Posts: 1,553
Threads: 0
Likes Received: 1,534 in 965 posts
Likes Given: 5,238
Joined: Jan 2019
Reputation:
190
(28-09-2021, 06:08 PM)dimpuch Wrote: সবাইকে ধন্যবাদ আর আন্তরিক শুভেচ্ছা। এইবারের আপডেট বড় হবে, বেশ বড়। কিন্তু একবারে না দিলে পড়ে মজা পাবেন না, তাই ভেঙে দিই নি। কাল চেষ্টা করবো যদি না হয় বৃহস্পতিবার নিশ্চিত।
পিএম পড়েছি। এই মাত্র পড়লাম। আলাদা করে উত্তর দিলাম না। এই দু দিন অপেক্ষা করুন। মূর্তির গায়ে এখন শাড়ি গয়না পরাতে হবে, ছুরি দিয়ে চেছে কিছু জায়গা সমান করতে হবে, তাই একটু সময় লাগছে।
এই ফোরামের কি অবস্থা হচ্ছে। গল্পের টাইটেল পড়লেই গল্প পড়া হয়ে যায়
অবশ্যই সময় নিন। কিন্তু ভুলে যাবেন না।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(28-09-2021, 08:10 PM)ddey333 Wrote: Jio dimpuch dada
শুধু একটাই দুঃখ বা অস্বস্তি , আপনার এই অকালজয়ী লেখাটা আমার নামের থ্রেড এ পোস্ট করা হচ্ছে , যেটা আমি একদমই চাইনি ...
কিন্তু ... যাকগে এখন আর ওসব কিন্তু ইত্যাদি বলে কি লাভ , যা হওয়ার তা হচ্ছে ...
Posts: 1,228
Threads: 0
Likes Received: 975 in 705 posts
Likes Given: 1,681
Joined: Jul 2020
Reputation:
66
(28-09-2021, 06:08 PM)dimpuch Wrote: সবাইকে ধন্যবাদ আর আন্তরিক শুভেচ্ছা। এইবারের আপডেট বড় হবে, বেশ বড়। কিন্তু একবারে না দিলে পড়ে মজা পাবেন না, তাই ভেঙে দিই নি। কাল চেষ্টা করবো যদি না হয় বৃহস্পতিবার নিশ্চিত।
পিএম পড়েছি। এই মাত্র পড়লাম। আলাদা করে উত্তর দিলাম না। এই দু দিন অপেক্ষা করুন। মূর্তির গায়ে এখন শাড়ি গয়না পরাতে হবে, ছুরি দিয়ে চেছে কিছু জায়গা সমান করতে হবে, তাই একটু সময় লাগছে।
এই ফোরামের কি অবস্থা হচ্ছে। গল্পের টাইটেল পড়লেই গল্প পড়া হয়ে যায় thank you
•
Posts: 207
Threads: 3
Likes Received: 366 in 97 posts
Likes Given: 12
Joined: Jun 2021
Reputation:
89
সিরাজ আলি মণ্ডল এইরকম কেস পায়নি তার সারা চাকরি জীবনে। ফাগুকে নিজেদের হেপাজতে পেয়েছে ২৮ দিন পর। হাসপাতালে ২৮ দিন কাটিয়ে, তার ভিতর আইসিউ তে ৫ দিন, ছেলেটি মোটা মুটি বিপদ মুক্ত। তার পর থেকে দফায় দফায় কত ঘণ্টা যে তাকে জিজ্ঞাসা করেছে সূর্য আর বাকি অফিসাররা তার হিসাব নেই। নতুন টাউনের ঘটনার পর ১ মাস ৯ দিন কেটেছে কিছুতেই ফাগু মুখ খুলছে না। প্রশ্ন করলে ঘাড় নিছু করে থাকে। মারধর করতে সিরাজ অনুমতি দেয়নি।কেমন এক অনুভুতি ভিতরে ভিতরে অনুভব করে সিরাজ। “কু কু মম” কি বলতে চেয়ে ছেলেটি সিরাজের চোখে চোখ রেখে বুকে লুটিয়ে পরেছিল তা জানতে প্রবল আগ্রহী সিরাজ। কু মানে বোঝা গেল কুন্তি, ওর বৌ। কিন্তু ওর নাম কি, ওর কি পরিচয়,কোথায় বাড়ি, কিছুই জানা যায়নি। কুন্তিও জানে না। সিরাজকে দু হাতে জড়িয়ে রক্তাক্ত ফাগু কিছু বলতে চেয়েছিল ফাগুর সেই চোখ তাড়া করে বেরাচ্ছে ঘাগু পুলিশ অফিসার সিরাজকে। “ নিজের হাতে রক্তাক্ত ফাগুকে বাঁচিয়েছি,আমাকে জড়িয়ে কি বলতে চেয়েছিল ও, আশ্রয় চাইছিল কি আমার কাছে? কি ভাবে ওকে মারতে পারি?আমি কি বুড়ো হয়ে গেছি তাই থার্ড ডিগ্রি তে মন সায় দেয় না?”
সকালে চা খাচ্ছে মেয়ে হাসনুহানা আর স্ত্রী জুঁই এর সাথে। মেয়ে হাসনুহানা এসেছে ৩ দিন।বর্ধমানের দিকে এক কলেজে পড়ায়। সবে ৭ টা বাজে। বাড়িতে থাকলে এর আগেই হাসনুহানার চা খাওয়া হয়ে যায় তবে বাপের বাড়ি বলে কথা, একটু আদর আলসেমি জড়িয়ে থাকে দিনভর। সকালে বাবার পাশে বসে চা খাচ্ছে , মেয়ে জুইএর কোলে।
……… তা বাবা তোমার সেন্সেসনাল ক্রিমিনালের কি খবর, কোথাকার ছেলে?
………ছেলেটা কিচ্ছু বলছে না, স্পিক টি নট
……কেন তোমার খাস কনস্টেবল অনাদি, সেও পারেনি কোন কথা বার করতে?
……না না একে অনাদির হাতে দেওয়া যাবে না। ওই গুলি খেয়ে রক্তাত অবস্থায় আমাকে জড়িয়ে কিছু বলতে চেয়েছিল। আমি ওকে আলাদা সেলে রেখেছি, একটু আলো আসে এইরকম। একা থাকে। ভীষণ মায়া লেগেছিল, ভীষণ, যখন ও আমায় জড়িয়ে ধরে কিছু বলতে চাইছিল। রক্তে শরীর ভেসে গেছে যন্ত্রণায় কথা বেরোচ্ছে না মুখ দিয়ে সেই অবস্থায় আমার দু হাতে নিজেকে ছেড়ে প্রানপন চেষ্টা এক গভীর গোপন কথা বলার, কি করে ভুলি বল হাসনু। নিজের কেউ না, চেনে না, তবু নিজে ৩ টে গুলি খেয়ে একটি বিশাল বড়োলোকের মেয়েকে কেন বাঁচাল, সেইটা জানা খুব জরুরি। পুলিশের খাতায় ওর নামে কোন অপরাধ নেই কিন্তু এই রিস্ক কেন নিল, জানতে হবে।
…… খুব সুন্দর দেখতেরে হাসনু। সিনেমায় নামতে পারে। এদিকে আবার দুর্দান্ত গান গায় । কাল সকালে এসআই উপাধ্যায় বলল “ স্যার, এ বিলকুল বিন্দাস ছেলে। আজ সকালে গান গাইছিল ‘সাগর রেন মে ভাগে ’, আপনি শুনলে অবাক হতেন, শুধু গান গেয়ে এই ছেলে দিন কাটাতে পারে, এই ছেলে খুন করলো?.... মৃদু হেঁসে উঠে হাসনু।
……… ওটা ‘সাগারি রেইন কে জাগে’, ভীমসেন ষোশির বিখ্যাত গান রামকেলি রাগে। ওই খুনি এইটি গাইছিল? বাপ রে বাপ। দাড়াও একে নিয়ে গল্প লিখবো, একবার দেখাবে তোমার হ্যান্ডসাম সমাজ বিরোধীকে সিনেমায় নামার আগে একবার দেখি আমরা, দেখাও না বাবা ? তবে বাবা, এর অতীত খারাপ না। কেননা ওই গান কোন সাধারন লোক গাইবে না।
………ধুর ছাড় তো, যতো সব গুন্ডা বদমাশ। দ্যাখ কত খুন করেছে, আর কত মেয়ের সর্বনাশ……জুঁই মেয়েকে বলল
………না জুঁই, ফাগু সেইরকম ছেলে না
………ফাগু? বাবা, সম্পূর্ণ নাম কি?
………ফাল্গুনি।
………ফাল্গুনি, তৃতীয় পাণ্ডব। তা কোন শ্রীকৃষ্ণ বাঁচাল? ৩ টে গুলি , বাবা রে বাবা
…………দুটো গুলি সেরকম না ……ডান কাঁধে, বাঁ বগলের পাশে তবে পেটের গুলি মারাত্মক হতে পারত। বাঁচিয়ে দিয়েছে ওর তাবিজ………হাতের কাপ নামিয়ে হাসনু, চোখ মুখ সিরিয়াস
………তাবিজ? কিসের তাবিজ?
………পেটে একটা বড় রুপোর তাবিজ লাগান ছিল। গুলি লেগেছে তাবিজে, তাই বেঁচে গেছে…… প্রায় ভরা কাপ রাখতে গিয়ে উত্তেজনায় কাপ উল্টে চা টেবিলে আর টেবিল ক্লথে,
উঠে দাঁড়িয়েছে হাসনুহানা চোখ মুখে উজ্জ্বল হাসি
………কি বললে, পেটে তাবিজ, তুমি ঠিক বলছ? মা তুমি কিছু বুঝতে পারছ? ক্লাসিক্যাল গান গায় .....চেয়ার ছেড়ে উঠে দু হাত আকাশে তুলে, “ ইহাআআআআআ” …… পাশের বাড়ির লোক হোক চকিয়ে উঠলো, “ কি হোল” হাসনুর প্রান খোলা উচ্ছাস
.........…বাবা, তুমি কি বুড়ো হয়ে গেছ?.........হাসনুর আচমকা ওই উত্তেজিত চিৎকারে সিরাজ দেখে খুশি উপচে পড়ছে হাসনুর মুখে
……”কি হয়েছে, হাসনু তুই উত্তেজিত কেন”?
...... জিতে রহ বেটা। জিতে রহ, তুই বাবাকে ফাকি দিতে পারিস কিন্তু হাসনুহানা কে ন………………য়
হেড অফিসে গাড়ী থেকে নেমে ,সিরাজ প্রথমেই কমিশনারের ঘরে। বাইরে লাল আলো জ্বলছে
………অনুপ, কতক্ষন চলবে? আমার ভীষণ জরুরি……বাইরে বসা পিএ কে প্রশ্ন সিরাজের
……… স্যার, একটু বসুন। এর পর একটা মিটিং আছে, আমি তার আগে বড় সাহেব কে বলছি
………আগে বল, আগে। খুব জরুরি……বলতে বলতে ভিতর থেকে এক অপরিচিত ভদ্রলোক বেরিয়ে এলেন…সিরাজ কোন চান্স না নিয়ে সোজা
……।।স্যার ক্ষমা চাইছি, এই ভাবে আসার জন্য
…… ঠিক আছে বল। কি ব্যাপার
………স্যার অনেক ভাবে আমি আর সূর্য চেষ্টা করেছি ফাগুর মুখ খোলাতে পারিনি। মারধর করে এই ক্ষেত্রে লাভ নেই আর আমার মন সায় দিচ্ছে না, তাই আমি চাই আজ দুপুরে ৬ জন পুরুষ আর মহিলার সামনে ওকে প্রশ্ন করতে। স্যার আমি নিশ্চিত আমি জানি ও কে। কিন্তু ফাগু স্বীকার না করলে কিছু করার নেই। এই একটা উপায়। এদের সামনে ফাগু ঘাড় গুজে থাকতে পারবে না
……ঠিক আগে ডাক । তবে বেশি সময় কিন্তু নেবে না। আর তুমি শিওর?
