Poll: এই গল্প টা আপনাদের ভালো লাগলে নীচের অপশন এ ক্লিক করে জানান কেন ভালো লাগছে
You do not have permission to vote in this poll.
গল্পের কাহিনী
10.00%
2 10.00%
গল্পের গতি
0%
0 0%
গল্পের গতি এবং কাহিনী
85.00%
17 85.00%
গল্প টি ভালো লাগছে না
5.00%
1 5.00%
Total 20 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 96 Vote(s) - 3.46 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Fantasy বাঘমুড়োর আতঙ্ক - সমাপ্ত
আগের পর্বের কিছু অংশ......

অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল লালি হীরার দিকে। কথাটা তো সত্যি। ওই স্বপ্ন দেখার পরে ঘুম ভাংতেই সবার আগে যে হীরার কথাই মনে পরেছিল লালির। আর মনে হচ্ছিল ওই কষ্ট টা, ও হীরার অনুপস্থিতি তেই পেয়েছে। নিজের বুকের দুরুদুরু ভাব খানা ঢাকতে, এক হাত দিয়ে বুক টা চেপে ধরল লালি। দেখল হীরা দাঁড়িয়ে আছে অশ্বত্থ গাছের নীচে বেদীর উপরে উঠে, গাছের গুঁড়ি তে  হেলান দিয়ে, দুটো পা কে কাঁচির মতন করে। তাকিয়ে আছে দুরের দিকে। লালি বসল বেদির উপরে ঠিক হীরার পায়ের একটু দূরে, হীরার দিকে তাকিয়ে। ভাবল দেখে নি ছোঁড়া কে। অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। হীরার দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যাবার আগে, হালকা শুনতে পাচ্ছিল জলা থেকে ভেসে আসা কাঁসর ঘন্টা ধ্বনির আওয়াজ।


সকাল হয়ে গেছে প্রায়। পূব আকাশ লাল করে সুজ্জি মামা আড়মোড়া ভাঙছেন। গ্রামের মাঝ খান থেকে ভেসে আসছে সংকীর্তনের আওয়াজ – হরে কৃষ্ণ নাম দিল প্রিয় বলরাম, রাখাল রাজা নাম দিল ভক্ত শ্রীদাম।
 
                                                                              পর্ব এগারো
হাঁটি হাঁটি পা পা করে, চাষির দল পুব মাঠে যেতে শুরু করেছে। গোয়ালে গোয়ালে গরু দের হাঁক ডাক শুরু হয়ে গেছে। দুয়ারে জল ছড়া পরতে শুরু করেছে। নগেন জ্যাঠা, বাড়ির ছাদে উঠে সকালের বাতাস নিচ্ছিলেন। পূব আকাশে তাকিয়ে দেখলেন, ছোট্ট সূর্য ধীরে ধীরে নিজের কিরণ পাখা মেলতে শুরু করেছে। দু এক ঘর বাড়ির পরেই বিশাল ফাঁকা জলা।ছাদ থেকে দেখা না গেলেও, বিশাল শূন্যতা দেখে বোঝাই যায় বড্ড ফাঁকা ওই জলা। একটা হিমেল বাতাস যেন শরীর কে একেবারে শীতল করে দিচ্ছে। আর দূর জলা থেকে, মৃদু ভেসে আসছে কাঁসর ঘণ্টার আওয়াজ।

রহিম সকালে কাশীর দোকানের পিছনের পুকুরে এসেছিল, লাঙল খানা ধুয়ে, মাঠে যাবে বলে। বলদ দুটো দাঁড়িয়ে ছিল ঘাটের ধারে। ভারী লাঙল টার ফলা খানা বেশ করে ঘষে ঘষে পরিস্কার করতে করতেই শুনতে পেল জলার থেকে, কাঁসর ঘন্টা বাজার শব্দ। কোন দিন ও শোনে নি ও আগে। বিশেষ পাত্তা দিল না রহিম। লাঙল খানা ধুয়ে, নিজের বজ্র মুষ্ঠি তে নিয়ে উঠে এল রাস্তায়। মুখে একটা অনাবিল মুচকী হাসি রহিমের। মুখে হাসি নিয়েই এগিয়ে গেল দক্ষিণ মাঠ বরাবর, বলদ জোড়া আর হাতে লাঙল খানা নিয়ে।

উমা আজকে যায় নি সংকীর্তনে। মহাদেব বেড়িয়েছে সাত সকালে। দরজার বাইরে গোবর ছড়া দিচ্ছিল উমা। সেই কোন ছোট বেলায় মহাদেব ওকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে। কোনদিন ও মাথার উপরে কেউ ছিল না উমার। না শাশুরি, না মাতৃস্থানীয়া কেউ। কিন্তু গৃহস্থের কল্যান অকল্যান, কোন দিন ও উমা কে বুঝিয়ে দিতে হয় নি। আজকে গোবর ছড়া দিতে দিতে,পুব আকাশে চেয়ে দেখল , অন্য দিনের থেকে বেশ কিছু টা আলাদা। আজকে জন্মাষ্টমী। এ ছাড়াও  আজকে উমার জীবনের একটা বিশেষ দিন।আজকের সকাল, ভাল লাগার কারণ খানা হয়ত উমার ভিতরেই লুকিয়ে। আজকের দিনেই হীরা এসেছিল ওর বাড়ি আলো করে ওর কাছে। তাই আজকেই ও হীরার জন্মদিন পালন করে। ওর মনে এই আশা, আজকের দিনে যেন সকলে হীরা কে আশির্ব্বাদ করেন। কোন মা সেটা না চায়। কিন্তু সকাল সকাল এতো বড় আশীর্ব্বাদ পাবে সেটা উমা কল্পনাতেও আনে নি। ছোট্ট সুজ্জি কে প্রণাম করতে করতে, যখন দূর থেকে কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ শুনল, গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল উমার। থরথর করে কাঁপতে শুরু করল উমা।

সকালে সংকীর্তন সেরে, মাঠের ফসল গুলো কে দেখা দিয়ে, মহাদেব যখন বাড়িতে এলো, তখন সূর্য বেশ খানিক টা উপরে উঠে গেছে। উমা ঘরের কাজ সেরে, মহাদেব কে দেখে চা চাপালো। আর মহাদেব এসে কলপারে হাত পা ধুয়ে, গামছা দিয়ে মুছে, মাটির দুয়ারে বসেই হাঁক পাড়ল,

-      হীরা, কই গেলি বাবা, একবার আয়, মুখ খানা দেখি। সকাল থেকে দেখি নি তোকে।

চায়ের কাপ হাতে নিয়ে প্রায় ঝাঁ ঝাঁ করে তেড়ে এলো উমা।

-      আহা ঘুমুচ্চে , ঘুমুক না খানিক ছেলে আমার। উঠলেই তো বই পত্র নিয়ে বসবে। আজকে ওর জন্ম দিন। ওকে পড়তে বসে বলে কাজ নেই বাপু।

মহাদেব হাসল উমার কথা শুনে। বলল,
-      কে তোমার ছেলেকে পড়তে বসতে বলছে বাপু? আমি ডাক ছিলাম মুখ খানা দেখব বলে একবার। তুলে দাও না ওকে ঘুম থেকে। সাত টা বাজতে চলল, উঠবে তো নাকি?

ততক্ষনে চায়ের কাপে চা নিয়ে এসে হাজির। মহাদেব কে বলল,

-      আজকে ছেলের জন্যে পরেশ দা দের বাড়ি থেকে ভাল দুধ, মাখন নিয়ে এসো না। ছেলে আমার খেতে বড্ড ভালোবাসে।
-      কোথাও থেকে আনতে যেতে হবে না। ভোগ নিয়ে আসার মতন সবাই এলো বলে যে যার বাড়ির জিনিস।
-      আচ্ছা বাপ বাপু। সবাই ছেলেকে আমার ভালোবেসে দেয়। তুমি বাপ হয়ে দেবে না কিছু?
-      আহা তাই বললাম নাকি? আচ্ছা বেশ যাচ্ছি। আমি বলে এসেছি পরেশ দার বাড়িতে। পেয়ে যাব।
-      হু। খুব করেছ। এখন চা টা খাও। আর নিয়ে এস। আজকে কিন্তু জন্মাষ্টমী। বেশি করে নিয়ে এসো। গোপীনাথের ভোগ দিতে হবে।

উমার কথা শুনে উঠে পড়ল মহাদেব। বলল
-      খুব দিনে তোমার ছেলে জন্মেছে। আর দেখ, সেই ব্যাটা ও যা খেতে ভালবাসে , তোমার ছেলেও তাই। কি যে লীলা কে জানে।

উমা মনে হয় শুনতে পেল না মহাদেবের কথা টা। মহাদেব উঠে বেরোবে চা খেয়ে, ঠিক সময়ে বকবক করতে করতে লালি ঢুকল। মহাদেব দেখল, লালির হাতে থাকে থাকে মাটির সরা সাজানো। হেসে ফেলল দেখে। নিশ্চই হীরার জন্য দুধের জিনিসপত্র এনেছে। এসেই প্রতিদিনের মতই হাঁকডাক শুরু করে দিল। এ বাড়িতে বড় জোর চলে এই মেয়ের। মা মরা মেয়ে। মহাদেব আর উমা বড ভালোবাসে লালি কে। মহাদেব বেড়িয়ে গেল বাড়ি থেকে ধীর পায়ে।

-      কাকি ও কাকি। ধর ধর। তোমার গুনধরের, প্রিয় খাবার। বাবাহ বড় ঠাম্মুর সকাল হতে তর সয় না। আমাকে এক্ষণি আসতে হল নিয়ে এসব।

উমা এসে মাটির মালসা গুলো কে নামিয়ে রেখে দিল ঘরে। বলল,

-      তোর ও ভারী তর সয়। হাট বারে নাকি এতো খাইয়েছিস তুই ওকে, এসে দুপুরে খেতেই পারল না। জিজ্ঞাসা করতে বলল তুই নাকি অনেক মাখন খাইয়েছিস?

