Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
# কথোপকথন
-"হাই আকাশ!"
-"হাই...হাই রাই!"
-"স্যরি, আপনাকে বসিয়ে রাখলাম বেশ কিছুক্ষণ "
-"না না, নো প্রবলেম"
-"আসলে, ভেবেছিলাম আজ ক্যান্সেল করে দেব। তারপর ভাবলাম, আবার কবে টাইম হবে... আপনার ও নিশ্চিয়ই আরও অনেকের সাথে দেখা করার আছে, তারমধ্যেও রবিবারটা আমাকে দিতে চাইছেন...তাই এলাম আর কি!"
-"অনেকের সাথে দেখা করার আছে বলতে, ওই... মাসি -পিসি, কাকিমা -জ্যেঠিমা... এই আর কি! বুঝতেই পারছেন, আবার কবে ছুটি পাই না পাই! কিন্তু আপনি ক্যান্সেল কেন করতে চাইছিলেন? মানে... যদি শেয়ার করতে প্রবলেম না হয় বলতে পারেন...
-"না না, প্রবলেম নেই। আসলে মেনস্ট্রুয়াল ক্র্যাম্পস ছিল সকাল থেকে।"
-"মেনস্ট্রুয়াল ক্র্যাম্পস? "
-"হ্যাঁ! এতে অবাক হচ্ছেন কেন? ও! আচ্ছা! নিজের তথাকথিত 'গোপন' ব্যাপার নিয়ে ওপেনলি বলছি বলে অসুবিধা, তাই না?"
-"না না.."
-"দেখুন, আমি এটাই দেখতে চাইছিলাম। ক্র্যাম্পস শুনে চমকে ওঠেন কিনা। আসলে আমাদের দেশের পুরুষেরা তো এখনও পিরিয়ডস কে মেনেই নিতে পারেন নি! এমন ভাব করেন যেন এরকম কিছু হয় বলে ওঁরা জানেন ই না!"
-"দেখুন, রাই..."
-"আমাদের সবেতে আপনাদের সমস্যা, তাই না? শুনুন, আমি একজন মহিলা, আমার পিরিয়ডস হয়। আমার জামা মাঝে মাঝে এদিক ওদিক সরে যায়, তাতে অন্তর্বাস দেখা যেতে পারে । আর আমি বিরিয়ানি দেখলে মাথার ঠিক রাখতে পারিনা, 'আনকুল' ভাবে খেতে শুরু করি।"
-"আমার কোভিড হয়েছিল। সতেরোদিন আইসোলেশানে ছিলাম। তারপরই ভাইরাল ফিভার হয়ে গেছিল। কাশিটা তো অনেকদিন জ্বালিয়েছে।"
-"হ্যাঁ, মানে... এখন তো আপনি ঠিক আছেন, তাই না?"
-"আপনার সমস্যা নেই? একজন এক্স কোভিড পেশেন্টের সাথে দেখা করতে এসে?"
-"আরে, কি মুশকিল? আমি কি সেসব বলেছি?"
-"সেকি! সমস্যা নেই? শুনুন, যখন রাস্তার দোকানে রোল বানানো হয়, তখন দাঁড়িয়ে পড়ি। ওই ডিমটা ফেটানোর পরে গরম তেলে যখন দেওয়া হয়, একটা ফাটাফাটি গন্ধ বের হয়... দারুণ লাগে তখন... আমি আনকুল ঠিক না, এক্কেবারে ষাঁড়েদের মতো রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়ি।"
-"ষাঁড়? হি হি!"
-"উফ! বাব্বা! হাসলেন তবে! আমি তো ভাবছিলাম খালি ঝগড়াই হবে!"
-"হি হি... আমি জাস্ট ভিজ্যুয়ালাইজ করছি... আপনি...ষাঁড়ের মতো...গন্ধ শোঁকার জন্য...আচ্ছা..লোভ দেন রোলের ওপর?"
-"একদম দিই! কত লোকের যে পেটখারাপ হয়েছে আমার নজরে!"
-"হি হি! উফ, তুমি হেব্বি লোক তো!"
-"তাই? তাহলে বলো, হঠাৎ করে মেনস্ট্রুয়াল ক্র্যাম্পসের জন্য আমাকে বকতে শুরু করলে কেন?"
-"ক্র্যাম্পস তো ছিলই। তবে বেশিরভাগ ছেলেই আকাশ থেকে পড়ে কিনা পিরিয়ডসের কথা শুনলে, তাই!"
-"অভয় দিলে একটা কথা বলি?"
-"সিওর!"
-"তুমিই তো বললে পিরিয়ডস খুব সাধারণ একটা ব্যাপার? এক্কেবারে জ্বর- সর্দি- কাশির মতো? তাহলে এটাকে নিয়ে এত হাশ হাশ, গোপন করার ভাব কেন? পিরিয়ডস হবেই। কারো কারো শরীরও খারাপ হয়। তাদের রেস্ট, খাবার ঠিকমতো করা উচিৎ, তাই না? পিরিয়ডস হয়, এটা জেনেও না জানার ভান করা যেমন অন্যায়, তেমনি 'আলাদা' ভাবার চেষ্টাটাও তো ভান, তাই না?"
-"হুম!"
-"শোনো, আমাদের একটা ফান্ডা আছে, মেয়েরা শুধু 'হুম' বলার মানে সেই ছেলের সাথে আর জীবনেও ডেট করবে না! এদিকে আমার আবার তোমাকে ম্যাট্রিমনিয়াল সাইটে দেখেই ভাল লেগেছিল, আর যেভাবে তুমি বিরিয়ানির জন্য লড়ে গেলে, তাতে আরও ভাল লেগে গেছে। কিন্তু এই 'হুম' টার জন্যই ভয় পাচ্ছি!"
-"কী যে বলো না! আর কে বলেছে এসব বাজে কথা?"
-"এটা আমাদের 'সিঙ্গল বয়েজ অ্যাসোসিয়েশানের' জ্ঞান! সবাই জানে!"
-"তাই?"
-"আজ্ঞে!"
-"তাহলে...আচ্ছা, শুক্রবার তো নিশ্চয়ই তোমার ছুটি? দেখা করবে?"
-"আপনি থেকে 'তুমি'তে আসা মানে কি সিঙ্গল বয়টা কি জানে?"
-"কি?"
-"ব্যাপারটা এগোনো যেতে পারে!"
-"ইয়েস!"
-"হা হা!"
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
#অনন্যা
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী
"ছোটবৌমা আজ কিন্তু একটু রান্না বেশি করতে হবে শুনেছো তো,ও বেলা তোমার মাসিমা মেসোমশাই আসবেন। ভেবেছিলাম বড় বৌমাকে বলবো তোমাকে বিকেলে একটু সাহায্য করে দেবে কিন্তু তার আবার অফিসে আজ কি সব আছে। মানে সে নাকি ওর অফিসের সেরা নারী, মানে ঐ মেয়েমানুষের প্রাইজ পাবে শুনলাম। যত্তসব হয়েছে আজকাল,আজ এটা কাল সেটা লেগেই আছে। বাপ ঠাকুর্দার আমলে কখনো শুনিনি বাপু মেয়েদের আবার আলাদা করে কোন দিন হয়। চিরকালই তো মেয়েদেরই দিন,আরে মেয়েরা মানে ইয়ে হলো মায়ের জাত সেই ব্যাটাছেলেই বলো আর মেয়েমানুষই বলো সবাইকে জন্ম তো দেয় মেয়েরাই।"...একটানে কথা বলে গেলেন সাবিত্রী। কিন্তু কি হলো যাকে এতগুলো কথা বলে গেলেন তার কোন সাড়াশব্দ নেই কেন,মনটা খারাপ হয়ে যায় কনকের। মানে এই বাড়ির বেকার ছোট বৌয়ের ভেবেছিলো আজ একটু মায়ের কাছে যাবে ওবেলা। হয়ত আর হবেনা।
চিরকাল মাকে এইভাবেই সংসার করে যেতে দেখেছে ও। বাবা ছোটবেলায় মারা যাওয়াতে ওরও পড়াশোনা মোটামুটি বি এ পাশের পর বিয়েতেই আটকে গিয়েছিলো। দত্তবাড়ির বেকার ছোটবৌ শ্বশুরবাড়িতে বেগার খাটে,মানে ওর দুই ভাশুরের মত ওর বর তেমন রোজগেরে নয়। বড় ভাশুর এই বাড়িতে থাকে মেজো ভাশুর আলাদা ফ্ল্যাটে থাকে। তাই বাড়ির যাবতীয় বাজার হাটের দায়িত্ত্ব সোমেনের, আর রান্নাবান্না মোটামুটি কনকের। বড় জা ইচ্ছে হলে হাত লাগায়,বেশি কিছু করার সময় পায়না খুব একটা। সোমেনের মাইনে অনেকটাই কম,বাকিটা ওরা দুজনে খেটে পুষিয়ে দেয়। শাশুড়ি হাতে করে তৈরি করেছেন কনককে তাই খুব একটা দেখতে হয়না।
কনক ততক্ষণে রান্নাঘরে ঢুকে পড়েছে দেখে অনেকটা নিশ্চিন্ত লাগে সাবিত্রীর, যাক্ আর চিন্তা নেই তবে ছোটবৌমা আজ হঠাৎ চুপচাপ কেন কি হলো? কিন্তু কিন্তু করেও জিজ্ঞেস করলেন," কি বৌমা তোমার কি আজ শরীরটা ভালো নেই, চুপ করে আছো একদম। কি হলো? চিন্তা কোরনা আমি তো আছিই সাহায্য করবো তোমায়। টেবিলে বসে বসেই সব গুছিয়ে দেবো।"
" না ভাবছিলাম আজ ও বেলাতে একটু মায়ের কাছে যাবো। অনেকদিন যাওয়া হয়নি,তাই মাম কলেজ থেকে ফিরলে ওকে নিয়েই.." আর দিন পেলোনা এমন দিনেই যেতে হবে ওকে বাপের বাড়ি! রাগ আর দুশ্চিন্তা দুইই হলো সাবিত্রীর। বড় বৌমাও তার ফাংশান সেরে কখন আসবে কে জানে। দিদিরা আসবে চারজন,তারপর ওরা এতগুলো লোক,ঝক্কি তো কম নয়। খেতে দেওয়াটাই তো এক সমস্যা! তাই মুখে একটু শুকনো হাসি হেসে বলেন," আমি বলি কি কাল যেয়ো বেশি তো দূর নয় ঐ তো বেলেঘাটা থেকে পাইকপাড়া। আচ্ছা আমি নাহয় বেয়ানের সাথে কথা বলে নেবো।"
দুঃখ রাগ হলেও মুখে মুখে তর্ক করা কনকের স্বভাব নয় আর সেইজন্যই হয়ত ওকে সবাই ভালোবাসে। কখনো বা একটু বেশিই নির্ভর করে। ওর বড় জা মল্লিকার সাথেও ওর সম্পর্ক বেশ ভালো। হয়ত বা মল্লিকা এটাও বোঝে কনক আছে বলেই ও এত নিশ্চিন্তে অফিস করে। পুপু আর মাম মিলেমিশে থাকে দুই বোনের মত মানে দুজন দুজনের সঙ্গী। মাঝে মাঝে খারাপও লাগে মল্লিকার কনকের জন্য তাই নিজে কোন ভালো জিনিস কিনলে কনকের কথা মাথায় রাখে। ওর অফিসের কেউ ভালো বলে কেউ বা মন্দ। যেমন এই সেদিনই শুক্লা বলছিলো," মল্লিকা,দারুণ চালাক। আর ওর জা টা তেমন ছাগল তাই এটা ওটা ঘুষ দিয়ে জাকে হাতে রাখে। মানে পরিস্কার কথা খাটিয়ে নেয়। তেমন অফিসেও সবাইকে কেমন হাতে রেখেছে মানে জাস্ট ধুরন্ধর মহিলা। আর এদের ভাগ্যও ভালো হয়।"..তবে শুক্লা কারো সমর্থন পায়না," মল্লিকাদির কোন তুলনা হয়না,এই তো সেদিন কত দাম দিয়ে ঢাকাই শাড়িটা কিনলো জায়ের জন্য। আমারই অবাক লাগছিলো।".." হুঁ ছাড়ো তো ওসব দেখনদারি, বিনা মাইনের লোক পেয়েছে করবেনা কেন,যত্ত মুখে মিষ্টি কথা বলে চালাকি করা। পাক্কা পলিটিশিয়ান একেবারে।"
কথাটা হয়ত নেহাত মিথ্যে নয়,সংসারটা বোধহয় একটা বড় রাজনীতির জায়গা। এখানে আমরা যতই আমাদের প্রতিপক্ষ করে পুরুষদের দাঁড় করাই। আসলে মেয়েরা যদি আরেকটু বেশি সুন্দর মন আর ভালোবাসা নিয়ে মেয়েদের দেখতো, অনেক সমস্যাই মিটে যেত। আসলে মল্লিকার প্রাইজ পাওয়াটা অনেকেরই বুকে কাঁটা হয়ে বিঁধছে। এদিকে বাড়িতে তখন কনক ব্যস্ত মালাইকারি,মুড়িঘন্ট,কাতলা কালিয়া আর চিকেন কষা রাঁধতে। মল্লিকা সাবিত্রীকে বলে গেছে বাড়ি এসে চটজলদি প্রেসার কুকারে পোলাওটা ও করে নেবে। চালটা যেন ধুয়ে ছড়িয়ে রাখে। কনকের যেন মনে হলো,দিদিভাইটা সবসময় সেরা প্রাইজটা পেয়ে যায়। সবাই হয়ত পোলাও খেয়ে ধন্য ধন্য করবে। কোথায় ও ভেবেছিলো আজ একটু ভালোমন্দ কিছু করে মায়ের কাছে যাবে। একা একা থাকে বেশিরভাগই ভালো করে খায়না।
কত কি রান্না হচ্ছে আজ এই বাড়িতে,আর মা হয়ত কালকের তরকারি দিয়েই খাবে। সারাজীবন মানুষটা কষ্ট করেই গেলো,আজ নিজের সংসার মেয়ে হওয়ার পর বোঝে একটা সংসার গড়ার পেছনে মেয়েদের কতটা ভূমিকা থাকে। ওর মেয়েবেলাতে মায়ের যে কথাগুলো শুনে রাগ হত খুব আজ সেগুলো সত্যি মনে হয় খারাপও লাগে। ওর মাও শাশুড়িমায়ের মত নারীদিবস বোঝেনা। বললেই বলে," আরে মেয়েরা তো ঘরের লক্ষ্মী,ঢাকঢোল পিটিয়ে অত অধিকার চাইতে হবে কেন শুনি? এই সবই ঐ ফরেন থেকে এসেছে।" মায়ের কথা শুনে সত্যিই হাসি পায় কনকের। কত কিছুরই খবর রাখেনা এরা,বাইরের পৃথিবীতে কত কি ঘটছে তাও জানেনা। ফেসবুক হোয়াটসআ্যপেও ওনার উৎসাহ নেই তার চেয়ে বরং মুখে পান দিয়ে শ্বশুরমশাইয়ের কাছে বসে গল্প করতেই ভালো লাগে ওনার। মল্লিকাও হাসে আর বলে," বুঝলি এখনো কিন্তু দুজনের হেব্বি প্রেম একদম টাইট বন্ডিং। আমাদের নেই এমন রে।" কনক হাসে, ওর বাবাও খুব ভালোবাসত মাকে,নাহ্ কোন বিশেষ দিন নয়; ওর ছোটবেলায় দেখেছে বাবা অফিস ফেরত খুচখাচ খাবার এনে মায়ের হাতে দিতো। বাজারে যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করতো মায়ের জন্য কি মাছ আনবে? পুজোর সময় প্যাকেট থেকে বেরোত মায়ের পছন্দমত শাড়ি,কোনদিন আবার ঘর জুঁই ফুলের সুবাসে মাততো। বাবা বলত," খুব সস্তায় পেলাম মালাগুলো তাই আনলাম।"..মা যেন একটু লজ্জা পেয়ে একটা মালা খোঁপায় জড়িয়ে নিতো,মুখে ছড়াতো আত্মতৃপ্তির হাসি।
