Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
(11-10-2021, 12:38 PM)ddey333 Wrote: পরকীয়া 

""""""""""""""

 এরপর যদি কোনও দিন দেখি এই সব ছোঁকছোকানিতাহলে শিলের ওই নোড়া দিয়ে তোমার হাড়মাশ সব এক করে দেব বলে দিলাম অসভ্য কোথাকার
গোপন দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে কিন্তু ধরা পড়ে গেলে সে একেবারে যাতা  । হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলাম ;শিকড়; লেখার সময় ধরা পড়ে গিয়ে। তবে আমার বৌ গালাগাল বলতে পারে না। গল্পটা শুনে  বড় বড়  চোখে তাকিয়ে ছিল।
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(11-10-2021, 12:38 PM)ddey333 Wrote:
পরকীয়া 

""""""""""""""

বাইশে মে লকডাউনের সন্ধ্যায় ডাইনিং রুমে বউ সুমনার পাশে বসে  সিরিয়াল দেখার সাথে সাথে সমীর ফেসবুকের নিউজ ফিড খুলে খুলে দেখছে ফেসবুক জুড়ে সব পোস্টই এখন করোনা সংক্রান্ত একটা পোস্ট নজর কাড়তেই সুমনাকে বলল দেখ দেখ বেশ মজার সুমনা ঝুঁকে পড়ে দেখা শেষ করতেই অমনি টুং করে ম্যাসেঞ্জারে একটা ম্যাসেজ ঢুকল-- "কল করো" সমীরের অবস্থা তখন রাস্তা পার হতে গিয়ে অসাবধানে চলন্ত দশ চাকার লরির তলায় চাপা পড়ার আতঙ্ক হার্টবিট ধরাক ধরাক করে যেন বেসুরো তাসা বাজচ্ছে তাড়াতাড়ি ম্যসেজটা লুকিয়ে ফেলল সুমনা বলল, "কে ম্যাসেজ করল?"  সমীর,  "এখন লকডাউনে অনেকের খেয়ে দেয়ে কোনও  কাজকর্ম নেই সারাদিন কেবল এটা সেটা খেজুরে আলাপ আর কিসমীর অনুভব করছে গেঞ্জিটা অল্প ভিজে গেছে টেনশনে মনে মনে ভাবছে শ্লা করোনা আসার আর সময় পেল না সবে প্রেমটা জমছে তখনই কথা নেই বার্তা নেই কোথা থেকে দুম করে করোনা এসে হাজির দেশ জুড়ে লক ডাউন বাইরে বের হওয়া বারণ ঘরে বন্দি থাকো যত্তসব সুমনা এমনিতেই সন্দেহ করে এই সুযোগে আর বাইরেই যেতে দিচ্ছে না এদিকে ভয় পাচ্ছে এখন যদি হঠাৎ ম্যাসেঞ্জারে ওদিক থেকে কল করে বসে তাহলেই শেষ সুমনা নির্ঘাত শিলে বেটে থেঁতলে দেবে যা ডেঞ্জার  মেয়ে , এই ভেবেই নেট টা অফ করে দিল সুমনা আবার টিভিতে মনোযোগ দিতেই সমীর মনে মনে লোকনাথ বাবকে স্মরণ করল কিন্তু ভীষণ কনফিউজড লোকনাথ বাবা তো রণে বনে জলে জঙ্গলে বিপদ থেকে বাঁচায় শুনেছে ঘরের ভেতর বউয়ের পাশে এই রকম পরকীয়া কেসে হাতেনাতে ধরা পড়লে তাকে কতটা সাপোর্ট দেবে যথেষ্ট সন্দেহ এই সময়ে ওনার স্মরণাপন্ন হওয়া মানে ধুম জ্বরে হোমিওপ্যাথি ওষুধের খাওয়ার মতন রিক্স হয়ে যাচ্ছে শ্লো অ্যাকশন সিওর না না কুইক অ্যাকশন হবে এমন কিছু ভাবতে হবে ওসবে ভরসা করা যাচ্ছে না কিছুক্ষণ পরে সুমনাকে বলল সিগারেট একদম শেষ একবার বাইরে যেতেই হবে শুনেই সুমনা বলল, "একদম না, দরজার বাইরে পা দিয়ে দেখ তোমার একদিন কি আমার এক দিন" সমীর মনে মনে ভাবছে উফ! কী জ্বালায় পড়লাম রে বাবা, ফোনে প্রেমের হাতছানি ঘরে লাদেন বউয়ের হুমকি কোন দিকে যে যাই উসখুস উসখুস করছে দুবার ড্রইং রুমে গিয়ে জল খেয়ে এল টিভিতে বিজ্ঞাপন শুরু হতেই সুমনা উঠে রান্না ঘরের দিকে গেল সমীর ভাবল এই সুযোগ এখন ফোন করা যে সম্ভব না জানিয়ে দিই যেই নেট অন করেছে অমনি ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ "খুব দরকার আছে কল করো না হলে আমিই করব" ম্যাসেজটা দেখেই তো হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাবার যোগাড় চুল খাড়া হয়ে যাচ্ছে  ব্যচেলর বলাটা ভীষণ ভুল হয়েছে দেখছি এদিক বাড়িতে বউ আছে জানলে  প্রেমটাই তো হত না উফ কী সমস্যায় পড়লাম রে বাবা কী করে ম্যানেজ  করব বুঝতে পারছি না তখনই সুমনা পিছনে এসে বলল, তরকারিটা একটু কম কম মনে হচ্ছে একটু আলু সেদ্ধ দিয়ে দেব? সমীর বলল আচ্ছা এই সব জিজ্ঞেস করার কি আছে? দিলে দাও এখন তো দেখছি তরকারিতে কতটা নুন দেবে সেটাও বলে দিতে হবে সুমনা চলে গেলে আবার ম্যাসেজ করতে যাবে অমনি বাজ পড়ার মতন আওয়াজ করে সুমনা ধপাস করে পাশে বসে পড়ল সমীর মনে মনে বলল, " সমীর আজ তোর নির্ঘাত কালশর্প যোগ রে! শিহরে শনি নাচাচ্ছে সিওর" ভয়ে ভয়ে সমীর ফোনটাই সুইচ অফ করে দিল সমীরের শরীরে তখন অস্থির অস্থির ভাব কিছুক্ষণ পরেই পাশে থাকা সুমনার ফোন বেজে উঠল সুমনা ধরেই বলল , "কেমন আছো? আমরা ভালো আছিনা তো, দেখছিবলেই কেটে দিয়ে সমীরকে বলল, "তোমার ফোন সুইচ অফ?"  সমীর, "না তো" সুবিমলদা ফোন করছে পাচ্ছে না সমীর - বাবা অফ হয়ে গেছে তা'হলে" সুমনা বলল, " নতুন ফোন এমনি এমনি অফ হয়ে গেল? সমীর, "তাই তো দেখছিসুমনা বলল,  " কোনও দিন অফ হয় না আজ অফ হয়ে গেল? আমি তো দেখলাম তুমি অফ করলে ম্যাসেঞ্জারে মেসেজটা আসার পর থেকেই তো দেখছি তোমার নাটক ভাবছ কিছুই বুঝি না?" চেনো তো আমাকেযদি উল্টেপাল্টা কিছু দেখেছি ঝেঁটিয়ে ঝাল ঝেড়ে দেব" সমীর বলল,, "কী আবোলতাবোল  বলছো কিছু বুঝছি না "সুমনা বলল, "আমি আবোল তাবোল বলছি? তুমি ওদিকে ডুবে ডুবে জল খাচ্ছো আর ভাবছো আমি কিছু বুঝতে পারছি না? সমীর - "খবরদার যা তা বলবে না বলছি একে সিগারেট নেই মাথা কাজ করছে না তারপর আবার আনাপসানাপ বকছো মাথা খারাপ কোরো না"   সুমনা বলল, "আমি যা তা বলছি? মাথা খারাপ করছিতুমি পিয়ালী নামে একটা মেয়ের সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করছ সেটা আমার জানতে বাকি নেই বুঝলে? সমীর মনে মনে বলল আবার গোয়েন্দা হল কবে থেকে রেসমীর একটু সামলে, "এবাবা তো আমার কলিগ কাজের স্বার্থে  ম্যাসেজ চালাচালি তো করতেই হয়" সুমনা, "আহা কি দারুণ, ম্যাসেজ চালাচালি করতেই হয়!" কান খুলে শোনো  সুবিমলদার বউকে আমি একটা ফেক একাউন্ট খুলে তোমার চরিত্র পরীক্ষা করতে বলেছিলাম তোমার স্বভাব চরিত্র যে সুবিধার না সেটা আমি বিয়ের পর থেকেই বুঝেছি মেয়ে দেখলেই হামলে পড়া স্বভাব ওই পিয়ালী হল সুবিমলদার বউয়ের ফেক আই ডি বুঝলে? এরপর যদি কোনও দিন দেখি এই সব ছোঁকছোকানিতাহলে শিলের ওই নোড়া দিয়ে তোমার হাড়মাশ সব এক করে দেব বলে দিলাম অসভ্য কোথাকার
হেহে..... দেখলে কেমন তুমি খেল ও চাঁদুরে  Big Grin
Like Reply
(11-10-2021, 07:56 PM)dimpuch Wrote: গোপন দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে কিন্তু ধরা পড়ে গেলে সে একেবারে যাতা  । হাড়ে হাড়ে বুঝেছিলাম ;শিকড়; লেখার সময় ধরা পড়ে গিয়ে। তবে আমার বৌ গালাগাল বলতে পারে না। গল্পটা শুনে  বড় বড়  চোখে তাকিয়ে ছিল।

Big Grin
Like Reply
(11-10-2021, 08:04 PM)Baban Wrote:
হেহে..... দেখলে কেমন তুমি খেল ও চাঁদুরে  Big Grin

banghead
Like Reply
[Image: IMG-20211012-WA0007.jpg]

শুধু প্রতিমায় নয় প্রতি মাতে দুর্গা বিরাজ করছেন পুজো সকলের ভালো কাটুক 
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
পরকীয়া পড়লাম 

তুমি চলো ডালে ডালে তো আমি চলি পাতায় পাতায়  Big Grin Big Grin Big Grin

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
- Sir, আপনার order টা নিয়ে location দাড়িয়ে আছি 

- দাড়াও ভাই, আসছি 
 
দরজা খুলে অনীশ মুখার্জী গেটের বাইরে এসে সাইকেল করে আসা  Zomato- ছেলেটার কাছ থেকে তার খাবারের ব্যাগটা নেয় 
 
- Thank you,  Sir,  please 5 star দিয়ে দেবেন 
- Ok, দাড়াও একটু, দেখে-নি সব ঠিক আছে কিনা
 
ব্যাগের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে অনীশ দেখেতে থাকে Zomato ছেলেটা মনে মনে অবাক হয়, ভাবে, এখন আবার প্যাকেট খুলে খুলে দেখবে না তো, ভেতরে সব ঠিকঠাক খাবার দিয়েছে কিনা! এইটাই লাস্ট delivery ছিল, ভিষণ খিদে পেয়েছে,ভাবলাম এবার বাড়ি গিয়ে খয়ে নেব, এখন আবার কতো দেরী করায় কে জানে
এদিকে অনীশ ব্যাগের থেকে একটা খাবারের প্যাকেট বের করে নিয়ে বলে
- এই একটা প্যাকেট নিয়ে যাও, আর একটা রাখলাম
- না.. মানে Sir, আপনি যা order দিয়েছিলেন, তাই এনেছি, আপনি দুটো চাউমিনের order করেছিলেন 
- হ্যাঁ, দিয়েছিলাম তো এখন প্রায় রাত নটা-সাড়ে নটা বেজে গেছে, একলা মানুষ, দুটো প্যাকেট নিয়ে কি করব? তুমি একটা নিয়ে যাও 
 
Zomato বাইশ-তেইশ বছরের ছেলেটা ভাবছে (এতো মহা ঝামেলায় পড়লাম, তাহলে order-টা দিলে কেন বাবা!) যথাসম্ভব মাথা ঠান্ডা রেখে বললো
- Sir, আমি তো on time-এই নিয়ে এসেছি আপনার ফুল পেমেন্টও হয়ে গেছে আপনাকে cancell  করতে হবে order টা অসুবিধা হবে এইভাবে একটা প্যাকেট নিয়ে আরেকটা ফেরত দিতে গেলে অসুবিধা হবে 
 
Zomato app খুলে অনীশ ছেলেটির নামটা দেখে নিয়ে বললো
- তপন, থাকো কোথায়? কে কে আছেন বাড়িতে? এখানে তো দেখাচ্ছে, তোমার ওপর দুজন dependent, তুমি একমাত্র  earning member
 
তপন ভাবে, এতো আমার ঠিকুজি নিয়ে পড়লো, আবার complain করবে না তো! স্টার পাওয়া আমার মাথায় উঠলো, এবার বক্ বক্ করো এর সাথে, কোথায় ভাবলাম তাড়াতাড়ি বাড়ি গিয়ে একটু খাবো!
তপন একটু মাথা নীচু করে বলে
- কাছেই থাকি Sir, সাহেব বাগান, মা-বাবা আর আমি অনেক রাত হলো তো Sir, আর ফেরত দেবেন না ফ্রিজে রেখে দিন, কাল নাহয় খেয়ে নেবেন, এক্ষুনি বানিয়েছে, নষ্ট হবে না এটাই আমার last order ছিলনা হলে.... 
 
একটু স্মিত হেসে, অনীশ বলে
- এই প্যাকেটটা তোমার বাড়ি নিয়ে যেতে বলছি দোকানে তো ফেরত নিয়ে যেতে বলিনি 
 
এবার তপনের অবাক হওয়ার পালা
- মা.. নে, ঠিক বুঝতে পারলাম না 
 
অনীশ হেসে বলে
- দেখো ভাই তপন, আমি একা থাকি, ইচ্ছে করেই দুটো প্যাকেট order দিয়েছি তোমাকে খাওয়াবো বলে এই পরিস্থিতি না থাকলে তোমাকে ঘরে নিয়ে গিয়ে  বসিয়ে খাওয়াতাম তুমি যদি নিয়ে যাও, আমার খুব ভালো লাগবে আমি যখনই order দি, একটা বেশি order করি... নিয়ে যাও ভাই 
 
অনীশের অমায়িক কথা শুনে, তপনের চোখটা ছল্ ছল্ করে ওঠে যা রোজগার করে, কোনরকমে চলে যায় তিন জনের রোজই এখান থেকে ওখানে খাবার বয়ে নিয়ে যায়, ইচ্ছে থাকলেও কখনো পকেটের টান ওকে  দোকানের খাবার কিনতে দেয়নি 
 
আবার ভাবে, এইভাবে ভিক্ষার জিনিস নেওয়া উচিত হবে কিনা!
 
