Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
*কলকাতার কচুরি বৃত্তান্ত*

 
সকাল সাড়ে আটটা হলুদ রোদ মাখা শ্যামবাজার মোড় থেকে ট্রামগাড়ি বাঁক নিচ্ছে ছায়াঝরা বিধান সরনীর দিকে কর্চরিকার দেখা পেতে হলে, এটাই সেরা সময়
 
কর্চরিকা আদি নাম আর এখন, কচুরি যার গল্প শুরু করতে হলে, উত্তরের কলকাতায় পা রাখতেই হবে
 
*হরিদাস মোদক*
 
শ্যামবাজার মোড়েই পাশাপাশি দুই হরিদাস মোদকের দোকান তার মধ্যে যে দোকানটা একটু পুরনো দেখতে, সেখানে একবার ঢুকে পড়লেই, কেমন যেন চুপচাপ হয়ে যায় চারপাশ কাঠের বেঞ্চ-টেবিল রঙচটা দেয়ালে মহাপুরুষদের বাঁধান ছবি, রজনীগন্ধার সরু মালা ঝুলছে সেখানে কলকাতার আকাশ যখন আরো একটু নীল ছিল, ধুতি পরা যুবকের দিকে যখন কেউ অবাক হয়ে ঘুরে তাকাতো না, যেন সেই হাওয়া বাতাস আজো থমকে আছে এখানে আর, আধো আবছায়া থেকে ঝুড়ি হাতে একজন এগিয়ে আসছে আপনার দিকে সবুজ কলাপাতায় ঘিয়েরঙা দুটি কচুরি থিতু হল তারপর তার সঙ্গে হাতা ভরা ছোলার ডাল নাহলে খোসা সমেত আলুর তরকারি রসিক মাত্রেই জানেন, শ্রীরাধিকা যেমন বৃন্দাবনচন্দ্রের হ্লাদিনীশক্তি, কচুরির সঙ্গে ডাল বা তরকারির সম্পর্কও ঠিক তাই আমরা যুগল বড় ভালবাসি
 
সে যাই হোক, এই দোকানে কচুরি মিলবে শুধু সকালে তারপর লুচি পাশের দোকানে বিকেলবেলাতেও পাওয়া যায়
 
অভিধান বলছে, ডালের পুর দেয়া ভাজা খাবারই হল কচুরি সেভাবে দেখলে, ছোলার ডালের পুরীকেও কচুরি বলতে হবে
 
*কিন্তু না খাঁটি কচুরিতে কাঁচা বিউলির ডাল আর হিঙের পুর ছাড়া অন্য কিছু চলবে না*
 
আবার একই পুর যখন পাঁচফোড়ন দিয়ে ভাজা হয়ে ময়দার লেচিতে ভরা হবে, তখন তার নাম *রাধাবল্লভী* শীতের কথা আলাদা তখন কড়াইশুঁটির পালা
 
এসব কথার ফাঁকে, পাঁচমাথার মোড় ছেড়ে পানসি ভিড়েছে বাগবাজারে, *পটলার ঘাটে* চলুন, নেমে পড়া যাক
 
বাগবাজারে যখনই ঢুকেছি, রাস্তার দুপাশে সাজানো থরে থরে কচুরি দেখে একটাই কথা মনে হয়েছে, এত কচুরি খায় কারা! উত্তর মেলেনা শুধু ভোজবাজির মতো খালি হয়ে যায় ঝুড়ির পর ঝুড়ি কিন্তু, এই ভিড়েও পটলার কচুরির হিসেবনিকেশ আলাদা সে অটল হিমাদ্রীসম দেখতে দেখতে তিরানব্বই বছর পার করে দিল এই ছোট্ট দোকান! কাচের শো কেসের ওপারে, বাবু হয়ে বসে আছেন দিব্যেন্দু সেন এখনকার মালিক
 
চোখে ঋত্বিক ঘটকের সেই কালো ফ্রেমের চশমা
-‘কে শুরু করেছিলেন দোকান?’
-‘আমার ঠাকুরদা, শশীভূষণ সেন
-‘তিনিই কি পটলা?’
-না পটলা তাঁর ছেলে আমার কাকা ভালো নাম কার্তিক সেন
টুকরোটাকরা কথার ফাঁকে হাত চলছে সেনবাবুর কচুরী আর ছোট আলুর তরকারি, শালপাতার বাটিতে ছড়িয়ে পড়ছে হাতে হাতে বিকেলে এখানে রাধাবল্লভী পাবেন দুটি বল্লভী, দুটুকরো আলুর দম
 
