Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(09-06-2022, 12:12 PM)nextpage Wrote: আমি ভাবছি বিষয়টা নিয়ে আলোচনা এখানেই সমাপ্তি টানা ভালো।
এর মানে এই নয় যেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বিষয়টা বাজে, তবে এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা অনেকেরই বোধগম্য হয় না আর তারা এটার নেগেটিভ সাইড নিয়ে ভাবতে থাকে। এর ফলে মূল আলোচনা মূল্য হারায়।
আমি একজন আপাদমস্তক ধার্মিক মানুষ তবে ধর্মভীরু নই। যেসব আচার পালন করি তার পজেটিভ সাইড গুলো বিবেচনা করেই করি। একাদশী, বিভিন্ন ব্রত, উপবাস এগুলো বাদ দেই না। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এন্টেড করি জ্ঞানীদের বক্তব্য শুনি মাঝে মাঝে নিজেও অংশগ্রহণ করি। তাতে আর যাই হোক না হোক জ্ঞানের পরিধি বাড়ে। অন্যদের সাথে তুমুল আলোচনা সমালোচনা করি তবে এমন মানুষদের সাথেই করি যারা আমার যুক্তির জায়গা ধরতে পারবে নইলে নেহাত বকবক মনে হবে।
শেষমেশ একটাই কথা,
হিরণ্যকশিপু ছাড়া প্রহ্লাদ পেতাম না, রাবন ছাড়া রাম, কৌরব ছাড়া পান্ডব, একপক্ষ কে তো বলিদান দিতেই হতো। বিষয়টা এমন ভাবে দেখলেই অনেকটা সাবলীল হওয়া যায়।
সত্য কথা। রামায়ণ আর মহাভারত এতোই বিশাল দুটো মহাকাব্য, আর এতো চরিত্র যে নানান চরিত্রের প্রেমে পরা টা স্বাভাবিক। দেখুন ইতিহাস আর পূরাণ দুটোর কোনটাই বাইনারী কিছু না। সেখান থেকে এক্সট্র্যাক্ট করতে হয় আসল কথা টা। আর সেখানেই বিতর্কের জন্ম হয়। হিসাবে দেখতে গেলে , দুই কবি ই এই সব চরিত্র বানিয়েছিলেন। রামায়ণ তূলনায় অনেক সরল আর মহাভারতের জটিলতা বিশাল। সেখানেই খটকা লাগে আমার। এতো চরিত্রের মিশেলে তৈরি মহাভারত , সত্যি ই উনি কাহিনী লিখেছিলেন নাকি কিছু হয়েছিল ঘটনা। বা এক জন ই লিখেছিলেন তো? না কি অনেকের লেখায় মহাভারত এই আকার নিয়েছে আজকে। যদিও অরিজিনাল মহাভারতে সত্তর হাজারের কাছাকাছি শ্লোক ছিল সেটা এখন এক লক্ষ এর উপরে দাঁড়িয়েছে। এটা তো সত্যি ই যে অনেকের হাত পরেছে সেখানে।
তবে অনেকেই অসুর দের সাধারণ মানুষের প্রতিভু আর দেবতা দের বাইরে থেকে আসা এলিয়েন মনে করেন যারা আমাদের মনন এবং সব কিছু দখল করে নিয়েছেন বলে ভাবেন। দেখতে গেলে এঁরা সবাই আমাদের মতই মানুষ। কল্যানের জন্য যারা প্রাণপাত করেছেন তাদের দেব আর যারা নিজেদের ভালো বুঝেছেন তারা অসুর নাম নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা হয়ে গেছেন। বস্তুত আমাদের মধ্যেই তাঁরা ছিলেন। কাজেই তাদের কাজ কর্মের সাথে নিজেদের রিলেট করে ফেলা টা খুব স্বাভাবিক।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
আগের পর্বের কিছু অংশ............
আজকের এই গল্পের শুরু এখান থেকেই। সেই দেহ দাহ সৎকার করার যোগ্য রইল না আর। সুদর্শন চক্রের ক্রোধে পতিত শিশুপালের দেহ কে সৎকার করতে বাড়ির লোকেও রাজী হলো না। ভাসিয়ে দেওয়া হলো গঙ্গায়। মহাবীর শিশুপালের সেই মস্তকহীন দেহ কে মা গঙ্গা ও শোধন করতে পারলেন না। গলিয়ে পচিয়ে মিশিয়ে নিতে পারলেন না পাপী শিশুপালের দেহ কে নিজের অতূল জলরাশির মধ্যে। গঙ্গার জলরাশি কোন নিয়তির টানে এই দেহ কে নিয়ে চলে গেল এই শান্তিপ্রিয় গ্রাম বাংলার দিকে। বিশাল দেহ আটকে গেলো নদীর উপরে প্রায় শুয়ে পরা বিশাল বৃক্ষের জল-নিমজ্জিত ডালে। অপ্রাপ্তি, লোভ, হিংস্রতা, আর অনেক জিঘাংসা নিয়ে শিশুপালের মাথা হীন দেহ রয়ে গেল এই জঙ্গলেই। খুঁজে বেরাতে লাগল একটা মাথা।
পর্ব দুই
এক সাথে অনেক ঘটনার কাকতলীয় সমাপতনে কত যে কাহিনীর জন্ম হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই জীবন এক বিশাল কম্পন। লক্ষ লক্ষ ঘটনার শুরুর অনন্ত বীজ ছুটে বেড়াচ্চে চারিদিকে, অনু পরমানুর ব্রাউনীয়ান চলনের মতন। কে জানে, যে ঘটনা এখন ঘটছে সেটা আলাদা হত না যদি অন্য কোন বীজ এই ঘটনার মূলে থাকত। কাজেই অসীম সম্ভাবনার মধ্যে আমরা রয়েছি।এখন চলে আসি এই ঘটনায়। কথিত আছে, সেই সময়ে এক বাঘিনী , পেটে বাচ্চা নিয়ে জল খেতে এসেছিল মা গঙ্গার জলে, যেখানে মা গঙ্গা একেবারে উপর দিয়ে বইছে। সেই সময়ে এই অঞ্চলের রাজা তাকে শিকারের উদ্দ্যেশ্যে তীর ছুঁড়তেই বাঘিনী আহত হয়ে পালিয়ে যায়। সেই দিনে ছিল মহা অমাবস্যা। রাতে অমাবস্যা শুরু হতে, মস্তকহীন শিশুপাল, জীবিত কিন্তু মৃতপ্রায় বাঘিনীর দেহ অনুভব করে গর্ভবতী বাঘিনী র পিছু নেয়।
পিশাচসিদ্ধ শিশুপালের কাছে এ ছিল এক খেলা মাত্র। নানান তন্ত্রে পারদর্শী শিশুপাল জানত, প্রসব সম্ভাবা কোন বাঘিনীর কাটা মাথাই পারে তাকে জীবিত অবস্থায় পৃথিবীতে আনতে। ওকে যেন বেঁচে উঠতেই হতো। এই জন্যেই মানি যে ভগবান আছে। অসীম সম্ভাবনার মধ্যেই তিনি খুঁজে নেন তার দরকার কে। এমন ঘটনার শুরু করেন যা মানুষ কে শিক্ষা দেবে, মানুষ কে এক জোট করবে। আইন্সটাইন একবার বলেছিলেন আমি ফিজিক্স চর্চা করি এই জন্যেই যে আমার বোঝা দরকার , এই অসীম সম্ভাবনার মধ্যে এই গুলোই ঘটল কেন, যে গুলো এখন ঘটছে।আমরা কল্পনাই করতে পারি মাত্র, কি হতে পারে। কিন্তু কি হবে আসলে, সেটা প্রেডিক্ট করা টা অসম্ভব। সেই জন্যেই এপ্রক্সিমেশন এ আমরা চলে যাই। কোন অধ্যাবসা ই পারে না এই এপ্রক্সিমেশন বা সম্ভাবনা কে নিশ্চিন্ততায় বদলাতে। কি মজা!! এদিকে পিশাচ দেহ নিয়ে সে মৃতপ্রায়, গর্ভবতী বাঘিনীর মাথা, নিজের বিশাল শক্তি তে ছিঁড়ে নিয়ে নিজের মাথায় স্থাপন করে আবার পৃথিবী দেখতে পাবার আশায়। এ যেন জোর করে ঘটানো হলো। কৃষ্ণ - র সাথে শেষ যুদ্ধের জন্য তাকে জীবিত হতেই হতো। তারপরে মানুষের দেহ আর বাঘের মাথা নিয়ে সে হয়ে গেল বাঘমুড়ো। কোন প্রসব সম্ভাবা বাঘিনীর মাথা ওই ক্ষনে কোন পিশাচের হাতে পরলে তার ক্ষমতা হয়ে ওঠে অসীম। সেই খবর অজানা ছিল না শিশুপালের।
