Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
#অন্য_রূপকথা
আজ সকালে কিন্তু মেঘ ছিল না একটুও! কিন্তু, বেলা বাড়ার সাথে সাথে প্রথমে মেঘলা, আর তারপর ই, বৃষ্টি এলো ঝেঁপে।
তা, বিকেলে বৃষ্টি থামার পরে খুব আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছিল। তাই অ্যাপ থেকে অর্ডার করে দিলাম আমার প্রিয়, টেন্ডার কোকোনাট আইসক্রিম। ডেলিভারি দিতে আসা ছেলেটিকে "ডানদিকের গলি", "শেষ বাড়ি", "তিনতলা" এসব আর পরে তিনি, মানে, আইসক্রিম এলেন! বেশ খানিকটা খাবার পরেই মনে পড়ল, কাল ই আমার এক বন্ধু আমাকে রোজ অন্তত মিনিট পনেরো- কুড়ি হাঁটতে বলেছে? শরীর আর মন ভাল রাখার জন্য? তাই তাড়াতাড়ি আইসক্রিম সরিয়ে, অফিসে 'ব্রেক টাইম' দেখিয়ে, জুতো গলিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আবার মনে মনে ভাবছিলাম "কাল থেকে গেলেও হতো! আজ এমনিতেই প্যাচপ্যাচ করছে রাস্তা!"
এখন মনে হচ্ছে, ভাগ্যিস বেরিয়েছিলাম!
বাড়ি থেকে একটু এগিয়েই দেখি রাস্তায় আমাকে যে ছেলেটি ডেলিভারি দিতে এসেছিল, সে বাইকের পাশে দাঁড়িয়ে। পিঠে যে ব্যাগ থাকে, যার মধ্যে খাবার থাকে? সেটা বাইকের সিটের ওপর রাখা।
ভাবলাম, ছেলেটি বোধহয় আবার কোনো ঠিকানা খুঁজছে। প্রায় এক দশক এই পাড়ার বাসিন্দা হবার সুবাদে আমি মোটামুটি চিনি জায়গাটা। তাই, হেল্প করার জন্য এগিয়ে গিয়ে বললাম, "ভাই, কোনো ঠিকানা খুঁজছ?"
একটু চমকেই ঘুরে থাকাল ছেলেটি।
হাতে একটা খোলা টিফিন বাক্স...তাতে রুটি দেখতে পেলাম!
ছেলেটি বোধহয় আমাকে চিনতে পারল। মাস্ক ছিল মুখে, কিন্তু মিনিট পাঁচ সাতেক আগেই তো ডেলিভারি দিয়েছে...জামাকাপড় ও এক আছে আমার। তাই একটু কেমন হাসল। অপ্রস্তুত হাসি। তারপর বলল "না ম্যাম, আজ দুপুরে খাওয়া হয়নি। এই বৃষ্টিতেই জল জমে গেছে অনেক জায়গায়। আটকে গেছিলাম রাস্তায়। তাই এখন একটু খাচ্ছি।"
কিছু বলব না ভেবেও বলে ফেললাম "সেকি! এত দেরিতে! পাঁচটা বাজে প্রায়! কোথাও একটা খেয়ে নিতে পারতে আগে!"
ছেলেটি চুপ করে রইল কয়েক সেকেন্ড। তারপর বলল "ম্যাম, আমার মা বানিয়ে দিয়েছেন কষ্ট করে। এসব না খেয়ে অন্য কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। তাই ভাত খেয়েই বের হই বাড়ি থেকে। আর দেরি হলেও এইভাবেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে খেয়ে নিই। আসলে একদিন মা থাকবেন না...কিন্তু এইদিন গুলোই থেকে যাবে... তখন যাতে কষ্ট না হয়, তাই আর কি!"
থমকে গেলাম। আরও একবার।
এই আমাদের ভারতবর্ষ। এই আমাদের গর্বের দেশ। মায়ের মমতা আর ভালবাসা দিয়ে মাখা শুকনো রুটিও অমৃতসমান। এই স্মৃতি টুকুর মধ্যেও শান্তি আছে। ভালবাসার আহ্বান আছে। এইটুকুই যে সম্পদ আমাদের।
স্বামীজীর নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী আমি। প্রতিদিন খাবার পরম ব্রহ্মকে নিবেদন করে মুখে তুলি, মনে মনে, নিজস্ব সুরে মন্ত্র পড়ি
"ব্রহ্মার্পণং ব্রহ্মহবির্ব্রহ্মাগ্নৌ ব্রহ্মণা হুতম্৷
ব্রহ্মৈব তেন গন্তব্যং ব্রহ্মকর্মসমাধিনা৷৷"
আর আজ, এই বৃষ্টিস্নাত... না না, প্যাচপেচে দিনে, তোবড়ানো টিফিন বাক্সের শুকনো রুটি হাতে হাড় জিরজিরে, মাথায় প্লাস্টিক বাঁধা ছেলেটিকে দেখে বুঝতে পারলাম, এই যে খাদ্যের প্রতি মায়াটুকু, মায়ের প্রতি মায়াটুকু, এটাই আমাদের আসল চালিকাশক্তি। কারণ খাবার মানে শুধু অন্নকণাই না, তাতে ভালবাসা আর তিতিক্ষা দুই ই আছে সমমাত্রায়।
আজ আমি চোখের সামনে যেন সেই 'ব্রহ্ম' কে দেখতে পেলাম।
ভাল দিন! আজ বড় ভাল দিন! মন ভাল লাগায় টইটুম্বুর হয়ে যাবার দিন।
Posts: 207
Threads: 3
Likes Received: 366 in 97 posts
Likes Given: 12
Joined: Jun 2021
Reputation:
89
(25-03-2021, 10:29 AM)ddey333 Wrote: লেখাটা লিখেছেন সাব্বির ইমন। পড়ে কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেছি!
//মুদি দোকানে ডিম কিনতে গিয়েছি। পাশে এক লোক বাচ্চা নিয়ে দোকানে এসেছে। লোকটা সম্ভবত শ্রমিক বা রিকশাচালক। শুকনা। কন্ঠার হাড্ডি বের হয়ে গেছে। অভাব অনটন তাকে কেমন জীর্ণশীর্ণ করে দিয়েছে।
তার বাচ্চাটারও একই অবস্থা। লোকটা ২৫০ গ্রাম তেল আর লবন কিনতে এসেছে। বাচ্চাটা জুলজুল চোখে লজেন্সের বয়ামের দিকে তাকিয়ে আছে। বেচারা চাইতে সাহস পাচ্ছে না। ওর বাবা সেটা বুঝতে পেরেছে। কিন্তু দারিদ্র্য মাঝেমাঝে চোখে নির্লজ্জ টিনের চশমা পড়িয়ে দেয়। সেই কথিত "চশমার" আড়ালে ছেলের মায়াভরা মুখটা দেখে ভালোবাসায় ভেজা গলায় বাবাটা বললো, "কিছু লইবি?"
ছেলেটা লাজুক ভাবে কথা না বলে আঙ্গুল তুলে দেখালো। বাবা হেসে লজেন্সের বয়ামের কৌটা খুলে দুইটা লজেন্স বের করে ছেলেকে খুব আদর করে বলো, "তিনের ঘরের নামতাটা কও তো বাপ"
বলেই লোকটা আড়চোখে সবার দিকে হালকা তাকালো। তার সেই দৃষ্টিতে কেমন একটা চাপা উত্তেজনা। যদি না পারে? সবাই তো তাকিয়ে আছে!
ডিমের পুটুলি হাতে নিয়ে আমিও তাকিয়ে আছি ছেলেটার দিকে।
দোকানদারও সরু চোখে তাকিয়ে আছে। এই পিচ্চি পোলা! নাক দিয়ে সিকনি ঝরছে, সে বলবে তিনের ঘরের নামতা! এই কঙ্কালসার ছেলে তিনে তিনে কত হয় সেটাই তো জানে না!
ছেলের হাতে লজেন্স। সে লজেন্স দুইটা এহাত-ওহাত করছে। বাবার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে স্পোর্টস কারের গতিতে সে বলতে শুরু করলো,
"তিন অক্কে তিন, তিন দুগুনি ছয়, তিন তিরিক্কা নয়, তিন চাইরে বারো...."
কেমন টেনেটেনে গানের তালে মাথা নেড়েনেড়ে সে বলে যাচ্ছে। বাবার চোখে যেন নামতার পাতাটা সেঁটে আছে, ও শুধু দেখে দেখে পড়ে যাচ্ছে।
নামতা শেষ হলো ত্রিশ কি চল্লিশ সেকেন্ডে। শেষ করে সে একটা লজেন্স মুখে পুড়লো। মুখ ঝলমল করে বাবাকে বললো, "আব্বা, চাইরের নামতাও পারি। কমু?"
সেই জীর্ণ লোকটা, হয়তো প্রতিদিন ঠিক মতো পয়সা পায় না। পাঁচটাকা বেশী রিকশা ভাড়া চাইলে দুইচারটা গালি খায়, মহাজনের গুঁতা খায়।
সেই গাল ভাঙ্গা কুঁজো হয়ে যাওয়া লোকটা প্রতিদিনই হেরে যায়। সমাজের কাছে, সংসারের কাছে, পিতৃত্বের কাছে।
আজ সে হারেনি। আজ তার অনেক বেশি আনন্দ। সবার সামনে ছেলে তার মুখ উজ্জ্বল করেছে। এবার সে আড়চোখে না, পূর্ণ দৃষ্টিতে আমাদের সবার দিকে তাকালো। তার চোখে গর্বের অশ্রু, আনন্দাশ্রু।
যে লোক শুধু পরাজিতই হয়, আমাদের চোখে, আসলে সে পরাজিত না। সে আসলে অনেক বড় যোদ্ধা। আমাদের চেয়ে অনেক সাহসী। আমরা তো যুদ্ধের আগে নানান পরিকল্পনা করি, কত ফন্দিফিকির, কাকে নিচে নামিয়ে কাকে মাড়িয়ে আমরা উপরে উঠবো।
কিন্তু এই লোকগুলো কাউকে মাড়িয়ে উপরে উঠতে চায় না, নিশ্চিত পরাজয় জেনেও প্রাণপণ যুদ্ধ করে যায়।
যে সিঁড়ি বেয়ে আমরা তড়তড়িয়ে উপরে উঠে যাই, আমরা কি জানি তাদের কাঁধের উপরই সেই সিঁড়ি চাপানো!
লোকটা আজ সাহস পেয়েছে। তিনের ঘরের নামতাটা শুধু নামতা নয়, একটা সাহস, একজন বাবার শক্ত একটা কাঁধ, একটা অবলম্বন। তিনের ঘরের নামতাটা এই দরিদ্র লোকটার স্বপ্ন পূরণের উপাখ্যান।
লোকটা তার ছেলেকে কোলে তুলে ফেললো। সে কেঁদেই ফেলেছে। এই সময় হুট করে দোকানী ডীপফ্রিজ খুলে একটা ললি আইসক্রিম পিচ্চির হাতে দিলো,
"সাবাস! জজ ব্যারিস্টার হইয়া দেখায়া দিস সবাইরে! ল, আইসক্রিম খা। বেশি খাইস না, গলা ফুইলা গেলে কথা কইবার পারবি না।"
ছেলেটা খুশি মনে আইসক্রিমটা নিলো। বাবা ছেলে চলে গেলো। আমি ওদের দিকে তাকিয়ে আছি।
দোকানদার আমাকে বললো, "আমি তো ভাববারও পারি নাই। বান্দরটা কেমনে চ্যালচ্যালাইয়া নামতা কইয়া দিলো! দেখলেন নি কারবার ডা!"
