Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
সে বছরের জন্মদিনটা কোনদিন ভুলতে পারবে না ট্রেসি। তখন তার বয়স দশ। বাবা এসে জানালো, ‘আজ আমরা সবাই অ্যান্টনিতে ডিনার করতে যাচ্ছি।’
অ্যান্টনি! উফ! নামটার সাথে একটা অদ্ভুত মাদকতা জড়িয়ে আছে। একটা জগত... একটা সম্পূর্ণ আলাদা জগত... অনেকটা ফেয়ারি ল্যান্ডের মত... যে জগতটা ঘিরে রয়েছে সৌন্দর্য, গ্ল্যামার, সম্পদের ঝলক। ওইটুকু বয়সেই ট্রেসি জানতো যে বাবার আর্থিক সামর্থ খুবই সীমিত। তাও পরের বছর বাইরে বেড়াতে যাওয়া হবে, সেটা নিয়ে বাড়ির মধ্যে সর্বদাই একটা আলোচনা চলে। এর ওপর এই ভাবে হটাৎ করে অ্যান্টনি! ট্রেসি তো আনন্দে আত্মহারা। ট্রেসির মা ওকে একটা খুব সুন্দর সবুজ রঙের ড্রেস পরিয়ে দিয়েছিল।
যাবার সময় তাকে আর মাকে দেখে বাবা তো খুশিতে বলেই ফেলল, ‘ওহ। আজ আমি নিউ অর্লিন্সের সব থেকে সুন্দরী দুইজন মহিলার সাথে অ্যান্টনি যাচ্ছি। আজ আমাকে দেখে প্রত্যেকে হিংসায় জ্বলে যাবে।’ বলে হা হা করে মুক্ত কন্ঠে হেসে উঠেছিল।
অ্যান্টনি, ট্রেসির কাছে যেন একটা স্বপ্ন। শুধু স্বপ্নই নয়, আরো, আরো অনেক কিছু। ওখানকার সব কিছুই ভিষন, ভিষন সুন্দর। যেমন ডেকরেশন, তেমনি পরিবেশ। সমস্ত কিছু কি অপূর্বভাবে সাজানো। কেতাদূরস্ত। শুদু তাই নয়, খাবার টেবিলের ন্যাপকিনগুলো পর্যন্ত ধব ধব করছে সাদা, পরিষ্কার। ডিশ, চামচ, সব কটাতেই সুন্দর করে মনোগ্রাম করা। এটা যেন একটা রাজপ্রাসাদ ট্রেসির কাছে। এখানে নিশ্চয়ই রাজা রানিরা খেতে আসে। আর সেখানে ট্রেসিও এসেছে খেতে। ভাবতেই গায়ে কেমন কাঁটা দিচ্ছে। চারদিকে সুন্দর সুন্দর পোষাক পরে লোকেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। ট্রেসি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, ‘আমি যখন অনেক বড় হব, তখন প্রতি রাতে অ্যান্টনিতে আসবো ডিনার করতে। আর আমার সাথে তখন মা আর বাবাকেও নিয়ে আসব।’
‘তুমি খাচ্ছ না, ট্রেসি’, মা মৃধু স্বরে বকা দিল। ‘শুদু অন্য দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে? খেতেও হবে তো?’
মাকে খুশি করতে তাড়াতাড়ি করে ঝটপট কয়েক চামচ খাবার নিয়ে মুখে পুরে দিল ট্রেসি।
ডিনারের শেষে একটা কেক এসেছিল। সেই কেকটার ওপর দশটা মোমবাতি ছিল। টেবিল ঘিরে ওয়েটাররা দাঁড়িয়ে হ্যাপি বার্থডে গান গেয়েছিল। আর তাই শুনে ওখানে অন্য যারা খেতে এসেছিল, তারাও ঘুরে বসে তার দিকে তাকিয়ে হ্যাপি বার্থডে গেয়েছিল আর হাততালি দিয়েছিল। ট্রেসির তো নিজেকে রাজকন্যা বলে মনে হচ্ছিল সেদিন। বাইরে থেকে ঘন্টার আওয়াজ ট্রেসির কানে ভেসে এল।
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
ঘন্টার বিকট আওয়াজে ধড়মড় করে উঠে বসল ট্রেসি। পাশ থেকে আর্নেস্টাইন বলে উঠল, ‘খাবার সময় হয়ে গেছে!’
ট্রেসির কানে এল সেলের দরজাগুলো একের পর এক খুলে যাবার ধাতব আওয়াজ। ট্রেসি চুপচাপ শুয়ে রইল বিছানায়। তাকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে লোলা বলল, ‘কি হল সখি, খেতে চলো...’
