Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#41
মা বললো, ‘কি সমস্যা? সেটা যতক্ষণ না ও তোকে খুলে না বলছে, তুই কি করে তার সমাধান করবি? ওর যদি সমস্যাটা গুরুতর হয়, তাহলে ওর পক্ষে বলাটা অত সহজ নয়ও জেনেও তোকে বলবে নাআর যদি সমস্যাটা অল্পতেই সমাধান হয়ে যেতে পারে, তাহলে দেখ, আজই তোকে হয়তো বিদিশা ফোন করবে, সব খুলে বলবে।’
মায়ের কথা শুনে আমার মনে হলো, মা হয়তো ঠিকই বলছেকারণ বিদিশা কাল ট্যাক্সিতে আসতে আসতেও আমাকে ওর সমস্যাটার কথাটা সেভাবে কিছু খুলে বলেনিআমার কাছে আরো দু তিনদিন বিদিশা টাইম চেয়েছেএটা যদি গুরুতর কিছু সমস্যা না হত, তাহলেই হয়তো কালকেই বিদিশা সব খুলে বলতো।  কি জানি ভাগ্যে আমার কি লেখা আছে
মন খারাপ না করে এবারে আমি অফিসে বেরুবার জন্য তৈরী হতে শুরু করেদিলাম।  কাল থেকে কি সুন্দর উপন্যাসটা লিখতে শুরু করেছিলাম মনে হলো, কালকের এক ঝটকায় গল্পটা কেমন থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছেআগে কি লিখবো, এখন আর বুঝতে পারছি না যতক্ষণ বিদিশার রহস্যের উন্মোচন যতক্ষণ না হচ্ছে, আমাকে ঐ কলেজের পুরোনো স্মৃতিগুলোর কথা মনে করেই আরো কিছু পাতা ভরিয়ে যেতে হবেতাছাড়া আর কিছু লেখার নেই
সকালে যে শুভেন্দু একটা ফোন করবে, এটা জানাই ছিলোকিন্তু আমি আরো অবাক হলাম, যখন দেখলাম, শুক্লাও আমাকে পরপর চারটে মিস কল করেছে, সে জায়গায় শুভেন্দু করেছে একটাঅঘোরে ঘুমিয়েছিলাম, এতগুলো মোবাইলে মিস কল হয়েছে আমি টেরই পাইনি
শুভেন্দু একটা মেসেজ ছেড়েছে। ‘কাল বিদিশা তোকে কিছু বলেছে? জানতে খুব ইচ্ছে করছেফ্রি হলে আমাকে একটা ফোন করিস। -শুভেন্দু
অফিসের জন্য বাড়ী থেকে বেরিয়ে পড়েছিট্যাক্সিতে যেতে যেতে শুভেন্দুকে এবারে ফোনটা করলামদেখলাম, ওর ফোনটা বিজি বলছে, তার মানে কোনো ক্লায়েন্টের সাথে হয়তো কথা বলছে শুভেন্দুঠিক তার পাঁচ মিনিট পরেই শুভেন্দু ঘুরিয়ে ফোনটা করলো আমকে
আমাকে বললো, ‘কি ব্যাপার বলতো দেব? একটু আগে বিদিশা আমাকে ফোন করেছিলো, আমাকে বললো, সরি, ‘কাল তোদের মুডটা আমি খারাপ করেদিয়েছিলামআসলে ওই অবস্থায় আমার তখন কিছু করারও ছিলো নাদেবের কথা ভেবে আমার ভীষন কষ্ট হচ্ছিলোমনে হলো, দেবকে এভাবে ঠকানোটা বোধহয় ঠিক হচ্ছে নাতাই আমি মনে মনে একটা অন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিএই মূহূর্তে দেবের বাড়ীতে আমি আর যাচ্ছি না।’
 
বারবার বিদিশাকে ঘিরে মনের মধ্যে সেই একই হতাশা আর বিষন্নতাহঠাৎ বিদিশা কেন এমন আচরণ করছে? আমার জীবনটাকে নিয়ে ও কি শুধু খেলতেই চাইছে? আমাকে যদি সে নিজের মনে করে, তাহলে সত্যি কথাটা কেন খুলে বলছে নাকেন বলছে না দেব, আমি তোমার কাছেই আবার ফিরে আসতে চাইতুমি যদি আমাকে একটু সাহায্য করতেআমার এই বিপদে তুমি আমার পাশে দাঁড়াতেআমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতেতা না বলে-
শুভেন্দুর কথার উত্তরে আমি কি বলবো, কিছু ভেবে পেলাম নাও শুধু বললো, ‘কাল বাড়ী ফেরার সময় বিদিশা তোকে কিছু বলেনি? ও কেন হঠাৎ ও রকম হয়ে গেলোআমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।’
আমি বললাম, ‘সেতো আমিও বুঝতে পারছি না।  আর বিদিশাও সেভাবে আমাকে কিছু বলেনিশুধু আমার কাছে দুতিনদিন ও সময় চেয়েছেবললো, আমাকে ও আর ঠকাতে চায় না।’
শুভেন্দু বললো, ‘তুই জোর করলি না কেন? এত কিছু করেও বিদিশার সাথে তোর মিলনটা করিয়ে দিতে পারলাম নাআমার নিজেরই তো খুব খারাপ লাগছে।’
 শুভেন্দুকে বললাম, ‘মন খারাপ করিস না শুভেন্দুহয়তো দু তিনদিন পরেই অজানা কথাগুলো সব জানা হয়ে যাবেবিদিশার কিসে এত অসুবিধা হচ্ছে, সেটা আমি তুই দুজনেই তখন জানতে পারবো
জানি শুভেন্দু আমার মনকেও শান্তনা দেবেও নিজের থেকে আমার ব্যাপারে চিন্তা করে বেশীফোনে বললো, ‘দেব, নিজের মনকে একটু শক্ত করদু তিনদিন বেশী সময় নয়আশাকরি এ রহস্যের জট কাটবেবিদিশা আবার তোরই হবেতুই দেখে নিস, আমার মন তাই বলছে।’
অফিসে পৌঁছোলামনিজের রুমে বসে বিদিশার কথাই শুধু ভাবছিহঠাৎ ওর পুনরাগমনে নিজের মধ্যে একটা শক্তি ফিরে পেয়েছিলামমনে হচ্ছিল, সেই কলেজের দিনগুলোর মতই আবার আমার মধ্যে জীবনীশক্তির এতই প্রাচুর্য হঠাৎ যেন ভীষন লাফাতে ইচ্ছে করছে আমার নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে সবাইকে খুশীর খবরটা দিতে ইচ্ছে করছেঅফিসের সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতে ইচ্ছে করছেসবাইকে বলতে ইচ্ছে করছে, যেন যাকে আমি ভালোবাসতাম, সে ঠিক এতদিন বাদে আমার কাছেই ফিরে এসেছে আবার
বিদিশার আগমন, আমাকে সেই তরুন বয়সে ফিরে দিয়েছে কলেজের দিনগুলোর মতই আবার গাইতে ইচ্ছে করছে, নাচতে ইচ্ছে করছে, আনন্দ করতে ইচ্ছ করছে
আবার পরক্ষণে এটাও মনে হল, সেই উদ্দীপনা এসেও যেন আবার নিভে গেলো আমি যেন পরিশ্রান্ত হয়ে নিজের সিটের ওপরে শরীরটাকে এলিয়ে দিয়েছি নানা রকম চিন্তা আমার মনকে ঘিরে ধরছে নিজের জীবনটাকে মনে হচ্ছে একেবারে শূন্য এই পৃথিবীটাকে মনে হচ্ছে একটা মরুভুমি এই মূহূর্তে বিদিশার ছায়াটাকে আমি আমার রুমের মধ্যে দেখেছি।  ছায়াটা ধীরে ধীরে আমার কাছ থেকে ক্রমশ আবার দূরে সরে যাচ্ছেআমি স্থির থাকতে না পেরে, বিচলিত হয়ে রুমের মধ্যে পায়চারী শুরু করে দিয়েছি,এমন একটা কঠিন পরিস্থিতি, জীবনের যখন একটা মান খুঁজে পেলাম, তখন আমি আবার একাভীষন ভাবে একাদীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার পর ঘুম ভেঙে জেগে ওঠার মতো, বিহ্বল চোখে আমি যখন বাস্তব জীবনের দিকে তাকাই, আমার ঘরের শূন্য দেওয়ালগুলো ছাড়া আমি আর কিছুই দেখতে পারি নাবা অনুভব করতে পারি না
মনে হয় আমার জীবনকে রমনীয় করে তোলার জন্য সত্যি কোনো নারী নেইনেই কোনো সঙ্গিনীসবাই যেখানে প্রেম অভিসারে ব্যস্তআমাকে সেখানে অবসর সময় কাটানোর জন্য এমন কিছু জায়গা খুঁজতে হয়, যেখানে আশ্রয় না নিলে আমার যেন সময় কাটানোর আর জায়গা নেইঐ শুভেন্দুর কথাটাই তখন সত্যি হয়বিদিশাকে ভালোবেসে জীবনটা নষ্ট করলি তুইএখন শুধু লেখালেখি, আর গানের চর্চা নিয়েই পড়ে থাকিস তুইএটাই কি জীবন নাকি? ধূরএভাবে জীবন কাটানো মানে একেবারেই তা অর্খহীন
অফিসে গিয়ে কাজকর্ম সেভাবে এখনো শুরু করতে পারিনিচেয়ারে বসে উল্টোপাল্টা এসব ভাবছি, আর চোখটাও অল্প একটু বুজে এসেছেঠিক তখনই দেখলাম, মোবাইলটা আবার বাজছেশুক্লা আবার আমাকে ফোন করেছে
 
কাল শুভেন্দু আমাকে শুক্লার ব্যাপারে অনেক কথাই বলেছেরনি তো বলেই দিয়েছে, ওর ফোন এলে ফোনও ধরবি না তুইসবাই এখন শুক্লাকে খারাপ চোখে দেখছেব্যাচারা শুক্লাবিদিশার প্রতি কঠোর মনোভাব দেখিয়ে সবার চোখে ঘৃনার পাত্র হয়ে উঠেছেকিন্তু শুক্লারই বা আমার প্রতি এত আগ্রহ দেখানোর কারণটা কি? বিদিশাকে ও সহ্য করতে পারছে নাবারে বারে আমাকে ও ফোন কল করছে, বাড়ীতে যাবার জন্য বলছেকই এতদিন তো শুক্লার একবারও আমার কথা মনে পড়েনি?
 মনে হল এই মূহূর্তে আমার মনে শক্তি জোগানোর বা মনকে শান্তনা দেবার জন্য এমন কাউকে দরকারশুক্লা সেই ভূমিকাটা কিছুতেই পালন করতে পারবে নাবরঞ্চ ও যদি বিদিশার ব্যাপারে হতাশাজনক আমাকে কিছু বলে দেয়, তাহলে আমি আরো দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ব। 
ফোনটা ধরলাম নাসুইচটা অফ না করে সাইলেন্ট মোড করে দিলামএকটার পর একটা ফোন করে যাচ্ছে শুক্লাওর ধৈর্য দেখে, আমিও রীতিমতন অবাক হয়ে যাচ্ছিভাবছি, হয় মেয়েটা আমার ভালো চাইছে, সত্যিকারের বন্ধু হয়ে এক বন্ধুর উপকার করতে চাইছে, নয়তো সে নিজের স্বার্থটাকেই বড় করে দেখছে, আমার স্বার্থটাকে নয়
‘প্লীজ শুক্লা লিভ মি অ্যালোনআমাকে একটু একা থাকতে দেকেন তুই ফোন করে আমাকে বিরক্ত করছিস?’
বাড়ী থেকে বেরুবার সময়ও দেখেছি, শুক্লা আমাকে অনেকগুলো কল করেছিলআবার এখনও করে যাচ্ছে স্পন্টেনিউসালিযেন আমাকে ক্ষিপ্ত না করে ও এবারে ছাড়বে না
অনেক বিরক্ত হয়েই শেষমেষে ওর ফোনটা ধরলামঠিক করে নিলাম, বিদিশার ব্যাপারে শুক্লা যদি কিছু উচ্চবাচ্য করে প্রথমেই ওকে না করে দেবো, কথাই বলব না হয়তো ফোনের লাইনটাও কেটে দেবোঠিক এই মূহূর্তে আমার মনোভাবটা এমনই কঠোর হওয়া দরকারনিজেকে দূর্বল করলে চলবে নাবিদিশার প্রতি দুদিন অন্তত আমাকে বিশ্বাস রাখতেই হবে
ফোন ধরলাম, হ্যালোও বললামকিন্তু ভেতর থেকে সেই উদ্দীপনাটা এল নাশুক্লা আমাকে অবাক করে প্রথমেই বলল, ‘দেব, আমি কিন্তু মিনু নইতুই কিন্তু আমাকে শুধু শুধু ভুল বুঝছিসএতবার করে তোকে ফোন করছি, ফোনটা অন্তত ধরবি তো? না শুক্লা বলে, তোর কেউ কোনদিন ছিল নাকলেজে শুভেন্দু, রনি সবাই তোর বন্ধুআমি তোর কেউ নই?’
আমি কোন কথা বলছি নাশুক্লা বলল, ‘কি হল জবাব দেকথা বলছিস না কেন?’
মনে হল, শুক্লা বোধহয় বিদিশার ব্যাপারে এবার কিছু বলবেহয়তো কাল শুভেন্দুর বাড়ীতে কি হল, সেটাই জিজ্ঞেস করবেজানতে চাইবে বিদিশা ওখানে এসেছিল কিনা? আমার সাথে বিদিশার কথা হল কিনা? বিদিশার জন্য আমি যে এখনও কাতর।  এই ছটফটে মনটা নিয়ে কোথায় যাই? আমার ভালবাসার গভীরতা বোঝার মত ক্ষমতা যদি শুক্লার থাকতো-
ও বলল, ‘শোন, তোকে আমি এখন কিছুই বলব নাতুই শুধু আমার অনুরোধটা রাখবিকাল যখন আসতে পারিস নিআজ অবশ্যই আমার ফ্ল্যাটে আসবিতুই না এলে আমি কিন্তু ভীষন দূঃখ পাবোযতদূর জানি, দেব কাউকে না বলে নাকাউকে ফেরায় নাঅন্তত আমার এই অনুরোধটা তুই ফেলিস নাদেব প্লীজতোর পায়ে ধরে তোকে রিকোয়েস্ট করছি।’
আমি বললাম,আরে না, নাতুই এতকরে আমাকে রিকোয়েস্ট করছিস কেন বলতো? আমি কি তোকে না বলেছি? কাল তো শুভেন্দুদের বাড়ীতে গিয়েছিলাম বলেই তোর ওখানে যেতে পারিনিতাই বলে কি আর যাব না কোনদিন? নিশ্চই যাবো।’
শুক্লা বলল, ভাবছিস আমি তোকে বিদিশার ব্যাপারে কিছু বলবতাই না?
আমি বললাম, ‘না, নাতা কেন হবে? তুই তো কালকেই-
-’হ্যাঁ যা বলেছিওটার আর পুনরাবৃত্তি আমি করব নাতোকে আমি কথা দিলামবিদিশার ব্যাপারে কিছু বলে, তোর মনকে আমি বিষিয়ে দিতে চাই নাশুক্লা দেবের খুব ভাল বন্ধু হয়েই থাকতে চায়ব্যাসআর কিছু নয়হ্যাপি? বল এবারে আসবি তো?
 
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#42
আমার যেন মনে হল, শুক্লা যেন আমার মনটাকে খুব ভালো করে পড়ে নিয়েছেবিদিশার ব্যাপারে কিছু বললে, আমি যে ওর বাড়ীতে যেতে আর আগ্রহ দেখাবো নাসেটা ও ভালোই বুঝতে পারছে শুক্লা ভাল করেই জানে, এতদিন বাদে বিদিশার পুনরাগমন, আমার কাছে একটা অক্সিজেনের মতন ওর এই ফিরে আসার মধ্যে যতই রহস্য থাকযতই বিদিশা আমার কাছে একটু সময় চেয়ে নিক, যতই আমার মনের মধ্যে কষ্টটা বয়ে যাক, একটা আশা নিয়ে দুদিন তো আমাকে ধৈর্য রাখতেই হবে এই সামান্য বোধটুকু যদি আমার মধ্যে না থাকে, তাহলে বিদিশাই বা কি মুখ নিয়ে আমার কাছে ফিরে আসবে? শুভেন্দুকেই বা কি বলব? রনিকেই বা কি বলব তখন? আমি নিজে থেকেই বিদিশার ফিরে আসাটার দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছিওকে চির দিনের জন্য বিদায় জানিয়ে দিয়েছি
একবার মায়ের কথাটা সে সময় খুব মনে হলমা আমার জন্য খুব ভাবে, কষ্ট পায়বিদিশাকে অর্জন করে মায়ের মুখেও এবার হাসি ফোটানোটা দরকার
শুক্লাকে বললাম, ‘যাবো তোর বাড়ীকবে যেতে হবে বল? অফিস ফেরত একদিন চলে যাব তোর ফ্ল্যাটে।’
শুক্লা বলল, ‘না তুই আজকেই আসবিআমি আজকেই তোকে আমার এখানে দেখতে চাই।’
ওকে বললাম, ‘আজকেই যাব? তাহলে তো অফিস ফেরত তোর ওখানে যেতে হয়।’
শুক্লা বলল, ‘হ্যাঁতোর বাড়ী থেকে তো আর বেশী দূরে নয়সল্টলেকে আসতে আর কতক্ষণ লাগবেএকটা ট্যাক্সি নিবিআর ঝটপট চলে আসবি।’
আমি বললাম, ‘খাওয়া দাওয়ার আবার অ্যারেঞ্জ করবি না তো? মাকে কিন্তু কিছু বলে আসিনিকাল এমনিতেই শুভেন্দুদের বাড়ীতে অনেক খেয়েছিআজ তোর ওখানে খেলে, মা বহূত চটে যাবে।’
শুক্লা বলল, ‘দেব, তোর আপত্তি থাকলে আমি তোকে জোর করব নাকিন্তু তুই কিন্তু অবশ্যই আসবিআমাকে আবার ফোন করতে বাধ্য করিস না।’
যেন নাছোড়বান্দা এক মেয়েকিছুতেই আমাকে না নিয়ে গিয়ে ছাড়বে নাআমিও শেষ পর্ষন্ত শুক্লাকে কথা না দিয়ে থাকতে পারলাম না
[+] 1 user Likes Lekhak is back's post
Like Reply
#43
নয়
 
