Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
আগের পর্বের কিছু অংশ............
তাহলে হিসাবে দাঁড়াল এটাই যে, বাঘমুড়ো দেওয়াল ভেঙ্গে দীনেশ কে তুলে নিয়ে গেছে? লালির বুক টা আঁতকে উঠল। আর পুকুর টা পেরোলেই হীরা দের বাড়ি। দীনেশ না হয়ে হীরা হলে কি হতো সেটা ভেবেই লালি ভয়ে কুঁকড়ে গেল একেবারে। কালকে রাতের বৃষ্টি তে কাদা হয়ে গেছে জায়গা টা। না হলে পায়ের ছাপ দেখে কিছু আন্দাজ করা যেত। কিন্তু কিচ্ছু বোঝা যাচ্ছে না এখন আর। ওদিকে দুয়ারে বসে সরলা কাকি কাঁদছে ভীষণ। লালি আর সহ্য করতে পারল না সেই কান্না। বেড়িয়ে এলো ও বড়ি থেকে। মন টা খারাপ হয়ে গেল। ও বেড়িয়ে এসে বসল অশ্বত্থ গাছের তলায়। হীরা সেই পায়ের মাপে মেপেই চলেছে গাছের গোঁড়া থেকে। চারিদিক কেমন ভয়ের পরিবেশ তৈরি হল সহসা। লালি বুঝল, সেটা লালির মনের ভয়ের কারণে।
পর্ব পনেরো
লালি ভাবতে লাগল, এর শেষ তো আছে! হীরা কে দেখছিল ও আর ভাবছিল, বাঘমুড়ো গ্রামে ঢুকে এবারে নিজের শিকার ধরছে? সত্যি হাতে সময় বেশ কম। না হলে গ্রাম উজার হয়ে যাবে অল্প দিনেই। এই অশ্বথামা আর বাঘমুড়োর মিলিত শক্তি কে সামাল দেবার ক্ষমতা লালি দের নেই। ততক্ষণে, পিছন পিছন বাকি তিনজন এসে হাজির। চার জনা মিলেই বসল গাছের তলার বেদী তে। চারজনেই চুপ। চারজন ই তাকিয়ে আছে হীরার দিকে। নগেন প্রথমে কথা বলল,\
- দিদি ভাই ওই ছোঁড়া কি করছে বলতো?
লালি তাকাল নগেনের দিকে। লালি অন্যমনস্ক ভাবেই তাকিয়ে বলল,
- সাতাত্তর পা গুনছে গাছের গোঁড়া থেকে। সিং দরজা খুঁজছে।
- অ্যাঁ? ও কি করে জানল ওখানে সিং দরজা আছে?
লালি ঘুরে তাকিয়ে বলল,
- সত্যি আছে?
নগেন ভারী অবাক হয়ে গেল এবারে। লালি কে বলল,
- ও কি করে জানবে সেটা? আমি আমার দাদুও দেখেনি সেই সিং দরজা। শুনেছিলাম তিন চারশ বছর, কি তার ও আগে সেখানে সিং দরজা ছিল। গঙ্গা কাছেই ছিল তখন। দাদু বলতেন তার দাদু নাকি গল্প করতেন তাঁরা শুনেছিলেন, রাজা মহারাজাদের বড় বড় বজরা আসত গঙ্গার ঘাটে। আর আমাদের গ্রামের শুরু তে ছিল বিশাল সিং দরজা। ধীরে ধীরে বাঘমুড়োর উৎপাতে সব নষ্ট হয়। সে তো বহুকাল আগের কথা। আমাদের গ্রাম এবং আশে পাশের দশ টা গ্রাম নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত আছে। সেই সব প্রচলিত কথাই আমার দাদু লিখে একটা চটি বই প্রকাশিত করেছিলেন। পরে বেশ কিছু বার ওটার পূনর্মুদ্রন করলেও , সেটা বন্ধ আছে গত তিরিশ বছর। কিছু কপি হয়ত লাইব্রেরী তে আছেও এখনো। আমি দাদুর মুখেই শুনেছি গ্রামে প্রবেশের মুখে একটা বিশাল সিং দরজা ছিল। তাই অবাক হয়ে গেলাম যে এটা ওই ছোঁড়া কি করে জানল? কারন এই কথা লেখাও নেই ঐ বই এ। এটা আমি দাদুর মুখে শুনেছিলাম তাই বলতে পারলাম।
নগেনের এই দীর্ঘ কথায় লালি একটা ব্যাপার বুঝতে পারল যে, কালকের ঘটনা নেহাত কোন ছুটকো ঘটনা ছিল না। কালকের ঘটনার গুরুত্ব হীরা বুঝতে পেরেছে। আর মণির ব্যাপার টা সত্যি। সেই মণি এখানেই আছে। ততক্ষণে অভি ছুটে গেল হীরার কাছে। হীরার সাথে অভির সখ্যতা বেশ ভাল। রহিম দাঁড়িয়ে রইল মুখ ভার করে। ও বলেছিল যে আর কাউকে মরে যেতে দেবে না ও। কিন্তু কালকে দীনেশ এর নিখোঁজ হয়ে যাওয়া, ওর মরে যাওয়ার আরেক নাম ই বলা যেতে পারে। তাই রহিম এর মন ও ভালো নেই। লালি ভাবতে লাগল কালকের ঘটনা বলে দেবে কিনা সবাই কে। কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতে পারল না। ও উঠে এল হীরার কাছে। সাথে সাথে নগেন ও উঠে এল। এদিকে হীরা নিজের মতন করে মাপছিল পা। লালি কাছে আসতেই ও বলল,
- হিসাব মতন এই খানে সাতাত্তর পা শেষ হচ্ছে বুঝলে। এই খানেই হওয়া উচিৎ।
এই বলে সরলা কাকিদের বাড়ীর সামান্য আগে একটা জায়গা দেখাল হীরা। বলল,
- কিন্তু এখান থেকে পরের ব্যাপার টা এগোনো ঝামেলা। একে তো সিং দরজা কত টা চওড়া ছিল সেটা আমরা জানি না। এই সিং দরজার বাঁদিক হয়ে আগমনীর আট পা যেতে হবে। এখন সিং দরজার পজিশন ই কিছু বোঝা যাচ্ছে না। তাহলে পরের টা কি ভাবে বের করব?
নগেন চুপ ছিল এতোক্ষণ। কিন্তু এবারে কথা বলল,
- আমার মনে হয় সেই সিংদরজা ছোট খাটো ছিল না। কারণ যতদূর আমি শুনেছি, সেই সিং দরজা দিয়ে দুটো ঘোড়ার গাড়ি পার করত এক ই সময়ে। তার মানে। মোটামুটি বারো ফুট চওড়া হতেই হবে তাই না। আর সিং দরজা এখানেই ছিল বুঝলি কি করে হীরা?
হীরা তাকাল নগেনের দিকে। অভি আর রহিম কিছুই বুঝতে পারছে না। নগেন ও বুঝতে পারছে না। কিন্তু এটা বুঝতে পেরেছে যে হীরা সিং দরজা খুঁজছে। আর নগেনের কাছে সিং দরজা সম্পর্কিত কিছু তথ্য আছে। হীরা একবার নগেনের দিকে তাকিয়েই প্রায় লাফিয়ে উঠল আনন্দে,
- দাদু কিছু জান তুমি কোথায় ছিল এই সিংহ দুয়ার?
নগেন হীরার উচ্ছ্বাসের সাথে পা মেলাল না। বস্তুত ওর মনেও অনেক প্রশ্ন। একে তো হীরা র কার্য কলাপ নগেনের কাছে ঠিক লাগে না। কিন্তু তা সত্বেও নগেন বলল,
- না ঠিক তো জানি না। তবে এটা জানি যে তখন রাস্তা আর ও চওড়া ছিল। আর তা হলে, পুকুরের ধার দিয়ে এখন যে রাস্তা সেটার আধ খানা পুকুরের মধ্যেই পরবে। আর তাহলে সিং দরজার আধ খানাও এখন পুকুরের মধ্যেই ছিল। হিসাব করে দ্যাখ না। বারো ফুটের রাস্তা। আর জলার দিকে আমাদের গ্রামে ঢোকার এই রাস্তা টা আট ফুটের বেশী না।
হীরা ভাবল নগেন ঠিক কথাই বলেছে। তবে ছড়া অনুযায়ী, সিংদরজার বাম দিক দিয়ে আগমনীর আট পা যেতে হবে। লালির দিকে তাকাল হীরা। হীরা ধরেই নিয়েছে জলে নামবে ও। কিন্তু ঠিক জায়গা টা খুঁজে না পেলে সেখান থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। একে তো আগমনীর আট পা বুঝতে পারছে না। তারপরে সিং দরজা কোথায় সেটাও না পাওয়া গেলে সমস্যা বাড়বে। হীরা আমার মনে মনে আওড়াতে লাগল ছড়া টা। আচ্ছা নগেন দাদুর কথাও ঠিক হতে পারে। রাস্তা এটা ছিলই না হয়ত। না না তা কি করে হয়? ছড়া তে তো বলাই আছে, “পেট কাটা গাছ ডাইনে রেখে সোজা হাঁটা দাও”। তার মানে এই বরাবর ই রাস্তা। হ্যাঁ হয়ত চওড়া ছিল একটু বেশী। তাহলে সিং দরজার বাম দিকের থাম টা জলের মধ্যে এখন তাই তো? তারমানে জলে নামতেই হবে। হীরা জলে নামার তোড়জোড় করতেই লালি এসে বাধা দিল। বলল,
- সাঁতার জানিস না জলে নামছিস কেন?
হীরা ভারী অবাক হয়ে গেল। বলল,
- জানিনা বুঝি? কি জানি, আমার তো মনে হয় আমি সাঁতার জানি।
- মনে হয় তুই সাঁতার জানিস? আর তার উপরে ভরসা করে তুই জলে নামবি? কোন দরকার নেই।
নগেন দুজনের কথাকাটাকাটি দেখছিল অবাক হয়ে। সত্যি পারেও আজকাল কার ছেলে মেয়েরা। নগেন এগিয়ে এল এবারে। মনে হল, হীরা কে সাহায্য করা দরকার। ও রহিম কে বলল নামতে। রহিম নেমে পরল জলে। হীরা রেগেই ছিল লালির উপরে, জলে নামতে না দেবার জন্য। এই বাচ্চাদের মতন ট্রিট করলে ওর একদম ভাল লাগে না। কিন্তু এই বারে ব্যাপার টা বাড়তে দিল না হীরা। ও এগিয়ে গেল পুকুরের ধারে। চেঁচিয়ে বলল রহিম কে,
- রহিম দা দেখ কিছু শক্ত পাও কিনা জলের তলায়। মানে কোন শক্ত কিছু বা উঁচু জল তলের থেকে।
- দাঁড়া দেখছি।
বাকি তিনজন দাঁড়িয়ে আছে পুকুরের পাশে। দেখছে রহিম কে। লালি হীরার একটা হাত শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রহিম জলের তলায় ডুব দিল। সবাই চাতকের মতন অপেক্ষা করতে লাগল। এদিকে রাস্তা দিয়ে দলে দলে লোক সরলার বাড়ি যাচ্ছিল, খবর নিতে। যেখানে লালিরা দাঁড়িয়ে আছে সেখান থেকে হাত বিশেক দূরেই সরলার বাড়ি। ভিতরের কান্না কাটি সবাই শুনতে পাচ্ছে। এক এক করে মহাদেব, পরেশ ছাড়াও আরো অনেকেই এল দেখা করতে। ততক্ষণে ভুশ করে জেগে উঠল রহিম। সেটা দেখেই হীরা ব্যাকুল হয়ে জিজ্ঞাসা করল,
- কিছু বুঝলে? কিছু পেলে?
