Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(15-06-2022, 01:01 AM)nandanadasnandana Wrote: ভালো ভালো রিভিউ পেলে মন টা ভালো হয়ে যায় কিন্তু। । হুম আমার গজদন্ত নেই । মনের দুঃখ মনেই রেখে দিয়েছি। খাক সবাই কামড় খাক ওই ভোমরার। আমি খেয়েছি যখন সবাই খাক। বুঝুক!!!!
এ কি কথা , দুরন্ত প্রচেষ্টা দিদি .... এসব জায়গাতে এসব জিনিস দেখবো কোনোদিন কল্পনাও করিনি !!
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
পরপর যা সব পর্ব আসছে উফফফফ। একবারও ভাবি মন ১ অসাধারণ, তারপরে মন ২ পড়ে ভাবি এর থেকে অসাধারণ কিছুই হতে পারেনা, রূপান্তরিতা কে টক্কর দেবার ক্ষমতা রাখে মন ২। কিন্তু এ তো দেখছি ১+২ কে একসাথে টক্কর দিচ্ছে ৩ নম্বর! যখন নিজের লড়াই বা জিত হার নিজের সাথেই চলে তখন বোধহয় এমনই সব লেখা বেরিয়ে আসে। না মোটেও বলছিনা লেখক বা লেখিকা সেসব ভেবে নতুন সৃষ্টিতে মনোযোগ দেয়। সেটা হয়ে যায়। যেমন এক্ষেত্রে হচ্ছে। প্রথম ভালোবাসা শক্তি ভয় সব কিছু ছিলো এই পর্বে আর ছিল পিতা সন্তানের পবিত্র ভালোবাসা আর ওই হীরার মতো কে যেন মাখন পাগল ছিলো? সেই ছোট্ট থেকে দুস্টু মাখন চোর মায়ের বকুনি খাওয়া বাচ্চাটা? মাথায় ময়ূর পুচ্ছ আর কোমরে গোঁজা বাঁশি.... কি নাম যেন তার? ♥️♥️♥️♥️
Posts: 548
Threads: 1
Likes Received: 627 in 383 posts
Likes Given: 1,634
Joined: Sep 2019
Reputation:
34
তাহলে, এযুগের রাধাকৃষ্ণ হলো হীরা ও লালি। পরপর দুটো শিকার হাতছাড়া, বাঘমুড়ো চরম প্রতিশোধের অপেক্ষায়। তবে কি মুখোমুখি দ্বন্দ্ব অনিবার্য!!! আড়ালে চলছে কি ষড়যন্ত্র!!! এগুলো জানা এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
চরিত্রগুলো সুন্দরভাবে রূপায়ণ করেছো দিদি। আপডেটের জন্য লাইক ও রেপুটেশন দুটোই।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(15-06-2022, 03:03 PM)Baban Wrote: পরপর যা সব পর্ব আসছে উফফফফ। একবারও ভাবি মন ১ অসাধারণ, তারপরে মন ২ পড়ে ভাবি এর থেকে অসাধারণ কিছুই হতে পারেনা, রূপান্তরিতা কে টক্কর দেবার ক্ষমতা রাখে মন ২। কিন্তু এ তো দেখছি ১+২ কে একসাথে টক্কর দিচ্ছে ৩ নম্বর! যখন নিজের লড়াই বা জিত হার নিজের সাথেই চলে তখন বোধহয় এমনই সব লেখা বেরিয়ে আসে। না মোটেও বলছিনা লেখক বা লেখিকা সেসব ভেবে নতুন সৃষ্টিতে মনোযোগ দেয়। সেটা হয়ে যায়। যেমন এক্ষেত্রে হচ্ছে। প্রথম ভালোবাসা শক্তি ভয় সব কিছু ছিলো এই পর্বে আর ছিল পিতা সন্তানের পবিত্র ভালোবাসা আর ওই হীরার মতো কে যেন মাখন পাগল ছিলো? সেই ছোট্ট থেকে দুস্টু মাখন চোর মায়ের বকুনি খাওয়া বাচ্চাটা? মাথায় ময়ূর পুচ্ছ আর কোমরে গোঁজা বাঁশি.... কি নাম যেন তার? ♥️♥️♥️♥️
এই গল্প টার যে এই বাঘমুড়ো কন্সেপ্ট। মানে বাঘের মুড়ো আর মানুষের দেহ, কোথাও একটা পড়েছিলাম। বাকি টা নিজের কল্পনা।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(15-06-2022, 05:21 PM)sudipto-ray Wrote: তাহলে, এযুগের রাধাকৃষ্ণ হলো হীরা ও লালি। পরপর দুটো শিকার হাতছাড়া, বাঘমুড়ো চরম প্রতিশোধের অপেক্ষায়। তবে কি মুখোমুখি দ্বন্দ্ব অনিবার্য!!! আড়ালে চলছে কি ষড়যন্ত্র!!! এগুলো জানা এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
চরিত্রগুলো সুন্দরভাবে রূপায়ণ করেছো দিদি। আপডেটের জন্য লাইক ও রেপুটেশন দুটোই।
অনেক ধন্যবাদ ভাই। তোমাদের লাইক আর রেপুটেশন এই গল্প টা কে ভাল বানায়, আর তোমাদের কমেন্ট , দিদিকে ভালো বানায়।
Posts: 42
Threads: 0
Likes Received: 58 in 38 posts
Likes Given: 160
Joined: Sep 2019
Reputation:
2
এতোটাই ইন্টারেস্টিং গল্প টা যে আপডেটের জন্য মুখিয়ে থাকি। কিন্তু আপনার আপডেট এতোটাই নিয়মিত যে বলতেও খারাপ লাগে। অপেক্ষায় রইলাম।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(16-06-2022, 12:50 PM)boro bara Wrote: এতোটাই ইন্টারেস্টিং গল্প টা যে আপডেটের জন্য মুখিয়ে থাকি। কিন্তু আপনার আপডেট এতোটাই নিয়মিত যে বলতেও খারাপ লাগে। অপেক্ষায় রইলাম।
আমি গল্প লিখে শেষ করে তবেই এখানে পোষ্ট করি। না হলে দি না। চিন্তা নেই। আসলে মাঝে মাঝে দেখলেও সময় দিতে পারছি না। দেবার আগে একটু দেখে, পড়ে, দরকার পড়লে এডিট করে তার পরে দি। আসলে কাল থেকে একটু ক্রাইসিস চলছে। আজকে দেব আপডেট।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(16-06-2022, 04:15 PM)nandanadasnandana Wrote: আমি গল্প লিখে শেষ করে তবেই এখানে পোষ্ট করি। না হলে দি না। চিন্তা নেই। আসলে মাঝে মাঝে দেখলেও সময় দিতে পারছি না। দেবার আগে একটু দেখে, পড়ে, দরকার পড়লে এডিট করে তার পরে দি। আসলে কাল থেকে একটু ক্রাইসিস চলছে। আজকে দেব আপডেট।
অপেক্ষায় আছি ...
