Thread Rating:
  • 83 Vote(s) - 3.4 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
-মন্দের ভালো (সমাপ্ত)
(06-09-2022, 09:49 PM)Bumba_1 Wrote:  বিয়ের পর প্রথম অফিস গেলো কপোত-কপোতী , একদম পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে পয়েন্ট ধরে ধরে প্রতিটি ঘটনা প্রবাহের বর্ণনা বেশ ভালই লাগলো। তবে আসল খেলা আজ হলো না, অর্থাৎ রুদ্র কি জানাবে অতীতের ব্যাপারে তার প্রিয়তমাকে .. এটা শোনার জন্য পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়।

ওসব খেলায় আড়ি পাতা নিষেধ  Smile Smile

বলতে তো হবেই। নইলে হারাতে হবে
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(06-09-2022, 09:54 PM)Baban Wrote: বাহ্ একটা গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবান পর্ব উপহার দিলে আজকে। মিষ্টি প্রেমের আর দুস্টুমির অংশ ছাড়াও ছেলেটার ভেতরের লড়াই এর ফল বাইরেও প্রকাশিত হচ্ছে একটু একটু। আমার মতে এবার সব বলে দেয়াই মঙ্গল। অন্তত হালকা লাগবে অনেকটা। আর ওপর জন যেমন বালিকা হয়ে উঠতে পারে তেমনি তার মনের জোরও অনেক।
তাহলে কি শেষ পর্ব আসন্ন?

আমার মতেও এবার বলে দেয়াই ভালো, যা হয় হবে।

নারী বলে কথা মহামায়া কখনো মাতৃরূপে আবার কখনো শক্তি রূপে।
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
Like Reply
(06-09-2022, 10:31 PM)Somnaath Wrote: খুব ভালো লাগলো আজকের পর্ব  clps পরের পর্বের জন্য মুখিয়ে আছি। বেশ বোঝা যাচ্ছে অন্তিম পর্ব আসন্ন।

অন্তিমের দিকেই এগোচ্ছি...
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
Like Reply
বাহ!! অসাধারণ আপডেট
[+] 1 user Likes Jibon Ahmed's post
Like Reply
নেক্সট আপডেট ১০ তারিখ এর আগে আসবে নাকি পরে?
[+] 1 user Likes Arpon Saha's post
Like Reply
(06-09-2022, 11:52 PM)Jibon Ahmed Wrote: বাহ!! অসাধারণ আপডেট

thanks
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
Like Reply
(07-09-2022, 10:25 AM)Arpon Saha Wrote: নেক্সট আপডেট ১০ তারিখ এর আগে আসবে নাকি পরে?

না ভাই, ১০ এর আগে সম্ভব না। 
অনেক কাজ জমে থাকে। তারপরও চেষ্টা করবো তাড়াতাড়ি দেবার।
কারণ পরবর্তী গল্পের ড্রাফট লেখা শেষ করেছি।
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
[+] 1 user Likes nextpage's post
Like Reply
Dada,update ar dilen na j?
[+] 1 user Likes Ari rox's post
Like Reply
(14-09-2022, 10:35 PM)Ari rox Wrote: Dada,update ar dilen na j?
দুঃখিত দাদা  Namaskar Namaskar
লেখালেখি বন্ধ হয়ে গেছে আপাতত, নতুন পর্ব লিখতেই বসি নাই।
লেখতে বসলে জানাবো।
ততদিন অন্য গল্প গুলো উপভোগ করুন।
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
[+] 1 user Likes nextpage's post
Like Reply
অন্য গল্প এই সাইটে কেউ তেমন লিখে নাহ
[+] 1 user Likes Ari rox's post
Like Reply
10 তারিখ কোন মাসের এটা যদি একটু বলে দাও
horseride আমাকে আমার মত থাকতে দাও horseride
[+] 1 user Likes Boti babu's post
Like Reply
Dada golpo ta ei vabe chere deben na....
please abar likhun.
[+] 1 user Likes pmdomg44's post
Like Reply
গল্পের লেখক হারিয়ে গিয়েছে
[+] 1 user Likes Arpon Saha's post
Like Reply
(15-09-2022, 12:03 AM)Ari rox Wrote: অন্য গল্প এই সাইটে কেউ তেমন লিখে নাহ

আরে নাহ দাদা অনেক গুলো ভালো গল্প পোষ্ট হচ্ছে নিয়মিত
(15-09-2022, 12:35 AM)Boti babu Wrote: 10 তারিখ কোন মাসের এটা যদি একটু বলে দাও

এই মাসের ১০ তারিখ কথা ছিল কিন্তু মানসিক অবসাদে সব এলোমেলো, দেখি সামনের সপ্তাহের মাঝেই আপডেট দেব।
(15-09-2022, 01:11 AM)pmdomg44 Wrote: Dada golpo ta ei vabe chere deben na....
please abar likhun.

আমারও অসমাপ্ত রাখতে ইচ্ছে করছে না।
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
[+] 2 users Like nextpage's post
Like Reply
(15-09-2022, 02:21 AM)Arpon Saha Wrote: গল্পের লেখক হারিয়ে গিয়েছে

না দাদা আছি....
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
[+] 1 user Likes nextpage's post
Like Reply
Osadharon golpo...
[+] 1 user Likes Lucca's post
Like Reply

কাল থেকে মনে মনে ভগবান কে ডেকে চলেছে একটাই প্রার্থনা সব যেন ভালই ভালই মিটে যায়, এত বছরেও মনে হয় আজকের মত ভগবান কে কখনো স্মরন করে নি রুদ্র কিন্তু আজ এহেন পরিস্থিতি তে নিজের উপর আর ভরসা করার মত শক্ত ভিত পাচ্ছে না শেষমেষ সেই অনাদির আদিই যেন শেষ সম্বল।






অন্তিমের দিকে হাঁটতে থাকা গল্পে এবার কি রুদ্র পারবে রাইয়ের কাছে নিজের জীবনের অন্ধকার অংশটা সামনে আনতে। আমাদের আশা সে পারবে ভালবাসা কে জিততে হলে নিজেকে হারতে শিখতে হবে। বাকিটা জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে নতুন পর্বের। আগামীকাল আসছে নতুন পর্ব - স্বীকার
[+] 4 users Like nextpage's post
Like Reply
অপেক্ষায় থাকব
[+] 1 user Likes Jibon Ahmed's post
Like Reply
(17-09-2022, 11:20 PM)Jibon Ahmed Wrote: অপেক্ষায় থাকব

আসছে কাল রাতে
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
Like Reply
স্বীকার





