Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
22-07-2021, 04:46 PM
(This post was last modified: 26-07-2021, 11:35 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
মুখবন্ধ
আমার এবারের গল্প সনামধন্য প্রখ্যাত রহস্য লেখক সিডনী শেলডনএর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ।
এই অ্যামেরিকান লেখককে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ রোমাঞ্চকর গল্পের লেখক হিসাবে মানা হয়। ইনি প্রায় ২০০টি টেলিভিশন স্ক্রিপ্ট, পঁচিশটি মোশন পিকচার, ছয়টি বড় নাটক ও আঠারোটি উপন্যাস লিখেছেন যেটার প্রায় ৩০০ মিলিয়ন কপি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছে। এই লেখকের অন্য অনেক লেখা গল্পের মধ্যে If Tommorrow Comes একটি বিশেষ পাঠক মহলে জায়গা করে নিয়েছে। বিশ্বে প্রায় সকল ভাষায় এনার গল্প অনুবাদীত। আমি অনেক চেষ্টা করেও এই গল্পটির কোন বাংলা অনুবাদ internetএ পাই নি। হয়তো এই সাইটের অনেক পাঠকই এনার এই গল্প পড়ে থাকবেন। আবার হয়তো অনেকেই পড়েন নি। গল্পটি আমার সংগ্রহশালায় বিশেষ জায়গা করে রেখেছে। আমার অনেক দিনের ইচ্ছা, এরকম একটা গল্পের রসাস্বাদন শুধু একা না ভোগ করে এই সাইটের পাঠকদের সাথে ভাগ করে নেবার। এটা বলা যেতে পারে একটা দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা আমার। জানিনা এই অনুবাদ কতটা সফল হবে পাঠকদের মনরঞ্জন করতে। আশা রাখব পাঠকরা আমার পাশে থেকে এই প্রচেষ্টাকে উদ্ভুধ্য করবে। এই গল্পের স্থান, কাল, পাত্র, তাদের নাম, চরিত্র সম্পূর্ণ রূপে অপরিবর্তিত রেখেছি। কারণ এর সামান্যতম বিচ্যুতিও গল্পের স্বাদ সম্পূর্ন রূপে নষ্ট করে দিতে পারে।
আমার হাজার কাজের মাঝে খুব ধীর গতিতে এর আপডেট দেব। কারণ হয়তো পাঠকরা বলবে যে এটা তো সামান্য অনুবাদিত গল্প। কিন্তু এই গল্পটা এমনই, তাড়াহুড়ো করে লিখলে এর প্রকৃত নির্যাশই হয়তো হারিয়ে যাবে। তাই সপ্তাহে মোটামুটি বার তিনেক এই গল্পের আপডেট পোস্ট করার চেষ্টা করব।
আশা রাখি, প্রতিবারে ন্যায়, এবারেও প্রিয় পাঠকেরা সাথে থাকবে।
ধন্যবাদান্তে...
BOURSES_BRAQUE
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
22-07-2021, 04:59 PM
(This post was last modified: 26-07-2021, 11:36 AM by ddey333. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
প্রথম ভাগ
পরিচ্ছদ ১
নিউ অর্লিন্স
বৃহস্পতিবার, ২০শে ফেব্রুয়ারি, রাত ১১টা
...কড় কড় কড়াৎ...
একটা প্রচন্ড আলোর ঝলকানি দিয়েই বিভৎস শব্দে কাছেই কোথাও বাজটা পড়ল। অন্য সময় হলে মিসেস হুইটনি তাড়াতাড়ি করে জানলাগুলো বন্ধ করতেন, বৃষ্টির ছাঁটে সব ভিজে যায় যে বড্ডো। কিন্তু আজ সে তাড়া নেই তাঁর মধ্যে। বাইরে যে প্রচন্ডতায় তুফান বইছে, তার থেকেও অনেক, অনেক বেশি জোরে তুফান বইছে তাঁর মনের মধ্যে... তাঁর কানে হয়তো ওই দিকবিদির্ণ করা বাজের শব্দটাই পৌছায় নি। খুব ধীরে ধীরে একটা একটা করে শরীর থেকে পোষাকগুলি খুলে ফেলতে লাগলেন মিসেস হুইটনি, ডোরিস হুইটনি। সমস্ত কটা পোষাক খোলা হয়ে গেলে সেগুলোকে সযন্তে পাট করে খাটের একটা পাশে রেখে দিয়ে হাতে ঘন লাল রঙের নাইটিটা তুলে নিলেন। ঘন লাল... এই রঙের পোশাকে রক্তের রঙ বোঝা যায় কম...
ভালো করে ঘরের মধ্যেটা একবার দেখে নিলেন মিসেস হুইটনি... তিরিশটা বছর... আজ তিরিশটা বছর এই ঘরের মধ্যে কাটিয়ে দিয়েছেন... ঘরের প্রতিটা আসবাব তার চেনা... অতি পরিচিত... তিল তিল করে শুধু এই ঘরটাকেই শুধু নয়, পুরো বাড়িটাকেই তো সাজিয়ে তুলেছেন নিজের মত করেই... আজও প্রতিদিনকার মতই সেই একই ভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখেছেন ঘরটাকে... এতটুকুও অগোছালো কিছু নেই। যেখানে যেটা থাকার ঠিক সেখানেই সেটা রয়েছে। ‘হু!’ একটা বড় দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এল বুকের মধ্যে থেকে।
খুব ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে বিছানার পাশের টেবিলের ড্রয়ারটা টেনে তার ভেতর থেকে পিস্তলটা বের করলেন। পিস্তলের গাটা চকচক করছে ঘরের বৈদ্যুতিক আলোতে। কালো, কৃষ্ণ কালো রঙের পিস্তলটা, গাটা নিটোল পালিশে তেলতেলে, হীম শীতল। পিস্তলটাকে হাতে নিয়ে খানিক দেখে সেটা টেলিফোনের পাশে রাখলেন। রিসিভারটা তুলে নিয়ে ডায়াল ঘোরাতে লাগলেন মেয়ের নাম্বারে, ফিলাডেলফিয়ায়। ওপাশে রিং হচ্ছে... দূরের রিং... বেশ একটানা... একটু থেমে... আবার একটানা। কয়একবার রিং হবার পর কানে এল অস্ফুট স্বরে – ‘হ্যালো!’
- ‘ট্রেসি?’
- ‘আরে! মা? তুমি! এই সময়?’
- ‘না, এমনি। হটাৎ তোর গলাটা শুনতে ইচ্ছা করল সোনা। ঘুমিয়ে পড়েছিলিস?’
- ‘এ বাবা, না, না। এখনো ঘুমায় নি। একটা বই পড়ছিলাম শুয়ে শুয়ে। এই সবে ভাবছিলাম এবার ঘুমাতে যাবো। ও, জানো তো মা, আজকে না চার্লসএর সাথে ডিনারে বেরুবার কথা ছিল, কিন্তু এতো বাজে ওয়েদার এখানে না, যে বেরুনোই হলো না। সেই দুপুর থেকে সমানে বরফ পড়ছে। কি করে বেরুবো বলো? তোমাদের ওখানকার কি খবর? ওখানকার ওয়েদারও কি খারাপ?’
হা ভগবান, এই মুহুর্তে তাঁর মেয়ের সাথে অনেক, অনেক প্রয়োজনীয় কথা বলার ছিল, কিন্ত সেটা না করে তাঁরা ওয়েদার নিয়ে আলোচনা করছেন। অনেক কিছুই বলতে চান তাঁর মেয়েকে কিন্তু কিচ্ছু বলতে পারছেন না।
- ‘মা, শুনতে পাচ্ছ? লাইনে আছো?’
জানলার বাইরে তাকালেন মিসেস হুইটনি। বাইরে অঝোরে বৃষ্টি নেমেছে। মনে হচ্ছে যেন আজ পৃথিবী ভাসিয়ে দেবে... সব কিছু ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে এই ধরাধাম থেকে... ‘এখানে... এখানে খুব বৃষ্টি হচ্ছে।’ কি অদ্ভুত নাটকীয় ভাবে যেন আজ সমস্ত কিছু ঘটছে, ভাবলেন মিসেস হুইটনি। যেন হিচককের সিনেমার দৃশ্য।
- ‘ওটা কিসের শব্দ মা?’
বজ্রপাতের। রেডিওতে বলছিল নিউ অর্লিন্সে আজ প্রচন্দ বজ্রবিদ্যুত সহ বৃষ্টির সম্ভবনা আছে। বাড়ির বাইরে বেরুলে ছাতা ব্যবহার করতে না ভোলে... ছাতা... ছাতা আর কোনদিনই প্রয়োজন হবে না মিসেস হুইটনির...
- ‘ওটা বাজ পড়ার শব্দ সোনা।’ গলায় জোর করে প্রফুল্লতা এনে বললেন মিসেস হুইটনি, ‘তা তোদের ওখানকার কি খবর বল।’
- ‘ওহ মা, আর বোলো না। নিজেকে একেবারে প্রিন্সেস মনে হচ্ছে গো। একেবারে প্রিন্সেস!’ খুশিতে ডগমগ হয়ে উঠল ট্রেসির গলার স্বর। ‘আমার মত এত খুশি কেউ হতে পারেনি কখনও। তুমি জানো, কাল সন্ধ্যেবেলায় চার্লসএর বাবা মার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। উফফফফ। কি যে মনের মধ্যেটা করছে কি বলবো তোমায়। তুমি শুধু ভাবো, দ্য স্ট্যানহোপ্স অফ চেস্টনাট হিলস, উফফফফ। ভাবা যায়? একটা সাম্রাজ্য, বুঝলে। ওরা নিজেরাই একটা প্রতিষ্ঠান... আমার তো কি বোলবো মা, ভাবলেই মনে হচ্ছে পেটের মধ্যে যেন হাজারটা ডায়নোসরসের সাইজের প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে। কি যে হবে কালকে, কে জানে!’
‘ভাবিস না সোনা, সব ঠিক হয়ে যাবে। দেখিস, তোকে খুব পছন্দ হবে ওনাদের।’
‘হ্যা। চার্লসও তো তাই বলেছে। ও বলেছে যে ওই সব বিরাট ব্যাপার স্যাপার নিয়ে না ভাবতে। ও আমাকে ভালোবাসে, সেটাই সবথেকে বড় ব্যাপার। এই সব বিরাট ব্যাপার স্যাপার সব তুচ্ছ। আমাকে খুব সাহস দিচ্ছে ও। আমিও ওকে ভিষন ভিষন ভালোবাসি মা। আমি যে কবে তোমার সাথে ওর আলাপ করিয়ে দেব, সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। দেখবে তোমারও চার্লসকে খুব ভালো লাগবে। ওর মধ্যে এতটুকুও বড়লোকি কোন ব্যাপার নেই। একদম আমাদের মতই সাধারন চালচরন। চার্লস না, ও দারুন, বুঝলে মা!’
‘বুঝতে পারছি সোনা।’ স্মিত হেসে উত্তর দিলেন মিসেস হুইটনি। ‘আমি জানি ও খুব ভালো। তোর মতই ভালো।’ মিসেস হুইটনি জানেন, আর কোনদিনই তিনি চার্লসএর সাথে দেখা করতে পারবেন না। নাঃ। এখন এইসব ভাবা ঠিক নয়। তাড়াতাড়ি করে বলে উঠলেন, ‘সেকি জানে সে কত ভাগ্যবান তোর মত একজনকে তার জীবনে পেয়ে?’
