Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
শুভেন্দু বলল, কোন সুন্দরী মেয়েকে দেখলে পুরুষরা যেমন তার প্রেমে পড়তে চায়আমার মনে হল, আমিও তো ওর প্রেমে পড়তেই পারিওকে মন প্রাণ দিয়ে ভালবাসতে পারিকিন্তু এও তো আমার কাছে এক অদ্ভূত ব্যাপারজীবনে প্রেমকে কোনদিন সেভাবে মানিনিপ্রেমের আমার কাছে কোন মূল্যই নেইঅথচ একে কি করে আমি ভালবাসতে পারব? কোন পুরুষ কোন সুন্দরী মেয়েকে কামনা করলেই ভাবে, তাকে আর বাকী জীবনে কখনও বিরক্তিকর লাগবে না কোন বাঁধা প্রতিবন্ধকতা আসবে না কিন্তু পরে দেখা যায় সবই ভুল একটার পর একটা বাঁধা অতিক্রম করতে হচ্ছে তাকে তাছাড়া কোন সুন্দরী মেয়ের সাথে জীবন কাটানোর মানে তো শুধুই জৈবিক ক্ষুধার নিবৃত্তি নয় তাকে জানতে হবে, বুঝতে হবে মন, রুচি আর প্রবনতার মিলটাকে খুঁজে বার করতে হবে
আমি বললাম, সবই তো বুঝলাম তারপর কি হল?
শুভেন্দু বলল, ভাবছি যেচে আলাপ জমাবো কিনা? কিন্তু সে সুযোগটা করে দিল শিখাই পুরীর সি বীচ দিয়ে হাঁটছি হঠাৎ সামনে দেখি শিখা একা একাই হোটেল ছেড়ে বেরিয়েছে আমি সামনে পড়তেই বলল, আপনি ওই একই হোটেলে উঠেছেন না? আপনাকে বারান্দাতে আমি দেখেছি
আমি শুভেন্দুর কথা শুনে চেঁচিয়ে উঠলামউত্তেজিত হয়ে বললাম, জিওকি শোনালি গুরুউফ কবে যে আমিও যাব পুরীতে বিদিশাকে নিয়ে
বিদিশা দেখি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে
শুভেন্দু বলতে লাগল।  মনে কর, সমুদ্রের জলে পড়েছে চাঁদের আলোপ্রেয়সীর হাত ধরে সমুদ্রের পাড় দিয়ে হাঁটছে তার প্রেমে পাগল ভালোবাসার মানুষটিরোমান্টিক রাতের আনন্দে আমি যেন তখন ভীষন ভাবে আপ্লুতআমার মনে তখন অচেনা আনন্দ বাসনা আর আকুলতার আলোড়নসেই সুন্দরী রাতে স্নিগ্ধ, প্রাণবন্ত আলোয় আমরা নীরবে হাতে হাত ধরে হেঁটে চলেছিচাঁদের স্নিগ্ধ সৌন্দর্য তখন দেহ পূর্ণ করে হৃদয় প্লাবিত করে সৌরভে আচ্ছন্ন করে ঝরে পড়ছেকেমন লাগবে তোদের এটা শুনে?
আমি বললাম, তুই কি সত্যি সত্যি শিখার হাত ধরে হেঁটেছিস?
শুভেন্দু বলল, তাহলে আর বলছি কি?
আমি বললাম, দারুন শুভেন্দুদারুনতুই করেছিস টা কি-
এতটা নস্টালজিক হয়ে আর রোমান্টিকতার সুন্দর বর্ণনা শুভেন্দুর মুখ দিয়ে এই প্রথম শুনছিতাও আবার শুদ্ধ বাংলাতে
এতক্ষণ পরে রাগটাকে ঠান্ডা করে শুক্লাও বলে উঠল, ঠিক এই মূহুর্তে শিখাকে দেখতে আমারও খুব ইচ্ছে করছে কবে রে? কবে দেখাবি ওকে? বল না? এই শুভেন্দু বল নামাঝখান থেকে রনি এবার ফোড়ণ কেটে উঠল শুক্লাকে বলল, ‘দে এবার টাকাটা দে শিখাকে দেখতে গেলে পয়সা লাগবে ওটা আমার পাওনা।’
শুক্লা এক ধ্যাতানি দিয়ে উঠলরনিকে বলল, হ্যাঁদাঁড়া তোর মজা দেখাচ্ছিতোর কি পয়সার অভাব?

রনি মুখটাকে করুন মত করে বলে উঠল, ‘আমার সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছেএই মূহূর্তে হাজার পাঁচেক টাকা পেলে তো ভালই হবেদে না দেশিগগীর ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে বের করতারপর শিখাকে আমি এখানে আনার ব্যবস্থা করছি।’

আমি একটা ধমক লাগিয়ে বললাম, ‘বেশ পুরীর গল্পটা শুনছিলামদিলি সব চোপাট করেএই শুভেন্দু তারপরে কি হল? বল না?’

বিদিশাও বলল, ‘হ্যাঁ, সী বীচ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তারপর তোরা কোথায় চলে গেলি? ঝাউবনের আড়ালে?’

শুভেন্দু বেশ বিজ্ঞের মতন বলে উঠল, দূর বোকা পুরীতে আবার ঝাউবন আছে নাকি? ওটা তো দীঘাতে

বিদিশা বলল, ‘হ্যাঁ হ্যাঁতাইআমারই ভুল হলতারপর কি হল?’

রনি এবার শুভেন্দুকে বাঁধা দিয়ে বলল, ‘আচ্ছা তুই আমাকে তখন বারণ করলিএদের সামনে শাসালিআর এখন ফ্রী তে এদের এত কিছু বলছিস কেন? কেউ কোন খরচা করবে নাসব কিপটের দলশিখা আর শুভেন্দুর প্রেম কাহিনী শুনবেঅতই সস্তা নাকি?’

বেশ রেগে গেছি আমিওশুক্লাও রেগেমেগে বলল, ‘এই দেবএই বেরসিকটাকে এখান থেকে ভাগা তোতখন থেকে ব্যাগড়া দিচ্ছেশুভেন্দুকে বলতে দিচ্ছে না।’

আমি বললাম, ‘হ্যাঁ রে রনিতুই তো এরকম ছিলিস নাএত আনরোমান্টিকইচ্ছে করে করছিস না ফাজলামো মারছিস?’

শুভেন্দুও রনিকে ধমক লাগাতে যাচ্ছিলমাধুরীও চটে গেছেতার আগেই রনি দাঁত কেলিয়ে বলল, একটু পরে শিখা তো এখানেই এসে পড়বেতখন কি আর পয়সা চাওয়া যাবে? তাই না একটু সুযোগ খুঁজছিলাম।’ বলে ও মাথা চুলকোতে লাগল

আমরা রনির কথা শুনে একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছিবিদিশা আমার দিকে তাকিয়েছেআমিও বিদিশার দিকেওদিকে শুক্লা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে রনির দিকেরনি তখনও দাঁত বার করে হাসছেসবাই স্তম্ভিত, হতভম্বশিখা এ বাড়ীতে আসবে? কেউ ভাবতে পারছে না

শুভেন্দুই শেষকালে সবাইকে স্বস্তি দিয়ে বলল, ‘তা নয়, তা নয়ব্যাপারটা তা নয়শিখাকে তো আমি দেবের কথা সবসময়ই বলিদেবের অসুস্থ হবার ঘটনাটাও ওকে জানিয়েছিসকালেই আমার সাথে আসতে চাইছিলবললাম, এখন নয়আমি ফোন করলে তারপর এসোবলেছে, ডাকলেই চলে আসবেনিজেই গাড়ী ড্রাইভ করতে জানেকোন অসুবিধে নেই।’

আমি সব শুনে বললাম, ‘নিয়ে এলি না কেন? এখনই তাহলে ওকে দেখতামআলাপ পরিচয় হত।’