মৃত হয়ে ফের জীবিত হবার পরে এই অসীম ক্ষমতার বলে কম অত্যাচার করে নি শিশুপাল। আশে পাশের গ্রাম কে প্রায় অর্ধেক করে ফেলেছিল শিশুপাল হত্যা করে। মারাত্মক জিঘাংসায় সে পাগলের মতন হয়ে গেছিল। রক্ষে ছিল, বাঘমুড়োর জঙ্গলের বাইরে কোন অত্যাচার করতে পারে নি বাঘমুড়ো। কারন সবাই মিলে এই জঙ্গলে, এখানের সেই সময়ের রাজার বদান্যতায় তৈরি করেছিল শ্রী কৃষ্ণের এক মন্দির। সেই দৈব বলের কৃপা তে বাঘমুড়ো কে বেঁধে রাখা হয়েছিল জঙ্গলের মধ্যেই। আর জঙ্গল ভেদ করে বয়ের যাওয়া মা গঙ্গা ও শিশুপালের এই নিরীহ মানুষের উপরে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে, কালের নিয়মে সরে গেলেন বেশ কয়েক কিলোমিটার। আর রেখে গেলেন পাঁকে পরিপূর্ণ এক বিশাল জলা। আর জঙ্গল পরিনত হল এক মৃত্যুপুরী তে।
শোনা যায় সেই মন্দির এখনো আছে জঙ্গলের কোন এক খানে। কেউ দেখে না তাকে। হয়ত জলার কোন গভীরে সেই মন্দির লুকিয়ে আছে।হয়ত বা অন্য কম্পাঙ্কে রয়েছে। কিন্তু আজকের দিনেও সকালে সন্ধ্যায় কাঁসরের আওয়াজ পাওয়া যায়। কোন ক্লান্ত পথিক জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে সন্ধ্যে বেলায় ফেরার সময়ে ভয় পেলে শুনতে পায়, বহুদুর থেকে ভেসে আসছে কাঁসরের আওয়াজ। কাই নানা কাই নানা। ব্যস তাতেই নাকি তার ভয় চলে যায়। শোনা যায় এখানে এই বাঘমুড়োর জন্যেই পদ্মনাভের অধিষ্ঠান। আর সেই থেকেই এই গ্রামের নাম বাঘমুড়ো। ভয় নয়, ভয় কাটাতেই এই নাম। প্রতি বাড়িতে কৃষ্ণের পুজো হয় নিয়মিত।
দেখা দেয় বাঘমুড়ো নানা ছলে, নানান ভাবে। এখনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে এ গ্রামের মানুষ দের। ষড়যন্ত্র করে। মৃত্যুও হয়। কখনো কারোর গলা নকল করে ডেকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। কখনো বা কারর শরীর ধারন করেও ডেকে নিয়ে যায় আদর করে। তারপরে মাথা বিছিন্ন করে দেহ ফেলে রেখে দিয়ে চলে যায় সে। রাতে কোন একলা পথিক পেলে তাকে দৌড় করিয়ে অবসন্ন করে তাকে ভয় আতঙ্কে কাতর করে মৃত্যু কামনা করলে তাকে মৃত্যু দেয় বাঘমুড়ো। কথায় বলে বাঘমুড়োর কাছে মৃত্যু কামনা করতে হয়। না হলে সেই জিঘাংসা তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেরায়। যতক্ষন না সে মৃত্যু কামনা করে, সেই আতঙ্ক, মানসিক চাপ, আর আসন্ন নিশ্চিত মৃত্যুর প্রভাব সহ্য করতে না পেরে, বাঘমুড়ো তার মাথা ধর থেকে আলাদা করে না। শুধু তো বাঘমুড়ো গ্রাম নয়, আশে পাশের আরো দশ টা গ্রাম আছে বাঘমুড়োর চারদিকে। দিনের বেলায় পার হলেও রাতের বেলায় কারোর সাধ্য হয় নি ওইদিকে যাবার। অতি সাহসী অনেকেই প্রান হারিয়েছে ওই জঙ্গলের ভিতরে। কে যেন মাথা খানা ছিঁড়ে নিয়ে দেহ ফেলে রেখে চলে যায়। নানান লোকে নানা গল্প বলে। অনেকেই বলে, সে নাকি নিজের মাথা আজকেও খুঁজে বেড়ায়। সরকার অনেক চেষ্টা করেছে এখানে রাস্তা বানিয়ে দিতে। পারে নি। দশ দিনের কর্মযজ্ঞে বারো জনের মৃত্যু হয়েছিল। আর একি রকম ভাবে। মাথা ছিঁড়ে নিয়ে চলে যেত সেই বাঘমুড়ো। বন্ধ হয়ে গেছিল সেই রাস্তা। তাই গ্রামের পিছন দিকটা রয়ে গেছে সেই আগের মতই পুরোন আর রহস্যময়। সরকার থেকে সরকারী ভাবে এই দিকে আসা এক প্রকার মানা হয়ে গেছে। তাও গ্রামের লোক আসে। কারন জঙ্গল লাগোয়া জমি গুলোর ফলন মারাত্মক ভাল। গরু ছাগল চড়তে আসে জঙ্গলের দিকে।
গ্রামে মোবাইল আছে কিন্তু জঙ্গলের কাছাকাছি আসলে আর কোন সিগ্ন্যাল থাকে না। গ্রামেও সিগন্যাল বিশেষ থাকে না। কোন অদৃশ্য জ্যামার যেন জ্যাম করে দেয় সিগন্যাল। বছর দশেক আগে, সরকার থেকে এক দিনে, দিনের বেলায় এই বিশ কিমি জঙ্গলের রাস্তায় পোল বসিয়ে ইলেক্ট্রিক চার্জ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। হাজার লোকে কাজ করেছিল সেই দিনে। গ্রামের লোকেও হাত লাগিয়েছিল। সবাই ভেবেছিল, এই আতঙ্কের নিরসন বুঝি এই ভাবেই করা যাবে। কিন্তু পরের দিন সকালে দেখা যায় কে বা কারা যেন, কংক্রীটের পোল গুলো কে উপড়ে পাশের জলায় ফেলে দিয়েছে। শুধু উপড়েই ফেলেনি, দুমড়ে মুচড়ে, মাঝা মাঝি ভেঙ্গে একেবারে তাকে ব্যবহারের অযোগ্য করে ডুবিয়ে দিয়েছে জলায়। ছিঁড়ে দিয়েছে বিদ্যুতের তার। পোল গুলোর কিছু কিছু অবশেষ জঙ্গলের রাস্তার দুই দিকে আজ ও বর্তমান। আশে পাশের কোন গ্রামেই বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে পারে নি সরকার। শিশুপালের অভিশাপ যেন বয়ে নিয়ে চলেছে বাঘমুড়ো আর ও নয় টা গ্রাম। গ্রামের লোকেরা দেখে, দক্ষিণ মাঠ পেরিয়ে দূরে কোন গ্রামে ঝিকিমিকি করছে বিদ্যুতের আলো। কিন্তু এই সব গ্রামে কোন দিন ও আলো আসবে কিনা সন্দেহ। একটা পরীক্ষা মূলক জায়গা হয়ে গেছে বাঘমুড়োর জঙ্গল। আশে পাশের কম করে দশ টা মোবাইল টাওয়ার এর অ্যান্টেনা জঙ্গলের দিকে ট্রিগার করা থাকলেও, ভিতরে কোন সিগন্যাল থাকে না। একেবারে শূন্য। কত বিশেষজ্ঞ এসে প্রান হারিয়েছে তার শেষ নেই। কিন্তু কিচ্ছু হয় নি।
