Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(30-12-2021, 05:49 PM)dada_of_india Wrote: আমার প্রথম প্রেম ! স্বীকার করতে লজ্জা নেই !
কিন্তু । ....... তুই কালো ছিলিস ! তাইতো তোকে বাসিনি ভালো !
শুধু চেয়েছিলাম খেলতে তোকে নিয়ে !
কিন্তু কখন যেন হারিয়ে গেলাম !
কালোয় আমার জীবন ভরিয়ে দিলো আলো !
তুলি !!! আমি তোকে ভুলতে পারিনি !
যৌবনের প্রথম উচ্ছাস ছিলি তুই !
না ! ! সত্যি বলছি ! তোকে ভুলিনি কখনো !
তুই ছিলিস ! আমি ছিলাম ! শুধু ছিলোনা
আমার সেই কালো হরিণ চোখের সেই জীবনের মই !
জীবন তখন স্বপ্ন ছিল
আমার ছিল সংগ্রাম !
কখন জানিনা বিকিয়ে গেলো
আমার সব অভিমান !
ছিলাম মানুষ কিন্তু শেষে
নিজেকে হারিয়ে দিলাম স্রোতে !
তুই প্রেমিকা থেকে হয়ে গেলি
বারবনিতা ! প্রলেপ দিতে ক্ষতে !
ক্ষমা করিস বলবো না আজ
এই জীবনের শেষ বিদায় লগ্নে !
মিলবো জানিস সেই সময়ে
শেষ জীবনের লগনে ! জীবন তখন স্বপ্ন ছিল
আমার ছিল সংগ্রাম !
কখন জানিনা বিকিয়ে গেলো
আমার সব অভিমান !
ছিলাম মানুষ কিন্তু শেষে
নিজেকে হারিয়ে দিলাম স্রোতে !
তুই প্রেমিকা থেকে হয়ে গেলি
বারোবনিকা ! প্রলেপ দিতে ক্ষতে !
ক্ষমা করিস বলবো না আজ
এই জীবনের শেষ বিদায় লগ্নে !
মিলবো জানিস সেই সময়ে
শেষ জীবনের লগনে !
আমার জীবনের প্রথম প্রেম ! এখনও স্বপ্নের মাআঝে এসে আমাকে কাঁদায় ! আমি কিন্তু পিনু বা নুনু কাউকে বলতে পারিনা ! কাঁদতেও পারিনা ! শুধু নিজের মনে গুম্রে মরি ! তুলি ......... অনেক ভুল করেছি তোমাকে হারিয়ে ! পারলে এই জীবনে আমাকে ক্ষমা করে দিও ! যদি নতুন জীবন থাকে তাহলে তোমাকে খুঁজে নেবো ! কথা দিলাম !
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
আটের দশকে জীবনের এক অন্যতম আকর্ষন ছিলো বিয়ে বাড়ীর ভোজ। কেউ নেমন্তন্ন করতে আসলেই শোনার চেষ্টা করতাম বাবা-মা কে কি বলছে। "তোমরা সবাই যাবে কিন্তু", "আপনারা সবাই না এলে খুব কষ্ট পাবো" এসব কথাবার্তার মধ্যেই মনের কোনে ভেসে উঠতো কোন নিরীহ পাঁঠার ব্যা ব্যা আওয়াজ অথবা বড় বড় মাপের রুইয়ের পেটি। জিহ্বা অতিরিক্ত সিক্ত হয়ে উঠত নিজের অজান্তেই।
গ্রাম এবং মফস্বলের মাঝামাঝি জায়গার মানুষ আমরা তাই আটের দশকে আমাদের এলাকার মহিলারা বিউটি পার্লারে যাওয়া তো দূরের কথা সেসবের নামই হয়তো শোনেননি। এলাকার সবচেয়ে স্টাইলিস্ট মহিলারা কনে সাজানোর দায়িত্ব নিতেন। অবশেষে চলে আসতো সেই বহু প্রতীক্ষিত সন্ধ্যা। সকালে তরকারি দিয়ে দুটো রুটি আর দুপুরে টলটলে মুসুর ডাল, লেবু আর বেগুনভাজা দিয়ে স্বল্প পরিমানে ভাত। এ এক অদ্ভুত কৃচ্ছসাধন। রাতের জন্য পেটে জায়গাটা রাখতে হবে যে!
বিয়ে বাড়ীর অন্দরসজ্জায় কোনোও আগ্রহ ছিলনা বরং কতক্ষনে খেতে বসবো সেই চিন্তায় বিভোর থাকতাম। মা ভেতরে বউ দেখার ফাঁকে সামাজিকতাটাও সেরে ফেললেন। কিছু সময় পর গৃহকর্তা জোড়হাতে সামনে এসে বললেন "এবার তাহলে আপনারা বসে যান"। আমরাও মন্ত্রমুগ্ধের মত উঠে এগিয়ে গেলাম খাবার জায়গায়। আমাদের কোনোও লজ্জ্বা ছিলনা। আর একটা ব্যাপার উল্লেখ না করলেই নয় যে তখন কিন্তু আমাদের অঞ্চলে টিফিনের নামে অতিথিদের চিকেন পকোড়া, কফি, চা, ফুচকা ইত্যাদি খাইয়ে খিদে নষ্ট করার ষড়যন্ত্র আমদানি হয়নি।
২০ ইঞ্চি চওড়া এবং ৬ ফুট লম্বা পাতলা তক্তার নীচে ইংরাজী A অক্ষরের এর মত দুটো স্ট্যন্ড নিয়ে বেশ নড়বড়ে টেবিল আর কাঠের ফোল্ডিং চেয়ার। ঠিকভাবে চেপে না বসলে দুর্ঘটনা ঘটে অপদস্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশ প্রবল। পুরানো খবরের কাগজ বিছিয়ে দেওয়া হল আমাদের সেই নড়বড়ে টেবিলের উপর। আমার সামনে পড়েছে আনন্দবাজারের বিজ্ঞাপনের পাতা যাতে "অনুরাগের ছোঁয়া" ছবির বিজ্ঞাপন রয়েছে। কেউ পেতে দিল জলে ধোওয়া কলাপাতা আবার কেউ বসিয়ে গেল শঙ্কু আকৃতির মাটির জলের গ্লাস যেটা টেবিলটার মতই নড়বড় করছে। গাঢ় সবুজ কলাপাতার কোনায় আকাশের তারার মত চিক করে ফুটে উঠলো নুন এবং পাতিলেবু। তখনও মফস্বলি বাঙালির রসনায় স্যালাডের আমদানি হয়নি। পাড়ার ছেলেরাই এলুমিনিয়ামের বালতির থেকে চিনামাটির প্লেটে করে তুলে ভাত পরিবেশন শুরু করলো। এরপরে এলো মাছের মাথা দিয়ে মুগডাল আর বেগুন ভাজা। আহা কি স্বাদ! বাবার সাইলেন্ট ওয়ার্নিং, "এসব দিয়ে বেশী খেলে পেটে মাছ-মাংস খাবার যায়গা থাকবে না"। এসেছে চিংড়ী দিয়ে ইঁচড়ের তরকারি যা আমার ভীষন প্রিয়। সেটাও মেপেজুপেই খেলাম। এবার মিষ্টির দোকানের শোকেসে যেরকম ট্রে দেখা যায় সেরকম ট্রে তে করে এল মশলা মাখা বড়বড় মাছের পিস এবং আলাদা বালতিতে ঝোল আলু। চারটে বেশ বড় সাইজের পিস নিয়ে একটু একটু করে ভেঙে মুখের মধ্যে পুরে তার স্বর্গীয় স্বাদ আস্বাদন করছি আর বাকি পিস গুলোর উপর লেবুর রস ছড়িয়ে দিচ্ছি যাতে মুখের রুচি বজায় থাকে। মাছের পালা খতম হতে না হতেই খাসির মাংসের আবির্ভাব। পরিবেশনকারীদের চোখমুখও যেন এই সময় যথেষ্ট সিরিয়াস হয়ে উঠতো। ভাত নিলাম আর একবার। ঝরঝরে সাদা ধোঁয়া ওঠা ভাতের চূড়ার উপর দিয়ে যখন মাংসের ঝোলের হিমবাহ নেমে আসে সেই দৃশ্য বর্ননা করতে হলে কাব্যিক জ্ঞান থাকা ভীষণ জরুরী। সুসিদ্ধ খাসির মাংস ঝোল আর ভাতে মাখিয়ে যখন মুখে দিলাম মনে হল মানব জীবন সার্থক। তাছাড়া খাসির মাংসের মধ্যে একটা আহ্লাদী পিচ্ছিল ভাব আছে যা আপনারা ওই চিকেনে কোনোওদিনই পাবেন না। ঝোলের মধ্যে আত্মগোপন করে থাকা চোকলা সহ আলুর পিস গুলিও কোনও এক অজানা মন্ত্রবলে হয়ে উঠতো দেবভোগ্য। মাংসের এপিসোড হত সবচেয়ে দীর্ঘ। কেউ কেউ অবলীলায় প্রায় কেজিখানেক উড়িয়ে দিতেন। মাংস শেষ করে যখন পাঁপরভাজায় চাটনী মাখাচ্ছি তখন অনেকেই আলোচনা করতে শুরু করেছেন কিভাবে রসগোল্লা বেশী খাওয়া যায়। একজন এক্সপার্ট তো বলেই দিলেন রস চিপে বের করে দিলে রসগোল্লা বেশী খাওয়া সম্ভব না। জমাট বাঁধা দইয়ের দুটো খন্ড পাতে পড়ার পরে আঙুলে ভেঙে যখন মুখে তুলছি ততক্ষনে মাঠে রসগোল্লা এন্ট্রি নিয়ে নিয়েছে। ১১ পিস খেয়েছিলাম মনে আছে। হাতে মিষ্টিপান নিয়ে খাবার আসর ছেড়ে যখন কলতলার দিকে এগোই হাত ধোবার জন্য, তখন বিয়েবাড়ীকে যথেষ্টই ম্লান লাগতে শুরু করেছে। গৃহকর্তা কৃতজ্ঞচিত্তে বাবাকে অনুষ্ঠানে আসার জন্য ধন্যবাদ দেন, মা চলে আসার আগে আর একবার নুতন বৌকে দেখতে যান, আর আমার চোখ চলে যায় প্যান্ডেল আলো করে বসে থাকা কিশোরীদের দিকে। এক অজানা ভালোলাগা থাকে সেই দেখার মধ্যে।
লেখাটা ছোট বেলার কথা মনে পড়িয়ে দিলো
সংগৃহীত ...
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(লেখক/লেখিকার নাম জানতে পারিনি। তাই নামটা দিতে পারলাম না।)
শুধু একদিন
বাটি থেকে অল্প মাংসের ঝোল নিয়ে শুকনো শুকনো করে ভাত মাখল তিন্নি । আজ একদম খেতে ইচ্ছে করছে না । গোটা বাড়ি জুড়ে কেমন একটা দমবন্ধ ভাব, কেউ কথা বলছে না কারো সঙ্গে । মন খারাপ লাগছিল তিন্নির। মনে হচ্ছে যেন একটা শক্ত বরফের পাহাড় তৈরী হয়েছে ঘরের মধ্যে ।
সপ্তাহের অন্য দিনগুলো তো ঝড়ের মত কাটে। এই রবিবার টাই যা হোক সবার থেকে আলাদা । অন্য দিনগুলোতে তো কলেজ তারপর সেখান থেকে ফিরেই নাচের ক্লাস, ড্রয়িং কলেজ , সাঁতার শেখা । দম ফেলার সময় থাকে না মোটেই। এই রবিবারটাই সব দিনের থেকে আলাদা। এই দিনটার জন্য হা পিত্যেশ করে বসে থাকে তিন্নি ।
কি মজার দিন এই রবিবার । দুপুরবেলা হৈ হৈ করে ডাইনিং টেবিলে হাজির হওয়া যায়, বাটিতে মাংস তুলে দিতে দিতে ঘামতেল মাখা ঠামির মুখটা কেমন আলো আলো হয়ে যায় ,সেটা দেখা যায়, দুপুরবেলা ঠামির বুকে মুখ গুঁজে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়া যায় । রোববারটা তো অন্যদিনের মত নয়, এক্কেবারে আলাদা।
কিন্তু হঠাৎ কেমন বদলে গেছে সবকিছু ।কি থমথমে চারদিক । কান্না পাচ্ছিল তিন্নির ।
খাওয়ার পরে ঠামির ঘরের দিকে যাচ্ছিল তিন্নি আর ঠিক তখনই ডেকে পাঠাল মা। “ তিন্নি , এদিকে এস , কথা আছে ।” মায়ের গলার সেই সহজ সুরটাই উধাও একেবারে। বুক ধুকপুক করছিল তিন্নির । লাস্ট উইকের ম্যাথস টেস্টের মার্কস নিয়ে নিশ্চয়ই এখন বকুনি দেবে মা ।বলবে, “ মন দিলে কিছুই অসম্ভব নয় তিন্নি । আসলে তুমি খুব ইনঅ্যাটেনটিভ হয়ে গেছ । “ খুব ভয় করছিল তিন্নির । মায়ের ঘরের দিকে যেতে যেতে দেওয়ালে টাঙানো বাবার ছবিটার দিকে তাকাল তিন্নি । কেন যে বাবা তাকে একলা ফেলে এত তাড়াতাড়ি তারার দেশে চলে গেল !!