শুভেন্দু হেসে বলল, ওতো তোকে দেখতেই এখানে আসবে বলেছেআমি আজকেই সেটা চাইছিলাম নাপরে সময় হলে শিখার কথা তোদের সবাইকে শোনাতামএই রনিটাই তো দিল সব ফাঁস করেব্যাটা পাজীকত করে মানা করেছিলামকিছুতেই আমার কথা শুনলো না।’
রনি তখনও মজা লুটে যাচ্ছেহাসতে হাসতে আমাকে বলল, ‘আমার শালাবাবু এখন লাখোপত্তিতিনি যে শিখাকে পেয়েছেনতাই না? আর তুই তো আগেই কোরোপত্তিকারন বিদিশাকে আবার ফিরে পেয়েছিসমাঝখানে আমি হলাম গিয়ে চায়ে কা পত্তিআমার কপালে এখন কিছু নেই।’
শুক্লা রেগে গিয়ে বলল, ‘দ্যাখ দ্যাখ কি বদমাইশমাধুরী বসে আছেওর সামনেই কেমন ভাবে বলছে?’
মাধুরী চুপমুখ গম্ভীরএকটু কড়া ভাবেই বলল, ‘আমি এখন আমার স্বামীকে কিছু বলবো নাকারণ ছোড়দার এই প্রেমের খবরটা আমার কাছে ভীষন আনন্দ সংবাদএতদিন বাদে একটা দারুন খবর পেলামআগে সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাকতারপর ওর সাথে আমি বোঝাপড়া করবো
বলেই ভূরু কূঁচকে রনির দিকে তাকালো
রনি তখন বউয়ের দিকে তাকিয়ে কান মুলছে, জিভ বার করছেকত কি করছেআমি আর বিদিশা হেসেই গড়াগড়িবুঝতেই পারছি, বাড়ী ফেরার পর মাধুরী ওকে দেবে আচ্ছামতনআজ রনির কপালে বেশ বড় সড় দূঃখ আছে
সবার সামনে গলা উঁচিয়ে রনি এবার বলল, ‘যে যাই বলুকআমার বউয়ের মতন কেউ নয়আমার বউ হল সবার সেরালাখে একটা।’ বলেই বউকে একটা হাম্মি দিতে গেলমাধুরী এক ধমক লাগিয়ে বলল, ‘কি হচ্ছে টা কি? অসভ্য কোথাকারএটা কি বাড়ী পেয়েছো নাকি? ইস, ন্যাকামো দেখে আর বাঁচি না।’
রনি বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘রাগ করে না মেরী জানআমি তো এমনি রসিকতা করছিতোমার সাথে কারুর তুলনা হয়?’
মাধুরী বলল, ‘থাক আর আদিখ্যেতা করতে হবে না
রনির করুন মুখটা দেখে ও এবার নিজেই হেসে ফেললোআমি বিদিশার মুখের দিকে তখন তাকালামবিদিশাও আমার দিকেপৃথিবীতে প্রেম জিনিষটা কত সুন্দরপ্রেমের কত রূপপ্রেম অবিনশ্বরএই প্রেম নিয়েই জীবনের কত চাওয়া পাওয়ার কত মূহূর্ত।  একটা আশার আলোর সন্ধান পেয়েছি আমরা দুজনেইশুভেন্দু আর শিখার নতুন প্রেম কাহিনী আমাদের ফিরে পাওয়া ভালোবাসাকে আরও মজবুত করবে।  আমরা আশাবাদীআমার মুখের দিকে তাকিয়ে বিদিশা যেন সেই জিনিষটাই খুঁজে পাবার চেষ্টা করছেআমি ওকে আরো আস্বস্ত করলামঘাড় নাড়লামহাতের ওপর হাতটা রেখে ওকে বললাম, ‘আমি আছি তোমার সাথেতুমি কিছু চিন্তা কোরো না।’
শুভেন্দু আমার আর রনির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ যা-চ্চলেএরা দেখি এখন নিজেদেরই ঘর সামলাতে  ব্যস্তএই তোদের পুরী আর ছাদের গল্পটা আর তাহলে বলছি না।’
আমি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলাম, ‘না নাগল্প তো শুনতেই হবেতবে তুই শিখাকে এখন আসতে বলছিস তো? ফোন করএখনই ফোন করসবার সামনেআমরা শুনি।’
শুভেন্দু আনন্দে বলে উঠল, ‘ফোন করবো? আসতে বলবো? তুই বলছিস?’
আমি বললাম, ‘অফ কোর্সওয়াই নটএটাই তো উপযুক্ত সময়শালা ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিলিসআমাদের আগে বলিস নিআজ কেমন সব ফাঁস হয়ে গেলদেখলি তো?’
 
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
শিখাকে দেখার জন্য সবাই ব্যস্তশুক্লাও বলে উঠল, ‘হ্যাঁহ্যাঁআজই এসেছি যখন ওকে দেখেই যাইআবার কবে আসা হবে না হবেআজই তো দারুন দিনএকসঙ্গে সবাই যখন জড়ো হয়েছিএটাই উপযুক্ত সময়ডাক শুভেন্দু ওকে ডাকতোর প্রেয়সীকে একবার চোখের দেখা দেখে যাই।’
আমি দেখলাম, শুভেন্দু মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে কি যেন চিন্তা করছেশিখাকে কি বলবে, সেটাই হয়তো ভাবছেতারপরে কি যেন আবার চিন্তা করে আমাকে বলল, ‘মাসীমা এবার ভিমরী খাবেশিখা এলে মাসীমা অবাক হয়ে যাবেআমার কি অবস্থা হবে বুঝতে পারছিস?’
শুভেন্দুকে বললাম, ‘মা কত খুশি হবে জানিস? না ডেকে ওই ভুলটা আর করিস নামা’কে এখুনি আমি ভেতর ঘর থেকে ডাকছিশিখার এখানে আসার কথা জানিয়ে দিচ্ছিতোর ভাবী বউয়ের জন্যও মা লুচি পরোটা বানিয়ে দেবে।’
শুভেন্দু বাঁধা দিয়ে বলল, না না মাসীমাকে আর কষ্ট দিস নাশিখা এমনিই আসবেআসবে তোকে দেখতেআসবে বিদিশাকেও একবার চোখের দেখা দেখতেআমি তো বিদিশার কথাও ওকে অনেক করে বলেছিতাই না?’
বিদিশা মুখটা একটু নিচু করলআমি শুভেন্দুর দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আমার এখন কি ইচ্ছে করছে জানিস? ইচ্ছে করছে হৈ হৈ করে দলবেঁধে সবাই মিলে বেড়িয়ে পড়তেএকটা দুদিন কিংবা তিনদিনের ট্রিপএই কাছে পিঠে কোথাওসবাই মিলে যাবখুব মজা হবেঅনেকটা পিকনিকের মতনতোদের ইচ্ছে করছে না?’
বিদিশা বলল, ‘আগে তো তুমি সুস্থ হওনইলে যাবে কি করে?’
জবাবটা কেড়ে নিয়ে শুভেন্দু বলল, ‘বিদিশা, দেবকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করবার দায়িত্ব কিন্তু এখন তোর কাঁধেআজকে এখানে থেকে সারারাত ধরে দেবের সেবা শুশ্রসা করবিসারারাত ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিবিআর ওর পেটের যেখানটায় ব্যাথাওখানটায় ভাল করে হাত বোলাবিসকালে ঘুম থেকে উঠে দেব তখন একেবারে চাঙ্গা।’
বিদিশা এক ধ্যাতানি দিয়ে শুভেন্দুকে বলল, যাঃঅসভ্য কোথাকার
শুক্লা যেন অধৈর্য হয়ে পড়ছেফোনটা শুভেন্দু এখনও করছে না দেখে ছটফট করে উঠে বলল, ‘তাহলে শিখা কখন আসছে? শুভেন্দু ফোনটা ওকে কর শীগগীর।’
 এমন একটা পরিবেশ, আমরা সব শুভেন্দুর ওপরই নির্ভর করে রয়েছি শিখাকে এখানে আনার দায়িত্ব শুভেন্দুর শুধু একটা ফোন করলেই কাজ হবে আমার কিন্তু রনির ওপর তখন সত্যি আর কোন রাগ নেই উল্টে ভাবছিলাম, আজ একটা উপযুক্ত কাজ করেছে রনি সবার সামনে শুভেন্দুর নতুন প্রেম কাহিনা ফাঁস করে সবাইকে ও চমকে দিয়েছে আড়ালে শুভেন্দু হয়তো আমাকে, আজ না হয় কাল ওর প্রেম কাহিনী শোনাতো কিন্তু আজকে যে সবাই মিলে এখানে জড়ো হয়েছি এবং শিখাকে দেখার জন্য সবাই এখন উদগ্রীবএই মূহুর্তটা তৈরী হত না রনি আসল কথাটা না বললে প্রেম কাহিনী সবাই এখন জেনে গেছেসবারই উচিৎ রনিকে একটা থ্যাঙ্কস জানানো কেউ কিছু না বললেও, আমি কিন্তু একটা থ্যাঙ্কস জানালাম রনিকে ওকে বললাম, রনি মেনি মেনি থ্যাঙ্কস তোর জন্য আমার কিন্তু একটা বড়সড় গিফ্ট থাকবে টাকা না হয় নাই দিলাম, কিন্তু এটা হল শুভ সংবাদটা আমাদের সবাইকে দেবার জন্যতোর মুখে ফুল চন্দন পড়ুক

রনি মাথা নিচু করে আমাকে সেলাম জানালোআমাকে বলল, “ওকে বসতুমি আমাকে চারআনা দিলেও আমি কিছু মনে করবো নাআফটার অল ইউ আর মাই বেষ্ট ফ্রেন্ড

শুক্লা রনির রকমটা দেখছিলওকে বলল, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ আমিও তোকে একটা গিফ্ট দেবোআগে শিখা এখানে আসুকতারপরই তোকে দিচ্ছি।’

রনি একটু রসিকতা করে বলল, ‘তুই কি স্বার্থপর রে? টাকার কথাটা বেমালুম ভুলে গেলিটাকা থেকে এখন গিফ্ট দিয়ে কাজ সারবিনা না শুক্লা এটা তুই ঠিক কাজ করলি না।’

শুক্লা ভালমতনই বুঝতে পারছে, রনি এখনও মজা করছে ওর সঙ্গেঅবশ্য তখন ওর ওদিকে আর ভ্রুক্ষেপ নেই দৃষ্টিটা গিয়ে পড়েছে শুভেন্দুর দিকে প্রেমিকার সাথে মোবাইলে কথা বলছে শুভেন্দু শিখাকে শুভেন্দু কি বলছে, আর জবাবে শিখাও কি বলছে, জানার জন্য শুক্লা কতটা উদগ্রীব আমরা দুজনেই একসাথে শুভেন্দুকে বলে উঠলাম, ‘কি রে শুভেন্দু? শিখা আসছে তো?’

ফোনটা তখনও কানে ধরে রয়েছে শুভেন্দুআমার দিকে হঠাৎই বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘হ্যাঁএই তো শিখা লাইনে রয়েছে, কথা বলও তো তোর কথাই জিজ্ঞাসা করছেজিজ্ঞাসা করছে দেবদার শরীর কেমন? আমি আসবো? কোন অসুবিধে হবে না তো?’

কথাটা শুনে শুক্লা বলে উঠল, ও মা কি মিষ্টি মেয়ে রে? আসবার আগে আবার জেনে নিচ্ছে, কোন অসুবিধে হবে না তো? বাহ্ খুব সুন্দর তো।’

ফোনটা আমার হাতে হঠাৎই ধরিয়ে দিয়েছে শুভেন্দুআমি একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছিদেখি বিদিশাও সেই সময় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছেআমার দিকে চোখের পাতা ফেলে ইশারা করে বলল, কথা বলো শিখার সঙ্গেঅসুবিধেটা কি?’

