Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
ছোট ছোট ছিল বলে পরপর তিনটে পড়ে নিলাম.... আমসত্ত্ব টা আগে পড়েছিলাম... এখন আবার পড়ে হাসলাম  Lotpot

স্বামীজীর ভবিষ্যৎ বানী.... উনি আশঙ্কা করেছিলেন চিন আক্রমণ করবে.... হয়তো কলোনাইজ ও করে নিতে পারে.... এরকম হলে কি হবে বলুন তো  Sad

আর শেষের টা মন ছুয়ে গেল... জানেন! আগে যখন গরমের ছুটি পড়তো তখন মামার বাড়ি কিংবা মাসির বাড়ি যেতাম... এখন আর সেই গরমের ছুটিও নেই আর ওদের বাড়িতেও যাওয়া ও নেই.... এখনতো মামার বাড়ির রাস্তাটাই ভুলতে বসেছি  Sad Sad Sad

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#অন্য_রূপকথা
 
নিউটাউনের যে কেতাদুরস্ত বিজনেজ পার্কে আমার অফিস, সেখানে বাপু অনেক হ্যাপা পোহাতে হয়!
ঢোকার সময়ে কোম্পানির দেওয়া পরিচয়পত্র দেখিয়ে, গায়ের তাপমাত্রা মেপে, স্যানিটাইজার হাতে বুলিয়ে তারপর ছাড়পত্র মেলে। দুজন সিকিউরিটি দাদা এসব সামলানোর জন্য থাকলেও, একেকদিন তো বেজায় লাইন পড়ে যায়। তখন অধৈর্য্য হয়ে ঘড়ি দেখতে হয় আর মনে মনে আকুল হয়ে বলতে হয় "আজ যেন লেট না হয় ভগবান... প্লিজ প্লিজ..." (যেন আমার লেট বাঁচানো ছাড়া ওনার আর কাজ নেই)!
আজও বেশ চার পাঁচজনের পরে ছিল আমার লাইন। আমার আগে দুজন, আর তাঁদের আগে দুজন ছিলেন - বয়সে অনেকটাই ছোট হবেন আমার থেকে। ওঁদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা থেকে বুঝতে পারছিলাম মাসের শেষ এসে গেছে বলে দুজনেই বেশ চিন্তিত। মান্থ এন্ড প্রেশার বলে কথা!
তা, এরমধ্যেই আবার একটি ছেলে নিজের আই ডি কার্ড দেখাতে পারল না। বুকপকেট, প্যান্টের পকেট হয়ে ল্যাপটপ ব্যাগ, খুঁজছিল খুব। ততক্ষণে সিকিউরিটি দাদা বলে দিয়েছেন মেইন দরজার পাশে ছোট্ট যে কাঁচে মোড়া সিকিউরিটি ঘর আছে, সেখানে গিয়ে নামধাম লিখে আসতে, কারণ সেটাই নিয়ম।
ইতিমধ্যে আমার পালা এসে গেছিল। ছেলেটি রেজিস্টার খাতায় লিখে প্রায় দৌড়ে চলে এসেছিল লাইনে। এসেই একটু অনুযোগের গলায় বলে উঠল "দাদা, আমাকে রোজ দেখেন, তাও এভাবে ওখানে পাঠালেন? দেরি হয়ে গেল!"
সিকিউরিটি দাদা বলে উঠলেন "স্যার, এটা আমাদের কাজ... না হলে ঝাড় খেতে হয়!"
ছেলেটি প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল "আপনাদের কোম্পানির তো আমাদের ব্যাঙ্কেই অ্যাকাউন্ট... আমিই দেখি... আপনার নাম কি?"
"কে...কেন স্যার?" একটু থেমে থেমে বলেছিলেন সিকিউরিটি দাদা।
আমি তখন চরণামৃতের মতো করে স্যানিটাইজার নিয়ে হাতে ঘষছি। তারমধ্যেই শুনি ছেলেটি বলে ওঠে "বাহ্, আপনার কোম্পানির যে স্যারের সাথে আমার চেনা, ওনাকে বলব আপনার কথা। আপনি তো কাজটা মন দিয়ে করছেন... আমার একটু দেরি হলো ঠিকই, কিন্তু দোষ তো আমারই, আপনার নয়! কোথায় যে গেল কার্ডটা... হারিয়ে গেলেই তো হয়ে গেল..." বিড়বিড় করে বলতে বলতে এগিয়ে গেল ছেলেটি।
আমার মন ভাল করে দিয়ে। নিজের অজান্তেই।
আমরা তো এরকম কত দেখি। একটু মতের অমিল হলেই রাগ... পদমর্যাদায় সমান বা উঁচু না হলেই "আপনার নামে কমপ্লেন করব! দেখে নেব!" বলা যায় অনায়াসে।
আর, সেখানে এমনি ব্যবহার - কাজের দিনে, চাপের দিনেও... বড্ড ভাল লাগল। দিনটাই যেন উজ্জ্বল হয়ে গেল।
এভাবেই... ঠিক এভাবেই তো পৃথিবীটা আরও, আরও, আরও অনেক সুন্দর হয়ে যাবে। সেই সুন্দর পৃথিবীতে সততা দিয়ে, সদিচ্ছা দিয়ে মাপা হবে পদমর্যাদা...
হবে।
হবেই
Like Reply
টক ঝাল মিষ্টি

♥♥♥♥♥♥
 
বছর সত্তরের ভদ্রলোকটি আমার মতোই কলকাতা থেকে ভুবনেশ্বর যাচ্ছেন , পরনে পায়জামা পাঞ্জাবি , তার উপর জহর কোট চাপানো , কম্বলটাকে পায়ের উপর জড়িয়ে বাবু হয়ে বসে এক মনে মোবাইলে টাইপ করে চলেছেন ...মাঝে মাঝে ফিক ফিক করে হাসছেন বেশ কয়েকবার আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখলেন আবার মোবাইলে মনোনিবেশ করলেন কেন জানি না সেদিন 2nd AC ওই কামরাটি বেশ ফাঁকাই ছিল , ঠান্ডাটা একটু বেশিই লাগছিলো
রাত তখন এগারোটা হবে বাকিরা সবাই মোটামুটি ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছে বা দেবে দেবে করছে রাত একটার আগে আমার ঘুম  আসবে না তাই আমি চাদরটাকে সারা গায়ে জড়িয়ে মোবাইলটাকে নাড়াচাড়া করছিলাম ভদ্রলোকটি চোখ থেকে হাই পাওয়ারের চশমাটা খুলে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন কি ঠান্ডা লাগছে my son ..?
ভদ্রলোকটিকে দেখে আমার শিক্ষক বা প্রফেসর মনে হচ্ছিল .... বেশ একটা পারসোনালিটি তার সারা শরীরের ভাষায় প্রকাশ পাচ্ছিল , তার উপর ওনার মুখে my son কথাটি শুনে আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম, বললাম তা একটু লাগছে ভদ্রলোকটি বললেন এক্ষুনি লাস্ট কফিওয়ালা উঠবে একটু কফি খেয়ে নাও দেখবে ভালো লাগবে ঠিক তাই দুজনেই কফি নিয়ে বসলাম , একে একে ধেয়ে এলো অতি পরিচিত কিছু প্রশ্ন ---কোথায় থাকোকি করা হয় ? সন্তান কটি ? তারা কিসে পড়ে ? কথায় কথায় ভদ্রলোকটি বললেন উনি ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির বাংলার প্রফেসর ছিলেন কিছুক্ষন দুজনেই চুপ, তারপর ভদ্রলোকটি শান্ত গলায় জিজ্ঞাসা করলেন কেমন লাগছে জীবনের স্বাদ ? বাড়িতে সময় দেওয়া হয় ? আমি কি বলবো তা ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারছিলাম না ভদ্রলোকটি আমাকে একটু আস্বস্ত করে বললেন আমি জানতে চাইছি জীবনটাকে মিষ্টি লাগছে না তেতো ?
আমি হাসতে হাসতে বললাম টক ঝাল মিষ্টি ...
সকালে নয়টায় অফিস, তারপর  ফিরতে ফিরতে সেই রাত আটটা বাকি সময়টুকু হয় আমার সাথে বউয়ের ঝামেলা নয়তো মেয়ের সাথে মেয়ের মায়ের ...সকালে ঘুম থেকে দেরি করে কেন ওঠা থেকে শুরু , homework কেন হয়নি ? খাবার কেন থালায় পড়ে ? কলেজের ব্যাগ কেন গোছাওনি ? খাটের চাদর কেন লন্ড ভন্ড ? বইগুলো ঠিক জায়গায় নেই কেন ? পা না ধুয়ে কেন খাটে উঠেছ ? কত TV দেখবে ? একটা না একটা বিষয় নিয়ে লেগেই আছে , মাঝে মাঝে অতিষ্ট হয়ে মেজাজ যায় হারিয়ে ....
 
ভদ্রলোকটি ছোট্ট একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে কম্বলটি বুকের উপর তুলে বলল এটাই তো জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় ...এটাকে অবহেলা কোরো না ....টক ঝাল মিষ্টির এই অতুলনীয় স্বাদটাকে কব্জি ডুবিয়ে চেটেপুটে খাও একেবারে হাতের নখ থেকে কুনুই পর্যন্ত একটা সময় আসবে যখন ঘরে ঢুকে দেখবে চারিদিক নিঃশব্দ , বিছানার চাদরটা টান টান করে পাতা , মা-মেয়ের প্রতিদিনের খন্ডযুদ্ধ কোনো এক অলৌকিক ইশারায় চিরতরে অবসান ঘটেছে , মনে হবে চাদরটা দু হাত দিয়ে আবার লণ্ডভণ্ড করে অপূর্ণ যুদ্ধের দামামা বাজাই ...বইয়ের তাকটা পরিপাটি করে সাজানো হালকা সাদা ধুলোর আস্তরণ বইগুলোতে লেপ্টে আছে ...মনে হবে সব বইগুলো পরিষ্কার টেবিলটার উপর আছড়ে ফেলে অসমাপ্ত অঙ্ক গুলোকে ছোটো ছোটো হাত দুটো ধরে আর একবার কষাই ...সব কিছু ঠিকঠাক কিন্তু চারিদিক মরুভূমির নিঃসঙ্গতাসন্তানের পরিচিত গন্ধকে একটিবার পাওয়ার আশায় এঘর ওঘর শুধু ঘুরপাক খাওয়া , বাড়ি থেকে বেরোবার সময় পেছনে নড়বে না কোনো আদুল হাতের টাটা , TVটা আপন মনেই চলতে থাকে কেউ কেড়ে নেয় না রিমোট টা অযথা বাহানায় , খাবার টেবিলেই শুকোতে থাকে এঁটো হাত, কেউ ছোবল দেয় না আর ডিমের কুসুমে , মোবাইলের ওপারে আদুরে আওয়াজ প্রতিদিন থেকে প্রতি সপ্তাহে, প্রতি সপ্তাহে থেকে প্রতি মাসে গিয়ে ঠেকবে , দুদিনের জন্য আসবে, যাবার সময় ব্যাগের ভিতর নিয়ে যাবে হাটি হাটি পা পা থেকে একটু একটু করে গড়ে তোলা সব স্বপ্ন ....দৃষ্টি শক্তি ধীরে ধীরে লোপ পাবে , বাড়বে শুধু ওষুধের সংখ্যা , অনিদ্রায় চোখ দুটো হয়ে উঠবে আরো নিশাচর ......
 
ভদ্রলোকটির প্রতিটি কথা ট্রেনের বিকট আওয়াজ পেরিয়ে বুকের ভিতর যেন তীরের মতো বিঁধছিল , আমি বললাম তাহলে বাঁচার উপায়ভদ্রলোকটি একটু ধরা গলায় বললেন শীতের ঝরা পাতার মতো যদি ঝরে পড়ো তবে কেউ ফিরেও তাকাবে না ... উপরে সবুজ পাতার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অচিরে বিলীন হবে মাটির বুকে ...সবুজ পাতার মতো ফুটে উঠতে হবে ওই জীর্ণ বট বৃক্ষে পুরোনো বন্ধুদের সান্নিধ্যের আগুনে মনটাকে সেকতে হবে ঠিক যেমন কনকনে শীতের রাতে কাঁপতে কাঁপতে এক টুকরো আগুনকে ঘিরে ধরে একটু ভালো লাগার উষ্ণতা সারা শরীরে মাখতে ইচ্ছা করে...
একমাত্র বন্ধুই পারে তোমার ক্ষয়ে যাওয়া জীবনে অফুরন্ত হাসির ফোয়ারা প্রলেপ লাগাতে , তাইতো আমি সময় অসময় চোখ রাখি ওই মোবাইলের ছোটো জানালায় ...তাতে ভেসে ওঠা পুরোনো বন্ধুর এক একটা শব্দ সবুজ পাতার ফাঁক দিয়ে ঠিকরে বেরিয়ে আসা এক একটি সূর্যরশ্মি সযত্নে আগলে রেখো পুরোনো বন্ধুত্বকে আজকের প্রতিদিনের কর্মযুদ্ধে হারিয়ে ফেলো না তাদের বন্ধুত্বের হাতছানি আমি আজ যাচ্ছি আমাদের বন্ধুদের মিলন সমারোহে ....তিন মাস অন্তর অন্তর আমরা মিট  করি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গান , বাজনা , হাসির কোলাহলে ডুবে থাকি দুদিন ...খুঁজে পাই বেঁচে থাকার অক্সিজেন .... 
 
