Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#1
[Image: NsgjsDUL_o.jpeg]

[Image: rpfpnfaR_o.jpg]

জীবন যে রকম’ উপন্যাস লেখা শুরু করেছিলাম আজ থেকে প্রায় আট- ন বছর আগেশুরু করেও শেষ করে উঠতে পারিনিলেখার জগত থেকে হারিয়েই গেছিলাম জীবনের অনেক বাঁধা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আজ আবার ডায়েরী আর পেন নিয়ে বসেছি এই উপন্যাসের অনেক ঘটনাই বাস্তবে আমার জীবনের সাথে মিল প্রেমের উপন্যাস আমি আরো একটি লিখেছি দুটোই অসমাপ্ত ছিল ফিরে এলাম অসমাপ্ত উপন্যাস সমাপ্তি করণের ইচ্ছা নিয়ে তবে পাঠকদের জানিয়ে রাখি, শেষ টুকু পড়তে হলে, কাহিনীর শুরু থেকে আবার একবার পড়ে নিতে হবেকারণ দুটি অধ্যায়ের সংযুক্তিকরণ হয়েছে পুরোনো লেখার সাথেইসকলকে আমার নমষ্কার ও ধন্যবাদ জানাই। 
ইতি
লেখক
 
[+] 4 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2
[Image: 7SFR0C87_t.jpg]
এক
 
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনের মত খবরের কাগজটা তন্ন তন্ন করে খুঁজছিলামকিছুতেই পাচ্ছিলাম না মা বলল, ‘আজ তো খবরের কাগজ দেবে না রে খোকাকাল যে ছুটী ছিল তোর কি খেয়াল নেই?’ সত্যি তোকাল যে ছুটী ছিল একেবারেই ভুলে গেছি২৬শে জানুয়ারী, প্রজাতন্ত্র দিবসসর্বভারতীয় ছুটীআগামীকাল এই প্রত্রিকার কোন সংষ্করণ প্রকাশিত হবে নাপ্রথম পাতায় দেখেছি, কিন্তু একেবারেই সেটা মনে নেই
প্রতিদিনই সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে চা খেতে খেতে খবরের কাগজটা পড়িরোজ একবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কাগজ পড়ার অভ্যাসটা আমার চিরদিনেররাজনীতি থেকে খেলাধূলাকোথায় কি ঘটেছে, সব যেন একবার ভাল করে চোখ বুলোনো চাই ই চাইকাগজ পড়ে তারপর স্নানে ঢুকিঅফিসে যাওয়ার তাড়া থাকে বলে, লেখালেখিগুলো সকালের দিকে একদমই হয় নাতরকারীর সাথে দুটো রুটিমুখে কিছু দিয়েই অফিসের জন্য আমাকে তারপরে বেরোতে হয়এগারোটার মধ্যে অফিসে না ঢুকলে আবার বসের গালিগালাজ শুনতে হবে
ভাবছিলাম, স্নানটা তাহলে সেরে নেব কিনা? আজ একবার শুভেন্দুর বাড়ী যেতে হবেকি জানি, এতদিন পরে কেন আমাকে ডেকেছে শুভেন্দু? অফিস থেকে বেরিয়ে পিকনিক গার্ডেনে যেতে একঘন্টা সময় লাগবেশুভেন্দু বলেছে ‘‘ঠিক সাতটার মধ্যে আসবিতোর জন্য অনেক সারপ্রাইজ আছে।’’
পুরোন দিনের স্মৃতিগুলো এখনও যখন মনে পড়ে, ভালো লাগেসেদিনের সেই উচ্ছ্বল জীবন, আর আজকের কর্মব্যাস্ত জীবনের মধ্যে যেন কত ফারাকজীবন যেন বড়ই ম্যারমেরেচার্মিং ব্যাপারটাই নেইকোথায় যে হারিয়ে গেল সেই দিনগুলোমাঝে মাঝে ভেসে ওঠে সেই চেনা পরিচিত মুখগুলোশুভেন্দু, শুক্লা, সৌগত, মিনু আর রনিআর সাথে বিদিশা তো আছেই
জানি না ওরা এখন সব কোথায়বিদিশা বিয়ে করে মুম্বাই চলে গিয়েছিলওর স্বামী ওখানে ভালো কোম্পানীতে চাকরি করেশুনেছি খুব দামী ফ্ল্যাটে থাকে ওরাসৌগতও বিয়ে করলবউটা ভারী মিষ্টিমুখটা একেবারে প্রতিমার মতবিয়েতে আমাদের সবাইকে নেমতন্ন করেছিলসবাই আমরা গিয়েছিলামযায়নি কেবল বিদিশাসেদিন ওকে খুব মিস করেছিলামশেষবারের মতন দেখতে চেয়েছিলামসে সুযোগ আর হয় নিবিদিশা সৌগতকে কথা দিয়েছিল বিয়েতে আসবে, তাও আসেনিহয়তো আমারই জন্যবুকের মধ্যে চাপা এক দূঃখ নিয়ে গুমড়ে গুমড়ে অনেকদিন মরেছি বিদিশার জন্যভেবেছিলাম, শেষবারের মতন ওকে একবার দেখববিদিশাকে উইশ করবওকে বলব, ‘‘বিদিশা, তোমার বিবাহিত জীবন সুখময় হোকদেবকে চটকরে ভুলে যেতে তোমারও হয়তো কষ্ট হবে জানিকিন্তু কি করবে? এটাই তো জীবনআমিও তোমার স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে আর বাঁচতে চাই নাযা হয়েছে এটাকেই ভাগ্যের পরিহাস বলে আমি মেনে নেবোতুমিও তাই মেনে নাও।’’
 
সেদিন শুভেন্দু আমাকে বলেছিল, ‘‘সত্যি দেব, তোর জন্য আমার দূঃখ হয়মিনুটা যে কি করলসবকিছু জেনেও ও তোর ক্ষতিটা করলবিদিশা তোকে ভুল বুঝলযখন সত্যিটা জানতে পারলতখন অনেক দেরী হয়ে গেছে।’’
 
ভালবাসার খেসারত দিতে দিতে একদিন ভালবাসাটাই এভাবে মিথ্যে হয়ে যায়জানি বিদিশা আমাকে হয়তো ক্ষমা করে দেবেকিন্তু ওকে কি আমি সত্যি ভুলে যেতে পারব? কখনই নয়আমি তো প্রেম কি তাই জানতাম না জীবনেবিদিশাই শিখিয়েছিল হাতে হাত ধরেবৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কখনও কলকাতার রাজপথে, কখনও ভিক্টোরিয়ায়, কখনও ইডেন গার্ডেন এ কিংবা গঙ্গার পাড়ে, দুজনের ভালোবাসার একে অপরকে পাওয়ার আনন্দ এক অনুভূতি যেন এক আচ্ছন্ন করা তীব্র সুখ সেদিন বিদিশা আমাকে বলেছিল, ‘‘আমাকে ছাড়া ‘দেব’ তুমি কোনদিন সুখী হতে পারবে না জানি আর আমিও তোমার সঙ্গ ছাড়া কোনদিন সুখে থাকতে পারবো না জেনে রেখো বিদিশা যদি দেবকে কোনদিন কাছে না পায়, তাহলে বিদিশা মরে যাবে।’’
সেদিন বিদিশার চোখে মুখে ফুটে উঠেছিল স্পষ্ট এক স্বীকারোক্তিবিদিশার সেদিনের সেই কথাগুলো আজও আমার মনে আছেকিন্তু দুনিয়াটা এরকমইকেউ কারুর জন্য মরে নাঅথচ সবাই নাকি মরতে চায়এই আমি কেমন দিব্যি বেঁচে আছিবিদিশাও হয়তো তাইমরার কথা তুলে ভালবাসাটাকে সেদিন হয়তো আরো শক্ত মজবুত করতে চেয়েছিল বিদিশাকিন্তু ও আর আমি, কেউ আমরা ভালবাসাটাকে ধরে রাখতে পারিনিসন্দেহ, অবিশ্বাস বিদিশার মনটাকে ছাড়খাড় করে দিয়েছিলভেবেছিল, আমি বুঝি ওর প্রতি আর আসক্ত নইকলেজে আমাদেরই সহপাঠিনী ‘মিনু’ তখন আমার প্রেমে মত্তবিদিশার কাছ থেকে মিনু আমাকে ছিনিয়ে নিতে চায়যে কোন মূল্যে মিনু হাসিল করতে চায় আমাকেসেদিনের সেই বর্ষামুখর কালো রাতমিনু নির্লজ্জ্বের মতন একটা কান্ড করে বসলআর তা দেখে বিদিশাও হারিয়ে গেল আমার জীবন থেকেহারিয়ে গেল প্রেমপড়ে রইল কিছু টুকরো স্মৃতিজীবনের সেই ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো যদি অধ্যায়কারে লিখতে বসি, তাহলে একটা বড় উপন্যাস তো হবেইজানি না পাঠকরা সেটাকে আনন্দ সহকারে নেবেন কিনা? কিন্তু যদি কোনদিন সুযোগ হয়, সে উপন্যাস নিশ্চই আমি লিখবতবে নিজের জীবন কাহিনী লিখতে একটু কষ্ট তো হবে বৈকি
মা বলল, কি রে খোকা? জল গরম করবি না? নাকি এই ঠান্ডা জলেই চান করবিসর্দি লেগে যাবে যেসকালবেলা গানের রেওয়াজে অসুবিধে হবে
ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন একঘন্টা গানের রেওয়াজ করিএকথাটা বলা হয় নিক্ল্যাসিকাল গানের চর্চাটা যেটা শুরু করেছিলামআজও রয়ে গেছেবাবা বলতেন, পড়াশুনা ছাড়া, একমাত্র গানের মধ্যেই মা স্বরস্বতীকে পাওয়া যায়তোর গলা এত ভালো, রেয়াজ কোনদিন ছাড়িস নাবাবা আজ নেই, কিন্ত তাঁর কথাটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছিমনে পড়ে বিদিশা কলেজে আমার গান শুনেই কেমন পাগল হয়েগিয়েছিল আমার প্রতিও বলেছিল,তোমার গলা এত মিষ্টিমনে হয় ঠিক যেন মধু ঝরে পড়ছে গলা দিয়েপ্রথমে ও আমার গানের প্রেমে পড়েছিল, তারপর পড়ল আমার
শুধু বিদিশা কেন? অনেক মেয়েকেই গান শুনিয়ে তাদের মন জয় করে নিয়েছিলামতারা সবাই যে আমার সাথে প্রেম করতে চেয়েছিল তা ঠিক নয়আসলে বিদিশা জীবনে এসে যাওয়াতে, অন্যকারুর প্রেমিক হতে আমারো ঠিক মন চায়নিভালবাসা আর প্রেমটা ছিল স্বচ্ছ, গাঢ়একে অপরকে অঙ্গীকার করার মতনএকটা মেয়েকে ভালবেসে, তার জীবনটা নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে আমিও চাই নিপ্রেমের মধ্যে কোন দাগ ছিল নাআমার ভালোবাসায় কোন ছল ছিল নাপ্রগাঢ় ভালবাসায় কলঙ্ক যেটা এল, সেটা শুধু মিনুর জন্যমিনুও আমার গানের পাগল ছিলবিদিশাকে জব্দ করার জন্যই ও এই খেলাটা খেলল
 কলেজের পরে মিনুর সাথে অনেকবারই দেখা হয়েছেএই কবছরে মিনু যেন আরো অনেক পাল্টে গেছেওকে এখন দেখলে মনে হয়, পুরুষ ধরায় ও যেন গিনিসবুকে নাম তুলতে চলেছেআমার পরেও কত ছেলেকে ফাঁসানোর চেষ্টা করলসঙ্গী বদলানোর তাগিদে চার চারটে বিয়েও করলকিন্তু কারুর সাথেই সেভাবে কোনদিন একাত্ম হয়ে ঘর করতে পারল নামিনু বলতো, আমি এখনও রাইট পার্টনারটাকে খুঁজছিযেদিন পাবো, সেদিন আমি এই খেলাটা ছেড়ে দেবোবছর তিনেক আগে মিনুর সাথে শেষ দেখা হয়েছিল তখন ও যে লোকটার সাথে আমায় আলাপ করিয়েছিল,সেটা ওর ফোর্থ হাজব্যান্ডভদ্রলোক নাকি দুবাইতে অনেকদিন ছিলেনপয়সাওয়ালামিনু তাকে ফাঁসিয়েছে এবং দিব্যি ঘর করছে তার সাথেএরপরে অবশ্য মিনুর খবর আর জানিনাআর রাখতেও চাই না
শুক্লা মেয়েটা একটু অন্যস্বভাবেরসৌগতর সাথে ও কিছুদিন ভাব করল আমার আর বিদিশার মতনতারপর সৌগত বিয়ে করলশুক্লাও বিয়ে করে নিল আর একজনকেপরে শুনেছিলাম, সৌগতকে বিয়ে করা নিয়ে নাকি মত দেয়নি শুক্লার বাবা মাঅথচ ভাগ্যের এমনই পরিহাসএকবছর ঘুরতে না ঘুরতেই, শুক্লার সাথে ওর স্বামীর ছাড়াছাড়িএখন শুনেছি, শুক্লা নাকি একা থাকেসল্ট লেকে একটা ফ্ল্যাট কিনেছেব্যাঙ্কে ভালো চাকরি করে বলে লোন পেতে নাকি অসুবিধে হয় নিসৌগতর বিয়েতে শুক্লাও এসেছিলদেখলাম পুরোনো অ্যাফেয়ারটা ভুলে গেছে ওরা দুজনেইবিয়েবাড়ীতে শুক্লাকে পেয়ে সৌগত স্বাভাবিকশুক্লাও তাইযেন দেখে মনে হবে না এই দুজনেও আমার আর বিদিশার মতন হাত ধরাধরি করে ভিক্টোরিয়াতে ভিজেছিল একদিনসেদিন শুভেন্দু আমাদের চারজনকে দেখে হাসতে হাসতে ভিক্টোরিয়ার ভেতরটায় পুকুরটায় পড়ে গিয়ে কিছুতেই আর উঠতে পারে নাপরে জেনেছিলাম, ও জলকে ভীষন ভয় পায়, সাঁতার জানে নাআমাকে বলল, ‘‘কি করব? তোদের যা রকম দেখলাম, হাসতে হাসতে পা পিছলে পুকুরটার মধ্যে পড়ে গেলামজলের মধ্যে পড়ে গিয়ে দেখি, আর কিছুতেই উঠতে পারি না।’’
আমি আর সৌগত দুজনে শুভেন্দুর হাত ধরে ওকে টেনে তুলেছিলাম জল থেকেআসলে বিদিশা বৃষ্টিতে মাথা বাঁচানোর জন্য ওর শালোয়ারের ওড়নাটা আমার মাথায় দিয়েছিলওড়নার তলায় আমি আর বিদিশা তখন একটু একে অপরকে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করছিতাই দেখে সৌগত আর শুক্লাও তাই করতে লাগলশুভেন্দু গিয়েছিল বাদাম কিনতেফেরার পথে ওড়নার তলায় আমাদের চারজনকে চুমোচুমি করতে দেখে ও হেসে অস্থিরপ্রথমে আনন্দে কিছুটা নাচতে চেষ্টা করলতারপর হেসে একেবারে কুতিয়ে পড়ছেসেই সময়ই পা পিছলে একেবারে পুকুরের জলেআমি আর সৌগত ছুটে গেলামবিদিশা বলল, ধরো ধরো ওকে ধরোযা আজকে করলোসব আনন্দটাই মাটি হয়ে গেল
মনে পড়ে সেই সব দিনকত স্মৃতি আজও ভুলবার নয়আজও ভাবি পুরোনো দিনগুলোতে একবার যদি ফিরে যেতে পারতামযদি বয়সটা কমে গিয়ে আবার সেই কলেজের দিনগুলোর মতন হৈ চৈ আর মাতামাতিতে মেতে উঠতে পারতাম আনন্দ আছে, আছে হূল্লোরবাজী, ঘন্টার পর ঘন্টা ক্যান্টিনে কেটে যাওয়া, কফি হাউসের বড় টেবিলটাকে দখল করে দেদারে ঘন্টার পর ঘন্টা আমাদের প্রানখোলা আড্ডা মারাএছাড়া প্রতি শুক্রবার নতুন কোন ছবি রিলিজ করলে, অ্যাডভান্স টিকিট কেটে আবার দেখা চাইহিট ছবির গানগুলো আমি ক্যান্টিনে বসে গাইতামমাঝে মাঝে প্রিন্সিপাল ওপর থেকে নিচে নেমে আসতেনআমাকে বলতেন, ‘‘দেব তোমার গলা ভালো আমি জানি, তা বলে পড়াশুনাটাও তো মন দিয়ে করোসামনে বি এস সি ফাইনাল পরীক্ষাতুমি যে কি রেজাল্ট করবে, আমার যে তোমাকে নিয়ে বড় চিন্তা হচ্ছে।’’
আমি এক চান্সে বি এস সি পাশ করেছিলাম ঠিকইতবে কলেজ ছেড়ে দেবার পর ক্যান্টিনের ভেতরটা পুরো বদলে গিয়েছিলস্বরস্বতী পূজোয় একবার করে যখন যেতামতখন দেখতাম ক্যান্টিনের ভেতরে কাঠের টেবিলগুলো আর নেইওখানে সব বাঁধানো সিমেন্টের টেবিল হয়ে গেছেআসলে আমার গানের সাথে টেবিল বাজিয়ে এমন নাচানাচি হত, আওয়াজটা প্রিন্সিপালের ঘর পর্যন্ত পৌঁছে যেতআমাকে উনি বকা দিতেন, আবার ভালও বাসতেনকারন কলেজের প্রতিবছরের কালচারাল প্রোগ্রাম আমাকে বাদ দিয়ে যে হত নাঐ প্রোগ্রামে আমি নিজে গাইতাম সবার প্রথমেভাড়া করা যারা আর্টিস্টরা আসত, তারা একে একে সব গেয়ে চলে যেতকিন্তু আমাকে প্রোগ্রামের শেষেও অনেকের আবদার মেটাতে হতকিসব ছিল সেইসব দিনপুরোন দিনগুলোর কথা মনে পড়লে বড় অদ্ভূত লাগেভাবি মানুষের জীবনটা অনেক স্বল্প দৈর্ঘ্যেরআনন্দটা কম, কষ্টটা বেশী হয়তো সেই জন্যইশুভেন্দু বলেছিল, ‘‘তুই বড্ড বেরসিক হয়ে গেছিস দেবএকা একা থাকিস, মাঝে মধ্যে সময় কাটাতে আমাদের কাছে তো আসতে পারিসকি এক বিদিশাকে তুই ভালবেসে জীবনটা শুধু ওর স্মৃতিতেই কাটিয়ে দিলিমেয়েদের মন বোঝা যে বড় শক্তদেখতো আমাকে, কাউকে ভাল না বেসে কেমন দিব্যি আছি আমিভাগ্যিস বিদিশার মত আমার জীবনে কেউ আসেনিপ্রেম যারা করে তারা সব মুর্খ হয়পৃথিবীতে প্রেমের মত বোকামি আর কিছুতেই নেইতুই না মানলেও আমি এটা প্রবলভাবে মানিযারা তোর মত সারাদিন কেবল লেখালেখিতে ডুবে থাকে, তারাও দেখ, হয়তো তোরই মতনকাউকে ভালবেসে বিফল হয়ে এখন এটাকেই জীবনের সঙ্গী হিসেবে মেনে নিয়েছেমাঝে মধ্যে একটু আড্ডাতে তাই আয়ফুর্তীর আসর জমাইগল্পগুজব করিসাথে হূইস্কি কিংবা রাম অথবা ভদকা তো আছেইতুই এলে আমার রনির দুজনেরই খুব ভালো লাগবে।’’

 
[+] 4 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#3
শুভেন্দুর পিকনিক গার্ডেনের বাড়ীতে বেশ কয়েকবার গেছিআমার মত ও এখনো বিয়ে করেনিপ্রতি শনি রবিবার নিয়ম করে রনি ওর কাছে যায়কলেজের সময় থেকেই রনির সাথে শুভেন্দুর একটা আলাদা খাতির ছিলরনি বিয়ে করেছে শুভেন্দুরই বোন মাধুরীকেওদের এখন শালা জামাইবাবুর সম্পর্কমাকে পেলে দুজনেই মিনু আর বিদিশার কথা তুলে একটু হাসি ঠাট্টা মশকরা করতবিদিশাকে রনি একবার ঠাট্টা করে কলেজে বলেছিল, ‘‘দেবকে দেখে আমার খুব হিংসে হয়তুই কি দেখে দেবের প্রেমে পড়লি বলতো? কেন? পাত্র হিসেবে আমি কি খারাপ ছিলাম? তোকে রাজরানী করে রাখতামনে এবার দেবকে বাতিল করে দেকালীঘাটে গিয়ে দুজনে মালা দিইআর দেবকে বলি, বিদিশা তোর সাথে প্রেম করে ভুল করেছিল, এখন পস্তাচ্ছেতাই ওকে আমি বিয়ে করে নিলাম।’’
বিদিশাও কম যায় নারনিকে বলেছিল, ‘‘শুভেন্দুর বাড়ীতে কার টানে তুই যাস, সেকী আমি আর জানি না? শুধু শুধু মেয়েটার মাথা খাচ্ছিসআগে ওকে যে প্রতিশ্রুতি গুলো দিয়েছিস, সেগুলো পালন করার চেষ্টা করতারপর তোকে বলব, কেন আমি দেবের সাথে প্রেম করিসত্যিকারের ভালোবাসা দেব রাখতে জানেও যদি কাউকে কথা দেয়, সেকথা ও রাখতে জানে।’’
রনি বলেছিল, ‘‘দেবকে নিয়ে তুই এত আদিখ্যেতা করিস কেন বলতো বিদিশাপৃথিবীতে বুঝি দেবই একা ভালবাসতে জানেআমরা কেউ ভালবাসতে জানি না?’’
বিদিশা বলেছিল, ‘‘মাধুরীকে কি তুই সত্যি ভালবাসিস?’’
রনি বলেছিল, হ্যাঁ
 বিদিশা বলেছিল, ‘‘তাহলে আবার আমার পেছনে পড়ছিস কেন? তার মানে তোর ভালবাসাটা মেকীওর মধ্যে কোন স্বচ্ছতা নেইঠিক আছে শুভেন্দুকে আমি বলছি, ও ঠিক জুতো পেটা করবে তোকেবোনের সাথে প্রেম করামজা বার করে দেবে তোর।’’
সবই ঠাট্টার ছলনে কথাগুলো বলাবিদিশা জানতো, রনি ইয়ার্কী মারছে,  রনিও তাই কেউ কারুর কথা তখন গায়ে মাখেনি শেষ পর্যন্ত শুভেন্দু বোন মাধুরীকে বিয়ে করে রনি প্রতিশ্রুতি পালন করল আর বিদিশার বলা কথাগুলো আমি রাখতে পারলাম না জানি না হয়তো আমারই দোষে মিনুকে বিশ্বাস করেছিলাম মিনু সেই বিশ্বাসের মর্যাদা আমার রাখতে পারেনি শুধু কয়েকটা ভুলের দোষে বিদিশা আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেলএক এক জন আলাদা আলাদা মানুষের জীবন অন্যরকম হয়আমার জীবনটা যেন কি রকম
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#4
দুই
 
মা বলল, কি রে দেব? তুই কি আজকে অফিস যাবি না? সকালে উঠে লেখালেখি করতে শুরু করলি, অফিস যাবি কখন? নটা তো বেজে গেলএরপরে কখন চানে যাবি, আর কখন তৈরী হবিতোকে দেখে মনে হচ্ছে তোর আজ কোন তাড়া নেই
মাকে বললাম, না গো মাঅফিস তো যাবইআজ আবার শুভেন্দুর বাড়ীতেও একটু আমাকে যেতে হবেও বলেছে সাতটার পরে আসতেভাবছি অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা ওখানেই-
মা বলল, শুভেন্দু? কেনরে? হঠাৎ এতদিন পর?
কারনটা আমিও জানি নামাকে বললাম, ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, বলেনিশুধু বলল, তোকে ডেকেছি যখন ব্যাস আসতেই হবে আর কিছু আমি শুনতে চাই নাআজ তোকে আসতেই হবে উইথ আউট ফেলতোর জন্য এখানে অনেক সারপ্রাইজ আছে
শুভেন্দু বলেছে, অথচ আমি ওর ডাকে যাইনি, এমন খুবই কম হয়েছেশুভেন্দু আমাকে একসময় অনেক হেল্প করেছিলব্যাবসার আর্থিক ক্ষতিতে দেনায় একসময় ডুবে গিয়েছিলামশুভেন্দু আমাকে বেশ কিছু টাকা ধার দিয়ে তখন বাঁচিয়েছিলদেনাগুলো শোধ করেছি, ওকেও একটু একটু করে পুরোটা শোধ করেছিশুভেন্দুর করা উপকার জীবনে কোনদিন ভুলতে পারব নাএকমাত্র কলেজের পরে ওই আমার সাথে যোগাযোগটা রেখেছিলপিকনিক গার্ডেনে চারতলা ওদের বিশাল বাড়ীশুভেন্দুরা চার ভাইশুভেন্দু তার মধ্যে ছোটবড়ভাই ওকালতি করেন, মেজভাই ডাক্তারআর সেজ ভাইয়ের সাথে শুভেন্দু জয়েন্টলি প্রোমোটারি ব্যাবসা করেখুব অল্প সময়ের মধ্যে কয়েকটা ফ্ল্যাট বাড়ী তৈরী করে অনেক টাকা রোজজগার করে নেয়শুভেন্দুর একটি মাত্র বোন মাধুরীকে বিয়ে করল রনিএদিক দিয়ে রনি খুব লাকিআসলে রনিদের আবার বড়বাজারে বিশাল বিল্ডিং মেটারিয়ালের দোকানরনি যখন কলেজে পড়ে, তখন ওর বাবা দোকানটা চালাতোবিশাল ব্যাবসারনি ব্যবসার দায়িত্ব নিল কলেজ পাশ করার পরসেজভাই দীপেন্দু আগে থেকেই প্রোমোটারি লাইনে ছিলশুভেন্দু এবার যুক্ত হলব্যাবসায়িক এবং কলেজের বন্ধুত্বের গাঢ় সম্পর্করনি তারপর থেকেই শুভেন্দুর বাড়ীতে যাতায়াত শুরু করলমাধুরীকে দেখে রনির প্রেমতারপরেই বিয়েরনির বিয়েতে আমরা সবাই গিয়েছিলামবিদিশাও এসেছিলতার ঠিক পরের দিনই বিদিশা আমাকে ছেড়ে চলে যায়বৌভাতে বিদিশা যায় নিবলেছিল, ‘দেব’ যেখানে থাকবে, সেখানে কোনদিন যাব নাও ভীষন পাপীমিনুকে নিয়ে যা কান্ডটা ‘দেব’ করেছে, তারপর ওর মুখ দেখাটাও পাপআমি কেন যে ওকে ভালবেসে ভুলটা করেছিলাম, সেটাই এখন বুঝতে পারছি ‘দেব’ ই আমার চোখ খুলে দিয়েছে
 বৌভাতে আমিও যাইনিবিদিশার দূঃখে সারারাত অনেক কেঁদেছিলামছেলে হয়ে কোন মেয়ের জন্য কাঁদছিমা বলেছিল, তুই কি পাগল? যে বিদিশার জন্য এত কষ্ট পাচ্ছিস?
মাকে বলেছিলাম, মা কষ্ট কেন পাচ্ছি, তুমি বুঝবে নাপৃথিবীতে ছেলেরাই শুধু দোষ করে আর মেয়েরা বুঝি সব ধোয়া তুলসী পাতাবিশ্বাসটা অর্জন করতে যে অনেক সময় লেগে যায় মা, কিন্তু ভাঙতে একদিনও যে লাগে না এটা যেমন সত্যিতেমনি সত্যি আর মিথ্যের বিচার না করেই, কেউ কাউকে অবিশ্বাস করতে একমূহূর্তও সময় নেয় নাএটা কি সহজে মেনে নেওয়া যায়? বিদিশা কেন এমন করল? ও যদি সত্যিটা একবার আমার কাছে জানতে চাইত, তাহলে হয়তো-
 