চোখ থেকে জল টা মুছে রহিম বলল,
- না রে কিছু পেলাম না।
হীরা বলল,
- আর এক বার দেখ না প্লিস। বা এটাও দেখ যে, নীচের তল টা উঁচু হয়ে আছে নাকি?
- আরে পাঁক এ ভর্তি। এখান টা ঘাট নয় যে। আচ্ছা আবার একবার দেখছি দাঁড়া। মনে হয় কিছু পেয়েছি।
আবার ডুব দিল রহিম। খানিক বাদে আবার উঠে এল। বলল,
- যেখান টায় দাঁড়িয়ে আছি, সেখানে একটা উঁচু ঢিপির মতন আছে। তবে উপরে পাঁক।
হীরা হিসাব করে দেখল ওই জায়গা টা হিসাব মতন রাস্তা থেকে ফুট আটেক দূরে। মানে সিং দরজার শেষ প্রান্ত টা হবে। হিসাব করে দেখল অশ্বত্থ গাছের থেকে সাতাত্তর পা হয়ে যাবে ওই দিক টা। ভাবল দেখাই যাক। বলল,
- ওখান থেকে হিসাব করলে বাম দিক ধরে এগোতে হবে, পুকুরের পাড় অব্দি। হিসাব মতন মানুষের এক টা পদক্ষেপ গড়ে আড়াই ফুট হয়। তুমি পুকুরের পাড় অব্দি পা গুনে এস। সোজা আসবে। চেষ্টা কর তাল গাছের বাম দিকে পৌঁছনোর।
রহিম চেষ্টা করল সাধারণ পা ফেলে এগিয়ে যাবার। জলের সাথে লাগোয়া তাল গাছের বাম দিকে পৌঁছে বলল,
- উনিশ পা হল।
- হুম, কিন্তু এখানে তো আগমনীর আট পা লেখা আছে। কিন্তু হয়ে তো গেল উনিশ পা।
নগেনের মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না। লালিও তথৈবচ। হীরা জিজ্ঞাসা করল লালি কে,
- আগমনী মানে মা দুর্গার মর্ত্যে আসা কে বলে তাই না?
- হ্যাঁ। এগজ্যাক্টলি সেটা না। মায়ের বাপের বাড়ি আসার কনসেপ্ট কে বলে আগমনী। মানে আসা বা আগমন কথা টা কে একটা রূপ দেওয়া হয়েছে মায়ের বাপেরবাড়ি আসার সাথে।
হীরা চুপ করে গেল খানিক। বলল,
- আগমন মানে আসা? আর আগমনী ? মানে আসি? আসি মানে আশি? আগমনীর আট পা? আশির আট পা? মানে আশির পরে আট পা? মানে অষ্ট আশি পা?
পুকুর টা গোল করে এখানে রাস্তা ঘুরেছে। পাশের বাড়ি টাই হীরাদের বাড়ি। কাউকে কিছু না বলে , ও পা মেপে গুণতে গুণতে এগিয়ে গেল বাড়ির ভিতর দিয়েই। পিছন পিছন অবাক হয়ে বাকি সবাই চলল। নগেন এর মাথায় ঢুকছেও না কি করছে ছেলেটা। লালি হীরাদের বাড়ির ভিতর দিয়ে আসবার সময়ে, একটা গামছা ঝোলানো ছিল, সেটা নিয়ে রহিম কে দিল মাথা আর গা মুছতে। ভিজে গায়েই রহিম হীরার পিছন পিছন উঠে এসেছিল। আর ততক্ষণে নিজের বাড়ি পেরিয়ে গিয়ে খিড়কী দরজা দিয়ে বেড়িয়ে একটা জায়গায় থামল হীরা। বলল,
- এখানে অষ্ট আশি পা শেষ হচ্ছে।
জায়গা টা তে কারোর বাড়ী নেই। একটা জায়গা মাত্র। দুটো তিনটে খড়ের পালা রয়েছে বাঁধা। এই জায়গা টা নগেন আর মহাদেবের বাড়ির মাঝখান। আসলে জায়গা টা নগেনের স্বর্গত দাদার জায়গা। নিগেনের বৌদি নগেন দের সাথেই থাকে কিন্তু নগেনের দাদার ছেলে নেই। দুই মেয়ে দুজনের ই বিয়ে হয়ে গেছে। কাজেই এই সব জায়গা দেখাশোনা নগেন কেই করতে হয়। ওই জায়গার মাঝে দাঁড়িয়ে হীরা বলল,
- এই জায়গা ঠিকানা। কিন্তু কীসের? মণির ঠিকানা তো না। তবে কীসের ঠিকানা?
মনে মনে বিড়বিড় করতে লাগল হীরা। এতক্ষণে নগেন কথা বলল। লালি কে জিজ্ঞাসা করল,
- কি ব্যাপার আমাকে বল দেখি খোলসা করে? কি খুঁজছে ছোঁড়া?
লালি একবার হীরা কে দেখল আর একবার নগেন কে দেখল। বলল,
- দাঁড়াও বলছি?
তারপরে ঘুরে অভি কে বলল,
- তুই হীরার সাথে থাকবি। আমরা পিছনেই চন্ডী মন্ডপে আছি। ওকে ছেড়ে নড়বি না বুঝলি? আর কিছু সে রকম বুঝলে হাঁক দিবি। আমরা চলে আসব।
অভি বলল,
- আচ্ছা ঠিক আছে। কেন গো লালি দি কিছু বিপদ?
- না না কিছু না। সব বলছি। তুই কিন্তু হীরা কে ছেড়ে কোথাও যাবি না বুঝলি?
তারপরে নগেন আর রহিম কে দেখে বলল,
- চল চন্ডী তলায়। বলছি অনেক ঘটনা ঘটে গেছে কালকে। এস বলছি।
চন্ডী তলায় তিনজনে বসে পরল। লালি এক এক করে সব টা বলল নগেন আর রহিম কে। শুধু , কেন হীরার সাথে বিকাল ভ্রমণে বেড়িয়েছিল, সেটা এড়িয়ে গেল লালি। নিজের প্রেমের কথা কাউকে বলে কাজ নেই। নগেন দাদু আর রহিম বেশ অনেক টা বড় ওর থেকে। রহিম এর মুখে কোন কথা নেই। গামছা দিয়ে মাথা মুছছিল রহিম শুধু। নগেন এর মুখ খানা অস্বাভাবিক ছোট হয়ে গেছে। লালি কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। ও উত্তেজনার সাথে দুজন কে বলতে থাকল, সেই ',ের কথা। লালির হয়ত বলাও শেষ হলো না। ততক্ষণে হীরা ছুটে এসেছে মন্দিরে। এসেই লালি কে বলল,
- বাবাহ এ উদ্ধার করা সমস্যার।
- কেন কি হলো?
হীরা লালি কে কিছু না বলে, নগেনের দিকে তাকাল। জিজ্ঞাসা করল,
- আচ্ছা দাদু এখানে কোন ঘোড়ার আস্তাবল ছিল?
- ঘোড়া?
লালির অবাক হয়ে করা প্রশ্নের উত্তরে হীরা বলল,
- হ্যাঁ “হয় ঠিকানা” আছে ছড়া তে। হয় মানে তো ঘোড়া। তাই ভাবলাম যদি কোন ঘোড়ার আস্তাবল থেকে থাকে। না হলে অন্য কিছু ভাবতে হবে।
লালি অভি আর রহিম তিনজনেই একসাথে তাকাল নগেনের দিকে। নগেন তখনো বেশ অন্যমনস্ক। তিনজনে এক সাথে তাকাতে, সবাই কে অবাক করে দিয়ে নগেন বলল,
- হুম তা ছিল। তবে সেটা আমিও দেখেছি। যেখানে হীরা এতক্ষণ ছিল, সেখানে না। আমাদের বাড়ি টা যেখানে এখন সেখানেই ছিল বিশাল আস্তাবল। বলেছিলাম তো তোদের, যখন গঙ্গা কাছে ছিল, এই রাস্তা ছিল খুব ব্যস্ত রাস্তা। তাই এই গ্রামে পান্থ শালা ছিল বেশ কয়েক টা। পান্থশালা জানিস তো? এখন কার দিনের হাইওয়ে হোটেলের মতন। সেই সব পান্থশালায় আসা অতিথি দের ঘোড়া আস্তাবলেই থাকত। তবে হীরা যেখানে খুঁজছে সেখানে ছিল না এই আস্তাবল। ছিল আমাদের বাড়ির দক্ষিণে। বস্তুত সেই আস্তাবল ইংরেজ আমল অব্দি ছিল। আমি ছোট বেলায় দেখেছি ভাঙ্গাচোরা সেই আস্তাবলের কিছু টা। পরে আমার বাবা সেই আস্তাবলের সামান্য নিয়ে আমাদের বাড়ি টা বানান। এখন অবশ্য আমার ছেলে ও কিছু টা মডিফাই করেছে।
হীরা আনন্দে লাফিয়ে উঠলো এক প্রকার। নগেন কে বলল,
- লাভ ইউ দাদু। এস সবাই।
কথা শেষ ও করল না। ও পালাল তীব্র গতি তে নগেনের বাড়ির দিকে। পিছন পিছন সবাই গেল ওর। নগেনের বাড়ি পৌঁছে ও মাপ করে দাঁড়াল যেখানে রাধামাধবের মন্দির টা আছে। নগেন বলল,
- এই মন্দিরের অংশটুকু আস্তাবল থেকে নেওয়া ছিল। বরং বাইরে থেকে দেখলে ভালো করে বোঝা যাবে।
ওরা সবাই বাইরে বেরিয়ে এল। বস্তুত ওরা কি করছে কারোর খেয়াল নেই। কারণ দীনেশের বেপাত্তা হয়ে যাওয়া টা একটা বড় ধাক্কা সবার কাছে। সেই গোলমালে এই ছেলে গুলো, একটা বুড়োর সাথে কি করছে অতো মাথা ব্যাথা কারোর ছিল না। যেখানে আস্তাবল টা ছিল সেখান থেকে হীরা এবারে পঞ্চান্ন করতলের মাপ নেবার চেষ্টা করল। লালি কে বলল,
- করতল মানে তো হাতের তালু । কিন্তু আমি দেখেই বুঝতে পারছি হাতের তালুর হিসাব করলে এই খানেই কোথাও হবে। মানে এই জায়গার কোন কোনে হবে। আর এই খানেই হলে পরের লাইনের সুত্র দেবার কি মানে? আর প্রশ্নই বা কই যে উত্তর পাবো?
তখন অভি বলে উঠলো,
- হীরা দা, হয়ত হাতের তালু নয়। পঞ্চান্ন হাত বুঝিয়েছে। তুমি একবার মেপে দেখবে কি?
হীরা বলল,
- হ্যাঁ সেটা হতেই পারে। কিন্তু কি প্রশ্নের বিপরীতে, সেটা না বের করতে পারলে পঞ্চান্ন করতল ব্যাপার টার কোন মূল্য নেই।
রহিম দাঁড়িয়ে দুজনের কথা শুনছিল। লুঙ্গি আর গেঞ্জি টা ভিজে। মাথা টা মুছেছে হীরা দের গামছায়। ও বলল,
- প্রশ্ন কি কিছু আছে? নাকি প্রশ্নের বিপরীত কথা টাই এখানে বেশী কাজে আসবে? না মানে আমি লেখা পড়া বিশেষ করিনি। কিন্তু মনে হলো কোন প্রশ্ন এখানে নেই।
- মানে?