মায়ের ঘরে ঢুকে অবাক হল তিন্নি। কি অন্ধকার ঘরটা ! সব দরজা , জানালা বন্ধ করে রেখেছে মা । ঘরে আলো , হাওয়া না থাকলে মায়ের ভাল লাগেনা , এটাই তো তিন্নি দেখে এসেছে সারা জীবন। তিন্নির দিকে তাকাল সোনালী । তারপর ,কোনরকম ভূমিকা না করে বলল, “ তোমাকে এখন থেকে কলেজের বোর্ডিংএ থাকতে হবে তিন্নি।। আসলে আ— আ- মি তোমাকে ঠিক ক সময় দিতে পারছি না , মানে অফিসে এত কাজের চাপ । কথা বলতে গিয়ে খেই হারাচ্ছিল সোনালী ।
চোখ ফেটে জল আসছিল তিন্নির । একটা ম্যাথস টেস্টে কম মার্কস পাওয়ার জন্য এতবড় শাস্তি ? শেষ পর্যন্ত বোর্ডিংএ চলে যেতে হবে তাকে !
একটু চুপ করে রইল সোনালী । বোধহয় মনে মনে কথাগুলো গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল । “ “আমি চলে গেলে ঠামির কি হবে?” তিন্নির প্রশ্ন শুনে ম্লান হাসল সোনালী । কি অদ্ভুত অচেনা মায়ের হাসিটা । যেন হাসি দিয়ে কান্না ঢাকতে চাইছে মা ।
“ ঠামির জন্যও একটা বোর্ডিংএর ব্যবস্হা করেছি।” “ যাহ্ , তাই আবার হয় নাকি।” এবার হেসে ফেলেছে তিন্নি । “বড়দের বোর্ডিং হয় বুঝি ?”
দেওয়ালের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বুক ঠেলে আসা কান্না আড়াল করার চেষ্টা করল সোনালী । তারপর ধরা গলায় বলল, “ না , মানে ঠিকক বোর্ডিং নয় , ওটা একটা ওল্ড এজ হোম। “
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল তিন্নি। ওল্ড এজ হোম মানে কি? ওল্ড মানে তো তার অজানা নয়। কিন্তু ঠামি কি ওল্ড হয়েছে নাকি ? মাথায় কয়েকটা সাদা চুল আছে ঠিকই ই কিন্তু কি সুন্দর ঠামি । টুকটুকে গায়ের রঙ, একমাথা চুল। ঠিকক ঠামির গল্পের কেশবতী রাজকন্যার মত। সেই ঠামিকে ওল্ড এজ হোমে চলে যেতে হবে । সব কিছু গুলিয়ে যাচ্ছিল তিন্নির ।
অনেক কিছু বলার ছিল, বলল না কিছুই। এই নয় বছর বয়সেই সে বুঝে গেছে সব কথা বলতে হয়না, বলা যায়না ।
ঘর থেকে বেরিয়ে আসছিল তিন্নি । হঠাৎ সোনালী উঠে এসে হাত রাখল কাঁধে । তারপর গলাটাকে যতটা সম্ভব নরম করা যায় সেই চেষ্টা করতে করতে বলল, “ এরপর থেকে আবিরকাকুকে তুমি বাবা বলে ডাকবে কেমন।”
অনেকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল তিন্নি। সোনালীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল একদৃষ্টে। অস্বস্তি হচ্ছিল সোনালীর । সব থেকে নিকট সম্পর্কের মধ্যে যেন অন্তহীন দুরত্ব তৈরী হয়ে গেল এক নিমেষে। একজনের বুক জুড়ে অন্তহীন অনিশ্চয়তা, অন্যজনের মন জুড়ে অপরাধবোধের প্লাবন ।
ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বাবার ছবিটার দিকে তাকাল তিন্নি। তারপর বলল, “ আমাকে কবে যেতে হবে মা। “ বুকের মধ্যে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল সোনালীর । গলা নামাল অল্প, তারপর বলল” সামনের রোববার ।”
বাবার ছবির দিকে তাকিয়ে রইল তিন্নি , তারপর ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করতে করতে বেরিয়ে গেল মায়ের ঘর থেকে।
কি করে আবিরকাকুকে বাবা বলে ডাকবে তিন্নি? আবিরকাকু কি কখনও ওর বাবা হতে পারবে? যাকে তাকে বাবা বলা যায় বুঝি? আর তাছাড়া আবিরকাকুকে ওর মোটেই পছন্দ নয় । কি বিশ্রীরকমের গম্ভীর আবিরকাকু । তিন্নিকে অবশ্য চকোলেট কিনে দেন মাঝেমধ্যেই, বার্বি ডলের সেট ও কিনে দিয়েছেন দুখানা । কিন্তু আবিরকাকু তো বাবার মত নয়। সেই যে বাবা অফিস থেকে এসে তিনু বুড়ি বলে টপটপাটপ হামি খেত , নাকের মধ্যে নাক ঘষতে ঘষতে ,“ দেখ আমার খাঁদু নাকি রাজকন্যে, “ বলে হৈহৈ করে হাসত , এমনটা কেউ পারবে?
বারান্দায় দাঁড়িয়ে চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এল তিন্নির । মনে মনে হিসেব করল সে । মাঝখানে আর কটা মোটে দিন । তারপরেই আর রোববার দুপুরে ঠামির হাতের মাংস ভাত নেই, গল্প শোনা নেই, দুপুরবেলা সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আচার চুরি করে খাওয়া নেই , মায়ের গায়ের গন্ধ নেই । সব চলে যাবে তিন্নির জীবন থেকে। বুকের ভেতরটা খুব ফাঁকা লাগছিল তিন্নির ।
আজকাল রাতে ঘুম আসেনা সহজে । ঘুমের ওষুধেও কাজ হয়না আর। দুপুরবেলা একটু ঘুমোবার চেষ্টা করছিল নিরুপমা। বিকেলে একটু গুছিয়ে নিতে হবে । এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় হয়ে এল ।জামাকাপড় সব বোঝাই করতে হবে সুটকেসে । এত বছরের সংসার ছেড়ে যাওয়া , এত বছরের স্মৃতি । বুকের ভেতরটা যেন শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে গেছে। কোনকিছুই আর স্পর্শ করেনা তাকে ।ঐ একরত্তি নাতনীটাকে নিয়েই তো এতদিনপুত্রশোক ভোলার চেষ্টা করেছিল নিরুপমা । এবার থেকে তাও থাকবে না আর ।
অমন ফুটফুটে একটা মেয়ে । রাতদিন কেবল বায়না , “ ঠামি গরম গরম লুচি খাব ,ভেজে দাও, ঠামি আমার পুতুলের ড্রেস সেলাই করে দাও, ঠামি গল্প বল , ঠামি মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দাও।” এই রাগ, তো এই বায়না , এই খিলখিল হাসি ,তো এই কান্না । রাতদিন নাচছে, গাইছে , ছবি আঁকছে , অন্তহীন প্রশ্নের বাণ ছোটাচ্ছে সারাক্ষণ ।
কিন্তু সময় বদলায় , পরিস্হিতি বদলায় ।
তিন্নিকে ঘরে ঢুকতে দেখে হাসল নিরুপমা । বলল, “ পায়েস করেছি। খাবি একটু ?”
মাথা নাড়ল তিন্নি ।কি করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়েটা !! নিরুপমার বুকের ভেতরটা টনটন করছিল !
একটু চুপ করে থাকল তিন্নি , তারপর বলল” আচ্ছা ঠামি, আবিরকাকু কি তোমার ছেলে হয়? থমকে গেল নিরুপমা । একটু সামলে নিয়ে বলল, “ হঠাৎ , একথা কেন ? “ “ না , মানে তোমার ছেলে না হলে আমি ওঁকে বাবা বলব কি করে ? “ গুছিয়ে যুক্তি সাজিয়েছে নয় বছরের তিন্নি ।
ম্লান হাসল নিরুপমা । তিন্নি তাকিয়ে ছিল ঠামির দিকে । কি কষ্টমাখা ঠামির হাসিটা । বুকের ভেতর মোচড় পড়ছিল তিন্নির ।” ছেলেই তো, “আবার হাসল নিরুপমা । ও তো তোর বাবার প্রাণের বন্ধু ছিল রে। তাই আমার ছেলের বন্ধু তো আমার ছেলেই হয়।
অবাক লাগছিল তিন্নির । এ তো বড় অদ্ভুত কথা । তার কলেজের অর্ক , মেঘ, নীলাদ্রী সবাই তো তার বন্ধু। পাশের ফ্ল্যাটের গাবলু ও তো তার বন্ধু।তা বলে ওরা সবাই কি ওর মায়ের ছেলে নাকি? সবারই আলাদা মা আছে , বাবা আছে । শুধু আবিরকাকু ঠামির ছেলে হল কি কারণে? নাহ, সব কেমন যেন উল্টোপাল্টা হয়ে যাচ্ছে ।
তিন্নিকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেল নিরুপমা । বলল, “এত প্রশ্ন করতে নেই রে। বড় হও , সব নিজেই বুঝবি তখন। “
খুব রাগ হচ্ছিল তিন্নির । বড় কি সে হয়নি । কবেই বড় হয়েছে সে। কেবল এ বাড়ির লোকজন সেটা মানতে চায়না ।
সেদিন টেস্টে কম মার্কস পেয়ে যখন কাঁদছিল সে, তখন ক্লাসের সবাই হাসছিল তাকে দেখে। আয়তাক্ষী তো বলেই ফেলল “এত বড় মেয়ে , ছোটদের মত কাঁদিস , লজ্জা করেনা তোর “। অথচ কি অদ্ভুত ! এরা সবাই তাকে ছোট ভাবে।
সেই যে সেবার । গরমের ছুটিতে গাবলু দাদু দিম্মার বাড়ি যাচ্ছিল বলে কান্না পাচ্ছিল তিন্নির । তার তো দাদু , দিম্মা নেই । শেষ পর্যন্ত বাবাকেই জিজ্ঞেস করেছিল তিন্নি “ সবার মামাবাডি থাকে , আমার কেন নেই বলতো? একটু থমকে গিয়েছিল বাবা । তারপর বলেছিল “ তোমার মা গরীব ঘরের মেয়ে কিনা , তাই তিনি আর সেখানে যান না ।” কথা বলতে বলতে মিচকি মিচকি হাসছিল বাবা ।
গরীব!!! অবাক হয়েছিল তিন্নি। মায়ের কাছে সে শুনেছে কলেজের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে ভিক্ষে করে যে বুড়ো মানুষটা সে নাকি খুব গরীব। অত হেঁয়ালী না বুঝে শেষকালে সটান প্রশ্ন করেছিল মা কে “ আচ্ছা মা, আমার দাদু , দিম্মা কি ভিখারী ? “ সেকি!! আঁতকে উঠেছিল মা । তারপর বাবা এসে বলে দিয়েছিল সব কিছু । ব্যস, তারপর মা আর বাবার সে কি হাসি।
তিন্নি অবশ্য থামেনি। পর্দা সরিয়ে সোজা ঢুকে পড়েছে ঠামির ঘরে । তিন্নির প্রশ্ন শুনে ঠামি হাসেনি। বলেছিলেন “ তোমার মা এ বাড়িতে থাকে সেটা তোমার দাদু দিম্মার পছন্দ নয় , তাই তোমার মা আর সে বাড়িতে যায়না । “ বিরক্ত হচ্ছিল তিন্নি । গাবলু, অর্ক , নিশা সবার মা তো অন্য বাড়িতেই থাকে , তবে কেন ......?