সকালের নাস্তার টেবিলে পাশাপাশি দুজন মানুষ বসে আছে দুটো শরীরের শারীরিক দূরত্ব হয়তো কয়েক ইঞ্চির কিন্তু গতকাল থেকে ওদের মানসিক দূরত্ব টা অনেক দূর গড়িয়েছে। খাবার ফাঁকে দুজনেই দুজনার দিকে বারবার রহস্যময় দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। একজনের চোখে হাজারো প্রশ্নের খেলা করছে তো আরেকজনের চোখে আত্মসমর্পনের অঙ্গীকার। নিয়মরক্ষার মত করে দুজনকেই বাকিদের সামনে নাস্তা করার অভিনয় টা চালিয়ে যেতে হচ্ছে, নইলে আবার অনেক প্রশ্নের মোকাবিলা করতে হবে যেটার জন্য দুজনের কেউই মানসিক ভাবে হয়তো সেই জায়গায় নেই। তবে মানসিক ভাবে আজ রুদ্র দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে করেই হোক আজ সবটাই শেষ করতে হবে নইলে নিজের সাথে নিজের লড়াইটা আর চালিয়ে যেতে পারছে না। এখানে শুধু নিজে হলে হয়তো জীবনটাকে বয়ে যেতে দিতো কিন্তু এখন তো ও আর একা নেই রাইয়ের জীবনের সাথে নিজে জড়িয়ে আছে আর সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষের কাছে নিজেকে বেশিদিন আড়াল করে রাখা মানে সেই ভালবাসাকে ছোট করা ভালবাসার অস্তিত্বে আঘাত করা। নিজের ভালোবাসার মানুষ কাছের মানুষের চোখের সাথে চোখ মেলাতে না পারাটা কতটা কষ্টদায়ক আর অস্বস্তিকর সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে রুদ্র। কষ্ট টা বেড়ে আরও দ্বিগুন হয় যখন দেখতে পারে ওর এভাবে মুষড়ে পড়তে দেখে রাই বিমর্ষ হয়ে থাকছে রুদ্রের মলীন মুখ দেখে আরও বেশি কষ্ট পাচ্ছে, যেখানে ওর তো এই কষ্টের ভাগিদার হবার কথাই না। রুদ্র মনে মনে ভাবছে এইতো আর কিছুক্ষণ এর পর মন খুলে সবটা বলে দিবে রাই কে, রাই কেমন করে সবটা নেয় সেটা হয়তো ওর জানা নেই তবে ওর ভালবাসার উপর যে আস্থা আছে সেটার জোরেই আজ রুদ্র কে সামনের পথে এগোতে হবে। সকাল থেকে মনে মনে ভগবান কে ডেকে চলেছে একটাই প্রার্থনা সব যেন ভালই ভালই মিটে যায়, এত বছরেও মনে হয় আজকের মত ভগবান কে কখনো স্মরন করে নি রুদ্র কিন্তু আজ এহেন পরিস্থিতি তে নিজের উপর আর ভরসা করার মত শক্ত ভিত পাচ্ছে না শেষমেষ সেই অনাদির আদিই যেন শেষ সম্বল।


অফিস থেকে আগেই ছুটি নেয়া ছিল দুজনেরই। নাস্তা শেষ করেই রাই বাইরে বাইকের কাছে অপেক্ষা করছে রুদ্র এখনো বের হয় নি, রাইয়ের এখনো জানা নেই ওরা কোথায় যাবে কাল একবার জিজ্ঞেস করেছিল রুদ্র বলতে চায় নি আর রাই ও আর জানতে চায় নি। রুদ্রের উপর ভরসা আছে তাহলে ও যেখানেই নিয়ে যাক না কেন চোখ বন্ধ করে ওর সাথে ঠিক চলে যাবে শুধু ওর সাথে থাকতে পারলেই হলো আর তো কিছু চায় না রাই, ও তো সবসময় চেয়ে এসেছে রুদ্রের পাশে থাকতে। রুদ্রের মনে কি চলছে সেটা এখনো বুঝে উঠতে পারছে না ও কি বলার জন্য ওকে অপেক্ষা করাচ্ছে সেটা জানার জন্য রাইয়ের মন উদগ্রীব হয়ে আছে। রুদ্র কিছু একটা নিয়ে কষ্ট পাচ্ছে নিজেকে ভেতরে ভেতরে ক্ষতবিক্ষত করছে সেটা আচ করতে পেরে রাইয়ের নিজের ভেতরের কষ্ট হচ্ছে বাড়ছে, নিজের কোন কিছুর জন্য কষ্ট পেলে হয়তো এতোটা পাত্তা দিতো না কিন্তু রুদ্রের কষ্টে থাকাটা কোন ভাবেই সহ্য করতে পারছে না সে। যাই কিছু হয়ে যাক না কেন ও কখনো রুদ্র কে কষ্ট পেতে দিবে না, ওর সমস্ত দুঃখ কষ্ট নিজের করে নিবে আর যাই হয়ে যাক না কেন রুদ্র পাশে থাকবে সবসময়।

রুদ্র কে আসতে দেখে বাইক থেকে নেমে দাঁড়ায় রাই, রুদ্রের হাতে দুটো হেলমেট দেখে বুঝতে পারে রাইয়ের জন্যও একটা হেলমেট নিয়ে এসেছে কিন্তু রাইয়ের হেলমেট এ কেমন দমবন্ধ দমবন্ধ লাগে। এর চেয়ে হেলমেট ছাড়া বাতাসের ঝাপটা টা যখন মুখে এসে লাগে তখন ওর অনেক ভালো লাগে, নিজেকে মনে হয় বাতাসে উড়ে চলা কোন পাখির মত। রুদ্র নিজের হেলমেট টা বাইকের উপর রেখে অন্য হেলমেট টা রাই কে পড়িয়ে দিতে এগিয়ে যায়

-(বাচ্চাদের মত বায়না ধরার ভাব করে)আমি হেলমেট পড়বো না।

-সেদিন আমি হেলমেট ছাড়া গিয়েছিলাম বলে তুমি কি কি বলেছিলে মনে আছে (দুচোখ বড় বড় করে রুদ্র উত্তর করে)

-আমার কেমন দমবন্ধ দমবন্ধ লাগে যে, আচ্ছা বড় রাস্তা উঠে হেলমেট পড়ে নেব ঠিক আছে (নাকি সুরের রাইয়ের আবদারে রুদ্রের কিছুই করার থাকে না, শুধু হাসি মুখে মাথা নেড়ে সায় দেয়)

-মনে থাকে যেন, পরে আবার নতুন বায়না না ধরা হয় যেন (বাইক স্টার্ট দিতে দিতে রুদ্র বলে উঠে)