‘যাঃ। কি যে বলো না মা। শুধু নিজের মেয়ের সুখ্যাতি...’ লজ্জায় রাঙা হয়ে তাড়াতাড়ি বলে উঠল ট্রেসি। ‘আমার কথা অনেক হয়েছে, তোমার কথা বলো। তোমার শরীর কেমন আছে, মা? পায়ের ব্যাথাটা কমেছে?’
ডঃ রুশের কথাটা মনে পড়ল মিসেস হুইটনির, ‘নিশ্চিন্তে থাকুন মিসেস হুইটনি, আমি লিখে দিচ্ছি, পাক্কা ১০০ বছর আরো বাঁচবেন... একদম পার্ফেক্ট হেলথ আপনার... সুগার, ব্লাড প্রেশার... কোনটারই কোন খারাপ অবস্থা নেই। একদম সঠিক সব কিছু...’ হাঃ, ১০০ বছর...। ‘ভালো। আমার শরীর একদম ঠিক আছে রে সোনা। চিন্তা করিস না।’
‘হুম, বুঝলাম। কোন বয়ফ্রেন্ড জুটেছে নাকি?’ হাসতে হাসতে পেছনে লাগল মেয়ে।
ট্রেসির বাবা মারা গেছে প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেল। সেদিনের পর থেকে আজ পর্যন্ত কারুর সাথে একটু বেরুবারও ইচ্ছা হয়নি মিসেস হুইটনির কখনো, ট্রেসির হাজার ইচ্ছা সত্তেও।
‘ছাড় তো বয়ফ্রেন্ডএর কথা। তুইও যেমন। সেই আবার পেছনে লাগা। তা তোর কাজ কর্ম কেমন চলছে? ভালো লাগছে তো?’
‘দা-রু-ন। আর জানো মা, চার্লস বলেছে যে বিয়ের পর আমি কাজ করলে ওর কোন আপত্তি নেই।’
‘বাঃ। সে তো খুব ভালো খবর। সত্যিই, ছেলেটা খুব বুঝদার মনে হচ্ছে। তোর সাথে খুব ভালো মানাবে, দেখিস।’
‘হ্যা গো, সত্যিই খুব ভালো ছেলে। তুমি নিজেই দেখো না যখন আলাপ করিয়ে দেব।’
আবার একটা প্রচন্ড জোরে বাজ পড়ল। সময় হয়ে গেছে। এবার চিরবিদায় নেবার পালা। গলাটাকে খুব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলেন মিসেস হুইটনি। বললেন, ‘আচ্ছা, ঠিক আছে। গুড বাই সোনা। শুয়ে পড় গিয়ে, যা। আর রাত করিস না। সাবধানে থাকিস।’
‘তুমিও সাবধানে থেকো। আর কালকে চার্লসদের ওখান থেকে ফিরে আবার ফোন করবো, কেমন?’
‘আচ্ছা’, তারপর একটু থেমে মিসেস হুইটনি বললেন, ‘আই লাভ ইয়ু ট্রেসি... আই লাভ ইয়ু ভেরি মাচ...’
‘লাভ ইয়ু টু, মা...’
মিসেস হুইটনি আস্তে করে টেলিফোনের রিসিভারটাকে নামিয়ে রেখে দিলেন ক্র্যাডেলের ওপর।
*********
টেবিলের ওপর থেকে পিস্তলটা তুলে নিলেন হাতে। এই মুহুর্তে আর একটা মাত্র কাজ বাকি রয়েছে। সেটা করতে হবে খুব তাড়াতাড়ি... সময় দিলে হবে না। পিস্তলটা তুলে নিজের কপালে ঠেকিয়ে ট্রিগারটা টেনে দিলেন...
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
23-07-2021, 09:36 PM
(This post was last modified: 26-07-2021, 11:36 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
প্রথম ভাগ
পরিচ্ছদ ২
ফিলাডেলফিয়া
শুক্রবার, ২১শে ফেব্রুয়ারি, সকাল ৮টা
মার্কেট স্ট্রিটের বৃষ্টিস্নাত পথে রোজকার মত ব্যস্ততা শুরু হয়ে গিয়েছে সেই ভোর থেকেই। অদ্ভুত এই মার্কেট স্ট্রিট, ধোপদুরস্ত উর্দি পরিহিত শোফার বিলাসবহুল লিমুজিন গাড়ি চালিয়ে চলেছে বস্তি পরিবৃত পথ দিয়ে। একদিকে সুউচ্চ অট্টালিকা আর তার পাশেই বস্তির ছোট ছোট নোংরা ঘরগুলো পাশাপাশি গুঁতোগুঁতি করে জায়গা ভাগ করে নিয়েছে, ঘরের পাশেই জড় করে রাখা আবর্জনার স্তুপ। অবস্য ট্রেসি হুইটনির কোনদিকেই এইমুহুর্তে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। দ্রুত পদক্ষেপে সে হেঁটে চলেছে তার কর্মক্ষেত্র... চেস্টনাট স্ট্রিটের পূর্ব প্রান্তে, ফিলাডেলফিয়া ট্রাস্ট এন্ড ফিডেলিটি ব্যাঙ্কের দিকে। আজ তার পরনে একটা উজ্বল বর্ষাতি, পায়ে উঁচু বুটজোড়ে। মাথায়ও হলুদ রঙের একটা টুপি পড়ে নিয়েছে যাতে তার ঘন প্রাণবন্ত বাদামী চুলগুল না বৃষ্টির জলে ভিজে যায়, সেই ভয়ে। ট্রেসি হুইটনি... যেন প্রাণের প্রতীক... মধ্য কুড়ির অসম্ভব সুন্দরী বুদ্ধিদীপ্ত যুবতী। একঝলক তার মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যায় যখন সেই উচ্ছল সৌন্দর্যের সাথে বুদ্ধিমত্তা মিশে থাকে, সেই মুখকে অঘ্রাহ্য করা একটা দূরহ ব্যাপার হয়ে ওঠে যে দেখে তার পক্ষে। সুন্দরী, ট্রেসির সৌন্দর্য শুধু একটা বৈশিষ্টেই আবদ্ধ নেই... পানপাতার মত মুখবায়ব, সরু পাতলা ওষ্ঠদ্বয়, গভীর বুদ্ধিদীপ্ত পান্নার মত সবুজ চোখের মনি আর সেই সাথে ছিপছিপে মেদহীন দেহবল্লরী। গায়ের শুভ্র চামড়ার রঙ গমের মত, আবার সেই রঙই কখনও কখনও রূপান্তরিত হয়ে যায় ষদচ্ছ সাদায় আর তা নয়তো গভীর গোলাপিতে। অদ্ভুত ভাবে তার চামড়ার রঙ বদলায় ট্রেসির মেজাজের ওপর, তার রাগ, অভিমান, ক্রোধ, উত্তেজনা, হতাশা সাথে সাথে। তার মা একবার বলেছিল, ‘সত্যি ট্রেসি, কখনও সখনও আমিই তোকে ঠিক বুঝতে পারিনা। ভগবান কি পৃথিবীর সমস্ত রঙ দিয়ে গড়েছেন তোকে?’
ট্রেসি হেঁটে চলেছে তার কর্মক্ষেত্রের দিকে দ্রুত পায়ে। পথচলতি মানুষ তার মুখের দিকে তাকিয়ে একবার না হেসে পারে না। এই রকম খুশিতে উজ্বল সুন্দর মুখের দিকে তাকিয়ে কে না একবার হাসিমুখে সুপ্রভাত না বলে থাকতে পারে? অতি বড় হৃদয়হীনেরও তার দিকে তাকিয়ে না হাসার সাহস আসে না বোধহয়। ট্রেসিও সহাস্যে সুপ্রভাত জানাতে ভোলে না প্রত্যুত্তরে।
‘প্রত্যেক মানুষেরই জীবনে কিছু না কিছু ঘটনা ঘটে তাকে খুশির শীর্ষে পৌছে দেবার জন্য...’ চলতে চলতে ভাবে ট্রেসি। ‘আর কয়একদিনের মধ্যেই আমি আমার ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করতে চলেছি... তারপর কিছুদিন পর সেই মানুষটার সন্তানের মা হব আমি... পৃথিবীতে এর থেকে খুশির আর কি থাকতে পারে কারুর জীবনে?’
প্রায় পৌছে গেছে সে ব্যাঙ্কের কাছাকাছি। কবজি উল্টে হাত ঘড়িতে সময় দেখে... আটটা বেজে কুড়ি। ব্যাঙ্কের দরজা কর্মচারীদের জন্য খুলতে এখনও মিনিট দশেক বাকি। কিন্তু ক্ল্যারেন্স ডেসমন্ড, ব্যাঙ্কের আন্তর্জাতিক বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ইন চার্জ এতক্ষনে বাইরের অ্যালার্ম বন্ধ করে দিয়ে দরজা খোলার কাজ শুরু করে দিয়েছেন। ট্রেসির বেশ লাগে এই প্রতিদিনকার পদ্ধতি দেখতে। রাস্তার একপাশে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে সে দেখতে লাগল ডেসমন্ড ব্যাঙ্কে ঢুকে দরজাটা আবার বন্ধ করে দিলেন। পৃথিবীর সমস্ত ব্যাঙ্কেরই নিজস্য একটা রহস্যময়তা থাকে তাদের নিজেদের নিরাপত্তা পদ্ধতিতে। এই ব্যাঙ্কও তার থেকে কিছু মাত্রায় বেতিক্রমী নয়। এই প্রতিদিনকার কার্যপ্রনালীতে কোন ছেদ নেই শুধু সিকিউরিটি সিগন্যাল ছাড়া, যেটা প্রতি সপ্তাহে একবার করে পরবর্তন করা হয়ে থাকে। ব্যাঙ্কের প্রবেশপথের প্রথম জানলার ভারী পর্দাটা সামান্য নামানো। এটাও একধরনের সিগন্যাল, কর্মচারীদের কাছে। এই ভাবে অর্ধেক নামানো পর্দা মানে এই মুহুর্তে ব্যাঙ্কের মধ্যে কোন অনুপ্রবেশকারী ঢুকে আছে কিনা, তার খোজ চলছে। ক্ল্যারেন্স ডেসমন্ড ব্যাঙ্কের কর্মচারীরা ব্যাঙ্কে ঢোকার আগে নিজে সমস্ত বাথরুম, স্টোররুম, ভল্ট আর সেফ-ডিপোজিট রুম ভালো করে খুঁজে দেখছেন, যদি কেউ কোথাও লুকিয়ে থাকে। বলা তো যায় না। সাবধানের কোন মার নেই। তবে এটা আজ নয়, প্রতিদিনকার ঘটনা। এই একভাবে প্রতিদিন সকালে কর্মচারীরা ব্যাঙ্কে ঢোকার আগে ঠিক এই ভাবেই একবার চিরুনি তল্লাসি চলে। তারপর ডেসমন্ড যখন নিজে সম্পর্ণরূপে সন্তুষ্ট হন, তখনই তিনি জানলার পর্দাটাকে পুরোপুরি সরিয়ে খুলে দেন। মানে ভেতরে সব কিছু ঠিকঠাক রয়েছে। কোথাও কোন অসঙ্গতি পাওয়া যায় নি।
এরপর ব্যাঙ্কের অন্যান্য সমস্ত কর্মচারীদের মধ্যে প্রথম ঢোকেন ব্যাঙ্কের সিনিয়র হিসাবরক্ষক। তাঁর বসার জায়গা ইমার্জেন্সি অ্যালার্মের পাশেই। প্রত্যেক কর্মচারী ব্যাঙ্কে প্রবেশ করার পর আবার সদর দরজাটা বন্ধ হয়ে লক হয়ে যায়।
ট্রেসি যখন ব্যাঙ্কে ঢুকল অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে, তখন ঘড়িতে কাঁটায় কাঁটায় আটটা তিরিশ। সুসজ্জিত হলঘরে নিজের নির্দিষ্ট চেয়ারের কাছে গিয়ে গা থেকে বর্ষাতি, টুপি খুলতে খুলতে আশ্চর্য হয়ে সে শুনতে লাগল এই বৃষ্টির প্রতি অন্যান্যদের বিরক্তিভরা উক্তিগুলো...
