25-02-2022, 03:05 PM
(This post was last modified: 16-03-2022, 03:48 PM by kumdev. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
।।৯৭।।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঞ্চিত হয়।আজ শনিবার এত দেরী করছে কেন।কি করছে কে জানে।কোনো গোলমাল হয়নি তো?ভাবতে ভাবতে প্রজ্ঞা মোবাইলের বাটন টেপে।কানে লাগিয়ে শুনল, আভি ব্যসত হ্যায়।বিরক্তিতে নাক কুচকে যায় এখন আবার কিসের ব্যস্ত।
আরে বাবা কিছু হলে ফোন করে জানাতে কি হয়েছে।আসুক দেখাচ্ছি মজা।শ্রেয়ার কথা মনে পড়ল,কার্ড পেয়েছে কিনা একবার জিজ্ঞেস করা যাক।এই তো রিং হচ্ছে প্রজ্ঞা কানে লাগায়।
--তুই এখন কোথায়?
শ্রেয়ার গলা,বানিয়ে বলল প্রজ্ঞা,তালপুকুর।
--কার্ড পেয়েছি।
--আসছিস তো?
--প্রিয়র তো খুব আগ্রহ।মন্দা আসছে তো?
--বলেছে তো আসবে।
--অনেকদিন তো বিয়ে হল, তোর কোনো খবর আছে?
--একা একা তো হয়না,আরেকজনের দরকার হয়।হেসে বলল শ্রেয়া।
--কেন ওর কি ইচ্ছে নেই?
--ও বলে কিছুদিন আনন্দ করে নিই তারপর..।
--খুব আনন্দ করছিস?
--আর বলিস না শুরু করতে না করতেই শেষ,দম নেই।শোন প্রজ্ঞা বিয়ের আগে পাত্র কি করে শুধু না খোজ নিবি পাত্রের ডিউরেশন কত সময় হি-হি-হি---হি-হি-হি।
প্রজ্ঞার মনে হল এসব কথা বলে নিজেকে খেলো করা ঠিক হবে না।প্রসংগ বদলাতে বলল,ও ফেরেনি?
--কে প্রিয়? আর বলিস না পায়রাডাঙ্গা থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে যায়।
--আচ্ছা শ্রেয়া তোরা আনন্দ কর।রাখছি দেখা হলে কথা হবে?
ফোন রেখে ঠোটে ঠোট চেপে প্রজ্ঞা ভাবে শুরু করতে না করতেই শেষ।মস্তানের শুরু হলে শেষ হতেই চায় না।দম বের করে দেয়।একটাই দোষ বলে বলে করাতে হয়।সব কি বলে বলে হয়।সন্ধ্যে হতে চলল এখনো আসার নাম নেই।মামণি রান্না শুরু করে দিয়েছে রান্না ঘরে শব্দ পাচ্ছে। একবার মামণিকে দিয়ে ফোন করাতে হবে।ব্যালকনিতে গিয়ে রেলিঙ্গে কনুইয়ের ভর দিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে।
পার্কে লোক আসা শুরু হয়েছে।বেশিক্ষন বসে থাকা যাবে না।দেখলে নানা রকম কথা উঠবে। কল্পনা বলল,এবার চাকরির চেষ্টা করো।
--ভাবছি এমসিএ পড়ব কিনা।বঙ্কিম বলল।
--আগে বিয়েটা হোক তারপর ওসব ভাবা যাবে।বিয়ের পর একই বাড়ীতে থাকা সম্ভব নয় আমি কিন্তু বলে দিলাম।
--সেটা আমিও ভেবেছি।আশিসদাকে জিজ্ঞেস করছিলাম ফ্লাটের কেমন দাম?কিসব স্কয়ার ফুট-টুট বলছিল।
--আচ্ছা তোমার বন্ধু মনসিজ তো বড় চাকরি করে।ও তোমার জন্য কিছু করতে পারবে না?