রাই উঠে বসতেই রুদ্র বাইক চালাতে শুরু করে, গলির পথ ছেড়ে বের হতেই রাই পেছন থেকে দুহাতে রুদ্রের বুকের কাছে দুহাত চেপে ওকে জড়িয়ে ধরে। বাইকের গতি বাড়তেই বাতাসের ঝাপটা এসে রাইয়ের মুখে লাগে, কপালের দিকে সাপের মত বেয়ে থাকা কয়েক গোছা চুল দুর্দান্ত প্রতাপের সাথে উড়ছে। বাতাসের সাথে উড়তে থাকা ধুলো চোখে লাগতেই নিজের মুখ আড়াল করে নেয় রাই আর রুদ্রের পিঠে মাথা গুজে দেয়। রাইয়ের এমন অবস্থা দেখে রুদ্রের শুষ্ক মুখেও হাসির বলি রেখা দেখা দেয়, তবে এমন করে জড়িয়ে ধরে থাকায় নিজের কাছেও ভালো লাগে মনে সাহস আর ভরসা দুটোই জাগে। রুদ্রের গায়ের কড়া বডি স্প্রের গন্ধ টা রাইয়ের নাকে লাগছে, এমনিতে উগ্র গন্ধ অসহ্য লাগলেও রুদ্রের গায়ের সাথে মিশে যাওয়া স্প্রের কড়া গন্ধ টাও ওর কাছে ভালো লাগে। নাক ডুবিয়ে দিতে ইচ্ছে হয় ওর পেটানো শরীর মোলায়েম চামড়ায়। দুচোখ বন্ধ করে নিজেকে এলিয়ে দেয় রুদ্রের শরীরে ইচ্ছে জাগে এমন করে সারাক্ষণ ওর সাথে মিশে থাকতে। সুখের আবেশে নিজের মুখটা ঘসতে থাকে রুদ্রের পিঠে

-(রাইয়ের আহলাদি আচরণে মনে সুখের জোয়ার বইলেও শরীরে কাতুকুতু লাগতে থাকে) এমন করলে বাইক চালাবো কেমন করে? বাচ্চাদের মত এ কি শুরু করেছো।

-বারে আমি কি করেছি? তুমি তোমার মত চালাও না, আমার সবটাতেই তুমি বাধ সাধো কেন। থাক আর ডিস্টার্ব করবো না (মেকি রাগে সুর গলায় কিন্তু আগের মতই রুদ্র কে জড়িয়ে ধরে রাখে)

-(বাইকটা হালকা স্লো করে একপাশে দাড় করায়) কথায় কথায় রাগ করো কেন হুম,(রাইয়ের দুহাত টেনে উপরের দিকে নিয়ে নিজের বুকের কাছে চেপে ধরে) আমি আর কিছু বলবো না তোমার যেমন খুশি তেমন করে থাকো ঠিক আছে তো (বা হাতে রাইয়ের গালটা টেনে দেয়, সাথে সাথেই রাইয়ের গলায় হাসির আওয়াজ)

বাইক আবার চলতে শুরু করে, শহরের রাস্তা ছেড়ে হাইওয়েতে বাইক উঠে গেছে। ফাঁকা লেন ধরে বাইকের গতি বাড়ে সামনে থেকে আসা হাওয়ার জোরে রাই চুল উড়ছে। রুদ্রের পিঠে মাথা পেতে সেই আগের মতই জড়িয়ে ধরে আছে। ওর হাতের পাতা টা রুদ্রের হৃদপিণ্ডের প্রতিটা লাবডাব অনুভব করছে। প্রিয়জনের সান্নিধ্য পাবার মত অপার্থিব সুখের আবেশে রাইয়ের চোখ বুজে আসে, আজ এখন এই মূহুর্ত টা ওর কাছে অনেক দামি প্রতিটা সেকেন্ড মূল্যবান। আর কিছুটা সময় তার পর এমন কোন মূহুর্ত এসে উপস্থিত হতে পারে যেটা হয়তো কখনো কল্পনাতেও রাখে নি সেটা ভালো বা মন্দ দুটোই হতে পারে কিন্তু আপাতত রাই মন্দ কিছু ভাবতে রাজিই নয়। ওর মন এখনো কোন অলীক সুখের প্রাপ্তির আশায় বুক বেঁধে বসে আছে। ভেতরের অস্থিরতা টাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে ভালো কিছু আসবে সেটার ভাবনা থেকে, চঞ্চল মনে ভরসার চর জাগছে এই ভেবে হয়তো সবটাই একটা সারপ্রাইজের অংশ রুদ্র হয়তো ওকে কোন সারপ্রাইজ দিবে তাই এতো সব ঘটনা ঘটছে। মনে প্রাণে রাই শুধু এটাই ভাবছে ও যেমন করে ভাবছে তেমনটাই যেন হয় সবকিছু যেন ভালো থাকে নইলে ও কেমন করে সবকিছু সামাল দিবে সেটা জানা নেই। রাই যে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েছে রুদ্রের প্রেমে, কিন্তু ও তো দুর্বল হতে চায় নি ওতো সবসময় চেয়ে এসেছে ভালোবাসা দিয়ে রুদ্রের শক্তি হয়ে পাশে থাকতে ওর দুর্বলতা হয়ে নয়। তবে আজ মন এমন অশান্ত উচাটন হয়ে উঠেছে কেন? কোনভাবেই যে শান্ত করতে পারছে না। রাইয়ের দুচোখ ভিজে উঠেছে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুবিন্দু চোখের কোনে জমা হয়ে রুদ্রের শার্ট ভিজিয়ে দিচ্ছে একটু একটু করে। রাই দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যে করেই হোক নিজেকে দুর্বল হতে দিলে চলবে না, নইলে যে ওর ভেঙে পড়া দেখে রুদ্রের কষ্টের বুঝা কমার বদলে বেড়েই চলবে। কিন্তু রাই তো রুদ্রের কষ্টের বুঝা বাড়াতে চায় না ও চায় রুদ্রেে কষ্টের ভাগিদার হতে ওর যন্ত্রণা লাঘব করতে।

এখন রাই যেমন বাচ্চা সুলভ মনে রুদ্র কে জড়িয়ে ধরে মাথা ঠেকিয়ে রেখে গতকাল রাতে রুদ্রও ঠিক ওমন করেই রাইকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল পুরোটা সময়।




