Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#61
Deleted.
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#62
[Image: 20210704-010634.jpg]

আপনার গল্পটা অসাধারণ হচ্ছে. সত্যিই অনেকদিন পর এরকম ভালোবাসার গল্প পড়ালে. প্রতিটি চরিত্রকে গুরুত্ব দিয়েছেন আর তারওপর পুরানো গানগুলো আবার মনে করিয়ে দিলেন. মন জয় করা একটি গল্প. নতুন পর্ব আসছে তাই এই উপহার আপনার জন্য
[+] 2 users Like Baban's post
Like Reply
#63
(04-07-2021, 01:25 PM)Baban Wrote:
[Image: 20210704-010634.jpg]

আপনার গল্পটা অসাধারণ হচ্ছে. সত্যিই অনেকদিন পর এরকম ভালোবাসার গল্প পড়ালে. প্রতিটি চরিত্রকে গুরুত্ব দিয়েছেন আর তারওপর পুরানো গানগুলো আবার মনে করিয়ে দিলেন. মন জয় করা একটি গল্প. নতুন পর্ব আসছে তাই এই উপহার আপনার জন্য

অসাধারণ পোস্টার। কিন্তু আমি ছবি আপলোড করতে পারছি না।
Like Reply
#64
(04-07-2021, 01:25 PM)Baban Wrote:
[Image: 20210704-010634.jpg]

আপনার গল্পটা অসাধারণ হচ্ছে. সত্যিই অনেকদিন পর এরকম ভালোবাসার গল্প পড়ালে. প্রতিটি চরিত্রকে গুরুত্ব দিয়েছেন আর তারওপর পুরানো গানগুলো আবার মনে করিয়ে দিলেন. মন জয় করা একটি গল্প. নতুন পর্ব আসছে তাই এই উপহার আপনার জন্য

মুক্ত আকাশ 
খোলা বাতাস 
পায়ের নিচে সবুজ ঘাস  
জ্যোৎস্নার আলোয় স্নান 
আর! আর শুধু তুমি আর আমি ❤❤❤

না না এটা কবিতা না। এটা আপনার পোস্টার ❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤❤
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
#65
বেশ অনেকদিন আগে xossipy.com এ একাউন্ট খুলেছিলাম xossip.com বন্ধ হওয়ার পর exbii/xossip র লেখকদের পুরানো ও নতুন গল্প পড়ার আশায়। যদিও অরিজিনাল লেখকরা অনেকেই ফিরে আসেননি তখন এখানে, বেশ কিছু পুরানো গল্প পোস্ট করেছিলেন অন্য মেম্বাররা। তারপর আমার বহুদিন এই সাইটের পথ মাড়ানো হয়নি। আজ হঠাৎ করে খুলেই দেখি পুরানো সব অতি প্রিয় লেখকরা ফিরে এসেছেন এই সাইটে। বহুদিন বাদে লেখক, পিনুরাম, indian dada, ধৃতরাস্ট্র এদের কে দেখতে পেয়ে কি যে ভালো লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না। পুরানো সেই exbii র দিনগুলো মনে পরে যাচ্ছে। অন্য যাদেরকে এই সাইটে খুঁজে পেলাম না যেমন ভার্জিনিয়া বুলস, লাভদীপ, দীপালি তাদেরকে খুব মিস করছি। আরো অনেক অনেক ভালো ভালো লেখক ছিলেন যাদের নাম এই মুহূর্তে মনে আসছে না।

লেখক দা আপনার কথা কি আর বলবো। আপনাকে এখানে দেখে খুবই ভালো লাগছে। একসময় আপনার সিরিজার জন্য রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করতাম।

আপনার কাছে একটা অনুরোধ রইলো সিরিজা উপন্যাস শেষ করবার। এরকম উপন্যাস আগে লেহা হয়নি। সিরিজা , রজত, দিবাকরকে ফিরিয়ে আনুন।
Like Reply
#66
(04-07-2021, 05:43 PM)bongreader Wrote: বেশ অনেকদিন  আগে xossipy.com এ একাউন্ট খুলেছিলাম xossip.com  বন্ধ হওয়ার পর  exbii/xossip র লেখকদের পুরানো ও নতুন গল্প পড়ার আশায়। যদিও অরিজিনাল লেখকরা অনেকেই  ফিরে আসেননি তখন এখানে, বেশ কিছু পুরানো গল্প পোস্ট করেছিলেন অন্য মেম্বাররা। তারপর আমার বহুদিন এই সাইটের পথ মাড়ানো হয়নি। আজ হঠাৎ করে খুলেই দেখি পুরানো সব অতি প্রিয় লেখকরা ফিরে এসেছেন এই সাইটে। বহুদিন বাদে লেখক, পিনুরাম, indian dada, ধৃতরাস্ট্র  এদের কে দেখতে পেয়ে কি যে ভালো লাগছে বলে বোঝাতে পারবো না।  পুরানো সেই exbii র দিনগুলো মনে পরে যাচ্ছে। অন্য যাদেরকে এই সাইটে খুঁজে পেলাম না যেমন ভার্জিনিয়া বুলস, লাভদীপ, দীপালি তাদেরকে খুব মিস করছি। আরো অনেক অনেক ভালো ভালো লেখক ছিলেন যাদের নাম এই মুহূর্তে মনে আসছে না।

লেখক দা  আপনার কথা কি আর বলবো। আপনাকে এখানে দেখে খুবই ভালো লাগছে। একসময় আপনার সিরিজার জন্য রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করতাম।

আপনার কাছে একটা অনুরোধ রইলো সিরিজা উপন্যাস শেষ করবার। এরকম উপন্যাস আগে লেহা হয়নি। সিরিজা ,  রজত, দিবাকরকে ফিরিয়ে আনুন।

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। অবশ্যই সিরিজা শেষ করবার পরিকল্পনা আছে। আমি আরো 5টি উপন্যাস লিখেছি, এক) নিষিদ্ধ স্বাদ, দুই) কামাগ্নি রেশমা, তিন) আমার একমাত্র শালী, চার) কামপুরুষ ও পাঁচ) রেবতী। যেগুলো অসমাপ্ত রয়ে গেছে। ইচ্ছা আছে পোস্ট করবার।
[+] 1 user Likes Lekhak is back's post
Like Reply
#67
এগারো
 
