Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
পরদিন সকালে পেরী পোপের মুখে নির্মল হাসি দেখে ট্রেসির বুঝতে অসুবিধা হয় না যে একটা খুব ভালো খবর নিয়ে সে এসেছে।
‘আমরা খুব লাকি, বুঝলেন!’ পেরী হাসি মুখে জানালো তাকে। ‘আমি এই মাত্র জজ লরেন্স আর টপ্পর, মানে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির সাথে দেখা করে এলাম। টপ্পর তো ভুতের মত চিৎকার চেঁচামিচি করছিল, কিন্তু অবশেষে আমরা ডিলটা করতে পেরেছি।’
‘ডিল?’
‘আমি জজ লরেন্সকে আপনার আসল ঘটনাটা পুরো বললাম। উনি রাজি হয়েছেন আপনার অপরাধনামা গ্রহণ করতে।’
‘অপরাধনামা! কিন্তু আমি তো...’
হাত তুলে মাঝপথেই পেরী তাকে থামিয়ে দিল। ‘আমার কথাটা আগে খুব মন দিয়ে শুনুন। দেখুন, আপনি যদি অপরাধনামা জমা করেন, তাহলে কি দাঁড়াচ্ছে? কোর্টের খরচা কমছে। আর আমি জজকে বুঝিয়েছি যে আপনি ছবিটা চুরি করেননি। আর উনিও রোম্যানো কেমন লোক সেটা ভাল মতই জানেন। তাই উনি আমার কথা বিশ্বাস করেছেন।’
‘কিন্তু আমি যদি অপরাধ স্বীকার করি তাহলে ওনারা আমায় কি করবেন?’ ভয়ার্ত গলায় প্রশ্ন করল ট্রেসি।
‘জজ লরেন্স সেই ক্ষেত্রে আপনাকে তিন মাসের জেল দেবে...’
‘জেল!’
‘এক মিনিট। আরো আছে। উনি জেলের সাজা শোনাবেন ঠিকই, কিন্তু সেই সাজাও সাস্পেন্ড করে রাখবেন। যাতে আপনি জেলে না গিয়ে নিশ্চিন্তে বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেন।’
‘কিন্তু তাতে... তাতে তো আমার নামের পাশে একটা রেকর্ড থেকে যাবে?’
পেরী পোপ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘হ্যা সেটা ঠিক, কিন্তু আপনাকে যদি মামলায় তোলা হয় তাহলে আপনার বিরুদ্ধে সসস্ত্র ডাকাতী আর সেই সাথে খুনের চেষ্টার মামলা চলবে, যাতে আপনার মোটামুটি দশ বছরের জেল কেউ আটকাতে পারবে না।’
‘দশ বছরের জেল?’
পেরী পোপ ভালো করে ট্রেসিকে দেখে নিয়ে ধীর কন্ঠে বলল, ‘এবার আপনার চিন্তা ভাবনা। আমি আমার যতটা করার সেটা চেষ্টা করেছি। আমি তো বলবো এটা একটা অলৌকিক ঘটনা যে জজ লরেন্সকে রাজি করাতে পেরেছি। এবার ওনারা এর উত্তর চান। আপনাকে যে এই ডিলটা করতেই হবে তার কোন মানে নেই। কেউ জোর করছে না আপনার ওপর। আপনি চাইলে অন্য আইনজীবিও ডাকতে পারেন, কিন্তু...’
‘না’, ট্রেসির এই লোকটির আন্তরিকতা নিয়ে কোন সন্দেহই নেই। এই পরিস্থিতিতে ইনি যথা সম্ভব চেষ্টা করেছেন সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু একবার যদি চার্লসের সাথে কথা বলা যেত। কিন্তু ওরা যে এখনই উত্তর চায়। হয়তো সেই লাকি যে তিন মাসের সাসপেন্ডের সাজা নিয়ে ছাড়া পেয়ে যাবে।
‘ঠিক আছে... আমি রাজি ডিলটায়!’ যেন জোর করে কথাগুলো বলল ট্রেসি।
পেরী ঘার নেড়ে শুধু বলল, ‘স্মার্ট গার্ল।’
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
আদালতে নিয়ে যাবার আগে অবধি আর ট্রেসিকে কোন ফোন করার অনুমতি দেওয়া হয় নি। তাকে নিয়ে সোজা হাজির করানো হল কোর্টে। একটা বেঞ্চে বসিয়ে তার দুইদিকে দুজন অ্যাটর্নি দাড়ালো। এক পাশে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি এড টপ্পার আর অন্য দিকে আসামী পক্ষের অ্যাটর্নি পেরী পোপ। সামনে জজের আসনে যে ভদ্রলোক বসে আছেন, ট্রেসি লক্ষ্য করল তার বয়স খুব বেশি হলে পঞ্চাশ হবে। ভারিক্কি চেহারার, বেশ সম্ভ্রান্ত দেখতে।
জজ লরেন্স ট্রেসিকে ভালো করে দেখে নিয়ে বলে উঠলেন, ‘আদালতকে বলা হয়েছে যে আপনি আপনার আবেদন নির্দোষ থেকে দোষী বলে পরিবর্তন করেছেন। এটা কি সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব মত আপনার?’
‘হ্যা, ইয়োর অনার।’
‘এ ব্যাপারে আপনাকে কোন রকম বাধ্য করা হয় নি? সম্পূর্ন সুস্থ মস্তিস্কে এই কার্য সম্পন্ন করেছেন?’
‘হ্যা, ইয়োর অনার।’
‘হু। বাদী ও বিবাদী পক্ষের সমস্ত অ্যাটর্নি এই বক্তব্য সমর্থন করেন?’
পেরী পোপ ও ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি, দুজনেই জজের বক্তব্যের সমর্থনে ঘাড় হেলিয়ে বলে উঠল, ‘হ্যা, ইয়োর অনার।’
শুনে বেশ কিছুক্ষন জজ লরেন্স চুপ করে নিজের চেয়ারে বসে রইলেন। তারপর একটু ঝুঁকে ট্রেসির চোখে চোখ রেখে বলে উঠলেন, ‘আজকের দিনে আমাদের এই মহান দেশের এই অবস্থার মূল কারন হচ্ছে রাস্তাঘাটে কিছু ক্ষতিকারক জঘন্য মানুষ বিনা বিচারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর তাতে লোকেরা বিচার ব্যবস্থার প্রতি ঠাট্টাতামাশা করছে। দেশের বিচার ব্যবস্থা শুধু শুধু কিছু ক্রিমিনালকে ছেড়ে দিয়ে আদর যত্ন করছে। কিন্তু এই লুইসিয়ানায় আমি সেটা হতে দেব না। আমরা এখানে বিশ্বাস করি অপরাধীর প্রকৃষ্ট সাজা পাওয়া উচিত।’
জজের কথা শুনতে শুনতে কেন জানি না, ট্রেসির কেমন যেন ভয় ভয় করতে লাগল। পেটের মধ্যে একটা ভয় কেমন গাঁট পাকিয়ে উঠছে মনে হল তার। সে একবার চোখ তুলে পেরী পোপের দিকে তাকালো। পোপ ভাবলেশহীন মুখে একদৃষ্টে জজের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। তার কানে এল জজ বলে চলেছে...