কাজ করতে করতে কত কথাই মনে আসছে কনকের। অদ্ভুতভাবে আজই ওর মায়ের জন্মদিন। যে মানুষটা আজও সেরা নারী ওর জীবনে,কোন সম্মানই হয়ত তার যোগ্য নয়। এখন আর তেমন করে কিছুই করা হয়না,তবুও ভেবেছিলো আজ যাবে। যদিও মাকে কিছুই বলেনি আজ যাবে,কারণ প্রতিবছর সত্যিই যাওয়া হয়না। কনক চাকরি করেনা,হয়ত তেমন অভাব তার কিছু নেই। তবুও কখনও মনে হয় আজকের দিনে হয়ত স্বাবলম্বী হওয়াটা খুব দরকার। রান্নাগুলো হয়ে আসছে প্রায়,শাশুড়িমা বেশ কয়েকবার দেখে আর চেখে গেছেন। রান্নাটা সত্যিই ভালো করে কনক।
মেয়েদুটো কলেজ থেকে আসার পর ওদের খাবার দিয়ে নিজেও একটু পরিপাটি হয়। ভাবে এবার মাকে একটু ফোন করবে। সকালে একবার কথা বলেছে তবে জন্মদিনটা ভেবেছিলো গিয়েই জানাবে। যদিও মা একগাল হেসে বলে,'মেয়েদের আবার জন্মদিন! চারবোনের সংসারে কোনদিনই হয়নি পালন,এই বাড়িতে আসার পর ঐ তোর বাবা জানতে পেরে টুকটাক কিছু দিতেন।"
বাইরে গাড়ির আওয়াজ পায়,মাসিমারা এত তাড়াতাড়ি চলে এলেন!দিদিভাইও তো আসেনি এখনো। একগাল হেসে মাসিমা বললেন," একটু আগেই চলে এলাম,গল্প করবো বলে।আমার বৌমাও তো একদম তৈরি কখন থেকে। এত গল্প শোনে এই বাড়ির দুই বৌয়ের।"
গল্প বেশ জমে উঠেছে,কনক ব্যস্ত রান্নাঘরে। দিদিভাই এলে তখন ঘরে গিয়ে ফোনটা করে নেবে। শ্বশুরবাড়ির মানুষের মন পেতে গিয়ে সবসময় মনে হয় মা তো ওর একদম নিজের, তাই মায়ের মনেই তো ও আছে। মা কিছু ভাববেনা।
কিছুক্ষণ বাদেই মল্লিকা আসে,হাতে একটা মোমেন্টো আর ফুলের বোকে। শাশুড়িমায়ের হাতে মিস্টির প্যাকেটটা দেয়," মা এটা অফিস থেকে দিয়েছে,আর এটা মাসিমণিদের দিয়ো। আর এই প্যাকেটটাতে আছে শুধু আমাদের জন্য খাবার। আজ নারীদিবস না।"..মাম আর পুপু হই হই করে ওঠে," দেখি,দেখি।"..হাসে মল্লিকা," কনক এটা রাখতো,পরে খুলবি। আমি আসছি রান্নাঘরে এক্ষুণি।"..নিজের ভরা সংসারের দিকে তাকিয়ে বড় শান্তি লাগে সাবিত্রীর। হয়ত অনেককিছু নেই তবুও বাঁধনটা তো আছে এটাই বা কম কি?" সত্যি দিদি আমাদের বৌমাগুলো কিন্তু খুব ভালো।" সুখের ডানা ঝাপটানো হাসি কথার মাঝেও কনকের মনটা ছটফট করে," দিদিভাই,আমি একটু আসছি। মাকে একটু ফোন করে আসি। বেশি রাত হলে হয়ত ঘুমিয়ে পড়বে।"..." আমাকে একটু মশলাগুলো আর কাজু কিসমিশটা দিয়ে যা না।আচ্ছা সোমেনটা এলোনা কেন এখনো,তোর দাদাও তো আসবে। তোকে ফোন করেছিলো সোমেন?"...মশলাগুলো এক জায়গায় করতে করতেই কনক বলে,"না তো,কোনদিন ফোন করে বলতো? জানে সারাদিনই বাড়ি থাকে। আচ্ছা সব গুছিয়ে দিয়েছি।"...বাইরে পা বাড়ায় কনক একটা পরিচিত গলার আওয়াজে বসার ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ায়। বড় অবাক লাগে ওর,সোমেন এসে মুচকি হাসে," মাকে নিয়ে এলাম অফিস ফেরত। মা আর বৌদি বারবার বলে দিয়েছে।"..মনের থেকে একটা ভার নেমে যায় কনকের ছুটে গিয়ে মায়ের কাছে দাঁড়ায়। তারপর একসাথে প্রণাম করে সবাইকে। ততক্ষণে মল্লিকা এসে দাঁড়িয়েছে। হয়ত চোখের কোলে অনেক খুশির মাঝেও জমেছে দুফোঁটা জল। দুইবছর আগে হারিয়েছে মাকে,নিজের সেরা নারী হিসেবে স্বীকৃতির দিনটাতে যে বড় মনে হচ্ছে মায়ের কথা। দুপুরে কনকের সাথে কথা বলেই বুঝেছিলো ওর মনটা।
" কই বড় বৌমা,এদিকে এসো দেখি। এই দেখুন বেয়ান আমার দুই লক্ষ্মী সরস্বতী। আজকের দিনে তো এটাই সেরা পাওনা। আর মেয়েদেরকে
সেরা হওয়ার শিক্ষা তো আমরাই দিই,তাইতো আমরা সেরা মা।"..সাবিত্রীর দুইপাশে কনক আর মল্লিকাকে দেখে মন ভরলো কনকের মায়েরও হয়ত জন্মদিনে এটাই ওনার সেরা প্রাপ্তি। সন্তানের সুখ্যাতি শুনতে কোন মায়েরই না ভালো লাগে। এর মধ্যেই দুই নাতনি প্যাকেট খুলে মাতিয়ে দেয় সারা বাড়ি," ও এর মধ্যে বার্থডে কেক!"..আশ্চর্য হয় কনক দিদিভাই এত কিছু খেয়াল রাখে কি করে,সেই জন্যই হয়ত দিদিভাই সত্যি সেরার সেরা। তবে এর পেছনে আরেকজন আছে, সোমেন।
"আচ্ছা বেয়ান সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে,কোন ছোটবেলায় দেখেছিলাম। আসলে কি জানেন সবাইকে সুখী আর ভালো আমরাই রাখতে পারি। মেয়েরা যে কখনো মা,কখনো বোন কখনো স্ত্রী কখনো বা অসুরনাশিনী দেবী দুর্গা।"
ভালোবাসায় আর ভালোলাগায় হারিয়ে যেতে যেতে কনকের মনে হলো সংসার শুধু নেয়না দেয়ও অনেক কিছু।
সমাপ্ত:-
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
বেআক্কেলে আবদার
******************
চার পাঁচ দিন ধরেই ছেলেমেয়েদের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে একটা ঢাকঢাক গুড়গুড় চলছিল। কিছুতেই ঠাওর করা যাচ্ছিল না ব্যাপারটা কি। সকালে কলেজ শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ক্লাস নাইন আর টেনের চারটে সেকশনের চারজন ক্লাস টিচার ছুটলেন হেড মাস্টারমশাইয়ের ঘরের দিকে। কারণ, প্রতিদিনের মতো ছেলেমেয়েরা ক্লাসে এসেছে ঠিকই কিন্তু কেউ কোন কথা বলছে না। এমনকি রোল কলের সময়ও কেউ সাড়া দেয় নি। সব্বাই এক্কেবারে বোবা হয়ে বসে আছে। সেকি? হেড মাস্টারমশাইয়ের জোড়া ভুরু সেকেন্ড ব্র্যাকেটের চেহারা নিল। কিন্তু গেঁড়োটা হল ছেলেমেয়েদের এই চুপ থাকো আন্দোলনটা যে কিসের জন্য সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। প্রথমে ধমক ধামক তারপর কলেজ থেকে তাড়ানোর হুমকি আর শেষমেশ বাবা বাছা। কিন্তু ভবি ভোলবার নয়। মহা জ্বালা। আর কোন রাস্তা খুঁজে না পেয়ে ছেলেমেয়েদের বাবা মাকে ফোন করে ডেকে পাঠানো হল। সব বাবা মা ই পুরোপুরি অন্ধকারে, এরকম বিটকেল ব্যবহারের কারণ সম্বন্ধে কিছুই জানেন না। শেষ পর্যন্ত এক ছাত্রীর দাদুর কাছ থেকে জানা গেল, সমস্যাটা বিনীতবাবুর সায়েন্স ক্লাস না নেওয়া নিয়ে।
গত তিন চার বছর যাবত উঁচু ক্লাসের ফিজিক্যাল সায়েন্স টিচারের পদটা খালিই পড়ে আছে। নিরুপায় হেড মাস্টারমশাই শেষমেশ নিচু ক্লাসের অঙ্কের টিচার বিনীতবাবুকেই ওটা পড়ানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বিনীতবাবু সাধারণ সায়েন্স গ্র্যাজুয়েট। সুতরাং তিনি উঁচু ক্লাসে পড়ানোর যোগ্য নন। কিন্তু কি আর করা যাবে। কলেজের তো ছুঁচো গেলা অবস্থা, টিচার নেই অথচ সায়েন্সও পড়াতে হবে। তাই বিনীতবাবুকে দিয়েই ঠেকনা দেওয়ার কাজটা চলছিল।
মাত্র দিন দশেক হল ফিজিক্যাল সায়েন্সের একজন যোগ্য টিচার পাওয়া গেছে, ইন্দ্র রায়। তাই বিনীতবাবু এখন আর নাইন টেনের ক্লাস নিচ্ছেন না আর সেটাই হল ছেলেমেয়েদের গোঁসার কারণ।
এদিকে বিনীতবাবুর অবস্থা ধরণী দ্বিধা হও গোছের, মুখ লুকোবার জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না। এমনিতেই ভদ্রলোকের স্বভাবটা তাঁর নামের সাথে এক্কেবারে মানানসই। নিজেকে আড়ালে রাখতে পারলেই যেন স্বস্তি পান। সেখানে সারা কলেজের চোখ এখন তার ওপর। তাঁকে বেশিরভাগ টিচারই কখনো ধর্তব্যের মধ্যে রাখেন না। এমন কি তিনি যে আছেন এটাই অনেকের অনেক সময় খেয়াল থাকে না। আর সেই বিনীতবাবুই কিনা রাতারাতি ছেলেমেয়েদের এতো আপনার হয়ে উঠলেন যে তাঁকে কেন্দ্র করে এরকম একটা ধুন্ধুমার কাণ্ড বেঁধে গেল? কারোই মাথায় কিছু ঢুকছিল না। এছাড়াও একটা জ্বলুনি তো হচ্ছিলই। আর সেটা অনেক টিচারই চাপতে না পেরে ঠারেঠোরে বুঝিয়েও দিচ্ছিলেন হাওয়ায় দু চারটে বাঁকা কথা ছুঁড়ে দিয়ে।
কিন্তু ছেলেমেয়েদের এই চুপ থাকো আন্দোলন থামাতে তো হবে। উপায় খুঁজতে হেড মাস্টারমশাই টিচারদের নিয়ে মিটিঙে বসলেন। মিটিঙের শুরুই হল বিনীতবাবুর দিকে তাক করে ছোঁড়া প্রশ্ন দিয়ে
কি ব্যাপার, ছেলেমেয়েরা হঠাৎ এরকম বেআক্কেলে আবদার করছে কেন?
বিনীতবাবু মিনমিনে গলায় বললেন
আমি তো কিছু জানিনা। আমি কি করে বলব বলুন?
অনেক অনুরোধ উপরোধ, তর্জনগর্জন আর ট্যারাবেঁকা মন্তব্যের পরেও বিনীতবাবুর সেই একই কথা।
শেষমেশ ঠিক হল ছেলেমেয়েদের মধ্যে থেকেই দু একজন আসুক, বলুক তারা চায়টা কি? ছেলেমানুষি আব্দার করলেই তো হবে না।
কিন্তু কা কস্য পরিবেদনা। কেউ এলো না। হতচ্ছাড়া হতচ্ছাড়িগুলো সিট ছেড়ে নড়বে না। এমন কি টিফিন টাইমে টিফিনটা পর্যন্ত খায় নি কেউ! ঠায় বসে আছে! শুধু প্রকৃতির ডাকে এক আধবার সিট ছেড়ে উঠতে হচ্ছে, কিন্তু ওইটুকুই। কথায় বলে ঠ্যালায় পড়ে ঢ্যালায় সেলাম। তাই শেষ পর্যন্ত হেড মাস্টারমশাইয়ের নেতৃত্বে টিচার বাহিনীই চললেন ক্লাসে। অনেক বাবা বাছা করে গোটা ক্লাস টেনকে একটা ঘরে জড়ো করা গেল। হেড মাস্টারমশাই মাথার টাকে বার দুই আঙুল চালিয়ে, তিনবার গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন
তোমরা বড় হয়েছ, তোমরা তো বোঝ কলেজের একটা নিয়ম আছে। তোমরা কেন আমরাও ইচ্ছে করলেই সেই নিয়ম ভাঙতে পারি না। পরের বাক্যটা শুরু করতে যাবেন আর ঠিক তক্ষুনি পিছন থেকে একটা প্রশ্ন ধেয়ে এলো
স্যার, নিয়ম কি আমাদের ভালোর জন্য নাকি শুধুই চোখকান বুঁজে মানার জন্য? সেটা যদি একটু বলেন।
গলাটা সুদীপের। ত্যাঁদড় দ্য গ্রেট। ঠোক্কর খেতে খেতে ক্লাস টেন অব্দি পৌঁছেছে, মাধ্যমিকটা টপকাতে পারবে কিনা স্বয়ং ঈশ্বরই জানেন। প্রথম ধাক্কার ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়াটা সামলে নিয়ে অঙ্কের কাঠখোট্টা হরেনবাবু ধমকে উঠলেন
চুপ হতভাগা। বছর বছর গাড্ডা মারছে, তার মুখে আবার বড় বড় লেকচার।
জানেন স্যার, আপনি ক্লাস না নিলেও না আমাদের কিস্যু আসবে যাবে না কিন্তু বিনীতস্যার ক্লাস না নিলে আমরা যেমন বসে আছি তেমনই বসে থাকব। আচ্ছা স্যার, ক্লাস নাইন থেকে অঙ্কে ফেল করতে করতে তো আমি পুরো হেদিয়ে গেছি কিন্তু ফিজিক্যাল সায়েন্সে একবারও কেন ফেল করলাম না বলুন তো?