খাবারের কথা শুনেই যেন আরো অসুস্থ বোধ করতে লাগল। বলল, ‘আমার খিদে পায়নি।’
মুটকি পাউলিটা তা শুনে ফ্যাক করে হেসে উঠল। ‘হে হে, খিদে নেই তো কি হয়েছে, ওরা তোর খিদে আছে কি না তার ধার ধারে না। যেতে হবে মানে যেতে হবে। ঘন্টা যখন বেজেছে, তখন সবাইকে মেসে গিয়ে হাজির হতে হবে।’
নজরে পড়ল সামনের করিডর দিয়ে অন্যান্য কয়েদিরা লাইন করে চলেছে।
‘ভালোয় ভালোয় উঠে পড়ে চল, নয়তো ওরা এসে তুলে নিয়ে যাবে...’ আর্নেস্টাইন সাবধান করল। ট্রেসি মনে মনে বলল, ‘আমি যাচ্ছি না, আমার এখন নড়তেও ভালো লাগছে না।’
তার সেলের সাথীরা ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে বাইরে লাইনে গিয়ে দাঁড়ালো। একটা বেঁটে মোটা মেট্রন এসে দেখে ট্রেসি তখনও বাঙ্কে শুয়ে। বাইরে থেকে খেঁকিয়ে উঠল, ‘এই... বেল বেজেছে, শুনতে পাসনি? চল্... বাইরে বেরো...’
ট্রেসি নিচু স্বরে বলে উঠল, ‘আমার খিদে পায়নি, আমি যাচ্ছি না।’
শুনে মেট্রনের চোখ অবিশ্বাসে বড়বড় হয়ে উঠল। দুড়দাড় করে সেলের মধ্যে ঢুকে ট্রেসির কাছে গিয়ে চিৎকার করে উঠল, ‘ওরে মাগী, নিজেকে কি ভাবছিস? রুম সার্ভিসের জন্য অপেক্ষা করছিস নাকি? চল্, লাইনে দাঁড়া। এই প্রথমবার বলে ছেড়ে দিলাম, এরপর দ্বিতীয়বার এরকম বেয়াদপী করলে শালি অন্ধকার কুঠুরীতে পাঠিয়ে দেব, বুঝছিস... আগে বাড়...’
না, বোঝে নি। বুঝতে চাইছে না আর এই যে ভাবে যা কিছু ঘটে চলেছে তার সাথে। অনেক কষ্টে নিজেকে টেনে তুলল বিছানা থেকে। তারপর আস্তে আস্তে সেলের বাইরে গিয়ে লাইনে কালো মেয়েটার পেছনেই দাঁড়ালো। “না চাইলেও কেন আমাকে...’ ‘চুপ!’ হিসিয়ে উঠল আর্নেস্টাইন, ‘লাইনে কথা বলার কোন নিয়ম নেই।’
সবাই মিলে লাইন করে দু-দুখানা সিকিউরিটির দরজা পেরিয়ে ওরা একটা বিশাল ঘরের মধ্যে এসে পৌছালো। ঘরটাতে সারি সারি কাঠের টেবিল আর বেঞ্চ পাতা। আর একদিকে একটা কাউন্টার টেবিল রয়েছে। সেখানে দুইজন কয়েদি দাঁড়িয়ে লাইনে থাকা বাকিদের খাবার পরিবেশন করে চলেছে। খাবার বলতে একটা টলটলে খিচুরী, সাথে একটা ল্যাবড়া, সেই সঙ্গে একটু দই আর হয় কফি নয়তো সিন্থেটিক ফলের জুস। একজনের পর আর একজন সেই কাউন্টারের সামনে দাঁড়াচ্ছে, আর তাকে বড় হাতা থেকে এক এক খাবলা তুলে টিনের থালায় ঢেলে দেওয়া হচ্ছে সেই খিচুরী। তারপর হাঁক পাড়ছে, ‘হয়ে গেছে, সরে যা, পরের জন এগিয়ে আয়...’
নিজের খাবারটা নিয়ে কোথায় যাবে ঠিক করতে পারছিলনা ট্রেসি। এদিক ওদিক তাকিয়ে সেই আর্নেস্টাইনকে খুজল সে। কিন্তু কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেছে মেয়েটা। তারপর নজর পড়ল লোলা আর পাউলিটার ওপর। ওদের দেখে সে ওখানে গিয়ে বসল ওদের পাশে। ওই টেবিলটাতে প্রায় জনা কুড়ি মেয়ে একসাথে বসে খাচ্ছে। খাচ্চে বলা ভুল, জন্তুর মত খাবারগুলো মুখের মধ্যে চালান করছে যেন। ট্রেসি নিজের প্লেটের দিকে তাকাতেই খাবার দেখে গাটা গুলিয়ে উঠল। ঠেলে পাশে সরিয়ে দিল খাবারের ডিসটাকে।
সাথে সাথে পাউলিটা ঝট করে ট্রেসির খাবারের ডিসটা তুলে নিয়ে নিমেশে সাফ করে দিল। ওকে কিছু বলারই দরকার পড়ল না।
লোলা বলে উঠল, ‘এই, তুই খাচ্চিস না কেন? না খেলে বাঁচবি কি করে?’