পাকা খদ্দের ভুলেও কোনোদিন একটুকরো আলু বেশি চাইবেনা চাওয়াটা ভব্যতা নয় যা দেওয়া হয়েছে, একেবারে ঠিকঠাক আলুরদম বাজার খুঁজেও পাওয়া যাবেনা
 
এবার সুকিয়া স্ট্রিট মোড় থেকে কয়েক পা এগোলেই, *গীতিকা* সরু একফালি দোকানে, কাঠের পাটাতনে বসে একটানা কচুরি বেলে চলেছেন একজন পাশেই ময়দার তাল ঠাসা চলছে এখানে কচুরি পাওয়া যায় যেকোন সময় হিঙের কচুরি আলুর তরকারি আর চাটনি মাখিয়ে মুখে দিলে কী হবে, বলি কেমনে! এই দোকান শুরু করেছিলেন গনেশ দলুই মুড়ি, বাতাসা, তেলেভাজা আর কচুরি এখন দোকান শঙ্কর দলুইয়ের হাতে কণ্ঠি পরা শ্যামল মানুষটি
 
ঝকঝকে কথাবার্তা ভুরু একটু কুঁচকেই বলেছিলাম, ’হিঙের দাম তো অনেক দিচ্ছেন কীভাবে?’ মিডল স্ট্যাম্প ছিটকে গেল আমার *‘না দিলে হিঙের কচুরি হবে কী করে!’*
 
হাসছেন শঙ্কর দলুই গনেশ দলুইয়ের নাতির নাতি শিক্ষা আমার পুরো হয়নি এখনো, বললাম, ‘কতদিনের দোকান? একশো বছর হবে?’ আবার সেই হাসি, ‘আমারই তো পঞ্চাশ পেরিয়ে গেল…’
 
পরের দিন সোজা কলেজ স্ট্রিট *পুঁটিরামের* দোকানে এখানে বলে রাখি, কচুরি আর রাধাবল্লভীর তফাৎটা আমায় জানিয়েছিলেন পুঁটিরামের ইন্দ্রজিৎ মোদক কচুরির থালা হাতে খোঁজখবর শুরু করতেই বললেন, ‘আগে খেয়ে নিন পরে রহস্যভেদ
 
দশটার পর এখানে রাধাবল্লভীর পালা সঙ্গে কাঁচা সোনার ছোঁয়া লাগা ছোলার ডাল হালকা একটু আদা ফোঁড়নের গন্ধ, মন ছুঁয়ে যাবে বারবার খাওয়া শেষ আমার
 
কাউন্টার ছেড়ে বেরিয়ে এলেন ইন্দ্রজিৎবাবু
বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর শিষ্য কুলদানন্দ ব্রহ্মচারীর ভক্ত ছিলেন জিতেন্দ্রনাথ মোদক পুঁটিরাম মোদক তাঁর পিসেমশাই নিজের হাতে ভিত খুঁড়ে, জিতেন্দ্রনাথের জন্য এই দোকান চালু করেন কুলদানন্দসেই যে চালালেন, আজো চলছে’, একগাল হাসলেন ইন্দ্রজিৎবাবু হাতজোড় করে আবার বললেন, ‘গুরুদেবেরই দোকান আমরা সব এমনিই আছি
 
*কলকাতায় কচুরির খোঁজ সাঙ্গ করা, আর পিছনদিক করে এভারেস্টে ওঠা, দুটোই একরকম*
 
তবু এই ঝাঁকি দর্শনে, একটু অন্যরকম স্বাদের কথা বলতে ইচ্ছে করছে এবার
 
ধর্মতলায়, কর্পোরেশন আর চাঁদনির ক্রসিঙে থমকে দাঁড়িয়েছি বারবার
 
পাশাপাশি দুটো অবাঙালি কচুরির দোকান যেকোনো একটায় ঢুকে পড়লেই হল তবে এখানে কচুরির থেকেও টানটা বেশি কাঁচা লঙ্কার আচারের দরুন ঘন সবুজ এই আচারের মোহে পড়েছিল কলকাতার নব্বই দশকের কবিরা তারা এর নাম দিয়েছিল, *শয়তানের কচুরি*
 
এখানকার আমআদার চাটনিটিও মন্দ নয় হিঙের কচুরি, চাটনি, আচার আর তরকারি ফুরিয়ে এলেই, বাটি ভরে ঢেলে দিয়ে যাচ্ছে আবার যাকে বলে ভরপেট খাওয়া
 