হরেনবাবু তখন তার দিকে তেড়ে আসা ভয়ঙ্কর অঙ্কটার উত্তর হাঁটকাচ্ছেন। অবস্থা সামাল দিতে হেড মাস্টারমশাই বলে উঠলেন
ঠিক আছে, ঠিক আছে। তারপর ফার্স্ট গার্ল নয়নার দিকে তাকিয়ে বললেন
নয়না, তুমি বলতো নতুন স্যারের কাছে পড়তে তোমাদের এতো আপত্তি কেন?
অমনি সুদীপ আবার লাফিয়ে উঠল
ও কি করে বলবে স্যার? বইয়ের কঠিন কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেই কি হক কথা বলতে পারা যায়? তাই আমি বলছি স্যার। বিনীতস্যার প্রথম যেদিন সায়েন্স ক্লাস নিতে ঢুকলেন সেদিন পড়ান শুরু করার আগে বলেছিলেন, দ্যাখ একটা হাঁটতে না শেখা বাচ্চার সামনে সব্বাই যদি গ্যাঁট হয়ে বসে শুধু মুখে বলে যায়, হাঁট, হাঁট, তাহলে ও কোনদিন হাঁটতে শিখবে না। কারণ ও তো জানেই না হাঁটা কাকে বলে। ওর সামনে সবাই যখন হাঁটবে তখন ও প্রথম হাঁটা দেখবে, ওর হাঁটা ব্যাপারটাকে মজার মনে হবে, ভাল লাগবে। তখন ও নিজে হাঁটার চেষ্টা করবে আর তারপরেই দেখবি হাঁটছে। তেমনি সায়েন্সটাকে আগে চোখ দিয়ে দ্যাখ, দেখলেই মজা পাবি, মজা পেলেই ভাল লাগবে, ভাল লাগলেই পড়বি আর পড়তে পড়তেই শিখে যাবি। হ্যাঁ, কোন কোন বাচ্চা যেমন হাঁটা দেখতে দেখতেই শিখে যায় কাউকে কাউকে আবার দুদিন হাত ধরে হাঁটাতেও হয় কারণ সে পড়ে যাওয়ার ভয় পায়। তার ভয়টা ভেঙে দিতে হয়। সেইরকম তোদের মধ্যেও কারো কারো পারব না’র ভয়টা আছে। তাদেরও, ওই পারব না’র ভয়টা ভেঙে দিতে, দুদিন হাত ধরে পারিয়ে দিতে হবে। ব্যস। শোন ভাল স্টুডেন্ট মন্দ স্টুডেন্ট বলে কিচ্ছু নেই রে আছে শুধু ভয় না পাওয়া স্টুডেন্ট আর ভয় পাওয়া স্টুডেন্ট। বিকলাঙ্গ ছাড়া কোন বাচ্চা দেখাতে পারবি যে হাঁটা শেখেনি। তেমনি তোরাও সবাই সায়েন্স শিখে যাবি। সব্বাই। স্যার সেদিন প্রথম মনে হয়েছিল আমিও পারব। স্যার, কাউকে কাউকে যে দুদিন হাত ধরে হাঁটিয়ে, পড়ে যাওয়ার ভয়টা ভেঙে দিতে হয়, এটা আর কোন স্যার কি কখনো ভেবেছেন? এবার আপনিই বলুন, কেন বিনীতস্যারকে চাইব না?
বাঃ, এই ফেলু ছেলেটা যে এতো সুন্দর গুছিয়ে বলতে পারে খেয়াল করেন নি তো কোনদিন! কিন্তু ও যে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল তার উত্তর তো হেডমাস্টার নিকুঞ্জবাবুর কাছেও নেই। তাই সামাল দিতেই বলতে হল
দেখ, ইন্দ্রস্যার কতো কোয়ালিফাইড, কতো কিছু জানেন...
ব্যস, অমনি আবার তিড়িং করে উঠে দাঁড়ালো সুদীপ
স্যার, উনি কতো কোয়ালিফাইড আর কতো জানেন সেটা বেশি জরুরি না আমরা কতোটা সহজে শিখলাম, সেটা বেশি জরুরি? স্যার ইন্দ্রস্যার পড়ান টু এভরি অ্যাকশন দেয়ার ইজ অ্যান ইকুয়াল এন্ড ওপোজিট রিঅ্যাকশন, নাইট্রোজেনের ভ্যালেন্সি তিন আর হাইড্রোজেনের এক তাই অ্যামোনিয়ার ফর্মুলা NH3। ওই খটমটে কথাগুলো কানে ঢোকে ঠিকই কিন্তু মাথায় ঢোকে না, স্যার। অথচ সেটাই বিনীতস্যার যখন পড়ান, যেমন কম্ম তেমনি ফল, যত জোরে দেওয়ালে মাথা ঠুকবি দেওয়ালও ততো জোরে তোর মাথায় ব্যাথা দেবে। অথবা নাইট্রোজেনের তিন তিনটে হাত কিন্তু হাইড্রোজেনের যে একটা মোটে হাত তাই নাইট্রোজেনটা তিনটে হাত দিয়ে তিনটে হাইড্রোজেনকে ধরে। কিন্তু এতো কথা লিখবে কে? তাই ছোট্ট করে লিখলাম NH3 আর ওটার নাম দিলাম অ্যামোনিয়া। তখন কই খটমটে লাগে না তো, টুক করে মাথায় ঢুকে যায়।
ইন্দ্রবাবু রে রে করে উঠলেন, এ সব কি? এসব তো ওভার সিমপ্লিফিকেশন। যেটা যা সেটাকে সেভাবেই শিখতে হবে। এ কি সাহিত্য নাকি যে যাহোক একটা অ্যান্যাল্যাজি দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম আর হয়ে গেল?
এদিকে বাকি যাঁরা ইন্দ্রবাবুর হয়ে মুখ খুলবেন ভেবেছিলেন তাঁরা ততোক্ষণে, সুদীপের প্রশ্নের ঘায়ে হরেনবাবুকে মুখ থুবড়ে পড়তে দেখে, বেইজ্জতির ভয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
শুধু হেডমাস্টার নিকুঞ্জবাবুর তখন মনে পড়ছে সেই কলেজ জীবনের কথা। খুব ইচ্ছে ছিল সায়েন্স পড়ার। কিন্তু ইচ্ছের ঘাড়ে ভয় চেপে বসেছিল। তাই ইচ্ছেটা ইচ্ছে হয়েই থেকে গেছে। ইস, তিনি যদি কোন বিনীতস্যার পেতেন।
লেখক এর নাম জানা নেই৷
(সংগৃহীত)
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
অনেক দিন ধরে বড়োদের জন্য দুস্টু গল্প লোভে পাপ লিখলাম কিন্তু এই কামুক লেখকের বাইরেও যে ওই ভদ্র লেখক সত্তাটাও অবশিষ্ট আছে সেটার বহিঃপ্রকাশের সুযোগই আসেনি. অনেকদিন নন ইরোটিক বিশেষ করে ছোটদের জন্য কিছুই লেখা হয়নি. আমি জানি এই সাইট বড়োদের কিন্তু ঐযে আগেই বলেছিলাম সবার মধ্যেই একটা বাচ্চা আজও বর্তমান. আমার নতুন গল্প সেই বাচ্চাটার জন্য. হ্যা একটা ছোট্ট কিন্তু খুব সুন্দর গপ্পো নিয়ে আসছি কাল দুপুরে. আশা করি পছন্দ হবে ❤
কাল দুপুরে আসছে..... ভূমি (কিছু কথা ছিল মনে থ্রেডে)
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(11-09-2021, 03:49 PM)dada_of_india Wrote: বেআক্কেলে আবদার
******************
চার পাঁচ দিন ধরেই ছেলেমেয়েদের মধ্যে কিছু একটা নিয়ে একটা ঢাকঢাক গুড়গুড় চলছিল। কিছুতেই ঠাওর করা যাচ্ছিল না ব্যাপারটা কি। সকালে কলেজ শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ক্লাস নাইন আর টেনের চারটে সেকশনের চারজন ক্লাস টিচার ছুটলেন হেড মাস্টারমশাইয়ের ঘরের দিকে। কারণ, প্রতিদিনের মতো ছেলেমেয়েরা ক্লাসে এসেছে ঠিকই কিন্তু কেউ কোন কথা বলছে না। এমনকি রোল কলের সময়ও কেউ সাড়া দেয় নি। সব্বাই এক্কেবারে বোবা হয়ে বসে আছে। সেকি? হেড মাস্টারমশাইয়ের জোড়া ভুরু সেকেন্ড ব্র্যাকেটের চেহারা নিল। কিন্তু গেঁড়োটা হল ছেলেমেয়েদের এই চুপ থাকো আন্দোলনটা যে কিসের জন্য সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। প্রথমে ধমক ধামক তারপর কলেজ থেকে তাড়ানোর হুমকি আর শেষমেশ বাবা বাছা। কিন্তু ভবি ভোলবার নয়। মহা জ্বালা। আর কোন রাস্তা খুঁজে না পেয়ে ছেলেমেয়েদের বাবা মাকে ফোন করে ডেকে পাঠানো হল। সব বাবা মা ই পুরোপুরি অন্ধকারে, এরকম বিটকেল ব্যবহারের কারণ সম্বন্ধে কিছুই জানেন না। শেষ পর্যন্ত এক ছাত্রীর দাদুর কাছ থেকে জানা গেল, সমস্যাটা বিনীতবাবুর সায়েন্স ক্লাস না নেওয়া নিয়ে।
গত তিন চার বছর যাবত উঁচু ক্লাসের ফিজিক্যাল সায়েন্স টিচারের পদটা খালিই পড়ে আছে। নিরুপায় হেড মাস্টারমশাই শেষমেশ নিচু ক্লাসের অঙ্কের টিচার বিনীতবাবুকেই ওটা পড়ানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বিনীতবাবু সাধারণ সায়েন্স গ্র্যাজুয়েট। সুতরাং তিনি উঁচু ক্লাসে পড়ানোর যোগ্য নন। কিন্তু কি আর করা যাবে। কলেজের তো ছুঁচো গেলা অবস্থা, টিচার নেই অথচ সায়েন্সও পড়াতে হবে। তাই বিনীতবাবুকে দিয়েই ঠেকনা দেওয়ার কাজটা চলছিল।
মাত্র দিন দশেক হল ফিজিক্যাল সায়েন্সের একজন যোগ্য টিচার পাওয়া গেছে, ইন্দ্র রায়। তাই বিনীতবাবু এখন আর নাইন টেনের ক্লাস নিচ্ছেন না আর সেটাই হল ছেলেমেয়েদের গোঁসার কারণ।
এদিকে বিনীতবাবুর অবস্থা ধরণী দ্বিধা হও গোছের, মুখ লুকোবার জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না। এমনিতেই ভদ্রলোকের স্বভাবটা তাঁর নামের সাথে এক্কেবারে মানানসই। নিজেকে আড়ালে রাখতে পারলেই যেন স্বস্তি পান। সেখানে সারা কলেজের চোখ এখন তার ওপর। তাঁকে বেশিরভাগ টিচারই কখনো ধর্তব্যের মধ্যে রাখেন না। এমন কি তিনি যে আছেন এটাই অনেকের অনেক সময় খেয়াল থাকে না। আর সেই বিনীতবাবুই কিনা রাতারাতি ছেলেমেয়েদের এতো আপনার হয়ে উঠলেন যে তাঁকে কেন্দ্র করে এরকম একটা ধুন্ধুমার কাণ্ড বেঁধে গেল? কারোই মাথায় কিছু ঢুকছিল না। এছাড়াও একটা জ্বলুনি তো হচ্ছিলই। আর সেটা অনেক টিচারই চাপতে না পেরে ঠারেঠোরে বুঝিয়েও দিচ্ছিলেন হাওয়ায় দু চারটে বাঁকা কথা ছুঁড়ে দিয়ে।
কিন্তু ছেলেমেয়েদের এই চুপ থাকো আন্দোলন থামাতে তো হবে। উপায় খুঁজতে হেড মাস্টারমশাই টিচারদের নিয়ে মিটিঙে বসলেন। মিটিঙের শুরুই হল বিনীতবাবুর দিকে তাক করে ছোঁড়া প্রশ্ন দিয়ে
কি ব্যাপার, ছেলেমেয়েরা হঠাৎ এরকম বেআক্কেলে আবদার করছে কেন?
বিনীতবাবু মিনমিনে গলায় বললেন
আমি তো কিছু জানিনা। আমি কি করে বলব বলুন?
অনেক অনুরোধ উপরোধ, তর্জনগর্জন আর ট্যারাবেঁকা মন্তব্যের পরেও বিনীতবাবুর সেই একই কথা।
শেষমেশ ঠিক হল ছেলেমেয়েদের মধ্যে থেকেই দু একজন আসুক, বলুক তারা চায়টা কি? ছেলেমানুষি আব্দার করলেই তো হবে না।
কিন্তু কা কস্য পরিবেদনা। কেউ এলো না। হতচ্ছাড়া হতচ্ছাড়িগুলো সিট ছেড়ে নড়বে না। এমন কি টিফিন টাইমে টিফিনটা পর্যন্ত খায় নি কেউ! ঠায় বসে আছে! শুধু প্রকৃতির ডাকে এক আধবার সিট ছেড়ে উঠতে হচ্ছে, কিন্তু ওইটুকুই। কথায় বলে ঠ্যালায় পড়ে ঢ্যালায় সেলাম। তাই শেষ পর্যন্ত হেড মাস্টারমশাইয়ের নেতৃত্বে টিচার বাহিনীই চললেন ক্লাসে। অনেক বাবা বাছা করে গোটা ক্লাস টেনকে একটা ঘরে জড়ো করা গেল। হেড মাস্টারমশাই মাথার টাকে বার দুই আঙুল চালিয়ে, তিনবার গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন
তোমরা বড় হয়েছ, তোমরা তো বোঝ কলেজের একটা নিয়ম আছে। তোমরা কেন আমরাও ইচ্ছে করলেই সেই নিয়ম ভাঙতে পারি না। পরের বাক্যটা শুরু করতে যাবেন আর ঠিক তক্ষুনি পিছন থেকে একটা প্রশ্ন ধেয়ে এলো
স্যার, নিয়ম কি আমাদের ভালোর জন্য নাকি শুধুই চোখকান বুঁজে মানার জন্য? সেটা যদি একটু বলেন।
গলাটা সুদীপের। ত্যাঁদড় দ্য গ্রেট। ঠোক্কর খেতে খেতে ক্লাস টেন অব্দি পৌঁছেছে, মাধ্যমিকটা টপকাতে পারবে কিনা স্বয়ং ঈশ্বরই জানেন। প্রথম ধাক্কার ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়াটা সামলে নিয়ে অঙ্কের কাঠখোট্টা হরেনবাবু ধমকে উঠলেন
চুপ হতভাগা। বছর বছর গাড্ডা মারছে, তার মুখে আবার বড় বড় লেকচার।
জানেন স্যার, আপনি ক্লাস না নিলেও না আমাদের কিস্যু আসবে যাবে না কিন্তু বিনীতস্যার ক্লাস না নিলে আমরা যেমন বসে আছি তেমনই বসে থাকব। আচ্ছা স্যার, ক্লাস নাইন থেকে অঙ্কে ফেল করতে করতে তো আমি পুরো হেদিয়ে গেছি কিন্তু ফিজিক্যাল সায়েন্সে একবারও কেন ফেল করলাম না বলুন তো?
