Poll: এই গল্প টা আপনাদের ভালো লাগলে নীচের অপশন এ ক্লিক করে জানান কেন ভালো লাগছে
You do not have permission to vote in this poll.
গল্পের কাহিনী
10.00%
2 10.00%
গল্পের গতি
0%
0 0%
গল্পের গতি এবং কাহিনী
85.00%
17 85.00%
গল্প টি ভালো লাগছে না
5.00%
1 5.00%
Total 20 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 96 Vote(s) - 3.46 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Fantasy বাঘমুড়োর আতঙ্ক - সমাপ্ত
(30-06-2022, 05:56 PM)rubisen Wrote: পড়ে মুগ্ধ হলাম

অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(30-06-2022, 11:58 PM)dipankarmunshidi Wrote: দারুন ডিটেল। গল্প ঝরঝর করে এগোচ্ছে।

Heart   । অনেক অনেক ধন্যবাদ
Like Reply
     

আগের পর্বের কিছু অংশ...............

চার জন অসম বয়সী নর নারী নিজেদের মধ্যে গল্প করছিল, জলার ধারে অশ্বত্থ গাছের নীচে। আর সন্ধ্যের সময়ে গ্রাম থেকে ভেসে আসছিল, শঙ্খের আওয়াজ। গৃহস্থের বাড়িতে সন্ধ্যে দিচ্ছে যে গৃহবধু রা। নগেন তাকিয়ে দেখল পূব আকাশে হালকা চাঁদ। আর পশ্চিম আকাশে জ্বলজ্বল করছে সন্ধ্যা তারা।
 
                                                                                                     অধ্যায় দুই
মাঝে মাঝেই আমার মনে ভেসে ওঠে এই সমস্ত ঘটনা। বুঝিও না ছাই কোথা থেকে আসে এই সব দৃশ্য আর কেনই বা আসে। আমি দেখতে পাচ্ছি একটি কিশোর বালক কে একটি বাগানের মতন মনোরম জায়গা তে। আহা কি নেই সেই বাগানে। আম থেকে শুরু করে ছোট বড় নানান বৃক্ষ। ম ম করছে চারিদিক সুগন্ধি আম এবং অন্যান্য ফলের গন্ধে। ইতিউতি গরুর দল দূর্বা ঘাস এ মজে। যমুনার জল যেন পারে এসে ছুঁতে চাইছে বালক টির পা। ছলাক ছলাক করে পারে ধাক্কা দিচ্ছে জলের ঢেউ। আপনা হতেই ফুল ঝরে পরছে উপর থেকে যেখানে বালক টি দাঁড়িয়ে। আর বালক টি দাঁড়িয়ে আছে একটা বিশাল গুলঞ্চ বৃক্ষের তলায়। বিশাল হলেও গাছের ডালপালা যেন নীচে থেকেই বিস্তার লাভ করেছে। আর ছেলেটি তেমন এক বিশাল ডালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে দুটো পা কে কাঁচির মতন করে বাঁশী বাজাচ্ছে। যেন জগত ভোলা।  আহা পা দুখানি দেখে মনে হয়ে যেন জড়িয়ে ধরি। নীল পদযুগল। রক্তিম পদতল। আলতা পরা পা দু খানি। কার ছেলে কে জানে? সেই মা হয়ত পরম মমতায় ছেলের পা দুখানি আলতায় রাঙ্গিয়ে দিয়েছে। দু খানি রূপোর বালা পায়ের পাতার উপরের অংশে শোভা পাচ্ছে। হলুদ ধুতি পরে আছে বালক টি। তাতে লাল বর্ডার। সামনের কোঁচা টা ময়ূরের পেখমের মতন পায়ের পাতার উপরে দোল খাচ্ছে। কতই বা বয়েস হবে ছেলেটির। ষোল সতের। নীল কমনীয় শরীর। ক্ষীনকায়া নয় বালক টি আবার স্থুল ও নয়। নীল শরীরের পেশী না দেখা গেলেও, সামর্থের শেষ নেই সেটা বোঝাই যাচ্ছে । হুম বুঝেছি। জগতের আরাধ্য, দিন কয়েক আগেই, কংস কে বধ করে গোকুলে ফিরেছে আমাদের নয়নের মনি, যশোদার হৃদপিণ্ড , আর আমারও আরাধ্য স্বয়ং কৃষ্ণ। কে বলবে তার এই সুরের মুর্ছণা শুনে যে, কয়েক দিন আগেই, এই বালক কংস কে হত্যা করেছে? তাও শুধু হাতে? আর সুর তো নয় যেন কথা বলছে ওর বাঁশী। যেন ডাকছে সবাই কে। কেউ কি আছে এই গোকুল এ, এই বাঁশী শুনে নিজেকে সমর্পণ করে দেবে না ওই পায়ের তলায়? কে বলে রাধা পাগল ছিল বাঁশীর জন্য? সুর শুনে তো মনে হচ্ছে, বাঁশী ই আকুল হয়ে রাধা কে ডাকছে।   

আর হয়ত ও থাকবে না ও এই বৃন্দাবনে। সমগ্র বৃন্দাবন, গত মাস থেকে কি যে দুঃখের সাগরে নিমজ্জিত, তা বলে বোঝাতে পারা যাবে না। ছেলে আমাদের গেছিল মথুরা তে। মহারাজ কংস ডেকে পাঠিয়েছিলেন যে। ছেলেও এক ডাকেই চলে গেছিল। তারপরে তো যা হয়েছে, না জানি কত লক্ষ বছর ধরে মানব ইতিহাসে এই ঘটনা লেখা হয়ে থাকবে উজ্জ্বল হয়ে। খেলার ছলে বিশালাকার, মহাবীর, কংস কে সম্মুখ দ্বন্দ্ব যুদ্ধে হত্যা করেছে এই বালক। কে বলবে সেটা এখন ওকে দেখে, যে এই বালক ই সংহার করেছে কংস কে। তাই সেই আনন্দে, গত কাল, মথুরায় হোলি খেলার পরে, ঠিক পাঁচ দিনের দিন সে মথুরা থেকে ফিরে হোলি খেলেছে সমস্ত বৃন্দাবনে। সকাল থেকে রাত অব্দি। নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দুষ্টুমি করেছে। প্রতিটা রাস্তায়, প্রতিটা অলিতে গলি তে, প্রতিটা পুকুরের ঘাটে, প্রতিটা গাছের পাতায় আবিরের রং লেগে এখনো। সমগ্র বৃন্দাবণে ছেলের স্পর্শ। আহা খেলার পরে গোকুলের কেউ স্নান ও করে নি। কেউ যে মুছে ফেলতে চায় না তাদের কানাই এর শেষ স্মৃতি টুকু। আর দেখ, যাকে নিয়ে এই পাগলামী , সে সকাল সকাল স্নান করে এসে এই গাছে তলায় দাঁড়িয়ে। হয়ত সে চায় না এই বৃন্দাবনের স্মৃতি নিয়ে মথুরাতে ফিরতে। হয়ত সে চায় না তার পরবর্তী জীবন এর সাথে আর বৃন্দাবন কে জড়াতে। কি জানি, কি লীলায় মেতেছে দুষ্টু টা। এই দেখনা , গোটা বৃন্দাবন এখন শোকে মগ্ন, আর ইনি এখানে এসে হাজির। কারোর অপেক্ষায় বাঁশী বাজাচ্ছে। ডাকছে তাকে করুণ ভাবে।  কে সেই ভাগ্যবান যার অপেক্ষায় স্বয়ং সময়? বা কে সেই জন যার অপেক্ষায় শেষ বাঁশী বাজিয়ে নিচ্ছেন সর্বশক্তিমান এই পুরুষ?

