Thread Rating:
  • 20 Vote(s) - 3.3 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Thriller খোঁজ by dimpuch
#61
টনি আর বিনি যখন তাদের স্কোডা নিয়ে শিলিগুড়ি পৌছাল তখন পাহাড়ের কোল বেয়ে সন্ধ্যা নেমেছে। নতুন ড্রাইভার বাহাদুর চালিয়েছে ভালো, কিন্তু হলে কি হবে দুই ভাই ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙে তৈরি হতেই তো সকাল গড়িয়ে দুপুর ছুই ছুই। এক হোটেলের সামনে গাড়ি রেখে দুই ভাই ঢুকল হোটেলের বারে,  এখনও ১ ঘণ্টার ওপর বাকি। বৃষ্টি পড়ছে টিপ টিপ। একটু না ঢাললে গা ম্যাজ ম্যাজ করছে। বারে প্রথমেই শকুনের মতো চোখে পড়ল এক কোনে দুই যুবতী। একেবারে উগ্র আধুনিক, হাতে সিগারেট বিয়ার খাচ্ছে


……… বসতে পারি, ……টনি শুরু করলো
………হ্যাঁ হ্যাঁ বসুন। একলা দুজনে, বসুন গল্প করা যাবে।

দুই যুবতী এখানে কোন একটি সফটওয়ার অফিসে কাজ করে, এক সাথে থাকে, খায় সব। দু জনের দুটো আইডেনটিটি কার্ড বার করে দেখাল। টনি আর বিনি চা বাগানে যাবে শুনে . “উফফ দারুন”। দুজনের নাম রিয়া আর পিকু। পিকু একটু বড় রিয়ার থেকে। “ আজ আবার পূর্ণিমা, চাঁদের  আলোয় চা বাগান দারুন। কিছু মনে করবেন যদি আমরা যাই” । আগ বাড়িয়ে রিয়া যেতে চাইল।
দুই ভাই তো এটাই চাইছিল। এই রকম রাতে , এই দুই মাগি উফফ জমে যাবে। 
………না না চলুন চলুন। কাল বিকালে আসবেন আমাদের সাথে।
………বিকালে? আমাদের আবার অফিস আছে না বলে ছুটি নেওয়া ঠিক না। সকালে যদি গাড়ি দিয়ে একটু এগিয়ে দেন
………হ্যাঁ হ্যাঁ কোন ব্যাপার না। চলুন। এখন কি নেবেন বলুন হুইস্কি? স্কচ কি এখান্র পাওয়া যাবে? শসসসস……। শব্দ করে ডাকল বেয়ারাকে। জিজ্ঞাসা করতে জানল গ্লেন ফিডিচ পাওয়া যেতে পারে।পুরো বোতল কিনে খাবারের অর্ডার দিয়ে দুই মেয়েকে সিডিউস  করতে যা যা লাগে শুরু করল।  মেয়ে দুটো কিন্তু অল্প একবার দুবার চুমুক দিয়ে শুধু ঢলে পড়ছে ওদের গায় বার বার। সন্ধ্যা গাড় হয়ে রাত হোল।
আপনি থেকে এখন তুমি হয়ে গেছে।

……এই টনি দেখ না তোমাদের ড্রাইভার কোথায়, চলো এখন
বিনি তাড়াতাড়ি ফোন বের করে ড্রাইভার কে ফোন লাগাল বেজেই গেল। আবার ৫ মিনিট পর , এবারও বেজেই গেল
 
ড্রাইভার ওদের নামিয়ে দিয়ে এক ঠেকে ঢুকেছে দু পাত্তর টানবে।সবে একটা ছোট বোতল শেষ করেছে পাশে এসে বসলো এক আধ বুড়ো লোক। নোংরা জামা কাপড়, মাথায় এক বড় টুপি, মুখ প্রায় ঢেকে রেখেছে ।কান দুটো বেয়ারা রকমের বড়। মুখ ভালো দেখতেই পারছে না কথায় অসমিয়া টান। কথা জমাল বাহাদুরের সাথে।তবে বুড়ো খেতে পারে। দেখতে না দেখতে একটা বড় বোতল শেষ করে আবার একটা নিল।
………এই নাও ওস্তাদ, এই বোতল আমার তরফে…।।বাহাদুরের খুব মোজ এসেছে
………ওস্তাদ তোমার মালিক কি রকম
………শালা দুটো বোকাচোদা। রাস্তায় বার বার বললাম, একটু দাড়াই খেয়ে নি, না তারা সোজা এখানে এসে খাবে। হাত দিয়ে পয়সা গলে না। বাপ ছেলে এক মাগি চো…দে। ……কথা জড়িয়ে এসেছে বাহাদুরের।
……ওস্তাদ সিগারেট নাও……সিগারেটে টান দিয়ে বাহাদুর ‘মগাম্বো খুশ হ্যাঁয়’। কেয়া নেশা। এই ভাবে ঘণ্টা দুয়েক  পর বাহাদুর যখন ঠেক থেকে বেরল তখন দাঁড়াবার অবস্থায় নেই। ধরে ধরে রিকশা থেকে নেমে গাড়ির গায়ে হ্যালান দিয়ে শুয়ে পড়ল।“ ভ্যাপ শালা মাদার চোদ। ভাগ” দু একবার বলে মাটি নিল।

এদিকে বারে টনি আর বিনি বাঁড়া ফেটে যাওয়ার যায়গায়।  রিয়া আর পিকু মাল টেনে চুমু খেতে শুরু করেছে। বারের মালিক এসে সাবধান করতে, ওপরে একটা ঘর নিল বিনি। টনি একটু সেয়ানা। সে বাইরে দেখতে গেল ড্রাইভারের অবস্থা। বিনি আর পিকু ঘরে ঢুকতেই , টনি ফোন করে ডাকল বিনি কে “ নীচে আয় এক্ষুনি”। বিনি নীচে নেমে দেখে ড্রাইভার গাড়ির পাশে শুয়ে। কি করে যাবে ? বাগান কিনবে বলে এসেছে, বর্তমান  মালিক আজ রাতে বাগানে থাকবে ওদের জন্য।
………টনি কি করা যায়, ফোন করি?......হঠাৎ

………দাদাবাবু আপনারা এখানে, এই সময় , কি করছেন?.........দুই ভাই তাকিয়ে দেখে রতন। মাথায় এক  বড়ছাতা, হাতে চটের ব্যাগ, তার থেকে সব্জি উঁকি মারছে
……।।আরে রতন, তুই এখানে কি করছিস? তোর তো বাড়ি যাবার কথা?
………বাড়িতেই তো এসেছি। আমার বাড়ি এখান থেকে  ৪-৫  কি,মি্‌ কিন্তু আপনারা তো বাগানে যাবেন
……।।আরে সেই জন্যই তো এসেছি, কিন্তু দ্যাখ ড্রাইভার মাল টেনে শুয়ে পড়েছে।
………   একি, ছি ছি, কোন দায়িত্ব নেই। যদি চান আমি নিয়ে যেতে পারি । আপনারা মনিব, আপনাদের বিপদে পাশে দাড়াব। বাবু আমাকে ৮  হাজার টাকা দিয়েছেন, আমার কিছু করা উচিৎ ।  আমি নিয়ে গেলে অসুবিধা আছে?
……না না তুই চল। বিনি যা সব নিয়ে আয় আর মেয়ে দুটোকে বল তৈরি হতে

বিনি ওপরের ঘরে ঢুকতেই পিকু বিনিকে দেয়ালে ঠেসে চুমু দিতে শুরু করলো।
“ এই চলো গাড়ির ড্রাইভার এসে গেছে”। পিকুর হাত পৌছে গেছে বিনির বাঁড়ায়। বার করে ফেলেছে বাঁড়া। দু এক বার কচলাতে ফোন বেজে উঠলো.” কি করছিস? এক্ষুনি আয়। পরে চুদিস পিকু কে”। পিকু ফোন কেরে ছুড়ে দিল বিছানার ওপরে। বাঁড়া  নিয়ে খেলছে। মাই ধরিয়েছে বিনি কে ।আবার ফোন বাজতে, বিনি তুলতে পারল না। পিকু খিঁচে মাল বার করে দিয়ে দেয়ালে ঠেসে চুমু। এই বার বিনি তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল পিকুর হাতে এক টানে সাথে নিয়ে। নীচে নামতেই
………কি করছিস, ৭ টা বেজে গেছে আর কত দেরি করবি।?...... দুই ভাই পিকু আর রিয়াকে  কোলে নিয়েছে। রতন স্পিড প্রথমেই বাড়িয়ে দিল। শহর থেকে বেরতেই বৃষ্টি নামল বেশ জোরে। পাহাড়ি অঞ্চলের বৃষ্টি হয় ঝম ঝম । দুই মাগি হাত তালি দিয়ে
………এই পিকু এই চাঁদের আলোয় তিস্তা কে যা দেখায় না, ভাবতে পারবি না। তার ওপর এখন বর্ষা। অন্য রুপ, এই একটু চলো না তিস্তার পাশে ।একটি বার দেখব। ড্রাইভার কে বল না…।।হাত থেকে বিয়ারের বোতল নিয়ে চুমুক দিয়ে  রিয়া আবদার করলো। টনি এইবার একটু নরম হয়ে
……।বাগান কিন্তু বেশ লাগে বৃষ্টিতে
………সে পরে দেখব। ৫ মিনিটের জন্য
………দাদাবাবু, যাবেন তো চলুন। যাওয়ার পথেই পড়বে। কত আর ১০-১৫ মিনিট বেশি লাগবে সময়
……চল তাহলে………রিয়ার জিন্স এর ভিতর হাত দিয়ে আঙুল গুদে পৌঁছেছে। রিয়া সোজা টনির কোলে উঠে দু পা দিয়ে পেঁচিয়ে ধরেছে। বিনি সমানে নিজের বাঁড়া পিকু কে দিয়ে খেচাচ্ছে। রতন গাড়ি বেশ জোরে  চালিয়ে সেবক ব্রিজ পেরিয়ে গেছে কিছুক্ষণ এখন   সমতলে গাড়ি। গ্রামের পথ। মিনিট ১০ যেতে দু পাশের বাড়ি কমতে কমতে শেষে কিছু নেই ,শোনা যাচ্ছে শুধু তিস্তার গর্জন দূর থেকে । পাহাড়ে কাল প্রচুর বৃষ্টি  হওয়ার ফলে অপরুপ তিস্তা তার বিপুল জল রাশি  নিয়ে নাচতে নাচতে নেমেছে। রতন গাড়ি নিয়ে একেবারে পাড়ের সামনে দাড় করাতে তিস্তার রুপ উদ্ভাসিত  চোখের সামনে।বিপুল জলরাশি আর পূর্ণিমার আলোতে তিস্তা এক  মায়াবি নারী।  