ট্রেসি মনে মনে হতাশ ভাবে বলল, ‘বাঁচতে চাইনা তো আর আমি! মরে যেতে চাই। এই মেয়েগুলো কি করে সহ্য করছে এখানে? কতদিন আছে এরা এখানে? মাস? বছর? তারপরই ওর মনে পড়ে গেল ওর সেলের বিছানার দৃশ্যটা। মনে পড়তেই ওর ইচ্ছা হল ওখানেই ডাক ছেড়ে কেঁদে ওঠে। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রাখল ট্রেসি। পাউলিটা বলল, ‘তুই খাচ্ছিস না দেখলে ওরা কিন্তু তোকে অন্ধ কুঠুরীতে পাঠিয়ে দেবে...’ ওর চোখ মুখ দেখে বুঝতে পারল ট্রেসি ব্যাপারটা ঠিক ধরতে পারে নি। তাই আবার বলল, ‘ওটা একটা ভিষন ছোট্ট একটা ঘর... প্রায় গর্ত বলা চলে। তোর একটুও ভালো লাগবে না ওখানে থাকতে...’ তারপর একটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বলল, ‘তোর এখানে প্রথম, তাই তো? একটা উপদেশ দিই। এখানে পুরো ব্যাপারটা আর্নেস্টাইনের কথায় চলে। ওর সাথে ভালো হয়ে লেগে থাক, দেখবি তোর কোন কষ্ট থাকবে না।’
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
ঘড়ি ধরে ঠিক তিরিশ মিনিট, যখন থেকে মেয়েরা খাবার ঘরে এসেছে, ঘন্টা বেজে উঠল আবার। খাবার সময় শেষ। যে যার সেলে ফিরে যেতে হবে। প্রত্যেকে ঘন্টার আওয়াজে টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। পাউলিটা পাশের একজনের কাছ থেকে প্লেটে পড়ে থাকা খানিকটা সবজির ল্যাবড়া প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে গলার্ধরন করে নিল ওই টুকু সময়ের সুযোগে। যা পাওয়া যায় আরকি। মেট্রনের তত্বাবধানে আবার প্রত্যেকে লাইন করে দাঁড়াল। খাবার সময় শেষ। যে যার সেলে ফেরার পালা। ঠিক যে ভাবে এসেছিলে, সেই ভাবেই লাইন করে ফিরে যেতে থাকল নির্দিষ্ট সেলে। এখন চারটে বাজে। এখন থেকে ঠিক পাঁচ ঘন্টা পর সমস্ত আলো নিভে যাবে কারাগারের সেলগুলির।
ট্রেসি সেলে ফিরে আশ্চর্য হয়ে গেল আর্নেস্টাইনকে দেখে। ওদের ফেরার আগেই কখন সে ফিরে এসেছে তাদের সেলে। অদ্ভুত! খাবার সময়টাতে তো একে চোখেই পড়ে নি? ছিল কোথায় ওই সময়টাতে? সেলের কোনে টয়লেটটার দিকে তাকালো। খুব প্রয়োজন এই মুহুর্তে টয়লেটটা ব্যবহার করার। কিন্তু এই আলোর মধ্যে সকলের সামনে সেটা ব্যবহার করতে সঙ্কচে বাধল। না। থাক। এখন নয়। আলো নিভে গেলে না হয় তখন একবার চেষ্টা করা যাবে’খন। চুপ চাপ গিয়ে নিজের নির্দিষ্ট বাঙ্কের কোনে বসল।
‘রাতের খাবার খাওয়া হয় নি কেন? খুব বোকামীর কাজ করেছিস,’ তার উদ্দেশ্যে আর্নেস্টাইন বলে উঠল।
আমি খাইনি, সেটা ও জানলো কি করে? আর আমার প্রতি এত দয়াই বা দেখাচ্ছে কেন? প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টে জিজ্ঞাসা করল, ‘ওয়ার্ডেনের সাথে কি ভাবে দেখা করা যাবে?’
‘একটা লিখিত অনুরোধ করতে পারিস, কিন্তু ওই কাগজটা গার্ডরা টয়লেট পেপার হিসাবে ব্যবহার করবে, সেটা বলতে পারি।’ ঝট করে নিজের জায়গা থেকে উঠে ট্রেসির কাছে সরে এল। এসে ট্রেসির ওপর প্রায় ঝুঁকে দাঁড়াল। ওর মুখের দিকে ট্রেসি চোখ তুলে তাকালো। আর্নেস্টাইন বলে উঠল, ‘একটা কথা বলি মন দিয়ে শোন, এখানে অনেক কিছু ঘটতে পারে যেটা তোকে বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তোর শুধু কি প্রয়োজন জানিস? একজন প্রকৃত বন্ধুর। যে তোকে কিনা সমস্ত আপদ বিপদ থেকে বাঁচাবে।’ বলেই দাঁত বের করে নিঃশব্দে হেসে উঠল। তার দাঁতের সামনের সারিতে একটা সোনার দাঁত চকচক করে উঠল আলো পড়ে। শান্ত গলায় বলতে থাকল, ‘এমন একজন যে কিনা এই চিড়িয়াখানার প্রতিটা রন্ধ্র চেনে, জানে, বুঝেছিস।’ ট্রেসির ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে হল যেন পুরো সিলিংটা জুড়ে ট্রেসির সামনে শুধুই ওর মুখটাই ভাসছে।
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
জীবনে প্রথম সে অত বড় লম্বা প্রানী দেখেছিল। কি জিজ্ঞাসা করতে বাবা উত্তর দিয়েছিল, ‘ওটাকে জিরাফ বলে।’
ওরা সেদিন ওডোবন পার্কের চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গিয়েছিল। প্রায় প্রতি রবিবারই বাবা, মা আর তাকে নিয়ে কোথাও না কোথাও ঘুরতে নিয়ে যেত। কখনো ব্যান্ড কন্সার্ট শুনতে, আবার কখনো অ্যাকোরিয়াম দেখাতে। আবার কখনও চিড়িয়াখানাও যেত ওরা। ধীর পায়ে প্রতিটা খাঁচার সামনে দিয়ে হেঁটে বেড়াতো, দেখত খাঁচার মধ্যে রাখা পশু পাখিদের।
‘আচ্ছা পাপা, ওদের এভাবে খাঁচার মধ্যে রাখাতে ওদের খারাপ লাগে না?’
