04-07-2021, 01:20 PM
(This post was last modified: 04-07-2021, 01:36 PM by Lekhak is back. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
Deleted.
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
|
04-07-2021, 01:20 PM
(This post was last modified: 04-07-2021, 01:36 PM by Lekhak is back. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
Deleted.
04-07-2021, 01:25 PM
04-07-2021, 01:35 PM
(04-07-2021, 01:25 PM)Baban Wrote: অসাধারণ পোস্টার। কিন্তু আমি ছবি আপলোড করতে পারছি না।
04-07-2021, 02:52 PM
(This post was last modified: 04-07-2021, 03:50 PM by Bichitro. Edited 1 time in total. Edited 1 time in total.)
(04-07-2021, 01:25 PM)Baban Wrote: মুক্ত আকাশ খোলা বাতাস পায়ের নিচে সবুজ ঘাস জ্যোৎস্নার আলোয় স্নান আর! আর শুধু তুমি আর আমি ❤❤❤ না না এটা কবিতা না। এটা আপনার পোস্টার ❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤
04-07-2021, 05:43 PM
বেশ অনেকদিন আগে xossipy.com এ একাউন্ট খুলেছিলাম xossip.com বন্ধ হওয়ার পর exbii/xossip র লেখকদের পুরানো ও নতুন গল্প পড়ার আশায়। যদিও অরিজিনাল লেখকরা অনেকেই ফিরে আসেননি তখন এখানে, বেশ কিছু পুরানো গল্প পোস্ট করেছিলেন অন্য মেম্বাররা। তারপর আমার বহুদিন এই সাইটের পথ মাড়ানো হয়নি। আজ হঠাৎ করে খুলেই দেখি পুরানো সব অতি প্রিয় লেখকরা ফিরে এসেছেন এই সাইটে। বহুদিন বাদে লেখক, পিনুরাম, indian dada, ধৃতরাস্ট্র এদের কে দেখতে পেয়ে কি যে ভালো লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না। পুরানো সেই exbii র দিনগুলো মনে পরে যাচ্ছে। অন্য যাদেরকে এই সাইটে খুঁজে পেলাম না যেমন ভার্জিনিয়া বুলস, লাভদীপ, দীপালি তাদেরকে খুব মিস করছি। আরো অনেক অনেক ভালো ভালো লেখক ছিলেন যাদের নাম এই মুহূর্তে মনে আসছে না।
লেখক দা আপনার কথা কি আর বলবো। আপনাকে এখানে দেখে খুবই ভালো লাগছে। একসময় আপনার সিরিজার জন্য রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করতাম। আপনার কাছে একটা অনুরোধ রইলো সিরিজা উপন্যাস শেষ করবার। এরকম উপন্যাস আগে লেহা হয়নি। সিরিজা , রজত, দিবাকরকে ফিরিয়ে আনুন।
04-07-2021, 07:24 PM
(04-07-2021, 05:43 PM)bongreader Wrote: বেশ অনেকদিন আগে xossipy.com এ একাউন্ট খুলেছিলাম xossip.com বন্ধ হওয়ার পর exbii/xossip র লেখকদের পুরানো ও নতুন গল্প পড়ার আশায়। যদিও অরিজিনাল লেখকরা অনেকেই ফিরে আসেননি তখন এখানে, বেশ কিছু পুরানো গল্প পোস্ট করেছিলেন অন্য মেম্বাররা। তারপর আমার বহুদিন এই সাইটের পথ মাড়ানো হয়নি। আজ হঠাৎ করে খুলেই দেখি পুরানো সব অতি প্রিয় লেখকরা ফিরে এসেছেন এই সাইটে। বহুদিন বাদে লেখক, পিনুরাম, indian dada, ধৃতরাস্ট্র এদের কে দেখতে পেয়ে কি যে ভালো লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না। পুরানো সেই exbii র দিনগুলো মনে পরে যাচ্ছে। অন্য যাদেরকে এই সাইটে খুঁজে পেলাম না যেমন ভার্জিনিয়া বুলস, লাভদীপ, দীপালি তাদেরকে খুব মিস করছি। আরো অনেক অনেক ভালো ভালো লেখক ছিলেন যাদের নাম এই মুহূর্তে মনে আসছে না। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। অবশ্যই সিরিজা শেষ করবার পরিকল্পনা আছে। আমি আরো 5টি উপন্যাস লিখেছি, এক) নিষিদ্ধ স্বাদ, দুই) কামাগ্নি রেশমা, তিন) আমার একমাত্র শালী, চার) কামপুরুষ ও পাঁচ) রেবতী। যেগুলো অসমাপ্ত রয়ে গেছে। ইচ্ছা আছে পোস্ট করবার।
04-07-2021, 10:01 PM
এগারো
মাথাটা একটু ঝিম ঝিম করছে। কেন জানি না শুক্লার বাড়ী থেকে ফিরে আসার পরই শরীরটা কিরকম খারাপ লাগছিল আমার। পেটের কাছটা কেমন ব্যাথা ব্যাথা করছিল। ঠিক যেমন আলসার কোলাইটিসের সময় ব্যাথাটা ওঠে, ঠিক তেমনই। ভীষন একটা যন্ত্রণা অনুভব করে বারান্দা থেকে আমি ঘরে ফিরে এলাম। কোমরের কাছটায় হাত দিয়ে একটু কাতরাতে শুরু করেছি। যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠলাম, ‘ও মা গো। আবার সেই যন্ত্রণা।’
ঘরের মধ্যে জলের বোতলটাও নেই। উঠে যে খাওয়ার ঘরে ফিল্টারের কাছে যাব, একটু জল খাবো। সে সামর্থও নেই। আমার চোখ দুটো কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে, বুঝতে পারছি এ যন্ত্রণা সারা রাত ভোগাবে আমায়। সকাল অবধি আর ঘুম হবে না।
কোমরের দুপাশে হাত দিয়ে চেপে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। টানটান পুরো শরীরটা নিমেষের মধ্যে ব্যাখায় আবার কুঁকড়ে গেল। যন্ত্রণাটা তখন ভেতর থেকে ঠেলে ঠেলে উঠছে। মনে হল, এই সময় কাউকে যদি পাশে পেতাম খুব ভাল হত। কেন যে ব্যাথাটা থেকে থেকে এরকম কষ্ট দেয় বুঝি না। এই বেশ আছি, আবার শরীরটা খুব খারাপ। সুস্থ সবল শরীরটা হঠাৎই বিষন্ন, ভীষন দূঃখী। কি জানি মনের সঙ্গে বোধহয় শরীরেরও একটা যোগসাজশ আছে বোধহয়। একটা অলৌকিক কোন শক্তি। যে শক্তিটাই আমাদের ঠিক থাকতে দেয় না।
মা ঘুমোচ্ছে অন্যঘরে। এই মূহূর্তে মাকে ডাকাটা ঠিক হবে না। মা আমার অনেক কষ্ট করে, সারাদিন অনেক পরিশ্রম করে। মায়ের ঘুমের ব্যাঘাত আমি ঘটাতে চাই না। চোখ বুজে দাঁতে দাঁত চেপে তাই যন্ত্রণাটা সহ্য করার চেষ্টা করে যেতে লাগলাম। মনে হল পেটের ভেতরে কে যেন হাতুড়ী মারছে, এক্ষুনি নাড়িভূড়ি সব বেরিয়ে পড়বে। একটা অসহায় মানুষের মতন সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম, ‘হায় ভগবান। এতটা কষ্ট দিও না আমায়।’
বিচিত্র মানুষের শরীর। হঠাৎ কিছু একটা হয়ে গেল, অমনি শরীরটা বিগড়ে গেল, ব্যস, হয়ে গেল তার দফারফা। ডাক্তার বলেছিল, খাওয়াদাওয়ার কিছু গড়বড় হলেই কিন্তু এই রোগটা মাঝে মধ্যে আবার দেখা দেবে। সুতরাং সাবধানে থাকতে হবে আপনাকে। গোলমাল হলেই ব্যাথাটা আবার আপনাকে কষ্ট দেবে। আর ব্যাথা যদি না কমে, তাহলেই বুঝবেন, বাথরুমে গিয়ে আবার সেই থোকা থোকা রক্ত। ডাক্তার ডেকে, ওষুধ খেয়ে হয়রানি। নার্সিংহোমে ভর্তী। এক গাদা শুধু পয়সা নষ্ট।
আমি কি এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি না?হ্যাঁ পারেন। তারজন্য খাওয়া দাওয়া কন্ট্রোল করতে হবে। আমি জানি, আপনি কাজের মানুষ, কিন্তু বাইরের হাবিজাবি খাওয়া একদম চলবে না। তাহলেই কিন্তু-
‘কিন্তু ডাক্তার আমি তো এই শেষ কয়েকমাসে বাইরে উল্টোপালটা কিছু খাই নি। তাহলে কেন এমন হচ্ছে?’
মনে হল আপন মনে আমি কথা বলছি বিড় বিড় করে। ডাক্তার আমার পাশে নেই। অথচ আমার মনে হচ্ছে আমি যেন ডাক্তারের সাথেই কথা বলছি।
অনেক কষ্ট করে বিছানা থেকে উঠে এক গ্লাস জল নেবার জন্য ফিল্টারের দিকে এগোতে লাগলাম। মনে হল গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, সমস্ত শরীরটা জবজব করছে ঘামে, এইবার মনে হয় ধুপ করে আমি মাটিতে পড়েও যাব। যেন শরীরে শক্তিটুকুও আর অবশিষ্ট নেই আমার। রোগটা হঠাৎই শরীরে নতুনভাবে দানা বেঁধেছে, আমার সমস্ত শক্তিকে সে কেড়ে নিতে চাইছে।
ফিল্টার থেকে আমি গ্লাসে জল গড়াতে লাগলাম। তলপেটের কাছটা চিনচিন করছে। পেটের কাছটা হাত দিয়ে চেপে ধরে বললাম, ‘বিদিশা, তুমি যদি আমাকে ছেড়ে না যেতে, তাহলে হয়তো এই কষ্ট কোনদিন আমার হত না। আজ তুমি ফিরে এসেছো। তাও পুরোন ব্যাথা সেই আমাকে আবার কষ্ট দিচ্ছে।’
এবার জল গড়াতে গিয়ে দুম করে মাটিতে পড়েও গেলাম। মাথার কাছটা ভীষন জোরে আঘাত লাগল। মনে হল মাটিতে লেগে মাথার পিছনটা যেন নিমেষে ফুলে আলুর মতন ঢোল হয়ে গেল। মেঝেতে গ্লাসটা পড়ল, ঝনঝন করে একটা শব্দ বয়ে গেল।
বেশ জোরে শব্দটা হয়েছে। মা’রও ঘুম ভেঙে গেছে আওয়াজ শুনে। মা, ছুটে এসেছে। দেখছে, মেঝেতে শুয়ে আমি ব্যাথায় কাতরাচ্ছি। আমার পেটের কাছটা আর মাথার পিছনে, দুটো জায়গাতেই ভীষন ব্যাথা অনুভব করছি। আমি আর পারছি না।
মা বেশ ভয় পেয়ে গেল। আমাকে বলল, কি হয়েছে তোর?