অফিস থেকে বেরিয়ে শুক্লার বাড়ীর দিকে যখন আসছিলামট্যাক্সিতে এফ এম এ খুব সুন্দর একটা কিশোর কুমারের গান হচ্ছিলগানটা আমারও খুব ফেভারিট
হে প্রিয়তমা, আমি তো তোমায়, বিদায় কখনো দেবো না
শুনে মনে হল, সত্যি তাইবিদিশাকে আমি নিজে থেকে কখনও বিদায় দিতে পারি না, এক সে যদি নিজে থেকে না চায়আমার মনের মধ্যে আশাটা কিছুটা হলেও এখনো যেন বেঁচে আছেবিদিশাকে আমি চাইশেষ পর্যন্ত যে করেই হোক বিদিশাকে আমি ফিরে পেতে চাই
ঠিক তার পরে পরেই কিশোর কুমারের আর একটা গান শুরু হল, গানটা হল, ‘আজ থেকে আর ভালোবাসার নাম নেবো না আমি যারে দিয়েছিলাম, যা কিছু তা আমার চেয়েও দামী নাম নেবো না আমি।’
এবার আমার মনটা কেমন বিষন্ন হয়ে গেলট্যাক্সিওয়ালা বলল, ‘দাদা এই যে লোকটার গান শুনছেন না? ইনি তো অমর শিল্পী কিশোর কুমারকিন্তু লোকে বলে ইনি নাকি মরে যাবার আগের দিন পর্যন্ত প্রেমিক ছিলেন চার চারটে বিয়ে করেছেন, ভালোবাসা ওনার কাছে অফুরন্ত ছিল
আমি বললাম, কিশোর কুমার সন্মন্ধে আমি যা জানি, তা আর কেউ জানে নাএকসময় কিশোরের গান গেয়েও অনেকের প্রশংসা কুড়িযেছিলোকটার জীবনে প্রেম অনেক ছিল তাও জানিকিন্তু লোকটার জীবনে একটা ব্যাথাও ছিলসেটা বাইরে থেকে ওর পাগলামী দেখে কেউ বুঝতে পারত না।  কিশোর কুমার নিজেও এমন ছিলেন, কাউকে বুঝতে দিতেন না
ঠিক সন্ধে সোয়া সাতটা নাগাদ ট্যাক্সিটা শুক্লার ফ্ল্যাটের নীচে গিয়ে দাঁড়ালোগাড়ীতে আসতে আসতে এরমধ্যেই শুক্লার ২বার ফোন এসে গেছে আমার মোবাইলে।  আমি যে সত্যি আসছি কিনা সেটা ও ফোন করে নিশ্চিত হতে চেয়েছেযাচাই করে দেখে নিতে চেয়েছে আমি অফিস থেকে বেরিয়েছি কিনা? আমার কাছ থেকে কনফারমেশন পেয়ে খুশিতে উচ্ছ্বল হয়ে উঠেছে শুক্লাএতটা আনন্দ পেতে আমি বিদিশাকেও কোনদিন দেখিনি
আমি ট্যাক্সি থেকে নামলামভাড়া মিটিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলামএসেছি তো ঠিক জায়গায়কিন্তু বাড়ীর নম্বরটা খুঁজে পাচ্ছি নাসল্টলেকে এই এক অসুবিধেপ্রথমবার এলে বাড়ী খুঁজে নিতে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়অ্যাডড্রেশ জানার জন্য এলাকার কোনো লোক পেয়েগেলে সুবিধেনচেৎ একবার এমাথা থেকে ওমাথা, নয়তো এ গলি ও গলি ঘোরাটাই শুধু সার
শুক্লা বলেছে, সাদা রংয়ের চারতলা বাড়ীপ্রতিটা ফ্লোরে দুটো করে ফ্ল্যাটদ্বোতলায় উঠে পেছন দিকের ফ্ল্যাটটাই শুক্লাদের অর্থাৎ শুক্লারআমার অসুবিধে হয় বাড়ী খুঁজতে তাহলে ওকে মোবাইলে ফোন করতে
কপাল ভালো দুটো বাড়ী পরেই ওই চারতলা সাদা বাড়ীটা দেখতে পেয়ে গেলামশুক্লাকেও আর ফোন করতে হল নাযখন ওর ফ্ল্যাটের দিকে এগোতে লাগলাম, মনের ভেতরে শুক্লাকে নিয়ে জমে থাকা সন্দেহগুলো আসতে আসতে দূর হতে লাগলমনে হল, শুক্লা আমাকে কিছুই সেরকম বলেনি বন্ধুত্বের সম্পর্ক থেকে হঠাৎই প্রেম ভালোবাসার সম্পর্কের সূচনা শুক্লা সেরকম তো কিছুই আভাস দেয় নি অথচ শুভেন্দু আর রনি ওকে সন্দেহ করছে, আসলে বিদিশার প্রতি শুক্লার এই বিদ্বেশ মনোভাব, শুভেন্দু আর রনিকে তাই এতটা চটিয়ে দিয়েছে
 সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে অনেক স্বাভাবিক হয়ে গেলামদু তিন ঘন্টা শুক্লার সাথে জমিয়ে গল্প করব, এই উদ্দেশ্য নিয়েই ওর ফ্ল্যাটের কলিংবেল টিপছিমনে হল, কে যেন আমার কানে কানে বলে দিল, ‘আবার তুমি ভুল করতে চলেছ দেবসবাইকে এত অন্ধবিশ্বাস করো তুমি? ওকি তোমায় এমনি এমনি ডেকেছে এখানে? নিশ্চই কোনো উদ্দেশ্য আছেমিনুকে বিশ্বাস করে তুমি যে ভুলটা করেছ, আবার শুক্লাকেও বিশ্বাস করে দ্বিতীয়বার ওই ভুলটা কোরো নাদেব তুমি ভীষন সরলএই সরলতার জন্যই আজ জীবনে এত খেসারত দিচ্ছ বারবারএকই ভুল তুমি কোরো না।’

আমার মুখটা কেমন গম্ভীর মতন হয়ে গেলযেন একটা ফ্যাকাসে মুখ নিয়ে আমি শুক্লার বাড়ীতে এসেছিশুক্লা দরজা খুলে আমার ঐ ফ্যাকাসে মুখটাই দেখলআমাকে বলল, ‘এ কি রে? কি হয়েছে তোর? এত মুখ ভার কেন তোর? আয় আয় ভেতরে আয়শুক্লাকে তো পাত্তাই দিচ্ছিলি না তুইদেখ, আমিই তোকে এখানে আসতে বাধ্য করালাম।’

ফ্ল্যাটে ঢুকেই শুক্লা আমাকে ওর ড্রয়িং রুমটায় বসতে বললবেশ সুন্দর সাজিয়েছে ফ্ল্যাটটাদেওয়াল জুড়ে শুধু কাঁচের আলমাড়ীথাক থাক করে সাজানো গল্পের বইশুক্লা গল্পের বই পড়তে খুব ভালোবাসতো আমি জানতামআমাকে বলল, ‘এগুলো সব আমার কালেকশনগতবারে বইমেলা থেকেও অনেক বই কিনেছি আমিএকা একা থাকিগল্পের বই পড়ে সময় কেটে যায়কিছু তো করতে হবেপুরোনো সেই সখটা আমার এখনো রয়ে গেছে বলতে পারিস।’

আমি জানি শুক্লা খুব ভালো ছবি আঁকতেও পারেদেওয়ালে খুব বড় একটা আঁকা ছবি দেখলাম।  ছবিটা খুব সুন্দর করে বাঁধানোশুক্লাকে বললাম, ‘এটা নিশ্চই তোর আঁকা? বাঃ সুন্দর হয়েছে ছবিটা।’

এক যুবক স্বপ্নাতুর চোখে নীল আকাশের দিকে চেয়ে রয়েছে, আকাশের নীলিমার মাঝে একটা নারীমুখ ভেসে উঠেছেযেন সুন্দরী ওই নারী যুবকের কোনো স্বপ্নের নারীযুবক তাকেই চিন্তা করছেআর সমস্ত পৃথিবীটা যেন রোদে স্নান করছেরঙটাই আসতে আসতে পাল্টে যাচ্ছে

কি করেছিস রে? এ তো অনন্য কীর্তিশিল্পের ছোঁয়াএমন ছবি তো দেখাই যায় না।’

শুক্লা বলল, ‘এ ছবি আঁকার অনুপ্রেরণা তো আমি তোর কাছ থেকেই পেয়েছিতুই জানিস না?’

আমি অবাক হলাম, শুক্লা বলল, ছবিটা আঁকতে শুরু করার সময়, আমি একটা সূত্র থুঁজে বার করার চেষ্টা করছিলামভাবছিলাম, ঐ যুবকটা যদি দেব হয়, তাহলে ওর স্বপ্নের নারীটা কে? যাকে চিন্তা করে করেই দেব এতটা লাইফ কাটিয়ে দিলবিদিশা ছাড়া নিশ্চই আর কেউ নয়।’

মনে হল, এই রে আবার বিদিশাকে নিয়ে শুরু করল শুক্লাএবারে দেখছি আমাকে পালাতে হবে এখান থেকেওকে বললাম, ‘তুই কিন্তু আমাকে সকালে যা বলেছিলিস, তার একবর্ণও মিলছে না এখনকেন বিদিশার কথা তুলছিস? থাক না ওই প্রসঙ্গতুই অন্য কথা বল।’

শুক্লা বলল, ‘ভয় হয়তুই যদি আবার রাগ করে উঠিস।  ছবিটার কথা উঠলো বলে তাই তোকে বললামতা চা খাবি তো? নাকি ওটার কথাও বলতে পারবো না তোকে?’

হেসে বললাম, ‘নিশ্চই খাবোতবে শুধু চাচায়ের সাথে অন্য কিছু নয়।’

শুক্লা বলল, ‘অফিস থেকে ফিরলিশুধু চা কেন? আমি সিঙ্গারা, নিমকি এসব আনিয়েছিএক্ষুনি তোকে দিচ্ছি।’

এতবড় ফ্ল্যাটটায় শুক্লা এখন একা থাকেওকে বললাম, ‘তোর আত্মীয়সজন, রিলেটিভ, বন্ধু বান্ধবরা কেউ আসে না? একা একা থাকিস, বই পড়ে আর ছবি এঁকেই কি সময় কেটে যায়?’
 শুক্লা বলল, ‘আমার মাসীরা আসে মাঝে মাঝে দুই মাসী আছে আমারদুজনেই মায়ের থেকে কয়েকবছরের ছোটবিয়ের সময় এক মাসী সন্মন্ধটা করে বিয়েটা ঠিক করে দিয়েছিল আমার।  ছাড়াছাড়ি হয়ে যাবার পর, মাসীর মনে একটা আফসোসটা থেকে গেছে মাঝে মাঝে আমাকে সান্তনা দিতে আসেমা, বাবা কেউ তো এখন বেঁচে নেইতাদের অভাবটা আমি অনুভব করিকেউ এলে ভালোই লাগেমাঝে মধ্যে আমার জ্যাঠাও আসেবেহালায় যেখানে আমরা থাকতাম, ওখান থেকে কিছুটা দূরেই জ্যাঠাদের বাড়ীআমার খবর নিতে মাঝে মাঝে জ্যাঠা এখানে আসেআর আসে চুমকী বলে একটা মেয়েও বিবাহিতাআমার অফিসে চাকরী করে আমার কলিগমাঝে মধ্যে আড্ডা দিতে আমার এখানে চলে আসে।’

‘বাড়ীতে কাজের লোক?’

শুক্লা বলল, ‘হ্যাঁঅমলা বলে একটা কাজের বউ আছেদুবেলা কাজ করে চলে যায়ওর সাথে কথা বলেও আমার সময়টা কেটে যায়।’

জীবনটা বড়ই কঠিন দেবআমরা যতটা সহজ মনে করিজীবন ততটা সহজ নয়অনেক ঝড় ঝাপাটা আছে, অনেক বাঁধা আছেআমাদের সবাইকেই সেগুলো অতিক্রম করতে হয়কেউ পারে, কেউ পারে নাআমি নতুন ভাবেই জীবনটাকে আবার সাজানোর চেষ্টা করছিজানি সুখ ফিরিয়ে দেবার মতন, সেরকম আমার জীবনে কেউ নেইতবুও একটা চেষ্টাএকটা আশাযদি কিছু-

আমি বললাম, ‘তুই তো আবার একটা বিয়ে করতে পারিসভালো চাকরি করিসতোর তো পাত্রের অভাব হবে নাতাছাড়া ডিভোর্স হয়ে গেলেই যে জীবন শেষ হয়ে যায় তা তো নয়ভগবান তোর জন্য হয়তো কোনো অন্য পরিকল্পনা করে রেখেছে।’

শুক্লা হেসে বলল, ‘পরিকল্পনা? ভালোই বলেছিসহ্যাঁসেরকমই তো কিছু মনে হচ্ছেতবে কি জানিস তো? মনের মিল হওয়াটা আজকালকার দিনে বড়ই কঠিন ব্যাপারস্বামীরা স্ত্রীকে প্রাধান্য দিতে দিতে শেষকালে এতটাই প্রাধান্য দিয়ে বসে তখন শুরু হয় মতের অমিলইগো ক্ল্যাশতাসের ঘরের মত হূড়মূড় করে বিয়েটা তথন ভেঙে পড়েআগুন সাক্ষী রেখে বিয়ে, কিছুই তখন তার দাম থাকে না।’

আমি বললাম, আর স্বামীদের ক্ষেত্রে?

শুক্লা বলল, ‘স্বামীরা যদি বউকে একেবারেই সময় না দেয়, তখন এই সমস্যাটা হয়বিয়ে করা বউ মানেই তো সে আমার দাসী নয়তারও সখ আহ্লাদ আছেমনের ইচ্ছা পূরণ করার তাগিদ আছেকিন্তু সেরকম স্বামী না জুটলে সে বউয়ের কষ্ট বোঝে নাতখন সংসারটা ছাড়খাড় হয়ে ভেঙে যায়সাত পাকে বাঁধার কোনো দাম থাকে না।’

আমি ওকে প্রশ্ন করলাম, ‘হঠাৎ তোর লাইফে কেন এমন ঘটল, কারণটা আমাকে বলতে পারবি?’

শুক্লা হেসে বলল, ‘কেন বললে, তুই আমাকে বিয়ে করবি?’

আমি বললাম, ‘তোর তো ইয়ার্কী মারাটা স্বভাবভাবিস, দেব কে একটু টেনশনে ফেলে দিই আর কি? আমি ওতে অত ঘাবড়াচ্ছি নাযাকে এতদিন ধরে দেখে আসছি, আমার থেকে ভাল কেউ তোকে চেনে না।’

শুক্লা বলল, ‘হ্যাঁএটা তুই ঠিক বলেছিস, আমি অন্যের চোখে খারাপ হলেও, তোর চোখে কোনদিন খারাপ হবো নাতবে জানি না কেন তুই আমার উপরে চটে গেলি? কাল অতবার তোকে ফোন করলাম, সকালেও ফোন করলামঅথচ ফোন ধরছিস নাআমি ভাবছি, তুই আমার ওপরে রেগে আছিস বোধহয়।’
 