পরদিন ভোর বেলায় যখন ভুবনেশ্বর স্টেশনে নামলাম দেখলাম গোটা পনেরো সত্তর বছরের যুবক ভদ্রলোকটিকে ঘিরে ধরেছে ....হাসতে হাসতে তারা এগিয়ে চলেছে নতুন ভুবন গড়তে ...আমাকে দেখে ভদ্রলোকটি হাত নেড়ে বললো look my son এরাই আমার এক একটি সবুজ পাতা .....
 
জানি না ২০ বছর পর আমাদের ভবিষ্যৎ কি হবে ? জানি না মোবাইলে টাইপ করার শক্তি হাতে মজুত থাকবে কি না ? হয়তো ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি আবছা হয়ে আসবে ...গ্রুপের গানের আসর হয়তো তখনো একই রকম ভাবে জমে উঠবে কিন্তু হঠাৎ করেই বেইমান হয়ে উঠবে শ্রবণ শক্তি , আস্তে আস্তে শিথিল হবে   স্মৃতিশক্তির বাঁধন ....তবু থেমে যেন না যায় বন্ধুত্ব...
 
তাই বন্ধু চাই, ভাল বন্ধু, যে স্বার্থহীন ভাবে সুখে-দুখে তোমার পাশে থাকবে এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে যেতে না চাইলেও একদিন তো চলে যেতেই হবে
তাই যতদিন বাঁচো প্রান খুলে হাসো জীবনে চাওয়া  পাওয়ার সংকীর্ণতা ভুলে শেষের দিনগুলি আনন্দেতে বাঁচো
জীবনের হাসিকান্নার এই রঙ্গশালায়......
The show must go on .......
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
# অন্য_রূপকথা

 
অফিস থেকে ফিরছিলাম। একরাশ ক্লান্তি নিয়ে।
অটোতে আমার পাশে আরও দুটি মেয়ে ছিল। নিজেদের মধ্যে কলকল করে কথা বলছিল। প্রথমে বেশ কিছুক্ষণ কে ভাইফোঁটায় কি কিনেছে, সেই নিয়ে কথা বলছিল। কান তো আর বন্ধ রাখা যায় না, তাই সবকথাই শুনতে পাচ্ছিলাম। আর, বেশ লাগছিল শুনতে! ওই বয়সের নিজেকে, আর আমার এক বন্ধুকে খুঁজে পাচ্ছিলাম যেন!
তারমধ্যেই, হঠাৎ শুনি, একটি মেয়ে আরেকটিকে বলছে "কি রে, কাকুর কাল ফিরতে এত দেরি হল কেন বললেন কিছু?"
"হ্যাঁ রে, আর বলিস না! বাবার কান্ড তো...এক্কেবারে দুনিয়া ছাড়া মানুষ!"
"কেন রে, কাকু আবার কি করলেন?"
"আরে বাবার তো এতদিন এমনি ফোন ছিল, এখন স্মার্ট ফোন পেয়েছে...জন্মদিনে দিলাম না আমি সেই ফোনটা? এখন দোকানে কাজের ফাঁকে হোয়াটসঅ্যাপ দেখে খালি। আর রাজ্যের জিনিস একে, ওকে, তাকে ফরোয়ার্ড করে! কে যেন একটা বাবাকেও পাঠিয়েছিল, ইন্দোর না কোথায় একটা বাচ্চা অসুস্থ, তার জন্য সাহায্য চেয়ে মেসেজ... বাবা সাহায্য টাকা পয়সা দিয়ে করতে পারবে না ভেবে কাল বাজার থেকে ফেরার সময় সোজা দমদম রোডের হনুমান মন্দিরে চলে গেছে পুজো দিতে। একটা চেনা দোকানে ব্যাগ -ট্যাগ রেখে। কি না, বাচ্চাটা যেন ভাল হয়ে যায়! হনুমানজি নাকি সঙ্কটমোচন, দাদুর অপারেশানের সময়ও বাবা গেছিল, তাই এবারও... চেনা নেই...জানা নেই, হোয়াটসঅ্যাপের খবর...ফেকই তো হয় বেশিরভাগ! তা না, উনি চললেন পুজো দিতে। কি যে বলি..." বলতে বলতেই মেয়েটি বলে উঠল "দাদা, গান ফ্যাক্টরি সাইড করবেন।"
নেমে গেল দুজনেই।
আমার মনটা ভাল করে দিয়ে।
আজকের এই আপনি-কোপনির স্বার্থপর জীবনেও এমন মানুষ আছেন... যিনি কারো অসহায়তায় আর্থিক সাহায্য করতে না পারলেও, যেটা পারবেন করতে সেটা নিজের বিশ্বাস থেকে করেছেন। এক্কেবারে অচেনা মানুষের জন্য। যে যুগে কেউ চেনা মানুষের জন্যই সময় দেন না। আর...মেয়েটি যেখানে নামল অটো থেকে, সেখানে যদি বাড়ি হয়, তবে তো হনুমান মন্দির বেশ দূরে ওখান থেকে। তাও গেছেন উনি। শুধু, একটি বাচ্চা সুস্থ হয়ে যাক...এই সদিচ্ছা আর শুভকামনা নিয়ে।
আর, আমরা ভাবি...ভালমানুষ নাকি নেই আর! সবাই নাকি স্বার্থ নিয়ে চলেন!
ধ্যাত! আমরা কিচ্ছু জানি না! আমরা নিজেরা কূপমণ্ডূক, তাই হাত বাড়াতে পারি না, দেখতে পাই না...
ভালমানুষ...মানুষের মতো মানুষের -এইই তো সম্পদ আমাদের এই মায়াময় নীলগ্রহের।
কাল মঙ্গলবার... বজরঙ্গবলি কে পুজো করার দিন। আমি মন্দিরে যাব না... কিন্তু মনে মনে চাইব এই নাম না জানা 'বাবা' যেন ভাল থাকেন, সুস্থ থাকেন, অপার আনন্দে থাকেন।
আর, যেন এমনিই থাকেন।
যেন... 'থাকেন'
থাকাটা...আজকের সমাজে...বড্ড দরকার...
 
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#ফ্ল্যাটবাড়ি 
#মৌমিতা_ঘোষ 

|| ১ ||

"তুমি কি পাগল হলে? এই এতবড় বাড়ি প্রোমোটারকে দিয়ে দেবে? এলো কি কিরে এরকম ভাবনা তোমার মনে?" - খুন্তি হাতে রান্নাঘর থেকে রে রে করে তেড়ে আসেন পরমা দেবী, সৌভিকবাবুর বাইশ বছরের সহধর্মিনী |

"শোনো পরমা, উত্তেজিত হয়ো না | উত্তেজনা কোনো সমাধান নয় | তুমি কি ভাবো আমার পিতৃপুরুষের ভিটের ওপর আমার কোনো টান নেই? এমনি এমনি এরকম একটা মারাত্মক সিদ্ধান্ত নিচ্ছি আমি?" - একটু রেগেই স্ত্রীর উদ্দেশ্যে কথাগুলো ছুঁড়ে দেন সৌভিক বাবু |

বাইরে থেকে ঘুরে এসে বারান্দায় রাখা বাবার ইজিচেয়ারে গা এলিয়ে স্ত্রীর উদ্দেশ্যে সবে বলেছিলেন, "ভাবছি বাড়িটা এবার প্রোমোটারকে দিয়ে দেবো"| আর তাতেই বিস্ফোরক হয়ে ওঠেন পরমা দেবী | চৈত্রের ঠা ঠা রোদ্দুরের তাপে ঘামে ভিজে গায়ে লেপ্টে আছে সৌভিকবাবুর আদ্দির পাঞ্জাবীটা | সেটা খুলে ইজিচেয়ারের হাতলে রেখে বাথরুমের দিকে যেতে যেতে স্ত্রীর উদ্দেশ্যে আবার বললেন, 
"সারাজীবন প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করলাম, আর ক’দিন পর রিটায়ার করবো | আমাদের পেনশন বলতে কিছু নেই | ছেলেটা বড় হচ্ছে, আজ বাদে কাল চাকরি নিয়ে বাইরে চলে যাবে| ভেবে দেখেছো রিটায়ারমেন্টের ওই ক’টা টাকায় তখন আমাদের কিভাবে চলবে? এই এতো বড় বাড়িতে চারিদিকে ফাটল, কোথায় ভেঙে পড়ছে, কোথায় বট অশ্বত্থের চারা ! মেন্টেন করবে কিভাবে? বাড়ির ইঁট বেচে ভাত রাঁধবো? "

"কেন? বাবুয়া আমাদের দেখবে না? " - ব্যকুলতা স্পষ্ট পরমা দেবীর গলায় |

"তোমার কথাটা বলতে লজ্জা হলো না? আজকালকার দিনের একজন মা হয়ে ছেলের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকবে তুমি? ওকে বড় করে কি ধন্য করে দিয়েছি আমরা যে সারাজীবন আমাদের খোরপোষ দেবে? খালি স্বার্থ আর স্বার্থ ! ছেলে বলে বাবা-মাকে দেখতেই হবে? আজ যদি বাবুয়া মেয়ে হতো এই এক্সপেক্টেশন রাখতে পারতে? ছিঃ, ! আর দ্বিতীয়দিন আমার সামনে এসব বলবে না বলে দিলাম | বাবুয়া নিজের জীবন শান্তিতে কাটাবে | কোনো বোঝা চাপাবে না ওর ওপরে |" - স্ত্রীকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বাথরুমে ঢুকে যান সৌভিকবাবু |

|| ২ ||

"বাবা, তুমি নাকি মাকে বাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার কথা বলেছো? " - আচমকা ঘরে ঢুকে সোজাসুজি প্রশ্ন করে বাবুয়া |

সৌভিকবাবু খাওয়াদাওয়ার পর সবে একটু শুয়েছিলেন | এই রবিবার দুপুরটা একটু না গড়িয়ে নিলে মনে হয় যেন কি একটা হয়নি ! আজ শুয়ে শুয়েও মাথার মধ্যে হাজার চিন্তা যেন কিলবিল করছে | তার মধ্যেই বাবুয়ার এরকম প্রশ্নে আচমকা চিন্তার জটটা ছিঁড়ে গেল| 

"আয়, বোস" - উঠে বসে বাবুয়াকে বসার জন্যে বিছানায় জায়গা করে দেন উনি |

"কেন বাবা, কেন করছ এমনটা? আমার ওপর কি তোমার একটুও ভরসা নেই? তোমার মনে হয় যে আমি তোমাদের দায়িত্ব নেওয়ার উপযুক্ত নই?" - বাবুয়ার চোখের কোনটা চিকচিক করছে, দেখেও না দেখার ভান করেন সৌভিকবাবু | ছেলেটা যে তাঁর প্রাণ | ওর কষ্ট উনি কিছুতেই সহ্য করতে পারেন না | তবে সাথে এটাও চান না যে তাঁর জন্যে বাবুয়ার ওপর কোনো বোঝা চেপে থাকুক | বাবুয়া হয়তো আরো পড়াশুনো করতে বা চাকরি সূত্রে বাইরে যাবে | শুধু নিজের স্বার্থের কারণে ওনার কোনো অধিকার নেই ছেলেটাকে আটকে রাখার | আজ ছেলেটার আবেগ বড় বেশী, হয়ত বা বয়সের কারণেই | কিন্তু যেদিন ও বাস্তবের মুখোমুখি হবে, বাবা - মাকে দেওয়া কথার জন্যে হয়ত ওকে একটা ভালো সুযোগ ছেড়ে দিতে হবে | সেটা সহ্য করতে পারবেন না সৌভিকবাবু | পরমা ছেলেকে কাছে রেখে দিতে পারলেই মহা খুশি | কিন্তু সৌভিকবাবু বাবা হয়ে পারবেন না সেটা | 

"তুই যে আমার কত বড় ভরসা, সেটা কি আমি তোকে বলে বোঝাবো? কিন্তু বাবুয়া, আমি আর তোর মা একা একা এই এত বড় বাড়িতে কি করবো বল তো? তুই আমাদের দেখবি আমি জানি | কিন্তু তুই যখন চাকরি করবি, তোর পক্ষে তো সম্ভব হবে না সবসময় এখানে থাকা | আমাদেরও বয়স বাড়বে | কে দেখবে বল এখানে আমাদের? সেখানে একটা ফ্ল্যাটবাড়িতে কত লোক !"