অনীশ যেন তপনের মনের কথা শুনতে পায়, সঙ্গে সঙ্গে বলে
- ভেবো না ভাই, আমি তোমায় ভিক্ষে দিচ্ছি আসলে, একা থাকি তো, কেউ খেলে ভালো লাগে নেবে?.. 
 
তপন আর কথা না বলে প্যাকেট-টা নিয়ে, তার চোখের ভাবেই ধন্যবাদ জানিয়ে সাইকেলের প্যাডেলে চাপ দেয় এইরকম মানুষ- এখনকার এই কঠিন পরিস্থিতিতে পৃথিবীতে আছে.... এরাই মনে হয় মানুষ রূপী ঈশ্বর.. সাহেব বাগানের দিকে এইসব ভাবতে ভাবতে চলতে থাকে তপন 

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
অনীশ মুখার্জী, আই. টি. সেক্টরের বড় চাকুরে, কোলকাতার উপকন্ঠে একটা ছোট বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে জলপাইগুড়িতে মা-বাবা, একান্নবর্তী পরিবারে থাকেন, এখন ওয়ার্ক ফর্ম হোম হোলেও, মাঝে মাঝে অফিসে যেতে হয়, তাই আর জলপাইগুড়ি যাওয়া হয়না অনেকসময়  মা-বাবা এখানে এসে কয়েকদিন থেকে গেলেও সবসময়ের জন্য থাকতে চাননা অগত্যা বিয়ে করতে অনাগ্রহী অনীশ একা- থাকে, সকালে কণিকা মাসি রান্না আর ঘরের অন্যান্য কাজ করে দিয়ে যায়, তাতেই বেশ চলছে তার মুখের স্বাদ বদলের জন্য, Zomato-তে order করে, নিজের যা লাগে সবসময় তার থেকে একটা বেশি order করে, লক্- ডাউনের বাজারে এইভাবে ওই ছেলেগুলোকে খাইয়ে মানসিক প্রশান্তি পায় অনেকে অনেকভাবে এই সময় মানুষকে সাহায্য করছে, এইভাবে কিছু করার চেষ্টা করে

 
তপন, পরিমল, আমিনুল, প্রলয়, ফিরাদ আরো অনেকেই সেদিন এই অঞ্চলের নামকরা একটি রেস্টুরেন্টে-এর সামনে নিজেদের বাহন নিয়ে order নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল একে অপরের পরিচিত হওয়ায় টুকটাক হাসি-মস্করাও চলছে, এমন সময় ফিরাদের কাছে নতুন order ঢোকে তার চোখে হাল্কা হাসি খেলে যায়, তপনের চোখ যায় ফিরাদের দিকে-
 
- কিরে, হাসলি কেন ওই  address দেখে
- ... কিছু না, এই বাড়িটাতে আগেও গেছি 
- তো? শুধু এরজন্য হাসলি? বল্ না ফিরাদ, কি ব্যাপার? গোপন কিছু
 
গলাটা খাদে নিয়ে, একটু আড়াল করে ফিরাদ বললো-
 
- ওই বাড়িতে অনীশ মুখার্জী বলে একজন থাকেনসবসময় একটা বেশি order দেয়, যে delivery করতে আসে তাকে ওইটা দিয়ে দেয় আজকে রাতে একটু ভালো-মন্দ পেটে যাবে (একটু হেসে বলে) বড়ো ভালো মানুষ-রে দাদা, এইরকম লোকও আছে
 
ফিরাদের কথা শুনতে শুনতে তপনের- চোখ গোল গোল হয়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে বলে-
 
- .. মি চিনি ওনাকে, আমিও একদিন ওই  extra box-টা পেয়েছিলাম, মা-বাবা ভিষণ খুশি হয়েছিল সেদিন উনি তো আবার order-এর সঙ্গে tips- যোগ করে দেন - 50/- টাকা সত্যি বড়ো ভালো মনের লোক 
 
এই শহরতলীর অনেক Zomato delivery boy  এর কাছেই অনীশ মুখার্জী বিশেষ পরিচিত হয়ে যায় এরা সবাই জানে, ওনাকে প্যাকেট দিতে গেলেই উনি ভালোবেসে আরেকটা ওদের হাতে ঝুলিয়ে দেবে পয়সা রোজগার করতে বেরিয়ে উপরি পাওনা এই ভালোবাসা সবারই মনে দাগ কাটে 
 
সেদিন সকাল থেকেই অনীশের শরীরটা ভালো লাগছে না, মাথাটা টিপ্-টিপ্ করছে, কোমর- গা-হাত-পা ব্যথা, কিছুই ভালো লাগছে না কণিকা মাসি দুদিনের ছুটি নিয়ে বোনের বাড়ি গেছে, রান্না করে ফ্রিজে খাবার- রেখে গেছে, কিন্তু কিছুই খেতে ইচ্ছে করছে না সন্ধ্যের সময় calpol 650 খাওয়ায় শরীরটা একটু ঝর্ ঝরে লাগলে, Zomato তে order দেয়, পছন্দের দোকানের চাউমিন 
 
আটটা নাগাদ তপন তাদের অনীশদার জন্য খাবার নিয়ে হাজির হয় এখন আর ওরা  location- এসে phone করেনা, অনীশদার বাড়িতে calling bell   বাজিয়ে একদম হাতে দিয়ে দেয় কিন্তু সেদিন দুবার calling bell বাজিয়ে, দু-এক বার অনীশ-দা করে চেঁচিয়ে ডেকে, phone- পুরো রিং হয়ে যাওয়ার পর- অনীশদার দেখা না পাওয়ায় তপন একটু ঘাবড়ে যায় এমনিতেই ওর বাড়িটা পাড়ার শেষ প্রান্তে, আশেপাশে ফাকা, লোকজন- বিশেষ কাউকে এদিকে দেখা যায়না ঘরের যে জানলার আলো বাইরের দিকে পড়েছে, সেদিকে গিয়ে পর্দা সরিয়ে তপন ভীষণ অবাক হয়ে যায় 
 
দেখে, কিরকম অদ্ভুত ভাবে খাটের ধারে শুয়ে আছে অনীশদা - বা হাত খাট থেকে নীচে ঝুলছে, বা-পা-টাও কেমন ধারের দিকে ঝুলে রয়েছে, মুখটা অন্যদিকে ঘোরানো কিছুক্ষণ ওইদিকে তাকিয়ে, তপন হতবাক হয়ে যায়, কি করা উচিত ঠিক বুঝে উঠতে পারে না, সম্বিত ফিরতেই সে প্রথমেই ফিরাদকে phone করে ফিরাদ বাকিদের সব জানায়... সবাই প্রায় আধঘণ্টার মধ্যে চলে আসে তাদের প্রিয় অনীশদার বাড়িতে আমিনুল-এর ওই অঞ্চলের  Zomato zonal manager এর সাথে বিশেষ জানাশোনা থাকায় আর পুলিশের সহায়তায় অনীশ মুখার্জী-কে কোলকাতার হসপিটালে ভর্তি করা সম্ভব হয় 
 
কদিন প্রায় যমে-মানুষে টানাটানি যায়, কখনো প্রলয়, কখনো তপন....  ওরা কেউ না কেউ হাসপাতালে থেকে, কখনো রাত জেগে যখন যা দরকার যোগান দিয়ে গেছে জলপাইগুড়ি থেকে ওর মা-বাবা -খুড়তুতো ভাই এসে অর্থের ব্যবস্হা করলেও অনীশের Zomato ভাইয়েরা সমস্ত ছোটাছুটির কাজগুলো নির্দ্বিধায় স্ব-উৎসাহে করে যায় দিনের পর দিন প্রায় একমাস হাসপাতালে কাটিয়ে বাড়ি ফেরে অনীশ, সেদিন- তার সঙ্গী ছিল ফিরাদ
 
আরও একমাস পরে, আজ অনীশ মুখার্জীর ভাড়া বাড়িতে আনন্দ হইচই, বাড়িতে রীতিমতো ঠাকুর  দিয়ে রান্না চলছে অনীশের Zomato ভাইদের আজ সারাদিনের নিমন্ত্রণ বাড়িতে, যার যখন সুবিধা এসে খেয়ে যাবে ওরা নিজেরাই সবকিছু তদারকি করছে, তপন-ফিরাদ আজ ছুটি নিয়েছে অনীশ বারান্দায় ঠায় বসে আছে তার এই বৃহৎ পরিবারের সদস্যদের সাদরে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ওর মা-বাবাও ওদের এই মিলন উৎসবে সমান উৎসাহে মেতে উঠেছেন.... পরম করুণাময় ঈশ্বরের কাছে তাঁরা বারবার ধন্যবাদ জানাচ্ছেন, ভাগ্যিস্ অনীশের এই ভাইয়েরা এখানে ছিল.... তা-না হলে কি যে হতো কে জানে?
 
(সংগৃহীত)

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
কিছু বিনিময় হয় টাকার মাধ্যমে, আর কিছু এই পবিত্র ভালোবাসা, বিশ্বাস মানবিকতা ও শ্রদ্ধার মাধ্যমে. যেটা ওই টাকার থেকে অনেক বেশি দামি. কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়.... ও ভাইরে!! সত্যিই আজও এসব অদ্ভুত মানুষ আছে যারা নিজের সাথে সাথে ওপরের জন্যও ভাবে... কে জানে? অদ্ভুত সেসব মানুষ নাঁকি আমরা?
Like Reply
যদিও এটা সংগৃহিত কিন্তু গল্প নয় ,

পুরোপুরি সত্যি ঘটনা , ফেসবুকে কেউ একজন লিখেছিলেন ...
Like Reply
#অনুগল্প
#হাঁদারামের_বৌ
#কলমে_অরু(অরুণিমা নাথ)

সোনাই... অ্যাই সোনাই... সোনাই... কানে কি কথা যাচ্ছে না নাকি... সোনাই... বলতে বলতে ঘরে ঢুকলেন একজন বছর পঞ্চাশের মধ‍্যবয়স্কা মহিলা। পরণে সাধারণ শাড়ি যার আঁচলটা কোমরে গোজা রয়েছে এবং ডান হাতে একটি স্টিলের খুন্তি ধরা, যা থেকে বোঝা যায় মহিলা রান্না করতে করতেই এখানে ছুটে এসেছেন। এই মুহূর্তে তার মুখখানা যথেষ্ট পরিমাণে লাল বর্ণ ধারণ করেছে এবং দুচোখেও স্পষ্ট রাগের ঝলক দেখা যাচ্ছে... তার দৃষ্টি স্থির হয়ে রয়েছে ঘরের একেবারে মাঝামাঝি অংশে রাখা বিছানার ওপর ঘুমিয়ে থাকা একটি মেয়ের দিকে... মেয়েটি ঘুমিয়ে থাকলেও তার ঠোঁটের কোণে আলতো একটা হাসির ঝিলিক দেখা যাচ্ছে যা থেকে অনুমান করা যায় যে হয়তো মেয়েটি কোনো মিঠে স্বপ্নের আবেশে বিভোর হয়ে রয়েছে... মহিলাটি আরো কয়েক মুহূর্ত মেয়েটির দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকার পরে দুই কদম এগিয়ে গিয়ে টেবিলের উপর রাখা জলের গ্লাসটি তুলে গ্লাসে থাকা জলটা সজোরে ছুঁড়ে দিলেন সেই মেয়েটির ঘুমন্ত মুখ লক্ষ্য করে... আচমকাই নিজের মুখে এভাবে জলের আক্রমণে মেয়েটি "বৃষ্টি.. বৃষ্টি... ছাদ ফুটো হয়ে গেছে... সব ভেসে যাবে মা..." বলতে বলতে ধড়মড়িয়ে বিছানায় উঠে বসে, তারপর চারদিকে নজর বুলিয়ে অবাক হয়ে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে বলে...
কি হল, কোথায় বৃষ্টি? 
তারপর নিজের মুখে হাত দিয়ে ত্বকের সিক্ততা অনুভব করে বলে...
এই তো জল, তাহলে এটা কোথা থেকে এল?... বলতে বলতেই তার নজর পড়ে সামনে দাড়িয়ে থাকা মহিলাটির দিকে যিনি বর্তমানে তার দিকেই জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন... 

মেয়েটি কিছু বলার আগেই সেই মহিলা বেশ ব‍্যঙ্গের সুরে বলে ওঠেন...
তা বলি মহারাণীর ঘুম ভাঙল নাকি আরো এক গ্লাস জল ঢালব?

মেয়েটি তখন দুহাতে চোখ রগড়ে বেশ কিছুটা আড়মোড়া ভেঙে এবং শেষে একটা বড় হাই তুলে জড়ানো গলায় বলে...
উফ্ মা কি সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলাম আমার সল্লুকে নিয়ে... সল্লু আর আমি ইতালিতে বেড়াতে গেছি... চারদিকে কত বরফ... সল্লু আমাকে গোলাপ হাতে প্রপোজ করছে... কিন্তু তুমি এসে সব ভণ্ডুল করে দিলে ধুর... মুখ পেঁচিয়ে বলে মেয়েটি ওরফে সোনাই।

এই যে খুন্তি দেখছো, এইটার বাড়ি পিঠে এক ঘা পড়লে না, সব স্বপ্ন জানলা দিয়ে পালাবে... সকাল আটটা বাজে, এই ধিঙ্গি মেয়ের এখনো ঘুম ভাঙল না... বলছি ইউনিভার্সিটি কি আমি যাবো নাকি ওটাকে তোমার এই বাবার বাড়ির হোটেল পেয়েছো যে যখন খুশি যাবে আর তোমাকে ক্লাসে ঢুকতে দিয়ে দেবে?... চিৎকার করে ওঠেন মহিলাটি ওরফে সোনাইয়ের মা।

উফ্ মা, কুল ডাউন! সবে আটটা বাজে এখনো তিন ঘন্টা দেরী আছে। কত দিন পরে জমিয়ে একটু স্বপ্ন দেখছিলাম দিলে সবটা পণ্ড করে... এক এক সময় খুন্তি হাতে এমন মা কালী হয়ে যাও না কি বলব... বিকৃত মুখে বলে সোনাই।

আর একটা কথাও শুনলে না এই গরম খুন্তির একটা মারও বাইরে পড়বে না বলে দিলাম... ওঠ্, শিগগির ওঠ... আগে বাথরুমে যা... পনেরো মিনিটের মধ‍্যে যদি নিচে টেবিলে না দেখেছি তাহলে সত‍্যি সত‍্যিই এই খুন্তি তোর পিঠে ভাঙব বলে দিলাম... তেইশ বছর বয়স হয়ে গেল এখনো নবাবজাদীর ধিঙ্গিপনা গেল না...