কচুরির কথায় একটা বিষয় পরিষ্কার করে জানানোর দরকার কলকাতার নামকরা বহু মিষ্টির দোকানেই কচুরি পাওয়া যায় আমার- আপনার পাড়ার দোকানেও যায় নামডাক সব ক্ষেত্রেই অল্পবিস্তর রয়েছে কিন্তু এখানে আমরা খোঁজ করছি সেইসব দোকানের, যাদের তেলেভাজা বা মিষ্টির চাহিদা থাকলেও, লোকে তাদের চেনে কচুরি দুনিয়ার নক্ষত্র বলে
 
এরকমই একটা দোকান হল *ভবানীপুরের শ্রীহরি* এটাসেটা মিষ্টি আছে হরেকরকম কিন্তু ভিড়টা হল কচুরি আর রাধাবল্লভীর শ্রীহরি কখনো ফাঁকা দেখেছি, এরকমটা ঠিক মনে পড়েনা এখানেও আসল চাহিদাটা বোধহয় ছোলার ডালের ১৯১২ সালে এই দোকান শুরু করেছিলেন সন্তোষকুমার গুঁই
 
কিছু বলা হল আর বাকি থেকে গেল অনেকটাই শ্যামবাজারের *দ্বারিক*, দেশপ্রিয় পার্কের কাছে *মহারানি*, বা খিদিরপুরের বহু পুরনো অবাঙালি কচুরির দোকান কলকাতার আঁকাবাঁকা গলির আবছায়ায় লুকিয়ে থাকল কতজন আর তাছাড়া, রুচিভেদ বলেও তো একটা ব্যাপার আছে

Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(15-12-2021, 01:11 PM)ddey333 Wrote: *কলকাতার কচুরি বৃত্তান্ত*

 
সকাল সাড়ে আটটা হলুদ রোদ মাখা শ্যামবাজার মোড় থেকে ট্রামগাড়ি বাঁক নিচ্ছে ছায়াঝরা বিধান সরনীর দিকে কর্চরিকার দেখা পেতে হলে, এটাই সেরা সময়
 
কর্চরিকা আদি নাম আর এখন, কচুরি যার গল্প শুরু করতে হলে, উত্তরের কলকাতায় পা রাখতেই হবে
 
*হরিদাস মোদক*
 
শ্যামবাজার মোড়েই পাশাপাশি দুই হরিদাস মোদকের দোকান তার মধ্যে যে দোকানটা একটু পুরনো দেখতে, সেখানে একবার ঢুকে পড়লেই, কেমন যেন চুপচাপ হয়ে যায় চারপাশ কাঠের বেঞ্চ-টেবিল রঙচটা দেয়ালে মহাপুরুষদের বাঁধান ছবি, রজনীগন্ধার সরু মালা ঝুলছে সেখানে কলকাতার আকাশ যখন আরো একটু নীল ছিল, ধুতি পরা যুবকের দিকে যখন কেউ অবাক হয়ে ঘুরে তাকাতো না, যেন সেই হাওয়া বাতাস আজো থমকে আছে এখানে আর, আধো আবছায়া থেকে ঝুড়ি হাতে একজন এগিয়ে আসছে আপনার দিকে সবুজ কলাপাতায় ঘিয়েরঙা দুটি কচুরি থিতু হল তারপর তার সঙ্গে হাতা ভরা ছোলার ডাল নাহলে খোসা সমেত আলুর তরকারি রসিক মাত্রেই জানেন, শ্রীরাধিকা যেমন বৃন্দাবনচন্দ্রের হ্লাদিনীশক্তি, কচুরির সঙ্গে ডাল বা তরকারির সম্পর্কও ঠিক তাই আমরা যুগল বড় ভালবাসি
 
সে যাই হোক, এই দোকানে কচুরি মিলবে শুধু সকালে তারপর লুচি পাশের দোকানে বিকেলবেলাতেও পাওয়া যায়
 
অভিধান বলছে, ডালের পুর দেয়া ভাজা খাবারই হল কচুরি সেভাবে দেখলে, ছোলার ডালের পুরীকেও কচুরি বলতে হবে
 
*কিন্তু না খাঁটি কচুরিতে কাঁচা বিউলির ডাল আর হিঙের পুর ছাড়া অন্য কিছু চলবে না*
 
আবার একই পুর যখন পাঁচফোড়ন দিয়ে ভাজা হয়ে ময়দার লেচিতে ভরা হবে, তখন তার নাম *রাধাবল্লভী* শীতের কথা আলাদা তখন কড়াইশুঁটির পালা
 
