Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#81
Khub bhalo bhabe start korlen
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#82
(05-07-2021, 05:19 PM)raja05 Wrote: Khub bhalo bhabe start korlen

Dhonyobaad.
Like Reply
#83
Bidisha r point of view thekeo ki apni likhben ? Khub jante iche korche.....age apnar sathe kotha bolar kono scope cholo na.....akhon jakhon peyechi takhon plz or dik thekeo kichu likhun....
Like Reply
#84
(05-07-2021, 09:13 PM)raja05 Wrote: Bidisha r point of view thekeo ki apni likhben ? Khub jante iche korche.....age apnar sathe kotha bolar kono scope cholo na.....akhon jakhon peyechi takhon plz or dik thekeo kichu likhun....

অবশ্যই চেষ্টা করবো।
[+] 1 user Likes Lekhak is back's post
Like Reply
#85
অসাধারণ দাদা, চালিয়ে যান
Like Reply
#86
(05-07-2021, 10:57 PM)Avenger boy Wrote: অসাধারণ দাদা, চালিয়ে যান

অনেক ধন্যবাদ।
Like Reply
#87
(05-07-2021, 09:31 PM)Lekhak is back Wrote: অবশ্যই চেষ্টা করবো।

Thats enough for me.....anek din por ei golpo ta start hoieche....eagerly waiting for next....thank you
Like Reply
#88
(06-07-2021, 12:33 AM)raja05 Wrote: Thats enough for me.....anek din por ei golpo ta start hoieche....eagerly waiting for next....thank you

আজকেই আবার নতুন আপডেট আসবে।
Like Reply
#89
তেরো
 
গানটা শুনতে শুনতে শুভেন্দু যেন দোলায় দুলছেগান পাগল নয় আমার গলা পাগল হঠাৎ একটা আবদার করে বসল, ‘এই দেব একটা রিকোয়েস্ট করব, রাখবি? তোকে এটা করতেই হবে।’
আমি বললাম, কি?
শুভেন্দু বলল, ‘এবারের পূজোতে বিরাট ফাংশন হচ্ছে আমাদের পাড়াতেতোকে গাইতে হবে।’
আমি বললাম, ‘পাড়ার জলসা?’
শুভেন্দু বলল, ‘কেন, তুই তো গেয়েছিস বেশ কয়েকবারতোদের পাড়ার ফাংশনেই গেয়েছিসএবার না হয় আমাদের ওখানে গাইবি।’
আমি বললাম, ‘সে তো দেরী আছে এখনওতখন যদি শরীর সুস্থ থাকে নিশ্চই গাইবআর তুই রিকোয়েস্ট করছিস, তোর অনুরোধ কি আমি ফেলতে পারি?’
দাঁত বার করে একটু ফিক ফিক করে হাসল শুভেন্দুশুক্লা বলল, ‘আচ্ছা দেব, আমিও যদি তোকে একটা রিকোয়েস্ট করি রাখবি?’
শুভেন্দু শুক্লার পুরো কথাটা শেষ না হতে দিয়েই শুক্লাকে বলল, ‘তুইও কি ওকে জলসায় গাওয়াবি নাকি? কি প্ল্যান মতলব?’
শুক্লা বলল, ‘এই চুপ করতুই যা করবি, আমাকেও তাই করতে হবে নাকি? আমি দেবকে দিয়ে গাওয়াব নাআমি গান শিখব।’
শুভেন্দু শুক্লার কথা শুনে হেসেই লুটোপুটিহাসতে হাসতে বলল, ‘তুই? গান শিখবি? এই বয়সে?’
শুক্লা বলল, ‘কেন? আমি কি বুড়ী হয়ে গেছি নাকি? যে বয়সের খোটা দিচ্ছিস?’
আমি মাঝখানে বাঁধা দিয়ে শুক্লার তারিফ করে শুভেন্দুকে বললাম, ‘জানিস তো শুভেন্দুশুক্লা কিন্তু দারুন ছবি আঁকেএক একটা ছবি যেন মাষ্টার পিসচোখ জুড়িয়ে যায়আমি ওর ফ্ল্যাটে গিয়ে ওর আঁকা ছবি দেখেছি।’
শুভেন্দু বলল, ‘সত্যি তোদের কত গুণএই ‘দেব’ কি সুন্দর গান গায়, আবার গল্পটল্পও লেখে শুনেছিতুই খুব ভাল ছবি আঁকিসআর আমি হলাম যে পুরোপুরি কোয়ালিটি লেসআমার কোন গুন নেই।’ বলেই মুখটা এমন ব্যাজার মত করল, যেন নিজের ওপরেই খুব আফসোস হয়েছে ব্যাচারার
মা সেই সময়ে আর একবার ঘরে ঢুকলশুভেন্দুর কথাটা শুনতে পেয়েছেওকে বলল, ‘কার গুণ নেই বলছ শুভেন্দু? তোমার? তুমি বললেই আমি বিশ্বাস করব? তোমার মত ছেলে হয় নাআমি নিজে তার প্রমাণ পেয়েছিএমন ছেলে লাখে একটা।’
মা কাছে এসে শুভেন্দুর থুতনিটা ধরে একটু আদর করে দিলশুভেন্দু তাড়াতাড়ি মা’র পা ধরে প্রনাম করে বলল, ‘মাসীমা আরও আশীর্ব্বাদ করুনআমি যেন আপনাদের সেবায় আরও নিমজ্জিত হতে পারিএবার আপনি বললেন, আমার দূঃখটা দূর হলআর আমাকে কেউ বেগুন বললেও আমি মানব না।’
 আমি আর শুক্লা দুজনেই হাসছি, শুভেন্দুর রকম দেখেশুক্লা হাসতে হাসতে বলল, ‘যাক, মাসীমার কাছ থেকে সার্টিফিকেটটা পেয়ে গেলিএর থেকে বড় সার্টিফিকেট পৃথিবীতে আর নেই।’
মা বলল, ‘সত্যি গো, ছেলেটার মনটা এত ভালআমার তো খুব ভাল লাগে ওকেদেব বারেবারে ওর কথা বলেএখন মনে হয়, সত্যি এমন বন্ধু আর কে আছে? ক জনের ভাগ্যে জোটে। ‘দেব’ আমি দুজনেই খুব ভাগ্যবান।’
মা কথাগুলো খুব আবেগ নিয়ে বলছে, আর শুভেন্দু চেয়ারে বসে বসে বুকের ছাতি চওড়া করছেশুক্লা হাসতে হাসতে আমাকে বলল, ‘দেখ, দেখমাসীমার কথাগুলো শুনে ও কেমন করছে? শুভেন্দুর রকমটা দেখ।’
আমিও শুয়ে শুয়ে হাসতে লাগলামমা হঠাৎই সেইসময় বলে বসল, ‘আমার কিন্তু একটা কথা আছে বাবা? এটা কিন্তু তোমাকে রাখতে হবে।’
কথাটা শুভেন্দুকে উদ্দেশ্য করেই বলেছেশুভেন্দু প্রথমে বুঝতে পারেনিভ্যাবাচাকা খেয়ে ওর মুখের আদলটাই পাল্টে গেলমা কি আদেশ করবে ও জানে নামুখটা একটু করুন মত করে বলল, ‘বলুন মাসীমা।’
মা বলল, ‘এবার কিন্তু তোমাকেও বিয়ে করতে হবে বাবা, আমি কোন কথা শুনছি না।’
শুভেন্দু আঁতকে ওঠার মতন করে বলল, ‘বিয়ে?’
মা বলল, ‘হ্যাঁ বিয়েতুমি শুনে অমন চমকে উঠলে?’
আমি আর শুক্লা দুজনেই মুখ টিপে হাসছি, শুভেন্দু বলল, ‘আপনি বলছেন যখন মাসীমাকরে ফেলবএ আর কি এমন কঠিন কাজ? কবে করতে হবে বলুন? আপনি শুধু হুকুম করুন।’
বাধ্য ছেলের রকম দেখে আমার আর শুক্লার দুজনেরই খুব মজা লাগছে।  মা বলল, ‘বিয়েটা করবে কাকে? একটা মেয়ে তো দরকারমেয়ে দেখা শুরু করেছ?’
শুভেন্দু বলল, ‘ওটাই তো মাসীমাসমস্যা তো ওখানেই হয়েছেকিছুতেই মেয়ে খুঁজে পাচ্ছি নাঅনেক চেষ্টা করলামসব বৃথা গেল।’
মা বলল, ‘সত্যি তুমি মনের মতন মেয়ে খুঁজে পাচ্ছো না? এও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?
আমি বিছানায় শুয়েই ওকে বললাম, কটা মেয়ে খুঁজেছিস তুই? মাকে খুব ম্যানেজ করছিসব্যাটা গুলবাজ।’
শুক্লা কান্ডকারখানা আর রকম দেখছে শুভেন্দুরশুভেন্দু বলল, ‘ভাবছিস আমি সত্যি গুল মারছিআরে তোদের কাছে আমি অনেক কিছুই লুকোতে পারিতা বলে মাসীমার কাছে কি লুকোব? এই তো গত মাসেই আমি ছটা মেয়েকে দেখলামআরে আমার মেজবৌদিও খুব উঠে পড়ে লেগেছে আমার জন্য।  তাছাড়া মাধুরীও চেষ্টা চরিত্র করছেজানি একদিন না একদিন আমাকে বিয়ে করতেই হবেতাই তো সত্যি কথাটাই বললাম।’
শুক্লা বলল, ‘ছটা মেয়ে কে দেখলি, তারমধ্যে একটাকেও তোর পছন্দ হল না? তোর ব্যাপারটা কি বলতো?’ সর্বগুণে গুণান্বিত আবার অপূর্ব সুন্দরীদুটো কিন্তু একসাথে হবে নাও আশা ছেড়ে দাও
 শুভেন্দু বলল, আমার কাছে সুন্দরীটা ফ্যাক্টর নয়কিন্তু একটা জিনিষ বুঝিস তো? জয়েন্ট ফ্যামিলি আমাদেরআমাদের চার ভাইয়ের নিজেদের মধ্যে খুব ভাববিয়ের পরও সেই বন্ধনটা অটুট রয়ে গেছেআমার বৌদিরাও সব মানিয়ে নিয়েছেআজকালকার মেয়েরা, তারা সব আলাদা থাকতে চায়আলাদা সংসার হবেছোট্ট সংসারজয়েন্ট ফ্যামিলিতে তারা থাকতে চায় নাএই ব্যাপারগুলো বুঝে শুনে,তবেই তো বিয়েটা করতে হবেবিয়ের পরে কোন ঝেমেলা বহন করতে আমি রাজী নই
মা শুভেন্দুর কথাটা শুনে ঘাড় নাড়লবলল, হ্যাঁ বাবা, তুমি ঠিকই বলেছসেরকম মেয়ে খুঁজেই তবে তাকে বিয়ে করতবে পাবে নিশ্চইআমার মন বলছে।’
শুভেন্দু বলল, ‘চেষ্টায় তো লেগে আছিদেখি-
মা এরপর পাশের ঘরে চলে গেলশুভেন্দু আমার আর শুক্লার দিকে তাকিয়ে মিচকি মিচকি হেসে বলল, ‘কোনরকমে ম্যানেজ করেছি বল? নইলে মাসীমা এখুনি চেপে ধরত আমায়
শুক্লা ওর কথা শুনে প্রথমে চোখটা বড় করেছেতারপর হাসতে হাসতে আমাকে বলল, ‘দেখেছিস ব্যাটা কেমন পাজীমাসীমাকে দিব্যি  কেমন বানিয়ে বানিয়ে কথাগুলো বলে গেল।’
শুভেন্দু একটু সিরিয়াস হয়ে বলল, ‘দেখ শুক্লা, এখন আমার বিয়ের থেকেও সবথেকে বড় ইমপরট্যান্ট জিনিষটা হচ্ছে দেব আর বিদিশার আবার মিল হয়ে যাওয়াআরে আপন কা ক্যায়া? কিসিকো ভী শাদী করলেগা ইয়ারলেকিন এ যো পড়া হ্যায় না বিস্তার মেতেরে সামনে? পহেলে ইসকা জিন্দেগী বস জানে দে ইয়ারবহূত ইন্তেজার কিয়াঅব আয়া ও শুভঘড়িএ মেরে সবসে প্যায়ারা দোস্ত জিসকা শাদী মে ম্যায় জবরদস্ত নাচুঙ্গা আরে ইয়ে মেরে ইয়ার কি শাদী হ্যায়এ মেরে ইয়ার কি শাদী হ্যায়।’
শুভেন্দু একটু এগিয়ে এসে আমার হাতটা ধরে গান গাইতে শুরু করল, ‘এ দোস্তীহাম নেহী তোরেঙ্গেতেরা সাথ না ছোড়েঙ্গে। ‘
আমিও ওর সাথে গলা মেলাতে লাগলাম।  কিছুক্ষণ পরে নিজেই খেই হারিয়ে, হাত ছেড়ে দিলতারপর আক্ষেপের সুরে বলল, না, এই হেঁড়ে গলায় আমার দ্বারা আর গান হবে নানারে শুক্লা, তোর মত আমাকেও গানটা শিখতে হবে দেখছি দেবের কাছে।’
 