মাথাটা একটু ঝিম ঝিম করছেকেন জানি না শুক্লার বাড়ী থেকে ফিরে আসার পরই শরীরটা কিরকম খারাপ লাগছিল আমারপেটের কাছটা কেমন ব্যাথা ব্যাথা করছিলঠিক যেমন আলসার কোলাইটিসের সময় ব্যাথাটা ওঠে, ঠিক তেমনইভীষন একটা যন্ত্রণা অনুভব করে বারান্দা থেকে আমি ঘরে ফিরে এলামকোমরের কাছটায় হাত দিয়ে একটু কাতরাতে শুরু করেছিযন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠলাম,ও মা গোআবার সেই যন্ত্রণা।’
ঘরের মধ্যে জলের বোতলটাও নেইউঠে যে খাওয়ার ঘরে ফিল্টারের কাছে যাব, একটু জল খাবো সে সামর্থও নেইআমার চোখ দুটো কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে, বুঝতে পারছি এ যন্ত্রণা সারা রাত ভোগাবে আমায়সকাল অবধি আর ঘুম হবে না
কোমরের দুপাশে হাত দিয়ে চেপে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়লামটানটান পুরো শরীরটা নিমেষের মধ্যে ব্যাখায় আবার কুঁকড়ে গেলযন্ত্রণাটা তখন ভেতর থেকে ঠেলে ঠেলে উঠছে।  মনে হল, এই সময় কাউকে যদি পাশে পেতাম খুব ভাল হতকেন যে ব্যাথাটা থেকে থেকে এরকম কষ্ট দেয় বুঝি নাএই বেশ আছি, আবার শরীরটা খুব খারাপসুস্থ সবল শরীরটা হঠাৎই বিষন্ন, ভীষন দূঃখীকি জানি মনের সঙ্গে বোধহয় শরীরেরও একটা যোগসাজশ আছে বোধহয় একটা অলৌকিক কোন শক্তি যে শক্তিটাই আমাদের ঠিক থাকতে দেয় না
মা ঘুমোচ্ছে অন্যঘরে এই মূহূর্তে মাকে ডাকাটা ঠিক হবে না মা আমার অনেক কষ্ট করে, সারাদিন অনেক পরিশ্রম করেমায়ের ঘুমের ব্যাঘাত আমি ঘটাতে চাই নাচোখ বুজে দাঁতে দাঁত চেপে তাই যন্ত্রণাটা সহ্য করার চেষ্টা করে যেতে লাগলামমনে হল পেটের ভেতরে কে যেন হাতুড়ী মারছে, এক্ষুনি নাড়িভূড়ি সব বেরিয়ে পড়বেএকটা অসহায় মানুষের মতন সিলিং এর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম, ‘হায় ভগবান এতটা কষ্ট দিও না আমায়।’
বিচিত্র মানুষের শরীরহঠাৎ কিছু একটা হয়ে গেল, অমনি শরীরটা বিগড়ে গেল, ব্যস, হয়ে গেল তার দফারফাডাক্তার বলেছিল, খাওয়াদাওয়ার কিছু গড়বড় হলেই কিন্তু এই রোগটা মাঝে মধ্যে আবার দেখা দেবেসুতরাং সাবধানে থাকতে হবে আপনাকেগোলমাল হলেই ব্যাথাটা আবার আপনাকে কষ্ট দেবেআর ব্যাথা যদি না কমে, তাহলেই বুঝবেন, বাথরুমে গিয়ে আবার সেই থোকা থোকা রক্তডাক্তার ডেকে, ওষুধ খেয়ে হয়রানিনার্সিংহোমে ভর্তীএক গাদা শুধু পয়সা নষ্ট
 আমি কি এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি না?
হ্যাঁ পারেনতারজন্য খাওয়া দাওয়া কন্ট্রোল করতে হবেআমি জানি, আপনি কাজের মানুষ, কিন্তু বাইরের হাবিজাবি খাওয়া একদম চলবে নাতাহলেই কিন্তু-
‘কিন্তু ডাক্তার আমি তো এই শেষ কয়েকমাসে বাইরে উল্টোপালটা কিছু খাই নিতাহলে কেন এমন হচ্ছে?’
মনে হল আপন মনে আমি কথা বলছি বিড় বিড় করেডাক্তার আমার পাশে নেইঅথচ আমার মনে হচ্ছে আমি যেন ডাক্তারের সাথেই কথা বলছি
অনেক কষ্ট করে বিছানা থেকে উঠে এক গ্লাস জল নেবার জন্য ফিল্টারের দিকে এগোতে লাগলামমনে হল গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, সমস্ত শরীরটা জবজব করছে ঘামে, এইবার মনে হয় ধুপ করে আমি মাটিতে পড়েও যাবযেন শরীরে শক্তিটুকুও আর অবশিষ্ট  নেই আমাররোগটা হঠাৎই শরীরে নতুনভাবে দানা বেঁধেছে, আমার সমস্ত শক্তিকে সে কেড়ে নিতে চাইছে
ফিল্টার থেকে আমি গ্লাসে জল গড়াতে লাগলামতলপেটের কাছটা চিনচিন করছেপেটের কাছটা হাত দিয়ে চেপে ধরে বললাম, ‘বিদিশা, তুমি যদি আমাকে ছেড়ে না যেতে, তাহলে হয়তো এই কষ্ট কোনদিন আমার হত নাআজ তুমি ফিরে এসেছোতাও পুরোন ব্যাথা সেই আমাকে আবার কষ্ট দিচ্ছে।’
এবার জল গড়াতে গিয়ে দুম করে মাটিতে পড়েও গেলামমাথার কাছটা ভীষন জোরে আঘাত লাগলমনে হল মাটিতে লেগে মাথার পিছনটা যেন নিমেষে ফুলে আলুর মতন ঢোল হয়ে গেলমেঝেতে গ্লাসটা পড়ল, ঝনঝন করে একটা শব্দ বয়ে গেল
বেশ জোরে শব্দটা হয়েছেমা’রও ঘুম ভেঙে গেছে আওয়াজ শুনেমা, ছুটে এসেছেদেখছে, মেঝেতে শুয়ে আমি ব্যাথায় কাতরাচ্ছিআমার পেটের কাছটা আর মাথার পিছনে, দুটো জায়গাতেই ভীষন ব্যাথা অনুভব করছিআমি আর পারছি না
মা বেশ ভয় পেয়ে গেলআমাকে বলল, কি হয়েছে তোর?
আমি বললাম, মা, মনে হচ্ছে সেই আলসার কোলাইটিসের ব্যাথাটা আবার চাগাড় দিয়েছেভীষন কষ্ট হচ্ছে
মা বলল, আমাকে ডাকবি তো তুই? দেখেছ কান্ডওঠ, ওঠ, দেখি একটু কষ্ট করে
আমার কাঁধটা ধরে, মা আমাকে ওঠানোর চেষ্টা করতে লাগলনিজেই কেমন শক্তিশূণ্য হয়ে গেছিমাকে বললাম, ‘মা দেখো তো ওষুধের বাক্সেতে কোলাইটিসের ওষুধটা আছে কিনা? ভীষন ব্যাথা করছেমনে হচ্ছে আমি আর বাঁচবো না।’
- ‘দূর পাগলঅমন কথা মুখে আনতে আছে?’ মা, তাড়াতাড়ি ওষুধের বাক্স থেকে একটা ট্যাবলেট বার করে, আমার মুখে দিলফিল্টার থেকে জল গড়িয়ে আমার মুখে ঢালতে লাগলআমাকে বলল, ‘আসতে আসতে ওঠার এবার চেষ্টা কর, আমি তোকে বিছানায় নিয়ে যেতে সাহায্য করছি কেন ব্যাথাটা কি খুব বেশী হচ্ছে?’
মাকে বললাম, উঠতে পারছি না মা, ভীষন ব্যাথা হচ্ছেআমি আর পারছি না।’
আমার কষ্ট দেখে মা ভীষন নার্ভাস হয়ে পড়েছে, বুঝতে পারছি মা না এবার কাঁদতে শুরু করে দেয়হঠাৎই দেখছি, আমার মাথার কাছে বিদিশাআমাকে বলছে, ‘ওঠো একটু চেষ্টা করেতুমি যদি এভাবে ভেঙে পড়, তাহলে আমারই বা চলবে কি করে?’
ভীষন কাঁদছে বিদিশাআমি ওর চোখের জল মুছিয়ে দিতে চেষ্টা করছিকিন্তু আমার হাত বিদিশার চোখের কাছে কিছুতেই পৌঁছোচ্ছে না
 কেন এমন হচ্ছে আমার? ভীষন বাজে একটা অসুখচোখে শুধু ঝাপসা দেখছিমাথাটাও ঘুরছে বনবন করে।  আবঝা আবঝা দেখছি, সারা ঘর জুড়ে শুভেন্দু, রনি, মাধুরী এমনকি শুক্লাও অস্থিরভাবে ঘোরাঘুরি করছেআমার দিকে ওরা ঘনঘন তাকাচ্ছে, আমার দিকে হাত বাড়াতে চাইছে অথচ আমার এই অস্থির অবস্থা দেখেও, ওরা যেন আমার জন্য কিছুই করতে পারছে না
মা চেঁচিয়ে উঠে বলল, ‘ওঠ, খোকাএকটু চেষ্টা করআমি তোকে ধরছিওষুধ তো খেয়েছিসএবারে ব্যাথা কমে যাবেএকটু চেষ্টা করএকটু ধৈর্য ধর।’
কোনরকমে মা’কে ধরে আমি ওঠার চেষ্টা করতে লাগলামশরীরের সমস্ত রয়ে যাওয়া শক্তিগুলো দিয়ে মায়ের হাতটা ধরার চেষ্টা করলাম, কিন্তু পারলাম নাআবার শরীরটা মাটিতে আছড়ে পড়লকে যেন মেঝের সঙ্গে আমাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখতে চাইছেশরীরটা মেঝের সঙ্গে একেবারে গেঁথে গেছেপৃথিবীর যেন কোন শক্তিই নেই, আমাকে টেনে তোলে
ভগবান আমাকে দয়া করআমি বাঁচতে চাইওহ্ কি কষ্ট, কি যন্ত্রণাকি ভয়ানক ব্যাথাআমার পেট থেকে এখন সারা শরীরের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে ওই ব্যাথাটামনে হচ্ছে এই বুঝি আমার চোখের পাতা বুজে গেলকাল সকালে চোখ খুলে সূর্যের মুখটা আমি বোধহয় আর দেখতে পারব না
জ্ঞান হারাবার আগে, শেষবার মায়ের মুখ থেকে একটা চীৎকার শুনলামমা চেঁচিয়ে উঠল খোকা বলেতারপর আর আমার কিছু মনে নেই
 