‘উফফফ, জঘন্য ওয়েদার। আমার তো ছাতাটাই হাওয়ার তোড়ে উড়ে গিয়ে একেবারে ভিজিয়ে দিল আমাকে...’, বলে উঠল এক সহকর্মী।
পাশ থেকে হেড ক্যাশিয়র মজা করে বলে উঠল, ‘আরে আমি আবার মার্কেট স্ট্রিটে দুটো হাঁসকে সাঁতরাতে দেখেছি আজ অফিস আসার সময়।’
ওপাশ থেকে আর একজন তাড়াতাড়ি খবর দিল, ‘রেডিওতে বলছিল, এই রকম ওয়েদার নাকি আগামী পুরো সপ্তাহটাই যাবে। এহঃ, এখন যদি ফ্লোরিডায় থাকতাম, কি দারুন হত বলোতো!’
ট্রেসি ওদের কথা শুনে মুচকি হেসে নিজের কাজে মন দিল। সে এই ব্যাঙ্কের কেবল-ট্রান্সফার বিভাগের ইন চার্জ। এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত টাকা ট্রান্সফার করা একটা বিশাল কষ্টসাধ্য কাজ ছিল। সেটা একটা ব্যাঙ্ক থেকে আর একটা ব্যাঙ্কে হোক বা একটা দেশ থেকে আর একটা দেশে। পুরো ব্যাপারটা করতে, হাজার একটা ফর্ম ভরো, সেটা তারপর পোস্টাল ডিপার্টমেন্টে পাঠাও আর ওদের খেয়াল মর্জির ওপর অপেক্ষা করে বসে থাকো। কিন্তু সম্প্রতি কম্পুউটার আসার পর থেকে সব কাজটাই অনেক ত্বরান্নিত হয়ে উঠেছে। মূহুর্তের মধ্যে বিশাল বিশাল অঙ্কের টাকা এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় হস্তান্তরিত হয়ে যাচ্ছে। আর ট্রেসির কাজই সেটা। প্রতিদিন কত লক্ষ্য লক্ষ্য ডলার যে এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য আকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয় ট্রেসির হাত দিয়ে বলার নয়। এই প্রতিটা ট্রান্সফারেই কিছু সংকেতলিপি রয়েছে। আর সেটা প্রতিদিন বদলে দেওয়া হয় অননুমোদিত অবৈধ প্রবেশ রুখতে। বেশ লাগে কিন্তু ট্রেসির এই কাজ করতে। তার মনে হয় যেন সারা বিশ্বের ধমনীতে বয়ে চলা ডলারের স্রোত তারই হাতের ছোয়ায় একদিক থেকে আর একদিকে দৌড়ে যাচ্ছে। বেশ একটা রোমাঞ্চ অনুভব করত সে এই কিছুদিন আগে অবধিও, চার্লস স্ট্যানহোপ দ্য থার্ড তার জীবনে আসার আগে পর্যন্ত। এখন তো তার জীবনের রোমাঞ্চ শুধুই চার্লস... তাকে ঘিরেই। কানে এল সহকর্মীদের কথপোকথন...
‘এই জানিস, গতকাল প্রায় কয়এক মিলিয়ন ডলার তুরস্ককে লোন দেওয়া হয়েছে আমাদের ব্যাঙ্ক থেকে...’ ডেবোরা, ব্যাঙ্কের সিনিয়র বুককিপার বলে উঠল।
সেটা শুনে মায়ে ট্রেনটন, ব্যাঙ্কের ভাইস প্রেসিডেন্টের সেক্রেটারী, বেশ বিজ্ঞের সাথে মন্তব্য করল, ‘আজ সকালেই বোর্ড মিটিংএ ঠিক হয়েছে পেরুকে কিছু অর্ধ সুবিধা দেওয়া হবে। তা এই ধরো প্রায় পাঁচ মিলিয়ন ডলার হবে...’
ওপাশ থেকে জন ক্রাইটনের মন্তব্য, ‘শুধু পেরু কেন? মেক্সিকোকেও তো প্রায় পঞ্চাশ মিলিয়ন দেওয়া হবে বলে শুনেছি। এদের তো এক কানাকড়িও পাওয়া উচিত নয়...’
সত্যি, কি অদ্ভুত না? - ভাবল ট্রেসি - যে সমস্ত দেশ এই অ্যামেরিকাকে গালি দেয় যে অ্যামেরিকা নাকি সব থেকে বেশি অর্থ-ভিত্তিক দেশ, এই বলে, আর তারাই সবার থেকে আগে অ্যামেরিকার কাছে হাত পাতে লোনের আশায়...’
মনে পড়ে এই ব্যাপারটা নিয়েই তার আর চার্লসের মধ্যে প্রথম বাক্য-বিতন্ডাটা বেঁধেছিল।
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
25-07-2021, 09:33 AM
(This post was last modified: 26-07-2021, 11:37 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
ট্রেসির সাথে চার্লসের প্রথম দেখা একটি অর্থনৈতিক সন্মেলনে। সেখানে চার্লস ছিল অতিথি বক্তা। চার্লেসএর একটা বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে... প্রতিষ্ঠানটি তার প্রপিতামহের প্রতিষ্ঠা করা। এখন যে ব্যাঙ্কে ট্রেসি কর্মরতা, সেই ব্যাঙ্কের সাথে বেশ ভালো লেনদেন হয়ে থাকে চার্লসের প্রতিষ্ঠানের। তাই ব্যাঙ্কের তরফ থেকে ট্রেসি উপস্থিত ছিল সেদিনের সেই সন্মেলনে ব্যাঙ্কের প্রতিনিধী স্বরূপ। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি টাকা ধার করে ফেরত দেওয়া নিয়ে টালবাহানার ওপর চার্লসের বক্তব্য ঠিক মেনে নিতে পারেনি ট্রেসি সেদিন। সেদিনের চার্লসের বিশ্লেষনের প্রতিবাদে বক্তব্য রেখেছিল সেও। আর চার্লস অবাক বিস্ময়ে শুনছিল এক সুন্দরী যুবতীর তীক্ষ্ণ আবেগপূর্ন যুক্তি তার বক্তব্যের প্রতিবাদে। পরে তাদের বাদানুবাদ চলেছিল অনেক রাত পর্যন্ত প্রাচীন বুকবাইন্ডার রেস্তোরাঁর ডিনার টেবিলেও।
প্রথম দিকটাতে চার্লস মোটেই ট্রেসির মনে কোন দাগ কাটতে পারেনি। যদিও ট্রেসি জানতো চার্লস ফিলাডেলফিয়ার এক রাজপুত্রসম। পয়ত্রিশ বর্ষিও চার্লস ধনবান, ফিলাডেলফিয়ার সমৃদ্ধ পরিবারের সদস্য। পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি উচ্চতার সুপুরুষই বলা চলে। মাথায় ইষৎ পাতলা হয়ে আসা বেলে চুল, বাদামী চোখ আর অতিব ভদ্র মার্জিত আচার ব্যবহার। কিন্তু ট্রেসির কাছে সেই মুহুর্তে চার্লস আর পাঁচটা বড়লোকের ক্লান্তিকর ছেলে ছাড়া আর কিছুই নয়।
সম্ভবত ট্রেসির মুখ দেখে চার্লস সেদিন তার মনের কথাটা বুঝতে পেরেছিল। তাই টেবিলের ওপর একটু ঝুঁকে ফিসফিস করে বলেছিল, ‘আমার বাবা নিশ্চিত যে তাঁদেরকে হসপিটালে ভুল বাচ্ছাকে দেওয়া হয়েছিল।’
‘মানে?’ ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করেছিল ট্রেসি।
‘আসলে আমি আমার পূর্বপুরুষের ধারায় প্রত্যাগত প্রজাতির কোন একজন। আমি মনে করি না যে অর্থই সব বা জীবনের শেষ কথা। অবস্য দয়া করে সেটা আমার বাবাকে বলবেন না।’
সেই রাতে ডিনার টেবিলে বসে ওদের কথপোকথনের শেষের দিকে চার্লসের মধ্যে একটা কেমন কমনীয় নিরহঙ্করতা লক্ষ্য করেছিল ট্রেসি। ধীরে ধীরে চার্লসের প্রতি একটা প্রচ্ছন্ন ভালো লাগা অনুভব করতে লাগল সে। আনমনে ভাবছিল, ‘বেশ হতো এইরকম যদি একটা ছেলেকে নিজের স্বামী হিসেবে পাওয়া যেত... অন্তত ভাবতে তো দোষের কিছু নেই।’
‘কোথায় হুইটনি আর কোথায় স্ট্যানহোপ। আমার বাবা সারাটা জীবন দিয়ে যে ব্যবসা দাঁড় করিয়েছিল সেই ধরনের ব্যবসা এই স্ট্যানহোপদের কাছে নগন্য মাত্র। তাই স্ট্যানহোপ আর হুইটনি কখনই মিলতে পারে না, অসম্ভব। একজন যদি হয় তেল তো অন্যজন জল। আর অবস্যই স্ট্যানহোপরাই তেল। আর আমায় দেখ, কি বোকা আমি। একজন ভদ্রলোক আমাকে ডিনারে আমন্ত্রন জানিয়েছে ভদ্রতার খাতিরে আর আমি কিনা ভেবে ফেললাম একেবারে বিয়ে অবধি। হয়তো ভবিষ্যতে এনার সঙ্গে কোনদিন আর দেখাই হবে না!’
কানে এল চার্লস তাকে প্রশ্ন করছে, ‘যদি কিছু মনে না করেন, আগামী কাল আপনাকে ডিনারে আমন্ত্রন জানাতে পারি? আপনি কি কাল সন্ধ্যেবেলা ফ্রি আছেন?’
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
25-07-2021, 09:35 AM
(This post was last modified: 26-07-2021, 11:37 AM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
ফিলাডেলফিয়া এককথায় যাকে বলা যায় প্রাচুর্যের পরিপূর্ণ ভান্ডার। কি নেই এখানে, দেখা বা কিছু করার জন্য। শনিবার সন্ধ্যায় ট্রেসি আর চার্লস গিয়েছিল ফিলাডেলফিয়া অর্কেস্ট্রা শুনতে। তার পরের সন্ধ্যাটা তারা ব্যালে দেখে একে অপরের সান্নিধ্যে কাটিয়েছিল। সপ্তাহটা তো কেটে গেল কখনও নিউ মার্কেটে ঘুরে বেড়িয়ে বা সোসাইটি হিলের অনন্য সংগ্রহ দেখেই। তারা চীজ স্টেক খেয়েছে জিনোতে, ডিনার করেছে কাফে রয়ালে – সব থেকে দামী রেস্তরাঁ, ফিলাডেলফিয়ায়। আবার কখন তাদের শপিং করেই সময় কেটেছে হেড হাউস স্কোয়ারে, কিম্বা ফিলাডেলফিয়ার আর্ট মিউজিয়ামে বা রোডিন মিউজিয়ামে ঘুরে বেড়িয়ে।
‘দ্য থিংকার’ স্ট্যাচুর সামনে দিয়ে যেতে যেতে তো ট্রেসি থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। চার্লসের দিকে তাকিয়ে আঙুল তুলে স্ট্যাচুটাকে দেখিয়ে মিচকি হেসে বলেছিল, ‘তুমি!’
