Thread Rating:
  • 114 Vote(s) - 2.66 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
কিছু মনের সত্যি কথা
অসমাপ্ত


কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে পোশাক পাল্টে কিছু না খেয়েই মাঠের দিকে দৌড় দিলো ছেলেটা। খেলাধুলা তার বড্ডো প্রিয়। আর প্রিয় গিটার। এই দুটো ছাড়া তার জীবন যেন অন্ধকার। সাধারণ ঘরের একজন সাধারণ ছেলে অনির্বান। ছেলে না বলে বালক বলাই ভালো। বেশি বয়স না। ক্লাস এইট এ পড়ে। একদিন খেলার শেষে বাড়ি ফিরে জানতে পারে পাড়ার কিছু দাদা তাকে খোঁজ করছিলো। কারণ জিজ্ঞাসা করে সে জানতে পারে তাদের পাড়ায় এবছর রবীন্দ্র জয়ন্তী খুব ধুমধামের সঙ্গে পালিত হবে। শুধু তাদের পাড়ার নয় আশেপাশের পাড়ার ও অনেকে সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেবে। অনির্বান কে তাদের সঙ্গে গিটার বাজাতে হবে। সে তো এক কথায় রাজি। এরপর এক রবিবারে পাড়ার ক্লাবে শুরু হলো অনুষ্ঠানের মহড়া। কিছূক্ষনের মধ্যে অনির্বান ও সেখানে এসে উপস্থিত হলো। সে এসে দেখলো সেখানে তাদের পাড়ার অনেক মেয়ে কাকি উপস্থিত। সঙ্গে আশেপাশের অনেক মেয়ে বউ ও এসেছে। কেও নাচ করবে, কেও গান করবে কেও আবৃতি করবে। সবাই উত্তেজিত। হঠাৎ অনির্বান দেখলো একপাশে আকাশী রঙের ফ্রক পরে একটা মেয়ে চুপ করে তার মায়ের পাশে বসে আছে। মেয়েটাকে দেখেই অনির্বাণের বুকে গিটার বাজতে শুরু করে দিলো। মেয়েটা কি করবে? গান, নাচ না আবৃতি? অনির্বান ভাবতে থাকে। কিছুক্ষন পরে সে জানতে পারলো মেয়েটা নাচ করবে। দুটো গানে নাচ করবে মেয়েটা আর সেই গানে গিটার বাজাবে অনির্বান। কিন্তু গিটার বাজাবে কি তারতো তখন মনের মধ্যে উথালপাতাল অবস্থা। বেশ কয়েকবার ভুল করে ফেললো সে। উপরি হিসাবে জুটলো বড়দের বকা আর সমবয়সীদের উপহাস। যাইহোক শুরু হলো মহড়া। একদিকে মহড়া চলছে আর অন্যদিকে অনির্বাণ দেখে যাচ্ছে সেই মেয়েটাকে। এর মধ্যে সেই মেয়েটার নামও জেনে ফেলেছে সে। চন্দ্রা ডাকনাম চুনু পাশের পাড়ায় বাড়ী ক্লাস 6 এ পড়ে বালিকা বিদ্যালয়ে। চন্দ্রা কে নিয়ে বালক বয়সেই অনির্বাণের মনে উদ্দীপনার সঞ্চার হয়। ধীরে ধীরে চলে আসে অনুষ্ঠানের দিন। খুব ভালোভাবে অনুষ্ঠান শেষ হয়। অনির্বাণের বাজনা, চন্দ্রার নাচ দুটোই খুব প্রশংসা পায়। অনুষ্ঠানের শেষে কলাকুশীলবরা সবাই খুশি অনুষ্ঠান খুব ভালো হয়েছে শুধু একজনের মনে দুঃখ। কেন এই দিনটা এত তাড়াতাড়ি চলে আসলো? আরও কিছুদিন পরও তো আসতে পারতো তাহলে সে দেখতে পারতো চন্দ্রা কে। এরপর মাঝেমধ্যে অনির্বাণের সঙ্গে দেখা হয় চন্দ্রার। অনির্বান শুধু আর শিখে দেখে কিছু বলতে পারেনা। এইভাবে দেখতে দেখতে প্রায় 4 বছর কেটে যায়। এর মধ্যে অনির্বান চন্দ্রাকে উদ্দেশ্য করে অপরিপক্ক হাতে একটা একটা চিঠিও লিখে ফেলে সেই চিঠিতে ভাষার ব্যবহার সাবলীল না হলেও ভালোবাসার কমতি ছিলোনা। চন্দ্রাকে নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করে অনির্বান। কিন্তু চন্দ্রার মুখোমুখি দাঁড়াবার সাহস তার নেই। রাস্তায় তাকে দেখলেই শুধু বোকার মতো তাকিয়ে থাকে। এরবেশি আর কিছু বলতে পারে না। কয়েকবার ভেবেছে যেভাবেই হোক চন্দ্রার সাথে কথা বলবে, কিন্তু সাহসে কুলিয়ে উঠতে পারেনি। অন্যদিকে চন্দ্রা এইসবের কিছুই জানেনা। তারও এইবার মাধ্যমিক। সে পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যস্ত। ওইসব প্রেম ভালোবাসা নিয়ে ভাবার সময় তার নেই। এইভাবেই একসময় অনির্বাণের কলেজ শেষ হয়। কলেজ শেষ হবার পর অনির্বান একটা বেশ ভালো বেসরকারী চাকরিও জুটিয়ে নেয়।  হঠাৎ একদিন রাস্তায় চন্দ্রাকে দেখে রাস্তায় থমকে দাঁড়িয়ে পরে অনির্বান। সিঁথিতে লাল সিঁদুর পরে, হাতে শাখা-পলা, গলায় মঙ্গলসূত্র! ঠিক দেখছে তো অনির্বান??? হ্যাঁ ঠিকই। এটা চন্দ্রাই যার জন্য কত বিনিদ্র রাত সে কাটিয়েছে। পায়ের তলায় মাটি সরে যায় অনির্বাণের। তার ভালোবাসা আজ অন্যকারো হয়ে গেছে। বিয়ে হয়ে গেছে চন্দ্রার। হ্যাঁ ঠিকই তো কেন বিয়ে করবে না চন্দ্রা? সে তো কখনো বলেনি যে সে চন্দ্রাকে ভালোবাসে। তাহলে চন্দ্রা তার হলো কিকরে? এটা তার মনের দুঃসাহস যে চন্দ্রাকে নিজের বলে ভেবেছিল। কি আছে তার মধ্যে যে চন্দ্রা তাকে পছন্দ করবে? 

*******************************

আরে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠো ছেলেকে কলেজে দিয়ে আসতে হবে আজকে গাড়ী আসবেনা ড্রাইভারের শরীর খারাপ ফোন করেছিলো, সকালের ব্যস্ততার মাঝে নিজের স্বামীর দিকে কথাগুলো ছুড়ে দেয় তিতলি। অনির্বাণের স্ত্রী। ছেলে অঙ্কুশ কে নিয়ে অনির্বান তিতলির  সংসার। ইতিমধ্যে অনির্বান একটা সরকারি চাকরি পেয়েছে। ছেলে বউ কে নিয়ে ভালোই আছে সে। অন্যদিকে স্বামী কন্যা নিয়ে ভরা সংসার চন্দ্রার। তার স্বামী ব্যাংকে চাকরি করে। একমাত্র মেয়ে অনুসূয়া কে নিয়ে তাদের প্রচন্ড আদরের। 