- মানে হলো, প্রশ্নের বিপরীত কি হয়?
- উত্তর?
কথা টা বলে খানিক চুপ করে রইল হীরা। তারপরে উচ্ছ্বাসে রহিম কে বলল,
- উফ রহিম দা, ইউ আর গ্রেট। ঠিক বলেছ তুমি, এখানে প্রশ্নের বিপরীতে মানে উত্তর দিকে পঞ্চান্ন হাত যেতে বলছে। অভি গোন তো ঠিক এই মাঝ খান থেকে পঞ্চান্ন হাত। ধরে নে হিসাব মতন, প্রায় পঞ্চান্ন আর সাড়ে সাতাশ, হলো গিয়ে, সাড়ে বিরাশি ফুট। তুই তিরাশি ফুট হিসাব কর। না হলে বত্রিশ তেত্রিশ পা গোন। দুমদাম পা নয়, নর্মাল সাধারণ পা।
অভি খানিক দূর গিয়ে বলল,
- হীরা দা পুকুরে চলে যাচ্ছে তো।
- অ্যাঁ?
পিছন পিছন সবাই গেলো। গিয়ে দেখল নগেন দাদুদের বাঁধানো ঘাটের কিনারায় দাঁড়িয়ে অভি। বলল,
- এখানে সাতাশ পা হচ্ছে। আরো ছয় পা হলে পুকুরের মধ্যে হবে জায়গা টা।
লালির মুখে একটা হাসি ছিল। সেই হাসি উবে গেল যেন। বিশ্বাস করতে পারছে না সকাল থেকে এতোক্ষণের পরিশ্রম সব বিফলে গেল। পুকুরের মধ্যে নিশ্চই কেউ মণি ডুবিয়ে রাখবে না। কিন্তু হীরা চুপ রইল। কোন কথা বলল না হীরা। কিছু একটা চিন্তায় এগিয়ে গেল ঘাটের সিঁড়ির দিকে। জলে পা ডুবিয়ে বসে রইল গালে হাত দিয়ে।
একে একে সবাই চলে গেল। শুধু লালি আর নগেন রয়ে গেল সেখানে। হীরা চুপ করে বসে রইল জলে পা ডুবিয়ে। লালি দেখছিল হীরা কে। এই ছোঁড়া কে সত্যি ও বুঝতে পারে না। পরশু অব্দি এই সবে বিশ্বাস করে নি ও। কালকের পর থেকে এই রকম উৎসাহী হয়ে উঠেছে। কি ছেলে ও নিজের জানে সেটা। কিন্তু ওকে আর একা ছাড়া যাবে না। লালি ভাবল, উমা কাকি কে বলে আস্তে হবে ওই ছোঁড়া কে যেন একলা না ছাড়ে। এদিকে নগেন দাদু বেশ চুপ করে গেছে, লালির মুখ থেকে গত কালের পুরো ব্যাপার টা শোনার পর থেকে। লালি দেখল বেলা বেশ বেড়ে গেছে। ও হীরা কে তুলে উমা কাকির জিম্মায় রেখে দিয়ে আসার জন্য উঠল। আর দেখল নগেন দাদু ধীর পায়ে ঢুকে গেল বাড়ি। লালি হীরা কে জিজ্ঞাসা করল,
- কি গোয়েন্দা মশাই, বাড়ি যাবি না? স্নান করেছিস?
- উম?
- উম কি? ওঠ। অনেক বেলা হয়েছে। বাড়ি চল। খেয়ে দেয়ে আবার ভাবতে বসবি। আমি তো জানতাম ওই ', ভুল ভাল বকছে। কিচ্ছু নেই মণি। তাও আবার অশ্বথামার? যেমন তুই তেমন ওই ', । চল এবারে!!
হীরা অন্যমনস্ক ভাবে তাকিয়ে ছিল, লালির কথায় বলল,
- আচ্ছা তুমি নগেন দাদু কে কালকের ঘটনা বলার পরে দাদু কেমন চুপ করে গেল না? শুধু আস্তাবলের ব্যাপার টা ছাড়া বিশেষ কোন সাড়াশব্দ দেয় নি। তাই না?
- হ্যাঁ তাতে কি? সব দিকে নজর এই ছেলের। দাদুর মন খারাপ। দীনেশ কে দাদু ভালবাসত খুব। দাদুর বাড়িতে গাই দুইতে আসত দীনেশ।
- হুম হবে হয়ত। নাহ বাড়ি যাই। দুপুরে আবার ঘুম দরকার আমার। আজকের রাত টা সাবধান হয়েই থাকতে হবে আমাদের।
লালি শেষের কথা গুল অস্পষ্ট ভাবে শুনল। বুঝতে পারল না ও। মনে হলো যেন হীরা বলল, আজকের রাত টা সাবধানে থাকতে হবে। ও জিজ্ঞাসা করল,
- কি বললি?
- কিছু না। তুমি বরং একবার বগেন দাদুর বাড়ি যাও। মনে হয় উনি কিছু তোমাকে বলবেন।
- মানে? তুই কি করে জানলি?
- মনে হলো। আমার সাথে আর যেতে হবে না।
- ইশ, ভাত খেয়ে তো আর বের হবি না, ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোবি। এই টুকুই তো আর থাকব তোর সাথে, আবার সেই বিকালে দেখা হবে। নগেন দাদুর বাড়ি না হয় পরে যাব একটু। এখন মায়ের ছেলেকে মায়ের কাছে ফেরত দিয়ে আসি।
বাড়িতে ঢুকতেই হীরা নিজের হাত টা লালির হাত থেকে সরিয়ে নিল। লালি থতমত খেয়ে দেখল সামনে উমা কাকি দাঁড়িয়ে।
উমা কেমন একটা চোখে দুজন কে দেখল। উমার যেন মনে হল লালি হীরার হাত টা নিজের হাতে নিয়ে আদর করছিল। উমা কে দেখেই হীরা হাত টা ছাড়িয়ে নিল। উমা লক্ষ্য করছে দুজনে বেশ কিছু টা সময় একলা একলা কাটায়। মায়ের চোখ, ব্যাপার টা যে অস্বাভাবিক, সেটা বুঝলেও, হীরা লালির সাথে প্রেম করছে এই ধারণা উমার হলো না। কারণ লালি কে উমা অসম্ভব ভালো বাসে। আর লালিও ছোট থেকে হীরার সাথে এই ভাবেই থাকে। গায়ে গায়ে লেগে থাকে।
এদিকে লালি উমার বিহ্বল মুখ টা দেখে হয়ত আন্দাজ করতে পারল, হীরার হাতে আদর করা টা কি উমা কাকি দেখে ফেলেছে? লজ্জার সাথে ভয় টা ও কাজ করল ওর মনে। কিন্তু সামলে নিল নিজেকে। সাথে সাথেই বলে উঠল,
- কাকি, নাও তোমার গুণধর কে দিয়ে গেলাম। কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই পেটকাটি থেকে নগেন দাদুর বাগান অব্দি। কান ধরে দিয়ে গেলাম চান করিয়ে খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দাও পুচু টা কে।
উমা হেসে ফেলল,
- তুই ধরবি ওর কান? ছোট বেলায় পড়াতিস, কত দুষ্টুমি করত। কোলে নিয়ে বসে পড়াতিস। এই তো দেখলাম হাতে খানা ধরে নিয়ে এলি।
লালির মনে হলো, এবারে মেদিনী দ্বিধা হয়ে যাক আর ও ঝাঁপ দিক সেখানে। সামাল দিল হীরা। হীরা তখন একটা গামছা নিয়ে স্নান করতে যাচ্ছিল, থেমে গিয়ে বলল,
- এর মানে কি? আমাকে চান করিয়ে, খাইয়ে আর ঘুম পারিয়ে দিতে হয়?
লালি মুখ বেঁকিয়ে বলল,
- তা না তো কি? এখনো মায়ের কাছ ছাড়া শুস না। আমি সবাই কে বলে দেব দ্যাখ।
উমা লঙ্কা তুলছিল গাছ থেকে, মহাদেব কে খেতে দেবে। লঙ্কা তুলে কলের জলে ধুয়ে নিয়ে, হাসতে হাসতে বলল,
- বলিস না মা আমার। এখনো যত টুকু করতে দেয়, ওই সব বললে আর করতে দেবে না রে মা।
হীরা কলতলায় জল ঢালতে ঢালতে বলল,
- যাও তো!! বলগা!! না গো মা, তুমি ভেব না। আমি তোমার কাছেই শোব। কে কি বলল, আর আমি তোমার কাছ ছেড়ে অন্য কোথাও শোব, এমন বোকা আমি নই। হিংসুটে রে ভাই, আমি শুকিয়ে কেন যাই। আমার মন ভাল নেই তাই। বরং ওকে বলো, সেও চাইলে আমার মায়ের কাছে এসে শুতে পারে। আমি না হয় ওর কথা ভেবে আধ খানা মা ওকে দেব আমার। হিংসুটি। আহা ওর থেকে আরামের কিছু নেই। হরি হরি!!!
হুশ হুশ করে জল ঢালতে লাগল হীরা গায়ে।
- আর একজনের নগেন দাদুর বাড়ি যাবার কথা ছিল। সে যেন পুকুরের ধার দিয়ে না যায়। বড় রাস্তা ধরে যেন যায়।
কথা টা শুনেই লালি দৌড় লাগালো নগেনের বাড়িতে। মন টা কি মারাত্মক ভাল হয়ে গেল। নিজের মা এর ভাগ দেবে? মানে বিয়ে হলে তো, উমা কাকি লালির ও মা হবে। কি দুষ্টু বাবা। মায়ের সামনেই কেমন করে বলে দিল কথা টা। কেউ কিছু বুঝতেও পারল না। আসতে আসতে শুনতে পেল উমা কাকি বলছে,
- ভারী ভাগ দেনে বালা এলেন। আমি ওর ও মা। ও লাল, ছুটিস না পড়ে যাবি। ওই দেখ, পড়বি লো!!
লালি থামলই না। লজ্জায় থেমে গেলে এই মুখ আর ওদের কে দেখাতে পারবে না। কিন্তু হীরাদের দরজার কাছে এসে মনে পড়ল, হীরা বলছিল নগেন দাদু কিছু বলতে পারে ওকে। হীরা বুঝতে পারে এই সব কথা। লালির তো মনে হয় না কিছু! মানে লালি বুঝতেই পারে না কিছু। হীরাদের দরজা থেকে বেড়িয়ে মাথায় এল, হীরা ওকে বড় রাস্তা ধরে যেতে কেন বলল। ও আর ভাবল না। লালি বড় রাস্তা নিল। বেশ দুপুর হয়েছে। রোদ একেবারে নিজের মেজাজে। গাছের পাতা ঝুলে গেছে। লালি গাছের আড়ালে আড়ালে আসছিল নগেনের বাড়ি। কিন্তু হীরাদের পাঁচিলের কোন টা যেখানে বড় রাস্তা থেকে হীরাদের বাড়ির গলি টা শুরু হয়েছে, সেখানে আসতেই দেখল, কটি পিসি র সাথে একটা অচেনা লোক কথা বলছে। লালির গা টা গুলিয়ে উঠল একটা বিশ্রী দুর্গন্ধে। কটি পিসিও নাকে সাদা কাপড়ের আঁচল টা চাপা দিয়ে আছে। কটি পিসির বাড়ি . পাড়ার আগে, মুচী পাড়ায়। সুন্দর তালপাতার চাটাই বুনতে পারে পিসি। পিসির বোনা অনেক গুলো শীতলপাটি লালিদের বাড়িতে আছে। হীরা পড়তে বসবে বলে, লালি একটা বড় শীতলপাটি হীরা র বাড়িতে দিয়ে এসেছিল। নিজের ওড়না টা, নাকে চাপা দিয়ে এগিয়ে গেল পিসির কাছে। ওকে দেখেই কটি পিসি বলে উঠলো,
- দ্যাখ তো লালি কার খোঁজ করছে এই লোকটা। কি নাম বললে? অলকা না কি যেন একটা? কই গো বল?
