দৃষ্টিতে রাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। দিন কয়েক আগের চঞ্চলমতি রাইকে এমন করে ব্যান্ডেজ জড়িয়ে হাসপাতালের বেডে পড়ে থাকা বড্ড বেমানান লাগে, ওর প্রতিটা পদক্ষেপে সাথে বেজে ওঠা নূপুরের শব্দ কতদিন ধরে শোনা হয় না ওর খোলা রাখা চুল বহুদিন হয়ে গেল উঠে এসে রুদ্রের মুখের উপর আছড়ে পড়ে না যেন বহুকাল বয়ে গেছে রাইয়ের গলার আওয়াজ রুদ্রের কানে বেজে উঠে না। এই সবটাই তো ওর নিজের কারণে রাইকে ভোগ করতে হচ্ছে রুদ্র মনে মনে ভাবছে।
রুদ্রকে ওমন করে বসে থাকতে দেখে রাই একটু উঠে বসার চেষ্টা করতে করতে বলে উঠে
-(ভেঙে যাওয়া কন্ঠে একটু জোর আনার চেষ্টা করে, চোখে মুখে একটা রাগী ভাব এনে) আমাকে কি আরেকবার বলতে হবে নাকি!
-(রাইকে উঠে বসার চেষ্টা করতে দেখেই রুদ্র টুল ছেড়ে রাইয়ের কাছে ছুটে আসে, ওকে ধরে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দেয় আর মনে মনে ভাবতে থাকে এমন অবস্থাতেও রাগটা ঠিকই আছে) না আর বলতে হবে না (শান্ত গলায় রুদ্র উত্তর দিয়ে রাইয়ে পাশেই বেডের কোনে বসে)
-(চেহারায় একটা আহলাদি ভাব এনে) কি হলো ওমন করে বসে আছো কেন? আর চোখ মুখের এ কি হাল করছো হ্যাঁ। (বা হাত বাড়িয়ে রুদ্রের হাতটা নিজের মুঠোয় পুড়ে নেয়)
-(রাইয়ের মুখে দিকে তাকিয়ে হু হু করে কাঁদতে শুরু করে দেয় রুদ্র, কান্না ভেজা কন্ঠেই বলতে থাকে) এমনটা কেন করলে তুমি? আমাকে এত বড় সাজা দিতে চাইলে কেন? নিজেকে এত কষ্ট যন্ত্রনা দিয়ে আমাকে রেখে দুরে চলে যেতে চাইলে কেন। যদি আমাকে ক্ষমা নাই করতে পারো তবে আমাকে মুখের উপর বলে দিলেই পারতে আমি আর কখনো তোমার সামনে আসতাম না সেই কষ্ট টা সহ্য করে নিতাম কিন্তু তোমাকে এই অবস্থায় দেখার যন্ত্রনা টা আমি সহ্য করতে পারছি না। আমাকে এত বড় সাজা টা কেন দিলে তুমি।
-(রুদ্র কে কাঁদতে দেখে রাইয়ের চোখ দুটোও ভিজে উঠে কিন্তু নিজেকে সামলে নেয় সে) ঐ দেখো কেমন বোকার মত কান্না করছে দেখো। মানুষ দেখলে কি বলবে বলো তো, আমাকে বলবে ওর বর বাচ্চাদের মত কান্না করে। ছি ছি লজ্জায় মুখ দেখাতে পারবো না। (হঠাৎ মুখটা একটু গম্ভীর করে) তোমাকে তো আমি কখনই ক্ষমা করবো না কখনই না, আমি না একটা পাগলি ভুল করে তোমার হাত টা ছেড়ে দিয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে ধরে রাখলে না কেন, তুমিও কি আমার মত স্বার্থপর হয়ে গিয়েছিলে নাকি নইলে কেন যেতে দিলে আমাকে! (রুদ্রের হাতটা তখনো নিজের মুঠোতেই ধরা ছিল সেটা নিজের বুকের কাছে টেনে এনে) প্রমিস করো আমি পাগলামি করলেও তুমি কখনো আমার হাত টা ছাড়বে না, আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।
-তুমিও তো কথা দিয়েছিলে যাই কিছু হোক না কেন আমার হাত ছাড়বে না, আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে তবে কেন এমনটা করলে?
-(মুখটা করুণ ভাব করে) ভুল করে ফেলেছি, দেখছো না তোমার হাত টা ছেড়ে দিয়ে কতটা কষ্ট পাচ্ছি এখন। আমার এমন করা ঠিক হয় নি আর কখনো এমন করবো না, তুমি আমাকে আটকে রেখো তোমার কাছে।
-তুমি বললে ছাড়বো না, একবার ছেড়ে কতটা পস্তাচ্ছি সে তো আর বলার মত নেই।
-(ধমকের সুরে) তাহলে চোখ মুছো এখন, তোমাকে কাঁদতে দেখলে আমার কেমন যেন হাসি পায়। খেয়েছো কিছু?
-(চোখ নামিয়ে নেয় রুদ্র) হুম
-মিথ্যে বলো কেন? পা টা ভেঙে বসে আছি দেখে নইলে ঠিক একটা লাথি মারতাম তোমাকে। ওখানে খাবার রেখে গেছে মামনি নিয়ে এসো আসার সামনে বসে খাবে। আমারও না খিদে পেয়েছে একটু জিজ্ঞেস করে আসো না আমি কি কিছু খেতে পারবো কিনা?
-(রুদ্র বিড়বিড় করে বলতে থাকে) অর্ধেক শরীর ব্যান্ডেজ করা তাও ম্যাডামের মেজাজ কমে না।
-ঐ ওমন ঠোঁট নাড়িয়ে কি বলছো হুম আমাকে মনে মনে বকাবকি করছো নাকি?
-(ভীমড়ি খায় রুদ্র) আরে না না আমি যাই ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসি (চোরের মত দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে যায় রুদ্র, রাই মুচকি হাসতে থাকে ওর ওমন চলে যাওয়া দেখে।
রুদ্র ডাক্তারের সাথে কথা বলে আবার কেবিনে ফেরত আসে রুদ্র। খাবারের বক্স টা খুলে দেখে ওতে রুটি সবজি আছে আর অর্ধেক বোতল জুস রয়ে গেছে। রাইকে ডাক্তার পাতলা আর হালকা খাবার খাওয়ানোর জন্য বলেছে, চিকেন বা মাটন স্যুপ খাওয়াতে বলেছে। রুদ্র বাড়িতে ফোন করে মাকে ডাক্তারের কথা গুলো জানিয়ে দেয়। রাইয়ের জন্য জুস টা একটা গ্লাসে ঢেলে একটা প্লেটে রুটি আর সবজি নিয়ে বেডে রাইয়ের পাশে বসে পড়ে।
-নাও জুস টা খেয়ে নাও।
-জুস খেয়ে পেট ভরবে না তো, আমার অনেক খিদে লাগছে। এক কাজ করো তোমার এখান থেকে একটু রুটি আর সবজি আমাকে খাইয়ে দাও।
-(রাইয়ের বায়না ধরার ভাবখানা দেখে রুদ্রের মন ভরে উঠে, এ যেন সেই পুরনো রাইকে আবার নিজের সামনে দেখছে) আচ্ছা ঠিক আছে এখন অল্প খেয়ে নাও বিকেলে তোমার জন্য আলাদা খাবার নিয়ে আসবে।
-খেয়ে নেব মানে কি তুমি নিজ হাতে খাইয়ে দিবে, ডান হাতে তো ব্যান্ডেজ করা দেখতে পারছো না (ডান হাতটা হালকা উঠিয়ে দেখানোর চেষ্টা করে)
-থাক থাক আর দেখাতে হবে না, আমিই খাইয়ে দেব তুমি চুপটি করে বসে থাকো।