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
‘অভিযুক্তা স্বীকার করেছে যে সে এই শহরের একজন বিশিষ্ট নাগরিককে খুনের চেষ্টা করেছে... এমন একজন নাগরিক, যে কিনা মানবপ্রীতি ও মহৎ কাজের জন্য বিশেষ ভাবে সমাদৃত। সেই রকম একজন নাগরীককে অভিযুক্তা বিনা প্ররোচনায় গুলি করে হত্যা করার চেষ্টা করেছে। আর শুধু তাই নয়, প্রায় আধ মিলিয়ন ডলার মূল্যের একটু অত্যন্ত বিখ্যাত ছবি নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে।’ ট্রেসির মনে হল জজ যত বলছেন ততই যেন ধীরে ধীরে তাঁর গলার স্বর তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠছে। এক অশেষ ঘৃণা ঝড়ে পড়ছে যেন সেই গলার স্বর থেকে। তার দিকে তাকিয়ে জজ লরেন্স চিবিয়ে চিবিয়ে বলতে থাকলেন, ‘কিন্তু আজ এই আদালত অভিযুক্তাকে কোন মতেই সেই হৃত সম্পদ ভোগ করার অবকাশ দেবে না। আদালত অভিযুক্তা আসামী মিস ট্রেসি হুইটনিকে পনেরো বছরের জন্য সাউদার্ন লুইসিয়ানা মহিলা সংশোধানাগারে রাখার সাজা শোনালো।’
ট্রেসির মনে হল যেন পুরো আদালত কক্ষটা দুলছে। এটা নিশ্চয় একটা মজা করছে সবাই। জজকে যেন মনে হচ্ছে উনি একজন অভিনেতা... ভুল করে যে পাট বলার কথা সেটা না বলে অন্য আর একজনের পাট বলে ফেলেছেন। এক্ষুনি নিজের ভুল বুঝতে পেরে আবার নতুন করে বলতে শুরু করবেন। সে মুখ তুলে আবার পেরী পোপের দিকে তাকালো। কিন্তু পোপ তখন ব্যস্ত হয়ে নিজের ব্রিফকেসে কাগজ গোছাতে ব্যস্ত। তার দিকে তাকাবার প্রয়োজনই বোধ করছে না। মুখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকাতে দেখল জজ লরেন্স ততক্ষনে রায় লিখে নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েছেন। ট্রেসি তাড়াতাড়ি করে উঠে দাঁড়ালো। কি ঘটছে যেন কিছুই মাথায় আসছে না তার।
একজন গার্ড এগিয়ে এসে তার বাজু ধরে কর্কশ গলায় বলল, ‘চলুন, যেতে হবে।’
‘না!’ কেঁদে ফেলল ট্রেসি। ‘প্লিজ, না! কোথাও একটা মারাত্মক ভুল হচ্ছে, ইয়োর অনার, আমি...’ বলে গার্ডের হাত ছাড়িয়ে জজএর দিকে এগোতে যেতেই, গার্ডের হাত আরো শক্ত হয়ে তার বাজুতে চেপে বসল। জজ, ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আর পেরী পোপ, তার চিৎকারের কোন ভ্রুক্ষেপ না করে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে আদালত কক্ষ্য থেকে বেরিয়ে চলে গেল। ট্রেসির আর বুঝতে বাকি রইল না... না, কোন ভুল হয়নি, একদম সুন্দর ভাবে তাকে ঠকানো হয়েছে। এরা তাকে একেবারে শেষ করে দিয়ে গেল। ঠিক যে ভাবে তার মাকে শেষ করে দেওয়া হয়েছিল।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
নিউ অর্লিন্স কুরিয়ার পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় বড় বড় হেডিং দিয়ে ট্রেসির অপরাধ আর ফলস্বরূপ তার সাজার কথা বেরিয়েছে। সেই সাথে পুলিশ দ্বারা তাকে কি ভাবে পুলিশের গাড়িতে তোলা হচ্ছে, তার ছবিও। শুধু এই শহরেই নয়, দেশের প্রতিটা কোনায় এই খবর সবিস্তারে ছড়িয়ে পড়েছে আধুনিক কম্পুউটারের দৌলতে। বেশ ফলাও করে ছাপা হয়েছে ট্রেসির ছবি চুরি করার আর সেই সাথে একজন বিশিষ্ট নাগরিককে হত্যার চেষ্টার কাহিনী। ট্রেসিকে যখন আদালত থেকে পুলিশের গাড়িতে তোলা হচ্ছে, সেই সময় শহরের প্রতিটা টেলিভিশন ক্যামেরা তার দিকে তাক করা। সে যতই চেষ্টা করুক না কেন নিজের মুখ ঢেকে এই অপমানকর পরিস্থিতি থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে, কিন্তু নিউজ চ্যানেলগুলি সেটা মানবে কেন? তো রোম্যানো নিজেই একটা বড় খবর সবসময়, আর সেখানে তার জীবনহানীর প্রয়াশ হয়েছে, আবার সেটাও এক সুন্দরী যুবতী চোরের হাতে, এই রকম খবর সচরাচর নিউজ চ্যানেল ছাড়ে? তাই শহরের প্রতিটা চ্যানেল ঝাঁপিয়ে পড়েছে ট্রেসিকে তাদের ক্যামেরা বন্দি করতে। আর সেই ছবি দেশের প্রতিটা কোনায় মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে আধুনিক সভ্যতার কারিগরদের ওপর ভর করে।
পুলিশের গাড়িতে উঠতে উঠতে ট্রেসি একটা কথাই নিজের মনে আউড়ে চলেছে, ‘চার্লস, চার্লস ঠিক আমাকে এর থেকে বের করে নিয়ে যাবে। ও কখনই চাইবে না আমাদের সন্তান কারাগারে জন্ম নিক। আর তাছাড়া চার্লস আমাকেও বিশ্বাস করে, সে যখনই শুনবে সব ঘটনাটা, ও নিজেকে আর শান্ত রাখতে পারবে না। দৌড়ে আসবে আমাকে এই নরক থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে। তারপর আমরা দুজনে ফিরে যাব ফিলাডেলফিয়ায়।
অনেক অনুরোধের পর দুপুরের দিকে ডেস্ক সার্জেন্ট একটা ফোন করার অনুমতি দিল ট্রেসিকে। ফোনটা হ্যারিয়েটই তুলেছে, ‘মিঃ স্ট্যানহোপের অফিস থেকে বলছি...’
‘হ্যারিয়েট, আমি ট্রেসি বলছি। একবার মিঃ স্ট্যানহোপের সাথে কথা বলা যাবে?’
‘একটু দাঁড়ান মিস হুইটনি, আমি... আমি দেখছি মিঃ স্ট্যানহোপ অফিসে আছেন কিনা!’ হ্যারিয়েটের গলায় স্পষ্ট দ্বিধার স্বর।
বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর অবশেষে চার্লসের গলা পেল ট্রেসি, ‘হ্যালো...’
চার্লসের গলা শুনে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল, ‘চার্লস...’
‘ট্রেসি?’
‘হ্যা ডার্লিং, ট্রেসি বলছি... ওহ চার্লস, আমি কত করে তোমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি...’
‘আমিও তো খবরটা দেখে কেমন পাগল পাগল হয়ে গেছি! খবরের কাগজে অদ্ভুত সব তোমার নামে খবর বেরিয়েছে এখানে। আমি তো বিশ্বাসই করতে পারি নি এরকম কিছু ঘটেছে বলে!’
‘একটাও সত্যি নয় চার্লস, একটাও সত্যি নয়। আমি...’
‘আমাকে কেন যোগাযোগ করনি আগে, ট্রেসি?’
‘করেছিলাম। অনেক করে চেষ্টা করেছিলাম তোমার সাথে যোগাযোগ করতে, কিন্তু...’
‘তুমি এখন কোথায় আছে?’
‘আমি... আমি এখন জেলে, নিউ অর্লিন্স জেলে। চার্লস, ওরা... ওরা আমাকে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে এমন একটা কাজের জন্য যেটা আমি করিই নি। বিশ্বাস কর...’ ভয়ে, আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকল ট্রেসি।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
‘দাঁড়াও দাঁড়াও, এত উতলা হোয়োনা। আমার কথা আগে শোনো। কাগজে দেখলাম লিখেছে যে তুমি নাকি কোন লোককে গুলি করেছ? সেটা নিশ্চয় সত্যি নয়, তাই না?’
‘না, আমি গুলি করেছিলাম, কিন্তু...’
‘সেটা সত্যি? তুমি গুলি করেছিলে?’
‘না, ডার্লিং, যে ভাবে ওটা দেখানো হয়েছে ব্যাপারটা সেই ভাবে ঘটেনি। আমি তোমাকে সব কিছু বুঝিয়ে বললে তুমি বুঝতে পারবে, আমি...’
‘ট্রেসি, তুমি নিজেকে দোষী বলে অপরাধ নামা জমা দিয়েছ আদালতে একজন লোককে হত্যা করার চেষ্টা আর সেই সাথে একটা দামী ছবি চুরি করার?’
‘হ্যা, চার্লস, দিয়েছি, কিন্তু সেটা শুধু মাত্র...’
‘হা ভগবান। তোমার যদি অতই টাকার প্রয়োজন ছিল, তুমি আমাকে বলতে পারতে। একবার আমার সাথে আলোচনা করতে পারতে, দেখতে আমি তোমাকে সাহায্য করি কি না, কিন্তু তাই বলে... কারুকে খুন করতে গিয়েছিলে? আমি তো ভাবতেই পারছি না। শুধু আমি কেন, আমার বাবা মাও এটা মানতে পারছে না। তুমি জানো আজকের ফিলাডেলফিয়ার সমস্ত খবরের কাগজে প্রথম হেডলাইনই তোমার কথা নিয়ে? আজ পর্যন্ত আমাদের এই স্ট্যানহোপ পরিবারে এই ধরনের কলঙ্ক কেউ লাগাতে পারেনি।’ চার্লসের প্রতিটা কথার মধ্যে একরাশ ঘৃণা ঝড়ে পড়াটা ট্রেসির কাছে লোকানো থাকলো না। তার কথা বলার ধরনেই বোঝা যাচ্ছে তার মনের মধ্যের অনুভূতি।
চার্লসকেই সে পাশে চেয়েছে সব থেকে বেশি। অনেক কষ্টে নিজেকে সংবরন করে বলল, ‘ডার্লিং, আমার তোমাকে এখানে দরকার, সোনা। তুমি একবার এখানে চলে এস। তুমিই পারবে এই সব কিছু ঠিক করে দিতে। আমি জানি।’
ওপার থেকে বেশ খানিকক্ষন কোন কথা এলো না। তারপর, ‘আমার মনে হয় না আর কিছু ঠিক করার মত ওখানে আছে। থাকতো, যদি না তুমি নিজের স্বীকারক্তি দিয়ে বসতে আদালতে। দেখ, আমার পরিবার এই রকম একটা স্ক্যান্ডালে জড়াতে চায় না। তুমিও সেটা নিশ্চয় বুঝতে পারছ। এটা একটা ভিষন বড় আঘাত আমাদের পরিবারের কাছে। আর তাছাড়া, এটা তো সত্যি, আমি খুব একটা দীর্ঘদিন তোমাকে চিনিনা। তাই...’
চার্লসএর প্রতিটা কথা যেন ট্রেসির মনে হল তার মাথার মধ্যে হাতুড়ির ঘায়ে একটা একটা করে গেঁথে যাচ্ছে... সমস্ত পৃথিবীটাই কেমন অন্ধকার হয়ে আসছে চোখের সামনে। মনে হচ্ছে এত বড় পৃথিবীটাতে সে একদম একটা... শুধু সে... আশে পাশে কেউ কোথাও নেই... আর কোন আশা নেই... শুকনো গলায় প্রশ্ন করল, ‘আর... আর আমাদের সন্তান?’