চার্লস কোনদিনই ঠিক শরীরচর্চায় বিশ্বাসী নয়। কিন্তু ট্রেসি সেটা আবার খুব উপভোগ করে। তাই রবিবার সকালে ট্রেসি ভোর থাকতে উঠে জগিং করতে বেরিয়ে পড়ে কখনো ওয়েস্ট রিভার ড্রাইভ ধরে, আবার কখনও স্কুইলকিল নদীর পাড় ধরে। শনিবারদিন দুপুরবেলাটাতে সে তাই-চি-চুয়ান ক্লাসে ভর্তি হয়েছে। সেখানেই প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে নাগাড়ে ওয়ার্কআউট করে থাকে। এতে ভিষন ভাবে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে ঠিকই কিন্তু সেই সাথে মনের মধ্যে একটা বেশ প্রফুল্লভাব জেগে ওঠে এই ওয়ার্কআউটের ফলে। তাই সেখান থেকে সে সোজা চলে যায় চার্লসের অ্যাপার্টমেন্টে। চার্লস আবার ভিষন পানভোজন বিলাসী। ভালো রাধুনীও বটে। ট্রেসি গেলেই কিছু না কিছু নিজের হাতে রেঁধে সুন্দর সুস্বাদু পদ খাওয়াবেই, তা সে কখনও মরক্কোর বিস্তিলা আর গুও-বু-লি হোক, বা চাইনিজ পুডিং আর সেই সাথে তাহিন-দ্য-পুলে-অ্য-সিট্রন হোক।
চার্লসের সাথে মিশে ট্রেসি একটা জিনিস পরিষ্কার বুঝে গেছে, চার্লস অত্যধিক শিষ্টাচারী মানুষ। ভিষন সময়ানুবর্তি। একবার মনে আছে তার চার্লসের সাথে ডিনারে বেরুবার কথা ছিল। সে মাত্র পনেরো মিনিট দেরীতে পৌছেছিল। তাতে চার্লস এত বিরক্ত, এত বিরক্ত হয়েছিল যে সেদিনের সেই সন্ধ্যাটাই সম্পূর্ণ মাটি হয়ে গিয়েছিল। তাই সেদিনের পর থেকে ট্রেসি প্রায় প্রতিজ্ঞা করে ফেলেছে যে এরপর থেকে সে কোনদিন দেরি করবে না।
চার্লসের সাথে ট্রেসির যৌন সম্পর্ক বিশেষ উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। চার্লস মোটামুটি ভালোবাসা ব্যাপারটাকেও নিজের জীবনযাত্রার সাথেই মিলিয়ে চলে, অসম্ভব নিয়মানুবর্তিতায়, একদম মেপে যাকে বলা যায়। তাই একবার ট্রেসি বিছানায় হটাৎই একটু বেশিই সাহসী হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিল, আর তাতে চার্লসকে দেখে মনে হয়েছিল যে সে যেন জীবনের সবথেকে বড় একটা থাক্কা খেয়েছে, ট্রেসির ওই ধরনের রূপ দেখে। ট্রেসি তো বেচারি গোপনে নিজেকেই দোষারোপ করেছিল। তার মনে হয়েছিল যে সে নিশ্চয়ই দিনদিন কামবাইগ্রস্ত ব্যক্তিতে পরিণত হয়ে পড়ছে।
ট্রেসির গর্ভবতী হয়ে পড়াটা একেবারেই আকস্মিক এবং অপ্রত্যাশিত। সে তো ভাবেই পাচ্ছিল না কি করবে এ ব্যাপারটা নিয়ে। কারণ তখনও পর্যন্ত চার্লস তাদের মধ্যে বিবাহের কোন ইঙ্গিত দেয় নি, আর ট্রেসিও চাইনি যে নিজের গর্ভধারণের কথা বলে চার্লসেকে বিয়েতে রাজি করাতে। কিন্তু সেই বা করবে কি? একবার ভেবেছিল গর্ভপাত করিয়ে নেবে। মন থেকে সায় পায়নি। কিন্তু পেটে যে এসেছে, তাকে পৃথিবীতে নিয়ে এসে একা পিতৃপরিচয় ছাড়াই বা কি করে বড়ো করে তুলবে, সেটা তো আরো বেশি দুঃখের। আর তার শিশুর পক্ষেও তো কখনই ভালো নয়।
অনেক ভাবনা চিন্তা করে সে ঠিক করেছিল, নাঃ। সেদিন ডিনারে চার্লসের কাছে কথাটা পাড়বে সে। চার্লসকে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে আমন্ত্রন জানিয়েছিল ট্রেসি। বার বার করে মনে মনে রিহ্যার্সাল করেছিল, কি বলবে চার্লসকে ডিনারে। ওর জন্য খুব যত্ন নিয়ে ক্যাসৌলেট বানানো ঠিক করেছিল। কিন্তু এতটাই নার্ভাস ছিল, সেটা পুড়েই গিয়েছিল তৈরী করতে গিয়ে। তাই যখন খাবার সার্ভ করছিল ডিনার টেবিলে, এতবার করে মনে মনে রিহার্সাল করা কথাটা তার মুখ দিয়ে দুম করে প্রায় উগরে বেরিয়ে এসেছিল বলতে গেলে, ‘আ-আমি মানে খুব সরি চার্লস... আ-আসলে আমি... চার্লস আমি প্রেগনেন্ট...’
কথা তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসার পর বেশ খানিকক্ষন একটা অসহনীয় নিরবতা বিরাজ করছিল ঘরের মধ্যে। কারুর মুখে কোন কথা নেই। ট্রেসি চুপ করে মাথা নিচু করে টেবিলে বসেছিল, ঘরের মধ্যে একটা ঝড় ওঠার আশঙ্কায়। কিন্তু সেদিন ঝড় ওঠেনি। খানিক চুপ থাকার পর চার্লস ধীর শান্ত গলায় বলেছিল, ‘ঠিক আছে... ও নিয়ে ভেবো না... আমরা বিয়ে করে নেব...’
সেই মুহুর্তে ট্রেসির মনে হয়েছিল যেন তার বুকের ওপর থেকে একটা বিশাল বোঝা নেবে গেলো। তবুও মুখে ম্লান হাসি এনে বলেছিল, ‘না, মানে তুমি যদি না চাও তাহলে তোমাকে এই বিয়ে করতে জোর করছি না আমি... আমি প্রেগনেন্ট... এই কারনের জন্য তোমায় বিয়ে করতে হবে না...’
হাত তুলে সেই মুহুর্তে ট্রেসিকে থামিয়ে দিয়েছিল চার্লস। ‘আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। আমি জানি তুমি খুব ভালো একজন স্ত্রী হবে।’ খানিক চুপ করে থেকে, আস্তে আস্তে আবার বলে উঠেছিল, ‘যদিও আমার বাবা বা মা, দুজনেই একটু আশ্চর্যই হবেন।’ বলে ইষৎ হেসে একটু ঝুঁকে ট্রেসির ঠোটে একটা চুমু এঁকে দিয়েছিল চার্লস।
ট্রেসি একটু অবাক হয়েই প্রশ্ন করেছিল, ‘ওনারা আশ্চর্য হবেন কেন?’
চার্লস একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে উত্তর দিয়েছিল, ‘আসলে ডার্লিং তুমি ঠিক ব্যাপারটা বুঝতে পারোনি। এই স্ট্যানহোপরা সর্বদাই বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হয়ে থাকে শুধু মাত্র নিজেদের বেরাদরী দেখেই... বলতে পারো মেনলাইন ফিলাডেলফিয়া...।’
‘আর ইতিমধ্যেই তাঁরা তোমার জন্য জীবনসঙ্গিনী খুঁজে নিয়েছেন, তাই না?’ সন্দীঘ্ন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিল ট্রেসি।
হাত বাড়িয়ে ট্রেসির হাতটা নিজের হাতের মধ্যে তুলে নিয়ে একটু চাপ দিয়ে উত্তর দিয়েছিল চার্লস, ‘সেটা কোন বড় ব্যাপার নয়। আমি কাকে পছন্দ করছি, সেটাই ব্যাপার। তুমি চিন্তা কর না। আগামী শুক্রবার বাবা ও মার সাথে আমরা ডিনার করছি। সেখানেই তোমাকে তাঁদের সাথে আলাপ করিয়ে দেব আমি।’
******
Posts: 765
Threads: 29
Likes Received: 1,591 in 626 posts
Likes Given: 134
Joined: Dec 2019
Reputation:
98
এখন অফিসে আছি রাতে পড়বো। ফন্ট সাইস একটু বড়ো করো গো দাদা বা....ড়া.....র মত.....প্রণাম নিবেন !!
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(25-07-2021, 12:58 PM)Kolir kesto Wrote: এখন অফিসে আছি রাতে পড়বো। ফন্ট সাইস একটু বড়ো করো গো দাদা বা....ড়া.....র মত.....প্রণাম নিবেন !!
দিলাম করে , একেবারে ৬ .....