জানালার কাছে দাড়িয়ে থাকা রুদ্রের বা হাতের বাজু জাপটে ধরে রাখা রাইয়ের মাথা রুদ্রের কাঁধে হেলে পড়েছে। কারও মুখে কোন কথা নেই চুপচাপ দাড়িয়ে থাকা দুটো শরীর একে অন্যের সাথে মিশে আছে তবুও যেন অদৃশ্য কোন অক্ষরেখা ওদের দুভাগ করে দিয়ে গেছে। ক্ষাণিকটা সময়ের বিরতিতে দুজনেই দুজনার দিকে আড় চোখে চেয়ে থাকার চেষ্টায় আছে কিন্তু যখনি এক বিন্দুতে দুচোখের দৃষ্টি মিলে যাচ্ছে তখনি চোখ জোড়া উদভ্রান্ত পথিকের মত এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছে। একটু শান্ত হতেই আবার সেই পরম আকাঙ্ক্ষিত মুখটার দিকে ফিরে তাকাচ্ছে কিছু পাবার আশায় যেন অনেকদিনের অভুক্ত একটা প্রাণ একটু তৃষ্ণা মেটাতে তপ্ত মরুভূমির মরীচিকায় বারবার হারিয়ে যাচ্ছে তবুও আশা ছাড়ছে না এই হয়তো আরেকটু এগোলেই জমে থাকা ভালোবাসার সিন্ধু হতে ভরসা আর বিশ্বাস টুকু দুহাতে আজলা করে আকন্ঠ পান করে নেব। রাইয়ের স্থির চোখ রুদ্রের মুখে ফোটে উঠা ভয় আর অস্বস্তি টা পড়তে পারছে কিন্তু কেন এই ভয় কিসের জন্য এই ভয় সেটার উত্তর তো জানা নেই তার হয়তো জানবে কিন্তু সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। রাইয়ের যদি রুদ্রের ব্যাথার কারণ জানা থাকতো তবে হয়তো অনেক আগেই সেটার পথ্যের খোঁজ করে নিত।
ঘাড় ঘুরিয়ে রুদ্র রাইয়ের দিকে ফিরে তাকায়, রাইয়ের স্থির চোখে যে হাজারো প্রশ্নের আনাগোনা চলছে সেটা রুদ্রের জানা কিন্তু কেমন করে সেই প্রশ্নের উত্তর দিবে সেটা তো রুদ্রের জানা নেই। এমন এক জায়গায় এসে দাড়িয়ে আছে যেখান থেকে আর পিছু হাটার মত শক্তি সাহস বা মনোবল কোনটাই আর রুদ্রের আত্মায় অবশিষ্ট নেই। নিজে হেরে যাবে সেই ভয় আর রুদ্রের নেই কিন্তু রাই কে হারিয়ে ফেলতে পারে সেই ভয়ংকর বিভীষিকা ওর বুকের উপর চেপে বসে আছে সেটা যে একটু একটু করে বজ্রআঁটুনি তে ওর শ্বাসযন্ত্র বন্ধ করে দেবার পায়তারা করছে।

ডান হাতটা রাইয়ের গালের কাছে হালকা করে ছোঁয়াতেই রাইয়ের যেন ঘোর ভেঙে যায়, ঘাবড়ে যাওয়া চোখে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে। রুদ্র ছোট করে একটা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে

-কি হলো! কি ভাবছো ওমন করে?

-কই কিছু না তো ( নিজেকে একটু ধাতস্ত করে নেয় রাই) তোমার কাছে এমন করে থাকতে ভালো লাগে, তোমার লাগে না?

-পাগলি একটা লাগবে না কেন, আমারও তো ভালো লাগে, ইচ্ছে করে সারাক্ষণ তোমার কাছেই এমন করে থাকি।

-তাহলে এক কাজ করি চলো, আমরা দুজন দূরে কোথায় চলে যাই সেখানে তুমি আর আমি সারাদিন এমন করে একজন আরেকজন কে জড়িয়ে ধরে বসে থাকবো। অনেক ভালো হবে তাই না।

(অঞ্জলি দেবীর গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, রাই কে ডাকছে হয়তো কোন কারণে)
-(রুদ্র একটু স্ফীত হাসি হেসে) সে তো খুব ভালোই হতো কিন্তু তোমার শশুর শাশুড়ি যেতে দেয় কি না সেটা আগে দেখো। প্ল্যান এর নাম করতেই তোমার ডাক পড়ে গেছে।

-ও কিছু না, আমি ঠিক মামনি কে ম্যানেজ করে নেব। তোমার সময় হবে কিনা সেটা দেখো আগে ( রুদ্রের বুকের কাছে ছোট্ট করে চিমটি কাটে) যাই মামনি কেন ডাকলো দেখে আসি, তোমার কিছু লাগবে কি? লাগলে বলো( রুদ্রের হাতের কব্জিতে ছোট্ট করে চুমু খায়)

-ফাঁক পেলে তোমার হাতে এক কাপ চা দিয়ে যেও তাতেই হবে।

রাই মাথা নাড়িয়ে জবাব দিতে দিতে রুম থেকে বেড়িয়ে যায় আর পেছন থেকে রাইয়ের যাওয়ার পথটার দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ ওখানে দাড়িয়ে থেকে রুদ্রের ভালো লাগে না, টেবিল থেকে একটা বই তুলে নিয়ে ছুটকির রুমের দিকে চলে যায়। খানিক বাদে রাই দু কাপ চা নিয়ে ছুটকির রুমে গিয়ে দিয়ে আসে, ছুটকির মন ভার হয়ে আছে দাদার কাছে আজ পড়া দিতে হবে নইলে বকা খাওয়া নিশ্চিত। ছুটকির সাথে রাইয়ের চোখে চোখে কথা হয়ে যায়

-ওকে কিন্তু বেশি বকাঝকা করো না, কোন পড়া না পাড়লে আমি না হয় ওকে দেখিয়ে দেব নে পরে (ছুটকির দিকে ইশারা করে) কিরে কোন বিষয়ে প্রবলেম থাকলে আমাকে দেখাস আমি সলভ করতে সাহায্য করবো তোকে।

-বাহ ভালো ভালো! কেস হবার আগেই উকিল হাজির (রাইয়ের দিকে ফিরে হাত জোড় করে) মাই লর্ড আপনার চিন্তার কোন কারণ নেই আপনার মক্কেলের উপযুক্ত যত্নআত্তিই হবে।

রুদ্রের কথা শেষ হতেই হাসির রুল পড়ে যায় ছুটকির রুমে সেই হাসির তোড়ে কিছুটা হলেও রাই রুদ্রের মাঝের গুমোট ভাবটা কেটে যায়।