“না মানে। “কথা বলতে গিয়ে হোঁচট খেল ঠামি, তারপর বললেন, “ তোমার মা এ বাড়িতে আসার আগে তাঁদের বলতে ভুলে গিয়েছিল কিনা, তাই অভিমান হয়েছে তাদের ।” এত প্রশ্ন করেনা সোনা, বড় হও সব নিজেই বুঝে যাবে ।” কথা না বাড়িয়ে কাজে মন দিয়েছিল ঠামি।
কিন্তু তিন্নি তো বড় হয়েছে ।সে বুঝতে পেরেছিল মায়ের ভুলটা ঠিক কোথায় । না বলে কোথাও চলে যাওয়া তো ঠিক কথা নয় । পাশের ফ্ল্যাটে গাবলুর সঙ্গে খেলতে গেলেও তো তাকে বলেই যেতে হয় ।মাকে বলেছিল সে কথা ।তারপর তাকে নিয়ে সবার সে কি হাসি ।
পুরোনো কথা ভাবতে ভাবতে তিন্নির বড় বড় চোখগুলো জলভরা দীঘি হয়ে গেল হঠাৎ । কি সুন্দর ছিল আগের দিনগুলো।
জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছিল তিন্নি । ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ ভাসছে আকাশে । দূরের পেয়ারা গাছটায় দুটো শালিক পাখি বাসা বাঁধছে । তিন্নির মনে হল পাখিদুটো ঠিক ওর মতন। কদিন পরেই কোথায় উড়ে চলে যাবে ওরা । বুকের ভেতর খুব কষ্ট হচ্ছিল তিন্নির । মাঝখানে আর তিনটে মোটে দিন। রোববার বিকেলেই চলে যেতে হবে। টসটস করে দুচোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছিল ওর ।
ঝড়ের মতন কাটছিল দিনগুলো । মাঝখানে দুদিন ছুটি নিল সোনালী । মেয়েটাকে তো এভাবে কাছে পাবেনা আর । ভাবনাটা এলেই তোলপাড় হয় বুকের মধ্যে ।
অসময়ে পাশে দাঁড়ানো মানুষটার সুখদুঃখের সঙ্গে কি করে যেন জড়িয়ে গেল হঠাৎ ।
অথচ কিছুই তো মেলেনা আবিরের সঙ্গে । দুজনে যেন দুটো ভিন্ন মেরুর মানুষ । আবির জেদী, অবুঝ। তবু সোনালী ভালবাসল আবিরকে ।ভালবাসা না নির্ভরতা কে জানে ।
অনেক বুঝিয়েছিল সোনালী । তবু বিয়ের পরে আবির ওদের কারো সঙ্গে থাকতে চাইল না । একটু ভয় করছিল সোনালীর । কিছু ভুল হচ্ছে না তো? মাঝেমাঝেই তো আবিরকে ঠিক মনে হয় না ওর । “একা কোথাও যাবেনা, কারো সঙ্গে কথা বলবে না । “সবসময় হম্বিতম্বি । একটু কষ্ট হয় বৈকি সোনালীর । দমবন্ধ হয়ে আসে শাসনে । তবু বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতেই হল। আবির ই চাপ দিল ভীষণ । দীর্ঘশ্বাস ফেলল সোনালী । এখনও কেন যে এত ঘর বাঁধার সাধ হয় , কে জানে ।
ধোয়া বাসনপত্র মুছে মুছে গুছিয়ে রাখছিল মণির মা । তিন্নিকে দেখে একগাল হাসল সে । বলল, “ কি গো ছোট গিন্নী, আজ এখানে কি মনে করে? “অন্যদিন ছোটগিন্নী শুনলে রেগে আগুন হয় তিন্নি । এসব নাম তার খুব অপছন্দ । কিন্তু আজ আর সেসব নিয়ে মাথা ঘামাল না। বলল , “ তোমার ছেলেমেয়েদের দূরে পাঠাও না কেন, মণির মা ?” বেশ তো দূরে থেকে বড় হতে পারে তারা ।” হেসে গড়িয়ে পড়ল মণির মা।
বলল, “ সে কি কথা গো, তারা দূরে যাবে কেন? তাদের মুখে ভালমন্দ তুলে দেব বলেই না রাতদিন এত কষ্ট করি ।” মন খারাপ হয়ে গেল তিন্নির ।মায়ের কথাগুলো এখনও কানে বাজছে। কেন যে মা দূরে পাঠিয়ে দিল তাকে ? আর তো সবে কালকের দিনটা । পরশুই তো রবিবার ।
নিজের ঘরের দিকে যেতে গিয়ে পাদুটো আটকে গেল তিন্নির। ঠামি আর মা কি সব কথা বলছে যেন । অত জোরে কাঁদছে কেন ঠামি ? কান পাতল তিন্নি ।” আমাকে রেজিস্ট্রি অফিসে যেতে বলনা সোনালী ।দূর থেকে তোমাদের আশীর্বাদ করব তোমাদের । তোমাদের নতুন জীবন সুন্দর হোক, সুখের হোক ।”কথা বলতে বলতে কাঁদছিল ঠাম্মি ।সব গুলিয়ে যাচ্ছিল তিন্নির । রেজিস্ট্রি অফিস টা আবার কি ? মায়ের অফিসের নাম তো আলাদা। তবে ? আর নতুন জীবন কথাটার মানেই বা কি ! কেন কথাগুলো বলতে কষ্ট হচ্ছে ঠামির ? কিছুই বুঝতে পারছে না সে ।সত্যিই বোধহয় এখন ও বড় হয়নি তিন্নি । বাড়ির সবার কথাই বোধহয় সত্যি ।
শনিবার সকালে উঠে ভেবেছিল বাংলা কবিতাটা মুখস্হ করে নেবে। কিন্তু পড়ায় আর মন বসল না । সারাদিন কেমন থম ধরে রইল বাড়িটা । মা সারাক্ষণ চাপা গলায় আবিরকাকুর সঙ্গে ফোনে কথা বলে গেল । তিন্নির দিকে ফিরেও তাকাল না ।শুধু তিন্নির যখন কাশি হচ্ছিল তখন কপালে হাত ছোঁয়াল একবার । ঠামিও গম্ভীর হয়ে থাকল সারাটা দিন। তিন্নি যে কাল চলে যাবে ,কারো যেন তাতে কিছুই যায় আসেনা ।
রাতে শুয়ে অনেকক্ষণ একাই কাঁদল তিন্নি । কাল রবিবার । কাল বিকেল থেকেই তো বদলে যাবে সবকিছু । এই বিছানাটা থাকবে না, এই পাশবালিশে পা তুলে ঘুমানো থাকবে না, এই ঝকঝকে আলমারী ভর্তি গল্পের বই থাকবে না ।
সোমবার কলেজের পরে যখন নিশা, দেবালীরা হৈ হৈ করে বাড়ি যাবে , তখন তিন্নি হাঁ করে দাঁড়িয়ে দেখবে ওদের । সবার বাড়ি থাকবে ,কেবল ওর বাড়িটাই বদলে যাবে। কত আদর করত মা । সব মিথ্যে । মা , আসলে খুব নিষ্ঠুর ।
বন্ধ চোখটা খুলে চারদিকে তাকিয়ে দেখল তিন্নি । নাহ্, কেউ আসেনি ওর কাছে । কেউ ভালবাসেনা ওকে আর ।
রোববার দিন খুব ভোরে উঠে পড়েছে তিন্নি ।কাল বেঙ্গলী টেস্ট । এখনও কবিতা মুখস্হ হয়নি । লক্ষী মেয়ের মত বই খুলে বসে গেল সে।
হঠাৎ বসার ঘরে আবিরকাকুর গলার আওয়াজ পেয়ে থমকে গেল তিন্নি। এত রেগে কথা বলছে কেন আবিরকাকু ? উঠে গিয়ে কান পাতল তিন্নি । কিন্তু কি সব যে বলছে মা, কিছুই তো বুঝতে পারছে না সে। এগিয়ে গিয়ে ভাল করে কথাগুলো শোনার চেষ্টা করল তিন্নি ।
“ আমার অকালে থমকে যাওয়া জীবন , গাঢ় অন্ধকারে ঢেকে থাকা জীবনকে আশ্বাসের স্পর্শ দিয়ে বদলে দিয়েছিলে তুমি। তবু ভেবে দেখলাম , যা পেয়েছি তা ও তো কম নয় । জীবন আমায় ভরিয়ে দিয়েছে আবির ।তিন্নিকে ছেড়ে , মাকে দূরে রেখে আমার ভরা জীবন শূণ্য হয়ে যাবে । অমন শূণ্য জীবন আমার চাই না। তুমি ফিরে যাও ।”একটানা কথার পরে খানিকক্ষণ থামল সোনালী ।
কিছুই বুঝতে পারছিল না তিন্নি । তবে ঠামি সবসময় বলেন বড়দের কথা শোনা ঠিক নয় , তাই সে দাঁড়াল না আর । মায়ের মুখটার দিকে তাকিয়ে দেখল একবার। কেমন যেন দুগ্গা ঠাকুরের মতন লাগছে মা কে ।
মনটা হাল্কা লাগছিল খুব । মনে হচ্ছিল ঘরের মধ্যে যে বরফের পাহাড় টা ছিল সেটা ভেঙে গুঁড়িয়ে গেছে আর তার নীচ থেকে একটা মরা গাছ মাথা তুলেছে হঠাৎ । গাছটা ভর্তি সবুজ পাতা , ডালে ডালে ফুল এসেছে ।কিছু না বুঝলেও , এটুকু সে বুঝেই গেছে আর বোর্ডিং এ যেতে হবে না তাকে ।
রবিবারগুলো আবার আগের মত হবে। মাংস রাঁধবে ঠামি , লাল লাল ঝোলে নরম নরম আলুর বল ভাসবে। ভাত মেখে খাইয়ে দেবে মা ।
বাংলা বই খুলে মন দিয়ে কবিতা মুখস্হ করছিল তিন্নি
সোম মঙ্গল বুধ এরা সব আসে তাড়াতাড়ি
এদের ঘরে আছে বুঝি ,মস্ত হাওয়া গাড়ি
রবিবার সে কেন ,মাগো ,অমন দেরী করে ?
ধীরে ধীরে পৌঁছায় সে সকল বারের পরে
আকাশ- পারে তার বাড়িটি দূর কি সবার চেয়ে ?
সে বুঝি মা তোমার মত গরিব - ঘরের মেয়ে।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
*হ্যাপি* *নিউ* *ইয়ার*
কবিতা
দেবাশীষ ঘোষ
হ্যাপি নিউ ইয়ার 2022, নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইল।
মহামারীর আতঙ্কে একটার পর একটা কত না ঝড় আমাদের জীবনে বইল।
ভগবান আমাদের নতুন একটা বছর দিলেন, এসো প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করি তাই,
পুরোতন সূর্য অস্ত যাবে, পুরাতন ক্যালেন্ডার টি নষ্ট হবে, দুর্দান্ত সাফল্যের সাথে নতুন বছর পূর্ণ হবে, এটাই তো চাই।
ভালোবাসার আনন্দ, শান্তি ও উল্লাসের সাথে নতুন বছরকে স্বাগতম, করি তার প্রার্থনা।
জীবনের সব প্রচেষ্টা, দুর্দান্ত সাফল্যে পরিণত হোক, মিটে যাক সমস্ত যন্ত্রনা।
অনেক আকাঙ্খা নিয়ে এগিয়ে যাবো সামনের দিকে। সুস্বাস্থ, আনন্দ ও সমৃদ্ধির জয়গান গাও। কাটুক বিষাদ, আসুক হর্স।
মিষ্টি মন মিষ্টি হাসি, শুভেচ্ছা জানাই রাশি রাশি। ফুরিয়ে গেল একটি বছর, সময় হল বিদায় বেলার। শুভ হোক নববর্ষ।
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
Happy New Year!!
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
#অন্য_রূপকথা
এই তো গত শুক্কুরবারের ঘটনা। চব্বিশে ডিসেম্বরের রাত।
সেদিন আবার আমার মায়ের জন্মদিন ছিল। সেই উপলক্ষ্যেই সারাদিন কয়েকজন বাচ্চাদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে রাত্তিরবেলা বেনারস যাবার ট্রেনে চেপে বসেছিলাম। খুব ক্লান্ত ও ছিলাম। তারমধ্যে আমাদের দুই বন্ধুর সিট ছিল দুই জায়গায়। তাই হাল্কা একটা অস্বস্তি নিয়েই ঘুমোতে গেছিলাম।
বেশ ঠান্ডা ছিল কামরাটা। সোয়েটার, মোজা পরে,কম্বল গায়ে দিয়েও কিছুতেই যেন বশ মানছিল না ঠান্ডাটা। আর তারমধ্যে তো লোকজনের ওঠা-নামা লেগেই আছে! এদিকে আমার আপার বার্থ ছিল, সেটা 'ম্যানেজ' করে লোয়ার নিয়েছিলাম এমন একজনের কাছ থেকে চেয়ে, যিনি গয়া স্টেশানে নেমে যাবেন ভোর রাতে। তাই ঘুমোনোর দরকার ও ছিল।
সেই আধা ঘুমের মধ্যেও বেশ অনেক লাগেজ আর কথার আওয়াজ শুনে চটকাটা ভেঙে গেছিল। দেখি, রাত আড়াইটে বাজে, ধানবাদ স্টেশানে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। একটু বিরক্ত ও লাগছিল, আলো চোখে পড়ায়... কাঁচা ঘুমটা...ধ্যাত ভাল লাগে নাকি?
আমার পাশের লোয়ার বার্থের লোক ছিলেন ওঁরা। সিটের তলায় মালপত্র ঢোকানো হলো। আমি উল্টোদিকে ফিরে শুয়ে থাকলেও বুঝতে পারছিলাম মা আর মেয়ে উঠেছেন ট্রেনে। দুজনের ভাষাই দেহাতি হিন্দি।
শুয়ে শুয়েই শুনছিলাম মেয়ে মায়ের জন্য বিছানা পেতে দিল। তারপর নিজের বিছানাও পাতছিল উপরের বার্থে। আর মা " ইয়ে ইধার রাখ, গির জায়েগা সামান, হুয়া তেরা, লাইট বন্ধ কঁরু?" এইসব বলছিলেন।
যাই হোক, আমার বিরক্তি আর না বাড়িয়ে লাইট বন্ধ হল। আমিও স্বস্তি পেলাম।
কিন্তু খানিকক্ষণ পরেই আবার মায়ের গলা। গজগজ করতে করতে সেই হিন্দিতে মেয়েকে বলছেন "কী ঠান্ডা এখানে! এর চেয়ে স্লিপারে গেলেই ভাল হতো, শুধু শুধু এইটুকু সময়ের জন্য এত পয়সা খরচ! শুনতি হী নেহি হ্যায় তু!"