 
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#44
শু্ক্লাকে বললাম, ‘না রে কাল বাড়ীতে ফিরে মার সাথেও কথা বলিনিসোজা বিছানায় গিয়ে উঠেছি, আর সেই যে সকালে ঘুম ভেঙেছে, তারপরেই অফিসতোর ফোন এসেছিল, আমি খেয়ালও করিনি।’
আমাকে বসিয়ে রেখে শুক্লা ভেতরে চলে গেলবলল, ‘এই যা ভুলে গেছিবস, তোর জন্য আমি চা টা করে নিয়ে আসি।’
মনে হল, আমাকে যেন ধাঁধায় ফেলে রেখে দিয়েছে, শুক্লাএতকিছু বলছে, অথচ আমাকে এখানে ডাকার কারণটা কিন্তু ও খুলে বলছে না
ঠিক দশ মিনিট পরে শুক্লা চা করে নিয়ে এলোপ্লেট ভর্তি সিঙ্গার নিমকি আর চানাচুর এনেছে।  ওকে বললাম, করেছিস কি? এত কে খাবে? পাগল নাকি?
শুক্লা জোর করল আমায়আমি তবুও প্লেট থেকে একটা করে সিঙ্গারা আর নিমকি তুলে দিলামওকে বললাম, ‘এখন আর এত বেশী খেতে পারি নাজানিস তো আমার পেটের সেই রোগএকবার শুরু হলে, ভীষন কষ্ট দেয়।’
সিঙ্গারা খেতে শুরু করলাম, সেই সাথে চায়ের কাপেও ঠোঁট ছোঁয়ালামশুক্লা চায়ের কাপটা মুখের কাছে ধরে আমার মতন চা খেতে লাগলকিন্তু ওর দৃষ্টি আমার চোখের দিকে দৃষ্টিটা আমি ভাল করে পড়তে পারছি নাকিন্তু বারে বারে একই প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছেও আসলে আমায় কি বলতে চাইছে?
শুক্লা বলল, ‘দেব তোর মনে আছে, আমাদের সেই পিকনিকের কথা? টাকী বসিরহারটে আমরা পিকনিক করতে গিয়েছিলামসৌগত জেদ ধরল, ডায়মন্ডহারবারে যাবেআর তুইও গোঁ ধরে বসলি, পিকনিক হলে টাকীতেই যাবিশেষ পর্যন্ত তোরই জিত হলআর আমরা হৈ হৈ করে পিকনিকটা সেরে এলাম।’
শুক্লাকে বললাম, হ্যাঁ মনে আছেসেদিন তুই আর সৌগত আমাদেরকে ছেড়ে কোথায় চলে গেলিশেষমেষ খুঁজে পাই নাশুভেন্দু, রনি সবারই খুব চিন্তা লেগে গিয়েছিল সেদিন।’
শুক্লা বলল, ‘হ্যাঁ জায়গাটা অত সুন্দরসৌগতও আগে ভাবেনিও ভেবেছিল ডায়মন্ডহারবারের থেকে ভালো বোধহয় কিছু হয় নানিজের চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করে নামাঝে একটা নদী, এদিকে এপার বাংলা ওদিকে ওপারচারিদিকে সারি সারি শুধু নারকেল গাছ, এত মনোরম, এতো সুন্দর, এমন একটা পিকনিক স্পট না এসে পারা যায় নাসারাটা রাস্তা সৌগতর যে রাগটা ছিল, ওখানে গিয়ে একেবারে জল হয়ে গেলআমাকে বলল, চলো না হাঁটতে হাঁটতে দুজনে একটু ওদিকটায় যাইতোরা সেই সময় আড্ডা দিচ্ছিলিঠিক সেই সময় সৌগত আমাকে নিয়ে বেশ কিছুটা দূরে চলে গেলআমি যত বলছি, আর যেও নাওরা চিন্তা করবেও ততই দূরে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে।’
শুক্লাকে বললাম, ‘সৌগত তোকে ইচ্ছে করেই আমাদের থেকে দূরে নিয়ে গিয়েছিললুকিয়ে তোকে আদর করবে বলে ডায়মন্ডহারবার হলে সেই সুযোগটা পেত না
শুক্লা বলল, ‘হ্যাঁ সেদিন সৌগত সত্যিই খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিলকাছে পিঠে যে এমন সুন্দর একটা জায়গা আছে ও জানতই না।’ আমি সাথে থাকা মানে ও তখন অন্যমানুষগালফ্রেন্ড প্রেমিকা বলে কথা।  ঠিক যেন সুযোগ সন্ধানী পুরুষআমাকে বলল, জানো শুক্লা, আমার মনে হচ্ছে, ফ্যামিলি প্ল্যানিংটা আজ এখানেই আমরা সেরে ফেলিতোমার যদি আপত্তি না থাকে?
আমি শুক্লার কথা শুনছিলাম আর হাসছিলামশুক্লা বলল, ‘কি অসভ্য বলতো? আমাকে বলল, এদিকটা ফাঁকাকেউ আসবে নাচলো তুমি আর আমি কাজটা সেরে ফেলি।’
 শুক্লাকে বললাম, আসলে সৌগত বরাবরই খুব ডেসপারেট ছিলআসলে আমাকে আর বিদিশাকে প্রেম করতে দেখে, ওর মধ্যে এই জেদটা চেপে গিয়েছিলবিদিশা আর আমি-
কথাটা বলেই আমি হঠাৎ থেমে গেলামশুক্লা বলল, কি হল থামলি কেন? বল-
আমি বললাম, না তুই বল, আমি শুনছি
শুক্লা বলল, আমার খুব ভুল হয়েগিয়েছিল দেব, জানিস তোঅকারণে সৌগতকে আমি সন্দেহ শুরু করলামওই অবাঙ্গালী মেয়েটাকে নিয়ে ওর আদিখ্যেতা সহ্য করতে করতে আমারও একদিন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল
শুক্লাকে বললাম, জীবনের এই ভুল গুলোই তোকে এখন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছেসবাই কিছু ভুল করেআমিও করেছিতার ফল ভোগ করছি এখন
শুক্লা বলল, ‘তুই তো কোনো ভুল করিস নি দেবআমি তো মনে করি তুই ই এতদিনে সঠিক আছিসতোকে যে ভুল বোঝার সে তোকে ভুল বুঝে ছেড়ে চলে গিয়েছিল।’
তারপর নিজেই বলল, না না আমি ভুল বললামবিদিশা ভালো মেয়েও তো তারপরেও ভুল বুঝেছিলকিন্তু সৌগত তো সেভাবে আমাকে-
আমি বেশ অবাক হলামশুক্লাকে বললাম, কেন সৌগত তো তোকে-
-ভালবাসত? তাহলে আমাকে ও জোর করল না কেন? আমার কথাটা মেনে নিল না কেন? আমার ভুলটাকে ভাঙানোর চেষ্টা করল না কেন? নিজের ইগোকে বজায় রেখে, ও বিয়ে করে বসলো আর একটা সুন্দরী মেয়েকেসত্যিকারের ভালোবাসার এই কি দাম? আমি ভুল করে বসলামতার জন্য সৌগত আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করল না? আমাকে এভাবে শাস্তি দিল?
মানুষ সবসময় ভালো কিছু পেতে চায়যখন ভালোর থেকে খারাপই কিছু জোটে, তখন ভাবে যেটা আমার ছিল, সেটাই বোধহয় ভালো ছিলশুক্লা হয়তো ভেবেছিল, মাসীর পছন্দ করা সুপাত্রই বোধহয় ওর জীবনে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেবেকপালের দোষে সেটাও যখন হল না, তখন শুক্লার জীবনে নেমে এল কালো ছায়াচরম এক আফসোস, এর থেকে সৌগতই বোধহয় পাত্র হিসেবে ওর সন্মন্ধ করা বরের থেকে ভালো ছিল 
শুক্লাকে বললাম, তোর বিয়ের পরবর্তী ঘটনাটা আমি জানি না।  তবে চোখের সামনে যা সব ঘটছে, এখন মনে হচ্ছে বিয়ে থা না করে এভাবেই জীবনটা আমি কাটিয়ে দেবোবলা যায় না, আমার জীবনেও যদি এরকম কিছু ঘটে যায়
শুক্লা বলল, বল তুই একজনকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবি না, তাই তো?
আমি বললাম, সেই একজনটা কে? সেটাই তো জানবার চেষ্টা করছি
শুক্লা বলল, কেন? বিদিশা? যে তোর জীবনে আবার ফিরে এসেছে
কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম, আমার মুখে কোন কথা নেইশুক্লা এগিয়ে এল আমার দিকে, আমার হাতদুটো ধরে বলল, সরি দেব, আমি জানি, বিদিশার কথা তুললেই, তুই কিরকম অন্যরকম হয়ে যাসআমি বিদিশার কথা আর তুলবো নাএই আমি কান ধরছি।’
মুখের সামনেই ওভাবে দুটো কান ধরছে দেখে, ওকে বললাম, কি পাগলামো করছিস? আমি কিছু মনে করিনিবল তুই কি বলছিস, আর কান ধরতে হবে নাহাতটা নামাযা বাজে লাগছে
শুক্লা বলল, ‘দেব একটা কাজ করবি, পুরোনো প্রেমকে কিভাবে আবার চাগাতে হয়, আমাকে একটু শিখিয়ে দিবি? আমি তো চেষ্টা করে যাচ্ছি, কিন্তু মনে ঠিক বল পাচ্ছি নাতোর তো তাও একটা উৎস আছে, একটা প্রেরনা আছেএতদিন বাদে একটা হারিয়ে যাওয়া রাস্তাটা খুঁজে পেয়েছিসকিন্তু আমি কাকে পাই? আমারো যে কাউকে দরকার, যে আমাকে শক্তি যোগাবে, প্রেরণা যোগাবেসেরকম তো কাউকে পাচ্ছি না।’
 আমি কি ওর কথার উত্তর দেবো বুঝতে পারছি নাহাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছি।  দেথছি, শুক্লা ছলছলে চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেওর দৃষ্টিতে প্রাণ আছে, কিন্তু প্রাণটা এই মূহূর্তে দেহ থেকে বেরিয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে মুখে কোনো ভাষা নেইযেন একটা শরীর দলা পাকিয়ে দুমড়ে মুচড়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে
আমাকে ছলছলে চোখ নিয়েই বলল, দেব আমাকে মরার একটা উপায় বলে দিবিএভাবে বাঁচতে আমার আর ভালো লাগছে নাতোকে মনের কথাটা এতক্ষনে বললাম
চোখ দিয়ে টসটস করে জল গড়িয়ে পড়ছেওর কাঁধে হাত দিয়ে বললাম, এ কি রে? তুই এত আপসেট হয়ে পড়েছিস? কেন কাঁদছিস তুই? এভাবে কাঁদিস নাশুক্লা-
শুক্লা এবার কাঁদতে আমার গায়ে ঢলে পড়লএকটা সান্তনা দেবার মতন ওর পিঠটাকে ধরলামমাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলামশুক্লাকে বললাম, কাঁদিস না।  দেখ তুই আমাকে বাড়ীতে ডেকে আনলি, আমারই খারাপ লাগছে
হাত দিয়ে ওর শরীরটাকে ধরে ওকে তুলে বসাতে যাব, দেখলাম, শুক্লা ওই কান্না নিয়েই আমার বুকে মুখ ঘসছে।  কিছু হারাবার ভয়ে, ওই ভাবে মুখ ঘষে নিজেই নিজের সান্তনা খুঁজছে।  আমি শুক্লাকে নিয়ে কি করব বুঝতে পারছি না।  হঠাৎই বলে বসল, ‘দেব, বিদিশার জায়গাটা তুই কি আমাকে দিতে পারিস না?
আমার শরীরটা হঠাৎই কেমন কেঁপে কেঁপে উঠলআমার বুকে ঠোঁট ছুঁয়ে আলতো প্রলেপ দিয়ে যাচ্ছে শুক্লাঠিক এই মূহূর্তে ওকে সান্তনা দিতে দিয়ে আমি নিজেই নিজের রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিনাপাগলের মত আমার বুকে মুখ ঘষে আর চুমু খেয়ে শুক্লার যেন নিজেরই হোশ ফিরলোআমাকে বলল, এই যাদেখ তো ইমশোনাল হয়ে পড়ে কিসব করে ফেললাম তোর সঙ্গে? দেব আমি সরি, ভীষন সরি, তোর সাথে এমনটা করলাম, আমার ভীষন খারাপ লাগছে
বলেই শুক্লা আমাকে ছেড়ে দিয়ে এবার বেশ কিছুটা দূরে চলে গেল
কেমন যেন ঘরের মধ্যে একটা স্তব্ধতা বিরাজ করছেআকস্মিক শুক্লার আচরণে আমি স্তম্ভিতবুঝতে পারছি শুক্লার মনে এখন শান্তি বলে কিছু আর অবশিষ্ট নেইকিন্তু মানসিক ভাবে আমিও কিছুটা বিপর্যস্তযাকে কোনদিন প্রেমিকা হিসেবে আমি ভাবিনি, বিদিশার জায়গায় যাকে কোনদিন চিন্তা করিনি, সে আমাকে এক গভীর সমস্যায় ফেলে দিয়েছেশুক্লাকে আমি কি বলব, নিজেই বুঝতে পারছি না
মানুষ আবেগের বশে অনেক কিছু করে বসেপরিনতির কথা চিন্তা না করে সে তখন নিজের ইচ্ছেটাকেই বেশী প্রাধান্য দেয়স্বভাবে, আচরণে তার পরিবর্তন ঘটে কোন কিছু পাওয়ার আশায় সে ছটফট করে ওঠে ভেতরে ভেতরে তার অস্থিরতা ফুটে উঠে শুক্লা মুখে আমাকে সরি বললেও, ওর ভেতরে আমাকে নিয়ে যে একটা প্রবল চিন্তা সেটা আমি ভাল করেই উপলব্ধি করতে পারছি
কিছুটা দূরে গিয়ে শুক্লা বলল, ‘দেখ, তুই আবার আমাকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলিএই আমার হয়েছে বড় জ্বালাকখন কি যে করে বসিতোকে সব পুরোনো কথা বলতে গিয়ে নিজেই ইমোশনাল হয়ে পড়লামএই দেব, কি ভাবছিস? তুই সত্যিই চিন্তায় পড়ে গেলি নাকি আমাকে নিয়ে?
আমি কোনো কথা বলছি না দেখে শুক্লা বলল, ‘আজ থেকে শুক্লা খারাপ হয়ে গেল তো তোর কাছে? দেখ আমার কিন্তু বন্ধু বলে কেউ আর রইলো নাসবাই আমার থেকে দূরে সরে গেলতুইও সরে গেলি।’
নিজের মনের মধ্যে কেমন একটা দুশ্চিন্তা তৈরী হচ্ছে শুক্লাকে নিয়েওর কাছে সেভাবে কঠোর হতে পারছি নাকিন্তু নরমও হতে পারছি নাকেমন যেন ডামাডোলে আমি দুলছি
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#45
শুক্লা বলল, ‘বল না দেব? কাল কি হল? বিদিশা এসেছিল?’
আমার ভেতরে তখনো একটা কিন্তু কিন্তু বিরাজ করছেবিদিশাকে নিয়ে শুক্লার এখনো এত আগ্রহ? ওর মনোভাবটা ঠিক পরিষ্কার হচ্ছে না আমার কাছে
আমি বললাম, ‘ছাড় না ওসব প্রসঙ্গতুই তোর কথা বলভালোই তো লাগছিল শুনতে।’
শুক্লা বলল, ‘আমার কথা শুনতে বুঝি তোর ভালো লাগবে? কি একটা জীবন নিয়ে এতকাল অতিবাহিত করে দিলামআমার আবার জীবন কাহিনী বলে কিছু বাকী আছে নাকি?’
আমি বললাম, ‘তোর বরের কথা একটু শুনিবেশ ভালই তো হয়েছিল বিয়েটাহঠাৎ ভেঙে গেল কেন?’
শুক্লা বলল, ‘জোড়া লাগানোর আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু আমার স্বামী আমাকে সেই সুযোগটা দেয় নি।’
কারণটা জানতে শুক্লা বলল, ‘আসলে আমার হাজব্যান্ড হল, বাবা মায়ের একমাত্র সন্তানজামশেদপুরে ওদের আদী বাড়ীচাকরীর দরুন, কলকাতাতেই অনেকদিন ছিলহঠাৎই আমার শাশুড়ী এসে সব গুবলেট করে দিল।’
আমি বললাম, ‘সেটা কিরকম?’
শুক্লা বলল, ‘আমি তখন অলরেডী ফ্ল্যাটের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে লোন স্যানকসন্ পেয়ে গেছিও আর আমি বিয়ের পর ভাড়াবাড়ীতে থাকতামশ্বাশুড়ি মায়ের আপত্তি হল, জামশেদপুরে যখন নিজেদের বাড়ী রয়েছে, তখন লোন টোন নিয়ে আবার এসব ফ্ল্যাট কেনা কেন? তাহলে তো ওই বাড়ীটাও শেষমেষ দেখার কেউ থাকবে নাআমার শশুড় শাশুড়ীর যখন জামশেদপুরে বাড়ী রয়েছে, তখন এসব ফ্ল্যাট ট্যাট কেনার কোন দরকার নেইআমার বর প্রথমে মায়ের কথাটার কোনো গুরুত্ব দেয় নিপরে দেখি ও মায়ের কথায় তাল দিচ্ছেভীষন রাগ হল আমারবললাম, আপনারা নিজেদের কথা চিন্তা করেনআমার বাবা মায়ের জন্যও তো আমাকে কিছু ভাবতে হবেমা বাবা এতকাল ধরে ভাড়া বাড়ীতে রয়েছেন, তাদেরকে যদি আমি নিজের ফ্ল্যাটে এনে তুলিঅসুবিধেটা কি?’
শাশুড়ী বলল, তার মানে তুমি ফ্ল্যাট নিতে চাইছ নিজের বাবা মায়ের জন্য? নিজেদের কথা ভেবে নয়?
ভীষন রাগ হল আমারবললাম, বাবা মা কি চিরকাল থাকবেন? তারপর তো ওই ফ্ল্যাট আমাদেরই হবেএই সহজ কথাটা কেন বুঝতে চাইছেন না?
আমার শাশুড়ী তারপরেও বিশ্রী ভাবে বেঁকে বসলো
আমি শুক্লাকে বললাম, ‘এটাই কি তোদের বিচ্ছেদের কারণ?’
শুক্লা বলল, না, এরপরেও জল অনেকদূর গড়ালোও হঠাৎই জামশেদপুরে চলে গেল কয়েকদিনের জন্যঅফিস থেকে ছুটী নিলবলল, বাবা মা দুজনেরই খুব শরীর খারাপআমাকে ওনাদের পাশে থাকতে হবেআমি বললাম, আমি কি যাব তোমার সাথে? ও বলল, না তুমি থাকোতাহলে তোমাকেও তো আবার ছুটী নিতে হবে
আমি শুক্লাকে বললাম, তারপর?
শুক্লা বলল, সেই যে গেল, তারপরে দেখি আর আসার নামই করে নাআমি এদিকে রোজ ফোন করছি, ওর কাছে খবরাখবর নিচ্ছিসেই একই কথানা আমার এখন কলকাতায় ফেরার কোন ইচ্ছা নেই
আমি বললাম, সেকী? তোর প্রতি ওর টানটা তাহলে চলে গেল? বিয়ে কেন করেছিল?
শুক্লা বলল, সেটাই তো কথাবাবু চাকরি ছেড়ে একেবারে বাবা মায়ের কাছে গিয়ে হাজির হয়েছেনওসব শরীর টরীর খারাপ মিথ্যে কথামোদ্দা কথা হল, উনি চাকরী আর করবেন নাজামশেদপুরে দোকান খুলে ব্যাবসা করবেন
 আমি বললাম, তারপর?
শুক্লা বলল, তারপর আর কি? আমার এদিকে চিন্তা বাড়ছেবাবা মাও চিন্তা করছে আমাকে নিয়েফ্ল্যাটে আমি একারোজ শুধু অফিস করছি, কিন্তু মন আমার একেবারেই ভাল নেইঠিক করলাম ভাড়া বাড়ীটা আমি ছেড়ে দেবোবাবা মায়ের কাছেই আবার ফিরে যাব।  ততদিনে সল্টলেকের আমার এই নতুন ফ্ল্যাটটাও তখন তৈরী হতে শুরু করেছেআমি বায়নাও অলরেডী করে দিয়েছিঠিক করলাম, ফ্ল্যাট কমপ্লিট হয়ে গেলে বাবা মাকে নিয়ে আমি এখানে চলে আসব
আমি বললাম আর তোর বর?
শুক্লা বলল, ‘শেষ চেষ্টা একটা করলামওকে ফোন করে আমি ট্রেন ধরে একাই চলে গেলাম জামশেদপুরভেতরে ভেতরে রাগটাকেও আমি প্রশমিত করে ফেলেছিএকবার ওকে অন্তত বোঝানোর চেষ্টা করব,এই আশা নিয়ে আমি জামশেদপুর রওনা দিলামসারাটা রাত্রি আমার ট্রেনে ঘুম এল নাকি হয় কি হয় একটা দুশ্চিন্তা মনে কাজ করছেআমার সব আশায় জল ঢেলে দিল, আমার শশুড় শাশুড়ীআমার বরও তখন তার বাবা মায়ের কবলেকিছুতেই সিদ্ধান্ত পাল্টাতে রাজী হল নাউল্টে আমাকে বলে বসল, তুমি চলে এসো জামশেদপুরেদরকার হলে ট্র্যানস্ফার নিয়ে নাওচাকরী ছেড়ে দাওকলকাতার প্রতি তোমার অত মায়া কেন?
আমি চেয়ে আছি শুক্লার মুখের দিকে
শুক্লা বলল, তুই বল দেব? বাবা মাকে একা ফেলে, ওনাদেরকে ছেড়ে এভাবে কি চলে যাওয়া যায়? বিয়ের আগে আমি শর্তই করে নিয়েছিলামবাবা মাকে ছেড়ে আমি অন্য কোথাও কিন্তু যেতে পারব নাসেটা সম্ভব নয়সব শর্তে রাজী হলঅথচ বিয়ের পর, তিনি একেবারে পাল্টে গেলেন
শু্ক্লাকে বললাম, কতবছর ঘর করেছিলিস তোরা?
শুক্লা বলল, মাত্র একবছর
আমি বললাম, মাত্র একবছরেই সব শেষ হয়ে গেল?
শুক্লা বলল, আমি শেষ করে দিতে চাইনি দেবওই আমাকে বাধ্য করলকোর্ট থেকে আমাদের ছমাস সময় দিলএই ছমাসেও তিনি মনোভাব চেঞ্জ করলেন নাবাধ্য হয়েই মিউচাল ডিভোর্সটা আমাদের করে নিতে হল
একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুক্লা বলল, দেখ, এতকিছু করলামসেই বাবা মায়ের জন্যই আমি এত লড়াই করলামঅথচ বাবা আর মা, দুজনকেই আমি শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারলাম নাআমার জীবনটা পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গেল
আমি শুক্লার চোখে আবার জল দেখলাম, যেন ভাঙাচোরা একটা জীবনের মতন জীবনটাকে জোড়া লাগানোর সব প্রচেষ্টাই শুক্লার ব্যর্থ হয়ে গেছেনতুন ভাবে বাঁচার উৎস খুঁজছেকিন্তু অসুখী নারীমন তাকে যেন চরম বিশাদে ভরিয়ে তুলেছে
আমার দিকে চেয়ে অনেক কষ্টে মুখে আবার হাসিটা ফেরত আনার চেষ্টা করল শুক্লাআমাকে বলল, ‘আমি কিন্তু তোর বিয়েতে খুব আনন্দ করব দেববিদিশার সঙ্গে যদি তোর বিয়েটা হয়, তাহলে খুব মজা করব, গাইবো নাচবোতোকে আর বিদিশাকে নিয়ে খুনসুটী করবসারারাত হৈ হুল্লোর হবেবাসরে মজা হবেএই শু্ক্লাকে দেখে তুই তখন চিন্তেই পারবি নাকি আমি ঠিক বলছি তো দেব?’
আমি অবাক চোখে চেয়ে আছি শুক্লার দিকেভাবছি, জীবনের নানা রং দেখতে যারা অভ্যস্ততারা কি এই রংয়ের সাথে কোন রংকে মেলাতে পারবে? এ আমি কি দেখছি? ভালোবাসার রং কি এরকমও হয়? না, আমার মাথা আর কোনো কাজ করছে নাএবারে মনে হচ্ছে, শুক্লাকেই আমাকে পরিষ্কার করে আসল কথাটা জিজ্ঞাসা করতে হবেশুক্লা তাহলে কি তুই?-
 মনে হল, শুক্লা আপ্রাণ চেষ্টা করছে, ওর প্রতি আমার যে ধারনাটা তৈরী হয়েছে সেটাকে নির্মূল করারযেন অভিনয় নয়, ভেতর থেকে খুশি আর আনন্দ ফেটে পড়ছেআমার মনের মধ্যে যাতে কোন আশংকা বাসা না বেঁধে থাকে, তার জন্য নিজেই এবার প্রাণখুলে হাসতে লাগল শুক্লাহাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে, আর বলতে লাগল, ‘আমি কিন্তু তোর রকমটা খালি দেখছিলামযেই তোকে ভালবাসার কথা বলেছি, অমনি তোর মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেলআরে বাবাআমি কি অতই বোকা? যে বিদিশার জায়গাটা শুধু শুধু নিতে যাব? তুই বুঝি বিদিশাকে ছেড়ে আমাকে ভালবাসতে শুরু করে দিবি? আর আমার কথাটাও সত্যি মেনে নিবিওতো আমি এমনি বলছিলামতোকে একটু পরখ করে দেখছিলাম, আর কি? তোর সাথে একটু মজা করব না তো কি করব বল? কলেজের দিনগুলোর কথা কি তুই ভুলে গেলি?’
মনে মনে বললাম, সব কিছু যে মজা করে হয় না শুক্লাতোর মনের মধ্যে একটা অস্বস্তি কাজ করছে এখনতুই যেটা বলতে চেয়েছিলিস, সেটা বলেও তুই কথাটা ঘুরিয়ে নিয়েছিসতোর মনের ইচ্ছাটা আমি তখুনি বুঝে নিয়েছি
শুক্লা আবার আমার কাছে এলআমাকে বলল, ‘বিদিশার কথা কিছু একটু বলবি তো? কাল শুভেন্দুদের বাড়ীতে বিদিশা এসেছিল কিনা তাও বললি নাশুধু এড়িয়ে যাচ্ছিস আমাকে? কেন আমাকে বলতে কি তোর কোন অসুবিধে আছে?’
ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আমি কিছুক্ষণ চিন্তা করলামতারপরে বললাম, ‘শুক্লা, আমাকে বড় বিপদে ফেলে দিলি তুইএ তুই কি করলি বলতো? আমাকে বাড়ীতে ডেকে এনে মনের কথাটা বলে ফেললিকোনদিন ভেবে দেখেছিস? আমি তোকে সেভাবে, কখনো-
শুক্লা আমাকে বাঁধা দিয়ে বলল, ‘আমি জানি দেবজোর করে কিছু হয় নাভালবাসা প্রেম এগুলো তো ছেলেখেলা নয়এই করলাম, আবার ছেড়ে দিলামআবার করলাম, আবার ছেড়ে দিলামওই ভুল আমি জীবনে একবারই করেছিকিন্তু তুই কেন করতে যাবি দেব? আমার জন্য তুই বিদিশার ভালবাসাটাকে ভুলে যাবি? এতদিন বাদে যে বিদিশা ফিরে এল, তার কি কোন দাম থাকবে না তোর কাছে? ও আমি ভুল করে ফেলেছি, দেবএকেবারে নির্বোধের মতন কাজ করে ফেলেছিতুই প্লীজ আমাকে ক্ষমা করে দেআমি সরি ভীষন সরিপ্লীজ দেব।’
আমি আবার চেয়ে রইলাম শুক্লার মুখের দিকেশুক্লা বলল, ‘কাল কি জানি কি মনে হল, বোকার মতন শুভেন্দুকেও কিছু খারাপ কথা বলে দিলাম, বিদিশার সন্মন্ধেপরে নিজেরই আমার অনুশোচনা হলভাবলাম, এ আমি কি করলাম? শুভেন্দু নিশ্চই খারাপ ভাবলো আমাকে।’
আমি বললাম, কি বলেছিস তুই শুভেন্দুকে? বিদিশা সন্মন্ধে কিছু বলেছিস?
শুক্লা আবার এড়িয়ে যেতে লাগল, আমার কাছেআমাকে বলল, ‘না আমি বলব নাকিছুই বলব নাতুই খালি আমাকে খোঁচাচ্ছিসজানিস তোর মনের কি অবস্থা হবে এটা শুনলেআমি তোর চোখে আরো খারাপ হবোএটাই কি তুই চাস?’
এমন একটা শর্তে ফেলে দিল শুক্লাআমার শোনার আগ্রহটা পুরোপুরি চলে গেলমনে হল, যে ঝড়টা আমার মনের ভেতর দিয়ে এখন বইছে, আমি সত্যি বিদিশার সন্মন্ধে কোন খারাপ কথা শুনতে পারব নাযেটা সত্যি সেটাও মানতে পারব নাহয়তো মুখ ভার করে এক্ষুনি আমাকে চলে যেতে হবে শুক্লার এখান থেকেআর কোনদিন শুক্লার মুখদর্শনও আমি করব না
ও বলল, ‘জেনে রাখ দেব, বিদিশা যতই ভুল করুকবা যতই তোর ভালবাসাকে ঠুকরে সে চলে যাকএতদিন বাদে সে যখন ফিরে এসেছেতাকে তাকে ক্ষমা করে দিতেই হবেআমি যদি বিদিশার জায়গায় থাকতাম, তুই করতিস না?’
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#46
মনে মনে বললাম, কিন্তু তুই তো আমার বাড়ীতে কাল অন্যকথাই-
শুক্লা বলল, ‘বিদিশা ভীষন ভালো মেয়েহয়তো পরিস্থিতির চাপেই ওকে বিয়েটা তখন মেনে নিতে হয়েছিলআমাকে ও সবই বলেছেতোর ভালবাসার দামও সেভাবে ও দিতে পারেনি।  কিন্তু সবাই তো ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে চায়এতদিন বাদে যখন তোর কাছেই আবার ফিরে এসেছেসেই সুযোগ কি তুই ওকে দিবি না, বল?’
মনে মনে বললাম, সুযোগ তো আমি দিতে চাইকিন্তু বিদিশা নিজেই তো-
কালকের বিদিশার শেষ কথাটা শুক্লাকে বলতে গিয়েও আমি বলতে পারলাম না শুক্লা বলল, ‘আমি জানি দেব, তোর মনের ভেতরে এখন যে ঝড়টা বইছেবিদিশার সাথে যতক্ষণ না তোর দেখা হবে এই ঝড় থামবে নাতুই বিদিশাকে একটা ফোন করওকে তোর বাড়ীতে ডেকে নেনয় তুই ওর কাছে চলে যা।’
মুখটা নিচু করে ঘাড় নেড়ে আমাকে আস্বস্ত করল শুক্লাবলল, আমি বলছি, সব ঠিক হয়ে যাবেবিদিশা তোর কাছেই আবার ফিরে আসবেআমার মন তাই বলছে।’
মনে মনে বললাম, তাই যেন সত্যি হয়শুক্লার কথাটাই মিলে যাকভগবান যেন পুরোপুরি বিদিশাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দেন
আরও আধঘন্টা শুক্লার সাথে নানা গল্প করে যখন ওর বাড়ী থেকে বেরুলাম, মনে হল, এতদিন ধরে যাকে শুধু বন্ধু হিসেবেই দেখেছি, সেই শুক্লা আমার কাছে নিজের স্বার্থ ভুলে গিয়ে সত্যিকারের বন্ধু হিসেবেই নিজেকে আবার প্রমান করলঠিক এই মূহূর্তে যে নিজের ভালটা না ভেবে আমার ভাল ছাড়া জীবনে আর কিছু চায় না
 