এসব কথার ফাঁকে, পাঁচমাথার মোড় ছেড়ে পানসি ভিড়েছে বাগবাজারে, *পটলার ঘাটে* চলুন, নেমে পড়া যাক
 
বাগবাজারে যখনই ঢুকেছি, রাস্তার দুপাশে সাজানো থরে থরে কচুরি দেখে একটাই কথা মনে হয়েছে, এত কচুরি খায় কারা! উত্তর মেলেনা শুধু ভোজবাজির মতো খালি হয়ে যায় ঝুড়ির পর ঝুড়ি কিন্তু, এই ভিড়েও পটলার কচুরির হিসেবনিকেশ আলাদা সে অটল হিমাদ্রীসম দেখতে দেখতে তিরানব্বই বছর পার করে দিল এই ছোট্ট দোকান! কাচের শো কেসের ওপারে, বাবু হয়ে বসে আছেন দিব্যেন্দু সেন এখনকার মালিক
 
চোখে ঋত্বিক ঘটকের সেই কালো ফ্রেমের চশমা
-‘কে শুরু করেছিলেন দোকান?’
-‘আমার ঠাকুরদা, শশীভূষণ সেন
-‘তিনিই কি পটলা?’
-না পটলা তাঁর ছেলে আমার কাকা ভালো নাম কার্তিক সেন
টুকরোটাকরা কথার ফাঁকে হাত চলছে সেনবাবুর কচুরী আর ছোট আলুর তরকারি, শালপাতার বাটিতে ছড়িয়ে পড়ছে হাতে হাতে বিকেলে এখানে রাধাবল্লভী পাবেন দুটি বল্লভী, দুটুকরো আলুর দম
 
পাকা খদ্দের ভুলেও কোনোদিন একটুকরো আলু বেশি চাইবেনা চাওয়াটা ভব্যতা নয় যা দেওয়া হয়েছে, একেবারে ঠিকঠাক আলুরদম বাজার খুঁজেও পাওয়া যাবেনা
 
এবার সুকিয়া স্ট্রিট মোড় থেকে কয়েক পা এগোলেই, *গীতিকা* সরু একফালি দোকানে, কাঠের পাটাতনে বসে একটানা কচুরি বেলে চলেছেন একজন পাশেই ময়দার তাল ঠাসা চলছে এখানে কচুরি পাওয়া যায় যেকোন সময় হিঙের কচুরি আলুর তরকারি আর চাটনি মাখিয়ে মুখে দিলে কী হবে, বলি কেমনে! এই দোকান শুরু করেছিলেন গনেশ দলুই মুড়ি, বাতাসা, তেলেভাজা আর কচুরি এখন দোকান শঙ্কর দলুইয়ের হাতে কণ্ঠি পরা শ্যামল মানুষটি
 
ঝকঝকে কথাবার্তা ভুরু একটু কুঁচকেই বলেছিলাম, ’হিঙের দাম তো অনেক দিচ্ছেন কীভাবে?’ মিডল স্ট্যাম্প ছিটকে গেল আমার *‘না দিলে হিঙের কচুরি হবে কী করে!’*
 
হাসছেন শঙ্কর দলুই গনেশ দলুইয়ের নাতির নাতি শিক্ষা আমার পুরো হয়নি এখনো, বললাম, ‘কতদিনের দোকান? একশো বছর হবে?’ আবার সেই হাসি, ‘আমারই তো পঞ্চাশ পেরিয়ে গেল…’
 
পরের দিন সোজা কলেজ স্ট্রিট *পুঁটিরামের* দোকানে এখানে বলে রাখি, কচুরি আর রাধাবল্লভীর তফাৎটা আমায় জানিয়েছিলেন পুঁটিরামের ইন্দ্রজিৎ মোদক কচুরির থালা হাতে খোঁজখবর শুরু করতেই বললেন, ‘আগে খেয়ে নিন পরে রহস্যভেদ
 
দশটার পর এখানে রাধাবল্লভীর পালা সঙ্গে কাঁচা সোনার ছোঁয়া লাগা ছোলার ডাল হালকা একটু আদা ফোঁড়নের গন্ধ, মন ছুঁয়ে যাবে বারবার খাওয়া শেষ আমার
 