নিজেই নিজেকে বলল লালি। কিন্তু জোরেই বলল,
-      বাবাহ এসব ও বলে? আমি জানতাম, এই সব পার্থিব কথা ও বলে না।

উমা বুঝল না লালির কথা। মাঝে মাঝে কেন, ওর সাংসারিক কথা ছাড়া লালির কোন কথাই বোঝে না। মাঝে মাঝে কি যে সব শক্ত শক্ত কথা বলে, উমার হাঁ করে চেয়ে থাকে লালির দিকে। কি তেজ ওই মেয়ের। এই টুকু পুচকে মেয়ে একটা, শহরে পড়াতে ও যায়। পরেশ দার বাড়ি একেবারে আলো করে আছে এই মেয়ে। আর যে বাড়িতে বিয়ের পরে যাবে, সেই বাড়িও আলো করে রাখবে। ও লালি কে বলল,
-      বোস, তোর জন্য কালকে গোটা মুসুরী ভিজিয়ে রেখেছিলাম। লাউ দিয়ে করব। খাবি এখন? আর তুই কিন্তু দুপুরে এখানেই খাবি। প্রতি বার হীরার জন্মদিনে এখানেই তো খাস। বলে আসতে হবে নাকি রে তোর বাড়িতে? তিলের বড়া ভাজা করব তোর জন্য, ঝাল ঝাল করে। ছেলে আর তার বাপে তো খাবে না। তোর আর আমার জন্য করব।
-      হুম খাব। না না বলতে যেতে হবে না তোমাকে আর। জান কাকি, আমার মা থাকতে এই সব খুব করত। আর তুমি করে দাও।
-      তা আমি কি মায়ের থেকে কম? খেতে ইচ্ছে হলে চলে আসবি।
-      হুম। তা সে কই?
-      ঘুমুচ্ছে। তুলিনি আজকে। উঠলেই তো পড়তে বসে পড়বে। তার থেকে ঘুমুক। কতদিন বাদে ঘুমোচ্ছে সকাল অব্দি। না হলে তো আমার আগেই উঠে পরে।

ঘুমোচ্ছে? বুঝতেই পারল না লালি ব্যাপার টা। যতদুর জানে,হীরা, উমা কাকির কাছেই শোয়, বাচ্চাদের মতন। মহাদেব কাকা বাইরের ঘরে শোয়। সকালে হীরা লালির কাছে গেছিল, সেটা উমা কাকি জানে না? কি করে হয়? এদিকে উমা থামে না। লালি কে বলল,
-      লালি জানিস আজকে না জলার কাঁসর ঘন্টা র আওয়াজ পেয়েছি আমি। তখন সবে আমি বাইরে বেড়িয়ে দরজায় গোবর ছড়া দিচ্ছিলাম। আহা , দ্যাখ, এখনো গায়ে কাঁটা দিচ্ছে আমার।

লালি শুনল কথা গুলো উমার, কিন্তু ব্যাপার টা মাথায় আসছে না কিছুতেই। কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ সেও শুনতে পেয়েছে, কিন্তু সেই সময়ে তো হীরা ওর সাথে ছিল। আর উমা কাকিমা ও শুনেছে ঘুম থেকে জেগে উঠে। মানে ঘুম থেকে উঠে হীরা কে, উমা কাকি দেখেছে নিজের কাছে। না হলে বলত কথা টা এখানেই।যে হীরা ছিল না কাছে। ব্যাপার টা বুঝতে পারছে না লালি। হয় কাকি ঘুমের ঘোরে ভুল ভাল দেখেছে না হলে …। আঁতকে উঠল লালি। তবে কি বাঘমুড়ো? নাহ, বাঘমুড়ো কি করে হবে? বাঘমুড়ো তো রাতেই চলাফেরা করে। আর তাছাড়া বাঘমুড়োর গন্ধ লালি চেনে। মাইল খানেক দূর থেকে টের পায় লালি বাঘমুড়োর গন্ধ। আর সকালে হীরার সাথে থাকা অবস্থাতেই লালি, জলার কাঁসর ঘন্টা শুনেছে। এদিকে উমা লালি কে ঠুকরে যাচ্ছে অনবরত।

-      কি রে বল? দেখলি? উফ লালি তোকে বলে বোঝাতে পারব না, সে যে কি অনুভুতি!!

এই বলে উমা চলে গেল ঘরে। অনেক কাজ এখন সামনে। অনেক লুচি করতে হবে। আর মোহন ভোগ করবে ও আজকে। জন্মাষ্টমীর আজকে। দ্বারকাপতির মতন ই হীরা ও খেতে ভালবাসে মোহন ভোগ। কত কথাই বলছিল উমা লালি কে। কিন্তু লালি অন্যমনস্ক। নিজের হাত পা কাঁপছে। এখনো ব্যাপার টা হজম হচ্ছে না ওর।

ঠিক সেই সময়েই হীরা উঠে এল চোখ কচলাতে কচলাতে। লালি কে দেখেও কোন ভ্রূক্ষেপ করল না। না, মানে সকালে অতক্ষণ একসাথে কাটানোর পরে, তাকিয়ে একবার তো হাসবে? কিছুই করল না, কল পারে গিয়ে ব্রাশ করে বসে পড়ল মাটির দুয়ারে।লালি ওকে হাঁ করে দেখছে রাগে ফুটছে। এই রকম বেমক্কা অধিকার নিয়ে রাগ হীরার উপরে লালি ই করে। হীরার বাবা মা ও রাগ করে না। ছেলেকে চোখে হারায় একেবারে। সেই এক ই পোশাক পরে আছে,যেটা পরে ভোর বেলায় লালির সাথে ঘুরেছে ও। আর দেখ এখন যেন দেখেও দেখতে পাচ্ছে না। কি করে হয়? হীরা কে দেখলেই কেমন একটা লজ্জা লাগছে সকালের ব্যাপার টা মনে করে, আবার উমা কাকির কথা মনে করলে ভয় লাগছে। ও হীরার সাথে কথা না বলে সোজা রান্না ঘরে গিয়ে উমা কে জিজ্ঞাসা করল,

-      আচ্ছা কাকি, তুমি যখন কাঁসর ঘণ্টার আওয়াজ শুনেছিলেন, হীরা শুয়েছিল না উঠে পরেছিল ঘুম থেকে? সত্যি বলতে আমিও শুনেছি।

উমা লুচির আটা মাখছিল। লালির কথা গুলো শুনে বলল,

-      শুনলি তো বললাম , হীরা ঘুমোচ্ছিল।

তারপরেও অনেক কথা বলছিল উমা, লালি যেন কিছুই শুনতে পাচ্ছিল না। ধীর পায়ে উঠনে এসে বাড়ির দিকে পা চালালো। হীরা যথারীতি বসে ছিল দুয়ারে। একবার দেখবে বলে হীরার দিকে তাকাতেই দেখল, হীরা ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। নিজের দুটো চোখ বুজে ওকে মনে হয় বোঝালো, সকালের টা আমি ই ছিলাম।

লালি প্রায় উড়তে উড়তে বাড়ি এল। মনে মনে যথেচ্ছ অকথা কুকথা বলল হীরা কে। শয়তান, বেল্লিক, ছুঁচো, ভীতু, আর ও কত কি। কিন্তু মন টা ওর খুব ভালো হয়ে গেল। কোন মেয়ের না ভালো লাগে, ভালোবাসার এমন একটা ক্ষণ। কিন্তু হীরা, উমা কাকি কে লুকিয়ে দেখা করে এসেছে মানে হীরা ও সম্পর্ক টা কে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে। ও আর কিছু ভাবতে পারছে না । না আগের ভাবনা না পরের ভাবনা। মন টা যেন মোহিত হয়ে আছে ওর। ও সোজা বাড়ির দিকে দৌড় দিলো এক প্রকার।

বাড়ী ঢোকার সময়ে, ওদের বাগানের পাশেই যে বড় একটা জাম গাছ ছিল, একটা মোটা ডাল রাস্তার উপরে চলে এসেছিল প্রায়। আনন্দের ধাক্কায়, ডাল ধরে দোল খেতে গিয়েই বিপত্তি টা হলো। মড়মড় করে ডাল খানা ভেঙ্গে পরে গেলো নীচে। লালি খানিক ঘাবড়ে গেলেও, চারদিক একবার দেখে নিয়ে, এক হাতে লম্বা মোটা ডাল টা কে তুলে ঘুরিয়ে লম্বা লম্বি করে রেখে দিল রাস্তায়। মাঝে মাঝে ওর শক্তির কথা ভুলে যায় ও নিজেই।

বাবা নেই বাড়িতে না হলে ছুটে আসত এখুনি। কিন্তু বড় ঠাম্মু চিৎকার করতে শুরু করল।
-      কে র‍্যা? কে?
লালি তখন ভাঙ্গা ডাল টা কে ঠিক করে রাখছিল। জবার দিল,
-      কেউ না ঠাম্মু। আমি লালি।
-      কি ভাঙলি?
-      কিছু না ।
-      নিশ্চই কিছু। হুড়মুড় করে আওয়াজ হলো, পরিষ্কার শুনলাম আমি। দিন রাত তিড়িং বিরিং করে নাচছে মেয়ে। আজ বাদে কাল বিয়ে হবে সে জ্ঞান নেই।

লালি আর কোন কথা বলল না। সোজা নিজের শোবার ঘরে গিয়ে, বিছানায় সটান শুয়ে পড়ল। ঠাম্মু খেঁকায় বটে মাঝে মাঝে। কিন্তু ভালো কথাও বলে। বিয়ের কথা তে একসাথে লজ্জা আর একটা দারুণ ভালোলাগা লালি কে সর্বতো ভাবে জড়িয়ে ফেলেছিল তখন। লালি আর কিছু ভাবলই না। শুধু গুনগুনিয়ে উঠল,

বিশ্ব বলে মনের কথা,
কাজ পড়ে আজ থাকে থাক না।
এমনি করেই যায় যদি দিন যাক না।

কিন্তু মনের খটকা টা গেল না। এতো আনন্দের মাঝেও এক ই সময়ে দুই জায়গায় উপস্থিতি, এক কড়াই দুধে , এক ফোঁটা গোচনার মতন রয়েই গেল লালির মনে কোন গহিনে, সেটা হয়ত লালিও বুঝতে পারল না।

সেদিনে জন্মাষ্টমী ছিল। আকাশে বাতাসে একটা ফুরফুরে ভাব। প্রত্যেক বছরেই কষ্ঠি পাথরের , রাম কানাই কে বের করা হত, রাস মন্দিরে। কিন্তু এই বছরে করা হলো না। চারদিকে এমন ভয়ের পরিবেশে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল যে, এ বছরে সে ব্যাটা কে বের করে কাজ নেই। কাজেই বিকালে যে একটা উৎসব মতন হতো সেটা বন্ধ রইল। অন্যান্য বছরে হীরা এই দিনে খুব হই হুল্লোর করে। সেটা হয়ত ওর জন্ম দিন বলে। কিন্তু এ বছরে আর সেটার উপায় নেই দেখেই, আজকে লালিও কলেজে যায় নি। ছুটি নিয়েছিল। আর ছুটি নিয়েছিল হীরার সাথে থাকবে বলে। দুপুরে হীরার বাড়িতে খেয়েছে। আর খেয়ে দেয়ে দুপুরে দুজনে মিলে, ঘুরতে বেড়িয়েছে। হীরার জন্মদিন বলে প্রথমবার শাড়ি পরেছে আজকে লালি। আর হীরা নীল পাঞ্জাবী আর হলুদ রঙের পাজামা। সকাল থেকে ওইটাই পরনে আছে ওর। অনেক বলা সত্বেও বদলায় নি।


বর্ষা কাল। আকাশে মেঘের ঘনঘটা। কিন্তু বৃষ্টি যেন কারোর আদেশের অপেক্ষা করছে। বললেই ঝরতে শুরু করবে। কালোর কালো তস্য কালো মেঘ আকাশে। বাড়িতে অনেকবার মানা করা সত্বেও দুজনে মিলে বেড়িয়েছে রাস্তায়। খুব একটা লোকজন নেই রাস্তায়। শুধু নগেন জ্যাঠা মন্ডপে বসে আছে। খবরের একটা কাগজ নিয়ে। চশমার ফাঁক দিয়ে দুটি কে দেখে নিয়েই আবার কাগজে মনো নিবেশ করেছে নগেন। এদিকে দুজনে মিলে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পূব দিকে এগোতে লাগল। লালির মনে হলো ইশ কত কাছে আছে ছেলেটা। নেহাত গ্রাম এর ভিতরে তাই না হলে জড়িয়েই ধরত মনে হয় লালি। প্রথম কথা লালি ই বলল,


-      তোকে থ্যাঙ্কস।

-      কেন?