"এখানেও তো পাড়ার লোক আছে বাবা !"

"একটা বাড়ির মধ্যে পাশের ঘরের লোককে ডাকা আর পাশের বাড়ির লোককে ডাকার মধ্যে তফাৎ আছে বাবু | আরও বয়স হলে এখানে আমাদের নিরাপত্তা খুব কম বিশ্বাস কর"|

কোনোরকমে ছেলেকে বুঝিয়ে ঘরে পাঠান সৌভিকবাবু |
এই বাড়ির ইঁট, কাঠ, পাথরে জড়িয়ে আছে তাঁর ছেলেবেলা, পূর্বপুরুষ | তবে সেই সবকিছুর ওপরে তাঁর সন্তানের ভালো থাকা, সুস্থ থাকা | সৌভিকবাবুর কেবল মনে হচ্ছে এই বাড়িটা রাখলে বাবুয়ার ওপর এক মারাত্মক চাপ বাড়বে বই কমবে না ! আর তিনি বেঁচে থাকতে সেটা সহ্য করতে পারবেন না |

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফ্ল্যাটের কাজ শুরু করে দিতে হবে |

|| ৩ ।।

এক সপ্তাহ হল নতুন ফ্ল্যাটে শিফট করেছেন সৌভিকবাবু। যতদিন ফ্ল্যাটটা তৈরীর কাজ হচ্ছিল, একটু দূরে অন্য একটা ফ্ল্যাটে থাকছিলেন ওনারা। প্রোমোটারই ঠিক করে দিয়েছিল। যখন তাঁর প্রাণের বাড়িটাকে একটু একটু করে ভাঙ্গছিল ওরা, প্রতিটা হাতুড়ির ঘা যেন সৌভিকবাবুর বুকের ভেতরে এসে লাগত। রোজ সকালে এসে দাঁড়িয়ে থাকতেন বাড়ির সামনে, মিস্ত্রীদের কাজ দেখতেন। ভাঙ্গাভাঙ্গির সময় মিস্ত্রীরা বারণ করত ওনাকে কাছে আসতে। পুরোনো দিনের বাড়ি, বলা তো যায়না কখন কোথা থেকে কি ভেঙ্গে পড়ে! বয়স্ক মানুষ, লেগে-টেগে গিলে আরেক বিপদ। প্রোমোটার মুকেশ বোধহয় এই লাইনে নতুন। এখনও মায়া-মমতা আছে শরীরে। 

সৌভিকবাবুর সাথে দেখা হলেই বলতেন, 
“চিন্তা করছেন কেন দাদা, ফ্ল্যাটে ভাবুন তো কত লোক আসবে, কত পরিচিতি হবে আপনার! আপনার এত বড় বাড়িতে মাত্র তিনজনে থাকতেন, আজ সেখানে আপনার বাড়িটা কতজনকে থাকার জায়গা করে দেবে! নিজের একটা ঠিকানা দেবে!”

মুকেশের সাথে কথা বলে বেশ ভাল লাগত সৌভিকবাবুর। বেশ সুন্দর করে ভাবতে পারে ছেলেটা। ভালই লাগত ওর মত করে ভাবতে। তবে এই ফ্ল্যাটে আসার পর সব হিসেব যেন গুলিয়ে গেল। এত লোক, তাও যেন কেমন খাঁ খাঁ করছে সবসময়। বারবার মনে হচ্ছিল ওইখানে তুলসীমঞ্চ ছিল, ওইখানে পাতকুয়ো, পিছনদিকে কতগুলো ফুলের গাছ বসিয়েছিলেন পরমা ...

এই ফ্ল্যাটেও একটা তুলসীমঞ্চ আছে বটে, তবে সৌভিকবাবুর মনে হচ্ছে ওতে যেন ঠিক প্রাণ নেই। ওখানে পরমা সন্ধেবেলা ধূপ দিচ্ছে বা শাঁখ বাজাচ্ছে ভাবতে কেমন যেন কষ্ট হয়!

পরমাদেবী বুঝতে পারছিলেন যে ভেতরে ভতরে গুমরোচ্ছে মানুষটা। কম দিন তো হল না একসাথে, লোকটা ভাংবে তবু মচকাবে না। পরমাদেবী জানতেন যে বাড়িটা ফ্ল্যাট হয়ে গেলে ও পারবে না সহ্য করতে। অনেক চেষ্টা করেছিলেন তাই আটকাতে। কিন্তু যা জেদী মানুষ! নিজের মুখ দিয়ে যখন বলেছেন, করেই ছাড়লেন ফ্ল্যাটটা। আর এখন কষ্টটা নিজের স্ত্রীর সাথেও ভাগ করে নেন না। 

এই ফ্ল্যাটবাড়িতে দোতলায় একটা বারোশো স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাট পেয়েছেন ওনারা, আর সঙ্গে বেশ ভাল অঙ্কের একটা টাকা। ডাইনিং –এর একফালি জানলা দিয়ে পাশের ফ্ল্যাটের দিকে কেমন যেন উদাস দৃষ্টিতে প্রায় সময়ই চেয়ে থাকেন সৌভিকবাবু। বড় ভয় করে পরমাদেবীর। নিজের সবচেয়ে কাছের মানুষটাও বড্ড অচেনা হয়ে যায় মাঝে মাঝে।

বাবুয়া এক সপ্তাহের জন্যে ট্রেনিং-এ দক্ষিণ ভারত গেছে। মাঝরাত্রে পরমাদেবীর হঠাত ঘুম ভাঙ্গল সৌভিকবাবুর ধাক্কায়। বুকের বাঁ দিকটা চেপে ধরে আছেন উনি। সারা শরীর ঘামে ভিজে গেছে। একটাও কথা বলতে পারছেন না। এমনিতেই নার্ভাস পরমাদেবীর মনে হচ্ছিল পায়ের তলায় আর মাটি নেই। দরজাটা খুলে তাড়াতাড়ি বেল বাজান পাশের ফ্ল্যাটে। সঞ্জু আর কাকলি থাকে ওটায়। নতুন বিয়ে হয়েছে ওদের, চাকরিসূত্রে তাই কোলকাতায় খেলাঘর পেতেছে দু’জন। সঞ্জু না থাকলে কি যে হত তখন! পনেরো মিনিটের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করে ফেলে সঞ্জু। তারপর ফ্ল্যাটের সবাই মিলে আধঘন্টার মধ্যেই বাড়ির কাছের নার্সিংহোমে আই সি ইউ-তে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছিল সৌভিকবাবুকে। ডাক্তার বললেন আর একটুও দেরী হলে ভয়ানক কিছু একটা হয়ে যেতে পারত। হার্টে বেশ বড়সড় সমস্যা বাঁধিয়ে বসেছেন ভদ্রলোক। বাইপাস করতেই হবে। বেশ কয়েকদিন অবজার্ভেশনে রাখার পর অপারেশন হবে ঠিক হল।
এত কিছু ঘটনা এত তাড়াতাড়ি ঘটে গেল, পরমা দেবীর ধাতস্থ হতেই বেশ কিছুটা সময় লেগে গেছিল। সঞ্জু না থাকলে সেদিন যে কি হত! ভাবলেও এখন শিউরে উঠছেন উনি। বাবুয়াকে খবর পাঠানো হয়েছে। তবে সঞ্জু এটাও বলেছে ওকে, যে এক্ষুনি তো অপারেশন হচ্ছে না, কাজেই বাবুয়ার এক্ষুনি হুড়মুড়িয়ে আসার দরকার নেই। ও আর কয়েকদিনের ট্রেনিং শেষ করেই আসুক। এদিকটা ওরা সামলে নেবে। একটু বোধহয় স্বস্তি পেয়েছিল বাবুয়া।

কিন্তু আসল সমস্যাটা হল অপারেশনের দিন। ওটি তে ঢোকানোর পর ডাক্তার হঠাত বললেন দু’ইউনিট রক্ত লাগবে, এমার্জেন্সি। কিন্তু সৌভিকবাবুর বম্বে ব্লাড গ্রুপ। এত সহজে ওই গ্রুপের রক্ত পাওয়া যায় না। পাগলের মত এক নার্সিংহোম থেকে অন্য নার্সিংহোমে, ব্লাড ব্যাঙ্কে ছোটাছুটি করছিল বাবুয়া। সঞ্জুর সেদিন অফিসের একটা কাজ ছিল জরুরী, ওকে তাই কিছু জানানো হয়নি। শেষে আর থাকতে না পেরে বাধ্য হয়েই ওকে ফোন করেছিল বাবুয়া। যদি ওর কিছু জানাশোনা থাকে।

“তুই আমায় এতক্ষণ জানাতে পারিসনি? আমার তো বম্বে ব্লাড গ্রুপ! আমি এক্ষুনি আসছি” – বলেছিল সঞ্জু।

“আমি জানতাম না তো দাদা! তোমার যে আজ ইম্পর্টেন্ট মিটিং ছিল” – খড়কুটোড় মত সঞ্জুকে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছিল বাবুয়া।

“আমার মিটিংয়ের থেকে কাকুর প্রাণটা বেশী জরুরী বাবুয়া। তুই ফোন রাখ, আমি আসছি”।

এরপর বাকি গল্পটা রূপকথার মতন। সঞ্জুর দেওয়া রক্তে সুস্থ হয়ে সাকসেসফুল অপারেশনের পর বাড়ি, অর্থাৎ তাঁর নতুন ফ্ল্যাটে ফিরে আসেন সৌভিকবাবু। তবে বাড়ি আসার পর একটা জিনিস খেয়াল করলেন পরমা দেবী, সৌভিকবাবুর মধ্যে সেই মনমরা ভাবটা আর নেই। বরং এখন যেন আগের থেকেও বেশী চনমনে। নিজের বয়সী বন্ধু যোগাড় করে ফেলেছেন ফ্ল্যাটেই জনা চারেক, সবাইকে নিয়ে সন্ধেবেলা তাস খেলা হয় ওনাদেরই ড্রয়িংরুমে। এখন আবার সৌভিকবাবুরই উৎসাহে ফ্ল্যাট সোশালের আয়োজন করছে সবাই। ওনার উৎসাহ দেখে কিনা জানা নেই, তবে ফ্ল্যাটের সবার সিদ্ধান্তে সৌভিকবাবুই প্রেসিডেন্ট। 

ফ্ল্যাট সোশ্যাল নিয়ে মেতে উঠেছে বাচ্চা থেকে বুড়ো প্রত্যেকে। সৌভিকবাবুর কড়া হুকুম, সক্কলকে কিছু না কিছু করতেই হবে। পরমাদেবীর প্রতিবাদ এক্ষেত্রে ধোপে টেকেনি। উনি বলতে চেষ্টা করেছিলেন, “আমি তো নাচ, গান, কবিতা কিছুই পারি না। এই বুড়ো বয়সে কি তাহলে রঙ মেখে সং সাজবো?”

“কাকিমা তুমি আমাদের সাথে গ্রুপ সং-এ থেকো। গ্রুপের মধ্যে আলাদা করে গলা বোঝা যাবে না। আমি তোমাকে রিহার্সাল করিয়ে নেব” – বলেছিল মিতালী।

আর অবশেষে এল সেই সোশ্যালের দিন। সবাই মোটামুটি রেডি। স্টেজে উঠলেন সৌভিকবাবু। সভাপতির ভাষণ দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হবে। একটু গলাটা ঝেড়ে নিয়ে শুরু করলেন সভাপতি,

“অল্প কথায় আমার বক্তব্য সারার চেষ্টা করছি। তবু যে কথাগুলো না বললেই নয়, সেগুলোই আজ আপনাদের বলতে চাই। আমার পৈতৃক বাড়ি ভেঙ্গে এই ফ্ল্যাট হয়েছে। আমার পরিবারের সাথে তর্ক করে, একরকম জেদ করেই আমি এই বাড়ি ফ্ল্যাটকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু যখন বাড়িটা ভাঙ্গা শুরু হল, মনে হত আমার হৃৎপিণ্ডটাকে কেউ যেন উপড়ে নিচ্ছে। এই বাড়ির প্রতিটা ইট, কাঠ, পাথরের সাথে জড়িয়ে আমার ছেলেবেলা, পূর্বপুরুষ। তখন খুব মনে হত আমি ভুল করেছি, নিজের জেদের জন্যে মারাত্মক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মনে হত এর থেকে মরে যাওয়া ভাল ছিল” – একটু থামলেন সৌভিকবাবু। গলা ধরে এসেছে। 

তারপর আবার শুরু করলেন,

“যাই হোক, তারপর নতুন ফ্ল্যাটে শিফট করলাম আমরা। আমার ‘মা ভবন’ নাম পাল্টে হয়ে গেল ‘পরিজন অ্যাপার্টমেন্ট’। সত্যি বলছি, এই বদলটা মেনে নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। বুঝতে পারছিলাম যে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আর তারপরেই তো সেই ঘটনা ঘটল, যেটা আপনারা সবাই জানেন। সত্যি বলছি, যা হয় বোধহয় ভালর জন্যেই হয়। ওই ঘটনাটা না হলে আমি জানতেই পারতাম না যে আমার একটা এত বড় পরিবার আছে। বাবুয়া আমার সন্তান, আর সঞ্জুর সাথে আমি রক্তের বন্ধনে জড়িয়ে গেলাম। ও কি আমার সন্তানের চেয়ে কম কিছু? আপনারাই বলুন? ওই সময়টায় আপনারা যেভাবে আমার পরিবারের পাশে থেকেছেন, আপনারা কি আমার আত্মীয় নন? আমার অসুস্থতা আমার চোখ খুলে দিয়েছে। আজ আমি নিশ্চিন্ত, আমার যদি কিছু হয়েও যায়, পরমা আর বাবুয়া ভেসে যাবে না। আপনারা সবাই আছেন। আর যে বাড়িতে আমি আমার স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে এতদিন থাকতাম, সেখানে আজ আমি আমার এতজন পরিজন নিয়ে থাকি। এরকম সৌভাগ্য কতজন মানুষের হয় বলুন দেখি? যাক গে, আর বেশী সময় নষ্ট করব না, সবাই সেজেগুজে অপেক্ষা করছে অনুষ্ঠানের জন্যে । বুড়ো হলে এই হয় জানেন তো, বড্ড বেশী বকবক করে ফেলি”। 

মাইক থেকে সরলেন সৌভিকবাবু। সামনে বসে থাকা সবাই তখন চোখের জল মুছছে। এতদিন তো ফ্ল্যাটবাড়ির খারাপ দিকটাই সবাই বলেছে। ফ্ল্যাট নাকি বড়লোকদের বস্তি! কই, এভাবে তো কেউ কখনো ভাবে নি! পরমাদেবী আজ বড় নিশ্চিন্ত। মানুষটা ভাল আছেন। এর চেয়ে শান্তির আর কি হতে পারে তাঁর কাছে!

