Poll: এই গল্প টা আপনাদের ভালো লাগলে নীচের অপশন এ ক্লিক করে জানান কেন ভালো লাগছে
You do not have permission to vote in this poll.
গল্পের কাহিনী
10.00%
2 10.00%
গল্পের গতি
0%
0 0%
গল্পের গতি এবং কাহিনী
85.00%
17 85.00%
গল্প টি ভালো লাগছে না
5.00%
1 5.00%
Total 20 vote(s) 100%
* You voted for this item. [Show Results]

Thread Rating:
  • 96 Vote(s) - 3.46 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Fantasy বাঘমুড়োর আতঙ্ক - সমাপ্ত
(13-06-2022, 02:32 PM)Sanjay Sen Wrote:
নরপিশাচের কবলে সিধুবাবু স্তব্ধ
হীরার হাতে বাখমুড়ো জব্দ

এই ধরনের গল্পের ক্ষেত্রে এখনো পর্যন্ত এই ফোরামের সেরা writer আপনি নন্দনা দি , প্রতিটা পর্ব পড়ছি আর মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। 

ওই দেখ। মোচড় এর স্পেশালিস্ট থেকে জনার চেঞ্জ হচ্ছে বলছেন? হাহাহাহাহাহা। অনেক ধন্যবাদ। এতো সুন্দর রিভিউ পেলে খুব ভালো লাগে।
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(13-06-2022, 02:34 PM)Sanjay Sen Wrote: তোমাকে এত বিশ্লেষণ করতে কে বলেছে? তোমার review পড়লে গল্প পড়াটা চাপ হয়ে যায়। এবার থেকে চুপচাপ গল্প পড়বে, তারপর ভালো হয়েছে এইটুকু বলে, লাইক আর রেপু দিয়ে চলে যাবে, বুঝেছ?  Tongue Big Grin banana

হাহাহাহাহাহাহাহাহা। না না রিভিউ না পেলে মন কেমন করে তো।
Like Reply
(13-06-2022, 03:19 PM)boro bara Wrote: অসাধারণ। এই লেভেলের গল্প পাওয়া একটা বিশাল পাওনা এই ফোরাম। ভাবি আপনি সেক্স এর গল্প লিখলে কি দাঁড়াবে? নাহ এই সব গল্প মেইন স্ট্রীমের গল্প। জানিনা বাকি রা কি বলবেন। তবে আমার মনে হয় এই সব গল্পের জন্যে ফোরামের নাম বাড়বে বই কমবে না । দিদি অপেক্ষা পরবর্তী পার্টের জন্য। মজার ব্যাপার, গল্প টির রেটিং দেখছি কমে গেছে। দিদি দয়া করে এই রেটিং নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাবেন না। আপনি লিখে যান দয়া করে।

আমি আগের একটা গল্প পরে বুঝেচি যেটা , সেটা হলো দিদির গল্পের, গ্রাফ টা ধীরে ধীরে ওঠে। আগে জাল বোনেন। পিক অব্দি কিচ্ছু বোঝা যায় না কি হতে চলেছে। আসতে আসতে জাল গুটিয়ে আনেন দিদি। তখন অনেক টাই পরিষ্কার হয়ে যায় , শেষে কি দাঁড়াবে। মনে হয় না গল্পটির কিছু বোঝার সময় এসেছে বলে। ভালো লেখকের এটাই গুন। যখন সামনে টা আবছা থাকে তখন ঘটনার ঘনঘটায়, পাঠক বোর ফিল করতে পারে না। এই গল্প যদি পূর্ণমাত্রা পায় তবে এটাও ইতিহাস তৈরি করবে বলেই মনে হয়। 

অনেক ধন্যবাদ ভাই। অনেক অনেক। নাহ মাথা ঘামাচ্ছি না। এই ফোরাম আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। বিশ্বাস দিয়েছে। ভালোবাসা দিয়েছে। আর ও ভালো লিখব। আর ধন্যবাদ এমন ভালো একটা রিভিউর জন্য।  Heart
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(13-06-2022, 03:27 PM)boro bara Wrote: কি ভাবে লেখেন এই সব কথা জানিনা । আমি বুঝতে পারছি ব্যাপার টা হয়ত। যদি বুঝি তবে আপনার এই গল্প বেশ গভীর। হয়ত আমার বিশ্লেষণ সবার মনোমত হবে না , কিন্তু আজকে না হলেও পরে এই গল্প অনেক অনেক লোকে পড়বেন। 

হ্যাঁ কথা টা তো সত্যি। ভাল খারাপ সবার মধ্যেই থাকে।  লিখে দিলাম। লেখার ফ্লো তে মাথায় চলে আসে আরকি।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(13-06-2022, 04:05 PM)Baban Wrote: এই অংশটা জাস্ট অসাধারণ লাগলো। গ্রাম বাংলার রূপ, দিনের সবুজ রাতের মিউজিক সব মিলিয়ে যেন এক মায়াবী বাস্তব। যেখানে বাস্তবের কঠিন রূপের স্পর্শ আছে, সাথে আছে আধুনিকতার বেড়াজাল ভেঙে অনুন্নত কিন্তু অসাধারণ এক পরিবেশ। হয়তো ইহাই প্রকৃত উন্নতির সংজ্ঞা কিন্তু বর্তমানে নিজ স্বার্থে সেই সংজ্ঞা পাল্টে গেছে। উঁচু বাড়ি, দামি গাড়ির আড়ালে ওই সবুজ রঙ যেন ধূসর হয়ে যাচ্ছে।

যাইহোক এবারে আসি আজকের পর্বে - হীরা বাবু রহস্যময় চরিত্র। অনেক কিছু লুকিয়ে তাকে কেন্দ্র করে। ধীরে ধীরে প্রকাশিত হোক পদ্মের মতন। তবে এটা কিন্তু সত্যিই যে এই কাহিনীর মূল আকর্ষণ ওই ভয়ানক জীব। সে যতই হিংস্র অমানবিক পৈশাচিক বীভৎস আর ভুল হোক না কেন...... সেই এই গল্পের খলনায়ক হয়েও নায়ক। তাকে বাদ দিয়ে এই গল্প ভাবা সম্ভবই নয়।  clps

হ্যাঁ নেক্সট পেইজ সেদিনে একটা কথা লিখেছিল। খারাপ না আসলে, ভালো আসে না। বা খারাপ কে না দেখলে, সামান্য ভালো টাও বোঝা যায় না। রাবণ না আসলে রাম কে পেতাম না। ঠিক ঠিক। আমাদের উন্নতির পিছনে জ্ঞান নয়, পরোক্ষ ভাবে অজ্ঞানতাই দায়ী। অজ্ঞানতাই আমাদের আলোর দিকে নিয়ে যাবার ইচ্ছে এবং চাওয়া টা দেয়। কি ভালো রিভিউ।
Like Reply
(13-06-2022, 06:27 PM)nextpage Wrote: হীরের দর্শন দিয়ে গল্পের নতুন ফেজে প্রবেশ করালে আমাদের।
শুরুতেই লালির চোখ দিয়ে আমাদের হীরাকে দেখালে আর সেই সাথে লালির মুখ৷ থেকে যে প্রাঞ্জল বর্ণনায় হীরা কেন হীরা সেটার জানান দিলে সেটা দিল এফোঁড়ওফোঁড় করে দিলো। এমন করে বর্ণনা করতে গেলে নিশ্চয়ই নিজেকে ঐ লালির জায়গায় দাঁড় করাতে হয়েছে। অপূর্ব....

