Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
মেয়েটাকে এক রাতের জন্য ভাড়া করে নিয়ে এসেছিলাম।বাড়িতে সপ্তাহ খানেক কেউ থাকবে না।
বাব-মা জরুরী কাজে বাড়ির বাহিরে গিয়েছিলেন। ছোটবোনটা মহিলা কলেজের হোষ্টেলেই থাকে। বাড়ি একদম ফাঁকা।
কেন এনেছিলাম জানেন?
আমি একটা প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে ক্রমশ ড্রাগ এ্যাডাক্টেড হয়ে পড়েছি। মেয়েটাকে ভালবাসতাম, কিন্তু সে আমাকে ছেড়ে বিয়ে করে বরের সাথে লন্ডন চলে গেছে। কারো ধার ধারতাম না। লেখাপড়া বন্ধ করে সারাদিন নেশায় পরেছিলাম। তখন প্রায় পড়ালেখা শেষ,,,,,,
বাবা মা কেঁদেকেঁদে বারবার এই পথ থেকে ফিরে আসার জন্য বলত। ছোটবোনটা প্রায়ই ফোন দিয়ে কাঁদে, বলে ভাইয়া ফিরে আয় তুই। কিন্তু আমার ফেরার কোন রাস্তাই ছিলনা, কষ্টে বাঁচার কোন ইচ্ছেই ছিলনা মনের মাঝে।
সে রাতে হিরোইন কিনে বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ অন্ধকার রাস্তার কোন এক পাশ থেকে অচেনা একটা মেয়ে এসে বলছিলো, ভাইয়া পছন্দ হয় আমায়?
অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম তারপর বলেছিলাম, দুরে থাক আমার থেকে, আমি ওরকম না।
মেয়েটা আরো কাছে এসে বলে, প্লিজ ভাইয়া, দেখুন না তাকিয়ে আমার দিকে, কোন কমতি নেই আমার মাঝে।
চেচিয়ে বলেছিলাম, তোকে বলছি না এখনি চলে যেতে
মেয়েটা বোধহয় একটু ভয় পেয়েছিল।
ভয়ে ভয়ে বলেছিলো, টাকার খুব দরকার ছিলো, যা দিবেন তাই দিয়েই,,,,
ভাবতে লাগলাম আমি। কাছে যা টাকাছিলো তাদিয়ে আরো ছ দিন চলতে হবে। কোনভাবেই নষ্ট করা যাবেনা, কারণ নেশাখোরদের কেউ টাকা ধার দেয় না। বাড়িতে বাবা মা-ও নেই।
ভাবছিলাম, মনে মনে কয়েক সেকেন্ড একটা হিসেব করছিলাম।
হঠাৎ আমার ভাবনায় ছেদ করে মেয়েটা আবার বলেছিলো, আপনি যেখানে বলবেন সেখানেই যাব।
বললাম, আমার বাড়িতে যাবি?
মেয়েটা মাথা নাড়ে।
বেশি কিন্তু দিবোনা, তুই রাজি তো?
মেয়েটা আমার পিছনে আমায় অনুসরণ করে চলতে থাকে,,,,,,,,,
কি ভাবে কি করব কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না সেদিন।
ভাবলাম নেশাটা আগে সেরে নেই। বাড়িতে গিয়ে দরজা খুলে মোমবাতি জ্বালিয়ে নিয়ে সবেমাত্র একটা টান দিয়েছিলাম।
মেয়েটা বলেছিলো, দাদা আমার সামনে এগুলো খাবেন না। আমার মাথা ঘোরে, বমি আসে।
কথাটা শুনে একটু অবাক হয়েছিলাম সে রাতে।
ভাবছিলাম মেয়েটার জীবনে কি আমিই প্রথম নেশাখোর? নাকি ওর বিছানায় শোয়া প্রত্যেকেই ভালো ছিলো?
সন্দেহের বশে বলেছিলাম, কেন হিরোইনের ধোয়ায় তোর বুঝি কষ্ট হয়?
ও উত্তরে বলেছিলো, হুম, খুব খারাপ লাগে, বিড়ি, সিগারেটের ধোয়াও সহ্য হয়না আমার।
ফেলে দিয়েছিলাম হিরোইন সে রাতে।
মেয়েটাকে প্রশ্ন করেছিলাম, তুই কি এই লাইনে নতুন?
মাথা নেড়েছিলো,,,,,, ও.
বললাম তবে কেন এসেছিস এই নোংরা জগতে? এই জগতটা তো ভালো নয়।
ও মাথা তুলে আমার মুখপানে কিছুক্ষন চেয়েছিলো। ওর চোখমুখে ছিলো বিস্ময়ের আবছায়া ।হয়ত ও অবাক হয়েছিলো এই ভেবে যে,এমন প্রশ্ন তো কেউ কোনদিন করেনা,এত গল্পের সময় তো কারো কাছে থাকেনা।
ও বিছানা থেকে উঠে চলে যেতে চাইলে আমি বলেছিলাম, পুরো দুহাজার দিবো রাতটা থাকবি আমার সাথে? থমকে দাঁড়ায় মেয়েটা।
ফিরে এসে বিছানায় শুয়ে বলে আগে টাকাটা দিন। টাকা বাহির করে দিলাম। তিনদিনের নেশার টাকা দিয়ে দিয়েছিলাম ওর হাতে।
ও হেসে বলেছিলো, দাদা একটু ফোন করতে পারি?
বললাম আমার ফোন নেই।
ও একটু অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিলো, ফোন নেই? আরে নিয়ে নেব না। আমি ওরকম মেয়ে নই।
আমি বললাম, জানি তুই ওরকম না।কিন্তু সত্যিই আমার ফোন নেইরে,, ওটাকে বেঁচে সাতদিন আগে হিরোইন খেয়েছি।
কিন্তু কেন বলত? ফোন কি করবি? অন্য কাউকে বাতিল করবি নাকি?
মেয়েটা কিছুই বলেনি, কোন উত্তর করেনি। চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো,,,,,
রাত আনুমানিক বারোটা, মেয়েটা ঘুমিয়ে গেছে। আমি কি করব বুঝতে পারছিলামনা। নেশাটাও এতক্ষনে চড়ে বসেছে।
সিগারেটের চিকচিকে কাগজটায় হিরোইন নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে নিলাম। হঠাৎ মেয়েটা কেশে উঠলো,বুঝতে পারলাম ধোয়ায় ওর কাশি উঠেছে।
হঠাৎ মেয়েটা বলে উঠে, বলেছিনা আমার সামনে খাবেন না। যান বাহিরে থেকে খেয়ে আসুন।
আগুন নিভিয়ে বাহিরে যেতে চাইলাম।
ও আবার বলে, কেন খান এগুলো?
বললাম, কষ্টে।
ও বলে, কিসের জন্য আপনার এত কষ্ট যে জীবনটাকে এভাবে অন্ধকারে নিয়ে যাচ্ছেন?
ওর প্রশ্ন শুনে আমি অবাক হয়েছিলাম সেদিন। মাথা থেকে পা পর্যন্ত ওর ভালো করে দেখছিলাম সেদিন। বয়স খুব একটা না, বছর সতেরো হবে হয়ত।
বলেছিলাম, তোর জীবন টা কোথায়? কোন আলোয় আছিস তুই?
মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। একটু পর চোখের কোনবেয়ে জল গড়িয়ে আসে। আমি আরো অবাক হয়ে যাই।
কিছুক্ষন পর চোখের জল মুছে ও বলেছিলো, কিছু করবেন না?
আমি বলেছিলাম, কিছুই করার ফিলিংস নাই রে। তুই ঘুমা,,,,,,,,,
ও আবার প্রশ্ন করে, কেন?
এমনিতেই। তুই বলেছিলি না কেন আমি নেশাকরি? শুনবি?
মেয়েটা মাথা ঝোকায়। আমি বলি তাহলে শুন আমার পেছনের ফেলে আসা ইতিহাস। যেখানে শুধুই হাহাকার আর কষ্ট। মেয়েটা গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পরে।
পরদিন সকালে ও যখন চলে যাচ্ছিল বলেছিলাম, তোর ঠিকানাটা দিবি?
ও বলেছিলো না।
বললাম আজ আবার এই ঠিকানায় চলে আসিস। মেয়েটা হেসে বলে আচ্ছা, আজ কত নিবে সে টাকার কথা না বলেই চলে গেল ও।
,পরদিন ওর গল্প শুনতে লাগলাম,
ও বলে, আমি কলেজে পড়ি।এবার বি.এ পড়তাম। যদিও বাবা বেঁচে নেই। ছোট্ট একটা বোন,মা আর আমি। এই আমার পরিবার, এই আমার দুনিয়া,,,,। দিনের বারোটা পর্যন্ত মানুষের বাড়িতে কাজ করি আমি। বিকেলে বাচ্চাদের পড়াই।মাঝে মাঝে কলেজে যেতাম!
আর মা সারাদিন কাজ করতেন। রাতে বাতির আলোয় কলেজের বই পড়ি।
বছর তিনেক আগে পাঁচ হাজার টাকায় ঝি এর কাজ করতাম এক বাড়িতে। তারা সকালে চা আর দুপুরের খাবার দিতো আমায়।
দিব্যি চলে যেত দিন।
আমি বললাম, তারপর?
তারপর যখন ,গেজুয়েসেন পাশ করেছিলাম,কলেজে ভর্তি হলাম। লেখাপড়ার খরচ বাড়তে লাগলো। প্রাইভেট পড়ার সময় ছিলো না, নোট প্রয়োজন দেখা দিত। প্রথম প্রথম বান্ধবীদের থেকে নিতাম। কিন্তু ঝি এর কাজের জন্য প্রতিদিন কলেজে যেতে পারতাম না। তাই তারাও আর নোট দিতনা।
অবশেষে বাড়ির মালিককে বলে দুপুরের খাবারের বদলে একহাজার টাকা বেতন বাড়িয়ে নিয়েছিলাম।
সকালের নাস্তার দুটো বিস্কুট আর এক কাপ চা খেয়েই কাজ করতাম সারাদিন।
এটুকু খেয়ে তুই থাকতে পারতি? তোর কষ্ট হতনা?
প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হয়েছিলো। পেটে মোচড় দিয়ে ব্যাথা হত। মাথা ঘুরে পরেও গিয়েছিলাম কয়েকদিন।
জানেন, মালিকে বাড়িতে দুটো গরু ছিলো। বহু গরুকে খাবার দিতে গিয়ে ঐ পচা পান্তা গুলো খেয়েছিলাম। কি করব, ক্ষুধার জ্বালায় থাকতে পারতাম না। আর কাজ না করলে মালিক তো বেতন দিবে না। রাতের খাবার মা অন্যের বাড়ি থেকে আনত। ছোট বোনকে খাওয়ানোর পর যা থাকত, মা আর আমি ভাগ করে খেতাম।
আমি মা কে বলতাম মা,জীবনে একদিন সুখ আসবেই। একদিন কষ্টগুলো সুখে রুপান্তরিত হবেই।
তারপর?
মেয়েটা আবার বলতে থাকে, আমি উনিভার্সিটি পাশ করলাম। কিন্তু আর বি কম এ ভর্তি হতে পারিনি। যে বস্তিটাতে থাকতাম কয়েকদিন আগে সেখানে আগুন লাগে। ঘরে যা টাকা ছিল সব আগুনে পুড়ে গেছে। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম আমি। আবার কষ্টটাকে বুকে টেনে নিয়েছিলাম। এবার বিকেলে বস্তির বাচ্চাদের পড়াতে শুরু করেছিলাম। ভেবেছিলাম, এবছর না হোক সামনে বছর আবার ভর্তি হব। কিন্তু হয়ত সে কপাল আমার নেই। একরাতে বাড়ি ফেরার পথে মা এক্সিডেন্ট করে বসেন।
কষ্টটা যেন এবার নিয়তি হয়ে গিয়েছিলো। কি করব আমি, কোনদিকে যাব?
ভাবতে লাগলাম গরিবের দুঃখই যে নেয়.....!!! একদিকে ছোটবোন, আরেকদিকে হাসপাতালে মা। কোন পথ না পেয়ে দিনের কাজের পাশাপাশি রাতে এ পথে নেমে এলাম,,,, আমি
তারপর কি হল রে,,,,,,,
মেয়েটার কন্ঠ ভারি হয়ে আসে, ও কাঁদোকাঁদো স্বরে বলতে থাকে, ব্যবসা করতে লাগলাম নিজের দেহ দিয়ে,, আজ একটা মাস যাবত মার কাছে ছোট বোনকে রেখে রাতে পড়ার নামে বেড়িয়ে পরি আমি।
বিক্রি করে বেড়াই নিজের দেহকে নিয়ে। দেহটার কত মূল্য হবে নিজেই ঠিক করে দেই,,,, কাঁদতে থাকে মেয়েটি, কাঁদতে থাকি আমি।
মেয়েটা তারপর থেকে রোজ আসত। আমি বুঝতে পারি আমার হিরোইনের নেশাটা এখন বদলে গেছে। নেশাটা এখন ওর গল্প শোনায় রুপান্তরিত হয়েছে। আমিও তখন নেশা বাদ দিয়ে তার সাথে সময় কাটাতাম ..