হরেনবাবু তখন তার দিকে তেড়ে আসা ভয়ঙ্কর অঙ্কটার উত্তর হাঁটকাচ্ছেন। অবস্থা সামাল দিতে হেড মাস্টারমশাই বলে উঠলেন
ঠিক আছে, ঠিক আছে। তারপর ফার্স্ট গার্ল নয়নার দিকে তাকিয়ে বললেন
নয়না, তুমি বলতো নতুন স্যারের কাছে পড়তে তোমাদের এতো আপত্তি কেন?
অমনি সুদীপ আবার লাফিয়ে উঠল
ও কি করে বলবে স্যার? বইয়ের কঠিন কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেই কি হক কথা বলতে পারা যায়? তাই আমি বলছি স্যার। বিনীতস্যার প্রথম যেদিন সায়েন্স ক্লাস নিতে ঢুকলেন সেদিন পড়ান শুরু করার আগে বলেছিলেন, দ্যাখ একটা হাঁটতে না শেখা বাচ্চার সামনে সব্বাই যদি গ্যাঁট হয়ে বসে শুধু মুখে বলে যায়, হাঁট, হাঁট, তাহলে ও কোনদিন হাঁটতে শিখবে না। কারণ ও তো জানেই না হাঁটা কাকে বলে। ওর সামনে সবাই যখন হাঁটবে তখন ও প্রথম হাঁটা দেখবে, ওর হাঁটা ব্যাপারটাকে মজার মনে হবে, ভাল লাগবে। তখন ও নিজে হাঁটার চেষ্টা করবে আর তারপরেই দেখবি হাঁটছে। তেমনি সায়েন্সটাকে আগে চোখ দিয়ে দ্যাখ, দেখলেই মজা পাবি, মজা পেলেই ভাল লাগবে, ভাল লাগলেই পড়বি আর পড়তে পড়তেই শিখে যাবি। হ্যাঁ, কোন কোন বাচ্চা যেমন হাঁটা দেখতে দেখতেই শিখে যায় কাউকে কাউকে আবার দুদিন হাত ধরে হাঁটাতেও হয় কারণ সে পড়ে যাওয়ার ভয় পায়। তার ভয়টা ভেঙে দিতে হয়। সেইরকম তোদের মধ্যেও কারো কারো পারব না’র ভয়টা আছে। তাদেরও, ওই পারব না’র ভয়টা ভেঙে দিতে, দুদিন হাত ধরে পারিয়ে দিতে হবে। ব্যস। শোন ভাল স্টুডেন্ট মন্দ স্টুডেন্ট বলে কিচ্ছু নেই রে আছে শুধু ভয় না পাওয়া স্টুডেন্ট আর ভয় পাওয়া স্টুডেন্ট। বিকলাঙ্গ ছাড়া কোন বাচ্চা দেখাতে পারবি যে হাঁটা শেখেনি। তেমনি তোরাও সবাই সায়েন্স শিখে যাবি। সব্বাই। স্যার সেদিন প্রথম মনে হয়েছিল আমিও পারব। স্যার, কাউকে কাউকে যে দুদিন হাত ধরে হাঁটিয়ে, পড়ে যাওয়ার ভয়টা ভেঙে দিতে হয়, এটা আর কোন স্যার কি কখনো ভেবেছেন? এবার আপনিই বলুন, কেন বিনীতস্যারকে চাইব না?
বাঃ, এই ফেলু ছেলেটা যে এতো সুন্দর গুছিয়ে বলতে পারে খেয়াল করেন নি তো কোনদিন! কিন্তু ও যে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিল তার উত্তর তো হেডমাস্টার নিকুঞ্জবাবুর কাছেও নেই। তাই সামাল দিতেই বলতে হল
দেখ, ইন্দ্রস্যার কতো কোয়ালিফাইড, কতো কিছু জানেন...
ব্যস, অমনি আবার তিড়িং করে উঠে দাঁড়ালো সুদীপ
স্যার, উনি কতো কোয়ালিফাইড আর কতো জানেন সেটা বেশি জরুরি না আমরা কতোটা সহজে শিখলাম, সেটা বেশি জরুরি? স্যার ইন্দ্রস্যার পড়ান টু এভরি অ্যাকশন দেয়ার ইজ অ্যান ইকুয়াল এন্ড ওপোজিট রিঅ্যাকশন, নাইট্রোজেনের ভ্যালেন্সি তিন আর হাইড্রোজেনের এক তাই অ্যামোনিয়ার ফর্মুলা NH3। ওই খটমটে কথাগুলো কানে ঢোকে ঠিকই কিন্তু মাথায় ঢোকে না, স্যার। অথচ সেটাই বিনীতস্যার যখন পড়ান, যেমন কম্ম তেমনি ফল, যত জোরে দেওয়ালে মাথা ঠুকবি দেওয়ালও ততো জোরে তোর মাথায় ব্যাথা দেবে। অথবা নাইট্রোজেনের তিন তিনটে হাত কিন্তু হাইড্রোজেনের যে একটা মোটে হাত তাই নাইট্রোজেনটা তিনটে হাত দিয়ে তিনটে হাইড্রোজেনকে ধরে। কিন্তু এতো কথা লিখবে কে? তাই ছোট্ট করে লিখলাম NH3 আর ওটার নাম দিলাম অ্যামোনিয়া। তখন কই খটমটে লাগে না তো, টুক করে মাথায় ঢুকে যায়।
ইন্দ্রবাবু রে রে করে উঠলেন, এ সব কি? এসব তো ওভার সিমপ্লিফিকেশন। যেটা যা সেটাকে সেভাবেই শিখতে হবে। এ কি সাহিত্য নাকি যে যাহোক একটা অ্যান্যাল্যাজি দিয়ে বুঝিয়ে দিলাম আর হয়ে গেল?
এদিকে বাকি যাঁরা ইন্দ্রবাবুর হয়ে মুখ খুলবেন ভেবেছিলেন তাঁরা ততোক্ষণে, সুদীপের প্রশ্নের ঘায়ে হরেনবাবুকে মুখ থুবড়ে পড়তে দেখে, বেইজ্জতির ভয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
শুধু হেডমাস্টার নিকুঞ্জবাবুর তখন মনে পড়ছে সেই কলেজ জীবনের কথা। খুব ইচ্ছে ছিল সায়েন্স পড়ার। কিন্তু ইচ্ছের ঘাড়ে ভয় চেপে বসেছিল। তাই ইচ্ছেটা ইচ্ছে হয়েই থেকে গেছে। ইস, তিনি যদি কোন বিনীতস্যার পেতেন।
লেখক এর নাম জানা নেই৷
(সংগৃহীত)
একে একে সব পুরোনো মন উড়িয়ে দেওয়া লেখকেরা চলে গেলো ছেড়ে ...
শুধু এই দাদা এখনো মনে রেখেছে আমাদের বিশেষ করে আমাকে ... তাইতো এতো ব্যস্ততার মাঝেও এখানে আসে আর লিখে যায় কিছু না কিছু একটা ...
দাদা
পাঁঠার ঝোল আবার কবে খাওয়াচ্ছ , তোমার নিজের রান্না করা ....
I love you Dada
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
12-09-2021, 07:44 PM
(This post was last modified: 12-09-2021, 07:48 PM by ddey333. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
ডিপ্রেসন -
কে জানে বাবা ,আমাদের দুই ভাই বোনকেই তো বাবা মা ,পাড়া-প্রতিবেশী যে যখন পেরেছে দু এক ঘা বসিয়ে দিয়েছে ,ঢাকে কাঠি ছোঁয়ানোর মতোই। কখনো কাউকে বলতেই পারিনি , আমার অন্যায়টা কি? আমাকে মারছো কেন?
বরং বলতে গেলে এক্সট্রা দুটো ফ্রি পাওয়ার চান্স থাকতো ,তাই মারের মুহূর্তে তর্ক করতে সাহসে কুলতো না। নিজের মনেই হাতের কাজ সারতে সারতে গজগজ করে চলেছে সোহিনী।
তার ক্লাস টেনের ছেলের নাকি ডিপ্রেশন আসছে।
ডিপ্রেশন ??বাংলায় যাকে বলে নিম্নচাপ?
কে জানে !!বাড়িতে কম্পিউটার , টিভি , হাতে মোবাইল ,পকেট মানি, সর্বোপরি এত প্রাইভেসি থাকা সত্ত্বেও কেন ডিপ্রেশন আসে!!
কথায় কথায় বলে, আমাকে একটু একা থাকতে দাও!!
সোহিনীর ছেলে অভিরূপ সবে মাত্র ক্লাস টেনে উঠেছে। সেই ছেলেকে জিটি রোডের ওপর দিয়ে জোরে সাইকেল চালানোর জন্য সোহিনীর স্বামী তাপস একটু বকেছে। বাবার মুখের ওপর সমানে তর্ক চালাচ্ছিল বলেই হয়তো রেগে গিয়ে তাপস দুটো থাপ্পড় মেরেছে অভিরূপকে। ব্যাস আর যায় কোথায়!! অভিরূপ সকাল থেকে গোজ হয়ে ঘরে বসে আছে।তার নাকি মারাত্মক প্রেস্টিজ হ্যাম্পার হয়েছে।
সোহিনী ভাবছিল, একবার সোহিনী ক্লাস নাইনে পেয়ারা পারতে গিয়ে পাঁচিলের কাঁচ এ হাত কেটেছিল, ওর মা মেয়ের ওই রক্তাক্ত হাত দেখে নিজে কাঁদছিলো আর সোহিনীকে পেটাচ্ছিলো। কই তখন তো সোহিনীর একবারও মনে হয়নি তার মা তাকে ভালোবাসে না। বরং এটাই মনে হচ্ছিল, সে অন্যায় করে ফেলেছে ,মা কষ্ট পেয়ে মারছে। বাবা,মা ,কলেজের টিচার কারোর কাছেই মার খেয়ে কখনো মনে হয়নি আর বেঁচে থেকে কি হবে?
যদিও সোহিনীর বাবা-মা কখনোই বেল্ট বা গরম শিক দিয়ে মারেনি কখনো।
অভিকে খেতে দিতে গিয়েছিল সোহিনী, অভি পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে ,সে আর এবাড়িতে কিছু খাবে না।
মা হিসাবে সোহিনী বোঝাতে গিয়েছিল, তুই আমাদের একমাত্র সন্তান,তোর কিছু হলে আমরা বাঁচবো কি করে?
অভি মুখের ওপর বলেছে, কেন, আমি মরে গেলে তুমি আর বাবা স্বাধীনতা উপলব্ধি করবে!
আশ্চর্য ! যদি দুজনে থাকতে চাইতো তাহলে কি আর এত কষ্ট করে অভিকে মানুষ করতো?
দুম করে দরজা বন্ধ করার আওয়াজ পেলো সোহিনী।
ওদিকে অফিসে গিয়েই তাপসের মন খারাপ। ছেলের গায়ে হাত না তুললেই হতো। একটু বুঝিয়ে বললেই চলতো!!
কিন্তু অভি যে বলে বসলো, আমি লরির তলায় গেলে তোমার কি? আমার জীবন, আমি কিভাবে কাটাবো সেটা একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার।
শুধুই অভির জীবন? বাবা হিসাবে নিজের সন্তানকে ভালো মন্দ বলার অধিকারটুকুও নেই তাপসের!!
তাহলে দিনরাত এক করে এই আই টি সেক্টরে ঘাড় গুঁজে খেটে যাচ্ছে কি শুধু নিজের পেটের ক্ষিদের জন্য ? নাকি অভির যাতে কোনো অভাব না হয় সে জন্য।
ছেলেকে এই বয়সেই কম্পিউটার, মোবাইল এসব কিনে দিয়েছিল তাপস। অনেকে বলেছিল, ছেলে উচ্ছন্নে যাবে। তাপস শোনে নি, ছেলের ওপর তার পূর্ন আস্থা ছিল। কে জানে ভুল করলো কি??
সন্ধ্যের দিকে বাড়ি ফেরার সময় প্রায়ই দেখে , গলির মোড়ে সমীরের কোচিংয়ের সামনে ছেলে মেয়েগুলো প্রেম করছে। কোচিং ক্লাসে ঢোকেনি। বাইরে দাঁড়িয়ে আড্ডা মারছে । হয়তো স্যারের ফিজের টাকায় মুভি দেখবে। কোনটা অন্যায়, নিজের সন্তানকে বিশ্বাস করা?
মহিমদা তাপসের কাঁধে হাত দিয়ে বললো, কি রে আজ কাজে মন নেই কেন?
অভির ঘটনাটি শুনে বললো, এত এখন ঘরে ঘরে সমস্যারে। ওদের যতই প্রায়োরিটি দাও তবুও ওরা ডিপ্রেশনে ভোগে। বেশি কিছু বলতে যাস না, শুনছিস তো নিউজে ক্লাস সেভেনের, সিক্সের ছেলেরা সব সুইসাইড করছে। আবার কত আইন হয়েছে, বাবা মা মারলে নাকি শিশু নিগ্রহের কি সব ধারায় কেস করা যাচ্ছে।
বুকের ভিতরটা শুকিয়ে গেল তাপসের।
ফোনটা করেই ফেললো, সোহিনীকে।
অভি কলেজে গেছে?
সোহিনী ফিসফিস করে অপরাধীর মত গলায় বলল, কিছু খায় নি দরজা বন্ধ করে রেখেছে। ডাকলাম ,বললো,একা থাকতে দাও।
ফোনে কথা বলছিল কোনো বন্ধুর সাথে। আবছা শুনতে পেলাম, আর নাকি বাঁচতে ইচ্ছে করছে না ওর।আমাদের অত্যাচারে ও নাকি ব্যতিব্যস্ত।
হাত পা গুলো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তাপসের।
অভিকে ছাড়া নিজেদের ফ্ল্যাটটা কল্পনা করতেও ভয় করছে।
কদিন আগেই একটা ঘটনা শুনলো, কলেজের পিছনে সিগারেট খাচ্ছিলো দেখতে পেয়ে বাবা একটা থাপ্পর মেরেছিলো বলে, ছেলেটা নাকি সুইসাইড করেছে। ছেলেটির মা এখন মেন্টাল এসাইলামে।
অভির কিছু হয়ে গেলে সোহিনী আর তাপস বাঁচবে কি নিয়ে!!
তাপস ভাবছে নিজের ছেলেবেলাটা...