একটু পরেই শান্ত গলায় জবাব এলো মেয়ের "মাঈ, অনেক কষ্ট করে পড়িয়েছ আমাকে, চাকরি পেয়েছি এবার, তাই এসি ট্রেন। মনে আছে, তুমি বলেছিলে বাড়িতে যেমন এসি লাগানো থাকে, তেমনি ট্রেনেও কি এসি লাগানো থাকে? তাই এবার এই টিকিট কাটলাম। দেখনা, ইস বার গরমি মেঁ ঘর মেঁ ভি এসি লাগা লেঙ্গে... আভি শো যা মাঈ, কাল বহোৎ কাম হ্যায়!"
একবারও ফিরে তাকাই নি, তবু বুকের ভেতরটা যেন টালুমালু ভালো লাগায় ভরে গেল একেবারে!
মা আর মেয়ে - জীবনে প্রথমবার এসি কামরায় উঠেছে। বহুদিনের প্রতীক্ষার পরে। বুঝতেই পারছিলাম, সেই প্রতীক্ষার মধ্যেও অনেক রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম লুকিয়ে ছিল। আর সবকিছুর পরে মেয়েটি চাকরি পেয়েছে... হয়ত অন্য শহরে। সেখানেই যাচ্ছে মাকে নিয়ে... তাই এত লাগেজ! আর... আত্মপ্রত্যয়ী মেয়ে সংকল্প করেছে মা কে ভালো রাখবে... গ্রীষ্মের দাবদাহ স্পর্শ করতে দেবে না মা কে...
আহা রে মেয়ে!
উধাল পাতাল মন আর ভেসে যাওয়া দু'চোখ নিয়ে একটাই কথা ভাবছিলাম - "মেয়েটার স্বপ্ন সত্যি হোক। মা ভাল থাকুন। আমাদের দেশের প্রতিটা মা... ভাল থাকুন..."।
ভোর হয়ে আসছিল।
পঁচিশে ডিসেম্বরের ভোর।
আর সেই অলীক ভোররাত্তিরে যেন স্বয়ং সান্টা ক্লজ আমাকে ভাল থাকার একটুকরো চাবিকাঠি দিয়ে গেলেন...
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(30-12-2021, 08:32 PM)dada_of_india Wrote: আমার জীবনের প্রথম প্রেম ! এখনও স্বপ্নের মাআঝে এসে আমাকে কাঁদায় ! আমি কিন্তু পিনু বা নুনু কাউকে বলতে পারিনা ! কাঁদতেও পারিনা ! শুধু নিজের মনে গুম্রে মরি ! তুলি ......... অনেক ভুল করেছি তোমাকে হারিয়ে ! পারলে এই জীবনে আমাকে ক্ষমা করে দিও ! যদি নতুন জীবন থাকে তাহলে তোমাকে খুঁজে নেবো ! কথা দিলাম !
ঝর্না !!
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
এটা না পড়লে সত্যিই লস!
"এককালে শোকসভা হতো, এখন শোককে শক দিয়ে শোকসার্কাস হয় ফেসবুকে। এই তো সেদিন বাজারে ঝরুর সঙ্গে ছগুর দেখা।
ছগু বলল -- 'কাকা মারা গেলো, অর্শ অপারেশন করাতে গিয়ে ...’
- 'রিপ রিপ'। ফেসবুকে দিয়েছিলে?
- হ্যাঁ।
- কটা লাইক আর কমেন্ট পেলে?
- ৬৭ টা লাইক আর ১০৮ টা কমেন্ট। তুমি তো কবিতাও দিয়েছিলে একটা –
‘আজ তোমায় নিয়েছে কেড়ে প্রাণঘাতী এক পাইলস,
চার কাঁধে তোমাকে যেতে হবে ফাইভ হান্ড্রেড মাইলস'।
এককালে লোকজন শোকে পাথর হতেন, এখন শোকে আগে অনলাইন হন তারপর পাথর হন। এই তো সেদিন কমলদার দাদু মারা গেলেন। কমলদা লিখলেন - 'আজ একটু আগেই দাদু দেহ রাখলেন'। এবার চারিদিক থেকে লাল পিঁপড়ের মতন কাতারে কাতারে মানুষ সেই দুঃখের মিছিলে যোগ দিতে চলে এলেন। বেশিরভাগ লোক লিখলেন - রিপ! যাঁদের আর একটু বেশি কষ্ট হয়েছে বা হাতে বেশি সময় তাঁরা লিখলেন, রেস্ট ইন পিস। যাঁদের আরও বেশি কষ্ট বা আরও বেশি টাইম আছে হাতে তাঁরা লিখলেন, ওনার আত্মার শান্তি কামনা করি। যাঁদের বড় বেশী কষ্ট তাঁরা বললেন, বিশ্বাস করতে পারছি না। অথবা, আমি দাদুকে চিনতাম না কিন্তু কেন জানি না বড্ড কষ্ট হচ্ছে। সকালে ঠাণ্ডা লুচি আর বাসি ঘুগনি খেয়ে গৌতমদার বুকের কাছে এসে একটা সিরিয়াস ঊর্ধ্ববায়ু আটকে ছিল। সেটাকেই কষ্ট বলে চালিয়ে দিয়ে গৌতমদা লিখলেন - 'বুকের কাছে একটা কষ্ট এসে আটকে আছে'। সেই কমেন্টে আবার ১০ টা লাইক।
যদিও এখানেই শেষ নয়। কমলদার পরিচিত ভজা ভট্ট পাড়ার নাটকে রাবণ, রাক্ষস, যম এসবের পার্ট করে বেশ আঁতেল হয়েছেন। তিনি বেশ সিরিয়াস পোস্ট লিখবেন, এটাই স্বাভাবিক! উনি লিখলেন - 'গলার কাছে একটা দলা পাকানো কষ্ট আর কান্না'। কেউ কেউ সেই পোস্টে লিখলেন - 'আমার কষ্টটাও ওইরকম'। কেউ জাস্ট লিখেছেন, সেম। মানে, উনিও একইরকম, অর্থাৎ সেম ফিল করছেন। কেউ এটাও ভাবছেন - 'আরে আমারও তো গলার কাছটায় দলা পাকানো কষ্ট আর কান্না ছিল, কিন্তু ভজাদা আগে পোস্ট করে দিল'। ভজাদা আগে পোস্ট করে দেওয়ায় অনেকেরই গলার কাছের কষ্ট ঢেঁকুর হয়ে উঠে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে আর কান্না শুকিয়ে গেছে।
কেউ কেউ আবার চোখ বুজে টাইপ করেন আর অদ্ভুত বানান লেখেন। শ্যামদা লিখলেন - 'আমার হুকটা কষ্টে ডেটে যাচ্ছে'। বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে, এটাই লিখতে চেয়েছিলেন। ওদিকে আবার বিমলের পোস্টে শ্যামদা লিখলেন - 'যন্ত্রণার ফল গু ধারা'। ওই ফল্গুধারা লিখতে গিয়ে বিপত্তি! তবে দুঃখ তাঁদের সবচেয়ে বেশী হয় যাঁরা বারবার পিতৃহীন, দাদুহীন, ঠাকুমাহীন ইত্যাদি হন। কেলাবের নদুদা মরলেও 'আবার পিতৃহীন হলাম', ওদিকে মাদাগাস্কারের কেত্তনশিল্পী মরলেও 'আবার পিতৃহীন হলাম'!
তবে কমলদা পুনুদার উপর বেজায় চটেছেন। দাদু টেঁসে যাবার এক সপ্তাহ আগে থেকেই কমলদা আপডেট দিচ্ছিলেন... 'দাদু আর খাচ্ছে না', 'দাদু আর বেডপ্যান চাইছে না'। এদিকে পুনুদা আবার পাহাড়ে যাবেন, ওখানে টাওয়ার নেই। তাই এর মধ্যে কমলদার দাদু মরলে, রিপ লেখা হবে না। তাই উনি কমলদার কোন এক পোস্টে লিখে দিলেন - 'আমি তো পাহাড়ে যাচ্ছি। আমি ফিরে আসার আগে যদি কিছু হয়ে যায়! তাই 'আগাম রিপ' লিখে গেলাম।' আগাম শুভেচ্ছা হলে, আগাম রিপ বা রেস্ট ইন পিস হতেই পারে!
ফেসবুক অঞ্চলে অনেক প্রাণী ঘুরে বেড়ায় যারা অতশত না পড়েই লাইক, কমেন্ট করে। সময় কম, পোস্ট অনেক। কেউ হয়তো তাঁর দাদুর ছবি দিয়ে অনেক কিছু লিখেছেন। এদের এতো বড় পোস্ট পড়ে দেখার সময় নেই যে ওটা দাদুর জন্মদিন উপলক্ষে লেখা নাকি দাদু পার্মানেন্ট শাটডাউন হয়ে গেছেন বলে লেখা! ফলে অনেক উজবুক জন্মদিনের পোস্টে লিখে ফেলে - ভাবতেই পারছি না। আবার কেউ মৃত্যুদিনের পোস্টে লেখে - কী মিষ্টি লাগছে!
বাজারে এমনটাই এখন 'ইন'।"
[সংগৃহীত, মূল লেখাটি কার কেউ জানতে পারলে জানাবেন দয়া করে]
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
#কথোপকথন
-"হাই!"
-"হাই!"
-"হাই!"
-"হাই! বল, কি বলবি?"
-"বললাম তো, হাই!"
-"ভাট বকার জন্য পিং করলি?"
-"শিং? ওহ্ স্যরি পিং!"
-"এ ভাই, তোর কি হয়েছে?"
-"দ্যাখ, যা খুশি বল, ভাই বলবি না!"
-"ইডিয়ট!"
-"বললাম তো, ইডিয়ট, স্টুপিড, এমনকি চাউমিন, এগরোল যা খুশি বল, বাট নো ভাই!"
-"কিছু খেয়ে আছিস তুই?"
-"প্রথমেই তো বললাম"
-"কি? কোনটা?"
-"যে আমি হাই!"
-"ওহ্, আমি ভাবলাম তুই ভাই বলাতে সত্যি রেগে গেছিস!"
-"কেন? রাগলে তোর কি?"
-"অনেক কিছু!"
-"ক্যান...ক্যান ইউ এক্সপ্লেইন?"
-"উরিশ্লা! ইংলিশ!"
-"জানিস তো বাঙালি রেগে গেলে আর মাতাল হলে ইংলিশে কথা বলে?"
-"তুই কোনটা?"
-"আমি তোর প্রেমের নেশায় মাতাল আর সেটা তোকে বলতে না পারায় নিজের ওপর রেগে আগুন!"
-"যাক বাবা, খোকাবাবুর মুখে কথা ফুটেছে!"
-"মানেএএ?"
-"মানে, এতদিন ধরে স্টক করার পরে নিজের সিস্টেম আপডেট করে মুখে বলার সাহস হয়েছে!"
-"স্টক? তোকে?"
-"নয়ত কি? আমি কোনো গান নিজের স্টেটাসে দেওয়া মাত্র সেটা তোর প্লে লিস্টে কিভাবে আসত? আমি তোর ইউটিউব দেখেছি।"
-"সোশ্যাল মিডিয়া ছেড়ে ইউটিউব? তুই তো আরও বড় লেভেলের স্টকার রে!"
-"অফিসে পাশাপাশি বসি, ধুমসো একটা স্ক্রিন... চোখে পড়বে না?"
-"ভাই! ভাই!"
-"এবার যে তুই বললি?"
-"তাতে কি হলো?"
-"বলবিনা। তোকে আমার 'ওগো শুনছো' বলে ডাকার খুব ইচ্ছে"
-"অ্যাঁ?"
-"অ্যাঁ নয়, হ্যাঁ!"
-"শ্লা, তোকে ভেবেছিলাম প্রোপোজ করে দেব আজ...যদি রেগে যাস, তবে 'হাই ছিলাম' বলে ম্যানেজ দেব!"
-"তোর পেটে পেটে এত! বাঁদর!"
-"আর, তুই আমার মুক্তোর মালা... হবি?"
-"ধ্যাত!"
-" "
Posts: 3,682
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
এই কথাগুলো আপনাকে সবথেকে বেশি টানে
তবে এইগুলো পড়ে আমার রাগ হয়। কারন এই ধরনের এতে সবসময় ছেলেরাই প্রোপজ করে
❤❤❤
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
শুধু ইভার জন্য
সন্দীপ চট্টোপাধ্যায়
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
অনেক দিন পর সতুদার সঙ্গে দেখা। ‘নিরিবিলি’ রেস্তরাঁয় একটা টেবিলে বসে খালি প্লেটেই বিলি কাটছিল সে। একা। তবে একই টেবিলে মুখোমুখি আর একটি প্লেটসজ্জা দেখে মনে হল, আরও কেউ আছে বুঝি, সঙ্গী বা সঙ্গিনী। আমাকে দেখে সতুদার মুখে আনন্দ আর বিষাদ যুগপৎ ঝিলিক দিয়ে গেল।
“আরে দীপ্র, বোসো ভায়া...”