সকালে চোখ খুলে দেখি, বিছানায় শুয়ে আছিকি করে ওই অবস্থায় বিছানায় এলাম তাও জানি না।  আমার মাথার কাছে দেখি মা বসে আছেডাক্তার এসেছেনআমাকে পরীক্ষা করছেন, আমার তলপেট চেপে চেপে দেখছেন, ব্যাথাটা আছে না চলে আছে
ওনার নাম ডাক্তার এস বাসুআমাদের হাউজ ফিজিশিয়ানসব কিছু পরীক্ষা টরীক্ষা করে বললেন, শেষ কবে হয়েছিল, কোলাইটিস?
আমি বললাম, তাও সাত আট বছর আগে
আমাকে বললেন, এখনো মিল্ক প্রোডাক্ট খাও তুমি?
আমি বললাম, না ও তো অনেক দিন আগেই ছেড়ে দিয়েছি
ডাক্তার বললেন, ‘রোগটা এমনইসামান্য কিছু থেকেই আবার ফর্ম করে নেয়তাও ভয়ের কিছু নেইতোমার কপাল ভাল, অত রাত্রে তোমার বন্ধু চলে এসেছিল গাড়ী নিয়েতোমার মা ভাগ্যিস তাকে ফোন করেছিলেনআমাকেও ফোন করেছিলেনআমি অত রাত্রে এসে দেখি, তোমার বন্ধু তার আগেই তোমাকে ওঘর থেকে তুলে এঘরে নিয়ে এসেছেচোখে মুখে জল দিয়ে তোমার জ্ঞান ফেরানোর অনেক চেষ্টা করছেআমি এসে তোমাকে আবার ওষুধ দিইব্যাথাটা ভাগ্যিস আর বাড়ে নিতাহলে আবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হতএখন কদিন ভারী খাবার একদম খাবে নাদু তিনদিন হালকা কিছু খাওআর ঠান্ডা খাবার খাবেগরম করা কোন জিনিষই নয়তিন চারদিন বাড়ীতে পুরো রেস্ট নিতে হবেঅফিস, কাজ বন্ধতারপর তুমি আবার পুরোপুরি সুস্থ।’
আমি মায়ের মুখের দিকে তাকালাম, মা’কে বললাম, কে এসেছিল মা?
মা বলল, ‘শুভেন্দু।’
তুমি ফোন করেছিলে ওকে? অত রাত্রে?
মা বলল, ‘কি করব বল? আমার টেনশনে হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে তখনতোর যদি কিছু হয়ে যেত?’ বলেই মা হাউহাউ করে কেঁদে ফেলল
[+] 1 user Likes Lekhak is back's post
Like Reply
#68
ডাক্তার এস বাসু মাকে বললেন, ‘আপনি কাঁদছেন কেন? ভয় তো যেটা ছিল সেটা কেটে গেছেশুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দেবেন নাকান্না থামান।’
মাকে আমিও বললাম, ‘হ্যাঁ মা, কেঁদো নাতুমি তো জানোইব্যাথাটা যখন ওঠে, কেমন কষ্ট হয়কাল রাতে যেন আরো বেশি বেশি করে হচ্ছিলোসেই যে শুরু হল, তারপরেই সহ্যের বাইরে চলে গেলো।’
ডাক্তার এস বাসু হঠাৎ প্রসঙ্গটা ঘুরিয়ে মাকে বললেন, ‘ছেলের এবার বিয়ে থা দিচ্ছেন না কেন? আপনি আর কত করবেন? এবার ঘরে বউ আসুকছেলেকে দেখুক।’ বলেই আমার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললেন, ‘কি দেব? তাই তো?’
আমি আর কি বলব? একটু লজ্জ্বা মতন মুখটা করে চুপ করে রইলামদেখছি মা এবার কান্না থামিয়ে মুখ টিপে টিপে হাসছেডাক্তার এস বাসুর মুখেও হাসিঠিক বুঝলাম না ব্যাপারটাআমার দিকে চেয়ে মুখ গম্ভীর করে ডাক্তার বাসু বললেন, ‘বিদিশা কে?’
আমি অবাকএই বিদিশার নাম, ডাক্তার এস বাসু জানলেন কি করে? বেশ খানিকটা বোকা বোকা মতন হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রয়েছি ডাক্তারের দিকেউনি বললেন, ‘কাল রাত্রে তুমি বিছানায় শুয়ে কতবার বিদিশার নাম করেছো, সেটা কি জানো?’
দেখছি আমার মা’ও কথাটা শুনে চুপ করে রয়েছেতারমানে কালরাতে আমি সত্যি অনেকবার বিদিশার নাম উচ্চারণ করেছি, অথচ আমার নিজেরই খেয়াল নেই
ডাক্তার বাসু বললেন, ‘পারো যদি ওই মেয়েটাকেই বিয়ে করে নাওতোমার মা’ও তাহলে অনেকটা হালকা হবেনকাল তোমার জন্য উনি যা টেনশনে পড়ে গেছিলেন, বলার নয়।  আর ভাগ্যিস তোমার ওই বন্ধুটাও চলে এসেছিল অতরাত্রেনইলে একা যে উনি কি করতেন, সেটাই ভাবছি।’
ডাক্তার বাসু এবার উঠে পড়লেনযাবার আগে বলে গেলেন, ‘আজকের দিনটা অন্তত বিছানা থেকে উঠে বেশি হাটাহাটি কোরো না।  একদম বেড রেস্টপেটের ওপর চাপ পড়বে তাহলেঘরের মধ্যেও চলাফেরা করার দরকার নেইএ বেলাটা শুয়েই থাকোপারলে সন্ধেবেলা একটু সো্ফার ওপরে গিয়ে বোসোকিন্তু সেটাও অবস্থা বুঝেআর আমি তোমার মা’কে বলে যাচ্ছি, যে ওষুধগুলো আমি লিখে দিয়েছি, ওগুলো উনি একটু কষ্ট করে কাউকে দিয়ে আনিয়ে নেবেনব্যাস্কয়েকদিন খেলেই তুমি পুরোপুরি ফিটতখন অফিস, কাজকর্ম্ম কোনো কিছু করতেই আর অসুবিধে হবে না।’
ডাক্তারকে এগিয়ে দেবার জন্য মা’ও ওনার পিছু পিছু গেলআমাকে বলে গেল, ‘তুই শুয়ে থাকআমি ওনাকে এগিয়ে দিয়ে এক্ষুনি আসছি।’
শুয়ে শুয়ে ভাবছি, কি একটা মেয়ের সাথে আমি প্রেম করেছি।  জীবন জুড়ে শুধুই বিষন্নতাএই ভাবি, আমার জীবনটা বুঝি আশার আলো দেখতে শুরু করেছে, পরমূহূর্তেই আবার কালো অন্ধকারঠিক যেন দূঃস্বপ্নের মত প্রেমএকটা বিড়ম্বনা, মনের কষ্টপ্রেম যেন এখানে অলৌকিক, এর কোনো বাস্তবতা নেইআমি চিরকাল ভালবাসার কাছে নতজানু হয়ে থাকলামকিন্তু ভালবাসাকে সেভাবে ফিরে পেলাম কই? এরপরেও আমি বিদিশাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবো, বিড় বিড় করে ওর নাম উচ্চারণ করে যাবো, কাল যেমনটি করেছিলোকে বলবে, আমি বোধহয় পাগলপৃথিবীতে বিদিশা ছাড়া আর বুঝি মেয়ে নেইপৃথিবীর সব লোকেদের হৃদয় বড় হয়ে যায় শরীরের সঙ্গে সঙ্গেআর আমার ক্ষেত্রে হবে ঠিক উল্টোআমার বয়সটা বেড়ে যখন একদিন ষাট সত্তর বছর হবে, সেদিনও বোধহয় আমার হৃদয় ওই বিদিশাকে দিয়েই বসে থাকবেলোকে বলবে, কি এক পাগলের প্রেম কাহিনী শুনছিজীবনের এমন কাহিনী পড়লে লোকে প্রেম করাও ছেড়ে দেবে
 বিদিশার চিন্তা ছেড়ে এবার আমার মনটা একটু শুভেন্দুকে নিয়ে পড়লঅতরাত্রে কাল শুভেন্দু চলে এসেছে মায়ের ডাকেসত্যিকারের জাত বন্ধু বলতে যা বোঝায়, সে হল, শুভেন্দুআমার কপালে প্রেমটা স্থায়ী না হলেও বন্ধুটা খুবই ভাল জুটেছেসময় অসময়ে শুভেন্দু সবসময় আমার পাশেএত দরদ, বন্ধুপ্রীতি, অন্তরের টানশুভেন্দুর সাথে আমার এই সম্পর্কটা টিকে যাবে আজীবনওর উপকারের কথা চিন্তা করতে করতে এবার আমার চোখে একটু জল এসে গেল মা সেই সময় ঘরে ঢুকলো আমাকে বলল, ‘কি রে তোর আবার কি হল?’
আমি বললাম, ‘তা নয়, আসলে শুভেন্দুর কথা চিন্তা করছিলাম তাই-
আমার মাথার কাছে এসে বসলো মাআমার মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল, ‘সত্যি হীরের টুকরো ছেলে অতরাত্রে ওকে পাবো কিনা? ও আসবে কিনা? একটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম আমার চিন্তাটা কাটিয়ে দিল শুভেন্দুই আমাকে বলল, কিচ্ছু চিন্তা করবেন না মাসীমা, আমি ঠিক আধঘন্টার মধ্যেই আসছি শুধু বাড়ীর নিচে থেকে এসে আমি আপনাকে ডাক দেবো আপনি দরজাটা খুলে দেবেন ঠিক তাই আধঘন্টার মধ্যেই দেখি, গাড়ী চালিয়ে সটান চলে এসেছে এখানে ঘরে ঢুকেই আমাকে বলল, কই দেব কোথায়? তুই তখন খাওয়ার ঘরে মেঝেতে পড়ে রয়েছিস তোর কোনো জ্ঞান নেইতোকে ও একাই তুলে নিয়ে চলে এলো এ ঘরেততক্ষনে ডাক্তার বাসুও চলে এসেছেন আমাকে একপ্রকার শুভেন্দুই বিপদ থেকে উদ্ধার করেছে কালকেডাক্তার চলে যাবার পরও ও অনেক্ষণ ছিল যাবার আগে বলে গেল, দেবকে বলবেন, আমি কাল আবার আসবোফোন করবোআর আপনি কিছু ভাববেন নাযদি আবার কোন সমস্যা হয়আমাকে ডাক দেবেনআমি ঠিক চলে আসবো।’
আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বন্ধু শুভেন্দু ঠিক যেন লাখে একটা বন্ধু অমন জোটে কপালে অত রাত্রে মা’র ডাকে যখন এক কথায় চলে এসেছে, তখন বিদিশাকেও নিশ্চই ফোন করে বলবে, শুভেন্দু ‘দেবের শরীর খারাপ পারিস যদি দেখে আয় একবার’ সত্যি কি বিদিশা তখন আসবে?
মা বললো, ‘তোকে একটা কথা বলা হয়নিশুভেন্দু একটু আগেই ফোন করেছিল, সকালে উঠেই তোর খবর নিয়েছেআমাকে বলল, দেবকে বলবেন, আমি ঠিক দুপুর বেলা আসছিতারপর যতক্ষণ পারবো, আপনাদের ওখানে থাকবোবিকেল বেলা হয়তো আমার বোন আর ওর স্বামী রনিও আসতে পারেসবাই ওর কথা শুনে ভীষন চিন্তিত হয়ে পড়েছেসবাই দেবকে খুব ভালবাসেআজ সকালে ওদের দুজনকে দেবের শরীর খারাপের কথা বলেছিওরা খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।’
আমি মনে মনে ভাবলাম, রনিকে আর মাধুরীকে আমার শরীর খারাপের কথা বলেছে শুভেন্দু বিদিশাকে বলে নি? তাহলে নিশ্চই বিদিশাও একবার আসতো
মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘কি ভাবছিস?’
আমি বললাম, ‘কই কিছু না তো?’
মা আমাকে বলল, ‘আর কি কাউকে ফোন করব? তোর মোবাইলটা থেকে কাকে কাকে ফোন করতে হবে বল? আমি করে দিচ্ছি।’
আমি বললাম, ‘আর কাউকে করতে হবে নাতুমি চুপ করে বসোতোরনি আর মাধুরীরা আসবেতাহলেই হবেআর কাউকে ফোন করার দরকার নেই।’
মা বলল, ‘বিদিশাকে তোর শরীর খারাপের কথা জানাবি না?’
 আমি অবাক চোখে মায়ের মুখের দিকে তাকালামমা যেন আমার প্রতি বিদিশার সত্যিকারের ভালবাসাটা এবার পরখ করে দেখে নিতে চায়।  আমার শরীর খারাপের খবর শুনে বিদিশা আসে কিনা মা হয়তো সেটাই দেখতে চাইছেনিশ্চই বিদিশা আসবেকেন আসবে না? কিন্তু মা জানে না পরিস্থিতি কতটা প্রতিকূলঠিক এই মূহূর্তে বিদিশাও একটা জ্বালা যন্ত্রণায় মরছেঠিক আমারই মতনবাঁধভাঙা বন্যার মতন হয়তো দূঃখ আর আফশোস আছড়ে পড়ছে বিদিশার জীবনেকেউ ওর পথকে রুদ্ধ করে রেখেছেবিদিশা স্বাভাবিক স্বচ্ছন্দ জীবনে ফিরতে পারবে না যতক্ষণ না ওর ডিভোর্সটা হচ্ছেচিন্তা ওকে কুরে কুরে খাচ্ছেহয়তো মুক্তি পেতে পেতে আরো কেটে যাবে কিছুদিনকারণ আমি যে মাকে এখনো আসল কথাটা বলে উঠতে পারিনিওই শুভেন্দুই আমাকে বারণ করে রেখেছে
টেবিলের ওপরে রাখা আমার মোবাইলটা ঠিকই তখনই বাজতে শুরু করেছেমা উঠে বলল, ‘দাঁড়া আমি দেখছি আবার কে ফোন করলো?’
ফোনটা ধরে মা হ্যালো বলাতেই আমি ভাবছি, কে আবার ফোন করলো? ঠিক তখনই মা দেখি কাকে বলছে, ‘হ্যাঁ দেবের তো খুব শরীর খারাপকাল রাতে খুব বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছিলডাক্তার ওষুধ দিয়েছেএখন ভালো আছে।’
আমি মাকে ইশারা করে জিজ্ঞাসা করলাম, কে ফোন করেছে মা? মা বলল, ‘শুক্লা,’ তোর সেই বন্ধুটাযে এসেছিল আমাদের বাড়ীতে।’
 