আমি বললাম, মা, মনে হচ্ছে সেই আলসার কোলাইটিসের ব্যাথাটা আবার চাগাড় দিয়েছে। ভীষন কষ্ট হচ্ছে।
মা বলল, আমাকে ডাকবি তো তুই? দেখেছ কান্ড। ওঠ, ওঠ, দেখি একটু কষ্ট করে।
আমার কাঁধটা ধরে, মা আমাকে ওঠানোর চেষ্টা করতে লাগল। নিজেই কেমন শক্তিশূণ্য হয়ে গেছি। মাকে বললাম, ‘মা দেখো তো ওষুধের বাক্সেতে কোলাইটিসের ওষুধটা আছে কিনা? ভীষন ব্যাথা করছে। মনে হচ্ছে আমি আর বাঁচবো না।’
- ‘দূর পাগল। অমন কথা মুখে আনতে আছে?’ মা, তাড়াতাড়ি ওষুধের বাক্স থেকে একটা ট্যাবলেট বার করে, আমার মুখে দিল। ফিল্টার থেকে জল গড়িয়ে আমার মুখে ঢালতে লাগল। আমাকে বলল, ‘আসতে আসতে ওঠার এবার চেষ্টা কর, আমি তোকে বিছানায় নিয়ে যেতে সাহায্য করছি। কেন ব্যাথাটা কি খুব বেশী হচ্ছে?’
মাকে বললাম, উঠতে পারছি না মা, ভীষন ব্যাথা হচ্ছে। আমি আর পারছি না।’
আমার কষ্ট দেখে মা ভীষন নার্ভাস হয়ে পড়েছে, বুঝতে পারছি মা না এবার কাঁদতে শুরু করে দেয়। হঠাৎই দেখছি, আমার মাথার কাছে বিদিশা। আমাকে বলছে, ‘ওঠো একটু চেষ্টা করে। তুমি যদি এভাবে ভেঙে পড়, তাহলে আমারই বা চলবে কি করে?’
ভীষন কাঁদছে বিদিশা। আমি ওর চোখের জল মুছিয়ে দিতে চেষ্টা করছি। কিন্তু আমার হাত বিদিশার চোখের কাছে কিছুতেই পৌঁছোচ্ছে না।
কেন এমন হচ্ছে আমার? ভীষন বাজে একটা অসুখ। চোখে শুধু ঝাপসা দেখছি। মাথাটাও ঘুরছে বনবন করে। আবঝা আবঝা দেখছি, সারা ঘর জুড়ে শুভেন্দু, রনি, মাধুরী এমনকি শুক্লাও অস্থিরভাবে ঘোরাঘুরি করছে। আমার দিকে ওরা ঘনঘন তাকাচ্ছে, আমার দিকে হাত বাড়াতে চাইছে অথচ আমার এই অস্থির অবস্থা দেখেও, ওরা যেন আমার জন্য কিছুই করতে পারছে না।মা চেঁচিয়ে উঠে বলল, ‘ওঠ, খোকা। একটু চেষ্টা কর। আমি তোকে ধরছি। ওষুধ তো খেয়েছিস। এবারে ব্যাথা কমে যাবে। একটু চেষ্টা কর। একটু ধৈর্য ধর।’
কোনরকমে মা’কে ধরে আমি ওঠার চেষ্টা করতে লাগলাম। শরীরের সমস্ত রয়ে যাওয়া শক্তিগুলো দিয়ে মায়ের হাতটা ধরার চেষ্টা করলাম, কিন্তু পারলাম না। আবার শরীরটা মাটিতে আছড়ে পড়ল। কে যেন মেঝের সঙ্গে আমাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখতে চাইছে। শরীরটা মেঝের সঙ্গে একেবারে গেঁথে গেছে। পৃথিবীর যেন কোন শক্তিই নেই, আমাকে টেনে তোলে।
ভগবান আমাকে দয়া কর। আমি বাঁচতে চাই। ওহ্ কি কষ্ট, কি যন্ত্রণা। কি ভয়ানক ব্যাথা। আমার পেট থেকে এখন সারা শরীরের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে ওই ব্যাথাটা। মনে হচ্ছে এই বুঝি আমার চোখের পাতা বুজে গেল। কাল সকালে চোখ খুলে সূর্যের মুখটা আমি বোধহয় আর দেখতে পারব না।
জ্ঞান হারাবার আগে, শেষবার মায়ের মুখ থেকে একটা চীৎকার শুনলাম। মা চেঁচিয়ে উঠল খোকা বলে। তারপর আর আমার কিছু মনে নেই।
সকালে চোখ খুলে দেখি, বিছানায় শুয়ে আছি। কি করে ওই অবস্থায় বিছানায় এলাম তাও জানি না। আমার মাথার কাছে দেখি মা বসে আছে। ডাক্তার এসেছেন। আমাকে পরীক্ষা করছেন, আমার তলপেট চেপে চেপে দেখছেন, ব্যাথাটা আছে না চলে আছে।
ওনার নাম ডাক্তার এস বাসু। আমাদের হাউজ ফিজিশিয়ান। সব কিছু পরীক্ষা টরীক্ষা করে বললেন, শেষ কবে হয়েছিল, কোলাইটিস?
আমি বললাম, তাও সাত আট বছর আগে।
আমাকে বললেন, এখনো মিল্ক প্রোডাক্ট খাও তুমি?
আমি বললাম, না ও তো অনেক দিন আগেই ছেড়ে দিয়েছি।
ডাক্তার বললেন, ‘রোগটা এমনই। সামান্য কিছু থেকেই আবার ফর্ম করে নেয়। তাও ভয়ের কিছু নেই। তোমার কপাল ভাল, অত রাত্রে তোমার বন্ধু চলে এসেছিল গাড়ী নিয়ে। তোমার মা ভাগ্যিস তাকে ফোন করেছিলেন। আমাকেও ফোন করেছিলেন। আমি অত রাত্রে এসে দেখি, তোমার বন্ধু তার আগেই তোমাকে ওঘর থেকে তুলে এঘরে নিয়ে এসেছে। চোখে মুখে জল দিয়ে তোমার জ্ঞান ফেরানোর অনেক চেষ্টা করছে। আমি এসে তোমাকে আবার ওষুধ দিই। ব্যাথাটা ভাগ্যিস আর বাড়ে নি। তাহলে আবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হত। এখন কদিন ভারী খাবার একদম খাবে না। দু তিনদিন হালকা কিছু খাও। আর ঠান্ডা খাবার খাবে। গরম করা কোন জিনিষই নয়। তিন চারদিন বাড়ীতে পুরো রেস্ট নিতে হবে। অফিস, কাজ বন্ধ। তারপর তুমি আবার পুরোপুরি সুস্থ।’
আমি মায়ের মুখের দিকে তাকালাম, মা’কে বললাম, কে এসেছিল মা?
মা বলল, ‘শুভেন্দু।’
তুমি ফোন করেছিলে ওকে? অত রাত্রে?
মা বলল, ‘কি করব বল? আমার টেনশনে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে তখন। তোর যদি কিছু হয়ে যেত?’ বলেই মা হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল।
04-07-2021, 10:03 PM
ডাক্তার এস বাসু মাকে বললেন, ‘আপনি কাঁদছেন কেন? ভয় তো যেটা ছিল সেটা কেটে গেছে। শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দেবেন না। কান্না থামান।’
মাকে আমিও বললাম, ‘হ্যাঁ মা, কেঁদো না। তুমি তো জানোই। ব্যাথাটা যখন ওঠে, কেমন কষ্ট হয়। কাল রাতে যেন আরো বেশি বেশি করে হচ্ছিলো। সেই যে শুরু হল, তারপরেই সহ্যের বাইরে চলে গেলো।’
ডাক্তার এস বাসু হঠাৎ প্রসঙ্গটা ঘুরিয়ে মাকে বললেন, ‘ছেলের এবার বিয়ে থা দিচ্ছেন না কেন? আপনি আর কত করবেন? এবার ঘরে বউ আসুক। ছেলেকে দেখুক।’ বলেই আমার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললেন, ‘কি দেব? তাই তো?’
আমি আর কি বলব? একটু লজ্জ্বা মতন মুখটা করে চুপ করে রইলাম। দেখছি মা এবার কান্না থামিয়ে মুখ টিপে টিপে হাসছে। ডাক্তার এস বাসুর মুখেও হাসি। ঠিক বুঝলাম না ব্যাপারটা। আমার দিকে চেয়ে মুখ গম্ভীর করে ডাক্তার বাসু বললেন, ‘বিদিশা কে?’
আমি অবাক। এই বিদিশার নাম, ডাক্তার এস বাসু জানলেন কি করে? বেশ খানিকটা বোকা বোকা মতন হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রয়েছি ডাক্তারের দিকে। উনি বললেন, ‘কাল রাত্রে তুমি বিছানায় শুয়ে কতবার বিদিশার নাম করেছো, সেটা কি জানো?’