ঠিক হয়েছিল একবার, এই বিশাল জলা পরিষ্কার করে একটা লেক মতন বানিয়ে দিলে পরিযায়ী পাখিরা এখানে আসতে পারবে। একটা ঘুরতে যাবার জায়গা হবে। হয়ত লোকজন বাড়লে বাঘমুড়ো নামের যে আতঙ্ক আছে সেটা নিরসন হবে। ডিসট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট এসে নিজে দেখে গেলেন সব কিছু। ছয় মাস ধরে পরিকল্পনা হয়েছিল। একদিন সকাল সকাল পঞ্চাশের উপরে বড় বড় বেশিন এলো। সবাই খুশী হলো। বড় বড় মেশিন গুলো সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল জলার চারিধারে। পরের দিন সকালেই কাজ শুরু হবে এই আশায়।পরের দিন সকালে দেখা গেলো বড় বড় মেশিন গুলো কে, কেউ যেন দুমড়ে মুচড়ে একেবারে ডুবিয়ে দিয়েছে জলার পাঁকে। রাস্তা থেকে ভয়ে আতঙ্কে, থম মেরে, জড় হয়ে থাকা মানুষ গুলোর, শুধু জলের উপরে মাথা তুলে থাকা মেশিন গুলো কে দেখে চোখের জল ফেলা ছাড়া কোন উপায় ছিল না আর।
সেবারে এলেন ডক্টর কৃষ্ণমূর্তি আর বেলজিয়াম থেকে এই আধিলৌকিক এবং পরলৌকিক বিশেষজ্ঞ ডক্টর বেতুয়াসি। ওরা ছাউনি ফেলেছিলেন গ্রামের পূর্বপ্রান্তে একেবারে জলার ধারে। দিনের পর দিন পুরো টিম কে সাথে নিয়ে ছিলেন। অনেক কিছু চেষ্টা করেছিলেন তারা। বলতে গেলে প্রায় দুই মাস। কিন্তু না তো কিছু দেখা গেল না কিছু শোনা গেল। গ্রামের লোকেরা ভাবল হয়ত এই ভয়ের অবসান হলো। দুই বিশেষজ্ঞ ই হাল ছেড়ে দিয়ে নিজের দের টিম কে পাঠিয়ে দিলেন। শেষ দিন রয়ে গেলেন দুজনে তাবু তে। গ্রামের মানুষ জন অনেক রাত অব্দি ছিল সেখানে। গল্প গুজব, সামান্য খাওয়া দাওয়া। একটু রাত হতেই সবাই যে যার ঘরে চলে গেছিল। নগেন, পরেশ , মহাদেব, রাধেশ্যাম গ্রামের যত বিশিষ্ট মানুষ ছিলেন সকলেই। অন্যান্য দিনে টিম থাকত। সেদিনে তাও ছিল না। কাজেই কেউ জানতে পারে নি কি হয়েছিল সেই রাতে। সকালে কারোর চিৎকারে, সকলে ছুটে যায় জলার ধারের মাঠে। গিয়ে দেখে এক বীভৎস দৃশ্য। সকলেই দেখেছিল, দুজনের মাথা বিহীন দেহ টানতে টানতে বাঘমুড়ো একেবারে গ্রামের প্রান্তে এসে দিয়ে গেছে। আর, কারোর মাথা নেই তাদের ধরে। সে এক অপ্রাকৃতিক দৃশ্য। যেন কেউ জোর করে ছিড়ে নিয়েছে মাথা দুখানা। গলার কাছ টা লম্বা হয়ে সরু হয়ে গেছে তারপরেই যেন মাথা দুটো অদৃশ্য। উফ !! যারা যারা দেখেছিল তারা বেশ কয়েক দিন খেতে, শুতে পারে নি। এমন নয় যে বাঘমুড়ো এমনি ভাবে কাউকে প্রথম মারল। কিন্তু সাধারণত, গলায় দাঁত বসিয়ে,কামড়ে, মাথা খানা ধর থেকে আলাদা করে বাঘমুড়ো। কিন্তু কোন অতুল বলে দুই হাতে টেনে ছিঁড়ে ধর থেকে মাথা আলাদা করার ঘটনা সেইবার প্রথম ছিল। তারপরে কয়েক মাস , সন্ধ্যে হতেই মুহুর্মুহু হুঙ্কার জলার ধার থেকে। গ্রামের লোকের বাইরে বেরোন বন্ধ হয়ে গেছিল সেই কয়েক মাস। সবাই ভেবেছিল এই বুঝি বন্ধ হলো। কিন্তু ওই দুজনের মৃত্যুর পরে উৎপাত বেড়েছিল বেশ। তারপরে ধীরে ধীরে বাঘমুড়োর রাগ কমতে আবার স্বাভাবিক হয়েছিল গ্রাম। খুনের মামলা রুজু হয়েছিল বটে। কিন্তু পুলিশের ও সাধ্য ছিল না এই নিয়ে তদন্ত করে।
আরেকবার ঘটল সব থেকে মর্মান্তিক ঘটনা। প্রথমবার ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধ চলছে কাশ্মীরে। সাল টা হবে নব্বই দশক। সেবারে গ্রামে এলো প্রমোদ বাবুর ছেলে।মিলিটারি তে চাকরী পেয়েছে। সদ্য দ্রাস সেক্টর থেকে বিজয়ী হয়ে ফিরল। একেবারে যেন ফুটছে তারুণ্যে। যৌবনে ভরপুর সেই ছেলে এলো কিছু বন্ধুদের নিয়ে। দ্রাস সেক্টর, কাশ্মীরে পোস্টিং ছিলো ওরা সবাই। সবাই যে বাঙ্গালী এমন না। কিছু অবাঙ্গালী ও ছিল সেই বন্ধুদের দলে। সবাই এক এক্কে এক। গোটা গ্রাম কে একেবারে ভরিয়ে রাখল আনন্দ আর মজা করে। কিন্তু কে জানত, বাঘমুড়ো সবার অলক্ষ্যে ষড়যন্ত্রের বীজ বুনছে। প্রমোদ বাবু ছেলের জানত বাঘমুড়োর ঘটনা, আর তাই ধীরে ধীরে এক দুই দিনের অর বন্ধু রাও জেনে গেল বাঘমুড়োর কথা। পৌরাণিক এই কাহিনী বিশ্বাসযোগ্য তো হয় না সবার কাছে। ত্রাসের শিকার যে না হয়েছে সে বুঝতেও পারে না ত্রাস কত ভয়ংকর হতে পারে। সমস্যা হলো, বাঘমুড়ো কে ছেলে কটা , কোন ধর্ত্যব্যের মধ্যেই আনল না। ওরা চাইল মোকাবিলা করতে।
অনেকেই মানা করল। প্রমোদ বাবু তো ছেলে কে গ্রামে আর রাখবেন না পন করে, পরের দিন সকালেই পাঠিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। ছেলে গুলো ও বুঝে গেল গ্রামের লোক কে বলে কয়ে কিছু হবে না। ওরা ভাবল, গ্রামের লোক, তাই কুসংস্কারাছন্ন। চায় না এই বিপদ থেকে বেরিয়ে আসতে। ওদের ধারনা, জলায় বেশ কিছু মহামূল্যবান সম্পদের খনি আছে। কোন বিশেষ ব্যক্তিবর্গ সেই খনির হদিশ জানে আর তাই সেই জায়গা কে ভৌতিক আখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষ এবং সরকার কে বঞ্চিত করে চলেছে অনন্ত কাল ধরে। ওরা কাউকে না বলে রাতে যাবার পরিকল্পনা করেছিল। আহা রে যদি জানত তবে রাতে জলার ধারে গিয়ে সরাসরি বাঘমুড়ো কে চ্যালেঞ্জ করত না। গ্রামের লোকে কিছুই জানত না। জানল তখন যখন জলার ধার থেকে পিস্তলের আওয়াজ আসতে লাগল একের পরে এক। গ্রামের লোকজন বেড়িয়ে এল রাস্তায়। কিন্তু এমন ই অবস্থা , ওখানে যাবার ক্ষমতা কারোর নেই। আর বেচারী প্রমোদ বাবু, পাগলের মতন গ্রামের রাস্তায় ছুটে বেড়াতে লাগল , ঘর থেকে কখন যে ছেলে তার বন্ধুদের নিয়ে চুপি চুপি বেড়িয়ে গেছে, সেই দুঃখে। কারোর বুঝতে বাকি রইল না জলার ধারে গুলি ওই ছেলে কটাই চালিয়েছে। আর বাঘমুড়ো কাউকেই ছেড়ে দেয় নি।পুরো গ্রাম রাত জাগল। সকালে সবাই গিয়ে দেখল, জলার ধারে মাঠে পাঁচ পাঁচটা মাথা হীন দেহ নিথর হয়ে পরে আছে। আজকে প্রমোদ বাবুর বয়েস আশি হবে। কিন্তু সেই ধাক্কা তে তিনি আজ ও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে খুজে বেড়ান নিজের প্রাণপ্রিয়, ছটফটে ছেলেকে।