রুদ্র অল্প রুটি আর সবজি নিয়ে রাইয়ের মুখে তুলে দেয়, দুষ্টুমির ছলে রুদ্রের আঙুলে হালকা করে কামড় বসিয়ে দেয় রাই। রুদ্রের মলিন হয়ে যাওয়া মুখটাতে হাসির ঝিলিক দেখা দেয় নতুন করে। এমন খুনসুটির মাঝেই দুজনেই অল্প করে খেয়ে নেয়। এর মাঝেই নার্স আসে রুটিন চেকআপের জন্য, সবকিছু চেকআপ করে জানিয়ে দেয় আগের চেয়ে অনেক ইম্প্রুভ হয়েছে। ডাক্তারের সাথে কথা বলে যতটুকু বুঝা গেছে তাতে এক দুদিনের মাঝে রাইকে ছুটি দিয়ে দিবে। কেবিনে ফিরে এসে রাইয়ের পাশেই বসে রুদ্র, ওর চোখ মুখে ঘুমের ভাবটা বেশ দেখা যাচ্ছে। রাই রুদ্রকে একটু ঘুমিয়ে নিতে বলে, সে নিজেও একটু রেস্ট নিবে মাথায় হালকা ব্যাথা অনুভব করছে অনেক্ক্ষণ ধরেই। রুদ্র পাশের বেডের দিকে যেতে চাইলে রাই ওকে ওর পাশেই থাকতে বলে। রুদ্র অনেক বুঝানোর চেষ্টা করে ছোট্ট বেডে দুজন কি করে থাকবে তার মাঝে ওর হাত পায়ে প্লাস্টার করা আছে ব্যাথা পেতে পারে, কিন্তু রাই তার সিদ্ধান্তে অনড় রুদ্র কে তার পাশেই থাকতে হবে। শেষমেশ রুদ্র রাইয়ের পাশেই গুটিশুটি দিয়ে শুয়ে পড়ে, অনেকদিনের ঘুম গুলো জমা হয়ো আছে চোখে এমন সময়ে ভালোবাসার মানুষটার পরশ পেতেই চোখ দুটো ঘুমের ভারে বুজে আসে। রাই আগেই রুদ্রের মোবইলটা চেয়ে নেয় গান শোনার জন্য। এতোদিন পর ভালোবাসার মানুষটাকে কাছে পেয়ে রাইয়ের ইচ্ছে করে রুদ্র কে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু পারে না সেই খামতি পোষাতে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঘুমন্ত রাজকুমারের দিকে। হঠাৎ ঘুমের মাঝে রুদ্র একটু সড়ে এসে একহাতে রাইকে জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নেয়, রুদ্রের স্পর্শ টা পেতেই রাইয়ের সমস্ত ব্যাথা যন্ত্রনা যেন নিমিষেই কোথায় যেন মিলিয়ে গেছে। দু চোখ বন্ধ করে রাই প্রিয়তমের সেই স্পর্শ টা আরও গভীর ভাবে অনুভব করতে করতে কখন যে চোখ লেগে আসে বলতে পারে না।
পরের অংশ এক্ষুনি আসছে
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
রাইয়ের ঘুম অনেক আগেই ভেঙে গিয়েছিল পাশেই রুদ্র রাইয়ের সাথে মিশে রয়েছে আর বিভোর হয়ে ঘুমাচ্ছে। মোবাইলের ঘড়িতে সময় বলছে সন্ধ্যা হয়ে এসেছে একটু পড়েই হয়তো বাসার মানুষজন দেখতে চলে আসবে তাই ভেবেছিল একবার রুদ্র কে ডেকে দিবে পরে আবার ভাবলো আরেকটু ঘুমাক ও কতদিন ঠিকমত ঘুমায় নি কে জানে। রাই মোবাইল টা নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ হতেই ওদিকে তাকিয়ে যে মানুষটাকে দেখেছে তাতে রাইয়ের মুখে হাস্যোজ্জ্বল ভাবটা ফুটে উঠে
-(দরজা ঠেলে কেবিনে ঢুকেই পল্লবী জয় কে বলে উঠে) চলো চলো আমরা মনে হয় ভুল সময় চলে এসেছি, এখানে রোমান্স চলছে এখন ( জয় সামনের দিকে ভালো করে তাকিয়ে বুঝতে পারে রুদ্র ঘুমিয়ে আছে, আর রাই লজ্জার আভা নিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে)
-তুমিও না, ছেলেটা ঘুমাচ্ছে দেখছো তারপরও ওসব বলে রাইকে লজ্জায় ফেলে দিতে চাও। (নিজের হাতে ব্যাগ গুলে পাশের টেবিলে রাখতে রাখতে বলে উঠে) আমার পুড়া কপাল তুমি ওদের মতো ওতোটাও রোমান্টিক না।
-(পল্লবী জয়ের হাতে চিমটি কেটে রাইয়ের বেডের দিকে এগিয়ে গিয়ে টুল টা টেনে ওর পাশে বসে) এখন কেমন আছো? তোমার খবর টা শুনে আমাদের কি যে অবস্থা হয়েছিল বলে বুঝাতে পারবো না। ও কোম্পানির কাজে বাইরে চলে গিয়েছিল না হলে আগেই চলে আসতাম।
-আগের চেয়ে ভালো আছি গো এখন, রুদ্র আমাকে বলেছে তোমাদের কথা। জয় তো প্রতি বেলায় ফোন করে খবর নিয়েছে, তোমরা এসেছো দেখে অনেক ভালো লাগছে।
-(রুদ্র যেদিকে ঘুমাচ্ছে সেদিকে জয় দাড়িয়ে রুদ্রকে হালকা কাতুকুতু দিয়ে বলতে থাকে) দেখো ব্যাটা কুম্ভকর্ণের মত ঘুমাচ্ছে৷ আমরা যে এলাম সেটার খবর নেই কিন্তু ঠিকি বউকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে যের ওর বউকে আমরা দিয়ে চলে যাব।
জয়ের খুঁচাখুঁচিতে রুদ্রের ঘুমটা ভেঙে যায়, আধো আধো চোখ খুলতেই ওপাশে বসা পল্লবী কে দেখে একটু অবাক হয়ে যায়। একবার চোখ বন্ধ করে আবার তাকিয়ে দেখে না ঠিকই দেখেছে এবার এপাশে ঘুরতেই জয়কে দেখে মুচকি হাসতে থাকে।
-ভাই আমরা এসেছি কোন ডাকাত না, এবার তো বউটাকে ছাড়।
-(জয়ের কথায় খেয়াল হয় ও রাইকে একহাতে জড়িয়ে ধরে আছে, ওমনি হাত টা সড়িয়ে নিয়ে রুদ্র উঠে বসে) তোরা কখন এলি? আমাকে আগে জানালি না তো।
-(ও পাশ থেকে পল্লবী বলে উঠে) এইতো একটু আগেই এসেছি। আগে জানিয়ে আসলে তো এত সুন্দর রোমান্টিক দৃশ্যটা দেখতে পেতাম না।
-(দরজা ঠেলে ছুটকি ঠুকতে ঠুকতে জিজ্ঞেস করে) কি ব্যাপার! কি রোমান্টিক দৃশ্যের কথা বলা হচ্ছে হ্যাঁ। আমিও একটু দেখবো।
-(রুদ্র ধড়ফড়িয়ে বেড থেকে উঠে দাঁড়ায়) কি কিছু না তো। তোর এত সব কিছুতে ইন্টারেস্ট কেন রে।
-(ছুটকি মুখটা গোমড়া করে রাইয়ের দিকে তাকিয়ে) দেখলে তো দিদি দাদা কেমনটা করলো।
-আমাকে সুস্থ হতে দে তারপর এটার শোধ নেব বলে দিলাম(রুদ্রের দিকে তাকিয়ে রাই মুচকি হাসতে থাকে)
একে একে সবাই কেবিনে ঢুকতে থাকে, বড়দের সামনে আগের বিষয়টা চাপা পড়ে যায়৷ বাকিরা অঞ্জলি দেবী আর দেবীকা দেবীর জন্য রাইয়ের পাশের জায়গা ছেড়ে দেয় আর জায়গা পেয়েই মায়েরা তাদের কাজ শুরু করে দেয়। ব্যাগ থেকে এক এক করে খাবারের বাটি বের করতে থাকে তো আরেকজন রাইয়ের চুল আঁচড়িয়ে বেনী তুলতে শুরু করে।
-(গরমা গরম স্যুপের চামচে চুমুক দিতে দিতে জিজ্ঞেস করে) বাবা কই গো মা?
-তোর বাবা আর রুদ্রের বাবা ডাক্তারের রুমে আছে, তোকে কবে নিয়ে যেতে পারবে সেটা নিয়েই কথা বলছে হয়তো।
-(অঞ্জলি দেবী রাইয়ের কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিয়ে জিজ্ঞেস করে) কিরে সাহেব খেয়েছে কি?