কাউন্টার ছেড়ে বেরিয়ে এলেন ইন্দ্রজিৎবাবু
বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর শিষ্য কুলদানন্দ ব্রহ্মচারীর ভক্ত ছিলেন জিতেন্দ্রনাথ মোদক পুঁটিরাম মোদক তাঁর পিসেমশাই নিজের হাতে ভিত খুঁড়ে, জিতেন্দ্রনাথের জন্য এই দোকান চালু করেন কুলদানন্দসেই যে চালালেন, আজো চলছে’, একগাল হাসলেন ইন্দ্রজিৎবাবু হাতজোড় করে আবার বললেন, ‘গুরুদেবেরই দোকান আমরা সব এমনিই আছি
 
*কলকাতায় কচুরির খোঁজ সাঙ্গ করা, আর পিছনদিক করে এভারেস্টে ওঠা, দুটোই একরকম*
 
তবু এই ঝাঁকি দর্শনে, একটু অন্যরকম স্বাদের কথা বলতে ইচ্ছে করছে এবার
 
ধর্মতলায়, কর্পোরেশন আর চাঁদনির ক্রসিঙে থমকে দাঁড়িয়েছি বারবার
 
পাশাপাশি দুটো অবাঙালি কচুরির দোকান যেকোনো একটায় ঢুকে পড়লেই হল তবে এখানে কচুরির থেকেও টানটা বেশি কাঁচা লঙ্কার আচারের দরুন ঘন সবুজ এই আচারের মোহে পড়েছিল কলকাতার নব্বই দশকের কবিরা তারা এর নাম দিয়েছিল, *শয়তানের কচুরি*
 
এখানকার আমআদার চাটনিটিও মন্দ নয় হিঙের কচুরি, চাটনি, আচার আর তরকারি ফুরিয়ে এলেই, বাটি ভরে ঢেলে দিয়ে যাচ্ছে আবার যাকে বলে ভরপেট খাওয়া
 
কচুরির কথায় একটা বিষয় পরিষ্কার করে জানানোর দরকার কলকাতার নামকরা বহু মিষ্টির দোকানেই কচুরি পাওয়া যায় আমার- আপনার পাড়ার দোকানেও যায় নামডাক সব ক্ষেত্রেই অল্পবিস্তর রয়েছে কিন্তু এখানে আমরা খোঁজ করছি সেইসব দোকানের, যাদের তেলেভাজা বা মিষ্টির চাহিদা থাকলেও, লোকে তাদের চেনে কচুরি দুনিয়ার নক্ষত্র বলে
 
এরকমই একটা দোকান হল *ভবানীপুরের শ্রীহরি* এটাসেটা মিষ্টি আছে হরেকরকম কিন্তু ভিড়টা হল কচুরি আর রাধাবল্লভীর শ্রীহরি কখনো ফাঁকা দেখেছি, এরকমটা ঠিক মনে পড়েনা এখানেও আসল চাহিদাটা বোধহয় ছোলার ডালের ১৯১২ সালে এই দোকান শুরু করেছিলেন সন্তোষকুমার গুঁই
 
কিছু বলা হল আর বাকি থেকে গেল অনেকটাই শ্যামবাজারের *দ্বারিক*, দেশপ্রিয় পার্কের কাছে *মহারানি*, বা খিদিরপুরের বহু পুরনো অবাঙালি কচুরির দোকান কলকাতার আঁকাবাঁকা গলির আবছায়ায় লুকিয়ে থাকল কতজন আর তাছাড়া, রুচিভেদ বলেও তো একটা ব্যাপার আছে


হুগলী জেলার মগরার বিখ্যাত দেশবন্ধুর হিঙের কচুরি ! প্রায় ১৫০ বছর বয়স দোকানটার ! সকাল ৮ টা বাজতেই লোকেদের লাইন লেগে যায় ! সকাল আটটা থেকে দুপুর বারোটা ! সঙ্গে কখনো চ্ছোলার ডাল, কখন আলু কপি, বা কুমড়ো বা পাঁচমিশালি তরকারি ! এখনও প্রতিদিন তার আট বস্তা ময়দা লাগে সাথে নিজের হাতে পেষা ৩০ কিলো ভাজা ছোলার ছাতু ! কি অপূর্ব তার টেস্ট যে খায়নি সে জানতেও পারবে না ! ! বংশ পরম্পরায় এই দোকান চলে যাচ্ছে ! অনেক কষ্ট করে আমি ওদের বানানো কচুরি শিখেছিলাম ! এখন আমিও মাঝে মধ্যে আমার পরিবার বা বিশেষ অথিতি সমাগমে বেশ ভালই নাম কামাই !   
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
শখ !
সংগৃহীত  !