দেখছি আমার মা’ও কথাটা শুনে চুপ করে রয়েছে। তারমানে কালরাতে আমি সত্যি অনেকবার বিদিশার নাম উচ্চারণ করেছি, অথচ আমার নিজেরই খেয়াল নেই।
ডাক্তার বাসু বললেন, ‘পারো যদি ওই মেয়েটাকেই বিয়ে করে নাও। তোমার মা’ও তাহলে অনেকটা হালকা হবেন। কাল তোমার জন্য উনি যা টেনশনে পড়ে গেছিলেন, বলার নয়। আর ভাগ্যিস তোমার ওই বন্ধুটাও চলে এসেছিল অতরাত্রে। নইলে একা যে উনি কি করতেন, সেটাই ভাবছি।’
ডাক্তার বাসু এবার উঠে পড়লেন। যাবার আগে বলে গেলেন, ‘আজকের দিনটা অন্তত বিছানা থেকে উঠে বেশি হাটাহাটি কোরো না। একদম বেড রেস্ট। পেটের ওপর চাপ পড়বে তাহলে। ঘরের মধ্যেও চলাফেরা করার দরকার নেই। এ বেলাটা শুয়েই থাকো। পারলে সন্ধেবেলা একটু সো্ফার ওপরে গিয়ে বোসো। কিন্তু সেটাও অবস্থা বুঝে। আর আমি তোমার মা’কে বলে যাচ্ছি, যে ওষুধগুলো আমি লিখে দিয়েছি, ওগুলো উনি একটু কষ্ট করে কাউকে দিয়ে আনিয়ে নেবেন। ব্যাস্। কয়েকদিন খেলেই তুমি পুরোপুরি ফিট। তখন অফিস, কাজকর্ম্ম কোনো কিছু করতেই আর অসুবিধে হবে না।’
ডাক্তারকে এগিয়ে দেবার জন্য মা’ও ওনার পিছু পিছু গেল। আমাকে বলে গেল, ‘তুই শুয়ে থাক। আমি ওনাকে এগিয়ে দিয়ে এক্ষুনি আসছি।’
শুয়ে শুয়ে ভাবছি, কি একটা মেয়ের সাথে আমি প্রেম করেছি। জীবন জুড়ে শুধুই বিষন্নতা। এই ভাবি, আমার জীবনটা বুঝি আশার আলো দেখতে শুরু করেছে, পরমূহূর্তেই আবার কালো অন্ধকার। ঠিক যেন দূঃস্বপ্নের মত প্রেম। একটা বিড়ম্বনা, মনের কষ্ট। প্রেম যেন এখানে অলৌকিক, এর কোনো বাস্তবতা নেই। আমি চিরকাল ভালবাসার কাছে নতজানু হয়ে থাকলাম। কিন্তু ভালবাসাকে সেভাবে ফিরে পেলাম কই? এরপরেও আমি বিদিশাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবো, বিড় বিড় করে ওর নাম উচ্চারণ করে যাবো, কাল যেমনটি করেছি। লোকে বলবে, আমি বোধহয় পাগল। পৃথিবীতে বিদিশা ছাড়া আর বুঝি মেয়ে নেই। পৃথিবীর সব লোকেদের হৃদয় বড় হয়ে যায় শরীরের সঙ্গে সঙ্গে। আর আমার ক্ষেত্রে হবে ঠিক উল্টো। আমার বয়সটা বেড়ে যখন একদিন ষাট সত্তর বছর হবে, সেদিনও বোধহয় আমার হৃদয় ওই বিদিশাকে দিয়েই বসে থাকবে। লোকে বলবে, কি এক পাগলের প্রেম কাহিনী শুনছি। জীবনের এমন কাহিনী পড়লে লোকে প্রেম করাও ছেড়ে দেবে।
বিদিশার চিন্তা ছেড়ে এবার আমার মনটা একটু শুভেন্দুকে নিয়ে পড়ল। অতরাত্রে কাল শুভেন্দু চলে এসেছে মায়ের ডাকে। সত্যিকারের জাত বন্ধু বলতে যা বোঝায়, সে হল, শুভেন্দু। আমার কপালে প্রেমটা স্থায়ী না হলেও বন্ধুটা খুবই ভাল জুটেছে। সময় অসময়ে শুভেন্দু সবসময় আমার পাশে। এত দরদ, বন্ধুপ্রীতি, অন্তরের টান। শুভেন্দুর সাথে আমার এই সম্পর্কটা টিকে যাবে আজীবন। ওর উপকারের কথা চিন্তা করতে করতে এবার আমার চোখে একটু জল এসে গেল। মা সেই সময় ঘরে ঢুকলো। আমাকে বলল, ‘কি রে তোর আবার কি হল?’আমি বললাম, ‘তা নয়, আসলে শুভেন্দুর কথা চিন্তা করছিলাম। তাই-
আমার মাথার কাছে এসে বসলো মা। আমার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল, ‘সত্যি হীরের টুকরো ছেলে। অতরাত্রে ওকে পাবো কিনা? ও আসবে কিনা? একটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম। আমার চিন্তাটা কাটিয়ে দিল শুভেন্দুই। আমাকে বলল, কিচ্ছু চিন্তা করবেন না মাসীমা, আমি ঠিক আধঘন্টার মধ্যেই আসছি। শুধু বাড়ীর নিচে থেকে এসে আমি আপনাকে ডাক দেবো। আপনি দরজাটা খুলে দেবেন। ঠিক তাই। আধঘন্টার মধ্যেই দেখি, গাড়ী চালিয়ে সটান চলে এসেছে এখানে। ঘরে ঢুকেই আমাকে বলল, কই দেব কোথায়? তুই তখন খাওয়ার ঘরে মেঝেতে পড়ে রয়েছিস। তোর কোনো জ্ঞান নেই। তোকে ও একাই তুলে নিয়ে চলে এলো এ ঘরে। ততক্ষনে ডাক্তার বাসুও চলে এসেছেন। আমাকে একপ্রকার শুভেন্দুই বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে কালকে। ডাক্তার চলে যাবার পরও ও অনেক্ষণ ছিল। যাবার আগে বলে গেল, দেবকে বলবেন, আমি কাল আবার আসবো। ফোন করবো। আর আপনি কিছু ভাববেন না। যদি আবার কোন সমস্যা হয়। আমাকে ডাক দেবেন। আমি ঠিক চলে আসবো।’
আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধু শুভেন্দু। ঠিক যেন লাখে একটা বন্ধু অমন জোটে কপালে। অত রাত্রে মা’র ডাকে যখন এক কথায় চলে এসেছে, তখন বিদিশাকেও নিশ্চই ফোন করে বলবে, শুভেন্দু। ‘দেবের শরীর খারাপ। পারিস যদি দেখে আয় একবার।’ সত্যি কি বিদিশা তখন আসবে?
মা বললো, ‘তোকে একটা কথা বলা হয়নি। শুভেন্দু একটু আগেই ফোন করেছিল, সকালে উঠেই তোর খবর নিয়েছে। আমাকে বলল, দেবকে বলবেন, আমি ঠিক দুপুর বেলা আসছি। তারপর যতক্ষণ পারবো, আপনাদের ওখানে থাকবো। বিকেল বেলা হয়তো আমার বোন আর ওর স্বামী রনিও আসতে পারে। সবাই ওর কথা শুনে ভীষন চিন্তিত হয়ে পড়েছে। সবাই দেবকে খুব ভালবাসে। আজ সকালে ওদের দুজনকে দেবের শরীর খারাপের কথা বলেছি। ওরা খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।’
আমি মনে মনে ভাবলাম, রনিকে আর মাধুরীকে আমার শরীর খারাপের কথা বলেছে শুভেন্দু। বিদিশাকে বলে নি? তাহলে নিশ্চই বিদিশাও একবার আসতো।
মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘কি ভাবছিস?’
আমি বললাম, ‘কই কিছু না তো?’
মা আমাকে বলল, ‘আর কি কাউকে ফোন করব? তোর মোবাইলটা থেকে কাকে কাকে ফোন করতে হবে বল? আমি করে দিচ্ছি।’
আমি বললাম, ‘আর কাউকে করতে হবে না। তুমি চুপ করে বসোতো। রনি আর মাধুরীরা আসবে। তাহলেই হবে। আর কাউকে ফোন করার দরকার নেই।’
মা বলল, ‘বিদিশাকে তোর শরীর খারাপের কথা জানাবি না?’
আমি অবাক চোখে মায়ের মুখের দিকে তাকালাম। মা যেন আমার প্রতি বিদিশার সত্যিকারের ভালবাসাটা এবার পরখ করে দেখে নিতে চায়। আমার শরীর খারাপের খবর শুনে বিদিশা আসে কিনা মা হয়তো সেটাই দেখতে চাইছে। নিশ্চই বিদিশা আসবে। কেন আসবে না? কিন্তু মা জানে না পরিস্থিতি কতটা প্রতিকূল। ঠিক এই মূহূর্তে বিদিশাও একটা জ্বালা যন্ত্রণায় মরছে, ঠিক আমারই মতন। বাঁধভাঙা বন্যার মতন হয়তো দূঃখ আর আফশোস আছড়ে পড়ছে বিদিশার জীবনে। কেউ ওর পথকে রুদ্ধ করে রেখেছে। বিদিশা স্বাভাবিক স্বচ্ছন্দ জীবনে ফিরতে পারবে না যতক্ষণ না ওর ডিভোর্সটা হচ্ছে। চিন্তা ওকে কুরে কুরে খাচ্ছে। হয়তো মুক্তি পেতে পেতে আরো কেটে যাবে কিছুদিন। কারণ আমি যে মাকে এখনো আসল কথাটা বলে উঠতে পারিনি। ওই শুভেন্দুই আমাকে বারণ করে রেখেছে।টেবিলের ওপরে রাখা আমার মোবাইলটা ঠিকই তখনই বাজতে শুরু করেছে। মা উঠে বলল, ‘দাঁড়া আমি দেখছি আবার কে ফোন করলো?’
ফোনটা ধরে মা হ্যালো বলাতেই আমি ভাবছি, কে আবার ফোন করলো? ঠিক তখনই মা দেখি কাকে বলছে, ‘হ্যাঁ দেবের তো খুব শরীর খারাপ। কাল রাতে খুব বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছিল। ডাক্তার ওষুধ দিয়েছে। এখন ভালো আছে।’
আমি মাকে ইশারা করে জিজ্ঞাসা করলাম, কে ফোন করেছে মা? মা বলল, ‘শুক্লা,’ তোর সেই বন্ধুটা। যে এসেছিল আমাদের বাড়ীতে।’
শুক্লা ফোন করেছে, আমার শরীর খারাপের খবর শুনেছে যখন নিশ্চই আসবে। এরা আমাকে সবাই ভালবাসে। দেবের কিছু হলে সবার একটু চিন্তা হয় বৈকি। অসুখটাতো নতুন নয়। এর আগে কলেজে পড়ার সময়ও একবার বাড়াবাড়ি হয়েছিল। সেবার মনে আছে কলেজে বেশ কিছুদিন ধরে যাচ্ছি না বলে, সবাই এক এক করে আমার বাড়ীতে এসে হাজির হচ্ছে। প্রথম দিনই শুক্লা এসে বলল, ‘কি হয়েছে তোর? কলেজে যাচ্ছিস না। জানিস, আমাদের সবার মন খারাপ। দেব, আর কিছুদিন পরেই কলেজে অ্যানুয়াল ফাংশন। তার আগে তুই সুস্থ হয়ে উঠবি তো?’
