Thread Rating:
  • 21 Vote(s) - 3.38 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance সুনিতা মাতা
#41
[Image: din-kate-na.jpg]

সুনিতার দিনও কাটে না রাত কাটে না। সব সময় মনের মাঝে শুধু আকাশ আর আকাশ। আকাশ কি ভাবে ভালো বেসে ছিল মনে করে কাঁদে। আবার কি ভাবে ওর হাত ধরে সমুদ্রের ধারে জলের মধ্যে দিয়ে দৌড়ে ওকে জড়িয়ে ধরেছিল মনে করে হেঁসে ওঠে। হাঁসার পরেই খেয়াল করে ও একা বসে হাঁসছে আর ওর পাশে আকাশ নেই, আবার কেঁদে ফেলে। গত সাতদিন ওরা দুজনে যা যা করেছিল কিছুতেই ভুলতে পারে না। তার আগের কোথাও ভুলতে পারে না। কি ভাবে মীনা আকাশকে দেখিয়ে বলেছিল যে কি সুন্দর দেখতে ছেলেটা। সুনিতা সেই প্রথম দিনে ভাবতেও পারেনি তার সাথে এই ভাবে জড়িয়ে যাবে। 


সেই তিনবন্ধু পড়ার সময় থেকে ও আকাশের চোখে যে ভালবাসা দেখেছিল, আকাশের চোখে যে আলো দেখেছিল সুনিতার মন সেই আলো খুঁজতে থাকে। যখন ও চোখ বন্ধ করে থাকে তখন মনের আকাশে সেই আলো দেখতে পায় কিন্তু যেই চোখ খোলে সামনে কিছুই নেই। আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে। ও ভাবতে থাকে কিছুদিন আগেও ও আকাশকে জানত না, তখন ওর জীবন খুব সুন্দর ছিল। কিন্তু এখন ও ভালবাসা পাওয়ার পর তাকে বার বার খুঁজে বেড়ায়। রোজ সকালে সেই মেহগনি গাছের নীচে গিয়ে দেখে আকাশ এসে দাঁড়িয়ে আছে কিনা। এর আগের বার হটাত করে ওই গাছের নীচেই আকাশকে ফিরে পেয়েছিল, তাই রোজ দশ বার করে ওই গাছতলায় যায় আকাশ দাঁড়িয়ে আছে কিনা দেখতে। কিন্তু হায়, গাছতলা সবসময়ই খালি। গাছ আছে, প্রকৃতি আছে, সূর্য আছে, সব আছে শুধু ওর আকাশ নেই। তখন চোখের জল ধরে রাখতে পারে না। কবে যে আকাশ আবার সুনিতার সামনে এসে দাঁড়াবে। সুনিতা রোজ প্রার্থনা করে, “হে সূর্যদেব, আমার আকাশকে আমার কাছে এনে দাও, আমার মনকে কোথাও লুকিয়ে রাখতে পারছিনা। দয়া করো আমাকে, আমার আকাশ এনে দাও”।

আকাশ যাবার পাঁচদিন পড়ে সুনিতার বাবা অফিস থেকে ফিরে বলে যে আকাশ ফোন করে ছিল। ও ঠিক মত বাড়ি পৌঁছে গেছে আর ওখানে সব ঠিক আছে। সুনিতা কিছুক্ষন খুব ভালো থাকে। শান্তিতেই ঘুমায় রাত্রে। পরদিন সকালে মেহগনি তলায় গিয়ে আবার মন খারাপ হয়ে যায়। ওর মা কত বোঝায় যে মন খারাপ করে কিছু হবে না। কিন্তু এ মন যে মানে না মানা তুমি যতই করো। ওকে যে যাই বলুক না কেন ওর মন মানে না।

আরও কিছুদিন চুপ চাপ থেকে সুনিতা আবার কলেজে যাওয়া শুরু করে। কলেজে যেতেই ওর ক্লাসের সব বন্ধুরা চেপে ধরে ওর বিয়ের কথা সোনার জন্য। সুনিতা কোন ভাবে একটু কিছু বলে কাটিয়ে যায়। ও সবাইকে খুব বেশী কিছু বলতে চায় না।  ধীরে ধীরে ও কলেজের পড়াশুনাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কলেজ চলার সময় মাঝে মাঝেই লতা হারিয়ে যায়। রোজ বিকালে কলেজ থেকে ফেরার সময় দিব্যা আর লতার সাথে অনেক গল্প হয়। দিব্যাদের কাছে ও সব কিছুই বলে। প্রত্যেকটা মুহূর্ত প্রত্যেকটা খেলা সব বলে। এক এক দিন এক এক দিনের ঘটনা বলে। আর আকাশের কথা বলার সময় ওর চোখের উজ্জলতা ওর আবেগ অতুলনীয়। ওর মনে হয় ও আকাশের সাথে আছে।

ওপরের যে গান টা দিয়েছি সেই গান টা নিশ্চয়ই এই সুনিতার মত কোন মেয়েকে নিয়েই লেখা হয়েছিল। গানের প্রতিটি লাইন সুনিতার দিন আর রাতের সাথে মিলে যায়। তবুও গানের মধ্যে দিন বা রাত কিছুই না কাটতে চাইলেও বাস্তব জীবনে দিন আর রাত দুটোই নিজের মত কেটে যায়। সময়মত রোজ সূর্য ওঠে, সুনিতা কলেজে যায় আবার ফিরে আসে, সূর্য অস্ত যায়। সুনিতার জীবন যান্ত্রিক ভাবে কেটে যেতে থাকে।

আমরা এবার আকাশকে দেখি ও কি করছে –
আকাশ বাড়ি ফিরে এসে বাবা, মা আর বোন কে সব কিছু বলে। এখানে ওনাদের পরিচয় দিয়ে দেই। আকাশের বাবা শ্রী সুভাস কুমার সেন একজন সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের এমপ্লয়ী, বয়েস প্রায় ৫৫, নির্বিবাদী শান্ত মেজাজের মানুষ। আকাশের মা স্রীমতি স্মৃতিকনা দেবী সম্পূর্ণ গৃহবধূ, হাঁসি খুশী কিন্তু একটু কঠিন মেজাজের মহিলা। ওনার বয়েস বলতে নেই। আকাশের বোন চন্দ্রিকা, ক্লাস ইলেভেনে পড়ে চপলা চঞ্চলা মেয়ে। ওর বাড়ীতে সবাই মোটামুটি সবই জানতো আকাশের লেখা চিঠির গুলোর জন্যে। আকাশ সব কিছু বলার পড়ে ওর স্মৃতি দেবীর মুখ গম্ভীর, সুভাস বাবুর মুখ চিন্তিত আর চন্দ্রিকার মুখ ঔৎসুক্যে ভরপুর। স্মৃতি দেবীর প্রথম প্রতিক্রিয়া, “আমি তোমাদের এই সব ছেলেমানুসি মেনে নেব না। তুমি যদি ভেবে থাকো যে একটা কি না কি চাকরি পেয়ে গেছ বলে এতো বড় লায়েক হয়ে গেছ যে তোমার বিয়ের মত জিনিসের ডিসিশন তুমি একাই নিয়ে নিলে। আর শুধু ডিসিশন নেওয়া নয় বিয়েটা পর্যন্ত করে এসেছ। সব যখন করেই ফেলেছ তখন আবার আমাদের বলার কি দরকার। নিজে নিজের মত থাকো। যা ইচ্ছা করো। আমাকে কিছু বল না”।

আকাশের মন এমনিতেই খারাপ ওর সুনিতাকে ছেড়ে, তার ওপর মায়ের এইরকম প্রতিক্রিয়া। আকাশ পুরো নিজের মধ্যে গুটিয়ে যায়। চুপ চাপ উঠে চলে যায়।   
সুভাস বাবু কিছু বলতে যান কিন্তু আকাশ শোনে না, নিজের ঘরে চলে যায়। চন্দ্রিকা ওর মাকে বলে, “তুমি সব কিছুতেই এই ভাবে শুরু করো। আমি জানি শেষ পর্যন্ত সব মেনে নেবে তুমি কিন্তু একটু হই চই না করলে তোমার শান্তি হয়না”।

ও উঠে যায় দাদার কাছে যাবার জন্য। সুভাস বাবু বলেন, “দেখো স্মৃতি আকাশ যথেষ্ট বড়ো হয়েছে। আমরা ওকে নিজের মত করে বাঁচতে শিখিয়েছি। আমি সব সময় ওকে বলেছি নিজের জীবনের যা কিছু ও নিজে ঠিক করবে। আমি চাই না আমার ছেলে আমার ওপর নির্ভর করে জীবন কাটাবে। আর সেই ভাবেই ওকে তৈরি করার চেষ্টা করেছি। ওর পড়াশুনো নিয়ে কি পড়বে ও নিজে ঠিক করেছে। এমনকি ওর এই চাকরির ব্যাপারেও কিছু বলিনি। ও এতো দূর এসেছে সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় নিজের মত করে এসেছে। তাই বিয়ের কথাও নিজে ঠিক করেছে। তো কি এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। ওর জীবন ওকেই বুঝে নিতে দাও”।

স্মৃতি দেবী বলেন, “নিজে নিজে ঠিক করবে বলে একদম বিয়ে পর্যন্ত! কিরকম সমাজ, কি রকম বংশ কিছুই দেখা নেই, হুট করে বিয়ে করে ফেললেই হল! আবদার অফ মামার বাড়ি। আমি এই বিয়ে মানছি না মানব না”।

সুভাস বাবু – মেনো না, কার কি এসে যায়। আকাশ সুনিতাকে নিয়ে তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে তোমার সেটা ভালো লাগবে?

স্মৃতি দেবী – ইঃ চলে গেলেই হল। দশ মাস পেটে ধরে এতো কষ্ট করে মানুষ করলাম আর এখন আমাকে ছেড়ে চলে যাবে!

সুভাস বাবু – তবে ছেলের ইচ্ছা মেনে নাও। আর তুমি তো আগে আকাশকে বলেছিলে ও নিজের বৌ নিজে ঠিক করতে পারে।

স্মৃতি দেবী – হ্যাঁ বলেছিলাম, তাই বলে এইরকম বিদেশী মেয়ে। একটা মাদ্রাজি পেত্নীকে বিয়ে করল। সবসময় অ্যান্ড্রা প্যান্ড্রা করে কথা বলবে। ম্যাগোঃ, আমি সবসময় ওইরকম কালো পেত্নীকে ঘরে দেখতে পারবো না।

সুভাস বাবু – দেখো সব আগে থেকে ভেবে নিও না। সব সময় যা ভাবো তা হয়না। বরঞ্চ তুমি যা যা ভাব তার কিছুই হয় না। তো চিন্তা করো না। তোমার আকাশের ওপর ভরসা রাখ। দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।

স্মৃতি দেবী – জানিনা যাও, পড়ে দেখা যাবে। এখন রাত হয়ে গেছে সবাই খেতে চল।

ওদিকে আকাশের ঘরে চন্দ্রিকা যায়। আকাশ মাথায় হাত দিয়ে বসে। চন্দ্রিকা গিয়ে দাদার গলা জড়িয়ে ধরে। দুজনেই চুপ চাপ বসে থাকে। অনেক পড়ে আকাশ জিজ্ঞাসা করে, “সোনা বোন ভালো আছিস ? কতদিন দেখিনি তোকে, তোর সাথে কত কথা বলার আছে, এতদিন বাড়ীর সবাইকে ছেড়ে কোন দিন থাকিনি”।

চন্দ্রিকা – আমি ভালো আছি। আমার পড়াশুনো ভালো হচ্ছে, বাড়ীতেও সব ঠিক আছেতুই কেমন আছিস আর তোর সুনিতা কেমন আছে ?

আকাশ সুনিতার নাম শুনেই চুপ করে যায়। বলে, “ওর কথা ছেড়ে দে, অন্য কথা বল”।

চন্দ্রিকা – তুই আমাকেও কি মায়ের মত ভাবছিস। আমি জানি তুই বিয়ে করেছিস মানে খুব ভালো মেয়ে আর কোন কারনে তুই ওকে খুব ভালো বেসে ফেলেছিস। আমি খুব খুশী কিন্তু আমার বৌদিকে আমার কাছে কবে নিয়ে আসবি সেইটা বল

আকাশ – আমি আর সুনিতা শারীরিক ভাবে ভালো আছি। মানসিক ভাবে আমি একদমই ভালো নেই আর মনে হয় আমার সুনিতা সারাদিন শুধু কেঁদেই চলেছে। কাল অফিসে গিয়ে ফোনে ওর বাবার সাথে কথা বলবো তখন জানতে পারবো।

চন্দ্রিকা – তুই কি দেখলি সুনিতা মানে বৌদির মধ্যে যে এতো ভালবেসে ফেললি?

আকাশ – আমি শুধু ওর চোখ দেখেছি। আমি এতো নিস্পাপ মেয়ে কোনদিন দেখিনি। ও আমাকে শুধু ভালোবাসে না ও আমাকে মন প্রান দিয়ে পুজা করে। ওর সাথে যে কটা রাত কাটিয়েছি, ও আগে আমার সামনে বসে ‘হে প্রভু’ বলে পুজা করে আমারে কাছে এসেছে। আমাকে যে এই ভাবে ভালবাসতে পারে তাকে আমি কি করে ছেড়ে আসব বল?

চন্দ্রিকা – তুই সত্যি বলছিস যে বৌদি আগে তোর পুজা করে ? আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা আজকাল কার দিনে একটা মেয়ে এইরকম হতে পারে।

আকাশ – আমি প্রথম দিনেই ওর চোখ দেখে আটকে গিয়েছি। আর যেদিন ওর মন দেখেছি সেদিন থেকে ওকে এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারিনি।

চন্দ্রিকা – আচ্ছা দাদা তুই কি বৌদির সাথে সত্যিকারের ফুলসজ্জা আর হানিমুন করেছিস।

আকাশ – হ্যাঁ বোন আমার, তুই আমার আদরের বোন, তোর কাছে মিথ্যাও বলবো না আর লুকাবও না। একটা ছেলে আর মেয়ে বিয়ের পরে যা যা করে আমরা তার সব কিছুই করেছি। পরে তোকে আমাদের হানিমুনে বেড়ানর সব কথা বলবো।

চন্দ্রিকা আকাশের গলা জড়িয়ে বলে – আমার দাদা পুরো পুরি অ্যাডাল্ট হয়ে গেছে। আমি খুব খুশী আর সুখী তোদের জন্য। চিন্তা করিস না মা সব মেনে নেবে আর আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।

রাত্রে খাবার সময় কেউ কোন কথা বলে না। স্মৃতি দেবী মুখ গম্ভীর করেই বসে থাকেন। চন্দ্রিকা একবার বলে যে দাদা কতদিন পরে সাথে বসে খাচ্ছে, একটু ভালোবেসে খেতে দিতে কিন্তু ওনার কোন বদল হয়না। সুভাস বাবু আকাশের মাথায় হাত রেখে ইশারাতে শান্ত থাকতে বলেন। বেশী কোন কথা ছাড়াই ওদের খাওয়া শেষ হয়। খাবার পরে সুভাস বাবু আকাশের সাথে ওর ঘরে আসেন। আকাশ বাবাকে জিজ্ঞাসা করে ও কি খুব বেশী কিছু অন্যায় করেছে একটা নিস্পাপ মেয়েকে ভালবেসে।

সুভাস বাবু বলেন, “দেখো একটু শান্ত ভাবে শোন। আমি কখনই বলিনি তুমি অন্যায় করেছ। আমরা কেউ দেখিনি মেয়ে টাকে। তাই আমার পক্ষে এখনই বলা সম্ভব নয় তুমি ঠিক করেছ না ভুল করেছ। তবু তোমার ওপর আমার একটা বিশ্বাস আছে যে তুমি জ্ঞানত কোন ভুল কাজ করবে না। তাই আমার বিশ্বাস যে তুমি নিশ্চয়ই ঠিক করেছ। এবার তোমার কি হয়েছিল আর কোন পরিস্থিতে তুমি বিবাহ করতে বাধ্য হয়েছ সেইটা আমাকে বল”।

আকাশ সুনিতার সাথে কি ভাবে দেখা হয়, কি ভাবে ওরা কাছা কাছি আসে সেই সব বিশদ বলে। তিনবন্ধু গল্পের বইটা আকাশ সুভাস বাবুর কাছ থেকেই পেয়েছিল। ওই বইটা সুভাস বাবুরও খুব প্রিয় বই ছিল। তাই উনি অনেকটাই বুঝতে পারলেন। তারপর আকাশ বলে, “বাবা আমাকে কোন পরিস্তিতিই বিবাহ করতে বাধ্য করেনি। তুমি নিশ্চিত থাকতে পার আমি সেইরকম কোন অনৈতিক কাজ কখনই করবো না। তবে আরেকটা জিনিস আমি তোমার কাছে স্বীকার করবো যে আমার সাথে সুনিতার শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে, কিন্তু সেটা বিবাহের পরে”।

এই জায়গাটাতে আকাশ সত্যি কথা বলার সাহস পায়নি। আর ওর পক্ষে সত্যি কথাটা বলে বোঝানও হয়ত সম্ভব হত না। তারপর আকাশ বলে সুনিতা কিভাবে ওর পুজা করে। সেই কথা শুনে সুভাস বাবু কিছুই বলতে পারেন না। উনিও কখনও ভাবতে পারেননি যে এইরকম মেয়ে হতে পারে। উনি বলেন, “আমার মনে হচ্ছে যে তুমি একদম সঠিক মেয়েই ঠিক করেছ তোমার জীবন সাথী হিসাবে। আমরা যে কেউ এই রকম মেয়ে স্ত্রী হিসাবে পেলে ভগবানের কাছে আর কিছু চাইব না। তবে বিবাহ কেন করলে এতো তাড়াতাড়ি”?

আকাশ বলে, “বাবা, তুমি সুনিতার বাবার দিক থেকে চিন্তা করো। ওর বাবা মায়ের কাছেও আমি একটা অজানা ছেলে, বাড়ি থেকে দু হাজার কিলোমিটার দূর থেকে গিয়েছি। ওনাদের আমি তোমার সম্বন্ধে আর আমাদের পরিবার সম্বন্ধে সব কিছুই বলেছি। সব জানা সত্বেও ওনারা আমার ওপর কি ভাবে ভরসা করবেন। রেজিস্ট্রি বিবাহ করাতে ওনাদের কাছে একটা তো আইনানুগ প্রমান আছে। সুনিতার বাবা মাকে ভরসা দেবার জন্য আমি বিবাহ করেছি”।

সুভাস বাবু – ঠিক আছে আমি সব বুঝলাম। আর এও বললাম তুমি যা করেছ ঠিক করেছ। কিন্তু আমাকে যেন তোমার নামে কোন খারাপ কিছু শুনতে না হয়। আমি তোমার মাকে সব বুঝিয়ে দেব।   
 
পরদিন আকাশ অফিসে গিয়ে সবার সাথে কথা বার্তা বলে। শুরুর দিকের কাজ গুলো শেষ করে পালঘাটে সুনিতার বাবার সাথে কথা বলে। সব খবর দেওয়া নেওয়া হলে জিজ্ঞাসা করে সুনিতার মনের অবস্থা কেমন। সুনিতার বাবা যা জানতেন সব বললেন। সুনিতা যে কলেজে যাওয়া শুরু করেছে সে খবরও দেন। আকাশ বলে ও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব ব্যবস্থা করে জানাবে।

আকাশের বন্ধুরাও কিছু খবর শুনেছিল। আকাশ সংক্ষেপে সবাইকে বলে ওর প্রেম আর বিয়ের কথা। আকাশের সব বন্ধুরাই বলে একটা করে ‘তিনবন্ধু’ বই কিনবে ওদের মনের ভালবাসার মেয়েকে পড়ানর জন্য। আকাশ বলে শুধু পড়তে দিলেই হবে না। আগে নিজে পড়তে হবে আর তারপর প্রেমিকাকে পরে শোনাতে হবে। আকাশের বন্ধুরা ওকে কোলকাতার ‘ত্রিস্তান’ নাম দেয়।

আকাশ বাড়ি ফিরে বাবা মায়ের সাথে সেরকম কোন কথা বলে না। চুপ চাপ নিজের ঘরে চলে যায়। রবিবার ছুটির দিনেও বাড়ীর বাইরে যায় না। প্রায় এক অসামাজিক মানুষ হয়ে থাকেরবিবার দুপুরে খাওয়ার পরে চন্দ্রিকা দাদার সাথে কথা বলতে যায়। আগের দিনগুলোতে ও কলেজ আর কোচিং ক্লাস করে দাদার সাথে কথা বলার একদম সময় পায়নি। চন্দ্রিকা দাদার কাছে গিয়ে সেই চিরন্তন প্রশ্নটাই করে, “দাদা ভালবাসা আসলে কি”?

আকাশ বলে, “তোকে কে কে ভালোবাসে”?

চন্দ্রিকা – তুই ভালবাসিস, বাবা ভালোবাসে, মা ভালোবাসে।

আকাশ – আমরা ছাড়া আর কে কে ভালোবাসে তোকে ?

চন্দ্রিকা – কিছু বন্ধু ভালোবাসে। আর মামা, কাকা এইসব কিছু আত্মীয় স্বজন ভালোবাসে।

আকাশ – সবাই কি তোকে সমান ভাবে ভালোবাসে ? আর যারা যারা তোকে ভালোবাসে সবাই কে কি তুই মনে প্রানে একশ শতাংশ ভালবাসিস ?

চন্দ্রিকা – সবাই সমান ভালোবাসে না। কিছু বন্ধু আমার বেশী প্রিয়, কোন বন্ধু কম। কাকা বেশী ভালোবাসে না কিন্তু মামা খুব ভালোবাসে আমাকে। আর পুরোপুরি বিশ্বাস আমি কাউকেই করি না।

আকাশ – ভালবাসা কোথায় দেখতে পাস ?

