Poll: এই গল্প টা আপনাদের ভালো লাগলে নীচের অপশন এ ক্লিক করে জানান কেন ভালো লাগছে
You do not have permission to vote in this poll.
গল্পের কাহিনী
10.00%
2 10.00%
গল্পের গতি
0%
0 0%
গল্পের গতি এবং কাহিনী
85.00%
17 85.00%
গল্প টি ভালো লাগছে না
5.00%
1 5.00%
Total 20 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 96 Vote(s) - 3.46 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Fantasy বাঘমুড়োর আতঙ্ক - সমাপ্ত
পড়লাম এই পর্ব টা। সাঙ্ঘাতিক পর্ব। মনেই হলো না কোন ফ্যান্টাসী পড়ছি। যতদূর মনে হলো, হীরা ইচ্ছে করেই অন্য পোর্ট কী দিয়ে লালি কে নিয়ে গেছে অন্য সময়ে। জানিনা এর পরের পর্ব হয়ত এই রহস্য উন্মোচন করবে। বাবান দার কথাই ঠিক। অতীত কে আসতেই হতো বর্তমানের প্রশ্নের উত্তর দিতে। হয়ত লুকিয়ে সেই সময়ে, এই সময়ের কিছু প্রশ্নের উত্তর। সত্যি ই থ্রিলার হয়ে গেছে। বাঙালী হ্যারি পটার? নাকি তার থেকেও বেশী কিছু পেতে চলেছি আমরা তা ভবিষ্যৎ বলে দেবে। এক কথায় অসামান্য। 

দিদি আবার বলছি, আমরা ভাগ্যবান তাই সৃস্টি পড়তে পারছি। না হলে সত্যি এই ফোরামের জন্য এই গল্প নয়। জানিনা হয়ত বাকীরা পড়ছেন না। কারন এই কয়জন ছাড়া তো কাউকে কমেন্ট ও করতে দেখি না। এই গল্প না পড়া কিন্তু এটা তাদের লস।  
[+] 1 user Likes boro bara's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
আস্তে আস্তে রহস্যের অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছি আমরা । আছে কোন আলোর দিশা, যা আমাদের পথ দেখাবে!!! অতীতের অস্ত্রের মাধ্যমে ভবিষ্যতে শয়তানের বধ। এমনটা শুধু মুভিতেই দেখেছি, আজ দেখছি তোমার লেখায়। রহস্য আর বিজ্ঞান মিলেমিশে একাকার। রহস্যের তো কেবল শুরু, সামনে যে আরো কি আছে, তা কে জানে।

গল্পের মহান চরিত্র গুলোকে যথাযথ ভাবেই দেখাচ্ছো দিদি। লাইক ও রেপু তোমার জন্য দিদি।
[+] 2 users Like sudipto-ray's post
Like Reply
(05-07-2022, 10:22 AM)ddey333 Wrote: একই সাথে গা ছমছমে আবার ভালো লাগার আপডেট , টাইম মেশিন ইত্যাদি ....

ভুল বলিনি ... একটা দারুন SCI FI ছবি তৈরী হতে পারে !!! 


clps

হে হে। খুব খরচের সিনেমা হবে।
[+] 2 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
(05-07-2022, 07:02 PM)Baban Wrote:
লেখার শুরুর দিকেই বলেছিলাম এই গল্পের যা গুন তাকে সঠিক ভাবে চলচ্চিত্র হিসাবে ফুটিয়ে তোলা এখানকার কম্পিউটার গ্রাফিক্স এর কাজ নয়, বা বলা উচিত ওতো বাজেট নেই। কিন্তু সেই পরিমান অর্থ সঠিক ভাবে কাজে লাগিয়ে অসাধারণ পরিচালনা ও সেই মানের vfx এর মাধ্যমে যদি সব কিছু ফুটিয়ে তোলা যায় তবে এই কাহিনী, সেই সিনেমা কাল্ট ক্লাসিক হয়ে ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে।

এবার আসি আজকের পর্বে - কল্পবিজ্ঞান, ভালোবাসা, ভয় ও বিদ্রোহ সব কিছুই ছিল আজকের পর্বে। বর্তমান যে জবাব দিতে অক্ষম তা জানতেই যেন অতীতের আবির্ভাব এইভাবে। এই অতীতের কিছু অজানা কথাই ভবিষ্যতকে রক্ষা করতে পারবে। উফ্ফ্ফ্ফ্ফ্ফ্ফ কিসব আসছে এই গল্পে পরপর!!  আর এটাকে ফ্যান্টাসি লেখা ঠিক নয়, এ যে অসাধারণ থ্রিলার!!♥️♥️

হ্যাঁ, এই রকম একটা গল্পের প্ল্যান ছিলই আমার। তোমাদের ভালো লাগছে এটাই অনেক।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(05-07-2022, 07:52 PM)boro bara Wrote: পড়লাম এই পর্ব টা। সাঙ্ঘাতিক পর্ব। মনেই হলো না কোন ফ্যান্টাসী পড়ছি। যতদূর মনে হলো, হীরা ইচ্ছে করেই অন্য পোর্ট কী দিয়ে লালি কে নিয়ে গেছে অন্য সময়ে। জানিনা এর পরের পর্ব হয়ত এই রহস্য উন্মোচন করবে। বাবান দার কথাই ঠিক। অতীত কে আসতেই হতো বর্তমানের প্রশ্নের উত্তর দিতে। হয়ত লুকিয়ে সেই সময়ে, এই সময়ের কিছু প্রশ্নের উত্তর। সত্যি ই থ্রিলার হয়ে গেছে। বাঙালী হ্যারি পটার? নাকি তার থেকেও বেশী কিছু পেতে চলেছি আমরা তা ভবিষ্যৎ বলে দেবে। এক কথায় অসামান্য। 

দিদি আবার বলছি, আমরা ভাগ্যবান তাই সৃস্টি পড়তে পারছি। না হলে সত্যি এই ফোরামের জন্য এই গল্প নয়। জানিনা হয়ত বাকীরা পড়ছেন না। কারন এই কয়জন ছাড়া তো কাউকে কমেন্ট ও করতে দেখি না। এই গল্প না পড়া কিন্তু এটা তাদের লস।  

হে হে। কি যে বল। তোমাদের ভালো লাগছে আমার এটাই অনেক।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(05-07-2022, 09:13 PM)sudipto-ray Wrote: আস্তে আস্তে রহস্যের অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছি আমরা । আছে কোন আলোর দিশা, যা আমাদের পথ দেখাবে!!! অতীতের অস্ত্রের মাধ্যমে ভবিষ্যতে শয়তানের বধ। এমনটা শুধু মুভিতেই দেখেছি, আজ দেখছি তোমার লেখায়। রহস্য আর বিজ্ঞান মিলেমিশে একাকার। রহস্যের তো কেবল শুরু, সামনে যে আরো কি আছে, তা কে জানে।