আমি জানি অ্যানুয়াল ফাংশন আমাকে বাদ দিয়ে হবে না। দেবের উপস্থিতি না থাকা মানে সবারই মুখে এক কথা। ‘দেব নেই। তাহলে কি হবে? যেভাবে ও সবকিছু সুন্দর ভাবে পরিচালনা করে, ওকে বাদ দিয়ে এই অনুষ্ঠান করা যায় না কি? তাছাড়া দেবের গান, ওর গান শোনবার জন্য তো উন্মুখ সবাই।’
আমি জানি স্বয়ং প্রিন্সিপাল ও আমাকে স্মরণ করেছেন। এই একটা সময়। যেখানে সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিভাবে গোটা অনুষ্ঠানটা সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করা যায়। কাকে কাকে শিল্পী হিসেবে বাছাই করা হবে। কে গাইবে, কে নাচবে আর কে আবৃত্তি করবে। আমি ছাড়া যেন চোখে সরষে ফুল দেখছে সবাই।
শুক্লাকে বললাম, ‘আশা তো করছি দুতিনদিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাব। আসলে আমার এই রোগটাই বড় বাজে। কখন শরীরের মধ্যে এসে হানা দেবে, আগে থেকে বোঝা খুব মুশকিল।’
শুভেন্দু এসে বলল, ‘স্যার বলছেন, হেমন্ত মুখার্জ্জী এই মারা গেলেন সবে। দেবকে বলো এবারে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের স্মরণে ফাংশনটাকে অরগাইজ করতে। কিন্তু তুই যেভাবে রোগ বাঁধিয়ে বিছানায় বডি ফেলে দিয়েছিস, তুই ছাড়া এসব করবে কে?’
শুভেন্দুকে বললাম, ‘সারা কলেজে একটা ছেলে নেই? সবাই যেন প্রেম করাতেই ব্যস্ত। তুইও যে কি করলি, আমার মত গানটা শিখতে পারতিস তো।’শুভেন্দু বলল, ‘যাকে দিয়ে যে কাজ হয় না, তাকে বলে কোন লাভ আছে কি? তুই আমাকে দিবি দায়িত্ব? তারপর কি করতে কি করে বসব। আর সবাই আমাকে গালাগালি দিয়ে ভূত ভাগিয়ে দিক আর কি?’
ওকে বললাম, ‘তোকে যা যা বলছি, তুই শুধু তাই করবি। বাকীটা আমি সুস্থ হয়ে সামলে দেবো।
শুভেন্দু বলল, ‘তা আমাকে কি করতে হবে স্যার?’
আমি বললাম, ‘ডেকরটের ঠিক করবি, মাচা বাধার জন্য। শুধু এইটুকুই তোর দায়িত্ব।’
শুভেন্দু বলল, ‘ও তাই বল। এ আর এমন কি দায়িত্ব। আমি ভাবলাম, তুই বুঝি আমাকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করার দায়িত্ব দিবি বোধহয়।’
আমি বললাম, ‘তুই যদি বলিস, তোকে একটা চান্স দিতে পারি। একবার ট্রাই করে দেখতে পারিস। আমার মন বলছে, তুই ঝোলাবি না।’
শুভেন্দু থতমত খেয়ে বলল, ‘কিসের চান্স?’
আমি বললাম, ‘খালি গলায় দুলাইন গেয়ে দিবি। তোকে আমি ট্রেনিং দিয়ে দেবো।’
শুভেন্দু বলল, ‘ক্ষেপেছিস। গান গাইব আমি? হেঁড়ে গলায় গান গেয়ে তারপর সব মাটি করি আর কি? শেষকালে সব বদনাম হয়ে যাক, আর কি?
আমি বললাম, ‘কেন? দুলাইন গাইলে কি এমন অসুবিধে হবে? তোকে ট্রেনিং দেবো। বলছি তো? তাছাড়া কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্যও তো একঘন্টার একটা পার্ট থাকে। তার মধ্যে তুই দুলাইন গাইবি। কেউ কিছু মনে করবে না।’
শুভেন্দু বলল, ‘সুনীল দত্ত আর কিশোরকুমারের পড়োশান ছবিটা দেখেছিস? অনেক চেষ্টা করেও যখন কিশোরকুমার পারল না। তখন ওকে বলল, গানের সাথে শুধু লিপ মেলাতে। প্রথমে সুনীল দত্ত অনেক চেষ্টা করেছিল, গলা দিয়ে গাধার ডাক ছাড়া আর কিছুই বেরোয় নি। মাইরি দেব, তোকে সত্যি কথাটা বলছি, আমাকে তুই যদি চেষ্টা করিস, তাহলে ওই দত্ত সাহেবের মতই অবস্থা হবে আমার। তারপর সকলে আওয়াজ মারুক, হাসি ঠাট্টা করুক। ও আমি সইতে পারবো না। একটা কাককে বলছিস কোকিল হতে। তুই কি করে পারিস?’
আমি বললাম, ‘তুই যেভাবে বলছিস, তাতে মনে হচ্ছে, সায়রা বানু গান শুনবে অডিয়েন্সে বসে। তোর গান শুনে তোর প্রেমে পড়বে। এত ভয় পাওয়ার কি আছে বু্ঝি না। তাও যদি তুইও কারুর প্রেমে পড়তিস?
চিরকাল যে আমার কথায় শুধু হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়েছে, শুধু এই একটি ব্যাপারেই ও যে রাজী হবে না আমি জানতাম। আসলে ওর সাথে মজা করবার মত একটা বিষয় পেয়েছিলাম বলে নাছোড়বান্দার মত আমিও ওর পেছনে লেগে ছিলাম। শুভেন্দু শেষ কালে বলল, ‘এই যে শোনো মহাশয়, আমাকে দিয়ে যখন অতই গান গাওয়ানো তোমার শখ। তখন তোমার বিদিশাকে দিয়ে একবার ট্রাই করে দেখো না। তিনি গাইবেন। আশাকরি তিনি তোমার কথা ফেলতে পারবেন না।’
05-07-2021, 01:28 AM
Gr8......keep going.....
05-07-2021, 01:28 AM
05-07-2021, 03:10 AM
আপনার লেখায় কোন একটা অদৃশ্য টান আছে, যেটা গল্প শেষ হওয়ার পরও কাটতে চায় না। বার বার মনে হয় শেষ হয়ে গেল কেন আরও একটু হলে কি এমন হতো।
05-07-2021, 08:48 AM
05-07-2021, 11:00 AM
05-07-2021, 11:41 AM
05-07-2021, 12:17 PM
আসলে বিদিশাকে দিয়ে গান গাওয়ানোর আইডিয়াটা আমারো মাথায় আসেনি। তাছাড়া বিদিশা তো শুধু গান শুনতে ভালবাসে। ও কি গাইবে? তাছাড়া জোর করে সুযোগ দিলে পক্ষপাতীত্বর একটা ব্যাপার চলে আসে। সবাই বলবে, ও যেহেতু বিদিশা দেবের সাথে প্রেম করে, সুতরাং ওরজন্য একটা গোটা স্টেজ তুলে দিয়েছে দেব। আদিখেত্যা ছাড়া আর কি?
আমি বললাম, ‘বিদিশা তোরই মতন। একটু ভীতু টাইপের। অল্পতেই ভয় পেয়ে যায়। প্রথমেই আমাকে ও না বলবে। তারপর জোরাজুরি করলে কান্নাকাটি শুরু করে দিতে পারে। তার চেয়ে বরং ওকে একটা কবিতা পাঠ করার জন্য বলব।’
শুভেন্দু বেশ আগ্রহ নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বিদিশা কবিতা পাঠ করবে? সত্যি করবে? উফঃ। দারুন হবে কিন্তু তাহলে ব্যাপারটা।’
তারপরেই আবার মুখটা উদাস মতন করে ও বলল, ‘কিন্তু তোর জন্য তার মন এখন খুব খারাপ। দেবের শরীর খারাপের খবর শুনে তিনি বিষন্ন হয়ে পড়েছেন। এই তোর কাছে এলো বলে। কালই কলেজে আমাকে বলেছে, ওর জন্য আমার ভীষন খারাপ লাগছে। কিছু ভাল লাগছে না। ওর শরীর খারাপ। আমাকে এখুনি ওর কাছে যেতে হবে।’
বিদিশা এল, শুভেন্দু থাকাকালীনই। এসেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, চোখে মুখে উৎকন্ঠার ছাপ। অসুখ থেকে সেরে না ওঠা পর্যন্ত বিদিশা ভীষন চিন্তিত হয়ে পড়েছে আমার জন্য। আমাকে গাদা গাদা উপদেশ দিয়ে কতকিছু একনাগাড়ে বলে গেল বিদিশা। - ‘শোনো, এই অবস্থায় নিজেকে একদম নেগলেট করবে না। নিয়ম করে ওষুধ খাবে বুঝেছো? আর ডাক্তারের কথার একদম অমান্য করবে না। শরীর তাড়াতড়ি সুস্থ না হলে, আমাদের তখন কি হবে বলোতো? তুমি আমাকে কত চিন্তায় ফেলে দিয়েছো জানো?’