বাবা ওর কথা শুনে হেসে উঠত। ‘না ট্রেসি। বরং ওরা চমৎকার আছে এখানে। ওদেরকে খাবার দেওয়া হচ্ছে, দেখা শোনা করা হচ্ছে। আর ওদের কোন শত্রুও ওদের কোন ক্ষতি করতে পারে না। বেশ দিব্বি আছে ওরা। খুব ভালো আছে।’
কিন্তু ট্রেসির মনে হত, না, ওরা খুব দুঃখি। তার ইচ্ছা করত খাঁচার দরজাগুলো খুলে দিতে। ছেড়ে দিতে ওদের বাইরে, খাঁচার বাইরে। ভাবত, ও নিজেও কোনদিন এই রকম খাঁচায় থাকবে না। খুব খারাপ এই ভাবে থাকাটা।
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
আটটা পয়তাল্লিশ, সারা কারাগার জুড়ে ওয়ার্নিং বেল বেজে উঠল। বেলের আওয়াজে ট্রেসির সেলের সঙ্গিরা উঠে পড়ে যে যার পোষাক ছাড়তে শুরু করে দিল। ট্রেসি চুপচাপ শুয়ে রইল সেই এক ভাবে।
‘এই মেয়ে, হাতে পনেরো মিনিট সময় আছে শোবার জন্য, চেঞ্জ করে নে’ লোলা বলে মেয়েটি ওকে বলে উঠল। বলত বলতে নিজের পোষাক ছেড়ে নাইটগাউনটা পড়তে শুরু করল। সেই সময় সেলের সামনে দিয়ে একজন মেট্রন পাস করছিল। ট্রেসিকে ওই ভাবে চুপচাপ শুয়ে থাকতে দেখে বাইরে থেকে হুকুমের সুরে বলে উঠল, ‘এই, পোষাক পালটালি না! তাড়াতাড়ি বদলে নে!’ তারপর আর্নেস্টাইনের দিকে ফিরে প্রশ্ন করল, ‘কি রে, ওকে বলে দিস নি?’ আর্নেস্টাইন মাথা হেলিয়ে বলল, ‘হ্যা, বলেছি তো।’
মেট্রন ট্রেসির দিকে ফিরে বলল, ‘কি রে, তোকে ও তো বলেছে বলছে, তাহলে শুয়ে আছিস কেন? এই শোন, বেশি ঝামেলা করার চেষ্টা করলে না, আমাদের নানান উপায় জানা আছে কি করে ঝামেলাবাজদের সামলাতে হয়, বুঝেছিস। এখানে যেটা বলা হবে সেটাই শুনবি, বেশি মাজাকি করলে মেরে গাঁড় ভেঙে দেব, খেয়াল থাকে যেন,’ বলে আর দাঁড়ালো না সে, হাঁটতে হাঁটতে চলে গেল সামনের দিকে।
পাউলিটা ট্রেসির উদ্দেশ্যে বলে উঠল, ‘এই মালটা যা বলছে শোন, বহুত খচরা এই মেট্রনটা। ওর নাম আয়রণ প্যান্ট। হেব্বি কড়া শালী...’
ট্রেসি আস্তে আস্তে নিজের বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। তারপর সেলে উপস্থিত বাকিদের থেকে পেছন ফিরে একটা একটা করে পোষাক ছেড়ে ফেলল, শুধু পরনের প্যান্টিটা আর খুলল না। পোষাক খুলতে খুলতে উপলব্ধি করল ঘরে উপস্থিত প্রত্যেকের দৃষ্টি তার শরীরটার ওপর ঘুরে বেড়াচ্ছে। চুপচাপ খড়খড়ে নাইটগাউনটা মাথা দিয়ে গলিয়ে পড়ে নিল সে। পাউলিটার মন্তব্য কানে এল, ‘আহ, হেব্বি ফিগার মাইরি তোর...’