*******************************

অনির্বান, চন্দ্রার বিয়ে হয়ে গেলে কিহবে অনির্বান এখনো চন্দ্রা কে ভুলতে পারেনি। রাস্তায় দেখা হলে এখনো সে বিভোর হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। মনের মধ্যে চন্দ্রার জন্য একটা জায়গা সংরক্ষণ করে রেখেছে সে। সেখানে প্রবেশের অধিকার কারো নেই। মাঝে মাঝে ফেসবুকে চন্দ্রার প্রোফাইল খুঁজে তার সব ছবি ওপর বিস্ময়ে দেখতে থাকে  অনির্বান। এরপর একদিন দুরু দুরু বুকে সে বন্ধুত্বের আবেদন পাঠালো। অনেকদিন সেই আবেদন পরে থাকার পরেও অন্যদিকে থেকে সারা না আসায় অনির্বান সেই আবেদন উঠিয়ে নেয়। কিন্তু চন্দ্রার ছবি, ভিডিও দেখা চলতেই থাকে। এর কিছুদিন পর আবার বন্ধুত্বের আবেদন পাঠায় অনির্বান। এবারেও আবেদন অনেক আবেদনের নিচে চাপা পরে যায়। হঠাৎ একদিন অনির্বানের একটা নোটিফিকেশন আসে "Chandra is accepted your friend request" ব্যাস অনির্বান কে আর পায় কে? তার চন্দ্রা তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেছে।  এরপর কিছুদিন কেটে যায় কিন্তু অনির্বান চন্দ্রা কে কোনো মেসেজ করেনা। কিছুদিন পরে আর থাকতে না পেরে চন্দ্রাকে একটা ছোট্ট মেসেজ দিয়ে ফেলে Hi। কিছুক্ষন পর চন্দ্রা সেটা সীন করে এবং উত্তর দেয় Hello।
অ : চিনতে পারছো?
চ : হ্যাঁ পারছি।
অ : কেমন আছো?
চ : ভালো।  তুমি? 
অ : এই চলে যাচ্ছে। কিকরে চিনলে?
চ : ছোটবেলায় দেখেছিলাম।
অ : যাক মনে আছে তাহলে।
চ : ভুলবো কেন?
অ : সময়ের চাদরে ঢাকা পরে আছি তাই......
চ : মানে?
অ : মানে আর বুঝতে হবেনা।

এরপর দুইজনার মধ্যে বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে। শুধু দুজনার কাছে দুইধরণের। চন্দ্রার কাছে নিছক বন্ধুত্ব আর অনির্বাণের কাছে স্বপ্নসম। চন্দ্রা যে তার সাথে কথা বলছে এইটাই তার চাওয়ার থেকে অনেক বেশি। ইদানিং অনির্বান তার জীবনের বাঁচার মানে খুঁজে পেয়েছে। সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে কখন চন্দ্রার নামের পাশে সবুজ বাতিটি জ্বলবে। কিন্তু ধীরে ধীরে অনির্বান বাস্তব কে উপলব্ধি করতে শুরু করে। তারা দুজনেই আজ বিবাহিত। তাদের দুজনেরই সংসার বাচ্চা রয়েছে। কিন্তু চন্দ্রার সঙ্গে রোজ কথা বললে হয়তো সে চন্দ্রার কাছে দুর্বল হয়ে পড়বে।  চন্দ্রা তার অনুভুতি গুলো ধরে ফেলবে। তখন হয়তো তার সঙ্গে আর কথা বলবে না। সেই ভয় তাকে গ্রাস করতো। হঠাৎ একদিন সে তার আইডি ডিএকটিভ করে দিলো। তার নামের পাশে আর সবুজ বাতি জ্বলবে না। চন্দ্রা শুধু তার মনের অন্তরেই বাস করুক।

**** অসমাপ্ত ****

কিছু কিছু প্রেম কখনো পূর্ণতা পায়না, কিন্তু একতরফা হলেও সেটা কারো মনের মধ্যে থেকে যায় সারাজীবন।

কিছু কিছু ব্যক্তিগত দুঃখ আছে যেগুলো স্পর্শ করার অধিকার কারোর নেই - হুমায়ুন আহমেদ।
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
(15-09-2021, 08:26 AM)Bichitravirya Wrote: গল্পটা আপনার নয় তাই আর বিশ্লেষণ করছি না। শুধু বলবো খুব ভালো মা মেয়ের কেমিস্ট্রি পেলাম।
এবার আপনার কাছে দুটো প্রশ্ন আছে ---১) সুমিত্রা নামটা এতো বিখ্যাত কেন?
২) আপনি তো বড়ো। তার উপর নাম দাদা অফ ইন্ডিয়া। কি করছেন টা কি? ওই পিনুরাম  রাজদীপ  নামক ভদ্রলোক দের  দুটো কথা শুনিয়ে এখানে আনতে পারছেন না? কি করতে দাদা হয়েছেন? দরকার হলে কান ধরে এখানে আনবেন। কিন্তু আনছেন না  Dodgy

❤❤❤

ভাই আমি আমার মতো থাকি ! সবার সাথে মিশতে ভালবাসি ! কিন্তু কারুর গলা ধরে জোর করতে পারিনা !! 
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
(17-09-2021, 08:56 PM)dada_of_india Wrote: ভাই আমি আমার মতো থাকি ! সবার সাথে মিশতে ভালবাসি ! কিন্তু কারুর গলা ধরে জোর করতে পারিনা !! 

আমি তো ওটা ইয়ার্কি মেরে বলেছি ... এক ধরনের রিকোয়েস্ট বলতে পারেন... তেমন কিছু মিন করে বলিনি...
আপনি আছেন, দে দা আছেন এই অনেক আমার কাছে

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
[+] 1 user Likes Bichitro's post
Like Reply
(13-09-2021, 06:13 PM)ddey333 Wrote: আজ শুরু করলাম !! Smile


সম্মান ( original story in hindi by BABAN )


আমি অভিক , অভীক সেনগুপ্ত …

ডকুমেন্টারি ছবি বানাই, সমাজের নানা দিক, নানা সমস্যা গুলো নিজের সাধ্যমতো তুলে ধরার চেষ্টা করি. এখন অবধি গোটাপাঁচেক রিলিজ হয়েছে ...দু একটা পুরস্কার টুরস্কার ও পেয়েছি .

সে যাই হোক , এই কিছুদিন আগেই আমার ষষ্ঠ ছবিটার শুটিং শেষ করলাম . বিষয়টা ছিল কল গার্লদের নিয়ে .
আর এই ছবিটা বানাতে গিয়ে জীবনে যে অভিজ্ঞতা আর শিক্ষা অর্জন করলাম , কোনোদিন ভুলতে পারবো না !
আজ সেই কাহিনী শোনাবো আপনাদেরকে ...

ছবিটার জন্য একটা মেয়ে খুজছিলাম , হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন , একটা সত্যি সত্যি দেহ পসারিনীকে দরকার ছিল আমার .
ওদের জীবনের নানা রকমের দিক , চিন্তা ভাবনা, একদম ওদেরই একজনের মুখ থেকে শোনা খুব দরকার ছিল আমার .
একটু মুস্কিলে পড়ে গেলাম , এইসব ব্যাপারে আমি একেবারেই আনাড়ি,   একটু আধটু সিগারেট বা কখনো কখনো বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে  খুব অল্প মদ্যপান ছাড়া জীবনে আর কোনো কু অভ্যাস নেই আমার
 
কি করা যায় ... কি করা যায় ভাবতে ভাবতে আমার এক পুরোনো কলেজের বন্ধু প্রতীকের কথা মাথায় এলোওর  বেশ সুনাম বা দুর্নাম  আছে এইসব ব্যাপারে আমাদের বন্ধু মহলে !!!
সালাকে ফোন করে বলেই ফেললাম অবশেষে , আমার দরকারের ব্যাপারটা ...
প্রথমে তো যথারীতি হো হো করে হাসলো , বললো " পথে এস বাছাধন , ডুবে ডুবে ....."
তারপরে জিজ্ঞেস করলো , কবে চাই .
বললাম , রবিবার করিয়ে দে মিটিংটা ...
আবার
হাসি ... মিটিং আবার কি রে বোকা .... মাগি আসবে ... টাকা  দিবি, কাজ করবি ... হা হা !!