ওহ্ মা চিল! বারবার ওই খুন্তির ভয় দেখিয়ে লাভ নেই সেকথা তুমিও জানো আর যতক্ষণ তুমি এখানে দাড়িয়ে আমার পিছনে টাইম ওয়েষ্ট করছো ততক্ষণে তোমার খুন্তি আর রান্না দুটোই ঠান্ডা বরফ হয়ে গেছে... আর সবসময় বয়সের খোটা দেবে না তো, আমি এখনো যথেষ্ট বাচ্চা আছি... বিছানা থেকে নামতে নামতে উত্তর দেয় সোনাই।

তবে রে... সোনাইয়ের কথায় তার মা তেড়ে আসলে সোনাই... "ও বাবা গো, তোমার মেয়েকে মেরে ফেলল তোমার পাগল বৌ..." বলেই একছুটে ওয়াশরুমে ঢুকে ধড়াম করে দরজা বন্ধ করে দেয়। তারপর দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বড় বড় শ্বাস নিতে নিতে বিড়বিড় করে বলে...
বাপ রে, খুব বাঁচান বেঁচে গেছি আজ নাহলে সত‍্যিই আজ ওই খুন্তি আমার পিঠে পড়তই.. মাদার ইণ্ডিয়া যা খেপেছে আজকে, মাথার ওই আগুন শান্ত হওয়াটা হেবি চাপের...

ওদিকে তখনও তিনি চিৎকার করে চলেছেন বাইরে থেকে...
কতবার বলেছি দেখ দেখে শেখ কিছু নির্ঝরের থেকে, কি ভালো ছেলেটা... যেমন পড়াশোনা তেমনি স্বভাব চরিত্রে। সি.এ পাশ করে ব‍্যাঙ্কে চাকরি পেয়ে গেল এইটুকু বয়সে আর উনি এখনো ধেই ধেই করে নেচে চলেছেন সারাদিন আর ইউনিভার্সিটি গিয়ে টো টো করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন... মা-বাবার প্রতি বিন্দুমাত্র সম্মান নেই আর ওদিকে নির্ঝর প্রতিদিন অফিসে বেরোনোর আগে কি সুন্দর তনুজা দিকে বলে যায় "মা, আমি আসছি"... আর এক আমার মেয়ে, ভোর রাত অবধি জেগে সাত বেলায় ঘুম থেকে উঠবে আর নাকেমুখে গুজে ছুটবে... এ জীবনে বোধহয় আমার আর শোনা হল না যে মা আমি আসছি...

এদিকে ভিতর থেকে এই সব কথাই সোনাইয়ের কানে খুব সুন্দরভাবে পৌঁছে যাচ্ছিল... এতক্ষণ মায়ের এমন মধুর বচনে সকাল সকাল নিজের কান দুটোকে সার্থক করে অবশেষে সে মুখ খোলে...
বলছি মা, তোমার মেয়ের না এখনো এম.এ টা শেষ হয়নি হ‍্যা, ওটা শেষ হলে যখন চাকরি পাব তখন আমিও ওই হাঁদারাম মানে তোমার নির্ঝরের মত বলে যাব যে আমি আসছি...

হ‍্যা.. হ‍্যা... দেখব কত চাকরি পাও! চাকরি তো ছেলের হাতের মোয়া না, যখন চাইবে তখনই দোকান থেকে কিনে এনে হাতে ধরিয়ে দেবে... লোকজন তো বসে রয়েছে ওনাকে চাকরি দেওয়ার জন্য... পড়াশোনার যা বহর তাতে এম.এ টা টেনেটুনে পাস করলে হয়... হা ভগবান, আমার গর্ভেই এমন একটা উড়নচণ্ডী মেয়ের জন্ম দিতে হল...

এই যে মাদার ইণ্ডিয়া, ভগবানকে বলে লাভ নেই তার থেকে বরং তুমি গিয়ে এখন রান্নাটা শেষ করো নাহলে বাবা বাজার থেকে বাড়ি ফিরে তোমার ওপর খেপে লাল হয়ে যাবে তাই আমার ওপর ঝাল পরে ঝেড়ে এখন গিয়ে রান্নাটা শেষ করো। আমার কিন্তু এখন থেকেই পেটে ছুঁচোয় ডন দিচ্ছে, টেবিলে খাবার না পেলে কিন্তু আমি না খেয়েই চলে যাব এই বলে দিলাম... ভিতর থেকে বলে সোনাই।

অসহ‍্য.. অসহ‍্য... জ্বলে গেল জীবন আমার এই মেয়ে নিয়ে... বলতে বলতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি।

যাক মা গেছে এবার আপনাদের সাথে একটু ঠিকমত কথা বলতে পারব... এই যে যিনি এখনি আমার ষষ্ঠীপুজো করে গেলেন তিনি আমার মা জননী শ্রীমতী তমালিকা বসু, আমার বাবা যিনি এখন বাজারে গেছেন তার নাম শ্রীযুক্ত তমাল বসু এবং আমি তাদের একমাত্র মেয়ে বিবৃতি বসু ওরফে সোনাই। আমার বয়স এখন তেইশ, যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে আমি বাংলায় মাস্টার্স করছি। তাই বলে ভাববেন না সারাক্ষণ আমি কঠিন কঠিন বাংলা কপচাই... নেহাত ছোটবেলা থেকে এই সাবজেক্টে ভালো ছিলাম আর এইচ এসেও ভালো নম্বর ছিল তাই বাংলার ঘাড় ধরেই ঝুলে পড়লাম, যতই হোক মাতৃভাষা বলে কথা... এই তমালিকা দেবী মানে আমার মা এতক্ষণ ধরে আমার পিছনে বেগার খাটছিলেন তার কারণ হল আমার দেরীতে ঘুম থেকে ওঠা। আচ্ছা এখানে আমার কি দোষ বলুন তো তাড়াতাড়ি ঘুম না ভাঙলে... কাল রাতে সল্লু মানে সলমন খানের হেব্বি ঝিঙ্কুমার্কা একটা রোমান্টিক সিনেমা দেখতে দেখতে অনেক রাত হয়ে গেছিল ঘুমাতে... এদিকে সল্লু হল আমার জানেমন, আমার দিল কা টুকড়া, আমার ফেবারিট হিরো তাই সল্লুর সিনেমা না দেখলে ভগবান আমাকে পাপ দেবে না তাইতো সিনেমাটা শেষ করে ঘুমোতে গেলাম... আর স্বপ্ন দেখলাম সল্লু আর আমি ইতালিতে বেড়াতে গেছি... চারিদিকে সাদা বরফের চাদর বিছিয়ে রয়েছে... সল্লু একটা গোলাপের তোড়া নিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে আমাকে প্রপোজ করছে আর যখনি আমি সেই প্রপোজাল আ্যাকসেপ্ট করে ফুলগুলো নিতে গেলাম ঠিক তখনি এই মাদার ইণ্ডিয়া রণচণ্ডী হয়ে এসে আমার স্বপ্নে মানে আমার মুখে জল ঢেলে সল্লুর প্রপোজালের বারোটা বাজিয়ে দিল... বাকি যা কিছু তার সবটাই তো আমার মায়ের থেকেই জেনে গেছেন তাহলে এবার তার বিষয়ে বলি যার সাথে মাদার ইণ্ডিয়া আমার তুলনা করছিল‌। নির্ঝর মিত্র ওরফে হাঁদারাম। বলছি বলছি কেন আমি ওকে হাঁদারাম বলে ডাকি... আমাদের ফ্ল‍্যাটের উপরের তলায় থাকে মিত্র ফ‍্যামিলি। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই তনুজা আন্টির সাথে মায়ের খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। এই ফ্ল‍্যাটে আমরা এবং ওরা প্রায় একই সাথেই শিফট করেছিলাম তাই হয়তো সখ‍্যতা হতে বেশি সময় লাগেনি। ওদিকে বাবার সাথে রাজদীপ আঙ্কেলেরও ভীষণ ভালো বন্ধুত্ব কিন্তু এর মধ‍্যে শুধু ব‍্যতিক্রম হলাম আমি আর নির্ঝর। ওই হাঁদারামটার নামে আর কি বলব, সবটাই তো মা বলে দিল। কিন্তু সত‍্যি বলছি আমার না ওই নির্ঝরকে একদম সহ‍্য হয় না বিশ্বাস করুন। তুই ব‍্যাঙ্কে চাকরি করিস কোথায় ঠাটবাট নিয়ে চলবি, বন্ধুদের সাথে ঘুরবি-বেড়াবি-হ‍্যাং আউট করবি তা না উনি লতানো লাউডগার মত প্রতিদিন ঠিক টাইমে অফিস যাবেন আর অফিস থেকে ফিরেই নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বসে থাকবে। কি করছে জিজ্ঞাসা করলে বলবে কাজ করছি। কাজ না হাতির মাথা! আমার তো ডাউট হয় ব‍্যাটা তলে তলে অন‍্য কিছু করে। মাঝেমধ্যেই মা ভালোমন্দ রান্না করলে মিত্র বাড়িতে দিয়ে আসতে বলে আমাকে, কতবার বলেছি যাব না ওই হাঁদারামের বাড়িতে কিন্তু আমার কথার কোনো মূল‍্য আছে নাকি এই বাড়িতে... উল্টে ধমক খেতে মায়ের কাছে যে কেন ওনার আদরের নির্ঝরকে আমি হাঁদারাম বলছি। বিশ্বাস করুন ওইরকম একটা গোপাল অতি সুবোধ বালক টাইপের ছেলেকে হাঁদারাম না বলে আর কি বলব... যখনই ওদের বাড়ি গেছি আজ অবধি একটা কথা বলা তো দূর চোখ তুলে আমার দিকে তাকায় নি অবধি... নয়তো হা করে বসে ক্রিকেট গিলেছে নয়তো ল‍্যাপটপে মুখ গুজে বসে থেকেছে আর নয়তো ডাইনিং টেবিলে বসে এমনভাবে মাথা নিচু করে খেয়েছে যেন আমার দিকে তাকালেও ওর ব্রহ্মচর্য ভেঙে যাবে... যতটুকু জানি হাঁদারাম আমার থেকে বছর চারেকের বড় তাহলে ওর বয়স আন্দাজ সাতাশ কি আঠাশ। এই বয়স থেকেই মোটামুটি ছেলেরা বিয়ের প্ল‍্যান করতে শুরু করে তা বাপু তুইও কর না কিন্তু না উনি ওইসব করবেন না কারণ উনি মনে হয় আজীবন ব্রহ্মচর্য পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাইতো প্রতিদিন অফিস যাওয়ার আগে বলে যায় 'মা, আমি আসছি'। কোথায় বিয়ে থা করে মাকে রেহাই দিয়ে বৌকে নরম সুরে বলে যাবি যে 'ও বৌ, আমি এলাম' তা নয়, উনি সেই মায়ের ঘাড়েই চেপে বসে থাকবে। তবে যতই রাগ করি না কেন এটা অস্বীকার করার জো নেই যে হাঁদারামকে কিন্তু এক কথায় ফার্স্ট ক্লাস দেখতে... ওইরকম হ‍্যাণ্ডু মার্কা চেহারা, ক্লিন শেভেন মুখ, কাটা কাটা নাক-চোখ, ওইরকম হাইট আর হালকা হালকা মাসলওয়ালা বডি... এইরকম পারফেক্ট কম্বিনেশনের ছেলে আমাদের এই পাড়ায় কটা আছে হাতে গুণে বলা যায়। আমার ঘরের একটা জানলা ফ্রন্ট ফেসিং হওয়ায় মেন গেট থেকে কেউ বেরোলেই সেটা আমার চোখে পড়ে। তাই ওই হাঁদারামটাও যখন ফিটফাট হয়ে ফুল বাবু হয়ে অফিস যায় তখন না চাইতেও আমার চোখটা ওর দিকে একবার হলেও চলে যায়... কিন্তু তাই বলে ওর ওপর ক্রাশ, নৈব নৈব চ কারণ আমার ক্রাশ তো আমাদের ফ্ল‍্যাটের অপোজিটের মুখার্জি বাড়ির একমাত্র ছেলে রক্তিম। মানছি হাঁদারাম সুন্দর কিন্তু রক্তিমও কোনো অংশে কম যায় না... ও যখন নিজের ঘরের সামনের ব‍্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলে তখন হা করে আমি ওর হাসিমাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকি... রক্তিম আমার মনের কথা বোঝে কি না কে জানে তবে দেখা হলেই যে কিলার স্মাইলটা দেয় না উফ্ আমি ওখানেই ক্লিন বোল্ড..! আর এই এক হাঁদারাম, রাস্তাঘাটে এমনকি লিফটে ওঠার সময়ও যদি কখনো একসাথে আসি তবুও ব‍্যাটা মুখ ফুটে দুটো কথা বলে না এমন উটকো ছেলে একটা... আমিও কথা বলি না। কেন বলব নিজে থেকে তাই আমারও ভারি বয়ে গেছে, হুহ্..! এই দেখেছেন আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে কখন এতটা সময় পেরিয়ে গেছে খেয়ালই করি নি। যাই এবার কাজ সারি নাহলে ওদিকে আবার মাদার ইণ্ডিয়া তাণ্ডব করতে শুরু করে দেবে...

.......