  বিনি নামতে গিয়ে “ কি হোল খুলছে না কেন, এই রতন  খুলছে না কেন?  টনি দেখত”……না খুলছে না “ এই রতন লক খুলে দে শুয়ারের বাচ্চা। খোল”। ঘুরে গেল রতন আর প্রচণ্ড জোরে এক থাপ্পড় এসে পড়ল টনির গালে।
“ চুপ। এই গাড়ি থেকে তোরা বেরতে পারবি না” ।
………খানকির পুত তোর এত বড় সাহস…… বিনি আর টনি কোমর থেকে রিভল্ভবার  বার করবে, দুজনের কানের পাশে ইস্পাতের শিতল স্পর্শ।।
……।। শোন টনি আর বিনি আজ তোদের শেষ দিন।
…।।রতন ভালো হবে না। আমাদের কিডন্যাপ করে লাভ নেই। আমাদের বাবার নাম গোবিন্দ সাহা, ভুলে ষাস না …।।টনি কথা শেষ করতে না করতেই গালে এসে পড়ল এক ঘুসি
……শোন শুয়ারের বাচ্চারা। আমার নাম রতন না। আমি রতন নই
……তাহলে কে তুই?
………আমি আদিত্য বা  আদি। তিস্তার স্বামী। চিনতে পারছিস এইবার…মাথায় বাজ পরে একেবারে চুপ দুই ভাই। নিঃশ্বাস পর্যন্ত নিতে ভয় পাচ্ছে। বুঝে গেছে কি ঘটতে  চলেছে। সামনে সুন্দরী তিস্তা। দর দর  করে ঘামছে, নেশা ছুটে গেছে
………আদি? তুমি বিশ্বাস করো আমরা খুন করিনি। খুন করেছে নকুল……।আবার থাপ্পড় বিনিকে  
………রেপ করেছিল কে?......পিকু অরফে জাহা …।।কি হোল উত্তর দে , কে রেপ করেছিল । শিতল স্পর্শ এইবার কানের ভিতর

………বলছি বলছি। আমরা দুজনেই দায়ী। তিস্তা কে ভালো লাগত, আলাপ করতে গিয়ে পাত্তা পাই নি। ভয় দেখিয়ে লাভ হয়নি। তখন নকুল সলা দেয়, আদি যখন বাড়ি থাকবেনা, তখন রেড করতে। তাই করেছিলাম। আদির মা কে নকুল তুলে আছাড় মারতে তিনি মারা যান। তিস্তা শেষ পর্যন্ত চেঁচিয়ে যাচ্ছিলো। তখন নকুল গলা টিপে ধরে। আমরা তখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছি। তোমার মেয়েকে নকুল নিয়ে যায়।
......ঘোষাল দারোগা কে কত দিয়েছিলি?
......শুনেছি বাবা ওকে ৪০ লক্ষ দিয়েছিলো
 
   কেউ বুঝতে পারেনি, পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে একটি অফফ হোয়াইট রঙের হণ্ডা। গাড়ি থেকে নেমে এল এক লম্বা শক্ত সমর্থ  লোক। রতনের দিকের দরজায় নক করতে রতন দরজা খুলে বাইরে এল।
……একে একে নামাও।
………আদিদা, ক্ষমা করো , প্লিস ক্ষমা …।বিনি কেঁদে দিয়েছে……টনি তখনো চেষ্টা করছে
………আদিদা কোন উপায় নেই? কি চাও বল , তাই হবে প্লিস
 
লক খুলে দুই ভাইএর প্যান্টের বোতাম খুলে পায়ের কাছে নামিয়ে মুখ চেপে গাড়ি থেকে নামাল। চেচানর চেষ্টা করছে দুই ভাই।  ঘাড় চেপে ধরল  একেবারে প্রায় হাঁটুর কাছে । ওইভাবে রাখলে চিৎকার করলেও  চিৎকারে জোর থাকেনা।আসে পাশে এক দেড় কিলোমিটারের ভিতর লোকালয় নেই। ছটফট করছে হাত ছুরছে প্রানপন।আদি আর করন মাটিতে মুখ চেপে ধরল। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, দম ফুরিয়ে আসছে, কিছু করার শক্তি প্রায় নেই।  তখন  ৪ জনে ওই ঘাড় হাঁটুর কাছে গুজে দুই ভাইকে তিস্তার জলে  মাথা ঠেসে ধরল।ছট ফট করছে দুটোই। পা ধরে আছে আদি আর করন। মাথা জলে ঠেসে ধরেছে জাহা আর মুন। ১৫-২০ সেকেন্ড রেখে তুলছে।বর বড় শ্বাস  নেওয়ার চেষ্টা করছে, আবারও ওই ভাবে ঠেসে ধরছে। এই ভাবে ৮-১০ বার করার পর দুই ভাই একে বারে নেতিয়ে পড়েছে, মুখ দিয়ে শব্দ বার হচ্ছে না প্রচুর জল গেছে পেটে,  ওই ভাবে হিঁচড়ে আবার গাড়িতে তুলে,
……কে কে রেপ করেছিস, দুজনেই?......।।
………ক্ষমা করো আদি দা ক্ষমা করো। খুব ভুল করেছি। পায়ে ধরছি আদি দা। …কথা বেরোচ্ছে না, অস্পষ্ট কথা আর হাত জড় করে
………তিস্তাও এই ভাবে তোদের কাছে বলেছিল, তাই না? তোরা কি করেছিলি? কে খুন করেছে আমার মাকে আর তিস্তা কে।
………খুন নকুল করেছে, এইটা সত্যি, খুন নকুল করেছে
……তিস্তার বুকেই তোরা মরবি, যা জানোয়ার 
 
করন ইশারা করলো আদিকে। আদি দরজা লক করে গাড়ি স্টার্ট করে চাবি ঝুলিয়ে রেখে নিজের দিকের দরজা খুলে বেরিয়ে এসে ঠেলতে আরম্ভ করলো বাকি ৩ জনের সাথে । ৩-৪ ফুট গড়িয়ে যেতেই,  ঢাল ধরে সোজা তিস্তার বুকে।প্রথমে পাড়ের কাছে একটা একটা জলের বড়  স্রোত গাড়িকে পারে ধাক্কা দিচ্ছে, মিনিট খানেক পর গাড়ি নদীর একটু ভিতরে। শুরু হোল খেলা। ওই বিশাল গাড়ি কে পল্কা দেশলাই বাক্সের  মতো লোফা লুফি করতে করতে তিস্তা গাড়ি কে তুলে নিল তার বুকে মুল স্রোতে । পিছনের কাঁচে দুই ভাইএর আকুল প্রান বাঁচানোর  চেষ্টা ১ মিনিটের কম সময় দেখা গেছিল। ওলট পালট গাড়ি তিস্তার মুল স্রুোতে, চোখের বাইরে যেতে ৫-৬ মিনিটের বেশি লাগলো না।

লক্ষ হীরার ঝলক তুলে ভয়ঙ্কর সুন্দর তিস্তা পূর্ণিমার আলোয় আলোকিত, এক অপার্থিব সৌন্দর্য, ঠিক এক কিশোরী প্রানের আনন্দে  নাচের শৈলী দেখাতে দেখাতে ছুটে  চলেছে। আদি আস্তে নেমে গেল জলে।  দুই হাতে তিস্তার জল নিয়ে নদীর দিকে  তাকিয়ে

……………তোমারেই যেন ভালো বাসিয়াছিলাম , শত রূপে শতবার
…………জনমে জনমে, যুগে যুগে ,অনিবার
 
 
নিঃশব্দে ৪ জনে গাড়ির ভিতর নিজেদের সল্প মেকআপ তুলে জামা প্যান্ট , সব খুলে  একটি ব্যাগে নিল। হণ্ডা গাড়ির ভিতর বাইরে ভিজে ন্যাকরা দিয়ে বার বার মুছে  সেই বারের গাড়ি রাখার জায়গার ঠিক আগে , যেখানে ক্যামেরা নেই, রেখে,চাবি ভিতরে ছুড়ে আসতে আসতে  হেটে রিকশা নিল।
 
………এক সপ্তাহ লাগবে ওদের খোঁজ পেতে। আদি কীরকম লাগছে?
……।।বহুদিন পর নিজেকে পুরুষ বলে মনে হচ্ছে কর্তা,
 
 
করন ঠিকই বলেছিল। এক সপ্তাহের পর তিস্তার জল কমতে ওই গাড়ির খোঁজ পাওয়া যায়  যেখানে ডুবেছে তার থেকে প্রায় দেড় মেইল দূরে পাথরের খাজে আটকে। দুই ভাইয়ের  মৃত্যু জলে ডুবে। শরীরের যে আঘাত তা গাড়ি ওলট পালটের জন্য।  ইনজুরি গুলো এনটি মরটেম নয় পোস্ট মরটেম। অর্থাৎ মৃত্যুর আগে ইনজুরি নয়,  পরে। পুলিশের স্পেশাল টিম তদন্ত করে কোন কিছু পায়নি, কিন্তু গোবিন্দ বুঝেছে যে এইটা প্রতিশোধ। ১৭-১৮ বছর আগের কোন ঘটনা যে কারন হতে পারে গোবিন্দর মাথায় আসেনি। কল্পনাও করে নি। গোবিন্দ সব সম্পত্তি মেয়ে সজনীর নামে লিখে দিয়েছে। মেয়ের বাড়ির পাশে বাড়ি কিনে উঠে গেছে, সেখানেই খাওয়া থাকা সব। মেয়ে তার ভার নিয়েছে। গোবিন্দ কি খুব দুঃখ পেয়েছে? দুঃখ পেয়েছে, কিন্তু তা সামলে নিয়েছে কেননা মেয়ে আছে। পুলিশ বার বার এসেছে গোবিন্দর কাছে কোন ঘটনা , কোন রকম প্রতিশোধ। ‘ কিচ্ছু জানি না। কোন ধারনা নেই, বলতে পারব না।“ মেয়ের শেখান বুলি আওড়ে গেছে। সজনী বুঝিয়েছে “ বাবা, তুমি যদি কোন কথা বল তাহলে তুমি কি করেছিলে, কাকে কাকে ঘুষ দিয়েছিলে, কোন মেয়ের সাথে কি করেছ সব  বেরিয়ে আসবে। তাই তুমি বলবে আমি কিছু জানি না। পুলিশ তোমাকে ছিরে খাবে। মায়ের পেটের দুই ভাই, তাদের মৃত্যু আমাকে কম আঘাত করেনি,কিন্তু ভেবে দেখ কত মেয়ের সর্বনাশ করেছে। তিস্তাদি বাদ দাও, বাড়ির কাজের মেয়ে রত্নার মেয়েকে বিয়ের আগের দিন ;., করলো আর বিয়ে ভেঙে গেল। এ বাদেও আর কত ;., খুন করেছে, তা কি আমরা জানি। তুমি যদি তিস্তাদির ঘটনার পর পুলিশে দিতে ওদের শিক্ষা হতো। ভুল করেছিলে। মা পর্যন্ত ওই ঘটনা মেনে নেয় নি।   “  চুপ করে শুনেছে মেয়ের কথাগোবিন্দ। অক্ষরে অক্ষরে সজনীর কথা মেনেছে। বিনির ফোন হোটেলের বিছানায় পাওয়া গেছে আর তার  ফলে ঝিলিক আর তার মা বুঝেছে যে পুলিশ মানে কি। ঝিলিকের আর উগ্র ভাব নেই, রোজ কলেজ যায় , ঠিক মতো বাড়ি ফেরে, নিত্য বাহারি জামা কেনা বন্ধ হয়েছে।    
 