একি! দোকানির চোখেও পানি! আসলে যারা ক্ষুধার কষ্ট বোঝে, তাদের একজনের মনের সাথে অন্যজনের মন একই সুতোয় গাঁথা থাকে। একজনের কষ্ট আরেকজন বুঝতে পারে, আবার আনন্দগুলোও স্পর্শ করে প্রবলভাবে।
আর আমরা? কোটি টাকার স্বপ্নে বিভোর আর প্রতিযোগীতার উন্নাসিকতায় ভুলে যাই আমরা আসলে কি!!!
আমি ডিম হাতে একা একাই হাঁটছি আর বলছি, "তিন অক্কে তিন, তিন দুকুনে ছয় ..."
আমাকেও সংক্রামিত করেছে তাদের জয়ের আনন্দ।//
এর নাম বাঁচা। প্রতিদিন লড়াই, কিছু আশা নিয়ে" না কাল নিশ্চিত কিছু বেশি পয়সা পাব"। এই নিয়েই আমরা সবাই জীবন নিয়ে আশা করি। মধুসূদনের কবিতা "আশা", সেই বিখ্যাত লাইন 'চলিল ভিখারি পুনঃ ভিক্ষার উদ্দেশে"। এই গল্পটি পড়ে দুনিয়া কাঁপানো সিনেমা "বাই সাইকেল থিফ" এর শেষ দৃশ্য মনে পড়ে যায়। সবাই বাবাকে গালাগাল দিচ্ছে চোর বলে, মাথা নিচু করে হাঁটছে কিন্তু তার ছোট ছেলে হাত ধরে ঝাঁকাচ্ছে আর বলছে " পাপা পাপা...।"। তার কাছে সে চোর নয়। বাবা এক মাত্র পরিচয়। এই রিক্সাওালার কাছে এক মাত্র পরিচয় সে এক বাবা। মন ছুয়ে গেছে।
Posts: 207
Threads: 3
Likes Received: 366 in 97 posts
Likes Given: 12
Joined: Jun 2021
Reputation:
89
কলকাতায় আমার সাথে কেউ ংরাজিতে কথা বললে আমি বাংলায় উত্তর দি। হ্যাঁ কিছু ইংরাজি শব্দ ঢুকে যায়, ষদিও। তবে ইংরাজিতে লেখা বই পড়তে কোন আপত্তি নেই। মন দিয়ে পড়ি। বাংলায় এখন শ্রেষ্ঠ লেখক জীবিত সুনিল গাঙ্গুলি আর মৃত শিরশেন্দু মুখোপাধ্যায় ( অনেক চেষ্টা করেও অভ্রকি তে বানান লিখতে পারলাম না )
Posts: 3,682
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
(09-08-2021, 06:30 PM)dimpuch Wrote: কলকাতায় আমার সাথে কেউ ংরাজিতে কথা বললে আমি বাংলায় উত্তর দি। হ্যাঁ কিছু ইংরাজি শব্দ ঢুকে যায়, ষদিও। তবে ইংরাজিতে লেখা বই পড়তে কোন আপত্তি নেই। মন দিয়ে পড়ি। বাংলায় এখন শ্রেষ্ঠ লেখক জীবিত সুনিল গাঙ্গুলি আর মৃত শিরশেন্দু মুখোপাধ্যায় ( অনেক চেষ্টা করেও অভ্রকি তে বানান লিখতে পারলাম না )
I like the way how you sarcastically describe this two legend.
❤❤❤
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
#অণুগল্প
"ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে..." গাইতে গাইতে দরজার বাইরে চটি খুলছিল চিত্রা। আজ মনটা খুব ভাল লাগছে ওর। যদিও, বেশিরভাগ রবিবার গুলোতেই একটুও নিজের জন্য সময় বা বিশ্রাম পায় না ও, কিন্তু সেই সাথে মনটা ভাল থাকে...যে কাজে যায় ও, সেই কাজগুলো ভাল ভাবে হলে সারা সপ্তাহের পরিশ্রমের গ্লানি কেটে যায় এক লহমায়।
চটি খুলতে খুলতেই দেখে আরও তিনজোড়া জুতো খুলে রাখা। বাড়িতে কেউ এসেছে! ভেবেই, মনটা আবার ভাল হয়ে গেল ওর। এই একটা বাজে রোগ... লোকের বাড়ি আসা, লোকলৌকিকতা... সব বন্ধ করে দিয়েছে। আগে মনে হত, "বাঁচা গেছে বাবা!" আর এখন, কষ্ট হয় খুব। এই অসামাজিক ভাবে বাঁচা যায়? ওর তো তাও কত জায়গায় যাবার থাকে, অফিস, কলেজ... বাবা মা একদম বন্দি হয়ে গেছেন।
গুনগুনটা থামিয়ে ঘরে ঢুকল চিত্রা। আর ঢুকেই দেখে তিনজন বসে আছেন। সামনে চায়ের কাপ আর ক'টা প্লেট রাখা। ভাল করে তাকিয়ে দেখে, ওমা, এতো ওদের বাড়ি থেকে চারটে বাড়ি পরে যাদের বাড়ি ছিল, সেই প্রদীপকাকু আর কাকিমা। সঙ্গে ওটা কে? অর্জুন নাকি? বাব্বা! এত বড় হয়ে গেছে! আগে তো গুরগুট্টি ছিল! লম্বাই হচ্ছিল না! এখন বসে থাকলেও লম্বা হয়েছে বোঝাই যাচ্ছে।
হাত পা ধুয়ে, জামা কাপড় ছেড়ে, ঘরের জামা পরে বসার ঘরে এল চিত্রা। বেশ ক্লান্ত লাগছে এখন। শুয়ে শুয়ে গান শুনতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু মা রাগ করবেন, এভাবে গেস্টদের কুশল ও না জিজ্ঞেস করলে।
"কাকু, কাকিমা, কেমন আছ তোমরা?" একগাল হেসে বলে চিত্রা।
"আমরা ভাল আছি রে মা। আজ এদিকে এসেছিলাম, ভাবলাম একবার দেখা করে যাই।" হাসতে হাসতে বললেন কাকু।
"আমাকে জিজ্ঞেস করলি না তো, কেমন আছি? সেইরকম ই হিংসুটি রয়ে গেছিস দেখছি!" শুনে তাকাল অর্জুনের দিকে চিত্রা। তারপর বলল "দেখতেই পাচ্ছি, সিঙারা খাচ্ছিস...তাই বুঝতেই পারছি দিব্যি আছিস!"
হঠাৎ করে মা বলে উঠলেন "কাকু কাকিমারা এসেছেন, একটু ভাল জামা তো পরতে পারতিস। সেই ঘরের নাইটি পরে চলে এলি!"
একটু অবাক হল শুনে চিত্রা। মা তো জানেন, সারাদিন কত পরিশ্রম হয় এইদিনগুলোতে। তাই বাড়িতে পরার জন্য নরম সূতির কিছু স্লিভলেস গাউন কিনেছে ও। দেখতেও সুন্দর সবগুলো। তাহলে মা এভাবে বললেন কেন?
তারপরই মনে পড়ল।
হাতকাটা জামা! তাই বাহু পুরোটাই উন্মুক্ত। আর সেই সাথে হাতের পোড়া দাগটাও দৃশ্যমান। গলার দাগটাও। তাই!
তিনবছর আগের কালীপুজোর আগের দিন। দরজায় প্রদীপ দেবার সময়ে অতর্কিতে আগুন লেগে গেছিল ওর গায়ে। গলা-বুক-হাত পুড়ে গেছিল বিশ্রীভাবে। ভাগ্যিস সূতির শাড়ি ছিল! তারপর চিকিৎসা হয়েছে অনেক। কিন্তু দাগটা রয়েই গেছে স্পষ্টভাবে। সেই দাগের জন্যই চিত্রা হীনমণ্যতায় ভুগেছে বহুদিন। তারপর, বুঝতে শিখেছে, নিজের শর্তে, নিজের মতো করে বাঁচার আনন্দ। আরও বুঝতে পেরেছে, এই সামান্য কারণের জন্য ঋজু, ওর তখনকার বয়ফ্রেন্ড ওকে ডাম্প করায়। সেদিন অবশ্য মুক্তির স্বাদ পেয়েছিল ও!
এত কষ্টে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার আনন্দ, তাকে কি ছোট করা যায়? তাই হেসে মা কে বলল "তুমি চিন্তা করো না মা, কাকু, কাকিমা তো জানেনই, আমি কুরূপা!"
মা একটু থমকে যান। মেয়ে তো কখনও এমনি বলে না। উলটে কদিন আগে ওর এক বন্ধুর ছবি মোবাইলে দেখে "ও মা, কত মোটা হয়ে গেছে!" বলায় বকা খেয়েছেন। সেটা নাকি বডি শেমিং। মেয়েটি নাকি খুব ভাল। সেটাই মেয়েটির পরিচয়। আর আজ নিজেকে কুরূপা বলছে? মন খারাপ নাকি ওর? সেই আগের মতো?
তাড়াতাড়ি বলে ওঠেন "বালাই ষাট, কুরূপা কেন হবি তুই? অ্যাক্সিডেন্টে যে বড় কোন ক্ষতি হয়নি, সেটাই তো অনেক! " আর তারপর ওঁদের দিকে তাকিয়ে বলেন "তাই না?"
"একদম তাই, আন্টি। ইন ফ্যাক্ট, এখন তুই আরো সুন্দরী হয়েছিস। আমি সেদিন ই ফেসবুকে দেখলাম তুই থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য রক্তদান শিবির আয়োজন করিস নিয়মিত। এই প্যান্ডামিকে অনেকের বাড়ি খাবার পৌঁছে দিয়েছিস। এসব তোকে আরও সুন্দরী করেছে। আর প্লেটে সিঙারা আছে দেখেও ভাগ বসালি না, তার মানে আগের মতো ছোঁচাও নেই তুই! সব প্লাস পয়েন্ট!" হাসতে হাসতে বলে অর্জুন।
হেসে ওঠেন বাবা মায়েরাও। আর চিত্রাও।
তারপর ই খটকা লাগে।
রক্তদান শিবির!
প্যান্ডামিকে খাবার পৌঁছে দেওয়া!
ও কিভাবে জানে? ফেসবুকে তো নেই? স্টক করে নাকি ওকে? কেন?
অবাক হয়ে অর্জুনের দিকে তাকায় ও।
অর্জুন ও তাকিয়ে আছে ওর দিকেই।
সেই দৃষ্টিতে "বঁধূ কোন আলো লাগল চোখে" র সুর লাগা আছে!
একটু হাসল চিত্রা, চিত্রাঙ্গদা।
সুরূপা চিত্রাঙ্গদা।
অর্জুন নিজেই বলল যে...