শুক্লা ফোন করেছে, আমার শরীর খারাপের খবর শুনেছে যখন নিশ্চই আসবেএরা আমাকে সবাই ভালবাসেদেবের কিছু হলে সবার একটু চিন্তা হয় বৈকিঅসুখটাতো নতুন নয়এর আগে কলেজে পড়ার সময়ও একবার বাড়াবাড়ি হয়েছিলসেবার মনে আছে কলেজে বেশ কিছুদিন ধরে যাচ্ছি না বলে, সবাই এক এক করে আমার বাড়ীতে এসে হাজির হচ্ছেপ্রথম দিনই শুক্লা এসে বলল, ‘কি হয়েছে তোর? কলেজে যাচ্ছিস নাজানিস, আমাদের সবার মন খারাপদেব, আর কিছুদিন পরেই কলেজে অ্যানুয়াল ফাংশনতার আগে তুই সুস্থ হয়ে উঠবি তো?’
আমি জানি অ্যানুয়াল ফাংশন আমাকে বাদ দিয়ে হবে নাদেবের উপস্থিতি না থাকা মানে সবারই মুখে এক কথা। ‘দেব নেইতাহলে কি হবে? যেভাবে ও সবকিছু সুন্দর ভাবে পরিচালনা করে, ওকে বাদ দিয়ে এই অনুষ্ঠান করা যায় না কি? তাছাড়া দেবের গান, ওর গান শোনবার জন্য তো উন্মুখ সবাই।’
আমি জানি স্বয়ং প্রিন্সিপাল ও আমাকে স্মরণ করেছেনএই একটা সময়যেখানে সবাই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেকিভাবে গোটা অনুষ্ঠানটা সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করা যায়কাকে কাকে শিল্পী হিসেবে বাছাই করা হবেকে গাইবে, কে নাচবে আর কে আবৃত্তি করবেআমি ছাড়া যেন চোখে সরষে ফুল দেখছে সবাই
শুক্লাকে বললাম, ‘আশা তো করছি দুতিনদিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাবআসলে আমার এই রোগটাই বড় বাজেকখন শরীরের মধ্যে এসে হানা দেবে, আগে থেকে বোঝা খুব মুশকিল।’
শুভেন্দু এসে বলল, ‘স্যার বলছেন, হেমন্ত মুখার্জ্জী এই মারা গেলেন সবেদেবকে বলো এবারে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের স্মরণে ফাংশনটাকে অরগাইজ করতেকিন্তু তুই যেভাবে রোগ বাঁধিয়ে বিছানায় বডি ফেলে দিয়েছিস, তুই ছাড়া এসব করবে কে?’
 শুভেন্দুকে বললাম, ‘সারা কলেজে একটা ছেলে নেই? সবাই যেন প্রেম করাতেই ব্যস্ততুইও যে কি করলি, আমার মত গানটা শিখতে পারতিস তো।’
শুভেন্দু বলল, ‘যাকে দিয়ে যে কাজ হয় না, তাকে বলে কোন লাভ আছে কি? তুই আমাকে দিবি দায়িত্ব? তারপর কি করতে কি করে বসবআর সবাই আমাকে গালাগালি দিয়ে ভূত ভাগিয়ে দিক আর কি?’
ওকে বললাম, ‘তোকে যা যা বলছি, তুই শুধু তাই করবিবাকীটা আমি সুস্থ হয়ে সামলে দেবো
শুভেন্দু বলল, ‘তা আমাকে কি করতে হবে স্যার?’
আমি বললাম, ‘ডেকরটের ঠিক করবি, মাচা বাধার জন্য শুধু এইটুকুই তোর দায়িত্ব।’
শুভেন্দু বলল, ‘ও তাই বলএ আর এমন কি দায়িত্বআমি ভাবলাম, তুই বুঝি আমাকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করার দায়িত্ব দিবি বোধহয়।’
আমি বললাম, ‘তুই যদি বলিস, তোকে একটা চান্স দিতে পারিএকবার ট্রাই করে দেখতে পারিসআমার মন বলছে, তুই ঝোলাবি না।’
শুভেন্দু থতমত খেয়ে বলল, ‘কিসের চান্স?’
আমি বললাম, ‘খালি গলায় দুলাইন গেয়ে দিবিতোকে আমি ট্রেনিং দিয়ে দেবো।’
শুভেন্দু বলল, ‘ক্ষেপেছিসগান গাইব আমি? হেঁড়ে গলায় গান গেয়ে তারপর সব মাটি করি আর কি? শেষকালে সব বদনাম হয়ে যাক, আর কি?
আমি বললাম, ‘কেন? দুলাইন গাইলে কি এমন অসুবিধে হবে? তোকে ট্রেনিং দেবোবলছি তো? তাছাড়া কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্যও তো একঘন্টার একটা পার্ট থাকেতার মধ্যে তুই দুলাইন গাইবিকেউ কিছু মনে করবে না।’
শুভেন্দু বলল, ‘সুনীল দত্ত আর কিশোরকুমারের পড়োশান ছবিটা দেখেছিস? অনেক চেষ্টা করেও যখন কিশোরকুমার পারল নাতখন ওকে বলল, গানের সাথে শুধু লিপ মেলাতেপ্রথমে সুনীল দত্ত অনেক চেষ্টা করেছিল, গলা দিয়ে গাধার ডাক ছাড়া আর কিছুই বেরোয় নিমাইরি দেব, তোকে সত্যি কথাটা বলছি, আমাকে তুই যদি চেষ্টা করিস, তাহলে ওই দত্ত সাহেবের মতই অবস্থা হবে আমারতারপর সকলে আওয়াজ মারুক, হাসি ঠাট্টা করুকও আমি সইতে পারবো নাএকটা কাককে বলছিস কোকিল হতেতুই কি করে পারিস?’
আমি বললাম, ‘তুই যেভাবে বলছিস, তাতে মনে হচ্ছে, সায়রা বানু গান শুনবে অডিয়েন্সে বসেতোর গান শুনে তোর প্রেমে পড়বেএত ভয় পাওয়ার কি আছে বু্ঝি নাতাও যদি তুইও কারুর প্রেমে পড়তিস?
চিরকাল যে আমার কথায় শুধু হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়েছে, শুধু এই একটি ব্যাপারেই ও যে রাজী হবে না আমি জানতাম আসলে ওর সাথে মজা করবার মত একটা বিষয় পেয়েছিলাম বলে নাছোড়বান্দার মত আমিও ওর পেছনে লেগে ছিলাম শুভেন্দু শেষ কালে বলল, ‘এই যে শোনো মহাশয়, আমাকে দিয়ে যখন অতই গান গাওয়ানো তোমার শখতখন তোমার বিদিশাকে দিয়ে একবার ট্রাই করে দেখো নাতিনি গাইবেনআশাকরি তিনি তোমার কথা ফেলতে পারবেন না।’
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#69
Gr8......keep going.....
Like Reply
#70
(04-07-2021, 01:25 PM)Baban Wrote:
[Image: 20210704-010634.jpg]

আপনার গল্পটা অসাধারণ হচ্ছে. সত্যিই অনেকদিন পর এরকম ভালোবাসার গল্প পড়ালে. প্রতিটি চরিত্রকে গুরুত্ব দিয়েছেন আর তারওপর পুরানো গানগুলো আবার মনে করিয়ে দিলেন. মন জয় করা একটি গল্প. নতুন পর্ব আসছে তাই এই উপহার আপনার জন্য

Khub bhalo hoieche
Like Reply
#71
আপনার লেখায় কোন একটা অদৃশ্য টান আছে, যেটা গল্প শেষ হওয়ার পরও কাটতে চায় না। বার বার মনে হয় শেষ হয়ে গেল কেন আরও একটু হলে কি এমন হতো।
Like Reply
#72
(05-07-2021, 01:28 AM)raja05 Wrote: Gr8......keep going.....