-      সকালে বাড়ীর কাউকে না বলে আমার সাথে দেখা করতে যাবার জন্য। জন্মদিন তোর আর গিফট পেলাম আমি।

-      এটা তোমার গিফট?

-      হুম সব থেকে বড় গিফট এখনো অব্দি আমার জীবনে।

-      ও ।

-      ব্যস ছোট্ট একটা ও মাত্র?

-      হুম। আমি তো ভাবলাম…

-      কি ভাবলি?

-      নাহ থাক।

-      বল না বাবা! এই জন্যেই রাগ ধরে। থাক বলতে হবে না যা। আচ্ছা সত্যি করে বল তো, তুই কি সত্যি আমার ডাকে এসেছিলি সকালে?


হেসে ফেলল হীরা। বলল,


-      মিথ্যা তো আমি বলি না। যা বলি সেটাই সত্যি হয় যে। তাই তো কথা কম বলি।

-      থাক থাক হয়েছে। নিজের অতো বড়াই করতে হবে না। কিন্তু কেন এলি? আমি ডাকলেই তোকে ছুটে আসতে হবে এমন মাথার দিব্যি তো কেউ দেয় নি।

-      না মাথার দিব্যি কেন দেবে? আমার ও ভালো লেগেছিল আসতে। অতো ভালোবেসে ডাকলে কি করব আর?


লালি রেগে গেল কথা খানা শুনে,


-      মানে যেই অমন ভালোবেসে ডাকবে তুই তার কাছেই যাবি? আমি বলে আলাদা কিছু না?


রেগে গিয়ে খানিক টা এগিয়ে গেল লালি। লালির ই ভুল। যতই লালি ওকে ভালবাসুক। ও তো একটা ছোট ছেলেই । তাই না? পিছনে তখন হীরা ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে। বলল,


-      বা রে! অমন করে কি সবাই ডাকতে পারে নাকি?


লালি পিছনে তাকিয়ে বলল,

-      কি করে জানলি? ডাকতেও তো পারে।


হীরা চুপ করে গেল। লালি বুঝতেও পারল না, হীরার সাথে কথা বলতে বলতে, মেইন রাস্তা ছেড়ে একটা গলি রাস্তা নিল হীরা। ছোট সরু গলি। কোন রকমে দুটো মানুষ পাশাপাশি যেতে পারে মাত্র। লালি তো হীরার গা ঘেঁষে চলতে লাগল। খেয়াল ও করল না, সামনে বিশাল কচুবন। তার মধ্যে দিয়েই সরু পায়ে চলার রাস্তা। হীরা চেয়ে রইল লালির দিকে কিছুক্ষণ, তারপরে বলল,


-      হুম ডেকেছ বলেই তো এসেছি আমি। না হলে কি আর আসতাম?

-      ভারী তুই একেবারে।

-      হুম গো। সবাই পারে না ডাকতে।

-      তাহলে? তাই যদি হবে এখনো বললি না তো আমাকে?

-      কি বলব?

-      উম্মম……… আমাকে ভালোবাসিস কিনা?

-      ধ্যাত!!

-      বোঝ!! কোথায় আমি লজ্জা পাব। আমি মেয়ে। তা না উনি লজ্জা পাচ্ছেন। আমি তো এখনি সবার সামনে বলতে পারি।

-      কি?

-      আমি তোকে ভালোবাসি। তোর জন্য পাগল।

-      উম্ম আমিও বাসি। আমি তো সবাই কেই ভালোবাসি।

-      অ্যাঁ?

-      না মানে , মা কে বাবা কে।

-      আর?

-      আর আমার এই গ্রাম কে।

-      আর?

-      আর বড়ো ঠাম্মু কে। কি সুন্দর মাখন বানায়! আহা!


রেগে গেলো লালি আবার। যেটা শুনতে চাইছে সেটাই বদমাশ টা বলছে না। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,


-      আর????????

-      আর আবার কি? কত আর থাকবে?

-      আর আমাকে?   


হীরা হেসে উঠল শব্দ করে। বলল,

-      আরে!!! গুন্ডা নাকি? জোর করে আদায় করবে যেন ভালোবাসা।


কিন্তু খুব খুশী হয়ে কচুবনের ভিতরে দিয়ে এগিয়ে গেল হীরা এক গাল হাসি নিয়ে। লালি মরে যায় ওই হাসি একবার দেখার জন্য। মন টা ভালো হয়ে গেল লালির। মনে হলো, অধিকার টা লালি কে দিয়ে হাসতে হাসতে হীরা এগিয়ে গেল সামনে। লালি পিছন থেকে দেখছিল হীরা কে। ইশ কি সুন্দর। ছুটে গিয়ে ঝাপিয়ে উঠে পড়ল হীরার পিঠে। হীরা কোনরকমে নিজেকে সামলে নিল। আর লালি হীরার পিঠে উঠেই রইল,হীরা কে জড়িয়ে ধরে। হীরার কাঁধে নিজের মুখ টা গুঁজে দিয়ে বলল,


-      হুম করবই তো আদায়। তুই শুধুই আমার। আর আমি তোর। আচ্ছা !!

-      কি??

-      আমাকে ভালোবাসলি কেন?

-      উম্মম।  তুমি খুব সুন্দর তাই।


হীরার পিঠে চড়ে যেতে যেতেই লজ্জা পেল লালি, ওকে সুন্দরী বলার জন্য। কাঁধে একটা ছোট্ট চুমু খেয়ে হীরা কে আবার জিজ্ঞাসা করল,


-      আর যদি কোন দিন দেখলি আমার মুখ টা কুৎসিত হয়ে গেছে, তখন? তখন আমাকে আর ভালোবাসবি না?


হীরা বলল,

-      আমি তো তোমার মুখ সুন্দর এ কথা বলিনি। বলেছি তুমি খুব সুন্দর তাই আমি তোমাকে ভালোবাসি। মুখ ছাড়াও মানুষের আরেক টা জিনিস সুন্দর হয়, সেটা হলো মন।  


লালির মনে হলো পাগল হয়ে যাবে আনন্দে। বেশ কত গুলো চুমু খেয়ে নিল হীরার কাঁধে আর ঘাড়ে। তারপরে বলল,

-      তোকে ছাড়া আমি মনে হয় বাঁচব না রে। আমার ছেড়ে দিবি না তো?


যে ভালবাসে, তাকে ছেড়েই তো দিতে পারে না হীরা। হীরা কোন কথা বলল না। নিঃশব্দে ভরসা দিল লালি কে, লালির জড়িয়ে ধরা হাতে চুমু খেয়ে। লালি নেমে পড়ল হীরার পিছন থেকে। হীরার একটা হাত, নিজের হাতে নিয়ে এগিয়ে গেল সামনের দিকে। একটা বিশাল গাছের কাছে এসে, যতটা সম্ভব জোরে হীরা কে জড়িয়ে ধরল। কত কালের অপেক্ষার ফল এটা, লালি জানে না। এখন বাঘমুড়ো লালি কে মেরে ফেললেও লালির কিছু যায় আসে না। হীরার বুকে নিজেকে দেখার, লোভ যে ওর কত দিনের কেউ বলতে পারে না। জানিনা কত জন্মের তেষ্টা।


হীরার বুকে মুখ টা গুঁজে হাত দুটো দিয়ে হীরা কে নিজের বাহু বন্ধনে নেবার চেষ্টা করতেই অন্যরকম বুঝল লালি। হীরার শরীর এতোটা বিশাল নয় যে ও ধরতে পারবে না ওকে। কিন্তু মনে হচ্ছে কোন বিশাল গাছের গুঁড়ি কে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছে। কিন্তু থাক ওর তো ভালই লাগছে। কেমন একটা সুখের ওম হীরার বুকে। কি সুন্দর একটা সুবাস। হারিয়েই গেল লালি হীরার বুকে।
চমক ভাঙল যখন তখন লালি দেখল চারিদিক অন্ধকার। ভয়ে পাগল পারা হয়ে, হীরা কে খুঁজতে গিয়ে দেখল ও হীরার বুকেই আছে। এতো ভয় পেল কেন ও? অন্ধকার কে, নাকি হীরা কে হারানোর ভয়। কেমন যেন গোল লেগে যাচ্ছে লালির। হীরার দিকে চেয়ে দেখল, ছোট্ট মিত্তি হাসি নিয়ে লালি কেই দেখছে। বুকে নাক টা দিয়ে বেশ করে ঘ্রাণ নিয়ে হীরা কে ছাড়ল ও। কারন রাত হয়ে গেছে। নিশ্ছিদ্র অন্ধকার চারিদিকে। জোনাকী জ্বলছে চারিদিকে। কেমন যেন মনে হলো লালির চারিদিক দেখে। ভালো করে চেয়ে দেখল উপরে তাকিয়ে। এটা তো পেট কাটা অশ্বত্থ গাছ নয়। কোথায় এটা? আবার তাকালো সামনের দিকে। কিন্তু এটা তো জলার মাঠ ই। তবে কি কোন ভাবে পোর্ট কী র মধ্যে দিয়ে অন্য কম্পাঙ্কে চলে এসেছে ওরা?  না না নিজের জন্য ভয় নেই লালির। ভয় টা হীরা সাথে আছে। এ বাঘমুড়োর কোন চাল নয় তো। আঁকড়ে ধরল ও হীরা কে সজোরে। ও সব পারবে, কিন্তু হীরার কোন ক্ষতি ও মেনে নিতে পারবে না। 
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
অসম্ভব সুন্দর পর্ব , মন ভরে গেলো ... উথাল পাথাল ....  


clps Heart
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
speechless, spellbound .. কিছু ব্যক্ত করার ভাষা নেই .  বাকিরা যা বলার বলুক .. অসাধারণ বললেও কম বলা হয় আজকের পর্ব কে .. শুভরাত্রি 
[+] 1 user Likes Bumba_1's post
Like Reply
উফফফফ কি অসাধারণ একটা পর্ব। আজ এক অন্য রকম রোমাঞ্চকর পরিবেশে পরিপূর্ণ ছিল এই পর্ব। সেই শয়তানের আসন্ন শয়তানির ভয় নয়, আজকের পর্বে ছিল অন্তত কাল ধরে বয়ে চলা এক ইচ্ছার পূর্ণতা পাওয়ার পরিতৃপ্তি, এক মহান সময়ের, এক অসাধারণ মুহূর্তর সাক্ষী হওয়ার সৌভাগ্য। সাথে দুই পিতা মাতার সন্তানের প্রতি ভালোবাসা। স্বামী স্ত্রীয়ের একে ওপরের সাথী হয়ে ওঠার বর্ণনা ওই সামান্য কথাবার্তার মাধ্যমে পরিষ্কার ভাবে ফুটিয়ে তোলা। এক সময় পর নব যৌবন লেখনীতে সর্বোচ্চ অধিকার ও আকর্ষণ লাভ করতে সক্ষম হয়, কিন্তু সেই যৌবনের উৎস, তার সৃষ্টির কারণ সেই মানব দুজনের অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যত ততটাই প্রয়োজনীয়। সন্তানের কাছে, লেখকের কাছে, পাঠকের কাছে, সকলের কাছে। ❤❤❤
[+] 2 users Like Baban's post
Like Reply
অনেক কথা হয়তো বলা যাবে কিন্তু মনের ভাব প্রকাশ কি শেষ হবে??