তবে ঐ স্পেস সাইন্স টা যখন এলো তখনি মাথাটা কেমন একটু ঘুরতে লাগলো, নিজেও সাইন্সের ছাত্র তাই এটার মারপ্যাঁচের দিকে যেতেই চাইছিলাম না। তবে হীরার সাদা কালোর বিশ্লেষণ টা সবকিছুর গন্ডি ছাড়িয়ে ভিতরের লুকানো সত্তা তে দাগ কেটেছে।
হীরার প্রতি লালির টান টা গঁদ বাধা ছকে হবে না সেটা দিদির উপর আশ্বাস থেকেই বলছি। 
শেষে এসে সিধু বাবু তো সব হিসেব উল্টো করে দিলো, পরেশ বাবুকে না হয় সাদা নেকড়ে বাচিয়ে ছিল, কিন্তু এখানে তীর ধনুক হস্তে বালক???

হ্যাঁ মেয়ে তো তাই হীরা কে নিজের ইচ্ছের চোখে দেখেছি। আসলে নায়ক দের তো নিজের মন আর চোখ দিয়েই তৈরি করি। আর নায়িকা গুলো একটু নিজের মতন হয় আরকি। ডমিনেটিং , বোকা আর একবজ্ঞা। 

আর ধুর ওই স্পেসের ব্যাপার টা আমিও খানিক ঘেঁটে দিয়েছি নিজেই। কে অতো কচকচানি পড়বে? আর দ্বিতীয়ত, এতো ভুল ভ্রান্তি এখনো ভাবনা তে , যে আমিও খেই হারিয়ে ফেলি। একটা সময় অব্দি , মেকানিক্স দিয়ে চেষ্টা করতাম সামলানোর। যবে থেকে মেকানিক্স স্পেস সায়েন্সে অবসলিট হয়ে গেছে, নতুন আঙ্গিকে, স্পেস সায়েন্স কে দেখা হচ্ছে, তবে থেকে স্পেস সায়েন্স, ম্যাথস ছাড়িয়ে ফিলসফি তে পা দিয়েছে বেশী করে। আর তখন থেকেই বেশী পড়াশোনা করতে হচ্ছে। এই বয়সে আর পোষায় না। বাচ্চা কাচ্চা, আর একটা ধেড়ে কে নিয়ে এতো চাপাচাপি? ভাবি , রগুবীর রক্কে করো। 

হ্যাঁ আসলে এটা কোন একার কাহিনী নয়। একটা মানুষ যখন জন্মায়, তখন একেবারে বোধ শূন্য থাকে। যবে থেকে জ্ঞান হয়, তার মধ্যে গুণের প্রকাশ ঘটতে থাকে। কারোর বেশি কারোর কম। প্রথম গুণ হলো কিছু বানানো। তৈরি করা। সৃজন করা। আর তার সাথেই যে দোষ দুটো চলে আসে সেটা হলো, সেই সৃজনের উপরে নিজের মোহ বা ঘৃণা। হয় সেটা পছন্দ হয় না হলে সেটা ভালো লাগে না। নিজের সন্তানের তো ভালো মন্দ হয় না। তাই দ্বিতীয় গুণ জন্ম নেয়। সেটা হলো ভালবাসা আর সেই সৃজন কে রক্ষা করা। আর তৃতীয় গুণ হলো, সেই সৃজিত ব্যাপার টার, সময় এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী সমাপ্তির ঘোষণা। এটা দেখতে গেলে প্রতিটা জীবের মধ্যেই থাকে। কাজেই  দেব বলে কিছু নেই, আছে গুণ। কাজেই এখানে কোন চরিত্র ই ফেলনা নয়।
[+] 3 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
(13-06-2022, 06:56 PM)Somnaath Wrote: অনবদ্য, পড়তে পড়তে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছিল you're a genius

হাহাহাহাহাহা। আমার বর বলে আমি নাকি শুধু বউ। কোন সাফিক্স বা প্রেফিক্স নেই। যাক তুমি জিনিয়াস বললে। এটার স্ক্রীনশট দেখাব ওকে।  Heart
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(13-06-2022, 11:21 PM)nandanadasnandana Wrote: হাহাহাহাহাহা। আমার বর বলে আমি নাকি শুধু বউ। কোন সাফিক্স বা প্রেফিক্স নেই। যাক তুমি জিনিয়াস বললে। এটার স্ক্রীনশট দেখাব ওকে।  Heart

আমার বৌ তো সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়ায় , আজকেই ফিরলো জার্মানি থেকে .... সবিই কপাল দিদি Sad

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
(13-06-2022, 11:46 PM)ddey333 Wrote: আমার বৌ তো সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়ায় , আজকেই ফিরলো জার্মানি থেকে .... সবিই কপাল দিদি Sad


বোঝ!!!
Like Reply
(13-06-2022, 01:17 PM)nandanadasnandana Wrote: যখন মাখন খায় কোন দিকে খেয়াল থাকে না ওর। কেমন গভীর কালো চোখের মনি দুটো। দেখলেই ছ্যাঁত করে বুক টা। মনে হয় ওই চোখে ডুব দিলেই আর উঠতে পারা যাবে না। কালো গায়ের রং। না না কালো না। সবাই বলে বটে হীরা কালো। কিন্তু লালির মনে হয় কেমন একটা উজ্জ্বল রং। সূর্যের মতন তপ্ত কাঞ্চনবর্ণ না, চাঁদের শীতল জ্যোৎস্নার মতন উজ্জ্বল গায়ের রং ওর।  মনে হয় আলো পিছলে পরবে ওই রঙের জেল্লায়।

 

অপূর্ব বর্ণনা
[+] 1 user Likes susantopakrashi's post
Like Reply
(14-06-2022, 10:08 AM)susantopakrashi Wrote: অপূর্ব বর্ণনা

ধন্যবাদ অনেক আপনাকে।
Like Reply
আগের পর্বের কিছু অংশ......

