Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
দাদা , জীবনে এতো দুঃখ .. এতো কষ্ট ... তাও তুমি কলম থামাওনি
আমি তো টুকে টুকে সবার সঙ্গে থাকতে চেয়েছিলাম ... কিন্তু জীবন বড়ো নিষ্ঠুর ... অনেককে হারিয়েছি আমরা , পেয়েছিও কয়েকজনকে ...
মরার শেষ দিনের আগে অবধি চেষ্টা করে যাবো ... ওই পিনুদা আর রাজদীপদাকে আবার ফিরিয়ে আনতে...
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(28-01-2022, 09:12 PM)ddey333 Wrote: #ভালোবাসার_বিবর্তন
সে অনেকদিন আগেকার কথা। শীতকালে তখন সদ্য সদ্য বিয়ে করেছি। বিয়ের পরেই গায়ে এতো পুলক লাগল যে ক্রিম মাখা ছেড়ে দিলাম। মনে প্রানে হিল্লোলের বাতাস, গ্রীষ্ম কালেও ফ্যান লাগছে না।
রান্নাঘরে তখন একসাথে হাতে হাত লাগিয়ে আমরা দুজনে রান্না করতাম। বউ খুন্তি নাড়ছে তো আমি হাতা নাড়ছি। পরসস্পরের দিকে মাঝে মাঝে চেয়ে দেখছি। বউ লজ্জা পেয়ে মুখ নামিয়ে নিচ্ছে। ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাজছে "আঁখো কি গুস্তাখিয়া...." আমি আবার হাতা নাড়াতে কনসেনট্রেট করছি। গরম তেলে বউ পেয়াঁজকুচি দিতে যাচ্ছে, আমি বললাম, সাবধানে দিও, তেল ছিটকে লাগলে ফোস্কা পড়ে যাবে। পেঁয়াজ দেওয়া হলে আমি বউয়ের মুখের দিকে চেয়ে দেখলাম--ঘর্মাক্ত মুখ। তোমার মনে হয় গরম লাগছে। টেবিল ফ্যানটা চালিয়ে দেব। বউ বলল, না থাক, ও সামান্য গরমে কিচ্ছু হবে না। তুমি বরং একটু টিভি দেখো। IPL চলছে তো। আমি বললাম, চলুক। তুমি একা একা রান্নাঘরে পচে মরবে আর আমি ঘরে বসে ফ্যান চালিয়ে tv দেখব! ভাবলে কী করে!
এসব কথা হতে গিয়ে পেয়াঁজ গেল পুড়ে। বউ বলল, ইস, পেয়াঁজ যে পুড়ে গেল। আমি বললাম, আরে হতেই পারে। আমি পেয়াঁজগুলো ফেলে দিয়ে কড়াই ধুয়ে দিচ্ছি।
বউ বলল, কিন্তু আর যে পেয়াঁজ নেই। তুমি আলুসেদ্ধ কী দিয়ে মাখিয়ে খাবে?
আমি বললাম, তুমি পারবে তো?
বউ বলল, আমার কাঁচা তেল নুন দিয়ে মাখিয়ে খেতে কোন অসুবিধা নেই।
আমি বললাম, আমারও অসুবিধা নেই।(যদিও কাঁচা তেল পেয়াঁজ দিয়ে আলুসেদ্ধ আমার অখাদ্য লাগে)
কড়াইটা বেসিনে নামাতে গিয়ে স্ল্যাবে রাখা একটা কাপে ধাক্কা খেয়ে কাপটি গেল মেঝেয় পড়ে।
আমি আঁতকে উঠে বললাম, সরি গো।
বউ বলল, ধুর এতে সরি বলার কী আছে। কাজ করতে গেলে এরকম একটু আধটু জিনিস তো ভাঙবেই। তুমি সরো, আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি। আমি বললাম, না সোনা, তোমার নরম তুলোর মতো আঙ্গুল, তুলতে গিয়ে কেটে যেতে পারে।
বউ বলল, ঠিক আছে, সাবধানে পরিষ্কার কোরো।
বউ ঝাঁটা নিয়ে এলো। আমি ঝাঁট দিয়ে কাপের ভাঙা টুকরোগুলো এক জায়গায় আনালম। এরপর হাত দিয়ে খুব সাবধানে টুকরোগুলো একটা কাগজের উপর রাখতে গিয়ে, একটা টুকরো আঙুলে ফুটে গেল। যেমনি ফুটল, ওমনি ফিনকি দিয়ে রক্ত শুরু হল। বউ রক্ত দেখে আউচ করে উঠল, যেন ওর হৃদয়ে কাপের টুকরো বিঁধল।
পুরোনো দিনের সিনেমার নায়িকাদের মত বউ আমার আঙ্গুল মুখে পুড়ে চুষতে যাবার উপক্রম করলে আমি বাধা দিলাম। বললাম, এসব কী করছ! বেরিয়ে যাওয়া রক্তে কত জার্ম থাকে তুমি জানো?
বউ বলল, কিন্তু রক্ত তো থামছে না।
এই বলেই বউ আমার হাত ধরে বেসিনের সামনে আঙ্গুল রেখে ট্যাপ কল চালিয়ে দিল। জল পড়ছে, আমরা পরস্পর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। জল পড়ছে, ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাজছে, "চোখে চোখে কথা বল, মুখে কিছু বলনা। মন নিয়ে খেলা করো, এ কি ছলনা।"
*
তারপর অনেক দিন কেটে গেছে। ভালোবাসা আর আগের মত নেই, তবে ফিকে হয়ে যায়নি, শুধু কালের নিয়মে বিবর্তিত হয়েছে।
এখন আমি রান্নাঘর এড়িয়ে চলি।
একদিন রান্নাঘর থেকে বউয়ের চিল চিৎকার শোনা গেল। উৎসুক হয়ে গিয়ে দেখলাম, গোটা ঘরময় সর্ষের তেল ছড়ানো। আমি চট করে হিসেব করে দেখলাম প্রায় ত্রিশ চল্লিশ টাকার তেল নষ্ট হয়েছে, মানে 600 ml কোল্ড ড্রিংকসের দাম।
আকাশ দিকে তাকিয়ে কাজ করলে এরকমই হবে, ঠোঁটের কোণে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি এনে আমি বললাম।
বউ ততোধিক গলা চড়িয়ে বলল, মুড়িতে তেল নিয়ে ঢাকনা হালকা করে লাগিয়ে রাখাটা তোমার স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
---মানে? কী বলতে চাও?