অপেক্ষার শেষ মনে হয়। ও কি? ও যে ললিতা। হ্যাঁ ওরা সখা সখী ছিল বটে। মেয়েটা ভালো বাসে খুব ছেলেটা কে। কিন্তু ছেলেটা ওই সবের ধার ধারে বলে মনে হয় না। ওসবের থেকে অনেক বড় উদ্দ্যেশ্য নিয়ে এসেছে সে এই ধরায়। ললিতায় পা ফসকালে তার চলবে কেন? কিন্তু কেউ তো কোন কথা বলে না। বলার দরকার তো হয় না কিছু ওই দুষ্টু কে? সব যে বুঝে নেয়। বাস একবার মনে করলেই হল তাকে। ললিতা বলার চেষ্টা ও করে না। আলুলায়িত কেশে ধির পায়ে এসে, পায়ের তলায় বসে চোখ বুজে বাঁশী শুনতে লাগল ললিতা। অন্যান্য দিন, বাঁশী শেষে কখন যে ফুড়ুৎ করে পালায় কানু কেউ বুঝতে পারে না। সবাই যে সেই সুরের মুর্ছণায় বোধ হীন হয়ে থাকে। আর ওই রকম বোধ হীন করে রেখেই যেন ও আনন্দ পায়। বড্ড ভালোবাসার কাঙাল ছেলেটা। কে বলবে যশোদা ওকে কি অসীম ভালবাসে। কিন্তু আজকে দুষ্টু টা নিজেই ললিতা কে ডাকল।

-      কি ব্যাপার, ললিতে, আজকেও কিছু বলবে না?

ললিতার যেন চমক ভাঙল। ওর কাছেও নতুন ব্যাপার টা। কিছু কিছু ব্যাপার এমন হয়। অন্যান্য দিন, সখা তো চলেই যায়, সুরের মূর্চ্ছণায় অবশ করে রেখে। আজকে নতুন কি হলো এর? যে ডেকে তুলল? কালকের খেলা হোলির চিহ্ন সারা গায়ে ললিতার। চুল খোলা। চুলে আবীর লেগে এখনো। দুষ্টু টা শুনল না। বাড়ি থেকে বের করে আবির লাগিয়েছিল। পোশাকে আশাকে আবীরের রং লেগে। ললিতা ও চায় নি, কানুর ছুঁয়ে দেওয়া হাত আর শরীর থেকে স্নান করে এই চিহ্ন গুলো কে শেষ করে দিতে। কানু না থাকলে বাঁচার তো কোন মানেই নেই। আর বাঁচবেই না যখন তখন স্নান খাওয়া সে সব নাই বা হলো?

কে বলবে বয়সে ছোট কানু। সবাই তো ওকে ভাবে সবার থেকে বড়। ও ছাড়া গরু দুধ দেয় না। ও ছাড়া মাখন বিক্রী করতে কেউ যায় না। ও ছাড়া কে বাঁশী বাজিয়ে সবাই কে ঘুম থেকে তুলবে? ও ছাড়া কেই বা কালীয় কে নাশ করবে। ও ছাড়া কেই বা আশ্রয় দেবে বিপদে? ললিতার পিতা মাতা কম রেগে যায় না কানুর সাথে এই হেন মেলামেশায়। কিন্তু তারা কি? কানু বাড়িতে এলে তো কি করবে খুঁজে পায় না ওরাও। সে এক হয়েছে ভালো। সামনে প্রজ্জলিত হুতাশন আর তাতে ঝাঁপ দিচ্ছে সবাই। জানে জ্বলবে, পুড়বে, ছাড়খার হবে সব কিছু, তবু না জানি কীসের টান। ললিতা অসহায় ভাবে তাকিয়ে রইল কানাই এর দিকে আর মনে মনে ভাবছিল,

-      বলার তো কিছু নেই তোকে? তুই তো না বলা সব কথাই জেনে নিস। আজকে ঢং হচ্ছে !

হেসে ফেলল কানু। বলল
-      আরে মজা করছি না আমি। আমি হয়ত আর ফিরব না।

ললিতা যেন কোন এক ঘোরে আছে। দীর্ঘশ্বাসের সাথে বলল,

-      জানি তো । তুই আর ফিরবি না।
-      তবুও কিছু বলবে না? কিচ্ছু বলার নেই তোমার?  কিচ্ছু চাইবার ও নেই?

এযে অসাধ্য সাধন করল ললিতা। ভগবান এর ভক্ত বুঝি এমন ই হয়। ভক্ত নেবে না আর ভগবান বলবে ওরে নিচ্ছিস না কেন? নে না যা খুশী আমার থেকে। বুদ্ধিমান ভক্ত চাইবে কেন? সে তো জানে বোকা টা সব দিয়ে যাবে ভালোবাসার টানে। বা জানে ওই গভীর চোখের মালিক, অনেক আগেই টেনে নিয়েছে তার বুকে। এখন শুধু ছলনা করছে মাত্র। ললিতার মনে হয় খেয়াল ও নেই কিছুর আর। কানুর দুটি পা ধরে পরে রইল ওই ভাবেই। চোখের জল বেড়িয়ে কানুর পা দুটি কে ধুইয়ে দিচ্ছে একেবারে। কিন্তু দুজনাই জানে এই জল দুঃখের নয়। এই জল সব দুঃখের উপরে, সব সুখের বাইরে, সব আনন্দের উপরে, এই ভালোবাসার কান্না। ওই ভাবেই বলতে শুরু করল ললিতা,

-      উঁহু, কিচ্ছু চাইবার নেই আমার তোর থেকে। আমি কে বলত? আমার মতন কত ললিতার ভালোবাসা তুই পায়ে মাড়িয়ে চললি তার কি ঠিক আছে? আমার সাধ্য কি আমি চাইব তোর থেকে। শুধু মনে রাখিস, তোকে খুব ভালবাসি। এই বৃন্দাবনে বাকী সবার মতন তুই ছাড়া কিচ্ছু বুঝিনি আমি। কিন্তু আমার সাধ্য কি? যেখানে রাধা কে তুই সরিয়ে দিলি , সেখানে আমি কে বলত? যেখানে যশোদা দিদি কে ছেড়ে তুই চললি জগত ধারণ করতে, সেখানে এই তুচ্ছ ললিতা কে বলত? হয়ত তোর লক্ষী অন্য কোথাও আছে রে। শুধু মনে রাখিস আমি তোকে খুব ভালবাসি। তুই চলে গেলে আমি আর বাঁচব না হয়ত। শুধু আমি কেন এই বৃন্দাবনের কেউ ই বাঁচবে না। জানি পৃথিবীতে কেউ ই মরে না যতক্ষন না সময় হয়। তবুও তোকে লালন পালন করার ক্ষমতা এই বৃন্দাবন দেখিয়েছে , তোর বিরহে মরে যাবার ক্ষমতা ও রাখে। কিন্তু মনে রাখিস তোকে আমি খুব ভালোবাসি।  

গলা ধরে এল ললিতার। কানু হাঁটু দুটো কে জড়িয়ে, মাথা টা রাখল ললিতা কানুর হাঁটুর উপরে। টলটল করছে চোখে জল। খুব ধীরে বলতে শুরু করল। হয়ত ও নিজেকেই বলছিল কথা গুলো, কিন্তু কানুর কানে সেই কথা গুলো যেন দামামার মতন বাজতে লাগল।

-      আর জ্বালাস না আমাকে। এই ভাবে একটু থাকতে দে। তোর কাছে , তোর এই পা দুটো ধরে। তুই জানিস না আমরা ব্রজবাসী রা এতেই সব পেয়েছিস দলে থাকি। আর জ্বালাস না আমাকে। পৃথিবীর এই বিশাল সময় ভান্ডারে, আগামী দিনের কোটি কোটি লহমার মধ্যে আমাদের ব্রজবাসী দের দিন যে শেষের মুখে আমি তা জানি। আর জ্বালাস না আমাকে, থাকতে দে একটু এমন করে।