তখন তাপস কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। কয়েকটা বন্ধু মিলে একদিন কলেজ কেটে মুভি দেখতে গিয়েছিল, কি করে যেন সেটা তাপসের বাবার কানে পৌঁছে যায়। তারপরই বাবা তাপসের পিঠে স্কেল দিয়ে বেদম মেরেছিলো । অত অপমানের পরেও কিন্তু তাপসের মৃত্যুচিন্তা আসেনি।
বাবা মায়েরা কি নিজের সন্তানের শত্রু?
সোহিনী হাতের কাজ ফেলে রেখে বারবার যাচ্ছে ছেলের ঘরের দরজায় কান পেতে দেখতে।
জানালার ফাঁকে চোখ রেখে খুঁজছে সেই বছর ষোলো আগে জন্মানো কচি মাংসপিন্ডটাকে।
অভির যখন দাঁত উঠছিল,অভি খুব জোরে কামড়ে দিয়েছিল, সোহিনীর আঙুল। সেই ব্যাথা লাগাটাও বড্ড আনন্দের ছিল সোহিনীর কাছে। কত বিনিদ্র রজনী কেটেছে শুধু অভির মুখের দিকে তাকিয়ে। এগুলো অভির কাছে বলতে গেলে হয়তো ও বলবে, ওভার এক্টিং বন্ধ কর। সব মায়েরাই এগুলো করে!! নিশ্চয় করে ,মায়েরাই তো আত্মত্যাগ করে।
ওই কচি শিশুটা কবে বড় হয়ে বাবা মায়ের দায়িত্ব নেবে !নাকি আদৌ কোনো সম্পর্ক রাখবে না ,সে কথা না ভাবেই বাবা,মায়েরা তাকে বড় করে।
আঙুল ধরে খুব সাবধানে শক্ত মাটিতে হাঁটতে শেখায়।
নিজেদের প্রিয় খাবার ,নিজেদের পছন্দগুলো আস্তে আস্তে পরিবর্তীত হয়ে যায় সন্তানের পছন্দ মত .
অভি...এই অভি...
সোহিনী ডাকছে...
ঘুমিয়ে গেল নাকি ছেলেটা!! কিছু না খেয়ে খালি পেটে ই ঘুমিয়ে গেল!!
বার চারেক নক করার পর অভি বিরক্ত মুখে দরজাটা খুলে বললো, তোমাকে বললাম না,আমাকে ডিস্টার্ব করো না।
আমি বাঁচতে চাই না। এত ডিপ্রেশন নিয়ে বাঁচার ইচ্ছে আমার নেই।
সোহিনী বললো, চল অভি ,আমরা একটা জায়গায় যাবো।
অভি বিরক্ত মুখে বললো, আমি যাবো না।
সোহিনী দৃঢ় স্বরে বললো, রেডি হয়ে নে.. আমরা যাবো।
মায়ের চোখের চাহনিটা একটু অস্বাভাবিক লাগলো বলেই হয়তো অভি কথা না বলে জামা বদলে এসে বললো, এখন বলো ,কোথায় যাবো?
ওটা সারপ্রাইজ !!
এখন বিকেল পাঁচটা, বাবা বাড়ি ফিরবে সন্ধ্যে সাতটায়।মা এই সময় সাধারণত বাড়ি থেকে কোথাও বেরোয় না। হঠাৎ অভিকে নিয়ে কোথায় যেতে চায় মা !!
বাইরে বেরিয়েই একটা ট্যাক্সি নিলো সোহিনী।
না ,একটা কথাও বলছে না সোহিনী।
অভির মনের মধ্যে তখন একটা অনুভুতি , সে আর বাঁচতে চায়না। বাবা, মা তাকে ভালোবাসে না বলেই আজ মেরেছে।
সে মরে গিয়ে দেখাতে চায়, সে মৃত্যুকে ভয় পায় না!!
রাতের অন্ধকারে সকলে যখন ঘুমাবে তখনই অভি সোজা সাইকেল নিয়ে চলে যাবে রেল লাইনে...
তারপর ভোর হতেই মা বাবা খুঁজবে...সাড়া জীবন শুধু ভাববে কেন মেরেছিলাম অভিকে।
অজান্তেই নিজের মৃত্যুচিন্তায় হাতের মুঠো শক্ত হয়ে গেছে অভির।
সোহিনীর ফোনে আবার তাপসের ফোন।
আমি বাড়ি ফিরে গেছি,তোমরা কোথায়?
আজ আর অফিসে ভালো লাগছিলো না। ছেলেটার জন্য চিকেন বার্গার আনলাম, অভি খেতে ভালোবাসে। তুমি বললে ,ও নাকি সারাদিন কিছু খায়নি তাই...
সোহিনী বললো, তুমি চাবি খুলে বাড়িতে ঢোক। আমি অভিকে নিয়ে একটু বেরিয়েছি।
এই যে দাদা,ডানদিকে...
ট্যাক্সিড্রাইভার অবাক হয়ে বলছে ,ম্যাডাম ওটা তো মহাশ্মশান !
অলরেডি নেমে পড়েছে সোহিনী। সাথে ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া অভি।
সোহিনী বললো, চল অভি তোকে একটা জিনিস দেখাই।
একদিকে ইলেট্রিক আরেকদিকে কাঠের চুল্লিতে দাহ কার্য চলছে। মৃতের বাড়ির লোকেরা মাটিতে গড়াগড়ি খেয়ে কাঁদছে।
এমন জায়গায় অভি এই প্রথম এসেছে।
কেমন একটা ভয় ভয় করছে ওর।
দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে,ছাই উড়ছে..একটা শরীর মুহূর্তে ছাই হয়ে যাচ্ছে....
অভি অন্যমনস্ক ভাবে মায়ের হাতটা চেপে ধরেছে।
একদল শ্মশানযাত্রী ফিরে যাচ্ছে, এই মাত্র দাহ হয়েছে ওদের খুব প্রিয়জন।অভি দেখেছে ওই মহিলা একটু আগেই খুব কাঁদছিলো। হয়তো ওরও সন্তান সুইসাইড করেছে!!নাকি স্বামী মারা গেছে!! অভি বুঝতে পারছে না কিছুই। কেমন যেন অবসন্ন লাগছে ওর।
ওই মহিলা এখন কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়েই হয়তো চুপ করে গেছে।
শ্মশানের পিছনেই খাবার হোটেলে ঢুকেছে ওরা।
ঝগড়া করছে হোটেলের লোকদের সাথে, ভাতেটা শক্ত আছে বলে।মাছটা চালানে কিনা ভালো করে বুঝে নিচ্ছে।
একটু আগেই গঙ্গায় স্নান করে উঠে এখন হোটেলে ঢুকেছে তারা, সকলে খাচ্ছে।
ফিরেও আর তাকাচ্ছে না শ্মশানে ছাই হয়ে যাওয়া প্রিয় মানুষটি কোথায় গেল ,তার সন্ধানে।
অভি আস্তে আস্তে বললো, মা বাড়ি চলো। আমার ক্ষিদে পেয়েছে।
সোহিনী বললো, জানিস অভি যে মারা গেল সে হারিয়েই গেল। বৃদ্ধ বয়েসে মারা গেলে তো ঠিকই আছে, কিন্তু যে নিজের ইচ্ছায় নিজের জীবনটাকে শেষ করলো, তার পরিণতিও কিন্তু ওই আগুনে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া।
কতদিন আর মানুষ দুঃখ করবে তাকে নিয়ে! সে হারিয়েই গেল। হেরে গেল সে জীবন যুদ্ধে। ভীতু মানুষদের মৃত্যুতে কেউ শোক প্রকাশ করে না।
অভি আবার বললো,মা বাড়ি চলো।
বাড়িতে ফিরেই বাবাকে জড়িয়ে ধরেছে অভি।
আর কখনো জিটি রোডে জোরে সাইকেল চালাবো না বাবাই।
আজও বাবা ওর পছন্দের চিকেন বার্গার এনেছে দেখে নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছিল।
শাসন করা মানেই সে ভালোবাসে না এই ধরণের ধারণাটাই সব থেকে ভুল। ছেলেমেয়েদের থেকে বাবা মায়েরা শিক্ষিত না হলেও অভিজ্ঞতায় অনেকটা বেশি জানেন। জীবনকে তারা অনেকটা কাছ থেকে দেখেছেন। জীবনের অনেক প্রতারণা, অনেক লড়াই এর তারা প্রত্যক্ষদর্শী, তাই বাবা-মায়ের কথা একটু আধটু শুনলে প্রেস্টিজ হ্যাম্পার হয় না। বরং দেখা যাবে ভবিষ্যতে ভালোই হবে।
প্রেমে বিফলতা মানেই সুইসাইড, বাবা মায়ের শাসন মানতে না পেরে সুইসাইড এগুলো তো শুধু হেরে যাওয়া মানুষরাই করে। ডিপ্রেশন বা নিম্নচাপকে গুরুত্ব না দিলেই সে আর ধারে কাছে ঘেঁষতে সাহস পাবে না।
Posts: 3,682
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
13-09-2021, 08:01 AM
(This post was last modified: 13-09-2021, 08:15 AM by Bichitro. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
এই দাদা মহাশয়ের ঝর্ণা গল্প পড়ার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এই লেখকের আর কোন গল্প পড়বো না। এখন আবার পড়লাম
গল্পটা খুবই সুন্দর এবং বাস্তব কেন্দ্রীক ছিল। বর্তমানে ক্ষয় রোগের পর যদি কোন রোগ ক্ষতিকর হয় তাহলে সেটা অবশ্যই ডিপ্রেশন। কিন্তু এখানে অভির ডিপ্রেশন ভালো ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয় নি। তার জায়গায় অভির মা বাবার ভালোবাসা বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। হয়তো দাদা নিজে এখন অভির বাবার বয়সী তাই বাবার দিক থেকে গল্পটা লিখতে পেরেছেন। আমি কিংবা বাবান দা লিখলে অভির দিক থেকে লিখতাম। কারন আমাদের বয়সটা অভির মতো ।
সে যাই হোক গল্পের শেষে যে কয়েকটা লাইন দিয়ে ডিপ্রেশন কে জয় করার কথা বলা হয়েছে আমি সেটাতে বিশ্বাসী নই। ভালোবাসা দিয়ে ডিপ্রেশন কমানো যায় না।
সব বক্তব্য ব্যাক্তিগত। অপরিচিত কেউ কমেন্ট করে ডিস্টার্ব করবেন না
❤❤❤
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
dada_of_india rocks !!
•
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
(12-09-2021, 04:53 PM)ddey333 Wrote: ভূমি গল্পটি অপূর্ব লাগলো ...
গল্পের মধ্যে দিয়ে যে বার্তা টি দেওয়া হয়েছে সেটা হয়তো অনেকে ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারবে না !!
অনেক ধন্যবাদ ddey দাদা ❤
বুঝতে পারছি তুমি মূল বার্তাটা বুঝতে পেরেছো
আর বাকিরা যে যেরকম আর যাই বুঝুন... সকলের মুখে একটা হাসি ফুটলেই আমার এই লেখা সফল.
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(13-09-2021, 05:18 PM)Baban Wrote: অনেক ধন্যবাদ ddey দাদা ❤
বুঝতে পারছি তুমি মূল বার্তাটা বুঝতে পেরেছো
আর বাকিরা যে যেরকম আর যাই বুঝুন... সকলের মুখে একটা হাসি ফুটলেই আমার এই লেখা সফল.
আজ শুরু করলাম !!
সম্মান ( original story in hindi by BABAN )
আমি অভিক , অভীক সেনগুপ্ত …
ডকুমেন্টারি ছবি বানাই, সমাজের নানা দিক, নানা সমস্যা গুলো নিজের সাধ্যমতো তুলে ধরার চেষ্টা করি. এখন অবধি গোটাপাঁচেক রিলিজ হয়েছে ...দু একটা পুরস্কার টুরস্কার ও পেয়েছি .
সে যাই হোক , এই কিছুদিন আগেই আমার ষষ্ঠ ছবিটার শুটিং শেষ করলাম . বিষয়টা ছিল কল গার্লদের নিয়ে .
আর এই ছবিটা বানাতে গিয়ে জীবনে যে অভিজ্ঞতা আর শিক্ষা অর্জন করলাম , কোনোদিন ভুলতে পারবো না !
আজ সেই কাহিনী শোনাবো আপনাদেরকে ...
ছবিটার জন্য একটা মেয়ে খুজছিলাম , হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন , একটা সত্যি সত্যি দেহ পসারিনীকে দরকার ছিল আমার .
ওদের জীবনের নানা রকমের দিক , চিন্তা ভাবনা, একদম ওদেরই একজনের মুখ থেকে শোনা খুব দরকার ছিল আমার .
একটু মুস্কিলে পড়ে গেলাম , এইসব ব্যাপারে আমি একেবারেই আনাড়ি, একটু আধটু সিগারেট বা কখনো কখনো বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে খুব অল্প মদ্যপান ছাড়া জীবনে আর কোনো কু অভ্যাস নেই আমার !
কি করা যায় ... কি করা যায় ভাবতে ভাবতে আমার এক পুরোনো কলেজের বন্ধু প্রতীকের কথা মাথায় এলো , ওর বেশ সুনাম বা দুর্নাম আছে এইসব ব্যাপারে আমাদের বন্ধু মহলে !!!
সালাকে ফোন করে বলেই ফেললাম অবশেষে , আমার দরকারের ব্যাপারটা ...
প্রথমে তো যথারীতি হো হো করে হাসলো , বললো " পথে এস বাছাধন , ডুবে ডুবে ....."
তারপরে জিজ্ঞেস করলো , কবে চাই .
বললাম , রবিবার করিয়ে দে মিটিংটা ...
আবার হাসি ... মিটিং আবার কি রে বোকা .... মাগি আসবে ... টাকা দিবি, কাজ করবি ... হা হা !!
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
আরিব্বাস.....!! শেষ পর্যন্ত তাহলে শুরু করলে..... ❤
তুমি যদি চাও নিজের কিছু মনের কথা যোগ করতে পারো অবশ্যই ❤
আমি তো শুধু হিন্দি গল্পের মাধ্যমে একটা বাস্তব ফুটিয়ে তুলেছিলাম.... তুমি তো সেই বাস্তবের নিজেই এক সাক্ষী. তাই তুমি তোমার নিজের বাক্য, পরিস্থিতি, সমস্যা যুক্ত করতে পারো এই গল্পে.
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(13-09-2021, 08:01 AM)Bichitravirya Wrote: এই দাদা মহাশয়ের ঝর্ণা গল্প পড়ার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এই লেখকের আর কোন গল্প পড়বো না। এখন আবার পড়লাম
কেন গো ? ঝর্না কি তোমার ভালো লাগে নি? তাহলে আর লিখব না !
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(13-09-2021, 06:13 PM)ddey333 Wrote: আজ শুরু করলাম !!
সম্মান ( original story in hindi by BABAN )
আমি অভিক , অভীক সেনগুপ্ত …
ডকুমেন্টারি ছবি বানাই, সমাজের নানা দিক, নানা সমস্যা গুলো নিজের সাধ্যমতো তুলে ধরার চেষ্টা করি. এখন অবধি গোটাপাঁচেক রিলিজ হয়েছে ...দু একটা পুরস্কার টুরস্কার ও পেয়েছি .
