Thread Rating:
  • 12 Vote(s) - 3.33 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance নীলা by Kalidash
#1
নীলা


০৫. জুল, ২০১২
নীলা আমার আত্মা, আমার চেতনা, আমার প্রেরণা, আমার সুখ, আমার দুঃখ, আমার হাসি, আমার কান্না, আমার আলো, আমার আধার, আমার সমস্ত অস্তিত্ব। নীলা বিহিন আমি অর্থহীন। আামার জাগতিক, পারলৌকিক সকল চিন্তায়, কল্পনায়, আবেগে নীলা।কল্পকথার কাহিনীর মত অসম্ভব রূপবতি নীলা আমার দুঃসময়ের সঙ্গী। সুখের সারথী।আমার বর্তমান, আমার অতীত। এই যে এখন আমি হোস্টেলের ছাদের এক কোনে টেবিল-চেয়ার পেতে বসে কলম চালাচ্ছি, তার প্রেরণা দাত্রীও নীলা। আমার সামনে-পিছনে, উপরে, নীচে বাতাসের কণায় নীলার অস্তিত্ব বিদ্যমান। সমস্ত পৃথিবীটাই যেন নীলার ছোয়ায় নীলাময় হয়ে আছে।
কলম চালাতে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। চোখে অঝোরে পানি ঝরছে। চোখের পানিতে ভিজে যাচ্ছে লেখার কাগজ। মাঝে মাঝে অস্পষ্ট স্পর্শ অনুভব করছি। নীলা, নীলা, নীলা, সমস্ত আকাশ কেন এত নীল? তাহলে কি নীলা আকাশের ঐ বিশাল নীলের মাঝে বিদ্যমান? জানি না। বাতাসের বেগে চোখের পানি গালবেয়ে ফোটা ফোটা হয়ে উড়ে গেল কয়েক ফোটা। এই চোখের পানি কি নীলার শুকনো কবরের মাটিতে পড়ে ওকে শান্ত করবেনা?
বাতাসে কিসের এত গন্ধ ভেসে আসছে? নীলা ফূলের গন্ধ কি? নীলা নামের কোনফুল আছে কি? নিশ্চয় আছে। হয়ত এত দিন কোন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী এই ফুলের প্রজাতি আবিস্কার করতে পারেনি। আমি পেরেছি। হ্যা,ঁ এটা নীলা ফূলেরই গন্ধ। ভবিষ্যৎ উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীরাও হয়ত গোলাপ,জবা ফুলের মত নীলা ফূল নিয়ে আলোচনা করবে।
নীলা এখন অনেক দুরে, কোটি কোটি, হাজার হাজার কোটি মাইল দূরে। সমস্ত জীবন, তার পরের, তারও পরের জীবন এবং আরও অনেক জীবন ধরেও যদি সেকেন্ডে একলক্ষ মাইল বেগে চলে এমন কোন গাড়িতে চড়ে তার কাছে যেতে চাই, তবুও পারব না।পারব না তাকে ছুতে। তার কোমল পরীশ্রেষ্ট সুন্দরীর হাতের কবজি স্পর্শ করতেপারব না। অথচ সে আমার চার পাশ অহরহ ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমার প্রতিটি নিশ্বাসে, রক্তের প্রতিটি কণায়, হৃদ পিন্ডের সঞ্চালনের সাথে, শরীরে প্রবেশ করে আমার অন্তরকে ব্যাথায় ককড়িয়ে দিচ্ছে। আমি বার বার বিশ্রাম নিতে চাচ্ছি। লেখা বন্ধ করে দূরে, অনেক দূরে, অন্য কোথাও পালাতে চাচ্ছি। ক্লান্তিতে চোখ বুঝে আসছে। কিন্তু পারছিনা। কোথায় পালাব? কত দিন পালিয়ে থাকব? পৃথিবীর এমন কোন নিরাপদ আশ্রয় আমার জন্য নেই যেখানে নিশ্চিন্তে পালিয়ে থাকতে পারি। আমি জানি, আমি পালিয়ে থাকতে পারব না। পুলিশ খুনের দায়ে আমাকে গ্রেফতার করবেই করবে। আজ না হোক, কাল, কাল না হোক পরশু, না হয় তার পরের দিন, না হয় তারও পরের দিন, তবুও আমি জানি পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করবেই করবে। খুন যে আমি করেছি, সত্য প্রমানিত হলে মৃত্যু দন্ড হবে আমার। খুব সম্বব বেশী দিন পালিয়ে থাকতে পারব না আমি। আমার হোস্টেলে প্রায় প্রায় বিভিন্ন বয়সের স্মার্ট টাইপের লোকজন আসছে। এরা গোয়েন্দা বিভাগের লোক না হয়ে পারে না। কি করে যে এরা খুনির গন্ধ নাকে পায়, বুঝিনা। অথচ দুই জন রাষ্টপতি এদেশে খুন হয়েছেন, এ খবর কি তারা পায়নি?
আজও দুপুরে ঘুমিয়ে আছি। আমার বন্ধু কবির আমাকে ডেকে তুলল। সাথে কদম ছাটচুল ওয়ালা এক ভদ্র লোক। আমার সাথে পরিচিত হতে এসেছেন। ব্যাটা সাহিত্যিক।আমিও সাহিত্য চর্চা করি শুনে আমার সাথে ভাব জমাতে চান। আমি ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে যেয়ে হাত মুখ ধুলাম। ফিরে এসে দেখি কবির নেই। লোকটি আমার ডায়রি ওল্টাচ্ছে। আমার বুকের ভিতর ধক করে উঠল। সাহিত্যিক হলে ডায়রি ওল্টাবে কেন? সামনেই কয়েকটা লেখা পড়ে আছে টেবিলে। কয়েকটা চমৎকার বিদেশী বইও আছে। সেগুলো ওল্টাতে পারত? আমি নিজেকে সামলে নিলাম। নিশ্চয় গোয়েন্দা। খুব সাবধানে কথাবলতে হবে। আামাকে দেখেই গোপের তলে সামান্য হেসে বললেন, আপনিতো চমৎকার লেখেন। লেখা পড়েই ভাবলাম একটু সাক্ষাত করি। কবির আপনার বন্ধু, আমিও তেমন।
আমি ভাবছি, ব্যাটা বলে কি? আমার লেখা পড়ে ভক্ত হয়ে গেল? কোথায় পেল আমার লেখা? বইয়ের দোকানে? অসম্ভব! আমার কোন লেখাই এখনও প্রকাশ পায়নি। আমি হলাম গিয়ে সেই বাথরুমের সিঙ্গারের মত পাতি লেখক। এখানে ওখানে এক পাতা করে লেখা পাঠাই। দুএকটা প্রেমের গল্প, কবিতা লিখি। এতেই যা চেনে দুএকজন। এতটুকু লেখা পড়েই ভক্ত হয়ে কেউ সক্ষাত করতে আসবে ভাবতে পারিনি।
লোকটার কথা শুনে আরও সতর্ক হলাম। জীবনে যার বই প্রকাশ হয়নি এই ভদ্রলোক তারও বই পড়ে ফেলেছেন। ভক্তও হয়েছেন। আমার সামনে উপবিস্ট আমার সাক্ষাতপ্রার্থী। কত বড় চিজরে বাবা!
আমি বললাম, তো কোথায় পেলেন আমার বই? আমার তো কোন বই প্রকাশ হয়নি। লোকটা একটু ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বললেন না মানে কবিরের কাছে শুনলাম আপনি লেখেন টেখেন আর কি!
এতেই আমার বই পড়ে ফেললেন? আপনিতো আচ্ছা চিজ দেখছি। আপনার তো পুলিশে দেওয়া উচিত। লোকটি আর বসলেন না। কবিরকে খুজতে চলে গেলেন। সমস্ত বিকাল আর দেখা গেল না। পরে কবির বলল, ওনার সাথে কোন বন্ধুত্ব নেই তার। তিনিই কবিরকে পেয়ে ম্যানেজ করে হোস্টলে এসেছেন আমার খোজে। আমি নিশ্চিত হলাম, মুক্ত আলোবাতাসে ঘুরে বেড়ানোর সময় আমার শেষ হয়ে আসছে খুব শীগ্রই আমি ধরা পড়ে যাব।বার বার আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে আমি পালিয়ে থাকতে পারবো না। আর তাই তো আমি লিখতে বসেছি অতীতের কাটা তারের বেড়ায় আবদ্ধ আামার জীবন কথা, যা খুবলে খুবলে খাচেছ আমার জীবনকে প্রতিটি মুহুর্ত। যে কাহিনী আমার লিখতে হাত কাপছে। চোখে অঝোর পানি ঝরছে। চোখের পানিতে জামার কলার ভিজে গেছে। কাগজেও পড়েছে দুএকফোটা। চোখের এই পানির ফোটা নীলার কবরে কি পড়ছে বাতাসে ভেসে ভেসে? জানিনা, নীলা, নীলা, তুমি কোথায় গো সোনা? তোমারই কাহিনী লিখতে যে আমার হৃদয় খুন হচ্ছে রক্ত ঝবছে। নীলা, নীলা সোনা আমার নীলা-নীলা-নীলু গো-আমার! তুমি কোথায়সোনা?
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
এইতো ! প্রথমে নীললোহিত তারপর মনোজ ম এখন কালিদাস। এবার শেক্সপিয়ার , টলস্টয় আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আসা বাকি Tongue Tongue ❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
#3
আমার জন্ম সাতক্ষীরা জেলায়। উনিশত পয়ষট্রিতে। পহেলা জুলাই। আমার বাবা ছিলেন একজন কলেজ মাষ্টার এবং আদর্শ কৃষক। দরিদ্র পিড়ীত বাংলাদেশের একটি গ্রামে একজন কলেজ মাষ্টার আধুনির্ক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতেন, চমৎকার ফসল ফলাতেন। অশিক্ষিত কৃষকদের মাঝে কৃষি বিষয়ে জ্ঞান দিতেন। বাবা কৃষি কাজে সফলতা পেয়েছিলেন বেশ কবার। শ্রেষ্ট আদর্শ কৃষক হবার গৌরব অর্জন করেন এবং কয়েকটা সোনার মডেলও পান। মাঝে মাঝে সে গুলো বাক্স থেকে বের করে মা-বাবা দেখতেন আর আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসতেন, বলতেন তোমাকেও কোন না কোন বিষয়ে মেডেল পেতেই হবে। তোমাকেও কোন না কোন বিষয়ে শ্রেষ্ট হতেই হবে। বাবা, আমি কি প্রেমের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ট হয়নি? আদর্শ প্রেমিকের গৌরব কি আর্জন করতে পারিনি? আমি শ্রেষ্ট প্রেমিক হিসেবে কি একটা মেডেল পেতে পারি না? বাবাএই প্রশ্নের উত্তর আজ কে দেবে?