কানু চুপ করে রইল। বসে পড়ল ললিতার সামনে। ও জানে, ললিতার পক্ষে সম্ভব না জানা, কানু যে ভুলতেই পারে না কিছু। মনে রাখাই যে ওর কাজ। ভাল মন্দের হিসাব ও ভুলে গেলে জগত টালমাটাল করবে যে? কানু যে ঘুমোয় ও না। চোখ হয়ত বুজে থাকে সে, কিন্তু অনবরত সব কিছুই খোদাই হয়ে যাচ্ছে স্মৃতির কোঠায়। কানু ভাবছে ললিতার দিকে তাকিয়ে, কত কত দিন খেলে ধুলে দুষ্টুমি করে কাটিয়েছে সে। থাকুক এরা ওর নিজের মধ্যে। জীবনের সব থেকে ভালো কাটানো দিন গুলো রয়ে যাক নিজের মধ্যে। এই গুলোই যে তার পাথেয়। সামনের বিশাল রাস্তায় চলার আসল অনুপ্রেরণা যে এই স্মৃতি গুলোই। সামনের দিনে তাকে অনেকেই ভক্তি করবে শ্রদ্ধা করবে। অসাধু রা ভয় পাবে। গুনী জনেরা সম্ভ্রম নিয়ে দেখবে। এ যুগের শ্রেষ্ঠ ঋষি ও পা ছুঁয়ে প্রণাম করবে তাকে। সেরা গদাধারী  তার ভয়ে আড়ালে থাকবে। সেরা ধনুর্ধারী ও তার আশীর্বাদের মুখাপেক্ষী থাকবে। সব থেকে বড় কুচক্রী ও নিজের শানিত চাতুর্য্য তার পায়ে অর্পণ করে দেবে। বয়সে বড় রাও তাকে আশীর্ব্বাদ না দিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে হাত জোর করে থাকবে। সে সব পাবে। স্ত্রী পাবে পুত্র পাবে , নাতি পুতি ও পাবে। কিন্তু এমন নিস্বার্থ, নির্ভেজাল, সম্ভ্রমহীন, বাড়ির ছেলের মতন ভাল তাকে আর কেউ বাসবে না। থাক ললিতা বসে। খুঁজে নিক তাকে গোকুলের আনাচে কানাচে। খুঁজে নিক নিজের স্বামীর মধ্যে তাকে। খুঁজে নিক এই গাছের তলায়, খুঁজে নিক গোয়ালে, খুঁজে নিক ননীর মধ্যে, খুঁজে নিক নিজের সন্তান কে বুকে জড়িয়ে ধরে। খুঁজুক খুঁজুক। সর্বত্র খুঁজুক। আর কোন দিন ও আসবে না ব্রজভূমি তে। বুকে টেনে নিল ও ললিতা কে। ললিতার মনে হল, কোন শীতল দেশে গরম ঢাকায় আবৃত হয়ে গেল যেন সে। সারা রাত ঘুম নেই তার। কিন্তু এমন শান্তি কি কোথাও আছে আর? মনে হল কানু কে না কোন বিশাল বক্ষধারী সর্বশক্তিমানের বুকে আশ্রয় নিয়েছে সে। ইচ্ছে হলো কানুর মুখ টা দেখার। আর পারছে না। ক্লান্তি যেন শরীর ছাপিয়ে চোখে আসছে আর শুনতে পাচ্ছে কানুর পুটপুট করে কত কথা।

-      ললিতে, আমার রাধা তো এই ব্রজভূমি। আমি স্পৃহাহীন এক জন। না ধনে স্পৃহা, না আছে মানে স্পৃহা। না আছে বীরত্বে স্পৃহা, না আছে পৌরুষত্বের স্পৃহা। না আছে পূন্যে স্পৃহা না আছে পাপে কোন আকিঞ্চন। শুধু আছে তো ভালোবাসার স্পৃহা। আমাকে যে তুমি ভালোবেসেই বধ করলে ললিতে। রাধা তো কেউ নেই। এই ব্রজভুমির প্রতিটা রন্ধ্রে, প্রতিটা আনাচে কানাচে আমার ভালবাসা তুমি পাবে। এই ভুমিই আমার কাছে রাধা। এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসার অভিলাষ ই আমার রাধা। আমার ভালোবাসা ই আমার রাধা। আর লক্ষী? লক্ষী যে সর্বত্র। মা যশোদার কাছে লক্ষী বাঁধা। তোমার ভালোবাসায়, আর গুনে লক্ষী বাঁধা। ধন মান স্বাস্থ্য এই তিন লক্ষী যে আমার ব্রজভূমি তেই আছে ললিতে। এ জন্মে আর আমরা মিলিত হতে পারব না। কিন্তু কথা দিলাম তিন সহস্র বছর পরে আবার আমার জন্ম হবে। সাধু জনেদের পরিত্রাণ হেতু আবার আমি আসব। তুমি চাইলে, সেই জন্মে আমি ভালবাসতে চাই তোমাকে। জানি, না বলবে না তুমি ললিতে। অপেক্ষা কোর। আর শোন, দয়া করে মরে যেও না। বাঁচিয়ে রেখ এই ভালোবাসা কে। জগত জানুক, আমাকে কাবু ভালবেসেই করা যায়। আমি ভক্তি তে নয়, আমি যে ভালবাসায় কাবু। তবুও যে যেমন ভাবে আমাকে চাইবে, আমাকে পাবে।

ললিতা আর ও আঁকড়ে ধরল তার কানু কে। আহা ছেলেটা স্নান করে এসেছে। চোখের জলে বুক ভিজে যাচ্ছে কানুর। আর অমন রাজবেশ, সুগন্ধী শরীর চোখের জলে নোংরা হয়ে যাচ্ছে। যাক। আর তো একটু খানি সময়। কানুও যেন টেনে নিল ললিতা কে নিজের কাছে আরো। বলতে শুরু করল।

-      এই বিশাল মহাবিশ্বের রক্ষার ভার যেদিন নিয়েছিলাম, নিতান্তই শিশু ছিলাম আমি।শৈশবেই আমাকে লড়তে হয়েছিল দুই দৈত্যের সাথে। মধু আর কৈটভ। সেদিন বুঝিনি তারা কারা। ছোট ছিলাম। আজকে বুঝি তারা আমার থেকেই জাত দুটো মহা শক্তিশালী দোষ। আমি তাদের নিজের মতন করে নাম দিয়েছি চাওয়া আর ঘৃণা। ওদের আমি বধ করেছিলাম। আমি সেদিনে বুঝেছিলাম, আমি কোন সাধারন কেউ নই। আমি মনের মধ্যে বসে থাকা সেই মহানতম গুণ, যা যে কোন জীব কে, ভালো খারাপ নির্বিশেষে  রক্ষা করতে ব্রতী হওয়ায়। সেদিনেই বুঝেছিলাম, রক্ষা করতে গেলে ভালো খারাপ বিচার করলে চলে না। মায়ের কাছে ভালো ছেলে খারাপ ছেলে কি? তাই না বল? কাজেই আমি তোমার মধ্যেও আছি। আর কংসের মধ্যেও ছিলাম। লোকে ভুল বোঝে আমাকে। আমি তো শুধু ভালোবাসা ছড়াতেই আসি। পৃথিবীর মহানতম গুণ ভালবাসা। আমি সেই ভালবাসার ই বাহ্যিক রূপ মাত্র। তুমি শুধু ভালবেসে ডেক আমাকে । যে ভাবে ডাকবে, যে নামে ডাকবে আমি আসব। যদি বুঝি আমাকেই ডাকছ আমি সাড়া দেব। আর এই কথাই রইল, আমাদের মিলন হবে। সত্যি হবে। সত্যি হবে।

  ললিতার বুক যেন জুড়িয়ে গেল। হয়ত কানুর কথা গুলো ওর কানে যায় নি। কিন্তু সত্যি হবে সত্যি হবে কথা খানা যুদ্ধের দামামার মতন গুম গুম করে বুকের ভিতরে বাজতে লাগল। তিনহাজার বছর তো এমনি কেটে যাবে তার কানুর কাছে আবার ফিরে যেতে। বড্ড হালকা এখন ও। যাক ওর দেরী হচ্ছে । চাঁদের থেকেও মিষ্টি মুখু টা একবার দেখে ওকে যেতে দিতে হবে, না হলে এই অবেলায় যাত্রা করলে না জানি কি হয়। যাবে সেই মথুরা। চোখ খুলতেই দেখল কই সে? কিচ্ছু নেই। বিশাল গাছ টা জড়িয়ে ধরে বসে আছে ললিতা। ঠিক কানাই এর মতনই গাছ টা ডালপালা ছড়িয়ে যেন জড়িয়ে আছে ললিতা কে। চমকে দাঁড়িয়ে পাগলের মতন খুঁজতে লাগল ললিতা কানাই কে। উফফ কোথায় গেলো ছেলেটা। একবার শেষ বারের মতন দেখতেও দিল না ! তাকিয়ে দেখল চারদিকে, কানাই থাকার সময়ে যে পরিপাটি ভাব ছিল, কয়েক লহমাতেই ভোল পালটে গেছে। যেন মনে হচ্ছে বেশ কয়েক যুগ এই বাগানের কোন দেখভাল হয় নি। বুক টা কেঁদে উঠল ললিতার। মনে হলো সর্বস্ব হারিয়ে গেল তার জীবন থেকে । মনে হল জীবনে এর থেকে ফাঁকা আর কখনো সে অনুভব করে নি । চিৎকার করে উঠল

-      যাস না কানু। যাস না। তোকে ছাড়া কি ভাবে বাঁচব আমি। কানু উ উ উ উ উ উ উ উ উ!  
 