হঠাৎ একদিন শুনলাম ওর মা মারা গেছে।
খুবই দুঃখ পেলাম,,,,,,,,,,, কি করব বুঝতে পারছিলাম না।
আমি বাবাকে বললাম তার জীবনের কাহিনী ও আমার খুজে পাওয়া,,,..... বলেছিলাম, বাবা আমার স্বপ্ন তো জোড়া লেগে ভেঙেছিলো, কিন্ত এ মেয়েটা স্বপ্নের খোজটুকুও পায়নি।
বাবা বিজ্ঞান বিষয় খুব ভালো বুঝতেন। দুটো কালো মেঘের ঘষায় সৃষ্ট বিদ্যুৎ যে সবাইকে আলোকিত করতে পারে, এই হিসাবেই আমি আর মেয়েটাকে একত্র করে দিলেন। বিয়ে দিয়ে বাবা বলেছিলেন, দুজনের অন্ধকার জীবনটাকে এবার আলোকিত করো তোমরা। আর আমি হয়ে গেলাম বিবাহিত
ও হ্যা, মেয়েটার নাম তানিশা।
আজ আমাদের তৃতীয় বিবাহ বার্ষিকী। আমি, তানিশা ,বাবা-মা-বোন, আমাদের ছোট শিশু স্বপ্ন আর ওর ছোটবোন রেখা, ওর মার চিতার পাশে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করছি। তানিশা কেঁদে কেঁদে বলল,মা বলেছিলাম না, সুখ একদিন আসবেই। আজ দেখ আমি কত সুখে আছি, কিন্তু তোমার অনুপস্তিতিতে, তারপর সবাই প্রার্থনা করে গাড়ি করে বাড়ি ফিরতে লাগলাম।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
যথারীতি এই গল্প আমার লেখা নয় , সংগৃহিত মাত্র ..
কিন্তু আমার অতি ভালোবাসার কাকসনের একটা মন্তব্যের আশায় থাকলাম !!
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,354 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
29-04-2022, 11:52 PM
(This post was last modified: 29-04-2022, 11:55 PM by cuck son. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(27-04-2022, 09:02 PM)ddey333 Wrote: যথারীতি এই গল্প আমার লেখা নয় , সংগৃহিত মাত্র ..
কিন্তু আমার অতি ভালোবাসার কাকসনের একটা মন্তব্যের আশায় থাকলাম !!
গরিবি জীবনে এক্সপিরিএন্স করিনি , আর প্রেমে ছেঁকা খেয়ে নেশা খাওয়ার মত উন্মাদ এখনো হইনি ।
তবে অলস জীবন আমার তাই দৈনন্দিন ঘটনা নিয়ে চিন্তা ভাবনার অনেক সময় । তাই আমাদের আসে পাশে ঘটে যাওয়া ব্যাপার গুলি দেখে প্রেম নিয়ে বেশ মন্দ ধারনা তৈরি হচ্ছে( হলেও কি না হলেও কি , মেয়েরা তেমন পাত্তা দেয় না আমাকে)
প্রেমিকা বিয়ের জন্য এসে প্রেমিক এর বাড়িতে অনশন করছে। আবার প্রেমিক অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি প্রকাশ করে দিচ্ছে ।
আবার কখনো প্রেমিকা বাবা মা এর কথা ভুলে গলায় ওড়না দিচ্ছে , তো প্রেমিক নেশা করে নিজেকে হিরো ভাবছে ।
আমার মতে এদের পিটিয়ে পাছার ছাল তুলে ফেলা উচিৎ। যখন একজন প্রত্যাখ্যান করছে তখন ওখানে প্রেম থাকছে কোথায়? যে তার জন্য এসব করতে হবে?
দ্বিতীয় ব্যাপার আমার যদি ক্ষমতা থাকতো আমি টাকার জন্য বেশ্যা বৃত্তি তে আসা সব মেয়েকে/ ছেলেকে এই পেশা থেকে বের করে নিয়ে আসতাম । তাদের শূন্য স্থান পুরন করতাম আগ্রহীদের দিয়ে । এতে দারুন লাভ হতো। কিভাবে জানতে চাইছেন তো । আরে ভাই কাস্টোমার সেটিসফেকশন হতো দ্বিগুণ । একটা কাজ যখন একজন মানুষ মন দিয়ে করবে তখন কাস্তোমার এর চাহিদা সম্পূর্ণ ভাবে পুরন হবে । কিন্তু এসব করার ক্ষমতা আমার নেই তাই বলেও লাভ নেই । গল্পে যে মেয়েটির কথা বলা হয়েছে তার জন্য দুঃখ করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই আমার।
তবে গল্পের শেষটা ভালো , দুই বিপর্যস্ত মানুষ একে অন্যের মাঝে সমুদ্রে ভাসতে থাকা কাঠের টুকরা খুঁজে পেয়েছে।
যদিও এদের মাঝে একজন কে কাঠের টুকরায় উঠতে দেয়ার আগে কষে দুই চড় মারা দরকার ছিলো ।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(29-04-2022, 11:52 PM)cuck son Wrote: গরিবি জীবনে এক্সপিরিএন্স করিনি , আর প্রেমে ছেঁকা খেয়ে নেশা খাওয়ার মত উন্মাদ এখনো হইনি ।
তবে অলস জীবন আমার তাই দৈনন্দিন ঘটনা নিয়ে চিন্তা ভাবনার অনেক সময় । তাই আমাদের আসে পাশে ঘটে যাওয়া ব্যাপার গুলি দেখে প্রেম নিয়ে বেশ মন্দ ধারনা তৈরি হচ্ছে( হলেও কি না হলেও কি , মেয়েরা তেমন পাত্তা দেয় না আমাকে)
প্রেমিকা বিয়ের জন্য এসে প্রেমিক এর বাড়িতে অনশন করছে। আবার প্রেমিক অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি প্রকাশ করে দিচ্ছে ।
আবার কখনো প্রেমিকা বাবা মা এর কথা ভুলে গলায় ওড়না দিচ্ছে , তো প্রেমিক নেশা করে নিজেকে হিরো ভাবছে ।
আমার মতে এদের পিটিয়ে পাছার ছাল তুলে ফেলা উচিৎ। যখন একজন প্রত্যাখ্যান করছে তখন ওখানে প্রেম থাকছে কোথায়? যে তার জন্য এসব করতে হবে?
দ্বিতীয় ব্যাপার আমার যদি ক্ষমতা থাকতো আমি টাকার জন্য বেশ্যা বৃত্তি তে আসা সব মেয়েকে/ ছেলেকে এই পেশা থেকে বের করে নিয়ে আসতাম । তাদের শূন্য স্থান পুরন করতাম আগ্রহীদের দিয়ে । এতে দারুন লাভ হতো। কিভাবে জানতে চাইছেন তো । আরে ভাই কাস্টোমার সেটিসফেকশন হতো দ্বিগুণ । একটা কাজ যখন একজন মানুষ মন দিয়ে করবে তখন কাস্তোমার এর চাহিদা সম্পূর্ণ ভাবে পুরন হবে । কিন্তু এসব করার ক্ষমতা আমার নেই তাই বলেও লাভ নেই । গল্পে যে মেয়েটির কথা বলা হয়েছে তার জন্য দুঃখ করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই আমার।
তবে গল্পের শেষটা ভালো , দুই বিপর্যস্ত মানুষ একে অন্যের মাঝে সমুদ্রে ভাসতে থাকা কাঠের টুকরা খুঁজে পেয়েছে।
যদিও এদের মাঝে একজন কে কাঠের টুকরায় উঠতে দেয়ার আগে কষে দুই চড় মারা দরকার ছিলো ।
ঠিক বলেছো ... একেবারে
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
#শরীরের_পবিত্রতা
#অর্পিতা_সরকার
এই দিনরাত এমন ন্যাকামি করো না তো। সবই বিয়ের আগে না ,শুনতে শুনতে আমি জাস্ট বিরক্ত হয়ে গেছি ইন্দ্রানী। অ্যাট লিস্ট কিস তো করতে দেবে তোমার ঐ জুসি ঠোঁট দুটোতে!
আমূল কেঁপে উঠলো ইন্দ্রানী।
আধুনিক কালের মেয়ে হলেও মনে মনে ও ভীষন সনাতন পন্থী। বিয়ের আগে শরীর কেউ ছোঁবে না গোছের মানসিকতার বশবর্তী। সৌনক প্রায়ই ভিড় রাস্তায় ইন্দ্রানীর হাত ধরতে গিয়েও টিপ্পনি কেটেছে। ওহ..তোমার হাত ধরলে তো আবার পবিত্রতা নষ্ট হয়ে যাবো! আজব প্রেমিকা জুটিয়েছি আমি বটে। বন্ধুরা শুনলে আমাকে নিয়ে খিল্লি করবে বুঝলে!
আমি আজ কোনো কথা শুনবো না ইন্দ্রানী। তোমাকে আজ ইউনিভার্সিটি পরে আমার বাড়িতে যেতেই হবে। আগে প্রমিস করো। একরাশ অভিমান গলায় নিয়ে আব্দার জুড়লো সৌনক।
ইন্দ্রানী ভালোবাসার পুরুষের অভিমানী মুখের দিকে তাকিয়েও শেষ চেষ্টা করলো,কিন্তু সৌনক ..রাত হয়ে যাবে যে। ইউনিভার্সিটি পরে গানের ক্লাস সেরে আবার তোমাদের বাড়ি!
ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড ইন্দ্রানী...আমার বার্থ ডে আর তুমি প্রেজেন্ট নেই। অফিস কলিগরা কি বলবে বলতো!
তাছাড়া আজ মা-বাবার সাথেও তোমার পরিচয়টা করিয়ে দেব সোনা। প্লিজ একদিন তোমার বাড়িতে ম্যানেজ করো।
ইন্দ্রানী চিন্তান্বিত মুখে বললো,বেশ দেখছি। মুস্কিলটা হলো শীতের দিনে সাড়ে পাঁচটা মানেই সন্ধ্যে। গানের ক্লাস মিস করলেই গানের নীলিমা দি ডিরেক্ট মাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে,কি রে ইন্দ্রানী আজ এলো না কেন! তখন! তখন কি উত্তর দেবে ইন্দ্রানী। সৌনকএর কথা এখনো বাড়িতে বলেনি। যদিও সৌনকের সাথে ওর বছর দুয়েকের সম্পর্ক। তবুও বাবার সামনে দাঁড়ালেই কেমন একটা অজানা ভয় চেপে ধরে ওকে।
আসলে ছোট থেকেই যৌথ পরিবারের রক্ষণশীল পরিবেশে বড় হয়েছে ইন্দ্রানী। বাবা,জ্যেঠুর সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রেমের কথা বলবে,এমন সাহসই ওর নেই। ওদের বাড়ির কেউ প্রেম করে বিয়ে করেনি। অভিভাবকরা দেখা শোনা করে বিয়ে দিয়েছে সকলের। এমনকি ইন্দ্রানীর ছোট কাকার বিয়ের সময় ছোট কাকিমাকে কাকুর খুব একটা পছন্দ ছিল না।তবুও জেঠুর মুখের ওপর কোনো কথা না বলতে পেরেই চুপ করে ছাদনা তলায় বসেছিল কাকু। ইন্দ্রানীর ভয়ে বুকটা কেঁপে ওঠে,কি করে বলবে ও সৌনকের কথা!
বিশেষ করে ফেসবুকে পরিচয় ,তারপর প্রেম শুনলেই তো বাবা আর জ্যেঠু ওর ইউনিভার্সিটি যাওয়াই বন্ধ করে দেবে। মাঝে মাঝে খুব দমবন্ধ লাগে ওর। বান্ধবীরা জিন্স টপ পরে,ও সেই একটি ফুলহাতা চুড়িদার। ক্লাসের বন্ধুরা মজা করে বলে, ওরে আমাদের কাননদেবী এসে গেছে। আওয়াজ খেতে খেতে এখন ও অভ্যস্ত।
মুস্কিলটা হলো,সৌনকের সাথে পরিচয় বা বন্ধুত্ব হলেও প্রেম করতে তেমন আগ্রহী ছিল না ইন্দ্রানী। নিজের বাড়ির পরিবেশ তো ও জানতো। কিন্তু নিজের সব কথা সৌনকের সাথে শেয়ার করতে করতে কবে যে ওদের সম্পর্কটা প্রেমে পরিণত হয়ে গেছে ইন্দ্রানী নিজেও জানে না। মাঝে মাঝে ওরও মনেহয়, সৌনক বোধহয় এবার বিরক্ত হচ্ছে। কোথাও মিট করার কথা হলেই ইন্দ্রানী বলে,দেরি করে ফিরলে বাড়িতে বকবে। আজ ওর জন্মদিনে কি করে বলবে ইন্দ্রানী,যে পার্টিতে যাবে না!