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
(11-08-2021, 02:07 PM)ddey333 Wrote: #অণুগল্প
"ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে..." গাইতে গাইতে দরজার বাইরে চটি খুলছিল চিত্রা। আজ মনটা খুব ভাল লাগছে ওর। যদিও, বেশিরভাগ রবিবার গুলোতেই একটুও নিজের জন্য সময় বা বিশ্রাম পায় না ও, কিন্তু সেই সাথে মনটা ভাল থাকে...যে কাজে যায় ও, সেই কাজগুলো ভাল ভাবে হলে সারা সপ্তাহের পরিশ্রমের গ্লানি কেটে যায় এক লহমায়।
চটি খুলতে খুলতেই দেখে আরও তিনজোড়া জুতো খুলে রাখা। বাড়িতে কেউ এসেছে! ভেবেই, মনটা আবার ভাল হয়ে গেল ওর। এই একটা বাজে রোগ... লোকের বাড়ি আসা, লোকলৌকিকতা... সব বন্ধ করে দিয়েছে। আগে মনে হত, "বাঁচা গেছে বাবা!" আর এখন, কষ্ট হয় খুব। এই অসামাজিক ভাবে বাঁচা যায়? ওর তো তাও কত জায়গায় যাবার থাকে, অফিস, কলেজ... বাবা মা একদম বন্দি হয়ে গেছেন।
গুনগুনটা থামিয়ে ঘরে ঢুকল চিত্রা। আর ঢুকেই দেখে তিনজন বসে আছেন। সামনে চায়ের কাপ আর ক'টা প্লেট রাখা। ভাল করে তাকিয়ে দেখে, ওমা, এতো ওদের বাড়ি থেকে চারটে বাড়ি পরে যাদের বাড়ি ছিল, সেই প্রদীপকাকু আর কাকিমা। সঙ্গে ওটা কে? অর্জুন নাকি? বাব্বা! এত বড় হয়ে গেছে! আগে তো গুরগুট্টি ছিল! লম্বাই হচ্ছিল না! এখন বসে থাকলেও লম্বা হয়েছে বোঝাই যাচ্ছে।
হাত পা ধুয়ে, জামা কাপড় ছেড়ে, ঘরের জামা পরে বসার ঘরে এল চিত্রা। বেশ ক্লান্ত লাগছে এখন। শুয়ে শুয়ে গান শুনতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু মা রাগ করবেন, এভাবে গেস্টদের কুশল ও না জিজ্ঞেস করলে।
"কাকু, কাকিমা, কেমন আছ তোমরা?" একগাল হেসে বলে চিত্রা।
"আমরা ভাল আছি রে মা। আজ এদিকে এসেছিলাম, ভাবলাম একবার দেখা করে যাই।" হাসতে হাসতে বললেন কাকু।
"আমাকে জিজ্ঞেস করলি না তো, কেমন আছি? সেইরকম ই হিংসুটি রয়ে গেছিস দেখছি!" শুনে তাকাল অর্জুনের দিকে চিত্রা। তারপর বলল "দেখতেই পাচ্ছি, সিঙারা খাচ্ছিস...তাই বুঝতেই পারছি দিব্যি আছিস!"
হঠাৎ করে মা বলে উঠলেন "কাকু কাকিমারা এসেছেন, একটু ভাল জামা তো পরতে পারতিস। সেই ঘরের নাইটি পরে চলে এলি!"
একটু অবাক হল শুনে চিত্রা। মা তো জানেন, সারাদিন কত পরিশ্রম হয় এইদিনগুলোতে। তাই বাড়িতে পরার জন্য নরম সূতির কিছু স্লিভলেস গাউন কিনেছে ও। দেখতেও সুন্দর সবগুলো। তাহলে মা এভাবে বললেন কেন?
তারপরই মনে পড়ল।
হাতকাটা জামা! তাই বাহু পুরোটাই উন্মুক্ত। আর সেই সাথে হাতের পোড়া দাগটাও দৃশ্যমান। গলার দাগটাও। তাই!
তিনবছর আগের কালীপুজোর আগের দিন। দরজায় প্রদীপ দেবার সময়ে অতর্কিতে আগুন লেগে গেছিল ওর গায়ে। গলা-বুক-হাত পুড়ে গেছিল বিশ্রীভাবে। ভাগ্যিস সূতির শাড়ি ছিল! তারপর চিকিৎসা হয়েছে অনেক। কিন্তু দাগটা রয়েই গেছে স্পষ্টভাবে। সেই দাগের জন্যই চিত্রা হীনমণ্যতায় ভুগেছে বহুদিন। তারপর, বুঝতে শিখেছে, নিজের শর্তে, নিজের মতো করে বাঁচার আনন্দ। আরও বুঝতে পেরেছে, এই সামান্য কারণের জন্য ঋজু, ওর তখনকার বয়ফ্রেন্ড ওকে ডাম্প করায়। সেদিন অবশ্য মুক্তির স্বাদ পেয়েছিল ও!
এত কষ্টে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার আনন্দ, তাকে কি ছোট করা যায়? তাই হেসে মা কে বলল "তুমি চিন্তা করো না মা, কাকু, কাকিমা তো জানেনই, আমি কুরূপা!"
মা একটু থমকে যান। মেয়ে তো কখনও এমনি বলে না। উলটে কদিন আগে ওর এক বন্ধুর ছবি মোবাইলে দেখে "ও মা, কত মোটা হয়ে গেছে!" বলায় বকা খেয়েছেন। সেটা নাকি বডি শেমিং। মেয়েটি নাকি খুব ভাল। সেটাই মেয়েটির পরিচয়। আর আজ নিজেকে কুরূপা বলছে? মন খারাপ নাকি ওর? সেই আগের মতো?
তাড়াতাড়ি বলে ওঠেন "বালাই ষাট, কুরূপা কেন হবি তুই? অ্যাক্সিডেন্টে যে বড় কোন ক্ষতি হয়নি, সেটাই তো অনেক! " আর তারপর ওঁদের দিকে তাকিয়ে বলেন "তাই না?"
"একদম তাই, আন্টি। ইন ফ্যাক্ট, এখন তুই আরো সুন্দরী হয়েছিস। আমি সেদিন ই ফেসবুকে দেখলাম তুই থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য রক্তদান শিবির আয়োজন করিস নিয়মিত। এই প্যান্ডামিকে অনেকের বাড়ি খাবার পৌঁছে দিয়েছিস। এসব তোকে আরও সুন্দরী করেছে। আর প্লেটে সিঙারা আছে দেখেও ভাগ বসালি না, তার মানে আগের মতো ছোঁচাও নেই তুই! সব প্লাস পয়েন্ট!" হাসতে হাসতে বলে অর্জুন।
হেসে ওঠেন বাবা মায়েরাও। আর চিত্রাও।
তারপর ই খটকা লাগে।
রক্তদান শিবির!
প্যান্ডামিকে খাবার পৌঁছে দেওয়া!
ও কিভাবে জানে? ফেসবুকে তো নেই? স্টক করে নাকি ওকে? কেন?
অবাক হয়ে অর্জুনের দিকে তাকায় ও।
অর্জুন ও তাকিয়ে আছে ওর দিকেই।
সেই দৃষ্টিতে "বঁধূ কোন আলো লাগল চোখে" র সুর লাগা আছে!
একটু হাসল চিত্রা, চিত্রাঙ্গদা।
সুরূপা চিত্রাঙ্গদা।
অর্জুন নিজেই বলল যে...
সৌন্দর্য আসলে কি সেটা যদি সবাই বুঝতে পারতো.... তবে দুই নর নারীর নামদুটো কিন্তু দারুন
Posts: 207
Threads: 3
Likes Received: 366 in 97 posts
Likes Given: 12
Joined: Jun 2021
Reputation:
89
(09-08-2021, 04:17 PM)dimpuch Wrote: এর নাম বাঁচা। প্রতিদিন লড়াই, কিছু আশা নিয়ে" না কাল নিশ্চিত কিছু বেশি পয়সা পাব"। এই নিয়েই আমরা সবাই জীবন নিয়ে আশা করি। মধুসূদনের কবিতা "আশা", সেই বিখ্যাত লাইন 'চলিল ভিখারি পুনঃ ভিক্ষার উদ্দেশে"। এই গল্পটি পড়ে দুনিয়া কাঁপানো সিনেমা "বাই সাইকেল থিফ" এর শেষ দৃশ্য মনে পড়ে যায়। সবাই বাবাকে গালাগাল দিচ্ছে চোর বলে, মাথা নিচু করে হাঁটছে কিন্তু তার ছোট ছেলে হাত ধরে ঝাঁকাচ্ছে আর বলছে " পাপা পাপা...।"। তার কাছে সে চোর নয়। বাবা এক মাত্র পরিচয়। এই রিক্সাওালার কাছে এক মাত্র পরিচয় সে এক বাবা। মন ছুয়ে গেছে।
(11-08-2021, 02:07 PM)ddey333 Wrote: #অণুগল্প
"ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে..." গাইতে গাইতে দরজার বাইরে চটি খুলছিল চিত্রা। আজ মনটা খুব ভাল লাগছে ওর। যদিও, বেশিরভাগ রবিবার গুলোতেই একটুও নিজের জন্য সময় বা বিশ্রাম পায় না ও, কিন্তু সেই সাথে মনটা ভাল থাকে...যে কাজে যায় ও, সেই কাজগুলো ভাল ভাবে হলে সারা সপ্তাহের পরিশ্রমের গ্লানি কেটে যায় এক লহমায়।
চটি খুলতে খুলতেই দেখে আরও তিনজোড়া জুতো খুলে রাখা। বাড়িতে কেউ এসেছে! ভেবেই, মনটা আবার ভাল হয়ে গেল ওর। এই একটা বাজে রোগ... লোকের বাড়ি আসা, লোকলৌকিকতা... সব বন্ধ করে দিয়েছে। আগে মনে হত, "বাঁচা গেছে বাবা!" আর এখন, কষ্ট হয় খুব। এই অসামাজিক ভাবে বাঁচা যায়? ওর তো তাও কত জায়গায় যাবার থাকে, অফিস, কলেজ... বাবা মা একদম বন্দি হয়ে গেছেন।
গুনগুনটা থামিয়ে ঘরে ঢুকল চিত্রা। আর ঢুকেই দেখে তিনজন বসে আছেন। সামনে চায়ের কাপ আর ক'টা প্লেট রাখা। ভাল করে তাকিয়ে দেখে, ওমা, এতো ওদের বাড়ি থেকে চারটে বাড়ি পরে যাদের বাড়ি ছিল, সেই প্রদীপকাকু আর কাকিমা। সঙ্গে ওটা কে? অর্জুন নাকি? বাব্বা! এত বড় হয়ে গেছে! আগে তো গুরগুট্টি ছিল! লম্বাই হচ্ছিল না! এখন বসে থাকলেও লম্বা হয়েছে বোঝাই যাচ্ছে।
হাত পা ধুয়ে, জামা কাপড় ছেড়ে, ঘরের জামা পরে বসার ঘরে এল চিত্রা। বেশ ক্লান্ত লাগছে এখন। শুয়ে শুয়ে গান শুনতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু মা রাগ করবেন, এভাবে গেস্টদের কুশল ও না জিজ্ঞেস করলে।
"কাকু, কাকিমা, কেমন আছ তোমরা?" একগাল হেসে বলে চিত্রা।
"আমরা ভাল আছি রে মা। আজ এদিকে এসেছিলাম, ভাবলাম একবার দেখা করে যাই।" হাসতে হাসতে বললেন কাকু।
"আমাকে জিজ্ঞেস করলি না তো, কেমন আছি? সেইরকম ই হিংসুটি রয়ে গেছিস দেখছি!" শুনে তাকাল অর্জুনের দিকে চিত্রা। তারপর বলল "দেখতেই পাচ্ছি, সিঙারা খাচ্ছিস...তাই বুঝতেই পারছি দিব্যি আছিস!"
হঠাৎ করে মা বলে উঠলেন "কাকু কাকিমারা এসেছেন, একটু ভাল জামা তো পরতে পারতিস। সেই ঘরের নাইটি পরে চলে এলি!"