লোলা যেন পাউলিটার কথার প্রতিধ্বনি করে বলে উঠল, ‘হ্যা, ঠিক বলেছিস, হেব্বি ফিগার।’ কথাগুলো কানে যেতে কেমন শিউরে উঠল ট্রেসি।
আর্নেস্টাইন ট্রেসির কাছে গিয়ে ওকে একবার আপদমস্তক ভালো করে দেখে নিয়ে বলে উঠল, ‘দেখ, আমরা সবাই এখানে বন্ধু। ভাবিস না, আমরা তোর খুব ভালো খেয়াল রাখবো।’ বলতে বলতে ওর গলার স্বর উত্তেজনায় কেমন যেন হিসহিসে হয়ে উঠল। ট্রেসি এক ঝটকায় ওর সামনে থেকে একটু দূরে সরে দাঁড়াল, কঠিন স্বরে বলল, ‘আমাকে একা থাকতে দাও! তোমরা আমাকে যা... যে রকম ভাবছ, আমি সেরকম নই!’
মুখ টিপে হেসে উঠে আর্নেস্টাইন বলল, ‘চিন্তা করিস না, হাতে অনেক সময় আছে। আমরা যেমন চাইবো, তুই সেই রকমই থাকবি, বুঝেছিস, সোনা?’
কথা শেষ হতে না হতেই ঝপ করে আলো নিভে গেল।
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
ট্রেসির অন্ধকারকে বরাবরই বড় ভয়। বাঙ্কের ধার ঘেসে শিরদাঁড়া টানটান করে চুপ করে বসে রইলো সে। কেন জানিনা, তার খালি মনে হচ্ছে যে কোন মুহুর্তে ঘরের মধ্যের বাসিন্দাদের যে কেউ অথবা সবাই এক সাথে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। নাকি এ তার ভ্রম মাত্র! হতে পারে সারা দিনের টেনশনে এই সব উল্টোপাল্টা ভাবছে সে। হয়তো এসব কিছুই হবে না। ও-ওরা কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছে? না, না। তা করে হয়। ওরা তো আমার সাথে বন্ধুর মতই ব্যবহার করছে। আর ও কিনা ওদের এই ধরনের ব্যবহার দেখে শুধু শুধু খারাপ ভাবছে ওদের সম্বন্ধে। হ্যা, এটা ঠিক যে জেলের মধ্যে সহকামীতা সম্বন্ধে অনেক গল্পই সে শুনেছে, কিন্তু সেটা যে সব সময়, সব জায়গায় হবে, তার কোন মানে নেই। জেল নিশ্চয় এই ধরনের নোংরামো প্রশ্রয় দেবে না।
তাও... তবুও তার মধ্যে থেকে একটা ভীতি যেন কিছুতেই যাচ্ছে না। সে ঠিক করল সে ঘুমাবে না। সারাটা রাত জেগেই কাটাবে। আর যদি কেউ কিছু করার চেষ্টা করে, সাথে সাথে সে চিৎকার করে সাহায্য চাইবে। কারন এটা তো গার্ডেদেরই দ্বায়ীত্ব কয়েদিদের কিছু হলে সেটা সামলানোর। সে নিজেকে বারংবার প্রবোধ দিতে থাকল নিশ্চিন্ত থাকার। শুধু তাকে একটু, একটু সতর্ক থাকতে হবে, ব্যস। অন্ধকারের মধ্যে ট্রেসি চুপচাপ নিজের বাঙ্কের ধার ঘেসে বসে রইল। ঘরের প্রতিটা শব্দ মন দিয়ে শুনতে লাগল সে। একে একে ঘরের বাসিন্দাদের প্রত্যেকে উঠে টয়লেটে গেল, ব্যবহার করে আবার নিজেদের নির্দিষ্ট বাঙ্কে ফিরে এল। তাকেও এবার টয়লেটটা ব্যবহার করতে হবে। আর পারা যাচ্ছে না। সন্তর্পনে উঠে আন্দাজে টয়লেটের কাছে এগিয়ে গেল। টয়লেট ব্যবহার করে ফ্ল্যাশ টানতে গিয়ে দেখে সেটা কাজ করছে না। ওই জায়গাটার দুর্গন্ধে টেঁকা দায়। তড়িঘড়ি ফিরে এল সে নিজের জায়গায়। কাল সকালে ওয়ার্ডেনকে বলতে হবে ফ্ল্যাশের ব্যাপারটা। আর শুধু তাই নয়, নিজের পেটের বাচ্ছাটার ব্যাপারটাও জানাতে হবে ওয়ার্ডেনকে। তিনি শুনলে নিশ্চয় একটা অন্য সেলে ব্যবস্থা করে দেবেন।
ট্রেসির সারা শরীরটা আরষ্ট হয়ে রয়েছে যেন। নিজের বিছানায় খানিক শুতেই তার যেন মনে হল কিছু গলার ওপর দিয়ে বেয়ে চলেছে। অনেক কষ্টে গলা দিয়ে উঠে আসা চিৎকারটাকে গিলে নিল। না। তাকে অন্তত সকাল অবধি এভাবেই সহ্য করতে হবে। মনে মনে সে ভাবল, সকাল হলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। ঠিক।
