08-07-2021, 02:46 AM
anek purano katha mone pore jache.....superb writting..... waiting for next
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
|
08-07-2021, 02:46 AM
anek purano katha mone pore jache.....superb writting..... waiting for next
08-07-2021, 08:38 AM
08-07-2021, 10:57 AM
08-07-2021, 12:43 PM
08-07-2021, 01:56 PM
আমি শুয়ে আছি বিছানায়। আমার দিকে তাকিয়ে রনি বলল, দিলি তো শরীরটাকে বারোটা বাজিয়ে? আমরা ভাবলাম, তোকে আর বিদিশাকে নিয়ে আজ একটু আনন্দ করব। সেটা আর হল না।
শুভেন্দু বলল, আনন্দ করা কি পালিয়ে যাচ্ছে? ব্যাচারাকে সুস্থ হতে দে।
আমি বললাম, তোরা আনন্দ কর না। কে মানা করেছে? আমি শুয়ে শুয়েই তোদের সাথে আনন্দ করি।
মাধুরী এগিয়ে এসেছে আমার দিকে। বাচ্চাটাকে কোলে নিয়েই আমার দিকে ঝুঁকে পড়ে বলল, ‘ও তোমার গালে একটা কিস করবে। তাহলেই তুমি ভাল হয়ে যাবে।’
বাচ্চাটা মাধুরীর কোলে থেকেই আমার গালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। শুভেন্দু সঙ্গে সঙ্গে ফোড়ণ কেটে বিদিশাকে বলল, নে তুইও একটা দেবের গালে কিস করে দে। তাহলে ও এখুনি ভালো হয়ে যাবে।
আমিও মনে মনে বললাম, করো না একটা কিস। কতদিন তোমার কিস খাইনি।
বিদিশা যেন বুঝতে পেরেছে। আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছে। মাধুরী সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল। হ্যাঁ করেছে করেছে পরশুদিন আমাদের বাড়ীর ছাদে। আমি দেখে ফেলেছি।
শুভেন্দু ধমক দিয়ে বলল, দেখেছিস তো কি হয়েছে? কিস খাওয়ার কথা সবার সামনে বলতে আছে?
মাধুরী বলল, যাবাব্বা। তুই নিজেই তো একটু আগে বললি। আর আমি বললেই দোষ?
রনিও সঙ্গে সঙ্গে বউয়ের হয়ে কথা বলল। হেসে বলল, কিস খাওয়াটা এখন জলভাত। মাঠে ঘাটে যেখানে সেখানে কিস হচ্ছে। সবসময় সেন্সর লাগালে চলে নাকি? আমি তো যখন তখন কিস খাই।’
শুক্লা হেসে বলল, কাকে?
রনি বলল, এই যে আমার বউকে। তুই কার কথা ভেবেছিস?
শুক্লা চুপ করে গেছে। মাধুরী ধমক দিয়ে রনিকে বলল, এই তুমি আর ছোড়দাটা ভীষন অসভ্য। যখন তখন সবার সামনে লজ্জ্বায় ফেলে দাও।
শুভেন্দু নিজের বোনকে সান্তনা দিল। ওকে বলল, লজ্জ্বার কিছু নেই। লজ্জ্বার কিছু নেই। এখানে সবাই ম্যাচুয়োর্ড। তোকে রনি ভালবাসে। ভালবাসলে বউকে যখন তখন চুমু খাওয়া যায়। এতে লজ্জ্বা পাওয়ার কি আছে?
আমিও বললাম, অত লজ্জ্বা পায় না। মাধুরী। আমরা সবাই তোমার দাদার মতন। দাদাকে সব কথা খুলে বলা যায়।
শুভেন্দু টিপ্পনি কেটে বলল, তুই আর কথা বলিস না। ছাদে লুকিয়ে লুকিয়ে বিদিশাকে চুমু খাচ্ছিলিস। ইস তখন যদি জানতাম।
রনি বলল, দিলে তো সব ফাঁস করে। দেব এখন টেনশনে পড়ে গেছে।
আমি শুয়ে শুয়ে বললাম, এতে টেনশনের কি আছে? ও তো পালটি খাচ্ছে এখন। বিদিশাকে যাতে ভালভাবে চুমুটা খেতে পারি, তারজন্যই তো ও আমাদের ছাদে পাঠিয়েছিল। আগেই বলেছে এই কথা। এখন আবার কথা ঘোরাচ্ছে কেন?
মা ঢুকেছে ঘরে। রনির দিকে তাকিয়ে বলল, কেমন আছো তোমরা?
রনি বলল, ভালো। মাধুরী সঙ্গে সঙ্গে মাকে ঢিপ করে একটা প্রনাম করল। -মাসীমা আপনি কেমন আছেন?মা বলল, ভালো। বাহ্ তোমার ছেলেটা তো খুব সুন্দর হয়েছে।
মাধুরী বলল, ‘হ্যাঁ ওর নাম দিয়েছি কি জানেন? দেবদার নামকে মনে করে।
মা বলল, তাই বুঝি? কি নাম?
মাধুরী বলল, দেবমাল্য। এই নামটাই সবার পছন্দ হল।
মা বলল, দেবের ভাল নাম হল দেবাশিস। দেবমাল্য আর দেবাশিস। খুব সুন্দর।
রনি বলল, দেবাশিস মানে হল, দেবতার আশীর্ব্বাদ। তাই না?
মা বলল, হ্যাঁ। ওর দাদু এই নামটা রেখেছিলেন।
বিদিশা এতক্ষণ চুপচাপ বসেছিল। মা’কে দেখে ও উঠে দাঁড়িয়েছে। মা চলে যাবার পর শুভেন্দু বলল, এই তোরা সবাই দেবের কথা বলছিস। বিদিশার কথা তো কিছু বলছিস না?
রনি বলল, আমি তো ছাদের গল্পটা বলতেই যাচ্ছিলাম। তোরাই তো বলতে দিলি না। মাঝখান থেকে মাধুরী আবার নিজেদের বাড়ীর ছাদের গল্প বলতে শুরু করে দিল।
মাধুরী বলল, তোমার আবার কোন ছাদের গল্প? যতসব গুলগল্প। ছাড়ো তো সব গ্যাঁজাখুড়ি কথা।
রনি বলল, যাবাব্বা। যা সত্যি তাই তো বলব। গুলগল্প কেন হবে?
আমরা কেউই এখন বুঝতে পারছি না। রনি কোন ছাদের গল্প শোনাতে চায়। এক কলেজ ছাড়া বিদিশাকে নিয়ে আমি আর কোন ছাদে গেছি, আমার তো মনে পড়ে না।
রনি বলল, মনে নেই? বলেই আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মারছে। আমি তখন শুয়ে শুয়ে হাসছি। বিদিশা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি হাসছো কেন? আবার কবে কোন ছাদে উঠেছো তুমি? আমি ছাড়া অন্য কোন মেয়ে ছিল নাকি তোমার সঙ্গে?