"ছোটো পেঁয়াজটা কাট তো ,আমি ভাতটা  বের আনি মিটসেলফ থেকে ।"- মালতি রান্নাঘর থেকে বাসনগুলো কলপাড়ে নিয়ে যেতে যেতে শুনলো বাড়ির বড়বৌ বলছে বাড়ির ছোটোবৌকে।
এতো বাড়িতে কাজ  করে মালতি কিন্তু জায়েদের মধ্যে এতো মিল আগে কোথাও দেখেনি।এবাড়িতে রান্নাঘর  আর কলপাড়ের মাঝে বিশাল হলঘর। সেই হলঘর অন্যদিন  ফাঁকা ফাঁকা থাকলেও রবিবার বেশ জমজমাট। বার ভুলে গেলেও এই ঘরটা দেখে যে কেউ সহজে বার টা বলে দিতে পারবে আজকের ।
বাসন নিয়ে যাওয়ার সময় মালতি দেখলো হলঘরে একেকজন একেক দিকে ছড়িয়ে বসে আছে।বাড়ির ছেলেরা, বাচ্চারা, শশুর শাশুড়ি সবাই। আর সবার সামনে প্লেট।
ইচ্ছে করলেও মালতি তাকালো না। কিন্তু গন্ধে টের পাচ্ছে গরম গরম ফুলকো লুচি আছে সবার পাতে।
পা চালিয়ে হলঘর টুকু হেটে গেল মালতি । ঐটুকু যেতে গিয়ে লুচির গন্ধে খিদে পেয়ে গেল ওর।আজ এমনি বেরোনোর আগে কিচ্ছুটি মুখে দেয় নি। কি করে খাবে ছেলেটাও যে না খেয়ে বেরিয়ে গেল আজ,এরকমই একটা বড়োলোক বাড়িতে গাড়ি চালায় মালতির ছেলে, রবিবারও যেতে হয়!
প্রায় কুড়ি মিনিট লাগলো মালতির বাসন গুলো ধুতে। নেহাত মানুষ গুলো ভালো আর টাকাটাও অনেকখানি দেয়, নাহলে সত্যি এই বাড়ির এতগুলো লোকের কাজের খাটনি কম না।
মাজা বাসন গুলো নিয়ে হলঘরে ঢুকতেই দেখলো ঘর অনেকটা ফাঁকা।বোঝা গেল রবিবারের সকালে এই জমায়েত শুধু সকালের খাবারের জন্য। আবার দুপুরে হয়তো এক হবে সবাই।সেটাও খাবারের জন্যই । ঘর ফাঁকা বলেই হয়তো পুরো ঘর জুড়ে এখনো  লুচির গন্ধ খেলে বেড়াচ্ছে। নাকটা একটু টেনে নিলো মালতি। কিছু কিছু জিনিস আছে যেগুলো  নিজের কাছে করলে নিজের লজ্জা লাগে না, বরং আত্মতৃপ্তি হয়!
রান্নাঘরে ঢুকতেই মালতি অবাক হয়ে গেল বাড়ির দুই বৌকে দেখে। ওরা রান্নাঘরে লুকিয়ে বাসনে মুখ ঢুকিয়ে কি যেন খাচ্ছে।ওদের লুকিয়ে খাওয়া দেখে মালতি নিজেই যেন একটু অপ্রস্তুতে পড়লো। কি এমন খাচ্ছে যে এভাবে লুকিয়ে খেতে হবে!  মনে মনে ভেবেই  মাজা বাসনের ঝুড়িটা নামিয়ে রেখে মালতি বললো "তোমরা খেয়ে নাও তারপর রান্নাঘর মুছবো, আমি বাইরে দাঁড়াচ্ছি!"
ছোট বউ চোখ নাচিয়ে বললো "কিরে খাবি  ?" মালতি খুব অবাক হয়ে বললো "কি এমন খাচ্ছ এতো খুশি দুজন?" মালতির কথা শুনে দুজনেই হেসে লুটিয়ে পড়ছে প্রায় ।বোঝা গেল ভীষণ পছন্দের কিছু খাচ্ছে।
বড়বৌ আসতে করে বললো "পান্তাভাত "
বলেই দলা করে তুলে নিয়ে মুখে দিল জলা ভাতগুলো ।
মালতি অবাক হয়ে বললো "পান্তাভাত?"
ছোটবৌ বললো "হমম রে পান্তা ভাত,পেঁয়াজ আলুসেদ্ধ আর শুকনো লঙ্কা দিয়ে খেয়ে দেখ ! আহা রে কতদিনের শখ !এবাড়িতে কেউ পছন্দ করেনা এসব।তুই আবার বাইরে কাউকে বলিস না!"
মালতি নিজের কান চোখ কোনোটাকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। এ আবার কেমন শখ!
বড়বৌ বললো "কাল রাতে বাড়ির ছেলেরা কেউ খায়নি, ব্যবসার জায়গায় কিসব খাওয়াদাওয়া ছিলো। তখনই ছোটো কে বললাম জল ঢেলে রাখতে। লুচি পরোটা খেয়ে খেয়ে অরুচি ধরে গেছে!"
মালতির মনে পড়লো ছেলের কথা "মা রোজ সকালে পান্তাভাত আর ভালো লাগে না, দুটো রুটি তো করতে পারো !"মালতি মুখ ঝামটা দিয়ে বললো "আটা কত করে কেজি জানিস?"সকালে কাজে যাওয়ার আগে খেতে বসেও খেলো না, এতো অরুচি এই পান্তাভাতে !"
তাই মালতিও না খেয়ে চলে এলো, ভাতগুলো দুপুরে আরও পান্তা হবে।
হায় ভগবান একটা ছবির দুটো পিঠে কত আলাদা আলাদা রঙ, কত আলাদা আলাদা শখ।
ভাগ্গিস এদের রোজ পান্তা খেতে হয় না।মনে মনে বললো মালতি। দেখলো একমনে খেয়ে যাচ্ছে দুই বউ। কি সস্তার শখ। বড়লোকদের চাপে পড়ে পান্তাভাতও আজ কত দামী!
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
(15-12-2021, 07:24 PM)dada_of_india Wrote: হুগলী জেলার মগরার বিখ্যাত দেশবন্ধুর হিঙের কচুরি ! প্রায় ১৫০ বছর বয়স দোকানটার ! সকাল ৮ টা বাজতেই লোকেদের লাইন লেগে যায় ! সকাল আটটা থেকে দুপুর বারোটা ! সঙ্গে কখনো চ্ছোলার ডাল, কখন আলু কপি, বা কুমড়ো বা পাঁচমিশালি তরকারি ! এখনও প্রতিদিন তার আট বস্তা ময়দা লাগে সাথে নিজের হাতে পেষা ৩০ কিলো ভাজা ছোলার ছাতু ! কি অপূর্ব তার টেস্ট যে খায়নি সে জানতেও পারবে না ! ! বংশ পরম্পরায় এই দোকান চলে যাচ্ছে ! অনেক কষ্ট করে আমি ওদের বানানো কচুরি শিখেছিলাম ! এখন আমিও মাঝে মধ্যে আমার পরিবার বা বিশেষ অথিতি সমাগমে বেশ ভালই নাম কামাই !   
আমাকেতো এখনো খাওয়ালে না ... Sad
Like Reply
ক্লান্ত আমি ... পুরোনো লেখক বন্ধুরা আর আরো অনেকে  ছেড়ে চলে গেছে ... নিজের নিজের জীবনে ঢুকে গেছে ... আমিও তাই করছি আজ থেকে , চাকরির জীবনেও প্রচুর চাপ ...