Ddey ভদ্রমহোদয়, আপনি কি এটার পরের অংশ অনুবাদ করবেন না? একসাথে পুরোটা পড়বো বলে বসে আছি কিন্তু

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
#অন্য_রূপকথা

 
কালকের বৃষ্টিতে অফিস যেতে গিয়ে খুব ভিজে গেছিলাম আমি। আজ সকাল থেকেই জ্বর জ্বর ভাব, আর সেই সঙ্গে মাইগ্রেনের যন্ত্রণা! তাই বাধ্য হয়েই বাড়ি থেকে কাজ করছিলাম।
বিকেল থেকে শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগছিল। বৃষ্টিও আর পড়ছিল না। তাই কাজ থেকে একটু ব্রেক নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছিলাম পাড়ার মধ্যেই। কিছুদূর যাবার পরেই, নাকে এলো বেশ ঝাঁঝালো একটা গন্ধ। এক লহমাতেই আমার বাঙালি নাক বুঝে নিল "এটা তেলেভাজার গন্ধ, আর আমাকে খেতেই হবে!" তাই আমিও প্রতিবছরের মতো "পুজোর আগে রোগা হতেই হবে" স্কিমকে "নিকুচি করেছে" বলে এগিয়ে গেলাম সেদিকে।
গিয়ে দেখি, সবে ভাজাভুজি শুরু হয়েছে। একজন বয়স্ক মানুষ পাম্প স্টোভটির সামনে বসে আছেন, আরেকজন, কিশোরী প্রায়, ভাজার আগে আলুর চপের যে চ্যাপ্টা একটা আকার থাকে না? সেটা তৈরি করছে। সামনে একটা ডেকচিতে বেসন গোলা। আরেকটি থালায় পাতলা করে কাটা বেগুনের টুকরো রাখা। আছে।
আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম "কত দেরি হবে? দুটো আলুর চপ আর দুটো বেগুনি।"
"এই এক্ষুণি হয়ে যাবে।" বলে আমার ফরমায়েশ মতো জিনিস গুলো গরম তেলে দিলেন ওই ভদ্রলোক।
হঠাৎ, আমার পিছনে একজন এসে, বেশ একটু কেমন করে বলে উঠলেন "এই যে! চপ কত করে?"
"পাঁচ টাকা" উত্তর দিল মেয়েটি।
"উঃ, এইটুকু টুকু চপ, পাঁচ টাকা! দুদিন আগে তো চারটাকা ছিল।" আবার কানে লাগল কথা গুলো। আসলে বলার ভঙ্গিতে একটা অভব্যতা ছিল।
"না বাবু, আমাদের তো পাঁচটাকা করেই চপ।" শান্তভাবে উত্তর দিলেন বয়স্ক মানুষটি।
ক্রেতাটি কিছু বলার আগেই হাতের কাজ থামিয়ে সোজাসুজি তাকাল মেয়েটি। তারপর বলল "আপনার মাস্ক কই?"
আমিও ঘুরে তাকালাম।
বারমুডা আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরা, মুশকো গোঁফওলা লোক, মুখে মাস্ক নেই।
"ধুর বাঁ! এখন করোনা মরোনা কিছু নেই, তাই মাস্ক পরিনা।" জবাব এলো।
হাতের কাজ থামিয়েই রেখেছিল মেয়েটি। খুব ঠান্ডা গলায় বলে উঠল "আপনাকে বেচব না।"
"কেনোওও?"
"একে তো আপনি মাস্ক পরে আসেন নি, তারপর আমাকে বিনা কারণে গালি দিলেন। আপনাকে চপ দেব না।"
"দিবি না? বউনির সময় নখরা? কে বে তুই?" বোমা ফাটার মতো আওয়াজে শুনলাম।
আমিও প্রতিবাদ করব বলে ঘুরে দাঁড়াতে গেছি, হঠাৎ শুনি মেয়েটি বলে উঠল "আমার মা মে মাসে করোনায় মারা গেছেন। আমাকে একবার দেখতেও দেয় নি। যা খারাপ হবার হয়ে গেছে। বউনি টউনি বুঝি না, আপনাকে চপ দেওয়া যাবে না। এখানে হুজ্জুতি করবেন না।"
ঠান্ডা গলায় বলা 'টি শব্দ।
লোকটি একটা অক্ষমের "হুঁহ্" বলে চলে গেলেন।
আমি চুপ করে রইলাম।
মনে মনে নতজানু হয়ে।
এই যে মেরুদন্ডের জোর, প্রতিবাদের ক্ষমতা, কালোকে কালো বলার স্পর্ধা আর সিদ্ধান্তে অবিচল থাকা - বড্ড ভাল লাগল। তাও জিজ্ঞেস করলাম "এভাবে না করে দিলে? তোমার সাহস আছে! "
আমার কথা শুনে মেয়েটি একটু হাসল বোধহয়। মানে, গলাটা ওমনি লাগল। তারপর বলে উঠল, "মা চলে যাবার পরে সাহস করে দোকান খুলেছি দিদি। কিছুই পারতাম না প্রথম প্রথম। সাহস ছিল বলেই তো!"
চোখ ভরে জল এলো।
সাহসী এবং আত্মপ্রত্যয়ী।
এই মেয়ে আগুনের মতো। এই মেয়ে পারবে। আরও অনেক কিছু করতে পারবে।
বড্ড মন ভরে গেল আজ।
এই সাহসিনী বিজয়িনী হবে।
হবেই
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
ধন্যবাদ ❤ এরকম অসাধারণ সব লেখা আমাদের মাঝে নিয়ে আসার জন্য ❤
Like Reply
(17-09-2021, 08:09 PM)dada_of_india Wrote: অসমাপ্ত


কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে পোশাক পাল্টে কিছু না খেয়েই মাঠের দিকে দৌড় দিলো ছেলেটা। খেলাধুলা তার বড্ডো প্রিয়। আর প্রিয় গিটার। এই দুটো ছাড়া তার জীবন যেন অন্ধকার। সাধারণ ঘরের একজন সাধারণ ছেলে অনির্বান। ছেলে না বলে বালক বলাই ভালো। বেশি বয়স না। ক্লাস এইট এ পড়ে। একদিন খেলার শেষে বাড়ি ফিরে জানতে পারে পাড়ার কিছু দাদা তাকে খোঁজ করছিলো। কারণ জিজ্ঞাসা করে সে জানতে পারে তাদের পাড়ায় এবছর রবীন্দ্র জয়ন্তী খুব ধুমধামের সঙ্গে পালিত হবে। শুধু তাদের পাড়ার নয় আশেপাশের পাড়ার ও অনেকে সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেবে। অনির্বান কে তাদের সঙ্গে গিটার বাজাতে হবে। সে তো এক কথায় রাজি। এরপর এক রবিবারে পাড়ার ক্লাবে শুরু হলো অনুষ্ঠানের মহড়া। কিছূক্ষনের মধ্যে অনির্বান ও সেখানে এসে উপস্থিত হলো। সে এসে দেখলো সেখানে তাদের পাড়ার অনেক মেয়ে কাকি উপস্থিত। সঙ্গে আশেপাশের অনেক মেয়ে বউ ও এসেছে। কেও নাচ করবে, কেও গান করবে কেও আবৃতি করবে। সবাই উত্তেজিত। হঠাৎ অনির্বান দেখলো একপাশে আকাশী রঙের ফ্রক পরে একটা মেয়ে চুপ করে তার মায়ের পাশে বসে আছে। মেয়েটাকে দেখেই অনির্বাণের বুকে গিটার বাজতে শুরু করে দিলো। মেয়েটা কি করবে? গান, নাচ না আবৃতি? অনির্বান ভাবতে থাকে। কিছুক্ষন পরে সে জানতে পারলো মেয়েটা নাচ করবে। দুটো গানে নাচ করবে মেয়েটা আর সেই গানে গিটার বাজাবে অনির্বান। কিন্তু গিটার বাজাবে কি তারতো তখন মনের মধ্যে উথালপাতাল অবস্থা। বেশ কয়েকবার ভুল করে ফেললো সে। উপরি হিসাবে জুটলো বড়দের বকা আর সমবয়সীদের উপহাস। যাইহোক শুরু হলো মহড়া। একদিকে মহড়া চলছে আর অন্যদিকে অনির্বাণ দেখে যাচ্ছে সেই মেয়েটাকে। এর মধ্যে সেই মেয়েটার নামও জেনে ফেলেছে সে। চন্দ্রা ডাকনাম চুনু পাশের পাড়ায় বাড়ী ক্লাস 6 এ পড়ে বালিকা বিদ্যালয়ে। চন্দ্রা কে নিয়ে বালক বয়সেই অনির্বাণের মনে উদ্দীপনার সঞ্চার হয়। ধীরে ধীরে চলে আসে অনুষ্ঠানের দিন। খুব ভালোভাবে অনুষ্ঠান শেষ হয়। অনির্বাণের বাজনা, চন্দ্রার নাচ দুটোই খুব প্রশংসা পায়। অনুষ্ঠানের শেষে কলাকুশীলবরা সবাই খুশি অনুষ্ঠান খুব ভালো হয়েছে শুধু একজনের মনে দুঃখ। কেন এই দিনটা এত তাড়াতাড়ি চলে আসলো? আরও কিছুদিন পরও তো আসতে পারতো তাহলে সে দেখতে পারতো চন্দ্রা কে। এরপর মাঝেমধ্যে অনির্বাণের সঙ্গে দেখা হয় চন্দ্রার। অনির্বান শুধু আর শিখে দেখে কিছু বলতে পারেনা। এইভাবে দেখতে দেখতে প্রায় 4 বছর কেটে যায়। এর মধ্যে অনির্বান চন্দ্রাকে উদ্দেশ্য করে অপরিপক্ক হাতে একটা একটা চিঠিও লিখে ফেলে সেই চিঠিতে ভাষার ব্যবহার সাবলীল না হলেও ভালোবাসার কমতি ছিলোনা। চন্দ্রাকে নিয়ে স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করে অনির্বান। কিন্তু চন্দ্রার মুখোমুখি দাঁড়াবার সাহস তার নেই। রাস্তায় তাকে দেখলেই শুধু বোকার মতো তাকিয়ে থাকে। এরবেশি আর কিছু বলতে পারে না। কয়েকবার ভেবেছে যেভাবেই হোক চন্দ্রার সাথে কথা বলবে, কিন্তু সাহসে কুলিয়ে উঠতে পারেনি। অন্যদিকে চন্দ্রা এইসবের কিছুই জানেনা। তারও এইবার মাধ্যমিক। সে পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যস্ত। ওইসব প্রেম ভালোবাসা নিয়ে ভাবার সময় তার নেই। এইভাবেই একসময় অনির্বাণের কলেজ শেষ হয়। কলেজ শেষ হবার পর অনির্বান একটা বেশ ভালো বেসরকারী চাকরিও জুটিয়ে নেয়।  হঠাৎ একদিন রাস্তায় চন্দ্রাকে দেখে রাস্তায় থমকে দাঁড়িয়ে পরে অনির্বান। সিঁথিতে লাল সিঁদুর পরে, হাতে শাখা-পলা, গলায় মঙ্গলসূত্র! ঠিক দেখছে তো অনির্বান??? হ্যাঁ ঠিকই। এটা চন্দ্রাই যার জন্য কত বিনিদ্র রাত সে কাটিয়েছে। পায়ের তলায় মাটি সরে যায় অনির্বাণের। তার ভালোবাসা আজ অন্যকারো হয়ে গেছে। বিয়ে হয়ে গেছে চন্দ্রার। হ্যাঁ ঠিকই তো কেন বিয়ে করবে না চন্দ্রা? সে তো কখনো বলেনি যে সে চন্দ্রাকে ভালোবাসে। তাহলে চন্দ্রা তার হলো কিকরে? এটা তার মনের দুঃসাহস যে চন্দ্রাকে নিজের বলে ভেবেছিল। কি আছে তার মধ্যে যে চন্দ্রা তাকে পছন্দ করবে? 