---তোমার জন্যই তেল পড়েছে। পরিষ্কার করো এবার।
শুনেই তো আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল।
ঝগড়া ঝামেলা করে কোন লাভ হল না। বউ প্রমান করেই ছাড়ল যে, আমার দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের জন্যই তার হাত থেকে তেল পড়েছে। অতএব আমাকেই পরিষ্কার করতে হবে। IPL দেখছিলাম। রাসেল ক্যালাচ্ছিল। আমি বললাম, রাসেলের ব্যাটিংটা দেখে পরিষ্কার করে দিচ্ছি।
বউ বলল, বলি রাসেল-ভাজা দিয়ে ভাত খাবে না মাছ-ভাজা দিয়ে ভাত খাবে?
আমি মনে মনে ভাবলাম, এক মাঘে তো আর শীত যায় না। আমারও দিন আসবে। আমার হাত থেকে কিছু জিনিস পড়ে নষ্ট হলে আমিও তোমাকে দায়ী করব।
কিছুদিন পরেই এরকম একটি ঘটনা ঘটে গেল। রান্নাঘরে কী একটা নিতে গিয়ে স্ল্যাবে রাখা পাঁচটি ডিমের মধ্যে একটি ডিম মেঝেতে পড়ে গেল। ব্যাস আর যায় কোথায়। শুরু করে দিলাম চেঁচাতে।
কবে যে বোধ বুদ্ধি হবে কে জানে! বলি কোন জিনিসটি কোথায় রাখতে হয় সেটা আর কবে শিখবে?
বউ সিরিয়াল দেখতে দেখতে রান্নাঘরে এসে জিজ্ঞাসা করল, এমন হাঁড়লের মত চিৎকার করছ কেন?
আমি মেজাজ নিয়ে তারই টেকনিকে বললাম, এটা ডিম রাখার জায়গা?
বউ ভ্রু কুঁচকে বলল,
ওহে নিউটনের নাতি, ভালো করে স্মরণ করে দেখ তো কে রেখেছে?
আমার তো স্পষ্ট মনে পড়ছে এটা শেক্সপিয়ারের নাতনির কাজ।
শেষমেশ অনেক চিৎকার চেঁচামেচি বাগবিতণ্ডার পর আমার একটু একটু মনে পড়তে লাগল, এই বেকুবের মত কাজটা অধমেরই করা। কিন্তু আত্মপক্ষ সমর্থন আদায়ের জন্য বললাম, ঠিক আছে তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম আমিই রেখেছি কিন্তু তোমার তো সরিয়ে রাখা উচিত ছিল। না, তাতে বিশেষ কোন কাজ হল না। বউ কোথা থেকে ছেঁড়া ন্যাকড়া নিয়ে হাজির। আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, পরিষ্কার করে ফেলো।
কী আর বলব আপনাদেরকে, মেয়ের পটি পরিষ্কার করতে এত কষ্ট করতে হয়নি যতটা ভেঙে যাওয়া ডিম পরিষ্কার করতে হল। পরিষ্কার তো হল কিন্তু একটা আঁশটে গন্ধ কিছুতেই যাচ্ছে না। ফিনাইল দিয়ে সেটা দূর করলাম। মিনিট পনের পর উনি রান্নাঘর পরিদর্শনে এলেন। নাক দিয়ে প্রথমে শুঁক শুঁক করে শুঁকলেন। কোন গন্ধ পেলেন না। এরপর ডিম ভাঙার জায়গায় হাঁটু গেড়ে বসে মাটি থেকে ইঞ্চি খানেক তফাতে নাক নিয়ে গিয়ে শুঁকে বললেন, গন্ধ আসছে।
এক বোতল কেরোসিন ঢালবো? আমি অম্লান বদনে জিগ্গেস করলাম।
প্রত্যুত্তরে কোন উত্তর এলো না। কিন্তু চোখের চাহনি ভালো ঠেকলো না। অগত্যা আবার ফিনাইল দিয়ে ন্যাকড়া ঘষতে লাগলাম। ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাজছে, "লেগেছে লেগেছে লেগেছে
লেগেছে লেগেছে লেগেছে আগুন
তুম তানা নানা নানা
আয় তোরা দেখে যা না।"
পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে গেল। সেই নতুন নতুন বিয়ে হবার পর কাপ ভাঙার দৃশ্য মনে করে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে এলো। উফ, কী সব দিন ছিল তখন! চোখে চোখে কতই না কথা হত আমাদের। এখন আর চোখে চোখে কোন কথা হয় না, যা হয় মুখে মুখেই হয়।
খুব সুন্দর.. কার লেখা এটা?
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(28-01-2022, 09:24 PM)ddey333 Wrote: দাদা , জীবনে এতো দুঃখ .. এতো কষ্ট ... তাও তুমি কলম থামাওনি
আমি তো টুকে টুকে সবার সঙ্গে থাকতে চেয়েছিলাম ... কিন্তু জীবন বড়ো নিষ্ঠুর ... অনেককে হারিয়েছি আমরা , পেয়েছিও কয়েকজনকে ...
মরার শেষ দিনের আগে অবধি চেষ্টা করে যাবো ... ওই পিনুদা আর রাজদীপদাকে আবার ফিরিয়ে আনতে...
কে আসলো আর কে গেলো তাতে আমার বাল ছেঁড়া গেলো
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
--হ্যালো....
--হ্যাঁ বলো....
--কি করছ...সারাদিনে তো একটা ফোন করতে পারো না । বিয়ের পর তো এই প্রথম অফিসের কাজে বৌ বাচ্ছাকে ফেলে বাইরে গেছ....তাই ডানা মেলে উড়ছ তাই না ।
--হুমম্ একদম....মস্তি...ফুল মস্তি....
--ফিরে এসো তোমার মুন্ডুপাত করব আমি....
--রাগ করো কেনো...মেয়ে কি করছে.... আমাকে খুঁজছে বুঝি ?
--বৌ বাচ্ছা চুলোয় যাক তোমার কি....