চন্দ্রিকা – মুখে, ব্যবহারে আবার কোথায়।

আকাশ – দ্যাখ বোন আমরা ভালবাসা, বিশ্বাস, ভরসা সব কিছুই অন্য জনের চোখে দেখতে পাই। কে কতটা ভালোবাসে সেটা আমরা চোখের মধ্যে দেখতে পাই। আমাকে সেই ভালবাসার দৃষ্টি ব্যাখা করতে বললে আমি বলতে পারবো না। কিন্তু আমাদের সবার ব্রেনে আর অবচেতন মনে সেই ভালবাসার দৃষ্টি এঁকে রাখা আছে। আমাদের অবচেতন মন ঠিক বুঝে নেয় কে কতটা ভালোবাসে।

চন্দ্রিকা – আর বিশ্বাস বা ভরসা ?

আকাশ – আমি যদি তোকে এক গ্লাস গরম জল এনে তোর গায়ে ঢেলে দিতে যাই তুই কি করবি ?

চন্দ্রিকা – সরে যাব। তোকে জল ঢালতেই দেব না।

আকাশ – আমি যদি এক গ্লাস গরম জল নিয়ে সুনিতার গায়ে ঢেলে দিতে যাই, সুনিতা একটুও নড়বে না বা ভয়ও পাবে না কারণ ওর একশ শতাংশ বিশ্বাস আছে আমার ওপরে যে আমি ওর কোন ক্ষতি করতেই পারি না। এটাই ভালবাসা।

তারপর আকাশ আরও অনেক কিছু বলে বোন কে। ওদের ভালবাসা কিভাবে শুরু হল। কিভাবে দুজনেই দুজনকে ভালোবাসতে শুরু করল সব বলে বোন কে। রোজ সকালের সূর্যোদয় দেখা থেকে, মালম্বুলাহ ড্যাম ঘুরতে যাওয়ার কথা, ক্যানালের ধারে ঘুরতে যাওয়ার কথা, সেই সবও বলে। চন্দ্রিকা ওদের হানিমুনের কথা জিজ্ঞাসা করলে আকাশ যতটা বোনকে বলা সম্ভব তাই বলে। তবে কন্যাকুমারিতে খোলা বারান্দায় বসে আরও অনেক লোকের চোখের সামনে সঙ্গমের কথাও বলে।

চন্দ্রিকা – দাদা তুই তো একেবারে কামাল করে দিয়েছিস। আমি ভাবতেই পারছি না আমার দাদা এতো বড়ো হয়ে যাবে। ইস যদি আমারও তোর মত একটা বয় ফ্রেন্ড থাকতো কি ভালো হত। কোন ছেলে যদি আমাকে এইভাবে ভালোবাসে ও গরম জল কেন গরম তেল, লোহার ডান্ডা যাই নিয়ে আসুক না কেন আমি ভয় পাবো না।

আকাশ – কোন ছেলে তোকে ওইরকম ভালবাসার আগেই তোকে ওইরকম ভালবাসতে হবে। ভালবাসা দিলেই তুই ভালবাসা আশা করতে পারিস। পৃথিবীতে মায়ের ভালবাসা ছাড়া আর কারো ভালবাসা এক তরফা সম্ভব হয় না। দুজনেই যখন দুজনের চোখে ভালবাসা আর বিশ্বাস দেখতে পায় তখনই সার্থক ভালবাসা হয়। আমি আর সুনিতা দেখিয়ে দিতে চাই যে আজকের দিনেও এই ভাবে ভালবাসা সম্ভব।

চন্দ্রিকা – দাদাভাই তুই ভাবিস না আমি আর বাবা ঠিক তোর এই ভালবাসা মাকে বুঝিয়ে দেব। খুব তাড়াতাড়ি সব ঠিক হয়ে যাবে।
[+] 4 users Like TumiJeAmar's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#42
পালঘাটে সুনিতা –
সুনিতা কলেজে যায়। আপ্রান চেষ্টা করে মন পড়াশুনায় আর শুধু পড়াশুনাতেই লাগানর। কিছুটা সফল হয়। তবু যখনই একা থাকে ওর মনের আকাশে ভালবাসার আকাশ ভেসে ওঠে। কিছুদিন পরে ও বাংলা শেখার ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করে। রাজন খবর এনে দেয় এক বৃদ্ধ বাঙালি ভদ্রলোকের। ওনার নাম প্রমথেশ রায়। উনি ছেলের কাছে থাকেন। ওনার ছেলে পালঘাটেই কাজ করে। উনি সুনিতাকে বাংলা শেখাতে রাজী আছেন। সুনিতা যায় ওনার কাছে। ওনার বাড়ি সুনিতার কলেজের থেকে খুব একটা দুরে নয়। প্রমথেশ বাবু প্রথমেই জিজ্ঞাসা করেন সুনিতা কেন বাঙলা শিখতে চায়। সুনিতা ছোট্ট করে আকাশের সব কথা বলে। প্রমথেশ বাবু বলেন উনি খুসিমনেই সুনিতাকে বাঙলা শিখিয়ে দেবেন আর যেহেতু এটা ওনার পেসা নয় টাই উনি কোন পয়সাও নেবেন না। উনি বলেন মেয়ের সুখের জন্য উনি কখনো পয়সা নিতে পারবেন না। সুনিতার মনে হয় ও নোবেল প্রাইজ পেয়েছে।

তার পর দিন থেকে সুনিতা রোজ কলেজে যায়। কলেজ থেকে বাঙলা শিখতে যায়। সন্ধ্যের সময় বাড়ি ফেরে। কিছু পড়াশুনো করে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। বন্ধুদের সাথে গল্প যেটুকু কলেজে হয় আর রবিবারে। ওর কাছে রবিবারটাই দুঃখের দিন হয়ে যায়। সেদিন আকাশের কথা বেশী করে মনে চলে আসে। আবার রবিবারটাই ওর কাছে সব থেকে সুখের দিনও হয়ে যায় কারণ সেদিন ও শান্তিতে বসে আকাশের কথা ভাবতে পারে।
 
কোলকাতায় আকাশ –
আকাশ রোজ অফিসে যায়। বাড়ি ফিরে একটু একটু সবার সাথে কথা বলে। রবিবারে পাড়ার বন্ধুদের সাথেও গল্প করতে যায়। বন্ধুদের সাথে সুনিতার কথাও হয়। সবাই বলে ওরা এইরকম ভালবাসার কথা কোনদিন ভাবে নি। আকাশের কাছে শোনে যে ওর অফিসে সবাই ওকে কোলকাতার ত্রিস্তান নাম দিয়েছে। ওরাও ওকে একই নামে ডাকতে শুরু করে। এক বন্ধু জিজ্ঞাসা করে এই ‘ত্রিস্তান’ ছেলেটা কে। আকাশ ওদেরকে ত্রিস্তানের গল্প বলে।

এর মধ্যে চন্দ্রিকা রোজ একটু একটু করে সুনিতার কথা আর ওদের ভালবাসার কথা মাকে বলে। রোজ শুনতে শুনতে উনিও ভাবতে শুরু করেন সুনিতা মেয়েটা সত্যিই ওনার ছেলেকে ভালোবাসে। উনি সবথেকে অভিভূত হয়ে যান সুনিতার আকাশকে ‘হে প্রভু’ বলে পুজা করার কথা শুনে আর আকাশের মুখের গরম জলের কথা শুনে। মা আর যাই হোক মা তো। মা সবসময় ছেলের ভালই দেখে। কতদিন আর নিজের ইগো আর জেদের জন্য ছেলের থেকে দুরে থাকবেন! এক রাতে খাবার পরে আকাশ ঘরে গেলে, উনি ওর ঘরে গিয়ে আকাশের মাথায় স্নেহের হাত রেখে বলেন, “বাবা, তুই সত্যি সুনিতাকে এতোটা ভালবাসিস”?
 
পালঘাটে সুনিতা –
পনেরো দিন মত কেটে যায়। আকাশের কোলকাতা যাওয়া এক মাসের বেশী হয়ে গেছে। একদিন বাঙলা পড়ে বাড়ি ফিরে ফ্রেস হয়ে খেতে বসে। খেতে পারে না। বমি করে দেয়।

সুনিতার মা উঠে এসে ওকে ধরেন। সুনিতার বমি করা দেখে উনি ভয় পেয়ে যান আবার মনে আনন্দও হয়। সুনিতা একটু সামলিয়ে নিলে উনি পাশে বসে খাইয়ে দেন। সুনিতা বুঝতে পারে না ওর কি হয়েছে। ওর পেটের মধ্যে আর গলার মধ্যে অদ্ভুত অনুভুতি। একমাত্র ওর বিছানাতে গেলে শান্তি পাচ্ছে। ওর ভাইয়ের পাশে বসলে বেশী করে বমি পাচ্ছে। ও বুঝতে পারে না ভাইয়ের পাশে গেলে কেন বমি পাচ্ছে। একটু পরে ভাই ওর বই খাতা গুছিয়ে রেখে খেতে বসে তখন আর সুনিতার বমি পায় না। তখন সুনিতা ভাইয়ের একটা বই নিয়ে শুঁকে দেখে আর খুব জোর বমি পায়। সুনিতা গিয়ে ওর মাকে বলে যে ওর বইয়ের গন্ধে বেশী বমি পাচ্ছে। সুনিতার মা নিশ্চিত হয়ে যান যে ওর মেয়ের কোল আলো করতে এক দেবশিশু আসছে। উনি কাউকে কিছু বলেন না। শুধু সুনিতাকে বলেন পরদিন ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন।

মীনা এসে বলে ওর কাছে একটা অমুল্য জিনিস আছে যেটা ও সুনিতাকে দিতে ভুলে গেছে। সুনিতা উঠে বসলে মীনা বলে আগে ওকে ২০ তা চুমু দিতে তবে ও দিদিকে দিদির জিনিস দেবে। সুনিতা কোন কথা না বলে ভাইয়ের দুই গালে অসংখ্য চুমু দেয় আর হাত পাতে ওর সামনে। মীনা ওকে একটা একটু মোটা খাম দেয় - আকাশের চিঠি। সুনিতার এতক্ষনের ক্লান্ত মুখে সূর্যোদয়ের উজ্জ্বল আলো চলে আসে। ও চিঠি খুলে পড়তে যায়, কিন্তু বমি পেয়ে যায়। মীনা প্রস্তুত ছিল, ও দিদির একটা পারফিউম এনে আকাশের চিঠির ওপর স্প্রে করে দেয়। সুনিতা আকাশের চিঠি বুকের মধ্যে চেপে ধরে আগে মনে মনে আকাশে ধ্যান করে। পাঁচ মিনিট আকাশের কথা ভেবে ধীরে ধীরে চিঠি খোলে। দশ পাতার চিঠি। প্রথমেই একটা কবিতা লেখা।

What is worry my friend ?
What is pain my friend ?
All day and night all of you Love and Love
What is Love my dear ?
Is it only pain ? Is it only tears ? Is it only grief ?
Then why we all aspire for pain ?

তারপর আকাশ পালঘাট থেকে যাবার পর থেকে কি কি হয়েছে সব লিখেছে। ওর বন্ধুরা কি বলেছে, ওর বোন কি বলেছে, ওর বাবা মায়ের কথা সব লিখেছে। তারপর ওর মন কত অশান্ত, কিভাবে ওর দিন কাটে আর রাত কাটে সব প্রচুর আবেগ দিয়ে লেখাআকাশের চিঠি পরে সুনিতা চোখের সামনে ওর দুঃখ, ওর ব্যাথা দেখতে পায়। চিঠি পড়তে পড়তে সুনিতা একবার হাসে, একবার কাঁদে। কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকে, আবার পড়ে।  তারপর একসময় চিঠি পড়া শেষ হয়। নিঃশব্দে শুয়ে থাকে, আর একসময় ওর চিঠি বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে যায়।

পরদিন সুনিতার মা ওকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তার সব দেখে আর পরীক্ষা করে বলেন সুনিতা ৬ সপ্তাহ প্রেগন্যান্ট। সুনিতা আকাশ থেকে পড়ে। কাঁদবে না আনন্দ পাবে বোঝে না। হতবাক হয়ে যায়। মাকে বলে, “মা আমি এবার কি করবো”? ডাক্তার ওকে বলেন কিছুই করতে হবে না। সাবধানে থাকতে হবে। একদম লাফালাফি বা দৌড়া দৌড়ি যেন না করে।

বাড়ি ফিরে সুনিতার মা সুনিতার বাবাকে সব বলে। সুনিতার বাবা খুব খুশীউনি বলেন বিয়ে দিয়েছেন, সুহাগ রাত হয়েছে, হানিমুন হয়েছে, বাচ্চাও হবে। সেটা নিয়ে অতো চিন্তা করার কিছু নেই। সুনিতাও মনের খুশীতে আকাশকে চিঠি লিখতে বসে।
 
কোলকাতায় আকাশ –
আকাশের মা এখন বুঝে গেছেন ছেলের বৌ খুব ভালই হবে। উনি আকাশের কাছে সুনিতার ব্যাপারে সব শুনেছেন। আকাশ মাকে জিজ্ঞাসা করে প্রথমে কেন ওইরকম রেগে গিয়েছিল। স্মৃতি দেবী বলেন, “আমার ভয় লেগেছিল তোকে কোন মেয়ে বশ করে তোকে পটিয়ে নিয়েছে। আর তুইও ড্যাং ড্যাং করে ওই বৌয়ের পেছু পেছু লেজ নাড়াতে নাড়াতে ঘুরে বেড়িয়েছিস”।

আকাশ – এতদিন তুমি আমাকে এই চিনলে ?

স্মৃতি দেবী – আমি তোকে চিনি। কিন্তু ওই মেয়েটাকে তো চিনি না। তাই ভয়। আর ওইসব জায়গার মেয়েরা অনেক ঘোড়েল হয়।

আকাশ – তোমাদের এইটাই সমস্যা। ওইসব জায়গার মেয়েরা মানে! ওটাও ভারত, ওদের কালচার আর আমাদের কালচার দুটোই রামায়ন আর মহাভারত থেকে এসেছে। বরঞ্চ ওখানকার লোকেরা আমাদের থেকে বেশী রক্ষণশীল। না জেনে না বুঝে একটা আলপটকা মন্তব্য করে দিলে।

স্মৃতি দেবী – জানিনা তো তাই।

আকাশ – না জানলে জানি না বলবে। না হয় ভালো বলবে। বদনাম কেন করবে !

স্মৃতি দেবী – আচ্ছা বাবা ভুল হয়েছে। তোর বৌ ভালো। তোর বৌয়ের দেশের সবাই ভালো। ওখানকার চোররাও ভালো। ওখানকার পকেটমাররাও ভালো। 

আকাশ – সত্যি তুমি শুধরাবে না।

স্মৃতি দেবী – কেন আবার কি বললাম ?

আকাশ – চোর পকেটমার কথা থেকে এলো ?

স্মৃতি দেবী – ওই আরকি কথার কথা। আমি তোদের মত ওইরকম মেপে মেপে কথা বলতে পারিনা।

চন্দ্রিকা অনেক আগেই এসে দাদা আর মায়ের কথা শুনছিল। এবার সুভাস বাবু এসে জিজ্ঞাসা করলেন এতো জোর কিসের মিটিং হচ্ছে।

চন্দ্রিকা – দাদা মাকে বোঝাচ্ছে যে পালঘাটের চোর আর পকেটমাররাও খুব ভালো লোক।

আকাশ – এবার আমি তোকে গাঁট্টা মারব বলে দিচ্ছি।

চন্দ্রিকা এরপর বাবাকে বোঝায় ব্যাপারটা। সুভাস বাবু হো হো করে হেঁসে ওঠেন আর বলেন, “তাহলে তোমার পছন্দ হল ছেলের বৌ”?

স্মৃতি দেবী – দেখলাম কই যে পছন্দ বা অপছন্দের কথা আসছে ?

সুভাস বাবু – তাও যা শুনলে তাতে কি মনে হচ্ছে ?

স্মৃতি দেবী – আকাশ আর চন্দি যেরকম বলল সেইরকম মেয়ে হলে আমি সারাজীবন বুকে করে রাখব। বাপরে আকাশকে ‘হে প্রভু’ বলে পুজা করে। আমি ভাবতেও পারছিনা।

সুভাস বাবু – তবে তুমিও একদিন ওইভাবে পুজা করে দেখতে পার।

স্মৃতি দেবী – হ্যাঁ স্বপ্ন দেখো। খায় না মদন ঘুরে ঘুরে বেড়ায়!

আকাশ – মা পুজা মানে ভালবাসা।

স্মৃতি দেবী – হ্যাঁ বুঝেছি। সেদিনকার ছেলে আমাকে ভালবাসা বোঝাতে এসেছে। মেনে নিয়েছি আর কোন কথা বলবে না। আমি কোথায় ভেবেছিলাম একটাই ছেলে, তার বিয়ের জন্য কত মেয়ে দেখব, সবার বাড়ি গিয়ে কত মিষ্টি খাব। তা না নিজে নিজেই পছন্দ করে বিয়ে করে চলে আসলো।

সুভাস বাবু – তুমি মেয়ে এখনও দেখতে পার।

আকাশ – বাবা !!

সুভাস বাবু – আমাকে বলতে দে বাপ। তুমি মেয়ে এখনও দেখতে পার। দেখে মিষ্টি খেয়ে বলবে পছন্দ হল না, ব্যাস।

স্মৃতি দেবী – যাঃ তাই আবার হয় নাকি?

চন্দ্রিকা – মা বাবা তোমার পেছনে লাগছে সেটা বুঝতে পারছ না ?

স্মৃতি দেবী – না বাবা আমি তোমাদের কথা ঠিক বুঝে উঠতে পারি না, কখন সত্যি বল আর কখন যে ঠাট্টা করো কে জানে!

আকাশ – ক্ষিদে পেয়েছে, এবার খেতে দাও।

চন্দ্রিকা – হ্যাঁ হ্যাঁ খেতে দাও দাদার দেরি হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে আর স্বপ্নে বৌদিকে দেখতে হবে। দেরি হয়ে যাচ্ছে।

আকাশ – আবার গাঁট্টা মারব তোকে।

বেশ হাঁসি খুশীর ভেতর ওদের খাওয়া শেষ হয়। আকাশ মনে অনেক শান্তি নিয়ে নিজের ঘরে ঢোকে। চন্দ্রিকাও পেছন পেছন আসে। দাদাকে বলে, “আমি গত দশ দিন ধরে মাকে একটু একটু করে তোদের সব কথা বলেছি। তারপর মায়ের মন বৌদিকে মেনে নিয়েছে”।

আকাশ – তুই আমার সোনা বোন। আমিও তোর জন্য এইরকম একটা বর খুঁজে আনব, যে তোকে ‘হে দেবী’ বলে পুজা করবে”।

চন্দ্রিকা – না না আমার দরকার নেই ওইসব পুজা করবার। আমার একটা ভালবাসার ছেলে পেলেই হল।

আকাশ – সময় হোক ঠিক পেয়ে যাবি।

চন্দ্রিকা – জানি, যার দাদা আর বৌদি এইরকম সেই মেয়েকে কোনদিন কষ্ট পেতেই হবে না।

আকাশ – তুই কি মাকে সব বলে দিয়েছিস ?

চন্দ্রিকা – ভয় নেই তোদের সমুদ্রের ধারে সেম সেম হয়ে ভালবাসার কথা বলিনি। ওটা শুধু আমার বন্ধুদের বলেছি। আর মিলি শুনে বলে তোর দাদাকে ভালবাসলে কত সুন্দর হত।

আকাশ – তোরা সুনিতাকে না দেখেই এতো কিছু বুঝে গেলি।

চন্দ্রিকা – সেটা তোর ভালবাসার জন্য। তুই ভালবেসে কথা দিয়ে বৌদির যে ছবি এঁকে দেখিয়েছিস সবাইকে, যে আমার তো মনে হচ্ছে আমি বৌদিকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। সত্যি বৌদি কি ভাগ্য করে জন্মেছে।

আকাশ – না রে আমি বেশী ভাগ্য করে জন্মেছি। আর ভাগ্যিস ওই কোম্পানিতে জয়েন করেছিলাম।

চন্দ্রিকা – আমি এবার যাই। তুই স্বপ্ন দ্যাখ।

আকাশ বসে বসে আবার চিঠি লেখে সুনিতাকে। সব খুশীর খবর বিশদ ভাবে লেখে। আর বলে ওর মনে হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি ও গিয়ে সুনিতাকে নিয়ে আসতে পারবে। চিঠি লিখে শুয়ে পরে। আর সত্যিই সুনিতাকে স্বপ্নে দেখে। স্বপ্ন দেখে কন্যাকুমারিতে ওরা দুজনে উলঙ্গ হয়ে সমুদ্রের ধারে বসে আছে। সবাই ওদের চারপাশ দিয়ে ঘুরে যাচ্ছে কেউ ওদের কিচ্ছু বলছে না। ওরা দুজনে সমুদ্রের ধারে শুয়ে পরে আর খেলতে শুরু করে। যখন আকাশ ওর ময়ুর সুনিতার সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়েছে তখন কত ছেলে মেয়ে ওদের ঘিরে ধরে দেখছে। আকাশ সুনিতার কবুতর নিয়ে খেলে যাচ্ছে। হটাত করে দর্শকদের মধ্যে একটা মেয়ে এসে ওর কানের কাছে কুউউউ করে চেঁচিয়ে ওঠে। আকাশের ঘুম ভেঙ্গে যায়। দেখে চন্দ্রিকা ওর কানে কুউউউ করেছে ওর ঘুম ভাঙ্গানর জন্য। আকাশ মন খারাপ করে বসে থাকে। চন্দ্রিকা ওর সামনে কান ধরে বলে, “তুই নিশ্চয়ই বৌদিকে স্বপ্নের মধ্যে আদর করছিলি। মুখে সুনিতা উঁ উঁ বলছিলি। স্যরি আর তোর এভাবে ঘুম ভাঙ্গাব না”।

এই বলে হি হি করে হাসতে হাসতে পালিয়ে যায়। আকাশ উঠে পরে ওর স্বপ্নের কথাটা আরেকটা কাগজে লিখে, চিঠির খামে ভরে দেয়। তারপর খেয়ে দেয়ে অফিসে যায়। দুপুরে সুনিতার বাবার কাছ থেকে ফোন আসে। আকাশ জানতে পারে সুনিতা মা হতে চলেছে।
 
[+] 3 users Like TumiJeAmar's post
Like Reply
#43
আকাশও প্রথমে বুঝে উঠতে পারে না এই খবরে ও আনন্দ করবে না চিন্তা করবে। খুশীতে পাগল হয়ে যাবে না ভবিষ্যতের কথা ভেবে টেনশন করবে। তারপর ভাবে সুনিতা তো ওর লিগ্যাল আর বৈধ স্ত্রী। আর বিয়ের পরে বৌয়ের বাচ্চা হয় এটা তো জানা কথা। আকাশ তো লুকিয়ে বিয়ে করেনি। সবাই জানে যে সুনিতা আকাশের বৌ। এর পর থেকে সবাই জানবে সুনিতা আকাশের বাচ্চার মা। এর মধ্যে খারাপ তো কিছু নেই। তাই দুশ্চিন্তা করার কোন কারণ নেই। কিন্তু চিন্তা করতে হবে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা নিয়ে।


আকাশের মনে পরে ও কন্যাকুমারীতে দু বার কনডম ছাড়া সঙ্গম করে ছিল। আর তাতেই হয়েছে। ও মনে মনে সেই স্নান করার সময়ের কথা আর সূর্যোদয়ের সময় অনেক লোকের সামনে ভালবাসার কথা ভেবে মনে মনে হেঁসে ওঠে। তারপর ভাবে একটু আনন্দ করা যাক। ও নীচে গিয়ে ১০০ টাকার মিষ্টি (১৯৮৫ সালে ১০০ টাকার মিষ্টি মানে অনেক) কিনে আনে আর অফিসের সবাইকে খাওয়ায়। সবাই কারণ জানতে চাইলে ও বেশ গর্বের সাথে বলে ও বাবা হতে চলেছে। অফিসের সবাই হইচই করে ওঠে।

ওদের অফিসে একটা তামিল মেয়ে কাজ করতো নাম সুগন্ধি। ও তামিল কিন্তু পরিষ্কার বাংলাতেই কথা বলত। ও প্রথম থেকেই আকাশের মন টানার কাজে লেগে পড়েছিল। কোন না কোন বাহানায় আকাশের গায়ে গা লাগিয়ে দিত। অনেকবার আকাশের হাতে ওর স্তন দিয়ে চাপ দিয়েছে। আকাশ প্রথম দিকে গা করতো না কিন্তু পরে ও সোজা বলেছিল ওর এটা ভালো লাগছে না। সুগন্ধি অবাক হবার ভান করে জিজ্ঞাসা করেছিল, “কোনটা”?