‘সেটা তোমাকেই ঠিক করতে হবে, তুমি কি করবে। আমি দুঃখিত, ট্রেসি।’ ফোনের লাইনটা কেটে গেল ওপাশ থেকে।
রিসিভারটা হাতে ধরে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল ট্রেসি ডেস্কের সামনে।
পেছন থেকে আর একজন কয়েদি তাড়া দিল, ‘একটু ফোনটা ছাড়লে ভালো হয়, আমাকেও আমার উকিলকে একটা ফোন করতে হবে...’
সেদিন তার সেলে ফেরার পর মেট্রন তাকে খবর দিয়ে গেল, ‘কাল ভোরবেলা তৈরী থেকো, সকাল পাঁচটার সময় তোমাদের নিয়ে রওনা হবে গাড়ী...’
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
ওট্টো শ্মিট এসেছিল ট্রেসির সাথে জেলে দেখা করতে। এই কয়েকঘন্টায় যেন লোকটার দশ বছর বয়স বেড়ে গেছে। কি ভিষন রোগা আর অসুস্থ লাগছে তাকে।
‘আমি আর আমার স্ত্রী, দুজনেই যা ঘটল, তার জন্য একান্ত দুঃখিত ট্রেসি। আমরা জানি এর কোনটার জন্যই তুমি দায়ী নও।’
যদি এই কথাগুলো চার্লসের মুখ থেকে শোনা যেত!
‘আগামীকাল মিসেস ডোরিসএর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আমি আর আমার স্ত্রী উপস্থিত থাকব। তোমাকে চিন্তা করতে হবে না।’
‘অসংখ্য ধন্যবাদ, ওট্টো।’
কি অদ্ভুত না! আগামীকাল আমাদের দুজনেরই কবর হবে! মনে মনে ভাবল ট্রেসি। সেই রাতটা সম্পূর্ন জেগেই কাটালো সে, সেলের সরু বিছানায় শুয়ে, সিলিংএর দিকে তাকিয়ে। মনের মধ্যে বার বার ফিরে ফিরে আসছে তার সাথে চার্লসের শেষ কথোপকথন। চার্লস একবারের জন্যও সুযোগ দিল না তাকে কিছু বলার।
তাকে নিজের সন্তানের কথা ভাবতে হবে। আগে কত শুনেছে কারাগারে বাচ্ছা জন্মানো নিয়ে গল্প, কিন্তু সে সব গল্প তার কাছে গল্পই ছিল, কখনই সেটা নিজের জীবনে ঘটতে পারে, ভাবে নি। কিন্তু আজ আর সেটা গল্প নেই, সত্যি হতে চলেছে তার কাছে। চার্লস বলেই দিল, সন্তান নিয়ে কি করবে সেটা ট্রেসিকেই ভাবতে হবে, তার কোন দায় চার্লস নেবে না। নাঃ। নিতে হবে না। সন্তান তার হবেই। যেখানেই হোক। সন্তান তার। সেই দায়িত্ব নেবে এই পৃথিবীতে আনার। কিন্তু এরা তো তার কাছে রাখতে দেবে না। ওরা তার সন্তানকে তার কাছ থেকে নিয়ে চলে যাবে... আগামী পনের বছরের জন্য। সেটাই বরং ভালো হবে। সে জানতেও পারবে না তার মায়ের কথা... চোখের কোন দিয়ে জলের ধারা নামলো তার।
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
ঠিক কাঁটায় কাঁটায় ভোর পাঁচটা, একজন পুরুষ রক্ষী মেট্রনের সাথে ট্রেসির সেলে এসে প্রশ্ন করল, ‘ট্রেসি হুইটনি?’
‘বলুন’ নিজের কন্ঠস্বর শুনে ট্রেসির নিজেরই অদ্ভুত লাগল।
‘মহামান্য আদালতের নির্দেশে আপনাকে আজ সাউদার্ন লুইসিয়ানা মহিলা সংশোধানাগারে স্থানান্তরিত করা হবে। আপনি তৈরী?’
সারি সারি সেলের মাঝখান বরাবর অলিন্দ ধরে তাকে নিয়ে যাওয়া হল। সেলের মধ্যে থেকে অন্যান্য বন্দিরা তার উদ্দেশ্যে নানা রকম মন্তব্য ছুড়ে দিতে লাগল...
- ভালো থেকো সোনা...
- হেই ট্রেসি, ওই ছবিটা কোথায় লুকিয়ে রেখেছ আমাকে বলে যাও না, আমরা টাকাটা ভাগাভাগি করে নিতে পারি...
- বড় বাড়িতে যাচ্ছ, ওখানে গিয়ে আর্নেস্টাইন লিটিলচ্যাপকে খুঁজো, তোমার সে ভালো যত্ন নেবে...
ডেস্কে রাখা টেলিফোনের পাশ দিয়ে যেতে যেতে সেটার দিকে একবার তাকালো ট্রেসি, এখান থেকেই ও চার্লস কে ফোন করেছিল... ওর চার্লস...। বিদায় চার্লস।
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
জেল চত্তরের বাইরে এসে ট্রেসি দেখল জানলায় জাল লাগানো একটা হলুদ রঙের বাস দাড়িয়ে রয়েছে তাকে নিয়ে যাবার জন্য। শুধু সে নয়, বাসের মধ্যে আরো জনা ছয়েক মেয়ে দুজন সশস্ত্র প্রহরী পাহারায় বসে। তাদের একজনের মুখটা বেজার, তো অপর জনের মুখটা সংশয়ে সাদা হয়ে রয়েছে। আবার কারুর আবার সম্পূর্ণ বেপরওয়া ভাব। যেন কোন কিছুই হয় নি। কিন্তু একটা জিনিস পরিষ্কার, আজ এদের প্রত্যেকের জীবনেরই একটা শেষ দিন বলা চলে। সবাই আজ সমাজচ্যুত প্রানী যেন, নিয়ে চলেছে কোন এক অজানা দেশে পশুর মত খাঁচায় পুরে রাখতে। ট্রেসি ভাবল এই যে বাসের মধ্যে বসা মেয়েগুলো, কি অপরাধ করেছে এরা? নাকি অনেকেই এদের মধ্যে আছে, যারা তারমত সম্পূর্ন নিরপরাধী কিন্তু পরিস্থিতির শিকার! হয়তো এরাও তার মুখ দেখে এরকমই কিছু ভাবছে... হতেই পারে।
বাসের মধ্যেটা নোংরা, দুর্গন্ধে ভরা। বাসের যাত্রাটাও যেন অন্তহীন... চলেছে তো চলেছে। ট্রেসি সমস্ত বাস যাত্রাটাই একেবারে নিজের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে রাখল। কি ভাবে যাচ্ছে, কোথা দিয়ে যাচ্ছে, বাসের দুর্গন্ধ, কিছুই তার মস্তিস্ক অবধি পৌছাচ্ছে না যেন আর। সে হারিয়ে গেছে যেন এক অন্য সময়ে, অন্য জগতে।
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
ট্রেসি তখন খুব ছোট। মা আর বাবার সাথে সমুদ্রতীরে বেড়াতে গিয়েছে। ট্রেসির বাবা তাকে কাঁধে তুলে নিয়ে জলের মধ্যে চলেছে হেঁটে, আর সে বাবার কাঁধের ওপর থেকে চিল চিৎকার করছে ভয়ে। বাবা তাকে ধমক দিয়ে বলছে, ‘বাচ্ছা মেয়ের মত ব্যবহার করো না ট্রেসি, তুমি এখন যথেষ্ট বড় হয়েছ... ভয় কি, আমি তো আছি... বলতে বলতে বাবা তাকে হটাৎ ছুড়ে জলের মধ্যে ফেলে দিল... তার আতঙ্কে ভয়ে দম বন্ধ হয়ে যাবার অবস্থা... বাবা তাকে তুলে নিল জল থেকে... তুলে আবার তাকে ছুড়ে দিল জলে... তারপর থেকে তার জল দেখলেই কেমন ভয় করে... যতটা সম্ভব সে জল থেকে দূরে থাকতে চায়... যে জন্য কোনদিন তার সাঁতারই শেখা হল না।
কলেজ পেক্ষাগৃহ... ছাত্র ছাত্রী তাদের বাবা মা আত্মীয় পরিজনে ঠাসা... সেখানে ট্রেসি ব্যক্তা... তাকে পনেরো মিনিট সময় দেওয়া হয়েছে তার বক্তব্য রাখার জন্য... মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে সে তার বক্তব্য রাখছে... প্রতিটা শব্দে ঝড়ে পড়ছে আত্মবিশ্বাস... তার সে বক্তব্য ভরা রয়েছে আদর্শবাদে, প্রতিটা ছত্রে রয়েছে রীতিমত অতীতের সাথে বর্তমানের সম্পর্কস্থাপন, উজ্জল হয়ে রয়েছে ভবিষ্যতের ভাবনায়। বক্তব্য শেষে ডীন নিজে উঠে এসে তার হাতে ট্রফী তুলে দিয়ে আশির্বাদ করলেন, ‘এটা তোমার হাতেই মানায়...’ মাকে যখন বাড়ি ফিরে এসে বলছে ট্রেসি, মায়ের মুখটা গর্বের হাসিতে জ্বলজ্বল করছে যেন।
ফিলাডেলফিয়া যাব মা... ব্যাঙ্কে একটা চাকরি পেয়েছি। অ্যানী, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, ডেকেছে। বলেছে ফিলাডেলফিয়ায় চলে আয় ট্রেসি। এখানে দেখবি সাংস্কৃতি বৈশিষ্টে ঠাসা। তার সাথে কি সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য.. তোর জন্য আমার ব্যাঙ্কে বলে একটা কাজের ব্যবস্থা করে রেখেছি... মা, আমি ফিলাডেলফিয়ায় যাচ্ছি।
চার্লসের সাথে সে মিলিত হচ্ছে। ঘরের সিলিংএ তাদের মিলনের ছায়া পড়েছে। চার্লসের পুরুষালী দেহের নিচে সুখে ভাসতে ভাসতে সে ভাবছে, কত মেয়ের স্বপ্ন চার্লসের বাহুলগ্না হবার, আর সে তার শয্যাসঙ্গী... ভালোবাসি... চার্লসকে ভিষন ভালোবাসি... জানি ওও আমাকে ভালোবাসে... সে অনুভব করছে চার্লসকে তার শরীরের মধ্যে... আরো জোরে... আরো দ্রুত হয়ে উঠছে রমন... চরম বিস্ফোরণের ঠিক আগে চার্লস তাকে প্রশ্ন করল, ‘তুমি তৈরী?’ মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল সে। ‘তোমার ভালো লাগছে?’ এবার কেন জানিনা মুখ দিয়ে মিথ্যা কথাটা বেরিয়ে এল, ‘হ্যা, ভালো লাগছে চার্লস’। মনে মনে ভাবল, সত্যিই কি এটাই সব? পরক্ষনেই একটা অপরাধবোধ ঘিরে ধরল মনটাকে...
