19-09-2021, 10:36 PM
Indian Private Cams | Porn Videos: Recently Featured XXXX | Most Popular Videos | Latest Videos | Indian porn sites Sex Stories: english sex stories | tamil sex stories | malayalam sex stories | telugu sex stories | hindi sex stories | punjabi sex stories | bengali sex stories
Thriller বহ্নিশিখা by BOURSES_BRAQUE
|
19-09-2021, 10:37 PM
20-09-2021, 11:49 AM
লেফট্যানেন্ট মিলার, মধ্য বয়স্ক, পোড় খাওয়া অফিসার একজন। দেখলেই বোঝা যায় তার নিজের কর্মসেবার প্রতি সে যথেষ্ট বিরক্ত। ‘সরি, মিস হুইটনি, আপনাকে নিতে আমি এয়ারপোর্টে যেতে পারি নি। পুরো শহরটাই যেন পাগল হয়ে গেছে। এই অবস্থায়...। যাই হোক, আমরা আপনার মায়ের জিনিস পত্র থেকে বুঝেছি যে আপনাকেই শুধু ফোন করলে হবে, তাই আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছি।’
‘লেফট্যানেন্ট মিলার, আপনি বলতে পারেন, কি... কি হয়েছিল আমার মায়ের? উনি মারা গেলেন কি করে?’ ‘সুইসাইড করেছিলেন উনি,’ প্রায় ভাবলেশহীন মুখে উত্তর দিল মিলার। একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল ট্রেসির শরীরের মধ্য দিয়ে। ‘অ... অসম্ভব! মা নিজেকে কেন মেরে ফেলবে? তার তো কোন কষ্ট বা সমস্যা ছিল না জীবনে? তাহলে?’ ‘উনি আপনার জন্য একটা চিঠি রেখে গেছে...’ বলে মিলার একটা কাগজের লেফাপা তুলে দিল ট্রেসির হাতে। ****** সাদা কোট পরা একজন অ্যাটেন্ডেন্ট ট্রেসিকে নিয়ে হীম শীতল মর্গের লম্বা করিডর দিয়ে পথ দেখিয়ে নিয়ে এল প্রায় শেষ প্রান্তে। এসে দেওয়ালের দিকে সার দিয়ে রাখা একটা ড্রয়ারের হাতল ধরে টান দিয়ে ট্রেয়েটাকে খানিকটা বের করে খুলে ধরল ট্রেসির সামনে... ‘দেখবেন?’ নিরশ কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়ে দিল। না! দেখতে চাই না ওই প্রাণহীন দেহটাকে। তার মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে এখান থেকে বেরিয়ে চলে যেতে। ফিরে যেতে কয়একঘন্টা আগের সময়ে, যখন আগুন লাগার পাগলা ঘন্টিটা বাজছিল তাড়স্বরে। ওটা যদি টেলিফোনের শব্দ না হয়ে সত্যিকারের আগুনের পাগলা ঘন্টি হত, সেটাই ভালো হতো যেন। অন্তত মা তো বেঁচে থাকতো! এক পা দু পা করে এগিয়ে গেল খুলে রাখা ট্রেয়ের দিকে। ভেতরটা চিৎকার করে বারন করছে আর না এগুতে। ধীরে ধীরে চোখ নামিয়ে তাকালো ভেতরে শুয়ে থাকা প্রাণহীন শরীরটার দিকে। তার মা, যে তাকে জন্ম দিয়েছে, ছোট্ট বেলা থেকে খাইয়েছে, আদর করেছে, মানুষ করেছে। সেই মা শুয়ে রয়েছে... ঠান্ডা শরীরটা নিয়ে। সামান্য ঝুঁকে গালটাকে মায়ের গালে ছোঁয়ালো সে। মৃত্যুশীতল মায়ের গালটাতে একটা চুমু খেলো। বিড় বিড় করে বলে উঠল, ‘মা, মা গো, কেন করলে মা? কেন এমন করে নিজেকে শেষ করে দিলে, আমাকে একটি বারও জানালে না তার আগে?’ ‘বডির ময়না তদন্ত করতে হবে... এটাই নিয়ম সুইসাইড কেসের’ পাশ থেকে ব্যাজার মুখে জানালো লোকটি। ট্রেসি প্রয়োজনীয় কাগজে সই করে বেরিয়ে এল মর্গ থেকে। মায়ের চিঠিটা বারংবার পড়েও নিজের মনের কোন উত্তর পেলনা সে। ছোট্ট একটা চিঠি... ‘প্রিয় ট্রেসি, আমাকে ক্ষমা করিস। আমি হেরে গেলাম। আমি চাই না তোর ওপর বোঝা হতে, তাই এটাই সঠিক রাস্তা বলে মনে হল। আমি তোকে ভিষন ভালোবাসি সোনা। মা’ ‘উফফফফ, ভগবান...’ ******
20-09-2021, 11:51 AM
‘আরো আছে। এখানকার ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি তোমার মাকে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনা হবে বলে নোটিস পাঠিয়েছিল, যাতে তাঁর কারাবাস পর্যন্তও হতে পারতো। যেদিন উনি সুইসাইড করলে, সেদিনই এই চিঠিটা এসেছিল মনে হয়’, বাবার বিজনেস পার্টনার ও তাদের পরিবারের দীর্ঘদিনের সাথী ওট্টো শ্মিট, ট্রেসিকে জানালো। শ্মিট ছোটবেলা থেকে ট্রেসিকে দেখছে। ট্রেসিও তার কোলে পীঠে করে বড় হয়েছে। তাই বাবার মৃত্যুর পর এই শ্মিট স্বজনের মত তাদের পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। মায়ের পাশে থেকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই কারখানাটাকে বড় করে তোলার পেছনে তার অবদান অনস্বীকার্য।
শুনতে শুনতে অনুপায় রাগ যেন সমুদ্রের ঢেউএর মত আছড়ে আছড়ে পড়তে লাগল ট্রেসির মাথার মধ্যে। ‘কেন? মা পুরো ঘটনাটা ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নিকে জানালেই তো সব মিটে যেত?’ শ্মিট ঘাড় নেড়ে বলল, ‘না। সেটা সম্ভব নয়। আসলে পুরো ব্যাপারটাই জো রোম্যানোর সাজানো। এটা তারই পরিকল্পনা। এভাবে আগেও অনেক কোম্পানীর এই হাল করে ছেড়েছে সে। কেউ তার বিরুদ্ধে আঙুল পর্যন্ত তুলতে সাহস করে নি। কারন তার মাথার ওপর অ্যান্থনি ওরাসত্তির হাত রয়েছে। তোমার মা যদি তাকে আদালত অবধি টেনেও নিয়ে যেত, তাও উনি কিচ্ছু করতে পারতেন না। বরং বহু বছর লেগে যেত কেসটা সলভ করতে। আর তোমার মায়ের সে সামর্থও ছিল না কেসটা ততদিন অবধি টেনে নিয়ে যাওয়ার।’ ‘কিন্তু মা আমাকে কেন একবার জানালো না?’ নিদারুণ মনস্তাপে চোখে জল এসে গেল ট্রেসির। ‘তোমার মা খুব ভালো মানুষ ছিলেন। আর তা ছাড়া তুমিই বা কি করতে? কারুর কিছু করা সম্ভব ছিল না।’ ভুল। ছিল, করার ছিল, আমার... রাগে কপালের শিরাগুলো দপ দপ করছে মনে হল তার। ‘আমাকে শুধু বলে দিন এই জো রোম্যানোকে কোথায় পাবো? তার সাথে আমি দেখা করতে চাই।’ ‘ভুলে যাও তার কথা... তোমার জোয়ের সাথে টক্কর নেওয়া কোন ছেলেখেলা ব্যাপার নয়। অসম্ভব ক্ষমতাশালী লোক সে’, দ্যর্থহীন ভাষায় ট্রেসিকে জানালো শ্মিট। ‘জো কোথায় থাকে শ্মিট?’ কঠিন স্বরে আবার প্রশ্ন করল ট্রেসি। বৃদ্ধের বুঝতে অসুবিধা হল না যে ট্রেসি জোয়ের সাথে দেখা করার সিদ্ধান্তে অবিচল আজ। খানিক চুপ করে থেকে সে বলল, ‘জ্যাকসন স্কোয়ারের কাছেই, একটা এস্টেটে।’ বলেই পরক্ষনেই সে তাকে নিরস্ত করার জন্য ফের বলে উঠল, ‘কিন্তু আমি বলছি ট্রেসি, তার সাথে দেখা করার কোন দরকার নেই। ওখানে গিয়ে কিচ্ছু হবে না, বিশ্বাস করো আমায়।’ ট্রেসি কোন উত্তর করলো না। সেই মুহুর্তে তার অন্তরাত্মা ঘৃণায় ভরে উঠেছে... যা তার চারিত্রিক বৈশিষ্টের একদমই পরিপন্থি। এর শেষ দেখতে চায় সে। তার মায়ের মৃত্যুর দাম জো কে দিতে হবে, দিতেই হবে... ছাড়বে না সে কিছুতেই... মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল ট্রেসি।
23-09-2021, 11:39 AM
পরিচ্ছদ ৩
সময়। সময় চাই তার। সময় চাই ভাবার, সময় চাই পরবর্তি পদক্ষেপ কিভাবে নেবে, তার জন্য। ট্রেসি তাদের পুরানো বাড়িতে আর ওঠেনি। সেখানে আছেই বা কি? শুধু স্মৃতি... চতুর্দিকে ছড়ানো। তাই সে ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টার, যেখানে এখনও মারদি গ্রাসের উদ্মত্ত কোলাহল চলছে, তার থেকে দূরে ম্যাগাজাইন স্ট্রিটের একটা ছোট্ট সস্তার হোটেলে এসে উঠেছে। তার হাতে কোন লাগেজ নেই, তাই হোটেলের ক্লার্ক সন্দিঘ্ন দৃষ্টিতে তাকে মেপে নিয়ে বলেছিল, ‘ঘর পাওয়া যাবে, কিন্তু আপনাকে চল্লিশ ডলার প্রতি রাতের জন্য দিতে হবে, আর সেটা অগ্রিম।’ হোটেলের ঘরে পৌছে সে ব্যাঙ্কে ক্লারেন্স ডেসমন্ডকে ফোন করে বলে দিয়েছে যে আগামী কিছুদিন সে কাজে আসতে পারবে না। শুনে ডেসমন্ড যে যথেষ্টই বিরক্ত তা বলে দিতে হয় না। কিন্তু তবুও সে তার বিরক্তিকে চেপে রেখে বলে উঠেছিল, ‘ঠিক আছে ট্রেসি, কোন ব্যাপার না। যতদিন তুমি না ফিরছ, আমি দেখছি অন্য কাউকে তোমার জায়গায় রেখে কাজ চালিয়ে নিচ্ছি।’ মনে মনে সে আশা পোষন করেছে যে ট্রেসি নিশ্চয় চার্লসকে বলবে, দেখ, ডেসমন্ড কত বোঝদার। ট্রেসি পরের কলটা চার্লসকে করল। ‘চার্লস, ডার্লিং...’ ‘ট্রেসি, তুমি কোথায়? একদিন তোমার সাথে কথা না বলে প্রায় পাগল হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে আমার। জানো মা কত করে চেষ্টা করেছেন তোমার সাথে যোগাযোগ করার? উনি চেয়েছিলেন আজকে তোমার সাথে লাঞ্চে যাবার। কত অ্যারেঞ্জমেন্ট করা বাকি। মা চেয়েছিলেন তোমরা দুজনে মিলে এই অ্যারেঞ্জমেন্টটা করতে।’ ‘আ...আমি সরি, ডার্লিং। আমি এখন নিউ অর্লিন্সএ।’ ‘তুমি কোথায়? নিউ অর্লিন্সএ কি করছ তুমি?’ ‘আমার... আমার মা মারা গেছেন।’ বলতে বলতে গলার মধ্যে কান্নাটা যেন দলা করে পাকিয়ে উঠল ট্রেসির। সাথে সাথে কথার ধরন বদলে গেল চার্লসের। ‘ওহ। সরি ট্রেসি। হটাৎ করে ব্যাপারটা ঘটে গেছে নিশ্চয়ই। খুব একটা বয়স তো হয় নি তোমার মায়ের!’ একদমই হয় নি... মনে মনে বলল ট্রেসি। ‘কেন, কি হয়েছিল? তুমি ঠিক আছ তো?’ চার্লসএর গলায় উদবেগের স্বর। ট্রেসি কোনমতেই মায়ের সুইসাইডের ব্যাপারটা ঠিক এখনই চার্লসকে জানাতে চাইল না। তার মনের মধ্যে তখন ঝড় বইছে। মন চাইছে সব কথা চার্লসকে এই মুহুর্তে বলে দেয়। কি নিদারুন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে মাকে যেতে হয়েছে, কি ভাবে মাকে ঠকানো হয়েছে যাতে করে মা বাধ্য হয়েছে নিজের জীবনটাকেই শেষ করে দিতে। কিন্তু অনেক কষ্টে নিজেকে সংবরন করল সে। না। এটা সম্পূর্ন আমার সমস্যা। এই ব্যাপারটা এখনই চার্লসকে বলে তার ওপর কোন বোঝা চাপাতে চায় না সে। ধীর কন্ঠে সে চার্লসকে বলল, ‘ভেবো না ডার্লিং, আমি সামলে নেব সব।’ ‘না, না ট্রেসি। তুমি কি চাও আমি তোমার ওখানে আসি?’ ‘তার দরকার নেই চার্লস। অনেক ধন্যবাদ এই ভাবে বলার জন্য। আগামীকাল মাকে সমাধীস্থ করা হবে। আমি আগামী সোমবার ফিলাডেলফিয়ায় ফিরছি, তখনই সব কথা হবে।’
23-09-2021, 11:41 AM
ফোনটা রেখে দিয়ে চুপ করে ঘরের সিলিংএর দিকে তাকিয়ে শুয়ে থাকল ট্রেসি। তাকিয়ে তাকিয়ে ঘরের সিলিংএর টালিগুলো গুনছে সে... এক... দুই... তিন... রোম্যানো... চার... পাঁচ... জো রোম্যানো... ছয়... সাত... রোম্যানো কে তার কর্মের প্রায়শ্চিত্ত করতেই হবে। এই মুহুর্তে সে কি ভাবে কি করবে তার কোন প্ল্যানই নেই, কিন্তু তবুও সে সুনিশ্চিত, তাকে একটা কিছু করতেই হবে মায়ের এই ভাবে চলে যাওয়ার প্রতিশোধ নেবার জন্য। কিছু একটা করতেই হবে।
বিকেলের দিকে হোটেল থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ক্যানাল স্ট্রিটে পৌছে গেল সে। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে একটা বন্ধকী জিনিসের দোকান দেখে ঢুকলো। দোকানের কাউন্টার বলতে একটা খাঁচা মত, তার ভেতরে পুরানো জামা প্যান্ট পরা বিশীর্ণ একটি লোক বসে। সম্ভবত দোকানটার সেই মালিক। ট্রেসিকে ঢুকতে দেখে সরু মিনমিনে গলায় বলল, ‘কিছু খুঁজছেন?’ ‘আ-আমি একটা ব-বন্দুক কি-কিনতে চাই।’ কথাটা বলে তাড়াতাড়ি চোখ নামিয়ে নিল সে। ‘কেমন বন্দুক চাইছেন আপনি?’ ভাবলেশহীন গলায় প্রশ্ন করল লোকটি। ‘ওই আরকি, রি-রিভলবার...’ ‘রিভলবার তো বুঝলাম, কিন্তু সেটা থার্টি-টু, নাকি ফর্টি-ফাইভ, বা...’ ট্রেসি হাতে কোনদিন কোন বন্দুক ধরে নি, তাড়াতাড়ি করে সে বলে উঠল, ‘এ-একটা থার্টি-টু হলেই চলবে’ ‘হুম। আমার কাছে একটা খুব সুন্দর স্মিথ ওয়েসন ব্র্যান্ডের থার্টি-টু আছে, কিন্তু সেটার জন্য দুশো উন্ত্রিশ ডলার লাগবে অথবা চার্টার আর্মস এর একটা থার্টি-টু আছে, সেটার জন্য একশ উনোষাট লাগবে...’ ট্রেসির কাছে এই মুহুর্তে অত টাকাও নেই। সে বলল, ‘এর থেকে সস্তার কিছু নেই?’ কাঁধ ঝাঁকিয়ে লোকটি বলে উঠল, ‘একটা কথা বলব দিদি, শস্তার তিন অবস্থা। সেটা কোন কাজে আসবে না। আচ্ছা, এক কাজ করুন, আপনার জন্য আমি একশ পঞ্চাশই নেব, আর তার সাথে এক বাক্স বুলেটও দিয়ে দিচ্ছি, কেমন?’ ‘ঠিক আছে’ ট্রেসি বলতে, লোকটি উঠে পেছন দিকে একটা আলমারী খুলে সেখান থেকে একটা রিভলবার বের করে সেটাকে ভালো করে নেড়ে চেড়ে দেখে আবার কাউন্টারে নিয়ে এল। ‘কি করে ব্যবহার করতে হয় জানেন তো?’ ‘হ্যা, হ্যা। ওই তো ট্রিগারটা টিপতে হয় শুধু।’ ‘আপনাকে কি দেখিয়ে দেব কি করে গুলি ভরতে হয়?’ প্রথমে ট্রেসি বলতে যাচ্ছিল যে সেটার দরকার হবে না। কারণ সে তো আর কাউকে খুন করতে যাচ্ছে না, শুধু এটা নিচ্ছে তাকে ভয় দেখাবার জন্য। কিন্তু এখন এই লোকটিকে তো সেটা আর বলা যাবে না, তাই সে ঘাড় নেড়ে বলল, ‘হ্যা, দেখিয়ে দিন প্লিজ।’ ট্রেসি তাকিয়ে দেখতে লাগল লোকটা কি ভাবে একটা একটা করে বুলেট রিভলবারটার চেম্বারে পুরছে। ‘থ্যাঙ্ক ইয়ু’ নিজের পার্স থেকে টাকাটা গুনে বের করে দিল ট্রেসি। টাকাটা গুনে নিতে নিতে লোকটি বলল, ‘আপনার নাম আর ঠিকানাটা লাগবে পুলিশ রেকর্ডের জন্য। এটা নিয়ম।’ এটা তো মাথায় আসে নি। জো রোম্যানোকে বন্দুক দিয়ে ভয় দেখানো একটা ক্রিমিনাল অফেন্স। কিন্তু সে ক্রিমিনাল নয়, ক্রিমিনাল জো র*্যামোনো। কাউন্টারের ওপাশ থেকে লোকটি বলে উঠল, ‘নাম?’ ‘স্মিথ... জোয়ান স্মিথ।’ ‘ঠিকানা’ ‘ডাউম্যান রোড। থার্টি টোয়েন্টি ডাউম্যান রোড’ লোকটি মাথা না তুলেই বলে উঠল, ‘থার্টি টোয়েন্টি বলে কোন ঠিকানা নেই, হলে সেটা নদীর মাঝখানে হত। আমি তার থেকে লিখে দিচ্ছি ফিফটি টোয়েন্টি।’ বলে রিসিট বইটা কাউন্টারের জালের তলা দিয়ে বাড়িয়ে ধরল, ‘একটা সই করে দেবেন।’ ট্রেসি লোকটির বাড়ানো কলমটা নিয়ে রসিদের নিচে সই করল... জোয়ান স্মিথ ... ‘ঠিক আছে?’ লোকটি আর একবারও সইটার দিকে তাকালোও না। ঘাড় নেড়ে শুধু বলল ‘হু, ঠিক আছে।’ বলে কাউন্টারের তলা দিয়ে বন্দুকটা ট্রেসির দিকে বাড়িয়ে দিল। ট্রেসি খানিক তাকিয়ে রইল রিভলবারটার দিকে তারপর সেটাকে হাতে তুলে পার্সের মধ্যে ভরে নিয়ে তাড়াতাড়ি করে দোকান থেকে বেরিয়ে এল। পেছন থেকে লোকটি চেঁচিয়ে বলে উঠল, ‘সাবধানে রাখবেন, ভুলবেন না বন্দুকটা কিন্তু লোডেড রয়েছে...’ ******
23-09-2021, 11:43 AM
ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টারের ঠিক মাঝখানে জ্যাকসন স্কোয়্যার। আর তার ঠিক পাশেই এলাকার আশীর্বচনের মত সেন্ট লুই ক্যাথিড্রাল দাড়িয়ে রয়েছে। এলাকাটা খুব সুন্দর সুন্দর পুরানো দিনের বাড়ি আর এস্টেট দিয়ে গড়া। নেই অন্যান্য জায়গার মত কোন ট্রাফিকের ব্যস্ততাও। রাস্তার দুই ধারে লাগানো বড় বড় ম্যাগনোলিয়া গাছের সারি।
দূর থেকে কানে ভেসে আসছে ওই নারকীয় মিছিলের উন্মত্ত আওয়াজ। যেটা খানিক আগেই ট্রেসিকে প্রায় তুলে নিয়ে চলে যাচ্ছিল। কোনরকমে নিজেকে বাঁচিয়েছে সে। একটা গাছের আড়ালে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল সে। পার্সের মধ্যে বন্দুকের ভারটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। তার পরিকল্পনা একদম সাদামাটা। সে গিয়ে সরাসরি জো র*্যামোনের মুখোমুখি হবে এখন। তাকে তার মায়ের নামের কলঙ্ক মুছে দিতে বলবে। ভালোয় ভালোয় শুনলে ঠিক আছে, নয়তো বন্দুকটা বের করে তাকে ভয় দেখাবে সে। বাধ্য করবে একটা স্বীকারক্তি লিখতে যেটাতে লেখা থাকবে তার মায়ের কোন দোষ নেই, সব দোষ এই জো র*্যামোনের। তারপর সেই স্বীকারক্তিটা নিয়ে সোজা চলে যাবে লেফট্যানেন্টে মিলারের কাছে। তাকে গিয়ে দিয়ে দেবে, যাতে মিলার গ্রেপ্তার করতে পারে র*্যামোনকে। খুব ভালো হত যদি সেই সময় চার্লসকে পাশে পাওয়া যেত। অবস্য তার দরকার নেই। ততক্ষনে তো র*্যামোন গরাদের পেছনে, যেখানে তার যোগ্য জায়গা। একজন পথচারী এদিকেই আসছে। ট্রেসি অপেক্ষা করল সেই পথচারী যতক্ষনে না চলে যায়। তারপর যখন দেখল চতুর্দিক একদম ফাঁকা, সে ধীর পায়ে এসে দাঁড়ালো বাড়িটার সামনে। দরজার কলিং বেলটাতে চাপ দিল। কোন উত্তর নেই। হয়তো র*্যামোন বাড়ি নেই। অবস্য এই সময় মারদি গ্রাস উপলক্ষে অনেকের বাড়িতে নিমন্ত্রন থাকে। সম্ভবত সেই রকমই কোথায় গিয়ে থাকতে পারে র*্যামোন। তবে সে কোথাও যাচ্ছে না। এখানেই অপেক্ষা করবে যতক্ষন পর্যন্ত না র*্যামোন ফেরে। ভাবতে ভাবতেই দরজার ওপর দেউড়ির আলোটা জ্বলে উঠল আর সদর দরজাটা খুলে একটি লোক বেরিয়ে এল। লোকটিকে দেখে যারপরনাই বেশ আশ্চর্যই হয়ে গেল সে। তার কল্পনায় ছিল সে এমন একজনকে দেখবে যাকে দেখতে অসম্ভব হিংস্র, সারা মুখটা কুটিলতায় ভরা। বদলে যে তার সামনে দাঁড়িয়ে, সে যথেষ্ট আকর্ষনীয় বলা চলে। ভদ্র, সৌম্যকান্তি চেহারা। দেখলেই মনে হয় কোন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। নম্র ধীর কন্ঠে প্রশ্ন করল, ‘হ্যালো, আমি কি ভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?’ কাঁপা গলায় ট্রেসি প্রশ্ন করল, ‘আপনি, আপনি কি জোসেফ রোম্যানো?’ ‘হ্যা। বলুন।’ লোকটির গলায় কোন তারতম্য নেই। কি শান্ত গলার স্বর। কোন প্রশ্নই নেই কেন মা একে দেখে ভুল বুঝে ছিল... মনে মনে ভাবল ট্রেসি। ‘আ-আমি আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই, মিঃ রোম্যানো।’ খানিক চুপ করে থেকে ট্রেসিকে আগাপাশতলা ভালো করে দেখলো সে। তারপর বলে উঠল, ‘হ্যা, বেশ তো, আসুন না ভেতরে...’ লোকটির সাথে ট্রেসি বাড়ির ভেতরের বসার ঘরে প্রবেশ করল। বসার ঘরটা খুব সুন্দর বার্নিশ করা প্রাচীন কাঠের আসবাবে সাজানো। জোসেফ রোম্যানো যথেষ্ট বৈভবের মধ্যে বসবাস করে সেটা বোঝা যাচ্ছে। আর সেটা আমার মায়ের পয়সায়... ভাবলো ট্রেসি। ‘আমি আমার জন্য সবে একটা ড্রিঙ্কস তৈরী করতে যাচ্ছিলাম, আপনি কি নেবেন?’ ‘কিচ্ছু না’, দৃঢ় কন্ঠে উত্তর দিল ট্রেসি। একটু কৌতুহলী চোখে ট্রেসিকে দেখে নিয়ে প্রশ্ন করল, ‘তা আমার সাথে কি ব্যাপারে কথা বলতে চান, মিস...’ ‘ট্রেসি হুইটনি। আমি ডোরিস হুইটনির মেয়ে।’ খানিকটা ভাবলেশহীন মুখে ট্রেসির দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর হটাত করে যেন মনে পড়ে যেতে বলে উঠল, ‘ওহ, হ্যা হ্যা। আপনার মায়ের সম্বন্ধে শুনেছি বটে। খুব বিশ্রী ব্যাপার।’ বিশ্রী ব্যাপার। ওই আমার মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী আর এখন সে বলছে কিনা খুব বিশ্রী ব্যাপার! ‘মিঃ রোম্যানো, ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি মনে করেন আমার মা প্রতারণার দোষে দোষী। কিন্তু আপনি জানেন যে সেটা সত্যি নয়। তাই আমি চাই আপনি মায়ের এই বদনামটা ঘোচাতে আমাকে সাহায্য করবেন।’ ট্রেসি থামতে সে কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে উঠল, ‘মারদি গ্রাসের সময় আমি ব্যবসার ব্যাপারে কোন কথা আলোচনা করি না, সেটা আমার নিয়ম বিরুদ্ধ বলতে পারেন’, বলতে বলতে রোম্যানো বারের দিকে এগিয়ে গিয়ে দুটো গ্লাসে ড্রিঙ্কস তৈরী করতে করতে বলে উঠল, ‘আমার মনে হয় আপনার একটা ড্রিঙ্কস নেওয়া উচিত, তাতে আপনার খানিকটা ভালো লাগবে।’ এ ভাবে ওকে রাজি করানো যাবে না বোঝা যাচ্ছে। ট্রেসি নিজের পার্স খুলে রিভলবারটা বের করল। তারপর সেটাকে লোকটির দিকে তাক করে বলল, ‘আমি জানি কিসে আমার ভালো লাগবে মিঃ রোম্যানো। আপনি এক্ষুনি স্বীকারক্তি লিখে দেবেন আমার মায়ের সাথে আপনি যা যা করেছেন সেটার।’
24-09-2021, 12:54 PM
রোম্যানো ঘুরে ট্রেসির হাতে বন্দুক দেখে খুব শান্ত গলায় বলে উঠল, ‘আপনি ওটাকে সরিয়ে রাখুন মিস হুইটনি। যে কোন মুহুর্তে একটা অঘটন ঘটে যেতে পারে।’
‘সে অঘটনটা ঘটবে যদি না আমি যা বলছি সেটা করেন। আপনি নিজের হাতে লিখে দিন কি ভাবে মায়ের কোম্পানিটাকে সর্বশ্রান্ত করেছেন, তারপর সেটাকে একেবারে দেউলিয়ার অবস্থায় নিয়ে গিয়েছেন আর আমার মাকে বাধ্য করেছেন সুইসাইড করতে।’ গভীর চোখে ভালো করে ট্রেসিকে দেখে বলে উঠল, ‘আচ্ছা? আর যদি আমি না করি?’ ‘তাহলে আমি আপনাকে খুন করব।’ ট্রেসি অনুভব করছে যে বন্দুকটা তার হাতের মধ্যে কাঁপছে। ‘আপনাকে কিন্তু ঠিক একজন খুনির মত দেখতে নয়, মিস হুইটনি।’ ধীর পদক্ষেপে সে এগিয়ে আসতে লাগল ট্রেসির দিকে হাতে ড্রিঙ্কসএর গ্লাসটা ধরে। তার কন্ঠ স্বর খুব শান্ত, ধীর। ‘আপনার মায়ের মৃত্যুতে আমার কোন হাত নেই, বিশ্বাস করুন আপনি, আমি...’ ঝট করে হাতের গ্লাস থেকে ড্রিঙ্কসটা ছুঁড়ে দিল ট্রেসির মুখের ওপর। চোখের মধ্যে অ্যালকহল ঢুকে যেতে জ্বলে উঠল চোখদুটো। পরক্ষনেই এক আঘাতে হাতের থেকে ছিটকে বেরিয়ে গেল বন্দুকটা। ‘আপনার মা আমার থেকে একটা কথা সম্পূর্ন গোপন করে গেছেন’ চিবিয়ে চিবিয়ে বলল জো রোম্যানো, ‘উনি আমাকে একবারও তো কই বলেন নি যে তাঁর এমন একটা ডাগর মেয়ে আছে?’ বলতে বলতে ট্রেসির বাহুদুটো ধরে তাকে ঠেসে ধরল দেওয়ালের সাথে। অ্যালকহলের জ্বালায় প্রায় অন্ধ ট্রেসি তখন রীতিমত ভীত। ‘সাহস আছে তোমার বলতেই হবে সুন্দরী। আর সেটা দেখে আমি কামার্ত হয়ে পড়ছি’ কর্কশ গলায় বলে উঠল। রোম্যানো নিজের শরীরটা ট্রেসির শরীরের ওপর চেপে ধরেছে। কিছুতেই তারথেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বেরুতে পারছে না সে। ‘তুমি এখানে এসেছিলে একটু উত্তেজনার খোঁজে, হু? বেশ, জো তোমাকে সেই উত্তেজনা প্রশমন করে দেবে, কথা দিলাম।’ ট্রেসি চিৎকার করার চেষ্টা করল, কিন্তু তার গলা দিয়ে একটা শুধু গোঙানি বেরিয়ে এল মাত্র। ফড়ফড় করে এক টানে তার পরনের ব্লাউজটা টেনে ছিড়ে দিল। ‘ছেড়ে দাও আমায়...’ কঁকিয়ে উঠল সে। তার সে কাতর আবদনের কোন পরোয়া না করে ফিসফিসিয়ে বলে উঠল, ‘আহ, কি সুন্দর স্তন তোমার’ বলেই তার একটা স্তনবৃন্তকে মুচড়ে ধরল আঙুলে। আবার ফিসফিসিয়ে বলল, ‘লড়াই কর, লড়াই, আমি লড়াই খুব ভালোবাসি।’ ‘ছেড়ে দাও আমায়...’ আরো জোরে জোরে তাকে পিষছে শয়তানটা। তারপর একসময় তাকে নিয়ে পেড়ে ফেলল মেঝেতে। ‘আমি জানি আজ পর্যন্ত তোমার সাথে কোন আসল পুরুষমানুষ যৌন সঙ্গম করেনি। বলতে বলতে তার ওপর নিজের শরীরটাকে চাপিয়ে দিল। ট্রেসি অনুভব করল লোকটির হাতটা ধীরে ধীরে তার উরু বেয়ে আরো ওপর দিকে উঠছে। ওর শরীরের নিচ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার প্রয়াশে ছটফট করে উঠল ট্রেসি। সেই মুহুর্তে তার হাতে ঠেকলো পড়ে যাওয়া বন্দুকটাতে। সেটাকে কোনমত ধরে নিল হাতের মুঠোয়, আর তারপরই একটা বিকট সশব্দ বিস্ফোরণ।
24-09-2021, 12:55 PM
‘হা যীশু!’ কঁকিয়ে উঠল রোম্যানো। সেই সাথে সহসা তার মুঠি আলগা হয়ে গেল। ট্রেসি ভয়ার্ত চোখে একটা লাল কুয়াশার মধ্য দিয়ে দেখল রোম্যানো তার শরীরের ওপর থেকে পড়ে গেল পাশে ধপ করে। ‘কুত্তি... আমাকে গুলি করে দিলি... গুলি করে মেরে ফেললি...’