এবার থেকে শুধু বাবান , বিচি ( my darling ) আর দাদার লেখা পড়তে এবং ছোটোখাটো কমেন্ট করতে আসবো হয়তো কখনো কখনো ...
বিদায় বন্ধুরা ...

Namaskar Heart
Like Reply
(19-12-2021, 03:06 PM)ddey333 Wrote: ক্লান্ত আমি ... পুরোনো লেখক বন্ধুরা আর আরো অনেকে  ছেড়ে চলে গেছে ... নিজের নিজের জীবনে ঢুকে গেছে ... আমিও তাই করছি আজ থেকে , চাকরির জীবনেও প্রচুর চাপ ...

এবার থেকে শুধু বাবান , বিচি ( my darling ) আর দাদার লেখা পড়তে এবং ছোটোখাটো কমেন্ট করতে আসবো হয়তো কখনো কখনো ...
বিদায় বন্ধুরা ...

Namaskar Heart

কথাটা পড়ে রাগ করবো নাকি খুশি হবো সেটাই ভাবছি  Sad 

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 1 user Likes Bichitro's post
Like Reply
(19-12-2021, 03:06 PM)ddey333 Wrote: ক্লান্ত আমি ... পুরোনো লেখক বন্ধুরা আর আরো অনেকে  ছেড়ে চলে গেছে ... নিজের নিজের জীবনে ঢুকে গেছে ... আমিও তাই করছি আজ থেকে , চাকরির জীবনেও প্রচুর চাপ ...