ধন্যবাদ আপনাকে।
Like Reply
#73
(05-07-2021, 01:28 AM)raja05 Wrote: Khub bhalo hoihoiech
Thank You.
Like Reply
#74
(05-07-2021, 03:10 AM)Thumbnails Wrote: আপনার লেখায় কোন একটা অদৃশ্য টান আছে, যেটা গল্প শেষ হওয়ার পরও কাটতে চায় না। বার বার মনে হয় শেষ হয়ে গেল কেন আরও একটু হলে কি এমন হতো।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
Like Reply
#75
আসলে বিদিশাকে দিয়ে গান গাওয়ানোর আইডিয়াটা আমারো মাথায় আসেনিতাছাড়া বিদিশা তো শুধু গান শুনতে ভালবাসে ও কি গাইবে? তাছাড়া জোর করে সুযোগ দিলে পক্ষপাতীত্বর একটা ব্যাপার চলে আসে সবাই বলবে, ও যেহেতু বিদিশা দেবের সাথে প্রেম করে, সুতরাং ওরজন্য একটা গোটা স্টেজ তুলে দিয়েছে দেব আদিখেত্যা ছাড়া আর কি?
আমি বললাম, ‘বিদিশা তোরই মতনএকটু ভীতু টাইপেরঅল্পতেই ভয় পেয়ে যায় প্রথমেই আমাকে ও না বলবে তারপর জোরাজুরি করলে কান্নাকাটি শুরু করে দিতে পারে তার চেয়ে বরং ওকে একটা কবিতা পাঠ করার জন্য বলব।’
শুভেন্দু বেশ আগ্রহ নিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘বিদিশা কবিতা পাঠ করবে? সত্যি করবে? উফঃদারুন হবে কিন্তু তাহলে ব্যাপারটা।’
তারপরেই আবার মুখটা উদাস মতন করে ও বলল, ‘কিন্তু তোর জন্য তার মন এখন খুব খারাপদেবের শরীর খারাপের খবর শুনে তিনি বিষন্ন হয়ে পড়েছেনএই তোর কাছে এলো বলেকালই কলেজে আমাকে বলেছে, ওর জন্য আমার ভীষন খারাপ লাগছেকিছু ভাল লাগছে নাওর শরীর খারাপআমাকে এখুনি ওর কাছে যেতে হবে।’
বিদিশা এল, শুভেন্দু থাকাকালীনইএসেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেআমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, চোখে মুখে উৎকন্ঠার ছাপ অসুখ থেকে সেরে না ওঠা পর্যন্ত বিদিশা ভীষন চিন্তিত হয়ে পড়েছে আমার জন্য আমাকে গাদা গাদা উপদেশ দিয়ে কতকিছু একনাগাড়ে বলে গেল বিদিশা। - ‘শোনো, এই অবস্থায় নিজেকে একদম নেগলেট করবে নানিয়ম করে ওষুধ খাবে বুঝেছো? আর ডাক্তারের কথার একদম অমান্য করবে নাশরীর তাড়াতড়ি সুস্থ না হলে, আমাদের তখন কি হবে বলোতো? তুমি আমাকে কত চিন্তায় ফেলে দিয়েছো জানো?’
শুভেন্দুও ঠিক পাশেই বসে আছেদেখছে, বিদিশা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেহেসে বলল, ‘এই তো বিদিশা এসে গেছেতোর আর চিন্তা নেইতুই এমনি ভাল হয়ে যাবি।’
বিদিশাকে বলল, ‘শোন, তুই এই কদিন দেবের এখানেই থেকে যাদেবের আদর যত্ন করবিওকে সেবা শুশ্রসা করবিওর শরীর সুস্থ হওয়াটা দরকারসামনেই অ্যানুয়াল ফাংশন আছে না।’
বিদিশা মুখ বেঁকিয়ে বলল, ‘গুলি মারো অ্যানুয়াল ফাংশন।  এদিকে আমার বরটার শরীর খারাপআর সবাই ফাংশন নিয়ে পড়েছেআগে ওর শরীর সুস্থ হবেতারপর ওসব ফাংশন নিয়ে কথা।’
বিদিশা আমার চুলে হাত বোলাতে বোলাতে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে হঠাৎআবেগ অনুভূতি নয়দেখছি, আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার কানের কাছে মুখটা নিয়ে এসে বলছে, ‘তুমি সুস্থ হয়ে যাও গোভগবান, তুমি আমার বরটাকে সুস্থ করে দাওসুস্থ করে দাও ভগবানপ্লীজ প্লীজ
শুভেন্দু হাঁ করে বসে দেখছে বিদিশার কান্ডপরে আমাকে খুব সিরিয়াসলি একদিন বলেছিল। ‘দেব সত্যিকারের ভালবাসা মানুষ বোধহয় একবারই বাসতে পারেগভীর ভালবাসার সত্যি কি কোন বিকল্প হয়? যে সব মানুষ উদভ্রান্তের মতন বারে বারে প্রেমে পড়েন, দুর্বিবাকের মতন প্রেম যাদের জীবনে বারে বারে আসেসত্যিকারের মহান প্রেমিক তাদেরকে বলা যায় কি? তোকে আর বিদিশাকে দেখে মনে হয়, সত্যি তোরা জীবনে আর কাউকে কোনদিন ভালবাসতে পারবি নাতোদের এই মহান প্রেমের জয় হোক
আমি সেদিন জানতাম নাপ্রেম হল মানুষের জীবনে এক বজ্রপাতএই প্রেমের বজ্রপাত একবার ঘটলে হৃদয়ভূমির সবকিছুই জ্বলে পুড়ে নিঃশ্বেস হয়ে যেতে পারেআর যেটুকু অবশিষ্ট থাকে তাতে আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখার বা নতুন করে প্রেমতরু অঙ্কুরিত হয়ে ওঠার কোনো অবকাশ থাকে না
 আমি মানুষটা এমন নইযে জীবনে বহুবার কোন না কোন নারীর প্রেমে পড়তে পারি আর প্রতিবারই মনপ্রাণ ঢেলে তাকে বিদিশার মতন ভালবাসতে পারিএই বিদিশাই আমার জীবনে প্রথম ও শেষ প্রেমআমার জীবনে দ্বিতীয় প্রেম আসা তাই অসম্ভব
সবাই যেটা মনে প্রাণে চেয়েছিল, চেয়েছিলাম আমিও অন্ততসেটা কিছুতেই সফল হল নাশুভেন্দুকে বলেছিলাম, ‘আমার যখন যখন পঞ্চাশ বছর বয়স পেরিয়ে যাবে, তখনও দেখবি বিদিশার সাথে আমার প্রেম অটুট থাকবেও এমনি করেই আমাকে ভালবাসবে।’
হেসেছিল শুভেন্দুআমাকে বলেছিল, ‘ভগবান করুক, তাই যেন হয়এমন প্রেম জীবনে আসা মানে সেটা স্বপ্ন সমানপঞ্চাশ বছর পরেও এক গভীর ও জীবন্ত প্রেমের মাঝে ডুবে থাকা যে সৌভাগ্যের কথাএমন প্রেমের পূজো যে করতে পারে, তার জীবন যে কি সুখের আর আনন্দের হয়, তা তো বলাই বাহুল্যতোদের এই অমর প্রেমের জয় হোক।’
 
শুয়ে শুয়ে এতক্ষণ ধরে পুরোনো কথাগুলো চিন্তা করছিলামমা বললো, ‘আবার তুই পুরোনো কথা ভাবছিস, আর মনকে কষ্ট দিচ্ছিস? বললাম না শুভেন্দু একটু পরেই এসে পড়বেঅত কি চিন্তা করছিস?’
আমি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললামমাকে বললাম, ‘মা শুভেন্দু আসবে বলেছেখবর পেয়ে বিদিশাও আসবেআমার মন তাই বলছেতুমি দেখে নিও।’
জানি এগুলো আমার মনের আশা ছাড়া কিছুই নয়বিদিশাকে এখনও ভালবাসি, তাই ভাবি বিদিশা বোধহয় আমার শরীর খারাপের খবর শুনলেই আসবে।  দৌড়ে আসবেব্যাকুল হয়ে ছুটে আসবেতারপর এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরবেহয়তো বুকে মুখ গুঁজে কিছুক্ষণ ধরে একনাগাড়ে কেঁদে কেটেও ভাসাতে পারে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে, বুকেও বোলাবে, আমার কষ্ট দেখলে হয়তো ওর মন ভেঙে যেতে পারেকি জানি, প্রেমিকার আদর পেলে নাকি যন্ত্রণার অনেক উপশম হয়ে যায়আমি যদি বিদিশাকে পেতামকি ভালই হতআমার এই বাজে রোগটা হয়তো কবেই সেরে যেতএকটা সুখের সংসার গড়ে আমরা এতদিনে মিষ্টার এন্ড মিসেসযেন একটা হ্যাপি কাপলতা না কোথায় কিছু না, সব যেন তার ছিড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল আমার এত কষ্টের মধ্যেও আমি বিদিশাকে পাচ্ছি না ভীষন কষ্ট হচ্ছে যেন কষ্ট আরো বেড়ে যাচ্ছে আচ্ছা ওষুধে আমার শরীরটা ঠিক হয়ে যাবে তো? না আমার বিদিশাকেই চাই ও না এলে মনে হয় কিছুই ঠিক হবে না
 
মা ঘর থেকে বেরিয়ে গেছিলহঠাৎ ঘরে ঢুকে দেখল, আমার চোখে জলকাছে এসে আমায় বলল, ‘দেব তুই কাঁদছিস? এ কি রে?’
তাড়াতাড়ি হাত দিয়ে চোখটা মুছে বললাম, ‘কোথায় কাঁদছি? না না ও তুমি ভুল দেখেছো।’
আমি জানি, হঠাৎ মনের কষ্টের কথা চিন্তা করলেই চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে যায়চোখের সাথে মনের একটা যোগসাজস আছেমন তার ভেতরের কষ্টটা অনুভব করে কিন্তু প্রকাশ করতে পারে নাসেটা প্রস্ফুটিত হয় অশ্রুধারার মাধ্যমে
মায়ের কথা শুনে মনে হল, সত্যি তাই বড্ড কষ্ট দিচ্ছি নিজেকে একটু পরেই সবাই হয়তো এক এক করে এসে পড়বে এই ছোট্ট ফাঁকা ঘরটাই তখন ওদের আগমনে গমগম করে উঠবে একটার পর একটা হাসির কথা তুলে শুভেন্দু যেভাবে পেটে ব্যাথা ধরিয়ে দেয়, আমারো পেটে খিল ধরে যাবে।  কান্না নয়, হাসি চেপে রাখতে না পেরে আমি নিজেই হয়তো তখন অবাক হয়ে যাবদূঃখের স্মৃতি থাকবে না আর পেছনে কে বলতে পারে, তারপরেই বিদিশা এসে হয়তো আমাকে নতুন করে আবার স্বপ্ন দেখাবে
 মা আমার মাথার কাছে বসে, চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, ‘শুভেন্দুকে আবার ফোন করে দেখবো? আসতে বলব তাড়াতাড়ি? ও এলে তোর মন ভাল হয়ে যাবে
আমি বললাম, ‘না মা, তার দরকার নেইও তুমি ফোন না করলেও আসবেআমার জন্য ব্যস্ত হয়ো নাবলে নিজেই একটু হাসলামমা বলল, ‘জানিস, শুভেন্দু আমাকে কি বলেছে?’
চুপ করে শুয়ে শুয়ে শুনছি মায়ের কথামা বলল, ‘কালরাতে শুভেন্দু চুপচাপ বসেছিল অনেক্ষণ ডাক্তার তখন চলে গেছেআমি ঘরে ঢুকে দেখি, ও চেয়ারে বসে ঢুলছে।  বললাম, বাড়ী যাবে না শুভেন্দু? আর তো বিপদ নেইডাক্তার ঘুম পাড়ানির ওষুধ দিয়ে গেছেদেব এখন অনেক্ষণ ঘুমোবেতুমি বরং বাড়ী যাওঅনেক কষ্ট করে এসেছো।’
শুভেন্দু বলল, ‘জানেন, মাসীমা, আমি খুব একটা রাত জাগতে পারিনাআসলে সারাদিন ব্যবসার নানান ঝেমেলায় ব্যস্ত থাকিদেবের মত অত আমার রাত জাগার অভ্যেস নেইতবে যদি কোনদিন এমন হয়, আমার এই প্রিয় বন্ধুটির জন্য আমাকে রাতের পর রাত জাগতে হচ্ছে আমি জাগবোকষ্ট হলেও জাগবোদেবের জন্য আমার জান হাজির।’ তারপরেই মা বলল, ‘কি ভাল ছেলে রে।’
আমি হাসলাম, বললাম, শুভেন্দু আমার জন্য পাগলও আমাকে খুব ভালবাসে তাই বলেছে।’
মা বলল, ‘আর তুই কার জন্য পাগল? বিদিশার জন্য?’
আমি এবার হাসব না কাঁদবো তাই ভাবছিপ্রসঙ্গটা ঘুরিয়ে মাকে বললাম, ‘মা, শুক্লা কি বলল? আসছে?
মা বলল, ‘ওতো ফোনে আমাকে পুরো কথাটাই বলতে দিল নাতার আগেই বলে বসল, মাসীমা আর বলতে হবে নাআমি বুঝে নিয়েছি দেবের কি হয়েছেআমি এখুনি আসছিওখানে গিয়ে বাকীটা শুনবো।’ দেখ হয়তো এখুনি এসে পড়ল বলে
মনে মনে ভাবলাম, শুক্লাও এখুনি আসবেআর শুভেন্দুও হয়তো এসে পড়বেদুজনে দুজনকে ভূত দেখার মত না দেখলেও শুভেন্দুর তো কিছুটা অস্বস্তি হবেইকারণ শুক্লা যে আমার প্রতি একটু দূর্বলতা দেখিয়েছে সেটা শুভেন্দু ধরে ফেলেছেকিন্তু শুভেন্দু তারপরের ঘটনাটা জানে নাশুক্লা মেনে নিয়েছে, বন্ধুত্ব কখনো ভালবাসায় পরিণত হতে পারে নাহার জিতের খেলা নয়একে অপরের মনকে বোঝার মতন দৃঢ় মানসিকতাবন্ধুত্বের মান রেখেছে শুক্লানিজেকেও ছোট করেনি, আর আমার ভালবাসাকেও খাটো করেনি
মাকে বললাম, ‘মা এরা সব এক এক করে আসবে, তোমার কষ্ট হবে না তো?’
মা বলল, কিসের কষ্ট?
আমি বললাম, ‘তুমি কিন্তু দফায় দফায় চা করা, ওদের আতিথেয়তা করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়াএসব একদম করবে না কিন্তুসবাই সুবিধে অসুবিধের কথাটা বোঝেএরা সবাই আমার খুব ভাল বন্ধু।’
মা বলল, ‘তুই এবার বিয়েটা করে ফেল, আর আমায় ছুটী দিয়ে দে তাহলে আমি আর ব্যস্ত হবো না কেউ এলে তাকে খাতির যত্নও করতে আসবো না সব তোর ওই বউই তখন করবে
মনে ননে ভাবলাম, সত্যি কি জ্বালাসব মায়েরাই ভাবে, ছেলের বউ একটু মনের মতন হবেসব দায়িত্ব একাই কাঁধে তুলে নেবেসংসার সুখের হবে রমনীর গুনেকিন্তু আজকালকার মেয়েরা এখন আর এরকম কই? যদি বিদিশার সাথে সত্যি আমার বিয়েটা হততাহলে অবশ্য-
[+] 1 user Likes Lekhak is back's post
Like Reply
#76
কলিং বেলটা বাজছেমা বলল, ‘ওই এল বোধহয় কেউ।’
তলপেটের কাছটায় হাত দিয়ে অল্প একটু টিপে দেখলাম, ব্যাথাটা এখন বেশ কমডাক্তারের ওষুধ কাজ করতে আরম্ভ করে দিয়েছে
 