বাবার নাম ছিল মোহাম্মদ আজারউদ্দীন বি,,বি,টি। আমার ছোট চাচার নাম ছিল মোহাম্মদ আবিদ হোসেন বি,এ। যতদূর পরে জেনেছি তিনি ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বেকার ছিলেন এবং বেকার অবস্থায় বিয়ে করেন। তার বিয়েতে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা আমার জানা নেই। এই বেকার দম্পতির ঘরেই ১৯৭১ সালে নীলার জন্ম হয়। আমার আবছা মনে আছে সামান্য কিছু ঘটনা। চাচীর প্রচণ্ড ব্যাথা শুরু হল। চার দিক ছোটা ছুটি শুরু করছে সবাই। একজন মহিলা সম্ভবত ধাই তিনি বার বার পান মুখে দিয়ে পানের চিপ ফেলতে আসছেন বাইরে। আমি বারান্দার এক কোনে দাড়িয়ে লোকজনের ছোটা ছুটি দেখছি। মাঝে মাঝে চাচীর গোঙ্গানীর শব্দ ভেসে আসছে কানে। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। বাবা বাড়ি ছিলেন না, কিছু পরে আসলেন। সাথে সাথে আমি বাবার কাছে গেলাম। বললাম, চাচী কাদছে ভীষণ। সবাই ঘরে নিয়ে গেছে। বাবা বললেন, তুমি চুপ কর। আমি চুপ করলাম। বাবা জামা গায়ে দিয়েই ডাক্তার বাড়িতে ছুটলেন।ডাক্তার এলেন তখন বিকাল প্রায় চারটা। সামন্য ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে।সন্ধার দিকে ডাক্তার বেরিয়ে এলেন চাচীর ঘর থেকে। একটা বাচ্চার কান্না ভেসে এল সবার কানে। কান্নাও যে আনন্দ ও স্বস্তি বয়ে আনতে পারে সেই ছোট অবস্থায় বুঝলাম।
নীলার জন্মের পর পরই পৃথিবীতে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিয়েছিল বাতাস। সেই হালকা শীতের মধ্যেও গাছের পাতা একটু নড়ে উঠেছিল। কিছু পরে বাড়ির ছাদের উপর দিয়ে একঝাক পাখি উড়ে গিয়েছিল উত্তর দিকে। বয়স্ক মহিলারা এসব দেখে মন্তব্য করেছিল, শুভ লক্ষণ। মেয়েটি হবে লক্ষী, জগৎ শ্রেষ্ঠা, যেমন রুপবতী তেমন গুনবতী ও সৌভাগ্যবর্তী হবে। শুনে বাবা হাসলেন। আমাকে বললেন, যা চাচীকে দেখেআয়। তোর মাকে আমার কাছে আসতে বল। আমি তাই করলাম।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#4
তারপর....
Like Reply
#5
নীলার জন্মের পরের দিন দুটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটল। প্রথমটা আমাদের পারিবারিক, দ্বিতীয়টা জাতীয় পর্যায়ের কিংবা আর্ন্তজাতিক পর্যায়ের ঘটনা।পারিবারিক ঘটনাটি এমন, আমাদের একটা পোষা গর্ভবতী গাভী ছিল। সে তার নির্দিষ্ট সময়ের আঠার দিন আগে বাচ্চা দিয়ে বসল। গ্রামের সবাই গভীর আগ্রহ নিয়ে দুটো বিষয় ভাবতে লাগল। কিভাবে এটা সম্ভব? আঠার দিন আগে বাচ্চা প্রসবের ঘটনা ্এই প্রথম। কেউ কেউ বলল, সঠিক হিসাব হয়ত জানে না। বাবা জোর দিয়েইবললেন, তার হিসাব ঠিক আছে। এই ঘটনাকে তারা সৌভাগ্যের লক্ষণ বলে মন্তব্য করল। একই সাথে দুটো প্রজাতির দুটো ব্চ্চাা দান। একটায় পারিবারিক প্রশান্তি।অন্যটা পুষ্টি আর আর্থিক নিশ্চয়তার প্রতীক। বাবা গ্রামের মানুষের মতামতকে অবৈজ্ঞানিক বলে
মন্তব্য করলেন।
দ্বিতীয় ঘটনা ঘটল ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে। ছাত্ররা বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দিল। পতাকা উড়িয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করল। সারা দেশে উত্তাল হাওয়া বইতে লাগল। শাসক গোষ্ঠী ভড়কে গেল। শেখ মুজিবর রহমানের সাথে ইয়াহিয়া খান টালবাহানা শুরু করে দিল। তারা পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের দাবিকে মেনে নিতে পারল না। ক্ষুব্ধ ছাত্ররা বাধ্য হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করল।নেতাদের ঘোষণার অপেক্ষা করল না। এই দুটি ঘটনা ঘটল নীলা জন্মাবার ঠিক পরের দিন। তাহলে নীলা কি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দৃষ্টা হয়ে জন্ম নিয়েছিল? তার জন্মের মধ্যেই কি সৃস্টিকর্তার কোন ইঙ্গিত ছিল?
১৯৭১ সালের ১০ই মার্চ আমার বয়স পাঁচ বছর আট মাস নয়দিন পূর্ণ হল। নিয়ম অনুসারে পাঁচ বছর বয়স হলেই কলেজে ভর্তি হবার কথা। আমি ভর্তি হতে পারিনি।সত্তরের নির্বাচন আর সাইক্লোন সমস্ত পরিকল্পনা নষ্ট করে দিল। তাই বাবার হাত ধরে আমি ১০ই মার্চ ভর্তি হতে গেলাম স্থানীয় প্রাইমারী কলেজে। এর আগে আমি যে বই পড়তে শিখিনি তা না। বাবা বাডিতে এক মাষ্টার রেখেছিলেন। তিনি আমার অক্ষর জ্ঞান শিক্ষা দিতেন। ছবির বই দেখে ছবি আঁকা শেখাতেন। ছবি সম্পর্কে হাত নেড়ে নেড়ে বিজ্ঞ পন্ডিতের মত কক্তৃতা দিতেন। পাহাড় সম্পর্কে ধারণা পেলাম সেই ছোট থেকেই। পরে জেনেছিলাম, আমার সেই শিক্ষক ছবি বিশেষজ্ঞ। এই শিক্ষকের আর একটি মুগ্ধ করার মত গুন ছিল। সেটা হল, শুর করে করে নামতা পড়ানো। বেশ ছন্দের মত মনে হত। মনে হত কোন মধু সুধা আমার শরীরে প্রবেশ করছে।আর আমি আনন্দিত হয়ে সেই মধুর স্বাধ নিচ্ছি। বাড়িতে পড়ে পড়ে আমি মোটমুটি সেই বয়সের উপযোগী হয়ে উঠলাম।
প্রথম দিন আমার সাথে যাদের পরিচয় হল, আমি শুর করে নামতা পড়ে আর ছবি,পাহাড় সম্পর্কে গল্প করে ওদের তাক লাগিয়ে দিলাম। কলেজের স্যার প্রথম দিনেই আমার নাম দিলেন লিটন পন্ডিত এ্যাবাউট ছবি এন্ড নামতা। কলেজ ছুটির আগেই বাড়ি ফিরলাম। মা যতœ করে খাওয়ালেন। বাবা জিজ্ঞাসা করলেন, কিরে সঞ্জু মিয়া, বাড়ি ফিরলি যে তাড়াতাড়ী? আমি বললাম, বাবা কলেজের চেয়ে বাড়িতে ভাল পড়তে পারব। কলেজ ঘর ভীষণ নোংড়া। বাবা বললেন ঠিক আছে, তাই হবে। আমি কলেজে যাওয়া বন্ধ করলাম।
বাড়িতে আমার পদচারনা ছিল কিছুটা নির্লুপ্ত টাইপের। নিজের ঘরে অনেক সময় বসে কটিয়ে দিতাম। ছবির বই নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে নাড়াচাড়া করতাম। নামতা লিখতাম। ছবির বইতে ছাপা পাহাড়ের ছবিটা আঁকতে চেষ্টা করতাম। ডেকে না দিলে খেতে যেতাম না। মা-বাবা ব্যস্ত থাকতেন চাচী আর নীলাকে নিয়ে। আমাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন আমার সেই ছবি বিশেষজ্ঞ শিক্ষক। চাচা সারাদিন কোথায় যেন থাকতেন চাকরীর ধান্দায়। তাকে নিয়ে বাবা মাঝে মাঝে বকাবকি করতেন।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#6
এর মধ্যে শেখ মুজিব ও ইয়াহিয়া নাটক জামিয়ে ফেললেন। হঠাৎ ঢাকায় নির্বিচারে গনহত্যা চালিয়ে বসল পাকিস্তানিরা। মুক্তিকামীরাও স্বাধীনতার ডাক দিয়ে বসলেন। শুরু হল যুদ্ধ। সমস্ত মানুষ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘঠতে লাগল সব অসভাবিক ঘটনা। দলে দলে মানুষ যে যার সুবিধা মত দলে যোগ দিতে লাগল। বাবা মৌন মুক্তি যোদ্ধা হলেন। চাচা হলেন শ্রেণী শত্রখতম আন্দোলনের সমর্থক।মাঝে মাঝে বাবা আর চাচার মধ্যে উত্তপ্ত কথা কাটা কাটি হত। বাবা বলতেন শ্রেণী শত্রখতমের নামে তোরা ত ডাকাতি করছিস। চাচা বলতেন, বাঁশের লাটি আর খোন্তা-কোদাল, দুএকটা পাখি মারা বন্দুক দিয়ে তোমরা দেশ স্বাধীন করতে পারবেনা। বাবার দৃষ্টিতে শ্রেণী শত্রখতমকারীরা স্রে¬ফ ডাকাত । আদর্শহীন একদল সংঘবদ্ধ খুনী। চাচা বলতেন, তোমরা তো স্রে¬ফ মুজিবের চামচা। সে পাকিস্তানের জেলখানায় বসে পোলাও-বিরাণী খাচ্ছে, আর তোমরা খালে-বিলে, বনে জঙ্গলে লাঠি সোটা নিয়ে যুদ্ধ করছ এবং স্বেচ্ছায় নিজেরা বলছ শহীদ হচ্ছে।সেতো জেল থেকে বেরিয়ে নানা চমৎকার বক্তৃতা দিয়ে তোমাদের মন ভোলাবে। বাবা আর কিছু বলতেন না। দেখতে দেখতে গ্রাম প্রায় লোকজন শূন্য হয়ে গেল। বাবা তার কিছু প্রতিবেশি নিয়ে আমাদের বাড়িতে সারা রাত গল্প গুজব করতেন। গোপনে বিভিন্ন ক্যাম্পে খবরা খবর পৌছে দিতেন। চাচা প্রায় বাড়ি আসতেন না। ছোট বাচ্চা মেয়ে নীলার জন্যও কোন দিন আসতেন না। চাচি কেঁদে কেটে অস্তির হতেন।হঠাৎ একদিন রাতে বাড়ি ফিরলেন। সাথে একটা থ্রি নট থ্রি রাইফেল। এক বস্তা ভর্তি গহনা ঘাটি এবং নগদ টাকা। চাচার চোখ দুটা লাল টকটক করছে। বাবা সাহস করে বললেন, কিরে আবেদ এগুলো কোথায় পেলি? চাচা কিছু বললেন না। হাত মুখ ধুতে লাগলেন। চাচী ফুপিয়ে ফূপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। আমার মাও অবাক হলেন। বাবা বললেন, এগুলো কোথায় পেলি? চাচা বললেন, এগুলো এখন আমার সম্পদ। বাবায় চাচায় বেশ কথা কাটা কাটি হল। এক সময় আমরা সবাই শুনতে পেলাম চাচা বললেন দেখ বড় ভাই হয়েছ বলে সব কিছুতে নাক গলিও না। এখন যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধের সময় কোন নিয়ম কানুন থাকে না। তুমি আমাকে কিছু করতে বাধ্য কর না। আমি একটু পরেই চলে যাব।আর ফিরব না। চাচা তার কথা রাখলেন। সেদিন রাতে সবাইকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন।এক পলকের জন্য নীলাকে দেখলেন না। মা-চাচি-বাবা আমি কাঁদছি অঝোরে। নীলা কাঁদছে ট্যা- ট্যা করে। ওর কান্নার মধ্যে ও কি কোন ইঙ্গিত ছিল? সেই যে চাচা গেলেন, আর এলেন না! যুদ্ধ শেষ হলেও তিনি এলেন না। বাবা বহু খোজাখুজি করলেন।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#7
দুই-২


আজ হোস্টেলের ছাদে বসে আমি যে কাহিনী লিখছি, সে কাহিনী সর্বনাশা দুর্দান্ত ঝড়ের প্রকোপে সর্ব শ্রান্ত প্রকৃতির কাহিনী। তার সূত্রপাত ঘটে উনিশত আটত্তর সালের বসন্তের আগমনের প্রথম দিকে। আমার বয়স তখন প্রায় তের ছুই ছুই। তের বছর বয়সে কি বসন্তের আগমন উপলব্দি করা যায়?