-      লালি এই লালি, কাঁদছিস কেন। এই লালি।
 
পরেশের বেশ কয়েকবার ধাক্কায় লালি ধড়মড় করে উঠে বসল বিছানায়। কেমন ভ্যাবলার মতন চেয়ে রইল সামনের দিকে। দেখল ওর বাবা আলো জ্বালিয়ে দেখছে ওকে। উফ ঘেমে একেবারে নেয়ে উঠেছে লালি। বালিশে হাত দিয়ে দেখল, বালিশ টা একেবারে ভিজে একসা। জম্মের কান্না কাঁদছিল নাকি ও। পরেশ বেশ ঘাবড়ে গেছে। মেয়েকে কাঁদতে দেয় না ও কোনদিন। মেয়ের সামান্য হাসির জন্য সব কিছু করতে পারে। আর সেই মেয়ে ঘুমের ঘোরে কাঁদছে? দরজা খোলাই থাকে। ভোর হচ্ছে। তাই পরেশের ঘুম টাও হালকা হয়ে গেছিল। আর হালকা হতেই টানা কান্নার আওয়াজ পেতেই ভয় পেয়ে লালির ঘরে এসে দেখে মেয়ে ঘুমের ঘোরে কাঁদছে।

-      কি রে কি হয়েছে? কাঁদছিস কেন?

বাবার দিকে তাকিয়ে দেখল লালি, পরেশের চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পস্ট।  বস্তুত লালি নিজেও বুঝতে পারছে না সে কাঁদছিল কেন? স্বপ্ন দেখছিল ও। কিন্তু কেমন যেন স্বপ্ন টা। অদ্ভুত। বালিশ টা উল্টো করে পেতে আবার মাথা রাখল সে বালিশে। চাইছিল না বাবা থাকুক আর এখানে। মনে কেমন একটা বিষাদ। মন টা তেঁতো হয়ে গেছে একেবারে। পায়ের আওয়াজে বুঝল ওর বাবা ধীর পায়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। কিন্তু ও বুঝতে পারছে না কি মানে এমন স্বপ্নের? অন্যান্য দিন স্বপ্ন দেখে আর ভুলেও যায়। শুধু স্বপ্নের যেখানে ঘুম টা ভাঙ্গে, সেই জায়গার ভালো বা মন্দের একটা রেশ রয়ে যায়। কিন্তু আজকে যেন স্বপ্নের প্রতিটা কথা ওর মনে বাজছে। বিশেষ করে সত্যি হবে সত্যি হবে কথা টা। সব থেকে বড় কথা, কোন সিনেমার মতন স্বপ্ন টা দৃশ্যায়িত হচ্ছিল না। ললিতার জায়গায় ও নিজে ছিল। ওই ক্ষণ টা ও ভুলতেই পারছে না যখন ললিতা জড়িয়ে ধরেছিল কানু কে। কি বিশাল বুক, কি শীতল বুক। কি দুর্দান্ত অনুভূতি।

এমন নিখাদ ভালোবাসার বিচ্ছেদ ও জীবনে ভাবতেও পারে নি। ওর জীবনে ভালবাসা এসেছে, কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারে নি ও কোনদিন ই। এই স্বপ্ন কি তেমন ই কিছুর ইঙ্গিত দিল। নাকি হীরা কে নিয়ে অত্যধিক ভাবনার ফল এটা? কিন্তু তা বলে এতো দীর্ঘ স্বপ্ন? মহাভারত ও পড়েছে। কিন্তু সেখানে রাধা বা রাধার সখী ললিতার কথা লেখা নেই। সাহিত্যের ইতিহাসে ও পড়েছে রাধা আর কৃষ্ণের কথা। কিন্তু সে তো সত্যি নয়। এই এতো বছর বাদে রাধা ললিতা আর কৃষ্ণের কথা তার মনে পরার কারন কি? আর যেটা দেখল সেটা কোন স্বপ্নের মতন ছিল না। ছিল একটা স্মৃতির মতন। পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে কথা গুলো অব্দি যেন তার মাথায় ঘুরছে। হীরা কে মনে পরছে খুব ওর এখন। চোখের জল এখনো বেড়িয়ে আসছে ওর। বুঝতে পারল ও হীরা কে ভালবাসে কিন্তু তার সাথে এই স্বপ্নের কি সম্পর্ক?

বালিশে মুখ টা গুঁজে বলতে গেলে হীরার ই নাম জপতে লাগল লালি। হীরার নানা কথা মনে পরতে লাগল। দুষ্টু টার হাসি, রাগ, হ্যাংলার মতন মাখন খাওয়া, পড়াশোনা, মন খারাপ হলে পুকুরের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা। ইশ কি মিষ্টি ও। পুকুরের ধারে দাঁড়ালে, না জানি কোথা থেকে মাছেরা এসে ভিড় করে ঘাটে। খেলে ওর সামনে। যেই লালি দাঁড়ায় , ওরা সব পালিয়ে যায়। এত্ত বদমাশ সব। ইশ কি দেখতে ইচ্ছে করছে ছেলেটাকে। একবার ভাবল ও চলে যাবে হীরা দের বাড়ি। কিন্তু তখনো আলো ফোটে নি। বাবা যেতে দেবে না। কিন্তু ইচ্ছে করছে যে খুব দেখতে। মনে মনে প্রায় বলেই ফেলল,

-      ইশ একবার যদি আসতিস হীরা , কি যে ভালো হত।

ঠিক সেই সময়ে জানালায় তিনবার খুট খুট করে আওয়াজ হলো। চমকে উঠে পড়ল লালি। কে রে বাবা! কিছুক্ষন অপেক্ষা করল ও। এই রকম পরিস্থিতি তে অনেক সময়ে রাতে নিশি বেরোয়। সেই ভয় ও আছে লালির।আর এখন তো সমস্যা বেশ গভীরে।ওই আবার আওয়াজ হলো। এবারে অনেকবার। লালি আর থাকতে পারল না। জানালা টা খুলেই বুক টা ধড়াস করে উঠল। সামনে ভুতের মতন দাঁড়িয়ে হীরা। লালির মনে হলো হৃদপিণ্ড টা মুখ দিয়ে হাতে বেড়িয়ে আসবে এবারে। এটা কেমন হলো? হ্যাঁ ও হীরা কে চাইছিল মনে মনে। কিন্তু………। আর ভাবল না সেই সব নিয়ে। মনে অদ্ভুত আনন্দের রেশ একটা। বুকের মধ্যে যেন সব থেকে কাঙ্খিত কিছু পাওয়ার একটা আনন্দের দামামা। কি পেয়েছে সেটা বুঝতে না পারলেও খুশী তে একেবারে উচ্ছ্বল হয়ে উঠল লালি। একটু সামনে নিয়ে হীরা কে বলল,

-     এই কি রে তুই এখানে কি করছিস? তাও এতো ভোরে? তাও আবার আমার কাছে? গেলেই তো বলিস উঁহু দূরে দূরে।

লালির হালকা মুচকী হাসি টা মনে হল হীরা দেখল। তারপরে মুখ গোমড়া করে বলল,

-      বা রে, নিজেই তো ডাকছিলে আমাকে। আবার বলছ এখানে কি করছি?