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল বাঁধছিলাম ইউনিভার্সিটি যাব বলে হঠাৎ জানলা দিয়ে বাইরে চোখ পড়লে দেখি হাঁদারাম ফুল বাবু সেজে চললেন অফিসে... তবে মানতে হবে বস, এই ডার্ক ব্লু শার্ট আর লাইট ব্লু জিন্সে নির্ঝরকে দারুণ লাগছে। অবশ্য যা গায়ের রং তাতে ওকে সবকিছুতেই মানিয়ে যায় সাথে আজকে আবার চুলে জেল লাগিয়েছে মনে হচ্ছে? উম্, ব‍্যাপার কি? কারোর জন্য ছিপটিপ ফেলতে যাচ্ছে নাকি... না ব‍্যাঙ্কে নতুন মেয়ে কলিগ এসেছে যাকে ইমপ্রেস করার জন্য বাবুর এত সাজ... এই.. এই.. এই... আমি মরতে ওই হাঁদাটার কথা ভাবছি কেন? আর কি বলে ডাকছিলাম যেন, নির্ঝর... আহ্...! আমার মাথা গেছে... এ শিওর ওই জল ঢালার ফল। মায়ের জন্য আমার সল্লুকে আই লাভ ইউ টু বলা হল না আর এখন এই হাঁদারামটা আমার মাথায় চেপে বসছে সকাল সকাল ওর নামের পাঁচালি শোনার জন্য... বিবু রে, এত অধপতনের আগে তুই পাগল হলি না কেন রে... মাথা চাপড়ে যখন নিজেকে পাগল বানানোর চেষ্টা করছি ঠিক তখনি মাদার ইণ্ডিয়ার চিৎকার শুনে হাঁদারামের কথা ভুলে 'আসছিইইইই' বলে ছুট লাগালাম নাহলে আজকের ব্রেকফাস্টটুকুও আর জুটবে না কপালে শুধু গালমন্দ খেয়েই কলেজ যেতে হবে...

......

সেদিনই তাড়াতাড়ি ক্লাস শেষ হয়ে যাওয়ায় আমি আর আমার বেস্ট ফ্রেন্ড রূপু মানে রূপকথা দুজনে মিলে যাদবপুরের এইট বি বাসস্ট্যান্ড থেকে হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছিলাম বাস ধরব বলে হঠাৎ রূপু লাফিয়ে উঠে বলল...
এই বিবু, ওই দ‍্যাখ ফুচকা। এ কতদিন খাই না রে, চল চল... 

আমিও সাথে সাথেই মাথা নাড়িয়ে একগাল হেসে বললাম...
হ‍্যা চল, ফুচকাকে না বললে ভগবান পাপ দেয়।

তারপর আর কি, দুজনে মিলে জমিয়ে তখন বিভিন্ন সাইজের ফুচকাগুলোকে উদরস্ত করতে করতে ফুচকাওয়ালা কাকুকে ইনস্ট্রাকশন দিয়ে চলেছি কখনো ফুচকার সাইজ নিয়ে আবার কখনো টক জল নয়তো আলু মাখা নিয়ে... তখন আমি পনেরো নম্বর ফুচকাটা সবে মাত্র গালে ঢুকিয়ে আরাম করে চিবিয়ে তার স্বাদ নিচ্ছি ঠিক তখনই রূপু সামনে কিছু একটা দেখে চমকে উঠে বলল...
ওই দ‍্যাখ বিবু, ওটা তোর হাঁদারাম না?

রূপুর কথায় আমিও যাহোক করে আধ খাওয়া ফুচকার টুকরোগুলোকে পেটে চালান করে সামনে তাকিয়ে দেখি, হ‍্যা সত‍্যিই তো। ওইতো ওই ফুটে হাঁদারাম দাঁড়িয়ে রয়েছে আর এই শার্ট-জিন্সেই তো সকালে ওকে বেরোতে দেখলাম কিন্তু ব‍্যাটা এখন এই চারটের সময় এখানে কি করছে?

এই প্রশ্নটা যখন সবেমাত্র আমার মনের ভেতরে নিজের জায়গাটা ভালো করে সেট করে নিচ্ছে ঠিক তখনই রূপুও আমার ভাবনাগুলোকে শব্দে রূপ দিয়ে বলল...
এ ভাই, এই ছেলে এখন এখানে কি করছে রে? এর তো এখন ব‍্যাঙ্কে থাকার কথা... কাউকে লাইন-ফাইন মারছে নাকি রে ইউনিভার্সিটির..?

হ‍্যা সত‍্যিই তো, রূপুর কথাটা তো ভেবে দেখার মত। যে ছেলে কিনা রোজ মাকে বলে যায়, মা আসছি সেই ছেলেই আজ এত ইসটাইল মেরে ফুলবাবু সেজে পুরো ঝিঙ্কু লুক নিয়ে এখানে এইট বি এর কাছে কি করছে? এমনিতেই যাদবপুর আর এইট বি বাসস্ট্যান্ড প্রেমের লীলাক্ষেত্র তাই এখানে এসেছে মানে শিওর কোনো ঘাপলা কেস আছে। এইসব কথাই যখন আবার আমার মাথার ভিতর সকালের মত কিলবিল করতে শুরু করেছে ঠিক তখনই আবার রূপু আমাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলল...
কি রে বিবু, কি এত ভাবছিস? আর ব‍্যাটা তো তোদের ফ্ল‍্যাটের ওপরেই থাকে তাহলে তুই কিছু জানিস না এই ব‍্যাপারে?

এখানে বলে নেওয়া প্রয়োজন যে নতুন পাড়ায় এই ফ্ল‍্যাটে শিফট হবার পর রূপুর সাথেই আমার প্রথম বন্ধুত্ব হয়। কিভাবে যেন আমাদের দুজনের ফ্রিকোয়েন্সি ম‍্যাচ করে গেছিল আর তারপর কিভাবে যে দুজনে বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে গেলাম সেকথা আমরা নিজেরাও জানি না। তাই ন‍্যাচারালি সব কথার মত হাঁদারামের কথাও আমি রূপুকে জানিয়েছিলাম এছাড়াও এক পাড়ায় থাকার জন্য রূপুও হাঁদারামকে চেনে আর মোটামুটি ওর বিষয়ে সবকিছু জানে ও...

রূপুর কথায় আমি ঝাঁঝিয়ে উঠে বললাম...
আশ্চর্য তো, ওর খবর আমি কি করে জানব? আমি কি ওর গার্লফ্রেন্ড নাকি বিয়ে করা বৌ যে ওর সব ঠিকুজি-কুষ্ঠি, কোথায় কখন যায় আসে সব আমি জেনে বসে থাকব... হাঁদাটা তো আমাকে দেখলেই এমন ভাব করে যেন আমি বাঘ, ওর ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ব। আস্ত উজবুক একটা, ওর মত হাঁদারামের খবর রাখতে আমার বয়েই গেছে। ফুচকা খাওয়ার মুডটাই পুরো বিগড়ে দিলি ধুত... বলে পাতাটা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আমি গটগট করে এগিয়ে গেলাম আর শুনলাম রূপুর চিৎকার...
এই বিবু ওয়েট আমি আসছি..!

......

বেশ কয়েকদিন পরের কথা, আমি তখন দাঁড়িয়ে আছি ফ্ল‍্যাটের ছাদে। এই বিকেল বেলার সময়টা আমার একা ছাদে দাঁড়িয়ে থাকতে বড্ড ভালো লাগে। হালকা ফুরফুরে হাওয়া, সূর্য ঢলে পড়ছে পশ্চিম দিকে আর তার মরা আলোর লাল আভায় ভরে যাচ্ছে আকাশের সবটুকু কোণা... সারাদিন এদিক সেদিক ঘুরে ক্লান্ত হয়ে সব পাখিরা ফিরে যাচ্ছে নিজের নিজের বাসায়... এই অদ্ভূত সুন্দর দৃশ‍্যটা আমাকে ভীষণ টানে তাই প্রায়ই আমি ছাদে এসে নিজের একাকীত্বটাকে উপভোগ করি এই পরিবেশের সাথে... প্রতিদিনের মত আজও পশ্চিম আকাশের দিকে তাকিয়ে মন দিয়ে সূর্যের মিলিয়ে যাওয়া দৃশ্য উপভোগ করছি ঠিক তখনই কারোর পায়ের শব্দে আমার চমক ভাঙল... পিছনে ফিরে দেখি ও বাবা, এ যে হাঁদারাম। কিন্তু এখন এই সময়ে ব‍্যাটা এখানে কি করছে? পরে মনে পড়ল আজ তো রবিবার তাই বাবু ছুটির দিনে ছাদে হাওয়া খেতে এসেছেন। পরণে একটা কালো ট্র‍্যাক প‍্যান্ট আর সাদা রঙের টি-শার্ট, এই সামান্য ড্রেসেই হাঁদাটাকে বেশ লাগছে কিন্তু... অবশ্য এরকম হ‍্যাণ্ডু হলে সব পোশাকেই মানিয়ে যায়। ওদিক হাঁদারামও ভাবেনি যে এই সময় আমাকে এখানে দেখবে তাই বেচারা নিজেও হকচকিয়ে গেছে... ওর চোখ-মুখ দেখে মনের অবস্থা বুঝে নিতে সমস্যা হল না আমার এছাড়া আমি নিজেও ওর সাথে থাকতে অত কমফর্টেবল ফিল করি না তাই ভাবলাম ছেলেটা একদিন ছাদে এসেছে, ও-ই নয় থাকুক আমি নাহয় পরে আসব... এই ভাবনা মতই সবেমাত্র ওর পাশ কাটিয়ে সিড়ির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি ঠিক তখনি গম্ভীর গলায় নির্ঝর বলে উঠল...
দাঁড়াও বিবৃতি, তোমার সাথে আমার কথা আছে।

কি হল, কি ভাবছেন হঠাৎ হাঁদারাম ছেড়ে কেন নির্ঝর বললাম? বিশ্বাস করুন ছেলেটা যেরকম গাম্ভীর্যের সাথে আমাকে ডাকল তাতে কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমি যেন ফ্রিজ হয়ে গেলাম...! তাছাড়া এতদিন ভাবতাম ব‍্যাটাচ্ছেলের আমার ওপর নজর অবধি দেয়নি কখনো কিন্তু এখন দেখছি এ আমার নামও জানে। এই কেসটা কি হল? কোনো ঘাপলা করেছি বলে তো মনে পড়ছে না তাহলে আমাকে হঠাৎ দাঁড়াতে বলল কেন, আর কি কথা বলতে চায় তাও আবার আমার সাথে... এইসব চিন্তাই মাথার মধ‍্যে একসাথে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিল তাই আমার সবসময় চলতে থাকা মুখটাও কিছু সময়ের জন্য নিজের ঝাঁপ বন্ধ করেছিল আর সেই সুযোগেই হাঁদারাম বলল...
তোমার সাথে আমার জরুরি কিছু কথা আছে, তোমার কাছে কি একটু সময় হবে আমাকে দেওয়ার জন‍্য?

লে পচা, এটা কি হল? মোহাব্বতের অমিতাভ থেকে ডাইরেক্ট ম‍্যায়নে প‍্যায়ার কিয়া-র সল্লুতে কনভার্ট হয়ে গেল কি করে এই ছেলে? আবার বলে কি না জরুরি কথা... ভয় আর চিন্তায় তখন আমার হাঁটু কাঁপতে শুরু হয়ে গেছে। আমি বিবৃতি বসু কিনা হাঁদারামের ভয়ে... নো ওয়ে! তাই নিজেকে যথা সম্ভব স্বাভাবিক করে বেশ প্রশ্নের সুরেই বললাম...
জরুরি কথা, আমার সাথে? আর আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে?... যার সাথে আজ পর্যন্ত হাই-হ‍্যালোটুকুও ঠিকমত হয়নি আর বয়সে যে মানুষটা আমার থেকে বড় তাকে হঠাৎ করে তুমি বলতে আমার কেমন একটা বাধো বাধো ঠেকল তাই আপনি করেই বললাম। কিন্তু বদলে হাঁদাটা যা উত্তর দিল তাতে আমি শকড্ হয়ে গেলাম...

ব‍্যাটাচ্ছেলে বলে কিনা...
যে মানুষটা সারাক্ষণ আমাকে নিয়ে এত ভাবে এমনকি আমাকে বেশ অনেকগুলো ইউনিক নামে যে ডাকে.. যে আমাকে জানলা দিয়ে দেখে তার নাম না জানাটাই তো অপরাধ তাই না?

এই কেস করেছে, এ ব‍্যাটা তার মানে দেখেছে আমি সেদিন ওকে জানলা দিয়ে দেখছিলাম আর ইউনিক নামে ডাকে মানে ও কি এটাও জানে নাকি যে আমি ওকে হাঁদারাম বলে ডাকি? সর্বনাশ করেছে, সব কথা মায়ের কানে তুলবে নাকি... তাহলে তো আজ আমি শেষ... ! প্রচণ্ড ভয়ে একটা ঢোক গিলে বললাম...
আমি ঠিক বুঝলাম না আপনি কি বলছেন?

বুঝলে না নাকি সব বুঝেও না বোঝার ভান করছো, হুম... নিজের মুখটা আমার মুখের কাছে নিয়ে এসে বলল নির্ঝর। শুধু তাই নয় কথাগুলো বলার সময় ওর চোখে যে ভীষণরকম দুষ্টুমি মিশে ছিল এমনকি আমার ভয় পাওয়া মুখটাও ও ভীষণভাবে এনজয় করছিল এটাও বুঝতে পারলাম...

তাই মনে মনে ভয়টা চেপে ধরলেও সেই ভয়ের চিহ্ন চেহারায় ফুটে উঠতে না দিয়ে বেশ ঝাঁঝ দেখিয়েই বললাম...
অদ্ভুত কথা তো, আপনি কি বলছেন সে আপনি জানেন আমি কিভাবে সেটা বুঝব শুনি?

ওহ্ তাই! বুঝতে পারছো না... বেশ আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি... বলতে বলতে নির্ঝর আমার দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে আসতে লাগল আর আমি না চাইতেও পিছিয়ে যেতে লাগলাম... সেই সময় ওকে কোনো অ্যাঙ্গেল দিয়েই হাঁদারাম মনে হচ্ছিল না বরং ভীষণ ধূর্ত কোনো শিকারী আর নিজেকে সেই শিকারীর ফাঁদে আটকে পড়া শিকার বলে মনে হচ্ছিল...