………১০০০% স্যার।
দুপুর ২টো। লাঞ্চ এর পর এক বড় ঘরে বিরাট টেবিলের মাঝখানে কমিশনার সাহেব। তার ডান পাশে সিরাজ। সূর্য সিরাজের পিছনে দেয়ালের ধারে চেয়ারে। কমিশনারের সামনে চেয়ার খালি। বাঁ দিকে জোনাকি, মেয়ে তিতলি আর স্বামী। আর সিরাজের ডান দিকে জোনাকির আগের স্বামী শঙ্কর, আর পাশে রোম , কুন্তি। সূর্য আর একজন পুলিশের সাথে ঘরে ঢুকল ফাগু কে নিয়ে। অন্য পুলিশ অফিসার বেরিয়ে গেলেন ইশারাতে । ফাগুর চুল নেমে এসেছে ঘাড় ছাপিয়ে, কপাল ঢেকে গেছে চুলে , কানের দুই পাশ দিয়ে আগোছাল চুল নেমে এসেছে কিছু কানে কিছু গালে।চুল আঁচড়েছে, পরনে পাজামা আর পাঞ্জাবি। একেবারে ছবিতে দেখা বিপ্লবী “ চে গেভারা”। শতকরা ৯০ টি কলেজ পড়ুয়া মেয়ে প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়বে। ঢুকেই থমকে দাঁড়িয়ে ফাগু, কুন্তি কে দেখে সূর্য কে “ একটু কথা বলতে পারি, এদের সাথে?” কুন্তি আজ সেজে এসেছে। দামি শিফনের শাড়ি ম্যাচিং ব্লাউস। আর রোমের সেই হিরের গয়না অঙ্গে। দেখে থমকে দাড়াতেই হবে। ফাগুর প্রস্নে ঘাড় নারিয়ে সায় দিলেন সিরাজ। এগিয়ে গিয়ে কুন্তির সামনে একটু হেঁসে
………সরি কুন্তি, তোমার এই অবস্থায় পাশে থাকতে পারলাম না। কুন্তি ইনি রোম। রোম, সম্ভব হলে কুন্তিকে সাহায্য করবেন প্লিস
………‘সম্ভব হলে সাহায্য করবেন’ ভেঙ্গিয়ে উঠলো রোম। … কে তোমাকে ওখানে গিয়ে ওইসব করতে বলেছিল হ্যাঁ? দিগ্বিজয় করতে বেড়িয়েছে,। চেনে না জানে না, নিজের জীবন দিয়ে প্রান বাঁচাবে। এখন কে দেখবে তোমায়। একে বারে বুদ্ধু, আর কুন্তি তুই এই বুদ্ধুর প্রেমে পড়লি। খালি ফুচ ফুচ কান্না। ‘ একটু দেখবেন রোম’ যেন উনি বলবেন তারপর যা হবার হবে। গাধা…………রোম বলে যাচ্ছে কিন্তু কথায় প্রানের ছোঁয়া সবাই বুঝতে পারছে। “ কুন্তি কে নিয়ে তোমার না ভাবলেও চলবে। দিগ্বিজয় করবেন, লোকে বাহবা দেবে, ছবি তুলবে, বুদ্ধু” ……মুখ টিপে হাসি মুখে ফাগু তাকিয়ে
……ফাগু তুমি চিন্তা করো না। আমি দিদির ওখানেই আছি। হাসপাতালের সব খরচ দিদি দিয়েছেন। উকিলের খরচাও দেবেন। পিউ ফোন করে আমাকে। ওর বন্ধুদের এনে তোমার জন্য ৫ বোতল রক্ত দিয়েছে। তুমি ভেবনা সব ঠিক হয়ে যাবে। ………গলা খাখারি দিলেন সিরাজ। চোখের ইশারায় চেয়ারে বসতে বললেন। ফাগু চেয়ারে বসে ডান দিকে চোখ ঘুরিয়ে আবার বাঁ দিকে দেখে নিল। ফের ডান দিকে তিতলির দিকে অল্প হাসি।
………ফাগু, এই বিবর্ণ হয়ে যাওয়া ছবিটি কার? তোমার ব্যাগে পেয়েছি, ইনি তোমার কে হন? ঘাড় গুজে ফাগু, সিরাজের প্রস্নে……
এইবার খুব কোমল স্নেহের স্বরে
……..ফাগু। এইখানে তোমার স্ত্রী আছেন, তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী রঙ্গনা ম্যাডাম আছেন, তিতলি আছে যার জন্য তুমি ‘জান কবুল করেছিলে, তবুও তুমি বলবে না, ইনি কে? তোমার মা, তাই না?.... চুপ থেকে ফাগু একটু সময়
…হ্যাঁ।
……কি নাম তোমার মায়ের ?....চুপ ফাগু, উশখুশ করছে তিতলি
………স্যার, প্লিস আমাকে একটা কথা বলার অনুমতি দেবেন………তিতলি উঠে দাঁড়িয়ে হাত জোর করে কমিশনার কে অনুরোধ জানাল……” হ্যাঁ বল” ।
………আমি এনাকে একবার প্রনাম করতে চাই, ইনি আমার প্রান বাঁচিয়েছেন……গলা ধরে এসেছে তিতলির। নড়েচড়ে বসলো ফাগু, একটু অপ্রস্তুত, হাত নেড়ে
……ধ্যাত, প্রনাম। এদিকে আয়, আয় আয় আয় এদিকে ……তিতলি আসতে তার হাত নিয়ে নিজের দু হাতে ধরে চুমু খেয়ে কমিশনারের দিকে তাকিয়ে উপহার দিল তার বিখ্যাত মন ভোলান হাসি
………একটা কথার ঠিক ঠিক উত্তর দাও ফাগু। তোমার এই শীভালরির কারন কি? তোমাকে পুলিশ খোজে নি? পুলিশ জানেই না তুমি কে তবু তুমি নিজের থেকে কেন ধরা দিলে একে বাঁচাতে? পুলিশের খাতায় কোন কেস নেই, তবুও, কেন, কি কারন?......চুপ করে ফাগু একটু সময়। ঘরের সবাইকে দেখে নিল আরও একবার, আবারও তার ভুবন ভোলান হাসি
……… আমি ছাড়া একে কে বাঁচাবে? একে বাঁচানো আমার কর্তব্য। এর নাম মীনাক্ষী বা তিতলি, এ ছাড়া একটা নাম আছে, মিনি। সেই নামে একে ডাকে শুধু একজন।……একটু চুপ কয়েক সেকেন্ড
……… আমার আর মিনির জন্ম একই গর্ভে, মিনি আমার ছোট বোন। আমার কলেজের নাম অর্জুন বাসু।
চুপ। নিঃশ্বাস পড়ছে না কারো। পৃথিবীর গতি কি থেমে গেছে, কয়েক সেকেন্ডের জন্য? তার পরই ঘর কাপিয়ে খুঁজে পাওয়ার চিৎকার “ দাদাই, ওজু ”। মুখ ঢেকে কাঁদছে জোনাকি আর শঙ্কর। তিতলি দু হাতে ফাগুকে জড়িয়ে ‘দাদাই, দাদাই ‘ আর কান্না । ফাগু মিনিকে জড়িয়ে রোম আর কুন্তির দিকে তাকিয়ে দেখে রোমের চোখ ছিটকে বেরোবে। ফিচকে হাসি হেঁসে, চোখ মেরে দিল ফাগু রোমকে ওই অবস্থায়। শুধু সিরাজের মুখে তৃপ্তির হাসি। হাসি মুখে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিল সূর্য কে। চোখের জলে ভাসতে ভাসতে জোনাকি উঠে এসে অজুর মাথা ধরে চুমু খেল গালে, শঙ্কর এসে মাথায় হাত বুলিয়ে চিপে নিল বুকে। জোনাকি ভেজা চোখে অজুকে ধরে
সিরাজ ইঙ্গিত করতে সবাই যায়গায় বসলো মিনি বাদে
………স্যার আমাকে প্লিস দাদাইএর পাশে বসতে দিন……কমিশনার মৃদু হাসলেন। প্রমান করলেন যে পুলিশ ও মানুষ।
……স্যার কুন্তি আমার পাশে বসতে পারে? শুধু হাত ধরে থ………আবার সেই এক ইঙ্গিত। ওজু বা ফাগুর দুই পাশে তার দুই প্রিয়জন , কুন্তি আর মিনি। দু হাতে দুজনকে ধরে
……মিনি এ তোর বৌদি কুন্তি……তারপর চোখ বড় করে কড়া গলায় “ একে কিন্তু প্রনাম করবি”……বলার ভঙ্গিতে না হেঁসে পাড়া যায়না
………স্যার, ওই তাবিজটা কি ফিরত পাওয়া যাবে? আর কিছু না ওইটি আমার ছেলেবেলা। ঠাম্মার দেওয়া। ওতে জড়িয়ে আছে তার স্মৃতি আর ভালোবাসা, তাই চাইছি………”দেখব চেষ্টা করে” সিরাজ উত্তর দিলেন।
………তা ওজু, এইবার বল মায়ের ছবি বুকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছ কিন্তু তাকে দেখেও নিজেকে লুকিয়ে রাখছ কেন? ইচ্ছা করলেই তো দেখা করতে পারতিস
………সে অনেক কথা। কি হবে দেখা করে?
………ছবি রেখেই বা কি হবে?