-(রাইও ফিস ফিস করে উত্তর দেয়) খাবে না মানে এক ধমকেই সব ঠান্ডা (কথাটা শেষ করেই রাই হাসতে থাকে সাথে অঞ্জলি দেবীও সেই হাসিতে যোগ দেয়।
অন্যদিকে তনু ছুটকি পল্লবী ওরা তিনজনে কথা বলতে বলতে ফ্লাক্স থেকে সবার জন্য চা কাপে ঢালতে থাকে আর এক এক করে সবাইকে দিয়ে দেয়৷ খানিকবাদেই অবিনাশ বাবু আর বিজয় চৌধুরী রুমে আসে, রাইয়ের কাছে গিয়ে ওর সাথে কথা বলতে থাকে। এর মাঝে সবাইকে জানিয়ে দেয় ডাক্তার বলেছে পরশু রাইকে রিলিজ করে দিবে। সন্ধ্যার এই সময়টা সবার হাসিঠাট্টা কথাবার্তা আর খোশগল্পে ভরে উঠে, রাইকে সুস্থ হয়ে উঠতে দেখে সবার মনেই আনন্দ নতুন করে বইতে শুরু করেছে খুশি পালে হাওয়া লেগেছে। এই কয়টা দিন সবার স্তিমিত হয়ে আসা প্রাণবায়ুতে আজ নতুন করে সঞ্জীবনীর প্রলেপ লেগেছে তারই ক্রিয়াতে শুষ্ক মুখ গুলোতে একটু একটু করে প্রশান্তির ছোঁয়া লাগছে। একটু দূরে দাড়িয়ে রুদ্র সবার হাসিমুখ গুলোতে চোখ বুলাচ্ছে আর পরিতৃপ্ত চেহারা গুলো ওকেও নতুন করে সাহস দিচ্ছে আশা জাগাচ্ছে প্রাণশক্তি বৃদ্ধি করছে। মাঝে মাঝে রাইয়ের সাথে চোখে চোখে খানিক বার্তাও আদান প্রদান হয়ে চলেছে সবকিছুর মাঝেই, এসব ছোট ছোট মূহুর্তের উষ্ণতার মাঝেই অনুকূল পরিবেশে সম্পর্ক গুলো মজবুত হতে থাকে আর ভালোবাসা বাড়তে থাকে।
আজ রাই হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় চলে এসেছে, তবে ডাক্তার বলে দিয়েছে রুটিন চেকআপের জন্য মাঝে মাঝে ওকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। হুইল চেয়ারে করে রাইকে নিয়ে রুদ্র ওর ঘরের দিকে নিয়ে যায় পেছন পেছন বিজয় চৌধুরী আর তনু ব্যাগপত্র গুলো নিয়ে রুমে ঢুকে। বাকিরা বসার ঘরে বসে কথা বার্তা বলছে, এর মাঝেই পল্লবী খাবারের ট্রে নিয়ে রুদ্রের ঘরে ঢুকে। রুদ্র বাকি জিনিস গুলো আনতে বাইরে গিয়েছে হয়তো, মেয়ের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে বিজয় চৌধুরী। বাবার স্নেহের পরশে রাইয়ের ভিতরের শিশুসুলভ আচরণ টা মনের ভিতর থেকে বাইরে বেড়িয়ে আসে, রাই বাবার কাঁধে হেলান দিয়ে ডান হাতের বাজু টা জড়িয়ে ধরে। মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বিজয় চৌধুরীর দু চোখ ভিজে উঠে, আজ কতবছর পর আবার মেয়েকে আবার সেই আগের মত স্নেহ করতে পারার সুখ আনন্দ টা অনুভব করতে পারছে। বাবা মেয়ের এই আনন্দঘন মূহুর্ত টা রুদ্র পল্লবী একটু দূরে দাড়িয়ে উপভোগ করছে।
-(পল্লবী একটু কাছে গিয়ে রাইয়ের বাবাকে বলে) আঙ্কেল ওকে তো এবার একটু ফ্রেশ হতে হবে ড্রেস চেঞ্জ করাতে হবে৷ তারপর না হয় আবার মেয়ের সাথে সুখ-দুঃখের গল্প করবেন।
-(ঝটপট চোখ মুছে নেয়) ঠিক আছে ঠিক আছে ও ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিয়ে রেস্ট নিক৷ আমি পরে আবার আসবো।(বিজয় চৌধুরী মেয়ের কপালে ছোট্ট করে একটা চুমো একে দিয়ে বাইরের ঘরের দিকে চলে যায়)
-(টেবিলের কোনের দিকে ঠায় দাড়িয়ে থাকা রুদ্রের দিকে ইশারা করে) কি মশাই আপনিও বাইরের ঘরে গিয়ে বসুন একটু।
-কেন কেন আমি থাকলে কি সমস্যা।
-কোন সমস্যা নেই। তবে এখন তো আমি আছি আমার কাজ টা আমই করি পরে তো সব তোমাকেই করতে হবে ( রুদ্র কে দুষ্টুমির ছলে ধাক্কা দিতে দিতে রুম থেকে বের করে দরজা লক করে দেয় পল্লবী)
হুইল চেয়ারে বসা রাই তখন থেকেই মুচকি মুচকি হেসে চলেছে, পল্লবীও রাইয়ের কাছে এসে হাসতে থাকে
-ঐ দেখো আরেকজনেরও দেখি তর সইছে না, আমি না হয় বাইরে গিয়ে ওকেই পাঠিয়ে দেই(পল্লবী গলার স্বরে আর চোখের নাচনে রাই কে টিপ্পনী কাটে)
-(অদ্ভুত এক অনুভূতির জোয়ারে রাইয়ের চোখ মুখ লাল হয়ে উঠে) ইশশ, আমি কখন সে কথা বললাম। ও থাকুক বাইরে, আমি ওকে ঘরেই আসতে দেব না ওটাই ওর শাস্তি।
পল্লবী রাইকে রেখে বাথরুমে চলে যায়, আগে থেকেই ওর জামা কাপড় রেডি করে রেখেছিল। গিজারের গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে রাইয়ের সারা শরীর স্পঞ্জ করে দেয় পল্লবী, পুরনো জামাকাপড় চেঞ্জ করে নতুন জামা পড়িয়ে দিয়ে আয়নার সামনে নিয়ে আসে। হাত মুখে লোশন লাগিয়ে দিয়ে রাইয়ের চুল গুলো আচড়িয়ে মাঝ কপালে সিঁথি তুলে দেয়, ড্রেসিং টেবিল থেকে সিঁদুরের কৌটা টা তুলে নিয়ে পুরো সিঁথি রাঙিয়ে দেয়৷ কপালের কাটা জায়গায়টায় অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিয়ে টেবিলের কাছে নিয়ে আসে, হালকা কিছু খাবার খাইয়ে যে যে ঔষধ গুলো ছিলো সেগুলো দেখে দেখে খাইয়ে দিয়ে রাইকে নিয়ে বাইরের ঘরের দিকে নিয়ে যায়। ঝরঝরে রাইকে দেখে সবাই উৎফুল্ল হয়ে উঠে সবার চোখে মুখে প্রশান্তির আভা ফুটে উঠে, আবার সেই পুরনো ভাবটা ফিরে আসে বাড়িতে অনেকদিন পর সবাই একসাথে খোশমেজাজে আড্ডায় মেতে উঠে।
রাই আয়নার সামনে বসে আছে একহাতে মোবাইলটা ধরে রেখেছে সেটাতেই ইউটিউবে চুলে বেনী তুলার পদ্ধতির একটা ভিডিও চলছে আর পেছনে বসে রুদ্র সেটা দেখে দেখে রাইয়ের লম্বা ঘন চুলে আনাড়ি হাতে চালাচ্ছে। রাই বাসার আসার দুদিন পর জয় এসে পল্লবী কে নিয়ে গেছে, ওখানে বাইরে খাওয়া দাওয়া করাটা জয়ের খুব সমস্যা নাহলে পল্লবী আরও কিছুদিন থাকতো। পল্লবী চলে যাবার পর রুদ্রের মা বোন আর রুদ্র নিজেই রাইয়ে সবকিছুর দেখাশোনা করে৷ আজ কয়েকদিন ধরে রুদ্র চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাইয়ের চুলে বেনী করে দেবার আজও সেটাই করে যাচ্ছে। প্রতিদিনের মত আজও আধঘন্টা হয়ে গেছে রুদ্র এখনো বেনী তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে আর রাই রুদ্রের এসব কার্যকলাপ দেখে মুখ টিপে হাসছে। হঠাৎ সামনের দিকে তাকাতেই আয়নায় দেখতে পায় রাই মুচকি মুচকি হাসছে।
-কই আমাকে একটু হেল্প করবে তা না এখানে বসে বসে হাসছে। এই যে আমি তোমার চুলে বেনী করে দিচ্ছি এমন রোমান্টিক বর আর কোথাও পাবে (রুদ্র মুখ ভার করে বসে থাকে)