--ওকে কোথায় পাবো।ও এখন হুগলীতে থাকে।
--চলো ভীড় বাড়ছে।আর শোনো বেশীক্ষন আড্ডা দিও না।তাড়াতাড়ি বাড়ী ফিরে যাবে।আর দেখো দুজনের চলার মত একটা চাকরি জোগাড় করা যায় কিনা।
পার্ক থেকে বেরিয়ে বোসবাড়ীর দিকে হাটতে থাকে।একই বাড়ীর দোতলায় কনারা থাকে।কনা ঠিকই বলেছে।কারো জন্য প্রাণপণ মেয়েরাই করতে পারে।দূর থেকে নজরে পড়ল মনাদের বারান্দায় সেই মহিলা দাঁড়িয়ে।মনা কি তাহলে ফিরে এসেছে?ব্যালকনির নীচে এসে বঙ্কিম উপর দিকে তাকাতে প্রজ্ঞার সঙ্গে চোখাচুখি হতে জিজ্ঞেস করল,মনা কি এসেছে?
ছেলেটাকে চেনা চেনা লাগে প্রজ্ঞা বলল,আসেনি,আজ কালের মধ্যে আসার কথা।
--ভালো আছেন?
হেসে ঘাড় নাড়ল প্রজ্ঞা।মাছ খায় না তার জন্য মাছ রান্না করছে,প্রজ্ঞার মনে হল বেরিয়ে একটু দই মিষ্টি নিয়ে আসে।রান্না ঘরে গিয়ে বলল,মামণি তুমি ফোন করো তো।
--তুই নম্বর লাগিয়ে দে।হিমানী দেবী নিজের মোবাইল এগিয়ে দিলেন।
প্রজ্ঞা বাটন টিপে কানে লাগায়,ওপাশ হতে শুনতে পেল... ব্যস্ত হ্যায় থোড়িদের ফোন কিজিয়ে...।
--কিরে রিং হচ্ছে না?
--ব্যস্ত আছে।মামণি আমি একটু আসছি।
--কোথায় যাবি?
--একটু দরকার আছে।
--শোন বেলি আমার জন্য কিছু আনতে হবে না।
ঠিক বুঝেছে প্রজ্ঞা বলল,তোমার কেন আমার জন্য আনতে পারি না।
রাস্তায় নেমে নিরুদ্দেশ হাটতে থাকে।এ পাড়ায় ভাল দোকান নেই।বড় রাস্তার দিকে হাটতে থাকে।সত্যনারায়ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ভিতরে বসে খাবার ব্যবস্থা আছে।প্রজ্ঞা দই সন্দেশ কিনে দোকান থেকে বেরোতে যাবে একটা ছেলে বলল,আরে তুমি এখানে?
প্রজ্ঞা বিরক্ত হয় লোকটা তুমি-তুমি করছে।লোকটি বলল,তুমি চাকদা থাকো না?
চেনা-চেনা লাগছে মনে করতে পারছে না বলল,এখানে আমার রিলেটিভ থাকে।
--আমি বুবলির দাদা তুমি প্রজ্ঞা তো?
এবার মনে পড়েছে বুবলি মানে ব্রততী বোস তার সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক পড়তো।মাঝে মাঝে ওদের বাসায় গেছে।পাস করার পর আর যোগাযোগ নেই।স্মিত হেসে প্রজ্ঞা বলল,আপনি বিশ্বজিৎ মানে বিশুদা?আপনি এখানে?
--যাক চিনতে পেরেছো আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।চলো এক কাপ চা খাই।কতদিন পরে দেখা।
প্রজ্ঞার হাসি পেল একটা কথা মনে পড়তে।ব্রততীর দাদা তখন এলসিই পড়তো। ব্রততীর সঙ্গে ওদের বাসায় গেলে বিশুদা নানা অছিলায় বোনের সঙ্গে কথা বলতে আসতো।টেরিয়ে তাকে লক্ষ্য করতো। একদিন বিশুদা একটা বই দিল পড়তে।বাসায় ফিরে বই খুলতে ভিতর থেকে এক টুকরো কাগজ পড়ল।হাতে তুলে দেখল প্রেমপত্র।বিনিয়ে বিনিয়ে তার রূপের প্রশংসা করা হয়েছে।প্রজ্ঞা চিঠীটা ভাজ করে বইয়ের মধ্যে যেমন ছিল ঢুকিয়ে রাখল।তারপর বই পড়ে ফেরত দিয়ে দিয়েছে,চিঠীটা দেখেছে বুঝতে দেয়নি।মস্তানকে যদি বলতো বিশ্বজিতের কপালে দুর্ভোগ ছিল।
দোকানের ভিতরে ঢুকে বসতে বসতে বিশ্বজিৎ বলল,বুবলির বাসায় গেছিলাম।ওর বিয়ে হয়েছে সিমলাই পাড়া লেনে।
--ব্রততীর বিয়ে হয়ে গেছে?