বাড়ীতে ফিরছি, ট্যাক্সি চড়েআবার সেই চিন্তাটা আমার মনকে ভীষন আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলএবার মনে হল, না, শুক্লা যতই বন্ধুত্বের কথা বলুকও যেন ইচ্ছে করেই আমার প্রতি ওর দূর্বলতা আর ভালবাসাটাকে আত্মগোপণ করে নিলপ্রেমের উদ্ভব ঘটাতে গিয়েও ঘটাতে পারল না।  এর জন্য দায়ী শুধু আমিইকারণ আমার মন তো সবসময়ই আচ্ছন্ন হয়ে আছে সেই একই বিদিশার চিন্তায়জানি না বিদিশার জন্য আমাকে আরো কতদিন প্রতীক্ষা করতে হবেআমি বোধহয় সেই পুরুষ, যাকে কোন নারী ইচ্ছে করলেও ভালবাসতে পারবে নাযেখানে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আর এক নারীসে শুধু বিদিশাই আর বিদিশাইসে আর কেউ নয়
 
ঠিক তখন বাজে রাত্রি দশটাভাবছি, শুভেন্দুকে একটা ফোন করিকি হালচাল একটু জিজ্ঞাসা করিআজকে যে শুক্লার বাড়ীতে গিয়েছিলাম, সেটাও ওকে বলি শুক্লা আমাকে কি বলেছে, কি কথা হয়েছে, সেটাও ওকে খোলসা করি তারপরেই ভাবলাম, শুক্লাকে ছোট করে আর কি লাভ? ব্যাচারা যদি কোনদিন জানতে পারে কষ্ট পাবেশুভেন্দুর মুখ পাতলাশুক্লাকে বলেও দিতে পারে কথাটাবিদিশার জন্য যদি স্যাকরিফাইশ করেও থাকে শুক্লাসেটার আর কোন দাম থাকবে না কারুর কাছে
তবুও শুভেন্দুকে ফোনটা করলামইচ্ছে হল বিদিশার কথা তুলেই শুভেন্দুর সাথে একটু গল্প করিকাল মাধুরী আর রনি এসেছিলওরা এখনো আছে না চলে গেছে, সেটাও শুভেন্দুর কাছ থেকে জানিফোন করলেই শুভেন্দু প্রথমেই আমাকে বিদিশার কথা জিজ্ঞাসা করবে, আজ সারাদিনে বিদিশার কোন খবর এসেছে কিনা সেটাও আমার কাছ থেকে জানতে চাইবেবিদিশার জন্য আমি যাতে বেশী চিন্তিত হয়ে না পড়ি, সেটাও আমাকে বোঝাতে চাইবেআমার মনকে শক্ত করতে বলবে শুভেন্দুহাল যাতে না ছাড়ি, সে আশ্বাসও দেবে হয়তো আমাকে
 ওর মোবাইলের নম্বরটা এনগেজ হচ্ছিলআমি জানি শুভেন্দুর কাছে দুটো মোবাইলএকটা নম্বরে না পেয়ে যথারীতি আর একটা নম্বরে ওকে ঠিক পেয়ে গেলামঅন্য নম্বরটায় ঠিক দুটো রিং হবার পরই ফোনটা ধরল শুভেন্দুআমাকে বলল, দেব, ‘তোকে আমি কল ব্যাক করছিযাস্ট পাঁচ মিনিট।’
মনে হল, ও বোধহয় কারুর সাথে ফোনেই কথা বলছে এতক্ষণ ধরেঅন্য ফোনটা এনগেজ পাচ্ছিলাম, এই কারনেই।  ফোনটা কেটে দিতে গিয়েও আমি কাটতে পারলাম নাপরিষ্কার শুনতে পেলাম, শুভেন্দু কাকে যেন বলছে, তুই কি সত্যি কথাটা বলতে ভয় পাস? এরকম কেন করছিস তুই? দেব কি তোর অসুবিধার কথাটা বুঝবে না? ওকে সব খুলে বলওই তো সিদ্ধান্ত নেবে এখানেদেবের উপরেই সব কিছু নির্ভর করছে।’
আমি দেখলাম শুভেন্দুও ভুলে লাইনটা কাটেনিআর আমার ব্যাপারেই কারুর সাথে কথা বলছেযা বলছে আমি পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছি
শুভেন্দু বলল, ‘কি হল, চুপ করে গেলি কেন তুই? কিছু তো বল? নাকি আমি তোর হয়ে বলব দেবের কাছেতোর বলতে কেন অসুবিধা হচ্ছে, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।’
কার সাথে কথা বলছে শুভেন্দু? কি বলবে? কার হয়ে বলবে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না
কান পেতে শুনতে লাগলাম, অন্য ফোনে শুভেন্দুর কথাকিন্তু যার সাথে কথা বলছে, তার কথা আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছি নাশুধু শুভেন্দুর কথাটা ভেসে আসছে আর ও যেন ভীষন ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছে কাউকে
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর শুভেন্দু বলল, ‘দেখ দেবকে আমি সত্যি কথাটা বলতে পারতামকিন্তু বলিনি, তার কারণ আমি জানি, এই সমস্যাটা হয়তো কিছু দিনের, কিছু মাসের জন্যচিরকালের জন্য তো তুই এই সমস্যা বয়ে বেড়াবি না? তাহলে অযথা কেন ভয় পাচ্ছিস? ডিভোর্স যখন হয় নিতখন একদিন না একদিন ঠিক হয়ে যাবেদেবও আশাকরি বুঝতে পারবে।’
আমি যেন চমকে উঠলামকার ডিভোর্সের কথা বলছে শুভেন্দু? কার সাথে কথা বলছে ও? তাহলে কি বিদিশা?
ঠিক সেই মূহূর্তে শুভেন্দু অন্য ফোনে বলে উঠলমাস কোনো সময়ই নয় বিদিশাযে ছেলেটা তোর জন্য এতবছর অপেক্ষা করেছিল, মাত্র ছমাস সে ওয়েট করতে পারবে নাতুই কি ভাবিস? দেবের মনটা অত পাথর নয়তুই কিচ্ছু তাকে ঠকাচ্ছিস নাতোর অসুবিধার কথাটাই তাকে বলছিস।’
ফোনটা কান থেকে নামিয়ে বুকের কাছে ধরে আমার একটা চাপা অস্বস্তি হতে লাগলভাবলাম, ভগবান এ আবার কি পরীক্ষায় ফেলল আমাকে? তবে কি বিদিশার এখনো ডিভোর্সটা হয় নি? কাল শুভেন্দু ইয়ার্কী নয়, সত্যি কথাটাই বলতে চেয়েছিল আমাকেশেষেমেষে ওর ইয়ার্কীটাই এবার সত্যি হয়ে গেল আমার কাছেও সব জানতোতাও গোপন করেছে আমাকেকিছুই বুঝতে দেয়নি শুভেন্দুকার কথা ভেবে শুভেন্দু সত্যিটা গোপন করলবিদিশার কথা ভেবে? না এই দেবের কথা ভেবেঠিক বুঝতে পারছি না
 ফোনটা তখনও আমি ছাড়িনিশুভেন্দু বিদিশাকে বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেওদিক দিয়ে বিদিশাও যেন খুব অসহায়শুভেন্দু মাঝে মাঝে ওকে বলছে, ‘চিন্তা করিস না বিদিশাদেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে।’

এক মূহূর্ত স্তব্ধের মতন হয়ে ফোনটা এবারে আমি ছেড়ে দিলামবিদিশার জন্য কষ্টও হলমনে হল, আমার কাছে ফিরে আসার জন্য ও এতটাই ব্যাকুলঅথচ শেকলটা পায়ে এখনও বাঁধা রয়েছেকিছুতেই ওটা ছিঁড়ে ও বেরিয়ে আসতে পারছে নাবিদিশা কাঁদছে, চোখের জল ফেলছেহয়তো আফশোসও করছেপ্রেমের সাথে জড়িয়ে থাকা, স্বপ্ন, আশা আর আকাঙ্খাগুলো এবার ধূলিসাত হতে চলেছে

শুভেন্দু এবার আমাকে ঘুরিয়ে ফোন করল ওকে বললাম, ‘কার সাথে তুই কথা বলছিলিস?’