সন্মতি পেয়ে ফোনটা কানের কাছে ধরে বললাম, ‘হ্যালো।’

উল্টোদিকে একটা মেয়ের মিষ্টি গলাঠিক যেন কোকিল কন্ঠীর মতআমি অবাক হয়ে শুনে যাচ্ছি, শিখা একনাগাড়ে বলে যাচ্ছে, ‘ভাল আছেন দেবদা? শুনলাম খুব শরীর খারাপ হয়েছিল আপনারএখন কেমন আছেন? আমাকে ও যেতে বলছে আপনার ওখানেআমি আসব? কোন অসুবিধে হবে না তো?’

আমি যেন মোহিত হয়ে ফোনটা কানে নিয়েই কিছুক্ষণ বোবা মানুষের মতন বসে রইলাম অপর প্রান্ত থেকে শিখা আবার বলে উঠল, দেবদা? আপনি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন?’

সন্মিত ফিরে বললাম, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ আপনি আসুন কোন অসুবিধে হবে না আমি এখন ভাল আছি

শিখা বলল, ‘আচ্ছা আমি তাহলে গাড়ী নিয়ে বেরুচ্ছি আমার যেতে হয়তো এক ঘন্টা মতন লাগবে আপনি ভাল থাকবেন আর ওকে একটু ফোনটা দিন
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
আমি শুভেন্দুর দিকে আবার মোবাইল ফোনটা বাড়িয়ে দিলামশুভেন্দু ফোনে শিখার সঙ্গে কিছুক্ষণ গুজগুজ করলোতারপর ফোনটা ছেড়ে দিলআমার দিকে তাকিয়ে বিদিশা বলল, ‘কি বললো শিখা? আসছে?’
 
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ আসছেবলল গাড়ী নিয়ে এক্ষুনি বেরুচ্ছেএক ঘন্টা মতন লাগবে এখানে আসতে।’
 
শুক্লা তখন ভীষন উসখুস করছে আরো কি কথা হয়েছে জানবার জন্যআমাকে বলল, ‘আর কি বললো শিখা? এই ‘দেব,’ বল নাকি কথা হলো? বল না?’
 
আমি বললাম, ‘ওই তো, আমার শরীর এখন কেমন, তাই জিজ্ঞাসা করছিলআর বলছিল, এলে আমাদের কোন অসুবিধে হবে না তো? কনফারমেশনটা নিয়ে নিল।’ আমি তখন ওকে আস্বস্ত করলামও আসতে রাজী হয়ে গেল।’
 
চোখ দুটো গোল গোল মতন করে অত্যাশ্চর্যের মতন শুক্লা বলে উঠল, ‘ও মাকি সুন্দর মেয়ে রে? এত দায়িত্ব সচেতন আর কর্তব্যপরায়ণ? শুভেন্দু তো বাজীমাত করে দিয়েছেআমি ভাবতেই পারছি না।’
 
একটু গদগদ হয়ে শুভেন্দুও বলে উঠল, ‘ওই জন্য তো বলিকখনও কাউকে আন্ডারেস্টিমেট করবি নাআর আমাকে তো নয়ইভেবেছিলিস, শুভেন্দুর তো বিয়ে থা করার ইচ্ছা নেইচিরকাল এভাবেই কাটিয়ে দেবেতাই তোদের এই ভ্রান্ত ধারণাকে আমি নির্মূল করে দিলাম।’ বলে গলা ফাটিয়ে শুভেন্দু যাত্রার নায়কদের মতন হাসতে লাগলো, হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ
 
শুক্লা বলল, ‘বা রে? আমরা আবার কি ভাবলাম? তুই ই তো সেই কলেজের সময় থেকে বলে আসছিস, প্রেম, বিয়ে থা তোর পোষায় নাআমরা কি কখনও তোকে না করেছিলাম? না বলেছিলাম, তোর দ্বারা কখনও প্রেম হবে না।’
 
শুভেন্দু বলল, ‘সেটা অবশ্য ঠিকতবে কেন জানি না শিখাই আমার তপস্যা ভঙ্গ করলোএমন একটা মেয়ে, দেবের মত আমার জীবনেও প্রেমকে ফিরিয়ে আনলোএরজন্য থাউজেন্ড পার্সন্ট ক্রেডিট গোজ্ টু হারবলতে পারিস এই অসম্ভব কাজটা শিখার জন্যই সম্ভব হয়েছে।’
 
আমি বললাম, এরজন্য শিখাকে আমিও একটা ধন্যবাদ দেবোতোকে শেষ পর্যন্ত নাবালক থেকে সাবালক করেছে ওআরে বাবা, প্রেম বিবাহ এসব না করে কি চিরকাল থাকা যায়? শেষ বয়সে তাহলে তোকে দেখতো কে? আমি তো শত চেষ্টা করেও তোর ধ্যান ভাঙাতে পারিনিযাক, শেষ পর্যন্ত কেউ না কেউ তো কাজটা করে দেখালোআমি এ ব্যাপারটাকে দারুন ভাবে অ্যাপ্রিসিয়েট করছি।’
 
বিদিশা আমার কথাটা মনোযোগ সহকারে শুনছেওর দিকে তাকিয়ে বললাম, জানো বিদিশা, মেয়েটার গলাটা কি মিষ্টিআমি ফোনে প্রথমে ওর গলার আওয়াজ শুনে অবাক হয়ে গেছিএত মাধুর্য্য গলার মধ্যেঅথচ শুভেন্দু যখন ফোনে আমার সাথে কথা বলে, ওর গলাটা ঠিক যাঁড়ের মতন লাগে
 
বিদিশা হো হো করে হাসতে লাগলো আমার কথা শুনেসেই সাথে শুক্লাওশুভেন্দু সেই সময় বলে উঠলো, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ এটাও শুনে নাও তোমরা বন্ধুরাশিখা শুধু সুন্দরী আর ভালো মেয়ে নয়ও ভালো গাইতেও পারেঅসম্ভব দরাজ আর মিষ্টি ওর গানের গলাআমি যতবার ওর গান শুনেছি, শুধু মুগ্ধ হয়ে গেছিশিখাকে আমি দেবের গানের ব্যাপারটাও বলেছিবলেছি, জানো শিখা, আমি বরাবরই দেবের গানের খুব ফ্যান ছিলাম, এখনও তাইও যখন গাইতে শুরু করে, তখন আর কেউ কথা বলতে পারে নাসবাই মূগ্ধ হয়ে শুধু ওর গান শোনেআর আজ তোমার গান শুনে আমার দেবকে বারে বারেই তোমার কথা বলতে ইচ্ছে হয়কিন্তু সুযোগ হয়ে উঠছে নাএকদিন না একদিন হয়তো ঠিক আমি বলবো।’
 আক্ষেপের সুরে শুভেন্দুকে বললাম, বললি আর কোথায়? রনি আজ ফাঁস না করে দিলে আমাদের তো এত কিছু আর জানাই হতো নামেয়েটার স্বভাব ভালো, দেখতেও শুনছি ভালোআবার ভালো গানও গায়একেবারে সর্বগুনা সম্পন্ন রমণীএর থেকে ভালো উপমা আর কি হতে পারে?’
 
শুক্লা বলল, ‘তা যা বলেছিসতবে এত প্রশংসা করছিসবিদিশা আবার খারাপ ভাবছে না তো?’
 
আমাকে সমর্থন করে বিদিশা বলল, ‘খারাপ কেন ভাববো? ও, যার সন্মন্ধে যা বলে, সেটা কখনও ভুল হয় নাশিখা সত্যি ভালো মেয়েআমারো তো তাই মনে হচ্ছে।’
 
আমি সঙ্গে সঙ্গে বিদিশার মুখের দিকে তাকালামএবার বিদিশা আক্ষেপের সুরে আমাকে বলল, ‘ইসতখন যদি আমিও ভালো করে গানটা শিখে নিতাম তোমার কাছ থেকেতাহলে আমিও সম্পূর্ণা হতে পারতাম
 
স্বান্তনা দিয়ে ওকে বললাম, ‘মন খারাপ করো নাএবার আমি তোমাকে গান শেখাবোসাতদিনে তোমাকে গান শিখিয়ে দেবোতুমি দেখে নিও
 
শুভেন্দুও আবদার শুরু করেছে বিদিশার কথা শুনেআমাকে বলল, এই তুই তোর বউকে গান শেখাবিতোরা জোড়ায় জোড়ায় গান গাইবিআর আমাকে শেখাবি না? আমিও তাহলে শিখার সঙ্গে একসাথে গলা মেলাতে পারতাম।’
শুক্লা ফোড়ণ কেটে বলল, ‘হু, সখ কতো একবার দেখেছো ছেলের।’
 
শুভেন্দু ধমক দিয়ে বলে উঠল, ‘এই তুই চুপ করআমার এখন দেবের সাথে ডিল হচ্ছেতোরা কেউ মাথা গলাতে আসবি না।’
 
আমি বললাম, ‘কেন শিখাই তো তোকে গান শেখাতে পারেতুই তোর বউয়ের কাছ থেকে তালিম নেআর আমি আমার বউকে গান শেখাই।’
 
শুভেন্দু মাথা চুলকে বলল, ‘কিন্তু শিখা শুধু রবীন্দ্রসঙ্গীতই জানেআমি একটু অন্যরকম ভাবে শিখতে চাইছিসতুই যেটা পারবি।’
 
একটু ভেবে নিয়ে বললাম, ‘আচ্ছা আগে শিখা আসুকওর গান আমিও শুনিতারপর দেখছি তোর সঙ্গে ওকে ম্যাচিং করাতে পারি কিনা? তবে ডুয়েট গাইলে রবীন্দ্রসঙ্গীতই তোমাকে শিখতে হবে বাপুআর জেনে রেখো, ক্ল্যাসিকালের মত রবীন্দ্রসঙ্গীতও একটা বেসবাংলা গানে রবীন্দ্র সঙ্গীতের এখনো কোন বিকল্প নেই।’
 
আমি দেখছি, পুরীর সেই গল্পটা থেকে আমরা অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি দেখে, শুক্লা আবার সেটা শুভেন্দুকে স্মরণ করাচ্ছে।  বারবার ওকে মনে করাচ্ছিল‘এই শুভেন্দু, তারপর পুরীতে তোদের কি হলো বল না? এক্ষুনি তো শিখাও এসে পড়বে তখন কি আর শোনা হবে? বল না?’
 
