Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
27-11-2021, 07:44 PM
(This post was last modified: 27-11-2021, 07:47 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
পিতৃঋণ
ডেডবডি দেখে যে কোনো মানুষ তার উদ্দেশ্যে জুতো ছুড়তে পারে তা এই প্রথম দেখল সৌম্য ।রীতিমত চোর ডাকাত মারা গেলেও মৃত্যুর পর সকলে তার এক টুকরো ভালো গুন খোঁজার চেষ্টা করে থাকে ।আহা অমুক লোকটা খুনি হোক ,তবুও নিজের মাকে ভালোবেসেছিল গো !
এই ধরণের কথাই সাধারণত মৃতের উদ্দেশ্যে বলা হয় ।সেখানে সুখেন বাবুর মত নির্বিবাদী মানুষটা মারা যাবার পর তার দুই ছেলেই ফুলের বদলে মৃতদেহের ওপর জুতো ছুড়েছে ।
পোস্টমর্টেমের পর অনেকেই সেই দৃশ্য দেখেছে ।
সজল আর উজ্জ্বল দুই ভাই একমুখ থুথু ফেলে বলেছে ,শালা বাপটা মরেও শান্তি দিলো না ।এখন থানা পুলিশ দৌড়ে বেড়াও ।
অবশ্য যে বাসের সাথে ধাক্কা লেগে সুখেন বাবু মারা গেছেন সেই বাস মালিকের কাছে আর ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছেও ছুটেছে একভাই ।
বাবার মৃতদেহের বদলে টাকাটা তো সঠিক সময়েই নিতে হবে ।
সৌম্য সজলের ছোট বেলার বন্ধু ।তাই ওদের বাড়িতে সেই ছোট্ট থেকেই যাতায়াত ছিল ওর ।কতবার খেলতে এসে কাকিমার হাতের লুচি,ঘুগনি খেয়ে গেছে ও ।কাকুও মাঝে মাঝেই পিঠ চাপড়ে বলতো ,বড় হও ,মানুষ হও ।
কাকু রেলে চাকরি করতো ,সকালবেলা বেড়িয়ে যেত ফিরতে ফিরতে সেই সন্ধ্যে । কাকু আর কাকিমার মধ্যে একটা অযথা দূরত্ব চোখে পড়েছিল সৌম্যর । কেমন দূরত্ব ,সঠিক ভাবে হয়তো বোঝাতে পারবে না সৌম্য,তবে এই অচেনা দূরত্বটা ওর বাবা-মা বা মাসি-মেসোর মধ্যে কোনোদিন দেখেই নি ।
অথচ রমলা কাকিমা মানে সজলের মা কিন্তু কাকুর অসম্ভব যত্ন করতো । কাকুও কাকিমাকে স্নেহের চোখেই দেখতেন তবুও ...ঐ খটকাটা সৌম্যর চোখে লাগতো ।কখনো সজলকে জিজ্ঞেস করেনি ,কারোর বাবা মা সম্পর্কে কিছু জানতে চাওয়াটা বড্ড অশোভন হয়ে যায়।
তবে মাঝে মাঝে কলেজে এসে সজল বলতো ,কপাল করেছি বটে !আমাদের প্রেমের বয়েসে এখন আমার বাপটা প্রেম মেরে বেড়াচ্ছে ,আর সে বুড়ি মাগীও বিয়ে থা না করে সুখেন দত্তর জন্য পসরা সাজিয়ে বসে আছে ।
সৌম্য বলেছিলো ,তুই চিনিস ভদ্রমহিলাকে ?
সজল বলেছিল , চিনি বলতে ,একদিনই দেখেছিলাম ...বাবার সাথে ।ফলো করে গিয়ে দেখি ,হাতিবাগানের একটা বাড়িতে থাকে ।সম্ভবত চাকরি করে বুঝলি ।
দুই ছেলের বাপ ,ঘরে বৌ আছে ,জেনেও যে কি করে মহিলা বাবাকে এখনো ...কোনোদিন কিছু বলিনি শুধু সমাজে আমার আর দাদার সম্মানের কথা ভেবেই ।
মুখটা কালো করে সজল মাটির দিকে চোখ নামিয়েছিলো ।সৌম্য বুঝতে পারছিল নিজের বাবার সম্পর্কে বন্ধুর কাছে এভাবে বলে ফেলে অন্তর্দ্বন্দ্বে ভুগছে সজল ।ওকে স্বাভাবিক করার জন্যই বলেছিলো ,দেখ ,কাকু তো কোনোদিন তোদের যত্নের কোনো ত্রুটি করেননি ।তাছাড়া কাকিমারও কোনো অবহেলা করেন নি ,তাই থাক না গুরুজনের কাজের সমলোচনা নাই বা করলাম ।
তবুও মাঝে মাঝেই সজলের মধ্যে একটা আক্রমণাত্মক মুখ কাজ করতো ।
একদিন এসে বললো ,শালা যার জন্য চুরি করি সেই বলে চোর !মাকে বলতে গেলাম বাবার কীর্তির কথা... সবটা শুনে মা বললো ,তোমার বাবার নামে সমলোচনা করাও পাপ ।
ভারতীয় নারী ,পতিব্রতা নারী।
নীরব শ্রোতা হওয়া ছাড়া সৌম্যর আর কিছুই করার ছিল না এক্ষেত্রে ।
তারপর তো কেটে গেছে বেশ কয়েকটা বছর ।সজল আর সৌম্য দুজনেই এখন চাকুরী জীবী ।
সজলের দাদা উজ্জ্বলদার বিয়ে ঠিক হয়েছে ।আর দুমাস বাকি । সজল একদিন সৌম্যর বাড়িতে এসে বলে গিয়েছিলো , দাদার বিয়েতে সাতদিন ধরে আমাদের বাড়িতেই তুই থাকবি ।আমি একা সামলাতে পারবো না ।
সৌম্য বলেছিলো , নিশ্চয় ।উজ্জ্বলদা তো আমারও দাদা রে । অনেকদিন পর দুই বন্ধু প্রাণ খুলে গল্প করেছিল ।
শুধু যখন সৌম্য জিজ্ঞেস করেছিল সুখেন কাকু কেমন আছে রে ।তখনি সজলের চোখে দেখেছিল একরাশ ঘৃণা।
ভালোই বলে প্রসঙ্গ পাল্টে ছিলো ।
উজ্জ্বলদার বিয়ের আগেই ঘটে গেল এমন দুর্ঘটনা ।
সুখেন কাকু মাত্র মাসখানেক আগে রিটায়ার করেছেন ।অফিস সংক্রান্ত কোনো কাজেই বোধহয় অফিসে যাচ্ছিলেন ,রাস্তা পেরোতে গিয়ে বাসের ধাক্কায় ...ইন্টারন্যাল হ্যামারেজ বোধহয় ।শরীরটা ওপর থেকে দেখে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না ।
কাকিমা নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে কাকুর মৃতদেহের একপাশে ।
সুখেন কাকু চরিত্রহীন হতে পারেন কিন্তু অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন বলে পাড়ায় কখনো কারোর সাথে ঝগড়া হয়নি ।পাড়ার অনেক ছেলেই এসেছে শবযাত্রী হিসাবে ।
উজ্জ্বলদা এই মাত্র ইনসুরেন্সের লোকেদের সাথে কথা বলে ,বাড়িতে ঢুকলো ।
ঢুকেই ভাইকে বললো ,বেওয়ারিশ লাশ বলে ফেলে দিয়ে এলি না কেন ?বেঁচে থাকতে তো ওনার কথায় চলতে হয়েছে আমাদের ।
তাহলে অবশ্য ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়া যেত না ।তাহলে ফিক্সট ডিপোজিট ,আরো টাকা পয়সা পাওয়ার সমস্যা হত ।
রমলা কাকিমা হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বললেন ,আরেকজন কোথায় ??
সে না এলে ওর মুখে অগ্নিসংযোগ হবে না যে ।
সজল ,উজ্জ্বলদা অবাক চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে ।তারা দুই ছেলেই তো বর্তমান ।তাহলে মা আবার কার কথা বলছে ?
তারমানে কি ঐ মহিলার সাথে অবৈধ সম্পর্কের জেরে সুখেন কাকুর কোনো অবৈধ সন্তান আছে নাকি ? কাকিমা হয়তো তার অস্তিত্বের কথা জানেন ,তাই আজ কাকুর মৃতদেহের সামনে তাকে আনতে চাইছেন!!
উজ্জ্বলদা বললো ,ওহ শুধু প্রেমিকা নয় আবার ছেলেও আছে বুঝি বাবার ?
রমলা কাকিমা হাত নেড়ে সৌম্যকে ডাকলেন ।
খুব ধীরে ধীরে যে ঠিকানাটা বললেন সেটা হাতিবাগানের কোনো একটা বাড়ির ।
সজল আর উজ্জ্বলদা তাড়া দিচ্ছে সুখেন কাকুর মৃতদেহ নিয়ে শ্মশানের উদ্দেশ্যে যেতে চায় ।কিছুতেই বাবার সম্পত্তির তৃতীয় ভাগীদারকে প্রবেশ করতে দেবে না ওরা ।
শান্ত রমলা কাকিমার উগ্র মূর্তি দেখে দুই ছেলেই একটু ঘাবড়ে গেছে । রমলা কাকিমা বললেন ,সৌম্য ফেরার আগে ওনার দেহ এবাড়িতেই থাকবে ।
সৌম্য ততক্ষনে বাইকে স্টার্ট দিয়েছে ।
হাতিবাগানের একটা গলির মধ্যে দোতলা বাড়ির একতলার ঠিকানায় পৌঁছে গেছে সৌম্য ।
কলিং বেল বাজতেই একজন মহিলা দরজা খুলল । কাঁচাপাকা চুল ,পরনে সুবুজ সাদার একটা জামদানী ,চোখে হাই পাওয়ারের চশমা ।কানে দুটো ছোট্ট কানফুল । হাতে একজোড়া সোনার বালা ।
এটুকু সাজে যে কোনো মহিলাকে এতোটা সুন্দর লাগতে পারে সেটা সৌম্য এই প্রথম দেখলো ।গাম্ভীর্যের আবরণে একটা কোমল চোখের চাহনি।
অষ্টাদশীর গলায় ঐ পঞ্চাশোর্ধ মহিলা বললেন ,কাকে চান ?
সৌম্য বললো ,আপনিই মানসী দেবী ?
ঘাড় নেড়ে বললেন হ্যাঁ ।কিন্তু এই মুহূর্তে তো আমি আর টিউসুনি করছি না ।বয়েস হয়েছে ,কলেজের চাকরিটাই ছাড়তে পারলে বাঁচি ।
ভদ্রমহিলা সম্ভবত সৌম্যকে কোনো কোচিং সেন্টারের হেড ভেবেছেন ।
সৌম্য ভুলটা ধরিয়ে দিয়ে বললো , আমি এসেছি সুখেন কাকুর বাড়ি থেকে । আমাকে রমলা কাকিমা পাঠিয়েছেন ।
সৌম্য স্পষ্ট দেখলো চমকে উঠলেন মানসীদেবী ।
ধীরে ধীরে বললেন ,আমি একা মানুষ জুনিয়র হাই কলেজে টিচারী করি ।বাকি জীবনটা আমার নিজের জমানো টাকায় চলে যাবে বাবা । রমলাকে গিয়ে বলো ,মানসী বলছে ,সুখেনের কোনো সম্পত্তি আমি নেবো না । সুখেনকে গিয়ে বলো ,ওদের নামেই যেন সব লিখে দেয় ।
সৌম্য বললো ,আপনাকে একবার অন্তত ওবাড়িতে যেতে বলে দিয়েছেন কাকিমা ।মানসী দেবী হেসে বললেন ,সই করতে হবে ...
সুখেন খুব চিন্তা করছিলো ,দুই ছেলেই নাকি বাপের সম্পত্তি নিয়ে মারামারি করবে ,রমলাকে কিছুই দেবে না ।এর মধ্যে আবার আমি ঢুকলাম কি করে !!আমার তো কোনো দাবি নেই ওর সম্পত্তিতে !!