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
আগের পর্বের কিছু অংশ...............
এমন এমন ঘটনা ঘটে যার কোন বিস্বাসযোগ্যতা থাকে না। আজকের ঘটনা টা তেমন ই একটা ঘটনা ছিল। যাদের মনে দাগ কাটল তাদের কথা কেউ ই বিশ্বাস করবে না। কারন যারা এই বিশ্বাসে নেতৃত্ব দেবে তারা কেউ ই ব্যাপার টা বোঝে নি। কিন্তু আমি বুঝেছি। কিছু তো চলছে এই গ্রামের ভিতরে। হয় কোন বিশাল ষড়যন্ত্র, না হলে বাঘমুড়োর অন্তিম সময় উপস্থিত। আমি যে ইঙ্গিত পাচ্ছি তার আসার। গত দুটো শিকার বাঘমুড়ো করতে পারে নি। কেউ না কেউ তো রক্ষা করছেন গ্রামের মানুষ গুলো কে।গ্রামের মানুষ গুলো ও বুঝতে পারছে, একটা হালচাল চলছে, এই শান্তিপ্রিয় মানুষ গুলোর জীবনে। কিন্তু আমি তো কিছু করতে পারব না। লোকে ফালতু বলে, যে সময় মহাশক্তিশালী। কোন শক্তি ই যে আমার নেই, দেখে যাওয়া ছাড়া। সময়ের অভিজ্ঞতা অনেক হতে পারে কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা স্বরূপ কে কাজে লাগাতে পারে না। আমার দেখে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।
পর্ব ছয়
দুপুর বেলায় চালা ঘরের থাম টা মেরামত করতে করতে কাশী দেখছিল দশ টা লোক মিলেও চালা টা কে ধরে রাখতে পারছিল না। আর মহাদেবের ছেলে ধরে রেখে দিলো? শরীরের রোম রোম খাড়া হয়ে গেল কাশী ময়রার। ভাবল হয়ত ভুল দেখেছে। না হলে অতো ছোট মিষ্টি একটা ছেলের পক্ষে এটা করা সম্ভব নাকি? মানুষের বিশ্বাস অবিশ্বাসের মাঝে, মানুষের জ্ঞান এবং অহংকারের একটা পর্দা থাকে। কাশীর সেই জানার অহংকার ওকে এটাই বিশ্বাস করালো যে, ও ভুল দেখেছে। একটা বাচ্চা ছেলের পক্ষে ওই কাজ করা অসম্ভব।
এদিকে লালি দুপুরে খেয়ে দেয়ে শুয়ে ভাবতে ভাবতে পরিষ্কার দেখতে পেল, রহিম দা, ছুটে গিয়ে ষাঁড়ের শিং ধরে, ষাঁড় টা কে ওই ভাবে আছড়ে ফেলল। আর হীরাই বা কি করে অতো দ্রুত পৌঁছে গেল ঘটনাস্থলে? ও তো হীরা কে চিরকাল পড়াশোনা করতে, মিষ্টি মুখ খানা নিয়ে পাশে বসে গল্প করতেই দেখেছে। ওকে দেখলে তো মনে হয় না জীবনে ও দৌড়েছে বলে। আর রহিম দা? চিরকালের শান্ত মানুষ। গেল বারে, ওর পুকুরের মাছ কেউ বিষ দিয়ে মেরে ফেলেছিল। কে করেছে তার নাম জানা সত্বেও রহিম দা, তাকে শাস্তি দেওয়া তো দূর, পুকুরের ধারে বসে, বউ আর মেয়েকে নিয়ে কান্না কাটি করছিল। আর সেই কিনা একটা অতো বড় ষাঁড় কে ওই ভাবে আছড়ে ফেলল? নিশ্চই ভুল দেখেছে লালি। ওই যে জানার অহংকারের পর্দা চোখে থাকলে, সামনের ঘটে যাওয়া ঘটনা ও অবিশ্বাস্য লাগে।
আর লালির বড় ঠাম্মু বারংবার প্রনাম করছিল মধুসূদন কে । যখন মনে পড়ল, ঘটনার সময়ে গাছের পিছনে হলুদ জামা পরা হীরা আর কিছু দুরেই অতো বড় চালা টা কে ধরে রেখে দেওয়া ছেলেটা, এক ই। একটাই ছেলে এক ই সময়ে দুই জায়গায় রয়েছে। দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা, বার বার সিদ্ধান্ত ভুল নেওয়া এক বৃদ্ধার মনে কিন্তু চরম উত্তেজনা। জানিনা কেন ছেলেটা কে মনে হয় কোন আশীর্ব্বাদ নিয়েই জন্মেছে। যদিও জন্মের জায়গাতেও অনেক রহস্য ওই ছোঁড়ার। কি জানি কি ভেবে, উঠে বসে প্রনাম করে নিতে ভুলল না সত্তর বছরের বৃদ্ধা।
পরের এক শনিবারে, গ্রাম ঘুমিয়ে পরেছিল। নিশুতি রাত ধীরে ধীরে নিজের থাবা বিস্তার করছিল গ্রামের ভিতরে। জলার কুয়াশা খুব সন্তপর্নে ঢেকে দিচ্ছিল জলার মাঠের সবুজ ঘাস কে। এই জলার মাঠ গ্রামের পূব দিকে। আর সেই পূব দিকের একেবারে দক্ষিণ দিকে থাকত, ভোলা আর তার মেয়ে। বলতে গেলে, দুটো তিনটে ছোট পুকুরের মাঝে ছিল ভোলার মাটির ঘর। ভোলা সকালে মাছ বিক্রী করত। আর বিক্রী বাটার পরে বাড়িতে নিয়ে আসত সেই দিনের খাবারের জোগাড়। আর ভোলার স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে রান্না বান্না করত। নেহাত ই গরীব ওরা। কিন্তু ভোলা ছিল নির্লোভ এক মানুষ। ও ভাবত , লোভ যদি পাপ হয়, সেই পাপ করেই বা কি লাভ? ও মনে করত, নির্লোভ মানুষ কে ভগবান রক্ষা করেন। খাওয়া পরার দায়িত্ব তিনি ই নেন। যদিও সে যে গরীব এই নিয়ে তার মনে কোন খেদ ছিল না। সকালে সন্ধ্যে ভগবানের নাম আর দুবেলা দুটি খাওয়া এই ছিলো ওর প্রয়োজন। কাজেই সেদিনেও ভোলা রাতে দুটি খেয়ে সকাল সকাল শুয়ে পরেছিল, কারণ ওকে খুব ভোরে উঠে মাছ ধরে সেইগুলো কে বিক্রী করতে হবে। তবে পরের দিনের উনুনে চাল চাপবে।