শুভেন্দু বলতেই যাচ্ছিল, রনি সেই সময় বলে উঠল, ‘এই শুভেন্দু, শিখা তোকে যে প্রথম গানটা শুনিয়েছিল, আমাদের দু লাইন গেয়ে একবার শোনাতুই তো আগের দিন এই হেঁড়ে গলা নিয়েও খুব ভালো গাইলিশোনা না একবার?
 
শুভেন্দু গলাটা খকখক করে একবার কেশে নিয়ে পরিষ্কার করে নিলতারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, গাইবো?’
 
আমি বললাম, ‘হ্যা গাঅসুবিধে কি? আমরা সবাই শুনি।’
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
শুভেন্দু বলল, ‘পুরীতে ওটা ছিল আমাদের তৃতীয় দিনগানের জন্য একটা পরিবেশ চাইআমি তার আগেই জেনে নিয়েছি, ছোটবেলা থেকেই শিখা রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিম নিয়েছেতাছাড়া ওর এত মিষ্টি গলাআমার কেন জানি না ওকে দেখার পরই মনে হচ্ছিল, মেয়েটা বোধহয় গান জানেসি বিচে বালির ওপর আমরা সেদিন বসে আছি পাশাপাশি দুজনেশিখা বালিতে কি যেন এঁকে যাচ্ছেআমাকে বলল, ছোটবেলায় বাবা মার সাথে একবার পুরীতে বেড়াতে এসেছিলাম।  কত কষ্ট করে এই বালি দিয়েই একটা ঘর বানিয়েছিলামএকটা বড় ঢেউ এসে বালিঘরটা নিশ্চিন্ন করে দিয়ে চলে গেলআমার সেকী কান্নাবাবা মা দুজনেই আমার কান্না থামাতে পারে নাঅনেক কষ্টে বুঝিয়ে সুজিয়ে সেদিন দুজনে বলেছিল, ‘মা আমার কাঁদে নাএটা তো বালিঘরআসল ঘর নাকি? তুই কেন মিছি মিছি কাঁদছিস?’
 
শুভেন্দু বলল, শিখা মাথা নিচু করেই বালিতে আঁচড় কাটতে কাটতে তখনও বলে যাচ্ছিল‘সেদিন আমার কান্নাটা থেমে গিয়েছিলকিন্তু আসল মানেটা উদ্ধার করতে পেরেছিলাম, তারও চার পাঁচ বছর পরে
 
শুভেন্দু বলল, আমি তখন শিখাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কেন তখন আবার কি হলো? কোন সমস্যার উদয়?’
 
ঠিক যেন ভাবুকের মতন হয়ে আমরা সবাই শুভেন্দুর কথা শুনছিশুভেন্দু বলল, শিখা আমার কথার জবাব দিচ্ছে নাআসতে আসতে কি যেন বলার চেষ্টা করলোকিন্তু একটা আছড়ে পড়া ঢেউয়ের শব্দে আমি ওর কথা শুনতে পেলাম নাশিখাকে বললাম, চার পাঁচ বছর পরে কি হয়েছিল?
 
শিখা অনেক কষ্ট করে ভারী গলায় বলল, বাবা মা’র সম্পর্ক ক্রমশই তখন অবনতির দিকেদুজনের ছাড়াছাড়ি হবার উপক্রমআমি চোখে অন্ধকার দেখছিদুজনকেই আমি মনে প্রানে খুব ভালোবাসিআমি কাউকে কাছছাড়া করতে চাই নাহাউ হাউ করে সেদিন খুব কেঁদেছিলামশুধুমাত্র আমার চোখের জলের দিকে তাকিয়েই বাবা মার ডিভোর্সটা সেদিন হয় নিনইলে-
 
একটা হতাশার সুরে শুক্লা বলে উঠল, ওফএখানেও? সবারই জীবনে দেখছি, কোন না কোন এরকম ঘটনা
 
আমি বললাম, মেয়ের জন্য বাবা মা শেষ পর্যন্ত আলাদা হন নিএটা তো ভাল খবরশিখাকে এরজন্য ক্রেডিট দিতে হয়
 
শুভেন্দু বলল, অবশ্যইআসলে মেয়েটার মধ্যে ভীষন একটা সফট জায়গা আছে জানিস তোও যেমন নিজের দূঃখটা দেখতে পারে না, সহ্য করতে পারে নাতেমনি কারুর কষ্টের কথা শুনলে ওরও খুব কষ্ট হয়ওর মনটা খুব নরমসি ইজ ভেরী সফট মাইন্ডেড
 
আমি বললাম, ‘মনে রাখিস এটাশিখাকে তোকে সারাজীবন সুখী রাখতে হবে।’
 
শুভেন্দু বলল, সেইজন্যই তো আমি এখন তোকে ফলো করিতোর অ্যাটিটুডটা কপি করার চেষ্টা করিআমি শিখার প্রতি ভালোবাসাটা প্রকাশ করতে সেদিন বিন্দুমাত্র দেরী করিনিমনে হয়েছিল, এরপরেও যদি শিখাকে আমি বুঝতে কোন ভুল করিঅনেক দেরী হয়ে যাবেওর হাতের ওপর হাতটা রেখে সি বিচেই ওকে ভালো লাগার ব্যাপারটা প্রকাশ করে ফেললামহাতটা সরিয়ে নিতে পারেনি শিখাআমার মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিলওকে বলেছিলাম, শিখা আমি প্রেম করতে জীবনে কোনদিন শিখিনিকিন্তু আমার এক প্রাণের বন্ধুকে দেখে শিখেছি, ভালোবাসার এই অক্সিজেনকে শতকষ্টের মধ্যেও কিভাবে বাঁচিয়ে রাখতে হয়বলতে পারো ‘দেব’  আমার জীবনে এক আদর্শ ব্যক্তিত্বহি ক্রিয়েটস অ্যান এক্সাম্পেলআজ তারই আদর্শের বানীকে উদ্ধৃত করে তোমায় বলছি, এই শুভেন্দুর প্রেমকে তুমি স্বীকার করোআমি তোমায় কথা দিচ্ছিজীবনে কোনদিন, কখনও তোমাকে আমি দূঃখী হতে দেবো না।’
 আমি অবাক হয়ে চেয়ে রয়েছি শুভেন্দুর দিকেওকে বললাম, ‘তুই করেছিস কি? এখানেও আমার উদাহরণ টেনেছিস?’
 
শুভেন্দু হাসতে হাসতে বলল, ‘তবে আর তাহলে বলছি কি? এতদিনে তুই আমায় শেষ পর্যন্ত এই চিনলি? সাধে কি ও তোর এখানে আসছে? তোকে দেখতে? ওর মনেও তো সেই কৌতূহলযে মানুষটার সন্মন্ধে প্রেমিকের কাছ থেকে এত কথা শুনে এসেছেএবার যাইএকবার চোখের দেখায় তাকে দেখে আসিসত্যি মানুষটা কিরকম?’
 
আমি শুভেন্দুর কাছ থেকে দরাজ সার্টিফিকেট পেয়ে নিজে কিছুটা বিচলিত বোধ করছিভাবছি কি এমন কাজ করেছি, যার জন্য আমি আমার বন্ধুবান্ধবের কাছে একটা দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছিআমি তো আমার করা ছোট্ট ভুলের একটা খেসারত দিয়ে এসেছি এতদিনদীর্ঘদিন অপেক্ষা করে গেছি ভগবান সেই কারণেই আমার ওপর হয়তো সদয় হয়েছেন আমি কি সত্যি কোন বড় মনের পরিচয় দিয়েছি? না, শুভেন্দু একটু বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলছে বোধহয়
 
একবার তাকালাম বিদিশার দিকে, দেখলাম বিদিশাও চোখের ভাষাতে আমাকে সেই কথাই বোঝানোর চেষ্টা করছেঅর্থাৎ শুভেন্দু যা বলেছে, ঠিকই বলেছেওর কথার মধ্যে কোন ভুল নেই
 
হেসে বললাম, ‘তা এরপর শিখা তোকে যে রবীন্দ্রসঙ্গীতটা শুনিয়েছিল, সেটা শোনালি না?’
 