আর ও ভয়াবহতা জড়িয়ে আছে এই জলা কে কেন্দ্র করে। এই গ্রামের থেকে প্রায় তিরিশ কিমি দূরে প্রতাপগড়ের জেল। বহু পুরোন এই জেল ইংরেজ আমল থেকেই সরকারের খুব গুরুত্বপূর্ণ জেল। তবে ইংরেজ আমলে শোনা যায় , কোন বিপ্লবী কে মারতে হলে, দিনের বেলায় তাকে জলার ধারের অনেক গুলো টিলার একটি তে তাকে বেঁধে দিয়ে যাওয়া হতো। আর পরের দিন সকালে মাথা হীন দেহ খানা তুলে নিয়ে যেত ওরা খুব সন্তপর্ণে। এমন না যে সব দিনেই এমন টা হতো। এমন ও হয়েছে দিনের পর দিন খাবার দাবার না পেয়ে , খিদে তেষ্টায় সে মানুষ মারা গেছে নিজে নিজেই। কিন্তু এই জলা আর জঙ্গল , বয়ে নিয়ে চলেছে ভারতের সেই লজ্জা জনক ইতিহাসের বেশ কিছু অধ্যায়। এই রকম ভাবে চলতে থাকার পরে, স্বাধীনতার বছর দশেক আগে ওই জলার মাঠে বেশ কিছু ইংরেজ অফিসার এসেছিলেন পিকনিকের উদ্দেশ্যে। তখন তাদের রাজত্ব মানা করার তো কেউ ছিল না। প্রতাপগড়ের জেলার ভেবেছিলেন, এই বাঘমুড়ো বিপ্লবী দের হত্যা করে বলে হয়ত ইংরেজ দের বন্ধু। কিন্তু তার কোন ধারণাই ছিল না বাঘমুড়ো গত কয়েক হাজার বছরের এক আতঙ্কের নাম। আর কত বলব, বাঘমুড়োর আতঙ্কের কাহিনী। পরের দিন সকালে মুড়ি মুড়কির মতন ছড়িয়ে ছিল চল্লিশ জনের মাথা বিহীন দেহ। কোন টা জলার জলে আধখানা হয়ে, তো কেউ টিলার উপরে মাথা হীন হয়ে। বাকি দের দেহ সারা মাঠ জুড়ে ছড়িয়েছিল ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ভাবে।
নিঃসন্দেহে এই জঙ্গল এবং আশে পাশের বেশ কিছু গ্রাম ভয়াবহতার একটা দায় ভার বহন করেছে চলেছে না জানি কত সহস্র বছর। প্রানহানি, সম্পদ হানি হয়ে চলেছে ক্রমাগত। কত যে ঘটনা ঘটেছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। কৃষ্ণ নামে মশগুল এই গ্রামের লোকগুলো কোন ভাবে আটকে রেখে দিয়েছে বাঘমুড়ো কে। আর আছে বেশ কিছু রহস্য এই জঙ্গল এর আশে পাশের বেশ কিছু গ্রামে। গত বেশ কিছু বছরে গ্রামের ভিতরে লালিত পালিত হচ্ছে এমন কিছু রহস্য যা সত্যি করেই বাঘ মুড়ো কে গ্রামের ভিতরে ঢুকতে দেয় নি। কিন্তু বাঘমুড়ো কে বিশ্বাস কি। হয়ত সবার অলক্ষ্যে লালন করছে কোন বিপদের সংকেত তা ভগবান ই জানেন। আজ থেকে সতেরো বছর আগের এক ঘটনা। হয়ত অনেকেই ভুলে গেছে। কিন্তু ওই যে আমি, যে কিনা কিছুই ভোলে না। আমি বুকে করে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি সব ঘটনার সাক্ষী হয়ে, জীবনের আর মরণের সব সংকেত নিজের মধ্যে নিয়ে।
বছর কুড়ি আগে সহসা এই গ্রামে এক সাধু এসেছিলেন। জানিনা কোন দিক দিয়ে এসেছিলেন কিন্তু আশ্রয় নিয়েছিলেন জলার ধারে একটা একটা পেট কাটা অশত্থ গাছের নীচে। হ্যাঁ পেট কাটা গাছ নাম ই ছিল গাছ টার। কারন বিশাল গুঁড়ি টা দুই ভাগ হয়ে মাঝখানে ডিম্বাকৃতি একটা ফাঁক ছিল। সেই খানে আশ্রয় নিয়েছিলেন সেই সাধু। নামেই সাধু কিন্তু না ছিল লম্বা জটা না ছিল মুখে বিশাল কিছু বুলি। শুধু গেরুয়া বসন ছিল ওনার পরিধানে। চুপ করে ধ্যান করতেন। কোন মন্ত্রোচ্চারণ নেই, নেই কোন গুরুগম্ভীর তন্ত্র প্রক্রিয়া। প্রথম দিন জলার ধারে রাত কাটানোর পরে সবাই গেছিলো ওনার কাছে। হয়ত সাধুদের মতন দেখতে নয়। কিন্তু একটা মানুষ সারাক্ষন না খেয়ে দেয়ে ধ্যান ই বা করতে পারেন কি করে? সেই সব দেখে একটা সম্ভ্রম মেশানো কৌতূহল তো জাগেই। তারপরে পরপর বেশ কয়েক রাত পরেও যখন সাধু সেই জায়গাতেই এক মনে বসে ধ্যান করেন তখন মানুষের বিশ্বাস জন্মে যায় যে, এই সাধু ছোটখাটো কেউ না। বাঘমুড়ো গ্রামের লোকজন প্রায় ভিড় করতে লাগল সেই সাধু কে দর্শনের আশায়।
গ্রামের বেশ কিছু মানুষ গেছিলেন ওনাকে বলতে যে এই জায়গা ভালো না। তারমধ্যে, মহাদেব, উমা, নগেন, পরেশ, সিধুবাবু, প্রসাদ, ইসমাইল সবাই ছিলেন। কিন্তু সেই সাধু যে কিসের ধ্যান এ মগ্ন থাকেন কে জানে। বহুক্ষন পরে যখন ওনার চোখ খুলল, সামনে বসে থাকা প্রায় জনাকুড়ি লোক কে দেখে উনি হেসেছিলেন। যেন জানতেন এরা সবাই আসবে ওনার সাথে দেখা করতে। কেমন যেন গভীর চোখ ছিল ওনার। ধপধপে ফরসা। গায়ের জেল্লা যেন ফেটে বেরচ্ছে। সাধু এতো কাছ থেকে সবাই প্রথম বার দেখলেন কিনা? সবাই যে যার নিজের মতন সিধে এনেছিল। কেউ ভাল বাসমতী চালের সাথে আলু আর ঘী। কেউ বা বাড়ির পাকা পেঁপে। কেউ বা সব থেকে ভালো তরমুজ খানা। কেউ বা আম, আপেল ইত্যাদি। কেউ বা জ্বালানীর শুকনো গাছে ডাল, বাবা নিজেই রান্না করে খাবেন সেই জন্য। মহাদেবের বউ উমা একেবারে সামনে হাত জোড় করে বসেছিল। বাড়ির পুজোর ফল কাটার বঁটি খানা নিয়ে গেছিল সে। সাধুবাবার সামনে বসে পরম ভক্তি ভরে, ফল কেটে দিচ্ছিল আর একতা থালায় সাজিয়ে রাখছিল বাবা খাবেন সেই উদ্দ্যেশ্যে।
বাবার যে খুব ভ্রূক্ষেপ ছিল তা না। কিন্তু উমার এ হেন ভক্তি তে খুশী ই হয়েছিলেন বলা যায়। কথা উনি উমার সাথেই বলেছিলেন। যেন নিজের মেয়েকে বলছেন।
- তা হ্যাঁ রে মা, এতো দিলি খেতে? আমি কি খেতে পারব? দ্যাখ না মা সবাই এখানে অভুক্ত। আমাকে জাগিয়ে দিসনি কেন তোরা?