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
ন’টা বাজতে পাঁচ। ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্কের ব্যস্ততা চোখে পড়ে। প্রত্যেকেই যেন আগের থেকে একটু বেশিই সচল এই মুহুর্তে। আর ঠিক পাঁচ মিনিট পরই ব্যাঙ্কের সদর দরজা খুলে যাবে কাস্টমারদের কাছে। তাই তার আগে সমস্ত কিছু ঠিকঠাক জায়গায় থাকা প্রয়োজন। ট্রেসির সামনের জানলার ফাঁক দিয়ে নজর গেল বাইরে, সেখানে কাস্টমাররা এই বৃষ্টির মধ্যেও লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ব্যাঙ্কের দরজা খোলার অপেক্ষায়।
ব্যাঙ্কের গার্ড নতুন ব্ল্যাঙ্ক ডিপোজিট স্লিপ আর উইথড্রয়াল স্লিপগুলো হলঘরের মাঝের টেবিলের ওপর নির্দিষ্ট মেটাল ট্রেতে গুছিয়ে রেখে দিচ্ছে। সাধারণত যারা নিয়মিত কাস্টমার, তাদেরকে ব্যাঙ্ক থেকেই পার্সোনাল ম্যাগনেটাইজড কোড দেওয়া ডিপোজিট স্লিপ দেওয়া হয়। তাতে সেই স্লিপ কাস্টমার জমা করতে সাথে সাথে কম্পুউটার সেই কাস্টমারের অ্যাকাউন্ট চিনে নিতে পারে। কিন্তু কখনো সখনও কাস্টমাররা ভুলে যায় নিজেদের ডিপোজিট স্লিপ আনতে, তখন তারা এই ট্রেতে রাখা ব্ল্যাঙ্ক ডিপোজিট স্লিপ ভরে জমা করে কাউন্টারে। সেই জন্যই এই স্লিপগুলো রাখা।
গার্ড আর একবার দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো। টিক টিক করে ঘন্টার কাঁটাটা সরে সরে যাচ্ছে নয়ের ঘরের দিকে। ঠিক নটা বাজতেই সে এগিয়ে গিয়ে সদর দরজা খুলে বড় ভারি পাল্লাদুটো দুপাশে সরিয়ে দিল প্রতিদিনকার মত।
সেই দিনের মত ব্যাঙ্কিং শুরু হল।
******
আগামী কয়এক ঘন্টা ট্রেসির মাথা তোলার সময় থাকে না। প্রতিটা ট্রান্সফার বার দুয়েক করে চেক করতে হয় তাতে সঠিক কোড আছে কিনা। যখন কোন অ্যাকাউন্ট ডেবিট করা হয়, তাকে সেই অ্যাকাউন্টের নাম্বার, জমা রাশি আর যে ব্যাঙ্কে ট্রান্সফার হচ্ছে সেই ব্যাঙ্কের নিজস্ব কোড লিখে তবে টাকা ট্রান্সফার করতে পারা যায়। প্রতিটা ব্যাঙ্কেরই নিজস্ব কোড নাম্বার আছে, আর সেই কোড নাম্বারগুলো একটা বিশেষ গোপনীয় ডায়রেক্টরিতে লিপিবন্ধ করা রয়েছে।
সকালটা কোথা দিয়ে যেন উড়ে গেল কাজের চাপে। ট্রেসি ঠিক করে রেখেছিল দুপুরে লাঞ্চএর সময় বেরিয়ে একবার চুলটাকে সেট করে আসবে। সেই মত ল্যারি স্টেল্লা বট্টেতে অ্যাপয়েন্টমেন্টও করে রেখেছে। ওখানে গেলে একটু বেশিই পয়সা লাগে ঠিকই কিন্তু তবুও, একবার গেলে বোঝা যায় এরা কত তফাত অন্যান্য হেয়ার ড্রেসারদের থেকে। ট্রেসির ইচ্ছা আছে আজ চার্লসের বাবা মার সামনে নিজের সবথেকে ভালোটা তুলে ধরার। ওনারা চার্লসের জন্য কাকে বেছে রেখেছেন জানা নেই, কিন্তু একটা ব্যাপারে ট্রেসি সুনিশ্চিত, ওর মত সুখি এই পৃথিবীতে কেউ চার্লসকে করতে পারবে না। করতে পারে না।
ঠিক ১টার সময়, তখন সবে ট্রেসি রেনকোটটা গায়ে দিয়ে তৈরী হচ্ছিল বেরুবার জন্য, ক্ল্যারেন্স ডেসমন্ড তাকে তার অফিসে ডেকে পাঠালো। ডেসমন্ডের অফিসে একটা আলাদা ভাবমুর্তি রয়েছে। সব সময় ফিটফাট, গুরুগম্ভীর। সাধারণত টিভিতে কোন কমার্শিয়াল অ্যাড হলে সেখানে ডেসমন্ডই প্রধান বক্তা হন। ওনার চারপাশে একটা কেমন সর্বদাই একটা কর্তৃত্বের বাতাবরণ ঘিরে থাকে। এমন একজন যাকে দেখলেই যেন মনে হয় না, একে সব ব্যাপারে বিশ্বাস করা যায়, ভরসা করা যায়।
‘বসো ট্রেসি...’ সামনের চেয়ারটা দেখিয়ে বসতে বললেন ট্রেসিকে। উনি আবার প্রত্যেক কর্মচারীর প্রথম নাম ধরেই ডাকতে ভালোবাসেন। তাতে বেশ একটা গর্বও অনুভব করেন মনে মনে। ‘বাইরে আবহায়য়া কি জঘন্য, না?’
‘হ্যা, ঠিক বলেছেন।’ চেয়ারে বসতে বসতে উত্তর দিল ট্রেসি।
‘তাও দেখ, এই ওয়েদারেও লোকেদের ব্যাঙ্কে আসতে হয়, কি খারাপ, না?’ ভদ্রলোকের মনে যে আসলে অন্য কথা রয়েছে, সেটা বুঝতে অসুবিধা হল না। কিছু না বলে চুপ করে আসল কথার অপেক্ষা করতে লাগল সে। খানিক পর ডেসমন্ড বলেই ফেললেন, ‘আমি জানি খুব শিঘ্রই তুমি এবং চার্লস স্ট্যানহোপ বিয়ে করতে চলেছ।’
কথাটা শুনে একটু অবাকই হয়ে গেল ট্রেসি। ‘কই, আমরা তো এই ব্যাপারটা নিয়ে কোন অ্যানাউন্সমেন্ট করি নি!’
শুনে মুচকি হেসে ডেসমন্ড উত্তর দিলেন, ‘সেটা তোমাকে মুখে না বললেও হবে। আসলে কি জানো তো স্ট্যানহোপরা নিজেরাই খবর তৈরী করে। সত্যি, বিশ্বাস কর, খুব খুশি হয়েছি শুনে। আশা করি তোমাদের মধুচন্দ্রিমার পর তুমি আবার এখানেই কাজে যোগদান করবে, তাই না? আমরা কিন্তু তোমার মত একজন যোগ্য কর্মচারীকে কোন মতেই হারাতে চাইনা। তুমি আমাদের ব্যাঙ্কের সম্পদ।’
ট্রেসি মাথা নিচু করে উত্তর দিল, ‘হ্যা, মানে চার্লসের সাথে আমার সেই রকমই কথা হয়েছে ইতিমধ্যেই। চার্লসেরও কোন দ্বিমত নেই আমার কাজ করা নিয়ে। সে খুশি মনেই আমার বিয়ের পর কাজ করা মেনে নিয়েছে।’
শুনে একগাল হেসে ডেসমন্ড উত্তর দিল, ‘যাক, তাহলে তো আর কোন চিন্তাই নেই।’ স্ট্যান্সহোপ এন্ড সন্স্, ফিনানশিয়াল কমিউনিটিতে একটা বিশাল নাম, তাই তাদের যদি একটা বেশ বড়সড় অ্যাকাউন্ট ট্রেসির দৌলতে এই ব্যাঙ্কে খোলানো যায়, তাহলে তো কোন কথাই নেই, আর সেই জন্য ডেসমন্ডের খুশি হওয়াও স্বাভাবিক। চেয়ারে ভালো করে হেলান দিয়ে বসে ট্রেসির উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন, ‘তোমরা মধুচন্দ্রিমা করে ফিরে এস, তারপর দেখো একটা বিরাট প্রমোশন তোমার জন্য তুলে রেখেছি আমি। তাতে তোমার পে প্যাকেজও যথেষ্ট বেড়ে যাবে।’
‘ওহ, অনেক ধন্যবাদ। সত্যি, খুব ভালো খবর এটা।’ বেশ খুশি মনেই উত্তর দিল ট্রেসি। ‘আজ গিয়েই খবরটা চার্লসকে দিতে হবে’, মনে মনে ভাবল সে। ‘উফ, ভগবান যেন সমস্ত ভালো খবরগুলোকে একসাথে সাজিয়ে রেখেছে আমার জন্য, বোধহয় আমাকে খুশি দেখার জন্যই।’
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
চার্লসের বাবা মা থাকেন রিট্টেনহাউস স্কোয়ারের বিশাল অট্টালিকায়। বাড়িটা তার নিজস্বতায় নিজেই একটা এই শহরের বিশেষ ল্যান্ডমার্ক। ট্রেসি অতীতে কত বার যে এই অট্টালিকার সামনে দিয়ে যাতায়াত করেছে। আর কিছুদিন পর এই অট্টালিকাই কিনা ট্রেসির জীবনে একটা অঙ্গ হতে চলেছে... ভাবলেই কেমন যেন একটা শিহরণ জাগে শরীরে।
আজ ট্রেসি নার্ভাস। সত্যিই সে নার্ভাস। কি করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। কেমন ড্রেস করা উচিত তার আজকের জন্য? ফর্মাল? নাকি সিম্পল? তার একটা সেন্ট লরেন্টএর ড্রেস আছে বটে যেটা সে ওয়ান্নামেকার্স থেকে কিনেছিল, কিন্তু সেটা যদি সে আজ পড়ে যায়, তবে তাঁরা ভাবতে পারেন যে সে বেহিসাবী। ভাবতেই পারেন। আবার অন্য দিকে সে যদি পোস্ট হরন থেকে সেলে কেনা ড্রেসটা পড়ে যায়? তখন তাঁরা ভাববেন নাতো যে ইস, এ কাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে এল চার্লস। উফফফফ। কি বিপদে পড়া গেল। অনেক ভাবে চিনতে ট্রেসি ঠিক করল সে আজ একটা ধূসর উলের স্কার্টের সাথে সাদা সিল্কের ব্লাউজই বরং পড়বে। সেটা না হবে খুব বেশি দামী আবার কম দামী একদম খেলোও নয়। আর সেই সাথে গলায় পড়বে মায়ের দেওয়া সোনার চেনটা যেটা মা খ্রিস্টমাসে তাকে দিয়েছিল। হ্যা। এটাই ঠিক হবে। তারপর তো চার্লস আছেই। ও পাশে থাকলে চিন্তা কিসের?
******
বিশাল অট্টালিকার সদর দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই উর্দিপরিহিত বার্টলার এসে দরজা খুলে সরে দাঁড়াল, ‘শুভ সন্ধ্যা, মিস হুইটনি!’ বাড়ির বার্টলারও আমার নাম জানে? এটা কি ভালো? না মন্দ? ব্যাপারটা খারাপ নয়তো? ‘আমি আপনার ওভারকোটটা খুলে নিতে পারি ম্যাডাম?’ ট্রেসি খেয়াল করল সে দামী পারসিয়ান কার্পেটের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে, আর তার কোট থেকে বৃষ্টির জল ঝড়ে পড়ছে সেই কার্পেটের ওপর। তাড়াতাড়ি করে নিজেই গা থেকে ওভারকোটটা খুলে বার্টলারের হাতে তুলে দিল। বার্টলার ট্রেসিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল অট্টালিকার অন্দরে। যেতে যেতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ভাবতে লাগল ট্রেসি, ‘ইস, কি ভুল করেছি সেন্ট লরেন্টএর ড্রেসটা না পড়ে। এই রকম জায়গায় ওই ধরনের ড্রেসই পড়া উচিত ছিল আমার। তাকে নিয়ে বার্টলার লাইব্রেরিতে ঢুকতেই একদম চার্লস স্ট্যানহোপ সিনিয়রের মুখোমুখি। আর ঘটনা চক্রে তখনই তার যেন মনে হল পায়ে পরে থাকা প্যান্টিহোসটা একটু আলগা হয়ে সামান্য যেন নেমে গেছে গোড়ালির কাছটাতে। কঠোর সুদর্শন মধ্য ষাটের ভদ্রলোক। দেখলেই বোঝা যায় একজন সিদ্ধসনোরথ পুরুষ। আজ থেকে তিরিশ বছর পর তার ছেলেকে কি রকম দেখতে হবে সেটা এনাকে দেখলেই বোঝা যায়। বাদামী তীক্ষ্ণ চোখ, দৃঢ় চিবুক, মাথায় সাদা পক্ক কেশ। ট্রেসি প্রথম দর্শনেই ভদ্রলোককে ভালোবেসে ফেলল। একদম প্রকৃষ্ঠ ঠাকুরদাদা তাঁর হবু নাতি বা নাতনির জন্য।
চার্লসের মাকেও বেশ হৃদয়স্পর্শী দেখতে। তিনি আবার একটু বেঁটে আর স্থুলো বলা চলে, কিন্তু তাঁর চারপাশটা একটা বেশ রাজকীয় আবহাওয়া ঘিরে রয়েছে যেন। দেখলেই বোঝা যায় এনাকে যে কোন ব্যাপারেই ভরসা করা চলে। ইনিও বেশ সুন্দর ঠাকুমা হবার যোগ্য।
হাত বাড়িয়ে ট্রেসিকে আহ্বান করে বললেন, ‘এস ট্রেসি। আমরা চার্লসকে বলে একটু তোমার সাথে একা আলাপ করতে চেয়েছি, তোমার তাতে নিশ্চয় খারাপ লাগে নি?’