তিনটে বাজতে সে আর চোখের পাতা খুলে রাখতে পারল না। গভীর ঘুমের মধ্যে ঢলে পড়ল ধীরে ধীরে।
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
মুখের ওপর হাতের চাপে ঘুমটা ঝট করে ভেঙে গেল। সেই সাথে তার স্তনদুটো হাতের থাবায় বন্দি। ধড়মড় করে উঠে পড়ার চেষ্টা করল। চিৎকার করে ওঠার চেষ্টা করল। কিন্তু অনুভব করল শরীর থেকে তার নাইটগাউন আর প্যান্টিটা কেউ ছিঁড়ে দূরে ফেলে দিল। হাত, একটা নয়, একটার অধিক হাত তার থাইয়ের মাঝে... পাদুটোকে ধরে কেউ যেন দুধারে টেনে সরিয়ে দিল। ট্রেসি উন্মাদের মত এই অদেখা হাতগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করার চেষ্টা করতে লাগল, ছটফট করতে লাগল বিছানা থেকে উঠে বসার।
একটা গলা হিসিয়ে উঠল, ‘শান্ত হ... চুপ চাপ থাকার চেষ্টা কর... দেখবি তোর কোন আঘাত লাগবে না...’ গলা লক্ষ্য করে সজোরে পাটা চালিয়ে দিল... ‘ওফফফফ, বাপরে... ধর কুত্তিটাকে... ওটাকে মাটিতে নামা’ গলার স্বরটা কঁকিয়ে উঠে অন্যদের উদ্দেশ্যে বলে উঠল। আর সাথে সাথে সজোরে একটা ঘুষি এসে পড়ল ট্রেসির মুখের ওপর, তারপরই আর একটা ঘুসি ওর তলপেটে। কেউ একজন ওর ওপর চেপে বসে রয়েছে... আর হাতগুলো ওর সারা শরীরে অসভ্যের মত ঘুরে বেড়াচ্ছে।
এক লহমার জন্য ট্রেসি নিজেকে মুক্ত করতে পেরেছিল, কিন্তু পরক্ষনেই কেউ একজন ওর মাথাটা ধরে বাঙ্কের লোহার গ্রিলে সজোরে ঠুকে দিল। ট্রেসি অনুভব করল একটা রক্তের ধারা নাক দিয়ে বেয়ে বেরিয়ে এল। ওকে ধরে ছুড়ে ফেলে দিল নিচের কংক্রিটের মেঝের ওপর। ফেলে দিয়ে ওর চার হাত পা চেপে ধরল মাটির সাথে। ট্রেসি পাগলের মত নিজেকে ছাড়াবার জন্য হাত পা ছুড়তে লাগল, কিন্তু তিনজনের সাথে সে একা পেরে উঠবে কি করে? সে অনুভব করতে লাগল হাত, শুধু হাত নয়, ভেজা ভেজা জিভও ওর নগ্ন শরীরটাতে বার বার বুলিয়ে যাচ্ছে। জোর করে মেলে ধরে রাখা পায়ের মাঝ বরাবর সে অনুভব করল একটা শক্ত শীতল কোন বস্তু, জোর করে ঢুকে গেল ওর শরীরের গভীরে। অসহায় ভাবে সে চেষ্টা করল চিৎকার করে উঠতে, কিন্তু একটা হাত ওর মুখটা চেপে ধরল নিমেশে। ট্রেসি মুখের ওপর বসে থাকা হাতটাতে দিল একটা মরন কামড় বসিয়ে।
গুঙিয়ে উঠল কেউ, ‘শালী কুত্তি...’
তারপরই একটা সজোরে ঘুষি আছড়ে পড়ল ওর মুখের ওপর... নিদারুন যন্ত্রণা ওর সারা শরীরটাতে ছেয়ে যেতে লাগল... একটু পরে সে আর কিছু বোঝার অবস্থায় থাকল না।
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
হুস ফিরল সেলের বাইরে বাজতে থাকা বেলের আওয়াজে। ঠান্ডা সিমেন্টের মেঝেতে সে নগ্ন অবস্থায় শুয়ে। তার সেলের বাকি তিন সাথী যে যার বাঙ্কে বসে। আয়রণ প্যান্ট অলিন্দ দিয়ে যেতে যেতে প্রত্যেক সেলের দিকে তাকিয়ে হাঁক পাড়তে পাড়তে চলেছে, ‘উঠে পড়, উঠে পড়...’ ট্রেসিদের সেলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তার চোখ পড়ে ট্রেসির দিকে। মেঝেতে একরাশ চাপ চাপ রক্তের মধ্যে পড়ে রয়েছে ট্রেসি, তার মুখটাতে কালশিটে পড়ে গিয়েছে, একটা চোখ ফুলে কালো হয়ে রয়েছে।
তড়িঘড়ি সেলের দরজা খুলে ভেতরে এসে প্রশ্ন করে সে, ‘এই, এখানে এই সব কি হয়েছে?’
‘ওর বাঙ্ক থেকে পড়ে গেছে হয়তো...’ উত্তর দেয় আর্নেস্টাইন। মেট্রন এগিয়ে গিয়ে পা দিয়ে ট্রেসিকে ঠেলা মারে, ‘এই, ওঠ...’