কাকিমা বারবার সৌম্যকে বলে দিয়েছেন ,হাই প্রেশারের রুগী মানসীদেবীকে যেন কোনো ভাবেই ওর বাড়িতে সুখেন কাকুর মৃত্যু সংবাদ দেওয়া না হয় ।
এদিকে মহিলা সম্পত্তির কেচ্ছা ভেবে কোনোমতেই যেতে চাইছেন না !!
শেষে সৌম্য বললো ,আসলে সুখেন কাকু একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ।আপনাকে একবার দেখতে চেয়েছেন ।
কথায় কাজ হলো মনে হচ্ছে ।
এক সেকেন্ড দেরি না করে মানসীদেবী ঘরে চাবি ঝুলিয়ে সৌম্যর বাইকে এসে বসলেন ।
খুব আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করলেন , বেঁচে আছে তো ?সেরিব্রাল নাকি ?তারপরের কথাগুলো স্বগতোক্তি । এতো বলতাম চিন্তা করো না। তবুও দুশ্চিন্তা করে যেত ,শুধু বলতো ও চলে গেলে নাকি রমলাকে ছেলেরা দেখবে না !!
ভাবতে ভাবতে শেষে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়লো ।
বাড়ির সামনে তখন অনেক লোক ।
বুদ্ধিমতী মহিলা মানসী দেবী ।
সৌম্যকে বললেন , কখন হলো ?
সৌম্য বললো ,বাস একসিডেন্ট!!
বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই রমলা কাকিমা এসে জড়িয়ে ধরলো মানসী দেবীকে ।
সাধারণত এই ধরণের সম্পর্কে স্বামীর অবৈধ প্রেমিকাকে তার স্ত্রীরা গালাগাল দেয় ,খারাপ নজরে দেখে ।এক্ষত্রে তো রমলা কাকিমাকে অত্যন্ত আধুনিক ভাবতে হবে ।
মানসী দেবীর দুচোখে জল ।
রমলা কাকিমা প্রলাপ বকছেন ,তোমাকে ফাঁকি দিয়েছিলাম আমি তাই আজ আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো ও ।
মানসী দেবী কাকিমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলছেন ,এই সময় তোমাকে শক্ত থাকতে হবে রমলা ।সুখেন নেই ,তোমাকেই তো দাঁড়িয়ে থেকে ছেলের বিয়ে দিতে হবে।
সৌম্য শুধু অবাক হয়ে দেখছে ,শুধু সৌম্য নয় ... দুই ভাই এতদিন ধরে যারা ওনাকে অনেক নোংরা কথা বলেছে তারাও হাতের কাছে মানসীদেবীকে পেয়েও সামনে কিছুই বলতে পারছেনা ।
মানসী দেবী সুখেন কাকুর পায়ের কাছে এসে বসলেন ।নিজের আঁচল দিয়ে ওনার পাটা মুছিয়ে দিলেন যেন ।মাথায় ছোঁয়ালেন হাত টা ।
তারপর নিজের হাত থেকে আংটিটা খুলে সুখেন কাকুর পায়ের কাছে রেখে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন ।
নির্দেশের গলায় বললেন ,চুল্লীতে ভরে দিও না ওকে। ওর ঐ ঘরটায় বড্ড ভয় ছিল ।কাঠের চিতা সাজিয়ে ওকে দাহ করো ।
শেষের দিকে গলাটা ধরে এসেছিলো ওনার ।
হঠাৎ রমলা কাকিমা সুখেন কাকুর উদ্দেশ্যে বললেন ,আজ তুমি চলে গেছো তাই তোমার কাছে দেওয়া প্রতিজ্ঞা ভাঙলেও আর তোমার কোনো ক্ষতি হবে না নিশ্চয় ,আজ তোমার সামনেই আমাকে বলতে হবে সবটুকু ।
ত্রিশ বছরের সব গোপন কথা ।
মানসীদেবী বললেন ,থাক না রমলা ।এই অবস্থায় ওসব কথা নাইবা বললে ,তাছাড়া পুরোনো কথা গোপন থাকাই ভালো !
রমলা কাকিমা দুদিকে ঘাড় নেড়ে বললেন ,তুমি আমাকে অনেক দিন চুপ করিয়ে রেখেছো ,দুই ছেলের চোখে ঐ ভগবানের মত মানুষটার জন্য শুধুই ঘৃণা দেখেছি তবুও শুধু তোমার আর ওনার কথা শুনে আমি ছেলেদের কাছ থেকে সবটুকু আড়াল করেছি ।আজ বলতে দাও ।
পাড়ার প্রচুর লোক জমে গেছে ।মৃতদেহের চরিত্রএর সদগুন বদগুন শোনার লোকের অভাব নেই। কিছুক্ষনের মধ্যেই যে মানুষটা ছাইভস্মে পরিণত হয়ে যাবে তাকেও সমাজের কাছে নিজের চরিত্রের দোষ স্খলন করে যেতে হচ্ছে ।
খুব ধীরে ধীরে রমলা কাকিমা বলতে শুরু করেছেন ।
যেন স্মৃতির একেকটি পাতার ধুলো ঝাড়ছেন সযত্নে ।
চোখদুটো মাঝে মাঝেই বন্ধ করে ফ্ল্যাশব্যাকে দেখে নিচ্ছেন ত্রিশ বছর আগের বৃষ্টি ভেজা এক সন্ধ্যেকে ।
রেল লাইন ধরে পাগলের মত ছুটছে রমলা ।
কোলে একটা বছর দুয়েকের ছেলে আর পেটে আট মাসের সন্তান । তিনজনেরই মৃত্যু কাম্য । স্বামীর মারধোর সহ্য করাটা তখন রমলার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিলো ।কিন্তু নিজের গর্ভবতী স্ত্রীর ঘরে পরপুরুষকে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো রমলার স্বামী ।
ওর ব্যবসার উন্নতির জন্য ।আর সহ্য করতে পারেনি রমলা ,সন্তানদের নিয়েই তাই মৃত্যু চেয়েছিলো সেদিন।
ট্রেনটা আসছিলো ধেয়ে এমন সময় একটা লোক এসে টেনে নিয়েছিল ওদের ।জীবন ফিরিয়ে দিয়েছিলো রমলা আর ওর কোলের সন্তানের ।
সেই রাতে ওকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল মানুষটা ।
কোলে সন্তান নিয়ে গর্ভবতী একজন মহিলাকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকতেই পাড়ায় রাষ্ট্র হয়ে গিয়েছিলো,সুখেনের লুকিয়ে রাখা স্ত্রী আর সন্তান এসেছে ।সুখেনের দাদারা মেনে নেয়নি ওর জন্য পরিবারের বদনাম হোক ।
গৃহ ছাড়া হয়ে একটা ভাড়া বাড়িতে এনে তুলেছিল ওদের। দুটো দিন যেতে না যেতেই বাড়িওলা লোক ডেকে ওদের বিয়ে দিয়ে দেয় । সুখেনের কোনো কথাই তখন কেউ শুনতে নারাজ ।
বিয়ের কদিনের মধ্যেই রমলা জানতে পারে সুখেন আর মানসীর কলেজ লাইফ থেকে প্রেমের কথা ,ওদের আংটি বদলের কথা ।মানসীর দিদির বিয়ে হয়ে গেলেই ওদের বিয়ে হবার কথা ছিলো ।
সেদিন থেকে মানসীর কাছে অপরাধী হয়েছে রমলা ।সুখেন অনেক বুঝিয়েছে মানসীকে ,সংসার পাততে বলেছে অন্য কোথাও ।কিন্তু মানসীর এতটাই জেদ যে কোনোভাবেই বিয়ে করেনি ।দাদাদের সংসার থেকে চলে এসে ঘর ভাড়া করে কাটিয়ে দিলো জীবনটা ।শুধু সুখেনকে ভালোবেসে ।
সজলের জন্মের পর রমলা চলে যেতে চেয়েছিলো অন্য কোথাও ।মানসীই জোর করে যেতে দেয়নি ওকে ।দুই সন্তান নিয়ে পথে পথে ঘুরতে দেয় নি রমলাকে ।তাই কোনো রকম শারীরিক সম্পর্ক ছাড়াই ও আর সুখেন স্বামী -স্ত্রীর জীবন কাটিয়েছে দিনের পর দিন । সুখেন বলেছিলো ,দুটো ছোট্ট ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুর চোখে নাইবা তাদের আসল বাবার পরিচয়টা প্রকট হলো !! আমিই ওদের বাবা । প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল রমলা ,কোনোদিন সজল আর উজ্জ্বল জানবে না ওদের আসল বাবার পরিচয় ।
ওদের জন্মদাতা তার কয়েক মাসের মধ্যেই নতুন বিয়ে করে সংসার বসিয়েছিল ,সে খবরও রমলার কানে এসেছিলো ।
মানসী প্রতি পুজোয় সজল আর উজ্জলের জন্য জামা কিনে পাঠাতো সুখেনের হাত দিয়ে ।বলতো ওদের বলো ,ওদের মাসীমনি পাঠিয়েছে ।
শব যাত্রীরা এগিয়ে চলেছে ,দুই দিকে দুই ছেলের কাঁধে চড়ে চলছে মান-অপমানের ঊর্ধ্বে থাকা একজন মানুষ ।যার পরিচয় ছিল সজল-উজ্জলের বাবা ।
এই প্রথম দুই ভাইয়ের চোখের জলে ভাসতে ভাসতে তাদের বাবা চলছে মহাপ্রস্থানের পথে। পালিত পিতার ঋণ হয়তো তারা এ জীবনে শোধ করতেও পারবে না ।
পিছনে দুজন মহিয়সী মহিলা ...একজন তাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসেছে সারাজীবন, আরেকজন মানবরূপী ঈশ্বর জ্ঞানে পূজা করে গেছেন। সৌম্য সুখেন কাকুর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখল ...একটা পরিতৃপ্তির হাসি যেন বিরাজ করছে গোটা মুখ জুড়ে ।নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে অন্যকে খুশি করার গর্বেই হয়তো এই তৃপ্তি।
লেখিকা অর্পিতা সরকার
আমি কারুর গল্প নিজের নামে চালাই না ! লেখক বা লেখিকাকে সম্মান দিতে জানি !
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
বড় একা লাগে !
যখন মনেতে খুব আঘাত পাই !
বড় একা লাগে ...
যখন সবাইকে হারিয়ে যাই !
বড় একা লাগে...
দুহাত বাড়িয়ে শুধু হওয়াকে জরাই !
বড় একা লাগে...
নিস্ব আমি, রিক্ত আমি ! শুধুই হারিয়ে যাই !
বড় একা লাগে ............
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(27-11-2021, 08:57 PM)dada_of_india Wrote: বড় একা লাগে !
যখন মনেতে খুব আঘাত পাই !
বড় একা লাগে ...
যখন সবাইকে হারিয়ে যাই !
বড় একা লাগে...
দুহাত বাড়িয়ে শুধু হওয়াকে জরাই !
বড় একা লাগে...
নিস্ব আমি, রিক্ত আমি ! শুধুই হারিয়ে যাই !
বড় একা লাগে ............
একা কেউ নয় , নিজের মধ্যে যে শুন্যতা ... সেটা ভরাট করে কেউ তো থাকে ...
হয়তো সে আজ অন্য পৃথিবীতে ... কিন্তু আছে .. ভেবেই একটু ভালো লাগে ...
•
Posts: 3,682
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
(27-11-2021, 10:36 PM)ddey333 Wrote: একা কেউ নয় , নিজের মধ্যে যে শুন্যতা ... সেটা ভরাট করে কেউ তো থাকে ...
হয়তো সে আজ অন্য পৃথিবীতে ... কিন্তু আছে .. ভেবেই একটু ভালো লাগে ...
কি হচ্ছে বলুন তো!... সব প্রিয় লোক আর তাদের লেখা গুলো হটাৎ উধাও হয়ে গেল... বেকপা দা, ডিমপুচ দা, কাক, অনঙ্গদেব দা, কামনাগল্প দা সব একসাথে অদৃশ্য হয়ে গেল
❤❤❤
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(27-11-2021, 10:59 PM)Bichitravirya Wrote: কি হচ্ছে বলুন তো!... সব প্রিয় লোক আর তাদের লেখা গুলো হটাৎ উধাও হয়ে গেল... বেকপা দা, ডিমপুচ দা, কাক, অনঙ্গদেব দা, কামনাগল্প দা সব একসাথে অদৃশ্য হয়ে গেল
❤❤❤
সবাই আছে আশেপাশেই , দেখা না দিলে কি হবে ...