-(রাই হাসি থামিয়ে রুদ্রের দিকে ঘুরে বসে ওর কাধে বা হাতটা রাখে, ওর ডান হাত এখনো ব্যান্ডেজ করা গলায় ঝুলছে) ওলে বাবালে, এতো রাগ করো কেন! যাও আমি আর হাসবো না ঠিক আছে (মুখে হাওয়া নিয়ে গাল ফুলিয়ে থাকে)
-আমি হাসতে না করেছি নাকি! তুমি গোমড়া মুখ করে থাকলে আমার তো ভালো লাগে না (রুদ্র দু হাতে রাইয়ের ফুলানো গালে দুটো হালকা করে টিপে দেয়, সাথে সাথে রাই আবার খিল খিল করে হাসতে থাকে)
-আচ্ছা ঠিক আছে, এখন আমি যেভাবে বলছি ওমন করেই করলেই দেখবে বেনী তুলতে পারবে।
রাইয়ে বলতে বলতে হাত নাড়িয়ে মাঝে মাঝে দেখিয়ে দিচ্ছে কেমন করে চুল গুলো ভাগ করে নিয়ে একটার সাথে অন্যটা আড়াআড়ি করে বেনী বুনতে হয়। অবশেষে আজ রুদ্র তার টার্গেট পূরণ করতে পেরেছে। খুশিতে রাইয়ের গালে চুমো খায় সে রাইও রুদ্রের গালে চুমো খায় আর ওকে একটু জড়িয়ে ধরতে বলে। রুদ্র পেছন থেকেই রাইকে জড়িয়ে ধরে রাখে রাইও সুখের আবেশে রুদ্রের গায়ে নিজেকে এলিয়ে দেয়। দুজনে আয়নার সামনে বসে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি মধুর প্রেমালাপে মজে যায়। ওদের দেখে মনে হয় সদ্য প্রেমে পড়া দুই কপোত-কপোতী নিজেদের নতুন করে চিনে নিচ্ছে। এভাবে কতক্ষণ বসে ছিল তার খেয়াল নেই তবে ওদের প্রেমালাপ ভঙ্গ হয় ছুটকির ডাকে, মা ডাকছে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। রাই এখন আর খুব বেশি একটা হুইল চেয়ার ব্যবহার করে না, রুদ্র ছুটকি কিংবা মামনির হাত ধরের অল্প হাটার চেষ্টা করে। আজও রুদ্রের কাধে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে বাইরের ঘরের দিকে যেতে থাকে।
দেখতে দেখতে একটা মাস চলে গেল আজ রাইয়ের হাত পায়ের প্লাস্টার খোলা হবে সে জন্য রুদ্র রাইকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছে। প্লাস্টার খোলার পর আবার এক্সরে করা হয়েছে রাইয়ের হাত পায়ের, রাই রুদ্র ডাক্তারের রুমে অপেক্ষা করছে ডাক্তার এক্সরে প্লেট নিয়ে ওদের সাথে দেখা করবে। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে জানালো ওর ফ্র্যাকচার গুলো আর নেই তবে হাত পায়ে আগের মত শক্তি পেতে হলে ফিজিও থেরাপি নিতে হবে আর কিছু ব্যায়াম আছে সেগুলো নিয়মিত করতে হবে এছাড়া আরও কিছু চেকআপের পর রাই আগের চেয়ে অনেক ভালো আছে সেটা জানায়। এখানের কাজ শেষে ডাক্তার ওদের নিয়ে ফিজিও থেরাপিষ্টের কাছে নিয়ে যায় সেখানেই ওদের কয়েকটা ব্যায়াম দেখিয়ে দেয় যেগুলো রাইকে নিয়মিত করতে হবে ওর হাত পায়ের আড়ষ্টভাব টা দূর করার জন্য৷
হাসপাতালের কাজ শেষে রুদ্র প্রথমে রাইকে নিয়ে রাইদের বাড়িতে বেড়াতে যায়, আজ অনেকদিন পর নিজের বাড়িতে রাইয়ের আগমন হতেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে বাসার সবাই। মা বোনের আলিঙ্গনে রাইও যেন নিজের সেই পুরনো সময় গুলোতে ফিরে গিয়েছে। রুদ্র ওদের কোয়ালিটি টাইমে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে সোজা রাইয়ের রুমের দিকে চলে যায়, ওর জানা আছে এখন এদের মা মেয়েদের অনেক গল্প করা বাকি আছে এ ফাঁকে সে একটু রেষ্ট নিয়ে নিতে পারবে।
শশুরবাড়িতে দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে বিকেলের দিকে রাইকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসে রুদ্র। সামনের সপ্তাহ থেকে রাইকে ফিজিও থেরাপির জন্য নিয়ে যেতে হবে। সন্ধ্যা হতেই রাই খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটতে হাটতে বের হয়ে যায়, রুদ্র বারবার বলছিলো কি দরকার ওকে বলার জন্য ও নিজেই নিয়ে আসবে কিন্তু রাই নাছোড়বান্দা সে নিজেই যাবে। খানিকবাদেই মায়ের গলার আওয়াজ পায় রুদ্র কিছু একটা নিয়ে বারন করছে রাই কে। বিষয়টা কি দেখার জন্য রুদ্র ঘর থেকে বের হতেই বুঝতে পারে আওয়াজটা রান্না ঘর থেকেই আসছে। এর মাঝে মায়ের উঁচু গলার আওয়াজে ছুটকি আর ওদের বাবাও বেড়িয়ে এসেছে, আর সবার গন্তব্য ঐ রান্না ঘরের দিকেই। ওখানে গিয়ে বুঝতে পারলো রাই জেদ ধরেছে আজ সে নিজেই সবার জল খাবার বানাবে কিন্তু সদ্য সেরে উঠা রাইকে এতক্ষণ ধরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে রান্না করতে দিতে নারাজ অঞ্জলি দেবী। সেটা নিয়েই দুই শাশুড়ি বউমার মাঝে নীরব যুদ্ধ চলছে। রাইয়ের মুখে মায়া আর কন্ঠের জাদুতে শাশুড়িকে বাগে আনতে না পেরে শশুরের কাছে অনুনয় শুরু করে দেয়। শেষমেশ অবিনাশ বাবু রাজি হয় তবে বেশি কিছু যেন না করে সেটার কড়া আদেশ দিয়ে যায়।
সন্ধ্যার জল খাবারের সময় হৈ-হুল্লোড়েরের মাঝেই কেটে যায়, ছুটকি আর রাই দুজনে মিলে রুদ্রের পেছনে লাগতে থাকে। রাই যখন হাসপাতালে ছিল তখন রুদ্র কি কি পাগলামি করেছে সেসব রাইকে বলতে বলতে টিপ্পনী কাটতে শুরু করে। রুদ্র মাঝে মাঝে রেগে ছুটকি কে মারার জন্য এগিয়ে যেতে চাইছিলো কিন্তু বাবার চোখ রাঙানি দেখে আর সাহস করে নি। ছুটকির মুখে রুদ্রের পাগলামির কথা শুনতে শুনতে রাই হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খাবার মত অবস্থা। অঞ্জলি দেবী ইশারায় রাইকে বারবার রুদ্র কে এমন করে না ক্ষ্যাপাতে বলছে।
রাতের খাওয়ার পর রাইয়ের কোন কোন ঔষধ আছে সেগুলো এক এক করে নিয়ে রাইয়ের কাছে নিয়ে আসে
-এতো ঔষধ খেতে আর ভালো লাগে না।
-না লাগলেও তো খেতে হবে, এই তো আর কয়েকদিন তারপর আর বেশি খেতে হবে না(জল ভর্তি গ্লাস আর ঔষধ গুলো রাইয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে) লক্ষ্মী মেয়ের মত এখন ঔষধ খেয়ে নাও।
-(টপাটপ সব গুলো ঔষধ মুখে দিয়ে জল নিয়ে গিলতে শুরু করে) একটা কথা বলবো বকাবকি করবে না তো!
-বকবো কেন, কি কথা?