একটু অবাক হল শুনে চিত্রা। মা তো জানেন, সারাদিন কত পরিশ্রম হয় এইদিনগুলোতে। তাই বাড়িতে পরার জন্য নরম সূতির কিছু স্লিভলেস গাউন কিনেছে ও। দেখতেও সুন্দর সবগুলো। তাহলে মা এভাবে বললেন কেন?
তারপরই মনে পড়ল।
হাতকাটা জামা! তাই বাহু পুরোটাই উন্মুক্ত। আর সেই সাথে হাতের পোড়া দাগটাও দৃশ্যমান। গলার দাগটাও। তাই!
তিনবছর আগের কালীপুজোর আগের দিন। দরজায় প্রদীপ দেবার সময়ে অতর্কিতে আগুন লেগে গেছিল ওর গায়ে। গলা-বুক-হাত পুড়ে গেছিল বিশ্রীভাবে। ভাগ্যিস সূতির শাড়ি ছিল! তারপর চিকিৎসা হয়েছে অনেক। কিন্তু দাগটা রয়েই গেছে স্পষ্টভাবে। সেই দাগের জন্যই চিত্রা হীনমণ্যতায় ভুগেছে বহুদিন। তারপর, বুঝতে শিখেছে, নিজের শর্তে, নিজের মতো করে বাঁচার আনন্দ। আরও বুঝতে পেরেছে, এই সামান্য কারণের জন্য ঋজু, ওর তখনকার বয়ফ্রেন্ড ওকে ডাম্প করায়। সেদিন অবশ্য মুক্তির স্বাদ পেয়েছিল ও!
এত কষ্টে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার আনন্দ, তাকে কি ছোট করা যায়? তাই হেসে মা কে বলল "তুমি চিন্তা করো না মা, কাকু, কাকিমা তো জানেনই, আমি কুরূপা!"
মা একটু থমকে যান। মেয়ে তো কখনও এমনি বলে না। উলটে কদিন আগে ওর এক বন্ধুর ছবি মোবাইলে দেখে "ও মা, কত মোটা হয়ে গেছে!" বলায় বকা খেয়েছেন। সেটা নাকি বডি শেমিং। মেয়েটি নাকি খুব ভাল। সেটাই মেয়েটির পরিচয়। আর আজ নিজেকে কুরূপা বলছে? মন খারাপ নাকি ওর? সেই আগের মতো?
তাড়াতাড়ি বলে ওঠেন "বালাই ষাট, কুরূপা কেন হবি তুই? অ্যাক্সিডেন্টে যে বড় কোন ক্ষতি হয়নি, সেটাই তো অনেক! " আর তারপর ওঁদের দিকে তাকিয়ে বলেন "তাই না?"
"একদম তাই, আন্টি। ইন ফ্যাক্ট, এখন তুই আরো সুন্দরী হয়েছিস। আমি সেদিন ই ফেসবুকে দেখলাম তুই থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য রক্তদান শিবির আয়োজন করিস নিয়মিত। এই প্যান্ডামিকে অনেকের বাড়ি খাবার পৌঁছে দিয়েছিস। এসব তোকে আরও সুন্দরী করেছে। আর প্লেটে সিঙারা আছে দেখেও ভাগ বসালি না, তার মানে আগের মতো ছোঁচাও নেই তুই! সব প্লাস পয়েন্ট!" হাসতে হাসতে বলে অর্জুন।
হেসে ওঠেন বাবা মায়েরাও। আর চিত্রাও।
তারপর ই খটকা লাগে।
রক্তদান শিবির!
প্যান্ডামিকে খাবার পৌঁছে দেওয়া!
ও কিভাবে জানে? ফেসবুকে তো নেই? স্টক করে নাকি ওকে? কেন?
অবাক হয়ে অর্জুনের দিকে তাকায় ও।
অর্জুন ও তাকিয়ে আছে ওর দিকেই।
সেই দৃষ্টিতে "বঁধূ কোন আলো লাগল চোখে" র সুর লাগা আছে!
একটু হাসল চিত্রা, চিত্রাঙ্গদা।
সুরূপা চিত্রাঙ্গদা।
অর্জুন নিজেই বলল যে...
darun darun sundor. sundor sundor i , amra jor debar jonyo darun lagai, amader bhalo laga bojhate
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
এটি একটি গল্প, কোনো সত্যি কাহিনী নয়
সমুদ্র শ্রুতির খুব ভালো লাগে। সেই ছোটবেলায় একবার কলেজ থেকে সমুদ্রে অবগাহন করতে কক্সবাজার গিয়েছিলো।সমুদ্রের বিশালতায় ওকে খুব ছোট মনে হচ্ছিল কিন্তু অবগাহনে মনটা কি এক অনাবিল আনন্দে ভরে উঠেছিল, তা এত বছর পর এখনো মনে করতে পারছে।এখনো কান পাতলে সে সমুদ্রের গর্জন শুনতে পায়, ভাবে আবার কবে যাবে। কি মজাটাই না করেছিলো সেবার।চিন্তা করতে করতে শ্রুতির বুক থেকে একটি দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আৎকে উঠল শ্রুতি।দ্রুত মুক্তা আপার বাসায় যেতে হবে, আজকে রাতে নাকি একটা ভালো পার্টি আসবে। সকালে মুক্তা ফোন দিয়ে বলেছিলো রাতে কোনো কাজ না রাখতে, ছেলেটাকে খুশি করতে পারলে ভালো টাকা পাবে। বড় লোকের ছেলে, মাঝে মাঝে খেয়াল হলে আসে এবং আসলে তাকে সবচেয়ে ভালোটাই দিতে হবে, সে জন্য মুক্তা শ্রুতিকে ফোন করেছিলো।
মুক্তার প্রতি শ্রুতি খুব কৃ্তজ্ঞ।ওদের বিপদে একমাত্র মুক্তাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।শ্রুতি অবশ্য এই লাইনে আসতে চায়নি। কিন্তু হঠাৎ করে ওর বাবা মারা যাওয়াতে ওরা বাস্তবিক অর্থেই বিপদে পড়ে গিয়েছিলো।তিন ভাই বোনের মধ্যে ওই সবচেয়ে বড়, ভার্সিটিতে পড়াশোনা করছে, ছোট দুই ভাই এখনো কলেজের গন্ডি পেরোয় নি। বাবা একটি কলেজে করণিক পদে কাজ করতো, খুব বেশী সৎ ছিলো মনে হয়, মৃত্যুর পর তার কোনো ব্যাংক একাউন্টের খোঁজ পাওয়া যায়নি, সঞ্চয়-ও খুব একটা করতে পারেনি।শ্রুতির মা তার কলেজ পড়ুয়া দুই ছেলে আর ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়ের খরচ চালাতে গিয়ে চোখে অন্ধকারই দেখছিল, তার উপর আবার সাথে আছে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত শ্রুতির দাদী। শ্রুতি পড়াশোনার খরচ চালানোর জন্য একটা পার্টটাইম চাকরি পাবার অনেক চেষ্টা করেছিলো। অভিজ্ঞতার অভাব ছিল, তাই চাকরিও মিললো না।যেখানে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন নেই, সেখানে নর মানুষের লোভী চোখের অভাব নেই, কিন্তু বেতন কম।
ঠিক এই সময়েই মুক্তা এগিয়ে আসে।একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে মুক্তার সাথে পরিচয়, সেখানকার রিসেপশনিষ্ট।ইন্টারভিউ রুম থেকে যখন বিষন্ন নয়নে বের হয়ে আসলো তখন মুক্তা শ্রুতির হাতে ফোন নম্বরটি দিয়ে বলেছিলো ফোন করতে।
এখন সে প্রায়ই মুক্তার ফোনের অপেক্ষায় থাকে। মাসে মাত্র কয়েক টা রাত থাকা লাগে, কিন্তু পকেট ভারী হয়। বাকী সময়টাতে সে পড়াশোনা করতে পারে। মুক্তার সাথে কথা বলার পর প্রথমে সে রাজীই হয়নি, পরে প্রয়োজনের তাগিদে রাজী হয়। প্রথম প্রথম খুব অস্বস্তি লাগতো, নিজেকে অশুচি অশুচি লাগতো, এখন আর লাগে না।মাঝে মাঝে সমুদ্র-অবগাহনের কথা মনে পড়ে যায়, ভাবে কোনো একদিন সমুদ্র সঙ্গমে শুদ্ধ হয়ে আসবে।
বাসা থেকে বের হবার সময় মা-কে বললো আজ রাতে সে বান্ধবীর বাসায় থাকবে, ক’দিন পর পরীক্ষা, একসাথে পড়বে। মা কিছু বলেনি, কখনো বলেনা, মা জানে শ্রুতি যেদিন রাতে বান্ধবীর বাসায় থাকে, তার পরের কয়েকটা দিন ভালো খাওয়া-দাওয়া হয়, সংসার খরচে বাড়তি কিছু টাকা আসে। সে কখনো শ্রুতিকে জিজ্ঞেস করেনি, কিভাবে টাকা আসে, কখনো জিজ্ঞেস করতেও চায়না, পাছে অপ্রিয় কথা শুনতে হয়।
মুক্তার বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সূর্য পশ্চিমাকাশে ডুবে গেলো। শ্রুতি সবসময় আগে আগে আসে, এসে বিশ্রাম নেয়, একটু মেকাপ লাগায়, নিজেকে মোহনীয় করে তোলার যাবতীয় চেষ্টা চলে। মুক্তা বলছে আজকের ছেলেটা বিশাল বড় লোকের ছেলে, মাঝে মাঝে আসে, ভালো লাগলে প্রচুর টাকা দেয়।ব্যবহার ভালো, দেখতেও রাজপুত্রের মতো।মুক্তার কথায় শ্রুতি হেসে ফেলে। রাজপুত্র শুনে ওর সমুদ্রের কথা মনে পড়ে যায়।
এই সমুদ্র, সেই সমুদ্র নয়। ওদের ভার্সিটিতে পড়ে, দুই ব্যাচ সিনিয়র, সবার মাঝে খুব জনপ্রিয়। চেহারা রাজপুত্রের মতোই, বাবার মনে হয় কয়েকটা ইন্ডাস্ট্রি আছে। শ্রুতির হৃদয়েও এই সমুদ্র দোলা লাগায়, মনে মনে খুব করে চায় এই সমুদ্রেও অবগাহন করতে।কিন্তু কখনো কথা বলারও সুযোগ হয়নি, সমুদ্র-সঙ্গম তো দূরের কথা, সমুদ্র বোধহয় ওকে চিনেই না। ওর বুক থেকে আবারো একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
শ্রুতি রুমে একা বসে আছে। রাজপুত্রের মতো দেখতে ছেলেটা মাত্র এসেছে, মুক্তার সাথে কথা বলছে। কিছুক্ষন পরই এই রুমে ঢুকবে।শ্রুতি দরজার দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে……..।
এ যে সমুদ্র! শ্রুতি পাথরের মতো ঠায় বসে আছে।চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টি নামছে, আনন্দে না কষ্টে বুঝতে পারছে না, শুধু বুঝতে পারছে সে আবার সমুদ্রে অবগাহনে যাচ্ছে, সমুদ্র-সঙ্গমে সে শুদ্ধ হয়ে উঠবে, নীল-আকাশের মতো শুদ্ধ।
(গল্পটি সংগৃহীত)
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
গরু
- "কি বললি? আমাকে ভালবাসিস? হুহ্! ছেড়ে যাবি না তো?"
-"ছেড়ে যাব! কি যে বলিস! আমি তোর জীবনে 'গরু' হয়ে থাকব।"
-"মানে?"
