Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
এই বাড়ির  ঠিক  পেছনে এখন  বিদ্যাসাগর  স্ট্রিটে ছিল বিপ্লবী পুলিন দাসের  আখড়া এখানে লাঠি খেলা শেখানো  হতো  এই বাড়িতে বিপ্লবীদের  আনাগোনা  ছিল  তাই ছিল পুলিশের  নজর ঢাকা তে অনুশীলন সমিতির দপ্তর সামলানোর পর পুলীন দাস শুধু লাঠি নয় ছোরা চালানোর শিক্ষা দিয়েছেন এখন ওখানে পৌরসভার  কমিউনিটি  হল হয়েছে 

পার্শীবাগান থেকে মিনিট খানেক  হাঁটলে যাওয়া  যায়  বিদ্যাসাগরের  বাড়ি  সে বাড়ি আজও  দাঁড়িয়ে আছে স্বমহিমায়  বাড়ির  সামনে দিয়ে আমি বহুবার  যাতায়াত  করেছি  আর ভেতরেও  বহুবার  গিয়েছি  আশি নব্বই এর দশকে এখানে গাড়ি মেরামত  করার  গ্যারাজ  ছিলসেই  সুবাদে আমি অনেক বার গিয়েছি  বাড়ি তো তীর্থ ক্ষেত্র
 
মানুষ  হয়তো বিশ্বাস  করবে না যে এই বাড়ির  সামনে দাঁড়ালে  অথবা ভেতরে গেলে আমার  একটা অদ্ভুত  অনুভূতি  হতো আমার  মনে হতো যে যেখানে আমি দাঁড়িয়ে আছি ঠিক  সেইখান দিয়ে  বিদ্যাসাগর  মশাই  যাতায়াত  করতেন  আর এখনই  বেরোবেন  ভদ্রলোক  কে নিয়ে চিরকাল  একটা ভয়  মিশ্রিত  শ্রদ্ধা  ছিল  এইখানেই  ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ  ঘোড়ার গাড়ি  করে নেমে এসে বলেছিলেনসাগর  দেখতে এলাম এইসব ভাবতে গিয়ে মন আমার  চলে যেত  কোন সুদূরে 
হঠাৎই  একদিন  নিমন্ত্রণ  পেলাম  বিয়ে উপলক্ষে  মেদিনীপুরের  বীর সিংহ  গ্রামে  চলে গিয়েছিলাম  আর দেখে এসেছিলাম মহাপুরুষের  জন্মস্থান 
সময় টা 1999  আমি তখন  বাঁধা সরকারি উকিল  হাইকোর্টের  বিভিন্ন  দপ্তরের  মামলা করতে হতো, জমি দপ্তরের  মামলার  অন্য  লোক ছিল  হঠাৎই  টেবিলে  দেখলাম  বিদ্যাসাগরের  বাড়ির  অধিগ্রহণের  মামলা  কয়েক ঘণ্টা  বাদেই  মামলা ফাইল  আনিয়ে প্রস্তুত  হয়ে নিলাম  জোর মামলা হলো দু পক্ষের  কথা শুনে জজ সাহেব  ফাইল  চেয়ে বাড়ি  নিয়ে গেলেন  পরের মামলার দিন উনি রায়  দিলেন যে অধিগ্রহণ  বৈধ  আমি জিতে গেলাম  এরপর  আপিল কোর্ট আর সুপ্রিম কোর্টে  গিয়ে  আবার  জিতেছিলাম  মামলায়  আমার  ওপর  অসম্ভব  চাপ  ছিল  সুপ্রিম কোর্টের মামলা  জিতে দিল্লি থেকে খুব  আনন্দ করে সেইদিন  বাড়ি ফিরলাম  বিদ্যাসাগরের জন্য একটা ভাল কাজ করে সেদিন  নিজেকে  খুব  ধন্য  মনে করেছিলাম জীবনে একটা ভাল কাজ তো করলাম 
বাড়ি এখন  বিদ্যাসাগর  মহিলা  কলেজের তত্ত্বাবধানে 
 
বিদ্যাসাগরের  বাড়ির  সামনেই  একসময়  ভাড়া থাকতেন  সঙ্গীত  পরিচালক  অনাদী  দস্তিদার  তার জামাই  ছিল  বিশিষ্ট  সাংবাদিক  অমিতাভ  চৌধুরী  দুজনকেই আমি দেখেছি 
বিদ্যাসাগরের  বাড়ির  ঠিক  পেছনে  ছিল  ভারতের  প্রাক্তন  অর্থ মন্ত্রী  সচিন  চৌধুরীর  বিশাল  বাড়ি  সে বাড়ি এখন  নেই  তার জায়গাতেই  দুটো নতুন  বাড়ি  হয়েছে পাশেই  ছিল একটা বিরাট  পুকুরলোকে বলত  চৌধুরী  পুকুর  সে পুকুর  এখন  বিদ্যাসাগর  সন্তরণ ক্লাব 
বাদুড় বাগান  লেনে আছে বিদ্যাসাগর  পার্ক  তারই  সামনে একসময়  একটা পুরাতন  মেস  বাড়ি  ছিল  সেই  মেস বাড়িতে  একসময়  থেকেছেন  কথা সাহিত্যিক  শরৎ  চন্দ্র  চট্টোপাধ্যায় সে বাড়ির ঠিকানা ২৭ নং বাদুড় বাগান লেন এখন সে বাড়ির জীর্ণ ভগ্ন দশা খুব বেশি দিন হয়নি মেস উঠে গেছে আর বাড়ি হাত বদল হয়েছে কালের নিয়মে এই বাড়ি ভেঙ্গে নতুন বাড়ি তৈরী হবে 
 
খোঁজ করলে এই অঞ্চলে  আরও  অনেক  বড় মানুষের  থাকার  হদিস  পাওয়া  যাবে 
বাদুড়  বাগানের  লাগোয়া  সুকিয়া  স্ট্রিট-গড়পাড় অঞ্চল  এখানেও  অনেক  ইতিহাস  উপেন্দ্র  কিশোরসুকুমারআরও পরে সত্যজিৎ  এখানে থাকতেন  ভাষাবিদ  হরিনাথ দে, ব্যায়ামাচার্য  বিষ্টু  ঘোষ, তার দাদা সাধক  যোগানন্দ  গিরি  (  Autobiography  of An Indian  Yogi  লেখক), আয়রণ  ম্যান  নীলমনি দাস পাশেই  থাকতেন  সাধু নগেন্দ্র নাথ (যাঁর নামে নগেন্দ্র মঠ) প্রবাসী পত্রিকার সম্পাদক রমানন্দ চট্টোপাধ্যায় এই অঞ্চলেই থাকতেন 
সবাইকার  কথা বলতে গেলে আমার লেখা সীমানা  ছাড়িয়ে  যাবে  তবে দুটো বিশেষ  বাড়ির কথা না বললেই নয় 
প্রথম  বাড়িটা  রমা প্রসাদ  রায়ের  যেটা লোকে জানে রামমোহনের  বাড়ি বলে  বাড়ি  তৈরি করেছিলেন  রামমোহনের কনিষ্ঠ  পুত্র  রমা প্রসাদ  তিনি আজীবন  বাড়িতে  থাকতেন  রমা প্রসাদ  ছিলেন খুব  গুণী  মানুষ সংস্কৃত  ফারসী  ভাষায়  তার ছিল  অগাধ পাণ্ডিত্য তিনি ছিলেন  ডেপুটি  কালেক্টর  তারপর  চাকরি ছেড়ে আইন  ব্যবসায়  নামেন  1862 সালে তিনি বাঙলার  লেজিসলেটিভ  কাউন্সিলের  সদস্য  নির্বাচিত  হন বছরেই  তিনি কলকাতা  হাইকোর্টের  প্রথম  ভারতীয়  বিচারপতি  হিসেবে  নিযুক্ত  হয়েছিলেন কিন্ত  কপালের  লিখন  বিলেত  থেকে warrant  এসে পৌঁছাবার  আগেই  তিনি দেহ  রাখলেন  পরের  বছর  প্রথম  ভারতীয়  বিচারপতি  হবার  সম্মান  পেলেন  শম্ভু  নাথ  পণ্ডিত  হাইকোর্টে  শম্ভু  বাবুর  বিশাল  ছবি টাঙানো  আছে কিন্তু  রমা প্রসাদ কে মানুষ  মনে রাখে নি তিনি বিদ্যাসাগরের  সঙ্গে বিধবা  বিবাহ  আন্দোলন  আরো জনহিতকর  আন্দোলনে  যুক্ত  ছিলেন  তার বাড়ির  উল্টো  দিকে একটা কানা গলি আছে ওনার  নামে 
এই বাড়ি  থেকে কৈলাস  বসু স্ট্রিট  দিয়ে একটু এগোলে পাবেন আজকের  48 নম্বর  বাড়ি  এই বাড়িতে  বিদ্যাসাগরের  আন্তরিক  প্রচেষ্টায়  অনুষ্ঠিত  হয়েছিল  প্রথম  বিধবা বিবাহ  এই বাড়ির  এক তলার  একটা ঘরে কিছুদিন  ছিলেন  অসুস্থ  মাইকেল মধুসূদন 
বাড়ির  বাম  দিকের  অংশ  পরে কিনে নেন  তখনকার  বিখ্যাত  ডাক্তার  শিবপদ  ভট্টাচার্য্য  ডাক্তার বাবুর  নাতি নাতবৌসৌমিত্র মৌ আমার  বাল্য বন্ধু  তাই  এই ঐতিহাসিক  বাড়িতে আমার  অনেক বার  যাওয়ার  সৌভাগ্য  হয়েছিল  এখন  আবার  হাতবদল  হয়েছে 
 
এই পুরো পার্শীবাগানবাদুড়  বাগানগড়পাড়সুকিয়া  স্ট্রিট  অঞ্চলে আরও  অনেক  বড় মানুষ  ছিলেন  আর এখানে  অনেক  ইতিহাস  আছে  অনেক  গুণী  মানুষ  আছেন  তারা ব্যাপারে  আরো আলোকপাত  করতে পারবেন 
আজ যদি একটা টাইম মেশিন  পেতাম  তাহলে তাতে আরোহণ  করে চলে যেতাম  সেই  হারিয়ে  যাওয়া  সোনালি  দিনে  আর চোখ সার্থক করে দেখে আসতাম  সেইসব  মহাপুরুষ দের  তা তো  আর সম্ভব নয়  তাই  দু কলম লিখে  সেইসব  হারিয়ে  যাওয়া  বরণীয়  স্মরণীয়  মানুষদের  স্মরণ  করছি 
 
সঞ্জীব মিশ্র 
পার্শীবাগান 
কলকাতা
২০/০৮/২০২১

[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
এতো রত্ন পুরো.... সংগ্রহে রাখার মতো.... কিন্তু এখানে copy করা যায় না তাই copy করতে পারলাম না.... কলকাতার ইতিহাস... মনীষীদের বাসস্থান... তাদের কলেজ.... এইসব পড়তে খুব ইচ্ছা করে আর পড়িও.... বিশেষ করে বিদ্যাসাগর মহাশয়.....