বয়েই গেছে ওর তোমাকে খুঁজতে । ও দিব্যি আছে...কেউ চটকাচ্ছে না ধরে ধরে;
--কাল ওর ভ্যাক্সিন ছিল তাই না...
--বাব্বা তোমার কত মেমরী...
--হুমম্, কি রান্না করলে আজ দুপুরে...
--পাতলা মাছের ঝোল ভাত । তুমি থাকলেই যত ফ্যাচাং হয় খাবারের । তা তুমি কি খেলে দুপুরে ?
--আমি....মটন বিরিয়ানি । হেব্বি টেস্টি বুঝলে সাথে দই এর রায়তা । আর লস্যি... কানপুরের দারুণ জমাট লস্যি আহহহ...
--ব্যাটা শয়তান, আবার আমাকে শোনাচ্ছে । কথা বলব না যাও ।
--আজ পাঁচ দিন হল...এখনো আরও তিনদিন লাগবে কাজ শেষ হতে বুঝলে
--হ্যাঁ আট দিন ধরে বিরিয়ানি গিলে ফিরে এসে পেট খারাপ বাধিও আর কি । বলছি ওখানে তো বিশাল গরম নাকি গো.... সাবধানে থেকো । তোমার আবার রোদ গরমে ঠান্ডা লাগার বাতিক আছে ।
--না না গরম তো কি...অফিসে এসি, হোটেল রুমে এসি,গরম লাগার নো চান্স ।
--উউউউউউউ, আমরা মা বেটি গরমে পচে মরছি, মেয়েটার গোটা গায়ে ঘামাচি বেরিয়ে গেল আর তুমি ওখানে এসির মধ্যে মজা করছ । ছিঃ.. আই হেট ইউ...
--হুমম, রাতে আবার তন্দুরী চিকেন আর বিয়ার.....হেব্বি মস্তি হচ্ছে কিন্তু ।
--আমি রাখলাম....তোমার ঐসব বাউন্ডুলেপনা শোনার জন্য ফোন করিনি আমি । বাই ।
--তোমাদের রাতের রান্না কমপ্লিট?
--হ্যাঁ, ভাত, টকের ডাল, ঝাল ঝাল আলু পিঁয়াজ ভাজা, ডিম পোঁচ, আর ঠান্ডা জমাট আমের মিষ্টি চাটনি....আমাদের আর কিছু লাগে না ।
--আহহা তোমার হাতের টক ডাল কতদিন খাইনি....
--তাহলে চলে এসো উড়ে উড়ে....
--হুমম্ দাঁড়িয়ে আছি তো, দরজা খোল...
ফোন কেটে দরজা খুলে :
--তুমি..তুমি কিকরে...এলে...জানালেও না
--দ্যাখো, কেমন চমকে দিলাম বল....
হুঁ হু....তোমার জন্য ছুটে এলাম ।
তাহলে মানছ তো আমি জিনিয়াস ।
--হুমম, সত্যিই....খুব অবাক হয়েছি...
আর খুব খুশিও । এবার যাও হাত পা ধুয়ে নাও খেতে দি ।
কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে মেয়ের সাথে খানিকটা খুনসুটির পর খাবার টেবিলে একসাথে :
--তোমার ভাগের ভাতটা আমাকে দিয়ে দিলে বুঝি....এসো এখান থেকেই ভাগ করে খাই ।
--নাহ্ অত প্রেম দরকার নেই । দুপুরে যখন তোমাকে ফোন করেছিলাম তখন ট্রেনের শব্দ আর চাওয়ালার হাঁক শুনেছিলাম । তারপর আরও শিওর হবার জন্য তোমার মেল চেক করে টিকিট বুকিং হিস্ট্রি দেখে নিয়েছি । তখনি বুঝেছি ব্যাটা চালাকি করে সারপ্রাইজ দেবে ভেবেছে । তাই আমিও বেশি করে রান্না করেছি ।
--যাচ্চলে....আমার সব আশায় জল ঢেলে দিলে যে । শালা এইজন্যই বলে বৌ নামক গোয়েন্দাকে কোন পার্সনাল পাসওয়ার্ড বলতে নেই ।
--তাহলে মানছ তো আসলে কে জিনিয়াস;
হিঃ হিঃ হিঃ ।।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
রনিতার যে এরকম ভয়ংকর রকমের কাতুকুতু-বাই আছে সেটা বিয়ের আগে ও বেমালুম চেপে গিয়েছিল। আমি নিজেও জানতে পারি আমাদের ফুলশয্যার রাতে।সে এক বিচিত্র ঘটনা। বৌভাতের সারাদিন ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে কেটে গেছে। রাতে বাড়ির লোকজনদের ঠাট্টা তামাশা সলজ্জে উড়িয়ে দিয়ে বাসরঘরে দরজা বন্ধ করে বিছানায় এসে বসেছি। দেখলাম রনিতা চুপচাপ বসে আছে। মুখ নামিয়ে। রনিতার সাথে আমার আলাপ অনেক আগেই হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। মেসেজ চালাচালি করতে গিয়ে কখন যে মন চালাচালি করে বসেছি খেয়াল নেই। ওর সাথে কথা বলে আমার ভালো লাগতো, আমাদের পছন্দ-অপছন্দের মধ্যেও অনেক সাদৃশ্য আছে।মোটের উপর রনিতাকে আমার পছন্দ হয়েছিল। ওদিকে যেদিন থেকে আমি চাকরি পেয়েছি সেদিন থেকেই মায়ের মুখে মাঝেমাঝেই এক পৈশাচিক হাসি দেখতে পেতাম। যার ভাবখানা অনেকটা এরকম ছিল,"এতদিনে পাঁঠাটাকে রেডি করা গেছে। এবার বলি দেওয়া যাবে।" মায়ের সেই হাসি দেখে আমি শিউরে শিউরে উঠতাম। পালানোর অনেক চেষ্টা করে বুঝলাম উপায় নেই। আমার যুক্তি-অযুক্তি, ইচ্ছে-অনিচ্ছে মায়ের বাংলা সিরিয়ালের ডায়লগের কাছে ধরাশায়ী হল। অবশেষে যখন বুঝলাম মুক্তির পথ নেই বলি আমাকে যেতেই হবে তখন ভেবে দেখলাম অচেনা হাঁড়িকাঠে মাথা রাখার থেকে চেনা হাঁড়িকাঠে মাথা রাখাই শ্রেয়। রনিতাকে প্রস্তাব দিলাম। তারপর বাবা-মার সাথে ওদের বাড়িতে গেলাম।