তেরো
 
শুভেন্দু ঘরে ঢুকেছে দেখলাম, বেশ খুশি খুশি ভাব আমাকে বলল, ‘একেই বলে অন্তরের টান যেই বললাম, অমনি ভেতর থেকে টানটা বেরিয়ে এল অটোমেটিক কি ফার্স্ট রেসপনসযেন এখুনি ছুটে চলে আসবে তোর কাছে।’
আমি বললাম, ‘কার কথা বলছিস তুই?’
শুভেন্দু বলল, ‘একজনই তো আছে গুরুআমরা সব ওর কাছে নস্যি।’
আমি বললাম, মানে? কে সে?
শুভেন্দু বলল, তোমার জন্ম জন্মান্তরের সঙ্গিনীশুধু এ জন্মে নয়, পরজন্মেও যে অলরেডি খাতায় নাম লিখিয়ে রেখেছে তোমার জন্য।’
আমি বললাম, ‘কে বিদিশা?’
শুভেন্দু একটু চেঁচিয়ে উঠে বলল, ইয়েশতোমার ডারলিংতোমার প্রাণেশ্বরী।’
আমি বললাম, বিদিশাকে তুই ফোন করেছিলিস?
শুভেন্দু বলল, ‘ওকে ফোন না করলে কি হত জানিস?’
আমি বললাম, কি?
শুভেন্দু বলল, ‘তুই এই পাংশুমতন মুখখানা নিয়ে আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকতিস, আর থেকে থেকে একবার করে বলে উঠতিস, বিদিশা ও বিদিশাকোথায় তুমি?’
আমি হেসে বললাম, ‘যা মেলা বাজে বকিস না।’
শুভেন্দু হেসে বলল, ‘শালাতুই কালকেও যা রকম দেখিয়েছিস, ডাক্তারও তাজ্জব হয়ে গেছে তোকে দেখে।’
মনে পড়ল ডাক্তারের কথাউনিও আমাকে বলেছেন, কাল ওই অবস্থার মধ্যেও আমি নাকি বিড়বিড় করে বিদিশার নাম অনেকবার উচ্চারণ করেছি
শুভেন্দু বলল, ‘তবে তোকে হ্যাটস অফ অনেক তপস্যা করে তোর মত স্বামী আর প্রেমিক পাওয়া যায় রেব্যাচারা বিদিশাএই সামান্য জিনিষটাই বুঝলো নাঅসামান্য একটা লোককে অতিসামান্য করে ছেড়ে দিয়ে নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনলো।’
আমি বললাম, ‘ছাড়, যা হয়েছে, হয়েছেও আর কি করা যাবে? তবে তুই যে ফোনটা করবি, আমি জানতামতারপরেই আবার ভাবছিলাম, মানসিক কষ্টে আছে মেয়েটাওকে দোষ দিয়েই বা কি করবো? আইনকে অবজ্ঞা করে তো আর কিছু করা যায় নাকিছু সময় তো লাগবেই।’
শুভেন্দু বলল, ‘শোনো বৎসআইন যেমন আছে, আইনের ফাঁকও আছেযতদিন ডিভোর্সটা না হচ্ছে, বিয়ে হয়তো করতে পারবি নাকিন্তু প্রেমটা করতে অসুবিধে কোথায়?’
 আমি বললাম, ‘কথাটা তো ঠিকতাহলে এত টেনশন কিসের? বিদিশাকে কি কোন ভয় পাচ্ছে? না কি ওর স্বামী সত্যি ওকে বলেছে ডিভোর্স দেবে না।’
শুভেন্দু বলল, ‘কিছু একটা ব্যাপার আছে, বুঝছিস দেববিদিশা ওটা খোলসা করে বলছে নাওর পেট থেকে কথাটা বার করতে হবেহয়তো কোন দোটনায় পড়ে আছে ব্যাচারা।’
‘দোটনায়?’ আমি একটু চিন্তিত হয়ে পড়লাম
শুভেন্দু বলল, ‘এই দ্যাখ, তোর আবার টেনশন শুরু হয়ে গেলনা, তোকে কথাটা না বললেই ভাল হতএক কাজ করবিদিশা আসছে, তুই ওকেই বরং পরিষ্কার করে সব জিজ্ঞেস করে নিস।’
আমি বললাম, ‘বিদিশা আসছে?
শুভেন্দু বলল, ‘না এসে পারে? আমার দেবের মুখে হাসি ফোটাতে আসছে।’
কানের কাছে মুখটা নিয়ে এসে শুভেন্দু আস্তে আস্তে বলল, ‘এই মাসীমাকে কিছু বলিস নি তো? বিদিশা কিন্তু আমাকে জিজ্ঞাসা করছিল।’
আমি বললাম, ‘কোনটা?’
‘আরে ওর ডিভার্স যে এখনো হয় নি, সেই ব্যাপারটা।’
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুভেন্দুকে বললাম, ‘মা’র সাথে এ ব্যাপারে কোন কথাই হয় নি আমারকেন বিদিশা কি এখনও আমার মনটাকে বুঝতে পারে নাআমাকে বিশ্বাস করতে পারে না?’
হঠাৎ ভ্যাবাচাকা খেয়ে নিজেই থমকে গেল শুভেন্দুআমাকে বলল, ‘আর কত পরীক্ষা দিবি? পরীক্ষারও তো একটা শেষ আছেতোর মত কেউ নয়সেটা যদি বিদিশা বুঝত, তাহলে হয়তো- বলে নিজেই মাথাটা নিচু করে নিল শুভেন্দু
আমি বললাম, ‘বিদিশা মাথা উঁচু করে এ বাড়ীতে আসবেওকে কেউ আমরা খারাপ চোখে দেখব নাআমিও নামাও নয়।’
শুভেন্দু বলল, মাসীমা কিছু বলছিল?
- ‘কি ব্যাপারে?’
- ‘বিদিশার কথাবলেনি মাসীমা? তোকে কিছু জিজ্ঞাসা করে নি?’
আমি বললাম, ‘মা তো আমার্, আমারই মতন আমি যেমন ছটফট করে উঠিমায়ের মনটাও খুব নরমমাঝে মাঝে একই সুরে গেয়ে ওঠেকাল থেকে অনেকবারই বিদিশার কথা বলেছেবিদিশা আসবে কিনা? অন্তত আমার শরীর খারাপের খবর জেনেও আসবে কিনা? পারলে মা হয়তো নিজেই ফোন করে বসতো বিদিশাকে। ‘কি গো বিদিশা? দেবের শরীর খারাপতুমি আসবে না?’
শুভেন্দু বলল, ‘কি অদ্ভূত না? তোর সাথে বিয়েটা তখন বিদিশার হয়ে গেলে বিদিশাও আর একটা মা পেয়ে যেত তোর মতনআমি সেইদিনটার জন্য শুধু অপেক্ষা করছি।’
 