‘না, না। ঠিক আছে!’
‘বসো... ট্রেসি।’
‘ইয়েস স্যর...’ মাথা নিচু করে উত্তর দিল সে।
ওনারা দুজনে তার উল্টো দিকের সোফায় পাশাপাশি বসলেন। কেমন যেন তার মনে হচ্ছে সে যেন কোন ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে বসে আছে। সোফায় বসে একটা ঢোক গিলল সে।
একটা দূর্বল হাসি মুখে ঝুলিয়ে রাখল ট্রেসি। সে ভালো মত উপলব্ধি করছে যে তার প্যান্টিহোসটা নেবে প্রায় হাঁটুর কাছে চলে এসেছে। মুখে হাসি রেখে চেষ্টা করল স্কার্টের ওপর দিয়ে প্যান্টিহোসটাকে খানিকটা ওপর দিকে টেনে তুলে সামাল দিতে।
কানে এল মিঃ চার্লসের জলদগম্ভীর স্বর, ‘তো, তাহলে তুমি আর চার্লস, দুজনে বিয়ে করতে চাও?’
চাও – কথাটা কেমন যেন খট করে কানে লাগল ট্রেসির। চার্লস নিশ্চয়ই এঁনাদের বলেছে যে তারা বিয়ে করতে চলেছে। মাথা নেড়ে সে উত্তর দিল, ‘হ্যা’।
পাশ থেকে মিসেস স্ট্যানহোপ প্রশ্ন করে উঠলেন, ‘তুমি আর চার্লস খুব একটা দীর্ঘদিন ধরে একে অপরকে চেনো না, তাই তো?’
ওনারা কি আমাকে অপনাম করছেন? অনেক কষ্টে ভেতর থেকে ঠেলে ওঠা অপমানবোধটাকে চেপে রাখার চেষ্টা করল ট্রেসি। সে ঠিকই ভেবেছে। এটা একপ্রকার ইন্টারভিউই হচ্ছে বটে। একটু থেমে সে উত্তর দিল, ‘ততদিনই যতদিনে আমরা বুঝেছি যে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি।’
‘ভালোবাসা!’ বিড়বিড় করে বলে উঠলেন মিসেস স্ট্যানহোপ। খানিক চুপ করে থেকে আবার বলতে লাগলেন মিসেস স্ট্যানহোপ, ‘সত্যি কথা বলতে কি জানো ট্রেসি, চার্লস যখন তোমাদের কথা এসে বোললো, আমি বা চার্লসের বাবা তো শুনে অবাক। রীতিমত আমরা দুজনেই শকড্।’ তারপর একটু স্মিত হেসে বলতে থাকলেন, ‘তোমাকে নিশ্চয়ই চার্লস চারলটের কথা বলেছে।’
চারলটের নামটা এই প্রথম শুনল ট্রেসি। তার চোখে বিস্ময় লক্ষ্য করে মিসেস স্ট্যানহোপ বলে উঠলেন, ‘ও, তুমি এখনও চারলটকে চেনো না! চার্লস বলে নি তার কথা? ঠিক আছে, হয়তো বলতো, বা বলবে বলে ভেবেছিল। যাই হোক। চারলট আর চার্লস ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছে, বুঝলে। ওরা একে অপরের খুব কাছের, আর সত্যি বলতে কি আমাদের অত্মীয়সজন প্রত্যেকেই অপেক্ষায় রয়েছে কবে চার্লস আর চারলটের এঙ্গজমেন্টটা অ্যানাউস করা হবে। সবাই তো ভেবেছিল যে হয়তো সেটা এই বছরই শুনবে তারা।’
চারলটের সম্বন্ধে আর বিশেষ কিছু শোনার প্রয়োজন বোধ করলনা টেসি। কি হবে শুনে। এইটুকু শুনেই মোটামুটি একটা ধারনা তার হয়ে গিয়েছে চারলটের সম্পর্কে। নিশ্চয় খুব কাছেই থাকে। বড়লোক। চার্লসের সামাজিক প্রতিপত্তির মত তারও একই রকম প্রতিপত্তি আছে নিশ্চয়ই। ছোট থেকে সব থেকে ভালো কলেজে পড়াশোনা করেছে। ঘোড়ায় চড়তে ভালোবাসে, হয়তো প্রচুর মেডেল কাপ জিতেছে নানা স্পোর্টসে। কানে এল মিসেস স্ট্যানহোপের গলা, ‘তা, তোমার পরিবার সম্বন্ধে কিছু বল ট্রেসি...’
উফ, এই মুহুর্তে যেন মনে হচ্ছে পুরো ব্যাপারটাই একটা লেট নাইট সিনেমা। ট্রেসির নিজেকে রিটা হেওয়ার্থ চরিত্র বলে মনে হচ্ছে। সে এখন যেন কেরি গ্রান্টের বাবা মার সাথে দেখা করতে এসেছে। এক গ্লাস জল দরকার।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
‘তোমার ছোটবেলা কোথায় কেটেছে?’ প্রশ্ন রাখলেন মিসেস স্ট্যানহোপ।
‘লুইসিয়ানায়। আমার বাবা একজন মেকানিক।’ কোন দরকার ছিল না, তাও কেন যে হটাৎ করে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল বাবার কথাটা, নিজেই বুঝতে পারল না। অবস্য বলে ভুল করে নি কিছু, ঠিকই করেছে। ট্রেসি যথেষ্ট গর্বিত তার বাবার সম্বন্ধে।
‘মেকানিক?’
গলাটা খেকারি দিয়ে একটু পরিষ্কার করে নিয়ে উত্তর দিল, ‘হ্যা। মেকানিক। আমার বাবা একটা খুব ছোট্ট কারখানা শুরু করেন, নিউ অর্লিন্সে, তারপর আসতে আসতে সেটা একটা বড় কোম্পানিতে রূপান্তরিত করেন। পাঁচ বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পর, মা সেই কোম্পানির দ্বায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে।’
‘তা তোমাদের সেই কোম্পানি কি তৈরী করে?’
‘গাড়ির এক্সহস্ট পাইপ আর অন্যান্য কিছু পার্টস।’
শুনে চার্লসের বাবা আর মা একে অপরের দৃষ্টি বিনিময় করলেন। তারপর প্রায় একসাথেই বলে উঠল, ‘ও, বুঝলাম।’ ওনাদের গলার স্বর বা বলার ধরন ট্রেসিকে যথেস্ট উদ্বিগ্ন করে তুলল। কেন জানি তার মনে এখনই একটা খটকা লাগছে, যে আগামী কতদিন সে এই মানুষগুলোকে ভালোবাসতে পারবে বলে। উল্টো দিকে বসে থাকা দুটো সহানুভূতিহীন মুখের দিকে তাকিয়ে রীতিমত অস্বস্তি হতে লাগল তার। তাড়াতাড়ি করে নিজের ভীতিটাকে মুছতে সে বলে উঠল, ‘আপনি মানে ঠিক আমার মায়ের মতই দেখতে জানেন। আমার মাও খুব সুন্দরী, বুদ্ধিমতি। আপনার মতই বেঁটেখাটো কিন্তু...’ বলতে বলতে তার কথাটা হারিয়ে গেল, যে ভাবে ঘরের মধ্যের আবহাওয়া অস্বস্তিকর রকম চুপচাপ, তাতে। চেষ্টা করল ঠোটের কোনে একটু হাসি আনতে কিন্তু যে ভাবে ভদ্রমহিলা তার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন, তাতে হাসিটা আসতে গিয়েও আর এলো না।
মিসেস স্ট্যানহোপ সরাসরি কথাটা ট্রেসির দিকে ছুড়ে দিলেন প্রায়, ‘চার্লস বলছিল তুমি নাকি অন্তঃসত্তা!’
এই মুহুর্তে ট্রেসির মনে হচ্ছে চার্লস এই কথাটা এনাদের এক্ষুনি না জানাতেও পারতো। এনাদের মনোভাব এতটাই নগ্ন অনভিলাষী, যেন মনে হচ্ছে এই ব্যাপারটাতে ওনাদের ছেলের কোন দোষই নেই। এনাদের তাকানো বা কথা বলার ধরনে মনে হচ্ছে যেন ট্রেসিই এই সব ঘটিয়ে তাঁদের ছেলের জীবনে একটা কলঙ্কের দাগ লাগিয়ে দিয়েছে।
‘আজকালকার দিনে এই সব...’ কথাটা বলতে বলতে চুপ করে গেলেন মিসেস স্ট্যানহোপ, কারন সেই মুহুর্তে চার্লস ঘরে প্রবেশ করছে। ট্রেসির যেন মনে হল তার সারাটা জীবনে এতটা খুশি সে আগে কখনও হয়নি।
‘তারপর? সব কেমন চলছে তোমাদের?’ চার্লস ঘরে ঢুকতে ঢুকতে প্রশ্ন করল।
ট্রেসি তাড়াতাড়ি সোফা থেকে উঠে চার্লসের কাছে গিয়ে তার বাহুটাকে ধরে বলে উঠল, ‘খুব ভালো, ডার্লিং।’ মনে মনে ভাবলো, উফ, ভাগগিস চার্লস এঁদের মত নয়। অবস্য হবেও না। এনারা কেমন যেন সঙ্কির্ণ মনের অসম্ভব উন্নাসিক আর ঠান্ডা। এনাদের মধ্যে সেই আপন করে নেওয়ার ব্যাপারটাই যেন নেই।
পেছনে একটা খুক খুক করে কাশির আওয়াজে ঘাড় ফিরিয়ে দেখে বার্টলার একটা ট্রেতে ড্রিঙ্কস নিয়ে দাঁড়াইয়ে রয়েছে। ট্রেসি মনে মনে বলে উঠল, এবার সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। এই সিনেমাটার মত একটা হ্যাপি এন্ডিং হবে নিশ্চয়।
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
ডিনার খুব ভালো ছিল। কিন্তু ট্রেসির মুখে সে খাবার উঠছিল না, এতটাই নার্ভাস হয়ে ছিল সে। খাবার টেবিলে তারা ব্যাঙ্কিং, রাজনীতি, পৃথিবীতে এই মুহুর্তের আর্থিক দুর্নীতি নিয়ে নানান আলোচনা হতে থাকল, কিন্তু সবটা যেন ভিষন ভাবে গুরুগম্ভীর আবহাওয়ার মধ্যে। খাবার টেবিলের সেই প্রাণচ্ছল ব্যাপারটাই যেন সম্পূর্ণ ভাবে অনুপস্থিত। ওনাদের কথাবার্তার বা বার বার তার দিকে তাকানোতে ট্রেসির যেন মনে হচ্ছে এনারা শুধু একটা কথাই চিৎকার করে তাকে বলছে না ‘তুমি, ট্রেসি তুমি আমার ছেলেকে ফাঁসিয়েছ, তাকে বাধ্য করছ বিয়ে করতে।’ বলছেন না, কিন্তু সেটা যেন না বলার মধ্যেই আরো বেশি করে উচ্চারিত হচ্ছে তাঁদের আচার ব্যবহারে। আবার আর একদিক দিয়ে দেখতে গেলে, এনাদের যে খুব একটা দোষ আছে, সেটাও মানছে না ট্রেসি। স্বাভাবিক। খুবই স্বাভাবিক নিজের ছেলে কাকে বিয়ে করছে সেই ব্যাপারে চিন্তিত থাকা। কারণ ভবিষ্যতে এনাদের অবর্তমানে এই বিরাট সাম্রাজ্য একদিন চার্লসেরই হবে। তাই চার্লসের উচিত সঠিক জীবন সঙ্গীনি বেছে নেওয়া। আর ট্রেসি জানে চার্লস সঠিক জীবন সঙ্গীনিই বেছে নিয়েছে। সে সব দিক দিয়ে চার্লসকে সুখি করবে। এটা তার প্রতিজ্ঞা। নিজের কাছে।
টেবিলের নিচে ন্যাপকিনটা নিয়ে হাতে পাকাতে পাকাতে ভাবছিল ট্রেসি। চার্লস হাত বাড়িয়ে তার হাতটাকে ধরে একটু চাপ দিয়ে ছোট্ট একটা চোখ মেরে বলে উঠল তার বাবা মার দিকে তাকিয়ে, ‘ট্রেসি আর আমার ইচ্ছা একটা ছোট্ট অনুষ্ঠান করে এই বিয়েটা করতে। তারপর...’