সেদিন ভোলা রাতে ঘুমিয়েছিল বাইরে। গরম খানা বেশ পরেছিল। তাই আর ভিতরে শোয় নি। বাইরেই শুয়েছিল। বাঘমুড়োর উৎপাত আছে বটে কিন্তু সে কোনদিন ও এই দিকে আসে নি। ঘুম টা ভেঙ্গে গেছিল সহসা। আর ভাঙল এমন ভাবেই ঘুম টা, যেন ও ঘুমায় ই নি। কত রাত কে জানে। বলেছিলাম না রাতের গান বাজে একটা। কোন গান ই বাজে নি তখন। তাই সময় বোঝা ভোলার কর্ম ছিল না। ধড়মড় করে উঠে বসেই বুঝল অস্বাভাবিক নীরবতা চারিদিকে। অন্যান্য দিন একটা কুকুর থাকে শুয়ে উঠনে। আদর করে নাম দিয়েছিল কুকুর টার, সুন্দরী। সেও নেই। অদ্ভুত ভাবে ভোলার মনে হচ্ছিল সে যেন বড্ড একা। জীবনে তার কেউ নেই। অথচ ঘরে শুয়ে আছে তার মেয়ে কাজরি। সামনে তাকিয়ে দেখল, জলার কুয়াশা উঠোন অব্দি এসে দাঁড়িয়ে আছে। কই এমন তো কোনদিন ও হয় না। একেবারে সূচ পরলেও শব্দ পাওয়া যাবে এমন নীরবতা চারিদিকে। কেমন ঝিম ধরে গেল ভোলার । বাঘমুড়ো নাকি? ও তড়িঘড়ি করে উঠে ঘরে ঢুকতে যাবে তখন দেখল সামনে একজন দাঁড়িয়ে। যেন কুয়াশা ফুঁড়ে উদয় হলো সে।
এমন বিশাল চেহারা সে জীবনে দেখে নি। কোমরে তরবারি আর কাঁধে বিশাল এক খানা ধনুক। পিঠের পিছন থেকে উঁকি দিচ্ছে তূনীরের রাখা তীর। এক খানা শতছিন্ন বস্ত্র পরে আছে। খালি গা। শরীরে এতো আঘাতের চিহ্ন, গোনার উপায় নেই। আর সেগুলো শুকিয়ে যায় নি। দগদগে ঘা হয়ে আছে একেবারে। সেখান থেকে পুঁজ মিশ্রিত রক্ত গড়িয়ে পড়ছে উঠোনে। আর মুখ খানার মতন ভয়ঙ্কর যেন শরীরের ঘা ও নয়। মুখে কি মারাত্মক কাঠিন্য। গালে গলায় আঘাতের সজীব দাগ। রক্ত চক্ষু আর কপালের ঠিক মাঝে এক খানা বিশাল ক্ষত। ঠিক যেন কেউ কিছু খুবলে নিয়েছে কপাল থেকে।সেখান থেকেও রক্ত আর পুঁজ গড়িয়ে পরছে মুখের দুই ধার দিয়ে নাকের উপর দিয়ে। বিশ্রী দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরেছে গোটা বাড়ি ময়। বমি পেয়ে গেল ভোলার। বেশীক্ষন সহ্য করতে পারল না ভোলা , ওই মারাত্মক দৃশ্য। অজ্ঞান হয়ে পরল, হা ভগবান বলে। ঘরের ভিতরে কাজরি হয়ত শুনতে পেয়েছিল বাবার কথা টা। বাইরে বেরিয়ে এসে সেই দৃশ্য দেখে এক ই ভাবে সেও অজ্ঞান হয়ে পরে রইল ঘরের দরজার কাছে।
এর পরের দৃশ্য আমিও সহ্য করতে পারিনি। ওদের অজ্ঞান হয়ে যাওয়া টা যেন কাম্য ছিল আগন্তুকের কাছে। ওরা অজ্ঞান হয়ে যেতেই যেন ব্যস্ত হয়ে পরল আগন্তুক। বাড়িময় ঘুরে বেড়াতে লাগল আর বিড়বিড় করে কিছু বলতে শুরু করল। ধীরে ধীরে এক অদৃশ্য ধোঁয়ায় ঢেকে গেল পুরো বাড়ি টা ছাউনির মতন। বুঝলাম, দৃষ্টি আর গন্ধ আর প্রবেশ তিনটে তেই বাঁধন দিল আগন্তুক। কিন্তু আমি তো সময়। আমাকে তো আটকে রাখতে পারবে না। আমি যেমন কিছু করতে পারি না, কিন্তু আমাকে বাদ দিয়েও কেউ কিছু করতে পারে না। আমি দুরু দুরু বুকে সেই খানে গিয়ে দেখলাম, নিজের ঝকঝকে তরবারি দিয়ে , ভোলা আর কাজরী কে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে সেই আগন্তুক। রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঘরের দুয়ার আর সেই রক্তের স্রোত মাটির সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে উঠোনে। ক্ষিপ্র হস্তে কাজ করছে সেই বিভীষিকা। তারপরে একটা ছোট গোল গর্ত খুঁড়ে ফেলল চোখের পলকেই নিজের তরবারি দিয়ে। পড়ে থাকা কাঠ জোগাড় করে নিমেষে আগুন জ্বালিয়ে ফেলল আগন্তুক।
এর পরের দৃশ্য আমি ভুলতে পারব না সারা জীবন। আর আমার যতদিন মনুষ্য জাতি থাকবে আমার ও মরণ নেই। তাই এই দৃশ্যের ভার আমাকেই বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে। সেই বিশাল দেহী পিশাচ, এক এক করে আগুনে নিক্ষেপ করতে লাগল ভোলা আর কাজরির দেহের টুকরো গুলো কে। আর কিছু বোধহীন মন্ত্র উচ্চারণে ভরে গেল সেই বাড়ির পরিবেশ। মনে হলো কোন নরকে আছি আমি। কিছুক্ষনের মধ্যেই কুয়াশা ফুঁড়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকল একটা বিশাল শেয়াল। ঢুকতেই সেই আগন্তুক, তরবারি দিয়ে এক টুকরো , কাটা দেহ ছুঁড়ে দিল শেয়ালের দিকে। একটা লাফ দিয়ে সেই মাংস টুকরো নিয়ে খেতে খেতে পরিষ্কার মানুষের মতন বলে উঠলো সে।
- কি চাস?