শুভেন্দুও ঠিক পাশেই বসে আছে। দেখছে, বিদিশা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। হেসে বলল, ‘এই তো বিদিশা এসে গেছে। তোর আর চিন্তা নেই। তুই এমনি ভাল হয়ে যাবি।’
বিদিশাকে বলল, ‘শোন, তুই এই কদিন দেবের এখানেই থেকে যা। দেবের আদর যত্ন করবি। ওকে সেবা শুশ্রসা করবি। ওর শরীর সুস্থ হওয়াটা দরকার। সামনেই অ্যানুয়াল ফাংশন আছে না।’
বিদিশা মুখ বেঁকিয়ে বলল, ‘গুলি মারো অ্যানুয়াল ফাংশন। এদিকে আমার বরটার শরীর খারাপ। আর সবাই ফাংশন নিয়ে পড়েছে। আগে ওর শরীর সুস্থ হবে। তারপর ওসব ফাংশন নিয়ে কথা।’
বিদিশা আমার চুলে হাত বোলাতে বোলাতে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে হঠাৎ। আবেগ অনুভূতি নয়। দেখছি, আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার কানের কাছে মুখটা নিয়ে এসে বলছে, ‘তুমি সুস্থ হয়ে যাও গো। ভগবান, তুমি আমার বরটাকে সুস্থ করে দাও। সুস্থ করে দাও ভগবান। প্লীজ প্লীজ।
শুভেন্দু হাঁ করে বসে দেখছে বিদিশার কান্ড। পরে আমাকে খুব সিরিয়াসলি একদিন বলেছিল। ‘দেব সত্যিকারের ভালবাসা মানুষ বোধহয় একবারই বাসতে পারে। গভীর ভালবাসার সত্যি কি কোন বিকল্প হয়? যে সব মানুষ উদভ্রান্তের মতন বারে বারে প্রেমে পড়েন, দুর্বিবাকের মতন প্রেম যাদের জীবনে বারে বারে আসে। সত্যিকারের মহান প্রেমিক তাদেরকে বলা যায় কি? তোকে আর বিদিশাকে দেখে মনে হয়, সত্যি তোরা জীবনে আর কাউকে কোনদিন ভালবাসতে পারবি না। তোদের এই মহান প্রেমের জয় হোক।
আমি সেদিন জানতাম না। প্রেম হল মানুষের জীবনে এক বজ্রপাত। এই প্রেমের বজ্রপাত একবার ঘটলে হৃদয়ভূমির সবকিছুই জ্বলে পুড়ে নিঃশ্বেস হয়ে যেতে পারে। আর যেটুকু অবশিষ্ট থাকে তাতে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখার বা নতুন করে প্রেমতরু অঙ্কুরিত হয়ে ওঠার কোনো অবকাশ থাকে না।
আমি মানুষটা এমন নই। যে জীবনে বহুবার কোন না কোন নারীর প্রেমে পড়তে পারি আর প্রতিবারই মনপ্রাণ ঢেলে তাকে বিদিশার মতন ভালবাসতে পারি। এই বিদিশাই আমার জীবনে প্রথম ও শেষ প্রেম। আমার জীবনে দ্বিতীয় প্রেম আসা তাই অসম্ভব।সবাই যেটা মনে প্রাণে চেয়েছিল, চেয়েছিলাম আমিও অন্তত। সেটা কিছুতেই সফল হল না। শুভেন্দুকে বলেছিলাম, ‘আমার যখন যখন পঞ্চাশ বছর বয়স পেরিয়ে যাবে, তখনও দেখবি বিদিশার সাথে আমার প্রেম অটুট থাকবে। ও এমনি করেই আমাকে ভালবাসবে।’
হেসেছিল শুভেন্দু। আমাকে বলেছিল, ‘ভগবান করুক, তাই যেন হয়। এমন প্রেম জীবনে আসা মানে সেটা স্বপ্ন সমান। পঞ্চাশ বছর পরেও এক গভীর ও জীবন্ত প্রেমের মাঝে ডুবে থাকা যে সৌভাগ্যের কথা। এমন প্রেমের পূজো যে করতে পারে, তার জীবন যে কি সুখের আর আনন্দের হয়, তা তো বলাই বাহুল্য। তোদের এই অমর প্রেমের জয় হোক।’
শুয়ে শুয়ে এতক্ষণ ধরে পুরোনো কথাগুলো চিন্তা করছিলাম। মা বললো, ‘আবার তুই পুরোনো কথা ভাবছিস, আর মনকে কষ্ট দিচ্ছিস? বললাম না শুভেন্দু একটু পরেই এসে পড়বে। অত কি চিন্তা করছিস?’
আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললাম। মাকে বললাম, ‘মা শুভেন্দু আসবে বলেছে। খবর পেয়ে বিদিশাও আসবে। আমার মন তাই বলছে। তুমি দেখে নিও।’
জানি এগুলো আমার মনের আশা ছাড়া কিছুই নয়। বিদিশাকে এখনও ভালবাসি, তাই ভাবি বিদিশা বোধহয় আমার শরীর খারাপের খবর শুনলেই আসবে। দৌড়ে আসবে। ব্যাকুল হয়ে ছুটে আসবে। তারপর এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরবে। হয়তো বুকে মুখ গুঁজে কিছুক্ষণ ধরে একনাগাড়ে কেঁদে কেটেও ভাসাতে পারে। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে, বুকেও বোলাবে, আমার কষ্ট দেখলে হয়তো ওর মন ভেঙে যেতে পারে। কি জানি, প্রেমিকার আদর পেলে নাকি যন্ত্রণার অনেক উপশম হয়ে যায়। আমি যদি বিদিশাকে পেতাম। কি ভালই হত। আমার এই বাজে রোগটা হয়তো কবেই সেরে যেত। একটা সুখের সংসার গড়ে আমরা এতদিনে মিষ্টার এন্ড মিসেস। যেন একটা হ্যাপি কাপল। তা না কোথায় কিছু না, সব যেন তার ছিড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। আমার এত কষ্টের মধ্যেও আমি বিদিশাকে পাচ্ছি না। ভীষন কষ্ট হচ্ছে। যেন কষ্ট আরো বেড়ে যাচ্ছে। আচ্ছা ওষুধে আমার শরীরটা ঠিক হয়ে যাবে তো? না আমার বিদিশাকেই চাই। ও না এলে মনে হয় কিছুই ঠিক হবে না।
মা ঘর থেকে বেরিয়ে গেছিল। হঠাৎ ঘরে ঢুকে দেখল, আমার চোখে জল। কাছে এসে আমায় বলল, ‘দেব তুই কাঁদছিস? এ কি রে?’
তাড়াতাড়ি হাত দিয়ে চোখটা মুছে বললাম, ‘কোথায় কাঁদছি? না না ও তুমি ভুল দেখেছো।’
আমি জানি, হঠাৎ মনের কষ্টের কথা চিন্তা করলেই চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে যায়। চোখের সাথে মনের একটা যোগসাজস আছে। মন তার ভেতরের কষ্টটা অনুভব করে কিন্তু প্রকাশ করতে পারে না। সেটা প্রস্ফুটিত হয় অশ্রুধারার মাধ্যমে।
মায়ের কথা শুনে মনে হল, সত্যি তাই। বড্ড কষ্ট দিচ্ছি নিজেকে। একটু পরেই সবাই হয়তো এক এক করে এসে পড়বে। এই ছোট্ট ফাঁকা ঘরটাই তখন ওদের আগমনে গমগম করে উঠবে। একটার পর একটা হাসির কথা তুলে শুভেন্দু যেভাবে পেটে ব্যাথা ধরিয়ে দেয়, আমারো পেটে খিল ধরে যাবে। কান্না নয়, হাসি চেপে রাখতে না পেরে আমি নিজেই হয়তো তখন অবাক হয়ে যাব। দূঃখের স্মৃতি থাকবে না আর পেছনে। কে বলতে পারে, তারপরেই বিদিশা এসে হয়তো আমাকে নতুন করে আবার স্বপ্ন দেখাবে।
মা আমার মাথার কাছে বসে, চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ‘শুভেন্দুকে আবার ফোন করে দেখবো? আসতে বলব তাড়াতাড়ি? ও এলে তোর মন ভাল হয়ে যাবে।’আমি বললাম, ‘না মা, তার দরকার নেই। ও তুমি ফোন না করলেও আসবে। আমার জন্য ব্যস্ত হয়ো না। বলে নিজেই একটু হাসলাম। মা বলল, ‘জানিস, শুভেন্দু আমাকে কি বলেছে?’
চুপ করে শুয়ে শুয়ে শুনছি মায়ের কথা। মা বলল, ‘কালরাতে শুভেন্দু চুপচাপ বসেছিল অনেক্ষণ। ডাক্তার তখন চলে গেছে। আমি ঘরে ঢুকে দেখি, ও চেয়ারে বসে ঢুলছে। বললাম, বাড়ী যাবে না শুভেন্দু? আর তো বিপদ নেই। ডাক্তার ঘুম পাড়ানির ওষুধ দিয়ে গেছে। দেব এখন অনেক্ষণ ঘুমোবে। তুমি বরং বাড়ী যাও। অনেক কষ্ট করে এসেছো।’
শুভেন্দু বলল, ‘জানেন, মাসীমা, আমি খুব একটা রাত জাগতে পারিনা। আসলে সারাদিন ব্যবসার নানান ঝেমেলায় ব্যস্ত থাকি। দেবের মত অত আমার রাত জাগার অভ্যেস নেই। তবে যদি কোনদিন এমন হয়, আমার এই প্রিয় বন্ধুটির জন্য আমাকে রাতের পর রাত জাগতে হচ্ছে আমি জাগবো। কষ্ট হলেও জাগবো। দেবের জন্য আমার জান হাজির।’ তারপরেই মা বলল, ‘কি ভাল ছেলে রে।’
আমি হাসলাম, বললাম, শুভেন্দু আমার জন্য পাগল। ও আমাকে খুব ভালবাসে তাই বলেছে।’
মা বলল, ‘আর তুই কার জন্য পাগল? বিদিশার জন্য?’
আমি এবার হাসব না কাঁদবো তাই ভাবছি। প্রসঙ্গটা ঘুরিয়ে মাকে বললাম, ‘মা, শুক্লা কি বলল? আসছে?
মা বলল, ‘ওতো ফোনে আমাকে পুরো কথাটাই বলতে দিল না। তার আগেই বলে বসল, মাসীমা আর বলতে হবে না। আমি বুঝে নিয়েছি দেবের কি হয়েছে। আমি এখুনি আসছি। ওখানে গিয়ে বাকীটা শুনবো।’ দেখ হয়তো এখুনি এসে পড়ল বলে।’
মনে মনে ভাবলাম, শুক্লাও এখুনি আসবে। আর শুভেন্দুও হয়তো এসে পড়বে। দুজনে দুজনকে ভূত দেখার মত না দেখলেও শুভেন্দুর তো কিছুটা অস্বস্তি হবেই। কারণ শুক্লা যে আমার প্রতি একটু দূর্বলতা দেখিয়েছে সেটা শুভেন্দু ধরে ফেলেছে। কিন্তু শুভেন্দু তারপরের ঘটনাটা জানে না। শুক্লা মেনে নিয়েছে, বন্ধুত্ব কখনো ভালবাসায় পরিণত হতে পারে না। হার জিতের খেলা নয়। একে অপরের মনকে বোঝার মতন দৃঢ় মানসিকতা। বন্ধুত্বের মান রেখেছে শুক্লা। নিজেকেও ছোট করেনি, আর আমার ভালবাসাকেও খাটো করেনি।
মাকে বললাম, ‘মা এরা সব এক এক করে আসবে, তোমার কষ্ট হবে না তো?’