*******************************

আরে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠো ছেলেকে কলেজে দিয়ে আসতে হবে আজকে গাড়ী আসবেনা ড্রাইভারের শরীর খারাপ ফোন করেছিলো, সকালের ব্যস্ততার মাঝে নিজের স্বামীর দিকে কথাগুলো ছুড়ে দেয় তিতলি। অনির্বাণের স্ত্রী। ছেলে অঙ্কুশ কে নিয়ে অনির্বান তিতলির  সংসার। ইতিমধ্যে অনির্বান একটা সরকারি চাকরি পেয়েছে। ছেলে বউ কে নিয়ে ভালোই আছে সে। অন্যদিকে স্বামী কন্যা নিয়ে ভরা সংসার চন্দ্রার। তার স্বামী ব্যাংকে চাকরি করে। একমাত্র মেয়ে অনুসূয়া কে নিয়ে তাদের প্রচন্ড আদরের। 

*******************************

অনির্বান, চন্দ্রার বিয়ে হয়ে গেলে কিহবে অনির্বান এখনো চন্দ্রা কে ভুলতে পারেনি। রাস্তায় দেখা হলে এখনো সে বিভোর হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। মনের মধ্যে চন্দ্রার জন্য একটা জায়গা সংরক্ষণ করে রেখেছে সে। সেখানে প্রবেশের অধিকার কারো নেই। মাঝে মাঝে ফেসবুকে চন্দ্রার প্রোফাইল খুঁজে তার সব ছবি ওপর বিস্ময়ে দেখতে থাকে  অনির্বান। এরপর একদিন দুরু দুরু বুকে সে বন্ধুত্বের আবেদন পাঠালো। অনেকদিন সেই আবেদন পরে থাকার পরেও অন্যদিকে থেকে সারা না আসায় অনির্বান সেই আবেদন উঠিয়ে নেয়। কিন্তু চন্দ্রার ছবি, ভিডিও দেখা চলতেই থাকে। এর কিছুদিন পর আবার বন্ধুত্বের আবেদন পাঠায় অনির্বান। এবারেও আবেদন অনেক আবেদনের নিচে চাপা পরে যায়। হঠাৎ একদিন অনির্বানের একটা নোটিফিকেশন আসে "Chandra is accepted your friend request" ব্যাস অনির্বান কে আর পায় কে? তার চন্দ্রা তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেছে।  এরপর কিছুদিন কেটে যায় কিন্তু অনির্বান চন্দ্রা কে কোনো মেসেজ করেনা। কিছুদিন পরে আর থাকতে না পেরে চন্দ্রাকে একটা ছোট্ট মেসেজ দিয়ে ফেলে Hi। কিছুক্ষন পর চন্দ্রা সেটা সীন করে এবং উত্তর দেয় Hello।
অ : চিনতে পারছো?
চ : হ্যাঁ পারছি।
অ : কেমন আছো?
চ : ভালো।  তুমি? 
অ : এই চলে যাচ্ছে। কিকরে চিনলে?
চ : ছোটবেলায় দেখেছিলাম।
অ : যাক মনে আছে তাহলে।
চ : ভুলবো কেন?
অ : সময়ের চাদরে ঢাকা পরে আছি তাই......
চ : মানে?
অ : মানে আর বুঝতে হবেনা।

এরপর দুইজনার মধ্যে বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে। শুধু দুজনার কাছে দুইধরণের। চন্দ্রার কাছে নিছক বন্ধুত্ব আর অনির্বাণের কাছে স্বপ্নসম। চন্দ্রা যে তার সাথে কথা বলছে এইটাই তার চাওয়ার থেকে অনেক বেশি। ইদানিং অনির্বান তার জীবনের বাঁচার মানে খুঁজে পেয়েছে। সে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে কখন চন্দ্রার নামের পাশে সবুজ বাতিটি জ্বলবে। কিন্তু ধীরে ধীরে অনির্বান বাস্তব কে উপলব্ধি করতে শুরু করে। তারা দুজনেই আজ বিবাহিত। তাদের দুজনেরই সংসার বাচ্চা রয়েছে। কিন্তু চন্দ্রার সঙ্গে রোজ কথা বললে হয়তো সে চন্দ্রার কাছে দুর্বল হয়ে পড়বে।  চন্দ্রা তার অনুভুতি গুলো ধরে ফেলবে। তখন হয়তো তার সঙ্গে আর কথা বলবে না। সেই ভয় তাকে গ্রাস করতো। হঠাৎ একদিন সে তার আইডি ডিএকটিভ করে দিলো। তার নামের পাশে আর সবুজ বাতি জ্বলবে না। চন্দ্রা শুধু তার মনের অন্তরেই বাস করুক।

**** অসমাপ্ত ****

কিছু কিছু প্রেম কখনো পূর্ণতা পায়না, কিন্তু একতরফা হলেও সেটা কারো মনের মধ্যে থেকে যায় সারাজীবন।

কিছু কিছু ব্যক্তিগত দুঃখ আছে যেগুলো স্পর্শ করার অধিকার কারোর নেই - হুমায়ুন আহমেদ।

আমি বলেছিলাম আপনার লেখা পড়বো না। এতো ট্রাজিক ভালো লাগে না। একদম ভালো লাগে না।
লাইক রেপু কিছুই দিলাম না....