এবারে সত্যিই ভয় করতে লাগল লালির। কি বলছে ও। ও তো নিজেকে ছাড়া কাউকেই এ কথা বলে নি। আজকেও চাইছিল হীরা কে একেবারে নিজের মনে মনে। আর ও চলে এল। দুষ্টু টা নিশ্চয়ই মজা করছে। ও পালটা তেড়ে গেল।

-      হ্যাঁ ভারী তুই দর্শনীয় রে! যেন এই ভোর রাতে আমি ওকে দেখতে চাইব? আমি ঘুমোচ্ছিলাম না নাকি? ভারী এক খানা পুঁচকে ছেলে তাকে আমি আবার ঘুম নষ্ট করে ডাকব!

মুখ টা কাঁচুমাচু হয়ে গেল হীরার। তাও ঠোঁটের কোনায় হালকা হাসি নিয়ে বলল,

-      ও তবে ভুল শুনেছি হয়ত। ঠিক আছে আমি চললাম তুমি ঘুমাও।

এই বলে হীরা উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করে দিল। লালি হাঁ হাঁ করে উঠল। আরে করছে কি ছোঁড়া। উফ এতো স্পষ্ট করে মনের কথা বলে দিলে হয় নাকি। রাগ একেবারে নাকের ডগায়। লালি কে কি ঘ্যাম নিতে নেই?  সব সময়ে ওনাকেই প্রাধান্য দিতে হবে যেন!  প্রায় চিৎকার করে ওকে আটকাল
-      আরে কোথায় যাচ্ছিস? এসেই যখন পরেছিস, তখন দাঁড়া আসছি। ভোর তো হয়েই গেছে।

কোন রকমে সালোয়ার টা পরে নিল লালি, আর বুকে ওড়না টা লাগিয়ে বেড়িয়ে এলো বাড়ির বাইরে। বাইরে থেকেই প্রায় চিৎকার করে বলল পরেশ কে,

-      বাবা ভোর হয়ে গেছে। উঠে পড়। গরু গুলো কে খেতে দিতে হবে। আমি হীরার সাথে হাঁটতে চললা আ আ আ ম।
 
দুজনে মিলে হাঁটা শুরু করল পূব দিক বরাবর। লালির তো খেয়াল থাকে না কিছুই হীরার সাথে থাকার সময়ে। তখনো রাতের ঘোর কাটেনি আকাশে বাতাসে। পূব আকাশে খুব হালকা একটা লালের আভাস। ক্ষুদে সুজ্জির ঘুম ভাঙ্গে নি এখনো। একটা হালকা হিমেল বাতাস যেন গায়ে জড়িয়ে আছে লালির। হাওয়ার বিষ দাঁত এখনো ভাঙ্গে নি। কামড়াচ্ছে লালি কে। ওড়না টা নিজের গায়ে বেশ করে জড়িয়ে নিলো ললিতা। হীরা টা কোন কথা বলছে না। প্রায় খালি গায়ে ওর সাথে চলেছে। পরনে একটা সাদা গেঞ্জি মাত্র। কখনো একটু আগে কখনো পাশে পাশে। মাঝে মাঝেই গায়ে গা ঠেকছে লালির হীরার সাথে। বাতাসে একটা সুন্দর গন্ধ। নাকি পদ্মের মতন সুগন্ধ হীরার কাছ থেকে আসছে? গায়ে গা লাগিয়ে চলল দুজনে বাঘমুড়ো র জঙ্গলের দিকে। বড় মিস্টি সকাল টা। 

লালি বার বার হীরা কে দেখছে আর কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারছে না। এক সময়ে জিজ্ঞাসা করেই ফেলল কথা টা। বিশ্বাস তো হয় না যে, লালির ভালোবাসার জন্যে, ওই আকুতি ভরা ডাক ও হীরা শুনতে পেয়েছে। তাও কিসের জন্য হীরা আজকে ভোর বেলায় এলো সেটা জানতে ইচ্ছে তো করেই। পূব দিকের রাস্তা ধরে দুজনে পাশা পাশি হাঁটছিল। অনেকেই উঠে পরেছে ঘুম থেকে। টুক টাক আওয়াজ ও ভেসে আসছে। হীরা কে সবাই বেশী ভালবাসলেও, কথা লোকে লালির সাথেই বলে বেশী। দুটি তে মিলে চললি কোথায়? বা কি রে এতো সকাল সকাল আজকে মর্নিং ওয়াক করতে বেড়িয়েছিস নাকি। এই রকম নানান কথা। লালি সবার কথার ই উত্তর দিতে দিতে একসময়ে লজ্জার মাথা খেয়েই হীরা কে জিজ্ঞাসা করে ফেলল,

-      কি রে বললি না তো?
-      কি?

আহা যেন কিচ্ছু জানে না। লালি রেগে গেলো বটে, কিন্তু ভাবল, আহা হীরা তো আর জানে না এতো কিছু মার প্যাঁচ। সবে তো আঠেরো। লালির মতন হয়ত ও ভাবে না। ধৈর্য্য হারালো না। বলল,

-      ভোর বেলায় চলে এলি যে বড়।

বলে তাকিয়ে রইল হীরার দিকে। হীরা অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে আছে। হীরা কে দেখছে লালি আর স্বপ্নের কথাটা ভাবছে। লালির চোখে মুখে একটা অদ্ভুত প্রশান্তি। হীরা পাওয়া না পাওয়ার নয়। এই মুহুর্ত টা কে উপভোগ করার প্রশান্তি। যথারীতি ছোট্ট কথায় উত্তর সারল হীরা,

-      বা রে! ডাকলে যে!
-      কোথায় ডাকলাম আমি তোকে?

হীরা এবারে চুপ করে গেল। কিছু টা এগিয়ে গেল সামনে। গ্রাম শেষ। সামনে জলার মাঠ। সামনেই পেট কাটা অশ্বত্থ গাছ টা। তলায় দাঁড়িয়ে রইল হীরা। পিছন পিছন লালি গিয়ে দাঁড়ালো। আলো ফুটছে এবারে অল্প অল্প করে। অশ্বত্থ গাছে বাস করা পাখী গুলো কিচিরমিচির করে চারিদিক ভরিয়ে দিয়েছে একেবারে। হিরা লালির দিকে তাকিয়ে বলল,

-      কি জানি মনে হলো, খুব কষ্ট পেয়ে তুমি ডাকছিলে আমাকে।

অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল লালি হীরার দিকে। কথাটা তো সত্যি। ওই স্বপ্ন দেখার পরে ঘুম ভাংতেই সবার আগে যে হীরার কথাই মনে পরেছিল লালির। আর মনে হচ্ছিল ওই কষ্ট টা, ও হীরার অনুপস্থিতি তেই পেয়েছে। নিজের বুকের দুরুদুরু ভাব খানা ঢাকতে, এক হাত দিয়ে বুক টা চেপে ধরল লালি। দেখল হীরা দাঁড়িয়ে আছে অশ্বত্থ গাছের নীচে বেদীর উপরে উঠে, গাছের গুঁড়ি তে  হেলান দিয়ে, দুটো পা কে কাঁচির মতন করে। তাকিয়ে আছে দুরের দিকে। লালি বসল বেদির উপরে ঠিক হীরার পায়ের একটু দূরে, হীরার দিকে তাকিয়ে। ভাবল দেখে নি ছোঁড়া কে। অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। হীরার দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যাবার আগে, হালকা শুনতে পাচ্ছিল জলা থেকে ভেসে আসা কাঁসর ঘন্টা ধ্বনির আওয়াজ।

সকাল হয়ে গেছে প্রায়। পূব আকাশ লাল করে সুজ্জি মামা আড়মোড়া ভাঙছেন। গ্রামের মাঝ খান থেকে ভেসে আসছে সংকীর্তনের আওয়াজ – হরে কৃষ্ণ নাম দিল প্রিয় বলরাম, রাখাল রাজা নাম দিল ভক্ত শ্রীদাম।

চলবে..................

 শুভ রথযাত্রার কোটি কোটি শুভেচ্ছা রইল সকল কে। ভালো থাকুন সকলে। আনন্দে থাকুন। সুস্থ থাকুন। শান্তি বিরাজ করুক সকলের ঘরে এবং বাইরে। মন আনন্দে ভরে উঠুক সবার।
Like Reply
শুধু একটাই শব্দ ,,,, অপূর্ব !!!