কাঁচুমাচু গলায় ইন্দ্রানী বললো,বেশ আমি ট্রাই করছি সৌনক ,কিন্তু আধঘন্টার বেশি থাকবো না কিন্তু।
যা ইচ্ছে করো,তাও এস প্লিজ।
আর হ্যাঁ, আজ একটা শাড়ি পরে এসো কিন্তু।
কথাটা শোনার পর থেকেই ভিতরে ভিতরে ভয় করতে শুরু হয়ে করেছে ইন্দ্রানীর। বন্ধুদের বাড়ির নিমন্ত্রন থাকলে তারা মা বাবার সাথে ফোনে কথা বলে, দল বেঁধে যায়। বাড়িতে প্রবলেম হয়না। এক্ষেত্রে বলবেই বা কি!
বেশ আমতা আমতা করে ইন্দ্রানী চায়ের টেবিলে গিয়ে বাবার সামনে গিয়ে বলল, বাবা..আজ গানের কলেজ থেকে একটা বান্ধবীর বাড়ি যাবো। কিছু নোটসের দরকার। বাবা মুখটা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফেরা ঔরঙ্গজেবের মত করে বলল, বাড়িটা কোথায়? কি নাম বান্ধবির?
সুলগ্না ...এত মিথ্যে একসাথে বলতে গিয়ে যেন ধরা না পড়ে যায়। বাড়ি ওই গাঙ্গুলিবাগানের দিকে। ওদের বাড়ি থেকে ওটা একটু দূরে আছে তাও। বাবা যাও কয়েদ খানায় নিয়ে যাও না বলে বললো, বেশি দেরি করো না যেন। এই শীতেও ইন্দ্রানীর হাতের তালু ঘেমে গিয়েছিল।
যাইহোক,এত কাণ্ডের পর আবার মায়ের কাছে বলবে কি করে,যে শাড়ি পরে যাবে!
অবশ্য মা একচান্সেই বললো,হ্যাঁ শাড়ি পরা অভ্যেস কর। আর তো মাত্র তিনটি মাস,তারপরেই তোর ফাইনাল পরীক্ষা হবে আর পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে।
চুপচাপ সৌনকএর পছন্দের হালকা গোলাপি শাড়িটা পরে নিলো ইন্দ্রানী।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই লজ্জা পেল। মনের মধ্যে একটা অদ্ভুত অনুভূতি। বিয়ের পরে যে বাড়িতে সংসার করবে সেই বাড়িতে আজ ওর প্রথম পদার্পন। কেমন হবে সৌনকের বাবা মা! ওকে মেনে নেবে তো? বিয়ে মানে তো শুধু স্বামী নয়,একটা সম্পুর্ন অপরিচিত গোটা জগৎ।
তাই সৌনকের পরিবারের সকলের সাথেই পরিচয় হওয়াটা জরুরি । সৌনক বলেছে এরপরেই ও ওর বাবা মাকে নিয়ে আসবে। ফুলের বুকে আর ওর পছন্দের পারফিউম কিনেই ট্যাক্সি ধরলো ইন্দ্রানী। আজ ইউনিভার্সিটিতেও সবাই আড়চোখে তাকাচ্ছিল ওর দিকে। অদ্ভুত একটা ভালোলাগা মিশেছিলো ইন্দ্রানীর মনে। আজ গানের ক্লাসে গিয়েও মন বসাতে পারছিল না ও। সৌনক একটা সাদা পাঞ্জাবি পরে বাড়ির সামনেই অপেক্ষা করছিল ইন্দ্রানীর জন্য।
একমুখ হেসে সৌনক বললো,যাক রাজকুমারীকে অবশেষে সম্রাট ছেড়েছেন। সৌনকের বাবা মাও খুব খুশি হবু বৌমাকে পেয়ে। সৌনকদের অফিসের কলিগদের সাথে পরিচয়ের আগেই ঘনঘন ঘড়ি দেখছিল ইন্দ্রানী। সেটা খেয়াল করেই সৌনক বললো,মাত্র সাতটা বাজে ইন্দ্রানী। অন্তত আটটা পর্যন্ত থাকো প্লিজ।
এর মধ্যেই বাবা দুবার ফোন করেছিল। অসহায় মুখে ও বললো,সৌনক আজ আর হবে না ,আমাকে এখুনি যেতে হবে যে।
সৌনকের বেডরুমে এই প্রথম ওকে জড়িয়ে ধরেছিল ও। ইন্দ্রানী কেঁপে উঠছিল প্রথম পুরুষের ছোঁয়ায়।
ভালোলাগায় ভাসছিল ও, তবুও সৌনক মুখটা গম্ভীর করে রেখেছিল। এখুনি ঢুকবে ওর অফিস কলিগরা। সেই মুহূর্তেই বেরিয়ে গেল ইন্দ্রানী। সৌনকই ট্যাক্সি ডেকে তুলে দিল ওকে।
মিনিট দশেক চলার পরেই ট্যাক্সিটা গন্ডগোল করতে শুরু করলো। বিরক্ত হয়ে নেমে পড়লো ইন্দ্রানী। কয়েক পা হেঁটে ধরে নেবে অন্য ট্যাক্সী। বাবার ফোনে ভয়ে ভয়েই বললো, আর ঘন্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে যাবে বাড়ি।
নির্জন রাস্তা ধরে কয়েকপা হাঁটার পরেই আর কিছু মনে ছিল না ওর।
মুখটা বাঁধা, শরীরে অকথ্য যন্ত্রনা নিয়ে সেন্স ফিরেছিল ওর। বেশ কয়েকজন ঘিরে ধরে ছিল ওকে। ওর গোলাপি শাড়িতে ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। ভিড়ের মধ্যেই দেখতে পেয়েছিল বাবার মুখটা।
বেশ কয়েকদিন বাড়িতে ঘর বন্দী হয়ে বসেছিলো ইন্দ্রানী। বাবা নিজের চুলের মুঠি ঝাঁকিয়ে বলেছিল, ইন্দ্রানীর ফোন থেকেই বোধহয় নাম্বারটা পেয়েছিল ওখানের লোকগুলো। আমাকে ফোন করে বললো, একটি গোলাপি শাড়ির মেয়ের ...
আর বলতে পারেনি বাবা।
কোনো এক খবরের কাগজের পাতায় ইন্দ্রানীর ছবি। ওই ভিড়ের মধ্যে কে যে ওর ছবি তুলেছিল বুঝতেও পারেনি অজ্ঞান ইন্দ্রানী। ওকে বাঁচানোর লোকের অভাব ছিল ঠিকই কিন্তু ওর ছবি তোলার লোকের অভাব ছিল না। এমনকি মিডিয়ার ভিড় লেগে গিয়েছিলো ওদের বাড়ির সামনে। ইন্দ্রানী কারোর সামনে বেরোয় নি।
পাগলের মত সৌনককে ডায়াল করে গেছে ও।
কিছুতেই ফোন ধরেনি সৌনক। শুধু একটা মেসেজ...ক্ষমা করো ইন্দ্রানী। আমার বাবা মা সকলে দেখেছে তোমার ছবি। কেউ আর মেনে নেবে না এই সম্পর্কটা।
কিন্তু সৌনক আমার দোষ কোথায়?
না আর উত্তর আসেনি ও তরফ থেকে। ধর্ষিতা মেয়েরা করুনার পাত্র হতে পারে কিন্তু কারোর প্রেমিকা বা স্ত্রী নয়। সত্যিটা খুব সহজেই বুঝে গিয়েছিল ইন্দ্রানী। নিজের শরীরের ক্ষতগুলোতে ওষুধ না লাগিয়ে কষ্টটা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছিল ইন্দ্রানী। আর মনে মনে সঞ্চয় করছিল একরাশ প্রশ্নের সম্মুখীন হবার মত জোর।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছে ও ,অন্ধকারে কাউকে চিনতে পারেনি ও। সত্যিই চিনতে পারেনি ওর জীবনটা তছনছ করে দেওয়া মানুষ দুটো অথবা চারটেকে।
শুধু শহরের রাস্তায় কোনো প্রতিবাদী মোমবাতি মিছিল বেরোয়নি ওকে কেন্দ্র করে,কারণ ধর্ষকরা ওকে জীবিত ছেড়েছিল,মেরে ফেলেনি।
ইউনিভার্সিটির লাস্ট পরীক্ষার জন্য পাগলের মত খেটে চলছিল ও। কিন্তু পড়তে বসলেই শুধু সেই কালো মুখগুলো দৃষ্টিপথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিলো। নোনতা জলে ভিজে যাচ্ছিল বইয়ের পাতা।
বাবার সাথে ইন্দ্রানী বসে আছে একজন সাইক্রিয়াটিস্ট এর চেম্বারে। বাবার শরীরটাও যেন ভেঙে গেছে এই সাত দিনে। সেই রাগী রাগী ভাবটা চলে গিয়ে কেমন বিধস্ত চেহারা নিয়েছে। বাবা নিজের মুখটা ঢেকে কেঁদে বলেছিল,মেয়ের বাবার বড় জ্বালা।
ওটা শুনেই বোধহয় সব থেকে বেশি কষ্ট হয়েছিল ইন্দ্রানীর। ওর রাশভারী বাবাকে ভেঙে পড়তে দেখে ভীষণ কষ্ট হয়েছিল ওর।
ডক্টর দিগন্ত রায় বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন ইন্দ্রানীর দিকে। অপলক ...
তারপর বললেন,কি মনে হয় তোমার,রেপ মানে কি?
মনের বিরুদ্ধে জোর করে যে কোনো কাজ! তাই তো?
ঘাড় নাড়লো ইন্দ্রানী।
দিগন্ত বললো,একটু ভালো করে ভেবে বলো তো...জীবনে কত বার তুমি নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো কাজ করেছ?
ইন্দ্রানী বললো, হ্যাঁ করেছি। আমার ইচ্ছে ছিল ইকোনমিক্স অনার্স নিয়ে পড়বো। কিন্তু বাবার ইচ্ছেয় ইংলিশ পড়ছি।
ডাক্তারের মুখে মিষ্টি হাসি। এটা রেপ নয়?
কোনোদিন হয়তো ভেটকি মাছ খেতে না, কারোর অনুরোধে জোর করে ভেটকি ফ্রাই খেলে, সেটাও কিন্তু তোমার মনের বিরুদ্ধেই।
ওই দিন রাস্তায় তুমি মনের বিরুদ্ধেই কিছু মানুষের নোংরামির স্বীকার হয়েছ, কষ্ট হয়েছে তোমার। কিন্তু বাকিগুলোর মত এটা নিয়ে এত কুন্ঠিত কেন তুমি?
বছর সাইত্রিশের ডাক্তারের ঝুলপির কাছে দু একটা সিলভার লাইন। চোখে পাওয়ারের চশমা। শুধু হাসিটা অমলিন। পৃথিবীতে কিছুই যেন খারাপ নেই।
শরীরের বাকি রোগগুলো যদি সারতে পারে তাহলে এটাও সারবে।
কাঁদছিলো ইন্দ্রানী। ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলেছিল।
দিগন্ত বললো, ইন্দ্রানী ..পবিত্রতা শরীরের মত ক্ষণে ক্ষণে রোগে পড়া জায়গায় থাকে না,থাকে মনে।
ইন্দ্রানী জানে না কেন! তবুও একমাত্র দিগন্তর সাথে কথা বললেই ও নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার প্রাণ শক্তি খুঁজে পাচ্ছে।
প্রায় রেগুলারই ফোনে কথা বলে ওরা। ডাক্তার নয় ,দিগন্ত যেন খুব কাছের বন্ধু।
পরীক্ষাটা ভালোই দিয়েছে ইন্দ্রানী। তবে এই ভালো পরীক্ষা দেবার জন্য সম্পুর্ন কৃতিত্ব দিগন্তর। ও যদি এভাবে শক্তিসঞ্চার না করতো, তাহলে হয়তো কোনোদিনই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারতো না ইন্দ্রানী।
আজ রাতে দিগন্তের কোনো একটা মিটিং আছে। তাই আজ ইন্দ্রানী কল করেনি ওকে। এই প্রথম ইন্দ্রানী বুঝতে পারলো,দিগন্তকে ইন্দ্রানী অন্য চোখে দেখতে শুরু করেছে। খুব কাছের বন্ধুর বেশিই কিছু।
দিগন্তর বয়েস প্রায় সাইত্রিশ। ইন্দ্রানীর থেকে তেরো বছরের বড়। হয়তো স্ত্রী সন্তানও আছে ওর। ইন্দ্রানীর অসহায় অবস্থায় ওকে সাহায্য করেছে বলেই ,এই ধরণের ভাবনাটা বড্ড ভুল হচ্ছে । কিন্তু কেন কিছুতেই ইন্দ্রানী ওকে ভুলতে পারছে না। ওর বলা সব কথাগুলো বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে ওর।
ইন্দ্রানী, জীবনে কখনো ছোট্ট ডোবাকে ভালোবেসো না। ডোবাকে করুনা করো কিন্তু ভালোবেসো সমুদ্রকে। সমুদ্র তোমাকে তার বিশালতা দিয়ে প্রসারতা চেনাবে। আর ডোবা তোমাকে চেনাবে সংকীর্ণতা।
কেন কে জানে আজকাল ইন্দ্রানীর সৌনককে ডোবার মতোই মনে হয়। একটা অন্তত সাধারণ সংকীর্ণ মনের ছেলে। যে ভালোবাসার অর্থই বোঝে না।
রাত তখন প্রায় বারোটা।
আর পারছে না ইন্দ্রানী। উত্তরটা আজ ওকে পেতেই হবে। এতক্ষনে হয়তো দিগন্ত ফিরেছে মিটিং থেকে। হয়তো স্ত্রীর সাথে নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে। ফোন করাটা কি ঠিক। তাছাড়া ব্যক্তিগত কথা তো শুধু ইন্দ্রাণীই বলতো ,দিগন্ত তো নিজের ব্যাপারে কখনো কিছু বলেনি।
প্রতিটা রিঙের আওয়াজে বুকের ভিতরে তোলপাড় হচ্ছে ইন্দ্রানীর। অবশেষে ঘুম গলায় ফোনটা ধরলো দিগন্ত।
কি হয়েছে ইন্দ্রানী?