মা হঠাৎই ঘরে ঢুকেছে আবার।  যেন মা’রও বিস্ময়ের ঘোর কাটতে চাইছে না।  বহুদিন পরে খুব চেনা, কাছের জনকে দেখলে যেমন মনটা আকুলতায় ভরে যায়, নিজের চোখকেও অনেকে বিশ্বাস করতে পারে নাআমি যা দেখছি, সত্যি দেখছি তো? নাকি ভুল দেখলাম? মা সেভাবেই ঘরে ঢুকে বলল, ‘বারান্দা থেকে দেখলাম বিদিশা ট্যাক্সি থেকে নামছেকতদিন পরে ওকে আবার দেখছিহ্যারে দেব? সত্যি আমি ওকে দেখলাম তো? না, বিদিশার মত দেখতে অন্য কোন মেয়ে? কিন্তু আমার চোখ কি এতটাইই ভুল হবে?
শুভেন্দু বলল, ‘না মাসীমাআপনি ঠিকই দেখেছেনবিদিশাই এসেছেও সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসুকআমি গিয়ে দরজা খুলে দিচ্ছি।’
 
পরবর্তী আপডেট একটু পরেই
 
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#90
বিদিশা এসেছেমা’র মুখ থেকে বিদিশার নামটা শুনেই, আমার ভেতরটা কেমন যেন হয়ে গেলশুভেন্দু তখন উঠে গেছে দরজা খুলে বিদিশাকে ফ্ল্যাটে ঢোকাবে বলেআমি শুক্লার মুখের দিকে তাকিয়ে আছিশুক্লাও আমার দিকেকিছুক্ষণ চুপচাপ, দুজনের মুখেই কোন কথা নেইশুক্লা বলল, ‘কি রে দেব? এবারে তুই খুশি তো? বিদিশা তো এসেছে।’
আমি বললাম ‘হ্যাঁএসেছেএই হতভাগাটাকে দেখতে এসেছে।’
শুক্লা বলল, ‘নিজেকে হতভাগা বলছিস? আরে তুই তো খুব ভাগ্যবাননইলে যে মেয়েটা কবে তোকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলআবার তার তোর কাছেই ফিরে আসা, এগুলো সব গল্পে হয়কিন্তু বাস্তবে? আমি তো ভাবতেই পারি নামনে কর, আজ থেকে তুই পৃথিবীর সব থেকে সৌভাগ্যবান ব্যক্তিযার জীবনে দূঃখ বলে কিছু নেই।’
আমি কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলামশুক্লাকে বললাম, ‘সময়টা মনে হচ্ছে আবার ভাল হয়ে গেলতাই নারে শুক্লা?’
শুক্লা বলল, ‘ভালো মানে? মনে কর, এটাই তোর জীবনের সেরা সময়তাছাড়া তুই তো কোন অন্যায় করিস নিভগবান তোকে শুধু শুধু কষ্ট দিতে যাবে কেন?’
আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললামশুক্লাকে বললাম, ‘হ্যাঁঠিক তাইভগবান অকারনে কাউকে কষ্ট দেয় না।’
শুক্লা একটু খুনসুটি মেরে আমাকে বলল, ‘এই দেব, আমি কিন্তু একটু মজা করবতুই কিন্তু চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকবিবিদিশা ঘরে ঢুকবেআমি বলব, দেব এখন ঘুমোচ্ছেডাক্তার বলে গেছে ওর ঘুম না ভাঙাতেতারপর ওর সাথেও খুনসুটি করবতুই চোখ বন্ধ করে সব শুনবি।’
আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলামশুক্লা আমাকে বাঁধা দিয়ে বলল, ‘না, না, আজ কোন কথা আর শুনছি নাআরে বাবা আমরাও তো একটু আনন্দ করব, তাই নয় কি? তোর আনন্দ মানে তো আমাদেরও আনন্দ।’
আমি বললাম, ‘সে ঠিক আছেকিন্তু শুভেন্দু তো জানেওই দেখবি, বিদিশাকে সব বলে দেবেদেব ঘাপটি মেরে শুয়ে আছেতুই তখন খারাপ হবি, আর সেই সাথে আমিও।’
শুক্লার কি খেয়াল হল, হঠাৎই উঠে গেল বিছানা ছেড়েশুভেন্দু তখন আমাদের ফ্ল্যাটের মেন দরজাটা খুলে ওয়েট করছে বিদিশার জন্যবিদিশা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসছেশুক্লা শুভেন্দুর কাছে গিয়ে কানে কানে কিসব বলে এলমা’কেও বলেদিল খুনসুটি করবার ফন্দীটাঘরে ঢুকে বলল, ‘শুভেন্দুকে বলে দিয়েছি, সেই সাথে মাসীমাকেওবিদিশা কিছু বুঝতেই পারবে না।’
আমি বললাম, ‘দেখিস, বিদিশাও কিন্তু খুব ঝেমেলায় আছেমজা করতে গিয়ে শেষকালে আবার ও যেন কোন ব্যাথা না পায়।’
শুক্লা বলল, ‘আরে না না, ওটাতো পাঁচ মিনিট থেকে দশমিনিটের জন্যতারপর তুই নিজেই চোখ খুলবিযেন তোর ঘুম ভেঙেছে, এইভাবেচোখ খুলেই বিদিশাকে বলবি, ও বিদিশা? তুমি এসেছো? কখন এলে? তার আগের কোন কথাই তুই শুনতে পাসনি।’
ফন্দীটা উগড়ে দিয়ে শুক্লা খিলখিল করে হাসতে লাগলতারপর নিজেই আবার চুপ হয়ে বলল, ‘এই এই এই বিদিশা এসে গেছেআমি ওর গলার আওয়াজ পাচ্ছিতুই চোখ বন্ধ কর, আমি মুখটা গম্ভীর করে নিচ্ছি।’