বিয়ের কথা ঠিক হল। এমনকি বিয়েটাও নির্বিঘ্নে মিটে গেলো। এতদূর তো গল্পটা সুখী বাংলা সিনেমার মতোই গড়গড়িয়ে চলল। কিন্তু আমার সামনে যে কি কি বিপদ আসন্ন, তা আমি মাইলখানেক দূর থেকেও টের পাইনি তখন। যাই হোক আমি তো বিছানার উপর থেবড়ে বসলাম। চোখের সামনে বাঘ সিংহ হাতি মশা অনেকবার দেখেছি কিন্তু বউ দেখিনি।তাই হাঁ করে তাকিয়ে কিছুক্ষণ দেখলাম। মনে মনে যে কি ফূর্তি হচ্ছিলনা তা আর বলব না। রনিতাকে দেখলাম চুপচাপ বসে আছে। আমি ভাবলাম লজ্জা পেয়েছে।আমি ভাবলাম মেয়েদের হয়ত এরকম একটু হয়,নিজের বাড়ি ছেড়ে এসে সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে,সম্পূর্ণ নতুন মানুষদের মাঝে একটু অস্বস্তি না হওয়াটাই অস্বাভাবিক।যতই পরিচিত হই,কারোর সাথে কথা বলা এক ব্যাপার আর তার পাশে শুয়ে রাত কাটানো আলাদা ব্যাপার। আমার মনে একটু সহানুভূতি এলো। যাক তাও ভালো আমার বউটা তাও একটু লজ্জা পায়। আমার বোনটা যা তৈরি হয়েছে, ও শালা বাসরঘরেই বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে বরকে দিয়ে পা টেপাবে। আমি গলা খাঁকারি দিয়ে বললাম,"তুমি একটু সহজ ভাবে বসতে পারো। অত চাপ নিতে হবেনা। আমিই তো আছি।" রনিতা মাথা নেড়ে বলল,"আরে না না। চাপ নিচ্ছিনা। তুমি শুয়ে পড়ো।"
কিন্তু দেখলাম ও তাও জবুথবু হয়ে বসে আছে। আমার কেন জানিনা খুব মিষ্টি লাগল ব্যাপারটা। ভাবলাম ওর গালটা টিপে বলি, "চাপ না নিলে ওভাবে বসে আছো কেন? শুয়ে পড়ো।"
কিন্তু আমি হাতটা নিয়ে যেই ওর গালের দিকে এগিয়েছে ওমনি ও তটস্থ হয়ে কিছুটা সরে গিয়ে ভয় ভয় মুখে বলল,"তুমি কিন্তু আমাকে টাচ করতে পারবেনা।" আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।শালা এ বউ না সুচিত্রা সেন! আমার পেটের ভিতর থেকে কেমন যেন উত্তমকুমার উত্তমকুমার ফিলিং এলো। তারপর বুঝলাম গ্যাস ফর্ম করেছে। মনে মনে ভাবলাম টাচ না করলে কি সারাজীবন ফ্লাইং কিস দিয়েই কাটাতে হবে। আমি হয়ত দূর থেকে দাঁড়িয়ে চুমুর শব্দ করে বলবো,"এই নাও সোনা। গালে মেখে নিও... এটা ঠোঁটে... এটা ফ্রি দিলাম,ঘুম না এলে কপালে বুলিয়ে নিও।" শালা বিয়ের পরও কি ভালোবাসা হোয়াটস্যাপে চ্যাটের মতো হবে নাকি! মাথা ঝাঁকালাম,এ হতে দেওয়া যাবেনা। তারপর মনে হল রনিতা হয়ত ইয়ার্কি মারছে, আমার সাথে। আগে যখন কথা হতো, তখন তো অনেক মারতো। ইয়ে মানে ইয়ার্কি। এবারও হয়ত তাই হবে। মনকে বোঝাতেই মন আবার জোর ফিরে এলো, আমিও "ধুর কি হয়েছে" বলে হাতটা ওর গালের কাছে নিয়ে গেলাম। আর ওমনি ঘটে গেলো বিপত্তি। রনিতার গালে হাত রাখতেই ও পূতনা রাক্ষসীর মতো 'হ্যা হ্যা হ্যা হ্যা' করে হেসে তিন চারটে ভল্ট খেয়ে বিছানা থেকে ধড়াম করে নীচে পড়ে গেলো। আর তার সাথে সাথেই "বাবাগো" বলে গগনভেদী চিৎকার করে গোটা পাড়া জাগিয়ে দিল।আমি তো নির্বাক। ওদিকে আমার মা ছুটে এসে আমাদের ঘরের দরজায় ধাক্কা মারছে। বাড়ির বাদবাকি সদস্যরাও এসে হাজির।রনিতা বিছানায় উঠে বসতেই আমি গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম। এক এক করে সবাই ঢুকল। মা, বাবা,জ্যাঠা,জেঠি,পিসি,বোন।মা তো ঢোকার সময় আমার দিকে এমন ঘৃণার চোখে তাকালো আমার শুকিয়ে গেলো। ইয়ে মানে,গলা। আমি বুঝতে পারলাম অতজন লোক সঙ্গে না এলে মা তো আমার দিকে তিনবার ঘাড় ঘুরিয়ে ছিঃ ছিঃ ছিঃ বলতো।ব্যাকগ্রাউন্ডে ধুম তানা না না ধুম তানা না মিউজিক বাজতো আর ঘরের লাইটটা জ্বলতো আর নিভতো। বা হয়ত এসব কিছুই হত না,আমিই ওভার এস্টিমেট করছি। সবাই তো রনিতাকে জিজ্ঞেস করতে ব্যস্ত, "কি হয়েছে মা! কি হয়েছে মা! বলো! বলো!" বোনটা মাঝখান থেকে মিচকে শয়তানের মতো হাসি নিয়ে আমার কানে কানে এসে বলল,"তোকে তো শালা আমি ভদ্র ভাবতাম। তুই একদিনও ওয়েট করতে পারলিনা! তা অন্ধকারে কি দেখতে পাসনি!”