শুরুতেই যে সকালের বর্ণনা দিলে তাতে মনে হচ্ছিলো এ রাতেই আমি সকাল দেখছি। বলতে গেলে গ্রামেই জন্মেছি আধুনিকতার ছোঁয়াতে এখন শহর হতে চলেছে। কিন্তু একটু ভিতরে গেলেইই সেই আগের অনুভব টা পাওয়া যায়।
ভালোবাসায় পূর্ণ একটা পর্ব.... এমনি করে বর্ণনা করলে যেন সেখানে নিজেকে একটা চরিত্রে বসাতে মন আনচান করে। নতুন করে ভালবাসতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে চলতে থাকুক না এভাবেই ভালবাসা দিয়ে যেখানে কোন ভয় নেই, নেই কোন আতংক। পিশাচ কিংবা বাঘমুড়োর বিভীষিকা নেই যেটা আছে শুধুই প্রগাঢ় শীতল অবিরাম ভালবাসার ধারা।
শেষে আবার একটু রহস্য রেখে দিলে, আর কি চাই...
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
[+] 2 users Like nextpage's post
Like Reply
darun lekha like o repu dilam
[+] 1 user Likes anadi's post
Like Reply
lekhikar icon ta "Nandan" prekkha griha theke copy kara hoyechhe naki?
[+] 1 user Likes anadi's post
Like Reply
অসাধারণ বললেও কম বলা হয়। রাধার বিশ্লেষণ হয়ত এখনো অনেক পথ যাবে। কারণ উনি সত্যি ছিলেন নাকি কৃষ্ণের উনি প্রেম অভিলাষা সেটা না জানি কি ভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। যাই হোক, আপনার বিশ্লেষণ ও বেশ গভীর। সত্যি তো নিমাই তো রাধা কৃষ্ণে মজেন নি। মজে ছিলেন কৃষ্ণে। 

এবারে আসি আজকের পর্বে। দারুণ একটা পর্ব ছিল। আপনার গল্পের একটা মজা হলো, পাঠক কে বেশ চিন্তায় রাখতে জানেন। আর সেটাতেই পাঠক ছুটে চলে চাতকের মতন। দারুণ পর্ব এক খানা। শুভেচ্ছা রইল। রেপু আর লাইক রইল।
[+] 1 user Likes boro bara's post
Like Reply
(03-07-2022, 10:48 PM)ddey333 Wrote: অসম্ভব সুন্দর পর্ব , মন ভরে গেলো ... উথাল পাথাল ....  


clps Heart

কি উথাল পাথাল হলো অতো?
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(03-07-2022, 10:56 PM)Bumba_1 Wrote: speechless, spellbound .. কিছু ব্যক্ত করার ভাষা নেই .  বাকিরা যা বলার বলুক .. অসাধারণ বললেও কম বলা হয় আজকের পর্ব কে .. শুভরাত্রি 

অনেক ধন্যবাদ বুম্বা।
Like Reply
(03-07-2022, 11:51 PM)Baban Wrote: উফফফফ কি অসাধারণ একটা পর্ব। আজ এক অন্য রকম রোমাঞ্চকর পরিবেশে পরিপূর্ণ ছিল এই পর্ব। সেই শয়তানের আসন্ন শয়তানির ভয় নয়, আজকের পর্বে ছিল অন্তত কাল ধরে বয়ে চলা এক ইচ্ছার পূর্ণতা পাওয়ার পরিতৃপ্তি, এক মহান সময়ের, এক অসাধারণ মুহূর্তর সাক্ষী হওয়ার সৌভাগ্য। সাথে দুই পিতা মাতার সন্তানের প্রতি ভালোবাসা। স্বামী স্ত্রীয়ের একে ওপরের সাথী হয়ে ওঠার বর্ণনা ওই সামান্য কথাবার্তার মাধ্যমে পরিষ্কার ভাবে ফুটিয়ে তোলা। এক সময় পর নব যৌবন লেখনীতে সর্বোচ্চ অধিকার ও আকর্ষণ লাভ করতে সক্ষম হয়, কিন্তু সেই যৌবনের উৎস, তার সৃষ্টির কারণ সেই মানব দুজনের অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যত ততটাই প্রয়োজনীয়। সন্তানের কাছে, লেখকের কাছে, পাঠকের কাছে, সকলের কাছে। ❤❤❤

Heart Heart । তোমার রিভিউ সত্যি বেশ সুন্দর। রিভিউ কে রিভিউ করলে যিনি লেখক তার বেশ ভালো লাগে।
Like Reply
(03-07-2022, 11:52 PM)nextpage Wrote: অনেক কথা হয়তো বলা যাবে কিন্তু মনের ভাব প্রকাশ কি শেষ হবে??

শুরুতেই যে সকালের বর্ণনা দিলে তাতে মনে হচ্ছিলো এ রাতেই আমি সকাল দেখছি। বলতে গেলে গ্রামেই জন্মেছি আধুনিকতার ছোঁয়াতে এখন শহর হতে চলেছে। কিন্তু একটু ভিতরে গেলেইই সেই আগের অনুভব টা পাওয়া যায়।
ভালোবাসায় পূর্ণ একটা পর্ব.... এমনি করে বর্ণনা করলে যেন সেখানে নিজেকে একটা চরিত্রে বসাতে মন আনচান করে। নতুন করে ভালবাসতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে চলতে থাকুক না এভাবেই ভালবাসা দিয়ে যেখানে কোন ভয় নেই, নেই কোন আতংক। পিশাচ কিংবা বাঘমুড়োর বিভীষিকা নেই যেটা আছে শুধুই প্রগাঢ় শীতল অবিরাম ভালবাসার ধারা।
শেষে আবার একটু রহস্য রেখে দিলে, আর কি চাই...

আমিও গ্রামের। সেই গ্রাম ও এখন আর প্রত্যন্ত নেই গো। ইচ্ছে করে খুউব, গ্রামের দুপুরের নির্জনতার স্বাদ নিতে। চমচমে রোদ আর কোন একটা বাগানে দাঁড়িয়ে যখন মনে হবে আর কেউ কোত্থাও নেই। কোন গাছ থেকে ঘুঘু ডাক দেবে। উফ আলাদা অনুভুতি!  ইচ্ছে করে খুব, শীতের সকাল টা তারিয়ে তারিয়ে উপোভোগ করতে, খেজুর গুড় বা রসের সাথে। ইচ্ছে করে সন্ধ্যেবেলায়, গলার কাপড় জড়িয়ে উঠোনের মাঝে দাঁড়িয়ে শাঁখে ফুঁ দিতে। ইচ্ছে করে শীতের রাতে ভারী লেপের তলায় মায়ের সাথে শুতে। কি জানি হয়ত এই চাওয়া গুলোই তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় আমাকে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সব মিটিয়ে কখন চলে যেতে পারব সেখানে। গ্রামের ব্যাপার ই আলাদা।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(04-07-2022, 12:16 AM)anadi Wrote: darun lekha like o repu dilam

Heart অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আর কি জানি, যিনি এই ছবি টা করে দিয়েছেন, তিনি আমার নাম টা ই পেয়েছিলেন সেই লেখা তে। তার কাছে কৃতজ্ঞ আমি।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(04-07-2022, 12:17 AM)anadi Wrote: lekhikar icon ta "Nandan" prekkha griha theke copy kara hoyechhe naki?

ঐটা আমার কাজ  Big Grin
তবে বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, আমি কিন্তু মোটেও ওই ভেবে বানাইনি। লোগো বানানোর সময় সাইজ ও আকার ঠিক করে ফন্ট ডিজাইন করতে হয়। তাই রাউন্ড শেপ এর সাথে যেন এটাই ফিট করলো। যেন হয়ে গেলো ব্যাপারটা। ওটা ছাড়াও একটা বানিয়েছিলাম। খুবই বেকার লাগছিলো। তাই সেরাটাই দিদির প্রাপ্য।
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
(04-07-2022, 10:46 AM)boro bara Wrote: অসাধারণ বললেও কম বলা হয়। রাধার বিশ্লেষণ হয়ত এখনো অনেক পথ যাবে। কারণ উনি সত্যি ছিলেন নাকি কৃষ্ণের উনি প্রেম অভিলাষা সেটা না জানি কি ভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। যাই হোক, আপনার বিশ্লেষণ ও বেশ গভীর। সত্যি তো নিমাই তো রাধা কৃষ্ণে মজেন নি। মজে ছিলেন কৃষ্ণে। 

এবারে আসি আজকের পর্বে। দারুণ একটা পর্ব ছিল। আপনার গল্পের একটা মজা হলো, পাঠক কে বেশ চিন্তায় রাখতে জানেন। আর সেটাতেই পাঠক ছুটে চলে চাতকের মতন। দারুণ পর্ব এক খানা। শুভেচ্ছা রইল। রেপু আর লাইক রইল।

অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ভাই। নাম খানা এমন অদ্ভুত দিয়েছেন নিজের অমুক ভাই , তমুক ভাই বলা যায় না। 

সত্যি বলতে , নিজে বিশ্লেষণ না করে কিছু লেখা অসম্ভব। এটা আমি বরাবর ই মানি, যিনি লেখেন, তার থেকে সহস্র গুণ বেশী পড়াশোনা করতে হয়। আর পড়াশোনা করলে এতো বেশী ইনফর্মেশন আসে নিজের কাছে যে বলা নয়। সেই ইনফর্মেশন গুলো কে নিজের ভিতরে, বিশ্লেষণ করে তারপরে লেখা। আর সত্যি বলতে আমি যা লিখি সব নিজের কথা। 
যেমন মহাভারত পড়া শুরু করলে আমার মনে হয় সবার আগে পরা উচিৎ উপেন্দ্র কিশোর এর ছোট দের মহাভারত। তার পরে কাশীদাসি মহাভারত। তারপরে কালীপ্রসন্ন সিংহ, তারপরে রাজশেখর বসুর অনুদিত মহাভারত। নৃসিংহপ্রসাদ , গজেন বাবুর প্রক্ষেপিত মহাভারত পরে পড়লে ভাল। কারন সেখানে , লেখন নিজের বিচার বিশ্লেষণ ঢেলে এক নতুন অবয়বে চরিত্র দের দেখিয়েছেন। কজেই সেটা মহাভারত নয়। কাহিনী তো একটাই। কিন্তু যারা পড়েন, তাদের ভিতরে আলাদা আলাদা মহাভারত চলে। আর সেটাই কাম্য। সমুদ্রে সবাই স্নান করলে, অকূল গভীরে ডুব দিয়ে রত্ন তুলবে কারা?
[+] 2 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
(04-07-2022, 07:19 PM)nandanadasnandana Wrote: কি উথাল পাথাল হলো অতো?