রাতে খাওয়া শেষে রাই ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে বসে চুল বাঁধছে বসে বসে, রুদ্র একটু বাসার বাইরে গিয়েছিল কি একটা দরকারে মাত্রই ফিরে এসেছে। আয়নায় ভেসে উঠা প্রতিবিম্বে রাই দেখছে রুদ্রকে, আধাশোয়া অবস্থায় মোবাইলে কিছু একটা করছে। ওর মুখটার দিকে আবেশিত ভাব নিয়ে রাই তাকিয়ে আছে আর রুদ্রের ঐরাতের করা দুষ্টুমি আর ভালবাসার মূহুর্ত গুলোর কথা মনে মনে ভাবছে। প্রতিটা স্পর্শ প্রতিটা চুম্বন উষ্ণতার আলিঙ্গনে লেগে থাকা সুখানুভূতির সেই মূহুর্ত গুলো আরেকবার চোখের সামনে ভেসে উঠতেই সেটার আপেক্ষিকতার ছোঁয়াতে উজ্জ্বলতার অাভা রাইয়ের মুখ জুড়ে ছড়িয়ে পরে। ওর চোখে মুখে অন্যরকম এক দ্যুতি ছড়াচ্ছে সেটা আয়নার প্রতিফলিত হয়ে নিজের চোখে ধরা দিতেই লজ্জায় নিজ দৃষ্টি নিচে নামিয়ে আনে। এক নারীর জীবনের অন্যতম এক অধ্যায়ে তার মনের মানুষের সান্নিধ্য পাওয়ার সেই স্বর্গীয় সুখের স্মৃতিতে ঠোঁটের কোনে হাসি গুলো ছোট ছোট ঠেউ এর মতই আছড়ে পড়তে থাকে। আর কিছুক্ষণ আয়নার সামনে বসে থেকে বাকি কাজ সেরে বিছানায় এসে রুদ্রের পাশে ওর দিকে কাত হয়ে শুয়ে পড়ে। রাইয়ের দিকে তাকিয়ে মৃদুছন্দে হাসি হেসে আধশোয়া থেকে রাইয়ের পাশে শুয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে রুদ্র। রুদ্র হাত বাড়িয়ে পরম যত্নে রাইয়ের একটা হাত নিজের দিকে টেনে এনে সেটার তালুতে মাথা রাখে

-তুমি কখনও আমাকে ছেড়ে যাবে নাতো? (রুদ্রের ভেতরের চাপা কান্না টা ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে, কোন মতে সেটা আটকাতে পারলেও গলার স্বরে জড়িয়ে যাওয়া আকুলতার সাথে চোখগুলো খানিকটা ভিজেই উঠে)

-(রুদ্রের কাতর কন্ঠটা রাইয়ের কোমল হৃদয়ে তীরের মতই বিদ্ধ হয়, জড়িয়ে যাওয়া গলার স্বর গলিত লাভার মত রাইয়ের কানে আছড়ে পড়ছে। রাই হাত বাড়িয়ে রুদ্রকে জড়িয়ে ধরে ওর মাথাটা নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে দিয়ে পাগলের মত ওর কপালে চুমু খেতে থাকে) তোমার কেন মনে হয় আমি তোমার কাছে থাকবো না? আমি তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাবো হ্যাঁ এমন কথা বলো কেন তুমি বারবার। তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে ভালোবাসি না?

-(রাইয়ের কোমল বুকে লেপ্টে থাকা মুখটা একটু সরিয়ে নিয়ে) না না সোনা, আমার ভয় তো আমাকে নিয়ে। আমি যদি তোমাকে ধরে রাখতে না পারি, যদি কোন কারণে তোমার হাতটা ছেড়ে দেই। তখন তুমি আমাকে আগলে রাখবে তো!

-(দুহাতে আলতোভাবে রুদ্রের গলা টিপে ধরে) স্বপ্নেও কখনো যদি আমাকে ছাড়ার কথা ভাবো তাহলে স্বপ্নে গিয়েই তোমাকে আমি মেরে তারপর আমি নিজেও মরে যাবো বলে দিলাম। যাই কিছু হয়ে যাক না কেন আমি তোমার আর তুমি আমার হাত টা কখনো ছাড়বে না। আর কোন কথা নয় চুপ করে শুয়ে থাকো, কথা বলতে দিলেই আবার আবোলতাবোল বলতে শুরু করবে।

রাই আরেকটু সরে আসে রুদ্রের দিকে, রুদ্র আর কথা বাড়ায় না বাধ্য ছেলের মত চুপটি করে রাইয়ের বুকে মাথা গুজে ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকে। রাই আলতো হাতে রুদ্রের চুলে বিলিকাটতে থাকে আর অন্য হাত রুদ্র কে জড়িয়ে ধরে রাখে নিজের সাথে।
অন্যসময় হলে হয়তো এমন করে একে অন্যের সাথে লেপ্টে থাকা দুটি বিপরীত লিঙ্গের শরীরের হয়তো উত্তেজনায় চড়তে থাকা পারদে রক্তের গতি বেড়ে যেত। হাত পা গুলো চঞ্চল হয়ে উঠতো মিলন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে, শুষ্ক ঠোঁট গুলো হাপিত্যেশ করতো নিজেদের প্রেয়সীর প্রেমরসে সিক্ত করে নিতে। নিজের স্তন ভাগের কাছে মিশে যাওয়া প্রিয়তমের উষ্ণ নিঃশ্বাসে শরীরকে জাগাতে শুরু করতো কিংবা প্রেয়সীর কোমল স্তনের স্পর্শ পুরুষ রক্তে কামনার আগুন ধরিয়ে দিতো তৎক্ষনাৎ, শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে কামাভাব দৌড়াতে শুরু করতো কিন্তু এখানে দুটি দেহ নয় দুটি প্রাণ একে অন্যকে আলিঙ্গনে বেঁধে রেখেছে। নিজেদের প্রতিটা শ্বাস নিশ্বাস একে অন্যের সাথে ভাগ করে নিচ্ছে, হৃদপিণ্ডের ছন্দিত কার্যের মূহুর্ত গুলো উপভোগ করছে অনুভব করছে। নিজেদের আরও বেশি করে জেনে নিচ্ছে বুঝে নিচ্ছে, প্রতিটা স্পর্শের মাহাত্ম্যে নিজেদের বুদ করে রেখেছে। শান্ত আবেশে দুটো প্রেম প্লাবনে প্লাবিত হৃদয়ে সুখানুভূতির সাথে আস্থার মেলবন্ধন গড়ছে। চারদেয়ালের নিস্তব্ধতার মাঝে দুটো প্রাণ অন্তরাত্মায় বিলীন হয়ে আছে অপ্রাকৃত প্রেমধারার মধুরতায়। ধীরে ধীরে দুজনেই ঘুমের দেশে হারাতে থাকে...