“কিন্তু সতুদা, তোমার সামনের আসনে কে? প্লেট কার? তোমার সঙ্গে কেউ আছেন?”
‘হ্যাঁ’ বলতে গিয়েও ঢোঁক গিলে সতুদা বলল, “ওটা আমার একটা ধারা বলতে পার, রেস্তরাঁয় এলে মুখোমুখি একজনকে বসিয়ে রাখি মনে মনেই। ওয়েটাররা প্রথমে একটু আপত্তি করে, তবে ‘নিরিবিলি’তে কাউকে বলতে হয় না, আমি বসলে সঙ্গে সঙ্গে আমার উল্টো দিকে আর একটা প্লেট পড়ে। তুমি ভায়া আমার বাঁ দিকের চেয়ারটায় বোসো না হয়।”টে কি বিশেষ কেউ...” কথাটা তোলা ঠিক হল কি না কে জানে! সতুদার লাল মুখটা পাংশু হয়ে গেল। দীর্ঘশ্বাসের আওয়াজও আমার কান এড়াল না।
ওয়েটার সতুদার পাতে কবিরাজি কাটলেট পরিবেশন করতে এল।
“তুমি কী নেবে ভায়া?”
“স্রেফ একটা গরম কফি। ওটাই নেশা এ দোকানে। রোজই আসি...”
দুটো কফির অর্ডার দিয়ে সতুদা সিগারেট ধরাল। সতুদা আমাদের পাশের পাড়ায় থাকে। অল্প বয়সে খেলাধুলোর জন্য নামডাক ছিল। ক্রিকেটে জোরে বোলার হিসেবে, ফুটবলে দুর্ধর্ষ সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে নানা ক্লাবে খেপ খেলে বেড়াত। আমাদেরই কলেজে ক্লাস পাঁচেক ওপরে পড়ত। সতুদার উচ্চতা কলেজ জীবনের পর বাড়েনি। গাঁট্টাগোঁট্টা ভাবটা অল্প বয়সে মুগুরটুগুর ভেঁজেই হয়ে গিয়েছিল। চকচকে ফর্সা, লালচে মুখ, কপালটা একটু বেশিই চওড়া।
“কপাল ভাই, কপাল। কপালে নেইকো ঘি, ঠকঠকালে হবে কী?” স্বগতোক্তি করল সতুদা, তার পর বলল, “তোমরা সুখে ঘরসংসার করছ। বাবা-মা-বৌ-ছানাপোনা... কী যাতনা বিষে বুঝিবে সে কীসে...!” সতুদা দার্শনিক হয়ে গেল।
“মাসিমা চলে যাওয়ার পর সত্যিই খুব একা হয়ে গেছ জানি,” আমি প্রলেপ লাগানোর চেষ্টা করি।
তবে সতুদাকে আমি পাড়ার ডাকসাইটে সুন্দরী ইভাদির সঙ্গে অনেক বার এ দিক সে দিক দেখেছি। যত দূর জানি, ব্যাপারটা ম্যাচিওর করেনি। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে মনে বাধছিল। কিন্তু কী কাকতালীয়, সতুদাই বলল, “ইভাকে চেনো তো! এলাকার সকলেই চিনত। অমন সুন্দরী তো রোজ জন্মায় না। কালেভদ্রে। বলতে পারো, এই প্লেট ওকে উৎসর্গ করেই সামনে রাখি।”
কাটলেট চিবোতে চিবোতে বলে চলল সতুদা, “ওর বাপের ওই দুই মেয়ে, ডাকসাইটে সুন্দরী দু’জনেই। সকলের হার্টথ্রব, ইভা আর নিভা। ওই ইভা আমার প্রেমে পড়ে গেল কৈশোরেই। তখন আমি দুর্ধর্ষ বোলিং করি। পরপর অপোনেন্টের স্টাম্প ওড়াচ্ছি আর খেলা দেখে বারান্দায় আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠছে ইভা। শীতের দুপুরে আমার কৃতিত্ব ওকেই দু’হাত তুলে সমর্পণ করছি। ইভার তখন বয়স বড়জোর বছর চোদ্দো।”
বললাম, “ইভাদির বাবা বড়বাজারে কী যেন ব্যবসা ছিল। পান খেতেন, পায়জামা-শার্ট আর কালো বুট পরে ঘুরে বেড়াতেন।”
“অতি হারামি চিজ! কিছু মনে কোরো না ভায়া, মুখ খারাপ করে ফেললাম। অন্তরের জ্বালা, বুঝলে না, আমার বুক থেকে ইভাকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল মাইরি! মক্ষিচুষ লোকটার মেয়েদের বিয়ে কবে দেবে আর সম্ভাব্য পাত্রদের ধনসম্পত্তির লিস্ট তৈরি— এ ছাড়া কোনও চিন্তা ছিল না। ধারণা ছিল, মেয়েদের সৌন্দর্যের জোরেই রাজপুত্তুররা হামলে পড়বে।”
বুঝতে পারলাম সতুদা ব্যথার কথা আমাকে বলে মনটাকে একটু হাল্কা করতে চাইছে। আমি বাধা দিলাম না, উসকে দিয়ে বললাম, “তুমিও তো পাত্র হিসেবে খারাপ নও, বাবার একমাত্র ছেলে, খেলাধুলোয় ভালে ছিলে, ক্লাবটাব করতে, পাঁচ জন তোমায় চিনত, লেখাপড়াটা কদ্দুর করলে অবশ্য জানা নেই।”
“বি কম পড়তে পড়তে ইভা মাথাটা খেয়ে নিল, ঠিক ইভা নয়, ইভার ওই ইবলিশ বাপটা, ইভার সঙ্গে আমার ইন্টুমিন্টু ওর নলেজে এসে গেছিল। আমার সামনে বলার সাহস ছিল না। মেয়েকে দিয়ে বলাত। আমার রোজগার নিয়ে আমি কী ভাবছি, কবে ঠিকঠাক দাঁড়াব, কবে কোমরের জোরে রাজকন্যে নিয়ে যেতে পারব... এমনি ঘ্যানঘ্যানানি... তার পর ইভা সুন্দরী বলে অনেক ছেলের মা-ই তো ছেলের বৌ করতে চায় তাকে... বেশ চাপে পড়ে গেলাম...”
সতুদা চোখ বন্ধ করে সিগারেটের শেষ ধোঁয়াটা শুষে নিয়ে অ্যাশট্রেতে ঘষে নেবাল।
“বি কমটা শেষ করে আমার মতো সাধারণ মেধার ছেলেদের যা হয় আর কী! ফ্যা ফ্যা বেকার। টো টো কোম্পানি। কখনও কম্পিউটার টাইপ শিখছি, কখনও স্পোকেন ইংলিশ। রোজগারের ঝোঁক ষোলো আনা। খেলাধুলো থেকে অনেকটা ডিটাচড হয়ে গেছি কলেজ ছাড়ার পর। ভাবছি ব্যবসাপাতি করে যদি দুম করে দু’পয়সা বাগানো যায়, তা হলে বাগিয়ে নেব ইভাকেও। বুক চিতিয়ে পুরুর মতো দাঁড়াব ওর বাবার সামনে। এমনই নানা প্ল্যানের ছক যখন মাথায়, অংশু পাত্র বলল, মাছের কারবার করবে। অংশুর মাছের স্টল আছে বাজারে। বলল সে, দিঘা, ডায়মন্ড হারবার এ সব মাছের আড়তে চলে যাবে থোক টাকা নিয়ে, সস্তায় মাছ কিনে কলকাতার বাজারে সাপ্লাই। নগদ লাভ থুতু দিয়ে গুনে নেবে দিনেরটা দিনে।”
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
জিজ্ঞেস করলাম, “নেমে পড়লে? বাড়িতে কিছু বলল না? টাকাই বা পেলে কোথায়?”
সতুদার কাটলেট শেষের দিকে। নিজের জন্য কফির অর্ডার করে আর একটা সিগারেট ধরাল সে, “আমার বাবা ছিলেন কর্পোরেশনের কেরানি। খরচ থেকে বাঁচিয়েই কিছু জমিয়েছিলেন, টুকটাক জমিজমাও কিনেছিলেন, তবে ওয়ান পাইস ফাদার-মাদার। তবু দিনের লাভ দিনেই ফেরত আসবে শুনে রাজি হলেন। বলব কী দীপ্র, এলও তাই। খাটনি ছিল। রাতভর কাজকারবার, প্রথম বিশ হাজার দু’রাতেই পঁচিশ হয়ে ফেরত এল। সাহস গেল বেড়ে। অংশু পাত্র তার মেদিনীপুরের শ্যালক পটলের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল। ইনভেস্টমেন্ট বাড়তে লাগল। বাবার থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে পটলের সঙ্গে দিঘা এলাম। ভোরের দিকে ট্রলার আসবে দিঘার মোহনায়। ভোরের হাটে বেচাকেনা। ইলিশ, ট্যাংরা, লটে, যা চলে কলকাতায়। অকশনে মাছ কিনে বরফ প্যাকিং করিয়ে ট্রান্সপোর্টে তুলে তবে শান্তি। রাতে উঠেছিলাম এক কমদামি হোটেলে। ঘরে পটলের দুই শাগরেদের সঙ্গে দারু নিয়ে বসলাম। কিন্তু কয়েক পেগের পরেই আমি অচেতন। পরদিন হোটেলের বেয়ারা যখন দরজা ধাক্কা দিয়ে তুলল, তখন বুঝতে পারলাম পটল আর তার চ্যালারা সব মালকড়ি ঝেঁপে হাপিশ। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরলাম। জলে গেল টাকা। অংশু পাত্রও চোখ উল্টোল। গণেশ উল্টোনোর দায়ে বাবা ত্যাজ্য না করলেও ওই টাকার শোকে মুহ্যমান হয়ে রইলেন। আর চাইতে সাহস হল না। সামনে রইল নিঃসীম বেকারত্ব। আর ইভা। থেকেও নেই। প্রেমে আছে, স্বপ্নে আছে। ভবিষ্যতের কথা মেয়েরা বড্ড ভাবে, তাদের ছোটবেলা থেকেই ভাবানো হয়। আমার অন্ধকার ভবিষ্যতের সঙ্গে তার ভবিষ্যৎ কেমন করে জুড়বে বাড়ির অনুমতি ছাড়া, তা নিয়ে সে ম্লান হয়ে থাকত। তার সে কষ্ট ক্রমে ক্রমে আমাকে হীনম্মন্যতার তলানিতে ঠেলে দিচ্ছিল।”
একটু জল খেয়ে কাটলেটের শেষাংশ চিবোতে চিবোতে অতীতে ডুবে গেল সতুদা।
“তার পর বুঝলে, বিনা পুঁজির ব্যবসা খুঁজতে লাগলাম। এক জন বললে, আছে তো, ধরবে আর সাপ্লাই দেবে। কী? আরে যত ধরবে, তত তোমার আয়। তার পর ধোঁয়াশা ছেড়ে সে খোলসা করল। আরশোলা আর ব্যাঙ ধরতে পারবে? বিনা পুঁজিতে। ধরবে আর কলেজের ল্যাবরেটরিতে সাপ্লাই দেবে। সে-ই সাহায্য করল। নিয়ে গেল, রেশন দোকানের গোডাউনে। ভায়া হে, আরশোলা নেহাত নিরীহ জীব নয়, প্রথম দিন ধরতে গিয়ে হাতে তাদের কাঁটা রোঁয়া লেগে হাত ছুলে একাকার। তবু ইভার মুখ মনে পড়ল। কিছু করে দেখাতেই হবে। এর পর দিব্যি ধরার কায়দা জেনে গেলাম। কাঁড়ি কাঁড়ি আরশোলা ধরেছি। শিখে গেলাম ব্যাঙ ধরতেও। মাঠে দাঁড়িয়েছি রেচন ক্রিয়ার তাগিদে, চতুর্দিকে কুনোব্যাঙের ডাক। হিসি করা মাথায় উঠল, টপাটপ ব্যাঙ ধরতে লাগলাম, ষাট সত্তরটা মিলে গেল মাঠ থেকেই। কিন্তু রোজ রোজ কত ধরব? এক দিন ছাদের ওপর এক বিরাট জারে অজস্র ব্যাঙ দেখে কলের মিস্ত্রি ইকবাল বলল, সে বস্তা বস্তা ব্যাঙ এনে দিতে পারবে। ইকবালের থেকে এক টাকায় কেনা কুনো ব্যাঙ পাঁচ টাকা করে সাপ্লাই দিতাম ল্যাবে। একদিন ছাদে পেলাম আধমরা একটা বাদুড়। তাই নিয়ে চলে গেলাম মানিকতলায় বিশ্বাসদার কাছে। বিশ্বাসদা ওয়েট স্পেসিমেন সাপ্লাই করতেন। বিশ্বাসদার থেকে নিয়ে জারে-ভরা ফণা-তোলা মরা-গোখরোও সাপ্লাই করেছি। আধমরা বাদুড়টা দরাদরির পর তিনশো টাকায় কিনতে রাজি হল সে। উনিই আমাকে বাদুড়-ঝোলা কিছু পুরনো বাড়ির ঠিকানা দিলেন। ইঁদুর-বাদুড়-সাপ-ব্যাঙ-আরশোলা এক দিকে, অন্য দিকে ইভা।”
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
“ইভা এক দিন বলল, ‘তুমি কী করছ বলো তো, রেশন দোকানের গদাই বাবাকে বলেছে আরশোলা ধরতে তুমি ওদের দোকানে গেছিলে!’ আমি গম্ভীর হয়ে বললাম, আমার প্রফেশনাল ব্যাপারে নাক গলাতে বারণ করো। তোমার বাবার ধনবান দৌলতদার পাত্র দরকার। কামালেই চলবে। কীভাবে কামাচ্ছি বড় কথা নয়। বাবাকে বলে দিও সতু এক্সপোর্টের ব্যবসা খুলেছে, চিনদেশে ব্যাঙ সাপ্লাই দিচ্ছে। ইভা বলল, ‘হুঁহ! এক্সপোর্ট যারা করে তারা বয়াম নিয়ে রেশন দোকানে আরশোলা ধরবে বলে ঘুরে বেড়ায় না।’
“খুবই ডিসহার্টেনড হলাম, বুঝলে ভায়া। কিন্তু শকুনির মুখ ভেসে উঠতেই চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল, কিছু একটা করতেই হবে...” এই বলে গরম কফিতে একটা জোর চুমুক দিয়ে ফেলল সতুদা। সিগারেটে দিল একটা রামটান। তার পর কপালে হাত দিয়ে বসে রইল মিনিট দুই। এ কীসের নীরবতা ঠাহর করতে না পেরে চুপ করে ওর দিকে চেয়ে বসে রইলাম। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সতুদা খেই ধরল, “রোজগারপাতি খারাপ হচ্ছিল না। কৃষ্ণনগর কলেজে বেশ কিছু বেঞ্চ বানিয়ে সাপ্লাই করলাম। প্যারাফিন ট্রে থেকে ফাইল, ফাইল থেকে সাইক্লো মেশিন— সাপ্লাইয়ের রেঞ্জ বাড়তে লাগল। কলেজ স্ট্রিটে একটা দোকানটোকান খোঁজ করছি, এমন সময় এক খোঁচড় বলল, ‘কঙ্কাল সাপ্লাই দেবেন? নরকঙ্কাল? উত্তরবঙ্গের এক কলেজে রিকোয়ারমেন্ট আছে। পার কঙ্কাল পঁচিশ হাজার। চারটে লাগবে ওদের।’ জোগাড় করব কোত্থেকে? নিয়েই বা যাব কেমন করে? সে ব্যাটা বলল, ‘টাকা দিলে হাসপাতালের মর্গ থেকেই কঙ্কাল বেরিয়ে যাবে আর কঙ্কালের পার্টস খুলে সুটকেসে ভরে নিয়ে যাবেন। লোক যাবে, সে টাকা নেবে আর কঙ্কালদের স্ক্রু দিয়ে আবার ফিট করে দিয়ে আসবে। কঙ্কালের দাম আর যাতায়াত রাহাখরচ মিলে হাজার পঁয়ত্রিশ যাবে আপনার।’
“বুঝলে, সে রাতে ঘুম এল না। তখন পরিবেশবাদীদের ঠ্যালায় ব্যাঙকাটা নিষিদ্ধ। সে সব সাপ্লাই শিকেয়। এরকম লাভের হাতছানি আর ইভার শকুনবাপের মুখ— দুই মনে হতেই রাজি হয়ে গেলাম। পার্টির সঙ্গে কথাবার্তা পাকা হওয়ার পর খোঁচড়ের কথামতোই সুটকেস-ভরা কঙ্কালের হাড়গোড় নিয়ে ট্রেনে। দুর্ভাগ্য, মধ্যপথে বামাল পাকড়াও হলাম। কেস, আদালত, হাজতবাস। মানসম্মান আর ইভা— সবই গেল আমার। ইভার বয়স পঁচিশ তখন, সময়মতো সবকিছু গুছিয়ে এনেও হেলায় হারালাম!