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
উত্তরণ

 
"বাবা? শেষ পর্যন্ত আমার বাবা?"
গত কয়েকদিনে এই প্রশ্নটা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে শমিকে।
যা কোনোদিন ভাবতে পারেনি, সেটাই হয়েছে ওর সাথে। ওর বাবা... ওর বাবা... ছিঃ!
ঘটনা শুরু গত সপ্তাহে। বলা নেই কওয়া নেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি এল অফিসে যাবার জন্য বেরিয়ে যাবার পর। আর ভিজে ভিজে অফিস... অফিসে তো সেন্ট্রাল এসি... সব মিলিয়ে বিকেল হবার আগেই বুঝতে পারছিল জ্বর আসছে কাড়া নাকাড়া বাজিয়ে। সঙ্গে দোসর গা -হাত- পা ব্যথা আর মাথার যন্ত্রণা। এখন তো এইসব উপসর্গ থাকা মানেই বিপদ। তাই আর রিস্ক না নিয়ে অফিস থেকে নির্ধারিত সময়ের আগেই বেরিয়ে গেছিল।
আর, ভাগ্যিস গেছিল!
তাই তো বুঝতে পারল ওর কাছে আর ওদের সমস্ত রিলেটিভদের কাছে যে মানুষটা 'দেবতার মতো'... ক্লাস এইটে মা চলে যাবার পর থেকে যে মানুষটা ওর ফে-ফি-গা, সে কিনা এমন একজন মানুষ!
বাড়িতে পৌঁছে একটানা কলিং বেল বাজাচ্ছিল ও। যাবার সময়েও বৃষ্টি, আবার আসার সময়েও তাই! বিরক্তিকর!
বেশ একটু দেরি করেই দরজা খুলেছিলেন বাবা। ওকে দেখে চমকে উঠেছিলেন। "কি রে বান্টি, এত তাড়াতাড়ি? " বলতে বলতেই শমির চোখে চোখ পড়েছিল বাবার।
"কি রে মা, তোর চোখ এত লাল কেন? জ্বর এলো নাকি?"
"বাবা... এখনও আসেনি, কিন্তু আসবে আসবে করছে। মাথাতেও প্রচন্ড ব্যথা!" কঁকিয়ে উঠেছিল ও।
"সেকি! তুই তাড়াতাড়ি চেঞ্জ কর... আমি একটু আদা চা বানাই। আগে সেটা খা... তারপর দেখছি... কিছু খেয়ে ওষুধ খাবি..." বলতে বলতে বাবা কিচেনে ঢুকে গেছিলেন। মিনতি মাসি তো সকালে রান্না করে চলে যান, বাকি টুকটাক কাজ বাবা একাই করে নেন। প্রায় আট বছরের অভ্যেস মা কে ছেড়ে থাকার! আগে তো কিচ্ছু পারতেন না। আর এখন? বাবার হাতের চা যে খেয়েছে সে আর কারো চা খাবেই না! পারফেক্ট লিকার হয় বাবার। ওর 'স্পেশাল ফ্রেন্ড' সুমন তাই বলে!
স্নান করে সূতির নাইটি টা পরে চুলটা ভাল করে মুছতে মুছতে রান্নাঘরে এলো ও। বাবা নুডলস বানাচ্ছেন ওর জন্য। ওকে দেখে বললেন "স্নান করলি আবার? অবশ্য তা ভাল... তোর মা বলতেন বৃষ্টি ভিজলে স্নান করে নিলে নাকি ঠান্ডা লাগে না! পাঁচ মিনিট দে, তোর প্রিয় চাউমিন রেডি হয়ে যাবে!"
একটু হেসেছিল শুনে শমি। তারপর ডাইনিং টেবিলে এসে বসেছিল।
এক্ষুণি আসছে ইয়াম্মি ইয়াম্মি খাবার!
টেবিলে বাবা ল্যাপটপটা খুলে রেখে গেছেন। শাট ডাউন করবে ভেবে সামনে এসেছিল শমি... আর... মিনিমাইজ করে রাখা ব্রাউজারে দেখেছিল বাবার সার্চ করা কিছু ছবি...
নগ্নিকাদের ছবি!
দু এক মুহূর্ত বিশ্বাস করতে পারে নি শমি। পরে বুঝেছিল... বাবা, ওর বাবা সার্চ করছিলেব এসব...
তাড়াতাড়ি উঠে এসেছিল ও। নিজের ঘরে ঢুকে গেছিল।
'ইয়াম্মি' খাবার বমি এনে দিয়েছিল ওর।
সেই থেকে এই এত্ত গুলো দিন... কেমন গুটিয়ে আছে ও। বাবা... এসব সার্চ করেন? কেন? ছিঃ!
আজ সুমনের সাথে দেখা করার আছে অফিসের পর। এমন কপাল, সুমনকে "চল, বিয়ে করে নিই!" বলে যে বাড়ি ছেড়ে বেরোবার সুযোগ পাবে, তাও সম্ভব না! সুমন ওর ক্লাসমেট ছিল। গ্র্যাজুয়েশানের পরে চাকরিতে জয়েন করেছে, সুমম এখন ইউ পি এস সি জন্য পড়াশোনা করছে। আর বাইশ বছর বয়সে আজকাল কে বিয়ে করে!
"এই যে মহারানি! কি ভাবছেন এত? নাকি ওই কোণের টেবিলের হ্যান্ডুটাকে ঝাড়ি মারছেন?" সুমন এসে গেছে, আর এসেই হাবিজাবি বকা শুরু করেছে।
অন্যদিন হলে রেগে যেত, কিন্তু আজ রাগ উঠল না শমির। বরং গাঢ় চোখে তাকাল একবার।
পাক্কা পনেরোদিন পরে দেখা হচ্ছে ওদের। দুজনেই এত্ত ব্যস্ত এখন। শমি জানে ওর নতুন চাকরি, সুমনের পড়াশোনা... এই দুটোই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ... তাও কাছে পেতে বড্ড ইচ্ছে করে যে...!
"কি রে, কি দেখছিস?"
"তোকে?"
"কেন? আমার কি একটা এক্সট্রা লেজ গজিয়েছে?"
"ধ্যাত! কত্তদিন পরে দেখা বলতো? "
"উউফফফ, এইসব কথা শুনলে না..."
"কি?"
"না মানে... ফাঁকা জায়গা খুঁজতে ইচ্ছে করে..."
"সুমন!" বলে কুট করে একটা রামচিমটি কাটে , সুমনের হাতে।
তারপর 'ফাঁকা জায়গা' শব্দটা মনে পড়ে... আর মনে পড়ে ওর বাবার সার্চ হিস্ট্রিটার কথা..
"কি হলো, প্রিন্সেস? কি ভাবছেন আপনি?"
"কিচ্ছু না!"
"বললেই হলো? তিনবছর ধরে ডেট করছি, ইলেভেন থেকে পড়ছি একসাথে। তোকে আমি বোন টু বোন চিনি! বল শিগগির!"
সুমনের কথা শুনে একটু থমকাল শমি।
তারপর সব বলল।
সেদিনের কথা। বাবার কথা।
আর, সার্চ আইটেমের কথা।
"ব্যাস, এইটুকু? না আরও কিছু আছে?"
"আরও কিছু মানে? আর কি বাকি আছে?"
"কাকু কি বিয়ে করেছেন? অবশ্য করলেও কিছু বলার নেই।"
"সুমন!!!" রেগে যায় শমি।
"কাম ডাউন প্রিন্সেস! দেখ, কাকিমা যখন চলে যান, তখন তুই তো অনেক ছোট?"
"ক্লাস এইট... অ্যানুয়াল পরীক্ষার দশদিন আগে..."
"হুম। মানে, আট নয় বছর হলো, তাই না? ভাব, কাকু কত্ত একা এখন.. তুই নিজের জগৎ নিয়ে বিজি থাকিস... "
"এটা কোনো এক্সকিউজ হতে পারে না, সুমন!"
"এক্সকিউজ মানে? দিজ ইজ নর্ম্যাল। মুভি হলে 'বধাই হো' দেখে আনন্দ পেতে পারিস, সাপোর্ট দেখাতে পারিস, আর কাকু কিছু সার্চ করলেই দোষ? তাও ওনার নিজের ল্যাপটপে, নিজের ব্যক্তিগত সময়ে? এটা তো তুই প্রাইভেসি লঙ্ঘন করেছিস। আর তোকে যা চিনি, তুই কাকুর থেকে নিজেকে গুটিয়েও নিয়েছিস নিশ্চয়ই এই 'দিনে? "
"হুম!"
"খুব অন্যায় করেছিস শমি! আজ কাকুর সঙ্গে ভাব করে নিবি। আর কাকুর হবু জামাইকে খাওয়া!"
"ভাগ!" কপট রাগে বলে শমি।
আজ বাবার সাথে ভাল করে গল্প করবে। এই 'দিন চুপচাপ থাকার দোষ অফিসের ঘাড়ে চাপিয়ে দেবে
সুমন তো ঠিক বলেছে। ওর যে সুমনকে কাছে পেতে ইচ্ছে করে। সেটা যেমন অন্যায় নয়, তেমনি বাবার কিছু সার্চ করাও না।
উফ! কী যে হাল্কা লাগছে শমির এখন...