আমি সে দিন কলেজে মন বসাতে পারছিলাম না। বার বার বাইরে মন চলে যাচ্ছিল।স্যার ক্লাসে কি পড়াচ্ছেন বুঝতে পারছিনা। খড়কুটোর মত নিরস মনে হতে লাগল।সেই দিন আমার জীবনের সর্বনাশার যে বীজ শরীরে প্রবেশ করেছিল তা থেকে চারা গজাতে শুরু করল। শরীর,মন,চঞ্চল হয়ে উঠল। মনকে আর ধরে রাখতে পারছিলাম না।শরীরের আশ্চার্য পরিবর্তনে ভয় পেয়ে গেলাম। বিষয়টা নিয়ে কারোর সাথে আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করলাম। কিন্তু বিশ্বস্ত কাউকে পেলাম না। এভাবে ঘোরের মধ্যে কাটল বেশ কয়েক সপ্তাহ। এর পর একদিন ক্লাসের মধ্যে দেখলাম আমার একবন্ধু একটা সাপ্তাহিক বিনোদন পত্রিকা দেখছে। তাতে অসম্ভব সুন্দরী সবমেয়েদের ছবি, নানা ভঙ্গিতে ছাপান। বন্ধুর নাম তুষার। লম্বা দোহারা গড়ন।হালকা নরম গোপ নাকের নীচে উঠার আয়োজন করছে। আমার সাথে দারুন ভাব। ছাত্র হিসেবে দ্বিতীয় শ্রেণীর। ওর আই, কিউ, খুব উন্নত নয় আমার মত। আমি দেখতে চাইলাম। খুব আগ্রহ নিয়ে আমাকে পত্রিকা দেখাল। মুগ্ধের মত দেখলাম। সমস্ত শরীর চঞ্চল হয়ে উঠল। আমার শারীরিক পরিবর্তন এবং চঞ্চলতা বাবার চোখ এড়াল না।বাবা তার পরিচিত এক ডাক্তার বন্ধুর কাছে আমাকে পাঠিয়ে দিলেন বাবার একটা ঔষধ আনার উছিলায়। ডাক্তার আংকেলের বয়স পঞ্চাশ ছুই ছুই ভাব। টেকো মাথা।কাধের উপরে হালকা কিছু চুল। হিসাব কষলাম, এরকম একটা টেকো মাথার চুল টাকাতে নাপিতেরা কত নেয়?
ডাক্তার আমাকে বাবার ঔষাধটা দিলেন। তার পর আমার সাথে কথা বলা শুরু করলেন। ঐ বয়সের শারীরিক সমস্যার অহেতুক ভয় দুর করার যাবতীয় পরামর্শ দিলেন।বাজে চিন্তা মাথায় আনতে নিষেধ করলেন। কিছু ঔষধ পত্রও দিলেন। সৎ থাকতে পরামর্শ দিলেন। ভাল বন্ধুর সাথে মিশতে বললেন। আমি বাধ্য ছেলের মত আংকেলের সমস্ত উপদেশ মেনে নিলাম। আংকেল আরও বললেন, তোমাদের এই যে বয়ঃসন্ধিকালের ব্যাপার স্যাপার নিয়ে তোমরা আমাদের মত পরামর্শক পাচ্ছ। কিন্তু আমাদের সময় এসব কথা কাউকে বলাও যেত না। লোকে নীচু চোখে দেখত। আতংকিত ভাব জাগিয়ে দিত।তিনি আরও বললেন কলেজের পাঠ্য বিষয়ে এই সব বিষয় অন্তর্ভূক্ত করা উচিত। আমি আর বসতে চাইলাম না। বিদায় নিলাম বুড়ো ডাক্তার, পরামর্শক আংকেলের কাছ থেকে।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#8
ডাক্তার আংকেলের কোন উপদেশ কাজে লাগতে পারলাম না। গোপনে সিনেমা হলে যেতে শুরু করলাম। নারীর স্পর্শ পেতে ইচ্ছা হতে লাগল। সিনেমা দেখে প্রেম করার স্টাইল, অজশ্র স্টাইল মনে আসতে লাগল। প্রেম,প্রেম,প্রেম! তখন যেন প্রেমই আমার সমস্ত আতœার খোরাক। কলেজের সমস্ত মেয়েকেই আমি প্রেমিকা হিসাবে পেতে চাইতাম। প্রচন্ড প্রেম তেষ্টায় জীবন যায় যায় অবস্থা। আমার ভাব সাব দেখে একবন্ধু বলল, বাবাকে বলে বিয়ে করে ফেল। প্রচন্ড ধাক্কা খেলাম। রৌদ্রের উত্তাপের সাথে সাথে আমার শরীর উত্তপ্ত হতে লাগল। অসম্ভব প্রেম তেষ্টায় কাতর হতে থাকলাম। অথচ কাউকে ভালবাসতে পারছিলাম না। প্রত্যেক মেয়েরই নিজস্ব একটা রুপ আছে, সৌন্দার্য আছে, প্রত্যেক মেয়েকেই প্রেমিকা হিসাবে পেতে ইচ্ছা হত।রুপ সৌন্দর্য সম্পর্কে তখন আমার কোন ধারনা ছিল না। বাজারে বইয়ের দোকান ঘুরে ঘুরে রুপ সৌন্দার্য সম্পর্কে বই খুজতে শুরু করলাম। বিখ্যাত কিছু সাহিত্যিতদের নারী ও সৌন্দর্য বিষয়ক বই পত্র পড়লাম। প্রেম ও নারীর সম্পর্ক, প্রেমের সাথে রুপ ও সৌন্দর্যের সম্পর্ক বিষয়ে প্রচুর বই পড়লাম। নারীর আকর্ষণ কিসে? প্রেমের মূলমন্ত্র কি? এত সব বুঝতে বুঝতে আমার বয়স তের পারহয়ে গেল। এসব বিষয়ে তখন বন্ধুদের সাথে খোলাখুলি আলোচনা হত। নারীর সৌন্দর্য কিসে এনিয়ে বিস্তর বিতর্ক চলত। কেউ নারীর সৌন্দর্য হিসেবে কোকড়ানো চুল, চোখ, ঠোট,মুখ হাসিকে বোঝাত। আমি একমত হতে পারতাম না। এর কিছু দিন পর বুকস্টল থেকে নারীর শ্রেষ্ট সম্পদ ও সৌন্দর্যের প্রতীকবই টি কিনে পড়তে শুরুকরলাম।

রাত্রে শুয়ে শুয়ে অজশ্র স্বপ্ন দেখতাম। রাজ্যের সব মেয়ে এসে ভীড় করতে লাগল আমার চোখের সামনে। সবারই চোখের মাদকতা আমাকে আকর্ষণ করত। কিন্তু প্রত্যেকের মধ্যেই যেন কিছু একটার অভাব। দুর্বিসহ যন্ত্রনায় জীবন ধ্বংস হয়ে যাবার মত অবস্থা। লেখা পড়া সিকেয় উঠতে লাগল। ক্লাস টিচার বাবার কাছে নোটিশ পাঠালেন যে, ছেলের লেখাপড়ার মান নিম্নগামী। বাবা আমার ভাবসাব দেখে একটা কড়া ধমক লাগালেন একদিন। কিরে ব্যাটা সঞ্জু? লেখাপড়া করিস না? আমি ভড়কে গেলাম। বললাম, করিতো বাবা। বাবা বললেন, বেশ, তাই কর। আমি ঘাড় নেড়ে সায় দিলাম। বুঝতে পারলাম, আমি লেখাপড়া থেকে অনেক দূরে চলে গেছি। নারীর রুপ, সৌন্দর্য আর প্রেম নিয়ে ভাবতে থাকলে লেখাপড়া সত্যিই সিকেয় উঠবে। মন প্রান বড় কষ্টে বইয়ের কালো অক্ষরের দিকে নিবন্ধ করলাম। খুব অল্প দিনেই আমি নারীর রুপ সৌন্দর্য ও আকর্ষনের বিষয় সম্পর্কে ছোট খাট একজন বিশেজ্ঞ হয়ে গেলাম।দেখলাম শুধু আকর্ষণীয় উচ্চতা, ফর্সা ধব ধবে রুপ, ঠোটের হাসি, চোখের চাউনিই নারীর আসল সৌন্দর্য নয়। পরীর মত সুন্দর নারীদের আরও একটা,বৈশিষ্ট্য থাকতেই হবে। সেটা হল ছলনাছলনানারীর সৌনর্যের আর একটা স্বর্গীয় রুপ। যেনারীর মধ্যে ছলনানেই, সে সত্যিকার রুপবতী নয়। কিছু কামনা, বাসনা, প্রত্যাশিত প্রাপ্তির মধ্যে ছলনাপ্রেমকে সত্যিই দৃঢ় করে। পরীর মত শ্রেষ্ট সুন্দরী হতে হলে অবশ্যই ছলনাশব্দ টি যুক্ত থাকতে হবে। আমি তখন বসন্তের প্রথম ধ্ক্কাা কাটিয়ে উঠেছি। মেয়েদের মধ্য আমার প্রবল চাহিদা। আমার দৈহিক উচ্চতা, শারীরিক গড়ন, চুলের ছাট, পোশাক, কথা বলার ধরণ, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় উপস্থিত যুক্তি খন্ডন, ফুটবল, ক্রিকেট খেলা, সবটাই মেয়েরা আকর্ষণ করত। আমি যেটাই করতাম, সেটাই শ্রেষ্ট হত তাদের কাছে।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#9