কোনো প্রবলেম?
এ প্রান্তে শুধুই ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ।দিগন্ত ধীর গলায় বলল,কেঁদো না ইন্দ্রানী। আমি জানি তুমি কি বলতে চাইছো।
আমি জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো। হয়তো আমিও...কিন্তু আমাদের বয়েসের পার্থক্যটা কখনো ভেবেছো? তোমার সামনে সুন্দর ভবিষ্যৎ।
ইন্দ্রানী কান্না ভেজা গলায় বলল, মনের বয়েসটা বুঝি গুরুত্বপূর্ণ নয়? শরীরের বয়েসটাই বুঝি সব?
দিগন্ত খোলা গলায় হেসে বললো, আমি অনাথ। খুব ছোট বেলায় বাবা মা মারা গিয়েছিলেন,পিসির কাছেই মানুষ হয়েছি।
কথা শেষ করতে না দিয়েই ইন্দ্রানী বললো,যদি তেরো বছরের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তোমাকে ছেড়ে আমি তেরো সেকেন্ডও না থাকতে পারি, সেটাকে কি বলে ডক্টর দিগন্ত রায়?
বেশ কয়েকমাস হয়ে গেছে ইন্দ্রানী আর দিগন্তর সুখী দাম্পত্যের। ইন্দ্রানী এখন একটা ইংলিশ মিডিয়াম কলেজের শিক্ষিকা।
ইন্দ্রানীর গোছানো সংসারের আদরে এলোমেলো দিগন্ত এখন পরিপূর্ণ।
সেদিনও ছিল এমনি শীতের সন্ধ্যে। দিগন্ত চেম্বারে। চেম্বার সেরে দুজনের যাওয়ার কথা ছিল শপিংএ। গাড়ি নিয়েই ওর চেম্বারের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল ইন্দ্রানী।
হঠাৎই চিৎকারটা কানে এলো ওর। গাড়ি দাঁড় করাতেই চোখে পড়লো একটা গোলাপি শাড়ির অল্পবয়সী মেয়ে..পাগলের মত দিকবিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে ছুটছে। শাড়ীর কয়েক জায়গায় ছেড়া। ইন্দ্রানীর পাঞ্জাবি ড্রাইভার সামনে দাঁড়াতেই পিছনের ছেলে দুটো ছুট লাগলো। মেয়েটি ক্লান্ত...
ইন্দ্রানী গাড়িতে তুলে নিয়ে গেল দিগন্তর চেম্বারে।
প্রাথমিক চিকিৎসার পরেই দিগন্ত বললো, মানসিক ভাবে বিধস্ত। বাড়িতে খবর দাও ইন্দ্রানী।
দিগন্তই ফোন করেছে ওর বাড়িতে।
মেয়েটি কান্না ভেজা গলায় বলল,আজ যদি তুমি না থাকতে দিদি তাহলে আমার সর্বনাশ হয়ে যেত।
হন্তদন্ত হয়ে যে মানুষটি ছুটে চেম্বারে ঢুকছে ,তাকে বছর খানেক আগে জন্মদিনের সন্ধ্যেতে শেষ দেখেছিল ইন্দ্রানী।
মল্লিকা বলে মেয়েটি তাহলে সৌনকের স্ত্রী।
সৌনক ঢুকেই জড়িয়ে ধরেছে নিজের স্ত্রীকে।
ভাগ্যিস...ভাগ্যিস মল্লিকাকে বাঁচাতে পেরেছিল ইন্দ্রানী। নাহলে কি করতো সৌনক! অপবিত্র ধর্ষিতা স্ত্রী কে কি ডিভোর্স করতো!
মল্লিকা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,এই দিদিই আমাকে আজ..
সৌনকের চোখে বিস্ময়। কোনটা দেখে বিস্ময়? ইন্দ্রানীর সিঁথির লাল রংটা দেখে কি?
ধন্যবাদ...সৌনকের কথাটা শেষ করতে না দিয়েই ইন্দ্রানী বললো,আমার হাজবেন্ড ডক্টর দিগন্ত রায়কে থ্যাংকস জানান। ওই আপনার ওয়াইফের ট্রিটমেন্ট করেছে এই মুহূর্তে।
সৌনকের বিস্মিত ভাবটা কাটার আগেই ইন্দ্রানী বললো, চলো দিগন্ত...আমাদের শপিংয়ের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ইন্দ্রানীর মনে পড়ে গেলো ,দিগন্তর বলা সেই কথাটা..ইন্দ্রানী ডোবাকে নয় সমুদ্রকে ভালোবাসো। যে তোমাকে বিশালতা শেখাবে...
ডোবাকে করুণা কোরো, সমুদ্রকে আলিঙ্গন।
সমাপ্ত
©এক চিলতে রোদ্দুর-কলমে-অর্পিতা সরকার
সমাপ্ত
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
অসাধারণ একটা গল্প। আবারো কি গল্প বলবো? হয়তো সেটা বলাই উচিত হবে। কারণ খাতায় গল্পের গরুকে গাছেও চড়ানো যায় কিন্তু বাস্তবে তাকে চড়াতে যে খাটনি সেটার জন্য পাশে কাউকে পাওয়া যাবেনা। খালি খালি অমন ফালতু কাজ করে লাভ কি সেটাই হয়তো শুনতে হবে। আসলে মানুষ যেকোনো শিক্ষা ও নীতি বা বাণীর ঠিক ততটুকুই নেয় যতটা তার লাভের কাজে আসবে, বাকিটা ভুলে যাবার ভান করে। কেউ কেউ হয়তো মনে রাখে তারাই হয়তো দিগন্তের মতো এগিয়ে যেতে পারে। একা নয়, সাথির হাত ধরে ♥️
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(16-04-2022, 06:43 PM)ddey333 Wrote: এমন একটা প্রেম হোক
তোমার সাথে আমার প্রেম হবে শব্দ বিহীন। তুমি সারাদিন আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে ভূগোল চোখ নিয়ে, আর তোমার ঐ অপলক দৃষ্টিতে সৃষ্টি হবে হাজার খানেক কবিতা, যে কবিতা কোনো বিচ্ছেদের না, সে কবিতা মন গড়ার, সে কবিতা আমাদের ভালোবাসার।।
আমাদের প্রেমে কোনো রাগ থাকবে না, থাকবে অজস্র অভিমান, থাকবে অনুরাগ, থাকবে কষ্ট কিন্তু সে কষ্ট হবে অহংকারের। প্রতিটা চুমুতে আমাকে তুমি সহজ করে তুলবে আরো..,আমার বুকে থাকবে প্রশান্তের ঢেউ, তোমার বুকে জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ড।
এমন একটা প্রেম হোক আমাদের...।
যে প্রেমে নিয়ম করে দেখা করতে হয় না, যে প্রেমে নিয়ম করে খবর নিতে হয় না। আমাদের প্রেমটা তেমনই হোক। দুটো শরীর থাকবে দুটো বালিশে, কিন্তু দুটো মন থাকবে এক বিছানায়। তুমি ব্যালকনিতে দাঁড়াবে, আর আমি বেডরুমে বসে এক নিমেষে বলে দিতে পারব তোমার চোখ ক'টা তারা গুনলো!
পৌষালী বৃষ্টি দিনে তুমি ঘুমিয়ে থাকবে আর আমি স্বপ্নে তোমার চোখের পাতায় টানবো কাজল, ঠোঁটে লিখে দেবো অর্ধ চন্দ্রের গল্প, তোমার চিবুক বেয়ে গড়িয়ে পড়বে অভিসার, আমার বুকে তখন ফল্গু ধারা!
তারপর বৃষ্টি থামবে...
বাইরের আকাশে উড়বে তখন অগুন্তি বিহান ফানুস।
অষ্টমী কিংবা পঞ্চমী তুমি শাড়ি নাই বা পড়লে, ইচ্ছে হলে পড়তে পারো মনের মতো টপ-স্কার্ট, আমি জিন্স-ব্লু শার্ট! বিনুনি করে চুল নাই বা বাঁধলে, তোমার খোলা চুলেই থাকবে আদম সুখ।
আমাদের প্রেম টা একটু অগোছালো হোক,
ঠিক যতটা অগোছালো মোনালিসার মুখ...।।
Collected....
জানিনা মানুষের ভুল কিনা। মানুষ প্রাশই ভুল করে, মানসিক কষ্ট/আনন্দ আর সুখ এই দুটো ব্যাপারে। দেখো আমি একজন কে ভালোবাসি তাকে বিয়ে করলাম। এখন সেই লোক অতি অসভ্য হতে পারে। ভিজে তোয়ালে বিছানায় রাখতে পারে। আমার জন্মদিন ভুলে যেতে পারে। সারাদিন অফিসে থেকে , আমাকে ডীনারে নিয়ে যাবে সেটা ভুলে যেতে পারে। কিন্তু এটা তো, মানসিক কষ্টের আওতায় আসে। বস্তুত সেই মানুষ টা কে নিয়ে আমি সুখী, কারন, সে আমাকে ভালোবাসে। তার মন খারাপে আমাকেই খোঁজে। তার জ্বর হলে বলে আমাকে কাছে বসে থাকতে। এই বয়সেও, সাজলে গুজলে হাঁ করে চেয়ে থাকে। এই বয়সেও জিজ্ঞাসা করে রাতে বাচ্ছা ঘুমালো কিনা। এই গুলো সুখ। সুখ টা জলবায়ুর মতন। দীর্ঘ মেয়াদি। আর মনঃকষ্ট বা মনের আনন্দ টা আজকের দুপুরে তীব্র রোদের মতন বা সন্ধ্যে বেলায় দিগবিকিক কাঁপিয়ে, ঝড়ের পরে বৃষ্টির মতন। কখনো কষ্ট তো কখনো মুড বদলে গেলো। সুখী মানুষ , রোজ কার কষ্ট আনন্দ নিয়ে মাথা ঘামায় না। সামান্য ভিজিয়ে দিলেও, নিজেকে শুকিয়ে নেয় সে নিজের ভিতরেই।
আমাদের কেউ আনন্দ বা দুঃখ দিতেই পারে, কোন ছোট বা বড় ঘটনার মাধ্যমে। কিন্তু সেখান থেকে সুখী হওয়া বা দুঃখী হওয়া টা আমাদের উপরে থাকে। কাজেই যে সুখী, সেটার জন্য যার সব থেকে বেশী অবদান থাকে, সেটা হলো সে নিজে। তেমনি দুঃখের ব্যাপার টাও সত্যি। সে নিজেই দুঃখী তাই সে দুঃখী হয়ে থাকে। সত্যি বলতে সেই কারনে, কোন দুঃখী মানুষ কে সিম্প্যাথী দেখাতে ইচ্ছে করে না। কারন যে বহু দিনের, বহু ঘটনার , মাল মশলা মিশিয়ে, নিজেকে দুঃখী বানিয়েছে। কারোর হাত নেই সেখানে।
এই সব ছোট ছোট ঘটনা বা লেখা এখানে তুলে ধরার জন্য দিদির তরফ থেকে অনেক ভালোবাসা রইল ডিডে।
Posts: 1,391
Threads: 12
Likes Received: 2,354 in 824 posts
Likes Given: 1,054
Joined: Nov 2019
Reputation:
378
একদম আমার মনের মত একটা লেখা , প্রায় ৭৫% আমার মনের মত হয়ে গেছে । বাকি ২৫% নিয়ে আক্ষেপ নেই , সব তো আর আমার মন মত হবে না , কিছু এডজাস্ট আমাকেও করতে হবে ।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
বাঁধ ভেঙেছে
আজও বাড়ি ফিরতে বেশ দেরি হয়ে গেল। মিলি আবার রাগ করবে! মাঝে মাঝে মিলিকে খুব ভয় লাগে পাপনের। ঠিক মিলিকে না... মিলির মুখটাকে! মিঠি হবার পর থেকেই যখন তখন মুখ ভার থাকে মিলির। সামান্য কারণেই রেগে যায়, আর তখন কি যে বলছে, কেন বলছে, কিচ্ছু ঠিক থাকে না ওর। বিশেষ করে ওর অফিস থেকে ফিরতে দেরি হলেই মিলি খুব রেগে যায়। নিজের মনেই গজগজ করে বলতে থাকে "সব দোষ অফিসের, তাই না? নিজেরই ফিরতে ইচ্ছে করে না। অফিসে তো মধু আছে! বুঝিনা! আমি মিঠি হবার পর মোটা হয়ে গেছি, তুমি ফিরেও তাকাও না। সব বুঝি..."। এই পাগলের প্রলাপ এড়ানোর জন্যই চেষ্টা করে যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি ফেরার। সত্যিই তো, মেয়েটা হবার পর থেকে মিলির যা যাচ্ছে! পাপনের মা যদি এসে থাকতে পারতেন... কিন্তু মায়ের পা ভাঙল ঠিক এইসময়। মিলির তো মা কবেই নেই। একজন আয়াদিদি আছেন ঠিকই, তাও চাপ পড়ে যায় বড্ড। আর, সেজন্যই হয়ত মিলি এতটা রেগে থাকে সবসময়।
মাঝে মাঝে মনে হয়, মিঠি না হলেই বোধহয় ভাল হত! আবার মিঠির মুখটা মনে পড়লেই ভিতরটা এক্কেবারে মায়ায় টইটুম্বুর হয়ে যায়।
আবার মাঝে মাঝে মিলির উপরেও রাগ হয়। মনে হয়, "ঠিক আছে, দেখিয়ে দিই না ওকে, একটা কারো সাথে প্রেম করে। বুঝবে তখন, কত ধানে, কত চাল!"