--ব্রততীর বিয়ে হয়ে গেছে আমি পাস করে চাকরি করছি।
ব্রততীর বিয়ে হয়ে গেছে তাকে বলেনি।অবশ্য আউট অফ সাইট আউট অফ মাইণ্ড।প্রজ্ঞা বলল,আপনারা ওখানেই আছেন তো?
--বাবা মা আছেন।আমি হুগলী মাখলাতে বাসা ভাড়া নিয়ে আছি।
প্রজ্ঞা ভাবে তাহলে বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে।প্রজ্ঞা বলল,এখন আবার সেই হুগলীতে যাবেন?
বিশ্বজিৎ হাসল বলল,এখন চাকদা বাসায় যাবো।পিডব্লিউ ডিতে চাকরি করি হুগলীতে।শনিবার শনিবার বাড়ী আসি।রোজ এতটা পথ যাতায়াত করা সম্ভব নয়।যতদিন বদলি না হচ্ছে এভাবেই চালাতে হবে।প্রজ্ঞার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,তুমি যা ভাবছো তা নয়।আমি এখনো বিয়ে করিনি ফাকা আছি।
ইঙ্গিতটা বুঝতে বেশি বুদ্ধি লাগেনা।এবার উঠতে হয় প্রজ্ঞা চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলল,চাকরি জীবন কেমন লাগছে?
--সরকারী চাকরি খারাপ না।ভালই কাটছিল তবে নতুন এক ডিএম এসে তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে।
প্রজ্ঞার ওঠা হয়না জিজ্ঞেস করে,মানে?
--বেশি বয়স না হারামী টাইপ--জিভ কেটে বলল, স্যরি মানে লোকটা টেটিয়া টাইপ।ওর জন্যই তো অফিস থেকে বেরোতে আজ দেরী হয়ে গেল।বুবলির বাসায় বেশীক্ষন থাকতে পারিনি।
--খুব স্ট্রিক্ট?
--বেশিদিন স্ট্রিক্টগিরি চলবে না।সাপের ল্যাজে পা দিয়েছে।
মনে হচ্ছে মস্তানের কথা বলছে।প্রজ্ঞা কৌতূহল দমন করতে পারে না জিজ্ঞেস করল,কেন কার লেজে পা দিয়েছে?
--এতকাল পরে দেখা হল বাদ দাও ওসব কথা।তুমি এখন কি করছো?
--আমি এবার এম এ পরীক্ষা দেব।কার লেজে পা দিয়েছে,বলুন আমার শুনতে মজা লাগছে।
--ওই অঞ্চলে ঘোষ কনস্ট্রাকশন বললে লোকে একডাকে চেনে। উপর মহলে তার লাইন।গ্রামের দিকে একটা রাস্তা করার বরাত পেয়েছিল।তার পেমেণ্ট আটকে দিয়েছে।বলে কিনা নতুন করে রাস্তা করতে হবে।
--নতুন করে করতে হবে কেন?
--রিকুইজিশন মাফিক হয়নি।আরে বাবা সরকারী কাজে এত ভুল ধরলে চলে।রাস্তার কাজ বন্ধ হতেই গ্রামের লোক ক্ষেপে গেছে।
--গ্রামের লোক ক্ষেপে গেল কেন?
--কেন খেপবে না?এতদিন পরে রাস্তা হচ্ছে মাঝ পথে বন্ধ হয়ে গেলে ক্ষেপবে না?
--কিন্তু উনি তো ওদের ভালোর জন্য করেছে।
--দেখো কেউ কারো ভালো করে না।আসলে চাপ দিয়ে কিছু আদায় করার মতলব।অফিস স্টাফের মধ্যেও ক্ষোভ।
--অফিস স্টাফের কি হল?