উনিশত আশি সালের প্রথম মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের এক দিন, শেষ রাতের দিকে একটা স্বপ্ন দেখলাম। স্বপ্নটা ছিল এই রকম, আমি পাহাড়ের উপরে উঠছি, পাহাড়ের উপরে সবুজ গাছ পালা দেখছি, প্রকৃতির রুপ সুধা পান করছি। নীল আকাশ, হালকা বাতাস, চুলগুলো পিছনে উড়ে যাচ্ছে। নীচে ঝর্ণার স্রোত ধারা। নেচে নেচে পানি নেমে যাচ্ছে দূরে। ছোট নালা, সাদা পানির স্রোতে পূর্ণ। হঠাৎ দেখলাম, একটা বুনো হাতি আমার দিকে তেড়ে আসছে। আমার মধ্যে উত্তেজনা ভয় কোনটাই হল না।হাতিটি আমার কাছা কাছি এল। শুড় দিয়ে আমার জামায় ঘষতে লাগল। আমি হাসছি। কোন উত্তেজনা নেই। মনে হল যেন বুনো হাতির সাথে মানুষের বুঝি এটাই স্বাভাবিক সম্পর্ক। কিছু পরে হাতিটি আমাকে ফেলে সামনে এগিয়ে গেল। আমি তখনও হাতিটির দিকে তাকিয়ে তার শুড় উচু করে চলে যাওয়া দেখছি। দেখতে দেখতে চোখ চলে গেল ঝর্ণার নীল পানিতে। স্বচ্ছ পানির স্রোত, দেখতে মধুময় লাগল। হঠাৎ কানে ভেসে এল একটা হাসির শব্দ। খিল খিল করে হাসা। কাচের চুড়ির ঝনঝনে শব্দের মত উচ্ছল প্রানবন্ত। কানে ছন্দের মত আছড়ে পড়তে লাগল। আমার দৃষ্টি উদাস হল। দেখলাম, আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তার নীচে ঝর্ণার পানিতে একটা মেয়ে। বয়স বড়জোর আট কি নয়। গায়ে লাল ফ্রক, মুখ চাঁদের মত গোল। থুতনিটা সামান্য লম্ব। মাথায় একরাশি চুল। পিঠের উপর ছড়ানো। ঠিক যেন ছোট পরী। হয়ত পরীর বাচ্ছা। শুধু ছবির পরীদের মত ডানা নেই। শুধু হাসছে আর দুহাতে পানি ছড়াচ্ছে। জামা ভিজাচ্ছে।আর কেউ আছে কিনা চারপাশে ভাল করে লক্ষ করলাম। কাউকে পেলাম না। একটু পরে ঝর্ণার পানিতে সাতার কাটতে শুরু করল। লাল ফ্রক আর লাল পাজামা পানিতে ভিজে শরীরের সাথে আটকে গেছে। হাসের মত ডুবছে আর উঠছে। একটু নীচে নেমে গেলাম। আরও কাছাকাছি। আরও কাছে, আমি তন্ময় হয়ে মেয়েটিকে দেখছি। চেহারায় দুষ্টামির আভাস। চোখ ফেরাতে পারলাম না। এক দৃষ্টিতে লাল পরীকে দেখছি। দাঁত দিয়ে নীচের ঠোট কামড়াচ্ছি। চোখের তারা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। কাটুক সাতার লাল পরী পানিতে, আমি তাকাচ্ছি আর ঐ দৃশ্যের সৌন্দর্য সুধা পান করছি। থরথর করে কাপছি আমি।কেন আমার এমন হচ্ছে? কিছু পরে মেয়েটি আমার দিকে তাকাল। একি দেখলাম আমি! এতো সাক্ষাত পরী। আমাকে দেখে আশ্চার্য হল না। বরং দাঁত দিয়ে নীচের ঠোট চেপে ধরে চোখ সামান্য বড় করে একটা আদুরে দৃষ্টিতে আমাকে দেখছে। আমিও দেখছি।দুজনে চোখ ফেরাতে পারছিনা। ভাবলাম এই কি আমার কল্পকথার রাজকন্যা? যার খোজে আমি অহর্নিশ ব্যস্ত? আমি হাসছি। মেয়েটিও হাসছে। আমি কাছে এগিয়ে যাচ্ছি।সেও রহস্যময়ী ভঙ্গীতে দূরে সরে যাচ্ছে। এক তীব্র হতাশায় হৃদয়টা মোচড় দিয়ে উঠল। সাথে সাথে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#10
তিন- ৩
১৯৮১ সালের ১লা জুলাই আমার বয়স হল ষোল। এই সময় একটা ব্যাপার ঘটল।নিদ্রায়, অনিদ্রায় আমি যে নারীকে খুজতাম, তাকে পেয়ে গেলাম। একদিন কলেজে থেকে ফিরে ছাদে উঠলাম। ফ্রেস বাতাস নিয়ে ফুসফুসকে শক্তিশালী করছি। হঠাৎ দেখি কুসুম কালারের সকার্ড পরা একটা মেয়ে। পায়ে কেডস। জিনসের প্যান্ট। হাতে বেসলেট। চুলগুলো এলোমেলো। মুক্তোর মত দাত বের করে হাসছে। দুষ্টামীতে ভরা হাসি।শরীরের মধ্যে বিদ্যুৎ খেলে গেল। আহ্-রে! এই তো সেই মেয়ে! এর সব রুপই আছে। সব সৌন্দর্যে পূর্ণ। চেহারায় দুষ্টামীর ভাব। আমি যত তাকাচ্ছি, তত পাকা পরিচিত প্রেমিকার মত করে হাসতে লাগল। চোখের তারায় কামনা আর আহবানের ঝিলিক। আমি স্থির থাকতে পারলাম না। ভাবলাম এইতো সেদিনের নীলা, আজ এই সেই। ওতো গোটা পৃথিবীর সৌন্দর্য পিপাসু পুরুষদের ঠন্ডা করে দিতে পারবে। নিজের সাথে বহু ধস্তা ধস্তি করলাম। বোঝালাম। পারলাম না। বৃষ্টিকে কি আটকানো যায়? আমি নীলার প্রেমে পড়ে গেলাম। আমাদের সেই দিনের ছোট নীলা আমার সমস্ত কামনায় আগুন ধরিয়ে পূর্ণ নারীতে পরিণত হল। চারদিকের সমস্ত নারী আমার পাছে ফিকে হয়ে গেল। আমার প্রেমে নীলা যেন গলে গলে পড়তে লাগল। ওর তখন বয়স আর কত হবে? বড়জোর দশ।
 
যুদ্ধের পর খোজ খবর নিয়ে বাবা নিশ্চিন্ত হলেন চাচা বেচে নেই। নীলা ও চাচীর অভিভাবক হলেন আমার বাবা। এই সুযোগে নতুন চাঁদের মত আমাদের প্রেম বড় হতে লাগল। নীলাকে আমি ছবি আঁকা শেখাতাম,কবিতা আবৃতি বুঝিয়ে দিতাম। এই সব অতিরিক্ত কাজ করতাম নীলাকে কাছে পাবার জন্য কঠিন কঠিন প্রশ্ন করতাম। নীলা ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকত। না পারার অপরাধে ওর গাল টিপে দিতাম। মা-বাবা মনে করতেন শাস্তি দিচ্ছি। নীলা ভাবত, মধুর পরশ পাচ্ছি।
আমার প্রতি নীলার প্রচন্ড টান ছিল। সময়ে অসময়ে পড়া দেখিয়ে দিতে বলত। আমি মাথার চুল ধরে হালকা টান দিতাম। ও হাসত। দাঁত গুলো যেন মুক্তার মত ঝিকমিক করছে। হাসলে গালে টোল পড়ে।
দিন দিন আমরা দুজন ভালবাসার সাগরে ডুবে গেলাম। নীলা গভীর রাত পর্যন্ত পড়া শুরু করল। আমিও পড়তাম। একঘরে। এই পড়ার সুযোগে আমার একটা হাত নীলার হাত ছুয়ে ফেলত। নীলা আলত করে হাতটা এগিয়ে দিত। আমি হাত ম্যাসেজ করে দিতম। বুকে তখন কম্পন শুরু হত। পড়ার শব্দ হত আরও উচ্চ। সবাই ভাবত আমরা পড়ার সাগরে ডুবেআছি।
এক সময় রাত গভীর হত। আমরা দুজনে লোভনীয় আনন্দে ডুবে যেতাম। আমি ঠোটে, কানের লতিতে, গলায় আদর একে দিতাম। ও শিউরিয়ে শিউরিয়ে উঠত। এক সময় আমার আঠা থেকে নিজেকে মুক্ত করে ও চাচীর ঘরে শুতে যেত। আমি যন্ত্রনায় ছটফট করতাম সারারাত। আমার কামনা, বাসনা তীব্র হতে লাগল। যন্ত্রনায় ছটফট করতাম। নীলারতীব্র ঝাঝালো রুপ আমাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে কয়লা করে দিত। নীলা কলেজে যাবার সময় পরত কেডস, জিনসের প্যান্ট আর টি শার্ট। বইয়ের ব্যাগ পীঠে ঝুলিয়ে যখন হাটত, তখন মনে হত স্বর্গের অপস্বরী। ছেলেরা হা করে তাকিয়ে থাকত ওর দিকে।কলেজের স্যারেরা পর্যন্ত বোকা বনে যেত ওর তীব্র রুপের ঝাঝে। অল্প বয়সেই ঔ পাকা যুবতী মেয়েদের মত হাসত। ছুরির মত ধারাল হাসি সবারই বুক চিরে ফেলত। আর কসাইয়ের মত দিব্যি হেসে কথা বলত ও।
কলেজের গেটে, রাস্তায় হু-হু করে নীলার ভক্ত বাড়তে লাগল। ফুলের ষ্টিক প্রায় প্রতিদিনই পেত ও। মাঝে মাঝে স্টিকের মধ্যে চিঠিও পেতে শুরু করল। সবই আমাকে দেখাত। আর আমার বুকের ভিতর ধক ধক করে উঠত। ভাবতাম এই বুঝি কেউ আমার নীলাকে ছিনিয়ে নেবার ষড়যন্ত্র করছে। ও গুলো যতো দেখতাম ততই আমি বলতাম, নীলাসোনা আমি তোমাকে ভালবাসি। নীলা তখন খিল খিল করে হাসত। বুঝতাম ও খুব মজা পাচ্ছে। আমাদের প্রেম গভীর হবার সাথে সাথে বিচিত্র সব সখও মাথায় আসতে লাগল।দুজনে মিলে ছাদের উপর গড়ে তুললাম বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের বাগান। এ কাজে বাবার উৎসাহ ছিল প্রচুর। বহুদুর থেকে তিনিও ফূলের চারা এনে দিতেন। মা-চাচী দুজন ব্যস্ত থাকতেন সংসার গোছানোয় আমরা ব্যস্ত থাকতাম বাগানের যতেœ
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#11