-"সিম্পল! গরু খুব উপকারী জীব, জানিস তো? গরুর সবকিছুই কাজে লাগে। তেমনি আমিও তোর সব কাজে লাগব।"
-"যেমন?"
-"ধর, তুই তো জানিস ই, আমি শেফ। রান্না করব। খাবার সুন্দর করে প্লেটিং করব। বাসন মেজেছি ছোটবেলায় অনেক, তাই সেটাও করব। গরুর মতো মায়াভরা চোখে তোকে দেখব আর রোজ রোজ প্রেমে পড়ব! আর তুই আমাকে রেগেমেগে 'গরু' বলে গাল দিলেও কিচ্ছু মনে করব না!"
-"ধ্যাত!"
-"বল, রাজি?"
-"যাঃ!"
-"ওতেই হবে! স্বয়ং পরশুরাম বলেছেন যাঃ মানেই হ্যাঁ!"
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
অ্যাডমিন
পোস্টটা করে দিয়ে লজ্জা লজ্জা লাগছিল রিয়ার।
প্রায় বছরখানেক হলো ফেসবুকে এই ফুডগ্রুপটিতে আছে ও। রান্না ওর সখ। আর সেই সুবাদেই একদিন আলাপ হয় গ্রুপের অ্যাডমিন প্রীতমের সাথে। প্রথমে টুকটাক কমেন্টে কথা, তারপর ইনবক্স, হোয়াটসঅ্যাপ। 'আপনি' থেকে 'তুমি' হলেও কখনই সীমা অতিক্রম করেনি প্রীতম।
করে ফেলেছে রিয়া নিজেই। ভালবেসে ফেলেছে শান্ত আর গভীর স্বভাবের প্রীতমকে।
আর আজ, প্রীতমের জন্মদিনে আর থাকতে না পেরে কেক বানিয়ে 'হ্যাপি বার্থডে পি' লিখে, ছবি তুলেছে। আর সেটা ওই গ্রুপেই পোস্ট করে দিয়েছে। কিন্তু এবার বড্ড লজ্জা লাগছে! পোস্ট অ্যাপ্রুভ করার সময়ে তো প্রীতম দেখবেই, কি ভাববে! যদি ভুল বোঝে? "তোমার জন্য না" বলে কাটিয়ে দেবে? তাহলে তো মনের কথা মনেই থেকে যাবে...
ইস! কেন যে করল এরকম!
ভাবতে ভাবতেই 'টুং' করে শব্দ। হোয়াটসঅ্যাপ। প্রীতমের!
কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা হাতে নিল রিয়া।
এক লাইনের মেসেজ
"আই লাব্বিউ টুউ, রি!"
হাতটা এখনও কাঁপছে রিয়ার... বুকে লাবডুব
প্রীতম আর রিয়া...খুশি থাকুক খুব...।।
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
#অণুগল্প
আজ সক্কাল সক্কাল ঘুম থেকে উঠে পড়েছে পিকু। ঝটপট ওকে একটা হোম ওয়ার্ক করে ফেলতে হবে, নইলে বাবা মায়ের কাছে মেইল করে বলে দেবেন কলেজের ম্যাম যে ও 'ক্রিয়েটিভ রাইটিং' করে নি। মা আবার "পিকু, আমি তো ভেবেছিলাম তুমি রাইটার হতে চাও? আর তুমিই লিখলে না?" বলে খুব দুঃখ দুঃখ করে তাকাবেন ওর দিকে... ওর কান্না পাবে তখন!
তাড়াতাড়ি উঠে, ব্রাশ করতে করতে নিজেকেই দোষ দিচ্ছিল পিকু। ইস! মাঝে শনিবার, রবিবার - দু দু'টো দিন গেল, তবুও কেন কাজ টা করল না ও? তাহলে তো এই সমস্যা হতো না! কিন্তু কি আর করা যাবে! লিখতে তো হবেই! তাই, মুখটা ধুয়ে ঘরে এসে বসল পিকু। আর, খাতাটা টেনে নিল।
নিজের মনে পেনটা মুখে দিয়ে কি লেখা যায় ভাবছিল পিকু। হঠাৎ কানে এলো কয়েকটি কথা। মায়ের গলা "হ্যাঁ গো, আমাদের একতলার নতুন ভাড়াটে মেয়েটি কবে আসবে? পরের সপ্তাহে?"
ওদের একতলার আঙ্কেল আন্টিরা মাসখানেক আগেই চলে গেছেন। এবার তাহলে নতুন কেউ আসবেন! ইয়েএএ! কী মজা! নইলে বাড়িটা ফাঁকা লাগে খুব! যদি ওর একটা ফ্রেন্ড পাওয়া যায়, আরও ভাল হবে...
ভাবার মাঝেই বাবার গলা কানে এলো পিকুর "না, উনি আসবেন না। অন্য ভাড়াটে দেখতে হবে.."
"সেকি! কেন? সেদিন তো ভদ্রমহিলা বললেন ওনার খুব পছন্দ হয়েছে... এরমধ্যেই শিফট করতে চান?" বেশ অবাক হয়ে বললেন মা।
"হ্যাঁ, ওনার কোনো সমস্যা নেই। আমি এই পরশুই জানতে পারলাম যে উনি একা থাকেন! ডিভোর্সি। সাথে বাবা - মা কেউ থাকবেন না। তাই ওনাকে ভাড়া দেব না।... দেখি, অন্য কাউকে খুঁজতে হবে।"
বড়দের কথায় আর মন দেবে না ভেবে খাতা খুলল পিকু। এমন একটা টপিক নিয়ে লেখা...মাথায় কিছু আসছেও না যে... ইস! ম্যাম কি তাহলে মায়ের কাছে নালিশ করে দেবেন?
"ডিভোর্সি বলে ভাড়া দেবে না? কেন?"
"কী যে বলো না রুমা! একা মেয়ে... কবে কী হয়ে যায়! হয়ত পাড়ার কেউ ডিস্টার্ব করা শুরু করল! না না, দরকার নেই বাবা!"
"সেই! ডিভোর্সি বলে কথা... বাড়ি ভাড়া দেবার দরকার নেই। স্বাধীনতা দিবস তো চলে গেছে... আজ থেকে আবার যে ই কে সেই! 'নারী স্বাধীনতা', কোনো মেয়ের নিজের মতো করে বাঁচতে চাইবার অধিকার, বা একা থাকার ইচ্ছে... সেসব আবার কি বস্তু, তাই না? আর, পাড়ার কেউ বিরক্ত করলেও তারা খারাপ মানুষ হবেন, যার দায় শুধুই তাদের। তেমন হলে আইন আছে... আমরাও পাশে থাকতে পারি" খুব ঠান্ডা গলায় বললেন মা।
একটু চুপ করে রইলেন বাবা। তারপর বললেন "আই অ্যাম স্যরি রুমা। আমি এক্ষুণি ওঁকে ফোন করে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি... উনি শিফট করতে চাইলে আমি সাহায্য ও করব..."।
মুখে হাসি ফুটে উঠল পিকুর ও। তারপরই ওর মাথায় আইডিয়া এলো।
'বর্তমান সময়ে তোমার প্রেরণা' এই বিষয়ে কি লিখবে বুঝে গেছে পিকু।
মোড়ের মাথার বাড়ির দিদা, যিনি ওদের করোনা যখন হয়েছিল, তখন ওদের দুবেলা খাবার পাঠিয়েছিলেন। খোঁজ নিয়েছিলেন। ওনাকে দেখেই তো পিকু ভেবেছে ও বড় হয়ে লেখক হবে আর সমাজসেবা করবে!
নিজের মনের কথা লিখতে শুরু করে দিয়েছিল পিকু। নইলে, খেয়াল করলে দেখতে পেত ওর খাতার প্রথম পাতায় আঁকা আমাদের জাতীয় পতাকার রং যেন তখন উজ্জ্বলতর হয়ে গেছে...
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
19-08-2021, 11:52 AM
(This post was last modified: 19-08-2021, 11:53 AM by Baban. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(19-08-2021, 10:53 AM)ddey333 Wrote: #অণুগল্প
আজ সক্কাল সক্কাল ঘুম থেকে উঠে পড়েছে পিকু। ঝটপট ওকে একটা হোম ওয়ার্ক করে ফেলতে হবে, নইলে বাবা মায়ের কাছে মেইল করে বলে দেবেন কলেজের ম্যাম যে ও 'ক্রিয়েটিভ রাইটিং' করে নি। মা আবার "পিকু, আমি তো ভেবেছিলাম তুমি রাইটার হতে চাও? আর তুমিই লিখলে না?" বলে খুব দুঃখ দুঃখ করে তাকাবেন ওর দিকে... ওর কান্না পাবে তখন!
তাড়াতাড়ি উঠে, ব্রাশ করতে করতে নিজেকেই দোষ দিচ্ছিল পিকু। ইস! মাঝে শনিবার, রবিবার - দু দু'টো দিন গেল, তবুও কেন কাজ টা করল না ও? তাহলে তো এই সমস্যা হতো না! কিন্তু কি আর করা যাবে! লিখতে তো হবেই! তাই, মুখটা ধুয়ে ঘরে এসে বসল পিকু। আর, খাতাটা টেনে নিল।
নিজের মনে পেনটা মুখে দিয়ে কি লেখা যায় ভাবছিল পিকু। হঠাৎ কানে এলো কয়েকটি কথা। মায়ের গলা "হ্যাঁ গো, আমাদের একতলার নতুন ভাড়াটে মেয়েটি কবে আসবে? পরের সপ্তাহে?"
ওদের একতলার আঙ্কেল আন্টিরা মাসখানেক আগেই চলে গেছেন। এবার তাহলে নতুন কেউ আসবেন! ইয়েএএ! কী মজা! নইলে বাড়িটা ফাঁকা লাগে খুব! যদি ওর একটা ফ্রেন্ড পাওয়া যায়, আরও ভাল হবে...
ভাবার মাঝেই বাবার গলা কানে এলো পিকুর "না, উনি আসবেন না। অন্য ভাড়াটে দেখতে হবে.."
"সেকি! কেন? সেদিন তো ভদ্রমহিলা বললেন ওনার খুব পছন্দ হয়েছে... এরমধ্যেই শিফট করতে চান?" বেশ অবাক হয়ে বললেন মা।
"হ্যাঁ, ওনার কোনো সমস্যা নেই। আমি এই পরশুই জানতে পারলাম যে উনি একা থাকেন! ডিভোর্সি। সাথে বাবা - মা কেউ থাকবেন না। তাই ওনাকে ভাড়া দেব না।... দেখি, অন্য কাউকে খুঁজতে হবে।"
বড়দের কথায় আর মন দেবে না ভেবে খাতা খুলল পিকু। এমন একটা টপিক নিয়ে লেখা...মাথায় কিছু আসছেও না যে... ইস! ম্যাম কি তাহলে মায়ের কাছে নালিশ করে দেবেন?
"ডিভোর্সি বলে ভাড়া দেবে না? কেন?"
"কী যে বলো না রুমা! একা মেয়ে... কবে কী হয়ে যায়! হয়ত পাড়ার কেউ ডিস্টার্ব করা শুরু করল! না না, দরকার নেই বাবা!"
