Thread Rating:
  • 12 Vote(s) - 3.33 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance নীলা by Kalidash
#41
সাত-৭

পর দিন সকাল সাড়ে আটটায় ঘুম ভাঙ্গল। জেগে দেখি নীলা গোসল সেরে কাপড় পাল্টাচ্ছে। সেজেছেও খানিকটা। চোখে কাজলও দিয়েছে। আমার নড়াচড়া দেখে বলল, ঘুম ভাঙ্গল! আমি বললাম হুমতুমি কখন উঠলে, নীলার তার কোন উত্তর দিলনা।সোজা বিছানায় নেমে আসল। আমার মাথায় বাম হাত রাখল। ডান হাতটা বুকের উপর দিয়ে চোয়াল ছুয়ে বলল, এই সোনা তাড়াতাড়ি ওঠ, বেড়াতে যাবে না? এখনও গোসল করবে, নাস্তা করবে, কত কাজ, ওঠ॥ আমি ইচ্ছা করে বললাম, ভাল লাগছে না। আর একটু শুই।চোখ বুঝে বিছানায় শুয়ে থাকতে ভাল লাগে। আমার সোনা বলল, তুমি চোখ বুজে আরাম করে শোও। আমি মাথাটা একটু টিপে দিচ্ছি। আরাম করে আর শোয়া হলনা। ওর শরীরের মিষ্টি মিষ্টি গন্ধ আর উঞ্চ স্পর্শ আরমের বারটা বাজিয়ে দিল। সকালের শান্ত পরিবেশ কে অশান্ত হয়ে উঠল। ভাবলাম- আর লুকোচুরি নয়। সত্যি সত্যিই কাজী ডাকতে হবে। এই পবিত্র সিলেটের হযরত শাহাজালাল (র) দরগা শরীফেই বিয়ে করতে হবে। আর শোয়া হল না। ওর আদরের বাহুবন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে উঠে পড়লাম। গোসল করলাম। বাহিরে থেকে নাস্ত করলাম। রাতেয় পরিকল্পনা অনুসারে জাফলং দেখতে রওনা হলাম, সকাল দাশটায়। শহর থেকে জাফলং মাত্র দুই ঘন্টার পথ। পথে যেতে যেতে আমার নীলা মনির আনন্দ আর ধরে না। জানালায় চোখ রেখে শুধু হাসতে লাগল। সাদা ঝকঝকে দাত মুক্তের মত লাগল। দেখতে দেখতে শ্রীপুরে চা বাগানের নৈশঙ্গিক দৃশ্যে ওর হৃদয় গলে যেতে লাগল। বেলা প্রায় বারটার দিকে জাফলং নামক শান্ত নিরিবিলি একটা গ্রামে আমরা পৌছালাম। জাফলংয়ের মেঘ, পাহাড়, অরন্য আর নদী যেন সত্যিই প্রকৃতির এক অপরুপ মিলন মেলা। সেখানকার সৌন্দার্য হৃদয় ছোয়া।পাহাড়ের চুড়ায় যেন মেঘদের মেলা। তামাবিল সীমান্তে উচু পাহাড়ের গায়ে পাহাড়ী ঝর্ণার দৃশ্য সাদা বরফের মতো সবুজের বুক চিরে এসব ঝর্ণাপ্রবাহ নৈসর্গিক দৃশ্যকে আরও আকর্ষনীয় করে তুলেছে। হিমালয় পর্বত থেকে আগত নদীটি সাপের মতএকে বেকে জাফলংয়ের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশ ভারতের সীমানা এঁকে দিয়েছে। সীমানার ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্য। মেঘের দেশ মেঘালয়কে দেখে আমার সোনারানীর আনন্দ আর ধরে না। ময়ুরের মত নেচে নেচে সৌন্দার্য উপভোগ করতে লাগল। জাফলং নদীর রং বেরং এর পাথর দেখে বায়না ধরল পাথর কুড়াবে। সোনালী রঙের চিক চিক করা পাথর দেখে নীলা কেবলই হাত ধরে আমাকে দেখাতে লাগল। দেখ গো কি স্ন্দুর! নদীর তীরে আমরা হাটতে লাগলাম। নদীর তীরে শুধু পাথর আর পাথর দেখে মনে হল জাফলং শুধু পাথরের দেশ। দেখতে দেখতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়রাম। পাথরের উপর বসে নদীর পরিস্কার পানি, পাহাড়, ঘন সবুজ বন দেখতে লাগলাম। নৌকা চড়লাম।এই সময় ভাবলাম এই দিনের স্মৃতিকে ক্যামেরা বন্দী করলে কেমন হয়? এই প্রথম ক্যামেরার অভাব অনুভব করলাম।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#42
ভাবলাম প্রেম করে পালাতে গেলে একটা ক্যামেরাও থাকা চাই, নইলে রঙ্গীন মধুর স্মৃতিকে ধরে রাকবো- কি করে? দেশ সমাজের আইনে যখন জীবন কয়লা হয়ে যাবে তখন এই ছবিই আনন্দ দেবে। এই সময়কে স্মরণ করিয়ে দেবে, যে সময় শুধু আবেগের, আনন্দের। সীমাহীন সৌন্দার্য্যরে জাফলংয়ের পাহাড়নদী, মেঘ, ঝর্ণা, পাখির ডাক আর অরন্যের রুপসুধা একসঙ্গে পান করতে করতে আমাদের সময় চলে গেল। আমার সোনার যে কি আহল্লাদ! বলে, এখান থেকে যাব না। এই পাহাড়ের গুহায় আমরা পালিয়ে বেড়াব, ঝর্ণার পানিতে স্নান করব, সাতার কাটব।আমি বললাম সোনামনিগো, আমাকে নিয়ে কি করবে? সোনারানী প্রথমে আবেগেময়ী হাসিফুটিয়ে বলে, ভালবাসা গো শুধু ভালবাসব। বললাম আর কিছু হবে না? শুধু ভালবাসা -ভালবাসা আর কতদিন চলবে? সোনা বলে অনন্ত কাল—–
আর বেশী সময় দেরী করতে পারলাম না। এই নৈসগিকি সৌন্দর্য কে বিদায় জানাতে আমাদের জান ফেটে গেল। বিকাল তিনটায় বাজার থেকে কিছু খেয়ে গাড়িতে ওঠলাম।গাড়িতে উঠে আর এক চিন্তা মাথায় ঢুকল। রাতের চিন্তা। দিনটা ভালই কাটে। রাতহলে অসহ্য যন্ত্রনা শুরু হয়। আমার সোনারানীর দাপাদাপি শুরু করে। সে দাপাদাপি আমার সহ্য হয়না। ওর কষ্ট আমার হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ ঘটায়।
প্রিয় পাঠক, আমার নীলা সোনার রাতের যন্ত্রনা, আর দাপাদাপি বন্ধ করার জন্য আমি একটা নতুন কৌশল নিয়ে ছিলাম। ঘটনাটা হয়ত আপনারা সমর্থন করবেন না।ভাববেন আমি একটা নির্জীব। তবুও অন্তত আমাকে দোষী করার আগে একবার ভেবে দেখুন- আমার জায়গায় আপনারা হলে কি করতেন? আপনারা তো জানেন, আমি আমার সোনারাণীর সরল আবেগের সুযোগ নেইনি। তাকে কলূষিত করিনি। তাকে পবিত্রতার চরম শীর্ষে রাখতে চেয়েছি। তাকে অবৈধ ভাবে আমি দখল করতে চাইনি। তাই সেদিন আমি একটা ঔষধের দোকান থেকে কিছু ঔষধ কিনলাম। রাতে ঘুমাবার সময় কৌশল করে পানিতে গুলে খাইয়ে দিলাম। আমার সোনা আধা ঘন্টার মধ্যে হাই তুলতে তুলতে ঘুম জড়ানো দুষ্টামির হাসি ঠোটে মেখে ঘুমিয়ে পড়ল।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#43
আমি চমৎকার দীর্ঘ ঘুমের সুযোগ পেলাম। পরের দিন খুব দেরী করে নীলার ঘুম ভাঙ্গল। মিষ্টি করে হাসল। হাসিতে একটু আদর করলাম। ওর শরীরে ওম ধরানো একটা বিদ্যুৎ প্রবাহ ছড়িয়ে দিলাম। বললাম, বেড়াতে যাবেনা? ও প্রায় নেচে উঠল।প্রাকৃতিক সৌন্দর্যর লীলাভুমি মাধবকুন্ড জলপ্রাপাতের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম আমরা। প্রায় চার ঘন্টা লেগে গেল। পাহাড়, বন আর জলপ্রাপাত। দুধের মত সাদা স্রোতের মত ঝর্ণা ঝরছে অবিরাম। প্রায় দুশ ফূট উচু থেকে পাহাড়ের বুক চিরে অবিশ্রান্ত ধারায় নেমে আসছে সাদা জলবাশি। আমি দেখছি নীলা ছুটো ছুটি করছে।বার বার উচু থেকে পড়া জলরাশী ছুতে যাচ্ছে। আমি বাধা দিচ্ছি। সৌন্দার্য দেখতে দেখতে মুগ্ধ হচ্ছি। শত শত মানুষের মাঝে নীলার চাল চলন বেশী মাত্রায় চঞ্চল। সবাই খেয়াল করছে আমাদের। কেউ কেউ আমার সোনারানীর চঞ্চলতা দেখছে, হাসছে। আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম সেই মানুষটি আমাদের লক্ষ করছে, গাড়িতে নীলার সাথে যে মানুষটি কথা বলেছিল। আমার শিরদাড়া ঠান্ডা হয়ে গেল। আমি নিশ্চিত হলাম সে পুলিশের লোক। মাথায় কদম ছাট চুল। দ্রুত নীলাকে ডেকে নিলাম। চা বাগান, পাহাড়, বন, ঝর্ণা মুহুর্তে ফিকে হয়ে গেল। আমিও সতর্ক হয়ে গেলাম। নীলাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। নীলাও লোকটাকে চিনতে পারল। একবার ভাবলাম পাহাড়ের মধ্যে হারিয়ে যাই। পারলাম না। মানুষের ভীড়ে লোকটার চোখ এড়িয়ে দ্রুত গাড়িতে উঠলাম।