আমার কান গরম হয়ে গেলো। আমি খিস্তি মেরে ওকে ভাগিয়ে দিলাম। রনিতা ওদিকে সমস্ত দোষ নিজের কাঁধে নিয়ে সবাইকে আস্বস্ত করে নিজেদের ঘরে পাঠানোর ব্যবস্থা করলো। মা তাও কিছুক্ষণ বসে রইল।বারবার করে বলো,"বল, ভয় পাসনা মা,আমি তো আজ থেকে তোরও মা", এসব বলতে লাগলো। আর আমার দিকে শ্যেনদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আমার মুন্ডুপাত করতে লাগলো।মায়ের চোখেমুখে তখন "আমি তো জানি।পাপীটাকে তো আমিই জন্ম দিয়েছি", লেখা। রনিতা অনেকবার বলার পরে মা ঘর ছাড়লো। আমিও দরজা লাগিয়ে দিয়ে এসে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার রনিতার পাশে বসলাম। একটু শান্ত হয়ে বসে থাকলাম কিছুক্ষণ। রনিতা মুখ নামিয়ে বসে আছে।আমার ভ্রু দুটো কুঁচকে।আমার মন বারবার জানান দিতে লাগলো," কুছ তো গারবার হ্যায় দয়া,পাতা লাগাও।" আমি সরাসরিই জিজ্ঞেস করলাম ওকে,"কি ব্যাপার বলোতো! তুমি ওরকম ছিটকে ছবি হয়ে গেলে কেন!" রনিতা প্রথমে মাথা নামিয়েই বলল,"কিছু না। তুমি ঘুমোও।" আমিও নাছোড়বান্দা, "তুমি যদি না বলো কি হয়েছে, আমি ঘুমোবোনা।" রনিতা একবার আমার দিকে তাকালো, তারপর মুখ ঘুরিয়ে বলল,"বলতে পারি,তবে তুমি হাসবেনা। কথা দাও।"
আমি ভুরু কুঁচকে জবাব দিলাম,"না হাসবোনা। তুমি বলো।"
রনিতা আমতা আমতা করে বলল, "আমার না হেব্বি কাতুকুতু লাগে কেউ ধরলেই।সারা শরীরেই। কেউ ছুঁলেই মনে হয় কারেন্ট লাগে।" আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলাম। ব্যাপারটা প্রসেস করতে আমার কিছুটা সময় লাগলো। কিন্তু বোঝার পরে আমি খ্যালখেলিয়ে হেসে উঠলাম। রনিতা গালদুটো ফুলিয়ে প্রতিবাদ করল,"এই জন্যই তোমাকে বলতে চাইনি।"
আমি "আচ্ছা! আচ্ছা! ঘুমোও" বলে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম। ব্যাপারটাকে আমি উড়িয়ে দিয়েছিলাম সেই রাতে আর তার মাশুল ও গুণতে হয় ভবিষ্যতে।
কদিন পরেরই ঘটনা।আমি সবে ঘুম থেকে উঠে সবে সবে ব্রাশ করছি। রনিতা চা করে এনেছে সবার জন্য। মাকে আর বোনকে চা দেওয়ার পর বাবাকে চা দেওয়ার জন্য কাপটা নিয়ে এগোচ্ছে। আমি ক্যাজুয়্যালি হেঁটে হেঁটে ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। এবার আমি কি করে জানবো আমার কনুইয়ের হালকা ছোঁওয়ায় ও ওরকম ডিস্কো নেচে গরম চায়ের কাপটা পুরো আমার বাবার মাথায় উপুড় করে দেবে! বেচারা লেজে আগুন ধরা হনুমানের মতো পাঁচ মিনিট গোটা বাড়ি লাফিয়ে দাপিয়ে বেড়ালো। মা বোন রনিতা সবাই যে যেখান থেকে পারলো গামলায়,বালতিতে,চামচে করে বাবার মাথায় জল ঢাললো। তবে গিয়ে বাবা শান্ত হলো। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি এতটাই অভিভূত হয়ে পড়েছিলাম যে আমি ভুলেই গেছিলাম আমারও কিছু একটা করা উচিৎ।চুপচাপ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুজরা দেখছিলাম। রনিতা তো ওদিকে ক্ষমা চেয়ে অস্থির। বাবা এমনিতে খুব শান্ত প্রকৃতির। খুব একটা কাউকে কিছু বলেনা। সেই বাবাও শান্ত হওয়ার পরে রনিতাকে এসে বলে গেলো,"মা এবার থেকে চা দিলে হাতে দিও, টাঁকে না।"
আমি বুঝলাম, এ জিনিস ফেলে রাখলে চলবেনা।তাহলে কিছুদিনের মধ্যেই বাড়িতে আগুন লেগে যাবে।আমি দেরি না করেই শহরের এক সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট করিয়ে রনিতাকে নিয়ে দেখাতে গেলাম।
সেই সাইক্রিয়াটিস্ট সব শুনে বেশ রাবীন্দ্রিক স্টাইলে বললেন,"দেখো এই কাতুকুতু ব্যাপারটা অনেকটাই মনের ব্যাপার। তুমি কাতুকুতু মনে করলেই কাতুকুতু, না করলেই নয়।" ওনার কথা শুনে আমার কেন জানিনা আমার মায়ের কথা মনে পড়ে গেলো।ছোটবেলায় আমার যখন পাতলা পায়খানা হতো আর আমি দশবারো বার ধূপধুনো দিয়ে আসার পরও বাথরুমের দরজা ধাক্কাতাম,মাও আমাকে বলতো,পায়খানার কথা ভাববিনা। পায়খানার কথা ভাবলেই পায়খানা পাবে।না ভাবলেই আর পাবেনা।এবার বুঝলাম ব্যাপারটা তাহলে সায়েন্টিফিক। যাইহোক ওই সাইক্রিয়াটিস্ট অনেক গল্প শোনালেন রনিতাকে কিভাবে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট বগলে চরম দুর্গন্ধ থাকা সত্ত্বেও সেটাকে অগ্রাহ্য করে যুদ্ধ করতে যেতেন। কিভাবে আইনস্টাইন মাথায় উকুন থাকা সত্ত্বেও একবারো না চুলকে একের পর এক জটিল ইকুয়েশন সলভড করতেন।আমার বেশ সম্ভ্রম জাগলো ওনার প্রতি। এসব তথ্য আমি তো কোনোদিন ইতিহাসের বই-এ পড়িনি। উনি নিশ্চয় বিদেশি বই থেকে পড়েছেন।