- তুই কে আগে বল?
কটর মটর করে হাড় মাংস চিবোতে চিবোতে সে বলল,
- আমি ব্রহ্মপিশাচের একটা রূপ। তুই তো আমাকে এই রূপেই ডাক দিয়েছিস? এখন জিজ্ঞাসা করছিস কেন? কি জানতে চাস তাই বল।
- থাম। বাঘমুড়ো কোথায়?
- আছে সে এখানেই আছে। কিন্তু যা করছিস ভেবে করিস। সব জায়গা সমান নয়।
গর্জে উঠলো আগন্তুক এবারে। আগুনের আলোতে মুখ টা মনে হচ্ছিল নরক থেকে আসা কোন জীব। বলল
- থাম। তোর থেকে আমি যেটা জিজ্ঞাসা করব তার উত্তর ই দিবি মাত্র। কোথায় আছে বাঘমুড়ো?
- কাছেই আছে।
- হুম ডাকলে আসবে?
- হুম আসবে।
- ডাকার উপায় কি?
- আমি পারব না। তোকে, তারকীণি কে ডাকতে হবে। তোর সাথে বাঘমুড়োর যোগ সেই ঘটাতে পারে।
- আচ্ছা যা এখন, তোর কাজ শেষ।
- যাচ্ছি , তবে শোন, তোকে আমি চিনেছি। সাবধান। আমার উপাসনা করলি তাই বলে দিয়ে যাচ্ছি, যার অভিশাপ নিয়ে তুই, না মরে বেঁচে আছিস, সে কিন্তু এখানেই আছে। তোর উদ্দেশ্য সফল হবে না। তুই মুক্তি পাবি না। তুই মুক্তি পাবি না। আমি দেব আর মানুষের মাঝের এক প্রকার জীব। তাই এই সব উপাসনায় সাড়া দি। শুধরে যা এখনো সময় আছে।
ধীরে ধীরে যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল শেয়াল টা। ব্রহ্মপিশাচের কথা কানে নেয় নি সেটা পরিষ্কার হলো যখন আগন্তুক আবার এক এক করে দেহ খন্ড গুলো আগুনে ফেলতে শুরু করল, আর তার সাথে অবোধ্য কিছু কথা। মন্ত্রের মতন শোনাচ্ছে কিন্তু মন্ত্র না। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা শোঁ শোঁ করে হাওয়া উঠলো। বাড়িয়ে উপরে ছাদের মতন কুয়াশা টা হালকা কেটে গেল সেই হাওয়ায়। ঠিক আগের টার মতই একটা লাল রঙের বিশাল শেয়াল প্রবেশ করল। আগন্তুক ওর দিকে এক খন্ড দেহাবশেষ ছুঁড়ে দিতেই সে অদ্ভুত ভঙ্গী তে নিজের থাবার নীচে চেপে ধরল সেই মাংশ পিন্ড টা। একবার আগন্তুক কে দেখে, বিশাল হাঁ করে পুরো টা নিজের মুখে ঢুকিয়ে নিল। উফ কি ভয়ানক। ততক্ষনে আগন্তুক আরেক টা খন্ড নিজের তরবারি তে গেঁথে ছুঁড়ে দিল শেয়াল টার দিকে। ঠিক আগের মতই থাবা নীচে সেটা কে নিয়ে নিলো শেয়াল টা। তারপরে আগন্তুকের দিকে তকিয়ে বলল এক মহিলার গলায় বলল,
- কি চাস আমার থেকে?
গলার আওয়াজ মহিলার কিন্তু মনে হল একসাথে দশ জন নানান আওয়াজের মহিলা একসাথে কথা বলছে। ফাঁসা অথচ কি দৃঢ় আওয়াজ। আমার প্রচন্ড ভয় লাগছে, কিন্তু আগন্তুকের মনে কোন ভয় নেই। সেই এক ই প্রশ্ন করল,
- কে তুই?
শেয়াল টা প্রত্যুত্তরে হেসে উঠলো, তীব্র আতঙ্কের সঞ্চার করিয়ে। শেয়ালের রূপ বদলে একটা কালো ত্রিমাত্রিক চাদরের মতন হয়ে গেল। ভিতরে মনে হলো শত শত গ্রহ নক্ষত্র রয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজের রূপে ফিরে এলো শেয়াল টা। বলল,
- বুঝলি আমি কে? খুব সাবধান। যা জিজ্ঞাসা করবি একবার। সাহায্য চাইলে একবার। এর যেন অন্যথা না হয়। তোকে মারতে তো পারব না। কিন্তু জীবন আর ও দূর্বিষহ করে দেবার ক্ষমতা রাখি আমি। তখন অমিত খিদে, তেষ্টায় জর্জরিত হয়ে ঘুরে বেরাবি সাধারণের থেকেও সাধারণ হয়ে। এখন বল কি চাস?