চুপ করে ফাগু, একটু সময় নিল ভাবতে তারপর মৃদু হেঁসে ফাগু …’তা হলে শুনুন, সব বলব এই কারনে যে আর আমায় কোন আলাদা আইডেনটিটি নিয়ে বাঁচতে হবে না, আর ছদ্মবেশ লাগবে না ।
……… আমার ৫ বছর অবধি আমি ছিলাম বাড়ির মধ্যমণি। সংসার ঘুরত আমাকে নিয়ে। বাবা মা দুজনেই আমাকে ভালবাসতেন সময় দিতেন। দুজনেই চাকরি করতেন তাই খুব বেশি সময় ছিল না তাদের। আমি থাকতাম ঠাম্মা কে নিয়ে আর খেলতাম আমার হিরো গব্বর সিং এর মেয়ে হাসনুহানার সাথে। হাসনুর মা কে আমি ফুল বলে ডাকতাম। ফুল আমাকে ভালবাসতেন নিজের সন্তানের মতো।ঠাম্মা আমায় গল্প শোনাত, আলিবাবার গল্প, মহাভারত, রামায়ণ টুনটুনির গল্প। রাতে শুয়ে শুয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে গল্প বলতেন। বাবা ক্লাসিক্যাল গান শিখেছেন, তাই ঠাম্মা আমায় নাড়া বাঁধিয়েছিলেন একজনের কাছে ৫ বছর বয়েসে, নিজেও গান গাইতে পারতেন। সব ঠিকঠাক। কিন্তু আমার খুব খারাপ লাগত যখন মা ঠাম্মার সাথে চেঁচিয়ে খারাপ ভাবে কথা বলতো। ঠাম্মা খুব নিরীহ মানুষ ছিলেন,বাবা রোজ রাতে মদ খেয়ে এসে প্রথমে মায়ের সাথে ঝগড়া করতেন তারপর ঠাম্মাকে যা খুশি তাই বলতেন। ঠাম্মা বলতেন আমাকে “ দাদুভাই তুমি ওই সব কথা শুন না, রেগে আছে তাই বলে”। কিন্তু কেন বলবে, কেন কেন…কেন বলবে… উত্তেজিত অজু চুপ করে নিজেকে সামলে নিচ্ছে ……ঠাম্মা আমাকে জড়িয়ে কাদতেন আমি ঠিক বুঝতে পারতাম। কেন বাবা আর মা ঠাম্মার সাথে খারাপ ব্যাবহার করতেন জানি না , বুড়ি মানুষ ,খুব ভালো ছিলেন ঠাম্মা। মনে হতো চেঁচিয়ে উঠে মাকে বলি “ তুমি বলবে না ওই ভাবে ঠাম্মা কে, বলবে না” ……চুপ করে ওজু মাথা নিচু করে চোখে জল, মিনি সামনের জলের গ্লাস দিতে ঢোঁক ঢোঁক করে খেয়ে চুপ
………কেন বলিসনি ওজু , কেন বলিসনি বাবা ? একবার যদি বলতিস, এখন আর বলিস না প্লিস, প্লিস ওজু…মুখ না তুলে বললেন জোনাকি ধিরে ধিরে
……আমার ৫ বছরের জন্মদিনের কিছুদিন পর একদিন সকালে মা আমায় খুব আদর করে বললেন “ ওজু আমি আজ বোম্বে চলে যাচ্ছি কাজে। তোকে কয়েকদিন পর এসে নিয়ে যাব। কেমন?তুই ঠাম্মার সাথে শান্ত হয়ে থাকবি”। আমি কিছু জিজ্ঞাসা করিনি, কেননা ঠাম্মা আমাকে বলেছিলেন মা বাইরে যাবে কাজে, । এরপর আমার জীবনে নেমে এলো একের পর এক খারাপ সময়। একদিন ঠাম্মা মারা গেলেন। আমি একেবারে একা হয়ে গেলাম। যে বাড়িতে সবসময় কেউ না কেউ আমার জন্য ব্যাস্ত থাকত সেই বাড়িতে আমি আর এক কাজের লোক। বাবা সকালে অফিস চলে গেলে সেই কাজের লোক আমাকে পাহারা দিত। আমি সুযোগ পেলেই চলে ষেতাম ফুলের কাছে ,মাঝে মাঝে থেকেও যেতাম রাতে। আমার খুব মন খারাপ করত, খুব। ফুলকে বলতাম, হাসনুকে বলতাম। এর কিছুদিন পর এক সকালে আমার হিরো গব্বর শিং আমাকে নিয়ে গেল প্লেনে করে বোম্বেতে মায়ের কাছে। বাবা আমাকে জড়িয়ে কেদেছিলেন , আমারও খারাপ লেগেছিল তবুও মা কে ফিরে পাব এই আনন্দে আমি বোম্বে গিয়ে জীবনের সবথেকে বড় ধাক্কা খেলাম। মা হারিয়ে গেছেন, তার যায়গায় খুব বড়লোক একজন মহিলা অনেক গয়না গায়ে, চুল কাঁটা, শাড়ি খুব দামি মতো, আমি অবাক হয়ে গেলাম। কোলে এক পুঁচকে বাচ্চা নিয়ে “ ওজু এই দেখ এ তোমার বোন”। মা আমাকে তুমি করে বলছে? জীবনে প্রথম মা তুমি করে বলছেন। আমার ডান পাশে যে একজন লোক বসে আছে ওনাকে দেখিয়ে “ ওজু ইনি তোমার পাপা, এনাকে তুমি আজ থেকে পাপা বলে ডাকবে”। উনি ঠোঁট আধ ইঞ্চি ফাক করে হাঁসার মতো করেছিলেন। আমার বয়েস তখন ৬, তারপর আমি প্রায় ৫ বছর মায়ের সাথে ছিলাম। কিন্তু মায়ের স্বামী কোনোদিন আমাকে ভালভাবে ডেকে কথা বলেছেন বা হেসেছেন মনে পড়ে না। বিরাট বাড়ি, অনেক কাজের লোক, বড় বড় ঘর সব কিছুই বড় বড়। আমার ঘর বড় ছিল। ওই বাড়িতে আমার খাবার, থাকার, কাপড়, জামা,খেলার সরঞ্জাম কোন কিছু অভাব ছিল না। বম্বেতেও এক পণ্ডিতের কাছে গান শেখার ব্যাবস্থা করে দিয়েছিলেন মা। শুধু অভাব ছিল একটু স্নেহ ভালবাসার। একটা কথা বললে বুঝবেন। আমাকে বলে দেওয়া হয়েছিলো যে মায়ের ঘরে ঢুকতে হলে বাইরে থেকে জিজ্ঞাসা করতে হবে “ঢুকব?” । বুঝুন স্যার এক ৬ বছরের বাচ্চা সে নিজের মায়ের ঘরে ঢুকবে পারমিশন নিয়ে। প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা বলছি, কোন কারনে আমি মায়ের ঘরে গিয়ে বিছানায় বসে মাকে কিছু বলব, ওই লোক আমাকে চোখের ভাষায় বিছানায় বসতে না করে মাকে বললেন “ জোনাকি, তুমি ওকে বুঝিয়ে দাও এই ভাবে যেন না ঢোকে আর বসে। হি ইস ইওর ব্যাগেজ”। সেই প্রথম আমি শুনলাম যে আমি শ্রীমতী জোনাকি দেবীর ব্যাগেজ- বোঝা। বুঝি নি ওই আনকালচারড লোকটি ঠিক কি বলতে চাইছে। ……মিনিকে উদ্দেশ্য করে “ মিনি সরি। তোর খারাপ লাগছে। কিন্তু আমায় আজ বলতে হবে
……দাদাই ইটস ওকে……গলা জড়িয়ে।“ দাদাই তুমি বল। পাপা ওইখানে থাকলে নিজের জীবনের ঝুকি নিতেন কিনা আমার সন্দেহ আছে, তাই ইটস ওকে”……
“মাফ কর দে বেটা, মাফ কর দে। বহুত বুরা কিয়া তেরে সাথ বেটা”…… ওজুর মুখে কোন ভাব প্রকাশ পেল না।
……মা আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন “ কি হয়েছে ওজু, তুমি এখানে কেন এসেছ?”
……… বুঝুন, কিছু না হলে ছেলে মায়ের কাছে যেতে পারেনা। কিন্তু একটি প্রাণী ওই ৪-৫ মাস বয়েস থেকে আমাকে দেখলেই ঝাপিয়ে আসতো আমার কোলে। যখন একেবারে ছোট, বসতে পারেনা তখনো দু হাত বাড়িয়ে পা ছুড়ে মুখে হাসি, আমাকে দেখলেই, এই মিনির। যখন খুশি আবদার করত গান শুনবে, গাইতে হতো আমায়। ওই বাড়িতে আমি ছিলাম ৫ বছরের মতো এই সম্পূর্ণ সময়ে মিনি আমাকে পেলে আর কারো কাছে যেত না। এক মধুর বন্ধন তৈরি হয়েছিলো দুজনের অজান্তে। মা আমাকে কলেজে ভর্তি করে দিয়েছিলেন সাথে খেলার সব কিছু। আর আমার দাঁত উঁচু ছিল তাই দাঁতের ডাক্তার এর কাছে নিয়ে গিয়ে ক্লিপ লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এইটি আমার পরের জীবনে বিরাট উপকার হয়েছিলো।
Posts: 207
Threads: 3
Likes Received: 366 in 97 posts
Likes Given: 12
Joined: Jun 2021
Reputation:
89
•
Posts: 207
Threads: 3
Likes Received: 366 in 97 posts
Likes Given: 12
Joined: Jun 2021
Reputation:
89
যাই হোক, একটা ব্যাপার আমাকে ভীষণ আঘাত করেছিল ওই ছোট বেলায়- ওই ব্যাগেজ। ওই আনকালচারড লোক আমাকে ব্যাগেজ বলেই মায়ের সাথে কথা বলতেন। আমার অপমান হতো কিন্তু কি করতে পারে এক ৭-৮ বছরের বালক! ৯ বছর বয়েসে কালীপূজোর বাজি ফাটানো হচ্ছে। মিনি ছুটে বেড়াচ্ছে। সবার সামনে কি করে যেন মিনির ফ্রকে আগুন লেগে যায়, আমি সবার আগে এসে হাত দিয়ে সেই আগুন নেভাই। মিনির পায়ে বেশ ফোস্কা পড়ে গেছিল। মিনিকে মা আর তার স্বামী হাসপাতালে নিয়ে গেল। অনেক সময় পর বাড়ি এসে ওই আনকালচারড লোক আমার দিকে যে চোখে তাকিয়েছিল আজও আমার মনে আছে । বলতে চাইছেন যে আমি দায়ী। আমার সহ্য শক্তি ওই বয়েস থেকেই একটু বেশি। আমার ডান হাতে কবজি অবধি বড় বড় ফোস্কা,শুধু জল ভর্তি বালতিতে হাত চুবিয়েছি, কেউ খোঁজ নেয় নি। খাবার সময় বা হাতে খেতে দেখে মা “ তুমি বা হাতে খাচ্ছ কেন?” এই বলে আমার ডান হাত দেখে তক্ষুনি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করেন। কিন্তু দেরি হয়ে যাবার ফলে আমার ডান হাত ভুগিয়েছিল। প্রায় ৬ মাস কোন কিছু করতে পারিনি। সব বাঁ হাতে করতাম। বল করা, বক্সিং এ স্তান্স নেওয়া, ক্যারাটে ক্লাসেও তাই। এই করে আমি সত্যি সব্যসাচী হয়ে উঠলাম। ৬ মাস পর আমি দু হাতে সমান পারদর্শী। এইসব কিছু না, ওই বয়েসেই আমার সব থেকে অপমান বা মায়ের প্রতি অভিমান ছিল যে মা কেন প্রতিবাদ করতেন না। কেন? চেচিয়ে উঠল ওজু
………কেন মা ওকে বলেনি যে ওজু আমার ব্যাগেজ নয়, ও আমার ছেলে, প্রথম সন্তান,কেন মা বুঝতে চায় নি যে এক বালকেরও সম্মান বোধ থাকতে পারে, মন থাকতে পারে…… ওজুর চোখে জল, গলা রীতিমত চড়া। সিরাজ হাসি মুখে হাতের ইশারায় চুপ করতে বলল
……… ক্ষমা কর ওজু, ক্ষমা কর। অনেক খুজেছি তোকে অনেক। দিনের পর দিন খুজেছি, ক্ষমা কর……চুপ করে ওজু। কুন্তি আর মিনি সান্ত্বনা দিচ্ছে হাতে হাত রেখে। ঘরে শুধু এসি র মৃদু শব্দ