সে যাই হোক , এই কিছুদিন আগেই আমার ষষ্ঠ ছবিটার শুটিং শেষ করলাম . বিষয়টা ছিল কল গার্লদের নিয়ে .
আর এই ছবিটা বানাতে গিয়ে জীবনে যে অভিজ্ঞতা আর শিক্ষা অর্জন করলাম , কোনোদিন ভুলতে পারবো না !
আজ সেই কাহিনী শোনাবো আপনাদেরকে ...
ছবিটার জন্য একটা মেয়ে খুজছিলাম , হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন , একটা সত্যি সত্যি দেহ পসারিনীকে দরকার ছিল আমার .
ওদের জীবনের নানা রকমের দিক , চিন্তা ভাবনা, একদম ওদেরই একজনের মুখ থেকে শোনা খুব দরকার ছিল আমার .
একটু মুস্কিলে পড়ে গেলাম , এইসব ব্যাপারে আমি একেবারেই আনাড়ি, একটু আধটু সিগারেট বা কখনো কখনো বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে খুব অল্প মদ্যপান ছাড়া জীবনে আর কোনো কু অভ্যাস নেই আমার !
কি করা যায় ... কি করা যায় ভাবতে ভাবতে আমার এক পুরোনো কলেজের বন্ধু প্রতীকের কথা মাথায় এলো , ওর বেশ সুনাম বা দুর্নাম আছে এইসব ব্যাপারে আমাদের বন্ধু মহলে !!!
সালাকে ফোন করে বলেই ফেললাম অবশেষে , আমার দরকারের ব্যাপারটা ...
প্রথমে তো যথারীতি হো হো করে হাসলো , বললো " পথে এস বাছাধন , ডুবে ডুবে ....."
তারপরে জিজ্ঞেস করলো , কবে চাই .
বললাম , রবিবার করিয়ে দে মিটিংটা ...
আবার হাসি ... মিটিং আবার কি রে বোকা .... মাগি আসবে ... টাকা দিবি, কাজ করবি ... হা হা !!
এইতো শুরু হয়েছে ! চালিয়ে যাও !!
•
Posts: 3,682
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
(13-09-2021, 08:14 PM)dada_of_india Wrote: কেন গো ? ঝর্না কি তোমার ভালো লাগে নি? তাহলে আর লিখব না !
ভালো লাগবে না কেন? অবশ্যই ভালো লেগেছে। তবে শেষে ওটা ট্রাজিক হয়ে গেছে... আর এখানে সবাই জানে আমি ট্রাজিক পছন্দ করি না।
❤❤❤
•
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
(13-09-2021, 08:15 PM)dada_of_india Wrote: এইতো শুরু হয়েছে ! চালিয়ে যাও !!
Ddey দাদা তো আমার respect গল্পটা বাংলায় নিজের মতন করে দারুন ভাবে লিখছে..... তুমি আমার নতুন ছোটদের গল্পটা পড়ে ফেলো. ভূমি. আশা করি ভালো লাগবে ❤
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
গল্প: বন্ধন
কলমে: সৌমিতা
মেয়েটা বড় অবাধ্য। আজকে সুমিত্রা পিউকে অনেকবার মানা করেছিল অফিস না যেতে। সকালে উঠে নিজেই বলল শরীরটা ভালো লাগছেনা অফিস থেকে আজ তাড়াতাড়ি ফিরে আসব। সুমিত্রা বলেছিল শরীর যখন ভালো না তখন তো না গেলেই হয় আজ! কোন উত্তর না করে গটগট করে বেরিয়ে গেল সে!! এগুলো দেখলেই রাগ উঠে যায় সুমিত্রার।এই যদি নিজের মা হতো তাহলে ঠিক মেনে নিতো!! গেল আর এলো,কিন্তু দেখালো যে সুমিত্রার কথার পাত্তা দিল না। গজগজ করতে করতে সুমিত্রা দুধ বসালো। আজ জোর করে হলেও পিউকে দুধ খাওয়াবেই সে... যতসব ন্যাকামো.. শরীর খারাপের আর দোষ কি!! ডায়েট করছে ডায়েট.. পাখির মতো খাবার খাবে... এতো জেদ..সুমিত্রা রান্না করলে সে রান্না পর্যন্ত খায় না, নিজের রান্না নিজে করে নেয় কম তেলে.. ঢং যত্তসব। এত জেদ কিসের বাপু! কিছু বললেই মুখেমুখে শুধু তক্কো!!
সুমিত্রার একমাত্র ছেলে দেবরাজের বৌ পিউ। খুব অল্প বয়সে স্বামীকে হারিয়েছিল সুমিত্রা। স্টেট ব্যাংকে চাকরি করতেন উনি। পেনশনের টাকায় ছেলেকে মানুষ করে তুলেছিলেন তিনি। বর্তমানে দেবু একটা প্রাইভেট কম্পানির এরিয়া ম্যানেজার। পিউ এর সাথে তার আলাপ অফিস যাতায়াতের পথে। পিউ রেলে চাকরি করে।দেবু তার খুব মন খোলা ছেলে, সারাক্ষণ হই হই করতে ভালোবাসে। সুমিত্রা এক-একসময় ভাবে পিউ এর সাথে তার ভাব হলো কি করে!! বাপরে কি গম্ভীর!! বধূবরণের দিন সুমিত্রার ননদ ল্যাটা মাছ ধরতে বলেছিল পিউ কে... মাগো মা!! মুখের উপরে বলে দিল, "আমি এই সমস্ত নিয়মকানুন মানি না। কিছু মনে করবেন না প্লিজ।"
কি যে লজ্জা লাগছিল সুমিত্রার!!
যাইহোক, এখন যেটা নিয়ে দু জনেরই মন খারাপ সেটা হল দেবুর ট্রানস্ফার হয়ে গেছে কোচবিহারে। দেবু অনেক চেষ্টা করেছিল ট্রান্সফার আটকানোর, কিন্তু বৃথা চেষ্টা, অবশেষে এই দুদিন হল দেবুকে চলে যেতে হয়েছে। মাত্র ছয় মাস বিয়ে হয়েছে তাদের, এ সময় আলাদা থাকার কষ্ট সুমিত্রা বুঝতে পারছে। মেয়েটার মুখটা একেবারে শুকিয়ে গেছে। সুমিত্রারো কিছু ভালো লাগছেনা । সারাদিন কাজের পর অপেক্ষা করে বসে থাকত ছেলে কখন আসবে। হাসা হাসি, গল্প বেশ কাটছিল দিনগুলো। এখন যে কি করে তার সময়গুলো কাটবে কে জানে!!না,মহারানী তাদের গল্পের আসরে কোন সময়ে যোগদান করতো না। অবশ্য রাতের বেলার খাবার টা সেই পরিবেশন করতো, সুমিত্রা কে কিছু করতে দিত না। নিজে তো কি সব ছাইপাশ সেদ্ধ খেতো। স্যালাদ খেতো। মাগো মা!! এসব খাবার খাওয়া তো দূরের কথা দেখলেই সুমিত্রার গায়ে জ্বর আসে..সুমিত্রার আবার একটু রসিয়ে রান্না না করলে চলে না। পিউ কম কথা বললেও রান্না নিয়ে কথা শোনাতে ছাড়তো না সুমিত্রা কে!!! সুমিত্রা স্পষ্ট বলে দিয়েছিল,"শোনো ওইসব তেল মশলা কমিয়ে রোগীর পথ্য আমরা খেতে পারব না।" আর কথা বাড়ায়নি অবশ্য পিউ। মামা বাড়ির আবদার আর কি!! ওনার কথা শুনে রোগীর পথ্যি কখনোই খাবেনা সে!!
গ্লাসের মধ্যে দুধ ঢেলে একটু প্রোটিন পাউডার মেশালো সুমিত্রা, মনে মনে ঠিক করে নিল আজ খেতে না চাইলে সেও দু-চার কথা শোনাবে। মোটেই ভয় পায় না সে!! সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে খট করে আবার আওয়াজ হলো হাটুতে। উফ্!!! পরশু থেকে ব্যথা টা একটু বেশিই বেড়েছে। কালকে আবার ল্যাবের ছেলেটা এসে অনেকগুলো রক্ত নিয়ে চলে গেল.. কি সব যেন টেস্ট করাবে... সব সময় কেমন যেন একটা দিদিমনি দিদিমনি ভাব!! আরে আমার রক্ত নিতে আসবে তা তুই আমাকে একবার জানাবি না!!! হঠাৎ করে লোকটাকে নিয়ে এসে ঘরে ঢুকে বললো, "তোমার কিছু টেস্ট করানো হবে, উনি ব্লাড নিতে এসেছেন!"যাক্ গে!!! বেশি লাগেনি... ছেলেটার হাত ভাল ছিল...
একটু খোঁড়াতে খোঁড়াতে হাঁটু ব্যথা নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে এলো সুমিত্রা। পিউ এর ঘরে ঢুকতে গিয়ে থমকে দাড়ালো।
"হ্যাঁগো,নতুন নতুন বলে কিছু বলতে পারতাম না... কিন্তু এখন দেখছি শক্ত হাতে না ধরলে হবে না।"
কারোর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কথা শোনাটা যে শোভনতা নয় সেটা সুমিত্রা জানে ।কিন্তু তাকে নিয়েই যে কারো সাথে কথা হচ্ছে সেটা তার বুঝতে বাকি রইল না। হঠাৎ করে খুব কান্না পেয়ে গেল তার।মেয়েটার সাথে হয়তো কখনো কোনো সখ্যতা গড়ে ওঠেনি কিন্তু মনে মনে বড় ভালোবাসে পিউকে সে... আজকে পিউ প্রমান করে দিল বৌ কখনো মেয়ে হয়না...!!!
না আর দাঁড়ানো দরকার নেই আবার কষ্ট করে নিচে চলে যাবে সে। কিছু কিছু কথা না শোনাই ভালো।
চোখের জল মুছে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়েই শুনল...
"অসম্ভব... আমি আর একদিনও সময় দিতে পারবো না, কাল থেকেই আমি নিজের হাতে সব নেব। তুমি এ ব্যাপারে কোনো কথাই বলবে না। তুমি জানো?? ক্লোরেস্টল কত হাই... তার উপরে সুগার... ইউরিক অ্যাসিড.. কিছু বাকি নেই... অদ্ভুত ছেলে তুমি... এত বয়স হয়েছে ওনার কখনো টেষ্ট করাও নি কিছু??? আমিতো অবাক হয়ে যাচ্ছি!!"
চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে সুমিত্রার। পিউ এসব কি বলছে!!! ছিঃ..কি সব আজেবাজে ভাবছিল সে এতক্ষন!! নিজের উপরই রাগ হলো তার!!এতটা ভাবে পিউ তাকে নিয়ে!! আর সে কিনা!!
ফোনের ও প্রান্তে যে দেবু আছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই... পিউকে আবার বলতে শুনলো...
"কাল থেকে এই বাড়িতে আমি নিজের জন্য যেরকম রান্না করি সেই রান্নাই হবে। আর সেটা ওনাকে খেতেই হবে। না খেলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। আর হ্যাঁ, কোনদিনই ফিজিওথেরাপিস্ট ডেকে রে দিয়েছো বলেও তো মনে হয় না। কি যে টেক কেয়ার করতে মায়ের কে জানে।" কিছুক্ষণ থেমে আবার সে বলল,"ও হ্যাঁ, মায়ের নতুন নাম্বারটা তোমাকে পাঠিয়ে দেবো। আসলে জিও নাম্বার নিলাম মায়ের জন্য। আজকে সকালে যখন রিপোর্ট আনতে বেরিয়েছিলাম, তখন একটা স্মার্ট ফোন কিনে এনেছি। দেখোতো ...আমি একদম বেশি কথা বলতে পারিনা,মায়ের খুব বোর লাগবে তুমি নেই তো তাই!! সেই জন্য আজ রাতে মাকে ফোনটা গিফট করবো আর ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ সব শিখিয়ে দেব.. তখন দেখবে তোমার সাথেও মা ওয়াট্সএপ এ কথা বলবে...." নিজের কথায় নিজেই হেসে ফেলল পিউ।
সুমিত্রার খুব ইচ্ছা করছে পিউকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে। নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হলো তার। নিজের মায়ের থেকে কোন অংশে কম ভাবে না মেয়েটা তাকে!!! মনে মনে সে বলল প্রাণভরা আশীর্বাদ রইল তোমার জন্য... সারা জীবন খুব ভালো থেকো মা.....
কিন্তু.... পরমুহূর্তেই তার মনে হলো....তা বলে কাল থেকে কম তেলে রোগীর পথ্যি!! ওই গোটা গোটা সবজি সেদ্ধ!!! কাঁচা কাঁচা স্যালাদ!!হায়রে!!! এই অবস্থা হবে যদি সে জানতো তাহলে কালকে ওই ব্যাটাকে রক্ত নিতেই দিত না.... কি একটা মনে পড়তেই সুমিত্রা তাড়াতাড়ি করে ওই হাঁটু ব্যথা নিয়েই সিঁড়ি বেয়ে নামতে শুরু করলো। রগরগে মসলার মাটন রান্না করা আছে ফ্রিজে, দেবু যেদিন যায় সেদিন ছেলের জন্য রান্না করেছিল সে, মনে পড়লো এখনো দু পিস পড়ে আছে ফ্রিজে, মনুর মাকে দিয়ে দেবে ভেবেছিল কিন্তু ভুলে গেছে, এক্ষুনি গিয়ে গরম করে মুখে পুরে দিতে হবে... একটু দেরি হলেই এ জন্মে আর খাওয়া হবেনা।
*সমাপ্ত*
Posts: 3,682
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
(14-09-2021, 12:26 PM)dada_of_india Wrote: গল্প: বন্ধন
কলমে: সৌমিতা
মেয়েটা বড় অবাধ্য। আজকে সুমিত্রা পিউকে অনেকবার মানা করেছিল অফিস না যেতে। সকালে উঠে নিজেই বলল শরীরটা ভালো লাগছেনা অফিস থেকে আজ তাড়াতাড়ি ফিরে আসব। সুমিত্রা বলেছিল শরীর যখন ভালো না তখন তো না গেলেই হয় আজ! কোন উত্তর না করে গটগট করে বেরিয়ে গেল সে!! এগুলো দেখলেই রাগ উঠে যায় সুমিত্রার।এই যদি নিজের মা হতো তাহলে ঠিক মেনে নিতো!! গেল আর এলো,কিন্তু দেখালো যে সুমিত্রার কথার পাত্তা দিল না। গজগজ করতে করতে সুমিত্রা দুধ বসালো। আজ জোর করে হলেও পিউকে দুধ খাওয়াবেই সে... যতসব ন্যাকামো.. শরীর খারাপের আর দোষ কি!! ডায়েট করছে ডায়েট.. পাখির মতো খাবার খাবে... এতো জেদ..সুমিত্রা রান্না করলে সে রান্না পর্যন্ত খায় না, নিজের রান্না নিজে করে নেয় কম তেলে.. ঢং যত্তসব। এত জেদ কিসের বাপু! কিছু বললেই মুখেমুখে শুধু তক্কো!!