ট্রেসি খানিকক্ষনের জন্য কেমন পাথর হয়ে গেছিল। নড়ার ক্ষমতাটাও হারিয়ে ফেলেছে যেন। সম্বিত পেতে ধড়মড় করে উঠে বসল সে। হোচট খেতে খেতে দৌড়ে গেল ঘরের অপরদিকে একটা দরজা লক্ষ্য করে। দড়াম করে খুলে দেখে সে ওটা একটা বাথরুম। তাড়াতাড়ি কল খুলে সিঙ্ক থেকে জল নিয়ে নিজের মুখে ছিটোতে লাগল। ঠান্ডা জল চোখে মুখে পড়তে একটু যেন ধাতস্থ হল। সামনের বেসিনের ওপর রাখা আয়নায় নিজের দিকে তাকাতে দেখে সারা মুখ চোখ রক্তে ভরে রয়েছে। বিভৎস দেখতে লাগছে তাকে। হে ভগবান। আমি একটা জলজ্যান্ত লোককে মেরে ফেললাম! দৌড়ে সে আবার বসার ঘরে ফিরে এল। জো রোম্যানো মেঝেতে পড়ে রয়েছে, আর তার বুকের পাশ থেকে রক্ত চুইয়ে বেরিয়ে সাদা কার্পেটটাকে রাঙিয়ে তুলেছে। কাছে এসে অসার গলায় বিড়বিড় করে বলতে লাগল, ‘সরি, আমি ভিষন দুঃখিত... আমি চাইনি এটা... এটা ভুল করে হয়ে গেছে... তারপরই যেন হটাৎ মাথায় আসতে বলে উঠল, ‘অ্যাম্বুলেন্স...’ তখনও লোকটার নিঃশ্বাস পড়ছে... সে দৌড়ে গেল টেবিলের ওপর রাখা টেলিফোনটার দিকে... ডায়াল করল অপরেটরকে... কথা বলবে কি, কথা যেন আটকে যাচ্ছে তার... তবুও হড়বড় করে বলতে থাকল সে, ‘অপরেটর, শিগগির একটা অ্যাম্বুলেন্স পাঠান। এক্ষুনি। ঠিকানা ফোর টোয়েন্টি ওয়ান, জ্যাকসন স্কোয়ার। একজন, একজন লোক গুলিবিদ্ধ হয়েছে...’ বলেই আবার রিসিভারটা ক্র্যাডেলে নামিয়ে রেখে দৌড়ে জো রোম্যানোর পাশে এসে দাঁড়ালো। হাত জোড় করে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে লাগল, ‘ওহ ভগবান, প্লিজ, একে মেরে ফেলো না। তুমি জানো আমি এটা করতে চাইনি। আমি মারতে চাইনি একে।’ রোম্যানোর দেহের পাশে নিচু হয়ে বসে বোঝার চেষ্টা করল সে এখনও বেঁচে আছে কি না। না, চোখ দুটো বন্ধ থাকলেও, নিঃশ্বাস এখনও পড়ছে। বেঁচে যাবে। নিশ্চয়ই বেঁচে যাবে। অ্যাম্বুলেন্স এক্ষুনি এসে পড়বে... আর সে দাঁড়ালো না। ওখান থেকে দৌড়ে বেরিয়ে পড়ল সে। ট্রেসি রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চেষ্টা করল না দৌড়বার। এতে লোকের সন্দেহ বাড়বে। গায়ের জ্যাকেটটাকে ভালো করে ঢেকে নিল শরীরটা যাতে ছেঁড়া ব্লাউজটা দেখা না যায়। একটা ট্যাক্সি ধরতে হবে। হাত বাড়িয়ে যতগুলো ট্যাক্সি পাশ দিয়ে যাচ্ছে, ধরার চেষ্টা করল, কিন্তু একটাও খালি নেই। সব কটা প্যাসেঞ্জারে ভর্তি। প্রত্যেকেই যেন কি খুশি, আনন্দে ভরপুর। দূর থেকে একটা সাইরেনের আওয়াজ ভেসে আসতে শুনল। পরক্ষনেই একটা অ্যাম্বুলেন্স হুস করে পাস দিয়ে বেরিয়ে গেল রোম্যানোর বাড়ি লক্ষ্য করে। পালাতে হবে। ট্রেসিকে যে করেই হোক এখান থেকে পালাতে হবে। সামনে একটা ট্যাক্সি এসে দাঁড়ালো, প্যাসেঞ্জার নামছে। দৌড়ে গিয়ে ট্যাক্সিটাকে ধরে জিজ্ঞাসা করল, ‘এটা খালি হচ্ছে?’ ‘কোথায় যাবেন?’ ‘এয়ারপোর্ট’ এক নিঃশ্বাসে উত্তর দিল সে। ‘উঠুন’
25-09-2021, 09:31 AM
এয়ারপোর্টের দিকে যেতে যেতে ট্যাক্সিতে বসে ট্রেসি ভাবতে লাগল, যদি অ্যাম্বুলেন্সটা দেরি করে ফেলে? যদি রোম্যানো মরে যায়? তাহলে তো সে খুনি ছাড়া আর কিছু নয়। বন্দুকটাও সে ওই বাড়িতে ফেলে এসেছে। ওটাতে তার আঙুলের ছাপ রয়েছে। না। সে পুলিশকে বলবে যে রোম্যানো তাকে বলাৎকার করতে গিয়েছিল, আর নিজেকে বাঁচাতে ঘটনা চক্রে বন্দুকটা চলে গেছে। সে মারতে চায় নি। কিন্তু ওরা কি সেটা বিশ্বাস করবে? না করবে না। সে বেনামে বন্দুকটা কিনেছিল। আচ্ছা কতক্ষন হলো? আধ ঘন্টা? এক ঘন্টা? তাকে যে করেই হোক নিউ অর্লিন্স থেকে বেরিয়ে যেতেই হবে।
‘কার্নিভাল ভালো লেগেছে?’ ট্যাক্সি ড্রাইভার প্রশ্ন করল। একটা ঢোক গিলে উত্তর দিল কোন রকমে, ‘হ্যা... ওই আর কি’ পার্স থেকে নিজের হাতআয়নাটা বের করে নিজের দিকে তাকালো। নিজেকে একটু ঠিকঠাক করে নেওয়ার চেষ্টা করল। ইশ। কি বোকার মত রোম্যানো কে স্বীকারক্তি করাতে গিয়েছিল সে। সব গন্ডগোল হয়ে গেল। চার্লসকে কি বলবে ও? ও শুনে খুব শকড হবে নিশ্চয়। কিন্তু ট্রেসি যখন ওকে সব খুলে বলবে, তখন ও ঠিক বুঝবে। চার্লস জানে এবার কি করতে হবে। ও ঠিক ট্রেসিকে বাঁচাবে। ******
25-09-2021, 09:32 AM
ট্যাক্সি যখন নিউ অর্লিন্স ইন্টারন্যাশানাল এয়ারপোর্টে এসে দাঁড়ালো, ট্রেসি ভাবলো, কি অদ্ভুত, এখানেই আজ সকালে এসে সে নেমেছিল। তারপর এত কিছু কি এই একটা দিনের মধ্যেই ঘটল? তার মায়ের আত্মহত্যা... কার্নিভালের মিছিলে তাকে প্রায় তুলে নিয়ে যাওয়া... তারপরই কানে বেজে উঠল যেন... ‘আমাকে গুলি করে দিলি... আমাকে মেরে ফেললি’
টার্মিনাল দিয়ে হেঁটে যাবার সময় ট্রেসির যেন মনে হতে লাগল সেই মুহুর্তে এয়ারপোর্টের সমস্ত যাত্রী শুধু তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে... তাকেই দুষছে বার বার। মনে মনে সে ভাবল, না, এটা আসলে ভ্রম মাত্র, দোষীদের এমনই মানসিকতা হয়ে থাকে... আসলে কেউই দেখছে না তাকে। তার খুব ইচ্ছা করছে এই মুহুর্তে জো রোম্যানোর অবস্থা জানতে, কিন্তু সেতো জানেই না তাকে কোন হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে তারা। কাকেই বা সে জিজ্ঞাসা করবে? না, না। কিচ্ছু হবে না রোম্যানোর। ও নিশ্চয়ই ঠিক হয়ে যাবে। কাল সে আর চার্লস আসবে মায়ের শেষকৃত্যে উপস্থিত থাকতে। জোও ঠিক থাকবে। জোর করে চেষ্টা করল চোখের সামনে থেকে ওই দেহটা পড়ে থাকা আর তার থেকে চুইয়ে রক্ত বেরিয়ে সাদা কার্পেটটা রাঙিয়ে ওঠার দৃশ্যটাকে সরিয়ে দিতে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চার্লসের কাছে এখন তাকে যেতে হবে। ডেল্টা এয়ারলাইন্সের কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়ালো... ‘ফিলাডেলফিয়া যাবার পরবর্তি ফ্লাইটের একটা টিকিট দেবেন প্লিজ...’ প্যাসেঞ্জার রিপ্রেজেনটেটিভ কম্পুউটারে দেখে বলল, ‘একটা ফ্লাইট আছে, ফ্লাইট থ্রি-ও-ফোর। আর সবচেয়ে লাকি ব্যাপার হচ্ছে একটাই মাত্র টিকিট পড়ে আছে’ ‘কখন ছাড়বে প্লেনটা?’ ‘আর মিনিট কুড়ির মধ্যেই। আপনাকে এখনি বোর্ড করতে হবে’ ট্রেসি নিজের পার্স খুলে টাকাটা বের করতে গিয়ে খেয়াল করল তার দুপাশে দুজন পুলিশের ইউনিফর্ম পরা অফিসার এসে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে একজন তার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করল, ‘ট্রেসি হুইটনি?’ ট্রেসির মনে হল যেন তার হৃদযন্ত্রটা থেমে গেল। মাথা হেলিয়ে সে শায় দিল, ‘হ্যা’ ‘আপনাকে গ্রেপ্তার করা হল’ সাথে সাথে ট্রেসি অনুভব করল তার কব্জিতে লোহার হ্যান্ডকাফের ঠান্ডা নির্মম উপস্থিতি। ******