--ও তুমি বুঝবে না।অফিসের বেশির ভাগ ঘোষ কোম্পানীর পক্ষে।আগের ডিএমের সময় এত ঝামেলা হয়নি।
প্রজ্ঞার এসব কথা কানে যায়না।সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,আসি আপনাকে তো চাকদা যেতে হবে।
--আমি প্রতি শনিবার আসি।এসো না একদিন।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঞ্চিত হয়।আজ শনিবার এত দেরী করছে কেন।কি করছে কে জানে।কোনো গোলমাল হয়নি তো?ভাবতে ভাবতে প্রজ্ঞা মোবাইলের বাটন টেপে।কানে লাগিয়ে শুনল, আভি ব্যসত হ্যায়।বিরক্তিতে নাক কুচকে যায় এখন আবার কিসের ব্যস্ত।
আরে বাবা কিছু হলে ফোন করে জানাতে কি হয়েছে।আসুক দেখাচ্ছি মজা।শ্রেয়ার কথা মনে পড়ল,কার্ড পেয়েছে কিনা একবার জিজ্ঞেস করা যাক।এই তো রিং হচ্ছে প্রজ্ঞা কানে লাগায়।
--তুই এখন কোথায়?
শ্রেয়ার গলা,বানিয়ে বলল প্রজ্ঞা,তালপুকুর।
--কার্ড পেয়েছি।
--আসছিস তো?
--প্রিয়র তো খুব আগ্রহ।মন্দা আসছে তো?
--বলেছে তো আসবে।
--অনেকদিন তো বিয়ে হল, তোর কোনো খবর আছে?
--একা একা তো হয়না,আরেকজনের দরকার হয়।হেসে বলল শ্রেয়া।
--কেন ওর কি ইচ্ছে নেই?
--ও বলে কিছুদিন আনন্দ করে নিই তারপর..।
--খুব আনন্দ করছিস?
--আর বলিস না শুরু করতে না করতেই শেষ,দম নেই।শোন প্রজ্ঞা বিয়ের আগে পাত্র কি করে শুধু না খোজ নিবি পাত্রের ডিউরেশন কত সময় হি-হি-হি---হি-হি-হি।
প্রজ্ঞার মনে হল এসব কথা বলে নিজেকে খেলো করা ঠিক হবে না।প্রসংগ বদলাতে বলল,ও ফেরেনি?
--কে প্রিয়? আর বলিস না পায়রাডাঙ্গা থেকে ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে যায়।
--আচ্ছা শ্রেয়া তোরা আনন্দ কর।রাখছি দেখা হলে কথা হবে?
ফোন রেখে ঠোটে ঠোট চেপে প্রজ্ঞা ভাবে শুরু করতে না করতেই শেষ।মস্তানের শুরু হলে শেষ হতেই চায় না।দম বের করে দেয়।একটাই দোষ বলে বলে করাতে হয়।সব কি বলে বলে হয়।সন্ধ্যে হতে চলল এখনো আসার নাম নেই।মামণি রান্না শুরু করে দিয়েছে রান্না ঘরে শব্দ পাচ্ছে। একবার মামণিকে দিয়ে ফোন করাতে হবে।ব্যালকনিতে গিয়ে রেলিঙ্গে কনুইয়ের ভর দিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে।
পার্কে লোক আসা শুরু হয়েছে।বেশিক্ষন বসে থাকা যাবে না।দেখলে নানা রকম কথা উঠবে। কল্পনা বলল,এবার চাকরির চেষ্টা করো।
--ভাবছি এমসিএ পড়ব কিনা।বঙ্কিম বলল।
--আগে বিয়েটা হোক তারপর ওসব ভাবা যাবে।বিয়ের পর একই বাড়ীতে থাকা সম্ভব নয় আমি কিন্তু বলে দিলাম।
--সেটা আমিও ভেবেছি।আশিসদাকে জিজ্ঞেস করছিলাম ফ্লাটের কেমন দাম?কিসব স্কয়ার ফুট-টুট বলছিল।
--আচ্ছা তোমার বন্ধু মনসিজ তো বড় চাকরি করে।ও তোমার জন্য কিছু করতে পারবে না?