উমা গলে গেছিল বাবার এই হেন কথায়। গলায় কাপড় জড়িয়ে বাবাকে প্রণাম করেছিল। বাবা সবাই কে দেখে নিয়ে একেবারে জোর গলায় বলেছিলেন,
- ভয় নেই ভয় নেই। আমার কিছু হবে না। এতো চিন্তা করছিস কেন তোরা?
সবাই অবাক হয়েছিল খুব। বস্তুত সবাই এসেইছিল সাধুবাবার কাছে ওনাকে অন্যত্র নিয়ে যাবার ইচ্ছে তে। কারন জঙ্গলের ধারেই উনি ডেরা বেঁধেছিলেন। কিন্তু সবার মনে কথা একেবারে সম্মুখে বলে দিতেই চাপা গুঞ্জনে ভরে গেল অশত্থ তলা। সবার মধ্যেই সমীহ জাগানো ভয় থাকলেও একমাত্র উমা , মেয়ের মতন বাবার সামনে একটু একটু ফল তুলে ধরছিল। বাবা খাচ্ছিলেন খুব ধীরে। উমাই বলেছিল,
- বাবা জায়গা টা ভালো না। আপনি এখান থেকে না গেলে আমরা এখানে থাকব আপনার পাশে।
উমার কথায় বাবা একেবারে বাচ্চা ছেলের মতন হেসে উঠেছিলেন দিগ্বিদিক কাঁপিয়ে। তারপরে ঠান্ডা হয়ে বলেছিলেন,
- ওরে তোদের আর এখানে আমার সাথে থাকতে হবে না। আমি আজকেই চলে যাব। তবে তোদের কিছু কথা বলতেই আসা।
সবাই চুপ। জানিনা এক অচেনা সাধু, তাদের কি বলতে গ্রামে এসেছেন? এ কী বাঘমুড়ো সম্পর্কিত? কিন্তু বাবা সবাই কে অবাক করে দিয়ে বলেছিলেন,
- পরিত্রাণায় সাধুণাং। বিনাশায়চঃ দুষ্কৃতাম। ধর্ম সংস্থাপানার্থায়। সম্ভবামি যুগে যুগে।
বড্ড ভাল লাগছিল বাবার গুরুগম্ভীর গলায় ওমন এক খানা শ্লোক। খানিক থেমে ছিলেন বাবা । তারপরেই বললেন।
- ওরে তিনি আসেন। তিনি আসবেন। তবে কার গুণে প্রকট হবেন, সেটা তিনি ই জানেন। তবে তিনি আসবেন। বেশী দিন আর নেই। এই ভয়ঙ্কর অবস্থার অবসান তিনি ই করবেন। আমি ত বাহক। সেই কথাই বলতে এলাম।
সবাই চুপ। এই একবিংশ শতাব্দী তে এই কথা যে ভাবাই যায় না। বাবার কথা বিশ্বাস করাই তো মুশকিল। আজকের যুগে কি মেনে নেওয়া যায় নাকি, স্বয়ং নারায়ন চক্র নিয়ে আবির্ভুত হচ্ছেন? একমাত্র উমা, বাবাকে প্রনাম করেছিল সরল ভক্তি তে। বাবা উমা কেও একটা কথা বলেছিলেন তখন ই।
- দ্যাখ মা, তোর সন্তান নেই আমি জানি। তবে কি জানিস? মা যশোদা ও অন্যের সন্তান মানুষ করেছিলেন। আমাকে বল মা, মা যশোদার মতন অমন মা কি আর হয়? তুই মা কষ্ট পাস না। তোর কষ্টের অবসান হলো বলে।
তারপরে সেই সন্ধ্যেতেই চলে গেছিলেন বাবা। কিন্তু কোন ভবিষ্যত বানী ই ফলে নি। এই ঘটনা আজ থেকে কুড়ি বছর আগের। এই গ্রামের ভিতরে রাস্তা তখনো কাঁচা। বর্ষা কালে বড় বড় দঁক গরুর গাড়ি কেও বসিয়ে দিত। ট্রাক্টর ভয়ে রাস্তায় নামত না। কলকব্জা খারাপ হয়ে যাবার ভয়ে। গত কয়েক বছরে অনেকেই নিজের মাটির বাস্তুভিটা পাকা করলেও সেই সময়ে বেশিরভাগ গ্রামবাসীর ভিটা ই কাঁচা ছিল। গরীব বেশীর ভাগ। তেমন ই এক গরীব চাষী ছিল, মহাদেব। মহাদেবের স্ত্রী উমা। কেতাবি শিক্ষার দৌড় দুজনের না থাকলেও, জীবনের শিক্ষায় চরম শিক্ষিত ছিল দুজনেই। সর্বদা এক মুখ হাসি নিয়ে থাকা এই দম্পতি সব সময়ে হাসিখুশী । নিজের সামান্য কিছু জমির ফসল হাটে বেচে দিন নির্বাহ করা মহাদেবের জীবনে সুখের কোন কমতি ছিল না। উমা মনে করত, তার স্বামী মহাদেব, নামেই নয় স্বভাবেও তাই। দুঃখ একটাই ছিল উমার। সেটা হলো কোন সন্তান ছিল না তাদের। না, মহাদেব কোন দিনেই তার জন্য কোন অনুযোগ করেনি উমার কাছে। মা বাবা হীন দুটো মানুষ নিজেদের নিয়েই সুখে শান্তি তে ছিল। গোয়ালে গরু, মাঠে ধান আর বাড়ির পিছনের বড় জমিতে সব্জি, পুকুরের মাছ। না ছিল খাওয়া পড়ার চিন্তা আর না ছিল ভালোবাসার কমতি। গোলার ধান, আর বাগানের সব্জি হাটে বিক্রি করেই চলে যেত দুটির। আর ছিল সকালে সন্ধ্যে হরিনাম। কৃষ্ণ ভক্ত ছিল যে উমা। সেই কোন ভোরে উঠে শীত গ্রীষ্ম বর্ষা, দুটি তে মিলে খঞ্জনী নিয়ে হরিনাম করতে বের হতো। আসতে আসতে যোগ দিতো, দুলু কাকি, পরেশ জ্যাঠা, হরেন দা, মলিনা পিসি এমন আর ও অনেকেই। উমার গানের গলা ছিল ভারী মিষ্টি। আহা সেই গলায় হরি সংকীর্তন যেন মনে হতো স্বয়ং মীরা কৃষ্ণ ভজন করছেন। ভোর বেলাতেই পাখীরা চঞ্চল হয়ে উঠত। ঘরে ঘরে শাঁখ বাজত। বাচ্চারা মায়ের কোলেই জেগে জেগে সেই সংকীর্তন শুনত। আর আমি? আমি তো আমার সব ইন্দ্রিয় দিয়ে শুনতাম সেই কীর্তন।
উমা সন্তানের আশা ছেড়ে দিলেও সেই সাধুবাবার কথা মনের মধ্যে ওকে তোলপাড় করত। আসবে সন্তান আসবে। তা সে যে রূপেই আসুক না কেন। এই বিশ্বাস ও মনে মধ্যে রেখেই খুশী তে থাকত আনন্দে থাকত। এক ভোর বেলায় উমা নিজের বাড়ির সদরে জল ছড়াতে গিয়ে দেখে, দরজার বাইরে ডান দিকে গুলঞ্চ গাছের নীচে একটি সাদা পুঁটুলি তে জড়ানো একটা বছর খানেকের বাচ্চা। কেউ বা কারা ফেলে দিয়ে গেছে। খবর দাবানলের মতন ছড়িয়ে পরল চারিদিকে। গ্রামের প্রায় সবাই এসে হাজির হলো মহাদেবের বাড়ির সামনে। বাচ্চা কে কোলে নিয়ে আছে উমা। অনেকের অনেক মতামত সামনে এল। কেউ বলল পুলিশে খবর দেওয়া উচিৎ, আর কেউ বলল, দরকার নেই এমন বাচ্চা ঘরে রেখে। কিন্তু মহাদেব, উমার টলটলে জলে ভরা চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝে গেছিল, সে এই বাচ্চা নিজের কাছেই রাখতে চায়। সন্তান হীন মায়ের কাছে এর থেকে বেশী আর কি চাওয়ার থাকতে পারে। বোধ করি তিন বছর আগে এই গ্রামে আসা সাধুবাবার প্রথম ভবিষ্যৎ বানী ফলে গেল। তারপরে পুলিশ এসেছিল বাড়িতে মহাদেবের। অনেক খোঁজ ও চলেছিল আশে পাশের গ্রামে। কিন্তু দীর্ঘদিন কোন খোঁজ না পাওয়ায় সবাই এখন ভুলতে বসেছে সেই বাচ্চা টা মহাদেব আর উমার নয়।সেই ছেলের নাম রাখা হয়েছিল হৃষীকেশ। কিন্তু গ্রামের মধুসূদন যেমন মোদো হয়ে যায় তেমন ই সেই নাম কালের গর্ভে চলে গিয়ে ডাক নামেই পরিচিত হয়ে গেল সেই ছেলে, হীরা নামে।