এবারে আগন্তুক একটু নড়ল মনে হলো। এ আর কেউ নয়, নিশীথ রূপী তারকীণি। রাত্রি রূপী মহারূপা। মহা কালীর দশ সখীর একজন। ভয়ঙ্কর ক্ষমতার অধিকারিনী। কিন্তু এক্ষেত্রে উনি বাঁধা। সাধনায় তুষ্ট হলে তো আসতেই হয়। মহাশিব কে ও আসতে হয়েছে অসুরের তপে সন্তুষ্ট হয়ে। ব্রহ্মা কেও বর দিতে হয়েছে। ভক্তের তপের কাছে সবাই জব্দ। আগন্তুক বিশেষ কথা বলল না। শুধু চাইল ওর চাওয়া।
- বাঘমুড়ো র সাথে সন্ধি।
হেসে উঠলো তারকীণি। বলল,
- হবে হবে। এটাই তো ভবিতব্য। উনিও যে তাই চান। এবারে যাই।
হুশ করে চলে গেল তারকীণি। খানিক চুপ থেকে হেসে উঠলো আগন্তুক। এবারে আমিও চিনতে পেরেছি ওকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আরেকটি শেয়াল এলো। তাকে আগন্তুক আদেশ করল উঠোন আর দুয়ার থেকে রক্ত পরিষ্কার করে দিতে। বলা মাত্রেই আদেশ পালন হলো আগন্তুকের। মুহুর্তে র মধ্যেই না জানি কোথা থেকে পালে পালে শেয়াল এসে যা পরেছিল খেয়ে দেয়ে, রক্ত সুদ্দু খেয়ে পুরো যায়গা টা একেবারে সাফ করে দিল। তারপরে শুরু হলো আগন্তুকের এক মনে অবোধ্য মন্ত্র উচ্চারণ। কিছুক্ষণের মধ্যেই মনে হলো ভারী পা ফেলে কেউ তো আসছে। কুয়াশা ফুঁড়ে ঢুকল যে, সে আর কেউ নয়। বাঘমুড়ো। আগন্তুকের মধ্যে কোন ভয়ের লেশ মাত্র দেখা গেল না। বাঘমুড়ো এদিকে ওদিকে ঘুরে বেড়াতে লাগল আর দেখতে লাগল আগন্তুক কে। একবার তো একেবারে মুখের সামনে মুখ নিয়ে এসে, চোখে চোখ রেখে। ঠিক এই সময়েই আগন্তুক হেসে উঠল। বলল,
- কি? চেনা গেছে আমাকে? তোমার মতই আমিও অভিশাপ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি, কত সহস্র বছর। অর্জুন সম বীর। আমাকে এই নামেই ডাকা হতো এক সময়ে। আর আমি ততোধিক পারদর্শী তন্ত্র বিদ্যায়। তন্ত্রের চৌষট্টি কলাই আমার আয়ত্তে। আমি এখানেই থাকব। তোমাকে সাহায্য করব। তোমার যে শত্রু সে আমার ও শত্রু।
গর্জন করে উঠলো বাঘমুড়ো। ওর ও সহায়তা লাগবে। এই এলাকায় নতুন কিছুর আমদানী হয়েছে। কেউ বা কারা বাঘমুড়ো কে শিকারে বাধা দিচ্ছে। বাঘমুড়ো চিনেছে, এই লোক টা কে। সায় দিলো বাঘমুড়ো আগন্তুকের প্রস্তাবে গর্জন করে। জয়ের নেশায় হেসে উঠল আগন্তুক ও। চলে গেল বাঘমুড়ো, একে অপর কে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। ধীরে ধীরে কুয়াশার ঘন চাদর সরে গেল। আগন্তুকের চেহারা, যেন অবিকল ভোলার মতন হয়ে গেল। বাইরে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে পরল সে।
পরের দিন সকালে, মহাদেব সমেত পুরো দলটাই গ্রাম সংকীর্তণে বেড়িয়েছিল। ভোলার বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে, মহাদেব ই ডাকতে গেল ভোলা কে। বাড়ির সামনে ঢুকতেই কেমন একটা গা গোলানো গন্ধ পেল। গন্ধ টা কেমন যেন। কি অসহ্য একটা গন্ধ। নাক চাপা দিয়ে গিয়ে দেখল, ভোলা শুয়ে আছে দুয়ারে।
- কি রে ভোলা যাবি না ঠাকুরের নাম নিতে?
চাদর চাপা দেওয়া ছিল ভোলার। ভিতর থেকেই বলে উঠলো,
- না রে মহাদেব তোরা যা। আজকে শরীর টা বিশেষ ভাল নেই।
- কেন কি হলো? ডাক্তার খবর দেবো?
- আরে না না। আজকে কাজরী একটি আমার বোনের বাড়ি গেল। আর তার পর থেকেই শরীর তা একটু খারাপ লাগছে। চিন্তা নেই ঠিক হয়ে যাব।
- ও কাজরী নেই? আচ্ছা ঠিক আছে।
বস্তুত মহাদেব ও আর পারছিল না ওই জায়গায় দাঁড়িয়ে নিঃশ্বাস নিতে। মনের মধ্যে এক রাশ ভয় আর চিন্তা নিয়ে বেরিয়ে এলো ভোলার বাড়ি থেকে।
এর কিছুদিন পরে, এক বিকালে, বিকালে নগেন জ্যাঠা বসেছিল চন্ডীমন্ডপে। মা দূর্গার মন্দির আর তার সামনে বিশাল নাট্মন্দির। মন্দির আর নাট্মন্দিরের মাঝে খানিক ফাঁকা জায়গা। পুজোর সময়ে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয় সেখানে বসে। ওই ফাঁকা জায়গাতেই বসে আড্ডা চলে আরকী সকলের। বিকালে বাচ্চা ছেলে গুলো খেলাধুলা করে ওই মন্দির এবং নাট্মন্দির সংলগ্ন এলাকা তে। কখনো লুকোচুরি থামের আড়ালে, বা কখনো কোনকোনাটি খেলা। আর নাট্মন্দিরের সামনেই বেশ বড় ফাঁকা মাঠের মতন। সেখানে নানান বয়সী ছেলে মেয়েরা গল্পগুজব করে বাড়ির লোকেদের সামনেই। তা আজকে নগেন জ্যাঠা চেয়ে দেখল গ্রামের প্রায় সব ছেলে মেয়েই আছে। আর মহাদেবের ব্যাটা , যে কিনা কিছু তেই থাকে না সেও নাট্মন্দিরে তে বসে আছে চুপটি করে। মজার ব্যাপার লালি , মানে পরেশের মেয়েও আছে। এদের থেকে অনেক বড় সে। কিন্তু তাও আছে। আর আছে সিধুর নাতি। কেউ কারোর সাথে কথা বলছে না, নিজেদের বয়সের ছেলে মেয়েদের সাথে গল্প করছে না হলে খেলা ধুলা করছে। কিন্তু সেদিনে সকালে এই তিনজন অসম বয়সী ছেলে মেয়ের হাসি মস্করা দেখার পর থেকে মনে হয় এই তিনজন আলাদা থেকেও যেন একসাথে আছে।
সন্ধ্যে প্রায় হয়ে এসেছে। আর বাড়ির বউ মা এরা হাতে হ্যারিকেন আর ধুপ জ্বালিয়ে লাল পাড় সাদা শাড়ি তে মন্দিরের সামনে শাঁখ বাজিয়ে যাচ্ছে। না অবাক হবার মতন কিছু নেই এতে। অবাক হবার মতন ব্যাপার যেটা তে আছে, সেটাই দেখছিল নগেন জ্যাঠা। একটা ফ্লাইং ডিশ নিয়ে খেলছিল, নাট্মন্দিরে কিছু বাচ্চা ছেলে। দুই দিকে দশটা করে বড় মোটা থাম আছে নাট্মন্দিরের আর সামনে পিছনে চারটে করে বড় থাম। খুব হাওয়া না দিলে নাট্মন্দিরের ভিতরে হাওয়া বিশেষ ঢোকে না বললেই চলে। আর ঢুকলেও এলোমেলো হাওয়া। বাচ্চা গুলো ফ্লাইং ডিশ টা কে চেষ্টা করছে উড়িয়ে দূরে ফেলবে কিন্তু হাওয়া নেই বলে সেটা বেশী দূর যেতে পারছে না। বা অতি দ্রুত , আড্ডার জায়গায় এসে, কখনো মাঝে , বা কারোর গায়ে এসে পড়ছে। নগেন জ্যাঠা অনেকক্ষণ ধরেই ছোট ছেলে গুলোর এই ব্যাপার টা লক্ষ্য করছিল আড্ডা দিতে দিতে। কিন্তু একটা সময় এলো দেখল, হীরা ও বাচ্চা গুলোর কান্ড দেখে হাসাহাসি করছে।
- এই তোর সবেতে এতো মুচকী হাসি কোথা থেকে আসে রে?