আমি সেই মূহূর্তে হাসবো না কাঁদবো। বুঝতে পারছি না। রনি একটু পরেই আর একজনের পোল খুলতে চলেছে। ব্যাপারটা যদি এখুনি ফাস করে দেয় রনি। শুভেন্দু খুব বিপদে পড়ে যাবে।
শুভেন্দু পেছন থেকে রনিকে চমকানো শুরু করেছে।- এই রনি। বলবি না বলছি। খবরদার। তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।
এমন ভাবে ওয়ার্নিং দিচ্ছিল। রনি বলতে গিয়েও থেমে গেল। শুক্লা ব্যাপারটাকে আঁচ করেছে। রনিকে বলল, কার কথা বলছিস তুই? শুভেন্দুর কথা? ও বুঝি কারুর সাথে লাইন মারছিল? শুভেন্দু কোন মেয়েকে নিয়ে ছাদে? তুই কি এটাই বোঝাতে চাইছিস। কিন্তু ও তো ব্রহ্মচারী। মুনি ঋষিরা যেমন ভাবে তপস্যা করে। শুভেন্দুও তাই। কে ওর ধ্যান ভাঙাতে গেল। তাও আবার ছাদে?
শুভেন্দু শেষবারের মতন ধমক লাগালো। এই রনি ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।
রনি বলতে গিয়েও শেষ মূহূর্তে চেপে গেল। দুটো কান ধরে বলল, না, আমার বস আমাকে মানা করে দিয়েছে। সুতরাং আমি আর বলব না। এই তোরা কিছু শুনিস নি। ওসব ছাদের গল্প হল বানানো গল্প।
শেষ মূহূর্তে রহস্যটা রহস্যই রয়ে গেল। শুভেন্দুর ধ্যানভাঙার গল্প আর শোনা হল না।
শুক্লা একটু আপসেট হয়ে পড়েছে। রনিকে ধমক দিয়ে বলল, এই তোরা দুই মক্কেল। তোদের পীড়িত এবার আমি বার করছি। বল শীগগীর। না হলে কিন্তু ভাল হবে না বলে দিচ্ছি। ব্যাটা শুভেন্দু সবাইকে গুল মেরে বেড়ায়, প্রেম নিয়ে উপদেশ দিয়ে বেড়ায়, ওর গুলবাজী এবার আমি বার করছি। বলেই শুভেন্দুর দিকে তাকালো শুক্লা। -আজ তোমার মজা আমি বার করছি। রনির পেট দিয়ে কথাটা বার করি। তারপর দেখ তোর আমি কি করি?
শুভেন্দু বলল, তুই আমার কিছুই করতে পারবি না। রনি যতক্ষণ আমার কাছ থেকে গ্রীন সিগন্যাল না পাবে, ও কিছুই বলবে না। শুক্লা রনিকে বলল, তোকে ঘুষ দেবে বলেছে শুভেন্দু? কত টাকা দেবে? বল আমিও দিচ্ছি। বলেই নিজের ভ্যানিটি ব্যাগটা খুলে ফেললো। ভেতরে কড়কড় করছে পাঁচশটাকার একগাদা নোট। রনি মুখ বাড়িয়ে উঁকি মেরে শুক্লার ব্যাগের দিকে দেখছে। -উরিব্বাস। কত নোট রে। আমি তো এত টাকা একসাথে চোখেই দেখিনি। শুক্লা বলল, এতে পাঁচহাজার আছে। বল। তাহলে পুরোটাই তোকে দিয়ে দেবো। শুভেন্দু নিশ্চই এর থেকে তোকে বেশি দেবে না।’ রনি বলল, টাকাটা আগে দে। তারপর বলছি। শুক্লাও নাছোড়বান্দা। রনিকে বলল, ওটি হবে না। খুব চালাক না তুমি ? আগে বলো। তারপরে পাবে।’ রনি এদিক ওদিক সবার দিকেই একবার করে তাকাচ্ছে। আর মাথা চুলকোচ্ছে। তারপর দাঁত মুখ খিচিয়ে বলল, যাক শালা, বলেই দিই। তারপর যা হয় দেখা যাবে।’ আমরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি রনির দিকে। রনি একবার শুধু তাকালো শুভেন্দুর দিকে। ওকে বলল, ডোন্ট মাইন্ড ইয়ার। তাহলে বলেই দিচ্ছি। আর তুইও বা কতদিন চেপে রাখবি। একদিন না একদিন তো ব্যাপারটা ঠিকই জানাজানি হবে।’ আমি লক্ষ্য করলাম, শুভেন্দু পালাবার পথ খুঁজে পাচ্ছে না। রনি সেই মাথা চুলকোতে চুলকোতেই বলল, আসলে আমার এই শ্যালক বাবু না। একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে গেছে। আমি তার কথাই বলতে যাচ্ছিলাম। বলেই আরো বেশি করে মাথা চুলকোতে শুরু করল রনি। আমি, শুক্লা, আর বিদিশা আমরা তিনজনে প্রায় একসঙ্গেই বলে উঠলাম। শুভেন্দু? প্রেম? বলিস কি? রনি মাথা চুলকোতে চুলকোতে বলল, হ্যাঁ শুভেন্দুর সাথে সেই মেয়েটার ছাদে প্রেম। ওটাই না বলতে যাচ্ছিলাম।
08-07-2021, 01:59 PM
হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিতে চলেছে রনি, এটা মাধুরীও বুঝতে পারেনি। শুভেন্দুর প্রেমের গল্প রনি জানে অথচ মাধুরী জানে না এটাই কেমন আশ্চর্য্যের বিষয়। আজ অবধি আমাকেও কোন কথা শুভেন্দু লুকোয়নি, অথচ লুকিয়ে চুরিয়ে প্রেম করেছে শুভেন্দু, আমার ওর উপরে খুব রাগ হচ্ছিল। মনে হল এই শুভেন্দুই না বলেছিল, প্রেম করে তোর মত পস্তাতে আমি আর চাই না। ছাদের উপর কোন মেয়েকে নিয়ে ফস্টি নস্টি করেছে, এটা আমিই জানি না। এ কিরকম হল?
শুভেন্দু দেখি আমার দিকে তাকিয়ে বলছে, ‘রাগ কোরো না আমার মজনুবাবু। তোমার মত লায়লা আমি এখনও খুঁজে পাইনি। ও রনি শুক্লার কাছ থেকে টাকা হাতাবে বলে এসব গাল গল্প শোনাচ্ছে।
মাধুরী শুভেন্দুর দিতে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল, ছোড়দা শেষ পর্যন্ত তুই?