………বোধ হয় মা ওনাকে ভয় পেতেন অথবা ওনার ওই বিশাল সম্পদ তার জন্য।আর একটা কারন হতে পারে। আমার নাকের ওপর ওই বিশ্রী আব আর সামনের বেরিয়ে আসা দাঁত, আমাকে দেখতে খারাপ করে দিয়েছিলো। তাই মা হতে পারে মনে মনে লজ্জিত ছিলেন
………না ওজু না না। ভুল ভুল ওজু ভুল
………কিন্তু তিনি ভাবেননি যে তার ছেলের মনে কি হচ্ছে। মা তার স্বামী আর মিনি প্রতি বছর বেড়াতে যেতেন আর আমি একা একা ওই বাড়িতে থাকতাম। ওই বাড়িতে থাকাকালিন সময়ে আমি মিনি মা ওই লোকের সাথে কোথাও গেছি, মনে পড়ে না। আমি ছিলাম ওই বাড়িতে উঁচু ধরনের আশ্রিত। লেখাপড়া এই নানা কারনে ভালো লাগতনা। ফেল না করে ক্লাসে উঠতাম। ভালো লাগত ফুটবল আর ক্যারাটে। কলেজে বক্সিং শেখাত, বাড়িতে না জানিয়েই আমি রোজ লড়তাম।গান করতাম ছাদে উঠে। ১০ বছর পার হয়েছে, এক বিকালে আমি আর মিনি সামনের বাগানে খেলছি। মিনি আমার হাত ধরে জোরে ঘুরছে। মোমেনটাম বেড়ে যাচ্ছে, থামতে বললেও থামছে না, আমার আঙুল ঘামে পিছলে যাচ্ছে। প্রানপনে চেষ্টা করছি মিনিকে ধরে থাকতে, কিন্তু মিনি মনের আনন্দে আরও জোরে, দু পা তুলে ঘুরছে। হঠাৎ আঙুল ছেড়ে ছিটকে পড়ে কপাল লাগলো পাথরের সিঁড়িতে আর ফিনকি দিয়ে রক্ত। সঙ্গে সঙ্গে মিনির পাপা আর মা হাসপাতালে নিয়ে গেল। আমি বুঝতে পারছি আজ আমার কপালে কিছু ঘটবে। রাতে দুজনের ঝগড়া শুনছি “ না না ওকে এখানে রাখা চলবে না। হি ইস ইওর ব্যাগেজ। “ মা বলছেন “ জানি ও আমার ব্যাগেজ, কিন্তু তুমি বিয়ের আগেই জানতে। লুকাইনি কিছু”। মা একটু পর বেরিয়ে এসে আমাকে কঠিন ভাবে বললেন “ তুমি কাল মুন্সিজির সাথে দেহরাদুন যাবে। ওখানকার কলেজে পড়বে যতদিন খুশি, যা খুশি। কিন্তু এই বাড়িতে তুমি আর আসবে না। ছুটিতে তোমার বাবা তোমায় নিয়ে ষাবে কলকাতায়, বুঝেছ”। যখন মা বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলেন আমাকে, তখন আমি সাড়ে ১০ বছরের। আর ষাইনি, ষাবও না এমন কি মিনির বিয়ে হলেও যাব না ওই আনকালচারড লোক এর বাড়ি।
কলেজে আমার ভিতরে সব সময় রাগ আর অভিমান জমে থাকত আর সেইটা আমি উগড়ে দিতাম বক্সিং এর রিঙে। ওই বয়েসেই আমি আমার থেকে ৩-৪ বছরের বড় ছেলেদের সাথে লড়তাম।মার খেতাম প্রচুর, দিতামও প্রচুর। বক্সিং এর মাস্টার বলতেন যে আমার ভিতর এক খুনি আছে তাই রিঙে আমি ওতো আগ্রাসী। দু বছরের ভিতর কলেজের বড় বড় ছেলেরা পর্যন্ত সমীহ করে চলতো।কলেজে গানের মাস্টার খুব খুব যত্ন করে গান শেখাতেন কেননা আর কেউ ওই ক্লাসিকাল সঙ্গীতে আগ্রহী ছিল না। আমাকে আগ্রহী করেছিলেন ঠাম্মা। তবে ছেলেবেলা থেকে শুধু অপমান আর অবহেলা, তার প্রভাভ পড়ে লেখাপড়ায়। ভালো লাগত না। ছুটিতে বাবা নিয়ে যেতেন কলকাতায়। একবার বাবা এক মহিলাকে নিয়ে এসে বললেন” ওজু ইনি তোমার নতুন মা”। দেখলাম তেনার আহ্বান ও নেই বিসর্জন ও নেই। তবে একটা ব্যাপার নিয়ম মেনে মা করতেন। প্রতি বছর মিনিকে নিয়ে আসতেন ভাইফোঁটা দিতে, ৫-৬ দিন থাকতেন।সারা বছর ওই ৫-৬ দিনের জন্য অপেক্ষা করে মিনির জন্য কিছু বানাতাম। কিছুই না, একটা ছোট ফুল রাখার ঝুড়ি, অথবা পাহাড়ি মহিলাদের থেকে কেনা হার মাথায় বাধার স্কার্ফ , এইসব। আমি মিনিকে নিয়ে ঘুড়তাম ওই পাহাড়ে।মিনিও আমাকে মিস করত ওর বাড়িতে ভীষণ, বলতো আমাকে
ক্লাস ১০ এর ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে কলকাতায় এসে ছিলাম অনেকদিন।এখনও জানি না পাশ করেছি কিনা। হাসনু আর আমি বহুত ঘুরেছি, সিনেমা দেখেছি এসপ্লানেডে, খেয়েছি মোগলাই। হাসনু সব জানত কোথায় ভালো খাবার পাওয়া যায়। রয়্যাল এ খেয়েছি, মিত্র কাফে, রাধু বাবুর দোকান লেক মার্কেটে, বসন্ত কেবিন, গোল বাড়ি, সব মুখরোচক রেস্তোরাঁয়। কিন্তু আমার কপালে ভালো যা কিছু লেখা ছিল, সাথে করে নিয়ে গেছে ঠাম্মা ………বেদনার হাসি ওজুর মুখে
………… একদিন বিকালে বাড়ি ফিরেছি, এমনিতে ৭-৮ টায় ফিরি , সেইদিন ফিরেছি ৬টায়। দেখি নতুন মা সাথে এক যুবক। ঠিক বলার মতো না, এইরকম অবস্থায়। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ষাই। রাত ৯ টা নাগাধ ফিরতেই বাবা , মদ খেয়ে ছিলেন। বিশ্রী ভাবে মারলেন। নতুন মা নালিশ করেছেন যে আমি নাকি তার শ্লীলতা হানি করেছি। বাবা মারতে মারতে বের করে ব্যাগ ছুড়ে দিয়ে “ জোনাকি এক বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে”। আবারও সেই বোঝা। কিন্তু স্যার আমি ভগবানের কাছে দরখাস্ত কোনোদিন করিনি যে আমকে শঙ্কর বসু আর জোনাকির সন্তান করে পাঠাও। চোখের জল সেই শেষবার বেরিয়েছিল অপমানে। মনে মনে বললাম “ গুড বাই। আর কাউর বোঝা হয়ে বাঁচব না”। তখন ১৬ বছর ৭ মাস বয়েস। পকেটে ছিল ১৩৪ টাকা, হাওড়া ষ্টেশনে এসে প্রথম যে ট্রেন চোখে পড়ল উঠে পড়লাম। শুরু হোল আমার সমাজ বিরোধী হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ।
সেইটাই আমার জীবনে বিরাট ভুল। উচিৎ ছিল ফুলের কাছে যাওয়া, তা হলে আজ আমি টেবিলের উল্টো দিকে বসতাম
………ওজু, নমিতা ক্যানসারে মারা গেছে। তোর কাছে ক্ষমা চেয়ে গেছে। স্বীকার করেছিল মরার আগে আমার কাছে
কোন পরিবর্তন হোল না ওজুর মুখে। এখনও পর্যন্ত, ওজু একবারের জন্য জোনাকি বা শঙ্করের দিকে তাকায় নি, এমনকি তারা জড়িয়ে ধরলেও না। জলের গ্লাস নিয়ে আবারও ঢোঁক ঢোঁক করে গলায় ঢেলে
………চেকার উঠে টিকেট চাইতে যথারীতি না। ধানবাদ ষ্টেশনে নামিয়ে দিল। থানায় নিল না কি কারনে কে জানে। ষ্টেশনে থাকতে শুরু করলাম। ওখানকার কিছু ছেলের সাথে ছুটক ছাটকা মারপিট চলতো। এই করে ১৩৪ টাকা শেষ। কিন্তু আমার কোন ভয় হয়নি, জানতাম চলে যাবে। চলে ষেতেও। গাড়ি ধোয়া দু একটা, কারো গাড়ি ধরে দেওয়া। বাসের হেল্পারি , এই ভাবে মাস খানেক চলার পর একদিন ওখানকার স্ট্রিট আরচিন দের একটা গ্যাং আমাকে এট্যাক করে। ৮-৯ জন হবে। একজনের হাতে ছুরি ছিল। আমি মারলাম। হ্যাঁ ঘাবড়াবেন না, ওই ৮-৯ জনকে পেটালাম। হাপিয়ে গেছিলাম। বসে হাফ নিচ্ছি, এক বয়েসে বেশ বড় লোক এসে
………তোর নাম কি রে?
......কি মনে হোল বলে দিলাম, বাচুয়া
………যাবি আমার সাথে, জি টি রোডে এক ধাবায়
………হ্যাঁ চল্ ………নিয়ে এলো এক ধাবার মালিকের কাছে। নাম কেদার নাথ সিং। ধাবায় থাকতে হবে,গাড়ি আর বাস দাড়ালে খদ্দের ধরতে হবে , এইসব কাজ। ঠিক আছে , চলবে। এক মাস পর মাটিতে না শুয়ে এক চার পাইয়ে মানে খাটিয়া তে ঘুমালাম সেই রাতে। সত্যি বলছি আমি ওই জীবন বেশ এনজয় করতাম, ওই বোহেমিয়ান লাইফে এক রোমান্স আছে। বেশ লাগত। খাওয়া শোয়া কোন কিছুই নিয়ম মেনে করতে হয় না কিন্তু ভালো লাগত। মনে হতো হঠাৎ বড় হয়ে গেছি। যা খুশি করতে পারি। হিপিরা শুনেছি ওই “ ডোন্ট কেয়ার” জীবন কাটাত। খারাপ না ওই জীবন, এক অদ্ভুত মাদকতা আছে। তবে রোগা হয়ে গেছিলাম। দেখতে একেবারে ওই রাস্তার ছেলে। মাস তিন পর একদিন ধাবায় এক জনের কাগজে দেখলাম মা ছবি দিয়ে ৪০০০০ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে। সেইদিন থেকে মুখে গামছা বাঁধা শুরু হোল। কিছুদিন যাবার পর ভাগ্য খেলল আমার সাথে। কেদার সিং এর দুই মেয়ে মঞ্জু আর অঞ্জু। মঞ্জুদিদির বিয়ে হয়ে গেছে, ৪-৫ কিমি দূরে থাকে। অঞ্জু দিদি আমার থেকে ৪ বছরের মতো বড়। বিয়ে হয়নি, প্রেম করে আলাম বলে এক '. ছেলের সাথে আর আমি অঞ্জুদিদির বন্ধু যে চিঠি আদান প্রদান করে আলম আর অঞ্জুদিদির। কিন্তু সিংজি বিয়ে দেবে না। যাই হোক, এক বিকালে আমি চা আর সামোসা খাচ্ছি। এক গাড়ি করে ৪ জন ছেলে নামল। চা সামোসা আর কি কি নিয়ে খেতে খেতে অঞ্জুদিদিকে নিয়ে খুব বাজে বাজে কথা বলছে, ইঙ্গিত করছে ইংরাজিতে। ওরা ভাবতে পারেনি যে ওই খানে ইংরাজি জানা কেউ থাকতে পারে। আমি উঠে হাত ধুয়ে কনফ্রন্ট করি। মানতে চায়না তারপর ইংরাজিতে সুরু করলাম- ইংরাজি শুরু করতে ওরা তর্ক শুরু করে পাত্তা না দেওয়ার ভাব। মারলাম ৪ জনকে, হ্যাঁ একাই। ও আমার কাছে তখন কিছুই না। সিংজির স্ত্রী মাইজি এসে ছাড়িয়ে আমাকে খুব বকা দিয়ে
………তুই কেন মারপিট করলি?