গল্পের মহান চরিত্র গুলোকে যথাযথ ভাবেই দেখাচ্ছো দিদি। লাইক ও রেপু তোমার জন্য দিদি।

রহস্য বিল্ট আপ হয়েছে। ধীরে ধীরে জট খুলবে।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
অফিসের কাজের পাহাড়সমান চাপ, পারিবারিক কাজের চাপ, এছাড়া নিজের উপন্যাস লেখার চাপ তো আছেই .. সব মিলিয়ে নতুন পর্ব পড়তে একটু দেরি হয়ে গেল।

রহস্য বেশ ঘনীভূত হয়ে গিয়েছে, এবার হয়তো ধীরে ধীরে জট খোলার পালা। দুর্দান্তভাবে এগিয়ে চলেছে এই উপন্যাসের গতিপ্রকৃতি। লাইক এবং রেপু নিয়ে আলাদা করে কোনওদিনই কিছু বলি না, কারণ ওগুলো দিয়েই কমেন্ট করি।
[+] 2 users Like Bumba_1's post
Like Reply
ami ekebare notun member. jodio aschi ei forum e onek din thekei. golpo pori. shudhu ei golpo ta porte portei ekhane log in korlam shudhu comment korte. osadharon golpo. shirshendu mukherjee babur gondho pelam. oi rokom i otiprakrito golper modhye adhunikotar choya. darun lagche. asole bujhte parchilam na ki bhabe lekha jay ekhane na hole kalkei likhe ditam ei kotha gulo. darun lekha. ei forum e ei golpo pabo asha korini konodin o. darun lekha . chaliye jan dada.
[+] 2 users Like nandini20002022's post
Like Reply
(06-07-2022, 12:13 PM)Bumba_1 Wrote: অফিসের কাজের পাহাড়সমান চাপ, পারিবারিক কাজের চাপ, এছাড়া নিজের উপন্যাস লেখার চাপ তো আছেই .. সব মিলিয়ে নতুন পর্ব পড়তে একটু দেরি হয়ে গেল।

রহস্য বেশ ঘনীভূত হয়ে গিয়েছে, এবার হয়তো ধীরে ধীরে জট খোলার পালা। দুর্দান্তভাবে এগিয়ে চলেছে এই উপন্যাসের গতিপ্রকৃতি। লাইক এবং রেপু নিয়ে আলাদা করে কোনওদিনই কিছু বলি না, কারণ ওগুলো দিয়েই কমেন্ট করি।

হ্যাঁ গো এবারে জট খুলে ফেলতে হবে। আর বেশী সময় নেই আমার হাতেও। কাজের চাপ চলে আসার আগে ব্যাপার টা কে দাঁড় করিয়ে ফেলতে হবে।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(06-07-2022, 12:32 PM)nandini20002022 Wrote: ami ekebare notun member. jodio aschi ei forum e onek din thekei. golpo pori. shudhu ei golpo ta porte portei ekhane log in korlam shudhu comment korte. osadharon golpo. shirshendu mukherjee babur gondho pelam. oi rokom i otiprakrito golper modhye adhunikotar choya. darun lagche. asole bujhte parchilam na ki bhabe lekha jay ekhane na hole kalkei likhe ditam ei kotha gulo. darun lekha. ei forum e ei golpo pabo asha korini konodin o. darun lekha . chaliye jan dada.

Heart Heart Heart Heart । অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। পড়ছেন আমার এই গল্প টা এটাই আমার কাছে অনেক।

আর দাদা নয়। দিদি বললে একটু ভাল হত আরকি।
[+] 2 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
(06-07-2022, 11:47 AM)nandanadasnandana Wrote: হে হে। খুব খরচের সিনেমা হবে।

ভালো গল্প পেলে প্রযোজকরা  খরচের কথা মনে হয়না খুব একটা ভাবে , কারণ খরচের দশ গুন্ আমদানি হয় যদি ছবিটা হিট করে !!
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
হে হরি মাধব! গল্পের জন্যে ধন্যবাদ?
[+] 2 users Like LajukDudh's post
Like Reply
(06-07-2022, 03:28 PM)LajukDudh Wrote: হে হরি মাধব! গল্পের জন্যে ধন্যবাদ?

অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(06-07-2022, 01:11 PM)nandanadasnandana Wrote: Heart Heart Heart Heart । অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। পড়ছেন আমার এই গল্প টা এটাই আমার কাছে অনেক।

আর দাদা নয়। দিদি বললে একটু ভাল হত আরকি।

sorry didi....
[+] 2 users Like nandini20002022's post
Like Reply
আগের পর্বের কিছু অংশ......

', কেঁদেই ফেললেন হাউ হাউ করে। হীরা তাকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে, নিয়ে এসে গাছের বেদী তে বসাল। আর লালি বসল ঠিক পাশেই। বাঘমুড়োর শক্তি আর সামর্থ্য অনেক বেশী লালির থেকে। কিছু আগেও একটা ভয় কাজ করছিল লালির মনে সেই জন্য। কিন্তু এই অত্যাচার আর হত্যালীলা শোনার পরে, লালির আর ভয় করছে না। মনে হচ্ছে আসুক তারা। সে লড়বে আজকে। হীরা কে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে এসে সে লড়বে। মনে মধ্যে একটা অদ্ভুত অস্থিরতা কাজ করছে লালির। যতক্ষন না বাঘমুড়োর গলার নলী টা ও কামড়ে ছিঁড়ে নিতে পারছে যেন শান্তি নেই লালির।                                                         
                                                                                            পর্ব তেরো
ততক্ষণে কেদার, বলতে শুরু করেছে,
-      বাঘমুড়োর জন্ম কাহিনী তো তোমরা জান আশা করি। বড়ই অলুক্ষুণে সময়ের যোগে বাঘমুড়ো জন্ম লাভ করেছিল। শিশুপাল এর জন্ম সময় ও অলুক্ষুণে ছিল। শিশুপাল জন্মে ছিল চার হাত নিয়ে। চার হাত নিয়ে জন্ম নেওয়ার মানে হলো দুটো, এক সে কর্মঠ হবে না হলে লোভী হবে। কিন্তু জন্মের সাথে সাথে আকাশ বানী হয়েছিল, যার দর্শনে, সেই চার হাতের দুটো হাত খসে পরবে, সেই হবে শিশুপালের হত্যাকারী। কাজেই কৃষ্ণ নিজের পিসির ছেলেকে দেখার সাথে সাথেই , যখন শিশুপালের দুটো হাত খসে গেছিল, তখন সবাই জেনে গেছিল, কৃষ্ণ ই বধ করবে শিশুপাল কে। তাই সে যে ক্ষমতা লোভী হবে সেটা স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু শিশুপাল বধের পরে তার নতুন করে জীবন লাভ টা, রাবণের জন্মের মতই ক্ষতিকারক হয়ে গেছিল। না মানুষ, না পশু ও। না জীবিত না মৃত। সমস্ত হিসাব নিকাশের বাইরে একেবারে। আর সেই কারনে, জীবিত আর মৃত র মাঝামাঝি সকল জীব কে নিজের কথা শোনাতে জানে ও। ওকে হত্যা করা এতো সহজ নয়। আর তাই এই সহস্র কাল ও নিজেকে বাচিয়ে রেখেছে।