এগিয়ে আসতে আসতেই নির্ঝর বলতে থাকে...
তোমার প্রথম প্রশ্ন আমি তোমার নাম জানলাম কিভাবে? এর উত্তর খুব সোজা, যে মেয়ে কথায় কথায় আমাকে হাঁদারাম বলে চিৎকার করে আর যার চিৎকার নিচের থেকে মাঝেমধ্যেই আমাদের উপরের ফ্ল‍্যাট অবধি শোনা যায় তার নাম বা ডাকনাম জানাটা কি এতই কঠিন স্পেশালি যখন তোমার এবং আমার মায়ের এত ভালো সম্পর্ক। আর সেকেন্ড আমার জরুরি কথা হল... 

নির্ঝরের কথা শেষ হল না তার আগেই নিজের পিছনে শক্ত কিছু অনুভব করেই চমকে উঠে বুঝলাম যে সত‍্যিই এবার আমার দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে আর সামনে যেভাবে এই ছেলে খাম্বার মত দাঁড়িয়ে রয়েছে তাতে পালানোর উপায়টুকুও নেই। ব‍্যাটাচ্ছেলে আমার দিকে তখনও সেই দুষ্টুমি মাখা চোখেই তাকিয়ে রয়েছে আর এতক্ষণে ঠোঁটের কোণের হাসিটাও দেখছি কিছুটা চওড়া হয়েছে। ওর হাবভাব দেখে ততক্ষণে আমি দরদর করে ঘামতে শুরু করেছি... বুকের বাঁদিকে কেউ যেন ফুল ভলিউমে ড্রাম বাজাচ্ছে আর সেই আওয়াজে আমার কানের পর্দা ফেটে যাওয়ার উপক্রম... কিন্তু এভাবে ভয় পেলে তো চলবে না, যেভাবেই হোক আমাকে পালাতেই হবে তাই আড়চোখে এদিক ওদিকে তাকাতে লাগলাম যে কিভাবে নিজেকে এই খড়ুশটার হাত থেকে মুক্তি পেতে পারি... আমার মুখ দেখে মনে হয় নির্ঝর আন্দাজ করেছিল আমার মনের ভাব তাই যে মুহূর্তে একটা ঢোক গিলে ওকে ধাক্কা দিয়ে পালাতে গেলাম ঠিক তখনি ব‍্যাটাচ্ছেলে নিজের শক্ত দুটো হাতে আমার হাত দুটোকে ধরে দেওয়ালের সাথে আমাকে ঠেসে ধরে তারপর নিজের হাতের সাহায্যে আমার দুপাশ দিয়ে দেওয়ালে এমনভাবে একটা অভেদ‍্য বেষ্টনী গড়ে তুলল যে আমার পক্ষে পালানো অসম্ভব হয়ে গেল... এইরকম ঘটে যাওয়ায় আমি সত‍্যিই তখন প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেছি যার ফলে থরথর করে কাঁপছি আর চোখ দুটো সজোরে একে অপরের সাথে চেপে ধরেছি...

আমাকে ওইভাবে দেখে আবারও নির্ঝর আমার মুখের একটু কাছে নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে এসে বলল...
এখনি চলে গেলে হবে, শুনবে না তোমার সাথে আমার জরুরি কথাটা কি?

আমার অত কাছে থাকায় নির্ঝরের তপ্ত নিশ্বাস আমার মুখে আছড়ে পড়ছে যার ফলে নিজের ভিতরের অস্বস্তিটা ভীষণভাবে টের পাচ্ছিলাম। ওই কথাটা বলেই নিজের মুখটা এবার আমার কানের কাছে নিয়ে এসে ফিসফিসিয়ে বলল...
খুব তো বলো যে আমি রোজ মাকে কেন বলে যাই অফিস যাওয়ার আগে, মা আসছি। কেন বলি না যে ও বৌ আসছি তাই তো? তাই আমি ঠিক করেছি এবার মাকে রেহাই দিয়ে বৌকেই বলব যে ও বৌ আমি আসছি আর সেটা কাকে বলতে চাই জানো, তোমাকে... শুনবে নাকি আমার মুখে, ও বৌ আমি আসছি... কথাটা বলেই নির্ঝর হালকা করে আমার কানে একটা ফু দিয়ে আমাকে মুক্তি দিয়ে ছাদ থেকে চলে গেল...

এদিকে এতক্ষণ নির্ঝর কি বলে গেল তার সবটাই ভয়ের চোটে মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে গেছিল কিন্তু যখন পায়ের শব্দ মিলিয়ে যেতে শুনলাম তখন বুঝলাম যে সত‍্যিই এবার আমি মুক্ত। বুকের ভেতরের ড্রামটা তখনও বেজে চলেছে এমনকি কানের কাছের সেই তপ্ত নিশ্বাস এখনো যেন অনুভব করতে পারছি তবুও ভয়ে ভয়ে চোখ মেলে দেখলাম যে নাহ্ ছেলেটা চলে গেছে কিন্তু তিড়িং করে আমার মাথায় ঘন্টা বেজে উঠল আর আমি নিজেকেই বললাম...
এই... এই... ব‍্যাটাচ্ছেলে কি বলে গেল এখনি, ও নাকি নিজের বৌকে বলতে চায় অফিস যাওয়ার আগে আর সেই কথাটা ও আমাকে... মানে... আমি... শেষে আমিই কিনা হাদারামের বৌ... মানে... মানে... অ্যাএএএএ... শেষে এই ছিল আমার কপালে...

........

এইসব কথাই এতক্ষণ ধরে ভাবতে ভাবতে নিজেই একা হাসছিলাম সেই একই ছাদে.. একই সময়ে.. একলা দাঁড়িয়ে সন্ধ‍্যেবেলায়... হঠাৎই কোমরে দুটো বলিষ্ঠ হাতের স্পর্শে চমকে উঠলেও পরমুহুর্তেই আমার ঠোঁটের হাসিটা আরেকটু চওড়া হল। কানের কাছে আবারো সেই তপ্ত নিশ্বাস আর সাথে গম্ভীর তথা আদুরে কন্ঠস্বর...
আমার কথা ভাবছিলে বুঝি?

উহ্, তোমার মত হাঁদারামের কথা ভাবতে আমার বয়েই গেছে... হালকা হেসে উত্তর দিলাম।

তাই বুঝি? তাহলে আজ থেকে একবছর আগে এই হাঁদারামের গলায় মালা দিয়েছিলে কেন শুনি... ছেলেমানুষী সুরে বলল হাঁদারাম ওরফে নির্ঝর যে এখন আমার স্বামী। 

হ‍্যা, ঠিকই ধরেছেন গত একবছর আগে এই হাক্ষদারামের সাথেই আমি সাত পাকে বাঁধা পড়েছি। আর আজ আগের মতই ছাদে একলা দাঁড়িয়ে সেই পুরোনো স্মৃতিই মনে করছিলাম আর একাই হাসছিলাম... আমরা ওই ফ্ল‍্যাটেই থাকি তবে আলাদা ফ্লোরে। নির্ঝর আর আমি দুজনের কেউই নিজেদের বাবা-মায়ের থেকে আলাদা হতে চাইনি তাই এই ফ্ল‍্যাটেরই থার্ড ফ্লোরে নিজেদের ছোট্ট একটা সংসার সাজিয়ে নিয়েছি।

আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে নির্ঝর আবার বলল...
কি হল বললে না তো কেন তাহলে রাজি হয়েছিলে আমার প্রস্তাবে?

ঠোঁটের কোণে ফাজিল হাসি ফুটিয়ে বললাম...
কি করব বলো, তুমি যেভাবে রিকোয়েস্ট করলে যে মামণিকে রেহাই দিয়ে আমাকেই বলে যেতে চাও অফিস যাওয়ার আগে, সেটা আর ফেলতে পারলাম না। আফটার অল, হাঁদারাম বলে কথা...

আমার কথায় নির্ঝর চোখ পাকিয়ে আমার দিকে তাকালেও পরক্ষণেই হা.. হা.. করে হেসে উঠে আলতো করে আমার গালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল...
ওহ্ আমি যদি হাঁদারাম হই তাহলে তুমি কি শুনি?

আমিও একইভাবে নির্ঝরের গালে চুমু একে দিয়ে হেসে বললাম...
আমি হাঁদারামের বৌ...!

©কলমে অরু। ( স্বত্ব সংরক্ষিত )
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
যাদবপুরের বাংলা ডিপার্টমেন্ট , খুব ভালো সংগ্রহ ছিল ...

Smile
Like Reply
শিক্ষা ! 
দেবশ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় 

ট্রেনটা বর্ধমান স্টেশনে দাঁড়াতেই মিলি বলে উঠল মা ডিম সেদ্ধ খাবে? ঐ দেখো বিক্রি করছে।মাধবী দেবীর সবে তন্দ্রাটা এসেছিল।  তিনি বললেন- না রে আমি খাবো না, তুই খেলে খা।মিলি হাত নেড়ে ডাকলো- ডিম, এই ডিম, এদিকে । একটা ডিম সেদ্ধ কিনে খেতে খেতে সামনের সিটের বয়স্ক মহিলাটির দিকে চোখ পড়ল তার। মহিলাটি একদৃষ্টে মিলিকেই দেখছিলেন। মিলি ওনার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। মহিলাটি বেশ আগ্রহ নিয়েই জিগ্গেস করলেন কোথায় যাচ্ছ? মিলি উত্তর দিল- কলকাতায়।ইশারায় মাধবীদেবীকে দেখিয়ে জিগ্গেস করলেন- তোমার মা? মিলি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাল। তিনি আবার জিগ্গেস করলেন- বাড়ি কোথায়? মিলি বলল- আসানসোলে। মহিলা বললেন- আমরা দুর্গাপুরে থাকি। মিলি এতক্ষণে বুঝল বয়স্ক মহিলার পাশে মিলির থেকে বয়সে কিছুটা ছোটো যে বিবাহিতা মেয়েটি বসে সে ওনার সঙ্গেই আছে। মিলি সেই মেয়েটির দিকে তাকাতেই একটা শুকনো হাসি উপহার দিল সে। ট্রেন আবার নিজের গতিতে ছুটতে শুরু করল।বয়স্ক মহিলাটি বেশ বকবকে। উনি নিজেই মিলিকে বলতে শুরু করলেন- এটা আমার ছেলের বউ। আমার একটাই ছেলে। ডি.এস.পি তে ইঞ্জিনিয়ার। এই একবছর হল বিয়ে দিয়েছি। আমার বউমার বাপের বাড়ি ধানবাদ। মিলি বুঝতেই পারল মহিলা নিজের গল্প শোনানোর মুডে আছেন। বাধ্য হয়েই কান থেকে ইয়ার ফোনটা খুলে জিন্সের পকেটে রাখল।মহিলা বলে চললেন- আমার বউমা এম.এ পাশ। চাকরি করার হুজুগ ছিল খুব। আমি একবারেই রাজি হয়নি। তোর বর এত টাকা রোজগার করে,তোর চাকরির কি প্রয়োজন? আর ব্যাগ দুলিয়ে চাকরি করতে গেলে ঘর কে সামলাবে বল দেখি? মিলি বিবাহিতা মেয়েটির দিকে একবার তাকাতেই তার মনের কষ্টটা তার মুখে ফুটে উঠতে দেখল। মহিলা এক নিঃশ্বাসে বলেই চললেন- আমি তো বলেই দিয়েছি, দুবছরের মধ্যেই নাতির মুখ দেখতে চাই। মেয়েমানুষের শিক্ষা , বাচ্চাকে মানুষ করার কাজেই লাগে। তাও তো আমার মত শাশুড়ি বলে বিয়ের একবছর পরেই চুড়িদার পরার পারমিশান দিয়েছি। এবার নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য একটু থেমে তিনি মিলিকে জিগ্গেস করলেন- তা তুমি কি করো মা? মিলি হেসে উত্তর দিল- আমি ডাক্তার। মহিলা- ডাক্তার,  বাহ খুব ভাল।  তা বিয়ে থা করো নি  কেন এখনও ? একে ডাক্তার, তার উপর দেখতে শুনতে এত সুন্দর।  তুমি তো ভাল ছেলে পাবে। মিলি হেসে বলল- কি করব মাসিমা,ছেলের মায়েদের আমায় পছন্দ হয় না। মহিলা বেশ অবাক হয়ে বললেন- সেকি , এত সুন্দর চেহারা, তাতে এত শিক্ষিত, ডাক্তার,  তাও পছন্দ হয় না? মিলি- নাহ ,হবে কি করে? আমি তো হসপিটালেই অনেকটা সময় কাটাই, সংসার সামলাতে যদি অসুবিধা হয়? মহিলা এবার থতমত খেয়ে গেলেন। এতক্ষণ মাধবীদেবী ঘুমানোর ভান করে সবই শুনছিলেন। হঠাৎ হাসতে হাসতে তিনি বললেন- উফ মিলি তুইও পারিস বটে। তারপর ঐ মহিলার দিকে তাকিয়ে বললেন- দিদি, মিলি আমার ছেলের বউ। আমার ছেলে আর ও দুজনেই দুর্গাপুর মিশন হসপিটালের ডাক্তার। তিন বছর হল ওদের বিয়ে হয়েছে। আজ আমরা কলকাতাতে মিলির বাবার বাড়িতেই যাচ্ছি।
মহিলা মুখটা হাঁ করে সব শুনছিলেন এতক্ষণ।  এবার তিনি বললেন- তা এয়ো স্ত্রী ,এদিকে হাতে শাঁখা,পলা ,মাথায় সিঁদুর কিছুই তো পরে নি। তার উপর এমন ছোট চুল,জিন্সের প্যান্ট। আপনি এগুলোর পারমিশান দিলেন দিদি? মাধবীদেবী হাসতে হাসতেই বললেন- দিদি ,আমার ছেলেও তো বিয়ের পর সাজ পোশাক পাল্টায়নি। তাহলে ওই বা কেন পাল্টাবে বলুন?
মহিলা বেশ ব্যাঙ্গের সুরেই বললেন- তা আপনি তো দেখছি শাঁখা,সিঁদুর সবই পরে আছেন। মাধবীদেবী ভদ্র ভাবেই বললেন- দিদি আমার শাশুড়ি পড়াশোনা জানতেন না,তাই অনেক কুসংস্কার নিয়ম ভেবে মেনে চলতেন তিনি। আমার পছন্দ না হলেও আমি কোনোদিন সেগুলোর বিরোধীতা করিনি, উনি কষ্ট পাবেন ভেবে। কিন্তু তাই বলে তো আমি নিয়মের নাম করে এই বোঝা আমার ছেলের বউয়ের উপর চাপিয়ে দিতে পারিনা।আপনি একটা কথা মন্দ বলেননি। মেয়েমানুষের শিক্ষা বাচ্চাকে মানুষ করার কাজেই লাগে। শুধু ডিগ্রি থাকলেই শিক্ষিত হওয়া যায় না। জীবনের বিভিন্ন ধাপে আমি যে শিক্ষা অর্জন করেছি তা থেকেই আমি আমার ছেলেকে মেয়েদের মানুষ হিসেবে ভাবতে শিখিয়েছি। তাদের সম্মান করতে শিখিয়েছি। মহিলার পাশে বসে থাকা তার ছেলের বউ মাধবীদেবীকে ঢিপ করে একটা প্রণাম করে বসল। বয়স্ক মহিলাটির মুখে যেন কেউ সেলোটেপ চিটিয়ে দিল। বাকিটা রাস্তা তিনি শুধুই গোমরা মুখে জানলার বাইরে তাকিয়েই কাটিয়ে দিলেন।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
অতি সুন্দর !!