The following 13 users Like nandanadasnandana's post:13 users Like nandanadasnandana's post
• Baban, bismal, boro bara, ddey333, LajukDudh, nandini20002022, nextpage, Pundit77, ray.rowdy, samael, sudipto-ray, Tiger, WrickSarkar2020
Posts: 1,538
Threads: 5
Likes Received: 2,632 in 909 posts
Likes Given: 1,512
Joined: Dec 2018
Reputation:
578
বাহ! পড়তে পড়তে হটাৎ করে মনে হলো যেন দূর্গেশগড়ের গুপ্তধনের সোনাদাকে দেখছি, ধাঁধার উত্তর খুঁজতে... কতটা মাথা খাটিয়ে পর্বগুলোর একে অপরের সাথে যোগসূত্রে আবদ্ধ করতে হয়েছে ভেবেই রোমাঞ্চিত হচ্ছি ম্যাডাম... ফাস্টো কেলাস... আর সেই সাথে লালীর উমার সামনে আচম্বিতে মুখোমুখি হয়ে গিয়ে হিরার হাত ছেড়ে "ধরণী দ্বিধা হও" মানসিকতা... উফফফফ... এক্সিলেন্ট যাকে বলে আর কি... তবে এই অলকাটির খোঁজ আবার অস্বথামা কেন করছে, সেটা জানার আগ্রহ বেড়ে গেলো যে... এমন জায়গায় এসে ছেড়ে দিচ্ছেন যে পরের পর্বটা না আসা অবধি শান্তি পাচ্ছি না...
Posts: 13
Threads: 0
Likes Received: 16 in 13 posts
Likes Given: 68
Joined: Jul 2022
Reputation:
0
osdaharon didi.... ki ki sob sundor porbo.. apnar baki golpo duto khub bhari. porini ekhono shudhu review dekhchilam. tatei mone holo porbo ki porbo na. kintu ei golpota ekebare durdanto. ish pujor somoye dite parten. pujo ta ei golpo ta porei kete jeto. duronto porbo. amar to lalir sathe hirar prem ta darun legeche. ki misti prem. bhabi prem hoyto emni i hoy sobar jonyo. amra hariye feli nijeder doshe. ar baki roilo rohosyo bhed, tate apni eksho te eksho. apnar charidike obadh goti mone hocche. ki durdant porrbo ta. onek onek bhalobasa roilo ar shroddha roilo apnar upore.
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
পড়তে পড়তে বারবার নিজেকে গোয়েন্দা মনে হচ্ছিলো, এই বুঝি নিজেই আটঘাট কোমর বেঁধে নেমে পড়বো সত্য উদঘাটনে। একের পর এক রহস্যের পর্দা উন্মোচন করে ধাঁধার উত্তর গুলো মিলিয়ে যাবো।
শুধু আমার নয় হযতো বাকি পাঠকেরও মনের কোনে এমন আকাঙ্খা নিশ্চয়ই জেগে উঠেছে আর এটাই এই পর্বের সার্থকতা...
অশ্বথামা গ্রামে ঢুকেছে দিনের বেলায় হয়তো নগেন জ্যাঠার খোঁজে.... সামনে বড় বিপদ
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
উফফফফ গোয়েন্দা গুলোর গোয়েন্দাগিরি, সত্যিই কেমন যেন ভালো লাগলো ওই অংশটা। হ্যা যদিও ব্যাপারটা গুরুতর কিন্তু ওই সবার অমন করে মাথা খাটিয়ে খোঁজাখুঁজি আর মগজাস্ত্রের প্রয়োগ সাথে আবার এক ভালোবাসার মানুষের হাত ধরা, মাতৃত্ব, কোলে বসিয়ে পড়ানোর অতীত আবার মায়ের ভালোবাসার আর মমতার ভাগ, লজ্জায় একটি নারীর পালিয়ে যাওয়া আর শেষে একটা লোকের আবির্ভাব। কারে যেন খুজতাসে! উফফফফফ পুরো কাঁপিয়ে দিচ্ছ তো ❤
Posts: 42
Threads: 0
Likes Received: 58 in 38 posts
Likes Given: 160
Joined: Sep 2019
Reputation:
2
আপনার প্রশংসা করা বাতুলতা। এই পর্বে মনে হচ্ছিল হীরা সাধারণ মানুষের মতই মানুষের সাথে থেকে কোন রহস্য উদ্ঘাটিত করছে। ভগবান নয় ও। দারুন ছড়া আর তার অর্থ নির্ধারণ। আপনার সর্ব দিকে গমনের ব্যাপার টা খুব ভারী। ভাবা যায় না এমন একটা ফোরামে এই লেভেলের গল্প লিখে সম্ভ্রম আদায় করা চাট্টি খানি ব্যাপার না। দুর্দান্ত দিদি। আপনি অনন্যা। লাইক আর রেপু রইল।
Posts: 548
Threads: 1
Likes Received: 627 in 383 posts
Likes Given: 1,631
Joined: Sep 2019
Reputation:
34
ধীরে ধীরে রাত গভীর হচ্ছে, মানে বিপদ আরও কাছে এগিয়ে আসছে। তাতে কি....রাত যত গভীর হয় প্রভাত তত নিকটে আসে।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(20-07-2022, 03:34 PM)bourses Wrote: বাহ! পড়তে পড়তে হটাৎ করে মনে হলো যেন দূর্গেশগড়ের গুপ্তধনের সোনাদাকে দেখছি, ধাঁধার উত্তর খুঁজতে... কতটা মাথা খাটিয়ে পর্বগুলোর একে অপরের সাথে যোগসূত্রে আবদ্ধ করতে হয়েছে ভেবেই রোমাঞ্চিত হচ্ছি ম্যাডাম... ফাস্টো কেলাস... আর সেই সাথে লালীর উমার সামনে আচম্বিতে মুখোমুখি হয়ে গিয়ে হিরার হাত ছেড়ে "ধরণী দ্বিধা হও" মানসিকতা... উফফফফ... এক্সিলেন্ট যাকে বলে আর কি... তবে এই অলকাটির খোঁজ আবার অস্বথামা কেন করছে, সেটা জানার আগ্রহ বেড়ে গেলো যে... এমন জায়গায় এসে ছেড়ে দিচ্ছেন যে পরের পর্বটা না আসা অবধি শান্তি পাচ্ছি না...
ওহ অনেক ধন্যবাদ আপনাকে বোরসেস দাদা। হ্যাঁ এর পরে আর চারটে পর্বে শেষ হবে গল্প টা।
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(20-07-2022, 05:28 PM)nandini20002022 Wrote: osdaharon didi.... ki ki sob sundor porbo.. apnar baki golpo duto khub bhari. porini ekhono shudhu review dekhchilam. tatei mone holo porbo ki porbo na. kintu ei golpota ekebare durdanto. ish pujor somoye dite parten. pujo ta ei golpo ta porei kete jeto. duronto porbo. amar to lalir sathe hirar prem ta darun legeche. ki misti prem. bhabi prem hoyto emni i hoy sobar jonyo. amra hariye feli nijeder doshe. ar baki roilo rohosyo bhed, tate apni eksho te eksho. apnar charidike obadh goti mone hocche. ki durdant porrbo ta. onek onek bhalobasa roilo ar shroddha roilo apnar upore.
খুব ভালো ভালো কথা লিখেছ বোন। অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালোবাসা নিও
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(20-07-2022, 06:15 PM)nextpage Wrote: পড়তে পড়তে বারবার নিজেকে গোয়েন্দা মনে হচ্ছিলো, এই বুঝি নিজেই আটঘাট কোমর বেঁধে নেমে পড়বো সত্য উদঘাটনে। একের পর এক রহস্যের পর্দা উন্মোচন করে ধাঁধার উত্তর গুলো মিলিয়ে যাবো।
শুধু আমার নয় হযতো বাকি পাঠকেরও মনের কোনে এমন আকাঙ্খা নিশ্চয়ই জেগে উঠেছে আর এটাই এই পর্বের সার্থকতা...
অশ্বথামা গ্রামে ঢুকেছে দিনের বেলায় হয়তো নগেন জ্যাঠার খোঁজে.... সামনে বড় বিপদ
বাহ একদিন তুমিও এই সব ছাই পাঁশ লিখে ফেলতে পারবে। লজিক সেন্স মারাত্মক তোমার। কেন সেটা বললাম না।
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(20-07-2022, 08:04 PM)Baban Wrote: উফফফফ গোয়েন্দা গুলোর গোয়েন্দাগিরি, সত্যিই কেমন যেন ভালো লাগলো ওই অংশটা। হ্যা যদিও ব্যাপারটা গুরুতর কিন্তু ওই সবার অমন করে মাথা খাটিয়ে খোঁজাখুঁজি আর মগজাস্ত্রের প্রয়োগ সাথে আবার এক ভালোবাসার মানুষের হাত ধরা, মাতৃত্ব, কোলে বসিয়ে পড়ানোর অতীত আবার মায়ের ভালোবাসার আর মমতার ভাগ, লজ্জায় একটি নারীর পালিয়ে যাওয়া আর শেষে একটা লোকের আবির্ভাব। কারে যেন খুজতাসে! উফফফফফ পুরো কাঁপিয়ে দিচ্ছ তো ❤
হ্যাঁ এই মাথা খাটিয়ে বের করতে তাঁর ও ইচ্ছে করে। হয়ত বুদ্ধিশিরোমণি আছে বলেই উনি সব জানেন।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(20-07-2022, 09:04 PM)boro bara Wrote: আপনার প্রশংসা করা বাতুলতা। এই পর্বে মনে হচ্ছিল হীরা সাধারণ মানুষের মতই মানুষের সাথে থেকে কোন রহস্য উদ্ঘাটিত করছে। ভগবান নয় ও। দারুন ছড়া আর তার অর্থ নির্ধারণ। আপনার সর্ব দিকে গমনের ব্যাপার টা খুব ভারী। ভাবা যায় না এমন একটা ফোরামে এই লেভেলের গল্প লিখে সম্ভ্রম আদায় করা চাট্টি খানি ব্যাপার না। দুর্দান্ত দিদি। আপনি অনন্যা। লাইক আর রেপু রইল।
সর্বদিকে গমনের ব্যাপার টা ভারী বলতে কি বোঝালেন, সেটাই বুঝলাম না ছাই।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(20-07-2022, 09:13 PM)sudipto-ray Wrote: ধীরে ধীরে রাত গভীর হচ্ছে, মানে বিপদ আরও কাছে এগিয়ে আসছে। তাতে কি....রাত যত গভীর হয় প্রভাত তত নিকটে আসে।
থাক সাথে থাক। গল্পের বেশী আর বাকি নেই।
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
আগের পর্বের কিছু অংশ......