হীরা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল লালি পিছনে। লালি কে বেশ সুন্দর লাগছে আজকে। হীরা সাড়া দিল না। একটা থামে ঠেস দিয়ে বসে রইল। কিন্তু ঠোঁটের কোনে হাসি টা লেগেই রইল ওর। পাশে এসে লালি বসল হীরার। বলল,
- কি রে বললি না তো? পড়াশোনা না হয় সব বুঝিস, এই খেলা টাও কি তুই জানিস?
লালির দিকে একবার চেয়ে নিল হীরা। চোখের পলক একবার ফেলে আর ছোট্ট হাসি টা চওড়া হয়ে লালি কে যেন বলেই দিল যে সে পারবে চেষ্টা করলেই।
- কর দেখি।
কথাটা বলে, হীরার উত্তরের অপেক্ষা না করেই ডাক দিলো
- বাবলু , ডিশ টা দিয়ে যা তো হীরা দা কে একবার।
বাবলুরা অনেকক্ষণ ধরেই চেষ্টা করেও হচ্ছিল না, তাই ওই খান থেকেই ডিশ টা ছুঁড়ে দিল হীরা কে। ডিশ টা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পাশের থামে লাগার আগেই, হীরা যেন তার আজানুলম্বিত বাহু প্রসারিত করে ,কি জানি কোন উপায়ে ডিশ টা কে নিজের হাতে এনে একটা আঙ্গুলের উপরে নিয়ে নিল। মনে হল ডিশ টা ঘুরছে তর্জনী তে কোন আয়াশ ছাড়াই। সায়ান্নের সময়ে ঠিক নাট্মন্দিরের মাঝে কেউ একজন হ্যারিকেন রেখে উবু হয়ে প্রণাম করছিল মন্দিরের দিকে মুখ করে। হ্যারিকেনের আলো আঁধারি তে হীরার মুখ দেখে চমকে উঠল লালি। ঠিক যেন বৈকুন্ঠপতি খেলার ছলে সুদর্শন চক্র নিয়ে খেলার মেতেছে। কে বলবে কালো ও। হ্যারিকেনের আলো ও যেন হীরের দ্যুতি নিয়ে, ছেলেটার মুখের থেকে জ্যোতির মতন বের হয়ে আসছে। আর প্রণাম শেষ হয়ে যাবার পরে গুরুগম্ভীর শাঁখের আওয়াজে ভরে উঠল নাট্মন্দির। যেন স্বয়ং নারায়ন চক্র হাতে পূজিত হচ্ছেন নিজে নিজেই। মন্দিরের গায়ে ঝোলানো ঘণ্টা টা যেন কেউ বাজিয়ে দিল একবার। পরিস্থিতির ছলে , গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল লালির।
সাময়িক ভাবে লালির সাথে নগেন জ্যাঠাও চমকে উঠেছিল সেই সময়ে। ঠেলে পাশের জনা কে ডেকে দেখাতে যাবে নগেন জ্যাঠা, তার আগেই হ্যারিকেনের মালকিন উঠে চলে গেল। মুহুর্তে যেন পরিস্থিতি টা আবার স্বাভাবিক হয়ে গেল। আর হীরা এক গাল হেসে লালি কে বলল
- বল আমাকে, কোন টা কে এখান থেকে ডিশ টা ছুঁড়ে হিট করব?
এদিক ওদিক খানিক দেখে নিয়ে লালি, হীরা কে বেশ শক্ত টার্গেট ই দিল একটা।
- উম্মম্মম, ওই যে তিন নম্বর থামের পিছনে যে বাঁশ টা পোঁতা আছে, তার ডগায় লেগে থাকা জবা ফুল টা নামিয়ে আন। পাশের জবা গাছ থেকে একটা ফুল খসে , ঠিক বাঁশের মাথার উপরে রয়েছে।
- হুম্ম, এই ব্যাপার। আচ্ছা বেশ তবে তাই হোক।
হীরার পাশেই বাচ্চা গুলো ঘিরে আছে। কাউকে সরে যেতে না বলে, বসে বসেই, একেবারে ধারের ছেলের টার পাশ দিয়ে নীচু করে ফ্লাইং ডিশ টা কে ছুঁড়ল হীরা। অল্প অল্প করে উচ্চতা নিতে নিতে ডিশ টা তিন নম্বর থাম টা কে পাশ কাটিয়ে বাঁক নিতে নিতে আরো উচ্চতা বাড়িয়ে ঠিক বাঁশের উপরে থাকা জবা ফুল টা কে আলতো করে স্পর্শে মাটিতে ফেলে দিয়ে খানিক উড়ে গিয়ে মাটিতে বসল।
ছেলে গুলো হই হই করে উঠল। নগেন জ্যাঠা টার্গেট শুনেই আর ওদিকে তাকায় নি। কারন বুঝতে পেরে গেছিল হীরা যেখানে বসে আছে সেখান থেকে বাঁশ টা তিন নম্বর থামের আড়ালে ছিল। লক্ষ্যভেদ করা অসম্ভব ব্যাপার ছিল। কিন্তু ছেলে গুলোর হইহল্লা তে তাকিয়ে দেখল, জবা ফুল টা মাটিতে পরে। অবাক হয়ে গেছিল নগেন জ্যাঠা। ভাবল নাহ হয়ে গেছে। আর সেখানে উপস্থিত বাচ্চা গুল আর লালিও ছাড়বার নয়। ওদের ও বদ্ধমূল ধারনে এটা তুক্কা লেগে গেছে। এই বারের টার্গেট টা লাগালে ওরা মেনে নেবে।
লালি আবার টার্গেট দিল,
- ওই যে দেখছিস, বাউড়ি কাকা, আইসক্রিম এর ঠেলা নিয়ে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে?