যেরকম কাহিনীর বিন্যাস ডালপালা মেলে এগোচ্ছে সেরকমই প্রত্যেকটা লাইনএ মন মুগ্ধ করে দেওয়া মূর্ছনা !!


clps
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
উফফফফফ!! মোচড় কুইন কি মোচড় না দিয়ে থাকতে পারে? সেই দিয়েই ছাড়লো গো! প্রথমে স্বপ্নের ওই অপার্থিব ভয়ানক সুন্দর দৃশ্য, সবচেয়ে আপনজনকে হারিয়ে ফেলার বিরহ বেদনা, আর স্বপ্ন শেষে লালির এক দুস্টুর মুখ বারবার দেখতে চাওয়ার ইচ্ছা আর পরক্ষনেই ইচ্ছাপূরণ। তারপরে সামান্য মিথ্যের আশ্রয়। ওটা যে বড্ড মিষ্টি মুহূর্ত। ইচ্ছে করে মনের ভাব লুকিয়ে নিজের অন্য রূপ কাছের মানুষটার সামনে ফুটিয়ে তোলা। কিন্তু..... সেই মানুষটা যে সবই জানে। সে যে এক এমন রাজা যে রাজত্ব করে সকলের হৃদয়ে। সে কি আর জানবেনা লালির মনের কথা? সেও তো থাকতে না পেরে চলে এসেছে সেই আপনজনের কাছে। সেও যে তাকে মন দিয়ে ভালোবাসে। সে যে সকল ভক্তর ভালোবাসার জন্য পাগল দুস্টু কানাই।♥️♥️

অসাধারণ পর্ব। আজকের দিনে একটা পর্ব এক্সপেক্ট করছিলাম সত্যিই।
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
রথযাত্রার দিনের জন্য একদম appropriate আপডেট হয়েছে এটা। অন্যরকম অথচ অপূর্ব লাগলো।

বনমালী গো পরজনমে হইও রাধা - তা না হলে রাধার কষ্ট কৃষ্ণের পক্ষেও বোঝা সম্ভব নয়। আর গল্পের ক্ষেত্রে লালি বলেই বোধহয় ললিতা

[Image: Images-2-2-1.jpg]

[+] 1 user Likes Somnaath's post
Like Reply
কি অপূর্ব আপডেট দিদি। অসাধারণ আপডেট। সত্যি আজকের দিনে এমন একটা আপডেট বেশ বেশ কাঙ্খিত ছিল। দুর্দান্ত। কিন্তু ললিতা কে নিলেন, রাধা কে ছেড়ে দিলেন কেন? মানে যতদূর জানি, ললিতা রাধার সখী ছিল। ললিতা আর বিশাখা। যেখানে রাধা , কানাই এর প্রেম অভিলাষা হলো, সেখানে ললিতা জীবন্ত হলো কি ভাবে? জানি এটা একটা গল্প, কিন্তু তাও জিজ্ঞাসা করলাম। নিশ্চই আপনার মনে কিছু চলেছে এই নিয়ে। 

এ ছাড়া আপনার বর্ণনা এক কথায় অসাধারণ। যে কোন প্রোফেশনাল রাইটার কেও হার মানিয়ে দেবে দিদি। লাইক আর রেপু দুটোই রইল। 
[+] 1 user Likes boro bara's post
Like Reply
দুটি প্রাণের মিষ্টি ভালবাসার মূহুর্ত, সত্যিই বড় মধুর। সে যদি ললিতা হয়, তাহলে রাধা কোথায় লুকিয়ে!!! 

লাইক ও রেপু রইল দিদি। আর রইল রথযাত্রার শুভেচ্ছা।
[+] 1 user Likes sudipto-ray's post
Like Reply
প্রেমেতে টলমল
ভাবেতে বিহ্বল
সখি বলরে তোরা
কোথায় গেলে পাব কানা
কানারে বাসিয়া ভালো
মরেছি জনমে জনমে।

বৃন্দাবনের প্রেম আর বৃন্দাবনের বিরহ দুটোই তো দেখিয়ে দিলে। রাধা কৃষ্ণের অপ্রাকৃত প্রেমলীলায় আরেকটু হলে ভেসেই যাচ্ছিলাম কিন্তু তুমি বড়ই দুষ্টু দিদি ঐ কানার মতই ভাসাবে বলে ডাকলে কিন্তু ভাসতে দিলে না। লালিরে তুমি ললিতা বানালে রাধার প্রিয় সখী আর কৃষ্ণে প্রিয় গোপী। কি খেলা তুমি খেলতে চলেছো সেটা আন্দাজ করার সাধ্য নেই শুধুই উপভোগ করেই যাচ্ছি।
বৃন্দাবনের লীলা যেহেতু সাক্ষাৎ করাচ্ছো তবে তো লালির বিরহ প্রেম অবধারিত। তবে তুমি যে স্কেলে সবটা বর্ণনা করলে সেটা লাজবাব। এটার প্রিন্ট না বেড় হলে খুবই কষ্ট পাবো।
আর কি বলবো শেষে তো তুমি হীরাকে ঐ অশ্বত্থ বৃক্ষের নিচেই দাড় করালে তাও আবার ত্রিভঙ্গ মুরারি রূপে আর লালি কে না বাবা আর কিছু বলবো না রথের নাম কীর্তনে চলে যাবো।
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
[+] 1 user Likes nextpage's post
Like Reply
এখানে বিতর্ক আসবে অনেক, তাই বলে রাখি, ভগবান মানে আমরা ভাবি সর্বগুণসম্পন্ন একজন কেউ। কিন্তু বেসিক পার্থক্য হলো, গুণ মানুষের কাজে না এলে, তখন ভগবান না হয়ে তাকে অসুর গোত্রে আমরা ফেলে দি। বস্তুত দেখতে গেলে সাধারণ মানুষ ই ভগবান আর অসুরের মধ্যেকার একটা লাইন। সম গুণসম্পন্ন রাবণ আর হনুমান। একজনের শক্তি অসীম অন্যজন বরপ্রাপ্ত ছিলেন কারোর বধ্য হবেন না। একজনের প্রাণ কাঁদত অন্যের দুঃখে, আর অন্যজন অন্যের দুঃখ কেই নিজের শক্তি বানিয়েছিলেন। একজনের শক্তি বাঁধা ছিল করুণার বাঁধ দিয়ে আর একজনের শক্তি স্বর্গ মর্ত্য পাতাল এক সাথে গেঁথে ফেলেছিল। দুজনাই এক প্রকার অমর। তথাপি একজন অসুর অন্য জন আমাদের কাছে ভগবান। কারণ, একজন মানুষের কল্যানে ব্রতী ছিলেন অন্যজন নিজের সমৃদ্ধি দেখেছেন শুধু। অদ্ভুত লাগে। সম ভাবে পারদর্শী হয়েও একজন আমাদের কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর, নিজের কপিধ্বজে চড়ে অঞ্জলীক কে ধনুকে জুড়ে আকর্ণ ছিলা টেনে অপেক্ষা করছেন শত্রুর, আর অন্য জন কে চোখের জল নিয়ে, নিজের পূর্ব কর্ম মনে করতে করতে ভয়ঙ্কর অঞ্জলীক অস্ত্রের প্রহর গুনতে হচ্ছে। বেশী পারদর্শী হয়েও একজন ভাঙ্গা উরু নিয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনলেন আর অন্য জন , পাঁচ ভাই আর স্ত্রী কে নিয়ে মহাপ্রস্থানে রওনা দিলেন।

ক্ষমতা থাকা গুরুত্ব পূর্ণ নয়। বা ক্ষমতা করায়ত্ব করাও গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো, সেই ক্ষমতার ব্যবহার। সেই ক্ষমতা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত। একটা সিদ্ধান্ত সাধারণ নর কে নারায়ণ মানায় আর সেই নর কে অসুর বানায় সেই সিদ্ধান্তই।                                                 



উফফফ ! এতো সুন্দর করে আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পেরেছে বলে আমি জানিনা ! সত্যি বলছি আজ থেকে আমি আপনার প্রেমিক (মানে লেখনির প্রেমিক) হয়ে গেলাম ! 
[+] 1 user Likes আমিও_মানুষ's post
Like Reply
Didi apnar galpo porte chokhe jol chole aschilo. E je anandashru. Eto bhalo lekhen apni je bhashai bornona kora jabena.
[+] 1 user Likes jhumaani123's post
Like Reply
(01-07-2022, 12:50 PM)ddey333 Wrote: শুধু একটাই শব্দ ,,,, অপূর্ব !!!