প্রায় চার ঘন্টা পর সিলেট শহরে পৌছলাম, কিছু খেলাম, সরাসরি হোটেলে উঠলাম না। শহরের প্রান কেন্দ্র হযরত শাহজালাল (র) এর দরগা শরীফে গেলাম। অসংখ্যা মানুষ। তার মাঝে নিজেদের আড়াল করে রাখলাম। মাজার শরীফ জিয়ারত করলাম।আল্লাহর কাচে প্রান ভিক্ষা চাইলাম। ভাবলাম মাজারের খাদেমকে ধরে বিয়ে করে ফেলি আজই, পারলাম না। সন্ধ্যার পর হোটেলে ফিরলাম। ম্যানেজার কৌতুহলি দৃষ্টিতে আমাদের দেখলেন। মনে মনে ভাবলাম আমরা ধরা পড়ে গেছি। তবুও সাহস হারালাম না।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#44
নীলাকে হোটেলে রেখে আমি বেরিয়ে পড়লাম শহরে। একজন সরকারী কাজীকে খুজতে লাগলাম। পেয়েও গেলাম। সব শুনে কাজী সাহেব যা বললেন তাহল এই রকমছেলের বয়স পঁচিশ আর মেয়ের বয়স আঠার না হলে বিয়ে আইন সিদ্ধ হবে না। বিয়ে পড়ালে তারও জেল হবার সম্ভবনা। আমি অবাক হলাম। বার বার বললাম আমরা প্রাপ্ত বয়স্ক। কাজীসাহেব তত মুখ ঘুরিয়ে বলতে লাগলেন না কোন মতে আইনের বাইরে কিছু করা যাবে না।তোমারও আমার জেল খাটতে হবে। আমার পাঁচশত টাকার চকচকে নোট কাজী সাহেবের মনে কোন লোভ ধরাতে পারলনা। জেল খানার লোহার শিখ তার চোখে ভেসে উঠল। আমি হতাশ হয়ে হোটেলে ফিরলাম। ফিরে এসে দেখলাম এর মধ্যে আমার সোনারানী একটা শাড়ী পরে জমকালো সেজেছে। চুলগুলো পিঠের উপর ঢেউ খেলানো। কপালে ছোট করে একটা টিপ, কানে মার্বেল সাইজের লাল- নীল পাথরের দুটো দুল, হাতে চুরি, চোখে কাজল, মুখে জরি ছড়ানো। আমাকে দেখে ভুবন ভোলানো একটা হাসি দিল। মনে হল মাধবকুন্ড দুশোফুট উচু থেকে ঝরে পড়া ঝর্ণা। আমি বললাম, এমন করে সাজলে কেন? ও বলল জানিনা, যে ভাবে পিছনে পুলিশ ছুটছে যে কোন সময় হয়ত ধরা পড়ে যাব। যদি আর সময় না পাই। আমি কিছুটা শান্ত হয়ে গেলাম, দাড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। ও আবার বলল, কি দাড়িয়ে থাকবে? আমি কিছু বললাম না। আমার একটা হাত ধরে বিছানায় নিয়ে এসে আমার কাধের উপর মাথা রেখে বলল, ওগো আমাকে একটু দেখবে না? দেখনা আমি কেমন সেজেছি। আমি ওর মুখটা উচু করে চোখের সামনে মেলে ধরলাম। সত্যিই অপূর্ব। আলোয় ঝলমল করছে ওর রূপ। ও সুন্দরী শ্রেষ্ঠা। ওর মত স্ন্দুরী অতীতে কোনদিন কোন নারী ছিলনা, আজও নেই, ভবিষ্যতেও হবে না। আমি অবাক দৃষ্টিতে ওকে দেখলাম।আস্তে আস্তে বুকের মধ্যে টেনে নিলাম। কিছুক্ষণ ঘোরের মধ্যে কাটল। এক সময় ও বলল, ওগো বিয়েটা সেরে নাও্ আর সময় পাবে না। চার দিকে শত্র“, আমি আর পারছিনা। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। কাজী সাহেবের কথা বলতে পারলাম না।বললম, কালই একটা ব্যবস্থা করব সোনা। এখন কি একটু ঘুমাবে? ও মাথা নাচিয়ে সায় দিল।

বেশ কিছু সময় আদর যতœ করার পর আমার পরীসোনা ঘুমিয়ে পড়ল। রাতে আমি পালানোর জন্য এক পরিকল্পনা একে ফেললাম। পরিকল্পনাটি ছিল এমন- প্রথমে সাতক্ষীরা যাব। বাবার সাথে একটু দেখা করব।্ কোন দালাল ধরে পড়ার ক্রস করব।কলকাতা হয়ে দিল্লী যাব। সেখানে লোকে সিলিগুড়ি অথবা ঘুম পৌছাব। হাই হিলে সানরাইজ দেখব। আকাশ ভাল থাকলে হয়ত কাঞ্চন জঙ্ঘও দেখা যেতে পারে। ওখান থেকে ওয়ায়চুং হয়ে নেপাল সীমান্তে তাপলং পৌছাব। প্রফেসর সাহেব যে যায়গায়র কথা বলেছিলেন ম্যাপ দেখে এই রকমই একটা পথের কথা ভেবে নিলাম। তবে দালালের কথাটা আবরও ভাবলাম। ওরা যদি বিশ্বস্ত না হয়? আমি যদি ওদের খপ্পরে পড়ি? ওরাতো পাচারও করে দিতে পারে? তখন আমার কিছুই করার থাকবে না। বিকল্প আর একটা পথের সন্ধান পেলাম, সেটা হল এমন জাফলং সীমান্ত অতিক্রম করে মেঘালয় রাজ্যে প্রবেশ করে বার্মায় যেতে হবে। সেখানে কিছু দিন বৌদ্ধ মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে বেড়াতে হবে। কিছুদিন থাকার পর চীনে ঢুকলে কোন সমস্যা হবে না। পাহাড় পর্বতে গহীন জঙ্গলে গুহার যে কোন একটা নিরাপদ আশ্রয় আমরা খুজে নেব। যেখানে বাংলাদেশের পুলিশ আর খুজতে যাবে না। দুটো পরিকল্পনাই আমার পছন্দ হল। কোনটা বেচে নেব, নীলা জেগে উঠলে দুজনে আলোচনা করে ঠিক করব।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#45
পরিকল্পনা গুলো বড় বাড়াবাড়ি রকমের হয়ে গেল। মনে হল প্রেমের ক্ষেত্রে এমন বাড়া বাড়িই উপযুক্ত। যদি এতটুকু সাহস না থাকে, এতটুকু ঝুকি নিতে না পারি তাহলে পরী মেয়েদের সাথে প্রেম করি কেন? অসম্ভব রূপবতী সব মেয়েদের রূপের ঝাজে পুড়ে গলে গলে খাক হব আর অনন্ত সুখের জন্য এতটুকু করতে পারব না? দেশের পুলিশ আমাদের ধরবে, হাজাতে দেবে, কিন্তু ঐ ভারত, বার্মা, চীন, ওরা? না ওরা আমাদের কিছুই বলবে না।ওরা তো আমাদের দেশের মা-বাবার মত কসাই না। ওরা আমাদের যদি ধরেও ফেলে সব শুনে অন্তত গহীন পাহাড়ের কোন একটা গুহায় আমাদের জায়গা করে দেবে। হয়ত অনাবাদী কোন নির্জন জায়গায় আমার আর আমার সোনার জীবন গড়তে দেবে। আমরা সেখানে ঘরবাধব, সংসার করব, আর আমার সোনারানীর পেট থেকে অসংখ্য ছোট পরী জন্ম নেব্।েসমস্ত পাহাড়, ঝর্ণা, সব ছোট ছোট পরীতে ভরে যাবে- হ্যাঁ হ্যাঁহ্যাঁ। আমার পরী সোনা তখনও গভীর ঘুমের দেশে। আমি জেগে ঘুম আনতে চেষ্টা করলাম। এলোমেলো ভাবে কিছু সময় পায়চারি করলাম। আয়নায় নিজের চেহারা দেখলাম, বাথরুমে গেলাম, চোখে পানির ঝাপটা দিলাম, তবুও ঘুম আসল না। শেষে একটা কাগজ কলম নিলাম, ভাবলাম, বাবাকে একটা চিঠি লিখি, চাচীকে একটা লিখলে কেমন হয়? আবার ভাবলাম কি হবে বাবা- চাচীকে লিখে? কাগজ কলম হাতে ধরা, ভাবলাম কিছু একটা কি লিখব? কি লিখব? সোনাকে নিয়ে কবিতা ,গল্প, উপন্যাস কিছু একটা শুরু কি করব? আমি শুরু করি, আর অন্য জীবনের কোন এক মানুষ এসে তার ইতি টানুক। শেষে ভাবলাম- না কোন চিঠি, গল্প নয়। কিন্তু কি লিখি? হঠাৎ কাজী সাহেবের কথাটা মনে পড়ল সোনারানী বয়স হতে হবে আঠারো আমার পচিশ। মনে মনে হাসলাম। এ দিকে যৌবন টস টস করছে আর শালার আইন বলে বিয়ের বয়স হয়নি। হারামী কাজী, মনে হয় মান্দু টাইপের কোন মানুষ এই আইন তৈরী করেছে। তা না হলে কি করে এই ছয় বছর আমার সোনাকে দেরী করতে বলে? ওর দাপা দাপি, কি ওরা দেখে? দেখতে হয় আমাকে। তাইতো সান্তনা দিই।ধমক দিই। সৎচরিত্রের কথা শোনাই। আদর্শ বোধ জাগিয়ে তুলি। সব শেষে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিই। বিষয়টা নিয়ে আমার মধ্যে একটা ভাবনা চলে এল। ভাবনাটা এমন-