 
[+] 5 users Like dimpuch's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#62
(22-08-2021, 11:58 PM)dimpuch Wrote:  ৫ তারা? আমি এই ব্যাপারটা একেবারে বুঝিনা। 'জীবন' শুরুর সময় ছিল ৫, তারপর হোল ৪ এখন বোধ হয় ৩। কেন ৫ আর কেনই বা ৩, কে দেয় কেন দেয় কে জানে। 
আপনার ৫ গোলাপ নিলাম সানন্দে

খুুব  ভালো লাগছে। 
এটা তার বহিঃপ্রকাশ।
Like Reply
#63
বীভৎস সুন্দর প্রতিশোধ।
তিস্তার আত্মা শান্তি পেলো।
Like Reply
#64
(25-08-2021, 11:07 PM)buddy12 Wrote: বীভৎস সুন্দর প্রতিশোধ।
তিস্তার আত্মা শান্তি পেলো।

প্রতিশোধ। একটু বীভৎসতা থাকে। ধন্যবাদ, সঙ্গে থাকুন
Like Reply
#65
পরবর্তী পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
Like Reply
#66
৬ দিন পর করন আর জাহা গুড্ডি মুনিয়া কে নিয়ে এল। বছর ১৯ বয়েস কিন্তু ঠিক  মতো সুষম খাবার না পেয়ে সৌন্দর্যর  অভাব চেহারায়। করন জাহাকে বুঝিয়ে দিল “ দ্যাখ , মেয়ে দুটো লম্বা, সাধারন বাঙ্গালির তুলনায়। গুড্ডির চোখ মুখ ভালো বললে কম বলা হয়। মুনিয়া ও সুন্দরী। তুই যেতে দে ৩ মাস, পাড়ার ছেলেরা তোর বাড়ির সামনে লাগাবে লম্বা লাইন”। জাহার  মনে ছুয়ে গেল   “তোর বাড়ির “ শুনে। আদি আর মুনমুন এল ৩ দিন বাদে। প্রথম দিনই জাহা দুইজনকে একতলার বড় ঘর, প্রায় ১৫০ স্কয়ার ফুট হবে, সেখানে দুটো তক্তপোষ এ সুন্দর বিছানা। মশারি গোটানো পায়ের দিকে । এমনকি কোল বালিশ অবধি আছে। সঙ্গে বাথরুম লাগোয়া দেখিয়ে

………এইটি তোদের রাত্রিবেলার ঘর। আর সারাদিন-রাত্রি তোরা যেখানে খুশি, মানে ওপর নিচ যেতে পারবি।গুড্ডি , মুনিয়া  আমি আর কর্তা ওপরে থাকি , তবে আমরা বিবাহিত নই। এর মানে বুঝে নে। তোরা কর্তাকে বাবজি বলে ডাকবি বাবা নয়। অথবা কর্তাবাবা যেটা তোদের ইচ্ছা আর আমাকে মাসি……দুই অনাথ মেয়ে ঘাড় নাড়ান ছাড়া কি করতে পারে?
……।।মেয়েরা শোন, তোরা যাতে নিজেদের পায়ে দাড়াতে পারিস, আমি সেই ব্যাবস্থা করব। তা হোল ঘরে বসে রান্না আর ঘর মোছা ছাড়াও ব্যায়ম করতে হবে। তোদের ক্লাবে ভর্তি করে দেব। সেখানে তোদের শেখাবে, বক্সিং, ক্যারাটে এই সব। বছর খানেক শিখলে  তৈরা কোথাও সিকুরিটির কাজ পেয়ে যাবি অথবা কোন ওই ধরনের অফিসে ঢুকতে পারবি। সকালে উঠে দৌড় লাগাবি, জাহা সঙ্গে যাবে। আর কোন ছেলে পিছনে লাগলে বা তোদের যদি ভালো লাগে আমাকে জানাবি। আমি দেখব বকাটে, লাফাঙ্গা কিনা। মাথায় ঢুকেছে ? প্রতি মাসে হাত খরচা পাবি। লেখাপড়া করতে চাইলে কলেজে ভর্তি করে দেব। দুটো এক সাথেও করতে পারবি। ক্যারাটে, বক্সিং আর কলেজ 

……হ্যাঁ বাবজি……২ দিন পর থেকে শুরু হোল দুই কন্যার ব্যায়ম আর ক্যারাটে, সকালে দৌড়। জাহা সঙ্গে যায়, তবে ৬-৭ মিনিটের বেশি  দৌড়াতে পারেনা। আশ্চর্য দুই মেয়ে ই কলেজে ভর্তি হয়েছে আর মন দিয়ে কলেজ যায়।
আদি আর মুনমুন দুই মেয়ের দিকে চেয়ে
……কর্তা একজন আমাদের সাথে?
 
………কেটে পড়। ওরা আমার মেয়ে। আচ্ছা আদি তোমার মেয়ের কোন বিশেষত্ব আছে চেহারায়, এই মানে কোন জন্ম দাগ, বা  আঁচিল এই রকম কিছু?
……মিষ্টির বাঁ দিকের পাছায় একটা বেশ বড় কালো ছোপ আছে। এ বাদে সেরকম কিছু মনে পড়ছে না
………ঠিক আছে, এটাও কাজে লাগবে। ……দুজনের অনাথ আশ্রম থেকে বাবা বা পরিবার বলে যে নাম বা ঠিকানা আছে তা একেবারে বাজে। একজনের নাম অনিল কাপুর আরেকজনের বাবা  অমিতাভ বচ্চন। করন শুনে একটু গম্ভীর হয়ে
………আদি আমার মনে হয় ওদের বাবা বল বা গার্জেন তারা বোম্বে তে থাকে। তাই ওইরকম নাম। এই বাংলায় কেউ ফলস নাম দিলে কি দেবে? কোন ক্রিকেটার বা ফুটবলের কোন নাম করা প্লেয়ার এর নাম অথবা এখানকার কোন আর্টিস্ট এর নাম, দেখা যাক রফিক মিয়াঁ কি খবর আনে।

শীতকাল এসে পড়ছে। কিন্তু বাচ্চু এইবার আসতে পারবে না ওর কলেজের ১২ ক্লাসের পরিক্ষা। পাশ করলে মিলিটারি অফিসারের ট্রেনিং এর জন্য মিলিটারি একাডেমী তে যাবে। করন সেই জন্য ঠিক করলো সবাই মিলে বাচ্চুর কাছে যাবে, একদিন হোটেলে থাকবে বাচ্চু ও থাকবে ওদের সাথে। ৬ জন মিলে এক বিরাট ভাড়া গাড়ি করে বাচ্চুর কলেজে হাজির। খুশীতে  ফেটে পড়ছে বাচ্চু। জাহা দেখছে আর ভাবছে “এ আমার বাচ্চু? রফিকের মার খেয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম একে জড়িয়ে? ”। ৫ফুট ১০ ইঞ্চি লম্বা। সুন্দর  স্বাস্থ্য। মাকে ধরে কোলে তুলে নেচে নিল একটু। বন্ধু কে ধরে আর ছাড়ে না। গুড্ডি আর মুনিয়া কে দেখেই পিছনে লেগেছে। পুরো ২৪ ঘণ্টা কোথা দিয়ে কেটে গেল কেউ জানে না।
………বন্ধু আমি যাব তোমাদের সাথে ২ দিনের জন্য। মা , ষাব……।আব্দার বাচ্চুর।
………না পরীক্ষা দিয়ে আসবি। আমি আসব তোকে নিয়ে যেতে
……মা দু দিন তো, প্লিস
……না…। গম্ভীর জাহা
………জাহা চলুক না দু দিনের জন্য
………না………করন কথা বাড়াল না। জানে জাহা না বললে হ্যাঁ করান যাবে না। আদি আর মুনমুন খুব খুশি কলকাতা থেকে বেরতে পেরে।  গাড়ি তে জাহা জানালা দিয়ে তাকিয়ে  বাইরে,  ধ্রুত চলে যাওয়া গাছ, লাম্প পোস্ট,  ক্ষেত । সে দেখছে এক ১২ বছরের মেয়েকে  তার নিজের কাকা ;., করছে সবাই জানার পর সেই কাকা মেয়েটার মাথা চিপে ধরেছে পুকুরের জলে। মা প্রানপন চেষ্টা করছে  ছাড়ানোর । ধাক্কা দিয়ে ফেলে আবার চেপে ধরছে। মেয়েটা দম নিতে পারছে না চি চি করছে। তার মা এক রাম দা এনে তার কাকার হাতে কোপ দিতে  কাকা তাকে ছেড়ে মাকে মারতে লাগলো। আনুদি তখন গ্রামে, করনের বাড়ি থেকে ছুটিতে গেছে, কাকাকে পুলিশের ভয় দেখাতে তবে ছাড়ল। “ বাচ্চু, না,  না। আর কয়েকটা মাস বাবা,  আর মাত্র ২ মাস। তুই যখন অফিসার  হবি আমি তোকে নিয়ে সেই জানোয়ারের সামনে দাড় করিয়ে বলব “ বাচ্চু এই জানোয়ার আমার ১২ বছর বয়েসে ;., করেছিল। আর একটু সময় দে বাবা”………গুড্ডি আর মুনিয়া  লক্ষ করেছে মাসির চোখে জল। মুনিয়া গলা জরিয়ে বুকে  মাথা রাখল।