শুভেন্দু এক ধ্যাতানি দিল মাধুরীকে। ‘ কি শেষ পর্যন্ত? কি আবোল তাবোল বলছিস? রনি যেটা জানে, সেটা তুই জানিস না। সেটাকি আবার হয় না কি? তাহলে তোকেও আমি ছাদের গল্প বলতাম। ও দেখছিস না কেমন মুচকি মুচকি হাসছে। ব্যাটা এক নম্বর গুলবাজ। বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে কথা বলতে রনির মতন কেউ পারবে না। ও আসলে শুক্লার ব্যাগ থেকে টাকাটা হাতাতে চায়।’
আমার শোলে সিনেমায় ধর্মেন্দ্রর ডাইলগটা মনে পড়ে যাচ্ছিল। জয় অমিতাভকে শুনিয়ে শুনিয়ে বীরু ধর্মেন্দ্র বলছে, এক গলতী আপনে কি ঠাকুর সাব। আপনে তিজোরি খুলকে ইন দো চোর বদমাশকো দিখাদি।
রনি যেন আমার মনের কথাটা বুঝতে পারল। মাথা চুলকে আবার বলল, কি মুশকিল। টাকা হাতাবো মানে? আমি কি চোর না বদমাশ?’
শুক্লা এবার ধমক লাগালো শুভেন্দুকে। বলল, ‘তুই আর কথা বলিস না। যেন তুমি কতো সত্যি কথা বলো আবার? পদে পদে মিথ্যে কথা। তোকে বিশ্বাস করা খুবই কঠিন।’
শুভেন্দু মুখ ভার করে বলল, ‘তুই একথা বলতে পারলি শুক্লা?’
আমি দেখলাম বেগতিক। ঝগড়াঝাটির সৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে। শুয়ে শুয়েই বললাম, ‘এই এই। তোরা কিসব শুরু করলি বলতো? এক কাজ কর। ব্যাপারটা যদি সত্যি হয়। তাহলে শুভেন্দুকেই ওর প্রেমের কাহিনী শোনাতে দে। আমরা সবাই শুনি, ও নিজের মুখেই বলুক। আর ব্যাপারটা যদি মিথ্যে হয়, তাহলে রনি তুই চেপে যা। খামোকা শুক্লার টাকাটার প্রতি লোভ দেখাস না।’
বিদিশাও আমার দেখাদেখি শুক্লাকে বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ। গুলপট্টি দিয়ে ব্যাগ খালি করে দেবে তোর। তার চেয়ে ও যা বলছে শুভেন্দু ওটাই করুক। নিজের মুখে বললে প্রমান হয়ে যাবে প্রেম ঘটিত ব্যাপার, সত্যি না মিথ্যে কিনা।’
শুভেন্দু এবার সবাইকে অবাক করে দিয়ে বলল, ‘ আচ্ছা ছাদে যদি কোন মেয়েকে নিয়ে আমি বসেও থাকি। তারমানেই কি প্রমান হয়ে গেল, যে আমি প্রেম করি? তোরা সবাই এতদিন ধরে নিজেরা প্রেম করলি। আর প্রেম কাকে বলে সেটা তোদের এখনও শেখাতে হবে?
শুক্লা এবার চোখ বড় বড় করে বলল, তারমানে শুভেন্দু, সত্যি সত্যিই তুই? রনিতো তাহলে ঠিকই বলেছে।’
ভালোমানুষির মতন শুক্লার দিকে দু’হাত বাড়িয়ে রনি বলল, ‘ দে তাহলে টাকাটা এবার দে। তাহলে প্রমান হল তো আমি সত্যি বলছি কিনা? চল তোরা সবাই মিলে চল। শুক্লার টাকাটা দিয়ে আমরা আজ পার্কস্ট্রীটে একটু এনজয় করে আসি।’
শুক্লা বলল, ‘রোসো বাবা রোসো। মাধুরী সামনে আছে তাই তোকে কিছু বলছি না। তোমরা এই দুই বন্ধু। দুজনেই খুব সেয়ানা। তাই না? তোমরা অন্যকে বোকা বানাতে খুব সহজেই পারো। নিজেদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং করে নিয়েছ। শালা জামাইবাবু বলে কথা। আমি অত সহজে বোকা বনছি না। আগে ওর ছাদের ইতিহাসটা ভাল করে শুনি। তারপরে আমি সিদ্ধান্ত নেব।
রনি মাথা চুলকে বলল, ‘ যা চলে। কি দিনকাল পড়েছে। ভালমানুষদের আর কদর নেই এই দুনিয়াতে। সত্যি কথা বলতে গিয়ে হোচট খেলাম। ঠিক আছে। বানিয়ে বানিয়ে শুভেন্দুই তাহলে মিথ্যে কথাগুলো বলুক।’
আমি শুয়ে শুয়ে বেশ ভালমতনই বুঝতে পারছি শালা জামাইবাবুতে দুজনে মিলে ভালই খেলা শুরু করেছে শুক্লার সঙ্গে। কে যে সত্যি বলছে আর কে যে মিথ্যে বলছে। আমার পক্ষেও বোঝা বড় মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। প্রেম ঘটিত ব্যাপার, সত্যি যদি শুভেন্দুর জীবনে কিছু হয়ে থাকে। কতদিন আর চেপে রাখবে? আজই এর রহস্য উন্মোচন হোক।শুক্লার প্রতি একটু দরদ দেখিয়ে শুভেন্দু বলল, ‘ না না টাকাটা তুই রেখে দে। ও তো রনি এমনি ফাজলামী মারছে। আমার প্রেম নিয়ে যখন তোদের এত কৌতূহল। তখন আমিই সত্যি কথাটা তোদের বলছি। তবে তোরা কেউ কান্নাকাটি করবি না। আর হাসাহাসিও করবি না। এ গল্পের মধ্যে কোন ট্রাজেডি নেই, ইমোশন নেই। কোন ড্রামাও নেই। নিছকই একটা টাইম পাশের গল্প। আমার কাছে এটার তেমন গুরুত্ব ছিল না। তাই তোদের কোনদিন বলিনি। হয়তো দেবও রনির কথা শুনে একটু অবাক হয়েছে। আমি যে কবে আবার ওর মতন মজনু হলাম সেটা তো দেবেরও এতদিন জানা ছিল না। আজ তোদের ছাদের গল্প আমিই শোনাচ্ছি।’
দারুন একটা ইন্টারেস্টিং সাবজেক্ট। সবাইকে দেখলাম একটু নড়েচড়ে বসল। বিশেষত মেয়েরা। শুক্লা বিদিশা আর মাধুরী। তিনজনেরই চোখ তখন শুভেন্দু দিকে।
শুভেন্দু শুরু করল এইভাবে, ‘মেয়েটা খুব ভাল ছিল রে। একেবারে সরল সাধাসিধে নিষ্পাপ মেয়ে। এই তোদের মত এত অসভ্য নয়।’
শুক্লা রেগে গিয়ে বলল, ‘এই দেখেছিস দেখেছিস। কেমন বদমাইশ শুভেন্দুটা। প্রথমেই আমাদেরকে ঠেস মেরে শুরু করেছে।’
বিদিশা বলল, ‘আচ্ছা আচ্ছা তোর প্রেমিকা আমাদের থেকেও ভাল। তারপর?’
