Thread Rating:
  • 9 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Non-erotic দেবলীনার সংসার জীবন by MANOJ M
#21
বারো


দু চারজন যুবক উকিলবাবুকে একটু সকাল সকালই নিতে এসেছিলো। একই গাড়ীতে উকিলবাবু দেবলীনাকে নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কেন্দ্রে গিয়ে উপস্থিত হলেন।
বিরাট এক উন্মুক্ত মাঠ, তারই মাঝখানে কয়েকখানা চৌকি জুড়ে নীলকাপড় মুড়ে মঞ্চ করা হয়েছে। সামনে ত্রেপল পাতা তাতে ছেলে পিলেরা বসেছে। পিছনের চেয়ারে অতিথিবৃন্দ।
ঠিক সময় মতো মঞ্চের পর্দা উঠে গেলো।
অনেকদিন পর দেবলীনা আবার ধরণের অনুষ্ঠানে যোগদান করলো। মনটা তার বেশ খুশীতে ভরে উঠেছিলো।
একজন ভদ্রস্ত একখন্ড কাগজ হাতে করে মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে আরম্ভ করলো - আজ আমাদের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন আমাদেরই গ্রামের প্রখ্যাত উকিল মাননীয় শ্রী সঞ্জীব মিত্র। প্রধান অতিথির আসন গ্রহণ করবেন মাননীয় অধ্যাপক চন্দ। কিন্তু তিনি এখনও এসে পৌঁছান নি। সংবাদ পাঠিয়েছেন, দুচার মিনিটের মধ্যেই এসে পড়বেন।
অধ্যাপক চন্দর নাম শুনে দেবলীনার মনটা যেন কিরকম চঞ্চল হয়ে পড়লো। মনে মনে চিন্তা করতে লাগলো কোন চন্দ? যাঁর নিকট আমি চীন ভাষা শিখেছি ? যিনি আমার বাবার বিশেষ্ট বন্ধু ছিলেন? সে চন্দ এখানে। আমাদেরই চন্দন গাঁয়ে !!
একটা ছোট মেয়ে সঞ্জীববাবুর গলায় মালা পরিয়ে দিলো, অমনি মঞ্চের বাইরে, ভেতরে হাততালির শব্দ শোনা যেতে লাগলো।
-
ছাড়াও আমরা এখন যাদের যাদের মালা দেবো সকলেই জ্ঞানী, গুণী, শিল্পী।

তিনি একে একে নাম পরিচয় দিতে লাগলো। ছোট মেয়েটি সকলের গলাতেই মালা পরিয়ে দিতে লাগলো।
হঠাৎ বাইরে কিসের যেন একটা গুঞ্জন শোনা যেতে লাগলো। একজন শ্যামবর্ণ মোটা সোটা প্রৌঢ় ব্যাক্তি উঠে এলেন।
-
আমাদের প্রধান অতিথি এসে গেছেন এবার তাঁকে মালা দেওয়া হবে।

দেবলীনা যা আশা করেছিলো ঠিক তাই। যে প্রফেসর চন্দ। যার কাছে সে চীনা ভাষা শিখেছিলো এবং যিনি তার বাবার অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন।
প্রথমেই অধ্যাপক চন্দ বক্তৃতা দিলেন।
বক্তৃতা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সকলে হাততালি দিয়ে উঠলো।
দেবলীনা সামনের চেয়ার ছেড়ে মঞ্চে ঢুকে অধ্যাপক চন্দকে প্রণাম করে বললো - আমায় চিনতে পারছেন স্যার ?
অধ্যাপক চন্দ দেবলীনার বাবার বন্ধু হলেও তাঁকে দেবলীনা শিক্ষকের সন্মানেই সম্বোধন করে।

অধ্যাপক চন্দ প্রথমটা দেবলীনাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করে কাঁধে হাত রেখে হেঁসে বললেন - তুমি? তুমি এখানে?
-
স্যার, এখানে আমার শ্বশুর বাড়ী।
-
তাই নাকি। শুনে খুব খুশী হলাম।