“এর পর পরই শকুন সক্রিয় হয়ে উঠল। ইভার বিয়ে হয়ে গেল। বেশ পয়সাওলা ঘরেই।”
এই অবধি শেষ করে সতুদা গুম হয়ে গেল। ধীরে ধীরে কফি খেতে লাগল। আমিও ওকে আর বিচলিত করতে চাইলাম না। আমার কফি, নিজের কফি আর কাটলেটের দাম দিয়ে উঠতে উঠতে বলল, “এখন সবই আছে ভায়া, যা আগে ছিল না। বাবা যাওয়ার পর, ইনসিওরেন্সের অগাধ টাকা, কৃপণ বাবার প্রচুর সেভিংস আর রমরম করে চলা আমার রেন্ট কারের বিজনেস। শুধু সময়টাই চলে গেছে। সামনের জানুয়ারিতে তেতাল্লিশে পড়ব।”
বললাম, “আজকালকার দিনে এ আর কী বয়স সতুদা! আবার নতুন করে জীবন শুরু করতেই পারো।”
ম্লান হাসল সতুদা।
তার পর আমরা রেস্তরাঁ ছেড়ে রাস্তায়। অটোর লাইনের দিকে যেতে যেতে সতুদা ফিসফিস করে বলল, “একটা কথা তোমায় বলি, কাউকে বোলো না। ইভার বাচ্চাকাচ্চা হয়নি, প্রচণ্ড অশান্তি স্বামীর সঙ্গে। সে কোথা থেকে আমার ফোন নম্বর জোগাড় করেছে আর ইদানীং থেকে থেকে ফোনও করে চলেছে আমায়। কী যে করি, বুঝে উঠতে পারছি না...”
আমি অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম সতুদার দিকে।
XXXX
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
উন্মুক্তমনা
ঝুম্পা মন্ডল
জয়দীপকে ঘরের মধ্যে আসতে দেখেই সবাই যেন একটু নড়ে চড়ে বসলো, ভুরু কুঁচকে গেলো সবাইয়ের, গত রাতের শ্মশান থেকে পরে আসা একবস্ত্রর ধুতি আজ জয়দীপের পরনে নেই, একি কথা!!
দশা..ঘাট আর শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের জন্য কি আয়োজন হবে! কোথায় কোন খাতে কত টাকা পয়সা খরচা করবে জয় ! কত জনকে নিমন্ত্রণ করা হবে..কাউকে বাদ দিলে চলবেনা , একটা ছেলে.. এটুকু দায়িত্বতো নিতেই হবে নইলে মান থাকেনা..,
এইসব নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত আজ সকালে জমায়েত হওয়া পুরোহিত আর বাড়ির বড়োদের সামনে আমার স্বামী জয়দীপ একটা চিঠি নিয়ে সামনের টেবিলে সযত্নে রাখলো ,
বললো.. " অনেক দিন আগে লেখা চিঠিটা, মনে ছিলোনা আমার.. সকালে হঠাৎ মনে পড়লো..মা বলেছিলো..এতে মায়ের শেষ ইচ্ছে লেখা আছে "
আমি বুঝলাম সকালে মায়ের আলমারি থেকে এই চিঠিটা বের করেই বসে থাকতে দেখেছি জয়কে একটু আগেই,
উপস্থিত আত্মীয় স্বজন.. আমার জ্যাঠা শ্বশুর.. শাশুড়িরা সবাই ঝুঁকে পড়লো চিঠিটার উপরে,
আমার বড়োজ্যাঠাশ্বশুর চিঠিটা হাতে তুলে নিয়ে একবার চোখ বুলিয়ে পাশের জনের কাছে হস্তান্তরিত করে গম্ভীর মুখে বলে ওঠেন.. "হয়ে গেলো.. তাহলে আর কি.. ল্যাঠা চুকে গেলো "
সবাই এক ঝলক চিঠিটা দেখার পরে..মেজো জেঠি শাশুড়ি মুখ বেঁকিয়ে বললো.. "বুঝলাম..এখানেও তিনি নিজে যে অত্যাধুনিক সেটাই প্রমান করবার চেষ্টা করেছেন .."
সঙ্গে সঙ্গে বাকি যে দুই চার জন বাড়ির লোক ছিল প্রত্যেকে সায় দিলো.. এ আমার শাশুড়ির ভীষণ বাড়াবাড়ি, অনাচার ছাড়া আর কিচ্ছু নয়,
মেজো জ্যাঠাশ্বশুর জয়কে বললেন.. "তাহলে বাবা আর আমাদের কাজ কি এখানে থেকে.. তুমিই যা ভালো বোঝো কোরো.. কি পুরোহিত মশাই ঠিক কিনা!"
পুরোহিতের কাছেও ব্যাপারটা নতুন, তিনিও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মাথা নাড়লেন,
জয়ের বাড়ি আমাদের পাশের পাড়ায়..একটু বুঝতে শেখা থেকেই আমার শাশুড়ির নামে নানারকম মন্দ কথা শুনে এসেছি আমি ,
আমার বাবা মা তাই খুব একটা রাজি ছিলোনা ওই বাড়িতে আমাকে বিয়ে দিতে, নেহাত জয় এর সাথে আমার সম্পর্ক আজ বহু দিনের..জয় ছেলেটা ভীষণ ভালো বলে বাবা ফেলতে পারেনি , তাই নিমরাজি হয়ে বিয়েটা হয়েছে ,
আমি ভীষণ চিন্তায় ছিলাম বিয়ের পরে কিভাবে ওনাকে মানিয়ে নেবো..!! আমি বোধহয় পারবোনা, উনি বিয়ের আগে আলাপ করার জন্য ছেলেকে অনেক বার ওদের বাড়ি আমাকে নিয়ে যেতে বলেছেন , জয়েরও ইচ্ছে ছিল, কিন্তু আমি যায়নি, ওনার প্রতি প্রথম থেকে মনের মধ্যে কেমন একটা বিরক্তি ছিল, যেটা জয়ের সামনেও লুকানো থাকতোনা, ওকে ঠারে ঠরে বোঝাতাম আমি কিন্তু বিয়ের পরে ওনার সাথে একবাড়িতে কিছুতেই থাকবোনা,
আমার ইঙ্গিত বুঝতে পারলেই জয়ের মুখটা ব্যথায় কেমন কুঁকড়ে যেত তখন.., চুপ করে থাকতো সে, মনে মনে ভাবতাম অমন মা কে জয় শ্রদ্ধা করে কিভাবে!!
বিয়ের পরে এবাড়িতে এসে দেখেছি একা হাতে সবাইকে বকা ঝকা ভালোবেসে কী নিপুন পারদর্শীতায় একা সমস্ত আয়োজন নিখুঁতভাবে করছেন, শাশুড়ির সাথে প্রথম পরিচয়ে ওনার মধ্যে হাসিখুশি অথচ মুখের মধ্যে কেমন একটা অদ্ভুত দৃঢ়তা দেখে আমি একটু ঘাবড়ে গিয়েই দূরত্ব বজায় রেখেছিলাম ,
হলুদ ছাড়ানোর পরে শ্বশুরবাড়িতে ফিরে অবাক আমি..উনি সকালে আমাকে ডেকে দোতালায় আলাদা রান্নাঘরের চাবি আমার হাতে দিয়ে বললেন.. "শাশুড়ি বৌমার খিটির মিটির আমার পছন্দ নয়.. আজ থেকে তোরা আলাদা.. দোতালায় থাকবি..ভালো মন্দ রান্না করলে ইচ্ছে হলে দিবি.. নইলে দিবিনা, আমি নিচের তলায় আমি আমার মত দুটো ফুটিয়ে নিয়ে বুটিকের ব্যবসা নিয়ে থাকবো ..এতে সম্পর্ক ভালো থাকবে.."
আমি মনে মনে খুশি হলেও এতো তাড়াতাড়ি এমন ডিসিশান শুনে চাবি হাতে নিয়ে যারপরনাই অবাক হলাম আমি !!
এ দেখি মেঘ না চাইতেই জল.. কিন্তু আমি ভেবেছিলাম.. আমাকেই বুঝি জয়ের মাথা খেতে হবে আলাদা হবার জন্য.. কিন্তু একমাত্র ছেলেকে মায়ের থেকে আলাদা করা এতো তো সহজ নয়.. তবে এই ব্যাপারটা ভারী অভিনব..,
উল্টো দিকেই জয়ের জ্যাঠাদের মহল, নিচের তলায় ভাগাভাগি হলেও.. সবাইয়ের সুবিধার জন্য..উপরের তলার সিঁড়ি ভাগাভাগি হয়নি..,
দুপুরবেলা ঠিক যে সময় শাশুড়ি নিচের তলায় তার বুটিকের দোকানে ব্যাস্ত .., সেই সময় জেঠি শাশুড়ি আর খুড় শাশুড়ি চুপিচুপি দোতালার সিঁড়ি দিয়ে আমার কাছে এসে শাশুড়ির এই নতুন নিয়ম নিয়ে যা নয় তাই বললো.. ছেলে বৌ বুঝি চোখের বিষ..আসতে না আসতেই আলাদা!! একসাথে খেলে কী এমন অসুবিধা হত!! নাকি চাকরি ওয়ালা বৌকে রেঁধে খাওয়াতে হবে বলে ওনার চটজলদি এমন সিদ্ধান্ত!!