বাংলাদেশে একটা মেয়ে নয় থেকে বার বছরের মধ্যে যৌবনবর্তী হয়। সন্তান ধারনে সক্ষম হয়ে ওঠে। আবার চৌদ্দ পনের বছরের একটা ছেলে সন্তান জন্ম দানে সক্ষম। তাহলে কেন আঠার আর পঁচিশ বছর বিয়ের বয়স সিদ্ধ হবে? আমি এই আইনের তীব্র বিরোধীতা করছি এবং প্রতিবাদ করছি।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#46
এই আইনের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে হলে শারীরিক সমস্যা দেখা দেবে। আবার জনসংখ্যা বেড়ে যাবে। আমি এই দুটো ধারনার সাথে একমত নই। যৌবন প্রাপ্তির সাথে সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে শরীর সুস্থ্য থাকে।মনে প্রফুল্লতা আসে, কাজে উদ্যম আসে। আর যৌবন জোর করে চেপে রাখার সমস্যা অনেক বেশী। অনেক সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এসব ক্ষেত্রে একমাত্র চিকিৎসা বিয়ে। আর জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ধারনা তো পুরোপুরি অমূলক। কারণ বিয়ে হবার পরও জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রন করা যায়। সেক্ষেত্রে আইনটা একটু উল্টো তুলে ধরতে হবে। আইন করতে হবে অবশ্যই আঠার বছরের আগে কোন সন্তান নেওয়া যাবেনা। তার জন্য মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়োগ করতে হবে। তাহলে একদিকে মানসিক প্রফুল্লতা থাকবে, অন্য দিক চরিত্র বজায় থাকবে, জনসংখাও নিয়ন্ত্রনে থাকবে। আর এই যে আইন এটা সরাসরি মানুষকে অবৈধ মিলনে উদ্ধুব্ধ করছে। মাঝের থেকে লাভবান হচ্ছে ঔষধ কোম্পানী, এরা জন্মনিয়ন্ত্রনের উপকরণ আর ঔষধ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছে। হিসাব করলে দেখা যাবে বিবাহিত দম্পতির চেয়ে অবিবাহিত মানুষরাই বেশী বেশী এই সব ঔষধ ক্রয় করে। আইন করে কি যৌবন চেপে রাখা যায়? যৌবনের কি কেলো আইনরে বাবা————–

আর পারলাম না ভাবতে। আমি তো কোন নামকরা বুদ্ধিজীবি নই। নই কোন নামকরা আইনবিদও।আমি হলাম হালকা টাইপের কবি, আর প্রেমিক। আমি কি করে আইনের ঔসব ফাক ফোকর বুঝাব?
এই সময় একটা কান্ড ঘটল। হঠাৎ শুনলাম নীলা ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে। ওর দিকে তাকালাম। ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে নিশ্চই। আমি ওর কাছে গেলাম। গায়ে ধাক্কা দিলাম। এই এই নীলা কাদছ কেন? কোন জবাব দিল না। আরও জোরে কাঁদছে। আমি জোর করে ওকে ডাকলাম। অনেক ধাক্কা দেয়ার পর চোখ বড় করে তাকাল আমার দিকে। ওর মাথাটা কোলে তুলে নিলাম। কোলে মাথা রেখে ছাদের দিকে তাকাল, চোখের দুই ধার দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। ভাবলাম মোহ কেটে যাচ্ছে না তো? ওকি নিজের কাজের জন্য অপরাধ বোধ করছে? হয়ত নিজের মধ্যে ভয় লজ্জা, অনুশোচনা কাজ করছে, কিন্তু বলতে পারছে না। সামনে সাম্ভব্য বিপদে ভয় পাচ্ছে। ভাবলাম এই সরল আবেগ কেটে গেলে আমাকেই দোষ দেবে। পৃথিবীর কোন যুক্তি আমাকে রক্ষা করতে পারবে না। ওর জবানবন্দীই হবে সত্য। আমি যা বলব সব হবে মিথ্যে। একটা প্রবাদ বাক্য মনে পড়ল, মেয়েলোক যা বলে তাই সত্য আর পুলিশ যা বলে তাই আইন, আমি একটু শক্ত হলাম। দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে শেষ যাচাই করতে হবে।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#47
আমি ওর চোখের পানি মুছে দিলাম। মুখটা শুকনা হয়ে গেছ্ েআমার সোনার। আস্তে করে বললাম, নীলা মায়ের কথা মনে পড়ছে? ও বলল না। বললাম তবে কাঁদছ যে? ও বলল চাচাকে দেখতে ভীষণ ইচ্ছা হচ্ছে। আমি বললাম নীলা একটা কথা বলব? ও বলল বল!বললাম নীলা চল বাড়ি ফিরে যাই। কেউ কিছু জানবে না। ভাববে বেড়াতে গিয়েছিলাম।নীলা বলল না সোনাগো তা আর হয় না। তোমাকে ছাড়া আমি একটা দিনও বাচতে চাইনা।আমিও বহু দেখেছি, বুঝলাম তোমাকে ছাড়া আমার জীবন নিরর্থক। আমার সমস্ত দিন, রাত আমার চঞ্চলতা সবই তোমার জন্য। তুমি আমাকে ফেলে দিও না সোনা।

বললাম তোমার কি মনে হচ্ছে আমি ছেড়ে যা্িচছ! ও বলল স্বপ্নে দেখলাম যে- আর বলতে পারলনা। ঝর ঝর করে কেদে ফেলল, আমি ওর কান্না থামানোর চেষ্টা কররাম, বুকের মধ্যে ওর মাথা তুলে নিলাম। আদর করলাম, ভালবাসলাম। আমরা ভালবাসার গরমে ওর কান্না কমে এল। চুম্বকের মত আমাকে জড়িয়ে ধরল। ওর শরীরের উঞ্চতা স্পর্স আমাকে জালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিল।
আস্তে আস্তে ওর শরীরে ঝড় কমে এল, বাহুমুক্ত হলাম আমরা। আমি উঠে গেলাম ঝুলন্ত বারান্দায় ও আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে সাজাল।
পরে ও বলল, স্বপ্নে দেখছে আমি নাকি জোর করে ওকে ওর বাবার কাছে তুলে দিযে চলে যাচ্ছি। মানে হয় এরকম একটা স্ব্েপ্নর?
পর দিন আর সিলেট থাকা নিরাপদ মনে কররাম না। রাতে যে প্লান করে ছিলাম।তার জন্য আমার সোনা আমাকে চমৎকার সব বিশেষণ দিল নামের সাথে। ও জাফলং হয়ে ভারত যাওয়ার পরিকল্পনাটা পছন্দ করল। আমরা সেই মত খুব ভোরে ব্যাগ-ট্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে জাফলং পৌছলাম। খুব সস্তা ধরনের কিছু খাবার খেলাম। জাফলং নতুনকরে ভাল লাগতে লাগল। ওর হৃদয় নেচে উঠল। ঐ তো নদী, ওর পর পাহাড় আর বন, ওটা পেরুতে পারলেই বিপদ মুক্ত। দ্রুত একটা নৌকা ঠিক করলাম। আরো কজন আমাদের সাথে উঠতে চাইলো , কিন্তু নিলাম না। হঠাৎ একজন চওড়া কাদ, কদম ছাট টাইপ চুলওয়ালা একজন বলে উঠলেন প্লিজ আমাকে একটু নিন না। সেই লোকটি। নিশ্চিত হলাম শালা ব্যাটা পুলিশ। মুচকি হাসল, বলল দেখ সোজা নৌকা থেকে নেমে এস, কোন ঝামেলা করতে ০চাইলে গুলি করে এই নীল পানি লালকরে দেব। মুখে মুচকি হাসি, কিন্তু কথা গুলো বেশ কটমট করে বললেন। তিনি আবার বললেন, শোন নীলা আর সঞ্জু তোমাদের এক্ষুনি ঢাকায় ফিরতে হবে। যদি সহজে না যেতে চাও তাহলে- বলে- তিনি পকেট থেকে একটা পিস্তল বের করলেন। দেখিয়ে বললেন এর সব কটা গুলিই বেরিয়ে যাবে নির্দয় ভাবে। আমি কথা বাড়ানোর কোন প্রয়জন বোধ করলাম না। নীলা ভয়ে পাংসু হয়ে গেল। আমাকে জড়িয়ে ধরল্ বলল ওগো বরং চল গুলি খেয়ে মরি। তবুও ঢাকায় বাবার কাছে ফিরে যাব না। লোকটা কড়া একটা ধমক দিলেন- চুপ বেয়াদপ মেয়ে। এতটুকু মেয়্ে এত সাহস, নেমে এস!
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#48
আমরা নৌকা থেকে নামলাম- পিছনে নীল পানি আর সাদা পাথর বয়ে যেতে লাগল।কিছু কৌতুহলী মানুষ আমাদের দেখতে লাগল। মনে হল ওরা খুব মজা পাচ্ছে। কেউ বা হয়ত মজা দেখার নাম করে আমার নীলা সোনার রূপও চুষতে লাগল। নীলা হঠাৎ শক্তহয়ে গেল। খুব করুন অথচ শক্ত ভাবে বলল শুনুন একটা কথা বলব? লোকটা মাথা নাড়ল, বললেন বল!