•
Posts: 446
Threads: 3
Likes Received: 11,694 in 2,466 posts
Likes Given: 4,988
Joined: Jan 2019
Reputation:
2,925
(27-11-2021, 11:45 AM)ddey333 Wrote: পেরিয়ে গেল আরও সাত দিন।
বিছানায় শুয়ে আছি। চোখে ঘুম নেই। পুরনো দিনের সুখস্মৃতি মনে পড়ছে। সুচেতনার দিকে তাকালাম। নাইট বালবের হালকা আলোয় দেখলাম সুচেতনা ঘুমোচ্ছে। হঠাৎ আমার দু’চোখ জলে ভরে গেল। কাঁদলে মানুষের মন হালকা হয়। যন্ত্রণা কমে। কিন্তু আমার যন্ত্রণা কমল না। দেওয়ালে টাঙানো রাধাকৃষ্ণের একটা ক্যালেন্ডার আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। শ্রীকৃষ্ণ রাধার মান ভঞ্জনের জন্য কত কী করেছেন। আর আমি সুচেতনার মান ভঞ্জনের জন্য কিছু করতে পারব না?
উঠে বসলাম। বিছানা ছেড়ে নেমে এগিয়ে গেলাম সুচেতনার কাছে। সুচেতনার ফর্সা পায়ের পাতাগুলো দেখা যাচ্ছে। এখন গভীর রাত। কোথাও কেউ নেই। কেউ কিছু দেখতে পাবে না। সুচেতনার পা দুটো জড়িয়ে ধরে বলে ফেললাম, “আমি ভুল করেছি। তুমি আমায় ক্ষমা করো।”
আরও কী কী বললাম জানি না। চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জলও সুচেতনার গায়ে পড়ল। সুচেতনাও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। মিনিট দুয়েক কান্নার পর সুচেতনা বিছানা থেকে নীচে নেমে আমায় প্রণাম করল। আমি কিছু বলার আগেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নার গতি বাড়াল। আমি নতুন করে সুচেতনাকে আবিষ্কার করলাম।
বিছানায় পাশাপাশি দু’জনে। আমাকে জড়িয়ে ধরে সুচেতনা বলল, “কেলটি ধুমসি মেয়েটার জন্য মদ ধরেছ! কী আছে ওই ডিভোর্সির? তোমার বিয়ে করার এত শখ? ছেলে-বৌকে পথে বসাতে চাও? তোমার লজ্জা করে না? মদ আর ওই মেয়েটার পিছনে কত টাকা খরচা করেছ? আমার জুতোর চেয়ে কম টাকায় হয়ে গিয়েছে তো সব? আর ডিভোর্স পাওয়াবে কে? তোমার প্রাণের বন্ধু দুলাল উকিল? সে-ই তো তোমার আর তার বোনের নামে হাজার হাজার কেচ্ছা কেলেঙ্কারি শোনাত আমাকে ফোন করে, যাতে আমি আর না ফিরি। তোমাকে ডিভোর্স পাওয়াতে ওর সুবিধে হয়। আমাকে আর কী বোঝাবে, তোমার দৌড় আমি জানি না! আমি হঠাৎ ফিরে আসায় সবার বাড়া ভাতে ছাই পড়ে গেল!”
আমি কোনও উত্তর দিলাম না। আজ আমি শ্রোতা।
সুচেতনা চুপ করলে বললাম, “কালই কিন্তু তুমি অনলাইনে নতুন জুতোর অর্ডার দিয়ে দেবে। আমি অফিস থেকে ফিরে তোমাকে টাকা দিয়ে দেব।”
উত্তরে সুচেতনা কিছু বলল না। ওর ঠোঁট দুটো আমার ঠোঁটের খুব কাছে এগিয়ে এল।
এখানে সুচেতনার তাঁর স্বামীর প্রতি ভালোবাসার চেয়ে অধিকার বোধ বেশি দেখলাম। কিন্তু লোকটার তাঁর স্ত্রীর প্রতি সম্মান এবং ভালোবাসা লক্ষ্য করলাম। জানিনা সমাজ কি দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিচার করে। কিন্তু পুরুষ মানুষই সর্বদা দায়ী হবে এটা জরুরী নয়। বেকার অথবা অপেক্ষাকৃত কম রোজগার সম্পন্ন স্বামী এবং চাকুরী জীবী স্ত্রীর কোন গল্প থাকলে শোনাবেন।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
মনস্বী: বুদ্ধদেব বসুর লেখনী প্রথা ভাঙতেই অভ্যস্ত ছিল চিরকাল ।
কলেজ ম্যাগাজ়িনে তাঁর লেখা গল্পের শেষাংশ বাদ দিয়ে দেন মাস্টারমশাই।
Buddhadeva Bose: আজীবন অভিযুক্ত হয়েছেন অশ্লীলতার দায়ে
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
নারীপুরুষের সম্পর্কে কামনাবাসনা নিয়ে সারা পৃথিবীতে অজস্র লেখালিখি হয়েছে। সেই সব লেখার অনেকগুলিই ছাপা হওয়ার পর নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। লেখককে ছুটতে হয়েছে থানা থেকে আদালত, উকিলের বাড়ি থেকে সাক্ষীর দরজায়। রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘বিজয়িনী’ নিয়ে, ‘কেন যামিনী না যেতে জাগালে না’ গান নিয়ে চেঁচামেচির কথা আমরা জানি। কিন্তু বাংলায় এই ঝামেলা সবচেয়ে বেশি সামলাতে হয়েছে বুদ্ধদেব বসুকে। সারা জীবন। কলেজ ম্যাগাজ়িনে তাঁর একটি গল্পের দ্বিতীয় অংশ মাস্টারমশাই ছাপতে রাজি হননি অশ্লীল বলে। আঠারো বছর বয়সে ‘কল্লোল’ পত্রিকায় তাঁর একটি গল্প বেরিয়েছিল, ‘রজনী হল উতলা’। গল্পটি পড়ে তখনকার দিনের নামী লেখক বীণাপাণি দেবী ‘আত্মশক্তি’ পত্রিকায় লিখেই দিলেন, ‘এই লেখককে আঁতুড়েই নুন খাইয়ে মেরে ফেলা উচিত ছিল!’ আর এক জন মহিলা বলেছিলেন, ‘লেখক যদি বিয়ে না করে থাকে তবে যেন অবিলম্বে বিয়ে করে, আর বৌ যদি সম্প্রতি বাপের বাড়িতে থাকে তবে যেন আনিয়ে নেয় চটপট।’ কী ছিল সেই গল্পে যার জন্য এত ধমক, এত ধিক্কার? এখনকার কোনও পাঠক যদি গল্পটি পড়েন, তিনি হয়তো খুঁজেই পাবেন না ঠিক কোন শব্দের জন্য, কোন বর্ণনার জন্য তখন অশ্লীল বলে দেগে দেওয়া হয়েছিল গল্পটিকে। শুধু গল্প-উপন্যাস নয়, সেই সময়ের কিছু কবিতার বিরুদ্ধেও এই রকম অভিযোগ ছিল, যেগুলো পড়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মনে হয়েছিল এই সব লেখা পড়লে এখন মনে হয় কোনও সংস্কৃত কবিতার অনুবাদ!
কিন্তু সদ্যযুবক বুদ্ধদেবের নিরীহ গল্পটি নিয়ে তখন তুলকালাম হয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে আসরে নেমেছিলেন সজনীকান্ত দাস। গল্পটিকে ব্যঙ্গ করে একটি নাটক লিখলেন তিনি, আর তার পরে সোজা অভিযোগ জানালেন রবীন্দ্রনাথের কাছে। বললেন, যে সব পারিবারিক সম্পর্ককে সম্মান করা হয় সমাজে, এই লেখায় সেই সব নিয়ে নয়ছয় হয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের প্রতিবাদ জরুরি। রবীন্দ্রনাথ উত্তর দিলেন। লিখলেন যে তাঁরও মনে হচ্ছে আধুনিক সাহিত্যে ‘হঠাৎ কলমের আব্রু ঘুচে গেছে।’ মাস চারেকের মধ্যেই লিখলেন ‘সাহিত্যধর্ম’ প্রবন্ধটি। সেখানেও তিনি ‘ল্যাঙট-পরা গুলি-পাকানো ধুলোমাখা আধুনিকতা’র বিরুদ্ধেই কথা বললেন। ছেড়ে দিলেন না বুদ্ধদেব বসুও। রবীন্দ্রনাথসহ তাঁর বিরোধীদের কড়া আক্রমণ করলেন তিনি। আরও অনেক কথার সঙ্গে বললেন যে, ‘বেশ্যাবাড়ি নিয়েও যে ভালো গল্প লেখা যায়, এবং অতিপরম সতীসাধ্বী স্ত্রীর কথা নিয়েও যে খারাপ গল্প লেখা যায়’, এটাই কেউ বুঝতে চাইছেন না।
কয়েক বছর পর বেরোল বুদ্ধদেবের প্রথম উপন্যাস ‘সাড়া’। আবার একই অভিযোগ। কিন্তু তার তিন বছর পর বেরোনো ‘এরা আর ওরা এবং আরো অনেকে’ লেখাটির জন্য এই অভিযোগ গড়াল একেবারে আদালত থেকে পুলিশ পর্যন্ত। পুরো ব্যাপারটা দুঃখজনক তো বটেই, কৌতুককরও। পুলিশের দু’জন স্পাই বুদ্ধদেবের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন বইটি কিনতে। স্বভাবতই ভয় পেলেন বুদ্ধদেব। কাঠগড়া, পাহারাওলার গুঁতো আর জেলখানার ঠান্ডা মেঝেয় কম্বলের বিছানার ভয়ঙ্কর ছবি মাথায় এল তাঁর। পুলিশের সঙ্গে রফা করলেন তিনি। যদিও প্রথমদিকে যুদ্ধ ঘোষণার একটা ভাব ছিল তাঁর। দিলীপকুমার রায় এক জন দুঁদে ব্যারিস্টারের সঙ্গে তাঁর কথা বলিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁকে দেখে এবং তাঁর গলার আওয়াজ শুনে বুদ্ধদেবের মনে হয়েছিল তাঁর একটি হুঙ্কারে ‘হাইকোর্ট সুদ্ধ কেঁপে উঠবে’। কিন্তু বুদ্ধদেবের সঙ্গে তাঁর কয়েক মুহূর্তের বাক্যালাপে পুরো ব্যাপারটা পণ্ড হয়ে গেল। বুদ্ধদেবেরই ভাড়া করা ট্যাক্সিতে লালবাজারের দিকে যেতে যেতে তিনি বুদ্ধদেবের কাছে জানতে চাইলেন, ‘আপনি কী লিখেছিলেন বলুন তো?’ প্রশ্নটা অদ্ভুত, কারণ বুদ্ধদেব এক কপি বই তাঁকে দিয়ে এসেছিলেন এবং ধরেই নিয়েছিলেন তিনি খুঁটিয়ে পড়ে নিশ্চয়ই বুদ্ধদেবের পক্ষে যুক্তি তৈরি করে রেখেছেন। যাই হোক, তাঁকে আশ্বাস দেওয়ার ধরনে বুদ্ধদেব জানালেন, ‘কিছু না— এই তরুণ তরুণীর প্রেমের কথা আর কী।’
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
বুদ্ধদেবের এই উত্তর শুনে শূন্যে হাত তুলে আঁতকে উঠেছিলেন ব্যারিস্টার সাহেব, বলেছিলেন, ‘লাভ বিটুইন আনম্যারেড মেন অ্যান্ড উইমেন? আপনি করেছেন কী? এসব কথা কি শেক্সপিয়র লিখেছেন, না মিল্টন লিখেছেন? আমরাও তো বিলেতে স্টুডেন্ট ছিলুম— কই, এ-রকম তো দেখিনি!’ এই অকল্পনীয় উত্তর শুনে মাথা ঝিমঝিম করে উঠল বুদ্ধদেবের। তিনি হাল ছেড়ে দিলেন। লালবাজারে গিয়ে তাঁকে একটি মুচলেকা দিতে হল এই মর্মে যে আগামী পাঁচ অথবা দশ বছরের মধ্যে তিনি আর বইটি প্রকাশ করবেন না। তার পরও যদি প্রকাশ করতে চান পুলিশের অগ্রিম অনুমতি নিতে হবে। লালবাজার থেকে বেরিয়ে ব্যারিস্টার সাহেব বুদ্ধদেবকে আদেশ দিলেন, ‘আমার জুনিয়রকে আট টাকা দিয়ে দিন।’ সকৌতুক বেদনার সঙ্গে লিখছেন বুদ্ধদেব, ‘আমি ভেবে পেলাম না কেন দেবো, কেননা সেই কনিষ্ঠ উকিলটি কিছুই করেননি আমার জন্য। কেন তাকে লাঙ্গুল রূপে আনা হয়েছিল তাও আমার ধারণাতীত...’ বলাবাহুল্য না দিয়ে উপায় ছিল না। শুধু টাকা নয়, আরও মজার কথা এই যে, বইটির সর্বশেষ কপিটিও তিনিই হস্তগত করলেন। বুদ্ধদেব চেয়েও পেলেন না।