আমি বললাম, ‘আরে তোরা জোরে জোরে কথা বললে তো আমার এমনিই ঘুম ভেঙে যাবেতখন?-

শুক্লা বলল, ‘আরে না নাআমরা আসতে আসতেই কথা বলবযাতে তোর ঘুম না ভাঙেতুই চিন্তা করিস নাএবার চোখটা বন্ধ করো তোবাবা লক্ষ্নী ছেলে।’

লক্ষ্নী ছেলের মতন আমিও চোখটা বন্ধ করে নিলামশুক্লা আমার মাথার কাছেই সেই ঠাই বসে রইলচোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলামবিদিশা ঘরে ঢুকে আমাকে দেখবে, অথচ আমি ওকে দেখতে পাব নাআমার মুখের দিকে হয়তো কিছুক্ষণ তাকিয়েও থাকবেকিন্তু আমি ওর মুখের অভিব্যক্তিটা বুঝতেই পারব নাবিদিশা হয়তো আমার মাথার কাছে এসে বসতে চাইবেআমার মাথায় হাত বুলোতে চাইবেকিন্তু আমি ওর হাতের স্পর্ষ পাব নাইস কি জ্বালায় পড়েছিশুক্লার মন রাখতে গিয়ে আমাকে এখন ঘুমোবার অ্যাকটিং করতে হচ্ছে

আমি চোখটা পুরোপুরি বন্ধ করে ফেলেছিআমাকে অবাক করে শুক্লা বলল, ‘চিন্তা করিস নাআমি এখন যেখানে বসে আছিবিদিশা ঘরে ঢুকলে ঠিক তোর মাথার কাছটাতেই ওকে বসাবযাতে চোখ খুলে তুই প্রথম ওকেই দেখতে পাস।’

শুক্লা যেন আমার মনের ইচ্ছাটা আগে থেকেই বুঝতে পারেচোখ বন্ধ করে ওকে বললাম, ‘ঠিক আছে, ঠিক আছেতুই বসে থাকনা এখনকে তোকে মানা করছে?’

শুক্লা হাসতে লাগল, খুব আস্তে আস্তেযেন খুব মজা পেয়েছেতারপরেই চুপ করে গেলকারণ বিদিশা তখন শুভেন্দুর পেছন পেছন ঘরে ঢুকেছেআমি চোখ বন্ধ অবস্থাতেই ওর উপস্থিতি টের পাচ্ছি

ঘরে ঢোকার পরে শুক্লা প্রথম যে কথাটা বিদিশাকে বলল, শুনে আমার মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেলশুক্লা ওকে বলল, ‘একিরে বিদিশা? কি চেহারা করেছিসকেমন উসখো খুসকো দেখাচ্ছে তোকেতোরও কি শরীর খারাপ নাকি?’

বিদিশা কোন জবাব দিল নামনে হল আমার খাটের উল্টোদিকের চেয়ারটায় বসল বিদিশাযেখানটায় শুভেন্দু এতক্ষণ বসেছিল

শুক্লা বলল, ‘আয় আয় আয়তুই বরং এখানে এসে বসদেবের মাথার কাছেতবে হ্যাঁদেব এখন ঘুমোচ্ছেআমি এসেছি, সেই থেকে দেখছি ঘুমোচ্ছেডাক্তার বলে গেছে একটু রেস্ট দরকারআমি আর শুভেন্দু আসতে আসতে কথা বলছিলামদেবকে সেভাবে ডিস্টার্ব করিনি।’

বিদিশাও বলল খুব আসতে আসতে। ‘এখন কেমন আছে ও?’

শুক্লা বলল, ‘ভালোএই তো ঘুমের মধ্যেই এতক্ষণ বিড় বিড় করছিলতোর নাম করছিলতুই যে এখানে আসছিস ও জানে না।’

মনে হল বিদিশা শুভেন্দুকে কিছু বলতে চাইছেশুভেন্দুও নিজে থেকে বলল, ‘হ্যাঁ আমিও কিছু বলিনিব্যাপারটা সারপ্রাইজ থাকও চোখ খুলে তোকে দেখুককি বল শুক্লা?’

শুক্লা বলল, ‘হ্যাঁ তাই তোদেব কিন্তু চোখ খুলে তোকে দেখলে খুব খুশি হবেবিদিশা ছাড়া দেব যেন কত মনমরা হয়েছিল এতদিনরাধা ছাড়া কৃষ্ণের বাঁশি শুনতে কি আর ভাল লাগে? এত দরাজ কন্ঠ, এত মিষ্টি গানএ গান কার জন্য? একজনই তো আছে দেবের একমাত্র প্রেমিকা।’

শুভেন্দু সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, ‘ঠিকই বলেছিসআর আমরা হলাম সব ফেউযত উলুখাগড়ার দলনা আমরা দেবের কোন উপকারে আসব, না বিদিশার জায়গাটা কোনদিন নিতে পারব।’

শুক্লা শুভেন্দুকে বলল, ‘না না তুই ও কথা বলিস নাতুই দেবের জন্য অনেক করিসদেব নিজেও সেটা স্বীকার করেতোর মতন বন্ধু হয় না।’

শুভেন্দু আবার হেঁড়ে গলায় গান শুরু করল, ‘এমন বন্ধু আর কে আছে? আমার মত মিষ্টার?’

শুক্লা সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘এই এই এইদেবের ঘুম ভেঙে যাবেঅত জোরে চিল্লাস না।’

শুভেন্দু বলল, ‘জাগা না ওকেবিদিশা এসেছেএকবার চোখ খুলে, নয়ন মেলে দেখুকআহা কি আনন্দ আজ আকাশে বাতাসে।’

বিদিশাও বলল, ‘না না ও ঘুমোচ্ছেওকে জাগাতে হবে নাএই তো আমি ওর কথা সব তোদের কাছে শুনছি।’

মা সেই সময় ঢুকলো ঘরেশুভেন্দু নিজেকে একটু নিয়ন্ত্রণ করে নিলঘরে ঢুকেই বিদিশার দিকে তাকিয়ে মা বলল, ‘ভালো আছো বিদিশা? কতদিন পরে তোমায় দেখলাম।’

বিদিশাও এই প্রথম এতদিন পরে মাকে দেখলচেয়ার ছেড়ে উঠে মা’কে প্রনাম করল পা ছুঁয়েমা বলল, ‘থাক থাকভালো থাকো মাআশীর্ব্বাদ করি।’

শুক্লা তখন বুড়ো আঙুল দিয়ে আমার গায়ে একটু ঠেলা মেরে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, মায়ের চরণ ছুঁয়েছে বিদিশাকিন্তু আমি চোখ বন্ধ অবস্থাতেই সব বুঝতে পারছিএকটু চোখটা অল্প বিস্তর ফাঁক করে পিট পিট মতন করে লুকিয়ে চুরিয়ে দেখছি, সত্যি বিদিশার মুখ যেন কত বিষাদে ভরাযেন চিন্তায় চিন্তায় সারা রাত ঘুম হচ্ছে না ব্যাচারারতার ওপর আমার শরীর খারাপের খবরটা পেয়েছেদৌড়ে চলে এসেছে আমার কাছেমনে মনে বললাম, ‘বিদিশা তুমি এসো কাছেপারলে এখুনি শুক্লার জায়গাটা দখল করো।  এই শুক্লা, তুই উঠে যা না? বিদিশাকে আমার মাথার কাছে বসতে দে না? কেন কেন শুধু শুধু তোরা ওকে বুঝতে দিচ্ছিস না? আমিতো জেগেই আছিমিছি মিছি ঘুমোবার ভাণ করে তোদের সব কথা শুনছিশুক্লা? তুই কি এভাবেই আমার মাথার কাছে বসে থাকবি? তাহলে বিদিশা এখানে এসে বসবে কি করে?