কিন্তু, তারপরেই, মিলির মুখটা মনে পড়ে যায়। মিলির হাসিহাসি মুখ। প্রেয়সী মুখ। আদুরে মুখ। তখনও মায়া হয় বড্ড।
চিনার পার্কের মোড়ে অটো থেকে নেমে ভাড়াটা দেবার পরেই চোখ আটকে গেল বিশাল হোর্ডিং টার দিকে। একজন মায়ের ছবি। ক্লান্ত মুখ। দেখেই মনে হচ্ছে সদ্য মা। হাসপাতালের পোষাক পরা। আর সেখানে লেখা 'পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশান ইজ নর্ম্যাল অ্যান্ড কিওরেবেল। কন্ট্যাক্ট করুন আমাদের..."
'পোস্ট পার্টাম?' মানে? পোস্টমর্টেম শুনেছে পাপন... কিন্তু এটা কি?
তাড়াতাড়ি পকেট থেকে ফোনটা বের করে মানে খুঁজতে থাকে।
হঠাৎ এক্কেবারে কানের কাছে "ও দাদা, ও দাদা... আরে বাবা, কানে কালা নাকি! কখন থেকে ডাকছি!" কর্কশ গলায় শুনে ফিরে তাকায় ও।
যে অটোতে এসেছিল, সেই ড্রাইভার দাদা না? কিন্তু ও তো ভাড়া দিয়েছিল! তাহলে?
"উফ দাদা, আপনি না! ডেকেই যাচ্ছি! ডেকেই যাচ্ছি! "
"বলুন?" একটু তেড়িয়া হয়েই জবাব দেয় ও।
"আরে দাদা, রাস্তায় বেরোলে এত ভুলোমনের হলে হয়? কুড়িটাকা ভাড়া, দুশো টাকা দিয়ে দিয়েছেন। এর ওর থেকে খুচরো নিয়ে দেখি আপনি নেইইই... সেই কতটা হেঁটে এসে দেখি মোবাইল ঘাঁটছেন..." রাগ রাগ গলায় বলেন উনি।
থমকে যায় পাপন। তারপর বলে "দাদা, আমি তো ভাবতেই পারছি না আপনি এতটা এলেন... এইজন্য... থ্যাংকইউ দাদা! আমি মানে... ইয়ে... আপনি এলেন কেন? আমি তো বুঝতেও পারতাম না বাড়ি যাবার আগে..."
রাগী রাগী দাদা এবার হাসেন একটু। বলেন "ওমা, এটুকু না করলে হয়। ধর্মে সইত?" বলেই চলে যান উনি।
সেদিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে পাপন।
তারপর আকাশের দিকে তাকায়।
এত্তবড় চাঁদ উঠেছে।
আজ বুদ্ধপূর্ণিমা। সেই বুদ্ধদেব, যিনি ভালবাসার কথা বলেছিলেন.. সেই বুদ্ধদেব, যিনি বলেছেন 'ধর্মং শরনং গচ্ছামি।'
ধর্ম কি? যা ধারণ করে। যেমন এই অটোদাদার ধর্ম কাউকে না ঠকানো।
নিজের মনে একটু হাসে পাপন।
মিলিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে শিগগিরি। এই ডিপ্রেশান থেকে বের করতে হবেই ওকে। সেটাই ওর ধর্ম। ভালবাসার ধর্ম।
তাড়াতাড়ি পা চালাচ্ছিল পাপন...
মিলি আর মিঠি অপেক্ষা করে আছে।
চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে...
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
বাথরুম থেকে বেরিয়ে জিজ্ঞেস করলাম - কার ফোন? রিং হয়ে গেল, ধরলে না ?
- ইচ্ছে করে ধরিনি, নিজে দেখো কার ফোন । ছিঃ ।
আমি আকাশ থেকে মাটিতে ! হঠাৎ কি হল , এই তো বললো ঘুরে এসো, চা করছি । তাড়াতাড়ি হাত মুছে ফোনটা দেখে আমিও বোল্ড আউট ।
মিসড কল - " মধুচক্র " ।
মনে পড়ে গেল । আমি হাসতে হাসতে গড়াগড়ি ।
- আরে চক্ররেলে এক বুড়োর থেকে মধু কিনেছিলাম না দুতিনবার, সে নাম্বার দিয়েছিল । নাম বলেনি । আমি এই নামে সেভ করে রেখেছিলাম । কি কান্ড ।
- আর কোন নাম খুঁজে পেলে না । আমি প্রায় কেঁদে ফেলছিলাম ।
- তুমি বড়ো সন্দেহবাতিক ।
- ভুলে যেও না তোমার বয়স পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছে । এই বয়সে যত ভীমরতি ধরে ।
জোড়া সার্জিকাল স্ট্রাইক । প্রথম বয়স, দ্বিতীয় চরিত্র ।
- পঞ্চাশ আবার বয়স নাকি, আর ভগবান প্রত্যেক পুরুষ প্রাণীর জিনে পলিগ্যামী ভরে ভরে দিয়েছে । জানা নেই ?
- তোমার ওসব পলিটেকনিক উত্তর আমার চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে না । বলে দিলাম । চা নিয়ে ঐ ঘরে বসে খাও , যাও ।
খুব দুঃখ হল, শুকনো কেস খেলাম বিনা দোষে । টেবিলে চা টা রেখে প্রথমেই বুড়োর নাম্বার ডিলিট করলাম । তারপর প্রতিজ্ঞা করলাম কোনদিন চক্ররেলে চড়বো না । তবু মন শান্ত হচ্ছে না । জীবনে কোনদিন মধু খাবো না, প্রতিজ্ঞা । উনি চা নিয়ে এসে পাশের চেয়ারে বসলেন । চোখ মুখ শান্ত ।
- কতদিন পলির খবর পাই না । কেমন আছে, কোথায় আছে, কে জানে ।
- কে পলি ?
- ওমা, ভুলে গেলে? পলি-মলি দুই বোন । আমার সাথে পড়তো । বিয়ের পর কত এসেছে এই বাড়িতে । মনে নেই ?
- এবার মনে পড়েছে । পলি ছিল খুব রোগা আর মলি খুব শান্ত । আমি নাম দিয়েছিলাম " পলিথিন " আর "মলিকুল" ।
- খুব বাজে করে ছিলে । তারপর আসাও কমিয়ে দিয়েছিল ।
- জানি না এখন মোটাসোটা হয়েছে কিনা ।
- ঐ আবার তোমার মধুগ্যামী না কি শুরু হয়ে গেল ।
এবার আমি উঠে তোয়ালে নিয়ে সোজা বাথরুমে ঢুকে গেলাম । দিনটাই খারাপ যাবে । দু তিন মগ জল ঢেলে মন শান্ত হল ।বোধহয় একটু জোরেই বলে ফেলেছি " সবই মায়া, সবই অনিত্য " । বাইরে থেকে গলা ভেসে এল - এই মায়া মিত্রটা কে ? আমি হাপুস হুপুস করে জল ঢালতে থাকলাম I
#সংগৃহীত
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
# অণুগল্প
রোজকার মতোই বাগবাজারের মায়ের ঘাটের কাছে বসেছিল বিজলী। ওর মাঈ এর পাশটিতে, এক্কেবারে ঘেঁষে। ও এখানে বসে ভিক্ষা করে। কখনও জলে পয়সা পড়ে গেলে কুড়িয়ে আনে, ওর বয়সী আরও কয়েকজনের সাথে দাপাদাপি করে। আবার, ঘাটে ঘুরতে আসা কারো গঙ্গাজল লাগলে তুলে এনে দেয়। তাঁরা দু'চার টাকা দেন। এভাবেই, বিজলী আর ওর মাঈ এর চলে।
রবিবার আজ, তাই লোকজনের ভিড় হয় এখানে। বাবুরা, দিদিমণিরা হাওয়া খেতে আসে বিকেলের দিকে। কিন্তু আজ এত্ত গরম, তাই কেউ আসবে কিনা সন্দ! আগুনের মতো তাপ যেন রোদ্দুরে। মাঈ বিজলীর মাথার ওপর নিজের ছেঁড়াখোঁড়া শাড়িটা ঢাকা দিয়ে দিল,যাতে তাপ কম লাগে!
গঙ্গার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে একটু ঝিমুনি আসছিল বিজলীর। হঠাৎ কানে একটু শোরগোল এলো।
তাকিয়ে দেখে, একজন বাবু আর একজন দিদিমণি, একটা বড় বস্তায় করে কিছু বিলি করছেন। দিদিমণিটা আবার চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলছেন "সবাই পাবেন। একটু ধৈর্য্য ধরুন। আমরা যাব সবার কাছে। আপনারা বসে থাকুন।"
দু' চারজনের পরে ওঁরা এলেন বিজলী আর মাঈ এর কাছে। কিছু চাল-ডাল আর একটা পঞ্চাশ টাকার 'লোট' দিলেন বিজলীর মাকে। তারপর বললেন "আমাদের মা মারা গেছেন গতমাসে। আজ মায়েদের দিন। তাই আমরা দুই ভাই-বোন ওঁর জন্য তোমাদের সবাইকে এই সামান্য জিনিস গুলো দিচ্ছি। আমাদের মা ভালবাসতেন..."। বলে দিদিমণিটা চলে যাবার আগে বিজলীর দিকে একটু তাকালেন। আহা, কেমন মা দুগ্গার মতো মুখ দিদিটার!
"অ্যাই, চকোলেট খাবি?" বলে টুক করে একটা ছোট্ট চকোলেট বিজলীর ফ্রকের ওপর দিয়ে চলে গেলেন।
খপ করে হাত দিয়ে ঢেকে ফেলল চকোলেট টা বিজলী।
তাড়াতাড়ি তাকিয়ে দেখে, দিদিটা ওকেই দিয়েছে শুধু, আর ক্কাউকে দেয় নি।
মাঈর পাশ থেকে উঠে আসে ও। সবার সামনে খাওয়া যাবে না! এই প্রথম এই রংচঙে চকোলেট খাবে ও! কী মজা!
রেললাইনের ধারে চলে এলো ও। এখানে তিন ভাইবোন মাটির মূর্তি হয়ে পাশাপাশি বসে থাকেন। বেশি কেউ আসে না এইদিকে। ঠাকুরমশাই পুজো করেন দুবেলা। বাকিসময় খালিই থাকে। মন্দিরের লাল মেঝেতে বসে চকোলেট টা খুলে কামড় বসাতে যাবে, হঠাৎ চোখ পড়ল ঠাকুরের দিকে।
আর, তক্ষুণি মনে পড়ল ওরা চাল-ডাল পেয়েছে। ইঁটের আগুনে মাঈ রান্না করবে। ওরা ভাত খাবে আজ!
যারা এইসব দিল... তারাও তো ভাইবোন। আহা, এই ঠাকুরেরাও তো তাই! আর আজ নাকি মায়েদের দিন। তবে ও একা কেন এটা খাবে?