শুভেন্দু বলল, আসলে আমি ভেবেছিলাম। আমার সাথে ওর খুব পটবে। কারণ আমিও তো খুব ভাল ছেলে। তাই না?’
শুক্লা বলল, ‘জানি জানি। তুই খুব ভাল ছেলে। তারপর?’
শুভেন্দু বলল, ‘এবার একটু মুখশ্রী আর চেহারার বর্ণনাটায় আসি। আমার দেখা শ্রেষ্ঠ সুন্দরী যদি বিদিশা হয়। তাহলে ওকে আমি তারপরেই বসাব। কারণ মেয়েটার মধ্যে যে রূপ ছিল,খুব কম মেয়ের মধ্যেই সেটা আমি দেখেছি। একবারে মার্জিত আর সুশ্রী চেহারা। আলগা কোন চটক নেই। এত গভীরতা আমি খুব কমই দেখেছি।’
মনে হল শুক্লা যেন একটু বোর হচ্ছে। বলতে না বলতেই শুভেন্দুকে ও বলে বসল। তার এই রূপের বর্ননাটা কতক্ষণ চলবে? ছাদের গল্পে কখন আসবি?
আমি বললাম, বলতে দে না ওকে। ভালই তো লাগছে শুনতে। আহা মেয়েটাকে যদি একবার দেখতে পেতাম?
আমিও একটু কথা বলতাম। রূপের বর্ণনা আমি আমার লেখা লেখির মধ্যে ছড়িয়ে দিতাম। শুভেন্দুর প্রেম কাহিনীকে উপন্যাসের রূপ দিতাম আমি।
বিদিশা এবার ঘাড় ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো। শুভেন্দু বলল, শোন বৎস। এটা কোন অমর প্রেম কথা নয়। নিছকই একটা ছাদের গল্প। ছাদের গল্প দিয়ে কখনও উপন্যাস হয় না।
আমি চুপ করে গেলাম। বিদিশা একটু হেসে বলল, আহা কত সখ? আফশোস হচ্ছে বুঝি?
আমি বললাম, যাঃ পাগল। সবাই কি আর তোমার মত নাকি?
রনি বলল, যা চলে। এরা যে দেখি আবার নিজেদের প্রেম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আরে তোরা শুভেন্দুর প্রেম কাহিনীটাও একটু শোন।
আমি আর বিদিশা দুজনেই আবার শুভেন্দুর কথার দিকে মনোযোগ দিলাম।
08-07-2021, 02:03 PM
পনেরো
ছাদের গল্প শুরু করার আগে শুভেন্দু বলল, ‘যাহা বলিব সত্য বলিব। সত্য ছাড়া মিথ্যা বলিব না।’
আমি ওর কথা শুনে হেসে ফেললাম। মনে মনে বললাম, এই শুরু হল তোর ড্রামা। আজ যদি বানিয়ে বানিয়ে এখানে কিছু বলিস, তোকে কেউ আস্ত রাখবে না।
শুক্লাও হাতটা তুলে শুভেন্দুর দিকে চড় দেখিয়ে বলল, প্যাঁদানি খাবে বুঝলে? আমাদের বোকা বানাবার চেষ্টা কোরো না।’
দেখি সঙ্গে সঙ্গে উপরের দিকে মুখটা করেছে শুভেন্দু। যেন ভগবানকে স্মরণ করছে। একবার মুখ দিয়ে উচ্চারণ করল একটা নাম। ‘শিখা’। আজ যদি শিখা তুমি এখানে থাকতে? এরা আমাকে এভাবে ছোট করতে পারতো না।’
আমি ওকে বললাম, মেয়েটার নাম শিখা নাকি? বাহ্ নামটা তো দারুন সুন্দর। তা তুই ওপরের দিকে তাকিয়ে শিখাকে স্মরণ করছিস। শিখা এখন কোথায়?
শুভেন্দুর দেখলাম মুখটা গম্ভীর। সবার দিকে একবার করে তাকিয়ে মুখটা করুন মত করে বলল, ‘আমাকে ওপর থেকে শিখা আশীর্ব্বাদ করছে। ও জানে আজ আমি বিপদে পড়েছি। এই বিপদ থেকে যাতে রক্ষা পাই তার জন্যই এই আশীর্ব্বাদ।’
কথাটা শুনে রনি দেখলাম ফিক ফিক করে হাসছে। শুক্লা রেগে গিয়ে বলল, একটা মেয়েছেলেকে নিয়ে ইয়ার্ক্কী হচ্ছে? ফাজলামোর আর জায়গা পাও না। না? ও তোমাকে ওপর থেকে আশীর্ব্বাদ করবে? কোথায় আছে সেই মেয়ে?
আমি হাসতে লাগলাম শুভেন্দুর কথা শুনে। বললাম, ‘জ্বলজ্যান্ত মেয়েটাকে তুই উপরে পাঠিয়ে দিলি? শুভেন্দু সত্যি তুই পারিস।’
মাধুরীও রেগে গেছে শুভেন্দুর ওপর। দাদাকে বলল, ‘ছোড়দা তুই না সত্যি পারিস।’
বিদিশাও অবাক হয়ে চেয়ে রয়েছে শুভেন্দুর দিকে। মাধুরী বিদিশাকে বলল, ’দেখো ছোড়দার রকমটা। শুরুটাই করল একটা মিথ্যা কথা দিয়ে। এবার বাকীটা আমরা কি করে বিশ্বাস করব?’