এক বছর ৩ মাস হয়ে গেছে রফিক গেছে, করন ভাবছে কি করা যায়। জাহা বলছে ” আর কটা দিন দেখুন। ও ঘাগু মাল। কিছু খবর আনবেই” । জাহা সঠিক চিনেছে রফিক কে। একবছর ৪ মাস পার করে এল
……… কর্তা সেলাম
………আরে সাজাহান, কি খবর তোর? চিন্তায় মারা পরবো
………কর্তা খুব ভালো খবর আবার খুব খারাপ খবর। প্রথম থেকে শুনুন । যে জেলে ওই শম্ভু প্রসাদের সাথে আলাপ হয়, সেই জেলের এক পাহারাদার আমাদের গ্রামের এক জনের কি রকম কুটুম্ব। এই টুকু জানতাম। তাকে গিয়ে ধরলাম—ওস্তাদ ওই শম্ভু প্রসাদের একটা ফটো দাও।। সে শুনে মারে আর কি।‘’ শালা তুই আমার চাকরি খাবি” আমিও নাছোড়বান্দা। শেষে ২ হাজার  টাকা দিলাম। তার কয়েকদিন পর শম্ভু প্রসাদের ঠিকানা দিয়ে বলল “ ওর ধারে পাশে ষাস না। এনকাউনটারের  অর্ডার আছে । এই নে ঠিকানা আর ভাগ। সেই ঠিকানা বালিয়া জেলায়। সেখানে গিয়ে ওই ঠিকানা আর শম্ভু প্রসাদের নাম বলতেই , কি মার মারল আমায়। শেষে গাছে বেঁধে পিটানি “বল শম্ভু কোথায়, কি দরকার তোর, কোথায় আলাপ?” আমি যতো বলি আমি বাঙ্গালি আমার কথা শোন, তত মার। “বাংলার থেকে মেয়ে চুরি করেছিস” এই মার খেতে খেতে পকেট থেকে যা ছিল বার করলো। আপনি আমার বিষয়ে যে লিখে দিয়েছিলেন সেই কাগজ পেয়ে” বল এখানে কি লেখা আছে?” আবার মার। কপাল ভালো পাশের বাড়ির একটি মেয়ে কলেজে পরে। সে ইংরাজি জানে।তাকে দিল ওই কাগজ। সে অনেকক্ষণ ধরে পড়ে বলল যে আমার নাম কি , এই চিঠি কে দিয়েছে এই সব। তখন আবার বাঁধন খুলে গায়ে হাতে তেল মালিশ, জল, খাবার খুব যত্ন।  যখন সব  খুলে বললাম। তখন যে মারছিল সে বলল” শম্ভু প্রসাদ অনেক দিন মারা গেছে। আমার পাশের পাড়ায় থাকত,  খুব কুস্তি লড়ত। আমাদের ভগ্নীপতি নকুল শর্মা ওর সাথে কুস্তি লড়ত।নকুল এই তল্লাটের নামি কুস্তীগির। নকুল  ওই নাম ভাঁড়িয়ে সব কুকর্ম  করে বেরায়”
……সে এখন কোথায়?......।
……জানি না। ওর একটা মেয়ে ছিল কলকাতায়,  গরম জলে পড়ে মারা যায়। আমার বোনের অসাবধানতায় আর আমার বোনের মাথা খারাপ হয়ে যায়। সে যেখান থেকে পারত ছোট মেয়ে চুরি করে আনত। তখন নকুল এক বাচ্চা চুরি করে এনে তাকে দেয়। তাই নিয়ে সে ভালো ছিল কিন্তু আমার বোন ধীরে ধীরে প্রায় পাগল হয়ে যায়। ওই অবস্থায় নকুল মেয়েটাকে নিয়ে এসেছিলো যদি আমরা মানুষ করি। খুব সুন্দর দেখতে। আমাদের সংসারে ওই মেয়ে মানায় না। আমরা  জিজ্ঞাসা করে বুঝতে পারি যে ও চুরি করেছে তখন আমরা  ৪ জন বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে   নকুলকে নিয়ে থানায় যাই। কিন্তু থানার পথে এক গ্রামে নকুল আমাদের ৩ জনকে প্রচণ্ড মেরে মেয়েটাকে নিয়ে পালায়। তার পর থেকে কোন খবর নেই। শেষ খবর দিয়ে ছিল যে আমাদের বোন বোম্বে তে এক সরকারি হাস পাতালে মারা গেছে।“ আমি নকুলের শালার কাছ থেকে সেই সরকারি হাসপাতালের নাম নিয়ে গেলাম বোম্বে। থাকতাম রেল ষ্টেশন এ। আর ওই হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ করতে থাকি নকুলের  ঠিকানার। কেউ কি দেয়, পয়সা খাইয়ে, আপনার চিঠি দেখিয়ে ঠিকানা নিয়ে গিয়ে দেখি সে উধাও।  তবে এক সেলুনের, ওই রাস্তার সেলুন, এক জন লক্ষিকান্তপুরের,  তাকে সব জানিয়ে বলে এসেছি খোঁজ রাখতে।
………এই এক বছর তোমার ওই ১০০০০ টাকায় কি করে্ চলল ………জাহার প্রশ্ন
………শিল্প শিল্প,  জাহা। কদর তো দিলি না এ এক শিল্প……মুখ টিপে হাসে রফিক
………রফিক তুই পুলিশে চাকরি করলে উন্নতি করতিস। শাবাশ রফিক , শাবাশ। তুই এইবার বোম্বে যাবি ৬ মাসের জন্য। সাথে আমার ২ মেয়ে যাবে। বেশি রিস্ক নিবি না। মেয়েরা ক্যারাটে , নানচাকু বক্সিং শিখছে নিজেদের আত্মরক্ষা করতে পারে এই ১ বছরের ট্রেনইং এ। কিন্তু সাবধান ৩-৪ জন একসাথে এ্যাটাক করলে মুশকিল। এখনও সেই অবধি যায় নি। তবুও তোর সঙ্গে যাক । হাতে কলমে শিখুক। এখন বস, খা, বিশ্রাম  নে আর কবে যাবি ঠিক কর।………  এদিকে দুই কন্যা লাফাচ্ছে বোম্বে যাবে মিষ্টির খোজে। করন জাহা কে বলল মেয়েদের ডেকে দিতে। জাহা নীচে ঘরে ঢুকতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়ল। দুই সখী  পুরো নগ্ন। দরজার দিকে পিছন ফিরে গায়ে ক্রিম মাখছে। পাছা থাই চক চক করছে। একটু দাঁড়িয়ে গভীর ভাবে দেখল জাহা, তারপর ওপরে উঠে করন কে বলল কিছু।
 