বিদিশাকে মা যতবারই দেখেছে, বিস্মিত হয়েছেআমাকে বলেছে, নারে মেয়েটার মুখ চোখ খুব সুন্দরআজকাল তো এমন মেয়ে পাওয়াই যায় নাকি রূপ, সুন্দর মুখশ্রী ওরভগবান যেন আলাদা তুলি দিয়ে ওকে গড়েছেনওর দিকে তাকিয়ে থাকলে মনে হয়, কলেজে ওই বোধহয় সবচেয়ে সুন্দরীকেবল তোকেই ও শুধু ভালবেসেছেআমি বলতাম, মা, বিদিশা শুধু সুন্দরী নয়ওর মনটাও খুব ভালএকেবারে ফুলের মতন নরমবিদিশার পক্ষে আঘাত সহ্য করা তাই খুব কষ্টও বলে, ‘‘জানোতো দেব, তোমার কাছ থেকে কোনদিন তো আমি আঘাত পাব নাতাই তোমার সাথে প্রেম করতেও খুব নিশ্চিন্ত বোধ করিকি জানি অন্যের মনে কি আছে? তুমি খুব সরলতোমার এই সরল মনটাই আমার সবচেয়ে বেশী ভালো লাগেতাই তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি, ভাবি দেব বলে পৃথিবীতে বোধহয় একজনই পুরুষ আছে, যে বিদিশার মনটাকে বুঝবে, তাকে ঠকাবে নাকোনদিন বিদিশাকে ছেড়ে দেব চলে যাবে না।’’
কলেজে বিদিশা সবসময় শাড়ী পড়ে আসতকলেজ ছুটীর পরে আমরা দুজনে ঠিক দুঘন্টা একসাথে ঘুরতামকখনও কলেজ স্কোয়ারে, কখনও লেবুতলা পার্কেএছাড়া ছুটীর দিনগুলোতে ভিক্টোরিয়া, গঙ্গার পাড় তো আছেইবিদিশা বেশ কয়েকবার আমার বাড়ীতে এসেছেমা’র সাথে প্রথম যেদিন আলাপ করালামঢুপ করে মাকে একটা প্রনাম করে বসলমা ওর থুতনীতে হাত রেখে আশীর্ব্বাদ করে বলল, বাহ্ তোমার মুখটা তো খুব সুন্দরতুমি কি দেবের বন্ধু? না অন্যকিছু?
বিদিশা মুখ নিচু করে লজ্জায় হেসেছিলআমাকে পরে বলেছিল, তুমি খুব দুষ্টুমাকে বলোনি কেন? আমি তোমার কে?
বিদিশার গালে হাত রেখে বলেছিলাম, মা বাবাকে যেচে কিছু বলতে হয় নাওনারা দেখলেই সব বুঝতে পারেনমা যেমন তোমাকে দেখে বুঝে গেছে তুমি আমার কে?
বিদিশা একবারই আমাকে ওর বাসায় যেতে বলেছিলসেদিন ওর জন্মদিন ছিলতার আগে জানতাম না বিদিশারা খুব বড়লোকল্যান্সডাউনে বিশাল ওদের বাড়ীটা দেখে আমার মাথা ঘুরে গিয়েছিলরনি সেদিন টিপ্পনি কেটে আমায় বলেছিল, ওরেব্বাস, দেব, তুই কি লাকী রেবিদিশারা এত বড়লোক, আমরা কেউ তো এটা জানতাম নাকপাল করে তুই ই ওকে শুধু পেলিনা এর জন্য তোকে এবার একটা পার্টী দিতে হবে
পার্টি আমি দেবো কি? সেদিন যা এলাহী ব্যাপার দেখেছিলাম, আমার মাথার ঠিক ছিল নালোকে লোকারণ্যযেন বিয়েবাড়ীজন্মদিনেও এত অতিথির সমাগম হতে পারে, আমার ধারনা ছিল নাকম করেও চারশোর ওপরে অতিথিএলাহী খাবারের আয়োজনআমি জীবনে এরকম বার্থডে পার্টি দেখিনি
 অত বড় বাড়ীতে গাদা গাদা লোকের মধ্যে আমি যেন নেহাতই এক নগন্য অতিথিচুপচাপ এক কোনে দাঁড়িয়ে বিদিশাকে একদৃষ্টে দেখে যাচ্ছিলামও ঘোরাঘুরি করছিল, সবাইকে অ্যাটেন্ড করছিলকিন্তু কিছুতেই একবারও আমার কাছে এসে কথা বলছিল নাকারুর সাথে আমার পরিচয়ও করিয়ে দিচ্ছিল নাহয়তো আমাকে সেদিন পরীক্ষা করেছিল বিদিশাশুভেন্দুর সাথে একটা সিগারেট টানবো বলে সবে মাত্র বাইরে বেরিয়ে এসেছিএমন সময় বিদিশা বাইরে এসে আমাদেরকে বলল, ‘‘এখানে কি করছ? ও ফোঁকার জন্য বাইরে আসা হয়েছি বুঝি? এই শুভেন্দু চল শীগগীর ভেতরে চলকেক কাটা হবেতোদেরকে বাদ দিয়ে আমি কেক কাটতে পারছি না।’’ আমাকে বলল, ‘‘যেই একটু কথা কম বলেছি, অমনি রাগ হয়েছে বুঝি? চলো ভেতরে চলোবাবা মা দুজনেই তোমাকে দেখেছে দূর থেকেবলেছি, ‘দেব’ হচ্ছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ডদেখোতো ওর সাথে কথা বলে, তোমাদের মেয়ে যাকে ভালবেসেছে, সে একদম ঠিকঠাক হয়েছে কিনা?
বিদিশার বাবা মা আমার সাথে কথা বলবে? তার আগেই আমার হাত পা গুলো কেমন কাঁপছিলশুভেন্দু বলল, ‘এই দেব, নার্ভাস হয়ে গেলি নাকি? তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে বহূত টেনশনে পড়ে গেছিস চল চল ভেতরে চলকেক কাটা হবেবিদিশা নয়তো আমাদের জন্য অপেক্ষা করবেবাবা মার পর তোকেই ও ফার্স্ট কেকটা খাওয়াবেএমন সুযোগ কিছুতেই মিস করিস না।’’
বিদিশার মা বাবা খুব ভালদুজনেই খুব অমায়িককেক কাটার পর বিদিশা ঠিক আমার মুখে প্রথম কেকটা গুঁজে দিলতাই দেখে রনি আবার বলল, কিরে আমাদেরকেও খাওয়াশুধু দেবকে খাওয়াবি, আর আমরা বাদ?
সেদিন বিদিশার জন্মদিনে আমরা সবাই গিয়েছিলামশুধু মিনু বাদেশুক্লা এসেছিল একটু রাতের দিকেসৌগত, শুক্লা আসছে না দেখে ওর জন্য ছটফট করে মরছিলশেষ পর্যন্ত শুক্লা এলোতবে দেরীতেবলল, সরি গাইস্একটু লেট হয়ে গেলবাড়ীতে মার শরীরটা খুব খারাপহঠাৎই জ্বরআমি শুধু এলাম, বিদিশার জন্যও অনেক করে আসতে বলেছেআর যাই হোক বিদিশার কথা তো আর চট করে কখনও ফেলা যায় নাপার্টিটা অন্যকারুর হলে হয়তো আসতাম না
সেদিন অনেক রাত্রি অবধি বিদিশাদের বাড়ীতে ছিলামফেরার পথে সবাই মিলে একটা ট্যাক্সি ধরলামশুভেন্দু আর রনি এমন বদমাইশ, সৌগতকেও পটিয়ে নিয়ে, ট্যাক্সিভাড়াটা আমাকে দিয়েই দেয়া করালোফেরার পথে আবার দোকান থেকে তিনবোতল বিয়ার কিনলো ওরা তিনজনেসে পয়সাও আমি দিলামআমাকে বলল, ‘‘আজকি শাম, তোর আর বিদিশাকে নামএবার থেকে মাঝে মধ্যেই আমরা তোর আর বিদিশার খুশীতে পার্টি দেবোআর সে খরচা পুরো তুই বীয়ার করবিবিদিশার সাথে যতদিন তোর বিয়ে না হচ্ছে, এইভাবেই তুই আমাদের খুশি করে যাবন্ধুদের খুশি করলে, আমরাও তোকে আশীর্ব্বাদ করবপ্রেমটা তাহলে আরও জমাট বাঁধবে।’’
সত্যিই জমাট বেঁধেছিল আমার আর বিদিশার প্রেমটাপ্রথম প্রথম ওকে অবশ্য বেশী পাত্তা দিতাম নাএকদিন লাইব্রেরী রুমে বসে আছিদেখলাম বিদিশা ঢুকলো, তিনটে মেয়েকে সঙ্গে নিয়েআমি যে টেবিলটায় বসে বায়োলজী পড়ছি, ও ঠিক তার পাশের টেবিলটাতেই বসলআড়চোখে আমাকে দেখছেআমি বইয়ের মধ্যে চোখটাকে নিবদ্ধ করে বসে আছিমেয়েটাকে ক্যান্টিনে দেখেছি, বেশ কিছুদিন ধরেমূগ্ধ হয়ে আমার গান শোনেকিন্তু আজকে হঠাৎ লাইব্রেরী রুমে আমার পাশে বসে এখানে কি করছে?
 ও এভাবে আড়চোখে দেখছেই বা কেন আমাকে? মনে হল, কিছু একটা মতলব নিয়ে এসেছে মনে হয়কিছুক্ষণ বসে, আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে তারপর চলে গেলএকটু পরে শুভেন্দু এলো ওখানেওকে বললাম, মেয়েটাকে চিনিস?
শুভেন্দু বলল, কোন মেয়েটা বলতো?
-একটু আগে এখানে এসেছিলআমাকে দেখছিল আড়চোখেমেয়েটাকে কদিন দেখেছি ক্যান্টিনে দেখতে বেশ ভালো স্লিম ফিগার, লম্বা হাইট চোখ মুখও খুব সুন্দরকিন্তু আমার প্রতি ওর এত ছোঁক ছোঁক কেন? এত আগ্রহ নিয়ে দেখছিল, মনে হল-
শুভেন্দু বলল, কোন মেয়েটা বলতো? আমাদের ক্লাসের নিশ্চই নয়তাহলে তুইও বুঝতে পারতিসএ কলেজে সুন্দরী বলতে তো একজনই আছেতুই যা বর্ণনা দিচ্ছিস, তাতে মনে হচ্ছে, ফার্স্ট ইয়ারের ওই মেয়েটাকি যেন নামওকে আমিও দেখেছি একদিন, ক্লাসে এসে তোর খোঁজ করছিলতুই সেদিন কলেজে আসিস নি
আমি অবাক হলামবললাম, আমার খোঁজ করছিল? কে বলতো? ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছেএমন সুন্দরী মেয়ে এ কলেজে কে আছে? তুই কার কথা বলছিস?
শুভেন্দু বলল, প্রেমঘটিত কোন ব্যাপার মনে হচ্ছেএ মেয়েটা তোর প্রেমে পড়ল না তো? কি রে দেব? এতো লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট মনে হচ্ছে
কলেজে এত মেয়েআমি তো কারুর সাথে প্রেম করিনিশুভেন্দুকে বললাম, হেঁয়ালি ছাড়ব্যাপারটা জানতে হবেতুই খবর নিয়ে দেখতো মেয়েটা আসলে কে? দেব চটকরে কারুর সাথে ভীড়বে না
শুভেন্দু আমার কথা মত কাজ করলআমাকে বলল, তুই এখানেই বসআমি এখুনি আসছি
আমাকে লাইব্রেরী রুমে বসিয়ে রেখে ও চলে গেলফিরে এল আধঘন্টা পরেআমাকে এসে বলল, এই দেব, বিদিশা তোকে ডাকছে, চল আমার সঙ্গে একটু তিনতলায় চলও সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে আছেআমাকে বলল, ওকে একটু ডাকবে? বলো, আমি ওর জন্য এখানে অপেক্ষা করছি
আমি একটু বিরক্ত হলামশুভেন্দুকে বললাম, কেন? আমি যাব কেন? কে না কে বিদিশা আমাকে ডাকছে, ওর কিছু বলার থাকলে, ওকে বল, এখানেই আসতেআমি তো লাইব্রেরী রুমেই বসে আছি
শুভেন্দু ঠিক বুঝতে পারল নাআমাকে বলল, ‘‘যা বাবামহা হ্যাপাতো? তুই তো বললি, আমাকে যেতেও তোকে কিছু হয়তো বলতে চায়চল না আমার সঙ্গেতাহলেই বুঝতে পারবি।’’
আমি কিছুতেই গেলাম না শুভেন্দুকে বললাম, ছাড় ওকেছেড়ে দেপরে দেখা যাবেওর যদি দরকার থাকে, ও নিজেই আমার কাছে আসবেআমি যাব না
আসলে বিদিশাকে আমি খেলাতে চাইনিকিন্তু কেন জানি আমার মনে হয়েছিল, কলেজের মেয়েগুলো সব বন্ধু হিসেবেই ঠিকই আছেবেশী প্রেমের খেলা খেলতে গেলে মুশকিলএকেতো কলেজে এসে গান গেয়ে এমনই হীরো বনেছি, তাতেই পড়াশুনার বারোটা বাজছে তারপরে আবার প্রেমে পড়লে, পড়াশুনা একেবারেই ডকে উঠবেভালো চাকরি পাওয়া তো দূর কেরানীর চাকরীও তখন জুটবে না কপালেঅতএব এসব বিদিশা টিদিশাকে যত দুরে রাখা যায় ততই মঙ্গল
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#5
শুক্লা আমার খুব ভালো বন্ধু ছিলক্লাসে ও আর আমি পাশাপাশি বসতামশুক্লা আমার কাছ থেকে ফিজিক্স এর নোট নিতআমার ডায়েরীর পাতাগুলো উল্টে পাল্টে দেখতভালো কিছু চোখে পড়লে, সঙ্গে সঙ্গে টুকে রাখতোএদিকে সৌগত বেশ কিছুদিন ধরেই শুক্লার সাথে লাইন মারার চেষ্টা করছেশুক্লা কিছুতেই পাত্তা দিচ্ছে নাএকদিন কলেজে এসে শরীরটা আমার ভীষন খারাপ হলগরমে প্রচন্ড বমি হচ্ছেচোখমুখ লাল হয়ে যাচ্ছেপ্রায় অজ্ঞান হবার মত অবস্থা হলসবাই চোখে মুখে জল দিয়ে আমাকে ক্যান্টিনে একটু ছায়ার মধ্যে নিয়ে গেলশুক্লার কোলে মাথা রেখে তখন শুয়ে আছিশুক্লা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেতাই দেখে বিদিশাও বুঝে গেল, আমি বোধহয় শুক্লার সাথে নিশ্চই প্রেম করিওর আমার প্রতি জেদটা আরো বেড়ে গেল
আমি বিদিশাকে সাতদিন, আমার কাছে ভীড়তে দিইনিতারপরই এল সেইদিনটাসেদিন ছিল কলেজে সরস্বতী পূজোর দিনবিদিশাকে দেখলাম, ঠিক আমার পেছনেই এসে দাঁড়িয়েছে একটা ঘি রঙের লাল পেড়ে শাড়ী পড়েছে কপালে লাল টিপ সরস্বতী পূজোয় মেয়েরা যেমন সাজে, তার থেকেও সুন্দর লাগছে ওকে আমাকে বলল, ‘‘তুমি খুব ভালো গাও তোমার গান শুনেছি, আমি মুগ্ধআজকে তো সরস্বতী পুজোআমাদের গান শোনাবে না?’’
আমি ভাল করে একবার তাকালাম বিদিশার দিকেওকে কয়েক পলক দেখলাম বিদিশার ঠোঁটের কোনে হঠাৎই এক চিলতে হাসি দেখলাম মনে হল, মেয়েটা যেন কিছু আশা করে রয়েছে আমার কাছ থেকে পাবে বলেগান শোনাব না ওর আমাকে ভাললাগাটাকে মেনে নেবো, কিছুই বুঝতে পারছি নাআমার হাতে হঠাৎই একটা চিরকূট গুঁজে দিয়ে বিদিশা বলল, ‘আমি এখানে কিছু লিখে রেখেছিতোমাকে দেবার জন্যপড়ে দেখো।’ বলেই এক নিমেষে ছুটে পালিয়ে গেল ওখান থেকে
আমি ওর গুঁজে দেওয়া কাগজটা হাতে নিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছিএকটু পরে শুভেন্দু এল ওখানেআমাকে বলল, কিরে? কি বলছিল বিদিশা? তোকে কিছু বলল?
আমি বললাম, না সেরকম কিছু নাএকটা কাগজ শুধু গুঁজে দিয়ে গেল হাতেবলল, তোমার জন্য লিখেছি, এটা পড়ে দেখো
শুভেন্দু বলল, খুলে দেখআমার মনে হচ্ছে নিশ্চই এটা প্রেমপত্রবিদিশা তোকে মনে হয় প্রেম নিবেদন করেছেজিও বেটা, আজ থেকে তোমার নাম প্রেম কুমার
[+] 1 user Likes Lekhak is back's post
Like Reply
#6
তিন
 
এটা ঠিক, আজকাল যেভাবে প্রেম ভালোবাসা হয়, আমাদের সময় প্রেমটা এরকম ছিল নাতখন প্রেমটা দানা বাঁধতে একটু সময় নিত একটু বোঝাপড়ার জন্য সময় লাগত বিদিশা আমাকে চিঠিতে দুলাইন লিখেছিল, ‘‘আমি তোমাকে ভালবাসি তুমিও কি তাই?’’
 
মেয়েটাকে যতবারই দেখেছি আমার মন্দ লাগেনিরূপ আছে, গুনও আছে নিশ্চইকিন্তু ওকে পাবার জন্য আমার মধ্যে তখনও ব্যাকুলতাটা আসেনিসেইভাবে ছটফটানিটাও অনুভব করিনিমনে হয়েছিল এতই কি সহজ? ও বলল, আমাকে মেনে নিতে হবে? সত্যি ভালবাসে কিনা একবার যাচাই করে নেওয়া তো দরকার
 শুভেন্দু বলল, ‘দেব’ তুই না দিনকে দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছিসআরে ও তোকে প্রেম নিবেদন করলওর ভালোবাসাটাকে অ্যাকসেপ্ট করকলেজে সবাই তোকে নিয়ে মাতামাতি করে বলে, তুই একটু দেমাকী হয়েছিসদেখতো মেয়েটা কেমন সরল, সুন্দরপুরুষেরা চিরদিন এমন নারীকেই ভালবেসে এসেছে যার স্নিগ্ধ কোমলতা ব্যাটাছেলেদের শান্তি দিতে পারেবিদিশার মত মেয়ে আর একটা খুঁজে পাবি তুই?
ঠিক ঐ মূহূর্তে কোন চিন্তা আমার মাথায় এল না ভাবলাম,শুভেন্দু যা বলছে, তার ঠিক কতটা সত্যি? সুন্দরী নারী বিদিশা আমার মধ্যে কি এমন ও দেখল, যে আমাকে ওর ভালো লেগে গেল
শিয়ালদহর কাফেটোরিয়াতে পরের দিন আমরা সবাই বসে আছি ঠিক ঐ সময়ে বিদিশাও ওখানে এসে উপস্থিত হলো শুভেন্দু, রনি, সৌগত আর আমি চারজনেই আমরা বিদিশার মুখের দিকে তাকালামওরা তিনজনে বিদিশাকে দেখে খুব খুশি হলকিন্তু আমি ভীষন অস্বস্তিতে পড়ে গেলাম
শুভেন্দু বলল, কি রে দেব? তুই কি ওকে খেলাচ্ছিস?
আমি কোন জবাব দিচ্ছি না
রনি কিছু জানে নাশুভেন্দুকে বলল, কি হয়েছে রে শুভ? দেব কাকে খেলাচ্ছে?
শুভেন্দু বলল, ঐ যে মেয়েটাকে দেখছিস, দেবের খোঁজে এখানে পর্যন্ত চলে এসেছেদেব ওকে খেলাচ্ছে
আমি রেগে গেলামবললাম, কি যাতা বলছিস? আমি কাউকে খেলাচ্ছি না
রনি বলল, কি হয়েছে ব্যাপারটা? আমাকে খুলে বল দেখি
শুভেন্দু, বিদিশার চিঠি দেবার ব্যাপারটা ওকে সব খুলে বললতাই শুনে রনি বলল, ওরে দেবএই ছিল তোর মনে? ঠিক আছে তুই যদি ওর সাথে লাইন মারতে না চাস, তাহলে বল, আমিই লাইন মারা শুরু করছি
বিদিশাকে আমাদের মাঝে রনিই ডেকে বসালোততক্ষণে শুক্লাও ওখানে এসে উপস্থিতবিদিশা আমারই উল্টোদিকের চেয়ারটায় এসে বসেছেও মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকানোর চেষ্টা করছেআমি মুখ নিচু করে বসে আছিরনি বলল, এই যে বিদিশা, আমাদের এই বন্ধু মাননীয় শ্রী দেব মহাশয় কে দেখছো তো? ইনি খুব লাজুক প্রকৃতিরইনি যখন গান গেয়ে সবাইকে মাতিয়ে রাখেন, তখন ইনার মুখ দিয়ে মধু ঝরে পড়েকিন্তু প্রেম নিবেদনে ইনি একটু কাঁচাইনার গলা দিয়ে তখন আওয়াজ বেরোয় নাকন্ঠস্বর রোধ হয়ে থাকেজিভে আড়ষ্ঠতা এসে যায়তুমি একে বাদ দিয়ে বাকী তিনজনের মধ্যে কাউকে পছন্দ হয় কিনা দেখোতো? দেব মনে হচ্ছে ঠিক খেলতে চাইছে না তোমার সঙ্গে
ইচ্ছে হচ্ছিল রনির পাছায় ক্যাঁত করে একটা লাথি মারিও বিদিশার সামনে আমাকে জেনেবুঝেই বেইজ্জ্বত করছে, সেটাও বুঝতে পারছিকোন কথা না বলে আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে বিদিশার হাতটা ধরলামওকে বললাম, এসো তো তুমি আমার সঙ্গেএসব ফালতু ছেলেদের সাথে মুখ লাগিয়ে কোন লাভ নেই চলো আমরা বরং আলাদা কোথাও গিয়ে বসি
বিদিশার হাত ধরে ওকে আমি ক্যাফেটরিয়া থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছিপেছনে একবার তাকিয়ে দেখলাম, রনি হাসছেওকে দেখে বাকীরাও হাসছেরনি হাসতে হাসতে বলল, এই তো গুরু জেগেছেকেয়া বাত কেয়া বাতএই না হলে দেবতরপরে আবার হাসতে হাসতে বলল, সবই যখন জানো, শালা ন্যাকামো করছিলে কেন? কচি খোকা
 শুভেন্দু হাসতে হাসতে বলল, যাঃ এই বিদিশা এলোআর অমনি তুই আমাদের ভুলে গেলি? তুই কি স্বার্থপর রেদেব যাস না আমাদের ছেড়েতাকা, একবার তাকাপ্লীজ প্লীজ
আমরা বাইরে বেরিয়ে এসেছিওদের হাসির আওয়াজটা তখনও ভেতর থেকে আসছিলবিদিশা একটু দূরে গিয়ে বলল, তোমার চিঠিটা আজকেই পেয়েছিশুভেন্দু আমার হাতে তোমার চিঠিটা দিয়ে বলল, দেব তোমাকে কাফেটরিয়াতে আসতে বলেছেএই নাও দেবের চিঠি
আমি বললাম, কই দেখিচিঠি? কই আমি তো লিখিনি তোমাকে
বিদিশা একটা কাগজ দিল আমার হাতেখুলে দেখলামতাতে আমারই নামকরে বিদিশাকে চিঠিটা লেখা হয়েছে,
 
বিদিশা, আমি জানি না, তোমার ভালবাসাকে আমি কিভাবে গ্রহন করব? আমার মত অতিসাধারন একটা ছেলেকে তুমি ভালবেসে ফেলেছমুখ ফুটে আমিও এতদিন বলতে পারিনিআমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি বিদিশাএ জীবনে কেন, জনমে জনমে আমি তোমাকে চাইআমার ভালোবাসা তুমিও গ্রহন করোআর আজকে কাফেটরীয়াতে অবশ্যই এসোআমি ওখানে তোমার জন্য অবশ্যই অপেক্ষা করবইতি তোমার দেব
 
চিঠিটা পড়ার পর আমি আর বিদিশাকে কিছু বলিনিওকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে গিয়েছিলাম কলেজ স্কোয়ারেদুজনে নিরিবিলিতে বসে অনেক্ষণ কথা বলেছিলামফিরে এসেছিলাম সন্ধে হবার পরতারপর পরপর দুদিন শুভেন্দু কলেজে আসেনিযেদিন এসেছিল, ওকে খুব তাড়া করেছিলামকলেজ গেট থেকে একেবারে বড় রাস্তার মোড় পর্যন্তআমার তাড়া খেয়ে কান ধরে শেষ পর্যন্ত হাসতে হাসতে শুভেন্দু বলেছিলমাফ করে দে বসএটা তো করতেই হতনইলে তোদের প্রেম পর্বটা যে শুরু হতে হতেও বাকী থেকে যেতবিদিশারও আফশোস থাকত নাআর আমাদের তো নয়ই
আসলে ওরা সবাই এটা জানতশুভেন্দু সবাইকে বলে রেখেছিলএমনকি শুক্লাকেওসেদিন কাফেটরিয়াতে ওরা কেউ বুঝতে দেয়নি আমাকেএমনকি রনিও নয়আজ মনে পড়ে সেসব কথাআর ভাবি বন্ধুত্বটা আমাদের এমনই ছিল
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#7
চার
 
বিদিশাকে নিয়ে আমি অনেক ঘুরেছি ওর সাথে বাসে করে যখন ঘুরতাম, বাসের ঝাঁকুনিতে মাঝে মাঝে বিদিশা আমার গায়ের ওপর টলে পড়ত মজা পেয়ে আমি একহাত দিয়ে ওকে বুকে টেনে নিতাম বিদিশা আমার কাঁধে মাথা রাখতো আমার শরীরে হেলান দিয়ে দাঁড়াতো সারা রাস্তায় আমাকে ওর বড় আপন মনে হত বিদিশার মনে হত ও যেন আমার ওপর নিশ্চিন্তে নির্ভর করতে পারে খুব কাছ থেকে ও বুক ভরে নিঃশ্বাস নিত বিদিশার কোমরে হাত দিলে ওর সারা শরীরটা শিরশির করে উঠত এ যেন এক অদ্ভূত অনুভূতি বিদিশা বলত, ‘‘তুমিই আমার জীবনের একমাত্র প্রেমিক দেব প্রেমের মানে কি তা, আমি তোমার মধ্যেই খুঁজে পেয়েছি’’ ভিক্টোরিয়ায়, গঙ্গার ঘাটে নিরিবিলিতে যখন ওকে জড়িয়ে ধরতাম, বিদিশা বলত, ‘‘তোমার মধ্যেই আমার শরীর এখন হারাতে চায় দেব একজন পুরুষের শরীরেই নারী তার নারীত্বকে আবিষ্কার করেতাই আজ তোমার শরীরের অস্তিত্বের মধ্যে আমার শরীরের উপস্থিতি খুঁজে পাচ্ছি।’’
 
বিদিশাকে নিয়ে প্রথমে যেটুকু আমার দ্বিধা আর সংকোচ ছিল, বিদিশাই সেটা কাটিয়ে দিলদূর্বার, দুরন্ত প্রেমের মধ্যে দিয়ে আমরা দিনগুলো অতিবাহিত করছিএকদিন বিদিশা এল বাড়ীতেসেদিন মা ঘরে ছিল নাআমি কলেজে যাইনিশরীরটা একটু খারাপবিদিশা  কলেজে এসে আমাকে দেখতে পাচ্ছে না বলে পাগলের মত খোঁজাখুঁজি করছে শুভেন্দুর কাছ থেকে ও জানলো, আমার শরীর খারাপআমি কলেজে না গিয়ে বাড়ীতেই এখন বসে রয়েছি
শুভেন্দু বিদিশাকে বলল, দেবকে পেতে গেলে তোকে এখন ওর বাড়ীতে যেতে হবেযা, দেখ গিয়ে হয়তো তোরই জন্য পথ চেয়ে বসে আছে
বিদিশা এলআমি কোনরকমে বিছানা থেকে উঠে দরজা খুললামদেখি বিদিশা দাঁড়িয়ে
-কি ব্যাপার? তুমি কলেজে যাও নিশুভেন্দু বলল, তোমার শরীর খারাপআশ্চর্য তো তুমি! আমাকে একবারও বলোনি?
বিদিশাকে ঘরের ভেতরে ডেকে নিলামও বলল, মা নেই বুঝি? তুমি একা?
আমার কপালে হাত রাখলো বিদিশাবলল, জ্বর? সর্দি হয়েছে? ওষুধ খেয়েছ?
আসতে আসতে আমার বুকের কাছে এসে দাঁড়ালো বিদিশা
আমি বললাম, শরীরটা ভালো নয়তাই কলেজে যাইনিএকটু জ্বরও জ্বরও এসেছেমা নেইআজ সকালেই মাসীর বাড়ী গেছেতাই আমি একা
চকিতে মুখ তুললো বিদিশাতারপর ডায়েরীটা টেবিলের ওপর রেখে, হঠাৎই আছড়ে পড়ল আমার বুকেসমস্ত শরীর থরথর করে কেঁপে উঠলোআমি দেখলাম বিদিশা পাগলের মতন আমার কাঁধে গলায় মুখ ঘষছেপায়ের পাতা থেকে হাতের আঙুল অবধি একটা ‘কি জানি কি’ বিন্দু বিন্দু হয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছেআমি বিদিশার কাঁধে হাত রাখলামদুহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে ওআমি দাঁড়িয়ে থেকে টলতে লাগলামতারপর বিদিশার মুখ দুহাতে অঞ্জলির মত করে ওপরে তুললাম দেখলাম বিদিশার চোখে জল
 এখন এই নির্জন দুপুরে, আমারই ঘরেতে চারদেয়ালের মধ্যে বিদিশা আমাকে জড়িয়ে রেখেছে।  আমার সমস্ত ছেলেবেলা, কৈশোর থেকে টেনে এনে ছুঁড়ে দিল যৌবনের রহস্যময় বিস্ময়েআমার চোখে চোখ রাখলো বিদিশাভিজে চোখের পাতায় এত কথা লেখা থাকতে পারে আমি কখনও জানতাম নাদুহাতে ওকে জড়িয়ে ধরলামতিল তিল করে বুকের মধ্যে একটা বোধ ছড়িয়ে যাচ্ছেএরই নাম কি সুখ! একটা ঘোরের মধ্যে চাপা স্বরে আমি বলে উঠলাম, ‘বিদিশা আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি’
আমার বুকের মধ্যে একটা গাল চেপে বিদিশা বললো, জানি, জানি, জানি!
তুমি কষ্ট করে আমার জন্য এলে?
কেন আসবো না? কেন?
ও যেন একটু একটু করে দুলছিলোওর দুহাতের মধ্যে জড়িয়ে থাকা আমার শরীরটায় সেই দুলুনি লাগলোবিদিশার মসৃণ মুখ, ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসির ঢেউ- আমি মাথা নিচু করলাম, মুখ নামালামআমার চোখের সামনে একশ নন্দন কাননবিদিশা চোখ বুজে ফেললোমনে হল, ওকি ভয় পাচ্ছে? ও কি চাইছে না? আমি দেখলাম কি একটা আশ্চর্য মায়ায় বিদিশা ক্রমশ সুন্দর থেকে সুন্দর হয়ে উঠছে আরোবিদিশার ঠোঁটে ঠোঁট রাখছিলাম আমিবিদিশার গরম নিস্বাস লাগছে মুখেআর ঠিক সেই সময় এক ঝটকায় মুখ সরিয়ে নিল বিদিশাতারপর আমার কাছ থেকে সরে গিয়ে হুহু করে কেঁদে ফেললোআমাকে বলল, আমি খারাপ, খুব খারাপতোমাকে আমি ঠকিয়েছি
খুব নাড়া খেলে যেমন সাড়া থাকে না আচমকাআমি প্রথমে কিছুই বুঝতে পারলাম নাওর কাছে গিয়ে ওর কাঁধে হাতটা রাখলামবিদিশাকে বললাম, কি যাতা বলছ?
‘তুমি আমাকে খুব বিশ্বাস করো না? বিদিশা মুখ ফেরাচ্ছিল না
আমি তোমাকে শুধু বিশ্বাস করি না বিদিশা, আমি তোমাকে খুব ভালবাসি
অথচ দেখো, তোমার কাছে আমি সত্যিটা লুকিয়েছি
কি লুকিয়েছো বলবে তো?
তোমার আগে আমি একটা ছেলেকে ভালবাসতাম দেব, এ সত্যিটা তোমাকে একবারও বলা হয় নিতুমি কি আমাকে ক্ষমা করে দেবে ‘দেব’?
সেদিন বিদিশার সরল মুখটা দেখে আমার মনে হয়েছিল, ও তো এই কথাটা আমার কাছে চেপেই যেতে পারতো? সত্যিটা না বললে, কি এমন হত? আমি তো ও না বললে কোনদিন জানতে পারতাম না
বিদিশাকে বললাম, যাকে ভালবাসতে সে এখন কোথায়?
বিদিশা বললো, সে নেই আমাকে ছেড়ে সে চলে গেছে
অবাক হয়ে বললাম, কেন?
বিদিশা বললো, ভালোবাসাটা একতরফা ছিল, তাইআমি ওকে ভালোবাসতামকিন্তু ও আমাকে সেভাবে ভালোবাসেইনি কোনদিনছেড়ে যাওয়াতে খুব কষ্ট পেয়েছিলামআমার বিশ্বাসটাকে চূর্ণ করেছিল সেসেভাবে মর্যাদা দেয় নি আমাকে
দেখলাম ওর চোখে এবার বেশ খানিকটা জলবিদিশাকে বললাম, আমি কিন্তু তোমাকে ছেড়ে যাব না বিদিশাতুমি আমাকে সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করতে পারো
 সত্যি বলছো?
একদম সত্যি
কথাটা বলার পরই বিদিশাকে দেখলাম, ও দুহাতে শিশুর মতন জড়িয়ে ধরল আমাকেতারপর আমার ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ালোযেন চমকে উঠলাম আমিএরকম হচ্ছে কেন? শরীরের সব রক্ত আচমকা টলে উঠলো কেন? চন্দনের ফোঁটা পড়িয়ে দেবার মত বিদিশা আমার কপালে, চোখের পাতায়, গালে, চিবুকে-এখন সারা মুখে ছোট ছোট চুমু খেয়ে যাচ্ছেশুধু নিষিদ্ধ করে রাখছে ঠোঁটটাআমার সমস্ত শরীর শক্ত হয়ে গেলোঅনুভব করলাম, বুকের বাতাস এত ভারী কেন? শেষ পর্যন্ত তিন বছর না খাওয়া কোন ভিখিরীর মত ঝাঁপিয়ে পড়লাম বিদিশার ঠোঁটেদুটো নরম উষ্ণ অথচ সিক্ত জবাফুলের মত ঠোঁট পাগলের মত নিতে চাইলাম নিজের মত করেঅস্ফুট আওয়াজ করে উঠলো বিদিশা, উঃ একেবারে রাক্ষসলাগে না বুঝি।’’ একটু থমকে গেলাম আমিমুখ তুলে দেখলাম বিদিশা হাসছেআমাকে বলছে, ‘উম আমাকে নাও, নাও, নাও।’
হঠাৎই শরীরে মনে হল, আমার আর জ্বর নেইঅসুস্থ শরীরটাকে যেন সুস্থ করে দিয়েছে বিদিশাএকটা ঝড়ো বাতাসের মত আমি বিদিশাকে বুকে তুলে নিলামআমার অগোছালো বিছানায় বিদিশাকে শুইয়ে দিলাম যত্ন করেছেলেমানুষের মতন বিদিশা তখন আমায় দেখছিলখাটের পাশে হাঁটু গে’ড়ে বসে আমি বিদিশার হাতে মুখ রাখলামকি নরম জলের মত গন্ধ বিদিশার হাতে, সমস্ত ছেলেবেলা মনে করিয়ে দেয়আস্তে আস্তে মুখ নামালাম ওর হাতের ওপরের দিকে, বাজুতেবিদিশার বুকের কাছে মুখ রেখে ও কৃপণের মত চুপ করে বসে থাকলাম খানিকআজ অবধি কোন যুবতী মেয়ের বুককে এত কাছ থেকে দেখিনিবিদিশার বুক কি নরম?
একটা হাত আমার মাথায় রেখেছে বিদিশাআঙ্গুলগুলো আমার চুলের ভেতরে খেলা করছেবিদিশার বুকের মধ্যে থেকে মন কেমন করা সুবাস উঠে আসছে আমার নাকেএই শাড়ী আর অন্তর্বাসের আড়াল খুললেই বিদিশার সমস্ত যৌবনটা আমার সামনে এসে দাঁড়াবেঅথচ ওটা খুলতে আমার কেমন যেন ভয় হচ্ছিলোএকবার আড়াল ঘুচে গেলেই সব যে দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে যাবেবিদিশা তখন কি ভাববে?
আমি আসতে আসতে মুখ নামালাম নিচেবিদিশার কোমর পেট কি নরম-আঃ
বিদিশা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেএখন ওর ঠোঁটদুটো ঈষৎ খোলাচিকচিকে কুন্দ ফুলের মত সাদা দাঁত দেখা যাচ্ছেজিভের ডগা দাঁতের গায়ে সামান্য নড়ছেবিদিশা আমাকে ডাকলো, ‘এই শোনো।’
মুখ তুললাম আমি বিদিশার গলার স্বরটা কেমন অনরকম
‘এখানে আমার পাশে এসে শোও।’ হাত বাড়িয়ে আমাকে ডাকলো বিদিশামূহূর্তে পরিবেশটা কেমন অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে, টের পাচ্ছিলাম আমিএই বিদিশা কেমন এক আকুতি নিয়ে আমাকে ডাকছেআমার ভেতরে একটা শিরশিরে অনুভূতি ছড়িয়ে দিচ্ছেউঠে গিয়ে আমি বিদিশার পাশে শুয়ে পড়লামবিদিশা আরো একটু সরে এলোতারপর আমার বুকে আঙুলের ডগা দিয়ে কি যেন লিখতে লাগলচোখ বন্ধ করে আমি লেখাটা বোঝার চেষ্টা করছিলাম
এই আমাকে বিয়ে করবে? আজ কিংবা কালখুব আস্তে আস্তে বিদিশা বললো
‘বিদিশা!’ আমি অবাক হয়ে গেলাম
এখনই বিয়ে?
 এখনও তো কলেজের গন্ডীই পার হলাম না
কেন কিসের অসুবিধা? তুমি তো পাশ করে চাকরি পেয়ে যাবে তাই না?
‘কিন্তু আমার তো একটু সময় দরকারতুমি তো সবই জানো অনার্সটা পাশ করতে এখনও দেড়বছরআমিও তোমাকে বিয়ে করতে চাইকিন্তু বিয়ে করে তোমাকে আমি খাওয়াবো কি?
‘আমি জানি নাকিছু জানি নাএসব তুমি ভাববে, আমি আমার সবকিছু তোমাকে দিয়ে দিলাম।’ ছেলেমানুষের মত আমার বুকে মুখ ঘষতে লাগল বিদিশা
বিদিশাকে বললাম, কিন্তু তোমার বাবা মা? তাদের কাছে তো আমাকে যেতে হবে কথা বলতে হবে তবে না বিয়ে
বিদিশা বললো, বাবাকে তো সব বলাই আছেতুমি বরং যা করার তাড়াতাড়ি করে ফেলো আমি আর পারছি না
কিন্তু এত তাড়াতাড়ি?
প্রেমিক থেকে পতিদেবতা বানাতে চাইছি তোমাকে, তুমি বুঝতে পারছো না?
বিদিশা এরপরে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লআমিও তখন চোখ বুজে চিন্তা করছি বিদিশাকে নিয়ে কি করব? ও এত ছেলেমানুষি করছেএও কি হয় নাকি? বিয়ে, তা বলে এখনই?
চিন্তা করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনাসন্ধেবেলা ঘুম ভাঙল আমারদেখি বিদিশাও চোখ খুলে তাকিয়েছে আমার দিকে, তখনো ও আমাকে ছেড়ে যেতে চাইছিলো নাআমার বুকের কাছে মুখটা ঘষছে আবারবিদিশাকে বললাম, ‘বিদিশা এক কাজ করলে হয় না? আমি যদি শুভেন্দু আর সৌগতকে বলি ব্যাপারটাতুমি তো জানোওদের কাছে আমি সব কথা খুলে বলিকিছু লুকোই নাওরা যদি আমাকে কিছু হেল্প করে।’
বিদিশা বলল, ‘বিয়ে করবে তুমিআর ওরা তোমাকে কি হেল্প করবে?’
আমি বললাম, ‘তুমি জানো নাশুভেন্দুরা খুব বড়লোকওদের অনেক পয়সাআমি যদি শুভেন্দুকে বলি আমাকে একটা কাজ জুটিয়ে দিতে, ও ঠিক পারবেআমার তো সেরকম চেনাপরিচিত কেউ নেইতোমাকে বিয়ে করবো, তার আগে রোজগার পাতির একটা ব্যবস্থা তো করতে হবে
কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে বিদিশা বললো, ‘এই একটা কাজ করবে? তুমি তো ভালো গান গাওআমাকে গান শেখাবে?’
অবাক হয়ে বললাম, গান শেখাবো? তোমাকে? কিন্তু এর সাথে বিয়ের বা রোজগারের কি সন্মন্ধ আছে? গান তো এমনি শেখাতে পারি তোমাকে
বিদিশা আমার গালে একটা টোকা দিয়ে বললো, দূর বোকাগান কি এমনি শেখাবে নাকি? আমি বাবাকে বলবো, মাসে মাসে এরজন্য দুহাজার টাকা করে দিতেবাবা না করবেন না
বিদিশার ছেলেমানুষির মত কথা শুনে আমার খুব হাসি পাচ্ছিলোবললাম, ‘আমি তোমাকে গান শেখাবোতোমার বাবা আমাকে টাকা দেবেনআর সেই টাকায় আমি সংসার চালাবোবা কি সুন্দরএকেবারে বুদ্ধিমতী মেয়ের মত কথা বলেছো তুমি
বিদিশা কিছুক্ষণ বোকার মত ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলো আমার দিকেমুখ নিচু করে বললো, হ্যাঁ তাও তো ঠিকবাবা এভাবে টাকা দেবেই বা কেন? আমি তো তখন তোমার কাছেই থাকবো
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#8
বিছানায় উঠে বসে গালে হাত দিয়ে কি যেন ভাবতে লাগলো বিদিশামনে হল, এমন ভাবে আমার জন্য চিন্তা করা শুরু করে দিয়েছে, এবার কিছু একটা ও করেই ছাড়বে
কিছুক্ষণ ভেবে টেবে এবার নিজেই খুশিতে আমার গালে একটা চুমু খেয়ে বসলোআমাকে বললো, হয়ে গেছেআর কোন চিন্তা নেই
আমি বললাম, কি হয়ে গেছে? কি চিন্তা নেই?
বিদিশা বললো, চাকরি করে কি হবে? তুমি বরং ব্যাবসা করো
‘ব্যাবসা? সে তো অনেক টাকার ব্যাপার বিদিশাঅত টাকা আমি কোথায় পাবো?’
বিদিশা আবার শুয়ে পড়ে, আমার মুখের কাছে মুখটা এনে বললো, ‘তুমি ব্যাবসা করবে কিনা বলোটাকার জন্য তোমাকে ভাবতে হবে না।’
যেন লাগলে টাকা দেবে গৌরী সেনবুঝলাম বাবাকেই গৌরী সেন বানাতে চাইছে বিদিশাআমার বুকের ওপর আবার আঙুল দিয়ে হিজিবিজি কাটতে কাটতে বললো, কত চাই? দুলাখ, পাঁচলাখ, না আরো বেশী? যা চাইবে, তাই পাবেআমি আছি না?
‘ও আমার দরদীনি গোকি বলে কি মেয়েটা? অত টাকা জোগাড় করে দেবে তুমি আমাকে?’
বিদিশা বললো, কেন বিশ্বাস হচ্ছে না?
আমার বুকের ওপর হাতটা রেখে আস্বস্ত করলো বিদিশাচোখের পাতাদুটো একবার বুজিয়ে বোঝাতে চাইলো, আমি আছি না?
আমি জানি বিদিশারা খুব বড়লোকদু পাঁচ লাখ টাকা ওর বাবার কাছে কিছুই নয়তবু বললাম, ‘বিদিশা, তুমি আমার জন্য এতটা করবে?’
‘কেন করতে পারি না?’ বিদিশা যেন এবার একটু অভিমানি হয়ে গেলআমাকে বললো, ‘আমি কি তোমার কেউ নই?’
উঠে বসে ওর গাল দুটো দুহাতে ধরলামবললাম, তুমিই তো আমার সব কিছু বিদিশাআমার সাথী তুমি, আমার ভালোবাসা তুমি, আমার প্রেরণা তুমিআমার জীবনের যা কিছু, সবকিছু তুমি
বিদিশা চোখে চোখ রেখে বললো, থাক আর কবি হতে হবে নাতাহলে তুমি আমাকে না করবে না বলো
ঘাড় নেড়ে ওকে জানান দিলামবললাম, তোমাকে আমি কি কখনও না করতে পারি?
দেখলাম ওর ঠোঁটদুটো আমার ঠোঁটের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে এবারচুমুটা খেতেই যাচ্ছিলামবিদিশা বললো, মা বাড়ীতে নেই, আমাকে পেয়ে খুব দস্যিপানা করতে ইচ্ছে করছে বুঝি?
আমি ওর কথা শুনে মুখটা ঘুরিয়ে নিলামদেখলাম বিদিশা আবার নিজে থেকেই আমার গালে গাল ঘষছেযেন রাগ ভাঙাচ্ছে, সেভাবেই আমার থুতনীটা হাত দিয়ে নাড়তে লাগলআমাকে বললো, কি রাগ আমার পতিদেবতার? আমি বুঝি চুমু খেতে মানা করেছি তোমাকে?
নিজেই নরম ঠোঁটটা আমার কঠিন ঠোঁটের সাথে ডুবিয়ে দিলোচুম্বনটা গাঢ হচ্ছে, এই প্রথম ভালবাসার গভীরতা অনুভব করছিআমাকে চুমু খেতে খেতেই বিদিশা আমাকে জড়িয়ে ধরে হাত দিয়ে আমার পিঠের সবল মাংস পেশীর সাথে খেলা করতে লাগলসুখটটা যেন ভালবাসার আলিঙ্গনে ক্রমশ আছড়ে পড়ছেভাবছি বিদিশার মত মেয়ে আমি পেয়েছি, আমার জীবন ধন্যআজ যেন বিদিশার মধ্যে এক অনন্য রূপকে আমি দেখলামওকে যেন নতুন করে আমি আবিষ্কার করলাম। 
সেদিনের সেই অনুভূতির স্মৃতি আজও আমার মনকে অস্থির করে তোলেমাঝে মাঝে ভাবি, কেন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে বিদিশা? আমি তো তোমাকে ঠকাতে চাইনিসত্যিই চাইনি
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#9
পাঁচ
 
‘তোর মনে হচ্ছে আজ অফিস যাবার কোনো ইচ্ছে নেই সকালে উঠেই ডায়েরী খুলে বসে গেছিস লিখতেঘড়িতে কটা বেজেছে, খেয়াল করেছিস?’
মাকে দেখলাম আমার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেআমার পিঠে হাত দিয়ে দেখছে, আমি আপন মনে কিসব লিখে যাচ্ছিমা বললো, ‘কি লিখছিস? গল্পো?’ হেসে বললাম হ্যাঁ মা গল্পোতবে জীবনের কিছু পুরোনো কথাও এর মধ্যে আছেওগুলো সব মনে পড়ে যাচ্ছে, তাই একটার পর একটা লিখে যাচ্ছি
অফিসে যাবি না?’
‘হ্যাঁ যাবো তোএই আর একটা পাতা লিখে নিই।’
মা জানে লেখার নেশাটা আমার অনেকদিনেরসেই ছোটবেলা থেকে লিখে আসছিকত কিছু লিখলামবিদিশাকেও আমার কতগুলো লেখা পড়িয়েছিলামআমার গল্প আর কবিতা গুলো পড়ে বিদিশা বলেছিল, ‘তুমি এত ভালো গান গাও, আবার এত ভালো লেখো,  এতসব পারো কি করে? কি প্রতিভা তোমার
আমি বলেছিলাম, ‘দূরএরজন্য আবার প্রতিভার দরকার হয় নাকি? লিখতে লিখতে ওটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যায়আর গানটা গাইতে গেলে সাধনা করতে হয়সবই রেওয়াজের ওপরপ্র্যাকটিস না করলে কোনকিছুতেই দক্ষ হওয়া যায় না
বিদিশা জানতো না ওকে দেওয়া আমার চিঠিটা শুভেন্দু লিখে দিয়েছিলআমাকে বললো, ‘আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে একটা সুন্দর প্রেমপত্র লিখবেশব্দের মালা বসিয়ে যেমনটা তুমি লেখোচিঠিটা পড়ে আমিও আবেগে আপ্লুত হয়ে যাবোআমার ভেতরের অনুভূতিটা চিনচিন করে উঠবে তা নাকি একটা লিখলেওটা কি প্রেমপত্র হল?’
হেসে বলেছিলাম, ওটা তো আমি লিখিনিওটা শুভেন্দু আমার হয়ে লিখে দিয়েছিল
বিদিশা অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছিল, কেন? শুভেন্দু লিখবে কেন? তোমার ঠিঠি ও লিখবে কেন?
এই রে বোকার মতন সত্যি কথাটা বলে এখন বিপদে পড়ে গেছিযাতে ওর রাগ না হয়, বিদিশার গালে হাত রেখে বলেছিলাম, শুভেন্দু তাড়াহূড়ো করে না লিখলে, সেদিন তুমি কি ক্যাফেটরিয়াতে আসতে? না আমরা একে অপরকে ভালবাসতে পারতাম? মিছিমিছি ওর ওপর রাগ করছ ও তো আমাকে জানিয়েই চিঠি লিখেছে তোমাকে
একটু যেন মন খারাপ করে ফেলেছিল বিদিশাভুলটা আমারই জন্যরাগ ভাঙাতে আমি কত কিছু করলামওর জন্য মান্না দের গানটা গাইলাম, ‘সুন্দরী গো দোহাই তোমার মান কোরো নাআজ নিশীথে, কাছেই থেকোনা বোলো নাসুন্দরী গো।’
কলেজে গিয়ে বিদিশার ক্লাসে ঢুকে গেলাম সোজাদেখলাম বিদিশা চুপ করে বসে আছে সিটেমুখটা ভারভারউস্কো খুস্কোওর পাশে গিয়ে বসে পড়লামবিদিশা লজ্জা পেয়ে গেলোওর ক্লাসের ছেলেমেয়েগুলো আমাকে দেখে বলতে লাগল, ‘আরে গায়ক মশাই যেতা হঠাৎ আমাদের ক্লাসে পদার্পনকি মনে করে?’
আমি বিদিশার হাত ধরে টানছি। ‘এই চলো না চলো না।’ ও লজ্জা পেয়ে বললো, ‘ধ্যাতকি হচ্ছেটা কি? সবাই দেখছেছাড়ো বলছি।’
 আমিও অগত্যা চুপ করে বসে রইলামএকটু পরে প্রফেশর এলেনআমাকে দেখে ভিমরী খেলেনবললেন, ‘দেব’ তুমি এখানে? কি ব্যাপার? নিজের ক্লাসে না গিয়ে এখানে বসে কি করছ?
আমি নাছোড়বান্দা প্রেমিকের মত জবাব না দিয়ে চুপচাপ বসে আছিবিদিশা ওই দেখে মুখ টিপে ফিক ফিক করে হাসতে লাগলোক্লাসের বাকীরাও সবাই হাসতে লাগলবুঝলাম জোর ফাঁসা ফেসেছি আজকেএকেবারে বেইজ্জ্বত হয়ে গেছিআজ আমার রেহাই নেইসেদিন কলেজে ঢ্যাড়া পিটে গেল, সবাই জেনে গেল, তারমানে আমি বিদিশার সাথে প্রেম করি
বিদিশা খুব লজ্জ্বা পেয়েছিল সেদিনওর রাগ ভাঙাতে আমি যে এতটা করতে পারি, ওর ধারনা ছিল নাবিদিশা কখনও আমাকে ভুল না বোঝে, আমাকে খারাপ না ভাবে আমি সবসময়ই চেষ্টা করতামওর জন্য আমি একটা গান লিখতে চেয়েছিলাম, সেটা লেখা হয় নিকিন্তু বিদিশা আমাকে বলেছিল, তুমি যেদিন আমাকে নিয়ে কিছু লিখবে, সেদিন বুঝবো, তুমি আমাকে কতটা ভালোবাসোকোন গল্প কাহিনী, কবিতা, উপন্যাসপারবে আমাদের প্রেম কাহিনী নিয়ে লিখতে?
বিদিশাকে বলেছিলাম, কেন পারবো না? ও তো আমার কাছে জলভাত 
‘তাহলে লিখে দেখাও।’
কলম নিয়ে সেদিন আর কিছু লেখা হয় নিকিন্তু আজ লিখছি। ‘বিদিশা তুমি জানো না, আমার জীবন কাহিনীর কতটা অধ্যায় জুড়ে তুমি বসে আছোসব কথা আজ লিখতে চাই, তোমার আর আমার প্রেমকাহিনী নিয়ে সবাইকে সব কথা বলতে চাইকিন্তু তুমি তো এখন অনেক দূরেএ লেখা কি শেষ পর্যন্ত তোমাকে পড়াতে পারবো বিদিশা? তুমি তো আমাকে ছেড়ে চলে গেছোআর তো ফিরে আসবে না কোনোদিনতাহলে?
একটু হেসে মা পেছন থেকে বললো, কার কথা লিখছিস?
মাকে কি আর বলতে পারি, বিদিশার কথাবললাম,ঐ কলেজের সব ঘটনাগুলো লিখছিযেগুলো যেগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে, সেগুলো
 
মা আমার কথাটা শুনে কেমন চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলোবললো, ‘কেন লিখছিস ওসব পুরোনো কথা? কে মনে রাখে? নিজেকে শুধু শুধু কষ্ট দিসএখনো ভুলতে পারিস নি তুই বিদিশার কথাতাই না?
‘তুমি কি করে জানলে আমি বিদিশার কথা লিখছি? আমি তো-’
মা বললো, আমার চোখকে তুই ফাঁকি দিতে পারবি? যে মেয়েটা তোকে ছেড়ে চলে গেলোএকবার ফিরেও তাকালো নাঘর করলো না, তার কথা তোর এখনো মনে পড়ে? কি পেয়েছিস তুই বিদিশার কাছ থেকে? সত্যিকারের ভালবাসা? ও যদি তোকে সত্যি ভালোবাসতো, তাহলে কি এভাবে ছেড়ে যেত?
আমাকে বলে নিজেই একটু বিষন্ন হয়ে পড়লো মাসেদিন মায়ের চোখে আমিও জল দেখেছিলাম, আজ আবারো দেখলামডায়েরীর পাতাটা বন্ধ করে মাকে বললাম, এই দেখো, তুমি আবার মন খারাপ করছোতাহলে লেখাটা বন্ধ করে দিইমা আমার মাথায় হাতটা রাখলোবললো, না রে বাবা, তুই লেখআমি তো এমনি বলছিলাম
 মাকে বললাম, এই দেখো না শুভেন্দু এতদিন বাদে ফোন করলো, আমাকে ওর বাড়ী যেতে বললো, আর আমারো পুরোনো কথা সব মনে পড়ে গেলতাই ভাবি একটু লিখিতুমি যখন বলছো, তাহলে লিখবো না
মা আবারো আস্বস্ত করলো আমাকেবললো, ‘না তুই লেখআমি তোকে বাঁধা দেবো নাআজ অবধি তোর কোনো কাজে বাঁধা দিয়েছি কি? তবে তুই যদি এখন না বেরোস, তাহলে আমাকে বলে দেআমি একটু স্নানটা সেরে আসিএসে তাহলে তোর খাবারটা বেড়ে দেবোখনে
মাকে বললাম, ঠিক আছে তুমি যাওআমি একটু পরেই লেখালেখি শেষ করছি
যাবার আগে মা বললো, বিদিশারা এখন কোথায় থাকে রে? বিয়ের পরে তো মুম্বাই চলে গিয়েছিল শুনেছিলামএখন কি ওখানেই?
মাকে বললাম, তোমার এখনো মনে আছে তাহলেমা বললো, কেন তুই তো আমাকে বলেছিলিসওর মুম্বাইতে বিয়ে হয়েছেপয়সাওয়ালা শশুড় বাড়ী পেয়েছেসুখে ঘর করছেআর হবে নাই বা কেন? ওরা নিজেরাও তো খুব বড়লোক ছিলো
মাকে বললাম, এখন আর বিদিশার খবর জানি না মাআর জানবোই বা কি করে? ও তো পরে আর যোগাযোগ করেনি আমার সঙ্গেচলে যাবার পরে কোনো ফোনও করেনি আমাকে
যাবার আগে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মা বললো, ‘ছেলে আমার বিদিশা বিদিশা করেই গেলো এবার একটা ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে কর তাহলে আমিও একটু হাল্কা হই।’
মা চলে গেলআমি আবার ডায়েরীটা খুলে ভাবছি কি লিখবোকলেজের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আরো লিখতে ইচ্ছে করছেবিদিশার সাথে আমার প্রেমনেতাজী ইন্ডোরে অনেক রাত অবধি জলসা দেখতে গিয়ে কি অবস্থা হয়েছিল সেদিনবিদিশা বাড়ীতে বলে আসেনিআর প্রোগ্রাম শেষ হবার পর ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে বেরোনোর সময়ই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টিতুমুল বৃষ্টিতে কেউ বেরোতে পারছে না অডিটোরিয়াম থেকেবিদিশা আমার হাতটা ধরে বললো, কি হবে বলোতো? বাড়ীতে বলে আসিনিএখন বৃষ্টিমা আমাকে পুরো খেয়ে ফেলবেকিছু একটা ব্যবস্থা করোএকটা ট্যাক্সিযেমন করে পারো
বিদিশা যাতে সময় মত বাড়ী পৌঁছোতে পারে বৃষ্টির তোয়াক্কা না করে ভিজে চপচপে হয়ে ওর জন্য ছুটে গিয়ে ট্যাক্সি ধরেছিলামবাড়ীতে ওকে ড্রপ করে দিয়ে যখন নিজের বাড়ী ফিরছি, তখন বাজে রাত্রি একটামা বসে আছে ঘরেআমার জন্য প্রবল চিন্তা করছেআমি ঘরে ঢুকতেই মা বললো, তুই বিদিশা ছাড়া আর কটা মেয়ের সাথে ভাব পাতিয়েছিস?
আমি অবাকমাকে বললাম, কেন? একথা বলছো কেন?
মা বললো, মিনু বলে একটা মেয়ে এসেছিল সন্ধেবেলাতোর খোঁজ করছিলবললো, মাসীমা দেব কোথায় গেছে বলতে পারবেন? আজ তো কলেজে দেখলাম না ওকে
চমকে উঠেছিলাম আমিমিনু? কেন? ও কেন আমার বাড়ীতে আসবে? আর ওকে বাড়ীর ঠিকানাই বা কে বললো, তাহলে কি সৌগত?
মা বললো, ‘মেয়েটা একটা ছেলেকে সাথে নিয়ে এসেছিলআমাকে বললো, আমি দেবের বন্ধুআর এ হলো সৌগতআমরা দুজনেই দেবের বন্ধুদেবকে খুব দরকারবলুন না ও কোথায় গেছে?
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#10
আমি জানি, মা সেদিন সরল মনে মিনুকে সব বলে দিয়েছিল, ‘ও তো ফাংশন দেখেতে গেছে ফিরবে সেই দেরীতে আমাকে বলে গেছে ফিরতে ফিরতে রাত এগারোটা হবে।’
মিনুর চোখে মুখে তখন কৌতূহলমাকে জিজ্ঞাসা করে বসলো, কার সাথে গেছে বলতে পারবেন?
মাও সরল মনে ওকে বলেদিল, ‘ও যে বললো, বিদিশাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবেকলেজে ওরা দুজনে কেউ তো যায়নি আজকেসোজা বাড়ী থেকে চলে গেছে ফাংশনে।’
বাড়ীতে ফেরার পর, মা, মিনুকে সব বলে দিয়েছে দেখে আমি আঁতকে উঠেছিলামমিনু কদিন ধরেই আমার পেছনে শুধু পড়ে রয়েছেখালি জ্বালাতন করছেওর ছোটো বোনকে আমায় গান শেখাতে হবে
আমি রাজী নইযেটুকু সময় পাই, কলেজ, পড়াশুনা তার বাইরে শুধু বিদিশার সাথে প্রেমএর মধ্যে মাষ্টারী করার আর আমার সখ নেইতবু মিনু আমার পেছন ছাড়বে নাএকেবারে জোঁকের মতন পেছনে লেগে রয়েছে
সেদিন মিনুকে কথা দিয়েছিলাম, ওর বাড়ীতে যাবঝেমেলাটা সৌগতই আগে পাকিয়ে রেখেছেওর হয়ে এমন ভাবে আমাকে সাধাসাধি করতে শুরু করলো, যেন মাথাব্যাথাটা ওরমিনু সৌগতকে রিকোয়েস্ট করেছে, ‘তুই আমার হয়ে দেবকে রাজী করাদেব কিছুতেই রাজী হচ্ছে নাতুই বললে হয়তো রাজী হবে।’
সৌগত মিনুর হয়ে আমার কাছে এসে যখন পীড়াপীড়ি করতে শুরু করলো, ওকে বললাম, তোর এখানে কি স্বার্থ আছে বলতো? কেন এই নিয়ে আমাকে বারে বারে ডিস্টার্ব করছিস?
এটা আসলে সৌগতর দোষ নয়এটা নাকি আমার গলার দোষসৌগত বললো, ‘কি করব? যা গানের গলা তোরমিনু তোর পুরো ফিদা হয়ে গেছেওর ছোটবোন বেশ কিছুদিন ধরেই গান শিখছেমিনুর ধারণা, তোর হাতে পড়লে ও নাকি ভালো গায়িকা হতে পারবেএখন ধরেছে আমাকেদেব তুই আমার মানটা রাখ।’
কলেজ থেকে মিনুদের বাড়ীটা খুব কাছেগলি ধরে শর্টকাটে গেলে পাঁচ মিনিটআমি জানি, মিনুর স্বভাবটা ভালো নয়রোজ কলেজ থেকে একটা করে ছেলে ধরে ওর বাড়ী নিয়ে যায়যেহেতু বাড়ীটা কলেজের খুব কাছে, কেউ নাও করে নাইদানিং মিনুকে নিয়ে আদিখ্যেতাটা খুব বেড়ে গেছে সকলেরযেন সবার নয়নের মনিচার পাঁচটা ছেলের সাথে সবসময় বসে আছেতারা ওর গায়ের যেখানে সেখানে হাত দিচ্ছে, খুনসুটি করছেদেখতে ভীষন বাজে লাগে এসবআমি একটু অন্য স্বভাবেরচোখের সামনে বাড়াবাড়িটা বেশী পছন্দ নয়তাও কাউকে কিছু বলিনাওটা যার যার ব্যক্তিগত, মজ্জাগত স্বভাবঅন্যতে যেটা করে আনন্দ পায়, সেখানে আমার হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নেই
মিনু কদিন ধরেই ক্যান্টিনে খুব যাতায়াত শুরু করেছেআগে খুব একটা বেশী আসতো নাকার মুখে শুনেছে, ক্যান্টিনে রোজ একঘন্টা করে আমি গান গেয়ে পুরো ক্যান্টিন মাতিয়ে রাখিকলেজে আমার এই গুনে সুনাম অনেকসারা কলেজ আমার গান শোনার জন্য পাগল
জানি না আমার মধ্যে ও কি পেয়েছিলমিনুকে প্রথম যেদিন কলেজে দেখেছিলাম, বুঝেছিলাম ও একটু অন্য টাইপের বিদিশার মতই মিনুর স্লীম ফিগারতবে গায়ের রঙটা বিদিশার মত অত ফর্সা নয়নাকটা একটু চ্যাপটা মতন, চোখ মুখ সুন্দরতবে বিদিশার মত অতীব সুন্দরী নয়
 কদিন ধরেই মেয়েটাকে আমার সহ্য হচ্ছে নাকলেজে ফার্স্ট ইয়ারটা সেভাবে আসেই নি মিনুসেসময় নাকি ওর মা মারা গিয়েছিলকোনরকমে পরীক্ষা দিয়ে সেকেন্ড ইয়ার থেকে আসা শুরু করলো কলেজেএসেই দেখছে কলেজে আমি তখন খুব ফেমাসসবাই দেব কে একনামে চেনেএ কলেজে দেব বলতে একজনই আছেপ্রথমে মিনু আমার গানের ভক্ত হলোতারপর থেকে যেচে গায়ে পড়ে আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করতআমি খুব একটা পাত্তা দিতাম নাএদিকে কলেজে বিদিশার সাথেও ভালো করে আমি কথা বলতে পারি নামিনু কাছে থাকলে ছুক ছুক করেকি যে চায় মেয়েটা আমার ঠিক বোধগম্য হয় নাযখন আমাকে ওর বোনের কথাটা তুললো, তখন ভাবলাম এটা মনে হয় একটা বাহানাএই সুযোগে আমাকেও বোধহয় ওর বাড়ীতে নিয়ে যেতে চাইছে
আমি কিছুতেই মিনুর সাথে ভীড়বো নাওর বাড়ীতেও যাবো নাএরপরে সৌগত যখন এসে আমায় বললো, বিশ্বাসটা কিছুটা হলেও হলকিন্তু আমি কিছুতেই রাজী হতে পারছিলাম না গানের মাষ্টারি করে পয়সা রোজগার করার ইচ্ছা আমার একেবারেই নেইএটা স্রেফ বন্ধুত্বের খাতিরে আমাকে করতে হবে, আর এর জন্য কিছুটা সময়ও আমার নষ্ট হবে
আমি সৌগতকে না করে দিয়েছি, কারণ বিদিশাও শুনে আমাকে মানা করে দিয়েছেঠিক ফাংশনে যাবার আগের দিন মিনু এসে প্রায় পায়ে ধরে আমাকে সাধাসাধি করতে শুরু করলো‘দেব’ তোর পায়ে পড়ছি, তোকে রিকোয়েস্ট করছি, তুই প্লীজ একবার চলসেরকম হলে সপ্তাহে একদিনের জন্য আসবিক্ষতি কি আছে? আমার বোন তাতেই খুশি হবে
বোনকে খুশি করার জন্য আমাকে যেতে হবে? এতো ভারী আবদারবললাম, ঠিক আছে কাল একবার যাবোকিন্তু শেখাবো কিনা বলতে পারছি নাতোর বোনের গলাটা একবার দেখে নেবোতারপর আমার ভালো ওস্তাদের সাথে জানাশোনা আছেতোর বোনকে ওখানে পাঠিয়ে দেবো, ভালো তালিম পাবে
মিনু তাতেই খুশী হলসেদিন আমার কলেজে গিয়ে, ওখান থেকে মিনুদের বাড়ীতে যাবার কথাসকালে বিদিশা, ফোন করে বললো, ‘এই আজ একটা ফাংশন দেখতে যাবে? নেতাজী ইন্ডোরেবোম্বে থেকে ভালো ভালো আটিস্ট আসছে
আমি বললাম, টিকিট কত করে? বিদিশা বললো, তিনশ টাকা করেওই নিয়ে তোমাকে কিছু চিন্তা করতে হবে নাটিকিটের দাম আমি দেবোতবে আমি বাড়ীতে কিছু বলতে চাই নাবাবা শুনলে যেতে দিতে চাইবে নাকলেজে না গিয়ে আমরা না হয় একটু ঘুরবো, ফিরবো, তারপর বিকেলে পৌঁছে যাবো, নেতাজী ইন্ডোরে
মিনুকে শেষমেষ কথা দিয়েও কলেজে যাইনি বিদিশার জন্যবিকেলবেলা আমার বাড়ীতে এসে হাজিরসাথে সৌগতকেও নিয়ে এসেছেকেন কলেজে যাইনি, সেটা আবার যাচাই করছে এসেসাংঘাতিক মেয়ে
বিদিশার মত আমাকে প্রেম নিবেদন করেনি মিনুকিন্তু ওর ওই একটা আবদার মেটাতে গিয়ে আমাকে কত খেসারত দিতে হয়েছিল, সে কথা বলবো আপনাদের, পরে
 ডায়েরীর কয়েকটা পাতা লেখা শেষ করে এবার আমি উঠে পড়লামসত্যি অনেক দেরী হয়ে গেছেএবার রেডী হয়ে আমাকে বেরোতে হবেমাও দেখি তখন আমার খাবার বেড়ে দেবার তোড়জোড় করছেসেলফোনটা হাতে নিয়ে ভাবছি, শুভেন্দুকে একটা ফোন করবো কিনা? আমার যেন আর তর সইছে নাভাবছি, সাতটা নয়, দুঘন্টা আগেই নয় ওর বাড়ী চলে যাবোগিয়ে বলবো, ‘দ্যাখ, তুই ডেকেছিস, আমি আগে ভাগেই তাই চলে এসেছিএবার বল, কি সারপ্রাইজ দিবি আমাকে
ব্যাপারটা জানতে খুব ইচ্ছে করছিলোতখন কত করে জানতে চাইলামশুভেন্দু কিছুতেই বললো না আমাকেওখানে না যাওয়া অবধি ও কিছুই বলবে না আমাকেশুভেন্দু বলেছে, সন্ধেবেলা রনিও আসবে ওর বউকে নিয়েতিনজনে আমরা গল্প করবো, খুব মজা হবে
সারপ্রাইজের কথাটা এখনো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছেজানি, শুভেন্দুর স্বভাবটা বরাবরই এরকমের ও কিছুতেই আগে থেকে কিছু বলে না আমাকে যেমন বিদিশাকে চিঠি দেবার ব্যাপারটা লুকিয়েছিলএকবার কাউকে কিছু না বলে কুলুমানালি সিমলা ঘুরে এলোফিরে যখন এলো তখন ও খুব অসুস্থবাড়ীতে গিয়ে জানলাম ও বেড়াতে গিয়েছিল তারপর ফিরে এসেই এই কান্ডটা বাঁধিয়েছেঅথচ কলেজে আমাদের কাউকেই কিছু বলে যায়েনি ওবাবু ফিরে এসেছেন ওখান থেকে সুন্দর সুন্দর কিছু গিফ্ট কিনে এনেছেন বন্ধুদের জন্যআমাকে বললো, কলেজে যেতে পারছি না, তাই তোদের বাড়ীতে ডেকে গিফ্টগুলো সব দিচ্ছি, এটাও একধরনের সারপ্রাইজ
শুভেন্দু কখন কি বলে, আর কখন কি করে বসে বোঝা মুশকিল আমাকে বললো, ভাবছি ‘দেব’ এবার তোদের মত আমিও একটা প্রেম করবোতোকে আর সৌগত দেখে আমারও লাইন মারতে ইচ্ছে করছে শালা! ভালো জমিয়েছিস তোরা, দুজনে যা শুরু করেছিস, এবার না ইতিহাস রচনা হয়ে যায়
প্রেমের অনেক ডেফিনেশন আছেশুভেন্দুকে বোঝানোর চেষ্টা করতামশুভেন্দু বলতো, প্রেম হচ্ছে সব বেকার জিনিষওসব মূর্খরা করেচালু লোকেরা কখনও প্রেম করবে নাদুদিন মেয়েটেয়ে নিয়ে ঘুরবে, তারপর ফুটিয়ে দেবেব্যাস
আমি বলতাম ও তো অসামাজিক প্রেম হয়ে গেলসামাজিক প্রেমের, সত্যিকারের ভালোবাসার ডেফিনেশনটাই অন্যরকম
শুভেন্দু বলতো, তুই বোঝা দেখি-
আমি বলতাম, দেখ, তুই প্রেরক হিসেবে বা প্রেরনাদায়ক হিসেবে কাউকে চাস না জীবনে?
শুভেন্দু বলতো, প্রেরণা না হাতিএখন মেয়েরা শুধু পয়সা চায় পয়সাবুঝলি? ও তোকে মোটিভেশন দেবে কি? পয়সাটাই ওদের কাছে মোটিভেশন
-তাহলেও জীবন সঙ্গিনীতো একটা দরকারযে তোকে অনাবিল এক আনন্দের স্তরে নিয়ে যাবেতোকে ভালোবাসবে, আদর করবে, সোহাগ করবে, চুম্বন করবেএকাকীত্ব ঘুচিয়ে দেবেরমনী ছাড়া জীবন কি করে কাটাবি, এ কখনো হয় নাকি? এখন যে যুবতী, সেই তো হবে তোর রমনী।’
আমার কথা শুনে কেমন ভাবুক মত হয়ে গেল শুভেন্দুশেষ পর্যন্ত রাজী হয়ে বললো, কিন্তু কার সাথে প্রেমটা করা যায় বল দেখিতুই তো শালা ভালোটাকে নিয়ে বসে আছিসকলেজে মেয়েগুলো সব ঢোকে, দুদিনের মধ্যেই অন্য ছেলের সাথে ফিট হয়ে যায়সেরকম কে আছে, যে আমার সাথে প্রেম করবে?
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#11
সৌগত. শুক্লার পেছনে লাইন দিয়ে বসে আছেএদিকে শুক্লা তো কিছুতেই রাজী হচ্ছে নাআমাকে শুভেন্দু বললো, ‘তুই তাহলে এক কাজ করসৌগতর যখন কোন চান্স নেই, আমাকে শুক্লার সাথে ভিড়িয়ে দেওকে আমার জীবন সঙ্গিনী বানিয়ে নিচ্ছি।’
-তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছেআমরা এই চারজনে এত ভালো বন্ধুশুধু একটা মেয়ের জন্য বন্ধুত্ব খারাপ করবি নাকি?
শুভেন্দু দেখলো না ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবেও আশা ছেড়ে দিলদুদিন বাদে হঠাৎই আমার পাশে বসে বললো, ‘তোদের এই প্রেম টেম কিছু টিকবে নাসব বকওয়াশ জিনিষভেবে দেখলাম, আমি যা আছি ঠিকই আছিএসব রমনী ভালোবাসার চক্করে পড়ে থেকে লাভ নেইএই মেয়েগুলো সব দুষ্টুএরা সব মুখোস পড়ে থাকেআমার বাবা দুষ্ট গোয়ালের চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো
কথাটা ইয়ার্কী মেরেই বলেছিল শুভেন্দুকিন্তু ওর কথাটা সত্যি হয়ে গেলআমার আর সৌগতর দুজনেরই প্রেম টিকলো না শেষ পর্যন্ত
স্নান সেরে আমি সবে মাত্র বাথরুম থেকে বেরিয়েছিমা বললো, দেখতো নিচে একটা ট্যাক্সি এসে দাঁড়ালোকে যেন নিচে থেকে 'দেব'' দেব' বলে ডাকছেও তো মেয়ের গলাআমি খালি গায়ে পাজামাটা গলিয়ে নিয়ে বারান্দায় গেলামদেখলাম এক মহিলা পেছন ফিরে আমার পাড়ার একটা ছেলেকে কি জিজ্ঞাসা করছেএকটু পরেই মহিলা পেছন ফিরলোআমি দেখে অবাকদেখি শুক্লা হাত নাড়ছে আমার দিকে রাস্তার ওপরে দাঁড়িয়েঅবাক হলামশুক্লা এসেছে, এতদিন পরেআমার বাড়ীতে কি মনে করে? সকাল থেকেই পুরোনো বন্ধুরা আমাকে সব স্মরণ করছে একে একেশুভেন্দুর ফোনের পর শুক্লাও এতদিন পরে হঠাৎ?
 
নিচে থেকেই শুক্লা বললো, কোনদিক দিয়ে যাবো বলতো? তোদের সিঁড়িটা কোনদিকে?
আমি বারান্দা থেকে ওকে ওপরে ওঠার সিঁড়িটা দেখিয়ে দিলাম নিচে দাঁড়িয়ে তখনো শুক্লা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিল ওর হাসিটা দেখে মনে হল, শুক্লার সেই পুরোনো হাসিকলেজে ওর হাসি দেখে সৌগত বলতো, ‘মেয়েরা বিয়ের আগে সব হাসে, আর বিয়ের পরে ভালো স্বামী না জুটলে সব কাঁদতে শুরু করেওর এই সুন্দর হাসিটা কতদিন থাকবে বলতো ‘দেব’? বলছি আমার অফারটাকে অ্যাকসেপ্ট করে নিতে, কিছুতেই করছে নাআমি ওকে রাজরানী করে রেখে দিতাম, এই হাসিটাও ও সারাজীবনের মত প্রানখুলে হাসতে পারতোতা না, শুধু শুধু ও জেদ ধরে বসে আছে।’
শুক্লা যখন সৌগতর সাথে প্রেম করা শুরু করলো, তখন আবার সৌগতর মুখে হাসি ধরে নাএমন ভাব করতে লাগলো, তখন আবার আমাকে চেনে নাঅথচ একসময় আমার কাছে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতোশুক্লার মন পাচ্ছে না বলে আমার কাছে এসে আফসোস করত বলতো, ‘মেয়েদের মুখে হাসিটাই কি যথেষ্ট নাকি? ওসব ঢঙ্গী হাসিআসল হল, মেয়েদের মনশুক্লার মনটা খুব কঠোরআমার প্রতি এতটা নির্দয় হচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না।’
ওকে বলতাম, ‘তুই এককাজ কর, কালীঘাটে গিয়ে একটা মানত করে আয়শুক্লার সাথে তোর ফিটিং হয়ে গেলে মাকালীকে খুশি করে আসবিমানত করলে মা কালী তোর মনবাসনা নিশ্চই পূরণ করবে।’
 সৌগত বলতো, ‘তুই হচ্ছিস মহা ঢ্যামনাবিদিশাকে পেয়ে গেছিস তো, এখন আর আমাকে নিয়ে মাথা ব্যাথা নেইআমি শালা দেবদাসের মত জ্বলে পুড়ে মরছি, কারুর আমাকে নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই?’
এরপরে এমন কান্ড করে বসলো সৌগত আমার তো মাথায় হাতদেখি অ্যানুয়াল ফাংশনের দিন সকালবেলাই এক পেট মাল খেয়ে বসে আছেকলেজে এসে শুক্লাকেও হঠাৎ সামনাসামনি পেয়ে গেলসৌগতর চোখদুটো তখন এমন টকটকে লাল হয়ে রয়েছে, শুক্লা ওই দেখে ভয় পেয়ে গেলোসৌগত বললো, তুমি আমার সাথে প্রেম করবে কিনা বলো? নইলে আমি কিন্ত-
শুক্লা প্রথমে ভয় পেয়েছিল, তারপরে একটু সাহসী হয়ে বললো, কি করবে? সোসাইড? শোলের ধর্মেন্দ্রর মত?
আমি সৌগতকে বললাম, এই সৌগত কি হচ্ছে টা কি? সাতসকালে মাল খেয়ে এসব কি করছিস তুই?
হঠাৎ কোত্থেকে তখন শুভেন্দুও ওখানে এসে হাজিরআমাকে বললো, ‘লে হালুয়া এর আবার কি হল?’
আমি শুভেন্দুকে কিছুটা দূরে নিয়ে গেলামকানে কানে বললাম, ‘ওকে কিছু বলিস নাতাহলে আরো বামাল করবেআমি শুক্লাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছি।’
শুক্লা তো রেগে অস্থিরআমাকে বললো, ‘মাল খেয়ে আবার চোখ রাঙাচ্ছে আমাকে কত বড় সাহস ওর তুই কি ভাবিস? যার তার সাথে শুক্লার মত মেয়ে ভেড়ে নাআগে ওর চরিত্রটাকে ঠিক করতে বল।’ তারপরে ওর সাথে প্রেম করবো কিনা আমি ভেবে দেখবো।’
পাছে সৌগত বেশী হজ্জূতি না করতে পারেশুক্লা সবসময় আমার পাশেই বসে রইলোসৌগত তখনো চোখ বড় বড় করে দেখে যাচ্ছে শুক্লাকে দূর থেকেএকটু পরে দেখি সৌগত মাথা নিচু করে হেঁটে চলে যাচ্ছে কলেজ ছেড়েশুভেন্দু মাথা নেড়ে বললো, ‘কোথায় যাচ্ছে মালটা?সুইসাইড করতে নাকি? এই শালাগুলোর ন্যাকামো দেখলে আর বাঁচি না।’
কলেজ ছেড়ে সৌগত চলে গেলএবার শুভেন্দু শুক্লার কাছে গেলশুক্লাকে বললো, ‘সৌগতর জন্য আমি এতবড় স্যাক্রিফাইস করলাম, আর তুই কিনা ব্যাচারেকে কষ্ট দিচ্ছিস?’
শুক্লা বললো, ‘মানে?’
শুভেন্দু বললো, ‘দেব’ আমাকে বলেছিলো, ‘বিদিশা আর ওর মত আমাকেও একটা প্রেম করতেআমি রাজী হয়েছিলাম, শ্র্রেফ তোর জন্য তোকে আমার মনে ধরেছিলতারপরে দেখলাম, না কাজটা করা ঠিক হবে নাএটা সৌগতকে দূঃখ দেওয়া হবেও  এমনি তোকে ভালোবাসেব্যাচারাকে কষ্ট দিয়ে আর লাভ নেইআর তুই কিনা ওকে শেষ পর্যন্ত দেবদাস বানিয়েই ছাড়লি? ‘পার্বতী’ এই ছিল তোর মনে?’
শুক্লা কিন্তু কিন্তু করেও শুভেন্দুর কথাটার শেষ উত্তর দিতে পারেনিতারপর থেকে সৌগত বেশ কয়েকদিন ধরে কলেজে আর আসছে নাআর শুক্লাও কলেজে এসে খালি আমাকে জিজ্ঞাসা করছে, ‘সৌগত এসেছে? আজও এলো না? পরপর তিনদিন হয়ে গেল ওর দেখা নেইকোথায় গেল ছেলেটা মনটা খারাপ লাগছে।’
 আমি বিদিশাকে যা করতে পারেনি, শুক্লা তাই করে বসলোযেদিন সৌগত কলেজে আবার এলো, দেখলাম ওর চোখ মুখ শুকনোযেন শুক্লার জন্য কেঁদে কেঁদে চোখের তলায় কালি পড়ে গেছেভালো করে কারুর সাথে কথা বলছে নামাথা নিচু করে বসে আছে একদম লাস্টের সীটেশুক্লা সৌগতকে দেখে আমার পাশের সীটটা থেকে উঠে গেল ওর কাছেসৌগতর পাশে গিয়ে বসলোওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলমুখটা নিচু করে সৌগতকে বললো, ‘কি হয়েছে তোমার? কলেজে আসোনি কেন এতদিন?’
সৌগত জবাব দিচ্ছেনামুখ নিচু করে তখনো বসে আছেআমাদের ফিজিক্স এর প্রফেশর নয়নবাবু এলেন, ক্লাস শুরু হলোআমি নোট নিচ্ছি, স্যারের লেকচার শুনছিহঠাৎই চোখটা গিয়ে পড়ল পেছনে ওদের সীটেদেখি শুক্লা তখন মাথাটা এলিয়ে দিয়েছে সৌগতর ঘাড়েযেন পার্বতী মাথা গুঁজেছে দেবদাসের শরীরেঅমর প্রেমকথার রেপ্লিকা দেখছি চোখের সামনেজানতাম যা শুরু করেছে দুজনে, নয়নবাবুর ঠিক চোখে পড়বেহলও তাইস্যার, ওদের দুজনের ওই রকম দেখে হঠাৎই ধমক দিয়ে বললেন, ‘সৌগত আর শুক্লা, কি করছো তোমরা পেছনে? বিহেভ ইয়োরসেল্ফ
শুভেন্দু ফিক ফিক করে হাসছে আমাকে পরে বললো, ‘দেখলি? শালা কত নাটকই পারে এরা দুজনে
 
সিঁড়ি দিয়ে শুক্লা উপরে উঠে এসেছে দ্বোতলায় কলেজে যখন পড়তো, কোনদিন আমার এই ফ্ল্যাটে ও আসেনিদুদুবার মিনু এসেছিল আর বিদিশাতো বেশ কয়েকবারকিন্তু শুক্লাকে এতদিন পরে আজ প্রথম আসতে দেখে আমি সত্যি অবাক হয়ে গেলামওকে বললাম, আরে ‘শুক্লা? তুই? আমি তো ভাবতেই পারিনি তুই আসবিএ কাকে দেখছি আমি? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।’
দরজা খুলে ঘরে ঢোকালাম ওকে শুক্লা বললো, ‘আমি জানতাম তুই অবাক হবি কেমন যেন পরপর হয়ে গেছিস তুই খোঁজখবরও রাখিস নাফোন নম্বরটাও সেই যে একবার দিয়েছিলিস, হারিয়ে ফেলেছিপুরোনো মোবাইলটা জলে পড়ে নষ্ট হয়ে গেল, আর আমার পুরোনো বন্ধুদের নম্বরগুলোও সব হারিয়ে গেলকাউকে পাই নানা তোকে, না শুভেন্দুকে, না রনিকেকাউকেই নয়শেষমেষে আজ আর থাকতে পারিনিট্যাক্সি ধরে তোর কাছে ছুটে এসেছি।’
ওকে বললাম, ‘বেশ করেছিসএতদিন বাদে আমাকেও যে তোর মনে পড়েছেআয় ভেতরে আয়।’
আমার বসার ঘরে শুক্লাকে বসালাম, বললাম, কি খাবি বল? ওফ তোকে দেখে আমার যা আনন্দ হচ্ছে না, কি আর বলবো
শুক্লা বললো, তা গায়ক মশাইয়ের খবর কি? বিয়ে থা কি করা হয়েছে? না এখনো সেই-
কিছুক্ষণ চুপ করে রইলামভাবছি, শুক্লার কথার কি উত্তর দেবোওকে বললাম, ‘না আমি ভাবছি চিরকুমারই আমি থাকতে চাই।’
শুক্লা হেসে একটু টিপ্পনি করলো আমাকেবললো, চিরকুমার না ছাই? বলো, এখনো তোমার বিদিশার জন্য মন পড়ে আছেতাই না? বিয়ে করে যে তোকে ছেড়ে চলে গেলআর তুইও পারিস
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#12
মা তখন ঘরে চলে এসেছেশুক্লা মাকে দেখে বললো, ‘মাসীমা, ছেলের এখনো বিয়ে দেন নি কেন? কি করেছেন কি? আমি তো ভাবলাম, এতোদিন বাদে দেবের বাড়ী যাচ্ছি, নিশ্চই ওর বউটাকেও দেখতে পাবো।’
মা বললো, ‘কি আর করবো বলো? এটা তো আমার ছেলেরই মর্জী সবআমি তো কবে থেকে ওকে বলছিউনি শুনবেন, তবে তো কথা।’
মার সাথে শুক্লার আলাপ করালামমাকে বললাম, ‘মা, একে তুমি চেনো? এ হল শুক্লাআমার কলেজের বান্ধবী।’
মা যেন পুরোনো কিছু মনে করার চেষ্টা করছেমানে মিনুর চেহারার সাথে শুক্লার চেহারাটা মেলানোর চেষ্টা করছেভাবছে আগে ওকে দেখেছে কিনা? আমি ঠিক বুঝে গেলাম, মাকে বললাম, ‘না মা, একে তুমি আগে কখনো দেখো নিএর নাম শুক্লাও আজই প্রথম আমার বাড়ীতে এলো।’
মা এবার বুঝতে পারলো, শুক্লাকে বললো, ‘চা খাবে তুমি? তাহলে চা করে নিয়ে আসি।’
শুক্লা বললো, ‘তা খেতে পারি মাসীমাতবে আপনি ব্যস্ত হবেন নাআজ আমি দেবের কাছে এসেছি, ওরজন্য একটা বীরাট সারপ্রাইজ আছে বলেআপনার ছেলে শুনলে একেবারে চমকে যাবে।’
কথাটা এমন ভাবে বললো, আমি সত্যি চমকে গেলামএও এতদিন পরে এসে বলে সারপ্রাইজ? কি হচ্ছেটা কি আজকে? সকাল থেকে উঠে খালি সারপ্রাইজের কথা শুনছিকিসের সারপ্রাইজ?
শুক্লা মুচকি মুচকি হাসতে লাগলআমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আছে আছে বৎসসাধে কি তোর কাছে আমি এসেছি? এমনি এমনি? খবর তো একটা আছেক্রমশ প্রকাশ্য।’
আমার মনে হল, এরা বোধহয় সবকটা এতদিন পরে একজোট হয়েছে আবারআমার মুখে কি হাসি ফোটাবে কে জানে? কিছুতো একটা ব্যাপার নিশ্চই আছে, যেটা শুভেন্দু, শুক্লা দুজনেই জানেঅথচ আমাকে বলতে চাইছে না
আমি বেশ ধন্দে পড়ে গেলামমনে পড়লো, শুভেন্দুর কথাশুভেন্দু বলেছে, আজ ওর বাসায় যেতেসেখানে রনি থাকবেআর সাথে রনির বউ থাকবেকিন্তু শুক্লার কথা তো বলেনিআবার শুক্লা সাতসকালে আমার বাড়ীতে ছুটে চলে এসেছেআমাকে সারপ্রাইজের কথা বলছেতাহলে শুক্লাও নিশ্চই জানে বিষয়টাআসল ব্যাপারটা কি? কিছুই তো বুঝতে পারছি না
ওকে বললাম, ‘কে বলেছে তোকে? শুভেন্দু?’
শুক্লা যেন আকাশ থেকে পড়লোআমাকে বললো, ‘শুভেন্দু কেন বলবে? আমার কাছে তো ওর ফোন নম্বরই নেইএকটু আগেই তোকে তো বললামসব ফোন নম্বরগুলো হারিয়ে গেছে
ঠিক ক্লিয়ার হচ্ছে নাশুক্লাকে বললাম, দাঁড়া, দাঁড়াতুই বলছিস শুভেন্দুর ফোন নম্বর তোর কাছে নেইঅথচ শুভেন্দুও আমাকে ফোন করে একই কথা বলেছে
শুক্লা বললো, কি বলেছে?
-ওই সারপ্রাইজতোর জন্য সারপ্রাইজ আছেকি সারপ্রাইজ কে জানেআমাকে বললো, এখানে এলে সব জানতে পারবিসন্ধেবেলা ওর বাড়ীতে যেতে বলেছেওখানে গেলে নাকি সারপ্রাইজটা আমাকে দেখাবে
 শুক্লা বললো, ‘তুইও শুভেন্দুর কথা বিশ্বাস করিস? ও আর্ধেক কথা মুখ দিয়ে বলেআর আর্ধেক কথা পেট দিয়েপট্টী মেরে ওখানে নিয়ে যাচ্ছে তোকেও আবার দেবে তোকে সারপ্রাইজ?’
আমার কিছুই মাথায় ঢুকছে নাসব অদ্ভূতুড়ে লাগছেএরা সব পুরোনো বন্ধুগুলো আমাকে নিয়ে মজা করছে নাকি? শুক্লাকে বললাম, ‘কি সারপ্রাইজ বলবি তো? তবে তো বুঝবোতুইও বলবি নাশুভেন্দুও বললো নাতাহলে আমি কোথায় যাই বলতো?’
শুক্লা দেখলাম, ওর ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে কি একটা বার করলোআমার হাতে দিয়ে বললো, এটা দেখতো
হাতে নিয়ে দেখলাম, ওটা একটা ছোট্টো ভাঁজ করা কাগজ, তাতে হিজিবিজি কিসব লেখা রয়েছেশুক্লাকে বললাম, ‘এগুলো কি? আমি তো কিছুই ভালো করে বুঝতে পারছি না
শুক্লা বললো, ‘ভালো করে দেখতাহলেই বুঝতে পারবি।’
একটা ছোট্ট চিরকূটের মত কাগজতাতে মাঝখানে দুতিন লাইন লেখা রয়েছেকিন্তু লেখাটাকে পেন দিয়ে হিজিবিজি করে কে যেন কেটে দিয়েছেভালো করে লেখাটা পড়া যাচ্ছে নাশুধু ওপরে ছোট্ট একটা নামনামটা কষ্ট করে হলেও পড়া যাচ্ছেব এ রস্সিকার, দ এ রস্সিকার, তালবশ্য এ আকারএ কি? এতো বিদিশাবিদিশাকে লেখা শুভেন্দুর সেই চিঠিতোর কাছে এলো কি করে? আমার নাম করে বিদিশাকে যে চিঠিটা শুভেন্দু দিয়েছিলএতো সেই চিঠিটা তুই এই চিঠিটা কোথায় পেলি?
শুক্লাকে দেখি, একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছেসেই পুরোনো দিনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো আবার মনে করাচ্ছে আমাকেকিছু দূঃখ, কিছু আনন্দ এই নিয়েই তো জীবনসবাই তো সুখী হতে চায়তারমধ্যেও কেউ সুখী হয়, কেউ হয় নাআমাকে বললো, আমিও পারলাম না জীবনে সুখী হতেআর তুই ও নয়
কাগজটা হাতে নিয়ে ভালো করে আবার দেখতে লাগলাম তলার লেখাগুলো সব পেন দিয়ে কাটা নিজের নামটাই যা কাটেনি বোঝা যাচ্ছে
শুক্লাকে দেখলাম, কিরকম অদ্ভূত ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে, আমার মনের ভেতরটা বোঝার চেষ্টা করছেআমাকে বললো, কলেজ ছাড়ার পর তোকে তো কোনদিন বলিনিভেবেছিলাম বলবও না কোনোদিনতুই কি ভেবেছিলিস, বিদিশা এই কান্ড করতে পারে?
আমার মুখে যেন ভাষা নেই, সেভাবেই বললাম, কিন্তু বিদিশার তোকে এই চিঠি?
শুক্লা বললো, ‘হ্যাঁ তোকে না বলেই আমি সেদিন বিদিশাদের বাড়ীতে গিয়েছিলামসেদিন বিদিশাকে আমি অনেক করে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলামওকে বলেছিলাম, দেব কে তুই ভুল বুঝছিস বিদিশাওর মত ছেলে হয় নাদেব যা করেছে, না বুঝেই করে ফেলেছেওকে তুই ক্ষমা করে দেছেলেটার কাছে গিয়ে একবার দেখ তোর জন্য শুধু শুধু ও কত কষ্ট পাচ্ছে।’
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি শুক্লার দিকেশুক্লা বললো, ‘সেদিন কিছুতেই আমার কথা মানতে চাইল না বিদিশাঅতকরে ওকে বোঝলাম, তাও মানলো নাযখন ফিরে আসছি, আমার হাতে এই কাগজটা দিলোআমাকে বললো, ‘দেবকে দিওএটা ওরই চিঠিমন থেকে যখন মুছে ফেলেছি, তখন চিঠিটা রেখেই বা কি হবে? চিঠিটা হাতে নিয়ে দেখলাম হিজিবিজি করে কেটে দিয়েছে পুরো চিঠিটারাগে, ক্রোধে বিদিশা তখন ফেটে পড়ছেআমি তাও বললাম, এ চিঠি আমি দেবকে দিয়ে কি করবো বিদিশা? তোর যদি রাখতে ইচ্ছে না হয়, তুই চিঠিটা ফেলে দেএ চিঠি আমাকে কেন দিচ্ছিস?’
 শুক্লা বললো, সেদিন তোদের দূরন্ত প্রেমটার ইতি সমাপ্তি ঘটলোচোখের সামনে দেখলাম, ভালোবাসার মৃত্যু ঘটেছেভালোবাসাকে নাকি অত সহজে ধরে রাখা যায় নাতুই ও পারলি নাআর আমি তো নই ই
আমি বললাম, আমাকে তো তুই বলিসনিকেন গেলি তুই বিদিশার বাড়ীতে?
শুক্লা বললো, ‘তোকে তো আমি চিনিতোর জন্য শুক্লা যা করতে পারবেআর কেউ নয় সেদিন বাড়ী বয়ে ওর কাছে আমি গেছিলামঅনেক আশা নিয়েই গেছিলামকিন্তু বিদিশার মনকে আমি সেদিন ঘোরাতে পারিনিকেন জানি না, আমার মনে হয়েছিল, মেয়েটার মন বলে কিছু নেইচট করে যার বিশ্বাস এত তাড়াতাড়ি চলে যেতে পারেসে কি করে তোর মনটা জিততে চেয়েছিল? চিঠিটা আমার হাতে দিতে এতটুকু ওর বাঁধলো না?
শুক্লা বললো, ‘ভাবছিস এতদিন পরে এই চিঠি তোকে কেন আমি এনে দেখাচ্ছিতাই তো? রাগে ঘেন্নায়, আমারো সেদিন মনে হয়েছিল, ওর কাছে আমি গেলাম, আর ও বলছে এই চিঠিটা তোকে এনে দিতে? বিদিশার মনটা এত নিষ্ঠুর? তোর মনের অবস্থা তখন কি,আমি তো জানি তোকে এনে বিদিশার চিঠিটা দেখাবো আর বলবো, এই দেখ, কি করেছে বিদিশা, এই দেখ সেই চিঠিহিজিবিজি করে কেটেছে লেখাগুলোকেএর জন্য তুই আর কত কষ্ট পাবি? ভুলে যা ওকেবিদিশার মত মেয়ে তোর যোগ্য নয়
আমি বললাম, তারপরে?
শুক্লা বললো, ‘তারপরে মন চাইলেও আর আসতে পারিনি তোর কাছে জানি তুই কষ্ট পাবিএই চিঠি তোকে কিছুতেই দেখানো যায় নাচিঠিটা তাই নিজের কাছেই রেখে দিলাম ডায়েরীর পাতার মধ্যে কোথায় যে রেখেছিলাম, মনেও নেইঘরের মধ্যে থেকেই চিঠিটা তারপর হারিয়ে গেলোআর খুঁজেও দেখিনি কোনদিনকাল সকালে ঘুম থেকে উঠে পুরোনো ডায়েরীগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করছিহঠাৎই দেখি, পুরোনো একটা ডায়েরীর মধ্যে এই সেই চিঠি
আমি অবাক হয়ে বললাম, এতদিন বাদে, তুই চিঠিটা আবার আমার কাছে নিয়ে এলি? কেন হঠাৎ? এ আর দেখে আমি কি করবো?
শুক্লা বললো, যে তোকে কষ্ট দিয়ে চলে গেল, সে অন্তত জীবনে সুখী হোক, তুই তো এটাই চেয়েছিলিস?
আমি বললাম, আমি চাই সবাই ভালো থাকুকপৃথিবীতে আমিই যদি একমাত্র কষ্ট পাই, তাহলেও কোন দূঃখ নেইভগবান সবাইকে সুখ দিক, আমাকে দূঃখ দিলে কোন কষ্ট নেইভাগ্যে যা আছে লেখা, সেটা কি আর খন্ডানো যায়? হয়তো এটাই আমার লেখা ছিল জীবনে
 
শুক্লা বললো, জীবনটা বড় অদ্ভূততাই না দেব?
আমি বললাম, যার যার জীবন যেরকম, সেরকমই তাকে মানিয়ে নিতে হবেএটাই তো ধ্রুব সত্য
শুক্লা বললো, ‘বিদিশার জন্য তুই কি এখনো কষ্ট পাস?’
ওকে হেসে বললাম, নিজের কষ্টটা নিজের কাছেই রাখতে হয়সবাইকে অত বলতে নেইআমি অন্যের দূঃখটা শুনতে বেশী ভালোবাসিএই পৃথিবীতে তো আর আমি একা নইসবার কথাই ভাবতে হবেভগবানেরও অনেক দায়িত্ব
শুক্লা বললো, আমিই না তোকে পরে বলেছিলাম,বিদিশা নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#13
শুক্লাকে বললাম, হ্যাঁতুই ফোন করে আমাকে পরে বলেছিলিসবিদিশা তোর কাছে পরে দূঃখ করেছেও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।  কিন্তু তখন বিদিশারও আর করার কিছুই নেইওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছেবিদিশা বিয়ে করে মুম্বাই চলে যাচ্ছে
শুক্লা অবাক করে আমাকে বললো, বিদিশা, তোকে যদি এতদিন পরে তোকে আবার দেখতে চায়, যাবি না ওর কাছে?
আমি শুক্লার দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছিকি বলছে ও কিছুই বুঝতে পারছি না
 
শুক্লা বললো, বিদিশা এখন কলকাতায়ও তোর সাথে একবার দেখা করতে চায়আমাকে অনেক করে বলেছে
আমি বললাম, বিদিশা কলকাতায় কেন? ও কি এখন এখানেই রয়েছে?
শুক্লা বললো, এখানেই থাকবে ওআর ফিরে যাবে না, মুম্বাইতেবিদিশার স্বামীর সাথে বিদিশার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছেতাই ও-
 
কথাটা তখনো শেষ করেনি শুক্লা।  আমি যেন কেমন ভাবুক মত হয়ে গেছিআপন মনে কি যেন ভাবছি।  আর মনে হচ্ছে, পুরোনো দূঃখের স্মৃতিতে দগ্ধ মনটায় হঠাৎই এ যেন এক খুশীর খবরমরে যাওয়া ভালোবাসাতে নতুন করে আবার প্রাণের স্পন্দনশুনেছি, হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা নাকি কখনো সখনো ঘুরে ফিরে আসেএটা কি তাহলে তাই? ভগবান কি এইভাবেই প্রেমিক প্রেমিকার পরীক্ষা নেয়? যে দূঃখ দেয়, ভগবান নাকি তাকে কখনো সুখী করেনাআর যে দূঃখ পায় ভগবান শুধু তার ধৈর্য্যেরই পরীক্ষা নেয় যেমনটি আমার নিয়েছে ভগবান এই কটা দিন। 
 
এর থেকেও বড় সারপ্রাইজটা আমার জন্য বোধহয় অপেক্ষা করছিলশুক্লা যেখানটায় বসে ছিল, ওখান থেকে উঠে এসে আমার পাশে হঠাৎ বসলোআমার হাত দুটো ধরে বললো, ‘দেব’ তুই কি বিদিশার কাছে আবার ফিরে যাবি?
আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম, কিছু তো ভাবিনি এখনোতুই বল-
শুক্লা বললো, ‘যাস না দেব, যাস নাআমি বলছি, বিদিশার কাছে তোর ফিরে না যাওয়াটাই আর ভালোআমি তোকে-
 
বিদিশার চিন্তাতে আমি কেমন মশগুল হয়ে গিয়েছিলাম কি একটা বলতে গিয়ে শুক্লাও হঠাৎই থেমে গেছে দেখলাম মা, চা নিয়ে ঢুকেছে ঘরেশুক্লা মায়ের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে মা’কে ঢুপ করে একটা প্রনাম করে বসলোমা, শুক্লার মাথায় দুহাত রেখে বললো, ‘থাক থাক মা, আমাকে আর প্রনাম করতে হবে নাআমি এমনি তোমাকে আশীর্ব্বাদ করছি।’
চায়ের সাথে চানাচুর আর মিষ্টিশুক্লা বললো, এ কি মাসিমা? দেবকে দিলেন নাশুধুই আমাকে?
মা বললো, ‘ও তো খেয়েছে এই সবেতুমি খাওদেব সকালে একবারই চা খায়, তারপরে আর খায় না।’
শুক্লা আমাকে বললো, ‘কলেজে তো খুব চা খেতিসঘন্টায় ঘন্টায়এখন সব কমে গেছে বুঝি?
 এক সময়ে চায়ের একটা নেশা ছিলচায়ের সাথে বিস্কুট আর সিগারেটবিদিশা বলতো, ‘তোমার এই চায়ের নেশাটা খুব বাজেআর এত ঘনঘন সিগারেট খাও কেন তুমি? জানো বেশী সিগারেট খেলে ক্যানসার হয়গলা খারাপ হয়ে যায়তোমাকে গলাটা বাঁচিয়ে রাখতে হবে কিনা?’
আমি বিদিশার জন্য চায়ের নেশা কমিয়ে দিলামসিগারেট খাওয়াও ছেড়ে দিলামকিন্তু বড়ই অদ্ভূতবিদিশাই তারপরে আমাকে ছেড়ে চলে গেল
শুক্লাকে দেখলাম, চা খাচ্ছে, আর বারে বারেই আমার দিকে তাকাচ্ছেকি যেন বলতে গিয়ে একটু আগে থেমে গিয়েছিল ওশুক্লার এমন দৃষ্টি, কলেজে যখন পড়তাম, আগে কখনো দেখিনিআমার পাশেই বসে রয়েছে ওঅথচ কলেজে যখন পাশে বসতো, কোনদিন এভাবে কখনো তাকাতো না আমার দিকে
-’কিছু বলবি শুক্লা? কি যেন বলতে গিয়ে থেমে গেলি তুই?’
শুক্লা বললো, ‘তোকে যদি কিছু বলি, তাহলে তোর মান হবেঅভিমান হবে আমার ওপররাগ করবি না বল?’
শুক্লাকে বললাম, ‘তুই তো আমার ক্ষতি কোনোদিন চাস নিরাগ করবো কেন? কি বলছিলিস বল?’
চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে, আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘সব বলবো তোকে, যদি পারিস, আজ সন্ধেবেলা আসবি একবার আমার ফ্ল্যাটে?’
আমি বললাম, ‘সন্ধেবেলা? আমাকে তো শুভেন্দুও আবার ডেকেছে ওর বাড়ীতেকি করে যাবো?’
শুক্লা বললো, ‘ওকে বারণ করে দেবল, শুক্লাও আমাকে ডেকেছেআমি শুক্লার ফ্ল্যাটে যাচ্ছি।’
শুভেন্দুকে আজ অবধি কোনদিন না করিনিশুক্লার কথায় না বলবো, মনটা কেমন খচখচ করতে লাগলোবিদিশার চিন্তাটাও মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছেশুভেন্দু আমাকে সারপ্রাইজের কথা বলেছে, সেটাও আমাকে জানতে হবেওকে যদি না বলে দিই।, শুভেন্দু অসন্তুষ্ট হবে, সারপ্রাইজটাও আমার জানা হবে না
-’কি হল? কিছু বলছিস না যে? বল আজ আসবি কিনা? আমি তো এখন অফিসে যাবোওখান থেকে ফিরে সন্ধেবেলা ফ্ল্যাটেই থাকবোতোর জন্য অপেক্ষা করবোআসবি তো?’
সল্টলেকের কোয়ালিটি বাস স্টপেজের কাছে শুক্লারা ফ্ল্যাট কিনেছিল আমি জানিএই শুভেন্দুই আমাকে বলেছিল, ‘জানিসতো দেব, শুক্লারা এখন সল্টলেকে থাকেআগে থাকতো বেহালায়এখন ওখানেই রয়েছে মা বাবাকে নিয়ে।’
শুভেন্দু পুরোনো বন্ধু বান্ধবদের সব খবর গুলো কেমন পেয়ে যায়, অথচ আমি পাই নানিজেকে বেশ কিছুদিন গুটিয়ে রেখেছিলাম, হয়তো সেইজন্য
শুক্লা বললো, ‘আমার ফ্ল্যাটটাতেও তো তুই কোনদিন আসিস নিতা একবার এসে দেখে যাসবাই তো এসেছেশুধু তুই বাকী।’
আমি বললাম, ‘সবাই বলতে কে কে?’
শুক্লা বললো, ‘কেন শুভেন্দু, রনিওরা দুজনেই তো এসেছে।’
-’আর সৌগত?’
নামটা শুনে মুখটা কেমন যেন হয়ে গেল শুক্লারআমাকে বললো, ‘কষ্ট দিচ্ছিস?’
 ভাবিনি ওর মুখটা এমন করুন হয়ে উঠবেশুক্লাকে আমি কোনদিন কাঁদতে দেখিনিচোখের কোনে জলটা চিকচিক করছিলরুমাল দিয়ে তাড়াতাড়ি চোখটা মুছে নিয়ে বললো, ‘না তোকে এমনি বললাম, আমি জানি তুই কোনদিন কাউকে কষ্ট দিতে শিখিস নি।’ সৌগত কি করে আসবে? ও তো বিয়ে করে কবেই চলে গেছে আমাদের থেকে অনেক দূরেমনে নেই? ওর বিয়েতে তো আমিও তো গিয়েছিলাম।’
বললাম, জানিস সৌগত এখন কোথায়?
শুক্লা বললো, ‘শুনেছিলাম তো অ্যামেরিকায়নিউ জার্সি তে রয়েছেযে মেয়েটাকে বিয়ে করেছিল, কি সুন্দর দেখতে মেয়েটাকেবিয়ে করার একবছর পরেই অ্যামেরিকাতে চলে গেলআমাকে একটা বিয়ের কার্ড পাঠিয়েছিল সৌগততখন আমি বেহালাতেই রয়েছিকার্ডটা পেয়ে যাবো কিনা ভাবছিতারপরই সৌগত আমাকে ফোন করলোবললো, কি গো আসবে না? নাকি রাগ এখনো রয়েছে আমার প্রতি? আমি কিন্তু সব কিছু ভুলেই ওর বিয়েতে গিয়েছিলাম।’
শুক্লাকে বললাম, ‘তোকে কিন্তু সেদিন দেখে আমিও খুব অবাক হয়েছিলাম শুক্লাপরে ভেবেছিলাম, শুক্লার মনটাও কি তাহলে বিদিশার মত বিষিয়ে গেলএত সুন্দর গড়ে উঠেছিল তোদের প্রেমটাঅথচ হঠাৎই কোথাথেকে কি যেন হয়ে গেলতুই আবার সৌগতর বিয়েতেও এসেছিলিস, আমার খুব অবাক লেগেছিল।’
শুক্লা বললো, ‘অবাক তো লাগবেই তুই যে আমার কথা ভাববি, আমি খুব ভালো করেই জানতামএই সৌগতই না কতদিন তোর পেছনে পড়েছিল, আমাকে রাজী করানোর জন্য।’
আমি হেসে বললাম, হ্যাঁমনে পড়ে সেসব কথাতারপরেই ওকে বললাম, ‘সৌগতর জন্য তোর কোনদিন আফশোস হয় না শুক্লা? দুজনে পৃথিবীর এখন দুই মেরুতেকখনো মনে হয় না, এই জীবনটা আমরা হয়তো চেষ্টা করলে একসাথেই কাটাতে পারতাম।’
শুক্লা বললো, ‘আফশোস তো হয়এই যেমন তোরও হয় বিদিশার জন্যকিন্তু কথায় বলে, আফসোস করে নাকি কিছু হয় নাপৃথিবীতে আমরা কি কেউ পেছনের দিকে তাকিয়ে চলি? বল? সবাই চায়, সামনের দিকে তাকাতেআমিও তাই-
 
মনে হল শুক্লা যেন দূঃখ কষ্টটাকে চেপে রেখেছে, আমারই মতন।  ভালোবাসা ওরও টেকেনিপৃথিবীতে আমরা দুজন যেন একই পথের যাত্রী
শুক্লাকে বললাম, ‘তাহলেও আমার আর তোর ব্যাপারটা তো আলাদাসৌগতর সঙ্গে তোর বিয়ে দিতে নাকি তোর বাবা মা আপত্তি করেছিলসৌগতও জেদের বশে বিয়ে করে ফেললো ওই মেয়েটাকেএটা কি সত্যি?’
শুক্লা বললো, ‘হ্যাঁ বাবা মা আপত্তি করেছিলপ্রথমে মনে হয়েছিল ঠিকই তো করেছেএটা তো সত্যিআমিই বা জোর করবো কেন?’
শুক্লাকে বললাম, ‘তুই তো সৌগতকে ভালোবাসতিসজোর করলি না কেন?’
শুক্লা বললো, ‘আমার ভালোবাসাটা আসলে ঠুনকো ছিলসেটাই বলতে চাইছিস তো? আমি তো বিদিশার মত অত ওকে ভালোবাসতাম নাযতটা বিদিশা তোকে ভালোবাসতো।’
শুক্লাকে বললাম, ‘আমি বিশ্বাসই করবো না সেকথাশুধু এটুকু জানতাম, বিদিশা আমাকে যতটা ভালোবাসে, শুক্লা ঠিক ততটাই ভালোবাসে সৌগতকেবিদিশা আমাকে ছেড়ে গেলেও শুক্লা কিছুতেই ছাড়তে পারে না সৌগতকে।’
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#14
আমার দিকে তাকিয়ে অল্প একটু হাসলো শুক্লাবললো, ‘দেব তুই এখনো কত সরলসেই আগের মতই রয়ে গেছিসতোকে দেখে ভাবি, ইস প্রেমটা যদি তখন আমি তোর সাথেই করতাম।’
বলতে বলতেই হেসে ফেললো শুক্লা। ‘আমাকে বললো, ভয় পেলি?’
আমি বললাম, ‘ভয় পাবো কেন? তোর প্রতি আমার সহানুভূতিটা সবসময়ই ছিলআমি জানতাম শুক্লার মত মেয়ে হয় নাতাও মনটা একটু খচখচ করেছিল সেদিনবিদিশা তারপরপরেই আমাকে যখন ছেড়ে গেল, তুই আমার প্রতি অনেক সহানুভূতি দেখিয়েছিলিস।  অথচ আমি সেটা তোকে দেখাতে পারলাম নাঅবাক হলাম, যখন দেখলাম সৌগতও মানিয়ে নিয়েছে ব্যাপারটাতোদের দুজনের মধ্যে আবার দেখা হলকিন্তু সেই দূঃখের অনুভূতিটা যেন নেইকোথায় হারিয়ে গেছে।’
শুক্লা বললো, ‘ওর সাথে আমার পরেও একবার দেখা হয়েছিল কার যেন বিয়েতে আবার দেখা হলও হ্যাঁ মনে পড়েছেরনির বিয়েতেসৌগত এসেছিলসাথে ওর সুন্দর বউটাআমার সাথে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলেছিলবললো, ভালো আছো? আমি বললাম, হ্যাঁওকে বললাম, তুমি? সৌগত বললো, আমি খুব ভালো আছি
শুক্লার কথা শুনে আমারো পুরোনো অনেক কথা মনে পড়ে যাচ্ছিলোওকে বললাম, ‘মাঝে মাঝে আমিও ভাবি শুক্লা, এই ভালোবাসাই যদি পরষ্পরকে কাছে আনার জন্য সৃষ্টি হয়, তাহলে এভাবে বিচ্ছেদ কেন শুরুতেই? পুরোনো ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মনকে তো প্রভাবিত করবেইতুই হয়তো ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করবিকিন্তু সত্যিই কি সব ভুলে থাকতে পারবি?’
শুক্লা হঠাৎই আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘সৌগত তখন একটা অবাঙ্গালী মেয়েকে নিয়ে বাইকে করে ঘুরতো, সেটা কি জানতিস?’
আমি অবাক হলামবললাম, ‘না, আমি জানতাম না, শুক্লা ছাড়াও সৌগতর অন্য কোনো প্রেমিকা আছে।’
শুক্লা বললো, আমিও জানতাম না। ‘সৌগতকে, বেহালায় যেদিন আমাদের বাড়ীতে নিয়ে গেলামবাবা মায়ের সাথে ওর আলাপ করালামবাবা বললো, তোমরা সব এক একটা ব্রিলিয়ান্ট বয়আমি শুক্লার মুখে তোমার কথাও শুনেছিদেব ছেলেটাও ভালোআর তুমি তো ভালো অবশ্যই।’
শুক্লাকে বললাম, ‘মেসোমশাই আমার কথা এখনো বলেন? সেই একবারই তোর বেহালার বাড়ীতে গেছিলামউনি অনেক্ষণ ধরে আমার সাথে গল্প করেছিলেন।’
শুক্লা বললো, ‘বাবা তোকে খুব পছন্দ করতোশুধু বলতো, দেবের মত ছেলে হয় নাকিন্তু সৌগতটা যে কি করলো।’
আমি বললাম, ‘তোর বাবা মা কি এটা জানতে পেরেছিলেন? কি করে জানলো? তুই বলেছিলিস?’
শুক্লা মাথাটা একটু নিচু করলোআমাকে বললো, ‘হ্যাঁ আমিই বলেছিআমি সৌগতকে একবার নয়, বেশ কয়েকবার ঘুরতে দেখেছি ওই মেয়েটাকে নিয়েমনের মধ্যে কষ্টটাকে চেপে রেখেছিলামজানিস তো দেব, আমার আবার বিশ্বাস ভাঙতে একটু সময় লাগেমনে প্রানে যাকে বিশ্বাস করি, চটকরে তার প্রতি বিশ্বাস ভেঙে যায় নাসৌগতকে আমি নিজেই অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছিও বলতো, দূর তুমি পাগল নাকি? ও তো আমার শুধু বন্ধু।’
 আমি অবাক হয়ে শুনছি শুক্লার কথাশুক্লা বললো, ‘আমি ভুল করেছি আমি মানিপ্রথম প্রথম আমি সহ্যও করতামসৌগত বলতো, ও আমার বন্ধুএর বেশী কিছু নয়কিন্তু সৌগতর হাবভাব দেখে মনে হত, এর মধ্যে নিশ্চই কিছু একটা ব্যাপার আছেআচ্ছা ‘দেব’, মানুষ কাউকে ভালোবাসলে কি আনসোশাল হয়ে যায়? পরষ্পরের প্রতি বিশ্বাস আর সন্মান অক্ষুন্ন রেখে যদি প্রেম করা যায়, তাতে তো হানিকর কিছু ঘটে নাভালোবাসার মূলমন্ত্র যদি আন্ডার স্ট্যান্ডিং হয়তাহলে যেকোনো ব্যাপারই মানিয়ে নেওয়া চলেআমি প্রথমে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলামকিন্তু পরে মনে হল সৌগত যে মেয়েটার সাথে ঘুরছে, এটাকি আমাকে অসন্মান করা নয়? আমার কেন জানি না বিশ্বাসটাই চলে গেল সৌগতর প্রতিমনে হল ও মিথ্যে কথা বলছে আমাকেতারপরে যখন ওই আবার অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করলোবুঝলাম সেদিন সত্যি কথাটাই বলেছিল সৌগতআমারই ওর কথাটা মেনে নেওয়া উচিত ছিল
শুক্লার কথা শুনে মনে হল, এখনো চরম একটা আফশোস রয়েছে সৌগতর জন্যসবাই যেন ভুলের খেসারত দিয়ে যাচ্ছি আমরাআর এটাই দিয়ে যেতে হবে আজীবন ধরে
শুক্লা বললো,ছাড়াছাড়ি মানে তো কয়েকটা সম্পর্কের কাটান ছাড়ানএই যেমন তোর জীবনটাকে নিয়েও কাটাছেড়া করল মিনু আর বিদিশাআমারো তাইওই অবাঙ্গালী মেয়েটাই আমার বিশ্বাসটাকে সেদিন ভেঙে দিলো
শুক্লাকে বললাম, ‘তুই এখনো দূঃখ পাস?’
শুক্লা বললো, ‘দূঃখ তো আমারই পাবার কথাভুলতো আমিই করেছিসৌগত নয়যে ভুল করে তারই তো দূঃখ পাওয়া উচিতঅথচ ভগবান বোধহয় তোর বেলায় উল্টোটাই করেছে।’
হেসে বললাম, ‘কেন? একথা বলছিস কেন?’
শুক্লা বললো, ‘ভুল করলো বিদিশা, আর তুই যেমন ওর জন্য শুধু শুধু দূঃখ করে মরলিকার ভুল কে করলো? আর এখন দেখ, ও কেমন আফসোস করছে তোর প্রতিএই ভুলের কি কোনো ক্ষমা হয়?
পৃথিবীতে বিদিশাই একমাত্র মেয়েযাকে কোনোদিন আমি ক্ষমা করতে পারবো নাএ কখনো হয় নাবিদিশার মনটা ফুলের মত নরমযে ফুল অল্প আঘাতও সহ্য করতে পারে নাসেদিন হয়তো, অল্প আঘাতেই ওর মনটা ভেঙে গিয়েছিলবিদিশা আমাকে ভুল বুঝেছিল, তাই বলে কি ওকে আমি ক্ষমা করতে পারি না? নিশ্চই পারি
শুক্লা হঠাৎই আমার হাতের ওপর হাতটা রেখে বললো, ‘আচ্ছা ‘দেব’, আমি যদি তোকে বলি, তোকে আমি ভালোবাসিতুই কি প্রমান চাস?
আমি বললাম, ‘আমি যদি কোনো অন্যায় কাজ করি আর এসে তোকে বলি ক্ষমা করে দেতুই করবি।’
শুক্লা বললো, ‘আমি সেটাকে অন্যায় বলেই ভাববোই নাকারণ তোর প্রতি আমার সেরকমই বিশ্বাস আছেবিদিশা তাহলে কেন এটা করলো না?’
শুক্লার কথাগুলো আমার কেমন গুলিয়ে যাচ্ছেবুঝতে পারছি না, ও কেন চাইছে নাকেন বলছে, বিদিশার সাথে আমার দেখা না করাই ভালো
কিছু একটা বলতে গিয়েও শুক্লা আবার থেমে গেলআমাকে বললো, ছাড় এসব পুরোনো কথাতুই আসবি কিনা বল?
 নিজের হাতঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, ও বাবাকটা বাজে খেয়াল করেছিস? আমাকে আবার অফিসে যেতে হবে, তোর এখানে এমনিতেই আমি লেটএরপরে আরো বসলে আরো লেট হবেএবার আমি উঠবোবল না যাবি কিনা?

শুক্লাকে বললাম, তোর অফিস মানে তো ব্যাঙ্ককোন ব্যাঙ্কে আছিস যেন?

শুক্লা বললো, ‘পাঞ্জাব ন্যাশানাল ব্যাঙ্কে আছিওই চাকরিটাই তো আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেএখান থেকে সোজা বালীগঞ্জ যাবোব্যাঙ্কে সারাদিন ডিউটি দেবোতারপর খাটাখাটনি করে বাড়ীতে একটু বিশ্রাম।’

শুক্লাকে বললাম, ‘মেসোমশাই, মাসীমা কেমন আছেন? মানে তোর বাবা মা?’

শুক্লা বললো, ‘বাবা তো মারা গেছেই সেই কয়েক বছর আগেমা হালে মারা গেলেনক্যানসার হয়েছিল।’

অবাক হয়ে শুক্লাকে বললাম, তুই তাহলে একা?

শুক্লা বললো হ্যাঁ একাবড় নিসঙ্গ আমি

 

শুক্লা এরপরে উঠি উঠি করছেমা ঘরে এলোশুক্লাকে বললো, চলে যাচ্ছো?

শুক্লা বললো, ‘হ্যাঁ মাসিমাপরে একদিন আসবোএই আপনার ছেলেকে বলে গেলাম, আমার ফ্ল্যাটে যেতেবাবু এখন যাবে কিনা আমাকে কথা দিতে পারছেন না। ‘

মা বললো, ‘তা যাবে খনঅসুবিধের কি আছে?’

আমি মায়ের মুখের দিকে তাকাচ্ছিশুভেন্দুর কথাটা একটু আগে মাকে বলেছিমা বোধহয় ভুলেই গেছেশুক্লা আমাকে বললো, ‘এই বদমাইশটাতোর ফোন নম্বরটা আমাকে দে তোকথা বলতে বলতে আসল কাজটাই ভুলে গেছি।’

আমি শুক্লাকে আমার সেলফোন নম্বরটা দিলামশুক্লা সেভ করলোআমাকে বললো, ‘তুই তাহলে আমাকে কনফার্ম করিসএখন তো কিছু আমাকে বললি না।’

শুক্লাকে বললাম, ‘দেখছি, আমি শুভেন্দুকে ফোন করেতোকে বিকেলে আমি ফোন করবোবলেছিস যখন নিশ্চই যাবোশুধু আমাকে শুভেন্দুর সাথে একটু কথা বলতে দে।’

আমাকে শুক্লা বললো, ‘তোকে নিচে যেতে হবে না কষ্ট করেআমি নিজেই চলে যাচ্ছি।’

বারান্দা থেকে দাঁড়িয়ে ওর দিকে হাত নাড়লামশুক্লাও হাত নাড়লো।  তারপর ওর শরীরটা আসতে আসতে গলির মুখটা থেকে মিলিয়ে গেলবারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি, আমাকে শুক্লা বিদিশার কাছে যেতে মানা করলোআবার ওর ফ্ল্যাটেও যেতে বলে গেলকিন্তু কেন বলে গেল? মনে কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকে গেল

 
 
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#15
ছয়
 
কথায় বলে প্রেম ভালোবাসা থেকে নাকি একধরণের শক্তির জন্ম নেয়জীবনের বাঁচার রসদ খুঁজে পাওয়া যায়অদ্ভূত এক হতাশায় জীবনটা কেটে গিয়েছিল বেশ কয়েকটা বছরভাবলাম, বিদিশার ফিরে আসাটা কি কোনো কিছুর ইঙ্গিত বহন করছে? আমি যেন একটা অবলম্বনের পথ খোঁজারই চেষ্টা করছিলামঅথচ শুক্লাই এসে আমাকে কেমন দ্বিধায় ফেলে দিলমন থেকে শুক্লার না চাওয়াটা একটু অবাকই করলো আমাকেএতদিন পরে চিঠিটাও খুঁজে খুঁজে ঠিক নিয়ে এসেছে আমার কাছেও কি বলতে চাইলো ঠিক স্পষ্ট হল না
মনে পড়ছিল, কলেজে যেকটা দিন আমাদের কেটেছে, শুক্লাকে কোনদিন বিদিশার প্রতি এত বিদ্বেশ করতে দেখিনিও কোনদিন বিদিশাকে দেখে হিংসেও করতো নাআমি বিদিশার সাথে চুটিয়ে প্রেম করছিশুক্লাকে কোনদিন অখুশি হতে দেখিনি।  যখন প্রেমটা আমাদের ক্রমেই দানা বাঁধতে শুরু করেছে তখনো শুক্লা স্বাভাবিককোনদিন প্রেম ভালোবাসার কথা ও আমাকে বলেনিআর শুক্লাকেও সে চোখে আমি কোনদিন দেখিনি
শুক্লা বলতো, ‘দেব’ হচ্ছে এমন একটা ছেলে, যার সাথে যে মেয়ে প্রেম করবে, সেই ধন্য হয়ে যাবেআমি করিনি তো কি আছেদেব আমার খুব ভালো বন্ধুকিন্তু বিদিশা করেছেসেই দিক দিয়ে বিদিশাকে আমি খুব লাকি বলেই মনে করবোসুন্দরী হলেই শুধু হয় না।  ভালো ছেলেদের মন পাওয়ার জন্যও মেয়েদের অনেক তপস্যা করতে হয়বিদিশা করেছে, তাই ও দেবকে পেয়েছেআমি চাই দেব আর বিদিশা জীবনে আরো সুখী হোকপ্রেম ভালোবাসা দিয়ে ওরা একে অপরকে পাওয়ার আনন্দটা আরো উপভোগ করুক
নিজেও যখন সৌগতর সঙ্গে প্রেম করা শুরু করলো, তখন আমাকে বললো, ‘তুই ই আমাকে পথ দেখালি দেবতোকে দেখেই শিখলাম পৃথিবীতে প্রেম জিনিষটা কত সুন্দরমধুর প্রেমের সত্যিই কোনো বিকল্প হয় না।’
সৌগত আর শুক্লা আমাকে আর বিদিশাকে খুব নকল করতোবিদিশা আমাকে ভ্যালেনটাইন্স ডে তে কার্ড দিচ্ছে, সাথে ডায়েরী আর পেনআর সুন্দর কারুকার্য করা একটা রুমালশুক্লা তাই দেখে বললো, ‘আমিও সৌগতকে তাহলে এগুলো দিই? শুধু কার্ড কেন দেবো? সাথে ডায়েরী, পেন আর রুমালটাও তো দেওয়া দরকার।’
কলেজস্ট্রীটে গিয়ে সব কিনে নিয়ে এসেছেআমাকে এনে দেখাচ্ছে, আর বলছে, ‘দেখ, বিদিশার মত কিনেছি সবভালো হয়েছে?’
প্রথম প্রথম আমি আর বিদিশা মাঝে মাঝে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে বেড়িয়ে যেতামবেশ কয়েকটা নতুন সিনেমাও দেখে ফেলেছি দুজনেশুক্লা আবদার করে বসলো, ‘এবার থেকে তোরা একা যাবি নাগেলে আমরা চারজনে মিলে যাবো।’
মাঝে মাঝে শুভেন্দুও এসে জুড়ে বসতো আমাদের সাথেআমাকে আর শুক্লাকে বলতো, ‘এই শোন, তোদের দুজনের এই যে প্রেমটা হচ্ছে নাএসবই আমার বদলৌতেসেদিন যদি বিদিশাকে আমি চিঠিটা না দিতাম না, তাহলে দেব কোথায় আর বিদিশা কোথায়? আর শোনো, পারুল রানী, তুমি তোমার প্রেমিকের যা অবস্থা করেছিলে, দেবদাস হতে হতে বেঁচে গেছে ব্যাচারা সৌগতভাগ্যিস তোর মনটা ঘোরাতে পেরেছিলাম সেদিননইলে?
 শুভেন্দুর আমাদের সাথে ভিক্টোরিয়াতে গিয়ে যে কি অবস্থা হয়েছিল, সেকথা তো আগেই বলেছিও কখনো বোর ফিল করত নাআমরা চারজনে আপন মনে যখন নিজেদের মধ্যে ভাব, ভালোবাসার কথা বলছি, শুভেন্দু তখন আপনমনে বাদাম চিবোতোআর মুখে বলতো, ‘তোরা প্রেম করআমার ভাই বাদামই ঠিক আছে।’
 
শুক্লা চলে যাবার পরে শুভেন্দুর সেই বিদিশাকে দেওয়া চিঠিটা হাতে নিয়ে অনেক্ষণ ধরে দেখছিলাম, আর পুরোনো কথাগুলো আবার মনে পড়ে যাচ্ছিল
মা, ঘরে ঢুকে বললো, ‘তোর মনে হচ্ছে কাজে বেরোনোর আজ বারোটা বেজে গেলকোনো তাড়া নেই, সেই সকাল থেকে লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লিতারপরে এখন আবার বসে বসে কি ভাবতে শুরু করেছিস?’
আমি বিদিশার কথাই ভাবছিলাম, মাকে সেভাবে বলতে পারলাম নাশুধু বললাম, ‘মা কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিতে আমাকে খুব দোটনায় থাকতে হচ্ছেভাবছি, কি সিদ্ধান্ত নেবো?’
মা বললো, ‘কি সিদ্ধান্ত?’
- ‘সেটা তোমাকে এখনি বলা যাবে নাআমি পরে বলবো।’
মা বললো, ‘তুই তো সব কথা আমাকে সেভাবে বলিস নানিজের ভেতরেই লুকিয়ে রাখিসযদি মনে করিস বলবি নাতাহলে বলিস নাআমি আর কি বলবো?’
মাকে বললাম, ‘তোমাকে আজ অবধি কোনোকিছু কি আমি লুকিয়েছি? তুমি তো সবই আমার পুরোনো কথাগুলো জানোআমার অতীতে যে ঘটনাগুলো ঘটে গেছে, সেগুলোই মাঝে মাঝে বসে আমি ভাবিকলেজের দিনগুলোর কথা এতদিন বাদে মনে পড়ে যাচ্ছিলতাই সকালে লিখছিলামতারপরে শুক্লাও এলোএতদিন বাদে আমার বাড়ীতে প্রথম এসেছে, ওর সাথে কথা বলে ভালো লাগলপুরোনো স্মৃতিগুলো মনকে নাড়া দিচ্ছে এই আর কি
মা বললো, ‘শুক্লা তোকে কিছু বলেছে?’
অবাক হলামবললাম, ‘না কই কিছু বলেনি তোকি বলবে?’
মা বললো, ‘আমি শুনেছি আড়াল থেকেও বিদিশার কথা বলছিলবিদিশা নাকি ফিরে এসেছে কলকাতায়ওর স্বামীকে ছেড়ে।’
আমি মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি, মাও তাকিয়ে আছে আমার দিকেদেখছে জবাবে আমি কি বলি?
মাকে বললাম, ‘কেন তুমি শুনে খুশি হও নি? বিদিশা ফিরে এসেছে।’
একটা চাপা দূঃখ ঠিক আমারই মতন মাকে বরাবরই দেখে এসেছি, আমার জন্য আফশোস করতে মা আমার এমনই যখন আমি দূখী তো মা দূখী আবার আমি সুখি তো মাও সুখী যেভাবে ছেলের মুখে হাসি ফুটলে মায়েরও মুখে হাসি ফোটে, ঠিক সেভাবেই মা, আমাকে বললো, আমি তোর মুখে হাসিটা দেখে ফেলেছিএতদিন বাদে তুই খুশী হয়েছিসআমি কি খুশী না হয়ে থাকতে পারি?
আমি মাকে আনন্দে জড়িয়ে ধরলামবললাম, ‘খুশি হয়েছি মা, খুব খুশি হয়েছিবিদিশা ফিরে এসেছে, আমার থেকে বড় খুশী বোধহয় পৃথিবীতে আর কেউ নেই
 শুক্লার কথাটা মন থেকে মুছে ফেললামমনে মনে বললাম, যে মেয়েটিকে আমি এত ভালোবাসতাম, যার কথা আমি সবসময় ধ্যান করতাম, তাকে যদি এতদিন বাদে আবার দেখতে পাই, চোখ তো ফেরাতে পারবো নাবিদিশা যদি আমার খোঁজ করে, আমি নিশ্চই ওর কাছে যাবো
মনে মনে বললাম, ভাগ্যিস, এই গল্পটার নাম, একটি ভালোবাসার মৃত্যু দিইনিতাহলে বিদিশার ফিরে আসাটা একেবারেই অর্থহীন হয়ে পড়তো
 
বিকেল হতেই শুভেন্দুর বাড়ী যাব বলে তৈরী হয়ে নিলাম অফিসে ফোন করে বলে দিয়েছি, ‘আজ আর অফিসে যাচ্ছি না কিছু কাজ পড়ে গেছে সুতরাং কালকে আবার আসছি যথারীতি
শুভেন্দু বলেছে, সাতটার মধ্যে ওর ওখানে যেতেআমি যখন বাড়ী থেকে বেরোলাম, তখন ঘড়িতে বিকেল পাঁচটা বেজে দশ মিনিট।  বাড়ী থেকে বেরিয়ে হন হন করে হাঁটতে হাঁটতে বড় রাস্তার মোড় অবধি গেলামমনে হল, এই যাঃ কিছু একটা আমি ফেলে এসেছিখেয়াল হল, বিদিশাকে দেওয়া শুভেন্দুর ওই চিঠিটা বাড়ীতে ফেলে এসেছিশুক্লা যেটা বাড়ী বয়ে এসে আমাকে দিয়ে গেলশুভেন্দুকে দেখালে বেশ ভালো হতবিদিশার কথা আমিও শুভেন্দুকে আগে থেকে বলতে পারতাম
চিঠিটা তাড়াহূড়োতে আর পকেটে ঢোকানো হয় নিখেয়াল হলো বসার ঘরের টেবিলের ওপরেই রেখে এসেছিমা’র চোখে পড়লেও পড়তে পারেকিন্তু ঐ চিরকূট দেখে মা আর কিছুই বুঝবে নাওতে হিজিবিজি ছাড়া আর কিছু নেই
 
কাঁকুড়গাছি মোড় থেকে একটা ট্যাক্সি পেয়ে গেলাম ট্যাক্সিওয়ালাকে বললাম, পিকনিক গার্ডেন যাবো ট্যাক্সিওয়ালা বললো, বাইপাস ধরবো? আমি বললাম, যেদিক দিয়ে খুশি চলুন আমার পিকনিক গার্ডেন পৌঁছোলেই হল
ট্যাক্সিওয়ালা ফুলবাগান পেরিয়ে বাইপাশই ধরলো বুঝলাম রুবী হসপিটাল থেকে তারমানে ডানদিকে টার্ণ নিতে হবে আমি তাহলে ঠিক ছটার আগেই শুভেন্দুদের বাড়ীতে পৌঁছে যাবো
ট্যাক্সিতে যেতে যেতে ভাবছি, শুভেন্দুতো বলেছে সারপ্রাইজের কথারনিও ওখানে থাকবেতারমানে রনিও ব্যাপারটা জানেঅথচ শুক্লা বললো, শুভেন্দুর সাথে এ ব্যাপারে নাকি কোনো কথা হয় নিবিদিশাকে শুক্লাই দেখেছে, কাল গড়িয়াহাটের মোড়েশুভেন্দু যে সারপ্রাইজের কথা বলছে, এটা তাহলে কোন সারপ্রাইজ?
কিছুতেই মাথায় কিছু এলো নাকত চিন্তা করলামভাবলাম, বিদিশাকে কি তাহলে শুভেন্দুও দেখেছে শুক্লার মত? কিন্তু আমাকে ও বললো না কেন? অন্তত বিদিশার ব্যাপার হলে শুভেন্দু আমাকে লুকোবে না।  এই ক বছরে অনেক যন্ত্রণায় মরেছিঅনেক কষ্ট পেয়েছি শুভেন্দু প্রথম প্রথম সান্তনা দিয়েছে আমাকে পরে বলেছে, ছেড়ে দে বিদিশাকে মনে কর, বিদিশা বলে তোর জীবনে কেউ কোনদিন ছিল না আবার নতুন করে জীবনটাকে শুরু কর সেই বিদিশাই যখন ফিরে এলো শুভেন্দুর তো বলা উচিৎ ছিল
ট্যাক্সিতে যেতে যেতে শুভেন্দুকে মোবাইলে ধরার চেষ্টা করলাম এক চান্সেই ওকে পেয়ে গেলাম শুভেন্দুকে বললাম, ‘আমি কিন্তু তোর ওখানে যাবো বলে রওনা দিয়ে দিয়েছি সাতটার আগেই মনে হচ্ছে পৌঁছে যাবোএই ধরেনে ছটা সোয়া ছটা
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#16
শুভেন্দু হাসলোবললো, ‘রনি থাকবে বাড়ীতেআমি সাড়ে ছটার মধ্যে কাজ সেরে ঢুকবোআর যে সারপ্রাইজটার কথা তোকে বলেছি, তার জন্য আরো আধঘন্টা তোকে অপেক্ষা করতে হবে।’
মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি নাওকে বললাম, ‘হেঁয়ালিটা রাখ নাকি সারপ্রাইজ দিবি, সেটা আগে থেকে বল না?’
শুভেন্দু বললো, ‘সারপ্রাইজ ইজ অলওয়েজ সারপ্রাইজআগে থেকে বললে, ওটা আর সারপ্রাইজ থাকে নাতুমি এসোধীরে ধীরে সব রহস্য উন্মোচন হবেএকটু অপেক্ষা কর বৎস।’
শুক্লার সকালে আমার বাড়ীতে আসার ব্যাপারটা চেপে গিয়েই ওকে বললাম, ‘তুই কিন্তু যে সারপ্রাইজের কথা আমাকে বলছিসওটা আমি আগে থেকেই জানিআমার জানা হয়ে গেছে, আজ সকালে।’
শুভেন্দু বললো, কি জেনেছিস? আমাকে বল দেখি
আমি বললাম, না থাকবলবো না
শুভেন্দু বললো, ‘বলবি না যখন তুইও চেপে থাকদেখা যাক তোর জানার সাথে আমার সারপ্রাইজ মেলে কিনা’। ফোনটা রাখতে রাখতেই আবার বললো, ‘তোর মুখে আমি অনেকদিন হাসি দেখিনিআজ তোর মুখে আমি হাসি ফোটাবো।’
আমি বুঝে গেলাম, তারমানে বিদিশার কথাই শুভেন্দু আমাকে বলতে চাইছে
 
ট্যাক্সির কাঁচ দিয়ে কতগুলো ছেলে মেয়েকে হাত ধরাধরি করে ঘুরতে ফিরতে দেখছিআর ভাবছি বয়সটা আমার দশবছর কমে গেছেকি জানি হয়তো বিদিশারই জন্য
 
রনির কথা ভেবে, রনিকেও একটা ফোন লাগালামরনি বললো, ‘কিরে দেব? তুই আসছিস তো?’
একটু আগেই শুভেন্দুর সাথে ফোনে কথা হয়েছে রনিকে সেটা বললামরনি বললো, ‘তোর জন্য আমি আর শুভেন্দু একটা পাত্রী ঠিক করেছিতুই এলে, সেই মেয়েটিকে তোকে দেখাবোশুভেন্দু যে সারপ্রাইজটার কথা বলেছে, ওটা সেই সারপ্রাইজ।’
আমি বললাম, ‘পাত্রীটি কে?’
রনি বললো, ‘ধরে নাও খুব সুন্দরীতবে এখন একটু বয়স হয়েছেতবে সৌন্দর্য তার কমে নিতোমার সাথে ভালো মানিয়েও যাবে, কোনো চিন্তা নেই।  এবার একটু ধৈর্য নিয়ে তুমিও এসো।  আর হ্যাঁ আজকে কিন্তু খুব সহজে তোমায় ছাড়ছি নাঅনেক গান শোনাতে হবে, সেই রাত অবধিযিনি আসবেন, তিনিও তোমার গান শুনবেন।’
তারপর আবার হেসে রনি বললো, ওফ দেব, কতদিন তোর গান শুনি নাসেই কবে শুনেছিলাম লাস্টমনেই নেইতারপর মনে হয় একজুগ হয়ে গেছে
মোবাইলটা কানে ধরে নিজের ভেতরের আনন্দটা ওকে প্রকাশ করতে পারছি নাশুধু রনি বললো, আজ তুই মুকেশের ওই গানটা আবার গাইবিযেটা খুব গাইতিস আগেবলে নিজেই গাইতে লাগলো -সুহানি চাঁদনী রাতেহামে শো নেহী দেতেতুমহারী প্যায়ার কী বাতে, হামে শো নেহী দেতে
 রনি ফোনটা ছাড়ার পরেই ধরে নিলাম, এ মেয়ে বিদিশা না হয়ে কিছুতেই যায় না ও যা বলছে, তাতে আর রহস্যের কিছু নেই শুক্লার মত শুভেন্দুও হয়তো দেখে ফেলেছে বিদিশাকে রাস্তায় দেখতে পেয়ে ওকে ইনভাইট করেছে বাড়ীতে আজ সেখানে আমিও যাচ্ছি সামনা সামনি আজ আমরা আবার দুজনে মুখোমুখি
 
বিদিশাকে আমি ভালোবাসতামসেই ভালোবাসার মধ্যে কোনো খুঁত ছিল না।  জানি, ভালোবাসার মধ্যে যদি সততা থাকে, সে ভালোবাসা কখনো হারিয়ে যায় নাসেদিন বিদিশা আমাকে ভুল বুঝেছিল, তাই আমার জীবন থেকে ও হারিয়ে গিয়েছিলোবিদিশার যখন ভুলটা ভাঙলো, তখন অনেক দেরী হয়ে গেছেকিন্তু আমার এই স্বচ্ছ ভালোবাসাই ওকে আবার ফিরিয়ে আনলো আমার কাছেএই পৃথিবীতে দেবকে ছেড়ে বিদিশা আর যাবে কোথায়?
 
আমার মনে আছে, কলেজে বিদিশার সাথে যখন প্রেম শুরু করলাম, তখন রনি কত পেছনে লেগেছে আমাদেরবিদিশার সাথে ফাজলামী আর খুনসুটি তো করতোই এছাড়া আমাকেও কখনো কখনো ছাড়তো নাএকদিন খুব গুরু গম্ভীর ভাবে আমাকে বললো, ‘দেব, একটা কথা খুব সিরিয়াসলি ভাবে তোকে জিজ্ঞাসা করছি। ‘এখনো অবধি বিদিশাকে তুই কটা চুমু খেয়েছিস? গালে, কপাল আর ঠোঁট মিলিয়ে কটা?’
তারপর আবার নিজেই হেসে বললো, ‘গুনে দেখিস নি, তাই না বল?’
 
রনিকে কোনদিন কাব্যিক হতে দেখিনি, আমাকে বলেছিল,‘প্রেম যখন হৃদয়ে আসে, তখন পুরুষ বা রমনী কি চায় জানিস? সে নিজেকে উজাড় করে দিতে চায়বাঁচিয়ে রাখতে চায়, লালন করতে চায় তার প্রেমকেসবার উপরে থাকে সমর্পনের ইচ্ছে।’ একেবারে পি সি সরকারের ম্যাজিকের মতনএক ঝলক চাহনি, একটু ঠোঁটের কাঁপন, মাথাটা হেলিয়ে রাখা, হাতের আঙুলের নড়াচড়াএর প্রত্যেকটিই প্রেমকে জাগিয়ে তুলতে পারেঠিক ম্যাজিকের মতনকিন্তু খুব সাধারণ ম্যাজিক।’
 
রনির কথা ভাবছিলাম আর বিদিশার মুখটাকে চিন্তা করছিলাম, ট্যাক্সিতে যেতে যেতে হঠাৎই আমার মনে হল, বিদিশার মুখটা যেন আমার মুখের খুব কাছেসেই আগে যেরমকম গরম নিঃশ্বাস ফেলতো আমার ঠোঁটের ওপরেপ্রথমবার চুমু খেতে গিয়ে ওর ঠোঁটটা একটু কেঁপে গিয়েছিলকিন্তু আমি যখন ওর ঠোঁটে প্রেমের চিহ্ন এঁকে দিলাম, ও জড়িয়ে ধরলো আমাকেপ্রজাপতির মত বিদিশার আঙুলগুলো আমার পিঠে তখন খেলা করছে বিদিশার ঠোঁটের ওপর আমার ঠোঁট বিদিশার পায়ের ওপর আমার পায়ের উষ্ণ চাপ দ্রুত নিঃশ্বাস একসাথে মিশে যাচ্ছে আঙুল গুলো দিয়ে বিদিশা আমার পুরো শরীরটাকে এমন ভাবে খেলাচ্ছে, যেন শরীরের প্রতিটি কোনকে জানার জন্য ও কত অধীরজড়িয়ে ধরে বিদিশাকে আমি বলছি, ‘বিদিশা, ভালোবাসাটাকে আমি অমর করে রাখতে চাই তুমি আমাকে কোনদিন ভুলে যাবে না তো? বিদিশার মুখ দিয়ে শুধু গোঙানির মত শব্দ দুটো ঠোঁট তখন ভালোবাসার আলিঙ্গনে আবদ্ধ আমাকে জড়িয়ে ধরে বিদিশা বলছে, ‘না গো নাআমি কি তোমাকে ভুলে যেতে কখনো পারি?’
 ভালোবাসার বেশী সুখ নাকি কপালে কখনো সয় নামূহূর্তগুলো সব ঝাপসা হয়ে যায়এই বুঝি শুরু হলআর কদিন পরেই সব শেষমনে হল, বিদিশার মুখটাকে আমি দেখছিলাম এতক্ষণ তারপরেই ওর মুখটা কেমন ঝাপসা ঝাপসা হয়ে যেতে লাগল আসতে আসতেআমার মুখের কাছে বিদিশার মুখটা আর নেই, হঠাৎ দেখছি ওখানে মিনুর মুখটা চলে এসেছেবিদিশার ঠোঁটদুটোও নেইওখানে মিনুর ঠোঁট দুটো চলে এসেছে
মূহূর্তে মুখটা কেমন পাথরের মত হয়ে গেল আমারমনে পড়ল, মিনুর বাড়ীতে সেদিন কি ঘটেছিল
 
সেদিন ছিল শনিবারবাবা বলতেন, শনিবার দিনটা আমার কাছে নাকি শুভ নয়শনি যদি ঘাড়ে চেপে বসে, তাহলে তো আরো মুশকিলসেদিন মিনু হয়েছিল আমার শনিতখন ঠিক সন্ধে সাতটামিনু আমাকে বাড়ীতে ডাকলোআগের দিন সৌগতর দাদার বিয়েতে গিয়েছিলামসারারাত সৌগতর দাদার বিয়ের বাসরে জেগেছিঅনেক রাত অবধি হৈহুল্লোর আর গানবাজনা হয়েছেশরীরটা এমনি খারাপমিনুকে বললাম, ‘আজ ছেড়ে দে মিনু, আজ আমার বাড়ী থেকে বেরোনোর একদম ইচ্ছে নেই।’
মিনু শুনলো নাবললো, ‘তোকে কি এমনি এমনি আমি বাড়ীতে ডাকছি? কারন তো একটা আছেতুই আয়আমি দশমিনিটের মধ্যে তোকে ছেড়ে দেবো।’
জানতাম না সেদিন বিদিশাও আমার বাড়ীতে এসে হাজির হবেআমি ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছি, মিনুর বাড়ী যাবো বলেতার ঠিক একঘন্টা পরেই বিদিশাও আমার বাড়ীতে এসে হাজিরআমাকে দেখতে পাইনিমা’ বলে দিয়েছে আমি মিনুর বাড়ী গেছিবিদিশাও আর অপেক্ষা করেনি
বিদিশার ভীষন রাগ ছিল মিনুর ওপরকলেজে কোনদিন দাঁড়িয়ে কথা পর্যন্ত বলেনি মিনুর সঙ্গেমিনুর বাড়ীতে আমি যাই, সেটা ওর বোনকে গান শেখানোর জন্য হলেও বিদিশার একেবারেই পছন্দ হতো নাসৌগতর দাদার বিয়ের দিন এই নিয়ে একটু মুখ ভার করেছিল বিদিশাআমি ওর রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছিবিদিশা বললো, ‘আমি তো বলেছি মেয়েটা ভালো নয়তুমি তাও শুধু শুধুকি পাও তুমি ওখানে গিয়ে?’
বিদিশাকে কথা দিয়েছিলাম, আর মিনুর বাড়ীতে যাবো নাকিন্তু সেদিন নিয়তি আমাকে ডেকে নিয়ে গেল মিনুর কাছে
যখন ওর বাসায় ঢুকলাম, তখন দেখলাম ওর ছোট বোনটা নেইমিনু একা রয়েছে ঘরেওর চোখ দুটো কেমন ঘোলা ঘোলাঘরের মধ্যে শাড়ী ছেড়ে নাইটি পড়ে রয়েছেমুখ চোখ দেখেই মনে হল, যেন শয়তান ভর করেছে ওকে
শুরুটা করলো ভালোভাবেআমাকে বললো, ‘সৌগতর দাদার বিয়েতে খুব আনন্দ হলতাই না রে?’
-তুই তো যাসনিগেলে আনন্দটা বুঝতে পারতিস
-আমাকে তো সৌগত বলেনিতোদের বলেছে আমি বাদ
-তোকে কেন বলেনি, সেটা তো বলতে পারবো নাতবে আনন্দ তো খুব হয়েছে
-এই দেব, তুই গান গেয়েছিস?
-গেয়েছি অনেকওরা ছাড়ছিল না তাই
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#17
-বিদিশা গেছিল কাল?
-হ্যাঁ গেছিলতাতে তোর কি?
-তুই দিন রাত শুধু বিদিশার কথাই চিন্তা করিসতাই না?
-কেন ডেকেছিস, সেটাই বলবিদিশার কথা বলতে ডেকেছিস আমাকে?
-ওফ বড্ড বিদিশা আর বিদিশা করিস তুই
-কেন, বিদিশাকে বুঝি তোর হিংসে হয়? সহ্য হয় না, তাই না?
-আমার তো মনে হয়, বিদিশা তোর সাথে ঢং করেভালোবাসার আবার ও বোঝেটা কি?
-মিনু, তুই এসব কথা বলার জন্য আমাকে বাড়ীতে ডেকেছিস?
-ও তুই রাগ করলি? অত রাগটাক করে না মেরী জান
-মিনু তুই কিন্তু সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিস
-আচ্ছা দেব, তুই কেন আমাকে এত অবজ্ঞা করিস বলতো? কেন, তোর প্রেমে পড়েছি, এটাই আমার দোষ?
- না তুই ছাড় আমাকেযেতে দে এখান থেকে
-যেতে দেবো বলে তো ডাকিনি তোকেতোর সাথে একটু প্রেমের খেলা খেলবোমদ না খেয়েই আজকে মাতালিনী হয়ে গেছি
-তুই মদ খাসনি?
-সত্যি খাই নিবিশ্বাস কর
-তুই দিনকে রাত করতে পারিসনয়কে ছয় করতে পারিসমিনু তোর সাথে আমার কোনো কথা নেই
মিনু এবার একটু খিলখিলিয়ে হাসতে লাগলোআমাকে বললো, -শুধু শুধু আমার ওপরে রাগিস তুই।  আমার জীবনের বড় স্বপ্ন তো তুইআজ বাদে কাল তোরই হাতে হাত রেখে সপ্তবনী প্রহর পার হবো।  তুই হবি আমার জীবনের জ্যাকপটের সবচেয়ে দামী ঘোড়া
-মিনু তুই মদ খেয়েছিসইস কি নোংরা তুই ছাড় আমাকে ছাড়
-কেন রে দেব? আমাকে কি তোর রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বেশ্য মাগী বলে মনে হয়?
-মিনু আই সে স্টপ নাওলিভ মি
-উঃ গোঁসা দেখো ছেলের? বিদিশা কে পেয়ে যেন বড় অহঙ্কার তোরকেন আমাকেও একটু ভালোবাসতে চেষ্টা কর। ‘দেব’ প্লীজ
-মিনু তুই কিন্তু বড্ড বাড়াবাড়ি শুরু করেছিস
মনে হচ্ছিল মিনুর গালে একটা চড় মেরে দিইতখনো মারতে পারিনিআমাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে মিনু।  মুখটাকে আমার মুখের কাছে নিয়ে এসে মাকালীর মত জিভ বার করে বিশ্রী অঙ্গভঙ্গী করতে লাগলো
-আমার জিভটা জ্বলে যাচ্ছে দেবদেখ একটু আগে লঙ্কা খেয়ে ফেলেছি।  প্লীজ্ আমার জিভে তুই জিভ টা ঠেকাআমাকে একটু আদর করবিচ্ছিরি আর বুনো আদরশুয়োর যেমন শুয়োরের পেছনে পেছন ঠেকিয়ে আদর করেঠিক সেইভাবে তুই পারবি তো! আমার বুকের ভেতরে আগুন জ্বলছে, মাইরি দেব, তুই একটা ল্যাদল্যাদে পুতুল হয়ে যাআমি তোকে ছিঁড়বো, চাটবো, চুষবোআমি তোকে পায়ের নীচে ফেলে রাখবো পাপোশ করে আমি তোকে মাথায় বসাবো তুই হবি আমার গলার হার তুই হবি আমার অন্তবাস হবি তো?
 -তুই এসব খারাপ খারাপ কথা বলার জন্য আমাকে বাড়ীতে ডেকেছিস?
-ওফঃ পারি না দেব তুই যেন ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানিস না সবই জানিসঅথচ বিদিশার জন্য সব রেখে দিয়েছিসবিদিশার কি দেখে মজেছিস তুই? বল না রে দেব? যেভাবে ও তোর ঘাড়ে চেপে বসেছে, যেন কচি লেবুর সাথে প্রথম বৃষ্টির মেলামেশা ও যেন তোর এই ঠোঁটদুটো থেকে মধু চুরি করে নিয়েছে হ্যাঁ রে দেব? তুই কি অসভ্য মাইরী তুই কি পুরুষ বেশ্যা নাকি? বিদিশাকে এতসব দিলি কেন? আমার জন্য তো কিছু রাখতে পারতিস
 
মিনুর কথা শুনেই বুঝতে পারছিলাম ও আমি আসার আগেই মদ খেয়েছে অনেকটা অসংলগ্ন কথা বলছে, কথা জড়িয়ে আসছেপেটের ভেতরে যেন ধাকতিনাকতি ধাকতিনাকতি শুরু হয়েছেউল্টে আমাকেই বলে বসল। ‘এ আমার কি হল দেব? কথাগুলো ছড়িয়ে যাচ্ছে কেন? তুই আমাকে গুন করেছিস? বল না দেব, তুই কি করেছিস আমার?
 
আমার মুখটা তখন এত কঠিন হয়ে গেছে, আগে কোনদিন হয় নি
 
মিনু বললো, ‘ওহ্ তুই কি কিউট রে? দেখি তোর বুক দেখিতোর বগল দেখি।’
বলে আমার জামার বোতাম গুলো সব খুলতে লাগলো পট পট করেমিনু প্রচন্ড আগ্রাসী হয়ে উঠেছেআমি ওর সাথে ধ্বস্তাধ্বস্তি করবো না ঠেলে দূরে সরিয়ে দেবো বুঝতে পারছি না
 
মিনু বললো, ‘দেব তুই কিন্তু স্টেডী থাকবিআমি তোকে সিডিউস করছি বলে ঘাবড়ে যাস নাতাড়াহূড়োতে তুই আবাব বৃষ্টি ঝরাতে শুরু করিস নাতাহলে কিন্তু আমি খুব রেগে যাবোতুই তো জানিস, মেয়েদের সেক্স আসতে আসতে ওঠেএকটা বিন্দুতে পৌঁছে যাবার পর অনেক্ষণ স্ট্রে করেতোদের মতো দুম ধড়াস কেলাস হয়ে যায় না।’
 
মিনু আমার জামাটা প্রায় খুলে ফেলেছেবুকে একটা চুমু খেয়ে বললো, দেব, তুই মাইরি দারুন সেক্সীআমার ভাগ্য ভালো বলতে হবেতোর পেছনে এতদিন শুধু ঘুরঘুর করেছি, আমি কিনা সত্যি- দেব আজ তুই আমার সাথে বিট্রে করিস না প্লীজ।’
মিনু আমার মুখের মধ্যে জিভটা ঢুকিয়ে দিল জোর করেআমাকে বললো, ‘দেখ, আমি কেমন মুখরোচক চানাচুরআমাকে খেতে তোর দারুন লাগবে।’
ঠিক ঐ মূহূর্তে মিনুকে আমার একটা বেশ্যা বলে মনে হচ্ছিলগালে একটা চড় মারতে গেলামমিনু চড়টা খেলো নাতার আগেই ওর কলিং বেলটা বেজে উঠলোমিনু আমাকে ছেড়ে দিয়ে নিজেই দরজা খুলতে লাগলোদরজা খুলতে গিয়ে আবার একটু টলেও গেলদরজার সামনে বিদিশা দাঁড়িয়েআমি হতবাকস্তম্ভিত হয়েগেছি বিদিশাকে দেখেবুঝতে পারছি না ও কি করে এখানে এলো?
মিনু বিদিশাকে দেখে বলে উঠল। ‘কি চাই এখানে? ভাগো ভাগোএটা তোমার জায়গা নয়আমার দেবের ওপরে গোয়েন্দাগীরি? সারাটা দিন চিপটে বসে আছিস ওর সাথেএখানেও রেহাই নেই?’
 বিদিশার চোখ মুখ দিয়ে তীব্র ঘেন্না ছড়িয়ে পড়ছেআমি বুঝতে পারছি না,  বিদিশা আমার খোঁজে এখানে কি করে চলে এলো?
ভেতরে ঢুকলো না বিদিশাআমাকেও কিছু বলার সুযোগ দিলো না।  মিনুকে বললো, ‘বড্ড ভুল হয়ে গেছে আমারভুল জায়গায় এসে পড়েছিলামসরিআমি চলে যাচ্ছি।’
পেছন থেকে বিদিশাকে ডাকছি,’ বিদিশা যেও নাপ্লীজ, প্লীজআমার কথা শোনো।’
মিনু তখন আমার জামাটা শক্ত করে ধরে রেখেছে, যাতে ছুটে আমি বিদিশার কাছে যেতে না পারি
 
কখনো ভাবিনি, একটা ছোট্ট অঘটনই জীবনে বিষাদ ডেকে আনতে পারে বিদিশা আমাকে ভুল বুঝলো আমি তো কোনো নোংরামো করিনি মিনুর সাথে মিনু শেষ চালটা দিয়ে হাসিল করতে চেয়েছিল আমায় যখন দেখলো ও আর পারলো না আশা ছেড়ে দিল অথচ বিদিশা ভুল বুঝে আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেল
 
বাড়ি ফিরে বিদিশাকে অনেক ফোন করার চেষ্টা করেছি সেদিন বিদিশা ফোন ধরেনি ল্যান্ডফোনের রিসিভার তুলে রেখে দিয়েছিল আমার মনে হল শ্বাসরোধ হয়ে আসছে কিছুক্ষণের জন্য শ্বাস নিতেই পারলাম না পকেট থেকে রুমাল বার করে চোখের ওপর চেপে ধরলাম নিরুদ্ধ অশ্রু বাঁধ ভেঙে ঝরে পড়তে চাইছেরুমাল দিয়ে সেটাকে আটকাতে চাইছিএকটা দূঃসহ বেদনার ভারে হৃদয়টা যেন গুঁড়িয়ে দিতে চাইছেমনে হল, বিদিশা তো আমার কাছে এখন নেইথাকলে হয়তো বলতো কেঁদো না, তাহলে আমি কষ্ট পাবো
আপ্রাণ চেষ্টা করেও আমি আমার কান্নাটাকে রোধ করতে পারলাম নাচোখ থেকে রুমালটা সরিয়ে নিলামধীরে ধীরে আমার চোখ দিয়ে অশ্রুধারা নেমে এলোএক একটা করে ফো’টা ঝরে পড়তে লাগলো
 
প্রচন্ড একটা ব্রেক কষে ট্যাক্সিটা দাঁড়িয়ে পড়েছেআমার যেন হোশ ফিরলোকোথায় যেন এতক্ষণ হারিয়ে গিয়েছিলাম এতক্ষণ, সেই অভিশপ্ত দিনটাতেএমন জোরে ব্রেক কষেছে গাড়ীটাআমি ভয় পেয়ে গেলামট্যাক্সি ওয়ালা বললো, দেখেছেন, কিভাবে এরা গাড়ী চালায়? আর একটু হলে গাড়ীর তলায় যাচ্ছিল আর কি? আমরা নিজেরাও দুজনে মরতাম সাথে এও
দেখলাম এক মটর সাইকেল আরোহী খুব জোরে বাইক চালিয়ে একেবারের ট্যাক্সির সামনে চলে এসেছেট্যাক্সি ওয়ালা পাশকাটাতে গেলে পাশের লাইটপোষ্টটায় ধাক্কা মারতোসামনের কাঁচটা গুঁড়িয়ে যেতোতারপরে কি হত আমি জানি নাট্যাক্সিওয়ালাকে খুব ভালো বলতে হবেসময় মত ব্রেক কষে ছেলেটার প্রাণটা বাঁচিয়ে দিয়েছেসেই সাথে আমারওনইলে অকালে চলে যেতো প্রাণটা
 
শুভেন্দুর বাড়ীর খুব কাছাকাছি চলে এসেছিট্যাক্সিওয়ালাকে বললাম, ‘দাদা আপনি আমার খুব উপকার করলেন আজকেবেঁচে না থাকার মতই বেঁচেছিলাম এতদিন ধরেযার সাথে দেখা হবে বলে যাচ্ছিতারজন্যই বাঁচাটা আমার এখন নিতান্তই দরকার।’
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#18
শুভেন্দুদের বাড়ীর সামনের রাস্তাটা বেশ সরুওখানে ট্যাক্সি ঢোকে নাএর আগে যেকবারই ট্যাক্সি চড়ে আমি এসেছি, গলির মুখটায়  ট্যাক্সিটা আমাকে ছেড়ে দিতে হতকিছুটা হেঁটে এগিয়ে গেলে তারপরেই শুভেন্দুদের বিশাল বাড়ীপিকনিক গার্ডেনে শুভেন্দুরা খুব বড়লোকনতুন লোক এলে বাড়ী খুঁজে নিতে তার অসুবিধে হবে নাশুভেন্দুদের নাম বললেই সবাই ওই বাড়ী দেখিয়ে দেবে
 
দুর থেকে ওদের বাড়ীর একতলার বারান্দাটা দেখা যায়বারান্দায় কেউ দাঁড়িয়ে থাকলে দূর থেকেই সেটা চোখে পড়েরাস্তাটায় ঢুকেই আমার মনে হল, শুভেন্দুর বোন মাধুরী দাঁড়িয়ে আছে ওখানেদূর থেকে ও আমাকে দেখছে
 
মাধুরীর স্বভাবটা খুব মিষ্টিএকে তো বড়লোকের একমাত্র মেয়েশুভেন্দুরা চারভাইআর ওদের এই একটিই মাত্র আদরের বোন মাধুরীখুব প্রানখোলা স্বভাবের মেয়ে মাধুরীর সাথে আমারও গল্প করতে খুব ভালো লাগতোকলেজে পড়ার সময় শুভেন্দুদের বাড়ীতে যতবারই এসেছি, মাধুরীর সঙ্গেও একটা দাদা বোনের মত সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিলমাধুরী, রনির সঙ্গে তখন থেকেই প্রেম করতো, কিন্তু শুভেন্দুর সাথে যেহেতু আমার একটা আলাদা খাতির ছিল, আমি এলে মাধুরী জমিয়ে আড্ডা দিত আমার সঙ্গেওর ডাক নাম ছিল ছুড়ীওকেও আমি ছুড়ী বলে ডাকতাম
বয়সে শুভেন্দুর থেকে দু’বছরের ছোটো মাধুরী উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর আর পড়াশুনা করেনিরনির সঙ্গে কয়েকবছর পরেই ওর বিয়ে হয়ে গেলমাধুরী আর রনির সুন্দর একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছেনাম রেখেছে ‘দেবমাল্য’
 
ওর বাচ্চা হবার পর শুভেন্দু আমাকে বললো, এই ‘দেব’ নামটা আমার খুব পছন্দ।  তোকেও যার জন্য আমার খুব পছন্দ।  মাধুরীর যেহেতু তোকে খুব ভালো লাগে, আমাকে বললো, ‘ছোড়দা, আমার ছেলের নাম, আমি দেব দিয়ে রাখবো।  দেবদার মতনপরে রনিও রাজী হয়ে গেলতাই ওর নাম রাখা হলো, ‘দেবমাল্য।’
 
দূর থেকে মাধুরী আমাকে দেখতে পেয়ে চেঁচিয়ে উঠে বললো, ‘এই যে দেবদা, ছোট্টবোনটাকে ভুলে গেছো বুঝি? ওফ কতদিন তোমায় দেখি নাসেই দুবছর আগে একবার তুমি এসেছিলেআবার এতদিন পর।’
 
শুভেন্দুর বাড়ীর গেটের সামনে যেতেই মাধুরী হাসতে হাসতে বারান্দা থেকে বেরিয়ে এলোওর গালটা টিপে দিয়ে বললাম, ‘ও আমার ছুড়ী রেদাদাটার কথা বুঝি এতদিন বাদে মনে পড়লো?’
 
মাধুরী বললো, ‘তুমি না কেমন জানি হয়ে গেছো দেবদাআগে কত আসতে আমাদের বাড়ীতেএখানে আড্ডা হতোগান বাজনা হতোমজা হতোতা না, সব ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে, তোমরা সব নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লে।  আর আমাকেও তুমি ভুলে গেলে
 মাধুরীকে বললাম, ‘তোকে আমি ভুলিনিরে ছুড়ীশুভেন্দু যতবারই ফোন করেছে, তোর কথা জিজ্ঞাসা করেছিরনিকে জিজ্ঞাসা করে দেখিস, ওকেও জিজ্ঞাসা করেছি তোর কথাতোদের যখন ছেলে হল, শুভেন্দু আমাকে বললো, মাধুরী ওর ছেলের নাম রেখেছে দেবমাল্যদেব নামটা ওর খুব পছন্দতোকে তো আমাদের বাড়ীর সবাই খুব পছন্দ করতো, তাই না? মাধুরীও বললো, আমি দেব নামটাই রাখবোরনিও রাজী হয়ে গেলতাই-
মাধুরী বললো, তুমি খুশি হয়েছো, ‘আমার ছেলের নাম দেবমাল্য রেখেছি বলে?’
আমি বললাম, বারে? খুশি হবো না? আমি তো তখনই খুশি হয়েছিখুব খুশি হয়েছি
মাধুরী বললো, ‘তোমার প্রতি আমার কিন্তু একটা ক্ষোভ আছে দেবদাআমি খুব রেগে আছি তোমার ওপরে।’
ওর গালটা টিপে দিয়ে বললাম, ‘কেন রে ছুড়ী? রাগ কেন?’
মাধুরী বললো, ‘তুমি তখন আমার ছেলেকে দেখতে আসো নি কেন? জানো তোমায় কত এসপেক্ট করেছিলামতুমি এলে নাআর আমিও ছোড়দাকে বললাম, কি রে ছোড়দা? দেবদা তো এলো না? তুই কি কিছু জানাসনি নাকি দেবদাকে? ছোড়দা বললো, সব বলেছিদেব এখন কাজবাজ নিয়ে ব্যস্তওর এখন তোর ছেলেকে দেখতে আসার টাইম নেই।’
মাধুরীকে বললাম, শুভেন্দু এই কথা বলেছে তোকে? দাঁড়া ওকে আসতে দেতারপর ওর মজা দেখাচ্ছিমিথ্যে কথা বলা বের করছি
মাধুরী মুখটা একটু করুন মত করে, ছেলেমানুষির মত করছিলবার বার ঘাড় নেড়ে বলতে লাগল, ‘না, না, বলো, তুমি আসোনি কেন?’
মাধুরীকে বললাম, ‘দূর বোকা আমি তখন ছিলাম না কি কলকাতায়? কোম্পানীর কাজে আমি তখন হায়দ্রাবাদে একমাস মত ওখানে ছিলামকলকাতায় ফিরেই চলে গেলাম, সিঙ্গাপুরেকোম্পানীর তরফ থেকে ট্রিপফিরে এসেই আবার অসুস্থ হয়ে পড়লামএকমাস মত বিছানায় শয্যাশায়ীকাজকর্ম সব ডকেএমন একটা রোগ বাঁধিয়ে ফেলেছি, ডাক্তার বললো, সাবধানে থাকুনবাইরের খাবার একদম খাবেন নাআর মিষ্টি খাওয়া তো একদম বন্ধ
মাধুরী বললো, ‘কি যেন রোগটা হয়েছিল তোমার?’
আমি বললাম, ‘আলসার কোলাইটিস।’
মাধুরী শুনে বললো, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ শুনেছিও তো খুব কঠিন রোগভীষন কষ্ট দেয়পেটে ব্যাথা করেরক্ত পড়েআমাশার মতন।’
মাধুরীকে বললাম, ‘হ্যাঁ, তারপর থেকেই মিষ্টি খাওয়া একেবারে বন্ধমিল্ক প্রোডাক্ট থেকেই না কি রোগটা হয়।’
মাধুরী বললো,তুমি তো আগে খুব মিষ্টি খেতে ভালবাসতে দেবদাসব বন্ধ হয়ে গেলতাই না?
আমি বললাম, হ্যাঁ
মাধুরী বললো, ‘এ তোমার ভারী অন্যায় দেবদামাসীমাকে শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছোবিয়ে থা তো এবার করোআর কতদিন একা একা  থাকবে? তোমাকে দেখার জন্যও তো কাউকে দরকার?
তরপর নিজেই বললো, অবশ্য এখনকার মেয়েদের মধ্যে ভালো মেয়ে খুঁজে পাওয়া খুব দুষ্করমেয়েরা এখন স্বামীদের কেউ দেখে না
ওকে বললাম, ‘কেন? তুই মেয়ে দেখেছিস আমার জন্য?’
মাধুরী হেসে ফেললো, আমাকে বললো, ‘আমি যদি মেয়ে দেখিসে মেয়ে তোমার পছন্দ হবে? সবাই তো আর বিদিশার মত সুন্দরী নয়।’
 এই বিদিশা নামটা আমার জীবনের সাথে এমন ভাবে জড়িতশুধু আমি কেন? অনেকেই ওকে ভুলতে পারেনি মাধুরীর মুখ দিয়ে বিদিশা নামটা শুনেই আমার বুকের ভেতরটা কেমন ছটফটানি শুরু হয়ে গেলওকে বললাম, ‘হ্যাঁ রে ছুড়ী, তুই কি কিছু জানিস? আমাকে সত্যি করে বলতো?
মাধুরী বললো, ‘কি জানবো? কি বলবো?
ওকে বললাম, ‘আজ এখানে নাকি কারুর আসার কথা আছেকোনো একটা মেয়েশুভেন্দু আর রনি তো সেই কথাটাই বলেছে আমাকে।’
মাধুরী শুনে এমন ভাব করলো, যেন ও কিছুই জানে নাআমাকে বললো, ‘কই সেরকম তো আমি কিছু শুনিনি।’
আমি অবাক হলাম মনে মনে ভাবলাম, তাহলে কি শুভেন্দু আর রনি, মাধুরীকেও ব্যাপারটা বলেনি? না ও সব জানে, রনি আর শুভেন্দুর মত মাধুরীও আমাকে গোপণ করছে
মাধুরীকে বললাম, ‘কই তোর কত্তা কোথায়? ওকে ডাক দেখি একবারদেখি জিজ্ঞাসা করে।’
মাধুরী বললো, ‘সে তো একটু আগেই বেরুলো তোমার জন্য।’
রনি আমার জন্য কোথায় গেছে? একটু অবাকই হলাম, ওকে বললাম, ‘কেন রে? আমার জন্য তোর কত্তা বেরিয়েছে? কোথায় গেছে?’
মাধুরী বললো, ‘গেছে হয়তো কিছু কিনতে টিনতেদুপুর বেলা তো এক পেট ভাত খেয়ে ভোঁস ভোঁস করে ঘুমোচ্ছিলতুমি ফোনটা করলেঅমনি বাবু তড়াক করে জেগে উঠলেনআমাকে বললো, তুমি বারান্দাতে দাঁড়িয়ে থাকো। ‘দেব’ আসছেআমি ততক্ষণ দোকানটা থেকে চট করে ঘুরে আসছি
বুঝে নিলাম, রনি কোথায় গেছেমাল খাওয়ার নেশাটা রনির প্রচুরতারপরেই আবার ভাবলাম, বিদিশা যদি সত্যি আসে, ওর সামনে এসব খাওয়াটা কি ঠিক হবে?
মাধুরী ভেতরে গিয়ে ওর বাচ্চাটাকে কোলে করে নিয়ে এলোআমার সামনে আসতেই খেয়াল হলইস তাড়াহুড়োতে ওর জন্য কিছু কিনে আনা হয় নিপকেট থেকে টাকা বার করতে যাচ্ছিলামমাধুরী বললো, ‘তুমি ওর মাথায় হাতটা রেখে আশীর্ব্বাদ করোতোতাহলেই হবেটাকা হাতে পেলে এক্ষুনি ওটাকে ছিঁড়ে দেবেযা দুষ্টু।’
বাচ্চাটাকে দুহাত বাড়িয়ে কাছে ডাকছিলামও ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে দেখছিল, কিন্তু কিছুতেই আসছিল নামাধুরী ওকে বললো, ‘এটা কে বলোতো? এটা হলো তোমার কাকু।’ যাও কাকু ডাকছে যাও।’
আমি দুহাত বাড়িয়ে মাধুরীকে বললাম, ‘কাকু কি রে? বল, আমি ওর মামা হই।  মাধুরী বললো, হ্যাঁ এটা হলো তোমার দেব মামাযাও মামার কাছে যাও।’
বাচ্চাটা এবার আমার কাছে চলে এলোমাধুরী ওকে বললো, ‘মামা কিন্তু খুব ভালো গান জানেতুমি মামার কাছে গান শিখবে?
বাচ্চাটা ঘাড় নাড়লোদাঁত বার করে হেসে বললো, হাঁ
মাধুরী বললো, দেবদা, তুমি বসো, আমি তোমার জন্য চা করে নিয়ে আসছিততক্ষনে রনিও এসে পড়বে
আমি মাধুরীকে বললাম, শুভেন্দু কখন আসবে? আমাকে তো বললো, আধ ঘন্টার মধ্যে ঢুকছে
[+] 1 user Likes Lekhak is back's post
Like Reply
#19
মাধুরী বললো, ‘ছোড়দা যদি তোমাকে আধঘন্টা বলে থাকে, তাহলে ধরে নাও ওটা একঘন্টাওর সব কিছুতেই লেটআজও অবধি কোনদিন টাইম মত কিছু করেনিতারপর হেসে বললো, দেখছো না বিয়েটাও করছে না এখনোএখনো নাকি ওর বিয়ে করার টাইম হয় নি।’
আমি বললাম, শুভেন্দু তো বলেছে, ‘বিয়ে আর করবে না এ জীবনে।’
মাধুরী হেসে বললো, ‘ওর মত তুমিও সেই ভুলটা আর কোরো না।। বিয়ে যদি না করোসারাজীবনের মত পস্তাতে হবে, এই আমি বলে দিচ্ছি।’
বলেই ও ভেতরে চলে গেলআমি বসার ঘরটায় বসে একটা ম্যাগাজিন উল্টে পাল্টে দেখতে লাগলামমনে হল, সকালে ডায়েরীতে শুভেন্দুর ব্যাপারে অনেক কথাই লিখেছি, কিন্তু এই কথাটা একবারও লেখা হয় নিশুভেন্দুর সব কিছুতেই লেট।’
 
বিদিশা কদিন ধরেই আমাকে বলছে, ‘জানো তো দারুন একটা ছবি রিলিজ করছে আগামী শুক্রবারছবির নাম ‘তেজাব।’ ওতে অনিল কাপুর আর মাধুরী দিক্ষিত আছে।’
আমি বললাম, তো?
বিদিশা বললো, তো মানে? দেখতে যাবো না? ওদিন পুরো একটা গ্রুপ যাবে
আমি বললাম, কে কে?
বিদিশা বললো, তুমি আর আমিসাথে শুক্লা আর সৌগতআর রনি আর মাধুরীও থাকবে আমাদের সঙ্গে
আমি বললাম, আর শুভেন্দু? ও তো না গেলে খেয়ে ফেলবে আমাদের
বিদিশা বললো, ‘শুভেন্দুই তো দায়িত্ব নিয়েছে  সবার টিকিট কাটারলাইন দিয়ে ও আগে টিকিটটা কাটবেও থাকবে না মানে? ও তো থাকছেই।’
বিদিশার কথা শুনে আমিও খুশি হলামবললাম, ‘তাহলে ঠিক আছেসবাই মিলে যাবোবেশ আনন্দ হবে।’
শুভেন্দু লাইন দিয়ে আমাদের জন্য আগে থেকে টিকিট কাটলো কষ্ট করেকলেজে এসে বললো, ‘উফ কি মারপিট হচ্ছে রে লাইনেবই একেবারে সুপারহিট।’
মোট সাতখানা টিকিট যথারীতি ওর কাছেই রেখে দিলযেদিন আমরা সিনেমাটা দেখতে যাবশুভেন্দুর আর পাত্তা নেইএদিকে মাধুরীও চলে এসেছে বাড়ী থেকেরনি এসে বললো, ও আমাকে বললো, তোরা হলের কাছে গিয়ে দাঁড়াআমি দশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছোচ্ছিআমরা ছজনে ধর্মতলায় প্যারাডাইস সিনেমা হলে পৌঁছে গেলামদাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবাই ঘড়ি দেখছিএদিকে শুভেন্দুর আর পাত্তা নেইতিনটের ম্যাটিনির শো চালু হয়ে গেলসৌগত, রনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত কামড়াচ্ছেআমিও তাইবাবু এলেন ঠিক তার আধঘন্টা পরেতখন বইটার অনেকগুলো সীন হয়ে গেছেসৌগত শুভেন্দুকে বললো, হ্যাঁ রে তুই কি? এতো দেরী করে এলি? এই তোর দশ মিনিট?
শুভেন্দু হেসে বললো, ‘আমি টাইমলিই আসছিলামবাড়ী থেকে কিছুটা রাস্তা চলে আসার পর দেখিটিকিটগুলোই সব ঘরের ড্রয়ারে ফেলে রেখে চলে এসেছিআবার বাড়ী যেতে হলোতাই দেরী হয়ে গেল।’ বলেই দাঁত বার করে আবার কেলাতে লাগলোহি হি
 মাধুরী চা নিয়ে এসে ঢুকেছে ঘরে, ঠিক তখুনি রনিও এসে হাজিরদেখলাম, ওর দুহাতে দুদুটো প্যাকেটআমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এসে গেছিস বস? বোস তাহলে, আমি একটু ভেতর থেকে আসছি।’
রনি মাধুরীকে সামনে পেয়ে কি মনে করে মাধুরীর হাতেই প্যাকেট দুটো দিয়ে দিলোবললো, ‘তুমি এই প্যাকেট দুটো ভেতরে রেখে আসো তোআমি আর যাবো না ভেতরে।’
মাধুরী বললো, কি এগুলো?
রনি বললো, ‘আছে কিছু তবে এটা আমাকে নয় তোমার ছোড়দাকে জিজ্ঞেস কোরো।’
মাধুরী একটু মুখ ভেংচি কাটলোরনিকে বললো, ‘আহাআমার কর্তাটিও যেন কম যান নাখালি ছোড়দাকে দোষ দিলে হবে? কমপিটিশন করতে আপনিও তো মাষ্টার।’
মাধুরী ভেতরে চলে গেলরনি আমার সামনের সোফাটায় বসলোআমাকে হেসে বললো, ‘বউটা আমার খুব ভালোজানিস তো দেবনইলে আমার মত ছাগলটাকে ভালোবেসে ফেললোমাধুরীর অনেক গুন আছেঠিক কিনা বল?’
আমি রনিকে বললাম, তুই এখনো মাল খাওয়া চালিয়ে যাচ্ছিস?
রনি বললো, ‘শোন, তোর কথা ভেবে আমি একটা শায়েরী লিখেছিবলেই শায়েরীটা শোনাতে লাগলো,
 
পি হ্যায় শরাব, হর গলি কি দুকান সে,
দোস্তি সি হো গয়ী হর শরাব কে জাম সে
গুজরে হ্যায় হাম কুছ অ্যায়সী মুকাম সে,
কি আঁখে ভর আতী হ্যায় মহব্বত কে নাম সে
 
রনির চোখের দিকে তাকালাম, হেসে বললাম, ‘তোর কি শালা আমার মত এত দূঃখ নাকি যে দূঃখে তুই মদ খাবি?’
রনি বললো, আমি তো দূঃখে মদ খাই নাআনন্দ করেই খাইতবে তোর জন্য কি আমাদের দূঃখ হয় নাএই তো শুভেন্দুতোকে এত জ্ঞান মারে, উপদেশ দেয়, শালা তোর দূঃখে একদিন কেঁদেই ফেললো
আমি বললাম, সেকীরে তাই নাকি?
রনি বললো, হ্যাঁ সেকী কান্নাতুই যদি একবার দেখতিস
আমি বললাম, তাহলে মনে হয় একটু বেশী নেশা হয়ে গেছিলো
রনি বললো, ‘তা ঠিকতবে ও তোকে খুব ভালোবাসে, জানিস তো দেব? এখনো বলে, বন্ধুদের মধ্যে তোর পরে দেবই আমার খুব কাছের ছিলোসেই যে কলেজের পর ঘটনা ঘটে গেলতারপর ও নিজেকে কেমন গুটিয়ে নিলশালা হারামী মিনুশয়তান, মাগীর বাচ্চাঢ্যামনা মাগীবিদিশাকে পুরো চটিয়ে দিলো
রনি এমন গালাগাল দিতে শুরু করেছেমাধুরী ভেতরের ঘর থেকে বেরিয়ে এলোওকে বললো, কি হচ্ছেটা কি? কাকে গালাগাল দিচ্ছো এভাবে?
 রনি বললো, ‘জানো না? ওই শয়তান মিনু ঢেমনিটাকেওই তো দেব আর বিদিশার প্রেমটাকে বরবাদ করে ছাড়লোইস কি সুন্দর ছিলো সেই সময়টাআমরা সবাই মিলে ঘুরতাম, ফিরতামতা না আপদটা এসে জুটে বসলোআর দেবের জীবনটাকে নষ্ট করে দিলো।’
মাধুরী সবই জানেবললো, ‘ছাড়ো না ওসব পুরোনো কথাএখন দেবদার কি করা যায় সেটা আগে বলোআমি কি মেয়ে দেখবো নাকি একটা দেবদার জন্য?’
রনি জোর করে পাশে বসালো মাধুরীকেওর গাল টিপে দিয়ে বললো, ‘তাই? তুমিও দেখবে? কিন্তু আজ যে আসছে, তাকে দেখলে, দেবের তো কাউকে আর পছন্দ হবে না।’
মাধুরী কিছুই জানে নারনি কে বললো, ‘কে আসছে গো?’
রনি বললো, ‘ওটা এখন বলা যাবে নাক্রমশ প্রকাশ্য।’
মাধুরী বললো, ঢং রাখো দেখিকি হবে বললে?
রনি বললো, ‘শুভেন্দু আমাকে মানা করেছেবললে আস্তো রাখবে নাদেবকে তো বলা যাবে নাতোমাকেও নয়।’
মাধুরী বললো, ‘আহা ন্যাকাকি হবে বললে? আমার ছোড়দাটাও যেমন, আর তুমিও তেমন।’
কানটা রনির মুখের দিকে বাড়িয়ে মাধুরী বললো, ঠিক আছে আমার কানে কানে বলোদেবদা শুনতে পাবে না
রনি বললো, ‘না তোমার পেট খুব পাতলাতুমি ঠিক বলে দেবে দেব কে আর সব মাটি হয়ে যাবে আজকে।’
মাধুরী রেগে মেগে বললো, ‘ঠিক আছে যাওবলতে হবে নাকে না কে খেদী পেঁচী আসবেতারজন্য সব নখরা হচ্ছে।’
 
আমি ওদের দুজনের রকমটা দেখছিলামরনিকে বললাম, আমি সব জানিকে আসবে তাও জানিশুধু মজাটা দেখছিশেষ পর্যন্ত কি হয়
বলতে বলতে শুভেন্দুও ঠিক তখন এসে ঢুকলোঘরে ঢুকে বললো, ‘দেখলি তোঠিক টাইম মত এসেছিআজ আর দেরী করিনি।’
মাধুরীকে বললো, ‘এই ছুড়ী, এই প্যাকেটটা ভেতরে রেখে দিয়ে আয়।’
দেখলাম শুভেন্দুর হাতেও একটা প্যাকেটরনির মত ও কিছু কিনে নিয়ে এসেছেমাধুরী বললো, ‘এটা কি আছে রে ছোড়দা?’
শুভেন্দু বললো, ‘ওর মধ্যে একটা গিফ্ট আছেএকজনকে দেবোসে আসছে।’
মাধুরী অবাক হয়ে তাকালো শুভেন্দুর দিকেওকে বললো, ‘কে আসছে? কাকে গিফ্ট দিবি?’
শুভেন্দু বললো, ‘আমাদের সবার তরফ থেকে এই গিফ্টআর কে আসছে? এখুনি তাকে দেখতে পাবিএকটু অপেক্ষা কর।’
মাধুরী যথারীতি ওই প্যাকেটটা নিয়েও ভেতরে চলে গেলআমি বুঝলাম, বিদিশার জন্য আজ অনেক কিছু অপেক্ষা করছে এখানেকলেজে দিনগুলো তো আর ভোলার নয়আমার বন্ধুরা সব, আমার মতন বিদিশাকে কেউ ওরা ভোলেনিসামান্য একটা ভুলের খেসারতে বিদিশা সেদিন আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলোবিদিশার সেদিনের সেই আচরণে সবাই একটু দূঃখ পেয়েছিল ঠিকইকিন্তু আজ এতদিন পরে সবাই যেন একটু নড়ে চড়ে বসেছেবিদিশা, আসবে বলে শুভেন্দু আর রনি বেশ এক্সসাইটেড হয়ে গেছেঠিক যেনো আমারই মতন
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#20
আমার সামনে বসেই শুভেন্দু আমাকে বললো, কি ভাবছিস?
আমি বললাম, কই কিছু না তো?
কলেজে যেভাবে আমার দিকে তাকিয়ে শুভেন্দু হাসতো, ওর চেনা হাসিটাকে দেখে বুঝতে পারলাম, আমার মনের ভাবটা বোঝার চেষ্টা করছে বিদিশাকে দেখলে, আমি হয়তো আত্মহারার মতন হয়ে উঠবো মনের মধ্যে যে আলোড়নের সৃষ্টি হচ্ছেসেটা সেভাবে প্রকাশ করতে পারছি নাআনন্দটা চেপে রেখেই বললাম, তোর সারপ্রাইজের জন্যই তো আমি এসেছিএবার বল, কি তোর সারপ্রাইজ?
শুভেন্দু বললো, আমি যে সারপ্রাইজটা তোকে দেবো, নিতে পারবি তো? পাগল হয়ে যাবি না?
রনি শুভেন্দুর মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছিলআমি বললাম, আগে তো শুনি, দেখিতারপরে দেখা যাবে, পাগল হই কিনা?
একটু রসিকতা করে শুভেন্দু রনিকে বললো, ‘দেব মনে হচ্ছে, আজ আর বাড়ী ফিরতে পারবে নাওকে সারারাত এখানেই থাকতে হবে।’
আমাকে বললো, ‘তুই এক কাজ করমাসীমাকে ফোন করে বলেদে, আজ আমি শুভেন্দুদের বাড়ীতেই থেকে যাচ্ছিসুতরাং তুমি শুধু শুধু আমাকে নিয়ে চিন্তা কোরো না।’
আমি বললাম, আগে সারপ্রাইজটা তো বলতারপরে মা’কে ফোন করছি
শুভেন্দু, রনি দুজনেই হাসতে লাগলোআমাকে রনি বললো, ‘ভাবছিস কি সারপ্রাইজ তোর জন্য ওয়েট করছেতাই না?’
আমি ওদের দুজনকেই হেসে বললাম, সেটা তোরা দুজনেই জানিসতবে আমিও জানি কিছুটাতবে এখন সেটা বলবো না
শুভেন্দু বললো, কি জানিস? কে বলেছে তোকে?
পাছে ওরা কিছু জেনে যায় আমি বললাম, কেউ বলেনি আমাকেআমি এমনি বলছি
পকেটে মোবাইলটা ছিল, হঠাৎই দেখি শুক্লা ফোন করেছে আমাকেখেয়াল হল, শুক্লাকে বলেছিলাম, ফোন করে ওকে জানাবোঘর থেকে যখন বেরিয়ে এসেছি, ওকে আর জানানো হয় নিশুভেন্দুর আর রনির সামনেই শুক্লার ফোনটা রিসিভ করলাম
ওরা দুজনে বলে উঠলো, কে রে?
আমি বললাম, শুক্লা
শুক্লা বেশ রেগে রয়েছে আমার ওপরেআমাকে বললো, কি রে দেব? তুই ফোন করলি না তো? আসছিস তো তাহলে?
শুভেন্দু আর রনি দুজনেই বেশ কৌতূহল চোখে তাকাচ্ছে আমার দিকেআমি শুক্লাকে বললাম, ‘এই তো শুভেন্দুর বাড়ী এসেছিতোকেও ফোন করতে ভুলে গেছি।  শুক্লা, সরি
শুক্লা একটু আপসেট হল, আমাকে বললো, এ মা, তুই শুভেন্দুর বাড়ীতে চলে গেছিস? তা আমাকে বলবি তো?
বুঝতেই পারছিলাম, যেন খুব আশা করেছিল ব্যাচারাওকে বললাম, ‘শুভেন্দু আমার সামনেই আছেকথা বলবি? রনিও আছেনে কথা বল।’
শুভেন্দু এগিয়ে এসে, নিজে থেকেই আমার হাত থেকে ফোনটা নিলোশুক্লাকে বললো, হায়, সুইট হার্ট! কেমন আছো তুমি?
আমি শুনতে পাচ্ছিনা শুক্লার কথা বোধহয় ওকে বলেছে, আমার কথা তাহলে তোর মনে পড়লো?
 শুভেন্দু বললো, ‘কি করবো বলো? আমি তো তোমার গলায় তখনি মালা দিতে চেয়েছিলামদেব বারণ না করলে কি আর শুনতাম? সবই রেডী ছিল, মালা, ফুল, তোমার জন্য আমার উপহারতুমি আমার দিকে ফিরেও তাকালে নাসৌগতর দিকেই ভীড়ে গেলেভগবান আমাকে সারাজীবন নিঃসঙ্গ করে রাখলো
শুক্লা ওকে কিছু বলতে চাইছিল, শুভেন্দু ওকে বাঁধা দিয়ে বললো, আরে রাখ, রাখ, ও তো আমি এমনি রসিকতা করছিজানিস তো ভালো একটা খবর আছে
শুক্লা বললো, কি খবর?
দেব একটা বড়সড় পার্টী দিচ্ছে আমাদের জন্যসেই কলেজে মাঝে মাঝে যেমন দিতো
শুক্লা বললো, পার্টী? কি খুশিতে?
শুভেন্দু বললো, ওটা এখুনি বলা যাবে নাতাহলে দেবকে সারপ্রাইজটা আর দেওয়া যাবে না
শুক্লা কি একটা বলতে গেলোশুভেন্দুর মুখটা শুকনো মতন হয়ে গেলআমাকে বললো, ‘এ আবার কি হল রে? এ যে দেখি উল্টো কথা বলছে।’
সকালে শুক্লা এসেছিল, আমার বাড়ীতেবিদিশার কথা ওই আমাকে বলেছেশুক্লা চায় না আমি বিদিশার সাথে আবার দেখা করিমুখ খানা ফ্যাকাসে মতন হয়ে গেলে মানুষ যেমন কোনো তালগোল খুঁজে পায় নাশুভেন্দু সেভাবেই বললো, ‘আমি তো শুক্লার কিছু তাল খুঁজে পাচ্ছি নাতবে কী?-
 
মনে হল, ভালোবাসা উজাড় করে একদিন নিজেকে নিঃশ্বেস করে দিয়েছিলাম এই বিদিশারই জন্যদূর আকাশের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে ভাবতাম, আমার জীবনে বিদিশার উদয় হয়তো আর কোনদিন হবে নাভালোবাসার কাঙালপনা করেও অজান্তেই আমি নিজের বলি দিয়েছিনিজের খুশিকে বিসর্জন দিয়েছিযখন এতদিন পরে আমি আবার বাঁচার একটা তাগিদ খুঁজে পাচ্ছি, তখন শুক্লা যেন ওই মিনুর মতই আমার স্বপ্নগুলোকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিতে চাইছেকেন সেটা হবে কেন? আমার জীবনে অতীতেই হোক, আর বর্তমানেই হোক, বা আগামীদিনেও হোকবিদিশা ছাড়া আমার জীবনে কোনদিন কোনো নারী ছিল না, নেই, আর কোনদিন থাকবেও নাআমার জীবনটাই যে এরকম
শুক্লার সাথে কথা বলে ফোনটা ছেড়ে দেবার পর কেমন থম মেরে গেলো শুভেন্দু।  মুখে ওর হাসিটা নেইচোখের কোনে চিন্তার ভাঁজআমাকে শুধু মুখে বললো, স্ট্রেঞ্জ, ভাড়ী অদ্ভূত তো-
আমি বললাম, এত গম্ভীর হয়ে গেলিকি হয়েছে বলবি তো? শুক্লা কিছু বলেছে তোকে?
শুভেন্দু বললো, দেখ, ‘দেব’ প্রেম আমি জীবনে করিনিবিয়েও হয়তো করবো নাকিন্তু এই মিয়া যখন কারুর সাথে কথা বলে, বুঝে নিতে তার অসুবিধা হয় নাআমি তো আর অবুঝ বা ছেলেমানুষ নই?
 
শুভেন্দুকে বললাম, কি হয়েছে বলবি তো?
শুভেন্দু বললো, যে কিনা কলেজে থাকতে থাকতে একটা প্রেম করলোতাকে বিয়ে করলই না সে আবার অন্য একজনকে বিয়ে করলোসেই মেয়ের এখনো বাসনা জেগে রয়েছে তোর প্রতি? এটা শুনেও কি তোর বিশ্বাস হচ্ছে না?
 শুভেন্দুর কথাটা শুনে এবার আমিও থম মেরে গেলামসকালে শুক্লা আমার বাড়ী এসেছিল, আমাকে ওর বাড়ীতে যেতেও ইনভাইট করে গেছেকিন্তু তা বলে প্রেম ভালোবাসার কথা এখানে আসবে কেন? শুক্লা তো আমাকে কোনদিন ভালোবাসেনিআমাকে তো কোনদিন এভাবে কামনা করেনিআমাকে জয় করার কোনো স্বপ্নই সে দেখায়নিআমি বিদিশাকে ভালোবেসেছিলাম, তার দিকেই শুধু হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছিলামহঠাৎ আমাকে বাড়ীতে ডাকার জন্য শুক্লার মনে এত উদ্বেগকূলএটা কি প্রেম না দেহগত বাসনা?
নিজেকে একটু হাল্কা করার চেষ্টা করলামশুভেন্দুকে তাও বললাম, না না শুক্লা এরকম মেয়েই নয়হয়তো তোর বোঝার ভুল হয়েছে, কিংবা শোনার ভুল
রনি পাশে বসেছিল চুপ করেএবার ফোড়ণ কেটে বললো, ‘দেব’ শেষকালে শুক্লাও তোর প্রেমে পড়লোব্যাচারা বিদিশার কি হবে রে?
বলেই জিভ কেটে ফেললো রনিতারপরেই বললো, এই যাঃভুল হয়ে গেছেহাঁটে হাঁড়ি ফাঁস হয়ে গেছেযাঃ বলে দিলাম যে
শুভেন্দু রনিকে বললো, ‘তুই না বললে, আমি তো বলতামইএবারে দেবকে তাহলে আসল কথাটা বলি।’
বুঝতেই পারছি, শুভেন্দু এবার সারপ্রাইজের উন্মোচন করছে আমার কাছেআমাকে বললো, শোন, দেবশুক্লা তোকে কি বলেছে আমি জানি নাতবে গত পরশুই আমার বিদিশার সাথে দেখা হয়েছেএকটা চেনা মেয়েকে এতদিন বাদে দেখলাম, আমার তো বুঝে নিতে কখনো অসুবিধা হয় নাযে বিদিশাকে আমি দেখেছিলাম, সেই বিদিশা এখন আর নেই
আমি শুভেন্দুর মুখের দিকে কৌতূহলের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলামমনে অনেক প্রশ্ন জাগছে, ভাবছি বলবো কিনাবিদিশা কেমন আছে? আমার কথা কিছু জিজ্ঞাসা করছিল? ও কি আগের মতই ভালোবাসে আমাকে? তাও চুপ করে রইলামদেখছিলাম, শুভেন্দু নিজে থেকে কিছু বলে কিনা?
শুভেন্দু আমাকে অবাক করে বললো, শেষ খেলাটা জিততে একটু শক্তি দেখাতে পারবি না? বিদিশার জন্য এটুকু তো তোকে করতেই হবে
বিদিশাকে পাওয়ার জন্য যদি কোনো শক্তি দেখাতে হয়, নিশ্চই আমি দেখাবোসেই অদম্য জেদটা নিয়েই তো আজ এখানে এসেছিতবু বললাম, কি শক্তি দেখাতে হবে বল? বিদিশাকে তো কারুর হাত থেকে ছিনিয়ে আনার প্রশ্ন নেইও তো-
শুভেন্দু বললো, বিদিশা এখন ডিভোর্সীতাই তো?
আমি বললাম, হ্যাঁ, শুক্লা তো আমাকে সেকথাই বলেছে, ওর স্বামীর সঙ্গে নাকি ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে।  ও এখন কলকাতায় এসে রয়েছেবাবা মায়ের কাছে থাকেআমার সাথে দেখা করতে চেয়েছে, শুক্লা তাই তো বললো
শুভেন্দু বললো, তোর জন্য আমার খুব কষ্ট লাগে, জানিস তো দেবআমি বিদিশাকে বলেছি, কেন শুধু শুধু তুই দেবকে দোষী করলি? মিনুর সাথে দেবকি সেদিন কোনো নোংরামী করতেই গেছিল? নিজের কাছের লোকটাকে বিশ্বাস করতে পারলি না? মিনুর দোষটা তুই দেবের ঘাড়েই চাপালি? এতে কার ভালো হল? তোর না দেবের?
শুভেন্দুকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোর সাথে বিদিশার কোথায় দেখা হয়েছিল?
শুভেন্দু বললো, গড়িয়াহাট মোড়ে
খেয়াল হল, শুক্লাও তাই বলেছেবিদিশার সঙ্গে শুক্লারও গড়িয়াহাট মোড়েই দেখা হয়েছে
[+] 4 users Like Lekhak is back's post
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)