তবে বুদ্ধদেবের সমর্থনে প্রতিবাদও হয়েছিল। আনন্দবাজার পত্রিকায় এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সম্পাদকীয় লিখেছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার। আরও অনেক কথার সঙ্গে তিনি লিখেছিলেন, ‘উপন্যাসের নর-নারীরা কিভাবে প্রেম নিবেদন বা হৃদয় বিনিময় করিবে, তাহার ‘হুদ্দা’ যদি পুলিশ-নিয়ন্ত্রিত হয় তাহা হইলে বাঙ্গলা সাহিত্যের অতি শোচনীয় দুর্দিন সমাগত হইয়াছে বুঝিতে হইবে।’
যে-বই নিয়ে এত কাণ্ড, পরে যখন আবার সেই বই ছেপে বেরোল, তখন বুদ্ধদেব লিখছেন, ‘আমার এক বন্ধুর বারো বছরের মেয়ে তা পড়ে বলে উঠলো,—ও মা! এতে আবার দোষের কী আছে! এ তো ডাবের জল।’
এখানে বলা দরকার, এই করুণ ঘটনাই বুদ্ধদেবকে প্রকাশক করে তুলেছিল। তিনি লিখেছিলেন, ‘শুনলাম এর পরে আমার প্রকাশক পাওয়া শক্ত হবে। আমার মাথায় খেলল দু’-একটা বই নিজেরা ছেপে দেখলে মন্দ হয় না—তাতে পারমার্থিক এবং আর্থিক লাভও বেশি হতে পারে।’ এই চিন্তা করে এর পরেই ‘গ্রন্থকার মণ্ডলী’ নামে প্রকাশনা সংস্থা খুললেন তিনি।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
29-11-2021, 12:10 PM
(This post was last modified: 29-11-2021, 02:09 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
অশ্লীলতার ভূত নানা ভাবে তাড়া করেছে তাঁকে। একদিন খোশমেজাজে প্রেস থেকে ‘কবিতা’ পত্রিকার নতুন সংখ্যা আনতে গেছেন। কিন্তু দেখলেন সবাই কেমন চুপচাপ, কোনও কথার স্পষ্ট উত্তর দিচ্ছেন না কেউ। শেষমেষ এক জন জানালেন যে পত্রিকা তৈরি আছে, কিন্তু চালান দেওয়া মুশকিল। কেন? পত্রিকার বিশেষ একটি পৃষ্ঠা দেখিয়ে তিনি বললেন, আগে খেয়াল করলে এইসব অশ্লীলতা তাঁরা ছাপতেন না। অবাক বুদ্ধদেব বুঝতেই পারলেন না কিরণশঙ্কর সেনগুপ্তর সেই কবিতায় সমস্যাটা কোথায়! তবে কি নারীর শরীরের কয়েকটি অংশের নামেতেই আপত্তি তাঁদের? বুদ্ধদেব অনেক চেষ্টা করলেন, কিন্তু কিছুতেই তাঁদের টলাতে পারলেন না। শেষ পর্যন্ত নামী লেখক ও আইনজীবী অতুলচন্দ্র গুপ্তর কাছ থেকে লিখিত অভয়বাণী নিয়ে এসে পত্রিকা ছাড়াতে হয়েছিল বুদ্ধদেব বসুকে।
শুধু নিজের জন্য নয়, বুদ্ধদেব লড়াই করেছিলেন অন্য লেখকদের জন্যও। সমরেশ বসুর ‘প্রজাপতি’ উপন্যাসের বিরুদ্ধে অশ্লীলতার জন্য মামলা হয়েছিল। বুদ্ধদেব বসু নিজে সেই মামলায় সমরেশ বসুর পক্ষে সাক্ষী দিয়েছিলেন। আনন্দবাজার পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল সেই মামলার বর্ণনা— ‘দরজার পাশে দাঁড়িয়ে হাবড়ে চুমু খাচ্ছিল—’ এই লাইনটি বলে বুদ্ধদেবকে কৌঁসুলির প্রশ্ন ছিল, ‘এই বাক্যগুলি কি অশ্লীল বলে মনে করেন?’
বুদ্ধদেব উত্তর দিয়েছিলেন : ‘না। আমার বক্তব্য এই বইয়ের নায়ক বা অনায়ক সমসাময়িক পশ্চিমবঙ্গের রকবাজ ছেলেদের টাইপ।... এই যুবকেরা সাধারণত যে ভাষায় কথা বলে সেই ভাষাতেই এই উপন্যাস লেখা।’ মনে পড়বে, সমরেশ বসু লিখেছিলেন, ‘জীবনে যদি অন্ধকার থাকে, তাকে অন্ধকারেই রাখতে হবে কেন। আলোয় আনতে গেলে পেঁচক শৃগাল চিৎকার করবে। করুক না। তবুও অন্ধকারে যেন না থাকতে হয়।’
অশ্লীলতা প্রসঙ্গে আইন-আদালতের ঝামেলা শেষজীবন পর্যন্ত সামলাতে হয়েছে বুদ্ধদেব বসুকে। ১৯৬৯ সালে ‘রাত ভ’রে বৃষ্টি’ উপন্যাস লেখার জন্য মামলা হল তাঁর বিরুদ্ধে। মামলা করেছিলেন নীলাদ্রি গুহ। বুদ্ধদেব বসুর পক্ষে সাক্ষী দিয়েছিলেন মানসী দাশগুপ্ত, শিশির চট্টোপাধ্যায় ও অরূপরতন বসু। প্রাথমিক ভাবে দোষী সাব্যস্ত হলেও পরে হাইকোর্টের রায়ে অশ্লীলতার দায় থেকে মুক্তি পান বুদ্ধদেব। এই মামলা প্রসঙ্গে জ্যোতির্ময় দত্ত লিখেছিলেন, মনস্তত্ত্ববিদ মানসী দাশগুপ্তকে সওয়াল করার সময় ‘কৌঁসুলি কেবল সাক্ষীর শরীরে হাত দিতে বাকি রাখেন’। প্রবাসী মেয়েকে লেখা চিঠিতে বুদ্ধদেবের সেই সময়ের মানসিক উদ্বেগ ধরা পড়েছে। ‘বাংলাদেশ পাগল হয়ে যাচ্ছে’— লিখেছিলেন তিনি।
এই লেখার কয়েক বছর পরে ‘চরম চিকিৎসা’ নামে একটি নাটক লিখেছিলেন বুদ্ধদেব, যেখানে একটি ‘অশ্লীলতা-নিবারণী সংঘ’-এর উদ্বোধন করেছিলেন ‘ড. মদনভস্ম ভট্টাচার্য, গোবর্ধন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক’। অশ্লীলতা-বিরোধী দলের একটি ইশতেহারে এমন এক জগতের কথা আছে, যেখানে ‘মানুষ নেই। শুধু আছে লক্ষ-লক্ষ রোবট, লোহা, তামা আর প্ল্যাটিনামে তৈরি।’
বুদ্ধদেব ছাড়াও আরও অনেক বাংলা ভাষার লেখককে নীতিপুলিশের গঞ্জনা শুনতে হয়েছে। অশ্লীল কবিতা লেখার জন্য একাধিক লেখকের চাকরি পর্যন্ত চলে গেছে এমন গল্পও আমরা শুনেছি। পঞ্চাশের দশকের কয়েক জন লেখকের নাম এই প্রসঙ্গে মনে আসতেই পারে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তো সরাসরি লিখেছিলেন, ‘খিস্তির ভাষাই সাহিত্যে সবচেয়ে বেশি পবিত্র। তার কারণ, সাহিত্যে যেসব শব্দ আগে ব্যবহৃত হয়নি বা খুব কম ব্যবহৃত হয়েছে — সেইগুলোই পবিত্র।’
Posts: 446
Threads: 3
Likes Received: 11,694 in 2,466 posts
Likes Given: 4,988
Joined: Jan 2019
Reputation:
2,925
লেখাটা পড়ে আমার খারাপ লাগলো। জানিনা এখনও কি মানুষের সেই মানসিকতা আছে কি না। যেখানে প্রেমকে অশ্লীল নিষিদ্ধ ধরা হত এবং বাল্য,বহু বিবাহকে সামাজিক। এক জন লেখক যা খুশি লিখতে পারেন। পাঠক নিশ্চিত করবেন তাঁরা সেটা পড়বে কি না? পাঠক না পড়লে লেখক লিখবেন না। স্বাভাবিক। অনেক সময় হাসি পায় ভেবে মানুষ কত কপটাচারী। খাবেও এবং বদনামও করবে।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
*খাঁড়ামশাই*
*নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়*
************
বংশীবদন খাঁড়ার ছেলে হংসবদন–যার ডাকনাম চিচিঙ্গে–সে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি এল।
ঝোলাগুড়ের ব্যবসায়ী বংশীবদন তখন নাকের নীচে চশমা নামিয়ে দুশো বত্রিশ মন গুড়ের হিসেব করছিলেন। বিরক্ত হয়ে বললেন, ক্যা হয়েছে রে চিচিঙ্গে? অমন করে শেয়ালের বাচ্চার মতো কাঁদছিস কেন?
শেয়ালের বাচ্চা নিশ্চয় ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদে না, কিন্তু বংশীবদন ওসব গ্রাহ্য করেন না। আর কী–কে–এগুলোকে তিনি ক্যা বলেন।
চিচিঙ্গে বললে, হেডমাস্টার কেলাসে তুলে দেয়নি।
-ক্যা বললি?
–হেডমাস্টার আমাকে
ঠাঁই করে বংশীবদন একটি চড় বসিয়ে দিলেন চিচিঙ্গের গালে। বললেন, পাঁঠার বাচ্চা কোথাকার! হেডমাস্টার! তোর গুরুজন না? বিদ্যের গুরু। বাপের চেয়েও বড়। কেন, মাস্টারমশাই–হেডস্যার এইসব বলতে পারিসনে? তুলে দেয়নি নয় তুলে দেননি। মনে থাকবে?
চড় খেয়ে চিচিঙ্গের কান্না বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। গোঁজ হয়ে, ঘাড় নেড়ে সে জানাল-মনে থাকবে
বংশীবদন বললেন, কিন্তু ক্যা হয়েছে? কেন দেননি ওপর-কেলাসে তুলে?
–আমি অঙ্ক আর ভূগোলে পাশ করতে পারিনি। সবাই বলছে, তুই পেসিডেনের ছেলে হয়ে
বংশীবদন রেগে আগুন হয়ে গেলেন : আমার বাপের নামে ইকলেজ, আমি জমি দিইছি, বাড়ি করে দিইছি–আর আমার ছেলেকেই ফেল করানো? আচ্ছা, তুই ভেতরে যা–আমি দেখছি।
চিচিঙ্গে ভেতরে চলে গেলে বংশীবদন তক্ষুনি একটা চিঠি লিখলেন হেডমাস্টার শ্রীনাথ আচার্যিকে। লিখলেন, মহাশয়, অবিলম্বে আমার সঙ্গে দেখা করিবেন। আর চিচিঙ্গির কেলাসের একখানা ভূগোল আর একখানা অঙ্কের প্রশ্নপত্র সঙ্গে লইয়া আসিবেন।
হেডমাস্টার আচার্যিমশাই তখন কেবল প্রমোশন দিয়ে, খুব ক্লান্ত হয়ে, নিজের ঘরে বসে হুঁকোয় টান দিয়েছেন। এমন সময় বংশীবদনের লোক ভূষণ মণ্ডল চিঠিটা এনে হাজির করল। বললে, বাবু আপনাকে এক্ষুনি যেতে বলেছেন।
–যাচ্ছি–তটস্থ হয়ে হেডমাস্টার বললেন, তুমি এগোও, আমি আসছি।
ভূষণ চলে গেল। তামাক খাওয়া মাথায় রইল, হুঁকো নামিয়ে হেডমাস্টার ডাকলেন, ওহে বিমল!