29-09-2021, 11:36 AM
পরবর্তি ঘটনাটা যেন স্লো মোশনে ঘটে যেতে লাগল। ট্রেসি নিজেকে দেখলো তাকে হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় একজন পুলিশ অফিসার এয়ারপোর্টের টারমিনাল দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, আর আশেপাশের সমস্ত লোক অবাক বিশ্ময়ে তাকিয়ে তাকিয়ে তাকে দেখছে। তারপর তাকে একটা পুলিশের গাড়ির পেছনে তুলে দিল। পুলিশের গাড়িটা চিৎকার করে সাইরেন বাজাতে বাজাতে লাল লালো জ্বালিয়ে চলতে লাগল। সে ভেতরে, সিটে নিচু হয়ে যতটা সম্ভব চেষ্টা করল নিজেকে এয়ারপোর্টে উপস্থিত সকলের দৃষ্টির আড়ালে রাখতে। সে খুনি। জোসেফ রোম্যানো নিশ্চয় মারা গেছে। কিন্তু ওটা তো একটা অ্যাক্সিডেন্ট ছিল। সে বোঝাবে পুলিশকে। ওরা নিশ্চয় বুঝবে। ওদেরকে বুঝতেই হবে।
পুলিশ স্টেশনে ট্রেসিকে নিয়ে ডেস্ক সার্জেন্টের সামনে নিয়ে যাওয়া হল। ঘরটা বিভিন্ন চরিত্রে ঠাসা – তাদের মধ্যে চো্র,* ছ্যাচোড়, মাতাল, পাতাখোর, গনিকা, দালাল... কে নেই। তার মনে হতে লাগল যেন সবাই তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে। তার সাথে আসা একজন অফিসার ডেস্ক সার্জেন্টকে বলল, ‘এই যে, হুইটনি। একে আমরা এয়ারপোর্টে ধরেছি, পালাবার চেষ্টা করছিল।’ ‘না। আমি...’ ‘হ্যান্ডকাফটা খুলে দাও’ ট্রেসির হাত থেকে হ্যান্ডকাফটা খুলে নেওয়া হল। ট্রেসির মনে হল যেন সে তার স্বর খুজে পেল। প্রায় হিসটিরিয়া রুগির মত হুড়মুড় করে বলতে শুরু করল, ‘এটা... এটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট... আমি ওনাকে মারতে চাইনি। উনিই বরং আমাকে রেপ করতে গিয়েছিলেন, আর আমি...’ ‘তুমি কি ট্রেসি হুইটনি?’ ‘হ্যা... আমি...’ ‘ওকে লকআপে ঢুকিয়ে দাও’ ‘না, না। এ...এক মিনিট’ প্রায় কাতর স্বরে অনুরোধ করল, ‘আমি একটা ফোন করবো, আ-আমাকে সেটা করতে দিতে বাধ্য আপনারা।’ ভুরু কুঁচকে তাকালো সার্জেন্ট। ‘আচ্ছা? বেশ ভালোই তো নিয়ম কানুন জানো দেখছি? এই নিয়ে কতবার হল, সোনা?’ ‘একবারও নয়। আসলে...’ ‘একটাই কল করতে পারবে। তিন মিনিট সময়। নাম্বার বল।’
29-09-2021, 11:37 AM
সেই মুহুর্তে ট্রেসি এতটাই স্নায়ুর চাপে ভুগছে যে তার কিছুতেই চার্লসের নাম্বারটাই মনে আসছে না। এমনকি ফিলাডেলফিয়ার এরিয়া কোডটাও মনে নেই তার। ওটা কি যেন? টু-ফাইভ-ওয়ান? না, না। ওটা নয়। প্রায় ভয়ে কাঁপতে লাগল সে ওখানে দাড়িয়ে।
‘কি হল? বল! তোমার জন্য কি সারা রাত অপেক্ষা করব নাকি?’ প্রায় খিঁচিয়ে উঠল সার্জেন্ট। টু-ওয়ান-ফাইভ... হ্যা মনে পড়েছে। ‘টু-ওয়ান-ফাইভ-ফাইভ-ফাইভ-ফাইভ-নাইন-থ্রি-জিরো-ওয়ান’ ডেস্ক সার্জেন্ট নাম্বারটা ডায়াল করে ট্রেসির হাতে রিসিভারটা ধরিয়ে দিল। ট্রেসি শুনতে পেল ওপাশে রিং হচ্ছে। রিং হচ্ছে, কিন্তু কোন উত্তর নেই। তবে কি চার্লস বাড়ি নেই? ‘সময় হয়ে গেছে’ বলে ট্রেসির হাত থেকে রিসিভারটা নিয়ে নিতে গেল সার্জেন্ট। ‘প্লিজ, একটু দাঁড়ান’ কেঁদে ফেলল ট্রেসি। তারপরই হটাৎ মনে পড়ল চার্লস রাতে ঘুমাবার সময় টেলিফোন অফ করে দেয় যাতে তাকে কেউ ঘুমের সময় বিরক্ত না করতে পারে। আর কোন উপায় নেই। সার্জেন্ট তাড়া দিল, ‘কি হল, হয়েছে?’ ট্রেসি সার্জেন্টের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে মাথা নেড়ে বলল, ‘হ্যা, হয়েছে।’ ট্রেসিকে নিয়ে আর একজন অফিসার অন্য একটা ঘরে গিয়ে তার ছবি তুলে, ফিংগারপ্রিন্ট নিয়ে নিল। তারপর তাকে একটা লম্বা করিডোর দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে গিয়ে ঘুপচি একটা কুঠুরির মধ্যে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে লক করে একা রেখে দিয়ে চলে গেল। যাবার সময় শুধু বলে গেল, ‘রাতটা এখানে কাটুক, কাল সকালে কোর্টে তোলা হবে।’ মিথ্যা। সব মিথ্যা। এই সব কিছুই একটা দুঃস্বপ্ন মাত্র। একটা বিভৎস দুঃস্বপ্ন। ওহ, ভগবান। এইগুলো যেন সত্যি না হয়। কিন্তু এই কুঠুরির শক্ত বিছানা যে সত্যি, ওই কোনে রাখা নোংরা বাথরুম করার জায়গাটা সত্যি। সামনের গারদটাও সত্যি। ******
30-09-2021, 10:20 AM
রাতটা যেন আর শেষ হতে চায় না। একবার, শুধু একবার যদি চার্লসকে টেলিফোনে এখন পাওয়া যেত। জীবনে কখনও এই ভাবে কারুকে আশা করেনি সে, আজ যতটা চার্লসকে তার পাশে চাইছে। ভুল হয়েছে। ভিশন বড় ভুল হয়ে গেছে। উচিত ছিল প্রথমেই চার্লসকে সমস্ত কিছু খুলে বলে দেওয়া। তাহলে এই এত কিছু ঘটতই না।
সকাল ঠিক ছ’টার সময় একজন গার্ড এসে ট্রেসিকে ব্রেকফাস্ট দিয়ে গেল। এক কাপ কফি আর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ওটমিল। ছুয়েও দেখল না সে। তার গলা দিয়ে এখন কোন খাবারই নামবে না। সকাল ন’টা। একজন মেট্রন এল তার কাছে। ‘যাবার সময় হয়ে গেছে সুন্দরী’ বলে সেলের গারদের তালা খুলল। ‘আমাকে একটা ফোন করতে হবে... ভিষন দরকারী...’ অনুনয় করল ট্রেসি। ‘ও সব পরে হবে’খন’ মেট্রন বলে উঠল। ‘তোমার জন্য জজ সাহেব অপেক্ষা করবেন না। ওটা একটা পাক্কা কুত্তার বাচ্ছা। কি যে মাল, জানো না তো।’ মেট্রন তাকে নিয়ে আবার সেই লম্বা করিডর পেরিয়ে একটা দরজা দিয়ে নিয়ে গিয়ে ঢুকল কোর্টরুমে। একজন বয়স্ক জজ সামনে বসে আছেন। তার মাথা আর হাতটা যেন মাঝে মাঝেই কেঁপে কেঁপে উঠছে। ওনার সামনে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি, এড টপ্পার, দাঁড়িয়ে। মধ্য চল্লিশ হবে। মাথায় ঢেউ খেলানো কাঁচাপাকা চুল। চকচকে কালো চোখ। ট্রেসিকে পেছন দিকের একটা বেঞ্চে বসিয়ে দেওয়া হল। তারপর আর্দালি যখন হাঁক পাড়ল, ‘ট্রেসি হুইটনি’ তাকে নিয়ে সামনের বেঞ্চে বসানো হল। জজ সাহেব সামনে রাখা একটা কাগজ ভালো করে পড়ে দেখতে লাগলেন। এবার, এবার সময় এসেছে অন্তত একজন কর্তৃপক্ষের কাউকে সামনে পাওয়া গেছে, যাকে আসল কথাটা বলা যাবে। যে বিশ্বাস করবে আমাকে। একটা হাত দিয়ে কাঁপতে থাকা অপর হাতটা চেপে ধরল সে। “ইয়োর অনার, আমি তাকে গুলি করেছিলাম ঠিকই, কিন্তু সেটা সম্পূর্ন একটা অ্যাক্সিডেন্ট। তাকে শুধু ভয় পাওয়ানোর জন্য… আর কিছু নয়। বরং ওই আমাকে রেপ করতে গিয়েছিল...”