বোম্বেতে রফিক যেখানে উঠলো তা আসলে রেলের জমির ওপর গড়ে ওঠা ঘুপচি। ২৫ টা ঘুপচির জন্য একটা পায়খানা আর রাস্তার ধারে চান। দুই মেয়ের বিশেষ হেল দোল নেই। সকালে উঠে ট্রাক স্যুট পড়ে দৌড়াতে যায়, সেই মাথে কিছু ব্যায়ম করে ঘরে ফিরে বিস্রাম নিয়ে রফিকের সাথে রেল ষ্টেশন এ অপেক্ষা করে। রফিকের সেই সেলুনের বন্ধু জানিয়েছে যে এক পাহারাদারের থেকে খবর সংগ্রহ করেছে যে রাইভাল গ্যাং এর সাথে বন্দুকের লড়াইতে নকুল আহত হয়  ডান পায়ে।খুব অল্প খুড়িয়ে হাটে, একটু লক্ষ করলে বোঝা যায় ওর খোঁড়ান। মহারাষ্ট্র পুলিশ ৪ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে নকুলের মাথার দাম।  এ ছাড়া নানা  রোগ ভোগে  নকুল এখন আর ডাকাতি খুন এই সব করেনা। তার পুরানো সাগরেদরা তাকে মাসে মাসে মাসোহারা দেয় বদলে রফিক তাদের মাল নিজের কাছে রাখে বা বিক্রি করে পয়সা দেয়। রফিকের গ্যাং রেলের যাত্রী দের লুট করে বা সুযোগ বুঝে হাত সাফাই করে।
রফিক তাই সারাক্ষন সেই নির্দিষ্ট ষ্টেশনে খোঁজ লাগায় নকুলের। মেয়েদের নকুলের চেহারার একটা আবছা আন্দাজ দিয়েছে। সেই মতো গুড্ডি দাড়ায় ষ্টেশন এর গেটের মুখের একটু পিছনে আর মুনিয়া দাড়ায় ওভার ব্রিজের সিঁড়ির নীচে।  রবিবার বাদে রোজ ৩ জনের এই রুটিন। এইরকম একদিনে  সন্ধ্যাবেলা ঘরে ফিরবে ৩ জন সিঁড়ির নীচে জড় হয়েছে। রফিক লক্ষ করেনি অনেকদিন ধরে একজন ওভারব্রিজের ওপর থেকে ৩ জনের ওপর নজর রাখছে। একটু ছোট মতো পাজামা, পাঞ্জাবি একটু চাপা। মাথার চুল উঠে গেছে প্রায়, দাড়ি আছে গোঁফ কামান এইরকম দেখতে একজন লোক। সেইদিন ভিড় একটু কম রফিক এসে দাঁড়িয়েছে একা। সেই লোক শিড়ি দিয়ে নেমে এল কয়েকধাপ ডান হাত পাঞ্জাবির পকেটে ঢোকান। সেই অবস্থায় পকেটের রিভল্বার তাক করেছে রফিকের দিকে। ঠিক করেছে, রিভল্ভার বার না করে ওই অবস্থায় গুলি চালাবে রফিকের ওপর। নিখুত তাক করেছে , ট্রিগার টিপবে, সেই মুহূর্তে রফিকের  সামনে এসে দাঁড়াল দুই মেয়ে। “ শুয়ার কি অউলাদ, আজ বাচ গায়ি, কিন্তু তুই মিষ্টি কে পাবি না, কিছুতেই না, মিষ্টি আমার মেয়ে”। হঠাৎ গুড্ডি ওপরে তাকিয়ে দেখে ফেলে রফিককে আঙুল তুলে দেখায়। রফিক ঘাড়  ঘুড়িয়ে দেখতে না দেখতে ফর্সা । তবুও আন্দাজে দূর থেকে নকুল ভেবে ধাওয়া করলো ৩ জন। মস্ত ভুল করে বসলো। সেই পালাতে পালাতে এমন গলিতে ঢুকে যে কোথায় উবে গেল ভালো ভাবে বুঝতে না বুঝতেই, সেই নির্জন গলিতে ৫-৬ জন  দাঁড়িয়ে পড়ল ওদের ঘিরে। বোম্বে শহরের সব থেকে খতরনাক গলির ভিতর একটি গলি। সেই গ্যাং দুই মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবে বলে পিছন থেকে কোমর জড়িয়ে তুলেছে, রফিক রোগাটে হলে কি হবে শরীরে কশ আছে। পিছন থেকে একটা দেড় ফুটের মতো লাঠি বার করে ঝাপিয়ে পড়ল । মেয়েরা ঘুসির সাথে সাথে নানচাকু বার করে চালাচ্ছে। কিন্তু ওই গ্যাং এর মুল লক্ষ  মেয়েরা। দুই মেয়েকে এক গাড়িতে ওঠাবেই। দুই মেয়ে প্রচণ্ড মারছে, গ্যাঙের ছেলে গুলো ও  মারছে, শেষে যখন প্রায় তুলে ফেলেছে এমন সময় গুলির শব্দ আর ২ জন লুটিয়ে পড়ল ওই গ্যাঙের।বাকিরা হোকচকিয়ে গেলেও একজন রিভলবার বার করে তাক করেছে। আবারও গুলি সোজা তার কপালে। রফিক সঙ্গে সঙ্গে “ছোট” বলে হাক দিয়ে দৌড় লাগাল, মেয়েরাও সাথে সাথে রফিকের সাথে দৌড়।এ গলি ও গলি ঘুরে ঘুরে মিনিট ৫ পর বড় রাস্তায় এসেই  রফিক এক অটো ধরে দুই মেয়েকে তুলে পালাল। হাপাচ্ছে ৩ জনেই। কিন্তু রফিক বুদ্ধিমান। তার ডেরার বেশ খানিক দূরে উল্টো দিকে অটো ছেড়ে বাকি পথ হেটে ফিরল।  “ কাকা অটো ছাড়লে কেন?’। আরে গুড্ডি, পুলিশ আসবে বাড়ির সামনে নামলে আর ধরবে। তাই।“ । দুই মেয়ে ঘরে ফিরে রফিক কে নিয়ে পরল।নানা জায়গা ফেটে গেছে, কপালে বেশ লেগেছে, রফিক কোন পাত্তাই দিচ্ছে না। মেয়েরা জোর করে ওষুধ লাগাল। করন কে ফোন করতে করন বলল “ এখুনি ফিরে আয় রফিক ২-৩ দিনের ভিতর”। একটু মন মরা  হয়ে গেল রফিক। ৪ লক্ষ টাকা পেত ধরতে পারলে। এই  খোঁজ রফিকের কাছে তার পৌরষের খোঁজ। রফিক দেখিয়ে দিতে চায় জাহাকে যে সে পুরুষ। সেও সাফল্ল্য পেতে পারে কঠিন কাজে। জাহার তাচ্ছিল্য ভাবে কথা, আঘাত করে রফিক  কে। জাহাকে বাড়ি থেকে মেরে বের করে দিয়েছিলো,  এখন অপরাধ বোধ হয় সেইজন্য। ছোট মনে হয় নিজেকে জাহার সামনে। রফিক জাহার সামনে এমন ভাবে নিজেকে তুলে ধরতে চায়, যে জাহা স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে রফিক এক পুরুষ। হাতছাড়া হতে চলেছে সেই সুযোগ। পরের দিন সকালে চা খেতে বেরিয়েছে ৩ জন। এক দল লোক যাচ্ছে গায়ে ছাই, মাটি এই সব মেখে। “ কুস্তি, হ্যাঁ, রফিক কুস্তি ভালবাসে”। সঙ্গে সঙ্গে করন কে ফোন “ কর্তা আর ১ মাস, ব্যাস। আমি একটা ফন্দী এঁটেছি, যদি কিছু না হয় তাহলে ফিরে যাব আর এক মাস”। পরের দিন থেকে কোথায় কোথায় শনিবার রবিবার কুস্তি হয় আসে পাশে খোঁজ নিয়ে প্রতিটি আসরে হাজির। একটু দূর থেকে। চলে আসবে মনস্থির করেছে, এই রকম সময় এক রবিবার এক কুস্তির আসরে রফিক লক্ষ করলো দর্শকের ভিতর একটি লোক বার বার বেরিয়ে এসে বলে দিচ্ছে এই প্যাচ মার ওই প্যাচ মার।। খুব উত্তেজিত লোকটি। একটু ভেবে লোকটি যেই আবার এগিয়ে এসেছে “ এই অতুল, অতুল”।একটু  দূর থেকে অতুল আর নকুল শুনলে এক রকমই লাগবে। রফিক লক্ষ করলো লোকটি থমকে গেল। তারপর চারিদিকে চোখ ঘোরাতে ঘোরাতে ভিড়ের পিছন দিকে দিয়ে বেরিয়ে হাটা লাগাল। রফিক অনুসরন করলো বাঁ দিক ঘেঁষে। অর্থাৎ লোকটির পিছন দিকে বাম পাশে থেকে। করন শিখিয়েছে যে কোন মানুষ পিছন ফিরে তাকালে ডান কাঁধ এর উপর দিয়ে তাকাবে। বাঁ দিক দিয়ে নয়। অনেক ঘুরে ঘুরে লোকটি বড় রাস্তা থেকে ছোট রাস্তা, তারপর বড় গলি, ছোট গলি ঘুরে ঘুরে একটি বাড়ির সামনে এসে গা ঘেঁষে এক সিঁড়ি বেয়ে উঠলো। রফিক দাঁড়িয়ে রইল গলির মুখে। প্রায় ২ ঘণ্টা পর লোকটি বেরিয়ে এক ওষুধের দোকানে ঢুকে কিছু কিনে , বেরিয়ে রুটি আর তরকারি নিয়ে আবার সেই বাড়িতে গেল। রফিক ওষুধের দোকানে গিয়ে এ কথা ও কথা বলতে বলতে জিজ্ঞাসা করলো “  একটু আগে নকুল এসেছিলো না, আরে কুস্তিগীর, কি নিল?”
……নকুল কে? ও তো শেখ রফিক, ইনসুলিন নেয়  ……রফিক প্রায় লাফ দিয়ে উঠেছিল উত্তেজনায়,   কোনক্রমে সামলে নিল নিজেকে। আরও কিছু সময় অপেক্ষার পর সন্তর্পণে ওই ঘরের কাছে এসে দেখল, যে দেড় তলার ওপরে একটা ছোট ঘর। সিঁড়ি খুব সরু। ঘরের পাশে ওই গলির ময়লা ফেলার জায়গা। স্তূপীকৃত হয়ে আছে কয়েকদিনের ময়লা, কি নেই সেখানে, মড়া বেড়াল , থেকে বাড়ির আনাজের অংশ সব। রফিক ওই ময়লার ওপরে উঠলো বেড়ালের মতো ধীর পায়ে। একটি ঘুলঘুলির থেকে কিছু বড় এক জানালা।ঘর থেকে রেডিওর গান শোনা যাচ্ছে  জোরে। ফাক দিয়ে দেখল  নকুল স্নান সেরে গামছা পরে একটা ধুপ জ্বালিয়ে দেয়ালের ক্যালেন্ডার সরিয়ে বজরংবলির ছবিকে পুজো করছে। ছোট একটা ঘণ্টা নাড়ছে। রেডিওর শব্দে বাইরে কেউ শুনতে পাচ্ছে না। রফিল লাফ দিয়ে নেমে নোংরা মেখে ছুটছে। এখুনি কর্তাকে জানাবে। এর ভিতর নামল বৃষ্টি। বৃষ্টি মাথায় করে বাড়ি ফিরে প্রথমেই করন কে “ কর্তা এখুনি আসুন। এক্ষুনি। হ্যাঁ নকুল আমার মুঠোয়।“  ভাসা ভাসা শুনে করন জানাল আগামি কাল আসবে। এর পর দুই মেয়েকে সারাদিনের কথা জানিয়ে আগামি কালের প্লান আঁটল।
 
করন প্রথম প্লেনে জাহা, আদি মুনমুন কে  নিয়ে বোম্বে পৌঁছেই প্রথমে নকুলের থাকার জায়গার থানায়  গিয়ে খোঁজ করলো কোন প্রাইজ ঘোষণা হয়েছে নাকি। থানার ইন চার্জ দিনেশ শিন্দে
………আচ্ছা আপনি কি এসওজি( স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ) এ  ছিলেন? অর্চনা জোশীর ছেলে  কে উদ্ধার করেছিলেন? ……।।করন হেঁসে হ্যাঁ বলতে , ওফিসার উঠে দাঁড়িয়ে
………স্যার চিনতে পারলেন না? আমি দীনেশ। আপনি অর্চনার ছেলেকে  উদ্ধার করে আমার কি উপকার যে করেছিলেন , তা ভুলবো না। পুলিশ মেডেল পেয়েছিলাম আর প্রমোশন।  আপনাকে জানিয়েছিলাম স্যার
………ওহ, আপনি? এইবার মনে পড়েছে। আমাকে গোয়া যাবার নিমন্ত্রণ দিয়েছিলেন? মনে পড়েছে
………স্যার বলুন কি করতে পারি
………নকুল শর্মা। এই লোকটি সম্পর্কে জানতে চাই………চোখ কপালে তুলে
………ওরে বাবা, ওই রকম ধুরন্ধর কালপ্রিট আমি জীবনে দেখিনি। নকুল আর ওর বন্ধু একনাথ রাম খুন করেছে, বাচ্চা চুরি করে বিক্রি করেছে কিন্তু ধরতে পারিনি। একনাথ পুলিশের সাথে গুলির লড়াইতে মারা যায় কিন্তু নকুল ঠিক বেঁচে যায়
………যদি তাকে ধরিয়ে দি?
………সরকার ৪ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেবে।আর অন্তত ১২ টা কেস সল্ভ হবে।
করন সিন্ধে কে নিয়ে আড়ালে কি সব কথা বলে “ রাত ৮ টার সময়। কিন্তু টপ সিক্রেট।
………একদম, এইবার প্রমোশন ইনস্পেক্টর,  স্যার, আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।
জাহাকে নিয়ে করন এক হোটেলে উঠে রফিক আর দুই মেয়েকে ডেকে নিল। হোটেলের দুই ঘরে থাকবে সবাই। পুরুষ এক ঘরে মহিলারা অন্য ঘরে। রফিক সকাল থেকে নকুলের গলির সামনে। কেউ জিজ্ঞাসা করলে , একজন আসবে তাই। দুপুরে এল রফিকের সেই সেলুনের বন্ধু। তাকে সব বুঝিয়ে রফিক একটু আলাদা থাকল দূর থেকে। রাত ৮ টা বাজলে রফিক দেখল নকুল বেরিয়ে ওই ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ আর রুটি নিয়ে ঘরে গেল। সিন্ধে তার লোকজন নিয়ে এলাকা ঘিরে নিয়েছে। রফিক দুই মেয়েকে নিয়ে নকুলের ঘরে গিয়ে” দরজা খোল রফিক, দরজা খোল”
……কে ?
……।।ওস্তাদ খুলেই দেখ ?
নকুল অল্প করে দরজা খুলতেই রফিক আর দুই মেয়ে ঝাপিয়ে পরে নকুলকে চিত করে দিল। কিন্তু শক্তি ধরে নকুল। ওই রকম অসুখে ভুগেও, এক লহমায় রফিক কে ছিটকে ফেলে গুলি চালাল। সঙ্গে সঙ্গে মুনিয়ার নান চাকু আছড়ে পড়ল তার হাতে। গুলি লক্ষ ভ্রষ্ট  হয়ে রফিকের ডান হাতে ওপরে লাগতে রফিক “উঁহু” করে বসে পড়ল। দুই মেয়ে ততক্ষনে নকুলকে চিত করে ফেলে সমানে ঘুসি মারছে। নকুল শুধু আটকে যাচ্ছে, একবারও মেয়েদের ওপর হাত তোলেনি। । গুড্ডি লাফ দিয়ে নকুলের বুকে বসে মুখে পাঞ্চ করতে খপ করে ধরে নিল নকুল” ছাড় আমার হাত ছাড়” নকুল ততক্ষনে অন্য  হাত ধরে নিয়েছে। গুড্ডি টের পাচ্ছে নকুলের শক্তি। দারোগা সিন্ধে, করন আদি সবাই ঘরের ভিতর। সিন্ধের হাতে রিভল্ভবার। গুড্ডি প্রানপন চেষ্টা করছে আর চেঁচাচ্ছে ” কেন তুমি মিষ্টি কে চুরি করেছ? কোথায় মিষ্টি
, কোথায় আছে মিষ্টি?
………।তু বেটি,  তুহি মিষ্টি গুড্ডি,  মেরি প্যারে গুড্ডি।……কানের ভিতর দিয়ে মস্তিষ্কে শব্দ তরঙ্গ সৃষ্টি করে। মস্তিস্ক তার পর নির্দেশ পাঠায়। গুড্ডির মস্তিস্ক অবশ হয়ে গেছে।  ঘরের সবাই থমকে,  করন ছাড়া। গুড্ডি ঝুকে পরে দেখছে নকুলকে,  দুই চোখ খুঁজে বেরাচ্ছে কাকে, তার বাপুজিকে? হথাত সমস্ত মহল্লাকে সচকিত করে বুকফাটা আর্তনাদ
………বাবুজি? বাবূজী………। কি বলছ বাবুজি, আমি ই গুড্ডি?......। ধীরে ধীরে উঠে বসেছে নকুল
…… হ্যাঁ মেরে বাচ্চে। তুই ই  মিষ্টি। …।।গুড্ডির এলাকা ফাটানো তীব্র চিৎকার
………বাবুজি। তুমি আমার মাকে খুন করেছ, বাবুজি………। করন এসে গুড্ডি কে সরিয়ে নিল। আদি নকুলের রিভল্ভবার তুলে য়ে তাক করেছে, শিন্দে চট করে রিভল্ভবার কেড়ে
………না। আপনি ওকে কোন শাস্তি দিতে পারেন না।
………আমাকে মেরে কি করবে আদি। আমার একটা কিডনি নষ্ট। ৪০০ ওপর সুগার, অবস্থা  ভালো না। তুমি আমাকে মারলে তোমার জেল হবে, তোমার মেয়েকে আবার হারাবে আদি।………  । করন সরিয়ে নিয়ে গেল আদিকে। গুড্ডি বাঁ মিষ্টি উথালি পাথালি কাঁদছে। আদি জীবনে প্রথম তার মিষ্টিকে জড়িয়ে রাখল।
………চাচা, আমি মুনিয়া। আমার বাপু কোথায়, তুমি জান?
……… কাছে আয় মা। আমি আর বাঁচব না।তাই সব বলে দেব। একনাথ  তোর বাপু না রে বেটি। শুনুন দারোগা সাহেব। আমি বাচ্চা চুরি করতে চাইনি। আমার মেয়ে গরম জলে পরে মারা যায় আর আমার বৌ  পাগল হয়ে গেল। ষার তার বাচ্চা চুরি করে আনত। সেইদিন আদির বাড়ির ওই ঘটনার পর আমি গুড্ডিকে  নিয়ে আসি। শ্যামনগরের এক জুট মিলে কাজ নিয়ে থাকতাম। একদিন একনাথ রাম, মুনিয়ার বাপু, এই বোম্বের এক মহিলার মেয়েকে চুরি করে আমার বাসায় নিয়ে যায় কলকাতার কোন বড়োলোকের কাছে বেচবে। আমি হতে দিই নি। বাচ্চা দের নিয়ে ব্যাবসা করব না। মিষ্টির ১০ বছরের মাথায় আমার  বৌ মারা যায়। তার আগেই সে পাগল হয়ে গেছিল। আমি চেষ্টা করেছিলাম যদি আমার শালারা গুড্ডি কে রাখে, কিন্তু তারা রাজি হয়নি। টার আগে থেকেই আমরা থাকতাম বোম্বে তে।  কিন্তু ওদের যখন বছর ১০ বয়েস তখন কলকাতার কাছে এক অনাথ আশ্রমে  দি। বাঙ্গালির মেয়ে বাংলায় থাকুক এই ভেবে। আর আমিও তখন বাঙ্গালি হয়ে গেছি। ৪ বছর আগে রাম পুলিশের গুলিতে মারা গেলে আমি আর আশ্রমে যাই নি। মুনিয়াকে কি বলব এই ভেবে। আমি অনেক খুন করেছি, ডাকাতি করেছি কিন্তু বাচ্চা নিয়ে ব্যাবসা করিনি। গুড্ডি কে নিজের মেয়ে ভাবতাম। সত্যি বলছি। আদির মা আর বউকে খুন করেছি তার কারন গুড্ডিকে নেব বলে। আদি আমি কিন্তু গুড্ডি কে ভালবাসি  বঙ্গাগলি তে দুই মেয়েকে সেলিমের দল তুলে নিয়ে যেত, হ্যাঁ আমি গুলি চালিয়েছিলাম আমার মেয়েদের বাঁচানোর জন্য।
  