সেই সুগন্ধি আকাশের বাবা হবার খবরে সব থেকে বেশী মজা করেও চেঁচিয়ে বলে ওঠে এই টুকু বাচ্চা ছেলে বাবা হবে, বেশ মজার ব্যাপার তো। আকাশ বলে ও এর মধ্যে মজার কি দেখল। সুগন্ধি বলে, এই টুকু বাচ্চা ছেলে, সে আবার একটা মেয়েকে ভালবেসে ফেলল। আবার তার সাথে সেক্সও করল, আর এমন সেক্স করল যে মেয়ে প্রেগন্যান্ট হয়ে গেল। দেশে কি ইন্সুলেসন পাওয়া যায় না ? আকাশ বলে ওরা ভোর বেলা সমুদ্রের ধারে ছিল আর ইন্সুলেসন শেষ হয়ে গিয়েছিল। নিজেদেরকে সামলাতে পারেনি। আর যা হয়েছে ভালই তো হয়েছে। এই কথাগুলো ওরা দুজনে জোরে জোরেই বলেছিল আর অফিসের সবাই শুনছিল। অন্য সবাইও বেশ মজা করল আকাশের বাবা হবার ব্যাপারটা নিয়ে। শেষে সুগন্ধি আকাশের কানে কানে বলে যায় যে ও একদিন ঠিক দেখবে আকাশের ভালবাসার যন্ত্রটার কেমন ক্ষমতা। 

আরেকজন একটু বেশী বয়সের মহিলা ছিল যে অফিসের সবার প্রতিমা দি। সে বলে একটা বাচ্চা মেয়ে যার নাক টিপলে দুধ বেরত, আকাশ ওর সাথে দুদিন কি করল যে অন্য কিছু দিয়ে দুধ বেরোবার সময় এসে গেল, খুব ভালো খুব ভালো। অফিসের সবাই খুব হাসাহাসি করে। আকাশের এক সিনিয়র ওকে বলে বাচ্চা হবে এই খবরটা সবার সাথে শেয়ার না করলেই ভালো করতোআকাশ কারণ জিজ্ঞাসা করলে ও বলে বাচ্চা হবার আগে আনন্দ করলে সেটা বাচ্চা জন্য সবসময় ভালো নয়, কারো নজর লেগে যেতে পারে। আকাশ বলে এখনকার দিনে কেউ আবার এইসব মানে নাকি!

আকাশ বাড়ি ফিরে মা আর বোনকে বলে সুনিতার মা হতে চলার খবর। এই খবরে স্মৃতি দেবী খুব খুশী হন, আর বলেন, “এতদিনে আমার ছেলে কোন একটা ছেলের মত কাজ করেছে”।

আকাশ লজ্জা পেয়ে যায়। চন্দ্রিকা এসে আকাশ কে বলে, “ভোর বেলা সমুদ্রের ধারে, সেম সেম দাদা বৌদির ভালবাসার ফসল আসছে। কি মজা আমরা সবাই একটা পুতুল পাবো”।

স্মৃতি দেবী – সমুদ্রে ধারে সেম সেম মানে ?

চন্দ্রিকা – ও তুমি বুঝবে না, ওটা বড়দের কথা। বাবা মায়ের মত বাচ্চাদের ওটা শুনতে নেই।

স্মৃতি দেবী – তোরা খুব বড়ো হয়ে গিয়েছিস ?

চন্দ্রিকা – দেখো দাদাও এবার বাবা হবে, তাই ওকে আর তুমি বাচ্চা বলতে পার না। আর আমি দাদার থেকে একটু খানি ছোটো তাই আমিও প্রায় বড়ো হয়ে গেছি।

স্মৃতি দেবী – ঠিক আছে তোমরা সবাই বড়ো হয়ে গেছ। কিন্তু আর বেশী পাকামো করতে হবে না।

চন্দ্রিকা – কিন্তু এই বাড়ীতে সমুদ্র আসলে, ও কিন্তু আমার কাছে থাকবে।

স্মৃতি দেবী – এই সমুদ্র আবার কে ?

চন্দ্রিকা – কেন দাদার ছেলে হবে। আর তার নাম হবে ‘সমুদ্র’

আকাশ উঠে বোনকে আলতো করে গাঁট্টা মারে। চন্দ্রিকা বলে, “দাদা দেখিস তোর ঠিক ছেলে হবে”।

আকাশ – না আমার মেয়ে হবে আর ওর নাম হবে ‘ঊষাশ্রী’

এমন সময় সুভাস বাবু বাড়ি ফেরেন আর জিজ্ঞাসা করেন এতো হইচই কিসের।

স্মৃতি দেবী – আকাশের বৌ সুনিতা মা হতে চলছে, আকাশ বাবা হচ্ছে। তুমি দাদু আর আমি ঠাকুমা হবো।

চন্দ্রিকা – আর আমি পিসি হবো।

সুভাস বাবু – ঠিক আছে পুরো ব্যাপারটা কি বল তো।

স্মৃতি দেবী – ব্যাপার আবার কি ছেলে বিয়ে করেছে তাই ওর বাচ্চা হবে। এর মধ্যে আবার ব্যাপারের কি আছে। বিয়ের পরে আমি আর তুমি যা করেছিলাম আকাশরাও তাই করেছে।

সুভাস বাবু – আরে ছেলে মেয়ের সামনে কি কথা বলছ একটু বুঝে বল।

স্মৃতি দেবী – এতে আবার লজ্জা পাবার বা বোঝার কি আছে। ওরা সবাই বড়ো হয়ে গেছে।

আকাশ আর চন্দ্রিকা মায়ের ব্যবহার দেখে আর কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। ওদের মা যেন একদম বাচ্চা হয়ে গেছে।

স্মৃতি দেবী – এবার তাড়াতাড়ি পালঘাটে যাবার টিকিট কাটো দেখি। বৌমা কে দেখে আসি আর সম্ভব হলে নিয়ে সাথে করে নিয়ে আসি।
আকাশ রাত্রে আবার চিঠি লিখতে বসে।
 
পালঘাটে সুনিতা –
সুনিতার জীবনও বদলে গেছে। সুনিতা ভাবতেই পারে না ও মা হবে। ও ভাবে এই কিছুদিন আগে ও একা ছিল। বাবা মা ছিল, ভাই ছিল, বন্ধুরা ছিল। তবুও ও একাই ছিল। আকাশ আসার পরে ওরা ‘দুজন’ হল। সেটা হতে না হতেই এবার ‘তিনজন’ হবে! ও মনে মনে কতবার বলে মা মা। যতবারই মনের মধ্যে ‘মা’ বলে এক আশ্চর্য রোমাঞ্চ ওকে ঘিরে ধরে। ও ভাবে একটা রক্ত মাংসের তৈরি নতুন প্রান ওর দেহের মধ্যে বড়ো হচ্ছে।  সুনিতা নিজের মনেই বার বার বলতে থাকে ‘আমি মা হবো’, আমি মা হবো।

কিছুদিন পর সুনিতা বলে কলেজ যাবে। ওর ডাক্তার বলেন প্রথম তিনমাস খুব সাবধানে থাকতে হবে সুতরাং বাসে যাতায়াত করা একদম মানা। একদিন রাজন গাড়ি করে ধীরে সাবধানে চালিয়ে সুনিতাকে কলেজে নিয়ে যায়। ওর এই সেসনের আর মাত্র দুমাস ক্লাস বাকি ছিল। কলেজের প্রফেসররা আর কতৃপক্ষ রাজী হয় যে সুনিতাকে কলেজে না আসলেও চলবে। সুনিতা দিব্যার কাছ থেকে ক্লাসের নোটস নিয়ে নেবে। আর বাঙলা শিক্ষক কে রাজী করান হয় যে শনিবার আর রবিবার রাজন গিয়ে ওনাকে নিয়ে আসবে আবার পরে বাড়ীতে পৌঁছে দিয়ে আসবে।

রোজ কলেজ থেকে ফিরে দিব্যা আর লতা সুনিতার কাছে চলে আসে। সারাদিনে কি হল সব বলতে আর নোটস দিতে। লতা মাঝে মাঝে আসে না বা দেরি করে আসে। দিব্যা সুনিতাকে বলে ও ছুটির পর কিছু ছেলের সাথে মস্তি করতে চলে যায়। ক্লাসের মধ্যেও মাঝে মাঝে লতা পেছনের দিকে গিয়ে বসে। দিব্যা দেখেছে লতার দুপাস থেকে দুটো ছেলে ওর স্তন নিয়ে খেলছে। একটা ছেলের হাত ওর স্কার্টের মধ্যে।

একদিন সুনিতা লতাকে জিজ্ঞাসা করে ও কলেজে সব ছেলেদের সাথে কি করে। ও দিব্যার কাছ থে যা শোনে সেটা ওর ভালো লাগে নালতা জিজ্ঞাসা করে, “দিব্যার কাছ থেকে কি শুনেছিস”?

সুনিতা – তুই ছেলেদের মাঝে গিয়ে বসিস। ক্লাসের মধ্যেই ছেলে গুলো তোর বুকে হাত দেয়, নীচে যোনিতে হাত দেয়। তুইও ওদের প্যান্টের মধ্যে হাত দিস।

লতা – খেলা করি, তো কি হয়েছে ?

সুনিতা – আর ওই ছেলে গুলো ?

লতা – ওরাও আমার সাথে খেলা করে মজা নেয়।

সুনিতা – তুই এখনও সবার সাথে সেক্সের খেলা চালিয়ে যাচ্ছিস! আমি যে তোকে কত বোঝালাম, তুই একটুও পালটাবি না ?

লতা – আমি অনেক ভেবেছি ভালবাসা না সেক্স কোনটা নেব। শেষে দেখলাম আমি ভালবাসা বুঝিনা। ওই প্যান প্যান করে হাতে হাত রেখে ‘আমি তোমার সব’ আমার দ্বারা হয় না। কেউ আমাকে ভালোবাসে বলার থেকে আমার যোনির ভেতর আঙ্গুল দিয়ে খোচালে আমার বেশী ভালো লাগে।

সুনিতা – তুই ছেলেদের কে ওইসব করতে দিস ?

লতা – আমি কলেজে স্কার্টের নীচে কিছু পরে যাই নাঅনেক ছেলেই সেটা জানে। পেছনে বসে এক এক ক্লাসে এক একটা ছেলে আমার যোনির ভেতর আঙ্গুল দিয়ে আমাকে আরাম দেয়।

সুনিতা – তোর ক্লাসের মধ্যে এইসব করতে ভয় লাগে না ? কেউ যদি দেখে নেয় ?

লতা – ভয় কিসের। আমার চার পাশে যারা বসে সবাই জানে আর আমার সাথে খেলে। তো ভয় কেন পাব!

সুনিতা – কোন টিচার যদি দেখে ফেলে ?

লতা – চার জন টিচার জানে। আমাকে পরে ফাঁক মত গিয়ে ওদের একটু বেশী করে আরাম দিয়ে দিতে হয়।

সুনিতা – মানে?

লতা – আমাকে ওই টিচারদের সাথে খেলা করতে হয় আর সঙ্গম করতে হয়। খুব মজা লাগে। তোরা যে টিচারদের দেখে ভয় পাস ওরা আমার বুকের মধ্যে মিউ মিউ করে। কলেজের কয়েকটা ছেলেও আমার সাথে জঙ্গলে গিয়ে সঙ্গম করে। সে যে কি মজা তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।

সুনিতা – কেন তোরা কোথায় যাস আর কি করিস?

লতা – আমি আর রেখা (ক্লাসের আর একটা মেয়ে) ওদের পাঁচ জনের সাথে ওই ক্যানালের ধারের জঙ্গলে চলে আসি। সবাই উলঙ্গ হয়ে ঘুরে বেড়াই। যার যখন খুশী যে ভাবে খুশী সঙ্গম করি। বহুত মজা হয়।

সুনিতা – তুই কিন্তু ভালো করছিস না।

লতা – ভালো খারাপের কি আছে! তুই আকাশকে ভালবেসে শুধু ওর সাথেই সেক্স করেছিস। তাও কতবার! দশ বার কুড়ি বার, খুব বেশী হলে পঞ্চাশ বার। তার বেশী নয়।     

সুনিতা – না না আমরা ওত বার করিনি। খুব বেশী হলে কুড়ি বার হবে।

লতা – তবেই দ্যাখ। আমি প্রায় রোজ করি। কম করে দুশো বার করেছি আর কুড়ি জন আলাদা আলাদা ছেলে আর লোকের সাথে। বল কোনটা বেশী মজার ?

সুনিতা – তুই সেক্স করেছিস। ভালবাসা করিস নি। ভালবাসা দিয়ে সেক্স কত আনন্দ দেয় সেটা জানিসই না।

লতা – সেক্স শুধুই সেক্স। তার মধ্যে ভালবাসা থাকল কি থাকল না তাতে ভারি বয়ে গেছে।

সুনিতা – তুই জানিস না তুই কি পাসনি।

লতা – তুইও জানিস না তুই কি পাচ্ছিস না।

সুনিতা – লতা সাবধান হয়ে যা, একদিন বিপদে পড়বি।

লতা – কিচ্ছু হবে না। সব এইভাবেই থাকবে। এই বেশ ভালো আছি।

লতা লতার মতই থাকে। সুনিতা ওকে বলে কিছুই পাল্টাতে পারে না। প্রায় রোজই সুনিতা ওকে বলে ঠিক হতে। লতা ওকে বলে, “দ্যাখ এক আকাশকে ভালবেসে তুই শুধু দুঃখোই পাচ্ছিস। একটা ফুলের ওপর যেমন একশোটা প্রজাপতি উড়ে বেড়ায়, আমার চারপাশে সব সময় কত ছেলে ঘুরে বেড়ায়”

সুনিতা - দ্যাখ ফুলের মধু শেষ হয়ে গেলে কোনো প্রজাপতি সেই ফুলের কাছে যায় না। তোর মধু শুকিয়ে গেলে ওই ছেলেরাও কেউ তোর পাশে থাকবে না।

লতা – আমার মধু ওত তাড়াতাড়ি শুকাবে না। আর মধু শুকিয়ে গেলে তুইকি ভাবছিস আকাশও তোর সাথে থাকবে ? আকাশও অন্য ফুলের পেছনে চলে যাবে তখন।

সুনিতা – আমার আকাশ আমাকে ছেড়ে কক্ষনো কোথাও যাবে না। আর কোন দিন যদি একবার কোথাও চলেও যায় পরদিন আবার আমার কাছেই ফিরে আসবে।
সুনিতা একদিন বাড়ি ফিরে আকাশের চিঠি পায়। আকাশ লিখেছে আর একমাস পরে আকাশের বাবা আর মা ওকে দেখতে পালঘাট আসছেন। সেদিন সুনিতা আনন্দে কেঁদে ফেলে। সুনিতার বাবা আর মা খুব খুশী। সুনিতার বাবা বলেন যে উনি জানতেন আকাশ খুব ভালো ছেলে। আকাশ কখনই ওদের সুনিতাকে ছেড়ে যাবে নাসুনিতার মা বলেন উনি আরও আগে থেকেই সেটা জানতেন আর তাই সুনিতাকে আকাশের সাথে সম্পর্ক রাখতে দিয়েছিলেন। 
 
কোলকাতায় আকাশ –
সুভাস বাবু আর স্মৃতিকনা দেবী পালঘাটে যাবেন। বিশাল লম্বা জার্নি। কোলকাতা থেকে করমন্ডল এক্সপ্রেসে চেন্নাই তখন ৩৪ ঘণ্টার জার্নি ছিল। তারপর চেন্নাই থেকে পালঘাট আরেকটা ট্রেনে ১২ ঘণ্টা। ওনারা বেড়োবেন ৯-ই আগস্ট (১৯৮৫) শুক্রবার। রবিবার সকালে চেন্নাই পৌঁছবেন। রবিবারে চেন্নাইয়ে একটা হোটেলে থাকবেন। রাজন ওর এক বন্ধুর সাহায্যে ওখানে টি-নগরে হোটেল পেনিনসুলা বলে একটা হোটেল বুক করে দিয়েছে। রবিবারে চেন্নাইয়ে বাজার করবেন। সোমবার সকালে ওখানে একটা হাসপাতালে স্মৃতি দেবিকে দেখাবেন। তারপর রাত্রে আলেপ্পি এক্সপ্রেসে পালঘাট যাবেন। মঙ্গলবার সকালে রাজন ওনাদের জন্য হোটেল ক্যাসিনো তে বুক করে রেখেছে। ফেরার টিকিটের ব্যবস্থা রাজন করে রাখবে।

আকাশ ভাবে ওর জীবনে যেরকম সুনিতা স্ত্রী হিসাবে এসেছে সেইরকমই ভাগ্য করে একটা বন্ধু পেয়েছে। ওর যখন যা সাহায্যের দরকার হয়েছে রাজন কিছু না বলতেই করে দিয়েছে। আকাশ কোন দিন কোন কিছু অনুরোধ করেনি বা চায়নি রাজনের কাছে। আকাশের কখন কি দরকার রাজন না বলতেই বুঝে যায়।  আকাশ বাবা মায়ের যাবার টিকিট করে রাজনকে ফোন করে ছিল। টিকিটের তারিখ গুলো শুধু রাজনকে জানিয়েছিল। রাজন পরের দুদিনে বাকি সব ব্যবস্থা করে আকাশকে জানিয়ে দিয়েছে।

আমরা অনেকেই ভাববো আকাশ কি ভাবে ওইরকম বন্ধু পেয়ে গেল। এর রহস্য হল যদি আমি সবাইকে দরকার মত সাহায্য করি, তবে আমিও সাহায্য পাব না চাইতেই। আমি যদি ঠিক থাকি তবে সব জায়গাতেই বন্ধু পাব। সব কিছু ‘এই আমি’-এর Attitude-এর ওপর নির্ভর করছে।   

আকাশের মন এখন অনেক শান্তসুনিতার জন্য মন খারাপ করে। মানুষের মনও নাকের মত। আমরা কে কোন একটা গন্ধ দু মিনিট মত শোঁকার পর আর সেই গন্ধটা বুঝতে পারি না। অন্য গন্ধ বুঝতে পারিমানুষের মনও সেইরকম দুঃখের মধ্যে কিছুদিন থাকার পর সেই দুঃখটাকে আর বুঝতে পারে না। আমরা বলি সয়ে গেছে। এখানে আকাশের আর ওখানে সুনিতার দুজনেরই মনের অবস্থা একই রকম, বিরহ জ্বালা আছে কিন্তু সয়ে গেছে। এই বিরহ আকাশকে আলাদা করে কষ্ট দেয়না। রোজ রাত্রে স্বপ্নে সুনিতাকে দেখবে। প্রত্যেক রাতে আলাদা জায়গায় ওকে নিয়ে যায়। প্রত্যেক রাতে আলাদা ভাবে ভালোবাসে। আর প্রত্যেক দিন সকালে আলাদা ভাবে ঘুম ভাঙ্গে। কোনদিন সুনিতাকে চুমু খেতে গিয়ে দেয়ালে ঠোঁট ঘষে যায় আর ব্যাথায় ঘুম ভাঙ্গে। কোনদিন সুনিতার কবুতর কে আদর করতে করতে দেখে বালিস চেপে ধরে আছে। চন্দ্রিকা দুষ্টুমি করে দাদাকে দুটো পাস বালিস দিয়ে গেছে।

অফিসে গেলে আকাশ মন দিয়ে কাজ করে। সেখানে কোন ফাকি দেয় না। ও ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে যে যে মেসিনের ট্রেনিং নিয়েছে সব গুলোতেই এক্সপার্ট হয়ে গেছে। ওর বেশীর ভাগ কাজই মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি নিয়ে। ই সি জি মেসিন আর ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটের মেসিন দেখে। সেই জন্য অনেকদিনই কোলকাতার সব নারসিং হোম আর হাসপাতালে ঘুরে বেড়ায়। সবাই ওদের অফিসে ফোন করে আকাশকে পাঠাতে বলে।

এর মধ্যে একদিন একটা জরুরি মেসিন ঠিক হচ্ছিল না। বেশ রাত্রি পর্যন্ত বসে ছিল। আর সুগন্ধিও বসে ছিল কোন একটা রিপোর্ট রেডি করার জন্য। ও মাঝে মাঝে এসে আকাশের সাথে কথা বলে যাচ্ছিল। অফিসে আর কেউ ছিল না, শুধু অফিসের পিওনটা বাইরে বসে পাহারা দিচ্ছিল। সুগন্ধির কাজ শেষ হয়ে গেলেও বাড়ি যাচ্ছিল না। একবার গিয়ে আকাশকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আকাশ লাফিয়ে উঠে ওকে সরিয়ে দেয়। সুগন্ধি বলে, “কেন আমার বুকের ছোঁয়া কি তোমার ভালো লাগলো না”?