[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
❤️❤️❤️মা❤️❤️❤️

ঘরের একটা কোনে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে রোহিনী।
বছর সাতের রোহিনী ,ভয়ে জড়োসড়ো, একটা নতুন অপরিচিত মানুষ হঠাৎ তাদের বাড়িতে এসে ঢুকলো।
রোহিনীর বাবার নতুন বউ। রাঙা দিদা বলেছে ,নতুন মা বলতে।
রোহিনী বলেছিলো, আন্টি বললে হয় না?
মায়ের ছবিটা চোখের সামনে এখনো ভাসছে।
মাত্র বছর খানেক হলো কিডনি অকেজো হয়ে মা চলে গেলো রোহিনীকে ছেড়ে।
রোহিনী তো ভীষণ শান্ত তবুও যে কেন বাবা রোহিনীকে সামলাতে পারছে না বলে একটা নতুন মা নিয়ে এলো কে জানে!!
এই মায়ের নাম নাকি নিবেদিতা। বেশ মিষ্টি মিষ্টি দেখতে ,ফর্সা ,রোহিনীর মত কালো নয়।
রোহিনীকে নাকি আর বাবা ভালোবাসবে না, নতুন মাকে নাকি সৎ মা বলে, সে তো রোহিনীকে খেতেও দেবে না। পাশের বাড়ির আন্টিরা বলেছে। ভীষণ ভয় করছে রোহিনীর।

সোফায় বসেই নতুন মা রোহিনীকে ডাকলো, রোহিনী জড়সড় হয়ে গিয়ে বলল, আমি তোমাকে আমার সব টেডি দিয়ে দেব, প্লিজ আমাকে মেরো না।
নতুন মা বললেন, ওসব কথা পরে হবে এখন তুমি আমাকে কি বলে ডাকবে বলো তো?
রোহিনী বললো, আন্টি বলবো না, নতুন মা বলবো,তাহলে...
কথা শেষ না হতে দিয়েই উনি রোহিনীকে কোলের কাছে বসিয়ে বললেন, ঐ যে ছবিটা দেখছো ওটা তোমার মা।
আমি তোমার একটা বন্ধু। তুমি আমাকে নিনি ডেকো, ওটা আমার ডাকনাম।
আরেকটা কথা আমি ঐ তুলোর কথা না বলা টেডি পছন্দ করি না, আমার এইরকম চোখ নাক নড়ছে, মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা টেডিই পছন্দ, আমার এটাকে চাই। বলেই রোহিনীর গলায় কাতুকুতু দিতে লাগলো।

তারমানে বাবা রোহিনী একা থাকে বলে রোহিনীর জন্য একটা বন্ধু এনেছে, সৎ মা নয়...
বন্ধ নিঃশ্বাসটা একটু একটু করে বেরিয়ে গেলো রোহিনীর।
নিনি বেশ ম্যাজিক জানে....দশ মিনিটের মধ্যেই ওর পছন্দের এগ টোস্ট বানিয়ে দিলো। রাত্রিবেলা রোহিনী ভয় পাবে বলে নিনি রোহিনীর পাশেই ঘুমোতো।
যেদিন কলেজের স্পোর্টসে রোহিনী হেরে গিয়েছিলো, খুব কাঁদছিলো, সেদিন ওর নিজের সেই চুলে ঝোটকন বাঁধা ছবিটা দেওয়া একটা কফি মগ নিনি ওকে প্রাইজ দিয়েছিলো। বলেছিলো, হেরে যাওয়া আছে বলেই না জয়ের আনন্দ আছে। তাই হেরে যাওয়াকেও সেলিব্রেট করো।
তারপর কবে যেন রোহিনী বড় হয়ে গেছে, কিন্তু নিনি কোনোদিন মা হয়নি। রোহিনী এখন কলেজের স্টুডেন্ট, নিনির সাথে একই বিছানায় শোয় না। নিনিও বাবার ঘরে ঘুমায় না, ও বাবার স্টাডির ছোট্ট ডিভানে ঘুমোয়।

মাঝে মাঝে নিনিকে মা বলে ডাকতে ইচ্ছে করে রোহিনীর কিন্তু এতো বছরের অনভ্যাসে, সংকোচ কাটিয়ে ডাকা হয়ে ওঠেনি।
রোহিনীর খুব ইচ্ছে ফিল্ম মেকিং নিয়ে পড়ার, পুনেতে গিয়ে থাকতে হবে শুনেই রোহিনীর বাবা এক বাক্যে না করে দিয়েছে। এখন একমাত্র ভরসা নিনি।
রোহিনী অপেক্ষা করছিল নিনির ঘরে, নিনি বোধহয় বাথরুমে ঢুকেছে। ভিজে কাপড়েই নিনি ঘরে ঢুকলো। রোহিনী অবাক হয়ে দেখছিল, দুধে আলতা গায়ের রঙে আকাশনীল ভিজে কাপড়টা কি অদ্ভুত ভাবে নিনির শরীরের মধ্য যৌবন ফুটিয়ে তুলেছে।
হঠাৎ রোহিনীর মনে একটা প্রশ্ন জাগলো! আচ্ছা নিনি আর বাবাকে তো কোনোদিন কোনো অন্তরঙ্গ মুহূর্তে দেখেনি সেই ছোট্ট থেকে।রোহিনীর ছোট বেলায় নিনি ঘুমোতো ওর ঘরে এখন বাবার স্টাডিতে।বাকি সময় হয় রান্না ঘর নয় ডাইনিংয়ের টিভির সামনে তাহলে নিনির সাথে কি বাবার কোনো স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নেই?
নিনির আদরের মধ্যেও এমন একটা গাম্ভীর্য আছে যেটার জন্য রোহিনী কিছুতেই প্রশ্নটা করে উঠতে পারে না।

নিনি রোহিনীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, মনের ভিতরের কথাটা মনে চেপে না রেখে বলে ফেলাই উচিত। রোহিনী লজ্জা পেয়ে বললো, আমি পুনেতে গিয়ে পড়তে চাই বাবাকে রাজি করানোর দায়িত্ব তোমার।
নিনি যেন চমকে উঠলো, অথচ এর আগে রোহিনীর খেলনার বায়না, চকলেটের বায়না, পোশাকের বায়না সবই তো বাবাকে বলে নিনিই সামলেছে, আজ কেন নিনি এতটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো?

রোহিনীর মাথায় আস্তে আস্তে সেই ছোটবেলার মতো হাত বোলাতে বোলাতে নিনি বললো, রোহিনী আমার বোধহয় এতটা অধিকার নেই। তুমি ফিল্ম মেকিং নিয়ে ডিগ্রি কোর্স করার জন্য পুনে যেতে চাও সেটাতে তো তোমার বাবার আপত্তি আছে। অন্য মায়ের মতো সন্তানের ওপর অধিকার তো আমার নেই তাই, রোহিনী অবাক হয়ে দেখছে অন্য এক নিনিকে। যে খুব কষ্ট করে কান্নাগুলোকে গলার মধ্যে গিলে নিচ্ছে। রোহিনী ,তুমি বড় হয়েছ সত্যিটা জানানোর সময় এবার এসেছে ....।
আমি ছিলাম তোমার বাবার অফিসের পি.এ। আমার সৎ মা আমাকে একটা খারাপ পাড়ায় বিক্রি করে দিচ্ছিল, সেই অবস্থায় আমি খুব বিপদে পড়ে তোমার বাবার কাছে সাহায্য চাই। উনি তোমার দেখাশোনার জন্য গভর্নেস হিসেবে আমাকে নিযুক্ত করেন কিন্তু আমরা রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করি শুধু সমাজের ভয়ে। এক বাড়িতে থাকবো কোনো পরিচয় ছাড়াই তা হয়না।
রোহিনীর এই প্রথম মনে হলো নিনি নয়, নতুন মা নয়, শুধু মা বলে ডাকা উচিত নিনিকে।
রোহিনী গলাটা জড়িয়ে ধরে মা বলে ডেকে উঠলো নিবেদিতাকে।
নিবেদিতা যেন সর্বস্ব দিয়ে আগলে ধরলো রোহিনীকে।
মায়ের ছোঁয়ায় কোথাও সৎ মায়ের স্পর্শ ছিল না। সেই তেরো বছর আগের এক রাতের কথা মনে পড়ে গেলো রোহিনীর....।

জ্বরে রোহিনীর গা পুড়ে যাচ্ছে। চোখ মেলে দেখলো একটা ঠান্ডা হাত ওর কপালে, আর দুটো রক্তিম নির্ঘুম চোখ ওর মুখের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
সেদিনও নিনির ছোঁয়াটা ঠিক আজকের মতোই ছিল তারমানে এই তেরো বছরে রোহিনী বদলেছে কিন্তু নিনি বদলায়নি একটুও। তারমানে সত্যিই সৎ মা বলে নির্দিষ্ট কোনো শব্দ হয় না। ভালোবাসা থাকলে মা হয়ে উঠতে দেরি হয়না। আর বন্ধনহীন সম্পর্ক যতই নাড়ি ছেড়া হোক সেটা দূরে যেতেও সময় লাগে না।
রোহিনীর বাবা রাধাকান্ত সরকার আজ একটু তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরে এসে দেখলেন, নিবেদিতার কোলে রোহিনী শুয়ে আছে আর নিবেদিতা ওর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে। ওকে দেখেও মা মেয়ের কারোর নিজেদের সুখানুভুতি থেকে একটুও সরতে ইচ্ছে করছে না সেটা ওদের দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রাধাকান্তর সত্যিই মাঝে মাঝে অবাক লাগে নিবেদিতাকে দেখে, সেই যে কথা দিয়েছিলো শুধুই রোহিনীর মা হবার চেষ্টা করবে বাড়ির গৃহিণী নয়, সে কথার মর্যাদা ও রেখেছে।

রোহিনী ডেকে উঠলো,বাবা!
আমার একটা অনুরোধ তোমায় রাখতে হবে। আজ থেকে তোমার বেডরুমটা মায়ের হবে, মা আর স্টাডিতে শোবে না।
নিবেদিতা রোহিনীর মুখে হাত চাপা দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করছে। রাধাকান্ত অবাক!!
রোহিনী কোনোদিন ওর সামনে দাঁড়িয়ে এভাবে কথা বলেনি, আজ হঠাৎ কি হলো?
রাধাকান্ত বললো, আমি তোমার মাকে বলিনি কোনোদিন আমার ঘরে ঢোকা তার বারণ আছে। সে যেকোনো সময় এই বাড়ির যেকোনো ঘরে যেতেই পারে, তার সে অধিকার আছে।
নিবেদিতা আবার মনে মনে প্রণাম করলো ভগবানের মত মানুষটাকে।মারা যাবার আগে নিশ্চয় স্ত্রীর পরিচয়ে তার বুকে একবার মাথা রাখবেই নিবেদিতা।

রোহিনীর পাগলামি মাত্রা ছাড়িয়েছে। নিবেদিতার কোনো কথাই সে শুনছে না আজ, কিছু বারণ করতে গেলেই বলছে তাহলে কিন্তু জলে ভিজে ঠান্ডা লাগবো। রোহিনীর জলে ভিজলেই জ্বর আসে নিবেদিতা তাই ওই ব্যাপারে খুব সাবধানে রেখেছে মেয়েকে।
গতকাল থেকে আর একবারও রোহিনী নিনি বলে ডাকেনি।
কারণে অকারণে মা বলে ডেকে চলেছে। ভালোলাগায় শিউরে উঠেছে নিবেদিতা কিন্তু রোহিনী এখন যেটা শুরু করেছে সেটা তো মানা যায় না!!
নিবেদিতার সমস্ত শাড়ি, জিনিসপত্র সব এনে বাবার আলমারিতে বাবার জামা কাপড়ের পাশে সাজিয়ে রাখছে।
লজ্জায় মরে যাচ্ছে নিবেদিতা।রাধাকান্ত বাবু মেয়ের কান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসছেন।