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
(18-09-2021, 06:27 PM)ddey333 Wrote: #অন্য_রূপকথা

 
কালকের বৃষ্টিতে অফিস যেতে গিয়ে খুব ভিজে গেছিলাম আমি। আজ সকাল থেকেই জ্বর জ্বর ভাব, আর সেই সঙ্গে মাইগ্রেনের যন্ত্রণা! তাই বাধ্য হয়েই বাড়ি থেকে কাজ করছিলাম।
বিকেল থেকে শরীরটা বেশ ঝরঝরে লাগছিল। বৃষ্টিও আর পড়ছিল না। তাই কাজ থেকে একটু ব্রেক নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছিলাম পাড়ার মধ্যেই। কিছুদূর যাবার পরেই, নাকে এলো বেশ ঝাঁঝালো একটা গন্ধ। এক লহমাতেই আমার বাঙালি নাক বুঝে নিল "এটা তেলেভাজার গন্ধ, আর আমাকে খেতেই হবে!" তাই আমিও প্রতিবছরের মতো "পুজোর আগে রোগা হতেই হবে" স্কিমকে "নিকুচি করেছে" বলে এগিয়ে গেলাম সেদিকে।
গিয়ে দেখি, সবে ভাজাভুজি শুরু হয়েছে। একজন বয়স্ক মানুষ পাম্প স্টোভটির সামনে বসে আছেন, আরেকজন, কিশোরী প্রায়, ভাজার আগে আলুর চপের যে চ্যাপ্টা একটা আকার থাকে না? সেটা তৈরি করছে। সামনে একটা ডেকচিতে বেসন গোলা। আরেকটি থালায় পাতলা করে কাটা বেগুনের টুকরো রাখা। আছে।
আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম "কত দেরি হবে? দুটো আলুর চপ আর দুটো বেগুনি।"
"এই এক্ষুণি হয়ে যাবে।" বলে আমার ফরমায়েশ মতো জিনিস গুলো গরম তেলে দিলেন ওই ভদ্রলোক।
হঠাৎ, আমার পিছনে একজন এসে, বেশ একটু কেমন করে বলে উঠলেন "এই যে! চপ কত করে?"
"পাঁচ টাকা" উত্তর দিল মেয়েটি।
"উঃ, এইটুকু টুকু চপ, পাঁচ টাকা! দুদিন আগে তো চারটাকা ছিল।" আবার কানে লাগল কথা গুলো। আসলে বলার ভঙ্গিতে একটা অভব্যতা ছিল।
"না বাবু, আমাদের তো পাঁচটাকা করেই চপ।" শান্তভাবে উত্তর দিলেন বয়স্ক মানুষটি।
ক্রেতাটি কিছু বলার আগেই হাতের কাজ থামিয়ে সোজাসুজি তাকাল মেয়েটি। তারপর বলল "আপনার মাস্ক কই?"
আমিও ঘুরে তাকালাম।
বারমুডা আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরা, মুশকো গোঁফওলা লোক, মুখে মাস্ক নেই।
"ধুর বাঁ! এখন করোনা মরোনা কিছু নেই, তাই মাস্ক পরিনা।" জবাব এলো।
হাতের কাজ থামিয়েই রেখেছিল মেয়েটি। খুব ঠান্ডা গলায় বলে উঠল "আপনাকে বেচব না।"
"কেনোওও?"
"একে তো আপনি মাস্ক পরে আসেন নি, তারপর আমাকে বিনা কারণে গালি দিলেন। আপনাকে চপ দেব না।"
"দিবি না? বউনির সময় নখরা? কে বে তুই?" বোমা ফাটার মতো আওয়াজে শুনলাম।
আমিও প্রতিবাদ করব বলে ঘুরে দাঁড়াতে গেছি, হঠাৎ শুনি মেয়েটি বলে উঠল "আমার মা মে মাসে করোনায় মারা গেছেন। আমাকে একবার দেখতেও দেয় নি। যা খারাপ হবার হয়ে গেছে। বউনি টউনি বুঝি না, আপনাকে চপ দেওয়া যাবে না। এখানে হুজ্জুতি করবেন না।"
ঠান্ডা গলায় বলা 'টি শব্দ।
লোকটি একটা অক্ষমের "হুঁহ্" বলে চলে গেলেন।
আমি চুপ করে রইলাম।
মনে মনে নতজানু হয়ে।
এই যে মেরুদন্ডের জোর, প্রতিবাদের ক্ষমতা, কালোকে কালো বলার স্পর্ধা আর সিদ্ধান্তে অবিচল থাকা - বড্ড ভাল লাগল। তাও জিজ্ঞেস করলাম "এভাবে না করে দিলে? তোমার সাহস আছে! "
আমার কথা শুনে মেয়েটি একটু হাসল বোধহয়। মানে, গলাটা ওমনি লাগল। তারপর বলে উঠল, "মা চলে যাবার পরে সাহস করে দোকান খুলেছি দিদি। কিছুই পারতাম না প্রথম প্রথম। সাহস ছিল বলেই তো!"
চোখ ভরে জল এলো।
সাহসী এবং আত্মপ্রত্যয়ী।
এই মেয়ে আগুনের মতো। এই মেয়ে পারবে। আরও অনেক কিছু করতে পারবে।
বড্ড মন ভরে গেল আজ।
এই সাহসিনী বিজয়িনী হবে।
হবেই

খুবই বাস্তবধর্মী একদম বলা যাবে না.... কঠোর বাস্তব বলতে হবে। হয়তো পিনুদার কল্লোলিনী তিলোত্তমার বুকে এরকম সাহসী চরিত্র আছে

শুধু গল্পের নামগুলো কেমন একটা। খাপ খায়না যেন... এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। ভুল হতেই পারে

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
যেদিন আমার বয়স হয়ে যাবে..

তুইও হবি সুন্দরী এক বুড়ি...
ভোরে উঠে morning walk যাবো..
alarm দিবি রোজ টে ২০..  Smile
তখন বুঝি সুগার হবে আমার, কোলেস্টেরল বাড়বে বুঝি তোর..
কুঁচকে যাবে গায়ের চামড়া জানি, আসবে কমে এই গায়ের জোর 
তাও ভীষন বাঁধন ছেঁড়া হবো..
দুর্গা পুজোয় দাঁড়িয়ে, ফুচকা খাবো..
লুকিয়ে গোলাপ খোঁপায় দেব গুঁজে..
সেই আদরে ভাবিস চোখটা বুজে...
বয়স বুঝি শুধুই সংখ্যা তবে,
বাষট্টিতেও বাইশ পাবি খুঁজে..
বাষট্টিতেও বাইশ পাবি খুঁজে।। 
আয়না ভর্তি চিটিয়ে বাসি টিপ,
চুড়ির গোছে সেফটি পিনটা আঁটা..
চূড়ান্ত এক গিন্নীপোনা মাখা,
পা থেকে তোর চুলের কাঁটা..
তোরও থাকবে একটা বাক্স গোপন..
যেটা হয়তো আমারো খুব আপন..
প্রথম দেওয়া কিছু উপহার,
প্রথম পাওয়া কিছু অনুভূতি..
প্রথম যাওয়া হানিমুনের টিকিট..
প্রথম দেওয়া কিছু প্রতিশ্রুতি.. 
আর তোর প্রিয় "ঘুঙুর"..
বাক্সে যদি এসবই কিছু আছে,
ছুঁয়ে দেখিস..... 
ওতে আজও যৌবন লেগে আছে..
আসবে হাসি পুরনো চ্যাট দেখে..
পুরনো দিনের গন্ধ পাবি
দেখিস স্মৃতি মেখে..
তখন বুঝি আর "ওসব" হবে না..? Big Grin
চুমু বুঝি হয়ে যাবে হামি
কাঁপা হাতের স্পর্শ থাকবে একই,
স্পর্শটাই সারা জীবন দামী..
আমার কাছে বাষট্টি তেও বাইশ হয়ে থাকিস..
সেদিনও কিন্তু কাজল পরার অভ্যেসটা রাখিস..
কাজল চোখটা সর্বনাশী..
বলবে সেদিন ভালোবাসি.. Heart Heart

[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
(21-09-2021, 11:52 AM)ddey333 Wrote: যেদিন আমার বয়স হয়ে যাবে..