আকাশ – আমি তোমাকে আগেও বলেছি যে আমি তোমার সাথে কিছু করতে পারবো না, তুমি কেন আমাকে ছারছ না ?

সুগন্ধি – আমিও তোমাকে চাই আকাশ।

আকাশ – সেটা কখনই সম্ভব নয়। আমি সুনিতাকে সব দিয়ে দিয়েছি। আমার কাছে তোমাকে দেওয়ার জন্য আর কিছুই নেই।

সুগন্ধি – তুমি সুনিতাকে তোমার মন দিয়েছ। আমি জানি আমি কখনই তোমার মন পাবো না। তবু অন্তত তোমার শরীরটা আমাকে দাও।

আকাশ – সেটাও সম্ভব নয়, সেটা সুনিতার সাথে প্রতারনা করা হবে। আর আমি শরীরের সম্পর্কতে বিশ্বাস করিনা। পেতেও চাই না।

সুগন্ধি – শুধু একদিনের জন্য দাও। তুমি একবার একটু আদর করো আমাকে। আমি সেই টুকু নিয়েই খুশী থাকব।

আকাশ – আমিতো বার বার বলেছি সেটা সম্ভব নয়। কেন একটা অসম্ভবকে নিয়ে তুমি এতো জেদ করছ ?

সুগন্ধি – তুমি আর সুনিতা সত্যিই কি হোটেলের বারান্দায় অন্যদের চোখের সামনে সুনিতার সাথে সঙ্গম করেছিলে?

আকাশ – হ্যাঁ করেছিলাম, তাতে কি হয়েছে ?

সুগন্ধি – অনেক লোকে তোমাকে আর সুনিতাকে উলঙ্গ দেখেছে ?

আকাশ – হ্যাঁ দেখেছে, তাতেই বা কি হয়েছে।

সুগন্ধি – তোমার সব কিছু কত জনে যখন দেখেছে, তখন আমাকে দেখালেই বা কি এসে যায়?

আকাশ – আমি ওদের দেখায়নি, ওরা দেখেছে।

সুগন্ধি – সে একই হল। আমাকে একদিন দাও তোমার সোনাকে আদর করি। প্লীজ।

আকাশ – না, পারবো না তুমি যা চাইছ সেটা দিতে। অফিসে আরও অনেকেইতো আছে। পলাস দা কে বললেই তোমার সাথে সব কিছু করে দেবে। তুমিও খুশী পলাস দাও খুশী।

সুগন্ধি – আমাকে কি তুমি বেশ্যা ভেবেছ নাকি যে যে খুশী করতে চাইলেই আমি দিয়ে দেব! আমি শুধু তোমাকে চাই।

আকাশ – তুমি যদি আমাকে ভালবেসেই থাকো আগে বলতে হত। এখন আর সম্ভব নয়। এখন বাড়ি যাও অনেক রাত হয়ে গেছে। বাড়ীতে সবাই চিন্তা করছে।

সুগন্ধি – আমাকে ফিরিয়ে দিলে। দুঃখ পেলাম কিন্তু রাগ করলাম না। সুনিতাকে একবার হিংসা হচ্ছে, কিন্তু সেই নিস্পাপ মেয়েটাকেও আমি তোমার কাছ থেকে শুনে ভালবেসে ফেলেছি। আমি চাই না ওর কোন ক্ষতি হোক। ও বাচ্চা নিয়ে আসুক। ওর কাছ থেকে তোমাকে এক রাতের জন্য চেয়ে নেব। তখন প্লীজ তুমি না করো না।

আকাশ বুঝতে পারে সুগন্ধিও ওকে সত্যিই ভালোবাসে, কিন্তু ও নিরুপায়। ওর মনের মধ্যে একটাই ঘর আর সেখানে সুনিতা দখল নিয়ে বসে আছে। ওর কাছে আর কোন ঘর নেই যেখানে ও সুগন্ধিকে রাখতে পারে। তবু সুগন্ধিকে সান্তনা দেবার জন্য ও বুকে টেনে নেয়, গভীর মমতায় ওর ঠোঁটে একটা চুমু খায় আর বলে, “এখন আমি তোমাকে এর বেশী ভালবাসা দিতে পারবো না। আমাকে ক্ষমা করে দিও”।
 
পালঘাটে সুনিতা –
সুনিতার দিনও ভালই যাচ্ছে। আকাশের বাবা মায়ের আসতে মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি। ও যদিও জানত যে ওনারা ওকে গ্রহন করে নেবেনই, তবু মনের মধ্যে একটা ‘কিন্তু’ ছিল বা ‘যদি’ ছিল। ওর আকাশের ওপর কোন অবিশ্বাস ছিল না। ও জানত আকাশ ওকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। কিন্তু ওর বাবা মায়ের ‘যদি’ পছন্দ না হয়। যদিবা পছন্দ হয়েও যায় তখন ওনারা বললেন মেয়ে পছন্দ ‘কিন্তু’ অমুক টা ঠিক নেই, তমুক টা খারাপ তখন কি হবে। ওর এখন মাথা থেকে ‘যদি’ টা গিয়েছে। কিন্তু ‘কিন্তু’ টা থেকেই গেছে। রোজ সকাল বেলা সূর্যদেবের কাছে প্রার্থনা করে ওকে যেন কোন ‘কিন্তু’-এর শিকার না হতে হয়।

দিব্যার সহযোগিতায় পড়াশুনা ভালই চলছে। রাজনের সহযোগিতায় বাঙলা শেখাও ভালো এগোচ্ছে। ও তিনবন্ধু বইটা পড়তে পারে, সব বুঝতে পারে না। দু দিন ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল। সব নর্মাল আছে। ওর রক্তে হিমোগ্লোবিন কম বলে, ডাক্তার আয়রন ট্যাবলেট খেতে দিয়েছে।

সুনিতা দিনের বেলা আকাশের কথা ভাবে। আকাশের কথা মনে করে মাঝে মাঝে হেঁসে ওঠে। প্রথম দিকে ওর মা আর ভাই ভয় পেয়েছিল সুনিতা হয়ত একটু পাগল মত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন সবাই জানে সুনিতা কেন হাসে। আকাশের চিঠি পড়ে ও মনের মধ্যে একটা ছবি এঁকে নিয়েছে ওর শ্বশুর বাড়ি কেমন দেখতে। আকাশের বাবা, মা আর বোন কেমন দেখতে।  রাত্রি বেলা ঘুমিয়ে ও সেই কাল্পনিক বাড়ীতে ঘুরে বেড়ায়। ও ভবিষ্যতের সন্তান কে নিয়ে ওই বাড়ীতে কত কি করে। কিন্তু কোনদিন বুঝতে পারে না ওর ভবিষ্যতের সন্তান ছেলে না মেয়ে। ও রোজ সকালে ভাবে এর পড়ে যখন স্বপ্নে বাচ্চাকে দেখবে খেয়াল করবে সে ছেলে না মেয়ে। কিন্তু স্বপ্ন দেখার সময় সেটা আর মনে থাকে না। দেখতে দেখতে ৯-ই আগস্ট এসে যায়। রাজন রাত্রে খবর দেয় যে আকাশ ফোন করেছিল আর ওর বাবা আর মা ট্রেনে উঠে পরেছেন।
 
কোলকাতায় আকাশ –
বাবা আর মাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে একটা স্টেশনের টেলিফোন বুথ থেকে আকাশ রাজনকে ফোন করে দেয়। বাবা, মাকে ট্রেনে তোলার পর আকাশ মনে মনে সূর্য দেবতাকে স্মরন করে যেন সব কিছু ভালো মত হয়ে যায়। বাড়ি ফিরে বোনকে বলে ও জীবনে প্রথমবার সূর্য ঠাকুরের কাছ থেকে কিছু চেয়েছে। চন্দ্রিকা বলে সব ঠিক মত হয়ে যাবে কোন চিন্তা না করতে।

আকাশ সেই রাতে স্বপ্ন দেখে সুনিতার সাথে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাথে ওদের মেয়ে। কোথা থেকে সুগন্ধি এসে যায় আর সুনিতা কে বলে ও কেন আকাশকে নিয়ে নিয়েছে। আকাশকে ছেড়ে সুগন্ধিও থাকতে পারবে না। সুনিতা উত্তর দেয় আকাশ ওর আর শুধুই ওর, ও ওর আকাশকে কাউকে দেবে না। সুনিতা আকাশকে জিজ্ঞাসা করে ওর প্রভু কি আরেকটা ভক্ত চায়। আকাশ বলে ওঠে না চায় না। যে সুনিতার মত সাথী পেয়েছে তার আর অন্য কাউকে চায় না। তারপর সুগন্ধি আকাশকে জড়িয়ে ধরে আর সুনিতা কাঁদতে থাকে। সুগন্ধি আকাশকে ছেড়ে ওদের মেয়েকে কোলে নিয়ে নেয় আর দুরে পালিয়ে যেতে থাকে। সুনিতা আর আকাশ দুজনেই সুগন্ধির ওপর চেঁচিয়ে ওঠে। আর ঘুম ভেঙ্গে যায়। আকাশের চেঁচানো শুনে চন্দ্রিকাও চলে আসে।

আকাশ মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিল। চন্দ্রিকা এসে ওর মাথায় হাত রাখে। জিজ্ঞাসা করে কি হল। আকাশ বলে ও সেদিন ওদের মেয়েকে স্বপ্নে দেখেছে। আর সুগিন্ধি ওদের মেয়েকে কেরে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। তাই চেঁচিয়ে উঠেছে। চন্দ্রিকা সান্তনা দিয়ে বলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আকাশ যেন ওর সূর্য দেবতার ওপর ভরসা রাখে।
[+] 2 users Like TumiJeAmar's post
Like Reply
#44
সুভাস স্মৃতির জার্নি –
সুভাস বাবুরা অনেক দিন পড়ে একা একা কোথাও যাচ্ছেন। একা একা মানে ছেলে মেয়ে ছাড়া শুধুই দুজনে। সেই কত বছর আগে দুজনে বেড়িয়েছিলেন। সুভাস বাবুর মনে পড়ে দুজনে মিলে ঘাটসিলা গিয়েছিলেন বিয়ের পরেই। সেই সময় ১৯৬০ সালে হানিমুন কথাটাও কেউ জানত না। কিন্ত দুজনে ফুলডুংরি পাহাড়ে আর সুবর্ণরেখা নদির ধারে যেভাবে এঁকে অন্যকে কাছে পেয়েছিলেন সেটা গত ২৫ বছরে ভুলতে পারেন নি। সুভাস বাবু আর স্মৃতি দেবী ঠিক সময় মত চেন্নাই পৌঁছান। হোটেলেও ওঠেন। সুভাস বাবু বলেন, “আমাদের ছেলের জন্য আমরা আবার একসাথে কোথাও এলাম। একটু আমার পাশে এসে বস”।

স্মৃতি দেবী পাশে গিয়ে বসেন আর বলেন, “কি বলছ বল।“

সুভাস বাবু – কিছু না। তোমাকে কোলে নিয়ে আদর করতে ইচ্ছা করছে। আমার ঘাটসিলার কোথা মনে পড়ছে।

স্মৃতি দেবী – এই বুড়ো বয়সে আবার প্রেম জেগে উঠেছে তোমার ?

সুভাস বাবু – কেন জাগবে না। আমি সবসময়ই তোমার সাথে প্রেম করি।

স্মৃতি দেবী – আচ্ছা ঠিক আছে। এখন চান টান করে রেডি হয়ে নাও আমাদের বাজার করতে যেতে হবে। আমাদের ঘরের লক্ষ্মীকে দেখতে যাচ্ছি খালি হাতে তো আর যাব না।

বিকালে দুজনে মিলে টি-নগরে নেলি বলে একটা শাড়ির দোকানে যান। স্মৃতি দেবী সুনিতার জন্য আর সুনিতার মায়ের জন্য শাড়ি কেনেন।  সারাভানা স্টোর্সে গিয়ে স্মৃতি দেবী পাগল হয়ে যান স্টিলের বাসন দেখে। উনি কোনদিন কোন দোকানে একসাথে ওত বাসন দেখেননি। উনি কত কি কিনতে চান। সুভাস বাবু বলেন ওরা ফেরার সময় কিনে নিয়ে যাবেন। ওখান থেকে দুজনে মিলে মেরিনা বীচে গিয়ে সমুদ্রের ধারে বসেন। পরদিন সকালে হাসপাতালে স্মৃতি দেবীকে দেখান। সব কিছুই ঠিক ছিল। তারপর সোমবার সন্ধ্যায় পালঘাটে যাবার ট্রেনে ওঠেন।

মঙ্গলবার সকাল ন’টার সময় পালঘাটে পৌঁছন। ট্রেন থেকে নামার একটু পড়েই রাজন গিয়ে ওদের চিনে নেয়। আর কোন বাঙালি লোক ছিল না ওখানে। রাজন ওনাদের হোটেলে পৌঁছে বলে দু ঘণ্টা পড়ে ও ওনাদের নিয়ে যেতে আসবে। রাজন অফিসে গিয়ে আকাশকে সুভাস বাবুদের পৌঁছানোর খবর দেয়।

রাজন গাড়ি করে সুভাস বাবুদের নিয়ে যায়। যত দূর গাড়ীতে যাওয়া সম্ভব গিয়ে রাজন ওনাদের নামতে বলে আর বলে একটু হাঁটতে হবে। সবাই মিলে হেঁটে পৌঁছায় সুনিতাদের বাড়ি। রাজন দেখে সেই মেহগনি গাছের নীচে সুনিতা একটা নীল রঙের ঘাগরা পড়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা কাছে যেতেই সুনিতা আকাশের বাবা আর মায়ের সামনে বসে দুজনকে প্রনাম করে। তারপর স্মৃতি দেবীর পায়ে হাত দিয়ে পরিষ্কার বাংলাতে বলে, “মা তোমার পায়ে আমাকে একটু জায়গা দাও মা”।    
  
পালঘাটে সুনিতা -
স্মৃতি দেবী সুনিতাকে বুকে তুলে নেন। বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন, “ও মা এতো পুরো বাংলা বলে গো। তোর জায়গা আমার পায়ে না মা, তোর জায়গা আমার এই বুকে। কি সুন্দর বৌ হয়েছে গো আমার। সুখে থাকো, শান্তিতে থাকো”।

সুভাস বাবু ভেবেছিলেন একটা কালো মেয়ে বিয়ে করেছে আকাশ। তার মানে এই নয় যে উনি কালো পছন্দ করেন না বা কালো মেয়েদের ওপর ওনার কোন বিতৃষ্ণা আছে। উনি শুধু ভেবেছিলেন আমরা তথাকথিত ‘মাদ্রাজী’ বলতে যে চেহারা বুঝি সেইরকম একটা মেয়ে হবে। উনি অবাক হয়ে দেখেন সুনিতা মোটেই সেইরকম নয়। প্রায় বাঙ্গালিদের মত গায়ের রঙ, শান্ত, সুশ্রী, নিখুঁত চেহারা, মুখটা দেখেই মনে ভক্তি আসে। কুমারটুলিতে যেরকম সরস্বতী ঠাকুরের মুখ বানায় অনেকটা সেইরকম। উনি সুনিতার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেন। ততক্ষনে সুনিতার বাবা মা বেড়িয়ে এসেছেন। ওনারা সবাইকে ভেতরে যেতে বলেন।

কথা বার্তা বলা নিয়ে বেশ একটু সমস্যা হয়। একটু দেখা যাক এখনকার চরিত্রদের মধ্যে কে কি কি ভাষা জানে।

সুনিতা – মালয়ালম, ইংরাজি (আকাশের সাথে দেখা হবার পরে অভ্যেস হয়ে গেছে) আর বাংলা (সবে শিখেছে)

সুনিতার বাবা – মালয়ালম, হিন্দি

সুনিতার মা – শুধু মালয়ালম

সুভাস বাবু – বাংলা, ইংরাজি, হিন্দি (মোটামুটি)

স্মৃতি দেবী – শুধু বাংলা

রাজন – মালয়ালম, ইংরাজি 

মীনা - মালয়ালম, ইংরাজি 

সুনিতাই প্রধান দোভাষী সবার মধ্যে। সুনিতার না থাকলে স্মৃতি দেবীর পক্ষে সুনিতার মাকে কিছু বোঝানও প্রায় অসম্ভব। স্মৃতি দেবী বাংলায় বললেন, সুভাস বাবু সেটা ইংরাজিতে অনুবাদ করলে, রাজন বা মীনা সেটা মালয়ালম করে দিল। অসুবিধা হলেও সবাই মেনে নিল। আর অনুবাদের পর অনুবাদ করে কথা বলতে থাকল।

প্রথম স্মৃতি দেবী সুনিতাকে একা একা বসে জিজ্ঞাসা করেন ও আকাশকে কেন ভালবাসে আর কি ভাবে শুরু হল। সুনিতা বোঝে সব কথা আকাশ নিশ্চয়ই ওর মা বাবাকে বলে দিয়েছে। উনি তাও জানতে চান সুনিতার মুখে। সুনিতা যে ভাবে শুরু হয়েছিল, মেহগনি গাছ, তিনবন্ধু বই, মালম্বুলাহ ড্যাম সব কোথা বলে। সুভাস বাবু ঢুকে জিজ্ঞাসা করেন, “কি ব্যাপার মা মেয়েতে কি গল্প হচ্ছে”।

স্মৃতি দেবী – তুমি আসলে কেন এখনএখানে আমাদের প্রাইভেট কোথা হচ্ছে। তুমি গিয়ে বেয়াই মসায়ের সাথে কোথা বল।

সুভাস বাবু চলে গেলেন। সুনিতা বুঝে গেল আকাশদের সংসারে চাবিটা কার কাছে। সুনিতা বলে, “মা আমি জানিনা তোমাদের সংসারে কি ভাবে থাকব। তোমরা আমাকে গ্রহন করবে কি করবে না জানিনা। আমি শুধু তোমার ছেলেকে জানি। আমি ওকে ছাড়া বাঁচব না। তোমরা আমাকে যা করতে বলবে তাই করবো। যে ভাবে থাকতে বলবে সেই ভাবেই থাকব। শুধু তোমার ছেলেকে ছেড়ে যেতে বল না। ও আমার শিব ঠাকুর। আমি ওকে পুজা না করে কিচ্ছু করতে পারি না”।

স্মৃতি দেবী – পাগলী মেয়ে। তোকে কখন বললাম আকাশকে ছেড়ে যেতে হবে। তুই আমাদের বাড়ীর বৌ। তুই আমাদের লক্ষ্মী। তোকে যত তাড়াতাড়ি পারি আমরা কোলকাতায় নিয়ে যাব।

সুনিতা – তোমরা কবে ফিরে যাবে ? আমাকেও তোমাদের সাথে নিয়ে চল। আমি ওকে ছেড়ে আর থাকতে পারছি না। তুমি হয়ত ভাবছ আমার কোন লজ্জা নেই। আকাশের কোন কিছু করার জন্য সত্যিই আমার কোন লজ্জা নেই।

স্মৃতি দেবী – আমি তোর মন বুঝতে পারছি। কিন্তু সোনা তোর এই অবস্থায় কি করে যাবি। যতদিন না তোর বাচ্চা হবে আমার মনে হয় না ডাক্তার তোকে যেতে দেবে।

সুনিতা – মা তুমি দেখো না ডাক্তার কে বলে।

স্মৃতি দেবী – আচ্ছা আমি আর তোর বাবা গিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলবো।   
 
সুভাস বাবু কিছুটা হিন্দিতে আর কিছুটা মীনার সাহায্য নিয়ে সুনিতার বাবা আর মায়ের সাথে কথা বলেন। উনি বলেন যে আকাশের ওপর ওদের সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে। তাই আকাশ যা করেছে ঠিক করেছে। ওনারা যেদিন ডাক্তার অনুমতি দেবে সেদিনই সুনিতা কে ঘরের লক্ষ্মী হিসাবে নিয়ে যাবে। সুনিতার বাবাও আকাশ আর সুনিতার সম্পর্কের মধ্যে যা দেখেছেন সব বলেন। স্মৃতি দেবী বাইরে এসে ওদের সাথে যোগ দেন। চার জন বাবা মায়ের মধ্যে সব আলোচনা হয়ে যায়। সুভাস বাবু বলেন যে পালঘাটে সুনিতাদের সব প্রতিবেশী আর আত্মিয়রা জানে সবাই জানে সুনিতার আকাশ সাথে বিয়ে হয়েছে, কিন্তু কোলকাতায় প্রায় কেউই জানে না। তাই ওনারা কোলকাতায় নিয়ে গিয়ে একটা অনুষ্ঠান করবেন। সেখানে শুধু মালা বদল হবে আর খাওয়া দাওয়া হবে। আর সেই অনুষ্ঠানে সুনিতার বাবা, মা, ভাই সবাইকে যেতে হবে।

দুপুরে খেতে বসেন সবাই। সব রান্নাই ওখানকার মত। সাম্বার, রসম আর আভিয়েল। শুধু মাছ সুনিতা রান্না করেছিল। সুনিতা সেদিন কারিমিন মাছের সর্ষে বাটা করেছিল। কারিমিন মাছ শুধু কেরালাতেই পাওয়া যায়। প্রায় আমাদের তেলাপিয়া মাছের মত দেখতে আর খেতেও প্রায় একই। দুপুরে খেতে বসে সুভাস বাবু আর স্মৃতি দেবী একেবারে অভিভূত। স্মৃতি দেবী বলেন যে উনি ভাবতেই পারছেন না একটা মেয়ে যে বাংলা বা বাঙ্গালীদের কিছুই জানত না, সে কি করে ছ’ মাসের মধ্য এতো কিছু শিখে গেল। সুভাস বাবু বলেন, “ওকে ভালবাসা সব কিছু শিখিয়ে দিয়েছে”।

খাওয়ার পড়ে সুভাস বাবু আর স্মৃতি দেবী নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন। সুভাস বাবু জিজ্ঞাসা করেন, “কেমন দেখলে বৌমা কে”?