ট্রেসির মনে হল বহু দূর থেকে কথা গুলো ভেসে আসছে। হ্যা, উঠতে হবে তাকে, উঠতেই হবে। এখান থেকে বেরিয়ে যেতে হবে। কিন্তু পারছে না সে। তার সারা শরীর যন্ত্রনায় যেন ছিড়ে যাচ্ছে।
মেট্রন একটু ঝুঁকে ট্রেসির বাহু ধরে টেনে বসিয়ে দিল। ট্রেসির মনে হচ্ছে যেন সে আবার ওখানেই অজ্ঞান হয়ে যাবে।
‘এই, কি হয়েছে তোর?’
ট্রেসি এক চোখ দিয়ে তাকালো সেলের বাকি সাথীদের দিকে। ওদের মুখগুল সব ঝাপসা দেখাচ্ছে। বুঝল যে ওরা প্রত্যেকেই ওর উত্তর শোনার অপেক্ষায়।
‘আমি... আমি...’ ট্রেসি চেষ্টা করল কিছু বলার। কিন্তু মুখ দিয়ে কোন কথা বেরুচ্ছে না তার। একটু দম নিয়ে অনেক কষ্টে বলে উঠল, ‘আমি বাঙ্ক থেকে পড়ে গিয়েছিলাম...’
শুনে মেট্রন খেঁকিয়ে উঠল, ‘আমি বেশি চালাকি একদম পছন্দ করি না। অন্ধকার কুঠুরীতে ভরে না দিলে শালী সত্যি কথা বলতে শিখবে না।’
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
গভীর আস্মরণে যেন ঢলে পড়েছে সে... ফিরে গিয়েছে জঠরের মধ্যে যেন। সে একা... নিঃসঙ্গ এই অন্ধকারে। কারাগারের মাটির নিচের একটা ছোট্ট অন্ধকার কুঠুরীতে তাকে রেখে যাওয়া হয়েছে। সেখানের ঠান্ডা সিমেন্টের মেঝেতে একটা পাতলা ছেড়া মাদুর ছাড়া আর কিচ্ছু নেই। ঘরের কোনে একটা গর্ত করা, টয়লেট করার জন্য। ট্রেসি ওই অন্ধকারের মধ্যে চুপচাপ শুয়ে বিড়বিড় করে বাবার শেখানো ছোটবেলাকার কবিতা আওড়াতে লাগল। উন্মাদ হতে তার আর কি বাকি আছে?
যে এখানে কি করে এল, বা এটা কোথায়, কিছুই জানে না সে। জানার প্রয়োজনই বা কোথায়? দরকার কি? শুধু যন্ত্রনা। অনুভব করছে সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রনা। আমি নিশ্চয় পড়ে গিয়েছিলাম আর তাতেই এত আঘাত লেগেছে আমার... মনে মনে নিজেকে বোঝায় সে। মা, মা শুধু পারে তার এই যন্ত্রনা লাঘব করে দিতে... গুঙিয়ে ওঠে সে... ‘মা... মা গো...’। কোন উত্তর নেই। কেউ সাড়া দেয় না। সব চুপ... নিস্তব্দ চতুর্দিক...। ধীরে ধীরে আবার ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে সে।
আটচল্লিশ ঘন্টা এক টানা সে ঘুমিয়ে রইল, তারপর ধীরে ধীরে তার সেই নিদারুণ যন্ত্রনা বদলে গেল ব্যথায় আর ব্যথা থেকে বেদনায়। চোখ খুলে তাকালো সে। সে অনুভব করল তার চারপাশে একটা অদ্ভুত অনস্তিত্ব যেন ঘিরে রয়েছে। নিকশ অন্ধকার ঘরটা। এতই অন্ধকার যে দেওয়াল পর্যন্ত দেখা যায় না। আস্তে আস্তে তার মনে পড়ে যেতে লাগল। হ্যা, তারা তাকে বয়ে নিয়ে গিয়েছিল ডাক্তাতের কাছে। ডাক্তার বলছিল, ‘... একটা পাঁজরার হাড় ভেঙেছে, আর সেই সাথে কবজিতেও একটা চিড় ধরেছে। ওগুলো ধরে টেপ দিয়ে টেনে বেঁধে দিলেই হবে। আর শরীরের যা কাঁটা ছেড়া, খুব খারাপ অবস্থা হলেও সে সবও আস্তে আস্তে সেরে যাবে। কিন্তু একটা ব্যাপার যেটা হয়েছে, ওর পেটের বাচ্ছাটাকে বাঁচানো গেল না...’