শুভেন্দু সেই সময় বলল, ‘আচ্ছা শুক্লা এমন তো নয়? দেব হয়তো জেগেই আছে।  আমাদের সবকথা শুনছে? ওর গায়ে একবার ঠেলা মেরে দেখ না? সত্যি ঘুমোচ্ছে কিনা?’

শুক্লাও তেমনিজবাবে বলল, ‘ না নাদেব এখন অঘোরে ঘুমোচ্ছেএইসময় জাগানোটা ঠিক হবে নাএত ব্যস্ত হচ্ছিস কেন? বিদিশা তো এই সবে এলও কি পালিয়ে যাচ্ছে না কি?’

আমার শুক্লার উপর খুব রাগ হচ্ছিলমনে হচ্ছিল এই দশ মিনিট সময়টাই যেন অনেক লম্বা সময়আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছেএই মেয়েরা কেন এত অবুঝ হয় বুঝি নাপুরুষের মন বোঝে নাদূঃখ কষ্ট বোঝে না? ব্যাচারা এল এত কষ্ট করে, আমার শরীর খারাপের খবর পেয়েতাকে আর আমাকে নিয়ে এখন শুক্লার মজামজা আমি বার করছি
 
 

 
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#91
মনে মনে এটাও ভাবলাম, শুক্লার উপরই বা কেন চটছি? চোখ খোলার দায়িত্বটাও তো আমারই হাতেআমি যদি এখন জোর করেই চোখটা খুলে ফেলি, তাহলে বিদিশাকে দেখব, সরাসরি চোখটা যাবে বিদিশার মুখের দিকেআর শুক্লা মনে মনে গজরাবে, ব্যাটাকে এত করে বললাম, তাও আমার কথা রাখল না? ঠিক চোখ খুলে ফেললো? কি না ওর রাধা এসেছে কৃষ্ণের বাঁশি শুনবে বলে? শুভেন্দুর কথাটাই তাহলে ঠিকবিদিশা কাছে থাকলে দেবের কাছে সবাই ফেউবন্ধু হিসেবে আমাদের সত্যি কোন মূল্য নেই
মা বলল, ‘বিদিশা চা খাবে তো?’
বিদিশা লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না যেনশুভেন্দু ফোড়ন কেটে বলল, ‘মাসীমা এই নিয়ে আপনার এটা কত নম্বর চা বানানো হচ্ছেদেবের কথাটা খেয়াল আছে তো?’
শুক্লা বলল, এই যাহ্পাজী কোথাকারমাসীমার সাথেও ইয়ার্কি? বিদিশাও কি ভাবছে বলতো?
শুভেন্দু সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘সেটাই তো বলছিসাধে কি আর বলছি? মাসীমার দশা দেখে বলছিএটাই লাস্টকারণ এতদিন পরে বিদিশা এসেছে বলেএরপর যেগুলো আসছে, সেগুলো সব ফেউ মালওদেরকে চা করে খাওয়াতে খাওয়াতে মাসীমার আরও কষ্ট হবে
বিদিশা বলল, ‘কেন? কারা আসছে এরপরে?’
শুভেন্দু বলল, ‘ওই যে পুঁচকে দম্পতিমাধুরী আর রনিযাদেরকে তুই দেখলি সেদিনআমাদের বাড়ীতে।’
বিদিশা বলল, ‘ওহ্তা বলে ওরা কি পুঁচকে নাকি? ছেলে হয়ে গেছে যার, সে আবার পুঁচকে হয় কি করে? তাছাড়া রনি তো তোদেরই বন্ধুমাধুরী শুধু আমাদের থেকে ছোট।’
শুভেন্দু বলল, ‘তোদের কাছে পুঁচকে না হলেওআমার কাছে ওরা পুঁচকেইতাছাড়া আমি তো তোদের সবার থেকে বড়এখানে যারা বসে আছে, সবাই আমার থেকে ছোটএমন কি দেবও।’
শুক্লা বলল, ‘ইস অত সস্তা? বুড়ো খোকা, তোমার এই গুল মারাটা এবার বন্ধ কর।’
শুভেন্দু বলল, শোন বুড়ো হলেও তোদের থেকে আমি অনেক বেশি চনমনেবরঞ্চ তোরা আমার থেকে ছোট হয়ে বেশি বুড়িয়ে গেছিস।’
বিদিশা বলল, আমি অবশ্য দু ক্লাস জুনিয়র ছিলাম তোদের থেকেতুই তোয়ার্ক্কিটা হয়ে গিয়েছিল কলেজে পড়ার সময় থেকেইকিন্তু একজনকে বরাবরই আমি তুমি বলে এসেছিসেই শুরু থেকেই।’
শুক্লা বোকার মতন বলে বসল, ‘কে সে?’
শুভেন্দু শুক্লাকে ধমক লাগিয়ে বলল, সে কী রে? সাতকান্ড রামায়ণ পড়ে এখন সীতা কার বাপ? বিদিশা কার কথা বলছে তুই এখনও বুঝলি না?’ যার মাথার কাছে তুই বসে আছিস, সেই লোকটা রে-’
শুক্লা যেই বলেছে, ‘ওহ্ তাইতো, ঠিকই তো’ আমি সঙ্গে সঙ্গে ইচ্ছে করেই ঘুমের ঘোরে একটু কেশে উঠলামশুভেন্দু বলে উঠল, নিদ্রাভঙ্গ করে দিলি তো ব্যাচারার? এখন বিদিশাকে দেখেই যদি ব্যাচারার ঘুম ভাঙাবার কষ্টটা দূর হয়।’
শুক্লাকে বলল, ‘তুই ওঠ ওঠওখান থেকে উঠে পড়বিদিশাকে দেবের মাথার কাছে বসতে দেকৃষ্ণ এবার তার রাধাকে দর্শন করুক।’
আমি চোখ বন্ধ অবস্থাতেই ভালো মতন বুঝতে পারছিশুক্লা আমার মাথার কাছ থেকে এবার উঠে গেল
 বিদিশাকে যেন জোর করেই বসিয়ে দিল ঠিক ওই জায়গাতেবিদিশা আমার মাথার কাছটায় বসেছেআমি ভাবছি চোখ খুলেই আমি বিদিশাকে এবার দেখবও আমাকে এখনও স্পর্ষ করেনিকিন্তু অনুভূত হচ্ছে মাথার কাছে ওর উপস্থিতিনা ছুঁয়েই এমন? ছুঁলে না জানি কি হবেআমার অসুস্থ শরীরটার মধ্যে কে যেন আনন্দের বীজ পুতে দিলএকাকীত্বের বেদনা ঘুচিয়ে আমার স্নায়ুতন্ত্র এখন বেশ সবলঠিক এই মূহূর্তে বিদিশার মুখটা দেখাটাও বড় প্রয়োজন আমার কাছেকিন্তু বিদিশাও কি আমার মতন মানসিক অস্থিরতা আর দূর্বলতা কাটিয়ে উঠেছে? ওর ওই উদাস, করুন মুখটা দেখে আমারও যদি আবার মন খারাপ হয়ে যায়? বিদিশা তুমি আমার ভালবাসার টানে আমার কাছে এসেছোআমিও চেষ্টা করব বিদিশা, তোমাকে যতটা পারি শান্তনা দেবারআমাকে একবার শুধু চোখটা খুলতে দাও-
চোখটা খোলার আগেই শেষবারের মতন শুভেন্দু বলল, ‘এই দেব, চোখটা খোল নাএত ড্রামা করিস কেন? আমরা তো আগেই জানি তুই জেগে আছিসনে চোখ খুলে এবার তোর দেবীকে দর্শন কর।’
 
ক্রমশঃ-
[+] 5 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#92
Uff.....sei ebar wait korte hobe......ekta besh misti prem kahini.....khub bhalo bhabe likhchen.......eagerly waiting for next
Like Reply
#93
(06-07-2021, 11:54 PM)raja05 Wrote: Uff.....sei ebar wait korte hobe......ekta besh misti prem kahini.....khub bhalo bhabe likhchen.......eagerly waiting for next

অনেক ধন্যবাদ। আমি আজকেও আবার আপডেট দেব। তবে কমেন্টস খুব কম আসছে। অনেকেই পড়ছেন তবু reply দিচ্ছেন না।
Like Reply
#94
কালজয়ী একটা উপন্যাস !!!
সাধারণ ভাষায় জীবনের অসাধারণ অনুভূতিগুলো কি স্বাভাবিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রত্যেকটা পাতায় পাতায় ....