শুভেন্দু আবার একটু খক খক করে কেসে নিয়ে বলল, গাইবো? কিন্তু শিখার মতন কি অত ভালো গাইতে পারবো? আচ্ছা চেষ্টা করছিবলে গাইতে শুরু করলো-
 
ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো-- তোমার
 মনের মন্দিরে
আমার পরানে যে গান বাজিছে
তাহার তালটি শিখো-- তোমার
 চরণমঞ্জীরে
 
এইটুকু গেয়ে গান থামিয়ে দিল শুভেন্দু আমাকে বলল, না না এর বেশি আর গাইতে পারছি না বাকীটা তুই গা
 
শুক্লা বলল, ওফঃ কি গান শুনিয়েছে রে শিখা তোকে শুভেন্দু সত্যি তোর প্রেমিকার জবাব নেই
 
আমি ঠিক সেই সময় অবাক হয়ে চেয়ে রয়েছি বিদিশার দিকেব্যাপারটা শুভেন্দু, রনি, শুক্লা, মাধুরী কেউই বুঝতে পারে নিআসলে অনেক দিন আগে এই গানটাও আমি বিদিশার উদ্দেশ্যে একবার গেয়েছিলামসেদিনের সেই স্মৃতি বিদিশা আর আমার, দুজনের মনেই এখন ভাসছেআমার সেদিনের গান শুনে বিদিশাও আমার সাথে গাইতে শুরু করে দিয়েছিলকিন্তু আজ আমি শুভেন্দুর কথায় আবার গাইছি, বিদিশা আর গাইতে পারছে নাও শুধু মুগ্ধ নয়নে শুনছে আমার গান-
 
ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো-- তোমার
 মনের মন্দিরে
আমার পরানে যে গান বাজিছে
তাহার তালটি শিখো-- তোমার
 চরণমঞ্জীরে
ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে
আমার মুখর পাখি-- তোমার
প্রাসাদপ্রাঙ্গণে
মনে ক'রে সখী, বাঁধিয়া রাখিয়ো
আমার হাতের রাখী-- তোমার
কনককঙ্কণে
আমার লতার একটি মুকুল
ভুলিয়া তুলিয়া রেখো-- তোমার
অলকবন্ধনে
আমার স্মরণ শুভ-সিন্দুরে
 একটি বিন্দু এঁকো-- তোমার
    ললাটচন্দনে
আমার মনের মোহের মাধুরী
মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো-- তোমার
অঙ্গসৌরভে
আমার আকুল জীবনমরণ
 টুটিয়া লুটিয়া নিয়ো-- তোমার
অতুল গৌরবে
ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো-- তোমার
 মনের মন্দিরে
 
 
আসতে আসতে বিদিশার চোখ দিয়ে এবার গড়িয়ে পড়ছে জলের ধারাগান শেষ করে ওকে সান্তনা দিয়ে বললাম, ‘এই দেখো আবার কাঁদতে শুরু করেছে? আরে বাবা কাঁদছো কেন? আমি তো শুভেন্দু বলল, তাই আবার গেয়ে শোনালাম।’
 
ঠিক সেই সময় মা আবার ঢুকে পড়েছে ঘরেবিছানার ওপর বিদিশাকে কাঁদতে দেখে মা’ও হতভম্বআমাদের দিকে তাকিয়ে বলল, ওমা বিদিশা কাঁদছে কেন? তুই কি বকেছিস নাকি ওকে?’
এরপরে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘আচ্ছা, তোমাদের পরিচিত কারুর কি এখানে আসার কথা আছে? বারান্দা দিয়ে দেখলাম, একটা মেয়ে গাড়ী চালিয়ে এসে নামলোআমাকে জিঞ্জাসা করলো, ‘এটা কি দেবদার বাড়ী?, আমি বললাম হ্যাঁতারপর বললো, আচ্ছা আমি উপরে আসছিমেয়েটা আমাদের ফ্ল্যাটেই আসছে মনে হয়।’
 
ক্রমশঃ-
 
[+] 5 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
উফফ !!
দারুন লাগছে , দারুন !!!
Smile
Like Reply
চেষ্টা করলাম একটা বড় আপডেট দিতে। কমেন্টস পেলে আবার নতুন আপডেট দেব।
Like Reply
(09-07-2021, 03:52 PM)ddey333 Wrote: উফফ !!
দারুন লাগছে , দারুন !!!
Smile

ধন্যবাদ। ধন্যবাদ।
Like Reply
khub bhalo likhchen .....aste aste nijerder modhye katha na bolleo friends ra thakle anek katha bola hoie jai.....very nice
Like Reply
(09-07-2021, 06:56 PM)raja05 Wrote: khub bhalo likhchen .....aste aste nijerder modhye katha na bolleo friends ra thakle anek katha bola hoie jai.....very nice

অনেক ধন্যবাদ।
Like Reply
আরও একটি দুর্দান্ত আপডেট, মাইন্ডব্লোইং !!!
yourock     clps
Like Reply
(09-07-2021, 10:14 PM)Lajuklata Wrote: আরও একটি দুর্দান্ত আপডেট, মাইন্ডব্লোইং !!!

ধন্যবাদ। আপনাদের ভাল লাগলেই আমার লেখা সার্থক।
Like Reply
কাহিনীতে এখন পাঁচটি নারী চরিত্র। বিদিশা, শুক্লা, মিনু, মাধুরী এবং দিশা। যৌনতা বিহীন খুব সুন্দর একটি গল্প। খুব ভাল লাগছে পড়ে।
Like Reply
(10-07-2021, 12:03 PM)Jonaki Poka Wrote: কাহিনীতে এখন পাঁচটি নারী চরিত্র। বিদিশা, শুক্লা, মিনু, মাধুরী এবং দিশা। যৌনতা বিহীন খুব সুন্দর একটি গল্প। খুব ভাল লাগছে পড়ে।

ধন্যবাদ।
Like Reply
যতদূর মনে পরে এই গল্পের কিছুটা অংশ আমিও লিখেছিলাম ! তাই কি? ঠিক মনেও পরে না ! বুড়ো হয়ে গেছি তো ! ......
Like Reply
(10-07-2021, 08:58 PM)dada_of_india Wrote: যতদূর মনে পরে এই গল্পের কিছুটা অংশ আমিও লিখেছিলাম ! তাই কি? ঠিক মনেও পরে না ! বুড়ো হয়ে গেছি তো ! ......

না ওটা একটা অন্য গল্প ছিল। কিছুটা পার্ট লিখেছিল, কামদেব আর বাকিটা তুমি। শুরু করেছিল দীপালি, আমি শুধু শুরু করেছিলাম।
[+] 1 user Likes Lekhak is back's post
Like Reply
কয়েকটা পর্ব একসাথে পড়লাম... সত্যি কি সুন্দর ভাবে লিখছেন... মাঝে মাঝে রবীন্দ্রসংগীত আর পুরানো গানগুলো.. উফফফ ❤ সত্যিই কিসব গান হতো তখন. আর সেই গান যদি হয় কিশোর কুমারের কণ্ঠে তো কিছু বলারই নেই - আজ থেকে আর ভালোবাসার নাম নেবোনা আমি, আজ মিলন তিথির পূর্ণিমা চাঁদ, ওরে মন পাগল তুই, আমারও তো সাধ ছিল, কোথা আছো গুরুদেব, ভালোবাসা ছাড়া আর আছে কি, ঢলে যেতে যেতে, কারো কেউ নইকো আমি, সে যেন আমার পাশে আজও বসে আছে.... কত বলবো? ❤
Like Reply
(11-07-2021, 12:16 AM)Baban Wrote: কয়েকটা পর্ব একসাথে পড়লাম... সত্যি কি সুন্দর ভাবে লিখছেন... মাঝে মাঝে রবীন্দ্রসংগীত আর পুরানো গানগুলো.. উফফফ ❤ সত্যিই কিসব গান হতো তখন. আর সেই গান যদি হয় কিশোর কুমারের কণ্ঠে তো কিছু বলারই নেই - আজ থেকে আর ভালোবাসার নাম নেবোনা আমি, আজ মিলন তিথির পূর্ণিমা চাঁদ, ওরে মন পাগল তুই, আমারও তো সাধ ছিল, কোথা আছো গুরুদেব, ভালোবাসা ছাড়া আর আছে কি, ঢলে যেতে যেতে, কারো কেউ নইকো আমি, সে যেন আমার পাশে আজও বসে আছে.... কত বলবো? ❤

এই উপন্যাসে প্রতিটা গান পরিস্থিতি অনুযায়ী সংযুক্ত করা হয়েছে। আপনিও দারুন লিখলেন।
Like Reply
সতেরো
মা’র কাছ থেকে শিখার আগমনের খবর পেয়ে শুভেন্দু এমন করতে লাগল, যেন এখুনি শিখাকে গিয়ে ওই নিয়ে আসে একতলা থেকে
-কই দেখি দেখি, বলে ও বারান্দার দিকে ছুট লাগালোআমি বিছানায় বসে বিদিশাকে বলছি, ‘যাও বিদিশা, শিখাকে তুমিই ভেতরে নিয়ে এসোমা’ও ততক্ষণে বুঝতে পেরে গেছে ব্যাপারটা কি ঘটতে চলেছে আমাকে ইশারা করে মা বলল, ‘এটা কি শুভেন্দুর প্রেমিকা?
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, ওর নাম শিখা আমাকে দেখতে ও এখানে এসেছে
বলতে বলতেই কলিংবেলের আওয়াজ হলশুভেন্দু আর বিদিশা দুজনেই এগিয়ে গেলমা বলল, ‘আজ শুভেন্দুর জন্য আমারও বড় ভালো লাগছেদেখি মেয়েটাকেকেমন দেখতে? বলে নিজেও দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো মা
শিখা ঢুকেছে ঘরেশুভেন্দু মা’র সাথে শিখার আলাপ করিয়ে দিচ্ছেঢপ করে শিখা একটা প্রনাম করল বিদিশারই মতনপাশে দাঁড়িয়ে বিদিশাশুভেন্দু শিখাকে বলল, ‘এটা কে জানোতো? এ হল বিদিশাআমার কাছে তুমি যা, দেবের কাছে বিদিশাও তাইঅনেক দিনের প্রেমআজ বিদিশাও এসেছে এখানেএকটু আগেই তোমার কথা হচ্ছিলসবাই তোমাকে দেখার জন্য উদগ্রীবচলো চলো ভেতরে চলোঘরে রনি আর মাধুরী রয়েছেদেব তো আছেই, এছাড়া শুক্লাও রয়েছে
দূর থেকে দেখলাম, শিখার মুখে যেন অমায়িক একটা হাসি সর্বদা লেগেই রয়েছেঘরে ঢুকে ও প্রথম আমার দিকেই তাকালোশুভেন্দু বলল, ‘এই হল ‘দেব’এ ম্যান উইথ এ গোল্ডেন ভয়েজ, সফ্ট মাইন্ডেড, অ্যান্ড এ রিয়েল লাভারপৃথিবীতে একমাত্র সৎপ্রেমিক ভালোবাসার মধ্যে একটুকু কোন খাদ নেই কোথাও, কেউ কষ্ট করে খুঁজলেও কোনদিন পাবে না।’
আমার সামনে দাঁড়িয়েই রয়েছে, সুন্দর মিষ্টি অনেকটা বিদিশার মতনই দেখতে মেয়েটিমুখে সেই অমায়িক হাসিটা রেখেই বলল, ‘কেমন আছেন? খুব তো শরীর খারাপ হয়েছিল শুনলামএখন ভালো তো?’
আমি অবাক হয়ে দেখছি শিখাকেমা ধমক দিয়ে বলল, কি রে দেব? ওকে বসতে বলও তো ঠায় দাঁড়িয়েই আছে দেখছি।’
 