তুইও হবি সুন্দরী এক বুড়ি...
ভোরে উঠে morning walk যাবো..
alarm দিবি রোজ টে ২০..  Smile
তখন বুঝি সুগার হবে আমার, কোলেস্টেরল বাড়বে বুঝি তোর..
কুঁচকে যাবে গায়ের চামড়া জানি, আসবে কমে এই গায়ের জোর 
তাও ভীষন বাঁধন ছেঁড়া হবো..
দুর্গা পুজোয় দাঁড়িয়ে, ফুচকা খাবো..
লুকিয়ে গোলাপ খোঁপায় দেব গুঁজে..
সেই আদরে ভাবিস চোখটা বুজে...
বয়স বুঝি শুধুই সংখ্যা তবে,
বাষট্টিতেও বাইশ পাবি খুঁজে..
বাষট্টিতেও বাইশ পাবি খুঁজে।। 
আয়না ভর্তি চিটিয়ে বাসি টিপ,
চুড়ির গোছে সেফটি পিনটা আঁটা..
চূড়ান্ত এক গিন্নীপোনা মাখা,
পা থেকে তোর চুলের কাঁটা..
তোরও থাকবে একটা বাক্স গোপন..
যেটা হয়তো আমারো খুব আপন..
প্রথম দেওয়া কিছু উপহার,
প্রথম পাওয়া কিছু অনুভূতি..
প্রথম যাওয়া হানিমুনের টিকিট..
প্রথম দেওয়া কিছু প্রতিশ্রুতি.. 
আর তোর প্রিয় "ঘুঙুর"..
বাক্সে যদি এসবই কিছু আছে,
ছুঁয়ে দেখিস..... 
ওতে আজও যৌবন লেগে আছে..
আসবে হাসি পুরনো চ্যাট দেখে..
পুরনো দিনের গন্ধ পাবি
দেখিস স্মৃতি মেখে..
তখন বুঝি আর "ওসব" হবে না..? Big Grin
চুমু বুঝি হয়ে যাবে হামি
কাঁপা হাতের স্পর্শ থাকবে একই,
স্পর্শটাই সারা জীবন দামী..
আমার কাছে বাষট্টি তেও বাইশ হয়ে থাকিস..
সেদিনও কিন্তু কাজল পরার অভ্যেসটা রাখিস..
কাজল চোখটা সর্বনাশী..
বলবে
সেদিন ভালোবাসি.. Heart Heart

যৌবনের ই মজা নিতে পারছি না.... বাষট্টির কথা তো অনেক দূরের ব্যাপার  Big Grin Big Grin Big Grin

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
এই কবিতাটা দাদা লিখে পাঠিয়েছে ...
আমাদের ভারতীয় দাদা !!

Smile Heart
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
আহা কি মিষ্টি এই কবিতার ছন্দমিল ❤
প্রতি লাইনে মিশে থাকা মিষ্টি প্রেম ছুঁয়ে গেলো dil

ভারতীয় দাদা তো দেখি ছুপা রুস্তম পুরো  clps
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
"একটা মেয়ের ভালবাসাকে আমি
 যুদ্ধের ট্যাংকের মতো মনে করি
 সত্যিকার প্রেমিক-প্রেমিকা ট্যাংকের
কঠিন বর্মের ভেতর থাকে কোন
চরাই-উতরাই ট্যাংককে আটকাতে পারে না"
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
একটা দারুন অসম্ভব রোমান্টিক গল্প পোস্ট করা শুরু করবো কয়েকদিনের মধ্যে ..


নতুন বৌদি

লেখকের নাম জানি না ...
কারো জানা থাকলে বলে দেবেন ...
Like Reply
(21-09-2021, 03:56 PM)ddey333 Wrote: একটা দারুন অসম্ভব রোমান্টিক গল্প পোস্ট করা শুরু করবো কয়েকদিনের মধ্যে ..


নতুন বৌদি

লেখকের নাম জানি না ...
কারো জানা থাকলে বলে দেবেন ...

একটা কথা বলুন তো..... আপনি এতো গল্প সত্যি পড়েন? মানে ওই যে 217 টা গল্প পোস্ট করেছেন... ওই সব গুলো আপনার পড়া?

❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
(21-09-2021, 04:07 PM)Bichitravirya Wrote: একটা কথা বলুন তো..... আপনি এতো গল্প সত্যি পড়েন? মানে ওই যে 217 টা গল্প পোস্ট করেছেন... ওই সব গুলো আপনার পড়া?

❤❤❤

দু চারটে বাদ দিয়ে প্রায় সব কটাই আগের পড়া ,


" নতুন বৌদি " পড়েছিলাম আজ থেকে সাত আট বছর আগে , যতদূর মনে পড়ে !!   
Like Reply
(21-09-2021, 04:25 PM)ddey333 Wrote: দু চারটে বাদ দিয়ে প্রায় সব কটাই আগের পড়া ,


" নতুন বৌদি " পড়েছিলাম আজ থেকে সাত আট বছর আগে , যতদূর মনে পড়ে !!    
Iex Iex Iex
❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
[quote pid='3715412' dateline='1631969846']
[quote pid='3715412' dateline='1631969846']
চোখ ভরে জল এলো।
সাহসী এবং আত্মপ্রত্যয়ী।
এই মেয়ে আগুনের মতো। এই মেয়ে পারবে। আরও অনেক কিছু করতে পারবে।
বড্ড মন ভরে গেল আজ।
এই সাহসিনী বিজয়িনী হবে।
হবেই
[/quote]

[/quote]
 তুমিও মানুষ, আমিও মানুষ
তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়
[+] 1 user Likes dimpuch's post
Like Reply
[Image: IMG-20210920-WA0008.jpg]
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
পার্শীবাগান  বাদুড় বাগান 

 
আমি ঐতিহাসিক  নই  সাহিত্যিক  নই  তবুও  কেন  পাড়ার  ইতিহাস  লিখতে বসলাম  জানিনা  প্রবাদ  আছে, fools  rush in where........ তাই বোধহয়  হবে 
আজকে  সায়েন্স  কলেজ  যেখানে  অবস্থান  করছে  আঠারো  শতকের  মাঝামাঝি  ওখানেই  এক পার্শী ভদ্রলোকের  বিশাল  বাগান  ছিল  সেই সুবাদে বাগান  তার  আশপাশের  অঞ্চল কে পার্শীবাগান  বলা হতো  পরে নাম  টা পার্শীবাগান  স্কোয়ার  হয়  পার্শীবাগানের  পেছনের  যে অঞ্চল  ছিল  সেই  গোটা অঞ্চলের  নাম  ছিল  বাদুড় বাগান  বিদ্যাসাগর  মহাশয়ের  বাড়ির  ঠিকানা  এখন  বিদ্যাসাগর  স্ট্রিট  কিন্ত  তখন  সবাই  বলত ' বিদ্যাসাগরের  বাদুড়  বাগানের  বাটি ' এই অঞ্চলে  অনেক  বড় গাছ  ছিল  আর  সেখানে  হয়তো   বাদুড়  ঝুলতে  দেখা যেত  তাই  এই নামের  সৃষ্টি  যত বাড়ি তৈরি হয়েছে  তত গাছ  কাটা গেছে  আর  তাতেই  বাদুড়ের  দল বিতাড়িত  হয়েছে  
দাদাঠাকুর যখন তার কলকাতার ভুল নিয়ে বিখ্যাত  গান  টি রচনা করেছিলেন  তখন  বাদুড়  ছিল না, তাই  তিনি লিখেছিলেন,  " বাদুড় বাগানে  দেখি বাদুড় নাহি ঝোলে, "
পার্শীবাগানের  সেই  পার্শী  ভদ্রলোক  মারা যাবার  কিছু পরে  বিশেষ জমি হাতবদল  হয়েছিল  কয়েক  বার  শোনা যায়  ঠাকুর  বাড়ির  হাতে এই জমির  মালিকানা  কিছু দিন  ছিল  জমি নিয়ে মামলা মোকদ্দমাও  হয়েছিল 
পার্শীবাগান  স্কোয়ার  নামকরণ  হয়েছিল  ঠিক  কবে জানা নেই  তবে এই সায়েন্স  কলেজের  আশপাশের বেশ কিছু জায়গা কে তখন পার্শীবাগান স্কোয়ার  বলা হতো  উল্টো  দিকের ব্রাহ্ম  গার্লস  কলেজ  সাধনা  সরকার  উদ্যান  আজ যে জায়গাতে  অবস্থান  করছে  সব ছিল  স্কোয়ারের  অন্তর্গত  পার্শীবাগান  এলাকার  তখন  খুব  গুরুত্ব  ছিল  গড়পাড়  অঞ্চলে  আজ যে ডাকঘর  আছে   তার নাম  তখন  থেকেই  পার্শীবাগান  পোস্ট অফিস 
 