সে অনেক কথা আছে ... কানে কানে বলবো কোনোদিন !!! Sad
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
আগের পর্বের কিছু অংশ......

চমক ভাঙল যখন তখন লালি দেখল চারিদিক অন্ধকার। ভয়ে পাগল পারা হয়ে, হীরা কে খুঁজতে গিয়ে দেখল ও হীরার বুকেই আছে। এতো ভয় পেল কেন ও? অন্ধকার কে, নাকি হীরা কে হারানোর ভয়। কেমন যেন গোল লেগে যাচ্ছে লালির। হীরার দিকে চেয়ে দেখল, ছোট্ট মিত্তি হাসি নিয়ে লালি কেই দেখছে। বুকে নাক টা দিয়ে বেশ করে ঘ্রাণ নিয়ে হীরা কে ছাড়ল ও। কারন রাত হয়ে গেছে। নিশ্ছিদ্র অন্ধকার চারিদিকে। জোনাকী জ্বলছে চারিদিকে। কেমন যেন মনে হলো লালির চারিদিক দেখে। ভালো করে চেয়ে দেখল উপরে তাকিয়ে। এটা তো পেট কাটা অশ্বত্থ গাছ নয়। কোথায় এটা? আবার তাকালো সামনের দিকে। কিন্তু এটা তো জলার মাঠ ই। তবে কি কোন ভাবে পোর্ট কী র মধ্যে দিয়ে অন্য কম্পাঙ্কে চলে এসেছে ওরা?  না না নিজের জন্য ভয় নেই লালির। ভয় টা হীরা সাথে আছে। এ বাঘমুড়োর কোন চাল নয় তো। আঁকড়ে ধরল ও হীরা কে সজোরে। ও সব পারবে, কিন্তু হীরার কোন ক্ষতি ও মেনে নিতে পারবে না।


                                                            পর্ব বারো

পিছন ফিরে একবার দেখে নিল ও। তারপরে হীরা কে বলল,
-      চল আমরা ফিরে যাই।

কিন্তু হীরা বেঁকে বসল,

-      আরে!! কেন? এই বেশ গল্প করছি দুজনে।

উফ এই এক ছেলে। যখন গল্প করতে বলি তখন করবে না। এখন বিপদ আর এখন ওনার প্রেম একেবারে উথলে উঠছে। লালি হীরার কথায় আর তোয়াক্কা করল না। প্রেমের থেকেও বড় এখন হীরা কে সাবধানে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া। এখানে লালি একা। আর একলা বাঘমুড়ো কে সামলাতে পারবে না সেটা লালি নিজেও জানে। হিম হয়ে গেল বুক টা। না না আর দেরী করা ঠিক হবে না। ও কোন কথা বলল না। হীরা কে টানল উঠে আসার জন্য। কিন্তু এক চুল ও নড়ল না হীরা। লালির দিকে হাসি মুখে তাকিয়েই রইল। লালির মাথায় ছিল না, ওর এই এক টানে , গাছের ডাল ও মড়মড় করে ভেঙ্গে পরে পলকেই। আর হীরা কে সামান্য নড়াতেও পারল না সেই টান। লালি প্রায় হাত জোড় করে হীরা কে বলল,

-      প্লিস চল। এখানে থাকা ঠিক নয়। তোকে আমি সব কথা বলতে পারব না হীরা। প্লিস দয়া কর, চল এখান থেকে।

হীরা যেন এই বারে নড়ল। উঠে এলো সেখান থেকে। লালির পিছনে পিছনে আসতে লাগল হীরা। কচুবনের ভিতর দিয়ে লালি তড়িৎ গতিতে দৌড়চ্ছে, হীরার হাত টা ধরে। আঁতিপাতি করে খুঁজতে লাগল লালি এবারে পোর্ট কী টা কে। গতবারে এখানে একটা বাঁক ছিল। সেই বাঁক টাই বা কোথায় আজকে। এটা কি অন্য রাস্তা নাকি? হীরার দিকে চেয়ে জিজ্ঞাসা করল লালি,

-      তুই কোন রাস্তা দিয়ে এনেছিলি এখানে?
-      কেন? জলার মাঠে যাবার সব থেকে শর্টকাট রাস্তা টা আমি নিয়েছিলাম।

হীরা অবাক হয়ে বলল কথাটা। লালি অস্থির হয়ে উঠল এবারে। প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,

-      মানে মেইন রাস্তা ধরে আমরা আসিনি জলার মাঠে?
-      না আসিনি তো।

লালি মাথায় হাত দিয়ে প্রায় বসে পড়ল। হীরা তুলে ধরল লালি কে। বলল,

-      এই তো বেশ ভালো। দুজনে বেশ একসাথে আছি। কি ক্ষতি?  কি শান্তি এখানে। কি সুন্দর পরিবেশ। আআহ।

লালি শুনে হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারল না। জড়িয়ে ধরল হীরা কে। মনে মনে ভাবল,

-      যদি জানতিস কি বিপদ লুকিয়ে আছে, এই শান্তির আড়ালে, তাহলে জীবনে আসতিস না এখানে।

কিন্তু সে সব ভাবলে চলবে না এখন। বিপদ যা হবার হয়ে গেছে, কিম্বা সামনে অপেক্ষা করছে। হে ঠাকুর, রহিম দা বা অভি কেউ একজন চলে আসুক আমাকে গ্রামে দেখতে না পেয়ে। না হলে কত বড় বিপদের সামনে ওরা আছে, ভেবেই লালি আঁতকে উঠলো। এরপরে হীরা বলল,

-      চলো না সামনে দেখাই যাক কি আছে।  
-      তুই বুঝতে পারছিস না হীরা।
-      কি বুঝব?
-      যদি বাঘমুড়ো থাকে?
-      হা হা, তাকে কোথায় এখানে পাবে তুমি? ওসব গল্প কথা।

আবার অবাক হয়ে হীরা কে দেখল লালি। কি বলে ছেলেটা? থাক ও না জেনেই। ভয় পাবে। আর ওর সামনে এই সব কথা খোলসা করে কাজ নেই। অন্ধকারেই এগিয়ে গেল দুজনে। আকাশে মেঘ আছে। কিন্তু মাঝে মাঝেই মেঘের ফাঁক দিয়ে কাস্তের থেকে একটু বড় অষ্টমীর চাঁদ ও দেখা যাচ্ছে। তাতেই পথ খুঁজতে হচ্ছে লালি কে। যদিও ওর অসুবিধা হচ্ছে না। কিন্তু হীরার অসুবিধা হচ্ছে হয়তো। হীরার হাত টা ভালো করে ধরে লালি সাবধানে এগিয়ে যাচ্ছে। কিছুদূর যাবার পরে লালির মনে হলো একটা গ্রামের মধ্যে এসে পরেছে ও। কিন্তু এই গ্রাম টা ওদের গ্রাম নয়। এই গ্রাম টা কেমন একটা পোড়ো বাড়ির মতন নির্জন নিঃসঙ্গ। ভালোরকম বিপদে পরেছে লালি সেটা বুঝতেই পারল। ছোট ছোট মাটির বাড়ি। কিন্তু অন্ধকার। লোকজন নেই সেটা পরিষ্কার লালির কাছে। বেশ খানিক টা যাবার পরে রাস্তা টা আরো তিন ভাগ হয়ে গেল। ওদের গ্রামের মতই। ও বুঝে গেলো কোন অন্য সময়ে চলে এসেছে ওরা। গ্রাম টা এক ই।

দূরে একটা হালকা আলোর আভাষ দেখা দিতেই দুজনে সেই দিকে এগিয়ে গেল। লালি সাবধানে এগোলেও, হীরা বেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে গেল সেদিকে। লালি একটু পিছনে রইল। বিপদে পরলে যাতে ও রূপ ধারণ করতে পারে। এই শাড়ী পরে আর মেয়ে হয়ে তো লড়তে পারবে না। এগিয়ে যেতেই দেখল, একটা রোয়াকে বেশ কিছু পুরুষ আর নারী বসে। হীরা এগিয়ে গেল একেবারে সামনে। যারা বসেছিল, ভুত দেখার মতন চমকে উঠলো একেবারে। হীরা এক মুখ হাসি নিয়ে এগিয়ে গেল ওদের দিকেই। লালি ও দেখল এবারে ওদের। একটা বড় মশাল জ্বলছে বাড়ির সামনের ভাঙ্গা গেট এ। রেড়ির তেলে, পুরোন কাপড় বা মোটা সুতুলি বা পাটের দড়ি দিয়ে বানানো মশাল। আলো খুব কম না। ওরা গল্প করছিল। কিন্তু হীরা কে দেখেই থেমে গেল একেবারে। আর পিছনে লালির নূপুরের আওয়াজে তাকিয়ে লালিকেও দেখল। দেখেই কেমন যেন ব্যোমকে গেল সবাই মিলে। লালিও অবাক হলো। একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ ছিল দাঁড়িয়ে। আর পাশে একটি হীরার বয়সের ই ছেলে। আর এক মধ্যবয়স্কা নারীর সাথে বাচ্চা দশ এগারো বছরের মেয়ে। অবাক হবার কারন হল, পুরুষ মানুষ দুজনেই হাঁটুর উপরে ছোট ধুতি কাছা দিয়ে পরা। আর খালি গা। আর মেয়েরা শাড়ি পরিহিতা। গায়ে গয়না ও আছে। মাথায় দুজনের ই মোটা করে সিঁদুর পরা। কিন্তু ওরা কেউ ই গায়ে জামা পরে নি। লালির খেয়াল পড়ল মাঝে মাঝে বড় ঠাম্মু এমন উদোল গায়ে, শুধু শাড়ি পরে ঠাকুর পুজো করেন। ওদের দেখলেই মনে হয় ওরা স্বামী স্ত্রী আর ছেলে আর তার বউ। এতো অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে গেছে মেয়েটির? কোন গ্রামে এলো ওরা? দেখে তো মনে হচ্ছে দুশো বছর আগের কোন যুগ। এরা দুজনাই জানে, সেই আমলে বাল্য বিবাহ প্রচলিত ছিল।

লালি প্রায় চমকে উঠল। মনে হলো ওরা কি অনেক আগের কোন সময়ে চলে এসেছে? উত্তেজনায় লালির কথা বন্ধ হয়ে গেল। ততক্ষণে হীরা অনেক টা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল,

-      কাকু এটা কোন জায়গা বলতে পারেন?