নীলার সয়স যত বাড়তে লাগল। বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে কথা বলার অভ্যাসও বেড়ে যেতে লাগল। একদিনের একটা ঘটনার কথা বলি, সে দিন ছিল মঙ্গলবার। শ্রাবন মাস।ঝর ঝর বৃষ্টি ঝরছে। নীলা বাবাকে চা তৈরী করে দিল। ঔ এক কাপ নিল। আমি শুনলাম নীলা বলছে, জানেন চাচাজি, আজ একটা অদ্ভত ব্যাপার ঘটবে। রাত দুটোয়। বাগানে একটা বিরল প্রজাতির ফূলের চারা আছে। রাত দুটোয় ফুল ফোটে। পনের মিনিট পরেই ঝরে যায়। কত মর্মান্ত্রিক ব্যাপার, তাইনা চাচাজি? বাবা মাথা নাড়লেন, হ্যাঁ, খুবই দুঃখজনক। মাত্র পনের মিনিটের আয়ূ। নীলা সাথে সাথে আবদার ধরল আজ কিন্তু সাথে থাকবেন চাচাজি। আমি আর আপনি দেখব, কখন ফুল ফোটে। ঠিক দুটোয় কিনা! বাবা সাথে সাথে বললেন না মা, আমি যেতে পারব না। আমার আবার ঠন্ডা লাগলে সমস্যা হবে। নীলা ততই জোর ধরে। শেষটায় বাবা বললেন, তোমরা দেখগে মা।কাল আমার সাথে গল্প করলেই আমার দেখা হবে। নীলা কপট রাগ দেখাল। আমি হাসলাম।নীলা ঠিক রাত একটা আটান্ন মিনিটে আমাকে ডেকে তুলল। শিগগিরি চল ছাদে। আমি বললাম, এই বৃষ্টির মধ্যে? বলল, আমার বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করছে। দুজনে ছাদে উঠে গেলাম। একটি ছাতার নীচে আমরা দুজন। ঝুমবৃষ্টি হচ্ছে। সিড়ির দরজায় ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়ে মাথা থেকে ছাতা ফেলে দিল। আমরা ভিজতে থাকলাম। বৃষ্টির রিনি ঝিনি শব্দে মন চঞ্চল হয়ে উঠল। আমি ওর ঠোটের নোনতা স্বাদ নিলাম। পরম আবেশে ও আমাকে জড়িয়ে ধরল। ওর ভেজা শরীরে হাত বোলাতে লাগলাম। শরীরের উত্তাপ বৃষ্টির পানি যেন ঠান্ডা করতে পারছিল না। ওর ঘাড়ের নরম চুলে, থুতনিতে অসংখ্য দুষ্টামির ছাপ মেরে দিলাম। ঠিক পনের মিনিট পরে নীচে নেমে গেলাম। ঘরে ঢুকে টিউব লাইটের আলোয় ঠিক জলপরীর মত দেখাল ওকে। আমাদের সমস্ত সুখের মাঝেও নীলার মধ্যে মাঝে মাঝে দুঃখবোধ জেগে উঠত। তখন ওর কাছে সব কিছুই মিথ্যে হয়ে যেত। হাতের কাছে যা কিছু থাকত ছুড়ে ফেলে দিত। আমাকেও ওর অসহ্য মনে হত।সাময়িত। তারপর আমার বুকের মধ্যে মাথা রেখে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাদত। আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দুঃখ ভোলাতে চেষ্টা করতাম। একসময় বাচ্চা মেয়েদের মত ঘুমিয়ে পড়ত। নীলার এই দুঃখটা ওর বাবাকে নিয়ে বাবা বেচে আছে কি মরে গেছে তাসে জানেনা। এই দুঃখবোধ তীব্র হত ছাব্বিশে মার্চ ও ষোলই ডিসেম্বর। বছরের এই দুই দিনে ওকে সামলানো খুব কঠিন হত। এই দুদিনে আমাদের বাড়িতে বিশেষ ব্যবস্থা হত। যখন খুব ছোট ছিল বাবা ওকে বাইরে বেড়াতে নিয়ে যেতেন। সারা দিন চিড়িয়াখানা, পার্ক, ইত্যাদি সব জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন। অজস্র লজেন্স, চকলেট খেতে দিতেন। ওকে হাসাবার জন্য বাবা মাঝে মাঝে জুকারদের মত ব্যবহার করতেন।জামা-কাপড় আর খেলনার দোকানে নিয়ে যেতেন। ওর পছন্দ মত খেলনা, প্যান্ট, ফ্রক, কেডস, চুলে বাধা গাডার, ফিতা যা যা ওর পছন্দ হত সব কিনে দিতেন। সন্ধায় যখন বাড়ি ফিরত নীলার মনে কোন দুঃখ থাকত না। হেসে হেসে কেনা জিনিস দেখাত। বাবা রাতে ওকে কেনা জামা কাপড় পড়তে বলতেন। ও পরত আর বেনী দুলিয়ে হেসে হেসে ঘর ভরিয়ে দিত। আমরা খুশি হতাম। নতুন জামা প্যান্ট আর কেডস পরে টিউব লাইটের আলোয় যখন হেটে বেড়াত মনে হত একটা বাচ্চা পরী হেটে বেড়াচ্ছে।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#12
বড় হবার সাথে সাথে ওর দুঃখবোধটা আরও বেড়ে গেল। তখন আর শুধু কেনা কাটা করেই ওর কষ্ট ভোলান যেত না। মুখ ভীষণ গম্ভীর করে থাকত। কাঁদত। মুখে বালিশ গুজে দিয়ে শুয়ে থাকত। মা-বাবা ও চাচী কেও ওর ঐ ভাব কাটাতে পারত না। সবাই চলে গেলে আমি খুব আদর করে ডাকতাম, এই সোনা, শোন নাসোনা, মাথায় হালকা ঝাকি দিতাম। ও নীচের ঠোট দাঁতে চেপে ধরে কান্না চেপে রাখার চেষ্টা করত। আমি থুতনি ধরে মুখটা উচু করে বলতাম, নীলা সোনাগো, তুমি কষ্টে থাকলে আমার হৃদয় ছিড়ে যায়। এটা কি জাননা? ও ঝর ঝর করে কেদে দিত। ওর ফর্সা গাল বেয়ে চোখের পানি যখন নামত, মনে হত মুক্তার দানা ঝরে ঝরে পড়ছে। দেখতে ভাল লাগত। চোখের পানি মুছে দেয়ার সুযোগে একটু আদর করতাম। আস্তে বলতাম, চল বেড়িয়ে আসি, ভাললাগবে।
 
আধ ঘন্টার মধ্যে আমরা তৈরী হয়ে নিতাম। চার দিকে আনন্দ উৎসব। আমরা আনন্দ উৎসবে যোগ দিতাম না। আমার নীলা সোনাকে নিয়ে যেতাম নির্জন পার্কে। গাছের ছায়ায় ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিতাম। গাছ, আকাশ দেখে দেখে সময় কাটাতে চেষ্টা করতাম। একসময় ক্লান্ত হতাম। ও বলত, আইচক্রীম খাব। কিনে দিতাম। আমি খেতাম বাদম। মাঝে মাঝ আজগোবী কথা বলত। যেমন, জান- সোনা, আমিও মরে যাব।বাবার মত চলে যাব। আর আসব না। দুঃখভরা হাসি দিত। আমি ভয় পেয়ে যেতাম। ওকে বুকে টেনে নিতাম। সাথে সাথে আদর করতাম। ওর ঘাড়ের নরম চুলগুলোতে আঙ্গুল বুলাতাম। পরম আনন্দে ও ডুবে থাকত কিছুক্ষণ। আমি বলতাম, নীলা হাসবে না? আমার কোলে মাথা রেখে চোখ বুঝে বলত, না। হাসতে ভাল লাগছে না। আমি তখন বানিয়ে বানিয়ে নানা রকম হাসির গল্প করতাম। ও খিল খিল করে হেসে উঠত। সাথে সাথে মনে হত পার্কের ঐ ফুলগাছ, মেহগনি গাছ, ও মাটি সবাই আনন্দে ঝনঝন করছে। আস্তে করে দাবির সুরে বলত, সিনেমা দেখব। সিনেমা হলে ঢুকতাম, প্রেমের রসে করুন পরিনতির বই বেশী সময় দেখতে পারতাম না। ও মন খারাপ করত। টেনে হল থেকে বের করে আনতাম। হোটেল থেকে কিছু খেয়ে নিতাম। ও বলত, খুব কষ্ট লাগছে। কেন? বলত, নায়িকার সাথে নায়কের এমন ব্যবহার দেখেও কষ্ট লাগবে না? আমি বলতাম, কষ্টের কি আছে। আমি তো তোমার সাথে অমন ব্যবহার করছিনা। ও হাসত। পার্কে ফিরে খেতাম চুইংগাম, দামী চকলেট। এক সময় নীলা বলত, গা গুলিয়ে যাচ্ছে। বমি বমি লাগছে।বলতে বলতেই বমি করে দিত। টিউবওয়েলের পানি দিয়ে ওর মুখে পানি ছিটিয়ে দিতাম।কিছু সময় পার্কের বেঞ্চে আমার উরুর উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে নিত। আমি ওর পিঠে ছড়িয়ে থাকা চুলে হাত বুলিয়ে দিতাম। পার্কের মানুষগুলো কৌতুহল নিয়ে আমাদের দিকে তাকাত। সন্ধ্যার দিকে ওর জন্য থ্রি পিস, কিছু প্রসাধনী, মা-বাবা-চাচীর জন্য মিষ্টি কিনে বাড়ি ফিরতাম। ও এসেই ঘুমিয়ে পড়ত। সে দিন আর দেখা হত না।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#13