একটা চেয়ার ঠেলে এগিয়ে দিল রনিদেখলাম শিখা মুচকি মুচকি হাসছে রনির দিকে তাকিয়েতারমানে ওকে ভাল করেই চেনেআমি বললাম, দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুনওই চেয়ারটায় বসুন।’
 
শিখা বলল, না না, অত ব্যস্ত হতে হবে নাসবাই এখানে দাঁড়িয়ে আছে, আমি একা কেন বসবো? এই তো আমি ঠিক আছি।’
এগিয়ে এল বিদিশাশিখাকে জোর করলোওকে হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বলল, ‘না, না, আপনি বসুনআমরা সবাই বসছিকেউ এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে নামা’কে বলল, মা’ ভেতরের ঘরে আরও চেয়ার আছে না? মা বলল, হ্যাঁবিদিশা নিজেই উদ্যোগ নিলবলল, আচ্ছা আমিই নিয়ে আসছি।’
আমার মুখের দিকে শিখা একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেযেন কিছু বলবে বলবে ভাবছেউল্টোদিকে একটা চেয়ারে বসে শুক্লা হাঁ করে দেখছে শিখাকেযেন সেই ঘোরটা তখনও কাটেনি ওরশিখাকে ছাপা একটা শাড়ীতে খুব সুন্দর লাগছেগায়ের রংটা উজ্জ্বলমুখটা পানপাতার মতনগলায় ঝুলছে একটা সরু সোনার চেনসাজ গোছ তেমন নেই, অথচ বিনা সাজেই কত সুন্দর লাগছে মেয়েটাকেভালো করে দেখলেই বোঝা যায়, যেন একটা আভিজাত্য ছড়িয়ে রয়েছে ওর সারা দেহেসম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে, শুভেন্দু একটু আগে যা বলেছে শিখার সন্মন্ধে একেবারে হুবহু তাই মিলে যাচ্ছে

চেয়ারে বসে শিখা বলল, ‘আমি কিন্তু আপনার খুব ফ্যান যার কাছে আপনার সন্মন্ধে শুনেছি, জানি সে মিথ্যে কথা আমাকে কখনও বলবে না

দেখলাম, ওর মুখে তখনও সেই অমায়িক হাসি আমি বললাম, আমার তো কোন গুন নেই আপনি কি করে আমার ফ্যান হলেন? শুভেন্দু নিশ্চই বাড়িয়ে বলেছে

শুভেন্দু দেখলাম পাশে দাঁড়িয়ে শিখাকে কিছু বলার চেষ্টা করছে, আর ঠিক তখুনি রনি একটা গান ধরলো, ‘আমার নাম এন্টনী, কাজের কিছুই শিখিনি, ডারলিং কিংবা পেইন্টিং অর সিংগিংআমি আজকের দুনিয়াতে গুড ফর নাথিং

শুক্লা সঙ্গে সঙ্গে একটা ধমক লাগালো রনিকে‘এই তুই চুপ করদেব হল এক্সেপসনালকি উল্টোপাল্টা গাইছিস ওর সন্মন্ধে?’

ধমক খেয়ে রনি চুপ করে গেলআমি শিখাকে বললাম, ‘এর সাথে আপনার আলাপ করিয়ে দিইএ হল শুক্লাআমরা সবাই কলেজে একসাথে পড়েছিসবাই কলেজের বন্ধু।’

মাধুরী ওর বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আদর করছেশিখাকে মাধুরীর দিকেও একবার মুখ ঘোরাতে বললাম, ‘আর ওটা কে জানেন তো? ও হল মাধুরীআমাদের সবার প্রিয় ছোট্ট বোনভারী মিষ্টি আর সুন্দর।’

মাধুরী ওর বাচ্চাটাকে আদর করতে করতেই শিখাকে বলল, ‘আর এটা হল আমার ছেলেআমিও দেবদার খুব ভক্ততাই দেবদার নামে এর নাম রেখেছি, দেবমাল্য

বাচ্চাটা শিখার দিকে তাকিয়ে প্রাণখুলে হাসছেশিখাও হাতটা বাড়িয়ে দিলঅদ্ভূত কান্ড মাধুরীর কোল ছেড়ে বাচ্চাটা শিখার কোলে চলে গেল

ওর গালে বারকতক চুমু খেলে শিখা বাচ্চাটাও শিখাকে পেয়ে যেন একেবারে গদগদ শুক্লা বলল, ‘দেখ, অত ছোট হলে কি হবে? ওরা কিন্তু সব বুঝতে পারে

আমি বললাম, ‘কি?’

শুক্লা বলল, ‘ওর কাছে শিখা চেনা লোকআবার কি? ও ঠিকই বুঝতে পারছে

আমি শুভেন্দুকে বললাম, ‘তুই তো ওর মামা হোস, তাই না রে শুভেন্দু?’

শুভেন্দু বলল, হ্যাঁ

আমি হাসতে হাসতে বললাম, ‘আর এটা যে ওর নতুন মামী, ও ভালমতনই বুঝতে পারছেনতুন মামীর আদর খাচ্ছে, শিখার কোলে বসে বসে

ঘরের মধ্যে একটা হাসির রোল উঠলআমার কথা শুনে সবাই হো হো করে হাসতে লাগলশিখাও তাইহেসে বলল, আমি, এঘরে যারা বসে আছে, সবার কথাই আগে শুনেছিতবে একটু বেশি শুনেছি, আপনার কথাআপনার আর বিদিশার কথাআপনার বন্ধু শুভেন্দুই আমাকে সব বলেছে

বলতে বলতে বিদিশাও তখন চেয়ার নিয়ে ঢুকেছে ঘরেশুভেন্দু আড়চোখে তাকাচ্ছে শিখার দিকেচেয়ারটা ঠেলে শুভেন্দুকেও বসতে বলে বিদিশা বলল, ‘আজ কিন্তু নতুন আমরা এমন একজনকে পেয়েছি, যার গানের গলা শুনেছি, খুব সুন্দরআজ আমরা সবাই কিন্তু তার গান শুনবোকি তোমরা সবাই রাজী আছো তো?

সবাই একবাক্যে বলে উঠল, হ্যাঁঅতি অবশ্যই, অতি অবশ্যই

শিখা একটু লজ্জ্বা পেয়ে বলল, ও মাআমি গাইতে পারি, এটা আবার কে বলল? এ নিশ্চই ওর কারসাজিবলেই একটু কটমট করে তাকালো শুভেন্দুর দিকেশুভেন্দুর মুখ তখন কাচুমচুআর আমি হাসতে লাগলাম, ঠিক সেই সময় শুভেন্দুর ওই রকমটা দেখে


[+] 4 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
শুক্লা বলল, ‘গাও না শিখা আমরা তো দেবের গানই শুনে এসেছি এতকাল ধরে তোমার যখন গানের গলা ভাল, তখন তোমাকেও আজ ছাড়ছি না শুভেন্দু বলেছ, তুমি না কি রবীন্দ্রসঙ্গীত দারুন গাও
শিখা একটু লজ্জ্বা পেল বলল, ‘এই মরেচে সবাই মিলে আমাকে চেপে ধরেছে আমি এখন কি করি?’
বিদিশা বলল, ‘আমরা সবাই এখানে গানের খুব ভক্তসেই কলেজের সময় থেকেই গান শোনাকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছিসেই সময় রোজই আমাদের গানের আসর বসতোকলেজে তো কালচারাল ফাংশনও হতআর এই যে দেখছো লোকটাকে, আমার পাশে বসে আছেবলে আমার দিকে ইঙ্গিত করল বিদিশাবলল, এ হল মধ্যমনিভীড়ের মধ্যে একজনই গায়কআর আমরা হল তার শ্রোতাএর মত গলা, আর দ্বিতীয় কারুর নেই।’
শিখা যেন এবারে আরও ভয় পেয়ে গেলবলল, ‘ও বাবাতাহলে আমি কিছুতেই গাইবো নাদেবদার ধারে কাছেও কোনদিন পৌঁছোতে পারবো না।’
আমি আশ্বস্ত করলাম শিখাকেবললাম, ‘ বিদিশা আমাকে একটু বেশিই ভালবাসে তো? তাই আমার সন্মন্ধে একটু বেশিই বলছেআমি এমন কিছু গাই নাতুমি পরে আমার গান শুনলেই বুঝতে পারবেআর তাছাড়া আমার আগের মতন গলা একেবারেই নেইরেওয়াজ করি নাগলা একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে।’
শুভেন্দু সঙ্গে সঙ্গে ফোড়ণ কাটলোবলল, ‘কি যাতা বলছিসএকটু আগেই তো গাইলিতোর সাথে কারুর তুলনা হয়?’
আমি এবার ধমক লাগালাম শুভেন্দুকেবললাম, ‘যাও বা মেয়েটাকে রাজী করালামদিলি তো সব ব্যাঘাত করেআমি এখানে শিখার গান শুনবো বলে বসে আছিআর তোরা কিনা আমার গান নিয়েই পড়ে আছিস।’
 