নীলা বলল, দেখুন আমার কাছে নগদ চৌদ্দ লক্ষ টাকা আছে, এই চার দিনে কিছু খরচ হয়ে গেছে, বেশ কয়েক ভরি সোনার গহনা আছে। জামা কাপড় আছে বেশ দামি দামি, আমি এই গুলো আপনাকে দিচ্ছি। নগদ টাকার সব গুলো আপনার। শাড়ি আর গহনা গুলো আপনার। মেয়ের বিয়ের জন্য উপহার দিচ্ছি, বিনিময়ে শুধু আমাদের ছেড়ে দিন। ঢাকা থেকে আমাদের পিছু নিয়েছেন্ ধরতে পারেননি, গাড়ির মধ্যে ইচ্ছা করলে ধরতে পারতেন ধরেন নি। এটা আপনার দয়া। লোকটা বললেন গাড়ীর মধ্যে ধরার হুকুম আমার ছিলনা। কোথায় যাও সেটা দেখাই আমার দায়িত্ব ছিল। পরশু দিন যখন এখানে তোমরা এসেছ, ভাবলাম পাগলামির শেষ সীমান্তে চলে যাচ্ছ তোমরা। সব জানতেই তোমাদের ধরার হুকুম পেয়েছি। এমন কি গুলি করারও হুকুম আছে। নীলা আবার বেশ আবেগ ঘনকন্ঠে বলল দেখুন এই দুই পা এগুলেই নৌকা। ঐ বয়ে যাওয়া নীল পানির স্রোত।স্রোতে নৌকা খানা ভাসালে মাত্র পনের মিনিট লাগবে ও পারে পৌছাতে। ওপারে ভারত। ঐ যে বুনো পদ ম্পর্শ বিহিন পথ পাহাড়ে উঠে গেছে ঐ পথে আমরা চলে যাব।পাহাড়েরে গুহায়, বনে, জঙ্গলে, পশু- পাখির সাথে আমরা ঘর বাধব। আপনি শুধু আমাদের যেতে দিন। এই মাত্র পনের মিনিটে আপনি মাঝারি সাইজের ধনী হয়ে যাবেন।সারা জীবন চাকরী করেও এতটাকা চোখে দেখতে পাবেন না। আর আপনার মেয়ের জন্য যে গহনা আর শাড়ী কাপড় দিলাম, তাতে ও খুশিতে আটখানা হয়ে যাবে। এর বিনিময় আমাদের যেতে দিন। ঐ তো পাহাড় জঙ্গল, ওখানে কোন মানুষ নেই আছে পশু পাখি-জীবজন্তু।ওদের সাথে আমরা বেশ থাকতে পারব। তবুও-নীলা সোনা কাঁদতে লাগল।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#49
আমি দুহাতে ওর চোখ থেকে হাত সরাতে চেষ্টা করলাম। পরলাম না। লোকটা আবার বললেন, পুলিশে চাকরী করি। এসব মায়া কান্না দেখলে চাকরী চলে যাব্।েদ্রুত চল, তোমাদের জন্য বিশেষ গাড়ী অপেক্ষা করছে। এবার নীলা অন্য বেশ ধরল। দুর্দান্ত মায়াবি চাউনিতে লোকটাকে কাবু করার চেষ্টা করল। কিছু পরে বীরঙ্গনার মত বলে উঠল- শুনুন- আমার শরীরে যে পোশাক আছে এর দাম তিন হাজার দুইশত টাকা। এতে প্রায় দুই আনা ওজনের পাত সোনার পাত আছে। আমার হাতের হীরার আংটি- এর দাম পনের হাজার টাকা। গলায় চেনটার দাম দশহাজার এগুলোও খুলে নিন। একে বারে খালি হয়ে নগ্ন হয়ে আমি বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেব। ফিরেও আসব না কোন দিন। এই নগ্ন অবস্থায় খালি শরীরে ওপারে চলে যাব। ওই পাহাড়ে তো কোন মানুষ নেই্। ওখানে আমরা শরীর দেখারও কেউ নেই। এই নগ্ন অবস্থা আমরা দুজন পাহাড়ের গুহায় আদিম মানুষ হয়ে ঘর বাধব। পশু পাখিদের নিয়ে সহ অবস্থান করব। তবুও আমাদের ছেড়ে দিন। বলেই নীলা ওর হাতের হীরার আংটি, গলার চেইন, খুলে লোকটার পায়ের নিকট ফেলে দিল। জামা খুলতে শুরু করল। আমি বাধা দিলাম।
 
ছি নীলা এত পাগলামি কর না। ও অঝোরে কাঁদতে লাগল। বার বার বলতে লাগল-স্যার আমাদের ছেড়ে দিন। আমি ওকে শান্তনা দিতে পারলাম না। এক বার ভাবলাম ব্যাটাকে খুন করে ফেলি, ঐ তো নদী। পেরিয়ে যেতে পারব। পরক্ষনেই ভাবলাম হয়ত চার দিকে পুলিশ আমাদের ঘিরে ধরেছে। পালানো সম্ভব নয়। আমার মরতেও কোন আপত্তি ছিল না। কিন্তু আমার সোনা? অকালে ওকে হারাতে চাইনি।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#50
আট-


ঢাকায় নিয়ে আমার চাচা আমাকে আচ্চা মার দিলেন। কেটে টুকরো টুকরো করে কুকুর দিয়ে খাওয়াতে চাইলেন। নীলাকে গুলি করবে পরিকল্পনা করলেন। চাচীর কান্নাতে সে গুলো করতে পারলেন না। আমাকে কুকুরের মত বের করে ছিলেন। নীলার কান্নায়, সমন্ত বাড়ি কাপতে লাগল থরথর করে। কোন কান্নায় আমার কসাই চাচার মন গলল না।
নীলার ঐ সানসিক অবস্থার মধ্যে বিয়ের আয়োজন করল এক সপ্তাহের মধ্যে। নীলার বিয়ের জন্য আমার চাচা ঢাকার সমস্ত মানুষদের খাওয়ানোর যে পরিকল্পেনা করেছিলেন তা বাতিল করে দিলেন। তবে বিদেশ থেকে বিয়ের সাওদাপাতি করলেন। ছেলে ভারতের কাশ্মীরে থাকে, ব্যবসায়ী। এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যবসা করে। ওর বিয়ে হল। আইন আমার সোনার বিয়ে ঠেকাতে পারলনা। বয়স বার কিন্তু কোন কাজী বলেননি যে বিয়ে পড়াতে পারবনা। সব ঠিক ঠাক মত হয়ে গেল। আমার নীলা সোনা আমাকে ছেড়ে চলে গেল। অনেক অনেক অনেক দূর। আমি জানি ও কোনদিনও আর ফিরে আসতে পারবেনা। আসবেও না কোন দিন। শুধু হৃদয়ের বোবা কান্নায় ওর দুচোখে পানি ভরে যাবে।কাশ্মিরের আনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্যকে ওর কাছে ফিকে মনে হবে। ও চলে গেল কাশ্মীর। আমি হোস্টেলে ফিরে আসলাম। কিছু দিন পর চিঠি পেলাম- ওগো রাজা সোনা, তুমি বিশ্বাস কর, আমি এখনও তোমাকে ভালবাসি। তোমাকে ছাড়া বাচব না। বিশ্বাস করো আমি এখনও ঐ পশু লোকটাকে আমার শরীর ছুতে দিইন্ িযেদিন ওই পশু আমার শরীরের গভীরে প্রবেশ করবে সেই দিনই আমার মৃত্যু হবে। সোনাগো আমি তোমাকে পাগলের মত ভালবাসি, এই জীবনেই তোমার সাথে আমার বিয়ে হবে। ভাল থাক রাজা নীলা।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#51
এই জাতীয় পত্র পেতাম হোস্টেলের ঠিকানায়। আমার সামনে এই কলেজ, পুকুর, মাঠ, গাছ-পালা, আকাশ, রাতের জ্যোৎস্না সবই মিথ্যে-ছলনা। বাবার সাথে অনেকদিন আর দেখা হলনা। কোন মুখে বাবার সামনে দাড়াব? আমার অধঃপতনে বাবা খুব কষ্টে একদিন স্ট্রোক হয়ে মারা গেলন। আমি হয়ে পড়লাম একা। সান্তনা দেবার মত কেউ রইল না। বাবার প্রচন্ড ভালবাসার স্মৃতি আমার এখনও মনে পড়ে। চাচা-চাচী বাবার মৃত্যুর পর আসলেন। খুব কান্নাকাটি করলেন। চাচী আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদলেন।গোপনে আমাকে খরচাপাতি দিতে চাইলেন। আজ খুব জানতে ইচ্ছা করে, এই চরম দুঃখে আমার সোনা আমাকে কি মনে করেছিল? ওকি ঐ মাঝ বয়সি ভদ্রলোক ব্যবসায়ী মানুষটিকে কবুল করেছিল?