আমাদের এই ভালবাসার লুকোচুরির খেলা বেশী দিন গোপন রাখতে পারিনী। আমরা ধরা পড়ে গেলাম। অথচ সেদিন খারাপ লাগার মত কিছু করিনি। সে দিনের ঘটনা নালিখলে নীলার সোনার ভালবাসার কাহিনী সম্পূর্ণ হবে না। সে দিন ছিল শুক্রবার।সম্ভবত ভাদ্রমাস। রাতে প্রচন্ড জ্যোস্না হবার কথা। বাতাসে জ্যেৎস্না গলেগলে পড়বে। নারকেল গাছের পাতায় জ্যোৎস্না পড়ে চিক্ চিক্ করবে। এদৃশ্য আমার ভাল লাগে। যখনই প্রচন্ড জ্যোৎস্না হয় আমি একা একা ছাদে উঠে ঘন্টার পর ঘন্টা ফুলের টবের পাশে বসে থাকি মাদুর পেতে। সেদিনও ছিলাম। আমি একদৃষ্টিতে পূর্বদিকে তাকিয়ে আছি। লাল টকটকে চাঁদ সবে উঠেছে। চারদিকে আলো ঝরে পড়ছে। আমি এক দৃষ্টিতে দেখছি। হঠাৎ পিছন দিকে পায়ের শব্দ পেলাম। তাকালাম না। একটু পর পিছন থেকে নীলা দুহাত দিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরল। আমার পিঠে ওর শরীরের আতিরিক্ত অপরিহার্স মাংসের চাপ অনুভব করলাম। মুহুর্তে গায়ে বিদ্যুৎ বয়ে গেল। বাম হাতে আমার মুখটা ওর দিকে ফিরিয়ে নিয়ে আদর করতে লাগল। ওর গরম নিশ্বাস আমাকে উতালা করে তুলল। আমার মুখের নোনতা স্বাদ নিতে লাগল ও। ওর শরীর থেকে প্রসাধনীর গন্ধ ভেসে আসল নাকে। কড়া মিষ্টি গন্ধ। আমি ওকে আরও কাছে নিতে চাইলাম। ও বাধা দিল। মুখে সামান্য উউম-উউম, আদর আর আবেগমাখা শব্দ হতে লাগল। আমি বাধা দিলাম না। আমি স্বর্গের সুখ অনুভব করলাম। ও আমাকে স্বর্গসুখ দিচ্ছে। ওর মুখের নোনতা লালায় আমার ঠোঁট জ্বলে যেতে লাগল। ঠোট ছেড়ে মুখে, কপালে, গলায়, ঘাড়ের নরম চুলে চুমো খেতে লাগল। ঠিক এই সময় পিছনে মায়ের কড়া গলা শুনতে পেলাম, কে ওখানে? সাথে সাথে মনে হল নীলা আমার পিঠের উপর মরে পড়ে আছ। আমি বুদ্ধিমান। আমার আই,কিউ ও ভাল। আমি চোখ বুঝে বললাম, প্রচন্ড মাথা ধরেছে। একটু মাথা টিপে দিচ্ছে। সাথে সাথে ওর দুহাত আমার মাথার চুলের মধ্যে খেলা করতে লাগল। বিলি কেটে দিতে লাগল। তবুও মাকে বুঝানো গেল না। আমরা মায়ের ঘোর সন্দেহের মধ্যে পড়লাম। দুজনের অবাধ চলাফেরয় নিষেধাজ্ঞ দিলেন।
আমাদের উপর মায়ের গোয়েন্দাগিরি শুরু হল। নীলা পনের দিন আর আমার সামনে আসল না। আমিও খোজার চেষ্টা করলাম না। নীলা ওর মায়ের ঘরে পড়তে শুরু করল, আমি আমার ঘরে। বাড়িতে কেহ কিছুই জানল না। দুদিন পর আমি অসহ্য হয়ে উঠলাম।বুঝলাম শরীরটা এবার সত্যিই কয়লা হয়ে যাবে। বার বার সুযোগ খুজতে লাগলাম।খাতা, বই, ষ্টাপলার, গজপিন, আলপিন এই সব চাইতাম। যাতে নীলা আমার কাছে আসার সুযোগ পায়। আমার চাহিদার কথা বলা মাত্রই মা এসে হাজির হতেন। আমার মুখ বিরক্তিতে ভার হত। ভাবতাম এই বয়সে ছেলের উপর এত গোয়েন্দা গিরি কেন? মা দীর্ঘরাত জেগে থাকতেন। যত সময় নিশ্চিত না হতেন যে, আমরা ঘুমিয়েছি তত সময়।জিদ করে আরও রাত জাগা শুরু করলাম। যাতে মায়ের জেগে থেকে গোয়েন্দাগিরির স্বাদ মিটে যায়। হলনা, উনি যেন ঘুমিয়ে থেকেও দুচোখ খোলা রাখতেন। ঘুমিয়েছেন কিনা জানার জন্য পেনন্সিল মেঝেতে ফেলে দিতাম। সাথে সাথে জেগে উঠতেন। আমার ঘরে ছুটে আসতেন। বলতেন, কি পড়লরে সঞ্জু? আমি বলতাম, কই কিছুই নাতো। আনমনে বলতেন, শুনলঅম তো কিসের একটা শব্দ! তার পর চলে যেতেন। মায়ের খোজাখুজিকে বাবা-চাচী ভাবতেন আমাদের জন্য তার দরদ গলে গলে পড়ছে। আমি ভাবতাম আমাদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে।
আমার নীলা আমার সামনে হেটে যাচ্ছে, হাসছে, বই পড়ছে অথচ আমি কাছে পাচ্ছিনা। অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করতাম। দুদিন আদর করতে না পেরে, আদর না পেয়ে জান কয়লা হয়ে উঠল। এই দুদিনে বুঝলাম, নীলা রুপের রানী হয়েছে। ও গোটা পৃথিবী ঠান্ডা করে দিতে পারবে। ওর রুপ শিখা দপদপ করছে। সেই শিখায় আমি জ্বলেপুড়ে খ্াক হয়ে যাচ্ছি। আমি সুযোগ খুজতে থাকলাম। একটা সুযোগ পেয়েও গেলাম।গোয়েন্দাগিরির তৃতীয় দিন। মা নামাজ কামাই দিতেন না। মাগরিবের নামাজে বসলেন সেদি। আমি ঘর থেকে বের হলাম না। নীলা ছাদ থেকে কাপড় চোপড় উঠারে বলে জোরেজোরে বলল এবং দ্রুত উঠে গেল। আমিও উঠে গেলাম। তিন দিন বিচ্ছেদে আমরা কাতর হয়ে পড়েছিলাম। আমাকে সিড়ির দিকে আসতে দেখে ও দাড়িয়ে গেল। দ্রুত কাছে টেনে নিলাম। ঠোটে,মুখে,গলায় যেখানে সুযোগ পেলাম আদর করলাম। ওইটুকু সময়ে যেটুকু পারলাম করলাম।
মায়ের গোয়েন্দাগিরি বেশীদিন টিকলনা। বয়সের চাপে অতিরিক্ত চিন্তায় মায়ের হাই প্রেসার দেখা দিল। ডাক্তার দেখালাম। বললেন, নিয়মিত অষুধ না খেলে স্ট্রোক হয়ে যেতে পারে। ফেরার সম্ভবনা কম। মা-শান্ত হয়ে গেলেন। এক মাস পর অনিয়মে মায়ের স্ট্রোক হল। হাস পাতালে মা মারা গেলেন। বাবা নীলা-চাচী-খুব কাদলেন। আমি কাঁদলাম না। মায়ের মৃত্যু আমাকে সাময়িক কষ্ট দিলেনও আনন্দিত হয়ে ছিলাম বেশী।
মায়ের মৃত্যুর পর সংসারটা অন্যরকম মনে হত। চাচী সারা দিন সংসার দেখাশুনা করতেন। বাবা বাইরের কাজ সেরে ক্লান্ত হয়ে বাড়ী ফিরতেন। খবরের কাগজের হেড লাইন এক নজরে দেখে শুয়ে পড়তেন। বাবার নিঃসঙ্গতা ঘোচানোর চেষ্টা করত নীলা। বাবা যত সময় বাড়ী থাকতেন, নীলা সব সময় আঠার মত লেগে থাকত। বাবার কোন কষ্ট হতে দিত না নীলা। আমরা পেয়ে গেলাম মধু খাওয়ার চমৎকার সুযোগ।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#14
মায়ের মৃত্যুর পর বাবা আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশী ভাবতে লাগলেন। বাবা চাইতেন আমি কৃষি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে গ্রামের কৃষকদের সেবা করি। আমি চাইতাম মেডিকেল সায়েন্সে ডিপে¬ামা করে পাহাড়ী দরিদ্র উপজাতীদের সেবা করি।

ছন্দের মত চলতে লাগলাম আমরা। রুটিন ব্রেক হত না। যে যার মত চলছি। এর মধ্যে সকল হিসাব নিকাশ ভুল প্রমাণিত হল। যে চাচাকে ভাবতাম মারা গেছেন। তিনি এক দিন রাত দশটায় দুটো সুটকেস নিয়ে হাজির হলেন। কোট প্যান্ট টাই পরা চমৎকার এক সুপুরুষ। এটা ঘটল ঊনিশত তিরাশিতে। চাচা যেন এতদিন পর আরও যুবক হয়েছেন। একাত্তরে যে বেকার ল্যাদলেদে যুবককে দেখতাম এ যেন সেই নয়। চাচী হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। বাবাও আমি আনন্দে নেচে উঠলাম। শুধু নীলা কিছু বুঝতে পরলনা ছবি ছাড়া ও ওর বাবাকে ভাল করে দেখেইনি। চাচা নীলাকে জড়িয়ে ধরে অজশ্র কাদলেন। আদর করলেন। মার জন্য দুঃখ করলেন। এতদিন পর চাচা যেন কেঁদে কেঁদে ফ্রেস হলেন। নীলা তো চাচাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে ক্লান্ত হয়ে গেল।আমাকে নীলাকে দুহাতে বুকে জড়িয়ে ধরে চাচা কাঁদলেন। কিছু সময় আমরা যোরেরমধ্যে কাটালাম। চাচা খাওয়া দাওয়া করলেন এবং বাবার সাথে একান্ত আলোচনায় বসলেন।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#15
চার- ৪