"সেই! ডিভোর্সি বলে কথা... বাড়ি ভাড়া দেবার দরকার নেই। স্বাধীনতা দিবস তো চলে গেছে... আজ থেকে আবার যে ই কে সেই! 'নারী স্বাধীনতা', কোনো মেয়ের নিজের মতো করে বাঁচতে চাইবার অধিকার, বা একা থাকার ইচ্ছে... সেসব আবার কি বস্তু, তাই না? আর, পাড়ার কেউ বিরক্ত করলেও তারা খারাপ মানুষ হবেন, যার দায় শুধুই তাদের। তেমন হলে আইন আছে... আমরাও পাশে থাকতে পারি" খুব ঠান্ডা গলায় বললেন মা।
একটু চুপ করে রইলেন বাবা। তারপর বললেন "আই অ্যাম স্যরি রুমা। আমি এক্ষুণি ওঁকে ফোন করে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি... উনি শিফট করতে চাইলে আমি সাহায্য ও করব..."।
মুখে হাসি ফুটে উঠল পিকুর ও। তারপরই ওর মাথায় আইডিয়া এলো।
'বর্তমান সময়ে তোমার প্রেরণা' এই বিষয়ে কি লিখবে বুঝে গেছে পিকু।
মোড়ের মাথার বাড়ির দিদা, যিনি ওদের করোনা যখন হয়েছিল, তখন ওদের দুবেলা খাবার পাঠিয়েছিলেন। খোঁজ নিয়েছিলেন। ওনাকে দেখেই তো পিকু ভেবেছে ও বড় হয়ে লেখক হবে আর সমাজসেবা করবে!
নিজের মনের কথা লিখতে শুরু করে দিয়েছিল পিকু। নইলে, খেয়াল করলে দেখতে পেত ওর খাতার প্রথম পাতায় আঁকা আমাদের জাতীয় পতাকার রং যেন তখন উজ্জ্বলতর হয়ে গেছে...
অসাধারণ ❤ এইটুকুর মধ্যেই কতকি বলে ফেলা সম্ভব তাইনা?
অবিশ্বাস ও ষড়যন্ত্রে ঘেরা সমাজের মধ্যেও অনেক ভালো মানুষের খোঁজ মেলে যারা সত্যিই মানুষ কারণ তাদের মান ও হুশ দুই আছে. আর আছে বিশ্বাস, ভালোবাসা, সম্মান শ্রদ্ধা, ভক্তি ও মানবিকতা ❤
Posts: 3,682
Threads: 14
Likes Received: 2,558 in 1,403 posts
Likes Given: 2,044
Joined: Apr 2021
Reputation:
530
(19-08-2021, 10:53 AM)ddey333 Wrote: #অণুগল্প
আজ সক্কাল সক্কাল ঘুম থেকে উঠে পড়েছে পিকু। ঝটপট ওকে একটা হোম ওয়ার্ক করে ফেলতে হবে, নইলে বাবা মায়ের কাছে মেইল করে বলে দেবেন কলেজের ম্যাম যে ও 'ক্রিয়েটিভ রাইটিং' করে নি। মা আবার "পিকু, আমি তো ভেবেছিলাম তুমি রাইটার হতে চাও? আর তুমিই লিখলে না?" বলে খুব দুঃখ দুঃখ করে তাকাবেন ওর দিকে... ওর কান্না পাবে তখন!
তাড়াতাড়ি উঠে, ব্রাশ করতে করতে নিজেকেই দোষ দিচ্ছিল পিকু। ইস! মাঝে শনিবার, রবিবার - দু দু'টো দিন গেল, তবুও কেন কাজ টা করল না ও? তাহলে তো এই সমস্যা হতো না! কিন্তু কি আর করা যাবে! লিখতে তো হবেই! তাই, মুখটা ধুয়ে ঘরে এসে বসল পিকু। আর, খাতাটা টেনে নিল।
নিজের মনে পেনটা মুখে দিয়ে কি লেখা যায় ভাবছিল পিকু। হঠাৎ কানে এলো কয়েকটি কথা। মায়ের গলা "হ্যাঁ গো, আমাদের একতলার নতুন ভাড়াটে মেয়েটি কবে আসবে? পরের সপ্তাহে?"
ওদের একতলার আঙ্কেল আন্টিরা মাসখানেক আগেই চলে গেছেন। এবার তাহলে নতুন কেউ আসবেন! ইয়েএএ! কী মজা! নইলে বাড়িটা ফাঁকা লাগে খুব! যদি ওর একটা ফ্রেন্ড পাওয়া যায়, আরও ভাল হবে...
ভাবার মাঝেই বাবার গলা কানে এলো পিকুর "না, উনি আসবেন না। অন্য ভাড়াটে দেখতে হবে.."
"সেকি! কেন? সেদিন তো ভদ্রমহিলা বললেন ওনার খুব পছন্দ হয়েছে... এরমধ্যেই শিফট করতে চান?" বেশ অবাক হয়ে বললেন মা।
"হ্যাঁ, ওনার কোনো সমস্যা নেই। আমি এই পরশুই জানতে পারলাম যে উনি একা থাকেন! ডিভোর্সি। সাথে বাবা - মা কেউ থাকবেন না। তাই ওনাকে ভাড়া দেব না।... দেখি, অন্য কাউকে খুঁজতে হবে।"
বড়দের কথায় আর মন দেবে না ভেবে খাতা খুলল পিকু। এমন একটা টপিক নিয়ে লেখা...মাথায় কিছু আসছেও না যে... ইস! ম্যাম কি তাহলে মায়ের কাছে নালিশ করে দেবেন?
"ডিভোর্সি বলে ভাড়া দেবে না? কেন?"
"কী যে বলো না রুমা! একা মেয়ে... কবে কী হয়ে যায়! হয়ত পাড়ার কেউ ডিস্টার্ব করা শুরু করল! না না, দরকার নেই বাবা!"
"সেই! ডিভোর্সি বলে কথা... বাড়ি ভাড়া দেবার দরকার নেই। স্বাধীনতা দিবস তো চলে গেছে... আজ থেকে আবার যে ই কে সেই! 'নারী স্বাধীনতা', কোনো মেয়ের নিজের মতো করে বাঁচতে চাইবার অধিকার, বা একা থাকার ইচ্ছে... সেসব আবার কি বস্তু, তাই না? আর, পাড়ার কেউ বিরক্ত করলেও তারা খারাপ মানুষ হবেন, যার দায় শুধুই তাদের। তেমন হলে আইন আছে... আমরাও পাশে থাকতে পারি" খুব ঠান্ডা গলায় বললেন মা।
একটু চুপ করে রইলেন বাবা। তারপর বললেন "আই অ্যাম স্যরি রুমা। আমি এক্ষুণি ওঁকে ফোন করে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি... উনি শিফট করতে চাইলে আমি সাহায্য ও করব..."।
মুখে হাসি ফুটে উঠল পিকুর ও। তারপরই ওর মাথায় আইডিয়া এলো।
'বর্তমান সময়ে তোমার প্রেরণা' এই বিষয়ে কি লিখবে বুঝে গেছে পিকু।
মোড়ের মাথার বাড়ির দিদা, যিনি ওদের করোনা যখন হয়েছিল, তখন ওদের দুবেলা খাবার পাঠিয়েছিলেন। খোঁজ নিয়েছিলেন। ওনাকে দেখেই তো পিকু ভেবেছে ও বড় হয়ে লেখক হবে আর সমাজসেবা করবে!
নিজের মনের কথা লিখতে শুরু করে দিয়েছিল পিকু। নইলে, খেয়াল করলে দেখতে পেত ওর খাতার প্রথম পাতায় আঁকা আমাদের জাতীয় পতাকার রং যেন তখন উজ্জ্বলতর হয়ে গেছে...
এটা পড়ে বাবান দা যেটা বললো না সেটা আমি বলছি।
বাবা মায়ের স্বভাব আচরণ তাদের সন্তানকে অনেক কিছুই শেখায়। বা বলা যায় সবকিছুই শেখায়। আল্টিমেটলি প্রথম শিক্ষক তো বাবা মা-ই হয়
❤❤❤
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
#অণুগল্প
সারাদিনের কাজ সেরে একটু ফেসবুকটা খোলে এইসময় রনিতা। নইলে সারাদিন আর সময় কই! ঊনকোটি, চোষট্টি কাজ সেরে এই রাত্তিরেই তো একটু নিজের জন্য সময় পায় ও।
তা, আজও অভ্যেস মতো খুলল ফেসবুক। আর খুলেই দেখে অনেক বন্ধুরা তাদের তোলা সুন্দর সুন্দর ছবি দিয়েছে ফেসবুকে । কেউ প্রকৃতির, কেউ ঈশ্বরের, তো কেউ মানুষের। সবাই এতরকমের ছবি দিয়েছে কেন? দেখে, আজ ওয়ার্ল্ড ফটোগ্রাফি ডে! তাই সবাই এত সুন্দর ছবি দিয়েছে! আচ্ছা!
একটু পরে রুটি বানাতে হবে, ওবেলায় কিমার তরকারি বানানো আছে। হাতে একটু বেশিই সময় আছে ওর। সবার ছবি দেখে ওর ও ইচ্ছে করছে কোনো একটা ছবি পোস্ট করতে। কোনটা দেওয়া যায়? ইস, বিকেল বিকেল যদি ফেসবুকটা খুলত, অস্তগামী সূর্য, পাখি, গাছ... কিছু না কিছু তো তুলতে পারত ও! এখন এই অন্ধকারে আর কি ছবি উঠবে!
ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ল, তাই তো! বাড়িতে জাবদা অ্যালবাম গুলো আছে তো! সেখান থেকেই একটা ছবি বেছে, তার ছবি তুলে পোস্ট করলে কেমন হয়?
যেই না ভাবা, তাড়াতাড়ি একটা অ্যালবাম বের করল শোকেস থেকে।
আর তারপরেই, চোখ আটকে গেল!
মায়ের ছবি। ওর আইবুড়ো ভাতের দিন তোলা। বিভিন্নরকম ব্যঞ্জন সাজানো বাটিতে বাটিতে, মাঝে কাঁসার থালায় ভাত, ও একটা আসনের ওপর বসে আছে। সামনে মা... ধান দূর্বা দিচ্ছেন মাথায়।
ছবিটা দেখতে দেখতে সেইদিনটাতে পিছিয়ে যাচ্ছিল রনিতা।
ও একটা হলুদ শাড়ি পরে... মা একটা ঘিয়ে রং এর শাড়ি পরে আছেন। মায়ের খুব প্রিয় শাড়ি ছিল ওটা। ও টিউশানির টাকায় কিনে দিয়েছিল।
মা আজ কোথায়! মায়ের কিছু শাড়ি এনে রেখেছে ও আলমারিতে সযত্নে। এটাও আছে।পরে ও মাঝে মাঝে... মায়ের গন্ধ আর স্পর্শ পায় যেন ।
এতগুলো বছর হয়ে গেল, তবু, মায়ের কথা মনে পড়লেই জল আসে চোখে...
মা... মা... মা...
"কি গো খেতে দেবে না?" সঞ্জয়ের গলার আওয়াজ শুনে চমকে উঠল রনিতা।
ওই! কর্তব্য! এখন রুটি বানাতে যেতে হবে! এর নাম সংসার!
"কি হলো? কাঁদছ কেন?" অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল সঞ্জয়।
"না... কিছু না। যাচ্ছি। রুটি করতে হবে।"
"ও। আচ্ছা তাহলে একটু পরে দিও। আমার একটা কল আছে, সেরে নিই।" বলে ঘরে চলে গেল সঞ্জয়।
এই রাত নটায় কল! বাড়ি থেকে কাজ বলে সময়ের কোনো মাপকাঠি থাকবে না?
আর, কতক্ষণ চলবে কে জানে? গরম গরম রুটি না হলে ভাল লাগে নাকি?