রাগের চোটে চোখমুখ লাল হয়ে গেছে শুক্লার। রনিকে বলল, এই রনি বলতো তুই। তোর পেয়ারের শালাবাবু সত্যি বলছে না মিথ্যে বলছে। আজ কিন্তু শুভেন্দুকে আমরা সবাই মিলে ধোলাই করব।’
বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে জবুথবু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর শুভেন্দু এতক্ষণে মুখ খুলল। সবাইকে বলল, ‘আহা কি মুশকিল। তোরা না চটপট জিনিষটা ধরতে বড় ভুল করিস। সবকিছু পাখী পড়ানোর মতন অত বোঝানো যায় না। আমি ওপর থেকে শিখার আশীর্ব্বাদের কথা বলেছি। তারমানে কি শিখা মারা গেছে? প্রদীপের শিখা কি অত সহজে নিভে যায়? এখনও জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। শিখা তো জীবিতই। এখনও ওর বাড়ীর সামনে দিয়ে যখন যাই। শিখা মাঝে মাঝে বারান্দা নয়তো ছাদে দাঁড়িয়ে থাকে। আমাকে দেখতে পেলে হাত নাড়ে। মুচকি হাসে। আমিও ওর দিকে হাত নেড়ে তারপরে চলে যাই। তাই বললাম, শিখা ওপর থেকে আমাকে দাঁড়িয়ে আশীর্ব্বাদ করছে।’
ব্যাপারটা দারুন ইন্টারেস্টিং। আমার মনে হল একটু বিদিশার কথার অবাধ্য হয়ে যদি বিছানার ওপরে উঠে বসতে পারতাম? ব্যাটাচ্ছেলে এখনও ওর বাড়ীর সামনে দিয়ে পাস করে বলছে। তারমানে প্রেম এখনও চলছে। ছাদের প্রেমটা হয়তো তার সূত্রপাত।
আমি আবার উঠে বসবার চেষ্টা করছি। বিদিশা চিৎকার করে উঠল। এই, এই, এই? কি করছ তুমি? উঠে বসবে নাকি তুমি? কথা না শুনে আমি আবার জোর করেই উঠে বসলাম। বিদিশাকে বললাম, ‘তুমি এসেছো। শুভেন্দু ওর প্রেমের গল্প শুরু করেছে। আমার শরীর এমনিই ভালো হয়ে গেছে। এমন ইন্টারেস্টিং গল্প। আমার শুয়ে শুয়ে শুনতে ভাল লাগছে না।’ রনি একটা সিগারেট আমার দিকে বাড়িয়ে বলল, খাবি নাকি একটা। সুখটান দিতে দিতে শোন। আমেজ এসে যাবে। মাধুরী এক বকা দিল রনিকে। কি করছ কি তুমি? পাশের ঘরে মাসীমা রয়েছে না? দেবদার শরীর খারাপ। আর তুমি সিগারেট অফার করছ? পাশে যে বউটা বসে রয়েছে তার পারমিশন নিয়েছ? রনি জিভ বার করে খেঁকিয়ে উঠে বলল, আহা। আমি যেন কত তোমার পারমিশন নিই? মাধুরী বলল, দেবদাকে দেখে শেখো। জীবনে অনেক পুণ্যিলাভ করবে। দেখো তো দেবদা বিদিশাকে কত ভালবাসে। আর তুমি আমাকে তার সিকিভাগও- শুক্লা বলল, ‘এই তোরা ঝগড়াঝাটি পরে করিস। আগে শুভেন্দু কি বলছে। সেটা শুনতে দে। আমাদের সকলের চোখ গিয়ে এবার পড়ল শুভেন্দুর দিকে। শিখা তার প্রদীপ জ্বালিয়ে শুভেন্দুকে কিভাবে বরণ করে নিল। আমরা শোনার জন্য প্রস্তুত। রনি একটু পেছন দিকটায় চলে গেছে। আমার ঘরের লাগোয়া বারান্দার দরজাটার ঠিক পাশে। একটা সিগারেট ধরিয়ে আমাকে বলল, ‘মাসীমা ঘরে ঢুকলে আমাকে একটু ইশারা করিস। সিগারেটটা নিভিয়ে দেব।’ আমি বললাম, ‘খা না তুই। মা এখন ঘরে আসবে না।’ শুভেন্দু রনির ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। শিখার নামটা আরো একবার উচ্চারণ করে শুভেন্দু শুরু করল, ‘আসলে আমার কপালে ছিল না তাই। বুঝলি তোরা? না হলে?’ আমি বললাম, কি কপালে ছিল না? শুভেন্দু বলল, এই শিখা আর আমার অমর প্রেমের ইতিহাস তৈরী হওয়ার ব্যাপারটা। শুক্লাকে দেখলাম এবার চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠেছে। প্রায়ই শুভেন্দুর গলা টিপতে যায়। শুভেন্দু বাঁধা দিয়ে শুক্লাকে বলল, আরে করিস কি? করিস কি? আমার প্রেমিকা জানতে পারলে কষ্ট পাবে। ভালো লোকটাকে এভাবে গলা টিপে মেরে ফেলতে চাইছিস? আমার ভাবী বউটার তাহলে কি দশা হবে বলতো?’ শুক্লাকে দেখলাম এবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত পা ছুঁড়ছে বাচ্চাদের মতন। আমাকে প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, ‘এই দেব। বল না তুই শুভেন্দুকে। আসল কথাটা বলছে না। তখন থেকে ভনিতা করে যাচ্ছে। দেখ, তখন থেকে কি শুরু করেছে? একবার বলছে প্রেম হয়েছিল ক্ষণিকের জন্য। আবার বলছে ও নাকি শিখার বাড়ীর সামনে দিয়ে যায়। হাত নাড়ে। আবার বলছে কপালে ছিল না। এভাবে বললে মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে না? রনি পেছন থেকে ফোড়ণ কেটে বলল, কনফিউজড্ কনফিউজড। সি ইজ ভেরী মাচ কনফিউজড্। আমি শুক্লাকে শান্ত করে বললাম। তুই চুপ করে বোস। ও আসল কথা ঠিকই বলবে। আরে এটাই তো শুভেন্দুর স্টাইল। ব্যাচারা শুক্লা। বিদিশারও অবস্থা প্রায় তাই। মাঝখান থেকে ব্যাপারটাকে এনজয় করছে রনি। আমিও তাই। মাধুরী শুধু চুপ করে বসে আছে। কোন