যেরকম কাহিনীর বিন্যাস ডালপালা মেলে এগোচ্ছে সেরকমই প্রত্যেকটা লাইনএ মন মুগ্ধ করে দেওয়া মূর্ছনা !!


clps

আহা যেন ছোট গল্প দেব আমি!!  Heart Heart । তোমাদের জন্য চেষ্টা করি বড় গল্প আনতে। পরের গল্প টা কিন্তু রগরগে আসবে।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(01-07-2022, 01:06 PM)Baban Wrote:
উফফফফফ!! মোচড় কুইন কি মোচড় না দিয়ে থাকতে পারে? সেই দিয়েই ছাড়লো গো! প্রথমে স্বপ্নের ওই অপার্থিব ভয়ানক সুন্দর দৃশ্য, সবচেয়ে আপনজনকে হারিয়ে ফেলার বিরহ বেদনা, আর স্বপ্ন শেষে লালির এক দুস্টুর মুখ বারবার দেখতে চাওয়ার ইচ্ছা আর পরক্ষনেই ইচ্ছাপূরণ। তারপরে সামান্য মিথ্যের আশ্রয়। ওটা যে বড্ড মিষ্টি মুহূর্ত। ইচ্ছে করে মনের ভাব লুকিয়ে নিজের অন্য রূপ কাছের মানুষটার সামনে ফুটিয়ে তোলা। কিন্তু..... সেই মানুষটা যে সবই জানে। সে যে এক এমন রাজা যে রাজত্ব করে সকলের হৃদয়ে। সে কি আর জানবেনা লালির মনের কথা? সেও তো থাকতে না পেরে চলে এসেছে সেই আপনজনের কাছে। সেও যে তাকে মন দিয়ে ভালোবাসে। সে যে সকল ভক্তর ভালোবাসার জন্য পাগল দুস্টু কানাই।♥️♥️

অসাধারণ পর্ব। আজকের দিনে একটা পর্ব এক্সপেক্ট করছিলাম সত্যিই।

হাহাহাহা। মোচড় ক্যুইন? কি সব নাম হয়ে যাচ্ছে আমার!!! প্রেম ব্যাপার টা আমার বেশ লাগে। আর সত্যি কি বলত? প্রেমের গল্প লিখলে, সেক্স ব্যাপার টা রিলেট করতে পারি না। পারি না বলা ভুল। খুব কষ্ট করেই করতে হয়।
Like Reply
(01-07-2022, 05:31 PM)boro bara Wrote: কি অপূর্ব আপডেট দিদি। অসাধারণ আপডেট। সত্যি আজকের দিনে এমন একটা আপডেট বেশ বেশ কাঙ্খিত ছিল। দুর্দান্ত। কিন্তু ললিতা কে নিলেন, রাধা কে ছেড়ে দিলেন কেন? মানে যতদূর জানি, ললিতা রাধার সখী ছিল। ললিতা আর বিশাখা। যেখানে রাধা , কানাই এর প্রেম অভিলাষা হলো, সেখানে ললিতা জীবন্ত হলো কি ভাবে? জানি এটা একটা গল্প, কিন্তু তাও জিজ্ঞাসা করলাম। নিশ্চই আপনার মনে কিছু চলেছে এই নিয়ে। 

এ ছাড়া আপনার বর্ণনা এক কথায় অসাধারণ। যে কোন প্রোফেশনাল রাইটার কেও হার মানিয়ে দেবে দিদি। লাইক আর রেপু দুটোই রইল। 

হুম কঠিন প্রশ্ন। বস্তুত, আমি যত রিসার্চ করেছি, তাতে আমার একটাই মনে হয়েছে, রাধা বলে কেউ ছিল না। নাহ হুড়ুম করে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি এমন না। বা এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছি এমন ও না। কিন্তু ভেবে দেখ, বিশাল মহাভারতে কোন রাধার উল্লেখ নেই। রাধা কে আমরা চিনলাম বা জানলাম, যখন শ্রী কৃষ্ণ কীর্তণ পড়লাম। তারপরে মহাপ্রভু এসে সব ওলট পালট করে দিলেন। রাধা প্রেমী রা বললেন, শ্রী কৃষ্ণ রাধার ভাব কান্তি নিয়ে মর্ত্যে এসেছেন শ্রী চৈতন্য হয়ে। কেন? উত্তর দিলেন ওনারাই, যে শ্রী কৃষ্ণ দেখতে চাইছিলেন, কৃষ্ণ প্রেমে কি মাধুরী লুকিয়ে আছে, সেটা জানতেই উনি, রাধার ভাব কান্তি নিয়ে ফের মর্ত্যে এসেছেন। কারন রাধা ফর্সা ছিলেন আর গৌরাঙ্গ নাম তো ফর্সা হবার জন্যেই হয়েছে। এখানেও রাধা প্রেমী রা বাজী মেরে দিলেন। মানুষ ও আর ভাবল না বেশী। সে বেশ করেছে ভাবে নি। আমরা কাঁদলাম রাধার দুঃখে। হয়ত বুঝলাম প্রেম কি। তবে, রাধা ছাড়াও কৃষ্ণ কিন্তু প্রেম করেই রুক্মিণী কে বিয়ে করেছিলেন। কাজেই ওই ছোঁড়া প্রেম ছাড়া থাকে নি। 

কিন্তু ওই যে ইতিহাস বাইনারী নয়। অনেক ইনফর্মেশন, আর তার থেকেই খুঁজে নিতে হবে উত্তর!  শ্রী চৈতন্যের সমসাময়িক আরেক জন কৃষ্ণ প্রেমিকা ছিলেন। তিনি হলেন মীরা বাঈ। দুজনাই স্পষ্টত, রাধা কৃষ্ণ নয়, কৃষ্ণ প্রেমে মজেছিলেন। যদি ধরেও নি এনারা কেউ দৈব ভাবে প্রভোকড নন, তাহলেও এটা মানতে তো সমস্যা নেই, দুজনাই মহা পন্ডিত ছিলেন। আর তাঁরা, রাধা কৃষ্ণ কে নয় শুধু কৃষ্ণ কে প্রেম করলেন? 

কাজেই ধীরে ধীরে রাধা কে ছিল আমার কাছে একটু পরিষ্কার হতে লাগল। রাধা কৃষ্ণের প্রেম অভিলাষা ই ছিলেন। হয়ত ব্রজভূমি কে রাধা বলা হয়েছে। হয়ত বা উনি জানতেন যে ভবিষ্যতে, কেউ তাকে প্রেম করবে না আর। সবাই সম্মান দেবে, ভয় পাবে, পুজো করবে, কিন্তু স্বার্থ হীন ভাল কেউ আর বাসবে না। সেই মারাত্মক প্রেমের ইচ্ছে টাই রাধা নাম নিয়ে বারংবার এসেছে আমাদের সামনে। 

আর ললিতা কে নিয়ে এলাম কারন , কে বলতে পারে , সত্যি কোন ললিতা ছিল না? যে গোয়ালার ছেলে কানু কে ভালবেসেছিল। আহা অমন ছেলেকে কে না ভালবাসবে। কে না হতে চাইবে তার প্রেয়সী? কোন ললিতা ছিল হয়ত, যে কানু কে চোখে হারাতো। তাই নিয়ে এলাম ললিতা কে। একে তো নাম টা চেনা, তার উপরে লালির সাথে মিল ও খেয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া আর কিছু না।   
[+] 3 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
(01-07-2022, 07:43 PM)sudipto-ray Wrote: দুটি প্রাণের মিষ্টি ভালবাসার মূহুর্ত, সত্যিই বড় মধুর। সে যদি ললিতা হয়, তাহলে রাধা কোথায় লুকিয়ে!!! 