রাতে জোর করে নিবেদিতাকে বাবার ঘরে পাঠিয়ে দিলো রোহিনী।
ওর চোখে মুখে যেন বিশ্ব জয়ের হাসি।
নিবেদিতা ধীর পায়ে ঘরে ঢুকছে। ৪১ বছরের নিবেদিতা যেন নববধূ এতটা সংকোচে সে আর কখনো পড়েনি।
রাধাকান্ত বাবু হাত ধরে নিবেদিতাকে পাশে বসালেন, ধীরে ধীরে বললেন, একটা জীবন চালানোর জন্য স্ত্রীর থেকেও বেশি দরকার হয় একজন বন্ধুর। যে মনের কাছাকাছি থাকবে, যার সাথে সুখ দুঃখের সব কথা প্রাণ খুলে বলা যাবে, কিছু কিছু সম্পর্ক থাকে যেগুলোর হয়তো সঠিক নাম নেই কিন্তু সে না হলে সব অকেজো হয়ে যায় নিমেষে, তুমিও ঠিক তেমনই আমার কাছে। নিবেদিতা চলো আমরা বন্ধু হই আজ থেকে।
নিবেদিতা নীরবে নিজের হাতটা রাধাকান্ত বাবুর হাতের উপর আলতো করে দিয়ে নিজের সম্মতি জানালো।
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
# তুমিও_হেঁটে_দেখো_কলকাতা
 
জানেন কি?
বাগবাজারের কাছে , গিরিশ এভিনিউতে উনবিংশ শতকের বনেদী বাঙালি শ্রী গুরুপ্রসাদ বসু স্থাপণ করেছিলেন একটি রাধা-শ্যামের মন্দির। সেই মন্দির থেকেই কলকাতার সুখ্যাত একটি অঞ্চলের নাম 'শ্যামবাজার?'
আমিও জানতাম না। তাই, জেনে বড্ড ভাল লেগেছিল। আরও বেশি বেশি করে ভাল লেগেছিল কারণ এই বাড়িটিই শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের স্মৃতি বিজড়িত, তাঁর সুযোগ্য শিষ্য বলরাম বসুর বসত বাড়ি, যা বর্তমানে 'বলরাম মন্দির' নামে পরিচিত।
শোভাবাজারের দিক থেকে বাগবাজারের দিকে একটু এগোলেই এই মন্দিরটি চোখে পড়ে। দ্বিতল এই বাড়িটিতে এখনও রাধা-শ্যামের মন্দিরটি আছে। এছাড়া একটি জগন্নাথদেবের মন্দির আছে এখানে। আর আছে, মন জুড়ানো একটি মন্দির, যেখানে শ্রীরামকৃষ্ণ দেব, মা সারদা এবং স্বামী বিবেকানন্দের প্রতিকৃতি রাখা আছে। আর কী যে শান্তি সেই মন্দিরে! মনে হয়, অনন্তকাল কাটিয়ে দেওয়া যায় ওখানে। নিজেকে প্রশ্ন করা যায়, উত্তর খুঁজে বের করা যায়, আর বিশ্বাস করা যায় যে 'তিনি আছেন, তাই সব ভাল হবে'
বাড়িটির একতলায় শ্রীরামকৃষ্ণ মিশনের প্রশাসনিক কক্ষ আছে। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে একে একে তিনটি মন্দির চোখে পড়বে।
সমস্তরকম কোভিড বিধি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে পালন করা হয় এখানে। এছাড়া আরেকটি বিষয় না বললেই নয়, আমাদের শহরের আনাচ কানাচ ঘুরে দেখা আমার নেশা। বেশিরভাগ জায়গাতেই অনেকটা করে সময় কাটাই আমি। জায়গাটি বোঝার, জানার, আত্মস্থ করার চেষ্টা করি। আর, তাই, জল বা বাথরুম ব্যবহার করার দরকার পড়ে প্রায়ই। এক্ষেত্রে বলরাম মন্দির, বা সামগ্রিকভাবে যে কোনো রামকৃষ্ণ মিশনের বাথরুম অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন থাকে, খেয়াল করে দেখেছি। সবাই, বিশেষত মহিলা মাত্রই জানেন, এটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
সকাল টা থেকে ১১ টা, এবং বিকেল টে থেকে .৩০ পর্যন্ত বলরাম মন্দির খোলা থাকে।
কখনও কোনো কারণে মন চঞ্চল লাগলে, বা কিছুক্ষণের জন্য শান্ত পরিবেশ ভাল লাগলে অবশ্যই একবার আসতে পারেন এই ঐতিহাসিক এবং ঐতিহ্যপূর্ণ বাড়িটিতে। আশা করি, আমার যেমন ভাল লেগেছে, আপনাদের তেমনি ভাল লাগবে...।।

[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
[Image: 242160743-10159434095491815-6590873712374447098-n.jpg]
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
[Image: 242169316-10159434095366815-4679914166280137317-n.jpg]
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
উত্তরণ, মা, তুমিও হেঁটে দেখো কলকাতা - ধন্যবাদ তোমাদের. এইসব মনিমুক্ত আমাদের সম্মুখে নিয়ে আসার জন্য. " ঐসবের " মাঝে এইসব ছোট ছোট অসাধারণ গল্প যেন নিজ আকর্ষণ ও গুরুত্ব নিজ গুনে বয়ে নিয়ে চলেছে.
Like Reply
#তুমিও_হেঁটে_দেখো_কলকাতা
 
গত শনিবারের ঝুম বৃষ্টির দিন। ঘুম থেকে উঠেই দেখি আকাশ বাবু গোমড়া মুখ করে আছেন!
দেখে, আমার মন মেঘলা হয়ে গেল। সবে 'দিন হল, একটু ঘুরু ঘুরু করছিলাম শনিবার গুলোতে, ধ্যাত! ভাল্লাগে না!
ব্যাজার মুখে এসব ভাবছি, হঠাৎ দেখি একটু খানি 'মেঘের কোলে রোদ হেসেছে'... আর সেই দেখে, প্রায় উসেইন বোল্টের গতিতে আমিও রেডি, গন্তব্য - মানিকতলার পুলিশ মিউজিয়াম।
মানিকতলা ক্রসিং থেকে শিয়ালদার দিকে যেতে, গুনে গুনে দশ পা হাঁটলেই এই মিউজিয়াম। এটি আদতে অগ্নিপুরুষ রাজা রামমোহন রায়ের বাড়ি ছিল। প্রায় দুই হাজার স্কোয়ার ফিটের এই বাড়িটিকে তারপর কলকাতা পুলিশের মিউজিয়াম বানানো হয়েছে।
নাম ধাম লেখার পরে একপ্রস্থ স্যানিটাইজেশান এবং 'মোবাইলে ছবি তোলা যাবে না' সতর্কবার্তা শুনে, কাঁচুমাচু হয়ে ঢুকলাম। কিন্তু, ভেতরে ঢুকেই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেল! সুবিশাল হলঘরকে সময় ক্রমণি অনুযায়ী বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আর, সেই সময়কার নথিপত্র, আগ্নেয়াস্ত্র, বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণ দলিল, সংবাদপত্রের আর্টিকেল সযত্নে রাখা আছে এখানে।
গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল।
অবর্ণনীয় কষ্ট হচ্ছিল
আমাদের পূজনীয় বিপ্লবীদের ব্যবহৃত জিনিস, আগ্নেয়াস্ত্র, নথিপত্র দেখে যেমন গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল, তেমনি বিভিন্ন সংবাদপত্রে তাঁদের নামে 'লুক আউট নোটিস' দেখে, তাঁদের উদ্দেশ্য 'ডেকোয়েটস' লেখা হয়েছে দেখে চোখে জল আসছিল।
কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন বিভাগ, ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস ইত্যাদিও বিশদে বর্ণনা করা হয়েছে এখানে। এছাড়া স্বাধীনতা পরবর্তী যুগের কিছু যুগান্তকারী অপরাধের ইতিহাস এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত নথি -প্রমানাদি রাখা আছে সুন্দর ভাবে।
দোতলায় একটি ঘরে আমাদের দেশনায়ক, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের সম্পর্কিত ফাইল পত্র রয়েছে, যদিও সাধারণ মানুষের দেখার অধিকার নেই
এই মিউজিয়ামটি খোলা থাকে মঙ্গল থেকে রবিবার, সকাল এগারোটা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত। সোমবার বন্ধ থাকে। কোনো প্রবেশমূল্য নেই।
ইতিহাসে আগ্রহ থাকলে একবার অবশ্যই আসুন। একে তো এতকিছু জানার, শেখার উপাদান আছে, তারপরে স্বয়ং রাজা রামমোহনের বাড়ি। হয়ত এই বাড়ির খোলা ছাদে দাঁড়িয়েই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন মেয়েদের জন্য লড়াই করার। আমাদের জন্য লড়াই করার।
বারবার সে কথাই মনে পড়ছিল। আর, বিপ্লবীদের ব্যবহার করা দ্রব্যাদি দেখেছি... যাঁরা না থাকলে আজ আমরা থাকতাম না...
দেখে যান একবার। খুব, খুব, খুউউব ভাল লাগবেই Namaskar Heart

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
[Image: 241491171-10159412663251815-4004066238982665102-n.jpg]
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#গল্প 
ভালোবাসার জয়
✍️সুস্মিতা রায় চৌধুরী

তিতির ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছিল
সৌরভকে। সৌরভও বিনা বাক্য ব্যয়ে সই করে পাঠিয়ে দিয়েছিল প্রায় কিছুদিন হল।এবার বোধহয় হিয়ারিং এর ডেট পড়বে। 
আসলে বেশ কয়েক বছর আগে কলকাতার এক বিখ্যাত ইংলিশ মিডিয়াম কলেজের ছাত্রী, ধনী বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান, তিতির  প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গিয়েছিল  মেদিনীপুরের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা পিতৃ-মাতৃহীন নেহাৎই সাধারন একটি ছেলে সৌরভের।

একই কলেজে পড়তো দুজনে। সৌরভের বাংলায় অনার্স আর তিতিরের ইংলিশে। কলেজের নবীন বরণ উৎসবে সৌরভের কবিতা পাঠ শুনে মুগ্ধ হয়েছিল তিতির।নিজেই গিয়ে পরিচয় করেছিল সৌরভের সাথে। 

সৌরভ প্রথম প্রথম দূরে থাকার চেষ্টা করলেও তিতিরের মত এমন নিরহংকারী  ভালো মনের মেয়ের ভালোবাসা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারল না। আসলে ভালোবাসা তো করো অনুমতি নিয়ে আসে না আবার ভালোবাসা তুমি চলে যাও বললেই ভালোবাসা টা টা বাই বাই করে  চলেও যায় না। তাই প্রেম অনুরাগের সীমানা ছাড়িয়ে,  বসন্তের আবেশে,  ভরিয়ে দিলো তাদের জীবন। সেই আবেকেই সঙ্গে নিয়ে, কেটে গেল,  কলেজ এবং ইউনিভার্সিটির কয়েকটা বছর।

পোস্ট গ্রাজুয়েশন শেষ হবার কিছুদিনের মধ্যেই সৌরভ একটা কলেজে চাকরি পেয়ে গেল। তিতির অবশ্য তখনো চাকরি পায় নি।   কারন কলেজের চাকরি তিতিরের পছন্দ ছিল না।
কিন্তু এবার ঘটলো ছন্দপতন। বসন্তের আবেশ সরিয়ে,  তিতির চোখে বর্ষা নিয়ে,  সৌরভের কাছে এসে বলল