"এই যে ঠাকুর মাঈ... আজ তো তোমার দিন, তাই তোমাকে এটা দিলাম। তোমার ভাইদের দিয়ে খেও।" বলে, মূর্তির কাছে ওটা রেখে দিয়ে লাফাতে লাফাতে বেরিয়ে এলো বিজলী।
সবসময় হাত পেতে সবকিছু নেয়... আজ প্রথম ও কিছু দিতে পেরেছে...
কী আনন্দ!
বিজলীটা বড্ড ছোট... মাটি মাটি চুলের মাটি মাখা মেয়ে... নইলে বুঝতে পারত আজ সেই ভাইবোনেরাও বড্ড খুশি।
ঈশ্বর থেকে 'মা' হতে পেরেছেন যে!
ঈশ্বর থেকে 'মানুষ' হতে পেরেছেন যে!
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
*আত্মহত্যা*
● বি.কম পাশ ছেলেটি *ঘুষ দিয়ে* চাকরি না কিনে, পাড়ার মোড়ে মুদির দোকান খুলেছে। এক কেজি চিনি কিনতে আসা পাড়াতুতো কাকু পান চিবোতে চিবোতে যখন বলে,
- “কি করলি জীবনে বি.কম পাশ করে? শেষে মুদিওয়ালা হলি? হেহেহেহে। আমার ছেলেকে দেখ! প্রাইভেট সেক্টরের অফিসার। আর তুই বসে বসে চিনি মাপছিস।”
সেই মুহুর্তে চিনি মাপতে মাপতে ছেলেটি নিজের ব্যার্থতায় মরে গেছিল -এটাও আত্মহত্যা। কিন্তু আমরা কেউ এই মৃত্যুর খবর পাই না।
● বিয়ের মাত্র একমাসের মাথায়, বরের হাতে দ্বিতীয় চড়টা খাওয়ার পর মেয়েটি তার মা'কে ফোন করে বলেছিল,
- “মা, আমার বর ভালো মানুষ নয়। আমায় তুমি নিয়ে যাও।”
কিন্তু যখন মায়ের থেকেই উত্তর আসে,
- “মেয়েমানুষ একটু মানিয়ে নে। ছেলেদের একটু রাগ বেশী হয়। আর তোর বর তো সরকারি চাকরি করে, অত মাইনে। একটু মানিয়ে নে।”
সেদিন নিজের মায়ের মুখে একথা শুনে লজ্জায় মেয়েটি মরে গেছিল -এটাও আত্মহত্যা। কিন্তু আমরা কেউ এই মৃত্যুর খবর পাই না।
● শ্যামলা রঙের মেয়েটি একখানা টুকটুকে লাল রঙের একটা শাড়ি পড়ে পাড়ায় বেরোতেই পাশের বাড়ির ফর্সা বৌদি বলে ওঠে,
- “মনা, তোর গায়ের রঙ্ বড্ড চাপা। লাল তোকে মানায় না। গিলে খাচ্ছে একদম। হালকা রঙ্ পরে আয়।”
ঘরে এসে নিজের শ্যামলা মুখটার দিকে তাকিয়ে মেয়েটির যখন মনে হয়েছিল কেন সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলা যায় না এই কালো রঙ্, ঠিক সেই মুহুর্তে মেয়েটির মরে গেছিল -এটাও আত্মহত্যা। কিন্তু আমরা কেউ এই মৃত্যুর খবর পাই না।
● বন্ধুদের গ্রুপে চিকেন পিৎজা উইথ এক্সট্রা চিজ্ অর্ডার দেওয়ার পর, সবথেকে গোলগাল মেয়েটিকে নিয়ে রসিকতা হচ্ছিল,
- “তুই পিৎজা বাদ দিয়ে একটু জল খেয়ে দেখ যদি রোগা হোস। আমার তো মনে হয় তুই জল খেলেও মুটিয়ে যাবি।”
ঠিক সেই মুহুর্তে মেয়েটির মনে হয়েছিল সে বেমানান বন্ধুদের ভীড়ে, সে একা, হাসির খোরাক -মরে গেছিল মেয়েটি -এটাও আত্মহত্যা। কিন্তু আমরা কেউ এই মৃত্যুর খবর পাই না।
•
Posts: 168
Threads: 2
Likes Received: 364 in 107 posts
Likes Given: 390
Joined: Jun 2022
Reputation:
51
মৃত্যু মধুর !
দু মিনিট যাদের কাছে বসার সময় ছিলনা !
আজ তারা আমার কাছে বসার জন্য অধীর !
কেউ কোনও উপহার দেয়নি সারাজীবন
আজ সবাই ফুল দিয়ে আমাকে ঢাকতে চাইছে !
একটা হাত ধরার জন্য আকুল ছিলাম চিরকাল !
আজ সবাই আমাকে কাঁধে নেবার জন্য উতসুক !
কেউ দু কদম হাঁটে নি আমার সাথে !
আজ আমার শেষ যাত্রায় সবাই পা মিলিয়েছে !
আজ জানতে পারলাম মৃত্যু কত মধুর !
শুধু এতকাল জীবন নিয়েই লড়ে গেছি!
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
পদক্ষেপ
মুখে বেশ শান্ত হয়ে থাকলেও মনের মাঝে ঝড় বইছে মুদ্রিকার।
কাল রাতেও এক্কেবারেই ভাল ঘুম হয়নি।
খালি নিজেকে দোষী মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেন কিছুতেই সম্পর্কটা থেকে বেরোতে পারছে না ও? আর যতবার এটা ভাবছে - বুকের ভেতরটা যেন জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে ওর।
যখন এক অফিসে কাজ করত আয়ানের সাথে - ভাল লাগত আয়ানকে। সদ্য বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে বাবার বন্ধুর কাম্পানিতে 'ম্যানেজমেন্ট ট্রেনি' হিসেবে জয়েন করেছিল আয়ান। সেখানেই সেলসে ছিল মুদ্রিকা। কাজের সুবাদেই কথাবার্তা হত। তারপর দুজন দুজনকে সোশ্যাল মিডিয়াতে ফলো করত। তখনও শুধুমাত্র কলিগ ছিল দুজন। তারপর তো আয়ান ওর বাবার কোম্পানিতেই জয়েন করে নিল। মুদ্রিকার কয়েকদিনের ভাললাগা ওখানেই থেমে গেছিল। সেলসের চাকরি, অবিরাম টার্গেট, স্ট্র্যাটেজি নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকত। এরমধ্যেই দুহাজার কুড়ির সেই বিখ্যাত বাজে সময়টা এলো। সারা বিশ্ব বাড়িতে বন্দী! ওয়ার্ক ফ্রম হোম চললেও ওর কাজের যা ধরণ, তাতে বাড়ি থেকে কাজ করা সেভাবে সম্ভব না - আর সেই ফাঁকেই সোশ্যাল মিডিয়া সাইট গুলোতে সারাক্ষণ সময় কাটাতো মুদ্রিকা। সারাদিন কাজ নেই, তাই রাতে ঘুম ও আসতে চাইত না। তখন আরও বেশি করে ফেসবুক-ইন্সটাগ্রাম! তেমনি এক রাতে ওকে বেশ অবাক করে দিয়েই মেসেজ এসেছিল আয়ানের "হেই! অ্যাওয়েক?" বেশ একটু অবাক হলেও "ইয়েস" লিখে পাঠিয়েছিল ও। আর, মনে মনে ভেবেছিল "বোকারাম! দেখছিস অনলাইন আছি - ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চ্যাট করছি নাকি!"
"মুঝে ভী নিন্দ নেহি আ রাহি হ্যায়!" আয়ানের মেসেজ।
"হোয়াই?"
"তুম যো জাগি হুয়ি হো!"
আচ্ছা! ফ্লার্ট করছে আয়ান আগরওয়াল!
তা, কোন মেয়ে না চায় একটু যোগ্য পুরুষের অ্যাটেনশান পেতে? তাই মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছিল মুদ্রিকার। আর কথা থেকেই তো কথা বাড়ে। দুজনের মধ্যে অনেক কথাই হয়ে গেল। মুদ্রিকা জানতে পারল আয়ানের ওর গালের টোলটা খুব ভাল লাগে বরাবর। আর আয়ানও জানতে পারল ওর স্মার্টনেস মুদ্রিকার পছন্দ ছিল আগে থেকেই।
ঘি আর আগুন এক জায়গায় হলে যা হয়, তাই হয়েছিল দুজনের। চ্যাট পেরিয়ে ভিডিও কল। ভিডিও কল পেরিয়ে দেখা হওয়া। প্রথম 'ডেট' এই অনেকটা কাছে চলে এসেছিল দুজনেই। তারপর মুদ্রিকা চেয়েছিল বেরিয়ে আসতে, ভুলে যেতে। কিন্তু পারেনি। ভবিষ্যতে কিছু হবার নেই - দুজনের বেড়ে ওঠা, পারিপার্শ্বিক পরিমন্ডল সবটুকু আলাদা জেনেও কী একটা কারণে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে আটকে পড়েছিল আয়ানের সাথে। আর, যখন দেখা হত দুজনের, নিভৃতে, আয়ানের কাছে ও হয়ে উঠত এই পৃথিবীর স্বপ্নকন্যা। ওই মুহূর্তগুলো বড্ড দামী ছিল ওর কাছে। আয়ানের স্পর্শ, আশ্লেষ মনে পড়লেই পেটের ভিতর যেন প্রজাপতি উড়ত ওর। তবে, হারানোর ভয়টাও ছিল। বারবার মনে হত "ওর বিয়ে হয়ে গেলে কি হবে?" আয়ানকে জিজ্ঞেস করলে ও হেসে বলত "আব সে দিমাগ খারাব মত করো। লেট আস এনজয় দিস মোমেন্ট। দিস ইন্টিমেসি।" আর, সবটা ভুলে যেত ও। স্বীকার করতে বাধা নেই, একলা ঘরের কোণে সেই 'ইন্টিমেসি'র কথা ভেবে শিহরিত হয়েছে ও বহুবার।
এভাবেই চলছিল। নিজেকে বোঝাত মুদ্রিকা "এটা ভালবাসা না, মোহ। আমাকে পারতে হবে!" কিন্তু আয়ানের ফোন এলেই পাগল হয়ে যেত ও। আবার সেই শিহরণ... সেই ভাললাগা...
মাসখানেক আগে আয়ান নিজে থেকেই ফোন করে একথা, সেকথার পরে জানাল ওর বাবা বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন ওর। মে মাসেই বিয়ে।
এমন একটা দিন যে আসবেই, জানত মুদ্রিকা। তবু, কী যে কষ্ট হচ্ছিল! চোখ ভেসে যাচ্ছিল জলে। আর, নিজেকেই বারবার দোষ দিয়ে ভাবছিল "কেন করলাম এরকম? এরচেয়ে হয়ত অন্য কারো সাথে আলাপ হলে ভাল হতো..."।
এতসব ভেবেও বারবার স্টক করছিল আয়ানের প্রোফাইল মুদ্রিকা। ওর ছবি দেখবে বলে। 'ওদের' ছবি দেখবে বলে। আর, 'করব না করব না' করেও ফোন করেছিল আয়ানকে মুদ্রিকা আরেকবার। আয়ান খুব ভাল ভাবে কথা বলেছিল ওর সাথে। বারবার বলছিল "আই মিস ইউ" আর তাতেই গলে যাচ্ছিল ও, ভিতরে ভিতরে। আয়ানের বিয়ের ছবি সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখে কষ্টটা বেড়ে গেছিল। ঠিক কষ্ট না - শূন্যতা। বারবার হোয়াটসঅ্যাপের ডিপি দেখছিল আয়ানের। আর কাল মেসেজ করেছিল আয়ানকে "কনগ্যাচুলেশানস" লিখে। আর প্রায় সাথে সাথেই ভিডিও কল করেছিল আয়ান। আর সেই কল থেকেই আবার আগের মতো সবকিছু... টেকনোলজির সৌজন্যে কাছে আসা...
কিন্তু আজ সকাল থেকেই নিজেকে খুব ছোট লাগছে ওর। বারবার মনে হচ্ছে আরেকজন মানুষকেও আঘাত করল, তার অজান্তে। কিন্তু, বেরোতে পারল না কিছুতেই। ছিঃ! এত ঠুনকো ও! আবার কিভাবে বেরোবে সেটাও বুঝতে পারছিল না ও... এতটুকুও মনের জোর নেই যেন ওর...
অলস হাতে নিউজপেপারটা তুলে নিল মুদ্রিকা। ইচ্ছে করছে না তাও একটু চোখ বোলানো। মনকে একটু ঘোরানোর চেষ্টা আর কি!