বাইকটা বড় রাস্তা ছেড়ে আরেকটা রাস্তা ধরতেই রাইয়ের কাছে জায়গা একটু চেনা চেনা লাগে। রুদ্রের পিঠ থেকে উঠিয়ে উৎসুক চোখে চারদিকে চেয়ে দেখে। এত বছরে অনেক কিছু পাল্টে গেছে আবার অনেক কিছু সেই আগের মতই আছে। যতটা পথ এগোচ্ছে ততটাই চেনা হয়ে উঠছে জায়গা টা, নিজের মুখ টা রুদ্রের কানের কাছে এগিয়ে নিয়ে

-আমরা কি গোপালপুর যাচ্ছি নাকি?

-(রুদ্র শুধু মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়)

রাই সেই চিনচেনা শৈশবের এলাকায় একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে। অনেক কিছু বদলে গেছে, রাস্তা টা অনেক বড় হয়েছে সেই সাথে গাড়ি চলাচলও বেড়েছে। বাজারের অনেক বড় বড় দোকান বসেছে কয়েকটা বহুতল ভবনও দাড়িয়ে গেছে। আরেকটু এগোতেই সেই স্কুলটা চোখে পড়ে আগের ভবনের পাশে নতুন ভবন উঠেছে, সীমানা দেয়াল হয়েছে আর তাতে নানা রঙের ছোঁয়া। স্কুলের উত্তর পাশের বিশাল আমগাছটা এখনো আছে পাশেই জামরুল গাছটাও আছে দেখা যায়। স্কুলের গেটের বাইরের কয়েকটা ঝালমুড়ি আর চটপটি ফুচকা এসবের দোকান দেখা যাচ্ছে কিন্তু উৎসুক চোখ যেই মানুষটাকে ওখানে খুঁজছিল তাকে দেখতে পায় নি। পুরনো স্মৃতি গুলো মনে করতে করতে মুখ দিয়ে শুধু একটা দীর্ঘশ্বাসের স্বর বেড়িয়ে আসে। বাইকটা যেখানে এসে থেমেছে এই জায়গাটা রাইয়ের ভালকরেই চেনা। একটু দূরে নতুন ব্রীজ হয়ে গেছে কিন্তু এ পাশের ভাঙা ব্রীজটা এখনো সেই জরাজীর্ণ চেহারা নিয়ে কোন মতে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকটায় এখনো সেই আগের মতই ঝোপঝাড়ে ভরে আছে। আচ্ছা এখনো কি সেই ঘাসফুলের গাছ গুলো গুলো আছে ওখানে ফুল গুলো কি এখনো ফুটে প্রতিদিন, রাই নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে থাকে। এদিকটায় আগে রাস্তা টা খুব ভাঙাচোরা ছিল তাই গাড়িও চলতো খুব কম, কিন্তু এখন নতুন পিচ ঠালা রাস্তায় বড় বড় ট্রাক আর লরি পিকাপের দৌরাত্ম্য বেড়েছে অনেক। বাইকটা ঐ ভাঙা ব্রীজের ঝোপের পাশে দাড় করাতেই রাই রুদ্রের দিকে হেলে গিয়ে

-হঠাৎ এখানে কেন? কোথায় যেন যাবে বলিছিলে।

-এখানে তো তোমার পছন্দের ঘাস ফুল আছে তাই এখানেই এলাম (রুদ্র বাইক থেকে নেমে রাইয়ের একটা হাত ধরে ঝোপের পাশ দিয়ে ছোট রাস্তা টা ধরে ব্রীজটার দিকে এগোতে থাকে)

-ঘাস ফুল তো আমার অনেক পছন্দের কিন্তু তুমি তো বলতে এগুলো আগাছা ছাড়া কিছুই না। স্কুলে থাকতে আমাকে কত কি বলতে যে এত এত ফুল থাকতে আমার এই আগাছার ফুল পছন্দ কেন?(একটু বিরতি নিয়ে) তবে কি এই ফুল দেখাতে এতো দূর নিয়ে এসেছো? এটা তো শহরের পাওয়া যায়।

-(রুদ্র কিছুই বলে না শুধু ওর হাত ধরে হেটে যাচ্ছে, সামনেই একটা গাছের তলায় পরিষ্কার জায়গা দেখে ধমকে দাড়িয়ে রাইয়ের দিকে ফিরে তাকায়) তোমার মনে আছে এই এখানেই আমি তোমার সাথে একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলাম আর তুমি আমার কাঁধে কামড়ে দিয়েছিলে।

-(হঠাৎ এই কথাটা শুনে একটু হতবাক হয় সাথে খানিকটা লজ্জায় রাইয়ের মুখের রঙ পাল্টে যায়, রুদ্রের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর কাধে হাত রেখে) ওটা একটু ছিল তোমার কাছে (চোখ দুটো বড় বড় করে) আবার ওমন করলে আজও কামড়ে দেব।( আপাতত সেই আবেগ টাকে সামলে রেখে নিজেকে একটু শক্ত করে নেয়) তুমি কি ওসব কথা বলার জন্য এত দূর এসেছো সেটা তো মনে হচ্ছে না। আমি কিন্তু তুমি কি বলবে সেটার জন্য অপেক্ষা করে আছি। প্লিজ বলো তোমার কি হয়েছে।

-এটাও বলতাম তবে আরও অনেক কিছু বলার বাকি আছে। জানো দুদিন পর যখন জ্বর সাড়লো তখন মা জিজ্ঞেস করেছিল আমার কাঁধে কি হয়েছে তখন মিথ্যে বলেছিলাম সত্যি বলতে তখন সত্য বলার সাহস ছিল না। সেই সাহস টা আজ কিছুটা সঞ্চয় করে এখানে আসার আগে মাকে সেদিনের সত্যটা বলে এসেছি।

-পাগল হলে নাকি? ওটা আবার মামনি কে বলতে গেলে এখন মামনি তোমার সম্বন্ধে কি না কি ভাববে বলোতো, শুধু শুধু বোকার মত ওটা বলতে গেলে কেন এখন। ঐটুকু মিথ্যা বলা তো তেমন কিছু ছিল না।