দিন যায় রাত আসে, আকাশে জ্যোৎস্না আর তারায় রাত ঝিকিমিকি করে, পাখির ঝাক মাথার উপর দিয়ে উড়ে যায়। চারদিক আলোয় ভরে যায়। এভাবে চলতে চলতে একদিন হিসাব করলাম, বেশ মাস খানিক আমার নীলা, আমার আতœ, ভালবাসা, আমার নিশ্বাস, প্রেরনা আমাকে চিঠি লেখেনি। ভাবলাম এটাই স্বাভাবিক। অতীত অতীতই। কেন তাকে ঘাটাই বার বার। অবশেষে একখানা চিঠি পেলাম। আজও মনে হয় এই চিঠি না পাওয়াই ভাল ছিল। চিঠি খানা যে ভাবে মনে আছে তুলে দিচ্ছি- ওগো রাজাসোনা, আমার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। খুব ইচ্ছা ছিল তোমাকে শেষ দেখব, পারলাম না। আমাকে ভালবেসে তুমি শুধু অপমানিত হলে। কিছুই তোমাকে দিতে পারলাম না। ভেবেছ আমি স্বামী  কে নিয়ে ভাল আছি? ওগো আমার- স্বামীগো আমার ভালবাসা, আমার জীবন, মরন, সবই তো তুমি। এই কথা ঐ পশুকে বলেছি বলে আমাকে ভীষণ সাস্তি দেয়। জানি তুমি আমাকে উদ্ধার করতে পারবেনা। আমাকে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জাপান নিয়ে যাবে। ওখানে আমাকে চিকিৎসা করাবে। আমি জানি, গোপনে ডাক্তারকে দিয়ে আমাকে হত্যা করবে। ওর ডায়েরী পড়ে তাই জেনেছি। আমি বাধা দেব না। একটা কথা তোমাকে বলি, সোনা আমাকে তুমি ক্ষমা করোনা। আমার শরীরকে আমি আজও পবিত্র রেখেছে। তোমার নীলা আজও পবিত্র! এখনও আমি আমার শরীরকে স্পর্শ করতে দিইনি- নীলা, লালারক, কাশ্মীর।
চিঠি পড়ার পর আমি বদ্ধ উম্মাদ হয়ে গেলাম। ভিটেমাটি জমি জমা বিক্রি করে জাপান যাবার জোগাড় করতে লাগলাম। আমার অস্বাভাবিক আচারণ কারও চোখ এড়াল না।হেস্টেল সুপার একদিন বললেন মদটদ খাও নাকি? কোন উত্তর দিলাম না। একদিন বুঝতে পারলাম জাপান যাওয়া হবে না। আমার সোনাকে উদ্ধার করতে পারব না। ও তীলে তীলে মরবে।
জমি বিক্রি করে যে টাকা পেলাম, তাই দিয়ে হোটেলের এক বৎসরের চার্জ মিটিয়ে দিলাম। বন্ধুদের খাওয়াতে লাগলাম। হোটেলে লাইব্রেরী ছিলনা। ত্রিশ হাজার টাকার বই কিনে লাইব্রেরী করে দিলাম। নাম দিলাম নীলা গ্রন্থাগার। দশ হাজার টাকা দিয়ে একটা রিভলবয় কিনলাম। কিছু কার্তুজ ।
সন্ধ্যার পর বেরিয়ে পড়তাম ফাকা একটা মাঠে। ফ্রি হ্যান্ডে গুলি ছুড়তে প্রাকটিস করতাম। ভাল ওস্তাদও পেয়ে গেলাম। ৫০ ফুটের মাথায় নিশানা অব্যার্থ হয় এমন প্রকটিস করলাম। মোটা অংকের পুরস্কার দিলাম গুরুকে।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#52
নীলা গ্রন্থাগারউদ্দোধনের সময় প্রিন্সিপ্যাল স্যার আমাকে খুব প্রসংসা করলেন। নীলা কে? জানতে চাইলেন। যত বার তারা প্রশ্ন করলেন, তত বার আমার চোখ পানিতে ভরে গেল। বার বার রুমাল দিয়ে চোখ মুসলাম। প্রকাশ্যে অনেকগুলো মানুষের সামনে এমন ভ্যদভেদে কান্না বড়ই বিরক্তিকর। তবুও আমাকে কাঁদতে হয়েছে। চেষ্টা করেও বন্ধ করতে পারিনি। শিক্ষক, ছাত্র, কলেজ এলাকার সুধীমহলে আমার নাম ছড়িয়ে পড়ল। ওদের প্রশাংসায় আমার সুখ লাগার কথা ছিল। কিন্তু হায়! কোথায় আমার সুখ? সেতো সবই হারিয়ে আমি এখন নিঃস্ব।

সেদিন রাতে হালকা টাইপের সবজিযুক্ত খাবার খেলাম। ছাদে উঠলাম রাত এগারটায়। চার দিক শুনসন নীরবতা। আকাশ ভরা তারা। গাঢ় অন্ধকার। দূরে একটা দুটো জোনক আলো ছড়িয়ে পরিবেশকে ভৌতিক করে তুলেছে। কিছুতেই মনকে প্রবোধ দিতে পারলাম না। বার বার নীলা আমার রাজ্যে ভিড় করতে লাগল। মনে হল ও তো আমার পাশে। ঐ তো চুড়ির টুন টুন শব্দে আমাকে পাগল করে দিচ্ছে। মনে হল চিৎকার করেবলি নীলা-নীলা-নীলা-নীলা-সোনা আমার নীলা ————–
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#53
সেদিন নীলা বিরহে আমি কাতর হয়ে পড়লাম। রাত প্রায় দুটোর দিকে রুমে ফিরে একটা কবিতা লিখলাম- কবিতাটা হল।