সুমিত্রার একমাত্র ছেলে দেবরাজের বৌ পিউ। খুব অল্প বয়সে স্বামীকে হারিয়েছিল সুমিত্রা। স্টেট ব্যাংকে চাকরি করতেন উনি। পেনশনের টাকায় ছেলেকে মানুষ করে তুলেছিলেন তিনি। বর্তমানে দেবু একটা প্রাইভেট কম্পানির এরিয়া ম্যানেজার। পিউ এর সাথে তার আলাপ অফিস যাতায়াতের পথে। পিউ রেলে চাকরি করে।দেবু তার খুব মন খোলা ছেলে, সারাক্ষণ হই হই করতে ভালোবাসে। সুমিত্রা এক-একসময় ভাবে পিউ এর সাথে তার ভাব হলো কি করে!! বাপরে কি গম্ভীর!! বধূবরণের দিন সুমিত্রার ননদ ল্যাটা মাছ ধরতে বলেছিল পিউ কে... মাগো মা!! মুখের উপরে বলে দিল, "আমি এই সমস্ত নিয়মকানুন মানি না। কিছু মনে করবেন না প্লিজ।"
কি যে লজ্জা লাগছিল সুমিত্রার!!
যাইহোক, এখন যেটা নিয়ে দু জনেরই মন খারাপ সেটা হল দেবুর ট্রানস্ফার হয়ে গেছে কোচবিহারে। দেবু অনেক চেষ্টা করেছিল ট্রান্সফার আটকানোর, কিন্তু বৃথা চেষ্টা, অবশেষে এই দুদিন হল দেবুকে চলে যেতে হয়েছে। মাত্র ছয় মাস বিয়ে হয়েছে তাদের, এ সময় আলাদা থাকার কষ্ট সুমিত্রা বুঝতে পারছে। মেয়েটার মুখটা একেবারে শুকিয়ে গেছে। সুমিত্রারো কিছু ভালো লাগছেনা । সারাদিন কাজের পর অপেক্ষা করে বসে থাকত ছেলে কখন আসবে। হাসা হাসি, গল্প বেশ কাটছিল দিনগুলো। এখন যে কি করে তার সময়গুলো কাটবে কে জানে!!না,মহারানী তাদের গল্পের আসরে কোন সময়ে যোগদান করতো না। অবশ্য রাতের বেলার খাবার টা সেই পরিবেশন করতো, সুমিত্রা কে কিছু করতে দিত না। নিজে তো কি সব ছাইপাশ সেদ্ধ খেতো। স্যালাদ খেতো। মাগো মা!! এসব খাবার খাওয়া তো দূরের কথা দেখলেই সুমিত্রার গায়ে জ্বর আসে..সুমিত্রার আবার একটু রসিয়ে রান্না না করলে চলে না। পিউ কম কথা বললেও রান্না নিয়ে কথা শোনাতে ছাড়তো না সুমিত্রা কে!!! সুমিত্রা স্পষ্ট বলে দিয়েছিল,"শোনো ওইসব তেল মশলা কমিয়ে রোগীর পথ্য আমরা খেতে পারব না।" আর কথা বাড়ায়নি অবশ্য পিউ। মামা বাড়ির আবদার আর কি!! ওনার কথা শুনে রোগীর পথ্যি কখনোই খাবেনা সে!!
গ্লাসের মধ্যে দুধ ঢেলে একটু প্রোটিন পাউডার মেশালো সুমিত্রা, মনে মনে ঠিক করে নিল আজ খেতে না চাইলে সেও দু-চার কথা শোনাবে। মোটেই ভয় পায় না সে!! সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে খট করে আবার আওয়াজ হলো হাটুতে। উফ্!!! পরশু থেকে ব্যথা টা একটু বেশিই বেড়েছে। কালকে আবার ল্যাবের ছেলেটা এসে অনেকগুলো রক্ত নিয়ে চলে গেল.. কি সব যেন টেস্ট করাবে... সব সময় কেমন যেন একটা দিদিমনি দিদিমনি ভাব!! আরে আমার রক্ত নিতে আসবে তা তুই আমাকে একবার জানাবি না!!! হঠাৎ করে লোকটাকে নিয়ে এসে ঘরে ঢুকে বললো, "তোমার কিছু টেস্ট করানো হবে, উনি ব্লাড নিতে এসেছেন!"যাক্ গে!!! বেশি লাগেনি... ছেলেটার হাত ভাল ছিল...
একটু খোঁড়াতে খোঁড়াতে হাঁটু ব্যথা নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠে এলো সুমিত্রা। পিউ এর ঘরে ঢুকতে গিয়ে থমকে দাড়ালো।
"হ্যাঁগো,নতুন নতুন বলে কিছু বলতে পারতাম না... কিন্তু এখন দেখছি শক্ত হাতে না ধরলে হবে না।"
কারোর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কথা শোনাটা যে শোভনতা নয় সেটা সুমিত্রা জানে ।কিন্তু তাকে নিয়েই যে কারো সাথে কথা হচ্ছে সেটা তার বুঝতে বাকি রইল না। হঠাৎ করে খুব কান্না পেয়ে গেল তার।মেয়েটার সাথে হয়তো কখনো কোনো সখ্যতা গড়ে ওঠেনি কিন্তু মনে মনে বড় ভালোবাসে পিউকে সে... আজকে পিউ প্রমান করে দিল বৌ কখনো মেয়ে হয়না...!!!
না আর দাঁড়ানো দরকার নেই আবার কষ্ট করে নিচে চলে যাবে সে। কিছু কিছু কথা না শোনাই ভালো।
চোখের জল মুছে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়েই শুনল...
"অসম্ভব... আমি আর একদিনও সময় দিতে পারবো না, কাল থেকেই আমি নিজের হাতে সব নেব। তুমি এ ব্যাপারে কোনো কথাই বলবে না। তুমি জানো?? ক্লোরেস্টল কত হাই... তার উপরে সুগার... ইউরিক অ্যাসিড.. কিছু বাকি নেই... অদ্ভুত ছেলে তুমি... এত বয়স হয়েছে ওনার কখনো টেষ্ট করাও নি কিছু??? আমিতো অবাক হয়ে যাচ্ছি!!"
চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে সুমিত্রার। পিউ এসব কি বলছে!!! ছিঃ..কি সব আজেবাজে ভাবছিল সে এতক্ষন!! নিজের উপরই রাগ হলো তার!!এতটা ভাবে পিউ তাকে নিয়ে!! আর সে কিনা!!
ফোনের ও প্রান্তে যে দেবু আছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই... পিউকে আবার বলতে শুনলো...
"কাল থেকে এই বাড়িতে আমি নিজের জন্য যেরকম রান্না করি সেই রান্নাই হবে। আর সেটা ওনাকে খেতেই হবে। না খেলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। আর হ্যাঁ, কোনদিনই ফিজিওথেরাপিস্ট ডেকে রে দিয়েছো বলেও তো মনে হয় না। কি যে টেক কেয়ার করতে মায়ের কে জানে।" কিছুক্ষণ থেমে আবার সে বলল,"ও হ্যাঁ, মায়ের নতুন নাম্বারটা তোমাকে পাঠিয়ে দেবো। আসলে জিও নাম্বার নিলাম মায়ের জন্য। আজকে সকালে যখন রিপোর্ট আনতে বেরিয়েছিলাম, তখন একটা স্মার্ট ফোন কিনে এনেছি। দেখোতো ...আমি একদম বেশি কথা বলতে পারিনা,মায়ের খুব বোর লাগবে তুমি নেই তো তাই!! সেই জন্য আজ রাতে মাকে ফোনটা গিফট করবো আর ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ সব শিখিয়ে দেব.. তখন দেখবে তোমার সাথেও মা ওয়াট্সএপ এ কথা বলবে...." নিজের কথায় নিজেই হেসে ফেলল পিউ।
সুমিত্রার খুব ইচ্ছা করছে পিউকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে। নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হলো তার। নিজের মায়ের থেকে কোন অংশে কম ভাবে না মেয়েটা তাকে!!! মনে মনে সে বলল প্রাণভরা আশীর্বাদ রইল তোমার জন্য... সারা জীবন খুব ভালো থেকো মা.....
কিন্তু.... পরমুহূর্তেই তার মনে হলো....তা বলে কাল থেকে কম তেলে রোগীর পথ্যি!! ওই গোটা গোটা সবজি সেদ্ধ!!! কাঁচা কাঁচা স্যালাদ!!হায়রে!!! এই অবস্থা হবে যদি সে জানতো তাহলে কালকে ওই ব্যাটাকে রক্ত নিতেই দিত না.... কি একটা মনে পড়তেই সুমিত্রা তাড়াতাড়ি করে ওই হাঁটু ব্যথা নিয়েই সিঁড়ি বেয়ে নামতে শুরু করলো। রগরগে মসলার মাটন রান্না করা আছে ফ্রিজে, দেবু যেদিন যায় সেদিন ছেলের জন্য রান্না করেছিল সে, মনে পড়লো এখনো দু পিস পড়ে আছে ফ্রিজে, মনুর মাকে দিয়ে দেবে ভেবেছিল কিন্তু ভুলে গেছে, এক্ষুনি গিয়ে গরম করে মুখে পুরে দিতে হবে... একটু দেরি হলেই এ জন্মে আর খাওয়া হবেনা।
*সমাপ্ত*
গল্পটা আপনার নয় তাই আর বিশ্লেষণ করছি না। শুধু বলবো খুব ভালো মা মেয়ের কেমিস্ট্রি পেলাম।
এবার আপনার কাছে দুটো প্রশ্ন আছে ---১) সুমিত্রা নামটা এতো বিখ্যাত কেন?
২) আপনি তো বড়ো। তার উপর নাম দাদা অফ ইন্ডিয়া। কি করছেন টা কি? ওই পিনুরাম রাজদীপ নামক ভদ্রলোক দের দুটো কথা শুনিয়ে এখানে আনতে পারছেন না? কি করতে দাদা হয়েছেন? দরকার হলে কান ধরে এখানে আনবেন। কিন্তু আনছেন না
❤❤❤
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
#আশীর্বাদ
#অনামিকা
'এই নে, এই বালা জোড়াটা তোর।' মোটা মকরমুখী সোনারবালা জোড়াটা ছোটমেয়ের হাতে তুলে দিয়ে ফাঁকা বাক্সটা কোলের উপরে রাখলেন রতনবাবু। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কাঁপা কাঁপা হাতে পরম যত্নে বাক্সটার গায়ে হাত বুলালেন। বন্ধ চোখের কোল দিয়ে নেমে এলো দু ফোঁটা চোখের জল। আস্তে আস্তে সেই জলের ফোটা মুক্তাবিন্দুর মতো ঝরে পড়লো গয়নার বাক্সটার উপরে। ' অনেক বেলা হলো দাদু। স্নানে যাবেনা?''চোখের জলটা মুছে সামনের দিকে তাকিয়ে রতনবাবু দেখলেন, ওর বাড়ীর কাজের মেয়ে মিনা। রতনবাবুকে নিরুত্তর দেখে মিনা ঝুঁকে পড়েছে রতনবাবুর দিকে। রতনবাবুর মিনার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত মুখে বললো,' শোন, আজ আর চান করবো না। অনেক বেলা হয়ে গেছে। তুই বরং অল্প করে একটু ভাত বেড়ে দে। গা-টা খুব ম্যাজম্যাজ করছে। একটু ঘুমোবো। মিনা একটা তেলের বোতল থেকে খানিকটা তেল ঢালে। তারপর রতনবাবুর মাথায় এসে তেলটা থুপতে থুপতে বলে স্নান না করলে, তোমার আরো শরীর খারাপ হবে দাদু। আমি সকালেই তোমার চানের জলটা রোদে দিয়েছি। সেটা এখন আগুনের মতো গরম হয়ে আছে। চলো স্নান করবে।' এবার রতনবাবুর মুখ তুলে তাকায় মিনার দিকে। ছলছল চোখে বলে আর এতো যত্ন করে কি করবি রে? বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে কি এগুলো পাবো? মিনা বিষণ্ণ হেসে বলে,' কেন পাবে না দাদু? ওখানে তো সব ট্রেনিং পাওয়া মানুষজন। আমার মতো আনাড়ী তো নয়।' রতনবাবু খাট থেকে নামতে নামতে বলে,' থাক আর বলে কাজ নেই। চল কোথায় স্নানের জল রেখেছিস তা দেখা। ' মিনা তাড়াতাড়ি ঘর থেকে বেরাতে গেলে রতনবাবু বলেন,' শোন, এই নে, তোর দিদার গয়নার বাক্সটা। ভর্তি তো আর দিতে পারলাম না! ফাঁকাটাই নে।' কথাগুলো বলে ধীরে ধীরে ঘর থেকে বের হয়ে যায় রতনবাবু। মিনা পরম যত্নে রতনবাবুর দেওয়া কাঠের ছোট গয়নার বাক্সটা হাতে নিয়ে কপালে ছোঁয়ায়।' একটু আগের ঘটনাগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। মিনা তখন এই ঘরে দাদুর জিনিসপত্রগুলো গোছাচ্ছিলো। তখনই রতনবাবুর দুই মেয়ে আর দুই ছেলের বৌ এই ঘরে আসে। বড়বৌমা নন্দিনী এক বান্ডিল কাপড় এনে রতনবাবুর বিছানায় রেখে বলে,' এগুলো মা-য়ের শাড়ী। এগুলো এ বাড়ীতে রেখে কি হবে? তার থেকে আমরা নিয়ে যাই?' রতনবাবু বলেন,' অবশ্যই নিয়ে যাবে। ও শাড়ীর তো আর আমি কিছু বুঝিনা! তোমরাই ভাগ করে নেও। তবে তার আগে দাঁড়াও। আমি আমি একটু আসছি। ' বলে উঠে গিয়েছিলেন উনি। তারপর এই গয়নার বাক্সটা হাতে নিয়ে ফিরে এসেছিলেন। বাক্স খুলে একে একে বের করে এনেছিলেন মূল্যবান অলংকারগুলোকে। তারপর একে একে সবগুলো ভাগ করে দিয়েছিলেন তার ছেলের বৌ,মেয়ে, নাতনিদের মধ্যে। মিনার চোখের সামনে দিয়ে একে একে ভাগ হয়ে গেল, ওর দিদার সিতাহার, মবচেন, বালা, বাউটি, কানপাশাসহ সব গয়নাগুলো।একটু দূরে দাঁড়িয়ে সেই গয়নাগুলো দেখতে দেখতে মিনার চোখের সামনে সিনেমার রিলের মতো করে একে একে ভেসে আসছিল টুকরো টুকরো ছবিগুলো। নববর্ষের সকালে পাটভাঙা তাঁতের শাড়ীর সাথে মবচেন, কানপাশা আর মকরমুখী বালার সাথে ভোরের সূর্যের মতো লাল সিঁদুরের টিপ পরা দিদার ছবি, দুর্গাপূজার দশমীর দিন গরদের শাড়ীর সাথে ঝুমকো, মটর হার আর মানতাসা পরা দিদার সিঁদুর রাঙা মুখ আবার সরস্বতী পূজার দিন হলুদ শাড়ি ও নিজের গায়ের গয়না দিয়ে মিনাকে সাজানোর পরে আলোর রোশনাই মাখা দিদার মুখ। অথচ কী অদ্ভুত ভাবে এক রাতের মধ্যে শেষ হয়ে গেল সব কিছু। স্মৃতির মনিমুক্তো নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে ভুলেই গিয়েছিল মিনা যে পারিবারিক সম্পত্তি ভাগের সময় ওর মতো আশ্রিতের থাকতে নেই। ' এই তুই এখানে দাঁড়িয়ে কী করছিস রে? যা ভাগ'। দাদুর বড়মেয়ের গলার স্বরে চমকে ওঠে মিনা। চোখের জল মুছে ঘর থেকে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় সে। কিন্তু তখনই রতনবাবুর গলার স্বর শোনে সে। রতনবাবু দৃঢ় গলায় বলে,' মিনা কোথাও যাবে না। ' তারপর মিনার দিকে তাকিয়ে বলেন,' তুই তোর কাজ সেরে নে।' দাদুর কথা অমান্য করার ক্ষমতা মিনার নেই। তাই আবার ঘরে এসে হাতের কাজ সারতে লেগে পড়েছিল সে।