শুক্লা বলল, ‘গাও না শিখাআমরা দেবের গানও শুনবোতোমারটা বরং আগে শুনি।’
শিখা আমার দিকে তাকিয়ে আছেএখনও একটু লজ্জ্বা লজ্জ্বা পাচ্ছেমুখ নিচু করে বলল, ‘গাইতে পারি এক শর্তেআপনাকেও কিন্তু একটা গান শোনাতে হবেবড় আশা করে এসেছি।’
শুভেন্দু শিখার কথা শুনে বাহ্বা নিচ্ছেওকে বলল, ‘ ও ব্যাপারে চিন্তা কোরো নাদেবকে আমি একবার বললেই ও গাইতে শুরু করবেআর তুমিও যখন রিকোয়েস্ট করেছোও তোমার কথা ফেলতে পারবে নাঅলওয়েজ রেডী তো সিঙদ্য মিরাকেল ভয়েজআজকের যুগের সেরা গায়কতবে অ্যামেচারএকেবারেই প্রফেশনাল নয়।’
 
শুক্লা ধমক দিয়ে শুভেন্দুকে বলল, ‘এই তুই চুপ করআমাদের এবার শিখার গান শুনতে দে।’
 
মাধুরী শিখার কোল থেকে বাচ্চাটাকে আবার নিজের কোলে নিয়ে নিয়েছেবাচ্চাটা হঠাৎই চিৎকার করতে শুরু করে দিলমাধুরী ওর ঠোঁটে হাত দিয়ে বলল, ‘এই চুপচুপএকদম চেঁচাবি না এখনদেখছিস না? তোর নতুন মামী এখন আমাদের গান শোনাবেখুব মিষ্টি মামীটাশোন শোনদেখ কি মিষ্টি গায় এই মামীটা।’
 
অদ্ভূত ভাবে চেঁচানি থামিয়ে মাধুরীর বাচ্চটাও শিখার দিকে তাকিয়ে রইলযেন গান শোনার জন্য বাচ্চাটাও এবারে উদগ্রীব হয়ে পড়েছেশুভেন্দু সব দেখেশুনে বলল, ‘বাহ্ আমার বোনপোটা তো বেশ প্রথমদিনই ফ্যান হয়ে গেছে শিখারদারুন দারুনদেখে বড় ভালো লাগছে
 
রনি এবারে একটু বাহবা নিয়ে বলল, ‘কার ছেলে দেখতে হবে না? ও হল আমার ছেলেমাই সনলাইক ফাদার লাইক সনভাবছি ওকেও বড় হয়ে আমি গায়কই বানাবোআজ থেকে আমারও একটা গোল সেট হয়ে গেল।’
 শিখা গান গাইবার জন্য এবারে তৈরীশুরু করতে গিয়েও শেষবারের মতন আবার একটু লজ্জ্বা পেলমুখ নিচু করে বলল, ‘ভীষন ভয় ভয় করছেআপনি সামনে বসে আছেনকি গাইতে কি গাইবোযদি ভুলভাল কিছু হয়?’
 
আমি ওকে আস্বস্ত করলাম। ‘বললাম ভয় কি? শুরু করে দিনআমি কথা দিচ্ছিভুল ধরবো নামনের আনন্দে গানআজ ভালো একটা দুটো রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনানআমিও রবীন্দ্রসঙ্গীতের খুবই ভক্ত।’
 
গানটা যখন শুরু করলো শিখামনে হল সরস্বতী যেন সত্যি সত্যিই বিরাজ করছে ওর গলায়কি অপরূপ গলাগলায় শুধু যে মিষ্টতাই বিরাজ করছে, তাই শুধু নয়একজন মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতার মতন মনটা কোথায় আচ্ছন্ন হয়ে যাবেশিখাই নিয়ে যাবে শ্রোতাকে এক অন্য ভাবনার জগতেমনে হবে এই পৃথিবীতে দূঃখ বলে সত্যি কিছু নেইশুধু আনন্দ আর সুখএমন গলা শুনলে মূমূর্ষ রুগীও বাঁচার তাগিদ অনুভব করবেশরীর জুড়ে অদ্ভূত এক প্রাণের পরশ লেগে যাবেপ্রেমিককে স্মরণ করবে প্রেমিকাপ্রেমিক স্মরণ করবে প্রেমিকাকেমনে হবে পৃথিবীতে ভুল বোঝাবুঝি বলে কিছু আর নেইযত দূঃখের, আজই হল তার অবসানশুধু আমিই কেন? যে কেউ ওর গান একবার শুনবেরীতিমতন শিখার ফ্যান হয়ে যাবেআমি গ্যারান্টী দিয়ে বলতে পারি
 
শুধু আমি কেন? শিখাটা গানটা শুরু করবার পর, সবাই যেন কেমন একটা আবেশের মধ্যে চলে গেলমাধুরী হাঁ হয়ে গেছে শিখার গলা শুনেশুভেন্দু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে থুতনীতে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে ঘাড় নাড়ছেরনিরও চোখ বোজাযেন অভিভূত হয়ে সেই আমেজটাকে গ্রহণ করছেঅদ্ভূত ব্যাপারশুক্লা যেন শিখার গান শুনে রীতিমতন আশ্চর্যভাবতেই পারেনি এত দরদী গলা হতে পারে মেয়েটার
 
আর আমি তো এতটাই তন্ময় হয়ে গেছি কিভাবে শিখাকে গান শেষ হলে সাধুবাদ জানাবোভাষা খুঁজে পাচ্ছি নাশুধু দেখছি বিদিশাই কেমন আনমোনাঅনুশোচনার ভারে আক্রান্তভাবতেই পারছে নাশুধু একটা ছোট্ট ভুলে জীবনের বেশ কয়েকটা বছর ভালোবাসা ছাড়াই একাকী করে দিল দুজনকেআমাকে ছেড়ে চলে গিয়ে নতুন আর একজনকে বিয়ে করে সত্যি জীবনে কোন সুখ পেলো কি বিদিশা? সেই তো  আমার কাছেই ওকে আবার ফিরে আসতে হল
 
শিখা প্রথম যে গানটা ধরলো, সেটা হল,
তুমি রবে নীরবেহৃদয়ে মমতুমি রবে নীরবে
নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমানিশীথিনী-সম
তুমি রবে নীরবে
মম জীবন যৌবন মম অখিল ভুবন
তুমি ভরিবে গৌরবে নিশীথিনী-সম
তুমি রবে নীরবেহৃদয়ে মমতুমি রবে নীরবে
জাগিবে একাকী তব করুণ আঁখি,
তব অঞ্চলছায়া মোরে রহিবে ঢাকি
মম দুঃখবেদন মম সফল স্বপন
তুমি ভরিবে সৌরভে নিশীথিনী-সম
তুমি রবে নীরবেহৃদয়ে মমতুমি রবে নীরবে
 
শুক্লা বলে উঠল এক্সিলেন্টঅসাধারণএটা নিশ্চই, শুভেন্দুর জন্যএবার বিদিশার জন্যও একটা গান ধরো শিখাদেখো ও কেমন তোমার গান শুনে অভিভূত হয়ে গেছে
 
বিদিশা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে শিখার দিকেসবাই ওকে জোর করছে। ‘হ্যাঁআর একটা আর একটাপ্লীজ শিখা গাও গাওকি দূর্দান্ত গলা তোমার।’
 
শিখা প্রথমে একটু ইতস্তত করে বিদিশার জন্যই দ্বিতীয় গানটা ধরলোআমি অবাক হয়ে চেয়ে রয়েছি শিখার দিকেমাঝে মধ্যে বিদিশার দিকেও তাকাচ্ছিবুঝতে পারছি শিখা এ বাড়ীতে আসার পর কেমন যেন অন্য রকম এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়ে গেছেশুভেন্দু সব দেখেশুনে একটা হীরের টুকরো মেয়েকে জীবনসাথী হিসেবে বাছাই করেছেওর জীবন সত্যি ধন্য হয়ে গেছে
 
দ্বিতীয় গান ধরলো শিখাআমি মন্ত্রমুগ্ধপুরো গানটাই শিখা, বিদিশার মুখের দিকে তাকিয়ে গাইলআমি অবাকসত্যি এমন দরদী গলা জীবনে প্রথমবার এতো কাছ থেকে শুনছি
 
তুমি কোন কাননের ফুল, কোন গগণের তারা
তোমায় কোথায় দেখেছি, যেন কোন স্বপনের পারা!!
কবে তুমি গেয়েছিলে,
আঁখির পানে চেয়েছিল, ভুলে গিয়েছি,
শুধু মনের মধ্যে জেগে আছে ঐ নয়নের তারা!!
তুমি কথা কয়োনা, তুমি চেয়ে চলে যাও,
এই চাঁদের আলোতে তুমি হেসে গলে যাও
আমি ঘুমের ঘোরে চাঁদের পানে,
চেয়ে থাকি মধুর প্রাণে
তোমার আঁখির মতন দুটি তারা, ঢালুক কিরণধারা!!
তুমি কোন কাননের ফুল, কোন গগণের তারা
তোমায় কোথায় দেখেছি, যেন কোন স্বপনের পারা!!
 