মা বলল, কিসের কষ্ট?
আমি বললাম, ‘তুমি কিন্তু দফায় দফায় চা করা, ওদের আতিথেয়তা করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়া। এসব একদম করবে না কিন্তু। সবাই সুবিধে অসুবিধের কথাটা বোঝে। এরা সবাই আমার খুব ভাল বন্ধু।’
মা বলল, ‘তুই এবার বিয়েটা করে ফেল, আর আমায় ছুটী দিয়ে দে। তাহলে আমি আর ব্যস্ত হবো না। কেউ এলে তাকে খাতির যত্নও করতে আসবো না। সব তোর ওই বউই তখন করবে।’
মনে ননে ভাবলাম, সত্যি কি জ্বালা। সব মায়েরাই ভাবে, ছেলের বউ একটু মনের মতন হবে। সব দায়িত্ব একাই কাঁধে তুলে নেবে। সংসার সুখের হবে রমনীর গুনে। কিন্তু আজকালকার মেয়েরা এখন আর এরকম কই? যদি বিদিশার সাথে সত্যি আমার বিয়েটা হত। তাহলে অবশ্য-
05-07-2021, 12:21 PM
কলিং বেলটা বাজছে। মা বলল, ‘ওই এল বোধহয় কেউ।’
তলপেটের কাছটায় হাত দিয়ে অল্প একটু টিপে দেখলাম, ব্যাথাটা এখন বেশ কম। ডাক্তারের ওষুধ কাজ করতে আরম্ভ করে দিয়েছে।
তেরো শুভেন্দু ঘরে ঢুকেছে। দেখলাম, বেশ খুশি খুশি ভাব। আমাকে বলল, ‘একেই বলে অন্তরের টান। যেই বললাম, অমনি ভেতর থেকে টানটা বেরিয়ে এল অটোমেটিক। কি ফার্স্ট রেসপনস। যেন এখুনি ছুটে চলে আসবে তোর কাছে।’
আমি বললাম, ‘কার কথা বলছিস তুই?’
শুভেন্দু বলল, ‘একজনই তো আছে গুরু। আমরা সব ওর কাছে নস্যি।’
আমি বললাম, মানে? কে সে?
শুভেন্দু বলল, তোমার জন্ম জন্মান্তরের সঙ্গিনী। শুধু এ জন্মে নয়, পরজন্মেও যে অলরেডি খাতায় নাম লিখিয়ে রেখেছে তোমার জন্য।’
আমি বললাম, ‘কে বিদিশা?’
শুভেন্দু একটু চেঁচিয়ে উঠে বলল, ইয়েশ। তোমার ডারলিং। তোমার প্রাণেশ্বরী।’
আমি বললাম, বিদিশাকে তুই ফোন করেছিলিস?
শুভেন্দু বলল, ‘ওকে ফোন না করলে কি হত জানিস?’
আমি বললাম, কি?
শুভেন্দু বলল, ‘তুই এই পাংশুমতন মুখখানা নিয়ে আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকতিস, আর থেকে থেকে একবার করে বলে উঠতিস, বিদিশা ও বিদিশা। কোথায় তুমি?’
আমি হেসে বললাম, ‘যা মেলা বাজে বকিস না।’
শুভেন্দু হেসে বলল, ‘শালা। তুই কালকেও যা রকম দেখিয়েছিস, ডাক্তারও তাজ্জব হয়ে গেছে তোকে দেখে।’
মনে পড়ল ডাক্তারের কথা। উনিও আমাকে বলেছেন, কাল ওই অবস্থার মধ্যেও আমি নাকি বিড়বিড় করে বিদিশার নাম অনেকবার উচ্চারণ করেছি।
শুভেন্দু বলল, ‘তবে তোকে হ্যাটস অফ। অনেক তপস্যা করে তোর মত স্বামী আর প্রেমিক পাওয়া যায় রে। ব্যাচারা বিদিশা। এই সামান্য জিনিষটাই বুঝলো না। অসামান্য একটা লোককে অতিসামান্য করে ছেড়ে দিয়ে নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনলো।’
আমি বললাম, ‘ছাড়, যা হয়েছে, হয়েছে। ও আর কি করা যাবে? তবে তুই যে ফোনটা করবি, আমি জানতাম। তারপরেই আবার ভাবছিলাম, মানসিক কষ্টে আছে মেয়েটা। ওকে দোষ দিয়েই বা কি করবো? আইনকে অবজ্ঞা করে তো আর কিছু করা যায় না। কিছু সময় তো লাগবেই।’
শুভেন্দু বলল, ‘শোনো বৎস। আইন যেমন আছে, আইনের ফাঁকও আছে। যতদিন ডিভোর্সটা না হচ্ছে, বিয়ে হয়তো করতে পারবি না। কিন্তু প্রেমটা করতে অসুবিধে কোথায়?’
আমি বললাম, ‘কথাটা তো ঠিক। তাহলে এত টেনশন কিসের? বিদিশাকে কি কোন ভয় পাচ্ছে? না কি ওর স্বামী সত্যি ওকে বলেছে ডিভোর্স দেবে না।’শুভেন্দু বলল, ‘কিছু একটা ব্যাপার আছে, বুঝছিস দেব। বিদিশা ওটা খোলসা করে বলছে না। ওর পেট থেকে কথাটা বার করতে হবে। হয়তো কোন দোটনায় পড়ে আছে ব্যাচারা।’
‘দোটনায়?’ আমি একটু চিন্তিত হয়ে পড়লাম।
শুভেন্দু বলল, ‘এই দ্যাখ, তোর আবার টেনশন শুরু হয়ে গেল। না, তোকে কথাটা না বললেই ভাল হত। এক কাজ কর। বিদিশা আসছে, তুই ওকেই বরং পরিষ্কার করে সব জিজ্ঞেস করে নিস।’
আমি বললাম, ‘বিদিশা আসছে?
শুভেন্দু বলল, ‘না এসে পারে? আমার দেবের মুখে হাসি ফোটাতে আসছে।’
কানের কাছে মুখটা নিয়ে এসে শুভেন্দু আস্তে আস্তে বলল, ‘এই মাসীমাকে কিছু বলিস নি তো? বিদিশা কিন্তু আমাকে জিজ্ঞাসা করছিল।’
আমি বললাম, ‘কোনটা?’
‘আরে ওর ডিভার্স যে এখনো হয় নি, সেই ব্যাপারটা।’
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুভেন্দুকে বললাম, ‘মা’র সাথে এ ব্যাপারে কোন কথাই হয় নি আমার। কেন বিদিশা কি এখনও আমার মনটাকে বুঝতে পারে না। আমাকে বিশ্বাস করতে পারে না?’
হঠাৎ ভ্যাবাচাকা খেয়ে নিজেই থমকে গেল শুভেন্দু। আমাকে বলল, ‘আর কত পরীক্ষা দিবি? পরীক্ষারও তো একটা শেষ আছে। তোর মত কেউ নয়। সেটা যদি বিদিশা বুঝত, তাহলে হয়তো- বলে নিজেই মাথাটা নিচু করে নিল শুভেন্দু।
আমি বললাম, ‘বিদিশা মাথা উঁচু করে এ বাড়ীতে আসবে। ওকে কেউ আমরা খারাপ চোখে দেখব না। আমিও না। মাও নয়।’
শুভেন্দু বলল, মাসীমা কিছু বলছিল?
- ‘কি ব্যাপারে?’
- ‘বিদিশার কথা। বলেনি মাসীমা? তোকে কিছু জিজ্ঞাসা করে নি?’
আমি বললাম, ‘মা তো আমার্, আমারই মতন। আমি যেমন ছটফট করে উঠি। মায়ের মনটাও খুব নরম। মাঝে মাঝে একই সুরে গেয়ে ওঠে। কাল থেকে অনেকবারই বিদিশার কথা বলেছে। বিদিশা আসবে কিনা? অন্তত আমার শরীর খারাপের খবর জেনেও আসবে কিনা? পারলে মা হয়তো নিজেই ফোন করে বসতো বিদিশাকে। ‘কি গো বিদিশা? দেবের শরীর খারাপ। তুমি আসবে না?’
শুভেন্দু বলল, ‘কি অদ্ভূত না? তোর সাথে বিয়েটা তখন বিদিশার হয়ে গেলে বিদিশাও আর একটা মা পেয়ে যেত তোর মতন। আমি সেইদিনটার জন্য শুধু অপেক্ষা করছি।’
বলেই আমার দিকে তাকালো মা। আমাকে বলল, ‘এই তুই রাগ দেখাবি না। সবাই আর শুভেন্দু এক নয়। কাল তোর জন্য ও কত খেটেছে বলতো?’
শুভেন্দু যেন কিছুই বুঝতে পারেনি। আমার আর মায়ের মুখের দিকে দুএকবার মুখ চাওয়া চাওয়ি করে বলল, ‘কি হয়েছে মাসীমা? ও রাগ দেখাবে কেন?’
আমিও হাসি তখন চেপে রাখতে পারছি না। মা বলল, ‘ছেলের আমার মায়ের জন্য খুব দরদ। আজকে সবাই এক এক করে আসবে। আগে ভাগে তাই আমাকে শাঁসিয়ে রেখেছে। তুমি কিন্তু সবাইকে নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পড়বে না। তোমার আবার তাহলে দারুন খাটাখাটনি হবে।’
শুভেন্দু বলল, ‘ঠিকই তো বলেছে। আপনি অত ব্যস্ত হবেন না তো। আজ এখানে কারুর খাতির নেই। যে যে আসবে সব বাড়ী থেকে খেয়ে দেয়েই আসবে। চা, জলখাবার মিষ্টি ওসবের কোন দরকার নেই।’
মা বলল, ‘তুমিও আমার ছেলের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছো? আরে ওটুকু করলে কি এমন কষ্ট হয়? ওতে আমার কোন খাটনি নেই।’
আমি বললাম, ‘যাও যাও চা করে নিয়ে এসো। শুভেন্দুর জন্য স্পেশাল চা। বাকীদের জন্য কোন খাতির নেই। শুধু আমার এই বন্ধুটির জন্য তোমাকে ছাড় দিলাম।’
মা মুখ ভেঙিয়ে চলে গেল। আমাকে বলল, ‘তুই বললেই বা শুনছে কে?’