- দ্যাখ তো লালি কার খোঁজ করছে এই লোকটা। কি নাম বললে? অলকা না কি যেন একটা? কই গো বল?
পর্ব ষোল
লোকটা চুপ ছিল একেবারে। হয়ত লালি কে দেখবে ভাবে নি। লালি লোক টা কে দেখল ভালো করে। কেমন মুখ টা যেন। অদ্ভুত সাদা। এমন নয় যে লোকটা খুব ফরসা। গায়ের রঙের সাথে অসামঞ্জস্য রেখে মুখের রঙ একেবারে ফ্যাকফ্যাকে সাদা। চোখের মণি স্থির। লোকটাও স্থির হয়ে দেখছে লালি কে। নজর টা সহ্য হলো না লালির। কেমন ছটফটিয়ে উঠলো লালি। বলতে গেল,
- কাউকে খুজছেন?
কিন্তু বেরোল না কথা। খুব আলতো করে গলা দিয়ে একটা “ গররররররররর” আওয়াজ বের হল মাত্র। সর্বনাশ এটা কি হলো। রূপ ধারণ তো নিজের ইচ্ছানুসারে হয়। কিন্তু এটা কি হচ্ছে? একটা সালোয়ার পরেছিল লালি। উফ কি মারাত্মক টাইট লাগছে এবারে। দম বন্ধ হয়ে আসছে। চোখ এ কম দেখতে শুরু করল লালি। গন্ধ টা মারাত্মক বেড়ে গেল। আর নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখল, সাদা লোম গুলো বের হতে শুরু করেছে এবারে। উফ হে কৃষ্ণ এই বিপদ থেকে বাঁচাও। কটি পিসি কথা বলছে লোক টার সাথে আর লালির মনে হচ্ছে, কানের সাথে মুখ ঠেকিয়ে কেউ চিৎকার করছে, - কি গো নাম কি বললে বল, এ লালি, সবাই কে চেনে গ্রামের বল বল?
লালি বুঝতে পারছে, ওর অনিচ্ছাকৃত রূপান্তর হয়ে যাচ্ছে এবারে। কোন উপায় নেই আটকানোর? ঠিক তখন ই হীরা দের বাড়ি থেকে ভেসে এলো হীরার গলা,
- মা খেতে দাও, চান হয়ে গেছে।
লালির মনে হলো সেটা ওষুধের মতন কাজ করল। চোখের দৃষ্টি স্বাভাবিক হলো। কানের ভিতরে দামামা কমে গেল। গন্ধ টা থাকলেও আগের মতন আর রইল না। খুব বেশী হলে সেকেন্ড পাঁচেক তাঁর মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে গেল লালি। খানিক ক্ষন চুপ থেকে জিজ্ঞাসা করল
- কাকে খুঁজছেন আপনি?
একটা গম্ভীরের ও বেশী গম্ভীর গলায় উত্তর এল,
- অলকজিত নামের একজন কে খুঁজছি আমি।
নাম টা শুনে লালি চমকে উঠল এক প্রকার। আগের দিনে সেই প্যারালাল ওয়ার্ল্ডের ব্রাহ্মন পরিবারের নাম গুল অনেক টা এই রকম ছিল বলেই মনে হচ্ছে না? অলায়ুধের বংশধর এরা সবাই। লালির মনে এক টা নয় একাধিক প্রশ্ন চলে এল। সাথে নিজের অনিচ্ছাকৃত রূপান্তরের কারণ ও বুঝল। ও বুঝতে পারল এ কোন সাধারণ লোক নয়। সামনের জন অশ্বথামা। দিনের বেলায় বাঘমুড়ো বের হবে না তাই অশ্বথামা নিজেই বের হয়েছে। থরথর করে কাঁপছিল লালি। লোকটি কিন্তু বলল আবার কথা,
- বা অলকৃত্য?
লালি প্রশ্ন শুনে এবারে ঘাবড়াল না। বুঝে গেল, মণির খোঁজ ওদিক থেকেও চলছে মারাত্মক রকম ভাবে। ওর মধ্যেকার ক্ষমতা ওকে সেই পরিস্থিতি তে নিজেকে সামলে নেওয়াল। ও ফিরে গেল নিজের চরিত্রে। ও বুঝেছিল, সামনের লোক টি সাধারণ কেউ নয়। সামান্য এদিক ওদিক কথাবার্তা বললেই বুঝে যাবে লালি কে আর কিছু ক্ষমতা ধরে। সাবধান হয়ে যেতে পারে। বেশ নিজের মেজাজেই পাশের বাড়ির সরল মেয়ের মতন হেসে উত্তর দিল,
- না তো, এমন অদ্ভুত নামে এই গ্রামে কেউ থাকে না। এতো মনে হচ্ছে কোন প্রাচীন নাম।
এই কথাবার্তার মাঝে কটি পিসি পালালো। হয়ত দুর্গন্ধ টা সহ্য করতে পারছিল না। লালিও পারছে না কিন্তু ক্ষমতা আসার পর থেকে ওর সহ্য ক্ষমতা অনেক বেড়ে গেছে সে নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সামনের লোক টা কে বুঝতে দিলে চলবে না সেটা। নিজের ওড়না টা নাকে চাপা দিল কথা বলতে বলতে। কিন্তু অশ্বথামার এমন করে অলায়ুধের বংশধর দের নাম জিজ্ঞাসা করা ভাল লক্ষণ নয়। বস্তুত লালি জানেও না যে গতকালের সেই ', জীবিত ছিলেন কিনা। কিন্তু অশ্বথামা এই নামে জিজ্ঞাসা করছে মানে সেই ', জীবিত ছিল আর এই নামের বংশধর রা এখন জীবিত? লালির মাথা ঘুরে যাবে এবারে। সামনের লোক টি কিন্তু হতাশ হলো না। বরং কপাল টা কুঁচকে নিলো। বলল,
- ও… কেউ থাকে না এই নামে তাই না? হুম তাই হবে। আমার ই কোন ভুল হয়ত।
লোকটির চোখ মুখ দেখে লালির মনে হল, হয়ত ভাবছে নিশ্চই পাওয়া যাবে। লালি আর কথা বাড়াল না। লোকটি কে না দেখেই ধীর পায়ে রাস্তায় পা রাখল। নগেন এর বাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে থাকল। পিছন ফিরে লোক টি কে দেখার সাহস ও হলো না লালির পাছে লোক টা কোন সন্দেহ করে।
নগেন এর বাড়ির গলি তে ঢুকতেই যেই লোক তার চোখের আড়াল হলো লালি, এক ছুটে সোজা নগেনের বাড়ী ঢুকে হাঁপাতে শুরু করল। নগেন তখন সবে খেয়ে দেয়ে উঠোনে দাঁড়িয়ে হাত মুছছিল। লালি কে ভয়ে হাঁপাতে দেখেই কাছে এসে বলল,
- কি রে কি হলো হাপাচ্ছিস কেন? কি হয়েছে? বল?
লালি খানিক দম নিয়ে বলল,
- দাদু খবর ভাল না।
- কেন কি হলো? আগে আয় তুই বোস তো।
তারপরে ছেলের বউ কে হাঁক দিয়ে বলল,
- এক গ্লাস জল দে তো লালি কে, রোদে এসে হাঁপাচ্ছে মেয়েটা।
নগেন লালি কে বসালো বাড়ির দুয়ারে। লালি দুয়ারে পাতা একটা তক্তপোষ এ বসে জল খেয়ে খানিক ঠান্ডা হল। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখল এবারে ও। ভয় হচ্ছে অশ্বথামা পিছনে পিছনে আসছে নাকি? বাতাসে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে সেই দুর্গন্ধ টার দুরত্ব মাপার চেষ্টা করল। যা বুঝল সেই গন্ধ এখন জলার মাঠ এর কাছে। নাহ এদিকে নেই। নিশ্চিন্ত হলো একটু লালি। কিছু দূরেই নগেন এর বৃদ্ধা বৌদি বসে আছে ঠাণ্ডা মেঝেতে। নগেন দাদু একেবারে সামনে। নগেন ই প্রথম কথা বলল,
- কি রে কীসের ভয় পেয়েছিস?
লালি এদিক ওদিক তাকিয়ে নিল একবার , তারপরে নিচু গলায় বলল,
- অশ্বথামা
- মানে?
- মানে, অশ্বথামা গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
- কি বলছিস?
- হুম ঠিক। আমি হীরা দের বাড়ি থেকে বেরিয়েই দেখি একটা লোক কটি পিসির সাথে কথা বলছে।
- হুম তারপরে?
- কি বিশ্রী দুর্গন্ধ চারিদিকে। আর তুমি তো জান, ক্ষমতা পাওয়ার পরেই এই গন্ধ ব্যাপার টা আমার খুব বেশী অনুভুত হয়। কিন্তু হীরাদের বাড়ি তে থাকার সময়ে গন্ধ টা পাই নি, বেরিয়েই পেলাম। দেখলাম কটি পিসির সাথে লোক টা দাঁড়িয়ে।
- বুঝলাম, কিন্তু বুঝলি কি করে ওটা অশ্বথামা। গন্ধে?
- হ্যাঁ সেটাও কারণ আর ও দুটো কারণ আছে।
- কি?
- লোক টার সামনে আসতেই আমার ভিতরের ক্ষমতার উপরে আমার কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
- মানে?
- মানে একটা উন্মুক্ত ক্রোধের সাথে লোকটার দিকে আক্রমণে যাচ্ছিলাম আমি। আমার গায়ে হাতে পায়ে লোম বের হতে শুরু করেছিল। স্বরে আমার গলা ছিল না, ছিল অপার আতঙ্কে ভরা মৃদু গর্জন।
নগেন বেশ অবাক হয়ে গেল। বলল,
- বলিস কি?
- হ্যাঁ আর ও আছে।
- কি আছে?
- লোক টা কাউকে খুঁজছে। যাকে আমরা চিনি না। কিন্তু নামের সাথে মিল পেয়েছি আমি
- মানে? বুঝলাম না। ঠিক করে বল।
- তোমাকে কালকের ঘটনা বলেছিলাম আজকে দুপুরে তোমার মনে আছে , মন্ডপে বসে? অলায়ুধের বংশধর দের কথা?