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
‘এই... কালা নাকি? তোমাকে বলছি, শুনতে পারছ না?’ কর্কশ গলায় কেউ খিঁচিয়ে উঠল যেন মনে হল তার। ঝট করে সম্বিত ফিরল। মনে পড়ে গেল ও এখন প্রিজিন ভ্যানে... বাসটা একটা প্রাঙ্গনে এসে দাঁড়িয়েছে। কখন দাঁড়িয়েছে, সে জানে না। খেয়াল করেনি। ধীর পায়ে বাস থেকে নেমে দাঁড়ালো অন্যান্যদের সাথে। সাউদার্ন লুইসিয়ানা মহিলা সংশোধনাগারের কারা প্রাঙ্গন... বিশাল উঁচু পাচিল দিয়ে ঘেরা। প্রায় পাঁচশ বিঘার ওপর এই কারাগার তৈরী হয়েছে যার অধিকাংশই গভীর বন ভূমির পাশে... জাগতিক সভ্যতা থেকে বহু মাইল দূরে... এক প্রত্যন্ত ফাঁকা প্রান্তরের মধ্যে।
‘চলো... সামনে এগিয়ে চলো... আমরা পৌছে গেছি...’ আবার সেই কর্কশ কন্ঠস্বর।
হ্যা, পৌছে গেছিই বটে... নরকে...
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
‘এই যে মেয়েরা, এখানে যারা নতুন এসেছে তাদের উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে। তোদের মধ্যে কেউ কেউ অনেক, অনেক দিনের জন্য এসেছিস। তাই তাদের একটা কথা মাথায় ভালো করে গেঁথে নেওয়া ভালো যে তারা যেন বাইরের জগতটাকেই সম্পূর্ন ভাবে ভুলে যায়।’ প্রস্তর কঠিন মুখের এক মোটামত মেট্রন কথাগুলো ছুড়ে দিল ট্রেসিদের উদ্দেশ্যে। ‘এখানে তোরা দুই ভাবে থাকতে পারিস, এক, ভালো ভাবে আর দুই, খারাপ ভাবে। আমাদের এখানে কিছু নিয়ম আছে, আর তোরা সেই নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন করবি। আমরা তোদের বলে দেব কখন ঘুম থেকে উঠতে হবে, কখন কাজে যেতে হবে, কখন খাবি, আর কখন টয়লেটে যাবি। সব কিছু। যে এই নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করবে সে নিজেকে মৃত বলে মনে করতে পারে। আমরা এখানে খুব শান্তিপ্রিয়। তাই কেউ যদি কোন রকম গন্ডগোল পাকাবার চেষ্টা করে, তাকে কি করে শায়েস্তা করতে হয় তা আমাদের ভালো জানা আছে। আশা করি কথাগুলো সবার মনে থাকবে।’ বলতে বলতে তার চোখদুটো একবার ট্রেসিকে ছুয়ে গেল। ‘এখানে থেকে তোদের শারীরিক পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর সেখান থেকে স্নান ঘরে এবং স্নান হয়ে গেলে প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্ট সেল দিয়ে দেওয়া হবে। আগামীকাল তোদের ডিউটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আজ এই পর্যন্ত...’ বলে সবে ঘুরে চলে যাচ্ছিল...
ট্রেসির পাশে দাঁড়ানো একটা শীর্ণ চেহারার মেয়ে বলে উঠল, ‘মাফ করবেন, আ...’ তার মুখের কথাটা মুখেই থেকে গেল। মেট্রন ঝট করে ঘুরে খেঁকিয়ে উঠল, ‘চপ... একটা কথাও মুখ দিয়ে বেরুবে না। এখানে তখনই কথা বলবি, যখন বলতে বলা হবে। বুঝেছিস? এই মাগীগুলো, প্রত্যেকে বুঝেছিস?’
বলার ধরন আর ভাষা, দুটোতেই অভ্যস্থ নয় ট্রেসি। শুনে রীতিমত অবাক হয়ে গেল সে। মেট্রন সামনে দাঁড়ানো দুজন মহিলা গার্ডকে নির্দেশ দিল, ‘এই, এই কুত্তিগুলোকে এখানে থেকে হটা।’ ট্রেসিকে অন্য কয়েদির সাথে প্রায় গরুভেড়ার মত লাইন দিয়ে লম্বা করিডর দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে গিয়ে একটা ঘরের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হল। বেশ বড় ঘরটা। দেওয়ালগুলো সাদা টালি দিয়ে মাজা। সেখানে ঘরের মধ্যে একটা লম্বা টেবিল পাতা রয়েছে, শরীরিক পরীক্ষার জন্য। টেবিলের পাশে একটা টুলের ওপর মোটা লোক বসে, পরনে একটা নোংরা ঢিলে অ্যাপ্রন। গার্ডেদের একজন বলে উঠল, ‘এই, সবাই লাইনে দাঁড়া...’ বলে সবাইকে একটা লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে দিল।
মোটা লোকটা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ওদের দিকে কুতকুতে চোখে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘আমি ডঃ গ্লাস্কো। নাও, এবার সবাই জামা কাপড় খুলে ফেলো।’
ডাক্তারের কথা শুনে প্রত্যেকেই একটু হতচকিত হয়ে পড়ল। ঠিক কি করবে বুঝে উঠতে পারল না। তাদের মধ্যে একজন সাহস করে প্রশ্ন করতে গেল, ‘মানে কতটা খুলব যদি...’
‘জামা কাপড় খোলা মানে বুঝিস না? যখন বলা হয়েছে খুলতে, মানে সব খুলতে’।
ধীরে ধীরে মেয়েরা একে একে গা থেকে সমস্ত জামা কাপড় খুলতে লাগল। বোঝা যায় কেউ লজ্জায় কুঁকড়ে রয়েছে, আবার কেউ বা অপমানে ফুঁসছে। কিন্তু মুখে কিছু বলার সাহস নেই কারুরই। ট্রেসির পাশে যে মহিলা দাঁড়িয়ে রয়েছে, তার বয়স প্রায় চল্লিশ হবে। সে তো প্রায় ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল। সবার জামাকাপড় ছাড়া হয়ে গেলে ডাক্তার লাইনে দাঁড়ানো প্রথম মেয়েটির উদ্দেশ্যে বলে উঠল, ‘এই, ওই টেবিলের ওপর শুয়ে পড় চিৎ হয়ে।’
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
মেয়েটি শুনে একটু দোনামনা করতে লাগল। ডাক্তার খেঁকিয়ে উঠল, ‘কি রে, কথাটা কানে গেল না?’
আর দ্বিতীয়বার বলতে হল না, মেয়েটি চুপচাপ এগিয়ে গিয়ে টেবিলের ওপর উঠে শুয়ে পড়ল। ডাক্তার ওর পা দুটোকে ধরে টেবিলের শেষে লাগানো রেকাবের ওপর তুলে দিল। তাতে মেয়েটির পাদুটো শরীর থেকে দুপাশে ফাঁক হয়ে যোনিটা ডাক্তারের সামনে খুলে গেল। ডাক্তার ভাবলেশহীন মুখে হাতে একটা স্পেকুলাম নিয়ে মেয়েটির যোনির মধ্যে ঢুকিয়ে দিল। তারপর সেটা ভেতরে পুরে নাড়তে নাড়তে প্রশ্ন করল, ‘তোর যৌনব্যাধি সংক্রান্ত কোন রোগ আছে নাকি?’
মেয়েটি অস্ফুট স্বরে বলল, ‘না’
‘হু। সেটা খুব শিগগিরিই বোঝা যাবে...’