-ডান পা টা একটু ব্যাথা করছে(রুদ্র নিশ্চিত বকা দিবে জেনে মুখটা কাচুমাচু করে নেয়)
-মা আগেই বলেছিল, কোন কথা শুনলে তো৷ যেটা জেদ করবে সেটাই, ডাক্তার না করেছিল তো বেশি প্রথমেই বেশি হাটাহাটি না করতে পায়ে বেশি প্রেশার না দিতে৷ এখন যদি মা জানে তবে কিন্তু খবর আছে বলে দিলাম।
-তুমি না জানালে মামনি কেমন করে জানবে, আমি তো আর বলে নিজে নিজে বকা খেতে যাবো না।
-এই বুদ্ধিতে তো মাথা পুরো ভর্তি। দেখি ও ঘর থেকে বাম টা নিয়ে আসি ওটা ম্যাসাজ করে দিলে ব্যাথা টা যদি কমে।
রুদ্র বাম এনে রাইয়ের ডান পায়ে সন্তপর্ণে ম্যাসাজ করে দেয়, ডান পা ম্যাসাজ শেষে রাই দুষ্টুমি করে আরেকটা পা এগিয়ে দেয় ম্যাসাজ করে দেবার জন্য। রুদ্র আলতো হাতে রাইয়ের মসৃণ পায়ে বাম ম্যাসাজ করে দেয়। ম্যাসাজ শেষে রুদ্র ঘুমানোর জন্য বিছানা রেডি করে বাথরুমে চলে যায়। বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখে রাই এখনো বিছানায় বসে আছে
-কি হলো এখনো বসে আছো, ঘুমাবে না?
-না ঘুম ধরছে না, তুমি একটু এখানে আসো।
-এখন আবার কি হলো! শরীর খারাপ লাগছে কি? হাত পা মুছে নিয়েই আসছি।
-না কিছু হয়নি তুমি আসো না তাড়াতাড়ি।
-(রুদ্র হাত পা মুছে নিয়ে বিছানায় রাইয়ের সামনে এসে বসে) কি হয়েছে, ওমন মুখ ভার করে বসে আছো কেন?
-(রুদ্রের দুই হাত নিজের কোলের কাছে নিয়ে) তুমি না খুব পঁচা।
-আবার কি করলাম আমি?
-(রুদ্রের বুকে মাথা ঠেকিয়ে) আমাকে একদম ভালোবাসো না, একটুও আদর করো না তুমি।
-এটা বলতে পারলে? আমি তোমাকে ভালোবাসি না।
-না একটুও ভালো বাসো ন। যদি বাসতে তাহলে ঠিকি আমাকে একটু আদর করতে। কতদিন ধরে একটুও আদর করো না (অভিযোগের মাঝেই রুদ্রের বুকে আলতো করে ছোট্ট ছোট্ট কিল মারতে থাকে)
-(রাই কিসের কথা বলছে সেটা আচ করতে পারে) বারে তাই বলে এতো অভিমান করতে হয় সোনা আমার। তোমার শরীরটা তো এতোদিন ভালো ছিল না, হাতে পায়ে প্লাস্টার করা ছিল তবে কেমন করে আদর করতাম বলো। আচ্ছা এখন বলো কোথায় তোমার আদর চাই, তুমি যেমন করে বলবে তেমন করেই আদর করবো ঠিক আছে।
-(রুদ্রের বুক থেকে মাথা তুলে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে) সত্যি তো! (কপাল দেখিয়ে) তাহলে এখানে একটা চুমো দাও।
-(রুদ্র এগিয়ে এসে ওর ঠোঁট জোড়া পরম যত্নে রাইয়ের কপালে ছোঁয়ায়, কপালের ডান দিকে সেলাইয়ের জায়গাটায় হালকা করে ফু দিয়ে ছোট্ট একটা চুমু একে দেয়। রাই সুখের আবেশে দু চোখ বন্ধ করে মূহুর্ত টা অনুভব করতে থাকে) এবার বলো আর কোথায় আদর করবো।
-(রাই নিজের গাল টা রুদ্রের দিকে এগিয়ে দেয়) এখানে দাও (কথাটা বলেই সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয়)
-(রাইয়ের এমন পাগলামি দেখে রুদ্রের চেহারা জুড়ে খুশির ছটা দেখা দেয়, দু হাতে রাইয়ের দু কানের পাশে হাত রেখে রাইকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে ওর কোমল নরম গালে চুমো খায়) এবার হয়েছে তো। আমার না ঘুম পাচ্ছে আমি এখন ঘুমাবো।(রুদ্র রাইয়ের পাশে বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়ে)
-শয়তান একটা! তার এখন ঘুম পাচ্ছে (রাই রুদ্রের দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করতে থাকে) তোমার ঘুম পেলে ফ্লোরে গিয়ে ঘুমাও এখানে আমি একাই থাকবো (রুদ্রের মাথার নিচ থেকে বালিশ টা টেনে নিয়ে ফ্লোরে ছোড়ে দিয়ে রাই একপাশে শুয়ে পড়ে)
রুদ্র ইচ্ছে করে রাইকে একটু রাগাচ্ছিল ও ভালো করেই বুঝতে পারছে রাই কেন এমন করছে। রুদ্র একটু শব্দ করে বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে লাইট অফ করে নাইট ল্যাম্প টা অন করে দেয়। রাই আড় চোখে দেখতে থাকে যে রুদ্র কি করছে, রুদ্রের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে মাথা ঘুরিয়ে এদিক ওদিক দেখতে থাকে। রুদ্রকে ফ্লোরে শুয়ে থাকতে দেখে রাইয়ের রাগ আরও বেড়ে যায়, বিছানা থেকে আরেকটা বালিশ আর কাথা টা রুদ্রের দিকে ছোড়ে দিয়ে সশব্দে শুয়ে পড়ে। খানিক বাদে রুদ্র উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে রাই কি করছে, রাই চুপচাপ শুয়ে আছে তবে ঘুমায় নি সেটা বুঝতে পারে। খুব সন্তপর্ণে রুদ্র বিছানায় রাইয়ের পাশেই শুয়ে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। রাই এখনো রেগে আছে তাই রুদ্রে হাত টা ওর পেটের কাছ থেকে এক ঝটকায় সরিয়ে দেয়। রুদ্র আবার আরো শক্ত রাইকে জড়িয়ে ধরে ওর ঘন চুলে ঢেকে থাকা ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দেয়।
-এখন এমন ঢং শুরু করেছো কেন? তোমার না ঘুম পেয়েছে যাও ঘুমাও।
-সে তো পেয়েছে কিন্তু তোমাকে জড়িয়ে না ধরলে তো ঘুম আসে না। তোমারও বুঝি ঘুম পেয়েছে (ঘাড় থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে ওখানে ছোট্ট করে চুমু খায় রুদ্র)
-আমার ঘুম পেলো নাকি না পেলো তাতে তোমার কি? আর আদর করতে হবে না তুমি ঘুমাও (কন্ঠে অভিমানী সুর টা রয়ে গেছে)
-বাবারে এতো গোসা আমার উপর হুম, দেখি তো গোসা করলে তোমাকে কেমন লাগে দেখতে (রুদ্র রাইয়ের মুখ টা ওর দিকে ঘুরিয়ে রাইয়ের ফর্সা গালে নাক ঘসে দেয়)
-(গলায় ন্যাকা সুর এনে) একটু আগে যখন বলছিলাম তখন তাহলে এমন করছিলে কেন, শয়তান কুত্তা বদমাশ একটা। আমারে শুধু শুধু রাগায় (রাই রুদ্রের দিকে ঘুরে শুয়ে ওকে কিল ঘুসি মারতে থাকে)
-(দু হাতে রাইয়ের কিল ঘুসি ফেরানো চেষ্টা করে) আস্তে মারো লাগছে তো। আমি কান ধরছি আর এমন করবো না।
রাই কিল ঘুসি থামিয়ে রুদ্রকে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটের উপর নিজের অপেক্ষারত চঞ্চল ঠোঁট গুলো নামিয়ে আনে। সংবেদনশীল দু জোড়া ঠোঁটের ঘর্ষনে ধীরে ধীরে তাপ উৎপন্ন হতে থাকে দুটো নর নারী দেহে। দুটো আত্মার অপেক্ষা বুঝি এবার ঘুচতে চলেছে এক দেহ হয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টায়। রাইয়ের চুম্বনের উত্তরে রুদ্রও সচর করতে থাকে তার নিজের ওষ্ঠদ্বয় যেগুলো অনেক প্রহর অতিবাহিত করেছে শুষ্ক মরুভূমির আধমরা তৃণের মত আজ সেগুলো আবার প্রেমিকার প্রেমরসের বারিধারায় নিজের প্রাণ ফিরে পাবার প্রচেষ্টায় রত। প্রেম রসে সিক্ত হওয়া ঠোঁট দুটো নেমে আসে প্রেয়সীর কাঁধের কাছে, জিভরসে ভিজিয়ের তুলে ফর্সা কাঁধ। শরীরের উন্মুক্ত অংশের প্রেমিকে উষ্ণ স্পর্শে শরীরের বাড়তে থাকা আকুলতাকে কাবু করতে প্রেমিকের মাথা জাপটে ধরে নিজের কাঁধে।