শুভেন্দু বলল, ‘এই আমার এক ক্লায়েন্টের সাথেব্যাটা রাত দুপুরে আমাকে ফোন করেছেবোঝাতে বোঝাতে আমার অবস্থা খারাপতাই তোকে বললাম, আমি পরে ফোন করছি।’

ওকে বললাম, ‘শুভেন্দু, বিদিশার জন্য আমার ভীষন চিন্তা হচ্ছে।’

শুভেন্দু বলল, ‘কিসের চিন্তা?’

-এই আমার কাছে কি যেন একটা লুকোলো বিদিশাহয়তো কোন সমস্যায় আছেকিন্তু আমার কাছে সত্যিটা বলতেও ওর কি অসুবিধা আছে? বিদিশাতো আমার কাছে বলতেই পারে অসুবিধাটাআমি তো-

শুভেন্দু বলল, ‘কিসের জোরে সে তোকে বলবে? তোর জন্য সে কি করেছে?’

আমি বেশ অবাক হলামবললাম, ‘তুই একথা বলছিস? তুই না কালকে আমাকে-

শুভেন্দু বলল, ‘হ্যাঁ বলেছিলামতোকে আমি সত্যি কথাটাই বলেছিলামকিন্তু কালকের সান্ধ্য আসরটা তাহলে মাটী হয়ে যেতবিদিশার ফিরে আসার আনন্দটা তোর কাছে ম্লান হয়ে যেতসত্যিটা মেনে নিয়েও, তুই নিজের মনকে অনেক প্রশ্ন করতিসএই সমস্যা থেকে বিদিশা আদৌ বেরুবে কিনা, তোর মনে অনেক প্রশ্ন থেকে যেতোআমি তোর মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলাম দেবতোকে এত চিন্তায় ফেলতে আমিও চাইনি।’

আমি অবাক হলাম, বললাম, ‘তুই বিদিশার এই সমস্যাটার কথাটা জানতিসজেনেও আমাকে কিছু বলিসনি?’

শুভেন্দু বলল, ‘হ্যাঁ জানতামবিদিশাই আমাকে সব বলেছেআমিই ওকে মানা করেছিলামবলেছিলাম, দেবকে এখনই কিছু জানাবার দরকার নেইতাহলে ওর মনটা ভেঙে যেতে পারেবিদিশা আমাকে কথা দিয়েছিল, তাও সব শেষে নিজের মনকে ও ঠিক রাখতে পারল নাতোর কাছে ও ভেঙে পড়ল।’

আমি বললাম, ‘আর কি কেউ জানে এই ব্যাপারটা?’

শুভেন্দু বলল, ‘শুক্লা জানে কিনা জানি নাতবে রনি, মাধুরী এই ব্যাপারটা জানে নাআমি ওদেরকে বিদিশার ব্যাপারে কিছু বলিনি।’

শুভেন্দুকে বললাম, ‘বিদিশা তার মানে এক প্রকার ওর স্বামীকে ছেড়েই এখানে চলে এসেছেডিভোর্সটা এখনও হয় নি।’
 
 
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#47
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শুভেন্দু বলল, ‘তুই ফোনে সব শুনেছিস না দেব? আমি বিদিশার সাথে কথা বলছিলাম
ওকে বললাম, ‘বিদিশা তো আমার কাছে আসল সত্যিটা কালকেই বলতে পারত? আমি ট্যাক্সিতে আসতে আসতেও ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলামবলল, দুদিন আমাকে অন্তত সময় দাওআমি তোমাকে ভেবে বলব।’
শুভেন্দু বলল, ‘বিদিশা তোর কাছে এখন অপরাধীও নিজে তাই মনে করেআর কারুর কথা বলতে পারছি নাকিন্তু বিদিশা বলেই নিজের স্বার্থটাকে বড় করে দেখতে পারছে নাতাছাড়া এ সমস্যা থেকে বেরুবার জন্য তোর তো কিছু করার নেইডিভোর্স যতদিন না হচ্ছে, তুই ওকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে পারবি নাইন্ডিয়ান ম্যারেজ অ্যাক্টতো তাই বলেঅপরের বিবাহিত স্ত্রীকে কাছে রাখাটাও অবৈধ পর্যায়ে পড়েতুই ওর সাথে লিভ টুগেদার হয়তো করতে পারবিকিন্তু সেটা কি তোর মা মেনে নেবে? বিদিশার মনের মধ্যে এখন সেই চিন্তাগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছেও শুধু মনে জোর পাচ্ছে না তা নয়এক প্রকার ভেঙেই পড়েছে বলা যায়কাল থেকে ওর অবস্থা আরো খারাপকাল যদিও সব ভুলে টুলে তোর মুখটা দেখার জন্য ও এখানে এসেছিলকিন্তু আজ ওর সাথে কথা বলে মনে হল, এই কষ্টভোগের পালা শুরু যখন হয়, তখন সেটাকে সহ্য করা খুব কষ্টকরএকেবারে বিধ্বস্তের মতন হতাশা গ্রস্থ হয়ে আমাকে কথাগুলো বলছিলবলল, আমার আপেক্ষের আর শেষ নেই শুভেন্দুতখন যে কেন দেবের কাছে আমি ফিরে গেলাম নাজীবনে এই পরিনামটাই বোধহয় আমার কপালে লেখা ছিলআমার মনে হচ্ছে, সবকিছু এখন শেষ হয়ে গেছেসামান্যটুকু সম্ভাবনাটাও এখন আমি দেখছি নাকেননা আমার স্বামী আমাকে বলেছে-
আমি কৌতূহল হয়ে শুভেন্দুকে বললাম, কি বলেছে বিদিশার স্বামী?
শুভেন্দু বলল, ‘বিদিশার স্বামী বলেছে, কিছুতেই ডিভোর্সটা নাকি বিদিশাকে সে আর দেবে নাসারাজীবন এভাবেই স্বামী ছাড়া শুধু কাটাতে হবে বিদিশাকেকোর্ট কাছারীতে আমরক্ত বেরিয়ে যাবে বিদিশারউকিলের পেছনে টাকা খরচাটাই শুধু সারএ জীবনে বিদিশারর দ্বিতীয় বিবাহ আর কোনদিন হবে না।’
ফোনটা ছাড়ার আগে শুভেন্দুকে বললাম, ‘আমি বিদিশার সাথে একবার কথা বলতে চাইওর সাথে দেখা করতে চাই।’
শুভেন্দু বলল, আমি তো বিদিশাকে বলেছিদেখ ও হয়তো ফোন করবেকিংবা দেখাও হয়তো করবে।’
শেষকালে ফোনটা রাখার আগে শুভেন্দু শুধু বলল, ‘আমারও আফশোসের আর শেষ নেই রে দেবমাঝে মধ্যে আমিও ভাবছি, তোর আর বিদিশার জীবনটা কি এভাবেই শুধু কেটে যাবে? জীবনে তোরা আর বিয়ে থা কোনদিন করতে পারবি না? এ কী জীবনের মানে? অদ্ভূত এই জীবনআমি তো কোন তালগোল খুঁজেই কিছু পাচ্ছি না।’
শেষে ও নিজেই বলল, ‘তোকে অবশ্য হাল ছেড়ে দিতে আমি বলছি না দেখ নিশ্চই কিছু তো রাস্তা বেরোবেই ভগবান মুখ তুলে চাইবেন এতটা নিষ্ঠুর কখনো হবেন না
 
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#48
অসাধারণ। সাথেই আছি, চালিয়ে যান।
yourock     clps
Like Reply
#49
দশ
 
মাঝে মাঝে জীবনটা বড় অদ্ভূত মনে হয়কলেজের দিনগুলোর মতন জীবনটা কেন ফিরে আসে না? কেন মনে হয়, এ পৃথিবীতে আনন্দ আর সুখ বলে কিছু নেইআমারও তো কিছু পাবার ছিল কিছু প্রত্যাশা ছিল জীবনকে ঘিরে ধরে শুধু ব্যাথা আর বেদনাপুরোনো কলেজ জীবনের, বিশ বছরের সেই উদ্দামতাকে যখন ফিরিয়ে আনতে চাই, জীবনকে পরিপূর্ণ করে তুলতে চাই, তখুনি বাঁধা বিপত্তিগুলো আবার ফিরে ফিরে আসে।  নারী যেন আমার জীবনে অংশভাগিনী হতে চেয়েও পারে না।  কেউ আমাকে ভালবাসতে চায়, সেখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় অন্য নারীআবার যখন সেই নারীকেই আমি ফিরে পেতে চাই, তখন বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তার নিজের স্বামীএ যেন জীবন সঙ্গিনীকে পাবার সমস্ত সুযোগই ব্যর্থআমার জীবনকে রমনীয় করে তোলবার জন্য সত্যি বোধহয় কোন নারী নেইনেই কোন সঙ্গিনী। 
পুরোনো দিনের কথা আর বর্তমান এই দুটোকে মেলাতে গিয়ে মনটা ভীষন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছিলনতুন করে কার প্রেমে যে পড়ব, সেটাই ঠিক বুঝতে পারছিলাম নাআবিষ্ট মন, স্পর্ষকাতর মন আমার সিদ্ধান্তকে একজায়গায় এনে ফেলতে পারছে নাকখনো বিদিশার মুখটা আমি চোখের সামনে দেখছি, কখনো শুক্লার মুখটা সেখানে ভেসে উঠছে।  দুজনেই যদি আমার প্রেয়সী হয়, তাহলে কাছে পাওয়ার জন্য কার প্রতি আমার সুতীব্র আকুলতা জেগে উঠবে, সেটাই বুঝতে পারছি না।  আমি কি শুক্লার আশাটাকে মেনে নেব? না বিদিশাকে এখনো ভরসা দিয়ে যাবযতক্ষণ না ওর ডিভোর্সটা সম্পন্ন না হচ্ছে, ততদিন অপেক্ষা করে যাব।  কোন একজনেরই একনিষ্ঠ প্রেমিক হয়ে ওঠার জন্য আমি এখন আপ্রাণ চেষ্টা করছি, কিন্তু কিছুতেই দুজনের মধ্যে কোনো একজনকে বেছে নিতে পারছি নাবড্ড কঠিন অবস্থা হয়ে উঠেছে আমারদুজনের মুখদুটোকে শুধু চিন্তা করে পীড়াদায়ক চিন্তারাশি আমার বুক ঠেলে উঠে বেরিয়ে আসতে চাইছেএমন এক দূরঅবস্থাআমার মনের দুশ্চিন্তাটাকে আমি কাউকে জানাতেও পারছি নাসত্যিই কি করুন এক পরিস্থিতি
 
ডায়েরীর পাতাটা খুলে ভাবছিলাম কিছু একটা লিখবউপন্যাসটা হঠাৎই এমন একটা জায়গায় থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছে যেন এগোতেই চাইছে নাঅতীত ভুলে এখন বর্তমানটাই আমার চোখের সামনেশুক্লা বিদিশা দুদুটো মেয়ে হঠাৎই এসে হাজির হয়েছে আমার জীবনেতারা আমার সান্নিধ্য পেতে চাইছে, অথচ কি করে সমস্যা কাটিয়ে উঠব, ভেবে কোন কূলকিনারা পাচ্ছি নাবিদিশার জন্যও কষ্ট হচ্ছে আবার শুক্লার জন্যও মনটা ভীষন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছেযেন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আমার অনেক দেরী হয়ে যাচ্ছে
হঠাৎ আমার খেয়াল হল, শুভেন্দু বিদিশাকে বলেছে, ‘দেবের বাড়ীতে এক্ষুনি তুই যাস না।  ওর সাথে দেখা করবার জন্য আমার বাড়ীটাই বেস্ট।’ আমাকে সারপ্রাইজ দেবে বলে নিজের বাড়ীতেও ডেকে নিয়ে গেছেবিদিশাকেও সেখানে আমন্ত্রণ করেছেতারমানে শুভেন্দু এটা জানতো, ওর বাড়ীতে এসব সমস্যার কথা উঠবে না, বিদিশাও আমাকে কিছু বলবে নাবিদিশাকে শুভেন্দুই হয়তো বারণ করে রেখেছিল আগে থেকেই। ‘এই মূহূর্তে দেবকে এসব কিছু বলার দরকার নেই।’
শুভেন্দু আমার কাছে সত্যি কথাটা বলেও পরে ওটা মিথ্যে বলে আমার মনটাকে হাল্কা করার চেষ্টা করেশুভেন্দু হয়তো জানতো, আমি চিন্তায় পড়ে যাব বিদিশাকে নিয়ে।  মন অস্থির হয়ে উঠবেবিদিশার ফিরে আসার খবরটা আমার মনকে সেভাবে নাড়া হয়তো দেবে নাও আমার কাছে ফিরে এলেও, সেটা কোন খুশীর খবর হয়ে উঠবে না
 ভাবছিলাম, শুভেন্দুরই বা বিদিশাকে নিয়ে এত আগ্রহ কেন? ও যখন সব আগে থেকেই জানেজেনেও বিদিশার সাথে আমাকে আবার মেলানোর চেষ্টা করছেবিদিশার কথা ভেবে শুভেন্দু এটা করেছে? না আমার কথা চিন্তা করে আমাকে ধৈর্য রাখতে বলছেঅতীতের সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ছিল, সেদিন কিন্তু বিদিশার প্রতি শুভেন্দু এতটা দয়ালু হয়নিমিনুর বাড়ীতে ওই ঘটনাটা ঘটে যাবার পর দোষ দেখেছিল বিদিশারইআমাকে বলেছিল, ‘বিদিশা এটা ঠিক করেনিসত্যি মিথ্যে যাচাই না করে তোর দোষ দেখল বিদিশাএটা কি ও ঠিক করল?’

মিনুর বাড়ীতে হঠাৎই ঘটে যাওয়া সেদিনের সেই ঘটনাটাআমার বাড়ীতে তার কিছুদিন আগেই সৌগত এসে হাজিরকলিংবেল টিপতেই দেখি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে, একগাল হাসিবিয়ের কার্ড নিয়ে এসেছে, বাবুর ফূর্তী যেন আর ধরে নাওকে বললাম, ‘কি রে সৌগত তুই?

সৌগত বলল, ‘সামনের মাসের দশ তারিখে আমার বিয়ে, তোকে কার্ডটা দিতে দেরী হয়ে গেলঅবশ্য কোন বন্ধুদেরই এখনো কার্ড দিইনিবলতে পারিস, তোর কাছেই প্রথম এলামতুই ফার্স্ট।’

সৌগতকে ঘরে ডেকে বসালামবললাম, ‘এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করছিস? তোর কি বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি রে শালাএই তো সবে আমরা কলেজ পাশ করলাম। ‘

সৌগত বলল, ‘তাও নয় নয় করে তিনবছর তো হয়ে গেলবাড়ীতে সবাই হূটোপাটি করছেআমিও তাই সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেললাম।’

আমি বললাম, ‘তাও চব্বিশ বছরে বিয়ে? আমি তো ভাবতেই পারছি না।’

সৌগত বলল, ‘সেদিক থেকে বিয়েটা একপ্রকার একটু তাড়াতাড়িই হচ্ছেআসলে আমার বউটা খুব সুন্দরীওদের বাড়ীর লোকেরাও আমাকে পছন্দ করেছেওরাই চটজলদি বিয়েটা সেরে নিতে চাইছেআর আমিও ভেবে দেখলাম, বউ যা সুন্দরীবিয়ে করে নেওয়াই ভালোপরে যদি হাত ফসকে ছিটকে যায়।’

বলেই হাসতে লাগল সৌগত

ওকে বললাম, তোর বউয়ের বয়স কত?

সৌগত বলল,কুড়ি

আমি বললাম, ‘সেকিরে তাহলে তো একেবারে কচি খুকী।’

সৌগত বলল, চারবছরের ডিফারেন্স, তাই বা কম কি? আমি তো বলব, সেদিক দিয়ে আমি খুব লাকি।’

সৌগতকে উইশ করলামবললাম, ভালো ভালোবিয়েটা তাহলে করআমরা সবাই একটু ফূর্তী করিকলেজ পাশ করার পরে, সেভাবে তো আর কারুর সাথে দেখাই হয় নাতোর বিয়েতে না হয় সবাই মিলে আনন্দ করা যাবে। ’

সৌগত বলল, ‘বিদিশার খবর কি?’