পরের মেয়েটি আগের মেয়েটির জায়গায় গিয়ে শুয়ে পড়ল। সবে ডাক্তার মেয়েটির যোনিতে ওই একই স্পেকুলামটা ঢোকাতে যাচ্ছিল, ট্রেসি চেঁচিয়ে উঠল, ‘এক মিনিট!’
ডাক্তার থমকে গেল। অবাক চোখে মুখ তুলে ট্রেসির দিকে তাকালো। ‘কি হলো?’
ঘরের প্রত্যেকেই ট্রেসির মুখের দিকে তাকিয়ে। সে বলল, ‘না, মানে আপনি ওই স্পেকুলামটা স্টেরিলাইজ করলেন না তো?’
কথা শুনে প্রথমে চুপচাপ ট্রেসিকে ভালো করে আগাপাশতলা দেখতে লাগল ডাক্তার। তারপর আস্তে আস্তে তার মুখে একটা কুটিল হাসি ভরে উঠল, ‘আমাদের এখানে খুব ভালো একজন গায়নোকলজিস্ট আছেন। তুই জার্মের ভয় পাচ্ছিস, তাই তো? বেশ, লাইনের একদম শেষে গিয়ে দাঁড়া।’
‘মানে?’
‘কি বললাম বুঝলি না? লাইনের পেছনে যা...’
ট্রেসি ব্যাপারটা ঠিক ধরতে পারল না। চুপচাপ লাইনে সবার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো। ও গিয়ে দাঁড়াতে ডাক্তার বলে উঠল, ‘এবার আমরা শুরু করতে পারি, হু?’ বলে ওই স্পেকুলামটাই মেয়েটির যোনিতে ঢুকিয়ে দিল। ট্রেসির আর বুঝতে বাকি রইল না কেন ডাক্তার তাকে লাইনের শেষে পাঠিয়েছে। সবার পরীক্ষা হবার শেষে, ওই স্পেকুলামটা তার যোনিতে প্রবেশ করাবে ডাক্তার। ভাবতেই মাথার মধ্যে যেন আগুন জ্বলতে লাগল। ওদের পরীক্ষা আলাদা করে করতেই পারত এই ভাবে সকলের সামনে নগ্ন না করিয়ে, কিন্তু ইচ্ছা করে তাদের মান সম্ভ্রম ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে নোংরামো করছে ডাক্তার। সবাই মিলে যদি এর প্রতিবাদ করে ওঠা যায়... এবার তার পালা।
‘টেবিলে উঠে পড়ুন, মিস ডক্টর’
ট্রেসি একবার ইতস্থত করল, কিন্তু এছাড়া আর কোন উপায় নেই। তাই ধীরে ধীরে সে টেবিলের ওপর উঠে শুয়ে পড়ল চোখ বন্ধ করে। অনুভব করল তার পা দুটোকে ধরে দুই দিকে সরিয়ে দেওয়া হল। তারপর স্পেকুলামটার শীতল অনুভূতি, এক লহমায় ঢুকিয়ে দেওয়া হল তার যোনির অভন্তরে অশেষ নির্মমতার সাথে। যন্ত্রনায় কুঁকড়ে গেল সে। ইচ্ছাকৃত ভাবে যে তাকে আঘাত দেওয়া হচ্ছে, সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করতে থাকে সে।
‘তোর সিফিলিস বা গনোরিয়া রোগ আছে নাকি?’ প্রশ্ন করে ডাক্তার।
‘না’। টেবিলের ওপর শুয়ে সে মনে মনে স্থির করে এই অসভ্য ডাক্তারটাকে তার পেটের বাচ্ছার ব্যাপারে কিচ্ছু বলবে না। এই জানোয়ারটাকে। বরং পরে একসময় ওয়ার্ডেনকে বলবে’খন।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
পরীক্ষা শেষে তার যোনির মধ্য থেকে একপ্রকার প্রায় জোর করে আঘাত দিয়ে স্পেকুলামটাকে বের করে নিল ডাক্তার। চোখ খুলে সে দেখে ডাক্তার হাতে রাবারের গ্লাভস পরতে ব্যস্ত। তার সাথে চোখাচুখি হতে ইশারায় টেবিল থেকে উঠে পড়তে বলল। সে চুপচাপ উঠে আবার অন্য মেয়েদের সাথে গিয়ে দাঁড়ালো। ডাক্তারের গ্লাভস পরা হয়ে যেতে বলে উঠল, ‘এবার তোরা লাইন করে পেছন ফিরে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে পড় দেখি। তোদের ওই সুন্দর সুন্দর পাছাগুলো দেখতে হবে আমাকে।’
ফট করে ট্রেসির মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, ‘এটা কেন বলছেন? কি করতে চান আমাদের নিয়ে?’ ডাঃ গ্লাসকো একনজর তাকিয়ে রইল তার দিকে। তারপর চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, ‘কেন বলবো মিস ডক্টর? মেয়েদের পাছা হচ্ছে কোন কিছু লুকিয়ে রাখার সবচেয়ে প্রকৃষ্ঠ জায়গা। তোর মত অনেক মাগীর পাছা থেকে প্রচুর পরিমানে কোকেন আর মারিজুয়ানা বের করেছি আমি। ঝুঁকে দাঁড়া...।’ শেষের কথাটা প্রায় হুকুমের সুরে বলে উঠল ডাক্তার। লাইনে ঝুঁকে দাঁড়ানো মেয়েগুলোর প্রত্যেকের পাছার ফুঁটোর মধ্যে গ্লাভস পড়া হাতের আঙুলটা ঢুকিয়ে দিয়ে অশ্লীল ভাবে নেড়ে নেড়ে দেখতে লাগল। এটা দেখতে দেখতে ট্রেসির কেমন যেন শরীরটা গুলিয়ে উঠল। মুখের মধ্যে বমি চলে এল প্রায়। ওকে ওয়াক তুলতে দেখে ডাক্তার খেঁকিয়ে উঠল, ‘এই মাগী, এখানে বমি করলে সেই বলি তোর মুখে মাখিয়ে দিতে বলব... চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক।’ তারপর গার্ডের উদ্দেশ্যে বলে উঠল, ‘এই, এদেরকে এখন থেকে সরাও, শাওয়ারে নিয়ে যাও। জঘন্য গন্ধ ছাড়ছে এদের গা থেকে।’
যে যার নিজস্ব পোষাক হাতে নিয়ে ওই নগ্ন অবস্থাতেই করিডোর ধরে লাইন করে চলল আবার। এবার তাদের একটা ঘেরা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে সার দিয়ে কিছু সিমেন্টের খোপ বানানো, আর সেই খোপ গুলোর মাথায় জলের শাওয়ার দিয়ে একনাগাড়ে জল পড়ে চলেছে। গার্ড তাদের পোষাক একটা কোনে রেখে শাওয়ারের নিচে গিয়ে স্নান করে নিতে বলল। ‘ওখানে সাবান আছে, প্রত্যেকে সাবান দিয়ে ভালো করে পা থেকে মাথা অবধি রগড়ে চান করে নে।’
ট্রেসি একটা খোপে ঢুকে শাওয়ারের তলায় দাঁড়ালো। কনকনে ঠান্ডা জল। সাবান দিয়ে ভালো করে নিজের শরীর ডলে ডলে স্নান করতে লাগল সে। মনে মনে ভাবল সে, ‘যতই সাবান মাখি না কেন, আর কোনদিনও পরিষ্কার হব না। এই লোকগুলো কেমন? এই ভাবে মানুষের সাথে ব্যবহার করে? অসম্ভব, এদের সাথে পনেরো বছর কাটানো সম্ভবই নয় আমার পক্ষে।’
পেছন থেকে একটা গার্ড চিৎকার করে উঠল, ‘এই, অনেক চান করেছিস, এবার বেরিয়ে আয়।’ ট্রেসি শাওয়ারের তলা থেকে বেরিয়ে ভিজে গায়ে এসে দাঁড়ালো। অন্য আর একজন কয়েদি শাওয়ারের নিচে তার জায়গা দখন করল ততক্ষনে। তার হাতে একটা পাতলা ছেঁড়া তোয়ালে ধরিয়ে দেওয়া হল। সেটা দিয়েই সে কোনমতে নিজের শরীরটা মুছে শুকোবার বৃথা চেষ্টা করল।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
সবার স্থান করা হয়ে গেল তাদেরকে আবার নিয়ে যাওয়া হল আর একটা ঘরে। এটা সাপ্লাই রুম। একজন কয়েদি সবার শরীরের মাপ নিয়ে নিয়ে প্রত্যেককে ধুসর রঙের ইউনিফর্ম ধরিয়ে দিচ্ছে। ট্রেসিকেও অন্যান্য কয়েদিদের সাথে দেওয়া হল দুটো ইউনিফর্ম, দুই জোড়া প্যান্টি, দুটো ব্রেসিয়ার, দুই জোড়া জুতো, দুটো নাইটগাউন, একটা স্যানিটারি বেল্ট, একটা চুলের চিরুণি আর একটা লন্ড্রি ব্যাগ। গার্ডগুলো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেয়েদের ইউনিফর্ম পরা দেখতে লাগল। সকলের ইউনিফর্ম পরা শেষ হলে আবার প্রত্যেককে লাইন করে নিয়ে যাওয়া হল আর একটা ঘরে। সেখানে ট্রেসি দেখে ঘরের মধ্যে একটা ক্যামেরা ট্রাইপডের ওপর লাগানো রয়েছে।
‘দেওয়ালের সামনে গিয়ে দাঁড়া সবাই।’ হুকুম এল পেছন থেকে।
ট্রেসি গিয়ে দেওয়ালের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
‘সামনে তাকা’
ক্লিক
‘মাথাটা ডানদিকে ফেরা’
ক্লিক
‘বাঁদিকে’
ক্লিক
‘নে, এবার ওই টেবিলের সামনে চলে যা’
পাশে একটা টেবিল রাখা রয়েছে। ট্রেসি গিয়ে দাঁড়াতে একজন গার্ড ট্রেসির প্রথমে ডানহাত, তারপর বাঁহাতটাকে ধরে তার সবকটা আঙুল টেবিলের ওপর রাখা ইঙ্কপ্যাডের থেকে কালি মাখিয়ে একটা সাদা কার্ডের ওপর ছাপ তুলে নিল। তারপর একটা ছেঁড়া ন্যাকড়া এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘হাতটা এটাতে মুছে ফেল। নে, তোর হয়ে গেছে...’