তার কথা শেষ করার আগেই ফোঁস করে উঠলেন মিসেস স্ট্যানহোপ, ‘কক্ষনো না! আমাদের পরিবারে কোনদিন ছোট করে বিয়ের অনুষ্ঠান হয়নি। আর হবেও না। চার্লস, ভুলে যেওনা, আমাদের প্রচুর আত্মীয় সজন রয়েছে, যাঁরা তোমার বিয়ে দেখার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন।’ একটু থেমে ট্রেসির দিকে তাকালেন। মনে হল যেন তিনি ট্রেসিকে আগাপাশতলা মেপে নিলেন একবার। ‘আমার মনে হয় বিয়ের আমন্ত্রন পত্র এখনই পাঠানো শুরু করে দেওয়া দরকার। কারন আমাদের অনেক আত্মীয় আছেন, যাঁরা বিদেশে থাকেন। তাঁদেরকে এখন থেকেই না নিমন্ত্রেণ পত্র পাঠালে ঠিক সময় এসে পৌছাতে পারবেন না। আর ওনারা এলে, এই বাড়িতেই উঠবেন, তাই বাড়িটাকেও সেই উপযোগী করে তোলার দরকার। তুমি কি বলো, ট্রেসি?’ শেষের কথাটা প্রায় ছুঁড়ে দিলেন ট্রেসির দিকে।
তাড়াতাড়ি করে মাথা নেড়ে উত্তর দিল সে, ‘হ্যা, হ্যা। আপনারা যা ভালো বোঝেন...’ যে ভাবে কথাগুলো বলছেন মিসেস স্ট্যানহোপ, তাতে ট্রেসির মনে হচ্ছে যেন সে কোন কোম্পানির বোর্ড মিটিংএ যোগ দিতে এসেছে। বিয়ের কথা হচ্ছে, কিন্তু তার মধ্যে কোন প্রাণচ্ছলতা নেই একদমই।
পাশ থেকে এবার প্রশ্ন করলেন মিঃ স্ট্যানহোপ, চার্লসকে লক্ষ্য করে, ‘তোমরা কোথায় মধুচন্দ্রিমা যাপন করবে, কিছু ঠিক করেছ?’
চার্লস ট্রেসির হাতে সামান্য একটু চাপ দিয়ে স্মিত হেসে উত্তর দিল, ‘সেটা এখন গোপন রেখেছি বাবা।’
‘হু। তা কতদিনের জন্য তোমাদের মধুচন্দ্রিমা হবে?’ পরবর্তি প্রশ্ন মিঃ স্ট্যানহোপের।
এবারেও হেসে উত্তর দিল চার্লস, ‘প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে।’ শুনে ট্রেসির মনটা খুশিতে ভরে উঠল। অন্য সময় হলে হয়তো আনন্দে লাফিয়ে উঠত সে। অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত রাখল।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
ডিনার শেষে সবাই এসে লাইব্রেরীতে বসল। এখানে ওদেরকে ব্র্যান্ডি পরিবেশন করা হবে। এটাই এই পরিবারের দস্তুর। লাইব্রেরিতে ঢুকে চারদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগল ট্রেসি। বিশাল কক্ষের চারটে দেওয়ালই দামী ওক প্যানেলের সেলফদিয়ে মোড়া। আর সেই সেলফে রাখা রয়েছে চামড়া দিয়ে বাঁধানো প্রচুর দুস্প্রাপ্য বই। দুটো করট, একটা কপলে, একটা রেনল্ড... আরো কত কত বই। আজ চার্লস যদি এত বড়লোক না হত তাতে ট্রেসির কিছু যায় আসতো না, তাতেই সে সুখি হত। কিন্তু এই প্রাচুর্য দেখে একটা জিনিস তার কাছে পরিষ্কার, তার আগামী জীবন খুব আরামদায়ক আর প্রাচুর্যে ভরা হতে চলেছে।
চার্লস যখন তাকে তার ফেয়ারমাউন্ট পার্কের ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টের সামনে নামাতে এল, তখন প্রায় মাঝরাত।
‘আশা করি আজকের সন্ধ্যা খুব খারাপ যায় নি তোমার, ট্রেসি? জানি, বাবা মা একটু প্রাচীনপন্থি, মাঝে মধ্যে হয়তো একটু রূঢ় ব্যবহার করেছেন তোমার সাথে।’
‘এ বাবা, না, না। ওনারা সত্যিই খুব ভালো।’ হেসে মিথ্যা কথাটা বলল সে।
আজকে সত্যিই ট্রেসি ভিষন ভাবে ক্লান্ত। সারা সন্ধ্যার টেনশনই যেন তাকে আরো বেশি করে ক্লান্ত করে তুলেছে। দরজার পাল্লাটা খুলে ধরে চার্লসের দিকে তাকিয়ে প্রেমঘন কন্ঠে সে বলে উঠল, ‘ভেতরে আসবে না চার্লস?’ এই মুহুর্তে ভিষন ভাবে চার্লসের বাহুডোরে বাঁধা পড়তে ইচ্ছা করছে তার। তার শুনতে ইচ্ছা করছে, ‘ভালোবাসি সোনা তোমায়। ভিষন ভালোবাসি। পৃথিবীর কোন শক্তি নেই তোমাকে আমার থেকে আলাদা করে।’ কিন্তু চার্লস নিজের হাতে বাঁধা দামী রোলেক্স ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল, ‘না, আজ থাক। কালকে আবার সকাল থেকে খুব জরুরী কাজ আছে।’ অনেক কষ্টে নিজের হতাশা চাপা দিয়ে ট্রেসি উত্তর দিল, ‘ঠিক আছে, আমি বুঝতে পারছি ডার্লিং।’ স্মিত হেসে মাথাটা সামান্য ঝুঁকিয়ে ট্রেসির ওষ্ঠে একটা ছোট্ট চুমু এঁকে দিয়ে চার্লস বলল, ‘কাল কথা হবে, কেমন?’ বলে আর দাঁড়ালো না। ট্রেসি তাকিয়ে রইল করিডোর ধরে ধীরে ধীরে হেঁটে চলে যাওয়া চার্লসের শরীরটার দিকে।
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
পুরো বাড়িটাই আগুনের গ্রাসে... দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। তার সাথে এক নাগাড়ে বেজে চলেছে আগুন লাগার বিপদসঙ্কেত অ্যালার্মটা... সেটার আওয়াজে মনে হচ্ছে মাথাটা যেন যন্ত্রনায় ফেটে যাবে... কানে তালা লেগে যাওয়ার উপক্রম...
ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসল ট্রেসি। নাক তুলে জোরে জোরে নিঃশ্বাস টেনে আগুনের পোড়া গন্ধ পাওয়ার চেষ্টা করল নিকশ কালো অন্ধকার ঘরটাতে। না তো! সে রকম কোন গন্ধ তো নেই... তবে এই বিপদসঙ্কেতের ঘন্টি বেজে চলেছে কেন? এবার খেয়াল হল তার। ওটা অ্যালার্মের আওয়াজই নয়, বিছানার পাশের টেবিলে রাখা টেলিফোনটা বাজছে নাগাড়ে। টেলিফোনের পাশে রাখা ঘড়িতে তখন সময় জানান দিচ্ছে রাত আড়াইটে। প্রথমেই তার মাথায় এল, তাহলে কি চার্লসের কিছু হল? তা নয়তো এত রাত্রে কার ফোন? তাড়াতাড়ি করে হাত বাড়িয়ে ক্র্যাডেল থেকে ফোনটা তুলে কানে লাগিয়ে বলে উঠল, ‘হ্যালো!’
ওপাশে এক অপরিচিত পুরুষ কন্ঠ, ‘ট্রেসি হুইটনি?’
একটু দোনামনা করল সে। এত রাত্রে... অশ্লীল ফোন নয়তো? একটু থেমে উল্টে প্রশ্ন করল, ‘কে বলছেন?’
‘আমি লেফট্যানেন্ট মিলার বলছি, নিউ অর্লিন্স পুলিশ ডিপার্টমেন্ট থেকে। আপনি কি ট্রেসি হুইটনি?’
নিউ অর্লিন্স আর পুলিশ শুনে বুকের মধ্যে যেন অসংখ্য দামামা বেজে উঠল তার, ‘হ্যা, বলছি।’
‘একটা দুঃসংবাদ আছে আপনার জন্য’
শক্ত করে টেলিফোনের রিসিভারটাকে খামচে ধরল হাতের মধ্যে। তখনও লেফট্যানেন্ট মিলার বলে চলেছেন, ‘কথাটা আপনার মায়ের ব্যাপারে।’
‘ক...কি হয়েছে মায়ের? অ্যাকসিডেন্ট?’
‘না, উনি আর বেঁচে নেই। আপনার মা মারা গেছেন, মিস হুইটনি।’
‘নাআআআআআ’, ফোনের মধ্যেই প্রায় চিৎকার করে উঠল ট্রেসি। এটা নিশ্চয় একটা বাজে ফোন। রাতের বেলায় তার সাথে ফোন করে কেউ মজা করছে। বদমাইশী করছে নিশ্চয় তার সাথে। মায়ের কিছু হতে পারে না। কক্ষনো না। মা, মাগো, আমি তোমাকে বড্ড ভালোবাসি যে মা, বড্ড ভালোবাসি, তোমার কিচ্ছু হতে পারে না। এই তো গতকালই মায়ের সাথে কথা হল। তা হলে?
ওপাশ থেকে কানে কথা ভেসে এল, ‘আমি বুঝতে পারছি। আমার নিজেরই এই সময় আপনাকে এই রকম একটা খবর দিতে খারাপ লাগছে।’
না, এটা সত্যি। একটা দুঃস্বপ্ন। দুঃস্বপ্ন, কিন্তু সত্যি। ট্রেসির জিভ যেন জড়িয়ে গেছে। মুখ থেকে কোন কথা সরছে না। টেলিফোনের রিসিভারটা হাতে নিয়ে পাথরের মত স্থির হয়ে বসে রইল সে। ওপার থেকে তখন বার বার প্রশ্ন ভেসে আসছে, ‘মিস হুইটনি, আপনি, লাইনে আছেন? শুনতে পারছেন আমার কথা? মিস হুইটনি, উত্তর দিন দয়া করে, শুনতে পারছেন?’