Namaskar Namaskar
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#95
(04-07-2021, 07:24 PM)Lekhak is back Wrote: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। অবশ্যই সিরিজা শেষ করবার পরিকল্পনা আছে। আমি আরো 5টি উপন্যাস লিখেছি, এক) নিষিদ্ধ স্বাদ, দুই) কামাগ্নি রেশমা, তিন) আমার একমাত্র শালী, চার) কামপুরুষ ও পাঁচ) রেবতী। যেগুলো অসমাপ্ত রয়ে গেছে। ইচ্ছা আছে পোস্ট করবার।

উত্তর দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। 

আপনার সব গল্পই আমার পড়া। যেখানে যে সাইটে পেয়েছি পড়েছি। সবকটাই দারুন।   

এই গল্পটা  আগে পড়িনি। আপনার লেখার অদ্ভুত এক মায়া  আছে. যত পড়ি মনে হয় আরো একটু পেলে ভালো হতো। .

চালিয়ে যান.দাদা ।  
Like Reply
#96
(07-07-2021, 10:46 AM)ddey333 Wrote: কালজয়ী একটা উপন্যাস !!!
সাধারণ ভাষায় জীবনের অসাধারণ অনুভূতিগুলো কি স্বাভাবিকভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রত্যেকটা পাতায় পাতায় ....

Namaskar Namaskar

আমার জীবনের অনেক ছোট ছোট ঘটনা এই উপন্যাস জুড়ে রয়েছে। তাই লিখতে লিখতে মাঝে মাঝে আমি নিজেও আবেগ প্রবন হয়ে পড়ি।
Like Reply
#97
(07-07-2021, 10:50 AM)bongreader Wrote: উত্তর দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। 

আপনার সব গল্পই আমার পড়া। যেখানে যে সাইটে পেয়েছি পড়েছি। সবকটাই দারুন।   

এই গল্পটা  আগে পড়িনি। আপনার লেখার অদ্ভুত এক মায়া  আছে. যত পড়ি মনে হয় আরো একটু পেলে ভালো হতো। .