ঠিক বলেছে মেয়েটি। আমার হয়ে গেছে... আমি শেষ... এখন আমি একটা নম্বর মাত্র, নামহীন, চেহারা বিহীন নম্বর।
একজন গার্ড ট্রেসির দিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল, ‘হুইটনি? ওয়ার্ডেন তোর সাথে দেখা করতে চেয়েছে, আমার সাথে আয়।’ ট্রেসির বুকের মধ্যেটা হটাৎ করে যেন ধক করে উঠল। ‘চার্লস... নিশ্চয়ই চার্লস কিছু একটা করেছে! জানতাম। আমি জানতাম ও আমাকে এই ভাবে ছেড়ে দিতে পারে না। সেও যেমন কোনদিন চার্লসকে ছাড়া ভাবতে পারেনি, চার্লসও সেই একই রকম ভাবে ট্রেসি ছাড়া নিজেকে ভাবতে পারে না। আসলে কি হয়েছিল বুঝতে পেরেছি। হটাৎ শুনেছিল তো কথাটা তাই শকে ওই রকম করে ফেলেছিল। তারপর একটু সময় পেতে, মনটা শান্ত হতে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছে যে সে ভুল বুঝেছে আমাকে। কারণ ও আমাকে ভালোবাসে যে। ভিষন ভালোবাসে। তাই নিশ্চয়ই ওয়ার্ডেনের সাথে কথা বলেছে। বলেছে যে একটা মারাত্মক ভুল হয়ে গেছে। আর তাই তাকে মুক্তি দিতে বলেছে।’
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
ওরা অন্য একটা করিডোর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একটা বন্ধ দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। দরজার সামনে একজন পুরুষ আর একজন মহিলা গার্ড দাঁড়িয়ে। সবে ট্রেসি দরজা ঠেলে ঢুকতে যাবে, অন্য একজন দরজার ওপাশ থেকে বেরুনো কয়েদির সাথে একেবারে মুখোমুখি ধাক্কা। কয়েদি মেয়েটি বিশাল চেহারার। বিশাল মানে প্রায় দৈত্য বললেও ভুল বলা হয় না। এত বিশাল মেয়ে ট্রেসি জীবনে আগে কখনও দেখি নি... অন্তত ছ’ফুটের ওপর লম্বা হবে। আর সেই অনুপাতে চেহারাও সেই রকম মোটাসোটা। প্রায় একশ কিলো তো হবেই। মুখটা একদম থ্যাবড়া... চোখগুলো হলদেটে, ঘোলা। ট্রেসি ওর ধাক্কায় প্রায় পড়েই যাচ্ছিল, ঝট করে হাত বাড়িয়ে ট্রেসিকে ধরে ফেলল সে, তাতে ওর বাহুটা ট্রেসির স্তনের ওপর চেপে গেল।
‘এই! এটা নতুন চিড়িয়াটা না?’ গার্ডের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিল ও। ‘এটাকে আমার সাথে ঢুকিয়ে দাও না।’ মেয়েটির উচ্চারণে সুইডিশ টান স্পষ্ট।
‘সরি বার্থা। সেটা হবে না। ওকে অলরেডি অন্য জায়গায় অ্যালট করা হয়ে গেছে।’
মেয়েটি বড় বড় হাত দিয়ে ট্রেসির গালে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। ট্রেসি একটা ঝটকায় নিজেকে ওর থেকে সরিয়ে নিল। তাতে খ্যাক খ্যাক করে হেসে উঠল সে। বলল, ‘ঠিক আছে সোনা। কোন ব্যাপার না। বার্থার সাথে তোমার পরে আবার দেখা হবে। অনেক সময় আছে আমাদের হাত। কোথায় যাবে?’
তাকে নিয়ে গার্ড ওয়ার্ডেনের অফিসে ঢুকল। ট্রেসি মনে মনে ভাবতে লাগল, ‘ওখানে কি চার্লস অপেক্ষা করছে ওর জন্য?’
ওয়ার্ডেনের সেক্রেটারি গার্ডকে বলল, ‘এখানে অপেক্ষা কর, ওয়ার্ডেন ভেতরে ব্যস্ত আছেন...’
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
মধ্য চল্লিশের জর্জ ব্র্যান্নিগানকে প্রথম দর্শনেই ভালো লাগে। তার সংবেদনী মুখ আর সহানুভূতিমাখা গাঢ় চোখ দেখলেই তাঁর সম্পর্কে কারুকে বলে দিতে হয় না তিনি কেমন। এই সাউদার্ন লুইসিয়ানা মহিলা সংশোধানাগারের দায়িত্বে এসেছেন প্রায় বছর পাঁচ হল। শান্ত, ভদ্র, শিক্ষিত। যখন প্রথম এখানে আসেন তখন তাঁর মনের মধ্যে এই সংশোধানাগারের উন্নতির জন্য অনেক কিছু প্রকল্প ভেবে রেখেছিলেন। কিন্তু আস্তে আস্তে তাঁর পূর্বসূরিদের মত তিনিও বুঝে গেছেন, এখানে কিছু করার নেই তাঁর। চাইলেও কিছু করা সম্ভব নয়। যেখানে প্রতিটা সেলে দুই জন করে কয়দি রাখার নিয়ম, সেখানে সেই সেলগুলোতে বাধ্য হয়ে কখনও চার আবার কখনও ছয়জন কয়েদিও রাখতে বাধ্য হন তাঁরা। তিনি জানেন, শুধু এখানেই নয়, দেশের প্রতিটা জেলই অতিরিক্ত পরিমানে কয়েদিদের ভীড়ে ভারাক্রান্ত আর সেই অনুপাতে কর্মচারীর সংখ্যা নগন্য। হাজার হাজার অপরাধীদের প্রতিদিন সাজা শোনানো হচ্ছে আর তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে এই ধরনের কারাগারগুলোতে। সেখানে তাঁর কিচ্ছু করার নেই। এটাই এখন সিস্টেম হয়ে দাঁড়িয়েছে, আর তিনিও সেই সিস্টেমের অংশ মাত্র।
সেক্রেটারিকে ইন্টারকমে নির্দেশ দিলেন ট্রেসিকে তার কাছে পাঠিয়ে দিতে।
গার্ড ওয়ার্ডেনের অফিসের দরজা খুলে ট্রেসিকে ভেতরে যেতে ইশারা করল। ট্রেসি ভেতরে এসে দাঁড়াল। ওয়ার্ডেন ব্র্যান্নিগান মুখ তুলে তাঁর সামনে দাঁড়ানো ট্রেসির দিকে তাকালেন। বিষণ্ণ মুখে ধুসর ইউনিফর্ম পরিহিত কয়েদি তার সামনে দাঁড়িয়ে। বিষন্ন, কিন্তু বোঝা যায় এই বিষন্নতার আড়ালে মেয়েটি যথেষ্ট সুন্দরী। একটা নির্মল ঢলঢলে লাবন্য মাখা মুখ। ওয়ার্ডেন ভাবলেন, কে জানে, আর কতদিন এই লাবন্য থাকবে এই সুন্দর মুখটাতে। এই কয়েদিটির সম্বন্ধে তিনি একটু বিশেষই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কারণ কিছুদিন যাবত এই কয়েদির ঘটনা নিয়ে খবরের কাগজে প্রচুর খবর পড়েছেন তিনি। এ খুন করেনি, তবুও এর সাজা হয়েছে পনেরো বছরের। একটু বেশিই নয় কি? ঘটনা হল রোম্যানো এই মেয়েটির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। তাই সেটা অন্য চোখেই দেখা হয়ে থাকবে হয়তো। তিনি আর কি করবেন। তিনি শুধু এই নিয়মের রক্ষাকর্তা। নিয়ামক নন। তাই তার হাতে আলাদা কিছু করা সম্ভব নয়। ইচ্ছা থাকলেও।
‘বসুন, প্লিজ’, নরম গলায় ট্রেসিকে চেয়ারে বসতে অনুরোধ জানালেন।
ট্রেসি আনন্দের সাথে চেয়ারে উপনিবেশ করল। তার হাঁটুদুটো যেন আর দিচ্ছিল না। ভিষন দুর্বল লাগছে নিজেকে। এবার ইনি তাকে বলবেন চার্লসের ব্যাপারে যাতে সে খুব শীঘ্রই এখান থেকে মুক্তি পায়।
‘আমি আপনার রেকর্ড দেখছিলাম’ বললেন ওয়ার্ডেন। মানে চার্লস বলেছে এনাকে নিশ্চয়।
‘আমি দেখলাম যে বেশ অনেক দিন আপনি এখানে থাকবেন। আপনার সাজা হয়েছে প্রায় পনেরো বছরের জন্য।’ ওয়ার্ডেনের কথাগুলো বুঝতে একটু সময় লাগলো তার। নিশ্চয় কোন ভুল হচ্ছে আবার। তাড়াতাড়ি করে সে বলে উঠল, ‘না, তা নয়... মানে আপনি কথা বলেন নি... মানে চার্লসের সাথে?’ নিজেকে ভিষন নার্ভাস লাগছে ট্রেসির।
একটু আশ্চর্য হয়েই ট্রেসির দিকে তাকালেন ওয়ার্ডেন, ‘চার্লস?’