ঠিক সেই সময়ে দুটো তীব্র শিষের শব্দ হতেই দেখা গেল তাল গাছে সিধুবাবু আর বাঘমুড়োর মাঝে দুটো তীর এসে বিধে গেল। বেশ লম্বা তীর। তালগাছ কে ফুঁড়ে দিয়ে তীরের ফলা টা বেড়িয়ে গেছে উল্টো দিকে। যেন বাঘমুড়ো কে বলা হলো ,ব্যস আর এগিও না। এই তীর গুলো কিন্তু সাধারণ তীর নয়। বাস্তবিক, তালগাছ টা কে একেবারে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছে তীর দুটো। বাঘমুড়ো যেন আসন্ন বিপদ বুঝতে পারল। বুঝতে পারল এই তীর ওকে সাবধান করে দেওয়া মাত্র। পরের মারা তীর গুলো বুকে বিঁধতে সময় নেবে না। তীরগুলোর মধ্যে যেন কিছু ছিল। চঞ্চল হলো বাঘমুড়ো। আতঙ্ক মনের বাইরে না এলে শরীরে যে চঞ্চলতা দেখা দেয় সেই রকম চঞ্চলতা। আর এদিকে শিকার হারানোর ক্রোধ। দুবার পা দুটো কে মাটিতে ঠুকে ,আতঙ্ক আর ক্রোধ মিলিয়ে পুকুরের জল কাঁপিয়ে ব্যাঘ্রনাদ করে উঠল বাঘমুড়ো। আর সেই নাদে, পুকুরের জলে অব্দি ঢেউ উঠল তির তির করে। ওই ভয়ানক আওয়াজে,  সিদুবাবু অজ্ঞান হয়ে যাবার আগে অন্ধকারে বুঝলে পারলেন , পুকুরের ধারে খানিক দূরে , একটা কচু বনের পিছনে কোন অল্পবয়সী বালক, তীরধনুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
 
                                                                                               পর্ব পাঁচ
পরের দিন সকালে আগুনের মতন হুহু করে ছড়িয়ে পড়ল এই ঘটনা। সকাল গড়ায় নি। ওই ভয়ানক ব্যাঘ্র নাদে কেউ জেগে থাকবে এটা ভাবাই অস্বাভাবিক। হয়েছে তো গ্রামের ভিতরেই ঘটনা খানা। গ্রামের সব লোক তো বটেই এপাশ ওপাশের গ্রামের লোক ও ছুটে এসেছিল সিধুবাবুর বাড়িতে পরের দিন। নগেন জ্যাঠা সেই ভোর রাত থেকেই সিধু বাবুর কাছে। তার বৃদ্ধ মন খুঁজে বেড়াচ্ছে কিছু। কোন সর্বনাশের ইঙ্গিত পর পর এই দুটো ঘটনা?  মন টা খচখচ করলো আরো যখন দেখল, মহাদেবের ব্যাটা হীরা, পরেশের মেয়ে লালি আর সিধুর চৌদ্দ বছরের নাতি অভি, সিধুবাবুর বাড়ির উঠোনে হাসাহাসি করছে আর গল্প করছে। বাঘমুড়োর ভয়ে সবাই যখন প্রায় পাগলপারা, এই তিনজনের মনে এতো কীসের আনন্দ?

দিন সাতেক সব কিছু ঠিক রইল। লোকজন একেবারে জঙ্গলের রাস্তা এড়িয়ে চলতে লাগল। চার কিমি রাস্তা এড়িয়ে চল্লিশ কিমি ঘুরে আসতে লাগল মানুষ জন। দরকার কি, বাঘমুড়ো কে নেমতন্ন করে? সে যে নতুন কিছু ভাঁজছে নিজের মনে, সে নিয়ে সন্দেহের তো অবকাশ নেই।  ভোর বেলায় আর সন্ধ্যে বেলায় নিয়ম করে কৃষ্ণ নামের দল গ্রাম জুড়ে নাম কীর্তন করতে শুরু করেছিল। কিন্তু একটা অজানা ভয় চেপে বসেছিল গ্রামের ভিতরে। ভগবান আছেন সে সবাই মানে। কিন্তু দেখেনি কেউ। কিন্তু বাঘমুড়োর আতঙ্ক এখন মনের বেড়া টপকে চোখের সামনে এসে হাজির। মানুষ না পেয়ে, পর পর দুদিন দুটো গাই গরু আর গোটা চারেক ছাগল নিখোঁজ হয়েছে।  সবাই ঠিক সময়েই উঠছে ঘুম থেকে , কিন্তু মনে আনন্দ নেই। নিরাশা যেন চেপে বসছে সবার মনে। মনে সর্বক্ষণ বিষাদের একটা ছায়া। ঘুমতে যাচ্ছে ক্লান্ত হয়ে কিন্তু ঘুম মনে হয় না কারোর আসছে। রাতের গান গুলো তে আর আনন্দ নেই, কেমন একটা বিষাদময় সুর নিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে রাত গুলো। বাঘমুড়ো কি পুরো গ্রাম কেই ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে নিজের মায়ায়?

 বেস্পতিবার হাট বার। হাট বসে দিনের বেলায়, জঙ্গল আর গ্রামের মাঝে বিশাল ফাঁকা মাঠে, গ্রামের কোল ঘেঁষে। তাও কম বড় হাট নয়। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে হাটের লোকজন বেশ কম। মহাদেব সকালেই চলে আসে নিজের জিনিসপত্র নিয়ে। ওর বাড়ির সব্জি, পেঁপে, তরমুজ এর নাম আছে বাজারে। আসতে না আসতেই হাওয়া হয়ে যায়। আজকেও হয়ে গেল। পাশে বসে থাকা হীরা কে বলল,
-      চল, বাপ বেটা তে দুটি খেয়ে নি ।

হীরা একটা বই পড়ছিল। বই টা বন্ধ করে হাতে নিয়ে মহাদেব কে বলল,
-      বাবা আমি ওই সব কচুরি খাব না। আমি মাখন খাব।

মহাদেব উঠে পরে জামা টা গায়ে দিয়ে বোতাম আটকাতে আটকাতে ভাবল, - আহা গরীবের ঘরে জন্মালি বাপ! ছেলে আমার কিছুই খেতে চায় না মাখন ছাড়া।

মহাদেব হীরা কে বলল,

-      আচ্ছা আচ্ছা হবে। চল দুটি কিছু মুখে দে এখন। না হলে তোর মা আমাকে আস্ত রাখবে না। অতো করে বললাম তোকে আসতে হবে না হাটে। শুনলি না। ঠিক আছে আজকে বিকালে লালি দের বাড়ি থেকে মাখন কিনে আনব ক্ষন।

ছেলের ওই বায়না করেই শান্তি। বাপ যা খাওয়ায় ছেলে হাসি মুখে খেয়ে নেয়। ছেলেটা কাছে থাকলে মনে হয় যেন জগতে আর কিছু লাগে না মহাদেবের। মুখে বলল বটে ছেলেকে যে, হাটে আনতে চায় নি, কিন্তু ছেলে কাছে থাকলে মনে হয় সে এই দুনিয়ার সব থেকে বড়লোক। গায়ের গামছা খানা হীরার মাথায় চাপিয়ে দিল মহাদেব। পাছে ছেলের মাথায় রোদ না লাগে। বাবাহ কত মোটা মোটা বই পরে ছেলে। সব মাথার কাজ কিনা! দুজনে হেঁটে হাটের একেবারে ধারে চলে এলো। কাশী ময়রার দোকান যে এই দিকেই। পেটে কিছু দিয়ে, হীরার মায়ের জন্য কিছু মিষ্টি কিনে,  খানিক জল খেয়ে বাপ ব্যাটা তে গ্রামে ফিরবে। 