--ওকে কোথায় পাবো।ও এখন হুগলীতে থাকে।
--চলো ভীড় বাড়ছে।আর শোনো বেশীক্ষন আড্ডা দিও না।তাড়াতাড়ি বাড়ী ফিরে যাবে।আর দেখো দুজনের চলার মত একটা চাকরি জোগাড় করা যায় কিনা।
পার্ক থেকে বেরিয়ে বোসবাড়ীর দিকে হাটতে থাকে।একই বাড়ীর দোতলায় কনারা থাকে।কনা ঠিকই বলেছে।কারো জন্য প্রাণপণ মেয়েরাই করতে পারে।দূর থেকে নজরে পড়ল মনাদের বারান্দায় সেই মহিলা দাঁড়িয়ে।মনা কি তাহলে ফিরে এসেছে?ব্যালকনির নীচে এসে বঙ্কিম উপর দিকে তাকাতে প্রজ্ঞার সঙ্গে চোখাচুখি হতে জিজ্ঞেস করল,মনা কি এসেছে?
ছেলেটাকে চেনা চেনা লাগে প্রজ্ঞা বলল,আসেনি,আজ কালের মধ্যে আসার কথা।
--ভালো আছেন?
হেসে ঘাড় নাড়ল প্রজ্ঞা।মাছ খায় না তার জন্য মাছ রান্না করছে,প্রজ্ঞার মনে হল বেরিয়ে একটু দই মিষ্টি নিয়ে আসে।রান্না ঘরে গিয়ে বলল,মামণি তুমি ফোন করো তো।
--তুই নম্বর লাগিয়ে দে।হিমানী দেবী নিজের মোবাইল এগিয়ে দিলেন।
প্রজ্ঞা বাটন টিপে কানে লাগায়,ওপাশ হতে শুনতে পেল... ব্যস্ত হ্যায় থোড়িদের ফোন কিজিয়ে...।
--কিরে রিং হচ্ছে না?
--ব্যস্ত আছে।মামণি আমি একটু আসছি।
--কোথায় যাবি?
--একটু দরকার আছে।
--শোন বেলি আমার জন্য কিছু আনতে হবে না।
ঠিক বুঝেছে প্রজ্ঞা বলল,তোমার কেন আমার জন্য আনতে পারি না।
রাস্তায় নেমে নিরুদ্দেশ হাটতে থাকে।এ পাড়ায় ভাল দোকান নেই।বড় রাস্তার দিকে হাটতে থাকে।সত্যনারায়ণ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ভিতরে বসে খাবার ব্যবস্থা আছে।প্রজ্ঞা দই সন্দেশ কিনে দোকান থেকে বেরোতে যাবে একটা ছেলে বলল,আরে তুমি এখানে?
প্রজ্ঞা বিরক্ত হয় লোকটা তুমি-তুমি করছে।লোকটি বলল,তুমি চাকদা থাকো না?
চেনা-চেনা লাগছে মনে করতে পারছে না বলল,এখানে আমার রিলেটিভ থাকে।
--আমি বুবলির দাদা তুমি প্রজ্ঞা তো?
এবার মনে পড়েছে বুবলি মানে ব্রততী বোস তার সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক পড়তো।মাঝে মাঝে ওদের বাসায় গেছে।পাস করার পর আর যোগাযোগ নেই।স্মিত হেসে প্রজ্ঞা বলল,আপনি বিশ্বজিৎ মানে বিশুদা?আপনি এখানে?
--যাক চিনতে পেরেছো আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।চলো এক কাপ চা খাই।কতদিন পরে দেখা।
প্রজ্ঞার হাসি পেল একটা কথা মনে পড়তে।ব্রততীর দাদা তখন এলসিই পড়তো। ব্রততীর সঙ্গে ওদের বাসায় গেলে বিশুদা নানা অছিলায় বোনের সঙ্গে কথা বলতে আসতো।টেরিয়ে তাকে লক্ষ্য করতো। একদিন বিশুদা একটা বই দিল পড়তে।বাসায় ফিরে বই খুলতে ভিতর থেকে এক টুকরো কাগজ পড়ল।হাতে তুলে দেখল প্রেমপত্র।বিনিয়ে বিনিয়ে তার রূপের প্রশংসা করা হয়েছে।প্রজ্ঞা চিঠীটা ভাজ করে বইয়ের মধ্যে যেমন ছিল ঢুকিয়ে রাখল।তারপর বই পড়ে ফেরত দিয়ে দিয়েছে,চিঠীটা দেখেছে বুঝতে দেয়নি।মস্তানকে যদি বলতো বিশ্বজিতের কপালে দুর্ভোগ ছিল।
দোকানের ভিতরে ঢুকে বসতে বসতে বিশ্বজিৎ বলল,বুবলির বাসায় গেছিলাম।ওর বিয়ে হয়েছে সিমলাই পাড়া লেনে।
--ব্রততীর বিয়ে হয়ে গেছে?