নীলা- আমার সোনা, আমার রাণী-
হারিয়ে গেছ তুমি গহীন অন্ধকারে।
সেদিন এসেছিলে ঝড় তুলতে আমার হৃদয়ে,
এই ভবে——-
আজ কেন লুকালে আধারে?
দেখ কি বিষন্ন আমি।
কি হতাশ আমি-
কত বিবর্ণ এই রজনী।
আকাশ ভরা তারা-
তবুও অন্ধকারে ভরা
এই ধরণী
নেই তো কোথাও আলো
কে জ্বালাবে বাতি-
কে দুর করিবে অন্ধকার রাতি।
এসেছিলে তুমি আমার-
-সাথে বাধবে বলে ঘর।
সেই আমি-পাজি-আইনের মানুষের বলে
হয়ে গেলাম পর।
ওগো- আমার রনী
কোথায় তুমি
কেমন করে কাটাও তুমি
এ কঠিন দিবস-রজনী॥
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#54
কবিতাটি তিন দিন পর এক বন্ধুর চাপে পত্রিকা অফিসে পাঠিয়ে দিলাম। দুদিন পর প্রকাশ পেল। খুব প্রশংসা পেলাম। কয়েকজন সমালোচনা করে বলল, বিরহ কাতর প্রেমিক কবি।
নীলাকে ভুলে থাকতে চেষ্টা করতাম, মাঝে মাঝে রিভলবরের নলটা নিজের কপালে টেকিয়ে বসে থাকতাম। যদি অন্যমনস্ক ভাবে আঙ্গুলটা ট্রিগারে চাপ দিত? তাহলে নীলার জ্বালা রক্তের সাথে ভেসে যেত। আমাকে আর জ্বলতে হত না। পুড়তে হত না।মনে মনে নীলার স্বামী, ওর বাবাকে গালাগালি দিতাম। একবার ভাবলাম ওর বাবাকে আগে খতম করে দেই। ও একটা আদর্শহীন মানুষ। ওদের পাপাচারিতে দেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ওদের রেখে কি লাভ এদেশে? ওরাতো প্রেমের শত্র“, আবার দেশেরও শত্র।ওদের অপরাধের বিচারতো কেউ করেনি, কেউ কোনদিন করবেও না। আমি নিজেই না হয় নিজের আদালতে বিচার করে ওকে মৃত্যুদন্ড দিলাম- ফায়ারিং স্কোয়ার্ডে মৃত্যু, প্রকাশ্যে নয়- গোপনে, কোথায় পাব জল্লাদ? আমি আমিওরে আমি, আমি অভিযোগকারী আমি আদালত, আমি বিচারক, আমিই জল্লাদ, স্পটটা কোথায় হবে?
মনে মনে ভাবতে লাগলাম———
কি ভাবে ওর বাবাকে খুন করলে ধরা পড়ার সম্ভবনা কম, তা নিয়ে গবেষনা করতে লাগলাম। গুপ্ত হত্যা সংক্রান্ত কিছু বইপত্র পড়লাম। বেশ কিছু পদ্দতি বার বার কল্পনা করতে লাগলাম। কিন্তু বই পড়া পদ্ধতির উপর বিশ্বাস করতে পারলাম না।ভাবলাম, এগুলো সবই কল্পনা- ফাকাবুলী, টাকা কামাই করবার জন্য লেখক এই সব আজগুভী পদ্ধতির কথা লিখেছে- এগুলো ফুল প্রপ না। এই পদ্ধতি অনুসারে কাজ করতে গেলেই হাতে নাতে ধরা পড়তে হবে। ঠিক করলাম বাস্তব খুনীদের কাছে পরামর্শ নিতে হবে। উপযুক্ত বকশিস পেলে ওরা হড় হড় করে বলে দেবে। খুনের দায়িত্বটাও ওরা নিতে চাইবে। কিন্তু আমি ওদের দিয়ে কাজটা করাব না। আমি নিজে কাজটা করতে চাই। নিজের কাজ অন্যকে দিয়ে কি হয়? না তাতে তৃপ্তি পাওয়া যায়? আমার দরকার আতœতৃপ্তি, চরম তৃপ্তি। আমার সামনে মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করবে, আমি হাসব, যেমন আমার নীলা সোনা কেঁদে ঘর ফাটিয়েছে, সে শুনেনি। সেও ওই রকম চিৎকার দেবে। মৃত্যুর চিৎকার। কাশ্মীর কিংবা জাপান থেকে আমার সোনা শুনতে পাবে। আমি দাঁতে দাত চেপে হাসব- তৃপ্তির হাসি—-হ্যাঁহ্যাঁহ্যাঁ।
বেশ কিছু টাকা খরচ করে একদিন দুজন পেশাদার খুনীর সাথে দেখা করলাম। ওদের চেহারা দেখে বুঝা গেলনা যে এরা এতবড় কিলার। খুনটাকে এরা একেবারে আর্টের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। মাসে দুএকটা ওডার পেয়ে থাকে। পেমেন্টের ক্ল্যাসিফিকেশন আছে। দামী মানুষ বিগ পেমেন্ট, সাধারণ মানুষ লাইট পেমেন্ট।তবে কোন বাকীতে এরা কাজ করে না। সবই এডভ্যান্স করতে হয়। এডভ্যান্স করে কাজ না হলে টাকা ফিরিয়ে দেয়। মেরে দেয় না। আমাকে পেয়ে ওরা খুশী হল।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#55
আমাকে একটা ক্লাইয়েন্ট ভেবে বসল। খাতির যতœ করল চা- কপি খাইয়ে। আমি খেলাম, সব শেষে আমি আমার কথা বললাম॥ ওরা হতভম্ব হয়ে গেল, কপালের চামড়া ভাজ হয়ে গেল। বলল এই পথে কেন ভাইজান? এ কাজে নেম না ভাই। আর বেরুতে পারবেনা। আমরা কি পেরেছি? বেশ দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেলে বলল জান ভাই- আমাদের এই চেহারাটাই যা সুন্দর। আর কিছুই সুন্দর নেই, সব মরে গেছে। এক সময় সবই ছিল। তোমার মত বয়সে দলদারী করতাম। নেতারা আমাদের ব্যবহার করতে শুরু করল। তখন ভাবতাম, রাজনীতিই আসল আদর্শ। লেখাপড়া কি করব। আগে দেশ বাচাই। আমাদের কথা শুনে নেতারা খুশি হত।একটু একটু করে আমাদের অপরাধের দিকে ঠেলে দিতে লাগল। টুক টাক বাধা আাসলে নেতাদের টেলিফোন বেজে উঠত। সমস্যা মিটে যেত। একদিন নেতাদের প্রয়োরচানায় কলেজের অফিসরুমে আগুন ধরিয়ে দিলাম। বেধড়ক পিটাতে লাগলাম ছাত্রদের।শিক্ষকদের তিনজন আগুনে পুড়ে মারা গেল। আইন আমাদের কিছু করতে পারলনা। তবে নেতারা এই আগুন লাগনোর ঘটনাকে পুজি করল। যখন তখন বীর বাহাদুর খুনী বলে ডাকত। নেতা হবার পরিবর্তে একদিন খুনীই হয়ে গেলাম। আর বলতে পারল না। ঝর ঝরকরে কেঁদে ফেলল। তার পর বলল, জান ভাই- টাকা নিয়ে মানুষ মারি সেটা ঠিক। তবে কেউ যদি স্বার্থবাদী রাজনীতিবিদদের, যারা ছাত্রদের তাদের সার্থে ব্যবাহার করে শিক্ষাঙ্গন রক্তাক্ত করছে তাদের টার্গেট করে আসে তবে রেট কনসিশন করব।এমনকি সেভেনটি ফাইভ পারসেন্ট রেট কন্সিশেন করব। একেবারে ফ্রি করলে তৃপ্তি পেতাম- কিন্তু ফ্রি করলে তো আর ব্যবসা চলে না, খাব কি? সংসার চালাব কি দিয়ে। বাজার দর যে ভাবে বেড়ে চলেছে সব মিলিয়ে হিমসিম খাচ্ছি। আমি বেশ কিছুসময় লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম, লোকটা দাত বের করে হাসতে লাগল। কান্নার ভাব কেটে গেছে। বলল- ভাই, নিজেতো খুন করতে পারবে না। হয়ত ট্রিগার চাপ দিবার আগেই প্যান্ট ভরে পেশাপ করে কাপড় চোপড় নাপাক করে ফেলবে। হেসে উঠল লোকটা।তার পর বলল হাসতে হাসতে, মধ্যখান থেকে তুমি জেলে ঢুকবে। লোকটা বেচে যাবে, আর আমাদের কিছু টাকা হাতছাড়া হয়ে যাবে। বোঝতো ভাই- যাদের যা পেশা তাদের তাই করতে হয়। এখন যদি সবাই দাড়ি সেভ করার মত সব কাজ নিজেরা করে তাহলে ডড়ৎশপষধংংরভরপধঃরড়হবলে কিছু থাকে না। ওদের কোন পরামর্শ আমার কানে ঢুকলনা।বললাম, আমি প্রফেশনাল করষষবৎ হতে চাইনা। মাত্র দুটো খুন করতে চাই, একটা দেশে আর একটা কাশ্মীর কিংবা জাপান। আমি বললাম, একটা পদ্ধতি বলার জন্য এক হাজার টাকা ফিস দেব। কয়েকটা পদ্ধতি শুনব, এরপর যে পদ্ধতি আমার পছন্দ হবে তার জন্য আতিরিক্ত পাচ হাজার টাকা পুরস্কার দেব। ইচ্ছা করলে আমাকে বিশ, পঞ্চাশ, একশ পদ্ধতি বলতে পারেন। প্রতিটির জন্য এক হাজার করে দেব। কাজ করে যা পেতেন তার চেয়ে অনেক বেশী রোজগার হবে। তবুও আমার কাজ অন্য কাউকে দিয়ে করাব না।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#56
নয়-

যে পদ্ধতিটা আমার পছন্দ হল সেটা বেশ শক্ত মনে হল। ওদের আড্ডা থেকে বেরিয়ে একটা রেস্টুরেন্ট ঢুকলাম। চোখে মুখে পানি দিতে রেস্টুরেন্টের পিছনে ট্যাপে গেলাম। সামনে লূকিং গ্লাস, নিজেকে দেখলাম। না, কোন খুন খুন ভাব জেগে ওঠেনি। বেশ শান্ত-শান্ত পাগল বিরহকাতর ব্যর্থ প্রেমিকদের মতই মুখের চেহারা। এই চেহারা বজায় রাখলে একশটা খুন করলেও ধরতে পারবে না। আচ্ছা করে চোখে পানি ছিটালাম। একটা আনন্দ উত্তেজনা শুরু হল। খালি একটা চেয়ারে গা এলিয়ে বসলাম, বেয়ারার ডাকে চমকে উঠলাম। ওকে কড়া করে এককাপ কপি আর দুটা সোমাচা আনতে বললাম। এই ফাকে পাশে রাখা খবরের কাগজটা টেনে নিলাম। সমস্ত পাতা জুড়ে আলফাল খবরে ছাপা। ''., ছিনতাই, প্রতারনার খবর দিয়ে কাগজ ভরে ফেলছে।আহা যদি এমন খবর থাকত বিবাহ আইন শিথিল করা হয়েছে- এখন থেকে দশ বছরের মেয়ে পনের বছরের ছেলের মধ্যে বিয়ে আইন সিদ্ধ, তবে শর্ত থাকে যে, মেয়ের বয়স কুড়ি বছর না হলে কোন বাচ্চা নিতে পারবেনা। এই শর্ত ভঙ্গ কারীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার। এ কাজ তদারকির জন্য মাঠ কর্মীদের সার্বক্ষনিক দায়িত্ব পালনে জোর তাগিদ দওেয়া হল। হাঁহাঁ
 