আমি বললাম, ‘ভালোই আছেমাঝে মধ্যে আসেদেখা সাক্ষাত হয়এখনো প্রেম করে যাচ্ছিতোর মত এত তাড়াতাড়ি বিয়েওটা এখনো ভাবিনি।’

সৌগত বলল, আমি তো বলব, বেশী দেরী করা উচিৎ নয়জানিস তো, কোথাথেকে কখন কি হয়ে যায়আজকাল কোন কিছুর উপরেই আমার কোন ভরসা নেই।’

মনে হল, শুক্লার ব্যাপারে সৌগতর মনে হয়তো কিছু খেদ আছেপ্রেমটা ভেঙে গেল বলে, আমাকেও ও সাবধান করছে

সৌগত নিজেই বলল, ‘আমি কিন্তু শুক্লার সাথে ব্যাপারটা সহজ করে নিয়েছি ওকে ফোনও করেছি, কথাও বলেছিবিয়েতেও শুক্লাকে আসতে বলবআশাকরি ও না বলবে না।’
 আমি বললাম, তোর আর শুক্লার ব্যাপারটা বড় অদ্ভূতকি যে হল তোদের দুজনের মধ্যেকিছুই বুঝতে পারলাম নাঅথচ তোদের প্রেমটা-

সৌগত বলল, ‘প্রেম মানে তো লাভআমি মনে করি লাভ ইস নট পার্মানেন্টযে কোন মূহূর্তে ভেঙে যেতে পারেআমার আর শুক্লার ব্যাপারটাও তাই হয়েছেএরকম ঘটনা আর কারুর জীবনেও ঘটতে পারেভালবাসা, প্রেম, যেকোন মূহূর্তে ভেঙে যেতে পারে।’

কিছুক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলামসৌগত বলল, ‘তোর আর বিদিশার ব্যাপারটা অবশ্য আলাদা।  তোদের প্রেম হল, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রেমএকে অপরকে অঙ্গীকার করে বসে আছিসচটকরে এ প্রেম ভাঙা খুব কঠিনসেদিক দিয়ে তুই আবার আমার থেকে একটু লাকি বলতে পারিস।’

আমি বললাম, ‘বিদিশা আসলে আমাকে একটু বেশী বিশ্বাস করেও জানে চট করে দেব, ওর বিশ্বাসটাকে ভাঙবে না।’

সৌগত এবার আমার মুখের দিকে তাকালো, আমাকে বলল, ‘বিশ্বাস থাকতে থাকতে, তুইও বিয়েটা করে নে দেববলাতো যায় নাকখন কি থেকে কি হয়ে গেলআমার কেন জানি, প্রেমটেম ওগুলোকে আর চিরস্থায়ী বলে মনে হয় নাজীবনে প্রেম ভালোবাসার এগুলোর কোন দাম নেইসব বেকার জিনিষ।’

-তুই একথা বলছিস সৌগত? তুই না-

সৌগত বলল, ‘হ্যাঁ আমিই বলছি।  প্রেম আমার জীবনে টেকেনি বলে বলছি নামেয়েদের মন বোঝা খুব কঠিনকখন তোকে কি অবস্থায় ওরা ফেলে দেবে,তুই ঠাওরও করতে পারবি নালেজে গোবরে এক হয়ে যাবিশেষ পর্যন্ত হতাশায় তোর চুল ছিঁড়তেও তোকে হতে পারেএরা ভীষন অবুঝসত্যি কথাটা শপথ করে বললেও বিশ্বাস করতে চায় না।’

আমি বললাম, ‘বিয়ে যাকে করছিস, তাকেও তো তোকে ভালবাসতে হবেনইলে সেটাও তো টিকবে নাপ্রেম মানে তো প্রেমহয় বিয়ের আগে, নয়তো বিয়ের পরেসেই একই তো কথা।’

সৌগত বলল, ‘জানি, সেটাও জানিবিয়ের পরে ভালবাসা না টিকলে সেখানেও লবডঙ্কাসবই জানিসেই জন্যই তো এবারে একেবারে দেখেশুনেই বিয়ে করছিএকেবারে পার্মানেন্ট হিসেবে টিকে যাবে ওতোকে গ্যারান্টী দিয়ে বলছি।’

দেখলাম শুক্লার থেকে নিজের বউয়ের ওপরেই ওর বিশ্বাসটা এখন অনেক বেশীকিভাবে আস্থা অর্জন করল, আমার জানতে ভীষন ইচ্ছে করছিলসৌগত বলল, ভেবে দেখলাম, নিজের প্রেম করার থেকে বাড়ীর লোকজনের পছন্দমত বিয়ে করাই অনেক ভালতাছাড়া মেয়েটা সুন্দরীস্বভাব চরিত্রও ভালোঅন্য মেয়েদের মত অত প্যাঁচালো নয়।’

সৌগত বলল, বিদিশাকে তো আলাদা করেই নেমতন্নটা করতে হবেতুই বরঞ্চ ওকে একটা ফোন করবল সৌগত যাচ্ছে, তোমাকে বিয়ের নেমতন্ন করতেএখন যদি যাই? বিদিশা বাড়ী থাকবে তো? তুইও আমার সাথে যেতে পারিস।’

বিদিশাদের বাড়ীর ল্যান্ডফোন নম্বরে বিদিশাকে তক্ষুনি পেয়ে গেলামসৌগতর বিয়ের খবরটা শুনে ও কিছুটা অবাক হল, আমাকে বলল, তুমি আসছ সাথে? তাহলে দুজনেই এসোআমি বাড়ীতেই আছি।’

সেদিন বিদিশার বাড়ীতে আমার অবশ্য আর যাওয়া হয় নিসৌগতর বাড়ী থেকে হঠাৎই তারকিছু পরেই একটা ফোন চলে এসেছিলওকে বেরিয়ে চলে যেতে হয়েছিলআমাকে বলল, বিদিশাকে আমি কার্ড পৌঁছে দেবোতুই চিন্তা করিস নাবরযাত্রী হিসেবে তোদের জন্য আলাদা গাড়ীর ব্যবস্থা করেছিসব কালকে ফোন করে তোকে বলছিতুই, বিদিশা, শুভেন্দু সব একই গাড়ীতে যাবিগাড়ীটা আমার গাড়ীর পেছনে পেছনে থাকবেতোদের কোন অসুবিধা হবে নাব্যারাকপুরে বিয়েকলকাতা থেকে যেতে একঘন্টা মতন লাগবে।’
 
[+] 1 user Likes Lekhak is back's post
Like Reply
#50
যতক্ষণ আমার কাছে বসেছিল সৌগত, কথায় কথায় এটাও আমাকে বলেছিল, ‘আমার কেন জানি না দেব, মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি যেন একটা খুব ভুল করে ফেলেছি।’
ওকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘কি ভুল করেছিস তুই?’
সৌগত সেই সময় মিনুর প্রসঙ্গটা তুললোআমাকে বলল, ‘মিনুর জন্য তোকে বোধহয় সেই হ্যাপাটা এখনো পোয়াতে হচ্ছে? সেই ওর বোনকে গান শেখানোর ব্যাপারটা? ভীষন বেয়ারা মেয়েএকবার কারুর পিছু নিলে, সহজে তাকে ছাড়তে চায় না।’
ওকে হেসে বললাম, ‘না না, সেতো কবেই আমি সেই পাট তুলে দিয়েছি এখন আর ওর বোনকে গান শেখাতে যাই নাসেই প্রথম প্রথম কদিন গিয়েছিলাম, তারপরে যাওয়া আমি বন্ধ করে দিয়েছি।’
সৌগত বলল, ‘কলেজ ছাড়ার পরে আর মিনুদের বাড়ী আর যাসনি?’
ওকে বললাম, ‘শ্যামল মিত্রর এক ছাত্রের কাছে আমি কিছুদিন তালিম নিয়েছিলাম ইচ্ছে ছিল মিনুর বোন রীনাকে ওখানে পাঠিয়ে দেবার কিন্তু মিনু রাজী হল না গোঁ ধরে বসে থাকলো আমার কি ওখানে যেতে আর ইচ্ছে করে? তুই তো বিদিশার ব্যাপারটা জানিসও পছন্দ করে না রীনাকে গান শেখাতে আমি যাই বলেসেই শেষ দিন থেকে মিনুর প্রতি বিদিশার একটা বিতৃষ্মাবিদিশা মিনুকে সহ্য করতে পারে না।  নাম শুনলেই ক্ষেপে ওঠেআমি যে মিনুর বাড়ীতে এখন যাই নাসেটা ওকে বললেও অবিশ্বাস করে ওঠেবলে সত্যি বলছ তো? কি জানি তোমার কথা বিশ্বাস করলেওমিনুকে আমার একদম বিশ্বাস হয় না।’
সৌগত বলল, ‘লাস্ট কবে গিয়েছিলিস মিনুর বাড়ীতে?’
আমি বললাম, ‘তাও নয় নয় করে মাস ছয়েক তো হয়ে গেলএখন যাওয়া একদমই বন্ধ করে দিয়েছি।’
সৌগত বলল ভালো, এইজন্যই তো মিনুকে আমি বিয়েতে নেমতন্ন করতে চাই নাওখানে বিদিশাও আসবেমিনুকে দেখলে বিদিশা একেবারেই চটে যাবেকি করতে কি করে বসবে মিনুওকে বোঝা খুব মুশকিল।’
সৌগত এরপরে চলে গেলভাবিনি মাস ছয়েক পরে হঠাৎই মিনুর আবার দর্শন পাবোসেদিনই সন্ধেবেলা মিনুর হঠাৎই আবির্ভাব ঘটল আমার বাড়ীতেসাথে ওর বোন রিনাকেও নিয়ে এসেছেবেশ সেজেগুজে এসেছে মিনুআমাকে বলল, দেব, তোর জন্য একবাক্স মিষ্টি নিয়ে এসেছিরীনা খুব ভালোভাবে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেতুই ওর গানের গুরুওকে ভাল করে আশীর্ব্বাদ কর।’
রীনা মাথা হেট করে, ঝুঁকে প্রনাম করল আমাকেওকে বললাম, ‘থাক থাক আর প্রনাম করতে হবে নাতা গান টান কি গাইছ? নাকি ছেড়ে দিয়েছে সব?’
রীনা ঘাড় নেড়ে বলল, এখনো গাইছি, ছেড়ে দিই নি এখনো তবে আপনাকে খুব মিস করিআপনি তো আর আমাদের বাড়ী আর আসেন নাআসুন না একদিন।’
ঠিক সেভাবে ওকে জোর দিয়ে বলার মতন আমার আর কিছু ছিল নামিনু আমাকে পটানোর জন্য ওর বোনকে সাথে করে নিয়ে এসেছে, সেটাও বুঝতে পারলামপাছে আমি না বলে ফেলি, মিনু আগে থেকেই রীনাকে বলল, ঠিকই যাবেতুই ব্যস্ত হচ্ছিস কেন? এখন দেবদার সময়ের খুবই অভাবদেবদার এখন অনেক দায়িত্বচাকরী করতে হবেবিয়ে করে বউকে খাওয়াতে হবেতোর জন্য ভাড়ী দেবদার দরদ? তবে তুই বলছিস যখন, ঠিকই যাবেকি ‘দেব’ যাবি না?’
আমি রীনার সামনে মিনুকে সেভাবে কিছু বললাম নাশুধু বললাম, ‘যাব একদিনএই সামনে সৌগতর বিয়েওর বিয়েটা হয়ে যাকতারপরে সময় করে একদিন যাবতোমাদের বাড়ী যাবার পথে কলেজেও একবার ঘুরে আসব।’
মিনু জানতো, আমি শুধুই ওর বোনকে সান্তনা দিচ্ছিযাবার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা নেই আমারআমাকে বলল, সৌগতর বিয়েতে যাবি নিশ্চই? তোকে কার্ড দিয়েছেকই আমাকে তো দিল না?’
 আমি বললাম, ‘হয়তো পরে দেবেএখনও অবধি আমাকে ছাড়া কাউকেই কার্ড দেয় নি ।’
মিনু যেন পরিকল্পনা করেই এসেছিলআমাকে বলল, ‘কাল বাড়ীতে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিতোকে কিন্তু আসতে হবে।’
হঠাৎ কিসের অনুষ্ঠান, কিছুই আমি জানি নাবেশ ভ্যাবাচাকা খেযে গেলামমিনু বলল, ‘আসলে রীনা ভালভাবে পাশ করেছে তোতাই কজন বন্ধুবান্ধবদের বাড়ীতে ডাকছিতুই ও আসবি, একটু আনন্দ আর হৈহুল্লোর হবে।’
আমি প্রায় মুখের ওপরেই না বলতে যাচ্ছিলামমিনু বলল, ‘কেন বিদিশা রাগ করবে তোর ওপর? আমি যদি ওকেও বাড়ীতে ডাকি।’
বেশ অবাক হলাম মিনুর কথা শুনেবিদিশাকে ও বাড়ীতে আসতে বলবেআর বিদিশাও ওর কথাশুনে একডাকে ছুটে যাবেকখনোই সেটা সম্ভব নয়মিনুকে বললাম, ‘শুধু শুধু বিদিশাকে কেন বলতে যাবি? ও তোর ওখানে যাবে না।’
মিনু একটা গম্ভীর মতন হয়ে গেলআমাকে বলল, ‘তাহলে তুই আসবি তো?’
আমি বললাম, ‘কথা দিতে পারছি নাতবে চেষ্টা করব।’
রীনাকে নিয়ে মিনু একটু পরে চলে গেলআমাকে বলে গেল, ‘রীনার কথা ভেবে অন্তত আয়তোকে কথা দিচ্ছি, আর কোনদিন তোকে আমার বাড়ীতে আসতে বলব না।’
আজ মনে পড়ে সেদিন কিন্তু মিনুর বাড়ীতে আমি গিয়েছিলামবিদিশা যাইনিবিদিশাকে বলেই আমি মিনুর বাড়ীতে গিয়েছিলাম মনে মনে একটু অসুন্তষ্ট হয়েছিল বিদিশাওকে বলেছিলামবোনটার পাশের জন্য বাড়ীতে একটা পাটি দিচ্ছে মিনুরীনা যদি আমাকে না বলতো, আমি হয়তো ওর বাড়ীতে যেতাম না
পরের দিন মিনুর বাড়ীতে বেশ কিছু ঘন্টা আমি ছিলামও কিন্তু একবারও বুঝতে দেয় নি ওর অভিসন্ধিটাআমার কাছ থেকে বিদিশার ফোন নম্বরটা নিয়েছিল, বিদিশাকে ফোনও করেছিল, অথচ আমাকে বিদিশা সেকথা বললেও মিনু একবারও তা বলেনি
বিদিশা ভাবতেই পারেনি, মিনু ওকে ফোন করবেফোনটা যখন করেছে, বিদিশার মা ধরেছিলমিনু নিজের পরিচয় দেয় নিবিদিশা এসে ফোনটা ধরতেই ওকে ঠেস মেরে বলেছিল, ‘কালতো দেব আসছে আমার বাড়ীতেতুমি আসবে নাকি?’
আমাকে একনাগাড়ে কতকিছু বলে গেল বিদিশামিনুর বাড়ী থেকে ফেরার পর ফোন করে আমাকে বলল,সখ মিটেছে তোমার? আঁশ মিটেছে? ধন্যি মেয়ে বাপুএখনো তোমার পিছন ছাড়ে না।’
সেদিন বিদিশার মুখে ওই কথা শুনে মিনুর ওপরে আমিও খুব চটে গিয়েছিলাম।  ভাবিনি আরো কত পরিকল্পনার জাল বিস্তার করে রেখেছে মিনুতার কিছুদিন পরেই ঘটল আর একটি মারাত্মক ঘটনা
সেদিন ছিল রবিবার।  মা বলল, সোদপুরে আমার বড়মামার বাড়ীতে যাবেবাড়ীতে রান্না সব করাই আছেশুধু ভাতটা ফুটিয়ে নিলেই হবেবিদিশাকে ফোন করলামবিদিশা বলল, ‘বাড়ীতে একা রয়েছ বলে আমাকে ডাকছ? কি করবে তুমি?’
আমি বললাম, ‘কেন এর আগে যখন একা ছিলাম, তুমি বুঝি কোনদিন আসোনি আমার বাড়ীতেমা, এই একটু পরেই বাড়ী থেকে বেরোবেতারপরে সারাদিন আমি শুধু একা।  এই মূহূর্তে একজনকে আমার খুব দরকারবিদিশা ছাড়া আর কারুর নাম এই মূহূর্তে মনে করতে পারছি না।’
 বিদিশা বলল, ‘বাহ্ আমাকেও তো বলে বেরোতে হবেরবিবারে বাড়ী থেকে বেরুচ্ছিবাড়ীতে বললেই তো বুঝে যাবেমা বাবা তো জেনেই গেছে, তোমার বাড়ীতে যাবার জন্য আমি সবসময় পা বাড়িয়ে রয়েছি।’
বিদিশাকে বললাম, ‘শোন বিদিশাআমি তোমার সাথে ছাড়া আর কারুর সাথে তো প্রেম করিনা ফুলশয্যার রাতে স্বামী যেটা তার স্ত্রীর সাথে করে, সেটা যদি এই ফাঁকা বাড়ীতে হয়ে যায় মন্দ কি? সুযোগকে কখনো পায়ে ফেলতে নেইএকা একা বাড়ীতে বসে তোমার স্বপ্ন দেখবো, অথচ তুমি আসবে না এটা কি কখনো হয়? কখন আসবে বলোমা কিন্তু ঠিক এক ঘন্টা পরেই বেরুবে।’
বিদিশা ফোনেই বলল, ‘তুমি কি করবে আমাকে? বিয়ের আগেই ফুলশয্যা সেরে নেবে? দাঁড়াও মাসীমাকে আমি বলছি।’
ওকে বললাম, ‘দেখো সৌগত বিয়েটা সেরে নিচ্ছে তোমার আমার বিয়েটাও হয়তো হয়ে যাবে আর কিছুদিনের মধ্যে বিয়ের আগে ফুলশয্যার প্র্যাকটিশটা করে নিতে অসুবিধে কি? মা তো সেই সুযোগই আমাদের করে দিয়ে যাচ্ছেন।’
একটু যেন ঘাবড়ে গেল বিদিশাআমাকে বলল, এই নাতারপরে কি থেকে কি হয়ে যাবেমরি আর কি?ওসব সখটক তোমার পূরণ হবে না বাপুবলোতো এমনি আমি যেতে পারি।’
আমি বললাম, আচ্ছা বিদিশা? তুমি আসবে, আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করবেতোমার শরীর আমাকে ছুঁয়ে যাবে, আমার হৃদয়কে চঞ্চল করে তুলবেসেই আশা নিয়েই তো আমি তোমাকে ডাকছিতোমার কি মনে হয় না প্রেম মানেই একটা নিবিড় মূহূর্ত? যেখানে প্রেমের সাথে থাকবে একটু চুমোচুমি নারীর সাহচর্য এক মধুর অনুভূতি এর থেকে আমাকে কেন বঞ্চিত করছ বিদিশা? তুমি কি চাওনা মাঝে মধ্যে এই সখগুলো আমি পূরণ করি মাঝে মধ্যে গোপণ খেলাটা খেললে অসুবিধা কি বিদিশা? তুমি এখুনি চলে এস দেরী কোরো না
বিদিশা একপ্রকার নাই বলে দিল আমাকে আমাকে বলল, ‘তোমার গোপণ খেলা আমি বার করছিআজ তুমি জব্দ বেশ হয়েছে আজ বাড়ীতে একা থাকোআমি আর যাচ্ছি না।’
একটু হতাশই হলামভাবলাম, ঠিক আছে বিদিশা যদি না আসে, ঘুরতে ঘুরতে বিকেলবেলা ওর বাড়ীতেই চলে যাবসময়টা কিছুটা হলেও অন্তত কাটবেবিদিশা না থাকলে, কিছুই আমার ভাল লাগে না
মা একটু আগেই বড়মামার বাড়ীর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছেঘড়িতে তখন বাজে সকাল এগারোটাসারাটা দিন বাড়ীতে বসে কি করব তাই ভাবছিহঠাৎই দরজায় কলিংবেলছুটে গেলামভাবলাম, বিদিশাই এসেছে বোধহয়আমাকে চমকে দেবার জন্যই না বলেছে তখন ফোনে।  আমার সাথে মজা করতে বিদিশাও খুব ভাল পারে
দরজা খুললামসামনে দেখি বিদিশা নয়মিনু দাঁড়িয়েএক গাল হেসে আমাকে বলছে‘চমকে গেছিস না? আসলে তোদের বাড়ীর খুব কাছেই একটা দরকারে আমি এসেছিলামভাবলাম, একটু ঢুঁ মেরে যাইআজ তো রবিবারতুই নিশ্চই বাড়ী থাকবিতা আমাকে ভেতরে আসতে বলবি না? নাকি দরজা থেকেই বিদায় করে দিবি।’
মিনু হাসছেআর আমি ভাবছি, এ আবার অসময়ে কেন এল? কি মুশকিল, বিদিশাও যদি আবার এখন এসে পড়ে?
[+] 1 user Likes Lekhak is back's post
Like Reply
#51
[quote="Lekhak is back" pid='3444236' dateline='1625158904']
[Image: ME1KVUE_t.jpg]