হঠাৎ চোখে পড়ল একটা খবর। একটি মেয়ের কথা। সাহসিনী মেয়েটির চাকরি পাবার জন্য তার 'স্বামী' তার ডান হাত কেটে দিয়েছে। আর মেয়েটি সামান্য সুস্থ হয়েই বাম হাত দিয়েই লেখার চেষ্টা করছে। কারণ মেয়েটির নিজের প্রতি ভরসা আছে। মেয়েটি জানে, ওকে পারতে হবে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া একটি মেয়ে, তাও সে কত আত্মবিশ্বাসী।
আচ্ছা, মুদ্রিকাও তো পারে এমনি হতে? ও তো ভাল চাকরি করে। বাবা আছেন। সম্ভাবনা আছে ওর মধ্যে যথেষ্ট। একটা টক্সিক, না হতে পারা সম্পর্ক, একটা ঠকানোর সম্পর্ক থেকে বেরোতে পারবে না?
পারবে... পারবে... পারতেই হবে...
বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস নেয় মুদ্রিকা। তারপর আয়ানকে ব্লক করে দিল।
নিজের জন্য এইটুকু পদক্ষেপ নেওয়াতেই যে কী অপার শান্তি...
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
নিরুদ্দেশ। সেই কাকিমা পিসিমা মাসিমারা। যারা এপাড়া থেকে ওপাড়ায় পাঠিয়ে দিতো লাউশাকের চচ্চড়ি নাহলে মোচার ঘন্ট নাহলে চালতার টক। "দিদিগো - বানিয়েছিলাম। খেয়ে দেখো"...
নাঃ। আর আসে না। যদি পথ ভুলে আসেও - দিদি তার সন্তানকে জ্ঞান দেবেন - "আঃ! আগে শুঁকে দ্যাখ - ফলিডলের গন্ধ কিনা.."
নিরুদ্দেশ। সেই তরুণেরা যুবকেরা। যারা ৭০ ছুঁইছুঁই বৃদ্ধকে বাজারভর্তি ব্যাগ হাতে হাঁটতে দেখে দৌড়ে এসে ব্যাগ কেড়ে নিয়ে নানান গল্প করতে করতে দাদুর বাড়ির দাওয়ায় তুলে দিয়ে আসত বাজার ঠাসা ব্যাগ।
নাঃ। এখন ছবিটা আলাদা। সেই বুড়ো আছে। হাতে বাজারঠাসা ব্যাগ আছে। স-বাইক তরুণ বা যুবক আছে। সাথে বাইকের হর্ণ... "দাদু ঘাটে যাবার শখ হয়েছে? সরতে কি হয়? কানে কী হয়েছে? ন্যাবা?"
নিরুদ্দেশ। সেই কিশোর তরুণেরা। গাছের আম ধ্বংস করা রোদেলা দুপুরে পুকুর তোলপাড় করা মাচায় আড্ডা দিতে দিতে গার্লস কলেজের মেয়েদের ঝাড়ি মারা কিশোর তরুণেরা? যারা অপরিচিত তিন পাড়া দূরের কেউ মারা গেলেও স্বেচ্ছা শববাহক।
নাঃ তারা আছে। আছে তাদের হাতে মোবাইল। আছে তাতে তাদের শতেক বিনোদন। পাশের পাড়া তো দূর, পাশের বাড়ি বা নিজের বাড়ির কেউ মারা গেলেও তারা তাদের দামী ফোন থেকে "শববাহীযান" বুক করে দেয় - কোমরে গামছা বাঁধে না।
নিরুদ্দেশ। সেই আঞ্চলিক নেতারা। car নয়, ঢিগজিগ ঢিগজিগ বুলেট নয়, স্রেফ সাইকেল - নাহলে পায়ে হেঁটে ঘামে ভেজা পাঞ্জাবী আর ব্যাগ কাঁধে - ভোট ফোটের সময় নাহওয়া নরম বিকেলে দুয়ারে দুয়ারে এসে জানতে চাইতেন - ডাক্তার কী বলছে? সবজি চাষে মাজরা পোকা কতটা ক্ষতি করছে? বড়ো ছেলেটা ডিভিশনে খেলতে যাচ্ছে তো? ঢকঢক করে কাচের গ্লাশে জল খেতেন। সঙ্গে দুটো বাতাসা। তৃপ্তি করে।
নাঃ। এখনও নেতারা আছেন। তবে নেতাদের কাছে পৌঁছাতে আগে তার পিএর কাছে পৌঁছাতে হয়। পিএর কাছে পৌঁছাতে আগে দাদার কাছে পৌঁছাতে হয়। দাদার কাছে পৌঁছাতে আগে হাতে পতাকা ধরতে হয়।
নিরুদ্দেশ আমার এক্কাদোক্কা চুকিতকিত রামলীলা ঠাকুরমার ঝুলি ঠাসা শৈশব - নিরুদ্দেশ আমার প্রিয় মাস্টারমশাই - যিনি বলতেন "তোর সার্টিফিকেট দেখে যদি বুঝতে হয় তুই শিক্ষিত - সেই সার্টিফিকেটের মাথায় মারি ঝাঁটার বাড়ি"। নিরুদ্দেশ আমার পাড়ার মাচা - যেখানে রবীন্দ্রনাথ থেকে পিকাসো - নন্দীগ্রাম থেকে শর্মিলা চানু - পিটিউষা থেকে গ্যাটচুক্তি ডাংকেল প্রোপোজাল তুমুল তর্কাতর্কিতে উত্তেজনা মাখাত। নিরুদ্দেশ আমার পরাণ ভাইয়ের ভাটিয়ালি - নিরুদ্দেশ আমাদের জল ফেলে জল আনতে যাওয়ার কলতলা - নিরুদ্দেশ আমাদের লাইব্রেরীর বই এর ফাঁকে গোঁজা লাভলেটারের নিকষিত হেম প্রেম - নিরুদ্দেশ আমাদের ভোরের আজান আর শুকসারীর গান মিশে যাওয়া বাতাসসুধা....
নিরুদ্দেশ - নিরুদ্দেশ - নিরুদ্দেশ - আমার আমি - আমার পরিবার - আমার সন্তান- আমার পাড়া - আমার গ্রাম - আমার রাজ্য - আমার স্বদেশ.... সব নিরুদ্দেশ।
সংগৃহীত.
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
উন্মত্ত বাসনার হলাহল...উত্থিত পুরুসাঙ্গের ডগায়...
আগ্নেয়গিরির লাভার ন্যায় উদ্ভাসিত......
তোমার শরীরের পরশে পেতে চায় ঝর্নার বেগ !
ক্ষুদিত জঠরে জ্বলে হাজার হাজার ক্ষুদা
প্রান পেতে চায় সহস্র না বলা কথা...
গুমরে মরে অনেক না পাবার বেদনার আবেগ !!
প্রেম কি সত্যিই ছিল কোনোদিন রক্তাক্ত পিঞ্জরে?
উদ্ভ্রান্ত কামনার জ্বালায় তোমার শরীরের স্নিগ্ধতা...
নগ্ন যৌবনের উদ্দাম প্রলোভন আর মুখর বিবেক !
- ভারতীয় দাদা -
Posts: 168
Threads: 2
Likes Received: 364 in 107 posts
Likes Given: 390
Joined: Jun 2022
Reputation:
51
(23-06-2022, 02:14 PM)ddey333 Wrote: উন্মত্ত বাসনার হলাহল...উত্থিত পুরুসাঙ্গের ডগায়...
আগ্নেয়গিরির লাভার ন্যায় উদ্ভাসিত......
তোমার শরীরের পরশে পেতে চায় ঝর্নার বেগ !
ক্ষুদিত জঠরে জ্বলে হাজার হাজার ক্ষুদা
প্রান পেতে চায় সহস্র না বলা কথা...
গুমরে মরে অনেক না পাবার বেদনার আবেগ !!
প্রেম কি সত্যিই ছিল কোনোদিন রক্তাক্ত পিঞ্জরে?
উদ্ভ্রান্ত কামনার জ্বালায় তোমার শরীরের স্নিগ্ধতা...
নগ্ন যৌবনের উদ্দাম প্রলোভন আর মুখর বিবেক !
- ভারতীয় দাদা -
অদ্ভুত সুন্দর বাস্তবের আয়না !
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
*রবীন্দ্ররচনাবলী ও একটি পুড়ে যাওয়া ব্রেসিয়ার*
*উ ত্ত ম দ ত্ত*
কলেজের সমস্ত পরীক্ষায় প্রথম হয়েছি আমি। কলেজেও আগুন আগুন মার্কশিট ছিল। কাগজে, দূরদর্শনে কিছুদিন হৈচৈ হয়েছিল। তবুও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ক্লাসরুমে কেউ ভালোবেসে আমার পাশে বসতে চায়নি একদিনও।
সমস্ত ফার্স্ট বেঞ্চ দখল করে বসে থাকত সোনালি মেয়েরা। ঠিক পিছনের বেঞ্চে তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব বাতিস্তম্ভ ছিল। শুধু আমারই কোনো প্রেমিক ছিল না। কোনো বাতিঘর ছিল না।
কেবল একজন ছাড়া বাকি অধ্যাপকেরাও ছিলেন আশ্চর্য রূপমুগ্ধ। ফার্স্টবেঞ্চের বাইরে যেন আর কোনও ছাত্রছাত্রী নেই। আমার দিকে তাঁরা ফিরেও তাকাতেন না।
লাস্ট বেঞ্চের এক কোণে একা একা বসে থাকতাম আমি। ক্লাসনোট নিতাম। স্যারেরা বিরক্ত হবেন জেনেও মাঝে মাঝে দুটি একটি প্রশ্ন করতাম। আর কখনো মন খারাপ হলে ক্লাসরুমের জানলা দিয়ে দেখতাম, দূরের পাহাড়, ঝাউবন... নীল কুয়াশায় ঢাকা আমাদের লিমা বস্তি।
মনে হত দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি, ভুট্টাখেতে কাজ করছে আমার বাবা। চা বাগান থেকে ফিরে মা রাইশাক আর বুনো মাশরুম তুলে কোঁচড়ে বেঁধে রাখছে। ছোটো ভাই অর্জুন একপাশে গুলতি আর তীর-ধনুক নামিয়ে রেখে মাছিদের সঙ্গে
পান্তাভাত খাচ্ছে নিশ্চিন্ত আরামে।
সামনে কদমফুলের মতো ১১ টা ছোটো-ছোটো বাচ্চা নিয়ে চরে বেড়াচ্ছে লাইলং নামের চিনা মুরগিটা। ভাইয়ের একটাই ভয়, কখন বেজি অথবা চিল এসে ছোঁ মেরে নিয়ে যাবে ফুটফুটে বাচ্চাগুলোকে।
কালো রোগা বাংরি নদীর মতো নিরিবিলি সাঁওতাল মেয়ে আমি। স্তন নেই। ছোটোবেলায় জ্বলন্ত মাটির উনুনে পড়ে গিয়ে স্তনগ্রন্থি পুড়ে গিয়েছিল আমার। তিনদিন জ্ঞান ছিল না। মা বলত, তোর বুকে আর দুধ আসবে না।
আমি মায়ের কথায় হাসতাম। দুধ দিয়ে কী হবে মা? সে তো বাজারেই কিনতেই পাওয়া যায় ।
আমার কথা শুনে ঝাউবনের মাথায় বৃষ্টি নামত। লালঝুঁটি মোরগেরা মাটিতে ছিটিয়ে দেওয়া রেশনের গম খেতে খেতে একবার মুখ তুলে দেখত। তারপর : 'কঁকরো-ক্রো- ক্রোঁওওও' বলে ডানা ঝাপটে পাহাড়ের গায়ে প্রবল প্রতিধ্বনি তুলে দিত।
তখন কি জানতাম, মেয়েদের মাথার চাইতে স্তনের দাম এত বেশি? মেধার চাইতে গায়ের রঙ আর নিতম্বের গঠন এত গুরুত্বপূর্ণ? উজ্জ্বল মার্কশিটের চাইতে সুন্দর মুখশ্রী এত ম্যাগনেটিক?
ছেলে বন্ধুরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করত আড়ালে। যেদিন শুধু কচুর শাক খেয়ে ক্লাসে আসতাম সেদিনও ওরা আমার গায়ে ইঁদুর-পোড়া গন্ধ পেত। যেদিন শুধু ঘাটো সেদ্ধ খেয়ে অথবা উপোস করে ক্লাসরুমে গিয়ে বসতাম সেদিনও ওরা আমার ওড়নায় সাপের মাংস আর বাসি হাঁড়িয়ার দুর্গন্ধ পেত।
আড়চোখে একবার আমার ফ্ল্যাট বুক দেখে নিয়ে
চর্যাপদের প্যারডি করে বলত : 'নীচু নীচু পাবত তহি বসহি শবরী বালি।'
শুধু ওই এক তরুণ অধ্যাপক, ধর্মে ক্রিশ্চিয়ান, দেবতাদের মতো রূপবান পুরুষ, একমাথা ঈষৎ সোনালি আর কোঁকড়ানো চুল, শুধু শুক্রবারেই যাঁর ক্লাস থাকত, আমার সহপাঠিনীরা প্রতিদিন যাঁর প্রেমে পড়ত, তিনি ক্লাসে এসেই একেবারে শেষ থেকে শুরু করতেন : ' কৃষ্ণকলি, আজ কেমন আছো? গত শুক্রবার কোনখানে শেষ করেছিলাম, মনে আছে?'