……তুমি আমাকে বেসাহারা করে দিয়েছ বাবুজি, বেসাহারা।
………গুড্ডি একবার কাছে আসবি , একবার
……না। নকুল তোমার প্রতি গুড্ডির আর কোন মায়া নেই। তুমি ওর মা, ঠাকুমা কে খুন করেছ। ওর বাবার জীবন ছারখার হয়ে গেছে তোমার জন্য। মিষ্টি যাবে না।………করন কঠিন স্বরে জানাল  
আদি মিষ্টি কে জরিয়ে চুপ করে রইল।
………কর্তা আমার ব্যাপার টা দেখুন। দারোগা সাহেব কে জিজ্ঞাসা করুন , আমি ওই ৪ লক্ষ টাকা পাব তো? এই দেখুন গুলি খেয়েছি?
………হ্যাঁ রফিক, তুমি পাবে আমি তোমারনাম ওপর তলায় জানাব, যাতে তুমি টাকা পাও। হ্যাঁ নকুল, এইবার তুই আমায় বল, এই মুনিয়ার মা কে কোথায় থাকে?
……ওর মায়ের নাম সাধনা, জুহুর সমুদ্রের কাছা কাছি  কোথায় ওদের বাড়ি, এই টুকুই জানি।
সবাইকে নিয়ে থানায় নিয়ে এজাহার লিখে, রফিক কে হাসপাতালে পাঠিয়ে, সিন্ধে জুহু থানায় খবর পাঠাল বছর ১৬-১৭ আগে সাধনা বলে কোন মহিলার মেয়ে চুরির ডাইরি আছে কিনা।
সেই রাতে হোটেলের ঘুরে আদি মিষ্টি কে নিয়ে মুনমুন কে   “ মুন, এই  আমাদের মেয়ে। এই আমার মিষ্টি”। আবেগের রাত , সেই রাত। জাহা আগলে রেখে মিষ্টিকে
……কর্তা আর আমি জানতাম। ঘরে কাপড় ছাড়ার সময় পিছনে কেউ আছে কিনা তো দেখিস না, তাই আমি দেখতে পেয়েছিলাম তোর জন্ম  দাগ, তোর পাছার বাঁ দিকে । কর্তা বলল ওকে বলার দরকার নেই। গুড্ডি আগুনের ওপর হাঁটছে, ঠিক পাশ করবে পরীক্ষা। কর্তা , পাশ করেছে? করন উঠে এসে
……আমার মেয়ে কখনও ফেল করতে পারে না
……বাবজি তুমি কার খোঁজ করতে পাঠিয়েছিলে আমায়
………নিজেকে। তুই নিজেকে খুঁজে পেয়েছিস। তুই খুঁজে পেয়েছিস তোর বাবাকে আর তোর মা আর ঠাকুমার হত্যাকারিকে।  মুনিয়াও তাই । ওর পরিবারের হত্যাকারি নকুল আর একনাথ। মা, আমরা সবাই খোঁজ করি কিছু না কিছুর।সব সময়।
সবাইকে আরও ৪ দিন থাকতে হোল বোম্বে তে। মুনিয়ার মায়ের খোঁজ পাওয়া গেছে। বেশ বড়োলোকের গৃহিণী। তার স্বামিকে খুন করে একনাথ শিশু নিয়ে পালিয়েছিল।তাই যখন সিন্ধে তাকে বলল
………আপনার ডান দিকে প্যান্ট আর টি সার্ট  পরা মেয়েটি আপনার ১৭ বছর আগের হারিয়ে যাওয়া মেয়ে……… মহিলা শুনে মুনিয়া কে দেখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে   অজ্ঞান  হয়ে গেলেন ঘটনার আকস্মিকতায়। কিন্তু মুনিয়া তার বাড়ি যেতে পারল না কেননা ডিএনএ টেস্ট না করে নির্ণয়  করা যাবে না।আদি, গুড্ডি আর সাধনা মুনিয়ার ডিএনএ টেস্ট করতে ৪ দিন লেগে গেল  রফিক কে হাসপাতালে রেখে ৪ দিন পর সবাই ফিরল কলকাতায়। ৪ লক্ষ টাকা পুরস্কারের জন্য সিন্ধে রফিকের নাম সুপারিশ করেছে। টাকাটা রফিক পাবে।
 
 
 
[+] 3 users Like dimpuch's post
Like Reply
#67
বড়দিনের ছুটিতে করনের বাড়ি জম জমাট। বাচ্চু এসেছে তার একাডেমী থেকে। তুনি, জামাই অবিনাশ আর মেয়ে ইন্দুকে নিয়ে এসেছে। সাধনা,  স্বামী অভয় আর মেয়ে মুনিয়াকে নিয়ে,  আদি আর মুনমুন। মুনমুন মা হবে, তাই জাহা কাছে এনে রেখেছে। করন এখন বাড়ি থেকে বেরতেই চায় না। ঘর মানে কি শুধু ৪  দেয়াল, মাথার ওপর ছাদ, ফার্নিচার এইসব? আর মানুষ? সমস্ত বাড়ি  এক অফুরন্ত প্রান শক্তিতে ভরা ৫ বছরের মেয়ের চঞ্চলতায় উচ্ছল সর্বদা। বাচ্চুর গা ঘেঁষে থাকে ইন্দু। জাহা বানুকে নিয়ে এসেছে এই বাড়িতে কয়েকদিনের জন্য। গ্রামের গরিব ঘরের কিচ্ছু না পাওয়া বানু , জীবন যে এতো আলোকময় হতে পারে জেনে হতবাক। বাচ্চু সবার পিছনে লেগে আছে। মাঝে মাঝেই, ছাড়ে “ ইহাআআআ……… “ একাডেমিতে শেখান  রনহুঙ্কার । ইন্দু গুড্ডি আর মুনিয়া কে নিয়ে বাইরে ঘোরে, সিনেমায় যায়। করন এইসব ছেড়ে নড়তেই চায় না। অফিস বন্ধ রেখেছে, মন দিয়ে উপভোগ করছে জীবন। বাচ্চু , বানু, মিষ্টি, লক্ষি কোনোদিন কল্পনা করতে পারে নি যে একসঙ্গে আনন্দের সাথে থাকতে পারে এতো গুলো লক এক ছাদের তলায়