"একটা বড় সমস্যা হয়ে গেছে। বাবা তার এক বন্ধুর ছেলে, সেও হাইকোর্টের উকিল, ধনী পরিবার, উচ্চ বংশ, তার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন। সামনের এক বা দুই মাসের মধ্যেই তারা আমার বিয়ে দিতে চান।"

আসলে তিতিরের বাবা মনতোষ রায়ও হাইকোর্টের একজন নামকরা উকিল।

আমি অবশ্য বলে দিয়েছি "যে আমি এই বিয়ে করতে পারবো না,আমি শুধু  তোকে ভালোবাসি।"
"তা শুনে ওনারা কি বললেন?"
"ওনারা বদ্ধপরিকর এই সম্পর্ক কখনো মানবেন না।সমাজে ওদের একটা মান সম্মান আছে।সামান্য একজন বাংলা কলেজ টিচারের সাথে তারা কোনমতেই তাদের মেয়ের বিয়ে দিতে চান না।"

"সেটাই তো স্বাভাবিক তিতির। পুরুষের আর্থিক সামর্থ্য বিয়ের জন্য বড় কথা। তুই ওনাদের একটু বুঝিয়ে বল যদি আমাকে একটু সময় দেন তাহলে আমি একটু গুছিয়ে নিতে পারি।"

"যদি ওনারা তোকে না মানেন? আমি তোকে খুব ভালোবাসি সৌরভ,তোকে ছেড়ে থাকতে পারবো না।আসলে পরিবার সব সময় চায় প্রেমটা যেন নিজ বৃত্তে, নিজ ধর্মে, সমবিত্ত সম্পন্ন কোন ছেলের সাথেই হয়।কিন্তু সেটা কি করে সম্ভব বল?লাভ ইজ নট এ ট্যালেন্ট হান্ট,তাই না?

"তুই তো ওনাদেরকেও খুব ভালবাসিস তিতির।ওনারা তোকে কষ্ট করে মানুষ করেছেন। সম্পর্কের এ এক বড় টানাপোড়েন।"

"কষ্ট করে মানুষ করেছেন বলে আমার ভালোবাসাটা বুঝবেন না? সবকিছু কি সবসময় সমানে সমানে হয়?"

"তাও ওনাদেরতো বোঝানোর চেষ্টাটা আমাদের করতেই হবে।তেমন হলে না হয় আমি গিয়ে তোর বাবার সাথে দেখা করব। ওনাকে অনুরোধ করবো।"
"ঠিক আছে তুই না হয় একবার চেষ্টা করে দেখ।।"

এরপর একদিন সৌরভ গেল তিতিরের বাবার কাছে।অনুরোধ করলো তাকে একটু সময় দেওয়ার জন্য।উনি রাজি হলেন না। উল্টে বললেন "তুমি কি ভালোবাসার জন্য আমার সাথে যুদ্ধে নামতে চাও?"সৌরভ বলল "ভালোবাসা তো কখনো যুদ্ধ চায় না স্যার,ভালোবাসা তো ভালোবাসতেই চায়। এই আর্থ-সামাজিক বৈষম্য ভালোবাসাকে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিয়েছে যুগ যুগ ধরে।"

"বৈষম্য তো থাকবেই।সেটাই তো স্বাভাবিক।আমি এমন চালচুলোহীন, পিতৃ-মাতৃহীন ছেলের হাতে মেয়েকে দিতে পারব না।"

এবার সৌরভ হেসে বলল 
"মেয়েকে দেবেন কি স্যার? তিতিরকি একটা বস্তু নাকি?ও একজন যথেষ্ট শিক্ষিত মানুষ। আর বিয়ে তো একজন মানুষের সাথে মানুষেরই হয়।"

"আসলে তো এই ভালবাসার অন্তরালে আছে অর্থের লোভ,হাই সোসাইটিতে ওঠার চেষ্টা।আত্নসম্মানে আঘাত লেগেছিল সেদিন সৌরভের গভীর প্রত্যয়ে বলেছিল 
"ক্ষমা করবেন স্যার।আমরা একে অপরকে ভালোবেসেছি,আমরা ভালো থাকবো, একে অপরকে ভালো রাখবো।"

এরপর কয়েকজন বন্ধুর উপস্থিতিতে রেজিস্ট্রি এবং মালাবদল করে ওদের বিয়ে হয়।শহরতলীতে একটা ছোট দু কামরার ঘর ভাড়া নিয়ে শুরু হয় তাদের ভালোবাসার লাল নীল সংসার।সুখেই চলছিল তাদের যৌথযাপন।সৌরভ চেষ্টা করছিল একটু সঞ্চয় করে এবং ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে একটা ছোট ফ্ল্যাট কেনার।

একটু অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের জন্য সৌরভ একটা দুটো প্রাইভেট টিউশনি নিলো। কোন কোন দিন হাঁটতে হাঁটতে ফিরে অটোর ভাড়া বাঁচাতো। কিন্তু ফিরে এসেই তিতিরের ওই সদাহাস্যময়ী মুখটা দেখে সৌরভের সব ক্লান্তি নিমেষে উধাও হয়ে যেত।ভালোবাসা বোধ হয় এক সঞ্জীবনী সুধা কষ্টেও প্রাণ জুড়িয়ে দেয়।তিতির কোনদিনই রন্ধন পটীয়সী ছিল না।তাই প্রধান রান্নার দায়িত্বটা ছিল সৌরভেরই ওপর। সৌরভ বলতো কলমের, চাকরির পরীক্ষার যদি কোন লিঙ্গ না হয় তাহলে খুন্তিরই বা কেন হবে?

এরপর তিতির একটা এডভার্টাইজিং এজেন্সিতে চাকরি পায়। তিতিরের চাকরি পাওয়ার খবর শুনে তিতিরের বাবা-মা হাজির হন তার সাথে দেখা করতে। তিতিরও অনেকদিন পর বাবা মাকে পেয়ে খুব খুশি। তবে তিতিরকে এমন একটা ছোট ভাড়া বাড়িতে থাকতে দেখে তাদের বেশ কষ্ট হয়। 

এরপর মনোতোষ বাবু একদিন এসে  তাদেরকে বলেন"এত কষ্ট করে তোমাদের এখানে থাকার দরকার নেই।আমাদের তো একটা ফ্ল্যাট ভবানীপুরে কেনা আছে তোমরা বরং দুজনে সেখানে গিয়ে 

শুনে তিতিরের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে আনন্দে সে সৌরভের সাথে কোন আলোচনা না করেই তার বাবার কথায় সম্মত হয়ে যায়।
"কিন্তু এবার সকলকে অবাক করে দিয়ে সৌরভ বলে

"মাপ করবেন,আমরা এখনই আপনার ফ্ল্যাটে গিয়ে থাকতে পারব না। কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো আমরা নিজেরাই একটা ছোট ফ্ল্যাট  কিনতে পারব। তেমন হলে না হয়  তিতির না হয় আপনাদের বাড়িতে গিয়ে,  আপনাদের সঙ্গে দেখা করে আসবে।"

এবার মনোতোষবাবু বললেন "তার মানে তুমি আমাদের ওই ফ্ল্যাটে থাকবে না?" 
"না, কখনোই না।"
কথাটা বলেই সৌরভ ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
এবার মনোতোষবাবুও বেশ মনোক্ষুন্ন হয়েই চলে গেলেন। তিতিরের খুব খারাপ লাগলো এই ঘটনায়। এরপর থেকেই সৌরভ আর তিতিরের মধ্যে ক্রমশ দূরত্ব বাড়তে থাকলো।

এরপর তিতির একদিন সৌরভ কে বলল "আমার বাবা-মা,  আমাদের বিয়েটাকে মেনে নেয় নি বলে,  তুই কি আমার বাবা-মায়ের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছিস?  কিন্তু ভালোবেসে বিয়ে করেছি বলে, আমারও যে ইচ্ছে অনিচ্ছার দাম থাকবে না এমনটা তো নয়? আমার ইচ্ছেটাকে,  তোরও সম্মান করা উচিত।"  আসলে সৌরভ বিয়ের আগে তার বাবার বলা কথাগুলো তিতিরকে কখনো জানায়নি তাই বলল

"ঠিক আছে তোর যদি আমার সিদ্ধান্তটাকে ভুল মনে হয়, তাহলে তুই সচ্ছন্দে তোর বাবা-মার কাছে গিয়ে থাকতে পারিস। আমি কোন ভাবেই,  নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দেব না।"

এরপর ধীরে ধীরে সম্পর্কের মধ্যে এল
তিক্ততা। একদিন তিতির রাগ করে সত্যিই ব্যাগ গুছিয়ে চলে গেল নিজের বাবা-মায়ের কাছে। সৌরভ তিতিরকে একবারো আটকালো না, বোঝানোর নূন্যতম চেষ্টাও করলো না।"

খুব কষ্ট হল তিতিরের। তবে তিতিরের বাবা-মা বোধহয় এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। তারা তিতিরকে বোঝালেন 

এখনো খুব বেশি দেরি হয়নি। তুমি ভালো চাকরি করছো। সৌরভকে ডিভোর্স দিয়ে নিজের জীবনটা সুন্দর করে গুছিয়ে নাও। 

বড় বিষন্ন তিতির। সৌরভ তার অভিমানের ভাষাটা বুঝলো না।ভালোবাসা কি এমন ভাবেই ভেতরে ভেতরে পুড়িয়ে দেয়, হৃদয় ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। রাগ করে তিতির ডিভোর্সের পেপারগুলো, পাঠিয়ে দেয় এই ভেবে,  যে এবার নিশ্চয়ই সৌরভ তার কাছে আসবে। তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইবে।

কিন্তু এসবের কোন কিছুই হলো না। সৌরভ সই করে দিলো ডিভোর্স পেপারে। আসা তো দূরের কথা একবার ফোন বা মেসেজ কিছুই    করলো না।

অভিমানী মেঘে ঢেকে গেল তিতিরের, মনের ঘর। এত নিষ্ঠুর সৌরভ?