চালিয়ে যান.দাদা ।  

ধন্যবাদ অসাধারণ মন্তব্যের জন্য।
Like Reply
#98
চোদ্দো
 
শেষপর্যন্ত শুভেন্দু যে হঠাৎই পাল্টি খেয়ে বসবে, না ওটা আমি আশা করেছিলাম, না শুক্লাওএমন ভাবে বলল কথাটা, আমি শেষ পর্যন্ত চোখ খুলতে গিয়েও খুলতে পারলাম নাবিদিশা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শুভেন্দুর দিকেএকটু আগে শুক্লা যে কথাগুলো ওকে বলেছে, ডাক্তার বলেছে ঘুমোতে, রেস্ট নিতেওকে ডিসটার্ব করা বারণ, তাহলে ওগুলো সব শুক্লার মন গড়া কথা? পুরো বেইজ্জ্বতের মত অবস্থায় পড়ে শুক্লাও মুখটাকে কাচুমুচু করে নিয়েছেআমি চোখ বন্ধ করে শুভেন্দুকে গাল পাড়ছি, শালা ঢ্যামনাদিলি তো সব ফাঁশ করেএখন বিদিশা কি ভাবছে?
আমাকে চোখ খুলতে না দেখে, শুভেন্দু ম্যানেজ করে নিলশুক্লাও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলশুভেন্দু বলল, ‘নারে শুক্লা, আমার মনে হল দেব যেন জেগে আছেএখন দেখছি সত্যিই ও ঘুমোচ্ছেআসলে মালটা এমনই ঘুমের ঘোরেও সব শুনতে পায়দেখবি ঘুম থেকে উঠে বলবে, ‘তোরা এই বলছিলিস, ওই বলছিলিসআমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সব শুনতে পেয়েছি।’
বিদিশার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘এক কাজ কর বিদিশা, তুই দেবের মাথায় হাত বুলিয়ে দেদেখ ও ঘুমের ঘোরে কেমন ফিক ফিক করে হাসবেআসলে দিবারাত্রি তোরই তো স্বপ্ন দেখে সারাক্ষণতুই হাত বোলাবি, ও ধরেই নেবে, বিদিশাই হাত বোলাচ্ছে আমার মাথায়।’
শুক্লা বলল, ‘হ্যাঁ শুভেন্দু ঠিকই বলেছেআমিও তো একটু আগেই হাত বোলাচ্ছিলামদেখলাম ঘুমের ঘোরে দুবার বলে উঠল, বিদিশা, বিদিশা, তুমি এসেছ? আমি তখুনি হাতটা তুলে নিলামকি জানি চোখ খুলে বিদিশার বদলে আমাকে দেখে যদি মন খারাপ করে বসে?’ এখন আসল লোক এসেছে, সেই হাত বোলাবে
শুভেন্দুও তাল দিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ একদম ঠিকশুক্লা ঠিক কথাই বলেছেনে শুরু কর বিদিশাদেখ ঘুমের ঘোরে ‘দেব’ তোর কেমন নাম নেয়এখুনি প্রমান পেয়ে যাবি।’
শুভেন্দু আর শুক্লা এমন ভাবে আমাকে চালনা করছে, আমিও মনে মনে প্রস্তুত হয়ে নিচ্ছিবিদিশা যেই কপালে হাতটা ঠেকাবে, আমিও ওর নামটা নেবযেন সবকিছু সত্যি সত্যি সফল হয়ে যায়
অনুভব করলাম একটা নরম হাত স্পর্ষ করেছে আমার কপালেআমার কপালটা যেন ধন্য হয়ে গেল বিদিশার হাতের স্পর্ষেশুভেন্দু ফোড়ণ কেটে বলল, ভালো করে বোলা, তবে তো ও বুঝবে, কেউ এসেছে ঘরেএ মেয়ে বিদিশা না হয়ে যায়ই নাদেখবি ও দুতিনবার ওর নাম নেবেঅবধারিত।’
যেন শুয়ে শুয়ে যাত্রাপালার অভিনয় হচ্ছেআমি নায়ক, বিদিশা আমার নায়িকাআর শুভেন্দু হলেন পরিচালক মশাই, তিনি দুজনকেই পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, শিখিয়ে দিচ্ছেন
বিদিশা এবার আমার কপালে হাত বোলাতে লাগলচুলেও হাত বুলিয়ে দিলনরম আঙুলগুলো কতদিন পর এই মাথায় খেলা করছেসখিকে পেয়ে সখা আনন্দিত, আপ্লুত অভিভূত
আমি প্রথমে বিদিশার নামটা আর উচ্চারণ করলাম নাএকটু চোখ পিট পিট করতে লাগলামআর মুখে একটু অল্প হাসি দিলামযেন ঘুমের ঘোরেই আমি হাসছি
 বিদিশা এবার বুঝতে পেরে, চোখ বড় বড় করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ওমা তুমি তো জেগেই আছচোখ বন্ধ করে ঘুমোবার ভাণ করছিলে এতক্ষণ?’
আমি ধরা পড়ে গেছি বেগতিক দেখে শুক্লা, শুভেন্দু দুজনেই চুপ বিদিশা মাথার ওপর থেকে হাতটা সরিয়ে আমাকে বলল, ‘চোখটা পুরো খোলো পিট পিট করছ কেন?’
শুভেন্দু আমার দিকে একটু এগিয়ে এসে শরীরটা ঝুঁকে আমাকে দেখে বিদিশাকে বলল, ‘সত্যি ও জেগে আছে?’
বিদিশা বলল, ‘হ্যাঁ একটু আগে হাসছিলআমি তো তাই দেখলাম।’
শুভেন্দু বলল, ‘ওটাই তো দেবের স্টাইলও যখন ঘুমিয়ে থাকেতোর স্বপ্ন দেখে, তখন হাসেদেখ এখন হয়তো তোরই স্বপ্ন দেখছে, আর হাসছেতা তুই ওর কপালের ওপর থেকে হাতটা সরিয়ে নিলি কেন? বোলা, যেমন বোলাচ্ছিলিস একটু আগে।’
বিদিশা আবার কপাল স্পর্ষ করছে না দেখে আমিও বললাম, ‘বোলাও না বিদিশাসরিয়ে নিলে কেন?’
বিদিশা এবার আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল। -তুই বন্ধুতে মিলে ভালই শুরু করেছনাও এবার চোখ খোল দেখিআর অ্যাকটিং করতে হবে না।’
আমি শেষপর্যন্ত চোখ খুললামবিদিশার মুখের এই হাসিটাই এতক্ষণ দেখতে চেয়েছিলামচোখ খুলে ওকে বললাম, কখন এসেছ?’
আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বিদিশা বলল, ‘তুমি পারোশরীর খারাপের মধ্যেও কি অদম্য উৎসাহ, কি অফুরন্ত এনার্জ্জী।’
আমি মুচকি হেসে বললাম, ‘শরীর তো আমার তোমরাই এসে ভাল করে দিয়েছ আমার কিচ্ছু হয় নি দিব্যি ভাল আছি
শুভেন্দু বলল, ‘তোমরা নয়, বল তুমি বিদিশাই তোর শরীর ভাল করে দিয়েছে
আমি জোর করে একটু উঠে বসার চেষ্টা করছি বিদিশা বাঁধা দিয়ে বলল, ‘থাক থাক, উঠতে হবে নাআবার পেটে যদি চাপ পড়েতুমি বরং শুয়েই থাকো।’
শুভেন্দু শুক্লাকে বলল, ‘দেখলি তো শুক্লাযেই বিদিশা এল আমরা কেমন ফেকলু হয়ে গেলামআর আমাদের দুজনের দিকে এরা দুজনের কেউ তাকাবে নাচল চল আমরা বরং পাশের ঘরে গিয়ে বসি।’
বিদিশা বলল, ‘এই ইয়ার্ক্কী হচ্ছে? বস বলছিমাসীমা এক্ষুনি ঘরে ঢুকবেকি ভাববে বল দেখি।’
শুভেন্দু বলল, ‘মাসীমা অত বোকা নয়তোকে আর দেবকে এই ঘরে একা দেখলে থোড়াই ঢুকবে? উনি যেন কিছু বোঝেন না?’
বিদিশা বলল, ‘না তাওতোরা যাবি নাবস এখানে।’
শুক্লা অবাক হয়ে বিদিশাকে দেখছিলওর চোখের কোনায় একটু জলরুমাল দিয়ে চোখটা মুছে বিদিশা আর আমাদের সবাইকে বলল, ‘এতদিন বাদে বিদিশাকে দেখছি, আমার মনটা যেন সেই অতীতে ফিরে যাচ্ছেদেবের ভালবাসার প্রতিদান এখন কানায় কানায় পূর্ণএই পৃথিবীতে বালি, সাহারার মরুভূমি বলে কিছু নেই
 আস্ত পৃথিবীটাই শস্য শ্যামলে ভরা ক্ষেতএই পৃথিবীটা হল কোমল,সজীব, সবুজ পৃথিবী।’
শুভেন্দু বলল, ‘সহজ করে বল, সহজ করে বল, বাংলায় আমি আবার অগা মূর্খ কিনা? তুই কি শুধু দেবের পৃথিবীর কথাটাই বলছিস, না গোটা পৃথিবীর কথা বলছিস?’
শুক্লা একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে বলল, তার মানে?
শুভেন্দু বলল, ‘শোন তাহলেদেবের পৃথিবীটার সাথে কিন্তু গোটা পৃথিবীটাকে তুই মেলাতে পারবি নাওরটা হল এক্সেপসনালএই যেমন তুই আর আমি, তোর আর আমার জন্ম হয়েছে মরুভূমিতেওখানেই মরব, ওখানেই সারাজীবন কাটাবআর দেব বিদিশাকে এতদিন বাদে পেয়েছেও ধানক্ষেতে বিদিশাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবেআর গুন গুন করে গান গাইবেচিরদিনই তুমি যে আমারযুগে যুগে আমি তোমারইআমি কি গো? তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারব কোনদিন? সঙ্গীসঙ্গীআমরা অমর সঙ্গী।’
শুক্লা হেসে বলল, সত্যিরে তুই? কি করে পারিস এত? অমন ভাবে বলছিস, ওরা কি করে প্রেমটা করবে বল দেখি? দেখ বিদিশা কেমন লজ্জ্বায় পড়ে যাচ্ছে।’
আমি তাকিয়ে দেখলাম, সত্যি তাইবিদিশা মাথাটা একটু নিচু করে নিয়েছেশুভেন্দু চেঁচিয়ে উঠে বলল, ‘একশবার বলবহাজার বার বলবদরকার হলে লাখোবার কোটিবার বলবকে আছে পৃথিবীতে এমন জোড়িদার? একটা সঙ্গী তুই খুঁজে দেখাতে পারবি? ভালবাসা কি ফেলনা নাকি? যে করলাম আর ছুঁড়ে ফেলে দিলামসত্যিকারের ভালবাসার কোন দাম নেই? বিশ্বাসের কোন দাম নেই? আমার ভালবাসা কি আমাকে প্রেমিকের কাছে ফিরিয়ে আনতে পারে না? যে বন্ধন অটুটতা কখনও ভেঙে যায় নাযদি একবার ভাঙে, শুনেছি তা নাকি চেষ্টা করেও জোড়া দেওয়া যায় নাকোথায় তারা? যারা বলেছিল, ভাঙা প্রেম নাকি সহজে জোড়া লাগে নাআমার তাদেরকে বলতে ইচ্ছ করেএই বিদিশা আর দেবের উদাহরণটাই তুলে ধরতে ইচ্ছে করেদেখ তোরা রোমিও জুলিয়েটের দলপ্রেম কাকে বলে, দেব আর বিদিশাকে দেখে তোরা শেখ।’
শুভেন্দু এমন ভাবে উত্তেজিত হয়ে কথাগুলো বলেছে, শুক্লা কাঁদতে শুরু করে দিয়েছেদেখলাম বিদিশার চোখেও জলহঠাৎ দেখলাম শুভেন্দুর চোখেও জলচট করে চোখটা মুছে নিয়ে শুভেন্দু বলল, ‘একটু বেশি বলে ফেললাম না? না আমিও আজকাল বড্ড ইমোশোনাল হয়ে পড়ছি।’
 