এমন সময় বেয়ারা কপি সোমচা নিয়ে এল। কাগজ রেখে দিলাম। কপির কাপে চুমুক লাগালাম। বেয়ারা বলল স্যার খবর শুনছেন? আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকালাম, এই বেচারা কি আমার পরিচিত? এ আমার কি খবর দেবে? তবুও বললাম, কি খবর? বলল, না মানে আপনার আমার খবর না, তবে সবাই আলোচনা করছে যে ভাবে মনে হয় খবরটা ওদের সবারই নিজের। আমার অবশ্য এই সব শুনতে ভাল লাগেনা। তবুও আপনি জানেন কিনা তাই বললাম, তা দেখছি আপনি তো এই জগতের বাসিন্দা না। হলে ওই রকম করে তাকাতেন না।
আমি বললাম কি খবর?
বেয়ারা একটু হতাশ হয়ে বলল, ঐ দেখেন আপনার কাছেই আছে । বাংলাদেশের মেয়ে জাপানে নিয়ে চিকিৎসার নামে হত্যা। ওর বাবা কিযে কান্না কাটি করতাছে। জাপান বাংলাদেশ নাম শুনে আমি চমকে উঠলাম। কান, মাথা গরম হয়ে উঠল, দ্রুত কাগজ টেনে নিলাম। সেদিন খবরের কাগজ পড়ে আমি থ হয়ে গেলাম। সাভ্যতার নামে এই কি বর্বরতা? খবরের বর্ননা এরকম- নীলা নামের একটি বাংলাদেশী মেয়ে চিকিৎসা করতে স্বামীর সাথে জাপান আসে। লোকটি কোটি কোটি টাকার মালিক। জাপানী ডাক্তারদের চিকিৎসার নামে মেয়েটিকে হত্যা করার জন্য প্রস্তাব করে। ডাক্তর পিচাশ লোকটির প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। এবং বলে বাচানোই আমাদের ধর্ম, মারা নয়। তাছাড়া এটা জাপানী সভ্যতার পরিপন্থি। লোকটা মোটা অংকের ডলারের প্রস্তাব করে কিন্তু ডাক্তার তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় এবং আইনি ব্যবস্তা নেবার জন্য হুমকি দেয়।এতে লোকটা ডাক্তারের কাছে ক্ষমা চায় এবং তার কাজে লজ্জিত হয়। একসময় লোকটা স্ত্রীর সেবার নামে স্যালাইনের সাথে পয়জন ঢুকিয়ে দেয়। এতে মেয়েটির মৃত্যু ঘটে। ডাক্তারের প্রেসক্রিপসন অনুযায়ী ঔষধের কারনে মৃত্যু হবার কোন সম্ভবনা নেই। কর্তব্যরত ডাক্তার, নার্স, সাথে সাথে পুলিশকে খবর দিয়ে লোকটিকে গ্রেফতার করায় এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষবাদী হয়ে লোকটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলে পুলিশ তাৎক্ষণাত ভাবে ব্যাবস্থা গ্রহণ করে। এক পর্যায়ে পিচাস লোকটি স্বীকার করে যে, তার স্ত্রীকে সেই হত্যা করেছে বিষ প্রয়োগ করে। জাপানী আইন অনুযায়ী লোকটির বিরুদ্ধে ব্যবস্তা নেয়া হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।সবশেষে নীচে লেখা- মেয়েটির বাব ঢাকার বাসিন্দা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ছাকিবহোসেন। জাপানী দুতাবাসে লাশ নিয়ে আসার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং মেয়ের স্বামীকে উপযুক্ত শাস্তির দাবী করে। আমার সমস্ত রক্ত সঞ্চালন মুহুর্তেই বন্ধ হয়ে গেল। মাথা এলোমেলো হয়ে গেল। মনে হল মাথার উপর একহাজারটা বাজ পড়ে পৃথিবী ধ্বংম হয়ে যাচ্ছে। সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ঘর বাড়ি, গাছ-পালা সব থর থর করে কাপছে, চারি দিকে চিৎকার চেচামেচি শুরু হয়েছে। বাচাও বাচাও আর্তনাদ ভেসে আসছে। কপি সমাচা পড়ে রইল। কিছুই খাওয়া হল না। রেস্টুরেন্টা থেকে বেরিয়ে আসলাম। বাইরে তীব্র আলো, ধুলোবালি লোকের ভিড়। কেউ আমার দিকে তাকিয়ে নেই। সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত। মনে হল আমার কাছে যদি বোমা- ছোট খাট বোমা নয়- একেবারে ভিয়েতনামীদের উপর ফেলা নাপাম বা হাইড্রোজেন বোমা কিংবা হিরোশিমো নাগাসাকীর এটম বোমা যদি থাকত। আমি এই মুহুর্তে সমস্ত পৃথিবী লন্ডভন্ড করে দিতাম, এই পৃথিবীতে আমার নীলা নেই এখানে কারোরই বেচে থাকর অধিকার নেই। কারোরই নেই- এমন কি আমারও না।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#57
আমি দ্রুত হোস্টেলে ফিরলাম। পিস্তল সোনাকে তুলে নিলাম, গুলি ভরলাম, পকেটে রাখলাম। ভাবলাম, ঢাকায় পৌছাতে বাসে গেলে চার ঘন্টা লাগবে। যশোর থেকে প্লেনে গেলে কেমন হয়? ঘড়ি দেখে বুঝলাম, প্লেনের সময় পার হয়ে গেছে। মনে মনে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে গালাগালি করলাম। দ্রুত একটা বাসে উঠে বসলাম। ড্রাইভরকে বললাম- তোমাকে প্রতি মিটিটে একশত করে দেব যদি তুমি ঘন্টায় ১ হাজার মাইল বেগে গাড়ি চালাতে পার। ড্রাইভার আমার প্রস্তাবে অবাক হয়ে গেল। মুখ ফেকাসে হয়ে গেল। লোকটার সরল চেহারা আমার পছন্দ হল। জামার কলার ধরে পিচনের ছিটে নিয়ে আসলাম। পিস্তল সোনা পকেট থেকে বের করে নলটা ওর কপালে ঠেকিয়ে বললাম-কোন ট্যাফো করবে না- জানে মারা পড়বে। দ্রুত গাড়ী চালাবে আর কোন চেক পয়েন্টে বা পুলিশ দেখলে গাড়ী থামাবে না। পুলিশ গাড়িতে উঠার আগেই তোমার মাথার খুলি উড়িয়ে যাবে। ওকে বেশ হতাশ মনে হল। বললাম- যদি এর ব্যতিক্রম কর তোমার জীবনতো বটেই তোমার পুরা ফ্যামিলিও সেই সাথে শেষ হবে। আর সোজা পথে চললে-পুরুস্কার। এই নাও- বলে ১০ হাজার টাকা মেলে ধরলাম ওর চোখের সামনে। চোখ জ্বলে উঠল ওর। মৃদ হেসে আমার প্রস্তাব মেনে নিল।

ঢাকায় পৌছানোর পর আমার মাথায় কোন কৌশল আসল না। এক অন্য কৌশল মাথায় খেলা করতে লাগল। ভাবলাম- টাকা গুলো শুধু শুধু গরচা গেল। আমি আমার চাচার নকশি বাড়িতে ঢুকলাম। দেখি চাচি অজ্ঞান, মরে গেছে কিনা বোঝা গেলনা। চাচা তার পাশে বসা- চুল এলোমেলো। আমাকে দেখে ক্ষেপে উঠল। বলল- তুই-হারামজাদা-স্কাউন্ড্রেল- তোর জন্য আমার মেয়েল এই অবস্থা। কি চাস তুই? বেরো এখান থেকে বের। আমি একটু রহস্যের হাসি ফুটিয়ে তুললাম ঠোটে। বললাম থাকতে আসিনি- শুধু একটা জিনিস নিতে এসেছি, নিয়েই চলে যাব। চাচা বলল- কি চাস তুই, বল কি চাস? এটা কি তোর বাবার বাড়ি যে চাইলেই পাবি? বললাম- চাই তোমার জান।সাহসী লোকটি হঠাৎ আতকে উঠল। ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেল। চোখ বড় বড় করে আমাকে দেখতে লাগল। বলল- তোর এত বড় সাহস? বললাম- কথা বাড়িও না জীবনে কোন সখ থাকলে মিটিয়ে নাও, আর শোন- ভদ্র ভাবে কথা বল। পিস্তল বের করলাম- ওর দিকে তাক করলাম। লোকটি নাকি সাহসী!
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#58
একটা ব্যাঙের যে সাহস থাকে তার তাও নেই। ভয়ে আধমরা হয়ে গেছে। তবে সাহস খুজে পেতে চেষ্টা করছে। আমি জানতাম- আতœরক্ষার জন্য ওর একটা পিস্তল আছে। সেটা দোতলায় থাকে। দেখলাম- নজরটা বার বার সিড়ির দিকে বোলাচ্ছে। ও ভয়ে ভয়ে বলল- সোন সঞ্জু তুমি আমার ভায়ের ছেলে, আমারও ছেলে।আমাকে মের না। হাদিসে আছে পিতা হত্যা মহা পাপ। তুমি এমন পাপ করোনা। নীলা মারা গেছে ও আর আসবে না। এই সব সম্পত্তির মালিক এখন তুমি। সেই দুটি কটন মিল এখনও তোমার নামে চলে। তোমার নামে ইনকাম ট্রাক্সের রশিদ আমাকেই কাটটে হয়। এইদেখ তার রশিদ- বলে- লোকটা আলমারির দিকে এগুতে লাগল। আমি সাঁ করে একটা ফাঁকা গুলি ছুড়লাম। কাঁচের কোন জিনিস ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। একটা সাদা মেছো বিড়াল দৌড়ে পালাল। একুইরামের মাছ গুল্ োসাতার কাটতে ভূলে গেল। ও সম্বিত ফিরে পেল। বলল- ছি- সঞ্জু মাথা খারাপ করো না- তুমি কি পত্রিকা পড়ে মাথা খারাপ করে এখানে এসোছ? ছি এটা ভদ্র লোকের বাড়ি না? পাগলামী করো না।যাদু আমার, লক্ষী ছেলে পিস্তল ফেলে দাও। ও একটু একটু করে পিছাতে লাগল। আমি ওর মতলব বুঝতে পারলাম- ও সময় বাড়াতে চায়, আতœরক্ষার চেষ্টা আর কি! ভাবলাম-লোকটাকে সিড়ির উপরে তুলে একটা দৌড় দিতে বলি। একটা খুন খুন খেলা-চাচা-ভাতিজার খুন খুন খেলা। খেলার বিষয় নীলা- ওর মেয়ে আমার প্রেমিকা ……হাঁ…..হাঁ।