নগেন চুপ করে গেল এবারে। কোনরকমে বলল,
- হ্যাঁ বলেছিলি।
- কি বলেছিলাম তোমাকে, যে ',ের সাথে আমাদের দেখা হয়েছিল, তার নাম হলো অলকবৃষ। মজার ব্যাপার অশ্বথামা রূপে এই লোক টা আমাকে এই নামের সাথে মিল আছে এমন আর ও দুটো নাম জিজ্ঞাসা করল, অলকজিত আর অলকৃত্য। অদ্ভুত না? দেখ দাদু তার মানে হলো, হীরা যে বলে এসেছিল সেই ',ের কিছু হবে না আর তার ছেলেও জীবিত আছে, সেটা সত্যি। আর এরা যে সেই ',ের বংশধর সে নিয়ে কোন সন্দেহই নেই।
নগেন চুপ করে গেল এবারে। লালি দেখল চোখে মুখে একটা অস্বাভাবিক আতঙ্ক নগেনের। আর সেটাই স্বাভাবিক। যে মণির পিছনে এরা সবাই আছে, সেই মণি যদি এই পিশাচ দের হাতে পরে তবে তো সব ধ্বংস হয়ে যাবে। এই তিনজনে মিলে কতটুকু বাঁধ দিতে পারবে আর? দাদুর চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক। এদিকে লালি দেখল বেলা বাড়ছে। বাতাসে সেই দুর্গন্ধ টা আর নেই। এবারে বাড়ি যেতে হবে। না হলে বাবা বকবে ওর। ও নগেন কে বলল,
- দাদু এবারে যাই। আশে পাশে কেউ নেই আর।
- হুম।
লালি দেখল নগেন চুপচাপ নিজের ঘরে চলে গেল। লালিও দেরী করল না। নগেনের খিড়কি দরজা দিয়ে বেড়িয়ে, পিছনের গলি পথে পুকুরের ধার দিয়ে নিজের বাড়ি চলে এল। স্নান সকালেই করে নেয় ও। এসে দেখল বাবা নেই। বড় ঠাম্মু শুয়ে পরেছে নিশ্চই। ও দুটি খেয়ে নিল। খেয়ে দেয়ে উঠে দুটো ডাঁশা পেয়ারা ছাড়িয়ে লঙ্কা আর নুন মাখিয়ে, খেতে খেতে বাড়ির পিছন দিকে এল। নিজেদের বাড়ির ঘাট থেকে দেখল হীরা নিজেদের বাড়ির গলির ঘাটে চুপ করে বসে আছে জলের দিকে তাকিয়ে। ভরা দুপুর। ছোঁড়া ঘুমোয় নি? হুম চিন্তায় আছে কাল থেকে। কে জানে কি চলছে ওর মনের ভিতরে। ভাবল চুপি চুপি পিছন থেকে গিয়ে ওকে ধরবে লালি। ছোট বেলায় কত ধরাধরি খেলত। কত্ত ছোট তখন হীরা। কেউ ধরতে পারত না ওকে। কেউ না। বড় বয়সের ছেলেরাও চেষ্টা করত, কিন্তু পারত না ধরতে। এমন না যে খুব জোরে দৌড়তে পারে হীরা। কিন্তু ঠিক ফস্কে যেত হাত থেকে। সব থেকে বেশী নাকাল হত তাঁরা যারা চ্যালেঞ্জ নিয়ে ওকে ধরতে যেত। কিন্তু লালি নিজেও জানে না , হীরা কে ধরে ফেলত কি করে লালি। হাঁপিয়ে গেলে বা খুঁজে না পেলে মনে মনে বলত “কোথায় গেলি হীরা? আয় ধরা দে “! আর না জানি কি করে ঠিক তারপরেই কোন গলির মুখে একেবারে সামনা সামনি ধরা পড়ত দুষ্টু টা। একেবারে কোলে তুলে নিত লালি ওকে। কিন্তু পিছন থেকে কোন দিন ধরতে পারে নি ওকে। যতবার চেষ্টা করেছে ও বুঝে গেছে। ঠিক ফস্কে পালিয়েছে বা ঘুরে দাঁড়িয়ে পরেছে লালির সামনে। আর কি ধরা যায় তারপরে? কিন্তু আজকে একেবারে অন্যমনস্ক। লালি ধীর পায়ে পিছন দিক থেকে যাবার চেষ্টা করল। ঠিক হাত পাঁচেক দূরে তখন, এক মুখ হাসি নিয়ে পিছন ফিরে হীরা বলল,
- এস, তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম। জানতাম তুমি আসবে।
উফ এবারেও হলো না। লালি বলে উঠলো,
- কি করে বুঝে যাস রে তুই?
- উম্ম, তোমার ঘ্রাণ পাই আমি। একটা বুনো ফুলের মতন বন্য সুগন্ধ আসে তোমার থেকে। খুব প্রিয় আমার সেটা।
লালি মরে গেল সুখে, আনন্দে ওই কথা শুনে। মুখ খানা বেঁকিয়ে বলল,
- খুব তুই একেবারে। কুকুর নাকি তুই, গায়ের গন্ধ পাস?
- হাহা। আমি না হলেও কুকুর এক খানা আছে বিশাল। সাদা কুকুর। পরেশ কাকা দেখেছিল না?
লালি এই নিয়ে আর কথা বাড়াল না। মনে মনে ভাবল, পরেশ কাকা কিরে? শশুর হয় না তোর? কিন্তু ও চায় না ওর এই দিক টা হীরা জানুক। হয়ত আর ভালবাসবে না তারপরে। ও আর যাই হোক, কোন মূল্যেই হীরা কে হারাতে পারবে না। হারিয়ে ফেলার আগে ওকে বাঘমুড়ো শেষ করে দিক, সেও চলবে কিন্তু হীরার থেকে কোন ঘেন্না বা ভয় লালির উপরে, সেটা লালি সহ্য করতে পারবে না। ও কথা ঘোরালো। বলল,
- হীরা কিছু কথা বলার আছে তোকে আমার।
- হুম কি কথা বলো।
হীরা ঘাটে বসে থাকলেই নানান আকারের মাছ ভিড় করে ঘাটে। কিন্তু লালি আসলেই তাঁরা চলে যায়। আজকে গেল না তারা কেউ ই। খেলতে লাগল ঘাটে। হীরার ঝোলানো পায়ে এসে মাথা লাগিয়ে ফিরে যাচ্ছিল গভীরে। আবার ফিরে আসছিল মাছ গুলো। মাঝে মাঝেই বেশ বড় বড় মাছ ও আসছে। এউ পুকুরে এতো মাছ আছে বলে লালির জানা ছিল না। এই পুকুর কারোর না। কেউ খেয়াল রাখে না যত্ন নেয় না এই পুকুরের। ভগবান জানে এই পুকুরে এতো মাছ কোথা থেকে এল। ছোট বড় কত মাছ এসে খেলছে, ঘুরছে, ল্যাজ ঝাপ্টাচ্ছে হীরার পায়ের কাছে। না জানি কোথা থেকে কিছু কিছু মুড়ি হীরা ফেলে দিচ্ছে জলে আর মাছ গুলো সেই গুলো খেয়ে নিচ্ছে। লালি ঠিক হীরার পাশেই বসল পা টা ঝুলিয়ে জলের মধ্যে। হীরার কাঁধে মাথা রাখল আলতো করে। কেউ দেখলে দেখুক। আজ বাদে কাল সবাই জানবে। জানুক। প্রেমিক প্রেমিকা দের মধ্যে নিজের ভালোবাসা সকল কে জানিয়ে দেবার একটা মারাত্মক প্রবণতা থাকে, লালিও ব্যতিক্রমী নয়। শুধু হীরাই উদাসীন থাকে সব ব্যাপারে। কাঁধে মাথা রাখলেও হীরার কোন ভয় নেই লালির মনে হলো। আর লালি হীরার কাঁধে মাথা না রাখলেও হীরা বলবে না রাখতে কোনদিন, সেটাও লালি জানে। ও বলল মৃদু স্বরে,
- আচ্ছা হীরা, যদি কোনদিন শুনলি, আমার এই রূপের বাইরেও একটা কদর্য রূপ আছে, তখন কি করবি? আমাকে আর ভালোবাসবি?
হীরা ভারী অবাক হলো, তারপরে মিষ্টি করে হেসে জবাব দিল,
- কদর্য? কি বলছ? মানে তুমি নিষ্ঠুর? এই রকম কিছু?
- উফ না!! মানে এই যে আমি দেখতে সুন্দর, সেটা আর রইল না, তখন?
- সে তুমি এমনিতেও জলার পেত্নীর মতন দেখতে। তুমি সুন্দর কে বলল?
- তবে রে!! কত যেন জলার পেত্নী দেখেছিস তুই?
- হুম দেখেছি। একদিন তোমাদের বাড়ি গেছিলাম পড়তে। সকালে মুখে দই মেখে একটা পেত্নী বেড়িয়ে এসেছিল ঘর থেকে। কিন্তু আমার না ওই পেত্নী কেই বেশ ভালো লাগে।
- ধ্যাত আবার বাজে কথা। বল না যা জিজ্ঞাসা করলাম।
- আচ্ছা শোন তোমাকে একটা গল্প বলি। এখন এই গল্প টা খুব ইম্পর্ট্যান্ট।
লালি অবাক হলো। এতো কথা তো হীরা কোনদিন বলে না। গল্প বলবে তাও হীরা? আনন্দ পাবে না অবাক হবে সেটা লালি বুঝতে পারল না। কিন্তু কিছু বলল ও না। কাঁধে মাথা দিয়ে রইল হীরার। ভাবল হীরা হয়ত ভালোবাসার কথায় কোন গুরুত্ব দিচ্ছে না। মনে মনে কষ্ট পেলেও চুপ করে গেল লালি। শুধু বলল,
- বল কি গল্প বলবি।
- বহুকাল আগে, এক বিশাল জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। এক ঋষি। আজ কেও সেই ঋষির কূল বর্তমান। সেই ঋষির এক পুত্র ছিল। জন্মে ', হলেও, কর্মে সে ক্ষত্রিয়। তার শিক্ষা গুরু ছোট খাটো কেউ ছিল না। ছিলেন মহান পরশুরামের সুযোগ্য বংশধর। ধনুক, গদা, কুঠার এবং তলোয়ার বিদ্যায় নিপুনের থেকেও নিপুন ছিলেন সেই পরশুরাম। কাজেই গুরুর থেকে শিক্ষা লাভ করে মহানতম বীর হয়ে উঠেছিল সেই পুত্র। এতো খানি পরাক্রম থাকা স্বত্বেও সেই পুত্রের জীবন যাপন ছিল খুব দারিদ্রতায় ভরা। সেই পুত্রের বিয়ে হলো। কৃপী নামে এক কন্যার সাথে।
এতোদুর শুনে লালি প্রায় চেঁচিয়ে বলে উঠল,
- তুই কি দ্রোণাচার্য্যের কথা বলছিস? এ গল্প তো জানি আমি। এমন ভাবে বলছিস যেন সামনে থেকে দেখেছিস।
- উফ শোনই না।
- আচ্ছা আচ্ছা বল।
- জীবন সংগ্রামের মারাত্মক সময়ে, কৃপী কে নিয়ে ঘর বেঁধে, সেই পুত্র পড়ল একেবারে অগাধ সমুদ্রে। প্রতিদিনের দারিদ্রতা তো ছিলই তার সাথে ছিল আর্থিক আনুকূল্য না থাকার সামাজিক অপমান। সবাই তাকে বলত , পুজো আচ্চা করে সংসার চালাতে। কিন্তু সে তো পুজো আচ্চা শেখেই নি। সে জানে ধনুক। সে জানে গদা। সে জানে রথ, তলোয়ার এই সব। কাজেই সন্তান হলে কি ভাবে বড় হবে সেই নিয়ে তার ছিল চিন্তা। বড় শিব ভক্ত ছিল সে।
লালি ফুট কাটল এই সময়ে,
- এটা জানতাম না তো যে দ্রোণাচার্য্য শিব ভক্ত ছিলেন।
হীরা হাসল সুন্দর করে। বলল,
- এমন অনেক কিছুই আমরা জানিনা। বা জানলেও, জ্ঞানী হই না। যাই হোক শোন। দ্রোণের ভয় ছিল, সন্তান জন্মালে তার কি হবে। খিদে আর তৃষ্ণা তে সে অধীর হয়ে যাবে। জঙ্গলে পশু, সাপ খোপে তার ক্ষতি করে দেবে। জঙ্গলের রাক্ষস, অপদেবতা তার সন্তান কে হত্যা করতে পারে। তাই সে রোজ মহাশিবের কাছে প্রার্থনা করত সন্তান আর সন্তানের সুখের জন্য। অনেকে বলে অশ্বথামা মহাশিবের অবতার , কিন্তু সেটা ঠিক নয়, তবে মহাশিবের কৃপা তো ছিলোই অশ্বথামার মধ্যে। মহাশিবের রুদ্রাবতার বড় সাধারণ নয়। নারায়ণের দশ অবতারের সাথে তূলনীয়। পার্থক্য হলো, মহাশিবের রুদ্রাবতার ক্ষনিকের ইমোশন এ হয়েছে আর নারায়ণের অবতার অনেক প্ল্যানিং এর পরে। যাই হোক অনেক কিন্তু আছে এ ক্ষেত্রে। অতো বুঝবে না তুমি। অশ্বথামার উপরে মহাদেবের যে কৃপা, তা পুরোটাই ছিল সেই মণির মধ্যে। মণি অশ্বথামা নিয়ে জন্মেছিল। শরীরের সাথে অচ্ছেদ্য ছিল সেই মণি।
- তারপর?