শুভেন্দু তখন হাসছে। আমিও হাসছি। আমার মুখের কাছে মুখটা নিয়ে এসে শুভেন্দু বলল, ‘আজ কিন্তু দারুন জমবে।’
আমি বললাম, ‘বিদিশা আসছে, তাই?’
শুভেন্দু বলল, ‘জীবনের বাকী কটা দিন যদি সুখে কাটাতে চাস, তাহলে বিদিশার আসাটা সত্যিই দরকার। আমি তো তাই মনে করি, তোর ভালবাসা যেখানে এখনো স্বচ্ছ, সেটা যদি শেষবারের মতন বিদিশা উপলব্ধি করতে পারে, তারজন্যই বিদিশার আসাটা নিতান্তই দরকার। অসুখের ঘোরে তুই শুধু বিড় বিড় করে যাবি, আর বিদিশা বিদিশা বলে পাগল হবি। আমাদেরও মাথাটা খারাপ হওয়ার আগে বিদিশার আসাটা একান্তই দরকার। প্রেমের রাজ্যে আমার তো মনে হয়, এমন কোন জায়গা নেই যেখানে বিদিশা নিশ্চিত আশ্রয় লাভ করতে পারে। এমন একটা নীড়। যেখানে মনের মতন একটা স্বামী আর মনের মতন একটা শ্বাশুড়ি। উফঃ এটা বোঝার জন্যও ওর একবার আসাটা খুবই দরকার। আর আমরা কি কেউ ওর এই বিপদে ওর পাশে নেই? এটা যেন ও কোনদিন না ভাবে, তারজন্যও ওর আসাটা দরকার। আর সব শেষে, তুই এখন শয্যাশায়ী। বিদিশা যদি না আসে তাহলে বাকীরা এসে শুধু কি করবে? সেটাও তুই বল। সেইজন্যই-
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ। বুঝেছি ওর আসাটা দরকার। ওফ তুই পারিস।’
শুভেন্দু হাসছে। মা চা নিয়ে ঢুকেছে ঘরে। বলল, ‘নিচে একটা ট্যাক্সি এসে দাঁড়াল। মনে হল শুক্লা এসেছে মনে হয়।’
05-07-2021, 12:25 PM
চমকে না উঠলেও বেশ অবাক হয়েছে শুভেন্দু। আমাকে বলল, ‘শুক্লা? তোর শরীর খারাপের খবর পেয়ে এসেছে, না এমনি এসেছে?’
আমি শুয়ে শুয়েই বললাম, ‘তুই যেটা ভেবেছিলিস, ওটা নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা আর নেই। শুক্লার মনটা তো ভাল, মায়ের কাছে শরীরে খারাপের খবর শুনেছে, তাই এখানে এসেছে।’
শুভেন্দু যেন তাও একটু চিন্তার মধ্যে রয়ে গেল। একটু পরেই ঘরে ঢুকল শুক্লা। মেন দরজাটা মা খুলে দিয়েছে। ঘরে ঢুকেই বলল, ‘আজকে আর অফিস গেলাম না। তোর জন্য ছুটে এলাম। কি আবার বাঁধিয়ে বসলি? এটা কি সেই পুরোন রোগটা?’
আমি শুয়ে শুয়েই ঘাড় নেড়ে ওকে বললাম, হ্যাঁ। শুক্লা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল শুভেন্দুকে। চেয়ারটায় বসে আছে। ওকে বলল, কি রে শুভেন্দু? তুই? কখন এসেছিস?
শুভেন্দু বলল, ‘আমি তো কাল রাত থেকেই আছি। দেবের পাশে, ওর মাথার কাছে। এটাই আমার ঘরবাড়ী। তুই জানিস না?’
শুক্লা আমার মাথার কাছটা বসেছে। আমার মাথায় হাত দিতে যাচ্ছিল। শুভেন্দু হাঁ করে দেখছিল। শুক্লা বলল, ‘গায়ে জ্বরটর নেই তো?’
আমি বললাম, ‘না এ রোগে জ্বর হয় না। শুধু পেটে ব্যাথা হয়।’
শুভেন্দু ফোড়ণ কেটে বলল, ‘তার সাথে মনের ব্যাথাটাও জড়িয়ে আছে। ওটাও যোগ করে নে।’
শুক্লা যেন কিছুই বোঝেনি, শুভেন্দুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কেন? দেবের তো এখন খুশী হওয়ার কথা। মনের ব্যাথা হবে কেন?’
আমি শুভেন্দুকে ইশারা করলাম। বিদিশার ব্যাপারে শুক্লাকে কিছু না বলতে। শুভেন্দুও চেপে গেল। শুধু বলল, সবই তো ঠিক ঠাক আছে। অথচ দেবের মনের কষ্টটা কিছুতেই ধরতে পারছি না। শুক্লা কি করা যায় বল তো? রহস্যটা কি? ঠিক ক্লিয়ার হচ্ছে না।’
শুক্লা বলল, ‘তাই তো।’ তারপর আমাকে বলল, ‘তুই শুধু শুধু খালি টেনশন করে মরিস। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।’
মা ঘরে ঢুকেছে সেই সময়। শুক্লা এসে গেছে দেখে বলল, ‘তাহলে দু’কাপ চা করে নিয়ে আসি। শুক্লা আর শুভেন্দুর জন্য।’
আমি বললাম, তুমি বরং আর একটু অপেক্ষা করে যাও। এরপরে আবার কেউ এসে পড়বে, তখন আবার তোমাকে ডবল করে খাটতে হবে।’
শুভেন্দু কথাটা বুঝতে পেরে মুচকি মুচকি হাসছে। মা বলল, ‘এই তুই অত ছটফট করিস না তো। কেউ এলে ওটা আমি বুঝে নেব।’
শুক্লা বলল, ‘মাসীমা, আমি কিন্তু চা খাব না। এই বাড়ী থেকে খেয়ে বেরিয়েছি। আর আপনি অত ব্যস্ত হবেন না। পারলে শুভেন্দুর জন্য এক কাপ করে দিন।’
শুভেন্দু বলল, ‘চা তো আমি খাবই। চা হল গিয়ে যা হতে নাহিক মাদকতা দোষ, কিন্তু পান করে চিত্ত পরিতোষ।’
আমি হাসি চেপে বললাম, ‘কি বললি কথাটা আর একবার বল।’ শুভেন্দু বলল, অনেক কষ্ট করে একবার বলেছি। বার বার বলতে পারব না।’ বলে ও নিজেই হেসে ফেলল। শুক্লা বলল, ‘বেশ তো ভালই ছিলি। হঠাৎ রোগটা বাঁধালি কি করে?’ আমি বললাম, ‘কি জানি হঠাৎ।’ শুক্লা বলল, ‘আমার ওখান থেকে ফেরার পরে?’ আমি যেই হ্যাঁ বলতে যাব। দেখলাম শুভেন্দু বেশ অবাক হয়ে আমাকে আর শুক্লাকে দেখছে। এর মধ্যে শুক্লার বাড়ীতে যে গিয়েছিলাম। শুভেন্দুকে সেটা বলা হয় নি। পরক্ষণেই খুব সহজ হয়ে ও বলল, ‘নতুন ফ্ল্যাটে বুঝি?’ শুক্লা বলল, ‘নতুন ফ্ল্যাট আর কোথায়? তাও তো অনেকদিন হয়ে গেল। তোরা তো কেউ আর গেলি না। আমি তাই দেবকেই বলে দেখলাম, যদি ও যায়। কিন্তু-’ শুভেন্দু বলল, কি কিন্তু? - ওখান থেকে আসার পরেই ওর যে এমন দশা হবে, আমি ভাবতেও পারিনি। কি যে একটা রোগ। শরীর থেকে পুরোপুরি যায় না। থেকে থেকেই এসে হাজির হয়।’ আমি বললাম, ‘মাঝে মাঝে শরীর খারাপটা হওয়াটা ভাল। এই তোরা কেমন এসেছিস, গল্প করছিস। ভাল লাগছে।’ শুক্লা বলল, ‘আমরা তো এমনিই আসতে পারি। এরজন্য শরীর খারাপ হতে হবে কেন?’ শুভেন্দু বলল, ‘হ্যাঁ তুই ঠিক বলেছিস। আসলে ওর মাথাটা একেবারে গ্যাছে।’ তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ওফ, দেব, তুই যে কি করবি, তোকে নিয়ে আমার বড় চিন্তা হচ্ছে।’ মনে মনে ভাবলাম, বিদিশা যদি এসে পড়ে, চিন্তাটা এক্ষুনি দূর হয়ে যাবে। মা ঘরে ঢুকল চা নিয়ে। শুভেন্দু হাত বাড়িয়ে মায়ের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিল। দেখি, মা শুক্লার জন্যও চা বানিয়ে নিয়ে এসেছে। শুক্লা বলল, ‘মাসীমা আপনি সেই আমার জন্য চা করলেন?’ মা হাসল। বলল, ‘একবার তো খেয়েছ। আর একবার খেলে কিছু হবে না। আমি তো বাড়ীতে কেউ এলেই চা বানাই। ছেলেও আমার চা বেশি খায় না। আর আমারও অত অভ্যেস নেই।’ শুক্লার হাতে আর একটা চায়ের কাপ ধরিয়ে মা পাশের ঘরে চলে গেল। শুক্লা বলল, ‘ইস মাসীমা কত ভাল। ঠিক আমার মায়ের মতন। আজ মা নেই। অভাবটা খুব অনুভব করছি।’ শুক্লার মুখটা খুব করুন। শুভেন্দুও দেখছে, চায়ের কাপে মুখ দিচ্ছে শুক্লা, কিন্তু মুখে কোন কথা নেই। হঠাৎই মায়ের স্মৃতিতে বিভোর হয়ে পড়েছে শুক্লা। - ‘শুক্লা! এতদিন বাদে তোর সাথে দেখা হল। খবর কি বল?’ হঠাৎই শুভেন্দুর জোরালো স্বরে যেন হোশ ফিরল শুক্লার। - ‘আমার আর খবর কি। এই আছি, চলে যাচ্ছে। সারাদিনের অফিস, তারপর বাড়ী গিয়ে একটু বিশ্রাম। মা বাবা এখন নেই। একা একা একটা মেয়ে, যেরকম থাকে। সেই আর কি।’ শুভেন্দু বলল, ‘এই এক অসুবিধে। আমাদের তো জয়েন্ট ফ্যামিলি। বাড়ী ভর্তি লোক গমগম করছে। অভাবটা বোধ হয় না। তাই তোরটা খুব ফিল করি। মাসীমা মেশোমশাই দুজনেই চলে যাওয়াটা খুব কষ্টের। বাবা মা যার নেই, সে বোঝে কষ্টটা।’ শুক্লা বলল, ‘এই মাধুরী কেমন আছে রে? আর রনি ওই পাজীটা।’ শুভেন্দু বলল, ‘ভালই আছে। ছেলে হয়েছে একটা। নাম রেখেছে ‘দেবমাল্য।’ শুক্লা বলল, ‘তাই? দেব নামটা এখানেও জায়গা পেয়েছে তাহলে। ভাল ভাল।’ শুভেন্দু চা খাচ্ছ, শুক্লাও খাচ্ছে। চা খেতে খেতে শুক্লা এবার বলল, ‘তা তুই বিয়েটা করছিস না কেন? হাভাতের মতন এরকম কদ্দিন থাকবি?’ শুভেন্দু বলল, ‘শোন, আমার বউ না থাকলে কি হবে, আমার তিন তিনটে বৌদি। বৌদিদের সাথে এত ভাল সময় কেটে যায় যে বউ এর অভাবটা আর ফিল করি না।’ - যাঃ অসভ্য।’ শুক্লা একটা ধ্যাতানি দিল শুভেন্দুকে। আমি কোন কথা বলছি না। শুয়ে শুয়ে শুধু রকমটা দেখছি। হাসি এসে গেল। বেশ জোরে হেসে উঠলাম। শুভেন্দু বলল, ‘এই এই দেব। হাসিস না। আবার নয়তো পেটে ব্যাথা উঠে যাবে।’ চা খেয়ে শুক্লা বলল, ‘আমার একটা চিন্তা হচ্ছিল। কি জানি কি হল আবার। এখন অনেক চিন্তামুক্ত লাগছে।’ আমি বললাম, ‘বাড়াবাড়িটা কাল রাতেই খুব হয়েছিল। শুভেন্দু না এলে খুব মুশকিলে পড়ে যেত মা। আমার তখন কোন জ্ঞান নেই। মেঝেতে পড়ে। পুরো সেন্সলেস।’ শুক্লা চোখ বড় বড় করে বলল, ‘তাই?’ আমি বললাম, হ্যাঁ। তারপরেই তো শুভেন্দু এল মা’র ফোন পেয়ে। ডাক্তারও এল। ওষুধ দেবার পর ডেঞ্জার সিচুয়েশনটা কেটে গেছে।’ শুক্লা বলল, ‘সেই কলেজে পড়ার সময়ও তোর একবার বাড়াবাড়ি হয়েছিল না? সেবার সেই ফাংশনের ঠিক আগেই।’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ যখন যখন এই রোগটা শরীরে অ্যাটাক করেছে, আগে পিছে সব ঘটনাই আমার মনে আছে।’ শুভেন্দু হাত ঘড়িটা দেখছে। বুঝলাম, ও বোধহয় বিদিশার আসার টাইমটা মিলিয়ে দেখে নিচ্ছে, কতক্ষণ আর বাকী আছে ওর আসতে। শুক্লা বলল, ‘কিরে? তাড়া আছে নাকি তোর? ঘড়ি দেখছিস?’ শুভেন্দু বলল, ‘বিদিশা আসছে। বলেছিল একঘন্টা পরেই আসবে। ঘড়িতে তাই দেখছি, একঘন্টা হয়েছে কি না?’
05-07-2021, 12:29 PM
এই প্রথম শুক্লার মুখের অভিব্যক্তিটা দেখে বুঝলাম, বিদিশার নামটা শুনে একবারও ওর মনের মধ্যে কোন রাগ নেই। হতাশা বা কষ্ট মানসিক কোন দ্বন্দ, সবকিছু মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে হাসি মুখে ও বলল, ‘বিদিশা আসছে? বাঃ এটাই তো চেয়েছিলাম। এই একটা কাজের মতন কাজ করেছিস তুই।’
শুভেন্দু বলল, ‘আমি আর কি করলাম? বুঝছিস না? একটা মেয়ে কতদিন বাদে ফিরে এল। কার টানে? ওই যে লোকটা, যার মাথার কাছে তুই বসে আছিস। ইতিহাস যদি কেউ বদলাতে পারে, তাহলে দেবই ওটা করে দেখিয়েছে। এরজন্য দেবের প্রশংসা প্রাপ্য।’
আমি বললাম, ‘কি আজেবাজে বকছিস? আমি আর কি করলাম? সবকিছু সময়ের ওপর নির্ভর করে। তখন আমার সময়টা খারাপ ছিল। এখন হয়তো-’
শুক্লা বলল, ‘পৃথিবীটা তো গোল। তাই ঘুরে ফিরে আমরা সবাই আবার একজায়গায়। আর বিদিশা তো আসবেই। কারণ দেব তো কোন অন্যায় করেনি।’
আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন একটা কম্পন অনুভূত হচ্ছে। ভাবছি, কত সহজ ভাবে কথাগুলো বলে দিল শুক্লা। কিন্তু ও কি পারবে চোখের সামনে ভালবাসাটা ছাই হয়ে যেতে দেখতে। শুক্লার তো কেউ নেই, আমার তবু বিদিশা আছে এখনো একটা আশার আলো নিয়ে। ঘরের মধ্যে বিদিশা যদি আমাকে সেই আগের আমাকে মতন জড়িয়ে ধরে, শুক্লা কি পারবে, দাঁতে দাঁত চেপে ওর হারটাকে স্বীকার করে নিতে। খুব কাছ থেকে আমি দুই নারীকে দেখেছি। হঠাৎ যদি শুক্লাও আমাকে জড়িয়ে ধরে, আমি কিছু মনে করবো না। কারণ আমি জানি ওই জড়ানোর মধ্যে কোন অনুভূতি নেই। উষ্ণতা নেই। এক বন্ধু তার বন্ধুকে জড়িয়ে ধরছে, তার গাল টিপে দিচ্ছে, খুনসুটি করছে, ওতে কোন আবেগ আসে না। কিন্তু প্রেম হল সূর্যের আলোর মত উজ্জ্বল। উত্তপ্ত প্রেম যখন শরীরে প্রবেশ করে তখন তাকে উন্মুখ করে তোলে। এই শুক্লা একটু আগেই আমার কপালে একবার হাত ঠেকিয়েছে, কিন্তু আমার কোন অনুভূতি হয় নি। কিন্তু হাতটা যদি শুক্লার না হয়ে বিদিশার হত। আমার কপালটা তখন আর কপাল থাকত না। বিদিশার ছোঁয়া পাওয়ার জন্য বারে বারে শুধু উন্মুখ হয়ে উঠত। ভালবাসা যেন আরাধনা হয়ে গেছে। কথায় বলে পরাণে ভালবাসা কেন দিলে গো, তাহলে হয়তো এই পরাণটা আমার জ্বলত না।
দেখলাম শুভেন্দু হঠাৎ মোবাইলের লাউড স্পীকারটা অন করেছে। সেদিনকে কখন আমার গাওয়া গানগুলো মোবাইলে রেকর্ড করে নিয়েছে আমি টেরই পাইনি। স্পীকারটা অন করে শুভেন্দু শোনাতে লাগল, গানটা।
‘দেব মনে পড়ে? সবার শেষে তুই এই গানটা গেয়েছিলিস সেদিন। বিদিশা ছিল।’
শুক্লা অবাক হয়ে শুনছে। ও জানে না, শুভেন্দুর বাড়ীতে বিদিশাও সেদিন এসেছিল। আমি শুক্লাকে বলিনি।
গানটা তখন মোবাইলে বাজছে,
‘তেরে মেরে সপনে আব এক রঙ্গ হ্যায়ও জাহান ভী লে যায়ে রাহে, হাম সঙ্গ হ্যায়।
ও তেরে মেরে সপনে-
মেরে তেরে দিলকা, তায় থা একদিন মিলনা।
যেয়সে বাহার আনে পর, তায় হ্যায় ফুল না খিলনা
ও মেরে জীবন সাথী- তেরে মেরে সপনে-
তেরে দুখ অব মেরে, মেরে সুখ অব তেরে
তেরে ইয়ে দো ন্যায়না, চাঁদ অউর সুরজ মেরে
ও মেরে জীবন সাথী- তেরে মেরে সপনে!
লাখ মানালে দুনিয়া, সাথ না এ ছুটেগা।
আ কে মেরে হাতো মে, হাত না এ ছুটেগা।
ও মেরে জীবন সাথী- তেরে মেরে সপনে অব এক রঙ্গ হ্যায়।।
শুভেন্দু বলল, উফ কি গলা দেখেছিস দেবের। এখনো সেই দরদ। সেই মূর্চ্ছনা। আমি যখন অফিসে যাই, তখনো এই গানটা চালিয়ে শুনি।’
শুক্লা বলল, ‘অসাধারণ। উফ, মন ভরে গেল।’
আসলে সেদিন সবশেষে, বিদিশার দূঃখ আর কান্নাটা ভোলাবার জন্যই এই গানটা গেয়েছিলাম। আমাদের স্বপ্নটা যেন আবার এক হয়ে যায়। যত কষ্ট আর বাঁধাই আসুক। আমরা আর আলাদা হবো না। কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না। হয়তো ওপরওয়ালা আগাম সেই পরিকল্পনাটাই করে রেখেছেন। কে বলতে পারে?
চলবে-
05-07-2021, 02:48 PM
আপনার লেখা প্রশংসার ঊর্ধে।
পরবর্তী পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
05-07-2021, 04:57 PM
|
« Next Oldest | Next Newest »
|