Namaskar Namaskar
Like Reply
আলোর ঠিকানা

 
প্রতিবারই দশমী এলেই মনটা বড্ড খারাপ হয়ে যায় দীপ্তির। মনে হয়, এই তো মা এলেন, আবার চলেও যাচ্ছেন!
এবার তো মন আরও বেশি খারাপ ওর। প্রতিবারের থেকে এই দিনটা তো আরও অন্যরকমের। অন্যান্যবার পুরোনো পাড়ায় এইদিনে মজা হতো খুব। মা কে বরণ করার পরে সিঁদুরখেলা হত... ছবি তোলা... কত আড্ডা...
রনিও যেত ওর সাথে। যখন মা কে বরণ করার জন্য ওই উঁচু টুলের ওপর উঠত, তখন রনি ওর হাতের ডালাটা ধরে থাকত। তিন্নি তখন বাবার পাঞ্জাবিটা আঁকড়ে ধরে দেখত ওকে, বেশ ভয় পাওয়া চোখে!
তারপর তিনজনের সিঁদুরমাখা সেলফি তোলা হতো।
সেসব দিন কোথায় চলে গেছে!
আঠেরো সালের শেষ থেকেই বাঁধ ভেঙেছে, টের পাচ্ছিল দীপ্তি। উনিশ কাটল অশান্তিতে! কুড়ি বদলে দিল সবকিছু! একুশে তো একাই! এখন শুধু মেয়েটা মানুষের মতো মানুষ হোক, সেটাই চায় ও।
এইবছর অনেককিছু কেড়ে নিলেও কিছু পেয়েওছে ও। একটা নিজের মনের মতো বাড়ি খুঁজে পেয়েছে। এখানে মা মেয়ে ভালোই আছে ওরা। পাশের ফ্ল্যাটেই যে পরিবার, তাদের সাথে খুব মিশে গেছে ওরা। দাদা - বৌদি দুজনেই খুব ভাল। তিন্নির এখন অনলাইন কলেজ চলছে, তাই অসুবিধা হয় না খুব একটা।তবে কলেজ খুলে গেলেও, বৌদি বলেছেন তিন্নিকে কলেজ থেকে ফেরার পর থেকে নিজের কাছেই রাখবেন। 'কিন্তু কিন্তু' করায় বকাও খেয়েছে বৌদির কাছে। বেশ রাগ করেই বলেছেন উনি "এতদিন আমার শাশুড়ি মা অসুস্থ ছিলেন, ওঁকে নিয়ে সময় কেটে যেত। মাসকয়েক আগে মা চলে গেলেন, তোরা ভাড়া এলি। ভাগ্যিস এখন তিন্নি মা আছে, ওর কটরকটর শুনে ভালো আছি আমরা। ভগবান তো আর আমাদের দিলেন না কাউকে..." এই কথা গুলো শুনলেই চুপ করে যায় দীপ্তি। এত আন্তরিকতার কি কোনো উত্তর দেওয়া সম্ভব?
পাড়ার ক্লাবে বরণের সময়ের ঘোষনা হচ্ছে। আর বলে দেওয়া হচ্ছে মাস্ক না পরলে মন্ডপে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এবার কোত্থাও বের হয় নি দীপ্তি। একদিন সকালে গিয়ে আশেপাশের 'টা ঠাকুর দেখে এসেছে মেয়েকে নিয়ে। আর রান্না করে, টিভিতে পুজো পরিক্রমা দেখে সময় কাটিয়েছে। কাল থেকে আবার অফিস! তাও এবার আর বরণ করা নেই। এখন অবসর অবসর।
স্নান সেরে, একটা পুরোনো পুজোসংখ্যা নিয়ে বসতে যাবে, হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ। বেশ অবাক হয়েই দরজার কাছে গেল দীপ্তি। এইসময় আবার কে এলো!
দরজা খুলতেই দেখে বৌদি দাঁড়িয়ে আছেন।
"কি রে, তুই রেডি হোস নি? চল, ফাঁকায় ফাঁকায় বরণ করে আসি!"
অবাক হলো দীপ্তি।
কী যে বলছেন বৌদি! কিভাবে বরণ করতে যাবে! কেন যাবে!
ওর মুখ দেখেই হয়ত কিছু বুঝেছিলেন উনি। তাই বলে উঠলেন "তুই যাবি না? কেন?"
"কেন যাব বৌদি? আমি কি ম্যারেড এখন? ডিভোর্সি আমি। সিঁদুর তো পরি না আর! তবে কেন যাব?" প্রায় হাহাকারের মতোই শোনাল ওর গলা, যেন।
একটু হাসলেন বৌদি।
তারপর বললেন "তাতে? আমাদের তো অশৌচ চলছে... তাও আমি যাচ্ছি মায়ের কাছে। তুই তাহলে কেন যাবিনা?"
"আমি সত্যি জানিনা তুমি কেন যাচ্ছ... শুনেছিলাম যেতে নেই। আর আমি কেন যাচ্ছি না, তোমাকে তো বললামই। ডিভোর্সি মেয়ের কি আর এসবের অধিকার থাকে?"
"তোর মুণ্ডু! আচ্ছা, আমরা কি মানি? মা দুর্গা আমাদের মেয়ে, তাই তো? আমাদের প্রিয় গান কি? "এবার আমার উমা এলে আর উমাকে পাঠাব না.." আমার উমা! আমরা ওঁর মা এখন! দুটো জল মিষ্টি খাইয়ে, পানপাতা দিয়ে আদর করে দিই না মাকে? বরণের সময় লক্ষী-সরস্বতী-কার্তিক-গণেশ আমাদের নাতি নাতনি হয়ে যান না? তাঁরা অন্যসময় আমাদের আরাধ্য হওয়া সত্ত্বেও? তাহলে এখানে কে বিবাহিতা, কে ডিভোর্সি বা বিধবা... সেই প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে! একজন মা তার মেয়ে স্বামীর কাছে যাবার আগে কাছে যাচ্ছে... ব্যস এইটুকুই ভাব না! আমিও তো সেজন্যই যাচ্ছি মায়ের কাছে। জরা-ব্যধি-মৃত্যু - সব তো তাঁর দেওয়া। তাহলে অশৌচ চললেও আমি কি তাঁর কাছে যেতে পারব না? আমি কি ওঁর কেউ না?" একটানা বলে থামলেন বৌদি।
তখনও চোখটা চিকচিক করছে ওঁর।
চোখটা চিকচিক করছে দীপ্তির ও। এভাবে তো ভাবেনি ! ভাবেনি যে, মা মা থাকেন! আর জগজ্জননীর কাছে তো যখন তখন মঙ্গলকামনা করা যায়। মণ্ডপে যিনি আছেন, আর ওই দেওয়ালে, ক্যালেন্ডারের মধ্যে যিনি আছেন -তাঁরা কি আলাদা?
আর, ওর মনে যিনি আছেন? তবে কেন যাবে না ?
"তুমি একটু দাঁড়াও, আমি এক্ষুণি রেডি হয়ে নিচ্ছি। আচ্ছা, এখন তো খুব ভিড় হবে না... মেয়েটাকেও নিয়ে যাই?" বলে হাসতে হাসতে একটা নতুন লালপেড়ে শাড়ি বের করে আলমারি থেকে।
ক্যালেন্ডারের মধ্যে থেকে মা দুর্গা তখন হাসছেন...
আলোর ঠিকানা লেখা আছে সেই হাসিতে...
 
Like Reply
(18-10-2021, 10:41 AM)ddey333 Wrote: আলোর ঠিকানা

 
প্রতিবারই দশমী এলেই মনটা বড্ড খারাপ হয়ে যায় দীপ্তির। মনে হয়, এই তো মা এলেন, আবার চলেও যাচ্ছেন!
এবার তো মন আরও বেশি খারাপ ওর। প্রতিবারের থেকে এই দিনটা তো আরও অন্যরকমের। অন্যান্যবার পুরোনো পাড়ায় এইদিনে মজা হতো খুব। মা কে বরণ করার পরে সিঁদুরখেলা হত... ছবি তোলা... কত আড্ডা...
রনিও যেত ওর সাথে। যখন মা কে বরণ করার জন্য ওই উঁচু টুলের ওপর উঠত, তখন রনি ওর হাতের ডালাটা ধরে থাকত। তিন্নি তখন বাবার পাঞ্জাবিটা আঁকড়ে ধরে দেখত ওকে, বেশ ভয় পাওয়া চোখে!
তারপর তিনজনের সিঁদুরমাখা সেলফি তোলা হতো।
সেসব দিন কোথায় চলে গেছে!
আঠেরো সালের শেষ থেকেই বাঁধ ভেঙেছে, টের পাচ্ছিল দীপ্তি। উনিশ কাটল অশান্তিতে! কুড়ি বদলে দিল সবকিছু! একুশে তো একাই! এখন শুধু মেয়েটা মানুষের মতো মানুষ হোক, সেটাই চায় ও।
এইবছর অনেককিছু কেড়ে নিলেও কিছু পেয়েওছে ও। একটা নিজের মনের মতো বাড়ি খুঁজে পেয়েছে। এখানে মা মেয়ে ভালোই আছে ওরা। পাশের ফ্ল্যাটেই যে পরিবার, তাদের সাথে খুব মিশে গেছে ওরা। দাদা - বৌদি দুজনেই খুব ভাল। তিন্নির এখন অনলাইন কলেজ চলছে, তাই অসুবিধা হয় না খুব একটা।তবে কলেজ খুলে গেলেও, বৌদি বলেছেন তিন্নিকে কলেজ থেকে ফেরার পর থেকে নিজের কাছেই রাখবেন। 'কিন্তু কিন্তু' করায় বকাও খেয়েছে বৌদির কাছে। বেশ রাগ করেই বলেছেন উনি "এতদিন আমার শাশুড়ি মা অসুস্থ ছিলেন, ওঁকে নিয়ে সময় কেটে যেত। মাসকয়েক আগে মা চলে গেলেন, তোরা ভাড়া এলি। ভাগ্যিস এখন তিন্নি মা আছে, ওর কটরকটর শুনে ভালো আছি আমরা। ভগবান তো আর আমাদের দিলেন না কাউকে..." এই কথা গুলো শুনলেই চুপ করে যায় দীপ্তি। এত আন্তরিকতার কি কোনো উত্তর দেওয়া সম্ভব?
পাড়ার ক্লাবে বরণের সময়ের ঘোষনা হচ্ছে। আর বলে দেওয়া হচ্ছে মাস্ক না পরলে মন্ডপে ঢুকতে দেওয়া হবে না। এবার কোত্থাও বের হয় নি দীপ্তি। একদিন সকালে গিয়ে আশেপাশের 'টা ঠাকুর দেখে এসেছে মেয়েকে নিয়ে। আর রান্না করে, টিভিতে পুজো পরিক্রমা দেখে সময় কাটিয়েছে। কাল থেকে আবার অফিস! তাও এবার আর বরণ করা নেই। এখন অবসর অবসর।
স্নান সেরে, একটা পুরোনো পুজোসংখ্যা নিয়ে বসতে যাবে, হঠাৎ কলিংবেলের আওয়াজ। বেশ অবাক হয়েই দরজার কাছে গেল দীপ্তি। এইসময় আবার কে এলো!
দরজা খুলতেই দেখে বৌদি দাঁড়িয়ে আছেন।
"কি রে, তুই রেডি হোস নি? চল, ফাঁকায় ফাঁকায় বরণ করে আসি!"
অবাক হলো দীপ্তি।
কী যে বলছেন বৌদি! কিভাবে বরণ করতে যাবে! কেন যাবে!
ওর মুখ দেখেই হয়ত কিছু বুঝেছিলেন উনি। তাই বলে উঠলেন "তুই যাবি না? কেন?"
"কেন যাব বৌদি? আমি কি ম্যারেড এখন? ডিভোর্সি আমি। সিঁদুর তো পরি না আর! তবে কেন যাব?" প্রায় হাহাকারের মতোই শোনাল ওর গলা, যেন।
একটু হাসলেন বৌদি।
তারপর বললেন "তাতে? আমাদের তো অশৌচ চলছে... তাও আমি যাচ্ছি মায়ের কাছে। তুই তাহলে কেন যাবিনা?"
"আমি সত্যি জানিনা তুমি কেন যাচ্ছ... শুনেছিলাম যেতে নেই। আর আমি কেন যাচ্ছি না, তোমাকে তো বললামই। ডিভোর্সি মেয়ের কি আর এসবের অধিকার থাকে?"
"তোর মুণ্ডু! আচ্ছা, আমরা কি মানি? মা দুর্গা আমাদের মেয়ে, তাই তো? আমাদের প্রিয় গান কি? "এবার আমার উমা এলে আর উমাকে পাঠাব না.." আমার উমা! আমরা ওঁর মা এখন! দুটো জল মিষ্টি খাইয়ে, পানপাতা দিয়ে আদর করে দিই না মাকে? বরণের সময় লক্ষী-সরস্বতী-কার্তিক-গণেশ আমাদের নাতি নাতনি হয়ে যান না? তাঁরা অন্যসময় আমাদের আরাধ্য হওয়া সত্ত্বেও? তাহলে এখানে কে বিবাহিতা, কে ডিভোর্সি বা বিধবা... সেই প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে! একজন মা তার মেয়ে স্বামীর কাছে যাবার আগে কাছে যাচ্ছে... ব্যস এইটুকুই ভাব না! আমিও তো সেজন্যই যাচ্ছি মায়ের কাছে। জরা-ব্যধি-মৃত্যু - সব তো তাঁর দেওয়া। তাহলে অশৌচ চললেও আমি কি তাঁর কাছে যেতে পারব না? আমি কি ওঁর কেউ না?" একটানা বলে থামলেন বৌদি।
তখনও চোখটা চিকচিক করছে ওঁর।
চোখটা চিকচিক করছে দীপ্তির ও। এভাবে তো ভাবেনি ! ভাবেনি যে, মা মা থাকেন! আর জগজ্জননীর কাছে তো যখন তখন মঙ্গলকামনা করা যায়। মণ্ডপে যিনি আছেন, আর ওই দেওয়ালে, ক্যালেন্ডারের মধ্যে যিনি আছেন -তাঁরা কি আলাদা?
আর, ওর মনে যিনি আছেন? তবে কেন যাবে না ?
"তুমি একটু দাঁড়াও, আমি এক্ষুণি রেডি হয়ে নিচ্ছি। আচ্ছা, এখন তো খুব ভিড় হবে না... মেয়েটাকেও নিয়ে যাই?" বলে হাসতে হাসতে একটা নতুন লালপেড়ে শাড়ি বের করে আলমারি থেকে।
ক্যালেন্ডারের মধ্যে থেকে মা দুর্গা তখন হাসছেন...
আলোর ঠিকানা লেখা আছে সেই হাসিতে...
 