আমারও তখন সকালের আনন্দ ভুলে ওনাদের কথায় খুব অপমানিত লাগছিলো, গুম মেরে ছিলাম কিছুদিন, কিন্তু মাসখানেক পরে বড়ো জেঠিশাশুড়ির সাথে তার বৌমার সংসারের নানা বিষয় নিয়ে নিত্য চিল চিৎকার শুনে ভাবলাম.. আমার শাশুড়ি যেটা করেছেন ব্যাপারটা অস্বাভাবিক হলেও.. ভুল উনি কিছু করেননি, আমাদের বাইরে ঘুরতে যাওয়া, সিনেমা দেখে রাত করে ফেরা.. কোনোকিছুতেই উনি নাক গলাননা .. একা একার মত থাকেন,
তারপরে যতদিন গেছে ওনার পাশে থেকে বুঝেছি মানুষটা খারাপ নন, ওনার পাশে থেকে ওনার কাছে গল্প শুনে সমস্ত কাজের পিছনে ওনার নিজস্ব যুক্তি দেখে অবাক হয়েছি...,আর সেই সঙ্গে ওনার প্রতি এতদিনের অবজ্ঞা থেকে শ্রদ্ধায় মন ভরে গেছে আমার.. উনিই হেসে হেসে গল্প করেছেন আমায়.., আমার শাশুড়ি নাকি বরাবর ওনাদের বাড়ির অযথা রীতি রেওয়াজ মানতেননা, কেন মানবেন ভুলভাল রীতিনীতি!
বিশ্বাসের সম্পর্ক ভালোবাসতেন বলেই ঘোমটার বালাই ছিলোনা তার কোনোকালে ..,
অবেলায় স্নান করে ভিজে চুল বেঁধে কাজ করতে হত বলে..কোমর ছাপানো চুল বিয়ের পরে কেটে ঘাড় অবধি নামিয়ে ছিল.. তা দেখে প্রথম দিন তার শাশুড়ির অজ্ঞান হয়ে যাবার জোগাড়, বাকি জায়েদের চোখও কপালে উঠেছিল সাহস দেখে, উনি যদিও কাউকে কোনো কৈফিয়ত দেয়নি, গট গট করে দোতালায় উঠে গিয়েছিলেন, কিন্তু ওনার স্বামী কৈফিয়ত দেবার স্বরে বলেছিলো.. "ঠান্ডা লাগার ধাত.. ভিজে চুল বেঁধে রেখে কাজ করতে হয়..শুকাতে চায়না বলেই.."এইটুকু বলে তাড়াতাড়ি দোতালায় বৌ এর পিছনে পিছনে চলে এসেছিলো, সাধে কি তাকে স্ত্রৈন বলে আত্মীয় স্বজন ?
আমি মনে মনে ভাবি.. আমার জয় ঠিক অমনটাই হোক,
তাছাড়া উনি নাকি প্রায় শ্বশুর..ভাসুরদের সাথে চোখে চোখ রেখে কথা বলতেন যুক্তি দিয়ে, বাড়ির সবাই পিছনে তাকে 'দেমাকি' বলে ডাকতো, অথচ পরে শুনেছি জায়েরা নাকি নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে আফসোস করতো .. "ইস এইভাবে যদি আমিও একটু প্রতিবাদটা করতে পারতাম."
আসলে প্রতিবাদ করে সমালোচনার পাত্রী সবাই হতে চায়না যে, সব সহ্য করে 'আমি ভালো' এই তকমার লোভ আমাদের সমাজের নারীদের মধ্যে মজ্জায় মজ্জায় মিশে গেছে দীর্ঘদিন ধরে,
আমার শাশুড়ি আরও সমালোচনার মুখে পড়ে ..যখন জয় বছর দশেক বয়সে তার বাবাকে হারায়.., হঠাৎ স্বামী মারা যাবার পরে ওনাকে প্রথম দিকে একটু বিদ্ধস্ত লাগলেও একদিনের জন্যও কারোর সামনে ওনাকে স্বামীশোকে কাঁদতে দেখেনি কেউ.., আসলে শোক সবাইকে দেখাতে আমার শাশুড়ি পারতেননা.., ফলে বাড়ি এসে দুইতিন দিন পাশে থেকে "আহা উহু" করার সুযোগও কেউ পায়নি কখনো,
এটা আত্মীয় স্বজনের পক্ষে মেনে নেওয়াটা সত্যিই কঠিন..কোথায় সবার দয়ার পাত্রী হয়ে মাথা নিচু করে থাকবে তা নয় , ভেবেছিলো এবারে হয়ত তেজ মরবে ছোট বৌ এর, কিন্তু না..বরং উল্টো হয়েছিল,
স্বামী মারা যাবার পরে ভাসুরেরা যখন ছেলে আর মা কে সম্পত্তি থেকে বাদ দেওয়ার তালে ছিল তখনি তিনি বুঝিয়ে ছিলেন তিনি সহজে দমবার পাত্রী নন, এতো বড়ো সাহস ভাসুরদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন আর জিতেওছেন তিনি,
কোর্টে তার তেজ দেখে অবাক হয় ওনার বাড়ির সবাই, কি করে পারলো একজন বাড়ির বৌ হয়ে!.. কে এসব পরামর্শ দিচ্ছে? কেনই বা দিচ্ছে? অতএব একলা মেয়ে মানেই.. তার চরিত্র হনন ভীষণ সহজ.. এক্ষেত্রেও তাই,
ওনার এইসব কাজের পিছনে কোনো না কোনো পুরুষ মানুষের সাহায্যর হাত থাকে..এ আবার উনি সবার সামনে স্বীকারও করেন..এই নির্লজ্জতাটা সহজে কেউ মেনে নিতে পারত না,
ওনার নির্ভেজাল স্বীকারোক্তিতে আরও নোংরা রঙ মাখিয়ে প্রচার করে আত্মতুষ্টি পেত সবাই, এমনি এমনি কেউ সাহায্য করে নাকি আজকাল!!..এই যুক্তিতে অভ্যস্ত টিকে থাকা সমাজ চোরা কথা আর ফুসফাসেই বিশ্বস্ত,
একে বিধবা তায় সুন্দরী..তারউপরে নিজেই বাড়ির নিচের তলায় শাড়ির ব্যবসা খুলেছেন .., একজন মহিলার পক্ষে একি এতোই কি সহজ..! পিছনে কোনো রহস্য না থাকলে!
আসলে পাড়ার মেয়ে বৌরাই ওনার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে.., তো পুরুষ মানুষের মাথা খেতে কতক্ষন!!
আমি নিজেও শাশুড়িকে দেখি..সাজতে ভালোবাসেন উনি, এই বয়সেও যথেষ্ট আকর্ষণীয়া, সুন্দরী না হয়েও এক আভিজত্য ঝকমক করে ওনার চোখে মুখে, সাধারণ শাড়িও ওনার পরার ধরণে অসাধারণ হয়ে ওঠে .. সেই সঙ্গে ম্যাচ করা মস্ত বড়ো এক টিপ ওনার কপাল জুড়ে ,
কথা বার্তা ওনার স্টাইল এই অঞ্চলে ছেলে বুড়ো মহিলামহলে ভীষণ আলোচনার বিষয়, একবার আলোচনা সভায় উঠলেই হয়.. "ওই যে বোসেদের বাড়ির বেধবা ছোট বৌ টা, গতকাল সন্ধ্যা আটটার সময় একটা বড়ো গাড়ি এলো বাড়ির সামনে .. পাক্কা একঘন্টা ছিল..হহেহে "..
"তাপ্পর তাপ্পর..!!"সঙ্গে সঙ্গে সবাই মুখিয়ে থাকে নতুন রসাস্বদনের জন্য,
বিয়ের পর মাত্র তিন বছর আমরা পাশাপাশি থেকেছি, দেখেছি কত লোক ওনার কাছে আনাগোনা করে, আমি মিথ্যে বলবোনা, প্রথম প্রথম সন্দেহের বসে আড়ি পেতেছি আমিও .. কিন্তু মানুষের প্রতি একে ওপরের বিশ্বাস ছাড়া কোনো আদিম রহস্য আমার চোখে পড়েনি.., আমার চোখকে ফাঁকি দেওয়া তো ওত সহজ নয়,
বিয়ের মাস খানেক পরে..সেদিন ভীষণ ঝড়বৃষ্টির রাতে অফিস থেকে বেরিয়ে কোনো বাস অটো পাইনি, জয়ও চেষ্টা করেছিল যেভাবেই হোক আমাকে অফিস থেকে নিয়ে যেতে, কিন্তু রাস্তায় কারেন্টের তার যত্র তত্র ছিঁড়ে থাকায় আর তার উপরে রাস্তায় জল জমায় আমি ভয় পেয়ে ওকে বারণ করি..ও অনেক চেষ্টা করেও আসতে পারছিলোনা , এদিকে রাত বাড়তে থাকায় অসহায় আমি আর ওদিকে জয় আর শাশুড়ির ছটফটানি.. শেষে অফিসের কাছে কলেজ লাইফের এক বন্ধু অম্লানের কথা মনে পড়তেই তাকে ফোন করলাম, অম্লান অম্লানবদনে রাজি হয়ে যেতেই জয়কে বলে তাদের বাড়িতে সেই রাতটুকু ছিলাম আমি.. বলাইবাহুল্য..অম্লান অবিবাহিত, মাকে নিয়ে থাকতো ফ্ল্যাটে.., কিন্তু ওর মা সেদিন আত্মীয়র বাড়িতে ছিল বলে ওর ফ্ল্যাটে থাকতে আমার ভিতরে একটু সংকোচ বোধ হলেও জয়ের গলায় স্বস্তির সুরে বুঝেছিলাম ও কি ভীষণ ভাবে বিশ্বাস করে আমায়.. আমাদের বন্ধুত্বকে ,
ভোর বেলাতে কোনোরকমে বাড়ি ফিরি আমি, বাড়িতে আমার শাশুড়ি আর জয় ছাড়া সবার মুখে রহস্যর হাসি ছিল, কারণ ততক্ষনে ওরা জেনে গেছে বাড়ির বৌ রাত্রে বাইরে কাটিয়ে এসেছে.., ওরা আমাকে সরাসরি কিছু বলতে পারেনি ঠিকই , কিন্তু ঠারে ঠরে বুঝিয়ে দিচ্ছিলো বেশ,
বড়ো জ্যাঠাশাশুড়ির নাতি টুবাই এর জন্মদিনে মেজো জেঠিশাশুড়ি আর থাকতে পারলোনা..পাশের জনকে বলছিলো.. "যেমন শাশুড়ি তেমন বৌমা ..এদের বর গুলোও কেমন ভেড়া হয় দ্যাখো ..বৌ বাইরে রাত কাটিয়ে এসেও বিন্দাস সংসার করে কি সুন্দর,"
আমি লজ্জায় সংকোচে চুপ করে গেলেও আমার শাশুড়ির কানে যে কথাটা গেছে সেটা বুঝতে পারিনি প্রথমে, উনি দেখি আমার পাশ থেকে উঠে মেজো জেঠিশাশুড়ির কাছে গিয়ে হেসে কিন্তু বেশ জোরেই বললেন .. "রাত কাটালেই চরিত্র খারাপ হয় আর দিন কাটালে হয়না বুঝি..সব চরিত্র নষ্টর কাজ রাতে হয় কে বলেছে তোমাকে মেজদি..নিজের মেয়ের দিকে খেয়াল দাও, শুনেছি বাইকে করে দিনের বেলাতেই অনেক ছেলের সাথে ঘোরাঘুরি করে "
সমস্ত হলঘর পিনড্রপ সাইলেন্ট হয়ে গিয়েছিলো.., সেদিন বুঝেছিলাম জয় কেন এতো উন্মুক্তমনের ..,
সেই থেকে আমার শাশুড়ির সাথে আমার হৃদয়ের সখ্যতা শুরু , ওনার সাথে থেকে বুঝেছি সমাজের কোনো কাজে কোনো মহিলা যদি এগিয়ে থাকে তাহলে সে বুঝি সবার কাছে আগে খারাপ হয়ে যায়,
তখন ভেবেছি.. একলা একজন মেয়ে বিভিন্ন কাজে কোনো পুরুষের সাহায্য নিতেই পারে..তার সাথে একটা আন্তরিক সম্পর্ক হতেই পারে..কিন্তু আমাদের সমাজ..সমস্ত সম্পর্ককে তুচ্ছ করে শুধুমাত্র পুরুষ নারীর আদিম সম্পর্কর মধ্যেই আটকে থেকে তাদেরকে দূর থেকে দেখে চুল চেরা বিচার করতে বসে ..,
এই সমাজকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বরাবর সমালোচনার শীর্ষে থাকা শাশুড়িকে.. কাছ থেকে দেখে আমার না ভালোবেসে উপায় ছিলোনা কিছুতেই,
যত দিন গেছে জয় আমার আর শাশুড়ির সম্পর্কের পরিবর্তনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে, কিন্তু এ সুখ আমার বেশিদিন সইলোনা,
গতকাল ভোরে আমাকে আর জয়কে একেবারে নিঃসঙ্গ করে হঠাৎ ঘুমের মধ্যে চলে গেলেন তিনি..,
আজ সকালে আবারও তার মৃত্যুর পরে তিনি সমালোচনার শীর্ষে রইলেন..