- হুম ।
- ওই ঠেলার সামনের দিকে যে ঘন্টা টা আছে, সেটা কে তোকে লাগাতে হবে। তাড়াতাড়ি কর না হলে, কাকার ঠেলা শিব মন্দিরের আড়ালে চলে যাবে কিন্তু।
- হুম। বুঝেছি। বেশ তবে তাই হোক।
বস্তুত নাট্মন্দির থেকে রাস্তা কিছু না হলেও পঞ্চাশ গজ হবে। আর শিবমন্দির টা কে নাট্মন্দিরে কেউ বসে থেকে দেখলে সোজাসুজি ভাবে দেখবে। যদি মন্দিরের আড়ালে চলে যাবার আগে মারতে পারে তো হবে, না হলে অসম্ভব। ছেলেগুলো ততক্ষনে কুড়িয়ে এনে দিয়েছে ফ্লাইং ডিশ টা। নগেন জ্যাঠা খুব আকিঞ্চন নিয়ে দেখছে ব্যাপার টা। কি করবে ছোঁড়া এই বারে? কিন্তু হীরার মনে কোন রকম কোন দোলাচল আছে বলে তো মনে হচ্ছে না। আগের বারের মতই কাউকে সরতে না বলে ও ডিশ টা আবার বেশ নীচে থেকে ছুঁড়ল। ততক্ষনে বাউড়ির ঠেলা শিব মন্দিরের আড়ালে চলেই গেছে। যাহ এবারের টা মিস হয়ে গেল। নাহ, আগের বারের টা তুক্কা ই ছিল। কি হয় দেখি ভেবে নগেন তাকিয়ে রইল ডিশ টার দিকে। অবাক করে দিয়ে ডিশ টা শিবমন্দিরের অন্য পথে উড়ে চলল বেশ নীচে দিয়ে। বাঁক নিতে নিতে শিব মন্দিরের আড়ালে চলে গেল ডিশ টা। আড়াল হয়ে গেল বটে, কিন্তু পরক্ষনেই ঢং করে আওয়াজ টা পেল সবাই। মানে বাঁক নিয়ে সঠিক জায়গায় লাগিয়েছে ছেলেটা ডিশ টা কে।
বাচ্চা গুলোর সাথে লালিও বাচ্চাদের মতই নেচে উঠল প্রায়। কিন্তু নগেনের মনে একটা কেমন ভয় জমাট বাঁধল। এও কি সম্ভব? আর ওই কয়েক মুহুর্তের জন্য চমকে যাওয়া টা? ছেলেটা কে দেখলে তো ভয় লাগে না। কিন্তু…… নাহ থাক। কাউকে বলল না কিছু। নাট্মন্দিরে হীরা কে ঘিরে আনন্দে মত্ত লালি আর বাচ্চা গুলো কে পাশ কাটিয়ে ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির দিকে রওনা দিল নগেন। মনের মধ্যে অজস্র প্রশ্ন।
The following 15 users Like nandanadasnandana's post:15 users Like nandanadasnandana's post
• Baban, bismal, boro bara, bourses, Bumba_1, ddey333, nandini20002022, nextpage, ray.rowdy, samael, sarkarrumkisarkar, Somnaath, sudipto-ray, Tiger, WrickSarkar2020
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,216 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
16-06-2022, 09:04 PM
(This post was last modified: 16-06-2022, 09:05 PM by Bumba_1. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
সেই ভয়ঙ্কর আগন্তুক ওরফে অশ্বথামা .. ব্রহ্মপিশাচ .. তারকীণি .. এদের সঙ্গে last but not the least one and only বাঘমুড়ো .. এতগুলো অশুভ শক্তি .. তার সঙ্গে conspiracy .. খুব কঠিন হয়ে গেল হীরার কাজটা।
অসাধারণ একটা পর্ব .. splendid
Posts: 42
Threads: 0
Likes Received: 58 in 38 posts
Likes Given: 160
Joined: Sep 2019
Reputation:
2
আজকের পর্ব টা কি ছিল!!!!! বাপরে!!!
পড়তে পড়তেই কেমন গা শির শির করছিল। বুম্বা ঠিক ই ধরেছেন। অশ্বথামা ওটা !!! কি ভাবে আঁকতে পারেন দিদি এসব? এতো ভয়ঙ্কর ভাবে শেয়াল গুলো এলো। ভেবেই গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছিল। তন্ত্র বিদ্যা নিয়েও মনে হয় পড়াশোনা করেছেন আপনি দিদি। জানিনা এই সব আছে কিনাতন্ত্রে। যদি থাকে তাহলেও অসম্ভব সুন্দর করে এঁকেছেন। আর যদি না থাকে তবে বলতে হয় আপনার ওই দিকেও বিচরণ বেশ কিছু দূর অব্দি আছে।
যাক একদিকে যেমন ভয় দেখালে তেমন ই হীরার কর্মকান্ডে বেশ পুলকিত হলাম। হ্যাঁ ওর জন্য এমন সব প্রতিপক্ষ না হলে কি জমে নাকি? অশ্বথামা, বাঘমুড়ো রূপী শিশুপাল। বাপরে বাপ। রেপু রইল লাইক রইল।
এ জিনিস বিভুতিভূষন আর তারাদাস দিয়ে গেছেন কিছু আমাদের। আর দিদি আপনি দিচ্ছেন। অসাধারণ পর্ব ছিল। দারুণ।
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
পর্বের শুরুতেই ছোট্ট একটা উক্তি করলে,
"মানুষের বিশ্বাসের আর অবিশ্বাসের মাঝে পার্থক্য গড়ে দেয়
জ্ঞান আর অহংকার"
যে কৃষ্ণ সেই রাম, আর এদিকে আরেকটা শক্তিশালী মানুষের আগমন রহিম। রাম রহিম তবে কি সেই সাদা নেকড়ে আর তীর ধনুক হাতে বালক??