“কাকিমা চলো, এবার আমাদের গান” – মিতালীর তাড়ায় খোঁপায় ফুলটা দিয়ে স্টেজের দিকে পা বাড়ান পরমাদেবী। 

© মৌমিতা ঘোষ
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
ধন্যবাদ দাদা ,

বেঁচে এখনো আছি , কাছাকাছি ...
 

Like Reply
(06-11-2021, 04:23 PM)ddey333 Wrote: # অন্য_রূপকথা

 
অফিস থেকে ফিরছিলাম। একরাশ ক্লান্তি নিয়ে।
অটোতে আমার পাশে আরও দুটি মেয়ে ছিল। নিজেদের মধ্যে কলকল করে কথা বলছিল। প্রথমে বেশ কিছুক্ষণ কে ভাইফোঁটায় কি কিনেছে, সেই নিয়ে কথা বলছিল। কান তো আর বন্ধ রাখা যায় না, তাই সবকথাই শুনতে পাচ্ছিলাম। আর, বেশ লাগছিল শুনতে! ওই বয়সের নিজেকে, আর আমার এক বন্ধুকে খুঁজে পাচ্ছিলাম যেন!
তারমধ্যেই, হঠাৎ শুনি, একটি মেয়ে আরেকটিকে বলছে "কি রে, কাকুর কাল ফিরতে এত দেরি হল কেন বললেন কিছু?"
"হ্যাঁ রে, আর বলিস না! বাবার কান্ড তো...এক্কেবারে দুনিয়া ছাড়া মানুষ!"
"কেন রে, কাকু আবার কি করলেন?"
"আরে বাবার তো এতদিন এমনি ফোন ছিল, এখন স্মার্ট ফোন পেয়েছে...জন্মদিনে দিলাম না আমি সেই ফোনটা? এখন দোকানে কাজের ফাঁকে হোয়াটসঅ্যাপ দেখে খালি। আর রাজ্যের জিনিস একে, ওকে, তাকে ফরোয়ার্ড করে! কে যেন একটা বাবাকেও পাঠিয়েছিল, ইন্দোর না কোথায় একটা বাচ্চা অসুস্থ, তার জন্য সাহায্য চেয়ে মেসেজ... বাবা সাহায্য টাকা পয়সা দিয়ে করতে পারবে না ভেবে কাল বাজার থেকে ফেরার সময় সোজা দমদম রোডের হনুমান মন্দিরে চলে গেছে পুজো দিতে। একটা চেনা দোকানে ব্যাগ -ট্যাগ রেখে। কি না, বাচ্চাটা যেন ভাল হয়ে যায়! হনুমানজি নাকি সঙ্কটমোচন, দাদুর অপারেশানের সময়ও বাবা গেছিল, তাই এবারও... চেনা নেই...জানা নেই, হোয়াটসঅ্যাপের খবর...ফেকই তো হয় বেশিরভাগ! তা না, উনি চললেন পুজো দিতে। কি যে বলি..." বলতে বলতেই মেয়েটি বলে উঠল "দাদা, গান ফ্যাক্টরি সাইড করবেন।"
নেমে গেল দুজনেই।
আমার মনটা ভাল করে দিয়ে।
আজকের এই আপনি-কোপনির স্বার্থপর জীবনেও এমন মানুষ আছেন... যিনি কারো অসহায়তায় আর্থিক সাহায্য করতে না পারলেও, যেটা পারবেন করতে সেটা নিজের বিশ্বাস থেকে করেছেন। এক্কেবারে অচেনা মানুষের জন্য। যে যুগে কেউ চেনা মানুষের জন্যই সময় দেন না। আর...মেয়েটি যেখানে নামল অটো থেকে, সেখানে যদি বাড়ি হয়, তবে তো হনুমান মন্দির বেশ দূরে ওখান থেকে। তাও গেছেন উনি। শুধু, একটি বাচ্চা সুস্থ হয়ে যাক...এই সদিচ্ছা আর শুভকামনা নিয়ে।
আর, আমরা ভাবি...ভালমানুষ নাকি নেই আর! সবাই নাকি স্বার্থ নিয়ে চলেন!
ধ্যাত! আমরা কিচ্ছু জানি না! আমরা নিজেরা কূপমণ্ডূক, তাই হাত বাড়াতে পারি না, দেখতে পাই না...
ভালমানুষ...মানুষের মতো মানুষের -এইই তো সম্পদ আমাদের এই মায়াময় নীলগ্রহের।
কাল মঙ্গলবার... বজরঙ্গবলি কে পুজো করার দিন। আমি মন্দিরে যাব না... কিন্তু মনে মনে চাইব এই নাম না জানা 'বাবা' যেন ভাল থাকেন, সুস্থ থাকেন, অপার আনন্দে থাকেন।
আর, যেন এমনিই থাকেন।
যেন... 'থাকেন'
থাকাটা...আজকের সমাজে...বড্ড দরকার...

 

এরকম এক লোকের পাল্লায় আমি একবার পড়েছিলাম.... তখন আমি কলেজে পড়ি... সে কথা থাক.... এইসব লোকগুলো কে ভোলা যায় না সহজে.... একটা দাগ কেটে দিয়ে যায়  Shy 

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
আলোময়

 
রোজকার মতো সকাল সকাল উঠে বাবুনের জন্য রান্না বসাতে যাবেন শিবানী, চাল ধোয়া হয়ে গেছে, হঠাৎ করে ছেলে বলে উঠল "মা!"
"কি রে বাবুন? এত সকাল সকাল উঠে পড়লি?"
"হ্যাঁ, আজ আমার জন্য রান্না করো না। পরে বললে রান্না হয়ে যাবে, তখন তুমিই রাগ করে বলবে আগে থেকে কেন বলিনি।"
"ওমা, সেকি, কেন? তুইই তো বলিস তোর যেখানে অফিস সেখানে কোনোকিছু পাওয়া যায় না। মোবাইল থেকে আনাতে গেলে অনেক বেশি টাকা খরচ হয়ে যায়।"
"ওফ মা, প্লিজ। আজ না।" বলে আবার ঘরে চলে যায় বাবুন। আরেকটু ঘুমোবে বোধহয়!
খানিকক্ষণ চুপ করে থাকেন শিবানী। কাল এই টিফিন নিয়েই বাবুনের সাথে একটু ঝামেলা হয়েছিল ওঁর। কি না, রোজ রোজ রুটি-তরকারি খেতে ভাল লাগে না ছেলের। কিন্তু আর কিই বা দেবেন! সকালে একটু ডাল ভাত খেয়ে যায়, তাই দুপুরে ভাত নিতে চায় না বাবুন। এদিকে শুধু ডাল - ভাত তো আর ছেলেকে দেওয়া যায় না... সারাদিনের জন্য বেরোয়... একটা তরকারি... মাছ থাকলে মাছের ঝোল বা নিদেনপক্ষে আলুভাজা তো করে দিতেই হয়। রান্না, কাটাকুটি... সব একার হাতে... এসব সামলে আর টিফিনে নিত্যনতুন কিছু করা যায় না। উনি জানেন না তেমন কিছু। সুজি দিয়ে মোহনভোগ বা চিঁড়ের পোলাও তো টিফিনে খাওয়া যায় না। পরোটা - লুচি কি ঠান্ডা হলে ভাল লাগবে? চামড়া হয়ে যাবে না? চাউমিন তো ঠান্ডা হয়ে গেলে ভাল লাগে না খেতে... তাহলে? ছেলে তো বলেই খালাস। মায়ের মন... ভাল লাগে?
এদিকে "আমার জন্য রান্না করো না" তো বলে দিল... খেয়ে যাবে তো? নাকি খাবেও না? আর ভাল লাগে না! বিয়ের পর থেকে এই চলছে! প্রথমে ছেলের বাবা... তা তিনি তো আজ পাঁচবছর হলো ড্যাং ড্যাং করে চলে গেলেন... ছেলের তখন পড়াও শেষ হয়নি...মাথার ওপর ঋণের বোঝা... কিভাবে যে বেঁচে ছিলেন ওঁরা দুজন সেইসময়, সে উনিই জানেন...ভাগ্যিস মাথার ওপর ছাদটুকু ছিল, আগের মতো ভাড়াবাড়ি ছিল না। পেনশানের টাকা থেকে খাওয়া -পরা আবার লোনের টাকা দেওয়া... তারপর ছেলে চাকরিতে ঢোকায় এখন একটু সুরাহা হয়েছে। আর এখন ছেলে জ্বালাচ্ছে! সারাজীবন সংসারে দেবার এই প্রতিদান!
ভাতটা প্রায় হয়ে এসেছে, এবার ডাল বসাবেন শিবানী। ভাতেই আলুসিদ্ধ দিয়ে দিয়েছিলেন, সেটা দিয়ে ভর্তা করে দেবেন। আজ আর কিছু ভাল লাগছে না। ছেলের রাগ থাকতে পারে, ওনার অভিমান থাকতে পারে না?
দ্রুতহাতে কাজ সারছেন উনি, হঠাৎ কে যেন কলিংবেল বাজাল।
এইসময় আবার কে? এমনিতেই সকালে কেউ এলে বড্ড বিরক্ত লাগে ওঁর... দেরি হয়ে যায় কাজে।
"ম্যাডাম, 'ইট নাও' থেকে এসেছি, আপনাদের অর্ডার ছিল" হাসিমুখে বলে একটি সবুজ জামা পরা ছেলে।
এই জামা চেনেন শিবানী। কালেভদ্রে খাবার অর্ডার করে বাবুন, মোবাইল থেকে। ওরাই দেয়। কিন্তু এখন তো কেউ খাবার অর্ডার করেনি...
"হ্যাঁ হ্যাঁ দাদা, থ্যাংকইউ! " পিছন থেকে বলে ওঠে বাবুন। তারপর কাগজের প্যাকেটটা নিয়ে নেয়।
বাবুন কি... খেয়েও যাবে না?
দরজা বন্ধ করে রান্নাঘরে ঢুকে যান শিবানী। সামান্য কারণে ছেলের এত রাগ!
"মা, দুটো থালা আর বাটি দাও তো। আর দুটো চামচ এনো।"
চুপচাপ ছেলের বলা জিনিস গুলো নিয়ে বাইরে আসেন উনি। যা খুশি করুক ও। ওনাকে যা দিতে বলেছে, দিয়ে দেবেন।
"মা এসো?"
একচিলতে বসার ঘরেই ডাইনিং টেবিল। সেখানে গিয়ে দেখেন ওই কাগজের ঠোঙাটা খোলা, সেখান থেকে কচুরি জাতীয় কিছু দেখা যাচ্ছে।
"মা, রোজ রোজ আমার রুটি খেতে বিরক্ত লাগে... আর তুমি তো রোজ বানাচ্ছ! তোমার তো একঘেয়ে লাগে। তারপর এত রান্না শেষ করা 'টার মধ্যে... বাড়ির সবকাজ তুমি একা করো... তাই ভাবলাম আজকের দিনটা অন্তত তোমাকে একটু অন্যরকমের দিন গিফট করি। এজন্যই তো শ্যামবাজারের ওই বিখ্যাত দোকানটা থেকে কচুরি- আলুর দম আর জিলিপি আনালাম... তুমি আর বাবা আগে মাঝেমাঝে খেতে, বলেছিলে না? এসো আমরা খেয়ে নিই গরম গরম..."
"তুই অফিস যাবি না?" জিজ্ঞেস করেন শিবানী।
ভাললাগা বুকে নিয়ে।
"ওফ মা, আজ তো কালীপুজো আর দীপাবলিও... তাই আজ অফিস ছুটি। চলো ব্রেকফাস্ট করে নাও, তারপর একটু বেরোব।"
", তোর আজ ছুটি? এই দ্যাখ, আমার মনেই ছিল না..." হাসতে হাসতে বলেন শিবানী। সকালের সব রাগ, অভিমান ছুমন্তর হয়ে গেছে যেন।
"হ্যাঁ তো... শোনো না, এখন একটু গোরাবাজারের দিকে যাই চলো। এই এত সকালে ভিড় হবে না... আমাদের অফিস থেকে দিওয়ালি উপলক্ষ্যে কিছু টাকা দিয়েছে... তোমাকে একটা শাড়ি কিনে দেব আর একটা কড়া... ওই কালো কালো ননস্টিক কড়া...তোমার ইচ্ছে ছিল না অনেকদিনের?"
"আবার শাড়ি কেন?"
"কেন নয় মা? আমারও তো দিতে ইচ্ছে করে বলো? পয়সা হাতে থাকলেই খরচা হয়ে যায়। তখন মনে হয়, ইস কেন কিনলাম না। আর এই দুদিন আগে ধনতেরাস গেল... তখনও তো স্যালারি আর এই হঠাৎ পাওয়া বোনাস হয়নি, তাই কিছু কেনা হয়নি... সোনাটোনা পারব না আমরা... চলো ওই কড়া... বা অন্যকিছু, তোমার যেটা লাগবে, সেটা কিনি..."
"তুই একটা আস্ত পাগল!" বলে মুখটা অন্যদিকে ঘোরান শিবানী।
আনন্দের চোটে চোখে জল এসে গেছে... মুছতে হবে তো?
আর যার ছেলে এত ভাল... এত 'মানুষ'... তার তো শুধু দীপাবলি কেন... সারাবছর আলোয় মোড়া, তাই না?
 