আনমনে হাঁটছিল মহাদেব।পাশে তাকিয়ে ছেলেকে দেখতে গিয়ে দেখে ছেলে নেই পাশে। ভারী অবাক হয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখে, পারু গয়লানীর, মাখন আর খোয়া ক্ষীরের মাটির কলসী গুলোর সামনে হীরা বসে আছে। আর গয়লানী হীরা কে একটা শালপাতার ঠোঙা তে বেশ খানিক টা মাখন তুলে খাইয়ে দিচ্ছে।

মহাদেব মাথায় হাত দিয়ে গেল সেখানে নিজের মনেই বকতে বকতে।
-      উফ আর পারি না একে নিয়ে। এ নির্ঘাত কোন গোয়ালা ঘরে ছিল আগের জন্মে।

সামনে গিয়ে দেখে গয়লানী পরম মমতায় মাখন খাইয়ে দিচ্ছে হীরা কে। আর হীরা চুপটি করে কোন কথা না বলে মাখন খেয়ে নিচ্ছে। কোঁচর থেকে পয়সা বের করে গয়লানী কে দিয়ে হীরা নিয়ে চলে আসবে এই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে গয়লানী কিছু তে পয়সা তো নিলই না তার উপরে বলল,

-      পাগল হয়েছিস মহাদেব। ছেলেকে একটু মাখন খাইয়ে পয়সা নেব? আমার গরু কটা আর দুধ ই দেবে না তাহলে। যা যা, মেলা পয়সা দেখাস না।

আর হীরা কে গামছা দিয়ে মুখ মুছিয়ে ফের মাখন খেতে যাবার নেমতন্ন করে তবে গয়লানী ছাড়ল।

-      তোকে না বলেছি, যেখানে সেখানে মাখন, মিষ্টি দেখলে হামলে পড়বি না!!

মহাদেবের রাগের কথায় কোন জবার দিলো না হীরা। এই এক সমস্যা। কথা খুব কম বলে ও। আরো বকাঝকা চলত। কোন বাপের ই বা ভালোলাগে, ছেলে গয়লানীর কাছে ফ্রী তে মাখন খেয়ে আসছে? কিন্তু বকাঝকা বন্ধ হলো কারন কাশীর দোকান সামনে চলে এসেছে আর পরেশ আর পরেশের মেয়ে লালি দুজনাই বসে আছে সামনে। কাশীর দোকানে ভিড় তখনো জমজমাট হয় নি। দুদিকে পাতা দুটি বেঞ্চি তে, একদিনে পরেশ আর লালি বসে, আর অন্য দিকে মহাদেব আর হীরা বসে পরল। লালিদের অনেক দুধ,মাখন আর ঘী বিক্রী হয়ে এই হাটে। তাই দুজনাই সকাল সকাল হাট বারে চলে আসে। এদিকে হীরা বসে চুপ করে বই পড়তে শুরু করল। আর মহাদেব কাশী কে কচুরী আর জিলাপী দিতে বলল।ইতি মধ্যে লালি উঠে এসে মহাদেব কে বলল,

-      কাকা তোমাকে না বাবা ওই দিকে বসতে বলল। কিছু কথা আছে নাকি!

মহাদেব চলে গেলো উল্টো দিকের বেঞ্চি তে। আর লালি বসে পরল হীরার পাশে। হীরা কে বলল,

-      তুই কচুরী খাবি?
-      ধুর, ওই সব তেলে ভাজা ভাল লাগে না।
-      চল তবে আমার সাথে। একটা ভালো জিনিস খাওয়াব।
-      কোথায়?
-      চল না।

ততক্ষনে লালি শুনতে পাচ্ছে মহাদেব কাকা, ওর বাবাকে বলছে
-      হ্যাঁ পরেশ দা বল, এলাম এদিকে

খানিক অবাক হয়ে পরেশ বলল
-      তা বেশ করেছিস এসেছিস। এখন দুটি খেয়ে নে।
-      যা বাবা, সে তো খাবই। কিন্তু তুমি ডাকলে যে!!
-      আমি!!!!
-      হ্যাঁ, লালি যে বলল?
-      অ্যাঁ? লালি এই লালি!!

আর শুনতে পেল না লালি। এক গাল হাসি, গজদন্তের সাজে সজ্জিত করে, হীরার হাত ধরে ছুটে ততক্ষণে চলে এসেছে বড় ঠাম্মুর ঠেলার কাছে। বিশাল রাধাচূড়া গাছে তলায় বড় ঠাম্মুর হাতের মাখন, ক্ষীর, দই আর ঘী এর ঠেলা। পরেশ এর ই ব্যবসা এটা। বড় বিখ্যাত এ অঞ্চলের। আর সব থেকে বড় কথা, বড় ঠাম্মু খুব মিষ্টি করে গান গায়। হীরা কে গাছের অন্য দিকে দাঁড় করিয়ে রেখে লালি চলে গেল বড় ঠাম্মুর কাছে। সম্পর্কে বড় ঠাম্মু পরেশের জেঠিমা হন। এই জেঠিমার ছেলে বলতে এখন পরেশ ই। লালি গিয়েই বলল,

-      ঠাম্মু, দাও তো আমার ভাগের মাখন টা।  

একটা খদ্দের কে ছেড়ে, লালির দিকে তাকিয়ে নিয়ে হেসে বড় ঠাম্মু বলল,
-      তা, মাখন টা কে খাবে? কেষ্ট টি কই?
-      উফ, তুমি দাও তো। অনেক টা দেবে বলে দিলাম।

ততক্ষনে একটা বড় মাটির সরা তে মাখন রাখতে রাখতে বড় ঠাম্মু, লালি কে বলল,

-      সে না হয় দিচ্ছি। কিন্তু রাধা কি দেখেই পেট ভরাবে নাকি, রাধার জন্য ও দেব খানিক টা?
-      ভারী বয়ে গেছে আমার রাধা হতে।
-      তা দিদি ভাই , অতো প্রেম ভালো না। কেষ্ট প্রেমে কিন্তু বুকে ব্যাথা লাগে গো। আমি যে বুঝি সব। তোর চোখ ই যে সব বলে দেয়।
-      উহ অতোই সস্তা। আমি কি সেই যুগের রাধা নাকি? আমার প্রেমের জোর ও আছে আর কেষ্ট কে নিজের করার ও জোর আছে, বুঝলে? তুমি দাও তো। ছেলেটা খাবে। একটা চামচ দিও কিন্তু।

এক মুখ হাসি নিয়ে এক মালসা ভর্তি মাখন নিয়ে হাজির হলো লালি গাছের পিছনে। দেখে গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হীরা। একটা ঢিলা হলুদ জামা পরে। আর একটা আকাশী জিন্সের প্যান্ট। দুটো পা এর পাতা কে একে অপরের সাথে কাঁচি দিয়ে দাঁড়িয়ে। খাওয়াবে কি লালি। হারিয়েই গেলো মনে হয়।

-      কই রে আয়? খাবি আয়। দেখ কি এনেছি?
-      আরে ব্বাস। বড় ঠাম্মুর বানানো?
-      হুম।

আশেপাশের অনেকেই দেখছে, লালি হীরা কে মাখন খাইয়ে দিচ্ছে গাছের নিচে। আর লালি? হাঁ করে দেখছে হীরা কে। খিদে তেস্টা সব উবে যায় এই ছোঁড়া কে দেখলে যেন। মাঝে মাঝে ভুলেই যাচ্ছে খাওয়াতে। হীরা, লালির হাত টা টেনে এনে নিজেই নিজের মুখে পুরে নিচ্ছে। আর ওদিকে বড় ঠাম্মু গান ধরেছে,

-      কইয়ো কইয়ো কইয়ো রে ভ্রমর, কৃষ্ণ রে বুঝাইয়া। মুই রাধা মইর‍্যা যাইমু, কৃষ্ণ হারা হইয়ারে ভ্রমর, কইয়ো গিয়া।

সেই গানের দ্যোতনা যেন মরমে মরমে বুঝতে পারছে লালি। যেন পুরো গান টাকেই আত্মসাৎ করবে লালি। কাউকে এ কষ্টের ভাগ দেবে না। কাউকে এ বিরহের সুখ দেবে না ও। ওর চোখে চোখ মিললেই যেন বুকের মধ্যে সহস্র ভোমরার কামড়। কি যে আছে ওই চোখে কে জানে? কে বলবে, চারিদিকে মৃত্যুর আতঙ্ক? কই মৃত্যু, কই পিশাচ? এ যে মারাত্মক বাঁচার ইচ্ছে। এই ছোঁড়া কে নিয়ে বাঁচার ইচ্ছে।

-       কই ক্ষমতা দেখি সেই পিশাচের, কিছু করে দেখাক হীরা কে? শেষ করে দেব।

নিজের ভাবনায় নিজের চমকে উঠল লালি। তবে কি এই কথা টা ভিতরের সাদা নেকড়ে টা বলছে? মনে পরে গেল সেদিনে হীরার বলা কথা গুলো আবার। লালির হাত খানা মুখের সামনে নিয়ে, আঙ্গুলে লেগে থাকা মাখন টা চেটে খেতে খেতে আড়চোখে তাকালো হীরা লালির দিকে। হাসল যেন একটু? উফ এবারে লজ্জা পেয়ে গেল লালি। না জানি কত লোকে দেখল হীরা কে মাখন খাইয়ে দেবার দৃশ্য।  

বলেছিলাম না, কত ঘটনা ঘটছে চারদিকে। কার সাথে সমাপতনে নতুন কি ঘটনা পাখা মেলে উড়বে, কে জানে? আমরা তো সামান্য মাত্র। ঘটনার কোপে কুপিত হয়ে এধার ওধার করি। আর যিনি ঘটাচ্ছেন, তিনি তো হাসছেন। এদিকে নিজের প্রেম প্রকাশ করতে না পারা এক প্রেমিকা, নিজের প্রেমিক কে নিয়ে জীবনের সব থেকে ভালো ক্ষণ কাটাচ্ছে। বড় ঠাম্মু গান গেয়ে গেয়ে নিজের জিনিসের বড়াই করে জিনিস বেচছেন। পরেশ আর মহাদেব গরম গরম কচুরি আর জিলাপি হাতে নিয়েছে সবে। গয়লানীর মাখন শেষের মুখে। কাশী এই ভিড়ের সময়ে চোখে দেখতে পাচ্ছে না এতো ব্যস্ত সে। আর ইসমাইল এর ছেলে ,রহিম , কাশীর দোকানের পিছনের পুকুরে নেমে , নিজের লাঙ্গল খানা কে ধুচ্ছিল। লাঙ্গল ধুয়ে , নিজের হাত পা ধুয়ে, হাটে কেনাকাটি করে বাড়ি ফিরবে এই ছিল উদ্দেশ্য। সাধারণ ব্যাপার। এই রকম প্রায় দুইশো মানুষ এই হাটে, চতুর্মাত্রিক স্পেসে নানান দিকে, নানান কাজে ব্যস্ত। কেউ বিক্রী করছে, কেউ কিনছে। কেউ খেতে এসেছে শুধু তো কেউ খাবার জিনিস কিনতে এসেছে। কেউ বা শুধু দেখতে এসেছে। আরো কত জনা কত মতলবে ঘুরে বেড়াচ্ছে তা মহাশিব ই জানেন।  

ঠিক সেই সময়ে আরো ঘটনার বীজ রোপিত হচ্ছিল সবার অলক্ষ্যে। যেহেতু আজকে হাট বার, নানা তরিতরকারি পরে থাকে এদিকে ওদিকে। গ্রামের ষাঁড় দু একটা সেদিনে এই হাটে ঘুরে বেড়ায়। এই সব কাঁচা তরিতরকারির জন্য। তা লোকে দেয় ও খেতে। কিন্তু আজকে যে ষাঁড় টা ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাকে আগে কেউ দেখেনি। কিন্তু এই ব্যস্ততার সময়ে, সেই নিয়ে আলোচনা করার মতন অবকাশ কারর ছিল না। ভুল টা করল . পাড়ার নজরুল। ও ঠিক কাশীর দোকানের সামনে বসেছিল বিরাট টোঙ্গা টা নিয়ে। কাশীর ওখানে স্থায়ী দোকান। দোকান ঘর টা পাকা আর সামনে চালা টা বিশাল। সেখানেই পাতা থাকে টেবিল আর বেঞ্চি গুলো, যেখানে সবাই বসে খায়। সেই চালা ঘরের ঠিক সামনে বাম দিক ঘেঁষে, পালং শাক, লাউ শাক, লাউ, বেগুন সব কিছু নিয়েই নজরুল বসে। বিক্রী হয়ে যাওয়া সব্জির , অবাঞ্ছিত ডাল পালা , পাতা পরেছিল ওর পাশেই। রহিম উঠে গিয়ে কিছু টা পাতা, একটা ভেঙ্গে যাওয়া লাউ এর অবশিষ্টাংশ ষাঁড় টির সামনে রাখতেই , ঘটনা টা ঘটল। ষাঁড় টি, কিছু না ভেবেই, সামনে অতো গুলো খাদ্য দ্রব্য পেয়ে একটু উত্তেজিত হয়েই, মুখে একটা আওয়াজ করে মাথাটা নীচে করেছিল। নজরুল তাতে ভয় পেয়ে গিয়ে কিছু টা পিছিয়ে আসতেই, একটা জিনিসে পা টা চাপালো বেশ জোরেই। সেটা ছিল একটা বেলচার উপরে রাখা কিছু টা আগুন। কাশীর উনোন বেশ তেতে গেছিল। কচুরি খরিয়ে গিয়ে লাল হয়ে যাচ্ছিল। সেই জন্য সে, কিছু গনগনে কয়লা, উনুন থেকে বের করে , লোহার বেলচার উপরে রেখে জল দিয়ে দিয়েছিল। আর বেলচা খানা রাখা ছিল রাস্তা থেকে ফুট চারেক দূরে নজরুলের কিছু টা পিছনে। কিন্তু ষাঁড়ের গুতিয়ে আসার ভঙ্গিমা তে, নজরুল এতই ভয় পেয়েছিল যে , একেবারে বাপ বলে সরে এসে বেলচার হাতলে পা দিল বেশ জোরে। ব্যস , বেলচার আগুন, একেবারে আকাশে উঠে পড়ল ষাঁড়ের গায়ে।

না, কিছু হয়ত হয় নি, কিন্তু স্তিমিত কয়লার আগুনেও বেশ তাপ থাকে। গায়ে মাথায় সেই কয়লা উপর থেকে পড়তেই, ষাঁড় টি ক্ষেপে গেল। দুবার পরিত্রাহী ডাক দিয়ে, মাথা নিচু করে সামনের দিকে দৌড়ানোর, ভঙ্গিমা তেই বোঝা গেল যে এবারে যাকে সামনে পাবে তাকেই ও গুঁতবে। সামনে বসে ছিল, পিছন করে, মহাদেব আর পরেশ। পাশাপাশি দুজনে কচুরি খাচ্ছিল আর গল্প করছিল। দৃশ্য টা সবাই দেখলেও, কি হতে পারে, আন্দাজ করতে সবাই পারে নি। একজন দেখছিল পুরো ঘটনা টা, লালির হাতে লেগে থাকা মাখন চাটতে চাটতে। দ্বিতীয় জন নজরুল। সে চেচিয়েও উঠল,

-      সরে যাও ও ও ও!!!!!! 

আর একজন দেখছিল, পুকুরের ঘাট থেকে উঠে আসতে আসতে। রহিম। জলে ভেজা ফরসা পেশীবহুল দেহ খানা গামছা দিয়ে টেনে টেনে মুছতে মুছতে উঠে আসছিল ও।ঘাটে ওঠার মুখেই দেখল, কিছু টা দূরে ষাঁড় টা, বাগিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে সব কিছু উপড়ে ফেলার। চোখ দুটো স্বাভাবিক নয় একদম ই। মারাত্মক ভয় আর ক্রোধে, দুবার সামনের একটা পা ঠুকেই , পরেশ আর মহাদেবের দিকে দৌড়তে শুরু করল শিং বাগিয়ে। এদিকে বেচারী পরেশ আর মহাদেব খাওয়ায় মগ্ন।

এদিকে পরের গ্রাসের মাখন টা মুখ নিচু করে, মাটির সরা থেকে নিয়ে, হীরার মখে তুলতে গিয়ে অবাক হয়ে লালি দেখল, হীরা নেই সামনে। ততক্ষনে রহিম ঘাটের উপরের লাঙ্গল খানা ফেলে তীব্র গতি তে পৌঁছে গেছে ষাঁড়ের সামনে। আর হীরা কাশীর চালা থেকে কিছু টা দূরে। হয়ত কেউ বুঝতেও পারল না, কিন্তু পরেশ বা মহাদেব আহত হবার আগেই কি করে যেন, সহসা থেমে গেল ষাঁড় টা। আর প্রচন্ড গতিতে ছেঁচড়ে গিয়ে ,রহিমের লাঙ্গল সুদ্দু নিয়ে পড়ল পুকুরের জলে, যেখানে রহিম হাত মুখ ধুচ্ছিল। আর আমি দেখলাম, রহিম বিশাল চেহারা নিয়ে ষাঁড়ের সামনে গতিপথ আটকে দাঁড়াল। আর ষাঁড় টি ঠিক সামনে আসতেই , হাল্কা সরে গিয়ে নিজের বাম হাত দিয়ে , ষাঁড়ের শিং টা ধরে হালকা টান দিল। আর তাতেই ষাঁড় বাবাজির মাথা খানা আটকে, পিছনের শরীর টা সামনে এগিয়ে ছেঁচড়াতে শুরু করল সামনের দিকে গতিজাড্যের নিয়মানুসারে। অতো বড় চেহারার ষাঁড়, ছেঁচড়ে যাবার সময়ে, কাশীর দোকানের আটচালাটার একটা মোটা বাঁশের থাম, যেটা পিলারের মতন ধরে রেখেছিল পুরো চালা টা কে, সেটা একেবারে ভেঙ্গে গেল। আর সাথে সাথে চালাঘর টা এক দিকে মড়মড় করে নুইয়ে পরতে শুরু করল। ভিতরের বড় কাঁড়ি গুলো অল্প অল্প করে ভাঙ্গার আওয়াজ পেল আশে পাশের সকলেই। সর্বনাশ, ওই চালার নীচে অন্তত জনা সাতেক লোক আর বিশাল উনুন জ্বলছে। উনুনের উপরে বিশাল কড়া তে তেল ফুটছে।  বাঁশ, বাখারী, মোটা মোটা কাঁড়ি, পুরু খরের আস্তরণ সমেত ওই চালা নীচে পরলে একেবারে আগুন লেগে বিশাল বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। ওই গরম তেল ছিটকে গিয়ে, ভিতরের সব কটা মানুষের একেবারে জীবন্ত অনলসমাধি ঘটবে। সেটা না হলেও ওই চালা ভেঙ্গে পরলে মারাত্মক জখম বা আহত হবার প্রভুত সম্ভাবনা।  

ততক্ষনে হীরা প্রায় বিদ্যুতের মতন এসে, নুইয়ে পরা চালাঘর টা ধরে নিল নিজের হাতে। আর সেটা ভেঙ্গে পরতে পরতে ও হীরার হাতের উপরে আটকে রইল আগের মতন। কিন্তু একটু নুইয়ে পরল কারন হীরা অতো লম্বা না। ততক্ষনে, রহিম ও ছুটে এসেছে। মহাদেব আর পরেশ দুজনাই খাবার ফেলে উঠে এসে হীরার সাথে হাত লাগিয়েছে। কয়েক সেকেন্ড মাত্র। রহিম একটা বাঁশ নিয়ে এসে ঠেকা দিতেই পরিস্থিতি তে আপাত-স্থায়ীত্ব এল। সবাই একে অপর কে দেখছে। কয়েক সেকেন্ড এর মধ্যেই কতগুলো বিপদ একসাথে ঘটতে চলেছিল। মহাদেব হীরা কে দেখছে বারংবার। ছেলের কোথাও লেগেছে কিনা। ততক্ষনে, সবাই ছুটে এসেছে আশ পাশ থেকে। আরো গোটা চারেক বাঁশ এনে ঠেকা দিল রহিম নজরুল আরো দুই একজন মিলে। গোলেমালে কেউ ভাবলই না, একটা আঠেরো বছরের ছেলের পক্ষে দশ মন ওজনের চালা ধরে রাখা অসম্ভব ছিল।

এমন এমন ঘটনা ঘটে যার কোন বিস্বাসযোগ্যতা থাকে না। আজকের ঘটনা টা তেমন ই একটা ঘটনা ছিল। যাদের মনে দাগ কাটল তাদের কথা কেউ ই বিশ্বাস করবে না। কারন যারা এই বিশ্বাসে নেতৃত্ব দেবে তারা কেউ ই ব্যাপার টা বোঝে নি। কিন্তু আমি বুঝেছি। কিছু তো চলছে এই গ্রামের ভিতরে। হয় কোন বিশাল ষড়যন্ত্র, না হলে বাঘমুড়োর অন্তিম সময় উপস্থিত। আমি যে ইঙ্গিত পাচ্ছি তার আসার। গত দুটো শিকার বাঘমুড়ো করতে পারে নি। কেউ না কেউ তো রক্ষা করছেন গ্রামের মানুষ গুলো কে।গ্রামের মানুষ গুলো ও বুঝতে পারছে, একটা হালচাল চলছে, এই শান্তিপ্রিয় মানুষ গুলোর জীবনে। কিন্তু আমি তো কিছু করতে পারব না। লোকে ফালতু বলে, যে সময় মহাশক্তিশালী। কোন শক্তি ই যে আমার নেই, দেখে যাওয়া ছাড়া। সময়ের অভিজ্ঞতা অনেক হতে পারে কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা স্বরূপ কে কাজে লাগাতে পারে না। আমার দেখে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।  
Like Reply
মুখ মুছে ফেলো হীরা 
মুখে যে লেগে আছে ননী,
তাড়াতাড়ি মুছে ফেলো
নইলে দেবে সাজা এসে জননী। 

সঙ্গী সাথী নিয়ে তুমি ঘরে দিলে হানা
ননী চুরী করে খেলে আরো তুই খানা,
তবে সাক্ষী রাখো কেন হে গোপালরূপী হীরা
ওগো আমার সখা শ্রী শিরোমণি ..

আমি শুধু ভাবছি লালির কথা .. সে কি রাধা নাকি রুক্মিণী? সম্ভবত রাধাই .. as usual অসাধারণ পর্ব
[+] 4 users Like Bumba_1's post
Like Reply
অসাধারণ বললেও কম বলা হয়, গ্রামে কৃষ্ণ নামের সংকীর্তন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আর হীরা -- এদের মধ্যে যে একটা সাদৃশ্য রয়েছে সেটা আগেই আন্দাজ করেছিলাম।  clps

[Image: Images-2-2-1.jpg]

[+] 1 user Likes Somnaath's post
Like Reply
উফ দিদি আগের পর্বটা এখনো হজম হলো না তো।

নতুন আপডেট নতুন মুখ, নতুন মূহুর্তের সাথে পরিচয় হয়ে গেল। শুরুতেই একটা কঠিন কথা বলেছো "ভগবান আছে জানে সবাই কিন্তু দেখেনি কেউ, আর এদিকে বাঘমুড়ো তো সাক্ষাৎ যমরুপে নিয়মিত দেখা দিচ্ছে"। মানুষের মনস্তাত্ত্বিক খেলা টা এখানেই বিপদ দেখা যায় মোকাবেলা করা যায় তবুও ভরসা ঐ অদেখা ভগবানেই। সেই সাথে মহাদেবে আর হীরা মূহুর্তে বাবা ছেলের মিষ্টি সম্পর্কের যে বর্ণনা দিলে সেটা খুব কমই দেখা যায় আমরা লেখকরা বেশিরভাগ সময় ছেলের সাথে মায়ের মধুর বন্ধনটা হাইলাইট করি বেশি।

অসম বয়সের লালি কে আপাতদৃষ্টিতে রাধা হিসেবেই দেখতো হচ্ছে, প্রেম ভালবাসা যতটুকু পাবে তার চেয়ে জ্বালা বেশি। তবে হীরার আধা হয়ে থাকবে নাকি পূর্ণ হবে সেটা তোমার হাতেই। মাখন খাওয়ানোর দৃশ্য টাতে নিজের প্রেমের সময়টাতে হারিয়ে গিয়েছিলাম, ও আমার জন্য বিভিন্ন জিনিস রান্না করে আনতো আর নিজ হাতে খাইয়ে দিত। আশেপাশে কে দেখছে তাতে কোন মাথাব্যথা ছিল না ওর।

শেষাংশের ক্ষিপ্রতা আর শক্তিমত্তার যে খেলা হীরা দেখাল সেটাতে ওকে নিয়ে বাজি ধরা যেতেই পারে।
লাইক রেপু গুলো এক প্রকারে ছিনিয়ে নিচ্ছো তুমি।
Shy হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
 দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।। Shy
[+] 2 users Like nextpage's post
Like Reply
(14-06-2022, 07:21 PM)nandanadasnandana Wrote: আর শুনতে পেল না লালি। এক গাল হাসি, গজদন্তের সাজে সজ্জিত করে, হীরার হাত ধরে ছুটে ততক্ষণে চলে এসেছে বড় ঠাম্মুর ঠেলার কাছে।


সেই গানের দ্যোতনা যেন মরমে মরমে বুঝতে পারছে লালি। যেন পুরো গান টাকেই আত্মসাৎ করবে লালি। কাউকে এ কষ্টের ভাগ দেবে না। কাউকে এ বিরহের সুখ দেবে না ও। ওর চোখে চোখ মিললেই যেন বুকের মধ্যে সহস্র ভোমরার কামড়। কি যে আছে ওই চোখে কে জানে? কে বলবে, চারিদিকে মৃত্যুর আতঙ্ক? কই মৃত্যু, কই পিশাচ? এ যে মারাত্মক বাঁচার ইচ্ছে। এই ছোঁড়া কে নিয়ে বাঁচার ইচ্ছে।



বলেছিলাম না, কত ঘটনা ঘটছে চারদিকে। কার সাথে সমাপতনে নতুন কি ঘটনা পাখা মেলে উড়বে, কে জানে? আমরা তো সামান্য মাত্র। ঘটনার কোপে কুপিত হয়ে এধার ওধার করি। আর যিনি ঘটাচ্ছেন, তিনি তো হাসছেন। 
আমি আবার বলছি দিদি, এই রকম গল্পে,  এই লেভেলের লেখা আমি কোনদিন ও পড়িনি। একবার ও মনে হচ্ছে না একটা অবাস্তব ঘটনা পড়ছি আমি। মনে হচ্ছে ঘটছে চোখের সামনে। 