রুদ্রের হাত গুলো সচল হয়ে উঠে প্রেয়সীর শরীরের প্রতিটি ভাজে ভাজে, খেলতে শুরু করে প্রেয়সীকে নিয়ে। হাতের আঙুল গুলো ছুঁয়ে যায় রাইয়ের বিস্তীর্ন খোলা পিঠ, অন্য হাতের আঙুল গুলো আঁকিবুঁকি কাটে মসৃণ পেট জুড়ে। রাইয়ের পুরো শরীর জুড়ে উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়তে থাকে রুদ্রের প্রতিটা ছোঁয়ার সাথে, নিজেকে সপে দেয় প্রিয়তম প্রেমিকের কাছে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নেয় নিজের সাথে। এমন অন্তরঙ্গতার মাঝেই রাইয়ের অন্যরকম খেয়াল আসতে থাকে কামনার ভাবনায় ডুবে থাকা মস্তিষ্কে, রুদ্রকে নিচে রেখে ওর উপর চেপে বসে রাই। রুদ্রের পড়নের গেঞ্জি টা গুটিয়ে নিতেই প্রেমিকের হালকা লোমশ বুকটা উন্মুক্ত হয়ে যায় প্রেয়সীর সামনে, রুদ্র অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে রাইয়ের চোখের দিকে সেখানে দুষ্টুমি খেলা করে চলেছে। রাইয়ের ঠোঁট জোড়া নেমে আসে রুদ্রের খোলা বুকে চুমোতে চুমোতে অস্থির করে তুলে ওকে, হঠাৎ করেই রাই রুদ্রের ছোট্ট কালো স্তন বোটায় জিভ বুলিয়ে দেয়৷ প্রেয়সীর তপ্ত জিভের স্পর্শে রুদ্রের ধমনি শিরা জুড়ে রক্তের গতি বাড়তে শুরু করে কেউ যেন আগুন ধরিয়ে দিয়েছে ওর শরীরে। ওদিকে রাই ওর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে জিভ বুলানোর মাঝে মাঝেই হালকা কামড় বসাচ্ছে রুদ্রের বুকে, প্রতিটা কামড়ে রুদ্রের শরীরের উত্তাপ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে তার প্রেয়সী৷ রুদ্রও থেমে থাকে না এই মিলন খেলার ময়দানে ও হাত চালিয়ে রাইয়ের গা থেকে ঢিলে টপ টা খুলে নেয় এক লহমায়, সঙ্গে সঙ্গেই চোখের সামনে দৃশ্যমান হয়ে উঠে বক্ষবন্ধনী বিহীন ফর্সা স্তনদ্বয়। দুহাতের বাঁধনে আটকা পড়ে প্রেয়সীর বক্ষ সৌন্দর্যের নরম কোমল মাংসপিণ্ডদ্বয়। প্রিয়তমের পুরুষালি হাতের মর্দনে রক্ত জমতে শুরু করে রাইয়ের বুকের অমৃতভান্ডে ফর্সা চামড়ায়, প্রতিটি মোচড়ে তর তর করে বাড়তে থাকে উত্তেজনার পারদ। রাই নিজেকে এগিয়ে দেয় রুদ্রের দিকে ওর স্তন নেমে আসে প্রেমিকের ঈষৎ ফাঁক হয়ে থাকা ঠোঁট যুগলের সামনে, প্রেয়সীর এমন আহ্বান অস্বীকার করার মত শক্তি স্বয়ং মদনদেবতারও নেই রুদ্র তো এক তুচ্ছ মনুষ্য। প্রেমিকার আহ্বানে সাড়া দিয়ে হালকা বাদামী রঙের স্তন বোটা নিজের মুখে পুড়ে নেয়। রুদ্রের দখলে থাকা এক স্তনে চোষন অন্য স্তনে মর্দনে রাই নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না, শরীর জুড়ে দৌড়ে চলা উত্তেজনার হরমোনের প্রভাবে রাইয়ের শরীর শক্ত হতে থাকে শিরদাঁড়া বেয়ে যেন রক্তপ্লাবন বইতে শুরু করেছে। নিজের বুক দিয়ে চেপে ধরে রুদ্রকে যেন আজই সব অধরামৃতের স্বাদ রুদ্রকে দিতে চায়, ঘন ঘন শ্বাস নিতে থাকা রাই নিজেকে এলিয়ে দেয় রুদ্রের উপর।
-এভাবে কেউ চেপে ধরে আমার তো দমবন্ধ হয়ে আসছিলো (ফিসফিস করে রাইয়ের কানে বলতে থাকে রুদ্র)
-(দ্রুত শ্বাস নেয়ার মাঝেই রাই বলে উঠে) তোমার জন্যই তো! ওমন করে... (রাই আর কিছু বলতে পারে না)
রুদ্রের হাত নেমে আসে রাইয়ের নিতম্বের কাছে পায়জামার উপর দিয়েই হালকা করে চাপ দিতে থাকে নরম মাংসপেশিতে তে৷ রাই উঠে বসে রুদ্রের গা থেকে গেঞ্জি টা খুলে নেয়, একটু নিচে নামতেই প্যান্টের ভিতর ফুঁসতে থাকা প্রিয়তমের পুরুষাঙ্গের তপ্ততা অনুভব করে। রাইয়ের হাত নেমে আসে রুদ্রের কামদন্ডের কাছে হালকা করে হাতের তালুতে পিশে দিতে থাকে। রাইয়ের হাতে স্পর্শ পেতেই রুদ্রের শরীরে ঝটকা লাগে, শরীরের সমস্ত রক্ত যেন লিঙ্গের দিকেই ধাবিত হতে থাকে। রুদ্র উঠে বসে রাইকে বিছানায় শুইয়ে দেয় ওর বুক থেকে নাভীমূল পর্যন্ত আঙুলগুলো বুলাতে থাকে, আঙুলের আলতো ছোঁয়াতেই শরীরে অন্যরকম এক আবেশে মোহিত হতে শুরু করে মেদহীন পেটে কাঁপুনি শুরু হয় যেই কাঁপুনি শেষ হয় নিজের নিম্নাঞ্চলে৷ রুদ্রের সচল হাত একটু একটু নেমে আসে রাইয়ের যোনী চেরার কাছে, পায়জামার উপর দিয়েই তর্জনীর পরশ বোলায় সেখানে। রাইয়ের পুরো শরীর যেন কেঁপে উঠে ওর দেহে যেন ভূমিকম্প শুরু হয়েছে, একহাতে রুদ্রের হাতটা চেপে ধরে। রুদ্র রাইয়ের হাত টা টেনে নিয়ে চুমু খেয়ে ওর চোখের দিকে তাকায়, রাইয়ের সাথে চোখে চোখে অনেক কথা হয়ে যায় মূহুর্তেই যে কথা গুলো হয়তো রাই মুখে কখনোই বলতো না সেগুলোও খুঁজে পায় ওর চোখের ভাষাতে। হঠাৎ করেই রুদ্র মুখ নেমে আসে রাইয়ের জানুসন্ধির কাছে আর কিছু বুঝে উঠার পায়জামার উপর দিয়েই চুমো খায় রাইয়ের গুপ্ত গুহামুখে।
-(রাই অবাক হয়ে যায়) ধ্যাত শয়তান একটা, এটা কি করলে! পঁচা ছেলে।
-আদর করলাম (রুদ্র মুচকি হাসতে থাকে)
পরের অংশ এক্ষুনি আসছে
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
রুদ্র পায়জামার গিট টা খুলে আলগা করে দিতেই রাই হালকা করে কোমড় উঁচিয়ে ধরে পায়জামা টা কোমড় থেকে ছাড়িয়ে নিতে, রুদ্র পাকা হাতে কোমড় গলিয়ে পায়জামাটা নামিয়ে দিতেই শুধু অন্তর্বাসের আবরণে ঢেকে আছে রাইয়ের গুপ্তঅঙ্গ। এতক্ষন ধরে চলতে থাকা মিলন খেলার উত্তেজনার জোয়ারে ভাসতে থাকা রাইয়ের যোনী চেরার জায়গাটা বাজেভাবেই ভিজে রয়েছে আগত কামরসের প্লাবনে। ভিজেথাকা অন্তর্বাসের উপর দিয়ে আবারও আঙুলের ছোঁয়াতে রাইকে আরও পাগল করে তুলতে থাকে রুদ্র, কামাগ্নিতে পুড়তে থাকা রাইয়ের শরীর আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না ভিতরের চলতে থাকা আলোড়নে হাত পা টান টান হয়ে আসে এ এক অদ্ভুত অনুভবের ভেলায় নিজেকে ভাসাতে থাকে। এ যেন প্রথম মিলনের সেই অপার্থিব সুখের সন্ধানে পিপাসিত সেই প্রাণ। রাইয়ের চঞ্চল হাত চলে যায় রুদ্রের প্যান্টের কাছে সেখানে তপ্ত লোহার মত গরম হয়ে থাকা পুরুষদন্ডটা মুঠোতে নেবার চেষ্টা করতে থাকে, প্রথম চেষ্টায় বিফলে প্যান্টের ভিতর হাত গলিয়ে দিতেই ভেতরের উষ্ণতা টা ভালো করেই অনুভব করতে পারে সে। রাইয়ের হাতের স্পর্শ পেতেই রুদ্রের কামদন্ডের শিরা-উপশিরায় রক্তের আনাগোনা আরও বেড়ে যায়, কোনমতেই সেটাকে আর প্যান্টের ভিতর আবদ্ধ রাখতে না পেরে নিজের প্যান্ট টা খুলে নেয় সে। দুজনেই দুজনার দেহ নিয়ে খেলতে শুরু করে হাতের পরশে একে অন্যকে তৈরী করতে থাকে আসন্ন মিলনের জন্য৷
-(দু হাত বাড়িয়ে রুদ্রকে নিজের কাছে আহ্বান জানায় রাই) জান
-কি হয়েছে সোনা (রাইকে জড়িয়ে ধরে ওর কানের লতিতে হালকা করে চুমো দেয়)
-(রুদ্রের বুকে চিমটি কেটে) আমাকে বলে দিতে হবে? তোমাকে না আমি মেরেই ফেলবো।
-তোমার হাতেই মরতে চাই গো সোনা।
-একদিন সত্যি সত্যি মেরে দিবো বলে দিলাম( কথাটা বলেই এক হাতে রুদ্রের পুরুষদন্ডটা খামচে ধরে)
-উফফ লাগছে তো, এমন করলে পরে আদর করবো কি দিয়ে।
রাই মুচকি হাসতে হাসতে হাতের মুঠোটা নরম করে দেয়, রুদ্র রাইকে ছেড়ে দিয়ে ওর জানুসন্ধি মাঝে নিজের জায়গা করে নেয় দুই দেহ একত্রে মিলিয়ে দেবার জন্য।
৮ বছর পর....