আমি উঠে দাঁড়িয়ে স্যারের প্রশ্নের উত্তর দিতাম। আর সমস্ত ক্লাসের চোখ ঘাড় বাঁকিয়ে আমাকে দেখত। কেউ মুচকি হাসত, কেউ চোখ মেরে অসভ্য ইঙ্গিত করত।
স্যার আমাকে কৃষ্ণকলি বলে ডাকলে আমার ভীষণ লজ্জা করত। ভালোও লাগত। মনে মনে গেয়ে উঠতাম :
'এমনি করে কালো কাজল মেঘ
জৈষ্ঠ্যমাসে আসে ঈশান কোণে।
এমনি করে কালো কোমল ছায়া
আষাঢ়্মাসে নামে তমাল বনে।
এমনি করে শ্রাবণ-রজনীতে
হঠাৎ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে।'
ক্লাসের শেষে মেয়েরা টিপ্পনি কাটত :
গরুর গাড়ির আবার হেডলাইট!
জাঙিয়ার আবার বুকপকেট!
গুপ্তকেশের আবার ইউ ছাঁট!
ছেলেরা সেসব শুনে হাসতে হাসতে ঘাসের উপরে গড়িয়ে পড়ে বলত :
লেজ নাই কুত্তির টাইগ্রেস নাম!
আরশোলা আবার পাখি!
নিমাইয়ের নাম কৃষ্ণকলি!
বাঁজার ভ্যানিটি ব্যাগে আবার কনডোম!
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
বাড়ি ফিরে এক একদিন আমার মরে যেতে ইচ্ছে করত। রাতের অন্ধকারে নির্জন পাহাড়ের খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকতাম একা একা। নীচে দূরে জোনাকির মতো আলো জ্বলছে ছোটো ছোটো টোলায় ও বস্তিতে। পাহাড়ের খাঁঁজে খাঁজে সজল অতিথির মতো মেঘের টুকরো থমকে আছে। মৃত্যুর সাত সেন্টিমিটার দূরে দাঁড়িয়ে আমার মনে পড়ত সেই মার্কিন কবির কথা, যিনি লিখেছিলেন :
'Danger hides in beauty and beauty hides in danger.'
এভাবেই আমার আর মরা হয় না। কতবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমার কোনো না কোনো কবিতার কথা মনে পড়ে গেছে। পাহাড় থেকে নীচের ঝর্ণায় ঝাঁপ দিতে গিয়ে সহসা পাহাড়ি জ্যোৎস্নার অলৌকিক রূপ থেকে থমকে দাঁড়িয়েছি।
ভেবেছি, কেন মরব আমি? একটা পতঙ্গও তো বাঁচতে চায়। জিপের চাকায় থ্যাঁৎলানো একটা বনবেড়ালও বেঁচে থাকতে চায়। সাংলিং টোলার পঁচাশি বছরের কুষ্ঠরোগাক্রান্ত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীটিও আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে চায়।
তাহলে আমি কেন বারবার মরে যেতে চাইছি এভাবে? শুধু দুটো স্তন নেই বলে? মানুষের মৃত্যুর আগেই যে বস্তুটি যাবতীয় ঐশ্বর্য হারিয়ে মরে যায়!নাকি শুধু গায়ের রং কালো বলে? শুধু দেখতে ভালো নই বলে? শুধু এক অন্ত্যজ অনার্য মেয়ে বলে?
নাকি দিনের পর দিন কয়েকজন ক্লিন্ন রুচির অশিক্ষিত অসুস্থ সহপাঠীর বিকৃত বিদ্রূপের শিকার হয়েছি বলে?
ভাই এসে প্রতিবার মৃত্যুর মুখ থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যায় আমাকে। মা ব্যাকুল হয়ে জানতে চায় : কী হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে তোকে?
তারপর মারাংবুরুর থান থেকে দুটো ফুল নিয়ে এসে আমার মাথায় ছুঁইয়ে দিয়ে বিড়বিড় করে স্বস্তিমন্ত্র উচ্চারণ করে।
বাবা ঘরের এক কোণে আগুনের পাশে বসে বিষণ্ণ গম্ভীর মুখে মদ খেতে খেতে গলায় ঝোলানো রুপোর ক্রুশে একবার চুম্বন করে, একবার আমাকে দেখে।
পরদিন শুক্রবার। মা বলল : কাল যেতে হবে না ক্লাসে। বাড়িতে শুয়ে থাক। দুটো দিন বিশ্রাম নে। শরীর, মন ভালো হলে যাস।
মা জানে আমার পিরিয়ড চলছে। আজ সেকেন্ড ডে। এসময় প্রচন্ড ব্যথা হয় আমার তলপেটে। কিন্তু কাল আমি ক্লাসে যাবই। বি এম স্যারের ক্লাস আছে। ১০২ জ্বর নিয়েও তাঁর ক্লাসে গেছি আমি।
মাঝে মাঝে নিজেকেই প্রশ্ন করি : গত একবছর ধরে এত বিষণ্ণ অন্ধকারেও আমি যে মরতে পারিনি, সে কি শুধু ওই তরুণ অধ্যাপকের জন্য?
পরদিন শরীর খারাপ নিয়েই ক্লাসে গেলাম। মা একটা কাচের বোতলে ভেষজ ওষুধ মেশানো গরম জল ভরে দিয়েছে। এতে ব্যথা কমে।
দুপুর দেড়টায় বি এম স্যার এলেন। হাতে একটা লম্বা কাগজের তালিকা। গত সপ্তাহে আমাদের ইন্টারনাল এসেসমেন্ট আর ডিসার্টেশান এগজাম হয়েছিল। স্যার এসেই ঘোষণা করলেন : তোমাদের পঁয়ষট্টি জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে জাগরী হেম্বরম। আমাদের কৃষ্ণকলি।
সমস্ত ক্লাস তখন আমার দিকে তাকিয়ে। স্যার নীচে নেমে এসে আমার মাথা ছুঁয়ে খুব প্রশান্ত ভঙ্গীতে বললেন : God bless you. I' m really proud of you.
সেই মুহূর্তে এক অপার্থিব আনন্দে আমার দুচোখ জলে ভরে উঠল। নীচু হয়ে বসে প্রণাম করলাম স্যারকে। মনে মনে ভাবছিলাম : কাল যদি আমি পাহাড় থেকে ঝাঁপ দিয়ে মরে যেতাম তাহলে এই স্বর্গীয় মুহূর্তটি আর দেখা হত না। আমার স্বপ্নের অধ্যাপককেও পা ছুঁয়ে আর প্রণাম করা হত না।
ক্লাসের শেষে ভেরোনিকা আচার্য নামের একটি মেয়ে আমাকে খুব অবাক করে দিয়ে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বলল : কংগ্রাচুলেশন!... কাল আমার জন্মদিন। বন্ধুরা সবাই আসবে বাড়িতে। তুমিও এসো। আগে বলা হয়নি তোমাকে। স্যরি।
আমি সচরাচর কারো বাড়িতে যাই না। কেউ ডাকেও না আমাকে। তবু পরদিন সন্ধ্যায় খুঁজে খুঁজে পৌঁছে গেলাম ভেরোনিকাদের বাড়িতে। বিশাল উঁচু প্রাসাদের মতো বাড়ি। দরজায় উর্দি পরা দারোয়ান। দুটো দামি গাড়ি। আলোয় ঝলমল করছে সারা বাড়ি।
ওর মা এসে আলাপ করল : 'তুমিই জাগরী! কী মিষ্টি মেয়ে তুমি! চোখদুটো কী সুন্দর! ওহ মাঃ, এত ঘন কালো এক ঢাল চুল তোমার! শুনেছি পড়াশোনাতেও খুব ব্রিলিয়ান্ট! এসো এসো ভেতরে এসো মা ... '
একটু পরেই ক্লাসের সবাই এসে গেল। সবাই খুব ভালো ব্যবহার করছে। মন্দিরা চ্যাটার্জি আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে খুব উঁচু গলায় বলল : 'এই যে ফার্স্ট গার্ল। তুমি তো ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হচ্ছই। একটু আমাদের দিকেও দেখো। তোমার স্পেশাল নোট-ফোটগুলো আমাদেরও একটু দিও।'
অমনি সবাই উৎসব ভুলে আমাকে ঘিরে ধরল সুসজ্জিত ডাইনিদের মতো। দুদিন আগেও এরা আমাকে পোকামাকড়ের মতো তাচ্ছিল্য করেছে। আর আজ...
আমি তবু সমস্ত অপমান আর বিষ-মাখানো তীরের আঘাত ভুলে গিয়ে বললাম : নিশ্চয়ই দেব। আমার চারটে খাতাই দিয়ে দেব তোমাদের। জেরক্স করে নিও।
সবাই খুব খুশি। শুরু হল নাচ গান হৈ চৈ বিলিতি মিউজিক... মস্ত বড় এক কেক কাটা হলো। ওড়ানো হলো অসংখ্য রঙিন বেলুন। সঙ্গে পান, ভোজন।
অবন্তী বলল : তুই একটু আদিবাসী নাচ করে দেখা। আমরাও তোর সঙ্গে...
আমি কিছুতেই রাজি হলাম না। দুটি পোড়া মাটির ঘোড়া এনেছিলাম। সেগুলো ভেরোনিকার হাতে তুলে দিয়ে বললাম : চলিরে। অনেক রাত হয়ে গেছে। মা খুব চিন্তা করবে। আমার শরীরটাও আজ ...
ভেরোনিকা বলল : তোমার জন্য একটা রিটার্ন গিফট আছে। সবার জন্যই কিছু না কিছু আছে।
বলে একটা রঙিন কাগজে মোড়া প্যাকেট আমার হাতে তুলে দিয়ে বলল : সাবধানে যেও। অন্ধকার রাস্তা। তোমাকে তো আবার বাস থেকে নেমে অনেকটা পথ পাহাড় বেয়ে নীচে নামতে হবে হেঁটে।'
মন্দিরা তার পার্লার-চর্চিত মুখে বিস্তর বিস্ময় ফুটিয়ে বলল : 'এত রাত্রে ওই অন্ধকার পাহাড়ি বস্তিতে ফিরবে! বি কেয়ারফুল বেবি। আজকাল যা রেপ টেপ হচ্ছে চারদিকে... '
আমি তখন ডোরম্যাটের পাশে রাখা আমার মলিন জুতোর ফিতে বাঁধছিলাম নীচু হয়ে। হঠাৎ কানে এল, বিম্বিসার সেনগুপ্ত নামের একটি বেঁটেখাটো গোলগাল ছেলে মন্দিরার কানে কানে নীচুস্বরে বলছে : 'আরে ভয় নেই তোর, অন্ধ আর পাঁড় মাতাল ছাড়া কেউ ওকে রেপ করবে না।'
বলে দুজনেরই সে কী হাসি। সেই অশ্লীল হাসিতে মুহূর্তেই নোংরা হয়ে গেল জন্মদিনের উল্লাস ও আনন্দ। খুব মনখারাপ হয়ে গেল আমার। অপমানিত কালো শরীরটা টানতে টানতে বাসস্টপে এসে দাঁড়ালাম।
বাস থেকে নেমে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে অন্ধকার পথ ধরে বস্তির দিকে যেতে যেতে হঠাৎ কী এক অবরুদ্ধ আবেগে আর যন্ত্রণায় আমার সারা শরীর চাবুক-খাওয়া বোবা বালিকার মতো আর্তনাদ করে উঠল।
বিম্বিসারের কথাগুলো মনে পড়ছিল। তার আর মন্দিরার সেই অশ্লীল বিদ্রূপের হাসি যেন ঝাউবনের বাতাসে চক্রাকারে ঘুরপাক খাচ্ছে। ডানহাতের তালু দিয়ে দুচোখের জল মুছে নিয়ে নিজেকেই প্রশ্ন করি : নির্জন রাস্তায় আজীবন রেপড হতে পারার সম্ভাবনা বয়ে বেড়ানোটাও কি মেয়েদের যোগ্যতার মধ্যে পড়ে? যা আমার নেই?
জীবনের প্রতি মুহূর্তে কামুক ও রূপমুগ্ধ লম্পট পুরুষের লালা ঝরতে দেখাটাও কি মেয়েদের কাছে খুব গৌরবের বিষয়? যে গৌরব আমার নেই!
এসব ভাবতে ভাবতে চোখের জল শুকিয়ে আসে। ঝিরিঝিরি ঠান্ডা বাতাসের মধ্যেও দু-চোখ দিয়ে আগুনের হলকা বেরোতে থাকে আমার। সেই আগুনের মধ্যে থেকে উড়ে আসে হাজার হাজার রাতচরা পাখি, যাদের এক চোখে ঘৃণা, অন্যচোখে করুণা।
•
|