ট্রেসি বুঝে গেল যা বোঝার। পেটের মধ্যেটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠল। ‘প্লিজ’ প্রায় অনুনয় করে উঠল সে, ‘প্লিজ, আমার কথাটা একটু শুনুন, আমি নির্দোষ, আমাকে এখানে একপ্রকার মিথ্যা কথা বলে পাঠানো হয়েছে।’
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
এই কথাটা কতবার শুনেছেন জীবনে? একশবার? হাজারবার? ‘আমি নির্দোষ’
একটু থেমে বললেন, ‘দেখুন, আদালত আপনাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। তাই আমার উপদেশ বলতে পারেন, এখানে যতদিন থাকবেন, এখানকার সাথে মিলেমিশে থাকুন, দেখবেন তাতে আপনারই ভালো হবে। আপনাকে মেনে নিতে হবে এই বন্দিদশা। সেটাই আপনার দিন কাটতে অনেক সহজ করে দেবে। এখানে কোন ঘড়ি নেই। আছে শুধু দিনপঞ্জিকা। তাই আমার উপদেশ হল সময়এর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিন, তাতে আপনারই ভালো হবে।’
‘পারবো না... আমি পারবো না থাকতে এই জঘন্য জায়গায় পনেরোটা বছর...’ ট্রেসি আতঙ্কিত হয়ে ভাবতে লাগল। ‘আমি মরে যাবো। ওহ ভগবান, এর চেয়ে আমাকে মেরে ফেলো। কিন্তু কেন আমি মরবো? কেন? আমি মরলে তাহলে আমার পেটের সন্তানকেও তো মেরে ফেলা হবে। এটা তো তোমারও সন্তান চার্লস! তুমি আমাকে সাহায্য করবে না?’ ভাবতে ভাবতে চার্লসের প্রতি একটা নিদারূন ঘৃণা উঠে এল মনের মধ্যে। কানে এল ওয়ার্ডেনের গলা...
‘এখানে আপনি কোন প্রবলেমে পড়লে আমাকে বলতে পারেন, আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি যদি কোন সাহায্য করতে পারি আপনাকে।’ যদিও তিনি মুখে বলছেন একথা, তবুও তিনি নিজেও ভালো করেই জানেই এই কথাগুলো কতটা অন্তঃসারহীন। কোন মূল্য নেই এই কথার। মেয়েটি তারুন্যে ভরা, তার ওপর আবার সুন্দরী। এই জেলের প্রাচীরের মধ্যে কিছু পশু আছে, যাদেরকে নাকি জেলের মধ্যের কয়েদিরা বুল-ডাইক বলে ডাকে, ওরাই হচ্ছে এই জেলের দাদা বলা যেতে পারে, এক একটা পশু কেন, পশুরও অধম এই এদেরকে বলা যেতে পারে বলে ওয়ার্ডেন শুনেছেন, আর সেই বুল-ডাইকরা এই রকম একটা মিষ্টি ফুলের মত মেয়েকে পেলে ছিড়ে পিষে খাবে। এখানে কোন সেলই নিরাপদ নয় যেখানে এই মেয়েটিকে স্থানান্তরিত করতে পারেন তিনি। প্রতিটা সেলই কোন না কোন এই রকম বুল-ডাইকএর হাতে রয়েছে। তিনিতো অনেক কানাঘুষো শুনেছেন এই কারাগারের সম্বন্ধে। এখানে মেয়েদের বলাৎকার করা হয়, সেলের মধ্যে, টয়লেটে অথবা করিডোরের অন্ধকারে। কিন্তু প্রতিটা ঘটনাই কানাঘুষো থেকে গিয়েছে, দিনের আলোয় তা কখনই আসে নি। ক্ষতিগ্রস্তরা হয় মুখ খোলেনি, নয়তো মুখ খোলার অবস্থায় বেঁচেই থাকেনি।
খুব শান্ত স্বরে ওয়ার্ডেন ব্র্যান্নিগান ট্রেসিকে বললেন, ‘দেখুন, আপনার ব্যবহার যদি ভালো থাকে, তবে হয়তো আপনাকে আমরা পনেরো বছরের জায়গায় বারোতেই ছেড়ে দিতে...’
‘না!’ চুড়ান্ত হতাশা আর গভীর আতঙ্কে কেঁদে ফেলল ট্রেসি। চেয়ার ছেড়ে উঠে প্রায় হিস্টিরিয়া রুগীর মত চিৎকার করতে থাকল। তা শুনে বাইরে থাকা গার্ড দৌড়ে এসে ট্রেসিকে ধরে ফেলল।
‘শান্ত, শান্ত হন’, প্রায় আদেশের স্বরে বলে উঠল ওয়ার্ডেন। গার্ডকে ইশারা করলেন তাকে সেলে নিয়ে যাবার জন্য।
হতচকিত, বিমর্শ অনুনপায় মুখে তাকিয়ে ট্রেসিকে নিয়ে যাওয়া দেখতে লাগলেন ওয়ার্ডেন, এ ছাড়া আর কিই বা করণীয় তার?
******
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
একটার পর আর একটা অলিন্দ পেরিয়ে ট্রেসিকে নিয়ে গার্ড কারাগারের অন্দরের গভীরে হেঁটে চলল। প্রতিটা অলিন্দের দুপাশে সার দিয়ে রয়েছে সেল, আর প্রতিটা সেলই কয়েদিতে ঠাসা। সেলের গারদের সামনে এসে কয়েদিরা অদ্ভুত ভাবে হাসি মুখে তাকিয়ে তাকিয়ে ট্রেসিকে দেখতে লাগল। যেন কোন নতুন কোন টাটকা খাবার দেখছে চোখের সামনে। ট্রেসির কানে ভেসে আসতে লাগল ওই সব সেলের মধ্যে থেকে কয়েদিদের নানা প্রাকার মন্তব্য। অনেক ভাষায়, অনেক ধরনে। সেলের কয়দিরাও শুধু একরকমের নয়। বিভিন্ন বর্ণের, বিভিন্ন ধর্ম আর প্রদেশের। কেউ কালো, কেউ বা সাদা। আবার কেউ বা বাদামী তো অন্য জন হলদেটে। যেন পুরো বিশ্বের হরেক রকমের মানুষকে একজায়গায় জড়ো করে রাখা রয়েছে। তাদের ভাষাও ভিন্ন ভিন্ন। শুধু একটাই মিল প্রত্যেকের মধ্যে। এরা প্রত্যেকেই কয়েদি... সাজাপ্রাপ্ত... সমাজ বহির্ভুত মানুষ। এখানে যারা রয়েছে তারা কেউই অল্পদিনের অতিথি নয়। অনেকদিনের পুরানো বাসিন্দা। এই ভাবেই এরা মেনে নিয়ে রয়েছে বহির্জগত থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত এক নরকের মধ্যে।
সেলের মধ্য থেকে অন্যান্য কয়েদিরা তার উদ্দেশ্যে নানান ভাবে কিছু মন্তব্য ছুড়ে দিতে লাগল। নানান ভাষায় নানান ভাবে সেই মন্তব্যগুলো ট্রেসির কানে এসে পৌছাচ্ছে... কিন্তু এমন ভাবে সবাই মিলে তার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করছে, তাতে ওরা যে কি বলছে সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না... কি বলতে চাইছে ওরা?
ভালো করে বোঝার চেষ্টা করল সে... তারপর যেটা উদ্ধার করতে পারল... টাটকা খাবার... সেটা আবার কি? এখানে তার সাথে খাবারের আবার কি সম্পর্ক? অদ্ভুত তো!
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
ব্লক সি... প্রতিটি সেলে চারজন করে কয়েদি রয়েছে। সবশুদ্ধ ষাট জন। ট্রেসি নোংরা পুতগন্ধযুক্ত অলিন্দ দিয়ে হাটতে হাটতে একটার পর একটা সেলের গারদের ফাঁক দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকা কয়েদিদের দেখতে দেখতে এগিয়ে যেতে লাগল। ওই কয়েদিদের মুখে নানান ধরণের অভিব্যক্তি... কারুর মুখ ভাবলেশহীন তো কারুর মুখে লালসা ঝরে পড়ছে যেন। আবার কেউ কেউ তার দিকে হিংস্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। তার মনে হতে লাগল সে যেন অদ্ভুত এক অচেনা ভীন জগতে এসে পড়েছে। একটা অদম্য চিৎকার যেন গলা ফুঁড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে তার শরীরের মধ্যে থেকে। ওয়ার্ডেনের ঘরে ওকে যখন ডেকে পাঠানো হল, তখন একটা ক্ষীণ আশা ছিল... কিন্তু এই মুহুর্তে আর সেটাও নেই। সব শেষ। আগামী পনেরোটা বছর তাকে এই অন্ধকার জগতের কোন একটা বিশোধক খাঁচায় থাকতে হবে।
‘ভেতরে যা...’ একটা সেলের দরজা খুলে দিয়ে ট্রেসিকে বলে উঠল গার্ড। হাঁটতে হাঁটতে নিজের চিন্তার মধ্যেই হারিয়ে ছিল সে। তাই গার্ডের কথা বুঝতে একটু সময় লাগল। মুখ তুলে তাকালো সে সেলের ভেতর দিকে। ভেতরে তিনটে মেয়ে তার দিকেই নীরবে তাকিয়ে বসে রয়েছে। ‘কি হলো, চল...’ খেঁকিয়ে উঠল গার্ড।
একটু ইতঃস্তত করে ধীর পায়ে সেলের মধ্যে পা রাখল ট্রেসি। কানে এল পেছনে গারদ বন্ধ হয়ে তালা লাগিয়ে দেবার ধাতব শব্দ। এটাই তাহলে ট্রেসির আগামী পনেরো বছরের জন্য নির্দিষ্ট ঘর...