স্মৃতি দেবী – খুব লক্ষ্মী মেয়ে। প্রথমদিন আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আজ তোমাকে বলছি আকাশের জায়গায় আমি যদি সুনিতাকে আগে দেখতাম, আমি এই মেয়েকে ছেলের বৌ করে নিয়ে যেতে বলতাম।

সুভাস বাবু - এই মেয়েটা আমাদের আকাশের জন্য সব পারে। ও আকাশকে পাগলের মত ভালো বাসে। আর ভালবাসা সবাইকে যে কোন কাজ করিয়ে নিতে পারে। আজ সুনিতাকে দেখে মনে হচ্ছে আমরা অনেকেই এই ভাবে ভালোবাসতে পারিনা। আমরা সবাই আমাদের কর্তব্য করে যাই। ভালবেসে কতটা করছি সেই চিন্তাই করিনা। আমাদের আকাশের জীবন ধন্য যে সুনিতাকে পেয়েছে।

স্মৃতি দেবী – তুমি এতদিনে প্রথমবার সত্যি কথা তাড়াতাড়ি বুঝতে পেরেছ।

সুভাস বাবু আর স্মৃতি দেবী সন্ধ্যা বেলা হোটেলে ফিরে আসেন। রাজন গিয়েছিল ওনাদের নিয়ে আসতে। রাজন ওনাদের ফেরার টিকিট রবিবার বিকালের ট্রেনে করেছে। সুভাস বাবু রাজনকে বললেন ওদের পরদিন কোন সময়ে একবার সুনিতার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার জন্য

পরদিন ১১ টার সময় রাজন ওঁদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার বলেন এই অবস্থায় কোলকাতায় কোন ভাবেই নেয়ে যাওয়া উচিত হবে না। কম করে চার মাস হবার পড়ে তখন দেখে ঠিক করবেন। ডাক্তারের কাছ থেকে বেড়িয়ে একটা টেলিফোন বুথ থেকে আকাশের অফিসে ফোন করেন আর সব খবর দিয়ে ওকে আশ্বস্ত করেন। আকাশ মায়ের সাথে কথা বলতে চায়। স্মৃতি দেবী ফোন ধরলে আকাশ জিজ্ঞাসা করে বৌ পছন্দ কিনা। স্মৃতি দেবী বলেন খুব ভালো মেয়ে। একদম আকাশ যা বলেছিল তাই।
 
কোলকাতায় আকাশ –
যখন স্মৃতি দেবী ফোনে বললেন যে ওনাদের সুনিতা পছন্দ হয়েছে, আকাশ আনন্দে পাগল হয়ে যায়। তখন ওর পাসেই সুগন্ধি দাঁড়িয়ে ছিল। আকাশ কোন নিছু না ভেবেই সুগন্ধিকে জড়িয়ে ধরে। সুগন্ধি অবাক হলেও কিছু বলে না। আকাশ ছেড়ে দিলে ও জিজ্ঞাসা করে, “কি হয়েছে আকাশ ? এতো আনন্দ কেন”?

আকাশ – মা বাবার সুনিতাকে পছন্দ হয়েছে।

সুগন্ধি – তাই, তবে তো আজকে পার্টি চাই তোমার থেকে।

আকাশ – সুনিতা যেদিন কোলকাতায় আসবে আমি সেদিন পার্টি দেব।

সুগন্ধি – কিছু তো একটা দাও আমাকে।

আকাশ – কি নেবে বল। তোমাকে কিই বা দিতে পারি।

সুগন্ধি – তুমি আমাকে অনেক কিছু দিতে পার। দিতে চাইছ না তাই দাও না।

আকাশ – আমার শরীর তোমাকে দিতে পারবো না। একদিনের জন্যে হলেও না, সুনিতা রাজী হলেও না।

সুগন্ধি – তোমার এই উত্তর আমি জানি। ঠিক আছে আমি ভেবে তোমাকে সন্ধ্যা বেলা বলবো আমি কি নেব। আজ একটু দেরি করে থেকো। আমি রিপোর্ট বানানোর পড়ে তোমার কাছে আসব।

সুগন্ধি ইচ্ছা করে দেরি করে। সবাই চলে যায় অফিস থেকে। ভেতরে শুধু আকাশ আর বাইরে সে পিওন টা। সন্ধ্যে সাতটার সময় সুগন্ধি আসে আকাশের কাছে। আর বলে, “দাও আমার উপহার”।

আকাশ – কি নেবে বল।

সুগন্ধি – আরও কয়েকটা চুমু। তুমি বলেছ তুমি আমাকে চুমু খেতে পার।

আকাশ – ঠিক আছে তুমি যদি চুমু খেতেই চাও, তাই হোক।

আকাশ উঠে দাঁড়িয়ে সুগন্ধির মুখ কাছে টেনে নেয়। পরপর তিনবার চুমু খায়। তারপর সুগন্ধি বলে আর একটা চুমু। বলেই সাথে সাথে ওর শাড়ির আঁচল নামিয়ে দেয় আর ব্লাউজ টেনে ওপরে উঠিয়ে ওর স্তন বের করে দেয়, আর বলে, ঃআমার এই দুই বুকে চুমু দাও”।

আকাশ হতভম্ব হয়ে যায়। চোখের সামনে খোলা বুক দেখে আর সামলাতে পারে না নিজেকে। আস্তে আস্তে দুটো ছোট্ট চুমু খায় দুই স্তন বৃন্তে। তারপরেই ব্যাগ নিয়ে চকিতের মধ্যে অফিস থেকে বেড়িয়ে যায়।
 
পালঘাটে সুনিতা –
সুভাষ বাবুরা যাবার পর থেকে সুনিতার মন নেচে চলেছে। ওর সব সংশয় শেষ। আকাশের বাবা মা ওকে মেনে নিয়েছে। ওর জীবনের সব থেকে আনন্দের দিন। দিব্যা আর লতা আসলে ও উত্তেজিত হয়ে সব কিছু বলে। আকাশের বাবা ভালো, আকাশে মা ভালো। ওরা সুনিতার রান্না খেয়ে খুব ভালো বলেছে। সুনিতা ওঁদের বলে একটু বসতে। সন্ধ্যে সাত টা বেজে গেছে। ও হাত মুখ ধুয়ে ঠাকুর কে পুজা দিয়ে আসছে। বাথরুমে ঢোকার সময় খেয়াল করেনি অনেকটা জল পড়ে। তাড়াতাড়ি যেতে গিয়ে সুনিতার পা পিছলে যায়, ও মুখ থুবড়ে পড়ে সামনের ইট গুলোর ওপরে। সুনিতা মাআআআ বলে চেঁচিয়ে উঠেই অজ্ঞান হয়ে যায়।
 
সবাই দৌড়ে আসে। ধরা ধরি করে সুনিতাকে তুলে এনে বিছানায় শোয়ায়। মুখে সুনিতার মা চোখে জলের ছিটা দিতে থাকে। সুনিতা চোখ খোলে না। রাজন তখনো ঘরে ফেরেনি। দিব্যা দৌড়ে যায় রাজনকে ডাকতে। পাশের ঘরের বাকি ছেলে দুটোকে বলে সুনিতার বাবাকে ডেকে আনতে। দশ মিনিটের মধ্যে রাজন চলে আসে। ততক্ষনে সুনিতা চোখ খুলেছে। চোখ খুলেই বলে ব্যাথা, ভীষণ ব্যাথা। কোথায় ব্যাথা জিজ্ঞাসা করলে কিছু বলতে পারে না। সুনিতার মা দেখেন সুনিতার রক্তপাত শুরু হয়ে গেছে। উনি রাজনকে বলেন তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। রাজন দৌড়ে গিয়ে গাড়ির ব্যবস্থা করে। কোনরকমে সুনিতাকে নিয়ে যে ডাক্তারকে দেখাত ওনার নারসিং হোমে নিয়ে যায়।

ডাক্তার ওকে ভেতরে নিয়ে যায়। আধ ঘণ্টা মত পরে এসে বলেন সুনিতার বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে। রাজন সুভাসবাবুদের হোটেলে গিয়ে খবর দেয়। সুভাষ বাবু আর স্মৃতি দেবী তক্ষুনি হাসপাতালে চলে আসেন। সুনিতা তখনো প্রায় অজ্ঞান। ডাক্তার বলেন আরও ঘণ্টা চারেক লাগবে ওঁদের সব চিকিৎসা করতে। আশা করা যায় সুনিতার কিছু হবে না। তবে সুস্থ হতে বেশ সময় লাগবে। ওষুধ পত্র যা লাগে রাজন সব ব্যবস্থা করে। সুভাষ বাবু বলেন যত টাকা খরচ হোক উনি করবেন। ওনার ছেলের বৌয়ের সব দায়িত্ব ওনার। ওনার সাথে কিছু টাকা ছিল। উনি বললেন দরকার হলে উনি একদিন পরে আরও ব্যবস্থা করতে পারবেন।

রাত্রি বারোটার সময় সুনিতা মোটামুটি সামলে উঠেছে। সবাই কথা বলতে গেলে ডাক্তার নিষেধ করেন। বলেন পরদিন সকালে গিয়ে কথা বলতে। রাত্রে আর কোন সমস্যা হবে না। রাজন আর দিব্যা হাসপাতালে থেকে যায়। দিব্যা সুনিতার পাশে থাকে। সুভাষ বাবুরা হোটেলে ফিরে যান। সুনিতার বাবা মা ঘরে চলে যায়। একটা আনন্দের পরিবেশ, আনন্দের সময় মুহূর্তের উত্তেজনায়, মুহূর্তের ভুলে চরম বিষাদের রাত্রে পরিণত হয়।

সকাল ন’টায় আকাশের অফিস খোলে। সুভাষ বাবু ন’টা বাজতেই আকাশের অফিসে ফোন করেন। আর সব কিছু বলেন। আকাশ নির্বাক হয়ে যায়। ওর চোখ থেকে জল পড়তে থাকে। যারা পাশে ছিল বুঝতে পারে খুব খারাপ কিছু হয়েছে। সুভাষ বাবু আকাশকে বলেন সেই রাতেই পালঘাটের জন্য রওনা দিতে। আকাশ অফিসের বস মিঃ জয়ন্ত বোসকে গিয়ে সব বলে। উনি আকাশকে রেডি হতে বলেন। তারপর উনি ওনার চেনাশোনার দ্বারা জরুরি কোটা থেকে আকাশের টিকিটের ব্যবস্থা করে দেন।

সকাল দশটার সময় সবাই হাসপাতালে যায়। সুনিতা মোটামুটি সুস্থ। ডাক্তার বলেন পেটের বাইরে থেকে দু এক জায়গায় কেটে গেছে ইঁটে লাগার জন্য। ভেতরে কতটা নষ্ট হয়েছে সেটা তক্ষুনি বলা যাবে না। এর পড়ে সুনিতার পক্ষে মা হওয়া কঠিন হতে পারে। সকালে সুনিতার পুরোপুরি জ্ঞান এসেছে। ওর বাচ্চা নষ্ট হবার খব শুনে প্রচুর কেঁদেছে। সবাই ওর রুমে ঢুকলে সুনিতা আবার কান্নায় ভেঙ্গে পরে। সবাই গিয়ে সুনিতাকে সান্তনা দেয়। শুধু স্মৃতি দেবী দুরে দাঁড়িয়ে থাকেন। দুপুর বেলা সুনিতাকে বাড়ি নিয়ে যায়। স্মৃতি দেবী বলেন যে উনি সুনিতাদের বাড়ি যাবেন না। সুভাষ বাবু ওনাকে হোটেলে পৌঁছে দিয়ে সুনিতাদের বাড়ি যান।       
 
[+] 3 users Like TumiJeAmar's post
Like Reply
#45
পালঘাটে আকাশ –
শনিবার ১৭-ই আগস্ট আকাশ পালঘাটে পৌঁছায়। ট্রেন থেকে নেমে ও সোজা সুনিতার কাছে যায়। সুনিতা ঘরে শুয়ে ছিল। বাড়ীতে তখন সুনিতার মা আর আকাশের বাবা ছিলেন। আকাশের বিধ্বস্ত চেহারা দেখে ওনারা দুজনেই গিয়ে আকাশকে ধরে বসান। আকাশ বলে ও আগে সুনিতার সাথে কথা বলবে। সুভাষ বাবু বলেন সুনিতা একদম ঠিক আছে কোন চিন্তার কারণ নেই। আকাশ বলে যাই হোক ও আগে সুনিতার সাথে কথা বলবে।

আকাশ সুনিতার ঘরে ঢোকে। সুভাষ বাবু আর সুনিতার মা পেছন পেছন আসেন। সুনিতা আকাশকে দেখেই কান্নায় ভেঙ্গে পরে। আকাশের বুকে মুখ রেখে কাঁদতে কাঁদতে বলে, “আমাকে ক্ষমা করে দাও প্রভু, আমি তোমার প্রসাদ আমার মধ্যে রাখতে পারলাম না। আমি পাপী আমাকে ক্ষমা করে দাও”।

আকাশ সুনিতার দু হাত ধরে চুমু খায়। ওর চোখের জল মুছিয়ে দেয়, আর বলে, “তোমার কোন পাপ নেই। যা কিছু হয়েছে সেটা আমার পাপে হয়েছে। আমি সেদিন যে মুহূর্তে পাপ করেছি, সেই মুহূর্তে সূর্য দেবতা আমাকে শাস্তি দিয়েছেন। আমি পাপী সুনিতা, আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার পাপে তোমাকে শাস্তি দিলেন ঠাকুর। আমি কথা দিচ্ছি আর কোনদিন এইরকম পাপ কাজ করবো না”।

সুনিতা আর আকাশ দুজনেই কাঁদতে থাকে। দুজনেই বলে, “তুমি কেঁদো না”।

তবু কেউ কান্না থামায় না। সুভাষ বাবু আর সুনিতার মা ওদেরকে একা রেখে বাইরে যান। ওরা কাঁদতে কাঁদতে ধীরে ধীরে কান্না থামায়। আকাশ জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছিল সেদিন। সুনিতা বাংলাতেই বলে, “আমি এতো আনন্দে ছিলাম যে আমি ভুলে গেছিলাম সাবধানে থাকতে হবে। অসাবধান হয়ে ছিলাম তাই সূর্য দেবতা আমাকে শাস্তি দিয়েছেন”

আকাশ – তুমি পড়ে গিয়েছিলে সন্ধ্যে সাত টার সময়। সেই সন্ধ্যায় ঠিক সেই সময়ে আমাদের অফিসের একটা মেয়ে আমাকে পাপ করতে প্ররোচিত করেছিল। আর আমি মুহূর্তের জন্য সব কিছু ভুলে গিয়ে ছিলাম আর পাপ করতে গিয়েছিলাম। সাথে সাথে আমার চেতনা ফিরে আসে আর আমি ওখান থেকে চলে যাই। কিন্তু আমার পদস্থলন হয়েছিল। সেই পাপের শাস্তি তোমাকে ভোগ করতে হল। সুনিতা আমাকে ক্ষমা করে দাও সোনা।

সুনিতা – তুমি তো পাপ করতে গিয়ে ফিরে এসেছ, তাতে তোমার পাপ কোথায় হল।

আকাশ – পাপ করতে যাওয়াও এক রকম পাপ।

সুনিতা – তোমার পাপ নয়, আমার ভুল।

আকাশ – মন খারাপ করোনা। এবার আমরা কোলকাতায় চলে যাব। আমার বাবা মা দুজনেই রাজী আছেন। আমি একবার ডাক্তারের সাথে কথা বলেই তোমাকে কোলকাতায় নিয়ে যাব। আমার সুনিতা আমার বুকে থাকবে। আমরা আর ভুল বা পাপ কোনটাই করবো না।

সুনিতার মুখে বেশ কিছুদিন পরে হাঁসি ফোটে। ও আকাশকে পরম আবেগে চুমু খায়। আকাশ বলে, “তুমি খুব ভালো বাংলা শিখে গেছআমি খুব খুশীআমি এবার গিয়ে বাবার সাথে কথা বলি।

আকাশ বাইরে বেড়িয়ে দেখে রাজন এসে গেছে। দুই বন্ধু আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে পরে। আকাশ কিছু বলতে গেলে রাজন ওকে বলে আগে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হয়ে নিতে। কিছু খেয়ে নিতে। তারপর সব কথা বলবে। রাজনের কথা মত আকাশ ফ্রেস হয়ে আসেএসে রাজনের হাত ধরে বলে ও না থাকলে ওর অনেক কিছুই দেখা বা করা সম্ভব হত না। ও বন্ধুদের ধন্যবাদ দেয় না। কিন্তু চায় ও আর রাজন সারাজীবন এইরকম বন্ধু থাকবে। আকাশ আরও বলল ও সুনিতাকে কোলকাতায় নিয়ে যেতে চায় আর তাই ডাক্তারের সাথে দেখা করা খুব দরকার।

আকাশ ওর বাবাকে জিজ্ঞাসা করে মা কোথায়। উনি উত্তর দেন যে স্মৃতি দেবী হোটেলেই আছেন। আকাশ জিজ্ঞাসা করে মা সুনিতাদের বাড়ি কেন আসেনি। সুভাষ বাবু বলেন পরে জানাবেন। আকাশ বুঝতে পারে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে।

দুপুর পর্যন্ত আকাশ সুনিতার সাথেই থাকে। তার পর বাবার সাথে হোটেলে যায়। মাকে জিজ্ঞাসা করে, “মা কেমন আছো?”

স্মৃতি দেবী – আমি ভালই আছি। তুমি কি দেখে আসলে তোমার প্রানের সুনিতার কাছে ?

আকাশ একটু থমকে গেল, কিন্তু উত্তর দিল, “সুনিতা এখন অনেক ভাল আছে।”

স্মৃতি দেবী – সেতো ভালো থাকবেই। আমার বংশের প্রদীপটা ভেঙ্গে দিয়ে মনের আনন্দে আছেনা ভাঙলে তো তোমাকে এতো তাড়াতাড়ি কাছে পেত না।

আকাশ – মা তুমি এইসব কি বলছ ?

স্মৃতি দেবী – আমি আগেই বলেছিলাম এই মেয়েরা বড়ো ঘোড়েল হয়, তুমি তো আমাকে কত কি শুনিয়ে দিলে। আমি মূর্খ মানুষ কিছু বুঝিনা। তোমরা সব আধুনিক লেখা পড়া শেখা ছেলে। আমি ভাবলাম তুমি হয়ত ঠিক কথা বলছ। ওমা ! আমি যা ভেবেছিলাম সেটাই ঠিক। তোমাকে সাদা সিধে পেয়ে পটিয়ে নিয়েছে।

আকাশ – কি যা তা বলে যাচ্ছ। কি করেছে সুনিতা ? ও নিজের ভুলের জন্য নিজে কাঁদছে আর তুমি যা খুশী বলে যাচ্ছ !

স্মৃতি দেবী – তুই সোজা ছেলে। তোর সাদা মনে কাদা নেই। তুই কি করে বুঝবি ?

আকাশ – মা ! তুমি থামো।

স্মৃতি দেবী – আমাকে থামালে কি আর সবাই থেমে যাবে? তারা যখন থু থু করবে তখন বুঝবি।

আকাশ – সুনিতা কি করেছে সেটা আগে বল আমাকে।

স্মৃতি দেবী – ওর শরীরে কুট কুটানি উঠেছে। ও চাইছিল কি ভাবে তোর সাথে অসভ্যতা করবে। তুমি কি ভেবেছ তোমরা হানিমুনের নাম করে কি কি নোংরামি করেছ আমি সেসব জানিনা। কোন সভ্য মানুষ করে ওইসব। ওর ইসের জ্বালা উঠেছে। তোমাকে চায়। যখন ডাক্তার বলেছে যে এখন যেতে পারবে না। তখন ইচ্ছা করে পরে গিয়ে বাচ্চা নষ্ট করে দিয়েছে। এবার তো সব ঠিক। তোমার কাছে ড্যাং ড্যাং করে চলে যাবে। আর ওইসব নোংরামি করবে। আবার ন্যাকামো করে তোমাকে প্রভু প্রভু বলে। সহ্য হয় না আমার এইসব।

আকাশ – মা তুমি এতো নোংরা কথা বলতে পারছ তোমার বৌমাকে নিয়ে ?

স্মৃতি দেবী – ওই নোংরা মেয়েটা আমার বৌমা নয়। ওকে ছেড়ে দিয়ে তুই এক্ষুনি আমাদের সাথে চল। তোর জন্য আমি লক্ষ্মী মেয়ে খুঁজে আনব।

আকাশ – কি করে তুমি এতো ছোটো মনের কথা বলতে পারো ?

স্মৃতি দেবী – আমি ছোটো মনের ? তবে আরেকটা কথা বলি শোন। তুই তো বুঝবি না আমি না বলে দিলে।

আকাশ – আর কি বলবে ? তোমার আরও কি বলার আছে ?

স্মৃতি দেবী – আকাশের বাবা তুমিও শোন। তুমিও তো বৌমা বৌমা করে পাগল। বাপ আর বেটা এক হয়েছে। আমার যত জ্বালা।

সুভাষ বাবু – আর কি বলবে তুমি ?

স্মৃতি দেবী – সুনিতার বাবা কালো, মা কালো, ভাই কালো। আসে পাশের সবাই কালো। শুধু সুনিতা কি করে ওইরকম গায়ের রঙ পায় ? বল তোমরা এর উত্তর দাও।

সুভাষ বাবু – তুমি কি বলতে চাইছ পরিষ্কার করে বল।

স্মৃতি দেবী – সুনিতা ওঁদের মেয়েই না। আর না হলে সুনিতার মায়ের সাথে কোন ফর্সা লোকের সম্পর্ক ছিল। সুনিতার তার মেয়ে। আমি ওইরকম মেয়েকে আমার বাড়ীর বৌ করবো ! মগের মুল্লুক পেয়েছ ?