ওরা মনে হয় ভয় পেয়েছিল। কিন্তু হীরা এতো সুন্দর করে জিজ্ঞাসা করল, হয়ত ওদের ভয় টাই কেটে গেল। বা হীরা কে দেখলে সবার ই তো ভালো লাগে। তাই ওদের ভয় টা কেটে গেল হয়ত। কিন্তু হীরার পোশাক বা শাড়ি পরা লালি কে ওরা হাঁ করেই দেখছিল। আমতা আমতা করে জবাব দিল ওদের মধ্যেই ছোট ছেলে টা।

-      এটা তো বাঘমুড়ো গ্রাম।

চমকে উঠল লালি। হীরার দিকে তাকিয়ে দেখল, হীরা ও লালি কে দেখছে। হীরা তারপরে একেবারে ভাঙ্গা গেটের সামনে চলে গেল। জিজ্ঞাসা করল,

-      এটা বাঘমুড়ো গ্রাম? তাহলে গ্রামের লোকজন কোথায়?

সবাই চুপ রইল, কিন্তু মহিলা টি জবাব দিলেন। গলায় বেশ ভয় আর কান্নার আভাষ।

-      গ্রামে আর কেউ আছে বাবা? তার অত্যাচারে কিছুই আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। আমরা কিছু মানুষ রয়ে গেছি। বাস্তু ভিটে ছেড়ে যেতে পারিনি।  
-      কার অত্যাচার? বাঘমুড়ো??

লালির কথায় এবারে লোক টা ভারী অবাক হয়ে এক নিঃশ্বাসে অনেক কথা বলে উঠল,

-      আরে! তোমরা জান না? তোমরা কি জমিদার বাড়িতে এসেছ? এখানে থেক না। এ জায়গা ভাল না। আমাদের জন্য কেউ আসে না। আমাদের জীবনের কোন দাম নেই।

লালি বলল,
-      এরকম আবার হয় নাকি? বাঘমুড়ো তো ঢুকতে পারবে না গ্রামে।

পুরুষ টির কন্ঠে জীবনের উপরে আস্থা হারানোর আওয়াজ। লালির কথার উত্তরে মহিলা ভারী অবাক হয়ে তাকাল। বলল,

-      তুমি জান না? বাঘমুড়ো নয় গো। সে এক পিশাচ এসেছে আমাদের গ্রামে। তাকে দেখা যায় না। তাকে চেনা যায় না। সে আসলেই মনে হয় , দুর্গন্ধে ভরে গেছে চারিদিক। উফ আর কি বীভৎস সেই রূপ। তোমরা বাছা পালাও এখান থেকে। থেক না। রাতে সে কি রূপে ঘুরে বেড়াবে কেউ জানে না। সব শেষ করে দিল সে। সব।

মহিলা ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠল। লালি কি বলবে খুঁজে পেল না। পিশাচ এসেছে? মানে এ কি সেই পিশাচ যে এখন, বাঘমুড়ো তে ঘুরে বেড়াচ্ছে? লালি বুঝতে তো পেরেছে, যে সময়ে ওরা এসেছে, সেই সময় টা বেশ পিছনের সময়। কিন্তু কনফার্ম করা দরকার। ও জিজ্ঞাসা করল,

-      কাকি, এটা কোন সাল? মানে বাংলার কোন সাল?

ভারী অবাক হলো ওদের চার জনেই। এই রকম কথাবার্তার মাঝে এই প্রশ্ন কেউ ই আশা করে নি। হতে পারে ওরা ভাবছে এ আবার কেমন মেয়ে যে জানে না বাংলার সাল কত এখন? পোশাক আশাকে তো লালি কে বেশ সম্ভ্রান্ত আর শিক্ষিত ই মনে হয়েছে ওদের। তাও ছোট ছেলেটি উত্তর দিল,

-      আজকে ২২ এ ভাদ্র, ১১২০ বঙ্গাব্দ। কৃষ্ণপক্ষ, ভাদ্রপদ, জন্মাষ্টমী।

দিনাঙ্ক শুনেই হীরা মুচকী হাসল। আর লালির চোয়াল ঝুলে গেল। বাংলা ক্যালেন্ডার এর হিসাব রাখে না আর ও। কিন্তু এটা জানে এখন ১৪২৮ বঙ্গাব্দ চলছে। আর আজকে জন্মাষ্টমী ও বটে। ভাদ্র মাসের কত তারিখ ও জানে না। তার মানে হিসাব করলে ওরা তিনশ আট বছর পিছনে চলে এসেছে? কি করে হয়? লালির বাক রুদ্ধ হয়ে গেল বললেই চলে। চুপ করে গেল ও। অমিত ক্ষমতার অধিকারিণী ও নিজে সেটা জানলেও, এমন গোলমেলে ব্যাপারে সবার আগে, মাথা খানা জবাব দেয় লালির সেটা লালি নিজেও জানে। কাজেই মাথায় গোল বেঁধে যাবার পরে ও চুপ করে রইল।

এদিকে হীরা নিজের স্বভাবেই পুটুর পুটুর করে চলেছে ওদের সাথে। লালি শুনতে পাচ্ছে ওরা বলছে হীরা কে

-      সে কি এক রূপে আসে বাবা রা? কখন নিশির ডাকে ডেকে নিয়ে যায়। কখনো ছোট ছেলে সেজে ভুলিয়ে নিয়ে যায় জলার মাঠে।কখনো বা সুন্দরী মেয়ে সেজে ছেলে ছোকরা কে ভুলিয়ে নিয়ে যায় বাইরে। আর খোঁজ পাওয়া যায় না গো তাদের। এক এক করে অর্ধেক গ্রাম শূন্য হয়ে গেছে। কিছু যেন খুঁজে বেড়াচ্ছে সব সময়ে। কিন্তু পাচ্ছে না সে। কি যে খুঁজছে, বললেই তো গোল মিটে যায় বল? আমরা দিয়ে দি।

বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পরল পুরুষ টি ও। কিন্তু কথা বলা থামাল না। বলেই যেতে লাগল,

-      কেউ নেই গো আমাদের বাঁচাতে। কেউ নেই। এই ভাবে চললে আমাদের মারা পরতে হবে, না হলে এই গ্রাম ছেড়ে যে কয় জন বেঁচে আছি, সবাই কেই বাবার ভিটে ছেড়ে চলে যেতে হবে অন্যত্র।

একটা সময় এলো, যখন ওরা ঘরে ঢুকে পরল। আর বাইরে দাঁড়িয়ে দুজন। নিশ্ছিদ্র অন্ধকার চারিদিকে। ঝি ঝি ডাকছে অনবরত। বর্ষার শেষ, বাতাসে টইটম্বুর পুকুরের কুল ছাপানো জলের পাড় ভিজিয়ে দেওয়া সোঁদা গন্ধ। একটা ভ্যাপসা ভাব চারিদিকে। চারদিকে আতঙ্কের ছায়া। আর আকাশে ঘন মেঘের ঘনঘটা। এই তো মাঝে মাঝে ফাঁকা ছিল আকাশ। এখন একেবারে যেন তেড়ে এসেছে সব মেঘের দল। জন্মাষ্টমী আজকে। সব না ভাসিয়ে নিয়ে যায় এই মহামেঘের দল। লালি আর পারল না থাকতে হীরার থেকে দূরে।এক ছুটে কাছে এসে হাত টা ধরে রইল। নিজে বলশালিনী হওয়া সত্ত্বেও হীরা কেই আঁকার করে ধরতে ইচ্ছে হলো লালির। জানে প্রয়োজনে হীরা কেই রক্ষা করতে হবে। কিন্তু এই কিছুক্ষণ ওর হাতে হাত দিয়ে থেকে মনে বল টা বাড়িয়ে নেওয়া আরকি। হীরার মধ্যে কোন ভয়ের লেশ মাত্র নেই। ও লালি কে বলল,

-      দেখ, কি সুন্দর অন্ধকার। আমার তো বেশ লাগছে। শুধু বৃষ্টি নেমে ব্যাপার টা গুবলেট না করলেই হলো।
-      কি? আমার ভয় করছে হীরা। আর তোর এখন বেশ লাগছে? তুই বুঝতে পারছিস? এখানে কিছু পাগল আছে। বলছে এটা নাকি ১১২০ বঙ্গাব্দ!! মানে তিনশ বছর আগের কোন সময়!!!!  
-      হাহাহা। ঠিক বলেছ। পাগল সব। কিন্তু জায়গা টা বেশ তাই না? কি করছ? ভালো করে হাত টা ধর না!

লালি রাগ ধরছে আবার হীরা কে পাশে পেয়ে গলেও যাচ্ছে। তবে লালি ভেবে নিয়েছে, যা হবে হোক, এই ছোঁড়ার এমন মুড আবার কবে হবে কে জানে? তার থেকে এখনি বেঁচে নি জীবন টা। এর পরে বাঘমুড়ো চাইলে মুড়ো ছিঁড়ে নিক। ও হীরা কে লজ্জা পেয়েই বলল,