আমি দাঁত বের করে হাসতে লাগলাম। একুইরামের মধ্যে পানি আর মাছ টলমল করছে।একটা গুলি করে ভেঙ্গে চুরমার করে দিলাম। পানিতে ঘর ভেসে গেল। মাছ গুলো ছটফট করতে লাগল। দেখি- এই ফাকে ও সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে চেষ্টা করছে। আমি একটা গুলি ছুড়লাম। সোজা ওর হাটুতে লাগল। রক্তে ঘর ভেসে যাচ্ছে। গোংগাছে, কাতরাচ্ছে। দাঁত দিয়ে ঠোট চেপে ব্যাথা সামলাচ্ছে। আমি হাসছি। খোড়াতে খোড়াতে দোতালায় উঠতে চেষ্টা করছে ও। বাধা দিলাম না। সারা মেঝেতে রক্ত লেগে লাল হয়ে গেছে। ভাবলাম- আহারে রক্ত যদি লাল না হয়ে নীল হত তাহলে দেখতে বেশ হত।সমস্ত ঘর নীল হত। রক্তে হিমোগ্লবিনের জন্য রক্ত লাল হয়, কোন উপাদান থাকলে রক্ত নীল হয়? আহা- আমি যদি চিকিৎসা বিদ্যা নিয়ে রক্ত লাল না বানিয়ে নীল বানাবার গবেষনা করতাম তাহলে আজ এই ঘর লাল না হয়ে নীল হয়ে যেত। আমার নীলাসোনার স্মৃতি চিহ্ন নীল- সমস্ত ঘর নীলাময় হয়ে যেত। ভাবতে পারলাম না।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#59
পিচাসের মত হাসতে ইচ্ছা করল। ভাবলাম- দ্রুত খেলা শেষ করি, কেউ এসে পড়বে হয়তো। কিন্তু পারলাম না। আরো খেলতে ইচ্ছা করল। আমি একটা সুযোগ দিলাম। সুযোগ পেয়ে মৃত্যুর মধ্যেও হেসে উঠল। ও পিস্তল খুজতে আলমারিতে হাত বাড়াল। সাথে সাথে আমি গুলি ছুড়লাম। রক্ত ঝরতে শুরু করল হাত থেকে। ওর প্রচন্ড কাতর মিনতি আমাকে ফেরাতে পারল না। সাথে সাথে আরও দুটি গুলি করলাম ও ঢলে পড়ে গেল।রক্তে সমস্ত ঘর লাল হয়ে গেছে। আসলে কি লাল? না লাল নয়। আমি দেখলাম সমস্ত ঘর নীল রক্তে ভেসে গেছে। চারদিক নীলার শরীরের গন্ধে ভরে উঠল। প্রাণ ভরে চোখ বুজে শ্বাস নিলাম। বুঝলাম এক ধরনের বিভ্রম শুরু হয়েছে। দ্রুত ফ্রিজ খুলে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খেলাম। আর এখানে নয়, বেরুতে হবে, পালাতে হবে। নীলা নেই তবে নীলাকে অমর করে রাখতে হবে। নীচে নেমে এলাম। ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লাম অজস্র মানুষের ভিড়ে। হারিয়ে গেলাম মানুষ সমুদ্্ের।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#60
এগার-

ঢাকা শহরে কিছু দিন উদ্দেশ্য হিন ভাবে ঘুরে বাতাসে নীলার শরীরের গন্ধ শুকে বেড়ালাম। পুলিশ দেখলে ড্যাম কেয়ার ভঙ্গিতে সিগারেট টানতে টানতে হেটে যেতাম। দাঁত বের করে স্থায়ী ঢাকাইয়াদের মত হাসতাম। ভিক্ষুকদের পয়সা দিতাম।ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে চা কপি খেতাম। পয়সা দিতাম বেশি।
ঢাকা শহরে আর বেশী দিন থাকতে পারলাম না। যে বাতাসে নীলার গন্ধ শুকে বেড়াতাম, সেই বাতাসই দুদিনে অসহ্য হয়ে উঠল। রঙ্গিন মধুর স্মৃতি গুলো বারবার সামনে হাজির হতে লাগল। ভাবলাম- এইভাবে আমার মৃত লাশকে টেনে বেড়ানোর কোনমানে হয় না। হয় এই জীবনের অবসান করি, নতুবা ভালভাবে বাচি। সবাই চলে গেছে-এখন আমি স্বাধীন। উপদেশ দেবার, শাসন করবার কেউ নেই। হাতে প্রচুর টাকা আছে।যেমন ইচ্ছা খরচ করতে পারি। কিছু দিন অজথা খরচ করলাম। দান খয়রাত করলাম। একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়লাম- ভাবলাম- আর না- আমাকে বাঁচতে হবে। নীলা নেই তো কি হয়েছে? শারীরিক নীলা নেই, কিন্ত নীলা আমার অন্তরে, নিশ্বাসে, রক্তে, ধমনি শিরায় মিশে আছে। এই স্মৃতি নিয়ে আমি বেচে থাকব। নীলাকে আরও নীলাময় করে তুলব। নীলার নামে কলেজ, হাসপাতাল গড়ে দেব। এসব চিন্তায় মন কিছুটা নরম হয়ে এল। ফিরে আসলাম হোস্টেলে। কিছু দিন শান্ত ভাবে থাকার চেষ্টা করলাম। নীলা গ্রহ্নগারে বই পড়ে সময় কাটালাম। ভাবলাম- এলোমেলো ভাবনা গুলো কোন দাম নেই।আমাকে হারিয়ে যেতে হবে একটা নির্দিষ্ট ভাবনার মধ্যে। কোন ভাবনায় নিজেকে ব্যস্ত রাখব? অনেক ভাবনা মাথার মধ্যে আসতে লাগল। শেষে ঠিক করলাম- আমি পর্বত্য এলাকায় যাব। ওই এলাকার উপজাতীয়দের মধ্যে নিজকে বিলিয়ে দেব। ওরা অশিক্ষিত, দরিদ্র, অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত। এ ব্যাপারে প্রচুর লেখাপড়া করলাম। পড়ে পড়ে যা জানলাম তা হল- ওদের হাতে এখন অস্ত্র। অধিকার প্রতিষ্ঠায় ওরা আনাড়ি ভাবে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে। বিশ্বের এক শ্রেণীর মানুষ তাদের অস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছে। ওদেরকে ধ্বংশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমি ঠিক করলাম- আর দেরি নয়। আমার মত নিঃস্ব মানুষকে ওদের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে।ওদের হাতের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে কলম তুলে দিতে হবে। ওদের বোঝাতে হবে- জীবন মানে কি? জীবনের অর্থ কি? দেশ কি? বলতে হবে- এদেশ ভাই তোমাদেরও। কেন ভাই হয়ে ভায়ের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিচ্ছ? কেন তোমরা নিজেদেরকে অন্যের মস্তিস্ক দিয়ে পরিচালিত করছ? মুক্তি যুদ্ধে কি তোমরা অংশ গ্রহণ করনি? তাহলে- তাহলে কেন বাংলাদেশকে জাফনা বানাবার আর্ন্তজাতিক ষড়যন্ত্রের মারবেল হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছ? বেশ কিছু দিন এই বিষয়ে ভাবলাম- কি ভাবে এই সব বাস্তবায়ন করা যায়? এসময় নিজের মধ্যে খুন খুন অপরাধ বোধটা কেটে গেল। ঠিক করলাম এই ভাবে বললে পার্বত্য এলাকার মানুষের হাতে কলম তুলে দিতে পারব না।আগে ওদের মাঝে যেতে হবে। ওদের একজন হতে হবে। কলেজ গড়ে দিতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা দিতে হবে। উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখাতে হবে। নীলার মত ভালবাসার বাধনে বাধবার মন্ত্র ওদের শেখাতে হবে। আমার সোনা রানীকে ওদের মাঝে শ্রেষ্টত্বের আসনে বসাতে হবে। পাহাড়ের চুড়া, সবুজ গাছ পালা, ঝর্ণাকে নীল ভালবাসায় নীলাময় করে তুলতে হবে। অশিক্ষিত, অসহায় দরিদ্র উপজাতীদের মধ্যে হতে হাজার হাজার লক্ষ কোটি ছোট নীলা পরি সোনার জন্ম দিতে হবে। ওরা হাসবে, গাইবে, ঝর্ণায় স্নান করবে আমি দেখব- শুধু দেখব- ওদের মধ্যে আমি নীলাকে খুজে পাব। নীলার জন্ম মৃত্যু দিবস পালন করব। ওই দুই দিন নীলাকে নিয়ে কবিতা, গল্প লিখতে বলব।পুরুস্কার দিব। আমি পার্বত্য এলাকায় যাবার জন্য তৈরী হলাম। প্রয়োজনীয় বইপত্র, জামা কাপড়, ঔষধ পত্র কিনলাম। এত ব্যস্ত থেকেছি তবুও এর ফাকে আমি নীলার বিরহে গলে গলে পড়তে লাগলাম। ভাবলাম- চলে তো যাব বাংলাদেশের এই অংশে আর কোন দিনও ফিরে আসবো না। চিরকালের মত বিদায়। শেষটাই এই জন্ম ভূমির জন্য মনটা একটু ভারি হয়ে উঠল। ঠিক করলাম আরও দুদিন থেকে যায়। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেল গোয়েন্দা পুলিশের আনা গোনা।

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply




Users browsing this thread: 2 Guest(s)