‘ওহ! আমার বাচ্ছা...!’ ডাক্তারের কথাটা মনে পড়তেই নিজের তলপেটে হাত রেখে গুঙিয়ে উঠল ট্রেসি। ‘ওরা... ওরা আমার বাচ্ছাটাকে খুন করল, মেরেই ফেলল...’ হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল। কাঁদতে থাকল নিজের বাচ্ছা হারানোর শোকে। কাঁদতে থাকল নিজের অবস্থার জন্য। কাঁদতে থাকল এই জঘন্য জগতটার জন্য।
ওই অন্ধকার ছোট্ট কুঠুরীতে সে হীমশীতল মেঝেয় পাতলা মাদুরের ওপর চুপ করে শুয়ে রইল। শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল সে। যত ভাবতে লাগল, তত তার অন্তরাত্মা তীব্র ঘৃণায় ভরে যেতে লাগল। এতটাই তীব্র সে ঘৃণা, যে আবেগে রীতিমত ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল ট্রেসি। সেই ঘৃণা তার মনে গভীরে জ্বলতে জ্বলতে যেন তার সমস্ত আবেগ অনুভূতিকে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিতে লাগল... পরিশেষে পড়ে রইল একটাই বোধশক্তি... প্রতিশোধ। সে প্রতিশোধ তার সেলের সতীর্থদের বিরুদ্ধে নয়, ওরা তো তারই মত অবস্থার শিকার মাত্র। এ প্রতিশোধ তাদের বিরুদ্ধে, যারা তার এই বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী, যারা তার জীবনটাকেই সম্পূর্ণ ধংস করে দিয়েছে।
জো রোম্যানো : তোমার মা আমাকে একবারও তো কই বলেন নি যে তাঁর এমন একটা ডাগর মেয়ে আছে...’
অ্যান্থনী ওরাসত্তি : ‘জো রোম্যানো যার হয়ে কাজ করে, তার নাম অ্যান্থনী ওরাসত্তি। আর এই নিউ অর্লিন্স শহরটা চালায় এই ওরাসত্তি...’
পেরী পোপ : ‘নিজেকে অপরাধী স্বীকার করে আদালতের সময় বাঁচিয়েছ...’
জজ হেনরী লরেন্স : ‘আগামী পনেরো বছরের জন্য আপনাকে নির্বাষীত করা হল লুইসিয়ানা মহিলা সংশোধানাগারে...’
হ্যা। এরাই আমার আসল শত্রু। আর সেই সাথে আছে চার্লস, যে একটা বারের জন্যও শোনার প্রয়োজন বোধ করল না তার কথা। ‘...তোমার যদি টাকার প্রয়োজন ছিল, আমাকে বলতে পারতে... এটা তো ঠিক যে আমি তোমাকে ততটা এখনও চিনি না... আমার কিছু করার নেই আর, তোমার সন্তান, তুমি যেটা ভালো বোঝ করতে পারো...’
এর দাম চোকাতে হবে, প্রত্যেককে। একে একে। কি করে তা এখনও জানে না সে। কিন্তু এটা জানে, এদের প্রত্যেকের ওপর প্রতিশোধ নেবে সে। ‘আগামীকাল... যদি আগামীকালটা আসে...’ ভাবল ট্রেসি।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
প্রথম পর্ব এখানেই শেষ
খুব আশ্চর্যের ব্যাপার যে এরকম একটা গল্পের এখানে পাঠকের সংখ্যা মুষ্টিমেয় এবং তারাও পড়ে চলে যায় শুধু ..
কোনো তাপ উত্তাপ , ভালো বা খারাপ লাগার ব্যাপারে কারো মুখে কোনো রা নেই ,
পরের পর্বগুলো বোরসেস দাদা আগে আর লেখেননি তবে রাজি করিয়েছিলাম খানিকটা কিছুদিন আগে , কিন্তু অবশেষে বারণ করে দিতে বাধ্য হলাম ...
Posts: 3,682
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
(19-10-2021, 11:48 AM)ddey333 Wrote: প্রথম পর্ব এখানেই শেষ
খুব আশ্চর্যের ব্যাপার যে এরকম একটা গল্পের এখানে পাঠকের সংখ্যা মুষ্টিমেয় এবং তারাও পড়ে চলে যায় শুধু ..
কোনো তাপ উত্তাপ , ভালো বা খারাপ লাগার ব্যাপারে কারো মুখে কোনো রা নেই ,
পরের পর্বগুলো বোরসেস দাদা আগে আর লেখেননি তবে রাজি করিয়েছিলাম খানিকটা কিছুদিন আগে , কিন্তু অবশেষে বারণ করে দিতে বাধ্য হলাম ...
অবশেষে প্রথম পর্ব শেষ হলো।
কটা পর্ব আছে এই গল্পের ?
❤❤❤
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(19-10-2021, 11:55 AM)Bichitravirya Wrote: অবশেষে প্রথম পর্ব শেষ হলো।
কটা পর্ব আছে এই গল্পের ?
❤❤❤
মনে নেই এখন
If Tomorrow Comes পড়েছিলাম বহু বছর আগে ...
•
Posts: 28
Threads: 0
Likes Received: 25 in 16 posts
Likes Given: 33
Joined: Nov 2022
Reputation:
2
লেখক দার কাছে জানতে চাই, এই গল্পটা আর লিখবে কিনা
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(22-02-2023, 02:09 PM)Nazmun Wrote: লেখক দার কাছে জানতে চাই, এই গল্পটা আর লিখবে কিনা
আপাতত সেরকম কোনো সম্ভাবনা নেই।
•
|