চারদিকে মৃত্যু আর হত্যা দেখে দেখে ক্লান্ত কেদার একটু থামল এবারে। হীরা খুব মৃদু অথচ দৃঢ় স্বরে বলল,
-      উপায় কি কিছুই নেই? মনে তো হয় আছে।

কেদার চাইল হীরার দিকে। লালিও চাইল। অন্ধকারে হীরার মুখে হীরের দ্যুতি মনে হলো এক ঝলকের জন্য। মনেই হচ্ছে না যার গলা শুনল সেটা হীরার কন্ঠস্বর। কেমন একটা আত্মপ্রত্যয় ছিল সেই কথায়।সেই প্রত্যয়েই লালির মনে মনে নিশ্চিত হল – মনে হয় নয়, নিশ্চই উপায় আছে। এর পরে কেদার কথা বলল,

-      উপায় আছে। কিন্তু সেটা অসম্ভব। এই রকম ভয়ানক জীব কে শেষ করতে আমাদের কোন অস্ত্র শস্ত্র কাজে আসবে না। স্বয়ং তাকেই আসতে হবে এই ধরায়। স্বয়ং তাকেই শেষ করতে হবে এই খেলা। দেখ, আমার জন্মের আগে শুনেছি, এখানে এক সাধু এসেছিলেন। তিনি বলে গেছিলেন, তিনি আসবেন। অনেক লক্ষণ বলেছিলেন তার। কিন্তু সব লক্ষণ মিললেও একটা লক্ষণ মেলে নি।  
-      কি সেটা?

হীরার প্রশ্নে, কেদার একটু চুপ করে গেল। কিছুক্ষণ পরে একটা ভারী শ্বাস নিয়ে বলল,
-      এই গ্রাম কে কবচ দিয়ে বাঁধা আছে, সেই বাঘমুড়োর জন্মের কিছু বছর পর থেকে। কথিত ছিল, বাঘমুড়োর পতনের সময়কাল উপস্থিত হলে সেই কবচ একটু একটু করে ভাঙতে থাকবে।

লালি তাকাল গ্রামের দিকে ভাল করে আরেকবার। মেঘের ঘনঘটা আর তার মাঝেই উজ্জ্বল হয়ে আছে, নীল রঙের ধোঁয়ায় সেই শক্তিশালী কবচ। কিন্তু সেই কবচ এখন ভাঙছে। মানে, বাঘমুড়োর পতন কাল উপস্থিত? কিন্তু কি ভাবে? লালির ধারণা বাঘমুড়ো কে যে শক্তিশালী করেছে, সেই ভাঙছে এই কবচ। সব উলটো পালটা হয়ে যাচ্ছে যেন। ও বলে উঠল,

-      অন্য কারোর ক্ষমতা নেই এই কবচ কে ভাঙবার?

তাচ্ছিল্যের সাথে লালির দিকে তাকালো কেদার। বলল,
-      সুদর্শন চক্র’র পরমাণু সদৃশ অংশের শক্তি দিয়ে বানানো এই বিশাল কবচের সামান্য পরিমান ও কেউ ভাঙতে পারবে না, যদি না স্বয়ং সুদর্শন নিজে এটা কে ভাঙ্গে বা স্বয়ং নারায়ণ না উপস্থিত হন। সত্যি বলতে শেষ নাগের ও সামর্থ্যে নেই এই কবচ ভাঙবার। বাকি দের কথা ছেড়েই দাও। মহাশিব ছাড়া এই কবচ কে ভেঙ্গে ফেলার কথা কেউ ভাবতেও পারবে না।

লালি ভয়ানক কনফিউজ হয়ে গেল। মনে অযুত প্রশ্নের ভিড়। তবে কি এখন, গ্রামে স্বয়ং নারায়ণের অধিবাস চলছে? না হলে ভাঙবে কি করে এই কবচ? নাহ আরো একটু নিশ্চিত হতে হবে ওকে। জিজ্ঞাসা করল,

-      আচ্ছা কি পিশাচের কথা বলছিলেন? ওর প্রভাবে ভাঙছে না তো এই কবচ?

কথাটা বলেই মনে হলো, যাহ, এই ', তো জানেন না, এই কবচ এখন ভাঙছে। কিছু বলার আগেই কেদার বলে উঠলো,
-      কই ভাঙছে?  ওই দেখ! কেমন নীল পুরু চাদরের এক খানা মোটা প্রলেপের মতন গ্রাম কে ঘিরে রেখে দিয়েছে সেই কবচ। আর সেই পিশাচের ক্ষমতা কি এই মহা শক্তিশালী কবচ ভাঙ্গার?

লালি বুঝতে পারল, সামনে মানুষ টির মধ্যেও কিছু ক্ষমতা আছে, যার জন্য সেও এই কবচ কে দেখতে পাচ্ছে। যেমন লালি, অভি আর রহিম দা দেখতে পায়। ',ের উপরে অবিশ্বাস তো আর রইল না, কিন্তু এই ব্যাপার মেনে নিতেও লালির কষ্ট হচ্ছে। আজকে পৃথিবী তে মানুষ চাঁদে, মঙ্গলে স্যটেলাইট পাঠাচ্ছে আর এখানে ওদের গ্রামে যা চলছে সেটা কে কোনমতেই বিজ্ঞান বলা চলে না। বা হয়ত বিজ্ঞান, যেটা মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে এখনো। শান্ত হলো লালি একটু। তারপরে জিজ্ঞাসা করল,

-      কেন? ক্ষমতা নেই কেন?
-      তোমরা কেউ জান না। কিন্তু আমি চিনেছি, সেই গলিত, পচন ধরা, কদাকার, বীভৎস পিশাচ আর কেউ না, স্বয়ং অশ্বথামা। এখন তন্ত্র বিদ্যায় শিক্ষিত হয়ে এসেছে, নিজের জিনিস খুঁজতে। সে ভাঙবে এমন মহাশক্তিশালী বাঁধন? অসম্ভব। মহাকালী ও পরম যত্নে লালন করেন এই কবচের স্বাস্থ্য।  
-      কি????