1906 সালের  ছয়ই  আগস্টে  এইখানেই  একটা ঐতিহাসিক  ঘটনা  ঘটেছিল  আজ যেটা সাধনা  সরকার  উদ্যান  তখন  তার  নাম  ছিল  পার্শীবাগান  স্কোয়ারের  গ্রীয়ার  পার্ক  গ্রীয়ার  সাহেব  ছিলেন  কলকাতা  কর্পোরেশনের  প্রাক্তন  চেয়ারম্যান  এই পার্কে  অনুশীলন  সমিতির  উদ্যোগে  ভারতের  প্রথম  জাতীয়  পতাকা  উত্তোলন  হয়েছিল  এই পতাকার  নাম পরে হয়েছিল  ক্যালকাটা  ফ্ল্যাগ অনুশীলন সমিতির দপ্তর ছাপাখানা ছিল রাজাবাজারের কাছে আজ তার ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায় 
এই পতাকা  সৃষ্টি  করেছিলেন  সচীন্দ্র  প্রসাদ  বসু   আর  সুকুমার  মিত্র  প্রথম জন ছিলেন  রিপন  কলেজের  ছাত্র  আর রাষ্ট্র গুরু সুরেন্দ্র নাথের  শিষ্য  দ্বিতীয় জন ছিলেন  অরবিন্দ  ঘোষের  শিষ্য  পতাকা  ছিল  ত্রিবর্ণওপরে লালমাঝে হলুদ  আর নীচে সবুজ  ওপরে আঁকা ছিল  আটটি  পদ্ম  ( আট  টি প্রদেশ) মাঝে দেবনাগরী  তে নীলে  লেখা বন্দে মাতরম  নীচে আঁকা ছিল  এক দিকে সূর্য  আর একদিকে  চাঁদ তারা  ( মতান্তরে  পূর্ণ  চন্দ্র)
বঙ্গ ভঙ্গের  ঠিক  এক বছর  পরে প্রতিবাদ  স্বরূপ  এই পতাকা  উত্তোলন  করেছিলেন  অনুশীলন  সমিতির  সভাপতি  ব্যারিস্টার  প্রমথ  নাথ  মিত্র এই ঘটনাতে  সেদিন  খুব  সাড়া পড়ে  গিয়েছিল  পার্শীবাগান  তখন  ছিল  জাতীয়তাবাদের  পিঠ স্থান  পরের  বছর  আর একটা পতাকা বিদেশে উত্তোলন  করেছিলেন  ম্যাডাম  কামাসেটা একটু অন্যরকমের  এরপর  আরো কিছু রদবদলের  পরে সৃষ্টি  হয়েছিল  আজকের  জাতীয়  পতাকা
পার্শীবাগানের  সায়েন্স  কলেজের  সেই  জমি টা প্রথম  বিশ্বযুদ্ধের  কিছু আগে কিনেছিলেন  আইনজীবী  দানবীর  তারকনাথ  পালিত  কেনার  কিছু পরে তিনি জমিটা দান করে দেন, কলকাতা  বিশ্ববিদ্যালয়  কে অবশেষে 1914 সালে আইনজীবী  তারকনাথ পালিত  বিশিষ্ট  আইনজীবী  আর এক দানবীর রাসবিহারী  ঘোষের  সৌজন্যে  সায়েন্স কলেজ  তার জয়যাত্রা শুরু করে প্রথমে রসায়ন  বিভাগ তারপর  পদার্থ বিদ্যা  বিভাগ  চালু হয়েছিল সায়েন্স কলেজের  প্রাঙ্গনের  নাম  এখন  রাসবিহারী  শিক্ষা  প্রাঙ্গন সামনে যে বিশাল  ইমারত  টি রাস্তা থেকে দেখা যায়  তার নাম  তারকনাথ পালিত  বিল্ডিং  সে সময় রাসবিহারী  আর পালিত  অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি  হয়েছিল, তার খরচ যোগাতেন  এই দুই  মহান  মানুষ 
 
সায়েন্স  কলেজ  চালু হবার  পরে পার্শীবাগান  স্কোয়ার  নামটি ধীরে ধীরে হারিয়ে  গেল  পার্শীবাগান কে মনে রাখার  জন্য  পরে সায়েন্স কলেজের  দুদিকের  গলি কে পার্শীবাগান  বলা হতো 
রাজাবাজারের  দিকের  কানা গলি টা পরে পাল্টে  গিরিশ  বিদ্যা  রত্ন  লেন হয়েছে  গিরিশ  বিদ্যারত্নবিদ্যাসাগর মহাশয়ের সহপাঠি  ছিলেন  আঠেরোশো  পঁয়তাল্লিশ  সালে ইনি সংস্কৃত  কলেজে  গ্রন্থ্যাধক্ষ  নিযুক্ত  হন পরে তিনি ব্যাকরণ  অধ্যাপক  হয়েছিলেন 
 তিনি এই অঞ্চলে  থাকতেন  সায়েন্স  কলেজ  আর বসু বিজ্ঞান  মন্দিরের  মাঝে  যে রাস্তা টি আছে সেটাই  এখন  পার্শীবাগান  লেন 
 
পার্শীবাগান  লেন  দিয়ে ঢুকলে  বাম দিকে দেখা যায়  সায়েন্স কলেজের  লম্বা  দেওয়াল  যেটা গলির  প্রায়  শেষ  প্রান্ত  অব্দি  চলে গিয়েছে  এই কলেজের  নাম  করলে যার নাম টি আগে উঠে আসে তিনি আচার্য  প্রফুল্ল চন্দ্র  রায়  ইনি প্রখ্যাত  রসায়নবিদশিক্ষক  আর দার্শনিক  ইনি বেঙ্গল  কেমিক্যালের  প্রতিষ্ঠাতা  বাঙলার  ঘরে ঘরে পাওয়া যেত  আকোয়াটাইকোটিস, ন্যাপথ্যালিন আর কালো ফিনাইল  ইনি অসাধ্য  সাধন  করে আবিষ্কার  করেন  মারকিউরাস  নাইট্রাইট  তাই তো কবি সত্যেন্দ্রনাথ  লিখেছেন,  " বিষম  ধাতুর  মিলন  ঘটায়েবাঙালি  দিয়েছে বিয়ে 
মোদের  নব্য  রসায়ন শুধু
গরমিলে  মিলিয়ে "
আচার্য্য রায়  ছাড়াও  যাদের  নাম  আজও  শ্রদ্ধার  সঙ্গে স্মরণ  করা হয় তারা চন্দ্রশেখর  রমন  (রমন  এফেক্টের  জন্য  নোবেল প্রাইজ), সত্যেন্দ্রনাথ  বসু ( বোস  আইনস্টাইন  স্ট্যাটিসটিক্স), মেঘনাদ  সাহা, দেবেন্দ্র  মোহন  বসুজ্ঞান  প্রকাশ  ঘোষ  ইত্যাদি  দেশে বিদেশে  অনেক  মানুষ  আছেন  যারা বিজ্ঞানের  জগতে আলো ছড়িয়েছেন  বা এখনও  ছড়াচ্ছেন  তাদের  মধ্যে অনেকেই  এই সায়েন্স কলেজের  ছাত্র ছাত্রী 
 