লাইক ও রেপু রইল দিদি। আর রইল রথযাত্রার শুভেচ্ছা।

রাধা তো আমাদের সবার মধ্যেই লুকিয়ে গো। ভালবাসা পেতে কার না ইচ্ছে করে? ভেবে দেখ ভালোবাসার থেকেও ভালোবাসা পাবার ইচ্ছে টা আরো প্রবল থাকে মানুষের মধ্যে। রাধা হয়ত সেই প্রেম স্পৃহা।
Like Reply
(01-07-2022, 08:31 PM)nextpage Wrote:
প্রেমেতে টলমল
ভাবেতে বিহ্বল
সখি বলরে তোরা
কোথায় গেলে পাব কানা
কানারে বাসিয়া ভালো
মরেছি জনমে জনমে।

বৃন্দাবনের প্রেম আর বৃন্দাবনের বিরহ দুটোই তো দেখিয়ে দিলে। রাধা কৃষ্ণের অপ্রাকৃত প্রেমলীলায় আরেকটু হলে ভেসেই যাচ্ছিলাম কিন্তু তুমি বড়ই দুষ্টু দিদি ঐ কানার মতই ভাসাবে বলে ডাকলে কিন্তু ভাসতে দিলে না। লালিরে তুমি ললিতা বানালে রাধার প্রিয় সখী আর কৃষ্ণে প্রিয় গোপী। কি খেলা তুমি খেলতে চলেছো সেটা আন্দাজ করার সাধ্য নেই শুধুই উপভোগ করেই যাচ্ছি।
বৃন্দাবনের লীলা যেহেতু সাক্ষাৎ করাচ্ছো তবে তো লালির বিরহ প্রেম অবধারিত। তবে তুমি যে স্কেলে সবটা বর্ণনা করলে সেটা লাজবাব। এটার প্রিন্ট না বেড় হলে খুবই কষ্ট পাবো।
আর কি বলবো শেষে তো তুমি হীরাকে ঐ অশ্বত্থ বৃক্ষের নিচেই দাড় করালে তাও আবার ত্রিভঙ্গ মুরারি রূপে আর লালি কে না বাবা আর কিছু বলবো না রথের নাম কীর্তনে চলে যাবো।

না না বিরহ আর ভালো লাগছে না। জানিনা মন ১ কি ভাবে লিখে ফেলেছিলাম। হয়ত বা ওটা আমার অভিলাষা ছিল। এমন হলে কেমন হতো? সেই ভাবেই লিখে ফেলেছিলাম। বড্ড কেঁদেছিলাম আমি। আসলে এমন টা তো হয় নি। হয়েছিল তো ভালই। কেন যে লিখলাম কে জানে? আর লিখব না ওমনি করে। রাধা হলেও আমি মিল করিয়েই ছাড়ব। আর নিতে পারছি না বিরহ। 

আহা কি রূপ বলত তার!! ওমন ত্রিভঙ্গ মূড়ারি!! উফ, ভাবলেই কেমন চোখে জল চলে আসে। বিশ্বাস কর কেউ যদি ওমনি করে সেজেও সামনে আসে, চোখের জলে পা ধুয়ে দেব আমি তার। আহা, ভাবলেই মনে সর্বস্ব দিয়ে বুকে পা দুখানি জড়িয়ে ধরি।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(01-07-2022, 09:00 PM)আমিও_মানুষ Wrote: এখানে বিতর্ক আসবে অনেক, তাই বলে রাখি, ভগবান মানে আমরা ভাবি সর্বগুণসম্পন্ন একজন কেউ। কিন্তু বেসিক পার্থক্য হলো, গুণ মানুষের কাজে না এলে, তখন ভগবান না হয়ে তাকে অসুর গোত্রে আমরা ফেলে দি। বস্তুত দেখতে গেলে সাধারণ মানুষ ই ভগবান আর অসুরের মধ্যেকার একটা লাইন। সম গুণসম্পন্ন রাবণ আর হনুমান। একজনের শক্তি অসীম অন্যজন বরপ্রাপ্ত ছিলেন কারোর বধ্য হবেন না। একজনের প্রাণ কাঁদত অন্যের দুঃখে, আর অন্যজন অন্যের দুঃখ কেই নিজের শক্তি বানিয়েছিলেন। একজনের শক্তি বাঁধা ছিল করুণার বাঁধ দিয়ে আর একজনের শক্তি স্বর্গ মর্ত্য পাতাল এক সাথে গেঁথে ফেলেছিল। দুজনাই এক প্রকার অমর। তথাপি একজন অসুর অন্য জন আমাদের কাছে ভগবান। কারণ, একজন মানুষের কল্যানে ব্রতী ছিলেন অন্যজন নিজের সমৃদ্ধি দেখেছেন শুধু। অদ্ভুত লাগে। সম ভাবে পারদর্শী হয়েও একজন আমাদের কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর, নিজের কপিধ্বজে চড়ে অঞ্জলীক কে ধনুকে জুড়ে আকর্ণ ছিলা টেনে অপেক্ষা করছেন শত্রুর, আর অন্য জন কে চোখের জল নিয়ে, নিজের পূর্ব কর্ম মনে করতে করতে ভয়ঙ্কর অঞ্জলীক অস্ত্রের প্রহর গুনতে হচ্ছে। বেশী পারদর্শী হয়েও একজন ভাঙ্গা উরু নিয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনলেন আর অন্য জন , পাঁচ ভাই আর স্ত্রী কে নিয়ে মহাপ্রস্থানে রওনা দিলেন।

ক্ষমতা থাকা গুরুত্ব পূর্ণ নয়। বা ক্ষমতা করায়ত্ব করাও গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো, সেই ক্ষমতার ব্যবহার। সেই ক্ষমতা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত। একটা সিদ্ধান্ত সাধারণ নর কে নারায়ণ মানায় আর সেই নর কে অসুর বানায় সেই সিদ্ধান্তই।                                                 



উফফফ ! এতো সুন্দর করে আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পেরেছে বলে আমি জানিনা ! সত্যি বলছি আজ থেকে আমি আপনার প্রেমিক (মানে লেখনির প্রেমিক) হয়ে গেলাম ! 

হাহাহাহা। বেশ বেশ। তাই হোক। লেখিকা হয়ে এর থেকে ভাল প্রসাদ আর কি পেতে পারি আমি? অনেক অনেক ধন্যবাদ।  Heart
Like Reply
(02-07-2022, 11:37 AM)jhumaani123 Wrote: Didi apnar galpo porte chokhe jol chole aschilo. E je anandashru. Eto bhalo lekhen apni je bhashai bornona kora jabena.

অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। অনেক ভালোবাসা রইল।  Heart
Like Reply
(02-07-2022, 09:56 PM)nandanadasnandana Wrote: আহা যেন ছোট গল্প দেব আমি!!  Heart Heart । তোমাদের জন্য চেষ্টা করি বড় গল্প আনতে। পরের গল্প টা কিন্তু রগরগে আসবে।

banana banana
Like Reply
(02-07-2022, 09:56 PM)nandanadasnandana Wrote: আহা যেন ছোট গল্প দেব আমি!!  Heart Heart । তোমাদের জন্য চেষ্টা করি বড় গল্প আনতে। পরের গল্প টা কিন্তু রগরগে আসবে।

হোক রগরগে , কিন্তু আমার একটা বিষয়ের ওপরে খুব বিতৃষ্ণা ... , তোমার তৃপ্তির ... , মা হলেও ... ইত্যাদি পড়া শুরু করেও কিছুদিন পরে ছেড়ে দিয়েছিলাম ওই কারণে ,একটাই গল্প যতটা পুরো লেখা হয়েছিল গোগ্রাসে পড়েছিলাম আর এখানে আসার পরেই ( মন , কোন সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে ) চিনতে পেরেছিলাম যে যে ইনি সেই ছাড়া আর কেউ হতে পারেন না ... এক ফালি রোদ আর একমুঠো আশা ....

Namaskar Namaskar Heart Heart Love you Nandudidi ...
Like Reply




Users browsing this thread: 16 Guest(s)