ওহ্অসাধারণশুক্লা বলে উঠলদেব তুই কিছু বলবি না শিখার গান শুনেআমার তো সত্যি বলার মতন কোন ভাষা নেই
 
বিদিশার মুখটা তখন নিচুকি যেন চিন্তা করছেওর মাথায় এখন নানা চিন্তাপুরোনো দিনগুলোকে আবার আঁকড়ে ধরবার চেষ্টা করছেকিন্তু কোথায় যেন এখনও সেই পুরোনো ব্যাথাভেতর থেকে মাঝে মধ্যেই গুমড়ে গুমড়ে উঠছেকষ্টটা চলে গিয়েও পুরোপুরি যেন যাচ্ছে না
 
ওর হাতের ওপর হাতটা রেখে শিখা বলল, ‘আমি সবই শুনেছি ওর মুখেকষ্ট পেও নাজেনে রেখো কষ্টটা সীমিতআনন্দটা চিরদিনের।’
 
বিদিশা কোন কথা বলতে পারছে নাওর মুখের দিকে তাকিয়ে শিখা আবারো বলল, ‘ভগবান যাকে দূঃখ দেন, তাকে আনন্দও ভগবান দিতে জানেনআমি তো সবসময়ই ভগবানকে বলি, তোমার আছে যত দূঃখতুমি এই ছোট্ট মেয়েটাকে দিয়ে দাওআর যাতে যত সুখতুমি আমার এই ছোট্ট দিদিটাকেই শুধু দিয়ে দাওআবার তোমার মুখে সেই পুরোনো হাসিটা আমরা দেখতে চাইকাননের একটা সুন্দর ফুল তুমিতারার মত তোমার চোখহাসি না দেখলে তোমাকে যে সত্যি মানায় না
[+] 4 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
আঠারো
ওরা এরপরে একে একে সবাই বাড়ী চলে গেল সেই বিকেল অবধি সবাই ছিল প্রথমে গেল শুক্লা আমাকে বলল, ‘তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে নে দেব এরপরে কিন্তু পিকনিকটা আমাদের হচ্ছেই সবাই মিলে যাব খুব আনন্দ হবে, মজা হবেআর তাছাড়া আমাদের নতুন বন্ধু শিখাকে এবারে পেয়েছিপিকনিকে তো একাই মাতিয়ে রাখবেযা গানের গলা শুনলামআমার অনেকদিন মনে থাকবে।’
রনি আর মাধুরীও তারপরে উঠি উঠি করছেপিকনিকের আয়োজন করবার সব দায়িত্ব এখন ওরশুভেন্দু আর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘তাহলে আমাদের দীঘাতে যাওয়াই ঠিক হলঅবশ্য মন্দারমনিটা হলেও মন্দ হত নাতবে দীঘা দীঘাইঅমন সুন্দর ঝাউবন কোথায় পাওয়া যায়? একটু মজা করে বলল, আচ্ছা আমরা সবাই যদি যে যার জুড়ীকে নিয়ে ঝাউবনের আড়ালে চলে যাই, শুক্লা তাহলে একা একা কি করবে?’
 
শিখা আর বিদিশা কথাটা শুনে দুজনেই খুব লজ্জ্বা পেয়েছেমাধুরী ধমক দিয়ে রনিকে বলল, নাহ্তোমার না সব কিছুতেই ফাজলামীশুক্লা শুনলে কি ভাববে?
শুক্লা অবশ্য তখন চলে গেছেআমি মজা করে বললাম, ‘তুই বরং মাধুরীকে নিয়ে ঝাউবনের আড়ালে যাসআমরা কিছু মনে করবো নাআমাদের না গেলেও চলবে।’
 
এবার মাধুরী একটু লজ্জ্বা পেলোশুভেন্দু বলল, ‘ওসব পরে হবেআগে তো আমাদের যাওয়াটা হোকসব থেকে আগে দেবের সুস্থ হওয়াটা দরকারওখানে গিয়ে আবার শরীর খারাপ হয়ে গেলে সবই মাটি।’
 
আমি বললাম, ‘তোরা চিন্তা করছিস কেন? আমি তো সুস্থ হয়েই গেছিতোরা এসেছিস, এতেই আমি ভাল হয়ে গেছিআর তাছাড়া বিদিশা তো এসেই গেছেআমার আবার চিন্তা কি?’ -বলেই আমি বিদিশার দিকে তাকালামএবার দেখলাম বিদিশা লজ্জ্বায় মাথা নিচু করে রয়েছে
 
রনি চলে গেল মাধুরীকে নিয়েশুভেন্দুও যাব যাব করছেআমি বললাম, তুই ও চলে যাবি?
শুভেন্দু হেসে বলল, আজ্ঞা হোক এবার আমি আমার প্রেয়সীকে তাহলে পৌঁছে দিয়ে আসি-বলেই ও শিখার দিকে তাকালো
শিখা হেসে বলল, ‘আমি তো গাড়ী নিয়েই এসেছিবলোতো তোমাকে ড্রপ করে দিতে পারি আমাকে আর পৌঁছে দিতে হবে না উহু
শুভেন্দু বলল, ‘ভাগ্যিস আমি গাড়ী নিয়ে আসিনি নইলে এমন সুযোগ মাঠে মারা যেতকেউ কি আর হাতছাড়া করে?’
আমার জীবনটা যেন আবার সেই কলেজের জীবনে ফিরে গেছে সেই হাসি আর গান আনন্দ আড্ডা বন্ধুদের না দেখতে পারলেই মন খারাপ করে
শিখা আমার পা ছুঁয়ে প্রনাম করলো বলল, আর্শীর্ব্বাদ করুন যেন জীবনের সব বাঁধাকে অতিক্রম করতে পারি আর আমি মনে প্রানে আবার আপনাদের দুজনকে একসাথে দেখতে চাই দেব আর বিদিশা যেন একটিই নাম একে অপরকে ভালবাসার জন্যই তৈরী হয়েছে
খুব ইমোশনাল হয়ে পড়ছি আমিশুভেন্দু বলল, আরে পাগল? মন খারাপ করছিস কেন? আমরা চলে গেলেও বিদিশা তো থাকছেই ও তো আজ তোর এখানেই থাকবে কি রে বিদিশা? থাকবি না?’

বিদিশা মুখ নিচু করে তখন ঘাড় নাড়ছে আমার মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে দেখে শিখা বলল, ‘এবারে একটু হাসুন নইলে আমরা যাই কি করে? এখন দিদি এসে গেছে অত মন খারাপ করলে কিন্তু চলবে না

 

আমি কোন কথা বলছি না শুধু ভাবছি, সত্যি মেয়েটা আজ এসে আমাদের সকলের মন জয় করে নিয়েছে এত সহজ, সরল কত সুন্দর আপন করে নিতে পারে সবাইকে জীবনে যতটুকু দূঃখ আমি ওই সর্বনাশা মিনুর জন্য পেয়েছি, সবই আমার কপালের দোষে শুভেন্দুকে অন্তত এই কষ্টটা কোনদিন পেতে হবে না আমি শতকরা একশোভাগ নিশ্চিতশিখা যখন উঠে গিয়ে বিদিশার সাথে আলাদা করে কথা বলছে, তখন আমি শুভেন্দুকে আবার কনগ্রাচুলেশন জানালামঅসাধারণ সিলেকশনের জন্য ওকে বাহবা দিলামশুভেন্দুও খুশি হল

 

ওরা সবাই চলে গেলআমি আর বিদিশা ঘরে তখন দুজনেদুজনের ফিরে পাওয়ার ভালবাসাকে ঘিরে আনন্দে বিহ্বলহাত বাড়িয়ে বিদিশাকে বুকের মধ্যে খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিল আমি জানি, মা এখন এঘরে আসবে নাখাওয়া দাওয়ার পর বিশ্রাম নিচ্ছে মায়ের ঘরেহাত বাড়িয়ে বিদিশাকে বুকে টানতেই বিদিশা বলল, ‘কে বলবে, বাবুর অসুখ হয়েছে? কত মন খারাপআর এখন আবার ঠিক সেই আগের মতন।’

আমি বললাম, আমার সব রোগ তো পেটেবুকে তো কোন রোগ নেইএখানে মাথাটা রেখে দ্যাখোএকটা ধকধক আওয়াজ শুনতে পাবে।’

 

বিদিশা মাথাটা রাখলো আমার বুকেকান পেতে কিছু শোনবার চেষ্টা করলোতারপর আমাকে বলল, ‘ইয়ার্কী হচ্ছে না? আওয়াজ হচ্ছে বললেই হলো?’

আমি বললাম, ভাল করে কান পেতে শুনতে হবেএ আওয়াজ চট করে সবার কানে পৌঁছোবে নাশুধুমাত্র দেব যাকে জান প্রান দিয়ে ভালবেসেছিলএখনও ভালবাসেসেই শুধু শুনতে পাবে।’

বিদিশা আবার কান পেতে শোনবার চেষ্টা করলোআমি বললাম, ‘শুনতে পাচ্ছো? ধুকপুকধক ধক।’

বিদিশা দেখছে আওয়াজ তো কিছুই কানে ঢুকছে নাউপরন্তু আমি ওকে আষ্ঠপৃষ্ঠে জড়িয়ে বুকের মধ্যে অদ্ভূত এক সুখানুভূতি অনুভব করছিকতদিন ধরে বুকটা শুধু খালি খালি লাগছিলএতদিন পরে আনন্দটা যেন কানায় কানায় পূর্ন হল।  ওকে জড়িয়েই রয়েছিছাড়ার নামগন্ধ নেই, ক্রমশ হাতের চাপ বাড়াচ্ছিবিদিশা টের পেলবুঝতেই পারলো আমার উদ্দেশ্যটা আসলে কি? হেসে বলল, ওহ্ বাবুর মতলবটা কি এবারে বুঝতে পেরেছিতলে তলে কেমন বদমায়েশী বুদ্ধিএই ছাড়ো না ছাড়ো বলছিমা যদি এখন এসে পড়ে?

আমি কিছুতেই ছাড়তে চাইছি নাবিদিশা বলল, ‘তোমার মতলবটা কি বলোতো? কি করতে চাইছো তুমি?’

 

বললাম, তোমার ঠোঁটে একটা চুমু খেতে চাইছিঅনেকদিন ধরে এই ঠোঁটটা ভালবাসার উষ্ণতা না পেয়ে পেয়ে শুধু শুকিয়েই গেছে একটা অভূক্ত প্রেমিককে এতক্ষণ ধরে শুকনো মুখে শুধু বসিয়েই রেখেছো দাও চুমু নইলে-

 

ক্রমশঃ-
 
[+] 5 users Like Lekhak is back's post
Like Reply




Users browsing this thread: 11 Guest(s)