The following 17 users Like nandanadasnandana's post:17 users Like nandanadasnandana's post
• Atonu Barmon, Baban, boro bara, bourses, Bumba_1, ddey333, issan69, Jupiter10, LajukDudh, nandini20002022, nextpage, ray.rowdy, samael, sudipto-ray, swaruproy312, Tiger, WrickSarkar2020
Posts: 27
Threads: 0
Likes Received: 21 in 17 posts
Likes Given: 134
Joined: Jun 2022
Reputation:
6
(10-06-2022, 01:41 PM)nandanadasnandana Wrote: সত্য কথা। রামায়ণ আর মহাভারত এতোই বিশাল দুটো মহাকাব্য, আর এতো চরিত্র যে নানান চরিত্রের প্রেমে পরা টা স্বাভাবিক। দেখুন ইতিহাস আর পূরাণ দুটোর কোনটাই বাইনারী কিছু না। সেখান থেকে এক্সট্র্যাক্ট করতে হয় আসল কথা টা। আর সেখানেই বিতর্কের জন্ম হয়। হিসাবে দেখতে গেলে , দুই কবি ই এই সব চরিত্র বানিয়েছিলেন। রামায়ণ তূলনায় অনেক সরল আর মহাভারতের জটিলতা বিশাল। সেখানেই খটকা লাগে আমার। এতো চরিত্রের মিশেলে তৈরি মহাভারত , সত্যি ই উনি কাহিনী লিখেছিলেন নাকি কিছু হয়েছিল ঘটনা। বা এক জন ই লিখেছিলেন তো? না কি অনেকের লেখায় মহাভারত এই আকার নিয়েছে আজকে। যদিও অরিজিনাল মহাভারতে সত্তর হাজারের কাছাকাছি শ্লোক ছিল সেটা এখন এক লক্ষ এর উপরে দাঁড়িয়েছে। এটা তো সত্যি ই যে অনেকের হাত পরেছে সেখানে।
তবে অনেকেই অসুর দের সাধারণ মানুষের প্রতিভু আর দেবতা দের বাইরে থেকে আসা এলিয়েন মনে করেন যারা আমাদের মনন এবং সব কিছু দখল করে নিয়েছেন বলে ভাবেন। দেখতে গেলে এঁরা সবাই আমাদের মতই মানুষ। কল্যানের জন্য যারা প্রাণপাত করেছেন তাদের দেব আর যারা নিজেদের ভালো বুঝেছেন তারা অসুর নাম নিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা হয়ে গেছেন। বস্তুত আমাদের মধ্যেই তাঁরা ছিলেন। কাজেই তাদের কাজ কর্মের সাথে নিজেদের রিলেট করে ফেলা টা খুব স্বাভাবিক।
ভারি সত্যি কথা।
•
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
10-06-2022, 03:50 PM
(This post was last modified: 10-06-2022, 03:53 PM by Baban. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
আমার ছোট গল্প ভয় পড়ে কেউ একজন বলেছিলো তারও ভৌতিক কিছু লেখার ইচ্ছা আছে। আর আমি বলেছিলাম অপেক্ষায় থাকবো। সেই অপেক্ষার ফল যে এমন দুর্ধর্ষ হবে জেনেও জানতাম না। এতো শুধুই নিছক ভুত বা ভয়ের গল্প না, এ তার চেয়েও বীভৎস অর্থাৎ আতঙ্কর অংশ টুকু বললাম। বাকি তো এক মায়ের গল্পও পাবো আমরা। সব শিশুর মধ্যেই ভগবান থাকে। বাকি আর কিছু বলবোনা আমি। সেটা গল্পের মাধ্যমে প্রকাশ পাক। যাইহোক ভুত তো শুধুই ঘাড় মটকে কিংবা ভয় দেখিয়ে দলে টানতে পারে, কিন্তু এই প্রাণী তো খেলে নিজের শিকার নিয়ে। শিকারের চোখে ভয় আতঙ্ক, মৃত্যু ভিক্ষা তার কাছে পৈশাচিক সুখ! সব মিলে অসাধারণ দ্বিতীয় এই পর্ব ❤
আগের দুই গল্পের প্রচ্ছদ আঁকার সুযোগ পেয়েছিলাম। তাই এবার সাহস করে এই তৃতীয় গপ্পের জন্য এই পোস্টার দিলুম। আশা করি পছন্দ হবে।
The following 12 users Like Baban's post:12 users Like Baban's post
• bourses, Bumba_1, ddey333, issan69, Jupiter10, Karims, LajukDudh, muntasir0102, nandanadasnandana, nextpage, rubisen, WrickSarkar2020
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(10-06-2022, 03:50 PM)Baban Wrote: আমার ছোট গল্প ভয় পড়ে কেউ একজন বলেছিলো তারও ভৌতিক কিছু লেখার ইচ্ছা আছে। আর আমি বলেছিলাম অপেক্ষায় থাকবো। সেই অপেক্ষার ফল যে এমন দুর্ধর্ষ হবে জেনেও জানতাম না। এতো শুধুই নিছক ভুত বা ভয়ের গল্প না, এ তার চেয়েও বীভৎস অর্থাৎ আতঙ্কর অংশ টুকু বললাম। বাকি তো এক মায়ের গল্পও পাবো আমরা। সব শিশুর মধ্যেই ভগবান থাকে। বাকি আর কিছু বলবোনা আমি। সেটা গল্পের মাধ্যমে প্রকাশ পাক। যাইহোক ভুত তো শুধুই ঘাড় মটকে কিংবা ভয় দেখিয়ে দলে টানতে পারে, কিন্তু এই প্রাণী তো খেলে নিজের শিকার নিয়ে। শিকারের চোখে ভয় আতঙ্ক, মৃত্যু ভিক্ষা তার কাছে পৈশাচিক সুখ! সব মিলে অসাধারণ দ্বিতীয় এই পর্ব ❤
আগের দুই গল্পের প্রচ্ছদ আঁকার সুযোগ পেয়েছিলাম। তাই এবার সাহস করে এই তৃতীয় গপ্পের জন্য এই পোস্টার দিলুম। আশা করি পছন্দ হবে।
ওয়াও বাবান। তুমি আমার আই ডি পাসোয়ার্ড রাখো। এটা সেট করে দাও ভাই আমার। আমি পারি না সেট করতে। দুর্ধর্ষ হয়েছে।
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
(10-06-2022, 05:00 PM)nandanadasnandana Wrote: ওয়াও বাবান। তুমি আমার আই ডি পাসোয়ার্ড রাখো। এটা সেট করে দাও ভাই আমার। আমি পারি না সেট করতে। দুর্ধর্ষ হয়েছে।
এই বিশ্বাসের জন্য যত ধন্যবাদ জানাই কম। আমি আগেও বলেছিলাম কিভাবে করতে হয় কিন্তু হয়তো তোমার কোনো একটা অসুবিধা হচ্ছে, বেশ তোমার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে pm করে জানিয়ে দাও। আমি সেট করে দেবো। তারপরে হয়ে গেলে বলে দেবো তখন পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে নিও দরকার হলে। যদিও অন্যের থ্রেডে তার পারমিশন ছাড়া আমি ঢুকোবোও না। ❤
Posts: 1,538
Threads: 5
Likes Received: 2,632 in 909 posts
Likes Given: 1,512
Joined: Dec 2018
Reputation:
578
আপনি এগোতে থাকুন... বুম্বাকে ধরেছি আজ থেকে... আপনাকে ছুঁতে একটু সময় নেবো... তবে ছুঁয়ে তো দেবোই... হা হা হা...