……ওরা অঞ্জুদিদিকে নোংরা কথা বলছিল ইংরাজিতে
………তুই অঞ্জুর জন্য মারপিট করলি?
……বা আমি দিদি বলি। তাহলে আমি ভাই হলাম, ভাইয়ের কর্তব্য বোনকে রক্ষা করা
……শুরু হোল আমার সুখের সময়। ওই ঘটনার পর মাইজি আমাকে বাড়ির একজন করে নিলেন। আর এই সিংজির মতো লোক আমি আর দেখিনি। কোন নেশা নেই। এমনকি চা পর্যন্ত পেলে ভালো না পেলেও চলে। কিন্তু আছে টাকার নেশা। কয়লার চোরাকারবারি করে। কাছে গ্রামে বাড়ি আছে, সেখানে অস্ত্র মজুত করে আর চালান দেয়। বিশেষ করে ভোটের সময়। ওই ঘটনার পর আমাকে সিংজি নিজের বাড়িতে রাখল। ধাবার পিছনে এই ৫০০ গজ দূরে গ্রামে। অঞ্জুদিদির মা যত্ন শুরু করলো আর আমি অঞ্জু দিদিকে ইংরাজি শেখানো। সিংজি আমাকে ১৫-২০ দিন পর কাছের গ্রামের বাড়িতে রেখে খুলে বলল সব। আমাকে ওই চোরাই কয়লার গাড়ি চালিয়ে বা গার্ড দিয়ে নিয়ে যেতে হবে আর ওই বাড়িতে অস্ত্র মজুত থাকে, তা পাহারা দিতে হবে। ৩ মাসের মধ্যে শিখে গেলাম ট্রাক চালান আর বন্দুক চালান। ওই বাড়িতে গুলি বানাত লুকিয়ে। আমি সিংজিকে বলে প্রাকটিস শুরু করলাম গুলি চালানোর। প্রথমে এক হাতে , তারপর দু হাতে। অল্প সময়ে হয়ে উঠলো আমার নিশানা অভ্রান্ত। যখন খুশি যেখান থেকে খুশি চালাতে পারতাম নিখুঁত ভাবে। ওই খানেই সময় কাটানোর জন্য ছুরি ছুরতাম এক গাছ লক্ষ করে সারা দিন দু হাতে। এক বছরের ভিতর আমি নিজেই নিজেকে তারিফ করতাম। ভাগ্য ভালো কোনোদিন কাউকে মারতে হয়নি।
The following 13 users Like dimpuch's post:13 users Like dimpuch's post
• anirban080, asmit003, auditore035, Badmas boy, Boti babu, ddey333, indian_dada, Kallol, ppbhattadt, Prince056, samael, Uzzalass, Voboghure
Posts: 207
Threads: 3
Likes Received: 366 in 97 posts
Likes Given: 12
Joined: Jun 2021
Reputation:
89
•
Posts: 207
Threads: 3
Likes Received: 366 in 97 posts
Likes Given: 12
Joined: Jun 2021
Reputation:
89
29-09-2021, 10:33 PM
(This post was last modified: 30-09-2021, 12:16 PM by dimpuch. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
কমিশনারের ইঙ্গিতে চা দিয়ে গেছে সবাই। কে চা খেতে খেতে ওজু মিনির সাথে খুনসুটি করছে, মিনির হাত নিয়ে কুন্তির হাতে দিয়ে “ প্রনাম কর, মাথায় ঠেকা” মিনি কুন্তির হাত নিয়ে নিজের মাথায় ঠেকিয়ে চুমু খেল হাতে। হাসি মুখে কুন্তি দেখছে চুপ করে।
……তারপর ওজু
……আমার ২০ বছর বয়েসে আবার ভাগ্য খেলা খেলল। ভোট এলো। ওখান থেকে দাঁড়াল অবিনাশ বর্মা। জেতার জন্য টাকা লাগাল প্রচুর। সিংজি কে প্রচুর টাকা দিয়ে হুকুম করলো এলাকার সব ভোট চাই। ওই অবিনাশ বর্মার সাথে এসেছিলো ৩ কুখ্যাত গুন্ডা। শ্যাম, কালিয়া আর বাসদেও। ওরা সিংজির ওখানেই থাকত খেত আর ভোটের যা যা করার করত। অঞ্জু দিদি আমাকে বলেছিল “ বাচুয়া, লোকগুলো ভালো না রে, খুব বাজে”। আমি শুনে আলমদের বলেছিলাম। ভোটে অবিনাশ জিতল সিংজির জন্য। অবিনাশ চলে গেল কিন্তু এই ৩ ভাই সিংজির পিছনে পড়ল।“ সিংজি, বর্মা সাহেব তোমায় ২২ লক্ষ দিয়েছে, তুমি হিসাব দাও কি খরচ করেছ”। এই নিয়ে রোজ ঝগড়া। একদিন সন্ধ্যাবেলা সিংজি আমাকে ৩ তে প্যাকেটে দিল ২ লক্ষ করে। “ বাচুয়া তুই একটা প্যাকেট দিবি মঞ্জু কে, একটা দিবি আমার শালা চন্দন কে আর একটা দিবি আমার বোন নয়না কে। বলবি রেখে দিতে এই গুলো, এই ৩ জন চলে গেলে আমি নিয়ে আসবো।“ একজনের জন্য ১০০০ টাকার দুটো প্যাকেট। আমি সামনের দু পকেট আর পিছনের পকেটে পুরে সাইকেল নিয়ে গেলাম প্রথমে শালা চন্দনের বাড়ি। তাকে প্যাকেট দুটো গছিয়ে সাইকেল নিয়ে মজু দিদির বাড়ি যাব, দেখি পাগলের মতো ছুটে আসছে দেবিলাল, সিংজির চাকর। আমাকে দেখে কেঁদে ফেলে “ বাচুয়া পালা। ওই ৩ ভাই লোক নিয়ে এসে বাড়ি ঘিরে মারছে। সিংজিকে মেরে ফেলেছে, টাকার জন্য, পালা”।
পালাবো? না। আমি সাইকেল ঘুরিয়ে সিংজির বাড়িতে এসে দেখি সমস্ত বাড়ি ঘিরে জনা ২০ লোক বন্দুক হাতে । বাড়ি জ্বলছে দাউ দাউ করে। গরুর গলার দড়ি ছিঁড়ে গেছে বা খুলে দিয়েছে, মাঠ ভেঙে পালাচ্ছে।গুলি ছুরছে এদিক ওদিক ভয় দেখাতে। আমি বাড়ির ভিতর ঢুকে দেখি ৩ ভাই মাইজি আর অঞ্জু দিদির ইজ্জৎ লুটছে । ঝাপিয়ে পড়ব, পিছন থেকে জড়িয়ে তুলে আনল আলম আর মকবুল, আমি কিছুতেই নিজেকে ছাড়াতে পারলাম না । বাসদেও দেখতে পেয়ে গুলি ছুরছে, অঞ্জু দিদি হাত নেড়ে “ ভাগ বাচুয়া ভাগ”। গুলি আমার পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, আলম ওই অবস্থায় তুলে নিয়ে ওদের মহল্লায় লুকিয়ে রাখল।
……পাগল হ্যায় কেয়া। ওখানে তুই কি করতে পারবি, এখান থেকে রাত থাকতে পালা না হলে দাঙ্গা ফ্যাসাদ লাগবে।
…সত্যি তাই। পরেরদিন সূর্য ওঠার আগে আমি মঞ্জু দিদির বাড়ি গিয়ে টাকা দিতে সে চমকে উঠে “ বাচুয়া তুই? পালা। ৩ ভাই পুলিশ কে বলেছে যে আলম, মকবুল আর তুই বাবাকে মেরেছিস, অঞ্জু আর মার ইজ্জৎ নিয়েছিস। আমি জানি সব ঝুট। কিন্তু তুই পালা এক্ষুনি। যে কোন সময় পুলিশ এসে পড়বে” আলম আমাকে কাছের ৩ কিমি দুরের ষ্টেশনে পৌছে দিতে সাইকেলে ছোটাল। এক দূর পাল্লার ট্রেন কি কারনে দাঁড়িয়ে পড়েছে ষ্টেশন পেরিয়ে খোলা মাঠে। আমি উঠে পড়লাম। দরজা খুলবে না, শেষে ধাক্কা ধাক্কি করে ঢুকে মেঝেতে বসে পড়তে বুঝলাম রিসারভড কামরা। আমার ভাগ্য আবার খেলল।
ওই কামরায় ছিল অসীম নামে একটি ছেলে কলকাতার বউবাজার এলাকায় থাকে। একেবারে অল্প পুঁজি নিয়ে জীবনের প্রথম টুর করছে কেদার বদ্রি। সকাল হতে আমার সঙ্গে আলাপ হোল। সিগারেট খাবে লুকিয়ে তাই আমাকে গার্ড দিতে হবে, এই ভাবে আলাপ। অসীমের সাথে কথা বলতে বলতে প্যান্টের পিছনে হাত দিয়ে মনে পড়ল ২ লক্ষ টাকা আছে। মনে ভাবলাম ভগবানের দান। অসীমের সাথে ভিড়ে গেলাম।অসীমের সাথে হাত লাগালাম ষাত্রিদের খাওয়া, এটা ওটা কিনে দেওয়া এইসব । অসীম খুশি হোল একা ছিল একজন সাথি পেল। কিন্তু হরিদ্বার ষ্টেশনে কি করে পড়ে গিয়ে বাঁ পায়ের গোড়ালি ভাংল অসীমের। কেঁদে দিয়েছে অসীম, আমি ওকে বললাম, তুমি আমায় বিশ্বাস করো আর বল কি কি করতে হবে। সব ডিটেলস এ লিখে নিয়ে প্রায় ৫০ জন পার্টি নিয়ে শুরু করলাম আমার অজানা কাজ। প্রথমে অসীমকে ওখানকার সব থেকে ভালো ডাক্তারের কাছে নিয়ে এক্স রে করে পায়ে প্লাস্টার করিয়ে হোটেলে গচ্ছিত করলাম। তারপর পার্টি নিয়ে কেদার বদ্রি দেখিয়ে দেখে, খাইয়ে হরিদ্বার নিয়ে এসে আর দেরি করিনি। সকালে এসে বিকালে গাড়ী ভাড়া করে দিল্লী। তখন আমি কনফিডেন্স পেয়ে গেছি। দিল্লী, আগ্রা মথুরা বৃন্দাবন সব দেখিয়ে আবার দিল্লী ফিরে কালকা মেলে হাওড়া। কিন্তু অসীম আমাকে ছাড়ল না।ওকে আর ওর ওই মালপত্র, সাথে দুজন লোক ছিল তাদের সাহায্যে অসীমের বাড়িতে নিয়ে এলাম । অসীমের মা আর বৌ আমার যা যত্ন করেছিলেন ভুলবো না। ওর বাড়িতে প্রায় ৭-৮ মাস ছিলাম। এই ক মাসে অসীমের ওই রকম অনেক টুর করেছি । খারাপ টাকা আসতো না, নিজের টা চলে যাবে এইরকম। অসীম সুস্থ হবার পর ওর জানা এক ডাক্তারের পরামর্শে আলিপুর চিড়িয়াখানার কাছে এক হাসপাতালে প্রথমে নাকের আবের প্লাস্টিক সার্জারি। ১৫ দিন পর ওই ডাক্তারের পরামর্শে এক নাম করা দাঁতের ডাক্তার কে দিয়ে সামনের দাঁত তুলে নতুন দাঁত ইমপ্ল্যান্ট করিয়ে অর্জুন কে ভাগিয়ে ফাগুর পৃথিবীতে আগমন। খরচ হোল সেই ভগবানের দান ২ লক্ষ টাকা থেকে। তবে দাঁত খুব ভুগিয়েছিল। ব্যাথায় কয়েকদিন নাম ভুলে গেছিলাম আর ততদিনে সত্যি অর্জুনকে একেবারে ভুলে গেছি।