Like Reply
# কথোপকথন

 
-"হাই!"
-"হেই!"
-"বাব্বা! কত্ত ঢং!"
-"মানে?"
-"হেই লিখলি কেন? হাই বা হ্যালো লিখলে জাত যায়?"
-"উফ বাবা, তোকে ঝগড়াটিশ্রী দিলাম। হয়েছে এবার?"
-"না হয়নি। একটা দরকারি কথা বলার জন্য পিং করলাম।"
-"কি, শুনি?"
-"কাল তোর কোনো কাজ আছে?"
-"কাল? কাল কি বার?"
-"শনিবার। তোর অফিস তো ছুটিই থাকে। বাড়ি থাকবি, না কোথাও চড়তে বেরোবি?"
-"কেন বল তো?"
-"দ্যাখ দীপ্ত, তুই তো জানিসই, আমার কোনো দাদা বা ভাই নেই। কোনোবছর ফোঁটা দিতে পারিনা। আর যতদূর জানি, তোদের কোনো বোন নেই।"
-"এইইইই যে, ম্যাডাম! ওকথা ভুলেও ভাববেন না!"
-"কি কথা?"
-"ফোঁটা টোঁটা হবে না। ভাগ!"
-"কেন বে?"
-"বলব না। আমার কাজ আছে, অফলাইন হচ্ছি।"
-"মারব কানের গোড়ায়। তুই আমার দুবছরের সিনিয়ার, একবছর আটমাসের বড়, কিচ্ছু মানব না কিন্তু!"
-"দ্যাখ পিউ, খিল্লি করবি না কিন্তু..."
-"বল, নইলে ফেবুতে তোকে ট্যাগ করে পোস্ট করব!"
-"আমি...ইয়ে... তোর যা মুখ, বলতেও ভয় লাগে..."
-"মুখরা বলছিস আমাকে?"
-"তা তো আছিসই। তবে আমি ছেলেটা খুব ইয়ে কিনা... তাই তোকে ইয়ে করি আরকি!"
-"ইয়ে করিস মানে?"
-"উফ! বেল্লিক একটা তুই!"
-"আর তুই একটা উজবুক! আমাকে পছন্দ করিস, তাই তো?"
-"ইয়ে... মানে...হ্যাঁ!"
-"উরিশ্লা! তাই ফোঁটা নিবি না?"
-"হুম!"
-"আমি না খোঁচালে তো বলতিস না!"
-"বলতাম...কবে জানি না, কিন্তু বলতাম..."
-"বুঝলাম। কিন্তু দীপ্তবাবু, কাল যে আমি আসছিইই!"
-"মানে? এইজন্য বলতে চাইনি তোকে। খিল্লিবাজ মেয়ে একটা।"
-"কাকু মুন্নার দোকান থেকে মাটন কিনেছেন আজ এক কেজি। আমি পাশের দোকানে গেছিলাম। উফ, কাল কাকিমা মাটন বানাবেন, আমি যাবই যাব। কাকুকে বলে দিয়েছি। "
-"বাই! গুড নাইট!"
-"এই শোন, শোন। নিজেকে এত ইম্পর্ট্যান্ট ভাবিস কেন তুই?"
-"মানে?"
-"তুই ছাড়াও তো বাড়িতে আরও লোকজন আছে, নাকি? কাল আমি তীর্থদাকে ফোঁটা দিতে যাব। তোকে এজন্যই পিং করলাম। হয় সকাল সকাল কেটে পড়বি, নইলে কাকু-কাকিমাকে আমার ব্যাপারে জানিয়ে দিবি। নইলে কিন্তু ফোঁটা দিতে হবে আমাকে।"
-"আর আমার মাটন?"
-"বাইরে মাটন বিরিয়ানি সাঁটিয়ে নিস.."
-"পারলাম না... তারচেয়ে..."
-"তারচেয়ে?"
-"গোলাপ দিয়ে তো প্রোপোজ করতে পারলাম না, নলির হাড় দিয়েই প্রোপোজ করব কাল। ফর্ম্যালি!"
-"ধ্যাত!"
-"উফ! ঝগড়ুটিটা আবার লজ্জাও পায়!"
-"কাল দেখা হচ্ছে..."
-"উইথ নলির হাড়..."

Like Reply
(04-11-2021, 11:56 AM)ddey333 Wrote: টক ঝাল মিষ্টি

♥♥♥♥♥♥
 
বছর সত্তরের ভদ্রলোকটি আমার মতোই কলকাতা থেকে ভুবনেশ্বর যাচ্ছেন , পরনে পায়জামা পাঞ্জাবি , তার উপর জহর কোট চাপানো , কম্বলটাকে পায়ের উপর জড়িয়ে বাবু হয়ে বসে এক মনে মোবাইলে টাইপ করে চলেছেন ...মাঝে মাঝে ফিক ফিক করে হাসছেন বেশ কয়েকবার আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখলেন আবার মোবাইলে মনোনিবেশ করলেন কেন জানি না সেদিন 2nd AC ওই কামরাটি বেশ ফাঁকাই ছিল , ঠান্ডাটা একটু বেশিই লাগছিলো
রাত তখন এগারোটা হবে বাকিরা সবাই মোটামুটি ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছে বা দেবে দেবে করছে রাত একটার আগে আমার ঘুম  আসবে না তাই আমি চাদরটাকে সারা গায়ে জড়িয়ে মোবাইলটাকে নাড়াচাড়া করছিলাম ভদ্রলোকটি চোখ থেকে হাই পাওয়ারের চশমাটা খুলে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন কি ঠান্ডা লাগছে my son ..?
ভদ্রলোকটিকে দেখে আমার শিক্ষক বা প্রফেসর মনে হচ্ছিল .... বেশ একটা পারসোনালিটি তার সারা শরীরের ভাষায় প্রকাশ পাচ্ছিল , তার উপর ওনার মুখে my son কথাটি শুনে আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম, বললাম তা একটু লাগছে ভদ্রলোকটি বললেন এক্ষুনি লাস্ট কফিওয়ালা উঠবে একটু কফি খেয়ে নাও দেখবে ভালো লাগবে ঠিক তাই দুজনেই কফি নিয়ে বসলাম , একে একে ধেয়ে এলো অতি পরিচিত কিছু প্রশ্ন ---কোথায় থাকোকি করা হয় ? সন্তান কটি ? তারা কিসে পড়ে ? কথায় কথায় ভদ্রলোকটি বললেন উনি ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির বাংলার প্রফেসর ছিলেন কিছুক্ষন দুজনেই চুপ, তারপর ভদ্রলোকটি শান্ত গলায় জিজ্ঞাসা করলেন কেমন লাগছে জীবনের স্বাদ ? বাড়িতে সময় দেওয়া হয় ? আমি কি বলবো তা ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারছিলাম না ভদ্রলোকটি আমাকে একটু আস্বস্ত করে বললেন আমি জানতে চাইছি জীবনটাকে মিষ্টি লাগছে না তেতো ?
আমি হাসতে হাসতে বললাম টক ঝাল মিষ্টি ...
সকালে নয়টায় অফিস, তারপর  ফিরতে ফিরতে সেই রাত আটটা বাকি সময়টুকু হয় আমার সাথে বউয়ের ঝামেলা নয়তো মেয়ের সাথে মেয়ের মায়ের ...সকালে ঘুম থেকে দেরি করে কেন ওঠা থেকে শুরু , homework কেন হয়নি ? খাবার কেন থালায় পড়ে ? কলেজের ব্যাগ কেন গোছাওনি ? খাটের চাদর কেন লন্ড ভন্ড ? বইগুলো ঠিক জায়গায় নেই কেন ? পা না ধুয়ে কেন খাটে উঠেছ ? কত TV দেখবে ? একটা না একটা বিষয় নিয়ে লেগেই আছে , মাঝে মাঝে অতিষ্ট হয়ে মেজাজ যায় হারিয়ে ....
 
ভদ্রলোকটি ছোট্ট একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে কম্বলটি বুকের উপর তুলে বলল এটাই তো জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় ...এটাকে অবহেলা কোরো না ....টক ঝাল মিষ্টির এই অতুলনীয় স্বাদটাকে কব্জি ডুবিয়ে চেটেপুটে খাও একেবারে হাতের নখ থেকে কুনুই পর্যন্ত একটা সময় আসবে যখন ঘরে ঢুকে দেখবে চারিদিক নিঃশব্দ , বিছানার চাদরটা টান টান করে পাতা , মা-মেয়ের প্রতিদিনের খন্ডযুদ্ধ কোনো এক অলৌকিক ইশারায় চিরতরে অবসান ঘটেছে , মনে হবে চাদরটা দু হাত দিয়ে আবার লণ্ডভণ্ড করে অপূর্ণ যুদ্ধের দামামা বাজাই ...বইয়ের তাকটা পরিপাটি করে সাজানো হালকা সাদা ধুলোর আস্তরণ বইগুলোতে লেপ্টে আছে ...মনে হবে সব বইগুলো পরিষ্কার টেবিলটার উপর আছড়ে ফেলে অসমাপ্ত অঙ্ক গুলোকে ছোটো ছোটো হাত দুটো ধরে আর একবার কষাই ...সব কিছু ঠিকঠাক কিন্তু চারিদিক মরুভূমির নিঃসঙ্গতাসন্তানের পরিচিত গন্ধকে একটিবার পাওয়ার আশায় এঘর ওঘর শুধু ঘুরপাক খাওয়া , বাড়ি থেকে বেরোবার সময় পেছনে নড়বে না কোনো আদুল হাতের টাটা , TVটা আপন মনেই চলতে থাকে কেউ কেড়ে নেয় না রিমোট টা অযথা বাহানায় , খাবার টেবিলেই শুকোতে থাকে এঁটো হাত, কেউ ছোবল দেয় না আর ডিমের কুসুমে , মোবাইলের ওপারে আদুরে আওয়াজ প্রতিদিন থেকে প্রতি সপ্তাহে, প্রতি সপ্তাহে থেকে প্রতি মাসে গিয়ে ঠেকবে , দুদিনের জন্য আসবে, যাবার সময় ব্যাগের ভিতর নিয়ে যাবে হাটি হাটি পা পা থেকে একটু একটু করে গড়ে তোলা সব স্বপ্ন ....দৃষ্টি শক্তি ধীরে ধীরে লোপ পাবে , বাড়বে শুধু ওষুধের সংখ্যা , অনিদ্রায় চোখ দুটো হয়ে উঠবে আরো নিশাচর ......
 
ভদ্রলোকটির প্রতিটি কথা ট্রেনের বিকট আওয়াজ পেরিয়ে বুকের ভিতর যেন তীরের মতো বিঁধছিল , আমি বললাম তাহলে বাঁচার উপায়ভদ্রলোকটি একটু ধরা গলায় বললেন শীতের ঝরা পাতার মতো যদি ঝরে পড়ো তবে কেউ ফিরেও তাকাবে না ... উপরে সবুজ পাতার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অচিরে বিলীন হবে মাটির বুকে ...সবুজ পাতার মতো ফুটে উঠতে হবে ওই জীর্ণ বট বৃক্ষে পুরোনো বন্ধুদের সান্নিধ্যের আগুনে মনটাকে সেকতে হবে ঠিক যেমন কনকনে শীতের রাতে কাঁপতে কাঁপতে এক টুকরো আগুনকে ঘিরে ধরে একটু ভালো লাগার উষ্ণতা সারা শরীরে মাখতে ইচ্ছা করে...
একমাত্র বন্ধুই পারে তোমার ক্ষয়ে যাওয়া জীবনে অফুরন্ত হাসির ফোয়ারা প্রলেপ লাগাতে , তাইতো আমি সময় অসময় চোখ রাখি ওই মোবাইলের ছোটো জানালায় ...তাতে ভেসে ওঠা পুরোনো বন্ধুর এক একটা শব্দ সবুজ পাতার ফাঁক দিয়ে ঠিকরে বেরিয়ে আসা এক একটি সূর্যরশ্মি সযত্নে আগলে রেখো পুরোনো বন্ধুত্বকে আজকের প্রতিদিনের কর্মযুদ্ধে হারিয়ে ফেলো না তাদের বন্ধুত্বের হাতছানি আমি আজ যাচ্ছি আমাদের বন্ধুদের মিলন সমারোহে ....তিন মাস অন্তর অন্তর আমরা মিট  করি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গান , বাজনা , হাসির কোলাহলে ডুবে থাকি দুদিন ...খুঁজে পাই বেঁচে থাকার অক্সিজেন .... 
 
পরদিন ভোর বেলায় যখন ভুবনেশ্বর স্টেশনে নামলাম দেখলাম গোটা পনেরো সত্তর বছরের যুবক ভদ্রলোকটিকে ঘিরে ধরেছে ....হাসতে হাসতে তারা এগিয়ে চলেছে নতুন ভুবন গড়তে ...আমাকে দেখে ভদ্রলোকটি হাত নেড়ে বললো look my son এরাই আমার এক একটি সবুজ পাতা .....
 
জানি না ২০ বছর পর আমাদের ভবিষ্যৎ কি হবে ? জানি না মোবাইলে টাইপ করার শক্তি হাতে মজুত থাকবে কি না ? হয়তো ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি আবছা হয়ে আসবে ...গ্রুপের গানের আসর হয়তো তখনো একই রকম ভাবে জমে উঠবে কিন্তু হঠাৎ করেই বেইমান হয়ে উঠবে শ্রবণ শক্তি , আস্তে আস্তে শিথিল হবে   স্মৃতিশক্তির বাঁধন ....তবু থেমে যেন না যায় বন্ধুত্ব...
 
তাই বন্ধু চাই, ভাল বন্ধু, যে স্বার্থহীন ভাবে সুখে-দুখে তোমার পাশে থাকবে এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে যেতে না চাইলেও একদিন তো চলে যেতেই হবে
তাই যতদিন বাঁচো প্রান খুলে হাসো জীবনে চাওয়া  পাওয়ার সংকীর্ণতা ভুলে শেষের দিনগুলি আনন্দেতে বাঁচো
জীবনের হাসিকান্নার এই রঙ্গশালায়......
The show must go on .......



GREAT.
Like Reply
# অণুগল্প

 
ঘরে ঢুকে ব্যাগটা ছুঁড়ে ফেলে বাথরুমে ঢুকে গেল শালিনী। অদ্ভুত একটা ওয়েদার চলছে এখন! সকালে বেশ ঠান্ডা... আর রাতে গা শিরশির করে। তাই, কদিন আগের মতোও এখন আর বাড়ি ফিরে স্নান করার বালাই নেই... ভাল করে হাত পা ধুয়ে নেয় ও।
আর আজ তো আরও ভাল করে হাত -মুখ ধুতে হবে।
রোজকার ক্লান্তির সাথে একটু অভিমান... আর অনেকটা চোখের জল মেশানো আছে যে!
ঘরে পরার কাচা জামাটা পরে দরজা আর জানলা মিলিয়ে চোদ্দটা প্রদীপ জ্বালায় শালিনী। মা করতেন, বলতেন এই দিনে নাকি ছেড়ে যাওয়া মানুষজন আসেন পাশে। সত্যি মিথ্যে জানেনা শালিনী, তবে,মায়ের শেখানো সবকিছুই মানতে ইচ্ছে করে আজকাল... হয়ত ওর বয়স হচ্ছে বলেই!
প্রদীপ দেওয়া শেষ করে সোফাতে গা এলিয়ে দেয় শালিনী।
বড্ড ক্লান্তি আজ... শরীরে আর মনেও।
অথচ সারাদিন আজ অফিসে হুটোপুটি করেছে ও। কত হাসি... সেলফি... দেখে কেউ বলবেই না, মেয়ের মনের কত মেঘ!
"কিরে? কিছু খেলি না যে? শরীর খারাপ নাকি?" মায়ের গলা।
"না না... শরীর ঠিক আছে। একটু টায়ার্ড... এতদূর অফিস... তাই আর কি!"
"মুখটাও তো কালো লাগছে! ঠিক করে বল... কি হয়েছে? মন খারাপ?"
"একটু... আসলে এইসব উৎসবের দিন এলে...কেমন একটা লাগে...একা লাগে খুব...মনে হয় কেউ যদি থাকত... যে বলত "বাহ! সুন্দর লাগছে!" বা, বেঁকে যাওয়া টিপটা ঠিক করে দিত..."
"...এই ব্যাপার! আচ্ছা, অন্য কাউকে কেন লাগবে? 'শালিনী' নিজে কি যথেষ্ট না? যদি নিজেকে সুন্দর ভাবে তাহলেই কি 'সবার' ভাবা হয় না? আর টিপ বাঁকা থাক, আমার মেয়ের মেরুদন্ডটা তো সোজা...এতেই হবে!"
"উফ মা! পারো বটে তুমি! ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খালি মেয়ের গুণকীর্তন! "
"তা আমার মেয়ে যদি কীর্তন করার মতো হয় তো কি করব বাপু?"
"ধ্যাত! পারো বটে!" হাসতে হাসতে বলে ওঠে শালিনী। তারপরেই চটকাটা ভেঙে যায়!
মনখারাপটা কেটে গিয়ে একটা ভাললাগা ফিরে আসছে...
"সোজা মেরুদন্ড!"...
কে বলল কথাটা?
খুব চেনা কথাটা?
ঘরে তো একা...
জানলার দিকে চোখ গেল... বক্স জানলায় রাখা প্রদীপের শিখাটা তখনও কাঁপছে...
আলোছায়ার দ্যুতিতে ভরিয়ে দিয়ে...
বিশ্বাস -অবিশ্বাসের সরু রেখা হয়ে...
একগাল হাসে শালিনী... মনে পড়ে যায় একটা কথা, বহুবার পড়া একটা কথা...
"নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ৷
চৈনং ক্লেদযন্ত্যাপো শোষযতি মারুতঃ৷।"

Like Reply
[Image: IMG-20211029-WA0015.jpg]
Like Reply
# অন্য_রূপকথা

 
"দিদি, মাস্ক লাগবে? সূতির মাস্ক... দুদিকে দুরকম ডিজাইন। লাগবে, দিদি?"
অফিস থেকে ফিরছিলাম। এই সময়টা বড্ড খিদে পায়... এখন একটু ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলছি, তাই হনহন করে বাড়ি ফিরছিলাম। "মাস্ক চাই?" শুনেও ফিরে তাকাইনি তাই। আসলে আগে এইধরনের মাস্ক পরলেও, কোভিড হবার পর থেকে এন -৯৫ মাস্ক পরি আমি। তাই, পাত্তাও দিই নি।
আসলে, তাকাইও নি।
হঠাৎ দেখি, আমার পাশ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সেই মাস্ক বিক্রেতা। একটি বাস এসে থামছে স্টপেজে, সেই দিকেই...
কেন জানি না, হয়ত হাঁটার ভঙ্গিমার জন্যেই চোখ চলে গেল পায়ের দিকে
একটি পা স্বাভাবিক। আরেকটি পায়ের পাতা নেই।
পায়ে জুতো নেই।
পায়ের নিচে খোয়া ওঠা রাস্তা। এবড়োখেবড়ো। স্টোনচিপ উঠে আসা।
কালো- রোগা টিংটিঙে ছেলেটি। হাতে একটা প্লাস্টিকের বাস্কেটে মাস্কের বান্ডিল। থেমে থেমে, হেলে দুলে হাঁটছে।
থমকে গেলাম।
যশোর রোড... গাড়ি...ধূলো... সব কেমন আবছা লাগছিল।
পেটের আগুন... কী মারাত্মক! পায়ের যন্ত্রণাকেও অগ্রাহ্য করা যায় অবলীলায়...
আমার পায়ে অসুবিধা নেই, তবু, ভারাক্রান্ত হৃদয়... নিজেকে যেন টেনে টেনে নিয়ে গেলাম ছেলেটির কাছে।
"কত করে মাস্ক?"
"পনেরো টাকা করে দিদি। সব সূতির। এই যে, দুদিকে দুরকম পিরিন্ট!"
হাতে যে 'টা উঠল, তুলে নিলাম। ডিজাইন বা প্রিন্ট, দেখিনি। ছেলেটির কাছে মেয়েদের জন্য ওই 'টাই মাস্ক ছিল।
আমার ব্যাগে থাকা একটি নোট ধরিয়ে হাঁটা লাগিয়েছি, পিছন থেকে "দিদি, দিদি, দিদি..." শুনে ফিরে তাকাতেই হলো।
মাস্ক -ভাইটির গলা।
মাথা নিচু। হাতে 'টি ভাংতি।
"দিদি, আপনার টাকা।"
"ওটা থাক... কিছু খেয়ে নিও..." ভাঙাচোরা গলায় বলেছিলাম আমি। খুব আবেগে কথা আটকে যায় আমার। ছোটবেলার অভ্যেস।
"না না দিদি। খুচরোটা রেখে দিন। আর নইলে আরো দুটো মাস্ক নিন... দাদার জন্য... তাহলে পুরোপুরি হয়ে যাবে।"
বুঝলাম, ছেলেটি 'দয়ার দান' নিতে চায় না।
আলাপ জমালাম।
ছেলেটির নাম শিবশঙ্কর। বাড়ি বারাসাতে। মায়ের সাথে ভাড়া থাকে। মা অন্ধ। অ্যাকসিডেন্টে ছেলেটির এই অবস্থা। একটি পায়ের পাতা নেই
জুতো নেই ছেলেটির। ওদের পায়ের বিশেষ জুতোর অনেক দাম। হাওয়াই চটি সারাতে সারাতে আর তাপ্পি মারার অবস্থায় ছিল না। তাই আজ রাগ করে ফেলে দিয়েছে।
বাড়ি ভাড়া নশো টাকা। এখনও সাড়ে তিনশো টাকা লাগবে।
একবেলা খায় ছেলেটি। রাতে। সকালে চা - পাঁউরুটি, দুপুরেও চা- পাঁউরুটি।
তবু, আমার "ভাই, কিছু খাবে?" আহ্বান অগ্রাহ্য করে বলতে পারে "পরে একদিন খাব দিদি। ওই যে আরেকটা বাস আসছে, স্টপেজটায় যাই।"
চলে যাবার আগে এই ছবিটা তুললাম।
ছেলেটি রোজ ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে মাস্ক। মোটামুটি সন্ধ্যেবেলা থেকে মতিঝিল কলেজের সামনে যে মিও আমোরের আউটলেটটি আছে, সেখানে থাকে।
ওইদিকে যারা থাকো বা যাতায়াত করো... কিছু কিনবে ছেলেটির কাছ থেকে? প্লিজ? না কিনলে যে এমনি এমনি দান নেবে না। পা নেই, তবু মন আছে যে ছেলেটির। মান আছে যে!
আর কিছু লিখতে পারছি না আজ। শুধু ভাবছি... কী অদ্ভুত আমাদের দেশ, আমাদের সমাজ! কিছু লোক অন্যের টাকা চুরি করে পকেট ভরায়, দেশ ছেড়ে চলে যায়...
আর কিছু মানুষ... পাইপয়সার হিসেবটুকুও দিয়ে দেয়। আত্মসম্মানের জন্য।
বুকের মধ্যে জমাট বাঁধা কষ্ট...তবু... বড় টইটুম্বুর আমি আজ...
"সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে..."
(নির্লজ্জের মতো বলছি... না কিনলেও যদি লেখাটা শেয়ার করো, বা পরিচিত মানুষদের বলো... মতিঝিল কলেজের পাশে, মিও আমোরের আউটলেটের কাছে...ছেলেটির নাম শিবশঙ্কর...একটা পায়ের পাতা নেই...পায়ে জুতো নেই....ছেলেটার বাড়ি ভাড়া বাকি....)

Like Reply
[Image: 254496087-10159538462031815-621272305800226624-n.jpg]
Like Reply
মায়াময় পৃথিবী !

তিন বছরের ছেলেটি সেদিন বাসে উঠেই আমাকে মা বলে  জড়িয়ে ধরেছিল।আমি তখন সীটে বসে।বাসে খুব একটা ভীড় না থাকলেও কোনো সীট ফাঁকা ছিল না।আমি সঙ্গে সঙ্গেই বাচ্চাটিকে কোলে বসিয়ে নিই।আমি কোলে বসিয়ে নিতেই পাশ থেকে বছর সাতেকের মেয়েটি বলে উঠল,
"ভাই আন্টির কোলে চুপ করে বসে থাকবি।"
বুঝলাম ওরা ভাই বোন।মেয়েটি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর ভায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।দুই বাচ্চার খুনসুটি দেখে আমারও বেশ ভালো লাগছে।পাশেই ওদের বাবা দাঁড়িয়ে আছেন।বাচ্চা দুটো বেশ মিষ্টি দেখতে।ভাবছি তখন এমন দুটো বাচ্চা পেয়ে ওদের মা বাবা তাহলে কত খুশিতে থাকে?নিজের মনটাই যেন খারাপ হয়ে গিয়েছিল সেদিন।স্বামী,সংসার সন্তান কোন্ মেয়েটা না চায়?সবটাই কপাল।ঠিক কপাল বলব না।কিছু ভুল সিদ্ধান্ত জীবনকে ভুল পথে ঠেলে দেয়।
আমি মধুপর্ণা।আমিও চেয়েছিলাম একটা সুন্দর সংসার।স্বামী সন্তান নিয়ে আমিও একটা সুখী পরিবারের স্বপ্ন দেখেছিলাম।বেশির ভাগ মেয়েদের স্বপ্ন গুলো স্বপ্নই থেকে যায়,সেগুলো কখনো পূরণ হয় না।
আমাকে নিয়ে আমার মায়ের দারুণ অহংকার ছিল কারণ আমি সুন্দরী।পাশের বাড়ির রুমকি,সম্পা,অর্পিতা ওদের থেকে যেহেতু আমি দেখতে সুন্দর ছিলাম আমার মা কিন্তু নানান কথার  প্রসঙ্গে ওদের মায়েদের কাছে আমার রূপের বড়াই করে বেড়াত।মা কথায় কথায় বলত,আমার মেয়ে সুন্দরী।বিয়েতে এক টাকাও পণ দেব না।এক দেখাতেই পছন্দ হবে।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর পাশের বাড়ির রুমকির যেই বিয়ে হয়ে গেল আমার মাও এবার আমার বিয়ের জন্য উঠে পড়ে লাগল।বাবাকে বলতে শুরু করল,
"দেখো রুমকির বাবাকে।মেয়েকে তো ওই রকম দেখতে,তাও আবার ভালো একটা ছেলে জোগাড় করে ড্যাঙডেঙিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিল চোখের সামনে।আর তুমি হাত গুটিয়ে বসে আছো।"
এমনিতেই পাত্র পক্ষ প্রায়ই বাড়িতে আসে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।কিন্তু ভালো পয়সাওয়ালা ছেলে ছাড়া আমার বিয়ে দেবে না আমার মা।রুমকির বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর থেকেই আমার মা আমার বিয়েটা না দিতে পারলে যেন নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিল না।রুমকির বড়ো লোক বাড়িতে বিয়ে হয়েছে।তাই আরো বড় লোক ছেলের খোঁজ করতে শুরু করল।অবশেষে বড়ো ব্যবসাদার ছেলে আমাকে দেখতে এলো।অবস্থাপন্ন ঘর।মা তো এমন পাত্র হাত ছাড়া করবেই না।রুমকির বাবা মাকে দেখিয়ে দেবে নিজের মেয়েকে আরো বড় লোক বাড়িতে দিয়েছে।আমি সবে কলেজে ভর্তি হয়েছি তখন।পড়াশোনাকে গোল্লায় পাঠিয়ে দিয়ে জমি জায়গা বিক্রি করে আমার বিয়েটা দিয়ে দিল।বাবা অবশ্য বলেছিল,
---গ্রাজুয়েট হোক,তারপর ভাবব।এত তাড়াতাড়ি মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেব?
মা তো এমন কথায় রেগে আগুন।বাবাকে বলে,
---তুমি পুরুষ মানুষ কি বুঝবে?বাড়িতে মেয়ে থাকলে কি যে চিন্তা হয় সেটা বোঝার ক্ষমতা তোমার হয় নি।একটা সমর্থ মেয়ে,তার ওপর সুন্দর দেখতে‌।কখন যে কার কু নজর পড়বে তার ঠিক নেই।তাই বিয়ে দেওয়াটাই শান্তির জায়গা।
আমার বিয়ে হলো কিন্তু বিয়ের পর সংসার হলো না।এক দেড় বছর যেতে না যেতেই আমি ফিরে এলাম বাপের বাড়িতে।বড়োলোক বাড়ির ছেলে।বড়ো ব্যবসা।টাকা পয়সার অভাব নেই।কিন্তু নেশায় আসক্ত।প্রতিদিন রাতে মদের নেশায় চূড় হয়ে থাকে। কিছু বলতে গেলেই অশান্তি।অবশেষে মারধোর অত্যাচার।দিনের আলোয় কিছু মানুষ থাকে ঝাঁ চকচকে, কিন্তু রাতের অন্ধকারে তারা হয়ে ওঠে হিংস্র।কত দিন আর সহ্য করব?শাশুড়িকে বললাম সব কথা।শাশুড়ি ভীষণ ভালো মানুষ।শাশুড়ি বললেন,
--এই বাড়িতে মেয়েদের কোনো কথাই টেকে না।আমাকে তো আর বিয়ের কথা বার্তা বলতে নিয়েও যায় নি।আমি কখনোই চাইনি কোনো মেয়ের জীবনটা নষ্ট হোক।তুমি এ বাড়িতে থাকলে একদিন মরেই যাবে।পারলে চলে যেও।অনেক যন্ত্রণা আমি সহ্য করেছি।তুমি পারবে না।
বুঝলাম শাশুড়ি আমার ভালোই চান।ভালো মানুষরা কখনো কারো খারাপ চায় না।শেষমেষ ডিভোর্স হয়ে বাপের বাড়ি চলে আসি।যখন বাপের বাড়িতে চলে আসছিলাম,আমার শাশুড়ি বলেছিলেন,
"স্বামী মানুষটা ভালো হলে কুঁড়ে ঘরে থেকেও সুখ।আমার ছেলেকে আমি মানুষ করতে পারি নি।তাই ভালো মা হতে পারিনি।সংসারের মানুষরা ভালো না হলে সে সংসারে মেয়েরা কখনো মূল্য পায় না।আমি তো এ জন্মে আর বেরোতেই পারলাম না।তুমি বেরিয়ে গিয়ে নিজের মতো করে বাঁচো।
আমি বাঁচব বললেই তো বাঁচা যায় না।মানুষ খেতে পরতে পেলেই বেঁচে থাকে না।মানুষ বাঁচে আনন্দে।মানুষ বাঁচে ভালোবাসায়।একটা কথা সব থেকে বড়ো সত্যি মেয়েরা বিয়ের পর শুধুই শ্বশুরবাড়িতেই অত্যাচারিত হয় তা নয়, বিবাহিত মেয়ে বাপের বাড়িতে ফিরে এলে তার যে কি অবস্থা হয় সেটা বলে বোঝানো যাবে না হয়তো।
বাপের বাড়িতে আসার পর থেকে আমি আরো অসহায় হয়ে পড়লাম।আমাকে ভালো চোখে দেখল না আমার মা।আমার জন্য কোনো সহানভৃতি তো নেই,উল্টে আমাকে দোষারোপ করতে শুরু করল।আমি নাকি সংসার করতে পারিনি।মা কথায় কথায় বলতে শুরু করল,
"নিজের সংসার ভেঙে আমার সংসারে জ্বালাতে এসেছিস?দেখ গিয়ে সম্পা রুমকিকে, কেমন সুন্দর করে সংসার করছে।আর তুই এসে পড়লি আমাদের ঘাড়ে।জমি জায়গা বিক্রি করে বিয়ে দিয়েছিলাম আমার ঘরে বসে থাকার জন্য?শ্বশুর বাড়িতে অনেক কিছু হবে।সে গুলো সহ্য করতে হয়।"
উঠতে বসতে আমাকে খোঁটা দিতে শুরু করল।একটু কিছু হলেই বলত,
"চার বেলা  গিলছিস,বাপের জমিদারি আছে নাকি যে তোকে বসে বসে খাওয়াবে?রাস্তা দেখ।এখানে ওসব চলবে না।"
বুঝলাম আমি গলগ্রহ।একবার মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে বাপের বাড়ির প্রতি তার কোনো অধিকার থাকে না।আমাদের সমাজে মেয়েদের বিয়ে মানে নিজের বাপের  বাড়ির  প্রতি অধিকার হারানো।সত্যিই তো সংসার তো মায়ের।মায়ের সংসারে থাকা মানেই একটা বাড়তি বোঝা।আসলে সংসারের কর্তৃত্ব কেউই ছাড়তে চায় না।সে শাশুড়িই হোক,আর নিজের মা-ই হোক।আমি ভাবলাম এই সব কিছুর জন্য আমিই কি দায়ী?আমার দোষটা কোথায়?আমাকে পড়াশোনা করতে দেওয়া হলো না‌।আমাকে জোর করেই বিয়েটা দেওয়া হল।বিয়ের পর শ্বশুর বাড়িতে অত্যাচারিত হলে সব সময় শাশুড়ির দোষ দিই।কিন্তু নিজের মা?মেয়েরা  বিয়ের পর বাপের বাড়িতে ফিরে এলে আরো নিপীড়িত হয় মায়ের দ্বারা।নিজের মা তখন শাশুড়ির থেকে বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।যেদিন শ্বশুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে ছিলাম সেদিন আমার শাশুড়ি বলেছিল,
"বৌমা,এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিজের মত করে বাঁচো।অন্তত শান্তিতে থাকবে।অন্তত তোমার পরের জীবনটা ভালো করে কাটবে এই আশীর্বাদ করি তোমায়।"
বাপের বাড়িতে ফেরার পর মনে হয়েছিল সেদিন শাশুড়ি মা আমাকে অভিশাপ দিয়েছিল এসব বলে।ভালো তো হলই না।বরং আরো খারাপ হল।পরে বুঝেছিলাম আমাকে উনি আশীর্বাদই করেছিলেন।জীবনে আমার মায়ের থেকে আমি সেভাবে ভালোবাসা পাইনি।কিন্তু এই শাশুড়িমা আমাকে ভীষণ ভালোবাসতেন।এখনো ওনার সাথে আমি যোগাযোগ রেখেছি।মাঝে মধ্যে উনি আমার বাড়িতে আসেন।একটা মায়া কাজ করে বই কি!
এখন আমার ভরা সংসার।ছেলে মেয়ে আর স্বামীকে নিয়ে ভালো আছি।সাত বছর হলো আমার বিয়ে হয়েছে। স্বামী ব্যাঙ্কে চাকরি করেন।ভাবিনি কখনো এমন একটা ভালো মানুষকে জীবনে পাব।আমার জীবনের স্বপ্নটা সার্থক হয়েছে।একটা সুন্দর সংসারের স্বপ্ন দেখেছিলাম সেটা আজ পেয়েছি।
সেই পাওয়ার গল্পটা না বললে অনেক কিছুই অপূর্ণ থেকে যায়।আসলে নিজের জীবনের কথা বলতে গিয়ে বাসের সেই ঘটনাটা বলতে বাকি রয়ে গেছে।সেদিন বাসে বাচ্চা ছেলেটি আমার কোলে আর মেয়েটির সাথে আমি কথা বলতে শুরু করলাম।জিজ্ঞেস করলাম,
--কী নাম তোমার?
--মৌমণি।তারপর মেয়েটি নিজে থেকেই বলল,
--আমার ভায়ের নাম ময়ূখ।
--কি মিষ্টি নাম।তা কোথায় গিয়েছিলে?
–-মামার বাড়িতে ছিলাম।এবার বাবার সাথে বাড়ি যাচ্ছি।
--তা তোমার মা আসেনি?
---আন্টি আমার মা তো নেই।কথাটা বলেই  মেয়েটির মুখটা কেমন ছোট হয়ে গেল।মুখের হাসিটাও মিলিয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গেই।পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওর বাবা মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে চটজলদি পকেট থেকে লজেন্স বের করে মেয়েটির হাতে দিয়ে বলে,
---মণি ভাইয়ের হাতে একটা দাও,আর একটা তুমি খাও।
বুঝলাম প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দেবার জন্যই এই পদক্ষেপ।যতই হোক,বাবা তো।বুঝতে পেরেছিলাম ওনার মনের অবস্থা।তাই খারাপ লাগছিল।আমিও ভদ্রলোককে সরি বলতেই উনি বললেন,
--ইটস ওকে।
--আসলে বুঝতে পারিনি।
--না না ঠিক আছে।
এরপর আমার বাস থেকে নামার সময় হলো।আমি উঠে দাঁড়াতেই ঘটল সেই অদ্ভুত ঘটনা।বাচ্চা ছেলেটি কিছুতেই আমাকে ছাড়ছে না।শাড়ির আঁচলটা টেনে ধরে রেখেছে।আর মা মা বলে চিৎকার করে কাঁদছে।বাসের সব লোক তো তখন তাকিয়েই আছে।কোনো ভাবেই ছাড়তে রাজি নয়।এদিকে ওর বাবা বোঝানোর চেষ্টা করছে।কিছুতেই কিছু না।আরো চিৎকার করে কাঁদছে বরং।এদিকে আমার স্টপেজ চলে এসেছে।হঠাৎ বাচ্চা মেয়েটি বলে ওঠে,
---আন্টি ভাই যখন ছাড়ছেই না চলো না আমাদের সাথে আমাদের বাড়ি।তুমি আমার মায়ের মতো দেখতে।
এই একটা কথাতেই আমাকে দমিয়ে দিয়েছিল সেদিন।আমার স্টপেজ ফেলে আমি চলে এসেছি অনেকটাই।সেদিন আমি যেন দুটি বাচ্চার  মা ডাকটা শুনতে পেয়েছিলাম আমার হৃদয়ে।পারিনি মাতৃহারা ওই দুটি বাচ্চাকে দূরে সরিয়ে রেখে নেমে যেতে।কেন জানিনা সেদিন চলেই গিয়েছিলাম ওনার বাড়ি পর্যন্ত।ভদ্রলোকও আমাকে না করেনি।আমার আর কমপিউটার ক্লাসে যাওয়া হয়নি সেদিন।আসলে কমপিউটার সেন্টারে ভর্তি হয়েছিলাম।ভেবেছিলাম একটা চাকরি করব।তাই কমপিউটার শেখাটা জরুরি ছিল।বাড়িতে যেভাবে মায়ের থেকে কথা শুনছিলাম তাতে আর বাড়িতে থাকতে পারছিলাম না।সেদিন ওই ভদ্রলোকের বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি ওনার স্ত্রী তিন মাস আগে মারা গেছেন।হঠাৎ করেই জ্বর হয়।সেই অজানা জ্বরেই মারা যান।বাচ্চা দুটো সেই থেকেই মামার বাড়িতে ছিল।কিন্তু ওখানে ওদের বেশিদিন রাখতে চাইছে না বলেই নিয়ে চলে এসেছেন।বাড়িতে নিয়ে এসেও সেভাবে দেখার লোক নেই।কারণ ভদ্রলোকের বাবা মা অনেক কাল আগেই মারা গেছেন।পিসির কাছে উনি মানুষ।সবটা শুনে খারাপ লেগেছিল আমার।ওনার বাড়ি থেকে আমি যখন চলে আসছিলাম ছেলেটি কাঁদছিল খুব।মেয়েটি বলছিল,
"কাল আসবে তো আবার।"
তারপর থেকে আমি নিজেই ওদের সাথে জড়িয়ে যাই।একটা মায়া পড়ে যায়।কমপিউটার ক্লাসে না গিয়ে ওখানে চলে যেতাম রোজ।যদিও বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য উনি অবশ্য লোক রেখেছিলেন।ভদ্রলোকের ব্যবহার আমাকে ভীষণ ভাবে মুগ্ধ করত।আমি যখন যেতাম তখন উনি থাকতেন না।যেহেতু ব্যাঙ্কে জব করতেন তাই সকালের দিকে বেরিয়ে যেতেন।ওনার সাথে ফোনে কথা বলতাম।আস্তে আস্তে ওনাকেও ভালোবেসে ফেললাম।অবশ্য তার আগে আমার অতীতটা জানিয়ে দিয়েছিলাম।
তারপর আর কি!সাত বছর কেটে গেছে।মৌমণি আর ময়ূখ আমার দুই সন্তান।আমার হ্যাজব্যাণ্ড বলে,নিজে কিছু একটা করো।প্রতিটা মেয়ের সাবলম্বী হওয়া দরকার।বিউটিশিয়ান কোর্স করে নিজের একটা বিউটি পার্লার খুলেছি।ভালো লাগে এই ভেবে যে একজন ভালো মানুষকে পাশে পেয়েছি।নিজের মতো করে বাঁচতে পেরেছি।
-:সমাপ্ত:-
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
"বুড়োর চিঠি বুড়িকে  **************************                  
( কবিতা হলেও বাস্তবে কিছুটা সত্যি )


Dear বুড়ি,কেমন আছো?
বড় ছেলের কাছে?
হিংসুটে ঐ,বৌমাটি কি
তোমার পাশেই আছে?

নাতি,নাতনি কেমন আছে?
ওরা কি সব কলেজে ?
এতদিনে ওরাও হয়তো
আমায় গেছে ভুলে।

সে যাক ভুলে,এবার তুমি
তোমার কথা বলো।
তোমার হাঁটুর,ব্যথাটা কি
এখন একটু ভালো?

আসার সময়,তোমার প্রেশার
ছিল অনেক বেশি।
উপরে প্রায়,দুশো ছিলো
নিচে ছিল আশি।

এখনও কি তোমার প্রেশার
একই রকম আছে?
থাকলে পরে,ওষুধ চাইবে
বড় খোকার কাছে।

sugar টাওতো,বেশি তোমার
মিষ্টিটা কম খেও।
মাঝে মাঝে,sugar টাকে
check করিয়ে নিও।

এসেছিলাম,দেখে তোমার
heartএ blockage আছে।
দেখিয়েছে, ওরা তোমায়,
specialist এর কাছে?

ছোটো খোকার,কাছে আছি
ভীষণ কষ্টে আমি।
বৌমার কাছে, আমার থেকেও
কুকুরটা তার দামি।

সকাল থেকেই,বাজারঘাট আর
যত ঘরের কাজ।
বউমা আমায়,করিয়ে নিয়ে
দেখায় আবার ঝাঁঝ।

আমারও তো,শরীরটা আর
সুস্থ মোটেও নেই।
হাত পা গুলো,কাঁপতে থাকে
উঠে দাঁড়ায় যেই।

কি আর করবো,এটাই হয়তো
বুড়ো হওয়ার জ্বালা।
হওয়ার ছিল,ভাগের মা আর
ভাগের বাবার পালা।
পারলে তুমি ভালো থেকো
একটু আধটু ঘুরো।
চিন্তা কোরোনা আমার জন্য
     ইতি ""তোমার "বুড়ো""
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
(09-11-2021, 08:14 PM)dada_of_india Wrote: "বুড়োর চিঠি বুড়িকে  **************************                  
( কবিতা হলেও বাস্তবে কিছুটা সত্যি )

Dear বুড়ি,কেমন আছো?
বড় ছেলের কাছে?
হিংসুটে ঐ,বৌমাটি কি
তোমার পাশেই আছে?

নাতি,নাতনি কেমন আছে?
ওরা কি সব কলেজে ?
এতদিনে ওরাও হয়তো
আমায় গেছে ভুলে।

সে যাক ভুলে,এবার তুমি
তোমার কথা বলো।
তোমার হাঁটুর,ব্যথাটা কি
এখন একটু ভালো?

আসার সময়,তোমার প্রেশার
ছিল অনেক বেশি।
উপরে প্রায়,দুশো ছিলো
নিচে ছিল আশি।

এখনও কি তোমার প্রেশার
একই রকম আছে?
থাকলে পরে,ওষুধ চাইবে
বড় খোকার কাছে।

sugar টাওতো,বেশি তোমার
মিষ্টিটা কম খেও।
মাঝে মাঝে,sugar টাকে
check করিয়ে নিও।

এসেছিলাম,দেখে তোমার
heartএ blockage আছে।
দেখিয়েছে, ওরা তোমায়,
specialist এর কাছে?

ছোটো খোকার,কাছে আছি
ভীষণ কষ্টে আমি।
বৌমার কাছে, আমার থেকেও
কুকুরটা তার দামি।

সকাল থেকেই,বাজারঘাট আর
যত ঘরের কাজ।
বউমা আমায়,করিয়ে নিয়ে
দেখায় আবার ঝাঁঝ।

আমারও তো,শরীরটা আর
সুস্থ মোটেও নেই।
হাত পা গুলো,কাঁপতে থাকে
উঠে দাঁড়ায় যেই।

কি আর করবো,এটাই হয়তো
বুড়ো হওয়ার জ্বালা।
হওয়ার ছিল,ভাগের মা আর
ভাগের বাবার পালা।
পারলে তুমি ভালো থেকো
একটু আধটু ঘুরো।
চিন্তা কোরোনা আমার জন্য

     ইতি ""তোমার "বুড়ো""

কবিতাটা একটা বিখ্যাত সিনেমাকে মনে করিয়ে দিল.... Baghban.... হেমা মালিনী, অমিতাভ বচ্চন আর কেকের উপর চেরির মতো সাল্লু ভাই.... অসাধারণ সিনেমাটা.... এই কবিতাটা তে যে দুঃখ আর বিচ্ছেদের কষ্ট সেটা ওই বুড়ো বুড়ির অভিনয়ে অমিতাভ বচ্চন আর হেমা মালিনী খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিল  Heart

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
(09-11-2021, 08:35 PM)Bichitravirya Wrote: কবিতাটা একটা বিখ্যাত সিনেমাকে মনে করিয়ে দিল.... Baghban.... হেমা মালিনী, অমিতাভ বচ্চন আর কেকের উপর চেরির মতো সাল্লু ভাই.... অসাধারণ সিনেমাটা.... এই কবিতাটা তে যে দুঃখ আর বিচ্ছেদের কষ্ট সেটা ওই বুড়ো বুড়ির অভিনয়ে অমিতাভ বচ্চন আর হেমা মালিনী খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিল  Heart

❤❤❤

হ্যা.... সত্যিই অসাধারণ একটা সিনেমা. কে যে সত্যিই আপন আর কে যে পর বোঝা বড়ো মুশকিল. আর ওই গানটা - main yahan tu wahan.. Zindagi hai kahan? উফ কি গান. সবকটা গানই দারুন ছিল. Bagon ke har phool ko apna samjhey baghban ওটাও দারুন. যাইহোক..... দাদার এই কবিতাও ততটাই অসাধারণ হয়েছে. ❤❤❤
Like Reply
(09-11-2021, 08:35 PM)Bichitravirya Wrote: কবিতাটা একটা বিখ্যাত সিনেমাকে মনে করিয়ে দিল.... Baghban.... হেমা মালিনী, অমিতাভ বচ্চন আর কেকের উপর চেরির মতো সাল্লু ভাই.... অসাধারণ সিনেমাটা.... এই কবিতাটা তে যে দুঃখ আর বিচ্ছেদের কষ্ট সেটা ওই বুড়ো বুড়ির অভিনয়ে অমিতাভ বচ্চন আর হেমা মালিনী খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিল  Heart

❤❤❤

(09-11-2021, 08:41 PM)Baban Wrote: হ্যা.... সত্যিই অসাধারণ একটা সিনেমা. কে যে সত্যিই আপন আর কে যে পর বোঝা বড়ো মুশকিল. আর ওই গানটা - main yahan tu wahan.. Zindagi hai kahan? উফ কি গান. সবকটা গানই দারুন ছিল. Bagon ke har phool ko apna samjhey baghban ওটাও দারুন. যাইহোক..... দাদার এই কবিতাও ততটাই অসাধারণ হয়েছে. ❤❤❤
ভালো লেগেছে জেনে আপ্লুত হলাম ! লেখা প্রায় ছেরে দিয়েছি ! তবুও মনের খেয়ালে কিছু কিছু লিখে ফেলি !
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
(09-11-2021, 08:46 PM)dada_of_india Wrote: ভালো লেগেছে জেনে আপ্লুত হলাম ! লেখা প্রায় ছেরে দিয়েছি ! তবুও মনের খেয়ালে কিছু কিছু লিখে ফেলি !

আপনি তো অনেকদিন আমার ওই নন- ইরোটিক থ্রেড কিছু কথা ছিল মনে -তে আসেন না.... আমিও কয়েকটি গপ্পো আর ছড়া লেখার চেষ্টা করেছি এর মধ্যে. পারলে সেগুলি পড়ে দেখতে পারেন. আশা করি ভালোলাগবে.. যেমন আগের গুলো লেগেছে ❤
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply




Users browsing this thread: 2 Guest(s)