এরপর তিতির নিজেই ফোন করে সৌরভ কে বলল "সামনের রবিবার আমি যাব। আমার জিনিসপত্রগুলো নিয়ে আসবো।" 

সৌরভ বলল "ঠিক আছে আসিস,নিয়ে যাস। রবিবার বেলার দিকে একটা ছোট ব্যাগ নিয়ে তিতির এল সৌরভের কাছে। এতদিন পর সৌরভকে দেখে অনেক কষ্টে নিজের চোখের জলকে, সংবরণ করে বলল 
"তুই খুব খুশি তাই না রে? কি সুন্দর ডিভোর্স পেপারে সই করে দিলি।"

"তোকে তো অদেও আমার কিছুই নেই।শুধু আত্মসম্মানটুকু বিসর্জন দিতে পারি নি।"

"আর আমাকে খুব সহজেই বিসর্জন দিয়ে দেওয়া যায়।"

"ভালোবাসার বিসর্জন হয় না, ভালোবাসার সমাপ্তি ঘটে না।"
এবার তিতির হঠাৎ বলল "কি রান্না করছিস রে তুই,আমার খুব খিদে পেয়েছে?" 
সৌরভ বলল "ভাত আর ডিমের ঝোল।তবে ডিম কিন্তু একটাই আছে।" 

"ঠিক আছে তুই ডিমটা খাস।আমি শুধু আলু ঝোল দিয়েই খেয়ে নেব।"

কিন্তু খেয়ে যেতে গেলে তো অনেক দেরি হয়ে যাবে। তোর বাড়িতে হয়তো সবাই চিন্তা করবে।

"তাড়িয়ে দিচ্ছিস আমাকে? জানিস আমি কতদিন ভালো করে খাইনি, ঘুমোইনি।"এবার সৌরভ তিতিরের খুব কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল

কেন খাস নি,ঘুমাস নি তুই তো ভাল থাকবি বলেই গিয়েছিলি?
"তুই বুঝি খুব ভালো ছিলি?"
"জানিস তো তিতির,চোখ কাঁদে অনেক পরে,আগে কাঁদে অন্তর।তোকে ছেড়ে আমি ভালো থাকবো এটা তুই ভাবলি কি করে?"

তুই জানিস আজকের দিনটা কি? এবার সৌরভ তিতিরের কানের পাশ থেকে চুলটা সরিয়ে তিতিরের লালচে গোলাপী ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালো তারপর আস্তে করে বলল 'শুভ চুম্বন দিবস'।"
"তোর মনে আছে?"
হ্যাঁ,যা এবার ঘরে গিয়ে চেঞ্জ করে আয়। আমি টেবিলে খাবার আনছি।"
ঘরে গিয়ে তিতির অবাক হয়ে গেল। 

বিছানার উপরে রাখা আছে একটা সুন্দর টেডি। বিছানার পাশের টেবিলে রাখা আছে অনেক গুলো চকলেট।আর একটা গোলাপের তলায় রাখা আছে একটা কাগজ। সেটা তুলে পড়তে শুরু করল তিতির,সৌরভ লিখেছে

"অনন্ত বিরহ দিলেও 
আমি তোমারই থাকবো 
অনন্ত বিরহ পেলে 
আমার মনকে যাচাই করে নেব কষ্টিপাথরে, তুমি আমাকে অনন্ত বিরহ দিও 
তবুও তোমাকেই আমি ভালোবাসতে চাই নিখাদ প্রেমে।"

এবার তিতির কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে এসে ঝাপিয়ে পরল সৌরভের বুকে। সৌরভও শক্ত করে তিতিরকে জড়িয়ে ধরল ওর বুকের মধ্যে,তারপর বলল "কাঁদছিস কেন? দেখ, ভালোবাসা কেমন জিতে গেল ক্ষমতার কাছে, বিত্তের কাছে। এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। এটা তো আমার ভালোবাসার পরীক্ষা ছিল রে।" 

এবার তিতিরের চোখ গেল খাবার টেবিলের দিকে চিকেন কষা,ফ্রাইড রাইস,আলুর দম আইসক্রিম এ সবই তো তিতিরের প্রিয় খাবার।"তুই যে বললি শুধু ডিমের ঝোল আর ভাত রান্না করেছিস।এগুলো তো সবই আমার প্রিয় খাবার।তার মানে তুই সব বুঝতে পেরে গিয়েছিলি?"

"হ্যাঁ,তুই যেমন অত ছোট একটা ব্যাগ নিয়ে চলে এসেছিস তোর সব জিনিস নিয়ে যেতে। আমি কি জানি না তুই এখানে থেকে যাবি বলেই ব্যাগে শুধু তোর নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস গুলোই এনেছিস।"আমাদের ভালোবাসা জিতে গেছে তিতির।"

এমন ভাবেই ভালোবাসা জিতে যাক ধর্মের কাছে,ক্ষমতার কাছে,বিত্তের কাছে জাতিভেদের কাছে।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
প্রেমে পড়া মানে নির্ভরশীল হয়ে পড়া
তুমি যার প্রেমে পড়বে সে তোমার জগতের একটা বিরাট অংশ দখল করে নেবে
যদি কোনো কারণে সে তোমাকে ছেড়ে চলে যায় তবে সে তোমার জগতের বিরাট অংশটাও নিয়ে যাবে
তুমি হয়ে পড়বে শূণ্য জগতের বাসিন্দা ....
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
# তুমিও_হেঁটে_দেখো_কলকাতা

 
তখনও 'সেকেন্ড ওয়েভ' আসেনি আমাদের এই ভালবাসার শহরে।
করোনার ভ্রুকুটি সরিয়ে জীবন ফিরছিল স্বাভাবিক ছন্দে, মাস্ক আর স্যানিটাইজারকে সঙ্গী করেই।
তেমনি এক বৃষ্টিভেজা দিনে, আমার হাওড়ার বাড়ি থেকে বাসে করে ডালহৌসি স্কোয়ারের দিকে আসছিলাম একটা কাজে। শনিবারের দ্বিপ্রহর... বৃষ্টির ফোঁটায় ধৌত রাস্তা...আর হেডফোনে "আমার সারাটা দিন..." হঠাৎ কি হলো, বাস থেকে নেমে পড়লাম হাওড়া ব্রিজের কাছে এসে। চেতন ভগতের 'অ্যান ইন্ডিয়ান গার্ল' নভেলের প্রোটাগনিস্ট রাধিকা একবার নিউইয়র্কের ব্রুকলিন ব্রিজের এদিক থেকে ওদিক হেঁটে গেছিল... সেই থেকেই, দিস বেঙ্গলি গার্ল, মানে আমার ইচ্ছে করত আমাদের শহরের অন্যতম আইকন, এই হাওড়া ব্রিজের একদিক থেকে অন্যদিকে হাঁটার। আর ঠিক সেই সুযোগটাই পেয়ে গেছিলাম সেদিন।
বিশ্বাস করুন, ওই মিনিট পনেরো, আমার বড্ড ভাল কেটেছিল। ব্যস্ত পথচারী, ফুটপাথের বিভিন্ন জিনিসের পসরা নিয়ে বসা বিক্রেতা, পাশ দিয়ে সাঁইসাঁই চলে যাওয়া বাস, ট্যাক্সি বা অন্যান্য যানবাহন, আর নদীতে ধীর লয়ে চলা নৌকা... সেই সাথে ভিজে ভিজে হাওয়া আর... মেঘমল্লারের শব্দ... মনে হচ্ছিল, অপার্থিব কোন জগতে পৌঁছে গেছি। আমাদের এত্ত চেনা, এত্ত কাছের হাওড়া ব্রিজ...অথচ.. এভাবে চেনা হয়নি কোনোদিনও...
হাঁটতে হাঁটতেই মনে পড়ে গেছিল, আমাদের প্রিয় হাওড়া ব্রিজ আসলে 'রবীন্দ্র সেতু' তাই, গঙ্গাজলে গঙ্গাপুজোর মতোই আওড়াই পংতি 'টি:
"বহু দিন 'রে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশিরবিন্দু।"
দেখবেন নাকি, এই 'শিশিরবিন্দু'কে, সময় নিয়ে নিয়ে, পায়ে হেঁটে? ভাল যে লাগবেই, আমার গ্যারান্টি Heart Heart Heart
 
 
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
[Image: 199722239-10159246322956815-239214894133826759-n.jpg]
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
*সুশোভন মাস্টার*
==========                           
জাঁদরেল লেডি Lawyer মিস গাঙ্গুলি বললেন – “Your Honour! এবার আমি আমার Client মিস প্রকৃতি মজুমদার কে Witness Box এ ডাকতে চাই। 
কোর্টের এজলাসে তখন থিক থিক করছে মানুষ – সবাই কয়েক মুহূর্ত চুপ। সবারই চোখ আটকে আছে সামনের দিকের চেয়ারে বসা জিন্স আর কুর্তি পরা তন্বী মেয়েটির দিকে। একটু যেন বেশীই সময় নিয়ে উঠে দাঁড়ালো মেয়েটি। কোর্টের ওই তিনদিক ঘেরা কাঠের বাক্সটার দিকে যেতে যেতে কত কথা মনে পরতে লাগল ওর। আজ সকালেই পাশের বাড়ির ছাদ থেকে মিলিদি বলছিল – “অ্যাই পিকু, তোদের তো কেস উঠেছে কোর্টে। আজ নাকি তোকে ডেকেছে, আর তোর ওই মাষ্টারকেও তো আজই তুলবে কোর্টে। একদম ছাড়বি না এই সব লোককে। মনের মধ্যে যা আছে আচ্ছা করে শুনিয়ে দিবি”।
মিলিদির কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ওই কাঠের বাক্সটায় উঠে দাঁড়ালো মেয়েটি।
বিচারক শান্ত নরম গলায় জিজ্ঞেস  করলেন- “মিস প্রকৃতি, আপনি আসামি সুশোভন মিত্রকে চেনেন?”
“না”- দৃঢ় আর সংক্ষেপ জবাব প্রকৃতির।
সভায় মৃদু গুঞ্জন – উঠে এলেন প্রকৃতির solicitor শ্রীমতী গাঙ্গুলি।

“মিস প্রকৃতি – ভাল করে তাকিয়ে দেখুন আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা ওই লোকটিকে আপনি চেনেন কি না”

উলটো দিকে দাঁড়ানো খোঁচা খোঁচা দাড়ি ভর্তি, অপমানে, লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে প্রকৃতি বলল – “ওই লোকটিকে আমি নিশ্চয় চিনি। ওনার নাম শ্রী সুশভন মিত্র। আমাদের সুশোভন স্যার। তবে ‘আসামি সুশোভন’ বলে আমি কাউকে চিনি না”।
“ব্যাপার একই” – বললেন Lawyer গাঙ্গুলি, “তার মানে আপনি ওনাকে চেনেন। এবার আমি আপনাকে যা যা প্রশ্ন করব, তার সঠিক উত্তর দেবেন। আমার প্রথম প্রশ্ন ---- 
হাত তুলে ইশারায় তার Lawyer কে থামতে বলল প্রকৃতি। বিচারকের দিকে ফিরে প্রশ্ন করল – “Your Honour! সকাল থেকে অনেক প্রশ্ন করেছেন আপনারা সবাইকে। আমার মা, প্রতিবেশী, কলেজের বিভিন্ন কর্মী – অনেককে। আমি কি আমার মতো করে নিজের কথা বলতে পারি? তারপর না হয় আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেবো”।

বিচারক বললেন – “অবশ্যই! আমরা তো তোমার কথাই শুনতে চাই” – আপনি থেকে তুমি তে এসে পরিবেশকে আরও সহজ করে তুলতে চাইলেন বিচারক মশাই।  “শুধু একটা কথা বল – সুশোভন বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ যে – উনি তোমাকে খারাপ ভাবে স্পর্শ করেছেন এবং শারীরিক ভাবে হেনস্থা করেছেন – যাকে আমরা “Bad Touch” বলে জানি – কথাটা সত্যি?” 