পাশের চেয়ারে সঞ্জীববাবু বসে ছিলেন। দেবলীনা তাঁকে দেখিয়ে বললেন ইনি আমার শ্বশুর শ্রী সঞ্জীব মিত্র।
সঞ্জীববাবু অধ্যাপক চন্দ উভয়ে উভয়কে হাত জোড় করে নমস্কার করলেন।
উভয়ের মধ্যে নতুন প্রীতির সম্বন্ধ গড়ে উঠলো।
সঞ্জীববাবু বললেন - আসুন না আমার বাড়ী। বেশী দূর নয়। সামনেই। গেলে খুব খুশী হবো।
-
আজ নয় আর একদিন।
-
তা হয় না স্যার, আজই। দেবলীনা বললো।
-
কিন্তু কাজের ক্ষতি হয়ে যাবে যে।
-
তবে কথা দিয়ে যান, কবে আসবেন?
অধ্যাপক চন্দ ভাবতে লাগলেন।

দেবলীনা বললো - আমি গাড়ী পাঠিয়ে দেব কিন্তু।
-
আমি তোমায় খবর দেব তখন, ভাবতে হবে না কেমন।
-
ঠিক আছে, এই কথা রইলো। না আসলে কিন্তু দুঃখ পাবো।
-
নিশ্চয়ই যাবো। আচ্ছা তারপর পড়াশুনা করছো তো ?
দেবলীনা ঘাড় নেড়ে জানালো, না।

অধ্যাপক চন্দ বললেন সে কি মা। বিয়ে হয়ে গেছে বলে পড়াশুনা ছেড়ে দিয়েছো। না--না-- এটা তোমার উচিত হয়নি।
দেবলীনা চুপ করে রইলো।
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#22
অধ্যাপক চন্দ সঞ্জীববাবুর সামনের চেয়ারের মুখোমুখি বসে বললেন - জানেন সঞ্জীববাবু মেয়েটার অসাধারণ প্রতিভা। যে কটা ভাষা আমার কাছে শিখেছে, সবগুলোতেই খুব কম সময় লেগেছে আর শিখেছেও নিপূনভাবে।

সঞ্জীববাবু বিস্ময়ে দেবলীনার দিকে তাকালো।
অধ্যাপক চন্দ আর কিছু বলার জন্য শুরু করলেন। দেবলীনা অনুপায় হয়ে বাধা দিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু বলার মত কিছুই মনে এলো না। শুধু বললো - স্যার....
অধ্যাপক চন্দ বললেন - আহা, লেখাপড়ার ব্যাপারে অমন লজ্জা করলে চলবে কেন? নিজে থেকেই তোমার প্রপোজালটা দেওয়া উচিত ছিলো। নইলে তোমার ভেতরে যে জ্ঞান সংগ্রহ করার একটা স্পৃহা আছে, কথাটা ইনি জানবেন কি করে? কি বলেন সঞ্জীববাবু ?
সঞ্জীববাবু বললেন - না--না এতে বউমার কোন দোষ নেই। আমাদেরই দোষ। এটা কোন প্রোপোজালের কথা নয়, আমাদেরই অন্তরিকতার অভাব। আমি বউমার পড়াশুনার ব্যবস্থা যত শীঘ্র পারি করবো।

দেবলীনা শ্বশুরের কথা শুনে হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
সঞ্জীববাবু যে কতো বড় মনের মানুষ, দেবলীনা তা নিজে থেকেই মুহুর্তে অনুভব করতে পারলো।
শ্বশুরের কাছে সে যেন হেরে গেলো। এমনি করেই যেন সঞ্জীববাবু প্রতিটি অনুক্ষণ তার মন কেড়ে নিচ্ছেন।

স্টেজের ড্রপসিন আবার উঠলো।
কবিতা পাঠ চলতে লাগলো পরে রবীন্দ্রসঙ্গীত।
এরপর একটা সাঁওতালী নাচ আরম্ভ হলো।
অনুষ্ঠান শেষ।

[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#23
এগিয়ে নিয়ে চলুন।
Like Reply
#24
তেরো



গ্রামখানা জড়িয়ে যেন একটা মন মাতানো হাওয়া বইছিলো। গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে উকিলবাবুর গাড়ী আসছিলো। অনুষ্ঠান শেষ হবার পর গাড়ীতে উঠে সঞ্জীববাবু দেবলীনা দুজনেই নীরব। কোথায় যেন তার কেটে গেছে। কেউই বুঝতে পারছে না, দুজনের মধ্যে এতদিন পর আজ হঠাৎ নীরবতা এতো তফাৎ নেমে এলো কেন! তাদের মধ্যে কোনদিন ছিল না।
বাতাসের সরসর শব্দ যেন দুজনের কানে যেন স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে।
-
বউমা....
দেবলীনার মনে কথাটা যেন একটু আশংকা, একটু নিষ্ঠা আর একটু স্পন্দন নিয়ে জীবন্ত হয়ে ওঠে।