আমার মনে হল আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়ত এটাও জানতে পারবো, পিকাসো খৈনি নিতেন, আর্কিমিডিসের হাজা ছিল, গ্যালিলিও ডেনড্রাইটের নেশা করতেন।যাই হোক উনি এগুলো বললেন না। তবে ওনার কথা শুনে এটা বুঝলাম সবকিছুই মনের ব্যাপার। তাই ইয়েটাকে শক্ত করতে হবে। মানে মনটাকে আরকি। তারপর উনি প্রেসক্রিপশন লিখে দিলেন। উপরে বড়ো বড়ো করে লিখলেন টাচ থেরাপি। বিষয়বস্তু আমি যা বুঝলাম রনিতাকে এরপর একমাস সকালে ঘুম থেকে উঠে,দুপুরে খাওয়ার দু ঘন্টা পরে আর রাতে শোওয়ার আগে এই থেরাপি নিতে হবে। বিশেষ কঠিন কিছুনা,আমি রনিতাকে এখানে ওখানে টাচ করবো আর রনিতার কাজ হবে না হেসে সহ্য করা। একমাসের মধ্যেই নাকি অনেকটা কেটে যাবে।
পরেরদিন থেকেই আমরা টাচ থেরাপি শুরু করে দিয়েছি।প্রথমদিকে যতবারই টাচ থেরাপি দিতে গেছি রনিতাকে রনিতা 'আঃ ছাড়ো!',' উঃ লাগছে!' বলে লোটে মাছের মতো কিলবিল করে উঠতো।তারপর খাটের এধার থেকে ওধারে গড়িয়ে সে কি হাসি!আমার চোখেও জল চলে আসতো। যাইহোক তিন সপ্তাহ যেতে যেতেই রনিতা অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে।তবে এখনও মাঝেমাঝেই থেরাপি দেওয়ার সময় অমানবিক আওয়াজ করে ওঠে। এসবের মধ্যে বাড়িতে একটা পরিবর্তন আমি দেখতে পেয়েছি। মা রনিতাকে আর চা করতে দেয়না। বাবা আমাদের ঘরের দিকে পা-ই রাখেনা। আর বোনটা কেন জানিনা আমাকে দেখলেই মুচকি হাসি হাসে।
<সমাপ্ত>
লেখা ~ অর্ক ব্যানার্জী
[ সময়টা ভালোনা। ঘরে থাকুন। সাবধানে থাকুন। হাসুন। হাসি ছড়িয়ে দিন। ]
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
উপরের স্বামী স্ত্রীয়ের মিষ্টি একটা গল্প আর শেষেরটা... ওরে বাপরে বাপ্ উফফফফ একি বীভৎস কেলেঙ্কারি!!
স্বামী যদি প্লে করে - zara zara touch me, বৌ উল্টো প্লে করবে - nahi nahi... Abhi nahi... Thoda karo intezar....
তবে সাবধানে কিন্তু স্বামী মহাশয়! যখনই এগোনোর কথা ভাববেন আগে নিচে গার্ড পড়িয়া লইবেন... নইলে আপনার একটা ভুল আপনার সারাজীবনের বারোটা বাজাইয়া দিতে পারে... দয়া একটা লাথি এমন মারবে না... দরজা পুরো ভেঙে যাবে...জাস্ট একটা শট অন দা রাইট স্পট.. অবশ্যই কাতুকুতুর কারণে
•
Posts: 5
Threads: 0
Likes Received: 3 in 3 posts
Likes Given: 2
Joined: Aug 2019
Reputation:
1
সোনার খনি বললে হয়তো কমই বলা হবে!!!
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(31-01-2022, 10:13 PM)Rounak_3 Wrote: সোনার খনি বললে হয়তো কমই বলা হবে!!!
রৌনকদা, সত্যি তুমি ?????????????
আমি পারছিনা ... আগে একটু ভালোমতো বাথরুমে গিয়ে একা একা কেঁদে আসি ... উফফফফফ ... সত্যি কি তুমি ??
•
Posts: 3,682
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
(31-01-2022, 10:17 PM)ddey333 Wrote: রৌনকদা, সত্যি তুমি ?????????????
আমি পারছিনা ... আগে একটু ভালোমতো বাথরুমে গিয়ে একা একা কেঁদে আসি ... উফফফফফ ... সত্যি কি তুমি ??
আরে শালা । একদিনে দুজন । WoooW .
কিন্তু রৌনক দা রেজিস্ট্রার করার তারিখ দেখুন
❤️❤️❤️
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(31-01-2022, 10:13 PM)Rounak_3 Wrote: সোনার খনি বললে হয়তো কমই বলা হবে!!!
তিস্তা , তুমি যে অপাপবিদ্ধা ...
শেষ করিয়ে ছাড়বো এবারে
•
Posts: 5
Threads: 0
Likes Received: 3 in 3 posts
Likes Given: 2
Joined: Aug 2019
Reputation:
1
(31-01-2022, 10:17 PM)ddey333 Wrote: রৌনকদা, সত্যি তুমি ?????????????
আমি পারছিনা ... আগে একটু ভালোমতো বাথরুমে গিয়ে একা একা কেঁদে আসি ... উফফফফফ ... সত্যি কি তুমি ??
না না কাঁদতে হবে না। কান্নাকাটি আমার এক্কেবারে সহ্য হয় না।
•
Posts: 5
Threads: 0
Likes Received: 3 in 3 posts
Likes Given: 2
Joined: Aug 2019
Reputation:
1
(31-01-2022, 10:27 PM)ddey333 Wrote: তিস্তা , তুমি যে অপাপবিদ্ধা ...
শেষ করিয়ে ছাড়বো এবারে
আমার হার্ড ডিস্ক দেহ রেখেছে আর তার সাথে সাথে আমার সব লেখার পঞ্চত্বপ্রাপ্তি হয়ে গেছে।
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(31-01-2022, 10:37 PM)Rounak_3 Wrote: আমার হার্ড ডিস্ক দেহ রেখেছে আর তার সাথে সাথে আমার সব লেখার পঞ্চত্বপ্রাপ্তি হয়ে গেছে।
আমি এখনো দেহ রাখিনি, তাই Hard Disk এর সব কাজ করবো..