-      বাবাহ, খুব রোম্যান্টিক দেখছি আজকে তুই?
-      হু হু বাবা! চল ওই দিক টায় যাই।
-      কিন্তু ওই দিকে তো জলার মাঠ!
-      তাতে কি? ফিরতেও তো ওই দিকেই হবে আমাদের। আমার কি মনে হয় জান?
-      কি?
-      কোন ব্যাপার তো আছেই। দেখ আমি ওদের পোশাক আশাক যা দেখলাম তাতে ওনারা তিনশ বছর আগের ই মানুষ। খেয়াল করে দেখ, কোন বাড়িতে লন্ঠন ও নেই। মশালের আলোতে ওরা রাত কাটাচ্ছে। আর তুমি হয়ত খেয়াল করনি, আমি ধুনোর গন্ধ পেয়েছি মশাল থেকে।
-      তাতে কি?
-      হিসাব বলছে, ১১২০ বঙ্গাব্দ মানে সবে আকবরের দেহাবসান হয়েছে। সেলিম রাজত্ব পেয়েছে দিল্লীর। ওই সময়ে বাংলায় এই রকম রেড়ির তেলের মশালে অনেক ধুনো চাপিয়ে আলো দেওয়া হত। দাউ দাউ করে ধুনো জ্বলত মশাল হয়ে। কথাটা ওরা কিছু ভুল বলে নি।
-      তুই কি ভাবে জানলি এতো কিছু?
-      কি ভাবে আবার? ইতিহাস কি বাইনারী নাকি? যে হ্যাঁ বা না তে উত্তর পাব। ইতিহাসের প্রামান্য বই পত্র পড়লেই তুমি নিজের জায়গা থেকেই দেখতে পাবে পুরো টা। বাংলায় তখন আকবরের ভাইপো রাজত্ব করছিল।
-      সে তো বুঝলাম! কিন্তু তোর মনে প্রশ্ন জাগল না, যে আমরা এখানে কি ভাবে এলাম?
-      উম্মম জাগে নি তা নয়। জেগেছে। কিন্তু তার থেকেও বড় প্রশ্ন জেগেছে, কি কারনে এলাম? আমাদের গ্রামে বহু রাস্তার একটা দিয়ে আমরা হাঁটছিলাম। অনেক মানুষ অনেক রাস্তা দিয়ে এক ই সময়ে যাতায়াত করছে। সেই অসংখ্য মানুষ আর অনেক রাস্তার মধ্যে পারমুটেশন কম্বিনেশন এ যে সকল অসংখ্য সম্ভাবনার উৎপন্ন হয়, সেই ছোট্ট প্রোবাবিলিটি থেকে আমরাই পৌছুলাম এখানে! কেন? কি দেখতে এলাম এখানে? এলাম না কি আমাদের এখানে নিয়ে আসা হলো? আমাদের নিয়ে আসা হলো, নাকি আমাকে, বা তোমাকে নিয়ে আসা হলো?
-      দাঁড়া দাঁড়া! এতো প্রশ্ন করলে আমার মাথা গুলিয়ে যায়।
-      হুম জানি, সেই ছোট থেকেই তোমার মাথা গোলানো।
-      এক থাপ্পড় খাবি!!

সঙ্গে সঙ্গে হীরা গাল লালির দিকে বাড়িয়ে দিল। বলল,
-      বেশ খাওয়াও থাপ্পড়।

লালি লজ্জা পেয়ে গেল হীরার কান্ডে। ইশ আজ বাদে কাল ওকে বিয়ে করবে বলে স্বপ্ন দেখছে লালি, আর গালে থাপ্পড় কি সত্যি করে মারবে বলেছে নাকি ও? ভয়ানক লজ্জা পেয়ে একেবারে কুঁকড়ে গেল লালি। কোন রকমে বলতে পারল,
-      আহা, আমি কি তাই বলেছি নাকি?

লালির কাছে হীরার গাল। হীরার গা থেকে অদ্ভুত একটা সুগন্ধ। লালি মোহিত হয়ে যাচ্ছে একেবারে। অপেক্ষা করল না লালি। মুখ টা বাড়িয়ে হীরার গালে ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে নিল। হীরা অবাক হয়ে গেল। বাচ্চা ছেলের মতন গালে লেগে থাকে লালির চুমু টা মুছতে মুছতে বলল,
-      এটা কি হলো?
-      থাপ্পড় দেওয়া হলো।
-      ওয়াও, আচ্ছা কি কি করলে তুমি থাপ্পড় দাও? আমাকে দাও নাকি অনেক কে দাও এমন থাপ্পড়।
-      এই রে! এই ছেলেটা এবারে বাড়াবাড়ি করছে। হ্যাঁ রে তুই তো এমন দুষ্টু ছিলি না।
-      বা রে , নিজেই তো দিনের মাথায় উঠতে বসতে আমাকে দুষ্টু বল।
-      উফ বাবা সে তো দুষ্টুমি। আর এখন এটা …
-      কি এটা…

ততক্ষণে দুজনেই চুপ করে গেল। জলার মাঠে ওরা উঠে পরেছিল। কিন্তু দেখল মাঠের ঠিক মাঝেই অন্ধকার কেউ একজন দাঁড়িয়ে। অন্ধকারে বুঝতে তো পারছে না। কিন্তু এটা বোঝা যাচ্ছে কেউ একজন ওখানে দাঁড়িয়ে। আর সে ছোট খাটো কেউ নয়। লালির ক্ষমতা ওকে জানান দিচ্ছে সামনে বিপদ। কি করবে লালি এখন? হীরা কে যে বাঁচাতেই হবে ওকে। ওর মায়ের কাছে ওকে ফিরিয়ে দিতেই হবে। আজকে যে ওর জন্ম দিন! হীরা কিন্তু বেশ নির্বিকার। লালির হাত টা ধরে সামনেই এগিয়ে যেতে শুরু করল। লালি ওকে টানছে পিছনের দিকে। কিন্তু হীরা যেন যেই টান অবলীলায় উপেক্ষা করে লালির হাত ধরে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে আগন্তুকের দিকে।

-      হীরা শোন আমার ভালো লাগছে না। আর এগোস না। তোকে আমি বলিনি তুই ভয় পাবি বলে। বাঘমুড়ো কিন্তু সত্যি আছে। কোন ঘটনার মিথ্যা নয় বাঘমুড়ো নিয়ে। আমার কথা শোন তুই।
-      আরে তুমি চল তো। থাকলেও সামনের জন বাঘমুড়ো না। দেখছ না মাথা টা ছোট। বাঘের মাথা অতো ছোট হয় নাকি?
-      অ্যাঁ?
-      হ্যাঁ, দেখ ভালো করে।

   লালি তাকিয়ে দেখল ভালো করে। সত্যি কথাই, মাথাটা মানুষের। ভয় টা কিছু টা হলেও কমল। কিন্তু লালি ভাবছিল, যদি সে হয়, যে বাঘমুড়োর পিছনে আছে? ওরা যতই এগোতে লাগল, ততই বুঝতে পারল কোন একজন মানুষ দাঁড়িয়ে। পরনে সাদা কাপড়। খালি গা। মাথায় টিকি। বোঝাই যাচ্ছে ', উনি। বা কোন পন্ডিত হবেন। ততক্ষণে দুজনাই একে অপরের হাত ধরে পৌঁছে গেছে ওই ',ের সামনে। ভালো করে দেখা না গেলেও বুঝতে অসুবিধা হয় না, বেশ সুদর্শন উনি। ফরসা। মাথা ন্যাড়া। লম্বা টিকি একটা গিঁট দিয়ে কাঁধের উপরে ঝোলানো। হীরা আর লালি যত খানি অবাক হয়েছে ততোধিক অবাক হয়েছে ওই ', ও এদের দেখে। ভয় পেয়েছে প্রত্যেকেই। কিন্তু হীরা আগের মতই অচঞ্চল। জিজ্ঞাসা করল,

-      আপনি কে? ও হ্যাঁ আমি হীরা আর এ লালি।

', বেশ খানিকক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

-      আমি কেদার ভটচাজ। এই গ্রাম এবং আশে পাশের বেশ কিছু গ্রামের পুরোহিত আর এখান কার টোলের শিক্ষক ও বটে।
টোলের শিক্ষক? লালি অবাক হয়ে তাকালো ',ের দিকে। মানে হীরা ঠিক ই বলেছে। ওরা পিছিয়ে এসেছে বেশ কয়েকশ বছর আগে ওদের ই গ্রামে।
-      ও! প্রণাম নেবেন স্যার।
-      স্যার?
-      ও!! না, মানে মহাশয়!!
-      আচ্ছা নিলাম! তা তোমরা এখানে? কারা তোমরা? এই খানে একলা এই ভাবে মহিলা নিয়ে ঘুরতে এসেছ? এ তো অসভ্যতা!! তার থেকেও বড় কথা, এখন এখানে মৃত্যু ভয় আছে। তোমরা সভ্য নও বুঝেছি, কিন্তু প্রাণের ভয় ও নেই?

লালির রাগ হল কথা টা শুনে। ভাবল, তুমি কোথাকার হরিদাস পাল যে আমাদের অসভ্য বলছ? কত কষ্ট করে মহারাজ কে নিয়ে একটু একলা সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া গেছে। আর এটা অসভ্যতা? কিন্তু দেখল, হীরার কোন বিকার নেই। দিব্বি মানিয়ে নিল। বলল,

-      ক্ষমা চাইছি। আসলে আমরা পথ হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু আপনার কপালে, গলায় আর হাতের কব্জি আর কনুই এর উপরে চন্দনের লেপ দেখে মনে হচ্ছে আপনি বৈষ্ণব। রাধা কৃষ্ণে বিভোর। আজ থেকে তিন হাজার বছর আগের প্রেম কে পুজো করেন। রাধা কৃষ্ণের প্রেম কে অমর করে বাড়িতে সেই প্রেমের পুজো করে সেটার বৈধতা দিয়েছেন। বস্তুত, পুজো করে সবাই কে বলতেও চাইছেন, প্রেম ভালো ব্যাপার। একটা মহান ব্যাপার। তবে আমরা অসভ্যতা করলাম কি করে?

অন্ধকারেই লালি হেসে উঠল, হীরার কথায়। ভাবল, এই ছেলের যুক্তি একেবারে মোক্ষম। পাশে দাঁড়িয়ে হীরার হাত টা কেই জড়িয়ে ধরল লালি আনন্দে কারণ হীরা অদের প্রেম নিয়ে একেবারে নিসন্দেহ। ', ততক্ষণে উত্তর দিয়েছেন হীরার কথায়,

-      হুম, মেনে নিলাম যুক্তি। কিন্তু তোমরা এখানে কি করে? দেখে অদ্ভুত লাগছে। পোশাক আশাক এ অঞ্চলের নয় বুঝতে পারছি। এখানে এলে কি করে? যদিও অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে যাচ্ছে আশে পাশে। আর এ অঞ্চল ভাল না।
-      কেন?
-      এখানে বাঘমুড়ো থাকে। বড় সাঙ্ঘাতিক সে। শিকার মরনেচ্ছায় না কাতরালে তাকে হত্যা করে না বাঘমুড়ো। কিন্তু…
-      কিন্তু কি স্যার?

এবারে স্যার কথা টা শুনে কেদার ঘাবড়ালো না। বুঝে গেছিল কোন অন্য ভাষা হবে হয়ত, যার মানে মহাশয়। হীরার দিকে একবার চেয়ে কেদার বলল,
-      গত দিন কুড়ি এখানে, এক পিশাচের আবির্ভাব হয়েছে। সে একটা আশ্চর্য্য জিনিস চায়।

লালির মাথায় খেলে গেল নগেন এর অনেক প্রশ্নের মধ্যে একটা প্রশ্ন। গ্রামে একটা জিনিস আছে। যেটা রহস্য। ও হীরার পিছন থেকে বলে উঠল,

-      কি জিনিস স্যার?