--ব্রততীর বিয়ে হয়ে গেছে আমি পাস করে চাকরি করছি।
ব্রততীর বিয়ে হয়ে গেছে তাকে বলেনি।অবশ্য আউট অফ সাইট আউট অফ মাইণ্ড।প্রজ্ঞা বলল,আপনারা ওখানেই আছেন তো?
--বাবা মা আছেন।আমি হুগলী মাখলাতে বাসা ভাড়া নিয়ে আছি।
প্রজ্ঞা ভাবে তাহলে বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে।প্রজ্ঞা বলল,এখন আবার সেই হুগলীতে যাবেন?
বিশ্বজিৎ হাসল বলল,এখন চাকদা বাসায় যাবো।পিডব্লিউ ডিতে চাকরি করি হুগলীতে।শনিবার শনিবার বাড়ী আসি।রোজ এতটা পথ যাতায়াত করা সম্ভব নয়।যতদিন বদলি না হচ্ছে এভাবেই চালাতে হবে।প্রজ্ঞার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,তুমি যা ভাবছো তা নয়।আমি এখনো বিয়ে করিনি ফাকা আছি।
ইঙ্গিতটা বুঝতে বেশি বুদ্ধি লাগেনা।এবার উঠতে হয় প্রজ্ঞা চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলল,চাকরি জীবন কেমন লাগছে?
--সরকারী চাকরি খারাপ না।ভালই কাটছিল তবে নতুন এক ডিএম এসে তোলপাড় শুরু করে দিয়েছে।
প্রজ্ঞার ওঠা হয়না জিজ্ঞেস করে,মানে?
--বেশি বয়স না হারামী টাইপ--জিভ কেটে বলল, স্যরি মানে লোকটা টেটিয়া টাইপ।ওর জন্যই তো অফিস থেকে বেরোতে আজ দেরী হয়ে গেল।বুবলির বাসায় বেশীক্ষন থাকতে পারিনি।
--খুব স্ট্রিক্ট?
--বেশিদিন স্ট্রিক্টগিরি চলবে না।সাপের ল্যাজে পা দিয়েছে।
মনে হচ্ছে মস্তানের কথা বলছে।প্রজ্ঞা কৌতূহল দমন করতে পারে না জিজ্ঞেস করল,কেন কার লেজে পা দিয়েছে?
--এতকাল পরে দেখা হল বাদ দাও ওসব কথা।তুমি এখন কি করছো?
--আমি এবার এম এ পরীক্ষা দেব।কার লেজে পা দিয়েছে,বলুন আমার শুনতে মজা লাগছে।
--ওই অঞ্চলে ঘোষ কনস্ট্রাকশন বললে লোকে একডাকে চেনে। উপর মহলে তার লাইন।গ্রামের দিকে একটা রাস্তা করার বরাত পেয়েছিল।তার পেমেণ্ট আটকে দিয়েছে।বলে কিনা নতুন করে রাস্তা করতে হবে।
--নতুন করে করতে হবে কেন?
--রিকুইজিশন মাফিক হয়নি।আরে বাবা সরকারী কাজে এত ভুল ধরলে চলে।রাস্তার কাজ বন্ধ হতেই গ্রামের লোক ক্ষেপে গেছে।
--গ্রামের লোক ক্ষেপে গেল কেন?
--কেন খেপবে না?এতদিন পরে রাস্তা হচ্ছে মাঝ পথে বন্ধ হয়ে গেলে ক্ষেপবে না?
--কিন্তু উনি তো ওদের ভালোর জন্য করেছে।
--দেখো কেউ কারো ভালো করে না।আসলে চাপ দিয়ে কিছু আদায় করার মতলব।অফিস স্টাফের মধ্যেও ক্ষোভ।
--অফিস স্টাফের কি হল?
--ও তুমি বুঝবে না।অফিসের বেশির ভাগ ঘোষ কোম্পানীর পক্ষে।আগের ডিএমের সময় এত ঝামেলা হয়নি।
প্রজ্ঞার এসব কথা কানে যায়না।সে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,আসি আপনাকে তো চাকদা যেতে হবে।
--আমি প্রতি শনিবার আসি।এসো না একদিন।