মনটাও খারাপ। একটু কথা বললে ভাল লাগত।
"নাঃ, যাই রান্নাঘরে" ভাবতে ভাবতে উঠতে যাবে, হঠাৎ দরজা খুলে বেরিয়ে এলো সঞ্জয়।
যাক বাবা! ফোন তাড়াতাড়িই শেষ হয়েছে!
"ট্যান ট্যানান! রনি! দেখো!" মজারু গলার আওয়াজ শুনে অবাক হয়ে তাকাল রনিতা।
আর, চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেল!
মায়ের সেই ঘিয়ে শাড়ি! সঞ্জয় পরেছে!
"এই পিউ! দেখ আমাকে কেমন লাগছে!" মায়ের দেওয়া ডাকনাম, 'পিউ' বলে ডাকে সঞ্জয়, গলাটা সরু করে, মেয়েলি ঢং এ!
"এটা আবার কি হয়েছে? তুমি শাড়ি পরেছ কেন?"
"সিম্পল! তোমাকে হাসাতে! এসে দেখলাম চোখ জল, হাতে অ্যালবাম... মায়ের ছবি খোলা। তাই বুঝে গেলাম... আর আলমারি খুলে এই শাড়িটা পেয়েও গেলাম। বারমুডার ওপরেই গিঁট দিয়ে পরেছি। আর এই দেখো, আমার স্টাইলিশ স্লিভলেস ব্লাউজ! " সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি পরা লোমশ হাত বার করে দেখায় সঞ্জয়।
দেখেই, প্রচন্ড হাসি পেয়ে যায় রনিতার।
পাগল ওর বরটা একদম!
"যাক বাবা, শান্তি! মেঘের কোলে রোদ হেসেছে! আচ্ছা শোনো, এটা কবেকার ফটো? এত খাবার? আমি নেই কেন?" হিংসুটে গলায় জিজ্ঞেস করে সঞ্জয়।
"কিভাবে থাকবে? এটা আমার আইবুড়ো ভাত। তোমার জীবন আলো করতে আসিনি তখনও আমি!" বলে রনিতা। একটু আগের কান্না বদলে গেছে হাসিতে
"ঘাড়ে চাপতে বলো! হা হা! আচ্ছা, এত জম্পেশ খাবারের ছবি যখন, আজ আর রুটি করো না, আমি কিছু অর্ডার করে দিচ্ছি। যে তরকারিটা আছে, ওটা কাল আমাকে টিফিনে দিয়ে দিও" বলে সঞ্জয়।
"আচ্ছা" বলে ফিক করে হাসে রনিতা। সঞ্জয়ের একটা ছবি তুলে নিয়েছে ও। ওটা দেখিয়ে, "ফেসবুকে পোস্ট করে দেব" বলে ভালোই ব্ল্যাকমেল করতে পারবে!
একটু আগের মনখারাপ তখন ছুমন্তর!
ছবি - যেমন ফেলে আসা দিনের কথা ভেবে মাঝেমাঝে দুঃখ দেয়... তেমনি স্মৃতিতে রাখা ছবি আনন্দ দেয় বড্ড...
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
#কথোপকথন
-" কি রে, চোখে জল কেন?"
-"আমি...আমি খুব খারাপ, তাই না?"
-"মানে?"
-"আহ্! বাংলা বুঝিস না নাকি? আমি খুব খারাপ, তাই না? "
-"কেন, শুনি?"
-"আমি মোটা, কালো..."
-"বেঁটে, নাক বোঁচা..."
-"এই... ভাল হবে না কিন্তু..."
-"আহা, না হয় এই দুটো নয়। তুই নাক চোখা, লম্বা, কিন্তু মোটা আর কালো... তাতে কি হলো?"
-"তো, আমাকে বাজে লাগে তো দেখতে? সবাই বলে?"
-"অ্যাঁ! সবাই বলে! কে বলে? এই একবিংশ শতাব্দীতে যারা এসব বলে, তাদের স্রেফ 'ওম ইগনোরায় নমঃ' করে সরিয়ে দে।"
-"আমি খুব বাজে রে। সবদিক দিয়ে"
-" এটা কে বলেছে? কুচুটে বন্ধু? হিংসুটি কলিগ? না ছিদ্রান্বেষী আত্মীয়? "
-"অনেকেই বলে..."
-"কৌন হ্যায় ইয়ে 'অনেকে'ই, কাঁহা সে আতেঁ হ্যায় ইয়ে 'অনেকেই'!"
-"উফ, তুই না..."
-"সিরিয়াসলি, যারা তোর ভাল না দেখে খালি খারাপটাই দেখে, তারা কি আদৌ তোর কেউ ছিল কোনোদিন? হ্যাঁ, ভুল করলে বলতেই পারে... তুই ভুল করলে ইগনোর করতে পারে...তবেই না..."
-"মনটা ঠিক হচ্ছে না কিছুতেই।"
-"কেন? তোর নিজের জন্য কি তুই যথেষ্ট না?"
-"ওরম মনে হয়।"
-"না। এরকমটাই হয়।"
-"কি যে বলিস!"
-"ভাব তো, ছোটবেলা থেকে এই এখন পর্যন্ত, কতবার, কত তুচ্ছ কারণে চোখে জল এসেছে তোর? কত তুচ্ছ মানুষের জন্য? তখন কষ্ট পেয়েছিস, তারপরেই ভুলে গেছিস, তাই না? নিজেকে বাজে ভাবলে কি এতদূর এগোতে পারতিস? আর এতদূরে, এই আজকের দিনটা অব্দি এসেছিস যখন, বাকিটাও পারবি।"
-"থ্যাংকইউ! অনেক বেটার লাগছে এবার।"
-"ইউ আর ওয়েলকাম! আচ্ছা শোন, একটা কথা বলার আছে..."
-"বল, বল..."
-"তুই বেঁটে না ঠিক ই... কিন্তু নাকটা কিন্তু বোঁচাই..."
-"কিইইইই? আমার নাক বোঁচা? আয়, ঘুঁষি মারি তোর নাকে.."
-"একটুউউউ টেকনিক্যাল সমস্যা আছে ডার্লিং... আমাকে মারতে গেলে সেটা তোর নিজের নাকেই পড়বে... আর আয়নায় মারলে, হাত কাটবে... "
-"ধ্যাত!"
-"চল, আজ ঘুমিয়ে পড়...কাল আবার নতুন সকাল...হাসি হাসি দিন..."
-" "
Posts: 207
Threads: 3
Likes Received: 366 in 97 posts
Likes Given: 12
Joined: Jun 2021
Reputation:
89
এই থ্রেড আমি রেগুলার পড়ি। হয়ত কমেন্ট করি না সব সময় কিন্তু ভালো লাগে তাই পড়ি। শুধু একটা প্রশ্ন সব গল্পেই প্রোটাগোনিস্ত নারী হতেই হবে?
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
(24-08-2021, 05:44 PM)dimpuch Wrote: এই থ্রেড আমি রেগুলার পড়ি। হয়ত কমেন্ট করি না সব সময় কিন্তু ভালো লাগে তাই পড়ি। শুধু একটা প্রশ্ন সব গল্পেই প্রোটাগোনিস্ত নারী হতেই হবে?
ক্ষতি কি !!
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
#কথোপকথন
-"কি রে, ভালো আছিস?"
-"ওমা! তুই? এখানে?"
-"কেন থাকতে পারি না?"
-"না, না, তা কেন? কি কিনতে এসেছিস?"
-"কিচ্ছু না! আমি এখানে চাকরি করি। ব্যাক অফিসে। তুই..?"
-"আমি চাকরি করি না! একটা ফ্রিজ দেখতে এসেছি। ফাইভ স্টার! পুরোনোটায় কারেন্ট উঠছে বড্ড।"
-"আচ্ছা! এমনি ভাল আছিস তো?"
-"ওই, আছি আর কি! খাচ্ছি দাচ্ছি মুটোচ্ছি!"
-"হা হা! না না, ঠিক ই আছিস...মানে সামান্য হয়েছিস..."
-"কী যে বলিস! 'ও' তো বলে আমি পুরো কুমড়োপটাশ হয়ে গেছি!"
-"ও! 'ও বলে!"
-"তুই কিন্তু ভালোই আছিস। চেহারাও একরকম, চাকরি করছিস, আমার মতো বাড়ি বসে অন্নধ্বংস করিস না..."
-"হ্যাঁ তা আছি। নিজের সাথে, নিজেকে নিয়ে! তা তুই ই বা বাড়িতে বসে আছিস কেন? এত সুন্দর আঁকতিস..."
-"ধুর! ওসব কবে চুকেবুকে গেছে! রং, তুলি, ক্যানভাস সব এখন হারিয়ে গেছে কোথায়..."
-"তোর মুখে এমনি কথা শুনব...ভাবিনি কখনও..."
-"আমাকে ছাড়া বাঁচবি, ভেবেছিলি?"
-"রিমি!"
-"তুই ও জানিস, আমিও জানি, আমরা দুজন দুজনের জন্য পারফেক্ট ছিলাম। তোকে আমার মতো, আমাকে তোর মতো করে কেউ বুঝত না!"
-"ছাড়! তোর হাজব্যান্ড ও এসেছেন তো?"
-"হুম! ও ই দেখছে। আমাকে তো পাত্তাই দেয় না। বলে আমি আসলে ওই ফ্রিজের মতোই...ঠান্ডা!"
-"রিমি...!"
-"কিরে, এতেই শিউরে উঠলি? এতো কিছুই নয়!"
-"এটাই যথেষ্ট..."
-"কিন্তু কি করার আছে বল? অ্যাবিউজ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এখন।"
-"বেরিয়ে আয় না! নিজে অ্যাবিউজড হচ্ছিস জানিস, তাও পড়ে আছিস কেন? তুই লেখাপড়া জানিস, গুনী মেয়ে... "
-"আসতে তো চাই রে, কিন্তু ভয় লাগে খুব। লোকে কি বলবে!"
-"এই লোকে কি বলবে করেই তো সব হল! লোকের ভয়ে শালা কখনও বলতেই পারলাম না আমাদের ব্যাপারটা কাউকে। লোক! মাই ফুট!"
-"থাকবি, আমার পাশে? যদি বেরিয়ে আসি?"
-"একথা তুই জিজ্ঞেস করছিস? তুই?"
-"সেবার পালিয়েছিলাম জীবন থেকে...দুজনেই কষ্ট পেয়েছি...এবার আর কষ্ট দেব না তোকে...সত্যি বলছি..."
-"আমি জানি। তোকে বিশ্বাস করি।"
-"আজও?"
-"আজ-কাল-পরশু-তরশু-নরশু..."
-"চন্দ্রানী?"
-"হুম?"
-"আই লাভ ইউ!"
-"আমিও...লাভ ইউ টুউউ..."