30-09-2021, 10:21 AM
তাকে থামিয়ে দিয়ে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি বলে উঠল, ‘ইয়োর অনার, আমার মনে হয় এই ব্যাপারে বেশি কথা বলে আদালতের মহামূল্য সময় অপচয় করার কোন মানেই হয় না। ব্যাপারটা খুবই সাধারণ। এই মেয়েটি মিঃ রোম্যানোর বাড়িতে লুকিয়ে ঢুকেছিল একটা থার্টি-টু-ক্যালিবারের বন্দুক হাতে। ওখানে গিয়ে জঁ রনোয়ার একটা ছবি চুরি করার জন্য। যেটার দাম প্রায় আধ মিলিয়ন ডলার হবে। আর যখন মিঃ রোম্যানো মেয়েটিকে হাতে নাতে ধরে ফেলে, তখন মেয়েটি তাঁকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে তাকে মৃত্যু মুখে ফেলে রেখে ওই ছবিটা নিয়ে পালিয়ে যায়।’
ট্রেসির মনে হল যেন তার মুখ থেকে সমস্ত রক্ত কেউ শুষে নিল, ‘ক---কি বলছেন আপনি? সব ভুল...’ ওর কথা কানেও তোলার প্রয়োজন মনে করল না ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি। সে বলে যেতে লাগল, ‘আর যে বন্দুকটা দিয়ে মিঃ রোম্যানোকে আহত করা হয়েছে, সেই বন্দুকে মেয়েটির ফিংগার প্রিন্ট পাওয়া গিয়েছে ইয়োর অনার।’ আহত! মানে জোসেফ রোম্যানো বেঁচে আছে! তার হাতে তার মানে কেউ খুন হয়নি! ‘ওই ছবিটা নিয়ে নিশ্চয়ই এতক্ষনে অন্য কারুর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে মেয়েটি। তাই আমি মহামান্য আদালতের কাছে আবেদন করছি সশস্ত্র হামলা, খুনের চেষ্টা ও ডাকাতির অভিযোগে মেয়েটিকে সাজা দেওয়া হোক আর সেই সাথে জামিন হিসাবে আধ মিলিয়ন ডলার জরিমানা ধার্য করা হোক, ইয়োর অনার।’ জজ সাহেব ট্রেসির দিকে ফিরে প্রশ্ন করলেন, ‘আপনার তরফে কেউ আছে দাঁড়াবার?’ তখন ট্রেসির কানে কিছুই ঢুকছে না যেন। জজ সাহেব এবার আর একটু গলা তুলে প্রশ্ন করলেন, ‘আপনার তরফে কোন অ্যাটর্নি আছে?’ ট্রেসি মাথা নেড়ে বলল, ‘না স্যর। কিন্তু... ইনি যা বলছেন... মানে এতক্ষন যা বললেন সব মিথ্যা... আমি...’ ‘আপনার কাছে অ্যাটর্নিকে দেবার মত টাকা আছে?’ টাকা তো অফিসে আছে। আর আমার পাশে চার্লস আছে। “না, এই মুহুর্তে নেই, কিন্তু ইয়োর অনার, আমি তো বুঝতেই পারছি না...’ ‘কোর্ট থেকে একজন অ্যাটর্নি দেওয়া হবে আপনাকে। আর ততদিন পর্যন্ত আপনাকে জেল কাস্টডিতে রাখা হল। আপনার জামিন হবে পাঁচ হাজার ডলার। নেক্সট...’ ‘কি...কিন্তু একবার শুনুন! একটা ভুল হচ্ছে! আমি কোন...!’ এরপর আর ট্রেসির কিছু মনে নেই, কখন কিভাবে তাকে নিয়ে আদালত কক্ষ্য থেকে বের করে নিয়ে আসা হল।
05-10-2021, 09:51 AM
পেরি পোপ, আদালত যে অ্যাটর্নিকে ট্রেসির জন্য নিযুক্ত করেছে, ট্রেসির সেলে পরদিন সকালে দেখা করতে এল। কত হবে বয়স... খুব বেশি হলে তিরিশের ওপারে। বেশ বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা আর সেই সাথে সহানুভূতী মাখা নীল চোখ। প্রথম দর্শনেই ট্রেসির ভালো লেগে গেল।
ট্রেসির সেলের মধ্যে ঢুকে বিছানায় বসে বলে উঠল, ‘ওয়েল, আপনি তো শহরে মাত্র চব্বিশ ঘন্টা আগে এসেছেন, আর এর মধ্যেই একেবারে ধামাকা করে দিয়েছেন! তবে আপনি যথেষ্ট ভাগ্যবতী বলতে হবে। যে গুলিটা করেছিলেন সেটা একদম ঠিকঠাক হয় নি। সামান্য মাংস ছুয়ে বেরিয়ে গেছে। আর তাই রোম্যানো বেঁচে যাবে মনে হচ্ছে। নয়তো...’ নিজের পকেট থেকে পাইপ বের করে ট্রেসির উদ্দেশ্যে বলে উঠল, ‘যদি কিছু মনে না করেন...’ ‘না, না। ঠিক আছে’ ধীরে সুস্থে পাইপের মধ্যে তামাক ভরে লাইটার বের করে সেটা জ্বালিয়ে ট্রেসির দিকে তাকালো। ট্রেসিকে ভালো করে দেখে নিয়ে বলল, ‘আপনাকে দেখে তো একেবারেই অপরাধী বলে মনে হয় না? মিস হুইটনি!’ ‘আমি নই। বিশ্বাস করুন, আমি একেবারেই নই।’ ‘আমাকে পুরো ঘটনাটা খুলে বলুন তো। একদম শুরু থেকে। সময় নিন, কোন তাড়াহুড়ো নেই... কিন্তু সবটা বলুন।’ ট্রেসি প্রথম থেকে একে একে সমস্ত ঘটনা তাকে খুলে বলতে লাগল। কিচ্ছু বাদ দিল না। সব কিছু। তার মায়ের ফোন পাওয়া থেকে শুরু করে এই মুহুর্তে সেলের কুঠুরীতে পৌছানো অবধি। পেরী পোপ চুপ করে শুনে যেতে লাগল। ট্রেসির বলা শেষ না হওয়া অবধি একটা কথাও বলল না। ট্রেসির সমস্ত বলা শেষ হতে সেলের দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে বলে উঠল, ‘বাস্টার্ড।’ তারপর নরম গলায় ট্রেসিকে বলল, ‘কিন্তু আমি তো বুঝতে পারছি না ওরা তাহলে কি বলতে চাইছে?’ ট্রেসির চোখেও দ্বিধা, ‘বিশ্বাস করুন, আমিও ওই ছবির ব্যাপারে কিচ্ছু জানি না।’ ‘হু। বুঝলাম। খুব সামান্য ব্যাপার। জো রোম্যানো আপনাকে ফাঁসিয়েছে, ঠিক যে ভাবে আপনার মাকে সে ফাঁসিয়েছিল, একদম সেই ভাবে। আর আপনি সরাসরি ওর ফাঁদে পা দিয়েছেন।’ ‘আমি কিন্তু এখনও বুঝতে পারলাম না কি বলতে চাইছেন।’ ‘আপনাকে বরং পরিষ্কার করে বোঝাই ব্যাপারটা। রোম্যানো কি করবে দেখুন, ও ইন্সিওরেন্স কোম্পানীর কাছে একটা আধ মিলিয়ন ডলারের ক্লেম করবে ওই জঁ রনোয়ার ছবিটার জন্য, যদিও সে নিজেই হয়তো ছবিটাকে লুকিয়ে রেখে দিয়েছে। হয়তো পেয়েও যাবে টাকাটা ইন্সিওরেন্স বাবদ। এবার ইন্সিওরেন্স কোম্পানী আপনার পেছনে পড়ে যাবে, তার নয়। তারপর যখন সব কিছু শান্ত হয়ে যাবে, তখন সে ছবিটাকে বের করে গোপনে কোন প্রাইভেট পার্টিকে বিক্রি করে দেবে আরো আধ মিলিয়ন ডলারে। ব্যস। আর এটা সম্পূর্ণ সম্ভব হয়েছে এই আপনার একলা কিছু করার তাগিদে। এখন বুঝতে পারছেন তো যে সব সময় বন্দুক দেখিয়ে স্বীকারক্তি আদায় করা যায় না।’ ‘এ--এখন তো পারছি বুঝতে। আসলে আমি ভেবেছিলাম যদি ওর মুখ থেকে সত্যিটাকে সামনে নিয়ে আসতে পারি তাহলে হয়তো কেউ ব্যাপারটা নিয়ে তদন্ত করবে আর তাতে আমার মা...’