গলির  ডান  দিকে লম্বা  হয়ে চলে গেছে বসু বিজ্ঞান  মন্দিরের  দেওয়াল এই সেই  বিখ্যাত  বাড়ি  যেখানে থাকতেন  আচার্য  জগদীশ  বোস  ইনি পদার্থবিদ, জৈবপদার্থ  বিজ্ঞানী, উদ্ভিদ  বিজ্ঞানীপ্রত্নতত্ত্ব বিদ  তার ওপর  ছিলেন  কল্পবিজ্ঞানের  লেখক  উনি রেডিও  বিজ্ঞানের  জনক  ক্রেসকোগ্রাফের  আবিষ্কারক  রবীন্দ্রনাথ  ওনার  সম্বন্ধে  বলেছেন,  " ভারতের  কোনো  বৃদ্ধ  ঋষি তরুণ  মুর্তিতুমি হে আর্য  আচার্য  জগদীশ "
জগদীশ বোসের  সঙ্গে  ছিলেন  তার  বিখ্যাত  স্ত্রী  লেডি অবলা বোস  তিনি ছিলেন  সমাজ  সংস্কারিকাশিক্ষাবিদ  সুলেখিকা  নারী শিক্ষা প্রসার  বিধবাদের  জীবনযাপনের  সাহায্য  করার  জন্য  তিনি বিশেষ ভাবে পরিচিত  তার দিদি ছিলেন  সরলা  রায়  তিনিও  বিশিষ্ট  শিক্ষাবিদ 
এই বাড়িতেই  থাকতেন  তাদের  ভাগ্নে  বিখ্যাত  পদার্থবিদ  দেবেন্দ্র মোহন  বসু 
 
এই পার্শীবাগান  লেন  দিয়ে আর একটু এগোলে  পাবেন  আজকের  বারো নম্বর  বাড়িসেখানে একদা ছিলেন  রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী ইনি ছিলেন  রিপন  কলেজের  অধ্যক্ষ  বিজ্ঞান   দর্শনের  দূরুহ  বিষয়  কে খুব  সহজ করে বাঙলা তে লিখতে পারতেন  তার লেখা অনেক  বই  আছে  উনি খুব  প্রাঞ্জল  বাঙলা  তে ছাত্র দের  পড়াতেন  উনি বঙ্গীয়  সাহিত্য  পরিষদের  প্রাণপুরুষ  ছিলেন  রবীন্দ্রনাথ  ওনার  সম্পর্কে বলেছেন,  " তোমার  বাক্য  সুন্দরতোমার  হাস্য  সুন্দর  তুমি রামেন্দ্র সুন্দর "
প্রথম  বিশ্বযুদ্ধের  সময়ে  তিনি পার্শীবাগান  ছেড়ে পটলডাঙা  তে চলে গিয়েছিলেন  বাড়িতেই  1919 সালে রবীন্দ্রনাথ  গিয়েছিলেন  অসুস্থ  বন্ধু  কে দেখতে  গিয়ে তিনি নাইট হুড  পরিত্যাগ  করার  সেই  ঐতিহাসিক  চিঠিটা পড়ে শুনিয়েছিলেন রামেন্দ্র  সুন্দর  একেবারেই  আপ্লুত  আর অভিভুত  তিনি বলেছিলেন  যে এর চেয়েও  ভাল  প্রতিবাদ  আর হয় না রবীন্দ্রনাথ  ফিরে যাবার  পরেই  রামেন্দ্র  কোমায়  চলে যান  আর কিছুদিন  বাদে মাত্র   পঞ্চান্ন  বছর বয়সে  তিনি দেহ রাখলেন 
এই রামেন্দ্র ছোট ভাই  দুর্গাদাস  ছিলেন  আমার  মায়ের  মাতামহ  রামেন্দ্র জন্মস্থান  মুর্শিদাবাদ জেলার জেমো  গ্রামে সেই বাড়িতে তাই ছোট বেলায় যাওয়ার  সৌভাগ্য  হয়েছিল, কারণ ওটা আমার মায়ের মামার বাড়ি 
 
রামেন্দ্র সুন্দরের  পরের বাড়িটা  চোদ্দ  নম্বর  ছিল  বিখ্যাত  বসু বাড়ি ঐখানে থাকতেন  চার ভাইকৃষ্ণ শেখরশশিশেখররাজশেখর  আর গিরীন্দ্র শেখর  বাড়ি এখন  বিক্রি  হয়ে গেছে পাশাপাশি  দুটো বাড়ি আছে 
রাজশেখর  বা পরশুরামের  কথা সবাই  জানেন তাঁর লেখায়  ছিল  অনাবিল হাস্যরস  আর তার চরিত্র  সৃষ্টি  ছিল  অসাধারণ  হাসির  গল্প  ছাড়াও  তিনি রামায়ণমহাভারতচলন্তিকা  ইত্যাদি  বই  লিখেছেন তিনি ছিলেন  বেঙ্গল  কেমিক্যালের  মুখ্য  রসায়নবিদ রসায়নের  রস আর সাহিত্য রস দুটোতেই  ছিল তার  অবাধ  বিচরণ একটা গল্প না বললেই নয়  আচার্য্য  রায়  একদিন  রবীন্দ্রনাথ কে চিঠি লিখে জানালেন যে রাজশেখর  এখন  নিজের  কাজের চেয়েও  বেশি লেখালিখি  নিয়ে মেতে আছে উনি লিখলেন, " আপনি তার  কোন লেখার  প্রশংসা  করিয়াছিলেন  আর তারপর  তাকে থামানো  যাইতেছে  না এরপর  সে আবার  যখন  লিখিবে  তখন  আপনি একটু কড়া করে সমালোচনা  করবেন "
চিঠির  জবাবে রবীন্দ্রনাথ  জানালেন,  " সমালোচনার  দরকার  নেইরাজশেখর  গিল্টি  নয় সে একেবারে  খাঁটি  সোনা "
 
এই চোদ্দ  নম্বর  বাড়িতে  প্রায়  আড্ডা বসতো  আর তাতে বসু ভাই রা ছাড়াও  থাকতেন  নজরুলবিপ্লবী  পুলিন  দাসআচার্য্য  রায়সত্যেন্দ্রনাথ  বসু,মেঘনাদ  সাহা এবং আরও  অনেকে  
রাজশেখর অবশ্য  পরে এই বাড়ি ছেড়ে দক্ষিণ  কলকাতায়  বাড়ি করে উঠে গিয়েছিলেন  
রাজশেখরের  ছোট  ভাই  গিরীন্দ্র শেখর  ছিলেন  আর এক বিখ্যাত  মানুষ  তিনি কলকাতার  মানসিক  রোগ  চিকিৎসার একজন  পথিকৃত দিকপাল  তিনি জাদুবিদ্যা  হিপনটিজম  শিক্ষা করেছিলেন সেটাই  মানসিক  রোগীর  চিকিৎসায়  প্রয়োগ  করতেন তখন  ফ্রয়েডের  ( সাইকো  এনালিসিসএর কথা ভারতে কেউ জানত  না পরে জানা গিয়েছিল যে গিরীন্দ্র শেখর  যে চিকিৎসা প্রণালী উদ্ভাবন  করেছিলেন সেটার  সঙ্গে ফ্রয়েডের  চিকিৎসা পদ্ধতির  বেশ কিছু মিল ছিল  তিনি মনোবিজ্ঞানে এম এস সি পরে ডি এস সি ডিগ্রি লাভ  করেন  তার লেখা একাধিক বই আছে  তিনি তার বাড়িতেই  ভারতীয়  মনঃ সমীক্ষা  সমিতি  প্রতিষ্ঠা করেন  অনেক নামকরা ডাক্তার মানুষ এতে যুক্ত ছিলেন  দাদা রাজশেখরের দান করা জমিতে তিনি গোবরা তে প্রথম  মানসিক  হাসপাতাল  প্রতিষ্ঠা করেন  তার সুযোগ্য  ভাইপো  ডাক্তার  বিজয় কেতু বোস  তাকে আজীবন  সাহায্য  করে গেছেন গিরীন্দ্র মৃত্যুর পর তার  ভাইপো এখানে আজীবন  চিকিৎসা  করেছেন  এখানে অনেক  বড় ডাক্তার  আসতেন  আর প্রায় নিখরচায়  অনেক  রোগীর  চিকিৎসা  করতেন  ডাক্তার  বিজয়কেতু কে আমি অনেক দিন  কাছ থেকে দেখেছি 
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply




Users browsing this thread: 25 Guest(s)