খুব সুন্দর
Like Reply
#কনকাঞ্জলি 
#মৌমিতা_ঘোষ 

'ও কি ও কি, বড়দিকে কনকাঞ্জলির থালা দিচ্ছ কেন? বড়দি তো নেবে না কনকাঞ্জলি' - হাঁপাতে হাঁপাতে ছাদে এসে বলে সুতনুকা |

'কেন বড়দি নেবে না কেন? আর তুমি তো গেছিলে বিসর্জনের গাড়ি দেখতে, তুমিই বা আবার ওপরে এলে কেন মেজদি? ' - ভুরু কুঁচকে মেজো জায়ের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় চাঁদনী, এ বাড়ির ছোট বৌ |

দু'মাস হল কৌশিকের বাড়িতে বৌ হয়ে এসেছে চাঁদনী | আর এইটুকু সময়েই সবাই নতুন বৌয়ের মুখকে সমঝে চলে | সবাই জানে মুখের ওপর স্পষ্ট কথা বলে দিতে নতুন বৌয়ের জুড়ি মেলা ভার| কৌশিকরা তিন ভাই | বড়দা শমীক বাবার ওষুধের দোকানে বসে | মেজো ভাই দ্বারিক একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে | কৌশিক সবার ছোট, ও কলেজে পড়ায় | চাঁদনীও চাকরি করে | বিয়ের আগে থেকেই নতুন বৌয়ের চাকরি করা নিয়ে বেশ অশান্তি হয়েছিল বাড়িতে | কৌশিকের মা বাড়ির বৌয়ের চাকরি করা একদম পছন্দ করেন না | বড় বৌ তমসা তো এতদিন সংসার করছে, কই সে তো কখনো চাকরি করতে চায়নি ! মেজ ছেলে চাকরিসূত্রে সল্টলেকে ফ্ল্যাটে থাকে | এতদূরে এই উত্তরপাড়ার বাড়ি থেকে রোজ অতটা যাতায়াত করতে পারছিল না দ্বারিক, তাই বছর দুয়েক আগে বিয়ের পর আলাদা হয়ে গেছে ওরা স্বামী-স্ত্রী | চাঁদনীর অফিসও সেক্টর ফাইভ | মাঝে মাঝে অফিসে চাপ থাকলে ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায় | কৌশিক তখন স্টেশনে গিয়ে বাইকে করে নিয়ে আসে ওকে | শাশুড়ি সেদিন ওর সাথে কোনো কথা বলেন না | তবে কয়েকদিনেই চাঁদনী অভ্যস্ত হয়ে গেছে এইসব কিছুর সঙ্গে | কৌশিক যে ওর পাশে আছে সেই প্রথম দিন থেকে !

এই দুর্গাপুজোর সময় সব আত্মীয় স্বজনরা এক হন ওদের এই উত্তরপাড়ার বাড়িতে | ওদের এই বাড়ির পুজো এবারে পঁচাত্তর বছরে পড়ল | কৌশিকরা তিন ভাই আবার যেন সেই ছোটবেলায় ফিরে যায় পুজোর দিনগুলোতে | তমসা, সুতনুকা আর চাঁদনী - এই তিন বৌ যেন তিন রকম | খুব যে মিল ওদের মধ্যে এমনটা নয়, তবে মুখোমুখি ঝগড়াও নেই | 

তমসার বিয়ে হয়েছে বছর সাতেক | নিঃসন্তান ওরা |এই নিয়ে শাশুড়ি উঠতে বসতে বড়ো বৌকে কথা শোনাতে ছাড়েন না | সুতনুকা সবে তিনমাসের প্রেগন্যান্ট | সেজন্য এবারে তার আদরের অন্ত নেই | শাশুড়ি যেন মেজ বৌমাকে চোখে হারাচ্ছেন | আর নিঃশব্দে সব দায়িত্ব পালন কিরে চলেছে তমসা | সুতনুকা এবার বিসর্জনে যাবে না | ওদের বিসর্জনে খুব আনন্দ হয়, সবাই মিলে হই হই - নাচানাচি করতে করতে একসাথে গঙ্গায় যায় | কিন্তু সুতনুকা এবারে যাবে না, ওকে নাকি এই অবস্থায় যেতে নেই | তাই বরণের পর বিসর্জনের গাড়ি সাজানো দেখতে গেছিল ও নিচে | কিন্তু ওর হঠাৎ ফিরে আসায় একটু হকচকিয়ে যায় সবাই | চাঁদনীর হাতে তখন কনকঞ্জলির থালা | ওদের শাশুড়ি এবার হাঁটুর ব্যথা নিয়ে উঁচু টুলে উঠে কনকঞ্জলি নিতে পারবেন না বলেছেন | তাই নিয়ম অনুযায়ী বড় বৌ হিসেবে তমসারই কনকঞ্জলি নেওয়ার কথা | সেই মতোই ব্যবস্থা করেছিল চাঁদনী | মেজদির হঠাৎ ওপরে আসার পিছনে নিশ্চয়ই কোনো ব্যাপার আছে, বুঝতে পারে ও |

চাঁদনীর হাত ধরে সাইডে সরিয়ে আনে সুতনুকা| তারপর ফিসফিস করে বলে, 'তুমি কি কিছুই জানো না চাঁদনী? বড়দি কি করে কনকঞ্জলি নেবে? বড়দির বাচ্চা আছে নাকি? মা বললেন আমাকে কনকঞ্জলি নিতে |'

অবাক হয়ে যায় চাঁদনী ! আজকের দিনে কেউ এমন ধ্যান ধারণা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে? ওর শাশুড়ি নয় পুরোনো দিনের মানুষ, মেজদি তো ওনাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে পারতো ! তা না করে মেজদিও এটা সমর্থন করলো? আজ এতদিন ধরে এই সংসারের এতো ঝক্কি সামলানোর পরেও শুধু গর্ভে সন্তান ধারণ করতে পারেনি বলে কোনো দায়িত্ব না নেওয়া মেজ বৌ বড় বৌয়ের চেয়ে বেশি যোগ্য? কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি চাঁদনী | সোজা শাশুড়ির কাছে গিয়ে জানিয়েছিল ওর অসন্তোষ |
'এটা কি ধরণের কথা মা? বড়দি আজ এত কিছুর পর শুধু সন্তান ধারণ করতে পারেনি বলে শুভ কাজে থাকতে পারবে না? '

'যেটা বোঝো না, সেই নিয়ে কথা বোলো না ছোট বৌমা | বাড়ির মঙ্গল-অমঙ্গলের একটা ব্যাপার আছে | বড় বৌমাকে তো আমি পুজোর কাজে থাকতে না করিনি, তবে কনকাঞ্জলি ও নিতে পারবে না ' - গম্ভীর স্বরে জবাব দিয়েছিলেন চাঁদনীর শাশুড়ি মা | 

বাইরে থেকে সবাই তাড়া দিচ্ছিল ঠাকুর নামানোর জন্য | আকাশের অবস্থা ভালো না, বৃষ্টি আসতে পারে | তমসাই ব্যবস্থা করে ফেলল কনকাঞ্জলির | দ্বারিকের হাত থেকে কনকাঞ্জলি নিল সুতনুকা | 'আসছে বছর আবার এসো মা' - বলে মাকে বিদায় জানাল ব্যানার্জী বাড়ি |

তমসা এবারে বিসর্জনে যায়নি | মাথা ধরেছে বলে শুয়েছিল ঘরে | ঠাকুর বেরোনোর পরেই বৃষ্টি এসেছিল জোরে | বাড়ি মোটামুটি ফাঁকা এখন | সবাই বিসর্জনে গেছে | শুধু ওর শ্বশুর-শাশুড়ি আছেন ঘরে, আর সুতনুকা যায়নি, ওকে যেতে নেই বলে | এখন বাচ্চা না হওয়ার জন্য কথা শুনতে শুনতে ব্যাপারটা গা-সওয়া হয়ে গেছে তমসার| প্রথম প্রথম কান্না পেত খুব, আজকাল চোখের জলও শুকিয়ে গেছে |

'উঃ মা গো ' - বাইরে থেকে হঠাৎ প্রচন্ড জোর চিৎকার ভেসে এল একটা | 

চোখটা লেগে গেছিল একটু তমসার | পুজোর কদিন খাটুনি তো কম যায় না ! চিৎকারটা সুতনুকার মনে হলো ! বাইরে বেরিয়ে দেখে ঠিক তাই | বৃষ্টির জলের ছাঁট এসেছিল বারান্দায় | সেখানেই পা হড়কে পরে গেছে সুতনুকা | দৌড়ে গিয়ে ওকে তোলে তমসা | ততক্ষনে ওর দু'পা বেয়ে নামতে শুরু করেছে রক্তের ধারা |

****************************

সুতনুকার গর্ভে বেড়ে ওঠা তিনমাসের ভ্রুণটিকে বাঁচানো যায়নি কোনোভাবেই | অতখানি রক্তপাতে প্রাণসংশয় হয়েছিল সুতনুকারও | ওর ও নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপ | দশমীর দিন অত রাতে ওই রেয়ার গ্রুপের রক্ত পাওয়া অসম্ভব ছিল | শেষে এগিয়ে আসে তমসা | ওরও ও নেগেটিভ | তমসার দেওয়া রক্তেই আস্তে আস্তে স্থিতিশীল হয় সুতনুকা | কিন্তু তখনও ওর জ্ঞান আসেনি |

দশমীর দিনেই বাড়িতে এমন একটা আকস্মিক দুর্ঘটনায় ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়েন সুতনুকার শ্বশুর শাশুড়ি | পরেরদিন ওর বড় ভাসুর জা, ওর স্বামী, ছোট দেওর, জা সকলে যখন ওর কেবিনে গিয়ে পৌঁছল, সুতনুকা তখন জানলা দিয়ে তাকিয়ে আছে বাইরে, শূন্য দৃষ্টি | পাশে গিয়ে বসল তমসা, সুতনুকার বড় জা | কাঁধে হাত রাখলেন ওর | একটু যেন কেঁপে উঠল সুতনুকা, নড়ে উঠল ওর শুকনো ঠোঁটদুটো, হঠাৎ করে টলটল করে উঠল ওর দু'চোখের কোল | 

'মন খারাপ করিস না, দেখবি, খুব শিগগির তোর কোল ভরে উঠবে' - সুতনুকার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে তার বড় জা|

'পাপ দিদি, বড় পাপ ভিড় কিরে আছে আমার চারদিকে | এত সহজে আমার মুক্তি নেই | কাল আমি পাপ করেছি তোমার সাথে | মা তোমার হাতেই কনকাঞ্জলি চেয়েছিলেন, আমি তোমায় নিতে দিইনি | তার শাস্তি পেলাম আমি | কেন আমায় বাঁচালে দিদি? আমি থাকলে এই পৃথিবীর পাপের বোঝা বাড়বে শুধু | তুমি আমায় যেতে দিলে না, কেন যেতে দিলে না, বলো? ' - তমসাকে জড়িয়ে ধরেছে সুতনুকা, কেঁদে চলেছে হাউহাউ করে |

'দূর পাগল, এভাবে কাঁদে কেউ? আমাদের জন্যে না হোক, আর ক'দিন পর যে আসবে তোর কোলে জুড়ে, তার জন্যে বাঁচতে হবে না? এসব অশুভ কথা একদম মনে আনবি না |'

তমসা বুকে জড়িয়ে ধরে আছে সুতনুকাকে, হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ওর মাথায় | পরম নিশ্চিন্তে বড় জায়ের বুকে মাথা গুঁজে দিয়েছে সুতনুকা | আজ যে ওর নবজন্ম হলো! আর যার জন্যে সেই জন্ম, সে কি মায়ের চেয়ে কিছু কম নাকি !

***************************

মাঝে কেটে গেছে অনেকগুলো বছর |

'ও বড় মা, তাড়াতাড়ি এসো | দিদি বেরোবে তো এবার | দেরি হচ্ছে ওদের, মেজো জেঠি তোমায় ডাকছে তো !' - সিঁড়ি থেকে চেঁচাচ্ছে রূপ, চাঁদনী আর কৌশিকের ছেলে |

নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে বসে আছে তমসা | ও কিছুতেই আর বেরোবে না | বুকে করে বড় করলো যে পম্পিকে, সে আজ পরের ঘরে চলে যাচ্ছে, কোন মা এটা সহ্য করতে পারে !