বাবার পিঠের উপর বসে আছে ৬ বছরের রদ্রিতা চুলে আঙুল চালিয়ে বিলি কাটছে আর একের পর এক প্রশ্নের বাণ ছুড়ে দিচ্ছে বাবার দিকে, তবে ওর বাবা ঘুম ঘুম চোখে কয়েকটার উত্তর দিয়ে যাচ্ছে আর কয়েকটা শুধু হু হা করে এড়িয়ে যাচ্ছে। সেটা নিয়ে রদ্রিতার মুখ বেজায় ভার, মেয়ে হয়েছে তার মায়ের মত একটু কিছুতেই মুখ জুড়ে অভিমানী মেঘ জড়ো হয়ে যায়।
হঠাৎ ঠাম্মির ডাক শুনে ছুটে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় রদ্রিতা, একটু পরে ঠাম্মি ওকে মাম্মার কাছে নিয়ে যাবে সেটার জন্যই গুছগাছ করে নিচ্ছে ওর ঠাম্মি।
-(ঠাম্মিকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাধের কাছে ঝুলে থাকে) আচ্ছা ঠাম্মি আমরা ভাই আনতে যাবো তাই না।
-হুম, আমার সোনা মনির তো একটা ভাই চাই তাই না।
-কিন্তু বাবা তো বলে আমার জন্য বোন আনবে।
-ও তোমার সাথে দুষ্টুমি করে, আমি বাবুকে তোমার সামনে আচ্ছা করে বকে দেব ঠিক আছে। মাম্মা বলেছো তো রদ্রিতার জন্য ভাই নিয়ে আসবে, তুমি যাও পিসিমনি কে ডেকে নিয়ে আসো।
অঞ্জলি দেবী বাকিসব গুছিয়ে নিয়ে রুদ্রকে ডাকতে যায়, খানিক বাদেই রদ্রিতা ওর বাবা ঠাম্মি আর পিসির সাথে গাড়িতে করে হাসপাতালে দিকে রওনা দেয়। রাইয়ের সাথে হাসপাতালে আগে থেকেই তনু আর ওর মা ছিল, আজ ওর ডেলেভারীর তারিখ ঘন্টাখানেক পরেই ওকে নিয়ে যাবে ওটি তে। মিনিট পনেরোর মাঝেই রুদ্ররা হাসপাতালে পৌঁছে যায়, রদ্রিতা কেবিনের দরজা ঢেলে দৌড়ে মায়ের কাছে চলে আসে।
-(রাইকে জড়িয়ে ধরে) মাম্মা তুমি কিন্তু বলেছো আমার ভাই হবে মনে থাকে যেন, বাবা তো বলে আমার নাকি বোন হবে। ভাই না হলে আমি কিন্তু কারও সাথে কথা বলবো না (ঠিক মায়ের মত অভিমানে গাল ফুলিয়ে রাখে রদ্রিতা, দেখতেও একদম মায়ের কার্বন কপি চোখ মুখ সবকিছু রাইয়ের মত, মায়ের মতই ঘন লম্বা ঘন চুলও হয়েছে)
-(মেয়েকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে লম্বা ঝুঁটি করা চুলে হাত বুলিয়ে) সোনা মা আমার তোমার মাম্মা তোমাকে কথা দিয়েছে তো নাকি। (রাগী চোখে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে) তোমার বাবার তো কয়েকদিন ধরে পাখা গজিয়েছে আমি বাসায় যাই তারপর ডানা গুলো ছেটে দেব(রুদ্র মুখ কাচুমাচু করে এক কোনে দাড়িয়ে থাকে)
-রুদ্র দা তুমি কি এখনো দিদি কে ভয় পাও নাকি (তনু খিলখিল করে হাসতে থাকে, দেবীকা দেবী পাশ থেকে মেয়েকে ধমক দেয়)
এর মাঝেই নার্স এসে রাইকে নিয়ে যাবার তোড়জোড় শুরু করে।
-আমার না খুব ভয় করছে কেমন যেন অস্থির লাগছে হাত পা কেমন ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, যদি আমার কিছু হয়ে যায় তাহলে আমার ছেলে মেয়ে গুলোকে তোমরা দেখে রাখবে তো।
-(পাশ থেকে অঞ্জলি দেবী হালকা ধমকের সুরে) তোর ভাব দেখে তো মনে হচ্ছে এই প্রথম মা হবি তুই? তোর যে আরেকটা মেয়ে আছে সেটা কেউ বলবে তোর হাবভাব দেখে! কিচ্ছু হবে না কোন টেনশন করিস না ভগবানের নাম স্মরন করতে থাক সবকিছু ঠিক মতই হবে।
সবাই ওটির সামনে অপেক্ষা করছে, এর মাঝেই বিজয় চৌধুরী আর অবিনাশ বাবুও চলে এসেছে।
-(বিজয় চৌধুরী রদ্রিতার দিকে এগিয়ে এসে) কই দেখি আমার ছোট গিন্নী টা কই!
-(রদ্রিতা জিভ বের করে ভেংচি কাটে) এহহ আমার বয়েই গেছে তোমার মত বুড়ো কে বিয়ে করতে। আমার চকলেট এনেছো নাকি সেটা আগে দাও দেখি।
রদ্রিতার কথা শুনে বাকিরা সবাই হেসে উঠে, বিজয় চৌধুরী পকেট থেকে রদ্রিতার পছন্দের চকেলট বের করতেই হাত থেকে ছু দিয়ে নিয়ে যায়।
-ঐ তো পার্বন দা, মামা মামী এসে গেছে (বলেই করিডোর ধরে এগিয়ে আসা জয় পল্লবীদের দিকে ছুটতে থাকে রদ্রিতা, ওদের ছেলের নাম পার্বন)
মিনিট বিশেক পর ওদের হৈ-হুল্লোড়েরের মাঝেই নার্স বেড়িয়ে আসে হাতে তোয়ালে জড়ানো এক নতুন প্রাণ নিয়ে। সামনে অঞ্জলি দেবীর হাতে সদ্যোজাত শিশুটাকে তুলে দেয়
-ছেলে হয়েছে মিষ্টিমুখের ব্যবস্থা করুন। মা ছেলে দুজনেই সুস্থ আছে।
রদ্রিতা ছুটে আসে ওর ভাইকে দেখার জন্য, রুদ্র ওকে কোলে তুলে মায়ের কাছে নিয়ে যায় ওকে দেখানোর জন্য। রদ্রিতা তোয়ালে তে জড়ানো চোখ বুজে থাকা ছোট্ট ছোট্ট আঙুলে মুঠো করে বাচ্চাটাকে দেখে খুশিতে কাঁদতে শুরু করে
-এটা আমার ভাই, আমার!