মুগ্ধ হয়ে শুনছিল হীরার কথা লালি। হীরার বাচনে মনে হচ্ছিল চোখের সামনে ঘটছে ঘটনা গুলো। ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে আসছে চারিদিকে। আর লালি হারিয়ে যাচ্ছে হীরার বাক্যজালে।
- দ্রোণ যে যে বিষয় এ ভয় পেত নিজের সন্তান কে নিয়ে, সেই সেই গুণাবলী ওই মণি তে আছে। ওই মণি ক্ষুধা, তৃষ্ণা থেকে অশ্বথামা কে দূরে রাখত সর্বদা। ওই মণির প্রভাবে অশ্বথামা জন্ম থেকেই মহাবীর ছিল। ভুত প্রেত পিশাচ মহাদেবের যাবতীয় অনুচর অশ্বথামার আজ্ঞাবহ ছিল। সেই সময়ের মহানতম বীর দের একজন ছিল অশ্বথামা। কাজেই ওই মণির গুণ অনেক। ক্রোধ সরিয়ে, মায়া মমতা ভালোবাসা সব কিছুই অশ্বথামা পেয়েছিল সেই মণির কৃপা তে। তবে সমস্যা হলো এই মণি কোন একার আজ্ঞাবহ নয়। এই শিরোরত্ন বড়ই অদ্ভুত। যার কাছেই থাকবে, সেই মানুষ কে মারাত্মক প্রভাবিত করতে পারত এই মণি। আর কারোর কাছে না থাকলে চারিপাশের প্রকৃতি কে প্রভাবিত করতে পারে এই মণি। ঠিক এই সময়ে যেমন এই জায়গা কে প্রভাবিত করছে। নিজেকে লুকিয়ে রাখতে এই জুড়ি নেই। চারিপাশের সাথে গিরগিটির মতন নিজেকে লুকিয়ে রেখে দেয় এই বিরাট শক্তিশালী মণি। মহাশিব অনেক ভেবেই এই মণি কে সমর্পণ করেছিলেন অশ্বথামার কাছে। হয়ত বুঝেছিলেন অশ্বথামা দিকভ্রষ্ট হলে এই মণি আর ওর কাছে থাকবে না।
অবাক হয়ে গেল লালি। এই জায়গায় মণি আছে? ছেলেটা মণি তে পাগল হয়ে গেছে। কাল রাত থেকে মণির পিছনে লেগে আছে। হেই মা, পাগল হয়ে গেল নাকি? তাকে কি সারা জীবন পাগল কে নিয়ে ঘর করতে হবে? চারিদিকে তাকাল লালি। কই কোথাও তো কিছু নেই। পুকুরের তিন দিকে বাড়ির জঙ্গল। আর ঠিক উল্টো দিকে মানে পশ্চিম দিকে বাঁশের বিশাল ঝাড়। পশ্চিম আকাশে এক ফালি চাঁদ। ঠিক তার পাশেই সখীর মতন ছোট্ট সাঁঝ তারা। চারিদিক কেমন স্তব্ধ। বাঁশগাছের পাতার একে অপরের সাথে স্পর্শ হয়ে রিনিঝিনি হালকা আওয়াজ কানে আসছে লালির। মৃদুমন্দ হাওয়া এসে মুখে চোখে লেগে প্রাণ টা জুড়িয়ে দিচ্ছে একেবারে। সেই হাওয়ায় পুকুরের জল ও তির তির করে কাঁপছে। কি সুন্দর পরিবেশ। পুকুরের জলে চাঁদের প্রতিবিম্ব যেন আরো মোহময় করে তুলেছে জায়গা টা কে। মনে হচ্ছে জলের ভিতরে আর একটা চাঁদ উঠেছে আর তাতে জলের উপরিতল একেবারে সাদা হয়ে আছে। জলের ঢেউ এ সেই চাঁদের আলো হাওয়ায় ভর করে তির তির করে সাদা জল কেটে সামনের দিকে এগিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে পাড়ে। লালি ও হারিয়ে গেল হীরার কাছে। যখন প্রকৃতিও নিজের মায়াজাল নিয়ে প্রেমের ওম দিতে আসে তখন মনে হয় প্রেম সার্থক। মণি থাকুক বা না থাকুক লালির কাছে এই পাওনা কোটি কোটি মণির থেকেও মূল্যবান।
কিন্তু কি বলছে হীরা এখানে মণি উপস্থিত ? ও ফিরে এল প্রেমের জগত থেকে। বলল,
- এখানে মণি? দেখলি তো সকালেই, নেই কোন মণি। ওই ', আমাদের ভুল সুত্র দিয়েছিল হীরা। তোকে অনেক কথাই আমি বলিনি। আজকে তোর বাড়ি থেকে বেড়িয়েও অনেক কিছু ঘটেছে।
হীরা কোন উৎসাহ দেখালো না লালির কথায়। কি ঘটেছে না ঘটেছে ওতে যেন কোন উৎসাহ ই নেই হীরার। শুধু বলল,
- তুমি সত্যি করেই মণি দেখতে পাচ্ছ না?
লালি চারিদিকে তাকাল। কিন্তু মণির কোন লক্ষণ বুঝতে পারল না। বলল,
- না আমি দেখতে পাচ্ছি না। তুই দেখা!
- আচ্ছা তাই হোক। ওই দেখ!!
লালি দেখল, পুকুরের যেখানে চাঁদের প্রতিবিম্ব পড়েছে হীরা সেই দিকে আঙ্গুল তুলে আছে। লালি হেসে ফেলল। বেশ করে গাল দুটো কে টিপে একেবারে অস্থির করে তুলল হীরা কে। আর প্রায় হেসে গড়িয়ে পরে বলল,
- এটা কে নিয়ে আমি কি করি! হ্যাঁ রে! তুই বিয়ের পরে আলু আনতে বললে অন্য কিছু নিয়ে আসবি না তো? কি করব আমি তখন তোকে নিয়ে হীরা??
তারপরে প্রায় অট্টহাসি তে ফেটে পরল লালি নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে। আর হীরার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
- ওরে ওটা চাঁদের রিফ্লেকশন মশাই। মণি না। নাহ সত্যি তোর মাথা টা গেছে। এই চল তো তুই বাড়ি। আর এই বাড়াবাড়ি আমার সহ্য হচ্ছে না। হীরা তোকে না আমি আর কার ও কাছে রাখতে ভরসা পাচ্ছি না। প্লিস তুই ওঠ এখন।
- আচ্ছা? বেশ উপরে চাঁদ কে দেখ। কেমন দেখছ?
- কেমন আবার আধখানা ফালি।
- এবারে জলে রিফ্লেকশন যাকে বলছ সেটা দেখ।
- হ্যাঁ দেখছি তো। কি আলাদা!!
এই টুকু বলেই খুব ভালো করে তাকালো জলের দিকে। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে বুঝতে পারল জলের ভিতরের চাঁদ টা আর আকাশের চাঁদ টা প্রায় একরকম হলেও এক নয়। নীচের চাঁদ টা প্রায় গোল। বেশ ছোট। ঢেউ এর সাথে কাঁপছে এমন করে যে আসল আকার টা ধরতে পারা যাচ্ছে না। কিন্তু মেটামর্ফ এর মতন চাঁদের সাথে আর সব থেকে বড় কথা চাঁদের আলোর সাথে একাত্ম হয়ে আছে। পুকুরের জল টা এমন ভাবে আলোকিত করে রেখেছে মণি টা মনে হচ্ছে আকাশের চাঁদের আলো এসে পুকুরের জলে পরেছে। অথচ আকাশের চাঁদের যা জ্যোতি তাতে পুকুরের জল এই ভাবে আলোকিত হতে পারে না। লালির কাছে মাঝে মাঝেই ধাঁধার উত্তরের মতন হারিয়ে যাচ্ছিল মণি টা, সব কিছু জানার পরেও।
লালির মুখ টা হাঁ হয়ে গেল। বুকে যেন কেউ দামামা বাজাচ্ছে ভীষণ জোরে। মণির এতো গুণ লালি কল্পনাও করতে পারে নি। লালি কোন কথা বলতে পারল না। হাঁ করে চেয়ে রইল হীরার দিকে। আর হীরা মিটি মিটি হাসছিল লালি কে দেখে। লালি একবার হীরা আর একবার জলের দিকে তাকাচ্ছিল। উফ কি মারাত্মক খেলা এই মণির। কে বুঝবে ওটা জলে চাঁদের আলোর প্রতিবিম্ব নয়? কিন্তু হীরা কি করে বুঝল? এ জিনিস জানার পরেও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।চোখ আর মস্তিস্ক কে একেবারে অবশ করে ফেলছে এই মণি। চোখ সরিয়ে নেবার পরে আবার তাকালে, আলাদা করা যাচ্ছে না মণি আর চাঁদের আলো কে। তবে হীরা কি করে বুঝল?
লালি দেখেছে আগেই, দরকারে হীরা সবার আগে মন পড়তে পারে। এবারেও মনে হয় পারল সেটা। বলল,
- আমি সকালেই আন্দাজ করেছিলাম। যখন দেখলাম পায়ের মাপের হিসাব পুকুরের দিকে যাচ্ছে তখন ই বুঝেছিলাম মণি এখানেই আছে। কিন্তু কোন কিছুর আভাস পাই নি।
লালি তখনো বুঝতে পারছে না কি জবাব দেবে। ও এক মনে মণি টা দেখছিল। কেমন একটা বুকচাপ অনুভব হতে লাগল লালির। জিজ্ঞাসা করল,
- কি ভাবে বুঝলি তবে?
- বুঝলাম দুপুরে তোমাকে দেখে।
- আমাকে দেখে?
- হুম।
- কি ভাবে?
- যেমন তুমি আমার হাত ধরে ছিলে বাড়িতে ঢোকার আগে। যেই মা কে দেখলে সাথে সাথে মায়ের চেনা লালি হয়ে গেলে। নাটক করলে মায়ের সামনে। তখন মা কে বুঝতেই দিলে না যে তুমি আমাকে কি চোখে ভালোবাস আর তোমার মনের ইচ্ছা কি। তুমি মানসিক ভাবে নিজেকে মর্ফ করলে। আর আমার সরল মা সেটা বুঝতে পারল না।
লালি লজ্জা পেল হীরার কথায়। জিজ্ঞাসা করল তাও,
- তাতে কি হয়। এর থেকে তুই ধরে ফেললি যে মণি মর্ফ করতে পারে?