চিন্তা নেই দাদা
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
পরাক্রমী
পাক্কা বাইশদিন পর আজ প্রথম বাইরে বেরোলেন শিউলি।
না, অসুস্থ ছিলেন না, বা অতিমারির জন্য, সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং মানার জন্য বেরোননি এমনি না। লোকলজ্জার ভয়ে বেরোতে পারেননি এতগুলো দিন। এমনকি ছাদে বা বারান্দাতেও যেতে ইচ্ছে করত না প্রথম প্রথম। পরে অবশ্য খানিকটা বাধ্য হয়েই গেছেন, কাঁহাতক আর নিজের মুখ লুকিয়ে রাখা যায়!
মিমি যা একটা কান্ড করল!
আবার তারপরেও, এতটুকু লজ্জা নেই মেয়ের! কেমন নিজের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে, খাচ্ছে দাচ্ছে, সপ্তাহে তিনদিন ওর অফিসে রোস্টার চলে, সেই তিনদিন অফিস যাচ্ছে, সবটুকু করছে।
এদিকে মা যে কষ্ট পাচ্ছেন, সেদিকে খেয়াল নেই মেয়ের! এমন ব্যবহার করছে যেন মায়ের কষ্ট পাবার কোনো কারণই নেই!
আজ ওর বাবা থাকলে...
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করেন শিউলি। আজ ওঁদের আবাসনের পার্কে প্রতিবছরের মতোই পতাকা উত্তোলন আর নেতাজীর ছবিতে মাল্যদান করা হবে আজ। প্রতিবছর উনি নিজেই এই উদ্যোগ নেন। এবার আসতেন না, কিন্তু রেবাদি, অসীমাদি দুজনেই কাল ফোন করেছিলেন, ওঁদের মতো সিনিয়র মানুষদের 'না' বলা যায়? তাই...
পার্কে এসে দেখেন হাতে গোনা মাত্তর ক'টা চেয়ার রাখা হয়েছে। তখনও সবাই আসেননি। শীতের আমেজ মাখা দিন...। একটা চেয়ারে বসে পড়লেন শিউলি।
আপাদমস্তক চাদরে মুড়ে বি ব্লকের সবিতা আর জিষ্ণু এলো। ওঁকে দেখে মাস্কের আড়াল থেকে হাসল সবিতা। উনিও হাসলেন। আগে বুঝতে পারতেন না কে হাসছে, কে মুখ গোমড়া করে রাখছে! কিন্তু আজকাল বেশ বুঝতে পারেন। মাস্ক নিয়েই তো কেটে গেল প্রায় দুবছর। সেই অভিজ্ঞতা, আরকি!
"কি গো শিউলিদি, অনেকদিন পর দেখলাম তোমাকে?" এতালবেতাল ভাবনার মাঝে বলে উঠল সবিতা।
"হ্যাঁ গো, ঠান্ডাটাও এমন পড়েছে..."
"সে কি গো দিদি! তুমি তো ঠান্ডায় কাবু না! উলটে আমাদের বকতে, বলতে গায়ে সোয়েটার দিয়ে বেরোতে, সকালের পৃথিবীকে নাকি 'হাই' বলতে হয়.."
"আরে, বুড়ো হচ্ছি না? এখন ঠান্ডা লাগে.."
"শিউলিদি, আমরা সবাই জানি কেন বেরোচ্ছ না তুমি! মিমি যে আসলে এরকম, আমরা তো কেউ ভাবতেই পারিনি!"
"তাই তো রেবাদিকে বললাম একবার ফোন করতে তোমাকে। মিমি যা করেছে, করেছে... আজকাল এসব নিয়ে কেউ আর ভাবে না! এসব তো হচ্ছেই..." এবার প্রতাপদার গলা।
"আমিও তো অবাক হয়ে গেছিলাম মিমির কথা শুনে। আমার ছেলে আছে মিমির ফ্রেন্ডলিস্টে, ও ই দেখাল... সত্যি বাইরে থেকে দেখে কিন্তু কিচ্ছু বোঝার উপায়ই নেই, বলো?" এবার সুলেখার গলা।
কথাগুলো মিষ্টি মাখা... তবু যেন বল্লমের মতো বুকে এসে বিঁধছিল শিউলির।
মেয়েটা যে কি করল!
একত্রিশে ডিসেম্বর শুক্রবার ছিল। বলল অফিসের পরে একটু বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মেরেই ফিরে আসবে। তা, শিউলি যথেষ্ট কুল মম, তাই মেয়ে বড় হয়েছে, পার্টি টার্টি করবে, তাতে কোনো আপত্তি নেই। শুধু ঠিকভাবে থাকলেই হলো। মেয়েও সাড়ে দশটার মধ্যেই বাড়ি চলে এল... বাইরে থেকে খাবার অর্ডার দিল...। পরেরদিন সকালে মেয়েকে "হ্যাপি নিউ ইয়ার" বলে, চা টা নিয়ে বসে ফেসবুক খুলে দেখেন মেয়ে পাবলিক পোস্ট করে লিখেছে যে- "সামনের মাসে আঠাশে পড়ব আমি (ইয়েএএএ হ্যাপি বার্থডে টু মি, ইন অ্যাডভান্স)। নতুন বছর মানেই নতুন শুরু! আর আমিও আর পাঁচজনের মতো চাই আমার জীবনটাকে, বছরটাকে নতুনভাবে শুরু করি। সেজন্যই আগের সববছর গুলোর ভুলটা শুধরে নিতে চাই আগে।
যবে থেকে নিজেকে চিনেছি, তবে থেকেই ভেবেছি বলব...
বলা আর হয়নি!
কিন্তু, এইবছরটা যে আলাদা হবে...
আর তাই, নিজের সেক্সুয়ালিটি আর প্রেফারেন্স নিয়ে বলতে চাই।
আমি লেসবিয়ান।
ইয়েস, ইউ রেড দ্যাট রাইট!