-হুম মামনি তোমার ভাই এবার খুশিতো (মেয়ের গালে পরম স্নেহে চুমো খায় রুদ্র)
-(বাচ্চাটাকে আবার কোলে নিয়ে নেয় নার্স) একটু পর বেডে দেয়া হবে সেখানে মন ভরে সবাই দেখবেন।
রাইকে কেবিনে দেবার পরই সবাই হুমড়ি খেয়ে পরে পরিবারের নতুন সদস্য কে দেখার জন্য৷ রুদ্র এগিয়ে গিয়ে রাইয়ের মাথার কাছে বসে আদরের পরশ বোলায়, রাই রুদ্রের জঙ্ঘায় মাথা হেলিয়ে দিয়ে আনন্দের অশ্রু ঝরাতে থাকে।
(সমাপ্ত)
The following 13 users Like nextpage's post:13 users Like nextpage's post
• Ari rox, Arpon Saha, auditore035, Baban, bad_boy, Boti babu, Bumba_1, Enora, Jibon Ahmed, MNHabib, Somnaath, tuhin009, অভিমানী হিংস্র প্রেমিক।
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,073 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
শেষ হলো এতদিনের মিষ্টি একটা গল্প। হ্যা শেষের ওই ধাক্কাটা দুঃখের ছিল বটে কিন্তু সেটা সাময়িক। কিন্তু এর ফলে রুদ্রের ভেতরের আরেক রূদ্র বোধহয় এতদিনে বিদায় নিলো। এবার সে পুরোপুরি মুক্ত। সেই ছোটবেলার বন্ধু আজ তার জীবন সাথী আর তাদের ছোট্ট দুটো পুচকে। আর পুরো পরিবারের ভালোবাসা নিয়ে তারা সুস্থ ভাবে আনন্দে বাঁচুক। এটাই চাইবো ♥️
তবে এই শেষ পর্ব পড়ার পর আবারো মনে হলো এমন একটা কাহিনী ব্যাভিচার এর গন্ডিতে থাকা উচিত নয়। হ্যা কিছু অংশ অবশ্যই আছে তবে তা কিছু মুহূর্তের লোভের ফলাফল। কিন্তু ভেতরের রূদ্র তো সারাজীবন একজনকেই চেয়ে এসেছে। তাকেই পেয়েছে। এরপরেও কিভাবে না একটা গল্প শুধুই যৌনতার আড়ালে থেকে যাবে। যেখানে ভালোবাসা দিয়ে ঘেরা প্রাচীর এদের চারিদিকে।
অসাধারণ অসাধারণ ♥️
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(27-09-2022, 10:58 PM)Baban Wrote: শেষ হলো এতদিনের মিষ্টি একটা গল্প। হ্যা শেষের ওই ধাক্কাটা দুঃখের ছিল বটে কিন্তু সেটা সাময়িক। কিন্তু এর ফলে রুদ্রের ভেতরের আরেক রূদ্র বোধহয় এতদিনে বিদায় নিলো। এবার সে পুরোপুরি মুক্ত। সেই ছোটবেলার বন্ধু আজ তার জীবন সাথী আর তাদের ছোট্ট দুটো পুচকে। আর পুরো পরিবারের ভালোবাসা নিয়ে তারা সুস্থ ভাবে আনন্দে বাঁচুক। এটাই চাইবো ♥️
তবে এই শেষ পর্ব পড়ার পর আবারো মনে হলো এমন একটা কাহিনী ব্যাভিচার এর গন্ডিতে থাকা উচিত নয়। হ্যা কিছু অংশ অবশ্যই আছে তবে তা কিছু মুহূর্তের লোভের ফলাফল। কিন্তু ভেতরের রূদ্র তো সারাজীবন একজনকেই চেয়ে এসেছে। তাকেই পেয়েছে। এরপরেও কিভাবে না একটা গল্প শুধুই যৌনতার আড়ালে থেকে যাবে। যেখানে ভালোবাসা দিয়ে ঘেরা প্রাচীর এদের চারিদিকে।
অসাধারণ অসাধারণ ♥️
প্রিফিক্স টা সরিয়ে নিলাম। এটা এভাবেই থাক।
ধন্যবাদ দাদা সেই প্রথম দিন থেকে সাথে থাকার জন্য প্রতিটা পদক্ষেপ উৎসাহ অনুপ্রেরণা আর পথ দেখাবার জন্য। তোমরা না থাকলে এত গুলো পর্ব কোনভাবেই লেখা হতো না। তোমরাই আমার লেখার শক্তি চিন্তাভাবনার প্রভাবক।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 250
Threads: 0
Likes Received: 197 in 172 posts
Likes Given: 340
Joined: May 2022
Reputation:
11
Excellent ending dada
Next story er opekkhai thakbo
Posts: 784
Threads: 0
Likes Received: 350 in 286 posts
Likes Given: 1,597
Joined: Feb 2022
Reputation:
15
আহহহ,দাদা আপনার গল্প আর আপনাকে অনেক মিস করবো।।।অসাধারণ সমাপ্তি।।।
Posts: 252
Threads: 0
Likes Received: 184 in 162 posts
Likes Given: 132
Joined: Dec 2021
Reputation:
0
শুভ শারদীয়া লেখক মহাশয়।
পূজোতে আপনার গল্পের আশা রাখি।
Posts: 1,156
Threads: 0
Likes Received: 1,384 in 928 posts
Likes Given: 3,570
Joined: Apr 2022
Reputation:
146
গল্প অনেকেই লেখে কিন্তু সবাই ঠিক ভাবে শেষ করতে পারে না। লেখক ভাইকে অনেক ধন্যবাদ এত মিষ্টি একটা ভালোবাসার গল্প আমাদের কাছে উপস্থাপন করার জন্য আগামী উপন্যাসের জন্য অগ্রিম শুভেচ্ছা জানিয়ে রাখলাম ভাই। আসা রাখি তাড়াতাড়ি আবার দেখা হবে ভালো থেকো।
আমাকে আমার মত থাকতে দাও
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(27-09-2022, 11:41 PM)Jibon Ahmed Wrote: Excellent ending dada
Next story er opekkhai thakbo
ধন্যবাদ দাদা।
শুরু থেকেই পাশে থেকে উৎসাহ দেবার জন্য আন্তরিক ভাবে কৃতজ্ঞ। ভবিষ্যতেও এভাবেই পাশে থাকবেন।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
•
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(28-09-2022, 01:16 AM)Arpon Saha Wrote: শুভ শারদীয়া লেখক মহাশয়।
পূজোতে আপনার গল্পের আশা রাখি।
পূজোর দায়িত্ব আছে নিজের কাঁধ। এরপরও চেষ্টা করবো পূজায় নতুন কিছু নিয়ে আসতে।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
•
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
(28-09-2022, 06:45 AM)Boti babu Wrote: গল্প অনেকেই লেখে কিন্তু সবাই ঠিক ভাবে শেষ করতে পারে না। লেখক ভাইকে অনেক ধন্যবাদ এত মিষ্টি একটা ভালোবাসার গল্প আমাদের কাছে উপস্থাপন করার জন্য আগামী উপন্যাসের জন্য অগ্রিম শুভেচ্ছা জানিয়ে রাখলাম ভাই। আসা রাখি তাড়াতাড়ি আবার দেখা হবে ভালো থেকো।
দাদা তোমাদেরও অনেক অনেক ধন্যবাদ এভাবে উৎসাহ অনুপ্রেরণা দেবার জন্য।
তোমরা ছিলে বলেই শেষ পর্যন্ত আসতে পেরেছি।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Posts: 1,375
Threads: 2
Likes Received: 1,407 in 974 posts
Likes Given: 1,714
Joined: Mar 2022
Reputation:
81
28-09-2022, 09:40 PM
(This post was last modified: 28-09-2022, 09:43 PM by Somnaath. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো একটি গল্প মধুরেণ সমাপয়েৎ মধ্যে দিয়ে একটি অসাধারণ পরিসমাপ্তি। অনেকদিন মনে থাকবে এই উপন্যাসটি
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
•
|