বিমলবাবু ইকলেজের জুনিয়ার টিচার। কিন্তু ছেলেমানুষ হলে কী হয়, যেমন বুদ্ধিমান, তেমনি চটপটে। খুব ভালো পড়ান। সব কাজেই হেডমাস্টার তাঁর পরামর্শ নেন।
বিমলবাবু আসতেই হেডমাস্টার বললেন, দ্যাখো কাণ্ড। খাঁড়ামশাই ডেকে পাঠিয়েছেন। তখনই তোমায় বললুম, প্রেসিডেন্টের ছেলে দিয়ে দিই প্রমোশন কী হবে ঝামেলা করে। কিন্তু তোমার কথায় ওকে আটকে দিলুম, এখন
বিমলবাবু বললেন, স্যার, কলেজের একটা নিয়ম তো আছে। প্রেসিডেন্টের ছেলে তো কী হয়েছে, ফেল করলেও প্রমোশন দিতে হবে? তাহলে গরিবের ছেলেরা আর কী দোষ করল–সব্বাইকে তো পাশ করিয়ে দেওয়া উচিত।
–আরে, উচিত-অনুচিত আর মানছে কে। যার টাকা আছে ওসব তার বেলায় খাটে না। এখন খাঁড়ামশাই যদি খেপে যান, তাহলে আমাদের অবস্থাটা ভাবো। তাঁর টাকায় কলেজ, তিনি প্রেসিডেন্ট। এদিকে সায়েন্স ব্লকের জন্যে সামনের মাসে পনেরো হ্যাজার টাকা দেবেন কথা আছে। এখন যদি বিগড়ে যান, আমরা মারা পড়ে যাব।
বিমলবাবু মাথা নেড়ে বললেন, আমার তা মনে হয় না স্যার। খাঁড়ামশাই অত অবিবেচক নন। টাকা অনেকেরই আছে, কিন্তু এরকম মহৎ মানুষ দুজন দেখা যায় না। কলেজ করেছেন, হেলথ সেন্টার খুলিয়েছেন, দুমাইল রাস্তা করেছেন। নিজেদের খরচে গ্রামের লোকের জন্যে তিনটে টিউবওয়েল করে দিয়েছেন। কত লোককে যে দুহাতে দান করেন তার হিসেব নেই। তিনি নিশ্চয় বুঝবেন।
ব্যাজার মুখে হেডমাস্টারমশাই বললেন, কে জানে! সেকেলে লোক, মেজাজের থই পাওয়া শক্ত। যা হোক, তুমিও চলে। তুমি সঙ্গে থাকলে একটু ভরসা পাব।
আচ্ছা, চলুন—
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
দুজনে গিয়ে হাজির হলেন খাঁড়ামশাইয়ের বাড়িতে।
বংশীবদন দুশো বত্রিশ মন ঝোলা গুড়ের কতটা ইঁদুর খেয়েছে, নাগরি ফুটো হয়ে কতটা নষ্ট হয়েছে, কতটাই বা আরশোলা-পিঁপড়ের পেটে গেছে–এইসব লোকসানের হিসেবের মধ্যে তলিয়ে ছিলেন। হেডমাস্টার আর বিমলবাবুকে দেখে প্রথমটায় বললেন, ক্যা ব্যাপার, আপনারা বলতে বলতেই তাঁর চিচিঙ্গের কথাটা মনে পড়ে গেল।
বসুন, বসুন। তারপরেই বিনা ভূমিকায় তাঁর সোজা জিজ্ঞাসা : চিচিঙ্গে ওপরের কেলাসে উঠতে পায়নি কেন?
হেডমাস্টামশাই একটা ঢোক গিলে বললেন, আজ্ঞে, ও অঙ্কে আর ভূগোলে ফেল করেছে।
কত পেয়েছে?—
অঙ্কে সাত। ভূগোলে বারো।
–হুঁম।–বংশীবদন গম্ভীর হয়ে গেলেন। তারপর বললেন, ওদের কেলাসের যে দুটো কোশ্চেন আনতে বলেছিলুম, এনেছেন?
আজ্ঞে এনেছি–বিমলবাবু তক্ষনি দুখানা প্রশ্নপত্র এগিয়ে দিলেন খাঁড়ামশাইয়ের হাতে।
চশমাটাকে তুলে, জায়গামতো বসিয়ে, বংশীবাদন উলটে-পালটে প্রশ্ন দুখানা পড়লেন। একবার বললেন, ইরে বাবা, একবার বললেন, ও-ওয়াফ আর-একবার বললেন, এসব ক্যা কাণ্ড। মাথার ওপরে যেন খাঁড়া উচিয়ে রয়েছে, এইভাবে তটস্থ হয়ে বসে থাকলেন দুই মাস্টারমশাই।
তারপর :
–এটা বুঝি ভূগোল।
হেডমাস্টার বললেন, আজ্ঞে।
–অ। কেরল রাজ্যের রাজধানী ক্যা? হুম। ভারতের কোথায়-কোথায় কয়লা ও পেট্রোলিয়াম পাওয়া যায়, তাহা বলো। হু-হুম। ভারতের একখানি মানচিত্র আঁকিয়া গঙ্গা নদীর উৎপত্তিস্থল হইতে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত প্রধান-প্রধান শহরগুলি–বেশ, বেশ।–প্রশ্নপত্রটি একদিকে সরিয়ে রেখে খাঁড়ামশাই বললেন, এসব না জানলে বুঝি বিদ্যে হয় না?
কথার সুরটা বাঁকা। হেডমাস্টার ঘামতে লাগলেন।
বললেন, আজ্ঞে, নিজের দেশটাকে তো জানতে হবে।
-ক্যা? নিজের দেশ? তা ভালো, খুব ভালো। আচ্ছা হেডমাস্টারমশাই, আপনি তো জ্ঞানী লোক, নিজের দেশের সব খবরই জানেন–দুদুবার এমএ পাশ করেছেন। বলুন দিকিনি, আমাদের এই জেলায় কটা গ্রাম আছে?
দুই মাস্টামশাই এ-ওর মুখের দিকে চাইলেন। ওঁরা অনেক খবর জানেন, কিন্তু
খাঁড়ামশাই একটু হাসলেন : আচ্ছা বলুন দেখি, বাংলা দেশের কোন্ কোন্ জেলায় বেশি আখের চাষ হয়?
বিমলবাবু বললেন, মুর্শিদাবাদ।
–আর?
দুজনেই চুপ।
বলতে পারেন, আমাদের এই কাঁসাই নদীর ধারে–এই জেলায় ক্যাক্যা গঞ্জ আছে?
তিন নম্বর খাঁড়ার ঘা। বিদ্যের জাহাজ দুই মাস্টারমশাই স্রেফ বোবা বনে গেলেন।
মিটমিট করে হাসলেন খাঁড়ামশাই : আপনারা দুই জাঁহাবাজ পণ্ডিত হয়ে নিজের বাংলা দেশ, নিজের জেলার এটুকু খবর বলতে পারলেন না, আর চিচিঙ্গে কেরলের রাজধানী কিংবা কোথায় কয়লা আর পেট্রোল পাওয়া যায়–তা লিখতে পারল না বলেই ফেল হয়ে যাবে? আচ্ছা, এবার অঙ্কে আসুন। এই যে
আতঙ্কে হেডমাস্টারমশাইয়ের দম আটকে এল, এর পরে যদি কড়াকিয়া, বুড়িকিয়া, মনকষা কিংবা শুভঙ্করের ফাঁকি নিয়ে পড়েন, তা হলে আর দেখতে হবে না। হাতজোড় করে বললেন, ঠিক আছে আমি এক্ষুনি গিয়েই হংসবদনকে প্রমোশন দিয়ে দিচ্ছি! মানে, আমাদেরই ভুল হয়ে গিয়েছিল।
–প্রমোশন দেবেন?–বংশীবদনের কপাল কুঁচকে গেল : কেবল চিচিঙ্গেকেই?
আজ্ঞে, আপনার ছেলে
–আমার ছেলে বলে পীর হয়েছে নাকি? ওটা তো একটা শেয়ালের বাচ্চা। ওকে একা কেন দিতে হলে সবগুলোকেই দিতে হয়। যারা গোল্লা খেয়েছে, তাদেরও। পারবেন?
মাস্টারমশাইরা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলেন।
–একটা কাজ করুন। সবগুলোকে কেলাসে তুলে দিন। যারা পাশ করেছে, একেবারে ডবল প্রমোশন দিয়ে দিন তাদের। বাপরে কী বিদ্যে। যারা গঙ্গা নদীর উৎপত্তি থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত ছবি এঁকে দেখাতে পারে, সব শহরগঞ্জের খবর দিতে পারে, তারা সামান্যি লোক।
খুকখুক করে একবার কাশলেন হেডমাস্টার।
আজ্ঞে, বোর্ডের নিয়ম মেনে তো আমাদের পড়াতে হয়। এসব করতে গেলে কলেজ তুলে দেবে।
খাঁড়ামশাই বললেন, দিক তুলে। যে-শিক্ষে দেশ-গাঁয়ের খবরটুকুও জানায় না, তা থাকলেই কী আর গেলেই কী। তা হলে তাই করুন। যারা ফেল হয়েছে, সব পাশ। যারা পেট্রোল আর কয়লার খবর দিয়েছে, তাদের ডবল-প্রমোশন। যান।
মামলা মিটিয়ে দিলেন বংশীবদন। তারপর খাতা খুলে আবার দুশো বত্রিশ মন ঝোলা গুড়ের হিসেব মেলাতে বসে গেলেন।
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দুই মাস্টারমশাই কিছুক্ষণ হাঁ করে চেয়ে রইলেন তাঁর দিকে। তারপর বিমলবাবু আস্তে-আস্তে ডাকলেন : খাঁড়ামশাই?
অন্যমনস্কভাবে বংশীবদন বললেন, আবার ক্যা হল?
–আমি একটা কথা বলব?
–নিশ্চয় নিশ্চয়।
–মই বেয়ে ওঠার সময় লোকে ওপরে তাকায়, না নীচের দিকে?
–নীচে তাকাবে কেন, ওপরেই তাকায়।
–আর ওপরে উঠে কাছের জিনিস দেখে, না দূরের?
–ওপরে উঠলে তো দূরেই তো চোখ যায়। কিন্তু একথা কেন?
বলছি। বিদ্যে হল সেই মই। ওপরে যত উঠবে তত দেশ-বিদেশের খবর জানবে সে। কোথায় গঙ্গার উৎপত্তি, কোথায় কেরোসিন-পেট্রোল, কেরলের রাজধানী কী, ইত্যাদি
বংশীবদন হাসলেন : বুঝেছি আপনার কথাটা। কিন্তু মইটা যে-মাটির ওপর–মানে দেশ-গাঁ, সে-মাটিটাকে কে চেনাবে?
-খাঁড়ামশাই, শিক্ষা তো কেবল কলেজের জিনিস নয়। তার অর্ধেক ঘরে, অর্ধেক কলেজে। আপনি জ্ঞানী লোক, এত বড় ব্যবসায়ী আপনার ছেলেকে কি আপনি শেখাবেন না, আমাদের থানায় কটা গ্রাম, কাঁসাইয়ের ধারে কী কী গঞ্জ? আপনি কি তাকে চেনাবেন না চারদিকের কোন গাছের কী নাম, কোনটা কী ফুল, কোন পোকাটা কোন জাতের? আপনারা শেখাবেন ঘরের খবর, আমরা বাইরের। অভিভাবক যদি তাঁর কাজ না করেন, আমরা কতটুকু পারি, বলুন। এই ঘরের শিক্ষাটা আমরা পাইনি বলেই তো আপনার কথার জবাব দিতে পারিনি। আপনারা এই সব শিখিয়ে-পড়িয়ে দিন, আমরা সারা দুনিয়াকে চিনিয়ে দিই। আপনি তো গুড়ের ব্যবসা করেন, আপনার ছেলেও কি জানে বাংলা দেশের কোথায়-কোথায় আখের চাষ হয়?