ওনারা রেগে বেরিয়ে যাবার পরে পুরোহিতের সাথে আলোচনা করে তিনি চলে যাবার পরে মায়ের ছবির দিকে তাকিয়ে জয় চুপচাপ বসে ছিল সজল চোখে, আমি ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে টেবিলে রাখা চিঠিটা হাতে নিলাম ..কী এমন লেখা আছে এতে!!
চিঠিতে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল ওনার শেষ ইচ্ছেটুকু ..
মৃত্যুর পরে যেন ঘাট..শ্রাদ্ধ শান্তিতে লোক খাওয়ানো না হয় , তাছাড়া ছেলের নেড়া হওয়া, চুল না আঁচড়ে.. তেল না মেখে.. মালসার সেদ্ধ ভাত খেয়ে..একবস্ত্র পরে.. এইসব লোকদেখানো দুঃখের আয়োজন যেন না করা হয় , শুধু যতটা সম্ভব কম খরচে পূজা শ্রাদ্ধ শান্তি যেটুকু প্রয়োজন.. সেটুকুই করা হয় যেন ..ওনার মতে লোকদেখানো আচারব্যবস্থার থেকে ছেলের দুইফোঁটা চোখের জলের তর্পনে উনি অনেক বেশি শান্তি পাবেন মৃত্যুর পরে ,
চিঠিটা পড়ে জয়ের পাশে বসে ওকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে হুহু করে কেঁদে ফেললাম আমিও ।
©ঝুম্পা মন্ডল
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
আমি অভিভূত ...
আমার একজন বয়স্কা দূর সম্পর্কের আত্মীয়া আছেন একদম এই চরিত্রটির মতো , হ্যাঁ বেঁচে আছেন উনি এখনো ...
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
ভালবাসার শক্তি
ব্রেকাপের ভয়টাই আমরা পাই, বিচ্ছেদের ভয়টা নয়।
বিছানার আদরটাই আমাদের জানা, একদিন বিছানার পাশের ফাঁকা জায়গাটা আমাদের মাথাতেও আসে না।
প্রেমের পর শুধু বিয়ে না হওয়ার ভয়টাই আমরা পাই, বিয়ের পর শেষদিন জীবনের শেষ বিয়ের সাজটার আশঙ্কা আমাদের কল্পনাতেও আসে না। সেদিনের বিয়েতেও চন্দনে সাজবে।
একে অপরকে জড়িয়ে থাকার তৃপ্তিটাই আমরা চাই, কিন্তু একে অপরকে ছেড়ে থাকার স্বাদটা আমরা পাইনা।
বর্তমানে একে অপরে অভিমান আর ইগোয় পোড়ার যন্ত্রনাটুকুই আমরা পাই, কিন্তু একে অপরকে ছেড়ে ভবিষ্যতে চিতার আগুনে পোড়ার যন্ত্রনাটা আমাদের মনেও থাকে না। ভুলে যাই এটাই যে আজ দুজন পুড়ছি অন্তরে অন্তরে, সেদিন একজন পুড়বে বাহিরে অপরজন অন্তরে।
আজ পার্কে একে অপরকে জড়িয়ে থাকাকালীন রাত আটটা বাজলেই যেমন দারোয়ান পার্ক খালি করার সিটি বাজিয়ে দুজনকে আলাদা করে দেয়, সেদিন শ্মশানে নিয়ে যাবার জন্যও প্রিয়জনেরা তাড়া দেবে, দুজনকে আলাদা করে দেবে। সেদিন শেষবারের মতন জড়িয়েও থাকতে দেবেনা একটু বেশিক্ষন।
সেদিন হয়তো আমার অদৃশ্য আত্মা তাকে কাঁদতে দেখেও তার চোখের জল মুছিয়ে দিতে পারবে না, বুকে জড়িয়ে ধরতে পারবে না, সে কোনো বিপদে পড়েছে দেখেও তাকে বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবে না। সেদিন নিজেই নিজের কাছে পরাধীন হয়ে যাবো। দেখতে পাবো সব, দেখাতে পারবো না কিছুই।
আসল ব্রেকাপ সেটা নয় যেখানে একে অপরকে ছেড়ে থাকলেও একদিন ফিরে আসার সম্ভাবনা থাকে, আসল বিচ্ছেদ সেটাই যেখানে ফেরার কোনো সম্ভাবনাই থাকে না।
একা থাকতে ভয় লাগে না, ভয় এটাই যে কে আগে চলে যাবো এবং কে একা হয়ে যাবো বাকি জীবনটা।
আজ ঝগড়া হয়েছে ওর সাথে? কাল ও আগে ক্ষমা চাইলে তারপর কথা বলবে ভাবছো? ভেবে দেখেছো কাল যদি তুমি মারা যাও? কিংবা তার ভাগ্যে যদি কোনো অ্যাকসিডেন্ট লেখা থাকে?
আমরা কেউ জানিনা কতদিন বাঁচব? তাই জীবনের প্রত্যেকটা সেকেন্ড একে অপরের সাথে বাঁচতে শিখুন ভালো ভাবে। সামান্য অভিমানে স্বেচ্ছায় দূরে থাকে বোকারা, কারণ এক না একদিন দূরে হয়ে যেতেই হবে সারাজীবনের জন্য।
যতদিন বেঁচে আছি একে অপরের সাথে বাঁচুন, কারণ সাথছাড়া হয়ে বাঁচার সুযোগ সবার একদিন আসবেই, কেউ আটকাতে পারবে না। তাই একা থাকতে ভয় লাগে না, ভয় এটাই যে কে আগে চলে যাবো এবং কে একা হয়ে যাবো বাকি জীবনটা। ছেড়ে থাকার আসল কষ্টটা কেউ পাননি বলেই বারবার ঝগড়া করে অভিমান আর ইগো নিয়ে আলাদা থাকেন।
যান ঝগড়া মিটিয়ে ফেলুন প্লিজ, কথা বলুন তার সাথে। ?
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন প্রেমে থাকুন... ❤
(Collected)
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
মিঠেকড়া
অঘ্রানের শেষ বিয়ের তারিখ ছিল যে দিনটায়, সেইদিন ই, গোধূলি লগ্নে 'শাণ্ডিল্য' থেকে 'কাশ্যপ' গোত্রের হয়ে গেল দীপশিখা।
আর তারপর, বাড়ির সবাইকে ভাল করে চিনে ওঠার আগেই অষ্টমঙ্গলায় 'ওই বাড়ি' চলে যাওয়া, আড়াইদিন কাটানো, আর তারপরেই চব্বিশে ডিসেম্বর শৌণকের সঙ্গে ঘুরতে চলে গেছিল কাশ্মীর। তা, ডিসেম্বর মাসে কাশ্মীর ইন্সটাগ্রামের রিল ভিডিওর জন্য খুব ভাল হলেও, ঠান্ডাটা বেশ জাঁকিয়েই লেগে গেছিল দীপশিখার। আর, বোধহয় পানীয় জলের সমস্যা থেকেই, পেটখারাপ ও। সবমিলিয়ে পুরোনো বছরের শেষটা একদম ভাল কাটেনি ওর। শৌণক না হয় মোটের ওপর চেনা, বছর দেড়েক আগে ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট থেকে আলাপ, কথাবার্তা, তারপর দু'দুবার বিয়ের ডেট ফিক্স হবার পরেও পিছিয়ে গেছিল অতিমারির জন্য। আসলে ওদের বাড়িতে দুর্গাপুরের পিসিমণি ছাড়া মেয়েলি কাজ করার কেউ নেই। মা চলে যাবার পর থেকে বাবা রান্নাবান্না মোটামুটি শিখে নিলেও বিয়ের আচার -আচরণ তো পারেন না! তাই, শেষমেষ আগে ঠিক হয়ে যাওয়া জুন মাসের বদলে অঘ্রানেই বিয়েটা হল ওদের। কিন্তু ওই যে... নতুন পরিবারের সঙ্গে আলাপ পরিচয়টাই হয়নি এখনও ভাল ভাবে।
ভাবতে ভাবতেই উঠে বসে দীপশিখা। নতুন একটা বছর এসে গেল। আজ বছরের প্রথম রবিবার। তাও কেমন একটা ধোঁয়াটে ভাব চারিদিকে! সোশ্যাল মিডিয়াতে স্ক্রল করলেই দেখা যাচ্ছে অতিমারি আবার ফিরে আসছে!
পায়ে পায়ে ঘরের বাইরে এলো ও। বাইরে মিঠে রোদ্দুর। আজ যেন শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগছে। আর খুব খিদেও পেয়েছে। এতদিন তো নইলে খেতেই ইচ্ছে করছিল না ওর।
দরজা খুলে বাইরে এসে দেখে শ্বশুরমশাই খবরের কাগজ পড়ছেন। সবিতা মাসি ঢাউস ফ্রিজটার সামনে বসে ঘষে ঘষে ফ্রিজ পরিষ্কার করছেন। শাশুড়ি মা... নিশ্চয়ই রান্নাঘরে। একটু কুণ্ঠাবোধ হচ্ছিল ওর। নতুন বৌ, এত দেরি করে উঠল... কেউ যদি কিছু মনে করেন! ইস, বড্ড লজ্জা লাগছে ওর।
পিসিমণি বারবার করে বলে দিয়েছিলেন নিয়ম মেনে চলতে, যাতে বাবা মায়ের নামে কেউ কিছু বলতে না পারেন, কিন্তু, তা আর হল না বোধহয়। যতই শরীর খারাপ থাক... সবাই বলে "শ্বশুরবাড়ি কখনও নিজের বাড়ি হয় না!"
রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াচ্ছিল দীপশিখা, হঠাৎ সবিতামাসি বলে উঠলেন "ও নতুন বৌমণি, তোমাকে রান্নাঘরে যেতে মানা করেচে তোমার শাউড়ী।"
শুনে একটু দমে গেল ও।
শাশুড়ি মা চান না ও রান্নাঘরে যান? কিন্তু কেন?
উনি কি খুব রাগ করেছেন ওর ওপর?
তাহলে কি... খুব বকা দেবেন ওকে? না কথাই বলবেন না?
খুব অসহায় লাগছে ওর। হাত পা যেন ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
"এই সবিতা, তোমাকে বলেছিলাম না বৌমা উঠলে আমাকে জানাবে?" পিছন থেকে বলে ওঠেন শাশুড়ি মা। তারপর ই যোগ করেন "মুখ ধুয়েছ তুমি?"
"হ্যাঁ" বলে ঘাড় নাড়ে দীপশিখা।
"টেবিলে বসো তাহলে।" বলে চলে যান উনি আবার। কয়েক সেকেন্ড পরে ফিরে আসেন, একটা কাপ নিয়ে।
"খুব তো ঠান্ডা লেগেছে, এটা এক ঢোঁকে খেয়ে ফেলো তো!"
"এটা কি?" জিজ্ঞেস করবে ভেবেও করতে পারেনা ও। বরং গিলে ফেলে।
উফ! কিরকম একটা ঝাঁঝালো আর তিতকুটে!
"কি হলো, মুখটা অমন ব্যাজার হয়ে গেল কেন? কত উপকারী জানো? এইজন্যই সবিতাকে বলেছিলাম তোমাকে রান্নাঘরে না যেতে দিতে। ওই বাসক পাতা টাতা দেখলে তো খেতেই না! চিনি না আমি তোমাদের! আমার ছেলেটাও তো এরকম! যাই হোক, দু তিনদিন খাও, সেরে যাবে। আর পেট কেমন আছে তোমার? লুচি খাবে?" নরম গলায় জিজ্ঞেস করেন উনি।
মিষ্টি হাসে দীপশিখা।
অবিকল মায়ের মতো শাসন। এমনকি ওই বাসক পাতা-মিছরি টিছরি দিয়ে বানানো ক্কাথটার স্বাদ ও এক।
আর লুচি!
একমুখ হেসে টুক করে মাথা নেড়ে দেয় ও।
"লুচির জন্য পেট ঠিক হয়ে গেল? না সত্যি সত্যি পেট ঠিক আছে?" হেসে জিজ্ঞেস করেন শ্বশুরমশাই। প্রশ্রয় মেশানো সেই স্বরে।
ঠিক বাবার মতো!
হঠাৎ করেই সবকিছু খুব, খুব, খুউউউউব ভাল লাগছে দীপশিখার।
মিঠে রোদ্দুরের মতোই জীবনটাও বড্ড মিষ্টি, এখন...
Posts: 3,682
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
আজ একটা স্বপ্ন দেখলাম আপনাকে নিয়ে ....
স্বপ্নটা এরকম --- দেখি আমাকে আপনি ফোন করেছেন। স্ক্রিনে দেবু দা নাম উঠেছে। কিছুক্ষণ ভেবে কলটা রিসিভ করলাম। দেখি হচ্ছে না। বারবার চেষ্টা করলাম তবুও রিসিভ হচ্ছে না। এদিকে রিং হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেল। দেখি আমার এলার্ম বাজছে
❤❤❤
•
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
মিঠেকড়া খুব সুন্দর লাগলো..... ❤
•
|