 বলতে বলতে মা’ ঢুকলো ঘরেশুভেন্দুর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কি শুভেন্দু চা খাবে? চা করে দেবো?’
বলেই আমার দিকে তাকালো মাআমাকে বলল, ‘এই তুই রাগ দেখাবি নাসবাই আর শুভেন্দু এক নয়কাল তোর জন্য ও কত খেটেছে বলতো?’
শুভেন্দু যেন কিছুই বুঝতে পারেনি আমার আর মায়ের মুখের দিকে দুএকবার মুখ চাওয়া চাওয়ি করে বলল, ‘কি হয়েছে মাসীমা? ও রাগ দেখাবে কেন?’
আমিও হাসি তখন চেপে রাখতে পারছি নামা বলল, ‘ছেলের আমার মায়ের জন্য খুব দরদআজকে সবাই এক এক করে আসবেআগে ভাগে তাই আমাকে শাঁসিয়ে রেখেছেতুমি কিন্তু সবাইকে নিয়ে এত ব্যস্ত হয়ে পড়বে নাতোমার আবার তাহলে দারুন খাটাখাটনি হবে।’
শুভেন্দু বলল, ‘ঠিকই তো বলেছেআপনি অত ব্যস্ত হবেন না তো।  আজ এখানে কারুর খাতির নেইযে যে আসবে সব বাড়ী থেকে খেয়ে দেয়েই আসবেচা, জলখাবার মিষ্টি ওসবের কোন দরকার নেই।’
মা বলল, ‘তুমিও আমার ছেলের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছো? আরে ওটুকু করলে কি এমন কষ্ট হয়? ওতে আমার কোন খাটনি নেই।’
আমি বললাম, ‘যাও যাও চা করে নিয়ে এসোশুভেন্দুর জন্য স্পেশাল চাবাকীদের জন্য কোন খাতির নেইশুধু আমার এই বন্ধুটির জন্য তোমাকে ছাড় দিলাম।’
মা মুখ ভেঙিয়ে চলে গেলআমাকে বলল, ‘তুই বললেই বা শুনছে কে?’
শুভেন্দু তখন হাসছেআমিও হাসছিআমার মুখের কাছে মুখটা নিয়ে এসে শুভেন্দু বলল, ‘আজ কিন্তু দারুন জমবে।’
আমি বললাম, ‘বিদিশা আসছে, তাই?’
শুভেন্দু বলল, ‘জীবনের বাকী কটা দিন যদি সুখে কাটাতে চাস, তাহলে বিদিশার আসাটা সত্যিই দরকারআমি তো তাই মনে করি, তোর ভালবাসা যেখানে এখনো স্বচ্ছ, সেটা যদি শেষবারের মতন বিদিশা উপলব্ধি করতে পারে, তারজন্যই বিদিশার আসাটা নিতান্তই দরকারঅসুখের ঘোরে তুই শুধু বিড় বিড় করে যাবি, আর বিদিশা বিদিশা বলে পাগল হবিআমাদেরও মাথাটা খারাপ হওয়ার আগে বিদিশার আসাটা একান্তই দরকারপ্রেমের রাজ্যে আমার তো মনে হয়, এমন কোন জায়গা নেই যেখানে বিদিশা নিশ্চিত আশ্রয় লাভ করতে পারেএমন একটা নীড়যেখানে মনের মতন একটা স্বামী আর মনের মতন একটা শ্বাশুড়িউফঃ এটা বোঝার জন্যও ওর একবার আসাটা খুবই দরকারআর আমরা কি কেউ ওর এই বিপদে ওর পাশে নেই? এটা যেন ও কোনদিন না ভাবে, তারজন্যও ওর আসাটা দরকারআর সব শেষে, তুই এখন শয্যাশায়ীবিদিশা যদি না আসে তাহলে বাকীরা এসে শুধু কি করবে? সেটাও তুই বলসেইজন্যই-
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ হ্যাঁবুঝেছি ওর আসাটা দরকারওফ তুই পারিস।’
শুভেন্দু হাসছেমা চা নিয়ে ঢুকেছে ঘরেবলল, ‘নিচে একটা ট্যাক্সি এসে দাঁড়ালমনে হল শুক্লা এসেছে মনে হয়।’
[+] 1 user Likes Lekhak is back's post
Like Reply
#77
চমকে না উঠলেও বেশ অবাক হয়েছে শুভেন্দুআমাকে বলল, ‘শুক্লা? তোর শরীর খারাপের খবর পেয়ে এসেছে, না এমনি এসেছে?’
আমি শুয়ে শুয়েই বললাম, ‘তুই যেটা ভেবেছিলিস, ওটা নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা আর নেইশুক্লার মনটা তো ভাল, মায়ের কাছে শরীরে খারাপের খবর শুনেছে, তাই এখানে এসেছে।’
শুভেন্দু যেন তাও একটু চিন্তার মধ্যে রয়ে গেলএকটু পরেই ঘরে ঢুকল শুক্লামেন দরজাটা মা খুলে দিয়েছেঘরে ঢুকেই বলল, ‘আজকে আর অফিস গেলাম নাতোর জন্য ছুটে এলামকি আবার বাঁধিয়ে বসলি? এটা কি সেই পুরোন রোগটা?’
আমি শুয়ে শুয়েই ঘাড় নেড়ে ওকে বললাম, হ্যাঁশুক্লা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল শুভেন্দুকেচেয়ারটায় বসে আছেওকে বলল, কি রে শুভেন্দু? তুই? কখন এসেছিস?
শুভেন্দু বলল, ‘আমি তো কাল রাত থেকেই আছিদেবের পাশে, ওর মাথার কাছেএটাই আমার ঘরবাড়ীতুই জানিস না?’
শুক্লা আমার মাথার কাছটা বসেছেআমার মাথায় হাত দিতে যাচ্ছিলশুভেন্দু হাঁ করে দেখছিলশুক্লা বলল, ‘গায়ে জ্বরটর নেই তো?’
আমি বললাম, ‘না এ রোগে জ্বর হয় নাশুধু পেটে ব্যাথা হয়।’
শুভেন্দু ফোড়ণ কেটে বলল, ‘তার সাথে মনের ব্যাথাটাও জড়িয়ে আছেওটাও যোগ করে নে।’
শুক্লা যেন কিছুই বোঝেনি, শুভেন্দুর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কেন? দেবের তো এখন খুশী হওয়ার কথামনের ব্যাথা হবে কেন?’
আমি শুভেন্দুকে ইশারা করলামবিদিশার ব্যাপারে শুক্লাকে কিছু না বলতেশুভেন্দুও চেপে গেলশুধু বলল, সবই তো ঠিক ঠাক আছেঅথচ দেবের মনের কষ্টটা কিছুতেই ধরতে পারছি নাশুক্লা কি করা যায় বল তো? রহস্যটা কি? ঠিক ক্লিয়ার হচ্ছে না।’
শুক্লা বলল, ‘তাই তো।’ তারপর আমাকে বলল, ‘তুই শুধু শুধু খালি টেনশন করে মরিসদেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।’
মা ঘরে ঢুকেছে সেই সময়শুক্লা এসে গেছে দেখে বলল, ‘তাহলে দু’কাপ চা করে নিয়ে আসিশুক্লা আর শুভেন্দুর জন্য।’
আমি বললাম, তুমি বরং আর একটু অপেক্ষা করে যাওএরপরে আবার কেউ এসে পড়বে, তখন আবার তোমাকে ডবল করে খাটতে হবে।’
শুভেন্দু কথাটা বুঝতে পেরে মুচকি মুচকি হাসছেমা বলল, ‘এই তুই অত ছটফট করিস না তোকেউ এলে ওটা আমি বুঝে নেব।’
শুক্লা বলল, ‘মাসীমা, আমি কিন্তু চা খাব নাএই বাড়ী থেকে খেয়ে বেরিয়েছিআর আপনি অত ব্যস্ত হবেন নাপারলে শুভেন্দুর জন্য এক কাপ করে দিন।’
 শুভেন্দু বলল, ‘চা তো আমি খাবইচা হল গিয়ে যা হতে নাহিক মাদকতা দোষ, কিন্তু পান করে চিত্ত পরিতোষ।’

আমি হাসি চেপে বললাম, ‘কি বললি কথাটা আর একবার বল।’

শুভেন্দু বলল, অনেক কষ্ট করে একবার বলেছিবার বার বলতে পারব না।’ বলে ও নিজেই হেসে ফেলল

শুক্লা বলল, ‘বেশ তো ভালই ছিলিহঠাৎ রোগটা বাঁধালি কি করে?’

আমি বললাম, ‘কি জানি হঠাৎ।’

শুক্লা বলল, ‘আমার ওখান থেকে ফেরার পরে?’

আমি যেই হ্যাঁ বলতে যাবদেখলাম শুভেন্দু বেশ অবাক হয়ে আমাকে আর শুক্লাকে দেখছেএর মধ্যে শুক্লার বাড়ীতে যে গিয়েছিলামশুভেন্দুকে সেটা বলা হয় নি

পরক্ষণেই খুব সহজ হয়ে ও বলল, ‘নতুন ফ্ল্যাটে বুঝি?’

শুক্লা বলল, ‘নতুন ফ্ল্যাট আর কোথায়? তাও তো অনেকদিন হয়ে গেলতোরা তো কেউ আর গেলি নাআমি তাই দেবকেই বলে দেখলাম, যদি ও যায়কিন্তু-’

শুভেন্দু বলল, কি কিন্তু?

- ওখান থেকে আসার পরেই ওর যে এমন দশা হবে, আমি ভাবতেও পারিনিকি যে একটা রোগশরীর থেকে পুরোপুরি যায় নাথেকে থেকেই এসে হাজির হয়।’

আমি বললাম, ‘মাঝে মাঝে শরীর খারাপটা হওয়াটা ভালএই তোরা কেমন এসেছিস, গল্প করছিসভাল লাগছে।’

শুক্লা বলল, ‘আমরা তো এমনিই আসতে পারিএরজন্য শরীর খারাপ হতে হবে কেন?’

শুভেন্দু বলল, ‘হ্যাঁ তুই ঠিক বলেছিসআসলে ওর মাথাটা একেবারে গ্যাছে।’ তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ওফ, দেব, তুই যে কি করবি, তোকে নিয়ে আমার বড় চিন্তা হচ্ছে।’

মনে মনে ভাবলাম, বিদিশা যদি এসে পড়ে, চিন্তাটা এক্ষুনি দূর হয়ে যাবে

মা ঘরে ঢুকল চা নিয়েশুভেন্দু হাত বাড়িয়ে মায়ের হাত থেকে চায়ের কাপটা নিলদেখি, মা শুক্লার জন্যও চা বানিয়ে নিয়ে এসেছেশুক্লা বলল, ‘মাসীমা আপনি সেই আমার জন্য চা করলেন?’