(হিয়ার, আই জাস্ট সেইড ইট! দ্যা ট্রুথ! অতটাও কঠিন নয়, সত্যিটা বলা, তাই না?)
বছরের শুরুতে প্রমিস করছি, নিজেকে ভাল রাখব। নিজের সব খামতিটুকু নিয়ে।
তোমরাও সবাই ভাল থেকো। হ্যাপিইই নিউ ইয়ার!"
পোস্টটা পড়েই মাথা ঘুরে গেছিল শিউলির। হ্যাঁ, এল জি বি টি নিয়ে লেখা উনিও পড়েছেন... কিন্তু তা বলে মিমি?
আর ওর মধ্যে তো 'ছেলে ছেলে ব্যাপার' নেই একদম? এক্কেবারে 'মেয়ে-মেয়ে'ই তো! তবে?
নিশ্চয়ই মজা করেছে মেয়ে! কারো সঙ্গে বাজি ধরে। ওই মাঝে মাঝে কিসব চ্যালেঞ্জ আসে না, ফেসবুকে? তার জন্য হয়ত!
কিন্তু,ভুলটা ভাঙল মিমি ঘুম থেকে ওঠার পরেই।
তারপর তো অনেক মান-অভিমান! এখনও ঠিক বিশ্বাস হয় না। তাও, খানিকটা মেনেই নিয়েছেন। সন্তান ভাল থাকলেই তো মা-বাবার শান্তি!
কিন্তু তাও, এরা এমনিভাবে কথা বলছে... যেন মিমি কতবড় অন্যায় করেছে!
একটু চুপ করে থাকেন শিউলি।
পতাকা উত্তোলনের সময় ঘনিয়ে আসছে। আবাসনের প্রবীন ডাক্তার সাজ্জাদ দাদা এগিয়ে যাচ্ছেন মঞ্চের দিকে। তাঁর হাতে মালা...বেদীতে মালা দিয়ে পতাকা উত্তোলন করা হবে...
আর, সেই মানুষটির ছবি, যিনি বলেছিলেন স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিতে হয়। ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। নিজে ত্যাগ স্বীকার করেছেন। নিজের কথা এতটুকুও ভাবেননি। সমস্ত জাতি-বর্ণ-ধর্মের ঊর্ধ্বে 'মানুষ' পরিচয়টাই সবকিছু ছিল তাঁর কাছে।
আজ উনি সশরীরে নেই। কিন্তু আছেন তো! সবার মনের মাঝে!
আর উনি থাকলে কি কারো নিছক জৈবিক প্রেফারেন্সের জন্য একজন মানুষকে বিচার করতেন? নাকি, তার সততা, কর্মনিষ্ঠা বিচার করতেন?
বুক ভরে শ্বাস নেন শিউলি। তারপর পাশে বসা সবিতা, সুলেখা, প্রতাপদাদের দিকে তাকিয়ে হাসেন। বলে ওঠেন "ও মা, মিমি তো কিছু অন্যায় করেনি! বরং নিজের পছন্দটুকু সবার সামনে বলার সাহস দেখিয়েছে। ও তো আমার গর্ব গো! কতমানুষ ঘুষখোর হয়, অসৎ হয়, নিষ্ঠুর হয়! এই তো, সেদিনই বারান্দা দিয়ে দেখলাম আমাদের এখানেরই একটি ছেলে, মিমিরই বয়সী, একটি নেড়ি কুকুরের গায়ে ঠান্ডা জল ঢেলে দিল এই শীতে! কী নিষ্ঠুর! আমার তো মনে হয় তার লজ্জা লাগা উচিৎ, মিমির না! নিজের ভাললাগাটা প্রকাশ্যে বলতে গেলে যে সাহস লাগে, সেটা ওর আছে। আর কি চাই?"
ওঁর কথা শুনে চুপ হয়ে গেলেন বাকি সবাই। মাথা নিচুও হয়ে গেল এক দুজনের...
পতাকা উত্তোলন হল।
ত্যাগ, পবিত্রতা, প্রগতি আর নির্ভীকতা - মিলে মিশে আছে...
আর সেদিকে তাকিয়ে শিউলির মনে হচ্ছিল বাড়ি গিয়েই মিমিকে জড়িয়ে ধরবেন, আর বলবেন "এমনি সাহসী, এমনি নির্ভীক থাকিস মা! আজকের এই পবিত্র দিনে প্রমিস কর?"
শুনে মেয়েটা আরও উজ্জ্বল হবে... জানেন উনি...
Posts: 3,682
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
কাতুকুতু টা পড়লাম । হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা করছে
❤️❤️❤️
•
Posts: 5
Threads: 0
Likes Received: 3 in 3 posts
Likes Given: 2
Joined: Aug 2019
Reputation:
1
(31-01-2022, 11:35 PM)ddey333 Wrote: আমি এখনো দেহ রাখিনি, তাই Hard Disk এর সব কাজ করবো..
চিন্তা নেই দাদা
Posts: 5
Threads: 0
Likes Received: 3 in 3 posts
Likes Given: 2
Joined: Aug 2019
Reputation:
1
(01-02-2022, 10:47 AM)ddey333 Wrote: পরাক্রমী
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(01-02-2022, 09:39 PM)Rounak_3 Wrote:
বিস্তারিত একটা PM পাঠাবো কাল
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(01-02-2022, 09:39 PM)Rounak_3 Wrote:
" তিস্তা তুমি যে অপাপবিদ্ধা " যতটা লেখা হয়েছিল তার প্রায় ৯০ শতাংশের মতো আজ মেইল করে দেব ...
শুধু শেষের ওই হায়দরাবাদ যাওয়ার অংশটা পাওয়া গেলো না ..
দয়া করে শেষটা লিখবে রৌনকদা ....
Please ... Please ... Please ...
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(03-02-2022, 01:11 PM)ddey333 Wrote: " তিস্তা তুমি যে অপাপবিদ্ধা " যতটা লেখা হয়েছিল তার প্রায় ৯০ শতাংশের মতো আজ মেইল করে দেব ...
শুধু শেষের ওই হায়দরাবাদ যাওয়ার অংশটা পাওয়া গেলো না ..
দয়া করে শেষটা লিখবে রৌনকদা ....
Please ... Please ... Please ...
পাঠিয়ে দিয়েছি ....
•
|