আরও কতদিন কতবার সঞ্জীববাবু দেবলীনাকে নামে ডেকেছেন কিন্তু তখন তো তার এমন শিহরণ জাগে নি। মনে কোন চঞ্চলতা এনে দেয় নি। তবে আজ কেন অনুভূতি?
দেবলীনা উত্তর করলো - বাবা....
-
তুমি কটা ভাষা জানো ?
দেবলীনা মনটাকে শক্ত করে বেঁধে রাখে। এটা কি তার অপরাধ? সে অমন ভয় পাচ্ছ কেন? শান্ত ভাবে উত্তর দিলো - কয়েকটা।

সঞ্জীববাবু আবার চুপ করে রইলেন।
গাড়ীটা চলছে আস্তে আস্তে।
সঞ্জীববাবু আবার নীরবতা ভেঙ্গে বললেন - একথা তুমি আমায় বিয়ের আগে বল নি কেন ?
-
আপনি তো আমায় লেখাপড়া সম্বন্ধে কিছুই তখন জিজ্ঞাসা করেন নি।

আবার সঞ্জীববাবু চুপ করে গেলেন।
একে একে সৌরভের বিয়ের সমস্ত ঘটনাগুলি সঞ্জীববাবুর মনে পড়ে গেলো।
সত্যি তিনি দেবলীনার লেখাপড়া সম্বন্ধে কিছু তখন জিজ্ঞাসা করেন নি। তিনি ধারনা করে নিয়েছিলেন দেবলীনা উচ্চ শিক্ষিতা কিন্তু অতো ভাষাবিদ হতে পারে একথা তিনি পর্যন্ত ভাবতেই পারেন নি।
ভাববার কোন যুক্তি ছিলো না।
এমন কি বিয়ের পরও দেবলীনার চাল চলনে, কথাবার্তায় আজও পর্যন্ত তিনি এর কোন চিহ্নই বুঝতে পারেন নি।

দেবলীনা বুঝতে পারছে না হঠাৎ এটা একটা কি রকম পরিস্থিতির উদ্ভব হলো। আজ পরিস্থিতির জন্যই বা সে নিজে কতটুকু দায়ী? সে নিজেই বা এর জন্য কি করবে।
দেবলীনা সঞ্জীববাবুর দুটি হাত চেপে ধরে যেন আর্দকন্ঠে বললো- বাবা !
সঞ্জীববাবু তবু কোন কথা বললেন না।

দেবলীনা সঞ্জীববাবুর দিকে কিছু শোনবার আশায় তাকিয়ে থাকে।
-
আচ্ছা মা, তুমি কি কোন রাজনৈতিক পার্টির সদস্যা?
-
না বাবা। সমাজে নারীরা যাতে যোগ্য সন্মান পায় তার জন্য চেষ্টা করতাম।

সঞ্জীববাবু ছেলের বউকে বুকে টেনে নিলেন। বললেন - না--মা--না, আর তোমাকে আমি ধরে রাখবো না। আজ থেকে তোমার আর কোন কথাই আমি শুনবো না। তোমার আদেশেই আমি চলবো

Like Reply
#25
চোদ্দ



একদিন সঞ্জীববাবু কোট থেকে ফিরে নিজের লাইব্রেরী রুমে ঢুকে দেখলেন দেবলীনা লাইব্রেরী রুমে বসে একটা বই পড়ছে।
দেবলীনাকে দেখলেই সঞ্জীববাবুর মন খুশীতে ভরে উঠতো। আজ আবার নিজের লাইব্রেরী রুমে দেখতে পেয়ে আরও উৎফুল্ল হয়ে বললেন - কি মা, তুমি কি আবার ওকালতিও পাশ করতে চাও নাকি? বেশ ভালোই হলো, বাড়ীতে আমার একটা মাস্টার পাবো।
দেবলীনা চোখ কপালে তুলে বললো - আমি আপনার মাস্টার হবো? চিন্তা করলেও ভয় হয়।
সঞ্জীববাবু দেবলীনার পাশে বসে বললেন - কেন মা? ওকালতিতে না হোক, অনেক বিষয়ে তুমি আমার মাস্টার তো হয়েই আছো। আমি যদি এক হই তুমি হবে পাঁচ।
দেবলীনা বইটা কোলে রেখে চোখ দুটো কপালে তুলে বললো - কি যে বলেন ! আমি শূন্য।
এরপর দুজনেই হেঁসে ওঠে।
-
হ্যাঁ আর একটা কথা। কাল কিন্তু বিকালের মধ্যেই তোমার গাড়ী আসছে।