যে পিশাচের বর্ণনা দিলেন সেটা ঐ শিশুপালের সময়ের হলে অবশ্যই অশ্বথামা। যেকারণে ব্রহ্মপিশাচ বললো যে তাকে সে মারতে তো পারবে না তবে আরও ভয়ানক সাজা দিতে পারবে। তবে তো সামনে গল্প আরও ভয়ানক হচ্ছে অশ্বথামা, ব্রহ্মপিশাচ, তরাকিনী। ভোলা রূপী যে শুয়ে আছে সে নিশ্চয়ই অশ্বথামা, গ্রামে সবার সাথেই মিশে গিয়ে সেই শক্তির সন্ধান করবে যে তাদের রুখতে এসেছে।
দিদি তুমি গ্রেট.... যেভাবে চালাচ্ছো মন চাচ্ছে সবটা গল্প এক্ষুনি পড়ে ফেলি।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
ভয়ানক বীভৎস এক পর্ব! যদিও শেষে একটা ভালোলাগা ছিল কিন্তুতার পূর্বের অংশ উফফফফ! আগন্তুক ওরফে অশ্বথামা, চিনতে কষ্ট হয়নি তাকে আর পিশাচ, তারকীনি আর নির্মম হত্যা আর সন্ধি। কালো শক্তিও ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে ওদিকে অবতারও নিজ গুনে বৃদ্ধি পাচ্ছে শরীরে, মনে আর হৃদয়ে ❤
আসবে সে লড়তে
সাম্রাজ্য গড়তে
সেই মৃত্যুপিশাচ কে
আসবে কেউ রুখতে
নানা নামে ডাকি তারে
নানা রূপে চিনি মোরা
তার তেজে তার কাছে
হারবে যে বাঘমুড়া
তবে সে অবশ্য অনেক দেরী আছে।
Posts: 1,375
Threads: 2
Likes Received: 1,407 in 974 posts
Likes Given: 1,714
Joined: Mar 2022
Reputation:
81
অশ্বত্থামা হত ইতি গজ -- আমাদের শ্রীকৃষ্ণ একা পড়ে গেছে, সঙ্গে একজন অর্জুন থাকলে খুব ভালো হতো।
দুর্দান্ত পর্ব
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(16-06-2022, 09:04 PM)Bumba_1 Wrote: সেই ভয়ঙ্কর আগন্তুক ওরফে অশ্বথামা .. ব্রহ্মপিশাচ .. তারকীণি .. এদের সঙ্গে last but not the least one and only বাঘমুড়ো .. এতগুলো অশুভ শক্তি .. তার সঙ্গে conspiracy .. খুব কঠিন হয়ে গেল হীরার কাজটা।
অসাধারণ একটা পর্ব .. splendid
ধন্যবাদ অনেক। হ্যাঁ বেশ কঠিন। হাহা।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(16-06-2022, 09:34 PM)boro bara Wrote: আজকের পর্ব টা কি ছিল!!!!! বাপরে!!!
পড়তে পড়তেই কেমন গা শির শির করছিল। বুম্বা ঠিক ই ধরেছেন। অশ্বথামা ওটা !!! কি ভাবে আঁকতে পারেন দিদি এসব? এতো ভয়ঙ্কর ভাবে শেয়াল গুলো এলো। ভেবেই গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছিল। তন্ত্র বিদ্যা নিয়েও মনে হয় পড়াশোনা করেছেন আপনি দিদি। জানিনা এই সব আছে কিনাতন্ত্রে। যদি থাকে তাহলেও অসম্ভব সুন্দর করে এঁকেছেন। আর যদি না থাকে তবে বলতে হয় আপনার ওই দিকেও বিচরণ বেশ কিছু দূর অব্দি আছে।
যাক একদিকে যেমন ভয় দেখালে তেমন ই হীরার কর্মকান্ডে বেশ পুলকিত হলাম। হ্যাঁ ওর জন্য এমন সব প্রতিপক্ষ না হলে কি জমে নাকি? অশ্বথামা, বাঘমুড়ো রূপী শিশুপাল। বাপরে বাপ। রেপু রইল লাইক রইল।
এ জিনিস বিভুতিভূষন আর তারাদাস দিয়ে গেছেন কিছু আমাদের। আর দিদি আপনি দিচ্ছেন। অসাধারণ পর্ব ছিল। দারুণ।
কি সব ভালো ভালো কথা। খুব ভালো লাগছে এমন রিভিউ পড়ে। অনেক অনেক ধন্যবাদ। দেখা যাক কি হয়।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(16-06-2022, 10:03 PM)Baban Wrote: ভয়ানক বীভৎস এক পর্ব! যদিও শেষে একটা ভালোলাগা ছিল কিন্তুতার পূর্বের অংশ উফফফফ! আগন্তুক ওরফে অশ্বথামা, চিনতে কষ্ট হয়নি তাকে আর পিশাচ, তারকীনি আর নির্মম হত্যা আর সন্ধি। কালো শক্তিও ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে ওদিকে অবতারও নিজ গুনে বৃদ্ধি পাচ্ছে শরীরে, মনে আর হৃদয়ে ❤
আসবে সে লড়তে
সাম্রাজ্য গড়তে
সেই মৃত্যুপিশাচ কে
আসবে কেউ রুখতে
নানা নামে ডাকি তারে
নানা রূপে চিনি মোরা
তার তেজে তার কাছে
হারবে যে বাঘমুড়া
তবে সে অবশ্য অনেক দেরী আছে।
হ্যাঁ একটু দেরী আছে। মোটামুটি সতের আঠেরো পর্বে শেষ হবে গল্প টা। দেখি।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(16-06-2022, 10:04 PM)Somnaath Wrote: অশ্বত্থামা হত ইতি গজ -- আমাদের শ্রীকৃষ্ণ একা পড়ে গেছে, সঙ্গে একজন অর্জুন থাকলে খুব ভালো হতো।
দুর্দান্ত পর্ব
তিনি কি একলা আসেন আর? যতবার ই এসেছেন সমভিব্যাহার এ এসেছেন। দেখা যাক এবারে কাকে কাকে এনেছেন। ধন্যবাদ অনেক।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
একবার মনে হচ্ছে কল্প কাহিনী ... একবার মনে হয় কঠোর বাস্তব , এ কি দুর্বার বৈচিত্র কাহিনীর বিন্যাসে !!!
|