'দরজা খোলো দিদি | মেয়ে জামাই যে তোমার জন্যে আটকে আছে | তুমি কনকাঞ্জলি না নিলে ওরা তো রওনা দিতে পারছে না ' - দরজায় ধাক্কা দেয় সুতনুকা, পম্পির জন্মদাত্রি মা |

'তুই নে মেজ, তুইই তো ওর মা !' - অনেক কষ্টে কান্না চেপে ভেতর থেকে বলে তমসা |

'তাই বললে কি হয় দিদি, আমি তো ওকে শুধু জন্মই দিয়েছি, বড় করলে তো তুমি | জন্ম দিলেই কি আর মা হওয়া যায়? আর মেয়েও তো তোমাকেই মা বলে মানে | মাকেই কনকাঞ্জলি নিতে হয় দিদি | মেয়ের কথা ভেবে একটিবার বাইরে এসো, লক্ষ্মীটি !'

বাইরে আসেন তমসা | কেঁদে কেঁদে চোখ দুটো জবাফুল হয়ে গেছে | 

'আচ্ছা এত কাঁদবে যদি, মেয়ের বিয়ে দিলে কেন বলো দেখি? ' - মজা করে প্রশ্ন করে সুতনুকা |

সিঁড়ি দিয়ে নামছে পম্পির দুই মা, একজন তার জন্মদাত্রি, আর একজন তার মাম্মাম | সেই হাসপাতাল থেকে এসে অবধি মাম্মামের কোলেই ওর বড় হয়ে ওঠা | তখন ওর বাবা -মা মেয়ের জন্যে আবার উত্তরপাড়ার বাড়িতেই চলে আসেন | পম্পি তো অনেক বড় বয়স অবধি মাম্মামকেই ওর মা বলে জানতো | ওর চান-খাওয়া-ঘুম-আবদার-বেড়ানো - সব কিছু মাম্মামের কাছে | আর মাম্মামও যেন পম্পিকে পেয়ে জগৎ ভুলে যেত | অনির্বানের সাথে সম্পর্কের কথাটাও প্রথম মাম্মামকেই বলেছিল ও | মাম্মাম একদিন বাড়িতে ডেকেছিল অনির্বানকে | তারপর নিজে ওদের বাড়ি গিয়ে বিয়ে ঠিক করেছিল | আর আজ এমন করে কাঁদছে !

তমসার তখন মনে পড়ছে সুতনুকার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার দিনটা | সেই দুর্ঘটনার ঠিক এক বছরের মাথায় মহালয়ার দিন এসেছিল পম্পি | ওকে তমসার কোলে দিয়ে সুতনুকা বলেছিল, 'তোমার মেয়েকে আগলে রেখো দিদি' |
তারপর এতগুলো দিন যেন চোখের পলকে কেটে গেল | সেই ছোট্ট ময়দার তালটা আজ শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছে | অনির্বান ভালো ছেলে, ভালো রাখবে পম্পিকে, জানেন তমসা | তাও যে চোখ দুটো কেন এত ঝাপসা হয়ে যায় !
মেয়ের মুখোমুখি দাঁড়ালেন তার দুই মা | মেয়ের হাতে কনকাঞ্জলির থালা | ঠাকুরমশাইয়ের কথা মতো আঁচল পেতে দাঁড়ালেন তমসা |

'এবার পিছন দিকে মায়ের আঁচলে চালটা ছুড়ে দিয়ে বলো, "মা তোমার সব ঋণ শোধ করলাম", বলে আর পিছনে না তাকিয়ে সোজা বেরিয়ে যাও' - পম্পিকে বললেন ঠাকুরমশাই | 

কনকাঞ্জলির থালা হাতে দাঁড়িয়ে পম্পি | হঠাৎ ওর হাতে ধরা ব্যাগটা ফাঁক করে সবটুকু চাল ভেতরে ঢেলে ফেলল মেয়ে | 'একি করলে? ' - আঁতকে উঠলেন ঠাকুরমশাই | কাউকে তোয়াক্কা না করেই পিছন ফিরল মেয়ে | সামনে এসে দাঁড়াল দুই মায়ের |

'মায়ের ঋণ শোধ করা যায় নাকি মাম্মাম? তুমি আঁচল পেতে দাঁড়ালে কেন? ওই এক মুঠো চাল দিয়ে তোমার ঋণ শোধ করবো আমি? ওটা আমি রাস্তায় কোনো ভিখারীকে দিয়ে দেবো | সে নয় একদিন একটু পেট ভরে ভাত খাবে | আর আমি তো আমার দুই মায়ের হাতের ভাত খেতে বারবার আসবো তোমাদের কাছে | তোমরাই যে আমার শিকড় !'

মেয়েটা তাঁর সত্যিই বড় হয়ে গেছে | তবে আজ বড় নিশ্চিন্ত লাগছে তমসার, মেয়েটা তাঁর মানুষ হয়েছে |

©মৌমিতা ঘোষ
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
দাদা তুমি তো কোনোদিন পুরুষ হতে পারোনি , ঝর্ণার জন্য এখনো কাঁদো... আমি নিজেই দেখেছি ...

কিন্তু আমার পাল্লায় পড়ে, মানে আমার এই থ্রেডে তোমাকে টেনে এনে ... মহাপুরুষ বানিয়ে দিয়েছি আমি ...

তোমার আবৃতি করা কবিতা গুলো আবার কবে শুনতে পাবো ??  

Namaskar Heart Namaskar Heart
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
চিকিৎসা করবেন বলে স্বেচ্ছায় সশ্রম কারাদণ্ড চেয়ে নিয়েছিলেন বিধান রায় 

 
মুখ দেখে রোগীর চিকিৎসা করতেন ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য হিসেবে ১৯৩০ সালে ইংরেজ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন দিল্লি থেকে তারপর তাঁকে আনা হয় কলকাতার আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে জেলে ওই সময় বন্দি ছিলেন বর্ধমানের এক গান্ধীবাদী শিক্ষক বিজয়কুমার ভট্টাচার্য বিজয়বাবু লিখেছেন, তিনি বর্ধমান জেলে থাকাকালীন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ওজন কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল সর্ব ক্ষণ জ্বর থাকত এই সময় তাঁকেও আনা হয় আলিপুর জেলে
বিধান রায় জেলে এসেছিলেন প্রথম শ্রেণির বন্দি হিসেবে কিন্তু তিনি স্বেচ্ছায় সশ্রম কারাদণ্ড চেয়ে নিয়েছিলেন জেল কর্তৃপক্ষের কাছে সাধারণত এটা করা যায় না, কিন্তু সম্ভবত বিধান রায়ের ব্যক্তিত্বের সামনে ওঁরা না বলতে পারেননি ফলে ডাঃ বিধান রায়ের ডিউটি পড়ল জেলের হাসপাতালে কিছু দিনের মধ্যেই বোঝা গেল জেলে রোগীর মৃত্যুসংখ্যা কমে গেছে নিউমোনিয়া, টাইফায়েড ইত্যাদি কিছু কঠিন অসুখের ওষুধ জেলে থাকত না, সে সব বিধান রায় তাঁর দাদা সুবোধ রায়ের মাধ্যমে বাইরে থেকে নিজের টাকায় আনাতে শুরু করলেন প্রায়ই দেখা যেত ফুট ছাড়ানো লোকটা স্টেথো গলায় দিয়া জেলের হাসপালে বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছেন, পেছন পেছন চলেছেন জেলের সরকারি ডাক্তার
গান্ধীবাদী সেই শিক্ষক বিজয়কুমার ভট্টাচার্য লিখেছেন, “বিধানবাবু চেয়ারটা টেনে নিয়ে আমার বিছানার পাশে বসলেন মিনিট কয়েক চেয়ে রইলেন আমার দিকে তারপর অসুখ নিয়ে কয়েকটা প্রশ্ন করলেন মুখের দিকে তাকালাম একটু যেন চিন্তিত বলে মনে হল কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে মুখখানা আবার প্রফুল্ল হয়ে উঠল হেসে বললেন, ‘কিছু না সেরে যাবেমনে হল এর মধ্যেই অসুখের সব কিছু বুঝে ফেলেছেন বিজয়কুমার ভট্টাচার্যই এরপর জানিয়েছেনকোনও রোগীর চিকিৎসা শুরুর আগে বিধান রায় কিছু ক্ষণ সেই রোগীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেন সেই অন্তর্ভেদী দৃষ্টি দিয়ে তিনি রোগ নির্ণয় করতেন 
ওই জেল হাসপাতালে তখন ১১০ জন রোগী একদিন জেলের ডাক্তার বঙ্কিমবাবু (উপাধি লেখেননি বিজয়কুমার ভট্টাচার্য) কোনও কারণে আসতে দেরি করছেন বিধান রায় একাই এক এক করে ১১০ জন রোগীকে দেখলেন তার পর ছুটতে ছুটতে বঙ্কিমবাবু এসে হাজির কাঁচুমাঁচু মুখে বন্দি বিধান রায়কে বলছেন, স্যার একটু দেরি হয়ে গেল বিধান রায় হেসে বললেন, না না ঠিক আছে, রোগী আমি দেখে নিয়েছি, আপনি ওদের টিকিটগুলো আনুন, পথ্য আর ওষুধটা আমি বলে দিচ্ছি বিজয়কুমার ভট্টাচার্য লিখেছেন, তিনি অবাক বিস্ময়ে দেখলেন, আধঘণ্টা আগে দেখা ১১০ জন রোগীর প্রত্যেকের জন্য ওষুধ, পথ্য প্রায় মুখস্থ এক এক করে বলে গেলেন ডাঃ বিধান রায় এমনই অসামান্য স্মৃতিশক্তি ছিল তাঁর
বিধান রায় জেলে থাকাকালীন পেয়ে গেলেন বন্দি কানাই গাঙ্গুলিকে কানাইবাবু ইঞ্জিনিয়ারিং- ডক্টরেট করেছিলেন জার্মানি থেকে খুব ভালো জার্মান ভাষা জানতেন তিনি তিনি বরিশালের শঙ্কর মঠের স্বামী প্রজ্ঞানন্দের বিপ্লবী দলের সদস্য ছিলেন পরে গ্রেফতার হন ব্রিটিশ পুলিশে হাতে এই কানাই গাঙ্গুলির কাছে জেলের ভিতর বিধান রায় শুরু করলেন জার্মান ভাষা শেখা এই নিয়ে কানাইবাবু লিখেছিলেন, মাস জেলে থাকাকালীন বিধান রায় একদিনও বাদ দেননি জার্মান শেখার ক্লাস এবং যখন জেল ছেড়ে চলে গেলেন, তখন তাঁর এই বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ হয়ে গেছে
জেলে বিধান রায়ের খাবার আসত ওয়েলিংটনের বাড়ি থেকে আলিপুর জেলে তখন সিনিয়র ডেপুটি জেলার ছিলেন রায় সাহেব অনিলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় সব রাজনৈতিক বন্দির দায়িত্বে ছিলেন তিনি নিয়ম অনুযায়ী বাড়ি থেকে খাবার এলে আগে তাটেস্টকরে দেখবেন ডেপুটি জেলার তার পর তা বন্দিকে দেওয়া হবে এক রাতে অনিলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে বসে খবর পেলেন, বিধান রায়ের খাবার আসেনি ছুটে গেলেন জেলে গিয়ে দেখলেন, খাবার এসেছিল, কিন্তু তা এত সুস্বাদু ছিল যে টেস্ট করতে করতে সবটাই খেয়ে ফেলেছেন ডেপুটি জেলার লজ্জার মাথা খেয়ে অনিলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বিধান রায়ের ঘরে গিয়ে সব জানালেন বিধান রায় হেসে বললেন, আগে বললে তো আমি ওর জন্যেও খাবার পাঠাতে বলে দিতাম অনিলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বিধান রায়কে বললেন, তিনি বিধান রায়ের বাড়িতে ফোন করে দিয়েছেন, নতুন করে খাবার পাঠানো হচ্ছে সেই খাবার এল রাত ১১টায় বিধান রায় খেলেন তার পর বাড়ি গেলেন রায় সাহেব অনিলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
-------

Like Reply
কেনেডির সঙ্গে বিধান রায়ের মিটিং চলছে মিটিং শেষে বিধান রায় বললেন, মিস্টার প্রেসিডেন্ট আমার মনে হচ্ছে আপনার পিঠে মারাত্মক পেইন আছে

কেনেডি অবাক বিস্ময়ে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, How do you know that?
বিধান রায় বিনীতভাবে বললেন, আমি পেশায় ডাক্তার, নেশায় রাজনীতিবিদ
কেনেডি তাঁর সেক্রেটারিকে চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল কাগজ বিধান রায়কে দেখাতে বললেন
তিনি দেখলেন এবং আমেরিকার চিকিৎসার মান দেখে অসন্তুষ্ট হলেন বিধান রায় নতুন করে প্রেসক্রিপশন দিলেন দৃঢ়চিত্তে বললেন, এগুলো নিয়ম করে খাবেন না সারলে আমাকে জানাবেন আমি আবার আসবো আমার নিজ খরচে
মিটিং শেষে বিদায় নেয়ার আগে হ্যান্ডশেক করতে করতে বললেন, মিস্টার প্রেসিডেন্ট আমার ফী তো দিলেন না!
কেনেডি জানতে চাইলেন, কত দিতে হবে ফী?
বিধান রায় মওকা পেয়ে পশ্চিম বঙ্গের উন্নয়নের জন্য ৩০০ কোটি টাকা চাইলেন সাথে সাথে মঞ্জুর করে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী মোরারজী দেশাই খুব চটলেন একটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এভাবে একটা দেশের প্রেসিডেন্টের কাছে সাহায্য চাইতে পারেন না
নেহরু বললেন, ওকে ক্ষেপিও না নিজে মঞ্জুরি এনেছে টাকা দিয়ে দাও
 
লেখা : উৎপল সেনগুপ্ত
Like Reply




Users browsing this thread: 9 Guest(s)