এর কিছুদিন পর অসীমের ক্যাটারিং ব্যাবসার সুত্রে রোহিতের সাথে পরিচয় আর পুরোপুরি সমাজ বিরোধী হয়ে ওঠা।
একটা কথা মা বাবা গব্বর সিং এদের খারাপ লাগবে কিন্তু সত্যি, মিনি ছাড়া কাউকে মিস করতাম না আর গান গাইবার সময় হাসনুকে মনে পড়ত।হাসনু আর আমি একই পণ্ডিতের কাছে গান শিখেছি, তবে আমি হাসনুর থেকে ভালো গাইতাম। বললে রেগে মারত আমায়, ভালবাসার মার। আর কোন অল্প বয়েসের মেয়ে দেখলেই এই মেয়েটিকে মনে পড়ত……হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে মিনিকে
………বাড়ি ছাড়ার পর একটা কথা বুঝেছি ভয় পেয়ে বা কেঁদে কোন লাভ নেই। কেউ পাশে দাঁড়াবে না। অসীমের মা স্ত্রী বাদে আর একজন মহিলার কথা না বললে বেইমানি হবে। রঙ্গনা ম্যাডাম। সম্পূর্ণ অপরিচিত এক যুবকের জন্য উনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সত্যিকারের উপকারি বন্ধু আমার। কুন্তি অবধি আমাকে বার বার বলেছে যে ওনার সাথে যেন বেইমানি না করি উনি আমাদের এক মাত্র শুভাকাঙ্ক্ষী। কুন্তির সাথে পরিচয় ঠিক ‘নর্মাল না এই রকমের ঘটনার’ কারনে। আর সেইদিনই ঠিক করি এই মেয়েকে ছাড়া বাঁচব না। কুন্তি চায় নি। অনেক দৌড় করিয়েছে মুখ ঝামটা দিয়েছে অপমান করেছে শেষমেশ আর কি করবে ভেবে না পেয়ে রাজি হোল।………হেঁসে উঠলো ঘরের সবাই, কুন্তি চিমটি কেটে দিল।
………জীবনে কুন্তি আসার পর ঠিক করি আমার সন্তান এই পৃথিবীতে আসবে কোন সমাজবিরোধীর সন্তান হয়ে না। একজন মাথা উঁচু করে বাঁচতে চায় এইরকমের পুরুষের সন্তান হয়ে।
……আমি আজ এখানে বন্ধি , তার জন্য যদি কেউ দায়ী হয় তাহলে তিনি আমার মা। আমি প্রানপন জড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলাম মাকে, ঠাম্মা চলে যাওয়ার পর । মা হাত ছাড়ায়নি, কিন্তু আমি যে তাকে ভীষণ ভাবে চাইছি তিনি বোঝার চেষ্টা করেন নি। আর বাবা জীবনে মদ ছাড়া কিছু ভালবাসেন বলে মনে হয়নি।
কাপড়ে মুখ ঢেকে ফুলে ফুলে উঠছেন কান্নায় জোনাকি। শঙ্কর মাথা ঝুকিয়ে বসে
……… কলকাতায় ১০ বছর আছি। রোহিতের সঙ্গ ছেড়েছি অনেক বছর হোল। একটি জিনিষ ছাড়ি নি কোনোদিন। এমনকি এই লকআপে পর্যন্ত গান গাই। ছেলেবেলা থেকে আমার মন বিক্ষিপ্ত, সবসময় রাগ, পুড়িয়ে দেয় ভিতরের সূক্ষ্ম মানবিক অনুভুতি তখন আমাকে সব থেকে শান্তি দেয় সঙ্গীত।সুর আমাকে ভুলিয়ে দেয় সব অনাঙ্খিত অনুভুতি, বাঁচিয়ে রাখে, আশ্রয় দেয় অপার শান্তির কুঞ্জে । রঙ্গনা ম্যডামের সাথে পরিচয় এই গানের সুত্রে। বন্ধু বলতে অসীম আর ধনু রোহিতের সাথে থাকত। সেইদিনের ঘটনার সময় ধনু আমায় বার বার সাবধান করছিলো। গুলি লাগার পর ধনুই আমায় প্রথম তুলে ধরে। স্যার ধনু কোথায়, ও কি বেঁচে নেই, নাকি পালিয়ে গেছে?
……কে ধনু, ধনু বলে কেউ ওখানে ছিল না তো
………সেকি, ধনু বা ধনঞ্জয়, ডান হাতে গুলি লেগেছিল, ধনু নেই?
………হ্যাঁ স্যার উনি রোহিত কে বার বার বলছিলেন আমাকে ছেড়ে দেবার জন্য। ওদের ভিতর একটু অন্যরকম……তিতলি অবাক
…… না না তোমরা ভুল করছ ওখানে আর কেউ ছিল না………কথা শেষ করে সিরাজ কমিশনারের কানে কানে কিছু কথা বলল। কমিশনার উঠে দাঁড়িয়ে
………আপাতত এই খানে শেষ। আপনারা কোর্টে যাবেন নিশ্চয়ই, সেখানে দেখা হবে
ওজু অবাক হয়ে চেয়ে মিনির হাত ধরে শক্ত করে। মিনিও হতবাক। সিরাজ
……ওজু আর কুন্তি তোমরা আমার সাথে পাশের ঘরে এসো। একজনকে আইডেনটিফাই করবে………কথা শেষ করে বাকিদের কোন সময় দিলনা। কুন্তি আর অজুকে নিয়ে পাশের দরজা দিয়ে বেরিয়ে অন্য ঘরে সূর্য নিয়ে এলো। সিরাজ পিছনে ঢুকল।
ঘরে ঢুকে ওজু জীবনের সব থেকে বড় ধাক্কা খেল। একেবারে চকচকে প্যান্ট সার্ট জুতো পড়ে ধনু হাত বাড়িয়ে
……… গুড আফটারনুন। আমি পার্থ সৎপতি, সাব ইনস্পেক্টর, স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ……ওজু পড়ে যাবে। চেয়ার ধরে সামলে নিল। কুন্তি জিভ ভেঙ্গিয়ে এগিয়ে গিয়ে পার্থ বা ধনুকে জড়িয়ে গালে চুমু দিয়ে
………আমার দাদা। আমার দাদা, তোমার শালা………অবাক হয়ে ওজু তাকিয়ে গভীর চোখে।
সূর্য এসে কাঁধে হাত দিল। সিরাজ কাছে এসে সজোরে এক চড় গালে।অজু গালে হাত দিয়ে বিস্ফোরিত চোখে সিরাজকে
………হতচ্ছাড়া আর কত জ্বালাবি তুই সবাইকে। তোকে ভালোবাসা কি অন্যায়। কলকাতায় থাকিস, একবারও মনে হয়নি ফুল আছে হাসনু আছে দেখা করি। গব্বর সিং কে না হয় বাদ দিলি……তুই কি রে ওজু, একবারও তোর আমাদের কথা মনে হয়নি। তোর ফুল রোজ একবার তোর কথা জিজ্ঞাসা করে, হাসনু আজ ধরল যে “ বাবা ওই ওজু। নাম ভাঁড়িয়ে অপারেশন করিয়ে ফাগু সেজেছে। পেটাও ওকে”। পিটাই এবার…………কুন্তি খুব খুশি কেন কে জানে
………সবাই বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে আমার সাথে। কোনোদিন ভাবতে পারিনি যে গব্বর সিং চড় মারবে । কুন্তি আজ বলছে ধনু ওর দাদা। রোম ঠিক বলেছে আমি একটা বুদ্ধু
……তুই কেন আমার কাছে এলি না ।তাহলে আজ তুই কত ওপরে উঠতে পারতিস। এখানে এই কথা বলছি তার কারন সূর্য এই সম্পূর্ণ প্লান করেছে। শোন সূর্যর কাছে।
………না আমি কিছু শুনতে চাই না। চড় খেলাম, কুন্তি এইরকম করলো, আমার কিছু শোনার দরকার নেই
………বন্ধু বস। ক্ষমা চাইছি তোর কাছে, তুই যা করেছিস একা আর কেউ পারত না। সেইদিন আমি তোকে বার বার বলেছি “ ফাগু তুই এক টিপে শেষ করতে পারিস আমি জানি” এইটি সঙ্কেত । ‘চালা গুলি এক টিপে একজনকে শেষ করবি’ সঙ্কেত ছিল এইটি। বুঝিস নি তুই। শোন ইনস্পেক্টর সাহেব কি বলেন………সিরাজ এসে জড়িয়ে ধরে “ কেন এলি না ওজু। আমরা সবাই তোকে মিস করতাম”,………অতঃপর ওজু একটু নরম হোল
………তাই বলে চড় মাড়বে গব্বর সিং? হাসনু কোথায়, ফুল? আনলে না কেন আজ?