রিয়াকশন নেই। একটা লম্বা ঢেঁকুড় তুলে শুভেন্দু বলল, না তোদের আর টেনশনে রাখবো না। কে কখন আমার গলা টিপে দেবে। ঠিক নেই। তার থেকে সত্যি কথাটা বলেই দিচ্ছি। বলেই শুক্লার দিকে তাকিয়ে শুভেন্দু বলল, ‘মেয়েটার সাথে আমার পনেরো দিন আগেই আলাপ হয়েছে। তালগোলে তোদের কাউকেই বলিনি। রনি শুধু জানে। আর বলার সুযোগটাই বা পেলাম কোথায়? তাছাড়া বিদিশার এতদিন পরে কামব্যাকটা আমার কাছে আরও অনেক বেশি ইম্পরট্যান্ট ছিল। এই কটা দিন আমি শুধু বিদিশা আর দেবকে নিয়েই ভেবেছি। সুযোগ আসলে তোদের শিখার কথাটাও বলতাম। ছাদের গল্প শোনাতাম। আজ আর না বলে তাই পারলাম না। এই রনিই দিল ব্যাপারটা সব ফাঁস করে।’ আমি বললাম, পনেরো দিন আগে যে মেয়ের সাথে তোর আলাপ। তার মানে তো প্রেমের ফুল ফুটেছে সবে। বাড়ীতে কি কেউ জানে? শুভেন্দু বলল, কেউ জানে না। একমাত্র জানে শুধু রনি। মাধুরীকেও বলেনি। কারণ প্রেম শেষ পর্যন্ত টিকবে কি টিকবে না। আগে থেকে বলে কি লাভ?’ আমি একটু শান্তনা দিলাম শুভেন্দুকে। বললাম, কেন টিকবে না? আমার দৃঢ় বিশ্বাস শিখা খুব ভাল মেয়ে হবে। টিকিয়ে রাখতে পারলেই টিকবে। তাছাড়া এতদিন বাদে তুই ও প্রেমের কলি গাইতে শুরু করেছিস। প্রেম টিকবে না মানে? শুভেন্দুকে দেখলাম ঘাড় ঘুরিয়ে শুক্লার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। শুক্লাও ব্যাপারটাকে আঁচ করে ওকে বলল, বালাই ষাট। এতদিন পরে কাউকে মনে ধরেছে। অমন কথা মুখে আনতে আছে? আমি তো জীবনে একটা ভুল করেছিই। তাই বলে কি তুইও করবি নাকি? আমি জানি তুই অনেক বিচক্ষণ। এতদিন বাদে ভেবে চিন্তে যখন পা বাড়িয়েছিস। দেখে নিস এই শিখার সাথেই তোর বিয়ে হবে।’ শুভেন্দু বলল, বলছিস? তোর মুখে তাহলে ফুল চন্দন পড়ুক। আমি একটু উতলা হয়ে বললাম, কিন্তু প্রেমটা কিভাবে শুরু হল সেটা তো বল। এখনও তো আসল কথাটাই বললি না। শুভেন্দু বলল, ওই যে বললাম ছাদে প্রেম। রনিও যেটা বলল। আমি বললাম, হ্যাঁ। কিন্তু সেটা কিভাবে? বলতে বলতে মা এসে ঢুকেছে ঘরে। রনি আস্ত সিগারেটটা কোমরের পেছনে নিয়ে আড়াল করল। মা বলল, তোমাদের সবার জন্য পরোটা আর আলুরদম বানিয়েছি আমি। এ ঘরেই কি খাবে? তাহলে প্লেটে করে আমি নিয়ে আসছি। সবাই অবাক হয়ে গেছে মায়ের কান্ড কারখানা দেখে। শুভেন্দু বলল, মাসীমা সেই আপনি কষ্ট করলেন? মা বলল, তুমি শিখার কথা বলছিলে না একটু আগে? নিয়ে এলে না কেন মেয়েটাকে? তাহলে আমিও একটু দেখতাম। ঘরের মধ্যে আমরা সবাই হতভম্ব। সব থেকে বেশী লজ্জ্বায় পড়ে গেছে শুভেন্দু। জিভ বার করে ছ্র্যা করে উঠে বলল, যাঃ। আপনিও জেনে গেলেন? বিদিশা আর শুক্লা দুজনেই ফিক ফিক করে হাসছে। মজা পেয়েছে মাধুরীও। আমি হেসে বললাম, একসময় তুই বলতিস না। প্রেম হল জীবনে মিথ্যে। এর কোন মানে নেই। শুভেন্দু বলল, হ্যাঁ। বলেছিলাম। তো? আমি বললাম, মান্নাদের একটা গান খুব মনে পড়ছে জানিস তো? এক সময় আমি খুব গাইতাম। শুভেন্দু বলল কি? আমি দু কলি গেয়ে বললাম, এ দুনিয়ায় ভাই সবই হয় ভাই সবই হয়। সব সত্যি, সব সত্যি। মা’ও হেসে বলল, শুভেন্দুর মত ছেলেও তাহলে প্রেমে পড়ল। ব্যাপারটা তাহলে সত্যিই সত্যি। আমি বললাম, হ্যাঁ গো মা। একেবারে সত্যি। আর কদিন বাদেই ছেলে নতুন বউকে বিয়ে করে ঘরে তুলছে। সবাই উলু দেবে। শাঁখ বাজাবে। আর আজকের দিনে এই খুশীতেই তুমি সবাইকে পরোটা আলুরদম খাওয়াও। আমরা এই সুযোগ সবাই মিলে আনন্দটাকে আজ উপভোগ করি। মা বলল, যাই তাহলে। খাবার ঘর থেকে প্লেট গুলো একে একে সব নিয়ে আসি। বিদিশা বলল, ‘মা’ আমিও যাচ্ছি আপনার সাথে। আপনি একা কেন আনবেন? আমি যাই? বলে মা’র পিছু নিল। ক্রমশঃ-
08-07-2021, 05:15 PM
কত ছাদে যে কতকিছু ঘটতে থাকে ...
অনেক কিছু মনে পড়ে যাচ্ছে ... কবেকার সব কথা !!
08-07-2021, 05:49 PM
(This post was last modified: 08-07-2021, 05:49 PM by Lekhak is back. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
08-07-2021, 06:52 PM
08-07-2021, 06:53 PM
bidisha ek dinei anek ta samle utheche mone hoche.....let's see dev ki bhabe situation samlabe
08-07-2021, 07:47 PM
08-07-2021, 07:48 PM
08-07-2021, 10:56 PM
08-07-2021, 11:42 PM
সব চরিত্রগুলোই খুব সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।
তবে দেবের মায়ের চরিত্রটা এক্সেপশন। মনেহচ্ছে যেন চোখের সামনে ঘটছে ঘটনাগুলো। অসাধারণ !!!