একটু চুপ করে থেকে হা-হা করে হেসে উঠলেন খাঁড়ামশাই।
–ঠিক বলেছেন। এ তো আমাদেরই কাজ। আপনারা মই দিয়ে তুলবেন ওপরে, আমরা ভালো করে নীচের মাটিটাকে চিনিয়ে দেব। হুঁ, আমরাই ভুল হয়েছে। আজ থেকেই আমি চিচিঙ্গিকে নিয়ে পড়ব। ফেল করিয়েছেন, বেশ করেছেন–কেরলের রাজধানীর খবর দিতে না পারলে আর সাতবার ফেল করিয়ে দেবেন। তারপর দেখি আমি ওই হতচ্ছাড়াকে নিয়ে কী করতে পারি।
বলেই চিৎকার :
ওরে ভূষণ, শিগগির মাস্টারমশাইদের জন্য ভালো করে জলখাবার নিয়ে আয়। ওঁরা অনেক খেটেখুটে এসেছেন।–বলে নিজেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে গেলেন ভেতরে।
হেডমাস্টারের ঘাম দিয়ে জ্বল ছাড়ল।
বাঁচালে বিমল, যা ঝামেলায় ফেলে দিয়েছিলেন খাঁড়ামশাই।
বিমলবাবু আস্তে-আস্তে মাথা নাড়লেন।
না স্যার, উনি আমাদেরও চোখ খুলে দিয়েছেন। আজ বুঝতে পারছি, এতগুলো ডিগ্রি পেয়েও নিজের দেশকে আমরা কিছুই চিনিনি, সব আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে!
[ দেখেই বুঝতে পারছেন এটি শ্রদ্ধেয় নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা, সংগ্রহ আমার ]
Posts: 446
Threads: 3
Likes Received: 11,694 in 2,466 posts
Likes Given: 4,988
Joined: Jan 2019
Reputation:
2,925
যুক্তি মূলক, শিক্ষা মূলক গল্প। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় মহাশয়কে গসিপে পেয়ে বড় আনন্দ পেলাম আমি !!!
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
করুনাধারা
দিপ্বানিতা
আজকাল দুপুর বেশ খানিকটা গড়ালে তবে ভাত খান আরতি। তাহলে সন্ধ্যের খাবার ঝামেলাটা এড়ানো যায়। নইলে দুপুর আর রাতের খাবারের মাঝে এত খিদে পায় যে শরীর অস্থির করতে থাকে। হাতের সেলাই গুলো শেষ করতে মন বসে না ওঁর।
অবশ্য সেলাই করেই বা কি হবে! কেউ তো ছোঁয়া লাগা কিছু নেবে না, কি ভাইরাস না কি এসে শেষ করে দিল একেবারে। এই যে উনি এক বাড়ি বাচ্চা দেখার আয়ার কাজ করতেন, ওই বাড়ি থেকেই ওঁকে যেতে বারন করে দিয়েছে। এমন ভাইরাস, এ নাকি রাস্তায় বেরোলেই ধরবে। আর তার থেকে চারপাশের মানুষগুলোর ছড়াবে। ওঁর থেকে মিমলির যদি কিছু হয়! ছোট্ট মানুষ! এই কথা ভেবেই মাইনের টাকাটাও চাইতে পারেননি। তাও পাশের বাড়ির গোবিন্দ রেশন এনে দিল একদিন গেল হপ্তায়, তাই সেদ্ধ ভাত টুকু জুটে যাচ্ছে। কিন্তু সে ও ফুরিয়ে এলো প্রায়। তারপর কি হবে, ভাবতেই বুক টা কেমন খাঁ খাঁ করে ওঠে।
বহু বছর ধরেই বাচ্চা দেখার কাজ করেন আরতি। ভগবান তো নিজের সন্তান দেননি, তাই অন্যের সন্তানকেই বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন উনি বরাবর। আজকাল ক্লান্ত লাগে খুব। কিন্তু উপায় নেই। মাসে মাসে যে কটা টাকা জমাতেন একজনের কাছে, বছর ছয়েক আগে সেই কোম্পানিতে তালা পড়েছে। সেই কোম্পানির মালিকেরা সবাই নাকি জেল হাজতে। আর...শেষ সঞ্চয়টুকু খুইয়ে আবার আয়ার কাজ ধরেছেন আরতি। সত্যি বলতে কি, কাজ টা ওনার ভালো লাগে খুব। বাচ্চাদের গায়ে একটা আলাদা গন্ধ থাকে...ওদের মুখের হাসিতে একটা আলাদা আলো থাকে...।
বুক ভেঙে দীর্ঘশ্বাস আসে আরতির। মিমলিটার জন্য খুব মন খারাপ লাগছে! দুষ্টু ও হয়েছে মেয়েটা। বিকেল হলেই ঝুঁটি বেঁধে পাউডার লাগিয়ে বেউ বেউ নিয়ে যেতে হয়। এখন তো ও ও বেরোতে পারছে না...মাম্মাম আছে অবশ্য কাছে, তাতে মেয়ে একটু ভাল থাকতে পারে। নইলে বৌদির তো অফিস থাকে সারাক্ষণ। আহা, বৌদির ও নিশ্চয়ই ভাল লাগছে মেয়ের কাছে কাছে থেকে। মায়ের মন...ওঁর ই যদি মিমলিকে ছেড়ে থাকতে কষ্ট হয়, তাহলে বৌদির না জানি কত কষ্ট হতো রোজ।
বিকেল শেষ হয়ে আসছে। এবার সন্ধ্যে দিতে হবে। সংস্কার। নইলে ঈশ্বর আর কি ই বা করতে পারেন...চারিদিকে এত অনাচার, পাপের বোঝা পৃথিবীতে...। এই ভাইরাস না কি, এত সেই পাপের ই ফল।
শুধু এই খিদের জ্বালা টা যদি না থাকত...।
'আরতি পিসি? ও আরতি পিসি?' হঠাৎ আওয়াজ শুনে তাকান আরতি। দেখেন গাড়ি থেকে নামছে একজন।
'উফ, তুমি কোথায়? এই যে এদিকে এসো, মা তোমার জন্য পাঠালেন,এই যে এগুলো তুলে রাখো...'
এক নজর তাকিয়ে থাকলেন আরতি আগন্তুকের দিকে। এই উঁচু লম্বা ছেলেটা কে রে বাবা! আর কতটা চাল ডাল এসব এনেছে!
'কি হলো, পিসি? আমাকে চিনতে পারছ না? আরে আমি তো রাজা। দাশগুপ্তদের ছেলে। তুমি তো আমার ছোটবেলায় আয়া পিসি ছিলে। এখন আমাদের পাশের বাড়ির বাচ্চাটাকে যত্ন করো? আমাকে ভুলেই গেলে তুমি? একটু যেন অভিমান করে বলে রাজা।
সেই রাজা! জন্মের প্রায় পর থেকে আট নয় বছর বয়স পর্যন্ত ওকে দেখতেন আরতি। তারপর ছেলে হোস্টেলে চলে গেল। এখন তো বাইরে কোথায় থাকে শুনেছিলেন! ওর মা, মানে বৌদিই তো মিমলির মাকে ওঁর কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন ওঁর কাছে বাচ্চা রেখে নিশ্চিন্তে থাকা যায়...নইলে যা দিনকাল!
'এসো বাবা এসো, এমন দিনে এলে..কিছু যে মুখে দেবে সে উপায় নেই...' কিন্তু কিন্তু করে বলেন উনি।
'আরে পিসি, এরকম বোলো না...আমি আরো আগেই আসতাম। কিন্তু বাইরে থেকে এসেছি বলে চোদ্দদিন বাড়িতে ছিলাম। তাই আগে আসতে পারিনি। শোনো, এটা রাখো তো...' বলে বিছানায় একটা খাম রাখল রাজা।
টাকা নাকি! না না! চাল টাল এনেছে এই অনেক...আবার টাকা...
ওনার মুখ দেখেই কিছু বুঝে থাকবে ছেলে, হেসে বলল 'শোনো, না করবে না! তুমিই না বলতে আমি "রাজা" না, তোমার "মহারাজা"...তা আমি আজ হুকুম করছি, মহারাজের হুকুম, এটা তোমাকে নিতেই হবে। আর...এটা কিন্তু আমার নিজের টাকা, আমি পড়াশুনা করি বলে পাই, ছেলের টাকায় না বলতে নেই, কেমন?' বলে উঠে দাঁড়াল ছেলে।
টাকা কটা দরকার ও ছিল! কয়েকটা ওষুধ কেনার আছে। গোবিন্দকে বললেই এনে দেবে তাই কিছু না বলে চুপ করে রইলেন আরতি।
চলে যেতে গিয়েও রাজা ঘুরে এলো একবার। 'পিসি, আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দেবে না? সেই ছোটবেলার মতো? আর শোনো, তারপর সাবান দিয়ে হাত টা ধুয়ে নিও কিন্তু...'
চোখটা ঝাপসা লাগছে খুব...সেই নিয়েই ছেলের মাথায় হাত রাখলেন আরতি। বাইরে কি দাবদাহ...কিন্তু ভেতরটা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে যেন...। হয়ত একেই বলে অপত্য...।
ঘরে এসে গুনগুন করে উঠলেন দু কলি গান 'জীবন যখন শুকিয়ে যায় করুণাধারায় এসো...'
গাড়িতে উঠতে উঠতে তখন রাজা ভাবছে, যাক, স্টাইপেন্ডের টাকাটা এতদিনে একটা ভাল কাজে লাগল.... যে মানুষগুলোর জন্য বেড়ে ওঠা...তাঁরা ভাল না থাকলে হয়?
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
বিষ-মুক্তি
অয়নের স্পর্শে ভেসে যাচ্ছে তুলি আজ।
গত দুটো উইকএন্ডে বাড়ি আসতে পারেনি তুলি। অনেকগুলো কাজ জমে ছিল। গতসপ্তাহে তো রবিবারও অফিস করেছে।
কিন্তু সত্যি বলতে কি... মন পড়ে ছিল বর্ধমানেই। একটু ফাঁক পেলেই মনে হতো... কতগুলো দিন হয়ে গেল... বাবার সাথে বসে চা খায়নি... মায়ের হাতের রান্না খায়নি...আর অয়নের সাথেও দেখা হয় নি!
কেমন টিনএজারের মতো লাগত! সেই ক্লাস টেন এ ইংলিশ স্যারের কোচিং এ একজনের প্রেমে পড়েছিল, তাকে না দেখলে মন আনচান করত...। একবার তো বিয়েবাড়িও মিস করেছিল স্যারের ক্লাস আছে বলে! আজকাল, অয়নের জন্য সেরকমই মনে হয় তুলির। সোমবার, বাড়ি থেকে সরাসরি অফিস জয়েন করার পর থেকেই ক্যালেন্ডার দেখতে থাকে... শুক্রবার আসতে আর কতদিন বাকি! সাধারণত শুক্রবারেই অফিসের পরে ধর্মতলা থেকে বাস ধরে নেয় ও। আর শনিবার গুলো যেন স্বপ্নের মতো কাটে! রবিবার এলেই যদিও অনিবার্যভাবেই মন খারাপ হয়ে যায়। আর এই দু' দুটো উইকএন্ড কেটে গেল অফিসের ল্যাপটপ, প্রেজেন্টেশান আর মেইলের কচকচি নিয়েই।
মাঝেমাঝে নিজেকেই বুঝিয়েছে তুলি... "এসব কি হচ্ছে শুনি! তুই তো আর বাচ্চা মেয়ে না! আগেও একজন ছিল তোর জীবনে। কিন্তু তখনও তো এমনি করিসনি কখনও!" নিজেকে করা প্রশ্নের কোনো উত্তর পায়নি। প্রবলভাবে ভেসে গেছে স্মৃতিতে ডুব দিয়েই!