লালির কথায় খানিকক্ষণ চুপ করে গেল কেদার। তারপরে বলল,



-      জানিনা তোমরা কে বা কোথা থেকে এসেছ। এতো কিছু বলছি ই বা কেন তোমাদের জানি না।কিন্তু জানি, আর বললেও ক্ষতি নেই কারণ সেই জিনিস সে অনেক খুঁজেও পায় নি। আর সেই ক্রোধে হত্যা করেছে নির্বিচারে গ্রামের মানুষ দের। বরং সেই জিনিস সে খুঁজে পেলে এই হত্যালীলা কমবে। কিন্তু তোমরা আগে বলবে আমাকে, তোমরা কোথা থেকে এসেছ?



হীরা কেদারের হাত টা ধরে বলল,



-      ও, আমরা এসেছি পাশের গ্রাম চন্ডীপুর থেকে। ওখানে আমাদের পিসির বাড়ি বেড়াতে এসেছি। আমি হীরা আর এ আমার পিসির ননদের মেয়ে লালি। হয়ত পথ হারিয়ে ফেলে এদিকে চলে এসেছি। ও আপনি ভাববেন না। আমরা চলে যাব ঠিক। কিন্তু আপনি বলুন না কি সেই জিনিস?



লালি অবাক হয়ে হীরা কে দেখতে থাকল। কত অবলীলায় মিথ্যা বলে দিল ছেলেটা। মুখে একটা হাসি খেলে গেল লালির, সবার অলক্ষ্যেই। হীরার এই দিক টা আবিষ্কার করে লালি বেশ আনন্দ পেল। কি দুষ্টু কি দুষ্টু। চন্ডীপুর , বাঘমুড়োর পাশের গ্রাম। লালি দেখল ', প্রতিবাদ করলেন না, মানে চন্ডীপুর তখনো ছিল। মনে মনে হীরার তারিফ না করে পারল না লালি। শয়তান টা খুব জায়গায় ঘা দিয়েছে। ', বিশ্বাস না করলেও কনফিউজ তো হয়েই যাবেন। ততক্ষণে ', বলতে শুরু করেছেন। বেশ অবাক উনি।বললেন,



-      দেখ আমিও জানিনা ঠিক কি জিনিস সেটা। তবে এর পিছনে একটা গল্প আছে। তাই অনুমান করতে পারি। তোমাদের বলে দিয়ে যাই। জানিনা এর পরে আমি বাঁচব কিনা। হয় বাঘমুড়ো খাবে না হলে সেই পিশাচ আমাকে মারবে। কিন্তু এই কাহিনী পৌঁছতে হবে ভবিষ্যতে। না হলে এই সমস্যার সমাধান নেই।

-      ভবিষ্যতে পৌঁছতে হবে মানে? – লালি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল।



-      মানে আমি যা জানি সেটা ভবিষ্যতে না গেলে এই বিপদের থেকে উদ্ধার পাওয়া যাবে না। কারন কথিত আছে এই বাঘমুড়ো অবসানের যোগ, পনেরোশ বঙ্গ শতকে আছে। এই শতকেও ছিল। কিন্তু হয় নি। কিন্তু কিছু ব্যাপার আছে, যে গুলো, ওই সময়ে না পৌঁছলে বাঘমুড়ো আর সেই সম্পর্কিত রহস্য ভেদ করা যাবে না। কারন আমরা আর কেউ বাঁচব বলে মনে হয় না। আমাদের ছেলে পুলে নাতি কেউ ই থাকবে না আর। তাহলে কাহিনী হয়ে পৌঁছবে কি ভাবে সেটা সেই সময়ে?



হীরা আর লালি দুজনেই অবাক হলো এই কথায়। একে অপরের দিকে তাকাল। লালি এগিয়ে এল এবারে সামনে। কারন হীরার থেকে লালি এই বাঘমুড়ো কে নিয়ে বেশী ঘেঁটেছে। সে লড়েওছে বাঘমুড়োর সাথে। জিজ্ঞাসা করল,



-      বলুন কি জানেন আপনি বাঘমুড়ো সম্পর্কে।

-      না না ব্যাপার শুধু বাঘমুড়ো নয়। অনেক কিছু জড়িয়ে আছে এর পিছনে। তবে তার আগে বলে দি, যদি এখন এখানে বাঘমুড়ো আসে, তবে তোমরা ওই যে পেট কাঁটা অশ্বত্থ গাছ দেখছ, সোজা ঝাঁপ দেবে ওই পেটের ফাঁক দিয়ে। দ্বিধা করবে না। না হলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।



হীরা চুপ ছিল। এতোক্ষণে কথা বলল,



-      আপনি সে নিয়ে ভাববেন না। আপনি বলুন, কি জানেন।



লালি দেখল, ', টি বেশ অন্যমনস্ক। হীরার কথায় যেন চমক ভাঙল ওনার। বলল,



-      চল তবে ওই অশ্বত্থ গাছের নীচে বসি। বিপদে তোমরা পালিয়ে যেতে পারবে। আমার উপায় নেই। আর আমি যাব ও না। আমার স্ত্রী কে ওই পিশাচ ভক্ষণ করেছে। আমার সন্তান কোথায় আমি জানি না। কিন্তু তার বিনাশের বীজ আমি পুঁতে দিয়ে যাব তোমাদের মাধ্যমে।



গলা ধরে এলো ',ের। হীরার হাত দুখানা নিজের হাতে নিয়ে বলল,



-      বল তোমরা পারবে না?  এই খানে যত পরিবার তাদের প্রিয়জন দের হারিয়েছে, সেই হারানোর ঋণ শোধ করতে? শুধু আজকে না। গত সহস্র বছরের অত্যাচারের বদলা নিতে পারবে না? বল???


', কেঁদেই ফেললেন হাউ হাউ করে। হীরা তাকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে, নিয়ে এসে গাছের বেদী তে বসাল। আর লালি বসল ঠিক পাশেই। বাঘমুড়োর শক্তি আর সামর্থ্য অনেক বেশী লালির থেকে। কিছু আগেও একটা ভয় কাজ করছিল লালির মনে সেই জন্য। কিন্তু এই অত্যাচার আর হত্যালীলা শোনার পরে, লালির আর ভয় করছে না। মনে হচ্ছে আসুক তারা। সে লড়বে আজকে। হীরা কে যথাস্থানে পৌঁছে দিয়ে এসে সে লড়বে। মনে মধ্যে একটা অদ্ভুত অস্থিরতা কাজ করছে লালির। যতক্ষন না বাঘমুড়োর গলার নলী টা ও কামড়ে ছিঁড়ে নিতে পারছে যেন শান্তি নেই লালির।
Like Reply
(05-07-2022, 09:46 AM)nandanadasnandana Wrote: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ভাই। নাম খানা এমন অদ্ভুত দিয়েছেন নিজের অমুক ভাই , তমুক ভাই বলা যায় না। 

সত্যি বলতে , নিজে বিশ্লেষণ না করে কিছু লেখা অসম্ভব। এটা আমি বরাবর ই মানি, যিনি লেখেন, তার থেকে সহস্র গুণ বেশী পড়াশোনা করতে হয়। আর পড়াশোনা করলে এতো বেশী ইনফর্মেশন আসে নিজের কাছে যে বলা নয়। সেই ইনফর্মেশন গুলো কে নিজের ভিতরে, বিশ্লেষণ করে তারপরে লেখা। আর সত্যি বলতে আমি যা লিখি সব নিজের কথা। 
যেমন মহাভারত পড়া শুরু করলে আমার মনে হয় সবার আগে পরা উচিৎ উপেন্দ্র কিশোর এর ছোট দের মহাভারত। তার পরে কাশীদাসি মহাভারত। তারপরে কালীপ্রসন্ন সিংহ, তারপরে রাজশেখর বসুর অনুদিত মহাভারত। নৃসিংহপ্রসাদ , গজেন বাবুর প্রক্ষেপিত মহাভারত পরে পড়লে ভাল। কারন সেখানে , লেখন নিজের বিচার বিশ্লেষণ ঢেলে এক নতুন অবয়বে চরিত্র দের দেখিয়েছেন। কজেই সেটা মহাভারত নয়। কাহিনী তো একটাই। কিন্তু যারা পড়েন, তাদের ভিতরে আলাদা আলাদা মহাভারত চলে। আর সেটাই কাম্য। সমুদ্রে সবাই স্নান করলে, অকূল গভীরে ডুব দিয়ে রত্ন তুলবে কারা?

এই রে!! ভাই বলেই ডাকবেন না হয়। যদিও এই অধমের নাম তমাল। আপনি যে নিজের মৌলিক কথাই লেখেন সে নিয়ে সন্দেহ নেই। আপনার প্রথম গসিপের গল্প পড়ার সৌভাগ্য হয় নি আমার। কিন্তু এখন যা পড়ছি তাতে মনে হয় সেই কাহিনী গুলো ও মৌলিক ছিল। মৌলিকত্ব আপনার বিশেষ গুণ। আমার ও তাই মনে হয়, মহাকাব্য আগে অরিজিনাল পড়াই উচিৎ। তারপরে, তাদের বিশ্লেষণ। আগেই বিশ্লেষণ এ গেলে, বায়াসড হয়ে যায়। আসলে এই দুই মহাকাব্যেই বাইরে থেকে ঘটনা জুড়ে দেবার অনেক নিদর্শণ আছে।
[+] 1 user Likes boro bara's post
Like Reply
একই সাথে গা ছমছমে আবার ভালো লাগার আপডেট , টাইম মেশিন ইত্যাদি ....

ভুল বলিনি ... একটা দারুন SCI FI ছবি তৈরী হতে পারে !!! 


clps
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
লেখার শুরুর দিকেই বলেছিলাম এই গল্পের যা গুন তাকে সঠিক ভাবে চলচ্চিত্র হিসাবে ফুটিয়ে তোলা এখানকার কম্পিউটার গ্রাফিক্স এর কাজ নয়, বা বলা উচিত ওতো বাজেট নেই। কিন্তু সেই পরিমান অর্থ সঠিক ভাবে কাজে লাগিয়ে অসাধারণ পরিচালনা ও সেই মানের vfx এর মাধ্যমে যদি সব কিছু ফুটিয়ে তোলা যায় তবে এই কাহিনী, সেই সিনেমা কাল্ট ক্লাসিক হয়ে ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে।

এবার আসি আজকের পর্বে - কল্পবিজ্ঞান, ভালোবাসা, ভয় ও বিদ্রোহ সব কিছুই ছিল আজকের পর্বে। বর্তমান যে জবাব দিতে অক্ষম তা জানতেই যেন অতীতের আবির্ভাব এইভাবে। এই অতীতের কিছু অজানা কথাই ভবিষ্যতকে রক্ষা করতে পারবে। উফ্ফ্ফ্ফ্ফ্ফ্ফ কিসব আসছে এই গল্পে পরপর!!  আর এটাকে ফ্যান্টাসি লেখা ঠিক নয়, এ যে অসাধারণ থ্রিলার!!♥️♥️
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply




Users browsing this thread: 14 Guest(s)