………তুই শঙ্কর বা জোনাকির সাথে কথা বললি না কেন? জোনাকি গত ১৩-১৪ বছর প্রতি সপ্তাহে আমাকে ফোন করেছে, নিজে এসেছে তোর খোঁজে। শঙ্কর দেখা হলেই জিজ্ঞাসা করে “ সিরাজ কিছু বেরল সুরাহা” আর তুই কথা বললি না
………কলকাতায় কি মদ বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে……হেঁসে দিল সিরাজ
………শোন ওজু, স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক খুব জটিল। কি কারনে ভীষণ মিল হয় আর কি কারনে হয় না কেউ বলতে পারবে না। তুই বোম্বে চলে যাওয়ার পর শঙ্কর যে কতদিন আমার কাছে কেঁদেছে তা গুনি নি। তোর দুর্ভাগ্য শঙ্কর আর জোনাকির সমঝোতা হয়নি। সামাজিক ভাবে দুই বাড়ি থেকে যোগাযোগ করে বিয়ে হয়, কিন্তু মিল হয়নি। এর কোন ব্যাখ্যা নেই। ইনডিভিজুআলি দুজনেই খুব ভালো কিন্তু নিজেরা এডজাস্ট করতে পারে নি। যদি আমার ওপর তোর কোন টান কোনোদিন থেকে থাকে তাহলে বিশ্বাস কর না হলে , তুই সাবালক যা ভালো বুঝবি করবি।
……বাবাও মেরেছিল আর আজ গব্বর সিং মারল।আমি ফুল আর হাসনু কে বলবই……বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে ওজু।
হেঁসে দিল সিরাজ। বুকে জড়িয়ে “ একবার আগে যদি বলতিস মুখ ফুটে গব্বর”।
সূর্য এসে বসিয়ে
……শোন ওজু। ঠাণ্ডা হও। এই ঘরে যা হতে চলেছে, সারা জীবন তা বাইরের কেউ কোনোদিন যেন না জানে, প্রনিস?.... মাথা নেড়ে ‘ প্রমিস’ বলে ওজু তাকিয়ে সূর্য র দিকে
………সম্পূর্ণটা শুনলে তুমি বুঝবে এর গুরুত্ব। সিরাজ স্যার আমাকে অনেকবার বলেছেন “ চাকরি শেষ হওয়ার আগে ওজু কে খুঁজে বার করতেই হবে” এখন শোন
আজ থেকে ৮ বছর আগে পশ্চিম বাংলার কয়লা খনি অঞ্চলের এক পরিবারের মা, ছেলে আর মেয়ে ধানবাদের একটু দূরে এক মন্দিরে যায় পুজো দিতে। মেয়েটি ১২ ক্লাসে প্রথম ডিভিশনে পাশ করেছে বাংলায় ১৪৩ পেয়ে। মেয়েটি গল্প কবিতা লিখত। কলেজের ম্যাগাজিনে ছাপা হতো। তার চোখে অনেক স্বপ্ন কিন্তু সেইদিন সব শেষ হয়ে যায়। তারা ধানবাদে এক গাড়ি ভাড়া করে। দুর্ভাগ্য গাড়িটি শ্যামের। ফেরার সময় রাত হয়ে যায়। শ্যাম গাড়ি ঘুরিয়ে রাস্তা থেকে বাসদেও কে তুলে নিয়ে ফাঁকা সরু রাস্তায় মেয়েটির দাদাকে প্রচণ্ড মারে। মরে গেছে ভেবে রাস্তায় ফেলে মা আর বোন কে ওদের ডেরায় নিয়ে তিন ভাই ইজ্জৎ লোটে। ওই সময় এক বরযাত্রীর বাস ছেলেটিকে দেখে জল দিয়ে জ্ঞান ফেরায়। তারপর ছেলেটির কথামতো খুঁজে ৩ ভাইয়ের ডেরায় হানা দেয়। গুলি ছুড়তে ছুড়তে ৩ ভাই পালিয়ে যায়। মা আর ভাই বোন কে হাসপাতালে ভর্তি করে ওই লোকেরা। ৩ দিন পর মা লজ্জায় অপমানে হাসপাতালের ছাদ থেকে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। ছেলেটি বোন কে নিয়ে বাড়ি ফিরে প্রতিজ্ঞা করে ৩ ভাইকে শাস্তি না দেওয়া অবধি ভাইফোঁটা নেবে না। কিছুদিন পর আমাদের বাহিনিতে যোগ দিয়ে মণ্ডল সাহেব কে একান্ত অনুরোধ করে ওকে যেন কাজে লাগান হয়। ওর বোন ট্রমা কাটিয়ে ওঠে অনেকদিন পর। দিল্লী থেকে তখন আমাদের কাছে নির্দেশ আসে অবিনাশ বর্মার দল কে ধরার। কিন্তু এমন ভাবে যাতে কিছুতেই আর না বেরতে পারে।আমার ওপর ভার পড়ে তার রূপরেখা তৈরি করা আর প্রয়োগের।তাই ছেলেটি অবিনাশ বর্মার দলে যোগ দেয় ৭ বছর আগে আমাদের সোর্স হয়ে । কিন্তু দুর্ভাগ্য ছেলেটির প্রতিজ্ঞা শেষ হয়ে যায় পাখি দলুই এর গুলিতে। তার বন্ধু ছেলেটির প্রান বাঁচায়।
তার ২ বছর আগে ছেলেটির বোন আমাদের বাহিনিতে যোগ দেয় নিজের হাতে প্রতিশোধ নেবে বলে কনস্টেবল হয়ে। মেয়েটির হাতের টিপ অব্যর্থ। বাহিনিতে সব থেকে ভালো। আমি ঠিক করি ও প্রতিদিনের কাজে থাকবে না। রোহিতের নার্সিং হোমে কাজ করবে ৪ ঘণ্টা অর্ধেক বেতনে। অজুহাত দেবে বাবার অসুখ। আমাদের লোক এক ডাক্তারের সুত্রে রোহিতকে বলে লাগায়। মেয়েটি আমাদের খবর দিত রোহিতের আর কোন ক্রিমিনাল ভর্তি হলে আর ছাড়া পেলেই আমরা টুক করে তাকে তুলে নিতাম। দাদা গুলি খেয়ে ওই নার্সিং হোমে এসে প্রথমেই বোন কে বলে “ বোন আমি আর পারলাম না ও পারবে। তুই ওকে চোখে চোখে রাখিস। “। মেয়েটি ভীষণ হতাশ হয়ে পরে। কিন্তু সেই দিনের যে হিরো, সত্যি সে হিরোর মতন দেখতে, সুন্দর গান গায়, দারুন স্বাস্থ্য, মেয়েটির প্রেমে পরে যায় আর মেয়েটির মুখ ঝামটা, উপেক্ষা, অপমান সব কিছু সরিয়ে মেয়েটিকে প্রেম নিবেদন করে। মেয়েটি অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে সেই আহ্বান থেকে ফেরাতে পারেনি, হিরোর কাছে আত্মসমর্পণ করে। তাদের বিয়ে হয়। ভাই বোনের বাবা সেই ধানবাদের ঘটনার পর ভেঙে পরেন, আর ওঠেন নি। প্রত্যন্ত গ্রামে লুকিয়ে থাকতে চান , মেয়েটি সেইভাবে জীবন চালায়। এরপর সেই ৩ ভাইএর একে একে মৃত্যু হয়।
সেই ৩ ভাইয়ের মৃত্যুর পুজারি কে মেয়েটি কালো প্যান্ট সার্ট জুতো আর টুপি পরে কভার করত প্রতি ক্ষেত্রে আমাদের নির্দেশে। অকুস্থলে তাকে নিয়ে আসতো আবার ছেড়ে আসতো তার দাদা, বাহিনীর বুলেটে। এমনকি সেই পুজারি ক্লাব হোটেলে গান গাইতে গেলে পাছে রোহিতের লোকেরা কিছু করতে পারে মেয়েটি কভার করত। দাদা বুলেট নিয়ে অপেক্ষা করত সব সময়। তিতলিকে বাঁচানোর জন্য তোমাকে ফোন করেছিল মেয়েটি আমাদের নির্দেশে,কেননা এনকাউনটারে অবিনাশ বা রোহিত মরলে আমরা সবাই শেষ হয়ে যেতাম। ওই কাজ আর কেউ পারতনা ওজু। কেউ না। তুমি ড্রাগনের ডেরায় ঢুকে তাকে নিকেশ করেছ একা। অকল্পনীয় এচিভমেনট।
অবিনাশ বর্মা অসাধারণ ক্রিমিনাল। জীবনে শুধু একবার ভুল করেছে তিতলি কে সওদা করতে গেছিল। জানত না তিতলি তোমার বোন। আমরা কেউ জানতাম না। আমরা অনেক চেষ্টা করেও অবিনাশের বিপক্ষে এমন প্রমান বা সাক্ষী জোগাড় করতে পারিনি যাতে ওকে ধরলে আর বেরতে না পারে। অবিনাশের মতো লোকেরা সভ্যতার শত্রু। ওদের মৃত্যু সমাজের মঙ্গল তাই আমরা বাধা দিই নি।
………চুপ করে সূর্য ওজু কে “ তোমাকে আমি শুভেচ্ছা জানাই ওই কাজের জন্য। আর ভাই বোন কারা, তুমি বুঝে গেছ”
হেঁসে কাঁধে হাত রেখে
……… স্যার আপনি কিছু বলবেন………গম্ভীর গলায় ওজু
………নো চড় গব্বর সিং, আর আমার তাবিজ কোথায়? ওতে ঠাম্মা আছে……ওজু এখন অনেক সহজ
……১০০ বার মারবো, রোজ মারবো। তুই সবাইকে ঘোল খাইয়ে ছেড়েছিস। হাসনু আজ সকালে যখন শুনল যে তুই “ সাগারি মে গায়ে” গাইছিস। ও তৎক্ষণাৎ আমাকে বলল “ চাকরি ছেড়ে দাও বাবা, তুমি বুড়ো হয়ে গেছ। ক্লাসিক্যাল গান গাইছে, তৃতীয় পাণ্ডবের নামে নাম, কোমরে রুপোর তাবিজ, তাতেও তুমি বুঝলে না ও ওজু। তোমার মনে নেই মাকে ডেকে দেখাত “ ফুল, দেক দেক থাম্মা লাগিয়েছে , দেক্তে বালো লাগছে” । ওজু তুই কি পাথরের? তোর হৃদয় বলে কিছু নেই?
……… ‘তোর হৃদয় বলে কিছু নেই’ সিরাজের ভঙ্গিতে ওজু বলে উঠলো…
“ ভুল ভাল বলবে আবার চড় মারবে। ওটা “সাগারি রাইনা কে জাগে”…ভীমসেন যোশির বিখ্যাত গান, রামকেলি রাগ। হাসনু ভুল বলবে না। হাসনুর সাথে দেখা হলে আমি বলব গব্বর সিং চড় মেরেছে। আমার তাবিজ ঠাম্মার দেওয়া, পাই নি, আর কুন্তি আমার স্ত্রী, ধনু প্রিয় বন্ধু প্রান দিতে পারতাম ওর জন্য, সবাই বিশ্বাস ভঙ্গের কাজ করেছে আমার সাথে। গব্বর সিং আমাকে ব্যাবহার করেছে অবিনাশের গ্যাং কে শেষ করার জন্য। আর চড় মারছে”
Posts: 207
Threads: 3
Likes Received: 366 in 97 posts
Likes Given: 12
Joined: Jun 2021
Reputation:
89
29-09-2021, 10:35 PM
(This post was last modified: 30-09-2021, 12:24 PM by dimpuch. Edited 2 times in total. Edited 2 times in total.)
ঘরের সবাই এই কথোপকথন উপভোগ করছে। ভিতরে ভিতরে সবাই বুঝছে যে ওজু আজ প্রচণ্ড খুশি নিজের পরিচয় সবার কাছে উন্মুক্ত করে আর মিথ্যা ফাল্গুনির ছদ্মবেশের দরকার নেই
…… শোন ওজু, যদি জানতাম তুইই ওজু আমি কিছুতেই সূর্য কে পারমিশন দিতাম না তোকে ব্যাবহার করার, বুঝেছিস………ব্যাজার মুখে চেয়ে ওজু। কুন্তি সব দেখছে আর মুখ টিপে হাসছে। কুন্তি বুঝতে পারছে তার ফাগু ভিতরে ভিতরে আনন্দে ফেটে পড়ছে।
…………শোন ওজু সবাই যা কিছু করেছে সব তোমার জন্য। রোহিতরা বেঁচে থাকলে তোমাকে মারতই। তাই যা হয়েছে ভালো হয়েছে। হ্যাঁ তুমি বলতে পার আমরা মৃত্যুর পুজারিকে বাধা দিই নি কেন? কারন আমরা চেয়েছিলাম ৩ ভাই শাস্তি পাক। তোমাকে না জানিয়ে আমি প্লান সাজিয়েছি। ওজু ওই মৃত্যুর পুজারি, ৩ ভাইকে শাস্তি দেবার সময় যদি জানত যে তার প্রানপ্রিয়া তাকে কভার করছে তার কি পুজোয় ব্যাঘাত ঘটার চান্স থেকে যেত না?