একটু আগে রতনবাবু শেষে বারের মতো ওই বাড়ী ছেড়ে বৃদ্ধাশ্রমে চলে গেলেন। দুপুরবেলা খাওয়া দাওয়ার পরে রতনবাবুর বড়ছেলে অবশ্য রতনবাবুকে বলেছিল, ' বাবা, তোমাকে কিন্তু আমরা বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাতে চাইনি। এখনও সময় আছে। তুমি চাইলে আমাদের সবার বাড়ীতেই পালা করে থাকতে পারো। আমরা সবাই মিলেই তোমার দায়িত্ব নিতে রাজি।' রতনবাবু বিষণ্ণ হেসে বলেছিলেন,' তোমরা কেন পাঠাবে? আমি কী করবো, তার দায়িত্ব তো আমার। এই বুড়ো বয়সে আর এই শহর থেকে অন্য শহরে যেতে মন চায়না রে। তার থেকে এই ভালো। এই বাড়ীতে না থাকতে পারলেও এই শহরে তো থাকবো।' দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিলেন রতনবাবু। তারপর আর কোন কথা বলেননি তিনি। এমন কী বিকেলে উনি চলে যাওয়ার সময় মিনাকে কাঁদতে দেখেও কিছু বলেননি রতনবাবু। শুধু বাড়ীর ভিতর থেকে ধমকে যখন মিনাকে বাইরে বের করে দিয়ে গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হলো, তখন যেন ওনার চোখদুটো দপ করে জ্বলে উঠেছিল। মিনার অবশ্য এসব দেখার মতো মন ছিলনা। সে গেটের পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছটার তলায় উদাস নয়নে তাকিয়ে ছিল। চোখের সামনে দিয়ে রতনবাবুকে নিয়ে গাড়ীটা দ্রুত বেগে চলে গিয়েছিল। নিমেষের মধ্যেই গাড়ীটা একটা ছোট্ট কালো বিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। সূর্যাস্তের সময় হয়ে এসেছিল। অস্তগামী সূর্যের লাল রং এসে লেগেছিল মিনার মুখের উপরে। দিনান্তের সূর্য কিরণের লালিমার সাথে মিশে গিয়েছিল মিনার চোখের থেকে নেমে আসা নোনতা জলের ধারা। একটু একটু করে নিজেকে যখন সামলে নিচ্ছিলো ও তখনই কৃষ্ণচূড়া গাছটা মাথার উপরে দুটো আগুনরঙা পাঁপড়ি ফেলে বিদায় জানিয়েছিল ওকে।
এখন বেশ রাত। অনেকদিন পরে নিজের ঘরের বিছানায় শুয়ে একটু অস্বস্তি হচ্ছিলো মিনার। মা মারা যাওয়ার পরে তো আর এই বিছানায় ঘুমোয়নি ও। একে একে মনের মাঝে পুরোনো কথারা এসে দল বাঁধছিল। স্মৃতির সরণী বেয়ে সে পিছিয়ে যাচ্ছিলো অনেক অনেক বছর পিছনে। মিনার জন্মের কিছুদিন পরেই ওর বাবা মারা যায়। ছোট্ট মিনাকে নিয়ে দিশেহারা ওর মা ছায়া,পরিচারিকার ঠিকে কাজ নিয়ে সংসার চালাতে শুরু করে। নানা বাড়ী ঘুরে সে কাজ নেয় রতনবাবুর ওখানে। রতনবাবুর ছেলেমেয়েরা তখন সবাই অন্য শহরে প্রতিষ্ঠিত। বিশাল বড় বাড়ীতে নিঃসঙ্গ দুটি মানুষ ছোট্ট মিনাকে পেয়ে একাকীত্বের জ্বালা ভুলে যায়। ওকে নিয়েই মেতে ওঠেন রতনবাবু ও তার স্ত্রী নীলিমা দেবী। মিনাকে, রতনবাবুর বাড়ীতে রেখেই মিনার মা কাজ করতে বের হতো। আর ছোট্ট মিনা, রতনবাবু ও তার স্ত্রীর ভালোবাসা ও যত্নে একটু একটু করে বড় হয়ে উঠছিল। একটু বড় হতেই রতনবাবু, মিনাকে কলেজে ভর্তি করে দিল। রতনবাবুর কড়া নজরে মিনার পড়াশোনা চলতে লাগলো। দেখতে দেখতে মিনা কলেজ ছেড়ে কলেজে উঠলো। এমন সময় হঠাৎ করেই তিনদিনের জ্বরে মিনার মা মারা যায়। এই বিশাল পৃথিবীতে মিনা পুরোপুরি অনাথ হয়ে পড়ে। এমন সময় রতনবাবু আর ওনার স্ত্রী মিনাকে আঁকড়ে ধরে। ওদের স্নেহ ভালোবাসায় মিনা কলেজের পড়া শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য ভিন রাজ্যে চলে যায়। দিনগুলো ভালোই কেটে যাচ্ছিলো মিনার। মাঝে মাঝে ছুটিতে বাড়ী এলে রতন বাবু আর ওনার স্ত্রীর যত্নে দিন কাটতো। দিদার কাছেই ও শিখেছিলো, টুকিটাকি রান্নাবান্না, ঘর গোছানো, এমন অনেককিছুই। রতনবাবুই মিনার পড়াশোনার খরচ যোগাতেন। কিন্তু জন্ম থেকেই ভাগ্যবিড়াম্বিত মিনার কপালে এইটুকু সুখও সইলো না। হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন রতনবাবুর স্ত্রী। খবরটা পেয়ে পাগলের মতো দৌড়ে এসেছিল মিনা। দিন, রাত এককার করে সেবা করেছিল ওর দিদার। কিন্তু বাঁচতে পারে নি। এর পর রতনবাবুর ছেলেমেয়েরা আর রতনবাবুকে অতো বড়ো বাড়ীতে একা রাখতে সাহস পায়নি। তবে ছেলেমেয়েদের বাড়ী ঘুরে ঘুরে থাকা রতনবাবুরও পছন্দ হয় নি। তাই মিনার সাহায্যে নিজেই পছন্দ করে একটা বৃদ্ধাশ্রমে চলে গেলেন উনি। এই বিরাট পৃথিবীতে মিনা এখন একা। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে থাকে মিনার। বুকের কাছে রতনবাবুর দেওয়া গয়নার বাক্সটা চেপে ধরে ও। হঠাৎ করেই টুক করে গয়নার বাক্সটা হাতের থেকে পড়ে যায় ওর। মাটির থেকে তুলতে গিয়ে দেখে বাক্সের ভিতরের চোরা কুঠুরিটা খুলে গেছে। এতোক্ষণে হুঁশ ফেরে মিনার। এবার মনে পড়ে ওর। আরে এই কুটুরিটার মধ্যেই তো দিদা, তার মৃত বাবা-মায়ের পায়ের ছাপ রেখে দিয়েছিল। রোজ সকালে স্নান করে গয়নার বাক্সটাকে বের করতো দিদা, তারপর ওই ছাপগুলোকে বের করে নমস্কার করতো। মিনা অনেকবার বলেছে, ' দিদা, দেওনা আমি এই ছাপ দুটোকে বাঁধিয়ে আনি। এমনিতেই তো হলুদ হয়ে গেছে কাগজটা। যদি ছিঁড়ে যায়।' কিন্তু উনি কিছু বলতেন না। খালি হাসতেন। তারপর একদিন রতনবাবুকে কারণটা জিজ্ঞেস করেছিল মিনা। রতনবাবু বলেছিলেন,' আমাদের বাড়ীর দেওয়ালে তোর দিদার বাবা-মায়ের শেষ চিহ্ন ঝুলবে, সেটা আমার মা, মানে তোর দিদার শাশুড়ী , কোনদিনও চাইনি রে। তাই তো তোর দিদা অভিমান করে ওগুলো লুকিয়ে রেখেছে।' পুরোনো কথা মনে পড়তে দুচোখ ছাপিয়ে জল এলো মিনার। কিছুক্ষণ পরে চোখের জল মুছে মিনা ঠিক করলো, চোরা কুঠুরি থেকে দিদার বাবা-মায়ের পায়ের ছাপ বের করে বাঁধাবে ও। সেই ভেবে চোরা কুঠুরির কাগজগুলো বের করলো ও। তারপর একে একে কাগজগুলো বিছানায় মেলে রাখতে লাগলো। পুরোনো হলদে হয়ে যাওয়া কাগজগুলোর মাঝে একটা নতুন কাগজ দেখে একটু অবাকই হয়ে যায় মিনা। কাগজটা হাতে নিয়ে একটু সময় নেড়েচেড়ে নিয়ে, ভাঁজটা খোলে সে। আর তারপরেই অবাক হয়ে দেখে ওই কাগজটা আসলে দাদুর হাতে লেখা একটা চিরকুট। কৌতূহলী হলে পড়ে দেখে দাদু মিনাকে, তার এক বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করতে বলেছেন। বন্ধুর ফোন নম্বরও দেওয়া আছে। মিনা কি করবে বুঝতে পারে না। দাদুকে কী ফোন করবে? সাতপাঁচ ভাবনার মাঝেই দাদুকে বার কয়েক ফোন করলো সে। কিন্তু প্রতিবারই ফোন নট রিচেবেল বললো। এর মধ্যেই আর একটা আননোন নম্বর থেকে ফোন এলো। মিনা ফোনটা ধরলে, ফোনের অপর প্রান্ত থেকে এক ভদ্রলোক বলেন, সে মিনার দাদু রতনবাবুর বন্ধু, প্রভাস মিত্র। মিনা যেন পরের রবিবার অবশ্যই ওনার সাথে দেখা করেন।
আজ তিন বছর হয়ে গেছে রতনবাবু বাড়ী ছেড়ে বৃদ্ধাশ্রমে চলে গেছেন। আজ দাদুর বাড়ীর মালকিন মিনা। রতনবাবু ওই বাড়ী মিনায় নামে দানপত্র করে, তার দলিল ওনার ওই উকিল বন্ধু প্রভাসবাবুর কাছে রেখে এসেছিলেন। বাড়ীর ভাগ না পাওয়ায় রতনবাবুর ছেলেমেয়েরা রাগ করে ওনার সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করেছে।
মিনা এখন পড়াশোনা শেষ করে বড় চাকরি করে। আজ বহুদিন বাদে সে লেডিস হোস্টেলের পাট চুকিয়ে দিয়ে দাদুর বাড়ীতে এসে উঠেছে। বাড়ীটাকে আজ ফুল, বাহারী আলো, মালায় সাজানো হয়েছে। বিকেলবেলা একটা গাড়ী এসে থামলো মিনার বাড়ীর সামনে থামলো । সাথে সাথেই বাড়ীর গেট খুলে বেরিয়ে মিনা হাসিমুখে এগিয়ে এসে গাড়ীর দরজা খুললো। তারপর রতনবাবুকে অভ্যর্থনা করে বাড়ীর ভেতরে নিয়ে গেল। বারান্দায় ওঠার আগে একটা গোলাপফুল লাগানো কাঁচি রতন বাবুর হাতে দিয়ে বলেন,' নাও, দাদু! এবার কাঁচি দিয়ে লালফিতেটা কেটে বৃদ্ধাশ্রমের উদ্ধোধন করো দেখি।' রতনবাবু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখেন, দরজার উপরে তার স্ত্রীর নামাঙ্কিত বৃদ্ধাশ্রমের হেডিং জ্বলজ্বল করছে। বহুদিন পরে ভালোলাগার আবেশে কেঁদে ফেলেন রতন বাবু। সেই দেখে মিনা বলে,' আমি জানি দাদু এই বাড়ী ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে তুমি শান্তি পাবে না। তাই তো তোমার দেওয়া বাড়ীতে এই বৃদ্ধাশ্রমটা শুরু করলাম। এই সব কিছুর পরিচালনার ভার তোমার। আমরা শুধু তোমার আদেশ পালন করবো।' কথাগুলো বলে মিটমিট করে হাসতে থাকে মিনা। মিনার কথা শুনে রতনবাবু বললেন, ' এই বয়সে এসব কিছুর ঝক্কি কি আমি নিতে পারবো রে?' মিনা বলে, ' পারবে না কেন? আমরা তো আছি তোমার সাথে। আর তুমিই তো বলতে, যেকোন বয়সেই নতুন করে জীবন শুরু করা যায়, তাহলে?' রতনবাবু বলতে যাচ্ছিলেন, ' সে তো তুই বড়ো হয়ে গিয়েছিলি বলে, ছোটদের সাথে কলেজে যেতে চাইছিলি না বলে বলছিলাম।' কিন্তু তার আগেই পায়ের উপরে কিসের যেন একটা স্পর্শ পেলেন রতন বাবু। নীচের দিকে তাকিয়ে দেখলেন ওনার স্ত্রীর লাগানো বেলি ফুল গাছটা থেকে একটা ফুল এসে ওনার পায়ের উপরে পড়েছে। মূহুর্তে ওনার মনে পড়ে গেল, ওনার কোন কাজ পছন্দ হলেই ওনার স্ত্রীর কাছ থেকে বেলিফুল উপহার পেতেন। এবার আর ওনার মনে কোন দ্বিধা রইলো না। মিনাকে বললেন,' চল আবার নতুন করে শুরু করি।' মিনা রতন বাবুর হাতটা জড়িয়ে ধরলো। রতন বাবুর চোখ থেকে আনন্দ অশ্রু এসে ভিজিয়ে দিল মিনার দুটো হাত।
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
অনামিকা জির এই আশীর্বাদ গল্পটি জাস্ট অসাধারণ ❤
ধন্যবাদ এরকম একটা গল্প এখানে শেয়ার করার জন্য ❤
সত্যি... সম্পর্ক কি আজব জিনিস. নিজের রক্তের সাথে যুক্ত মানুষও কখনো অচেনা অজানা হয়ে যায়, আবার সম্পূর্ণ অচেনা অজানা কেউ সবচেয়ে আপন হয়ে যায়. এই গল্প... নাকি বাস্তব বলা উচিত... এটি দাদু দিদিমা ও নাতনির গল্প. ব্যাস...... এই হলো সম্পর্ক... পবিত্র সম্পর্ক ❤
|