এবার থেকে শুধু বাবান , বিচি ( my darling ) আর দাদার লেখা পড়তে এবং ছোটোখাটো কমেন্ট করতে আসবো হয়তো কখনো কখনো ...
বিদায় বন্ধুরা ...

Namaskar Heart
তুমি হচ্ছ আমাদের আদরের বোকাচোদা.........
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
তবে যেসব গল্পের যতটুকু সেভ করা আছে ওগুলো দিয়ে দেব , আমি পিনুরাম ,, রাজদীপ অথবা বোরসেস ... এদের মতো বোকাচোদা নোই যে হঠাৎ করে হাপিস হয়ে যাবো ...
Like Reply
[Image: IMG-20211220-WA0001.jpg]
Like Reply
(19-12-2021, 07:31 PM)dada_of_india Wrote: তুমি হচ্ছ আমাদের আদরের বোকাচোদা.........

সব শেষ , আর ভালো  লাগছেনা
Like Reply
(21-12-2021, 09:36 PM)ddey333 Wrote:
সব শেষ , আর ভালো  লাগছেনা

XXXXX
Like Reply
https://www.anandabazar.com/west-bengal/...VE5x3q1ZMg


এইটা দিয়ে একটা ভালো গল্প হবে। কি বলেন দে বাবু?



[+] 1 user Likes Jupiter10's post
Like Reply
(22-12-2021, 07:12 PM)Jupiter10 Wrote: https://www.anandabazar.com/west-bengal/...VE5x3q1ZMg


এইটা দিয়ে একটা ভালো গল্প হবে। কি বলেন দে বাবু?

সংবাদটা আমাদের দেশের পত্রিকায় পড়েছি. ঘটনা কি সত্য দাদা..
Like Reply
(22-12-2021, 07:38 PM)ambrox33 Wrote: সংবাদটা আমাদের দেশের পত্রিকায় পড়েছি. ঘটনা কি সত্য দাদা..

হ্যাঁ সত্যিই তো মনে হচ্ছে।



Like Reply
(22-12-2021, 07:48 PM)Jupiter10 Wrote: হ্যাঁ সত্যিই তো মনে হচ্ছে।

সত্যি দাদা তোমাদের দেশে অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে.
Like Reply
(22-12-2021, 07:56 PM)ambrox33 Wrote: সত্যি দাদা তোমাদের দেশে অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে.

আর আপনাদের দেশ ধোয়া তুলসিপাতা।



Like Reply
(22-12-2021, 08:00 PM)Jupiter10 Wrote: আর আপনাদের দেশ ধোয়া তুলসিপাতা।
বাংলাদেশে তুলশি পাতা কি জিনিশ সেটাই জানে না ! নতুন করে শেখানোর সময়ও নেই ! তার থেকে ভালো গল্পে মনোযোগ দেওয়া !
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
(22-12-2021, 08:00 PM)Jupiter10 Wrote: আর আপনাদের দেশ ধোয়া তুলসিপাতা।

তা নয়। কিন্তু আপনাদের দেশের মত অদ্ভুত নয়। কিছু দিন আগে পড়েছি ভারতে কোন এক অঞ্চলে পাচঁ  ভাই মিলে একজনকে বিয়ে করছি
Like Reply
(19-12-2021, 07:36 PM)ddey333 Wrote: তবে যেসব গল্পের যতটুকু সেভ করা আছে ওগুলো দিয়ে দেব , আমি পিনুরাম ,, রাজদীপ অথবা বোরসেস ... এদের মতো বোকাচোদা নোই যে হঠাৎ করে হাপিস হয়ে যাবো ...

আর আমার হারিয়ে যাওয়া গল্প গুলোর কি হবে? আমি কি লেখক নই?
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
(22-12-2021, 08:07 PM)dada_of_india Wrote: বাংলাদেশে তুলশি পাতা কি জিনিশ সেটাই জানে না ! নতুন করে শেখানোর সময়ও নেই ! তার থেকে ভালো গল্পে মনোযোগ দেওয়া !

ঠিকই বলেছেন ভারতের দাদা। তবে সে দেশে পাগলা গারদ নেই বোঝায় যায়। নইলে এই ভাই খুল্লমখুল্লা এভাবে ঘুরে বেড়ায় কি করে?



Like Reply




Users browsing this thread: 20 Guest(s)