দেবলীনা বিস্ময়ে শ্বশুরের দিকে তাকিয়ে রইলো। বললো - কিসের গাড়ী বাবা ?
-
কেন, তুমি জানো না? তোমার নিজের জন্য যে আমি একটা গাড়ী অর্ডার দিয়েছি, সে গাড়ী।
-
আমার জন্য গাড়ী? আমি গাড়ী নিয়ে কি করবো?
-
গাড়ী দিয়ে কি করবে মানে? আগে যা করতে তাই করবে।

দেবলীনা হেঁসে উত্তর দিলো - আগে আমি কি করতাম বাবা?
সঞ্জীববাবু হেঁসে বললেন - এই মনে কর সাইকেলে চড়ে জনসভা, নানা রকম সামাজিক কাজ, তারপর.... মানে আগে তুমি সাইকেলে চেপে তোমার খুশীমতো যে যে কাজ করতে এখন এই নতুন গাড়ীখানায় চেপে তোমাকে সেই সব কাজ করতে হবে।
-
আপনি কি বলছেন বাবা! দেবলীনার দুচোখ ছলছল হয়ে উঠলো।

সঞ্জীববাবু দেবলীনার দুকাঁধে দুহাত রেখে বললেন - আমি ঠিকই বলছি মা। তুমি মুক্তগণের পাখী, তোমাকে আর বেঁধে রাখতে চাই না। এখন থেকে তোমার মন যা চায় তাই করবে। বাড়ী থেকে কোন বাধা আসবে না। আমি তোমাকে আর সংসারের এসব কাজের মধ্যে আটকে রাখতে চাই না।
-
তা হয় না বাবা। এখন আমি সংসারী।
-
হলেই বা সংসারী তোমাকে তো আমি সংসার ছেড়ে চলে যেতে বলছি না কিন্তু সংসারের আর কোন দায়িত্বই তোমার ওপর থাকবে না। আমার ঘরে এতো লোকজন থাকতে তুমি কেন ওসব করতে যাবে।

দেবলীনা চুপ করে রইলো।
সঞ্জীববাবু আবার বলে চললেন - আমি জানি, আমি বুঝতে পেরেছি, তোমার সেই আগের মত কর্মস্পৃহা আজও মনের মধ্যে জেগে রয়েছে। মাঝে মাঝে সে ইচ্ছা, সে স্বপ্ন মনের অনুশাসন মানতে চায়না। সকলের আহ্বান তোমার মনকে চঞ্চল করে তোলে। কিন্তু তবু তুমি সে সব জোর করে দমিয়ে রাখো। আর আমি তা হতে দেব না।
সঞ্জীববাবু যেন অল্পের জন্য হঠাৎ থেমে আবার বলতে লাগলেন - মা, আমি চাই আবার তুমি তোমার সেই অবিবাহিত জীবন ফিরে পাও। নেমে আসো আগেকার মতো দেশের সেই আর্তদের মধ্যে। করো তাদের সেবা। যে জন্য শিক্ষা নিয়েছো, সেকাজে জীবন উৎসর্গ করো। আমি জানি তোমার মন এটাই চায়। তাই মনকে আটকে রেখোনা। আমরা সবাই তোমার পাশে থাকবো

Like Reply
#26
পনেরো


সঞ্জীববাবুর কথা শুনে দেবলীনার যেন হঠাৎ কতো পরিবর্তন হয়ে গেলো। সমস্ত উচ্ছসিত গোপন আকাঙ্ক্ষা যেন মনের দুয়ারে এসে কাতর প্রার্থনা করতে লাগলো।
বাবার কথাগুলো কি ঠিক নয়, সে কি মনে মনে আজও তাই চায় না ?
সমস্ত চিন্তা শেষ হতে না হতে, সঞ্জীববাবু কথা আবার দেবলীনার কানে নানান সূরে ভীড় করে।