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
#সেঁজুতি
একটানা কাজ করতে করতে ঘাড়ে পিঠে ব্যথা হয়ে গেছে শিবানীর। তাও আদ্ধেক কাজ ও হয়নি এখনও! এমনিতেই এই ব্লাউজের হেম করার কাজ খুব ভজঘট একটা কাজ। চোখের দৃষ্টি ভাল না হলে মুশকিল। যে কারখানা থেকে মাল নিয়ে আসে, তার কাছে গালমন্দ শুনতে হয়। পয়সা কেটে নেয়... সে অনেক হ্যাপা। আর পয়সা কেটে নেবার মতো আতান্তর, ওদের মতো পরিবারে, আর কিই বা হতে পারে! এক টাকারও অনেক দাম ওদের মা মেয়ের কাছে।
ভাবতে ভাবতেই মেঝেতে বসে বসে ঠোঙা বানানো মেয়ের দিকে নজর গেল শিবানীর। আঠা আর কাগজের বান্ডিল নিয়ে বসেছে মেয়েও। আহা, সেই সকাল থেকেই বসেছে, ওর ও নিশ্চয়ই ঘাড় আর হাত টনটন করছে, ওর মতোই।
"কি রে মাতু, একটু চা খাবি? করব?" বলেন শিবানী। মেয়ে খেলে নিজেরও খাওয়া হয় একটু। একটানা কাজের ফাঁকে একটু চা.. এই একটাই বিলাসিতা ওঁদের। পয়সা কই বিলাসিতার! সকালে চা মুড়ি, দুপুরে সেদ্ধ ভাত, রাতেও তাই। মাঝে মাঝে এই চা! ব্যস। মাছ, ডিম খুব কম হয় ওদের। আগে তবু হতো। তারপর গেলবছর আর এবছর দু'দুবার যা লকডাউন না কি, হয়ে গেল, তাতে হাতে জমা সামান্য ক'টা টাকাও শেষ। এখন তাই আরও হিসেবী হয়েছে ওরা মা মেয়ে। বলা যায় না, কখন কি হয়। এই বুধবার কারখানায় মাল দিতে গিয়ে শুনল আবার নাকি রোগটা বাড়ছে, মাসখানেকের মধ্যে নাকি আবার ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়বে।
শুনে ভয় আরো বেড়েছে।
এর আগের দুবার তবু বেঁচে গেছে, এবার কি আর পারবে? কুড়িটা ব্লাউজের হেম করলে একশো টাকা পাওয়া যায়! কিন্তু কুড়িটা করতে গেলেই প্রান বেরিয়ে যায়! ঠোঙা বানাতেও মেলা কষ্ট! হাল্কা জিনিস, এক কেজি মাল হতে না হতেই, দিন কাবার হয়ে যায়। রাতে মা মেয়ে যখন ঘুমোতে যায়, দুজনেই ব্যথায় এবং বেদনাতেও, কাতর থাকে।
শুধু যদি সেই লোকটা এরকম না হতো! সোয়ামীর মতো হতো... বাপের মতো হতো!
অ্যাই যা! আঁধার করে এলো। "বিষ্টি আসবে এক্ষুণি, সব জামা ভিজিয়ে দেবে.." বলতে বলতে বেরিয়ে এলেন শিবানী। ভাগ্যিস ঠিক সময়ে নজরে পড়ল, নইলে শুকনো জামা ভিজে একশা হয়ে যেত!
"অ বৌমা, বলি বাড়িতে আছো নাকি?" ডাক শুনে তাকিয়ে দেখেন বাঁড়ুজ্জে বাবু। এই পাড়ার শেষের দিকে থাকেন। ঘটকবৃত্তি করে পেট চালান। তা, উনি হঠাৎ, এখেনে?
"এই তো কাকাবাবু, ভাল আছেন?"
"হ্যাঁ, তা আছি। একটু কথা ছিল গো বৌমা।"
"আসুন না কাকাবাবু। চা খাবেন?"
"চা? তা হলে মন্দ হয় না, তবে যে খবর দেব, সেটা শুধু চায়ের না, এক্কেবারে মিষ্টি খাওয়াতে হবে! হা হা হা!"
"কি খবর কাকাবাবু?" কথার থই খুঁজে পাচ্ছিলেন না শিবানী।
"বলচি বলচি... সবুর করো। বলি, মেয়ের তোমার বয়স যেন কত হল?"
"আজ্ঞে, এই কুড়িতে পড়বে আশ্বিন মাসে।" কেমন বুক ধুকপুক করছে শিবানীর!
"বেশ, বেশ! মেয়ের গড়ন পিটন ভাল। সেদিন কার্তিকের বাড়ি ঠোঙা দিতে গেছিল, দেকলাম। তা দেকে একটু বড় বলেই মনে হয় কিন্তু!"
"না, কাকাবাবু, আমার কাছে ওর জন্মের সাট্টিফিকেট আছে তো... হাসপাতালের।"
"অ! তা মেয়ের এবার কপাল খুলে গেছে গো মা। মেয়ে এবার রাজরানি হবে!" দেঁতো হেসে বলেন বাঁড়ুজ্জে কাকাবাবু।
রাজরানি! মেয়ে... মানে মাতু? কিভাবে?
ওর হতভম্ব ভাব দেখে একটু হাসেন ঘটক মশাই। মেয়েদের বাড়ি সম্বন্ধ নিয়ে গেলে এমনি ভাব হয় বাবা মা দের। উনি জানেন।
"শোনো বৌমা, বড় ঘরের সম্বন্ধ এসেছে। যেচে স্বয়ং লক্ষ্মী এসেছেন তোমাদের কাছে।"
"আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না কাকাবাবু.."
"বলি, আমাদের দক্ষিণপাড়ায় বাবার মন্দিরটা আছে জানো তো? বিরাট অবস্থা ওদের! ফি বচর বড় করে বচরের উৎসব হয়। তাচাড়া পুজো আচ্চা তো লেগেই আচে! চাল-কলা-ফল-দক্ষিণা, মায় শাড়ি কাপড় অব্দি দেদার পায়। সেই বাড়ির গিন্নিমার তোমার মেয়েকে মনে ধরেচে গো! আমাকে ডেকে বলে 'ঠাকুরপো, ওরা গরীব, কিন্তু লোকের বাড়ি তো কাজ করে না! পালটি ঘর! আপনি বলে আসুন গিয়ে, শাঁখা সিঁদুরেই মেয়েকে নেব খন। বাপ থেকেও নেই, মেয়েটার ও তো গতি করতে হবে!' তা আমিও বললাম এ খুব ভাল কতা গিন্নিমা, আমি আজ ই যাব!" বলতে বলতে একগাল হাসলেন উনি। বাজিমাতের হাসি।
"মন্দিরবাড়ির ছেলে? কিন্তু সে তো... মানে অনেক কথাই তো কানে আসে কাকাবাবু.." শঙ্কিত গলায় বলেন শিবানী। হতভম্ব ভাবটা এখনও কাটছে না।
"ও কোনো ব্যাপার না। ওসব বিয়ে দিলেই ঠিক হয়ে যায় বৌমা। নেশাভাং তো করেনা! ওসব রটনা সব! ছেলে খুব ই ভাল। ওসব খচরামি করে বদলোকের রটানো.." জোর দিয়ে বলেন বাঁড়ুজ্জে বাবু।
শিবানী চুপ করে আছেন দেখে বলে চলেন "মেয়েকে একবস্তর পরিয়ে বিদেয় করার এমন সুযোগ আর পাবে না বৌমা। মেয়ের বাপ তো কবেই তোমাকে ছেড়ে পালিয়েছে, তার দুটো বিয়ে! এইরকম একটা বাড়ি থেকে ডাক এসেচে এ কি কম ভাগ্য নাকি! বাকি, মেয়েকে একটু সোয়ামীকে আঁচলে বাঁধা শিখিয়ে দিও, মেয়ের গড়ন ভাল...সব ঠিক হয়ে যাবে..." বাঁড়ুজ্জে কাকাবাবুর কথাগুলো বড় অশ্লীল লাগল শিবানীর।
তারপর নিজের অজান্তেই চেঁচিয়ে উঠল "ও, মেয়ের বাবার দুটো বিয়ে, তাই মেয়েকে কেউ বিয়ে করবে না তাই না? তাই একজন... এমন একজন যে শুধু ছেলেদের পছন্দ করে, গোটা পাড়া জানে, তার গলায় ঝুলিয়ে দিতে হবে? দুজনের জীবন ই নষ্ট করতে হবে?"
" এ কি বলছ বৌমা, ওটা একটা রোগ। বিয়ে হলেই সেরে যাবে। আর, অন্তত, মেয়ে তোমার খেয়ে পড়ে তো বাঁচবে? মাথার ওপর ছাদ থাকবে। মেয়েমানুষের আর কি চাই? সব কি পাওয়া যায়?" হিসহিসে গলায় বলেন উনি।
মাথায় আগুন জ্বলে যায় শিবানীর। সেই অমানুষটা যখন আটমাসের মেয়েকে ছেড়ে, ওকে ছেড়ে, চলে গেছিল, পাড়ায় কানাকানি হয়েছিল অনেক। প্রথমে সহানুভূতি, আর তারপরে মস্করা। পাড়ার বৌ ঝিয়েরা "সোয়ামীকে বেঁধে না রাখতে পারলে আর কি হবে!" বলে কম কুমীরের কান্না করে নি! আর, এক ই কারণে কোনো মেয়ে যদি কাউকে ছেড়ে যায়? এই ভদ্দরলোকেদের সমাজ সেটা মেনে নেবে? ছিছিক্কার ফেলে দেবে না?
"বাঁড়ুজ্জে কাকা আপনি আসুন। আপনার গিন্নিমাকে বলে দেবেন, মেয়ের বাবার দুই বিয়ে হলে মেয়ের দোষ হয় না। আর ওনার ছেলের এটা কোনো রোগ না। এরকম হয়। আমি যে কারখানায় মাল দিই, সেখানে শুনেছি। ছেলে যখন ভাল, অবস্থাও যখন ভাল, তখন বাবা মায়ের চিন্তা কি! তবে কোনো মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দুজনের জীবন নষ্ট করবেন না। "
একসাথে এতগুলো কথা বলে জোরে শ্বাস নেন শিবানী। আহ, বুকের ভেতর এতগুলো বছর ধরে ধিকিধিকি জ্বলা কথাগুলো বলতে পেরেছেন। মেয়েদের ও ইচ্ছে আর অনিচ্ছে থাকে, চাহিদা থাকে, কেউ সেটা মানতেই চায় না! যুগে যুগে এইভাবেই তো মেয়েদের বলি দেওয়া হয়েছে!
চোখ দিয়ে অঝোরে জল পড়ছিল শিবানীর। হঠাৎ টের পান মেয়ে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে... "ভাগ্যিস তুমি 'না' করলে মা! আমরা দুজনে একটু কষ্ট করে চলি ঠিক ই, কিন্তু আমরা ভাল আছি মা..." বলে মেয়ে...
চোখ বন্ধ করেন মা।
কষ্টের মধ্যেও ভাল থাকার, লোভ জয় করার, ওই সেদ্ধভাত টুকু খাবার যে আনন্দ ই আলাদা...
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
(25-08-2021, 11:48 AM)ddey333 Wrote: #কথোপকথন
-"কি রে, ভালো আছিস?"
-"ওমা! তুই? এখানে?"
-"কেন থাকতে পারি না?"
-"না, না, তা কেন? কি কিনতে এসেছিস?"
-" বেশ ভাল গল্প... কিন্তু এই গল্পটি এতো ছোট হওয়া ডিজার্ভ করেনা.. তাই ব্যাপারগুলো এতো তাড়াহুড়ো লাগছে.... মানে শেষের অংশটা... এই গল্পটার মধ্যে একটা আলাদা গুন আছে... এটা একটা বড়ো গল্প আকারে লিখলে এটি সঠিক মর্যাদা পেতো কারণ মূল বিষয়টা খুব সুন্দর ❤ Ddey দাদা এটাকে আপনি বড়ো করে নিজের মতো করে লিখুন না.... ❤
(26-08-2021, 10:22 AM)ddey333 Wrote: #সেঁজুতি
বাহ্ অপূর্ব এই কাহিনী.... না বাস্তব...
•
|