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,216 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
টান টান উত্তেজনায় ভরা একটি পর্ব .. শুরু থেকে এই কাহিনীর ভক্ত হয়ে গেলাম .. চলতে থাকুক .. সঙ্গে আছি
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
10-06-2022, 06:04 PM
(This post was last modified: 10-06-2022, 06:22 PM by Baban. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পোস্টার সেট করে দিয়েছি। সাথে প্রোফাইল পিক। ❤
Posts: 548
Threads: 1
Likes Received: 627 in 383 posts
Likes Given: 1,631
Joined: Sep 2019
Reputation:
34
10-06-2022, 09:19 PM
(This post was last modified: 10-06-2022, 11:03 PM by sudipto-ray. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
দিদি তোমার এলেম আছে বলতে হবে, এমন একটা অবাস্তব ঘটনাকে পুরোপুরি বাস্তব রূপ দান করেছ। এখন তো মনে হচ্ছে, সত্যিই বাঘমুড়ো নামে কোন জঙ্গল আছে।" Sming " নামে একটা মুভি দেখেছিলাম, সেখানেও একটি বাঘ বিভিন্ন রূপ ধরে গ্রামের নিরীহ মানুষদের শিকার করতো।
আপডেটের জন্য লাইক ও রেপুটেশন দুটোই।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(10-06-2022, 05:50 PM)Bumba_1 Wrote: টান টান উত্তেজনায় ভরা একটি পর্ব .. শুরু থেকে এই কাহিনীর ভক্ত হয়ে গেলাম .. চলতে থাকুক .. সঙ্গে আছি
অনেক ধন্যবাদ। লাভড
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(10-06-2022, 05:26 PM)bourses Wrote: আপনি এগোতে থাকুন... বুম্বাকে ধরেছি আজ থেকে... আপনাকে ছুঁতে একটু সময় নেবো... তবে ছুঁয়ে তো দেবোই... হা হা হা... হা হা হা। ধরাধরি খেলি তবে।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(10-06-2022, 06:04 PM)Baban Wrote: পোস্টার সেট করে দিয়েছি। সাথে প্রোফাইল পিক। ❤
ঘ্যাম হয়েছে বললেও কম বলা হয়। দারুণ হয়েছে।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(10-06-2022, 09:19 PM)sudipto-ray Wrote: দিদি তোমার এলেম আছে বলতে হবে, এমন একটা অবাস্তব ঘটনাকে পুরোপুরি বাস্তব রূপ দান করেছ। এখন তো মনে হচ্ছে, সত্যিই বাঘমুড়ো নামে কোন জঙ্গল আছে।" Sming " নামে একটা মুভি দেখেছিলাম, সেখানেও একটি বাঘ বিভিন্ন রূপ ধরে গ্রামের নিরীহ মানুষদের স্বীকার করতো।
আপডেটের জন্য লাইক ও রেপুটেশন দুটোই।
অনেক ধন্যবাদ ভাই। চেষ্টা করছি। সত্যি বলতে, আমি ভুতের বা ভয়ের গল্প লেখার চেষ্টা করেছিলাম আগে। কিন্তু কিছু টা লেখার পরে এমন ভয় করে যে সব গুটিয়ে পাটিয়ে , শুতে চলে আসতাম। খুব ভীতু আমি। বিশ্বাস করবে না, আমি আরশোলা ভয় একটু হলেও কম পাই, কিন্তু ভুতে মারাত্মক ভয় পাই। তাই লেখা হয়ে উঠছিল না। তাই ভুতের সাথে ভগবান কে মিশিয়ে দিলাম। যাতে ভয় টা একটু কম লাগে। আর এখন আমার ছেলে গুন্ডা কে পাশে নিয়ে লিখি। ভয় টা কম পাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে।
Posts: 1,473
Threads: 7
Likes Received: 2,458 in 929 posts
Likes Given: 2,453
Joined: Mar 2022
Reputation:
512
গল্পের ভৌতিক আবহ তৈরী করতে যে প্লট টা ব্যবহার করেছেন সেটা অনবদ্য।
কল্পপুরানের ঘটনার সাথে বর্তমানের যে সংযোগ ঘটালেন দিদি তাতেই তো দিল খুশ। কেবল তো কাহিনীর শুরু তবে শুরুতেই যে হীরার আগমন দেখিয়ে লোভ দেখাচ্ছেন সেটা দুর্দান্ত।
আমরা যতই অসুর বলি ,
ওরাও কিন্তু ভক্ত
তবে ওরা নিষ্ঠা করে
একটু পথভ্রষ্ট।
তবেই না গোবিন্দ দিলো কথা
যতবার যাবি তোরা
পাবি আমার হাতেই মুক্তি।
হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই।
দুইকে আমি এক করি না, এক কে করি দুই।।
Posts: 42
Threads: 0
Likes Received: 58 in 38 posts
Likes Given: 160
Joined: Sep 2019
Reputation:
2
11-06-2022, 12:25 AM
(This post was last modified: 11-06-2022, 12:40 AM by boro bara. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
অনেকদিন পরে এলাম। এসে নতুন নামের গল্প টা দেখে পড়তে শুরু করলাম। দুর্দান্ত। পূরাণ এবং বর্তমান কে মিশিয়ে করেছেন কি? দুর্দান্ত। বরাবর ই এমন ফ্যান্টাসি গল্প ভাল লাগে। বলতেই হবে , আপনার মহাভারতের উপরে কিছু কথা দেখে মনে হলো সত্যি আপনি মহাভারত পড়েছেন আর সেটা নিয়ে বিশ্লেষণ ও করেন। বি আর চোপড়া তে সীমাবদ্ধ নেই ব্যাপার টা। আমার ও সামান্য ন্যাক আছে ওই দিকে, তাই বলতে পারলাম। এই রাবণ আর ইন্দ্রজিৎ কে মহিমান্বিত করে গেছেন আমাদের মাইকেল। না না মাইকেলের, প্রতিভা হয়ত কবিগুরুর ও উপরের লেভেলে ছিল। কিন্তু এই খারাপ কে মহিমান্বিত করার প্রচেষ্টা মানতে পারিনি। এক ই দোষে দোষী আমাদের কবিগুরুর কর্ণ কুন্তী সংবাদ। পুরো ব্যাপার টা কেই বদলে দিয়েছিল। দৃষ্টি ভঙ্গী টাই বদলে দিয়েছে বাঙালীর। আর রামায়ণ মহাভারত কে বাঙালী করার প্রচেষ্টা বহুদিনের।
মজার ব্যাপার, একদিকে রাম বলছেন মাইকেলের কথায় , সীতা বিনা আমি যেন মনি হারা ফণী। আর বল্মীক রামায়ণে , রাম কামে কাতর হচ্ছে । কাছে সীতা নেই , রাবণ তাকে হরণ করেছেন। বসন্তের মৃদু মন্দ হাওয়া, কোকিলের কূজন, রামের কাছে কাম বার্তা বয়ে নিয়ে আসছে। একদিকে মাইকেল রাম কে দুর্বল দেখাচ্ছেন , অন্য দিকে বাল্মিকী বলছেন, সীতা কে উদ্ধার করা রামের কর্তব্য। যে রাজা বনবাসে এসে স্ত্রী হরণ কারী কে হত্যা করতে না পারে, তার কাছে প্রজা কি ভাবে সুরক্ষিত থাকবে? রামের পরবর্তী কাজ কর্ম সেই ইঙ্গিত ই দেয়। কই সীতা কে অগ্নীপরীক্ষার সময়ে তো রাম কাঁদে নি?