জীবন যে রকম’ উপন্যাস লেখা শুরু করেছিলাম আজ থেকে প্রায় আট- ন বছর আগেশুরু করেও শেষ করে উঠতে পারিনিলেখার জগত থেকে হারিয়েই গেছিলাম জীবনের অনেক বাঁধা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আজ আবার ডায়েরী আর পেন নিয়ে বসেছি এই উপন্যাসের অনেক ঘটনাই বাস্তবে আমার জীবনের সাথে মিল প্রেমের উপন্যাস আমি আরো একটি লিখেছি দুটোই অসমাপ্ত ছিল ফিরে এলাম অসমাপ্ত উপন্যাস সমাপ্তি করণের ইচ্ছা নিয়ে তবে পাঠকদের জানিয়ে রাখি, শেষ টুকু পড়তে হলে, কাহিনীর শুরু থেকে আবার একবার পড়ে নিতে হবেকারণ দুটি অধ্যায়ের সংযুক্তিকরণ হয়েছে পুরোনো লেখার সাথেইসকলকে আমার নমষ্কার ও ধন্যবাদ জানাই। 
ইতি
লেখক
 
[/quot


Welcome back dada.....it's very sweet story......pure natural emotions
Like Reply
#52
মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়েই ওকে ঘরে ঢোকালামআমার মন বলছিল, হঠাৎ মিনুর আগমনটা উদ্দেশ্যপ্রনোদীতমাঝে মাঝে এত ন্যাকামি করে মিনু, বিরক্তিতে গা জ্বলে যায়ওর এই গায়ে ঢলানি স্বভাবটা আমি জানি, যতদিন কলেজে পড়েছি, মিনু আমার পিছু ছাড়েনিএতদিন পরে গায়ে পড়ে এসে আবার মাঝে মধ্যেই আমার বাড়ীতে এসে হানা দিচ্ছে, এটা একধরণের ফন্দী ছাড়া আর কিছুই নয়আগের দিন ও বাড়ীতে গিয়ে, পুনরায় ওর বোনকে গান শেখানোর জন্য ভীষন কাকুতি মিনতি করছিল মিনুআমি একপ্রকার না ই করে দিয়েছি।  রীনা একটু দূঃখ পেয়েছে, কিন্তু আমার কিছু করার নেইআমি জানি, যতক্ষণ আমি রীনাকে গান শেখাব,মিনু এসে সামনে বসে থাকবেহাঁ করে তাকিয়ে থাকবে আমার দিকেচোখের পাতা পড়বে নাওর ওই দৃষ্টিতে আমার ভীষন অস্বস্তি হবেমনোসংযোগে চীড় ধরবে বলা যায় না রেগেমেগে ওকে কিছু বলেও দিতে পারি মিনু অবশ্য এসবে অভ্যস্ত আমার কাছে না শুনেও সেই একপ্রকার আমার পায়ের উপরেই সে পরে আছে
মনে পড়ে কলেজে যেদিন মিনুকে প্রথম দেখেছিলাম, ও একটা কালো রঙের শাড়ী পড়ে এসেছিলবগল কাটা ব্লাউজশাড়ীতে যতনা ওকে আকর্ষনীয়া লাগছিল, তার থেকেও বেশি ঠিকরে পড়ছিল ওর নির্লজ্জ্বতামিনু বেশ ব্যাটাছেলেগুলোকে ধরে ধরে জবাই করতে পারেকেন জানি না আমাকেও ও অত চেষ্টা করলকিন্তু কিছুতেই সফল হয়ে দেখাতে পারল নামিনুর বেশ আফশোসও হয়েছিলবিদিশার জন্যই ওকে এই হারটা স্বীকার করতে হয়েছিল, তাতে অবশ্য ওর কোন দূঃখ নেইরীনাকে গান শেখাতে রাজী হয়ে যাওয়াটা মিনুর কাছে একপ্রকার মেঘ না চাইতেই জল পাওয়ার মতন ঠিক দুদিন আগেই ও আমাকে এসে বলল, দেব, ‘আমার সন্মন্ধে অনেকে বাজে বাজে কথা সবাই বলছে, আমি কিন্তু এতটা নির্লজ্জ্ব নইনিজের স্বার্থকে আমি কখনই বড় করে দেখিনা তুই ভাবিস, আমি খুব খারাপ তাই আমার বাড়ীতে তোর যেতে ইচ্ছে হয় না, তাইতো? আজ থেকে তোকে আমি কথা দিলাম বিদিশা যেমনটি আছে, ঠিক তেমনটিই তোর থাকবে আমি তোদের মাঝে আর মাথা গলাবো না
তাও মনটা ভীষন খুচখুচ করছিলশেষে মেষে এই সৌগতই আমাকে ভরসা দিলবলা যায় ওর কথাতেই শেষপর্যন্ত আমি রীনাকে গান শেখাতে রাজী হয়ে গেলাম
সেই প্রথমদিন থেকে সপ্তাহে একদিন করে আমি মিনুর বাড়ীতে আমি যেতামএকঘন্টা রীনাকে গান শেখাতামমিনু সামনে এসে বসে থাকতোআমার গান শুনতোকিন্তু আমার প্রতি ওর দূর্বলতার কথা কখনো আর বলেনি কলেজের শেষ কটাদিন, আমার সাথে দেখা হলে শুধু কথা বলতকিন্তু ওর হাবভাবে, ওর আচরণে সেরকম কিছু আমার চোখে পড়ত না
কলেজ ছাড়ার দুমাস বাদে আমি যখন মিনুর বাড়ী যাওয়া বন্ধ করে দিলাম, তখন যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম বিদিশার আপত্তি ছিল, সে কথা আমি আগেই বলেছিএকদিন বিদিশা এল কলেজে মুখ ভার করেআমার সাথে সেভাবে ভাল করে কোন কথা বলছে নাভেতরে ভেতরে যেন কোন চাপা রাগ, রাগটা ঠিক আমাকে দেখাতেও পারছে নাঅথচ আমি ধরেই নিয়েছি, ওর মনের মধ্যে আমাকে নিয়ে কিছু একটা শঙ্কা রয়েছে
একটু জোর করতেই বিদিশা বলল, ‘তুমি প্রনব বলে কাউকে চেনো?’
আমি বললাম, ‘প্রনব বলে সেরকম তো আমি কাউকে চিনি নাসে কি আমাদের কলেজে পড়ে?’
বিদিশা বলল, ‘সেভাবে ওকে কোনদিন কলেজে আমিও দেখিনিকালকে হঠাৎই তোমার সন্মন্ধে আমাকে উল্টোপাল্টা কথা বলল, আমার মনটাকে খারাপ করার চেষ্টা করছিল ছেলেটাকে ও?’
ওকে বললাম, মুখ না দেখলে কি করে বুঝব? আর আমার সন্মন্ধে খারাপ কথা বলবেই বা কেন সে তোমাকে? কি করেছি আমি? কারুর ক্ষতি করেছি?
বিদিশা বলল, প্রথমেই সে আমাকে বলল, দেব তো গেল ফসকে এবারে কি করবে তুমি?
আমি বিদিশাকে বললাম, মানে?
 বিদিশা বলল, আমার ইচ্ছে করছিল ছেলেটার মুখের ওপরে একটা চড় কসাতেসবকটা দাঁত বার করে আমার মুখের সামনে এমন বিশ্রীভাবে টোনটিটকিরি কাটছিল ছেলেটাভীষন রাগ হচ্ছিলআমি ওর কোন কথা শুনতে চাই নাতাও জোর করে আমাকে বলল, ‘দেব তোমাকে নিয়েও খেলছে, আবার মিনুকে নিয়েও খেলতে শুরু করেছেশেষ পর্যন্ত মিনুরই জয় হবে তুমি দেখে নিওদেব শীগগীরই তোমাকে টা টা আর বাই বাই করে দেবেসেদিনটা আসতে আর খুব বেশী বাকী নেই।’
আমি বিদিশার কথায় ভীষন অস্বস্তিতে পড়ে গেলামকে এই প্রনব বলে ছেলেটা? বিদিশাকে এই কথাটা বলার কারণই বা কি? মাথামুন্ডু কিছু ভেবে পেলাম নাশুভেন্দুকে ডাকলামশুভেন্দু এলবলল, ‘আমি খবর নিয়ে দেখছিকে এই প্রনব? দরকার পড়লে মিনুকেও জিজ্ঞাসা করছিরহস্যটা খুঁজে বার করছি।’
সত্যি কথা বলতে কি, কলেজে আমার শত্রু সেরকম কেউ ছিল নাএখন বিদিশার প্রতি যদি কারুর দূর্বলতা থেকে থাকে, তাহলে সেটা অন্য কথাআমি যেন বিদিশার কষ্টটা বুঝে ওকে আর সেদিন কিছু বললাম নামনে হল, মিনুকে নিয়ে বিদিশার দ্বিধা এখনো কাটেনিমিনু যখন কথা দিয়েছে, আমার প্রতি ওর দূর্বলতাটা আর নেইতখন প্রনব বলে এই ছেলেটাই বা কেন বিদিশার কান ভাঙাতে যাবেতাহলে কি মিনুই এই খেলাটা খেলেছে?
পরের দিন মিনু এল কলেজেপ্রথমেই এসে বলল, ‘প্রনব বলে আমি কাউকে চিনি নাআর এ কলেজের যে ছেলে নয়, তাকে এত গুরুত্ব দেওয়া কেন?’
আমাকে বলল, ‘বিদিশাকে এই পরের কথায় কান না দেওয়াটা বলে, একটু তুই বন্ধ করসবকিছুতেই তোকে আর আমাকে নিয়ে এত বাড়াবাড়ি, আমারও বাপু সহ্য হয় না।’
মিনুর সঙ্গে তারপর থেকে বেশ কয়েকদিন কথা বলা আমি বন্ধ করে দিয়েছিলামরীনাকেও গান শেখানো বন্ধ করে দিয়েছিহঠাৎই একদিন আমার পায়ে ধরে আবার সাধা শুরু করে দিল মিনুআমাকে বলল, যেটা সত্যি নয়, সেটা নিয়ে শুধু শুধু তুই পড়ে আছিসখামোকা রীনাকেও তুই গান শেখাতে যাওয়া বন্ধ করে দিলিআচ্ছা আমার কি দোষ বল তো? তুই যেন আমাকেই দোষী সাব্যাস্ত করতে চাইছিসআমি কি প্রনব বলে ছেলেটাকে বিদিশার কাছে পাঠিয়েছি?
সেদিন বিদিশাকেও অনেক বুঝিয়েছিল শুভেন্দু। ‘এসব কথার কান দেওয়ার কোন দরকার নেইদেব কোনটা ভাল আর কোনটা মন্দ, নিজে খুব ভালো বোঝেযেদিন বুঝবে, মিনুর বাড়ীতে ও নিজে থেকেই যাওয়া বন্ধ করে দেবেতুই কেন এসব কথায় কান দিয়ে মন খারাপ করছিস? কেন দেবের প্রতি কি তোর ষোলো আনা বিশ্বাস নেই?’
 এতদিন বাদে সেই মিনুই আবার আমার বাড়ীতে আসা আরম্ভ করেছেআমি না পারছিলাম ওকে দোড়গোড়া থেকে বিদায় করতে, না পারছিলাম মুখের ওপরে সরাসরি কিছু কটু কথা বলে দিতেঘরে ঢুকে প্রথমেই আমার ভুল ধারণাটা ভেঙে দিল মিনুআমাকে বলল, ‘আমি কিন্তু তোকে আমার বাড়ী যাওয়ার কথা আর বলব নাএকবার তুই আমাকে না করে দিয়েছিসরীনাকেও না বলে দিয়েছিস, সুতরাং গান শেখানোর প্রসঙ্গ আর নয়।’

আমি বললাম, ‘তাহলে তুই হঠাৎ?’

মিনু বলল, ‘কেন তোর কাছে কি এমনি আসতে নেই?’

আমি বললাম, তাও কারণ তো কিছু একটা থাকবেইসাত সকালে এসে হাজির হয়েছিসতোর আসার কারণটা কি, খুলে বল

মিনু বলল, ‘আমার কেন জানি না দেব, তোকে আমার মনের কথাটা বলতে খুব ইচ্ছে করেএই ধর তোকে যদি আমি বলি, দেব তোকে আমার সেই আগের মতন পেতে খুব ইচ্ছে করেতুই রেগে যাবি।  আমি জানি তোর কানের লতিটাও তখন লাল হয়ে যাবেপ্রেমকে আঁকড়ে ধরে রাখার মতন আমার তো বিদিশার মতন রূপ নেই।  যে তোকে বলব, বড় আশা করে এসেছি গো, কাছে ডেকে লওআমি আসলে খুব ভুল করেছিলামমানুষতো পদে পদে ভুল করেধরে নে তোর প্রতি আমার দূর্বলতাটা একপ্রকার ভুল।’

মিনুকে বললাম, ‘ছাড় না ওসব পুরোনো কথাকি জন্যে এসেছিস তুই বল

মিনু বলল, ‘আমি না ঠিক তোর মতই আর একজনের প্রেমে পড়ে গেছিআজ তোকে সেকথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে।’

আমি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলামমিনুকে বললাম, ‘শুনে খুশী হলামতা সেই ভাগ্যবান ব্যক্তিটি কে?’

মিনু বলল, ‘ছেলেটির চাউনির মধ্যে কী একটা অদ্ভূত আকর্ষন আছে জানিস তোকিছু কিছু ছেলেদের চোখ থেকে এমন দুটি ঝরে পড়েমনে হয়, তারা যেন হৃদয়ের সবটুকু দেখতে পাচ্ছেকথার মধ্যেও এক অদ্ভূত কুহক মায়া আছেমনে হয় ও বুঝি এক জাদুকরকেমন করে মেয়েদের মন চুরি করতে হয়, সে বিদ্যা ও শিখেছে সযত্নে।’

আমি বললাম, ‘এতদিন ধরে যে মিনুর প্রেমে সবাই পাগলসেই মিনু কিনা কারুর প্রেমে পড়েছেব্যাপারটা তো ইন্টারেস্টিংতা বিয়েটা কবে করছিস? আর ছেলেটিই বা কে?’

মিনু বলল, ‘বিয়ের দিনখনটা আমি তার উপরই ছেড়ে দিয়েছিওখানে আমার কোন তাড়াহূড়ো নেইশুধু ছেলেটাকে একটা মেয়ে বড় জ্বালাচ্ছেসে আমারই মতন তাকে ভালবাসেএখন আমার প্রেমিক কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে নাকাকে ছেড়ে সে কার কাছে যাবে? আমার কাছে না তার কাছে?’

আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মিনুর মুখটা তখন বেশ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেমনে মনে বললাম, এ আবার কি কথা? কাকে না কাকে পছন্দ করে বসে আছে, তাকে আবার অন্য একটি মেয়েও ভালবাসেতারমানে আবারো সেই নিরীহ কোন ছেলেকে নিয়ে টানাটানি, মিনুর চক্করে পড়ে একটা ভালো ছেলের মাথানষ্ট নিরীহ ছেলেটা বলি হল, আর কি?

ওকে বললাম, ‘তোর মতলবটা কি বলতো? এতো আমার সাথে বিলকুল মিলে যাচ্ছে মনে হচ্ছে কার কথা বলছিস তুই?’

মিনু একগাল হেসে বলল, ‘কারো কথা বলছি নারে বাবাওফ, তোকে কিছু বলতে যাওয়াই মুশকিলসবসময় কিছু একটা ধরে বসে থাকিস তুইআমি তো এমনি বলছি।’

ভীষন বিরক্তি হচ্ছিল আমারমনে হল, যতক্ষণ আমার ঘর থেকে ও বিদায় না হচ্ছে রেহাই নেইকি করে যে ভাগাবো, সেটাও বুঝতে পারছি নাআমাকে বলল, এই দেব, চা খাওয়াবি?
 