05-10-2021, 09:54 AM
পাইপটা নিভে গিয়ে থাকবে। সেটাকে পুনরায় জ্বালিয়ে নিয়ে সে প্রশ্ন করল, ‘আচ্ছা, আপনি বাড়িটাতে কি ভাবে ঢুকলেন?’
‘আমি ডোর বেল বাজালাম, উনি এসে দরজা খুলে দিলেন।’ ‘কিন্তু গল্পে তো সে রকমটা নেই। বাড়ির পেছনদিকের একটা জানলা ভাঙা রয়েছে। এবং রোম্যানো বলেছে যে আপনি বাড়ির ওই জানলা ভেঙে ঘরে ঢুকেছিলেন আর ওই জঁ রনোয়ার ছবিটা নিয়ে যখন পালাচ্ছিলেন তখন রোম্যানো ঘরে ঢোকে। সেই সময় আপনাকে বাধা দিতে গেলে আপনি ওকে গুলি করে পালিয়ে যান।’ ‘কিন্তু সেটা তো সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা...’ ‘হু, মিথ্যে কথা, কিন্তু সেটা ওর মিথ্যা, ওর বাড়ী আর আপনার বন্দুক। আপনার কোন ধারনা আছে কার সাথে আপনি পাঙ্গা নিতে গিয়েছিলেন?’ ট্রেসি নীরবে শুধু মাথা নাড়ল। ‘তাহলে জীবনের একটা খুব সত্য আপনাকে জানাই, মিস হুইটনি। এই শহরটা চলে একমাত্র ওরাসত্তি পরিবারের আঙ্গুলী হেলনে। এখানে কোনকিছুই করা সম্ভব নয় অ্যান্থনী ওরাসত্তির অনুমোদন ছাড়া। তা সে পারমিট পাওয়াই হোক, বাড়ি বানানো হোক, গনিকালয় চালানই হোক বা ড্রাগ বিক্রি করাই হোক। সব জায়গায় শুধু ওরাসত্তি। জো রোম্যানো এখানে প্রথমে ছিল এই ওরাসত্তির হিট ম্যান। আর আজ সে ওরাসত্তির ডান হাত।’ একটু থেমে ট্রেসির দিকে বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে বলল, ‘আর আপনি কি না সেই রোম্যানোর বাড়ি গিয়ে ওরই দিকে বন্দুক তুলেছেন! ভাবা যায়?’ ট্রেসি শুনতে শুনতে আরো বিমর্শ হয়ে পড়তে লাগল। থম মেরে খানিক বসে থেকে ধীর গলায় প্রশ্ন করল, ‘আপনি কি আমার কথা বিশ্বাস করেছেন?’ ম্লান হেসে পেরী পোপ উত্তর দিল, ‘করেছি। আপনার প্রতিটা কথাই জলের মত সত্যি। একটা কথাও অবিশ্বাস করার মত নয়।’ ‘তাহলে আপনি কি আমাকে সাহায্য করবেন?’ একটু চুপ করে থেকে উত্তর দিল, ‘আমি চেষ্টা করব, সেটা বলতে পারি। আর শুধু তাই নয়, আমি চেষ্টা করব এদেরকেও গারদের পেছনে ভরার। এরা পুরো শহরটাকেই এদের দখলে রেখেছে, আর সেই সাথে, অনেক জজও এদের কেনা। তাই যদি আপনি সোজা সাপ্টা মামলায় যান, এদের সাথে পেরে উঠবেন না। এরা এমন ভাবে আপনাকে ফাঁসাবে যে আর কোনদিন হয়তো দিনের আলোও চোখে পড়বে না আপনার, সারাটা জীবন হয়তো জেলের অন্ধকার কুঠুরীতে কেটে যাবে আপনার জীবনটা।’ ভীত চোখে ট্রেসি প্রশ্ন করল, ‘যদি মামলা করি মানে?’
06-10-2021, 02:27 PM
পোপ উঠে দাঁড়িয়ে খানিক সেলের মধ্যে চুপচাপ পায়চারি করতে থাকল, তারপর একটু ভেবে বলল, ‘আমি চাইনা আপনাকে জুরিদের সামনে দাঁড় করাতে। কারন আমি জানি যে এই জুরিরাও ওরাসত্তিরই কেনা হবে। তাই এরা কখনই ঠিক রায় দেবে না। বরং এই শহরে একজন মাত্র জজ আছেন যাঁকে এখনও পর্যন্ত ওরাসত্তি কিনতে পারেনি। তাঁর নাম হেনরি লরেন্স। আমি চেষ্টা করব যদি তাঁকে দিয়ে এই কেসটার হিয়ারিং করানো যায়। তাহলে আমি সুনিশ্চিত যে আপনাকে এই কেসটা থেকে বেকুসুর খালাস করিয়ে নিয়ে আসতে পারব। যদিও জানি ব্যাপারটা একদমই অনৈতিক হবে, তবুও শুধু আপনার জন্য আমি একবার চেষ্টা করে দেখব যদি আলাদা করে ওনার সাথে একবার কথা বলে রাজি করাতে পারি। উনিও আমার মতই ওরাসত্তি বা রোম্যানোকে ঘৃণা করেন। তাই আমাকে জজ লরেন্সকে পেতেই হবে আপনার জন্য।’
****** পেরী পোপের ব্যবস্থাপনায় ট্রেসি ফোন করল চার্লসকে। ওপারে চার্লসের সেক্রেটারী ধরল ফোনটা, ‘হ্যালো, মিঃ স্ট্যানহোপের অফিস থেকে বলছি...’ চেনা কন্ঠস্বরে খানিকটা হলেও ভালো লাগল ট্রেসির। তাড়াতাড়ি বলে উঠল, ‘হ্যারিয়েট, আমি ট্রেসি হুইটনি বলছি...’ ‘ওহ, মিস হুইটনি, স্যর কখন থেকে আপনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু আপনার কোন ফোন নাম্বার না থাকার কারনে যোগাযোগ করে উঠতে পারছেন না। মিসেস স্ট্যানহোপও আপনাকে ভিষন ভাবে খুজছিলেন। উনি খুব উদগ্রীব হয়ে রয়েছেন আপনাদের বিয়ের ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য। আপনি যথাশিঘ্র সম্ভব ওনাকে একবার ফোনে যোগাযোগ করুন...’ ‘হ্যারিয়েট, আমি মিঃ স্ট্যানহোপের সাথে একবার কথা বলতে পারি?’ ‘আমি একান্ত দুঃখিত মিস হুইটনি, স্যর তো অফিসে নেই। উনি একটা জরুরি মিটিংএর জন্য সকাল বেলায়ই হাউস্টন চলে গেছেন। আপনি যদি আপনার নাম্বারটা দেন তাহলে উনি ফিরলেই আপনাকে ফোন করতে বলতে পারি। আমি জানি উনি ফিরলেই সাথে সাথে আপনাকে ফোন করবেন।’ ‘আমি...’ জেলের মধ্যে কোন ভাবেই কারুর পক্ষে যোগাযোগ করা সম্ভব নয়। তাকেই ফোন করে সমস্ত কিছু বলতে হবে। ‘আমি... আমি পরে না হয় মিঃ স্ট্যানহোপকে ফোন করে নেব।’ আস্তে আস্তে ফোনের রিসিভারটা নামিয়ে রাখল ট্রেসি। আগামীকাল... ট্রেসি ভাবল... আগামীকাল চার্লসকে আমি সব কিছু খুলে বলব। সেদিন দুপুরে একটা আরো বড় সেলে ট্রেসিকে স্থানান্তরিত করা হল। দুপুরের খাবারও বেশ ভালো ছিল। খানিকপর একজন একটা ফুলের তোড়া তাকে দিয়ে গেল। সেটাতে একটা কার্ড লাগানো রয়েছে। কার্ডটা হাতে নিয়ে সে দেখে, লেখা রয়েছে, ‘সুসংবাদ। আগামীকাল আমরা ওই বাস্টার্ডদের উচিত শিক্ষা দিতে চলেছি।’ নিচে সই রয়েছে... পেরী পোপ। ****** |
« Next Oldest | Next Newest »
|
Users browsing this thread: 1 Guest(s)