 
[+] 4 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#99
মা ঢুকেছে এবার বিদিশার জন্য চা বানিয়েশুভেন্দু উত্তেজিত হয়ে এতক্ষণ প্রেমের বানী শোনাচ্ছিলমা বলল, ‘একি শুভেন্দু? তুমি কাঁদছ?’
শুভেন্দু বলল, ‘না মাসীমাআমি আবার মেয়েদের কান্না দেখলে কান্না চেপে রাখতে পারি না।’
মা তাকাচ্ছে একবার বিদিশার দিকে, একবার শুক্লার মুখের দিকেকি হয়েছে, কিছুই বুঝতে পারছে নাশুক্লাকেই প্রথমে বলল, ‘কি হয়েছে গো, তোমাদেরহঠাৎই শুভেন্দু এই কথা বলছে?’
শুক্লা বলল, ‘মাসীমা শুভেন্দু যা হাসায়, আপনি তো জানেনহাসতে হাসতে পেট ফেটে এখন চোখে জল চলে এসেছে।’
মা বিদিশার দিকে চায়ের কাপটা বাড়িয়ে বলল, ‘ওহ্ তাই বুঝি? আমি ভাবলাম কি না কি হয়েছে।’
বিদিশা মা’কে দেখেই আমার মাথার কাছ থেকে উঠে পড়লহাত বাড়িয়ে চায়ের কাপটা নিলমা বলল, ‘দেখলে তো দেবকেমাঝে মধ্যেই এই রোগটা বাঁধায়, আর আমরা সবাই বিপদে পড়ে যাই।’
বিদিশা একবার মুখ ঘুরিয়ে তাকাল আমার দিকেমায়ের দিকে ফিরে বলল, ‘ভাল হয়ে গেছে ও এখনআর কোন চিন্তা নেই।’
মা বলল, ‘তোমরা সবাই মিলে আমার এই ছেলেটাকে একটু বোঝাও তোকিছুতেই কথা শুনবে নাহাবিজাবি সব খাবেআর থেকে থেকেই পেটের রোগ বাঁধাবে।’
মা’কে আমি বললাম, ‘মা এটা তো পেটের রোগ নয়, এটা হল আলসার কোলাইটিসপ্রবলেমটা ইনটেনস্টাইনে হয়।’
মা বলল, ‘ওই হলরোগ মানেই রোগনিজেকে সাবধানে রাখতে হবে তো?
আমি চুপ করে গেলামবিদিশা আমার দিকে ঘুরে বলল, ‘শুনেছ তো মা কি বলছে? এবার থেকে নিজের শরীর নিয়ে আর ছেলেখেলা কোরো নাসবসময় তো আর শুভেন্দুকেও পাবে নামা তখন একা কি করবে বলোতো?’
আমি ফ্যাল ফ্যাল করে বিদিশার মুখের দিকে তাকিয়ে আছিশুভেন্দু শুক্লাকে বলল, এই বিদিশা দেবকে ধমকাচ্ছে রেদেখ ‘দেব’ কেমন চুপযেন শান্ত শিষ্ট বালকআর আমরা যদি বলতাম, এক্ষুনি দেব, তেড়েমেড়ে উঠত।’
শুক্লা এবার হাসতে শুরু করেছেমা’ও একটু হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলআমি যেন বকা খেয়েছি, এইভাবেই বিছানায় করুন মুখটা করে শুয়ে রয়েছি।’
বিদিশা বলল, ‘না নাধমক কোথায়? নিজের শরীরের দিকে আগে খেয়াল রাখতে হবে তো? তারপরে তো সবও নিশ্চই খাওয়াদাওয়াতেও অনিয়ম করে, তাই এরকম হয়আমি জানি নিজের শরীরের দিকে ও একদমই তাকায় না।’
শুক্লা বলল, ‘এক কাজ করবিতুই এবার এসেগেছিসদেবকে নিজের হাতে তুই খাইয়ে দিবিদেব তোর হাতের ছোঁয়া ছাড়া জলস্পর্ষও করবে না।’
বিদিশা বলল, ‘ইসও যেন বাচ্চা ছেলে
 শুভেন্দু বলল, ‘শোন বিদিশা, বাচ্চা হয়ে যতদিন থাকা যায় ততই ভালবুড়ো হলেই যত বিপত্তিএই দ্যাখ, আমিও কেমন দেবের মতনশান্ত শিশুদেব শুধু বিছানায় শুয়ে আছে, আর আমি বসে আছি, এই যা তফাত।’
বিদিশা বলল, ‘তুমি আর কথা বোলো নাবাচ্চা হয়েই থাক চিরকালবিয়ে থা আর কোরো নাতোমাকে খাওয়াবারো কেউ নেই।’
শুভেন্দু বিদিশাকে বাঁধা দিয়ে বলল, ‘কে বলছে তোকে? আমার বউদিরা সব আছে না? ওরাই তো আমাকে খাইয়ে দেয়।’
শুক্লা এবার হাসতে শুরু করেছেফোড়ন কেটে বলল, ’এই শুরু হল শুভেন্দুর আবার ফাজলামীসত্যি পারে ও।’
বিদিশা চায়ের কাপটা নিয়ে আবার আমার মাথার কাছটায় বসেছেএকনাগাড়ে শুয়ে থাকতে আমারও ভাল লাগছে নাদেহটা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করতেই বিদিশা বাঁধা দিয়ে বলল, ‘হু হুএকদম নয় ওঠার চেষ্টা একদম করবে নাতাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে বলে দিচ্ছি।’
আমি যাও বা শরীরটাকে নিয়ে একটু কসরত করে নিজেকে ঠেলা মেরে ওঠবার চেষ্টা করছিলাম, বিদিশার বকানির ঠেলায় আমার প্রত্যাশা আর পূর্ণ হল নাশুভেন্দু ঠিক বুঝে নিয়েছে ব্যাপারটাশুক্লাকে বলল, ‘আজ দেবের কপাল সত্যি খারাপদিদিমনি এসে গেছেনছাত্রকে থেকে থেকেই বকা দিচ্ছেন।’
আমি হাসব না কাঁদব, তাই বুঝতে পারছি নাবিদিশা বলল, দেখ কোনো মানে হয়ডাক্তার মানা করে দিয়ে গেছেতাও ও জোর করে ওঠবার চেষ্টা করছেআবার যদি পেটে ব্যাথা শুরু হয়?’
শুক্লাও সায় দিয়ে বলল, ‘হ্যা রে দেবতুই জোর করিস নাঅন্তত আজকের দিনটা একটু রেস্ট নে।’
শুভেন্দু বলল, ‘শুধু আজকের দিনটা কি? ডাক্তার তো বলেছে ওকে সাতদিন রেস্ট নিতে।’
আমি বললাম, ‘তাহলে আমি মরে যাবএভাবে বিছানায় মরার মতন পড়ে থাকতে আমি পারব নাতোরা এসেছিস, আমি উঠে বসতে পারছি নাভীষন বিরক্তি কর।’
আমার কাছে এগিয়ে এসে শুভেন্দু বলল, ‘এই সিরিয়াস বলছি, পাশের ঘরে যাব? তোদের একটু নিরিবিলিতে ছেড়ে দিই কি বল?’
বিদিশা চা খেতে খেতেই বলল, ‘এই যে পাশের ঘরে যাবার কিছু হয় নিঅত উদারতা দেখাতে হবে নাআমি যেন এখুনি চলে যাচ্ছি।’
আমি শুয়ে শুয়ে অতি উৎফুল্ল হয়ে বিদিশাকে বললাম, ‘তুমি থাকবে বিদিশা?’
বিদিশা বলল, ‘কেন? থাকলে তুমি খুশি হবে না?’
আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলছে বিদিশাসেই চেনাপরিচিত মুখদৃষ্টিবিদিশার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছি, মনের মধ্যে যে ঝড়টা উঠেছিল, সেটা যেন ও অনেক কাটিয়ে উঠেছেএখন আর দ্বিধা নেইবাঁধা, প্রতিবন্ধকতা, এগুলোকে কাটিয়ে ওঠবার মানসিকতা নিয়ে ফেলেছে ওওর চোখের পরিভাষা সেই কথাটাই বলছে
 আমাকে থ মেরে শুয়ে থাকতে দেখে, শুভেন্দু বলল, একিরে দেব? স্ট্যাচু হয়ে গেলি কেন? বিদিশার কথার জবাব দে।’
শুক্লা বলল, ‘দেব মনে হয় এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না যে বিদিশা ওর কাছে থাকবার জন্যই এসেছে।’
আমার যেন খানিকের ঘোরটা একটু কাটলশুভেন্দু আর শুক্লা দুজনকেই বললাম, ‘আমি জীবনে অনেক কঠিন জিনিষটা খুব সহজ ভাবে বিশ্বাস করে এসেছিঅথচ কত সহজ, কত সরল, মনের কথাটা কেউ মন থেকে বললে, কেন মনে হয় আমার বিশ্বাস করতে কেন এত কষ্ট হচ্ছেবিদিশা এতদিন পরে আমার বাড়ী এসেছে, ওকে সেই আগের মতন দেখছি বলেই আনন্দে বিশ্বাস করতে পারছি না।’
বিদিশাকে বললাম, ‘বাড়ীতে বলে এসেছো? তোমার মা’ বাবাকে?’
বিদিশা বলল, ‘বলেছি, আজ আর বাড়ী ফিরব নাতোমার এখানে থাকবকাল সকালে আমি চলে যাব।’
শুভেন্দু এবার চোখটা বড় করে ফেলেছেগোল গোল করে বিদিশার দিকে তাকিয়ে রয়েছেএবার আমার মতই শুভেন্দুর অবস্থাএ যেন আশাতীতবেশ বড়সড় একটা ঢোঁক গিলে শুভেন্দু বলল, ‘ওরে তুই তো ষোল আনা দেবের আকাঙ্খা পূর্ণ করলিদেবের এখানে থাকবি বলে তুই বাড়ীতে বলে এসেছিস? গ্রেটএইজন্যই প্রাইভেসির ব্যাপারটা তখন পাত্তা দিচ্ছিলি নাআমি আর শুক্লা যখন বাড়ী ফিরে যাব, তখন তোরা মনের আনন্দে প্রেম সারবি?’
আমার কেমন মনে হল, শরীরের মধ্যে আনন্দশ্রোতগুলো সব বইতে শুরু করেছেকে বলবে আমি একজন অসুস্থ রুগীআমার শিরা উপশিরাগুলো সব আনন্দে ধেই ধেই করে নাচতে শুরু করে দিয়েছেরক্ত চলাচল স্বাভাবিকপেটের ব্যাথা অদ্ভূত ভাবে পুরোপুরি গায়েবআমি একজন পুরোনো হারিয়ে যাওয়া প্রেম ফিরে পাওয়া ভাগ্যবান প্রেমিকআমার মনের মধ্যে আর কোন কষ্ট নেইআমার জীবনে কোন একাকীত্ব নেই।  আমি এখন নাচতে পারি, গাইতে পারিবিদিশাকে নিয়ে কত কি করতে পারি
শুভেন্দু দেখলাম হেঁড়ে গলায় আবার গাইতে শুরু করেছে, আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসেশাখে শাখে পাখী ডাকেকত শোভা চারিপাশেআহা কি আনন্দ-
শুক্লা বলল, ‘তুই থামবিতখন থেকে কিশোরকুমার, মহম্মদ রফি হবার চেষ্টা করছিসদেখ বিদিশা আরো কিছু বলবেআমরা ওর কথাটা বরং শুনি মন দিয়ে।’
শুভেন্দু গান গাওয়াটা বন্ধ করে দিলবিদিশা তখন চা খাওয়াটা সবেমাত্র শেষ করেছেশুক্লা আর শুভেন্দুর দিকে তাকিয়ে বিদিশা বলল, ‘এই মাঝখানে একটা দিন, অনেক ভেবেছি, নিজের মনের সাথে শুধু লড়াই করেছিএকবার শুধু ভাবছি, আমি দেবকে সত্যি কথাটা বলতে গিয়েও কেন পারলাম না? আমার নিজের সততাটা কেন এখানে জাহির করতে পারলাম না? আমি কি দেবের কাছে ছোট হয়ে যাব বলেই সত্যি কথাটা বলতে ইতস্তত করে ফেললাম? বললাম যখন পুরোটা কেন বললাম না? দেবকে একদিন বিশ্বাস না করে আমি চলে গিয়েছিলামআবার যখন ফিরে এলাম, বিশ্বাসটা কেন পুরোপুরি ফিরিয়ে আনতে পারলাম না? আমার মনে হয়েছিল আমি হয়তো ছোট হয়ে যাব দেবের কাছেভুল আমি করেছি, দেবের তো কোন ভুল নেইকিন্তু ভুলের প্রায়শ্চিত্ত যখন করতে চাইছি, তখন আমার অনেক জ্বালা, আমার অনেক বাঁধা আর প্রতিবন্ধকতাবারে বারেই আমার মনকে শুধু পেছনে ঠেলে দিচ্ছেদেবের জীবনের অনেকটা সময় নষ্ট করেছি আমি।  আমার জন্যই শুধু শুধু ও কেন এত কষ্ট সহ্য করবে? আজ যে আমার ওখান থেকে ফিরে এসেও এত সমস্যাকে আছে এমন? এত কিছু ঝেমেলা সত্ত্বেও আমাকে-