“ কোথায় সে লুকিয়ে, সাপে না কাটে, বাজে পোকা থাকতে পারে। ওর আসা ঠিক হয়নি” এই ধরনের চিন্তা মাথায় আসা কি স্বাবাভিক নয়? ঠিক এই কারনেই কোন সার্জন তার আপনজনের অপারেশন করে না। ব্যাক অফ দা মাইন্ড এ এই ধরনের ভাবনা থেকে যায় তা সে যতই সাবধান হোক। তোমাকে আমি ব্যাবহার করেছি কারন তোমার থেকে ভালো আর কেউ আমার জানার মধ্যে নেই। তোমারও হিসাব মিটানোর ছিল ওদের সাথে ,তুমি কি দুঃখিত? তা তো না, তাই তো ?ওজু তুমি বলতে পার যে কেন তোমাকে সব খুলে বলছি, কেননা এখন তো সব শেষ আর এই সব প্লান আমি ছাড়া আর দুজন মাত্র জানে। তাহলে তোমায় কেন বলছি, এই প্রশ্ন মনে হতে পারে। কারন অবিনাশ বর্মার নিকেশে আমরা অভিনন্দন পেয়েছি অনেক। কিন্তু আমরা জানি তুমি না থাকলে এই কাজ সম্ভব হতো না। তাই মণ্ডল সাহেব আর আমি তোমায় আমাদের তরফে শুভেচ্ছা জানাই ……………লঘু স্বরে আবারও সূর্য
নিজের বা গালে হাত বুলিয়ে ওজু
………আমি কোনোদিন ভুলবো না যে গব্বর সিং আমায় চড় মেরেছিল………সূর্য আর সিরাজ হেঁসে ফেলল
……নতুন টাউনে সেই দিন সামার গুলি আমার পেটে লেগেছিল, কেউ নিশ্চয়ই সামা কে গুলি করেছিল। না হলে সামার গুলি মিস হয় না। সে কে?.........কুন্তি এগিয়ে এসে কানে কানে
………” মেঘের ওপর মেঘ করেছে রঙের ওপর রঙ ” কি করে একা একা তোমাকে ওখানে ছেড়ে দিতে পারি? তাই জানালা থেকে…এবার একটু হাস
………তোরা মিনিট ৫ নিজেদের ভিতর কথা বলে নে………সিরাজ আর সূর্য বেরিয়ে গেল
………ওজু ক্ষমা করবি না……… পার্থ এগিয়ে এসে হাত ধরে। ওজু তাকিয়ে থেকে ঝট করে মাথা টেনে মুখের কাছে এনে কঠিন চোখে
……শালা। তুই একটা একদম শালা, বোকাচোদা।
………কুন্তির সামনে গালাগাল দিচ্ছিস, ও ছোট বোন, আমি সম্পর্কে তোর থেকে বড় গুরু
………কুন্তি এখন আমার বৌ কিন্তু বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে “ ইসকা সাজা মিলেগি জরুর মিলেগি” , এই বোন গুলোই যতো টেনে ধরে, তাই না ধনু
………পার্থ বল, পার্থ
……ছাড় তো, ষতসব। কুন্তি কে দেখিস।সম্ভব হলে কুন্তি আর রোম কে নিয়ে ফুল আর হাসনুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিস। সম্ভব হলে বাড়ি নিয়ে যাস লুকিয়ে। কুন্তি, রোমের ওখানে যদি অসোয়াস্তি হয় ফুলের কাছে থেক। মায়ের যত্ন পাবে। বল ফুলকে গব্বর সিং আমায় চড় মেরেছে………এই প্রথম হাসল ৩ জন পরস্পরকে জড়িয়ে
কমিশনারের ঘরে সিরাজ আর সূর্য দাঁড়িয়ে, হাতের কাজ শেষ করে,
……… সূর্য, ছেলেটি কি বলল বল তো। কিছুই তো বুঝলাম না। ও কি করত আগে
………স্যার আমারও ঠিক মনে আসছে না , কি কি বলল হরবড়িয়ে, স্যার আপনি বলতে পারেন
……আমার ঘুম পাচ্ছিল তাই কিছু শুনিনি………সিরাজের উত্তর
………শোন সূর্য মণ্ডল সাহেবের ঘরে নাতি আসছে, ছেলেটিকে ধরে রেখনা। ওই স্টিলেটোতে কোন ছাপ পাওয়া যায় নি, তাই তো? আর ছুরেছিল তো সামা ওজু কে লক্ষ করে, ওজু সরে গেছে তাই সাহেব মরেছে। বাপ বেটা মরেছে পার্থর গুলিতে আর সামা আমাদের মেয়েটার গুলিতে। সোজা কেস। ষতসব, সমাজের উচ্ছিষ্ট তাদের জন্য সময় আর পয়সা নষ্ট।………অনেকদিন পর ঘর ফাটিয়ে হাসলেন সিরাজ বাকি দুজনের সাথে।
……… বলতে ভুলে গেছি, দিল্লী থেকে স্পেশাল অভিনন্দন মেসেজ এসেছে অবিনাশ শেষ হয়েছে বলে।
রাত ১১ টা বেজে গেছে। সিরাজের ঘরে বসে জোনাকি এখনও কেঁদে চলেছে। শঙ্কর একটু আগে উঠে গেছে। সিরাজ দু বার চা দিয়েছে
………একবার সিরাজ, একবার তুমি ওর মুখোমুখি বসতে দাও প্লিস। ওজু একবার মা বলে ডাকল না , তাকাল না। সবার সামনে শুনতে হোল ওজুর এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী, শুধু বলতে চাই ভুল বুঝিস না ওজু, ভুল বুঝিস না।গত ১৪ বছর তোকে খুজছি। তোর মিনিকে জিজ্ঞাসা কর। সব যায়গায় তোকে খুজি। একবার দেখা করিয়ে দাও সিরাজ , হাত জোর করে অনুরোধ করছি
………কি করছ জোনাকি। হাত জোর ফোর ছার।হাই প্রোফাইল কেস, খবর বাইরে গেলে প্রেস ছিঁড়ে খাবে, আর একটু বস দেখি কি করা যায়।
অন্ধকার আঁকড়ে ধরেছে সমস্ত লাল বাড়ি। দূরে কোথাও কুকুর দু একটা ঘেউ ঘেউ করে উঠছে মাঝে মাঝে। ঘর ঘর করে শব্দ তুলে চলে গেছে শেষ ট্রাম সাথে সাথে চার্চের ঘড়ি জানিয়ে দিয়েছে মধ্য রাত পার, বেজেছে ঘণ্টা ১২ বার। আকাশের দিকে তাকালে বুক জোড়া অগুন্তি তারা দেখতে পাওয়া যায় এই সময়। কিছু মাতাল এই নিঃশব্দের শব্দ খান খান করে ভাংছে মাঝ রাতে ফুটপাথ অদল বদল করে। লাল বাড়ি তে জেগে অতন্দ্র পুলিশ। খুব আস্তে আস্তে ওজুর সেলের সামনে সিরাজ নিয়ে এলো জোনাকিকে। সেলে অল্প আলোর বাতি। লোহার গেটের দিকে পিঠ করে ‘দ’ হয়ে শুয়ে ওজু, ফুলে ফুলে উঠছে। কাঁদছে ওজু বুকের কাছে হাঁটু মুড়ে নিঃশব্দে। নোংরা মেঝেতে বসে জোনাকি গরাদের ভিতর হাত ঢুকিয়ে ওজু কে ডাকবে, ঠিক তখনই ছিটকে এলো ওজুর কান্না---মা
………………………………………………শেষ………………………………………………………………
The following 18 users Like dimpuch's post:18 users Like dimpuch's post
• asmit003, auditore035, Badmas boy, Bangla Golpo, Bichitro, Boti babu, ddey333, indian_dada, MNHabib, ppbhattadt, Prince056, raja05, samael, Siraz, vichitra_1, Voboghure, অভিমানী হিংস্র প্রেমিক।, জীবন পিয়াসি
Posts: 207
Threads: 3
Likes Received: 366 in 97 posts
Likes Given: 12
Joined: Jun 2021
Reputation:
89
নিন কি বলবেন বলুন। দয়া করে বলুন
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(29-09-2021, 10:36 PM)dimpuch Wrote: নিন কি বলবেন বলুন। দয়া করে বলুন
মেগা আপডেট যাকে বলে , কিন্তু এখন পড়িনি ... কাল সকালে ...নাহলে হয়তো ঘুম আসবে না রাতে আজ !!
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
শুধু এটাই এখন দেখলাম যে গল্পটা সমাপ্ত করে দিয়েছেন ... বাকি কথা কাল হবে ...
•
Posts: 3,682
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
আমি পড়া শুরু করছিলাম... কিন্তু দেখি একি! এতো বিশাল আপডেট। তার উপর শেষ লেখা। এখন পড়তে বসলে ভালো ভাবে পড়া যাবে না। ঘুম পাচ্ছে। কালকে সকালে পড়বো....
❤❤❤
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
না না করেও এখনই পড়ে ফেললাম , তর সইছিলোনা ...
আগের পাড়াতে পড়িনি , কিন্তু এখন বুঝতে পারছি সবাই কেন পাগল হয়ে গেছিলো ,
ওই সবাই এর মধ্যে পিনুরাম , তুমি যে আমার , উত্তম , রৌনক , অভি এবং এনাদের মতো আরো অনেক বিখ্যাত লেখকেরাও ছিলেন
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,410 in 27,674 posts
Likes Given: 23,734
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
অনবদ্য , শুধু এই থ্রেড নয় , এই বাংলা গল্পের ফোরামটা আপনি কাঁপিয়ে দিলেন আজ ..
আমরাই সেরা , আছি এবং থাকবো ...
•
Posts: 16
Threads: 0
Likes Received: 3 in 2 posts
Likes Given: 42
Joined: Aug 2019
Reputation:
0
•
Posts: 29
Threads: 0
Likes Received: 25 in 16 posts
Likes Given: 802
Joined: Mar 2019
Reputation:
2
ওহ্ দাদা!!!! কি দিলেন!!!! মনে হল কুমিল্লার রসমালাই গোগ্রাসে গিলছি!!!❤️❤️❤️❤️
•
Posts: 541
Threads: 6
Likes Received: 1,383 in 480 posts
Likes Given: 842
Joined: Feb 2021
Reputation:
82
Osadharon.....,...........
•
Posts: 1,228
Threads: 0
Likes Received: 975 in 705 posts
Likes Given: 1,681
Joined: Jul 2020
Reputation:
66
khub sundor kore finishing touch diyechen......gr8 job done .....congrats
•
Posts: 9
Threads: 0
Likes Received: 7 in 4 posts
Likes Given: 0
Joined: May 2019
Reputation:
0
Great story.
Onek dhonnobaad Dimpuch dadar uddessye. Ei ettoboro uthpaakhir Dimer Pocher jonne.
SGP te ekhon just 4.55 am, kintu rohossyo unmochoner asahay puro update ta pore bedfordshire jachchi.
Osonkhyo dhonnobaad ebong Sadhu Sadhu......
|