- হুম কারণ তুমি হয়ত মনে রাখনি কিন্তু আমি ',ের কথা গুলো মনে রেখেছি। ওই ', মণির কাছে যেতে পারত না। গেলেই শারীরিক সমস্যা দেখা দিত। মানে মণি নিজেকে সুরক্ষা দিতে পারে। ওর মধ্যে যা ক্ষমতা আছে সেই দিয়েই ও নিজেকে সুরক্ষিত রাখে। হয়ত সেই ব্রাহ্মনের পূর্ব পুরুষ তাকে একটা ঘরে রেখে দিয়েছিল। কালের গর্ভে সেই ঘর এই পুকুরের জলে নিমজ্জিত হয়ে গেছে আর মণি রয়ে গেছে এই খানেই। বা আর ও একটা উপায়ে হতে পারে। সেটা পরে বলছি । এর মানে একটাই সেই ব্রাহ্মনের পরিবার জানে মণির এই গুণের কথা আর সেই মণি গত তিন হাজার বছর ধরে এখানেই রয়েছে। এই গ্রামেই রয়েছে। আর সেই পরিবার কে সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছে।
লালি এবারে মুখ খুলল। বলল,
- ধরেও নিলাম তোর থিয়োরী ঠিক। আর ঠিক হলে এই পুকুরের চারিদিকে যাদের বাড়ি আছে তাদের মধ্যেই কাউকে অলায়ুধের বংশধর হতে হয়।
- একদম তাই। কিন্তু দেখতে গেলে চারটে পরিবার এই পুকুরের ধারে বাস করে। আমরা, তোমরা , নগেদ দাদু আর অভির কাকা আর কাকার ছেলে। আমরা নই। কারণ যতদূর জানি আমার বাবা এখানকার ই নয়। একেবারে কিছুই ছিল না , সেই কোন ছোট বেলায় আমার বাবা এই গ্রামে এসেছিল। তোমরা ও নও।
- কেন আমরা নই কেন?
- না নও। কারণ সেই ', বলেছিল, যে ছোট থেকেই মণির ব্যাপারে জানিয়ে দেওয়া হয় পরিবারের সন্তান দের। আর সেই মণির কৃপা তে তারা শিক্ষা দীক্ষায় উজ্জ্বল হয় বেশ। তুমি এর আগে মণির ব্যাপারে শোননি এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। আর শুনলে তুমি ভ্যাবাচ্যাকা খাবার মতন যে মুখ টা করে আছ সেটা কে এক্টিং করে বের করতে হবে। তুমি এক্টিং জান না সেটা আমি জানি। আর তোমরা ', ও নউ। তোমরা ঘোষ।
লালি প্রতিবাদ করল এবারে। বলল,
- তবে তো এই পুকুরের চারিদিকে যারা আছে তারা কেউ ই ', নয়।
- হ্যাঁ ঠিক তবে একজন ছাড়া।
The following 13 users Like nandanadasnandana's post:13 users Like nandanadasnandana's post
• Baban, bismal, boro bara, bourses, Bumba_1, ddey333, nandini20002022, nextpage, Pundit77, ray.rowdy, samael, sudipto-ray, Tiger
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,216 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
পর পর দুটো পর্ব একসঙ্গে পড়লাম। আগের পর্বটা ঘিরে সিংহদুয়ার খোঁজার টেকনিক্যাল দিনগুলোই বেশি প্রকাশ পেয়েছে আর বর্তমান পর্বটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই উপন্যাসের জন্য। বিশেষ করে কিছুটা আলোর প্রতিসরণ থিওরির উপর নির্ভর করে পুকুরের মধ্যে মণির সন্ধান পাওয়ার ব্যাপারটা। দুর্দান্ত লাগলো
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
21-07-2022, 06:38 PM
(This post was last modified: 21-07-2022, 06:40 PM by nextpage. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
তুমি মোটেও ছাইপাশ লেখো না, ওসব তো আমার ক্রিয়া ধারা। অলস মস্তিষ্কে যা আসে লিখে ফেলি। তবে হ্যাঁ সামনে একটা থ্রিলার লেখার ইচ্ছে আছে। অনেক আগেই একটা অনু থ্রিলার লিখেছিলাম কলেজ ম্যাগাজিনের জন্য।
ঢাকা এসেছি একটা কাজে সেখানে আড্ডায় তোমার লেখা নিয়ে কথা বলেছি, অনেকেই আগ্রহী বই হিসেবে সামনের বই মেলায় তোমার বই পেতে। প্রিন্ট হলে ছোট ভাইয়ের জন্য কপি পাঠাবে??
আজকের পর্বে আসি, গত পর্বের নগেন জ্যাঠার নীরবতা আমাকে ভাবিয়েছে তখনি ধরে ফেলেছি তিনিই সেই বংশধর তবে বলিনি বাকিদের জন্য। শক্তির বিপরীতেই আরেক শক্তির প্রকাশ ঘটে তাই লালিরও হয়েছিল তবে কৃষ্ণের সব জানা তাই ওটার নিরাময় তার কাছেই ছিল শুধু একটু আওয়াজেই সব ঠিক করে দিল।
আজকের সবচেয়ে সুন্দর পার্ট পুকুর পাড়ে লালি হীরার সময় টুকু, আহা কাধে মাথা রেখে আকাশের চাঁদ পুকুরের প্রতিফলিত হতে দেখা উফফ সেই সময়টা খুব মিস করছি...
লালির নিজের সাথে কথা বলা নিজের সুখেই নিজেকে মেরে ফেলার যে সুখ এটা এখনকার সিঙ্গেল জীবনে খুব কষ্ট দেয় গো দিদি।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Posts: 42
Threads: 0
Likes Received: 58 in 38 posts
Likes Given: 160
Joined: Sep 2019
Reputation:
2
(21-07-2022, 02:49 PM)nandanadasnandana Wrote: পুকুরের তিন দিকে বাড়ির জঙ্গল। আর ঠিক উল্টো দিকে মানে পশ্চিম দিকে বাঁশের বিশাল ঝাড়। পশ্চিম আকাশে এক ফালি চাঁদ। ঠিক তার পাশেই সখীর মতন ছোট্ট সাঁঝ তারা। চারিদিক কেমন স্তব্ধ। বাঁশগাছের পাতার একে অপরের সাথে স্পর্শ হয়ে রিনিঝিনি হালকা আওয়াজ কানে আসছে লালির। মৃদুমন্দ হাওয়া এসে মুখে চোখে লেগে প্রাণ টা জুড়িয়ে দিচ্ছে একেবারে। সেই হাওয়ায় পুকুরের জল ও তির তির করে কাঁপছে। কি সুন্দর পরিবেশ। পুকুরের জলে চাঁদের প্রতিবিম্ব যেন আরো মোহময় করে তুলেছে জায়গা টা কে। মনে হচ্ছে জলের ভিতরে আর একটা চাঁদ উঠেছে আর তাতে জলের উপরিতল একেবারে সাদা হয়ে আছে। জলের ঢেউ এ সেই চাঁদের আলো হাওয়ায় ভর করে তির তির করে সাদা জল কেটে সামনের দিকে এগিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে পাড়ে। লালি ও হারিয়ে গেল হীরার কাছে। যখন প্রকৃতিও নিজের মায়াজাল নিয়ে প্রেমের ওম দিতে আসে তখন মনে হয় প্রেম সার্থক। মণি থাকুক বা না থাকুক লালির কাছে এই পাওনা কোটি কোটি মণির থেকেও মূল্যবান।
আমি আবার বলছি, কি ভাবে এমন বর্ণনা দেন জানিনা। হয়ত আপনি লেখক বলেই দিতে পারেন এমন বর্ণনা। ঠিক যেন মনে হচ্ছে সামনের স্ক্রীনে হচ্ছে এই গুলো। আবহাওয়া তৈরি করতে আপনার জুড়ি নেই। মনি র আত্মপ্রকাশ এর বর্ণনা অসাধারণ। এমন ভাবে আত্মপ্রকাশ করালেন তাতেই মনির ক্ষমতা আর গুরুত্ব অনেকের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। লালির ক্ষমতার কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলার জায়গা টা মনে হচ্ছিল সিনেমা দেখছি। দারুণ বললেও কম বলা হয়। লাইক আর রেপু রইল দিদি। আর লালির প্রেম, উফ এককথায় দারুন। নেক্সটপেজের সাথে একমত হলাম না। আমি বিবাহিত তারপরেও মন টা কেমন করে উঠলো। মনে হলো কাশ আমারো এমন একটা প্রেমিকা থাকত।
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
আজকের পর্ব পড়ে সিওর হলাম নগেন দাদুই তাহলে সেই বংশধর। তার চিন্তা ও নিরাবতাই সেইটি প্রমান করছে। ওদিকে লালির নিজের থেকে ট্রান্সফরম হবার অভিজ্ঞতা বেশ ভয়ের কিন্তু! নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে শরীর অবাদ্ধ হয়ে পাল্টে ফেলছে নিজেকে। আবার লালির আর হীরার একসাথে বসে মাছেদের মাঝে, প্রকৃতির মাঝে সাময়িক ভাবে অন্য জগতে হারিয়ে যাওয়া, যেখানে বাস্তবের ভয়ঙ্কর রূপ নেই, আছে শুধুই ভালোবাসা ও বিশ্বাস। একে ওপরের প্রতি। সেই অংশ টুকুও খুব মিষ্টি। আবার শেষে মণির আবিষ্কার কিংবা রহস্য উদ্ধার যাই বলি সেটার জন্য তো হীরা বাবুকে স্যালুট। সে যখন মানব জীবন নিয়ে এসেছে, তখন সকল পরীক্ষার পথে তাকে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই যে খেটে সব পথ উত্তীর্ণ করতে হচ্ছে এই ব্যাপারটা কিন্তু সত্যিই একটা দারুন উদাহরণ!
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(21-07-2022, 07:28 PM)Baban Wrote: আজকের পর্ব পড়ে সিওর হলাম নগেন দাদুই তাহলে সেই বংশধর। তার চিন্তা ও নিরাবতাই সেইটি প্রমান করছে। ওদিকে লালির নিজের থেকে ট্রান্সফরম হবার অভিজ্ঞতা বেশ ভয়ের কিন্তু! নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে শরীর অবাদ্ধ হয়ে পাল্টে ফেলছে নিজেকে। আবার লালির আর হীরার একসাথে বসে মাছেদের মাঝে, প্রকৃতির মাঝে সাময়িক ভাবে অন্য জগতে হারিয়ে যাওয়া, যেখানে বাস্তবের ভয়ঙ্কর রূপ নেই, আছে শুধুই ভালোবাসা ও বিশ্বাস। একে ওপরের প্রতি। সেই অংশ টুকুও খুব মিষ্টি। আবার শেষে মণির আবিষ্কার কিংবা রহস্য উদ্ধার যাই বলি সেটার জন্য তো হীরা বাবুকে স্যালুট। সে যখন মানব জীবন নিয়ে এসেছে, তখন সকল পরীক্ষার পথে তাকে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই যে খেটে সব পথ উত্তীর্ণ করতে হচ্ছে এই ব্যাপারটা কিন্তু সত্যিই একটা দারুন উদাহরণ!
না হীরা বাবু নিজে সর্বশক্তিমান হবার সমস্ত ফায়দাই নিচ্ছেন। ক্রমশ প্রকাশ্য। তবে হ্যাঁ, ভগবান তো কোন অবতারেই আয়াসে কিছু পান নি। কোন পূর্নাংগ অবতারেই তিনি আয়াসে কিচ্ছু পান নি, রিতীমত ঘাম ঝড়িয়ে অর্জন করেছিলেন সব কিছু।
|