 
 
 
[+] 4 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
বিদিশা পুরো কথাটা বলতে গিয়েও পারল নাহু হু করতে কাঁদতে লাগল অঝোরে
আমি ওকে শুয়ে শুয়ে সান্তনা দেবার চেষ্টা করছিশুক্লা বিদিশার দিকে তাকিয়ে বলল, এই পাগলি মেয়েতাকা আমার দিকেদ্যাখ, একবার
বিদিশা মুখ তুলে তাকালোওর চোখে তখন জল ছলছল করছে
শুক্লা হাসিমুখে বলল, ‘প্যায়ার করনে ওয়ালে কভি ডরতে নেহীযো ডরতে হ্যায়ও প্যায়ার করতে নেহীগানটা শুনিস নি।?’
বিদিশা বলল, ‘সব শুনেছি, সব শুনেছিকিন্তু কোথাও যেন- মনের ভেতরে খুব কষ্ট হয় রেতাই তো ভাবি, না বুঝে শুনে কাউকে কখনও কষ্ট দিতে নেইকাউকে দূঃখ দিতে নেইভগবান তাকে সুখী করতে পারে নাসত্যি কথা বলতে কি? আমিও কি জীবনে সুখী হতে পারলাম? বিয়ে করলাম যাকে একপ্রকার জোর করেই, নিজের প্রেমের সাথে প্রতারণা করেএতদিন শুধু বিভীষিকার মতন কাটিয়েছিদম বন্ধ হয়ে মরে যাচ্ছিলামএকটা মানুষ যখন মনের কোনায় ছবির মতন এঁকে যায়, তার মুখটাই শুধু ভেসে ওঠেআমার কেন জানি না ওই অবস্থার মধ্যে আমি শুধু দেবের কথাই চিন্তা করে গেছিশুধু ভেবেছি, আমার জীবনে কি ঘটবে, আগাম ভবিষ্যত আমি জানি নাকিন্তু দেব কাউকে বিয়ে করে সুখী হোকহয়তো আমার থেকে অনেক ভাল মেয়ে পাবে ওআমি তো পোড়ামুখিসুন্দরী শুধুআমার রূপটাই আছেআর কিছু নেই।’
শুক্লা বিদিশাকে শান্তনা দেবার চেষ্টা করছেউঠে এসে ওর মাথায় হাত রেখে বলল, ‘ছিঃঅমন করে বলতে আছে? ভুল তো মানুষ মাত্রই হয়আমার হয় নি? আমিও জীবনে অনেক ভুল করেছিতারজন্য নিজেকে কষ্ট দিয়ে কোন লাভ আছে বিদিশা? যা হয়েছে ভুলে যামনে কর ওগুলো তোদের জীবনে কিছুই ঘটেনিতাহলেই হলতোরা আবার নতুন করে জীবন শুরু কর।’
বিদিশা তবু কান্না থামাচ্ছে নাওকে এভাবে চোখের সামনে চোখের জল ফেলতে দেখছি, আমার ভেতরে আনন্দশ্রোতটা আবার কেমন যেন মিইয়ে যাচ্ছেঅস্বস্তিও হচ্ছে, আবার ভাবছি, মা যদি আবার এখুনি ঘরে ঢুকে পড়ে, তাহলে আরও মুশকিল হবেওর পিঠে একটা হাত রেখে বললাম, ‘বিদিশা কেঁদো না অত।  সব ঠিক হয়ে যাবেএতদিন বাদে তুমি এসেছআজ শুধু আনন্দ করো।’
বিদিশা এবার শুভেন্দুর দিকে তাকালশুক্লাকে বলল, ‘এই লোকটা, জানিসরে শুক্লা, সব বলেছি ওকেশেষ পর্যন্ত ফোনে আমাকে একটা কথাই বলল, ‘বাড়ীর গোটা ছাদটাই তোদের দুজনকে দিয়ে দিয়েছিলামসব বললি, আর নিজের কষ্টটা দেবকে খুলে বলতে পারলি না? দেব কি তোকে দূর ছাই করে তাড়িয়ে দিত? তুই এখনও দেবকে বুঝতে ভুল করছিস বিদিশাএরজন্য তুই নিজেই পরে আফশোস করে মরবিআমারও তখন আর কিছু করার থাকবে না।’
আমি সব জানি, তবুও নির্বাক হয়ে চেয়ে রয়েছি ওদের দুজনের দিকেশুভেন্দু বিদিশাকে এবার ধমক দিল
 ওকে বলল, ‘থামবি তুই? তখন থেকে প্যান প্যান প্যানকি হয়েছে? কি দোষ করেছিস তুই? কিছু দোষ করিসনিকিছু হয় নিসব ঠিক আছেএবার হাস তো?’
ঠিক ওই অবস্থায় বিদিশার মনকে সান্তনা দেবার মত যেন আমি ছাড়া আর কেউ নেইএক প্রকার জোর করেই উঠে বসলাম বিছানার ওপরেশুভেন্দু আর শুক্লা দুজনেই আমাকে উঠে বসতে দেখে চমকে গেছেবিদিশাও প্রথমে খেয়াল করেনিউঠে বসে ওকে জড়িয়ে ধরলামবিদিশার মাথাটাই তখন আমার বুকেওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিশুভেন্দু আর শুক্লার সামনেই বিদিশার কপালে একটা চুমু খেলামচোখে চোখে চোখ রেখে বললাম, ‘কান্না থামাবে তুমি? তুমি কি চাও আমি আবার অসুস্থ হয়ে যাই? না সুস্থ হয়ে তোমার সাথে আগের মত প্রেম শুরু করি।’
বিদিশা আমাকে ঠেলা দিয়ে বলল, ‘ধ্যাতছাড়ো বলছিকে তোমাকে উঠে বসতে বলেছে?’
শুভেন্দু আর শুক্লা তখন দুজনেই জোর হাসা হাসছেহাসতে হাসতেই শুভেন্দু বলল, ’ঠিক এই সময়ে মাসীমা যদি আবার ঘরে ঢোকে না? ঢুকে তোদের দুজনকে দেখলে, পিলে একেবারে চমকে যাবে।’
 
ক্রমশঃ-
Like Reply




Users browsing this thread: 21 Guest(s)