তিন দিন পরে চাচা সম্পর্কে যেটা জানলাম, সেটা হল এই রকম—- চাচা একাত্তরে নকশালী লিডার হয়ে অনেক খুন খারাবী করেছেন। লূট-পাট করেছেন। সঙ্গীদের কাউকে ভাগ দেননি। সম্পদ নিজের বলে মনে করলেন। নিজের লোক তখন শত্রহয়ে গেল। তিনি আতœ গোপন করলেন। দেশ স্বাধীন হলেও শত্রকমল না। তিনি কিছুদিন চিটাগাং এর দিকে ছিলেন। পাহাড়েও কিছু দিন কাটিয়েদেন। দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটল ।তিনি এই পরিবর্তনের সুযোগে সাদা জীবনে প্রবেশ করার চেষ্টা করলেন। ঢাকায় ফিরলেন। উত্তরায় ভাড়া বাসায় একা একা থাকতে শুরু কলরেন, ব্যবসা পাতি শুরুকরলেন। নিজেকে মুক্তি যোদ্ধা বলে পরিচয় দিলেন। প্রভাব প্রতিপত্তি বেড়ে গেল।এখন তার অনেক ব্যবসা। বৈধ অবৈধ মিলে কয়েক কোটি টাকার মালিক। গুলশান, মতিঝিল, উত্তরায় মোট আটখানা প্রাসাদতুল্য বাড়ি। এসব এলাকায় তার নাম বললে যেকোন রিক্সা, ট্যাক্সি ওয়ালা দেখিয়ে দেবে। তবে আবিদ হোসেন নামে তাকে কেউ চিনবে না। বলতে হবে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাকিব হোসেন। এখন ঢাকায় তিনি নীলা ও নীলার মাকে নিয়ে যেতে চান। বাবা রাজি হলে তিনি এবং আমিও যেতে পারি।
সব শুনে বাবা হাসলেন। বললেন খুন খারাবী করে বড়লোক হয়েছিস। ছিলি নকশালী, হলি মুক্তিযোদ্ধা নাম ছিল আবেদ হোসেন, পাল্টে হলি কিনা সাকিব হোসেন। এখন বলছিস আমাদের সবাইকে সেখানে যেতে হবে। অসম্ভব! চাচার মুখটা অনেক মলিন হয়ে গেল। অবশেষে বাবাকে হার মানতে হল। দীর্ঘ দিন পর চাচী তার স্বামীকে পেলেন।নীলা তার বাবাকে পেল, এখন তাদের কেন আটকাতে হবে? বাবা অমত করলেন না।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#16
আমার নীলাসোনাকে ঢাকায় নিয়ে গেলেন আমার কসাই চাচা তিরাশিতে। সেদিন ছিল রবিবার। শনিবার বিকালে নীলাকে মার্কেটে নিয়ে গেলাম। ওর জন্য কিছু জামাকাপড়, রেডিমেড সোনার গহনা কিনলাম।দুজনে কিছু সময় নির্জনে কাটালাম। কেউ কোন কথা বলতে পারলাম না। নীলার দিকে চাইতেও পারলাম না। বাড়ি ফিরে আসলাম।রাতে খাওয়া দাওয়া করলাম। বাবা-চাচা-চাচী ঘুমিয়ে পড়লেন। আমি একা একা ছাদে উঠে গেলাম। সমস্ত নীল আকাশ মনে হল কালো মেঘে ঢাকা। অসংখ্যা উজ্বল তারকারাজিকে মনে হতে লাগল বিষন্ন। মনে হতে লাগল আমার সামনে কেবল অন্ধকার।গাছের সেই সৌন্দার্য চোখে পড়ল না। নীরব মনে হল সব। ফুলবাগানটায় ঘুরলাম। চোখ জ্বলতে লাগল।

রবিবার সকালে আমার কেনা গহনা শাড়ি পরে নীলা পূর্ণ পরী হয়ে বসল। আমি ভাবলাম, যে ভাবে সেজেছে নীলা গোটা পৃথিবী আজ থ হয়ে যাবে। আমার মনে ভয় ঢুকে গেল। এই নীলাকে আমি ফিরে পাবতো? ঢাকার মানুষ একে আমার কাছে ফিরিয়ে দেবেত? মনে মনে বললাম, হায় আল্ল¬াহ্ গোটা ঢাকা শহরের সমস্ত পুরুষদের তুমি অন্ধ করে দাও। কেউ যেন আমার নীলাকে না দেখে। যে দেখবে সেই পাগল হয়ে যাবে। নীলাকে বিদায় করে দিয়ে আমি বাড়ি ফিরলাম। একটা সিগারেট ধরালাম। মাথাটা ঝিমঝিম করছিল। একটা মাথা ব্যাথার ট্যাবলেট খেলাম। চিত হয়ে শুয়ে পড়লাম। সন্ধ্যার পর ঘুম ভাঙ্গল। ঘুম চোখে উঠলাম। বাথরুমে যেয়ে হাত মুখু ধুলাম। পড়ার টেবিলে খবরের কাগজ রাখা। দেখলাম। এই প্রথম বুঝলাম, নীলা ছাড়া আমার অস্তিত্ব অর্থহীন। শরীরটা মোচড় দিয়ে উঠল। নীলাকে আমি ভূলতে চেষ্টা করলাম। পারলাম না।আমার স্বপ্নে, অনিদ্রায় নীলা বার বার এসে দাড়াতে লাগল। আস্তে আস্তে নীলার শয়ন কক্ষে প্রবেশ করলাম। খাট পড়ে আছে খালি। বালিশগুলো সাজানো। বিছানা চাদর তুলে রাখা। খাটে হাত বুলাতে লাগলাম। কিছু পরে নীলার শয়ন খাটে শুয়ে পড়লাম।নীলার শরীরে একটা চমৎকার গন্ধ ছিল।গন্ধটা খুজতে লাগলাম। যে বালিশ মাথায় দিয়ে আমার সোনা ঘুমাতো সেটি বুকে চেপে ধরে স্বাদ নিতে লাগলাম। কিছু সময় এভাবে কাটালাম। খাট থেকে উঠলাম। নীলার পড়ার টেবিলে বসলাম। ওর পড়ার বইগুলোতে হাত বুলালাম। বই খুলে কিছু পড়তে চেষ্টা করলাম। আজে বাজে কিছু কাগজ ছিড়ে ফেললাম। ছোট বেলায় ব্যবহার করা ছবি আকার পেন্সিলগুলো দেখলাম সাজানো।কয়েকটি ছবিও দেখলাম। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম সেদিকে। নীলাকে ভূলে থাকার জন্য অনেক চেষ্টা করলাম। কোন স্বৃতি যাতে মনে না পড়ে তার জন্য ছবি পেন্সিলগুলো নষ্ট করে ফেললাম। এরপর আলমারির দিকে নজর গেল। দেখলাম কিছু নীল রঙের জিন্সের প্যান্ট, কলেজের ব্যাগ, কিছু প্রসাধনী, কেডস্ পড়ে রয়েছে। পারলামনা আমি। আমার অস্তিত্ব থেকে নীলাকে সরাতে পালাম না। সমস্ত ঘর খানাতেই নীলার ছোয়ায় নীলাময় হয়ে আছে। ঠিক করলাম এখন থেকে নীলার ঘরেই আমি পড়ব, শোব। ঘর থেকে বেরিয়ে সিড়ি ভেঙ্গে ছাদে উঠলাম। অন্ধকার! আকাশে উজ্জ্বল তারাগুলো একদৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছে। বাতাসে আমার চুল গুলো বার বার চোখের উপর পড়ছে। ভাবলাম, এই বাতাসে কি আমার নীলার শরীরের গন্ধ ভেসে আসবে না? কোন নীলা বার্তা কি আসবে না? আস্তে আস্তে ফুলগাছগুলোকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম। আদর করলাম। গাদাফুলের ডগাটা নিয়ে আমার মুখে চোখে গলায় বুলিয়ে দিলাম। আহ, কিস্বাদ! ঠিক যেন নীলার শরীরের গন্ধ। কিছু সময় চোখ বুজে স্বাদ নিলাম।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#17
রাতে বাবা আমি খেতে বসলাম। বাবার মনও ভাল ছিল না। স্নেহ আর ঘৃর্ণা একসাথে মিশে আছে বাবার মুখে। আমি কিছুই বললাম না। বাবাই প্রথম বললেন মন খারাপ লাগছে? আমি বললাম, না। বাবা আমার কথায় আস্বস্ত হতে পারলেন না। আবার বললেন, তেলে জলে মেশে না। তোর চাচা এখন কোটিপতি। আমি গরীব। আর মিশবে না। পৃথিবীতে মানুষ মানুষে একটাই পার্থক্য, যার আছে, আর যার নেই। রক্তের সম্পর্ক অর্থের কাছে মিথ্যে। আমি কিছুই বললাম না। বাবা আবার বললেন, তুই হোস্টেলে চলে যা।ওখানে তোর পড়ালেখা ভাল হবে। স্বাস্থ্যের প্রতিও যতœ নিতে পারবি। মন ভাল লাগবে। আমি বাবার কথা শুনেও শুনলাম না। দ্রুত খেয়ে উঠে গেলাম। বাবার সাথে কোন কথা না বলেই শুতে গেলাম রাত দশটায়। ঘুমের মধ্যে অদ্ভুত একটা স্বপ্ন দেখলাম। স্বপ্নটা এই রকম- নীলা সমুদ্রের তীরে হাটছে। পায়ে সাদা কেডস্, কালো জিন্সের প্যান্ট, লাল রঙের হাফহাতা গেঞ্জি, চোখে কালো সান গ্ল¬াস, চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া, হাতে একটা কালো বেল্টের ঘড়ি। আমি দূর থেকে ডাকছি, নীলা হাসছে মিটি মিটি। সে হাসির ছুরি আমার অন্তর কেটে ফালা ফালা করে দিচ্ছে। আমি ডাকছি। নীলা আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে। আমি দেখছি, বাতাস ওর দিকে ছুটে চলেছে। সমুদ্রের স্রোত ওকে ছুতে চেষ্টা করছে। অবাক হয়ে সমস্ত প্রকৃতি ওকে দেখছে। আমি ডাকছি তো ডাকছি। নীলা সোনা ছুটেই চলেছে। ডাকতে ডাকতে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। পিপাসা অনুভব করলাম। একগ্ল¬াস ঠান্ডা পানি খেলাম। মনের ভিতর ভয় ঢুকে গেল। আমার সোনা সত্যিই কি আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে দুরে, বহু দূরে…? যেখানে আমার নীলা সোনার নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়? বাকী রাত আর ঘুম হলো না।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#18