হীরা আর লালি দুজনাই চমকে উঠল। কিন্তু কেদার নিজের মতন করেই বলে যেতে লাগল,

-      অবাক হয়ো না। যেটা বলছি সেটাই সত্য। মহাভারতে, অমর ছিলেন তিন জন, কৃপাচার্য্য, কৃতবর্মা আর অশ্বথামা।
লালি বলে উঠল,
-      মানে কি ভাবে? ওনারা অমর ছিলেন জানি। কিন্তু এখানে অশ্বথামা?
-      হ্যাঁ তোমাকে জানতে হবে, কি হয়েছিল সেদিন। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ সমাপ্ত হয়েছে আগের দিন। ভীমসেন তীব্র ক্রোধে দুর্যোধনের উরু ভঙ্গ করেছেন। বলরামের সাথে কৃষ্ণের কথা কাটাকাটি ও হয়ে গেছে। তৎকালীন সময়ের এক মহানতম বীরের উরু ভঙ্গ অবস্থায়, তাকে ক্ষুধার্থ শেয়াল কুকুরের হাতে ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছিলেন কৃষ্ণ, পান্ডবদের সাথে নিয়ে। কিন্তু সেই রাতেই ঘটল অঘটন। দুর্যোধন এর অবস্থা দেখে কাতর হয়ে, কৃতবর্মা, কৃপাচার্য্য আর অশ্বথামা প্রতিজ্ঞা করেছিল, যুদ্ধ শেষ হলেও হয় নি। পাঁচ পান্ডব কে হত্যা ওরা করবেই।  সেই রাতেই ওরা রাতের অন্ধকারে, ঘুমন্ত পাণ্ডব শিবিরে আক্রমণ করল চুপিসাড়ে। পঞ্চপান্ডব ভেবে হত্যা করল পাঁচ পান্ডব পুত্র কে আর অশ্বথামার ক্রোধে বলি হল, ধৃষ্টদ্যুম্ন।

থামল কেদার একটু। আর লালি বলে উঠলো,
-      তারপরে?
-      বলছি, বলছি।

শ্বাস নিল ', বেশ কিছুক্ষণ। তারপরে বলতে শুরু করল আবার,

-      পরের দিন সকালে পান্ডব দের মনে হলো, এর থেকে যুদ্ধে নিজেদের প্রাণ যাওয়া ভালো ছিল। একজন পুত্র ও জীবিত রইল না আর? সব শেষ। কি হবে এই রাজত্ব নিয়ে? একমাত্র আশা ছিল উত্তরার গর্ভে অভিমন্যুর সন্তান। কিন্তু সব থেকে দুঃখ পেল দ্রৌপদী। নিজের পাঁচ পুত্র আর সাথে নিজের ভাই। কেউ ই জীবিত নেই আর। রাগে দুঃখে প্রায় পাগল হয়ে একটা অদ্ভুত জিনিস চেয়ে বসল কৃষ্ণের কাছে। অশ্বথামার মাথার মণি। বড় সাধারণ ছিল না সে মণি। অদ্ভুত ক্ষমতার অধিকারী ছিল সে। সেই মণির জোরেই অশ্বথামা র বীরত্ব ছিল স্থায়ী। ছিল ক্রোধ সংবরণের ক্ষমতা। ছিল দয়া মায়া আর অমরত্বের নির্যাস। ছিল ক্ষুদা তৃষ্ণা নিবারণের ক্ষমতা সেই মণির মধ্যে। কিন্তু…
-      কিন্তু কি স্যার?

হীরার কথার উত্তরে কেদার বলে উঠল,

-      কিন্তু, সেই মণি বিনা অশ্বথামা হয়ে উঠল, মানুষ রূপী শয়তান। মরতেও পারবে না আর এই ভয়ঙ্কর তৃষ্ণা , খিদে আর জিঘাংসা নিয়ে তাকে বেঁচে থাকতে হবে। এর মাঝে একটা কাহিনী আর ও হয়ে গেল। সেটা হল, দ্রৌপদী চেয়েছিলেন সেই মণি। কিন্তু সেটা ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ছিল মাত্র। মণি কোন কাজে তো তার লাগত না। ওই মণি অশ্বথামার কাজেই লাগত। কিন্তু মাথা থেকে সেই মণি, ভীম খুবলে নেবার পরে দ্রৌপদির রাগ কমে গেলেও, মণির প্রয়োজনীয়তা ছিল না আর। কেউ জানে না তার পরে মণির কি হলো তারপরে। আসলে সেদিনে অশ্বথামার আচরণ ও ঠিক ছিল না কিনা। পান্ডব দের একমাত্র উত্তরাধিকার অশ্বথামার ব্রহ্মাস্ত্রের প্রভাবে নষ্ট হয়ে গেল, উত্তরার গর্ভেই। কি নিদারুণ পরিস্থিতি। অশ্বথামা আর অর্জুন দুজনেই একই গুরুর শিষ্য। দুজনের কাছেই ছিল ব্রহ্মাস্ত্র। একজনের কাছে বাবার দেওয়া ব্রহ্মাস্ত্র, আরেক জনের কাছে দ্রোণদত্ত ব্রহ্মশির। কিন্তু অর্জুন তো অর্জুন। শত শত অশ্বথামা মিলে অমন এক অর্জুনের জন্ম হয়। সে তো শুধু অস্ত্র চালাতেই জানত না, জানত তাকে সংবরণ করতেও। কাজেই আরো শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও অর্জুন ব্রহ্মশির কে সংবরণ করলেন আর অশ্বথামার অস্ত্র উত্তরার গর্ভের সন্তান কে মেরে ফেলল। কারন ব্রহ্মাস্ত্র নিক্ষেপের সময়ে অশ্বথামা পান্ডব দের সর্বনাশ চেয়েছিল। তাই শেষ সর্বনাশ হয়ে গেল তাদের। তার পরে গিরিধর সেই সন্তান কে বাঁচিয়ে তোলেন।   

হীরা এরপরে কথা বলল,
-      কি হলো সেই মণির?

কেদার হীরার দিকে তাকাল একবার। হাঁপিয়ে গেছে কেদার। অনেকক্ষণ এক তানা কথা বলে কেদার একটু শ্বাস নিল । আর একটু অন্য মনস্ক। কিন্তু মনে হল, শরীরে মনে জোর পেয়েছে মনে হলো কেদার এবারে। বসে ছিল কেদার, এরপরে উঠে দাঁড়িয়ে, এগিয়ে গেল সামনের দিকে। তারপরে লালি আর হীরার দিকে তাকিয়ে বলল,

-      ঠিক কোন খবর নেই। কারন মহাভারতের কথক, সেই মণির ব্যাপারে কিছুই বলে যান নি। কিন্তু ধারণা করা হয় যে, সেই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল , পূর্ব ভারত থেকে বেশ কিছু রাজ্য। তার মধ্যে ছিল সংশপ্তক সেনা চালন কারি সুশর্মা। আর ছিল বক রাক্ষসের আত্মীয় অলম্বুষ, আর তার ভাই অলায়ুধ। দেখতে গেলে ওরা কেউ খারাপ ছিল না। কিন্তু দুর্যোধনের সাথে বন্ধুত্বের খাতিরে অলম্বুষ কে যুদ্ধ করতে হয়েছিল কৌরব দের হয়ে। অলায়ুধ কে বধ করেছিল ভীমসেন। ভাই কে মরতে দেখার পরেই, ভীম কে আক্রমণ করেছিল অলম্বুষ। অলায়ুধ এর সাথে যুদ্ধে ক্লান্ত ভীমসেন কে ভীমসম শক্তিশালী অলম্বুষের কাছে হারতে দেখে ছুটে এসেছিল পান্ডব পুত্র দের মধ্যে সব থেকে যে বীর ছিল সেই ঘটোতকচ। বাবাকে সরিয়ে নিজে অলম্বুষ কে বধ করার ভার তুলে নিয়েছিল নিজের হাতে। আর বেশ কিছুক্ষন মায়া যুদ্ধের পরে অলম্বুষের গলা কেটে ফেলেছিল ঘটোতকচ। কি আর বলব, যুদ্ধ হয়েছিল একটাই। কিন্তু কত মানুষ , কত জীবের যে কত সমস্যা হয়েছিল সে বলার কথা নয়।

এই পর্যন্ত বলে কেদার চুপ থাকল বেশ কিছুক্ষণ। পরিস্থিতি বেশ ভারী। হীরাও চুপ। তাকিয়ে রইল জলার দিকে চেয়ে। হয়ত যুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়েই মনের মধ্যে লড়াই চলছিল ওর। লালির মনেও ঝড়। এতোক্ষণ অবধি যা শুনেছে, সেটা সে জানে। কিন্তু এর পরে কি? কেদার হাঁপিয়ে গেছিল। এর পরে মুখ খুলল,

-      অলায়ুধের চৌদ্দ বর্ষীয় ছেলে, অলকৃষ এবং তার স্ত্রী পিঙ্গলা তখন উপস্থিত ছিল সেই যুদ্ধভূমি তে কৌরব শিবিরে। পিঙ্গলার ইচ্ছে ছিল না অলকৃষ বাবা আর জেঠুদের রাস্তায় যাক। বরং তার ইচ্ছে ছিল, ভীম পুত্রের মতন অলকৃষ ও শাস্ত্র অধ্যয়ন করুক। ও চলে এসেছিল নিজের বাড়ির দিকে। কিন্তু পিঙ্গলার অজান্তে , অলকৃষ তুলে এনেছিল সেই মণি যা পরেছিল, পান্ডব শিবিরে। দ্রৌপদী ছুঁয়েও দেখেন নি সেই মণি। অলকৃষ কে সহায়তা করেছিল সেই মণি। ক্রোধ এবং হিংসা ত্যাগ করে এই রাক্ষস পরিবার ফিরে এসেছিল, অধ্যয়নের রাস্তায়। মহাভারত শুধু তো কোন কাহিনী নয়, এ এক জীবন পরিবর্তনের কথা। জীবনে কি ভাবে বাঁচবে মানুষ সেই কথা। এক বিবর্তনের কথা। কিন্তু বাধ সাধল অশ্বথামা নিজে। বেশ কিছু বছর পরে অশ্বথামা নিজের মণি খুঁজতে শুরু করল। নিজেরই মণি। একে অপর কে ডাকছিল যেন। কিন্তু কৃষ্ণের অভিশাপ তলায় একেবারে পিষ্ট অশ্বথামা ভয় পাচ্ছিল মণি কে নিজের করে নিতে। ততদিনে অলায়ুধ বড় হয়েছে। বয়েস হয়েছে । তার ও নাতিপুতি হয়েছে। শ্রী কৃষ্ণের মৃত্যু হয়েছে। পঞ্চ পান্ডব মহাপ্রস্থানে গেছেন। দ্বাপর কাল ছেড়ে ততদিনে কলি প্রবেশ করেছে। কিন্তু অশ্বথামার ক্রোধ থেকে বাঁচতে না পেরে, সে খুঁজতে শুরু করল একটা সুরক্ষিত জায়গা।

অবাক হয়ে শুনছিল লালি এই কাহিনী। মনে হচ্ছে মহাভারত নয়, কোন জীবন যুদ্ধে রত এক মানুষের কাহিনী শুনছে। এদিকে হাঁপাচ্ছিল কেদার। হীরা কেদারের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। কেদার ভারী অবাক হয়ে চেয়ে রইল হীরার দিকে। হীরা বলল,

-      বলুন স্যার তারপরের কাহিনী।

কেদার মনে হলো অনেক খানি চনমনে হয়ে গেল। শুরু করল বলতে,

-      ততদিনে এদিকে বাঘমুড়োর আত্মপ্রকাশ হয়েছে এই গ্রামে। অলকৃশ এর মধ্যে রাক্ষসের মায়া ছিল বর্তমান আর শাস্ত্র অধ্যয়ন করে সে হয়েছিল মহাজ্ঞানী। সে যখন শুনল, এখানে পদ্মনাভর অবস্থান সুনিশ্চিত, তখন পুরো পরিবার নিয়ে সে চলে এসেছিল এই গ্রামে। বাঘমুড়োর থেকে কোন ভয় তার ছিল না। ছিল অশ্বথামার থেকে ভয়। আর সে মণি ফেরত ও দিতে চাইছিল না অশ্বথামা কে। দিলেই অশ্বথামা হয়ে উঠবে একমেবদ্বিতীয়ম। না তাকে কেউ রুখতে পারবে, না তা কে কেউ সামলাতে পারবে। বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সে এই মণির ক্ষমতা কে অধ্যয়নের রাস্তায় চালিত করতে চেয়েছিল। সেই থেকে সে এখানেই মানে এই গ্রামেই থাকে।

লালির শুনতে ভাল লাগলেও মনে হলো এই ', যা বলছে তা ঠিক নয়। এরকম আবার হয় নাকি? মহাভারতের তিন মহান চরিত্র এই একটা গ্রাম কে কেন্দ্র করে রয়েছে? জিজ্ঞাসা করল লালি,

-      আচ্ছা এই সব কথা তো কোথাও লেখা নেই। মানে মহাভারতে তো লেখা নেই এই সব কথা? আপনি কি ভাবে জানলেন? যতদুর জানি এরকম কথা সত্যি বলে কেউ দাবী ও করেন নি। মানে আপনি যা বলছেন এর সত্যতা কি?