-(দুহাত রাইয়ের দু'গালের পাশে রেখে) তুমি খুব ভালো গো, তাই এখনো আমার কথাই চিন্তা করে যাচ্ছো কিন্তু আমি তো তোমার কথা ভাবিনি সবসময় নিজেকেই সবকিছুর সামনে রেখেছি। ঐ মিথ্যে টা তোমার কাছে নিছক একটা কথা হতে পারে রাই, কিন্তু আমি জানি সেইদিনের সেই মিথ্যে টার পর থেকে আমি নিজেকে কখনো আর সত্যের পথে নিতেই পারিনি। সবসময় একটা মিথ্যা কে প্রাধান্য দিয়ে সবকিছু করে গেছি। ওটাকে নিজের মননে গেথে নিয়ে ভুল পথে চলেছি নিজেকে মন্দের খাতায় লিপিবদ্ধ করে রেখেছি। সেই কারণেই হয়তো সত্য টা বলতে আমার এত ভয় এত দ্বিধা, অনেক লড়তে হয়েছে নিজের সাথে। রাই সত্যি বলছি আমার নিজের জন্য না আমি শুধু তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে এতদিনেও কিছু বলে উঠতে পারিনি। তবে আজ বলবো অনেক কষ্টে আজ নিজেকে এখানে আনতে পেরেছি আজ যে করেই হোক তোমাকে সবটা বলে দিয়ে নিজেকে একটু হলেও হালকা করার চেষ্টা করবো। তুমি শুধু আমাকে ছেড়ে যেও না, নইলে আমি বাঁচবো না। আগের সেই আমি নেই গো, তোমাকে আবার নতুন করে পাবার পর থেকে আগের আমি বদলে গেছি। এখন আমি আমার জন্য না রাই আমি তোমার হয়ে বাঁচতে চাই।

-(এতক্ষণ কোনভাবে নিজের মন কে কোন মতে চেপে ধরে রুদ্রের কথা গুলো শুনে গেছে রাই, ওর মনের ভেতরে যে উথাল-পাতাল শুরু হয়েছে সেটা রুদ্রের সামনে আনতে চায় নি। দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে শক্ত করে ধরে রাখছে, রুদ্র যেমন করে ভেঙে পড়ছে তার সামনে নিজেকে ভাঙতে দিলে চলবে না) তুমি এসব কি বলছো বলোতো! তুমি কি এ কথা গুলো বলবে বলেই এ কদিন ধরে এমন মনমরা হয়ে আছো, আমার তো সেটা মনে হয় না। প্লিজ সোনা আমার লক্ষ্ণীটি বলোনা কি হয়েছে তোমার। এই যে তোমার হাত ধরে রেখেছি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না বললাম তো, এবার তো বলো।

রুদ্র নিচের ঠোঁট টা দাঁতে চেপে নিজের সাথে শেষবারের মত যুদ্ধ টা করে নেয়। রাইয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে যেন সেই সঞ্জীবনী টা আবার উপলব্ধি করতে পারে, একবার চোখ বন্ধ করে নিজেকে আবার সেই জায়গায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে প্রথম থেকে সবকিছু বলতে শুরু করে। সেই রাইয়ের গোপালপুর ছেড়ে যাওয়া থেকে যার শুরু আর তার পরের রুদ্রের অন্যরকম এক জগতের নিজের বিচরন সেখানের অন্ধকার জগত সব কিছু এক এক করে সামনে আসতে থাকে রাইয়ের। রুদ্র যতই এগোচ্ছে রাইয়ের হাতটা যেন ততোটাই চেপে বসেছে রুদ্রের বাজুতে। রাই শুষ্ক মুখে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রুদ্রের দিকে কখন যে রুদ্র থেমে গেছে সেটার খবর নেই রাইয়ের কাছে। রুদ্রের হালকা ধাক্কায় সম্বিত ফিরে পায় রাই

-তুমি আমাকে ক্ষমা করবে তো রাই? জানি আমি যা করেছি সেটার ক্ষমা নেই তবু আমি ক্ষমা চাইবো তোমার তাছে বারংবার। তোমার জায়গায় আমি হলেও হয়তো ক্ষমা করতে পারতাম না।

-(রাই কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না, এতক্ষণ সব শোনার পর নিজেকেই যেন সে নিজের মাঝে খুঁজে পাচ্ছে না। রুদ্র কে কি দোষ দিবে রাই! রাই তো মনে মনে দোষীর আসনে নিজেকে বসিয়ে নিয়েছে। যদি সেদিন ওমন করে না চলে যেত তাহলে হয়তো এতো কিছু ঘটতোই না। রুদ্র কে একা ফেলে ও চলে গিয়েছিল আরেকটু চেষ্টা করলে কি সে রুদ্রের কাছে থাকতে পারতো না? এই প্রশ্নের উত্তর কে দিবে? না রাইয়ের কাছে সেই উত্তর নেই। ও তো নিজেকেই ক্ষমা করতে পারছে না। হঠাৎ রাই রুদ্রের থেকে একটু সরে দাঁড়ায়, ওর পা টলমল করছে ঠিকমত দাঁড়াতে পারছে না)  যদি বলি তোমার প্রতি রাগ ক্ষোভ ঘৃনা হচ্ছে না তবে মিথ্যে বলা হবে কিন্তু জানো কি তোমাকে আমি এতটাই ভালোবাসি যে সেখানে হয়তো এই রাগ ক্ষোভ ঘৃনা ততটাও জায়গা নিতে পারবে না। বরং তোমার উপরে যতটা রাগ ঘৃণা হবার কথা ছিলো তার চেয়ে বেশি নিজের উপরে হচ্ছে, আমি নিজেকে নিজের মধ্যে খুঁজে পাচ্ছি না নিজের ভালোবাসান প্রতি যে অহং বোধ ছিল সেটা আর নেই এখন। (একটু লম্বা নিঃশ্বাস টেনে) তোমার কোন দোষ নেই গো, তাই ক্ষমা করবো কিসের জন্য। সব টা তো আমার জন্যই হয়েছে।  আমি যদি আরেকটু সাহস জোগাতে পারতাম তবে তো তোমার কাছে থাকতে পারতাম, তখন তো তুমি আমাকে ঘৃণা করতে পারতে না, আমি তোমার হৃদয়ে ভালবাসার জায়গা টা হারাতাম না। তোমার কোন দোষ নেই গো সবটাই আমার দোষ আমার ভাগ্যের দোষ নইলে কি আমি তোমার ঘৃণাতে থাকতাম কখনো! আচ্ছা তুমি কি এখনো আমাকে ঘৃণা করো তাই না। করাটাই স্বাভাবিক তুমি যদি ওমন করে চলে যেতে তবে আমিও হয়তো তোমাকে ঘৃণা করতাম আচ্ছা রুদ্র তুমি কি আমাকে ক্ষমা করতে পেরেছো এখনো? হয়তো পারো নি তাই না? কারণ আমি তো তোমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। আমি তোমার বিশ্বাসের জায়গাটাতেই ছিলাম না, আমার জন্য তোমার জীবনটা এমন অন্ধকার হয়ে গেল তাই না! আমার না নিজের উপর নিজের রাগ হচ্ছে এখন, আমি কিছুই করতে পারলাম না। আমি তোমার দোষ খুঁজবো কখন নিজে কাছেই তো আমি হেরে গেলাম আমি হেরে গেলাম ( অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরা চোখ দুটো মুছতে মুছতে রাই রাস্তাটার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে) আমি তোমাকে আমার করে রাখতে পারি নি আমি হেরে গেছি ( অল্প গতিতে দৌড়ে যেতে থাকে রাস্তাটার দিকে)

-(যেটা ভেবেছিল সেটার উল্টো টা হতে দেখে রুদ্র হতভম্বের মত দাঁড়িয়ে ছিল, রাই যখনি দৌড়াতে শুরু করে তখনি ওর হুশ ফিরে। পেছন থেকে উচ্চস্বরে বলতে থাকে ) না রাই তুমি ভুল বুঝছো, তোমার কোন দোষ নেই৷ আমিই নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে পারিনি, তোমার ভালবাসার উপর ভরসা করতে পারি নি। তুমি দাঁড়াও আমার কথাটা তো শুনো ( রাইয়ের পেছন পেছন রুদ্রও দৌড়াতে শুরু করে)



রাই দৌড়াতে দৌড়াতে রাস্তার পাশর এসে থমকে দাড়িয়ে হাঁপাতে থাকে। নিজের পায়ের শক্ত মাটিটা হঠাৎ কেমন আলগা হয়ে যাচ্ছে রাইয়ের। এমন করে সবকিছু ওলট-পালট হয়ে যাবে কখনো কল্পনাতেও ভাবে নি। কেন এমন হলো সেটার উত্তর কে দিবে কার কাছে পাওয়া যাবে। এতদিনের স্বপ্নের সাজানো জগত টা হঠাৎ ধমকা হাওয়ায় তাসের ঘরের মত হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল সেটা কি আর কখনও সাজানো যাবে আগের মত করে? সবসময় কি সব সত্য জানতে হয়? যদি এই সত্য টা কখনো সামনে আসতো তবে কি এই কষ্ট টা যন্ত্রনা টা সহ্য করতে হতো। কিছু সত্য হয়তো না জানলেই ভালো হয়, সব সত্য ভালো হয়ে আসে না জীবনে সাজানো-গোছানো জীবন এলোমেলোও করে দেয়। এমন কি হতো যদি এই সত্য গুলো মিথ্যে হয়ে আজীবন আড়ালেই থেকে যেত, ভালই হতো অন্তত এমন করে হয়তো মন ভাঙতো না। নিজের প্রতি নিজের ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস টা এমন করেই দুর্বল হয়ে যেত না। নিজের ভালোবাসার মানুষটার অন্ধকার দিকটা জানার পরেও কি নিজেকে স্বাভাবিক রাখা যায়, যদি যায় তবে সেটা কি করে কেউ কি সেই পথটা বলে দিতে পারবে? রাইয়ের সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে, হাত পা গুলো অসার হয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে। বড় বড় নিঃশ্বাস গুলো ছোট হয়ে আসছে, চোখের সামনে যেন সবটা অন্ধকার হয়ে আসছে ধীরে ধীরে। রাই আর নিজের মাঝে নেই ওর সব কিছু হারিয়ে গেছে অজানা ঝড়ের তুড়ে, নিজের উপর সেই বিশ্বাস টা ওর আর অবশিষ্ট নেই। দুচোখ বন্ধ করে মাঝ রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা রাই যেন আর নিজের মাঝেই নেই। চোখ বন্ধ করতেই রাইয়ের কল্প জগতে রুদ্রের আত্মসমর্পিত কাতর মুখটা ভেসে উঠে নিজেই নিজেকে বলতে থাকে, আমি শুধু নিজের কথা ভাবছি কেন? আমি তো আর একা নই তবে কেন শুধু নিজের জন্য ভাববো। আমি তো কথা দিয়েছিলাম যাই হয়ে যাক না কেন আমি ওর হাত টা কখনো ছাড়বো না, ওকে একা রেখে কখনো কোথাও যাবো না তবে কেন আমি রুদ্র কে একা রেখে চলে এলাম। আমিও কি তবে স্বার্থপর হয়ে গেলাম শুধু নিজের ভালো মন্দ টাই ভাবলাম আর ওর কথা? রুদ্র তো আমাকে এই কথা গুলো না বললেও পারতো ও নিজে না বললে আমি হয়তো কখনই কিছু জানতে পারতাম না এই সবকিছু আজীবন অতল গহ্বরে নিমজ্জিতই থাকতো। আমাকে হারাবার ভয় আছে জেনেও নিজের ভালবাসাকে সত্য করতে সবকিছু বলে দিলো আর আমি স্বার্থপরতা দেখিয়ে ওর হাতটা ছেড়ে দিলাম। আমি তো ওকে কথা দিয়েছিলাম যাই হয়ে যাক না কেন আমরা দুজন দুজনার হাত কখনো ছাড়বো না তবে আমি যে ছেড়ে দিলাম আমার ভালবাসার হাত টা। এ আমি কি করলাম না আমিও ভুল করে ফেলেছি মস্ত ভুল হয়ে গেছে, আমাকে রুদ্রের কাছে ফিরে যেতে হবে রুদ্রের পাশে থাকতে হবে নইলে তো ভালোবাসার উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে সত্যের উপর আর কখনো আস্থা থাকবে না।
রাই সিদ্ধান্ত নেয় রুদ্রের কাছে ফিরে যাবার জন্য ও হাতটা আরও শক্ত করে ধরে রাখার জন্য কিন্তু চোখ মেলে তাকাতেই.....

রাইয়ের পেছন পেছন দৌড়ে রুদ্র রাস্তার কাছে পৌঁছাতেই একটা ট্রাকের কড়া ব্রেক কসার আওয়াজ পায় আর তৎক্ষণাৎ একটা গগনবিদারী আর্তনাদ ওর কানে পৌছায়। চোখ তুলে তাকাতেই ওর খানিকটা সামনের রাস্তার পাশের সবুজ ঘাস গুলো ছিটকে আসা রক্তের ফোঁটায় রক্তিম হয়ে উঠে।
[+] 10 users Like nextpage's post
Like Reply




Users browsing this thread: 5 Guest(s)