সুভাষ বাবু – তুমি কি ভাবে এইরকম নিচ মনোবৃত্তি নিয়ে আমার সাথে থাকলে বলতো ?

স্মৃতি দেবী – সেতো বলবেই। আমি এখন বুড়ি হয়ে গেছি বলে আমি নিচ। আর কচি মেয়েটাকে দেখে তোমারও জিব লক লক করছে !

আকাশ – কি যা তা বলে যাচ্ছ তোমরা ? তুমি কি মানুষ ?

স্মৃতি দেবী – তাতো বলবেই। এখন আমি মানুষ নই। আমি নিচ। তোমাদের আমি ভালো করে বুঝেছি।

আকাশ – তোমার সাথে কথা বলাই বৃথা। তুমি যা খুশী ভাব আমার কিছু যায় আসে না। আমি তোমাদের সাথে থাকছি না। তোমরা কোলকাতা ফিরে যাও। আমাকে আর সুনিতাকে নিয়ে তোমাদের কিচ্ছু ভাবতে হবে না।

আকাশ বেড়িয়ে যায়। সুনিতার কাছে ফিরে যেতে চায়। কিন্তু ক্যানালের ধারে পৌঁছে ওর মন আরও খারাপ হয়ে যায়। ও কোন মুখ নিয়ে ওর দেবী তুল্য প্রেয়সীর কাছে যাবে। ও ক্যানালের ধারেই বসে পরে। হাঁটুর মধ্যে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে। একসময় চোখের জল শুকিয়ে যায় কিন্তু চোখের জলের দাগ থেকে যায়। যতই চেষ্টা করি না কেন কোনদিন চোখের জলের দাগ মুছে ফেলা যায় না। অনেক নামী দামী বিদেশী ক্রীম আছে মুখের যে কোন দাগ তোলার জন্য। কিন্তু চোখের জলের দাগ মোছার ক্রীম আজও আবিস্কার হয়নি।

আকাশ কতক্ষন ওইভাবে বসে ছিল জানে না। সন্ধ্যের একটু আগে রাজন আর দিব্যা বাড়ি ফিরছিল, ওকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। রাজন আকাশের পাশে বসে মাথায় হাত দিয়ে জিজ্ঞাসা করে, “কি হয়েছে তোমার ? সুনিতা ঠিক হয়ে গেছে, এর জন্য এতো মন খারাপ করার কোন মানে নেই।”

আকাশ চুপ করেই বসে থাকে। রাজন আর দিব্যা অনেকবার বলে সব ঠিক হয়ে গেছে। অনেক পরে আকাশ বলে, “আমি জানি সুনিতা ঠিক আছে। আমি এটাও জানি যে সুনিতার হয়ত এর পর বাচ্চা হতে অসুবিধা হবে। এটা ডাক্তারের কাছে এখনও শুনিনি, কিন্তু আমি জানি। তাও আমার সুনিতা আমারই আছে আমারই থাকবে।”

রাজন – সেটা আমরা সবাই জানি। এখানকার ডাক্তারও তাই বলেছে। কিন্তু সেসব আমরা পরে চিন্তা করবো। তোমার এখন কি হল।

আকাশ – মা

রাজন – মা ? মা কি ? কি হয়েছে ?

আকাশ – মা বলছেন এই মেয়ে ভালো না। অনেক বাজে বাজে কথা বলেছেন আমি তোমাদের বলতে পারবো না। আমাকে একটু একটা থাকতে দাও। আমি একটু পরে সুনিতার কাছে আসছি।

রাজন আর দিব্যা আরও কিছুক্ষন আকাশের পাশে বসে থাকে। তারপর কিছু না বলে চলে যায়। সন্ধ্যে সাত টার পর আকাশ সুনিতার কাছে যায়। আকাশ পৌঁছানোর একটু পরেই সুভাষ বাবু সুনিতাদের বাড়ি আসেন। জিজ্ঞাসা করেন আকাশ আছে কিনা। রাজন বেড়িয়ে এসে সুভাষ বাবুকে বলেন আকাশ একদম ভেঙ্গে পড়েছে। ও কোন কারণ বুঝতে পারছে না। আকাশ বেড়িয়ে এসে বাবাকে দেখে বলে, “বাবা, আমি ঠিক আছি। আমাকে নিয়ে তোমাকে কোন চিন্তা করতে হবে না। তুমি মাকে দেখো। মা যদি নিজের ভুল বোঝে তবেই আমি ফিরে যাব। মা যদি মায়ের ওইসব নোংরা চিন্তা থেকে সরে না আসে আমি আর কোলকাতাতেও ফিরব না। এখানেই থেকে যাব।”

সুভাষ বাবু – আমি কি করবো বল। আমি হয়ত বকে তোর মাকে চুপ করিয়ে দেব। কিন্তু তাতে ওর সুনিতার সাথে ব্যবহারের তো কোন বদল হবে না।

আকাশ – সেটা আমি বুঝি। সেই জন্য আমি তো তোমার ওপর রাগ করে নাই।

সুভাষ বাবু – তাই বলে তুই কোলকাতা ছেড়ে দিবি ? এটা কিরকম কথা ?

আকাশ – তুমি এখন হোটেলে ফিরে যাও। এখানে তোমার সাথে এইসব কথা বলা ঠিক নয়। তুমি রাত্রে মায়ের সাথে কথা বল। আমি কালকে হোটেলে আসব। আমাদের যা কথা বলার ওখানেই বলবো।

সুনিতা ভেতর থেকে সব শোনে আর বোঝে। কিন্তু সমস্যা কোথায় বুঝতে পারে না। রাজন আর সুনিতার মাও বোঝে যে কিছু একটা সাংঘাতিক সমস্যা হয়েছে। কিন্তু ওনারা কেউ আকাশকে কিছু জিজ্ঞাসা করেন না। আকাশ ভেতরে সুনিতার কাছে গিয়ে শুয়ে পরে। সুনিতা আস্তে আস্তে উঠে বাইরে আসে। মা আর রাজনকে বলে ও পরে আকাশের সাথে কথা বলবে। আকাশ এখন একদম ভেঙ্গে পড়েছে। রাজন আকাশের কাছ থেকে যা জেনেছিল সেটা বলেসুনিতার মা বলেন আকাশ সুনিতাকে ভুল না বুঝলেই হল। আগের দিন আকাশের মা কত খুশী ছিলেন। মেয়ের এই সমস্যার সময় ওনার কি হল কেউ বুঝতে পারে না। সুনিতা ওর মাকে বলে আকাশের জন্য কিছু খাবার দিতে। ও আকাশকে খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেবে। একে তো তিন দিন ধরে জার্নি করে এসে ক্লান্ত তারপর এই মানসিক ধকল। বেচারা আর পারছে না।

সুনিতার মা খাবার দিলে সুনিতা আকাশকে খেতে বলে। আকাশ খেতে চায় না বলে ওর ক্ষিদে নেই। সুনিতা অনেক বুঝিয়ে প্রায় জোর করেই ওকে খাওয়ায়। তারপর আকাশকে ঘুমাতে বলে। আকাশ শুয়ে পড়ে সুনিতার কোমর জড়িয়ে ধরেসুনিতা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আকাশ ঘুমিয়ে পরে। সুনিতা কোনরকমে আকাশের হাত থেকে বেড়িয়ে খেয়ে আসে। আকাশের পাশে শুয়ে পরে। কত দিন অপেক্ষা করছিল আকাশের সাথে রাত কাটাবার জন্য। সেই রাত এলো কিন্তু যে ভাবে এলো সেটা কেউ চাইছিল না। আকাশকে কাছে পেতে চাইছিল কিন্তু সেই পাওয়ার জন্য যে মুল্য দিতে হল সেটা কোন বাবা মাই চায় না। যাই হোক সুনিতা আকাশকে তো পেয়েছে, সেটাই বড়ো শান্তি।

সকালে উঠে দুজনেই ওঁদের অভ্যেস মত মেহগনি গাছের নীচে গিয়ে বসে। কিন্তু সূর্যোদয় দেখার সে মন আর নেই। সুনিতাও গত তিন চার দিন সূর্যোদয় দেখেনি। সেদিন সূর্য মেঘের আড়ালেই লুকিয়ে থাকল। সুনিতাদের বোঝাতে চাইল সূর্যদেবও ওঁদের দুঃখে দুখী। ওরা আকাশের দিকে চেয়েই থাকে কিন্তু সূর্য আর সামনে আসে না। আকাশ বলে সূর্য দেবতার লজ্জা লাগছে ওঁদের মুখ দেখাতে। উনি লঘু পাপে গুরু শাস্তি দিয়ে দিয়েছেন। দুজনে হাঁটু গেড়ে বসে সূর্য দেবের প্রার্থনা শুরু করে। দুজনেই একসাথে বলে,

ওঁ জবাকুসুম সংকাসং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম।
ধান্তারিম সর্বপাপঘ্ন্য, প্রনতহস্মি দিবাকরম।

হে সূর্য দেবতা আমরা নিশ্চয়ই অনেক পাপ করেছি। কিছু জেনে করেছি। কিছু না জেনে করেছি। আমরা তোমার সামনে সঙ্গম করার মত গর্হিত কাজ করেছি। আমরা মানছি যে ওটা ভীষণ বড়ো পাপ। আমরা তোমাকে সন্মান দেইনি। আমরা আর কোনদিন সজ্ঞানে কোন পাপ করবো না। আমাদের ক্ষমা করো ঠাকুর।

ওরা চোখ বন্ধ করে যে যার মত প্রার্থনা করে। চোখ খুলে দেখে সূর্য মেঘের আড়াল থেকে বেড়িয়ে এসে ওঁদের দিকে তাকিয়ে আছেআকাশ উত্তেজিত হয়ে বলে সূর্যদেব ওঁদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। ওঁদের এই দুঃখের দিন আর থাকবে না। একদিন ওঁদের জীবন ফিরে আসবে।

সকাল ন’টার সময় আকাশ হোটেলে যায়। সুভাষ বাবু জিজ্ঞাসা করেন সুনিতা কেমন আছে। আকাশ বলে যে সুনিতা অনেকটাই নর্মাল। আজ ও আর রাজন ডাক্তারের কাছে যাবে। স্মৃতি দেবী চুপ করেই বসে থাকেন। আকাশ জিজ্ঞাসা করে, “তোমরা কবে ফিরবে?”

সুভাষ বাবু – আমরা আজ রাত্রে মাদ্রাস যাব। কাল মাদ্রাস থেকে করমন্ডলে কোলকাতা যাব।

স্মৃতি দেবী – ব্যাস আমরা চলে যাচ্ছি। এবার তুমি তোমার মত নেচে বেড়াও। কেউ কিছু বলার নেই। যাও আবার সুনিতাকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়। রাস্তায় রাস্তায় অসভ্যতা করে বেড়াও। বাবা মায়ের কথা মনে না রাখলেও চলবে।

আকাশ – মা তুমি এই নিয়ে আর কোন কথা বল না। আমার তোমার ওপর রাগ নেই। কিন্তু আমি সুনিতকে নিয়ে তোমার কাছে গিয়ে থাকতে পারবো না।

স্মৃতি দেবী – তোমাকে আমি সুনিতাকে আমার কাছে নিয়ে আসতেই দেব না। তুমি আশা করো কি ভাবে!

আকাশ – আমি আশা করিও না। তুমি থাকো তোমার পুরনো ধ্যান ধারনা নিয়ে। তোমাকে বোঝানও বা শেখানো আমার দায়িত্ব নয়। আমি আজকেই এখানকার অফিসে যাচ্ছি। দেখি যদি আমার চাকুরি এখানে ট্রান্সফার করে নিতে পারি।

সুভাষ বাবু – সত্যিই তুই আমাদের ছেড়ে চলে আসবি ?

আকাশ – আমার সে ছাড়া আর কোন উপায় আছে ? তুমি বল।

সুভাষ বাবু – তোর মা এখন এইরকম বলছে। দুদিন পরে ঠিক বুঝে যাবে। সব ঠিক হয়ে যাবে।

স্মৃতি দেবী – তুমি কি করে ভাবছ আমি এই অনাচার মেনে নেব!

সুভাষ বাবু – তুমি বোঝোই না অনাচার কাকে বলে।

আকাশ – বাবা তুমি গত ২৫ বছর ধরে মাকে বুঝিয়েছ। পরের ২৫ বছরে আরও বোঝাও। কিন্তু আমি সুনিতাকে ছেড়ে আর এক মুহূর্ত থাকব না।

সুভাষ বাবু – তোমার কি বাবা মায়ের প্রতি কোন দায়িত্ব নেই ?

আকাশ – হ্যাঁ আমার বাবা মায়ের ওপর দায়িত্ব আছে। কিন্তু আমার কাছে সুনিতার দায়িত্ব তার থেকে বেশী। তোমার জন্য মা আছে, মায়ের জন্য তুমি আছো। সুনিতা আমার হাত ধরে বেড়িয়ে এসেছে। সুনিতার জন্য আমি ছাড়া আর কে আছে ? কেউ নেই। সুনিতার বাবা, মা ওকে দেখে রাখবে। বন্ধুরা জীবন দিয়ে সাহায্য করবে। কিন্তু সবকিছুর দায়িত্ব আমার। সেখানে আমি সুনিতাকে ছেড়ে যেতে পারি না।

স্মৃতি দেবী – কেন ওর সাথে কথা বলছ ? ওর মাথায় সুনিতা চেপে আছে, আর কিছুই ঢুকবে না।

আকাশ চেঁচিয়ে উঠতে যাচ্ছিল, কোনরকমে নিজেকে সামলিয়ে নেয়, বাবাকে বলে, “বাবা, একটা কথা বল। আমরা সবাই প্রকৃতির নিয়মে চলি তো?”

সুভাষ বাবু – হ্যাঁ

আকাশ – সব প্রানীর জন্যই প্রকৃতির নিয়ম এক, সেটা মানো ?

সুভাষ বাবু – হ্যাঁ, প্রকৃতি সবাইকে সমান ভাবে দেখে। যে প্রকৃতির বিরুদ্ধে যায় প্রকৃতি তাকে ক্ষমা করে না।

আকাশ – না আমি প্রকৃতির বিরুদ্ধে যাবার কথা বলছি না। সব প্রাণীর মধ্যেই প্রাকৃতিক নিয়মে মায়ের কর্তব্য সন্তান জন্ম দেওয়া। বাবার দায়িত্ব সেই সন্তানকে বড়ো করে তোলা। বাবা আর মা দুজনে মিলে সন্তানকে স্বাবলম্বী করে তোলে। একটা বাঘ তার বাচ্চাকে শিকার করা শেখায়। একটা পাখি টার বাচ্চাকে আকাশে ওরা শেখায়। ঠিক তো ?

সুভাষ বাবু – হ্যাঁ, একদম ঠিক।

আকাশ – এবার তুমি বল মানুষ ছাড়া আর কোন প্রাণী বড়ো হয়ে বাবা মায়ের দেখাশোনা করে ? শুধু মানুষই বুড়ো বাবা আর মায়ের দায়িত্ব নেয়। তাই এটা মানবিক নিয়ম, প্রাকৃতিক নিয়ম নয়। প্রাকৃতিক নিয়মে আমার প্রধান দায়িত্ব আমার সন্তানের জন্ম দেওয়া। আর তার জন্য আমার সুনিতাকেই চাই। তোমরা যদি সেটা মেনে নাও তবে তোমাদের সব দায়িত্ব আমার। আর যদি মেনে না নাও তবে আমার কোন দায়িত্ব নেই।

সুভাষ বাবু – তুই এই কথা বলতে পারলি। তুই ভুলে গেলি আমরা তোর জন্য কি কি করেছি।

আকাশ – বাবা, আমার কথা গুলো খুব রুঢ় শোনাল। আমি হয়ত ঠিক ভাবে বলতে পারিনি। কিন্তু যুক্তি দিয়ে বল আমি কোন ভুল কথা বলেছি কি ?

সুভাষ বাবু – আমার তো মনে হচ্ছে না লজিকালি তুমি কিছু ভুল বলছ। তবু...

আকাশ – তোমরা আমাদের মানুষ করেছ সেটাকে ছোটো না করে বলছি, বাবা মায়ের কর্তব্য ছেলে মেয়েকে মানুষ করা। তোমরাও করেছ, তার মধ্যে কোন মহানতা নেই। আর বাবা মা মানুষ করেছে বলে সন্তানের বাবা মায়ের কাছে কোন ঋণ নেই।

সুভাষ বাবু – কেন ঋণ নেই ?

আকাশ – বাবা তাকেই ঋণ বলে, যেটা নেওয়ার আগে কোন ফেরত দেবার চুক্তি থাকে। চুক্তি না থাকলে, সেটা লিখিত হোক বা মৌখিক হোক, সেটা ঋণ হিসাবে গ্রাহ্যই হবে না। তোমরা কি আমাকে জন্ম দেবার পর আমার সাথে কোন চুক্তি করেছিলে যে আমি ফেরত দিতে যাব !

সুভাষ বাবু – তুমি আজ অনেক খারাপ ভাবে কথা বলছ। কিন্তু আমি রাগ করছি না। আমরাই দায়ী তোমার এই অবস্থার জন্য। আমি বুঝতে পারছি তোমার মত ছেলে মানসিক ভাবে কি অবস্থায় পৌঁছলে এই ভাবে কথা বলে। তাই আমি তোমাকে দোষী করছি নাতুমি যদি পারো আমাকে ক্ষমা করে দিও।

আকাশ সুভাষ বাবুর পায়ে হাত দিয়ে বলে, “আমাকে এই কথা বল না। আমি তোমাদের কক্ষনো অশ্রদ্ধা করিনি আর করবও না। যাতে অশ্রদ্ধা না করতে হয় তাই দুরে থাকতে চাইছি। আমি জানি একমাত্র মা নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসে। কিন্তু আজ মা আমাকে ভালবাসার নামে যা বলল সেটা মায়ের ধারনায় হয়ত ঠিক। কিন্তু আমি মানতে পারছি না। আমি এটাও বুঝি যে মা বোঝে না যে মা বোঝে না। কোনদিন যদি সেটা বুঝতে পারে সেদিন আমরা ফিরে আসব।”

সুভাষ বাবু চুপ করে থাকেন। স্মৃতি দেবীও চুও করেই থাকেন। অনেকদিন আগে বঙ্কিমচন্দ্র লিখেছিলেন মেয়েদের বুদ্ধি নারকেলের মালার মত, দু ভাগেই থাকে কখনো সম্পূর্ণ হয়না। এখন অনেক মহিলা সেই অবস্থা থেকে বেড়িয়ে এসছে। কিন্তু কিছু মহিলার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত বঙ্কিমচন্দ্রের ধারনাই সত্যি আছে।

আকাশ হোটেল থেকে বেরিয়ে যায়। যাবার আগে বাবা আর মাকে প্রনাম করে। সুভাষ বাবু মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করেন স্মৃতি দেবী সেটুকুও করেন না। কখনো কখনো আত্মাভিমান সন্তান স্নেহের থেকেও যে বড়ো হয়ে যায় সেটা আজ বোঝা গেল। হোটেলের বাইরে সুভাষ বাবু আকাশের সাথে এসেছিলেন। উনি আকাশকে কুড়ি হাজার টাকা দিলেন আর বললেন, “আমি জানি এখানে ঘর নিয়ে জীবন শুরু করতে যত টাকা দরকার সেটা তোমার কাছে নেই। তাই এটা তোমাকে দিচ্ছি। এটা ঋণ নয়, এটা আমার কর্তব্য। তোমার জীবন ভালো ভাবে শুরু করানোটাও প্রাকৃতিক নিয়মে আমার দায়িত্ব।”

আকাশ টাকাটা নেয়, আর বাবাকে বলে, “তখন উত্তেজনার বসে কি সব বলে গেছে সেগুলো মনে না রাখতে। ও কি সব ভুল ভাল কথা বলেছে ও নিজেও জানে না।”

আকাশ যে কথাগুলো বলেছিল সেগুলো ঠিক না ভুল ? কে জানে !!
 