………করন সাহেব, আমরা ৩ ভাই। ৩ ভাইয়ের ৭ টা ছেলে। দুই ছেলের বিয়ে হয়েছে, তাদেরও ২ ছেলে। প্রান আকুতি বিকুতি করত একটা মেয়ের জন্য, আপনার জন্য আমরা পেয়েছি লক্ষ্মী  কে। ওর নাম আমরা দিয়েছি লক্ষ্মী । হ্যাঁ বাঙ্গালি নামেই। লক্সমি নয়। আমরা সবাই কৃতজ্ঞ আপনার প্রতি। আমরা পুজো করে, লোক ডেকে অনুষ্ঠান করে ঘরে এনেছি লক্ষ্মী  কে। আপনার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ 
………যা করেছে , সব জাহা।ওই বুদ্ধি দিয়েছিলো মেয়েদের পাঠাতে। ও বুঝেছিল যে ওদের বাড়ি বোম্বে তে। যেতে দিন ওই সব কথা,  আসুন আমরা আনন্দ করি এই কটা দিন।
জাহা এক বিরাট গামলায় ৩ কেজি খাসির মাংস রান্না করে দু হাতে ধরে খাবার টেবিলে রাখবে বলে আসছে
………মা , মা দাড়াও……জাহা একটু থমকে গেল,  বাচ্চুর কথা শুনে দাড়াতেই, বাচ্চু এসে জাহাকে একটা মুখ ঢাকা টুপি পরিয়ে দিয়ে দু হাতে ঘুড়িয়ে দিল
………বাচ্চু, খুলে দে, এতে ৩ কেজি মাংস আমি ধরে রাখতে পারছি না, গরম, বেশ গরম্‌‌,বাচ্চু মাএর চার  দিকে ঘুরে ঘুরে হাত তালি দিয়ে গান করছে নাচতে নাচতে……মিষ্টি  মুনিয়া, তুনি, মুনমুন খুলে দে কেউ………এই বার জাহা রীতিমত রেগে গলা ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছে। কেউ এগিয়ে গেলেই বাচ্চু হাত দিয়ে ধরছে। জাহার কোন আকুতি বাচ্চু কানে নিচ্ছে না। অবশেষে, যে জাহার কোন ডাক ফেরাতে পারে না ……কর্তা ……।।রিতিমত চেঁচাচ্ছে জাহা। করন ঢুকে ওই দৃশ্য দেখে হেঁসে দিয়েছে কিন্তু জাহার কথা ফেলতে পারল না। টুপি খুলে দিতে, জাহা টেবিলে কোনক্রমে রেখে, হাতের কাছে পেল ঘরের আসবাব সাফ করার ঝারন, বেতের। প্রথম মার পড়ল, মিষ্টির ওপর সজোরে, পরের টা লক্ষ্মী ,বাচ্চু পালিয়ে বেড়াচ্ছে , “ আজ তোর একদিন কি আমার এক দিন” কিন্তু বাচ্চুকে ধরা কি সহজ, মার খাচ্ছে, মিষ্টি আর লক্ষ্মী । “ মাসি আমি না, বাচ্চু”…”সবাই আছিস তোরা, সব কটাকে পেটাব”, সব চাইতে খুশি ইন্দু। সমানে হাত তালি দিচ্ছে আর লাফাচ্ছে। অবশেষে বাচ্চু এসে জড়িয়ে ধরে “ মার মা মার………”…জরিয়ে ধরলে মারা যায় না, তবুও জাহা চেষ্টা করছে। শেষে কর্তা এসে
………জাহা মাফ করে দে। তোরই  ছেলে, বাড়ি এসেছে। একটু মজা করছে। ছাড়
………কর্তা এতগুলো মানুষ কি খেতাম? ওই বাদর টার জন্য………হাসি দিয়ে সমাপ্ত হয়েও হোল না। সবাই খেতে বসেছে। বাচ্চুর পাশে যথারীতি ইন্দু আর বানু ,সামনে মুনমুন
………সবাই শোন। আমি একাদেমিতে জানিয়ে দিয়েছি যে আমার নাম পরিবর্তন করছি। এখন থেকে আমার নাম, শেখ অস্মিত করন। মা, বন্ধু আপত্তি  আছে?
জাহা আর করন চোখে চোখে কথা বলল। কথা শেষ করেই সামনে বসা মুনমুন এর পাত থেকে টুক করে মাংস তুলে “ মাসি রাগ করলে?” মুনমুন হেঁসে গরিয়ে যাচ্ছে। ইন্দু  ওই দেখে চামচে দিয়ে বাচ্চুর পাত থেকে মাংস নিল। করন বুক ভরে ঘ্রান নিচ্ছে সময়ের। মেয়ে তুনি বাবার পাশে বশে সবার অলক্ষে বাঁ হাতে বাবার হাত ধরে হাসি মুখে বাবাকে দেখছে।
 
খাবারে পর ছাদে বাচ্চু, মিষ্টি আর লক্ষি আড্ডা মারছে
………বাচ্চু নীচে চল, ঠাণ্ডা লাগছে রে
……।।তুই যা, ভিতু কোথাকার…… “ যা ভাগ…।বলে লক্ষ্মী  নেমে গেল
………মিষ্টি । তুই আমার মাকে কি বলে ডাকিস রে?
………মাসি, কেন  রে পাগল?
………সি টা বাদ দে
………মানে?
………অভ্যাস কর মা বলে ডাকতে। কেননা আমি পাশ করে বেরিয়ে তো তোকে বিয়ে করব, তাই তুই এখন থেকে অভ্যাস কর
……বাচ্চু আমি তোর থেকে প্রায় ২ বছরের বড়
……ছাড়। ও কোন ব্যাপার না। অভিষেক বচ্চনের বৌ ৫ না ৬ বছরের বড়। আমি তোকেই বিয়ে করব। জেনে রাখ
………ইসস।তোকে বিয়ে করতে বয়ে গেছে
………কেন?
………কেমন লোহা লোহা শরীর , বাচ্চা ছেলে ………সারা দেহে শীত জড়িয়ে আর মনে আগুন জ্বালিয়ে ঝগড়া করছে দুই তরুন  তরুণী খুব ঝগড়া , খুব খুব
জাহা ঘরে বানানো পুডিং দেবে বলে বানুকে পাঠাল ডেকে আনতে তাই শুনে  ইব্দু লাফ দিয়ে বানুর আগে ছাদে।কিন্তু  কি দেখছে  চোখ বড় বড় করে ? “মাম্মি মাম্মি”   ঊর্ধ্বশ্বাসে দূড় দাড় করে নেমে তুনির কানের কাছে গিয়ে প্রচণ্ড উত্তেজনায় জোরে জোরে
………মাম্মি। কিসিং  দে আর  কিসিং। মামু এন্ড মিষ্টি আর কিসিং   
 
 
 
রান্না ঘরে বশে আমিনা। সামনে  জ্বলছে দুটো উনুন। একটা উনুন আজ কিনে এনেছে রফিক। একটাতে ভাত, অন্যটাতে খাসির মাংস। এ বাড়িতে আজ প্রথম খাসির মাংস। কত দাম কি করে লোকে খায় কে জানে। আমিনার গায়ে নতুন বেগুনি রঙের শাড়ি।  কিন্তু আমিনা সমানে কাঁদছে। তাহলে কি আবার? আমার কি হবে? বানু,মুজিবর, বুলার এদের কি হবে? লোকটা এতদিন পর এল, কিন্তু পালটে গেল কি করে? বাজারে গিয়ে বানুর জন্য কত দাম দিয়ে প্যান, সার্ট, পাজামা কিনেছে । তাও ৪ টে এক সাথে। আমিনার জন্য এনেছে ৪ খানা শাড়ি। মুজিবর বুলা সবার জন্য এসেছে নতুন জামা। ২ কেজি খাসির মাংস, ৩০ টাকা কেজি দরের চাল কিন্তু একবারও আমিনাকে চড় মারে নি, খিস্তি করেনি, কেন পালটে গেল লোকটা, তাহলে কি আবার?
 বুকের ভিতোর থেকে উঠে এল কান্না। বুলাকে কোলে করে নতুন লুঙ্গি পরে গ্রাম ঘুরে এল। ছেলে মেয়েদের জন্য আইসক্রিম , লজেন্স , কোথা থেকে এতো টাকা পেল? আবার নাকি টোটো কিনবে? বুক কাঁপে আমিনার , আবার যদি পুলিশ এসে মারতে মারতে নিয়ে যায়? কি হবে?আমিনা তাই ভয়ে ভয়ে এই শাড়ি পড়েছে। আমিনা সকাল থেকে ডেকে যাচ্ছে আল্লা কে। আর কাকে জানাবে নালিশ, আমিনার মতো গরিব দুর্ভাগিনী মেয়েদের জন্য কে আছে আল্লাহ ছাড়া?
কিন্তু কি হবে যদি আবার হয়? তাহলে আমিনা কি করতে পারে? এই ঘরে থাকতে দেবে? মসজিদের চাতালে গিয়ে থাকতে হবে ছেলে মেয়েদের নিয়ে। তবুও কপাল ভালো বানু এইবার থেকে ওর বড় আম্মি, জাহার কাছে থাকবে। কিন্তু বুলা তো একেবারে এই টুকু আমিনা ছাড়া আর কে আছে বুলার জন্য।
আঁচলে চোখ মুছে খান ৫ কাঁচা লঙ্কা বোঁটা ছিড়ে দিয়ে দিল ফুটন্ত মাংসে। মানুষটা একটু ঝাল ঝাল পছন্দ করে। খাক, যা প্রানে চায় করুন। মারুক না আমিনাকে, কি হয়েছে তাতে? মরদরা একটু মারে তাতে কি মেয়ে মানুষ নষ্ট হয়, কিন্তু আবার যদি? মানুষটা নাকি ৪ লক্ষ টাকা পেয়েছে, কোন ডাকাত কে ধরিয়ে দিয়ে। আরও কত সব কাগজ, কি সব লেখা, ছবি দেওয়া , এ সব কি সত্যি? ৪ লক্ষ মানে কত টাকা? আমিনা একবার ৬০০ টাকা পেয়েছিল। আমিনা গুনতে পারেনি, মুজিবর গুনে দিয়েছিলো। ৪ লক্ষ তে কত গুলো শুন্য লাগে? ১০ টাকায় একটা শুন্য, আমিনা জানে, কিন্তু জানে না ৪ লক্ষতে কত গুলো লাগে। মানুষটাকে কেউ কিছু খাওয়ায় নি তো? সবার জন্য দাত মাজার ব্রাশ আর একটা গোল মতো কি নিয়ে এসেছে। টিপলে   সাদা মতো কি বেরোয়, ব্রাশে লাগিয়ে দাত মাজতে হবে সকালে আর রাতে শোয়ার আগে। মিষ্টি নাকি শিখিয়েছে। মিষ্টির সাথে বাচ্চুর বিয়ে হবে। আমিনা যাবে না। আমিনা কি ওতো বড় লোকের ভিড়ে যেতে পারে, মূর্খ মেয়েমানুস? ছেলে মেয়েদের বলছে “ দু বেলা দাত মাঝবি, না মাঝলে মুজিবর , প্যাদানি , হা হা হা”। ওই শোন,  মেয়েকে নিয়ে গান করছে। নিশ্চয়ই কেউ কিছু খাইয়েছে। আল্লা, ৪ লক্ষ টাকা চাইনা আল্লা, পুলিশ যেন না আসে। ভীষণ মারে, ভীষণ।
আবারও বুক ভরে উঠে এল কান্না। আঁচলে  আবার চোখ ঢাকল  আমিনা
………আম্মি, মা মা দেখ দাদার এই ছবিটা দেখ। কি রকম জংলা সার্ট প্যান্ট, নিচের দিকে আবার জুতোর ভিতর গোঁজা। হাতে বদুক আর ছোরা। না আম্মি এই গুলো ছোরা না এই গুলো কে কুকড়ি বলে। দেখ কি রকম লাফ দিয়ে উঠেছে। আর মুখে চিৎকার আহহহহহহহ…………। আসলে শত্রু যখন একেবারে কাছে এসে পরে তখন এই রকম লাফ দিয়ে আর হুঙ্কার দিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে হয়। এই ছবিতে দেখ , কোট , প্যান্ট মাথায় টুপি কি সুন্দর দেখাচ্ছে তাই না মা?
………হ্যাঁ মা,  বাচ্চু কে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে।
………কাল আমি এই সব ছবি নিয়ে কলেজে যাব মা।
………যাস মা। সাবধানে রাখিস
………কাল  সবাইকে দেখাব। মরজিনা, সান্ত্বনা, সরস্বতী সবাই যখন দেখবে না, একেবারে হা হয়ে যাবে। মা মিষ্টিদি কে দেখতে যে কি সুন্দর কি বলব। একেবারে দুর্গা ঠাকুরের মতন মুখ
………আস্তে  বল বানু, কেউ যদি শুনে ফেলে
………শুনলে শুনুক। সুন্দর  দেখতে তাই বলেছি। আমাদের গ্রাম শুধু না এই তল্লাটে কেউ নেই ওতো সুন্দর। দেখলে না তুমি অবাক হয়ে যাবে। মা আমি বড় আম্মির কাছে থাকলে তোমার জন্য মন খারাপ করবে
………না রে বানু ওখানেই থাক। ভালো ভাবে লেখা পরা কর। দেখছিস তো আমার মতন মুক্ষু  দের কি কষ্ট। মন খারাপ হলেও ওখানে থাক। দিদি তো থাকবে, ভয় কি………বানু আমিনার কাঁধে মাথা রেখে ছবি গুলোকে চেপে ধরল নিজের বুকে।
 