প্রকৃতি - Touch তো উনি অবশ্যই করেছেন, [থামল প্রকৃতি। সভায় গুঞ্জন বাড়ল। সুশোভন মাষ্টার একবার প্রকৃতির দিকে তাকিয়েই আবার মাথাটা আরও নিচু করে দাঁড়ালেন] আবার বলল প্রকৃতি – Touch করেছেন উনি, আর করেছেন আমাকে। তাহলে সেটা Good না Bad সেটা আমার থেকেও ভাল করে এতগুলো মানুষ বুঝে ফেলল কি করে?
শ্রীমতী গাঙ্গুলি case-এর হাল ধরবেন বলে উঠে আসছিলেন চেয়ার ছেড়ে। বিচারক তাঁকে ইঙ্গিতে বসতে বলে নিজেই প্রশ্ন শুরু করলেন। - “তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে মাষ্টার মশায়ের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তুমি মানতে চাইছ না”।

প্রকৃতি - অভিযোগ তো আমি করিনি, করেছেন আমার মা, মাকে সাহায্য করেছেন পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন আর দু-তিনটে  TV Channel.

- কি ঘটেছিল সেটা বরং তুমিই খুলে বল। [বিচারক জিজ্ঞেস করলেন] মাষ্টার মশায় কে তুমি কি ভাবে চেন? কেমন ধারনা তোমার এই মানুষটির সম্বন্ধে?

-“প্রথম দিকে অতি সাধারন বলে মনে হত। আমাদের ক্লাস নিতেন না, দেখতেও আহামরি কিছু নয়, তাই নজর দেওয়ার প্রয়োজনই পড়েনি। শুধু উঁচু ক্লাসের দাদা দিদিদের মুখে ওনার কথা খুব শুনতাম। ক্লাস নাইন-এ যখন উঠলাম, রেসাল্ট খারাপ করাতে একদিন ডেকে আমায় বললেন– “শোন! তোমার এই প্রকৃতি নামের গুরুত্ব বোঝো তো? সৃষ্টি আর ধ্বংস দুটোর ক্ষমতাই তোমার আছে। যদি ঝড় তুলতে চাও তবে এটাই সেরা সময়। একবার শুধু দাঁতে দাঁত চেপে ঝাঁপিয়ে পড়, দেখবে কোন বাঁধাই তোমার সামনে দাঁড়াতে পারবে না” – সেদিন নতুন করে চিনেছিলাম মানুষটাকে। সেদিন অন্যভাবে চিনেছিলাম নিজেকে। আত্মবিশ্বাসী লাগছিল অনেক। এতদিন তো শুধুই শুনতাম সব জায়গায় – “তোর দ্বারা কিস্যু হবে না”। বলতে বলতে গলা ধরে আসে প্রকৃতির।

বিচারক - যে ঘটনার কারণে এত তোলপাড়, সে ব্যাপারে সত্যিটা শুনতে চাই তোমার মুখ থেকে।

প্রকৃতি - সত্যিটা খুব ছোট্ট আর অতি সাধারন। এবার Inter-House Drama Competition এ আমাদের House চ্যাম্পিয়ন হয়। উনি ছিলেন আমাদের Trainer. যা হয়, জয়ের উল্লাসে ছুটে গেছিলাম ওনার কাছে। প্রণাম করলাম। উনি আশীর্বাদ করলেন। গাল টিপে দিলেন। তারপর আনন্দে সবার মতোই আমাকেও বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। পরিচ্ছন্ন পিতৃ সুলভ আলিঙ্গন। এক ফোঁটা দুরভিসন্ধি বা খারাপ চিন্তা ছিল না সেই ছোঁয়ায়। অথচ যারা এই ঘটনাটা দেখলেন তাদের চোখ বোধহয় অন্য কিছু অনুভব করেছিল। খানিক পর থেকেই গুঞ্জন শুনলাম – Back Stage-এ Bad Touch. সেই গুঞ্জন আলোড়নে পরিনত হয়ে আজ এই Court room এ এসে হাজির।

বিচারক - প্রকৃতি, তোমার কথাই আমরা সত্যি বলে মেনে নেব, কারন, প্রথমত – অভিযোগ মুলত তোমাকে ঘিরে আর দ্বিতীয়ত – যে জায়গায় ঘটনাটা ঘটে সেখানে কোন CC-TV ক্যামেরা ছিল না।

প্রকৃতি - ঠিক কথা,স্যার, এই CC-TV Camera ই আজকাল সব থেকে বড় গোয়েন্দা, সব থেকে বড় বিচারক। জানেন স্যার, আমাদের বাড়ির ছাদের চিলেকোঠার ঘরটাতেও কোন CC-TV Camera নেই, আর তাইজন্যই তো কোনও শাস্তি হল না বিল্টু মামার। আমার নিজের মামা স্যার। ক্লাস সেভেনে যখন পড়ি তখন একবার বিল্টু মামা এসে চিলেকোঠার ঘরে পড়া বোঝাবার নাম করে বেশ করে বুঝিয়ে দিয়েছিল – পুরুষের লোভী স্পর্শ কেমন হয় আর এখনকার ভাষায় কাকে বলে Bad Touch. মাকে জানালাম। সাথে সাথে ধমক খেলাম – “তোমার সবেতেই বাড়াবাড়ি। তোমার মামা বিদেশে পড়াশুনো করে। Adjust করতে না পারলে Avoid কর, কিন্তু এই নিয়ে আর কোনও কথা যেন উচ্চারণ করতে না শুনি”। ভেবে দেখুন স্যার একজন নারী তার কন্যাসন্তানের অসন্মান উপেক্ষা করছেন কেন? না যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে তার নিজের ভাই, সে আমেরিকা থেকে এসেছে, তার বিরুদ্ধে কি কিছু বলা যায়? না উচিৎ? স্যার, আজ আমি ক্লাস ইলেভেনে। এই চার বছরেও কিন্তু আমাদের বাড়িতে CC-TV বসেনি। আজও কিন্তু বিল্টু মামা নিয়ম করে বছরে দুবার আমাদের বাড়ি বেড়াতে আসেন। প্রচুর আমোদ আলহাদ হয়। কিন্তু ওই যে দাঁড়িয়ে আছে লোকটা (সুশোভন মাস্টারের দিকে আঙ্গুল দেখায়), বিচারের রায় যেমনই হোক, তার কিন্তু কলেজে আসা চিরকালের মতো ঘুচে গেল।
স্যার! আমার বাবার অফিসের করিডরেও কোনো CC-TV নেই। তাই বাবার অফিসের Boss পরেশ কাকু যখন তাদের Annual Programme এ  আমার নাচের প্রশংসা করতে করতে আমার সারা গায়ে হাত বোলাচ্ছিলেন, তখন পাশে দাঁড়িয়ে বাবা অন্যদিকে তাকিয়েছিলেন। আহা! বড়বাবু বলে কথা। পরেশ কাকু কিন্তু প্রায় রোববারই আমাদের বাড়ি আসেন। লুচি-তরকারি খান। অথচ সুশোভন মাষ্টারকে কলেজ কিন্তু আর রাখবে না।
স্যার! আজকাল কলেজে ক্লাসে ক্লাসে যখন Good Touch/Bad Touch কি তা বোঝানো হয়, তখন মেয়েরা মুখে হাত রেখে হাসি চাপার চেষ্টা করে। আচ্ছা বলুন তো, এই বিল্টু মামা, পরেশ কাকুদের স্পর্শ বুঝতে আমাদের বই থেকে কায়দা শিখতে হবে? এটা হাস্যকর নয় আমাদের মেয়েদের কাছে? 

বিচারক - বেশ, আমার তাহলে তোমার বক্তব্যকেই বিশ্লেষণ করে তোমাকে শেষ প্রশ্ন করছি – খুব সংক্ষেপে বল – তোমার বিচারে সুশোভন মাষ্টার কি অপরাধী?

প্রকৃতি - বাবা মায়ের ভালবাসা আর সময়ের অভাবে আমরা যখন দিশেহারা, তখন ছাত্রছাত্রীদের বন্ধু হয়ে ওঠা যদি অপরাধ হয় তবে উনি অপরাধী, আর বিলটু মামা, পরেশ কাকুদের মতো, বিলেত ফেরত বা অফিসের Boss না হয়ে সাধারন নিরীহ শিক্ষক হওয়াটা যদি অপরাধ হয়, তাহলেও উনি অপরাধী। Teacher হয়ে উনি যখন উনি জন্মেছেন তখন অপরাধী হওয়ার একচেটিয়া অধিকার তো ওনারই।
পরীক্ষায় প্রশ্ন Common না এলে Teacher অপরাধী, Result খারাপ হলে Teacher অপরাধী, ক্লাসে মারামারি হলে Teacher অপরাধি। মিডিয়া প্রচার করে – কলেজে দুষ্টু লোকেরা থাকে। বাবা মায়েদের দাবির জোরে আমাদের কলেজে 75টা CC-TV Camera. এবার খেলার মাঠে গাছের ডালেও Camera বসানো হবে। আচরণ দেখলেই মনে হয় – যেন কলেজের বাইরেটা পবিত্রতায় ভরা আর ভেতরেই যত দুষ্টু লোকদের আনাগনা। বাড়িতে শেখানো হয় শিক্ষকরা বাবা-মায়ের মতো। অথচ ওই লোকটাকে দেখুন কেমন হাত পা বাঁধা। বাবার মতো শাসন করতে গেলেও মুশকিল, বাবার মতো ভালবাসতে গেলেও বদনাম।
Sir, আপনি আপনার ছাত্রজীবনে কতজন শিক্ষককে আসামীর কাঠগড়ায় উঠতে দেখেছেন বা শুনেছেন স্যর? তাঁরা কি রাতারাতি সবাই বদলে যাচ্ছেন? সবাই “দুষ্টু লোক” হয়ে পড়ছেন? সারা বছর ধরে আমাদের বাবা-মায়েরা হোম-ওয়ার্ক কপি থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে টিচার এর ভুল ধরেন, আর 4Th September আমাদের Gift কিনে দেন পরের দিন Teachers’ Day বলে। আসলে আমরা পিছিয়ে পড়ছি স্যর। রাজা রামমোহন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নারীদের যে উচ্চতায় তুলে এনেছিলেন, আমরা আইনের অপব্যবহার করে করে নিজেদেরকে সেই সম্মানের আসন থেকে নামিয়ে আনছি দিনে দিনে। অবাক হবেন না স্যর – যদি আজ থেকে কয়েক বছর পর আপনি এই এজলাসেই আবারও কোন “সতীদাহ”র মামলা পেয়ে যান। সেই দিন আবার ফিরে আসতে খুব বেশি দেরি নেই হয়ত।

বিচারক এতক্ষন অপলক দৃষ্টিতে প্রকৃতির কথা শুনছিলেন। কয়েকটা নিয়মমাফিক কাজকর্মের পর তিনি রায় ঘোষণা করলেন। নির্দোষ প্রমান হলেন সুশোভন মাস্টার। তাঁর বুক হাল্কা করে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। রুমাল দিয়ে চোখ মুছলেন তিনি। বিজয়িনীর গর্বে প্রকৃতি এগিয়ে গেল তাঁর দিকে। পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করল। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন সুশোভন বাবু। 
“আশির্বাদ করলেন না স্যর!” – প্রশ্ন করল প্রকৃতি। আরও জড়সড় হয়ে খালি হাতটা যেন কোথাও লুকিয়ে ফেলতে চাইছেন মাস্টার-মশাই। তারপর কাঁপা কাঁপা ধরা গলায় বললেন – “ভয় করে রে মা! সবই তো বুঝিস, আবার যদি Bad Touch হয়ে যায়!”
[+] 4 users Like ddey333's post
Like Reply
দাদা আজ আবার সত্যি সত্যি কাঁদিয়ে দিলো .... Namaskar
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
Dada of India ❤❤❤❤❤❤❤❤
কি অসাধারণ একটা লেখা আমাদের মাঝে নিয়ে এলেন ❤
অনেকদিন পর এমন একটা লেখা পড়লাম যেটা বুকের বাঁ দিকে ধাক্কা দিলো.