দেব আর অসুর দের মধ্যের লাইন টা খুব সুন্দর ভাবে ব্যক্ত করেছেন আপনি। গুণ পুজো টা ভাবাল নতুন করে। বাহ দারুন। এখানে এমন গল্প পাব ভাবিনি। এডমিন এর উচিৎ এমন সব গল্প কে আলাদা করে দেওয়া। অনেকের গল্প পড়েছিলাম। বাবান, বুম্বা, বিচিত্র এরাও ভিন্ন স্বাদের গল্প লেখে। এই সব গল্প গুলো সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এক্ষনি। আরো লিখুন । ভালো লিখুন । সুস্থ থাকুন।
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(11-06-2022, 12:18 AM)nextpage Wrote: গল্পের ভৌতিক আবহ তৈরী করতে যে প্লট টা ব্যবহার করেছেন সেটা অনবদ্য।
কল্পপুরানের ঘটনার সাথে বর্তমানের যে সংযোগ ঘটালেন দিদি তাতেই তো দিল খুশ। কেবল তো কাহিনীর শুরু তবে শুরুতেই যে হীরার আগমন দেখিয়ে লোভ দেখাচ্ছেন সেটা দুর্দান্ত।
আমরা যতই অসুর বলি ,
ওরাও কিন্তু ভক্ত
তবে ওরা নিষ্ঠা করে
একটু পথভ্রষ্ট।
তবেই না গোবিন্দ দিলো কথা
যতবার যাবি তোরা
পাবি আমার হাতেই মুক্তি।
লাভ লাভ লাভ। অনেক ধন্যবাদ
•
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(11-06-2022, 12:25 AM)boro bara Wrote: অনেকদিন পরে এলাম। এসে নতুন নামের গল্প টা দেখে পড়তে শুরু করলাম। দুর্দান্ত। পূরাণ এবং বর্তমান কে মিশিয়ে করেছেন কি? দুর্দান্ত। বরাবর ই এমন ফ্যান্টাসি গল্প ভাল লাগে। বলতেই হবে , আপনার মহাভারতের উপরে কিছু কথা দেখে মনে হলো সত্যি আপনি মহাভারত পড়েছেন আর সেটা নিয়ে বিশ্লেষণ ও করেন। বি আর চোপড়া তে সীমাবদ্ধ নেই ব্যাপার টা। আমার ও সামান্য ন্যাক আছে ওই দিকে, তাই বলতে পারলাম। এই রাবণ আর ইন্দ্রজিৎ কে মহিমান্বিত করে গেছেন আমাদের মাইকেল। না না মাইকেলের, প্রতিভা হয়ত কবিগুরুর ও উপরের লেভেলে ছিল। কিন্তু এই খারাপ কে মহিমান্বিত করার প্রচেষ্টা মানতে পারিনি। এক ই দোষে দোষী আমাদের কবিগুরুর কর্ণ কুন্তী সংবাদ। পুরো ব্যাপার টা কেই বদলে দিয়েছিল। দৃষ্টি ভঙ্গী তাই বদলে দিয়েছে বাঙালীর। আর রামায়ণ মহাভারত কে বাঙালী করার প্রচেষ্টা বহুদিনের।
মজার ব্যাপার, একদিকে রাম বলছেন মাইকেলের কথায় , সীতা বিনা আমি যেন মনি হারা ফণী। আর বল্মীক রামায়ণে , রাম কামে কাতর হচ্ছে । কাছে সীতা নেই , রাবণ তাকে হরণ করেছেন। বসন্তের মৃদু মন্দ হাওয়া, কোকিলের কূজন, রামের কাছে কাম বার্তা বয়ে নিয়ে আসছে। একদিকে মাইকেল রাম কে দুর্বল দেখাচ্ছেন , অন্য দিকে বাল্মিকী বলছেন, সীতা কে উদ্ধার করা রামের কর্তব্য। যে রাজা বনবাসে এসে স্ত্রী হরণ কারী কে হত্যা করতে না পাড়ে, তার কাছে প্রজা কি ভাবে সুরক্ষিত থাকবে? রামের পরবর্তী কাজ কর্ম সেই ইঙ্গিত ই দেয়। কই সীতা কে অগ্নীপরীক্ষার সময়ে তো রাম কাঁদে নি?
দেব আর অসুর দের মধ্যের লাইন টা খুব সুন্দর ভাবে ব্যক্ত করেছেন আপনি। গুণ পুজো টা ভাবাল নতুন করে। বাহ দারুন। এখানে এমন গল্প পাব ভাবিনি। এডমিন এর উচিৎ এমন সব গল্প কে আলাদা করে দেওয়া। অনেকের গল্প পড়েছিলাম। বাবান, বুম্বা, বিচিত্র এরাও ভিন্ন স্বাদের গল্প লেখে। এই সব গল্প গুলো সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এক্ষনি। আরো লিখুন । ভালো লিখুন । সুস্থ থাকুন।
ধন্যবাদ অনেক। ভালো থাকবেন। গল্প টা পড়ছেন এটাই ভালো লাগে।
Posts: 7
Threads: 0
Likes Received: 3 in 3 posts
Likes Given: 1
Joined: May 2022
Reputation:
0
Didiii... tuumar haater lekhonii toh onek Novelist der moto....thinking oo surprising... tuumi ki ekta Bangla Unfinished Golpo try korbe lekhaar???... etaa oneek ageer ekta golpo 8/9yr toh hobeii.... পূর্বার দূর্বার প্রেমিক ... eii golpo taa...
Posts: 717
Threads: 5
Likes Received: 2,153 in 475 posts
Likes Given: 730
Joined: Dec 2021
Reputation:
666
(11-06-2022, 01:15 AM)Rakesh222 Wrote: Didiii... tuumar haater lekhonii toh onek Novelist der moto....thinking oo surprising... tuumi ki ekta Bangla Unfinished Golpo try korbe lekhaar???... etaa oneek ageer ekta golpo 8/9yr toh hobeii.... পূর্বার দূর্বার প্রেমিক ... eii golpo taa...
অনেক ধন্যবাদ। তাই বলে অন্যের লেখা? তাই কি পারা যায়? সবাই নিজের একটা রিদম এ লেখে। ভেবে রাখে কোথায় কি লিখবে। অন্যে লিখলে কি সেটা হবে? তাও আমাকে যোগ্য মনে করেছ এতেই আমি ধন্য। অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে ভাই।
•
|