সঞ্জীববাবু বলতে লাগলেন - তুমি এবাড়ী আসার পর থেকে আমিও যেন এক নতুন মানুষ হয়ে গেছি। জানো মা, এই সঞ্জীব মিত্র আর দুবছর আগের সঞ্জীব মিত্রের মধ্যে অনেক তফাৎ। নতুন যা কিছু সবই নীরব মন্ত্রের মতো তোমার কাছে পাওয়া।
সঞ্জীববাবু আর এক সেকেন্ডও অপেক্ষা না করে লাইব্রেরী রুম থেকে বেরিয়ে এলেন।

পরেরদিন ভালো একখানা নতুন গাড়ী এলো। সাদা ধবধবে বকপাখীর মতো গায়ের রং। গাড়ীটা যখন চলে গাঁয়ের লোকেরা, পাড়ার লোকেরা সকলেই জানে সঞ্জীববাবুর ছেলের বউ যাচ্ছে।
দেবলীনার নতুন করে জীবন শুরু হয়ে গেলো।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর অধ্যাপক চন্দ পরপর তিনচারদিন দেবলীনা আর সঞ্জীববাবুর অনুরোধে বাড়ীতে এলেন। লোকটিকে দেবলীনার খুব ভালো লাগে।
পান্ডিত্য অগাধ। অনেকগুলো ভাষা জানেন। নিষ্ঠার সঙ্গে আজও তিনি ভাষা চর্চা করে চলেছেন। সাংবাদিক জীবনে অধ্যাপক চন্দের সঙ্গে দেবলীনার বাবার পরিচয় হয়। দেবলীনার বাবা অধ্যাপক চন্দের একেবারে কাছের বন্ধু ছিলেন।
যদিও দেবলীনার গুরু তার বাবা সৌমেন দত্ত তবু অধ্যাপক চন্দের চরিত্র, ব্যক্তিত্বকে সে অত্যন্ত সন্মান করে।
সে অধ্যাপক চন্দের কাছ থেকে ভাষা শিখতে গিয়েও নানারকম ভাবে উৎসাহ পেয়েছে, সাহায্য পেয়েছে। বিভিন্ন ভাষায় যখন তার মন মশগুল হয়ে থাকতো, নতুন নতুন শব্দের অনুসন্ধান করতে পেরে যখন তার মন উদ্ভাসিত হয়ে উঠতো তখন মৃদু হাতের পরশ দিয়ে অধ্যাপক চন্দ বলতেন - মাই গার্ল, জন্যই আমি তোমায় এতো ভালোবাসি। আরো অনুসন্ধান চালিয়ে যাও। দেখতে পাবে এরমধ্যে আরো কত আনন্দ আছে।
আসলে এসব উৎসাহ দানের মধ্যেই নিহিত রয়েছে অধ্যাপক চন্দের মূল শিক্ষার আনন্দ আর এজন্যই দেবলীনা অধ্যাপক চন্দকে এতো শ্রদ্ধা সন্মান করে।

কিন্তু এই অধ্যাপক চন্দ চার পাঁচ বছর কোথায় ছিলেন, দেবলীনা তার অনুসন্ধান চালিয়েও খোঁজ করে উঠতে পারে নি। তিনি মাঝে মাঝে এরকমভাবে হারিয়ে যান আবার ভেসে ওঠেন। এর কারণ কি, সচরাচর কথার উত্তর তিনি কাওকে বড় একটা দেন না।
একবার প্রায় এক বছর পর্যন্ত অধ্যাপক চন্দ দেবলীনাদের কাছ দেকে নিখোঁজ হয়ে ছিলেন। এক বছর পর দেবলীনার বাবা অধ্যাপক চন্দকে মস্কোর এক চাষীর ঘর থেকে বার করেছিলেন।
দেবলীনা জিজ্ঞাসা করেছিলো - এতদিন চিঠিপত্র দেন নি কেন ?
অধ্যাপক চন্দ হাসতে হাসতে বলেছিলেন - এতো দিন রাশিয়ায় এক চাষীর ঘরে অতিথি হয়ে ছিলাম। সেখানকার চাষীদের জীবন উপভোগ করলাম। সত্যি কি সুন্দর !
অধ্যাপক চন্দ এইভাবে মাঝে মাঝে নিজেকে লুকিয়ে রেখে নিজেকে অনুসন্ধান করে বেড়াতেন
Like Reply




Users browsing this thread: