Posts: 446
Threads: 3
Likes Received: 11,694 in 2,466 posts
Likes Given: 4,988
Joined: Jan 2019
Reputation:
2,925
(26-07-2022, 03:41 PM)nandanadasnandana Wrote: এই গল্প এর পরে আসবে আপাদমস্তক রগরগে ইন্সেস্ট কাহিনী। হ্যাঁ গল্পের মোড়কে ঢাকা কাহিনীতে সেক্স এর সব উপাদান ই থাকবে। এই গল্প শেষ হতে আর দুটো পর্ব খুব বেশী হলে। শেষ পর্ব লেখা হয়ে গেছে। আশা করি গল্প টা আপনাদের ভালো লেগেছে।
চেষ্টা করে দেখছিলাম, কত পারি এই রকম গল্প লিখতে। আপনাদের ভালবাসায় মনে হয়েছে, হয়ত বা পারব। আর একটু রিসার্চ ওয়ার্ক আর পড়াশোনা করেই লিখব এমন গল্প পরের দিকে।
আমার সাথে থাকার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
চলুন সঙ্গে আছি।
Back into the track!!!
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
আগের পর্বের কিছু অংশ...
আর বাঘমুড়ো কোনরকমে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উর্ধশ্বাসে পালাল নগেনের বাড়ির দেওয়াল টা কে একেবারে মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে। মন্দিরের কোনায় পরে রইল গলিত বোতাম টা কালো হয়ে। নগেনের হাত জ্বালা করছে মারাত্মক। কুকুর টার দিকে তাকিয়ে দেখল, সেটা ধীরে ধীরে লালির রূপ ধারণ করছে। ক্ষমতাধারী বাঘমুড়োর সাথে লড়তে গিয়ে প্রাণ টাই যেতে বসে ছিল মেয়েটার। দেরী করল না নগেন। বারান্দার এক কোনে একটা বিছানার চাদর ছিল। সেটা নিয়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি উলঙ্গ লালির গায়ে চাপিয়ে দিল। কেঁদে উঠল নগেন হাউ হাউ করে চাদর সমেত লালি কে বুকে করে আঁকড়ে ধরে।
পর্ব উনিশ
লালি শুয়ে ছিল নিজের ঘরে। সর্বাঙ্গে ব্যাথা। বাঘমুড়োর মরণ পাশে যখন লালি আবদ্ধ হয়েছিল, পাঁজরের কিছু হাড়, ভাঙ্গার আওয়াজ লালি পেয়েছিল। সেলফ হিল হচ্ছে দ্রুত। আর তখন ই ব্যাথায় মনে হচ্ছে প্রাণ বের হয়ে যাবে লালির। বুঝতে পারছে মাথায় বসে আছে উমা কাকি। উফ কি সুন্দর হাত বুলিয়ে দিচ্ছে উমা কাকি মাথায়। এই চরম বেদনা তেও হীরা আর লালির এক ই মা সেটা ভেবে নিল লালি নিজের মতন করে। আহা হীরা নিশ্চই খুব কান্না কাটি করেছে লালির জন্য। উমার হাত টা নিজের গালের নীচে নিয়ে শুয়ে রইল লালি। আর উমা অন্য হাতে লালির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। লালি বুঝতে পারছে বাইরে বাবা, নগেন দাদু জেগে আছে। গলার আওয়াজ পাচ্ছে লালি। হয়ত , না না হয়ত না, রহিম দা , অভি আর হীরা তো থাকবেই। কিন্তু গলার আওয়াজ পাচ্ছে নগেন দাদু আর বাবার। বাকিদের গলার আওয়াজ পাচ্ছে না।
পরেশ বাইরে জেগে। আর মেয়েকে ও বাড়ির বাইরে আর একলা ছাড়বে না, মনে মনে বিড়বিড় করছিল পরেশ। রহিম আর অভি দাঁড়িয়ে উঠোনে ঠায় এই মাঝরাতেও। নগেন ও বসে পরেশের পাশে। পরেশ মাঝে মাঝেই দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছে আর কাঁদছে। যে মেয়েকে জীবনে কষ্ট পেতে দেয় নি সেই মেয়ের এমন অবস্থায় কোন বাপ নিজেকে স্থির রাখতে পারবে? কিন্তু নগেনের লালির সাথে কথা বলতে হবে। নগেন যা সন্দেহ করছে সেটা যদি সত্যি হয় তবে এটা নিশ্চিত তিনি এই গ্রামেই অধিবাসে আছেন। নগেন পরেশ কে বলল,
- পরেশ বাবা তুই একটু বিশ্রাম নে। তোকে তো সব বলেছি। কোন ভয় নেই আর। আমরা আছি আর উমা ও আছে।
পরেশের চোখ লাল হয়ে আছে কেঁদে কেঁদে। কোন সাড়া দিল না। কিন্তু উঠলো ও না দুয়ার থেকে। তাকিয়ে রইল সামনের অন্ধকারের দিকে। নাহ মেয়েকে ছেড়ে ও উঠবে না। নগেন আবার বলল,
- দ্যাখ, মেয়ে তোর। কষ্ট হয়তো তোর অনেক বেশী পরেশ। কিন্তু বিশ্বাস কর আমিও কম কষ্টে নেই। তার থেকেও রাগে আমার গা হাত পা জ্বলছে। তুই গিয়ে শুয়ে পর। মহাদেব ও শুয়েছে একটু। যা একটু গড়িয়ে নে। আমরা আছি। কথা দিচ্ছি তোকে এই বুড়োর দেহে যতক্ষণ প্রাণ আছে, আমাদের লালি সুরক্ষিত। আর সত্যি করে একটা কথা বল, না আমি না তুই, কেউ তো বাঘমুড়ো কে হারাতে পারব না। পুরো গ্রাম আজকে জেগে। সবাই রাস্তা ঘাটে শাবল গাইতি নিয়ে পাহাড়া দিচ্ছে।
এই বলে হাতের গলে যাওয়া বোতাম টা নেড়ে চেরে দেখতে লাগল নগেন। এক হাতে ভালো বোতাম খানা আর অন্য হাতে গলিত বোতাম টা। কি অসাধ্য সাধন করল এই ছোট্ট জিনিস টা, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পরেশ শুনছিল নগেনের কথা। এবারে কথা বলল,
- কিন্তু জ্যাঠা, আমার মেয়ের কিছু হবার আগে আমার প্রাণ যাক। জানি সবাই মরব ওই পিশাচের হাতে। শুনেছিলাম বহু আগেও আমাদের গ্রাম শ্মশান হতে হতে বেঁচে গেছিল। কিন্তু আমার মেয়েকে , ও মেরে ফেলার আগে ওই শয়তান কে কষ্ট করতে হবে। আমি দাঁড়াব ওর সামনে জ্যাঠা।
- শুধু তুই না পরেশ, আমিও দাঁড়াব তোর সাথে সবার আগে…
তার আগেই শুনল লালি ডাকছে ভিতর থেকে। আসলে লালি শুনতে পাচ্ছিল ওর বাবা আর নগেন দাদুর কথা।
- দাদু একবার ভিতরে আসবে?
ডাক টা শুনে পরেশ আর নগেন দুজনাই উঠে এলো ঘরে। পিছন পিছন এল রহিম আর অভি। পরেশ এসে দেখল, নাক দিয়ে বেরিয়ে আসা রক্ত এখনো অল্প অল্প লেগে লালির গায়ে আর গালে। দেখে মনে হচ্ছে অনেক তা আগের থেকে ভাল। বাবা কে দেখে লালি হাসল। পরেশ গিয়ে আলতো করে মেয়ের মাথায় হাত বোলাতে লাগল। উমা উঠে দাঁড়াল। বলল,
- আপনারা কথা বলুন তো মেয়েটার সাথে। আমি একটু চা করে নিয়ে আসছি।
নগেন বলল,
- সেই ভালো বৌমা। কিন্তু পুকুরের পাড় দিয়ে যেও না আর বাড়ি। এখানেই চা করো।
- আচ্ছা জ্যেঠাবাবা।
নগেন বেড়িয়ে যাওয়া উমা কে জিজ্ঞাসা করল,
- বৌমা, সেই ছোঁড়া কোথায়? ঘুমোচ্ছে?
উমা দাঁড়াল না। কিন্তু বলতে বলতে কেঁদে ফেলল প্রায়। নগেন শুনতে পেল দরজার বাইরে চলে উমার কথা,
- জানিনা জ্যাঠাবাবা, লালি কে এই অবস্থায় দেখে সেই যে গেছে সন্ধ্যে বেলায় আর আমি ওকে দেখিনি।
এটা শুনে লালির বুক কেঁপে উঠলো। কোনো অজানা শক্তির বলে ছিলার মতন উঠে বসে পরল লালি বিছানার উপরে। সবাই মিলে লালি কে ধরতে গেল যাতে পরে না যায়। শুধু নগেন ঠান্ডা মাথায় বলল,
- ওকে নিয়ে চিন্তা করিস না দিদিভাই। এই বিশাল যজ্ঞ ওর ই নির্দেশে হচ্ছে রে দিদি। আজকেও ও না থাকলে তোকে বাঁচাতে পারতাম না।
ততক্ষণে সবাই ধরে লালি কে আবার শুইয়ে দিয়েছে বিছানায়। কিন্তু নগেনের বলা কথা গুলো এমন ই অদ্ভুত যে সবার চোখ নগেনের দিকে চলে গেল। নগেন লালির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
- ভাবিস না মা, আমি একটা বোকা ওকে চিনতে পারিনি। কত বার আমাদের ও বুঝিয়েছে। কিন্তু আমরা বুঝিনি।
রহিম কথা বলল এবারে প্রথম। সেই সন্ধ্যে থেকে গুম হয়ে আছে ও। না পারছে সরাসরি লড়াই এ যেতে, না পারছে ওই শয়তান টার মুন্ডু খানা ছিঁড়ে ফেলতে। তারপরে লালির এই অবস্থার জন্য নিজেকেই দায়ী করছে রহিম। এক ই অবস্থা অভির ও। লালির হাড়গোড় ভাঙ্গা রক্তাক্ত চাদরে ঢাকা অবস্থা টা কারোর ই মন থেকে সরে যাচ্ছে না। রহিম বলল,
- কি বলছ দাদু খোলসা কর।
লালি ছটফট করছিল। হীরা বাড়ি ফেরে নি সেই সন্ধ্যে থেকে ও মানতেই পারছে না। একবার রহিম কে একবার অভি কে বারং বার বলেই চলেছে,
- তোমরা এখানে কেন? যাও না ওকে খুঁজে নিয়ে এস এখনি আমার কাছে। অভি তুই যা ভাই। ওর কোন কান্ডজ্ঞান নেই। যাআআআআ।
শেষ ও করতে পারল না কথা টা। উমার মতই গলা ধরে এলো ওর। বস্তুত দুজনাই ধরে নিয়েছে হীরা আর নেই। নগেন হয়ত বুঝল লালির মনের অবস্থা টা। বুঝল, কত টা ভালোবাসে লালি হীরা কে। পরেশ হাঁ করে তাকিয়ে আছে নগেনের দিকে। নগেনের প্রশান্ত চিন্তা হীন মুখের কারণ বের করতে পারছে না। বস্তুত সবাই যখন নানা কারণে এখানে ভয়গ্রস্ত, আতঙ্কিত। নগেন আবার লালির মাথায় হাত বোলাতে লাগল আর বলল,
- লালি, শান্ত হ দিদি। কোন ভয় নেই ওকে নিয়ে। শান্ত হ। তুই সত্যি করেই ওকে চিনতে পারিস নি?
লালি ভয়ানক অবাক হয়ে গেল। হীরা কে কি চিনবে আলাদা করে ও। ও হীরার অনু পরমাণু চেনে। হাঁ করে তাকিয়ে রইল নগেনের দিকে। নগেন বলল,
- তুই সেদিন আমাকে যে কথাটা বলেছিলি, চন্ডীমন্ডপে বসে। মানে যেখান থেকে তোরা মণি কোথায় আছে সেই সুত্র টা পেয়েছিলি। সেদিনে তুই বলেছিলি, হীরা বলে এসেছিল, সেই ', বাঁচবে। আর তার ছেলেও বেঁচে আছে তাই তো?
- হ্যাঁ। এই রকম ই হয়েছিল। ওই ',ের কথা মতন হীরা আমাকে নিয়ে ঝাঁপ দিয়েছিল গাছের পেটের ভিতরে। তার আগেই এই কথা হীরা বলেছিল সেই ', কে।
- আর এদিকে আমাদের বংশে একটা গল্প আছে। গল্প টা হলো এই যে, তিনশো বছর আগে আমার এক পূর্বপুরুষ ছিলেন। নাম কেদার ভট্টাচার্য্য। উনি রাধা কৃষ্ণ কে সাক্ষাত করেছিলেন। এমন এক সময়ে সাক্ষাত পেয়েছিলেন যখন আমাদের গ্রাম শ্মশান হয়ে গেছিল। একা ছিলেন বলতে গেলে আমার পূর্বপুরুষ। গ্রামের সবাই কে হয় মেরে ফেলেছিল এক পিশাচ আর না হয় ভয়ে সবাই গ্রাম ত্যাগ করেছিল। ঠিক সেই সময়ে রাধা কৃষ্ণ ওনাকে দেখা দিয়েছিলেন। এবং পরিবার কে আশীর্ব্বাদ করেছিলেন। আশীর্ব্বাদ স্বরূপ ছোট্ট একটা জিনিস দিয়েছিলেন লালি। এটা হলো সেই জিনিস টা। যেটার কল্যানে আজকে তুই বেঁচে গেলি।
এই বলে হাতের গলে গিয়ে আকার বদলে যাওয়া হলুদ রঙের বোতাম টা দেখল নগেন সকল কে। লালি দেখল ছোট্ট একটা প্লাস্টিকের বোতাম। সুতো পরানোর দুটো ঘরের একটা গলে গেছে আর একটা রয়েছে। লালি বলে উঠলো,
- এটা কি?
- আচ্ছা বুঝলি না? এবারে এটা দ্যাখ।
এই বলে লালির হাতে ভালো বোতাম টা দিল নগেন। লালি দুটো জিনিস কে পাশাপাশি রাখতেই বুঝল, এই দুটো বোতাম। একটা গলে গেছে আর একটা অক্ষত আছে। লালি অবাক হয়ে গেল এই দুটো কে নগেন এর হাত দেখে। খুব অবাক হয়ে বলল,
- কোথায় পেলে এই দুটো কে। এটা তো!!
লালির কথা শেষ ও হলো না। নগেন হাসি মুখে বলে উঠল,
- হীরার হলুদ পাঞ্জাবীর বোতাম তো!
- হ্যাঁ কিন্তু তুমি কোথা থেকে পেলে?
লালি জানে এটা হীরার পাঞ্জাবীর বোতাম। কারণ পাঞ্জাবী লালি ই কিনে এনেছিল শহর থেকে হীরা কে জন্মদিনে দেবে বলে। বোতাম টা মনে আছে আরো ভালো কারণ পাঞ্জাবী কাঁচা হলুদ রঙের হলেও বোতাম টা একটু ডিপ ছিল। লালির আপত্তি ছিল বোতামের কালার টার জন্য, কিন্তু পাঞ্জাবী টা এতো পছন্দ হয়েছিল যে বোতামের আলাদা রঙ এর আপত্তি টা ধোপে টেকে নি। কিন্তু পরেশের সামনে বলতে পারছিল না লজ্জায়। বাবা জেনে যাবে অনেক কিছুই বা আন্দাজ করবে অনেক কিছুই। ও ভারী অবাক হয়ে বলল,
- এ তুমি কোথা থেকে পেলে?
- সেটাই তো অবাক ব্যাপার লালি। এই বোতাম দুটো আমাদের পরিবারে গত দশ প্রজন্ম ধরে আছে। অথচ প্লাস্টিকের বোতাম। ওই সময়ে এই প্লাস্টিক আবিষ্কার হয় নি, যে সময় থেকে এই বোতাম টা আমাদের বাড়িতে আছে।
লালির গায়ে কাঁটা দিল। লালি কেন উপস্থিত সকলের গায়ে কাঁটা দিল এবারে। অসম্ভব ব্যাপার বলছে নগেন। লালি বলল,
- তার মানে তুমি সেই মহান অলকৃষের বংশধর?
- হ্যাঁ রে দিদি ভাই, আমি অলকজিত।
- কিছু ভুল হচ্ছে না তো দাদু? এটা খুব বেশী হলে মাস খানেক আগের কেনা।
- না ভুল করছি না। অনেক প্রমাণ আছে দিদি। প্রথমত এই বোতাম দুটো বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষ দের কাছেই থাকে। মানে আমার দাদার কাছে ছিল তার আগে আমার বাবা, তার ও আগে আমার জেঠুর কাছে। আমার পরে আমার দাদার ছেলের কাছে থাকবে। পরিবারের এই অতি মূল্যবান জিনিস টা আমরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বহন করে চলেছি।
পরেশের মাথায় কিছু ঢুকছে না বললেই চলে। এই গ্রামের ছেলে সেও। কিন্তু এতো গুহ্য কথা লালি কি ভাবে জানল আর এই কথা বার্তার মানেই বা কি পরেশ বুঝতে পারছে না। কিন্তু নগেন বলেই চলে।
- আমরা চৌধুরী, কিন্তু আমরা আচার্য্য। আমাদের উপনয়ন হয়। কিন্তু খুব সন্তপর্ণে। কেউ জানতে পারে না। তিনদিন অসূর্য্যস্পর্শ্যা হয়ে থাকি আমরা শরীর খারাপের আড়ালে। আমরাই আমাদের পরিবারের গুরু আর আমরাই শিষ্য। ছোট বেলায় আমি ই বুঝতাম না জিনিস টা কি। কারণ আমার ছোট বেলাতেও প্লাস্টিকের আবিষ্কার হয় নি। জন্মাষ্টমীর দিনে প্রণামের জন্য বের করেছিলাম এই মহামূল্যবান জিনিস টা কে। প্রায় দীর্ঘ তিরিশ বছর পরে। কারণ এর আগে আমার দাদার হাতে ছিল এই সম্পদ। তখন ই মনে হয়েছিল এ প্লাস্টিক। কিন্তু তিনশো বছরের লেগাসি বহন করে চলেছি আমরা এই বোতাম কে নিয়ে। আগে মনে হতো এ কোন অন্য জিনিস। ট্রান্সপারেন্ট অথচ শক্ত। মনে হতো সত্যি কৃষ্ণ দিয়েছেন এমন মহামূল্যবান জিনিস। এটা কৃষ্ণ দিয়েছেন এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কারণ এর স্পর্শ মাত্রেই বাঘমুড়ো তোকে ছেড়ে দিয়ে উর্ধশ্বাসে পালালো আমার বাড়ির দেওয়াল ভেঙ্গে। আমাদের ছোটবেলাতেই বলা হত, খুব বিপদ মানে মরণ বাঁচনের মতন বিপদ না আসলে এই বোতাম বাইরে বের না করতে। আমরা কোনদিন এই বোতাম ওই ভেলভেটের বাক্স থেকে বের করিনি। এছাড়া আর ও একটা প্রমাণ আছে।
পরেশ এবারে মুখ খুলল। আসলে ও কিছুই বুঝতে পারছে না। অভি আর রহিম বুঝতে পারলেও কিছু টা, পরেশ একেবারে শূন্য। যদিও নগেন, লালি রহিম আর অভির ক্ষমতার ব্যাপারে বলেছে পরেশ কে। পরেশ ও দেখে বুঝেছে, সমান শক্তিশালী দের মধ্যে যুদ্ধ না হলে, যে পরিমাণ ক্ষয় ক্ষতি নগেন জ্যাঠার বাড়িতে হয়েছে, সেটা হতো না। ও বলে উঠলো,
- কি প্রমাণ প্রমাণ করছ তোমরা? চুপ কর, আমরা আর এই গ্রামে থাকব না। আমি আজ ই ভোর হলে চলে যাব এই গ্রাম ছেড়ে মেয়ে কে নিয়ে। প্রাণ নিয়ে এই গ্রামে আর থাকব না। আর এই অলকজিত টা কে আবার?
পরেশের কথায় নগেনের চোখে জল এলো। বলল,
- হুম তুই পারিস পরেশ চলে যেতে। কিন্তু আমি পারব না। কারণ আমার উঠোনে যে মন্দির আছে সেইখানে রাধা মাধব বসে আছে। তারা যে জীবন্ত রে পরেশ। আমি জানি তারা জীবন্ত।
কেঁদে উঠল নগেন এবারে। বলল,
- আমি চলে গেলে ওদের খেতে দেবে কে? ওদের ঘুম পাড়াবে কে?
পরেশ প্রতিবাদ করল,
- আমার বাড়িতে নেই? রঘুনাথ আমার বাড়িতেও আছে। কিন্তু তিনি ই যখন আমার মেয়েকে এই রকম বিপদে ফেললেন আমি কেন থাকব এই গ্রামে?
লালি এবারে পরেশ কে বলল,
- বাবা তুমি চুপ কর। দাদু কে বলতে দাও। মনে হচ্ছে আমিও বুঝতে পারছি আবছা। দাদু তুমি বল।
নগেন কাঁদতে কাঁদতেই বলতে শুরু করল,
- দিদিভাই, তুই আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলি একবার, গ্রামের সব মন্দিরের রাধামাধবের পোশাকে হলুদ ধুতি আছে, তোমার মন্দিরে হলুদ পাঞ্জাবী কেন? আর রাধাই বা বাঙালী শাড়ি পরে কেন? উত্তর আমাদের বংশ তিনশো বছর ধরে বয়ে নিয়ে চলেছে। উত্তর টা হলো সেদিনে রাধা কৃষ্ণ আমাদের পূর্বপুরুষ কে দেখা দিয়েছিলেন, তারা ঠিক ওই রকম পোশাক পরেই ছিলেন।
লালি বলল কথা।
- হ্যাঁ তুমি ওই উত্তর ই দিয়েছিলে।
নগেন কথা সেশ হবার আগেই বলে উঠলো,
- কিন্তু জানিস দিদি ভাই, ভেবে পেতাম না, তিনশো বছর আগে এমন পাঞ্জাবীর চল তো ছিল না। না চল ছিল এমন ভাবে শাড়ি পরার। তাহলে কি ভাবে এমন ডিজাইনের পাঞ্জাবী আমাদের পূর্বপুরুষ ভেবেছিলেন? বা কি ভাবে তারা রাধা কৃষ্ণ কে দেখেছিলেন এই পোশাকে? কিন্তু চণ্ডীমণ্ডপে তোর কাহিনী শোনার পরে আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম। দুয়ে দুয়ে চার করতে পেরেছিলাম। চণ্ডীমণ্ডপে বসেই আমি ভয়ভীত হয়েছিলাম। বুঝে গেছিলাম সেদিনে আমার পূর্বপুরুষ কৃষ্ণ রাধা নয়,তোদের দুজনার সাথে মিলিত হয়েছিলেন। আর সেদিনে আর কেউ নয়, আমাদের হীরা বাঁচিয়ে ছিল আমার পূর্বপুরুষ কে।
নগেনের হাত আপনা থেকেই জোড়া হয়ে মাথায় পৌঁছে গেল। লালির ও মনে পরল, সেদিনে যখন লালিকে হ্যাঁচকা টেনে বুকের মধ্যে নিয়ে, হীরা ঝাঁপ দিলো পোর্টালে, তখন লালি, হীরার পাঞ্জাবী টা বুকের কাছে মুঠো করে ধরেছিল। তাতেই টান পরে বোতাম দুটো ছিঁড়ে গেছিল আর হয়ত পরে গেছিল তিনশ বছর আগের সেই অশ্বত্থ গাছের বেদীতে। লালি আনমনা হয়ে গেল যখন মনে পড়ল, সেই পোর্টালে ঝাঁপ দেবার সময়ে, হাওয়ায় ভাসমান অবস্থাতেই হীরার আঙ্গুল থেকে কিছু একটা বের হয়েছিল নীল রঙের। এদিকে নগেন বলে চলে,
- আর হীরা যে সেই বিশাল আর অমিত শক্তির অংশ তার প্রমাণ হলো, এই বোতামের শক্তি। সামান্য এই বোতামের তেজ সহ্য করতে পারল না বাঘমুড়ো।
ঘরে অখণ্ড নীরবতা। পরেশের মাথায় কিছু না ঢুকলেও বুঝে গেছে গত সহস্র বছর ধরে কৃষ্ণ নাম জপ করা এই গ্রামের বিফলে যায় নি। এই রাত শেষ হবে তাড়াতাড়ি। লালি মনে মনে শিহরিত হচ্ছিল। নিজের স্বপ্নের মানে নিজের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেলো ওর। বুঝে গেলো ও কে। হীরা কে। কত জন্মের তৃষ্ণা নিয়ে ও এই জন্ম পেয়েছে, শুধু কিছু সময় কাটাবে বলে নিজের আরাধ্যের সাথে। এতোক্ষণে কথা বলল নগেন আবার,
- তাই বলছিলাম দিদি ভাই, ওকে নিয়ে ভাবার কোন মানে হয় না। সে ঠিক আছে। আমাদের জন্যেই কোন কাজ করছে হয়ত। যার জামার বোতাম এতো ক্ষমতা ধরে, না জানি সে কতখানি অসীম ক্ষমতার অধিকারী হবে। ওর ভুলও সহস্র বার ঠিক হয়ে আশির্ব্বাদের মতন ঝরে পরে মানুষের উপরে। চিন্তা করিস না দিদি ভাই। ও সামান্য কেউ না।
লালি কথা গুলো শুনছিল আর ওর মনে হতে লাগল, নিজের শরীরে আর কোন ব্যাথা নেই। ভাঙ্গা হাড় গুলো দ্রুত জোড়া লাগছে লালির। ক্ষত গুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে কোন অদৃশ্য শক্তির কৃপায়। একটা আওয়াজে তাকিয়ে দেখল সামনে চা নিয়ে উমা কাকি এসেছে। চোখে জল উমা কাকির। মহাদেব কাকা ও উঠে এসেছে ঘুম থেকে। থম্থমে মুখ। লালি উঠল বিছানা থেকে। নাহ সামান্য দুর্বলতা ও আর নেই। উঠে প্রণাম করল উমা কাকি কে। বলল,
- কাকি তুমি ভেব না। জানবে এই শরীরে যতক্ষণ প্রাণ আছে, হীরা সুরক্ষিত আছে।
লালি জানে, হীরা যদি সে হয়, একমাত্র অসীম ভালোবাসাই হলো ওই ছোঁড়ার অসীম শক্তির উৎস। লালির মনে পরল, কানুর বলা কাহিনী টা। মর্মোদ্ধার করতে পারল কানুর সেই কাহিনীর।বুঝে গেল এই মহাশক্তির উৎস মানুষের মনের ভিতরে। আর সেটা হলো ভালোবাসা। ভালোবাসার বিশাল শক্তি তেই আমাদের রক্ষাকর্তা বলীয়ান। মধু কৈটভ কোন অসুর ছিল না। ছিল দুটো মারাত্মক বদ গুণ। কৈটভ মানে ঘৃণা। আর মধু মানে স্বার্থ জনিত আকর্ষণ। যে পালন করে তার কাছে এই দুটোই মারাত্মক দোষ। সেদিন ভগবান কোন অসুর কে নয়, মহামায়ার কৃপা তে , মোহ মায়া ত্যাগ করে, নিজের ভিতরেই প্রতিপালিত হওয়া দুটো মহা দোষের হত্যা করেছিলেন। মুক্ত করেছিলেন নিজেকে এই দোষ থেকে। এই দোষ এই সংসারে সব পিতা বা মাতার মধ্যে থাকে। আর তারপরে মোহ মায়া মুক্ত স্থিতধী মুনির মতন ভগবান নিজে ভালোবাসার সাগরে নিমজ্জিত হয়েছিলেন। সত্যি তো ভালোবাসা ছাড়া তো জীবন অচল। নাহ আর সময় নেই। সময় উপস্থিত। হয়তো সে নিজে লড়বে না কিন্তু পথ দেখাবে সে ই।
আর কোন বেদনা নেই শরীরে লালির। মনে হচ্ছে শত শত মৃগেন্দ্রর বল লালির শরীরে। নগেন ও দেখছে লালির চোখে মুখে যেন এক আলাদা জ্যোতি। সত্যি তো সে থাকার প্রমাণ যখন পাওয়া গেছে আর কীসের ভয়? এখন মৃত্যু তেও ভয় নেই নগেনের। রহিম এক অন্যরকম তেজে জ্বলছে। আর অভির চোয়াল শক্ত হয়ে আছে। এই গভীর রাতে এদের গন্তব্য কোথায় এখন? জলার মাঠ? নগেন বুঝতে পারল, এদের দরকার ছিল এই ভাবনা টা, যে ওদের পিছনে সর্বিশক্তিমান আছে। কিন্তু উমার কোন পরিবর্তন হলো না। চোখের জলে ভিজেই সবাই কে চা দিল। মহাদেব ও চুপ করে আছে। ছেলের চিন্তায় বাবা মা কাতর হবে এটাই স্বাভাবিক। সেখানে ছেলে কত বড় মাতব্বর সেটা তো বাবা মা ভাবতে পারে না। লালির মন ও অস্থির। মনে হচ্ছে এক্ষণি চলে যায় হীরা কে খুঁজতে।
ঠিক সেই সময়েই পেল সবাই আওয়াজ টা। লালি দের বাড়ির পাশেই বাড়ি নগেন দের। এমন নয় যে পাশাপাশি। কারণ দুই বাড়ির মাঝে অনেক ফাঁকা জায়গা। কিন্তু আওয়াজ টা এতো টাই ভয়ঙ্কর যে সবাই মিলে বের হয়ে এল বাইরে। সবার চোখে মুখে আতঙ্ক। আওয়াজ টা শক্ত দেওয়াল ভেঙ্গে পরার আওয়াজ। নগেনের বয়েস হয়েছে বটে, কিন্তু আওয়াজ তার বাড়ি থেকে আসতেই, আর কিছু না ভেবেই নগেন দৌড়ল। লালি নগেন কে একলা ছাড়ল না। পিছন পিছন পিছন দৌড়ল। সাথে রহিম আর অভি। পরেশ পিছনে পিছনে ছুটল লালি কে আটকাতে। মেয়েটার কি হাল ছিল সেটা দেখেছে পরেশ সন্ধ্যে বেলাতেই। এখনো হয়ত পরিপূর্ন সুস্থ হয় নি। নাহ মেয়েটা কে আটকাতেই হবে।
লালি যতক্ষণে পৌঁছল ততক্ষণে গিয়ে দেখল, নগেন দাদুর বাড়ি একেবারে তছনছ। নীচের যে ঘরে নগেন দাদু শুতো সেই ঘরের দেওয়াল টা ভাঙ্গা। বাড়ি তে পৌঁছে দেখল বাড়ির সবাই দাঁড়িয়ে আছে স্থানুর মতন। হয়ত কেউ বিশ্বাস করতে পারছে না কি হয়ে গেল। লালি অবাক হয়ে গেল। নগেন দাদু কোথায়? ও ছুটে গিয়ে নগেন দাদুর বড় ছেলে বউ দাঁড়িয়েছিল, তাকে জিজ্ঞাসা করল,
- দাদু কোথায়? কি গো কাকি? ও কাকি?
উত্তর না পেয়ে সামনে যে দাঁড়িয়েছিল তাকেই জিজ্ঞাসা করল লালি পাগলের মতন, ততক্ষণে এসে গেছে পরেশ মহাদেব উমা সবাই পিছন পিছন। লালি পাগলের মতন জিজ্ঞাসা করছে তার একটাই কারণ সেটা হলো, দাদুর কাছে মণির চাবি আছে। একবার দাদু কে ওরা নিয়ে গেলে না জানি কি হবে? লালির পাগলামো দেখে রহিম লালি কে ডাক দিল,
- লালি এই দিকে আয় একবার।
লালি ছুটে গেল রহিমের কাছে। সাথে অভি আর বাকি সবাই। লালি কাছে আসতেই রহিম আঙ্গুল তুলে যেটা দেখালো সেটা দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেল। দেখলো, পূব দিকে পুকুরের ধারে, নগেন দের বাড়ির পাশেই যে বিশাল জায়গায় ঝোপ ঝাড় আর কলা বনের জঙ্গল ছিল সেখান টা মনে হচ্ছে কিছুটা জায়গা জুড়ে কোন বড় বুলডোজার চলে গেছে। গোল হয়ে দেখা দিচ্ছে বাগান টার শেষ অব্দি। আর কলা গাছ আর ঝোপঝাড়ের জঙ্গল হয়ত দুই পাশে পরে আছে সেই বিশালদেহী বাঘমুড়োর শরীরের চাপে। একলা লালি নয় উপস্থিত সকলেই বুঝে গেল নগেন কে নিয়ে বাঘমুড়ো ওই পথেই গেছে। লালি কোন সময় নস্ট করল না। ওর কুকুরের ইন্সটিঙ্কট বলছে সামনে বিশাল বিপদ। ও দৌড়তে থাকা বাঘমুড়োর শরীরের চাপে ভগ্নপ্রায় গাছপালা, বাড়ি, রাস্তা অনুসরণ করে পিছু নিল। ও যে শুনতে পাচ্ছে বাঘমুড়োর পায়ের আওয়াজ। ও জানে বাঘমুড়ো ওকে অন্য কোন কম্পাঙ্কে নিয়ে যাবে। কিন্তু পোর্টাল বন্ধ হয়ে যাবার আগেই লালি কে সেই পোর্টালের দরজায় পৌঁছতে হবে। না হলে সমূহ বিপদ।
লালি কে অনুসরণ করে দৌড়তে লাগল রহিম আর অভি। রাতেও লালি দৌড়চ্ছে যেন ও পুরোটাই দেখতে পাচ্ছে। কোন গাছের ছোট্ট ডাল কেও নিপুন ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে লালি। ওকে পৌঁছতেই হবে যে পোর্টালে, না হলে কোন জায়গায় নিয়ে যাবে নগেন দাদু কে কেউ জানতেও পারবে না। দ্রুততার সাথেই লালি বুঝতে পারল বাঘমুড়ো বেশী দূরে নেই। খানিক পা গিয়েই কচুবনে প্রবেশের আগে দেখতে পেল বাঘমুড়ো কে। নগেন দাদু কে প্রায় বগলদাবা করে, অতুল বলের অধিকারী বাঘমুড়ো একটা পোর্টাল কী এর দিকে ছুটে যাচ্ছে। লালি জানে ওই পোর্টাল কী বন্ধ হবে পাঁচ সেকেন্ডে। বাঘমুড়ো প্রবেশ করল পোর্টাল এ আর সাথে সাথেই লালি, লালির পিছনে রহিম আর অভি।
কিন্তু তিনজনে দিশাহারা হয়ে গেল তারপরে। এখানে অন্ধকার অনেক বেশী। লালির দৃষ্টি শক্তি কম, কিন্তু লালি কান দিয়ে শুনে আর ঘ্রাণে দিক নির্ণয় করত। কিন্তু এখানে এসে থেকেই লালির কানে যেন দামামা বাজছে। সামনে জলা সেই নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কারণ জলা থেকে ভেসে আসা আত্মা দের কান্না লালি কে আর অন্য কিছু শুনতে দিচ্ছে না। কিছু আগে বাঘমুড়োর হৃদয়ের ধুকপুকুনিও শুনতে পাচ্ছিল লালি। এখন কান্না ছাড়া আর কিচ্ছু শুনতে পাচ্ছে না। রহিম ও সাধারণত মাটির কাঁপুনিতেই শত্রু কে শনাক্ত করে। কিন্তু বাতাসে এতো বেশী কম্পন জলার পেত্নী দের আওয়াজে যে মাটির কাঁপুনির কোন হদিশ পাচ্ছে না রহিম। আর ততোধিক অন্ধকার। একমাত্র অভি নিজের ধনুকে একটা তীর জুড়ে ধীর পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
- লালি দি, রহিম দা আমার পিছনে এস। এই কচুবন আলাদা। তবে সামনেই জলার মাঠ এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। ধীরে ধীরে এস। সাবধান!! সামনেই একটা ছোট গর্ত আছে।
লালি দেখতে পাচ্ছে না কিছুই, কিন্তু কান খাড়া করে আছে, অভি কোথায় পা ফেলছে সেটা শোনার জন্য। সেই ভাবে আন্দাজে এগিয়ে যাচ্ছে। জলার আত্মাদের কান্নার আওয়াজ কে অবদমিত করে শোনার চেষ্টা করছে অভির পায়ের আওয়াজ। আর লালি কে অনুসরণ করছে রহিম। কিছু পরেই অভি অভিজ্ঞ গাইডের মতন , বাকি দুজন কে সেই বিশাল পাতার কচু বন পেরিয়ে জলার মাঠে এনে ফেলল। লালি দেখল নিকষ কালো আঁধারে নিমজ্জিত জলার মাঠ। কিন্তু ধীরে ধীরে এবারে সয়ে আসছে এই আঁধার। সামনের মাঠ আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হচ্ছে সবার কাছেই। লালি বুঝতে পারল সামনে কিছু আছে, যখন দেখল , এগিয়ে যেতে যেতে অভি চকিত হয়ে নিজের ধনুকের ছিলা টেনে দাঁড়িয়ে পড়ল।
লালি অর ধনুকের লক্ষ্য বরার ভালো করে তাকিয়ে দেখল, আঁধারে দাঁড়িয়ে বিশাল দেহী বাঘমুড়ো আর নীচে পরে আছে নগেন দাদু। ধীরে ধীরে জলার আত্মা দের কান্নার দামামা কে জয় করল লালি। কন্সেন্ট্রেট করল আর ও। জলার কান্না উপেক্ষা করে শোনার চেষ্টা করল নগেন দাদুর হার্টবিট। চলছে দাদুর হৃদপিণ্ড। জলার কান্নার দামামার পাশে, অভি আর রহিম দা র হৃদপিন্ডের শব্দ পেল আর পেল হালকা বাঘমুড়োর ধুকপুকুনি আর খুব ভাল করে শুনলে আর ও কম নগেন দাদুর ধুকপুকুনি। লালি নিশ্চিত হলো, নাহ ঠিক আছে দাদু। একটু দ্রুত চলছে হৃদপিণ্ড, কিন্তু সেটা ভয়ের কারণে। কিন্তু লালি ওদের পিছনে আরো একজনের পায়ের আওয়াজ পেল। সাথে তার ও বুকের ধুকপুকুনি। সাথে তীব্র দুর্গন্ধ। অশ্বথামা!!!!!
The following 17 users Like nandanadasnandana's post:17 users Like nandanadasnandana's post
• Baban, bismal, boro bara, bourses, Bumba_1, ddey333, Indrakumar, kublai, Mompi, nandini20002022, nextpage, Pundit77, ray.rowdy, samael, Shikhachakraborty705, sudipto-ray, WrickSarkar2020
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,216 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
26-07-2022, 05:12 PM
(This post was last modified: 26-07-2022, 05:14 PM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
বাঘমুড়ো যখন নগেন দাদুকে নিয়ে যাচ্ছে আর তার পেছনে লালি, অভি আর রহিম অনুসরণ করতে গিয়ে দৌড়াচ্ছে .. এই সমগ্র সিকোয়েন্সটা দুর্দান্তভাবে ফুটিয়ে তুলেছো। চোখের সামনে ঠিক যেন মনে হচ্ছিল একটা চলচ্চিত্র দেখছি আর সবশেষে অশ্বথামার আগমন .. শেষ বাজিটা কি তাহলে হীরা মারবে? টান টান উত্তেজনায় শেষ হলো আজকের পর্বটি। পরবর্তী অর্থাৎ শেষ পর্বের অপেক্ষায়।
Posts: 42
Threads: 0
Likes Received: 58 in 38 posts
Likes Given: 160
Joined: Sep 2019
Reputation:
2
আজকে আপডেট না আসলে আমি পাগল হয়ে যেতাম। দুটো ব্যাপার দেখার ছিল ১) আগের দিনের নেক্সট পেজের প্রশ্নের উত্তর ২) আর লালির কি হলো। যা বুঝলাম দুটোর উত্তর ই তুমি দিলে। নিজের স্বভাব জাত ভঙ্গী তেই দিলে। উত্তর দেব বলে দিলে না। কাহিনীর ছলে দিলে। ভাবা যায় না। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। হীরা আর লালির মুর্তি পুজো করে আসছে নগেন দের পরিবার গত তিনশো বছর ধরে। যাই বলো এই গল্পের আরেক টা প্রাণ হলো নগেন জ্যাঠা বা দাদু যাই বলো না কেন। দ্বিতীয় উত্তর টা আশাই করেছিলাম। লালি সুস্থ হবে খুব তাড়াতাড়ি। একটা অসাধারণ পর্ব। বলার অপেক্ষা রাখে না। এতো সুন্দর করে জাল গোটাতে তুমি ই পার।
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
26-07-2022, 05:53 PM
(This post was last modified: 26-07-2022, 06:00 PM by nextpage. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
গত দু পর্বর সময় বিজ্ঞান আর সম্ভবতা যাচাইয়ের ডিটেইলস বর্ননা মাথা জিম ধরিয়েছিল আর আজ এসে হৃদয়ে দাগ কেটে গেল।
চারপাশ টা কেমন যেন আহাজারি আর স্বজনের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে। তোমার পয়েন্ট টু পয়েন্ট সিকুয়েন্স তুলে ধরার প্রবনতা পাঠক কে গল্পের সাথে এনগেজ করে রাখে, নিজেকে একটা চরিত্রে চিন্তা করতে থাকে আর তাতেই দৃশ্যের হাসি কান্না বেদনা ভালোবাসা অভিমান সবকিছুর অনূভব করতে পারে।
আজ বোতাম কাহিনি জানা হয়ে গেল, নগেন জ্যাঠা আগেও সন্দেহ করেছিলো হীরা কে নিয়ে যেদিন মন্দির কাছে হাওয়ায় ডিস্ক নিয়ে খেলছিল সেটাই ধীরে ধীরে বিশ্বাসে পরিনত হয়েছে। আর লালিও তার ভালোবাসার মানুষের আরেকটা চিরন্তন সত্য সম্পর্কে জানতে পারলো।
সামনের পর্বেই হয়তো শেষ হয়ে যাবে কিন্তু মন চাইছে আরো কয়েকটা পর্ব শুধু হীরা আর লালির জন্য।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Posts: 182
Threads: 0
Likes Received: 399 in 207 posts
Likes Given: 1,160
Joined: Jun 2021
Reputation:
64
(26-07-2022, 03:41 PM)nandanadasnandana Wrote: এই গল্প এর পরে আসবে আপাদমস্তক রগরগে ইন্সেস্ট কাহিনী। হ্যাঁ গল্পের মোড়কে ঢাকা কাহিনীতে সেক্স এর সব উপাদান ই থাকবে। এই গল্প শেষ হতে আর দুটো পর্ব খুব বেশী হলে। শেষ পর্ব লেখা হয়ে গেছে। আশা করি গল্প টা আপনাদের ভালো লেগেছে।
চেষ্টা করে দেখছিলাম, কত পারি এই রকম গল্প লিখতে। আপনাদের ভালবাসায় মনে হয়েছে, হয়ত বা পারব। আর একটু রিসার্চ ওয়ার্ক আর পড়াশোনা করেই লিখব এমন গল্প পরের দিকে।
আমার সাথে থাকার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
তাকিয়ে আছি।
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
সময় অতিক্রম করে অতীত বর্তমান মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় তখন তার ফলাফল ভবিষ্যতের নিজের জায়গা করে নেয় তৎক্ষণাৎ। যেন সেটা হবারই ছিল। সেই ভবিষ্যত কে ভেবেই অতীত ও বর্তমান কেউ লিখেছে। অসাধারণ একটা জাদু!
ঠিক যেমন বলেছিলাম Terminator এর গল্পটি। সেই অভিজ্ঞ যোদ্ধা নিজের নবীন যোদ্ধাকে মাকে বাঁচাতে না পাঠালে, আর মায়ের সাথে তার সম্পর্কের পরিস্থিতি সৃষ্টিই না হলে সেই সন্তান ও মূল নায়ক জন্মাতেই তো পারবেনা। এক্ষেত্রেও কেমন একজনের ষড়যন্ত্র দেখো.... ওই ভবিষ্যতের উন্নত যান্ত্রিক সমাজ নিজেকে রক্ষা করতে টাইম মেশিন বানিয়ে নিজের এক যোদ্ধাকে অতীতে না পাঠালে তো সেই মানব যোদ্ধা কিংবা নায়ক যাকে বলা উচিত সেও নিজের মাকে বাঁচাতে ওই যন্ত্র ব্যবহার করতে পারতোনা। সেই সুযোগই আসতোনা। ওই টাইম মেশিন আবিষ্কার ওই যান্ত্রিক শক্তির দ্বারা হলো বলেই মানব সমাজও সেটার পূর্ণ ব্যবহার করতে পারলো। এক্ষেত্রে বলা উচিত হবে যান্ত্রিক সমাজ নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মারলো। কারণ সে যতই উন্নত এক আধুনিক শক্তি হোকনা কেন, মহান শক্তির উর্ধে কখনোই নয়। তাই তাদের আবিষ্কারই তাদের কাল হলো।
ঠিক তেমনি মহান শক্তি সময় পারাপার রাস্তার সাহায্যে অতীতে গিয়ে এক মানুষকে রক্ষা করতে যে কাজ করেছিল, তার ফলাফল এর সাক্ষী ভবিষ্যতে অর্থাৎ বর্তমানে লালি ও বাকিরা হচ্ছে। অনুন্নত এক সময়ে সুরক্ষিত উন্নত সময়ের কিছু আবিষ্কার। যা সাধারণ হয়েও অসাধারণ। এক সময় ব্যাবধান এর কারণে, আর দুই সেটি কার কাছ থেকে এসেছে সেটা। আর সেই অতীত যাত্রার ও রক্ষা কর্মের ফল স্বরূপ ভবিষ্যতেও তার প্রভাব অর্থাৎ রাধা মাধবের বস্ত্রর অংশ টুকু বিশেষ নজর কাড়ে।
আর শেষে প্রি ক্লাইমাক্স অংশ টুকু দুর্ধর্ষ! বাঘমুড়া নিজের সর্ব শক্তি প্রয়োগ করে জিততে মরিয়া। নগেন দাদু কে নিয়ে ধ্বংস লীলা চালাতে চালাতে এগিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটা সত্যিই ভয়ঙ্কর, সাথে দাদুকে বাঁচাতে রক্ষাকারী দলের এগিয়ে যাওয়া। যেন চোখের সামনে সবটা দেখছি। কিন্তু সেই বালক যে এখনো এন্ট্রি নেয়নি, যেইমাত্র সেই পাগলা ছেলে আবির্ভাব হবে তখন তো পাঠক মহল উল্লাসে ফেটে পড়বে। শেষ সংঘাত! শেষ যুদ্ধ, এতো বছরের ক্রোধ, এতো বছরের লালসা একদিকে... আরেকদিকে একটি ছেলে। যাকে সবাই চেনে কিন্তু এবার চিনবে অন্য রূপে।
অপেক্ষায় রইলাম শেষ সাংঘাতিক সেই পর্বের।
Posts: 13
Threads: 0
Likes Received: 16 in 13 posts
Likes Given: 68
Joined: Jul 2022
Reputation:
0
wowww ei porrbo ta ami bujhte parlam. ar darun ekecho ei porbo ta didi. osadharon. botam er byapar ta durdanto. osadharon.. uff porer porber jonyo wait korte parchi na ar. ki durdanto porbo didi bole bojhate parbo na.
Posts: 13
Threads: 0
Likes Received: 16 in 13 posts
Likes Given: 68
Joined: Jul 2022
Reputation:
0
(26-07-2022, 03:41 PM)nandanadasnandana Wrote: এই গল্প এর পরে আসবে আপাদমস্তক রগরগে ইন্সেস্ট কাহিনী। হ্যাঁ গল্পের মোড়কে ঢাকা কাহিনীতে সেক্স এর সব উপাদান ই থাকবে। এই গল্প শেষ হতে আর দুটো পর্ব খুব বেশী হলে। শেষ পর্ব লেখা হয়ে গেছে। আশা করি গল্প টা আপনাদের ভালো লেগেছে।
চেষ্টা করে দেখছিলাম, কত পারি এই রকম গল্প লিখতে। আপনাদের ভালবাসায় মনে হয়েছে, হয়ত বা পারব। আর একটু রিসার্চ ওয়ার্ক আর পড়াশোনা করেই লিখব এমন গল্প পরের দিকে।
আমার সাথে থাকার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
keno didi ei rokom sundor golpo ki porer ta pabo na ar? sex er golpo o bhalo, kintu ei golpo ta jeno mon pran jure ache didi. ar tar sathe lalir ar hirar prem. please emon i golpo likhben didi. please
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(26-07-2022, 05:36 PM)boro bara Wrote: আজকে আপডেট না আসলে আমি পাগল হয়ে যেতাম। দুটো ব্যাপার দেখার ছিল ১) আগের দিনের নেক্সট পেজের প্রশ্নের উত্তর ২) আর লালির কি হলো। যা বুঝলাম দুটোর উত্তর ই তুমি দিলে। নিজের স্বভাব জাত ভঙ্গী তেই দিলে। উত্তর দেব বলে দিলে না। কাহিনীর ছলে দিলে। ভাবা যায় না। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। হীরা আর লালির মুর্তি পুজো করে আসছে নগেন দের পরিবার গত তিনশো বছর ধরে। যাই বলো এই গল্পের আরেক টা প্রাণ হলো নগেন জ্যাঠা বা দাদু যাই বলো না কেন। দ্বিতীয় উত্তর টা আশাই করেছিলাম। লালি সুস্থ হবে খুব তাড়াতাড়ি। একটা অসাধারণ পর্ব। বলার অপেক্ষা রাখে না। এতো সুন্দর করে জাল গোটাতে তুমি ই পার।
হয়ে গেছে জালের কাজ শেষ। এর পরে ধুন্ধুমার। হাহাহাহা।
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(26-07-2022, 05:53 PM)nextpage Wrote: গত দু পর্বর সময় বিজ্ঞান আর সম্ভবতা যাচাইয়ের ডিটেইলস বর্ননা মাথা জিম ধরিয়েছিল আর আজ এসে হৃদয়ে দাগ কেটে গেল।
চারপাশ টা কেমন যেন আহাজারি আর স্বজনের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে। তোমার পয়েন্ট টু পয়েন্ট সিকুয়েন্স তুলে ধরার প্রবনতা পাঠক কে গল্পের সাথে এনগেজ করে রাখে, নিজেকে একটা চরিত্রে চিন্তা করতে থাকে আর তাতেই দৃশ্যের হাসি কান্না বেদনা ভালোবাসা অভিমান সবকিছুর অনূভব করতে পারে।
আজ বোতাম কাহিনি জানা হয়ে গেল, নগেন জ্যাঠা আগেও সন্দেহ করেছিলো হীরা কে নিয়ে যেদিন মন্দির কাছে হাওয়ায় ডিস্ক নিয়ে খেলছিল সেটাই ধীরে ধীরে বিশ্বাসে পরিনত হয়েছে। আর লালিও তার ভালোবাসার মানুষের আরেকটা চিরন্তন সত্য সম্পর্কে জানতে পারলো।
সামনের পর্বেই হয়তো শেষ হয়ে যাবে কিন্তু মন চাইছে আরো কয়েকটা পর্ব শুধু হীরা আর লালির জন্য।
কিন্তু বলতো। এ জিনিস লালির মনে থাকলে কি আর সেটা ভালোবাসা হবে? বরং লালি ভুলে গিয়ে সব হীরার মধ্যে নিজের কানাই কে পেলে কতই না ভাল হবে? ভালোবাসার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে পুনরায়।
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(26-07-2022, 06:55 PM)issan69 Wrote: তাকিয়ে আছি।
পরবর্তী গল্পের জন্য?
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(26-07-2022, 08:44 PM)nandini20002022 Wrote: wowww ei porrbo ta ami bujhte parlam. ar darun ekecho ei porbo ta didi. osadharon. botam er byapar ta durdanto. osadharon.. uff porer porber jonyo wait korte parchi na ar. ki durdanto porbo didi bole bojhate parbo na.
তোমার ভাল লেগেছে শেষ পর্যন্ত। মানে বুঝতে পেরেছ। অনেক অনেক ভালোবাসা নিও।
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(26-07-2022, 08:47 PM)nandini20002022 Wrote: keno didi ei rokom sundor golpo ki porer ta pabo na ar? sex er golpo o bhalo, kintu ei golpo ta jeno mon pran jure ache didi. ar tar sathe lalir ar hirar prem. please emon i golpo likhben didi. please
ওমা লিখব না কেন। আর ও প্রেমের গল্প লিখব। কিন্তু কি জান, তোমাদের এই দিদি সমুদ্র ছেড়ে নদী তে সাঁতার কাটবে ভেবেছে। দেখি সাঁতার কেটে। সেই কত কাল আগে নদী তে সাঁতার কেটে হাতে খড়ি এই যাত্রার। নোনা জলে ( কান্নার জলের স্বাদ নোনা, তাই বললাম) ভাসলাম বেশ কিছু দিন। এবারে মিষ্টি জল ঘাঁটি কিছু দিন।
আমার আর ও দুটো প্রেমের গল্প আছে। মন ১ টা পোড়ো না এখন ই। কষ্ট পাবে বেশী। মন ২ টা পড়ো। তারপরে মন ১ টা পোড়ো। আশা করি ভালো লাগবে। ততদিনে সাঁতার কেটে আসি নদীতে। তুমি এই গল্প দুটো ততদিনে শেষ করে নাও।
তবে তোমার বয়েস জানি না। যদি পরিনত বয়স্ক হও তবে পড়ে ফেলো জলদি। লালি হীরা কে ভালো লাগলে ওদিকে অর্জুন নন্দনা, আর রাকা শিব কে ও ভাল লাগবে। তবে তোমার আই ডি দেখে মনে হচ্ছে তুমি মিলেনিয়াম গার্ল।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
আগের পর্বের কিছু অংশ...
লালি অভির ধনুকের লক্ষ্য বরার ভালো করে তাকিয়ে দেখল, আঁধারে দাঁড়িয়ে বিশাল দেহী বাঘমুড়ো আর নীচে পরে আছে নগেন দাদু। ধীরে ধীরে জলার আত্মা দের কান্নার দামামা কে জয় করল লালি। কন্সেন্ট্রেট করল আর ও। জলার কান্না উপেক্ষা করে শোনার চেষ্টা করল নগেন দাদুর হার্টবিট। চলছে দাদুর হৃদপিণ্ড। জলার কান্নার দামামার পাশে, অভি আর রহিম দা র হৃদপিন্ডের শব্দ পেল আর পেল হালকা বাঘমুড়োর ধুকপুকুনি আর খুব ভাল করে শুনলে আর ও কম নগেন দাদুর ধুকপুকুনি। লালি নিশ্চিত হলো, নাহ ঠিক আছে দাদু। একটু দ্রুত চলছে হৃদপিণ্ড, কিন্তু সেটা ভয়ের কারণে। কিন্তু লালি ওদের পিছনে আরো একজনের পায়ের আওয়াজ পেল। সাথে তার ও বুকের ধুকপুকুনি। সাথে তীব্র দুর্গন্ধ। অশ্বথামা!!!!!
পর্ব কুড়ি
শেষ পর্ব
লালি অভি কে বলতে যাবে কথাটা,
- অভি বাঘমুড়ো ছাড়াও কেউ আছে এখানে।
কিন্তু তার আগেই দেখল অভি মারাত্মক কনফিউজ হয়ে নিজের ধনুক একবার বাঘমুড়ো আর একবার পিছনেই কাউকে লক্ষ্য করে, লক্ষ্য সাধছে। বার বার ওর ধনুকের লক্ষ্য বদলাচ্ছে। অভি ভয় পেয়েছে মনে হচ্ছে। লালি হাত টা অভির কাঁধে রাখতেই অভি একটু থামল। নাহ এবারে আর কানে শুনে কিছু করতে হচ্ছে না। কারণ অন্ধকার টা বেশ রয়ে এসেছে সবার। তার কারণ স্বরূপ লালি দেখল রহিম এবারে এগিয়ে গেল বাকি দুজন কে পিছনে রেখে। একা বাঘমুড়ো কে নয়। আর ও কাউকে দেখেছে রহিম। রহিমদার গলা থেকে মানুষের আওয়াজ নয়। অবাক করা হিস হিস শব্দ শুনতে পাচ্ছে লালি। সাথে সাথে রহিমদার চেহারা বড় হচ্ছে আর পেশী বহুল হচ্ছে, সেই আগের দিনের রাত্রের মতন যেদিনে ওরা প্রথমবার আক্রমণ করেছিল বাঘমুড়ো কে।
লালি নিজেও বুঝতে পারছে না কি করা উচিৎ। আক্রমণে যাওয়া উচিৎ নাকি কথা বার্তা তে সময় নষ্ট করা উচিৎ। কিন্তু আজকে নিষ্পত্তি না হলে আর নগেন দাদু ওদের জিম্মায় থাকলে, সর্বনাশ বাড়বে বই কমবে না। লালি প্রথম বলল রহিম কে,
- রহিম দা সবার আগে দাদু কে মুক্ত করতে হবে ওদের হাত থেকে। দাদুর কাছে আছে মণির চাবি। কিন্তু বুঝতে পারছি না কি ভাবে আটকাব। একলা বাঘমুড়োই আমাদের জন্য বেশী। পিছনে আবার অশ্বথামা।
রহিমের কাছে এই সব কোন ব্যাপার নয়। রহিম ইচ্ছে মতন নিজের বল তূল্য করতে জানে শত্রুর সামনে। বাঘমুড়োর বল যতই হোক না কেন, রহিম কিছুক্ষণের মধেই তূল্য বল নিজের শরীরে সমাহিত করতে পারবে। ও ব্যস্ত এখন, বাঘমুড়োর দিকে ছুটে যেতে।
তখন অভি বলল,
- লালি দি ভরসা রাখ আমার উপরে। আমি অশ্বথামা কে আটকাচ্ছি। তুমি আর রহিম দা দাদু কে বের করে আনো ওখান থেকে।
অভির কথা শেষ ও হলো না। রহিম ছুটে গেল বাঘমুড়োর দিকে। লালি দেখল সাথে সাথেই অভির তীর টা লক্ষ্য বদলে বাঘমুড়োর পিছনে আসা, অন্ধকারের জন্য আবছা দেখতে পাওয়া অশ্বথামার দিকে ছুটে গেল একটা শিষ দিয়ে তীব্র বেগে। আর কানের পাশেই ছিলার শব্দে লালি জেগে উঠল। ভুলে গেল কিছু আগেও বাঘমুড়ো ওকে প্রায় হত্যা করে ফেলেছিল। রহিম কে অনুসরণ করল লালি তীব্র বেগে। দৌড়ন অবস্থা তেই ওর রূপান্তর হলো কয়েক লহমা তেই।
আর অন্য দিকে অভি বুঝল , অশ্বথামা চকিতেই তলোয়ার বের করে অভির তীর টা আটকে দিল। আওয়াজ হলো “ঠং”। অভি নিজেও জানে না কি করবে এবারে। যে এই রকম একটা তীব্র গতির তীর কে দুই ইঞ্চি চওড়া একটা তলোয়ার দিয়ে আটকে দিতে পারে অন্ধকারেই, তার শিক্ষা কি রকম মারাত্মক সে নিয়ে কোন সন্দেহ নেই আর। কিন্তু অভির মধ্যে ভয় এর থেকেও বেশী দুষ্টু বুদ্ধি খেলল। তার মধ্যে ভয়ের থেকেও বেশী খেলা করতে ইচ্ছে হলো। মনে হলো অনেক যোদ্ধার সাথে একা সে লড়েছে আগেও। সেও যে অশ্বথামা কে পরাস্ত করেছিল তাও সাতজন মহারথীর সাথে একসাথে যুদ্ধের সময়ে সেটা অশ্বথামা কে বুঝিয়ে দিতে হবে এখনি। ও চকিতেই দুটো তীর কে জুড়ল একসাথে। অশ্বথামার শরীরে পৌঁছনর আগে দুটো তীরের মধ্যে গ্যাপ টা কত হতে পারে সেটা ও আন্দাজ করে ছিলা টেনে ধরল। দুটো তীর একসাথে বের হবার সমস্ত অঙ্ক ও জানে। কারণ যখন তীর দুটো ছিলা থেকে বের হবে তখন শুরু থেকেই একটা কোন তৈরি করে ইংরাজী ভি এর মতন দুটো তীরের মধ্যে গ্যাপ বাড়তে থাকবে। কাজেই গতি থাকতে হবে, আঘাত করতে হবে আর ভাবতে হবে, একটা তীর কে আটকাতে গেলে অন্য তীর টা যেন ওর কব্জি বা হাতে আঘাত করে। গ্যাপ টা ওই রকম আন্দাজেই নিক্ষেপ করতে হবে তীর টা। তবেই ও তরবারী ছাড়বে, না হলে এই তরবারি দিয়েই ও সব তীর আটকে দেবে। কারণ অভি তলোয়ার যুদ্ধেও অশ্বথামা কে পরাস্ত করেছিল। ও অশ্বথামা কে চেনে ভাল করেই। ওর যুদ্ধশৈলী অভি জানে।
দুটো করে তীর জুড়ে ও পর পর তিনবার ছুঁড়ল। আর ছুঁড়ল যেন প্রতিবারের মাঝে কোন গ্যাপই নেই। অভি নিজেও অবাক। কি ভাবে পারল ও এমন ভাবে তীর ছুঁড়তে? জানে না এই শিক্ষা ওর কোথা থেকে এল। কিন্তু তির ছুঁড়তে ছুঁড়তেই ওর মনে পড়ছে অনেক কথা। চারিদিকে অস্ত্রের ঝনঝনানি, বাতাসে রক্তের গন্ধ। আর তার সাথে মরণ আর্তনাদ।
এদিকে অশ্বথামা মনে হয় ভাবেও নি একটা বাচ্চা ছেলের কাছ থেকে এর প্রত্যুত্তর আসবে। বাতাসের হাওয়া কাটার শব্দে ও বুঝে তো ছিল তীর একটা না দুটো আসছে। ওর মনে একসাথে অনেক গুলো প্রশ্ন এল। আর সাথে প্রতিবর্ত ক্রিয়ার মতন হাতের তরবারি টা ঘুরে এল একচক্কর। তাতেই দুটো তির প্রতিহত হল পলকেই। কিন্তু ও ছিলার শব্দ আরো দুটো শুনতে পেয়েছে। মানে এর পিছনেও আরো আঘাত আসছে। এই ভাবনার জন্য যতটুকু সময়ের দরকার তার থেকেও কম সময়ে পর পর আরো চারটে তীর এসে আঘাত করল অশ্বথামা কে। প্রথম তীর টা প্রতিহত করতে পারলেও, পরের গুলো প্রতিহত করতে পারল না অশ্বথামা। বরং আসতে দিল তীর গুলো কে। এ জিনিস করতে পারত কিছু মানুষেই। অর্জুন, পিতা দ্রোণ, পিতামহ ভীষ্ম ছাড়া আরো দুজন। এক অঙ্গরাজ কর্ণ আর অর্জুন পুত্র অভিমন্যু। ততক্ষণে পরপর দুটো তীর এসে অশ্বথামার হাত থেকে ফেলে দিয়েছে তরবারি টা। আর দুটো তীর গেঁথে গেছে অশ্বথামা উরু তে আর একটা ফস্কে গেছে। উরুর তীর টা গ্রাহ্য করল না অশ্বথামা। অশ্বথামা ঝুঁকে তীর টা নিয়ে ওজন মেপে দেখল, এ তীর অঙ্গরাজের নয়। কর্ণের তীর আরো ভারী। ভীষ্ম আর পিতার তীর অপেক্ষাকৃত পিছনের সময়ে নির্মিত ছিল, বেশ ভারী আর সরাসরি আঘাত করত লক্ষ্যে। অনেক টা অর্ধ উপবৃত্তের আকারে। উল্লম্ব ছিল সেই উপবৃত্তের অবস্থান। বস্তুত অশ্বথামাও পিতার কাছে শিক্ষা লাভ করেছিল। সেই নিজের তীর বানাত ভারী। কম সময়ে লক্ষ্যে আঘাত করত অশ্বথামার তীর নিজের পিতার মতই। কিন্তু এ তীর হালকা। একমাত্র অর্জুন ভারী তীর ব্যবহার করত না। ওর শিক্ষা এতোই বলবান ছিল যে, ও পছন্দ করত হাওয়ায় তীরের অভিমুখ বদলাতে। অর্জুনের সাথে যুদ্ধে অশ্বথামার প্রতিবার পরাজয় ঘটত। কারণ ওই একটাই, এই অভিনব তীর তৈরির প্রকৌশল আর সেই তীর কে যুদ্ধে ব্যবহার ওর ই আয়ত্ত্বাধীন ছিল। যতবার অর্জুনের সাথে ওর যুদ্ধ হয়েছে, অশ্বথামার একটা তীরের বদলে ওর কাছে ধেয়ে এসেছে দশগুন তীর। একটা তীরে ও অশ্বথামার বানের জবাব দিত বাকী তীর সরাসরি অশ্বথামা কে আঘাত করত। অর্জুনের তীরের গতিপথ সর্বদিকে বাঁক নিয়ে আঘাত করত অভ্রান্ত ভাবে লক্ষ্যে। ওর সাথে যুদ্ধে পেরে ওঠা একপ্রকার অসম্ভব ছিল। কিন্তু এ তীর অর্জুনের ও না। তীরের ফলা ছোট। অর্জুনের তীরের ফলা বড় হতো, হাওয়ায় খেলা করার জন্য। কাজেই এ তীর অর্জুন পুত্র অভিমন্যুর। এতো দ্রুততার সাথে তীর ছুঁড়তে একমাত্র অর্জুন ব্যেতীরেকে সুভদ্রা-অর্জুন পুত্র ই পারে। অশ্বথামা দেখেছে চক্রব্যূহে অভিমন্যুর কেরামতি। সেদিনেই বুঝে গেছিল অর্জুন ছেলের ভিতরে নিজের অর্জুনত্ব একেবারে ঠেসে ঠেসে ভরে দিয়েছে ইরাবানের মতই।
ততক্ষণে অভি নিজের ধনুকে জুড়ে ফেলেছে আর ও দুটো তীর। অপেক্ষা করতে লাগল অশ্বথামার উঠে দাঁড়ানোর জন্য। আর এদিকে ঘোর যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে বাঘমুড়োর সাথে লালি আর রহিমের। আগের বারের মতন কেউ ই আর সপাট আক্রমণে যাচ্ছে না। মাপছে নিজেদের। লালি কে দেখছে আর বাঘমুড়ো ফুঁসছে। লালি তুলনায় দুর্বল তাই বাঘ মুড়ো লালির কাছে আর রহিমের থেকে দূরত্ব বেশী বজায় রাখছে। কিন্তু লালি আর রহিমের মধ্যে অদৃশ্য কোন কথোপকথনে দুজনাই একসাথে আক্রমণ শানানোর জন্য ছুটে গেল বাঘমুড়োর দিকে। বাঘমুড়ো এক হাত দিয়ে লালির বিশাল দাঁত এর আক্রমণ সামলালো আর অন্য হাতে রহিমের গদার মতন ঘুষি টা আটকে মাথা দিয়ে আঘাত করল রহিমের বুকে। রহিম ছিটকে গেল অনেক টা দুরত্ব আর সাথে সাথে বাঘমুড়ো লালি কে ধরতে গেল, কিন্তু লালি নিজেকে বাঁচিয়ে একটা নিরাপদ দুরত্বে এসে ঘুরতে লাগল বাঘমুড়োর চারিপাশে। ততক্ষণে দ্বিগুণ ক্রোধে উঠে এসেছে রহিম বাঘমুড়োর কাছে।
এদিকে পিছন পিছন পরেশ, উমা আর মহাদেব ছুটে যাচ্ছিল লালিদের সাথে। কিন্তু ওই তিনজনের গতির সাথে কোন ভাবেই পেরে উঠছিল না। শেষকালে একটা জায়গায় এসে সবাই থেমে গেল। সামনে জলার মাঠ তো দেখতে পাচ্ছে সবাই কিন্তু সেখানে কিচ্ছু নেই। উমা কেঁদে উঠলো মহাদেবের বুকে মাথা রেখে। সন্ধ্যে থেকে এমনিতেই হীরার জন্য কান্না কাটি করে কিচ্ছু খায় নি উমা সেটা মহাদেব জানে। মহাদেব দেখল এ জিনিস বড় সোজা না। নাহ উমা কে বাড়িতে পৌঁছে পরেশ কে নিয়ে ও বের হবে খুঁজতে সবাই কে। এই মহাদুর্দিনে ওই ছোট ছোট ছেলে মেয়ে গুলো বাঘমুড়োর পিছনে ধাওয়া করতে পারে তাহলে ওরা কেন পারবে না। নগেন জ্যাঠা কে এই বয়সে তুলে নিয়ে গেলো ওই পিশাচের দল, তার কারণ ও কেউ বুঝতে পারছে না। একমাত্র পরেশ বুঝতে পারছে অল্প অল্প। ও বলল,
- মহাদেব, চল উমা কে আমরা বড়িতে পৌঁছে দিয়ে গ্রামের লোক জড়ো করি। এই খানে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই কোন। আমরা পাব না এই ভাবে ওদের কে।
মহাদেবের কিছু বলার আগেই উমা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। চিৎকার করে বলল,
- তোমরা যেখানে যাবে যাও। আমার ছেলেকে না নিয়ে আমি ওই বাড়িতে ঢুকতে পারব না কোনমতেই। আমার ছেলে চাই। দরকারে আমি নিজেকে শেষ করে দেব তবু আমি ছেলে ছাড়া বাড়ি ঢুকব না।
উমার কান্নায় পরেশ আর মহাদেব একে অপর কে দেখে নিয়ে উমা কে কিছু বলতে যাবে, সেই সময়েই দেখল পিছনে দল বেঁধে আসছে নগেন জ্যাঠার বাড়ির লোক। মহাদেব দেখল ওদের বাড়ির সবাই আছে একসাথে। অন্ধকারে কেউ হ্যারিকেন কেউ বা টর্চ নিয়ে এসে হাজির হয়েছে। নগেন জ্যাঠার ছোট ছেলে বিমল, পরেশের বন্ধু। ও বলল,
- পরেশ, মহাদেব, আমাদের একবার বড় রাস্তায় যেতে হবে। ওদিকে হীরা সমগ্র গ্রামবাসী কে জড়ো করে এই জলার মাঠের দিকে আসছে। কিন্তু ওরা এই রাস্তায় নয়, আসছে মেইন রোড ধরে। জানিনা কোথা থেকে সব মশাল জ্বালিয়ে আসছে হীরার সাথে।
বিমল এর কথায় পরেশ মহাদেব দুজনাই অবাক হলো। পরেশ বলে উঠলো,
- সে কী?
পরেশের কথা টা শেষ ও হলো না। উমা চিৎকার করে হীরা বলে চিৎকার করতে করতে বড় রাস্তার দিকে ছুটতে শুরু করল। মহাদেব ধরে রাখতে পারল না উমা কে। মহাদেব ও পিছন পিছন ছুটল,
- আরে অন্ধকারে লেগে যাবে কোথাও। উমা শোন!!!
আর শোনার মতন অবস্থায় কেউ নেই। সবাই মিলে বড় রাস্তার দিকে দৌড়ল। মহাদেবের বাড়ির পিছনের গলি টা পার হবার সময়েই দেখছিল বড় রাস্তা একেবারে আলো হয়ে আছে। আর কৃষ্ণ নামে চারদিক মুখরিত। উর্দ্ধশ্বাসে গলি টা পার করে এসে দেখল দিনের মতন আলো চারদিকে মশালের। পরেশ দেখল কেউ বাকি নেই আর। সব বড়দের হাতে একটা করে মশাল আর সবার মুখে কৃষ্ণ নাম। আকাশে বাতাসে যেন সমবেত সঙ্গীতের মতন ধ্বনিত হচ্ছে। আর উমা নিজের ছেলেকে খুঁজে চলেছে পাগলের মতন। এগিয়ে গেছে অনেক টা আগে। পরেশ আর মহাদেব সামনে ছুটে গিয়ে দেখল, হীরা এক এক করে বিশাল অশ্বত্থ গাছের পেটের ফুটো দিয়ে এক এক করে মানুষ পার করাচ্ছে উলটো দিকে আর উমা ছেলেকে পিছন থেকে পাগলের মতন জড়িয়ে ধরে আছে।
এদিকে জলার মাঠে, সামনে যোদ্ধার তীর দেখেই অশ্বথামা বুঝে গেল এই ছেলের সাথে লড়তে গেলে শুধু তীর ধনুক বা তরবারির যুদ্ধে পারা যাবে না। এর সাথে কথা আর তন্ত্র যুদ্ধ করতে হবে। মায়া যুদ্ধ না হলে এই ছেলেকে পরাস্ত করা যাবে না। পাশে পড়ে থাকা ধনুক টা হাতে নিয়ে অশ্বথামা হাঁক দিল,
- অভিমন্যু!!!!
অভির মাথায় ঢুকল না কথা টা। তার নাম অভিজিৎ। অভিমন্যু নয়। আর অতো কথায় কাজ কি? লড় তুই, হয় তুই মরবি না হলে আমি। ও গেলই না ডাকের সাড়া দিতে, তড়িৎ গতিতে ধনুকে জুড়ে থাকা দুটো তীর নিক্ষেপ করল অশ্বথামার উদ্দেশ্যে। অশ্বথামা যেন জানত এটা। ছিলার আওয়াজের সাথেই ও নিজের ধনুকে তীর জুড়ে ছুঁড়ল। কিন্তু তাতে একটা তীর প্রতিহত হলেও বাকি টা আটকাতে পারল না অশ্বথামা। বাঁক নিয়ে এসে সোজা এসে বিঁধে গেল অশ্বথামার কাঁধে। অশ্বথামা এক ফোঁটা ও শব্দ করল না। ব্যাথার কোন লেশ মাত্র নেই ওর চোখে মুখে। শুধু তীরের ধাক্কায় পিছিয়ে গেল খানিক টা। শুধু বলল,
- অভিমন্যু তুমি আমাকে মেরে ফেলতেই পার। তোমার সেই শিক্ষা আর বীরত্ব আছে। কিন্তু আমি কি মরব? পারবে না তুমি আমাকে মারতে। তোমার ই মামার শাপে আমি অমর। হাহাহাহাহাহা।
তারপরে খানিক চুপ থেকে বলল অশ্বথামা,
- একটা কথা বল, তুমি কাকে বাঁচাতে এসেছ? মনে পরে, তোমার দাদা ইরাবান কে হত্যা করেছিল অলায়ুধের দাদা অলম্বুষ। তোমাকে কত ভালবাসত ইরাবান। মায়া যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে ইরাবানের কাছে, অলম্বুষ সময় চেয়ে নিয়েছিল। ইরাবানের সেই দয়ার পরেও, বিশ্রাম রত সুদর্শন ইরাবানের গলা কেটে ফেলেছিল অলম্বুষ। আর তুমি সেই ইরাবানের হত্যাকারীর বংশধর দের বাঁচানোর জন্য আমার সাথে যুদ্ধ করছ? এরা আমার মণি চুরি করেছে অভিমন্যু। চোর কে শাস্তি দিতে দেবে না? এমন শিক্ষা তো তোমার নয়? তোমার বাবা মহানতম যোদ্ধা, অর্জুন সামান্য গরু চোর কে শাস্তি দিতে গিয়ে নিজের বারো বছরের বনবাস মেনে নিয়েছিল। আর তুমি সেই তুচ্ছ অপাংক্তেয় রাক্ষস অলায়ুধের বংশধর দের বাঁচাচ্ছ? আমার সাথে যুদ্ধ করছ?
গোল লেগে গেল অভির মাথায়। কি বলছে পিশাচ টা? ওকে অভিমন্যুই বা বলছে কেন ও। ও তো অভিজিৎ, শুধুই অভি। যা বলছে বলুক শয়তান টা। অভি ফের নিক্ষেপ করল দুটো তীর। অশ্বথামা আটকানোর চেষ্টা ও করল না। দুটোই গিয়ে বিঁধে গেল অশ্বত্থামার শরীরে। অশ্বথামা হেসে উঠলো জোরে। সাথে সাথেই অভি দেখল কালো মতন ধোঁয়ায় অশ্বত্থামা ঢেকে গেল। অভির মনে হলো কোন পিশাচ এসে অশ্বথামা কে ঘিরে ধরল। উফ কি মারাত্মক চেহারা। অশ্বথামার গলা শুনতে পেল অভি,
- পারবে না অভিমন্যু আমার সাথে লড়তে। না তো তোমার বধ্য আমি , না তুমি আমাকে পরাজিত করতে পারবে। বরং আমি তোমাকে সুযোগ দিচ্ছি, তোমার দাদা ইরাবানের হত্যার বদলা নাও।
ঠিক সেই সময়ে মাঠের শেষে গ্রামের শুরু তে একটা আলো দেখতে পেল দুজনেই। আর অশ্বথামা দেখল অলায়ুধের বংশধর উঠে বসেছে। এটাই চাইছিল অশ্বথামা। এদিকে বাঘমুড়োর একটা পদাঘাতে লালি ছিটকে চলে এসেছিল অশ্বত্থ গাছের বেদী তে। ও উঠে নিজেকে একটু সামলে নিতেই দেখল রহিম দা বাঘমুড়ো কে ছেড়ে কথা বলল না। হাতাহাতি হবার সময়েই বাঘমুড়োর দুটো হাত কে নিজের দুটো শক্তিশালী হাতে ধরে বুকে যে লাথি টা মারল তাতে অন্য কেউ হলে ওখানে হাত দুটো ছিঁড়ে শরীর টা শতখন্ড হয়ে ছিটকে পড়ত না জানি কত টা দূরে। কিন্তু বাঘমুড়ো র কিছু হলো না, শুধু লালি যেমন বাঘমুড়োর লাথি তে ছিটকে বেদীর কাছে চলে এসেছিল, বাঘমুড়ো ও ছিটকে এই দিকেই গড়িয়ে আসতে শুরু করল। লালি সময় নষ্ট করল না, হুংকার নিয়ে দৌড়ে গেল সামনে দিকে। গড়িয়ে আসা বাঘমুড়োর কাঁধে কামড়ে ধরে আবার ছুঁড়ে দিলো বাঘমুড়ো কে আবার রহিম দার দিকেই।রহিম এই সুযোগ একদম হারালো না । লালির থেকে আসা বেসামাল বাঘমুড়ো কে দুই হাতে আকাশে তুলে ধরে মাটিতে আছাড় মারল পলকেই। কেঁপে উঠল মাটি। এই প্রথম বাঘমুড়ো সময় নিল উঠতে। কিন্তু সেই অবকাশ ও দিল না ওকে রহিম। পা দিয়ে চেপে ধরল একটা হাত বাঘমুড়োর। আর অন্য হাত টা লালি কামড়ে ধরল ভয়ঙ্কর ভাবে।
ঠিক তখনি রহিম লালি আর সবাই দেখল অশ্বত্থ গাছের কাটা পেট থেকে একটা করে মশাল বের হচ্ছে আর সেই মশাল নিয়ে আসছে একজন করে মানুষ। দুজনাই এই ঘটনায় একটু বিহবল হয়ে গেল। আর সেই সুযোগ টা নিল বাঘমুড়ো। পা দিয়ে মাটিতে ধাক্কা দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল সাথে সাথেই। আর উঠে পড়ল মাটি থেকে। আর উঠেই সামনের দৃশ্য দেখে হুহুংকারে চারিদিক ভরিয়ে দিল। রহিম আর লালি দুজনাই সরে এল বাঘমুড়োর নাগাল থেকে।
একটা অপার্থিব পরিবেশ তৈরি হল মাঠে। গ্রামের সীমানা ধরে জলার মাঠ এর সামনেই গ্রামবাসী রা দাঁড়িয়ে আছে হাতে মশাল নিয়ে আর অবিরাম কৃষ্ণ নাম জপে যাচ্ছে। একটা অপার্থিব সুন্দর সুরে।
জয় জয় রাধা রমণ হরি বোল,
জয় জয় মধু সূদন হরি বোল।
ধীরে ধীরে লালির কানে দামামার মতন বাজতে থাকা জলার আত্মাদের কান্না কমতে শুরু করল। মনের মধ্যে ভয় ছাড়িয়ে, প্রতিশোধ ছাড়িয়ে এক অপ্রাকৃতিক শান্তি ফিরে এল। দেখল উমা কাকি কে নিয়ে হীরা বের হয়ে এল এই জলার মাঠে, অশ্বত্থ গাছের ফোকর দিয়ে। এই অন্ধকারেও যেও হীরার তেজ দেখার মতন। নগেন দাদুর কথা টা ফেলে দেবার মতন না। আহা কি রূপ!! মনে হলো সব ভুলে ওই দুই পায়ের তলায় গিয়ে বসে পরে লালি। যাক আর চিন্তা নেই। ছেলেটা আছে সামনেই। এখন বাঘমুড়ো নিজেকে বাঁচাক।
রহিম দেখল বিশাল অসীম সাগরে নিজের শীতল শরীরের শীতলতায় যে শুয়ে বিশ্রাম নেয়, যার গুরুভারে মাঝে মাঝে তার ও মনে হয় ঘুমের প্রয়োজন সেই অমিত শক্তি সামনে উপস্থিত।
অভি দেখল পিতার অনুপস্থিতি তে যে তাকে পিতার মতই আগলে রেখেছিল, যে তাকে পিতার মতই শিক্ষা দিয়েছে, যে তাকে পৃথিবীর সব থেকে বিপজ্জনক যোদ্ধা বানিয়েছে সেই বিশাল ছাতা তার সামনে। চারিদিকে শতশত মশাল জ্বলছে, কিন্তু তার মধ্যেই হীরা কে যেন আলাদা করে চিনে নেওয়া যাচ্ছে।
তিনজনেই ফিরে এল যুদ্ধের ময়দানে। ফুঁসতে থাকা রহিম ঘুরে দাঁড়ালো সামনে বিশালাকায় বাঘমুড়োর দিকে। মশালের আলোয় চকচক করে উঠলো লালির দাঁত। ঘুরে দাঁড়ালো লালি বাঘমুড়োর দিকে। অভি চোয়াল চেপে ধরে পলকেই জুড়ে নিল দুটো মহাশক্তিশালী তীর। টেনে ধরল আকর্ণ ছিলা অশ্বথামার দিকে লক্ষ্য স্থির করে । মনে মনে বলল, নিপাত যাক এই পিশাচ।
কিন্তু ততক্ষণে মনে হয় দেরী হয়ে গেছিল। অশ্বথামা বুড়ো নগেন কে তুলে ধরে গলার কাছে নিজের তরবারী টা ধরে রেখে দিয়েছে। অভি পারে এক্ষণি দুটো তীর দিয়ে এক ই সাথে অশ্বথামা র দুটো গলে যাওয়া চোখ কে ফুঁড়ে দিতে। কিন্তু নগেন দাদুর পা টলছে। অশ্বথামা তীরের আঘাতে পিছিয়ে গেলেই নগেন দাদুর গলায় ধারালো তলোয়ার টা বসে যাবে। ইশ যার জন্য এতো যুদ্ধ সেটাই এতো সহজে শেষ হয়ে যাবে।
অশ্বথামা বলে উঠল,
- ব্যস আমার কিচ্ছু চাই না। শুধুই মণি চাই আমার। আমার মণি। আমার। শেষনাগ, অভিমন্যু তোমরা বোঝ। এই জঘন্য অলায়ুধের বংশধর আমাকে বলে দিলেই আমি চলে যাব এখান থেকে। কারোর কোন ক্ষতি করব না।
নিজের বংশে গত তিন হাজার বছর ধরে বয়ে নিয়ে আসা এই মণির হদিশ নগেন মৃত্যুর বিনিময়েও বলবে না সেটা নগেন ও জানত। ওই মণি পৃথিবীর সম্পদ। কোন একটা অশ্বথামার নয়। ও চুপ করে রইল। কোন কথা বলল না। মনের মধ্যে অদম্য সাহস। শুধু প্রার্থনা করছিল কৃষ্ণের কাছে,
- হে ভগবান এই শয়তান আমাকে মেরে ফেললে এই মণির দায়ভার চলে যাবে বংশের জ্যেষ্ঠ পুত্রের কাছে। তাকেও তুমি এই ক্ষমতাই দিয়ো। যে যেন এই মণির খবর কাউকে না দেয়। নগেন জানে। এই মণি ই পৃথিবী তে ভালত্ব বজার রেখেছে। ভাল খারাপের সমতা বজায় রাখে।
লালি দেখল নগেন চুপ করে আছে। হয়ত অশ্বথামা মেরেই ফেলবে নগেন দাদু কে। ঠিক সেই সময়ে হীরা চেঁচিয়ে উঠল,
- দাদু বলে দাও মণির ঠিকানা। ওর পরিনতি ওই মণি তেই। বিশ্বাস রাখো আমার উপরে। মিথ্যা আমি বলি না
নগেনের আর কিছু বলার ছিল না। চোখ বুজতেই সেই অন্তর্নিহিত জ্ঞান চলে গেল অশ্বথামার কাছে। ব্যস কিছুক্ষণের নীরবতা আর সাথে সাথেই অশ্বথামা অন্তর্ধান করল। নগেন জানে যে জ্ঞান চাবি দিয়ে মণির দ্বার রক্ষিত ছিল সেই জ্ঞান চাবি দেবার সাথে সাথেই অশ্বথামা সেই জায়গায় চলে গেল। আর সকল অবাক করে দিয়ে, অশ্বথামার মধ্যেকার তন্ত্র শক্তি এসে বাসা বাঁধল বাঘমুড়োর শরীরে। ব্রহ্মপিশাচ আর তারকীণি দুজনের শক্তি মিলিত হয়ে বাঘমুড়োর মধ্যে এসে ঢুকল। কালো হয়ে যে বিশাল ধোঁয়ার কুন্ডলী অশ্বথামা কে ঘিরে রেখেছিল সেটা ঘুরে গিয়ে সোজা বাঘমুড়োর শরীরে ঢুকে গেল।
গর্জন করে উঠল বাঘমুড়ো। কিছুক্ষণ আগেই রহিম আর লালির কাছে হারতে বসেছিল বাঘমুড়ো। কিন্তু এই গর্জন নতুন উদ্যমে আক্রমণের গর্জন। বিশাল কায়া নিয়ে বাঘমুড়ো এগিয়ে গেল রহিমের দিকে। কিছুক্ষণ আগে অব্দি রহিম কে ছেড়ে বাঘমুড়ো লালি র দিকে যাচ্ছিল আক্রমণের জন্য কিন্তু এবারে উলটো হলো। লালি কে ছেড়ে রহিম কে আক্রমণ করল বাঘমুড়ো। লালি সাবধান করে দিল রহিম কে। আর ততক্ষণে নগেন কে অভি পৌঁছে দিল অশ্বত্থ গাছের নীচে। অভি আর সময়ে নষ্ট করল না। বাঘমুড়ো কে প্রতিহত করতে , অনবরত তীরের বর্ষন শুরু করল। কিন্তু আশ্চর্য্য উপায়ে সেই তীর গুলো বাঘমুড়ো কে স্পর্শ করার আগেই যেন গলে গলে পরছিল মাটিতে। তবুও অভি থামল না।
এদিকে রহিমের দিকে বীর বিক্রমে ছুটে আসা বাঘমুড়োর এই দর্প সহ্য হলো না রহিমের। নিজের কালরূপ ধারণ করে হিস হিসিয়ে ছুটে গেল সেও বাঘমুড়োর দিকে। লালি শরীর টা কে পিছনে টেনে এনে, ধনুকের ছিলার মতন ছিটকে গেল সামনের দিকে বাঘমুড়োর উদ্দেশ্যে। যুযুধান তিন মহাবীরের যুদ্ধ সামনে থেকে প্রতক্ষ্য করতে লাগল সমগ্র গ্রামবাসী। চোখের সামনে এই মরণপণ যুদ্ধ না তো কেউ কোন দিন দেখেছে না তো দেখবে। কিন্তু সময় টা না তো রহিমের ছিল না ছিল লালির। অশ্বথামার তন্ত্র শক্তি বাঘমুড়ো কে কত শত বাঘমুড়োর মিলিত শক্তি দান করেছে সে নিয়ে কারোর ই ধারণা ছিল না। মহাকালের শক্তি জুড়ে গেছিল বাঘমুড়োর সাথে। মহাকালীর দুই রুদ্রানুচর বাঘমুড়োর সাথী হয়ে বাঘমুড়ো কে রক্ষা করছিল। সবার আগে ছিল রহিম। রহিম এর সামনে যেতেই রহিম সর্বশক্তি তে বাঘমুড়ো কে আক্রমণ করল। শরীরের যত শক্তি ছিল সেই শক্তি তে বাঘমুড়োর দুই হাত টেনে ধরে মাটিতে ফেলে দিতে চাইছিল শেষ নাগ। কিন্তু দেরী হয়ে গেছে। বাঘমুড়ো চোখের পলকে শেষনাগ কে মাটি থেকে তুলে যে আছাড় টা মারল, রহিম তাতে তীব্র বেগে ছিটকে সোজা জলার জলে গিয়ে পরল।
লালি বুঝল শেষ নাগের সময় লাগবে বাঘমুড়োর সাথে বলের তূল্যতা আনতে। ততক্ষণে লালি ঝাঁপিয়েছে বাঘমুড়োর মাথা লক্ষ্য করে। কিন্তু এ তো একলা নয়। ওই সময়েও বাঘমুড়ো তীব্র ক্রোধে লালির দিকে ফিরেই পদাঘাত করল সোজা লালির বুকে। আর তার সাথে নখর যুক্ত সামনের হাতের তীব্র আঁচড়। কোন টাই বিফলে গেল না। দুটো আঘাত ই মারাত্মক রকম লালি কে আহত করল। লালি রহিমের মতই ছিটকে গিয়ে পরল জলার অন্য কিনারে। কিন্তু আর উঠতে পারল না লালি। ছুটে গেল পরেশ নিজের মেয়ের জন্য। আর সেটাই হলো কাল। বাঘমুড়োর অন্ধ ক্রোধ গিয়ে পরল পরেশের উপরে। চিনতে পারল বাঘমুড়ো প্রথম শিকার কে যা তার হাত থেকে বেড়িয়ে গেছিল ওই কুকুর টার জন্যে। বাঘমুড়োর ক্রোধের বলি হল পরেশ। অতি ক্রোধে পরেশ কে দুই হাতে ধরে, মুন্ডু ছিঁড়ে নিতে যাবে সেই সময়ে এগিয়ে এল হীরা। ততক্ষণে পরেশ জ্ঞান হারিয়েছে। শান্ত হয়ে বাঘমুড়োর কাঁধে হাত রাখল হীরা।
উলটো দিকে চারিদিকে কৃষ্ণ নামের মাঝে ভেসে আসছে হীরার মায়ের গলা,
- ফিরে আয় হীরা, ফিরে আয়। যাস না বাবা মায়ের কোল ফাঁকা করে সোনা।
পিছন ফিরে হীরা কে দেখে আর হীরার মায়ের কান্না শুনে, একটা অপার্থীব আনন্দময় জিঘাংসা খেলে গেল বাঘমুড়োর মুখে। বড় আনন্দ পায় বাঘমুড়ো এমন অসহায়ের মায়ের বুক থেকে তার আদরের সন্তান কে কেড়ে নিতে। হাতের শিকারের থেকেও বেশী আনন্দ ওর এই মায়ের ছেলেকে তার বুক থেকে কেড়ে নিতে। ও ধীরে ধীরে জ্ঞান হারা পরেশ কে মাটিতে প্রায় আছাড় মেরে ঘুরে দাঁড়াল হীরার দিকে। হীরা বলল,
- এবারে লড়াই এ ক্ষান্ত দাও শিশুপাল।
নগেন শুনতে পাচ্ছে না ওদের মধ্যে কি কথা হচ্ছে কিন্তু ও ভাবতেও পারছে না, কি হতে চলেছে। ওর বৃদ্ধ চোখ কি ঠিক দেখছে? ও কি দেখছে, জগতের বিপদ টলিয়ে দিতে তিনি নিজে আসেন? ও কি দেখছে গত তিন হাজার বছরের ত্রাস কে মিটিয়ে দিতে, উনি নিজে গেছেন? নাহ এ নিশ্চই স্বপ্ন। সে নিশ্চই কোন গভীর স্বপ্নে মগ্ন। কিন্তু দেখতে তো পাচ্ছেই, বাঘমুড়ো এগিয়ে যাচ্ছে হীরার দিকে আর হীরা এক পা এক পা করে পিছিয়ে যাচ্ছে। বড় ইচ্ছে হচ্ছে ওদের কথা শুনতে।
এদিকে রহিম কোন রকম জলে থেকে উঠে, সামনে তাকিয়ে দেখছে, মাটির টিলার বেশ কিছু টা সামনে হীরা আর বাঘমুড়ো কে। হীরা পিছিয়ে আসছে আর বাঘমুড়ো জান্তব ক্রোধে এগিয়ে আসছে। হীরার বারংবার অনুরোধ করছে,
- লড়াই থামাও শিশুপাল। এ লড়াই এ হারবে একজন ই। যে তোমাকে বধ করেছিল। এবারে ফিরে এস এই পিশাচ থেকে। তোমার তিন হাজার বছরের শাপ থেকে মুক্ত হয়ে যাও। তোমার সাথে তোমাকে রক্ষা করতে থাকা, ব্রহ্মপিশাচ আর তারকীণি কে বল চলে যেতে। ওদের কে মুক্ত করে দাও শিশুপাল। ওদের কে তোমার পাপের ভাগীদার বানিও না। শোন আমার কথা।
হীরার কথা বাঘমুড়ো শুনতেও চাইছে না। চেষ্টা করছে সামনের একরত্তি ছেলেটা কে পদাঘাতে মাটির ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলতে কিম্বা ছিঁড়ে ফেলতে ছোট্ট মাথা টা দেহ থেকে। পা চালাল বাঘমুড়ো। কিন্তু অদ্ভুত কায়দায় হীরা সেটা এড়িয়ে গেল। হাত চালাল বাঘমুড়ো যেমন করে ওই কুকুর টার মুখ টা ফালা ফালা করে দিয়েছে সে তেমন ভাবেই এই ছেলেটার মুখ টা কে ফালা ফালা করে দিয়ে চাইল বাঘমুড়ো। কিন্তু এবারেও অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় সেই আঘাত ও এড়িয়ে গেল ছেলেটা। উফ এ থামে না কেন? হীরা বারংবার অনুরোধ করছে
- অনেক হত্যা করেছ তুমি শিশুপাল, এবারে ক্ষান্ত দাও। এখনো ক্ষমা পাবে। সেই বাঘিনী কে মুক্তি দাও। সন্তান প্রসবা বাঘিনীর ক্ষমতা বড় কম নয় শিশুপাল। ছাড়খার হয়ে যাবে তুমি। আর তুমি ক্ষান্ত না হলে তোমার সেই পরিনতি ই হবে যা তোমার সেই রাজসভা তে হয়েছিল। আমার কথা শোন। এরপরে আর অনুরোধ করব না আমি।
কথা শেষ ও হলো না, তীব্র ক্রোধ আর বিরক্তি তে গর্জন করে উঠলো বাঘমুড়ো। এতো বড় স্পর্ধা!! একরত্তি একটা ছেলে। তার এতো বড় সাহস? সর্বশক্তি দিয়ে এগিয়ে গেল বাঘমুড়ো। প্রথমে হাতের বল আর তারপরে পদাঘাত করল। হীরা হাত এড়িয়ে গেলেও পদাঘাত এড়িয়ে যেতে পারল না। ছিটকে গিয়ে একটা বিশাল মাটির টিলা ছিল, সেই টা তছনছ করে গিয়ে পরল জলার জলে।
The following 12 users Like nandanadasnandana's post:12 users Like nandanadasnandana's post
• Baban, bismal, boro bara, Bumba_1, ddey333, Mompi, nandini20002022, nextpage, Ratul05, ray.rowdy, Shikhachakraborty705, Tiger
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
রহিম ভাবতেও পারে নি এমন টা হয়ে যাবে। আজকে বাঘমুড়োর হাতে ভগবানের এমন হাল দেখে, ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে উঠলো সে। হীরার ছোট্ট শরীর টা প্রায় উড়ে গিয়ে জলার জলে পরতেই অজ্ঞান হয়ে গেল উমা। মহাদেব দু চোখের জল প্রতিহত করতে না পেরে বসে পরল ওখানেই মাথায় হাত দিয়ে। নগেনের মনে হলো সামনে আর কোন আলো নেই। আছে শুধু অন্ধকার মাত্র। লালি বেঁচে না মরে কেউ জানে না। রহিম এর মধ্যে আর সেই ক্ষমতা নেই বলেই বোধ হচ্ছে। হীরাও মনে হয় শেষ। একমাত্র বাকি অভি।
কিন্তু অভি থেমে নেই। তীর বর্ষণ ও থামায় নি। চালিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির ধারার মতন, হীরা কে জলার জলে ছুঁড়ে ফেলে দেবার পর থেকেই। বিরক্ত বাঘমুড়ো যেন সমস্ত গ্রাম কেই শেষ করে দেবে। ভয়ঙ্কর ক্রোধে অভির দিকে এগিয়ে যেতেই শুনল সবাই মেঘ নাদের মতন বিশাল গর্জন। মনে হচ্ছে কোন ক্রোধী মৃগেন্দ্র গর্জন করছে। একবার নয় বারংবার। সবার চোখ চলে গেল জলার দিকে। সামনে ও কি। বিশাল কায়া নিয়ে সামনে ও কে দাঁড়িয়ে?
চারিদিকে মশালের আলোতে মনে হলো কোন তপ্ত সোনার রঙের বিশাল সিংহ সামনে দাঁড়িয়ে। ঘন ঘন গর্জনে চারিদিক মুখরিত। শরীর টা মানুষের আর মাথা টা সিংহের। সহসা চারিদিকে ভরে উঠলো এক স্বার্গিক সুগন্ধে। ধীরে ধীরে সে উঠে এসে দাঁড়াল মাটির টিলার উপরে। উফ কি প্রকান্ড শরীর! রক্তিম কেশর লতিয়ে তার পিঠ অব্দি এসে পৌঁছেছে। শাল গাছের কান্ডের মতন বিশাল বিশাল দুই হাত। পেশীবহুল তার পদ যুগল। উরুর পেশী তে যেন নাগ খেলা করছে। বিশাল চওড়া কাঁধ। ছোট্ট রক্তিম ধুতি তে টিলার উপরে দাঁড়িয়ে যে গর্জন শুরু হলো মনে হলো, ইন্দ্র মহামেঘ দের পাঠিয়েছে। মুহুর্মুহু ক্রোধিত গর্জনে চারিদিক ভরে উঠল। মনে হচ্ছিল শত শত রুদ্রাবতার একসাথে ধ্বংস লীলায় মাতবে এবারে। নগেন স্তব্ধ হয়ে গেল একেবারে ভয়ে, আতঙ্কে। সামনে কি দেখছে ও! নৃসিংহ রূপে স্বয়ং তিনি! পালন কর্তা কে, রক্ষা কর্তা কে ভালবাসা রক্ষার তাগিদে মনে হয় পশু ও হতে হয়। এ এক জীবনের শিক্ষা। উফ কি রূপ! তাকানো যাচ্ছে না আর। আহা এমন বিশাল কাঁধেই তো মানায় রক্ষাকর্তা কে। এদিকে জলার থেকে অনবরত ভেসে আসছে অচ্ছেদ্য কাঁসর ঘন্টার শব্দ। আর তার সাথে মহাশঙ্খের ফুঁৎকার। নগেনের মুখ থেকে বের হয়ে এল আপনা থেকেই
- অভ্যুথ্যানং অধর্মস্য তদাত্মানম সৃজম্ম্যেহম। পরিত্রাণায় সাধুণাং, বিনাশায়চ দুস্কৃতাম, ধর্ম সংস্থাপনার্থায় , সম্ভবামী যুগে যুগে।
উমার অজ্ঞান অবস্থা দেখতে পেল না এই ভীষণ মুর্তি কে। মহাদেবের মন ও আর সায় দিচ্ছে না তাকাতে। মন বলছে ছুটে চলে যেতে হীরার কাছে। মহাদেব উমার মাথা টা কোলে নিয়ে বসে রইল চুপটি করে হীরার কথা ভাবতে ভাবতে।
রহিম এই বিশাল সিংহের মুর্তি দেখেই হাঁটু মুড়ে বসে পরেছে সামনেই। এক মনে দেখে চলেছে ভগবানের চতুর্থ অবতার কে। কিন্তু তিনি তো এখন আর তিনি নন। সামনে বাঘমুড়ো রূপী শিশুপাল। এগিয়ে গেলেন তিনি সামনে বাঘমুড়োর দিকে। বাঘমুড়ো ছটফট করছিল তখনো। নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে একেবারে সামনে ওই মুর্তি দেখে ক্রোধে ভয়ানক গর্জন করে উঠল বাঘমুড়ো। মনে হচ্ছিল একলা বাঘমুড়ো নয়। ওর ভিতরে বাস করা শত শত পিশাচ একসাথে মরন আর্তনাদ করছে। সেই নাদ শেষ ও হলো না। সেই ভয়ানক সিংহ গর্জন করে উঠল বাঘমুড়োর একেবারে মুখের সামনেই। যাকে বলে নাদ। মুখের ভিতরের চারটে বিশাল দাঁত বেড়িয়ে এল সামনে। যত গর্জন বাড়ছে ততই আকার বেড়ে যাচ্ছে সিংহের। সেই গর্জন চলতেই থাকল যতক্ষন না বাঘমুড়োর শরীর থেকে ব্রহ্মপিশাচ আর তারকীণি বেড়িয়ে আসে বাইরে। সামনে ভগবান কে প্রণাম করতেও সময় পেল না ওরা। ভয়ঙ্কর গর্জনে মারাত্মক ভয়ভীত হয়ে দুটো কালো ধোঁয়ার কুন্ডলী রণক্ষেত্র ত্যাগ করল নিমেষেই। পড়ে রইল বাঘমুড়ো একলা।
এবারে ভয় পেয়েছে বাঘমুড়ো। কি করবে বুঝতে পারছে না। বিহবল হয়ে পরেছে সে। সামনে এই বিশাল মৃত্যু কে দেখে সৎবিত অবশ হয়ে আসছে বাঘমুড়োর। দুই পিশাচ ছেড়ে চলে যেতেই মনে হচ্ছে শরীরে বল নেই আর তার। সভাঘরে মৃত্যুর আগেও ভয় টের পায় নি সে। কিন্তু ভয়ের গন্ধ কেমন হয় এবারে বুঝতে পারছে সে। সামনেই মুর্তিমাণ মৃত্যু। বাঘমুড়ো উলটো দিকে পালানোর চেষ্টা করতেই কানে শত শত প্রহারের মতন সিংহ নাদে অবশ হয়ে পুনরায় বসে পরল বাঘমুড়ো সেখানেই। ঠিক যেন মৃগেন্দ্র খেলছে, কোন দুষ্টু ইঁদুরের সাথে।
রহিম ক্রোধে কাঁপছিল। সুযোগ টা খুঁজছিল ও। বিশাল সিংহ টা রহিমের দিকে তাকাতেই রহিম দৌড়ে এসে যে পদাঘাত টা করল তাতেই বাঘমুড়োর অর্ধেক প্রাণবায়ু বেড়িয়ে গেল বোধকরি। তীব্র গতিতে ছিটকে গড়িয়ে গেল সামনে। কিন্তু বাঁচার তাগিদ বড় তাগিদ। কোন রকমে উঠে বসার চেষ্টা করতেই, তীব্র গতিতে একটা তীর গিয়ে সজোরে বিঁধে গেল বাঘমুড়োর উরু তে। গেঁথে ফেলল তীর টা বাঘমুড়ো কে মাটিতে প্রায়। অভি রহিমের দিকে তাকিয়ে হাসল শুধু। বাঘমুড়োর মরণ নাদে চারদিকে মনে হলো কান্নার রোল উঠল। কিন্তু আর ও বাকি ছিল। একটা মৃদু গর্জনে সবাই দেখল, চুড়ান্ত আহত অবস্থায় সারা শরীরে রক্ত মাখা সাদা কুকুর টা তীব্র ক্রোধ নিয়ে ছুটে আসছে বাঘমুড়োর দিকে। লাফ দিলো কুকুর টা বাঘমুড়োর মাথা টা লক্ষ্য করে। ব্যস, এক লহমা তেই ওই বিশাল বাঘের মুন্ডু খানা একেবারে ছিঁড়ে, মুখ থেকে বের করে পরে ধরাশায়ী হলো জলার মাঠে। যেন যা জীবনি শক্তি অবশিষ্ট ছিল কুকুর টার সেটা ওই টুকু কাজ শেষ করতেই।
বাঘমুড়োর ধড় আর মাথা আলাদা হয়ে যেতেই মনে হলো মাঠে বাজ পরল। কান ফাটা শব্দ আর আলো তে সবার চোখ ঝলসে গেল। সবাই কান ঢেকে মাটিতে বসে পরল। দেখতে কেউ পেল না, কিন্তু বাঘমুড়োর আতঙ্কের অবসান ঘটল সেই মুহুর্তেই। ধীরে ধীরে ধড় আর মাথা পচে গলে মিশে গেল জলার মাঠের ভেজা মাটিতে। সেই বিশাল সিংহ টা ধীরে ধীরে লালির কাছে এসে বসল। লালির মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। মেঘের মতন জলদ-মন্দ্র কন্ঠে আওয়াজ এলো,
- শোনিতম পুনরুদ্ভব!
শয়তান টার নখের আঘাতে লালির গাল একেবারে ফুটো হয়ে গেছিল। অনবরত রক্তক্ষরণ হচ্ছিল লালির। ধীরে ধীরে লালির গালের ক্ষত টা ভর্তি হয়ে গেল কিছুক্ষণেই। কেঁপে উঠল লালি একবার অজ্ঞান অবস্থা তেই। মনে হলো যে প্রানপাখী আকাশে ডানা মেলে দিয়েছিল, সে আবার ফিরে এলো শরীরে। ধীরে ধীরে লালির মাথাটা মাটিতে নামিয়ে দিয়ে সিংহ টা বলিষ্ঠ পদক্ষেপে এবারে এগিয়ে গেল পরেশের দিকে।
সবাই যখন চোখ খুলল, দেখল না বাঘমুড়ো আছে আর না তার আতঙ্ক আছে। পূব আকাশ হালকা লাল বর্ণ হচ্ছে ধীরে ধীরে। জলার দিক থেকে ভেসে আসছে হালকা শীতল হাওয়া। সেই হাওয়ায় কোন আতঙ্ক নেই। আছে শুধু অপার্থিব আর প্রাণ জুড়ানো মিষ্টি শীতলতা। হালকা মিষ্টি ভোরের আলোয় আস্তে আস্তে আলোকিত হচ্ছে কুখ্যাত জলার মাঠ। বাতাসে কেমন একটা খুশীর ভাব।
সবাই চেয়ে দেখল, মাঠের মধ্যে ইতস্তত ছড়িয়ে আছে রহিম আর পরেশের অজ্ঞান শরীর দুটো। আর রক্তাক্ত লালির উলঙ্গ শরীর। নগেন চেঁচিয়ে উঠল গ্রামের মেয়েদের উদ্দেশ্যে,
- ওগো তোমরা সব যাও। মেয়েটা কে ঢাকা দাও। কিছু একটা চাপা দাও ওর শরীরে।
আর অভির দিকে চেয়ে বলল,
- চল দেখি পরেশ কে। হীরা কোথায় গেল বল দেখি?
দুজনায় ছুটে এলো মাঠের মধ্যে। গ্রামবাসী একেবারে বাঁধন হারা হয়ে প্রবেশ করল মাঠে। রহিম ধীরে ধীরে জাগতেই রহিমের মেয়ে রহিম কে কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরল। রহিম তাকিয়ে দেখল ওর বউ আনোয়ারার চোখে জল। ও মেয়েকে কোলে নিয়ে উঠে আনোয়ারা কে বুকে টেনে নিল গ্রামবাসী দের মাঝেই। ও ভাবল, এই জীবন বড্ড ছোট। এবার থেকে ভালোবেসেই যাবে ও নিজের লোক কটা কে।
পরেশের যেন ঘুম ভাঙল। তাকিয়ে দেখল পুরো গ্রামবাসী তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে। ওর মনে পরে গেল লালির কথা। ও প্রায় চেঁচিয়ে উঠল,
- লালি!!!!!!
- এই যে বাবা আমি এখানে।
পরেশ তাকিয়ে দেখল লালি একটা বস্তা কে চাদরের মতন জড়িয়ে এগিয়ে আসছে, গ্রামবাসী দের ভিড় ঠেলে। মেয়েকে আদর করেও শেষ হচ্ছিল না পরেশের।
- তুই ঠিক আছিস তো মা?
- হ্যাঁ বাবা এই দেখ আমার কিচ্ছু হয় নি।
পরেশের বিশ্বাস হচ্ছিল না কথা টা। তাও বারংবার মেয়ের মুখ পা সব কিছুই দেখে নিচ্ছিল পরেশ। নগেন বাপ মেয়ের মিলন দেখছিল। বাকি ছিল আর কিছু মিলনের। এর থেকে সুখের অবসান আর কিছু হতে পারে না। দেখল কিছু গ্রামবাসির সাথে ওর দুই ছেলেও আহত দের চিকিৎসা করে দিচ্ছে মাঠের মধ্যেই।
নগেন রহিম আর অভি মিলে হীরা কে খুঁজছে পাগলের মতন। লালি হাঁটতে পারছে না ঠিক করে। রহিমের ও এক ই অবস্থা। রহিমের পাঁজরে মারাত্মক ব্যাথা। লালি ওই ভাবে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতেই হীরার নাম নিয়ে জলার ধার গুলো দেখছে। আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছে না ও। মনে হচ্ছে , হীরা কে না পেলে ও আর গ্রামে ঢুকবে না। অশত্থ গাছের তলায় অনবরত কেঁদে যাচ্ছে উমা কাকি। উমা কাকি কে ও কথা দিয়েছে হীরার কিচ্ছু হবে না। হীরার কিছু হলে লালিও আর বাঁচবে না। হঠাত শুনল রহিম দা ডাকছে ওকে,
- লালি দেখবি আয়।
লালি রহিম কে দেখল মেয়েকে কোলে নিয়ে উঁচু মাটির টিলার উপরে দাঁড়িয়ে আছে হাসি মুখে। ওর সাথে সবাই গেল। নগেন জ্যাঠা ডাক দিল মহাদেব কাকাকে। উর্ধশ্বাসে ছুটে এলো উমা কাকি আর মহাদেব কাকা। গ্রামবাসী আবার জড়ো হলো টিলার উপরে বা টিলার পাশে। লালি চটের বস্তা জড়িয়ে কোনরকমে টিলা পেরিয়ে গিয়ে দেখল, ভোরের আলোয় এক জন জলার কোমর জলে দাঁড়িয়ে হাতে করে জলের নীচে পায়ে জড়িয়ে থাকা ঘাস গুলো কে ছিঁড়ে পাড়ে তুলছে। ততক্ষণে উমা কাকি গিয়ে দাঁড়িয়েছে সামনে। মায়ের ছেলেকে চিনতে ভুল হয় নি একদম ই। আর এদিকে সে ছোঁড়া যেন খুব ব্যস্ত। এতো ডাকাডাকির পরেও সাড়া না দেবার কারণ জিজ্ঞাসা করার আগেই হীরা কাঁচুমাচু মুখে বলল,
- কি? তাকিয়ে আছ কেন আমার দিকে? আরে খুব পাঁক এখানে। এই কোমর অব্দি পাঁক। তারপরে এই ঘাস গুলো পায়ে জড়িয়ে গেছিল। ভাবছি, এই জলা টা সংস্কার করতে হবে। কি বলো দাদু?
হেসে ফেলল লালি। বদমাশ কোথাকার। কোন বিকার নেই। আবার সেই টাইম লকারের মতন প্রমাণ করার চেষ্টায় থাকবে যে ও কিচ্ছু জানে না। কোনরকমে নিজের ইজ্জত একটা চটের বস্তার মধ্যে নিয়ে হীরা কেই দেখছিল লালি। ফরসা হচ্ছে চারিদিক আস্তে আস্তে। আর পুরো গ্রামবাসীর সামনে, মায়ের আদর খেতে যে কি পরিমাণ ব্যেতিব্যস্ত হচ্ছে ছোঁড়া, সেটাই বেশ আনন্দের সাথে দেখছিল লালি একলা দাঁড়িয়ে। উমা কাকির আদর শেষে ধীরে ধীরে অনেকেই জলার ধার টা ফাঁকা করল। আর উমা কাকি উঠে যাবার আগে হীরা কে শাসিয়ে গেল, এখনই যেন বাড়ি যাওয়া হয়। নগেন আর পরেশ আর মহাদেব টিলার উপরে দাঁড়িয়ে ছিল। সূর্যোদয় দেখছিল বোধ হয়। মাঝে মাঝেই নগেন দেখছিল হীরা কে। ভুলতে পারছে না নগেন কিছুক্ষণ আগের সেই অপার্থিব দৃশ্য। তিনজনেই দেখল লালি ধীরে ধীরে হীরার কাছে এগিয়ে গেল। রহিম সেটা দেখে, আনোয়ারার দিকে তাকিয়ে একবার হেসে, মাঠের মাঝ খানের দিকে হাঁটা দিল বউ আর মেয়ে কে নিয়ে।
আর লালি চেয়ে রইল হীরার দিকে। ইশ কেমন ব্যোম ভোলা হয়ে আছে দেখ! কি করত লালি হীরা কে খুঁজে না পেলে? লালি দেখেছে হীরার বদলে যাওয়া রূপ, লড়াই এর সময়ে। লালি বুঝতে পেরেছে মৃত প্রায় লালির মাথায় হাত বুলিয়ে নিজের বুকে ফিরিয়ে এনেছে এই দুষ্টু টাই। হাঁ করে দেখছিল লালি। আর হীরা লজ্জা পাচ্ছিল। লালির এমন প্রেমাতুর নজরে নিজেকে অসহায় বোধ করছিল হীরা। হীরা ইশারায় জিজ্ঞাসা করল,
- কি হলো?
লালি জবাব দিলো না। শুধু দুই হাত তুলে হীরা কে ছুট্টে গিয়ে জড়িয়ে ধরল। তাতে লালির বুকের কাছে ধরে থাকা বস্তা টা শরীর থেকে পরে যাবার উপক্রম হতেই সেটা হীরা ধরে নিল নিজের দুই হাতে। আর লালি সব ভুলে হীরা কে পাগলের মতন আঁকড়ে ধরে রইল। হীরা ও লালির বস্তা টা দুই হাতে ধরে লালির সম্ভ্রম আড়াল করে বাধ্য হয়ে লালির আদর খেতে লাগল।
টিলার উপর থেকে পরেশ সেটা দেখতে পেয়েই অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। যতই হোক বাবা পরেশ। আজকাল কার ছেলে মেয়ে গুনো কিচ্ছু মানে না বাপু! পরেশ এমন ভাব করল যেন কিছুই দেখেনি। পাশে ছিল নগেন। কিন্তু ততক্ষণে সবাই অন্য দিকে মুখ ফিরিয়েছে। নগেন জানেই হীরা আর লালির ব্যাপার টা আগে থেকে। টিলা থেকে প্রায় দৌড়ে নেমে এলো পরেশ। সাথে নগেন আর মহাদেব। পরেশের মতই মহাদেবের ও বেশ কিছুই দেখতে না পাওয়া আমতা আমতা ভাব। কথা ঘোরাতে পরেশ নগেন কে বলল,
- বুঝলে জ্যাঠা কাশী তো এখানেই আছে। ওকে বলি সবার জন্য চা বানাতে। সাথে আর কি করতে বলি বলত।
নগেন বলল,
- সে তোরা দুই বেয়াই আছিস। তোরা কি খাওয়াবি সে আমি কি জানি? তবে হ্যাঁ, আমি ভাবছি রাধা আর মাধবের বিয়ে টা আমি দেওয়াব। এই পুরো জলার মাঠে প্যান্ডেল করব। বাঘমুড়োর অত্যাচার যত গ্রামে হয়েছে, সবাই আমার, রাধা মাধবের বিয়েতে নেমতন্ন খাবে বুঝলি?
পরেশ বলল,
- তা জ্যাঠা, লালি তো ওই ছোঁড়ার থেকে বয়সে বড়। সমস্যা নেই তো কোন?
- কীসের সমস্যা? আর সমস্যার আমি কি জানি? মহাদেব কে জিজ্ঞাসা কর তুই! ওর বাড়ির বউ হবে তোর মেয়ে। কি রে মহাদেব তোর আপত্তি আছে নাকি?
মহাদেব ভারী লজ্জায় পরে গেল নগেনের এমন সরাসরি প্রশ্নে। আমতা আমতা করে মহাদেব বলতে পারল কোন রকমে,
- না মানে, আপত্তির কি আছে জ্যেঠা। লালি পরেশের সাথে সাথে আমাদের ও মেয়ে।
নগেন বেশ খুশী হলো। দেখল ওর পরিবার গ্রামের বাকি সকলের সাথে বসে আছে খোলা মাঠে। খেলছে ওর নাতিরা। অভির ধনুক টা নিয়ে খেলছে ছোট নাতি অভির দাদু সিধুর সাথে। আর অভি একটু দূরে বসে হাসছে ছোট নাতির কান্ড দেখে। নাহ আজকে আর কোন ক্লেদ নেই মনে। ভাগ্যিস! মনে মনে প্রণাম করল নগেন, তার মহান পূর্বপুরুষ দের উদ্দেশ্যে।
দশ বছর পর
সেই জলার মাঠ আর নেই। সে এক সুন্দর দেখতে খেলার মাঠ হয়ে গেছে। চারদিক এ চারটে বড় বড় লাইট এর পোষ্ট। রাতেও খেলা হয় এই মাঠে। একেবারে জলার ধারে মেয়ে জামাই কে বেশ অনেক টা জায়গা কিনে দিয়েছে পরেশ। সাথে একটা বেশ বড় বাড়ি। সামনে অনেক টা জায়গা সেখানে। হীরার অদ্ভুত সুন্দর গাছ করার হাত। মৃত প্রায় গাছেও হীরার হাত পড়লে ফনফনিয়ে বেড়ে ওঠে সে গাছ। সে ওই গাছ দেখে আর পড়াশোনা করে। লালি হীরার জন্য একটা পুরো ঘর জুড়ে লাইব্রেরী বানিয়ে দিয়েছে। হীরা আর লালির দুটো সন্তান হয়েছে। বড় টা মেয়ে আর ছোট টা ছেলে। মেয়ে টা যেমন লক্ষী বাপের মতন, ছেলেটা তেমন দুষ্টু মায়ের মতন।
জলা টা সরকার থেকে সংস্কার করে দিয়েছে। মাঝে মাঝে ছোট ছোট আইল্যান্ড মতন বানিয়ে সেখানে ছোট ছোট পার্ক মতন করে দিয়েছে সরকার থেকে। রাতের বেলায় ঝলমল করে এই জলা আর জলার মাঠ। লালি আর হীরা অনেক রাতেই ছাদে উঠে দেখে জলের মধ্যে আলোর খেলা। শীতকালে জলার কুয়াশা আর আলোর লুকোচুরি দেখার মতন লাগে। কত লোকে ঘুরতে আসে এখানে তার কোন ঠিক নেই। বাঘমুড়োর জঙ্গল আর জঙ্গল নেই। পুরো রাস্তা তেই এখন আলো ঝলমল করে। গ্রামের ভিতর দিয়ে পাকা রাস্তা হয়ে গেছে কবেই। পুরোন দিনের মতন একটা বিশাল গেট তৈরি হয়েছে জঙ্গলের পরে গ্রামে ঢোকার মুখে, ঠিক সেখানে যেখানে পরেশ কে বাঘমুড়ো তে ধরেছিল।
লালি এখন সরকারী কলেজে পড়ায়। হীরা শুধু পড়াশোনা করে আর লেখা জোকা করে। অনেক লেখাই হীরার প্রকাশিত হয়েছে। লেখক হিসাবে নাম ডাক মন্দ নেই হীরার। কিন্তু সেই সব সামলায় লালি। লালি মনে করে হীরা যা করছে করুক নিজের মতন করে। লালির তো হীরার থেকে কোন এক্সপেক্টেশন নেই। ব্যস হীরা কে ভালোবাসতে ছাড়া আর কিচ্ছু চায় না ও। নিজেই সব করে। রান্না করে দেওয়া থেকে শুরু করে, হীরার সব কাজ ও নিজের হাতে করতে পছন্দ করে। পারলে খাইয়েও দেয় লালি। হীরার ও বিকার নেই সেই সব নিয়ে।
মাঝে মাঝে নগেন হীরার কাছে আসে বিকালে। গল্প করে যায়। নগেনের ও ভাল লাগে, হীরার সাথে লালির সাথে খানিক সময় কাটাতে। নগেন বহু চেষ্টা করেও অশ্বথামার অন্তর্ধানের ব্যাপার টা বুঝতে পারে না। লালি খুব চেষ্টা করে বোঝানোর কিন্তু নগেনের মাথায় ঢোকে না। বার বার মনে হয়,
- এ তো সম্ভাবনা মাত্র। সত্যি যদি ভগবানের কৃপা তে ও সঠিক জায়গায় পৌঁছে যায়?
ঘরের কাজ করতে করতে আনমনা হয়ে লালি জবাব দেয়,
- সেই কৃপাই তো হবে না ভগবানের। কয়েক লক্ষ বছর সময় লেগে যাবে দাদু। তুমি ভেব না।
দিন কাটে ওদের সুখ দুঃখে। কারোর কিচ্ছু মনে নেই হীরার ব্যাপারে। কেউ যেন ভুলিয়ে দিয়েছে সব কিছু কোন অদৃশ্য কালির ম্যাজিকে। শুধু নিজেকে সাজাবার সময়ে লালি লক্ষ্য করে ডান গালে হালকা তিনটে দাগ। কানের উপর থেকে একেবারে চিবুক অব্দি। হীরা লালি কে দেখে আর মুচকী হাসে। বস্তুত হীরা তাই চেয়েছিল। চেয়েছিল লালি সাধারণ বউ এর মতই তাকে ভালোবাসুক। সাধারণ স্বামী স্ত্রীর মতই লড়াই ঝগড়া, ভালোবাসা, খুনসুটি তে কাটুক তাদের দিন। তার মা যেন তাকে আর দশটা ছেলের মতই ট্রিট করে। তার বাবা যেন তাকে বকাঝকা করে। হীরার ইচ্ছে এই জন্ম টা কোন রাজা নয়, ভগবান নয়, মানুষ হয়ে বাঁচতে। ছেলে হয়ে বাঁচতে, এক টা সাধারণ স্ত্রীর স্বামী হয়ে বাঁচতে। দুজনের একে অপরের ভালবাসায় বন্ধু হয়ে বাঁচতে। বাবা হয়ে বাঁচতে। ছেলেকে মেয়ে সকাল সন্ধ্যে বেলায় পড়াতে বসাতে। বাবার সেবা করে বাঁচতে। মায়ের আদরে বাঁচতে।
আজকে লালি অনেক সকালে উঠেছে। আজকে ওদের বিবাহবার্ষিকি। সাতাশে আগস্ট। যেত না কলেজে। কিন্তু যেতেই হবে। কাজ আছে। চলে আসবে তাড়াতাড়ি। কলেজে বের হবার সময়ে দেখল হীরা সামনে বাগানে মাচা বাঁধছে একটা ছোট্ট লাউ গাছের জন্য। ও হাতে ঘড়ী টা পরতে পরতে ডাকল হীরা কে
- ওই , শুনছ?
হীরা এক মনে মাচা বাঁধছিল। সাড়া দিল,
- উম্ম
- খেয়ে নিও সময় মতন।
- হুম
- মেয়েকে খাইয়ে দিও কলেজ থেকে ফিরলে। বুঝেছ?
- হুম। ঠিক আছে। ছেলে কোথায়?
- মায়ের কাছে আছে।
- হুম বেশ।
- আচ্ছা ছেলে বাবা, দেখেও না একবার আমাকে। ছেলে মেয়ের খবর নেওয়া হয়ে গেল আর আমি কেউ নই। আরে, আমি বেরোচ্ছি তো!
হীরা হেসে তাকাল লালির দিকে। বলল,
- কই বের হচ্ছ তুমি? গাড়ীর চাবি নাও নি। পার্স এ টাকা নেই। টিফিন বক্স নাও নি আর আমাকে চুমুও খাও নি।
কি করে যে সব জেনে যায় হীরা কে জানে? রোজ এই কান্ড টা করে লালি। আর হীরা মনে পরিয়ে দেয় ওকে। লালি খুশী তে পাগল হয়ে গিয়ে বলল,
- এই জন্যেই তো আমি অপেক্ষা করছিলাম। উম্মমাআহহহ ।
বাড়ির বাইরে বেড়িয়ে হীরা দাঁড়িয়েছিল নিজেদের বাড়ির গেটে আর স্কুটি টা স্টার্ট দিয়ে লালি বলল,
- এলাম তাহলে?
- এস।
- আর শোন, দুপুরে ঘুমবে বেশ?
- আরে!! কেন? সেই কবে আমার দুপুরে ঘুমের অভ্যেস চলে গেছে। আমি ঘুমোব না।
- আজকে অনেকে আসবে বাড়িতে সন্ধ্যে বেলায়, আমার বিবাহবার্ষিকির জন্যে। তোমার সাথে কথা বলাই হবে না। কালকে ছুটি আছে আমার। সারা রাত গল্প করব দুজনে। আর দুপুরে না ঘুমোলে তুমি সন্ধ্যে থেকে ঘুমিয়ে যাবে। প্লিস ঘুমিও!! প্লিস প্লিস প্লিস!!!
হীরা হাসল। লালি স্টার্ট দিল স্কুটি তে। হীরা তাকিয়ে দেখল লালির স্কুটি বাঘমুড়ো জঙ্গলের গেট পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। হীরা বলে উঠল লালির আগের কথার উত্তরে নিজের মনেই,
- তথাস্তু।
সমাপ্ত
The following 20 users Like nandanadasnandana's post:20 users Like nandanadasnandana's post
• Atonu Barmon, Baban, bismal, boro bara, Bumba_1, ddey333, kublai, Mompi, nandini20002022, nextpage, Prasenjit, Pundit77, Ratul05, ray.rowdy, samael, Shikhachakraborty705, Somnaath, sudipto-ray, Tiger, WrickSarkar2020
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,216 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
অফুরান ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধায় বুক ভরে উঠলো লেখিকার প্রতি .. শেষের কয়েকটা লাইন পড়তে পড়তে চোখে জল এসে গিয়েছিল .. এর বেশি আর কিছু বলার নেই। ভালো থেকো, সুস্থ থেকো আর এই ভাবেই ভালো ভালো লেখা আমাদের উপহার দিয়ে যাও।
Posts: 42
Threads: 0
Likes Received: 58 in 38 posts
Likes Given: 160
Joined: Sep 2019
Reputation:
2
|