খেতে বসে রফিক গল্প করছে কি ভাবে সেই ডাকাত ধরল, বাবা কি সাহস। যদি কিছু হতো, তাহলে আমিনা আর ছেলে মেয়েদের কি হতো? বুলা একেবারে কোলে সেঁধিয়ে গেল ভয়ে। কত খানি ভাত আর মাংস খেল সবাই। আমিনার জন্য মাংস আছে কিনা, তাও মানুষটা দেখল। নিশ্চয়ই কেউ বান মেরেছে, না হলে সকাল থেকে একবারও গালি দিল না। আল্লা , কি হবে আমার আল্লা?
 
অনেক রাত অবধি রফিক ছেলে মেয়েদের সাথে গল্প করেছে। বম্বেতে কি কি ঘটেছে, সব বলেছে রফিক। বানু শুয়েছে বাচ্চুর ফটো বালিশের পাশে নিয়ে, বার বার দেখছে বানু। “ মা আমি তোমায় খুব ভালবাসি মা। মুজিবর, বুলা কে খুব ভালবাসি মা। বড় আম্মি আমাকে বলেছে যে বড় কলেজে ভর্তি করে দেবে, কর্তা আমাকে ব্যায়ম এর কলেজে দেবে। নাচ শেখাবে। কিন্তু আমার দুঃখ লাগবে মা। দাদা আমাকে দু হাতে ওপরে ছুড়ে লোফে, কাল কলেজে সবাইকে আমি ফটো দেখাব মা , মিষ্টি দি কি সুন্দর, কতখানি মাংস, ও বাড়িতে কত লোক “  আর কি পারে বানু। ঠিক এই সময়েই পরীরা  পাখনায় ঘুম জড়িয়ে উড়ে আসে বানুদের চোখে , স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বানুরা।  
 
ছোট্ট ঘরটায় আজ রফিক আমিনার একটা  ছেরা শাড়ি দিয়ে  দু ভাগ করে নিয়েছে। আমিনা আসতে তাকে নিয়ে মাটিতে পাতা বিছানায় নিজের কোলের ভিতর নিয়েছে রফিক। ওপুষ্টিতে ভোগা আমিনার  ছোট ছোট দুটো স্তন নিয়ে প্রানপন চেষ্টা করছে রফিক কিছু যদি পাওয়া ষায়।আমিনা দু হাতে জড়িয়ে খুব আসতে “ তুমি কি আবার?’। থমকে গেল রফিক
………আবার কি, মানে?
………তুমি কি আবার নিকা করবে?......হা করে রইল রফিক। তারপর হা হা হা করে হেঁসে উঠে
………ধুর। পাগলি  শালি। কেন বিয়ে করব? আমার তো তুই আছিস, আমার আমিনা সুন্দরী। আজ জাহাকে তালাক দিয়েছি। সবার সামনে, খুব বেড়ে গেছিল। তুই যদি জাহার মুখ টা দেখতিস আমিনা, একেবারে ভোঁতা করে দিয়েছি। হা। আমার নাম শেখ রফিক। আমিও পারি। দেখিয়ে দিয়েছি। শুধু তুই আর আমি এখন থেকে। শোন রোজ একটা ডিম খাবি,। বাচ্চাদের দিবি  দু বেলা দাত মাঝবি, দাত থেকে প্রচুর রোগ হয়। মিষ্টি শিখিয়েছে। আর পুকুরের পানি মুখে দিবি না। একটু দূর তবুও ওই টিপ কল থেকে পানি আনবি। শোন তোকে নিয়ে কলকাতায় যাব, ডাক্তারের কাছে অপারেশন করাতে । তাহলে আর বছর বছর বাচ্চা হবে না  আর কর্তা আমায়  টোটো কিনে দেবে। আর যে টাকা পেয়েছি, তা দিয়ে চালের ব্যাবসা করব। তুই পারবি না, চালের ব্যাবসা তে আমার সঙ্গে থেকে করতে? হা হা জাহা যখন দেখবে তখন হা হয়ে যাবে। আরে ও কি এখন আর আমার বৌ নাকি, কর্তার সব কিছু জাহা। দুজন দুজন কে খুব ভালবাসে। বাচ্চু বলেছে প্রতিমাসে ৮ হাজার টাকা পাঠাবে। বলে দিয়েছে, ভাই বোনের  লেখা পড়ার জন্য। আমিনা এই বাড়িতে পুলিশ আবার আসবে যখন মুজিবর পাশ করে দারোগা হবে,তার আগে না
রফিক আমিনার রোগা শরিরটাকে নিয়ে ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছে। বার বার আমিনা উঠে উঠে যাচ্ছে। অন্ধকারে রফিক দেখতে পাচ্ছে না আমিনার বুক ভেসে যাচ্ছে চোখের জলে।সারা জীবন আমিনা চোখের জল ফেলেছে শরীরের বা মনের ব্যাথায়, কিন্তু আজ কেন চোখের জল বাঁধা মানছে না আল্লা?
 
রফিক সরে যেতে আমিনা উঠে বাইরে ঘুরে এসে ছেলে মেয়েদের গায়ের চাদর ঠিক করে শুয়ে পড়ল বুলার পাশে। দু হাত জড় করে
……সকালে প্রথম পানি থেকে শুধু তোমাকেই খুঁজে বেড়াই আল্লা।  আমার খাবারের প্রতিটি গ্রাসে  তোমাকে খুজি। রাস্তার দুপাসে তোমাকে দেখি, ধান খেতে পুকুরের পানিতে, সুদ্ধু  তোমাকে খুজি আল্লা। আমি পাপ করি না আল্লা। সাকিনারা, এদের ওদের ক্ষেত থেকে, মাচা থেকে, ঝিঙ্গে , বেগুন চুরি করে  কিন্তু আমি করি না আল্লা। আমি তো জানি তুমি সব লক্ষ করছ। একবার শুধু হিঁদু দের মনসা পুজোয় ১ টাকার বাতাসা ভোগ দিয়েছিলাম আল্লা। লতা যে * '. দেখে কাটে না আল্লা। ছেলে মেয়ে গুলো আদার বাদারে ঘুরে বেড়ায় তাই ওই ১ টাকার পুজো দিয়েছিলাম আল্লা,  এইটা কি পাপ? ছেলে মেয়ের ভালো জন্য আল্লা। এইটা যদি পাপ হয় , তুমি আমারে শাস্তি দিয়। কিন্তু আমার তো তুমি ছাড়া কেউ নেই আল্লা। আমি যে সব সময় তোমারে খুজি আল্লা, তুমি আমার সাথে থেক আল্লা। আমার মানুষ টা যেন আবার না বিগড়ে যায় আল্লা। আমার ছেলে মেয়েরা যেন ভালো থাকে আল্লা, দু মুঠো ভাত যেত পায় আল্লা, আল্লা আল্লা আল্লা আল্লা  
শেষ       
[+] 8 users Like dimpuch's post
Like Reply
#68
খুব সুন্দর মন ছুঁয়ে যাওয়া সমাপ্তি ।
Like Reply
#69
(01-09-2021, 04:03 PM)buddy12 Wrote: খুব সুন্দর মন ছুঁয়ে যাওয়া সমাপ্তি ।

শেষের অংশ ভালই লিখেছি, তা যে যাই বলুক।' যা খুশি ওরা বলে বলুক, লোকের কথায় কি আসে যায়'।

এই অভাগা দেশের সব সম্প্রদায়ের  আমিনাদের  জন্য আছেন, আল্লা, বা ভগবান বা যীশু অথবা গুরু সাহেব নানক। আর কে আছে বলুন?
Like Reply
#70
এটাও আবার মাথা ঠান্ডা রেখে শুরুর থেকে শেষ অবধি পড়তে হবে আরেকবার ...
মাঝখানে এদিক ওদিক দৌড়া দৌড়িতে খুব অসুবিধা হয়ে গেছিলো ...
Like Reply
#71
মনে হচ্ছে তারাহুড়ো করে শেষ করা। খুব ভাল লেগেছে
Like Reply
#72
(09-10-2021, 03:02 AM)Kesob roy Wrote: মনে হচ্ছে তারাহুড়ো করে শেষ করা। খুব ভাল লেগেছে

শেষ প্যারাগ্রাফ আমার মতে ভালো হয়েছে।
তবে সেইরকম জমেনি তার কারন গল্পের পটভূমি  ভালোবাসা নয়। যে  কোন গল্পের মুল ভিত্তি ভালোবাসা। দেশের জন্য, কোন মতবাদ অথবা  নারী যাই হোক, ভালোবাসা ছাড়া হয়না। সেই ভিতের ওপর গল্প গড়ে ওঠে বলে আমার মনে হয়। এই গল্পে ভিত কমজোরি হয়ে গেছে।
Like Reply
#73
dimpuch দাদার এই গল্পটাকে আবার প্রথম পাতায় নিয়ে এলাম।

নতুন পাঠকেরা পড়ে দেখবেন ভালো লাগবেই লাগবে।


Thanx Sarit for your understanding and cooperation .
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply




Users browsing this thread: 2 Guest(s)