হীরা চুপ ছিল। কোন কথা বলছিল না। শুধু কেদারের পিঠে হাত বোলাচ্ছিল। লালির প্রশ্নে সেও চেয়ে রইল কেদারের দিকে তাকিয়ে। উত্তরের অপেক্ষায়। লালির প্রশ্নে কেদার রেগেও গেল না, ঘাবড়েও গেল না। বলল,

-      শোন মা, এতো বড় কাহিনী। এতো চরিত্র। আর সবাই সত্য চরিত্র। কেউ মিথ্যা নয়। কিন্তু কি জান মা, এই কাহিনী হস্তীনাপুর কে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল। এমন নয় যে তখন হস্তীনাপুর সব থেকে বড় রাজ্য ছিল। বরং দেখতে গেলে, হস্তীনাপুর পাঞ্চাল এর থেকেও ছোট ছিল। কিন্তু কলির বীজ সেখানেই রোপিত হয়েছিল মা। তখন সব থেকে বড় রাজ্য ছিল মগধ। তা স্বত্বেও মহাভারত হস্তীনাপুর কে নিয়েই রচিত। জ্ঞানী আর মহারথী দের যে মেলা হস্তীনাপুরে ছিল ভারতের আর কোথাও ছিল না যে। কাজেই তারপরে কার কি হল, সে তো কাহিনী থেকে সরে গেছে মা। সে তো কাহিনী তে তুমি পাবে না আর। পাবে তাদের বংশধর দের থেকে।

লালিও ছেড়ে দেবার পাত্রী নয়। তাকে এই রহস্যের ভেদ করতেই হবে। সে বলল,

-      হ্যাঁ ঠিক কথা। কিন্তু আপনি অলায়ুধের বংশধর দের কথা কি ভাবে জানলেন?

কেদার হাসল। হীরা ধরে রইল কেদার কে। কেদার একবার হীরা কে দেখে নিয়ে বলল,

-      কারন আমি সেই মহান অলকৃষ এর একশ চল্লিশ তম বংশধর অলকবৃষ।
-      কি??????

চমকে উঠলো দুজনাই। লালির এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না এ কথা। মনে হচ্ছে ', টি পরিবারের বিয়োগে পাগল হয়ে গেছেন। লালি জিজ্ঞাসা করল,

-      কিন্তু এই তো আপনার নাম বললেন কেদার ভট্টাচার্য্য।
-      হ্যাঁ ঠিক কথা। কিন্তু কুষ্ঠির নাম অলকবৃষ। আমার পুত্রের নাম নৃপেণ। কিন্তু ওর কুষ্ঠির নাম অলকপ্রাশ। এটা যে কেউ দিতে পারে না। জন্মের তিথি নক্ষত্র অনুসারে এই নাম ঠিক হয়। আমাদের বংশের কাহিনী এই বংশ পরম্পরায় এক জন থেকে আরেক জনে প্রবাহিত হয়ে চলেছে।হয়ত আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না তোমাদের। কিন্তু আমি জানি সেই মণি কোথায় আছে।আমার ছেলেও জানত।  কিন্তু ভরসা করে বলতে পারছি না তোমাদের। আবার না বললেও নয়। কারন আমার ছেলে মনে হয় না আর বেঁচে আছে। এই টুকু জেনে রাখ ওই মণি , অশ্বথামার হাতে পরলে জগতের বিপদ। অনেক অনেক কষ্ট সহ্য করে, অনেক প্রিয়জন কে হারিয়ে এই গোপন কথা বয়ে নিয়ে চলেছি আমরা। দয়া করে তোমরা তোমাদের সন্তানাদিদের বলবে এই তথ্য বয়ে নিয়ে যেতে, যতদিন না এই মণি, সঠিক মানুষের হাতে গিয়ে পরে। 

লালি কিছু বলতে পারল না। মানে ভাবতেও পারছে না ব্যাপার টা। এ কেমন কথা বার্তা? এ কোন চাল নয় তো? ও জিজ্ঞাসা করল আবার,
-      এই মণির সাথে বাঘমুড়োর সম্পর্ক কি?

এতোক্ষণে ব্রাহ্মন কে একটু চনমনে দেখাল। একবার হীরা আর লালি কে দেখে নিয়ে বলল,

-      দেখ সম্পর্ক যে কি, সেটা বলতে পারি না। তবে একটা অন্যরকম যোগ তো আছেই। যোগ টা হলো, এই দুজনায় মিলিত হয়ে গেলে হবে ঘোর বিপদ।  

লালি ভাবল, মিলিত তো হয়েই গেছে ওরা। তার মানে সর্বনাশ যা ঘটার ঘটেই গেছে। কেদার কিন্তু বলেই চলে,

-      বস্তুত ওই মণি অশ্বথামার হাতে পরলে, জীবনে রাগ দ্বেষ আর হিংসা বাড়বে। আর দুজনেই তন্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী। দুজনে এক হয়ে গেলে সর্বনাশ হবে যে মা। দুজনেই একবজ্ঞা, মহারথী। এখনো একে অপরের শক্তির সাথে মিলিত হয় নি ওরা। কিন্তু যদি হয়? পৃথিবীতে ধ্বংসের বীজ ছড়িয়ে পড়বে চুপচাপ। কেউ টের ও পাবে না। একজন নয়, দুজনের শক্তি মিলিত হলে শতশত মানুষ কে বশ করতে ওদের সময় লাগবে না। তারপরে সব শেষ হতে কতক্ষণ? কাজেই সম্পর্ক এখন নেই। কিন্তু হলে ওদের কে বাঁধ দেবার কোন পন্থা আমার তো জানা নেই। স্বয়ং মধুসূদন যদি রক্ষা করেন তার এই মানব জাতি কে।