নতুন চরিত্র, রহিম। জানিনা, হয়ত বুঝতে পারছি দিদি কি আঁকছেন আপনি। যদি আমার ধারণা সত্যি হয় তবে সত্যি এই গল্প একটা রিমার্কেবল জায়গায় যেতে চলেছে, আপনার মন ১ মতই। 

গজদন্তের সাজে সজ্জিত হাসি, মেয়েদের অস্ত্র বললে কম বলা হয়। হাসি তেই সব ঘায়েল হয়ে যাবে। অসাধারণ বর্ণনা। 

প্রেমে পরা সবাই মনে হয়, ওই ভোমরার কামড় খেয়েছে। কি দারুণ বর্ণনা। দারুণ। 

জাল বুনছেন এখন বুঝতেই পারছি। কিছু লাইক আর রেপু রইল। লেখা চলুক।   
[+] 2 users Like boro bara's post
Like Reply
(14-06-2022, 07:59 PM)Bumba_1 Wrote:
মুখ মুছে ফেলো হীরা 
মুখে যে লেগে আছে ননী,
তাড়াতাড়ি মুছে ফেলো
নইলে দেবে সাজা এসে জননী। 

সঙ্গী সাথী নিয়ে তুমি ঘরে দিলে হানা
ননী চুরী করে খেলে আরো তুই খানা,
তবে সাক্ষী রাখো কেন হে গোপালরূপী হীরা
ওগো আমার সখা শ্রী শিরোমণি ..

আমি শুধু ভাবছি লালির কথা .. সে কি রাধা নাকি রুক্মিণী? সম্ভবত রাধাই .. as usual অসাধারণ পর্ব

দেরী হলো উত্তর দিতে। রাধা হলো, কৃষ্ণের জীবনে প্রেম অভিলাষা। রূপক বলে আমার মনে হয়। যদিও আমিও সেই রূপকের সাহায্য নিয়েছি। এতো বড় মহাভারত, এক জায়গাতেও রাধার কোন উল্লেখ নেই গা!!!
[+] 2 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply
(14-06-2022, 09:22 PM)Somnaath Wrote: অসাধারণ বললেও কম বলা হয়, গ্রামে কৃষ্ণ নামের সংকীর্তন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আর হীরা -- এদের মধ্যে যে একটা সাদৃশ্য রয়েছে সেটা আগেই আন্দাজ করেছিলাম।  clps

গুণের সাদৃশ্য আছে। ভালোবাসা পাওয়ার ইচ্ছের সাদৃশ্য আছে। তোমরা রিভিউ দিলে যে কি ভালো লাগে ।
Like Reply
(14-06-2022, 11:33 PM)nextpage Wrote:
উফ দিদি আগের পর্বটা এখনো হজম হলো না তো।

নতুন আপডেট নতুন মুখ, নতুন মূহুর্তের সাথে পরিচয় হয়ে গেল। শুরুতেই একটা কঠিন কথা বলেছো "ভগবান আছে জানে সবাই কিন্তু দেখেনি কেউ, আর এদিকে বাঘমুড়ো তো সাক্ষাৎ যমরুপে নিয়মিত দেখা দিচ্ছে"। মানুষের মনস্তাত্ত্বিক খেলা টা এখানেই বিপদ দেখা যায় মোকাবেলা করা যায় তবুও ভরসা ঐ অদেখা ভগবানেই। সেই সাথে মহাদেবে আর হীরা মূহুর্তে বাবা ছেলের মিষ্টি সম্পর্কের যে বর্ণনা দিলে সেটা খুব কমই দেখা যায় আমরা লেখকরা বেশিরভাগ সময় ছেলের সাথে মায়ের মধুর বন্ধনটা হাইলাইট করি বেশি।

অসম বয়সের লালি কে আপাতদৃষ্টিতে রাধা হিসেবেই দেখতো হচ্ছে, প্রেম ভালবাসা যতটুকু পাবে তার চেয়ে জ্বালা বেশি। তবে হীরার আধা হয়ে থাকবে নাকি পূর্ণ হবে সেটা তোমার হাতেই। মাখন খাওয়ানোর দৃশ্য টাতে নিজের প্রেমের সময়টাতে হারিয়ে গিয়েছিলাম, ও আমার জন্য বিভিন্ন জিনিস রান্না করে আনতো আর নিজ হাতে খাইয়ে দিত। আশেপাশে কে দেখছে তাতে কোন মাথাব্যথা ছিল না ওর।

শেষাংশের ক্ষিপ্রতা আর শক্তিমত্তার যে খেলা হীরা দেখাল সেটাতে ওকে নিয়ে বাজি ধরা যেতেই পারে।
লাইক রেপু গুলো এক প্রকারে ছিনিয়ে নিচ্ছো তুমি।

হা হা হা। হ্যাঁ ওই তো বাজী আমাদের। বাঘমুড়োর মুড়ো থেকে নিজেদের মুড়ো খানা বের করতে গেলে হীরার দ্যুতি ই লাগবে মনে হচ্ছে।
[+] 1 user Likes nandanadasnandana's post
Like Reply
(15-06-2022, 12:47 AM)boro bara Wrote: আমি আবার বলছি দিদি, এই রকম গল্পে,  এই লেভেলের লেখা আমি কোনদিন ও পড়িনি। একবার ও মনে হচ্ছে না একটা অবাস্তব ঘটনা পড়ছি আমি। মনে হচ্ছে ঘটছে চোখের সামনে। 

নতুন চরিত্র, রহিম। জানিনা, হয়ত বুঝতে পারছি দিদি কি আঁকছেন আপনি। যদি আমার ধারণা সত্যি হয় তবে সত্যি এই গল্প একটা রিমার্কেবল জায়গায় যেতে চলেছে, আপনার মন ১ মতই। 

গজদন্তের সাজে সজ্জিত হাসি, মেয়েদের অস্ত্র বললে কম বলা হয়। হাসি তেই সব ঘায়েল হয়ে যাবে। অসাধারণ বর্ণনা। 

প্রেমে পরা সবাই মনে হয়, ওই ভোমরার কামড় খেয়েছে। কি দারুণ বর্ণনা। দারুণ। 

জাল বুনছেন এখন বুঝতেই পারছি। কিছু লাইক আর রেপু রইল। লেখা চলুক।   

ভালো ভালো রিভিউ পেলে মন টা ভালো হয়ে যায় কিন্তু।  Heart । হুম আমার গজদন্ত নেই   Sad  । মনের দুঃখ মনেই রেখে দিয়েছি। খাক সবাই কামড় খাক ওই ভোমরার। আমি খেয়েছি যখন সবাই খাক। বুঝুক!!!!
[+] 2 users Like nandanadasnandana's post
Like Reply




Users browsing this thread: 15 Guest(s)