মা হাসলবলল, ‘একবার তো খেয়েছআর একবার খেলে কিছু হবে নাআমি তো বাড়ীতে কেউ এলেই চা বানাইছেলেও আমার চা বেশি খায় নাআর আমারও অত অভ্যেস নেই।’

শুক্লার হাতে আর একটা চায়ের কাপ ধরিয়ে মা পাশের ঘরে চলে গেলশুক্লা বলল, ‘ইস মাসীমা কত ভালঠিক আমার মায়ের মতনআজ মা নেইঅভাবটা খুব অনুভব করছি।’

শুক্লার মুখটা খুব করুনশুভেন্দুও দেখছে, চায়ের কাপে মুখ দিচ্ছে শুক্লা, কিন্তু মুখে কোন কথা নেইহঠাৎই মায়ের স্মৃতিতে বিভোর হয়ে পড়েছে শুক্লা

- ‘শুক্লা! এতদিন বাদে তোর সাথে দেখা হলখবর কি বল?’ হঠাৎই শুভেন্দুর জোরালো স্বরে যেন হোশ ফিরল শুক্লার
 - ‘আমার আর খবর কিএই আছি, চলে যাচ্ছেসারাদিনের অফিস, তারপর বাড়ী গিয়ে একটু বিশ্রামমা বাবা এখন নেইএকা একা একটা মেয়ে, যেরকম থাকেসেই আর কি।’

শুভেন্দু বলল, ‘এই এক অসুবিধে আমাদের তো জয়েন্ট ফ্যামিলিবাড়ী ভর্তি লোক গমগম করছেঅভাবটা বোধ হয় নাতাই তোরটা খুব ফিল করিমাসীমা মেশোমশাই দুজনেই চলে যাওয়াটা খুব কষ্টেরবাবা মা যার নেই, সে বোঝে কষ্টটা।’

শুক্লা বলল, ‘এই মাধুরী কেমন আছে রে?  আর রনি ওই পাজীটা।’

শুভেন্দু বলল, ‘ভালই আছেছেলে হয়েছে একটানাম রেখেছে ‘দেবমাল্য।’

শুক্লা বলল, ‘তাই? দেব নামটা এখানেও জায়গা পেয়েছে তাহলেভাল ভাল।’

শুভেন্দু চা খাচ্ছ, শুক্লাও খাচ্ছেচা খেতে খেতে শুক্লা এবার বলল, ‘তা তুই বিয়েটা করছিস না কেন? হাভাতের মতন এরকম কদ্দিন থাকবি?’

শুভেন্দু বলল, ‘শোন, আমার বউ না থাকলে কি হবে, আমার তিন তিনটে বৌদি বৌদিদের সাথে এত ভাল সময় কেটে যায় যে বউ এর অভাবটা আর ফিল করি না।’

- যাঃ অসভ্য।’ শুক্লা একটা ধ্যাতানি দিল শুভেন্দুকে

আমি কোন কথা বলছি না শুয়ে শুয়ে শুধু রকমটা দেখছি হাসি এসে গেল বেশ জোরে হেসে উঠলাম শুভেন্দু বলল, ‘এই এই দেব হাসিস না আবার নয়তো পেটে ব্যাথা উঠে যাবে

চা খেয়ে শুক্লা বলল, ‘আমার একটা চিন্তা হচ্ছিলকি জানি কি হল আবারএখন অনেক চিন্তামুক্ত লাগছে।’

আমি বললাম, ‘বাড়াবাড়িটা কাল রাতেই খুব হয়েছিলশুভেন্দু না এলে খুব মুশকিলে পড়ে যেত মাআমার তখন কোন জ্ঞান নেইমেঝেতে পড়েপুরো সেন্সলেস

শুক্লা চোখ বড় বড় করে বলল, ‘তাই?’

আমি বললাম, হ্যাঁতারপরেই তো শুভেন্দু এল মা’র ফোন পেয়েডাক্তারও এল ওষুধ দেবার পর ডেঞ্জার সিচুয়েশনটা কেটে গেছে

শুক্লা বলল, ‘সেই কলেজে পড়ার সময়ও তোর একবার বাড়াবাড়ি হয়েছিল না? সেবার সেই ফাংশনের ঠিক আগেই

আমি বললাম, ‘হ্যাঁ যখন যখন এই রোগটা শরীরে অ্যাটাক করেছে, আগে পিছে সব ঘটনাই আমার মনে আছে

শুভেন্দু হাত ঘড়িটা দেখছে বুঝলাম, ও বোধহয় বিদিশার আসার টাইমটা মিলিয়ে দেখে নিচ্ছে, কতক্ষণ আর বাকী আছে ওর আসতে

শুক্লা বলল, ‘কিরে? তাড়া আছে নাকি তোর? ঘড়ি দেখছিস?’

শুভেন্দু বলল, ‘বিদিশা আসছে বলেছিল একঘন্টা পরেই আসবে ঘড়িতে তাই দেখছি, একঘন্টা হয়েছে কি না?’
 
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#78
এই প্রথম শুক্লার মুখের অভিব্যক্তিটা দেখে বুঝলাম, বিদিশার নামটা শুনে একবারও ওর মনের মধ্যে কোন রাগ নেইহতাশা বা কষ্ট মানসিক কোন দ্বন্দ, সবকিছু মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে হাসি মুখে ও বলল, ‘বিদিশা আসছে? বাঃ এটাই তো চেয়েছিলাম এই একটা কাজের মতন কাজ করেছিস তুই
শুভেন্দু বলল, ‘আমি আর কি করলাম? বুঝছিস না? একটা মেয়ে কতদিন বাদে ফিরে এলকার টানে? ওই যে লোকটা, যার মাথার কাছে তুই বসে আছিসইতিহাস যদি কেউ বদলাতে পারে, তাহলে দেবই ওটা করে দেখিয়েছেএরজন্য দেবের প্রশংসা প্রাপ্য।’
আমি বললাম, ‘কি আজেবাজে বকছিস? আমি আর কি করলাম? সবকিছু সময়ের ওপর নির্ভর করেতখন আমার সময়টা খারাপ ছিলএখন হয়তো-’
শুক্লা বলল, ‘পৃথিবীটা তো গোল তাই ঘুরে ফিরে আমরা সবাই আবার একজায়গায়আর বিদিশা তো আসবেইকারণ দেব তো কোন অন্যায় করেনি।’
 
আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন একটা কম্পন অনুভূত হচ্ছেভাবছি, কত সহজ ভাবে কথাগুলো বলে দিল শুক্লাকিন্তু ও কি পারবে চোখের সামনে ভালবাসাটা ছাই হয়ে যেতে দেখতে শুক্লার তো কেউ নেই, আমার তবু বিদিশা আছে এখনো একটা আশার আলো নিয়ে ঘরের মধ্যে বিদিশা যদি আমাকে সেই আগের আমাকে মতন জড়িয়ে ধরে, শুক্লা কি পারবে, দাঁতে দাঁত চেপে ওর হারটাকে স্বীকার করে নিতেখুব কাছ থেকে আমি দুই নারীকে দেখেছিহঠাৎ যদি শুক্লাও আমাকে জড়িয়ে ধরে, আমি কিছু মনে করবো নাকারণ আমি জানি ওই জড়ানোর মধ্যে কোন অনুভূতি নেইউষ্ণতা নেইএক বন্ধু তার বন্ধুকে জড়িয়ে ধরছে, তার গাল টিপে দিচ্ছে, খুনসুটি করছে, ওতে কোন আবেগ আসে নাকিন্তু প্রেম হল সূর্যের আলোর মত উজ্জ্বলউত্তপ্ত প্রেম যখন শরীরে প্রবেশ করে তখন তাকে উন্মুখ করে তোলেএই শুক্লা একটু আগেই আমার কপালে একবার হাত ঠেকিয়েছে, কিন্তু আমার কোন অনুভূতি হয় নিকিন্তু হাতটা যদি শুক্লার না হয়ে বিদিশার হতআমার কপালটা তখন আর কপাল থাকত নাবিদিশার ছোঁয়া পাওয়ার জন্য বারে বারে শুধু উন্মুখ হয়ে উঠতভালবাসা যেন আরাধনা হয়ে গেছেকথায় বলে পরাণে ভালবাসা কেন দিলে গো, তাহলে হয়তো এই পরাণটা আমার জ্বলত না
 
দেখলাম শুভেন্দু হঠাৎ মোবাইলের লাউড স্পীকারটা অন করেছেসেদিনকে কখন আমার গাওয়া গানগুলো মোবাইলে রেকর্ড করে নিয়েছে আমি টেরই পাইনিস্পীকারটা অন করে শুভেন্দু শোনাতে লাগল, গানটা
‘দেব মনে পড়ে? সবার শেষে তুই এই গানটা গেয়েছিলিস সেদিনবিদিশা ছিল।’
শুক্লা অবাক হয়ে শুনছেও জানে না, শুভেন্দুর বাড়ীতে বিদিশাও সেদিন এসেছিলআমি শুক্লাকে বলিনি
গানটা তখন মোবাইলে বাজছে,
 ‘তেরে মেরে সপনে আব এক রঙ্গ হ্যায়
ও জাহান ভী লে যায়ে রাহে, হাম সঙ্গ হ্যায়
ও তেরে মেরে সপনে-
মেরে তেরে দিলকা, তায় থা একদিন মিলনা
যেয়সে বাহার আনে পর, তায় হ্যায় ফুল না খিলনা
ও মেরে জীবন সাথী- তেরে মেরে সপনে-
তেরে দুখ অব মেরে, মেরে সুখ অব তেরে
তেরে ইয়ে দো ন্যায়না, চাঁদ অউর সুরজ মেরে
ও মেরে জীবন সাথী- তেরে মেরে সপনে!
লাখ মানালে দুনিয়া, সাথ না এ ছুটেগা
আ কে মেরে হাতো মে, হাত না এ ছুটেগা
ও মেরে জীবন সাথী- তেরে মেরে সপনে অব এক রঙ্গ হ্যায়।।
 
শুভেন্দু বলল, উফ কি গলা দেখেছিস দেবের এখনো সেই দরদ সেই মূর্চ্ছনা আমি যখন অফিসে যাই, তখনো এই গানটা চালিয়ে শুনি
শুক্লা বলল, ‘অসাধারণউফ, মন ভরে গেল।’
 
আসলে সেদিন সবশেষে, বিদিশার দূঃখ আর কান্নাটা ভোলাবার জন্যই এই গানটা গেয়েছিলামআমাদের স্বপ্নটা যেন আবার এক হয়ে যায়।  যত কষ্ট আর বাঁধাই আসুকআমরা আর আলাদা হবো নাকেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে নাহয়তো ওপরওয়ালা আগাম সেই পরিকল্পনাটাই করে রেখেছেনকে বলতে পারে?
 
 
চলবে-
Like Reply
#79
আপনার লেখা প্রশংসার ঊর্ধে।
পরবর্তী পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। 
Like Reply
#80
(05-07-2021, 02:48 PM)buddy12 Wrote: আপনার লেখা প্রশংসার ঊর্ধে।
পরবর্তী পর্বের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। 

অনেক ধন্যবাদ। নিশ্চই আপডেট দেবো।
Like Reply




Users browsing this thread: 1 Guest(s)