লালি হীরার দিকে তাকাল। হীরা অসম্ভব গম্ভীর। লালি ভাবল, এই ছেলে যা বিদ্বান, হয়ত বিশ্বাস ই করতে পারছে না এই সব কথা। বাঘমুড়োর সাথে সামনা সামনি লড়াই করা লালিও বিশ্বাস করতে পারছে না। এদিকে ক্লান্ত, দীর্ঘশ্বাস নিতে থাকা কেদার বলেই চলে,

-      ওই মণির ঠিকানা আমি তোমাদের বলে দিয়ে যাব। অশ্বথামা কে শেষ করার রাস্তা একটাই। ওই মণি কে নষ্ট করে ফেলা। তাহলেই অশ্বথামা ফিরে যাবে হিমালয়ে। আর কোনদিন ও জনপদ মুখী হবে না ও। কিন্তু বাঘমুড়ো কে শেষ করার উপায় আমার জানা নেই। তবে যেদিনে দেখবে এই কবচ ভাঙছে সেদিনে জানবে, হয়ত সময় চলে এসেছে।

হীরা প্রশ্ন করল এবারে। জিজ্ঞাসা করল ', কে,

-      আচ্ছা, মণি নষ্ট করে দিলেই যদি এই পিশাচ বা অশ্বথামা যার কথাই বলছেন আপনি, সে যদি নষ্ট হয়ে যায় তবে, সেটা আপনি করেন নি কেন? আপনি তো জানেন সেই মণি কোথায় আছে।
-      হ্যাঁ জানি। সে ক্ষমতা থাকলে কি আমি নষ্ট করে দিতাম না? সে মণি কে বেশীক্ষণ দেখলেও চোখ, মাথা ব্যাথা করে। শরীরে নানান উপস্বর্গ দেখা দেয়। মনে হয় নাড়ি অনেক দ্রুত চলছে। গা হাত মাথা টলে। সম্ভব হয় নি ওই মণি কে নষ্ট করা আমাদের কারোর পক্ষে। একজনের অমরত্বের পরিচয় সেই মণি। অতোই সহজ নাকি? তবে ওই সাধুর কথা মিথ্যে হবে না বলেই মনে হয় আমার। আর যদি সত্যি হয় তবে সত্যি ই তিনি আসবেন। আর বাঘমুড়ো কে হত্যা করবেন। আর সত্যি বলতে ওই মণি কে নষ্ট করার ক্ষমতা একমাত্র স্বয়ং তাঁর ই আছে।

আব্রে লালি বলল কথা। জিজ্ঞাসা করল,

-      তবে সে মণি আছে কোথায়? আমাদের বলুন। আমরা চেষ্টা করতে পারি।

কেদার ভয়ানক অবাক হয়ে গেল। বলল,
-      তোমরা নষ্ট করবে? পারবে?

লালি সাথে সাথেই উত্তর দিল,
-      হ্যাঁ পারতে পারি। আপনার মতই আমিও কবচ দেখতে পাই। কাজেই কিছু ক্ষমতা আমার মধ্যেও আছে। আপনি বলুন।

কেদার পুনরায় অবাক হলো। দ্বিধাগ্রস্ত এখন। কিন্তু তাঁর মন বলছে আর বেশী সময় নেই। মৃত্যর ঘন্টা শুনতে পাচ্ছে সে। বলে তো যেতেই হবে। কিন্তু এরা যদি কোন রূপধারী কেউ হয়? হয়ত মণির খবর নিতেই এসেছে। কেদার এবারে বলল লালি কে,

-      বলতে আমি পারি। কিন্তু আমি তো তোমাদের জানি না। কাজেই সোজাসুজি বলব না। যে ভাবে বলে যাব সেই ভাবে না খুঁজে পেলে জানবে, তোমরা সে নউ যে ওই দুজন মহারথী কে হত্যা করতে পারবে। তোমরা বলে যেও তোমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কে।
লালি রেগেই গেল এই কথায়। আশ্চর্য্য, এতো কথার পরেও বিশ্বাস করতে পারছে না ',। ও বলতে যাচ্ছিল যে,

-       থাক আমাদের বলতে হবে না। আমরাই যা করার করব।   

কিন্তু তার আগেই হীরা বলে উঠল,
-      স্যার, আপনার মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারছি। বেশ আপনি যেমন ভাবে চাইছেন তেমন ভাবেই বলুন আমাদের। আমরা মানে উদ্ধার করে নেব।

কেদার ভারী সন্তুষ্ট হলো হীরার কথায়, বলল,
-      তবে শোন।
একটা ছড়া বলল কেদার। আর ছড়া টা হল,

 পেট কাটা গাছ ডাইনে রেখে,সোজা হাঁটা দাও
সাতের পিঠে সাত কে দেখ,সিংহ দুয়ার পাও
শিং দরজার বাঁদিক হয়ে, আগমনীর আট পা নিয়ে, হয় ঠিকানা।
সেই প্রশ্নের বিপরীতে, পঞ্চান্ন করতলে, মণির আসল তোষাখানা।

ছড়া টা দু তিন বার বলার পরেও লালির মাথায় ঢুকল না কিছুই। একবার হীরার দিকে চাইল লালি। হীরার মুখে কোন ভাবলেশ এর চিহ্ন মাত্র নেই। লালি জানে হীরা যেটা একবার শোনে ওর মাথায় ঢুকে যায়। ওকে কলি কালের শ্রুতিধর অনায়াসেই বলা যায়। ততক্ষণে হীরা ফের কেদার কে বসিয়েছে গাছের তলায়। কতক্ষণ কেটে গেছে কেউ জানে না। বাড়ি থেকে দুজনায় সেই বিকালের শুরু তে বেড়িয়েছিল। তাও তিনজনে বসে ছিল বিশাল গাছের বেদী তে। লালি খেয়াল করল, অশ্বত্থ গাছের ফুটো টা অতো বড় নয় যত টা বড় এখন হয়েছে।

ঠিক সেই সময়ে গ্রামের ভিতর থেকে ভেসে এলো একটা অতিপ্রাকৃত আওয়াজ। শত শত মানুষ মরণ যন্ত্রণায় ছটফট করলে যেমন বিভীষিকা ময় চিৎকার হয় ঠিক তেমন। চমকে উঠলো লালি। রতের আঁধারে, জলার থেকে ভেসে এল কত ইনিয়ে বিনিয়ে কান্না। লালির ভয় করতে লাগল খুব। চরম ভয়ে হাত টা বাড়িয়ে দিল হীরার দিকে লালি। কেদার চঞ্চল হয়ে উঠল। শুধু অচঞ্চল রইল হীরা। এক হাতে লালির হাত টা ধরে রইল হীরা শক্ত করে। আর কেদার ছটফট করতে লাগল। কেদার বলল,