ঘিঞ্জি ঘরটাতে সব সমেত চারটি বাঙ্ক রয়েছে। একটা টেবিল, তার ওপর একটা ভাঙা আয়না। চারটে লকার। দূরে, ঘরের কোনায় আসন বিহীন একটা টয়লেট করার জায়গা। তার সেলের অন্য তিন সাথী তার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে... তাকিয়ে রয়েছে বললে ভুল বলা হবে... যেন তার শরীরের প্রতিটা ভাঁজ লালসা ভরা দৃষ্টি দিয়ে চেটে চেটে আস্বাদন করছে।
প্রথম কথাটা ওদের মধ্যে একজন পিয়ুর্তোরিকান মেয়ে বলে উঠল... ‘ওরে, দেখ দেখ, নতুন চিড়িয়া এসেছে আমাদের কাছে...’ গলাটা ভারী আর ঘড়ঘড়ে। দেখতে মোটামুটি খারাপ না। আরো ভালো বলা যেত যদি না ওই লম্বা একটা ছুরিতে কাটা দাগটা প্রায় কপাল থেকে গলা অবধি থাকত। দেখে তো খুব বেশি হলে বছর চোদ্দর বেশি মনে হয় না।
পাশ থেকে একটা বেঁটে মোটা মাঝ বয়সী মেক্সিকান মহিলা বলে উঠল, ‘তোকে দেখে বেশ ভালো লাগল মেয়ে... তা তোকে এখানে কি করতে পাঠালো?’
ট্রেসির সত্যি বলতে উত্তর দেবে কি তখন মুখ থেকে কথা সরছে না।
তৃতীয় জন এক কালো নিগ্রো মেয়ে। উচ্চতায় প্রায় ছয় ফুটের কাছাকাছি হবে। তীক্ষ্ণ ঠান্ডা দৃষ্টি। মুখটা পাথরের মত কঠিন। মাথাটা সম্পূর্ন কামানো যার ফলে ঘরের মিটমিটে আলো সেই কামানো খুলির ওপর পড়ে মাথার নীলকালো শিরাউপশিরাগুলো স্পষ্ট করে তুলেছে। এতে আরো যেন একটা ভয়ঙ্কর রূপ দিয়েছে মেয়েটিকে। সে এবার বলে উঠল, ‘ওই কোনের বাঙ্কটা তোর, বুঝেছিস!’
ধীর পদক্ষেপে নির্দ্দিষ্ট বাঙ্কের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। বাঙ্কের ওপর একটা নোংরা তোষক পাতা, না জানি আগের কয়েদির কি কি শরীর নিসৃত রস সেই তোষকে দাগ করে রেখেছে। দেখেই গাটা গুলিয়ে উঠল ট্রেসির। ঘেন্নায় তোষকটায় বসা তো দূর ছুতেও প্রবৃত্তি হল না তার। অনিচ্ছা সত্তেও ভেতর থেকে একটা প্রতিবাদ বেরিয়ে এল তার মুখ দিয়ে, ‘অসম্ভব, এই বিছানায় আমি... আমি কিছুতেই শুতে পারব না!’
শুনে ওপাশ থেকে মুটকি মেক্সিকান মেয়েটা খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে উঠল, ‘শুতে হবে না সোনা, তুই একটা কাজ কর বরং, তুই এসে আমার ওপর শুয়ে পড়।’
কথাটা শুনে চোখ তুলে তাকালো। একে একে ঘরের তিনজনকে দেখল সে। প্রত্যেকের চোখের দৃষ্টি তাকে যেন জামাকাপড়ের ওপর দিয়ে ভেতরের নগ্ন শরীরটাকে মাপছে মনে হল তার। না, না। ভুল ভাবছি আমি। আমি যা ভাবছি তা নয়। সব ভুল ভাবনা আমার... তবুও মনের মধ্যের সংশয় কাটে না তার।
অনেক কষ্টে সে বলে উঠল, ‘কার সাথে কথা বলতে হবে? মানে আমার একটা পরিষ্কার বিছানা চাই। কার সাথে কথা বললে হবে?’ প্রশ্ন করল সে। উত্তর দিল কালো মেয়েটি, ‘ভগবানের সাথে! কিন্তু বিগত বেশ কিছু বছর হল উনিও আর এদিকে আসছেন না!’
উত্তরটা শুনে একটু দমে গেল। আবার ঘুরে নিজের বিছানার দিকে তাকালো। কয়একটা বড়বড় তেলাপোকা ঘুরে বেড়াচ্ছে ওর বিছানার ওপাশে। অসম্ভব। পারবো না। এই ভাবে থাকতে হলে আমি পাগল হয়ে যাব... মনে মনে ভাবল সে। তার মনের কথা বুঝেই যেন কালো মেয়েটি বলে উঠল, ‘ভুলে যা... সময়ের সাথে নিজেকে মানিয়ে নে...’ কথা শুনে মনে পড়ে গেল কিছুক্ষন আগেই বলা ওয়ার্ডেনের কথা গুলো... ‘সময়এর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিন, তাতে আপনারই ভালো হবে।’
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
কালো মেয়েটি বলে উঠল, ‘আমার নাম আর্নেস্টাইন লিটিলচ্যাপ।’ তারপর ছুরিতে কাটা দাগওয়ালা মেয়েটির দিকে দেখিয়ে বলল, ‘ওর নাম লোলা। ও পোর্টারিকো থেকে এসেছে। আর ওই মুটকিটা, পাউলিটা, মেক্সিকান। তোর নাম কি?’
‘ট্রেসি... ট্রেসি হুইটনি।’
পাশ থেকে মুটকি প্রশ্ন করল, ‘কোথা থেকে আসা হয়েছে?’
কথা বলতে বলতে নিজের শরীরটা কেমন করতে লাগল। ভিষন দূর্বল লাগল নিজের। তাড়াতাড়ি করে বিছানার কোনটা ধরে নিজেকে সামলাল। ‘ভালো লাগছে না... আমার ঠিক ভালো লাগছে না কথা বলতে এখন।’ বলেই ধপ করে ওই নোংরা বিছানার একটা কোনেই বসে পড়ল সে। পরনের ইউনিফর্মের হাতা দিয়ে কপালে জমে ওঠা ঘাম মুছল। মনে মনে ভাবল, ‘আমার উচিত ছিল ওয়ার্ডেনকে আমার সন্তানের ব্যাপারে বলা, খুব ভুল হয়ে গেল। উনি শুনলে আমাকে নিশ্চয় একটা পরিষ্কার সেলে পাঠাতেন। অন্তত সেই সেলটাতে শুধু আ্মিই থাকতাম হয়তো।’
ভাবতে ভাবতেই কানে এল পায়ের আওয়াজ। করিডোর ধরে কেউ আসছে। গারদের বাইরে তাকিয়ে থাকতেই খানিক পর দেখল একজন গার্ড করিডর ধরে হেঁটে যাচ্ছে। উঠে দৌড়ে গেল গরাদের কাছে। তাড়াতাড়ি করে গার্ডকে ডেকে বলল, ‘এই যে, শুনছেন, আমি... আমি একবার ওয়ার্ডেনের সাথে দেখা করতে চাই... আমি আসলে...’
গার্ড যেতে যেতে মুখ ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে একবার দেখে নিয়ে বলে গেল, ‘ও, ঠিক আছে, আমি ওনাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি...’
‘না, আপনি বুঝতে পারছেন না, আমি...’ ততক্ষনে গার্ড চোখের আড়ালে চলে গেছে। ট্রেসি অনেক কষ্টে নিজের আঙুলগুলো মুখের মধ্যে পুরে দিয়ে গভীর হতাশায় ভেতর থেকে উঠে আসা চিৎকারটাকে সামলালো। লোলা পেছন থেকে প্রশ্ন করল, ‘তুই কি অসুস্থ নাকি? না অন্যকিছু হয়েছে?’ ট্রেসি শুধু দুই একবার মাথাটা নাড়ালো। মুখ দিয়ে কোন কথা বেরুচ্ছে না আর। তারপর আবার ধীর পায়ে হেঁটে নিজের বাঙ্কে গিয়ে নিজের বিছানার দিকে একবার তাকালো। তারপর চুপচাপ ওই নোংরা বিছানাতেই শুয়ে পড়ল। এ যেন আশাহীনতার ব্যবহার, সমর্পণের শরীরি ভাষা। চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইল সে।
******
|