বাবার কড়া তাগিদেই পরের সপ্তাহে হোস্টেলে উঠলাম। দুইশ আট নম্বরে ছিট পেলাম। দুজনের থাকার ব্যবস্থা। আমার রুমমেট একজন গিটার বাদক। কলেজ ক্যাম্পাসে তার সুখ্যাতিও আছে। বান্ধবীর সংখ্যাও প্রচুর। সারা দিন কেউ না কেউ তার ভক্ত হয়ে আসে। আমিও হালকা টাইপের একজন কবি। কবি হিসাবে পরিচিতিও আছে। কলেজে একবার স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করে পুরুস্কার ও পেয়েছিলাম। দুজনে চমৎকার মানিয়ে নিলাম। দুজনে শিল্প সাহিত্য সংগীত নিয়ে বিস্তর আলোচনা করতাম। ও বানিজ্য বিভাগের ছাত্র-আমি বিজ্ঞান বিভাগের।
হোস্টেলের হৈ হুল্লু¬ড়ের মধ্যে নিজেকে ছেড়ে দিলাম। টেবিল টেনিস, দাবা, তাস খেলায় মেতে উঠলাম। ব্যাময়াগারে বেশ কিছু সময় কাটাতে লাগলাম স্বাস্থ্য টিক রাখার জন্য। বিতর্ক করতাম। কবিতা সংগীত চর্চাতেও মন দিলাম। পড়াশুনাতেও প্রচুর উন্নতি হতে লাগল। পরীক্ষাতে ফাষ্ট হতে লাগলাম। নীলার কথা বেশ কিছুদিন জোরাল ভাবে মনে এলনা। তবে অন্তরে তীব্র ব্যাথা অনুভব করতাম। এরমধ্যে বাবা বাড়ি থেকে চিঠি পাঠালেন। মামুলি ধরনের কিছু উপদেশ ছিল চিঠিতে। কিছু টাকা, সাথে নিলার পাঠানো একটা চিঠি। চিঠিটা আমার কাছেই লেখা। নীল রং এর খাম। উপরে দরদ করে লেখা সঞ্জুকে। বাবা বোধ হয় খোলেননি। খুললে আমার ভালবাসা কয়লা হয়ে যেত এতক্ষণ।
আমি চিঠিটা খুললাম। পড়লাম। চিঠির সারবস্তু এরকম- ঢাকায় বাবার সাথে আটখানা বাড়িই ঘুরে ফিরে দেখেছে। খুব মজা পেয়েছে। এত চমৎকার বাড়ী তাদের!কয়েকটা স্বুলও দেখা হয়েছে। সব চেয়ে নামী স্বুলে ভর্তি হয়েছে। সেখানে টেনিস কোর্ট আছে। মেয়েদের ফুটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন খেলা হয় নিয়মিত। ডিবেটিং ক্লাবের সদস্য হয়েছে। সুইমিং পুল আছে। সেখানে ছেলে মেয়েরা একসাথে সাতার কাটে। আমার মাথা ঝিম ঝিম করে উঠল। আমার পরীসোনা একগাদা ছেলেদের সাথে সুইমিংপু লে সাতার কাটবে? জলপরীর মত আমার সোনা ডুবেডুবে সাতার কাটবে? হায়আল্ল¬াহ! ঐ বোকা ছেলেরা কি সাতার কাটবে? না হা করে আমার নীলা সোনাকে সাতারের পোশাকে দেখবে? ওরাতো সাতারের কথা ভুলেই যাবে। শেষে আমার সোনা লিখেছে, তুমি ছাড়া আমার জীবনের সব কিছুই অর্থহীন। যত দ্রুত সম্বব ঢাকায় এস।চিঠিটা বন্ধ করলাম। বাথরুমে ঢুকে চোখেমুখে বেশ করে পানি দিলাম। বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব লাগল। চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলাম। ঘুমুতে চেষ্টা করলাম। পারলাম না। চোখের সামনে ভেসে উঠল সুইমিং পুল। সেখানে নীলা সাতার কাটছে। সাতারের পোশাকে ওকে সবায় দেখছে। ও হেসে হেসে জলপরীর মত এগিয়ে যাচ্ছে।
মাথার মধ্যে অজস্র আজে বাজে ভাবনা ঢুকে পড়ল। যেমন- নীলা আজ কলেজ সাতার প্রতিযোগিতায় চাম্পিয়ান হয়েছে। এবার বিভাগীয় পর্যায়ে অংশ নেবে। পেপারে ওর সাতারের পোশাকে ছবি ছাপা হয়েছে। শুধু ওর সাতারের পোশাকে ছবি ছাপানোর জন্য ঐপত্রিকার বিক্রি সংখ্যা বেড়ে গেল দ্বিগুন। দাঁত দিয়ে নিচের ঠোট কামড়াতে লাগলাম। আবার ভাবালাম, নীলা খুব ভাল টেনিস খেলে। কলেজ প্রতিযোগিতায় চা¤িায়ান। জাতীয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। গ্যালারি ভর্তি দর্শক। সবায় নীলাকে সাপোর্ট করছে। ওর সাফল্যে গ্যালারি হাঁসি আর হাততালিতে ভরে যাচ্ছে।মাঝে মাঝে ও রহস্যময়ী হাসি দিয়ে গ্যালারীর দিকে তাকাচ্ছে। হায় দর্শক, খেলার কি দেখবে? সবাই হা করে নীলার দপদপে রুপ সৌন্দর্য দেখছে। খেলার পোশাকে চমৎকার লাগছে। আর ভাবতে পারলাম না। না জানি আমার নীলা সোনা এবার ফিল্মেও নামবে! ঢালিউড থেকে বলিউড, সেখান থেকে হলিউড। আরও কত কি সব নামি দামি হবে যে আমার সোনা! চোখ খুললাম। আজে বাজে ভাবনা গুলোকে তাড়ানোর চেষ্টা করলাম।একটা সিডেটিভ ট্যাবলেট ও একগ্ল¬াস ঠান্ডা পানি খেলাম।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#19
পরের দিন সকাল আটটা পনেরই ঘুম থেকে উঠলাম। নাস্তা আর প্রচুর পানি খেলাম।প্রায় নটায় কলেজে গেলাম। কলেজের ভীড় আমাকে উতালা করে তুলল। চারদিকে কত আলো কিন্তু আমি কিছুই দেখতে পেলাম না। যে দিকে তাকাই কেবলই অন্ধকার, সবফাঁকা। কদমগাছের তলায় বসে পড়লাম। অন্য ছেলেরা ক্লাস থেকে বের হয়ে আসছে।আবার ঢুকছে। আমি বেলা দশটা আটত্রিশ মিনিট পর্যন্ত বসে থাকলাম। মাটিতে ভেসে উঠা কদম গাছের উপর বসে ভাবতে লাগলাম। নীলা কি করছে এখন? কলেজ টাইম। কলেজে গেছে কি? কোন ড্রেসটা পরেছে? চুলে শ্যাম্পু করেছে কি? মাজায় বেল্ট পরেছে, না কি? কার সাথে কলেজে গেল? গাড়ীর ড্রাইভার নিশ্চয় আছে। ড্রাইভার কি একা নীলাকে নিয়ে যায়? তাহলে তো সব ভেস্তে যাবে। আমার সোনার রুপ সৌন্দর্য তাহলে তো একা ঐ ড্রাইভারই দেখে নিচ্ছে। আদরের সুবাদে পিঠে একটু হাতও বুলিয়ে দিতে পারে। পড়ার উপদেশ দিয়ে দুআঙ্গুল দিয়ে গালও টিপে দিতে পারে। শালার ড্রাইভাররা সব খচ্চর। সুযোগ সন্ধানী। এরা সব পারে। আর ভাবতে পারলাম না। উঠে পড়লাম। বন্ধুদের চেচামেচি শুনতে পেলাম। বাঃ! একেবারে আমার কাছে বসে আছে সবায়। অথচ আমি বুূঝতেই পারিনি। ভাবী কবি হিসাবে ওরা আমাকে ঠাট্রা করতে শুরু করল। আমি ভাবলাম, কবিতা না ছাই লিখব। ও সব চুলোয় দেব। শালার ফালতু কবিতা!কবি, কবিতার নাম, সারমমর্, ভাষা, ছন্দ, তাল, ছত্র সব যদি নীলা হত!
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#20
বেলা বারটার দিকে হোস্টেলে আসলাম বন্ধুদের আঠা ছাড়িয়ে। কিছুটা বিবর্ষ হয়ে পড়লাম। এ-কয়দিন মনের সাথে বেশ লড়াই করেছি। ব্যাস্ত থেকেছি। কিন্তু আর পারছি না। নীলাকে না দেখে থাকতে পারছি না। হৃদয়, মন হাহাকার করে উঠতে লাগল।নীলাই যেন একমত্র সম্বল। যা আমাকে সজীব করবে। কলেজের অনেক মেয়েকেই নীলার আসনে বসাতে চাইলাম। পারলাম না। আমার নীলা পৃথিবীতে একা। ওর মত পরীশ্রেষ্ঠা আর একটিও নেই। ও যত দুষ্টু, তার মত আর কেউ নেই। ক-জন দিতে পারবে ওর মত হাসি? মুক্তো ঝরবে, ঝকঝকে দাত বের হবে, চোখের তারা উজ্জ্বল হবে, ঐ জল ভেজা চোখ, কার এমন আছে? তার মতো ভালবাসাতে পারও তো চাই। ঠিক করলাম ঢাকায় যাব।আমার সোনাকে না দেখে থাকতে পারব না। আমার সোনাকে সবাই দেখবে, আদর করবে, ভালবাসবে, আর আমি পারবনা? তা হয় না। আমার সোনাকে ঢাকার খচ্চর টাইপ মানুষেরকাছে ছেড়ে দিতে পারি না। বাবাকে হালকা নোটিশ দিয়ে পরের দিন রওনা দিলাম ঢাকায়।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply




Users browsing this thread: