Posts: 338
Threads: 7
Likes Received: 615 in 186 posts
Likes Given: 6
Joined: Jun 2021
Reputation:
81
শুভেন্দু বলল, কোন সুন্দরী মেয়েকে দেখলে পুরুষরা যেমন তার প্রেমে পড়তে চায়। আমার মনে হল, আমিও তো ওর প্রেমে পড়তেই পারি। ওকে মন প্রাণ দিয়ে ভালবাসতে পারি। কিন্তু এও তো আমার কাছে এক অদ্ভূত ব্যাপার। জীবনে প্রেমকে কোনদিন সেভাবে মানিনি। প্রেমের আমার কাছে কোন মূল্যই নেই। অথচ একে কি করে আমি ভালবাসতে পারব? কোন পুরুষ কোন সুন্দরী মেয়েকে কামনা করলেই ভাবে, তাকে আর বাকী জীবনে কখনও বিরক্তিকর লাগবে না। কোন বাঁধা প্রতিবন্ধকতা আসবে না। কিন্তু পরে দেখা যায় সবই ভুল। একটার পর একটা বাঁধা অতিক্রম করতে হচ্ছে তাকে। তাছাড়া কোন সুন্দরী মেয়ের সাথে জীবন কাটানোর মানে তো শুধুই জৈবিক ক্ষুধার নিবৃত্তি নয়। তাকে জানতে হবে, বুঝতে হবে। মন, রুচি আর প্রবনতার মিলটাকে খুঁজে বার করতে হবে।
আমি বললাম, সবই তো বুঝলাম। তারপর কি হল?
শুভেন্দু বলল, ভাবছি যেচে আলাপ জমাবো কিনা? কিন্তু সে সুযোগটা করে দিল শিখাই। পুরীর সি বীচ দিয়ে হাঁটছি। হঠাৎ সামনে দেখি শিখা। একা একাই হোটেল ছেড়ে বেরিয়েছে। আমি সামনে পড়তেই বলল, আপনি ওই একই হোটেলে উঠেছেন না? আপনাকে বারান্দাতে আমি দেখেছি।
আমি শুভেন্দুর কথা শুনে চেঁচিয়ে উঠলাম। উত্তেজিত হয়ে বললাম, জিও। কি শোনালি গুরু। উফ কবে যে আমিও যাব পুরীতে বিদিশাকে নিয়ে।
বিদিশা দেখি আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
শুভেন্দু বলতে লাগল। মনে কর, সমুদ্রের জলে পড়েছে চাঁদের আলো। প্রেয়সীর হাত ধরে সমুদ্রের পাড় দিয়ে হাঁটছে তার প্রেমে পাগল ভালোবাসার মানুষটি। রোমান্টিক রাতের আনন্দে আমি যেন তখন ভীষন ভাবে আপ্লুত। আমার মনে তখন অচেনা আনন্দ বাসনা আর আকুলতার আলোড়ন। সেই সুন্দরী রাতে স্নিগ্ধ, প্রাণবন্ত আলোয় আমরা নীরবে হাতে হাত ধরে হেঁটে চলেছি। চাঁদের স্নিগ্ধ সৌন্দর্য তখন দেহ পূর্ণ করে হৃদয় প্লাবিত করে সৌরভে আচ্ছন্ন করে ঝরে পড়ছে। কেমন লাগবে তোদের এটা শুনে?
আমি বললাম, তুই কি সত্যি সত্যি শিখার হাত ধরে হেঁটেছিস?
শুভেন্দু বলল, তাহলে আর বলছি কি?
আমি বললাম, দারুন শুভেন্দু। দারুন। তুই করেছিস টা কি-
এতটা নস্টালজিক হয়ে আর রোমান্টিকতার সুন্দর বর্ণনা শুভেন্দুর মুখ দিয়ে এই প্রথম শুনছি। তাও আবার শুদ্ধ বাংলাতে।
এতক্ষণ পরে রাগটাকে ঠান্ডা করে শুক্লাও বলে উঠল, ঠিক এই মূহুর্তে শিখাকে দেখতে আমারও খুব ইচ্ছে করছে। কবে রে? কবে দেখাবি ওকে? বল না? এই শুভেন্দু। বল না।মাঝখান থেকে রনি এবার ফোড়ণ কেটে উঠল। শুক্লাকে বলল, ‘দে এবার টাকাটা দে। শিখাকে দেখতে গেলে পয়সা লাগবে। ওটা আমার পাওনা।’
শুক্লা এক ধ্যাতানি দিয়ে উঠল। রনিকে বলল, হ্যাঁ। দাঁড়া তোর মজা দেখাচ্ছি। তোর কি পয়সার অভাব?
রনি মুখটাকে করুন মত করে বলে উঠল, ‘আমার সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে। এই মূহূর্তে হাজার পাঁচেক টাকা পেলে তো ভালই হবে। দে না দে। শিগগীর ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে বের কর। তারপর শিখাকে আমি এখানে আনার ব্যবস্থা করছি।’
আমি একটা ধমক লাগিয়ে বললাম, ‘বেশ পুরীর গল্পটা শুনছিলাম। দিলি সব চোপাট করে। এই শুভেন্দু তারপরে কি হল? বল না?’
বিদিশাও বলল, ‘হ্যাঁ, সী বীচ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তারপর তোরা কোথায় চলে গেলি? ঝাউবনের আড়ালে?’
শুভেন্দু বেশ বিজ্ঞের মতন বলে উঠল, দূর বোকা। পুরীতে আবার ঝাউবন আছে নাকি? ওটা তো দীঘাতে।’
বিদিশা বলল, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ। তাই। আমারই ভুল হল। তারপর কি হল?’
রনি এবার শুভেন্দুকে বাঁধা দিয়ে বলল, ‘আচ্ছা তুই আমাকে তখন বারণ করলি। এদের সামনে শাসালি। আর এখন ফ্রী তে এদের এত কিছু বলছিস কেন? কেউ কোন খরচা করবে না। সব কিপটের দল। শিখা আর শুভেন্দুর প্রেম কাহিনী শুনবে। অতই সস্তা নাকি?’
বেশ রেগে গেছি আমিও। শুক্লাও রেগেমেগে বলল, ‘এই দেব। এই বেরসিকটাকে এখান থেকে ভাগা তো। তখন থেকে ব্যাগড়া দিচ্ছে। শুভেন্দুকে বলতে দিচ্ছে না।’
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ রে রনি। তুই তো এরকম ছিলিস না। এত আনরোমান্টিক। ইচ্ছে করে করছিস না ফাজলামো মারছিস?’
শুভেন্দুও রনিকে ধমক লাগাতে যাচ্ছিল। মাধুরীও চটে গেছে। তার আগেই রনি দাঁত কেলিয়ে বলল, একটু পরে শিখা তো এখানেই এসে পড়বে। তখন কি আর পয়সা চাওয়া যাবে? তাই না একটু সুযোগ খুঁজছিলাম।’ বলে ও মাথা চুলকোতে লাগল।
আমরা রনির কথা শুনে একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি। বিদিশা আমার দিকে তাকিয়েছে। আমিও বিদিশার দিকে। ওদিকে শুক্লা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে রনির দিকে। রনি তখনও দাঁত বার করে হাসছে। সবাই স্তম্ভিত, হতভম্ব। শিখা এ বাড়ীতে আসবে? কেউ ভাবতে পারছে না।
শুভেন্দুই শেষকালে সবাইকে স্বস্তি দিয়ে বলল, ‘তা নয়, তা নয়। ব্যাপারটা তা নয়। শিখাকে তো আমি দেবের কথা সবসময়ই বলি। দেবের অসুস্থ হবার ঘটনাটাও ওকে জানিয়েছি। সকালেই আমার সাথে আসতে চাইছিল। বললাম, এখন নয়। আমি ফোন করলে তারপর এসো। বলেছে, ডাকলেই চলে আসবে। নিজেই গাড়ী ড্রাইভ করতে জানে। কোন অসুবিধে নেই।’
আমি সব শুনে বললাম, ‘নিয়ে এলি না কেন? এখনই তাহলে ওকে দেখতাম। আলাপ পরিচয় হত।’
শুভেন্দু হেসে বলল, ওতো তোকে দেখতেই এখানে আসবে বলেছে। আমি আজকেই সেটা চাইছিলাম না। পরে সময় হলে শিখার কথা তোদের সবাইকে শোনাতাম। এই রনিটাই তো দিল সব ফাঁস করে। ব্যাটা পাজী। কত করে মানা করেছিলাম। কিছুতেই আমার কথা শুনলো না।’
রনি তখনও মজা লুটে যাচ্ছে। হাসতে হাসতে আমাকে বলল, ‘আমার শালাবাবু এখন লাখোপত্তি। তিনি যে শিখাকে পেয়েছেন। তাই না? আর তুই তো আগেই কোরোপত্তি। কারন বিদিশাকে আবার ফিরে পেয়েছিস। মাঝখানে আমি হলাম গিয়ে চায়ে কা পত্তি। আমার কপালে এখন কিছু নেই।’
শুক্লা রেগে গিয়ে বলল, ‘দ্যাখ দ্যাখ কি বদমাইশ। মাধুরী বসে আছে। ওর সামনেই কেমন ভাবে বলছে?’
মাধুরী চুপ। মুখ গম্ভীর। একটু কড়া ভাবেই বলল, ‘আমি এখন আমার স্বামীকে কিছু বলবো না। কারণ ছোড়দার এই প্রেমের খবরটা আমার কাছে ভীষন আনন্দ সংবাদ। এতদিন বাদে একটা দারুন খবর পেলাম। আগে সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাক। তারপর ওর সাথে আমি বোঝাপড়া করবো।’
বলেই ভূরু কূঁচকে রনির দিকে তাকালো।
রনি তখন বউয়ের দিকে তাকিয়ে কান মুলছে, জিভ বার করছে। কত কি করছে। আমি আর বিদিশা হেসেই গড়াগড়ি। বুঝতেই পারছি, বাড়ী ফেরার পর মাধুরী ওকে দেবে আচ্ছামতন। আজ রনির কপালে বেশ বড় সড় দূঃখ আছে।
সবার সামনে গলা উঁচিয়ে রনি এবার বলল, ‘যে যাই বলুক। আমার বউয়ের মতন কেউ নয়। আমার বউ হল সবার সেরা। লাখে একটা।’ বলেই বউকে একটা হাম্মি দিতে গেল। মাধুরী এক ধমক লাগিয়ে বলল, ‘কি হচ্ছে টা কি? অসভ্য কোথাকার। এটা কি বাড়ী পেয়েছো নাকি? ইস, ন্যাকামো দেখে আর বাঁচি না।’
রনি বউয়ের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘রাগ করে না মেরী জান। আমি তো এমনি রসিকতা করছি। তোমার সাথে কারুর তুলনা হয়?’
মাধুরী বলল, ‘থাক আর আদিখ্যেতা করতে হবে না।
রনির করুন মুখটা দেখে ও এবার নিজেই হেসে ফেললো। আমি বিদিশার মুখের দিকে তখন তাকালাম। বিদিশাও আমার দিকে। পৃথিবীতে প্রেম জিনিষটা কত সুন্দর। প্রেমের কত রূপ। প্রেম অবিনশ্বর। এই প্রেম নিয়েই জীবনের কত চাওয়া পাওয়ার কত মূহূর্ত। একটা আশার আলোর সন্ধান পেয়েছি আমরা দুজনেই। শুভেন্দু আর শিখার নতুন প্রেম কাহিনী আমাদের ফিরে পাওয়া ভালোবাসাকে আরও মজবুত করবে। আমরা আশাবাদী। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বিদিশা যেন সেই জিনিষটাই খুঁজে পাবার চেষ্টা করছে। আমি ওকে আরো আস্বস্ত করলাম। ঘাড় নাড়লাম। হাতের ওপর হাতটা রেখে ওকে বললাম, ‘আমি আছি তোমার সাথে। তুমি কিছু চিন্তা কোরো না।’
শুভেন্দু আমার আর রনির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ যা-চ্চলে। এরা দেখি এখন নিজেদেরই ঘর সামলাতে ব্যস্ত। এই তোদের পুরী আর ছাদের গল্পটা আর তাহলে বলছি না।’
আমি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলাম, ‘না না। গল্প তো শুনতেই হবে। তবে তুই শিখাকে এখন আসতে বলছিস তো? ফোন কর। এখনই ফোন কর। সবার সামনে। আমরা শুনি।’
শুভেন্দু আনন্দে বলে উঠল, ‘ফোন করবো? আসতে বলবো? তুই বলছিস?’
আমি বললাম, ‘অফ কোর্স। ওয়াই নট। এটাই তো উপযুক্ত সময়। শালা ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিলিস। আমাদের আগে বলিস নি। আজ কেমন সব ফাঁস হয়ে গেল। দেখলি তো?’
Posts: 338
Threads: 7
Likes Received: 615 in 186 posts
Likes Given: 6
Joined: Jun 2021
Reputation:
81
09-07-2021, 03:29 PM
(This post was last modified: 09-07-2021, 03:50 PM by Lekhak is back. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
শিখাকে দেখার জন্য সবাই ব্যস্ত। শুক্লাও বলে উঠল, ‘হ্যাঁ। হ্যাঁ। আজই এসেছি যখন ওকে দেখেই যাই। আবার কবে আসা হবে না হবে। আজই তো দারুন দিন। একসঙ্গে সবাই যখন জড়ো হয়েছি। এটাই উপযুক্ত সময়। ডাক শুভেন্দু ওকে ডাক। তোর প্রেয়সীকে একবার চোখের দেখা দেখে যাই।’
আমি দেখলাম, শুভেন্দু মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে কি যেন চিন্তা করছে। শিখাকে কি বলবে, সেটাই হয়তো ভাবছে। তারপরে কি যেন আবার চিন্তা করে আমাকে বলল, ‘মাসীমা এবার ভিমরী খাবে। শিখা এলে মাসীমা অবাক হয়ে যাবে। আমার কি অবস্থা হবে বুঝতে পারছিস?’
শুভেন্দুকে বললাম, ‘মা কত খুশি হবে জানিস? না ডেকে ওই ভুলটা আর করিস না। মা’কে এখুনি আমি ভেতর ঘর থেকে ডাকছি। শিখার এখানে আসার কথা জানিয়ে দিচ্ছি। তোর ভাবী বউয়ের জন্যও মা লুচি পরোটা বানিয়ে দেবে।’
শুভেন্দু বাঁধা দিয়ে বলল, না না মাসীমাকে আর কষ্ট দিস না। শিখা এমনিই আসবে। আসবে তোকে দেখতে। আসবে বিদিশাকেও একবার চোখের দেখা দেখতে। আমি তো বিদিশার কথাও ওকে অনেক করে বলেছি। তাই না?’
বিদিশা মুখটা একটু নিচু করল। আমি শুভেন্দুর দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘আমার এখন কি ইচ্ছে করছে জানিস? ইচ্ছে করছে হৈ হৈ করে দলবেঁধে সবাই মিলে বেড়িয়ে পড়তে। একটা দুদিন কিংবা তিনদিনের ট্রিপ। এই কাছে পিঠে কোথাও। সবাই মিলে যাব। খুব মজা হবে। অনেকটা পিকনিকের মতন। তোদের ইচ্ছে করছে না?’
বিদিশা বলল, ‘আগে তো তুমি সুস্থ হও। নইলে যাবে কি করে?’
জবাবটা কেড়ে নিয়ে শুভেন্দু বলল, ‘বিদিশা, দেবকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করবার দায়িত্ব কিন্তু এখন তোর কাঁধে। আজকে এখানে থেকে সারারাত ধরে দেবের সেবা শুশ্রসা করবি। সারারাত ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিবি। আর ওর পেটের যেখানটায় ব্যাথা। ওখানটায় ভাল করে হাত বোলাবি। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেব তখন একেবারে চাঙ্গা।’
বিদিশা এক ধ্যাতানি দিয়ে শুভেন্দুকে বলল, যাঃ। অসভ্য কোথাকার।
শুক্লা যেন অধৈর্য হয়ে পড়ছে। ফোনটা শুভেন্দু এখনও করছে না দেখে ছটফট করে উঠে বলল, ‘তাহলে শিখা কখন আসছে? শুভেন্দু ফোনটা ওকে কর শীগগীর।’
এমন একটা পরিবেশ, আমরা সব শুভেন্দুর ওপরই নির্ভর করে রয়েছি। শিখাকে এখানে আনার দায়িত্ব শুভেন্দুর। শুধু একটা ফোন করলেই কাজ হবে। আমার কিন্তু রনির ওপর তখন সত্যি আর কোন রাগ নেই। উল্টে ভাবছিলাম, আজ একটা উপযুক্ত কাজ করেছে রনি। সবার সামনে শুভেন্দুর নতুন প্রেম কাহিনা ফাঁস করে সবাইকে ও চমকে দিয়েছে। আড়ালে শুভেন্দু হয়তো আমাকে, আজ না হয় কাল ওর প্রেম কাহিনী শোনাতো। কিন্তু আজকে যে সবাই মিলে এখানে জড়ো হয়েছি এবং শিখাকে দেখার জন্য সবাই এখন উদগ্রীব। এই মূহুর্তটা তৈরী হত না রনি আসল কথাটা না বললে। প্রেম কাহিনী সবাই এখন জেনে গেছে। সবারই উচিৎ রনিকে একটা থ্যাঙ্কস জানানো। কেউ কিছু না বললেও, আমি কিন্তু একটা থ্যাঙ্কস জানালাম রনিকে। ওকে বললাম, রনি মেনি মেনি থ্যাঙ্কস। তোর জন্য আমার কিন্তু একটা বড়সড় গিফ্ট থাকবে। টাকা না হয় নাই দিলাম, কিন্তু এটা হল শুভ সংবাদটা আমাদের সবাইকে দেবার জন্য। তোর মুখে ফুল চন্দন পড়ুক।
রনি মাথা নিচু করে আমাকে সেলাম জানালো। আমাকে বলল, “ওকে বস। তুমি আমাকে চারআনা দিলেও আমি কিছু মনে করবো না। আফটার অল ইউ আর মাই বেষ্ট ফ্রেন্ড।
শুক্লা রনির রকমটা দেখছিল। ওকে বলল, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ আমিও তোকে একটা গিফ্ট দেবো। আগে শিখা এখানে আসুক। তারপরই তোকে দিচ্ছি।’
রনি একটু রসিকতা করে বলল, ‘তুই কি স্বার্থপর রে? টাকার কথাটা বেমালুম ভুলে গেলি। টাকা থেকে এখন গিফ্ট দিয়ে কাজ সারবি। না না শুক্লা এটা তুই ঠিক কাজ করলি না।’
শুক্লা ভালমতনই বুঝতে পারছে, রনি এখনও মজা করছে ওর সঙ্গে। অবশ্য তখন ওর ওদিকে আর ভ্রুক্ষেপ নেই। দৃষ্টিটা গিয়ে পড়েছে শুভেন্দুর দিকে। প্রেমিকার সাথে মোবাইলে কথা বলছে শুভেন্দু। শিখাকে শুভেন্দু কি বলছে, আর জবাবে শিখাও কি বলছে, জানার জন্য শুক্লা কতটা উদগ্রীব। আমরা দুজনেই একসাথে শুভেন্দুকে বলে উঠলাম, ‘কি রে শুভেন্দু? শিখা আসছে তো?’
ফোনটা তখনও কানে ধরে রয়েছে শুভেন্দু। আমার দিকে হঠাৎই বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ। এই তো শিখা লাইনে রয়েছে, কথা বল। ও তো তোর কথাই জিজ্ঞাসা করছে। জিজ্ঞাসা করছে দেবদার শরীর কেমন? আমি আসবো? কোন অসুবিধে হবে না তো?’
কথাটা শুনে শুক্লা বলে উঠল, ও মা কি মিষ্টি মেয়ে রে? আসবার আগে আবার জেনে নিচ্ছে, কোন অসুবিধে হবে না তো? বাহ্ খুব সুন্দর তো।’
ফোনটা আমার হাতে হঠাৎই ধরিয়ে দিয়েছে শুভেন্দু। আমি একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছি। দেখি বিদিশাও সেই সময় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আমার দিকে চোখের পাতা ফেলে ইশারা করে বলল, কথা বলো শিখার সঙ্গে। অসুবিধেটা কি?’
সন্মতি পেয়ে ফোনটা কানের কাছে ধরে বললাম, ‘হ্যালো।’
উল্টোদিকে একটা মেয়ের মিষ্টি গলা। ঠিক যেন কোকিল কন্ঠীর মত। আমি অবাক হয়ে শুনে যাচ্ছি, শিখা একনাগাড়ে বলে যাচ্ছে, ‘ভাল আছেন দেবদা? শুনলাম খুব শরীর খারাপ হয়েছিল আপনার। এখন কেমন আছেন? আমাকে ও যেতে বলছে আপনার ওখানে। আমি আসব? কোন অসুবিধে হবে না তো?’
আমি যেন মোহিত হয়ে ফোনটা কানে নিয়েই কিছুক্ষণ বোবা মানুষের মতন বসে রইলাম। অপর প্রান্ত থেকে শিখা আবার বলে উঠল, দেবদা? আপনি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন?’
সন্মিত ফিরে বললাম, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ। আপনি আসুন। কোন অসুবিধে হবে না। আমি এখন ভাল আছি।’
শিখা বলল, ‘আচ্ছা। আমি তাহলে গাড়ী নিয়ে বেরুচ্ছি। আমার যেতে হয়তো এক ঘন্টা মতন লাগবে। আপনি ভাল থাকবেন। আর ওকে একটু ফোনটা দিন।’
Posts: 338
Threads: 7
Likes Received: 615 in 186 posts
Likes Given: 6
Joined: Jun 2021
Reputation:
81
আমি শুভেন্দুর দিকে আবার মোবাইল ফোনটা বাড়িয়ে দিলাম। শুভেন্দু ফোনে শিখার সঙ্গে কিছুক্ষণ গুজগুজ করলো। তারপর ফোনটা ছেড়ে দিল। আমার দিকে তাকিয়ে বিদিশা বলল, ‘কি বললো শিখা? আসছে?’
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ আসছে। বলল গাড়ী নিয়ে এক্ষুনি বেরুচ্ছে। এক ঘন্টা মতন লাগবে এখানে আসতে।’
শুক্লা তখন ভীষন উসখুস করছে আরো কি কথা হয়েছে জানবার জন্য। আমাকে বলল, ‘আর কি বললো শিখা? এই ‘দেব,’ বল না। কি কথা হলো? বল না?’
আমি বললাম, ‘ওই তো, আমার শরীর এখন কেমন, তাই জিজ্ঞাসা করছিল। আর বলছিল, এলে আমাদের কোন অসুবিধে হবে না তো? কনফারমেশনটা নিয়ে নিল।’ আমি তখন ওকে আস্বস্ত করলাম। ও আসতে রাজী হয়ে গেল।’
চোখ দুটো গোল গোল মতন করে অত্যাশ্চর্যের মতন শুক্লা বলে উঠল, ‘ও মা। কি সুন্দর মেয়ে রে? এত দায়িত্ব সচেতন আর কর্তব্যপরায়ণ? শুভেন্দু তো বাজীমাত করে দিয়েছে। আমি ভাবতেই পারছি না।’
একটু গদগদ হয়ে শুভেন্দুও বলে উঠল, ‘ওই জন্য তো বলি। কখনও কাউকে আন্ডারেস্টিমেট করবি না। আর আমাকে তো নয়ই। ভেবেছিলিস, শুভেন্দুর তো বিয়ে থা করার ইচ্ছা নেই। চিরকাল এভাবেই কাটিয়ে দেবে। তাই তোদের এই ভ্রান্ত ধারণাকে আমি নির্মূল করে দিলাম।’ বলে গলা ফাটিয়ে শুভেন্দু যাত্রার নায়কদের মতন হাসতে লাগলো, হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ।
শুক্লা বলল, ‘বা রে? আমরা আবার কি ভাবলাম? তুই ই তো সেই কলেজের সময় থেকে বলে আসছিস, প্রেম, বিয়ে থা তোর পোষায় না। আমরা কি কখনও তোকে না করেছিলাম? না বলেছিলাম, তোর দ্বারা কখনও প্রেম হবে না।’
শুভেন্দু বলল, ‘সেটা অবশ্য ঠিক। তবে কেন জানি না শিখাই আমার তপস্যা ভঙ্গ করলো। এমন একটা মেয়ে, দেবের মত আমার জীবনেও প্রেমকে ফিরিয়ে আনলো। এরজন্য থাউজেন্ড পার্সন্ট ক্রেডিট গোজ্ টু হার। বলতে পারিস এই অসম্ভব কাজটা শিখার জন্যই সম্ভব হয়েছে।’
আমি বললাম, এরজন্য শিখাকে আমিও একটা ধন্যবাদ দেবো। তোকে শেষ পর্যন্ত নাবালক থেকে সাবালক করেছে ও। আরে বাবা, প্রেম বিবাহ এসব না করে কি চিরকাল থাকা যায়? শেষ বয়সে তাহলে তোকে দেখতো কে? আমি তো শত চেষ্টা করেও তোর ধ্যান ভাঙাতে পারিনি। যাক, শেষ পর্যন্ত কেউ না কেউ তো কাজটা করে দেখালো। আমি এ ব্যাপারটাকে দারুন ভাবে অ্যাপ্রিসিয়েট করছি।’
বিদিশা আমার কথাটা মনোযোগ সহকারে শুনছে। ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, জানো বিদিশা, মেয়েটার গলাটা কি মিষ্টি। আমি ফোনে প্রথমে ওর গলার আওয়াজ শুনে অবাক হয়ে গেছি। এত মাধুর্য্য গলার মধ্যে। অথচ শুভেন্দু যখন ফোনে আমার সাথে কথা বলে, ওর গলাটা ঠিক যাঁড়ের মতন লাগে।’
বিদিশা হো হো করে হাসতে লাগলো আমার কথা শুনে। সেই সাথে শুক্লাও। শুভেন্দু সেই সময় বলে উঠলো, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ এটাও শুনে নাও তোমরা বন্ধুরা। শিখা শুধু সুন্দরী আর ভালো মেয়ে নয়। ও ভালো গাইতেও পারে। অসম্ভব দরাজ আর মিষ্টি ওর গানের গলা। আমি যতবার ওর গান শুনেছি, শুধু মুগ্ধ হয়ে গেছি। শিখাকে আমি দেবের গানের ব্যাপারটাও বলেছি। বলেছি, জানো শিখা, আমি বরাবরই দেবের গানের খুব ফ্যান ছিলাম, এখনও তাই। ও যখন গাইতে শুরু করে, তখন আর কেউ কথা বলতে পারে না। সবাই মূগ্ধ হয়ে শুধু ওর গান শোনে। আর আজ তোমার গান শুনে আমার দেবকে বারে বারেই তোমার কথা বলতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু সুযোগ হয়ে উঠছে না। একদিন না একদিন হয়তো ঠিক আমি বলবো।’
আক্ষেপের সুরে শুভেন্দুকে বললাম, বললি আর কোথায়? রনি আজ ফাঁস না করে দিলে আমাদের তো এত কিছু আর জানাই হতো না। মেয়েটার স্বভাব ভালো, দেখতেও শুনছি ভালো। আবার ভালো গানও গায়। একেবারে সর্বগুনা সম্পন্ন রমণী। এর থেকে ভালো উপমা আর কি হতে পারে?’
শুক্লা বলল, ‘তা যা বলেছিস। তবে এত প্রশংসা করছিস। বিদিশা আবার খারাপ ভাবছে না তো?’
আমাকে সমর্থন করে বিদিশা বলল, ‘খারাপ কেন ভাববো? ও, যার সন্মন্ধে যা বলে, সেটা কখনও ভুল হয় না। শিখা সত্যি ভালো মেয়ে। আমারো তো তাই মনে হচ্ছে।’
আমি সঙ্গে সঙ্গে বিদিশার মুখের দিকে তাকালাম। এবার বিদিশা আক্ষেপের সুরে আমাকে বলল, ‘ইস। তখন যদি আমিও ভালো করে গানটা শিখে নিতাম তোমার কাছ থেকে। তাহলে আমিও সম্পূর্ণা হতে পারতাম।’
স্বান্তনা দিয়ে ওকে বললাম, ‘মন খারাপ করো না। এবার আমি তোমাকে গান শেখাবো। সাতদিনে তোমাকে গান শিখিয়ে দেবো। তুমি দেখে নিও।’
শুভেন্দুও আবদার শুরু করেছে বিদিশার কথা শুনে। আমাকে বলল, এই তুই তোর বউকে গান শেখাবি। তোরা জোড়ায় জোড়ায় গান গাইবি। আর আমাকে শেখাবি না? আমিও তাহলে শিখার সঙ্গে একসাথে গলা মেলাতে পারতাম।’
শুক্লা ফোড়ণ কেটে বলল, ‘হু, সখ কতো একবার দেখেছো ছেলের।’
শুভেন্দু ধমক দিয়ে বলে উঠল, ‘এই তুই চুপ কর। আমার এখন দেবের সাথে ডিল হচ্ছে। তোরা কেউ মাথা গলাতে আসবি না।’
আমি বললাম, ‘কেন শিখাই তো তোকে গান শেখাতে পারে। তুই তোর বউয়ের কাছ থেকে তালিম নে। আর আমি আমার বউকে গান শেখাই।’
শুভেন্দু মাথা চুলকে বলল, ‘কিন্তু শিখা শুধু রবীন্দ্রসঙ্গীতই জানে। আমি একটু অন্যরকম ভাবে শিখতে চাইছিস। তুই যেটা পারবি।’
একটু ভেবে নিয়ে বললাম, ‘আচ্ছা আগে শিখা আসুক। ওর গান আমিও শুনি। তারপর দেখছি তোর সঙ্গে ওকে ম্যাচিং করাতে পারি কিনা? তবে ডুয়েট গাইলে রবীন্দ্রসঙ্গীতই তোমাকে শিখতে হবে বাপু। আর জেনে রেখো, ক্ল্যাসিকালের মত রবীন্দ্রসঙ্গীতও একটা বেস। বাংলা গানে রবীন্দ্র সঙ্গীতের এখনো কোন বিকল্প নেই।’
আমি দেখছি, পুরীর সেই গল্পটা থেকে আমরা অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি দেখে, শুক্লা আবার সেটা শুভেন্দুকে স্মরণ করাচ্ছে। বারবার ওকে মনে করাচ্ছিল। ‘এই শুভেন্দু, তারপর পুরীতে তোদের কি হলো বল না? এক্ষুনি তো শিখাও এসে পড়বে। তখন কি আর শোনা হবে? বল না?’
শুভেন্দু বলতেই যাচ্ছিল, রনি সেই সময় বলে উঠল, ‘এই শুভেন্দু, শিখা তোকে যে প্রথম গানটা শুনিয়েছিল, আমাদের দু লাইন গেয়ে একবার শোনা। তুই তো আগের দিন এই হেঁড়ে গলা নিয়েও খুব ভালো গাইলি। শোনা না একবার?’
শুভেন্দু গলাটা খকখক করে একবার কেশে নিয়ে পরিষ্কার করে নিল। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, গাইবো?’
আমি বললাম, ‘হ্যা গা। অসুবিধে কি? আমরা সবাই শুনি।’
Posts: 338
Threads: 7
Likes Received: 615 in 186 posts
Likes Given: 6
Joined: Jun 2021
Reputation:
81
শুভেন্দু বলল, ‘পুরীতে ওটা ছিল আমাদের তৃতীয় দিন। গানের জন্য একটা পরিবেশ চাই। আমি তার আগেই জেনে নিয়েছি, ছোটবেলা থেকেই শিখা রবীন্দ্রসঙ্গীতের তালিম নিয়েছে। তাছাড়া ওর এত মিষ্টি গলা। আমার কেন জানি না ওকে দেখার পরই মনে হচ্ছিল, মেয়েটা বোধহয় গান জানে। সি বিচে বালির ওপর আমরা সেদিন বসে আছি পাশাপাশি দুজনে। শিখা বালিতে কি যেন এঁকে যাচ্ছে। আমাকে বলল, ছোটবেলায় বাবা মার সাথে একবার পুরীতে বেড়াতে এসেছিলাম। কত কষ্ট করে এই বালি দিয়েই একটা ঘর বানিয়েছিলাম। একটা বড় ঢেউ এসে বালিঘরটা নিশ্চিন্ন করে দিয়ে চলে গেল। আমার সেকী কান্না। বাবা মা দুজনেই আমার কান্না থামাতে পারে না। অনেক কষ্টে বুঝিয়ে সুজিয়ে সেদিন দুজনে বলেছিল, ‘মা আমার কাঁদে না। এটা তো বালিঘর। আসল ঘর নাকি? তুই কেন মিছি মিছি কাঁদছিস?’
শুভেন্দু বলল, শিখা মাথা নিচু করেই বালিতে আঁচড় কাটতে কাটতে তখনও বলে যাচ্ছিল। ‘সেদিন আমার কান্নাটা থেমে গিয়েছিল। কিন্তু আসল মানেটা উদ্ধার করতে পেরেছিলাম, তারও চার পাঁচ বছর পরে।’
শুভেন্দু বলল, আমি তখন শিখাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কেন তখন আবার কি হলো? কোন সমস্যার উদয়?’
ঠিক যেন ভাবুকের মতন হয়ে আমরা সবাই শুভেন্দুর কথা শুনছি। শুভেন্দু বলল, শিখা আমার কথার জবাব দিচ্ছে না। আসতে আসতে কি যেন বলার চেষ্টা করলো। কিন্তু একটা আছড়ে পড়া ঢেউয়ের শব্দে আমি ওর কথা শুনতে পেলাম না। শিখাকে বললাম, চার পাঁচ বছর পরে কি হয়েছিল?
শিখা অনেক কষ্ট করে ভারী গলায় বলল, বাবা মা’র সম্পর্ক ক্রমশই তখন অবনতির দিকে। দুজনের ছাড়াছাড়ি হবার উপক্রম। আমি চোখে অন্ধকার দেখছি। দুজনকেই আমি মনে প্রানে খুব ভালোবাসি। আমি কাউকে কাছছাড়া করতে চাই না। হাউ হাউ করে সেদিন খুব কেঁদেছিলাম। শুধুমাত্র আমার চোখের জলের দিকে তাকিয়েই বাবা মার ডিভোর্সটা সেদিন হয় নি। নইলে-
একটা হতাশার সুরে শুক্লা বলে উঠল, ওফ। এখানেও? সবারই জীবনে দেখছি, কোন না কোন এরকম ঘটনা।
আমি বললাম, মেয়ের জন্য বাবা মা শেষ পর্যন্ত আলাদা হন নি। এটা তো ভাল খবর। শিখাকে এরজন্য ক্রেডিট দিতে হয়।
শুভেন্দু বলল, অবশ্যই। আসলে মেয়েটার মধ্যে ভীষন একটা সফট জায়গা আছে জানিস তো। ও যেমন নিজের দূঃখটা দেখতে পারে না, সহ্য করতে পারে না। তেমনি কারুর কষ্টের কথা শুনলে ওরও খুব কষ্ট হয়। ওর মনটা খুব নরম। সি ইজ ভেরী সফট মাইন্ডেড।
আমি বললাম, ‘মনে রাখিস এটা। শিখাকে তোকে সারাজীবন সুখী রাখতে হবে।’
শুভেন্দু বলল, সেইজন্যই তো আমি এখন তোকে ফলো করি। তোর অ্যাটিটুডটা কপি করার চেষ্টা করি। আমি শিখার প্রতি ভালোবাসাটা প্রকাশ করতে সেদিন বিন্দুমাত্র দেরী করিনি। মনে হয়েছিল, এরপরেও যদি শিখাকে আমি বুঝতে কোন ভুল করি। অনেক দেরী হয়ে যাবে। ওর হাতের ওপর হাতটা রেখে সি বিচেই ওকে ভালো লাগার ব্যাপারটা প্রকাশ করে ফেললাম। হাতটা সরিয়ে নিতে পারেনি শিখা। আমার মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল। ওকে বলেছিলাম, শিখা আমি প্রেম করতে জীবনে কোনদিন শিখিনি। কিন্তু আমার এক প্রাণের বন্ধুকে দেখে শিখেছি, ভালোবাসার এই অক্সিজেনকে শতকষ্টের মধ্যেও কিভাবে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। বলতে পারো ‘দেব’ আমার জীবনে এক আদর্শ ব্যক্তিত্ব। হি ক্রিয়েটস অ্যান এক্সাম্পেল। আজ তারই আদর্শের বানীকে উদ্ধৃত করে তোমায় বলছি, এই শুভেন্দুর প্রেমকে তুমি স্বীকার করো। আমি তোমায় কথা দিচ্ছি। জীবনে কোনদিন, কখনও তোমাকে আমি দূঃখী হতে দেবো না।’
আমি অবাক হয়ে চেয়ে রয়েছি শুভেন্দুর দিকে। ওকে বললাম, ‘তুই করেছিস কি? এখানেও আমার উদাহরণ টেনেছিস?’
শুভেন্দু হাসতে হাসতে বলল, ‘তবে আর তাহলে বলছি কি? এতদিনে তুই আমায় শেষ পর্যন্ত এই চিনলি? সাধে কি ও তোর এখানে আসছে? তোকে দেখতে? ওর মনেও তো সেই কৌতূহল। যে মানুষটার সন্মন্ধে প্রেমিকের কাছ থেকে এত কথা শুনে এসেছে। এবার যাই। একবার চোখের দেখায় তাকে দেখে আসি। সত্যি মানুষটা কিরকম?’
আমি শুভেন্দুর কাছ থেকে দরাজ সার্টিফিকেট পেয়ে নিজে কিছুটা বিচলিত বোধ করছি। ভাবছি কি এমন কাজ করেছি, যার জন্য আমি আমার বন্ধুবান্ধবের কাছে একটা দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছি। আমি তো আমার করা ছোট্ট ভুলের একটা খেসারত দিয়ে এসেছি এতদিন। দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে গেছি। ভগবান সেই কারণেই আমার ওপর হয়তো সদয় হয়েছেন। আমি কি সত্যি কোন বড় মনের পরিচয় দিয়েছি? না, শুভেন্দু একটু বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলছে বোধহয়।
একবার তাকালাম বিদিশার দিকে, দেখলাম বিদিশাও চোখের ভাষাতে আমাকে সেই কথাই বোঝানোর চেষ্টা করছে। অর্থাৎ শুভেন্দু যা বলেছে, ঠিকই বলেছে। ওর কথার মধ্যে কোন ভুল নেই।
হেসে বললাম, ‘তা এরপর শিখা তোকে যে রবীন্দ্রসঙ্গীতটা শুনিয়েছিল, সেটা শোনালি না?’
শুভেন্দু আবার একটু খক খক করে কেসে নিয়ে বলল, গাইবো? কিন্তু শিখার মতন কি অত ভালো গাইতে পারবো? আচ্ছা চেষ্টা করছি। বলে গাইতে শুরু করলো-
ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো-- তোমার
মনের মন্দিরে।
আমার পরানে যে গান বাজিছে
তাহার তালটি শিখো-- তোমার
চরণমঞ্জীরে॥
এইটুকু গেয়ে গান থামিয়ে দিল শুভেন্দু। আমাকে বলল, না না এর বেশি আর গাইতে পারছি না। বাকীটা তুই গা।
শুক্লা বলল, ওফঃ কি গান শুনিয়েছে রে শিখা তোকে। শুভেন্দু সত্যি তোর প্রেমিকার জবাব নেই।
আমি ঠিক সেই সময় অবাক হয়ে চেয়ে রয়েছি বিদিশার দিকে। ব্যাপারটা শুভেন্দু, রনি, শুক্লা, মাধুরী কেউই বুঝতে পারে নি। আসলে অনেক দিন আগে এই গানটাও আমি বিদিশার উদ্দেশ্যে একবার গেয়েছিলাম। সেদিনের সেই স্মৃতি বিদিশা আর আমার, দুজনের মনেই এখন ভাসছে। আমার সেদিনের গান শুনে বিদিশাও আমার সাথে গাইতে শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু আজ আমি শুভেন্দুর কথায় আবার গাইছি, বিদিশা আর গাইতে পারছে না। ও শুধু মুগ্ধ নয়নে শুনছে আমার গান-
ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো-- তোমার
মনের মন্দিরে।
আমার পরানে যে গান বাজিছে
তাহার তালটি শিখো-- তোমার
চরণমঞ্জীরে॥
ধরিয়া রাখিয়ো সোহাগে আদরে
আমার মুখর পাখি-- তোমার
প্রাসাদপ্রাঙ্গণে॥
মনে ক'রে সখী, বাঁধিয়া রাখিয়ো
আমার হাতের রাখী-- তোমার
কনককঙ্কণে॥
আমার লতার একটি মুকুল
ভুলিয়া তুলিয়া রেখো-- তোমার
অলকবন্ধনে।
আমার স্মরণ শুভ-সিন্দুরে
একটি বিন্দু এঁকো-- তোমার
ললাটচন্দনে।
আমার মনের মোহের মাধুরী
মাখিয়া রাখিয়া দিয়ো-- তোমার
অঙ্গসৌরভে।
আমার আকুল জীবনমরণ
টুটিয়া লুটিয়া নিয়ো-- তোমার
অতুল গৌরবে॥
ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো-- তোমার
মনের মন্দিরে।
আসতে আসতে বিদিশার চোখ দিয়ে এবার গড়িয়ে পড়ছে জলের ধারা। গান শেষ করে ওকে সান্তনা দিয়ে বললাম, ‘এই দেখো আবার কাঁদতে শুরু করেছে? আরে বাবা কাঁদছো কেন? আমি তো শুভেন্দু বলল, তাই আবার গেয়ে শোনালাম।’
ঠিক সেই সময় মা আবার ঢুকে পড়েছে ঘরে। বিছানার ওপর বিদিশাকে কাঁদতে দেখে মা’ও হতভম্ব। আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল, ওমা বিদিশা কাঁদছে কেন? তুই কি বকেছিস নাকি ওকে?’
এরপরে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘আচ্ছা, তোমাদের পরিচিত কারুর কি এখানে আসার কথা আছে? বারান্দা দিয়ে দেখলাম, একটা মেয়ে গাড়ী চালিয়ে এসে নামলো। আমাকে জিঞ্জাসা করলো, ‘এটা কি দেবদার বাড়ী?, আমি বললাম হ্যাঁ। তারপর বললো, আচ্ছা আমি উপরে আসছি। মেয়েটা আমাদের ফ্ল্যাটেই আসছে মনে হয়।’
ক্রমশঃ-
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
উফফ !!
দারুন লাগছে , দারুন !!!
•
Posts: 338
Threads: 7
Likes Received: 615 in 186 posts
Likes Given: 6
Joined: Jun 2021
Reputation:
81
চেষ্টা করলাম একটা বড় আপডেট দিতে। কমেন্টস পেলে আবার নতুন আপডেট দেব।
•
Posts: 338
Threads: 7
Likes Received: 615 in 186 posts
Likes Given: 6
Joined: Jun 2021
Reputation:
81
(09-07-2021, 03:52 PM)ddey333 Wrote: উফফ !!
দারুন লাগছে , দারুন !!!
ধন্যবাদ। ধন্যবাদ।
•
Posts: 1,228
Threads: 0
Likes Received: 975 in 705 posts
Likes Given: 1,681
Joined: Jul 2020
Reputation:
66
khub bhalo likhchen .....aste aste nijerder modhye katha na bolleo friends ra thakle anek katha bola hoie jai.....very nice
•
Posts: 338
Threads: 7
Likes Received: 615 in 186 posts
Likes Given: 6
Joined: Jun 2021
Reputation:
81
(09-07-2021, 06:56 PM)raja05 Wrote: khub bhalo likhchen .....aste aste nijerder modhye katha na bolleo friends ra thakle anek katha bola hoie jai.....very nice
অনেক ধন্যবাদ।
•
Posts: 62
Threads: 0
Likes Received: 35 in 33 posts
Likes Given: 457
Joined: May 2021
Reputation:
1
আরও একটি দুর্দান্ত আপডেট, মাইন্ডব্লোইং !!!
•
Posts: 338
Threads: 7
Likes Received: 615 in 186 posts
Likes Given: 6
Joined: Jun 2021
Reputation:
81
(09-07-2021, 10:14 PM)Lajuklata Wrote: আরও একটি দুর্দান্ত আপডেট, মাইন্ডব্লোইং !!!
ধন্যবাদ। আপনাদের ভাল লাগলেই আমার লেখা সার্থক।
•
Posts: 13
Threads: 0
Likes Received: 1 in 1 posts
Likes Given: 0
Joined: Jul 2021
Reputation:
1
কাহিনীতে এখন পাঁচটি নারী চরিত্র। বিদিশা, শুক্লা, মিনু, মাধুরী এবং দিশা। যৌনতা বিহীন খুব সুন্দর একটি গল্প। খুব ভাল লাগছে পড়ে।
•
Posts: 338
Threads: 7
Likes Received: 615 in 186 posts
Likes Given: 6
Joined: Jun 2021
Reputation:
81
(10-07-2021, 12:03 PM)Jonaki Poka Wrote: কাহিনীতে এখন পাঁচটি নারী চরিত্র। বিদিশা, শুক্লা, মিনু, মাধুরী এবং দিশা। যৌনতা বিহীন খুব সুন্দর একটি গল্প। খুব ভাল লাগছে পড়ে।
ধন্যবাদ।
•
Posts: 18,205
Threads: 471
Likes Received: 65,429 in 27,679 posts
Likes Given: 23,741
Joined: Feb 2019
Reputation:
3,261
যতদূর মনে পরে এই গল্পের কিছুটা অংশ আমিও লিখেছিলাম ! তাই কি? ঠিক মনেও পরে না ! বুড়ো হয়ে গেছি তো ! ......
•
Posts: 338
Threads: 7
Likes Received: 615 in 186 posts
Likes Given: 6
Joined: Jun 2021
Reputation:
81
10-07-2021, 10:44 PM
(This post was last modified: 10-07-2021, 10:45 PM by Lekhak is back. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(10-07-2021, 08:58 PM)dada_of_india Wrote: যতদূর মনে পরে এই গল্পের কিছুটা অংশ আমিও লিখেছিলাম ! তাই কি? ঠিক মনেও পরে না ! বুড়ো হয়ে গেছি তো ! ......
না ওটা একটা অন্য গল্প ছিল। কিছুটা পার্ট লিখেছিল, কামদেব আর বাকিটা তুমি। শুরু করেছিল দীপালি, আমি শুধু শুরু করেছিলাম।
Posts: 6,108
Threads: 41
Likes Received: 12,072 in 4,138 posts
Likes Given: 5,306
Joined: Jul 2019
Reputation:
3,734
কয়েকটা পর্ব একসাথে পড়লাম... সত্যি কি সুন্দর ভাবে লিখছেন... মাঝে মাঝে রবীন্দ্রসংগীত আর পুরানো গানগুলো.. উফফফ ❤ সত্যিই কিসব গান হতো তখন. আর সেই গান যদি হয় কিশোর কুমারের কণ্ঠে তো কিছু বলারই নেই - আজ থেকে আর ভালোবাসার নাম নেবোনা আমি, আজ মিলন তিথির পূর্ণিমা চাঁদ, ওরে মন পাগল তুই, আমারও তো সাধ ছিল, কোথা আছো গুরুদেব, ভালোবাসা ছাড়া আর আছে কি, ঢলে যেতে যেতে, কারো কেউ নইকো আমি, সে যেন আমার পাশে আজও বসে আছে.... কত বলবো? ❤
•
Posts: 338
Threads: 7
Likes Received: 615 in 186 posts
Likes Given: 6
Joined: Jun 2021
Reputation:
81
(11-07-2021, 12:16 AM)Baban Wrote: কয়েকটা পর্ব একসাথে পড়লাম... সত্যি কি সুন্দর ভাবে লিখছেন... মাঝে মাঝে রবীন্দ্রসংগীত আর পুরানো গানগুলো.. উফফফ ❤ সত্যিই কিসব গান হতো তখন. আর সেই গান যদি হয় কিশোর কুমারের কণ্ঠে তো কিছু বলারই নেই - আজ থেকে আর ভালোবাসার নাম নেবোনা আমি, আজ মিলন তিথির পূর্ণিমা চাঁদ, ওরে মন পাগল তুই, আমারও তো সাধ ছিল, কোথা আছো গুরুদেব, ভালোবাসা ছাড়া আর আছে কি, ঢলে যেতে যেতে, কারো কেউ নইকো আমি, সে যেন আমার পাশে আজও বসে আছে.... কত বলবো? ❤
এই উপন্যাসে প্রতিটা গান পরিস্থিতি অনুযায়ী সংযুক্ত করা হয়েছে। আপনিও দারুন লিখলেন।
•
Posts: 338
Threads: 7
Likes Received: 615 in 186 posts
Likes Given: 6
Joined: Jun 2021
Reputation:
81
সতেরো
মা’র কাছ থেকে শিখার আগমনের খবর পেয়ে শুভেন্দু এমন করতে লাগল, যেন এখুনি শিখাকে গিয়ে ওই নিয়ে আসে একতলা থেকে।
-কই দেখি দেখি, বলে ও বারান্দার দিকে ছুট লাগালো। আমি বিছানায় বসে বিদিশাকে বলছি, ‘যাও বিদিশা, শিখাকে তুমিই ভেতরে নিয়ে এসো। মা’ও ততক্ষণে বুঝতে পেরে গেছে ব্যাপারটা কি ঘটতে চলেছে। আমাকে ইশারা করে মা বলল, ‘এটা কি শুভেন্দুর প্রেমিকা?
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, ওর নাম শিখা। আমাকে দেখতে ও এখানে এসেছে।’
বলতে বলতেই কলিংবেলের আওয়াজ হল। শুভেন্দু আর বিদিশা দুজনেই এগিয়ে গেল। মা বলল, ‘আজ শুভেন্দুর জন্য আমারও বড় ভালো লাগছে। দেখি মেয়েটাকে। কেমন দেখতে? বলে নিজেও দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো মা।
শিখা ঢুকেছে ঘরে। শুভেন্দু মা’র সাথে শিখার আলাপ করিয়ে দিচ্ছে। ঢপ করে শিখা একটা প্রনাম করল বিদিশারই মতন। পাশে দাঁড়িয়ে বিদিশা। শুভেন্দু শিখাকে বলল, ‘এটা কে জানোতো? এ হল বিদিশা। আমার কাছে তুমি যা, দেবের কাছে বিদিশাও তাই। অনেক দিনের প্রেম। আজ বিদিশাও এসেছে এখানে। একটু আগেই তোমার কথা হচ্ছিল। সবাই তোমাকে দেখার জন্য উদগ্রীব। চলো চলো ভেতরে চলো। ঘরে রনি আর মাধুরী রয়েছে। দেব তো আছেই, এছাড়া শুক্লাও রয়েছে।
দূর থেকে দেখলাম, শিখার মুখে যেন অমায়িক একটা হাসি সর্বদা লেগেই রয়েছে। ঘরে ঢুকে ও প্রথম আমার দিকেই তাকালো। শুভেন্দু বলল, ‘এই হল ‘দেব’। এ ম্যান উইথ এ গোল্ডেন ভয়েজ, সফ্ট মাইন্ডেড, অ্যান্ড এ রিয়েল লাভার। পৃথিবীতে একমাত্র সৎপ্রেমিক। ভালোবাসার মধ্যে একটুকু কোন খাদ নেই। কোথাও, কেউ কষ্ট করে খুঁজলেও কোনদিন পাবে না।’
আমার সামনে দাঁড়িয়েই রয়েছে, সুন্দর মিষ্টি অনেকটা বিদিশার মতনই দেখতে মেয়েটি। মুখে সেই অমায়িক হাসিটা রেখেই বলল, ‘কেমন আছেন? খুব তো শরীর খারাপ হয়েছিল শুনলাম। এখন ভালো তো?’
আমি অবাক হয়ে দেখছি শিখাকে। মা ধমক দিয়ে বলল, কি রে দেব? ওকে বসতে বল। ও তো ঠায় দাঁড়িয়েই আছে দেখছি।’
একটা চেয়ার ঠেলে এগিয়ে দিল রনি। দেখলাম শিখা মুচকি মুচকি হাসছে রনির দিকে তাকিয়ে। তারমানে ওকে ভাল করেই চেনে। আমি বললাম, দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন। ওই চেয়ারটায় বসুন।’
শিখা বলল, না না, অত ব্যস্ত হতে হবে না। সবাই এখানে দাঁড়িয়ে আছে, আমি একা কেন বসবো? এই তো আমি ঠিক আছি।’
এগিয়ে এল বিদিশা। শিখাকে জোর করলো। ওকে হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বলল, ‘না, না, আপনি বসুন। আমরা সবাই বসছি। কেউ এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে না। মা’কে বলল, মা’ ভেতরের ঘরে আরও চেয়ার আছে না? মা বলল, হ্যাঁ। বিদিশা নিজেই উদ্যোগ নিল। বলল, আচ্ছা আমিই নিয়ে আসছি।’
আমার মুখের দিকে শিখা একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। যেন কিছু বলবে বলবে ভাবছে। উল্টোদিকে একটা চেয়ারে বসে শুক্লা হাঁ করে দেখছে শিখাকে। যেন সেই ঘোরটা তখনও কাটেনি ওর। শিখাকে ছাপা একটা শাড়ীতে খুব সুন্দর লাগছে। গায়ের রংটা উজ্জ্বল। মুখটা পানপাতার মতন। গলায় ঝুলছে একটা সরু সোনার চেন। সাজ গোছ তেমন নেই, অথচ বিনা সাজেই কত সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে। ভালো করে দেখলেই বোঝা যায়, যেন একটা আভিজাত্য ছড়িয়ে রয়েছে ওর সারা দেহে। সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে, শুভেন্দু একটু আগে যা বলেছে শিখার সন্মন্ধে একেবারে হুবহু তাই মিলে যাচ্ছে।
চেয়ারে বসে শিখা বলল, ‘আমি কিন্তু আপনার খুব ফ্যান। যার কাছে আপনার সন্মন্ধে শুনেছি, জানি সে মিথ্যে কথা আমাকে কখনও বলবে না।’
দেখলাম, ওর মুখে তখনও সেই অমায়িক হাসি। আমি বললাম, আমার তো কোন গুন নেই। আপনি কি করে আমার ফ্যান হলেন? শুভেন্দু নিশ্চই বাড়িয়ে বলেছে।’
শুভেন্দু দেখলাম পাশে দাঁড়িয়ে শিখাকে কিছু বলার চেষ্টা করছে, আর ঠিক তখুনি রনি একটা গান ধরলো, ‘আমার নাম এন্টনী, কাজের কিছুই শিখিনি, ডারলিং কিংবা পেইন্টিং অর সিংগিং। আমি আজকের দুনিয়াতে গুড ফর নাথিং।
শুক্লা সঙ্গে সঙ্গে একটা ধমক লাগালো রনিকে। ‘এই তুই চুপ কর। দেব হল এক্সেপসনাল। কি উল্টোপাল্টা গাইছিস ওর সন্মন্ধে?’
ধমক খেয়ে রনি চুপ করে গেল। আমি শিখাকে বললাম, ‘এর সাথে আপনার আলাপ করিয়ে দিই। এ হল শুক্লা। আমরা সবাই কলেজে একসাথে পড়েছি। সবাই কলেজের বন্ধু।’
মাধুরী ওর বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আদর করছে। শিখাকে মাধুরীর দিকেও একবার মুখ ঘোরাতে বললাম, ‘আর ওটা কে জানেন তো? ও হল মাধুরী। আমাদের সবার প্রিয় ছোট্ট বোন। ভারী মিষ্টি আর সুন্দর।’
মাধুরী ওর বাচ্চাটাকে আদর করতে করতেই শিখাকে বলল, ‘আর এটা হল আমার ছেলে। আমিও দেবদার খুব ভক্ত। তাই দেবদার নামে এর নাম রেখেছি, দেবমাল্য।
বাচ্চাটা শিখার দিকে তাকিয়ে প্রাণখুলে হাসছে। শিখাও হাতটা বাড়িয়ে দিল। অদ্ভূত কান্ড মাধুরীর কোল ছেড়ে বাচ্চাটা শিখার কোলে চলে গেল।
ওর গালে বারকতক চুমু খেলে শিখা। বাচ্চাটাও শিখাকে পেয়ে যেন একেবারে গদগদ। শুক্লা বলল, ‘দেখ, অত ছোট হলে কি হবে? ওরা কিন্তু সব বুঝতে পারে।’
আমি বললাম, ‘কি?’
শুক্লা বলল, ‘ওর কাছে শিখা চেনা লোক। আবার কি? ও ঠিকই বুঝতে পারছে।
আমি শুভেন্দুকে বললাম, ‘তুই তো ওর মামা হোস, তাই না রে শুভেন্দু?’
শুভেন্দু বলল, হ্যাঁ।
আমি হাসতে হাসতে বললাম, ‘আর এটা যে ওর নতুন মামী, ও ভালমতনই বুঝতে পারছে। নতুন মামীর আদর খাচ্ছে, শিখার কোলে বসে বসে।
ঘরের মধ্যে একটা হাসির রোল উঠল। আমার কথা শুনে সবাই হো হো করে হাসতে লাগল। শিখাও তাই। হেসে বলল, আমি, এঘরে যারা বসে আছে, সবার কথাই আগে শুনেছি। তবে একটু বেশি শুনেছি, আপনার কথা। আপনার আর বিদিশার কথা। আপনার বন্ধু শুভেন্দুই আমাকে সব বলেছে।
বলতে বলতে বিদিশাও তখন চেয়ার নিয়ে ঢুকেছে ঘরে। শুভেন্দু আড়চোখে তাকাচ্ছে শিখার দিকে। চেয়ারটা ঠেলে শুভেন্দুকেও বসতে বলে বিদিশা বলল, ‘আজ কিন্তু নতুন আমরা এমন একজনকে পেয়েছি, যার গানের গলা শুনেছি, খুব সুন্দর। আজ আমরা সবাই কিন্তু তার গান শুনবো। কি তোমরা সবাই রাজী আছো তো?
সবাই একবাক্যে বলে উঠল, হ্যাঁ। অতি অবশ্যই, অতি অবশ্যই।
শিখা একটু লজ্জ্বা পেয়ে বলল, ও মা। আমি গাইতে পারি, এটা আবার কে বলল? এ নিশ্চই ওর কারসাজি। বলেই একটু কটমট করে তাকালো শুভেন্দুর দিকে। শুভেন্দুর মুখ তখন কাচুমচু। আর আমি হাসতে লাগলাম, ঠিক সেই সময় শুভেন্দুর ওই রকমটা দেখে।
Posts: 338
Threads: 7
Likes Received: 615 in 186 posts
Likes Given: 6
Joined: Jun 2021
Reputation:
81
শুক্লা বলল, ‘গাও না শিখা। আমরা তো দেবের গানই শুনে এসেছি এতকাল ধরে। তোমার যখন গানের গলা ভাল, তখন তোমাকেও আজ ছাড়ছি না। শুভেন্দু বলেছ, তুমি না কি রবীন্দ্রসঙ্গীত দারুন গাও।’
শিখা একটু লজ্জ্বা পেল। বলল, ‘এই মরেচে। সবাই মিলে আমাকে চেপে ধরেছে। আমি এখন কি করি?’
বিদিশা বলল, ‘আমরা সবাই এখানে গানের খুব ভক্ত। সেই কলেজের সময় থেকেই গান শোনাকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছি। সেই সময় রোজই আমাদের গানের আসর বসতো। কলেজে তো কালচারাল ফাংশনও হত। আর এই যে দেখছো লোকটাকে, আমার পাশে বসে আছে। বলে আমার দিকে ইঙ্গিত করল বিদিশা। বলল, এ হল মধ্যমনি। ভীড়ের মধ্যে একজনই গায়ক। আর আমরা হল তার শ্রোতা। এর মত গলা, আর দ্বিতীয় কারুর নেই।’
শিখা যেন এবারে আরও ভয় পেয়ে গেল। বলল, ‘ও বাবা। তাহলে আমি কিছুতেই গাইবো না। দেবদার ধারে কাছেও কোনদিন পৌঁছোতে পারবো না।’
আমি আশ্বস্ত করলাম শিখাকে। বললাম, ‘ বিদিশা আমাকে একটু বেশিই ভালবাসে তো? তাই আমার সন্মন্ধে একটু বেশিই বলছে। আমি এমন কিছু গাই না। তুমি পরে আমার গান শুনলেই বুঝতে পারবে। আর তাছাড়া আমার আগের মতন গলা একেবারেই নেই। রেওয়াজ করি না। গলা একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে।’
শুভেন্দু সঙ্গে সঙ্গে ফোড়ণ কাটলো। বলল, ‘কি যাতা বলছিস। একটু আগেই তো গাইলি। তোর সাথে কারুর তুলনা হয়?’
আমি এবার ধমক লাগালাম শুভেন্দুকে। বললাম, ‘যাও বা মেয়েটাকে রাজী করালাম। দিলি তো সব ব্যাঘাত করে। আমি এখানে শিখার গান শুনবো বলে বসে আছি। আর তোরা কিনা আমার গান নিয়েই পড়ে আছিস।’
শুক্লা বলল, ‘গাও না শিখা। আমরা দেবের গানও শুনবো। তোমারটা বরং আগে শুনি।’
শিখা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এখনও একটু লজ্জ্বা লজ্জ্বা পাচ্ছে। মুখ নিচু করে বলল, ‘গাইতে পারি এক শর্তে। আপনাকেও কিন্তু একটা গান শোনাতে হবে। বড় আশা করে এসেছি।’
শুভেন্দু শিখার কথা শুনে বাহ্বা নিচ্ছে। ওকে বলল, ‘ ও ব্যাপারে চিন্তা কোরো না। দেবকে আমি একবার বললেই ও গাইতে শুরু করবে। আর তুমিও যখন রিকোয়েস্ট করেছো। ও তোমার কথা ফেলতে পারবে না। অলওয়েজ রেডী তো সিঙ। দ্য মিরাকেল ভয়েজ। আজকের যুগের সেরা গায়ক। তবে অ্যামেচার। একেবারেই প্রফেশনাল নয়।’
শুক্লা ধমক দিয়ে শুভেন্দুকে বলল, ‘এই তুই চুপ কর। আমাদের এবার শিখার গান শুনতে দে।’
মাধুরী শিখার কোল থেকে বাচ্চাটাকে আবার নিজের কোলে নিয়ে নিয়েছে। বাচ্চাটা হঠাৎই চিৎকার করতে শুরু করে দিল। মাধুরী ওর ঠোঁটে হাত দিয়ে বলল, ‘এই চুপচুপ। একদম চেঁচাবি না এখন। দেখছিস না? তোর নতুন মামী এখন আমাদের গান শোনাবে। খুব মিষ্টি মামীটা। শোন শোন। দেখ কি মিষ্টি গায় এই মামীটা।’
অদ্ভূত ভাবে চেঁচানি থামিয়ে মাধুরীর বাচ্চটাও শিখার দিকে তাকিয়ে রইল। যেন গান শোনার জন্য বাচ্চাটাও এবারে উদগ্রীব হয়ে পড়েছে। শুভেন্দু সব দেখেশুনে বলল, ‘বাহ্ আমার বোনপোটা তো বেশ। প্রথমদিনই ফ্যান হয়ে গেছে শিখার। দারুন দারুন। দেখে বড় ভালো লাগছে।
রনি এবারে একটু বাহবা নিয়ে বলল, ‘কার ছেলে দেখতে হবে না? ও হল আমার ছেলে। মাই সন। লাইক ফাদার লাইক সন। ভাবছি ওকেও বড় হয়ে আমি গায়কই বানাবো। আজ থেকে আমারও একটা গোল সেট হয়ে গেল।’
শিখা গান গাইবার জন্য এবারে তৈরী। শুরু করতে গিয়েও শেষবারের মতন আবার একটু লজ্জ্বা পেল। মুখ নিচু করে বলল, ‘ভীষন ভয় ভয় করছে। আপনি সামনে বসে আছেন। কি গাইতে কি গাইবো। যদি ভুলভাল কিছু হয়?’
আমি ওকে আস্বস্ত করলাম। ‘বললাম ভয় কি? শুরু করে দিন। আমি কথা দিচ্ছি। ভুল ধরবো না। মনের আনন্দে গান। আজ ভালো একটা দুটো রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনান। আমিও রবীন্দ্রসঙ্গীতের খুবই ভক্ত।’
গানটা যখন শুরু করলো শিখা। মনে হল সরস্বতী যেন সত্যি সত্যিই বিরাজ করছে ওর গলায়। কি অপরূপ গলা। গলায় শুধু যে মিষ্টতাই বিরাজ করছে, তাই শুধু নয়। একজন মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতার মতন মনটা কোথায় আচ্ছন্ন হয়ে যাবে। শিখাই নিয়ে যাবে শ্রোতাকে এক অন্য ভাবনার জগতে। মনে হবে এই পৃথিবীতে দূঃখ বলে সত্যি কিছু নেই। শুধু আনন্দ আর সুখ। এমন গলা শুনলে মূমূর্ষ রুগীও বাঁচার তাগিদ অনুভব করবে। শরীর জুড়ে অদ্ভূত এক প্রাণের পরশ লেগে যাবে। প্রেমিককে স্মরণ করবে প্রেমিকা। প্রেমিক স্মরণ করবে প্রেমিকাকে। মনে হবে পৃথিবীতে ভুল বোঝাবুঝি বলে কিছু আর নেই। যত দূঃখের, আজই হল তার অবসান। শুধু আমিই কেন? যে কেউ ওর গান একবার শুনবে। রীতিমতন শিখার ফ্যান হয়ে যাবে। আমি গ্যারান্টী দিয়ে বলতে পারি।
শুধু আমি কেন? শিখাটা গানটা শুরু করবার পর, সবাই যেন কেমন একটা আবেশের মধ্যে চলে গেল। মাধুরী হাঁ হয়ে গেছে শিখার গলা শুনে। শুভেন্দু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে থুতনীতে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে ঘাড় নাড়ছে। রনিরও চোখ বোজা। যেন অভিভূত হয়ে সেই আমেজটাকে গ্রহণ করছে। অদ্ভূত ব্যাপার। শুক্লা যেন শিখার গান শুনে রীতিমতন আশ্চর্য। ভাবতেই পারেনি এত দরদী গলা হতে পারে মেয়েটার।
আর আমি তো এতটাই তন্ময় হয়ে গেছি কিভাবে শিখাকে গান শেষ হলে সাধুবাদ জানাবো। ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। শুধু দেখছি বিদিশাই কেমন আনমোনা। অনুশোচনার ভারে আক্রান্ত। ভাবতেই পারছে না। শুধু একটা ছোট্ট ভুলে জীবনের বেশ কয়েকটা বছর ভালোবাসা ছাড়াই একাকী করে দিল দুজনকে। আমাকে ছেড়ে চলে গিয়ে নতুন আর একজনকে বিয়ে করে সত্যি জীবনে কোন সুখ পেলো কি বিদিশা? সেই তো আমার কাছেই ওকে আবার ফিরে আসতে হল।
শিখা প্রথম যে গানটা ধরলো, সেটা হল,
তুমি রবে নীরবে। হৃদয়ে মম। তুমি রবে নীরবে।
নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমানিশীথিনী-সম॥
তুমি রবে নীরবে।
মম জীবন যৌবন মম অখিল ভুবন
তুমি ভরিবে গৌরবে নিশীথিনী-সম॥
তুমি রবে নীরবে। হৃদয়ে মম। তুমি রবে নীরবে।
জাগিবে একাকী তব করুণ আঁখি,
তব অঞ্চলছায়া মোরে রহিবে ঢাকি।
মম দুঃখবেদন মম সফল স্বপন
তুমি ভরিবে সৌরভে নিশীথিনী-সম॥
তুমি রবে নীরবে। হৃদয়ে মম। তুমি রবে নীরবে।
শুক্লা বলে উঠল এক্সিলেন্ট। অসাধারণ। এটা নিশ্চই, শুভেন্দুর জন্য। এবার বিদিশার জন্যও একটা গান ধরো শিখা। দেখো ও কেমন তোমার গান শুনে অভিভূত হয়ে গেছে।
বিদিশা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে শিখার দিকে। সবাই ওকে জোর করছে। ‘হ্যাঁ। আর একটা আর একটা। প্লীজ শিখা গাও গাও। কি দূর্দান্ত গলা তোমার।’
শিখা প্রথমে একটু ইতস্তত করে বিদিশার জন্যই দ্বিতীয় গানটা ধরলো। আমি অবাক হয়ে চেয়ে রয়েছি শিখার দিকে। মাঝে মধ্যে বিদিশার দিকেও তাকাচ্ছি। বুঝতে পারছি শিখা এ বাড়ীতে আসার পর কেমন যেন অন্য রকম এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়ে গেছে। শুভেন্দু সব দেখেশুনে একটা হীরের টুকরো মেয়েকে জীবনসাথী হিসেবে বাছাই করেছে। ওর জীবন সত্যি ধন্য হয়ে গেছে।
দ্বিতীয় গান ধরলো শিখা। আমি মন্ত্রমুগ্ধ। পুরো গানটাই শিখা, বিদিশার মুখের দিকে তাকিয়ে গাইল। আমি অবাক। সত্যি এমন দরদী গলা জীবনে প্রথমবার এতো কাছ থেকে শুনছি।
তুমি কোন কাননের ফুল, কোন গগণের তারা।
তোমায় কোথায় দেখেছি, যেন কোন স্বপনের পারা!!
কবে তুমি গেয়েছিলে,
আঁখির পানে চেয়েছিল, ভুলে গিয়েছি,
শুধু মনের মধ্যে জেগে আছে ঐ নয়নের তারা!!
তুমি কথা কয়োনা, তুমি চেয়ে চলে যাও,
এই চাঁদের আলোতে তুমি হেসে গলে যাও।
আমি ঘুমের ঘোরে চাঁদের পানে,
চেয়ে থাকি মধুর প্রাণে
তোমার আঁখির মতন দুটি তারা, ঢালুক কিরণধারা!!
তুমি কোন কাননের ফুল, কোন গগণের তারা।
তোমায় কোথায় দেখেছি, যেন কোন স্বপনের পারা!!
ওহ্। অসাধারণ। শুক্লা বলে উঠল। দেব তুই কিছু বলবি না শিখার গান শুনে। আমার তো সত্যি বলার মতন কোন ভাষা নেই।
বিদিশার মুখটা তখন নিচু। কি যেন চিন্তা করছে। ওর মাথায় এখন নানা চিন্তা। পুরোনো দিনগুলোকে আবার আঁকড়ে ধরবার চেষ্টা করছে। কিন্তু কোথায় যেন এখনও সেই পুরোনো ব্যাথা। ভেতর থেকে মাঝে মধ্যেই গুমড়ে গুমড়ে উঠছে। কষ্টটা চলে গিয়েও পুরোপুরি যেন যাচ্ছে না।
ওর হাতের ওপর হাতটা রেখে শিখা বলল, ‘আমি সবই শুনেছি ওর মুখে। কষ্ট পেও না। জেনে রেখো কষ্টটা সীমিত। আনন্দটা চিরদিনের।’
বিদিশা কোন কথা বলতে পারছে না। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে শিখা আবারো বলল, ‘ভগবান যাকে দূঃখ দেন, তাকে আনন্দও ভগবান দিতে জানেন। আমি তো সবসময়ই ভগবানকে বলি, তোমার আছে যত দূঃখ। তুমি এই ছোট্ট মেয়েটাকে দিয়ে দাও। আর যাতে যত সুখ। তুমি আমার এই ছোট্ট দিদিটাকেই শুধু দিয়ে দাও। আবার তোমার মুখে সেই পুরোনো হাসিটা আমরা দেখতে চাই। কাননের একটা সুন্দর ফুল তুমি। তারার মত তোমার চোখ। হাসি না দেখলে তোমাকে যে সত্যি মানায় না।
Posts: 338
Threads: 7
Likes Received: 615 in 186 posts
Likes Given: 6
Joined: Jun 2021
Reputation:
81
আঠারো
ওরা এরপরে একে একে সবাই বাড়ী চলে গেল। সেই বিকেল অবধি সবাই ছিল। প্রথমে গেল শুক্লা। আমাকে বলল, ‘তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে নে দেব। এরপরে কিন্তু পিকনিকটা আমাদের হচ্ছেই। সবাই মিলে যাব। খুব আনন্দ হবে, মজা হবে। আর তাছাড়া আমাদের নতুন বন্ধু শিখাকে এবারে পেয়েছি। পিকনিকে তো একাই মাতিয়ে রাখবে। যা গানের গলা শুনলাম। আমার অনেকদিন মনে থাকবে।’
রনি আর মাধুরীও তারপরে উঠি উঠি করছে। পিকনিকের আয়োজন করবার সব দায়িত্ব এখন ওর। শুভেন্দু আর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘তাহলে আমাদের দীঘাতে যাওয়াই ঠিক হল। অবশ্য মন্দারমনিটা হলেও মন্দ হত না। তবে দীঘা দীঘাই। অমন সুন্দর ঝাউবন কোথায় পাওয়া যায়? একটু মজা করে বলল, আচ্ছা আমরা সবাই যদি যে যার জুড়ীকে নিয়ে ঝাউবনের আড়ালে চলে যাই, শুক্লা তাহলে একা একা কি করবে?’
শিখা আর বিদিশা কথাটা শুনে দুজনেই খুব লজ্জ্বা পেয়েছে। মাধুরী ধমক দিয়ে রনিকে বলল, নাহ্। তোমার না সব কিছুতেই ফাজলামী। শুক্লা শুনলে কি ভাববে?
শুক্লা অবশ্য তখন চলে গেছে। আমি মজা করে বললাম, ‘তুই বরং মাধুরীকে নিয়ে ঝাউবনের আড়ালে যাস। আমরা কিছু মনে করবো না। আমাদের না গেলেও চলবে।’
এবার মাধুরী একটু লজ্জ্বা পেলো। শুভেন্দু বলল, ‘ওসব পরে হবে। আগে তো আমাদের যাওয়াটা হোক। সব থেকে আগে দেবের সুস্থ হওয়াটা দরকার। ওখানে গিয়ে আবার শরীর খারাপ হয়ে গেলে সবই মাটি।’
আমি বললাম, ‘তোরা চিন্তা করছিস কেন? আমি তো সুস্থ হয়েই গেছি। তোরা এসেছিস, এতেই আমি ভাল হয়ে গেছি। আর তাছাড়া বিদিশা তো এসেই গেছে। আমার আবার চিন্তা কি?’ -বলেই আমি বিদিশার দিকে তাকালাম। এবার দেখলাম বিদিশা লজ্জ্বায় মাথা নিচু করে রয়েছে।
রনি চলে গেল মাধুরীকে নিয়ে। শুভেন্দুও যাব যাব করছে। আমি বললাম, তুই ও চলে যাবি?
শুভেন্দু হেসে বলল, আজ্ঞা হোক। এবার আমি আমার প্রেয়সীকে তাহলে পৌঁছে দিয়ে আসি।-বলেই ও শিখার দিকে তাকালো।
শিখা হেসে বলল, ‘আমি তো গাড়ী নিয়েই এসেছি। বলোতো তোমাকে ড্রপ করে দিতে পারি। আমাকে আর পৌঁছে দিতে হবে না উহু।
শুভেন্দু বলল, ‘ভাগ্যিস আমি গাড়ী নিয়ে আসিনি। নইলে এমন সুযোগ মাঠে মারা যেত। কেউ কি আর হাতছাড়া করে?’
আমার জীবনটা যেন আবার সেই কলেজের জীবনে ফিরে গেছে। সেই হাসি আর গান। আনন্দ আড্ডা। বন্ধুদের না দেখতে পারলেই মন খারাপ করে।’
শিখা আমার পা ছুঁয়ে প্রনাম করলো। বলল, আর্শীর্ব্বাদ করুন। যেন জীবনের সব বাঁধাকে অতিক্রম করতে পারি। আর আমি মনে প্রানে আবার আপনাদের দুজনকে একসাথে দেখতে চাই। দেব আর বিদিশা যেন একটিই নাম। একে অপরকে ভালবাসার জন্যই তৈরী হয়েছে।’
খুব ইমোশনাল হয়ে পড়ছি আমি। শুভেন্দু বলল, আরে পাগল? মন খারাপ করছিস কেন? আমরা চলে গেলেও বিদিশা তো থাকছেই। ও তো আজ তোর এখানেই থাকবে। কি রে বিদিশা? থাকবি না?’
বিদিশা মুখ নিচু করে তখন ঘাড় নাড়ছে। আমার মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে দেখে শিখা বলল, ‘এবারে একটু হাসুন। নইলে আমরা যাই কি করে? এখন দিদি এসে গেছে। অত মন খারাপ করলে কিন্তু চলবে না।’
আমি কোন কথা বলছি না। শুধু ভাবছি, সত্যি মেয়েটা আজ এসে আমাদের সকলের মন জয় করে নিয়েছে। এত সহজ, সরল। কত সুন্দর আপন করে নিতে পারে সবাইকে। জীবনে যতটুকু দূঃখ আমি ওই সর্বনাশা মিনুর জন্য পেয়েছি, সবই আমার কপালের দোষে। শুভেন্দুকে অন্তত এই কষ্টটা কোনদিন পেতে হবে না আমি শতকরা একশোভাগ নিশ্চিত। শিখা যখন উঠে গিয়ে বিদিশার সাথে আলাদা করে কথা বলছে, তখন আমি শুভেন্দুকে আবার কনগ্রাচুলেশন জানালাম। অসাধারণ সিলেকশনের জন্য ওকে বাহবা দিলাম। শুভেন্দুও খুশি হল।
ওরা সবাই চলে গেল। আমি আর বিদিশা ঘরে তখন দুজনে। দুজনের ফিরে পাওয়ার ভালবাসাকে ঘিরে আনন্দে বিহ্বল। হাত বাড়িয়ে বিদিশাকে বুকের মধ্যে খুব জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছিল। আমি জানি, মা এখন এঘরে আসবে না। খাওয়া দাওয়ার পর বিশ্রাম নিচ্ছে মায়ের ঘরে। হাত বাড়িয়ে বিদিশাকে বুকে টানতেই বিদিশা বলল, ‘কে বলবে, বাবুর অসুখ হয়েছে? কত মন খারাপ। আর এখন আবার ঠিক সেই আগের মতন।’
আমি বললাম, আমার সব রোগ তো পেটে। বুকে তো কোন রোগ নেই। এখানে মাথাটা রেখে দ্যাখো। একটা ধকধক আওয়াজ শুনতে পাবে।’
বিদিশা মাথাটা রাখলো আমার বুকে। কান পেতে কিছু শোনবার চেষ্টা করলো। তারপর আমাকে বলল, ‘ইয়ার্কী হচ্ছে না? আওয়াজ হচ্ছে বললেই হলো?’
আমি বললাম, ভাল করে কান পেতে শুনতে হবে। এ আওয়াজ চট করে সবার কানে পৌঁছোবে না। শুধুমাত্র দেব যাকে জান প্রান দিয়ে ভালবেসেছিল। এখনও ভালবাসে। সেই শুধু শুনতে পাবে।’
বিদিশা আবার কান পেতে শোনবার চেষ্টা করলো। আমি বললাম, ‘শুনতে পাচ্ছো? ধুকপুক। ধক ধক।’
বিদিশা দেখছে আওয়াজ তো কিছুই কানে ঢুকছে না। উপরন্তু আমি ওকে আষ্ঠপৃষ্ঠে জড়িয়ে বুকের মধ্যে অদ্ভূত এক সুখানুভূতি অনুভব করছি। কতদিন ধরে বুকটা শুধু খালি খালি লাগছিল। এতদিন পরে আনন্দটা যেন কানায় কানায় পূর্ন হল। ওকে জড়িয়েই রয়েছি। ছাড়ার নামগন্ধ নেই, ক্রমশ হাতের চাপ বাড়াচ্ছি। বিদিশা টের পেল। বুঝতেই পারলো আমার উদ্দেশ্যটা আসলে কি? হেসে বলল, ওহ্ বাবুর মতলবটা কি এবারে বুঝতে পেরেছি। তলে তলে কেমন বদমায়েশী বুদ্ধি। এই ছাড়ো না ছাড়ো বলছি। মা যদি এখন এসে পড়ে?
আমি কিছুতেই ছাড়তে চাইছি না। বিদিশা বলল, ‘তোমার মতলবটা কি বলোতো? কি করতে চাইছো তুমি?’
বললাম, তোমার ঠোঁটে একটা চুমু খেতে চাইছি। অনেকদিন ধরে এই ঠোঁটটা ভালবাসার উষ্ণতা না পেয়ে পেয়ে শুধু শুকিয়েই গেছে। একটা অভূক্ত প্রেমিককে এতক্ষণ ধরে শুকনো মুখে শুধু বসিয়েই রেখেছো। দাও চুমু। নইলে-
ক্রমশঃ-
|