 
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#53
আমি বললাম, ‘মা তো ঘরে নেইতাহলে বস, আমি চা করে নিয়ে আসছি।’
কি বলতে কি বলে বসলাম, মিনুর দেখলাম, মুখটা বেশ খুশী খুশী হয়ে উঠলমা’র ঘরে না থাকাটা ওর কাছে যেন হাতে চাঁদ পাওয়ার মতনউঠে আমারই পেছন পেছন চলে এল মিনুআমাকে বলল, ‘তুই একা কেন চা করবি? চল আমিও তোকে সাহায্য করছি।’
আমার রান্নাঘরে যেখানে স্টোভটা রাখা রয়েছে, মিনু আমার পিছন পিছন ঠিক ওখানটাই এসে দাঁড়ালোঅস্বস্তি হচ্ছে আমারএকে মা ঘরে নেইমিনু জ্ঞানহারা হয়ে হঠাৎ যদি কিছু করে বসে আমার আফশোসের শেষ থাকবে না বেয়ারাপনা শুরু করলে আর একে কেলেঙ্কারী সুযোগের সদ্বব্যবহার করতে মিনুর কোন জুড়ি নেই
হঠাৎই পেছনে দাঁড়িয়ে মিনু বলল, ‘রীনার খুব মন খারাপতুই ওকে হ্যাঁ বলে আসিস নিও আর গান গাইবে না বলছেরেওয়াজও বন্ধ করে দিয়েছেবলছে, দেবদা যতক্ষণ না আমাকে আবার গান শেখাতে না আসছে, আমি আর হারমোনিয়াম ধরব নাএবার থেকে গান গাওয়া আমি ছেড়ে দিলাম।’
আমি বললাম, ‘দেখ, গান তো সেভাবে আমি কাউকেই শেখাই নাতুই জোর করেছিলিস, তাই রীনাকে গান শেখাতে আমি রাজী হয়েছিলামওকে একটু বোঝানোর চেষ্টা করমাষ্টারের কি অভাব আছে? বেস টা তো ভালভাবে তৈরী হয়ে গেছেতাছাড়া রীনার গলায় সুর আছেগলাও মিষ্টিআর আমি তো একজনের কাছে ওকে পাঠিয়েছিলামসেখানে যাওয়াই বা বন্ধ করে দিল কেন? থাকলে এতদিনে তো ভাল তৈরী হয়ে যেত।’
মিনু বলল, ‘আমি অনেক বুঝিয়েছিকিছুতেই আমার কথা শুনছে নাতাই তো তোর কাছে ছুটে এলাম।’
মিনুকে এবার মুখের ওপর না ই বলে দিতে হল আমাকেওকে বললাম, আমাকে মাফ কর মিনুআমার পক্ষে আর সম্ভব নয়আমার মাথার উপরে এখন অনেক দায়িত্বতাছাড়া সময়েরও খুব অভাবকথা দিয়েও যখন কথা রাখতে পারব নাতখন শুধু শুধু আস্বাস দিয়ে কোন লাভ নেইআমি পারব নাকিছুতেই পারব না।’
হঠাৎই মিনু আমার হাতটা ধরলওর এই হাত ধরার মানেটা আমার কাছে পরিষ্কার হল তখনই, যখন মিনু বলল, তোকে একবার রিকোয়েস্ট করবতুই একবার অন্তত আমার বাড়ী আয়রীনাকে তুই ই বোঝাআমার দ্বারা ওটা সম্ভব নয়।’
আমি মিনুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছিকিন্তু বরাতে যে আমার দূঃখ আছেতখনো জানতাম নাকথায় বলে পৃথিবীর সব থেকে সুখী লোকও যেকোন মূহূর্তে দূঃখী বনে যেতে পারেহঠাৎই বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পেয়ে যাবার মতন মিনুকে বলে বসলাম, ‘কবে যেতে হবে বল? আমি গিয়ে বোঝাবো রীনাকেআশাকরি ও নিশ্চই আমার কথা ফেলবে না।’
মিনুর সঙ্গে আমার ব্যবধানটা যতটাই বেড়েছিল, ঠিক ততটাই আবার কমে গেল সেই মূহূর্তেওর ওই আমন্ত্রণের মধ্যে যে একটা রহস্য আছে, তখনো আমি নিশ্চিত নইধরেই নিলাম মিনু সত্যি কথাটা বলছেঅন্তত রীনার কথা ভেবে মিনুর বাড়ীতে আমার যাওয়া দরকার
মিনুকে চা করে খাওয়ালামএকগাল হেসে মিনু বলল, ‘তোর ভারী ভয় শুধু আমাকে নিয়ে।  এতই তুই বিদিশাকে ভালবাসিস, অন্যকোন মেয়েছেলের সংস্পর্ষেও আসতে চাস নাআরে আমরা তো ভাল বন্ধু হতে পারি না কি? মিনু নয় তোর ভালবাসার পাত্রী হতে পারল নাকিন্তু বন্ধু হতে চাইলেও তুই কি না করবি আমাকে? কেন বিদিশার কি ছেলেবন্ধু একেবারেই নেই?’
 মিনুকে বললাম, ‘আগে হয়তো ছিলকিন্ত আমার সঙ্গে প্রেম শুরু করার পর থেকে, যতদূর জানি, বিদিশার কোন ছেলেবন্ধু নেই।’
হো হো করে হেসে উঠল মিনুআমাকে বলল, তোর সাথে শুক্লারও তো খুব ভাল দোস্তী ছিলতা বিদিশা সেখানে কোন আপত্তি করেনি?
আমি বললাম, ‘শুক্লা নিজেই তো পরে সৌগতর সাথে প্রেম করেছেআপত্তি থাকবে কেন? তাছাড়া শুক্লার সঙ্গে সেভাবে তো আমি কোনদিন মিশিনিবিদিশা প্রথম প্রথম সেটা দেখে একটু অস্বস্তিতে ভুগলেও, পরে খুব সুন্দর মানিয়ে নিয়েছেতাছাড়া শুক্লা, বিদিশা দুজনেই ওরা খুব ভাল বন্ধুখামোকা বিদিশা রাগ করতে যাবে কেন?
মিনু বলল, ‘এই আমিই কারুর ভাল বন্ধু হতে পারলাম নাতাই না? সবার দুচোখের বিষ হয়ে গেছিআমার যেন কারুর কাছে মুখ দেখানোর আর জো নেই।’
মিনুকে বললাম, ‘এসব মন খারাপের কথা ছাড়এবার তুই বল, তুই নিজে বিয়েটা কবে করছিস?’
একটা হতাশা আর আক্ষেপ নিয়ে মিনু যেন আমার মুখের দিকে তাকালোআমাকে বলল, ‘আমি ভাবছি, এ জীবনে বিয়ে থা আর করব না
আমি বললাম, কেন রে?
মিনু বলল, ‘আমার তো অনেক বদনাম আছেবিয়ে করলেই কি বদনাম সব ধুয়ে যাবে? ওসব বিয়ে ফিয়েতে আমার বিশ্বাস নেইফটর ফটর করে কটা অজানা সংস্কৃত মন্ত্র পড়লেই কি সব হয়ে যায় নাকি? দাউ দাউ আগুনে হাত রাখলেই কী আর সতী হওয়া যায়? আমাদের এই মেয়েদের শরীরটাকে নিয়ে সব থেকে বড় জ্বালা, মনের অরণ্যে সবসময় জ্বলছে দাউ দাউ আগুনতোরা যতই বলিস না কেন, মেয়েরা লজ্জ্বাবতী লতাআমি তো বিশ্বাস করি নাবিধাতা আমাদের ওভাবেই তৈরী করেছেবিশ্বে এমন কোন পুরুষ আছে কি যে আমাকে সেন্ট পার্সেন্ট খুশি করতে পারবে? আমার মনে হয়, কেউ বোধহয় এমনটা সুখী হয় নাসুখী সুখী মুখ করে বসে থাকে সবএসব দের ন্যাকামি আমি পছন্দ করি না।’
ভাবছিলাম, আমার জায়গায় অন্যকেউ থাকলে ওকে হয়তো বলে বসত, জিও বেটি হাজার সালতোমার মুখে ফুল চন্দন পড়ুকতুই শালি ঠিক কথা জেনেছিস তোসত্যি এই পৃথিবীতে এমন কোনো আখাম্বা দন্ড নেই যা মেয়েদের একশো ভাগ সুখি করতে পারেতবুও তো তার মধ্যে সুখ খুঁজে নিতে হয়এক দন্ড থেকে আর এক দন্ডে নিরন্তর পরিভ্রমণ করতে হয়দেখতে হয় কে সব থেকে বেশি আনন্দ দিতে পারে
মিনুকে দেখে আমার ওই মূহূর্তে তাই মনে হলএ মেয়ে বিয়ে থা সত্যি আর করবে নাশুধু শুধু ঘনঘন বয় ফ্রেন্ড চেঞ্জ করবে
ভাগ্যিস আমার কপালটা এরকম নয়আমাকে নিয়ে বিদিশা ছেনাল খেলা খেলবে না কোনদিনকিছুদিন খেলাটা চলল, তারপর এঁটো পাতার মতো তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হল ডাস্ট বিনেপরে দেখছি, কুকুরের কাড়াকাড়ি
জীবন নাটকের পরবর্তী অধ্যায় যে শুরু হচ্ছে তার একটু পরেই, তখনো জানি নামিনু একেবারে হাত পা ছড়িয়ে আমার সাথে বসার ঘরে সোফায় বসে কথা বলছেঠিক তখুনি শুনলাম, দরজায় কলিংবেলের শব্দচমকে উঠলামএই সময় কে এল?
দরজা খুললাম, দেখি বিদিশা দাঁড়িয়ে
আমার হাট বিটটা একটু বেড়ে গেলওর মুখটা দেখে কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলামহঠাৎ যেন ভূত দেখার মতন দেখছিবিদিশাকে বললাম, ‘তুমি যে বললে বড় আসবে না? হঠাৎই চলে এলে? আমাকে তো জানালে না?’
 চিরকালের যারা প্রেমিক প্রেমিকা হয়, জন্মজন্মান্তরেও যারা পরষ্পরকে ভালবাসেভগবান কখনো কখনো তাদের মধ্যে বাধার প্রাচীর তৈরী করে দেনসেই মূহূর্তে বাঁধার প্রাচীরটি কে? সেটা অবশ্য বুঝতে অসুবিধে নেই।  কিন্তু আমি চাইলেও, বিদিশা যেন সেটা মন থেকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিতে পারল নাঘরে ঢুকেই আমাকে বলল, ‘মিনু এসেছে, তোমার কাছে, এটাতো তুমি আমাকে আগে বলো নি।’
মিনু ততক্ষনে বিদিশাকে দেখে ফেলেছেওকে বলল, ‘এই তো বিদিশাএতক্ষণ তোমার কথাই হচ্ছিলঅনেক দিন বাঁচবে তুমিএসো এসো ভেতরে এসোকতদিন তোমায় দেখি না।’
বিদিশার প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছেমুখ তুলতে পারছে নাআমি ব্যাপারটা সহজ করে দেবার জন্য বললাম, ‘আসলে মিনু, রীনার জন্যই আমার কাছে এসেছেরীনা খুব ঝেমেলা পাকাচ্ছে বাড়ীতেগানটান সব বন্ধ করে দিয়েছেওকে আমি যতক্ষণ না বোঝাচ্ছি, মিনু বলছে কোন কাজ হবে নারীনাকে বোঝানোর জন্য আমাকে একবার অন্তত যেতেই হবে।’
বিদিশা মুখ তুলে একবার মুখের দিকে তাকালো বুঝতেই পারলাম, কথাটা মনে ধরে নি ওর যেন মিনুকে আমার ফ্ল্যাটে দেখে হঠাৎই ছন্দোপতন ঘটে গেছেমনের মধ্যে জমে উঠছে অনিশ্চয়তার ইঞ্চি ইঞ্চি ধুলোঅথচ ওকে আমি কিছুতেই বোঝাতে পারছি না।  মিনু আর কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে আসেনিএসেছে শুধু রীনার জন্যইবিদিশা হয়তো যেটা ভাবছে, সেটা ভুল
ঠিক সেই মূহূর্তে মিনু হয়ে গেল বিদিশার কাছে বিভীষিকার মতনহঠাৎ আমাকে বলে বসল, আমি তাহলে যাই? তুমি মিনুর সঙ্গে গল্প করছ, জানলে আসতাম না।’
মিনু খুব চালাকসঙ্গে সঙ্গে ও উঠে পড়লবিদিশাকে বলল, ‘না, না, একি? তুমি যাবে কেন? এই তো এবার আমিই যাবটাইম হয়ে গেছেদেব তাহলে আমি আসিটা টা বাইতুই কিন্তু রীনার কথাটা মনে রাখিসভুলে যাস না।’
মিনুকে বিদায় দিয়ে আমি এবার বিদিশাকে নিয়ে পড়ে গেলামওকে বললাম, ‘কি হয়েছে? মিনুকে দেখে খারাপ ভাবছ? আরে বাবা, আমি তো ওকে ডাকিনিও নিজেই এসেছেহঠাৎ করে দরজা খুলে দেখি মিনু দাঁড়িয়েকি করব বল? ঘরে এসে বলল, রীনার জন্য আমাকে একবার নাকি যেতে হবে।’
বিদিশা বলল, এখন কি মনে হচ্ছে জানো? এই পৃথিবীতে আমি বুঝি আর সুখী নই
আমি বললাম, ‘কেন এ কথা বলছ বিদিশা?
বিদিশা বলল, ‘সুখ নামের একটা সুখপাখীকে হৃদপিন্ডের মধ্য বন্দী করতে চাইছিলামসেই পাখিনী ভীষন চালাকহঠাৎই খাঁচা খুলে ফুড়ুত করে উড়ে যেতে চাইছে নীল আকাশে।’
ভীষন খারাপ লাগল ওর কথা শুনেবললাম, ‘কেন আমাকে অবিশ্বাস করছ বিদিশা? আমি তো সত্যি কথাই বলছি।’
বিদিশা বলল, ‘তোমাকে বলেছিলাম নাওকে বেশী প্রশ্রয় দিও নাসাতঘাটে জল খাওয়া একটা মেয়েওকে তুমি বিশ্বাস করো?’
আমি বললাম, ‘আমিও করি না বিশ্বাসবলছি তোও নিজে থেকেই আমার কাছে এসেছে।’
বিদিশা বলল, ‘তাহলে কথা দাও, ওর বাড়ীতে কোনদিন যাবে নাও ডাকলেও যাবে না।’
বিদিশাকে বললাম, কথা দিলাম
বিদিশা বলল, ‘আমার মাথায় হাত রেখে বলো, সত্যি।’
আমি ওর মাথায় হাত রেখে বললাম, সত্যি, সত্যি, সত্যিএই তিন সত্যি করলাম তোমার কাছে।’
 
 হঠাৎ পুরোনো কথা চিন্তা করতে করতে অনেক রাত হয়ে গেছেঘর থেকে বেরিয়ে বাইরের বারান্দাটায় এলামজানি মা ঘুমিয়ে পড়েছেখাবারটা টেবিলে রাখা রয়েছেআমাকে খেয়ে নিতে হবে।  আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম চাঁদটা সরে গেছেকোথা থেকে একরাশ মেঘ এসে চাঁদটাকে ঢেকে দিয়েছে।  অসময়ের কুচকুচে কালো মেঘএ মেঘকে যে আমি এসময় দেখবো আশাই করিনিবেচারী চাঁদ হবো হবো সন্ধে থেকেই দুহাতে দু মুঠো জোৎস্না ছড়িয়ে ছিল চারপাশেচাঁদ বোধহয় অকালেই ঝরে পড়লমাঝরাতেই ঢলে পড়েছে চাঁদতাহলে কি আমার জীবনটাও তাই?-
মনে পড়ছিল, বিদিশাকে একদিন অনেক রাত অবধি একা পেয়ে একটা গান গেয়েছিলাম, ‘এখনি বিদায়, বোলো নাএখনো আকাশে চাঁদ জেগে আছেকোন কথা তো এখনো হল নাএখনি বিদায় বোলো না।’
বিদিশা আমাকে বিদায় দিয়ে চলে গেলআর যখন ফিরেই এলসেই চাঁদটাকে কিন্তু আমি আর দেখতে পাচ্ছি না
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#54
(03-07-2021, 10:42 PM)Lajuklata Wrote: অসাধারণ। সাথেই আছি, চালিয়ে যান।

ধন্যবাদ। সাথেই থাকুন।
Like Reply
#55
(03-07-2021, 11:04 PM)raja05 Wrote:
(01-07-2021, 10:31 PM)Lekhak is back Wrote:
[Image: ME1KVUE_t.jpg]

জীবন যে রকম’ উপন্যাস লেখা শুরু করেছিলাম আজ থেকে প্রায় আট- ন বছর আগেশুরু করেও শেষ করে উঠতে পারিনিলেখার জগত থেকে হারিয়েই গেছিলাম জীবনের অনেক বাঁধা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আজ আবার ডায়েরী আর পেন নিয়ে বসেছি এই উপন্যাসের অনেক ঘটনাই বাস্তবে আমার জীবনের সাথে মিল প্রেমের উপন্যাস আমি আরো একটি লিখেছি দুটোই অসমাপ্ত ছিল ফিরে এলাম অসমাপ্ত উপন্যাস সমাপ্তি করণের ইচ্ছা নিয়ে তবে পাঠকদের জানিয়ে রাখি, শেষ টুকু পড়তে হলে, কাহিনীর শুরু থেকে আবার একবার পড়ে নিতে হবেকারণ দুটি অধ্যায়ের সংযুক্তিকরণ হয়েছে পুরোনো লেখার সাথেইসকলকে আমার নমষ্কার ও ধন্যবাদ জানাই। 
ইতি
লেখক
 
[/quot


Welcome back dada.....it's very sweet story......pure natural emotions
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
[+] 1 user Likes Lekhak is back's post
Like Reply
#56
আগামীকাল থেকে নতুন লেখা শুরু।
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#57
(03-07-2021, 11:27 PM)Lekhak is back Wrote: আগামীকাল থেকে নতুন লেখা শুরু।

Atlast......eagerly waiting.....thank you
Like Reply
#58
অসাধারণ প্লট এবং লিখনি। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
Like Reply
#59
(04-07-2021, 05:34 AM)raja05 Wrote: Atlast......eagerly waiting.....thank you

অনেক ধন্যবাদ। আজকে থেকে নতুন আপডেট শুরু।
Like Reply
#60
(04-07-2021, 07:13 AM)Thumbnails Wrote: অসাধারণ প্লট এবং লিখনি। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

অনেক ধন্যবাদ। আজকে থেকে নতুন পর্ব।
Like Reply




Users browsing this thread: 2 Guest(s)