আর তাই, আজ অয়নের সামান্য স্পর্শেই যেন মোম হয়ে যাচ্ছিল তুলি! অয়নের হাল্কা স্টাবল, এলোমেলো চুল আর... ভিজে ছোঁওয়া... আহ্!
"আই লাভ ইউ,অয়ন। খুউউউব মিস করেছি তোকে এই দু সপ্তাহ!" ভাঙা ভাঙা গলায় বলে তুলি।
থেমে যায় অয়ন। তারপর জিজ্ঞেস করে "সত্যি?"
"তিন সত্যি!"
"তাহলে আসিস নি কেন?"
"কাজ ছিল রে... একটা টেন্ডারের কোটেশান দেবার ছিল।"
"তোর অফিস তো শনি-রবি ছুটি থাকে?"
"অয়ন, তুই জানিস... আমার কাজটাই এমন, কোনো কোটেশান দেবার আগে অনেক কিছু ডিউ ডিলিজেন্স থাকে... খতিয়ে দেখার ব্যাপার থাকে। ভুলভাল হয়ে গেলে গোটা কোম্পানি ব্ল্যাকলিস্ট হয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে প্রাইসিং এর ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হয়। মিসকোট হয়ে গেলে মুশকিল হয়ে যায়। "
"বাব্বা! অনেক দায়িত্ব! তা তুই একাই ছিলি, না অন্যকেউ ও...?"
"অন্য কেউ মানে? দ্যাখ, আমি একা তো এতকিছু করি না, আলাদা আলাদা টিম আছে।" বলতে বলতেই সতর্ক হয়ে গেল তুলি।
অয়ন কি আবার সেই এক কচকচানি শুরু করবে? উফ! এতবার বলার পরেও!
"ও! তারমানে সেই লোকটাও ছিল... তোর ম্যানেজার!"
"অয়ন! উনি আমার ডিপার্টমেন্টাল হেড! উনি তো থাকবেন ই! তুই কি বলতে চাইছিস?" ভাল লাগছে না আর তুলির।
মাসদুয়েক আগে একটা টেন্ডার পাওয়ার পরে ওদের সবাইকে পার্টি দিয়েছিলেন ইন্দ্র স্যার। সবগুলো ছবি আপলোড করেছিল তুলি ফেসবুকে। আর সেই থেকেই অয়নের সন্দেহ ওর আর ইন্দ্র স্যারকে নিয়ে। কী না... স্যার কেন ওর কাঁধ ধরেছেন! আরে কর্পোরেট এটিকেট মেনেই কাঁধ ধরেছিলেন উনি, অত্যন্ত ডিসেন্ট ভাবে। তাতেও সমস্যা! এখন তো অয়ন ইন্দ্র স্যারকে রীতিমতো স্টক করে ফেসবুকে। আর ওকে কথা শোনায়। পোস্ট শেয়ার করবেন ইন্দ্র স্যার... মজার পোস্ট হলেও সেটা তুলির জন্য, গানের কলি হলেও সেটা তুলির জন্য! হাস্যকর!
"না... আসলে ভদ্রলোক খুব হ্যান্ডসাম!"
"আর তেমনি খিটখিটে... আমাদের খুব জ্বালায় কারণে অকারণে!"
"কিভাবে জ্বালায়? শুধুই কাজ দিয়ে, নাকি...?"
"অয়ন! হাউ ডেয়ার ইউ! কি বলতে চাইছিস তুই!"
"আজকাল আমার থেকে কাছে আসার টান তোর বেশি থাকে... সেখানে পনেরোদিন পরে এলি... তোর ওই ইন্দ্র স্যার কি প্রক্সি দিচ্ছিল নাকি?"
"অয়ন!" থরথর করে কাঁপছে তুলি!
এতদিন ওর গলায় হাল্কা ঈর্ষা থাকত। কিন্ত্য আজ...
ছিঃ!
"ও... উনি নন... তাহলে কে... আচ্ছা তুই আবার তোর এক্স হাজব্যান্ডের সাথেই... "
"গেট আউট, অয়ন। এক্ষুণি বেরিয়ে যা!" হাঁফাতে হাঁফাতে বলে তুলি।
"কেন? কি এমন অন্যায় কথা বলেছি তোকে?"
"সেটা বুঝতে পারছিস না? মানুষ তুই?"
"না না, আমি অমানুষ, আর তুই সতী! সাবিত্রী! তাই তো কলকাতায় একা একা কি যে করে বেড়াস..."
কানটা বন্ধ করে তুলি।
সেই এক প্রশ্ন! এক ভঙ্গিমা!
"অয়ন, আই নিড আ ব্রেক। তুই এখন যা। পরে কথা হবে।" চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় তুলি।
"আমি চলে গেলে কিন্তু আর ফিরব না। মনে রাখিস।"
"রাখব, এবার যা।"
"ও, তাতেও তোর কিছু যাবে আসবে না! তাই তো... সব ই তো ইন্দ্রস্যার..."
"অয়ন! তুই যাবি? না আমি মা বাবাকে ডাকব?"
"আমাকে চলে যেতে বলছিস... সেটা কাকু কাকিমা শুনলে কি ভাববেন? এমনিতেই ডিভোর্সি তুই। আমি তাও দয়া করে এসেছিলাম তোর কাছে। আর তুই আমাকেও হারালি!"
"বাবা মা কি ভাববে, সেটা আমি দেখব। তবে তোর মতো টক্সিক কারো সাথে আর একমুহূর্ত ও থাকব না আমি। আর আমি ডিভোর্সি, কি না, সেটা আমার ব্যাপার, তোর না। তোর মতো টক্সিক মানুষকে আমার জীবনে রাখব না আমি। মাই চয়েস! নে, এবার ফোট!" একটানা, কিন্তু দৃঢ় গলায় বলে তুলি।
একপলক তাকায় অয়ন ওর দিকে। তারপর বেরিয়ে যায়।
সম্পর্কটা এভাবে ভেঙে গেল! কেমন ভোঁতা একটা কষ্ট হচ্ছে তুলির। কিন্তু... তারচেয়েও বেশি শান্তি হচ্ছে একটা...
প্রতিবার সোশ্যাল মিডিয়াতে ছবি দেবার আগে ভয়... অয়ন কি বলবে!
ছবি দেবার পরে ভয়... কে কি রিয়্যাক্ট দেবে বা কমেন্ট করবে, সেই নিয়ে কথা শুনতে হবে...
এই দমচাপা ভাবে থাকতে গিয়ে যে বাঁচতেই ভুলে যাচ্ছিল ও!
বাবা-মা কে বোঝাবে ও। বাবা মা সবটাই জানতেন ওর আর অয়নের ব্যাপারে। ওনারা কষ্টও পাবেন খুব। তবু.... আর নিজেকে হারাবে না তুলি... কিছুতেই না...
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(বাংলাদেশের কবি আবরার শাহরিয়ারের একটি কবিতা। ফেসবুকের টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত।)
'.রা গরু খায়, প্রিয় মাংস।
* রা গরুর পুজো করে, পবিত্র মাংস;
মনে মনে ধিক্কার দেয়,"শালারা ধর্ম করলো নাশ"!
* রা পাঁঠা ছাগল খায়।
'.রা নাক সিঁটকায়;
মনে মনে ধিক্কার দেয়, "পাঁঠার বিশ্রী গন্ধে দেশটাই শ্যাষ"!
বৌদ্ধরা শুকর খায়।
'.রা ঘেন্নাভরে চায়;
মনে মনে ধিক্কার দেয়,কাছে ঘেঁষলেও ঈমান থাকবে না লেশ"!
মাংসেও বিভাজন টানে ধর্ম।
মাংস নিয়ে কখনো-সখনো রক্তারক্তিও
হয় -- চলে দা, ছুরি, বর্ম; হরহামেশা যায় প্রাণও।
নারী মাংসের অবশ্য ধর্ম নেই, সবার প্রিয়,জাতীয় মাংস;
ধার্মিক, অ-ধার্মিক, নাস্তিক সবার কাছেই।
মিলেমিশে এমনকি জোর করে খেতেও আপত্তি নেই!
সত্য বড়ই অপ্রিয় - মেয়েদের মাংস ভক্ষণে কোন মতভেদ নেই।
\\ জাতীয় মাংস \\
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
সাথি !
বিয়ে বাড়িতে নিমন্ত্রিত হিসেবে আমিও তখন উপস্থিত।আমার দিদির ছোটো ননদের মেয়ের বিয়ে।আমি বর্ধমান থেকে গিয়েছি।খাওয়া দাওয়া পরেই করব।কারণ বাড়ি ফেরার তাড়া নেই।খাওয়া দাওয়া করে শীতের রাতে বেলঘরিয়া থেকে বর্ধমানে ফেরাটা একটু সমস্যাই বটে।দূরত্বটা তো কম নয়।আমি চেয়ারে বসে কফি খাচ্ছি।তখন বরযাত্রীও এসে গেছে।আমার দিদি আমার কাছে এসে একবার বলে গেল,"ভাই খিদে পেলে খেয়ে নিস।" আমার পাশেই বসে আছে আরো দু তিনজন মেয়ে।ওরা নিজেদের মধ্যে বার্তা বলে চলেছে।হঠাৎ একটি কথা কানে এল।ওদের মধ্যে থেকে একটি মেয়ে বলে উঠল,
--যত সব ঢঙ।আদিখ্যেতা দেখলে গা জ্বলে।
পাশ থেকে আর একটি মেয়ে বলে উঠল,
--দ্যাখ দ্যাখ ছেলেটার কোনো পার্সোনালিটিই নেই।বৌ একদিকে হুকুম করে যাচ্ছে আর ও সেটাই করছে।কেন একটু উঠে গিয়ে ফুচকাটা খেতে পারছে না? সুন্দরী বৌয়ের অর্ডার,শুনতে তো হবেই।....কথাগুলো বলেই একসঙ্গে হো হো করে হেসে উঠল সকলে।আমি কথাটা শুনেই সামনে তাকিয়ে দেখি,একটি ছেলে ফুচকার স্টল থেকে একটা একটা করে ফুচকা নিয়ে এসে দিচ্ছে আর মেয়েটি চেয়ারে বসে সেটা খেয়ে চলেছে।দেখেই মনে হল নতুন বিয়ে হয়েছে ওদের।
আমিও দেখে একটু অবাক হলাম।ফুচকার স্টল তো মুখের সামনেই।এই ভাবে একটা একটা করে ফুচকা নিয়ে এসে দেওয়ার থেকে নিজে একটু উঠে গিয়ে দাঁড়িয়ে খেয়ে নিলেই তো পারে।তবে এটার মধ্যেও একটা ভালোবাসা আছে বটে।বৌয়ের আবদার রাখতেই হয়তো ছেলেটি এই ভাবে নিয়ে এসে দিচ্ছে।ব্যাপারটা দেখে আমার খারাপ লাগেনি,আর আদিখ্যেতা বলেও মনে হল না।যারা যেভাবে ভালো থাকতে চায় থাক না,সেটা দেখে বাজে মন্তব্য করাটা ঠিক নয়।স্বামী স্ত্রীর মধ্যে প্রেমটা যতদিন থাকবে ততদিন সম্পর্কটা মধুর থাকে।সম্পর্ক এক ঘেয়ে হওয়ার থেকে এই ছোটো ছোটো আবদার গুলো পূরণ করলে ভালোবাসা বরং বাড়েই।
কিছুক্ষণ পর আমার পাশে বসে থাকা মেয়ে গুলো উঠে গেল।আমি একাই বসে আছি।এদিকে দিদি জামাইবাবু ওরা সব যে যার কাজেই ব্যস্ত।বিয়ে বাড়িতে সেভাবে আমার পরিচিত কেউ নেই।দিদির বাড়ি হলেও কথা ছিল।এটা দিদির ননদের বাড়ি।যে ছেলেটি তার ওয়াইফকে ফুচকা নিয়ে এসে খাওয়াচ্ছিল তারাও আমার পরিচিত নয়।ওদের দেখে বরপক্ষের লোক বলেই মনে হল।এদিকে ওদের ফুচকা খাওয়া শেষ হয়ে গেছে তখন।মিনিট পনেরো পর দেখি,ওই ছেলেটি হন্তদন্ত হয়ে মেয়েটির কাছে এসে বলল,
--বিদিশা,এই ব্যাচেই তুমি খেয়ে নাও।মাকেও বললাম খেয়ে নিতে।মা বলল বৌমাকে ডেকে দে তাহলে।
--তুমি এখন খাবে না?
--আগে তোমরা খেয়ে নাও।আমি পরের ব্যাচে বসব।বিয়ে না মিটলে তো যেতেও পারব না কেউই।
--বেশ ঠিক আছে।তাহলে খেয়ে নিই।হাতটা ধরো একটু। বলেই মেয়েটি হাতটা বাড়িয়ে দিতেই,ছেলেটি বলল,
--সাবধানে।আমাকে ভালো করে ধরো।
তারপর মেয়েটি চেয়ার থেকে উঠে ছেলেটির কাঁধে হাত দিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে চলল।ছেলেটিও অত্যন্ত যত্ন সহকারে মেয়েটিকে নিয়ে গেল।মেয়েটি হাঁটা চলা স্বাভাবিক বলে মনে হল না।ভালো রকম অসুবিধা আছে।পায়ের দিকে তাকাতেই দেখলাম মেয়েটির ডান পা টা নকল।অবাক হলাম।বুঝতে পারলাম তখন ছেলেটি কেন ফুচকা নিয়ে এসে খাওয়াচ্ছিল।শারীরিক প্রতিবন্ধী একটা মেয়েকে জীবন সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করাটা অনেক বড়ো মনের পরিচয়।কথা গুলো আমি তখন ভাবছি।কিছুক্ষণ পর দেখি ছেলেটি ওয়াইফকে পৌঁছে দিয়ে এসে আমার ঠিক পাশে এসেই বসল।ছেলেটি নিজে থেকেই আলাপ জমালো।এদিকে আমিও কথা বলার জন্য আগ্রহী হয়েই ছিলাম।খানিকটা পরিচয় হয়ে যাওয়াতে জানতে পারলাম ছেলেটির পিসতুতো দাদার বিয়ে।কথা বলতে বলতেই জিজ্ঞেস করলাম,
--আপনি খেতে বসলেন না?দেখলাম তো বৌদিকে নিয়ে গেলেন।
ছেলেটি হেসে বলল,
--আপনি লক্ষ্য করেছেন তাহলে!
--লক্ষ্য তো তখন থেকেই করছি যখন দেখলাম বৌদিকে ফুচকা নিয়ে এসে খাইয়ে দিচ্ছিলেন।দেখে বেশ ভালো লাগলো আপনাদের এই সুন্দর ভালোবাসা দেখে।রিসেন্ট বিয়ে হয়েছে মনে হয় আপনাদের।নিশ্চয়ই প্রেম করে বিয়ে?
--ঠিকই ধরেছেন রিসেন্ট বিয়ে হয়েছে।তবে ঠিক প্রেম করে আমাদের বিয়েটা হয়নি।বিদিশা আমাকে বিয়ে করতে প্রথমে রাজী হয়ে ছিল না,পরে অবশ্য মত চেঞ্জ করেছে।
এমন কথা শোনার পর আমার মধ্যে আরো কৌতূহল জন্মালো।বিয়েটা যখন প্রেম করেই নয়,তাহলে তো দেখাশোনা করেই।আমাকে আর জিজ্ঞেস করতে হয়নি।তারপর ছেলেটি নিজে থেকেই বলতে শুরু করল সে কথা...
বছর তিনেক আগের ঘটনা।আমরা দু ভাই।আমি তখন রিসেন্ট জব পেয়েছি সরকারীতে।আমার দাদার বিয়ে হলো।দাদা তখন বেসরকারী কোম্পানিতে চাকরি করে।দাদার বিয়েটা দেখাশোনা করেই।বিয়ের পাঁচ মাস পর দাদা বৌদিকে নিয়ে ঘুরতে গেল নৈনিতাল।বৌদির ইচ্ছে ছিল সমুদ্রে যাওয়ার।দাদা বলল পাহাড়ে যাবে। এদিকে সমুদ্রে যাবার ইচ্ছে দাদার নেই।দাদা ছোটো থেকেই পাহাড় ভালোবাসে।আবার বৌদি জেদ ধরে বসে আছে পাহাড়ে যাবে না।বাড়িতে আমার মা তখন বৌদিকে বুঝিয়ে বলল,
"নৈনিতাল ঘুরে এসো।তোমার খারাপ লাগবে না।নতুন বিয়ে হয়েছে কত নতুন নতুন জায়গায় ঘুরবে তোমরা।অমিত যখন বলছে নৈনিতাল যাবে,তখন যাও না।পরের বছর রণিতের বিয়ে দিয়ে দেব।তারপর তোমরা দুই বৌ মিলে প্ল্যান করবে।" রণিত মানে আমি। দাদার বিয়ের পর থেকে আমার মা বাবা দেখাশোনা শুরু করে দিয়েছিল আমার বিয়ের জন্য।মা তো আমাদের প্রায়ই বলত,তোরা দুই ভাই কোনো কাজের নয়।একটা প্রেম করতেও পারলি না।যাইহোক দাদা বৌদি চলে গেল নৈনিতাল।আট দিনের ট্যুর।ফেরার ঠিক আগের দিনের ঘটনা।আমি তখন অফিসে।বাবা ফোন করে বলল,তাড়াতাড়ি বাড়ি আয়।বড়ো বিপদ।ভাবিনি এমন খবর শুনব।নৈনিতাল থেকে ফেরার পথে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে।প্রচণ্ড কুয়াশা ছিল তখন।গাড়ি পাহাড় থেকে খাদে পড়ে যায়।বৌদি প্রাণে বাঁচলেও দাদা বাঁচতে পারে নি।বৌদি গুরুতর আহত অবস্থায় তিনমাস হসপিটালে ভর্তি ছিল।তারপর আমরা বাড়ি নিয়ে আসি।আর আজ যাকে আমার ওয়াইফ হিসেবে দেখলেন,বিদিশা আসলে আমার বৌদিই।
আমরা কখনো ভাবিনি এমন ভয়াবহ পরিণতি হবে।দাদার চলে যাওয়াটা অনেক বড়ো ধাক্কা আমাদের কাছে,বিশেষ করে বৌদির কাছে।সুস্থ সুন্দর একটা জীবন থেকে একটা মেয়ের জীবনে এমন পরিণতি সত্যি কষ্টদায়ক।ভয়াবহ দুর্ঘটনায় বৌদির ডান পা টা হাঁটু থেকে বাদ দিতে হয়।সেই সঙ্গে ডাক্তার জানিয়ে দেয় বৌদি কখনো মা হতেও পারবে না।কারণ জরায়ুতে গুরুতর আঘাত।
বৌদিকে যখন হসপিটাল থেকে বাড়ি আনা হয়,বৌদি তখন স্বাভাবিক জীবন যাপন থেকে অনেক দূরে।শারীরিক ও মানসিক ভাবে বৌদি সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত।এই সময় একটা মেয়ের পাশে থাকা যে কতটা জরুরী ছিল সেটা বৌদিকে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না।বৌদিকে সুস্থ জীবনে ফেরাতেই হবে এই জেদ নিয়ে চলতে শুরু করলাম আমার মা বাবা আর আমি।দেড় বছর পর বৌদি যখন অনেকটাই স্বাভাবিক হলো বৌদির বাবা মা বৌদিকে নিজেদের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।বৌদি নিজে থেকে যায়নি,সব থেকে বড় কথা আমার মা বাবাও পাঠাতে চায়নি।আমার মা বৌদির বাবাকে ডেকে বললেন,
"দাদা, আমার বড় ছেলেকে কখনই আমি ফিরে পাব না।কিন্তু মেয়েকে আমার কাছ থেকে নিয়ে চলে যাবেন না।আমি আমার ছোটো ছেলের সাথে ওর বিয়ে দিতে চাই।"
কেন জানিনা আমিও বৌদিকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে গিয়ে বৌদিকে ভালোবেসে ফেললাম।বৌদি কিন্তু এমন প্রস্তাবে রাজী হতে চায় নি।আমাকে ডেকে একদিন বলল,
--তোমার সুস্থ সুন্দর জীবনে আমি বোঝা হতে চাই না।শারীরিক প্রতিবন্ধী একটা মেয়ের থেকে পাওয়ার কিছু নেই।আমি যে কখনো মা হতেও পারব না।
--আমি তোমার সব টুকু জেনেই তো তোমার পাশে থাকতে চাই।তোমার ভালো থাকাতেই এখন আমার ভালো থাকা।
বৌদি আরো ছ'মাস টাইম নেয়।অবেশেষে আমাদের দুই বাড়ির সম্মিলিত সিদ্ধান্তে এক বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়।বিদিশা স্বাভাবিক জীবনে আবার ফিরতে পেরেছে এর থেকে বড়ো কথা আর কী হতে পারে।বিদিশা নিজেও খুশি।বিদিশা এখন মাকে বলে,"তোমাদের মত মা বাবা যেন প্রত্যেক মেয়ে পায়।এত কিছুর পরেও জীবনে যে নতুন করে বাঁচা যায় তোমরা সাথে না থাকলে আমি হয়তো বাঁচতেই পারতাম না।"
তবে বিদিশা সত্যিই খুব ভালো মনের মেয়ে।আমি ওকে খুব ভালোবাসি।জীবনে চলার জন্য একটা পা না থাকাটা বড়ো কথা নয়।দরকার একটা সাথীর।বিদিশাকে নিয়ে চলতে আমার অসুবিধা হয় না।এখন এমন হয়েছে ও সাথে না থাকলেই আমি চলতে পারি না,ও যে আমার জীবন সাথী।
-:সমাপ্ত:-
কলমে:সরজিৎ ঘোষ
Posts: 4,428
Threads: 6
Likes Received: 9,216 in 2,849 posts
Likes Given: 4,330
Joined: Oct 2019
Reputation:
3,225
(03-12-2021, 09:27 AM)ddey333 Wrote: (বাংলাদেশের কবি আবরার শাহরিয়ারের একটি কবিতা। ফেসবুকের টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত।)
'.রা গরু খায়, প্রিয় মাংস।
* রা গরুর পুজো করে, পবিত্র মাংস;
মনে মনে ধিক্কার দেয়,"শালারা ধর্ম করলো নাশ"!
* রা পাঁঠা ছাগল খায়।
'.রা নাক সিঁটকায়;
মনে মনে ধিক্কার দেয়, "পাঁঠার বিশ্রী গন্ধে দেশটাই শ্যাষ"!
বৌদ্ধরা শুকর খায়।
'.রা ঘেন্নাভরে চায়;
মনে মনে ধিক্কার দেয়,কাছে ঘেঁষলেও ঈমান থাকবে না লেশ"!
মাংসেও বিভাজন টানে ধর্ম।
মাংস নিয়ে কখনো-সখনো রক্তারক্তিও
হয় -- চলে দা, ছুরি, বর্ম; হরহামেশা যায় প্রাণও।
নারী মাংসের অবশ্য ধর্ম নেই, সবার প্রিয়,জাতীয় মাংস;
ধার্মিক, অ-ধার্মিক, নাস্তিক সবার কাছেই।
মিলেমিশে এমনকি জোর করে খেতেও আপত্তি নেই!
সত্য বড়ই অপ্রিয় - মেয়েদের মাংস ভক্ষণে কোন মতভেদ নেই।
\\ জাতীয় মাংস \\
লেখাটা স্পর্শকাতর হলেও কথাগুলো বিশেষ করে নারী মাংসের সম্বন্ধে উনি যে কথাগুলো লিখেছেন সেগুলো সর্বৈব সত্য।
তবে কোন '.েরা পাঁঠার মাংসের গন্ধে নাক সিঁটকায়, সেটা আমার অবশ্য জানা নেই। আমার যে সমস্ত . বন্ধুরা আছে, তাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণে গেলেই সেখানে পাঁঠার মাংস ছাড়া অন্যকিছু খুব একটা দেখিনি।
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
সরজিৎ ঘোষ বাবুর সাথী... ছোটোর মধ্যে অসাধারণ সুন্দর একটা গল্প.... কাহিনী যাই হোক..... কিন্তু ভালোবাসার শক্তি অনেক ❤❤❤❤
•
|