একটু চুপ করে থেকে খানিকটা দম নিয়ে খুব ধীর স্বরে থেমে থেমে ট্রেসি শুধু বলল, ‘আমি কালকের প্রথম ফ্লাইট ধরছি...’ বলে আসতে করে রিসিভারটা টেলিফোনের ক্র্যাডেলে নামিয়ে রেখে দিল।
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
রান্না ঘরের খাবার টেবিলে এক কাপ কফি করে নিয়ে চুপ করে ট্রেসি বসেছিল জানলার বাইরে রাতের কালো আকাশটার দিকে তাকিয়ে। তাকিয়ে রয়েছে, কিন্তু সেই মুহুর্তে কিছুই চোখে পড়ছে না তার। মা, মাগো, তুমি নেই? ভিতরটা গুমড়ে গুমড়ে উঠছে যেন। এইতো গতকালও মায়ের সাথে কথা হল। কই, তখন তো দিব্বি কথা বলল মা। তবে? বার বার মায়ের মুখটা ভেসে উঠছে চোখের সামনে। কি অনুনাদশীল, হাসি খুশি মানুষটা। সর্বদা যেন প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা। তার আর মায়ের মধ্যে অদ্ভুত একটা সম্পর্ক ছিল, সেটা যত না মা মেয়ের তার থেকে অনেক বেশি বন্ধুত্বের। সেই ছোট্টবেলা থেকে যা কিছু প্রবলেম, সব মায়ের কাছে এসে বলা চাই তার। তা সে কলেজে পড়া কালিন কোন ঘটনা অথবা বড় হয়ে অন্য কোন পুরুষ সম্বন্ধে। এতটুকুও দ্বিধা বোধ আসত না মায়ের কাছে কিছু বলতে। কোন কিছু গোপন ছিল না তার মায়ের কাছে। মনে আছে বাবা মারা যাবার পর কত লোকে চেয়েছিল বাবার ব্যবসাটা নেবার জন্য। মাকে প্রচুর টাকা অফার করেছিল তারা। কিন্তু মা প্রথম দিন থেকেই দৃঢ়তার সাথে সব অফার ফিরিয়ে দিয়েছে। মা বলতো, ‘তোর বাবা এত কষ্ট করে ব্যবসাটাকে দাঁড় করিয়ে গেছে, সেটা অন্য লোককে বিক্রি করে দেব? কক্ষনো না।’ নিজের হাতে ব্যবসার হাল ধরল মা। আস্তে আস্তে আরো বেশি করে উন্নতি করতে লাগল বাবার রেখে যাওয়া ব্যবসা, মায়ের হাত ধরে। আর কোনদিন চার্লসের সাথে মায়ের আলাপ করিয়ে দেওয়া হবে না। আর কোনদিন ট্রেসির সন্তান তার দিদিমার ছোয়া পাবে না। ভাবতেই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল ট্রেসি। সামনে কফিটা আস্তে আস্তে ঠান্ডা হয়ে গেছে কখন সে দিকে ট্রেসির কোন হুসই নেই। চুপ করে বসে রইল ঠান্ডা কফির কাপটা হাতে ধরে। একবার ভাবল চার্লসকে ফোন করে বললে ভালো হত? কিন্তু তারপর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে তখন রাত প্রায় সাড়ে তিনটে। নাঃ। এই সময় চার্লসকে ঘুম থেকে তুলে এই রকম একটা সংবাদ দেওয়ার কোন মানেই হয় না। বরং নিউ অর্লিন্স পৌছে একটা ফোন করে দিলেই হবে’খন। চার্লসএর কথা মনে আসতেই নিজেদের বিয়ের কথা মাথায় এল তার। বিয়ের কি হবে? পরক্ষনেই নিজের এই ধরনের ভাবনায় খারাপ লাগল তার। ছিঃ। এই সময় নিজের বিয়ের কথা মনে আসছে। ছি ছি। আচ্ছা, লেফট্যানেন্ট মিলার বলেছিলেন এয়ারপোর্টে নেবেই একটা ট্যাক্সি নিয়ে তাড়াতাড়ি পুলিশ হেড কোয়ার্টারে যেতে। কেন? পুলিশ হেড কোয়ার্টার কেন? কি ঘটেছে সেখানে?
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
ভীড়ে ঠাসা নিউ অর্লিন্স এয়ারপোর্টে দাড়িয়ে সুটকেসে জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে যে ভাবে লোকের গোঁতা খেতে হচ্ছে, তাতে ট্রেসির মনে হতে লাগল এই রকম ভীড়ে যেন দম বন্ধ হয়ে যাবে তার। সকলেই ব্যস্ত। যে যেরকম খুশি থাক্কা মেরে চলে যাচ্ছে। অনেক করে সে চেষ্টা করছে ব্যাগেজ ক্যারাসোলের দিকে এগিয়ে যেতে, কিন্তু সামনের লোকগুলো যেন পণ করেছে তাকে আগে না যেতে দেবার। কি অদ্ভুত মানুষগুলো। সত্যি বলতে কি আর কিছুক্ষন পর কি দেখতে চলেছে, ভাবতেই মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে বেচারার। মাথার মধ্যে শুধু ওই কথাগুলো বার বার করে বাজছে... ‘এটা দুঃসংবাদ ছিল আপনার জন্য... তিনি আর বেঁচে নেই, মিস হুইটনি... আমার খুব খারাপ লাগছে খবরটা দিতে...’ অবশেষে সে তার সুটকেসটাকে কোন রকম করায়ত্ত করতে পেরে তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে একটা ট্যাক্সি ডেকে নিল। ড্রাইভারকে ভালো করে ঠিকানাটা বুঝিয়ে দিল, যেটা লেফট্যানেন্ট তাকে দিয়েছিল... সাতশ পনেরো সাউথ ব্রড স্ট্রিট।
ট্যাক্সিতে ওঠার পর ট্রেসিকে রিয়ার ভিউ মিরর দিয়ে দেখতে দেখতে ড্রাইভার প্রশ্ন করল, ‘এখানে যে খুব বড় শো হবার আছে, সেটা দেখতে এসেছেন, মিস?’
ড্রাইভার কোন ব্যাপারে জানতে চাইছে তা বুঝতে পারল না সে। কিন্তু মনে মনে বললো, ‘না, আমি এখানে মৃত্যু দেখতে এসেছি...’ ড্রাইভার বকেই চলেছে সমানে গাড়ি চালাতে চালাতে, কিন্তু তার একটা কথাও শোনার মানসিক অবস্থায় ট্রেসি নেই। সেই সাথে দূর থেকে একটা দুম দুম করে নাগাড়ে বাজনার শব্দ ভেসে আসছে। তারা যত ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টারের দিকে এগিয়ে যেতে থাকল, ততই যেন সেই বাজনার শব্দ আসতে আসতে বাড়তে লাগল। আর সেই সাথে অনেক মানুষের সম্মিলিত চিৎকার। মনে হচ্ছে যেন বিশাল একটা মানুষের মিছিল আসছে, যেখানে সবাই উন্মাদ হয়ে গিয়েছে। তারঃস্বরে চিৎকার করে চলেছে।
খানিকটা গিয়ে ড্রাইভার গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিল। ‘আর এগুনো সম্ভব নয় আমার পক্ষে, মিস...’
ট্রেসির ট্যাক্সির সামনের উন্ডস্ক্রিনের মধ্যে দিয়ে তাকাতেই পরিষ্কার হয়ে গেল। হাজার হাজার মানুষ নাচতে নাচতে আর সেই সাথে পাগলের মত চিৎকার করতে করতে এগিয়ে আসছে মিছিল নিয়ে। কারুর মুখে মুখোস, কেউ সেজেছে ড্রাগন বা বিশাল কুমীর তা নয় তো প্যাগান গড। সারাটা রাস্তা ফুটপাত জুড়ে মিছিল এগিয়ে আসছে। আর সেই সাথে উচ্চস্বরে বাজছে ড্রাম, বিউগল। পুরো ব্যাপারটা যেন উন্মত্ততার বিস্ফোরণ... মারদি গ্রাস... নিউ অর্লিন্সের এক বিশেষ কার্নিভাল, যেটা সাধারনতঃ ক্রিশ্চানরা পালন করে থাকে ফ্রেব্রুয়ারী মাসের এই সময়টায়। সারা শহর এই সময় লেন্ট উৎসব শুরুর আগে মারদি গ্রাস কার্নিভাল উদযাপন করে থাকে।
ড্রাইভার সসব্যস্ত হয়ে বলে উঠল, ‘মিস, আপনি বরং তাড়াতাড়ি আমার গাড়ি থেকে নেমে যান। ওরা এসে পৌছানোর আগেই আমি গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে চলে যাই, নয়তো এ যা পরিস্থিতি, তাতে আমার গাড়ী যদি উল্টে দেয়, আমার বলার কিছু থাকবে না।’
ট্রেসি তড়িঘড়ি ট্যাক্সি থেকে সুটকেস নিয়ে নেবে রাস্তার একধারে চুপ করে দাঁড়িয়ে পড়ল। ততক্ষনে উন্মত্ত মিছিল এসে পড়েছে প্রায় ঘাড়ের ওপর। কিছু বোঝার আগেই ট্রেসিকে যেন ভাসিয়ে নিয়ে চলল সেই নাচতে নাচতে চিল চিৎকার করে চলা উন্মাদ মানুষের মিছিলটা। নিমেশে ট্রেসির হাত থেকে তার সুটকেসটা ছিটকে বেরিয়ে কোথায় হারিয়ে গেল। ততক্ষনে তাকে শয়তানের মুখোস পরা একটা মোটা লোক জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে শুরু করেছে। একটা হরিণ এসে তার নরম স্তনটাকে টিপে ধরল। একটা বিশাল পান্ডা পেছন থেকে এসে প্রায় শূন্যে তুলে নিল তাকে। সে আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগল এই উন্মাদগুলোর হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পালিয়ে যেতে, কিন্তু অলিক সে প্রচেষ্টা। তাকে সেই ভাবেই ওই উন্মত্ত জনতা ভাসিয়ে নিয়ে যেতে থাকল তাদের মিছিলের সাথে সাথে। যেন পালাবার কোন পথ নেই এর থেকে। অবশেষে যখন সে নিজেকে কোনরকমে ছাড়িয়ে একটা ফাঁকা রাস্তায় পালাতে সক্ষম হল, তখন তার প্রায় পাগলের মত অবস্থা। অনেকক্ষন চুপ করে দাড়িয়ে রইল সেখানে একটা ল্যাম্পপোস্টে হেলান দিয়ে, বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে। আস্তে আস্তে যখন সে একটু সামলে নিয়েছে বুঝল, সে রওনা হল পুলিশ স্টেশনের দিকে ধীর পায়ে।
******
Posts: 3,681
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
এই গল্পটা কি সম্পূর্ণ পোস্ট করা হয়ে গেছে ? গল্পটা সম্পূর্ণ হলে এখন পড়তে বসবো....
❤❤❤
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(19-09-2021, 04:00 PM)Bichitravirya Wrote: এই গল্পটা কি সম্পূর্ণ পোস্ট করা হয়ে গেছে ? গল্পটা সম্পূর্ণ হলে এখন পড়তে বসবো....
❤❤❤
আরো অনেকটাই আছে
•
Posts: 3,681
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
(19-09-2021, 10:31 PM)ddey333 Wrote: আরো অনেকটাই আছে
তাহলে পুরোটা পোস্ট করার পর পড়বো। ওই কামদেব দার রাঙা কাকুর মতো হয়ে যাবে আবার....
❤❤❤
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
আমিও নিজের চাকরি জীবনে খুব ব্যস্ত হয়ে গেছি , দেশে বিদেশে দৌড়া দৌড়ি শুরু ..
আর বিশেষ কিছু পারবো না এখানে ...
•
|