 
আকাশ হোটেল থেকে বেড়িয়ে ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার বলে সুনিতা মোটামুটি ঠিকই আছে। তবে ওর ওপর সেক্সুয়াল চাপ একদম কম রাখতে। আকাশরা যেন কম করে দু তিন মাস কোন সেক্স না করে। সুনিতার মিস ক্যারেজ হওয়ার কারণ ফিটাসের গায়ে ইটের ধাক্কা খুব জোরে লেগেছিল। আর সুনিতার ফ্যালপিয়ান টিউব অনেকটা ড্যামেজ হয়েছে। তবে সুনিতা বাচ্চা মেয়ে তাই আসা করা যায় খুব তাড়াতাড়ি রিকোভার করবে। আর পরে বুঝতে পারবে সুনিতা আবার মা হতে পারবে কি না। ডাক্তার বললেন কোন অসুবিধা না হলে সুনিতাকে তিন মাস পরে দেখিয়ে নিয়ে যেতে।

আকাশ ডাক্তারের কাছ থেকে বেড়িয়ে ওর পালঘাটের অফিসে যায়। ওদের কোম্পানির সারা ভারতে ব্রাঞ্চ ছিল (এখনও আছে)। ব্যাঙ্গালরে হেড অফিস হলেও, মালিক মিঃ নাম্বিয়ার পালঘাটেই বসতেন। কারণ উনি কেরালার লোক। আকাশ ট্রেনিং এর সময়েও মিঃ নাম্বিয়ারের সাথে দেখা করেছিল। তাই সেদিন আকাশ সোজা ওনার কাছেই গেলসব কিছু বলল ওনাকে। মিঃ নাম্বিয়ার সব শুনে ওঁদের কারখানার ম্যানেজারকে ডাকলেন আর বলে দিলেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আকাশকে ওখানে ট্রান্সফার করে নিতে। ম্যানেজার বললেন, “আকাশ যখন এখানে ট্রেনিং এ এসেছিল তখনই ভেবেছিলাম আকাশ আমাদের এখানে থাকলে অনেক ভালো হবে। ও মেসিন সারানোর থেকে R&D তে বেশী ভালো কাজ করবে। আজ যখন আকাশ এখানে আসতে চাইছে, আমার কোন অসুবিধা নেই। ও কাল থেকেই এখানে বসতে পারে। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ব্যবস্থা আমি করে দিচ্ছি।”

আকাশ যারপরনাই আনন্দিত। ও বলল মাঝখানে দশ দিন মত ছুটি চাই ওর সব জিনিসপত্র কোলকাতা থেকে নিয়ে আসার জন্য। মিঃ নাম্বিয়ার বললেন সেটা কোন সমস্যা নয়। ম্যানেজারকে বলে দিলেন সব কিছু ঠিক মত দেখে নিতে। 
 
[+] 2 users Like TumiJeAmar's post
Like Reply
#46
পালঘাটে আকাশ ও সুনিতা –
একমাস হয়ে গেছে আকাশের পালঘাটে আসা। রাজন একটা ঘর ঠিক করে দিয়েছে আকাশ আর সুনিতার জন্য। সুনিতা কলেজে যেতে শুরু করেছে। আকাশ অফিসে খুব ভালো ভাবে কাজ করছে।  রাজন আর দিব্যা এক বছর পরে বিয়ে করবে। আকাশ আর সুনিতার জীবন ভালো ভাবেই চলছে। সুভাষ বাবু মাঝে মাঝে আকাশের অফিসে ফোন করে সব খবর নেন। স্মৃতি দেবী একই আছেন। সুভাষ বাবু আর চন্দ্রিকা অনেক বুঝিয়েও ওনার মাথা ঠিক করতে পারেননি।

আকাশ এখনও কোলকাতা যেতে পারেনি। ওর সুনিতাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছাই করে না। ও আর সুনিতা রোজ রাতে ভালোবাসে। সব কিছু করে কিন্তু সুনিতার ক্যানালকে ছোঁয় না।

লতাও একই আছে। ও ওর কুড়ি বা পঁচিশটা ছেলে আর টিচারের সাথে মনের সুখে সেক্স এর খেলা চালিয়ে যাচ্ছে। সুনিতা আর দিব্যা লতাকে মাঝে মাঝেই দ্যাখে সেই জঙ্গলের পেছনে দু চারটে ছেলের সাথে যেতে। একদিন দিব্যা বলে গিয়ে দেখতে লতা কি কি করছে। সুনিতার যাবার ইচ্ছা ছিল না। দিব্যা জোর করায় গেল। গিয়ে দ্যাখে লতা সব জামা কাপড় খুলে উলঙ্গ। সাথে তিনটে ছেলেও তাই। চার জনে মিলে যা খুশী করছে। সেক্সের কিছু বাদ নেই আর। তিনটে ছেলেই পালা করে সঙ্গম করে ওর সাথে। লতাও ছেলেদের সাথে তাল মিলিয়ে সব কিছু করে গেল। সুনিতা চলে যায়। দিব্যা পেছন থেকে এসে ওকে ধরে জিজ্ঞাসা করে ওর কি হয়েছে। সুনিতা বলে লতা যা করছিল ওটা সেক্সের নামে নোংরামো। সেক্সের মত পবিত্র পুজাকে লতা আর ওর যৌনভৃত্যরা পাপের আধার করে তুলেছে। ও এই সব সহ্য করতে পারেনা। ও আর আকাশও সেক্স করে। কিন্তু ওরা দুজনেই পুজা করার মত পবিত্রতা নিয়েই করে। একদিন ভগবান লতাকে ঠিক শাস্তি দেবে। আর সেইটা ও লতার ছোটবেলার বন্ধু হিসাবে সহ্য করতে পারছে না।

সেদিন সন্ধ্যা বেলায় সুনিতা লতাকে জিজ্ঞাসা করে যে ও দুপুরে কি করছিল।

লতা – তুই আর দিব্যা তো দেখেছিস আমি কি করেছিলাম।

সুনিতা – তুই জানিস আমরা দেখছিলাম।

লতা – হ্যাঁ আমি দেখেছি যে তোরা দেখছিলি।

সুনিতা – তাও তুই ওইসব করে গেলি ?

লতা – তুই আর আকাশও তো সবার সামনে করেছিস।

সুনিতা – আমরা ভালবাসার পুজা করছিলাম। আর তোরা নোংরামো করছিলি।

লতা – বেশ বললি তো ! শালা আমি সঙ্গম করলে নোংরামো, আর তুমি করলে সেটা পুজা ? বাঃ ভালো বললি

সুনিতা – আর আমরা বিবাহ বন্ধনে বাঁধা পড়ার পর করেছি।

লতা – বিয়ের আগেও তো করেছিস। দিব্যা আর রাজনও তো করেছে।

সুনিতা – হ্যাঁ আমরা করেছি। কিন্তু পাগলের মত উচ্ছৃঙ্খলের মত করিনি। একদিন চার জনে মিলে উচ্ছৃঙ্খলতা করতে গিয়েছিলাম আকাশ থামিয়ে দিয়ে আমাদের পাপ করা থেকে বাচিয়েছে।

লতা – আমি বুঝিনা বাবা তোদের ওইসব পাপের সঙ্গম আর পুজার সঙ্গম। আমার কাছে সঙ্গম মানে ছেলেদের ওইটা আমার যোনির মধ্যে আসবে ব্যাস। তোর পুজা ওয়ালা সঙ্গমেও তাই করিস। নাকি অন্য কিছু করিস ?

সুনিতা – তোকে বোঝানও যাবে না। যে জেগে থেকে ঘুমানোর ভান করে তার ঘুম কখনো ভাঙ্গানো যায় না। আর তুই কেন কনডম ছাড়া সঙ্গম করছিলি। যদি প্রেগন্যান্ট হয়ে যাস তখন কি হবে ?

লতা – না রে বাবা এই লতা ওত কাঁচা মেয়ে না। আমি ওদের কখনো ভেতরে ফেলতেই দেই না। আমার মাসী শিখিয়ে দিয়েছে কারো বীর্য ভেতরে চলে গেলে কি ভাবে বের করে দিতে হয়। তুই চিন্তা করিস না। আর আমার পাপ হলেও তোর কোন দায়িত্ব নেই বা আমি বিপদে পড়লেও তোকে বাঁচাতে হবে না।

সুনিতা – এইখানে তুই আরেকটা ভুল বলছিস। আমার গত ১৫ বছরের বন্ধু। তার আগেও হয়ত বন্ধু ছিলি কিন্তু সেই বয়সের কথা তো আর আমাদের কারো মনে নেই। তাই চিরদিনই তুই আমার বন্ধু থাকবি। তুই যদি কেরালার মুখ্যমন্ত্রী হোস আমার বন্ধু থাকবি, আর তুই যদি মানুষ খুন করে জেলে যাস তাও আমার বন্ধুই থাকবি।

লতা – আমি কখন বলেছি আমি তোর বন্ধু থাকব না। আর তুই বন্ধু বলেই তোর কাছে সব কিছু বলি।

সুনিতা – তবে কেন বলিছিস তোর বিপদ হলে আমার কোন দায়িত্ব নেই ?

লতা – আমি ভুল বলেছি। আর আমি সাবধানে থাকব যাতে বিপদে না পড়ি।

লতা চলে যায়। কিন্তু বদলায় না। সুনিতা আর দিব্যা একদিন ছুটির পর টিচার্স রুমের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল। ভেতর থেকে লতার গলা শোনে। সুনিতা পালিয়ে যায়। দিব্যা গিয়ে দেখতে চেস্টা করে। জানালার ফাঁক দিয়ে দ্যাখে দু প্রফেসর, লতা আর একটা মেয়ে চারজনে উলঙ্গ হয়ে সেক্স করছে। দিব্যা পরে সুনিতাকে বলে। সুনিতা আর লতাকে কিছু বলে না।
 
রাত্রে সুনিতা মাঝে মাঝেই ‘হে প্রভু’ বলে আকাশকে পুজা করতে যায়। আকাশ অনেক বলেও বন্ধ করতে পারে না। বাড়ীতে বেশীর ভাগ সময় আকাশ আর সুনিতা ছাড়া আর কেউ থাকেনা। সুনিতা আকাশের খুশীর জন্য বাড়ীতে নগ্নই থাকে। আকাশ নগ্ন থাকতে চায় না। সুনিতা বলে, “আমি একা কেন নগ্ন থাকবো?”

আকাশ – আমি তোমাকে নগ্ন দেখতে ভালোবাসি তাই তুমি নগ্ন থাকবে।

সুনিতা – আমিও তো তোমাকে ভালোবাসি।

আকাশ – সে আমি নগ্ন থাকলেও ভালোবাসো না থাকলেও ভালোবাসো

সুনিতা – তার মানে তুমি আমাকে ভালোবাসো না, আমার নগ্নতাকে ভালোবাসো ?

আকাশ – তা নয় আমি তোমাকেই ভালোবাসি, তোমার নগ্নতাকেও ভালোবাসি।

সুনিতা – আমিও তোমার ময়ুরকে খুব ভালোবাসি।

আকাশ – সেটাই তো সমস্যা। আমার ময়ুরকে খোলা রাখলেই লাফালাফি শুরু করে দেয়। আর এখন তো ওর ক্যানাল বন্ধ। তাই ওকে বেঁধে রাখি।

সুনিতা কাঁদতে শুরু করে। ওর মন খারাপ হয়ে যায় আকাশের ময়ুরকে শান্ত করতে পারছে না বলে।

আকাশ – আবার কাঁদো কেন সোনা ?

সুনিতা – আমার জন্য তোমার কত কষ্ট। আমার জন্য তামাকে কত কিছু ত্যাগ করতে হচ্ছে। মা, বাবা, বোনকে ছেড়ে আছো। আর তোমাকে তোমার প্রয়োজনীয় দৈহিক শান্তিও আমি দিতে পারছি না।

আকাশ – আমি তোমার কাছে আছি, এটাই আমার বড়ো শান্তি। তুমি আমার চোখের সামনে ঘুরে বেরাচ্ছ সেটাই আমার শান্তি। আমি তোমার হাঁসি মুখ সবসময় দেখতে পারছি এটাই আমার শান্তি। তুমি আমাকে পেয়ে খুশী আছো এটাই আমার শান্তি। ওই একটু দৈহিক আরাম না পেলে কি আসে যায়। দেখো এই নয় যে আমার নগ্ন থাকতে খারাপ লাগে। কিন্তু আমি সাবধান থাকতে চাই। কখন বেশী উত্তেজনার বসে আবার কিছু ভুল করে ফেলব তখন তোমার যদি আরও শরীর খারাপ হয়, তখন আমি কি করবো।

সুনিতা – তাও তো আমার জন্য কত কিছু মানিয়ে নিতে হচ্ছে তোমাকে।

আকাশ – এটা কি শুধু তোমার জন্য? এটা আমার জন্যও তো বটে। তুমি ভালো থাকলে আমিও তো ভালো থাকি। তাই যা কিছু করছি শুধু তোমার বা আমার জন্য নয়। আমরা দুজনেই যা যা করছি আমাদের দুজনের ভালবাসার জন্য।

দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকে। তারপর দুজনেই হেঁসে ওঠে। আকাশ বলে, “আমার সোনা মেয়ে, আমার প্রানের দেবী।”

সুনিতা বলে, “আমার শিব ঠাকুর, আমার জীবনের প্রভু।”

এই ভাবেই ওদের ভালবাসা চলতে থাকে। একদিন আকাশ দোকান থেকে চারটে হাফপ্যান্ট কিনে আনে। তখনকার দিনে এখনকার মত বড়দের হাফপ্যান্ট পড়ার চল ছিল না। আকাশ স্পোর্টসের দোকান থেকে ফুটবল খেলার রেফারীদের প্যান্ট কেনে। বাড়ি এসে সুনিতাকে বলে ওরা দুজনেই বাড়ীতে হাফপ্যান্ট পরে থাকবে। তাহলেই সুনিতার মালাবুলাহ ক্যানাল আর আকাশের ময়ুর দুটোই ঢাকা থাকবে আর নিরাপদে থাকবে। মাঝে মাঝে রাজন আর দিব্যা আসে। সুনিতার মা আসেন তবে দুপুর বেলা যখন আকাশ অফিসে থাকে। কেউ আসলে সুনিতা হাফপ্যান্টের ওপর টিশার্ট বা টপস পরে নিত।

একদিন সুনিতা আকাশকে জিজ্ঞাসা করে, “আমার শরীরে কোন কোন অংশ তোমার বেশী ভালো লাগে ?”

আকাশ – আমি পরপর বলছি। একটু ভাবতে দাও।

দু মিনিট ভেবে বলে – এক নম্বর তোমার পেট আর নাভি, তারপর চোখ, তারপর মুখ আর ঠোঁট, তারপর তোমার দুই কবুতর, তারপর মালাম্বুলাহ ক্যানাল, চুল, পা, হাত ব্যাস। এবার তুমি বল আমার কি কি ভালো লাগে তোমার।

সুনিতা – এক নম্বর তোমার মন,

আকাশ – না না মন বাদ। মন শরীরের অংশ নয়। মন ধরা হলে আমারও এক নম্বর তোমার মন হত।

সুনিতা – আচ্ছা ঠিক আছে মন বাদ এই তালিকা থেকে। এক নম্বর তোমার চোখ, দুই নম্বর হল তোমার বুক, তিন নম্বর তোমার সুন্দর ময়ুর, চার নম্বর তোমার মুখ, পাঁচ নম্বর তোমার পাছা, তারপর হাত, পা এইসব।

আকাশ – আমি তোমার পাছা বলতে ভুলে গেছি। তোমার সব কিছুই এতো ভালো কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি।

সুনিতা – আজকে আমাকে তোমার ময়ুর নিয়ে একটু খেলতে দেবে ?

আকাশ – ময়ুর জেগে উঠলে কি করবো ?

সুনিতা – হামি খেয়ে, হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেব।

আকাশ – ঠিক আছে তোমার ভালো লাগলে খেলো। আমি মানা করবো না।

সুনিতা আকাশের প্যান্ট খুলে দেয়। ময়ুরকে চুমু খায়। ময়ুর জেগে ওঠে। সুনিতা বলে, “কতদিন পরে তোমার ময়ুরকে এইভাবে দেখছি। আমার শিব ঠাকুরের শিবলিঙ্গ। আমার খুব ভালো লাগছে। ও আদর করতে থাকে আকাশের ময়ুর কে। বার বার চুমু খায়। আকাশের ময়ূরও অনেকদিনের উপোষী ছিল। বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। চরম সময় এসে যায় খুব তাড়াতাড়ি। আকাশের পেট সুনিতার হাত সব মাখামাখি হয়ে যায়। সুনিতা কিছু না বলে উঠে গিয়ে একটা টাওয়েল ভিজিয়ে এনে আকাশকে পরিষ্কার করে দেয়। তারপর জিজ্ঞাসা করে, “তোমার ভালো লেগেছে ?”

আকাশ বলে খুব ভালো লেগেছে। সুনিতা বলে, “আজ থেকে রোজ রাতে তোমাকে অন্ততঃ এই ভাবে একটু আরাম দেব। তুমি মানা করো না। আকাশ বলে সুনিতা যা চাইবে তাই হবে।   

সুনিতার মা প্রায় প্রতিদিন একবার করে আসে। মেয়ের সাথে কথা বলেন। ওর যা যা দরকার করে দেন। উনি সুনিতাকে কোন ভারী কাজ করতে দেন না। সুনিতার মা আর বাবার দুঃখ যে আকাশের মা সুনিতাকে মেনে নেন নি। আবার খুশীও যে আকাশ ওঁদের মেয়েকে ছেড়ে যায়নি। বরঞ্চ আকাশ সব ছেড়ে ওঁদের মেয়ের সাথেই আছে। সুনিতার বাবার কথা, “মিয়া বিবি রাজী তো কেয়া করেগা কাজী।”

এইভাবে ওঁদের দিন কেটে যাচ্ছিল। তিন মাস পরে আকাশ সুনিতাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার সব USG আর অন্য কিছু পরীক্ষা করে বলেন সুনিতার ভেতরের ক্ষত শুকিয়ে গেছে ওরা নর্মাল জীবন শুরু করতে পারে। সুনিতা জিজ্ঞাসা করে ও আকাশকে পুরোপুরি ভালবাসতে পারবে কিনা। ডাক্তার মহিলা সুনিতার গাল টিপে বলেন ও ওর আকাশের সাথে সব কিছুই করতে পারবে। তারপর থেকে সুনিতা আকাশের ময়ুরকে রোজ রাত্রে মালম্বুলাহ ক্যানালে স্নান করায়। কিন্তু যা চাইছিল সেটা আর আসে না। আকাশ বলে ওরা চেস্টা করে যাবে।

আরও এক মাস কেটে যায় আকাশ আর সুনিতারগত পাঁচ মাসে চার পাঁচ বার চন্দ্রিকা কোন টেলিফোন বুথ থেকে আকাশের সাথে অফিসে কথা বলেছে। চন্দ্রিকা ওদের মাকে অনেক বুঝিয়েছে কিন্তু মা বোঝেন নি। মাঝে দুর্গা পুজা কেটে গেছে। চিঠি দিয়ে আকাশ বাবা আর মাকে প্রনাম জানিয়েছে। বোনকে ফোনে ভালবাসা জানিয়েছে। ডিসেম্বর মাসের শেষে এক দিন আকাশ বলে ও একবার কোলকাতায় যাবে। বাড়ি থেকে ওর কিছু জিনিসপত্র আনতে হবে। আর সুনিতাকে বলে চন্দ্রিকার ইলেভেনের পরীক্ষা হয়ে গেছে তাই ও চেস্টা করবে দু মাসের জন্য যদি সুনিতাকে পালঘাটে নিয়ে আসা যায়। সুনিতা খুব খুশী বোন আসবে শুনে। কত কি জিজ্ঞাসা করে বোনকে নিয়ে। আকাশ বলে, “দাঁড়াও এখনও ঠিক হয়নি। আমি বাড়ি গিয়ে বাবাকে বলি। বাবা রাজী হলে নিয়ে আসব।”

সুনিতা বলে ও বাবাকে চেনে আর বাবা ঠিক রাজী হয়ে যাবে। আকাশ ২২শে ডিসেম্বর শনিবার কোলকাতা যায়। যাবার আগে আকাশ সুনিতা কে বলেছিল মায়ের কাছে গিয়ে থাকতে। সুনিতা রাজী হয়নি। ও আকাশের জায়গা ছেড়ে কোথাও যাবে না। ও বলে দিনের বেলা ওর মা আসেন একবার। আর রাত্রে ও দিব্যা বা লতার সাথে থেকে যাবে। আকাশ কোলকাতা পৌঁছে রাজনকে ফোন করে পৌঁছানোর খবর দেয়। আকাশ কোলকাতা যাবার চার পাঁচ দিন পরে লতা ছিল সুনিতার সাথে। রাত্রে খাবার পরে লতা বমি করতে শুরু করে।   
 
লতার বমি করা দেখে দিব্যা ঘাবড়ে যায়। জিজ্ঞাসা করে লতা কি খেয়েছিল সেদিন। লতা বলে কিছুই খায়নি। ওর পেট ঠিক আছে কোন বদহজমের সমস্যা নেই। সুনিতা জিজ্ঞাসা করে, “তুই কি এই জন্যেই আমার সাথে কথা বলতে চাইছিলি ?”

লতা – হ্যাঁ, গত দু তিন দিন ধরে আমার বমি পাচ্ছে। আমি মাকে কিছু বলিনি।

দিব্যা – কি হয়েছে ওর ?

সুনিতা – তোর বমি পাচ্ছে আর কি হচ্ছে ?

লতা – সব সময় গা গুলাচ্ছে। মাছের গন্ধ পেলেই বমি বেশী পাচ্ছে। তুই রাতের খাবারে মাছ এনেছিস তাই আমার বমি পাচ্ছিল।

সুনিতা – এবার কি করবি তুই ? আমাদের কথা তো শুনিস নি। এবার তোকে কে বাঁচাবে ?

দিব্যা – লতার হয়েছে টা কি ?

সুনিতা – আমাদের বন্ধু মা হতে চলেছে। তোকে কতবার বলেছি নিজেকে ঠিক কর। এবার আমিই বা কি করবো!

লতা – সুনিতা, দিব্যা কিছু একটা কর আমাকে বাঁচা।

সুনিতা – মাকে বলেছিস ?

লতা – মা জানলে আমাকে কুচি কুচি করে কেটে ফেলবে।

সুনিতা – তাও উনি তোর মা। আমি যাই করিনা কেন তোর মাকে জানাতেই হবে।

লতা – এখন আমি কি করবো বল ?

সুনিতা – এখন খেয়ে নে। আমি মাছ সরিয়ে দিচ্ছি। তুই বাকি জিনিস দিয়ে খেয়ে নে। আমি তোকে আগেও বলেছি, এখনও বলছি। আমি তোর বন্ধু। আমি বন্ধুর বিপদে তাকে ছেড়ে যাব না। আমাকে চিন্তা করতে দে। কোন একটা উপায় বের করবো।

সুনিতা মাছ ছাড়া অন্য সব দিয়ে আগে লতাকে খাইয়ে দেয়। তারপর ও আর দিব্যা খায়। রাত্রে তিনবন্ধু একসাথে ঘুমায়। সারারাত সুনিতা ঘুমাতে পারে না। সকালে উঠে ও লতাকে নিয়ে ওর ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার সব শুনে কিছু পরীক্ষা করতে বলেন। বমি থামিয়ে রাখার ওষুধ দেন। বিকালে রাজন কে সব কিছু বলে। রাজন নিজে খরচ করে লতার সব পরীক্ষা করায়। দুদিন পরে সব রিপোর্ট দেবে। সেই দু দিন লতা আর বাড়ি যায় না। বাড়ীতে খবর পাঠায় যে সুনিতার শরীর খারাপ বলে ওর কাছে থাকবে।

দুদিন পড়ে ডাক্তারের কাছে গেলে উনি বলেন লতা ছয় সপ্তাহের প্রেগন্যান্ট। ও যদি বাচ্চা রাখতে চায় তবে ঠিক আছে। কিন্তু অ্যাবরসন করাতে হলে খুব বেশী হলে দশ দিনের মধ্যে করে নিতে হবে। সুনিতারা ওখান থেকে চলে আসে। বাড়ি এসে ও লতাকে বলে আকাশের ফেরা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে।

এর মধ্যে আরেকটা সমস্যা আসে। সেটা দিব্যাকে নিয়ে। দিব্যার বাড়ি থেকে দিব্যার বিয়ে দেবে। দিব্যা রাজনকে ছাড়া বিয়ে করবে না। রাজনের নিজের ফ্যামিলিতে কিছু সমস্যা থাকায় ও তখন বিয়ে করতে পারবে না। আর দিব্যার বাড়ি থেকে তক্ষুনি বিয়ে দেবে। দিব্যার বাবার কোন এক বন্ধুর ছেলে সাথে ওঁরা দিব্যার বিয়ে ঠিক করেছে। দক্ষিন ভারতের * সমাজ অনেক বেশী রক্ষণশীল। ওখানে ভালবেসে বিয়ে এখনও হাতে গুনে বলা যাবে। আর ১৯৮৫ সালে কেউ সেটা চিন্তাই করতো না। সুনিতার বাবা আর মা ব্যতিক্রম ছিলেন। ওনারা মেনে নিয়ে ছিলেন। তাছাড়া ওনারা একটু কম পয়সা ওয়ালা ফ্যামিলি ছিলেন, হতে পারে সেই জন্যই ওঁদের আত্মম্ভরিতা কম ছিল। আকাশকে মেনে নিয়ে ছিলেন। দিব্যার বাড়ি অপেক্ষাকৃত সচ্ছল। দিব্যার বাবা একটু নামকরা লোক। তাই উনি কেন মানবেন। দিব্যা বাবাকে বলার চেষ্টা করেছিল। ওর বাবা, মা, দাদা কেউ পাত্তাই দেননি দিব্যার ভালবাসার কথায়। মনের দুঃখে ও রাজনকে সব জানায়। রাজন মেনে নিতে বাধ্য হয়। ওর আকাশের মত সাহস ছিল না। অনেক সাদা সিধে ছেলে।
[+] 2 users Like TumiJeAmar's post
Like Reply
#47
২রা জানুয়ারি আকাশ চন্দ্রিকা কে নিয়ে পালঘাটে ফেরে। চন্দ্রিকা ঘরে ঢুকেই তিনটে মেয়ের মধ্যে নিজের বৌদিকে ঠিক চিনে নেয়। দৌড়ে গিয়ে বৌদিকে জড়িয়ে ধরে। আমার সোনা বৌদি, আমার পাগল বৌদি করে আদর করতে থাকে। সুনিতা একটু অবাক হয়ে যায়। একটু শান্ত হলে সুনিতা বলে, “এতো উচ্ছাসের কি হল!”


চন্দ্রিকা – উচ্ছাস হবে না ! আমার আনন্দ হবে না ! আমার ভোলা মহেশ্বর দাদাকে তুমি দেখে রাখছ, তাতে আমার আনন্দ হবে না! তুমি আমার একমাত্র দাদার একমাত্র বৌ আর আমার একমাত্র বৌদি। আর তোমার মত বৌদি যে দাদাকে ‘হে প্রভু’ বলে পুজা করে, আমি তোমাকে দেখে খুশী হবো না তো কাকে দেখে খুশী হবো।

আকাশ – আচ্ছা অনেক হয়েছে এবার থাম। চুপ করে বস। সারা রাস্তা আমার মাথা খেতে খেতে এসেছে। ট্রেনের সব লোক জেনে গেছে ওর দাদা একটা সুন্দর নিস্পাপ মেয়েকে বিয়ে করেছে।

সবাই হেঁসে ওঠে। সব কথা বাংলাতে হচ্ছিল। দিব্যা আর লতা কিছুই বুঝতে পারে নি। আকাশ আর চন্দ্রিকা ফ্রেস হতে গেলে সুনিতা ওঁদের চন্দ্রিকা কি কি বলেছে সব বলে। দিব্যা বলে খুব ভালো ননদ পেয়েছে।

চন্দ্রিকা এসে সুনিতাকে বলে, “আমি তোমাকে কিন্তু বৌদি বলে ডাকতে পারবো না। আমি তোমাকে দিদি বলে ডাকব। তাতে আরও কাছের মানুষ বলে মনে হবে। আর তুমি আমাকে নাম ধরে ডাকবে। দাদা আমাকে চাঁদ বলে ডাকে তুমিও তাই ডাকবে।”

সুনিতা – এই চাঁদের মত মেয়েটাকে চাঁদ বলেই ডাকা উচিত।

আকাশ আসার একটু পড়ে দিব্যা বাড়ি চলে যায়। লতা থেকে যায়। সুনিতা আকাশকে জিজ্ঞাসা করে কোলকাতায় ওর বাবা মা কেমন আছেন আর ওখানে গিয়ে কি কি হল। আকাশ বলে –

“বাড়ীতে সব কিছু ঠিকই আছে। বাবার খুব মন খারাপ, কিন্তু আমার জন্য একটু গর্বিত। উনি যে আমাকে একা সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা দিতে পেরেছেন সেই জন্য খুব খুশী। বাবা বললেন ছেলে মেয়ে বড়ো হয়ে গেলে সাথে থাকবে না সেটাই হয়ে এসেছে। উনিও বাড়ি ছেড়ে বাবা মাকে ছেড়ে কোলকাতায় এসেছিলেন। এটাও একই ব্যাপার। মা একই আছেন। মনে মনে হয়ত কাঁদছেন। মুখে স্বীকার করবেন না। ওনার মাথায় এখনও ঢোকেনি যে সুনিতা খুব ভালো মেয়ে। চন্দ্রিকা অনেক বোঝানর চেষ্টা করেছে। কিন্তু কিছুই হয়নি।

খেয়ে নিয়ে আকাশ একটু অফিসে দেখা করে আসে। সুনিতা আর চন্দ্রিকা সারা দুপুর গল্প করে। চন্দ্রিকা বলে, “জান দিদি, আমি তোমার আর দাদার গল্প কলেজে সব বন্ধুদের কাছে বলেছি ।”

সুনিতা – আমাদের গল্প না আমাদের ঘটনা ?

চন্দ্রিকা – আসলে তোমাদের ঘটনা। কিন্তু গল্পের থেকে কম চমকের নয়। কলেজের সব ছেলেরা বলে ‘ইস যদি তোর বৌদির মত একটা মেয়ে পেতাম’ আর সব মেয়েরা বলে ‘আগে তোর দাদাকে দেখে আমরা কিছু বুঝতেই পারিনি যে এইভাবে ভালবাসতে পারে’।

সুনিতা – ওঁরা তো তোমার দাদার মুখ দেখেছে তাই ভালবাসা আর বিশ্বাস দেখতে পায়নি। আমি নিজের চোখে সঠিক দৃষ্টি নিয়ে আকাশের চোখ দেখেছি। তাই সব বুঝতে পেরেছি।

চন্দ্রিকা – দিদি সত্যিই তুমি দেবী। তুমি দাদাকে তোমার শিব ঠাকুর বল। তুমিও মা দুর্গার থেকে কম নও।

ওঁরা দুজনে সারা দুপুর আর বিকাল এইসব গল্প করে যায়। আকাশ সন্ধ্যের একটু আগে বাড়ি ফেরে। লতাকে দেখে আকাশ সুনিতাকে আস্তে করে জিজ্ঞাসা করে লতার কি হয়েছে। সুনিতা বলে লতা রাত্রেও ওখানে থাকবে। পরে বলবে কি হয়েছে। রাত্রে লতা আর চন্দ্রিকা একসাথে ঘুমায়। সুনিতা লতার সব ঘটনা বলে। আকাশ বলে একদিন ভেবে পরদিন অফিস থেকে ফিরে বলবে। তারপর আকাশ দিব্যার খবরও শোনে। বেশ দুঃখ পায়। ও ভাবে রাজন ওকে কেন বলল না।
পরদিন অফিসে গিয়েই আকাশ রাজনকে জিজ্ঞাসা করে দিব্যার ঘটনা। রাজন বলে দিব্যা শুরুতে একটু ইমোশনাল হয়ে রাজনের সাথে সম্পর্ক করেছিল। কিন্তু দিব্যাও আসলে রাজনের চলার সাথে মানাতে পারছিল না। দিব্যারা অনেক বেশী স্বচ্ছল জীবন কাটায়। রাজনের সাথে আসলে জীবনের ওই আরাম ছেড়ে আসতে হতো। দিব্যা মুখে কিছু না বললেও, রাজন বুঝতে পারত। তাই যখন দিব্যার বাড়ি থেকে চাপ আসে ওঁদের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করতে, রাজন শুনেই দিব্যাকে বাড়ীর ইচ্ছায় বিয়ে করতে বলেছে। আকাশ আর রাজনের লতার সমস্যা নিয়েও কথা হয়। দুজনে একটা সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত নেয়। সুনিতা আর লতার অনুমতি লাগবে।
সারাদিন বাড়ীতে থেকে চন্দ্রিকাও লতার কথা শোনে। ও বৌদিকে কিছু বুদ্ধি দেয় আর বলে দাদাকে রাজী করাতে।   
 
সুনিতা মাতা –
আকাশ একটু তাড়াতাড়িই বাড়ি ফেরে। ফ্রেস হবার পর সবার সাথে এসে বসে। লতা, সুনিতা, চন্দ্রিকা সবাই বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। আকাশ বলে সবার এতো টেনশন কিসের। সুনিতা বলে লতার জন্য কি করা উচিত সেটাই আগে ঠিক করতে হবে।

আকাশ – আগে লতা বলুক ও কি চায়।

লতা – আমি চাই আমার বাচ্চা বেঁচে থাকুক। যতই আমার ভুল হোক আমারই তো বাচ্চা হবে।

আকাশ – আমাদের দেশে আমাদের সমাজে তো তোমার পক্ষে একা মা হয়ে বাচ্চা মানুষ করা ভীষণ কঠিন।

লতা – আমি সেটা পারবো না। আমার সেই মানসিক শক্তি নেই।

চন্দ্রিকা – দ্যাখ দাদা আমরা সারাদিন এটা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের কাছে একটাই উপায় আছে।

আকাশ – কি সেটা ?

চন্দ্রিকা – লতা দিদি বাচ্চার জন্ম দিক।

আকাশ – তারপর।

চন্দ্রিকা – তারপর বাচ্চাটা তোরা অ্যাডপ্ট কর। আমি দিদির কাছে যা শুনেছি যে ডাক্তার বলেছে দিদির বাচ্চা হবার সম্ভাবনা কম। আর তোরাও একমাস চেস্টা করছিস। কিন্তু দিদি কনসিভ করছে না। আমাদের লাগছে বাচ্চাটা তোদের নিয়ে নেওয়াই সব থেকে ভালো।

আকাশ – তোমাদের সবাইকে বলছি। আজ দুপুরে আমি আর রাজন এটা নিয়ে যখন কথা বলছিলাম তখন আমাদের মাথাতেও এই সমাধান এসেছে। কিন্তু এতে অনেক সমস্যা আছে। সেগুলো যদি আমরা ম্যানেজ করতে পারি তবে আমার কোন আপত্তি নেই।

সুনিতা – কি কি সমস্যা ?

আকাশ – প্রথম সমস্যা লতাকে লুকিয়ে রাখা। আমাদের লতাকে পুরোপুরি লুকিয়ে রাখতে হবে। ওর মা বাবা ছাড়া যেন কেউ জানতে না পারে। তা না হলে ওর কোনদিন বিয়ে দেওয়া যাবে না।

দ্বিতীয় সমস্যা যদি সুনিতা ভবিস্যতে আমাদের বাড়ি যেতে চায়, তবে আমি, সুনিতা আর চন্দ্রিকা ছাড়া কেউ জানবে না। মা বা বাবা জানতে পারলে মা কোন দিন মেনে নেবে না। আর সুনিতা যদি বলে আমার মা ওকে মেনে না নিলে ওর কোন অসুবিধা নেই। তবে আমি ওর সাথেই থাকব। কারো কাছে কিছু লুকাব না।

তৃতীয় সমস্যা লতা কিভাবে ওর বাবা আর মাকে জানবে। ওর লতার মা বাবা মেনে নেবেন কিনা।

চতুর্থ সমস্যা লিগ্যাল ব্যাপার। আমাদের লিগালি করতে হবে যা ঠিক করবো।

সুনিতা – দেখো আমার একটা বাচ্চা চাই। আমার যেটা চাই লতা সেটাই পাবে কিন্তু রাখতে পারবে না। যদি তুমি ওই নাম না জানা বাবার ছেলে কে নিজের করে নিতে রাজী থাকো তবে আর সব সমস্যা আমরা সামলাতে পারবো।

আকাশ – আমি মেনে নিতে পারবো। তবে তোমার সাথে আমি রাত্রে আরও কিছু কথা বলবো সেগুলো যদি মেনে নাও তবে আমার কোন আপত্তি নেই।

সুনিতা – দেখো আমি তোমাকে জানি। তুমি কি কি বলবে সেগুলোও আন্দাজ করতে পারি। আর আমি সব কিছুতেই রাজী আছি। যদি আমার বন্ধুর জন্য এটুকু না করতে পারি তবে আর তোমার সাথে ‘তিনবন্ধু’ বইটা পড়ে কি শিখলাম। তুমি যেমন আমার প্রভু। ওরাও আমার সহচরী। তোমাকে ছাড়া যেমন আমার ভবিষ্যৎ অসম্পূর্ণ, লতা আর দিব্যা ছাড়া আমার অতীত অসম্পূর্ণ। আমি অতীত কে ছেড়ে শুধু ভবিষ্যৎ নিয়ে বাঁচতে পারবো না। আমাকে যে কোন মুল্যে আমার বন্ধুকে বাঁচাতেই হবে।

আকাশ – আমিও তোমার সাথে আছি সোনা।

লতা সুনিতা আর আকাশ জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে। চন্দ্রিকা যখন এই সমাধান চিন্তা করে ছিল তার পেছনে এতো জটিলতা থাকতে পারে চিন্তাই করেনি। ওর কাছে সমস্যার পৃথিবী তখনো এতো পরিষ্কার হয়নি। ওর দাদা আর বৌদির আলোচনা শুনে আর বৌদির বন্ধুর প্রতি ভালবাসা দেখে কোন কথা বলতে পারে না। অনেক পরে উঠে গিয়ে সুনিতাকে পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করে। আর বলে, “তুমি সত্যিই এক দেবী। তোমাকে প্রনাম করে আমার যে পুন্য হল আজ পর্যন্ত কোন মন্দিরে প্রনাম করে সেই পুন্য হয়নি ।”

সুনিতা চন্দ্রিকাকে বুকে টেনে নেয় আর বলে, “তোমার মত বোন থাকলে আমাদের কোন দিন কোন সমস্যা ছুঁতেই পারবে না।”

এর মধ্যে দিব্যা আর রাজনও এসে পরে। ওরাও সব শুনে খুব খুশী। আকাশ দিব্যাকে আলাদা ডেকে জিজ্ঞাসা করে ওদের সম্পর্ক কেন ভেঙ্গে গেল। আগে তো ও কখনো বোঝেনি যে ওর রাজনের সাথে কোন অসুবিধা ছিল। দিব্যা বলে যে ওর কোন অসুবিধা ছিলও না সেদিনও নেই। কিন্তু ও রাজনের কথা বাড়ীতে কাউকে জানায় নি। যেদিন ওর বাবা রাজনের কথা জানতে পেরেছেন সেদিনই বলে দিয়েছেন যে রাজনের সাথে কোন সম্পর্ক রাখা যাবে না। উনি ওনার বন্ধুর ছেলের সাথে দিব্যার বিয়ে দেবেন। আর দিব্যার আকাশের মত বাড়ীর বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করার ক্ষমতা নেই, তাই মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। সেদিনও যে রাজনের সাথে এসেছে বাড়ীতে কেউ জানে না। ওর বাড়ীতে জানে ও সুনিতাকে দেখতে এসছে।

চন্দ্রিকা সুনিতাকে বলে, “দিদি সেই ‘তিনবন্ধু’ বইটা তোমার কাছে আছে নয়া ?”

সুনিতা – হ্যাঁ কেন?

চন্দ্রিকা – আমাকে দেবে, আমি রাজনকে ওই বইটা পড়ে শোনাবো।
[+] 1 user Likes TumiJeAmar's post
Like Reply
#48
পরিশিষ্ট –
লতার বাবা মাকে আকাশের বাড়ীতে ডাকা হয়। সুনিতা ওনাদের বলে লতার ভুলের কথা। শুরুতে ওনারা খুবই রেগে গিয়েছিলেন। তারপর আকাশ বোঝানোতে শান্ত হন।

রাজনের এক বন্ধু পালঘাটের সরকারি হাসপাতালে কাজ করতো আর ওখানে কোয়ার্টারে থাকতো। লতার বাচ্চা হওয়ার আগে ওই বাড়ীতে আকাশ আর সুনিতার সাথে থাকে। রাজনের বন্ধুর কোন বাচ্চা ছিল না। ওঁরা আকাশদের বাড়ীতে এসে থাকে। লতা যে ওখানে থাকতো কেউ জানত না। এমন কি রাজনের ওই বন্ধুও জানত না। ওঁরা আটজন ছাড়া শুধু আমি জানতাম আর আজ আপনারা সব পাঠকেরা জানলেন।

লতার ঠিক সময়ে কোন সমস্যা ছাড়া একটা ছেলে হয়। সুনিতা তার নাম রাখে, যেটা আগে ঠিক করা ছিল, ‘সমুদ্র’। স্বাভাবিক ভাবেই স্মৃতি দেবী সুনিতার ছেলে হবার পরে সব কিছু মেনে নেন। উনি সুভাষ বাবুকে নিয়ে আবার পালঘাটে এসেছিলেন। সুনিতার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। সুনিতা কেঁদে ভাসিয়ে দিয়েছিল আর বলেছিল, “মা কোনদিন সন্তানের কাছে অন্যায় করে না। নিশ্চয়ই সুনিতা কোন পাপ করেছিল ভগবান তার শাস্তি দিয়েছেন। ওর প্রভুর মা কোনদিন ভুল করতে পারেন না।”

এরপরে স্মৃতি দেবীর সব অহঙ্কার ভেঙ্গে চূর্ণ হয়ে গেছে।

আরও দু বছর পড়ে ১৯৮৮ সালে রাজনের সাথে চন্দ্রিকার বিয়ে হয় – একসাথে ‘তিনবন্ধু’ পড়ার ফলএই বিয়েতে স্মৃতি দেবী আর কোন আপত্তি করেনে নি। ওদের মেয়ে হয়েছে আর মেয়ের বয়স এখন ২২।

সমুদ্র এখন দিল্লিতে থাকে। বাবার মত ইঞ্জিনিয়ার। একটা পাঞ্জাবি মেয়েকে বিয়ে করেছে। সুখে আছে।

সুনিতা আর আকাশ এখন কোলকাতায় থাকে। বাবা মায়ের সাথেই থাকে। বাবা মায়ের বয়েস প্রায় ৭৫। সুনিতা এখনও রোজ আকাশকে ‘হে প্রভু’ বলে পুজা করে। আকাশেরও অভ্যেস হয়ে গেছে আর নিষেধ করে না।

ওহো আরেকটা কথা লিখতে ভুলেই গিয়েছি। সেই রাতে আকাশ সবার সাথে নিজেদের সন্তান ঠিক করার পরে আকাশ আর সুনিতার মধ্যে কি কথা হয়েছিল সেটা লিখিনি। সেই রাতে আকাশ বলেছিল যে ওঁরা আর কোন সন্তানের চেষ্টা করবে না। নিজেদের কোন সন্তান হলে যদি মন বদলে যায়। প্রথম সন্তানকে যদি অবহেলা করে। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত আকাশ ওর ময়ুরকে রেনকোট পড়িয়েই ক্যানালে নামায়।
 
সমাপ্ত
 
[+] 5 users Like TumiJeAmar's post
Like Reply
#49
শেষ করলাম ...

এরকম গল্প আজকাল আর কেউ লেখে না কেন কি জানি !!!

Namaskar Namaskar clps yourock
[+] 3 users Like ddey333's post
Like Reply
#50
উফফফ  দারুণ লাগলো আপনার এই গল্প টা
 








PROUD TO BE KAAFIR  devil2


                                 
[+] 2 users Like Kallol's post
Like Reply
#51
যতবার পড়ি, ভাললাগে। গসিপে মনে আছে কিছু ছবি দেখেছিলাম। সেগুলোও পাবলিশ করুননা।
[+] 1 user Likes sunilgangopadhyay's post
Like Reply
#52
(05-01-2022, 11:14 AM)sunilgangopadhyay Wrote: যতবার পড়ি, ভাললাগে। গসিপে মনে আছে কিছু ছবি দেখেছিলাম। সেগুলোও পাবলিশ করুননা।

আমার এখন ডেস্ক টপ বা ল্যাপ টপ নেই।
মোবাইল থেকে সেই সব ছবি আপলোড করা অনেক খামেলার।
[+] 2 users Like TumiJeAmar's post
Like Reply
#53
(05-01-2022, 11:59 AM)TumiJeAmar Wrote: আমার এখন ডেস্ক টপ বা ল্যাপ টপ নেই।
মোবাইল থেকে সেই সব ছবি আপলোড করা অনেক খামেলার।

পুরোনো Xossip আর্কাইভ এ এখনো আছে ওই ছবিগুলো , সময় পেলে আমি দিয়ে দেব যতগুলো পাওয়া যায় ... 
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#54
(06-01-2022, 10:14 AM)ddey333 Wrote: পুরোনো Xossip আর্কাইভ এ এখনো আছে ওই ছবিগুলো , সময় পেলে আমি দিয়ে দেব যতগুলো পাওয়া যায় ... 

তুমি সত্যিকারের বন্ধু
[+] 1 user Likes TumiJeAmar's post
Like Reply
#55
[Image: Signature.jpg]
Like Reply
#56
[Image: 2.jpg]
Like Reply
#57
[Image: Malampuzha-1.jpg]

মালামমুল্লাহ ড্যামের ওপরের রাস্তা
Like Reply
#58
[Image: malampuzha-3.jpg]

মালামমুল্লাহ ড্যামের ওপরের রাস্তা
Like Reply
#59
[Image: Malampuzha-2.jpg]

মালামমুল্লাহ ড্যাম
Like Reply
#60
[Image: DAM02.jpg]

মালামমুল্লাহ বাগান
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)