09-07-2021, 12:24 AM
Bidisha r masima theke ma te chole asa ta besh bhalo laglo.....first e ektu dilemma te chilo
09-07-2021, 08:49 AM
09-07-2021, 08:50 AM
09-07-2021, 08:51 AM
09-07-2021, 03:24 PM
ষোলো
কে বলবে আমি অসুস্থ? এক তো বহুদিন পরে বিদিশার প্রত্যাবর্তন। তার ওপর শুভেন্দু যেভাবে প্রেমের নতুন কাহিনী শোনাতে আরম্ভ করেছে, আমার মনে হচ্ছে প্রেম হল সব রোগের একমাত্র ওষুধ। যারা প্রেম করে তাদের শরীরে কোন রোগ ধরে না। এরই নাম প্রেম, এরই নাম প্রেম।
হঠাৎই আমাকে একটু উত্তেজিত করে শুভেন্দু বলল, কি রে দেব? তোকে তো দেখে মনে হচ্ছে বিছানা ছেড়ে তোর এবার দৌড়াতে ইচ্ছে করছে। যাবি না কি একটা লং ড্রাইভে? বল তাহলে, গাড়ীটাকে নিয়ে এসে যাচ্ছি সকালে তোর বাড়ীতে। বিদিশা তো আছেই। আর যাবার পথে শিখাকেও গাড়ীতে তুলে নেব। সামনের সীটে আমি আর শিখা। আর পেছনের সীটে তুই আর বিদিশা। ওফঃ-
-আহা। আমরা বুঝি বাদ? সব বাণের জলে ভেসে এসেছি। শুক্লা যেন হেই হেই করে উঠল।
রনিও মুখটা কাচুমুচু করে বলল, একিরে? তুই আমার কথাও ভাবলি না? এ কেমন শালা রে? শালা-
শুভেন্দুও দাঁত মুখ খেচিয়ে বলল, আচ্ছা মুশকিল তো। একটা গাড়ীর সীটে কজন ধরে? আমাকে বোঝা তো? তোরা না বড্ড না বুঝে কথা বলিস। আমাকে দেখছি, তাহলে একটা আস্তো বাস নিয়ে আসতে হয়।
মাধুরীও মুখ ভার করে চুপচাপ বসে আছে। স্বামীকে তাল দিয়ে ছোড়দাকে মাধুরীও একটু খোচা দিল। -হ্যাঁ হ্যাঁ। তাই যাও। প্রেমের ফুল ফুটতে শুরু করেছে না সবে। এখন কি আমাদের কথা মনে পড়বে সহজে?
বোনকে সান্তনা দেবার জন্য শুভেন্দু বলল, এই দেখো। দিলি তো সব মাটি করে?
আমি বললাম, না না। সবাই মিলেই আমরা যাব। সেরকমই একটা ব্যবস্থা করতে হবে। শুধু আমাকে পুরোপুরি সুস্থটা হতে দে। তারপর দ্যাখ, ছোটখাটো একটা পিকনিকই হয়তো অ্যারেঞ্জ করে ফেলবো।
বলতে বলতে বিদিশা আলু পরোটা প্লেটে করে নিয়ে ঘরে ঢুকেছে। মা’ও হাতে দুটো প্লেট নিয়ে বিদিশার পেছনে।
বিদিশাই বলল, কোথায় যাবার প্ল্যান হচ্ছে তোমাদের?
আমি বললাম, ভাবছি একটা পিকনিক করব, সবাই মিলে। শুভেন্দু বলছে, শিখাকেও সঙ্গে আনবে। আমাদের সারাটা দিন দারুন এনজয় হবে।
বিদিশা বলল, বাহ্ তাহলে তো দারুন হবে।
শুভেন্দু বলল, সবাই মিলে গেলে প্রেম তো আর হবে না। তখন শুধু হুল্লোরবাজী হবে।
শুক্লা রেগে গিয়ে বলল, সেই ভাল। তুই আর দেবই বরং যা। জোড়ায় জোড়ায়। আমরা সাথে গেলে তোদের আবার প্রেম তো মাটি হয়ে যাবে। তাই না?
শুভেন্দু হেসে বলল, আহা। রাগ করিস না, রাগ করিস না। আমি তো এমিন মস্করা করছি।
আলুরদম আর পরোটা শুদ্ধু চারটে প্লেট মা আর বিদিশার হাতে। মাধুরী আর রনির দিকে প্লেটটা বাড়িয়ে দিল মা। আর বিদিশা দিল শুভেন্দু আর শুক্লাকে। আলু পরোটার ভোজ। শুভেন্দু পরোটা মুখে পুরে চেটেপুটে খেতে শুরু করেছে। মা’কে বলল, আহা মাসীমা, আপনার হাতের রান্না লা জবাব। কতদিন এমন পরোটা খাইনি।
শুক্লা বলল, ব্যাচারা দেব। আমরা সবাই মিলে খাচ্ছি। আর ও ব্যাচারা কিছুই খেতে পারছে না।
শুভেন্দু বিদিশাকে বলল, কি রে বিদিশা? তোরটা কোথায়?
মা বলল, আমি বিদিশারটা নিয়ে আসছি। আর তোমাদের কারুর পরোটা লাগলে আমায় বোলো।
শিখার বাকী অধ্যায়টা শোনবার জন্য আমি ভীষন ছটফট করছি। শুভেন্দুকে বললাম, এখনও কিন্তু ছাদের গল্পটা পুরোপুরি শোনা হয় নি। পরোটা আলুরদম খেয়ে বাকীটা শেয়ার কর। উই আর ওয়েটিং।
শুভেন্দু বলল, ওই তো তারপরেই ভালোবাসা শুরু হল। নটেগাছটি মুড়োলো। আর আমার কথা ফুরোলো। শুক্লা পরোটা খেতে খেতে বলল, ধ্যাত। আবার ফাজলামী। কিছুই তো শেয়ার করলি না। শুধু ফাজলামীই মেরে গেলি। শুভেন্দু রসিকতা করে বলল, আচ্ছা সবকি তোদের ডিটেলস এ বলতে হবে নাকি? তাহলে তো অন্তরঙ্গ মূহূর্তগুলোও ডিটেলস এ বলতে হয়। এই আমি শিখাকে একটু জড়িয়ে ধরলাম, শিখাও আমাকে। তারপর গালে একটা চুমু। ঠোঁটেও পরপর দুটো। শিখা কটা খেল, আমি কটা খেলাম। বলতে হবে নাকি? শুক্লা বলল, হ্যাঁ। সবই তো বলবে। আমাদের কাছে কিছু গোপণ রাখবে না। জানো না আমরা রেগে গেলে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করতে পারি। রনি বলল, বলে ফেল শুভেন্দু। নইলে শুক্লা তোকে আজ ছাড়বে না। শুভেন্দুও রসিকতা জারি রেখে চলেছে। পরোটা আর আলুরদম খেতে খেতেই বলল, দাঁড়া আগে মাসীমার কাছ থেকে আরো দুটো চেয়ে নিয়ে আসি। খেতে যা দারুন লাগছে না। ফ্যানটাসটিক। তারপর শিখার সাথে আমার রাতে শোওয়ার গল্পটাও তোদের শেয়ার করব। বলেই ফিক ফিক করে হাসতে লাগল। রনিও এবার হেসে ফেলেছে শুভেন্দুর কথা শুনে। শ্যালককে বলল, এই এই। এটা কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। তুই শিখার সাথে মোটেই এখনও শুসনি। খামোকা কেন গুল মারছিস? শুক্লা তাহলে আরো রেগে যাবে। শুক্লা এবার চোখ বড় করে ফেলেছে। এক ধ্যাতানি দিয়ে শুভেন্দুকে বলল, সত্যি শুভেন্দু। সবকিছুরই একটা লিমিট আছে। যা গুল মারা শুরু করেছিস না তুই। আমি আর কি বলব? মাধুরীও টিপ্পনি কেটে বলল, দেখো আবার, সত্যি শিখা বলে কোন মেয়ে আদৌ আছে নাকি। ওটাও গুল হতে পারে। ছোড়দা সব পারে। দিনকে রাত আর রাতকে দিন। নিজের বোনকে দাবিয়ে দিয়ে শুভেন্দু বলল, বলিস না ওভাবে বলিস না। শিখা জানতে পারলে দূঃখ পাবে। আমি তোর কথা ওকে কত বলেছিস জানিস? বলেছি আমরা চারভাই। কিন্তু আমাদের এই একটি মাত্রই আদরের বোন। বড় আদরের ছোটবোন। মাধুরী। মাধুরী বলল, বল না তাহলে। তুই তো সব খুলে বলছিস না। ওই জন্য তো, তোর ওপর আমরা সবাই মিলে রেগে যাচ্ছি। শুভেন্দু বলল, বলবো রে বাবা বলবো। সব তোদের খুলেই বলবো। তবে ওপেনলি তো সব কথা বলা যায় না। তাই একটু সেন্সর করে বলতে হবে। আমি শুভেন্দুর কথা শুনে হেসেই অস্থির। শুক্লা এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল, একটু আগে কেমন ঢং করছিল শুভেন্দু। যাহা বলিব সত্য বলিব। এখন কি রকম করছে দেখেছিস তো? রনি নেহাত আজকে সব ফাঁস করে দিল। নইলে এটাও আমাদের জানা হত না। মা বেশ কিছুক্ষণ পরে আবার পরোটা ভর্তি থালা নিয়ে ঢুকলো। সাথে বিদিশার জন্য একটা আলাদা প্লেট। সবাই বেশ তৃপ্তি করে খাচ্ছে। মা বলল, কে কটা নেবে বলো? এই ভাজতে ভাজতে আমার একটু দেরী হয়ে গেল। আমি বললাম, দাও দাও। শুভেন্দুকে আরো দুটো পরোটা দাও। ও নইলে শিখার গল্পটা পুরোটা আমাদের কাছে শেয়ার করবে না। শুভেন্দু বলল, না না। আমি এমনি বলব। আর এই পরোটা খাবার গল্পটাও শিখার কাছে গিয়ে বলতে হবে। ও শুনে দারুন খুশি হবে। খাওয়া দাওয়া এবারে শেষ। শুভেন্দুর প্রেম কাহিনী শোনবার জন্য সবাই তখন উদগ্রীব। শুভেন্দু এবার শুরু করল একমাত্র বক্তা হিসেবে। আমরা বাকীরা তখন শ্রোতা। মা’কে কায়দা করে আমিই ভেতরের ঘরে পাঠিয়ে দিয়েছি। মা জানে এখন অনেক রসিকতাই হবে। মায়ের সামনে সবকথা তো আর অকপটে বলা যায় না। শুভেন্দু অনেক ফ্রী হয়ে বলতে পারবে। আরো এক প্রস্থ চা বানাবে বলে মা নিজেই চলে গেল। শুভেন্দু শুরু করল এইভাবে। -দ্যাখ তোরা বিশ্বাস করই বা না কর। তবে আমার প্রেমটাকে অত খাটো করে দেখিস না। হতে পারে এটা অনেকদিনের প্রেম নয়। বিদিশা আর দেবের মতন। তবে আমার প্রেমের মধ্যে একটা বেশ রোমান্টিক রোমান্টিক ভাব আছে। ঠিক যেমন বিদিশা আর দেবের বেলায় ঘটেছিল। চিরকাল তো ওই লোকটাই প্রেমের অমৃতবানী আমাদের শুনিয়ে এসেছে। আমি ছিলাম উল্টো পথের যাত্রী। তোরা যেদিক দিয়ে এতদিন হেঁটেছিস, আমি হেঁটেছি উল্টো পথে। কিন্তু কেন জানিনা, এই শিখাই আমাকে সঠিক রাস্তাটা চেনালো। সেই হিন্দীতে একটা কথা আছে না। ‘তুমকো ভটকনে নেহী দুঙ্গা মেরী জান। ম্যায় আ গ্যায়ী হু না। তুমহারা জান। শিখা।’ শুক্লা শুনে বলল, বাহ বা বাহ বা। তারপর? শুভেন্দু বলল, শিখা মানে কি? হিন্দীতে এর মানে হল রোশনী। আর শিখাকে নিয়ে আমার শায়েরীটা হল, ভটক রাহা থা অন্ধরোমে এক রোশনীকে লেকর। কাহাসে শিখা নাম কি এক চাঁদ নিকাল আয়া চাঁদনী লেকর। শুক্লা আবার বলল, বাহ বা, বাহ বা। ক্যায়া বাত। তারপর? আমিও হেসে বললাম, বারে শুভেন্দু। তুই তো আসর একেবারে গরম করে দিলি। শুভেন্দু বলল, দাঁড়া দাঁড়া। আমাকে বাঁধা দিস না। তাহলে সুর তাল সব কেটে যাবে। অনেকদিন পরে আমিও সত্যি কথাটা বলছি তো। তাই বেশ একসাইটমেন্ট ফীল হচ্ছে। আমি হাসছি ওর কথা শুনে। শুভেন্দু বলতে থাকলো, শিখাকে কিন্তু কলকাতায় আমি প্রথম দেখিনি। ওর সাথে আমার প্রথম দেখা পুরীতে। তারপর কোনারক মন্দিরের সামনে হাতে হাত ধরে অনেকটা পথ চলা। প্রেম সেখানেই শুরু। বাড়ীর ছাদের গল্পটা তো অনেক পরে। যেটা রনি জানে। পুরী আর কোনারকের গল্পটা রনিও জানে না। আমি অতি আগ্রহ নিয়ে বললাম, বল বল। শুনি। শুভেন্দু বলতে থাকল, অনেক মেয়েই আছে তোতা পাখীর মত শুধু বকবক করে অবান্তর কথা বলে যেতে পারে। কিন্তু বলার ভঙ্গীমাটা যদি সুন্দর আর বুদ্ধিদীপ্ত হয়, তাহলে পুরুষ মানুষের চোখকে তা মুগ্ধ করে তোলে। আমি অবাক। অচেনা একটা লোকের সাথে কি করে এত সহজ হয়ে যেতে পারল মেয়েটি? ও যেন সত্যি সুন্দর। পুরীতে যে হোটেলটায় উঠেছিলাম, বাবা মা’কে সঙ্গে করে ও পুরীতে সেই হোটেলটাতেই উঠেছিল। হোটেলের বারান্দায় দাঁড়িয় দাঁড়িয়ে ওর অপরূপ সৌন্দর্য শোভা দেখছি। সত্যি কথা বলতে কি বিদিশার পর এত সুন্দর মুখশ্রী আমিও জীবনে প্রথমবার দেখছি। আমি বললাম তারপর? |
« Next Oldest | Next Newest »
|