আসলে কি বলুন তো আমরা.. So called human শ্রেষ্ট প্রাণী.... যেকোনো আদর্শ, বাণী বা শিক্ষার ঠিক ঐটুকু অংশই মনে রাখি বা মেনে চলি যাতে আমাদের লাভ আছে আমাদের ভালো লুকিয়ে আছে.... যেমন এই গল্পের এক মা কালা হয়ে গেলো সঠিক সময় আর এক বাবা অন্ধ..... এরাও গুরুজন..... বাহ্.

আর আসল মানুষটা যার মধ্যে আজও মনুষত্ব বর্তমান সে এতবড়ো ধাক্কা খেলো যে একটা ভয়ানক ভয় ঢুকে গেলো তার মধ্যে. শেষে নিজের ছাত্রীকে আশীর্বাদ করতেও......!!!

প্রকৃত নারী বা প্রকৃত শক্তি হলো প্রকৃতির মতন নারী যারা নারীত্বকে বোঝে, বোঝে মনুষত্ব কি? ভালোবাসা ও নোংরামির তফাৎ বুঝে জবাব দিতে জানে, নিজের গুরুকে মন থেকে শ্রদ্ধা করতে যেমন জানে তেমনি বিপদে তাকে সাহায্য করতেও পিছপা হয়না. পুরুষ আর নারীর এই নামহীন, স্বার্থহীন সম্পর্ক যদি সত্যিই সৎ হয় তবে তার থেকে পবিত্র আর কিছু হতে পারেনা. এক শিশু যতটা পবিত্র ঠিক ততটাই ❤

লেখক কে salute ❤
[Image: 20240716-212831.jpg]
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
পড়তে হচ্ছে তো এটা তাহলে.... কালকে পড়বো। বেশ কয়েকটা গল্প বেছে রেখেছি কালকে পড়ার জন্য...

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
আমার দুর্গাl
***********

কলেজের বড় দিদিমনির ঘরের সামনে রাখা বেঞ্চিতে বসে ঘামছিলেন বীরেন বাবু। সাড়ে দশটা বাজে। এখান থেকে এগারো টার মধ্যে বেরোলে তবে সাড়ে এগারো টার মধ্যে দোকানে পৌঁছতে পারবেন উনি। আজ ষষ্ঠী।  অনেক ছোটখাট কোম্পানীতে আজ ই বোনাসের দিন। আর, বোনাস পেয়ে অনেকে এই দিনেই কেনাকাটা করতে আসেন। তাই মালিক বারবার বলে দিয়েছেন আজ বারোটা বাজার আগে ওনাকে পৌঁছনোর জন্য। আর, আজকালের মধ্যে যা শাড়ি বা অন্য জিনিষ বিক্রি হবে, তার ওপর ই নির্ভর করবে বীরেন বাবু আর সারদাময়ী বস্ত্রালয়ের বাকি স্টাফদের পুজোর বোনাস। আজকের দিন টা তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ।  কিন্ত কাল মেয়ে যখন বলল আজ কলেজ ছুটি পড়ে যাবার দিনে কলেজের বড় দিদিমণি ওনাকে কলেজে ডেকেছেন,  তখন থেকেই খুব ভয় লাগছে ওনার। এমনি তে মাম্পি খুব একটা দুষ্টু না, বরং লক্ষী মেয়েই বলা যায়। মা মরা মেয়ে, নিজের খেয়ালেই থাকে বেশিরভাগ।  সেই মেয়ে কোন অন্যায় করেছে কি? ভেবে ভেবে রাতে ভাল ঘুম হয়নি বীরেন বাবুর। আজ সকালে, মেয়েকে সাইকেলে করে কলেজে দিতে আসার সময়ও জিজ্ঞেস করেছিলেন 'কিরে মাম্পি, আমাকে দিদিমণি ডাকলেন কেন? তুই কি করেছিস'?'
'আমি কিছু করিনি বাবা। সত্যি বলছি। ' জোর গলায় বলেছে মেয়ে। 
ঘড়িটা খারাপ হয়ে গেছে, ব্যাটারি লাগানো যায় নি। পকেট থেকে সাদা কালো মোবাইল টা বের করতে যাবেন,  এমন সময় বড়দিদিমনি সামনে এলেন। 
'আপনি কি ক্লাস ফাইভের দুহিতার বাবা?'
'আ...আজ্ঞে ম্যাডাম, ইয়ে দিদিমণি। '
'আসুন,  প্লিজ' স্মিত মুখে হেসে বললেন উনি। 
বেশ বড় ঘর। সেক্রেটারিয়েট টেবিলের এক কোনে টেলিফোন।  নানারকম কাগজপত্তর রাখা গুছিয়ে। 
'বসুন। আপনি কি জানেন আজ কেন ডাকা হয়েছে আপনাকে?'
'না...মাম্পি, দুহিতা কি কোনো অন্যায় করেছে?'
'না। সেরকম কিছু না। আমাদের বাংলার দিদিমণি ক্লাস ফাইভের 'দুর্গার' ওপর একটা রচনা লিখতে দিয়েছেলেন কদিন আগে। আপনার মেয়ের লেখাটা পড়ানোর জন্য আপনাকে ডেকেছি।'
'ও কি ভুল কিছু লিখেছে দিদিমণি?  আসলে...' 
'আরে, দেখুন ই না আপনি...'

কাঁপা কাঁপা হাতে ফুলস্কেপ কাগজ টা নিয়ে দেখেন মাম্পির গোল ছাঁদের হাতের লেখা। বারবার বলা সত্ত্বেও মার্জিন ছাড়েনি মেয়েটা। ভুরুটা একটু কুঁচকে পড়তে শুরু করলেন বীরেন বাবু

" দুর্গা"

দুর্গা আমাদের প্রিয় ঠাকুর। শরৎকালে দুর্গা পুজো হয়। মা দুর্গার দশটি হাত আছে। মা দুর্গার বাহন সিংহ।' এই পর্যন্ত পড়ে অবাক হয়ে দিদিমণির দিকে তাকান বীরেন বাবু। 
'পুরোটা পড়ুন'
'আমার বাবা বলেন, ঠাকুরকে ভালবাসলে চোখ বন্ধ করলেই দেখা যায়। আমি দুর্গা ঠাকুরকে খুব ভালবাসি। কিন্তু আমি চোখ বুজে মনে মনে ভাবলে দুর্গা ঠাকুরকে দেখতে পাই না।
আমার বাবাকে দেখতে পাই। 
আমার বাবার দশটা হাত নেই। মাত্র দুটো হাত। বাবার সিংহ নেই, একটা সাইকেল আছে। কিন্তু সেই সাইকেলে চড়ে কাকভোরে উঠে বাবা বাড়িতে বাড়িতে খবরের কাগজ বিলি করেন। তারপর বাড়ি ফিরে আমাকে কলেজে পৌঁছে দেন। তারপর নিজে কাজে বেড়িয়ে যান। বাবা গড়িয়া বাজারের কাছে একটি শাড়ির দোকানে কাজ করেন। রাতে বাড়ি ফিরে বাবা আমাকে পড়াতে বসেন। কারন বাবা বলেন বাবা মা ছাড়া পড়া হয় না ঠিকমত।  আমার মা নেই, তাই বাবাই আমাকে পড়ান। তারপর আমি যতক্ষন না ঘুমোচ্ছি বাবা আমার সাথে গল্প করেন। বাবার ও ঘুম পায় সারাদিনের পরিশ্রমে। কিন্তু আমাকে কক্ষনো কিছু বলেন না। বাবার নিজের জুতো টা ক্ষয়ে গেছে কিন্ত আমাকে বাবা দুটো নরম জুতো কিনে দিয়েছেন। আমার বন্ধু কনীনিকা আমাকে বলেছে বাবার দোকানের মালিক বাবাকে সবার সামনে বকাবকি করেন, ও কাকিমার সাথে দোকানে গিয়ে শুনেছে। আমার সেটা শুনে খুব কষ্ট হয়েছে। সেদিন আমি কোনো কথা না বলে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ার ভান করেছিলাম। একটু পরে ক্লান্ত শরীরে বাবাও ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। আমি দেখেছি বাবার গালে শুকিয়ে থাকা চোখের জল। কনীনিকা বলেছিল বাবাকে নাকি শাড়ি পড়ে দেখাতে হয় সবাই কে, শাড়িটা কেমন।  ও বলতে বলতে খুব হাসছিল। কৃতিকা,  পৌলমীও খুব হাসছিল। তাই আমি ওদের বলতে চাই, সব প্রতিকুলতা, অভাব আর দুঃখের মধ্যেও আমার বাবা যেভাবে হাসিমুখে আমার, ঠাম্মা আর দাদুর সেবা করেন, ভালবাসেন, তাতে আমার বাবাই আমার দুর্গা। কারন মা দুর্গার মতো ই, আমার বাবাও, দুর্গতি বিনাশ করেন আমাদের পরিবারের জন্য।'

পড়তে পড়তে হাতটা কাঁপছিল বীরেন বাবুর। চোখটা জ্বালা করছে বড্ড।

'ভাল থাকবেন বীরেন বাবু। এভাবেই, আপনার মেয়ের দুর্গা হয়ে।' বড় দিদিমণির কথায় ভেসে যাওয়া চোখ নিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করেন উনি। বন্ধ চোখের আড়ালে একবার মাম্পির মুখ। আরেকবার মা দুর্গার। তিনিও যে আমাদের সবার 'দুহিতা'।
Collected............
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
অসাধারণ !!!

Namaskar
Like Reply




Users browsing this thread: 25 Guest(s)