-      এবারে তোমরা যাও। সে আসছে। আমার খোঁজেই সে বেরিয়েছে আজকে। মণি উদ্ধার করে নষ্ট করার চেষ্টা কোর।

হীরা বলল,
-      না আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাব না। কিচ্ছু হবে না আপনার। আমরা আছি।

কেদারের থেকেও লালি অবাক হলো বেশী হীরার কথায়। লালির আর এক দন্ড ও থাকার ইচ্ছে নেই হীরা কে নিয়ে এখানে। জীবনের সব থেকে কাছের মানুষ টা কে কোন বিপদে জড়াতে ও দেবে না, এই ওর পন। কিন্তু ও কিছু বলার আগেই কেদার বলে উঠল,

-      না বাবারা তোমরা যাও এখান থেকে। আমার আর কেউ নেই। মৃত্যু কামনা করছি আমি নিজেই। কিন্তু তোমরা বাবা মায়ের সন্তান। তোমরা যাও এবারে। যাও !!!!! দেরী কোর না। সে শয়তান হাওয়ার বেগে আসে। ওই শোন!!!!

কেদারের কথা শেষ হলো না। আবার ভেসে এলো গ্রামের ভিতর থেকে সেই অপার্থীব আওয়াজ। কি ভয়ংকর জিঘাংসা সেই আওয়াজে। উফ লালি কান বন্ধ করে নিল নিজের দুই হাতে। জলা থেকে আবার ভেসে এল, বহুদিনের পুরোন আত্মাদের কান্না। লালি দেখল হীরার কোন ভ্রূক্ষেপ ও নেই। ও শুধু বলল কেদার কে,

-      আপনাকে বাঁচতেই হবে। আপনার ছেলে মারা যায় নি। সে বেঁচে আছে। সে ফিরবে সময়ে। কিন্তু আপনাকে বাঁচতেই হবে। বাঁচতেই হবে।

লালি অবাক হয়ে দেখল হীরা লালির হাত টা ধরে একটা হ্যাঁচকা টানে প্রায় পাঁজাকোলা করে তুলে ঝাঁপ দিলো, অশ্বত্থ গাছের ছোট ফুটোর ভিতরে। আর তার থেকে ও অবাক হয়ে গেল যখন দেখল, লালি কে বুকে জড়িয়ে ধরে লাফ দেবার সময়ে, প্রায় ভাসমান অবস্থাতেই নিজের হাত দিয়ে কেদারের দিকে কিছু একটা ইশারা করতেই, গ্রামের কবচের মতন একটা নীল আলো দিয়ে কেদারের চার পাশ টা ঢেকে গেল নিমেষেই। লালির মনে হল সে জ্ঞান হারাচ্ছে।
Like Reply
বেদ উদ্ধারিলে তুমি মীন রূপ ধরি,
কূর্ম্ম রূপে বহিলে মহীরে পৃষ্ঠে করি,
বরাহ রূপেতে দন্তে ধরায় রাখিলে,
নর-হরি-রূপ ধরি দৈত্যে বিদারিলে,
বলিরে ছলিলে ধরি বামন মূরতি,
ক্ষত্র-ক্ষয় করিলে হে হয়ে ভূগু-পতি,
রাম-রূপে দশাননে বিনাশ করিলে,
হলধর-রূপে করে হল ধরেছিলে,
জীবে দয়া দেখাইল বুদ্ধের ‍আকারে,
বিনাশিলে ম্লেচ্ছ-গণে কল্কি-অবতারে,
সাধিলে এ দশ কাজ দশ-রূপ ধরি,
হরি হে, চরণে তব প্রণিপাত করি।

হরি বোল!

ভাল রান্নার পদ তৈরী করতে শুধু মাত্র উপকরন লাগে না, লাগে সেই সমস্ত উপকরনের সঠিক সংমিশ্রণ আর পরিমাপ... তবেই পদটি সর্বৎকৃষ্ট সুস্বাদু হয়ে ওঠে... আপনার গল্পটিও সেই রকমই সমস্ত উপকরনের সঠিক সংমিশ্রণে এক অতিব সুস্বাদু ও লোভনীয় গল্প হিসাবে পরিবেশিত হয়েছে এখানে... পূরাণ, মহাভারত, অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত, পূর্বজন্ম, পরজন্ম, বিজ্ঞান, সংস্কার... প্রতিটা উপাদানের সঠিক পরিপক্কতা... আহা... এই ফোরাম ধন্য যে আপনার মত একজন লেখিকার গল্প এখানে পাওয়া যাচ্ছে বলে... কারন এই ধরনের গল্প মূল সাহিত্য স্রোতে থাকা উচিত বলে মনে করি, সেখানে আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা এখানে পড়তে পারছি আপনার গল্পগুলি... চলুক এই ভাবেই... সাথে আছি... 

হরি বোল...
[+] 2 users Like bourses's post
Like Reply
উরি বাপরে বাপ !!!


কি ছিল এটা ?? অ্যাকশন শুরু !!!!!!

মাথা ঘুরছে বনবন .....  Huh

[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
রহস্য-রোমাঞ্চ, প্রতিশোধ, দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন .. এগুলোতো গল্পের গতি প্রকৃতির সঙ্গে আসবে যাবে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি .. এই উপন্যাসের প্রতিটা লাইন পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি সমৃদ্ধ হচ্ছি। তাই লেখিকাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই এই ফোরামে এইরকম একটা উপন্যাস আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য।  Namaskar
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply
আমি অবশ্য এই মণিটার কথাই একবার ভেবেছিলাম। এখন সেটা মিলে গেল। এখন শুধু অপেক্ষার পালা এটা দেখার যে, কিভাবে বধ হয় এই ভয়ংকর রাক্ষসদুটো। তবে অশ্বথামা তো অমর হওয়ার অভিশাপপ্রাপ্ত।

লাইক ও রেপু রইল দিদি।
Like Reply
ভয়ঙ্কর ভালো লাগছে গল্প টা, অসাধারণ জাস্ট বলে বোঝানো যাবে না।
অসংখ্য ধ্যবাদ এই রকম একটা গল্প উপহার দেওয়ার জন্য।????
[+] 1 user Likes Krishk's post
Like Reply




Users browsing this thread: 12 Guest(s)