Thread Rating:
  • 9 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Non-erotic দেবলীনার সংসার জীবন by MANOJ M
#1
দেবলীনার সংসার জীবন

MANOJ M



Collected from Xossip web archive
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#2


পরচর্চা পরনিন্দা হিংসা যে মানুষকে কতটা নিচে নামাতে পারে এবং তার ফলে মানুষের যে কতটা সর্বনাশ হতে পারে সেই নিয়েই এই গল্প দেবলীনার সংসার জীবন।।

==
বিশেষ দ্রষ্টব্য==
এই গল্পে কোনরকম যৌনতামূলক বিবরণ থাকবে না। তাই যারা এখানে শুধুমাত্র যৌন চাহিদা পূরণের জন্য আসেন তারা এই গল্প থেকে শত হাত দূরে থাকুন। ধন্যবাদ
Like Reply
#3
এক


দেবলীনাকে এগাঁয়ে কে না চেনে। ওর নাম প্রায় সকলের মুখে মুখে।
মোহিত গ্রামের মেয়ে দেবলীনাকে নিয়ে সকলের ঘরে ঘরে আর এই হীরামতিঝিলের শেওলা পড়া ঘাটটার ওপর দাঁড়িয়ে যতো আলোচনা, যতো কথা।
অবশ্য আলোচনা হওয়ারই কথা। এত লেখাপড়া জানা মেয়ে নাকি গ্রামে কেউ ছিলো না। দেবলীনাই প্রথম। তাই সংস্কারবদ্ধ মেয়েদের কাছে এক বিস্ময় ভয়ংকর।
ওর সব কিছুই ছিল গাঁয়ের অন্যান্য মেয়েদের থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। ওর চলা ফেরা দেখে গ্রামের অনেক মেয়েরই পছন্দ হতো না, হিংসে হতো।
দেবলীনা শহুরে মেয়েদের মতো ফুলপ্যান্ট পড়ে সাইকেলে চেপে ঝিলটার পাশের চওড়া রাস্তাটা দিয়ে চলে যেতো, কারো কথা বা মন্তব্যের দিকে কোনো রকম নজর দিতো না।
কোথায় যেতো তা কেউ জানতো না। হয়তো কখনো বেড়াতে কখনো কারো বাড়ী বা কোন কাজে।
কেউ কেউ বলতো মেয়েটা পার্টি করে, নইলে অমন চলা-ফেরার পোষাক হয় ?
গ্রাম্যমেয়েরা ছোট বড় মিলিয়ে সবাই যখন খুশি সকাল সন্ধ্যায় এই হীরামতিঝিলটার শেওলা পড়া স্যাঁৎসেঁতে সিঁড়িগুলোতে দাঁড়িয়ে ধরণের নানান রকম কথা বলতো দেবলীনাকে নিয়ে।
অনেকেরই ধারণা মেয়েটা এত শিক্ষিতা হলে কী হবে একেবারে বাজে মেয়ে। আবার কেউ কেউ হয়তো কথাটা পুরোপুরি একবারে সমর্থনও করতো না। বলতো ধ্যাত ওসব কিছু না শহুরে মেয়ে তো তাই ওরকম।

তখনো হীরামতিঝিল গ্রাম্যমেয়েদের গুঞ্জনে মশগুল হয়ে ওঠেনি। সবে একে একে মেয়েরা আসতে আরম্ভ করেছে।
মংলির মা এসেছে প্রথমে। আধাআধি বয়েস। মাথার চুলে কোনদিনই তেল মাখে না, একগোছা চুল খয়েরি রঙের মতো লাল হয়ে রয়েছে। মংলির মা একটা ঘড়া কাঁকে, গামছা কাঁধে, সকলের একটু আগে সময়ে রোজই আসে। এতো বড় ঝিলটা সে নাকি একাই পার হতে পারে, বাপের বাড়ী সে এরচেয়ে বড় ঝিল পার হয়েছে। নিয়ে সে রোজই সকলের সঙ্গে বাজি রাখে কিন্তু তার সঙ্গে এনিয়ে বাজি রাখতে কেউ সাহস করে না। সকলে তো মংলির মায়ের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়।
একে একে অনেকেই আসতে আরম্ভ করলো। বীণাও এসেছে। বীণা চুপটি করে বসে থাকে পাথর বাঁধানো রকটায়। মংলীর মার মতো এরকম আরও কয়েকজন আছে যেমন বিন্দুবালা, বিমলা কাকী এদের কথাবার্তা তার একদম ভালো লাগেনা। তাই সে কোন কথা না বলে চুপ করে বসে বসে শেওলা পড়া রকটা থেকে সবুজ ছোট ছোট গাছগুলো নাড়াচাড়া করতে থাকে।
মংলীর মা জলে নেমেছে, কখন জল থেকে উঠবে কেউ জানে না। কোন কোন দিন সকলের আগে নামে সকলের পরে যায়।
বীণা বসে থাকে তার সমবয়সী আরও সব মেয়েরা আসবে ওদের সঙ্গে একসাথে জলে নামবে।
হঠাৎ সাইকেলের ঘন্টার আওয়াজ শোনা গেল।
মংলীর মা জলে ডুব দিয়েছিল কিন্তু সে যেন জলের তলা থেকে ঘন্টার আওয়াজ শুনতে পেয়ে মাথা তুললো। মুখ উঁচু করে চেয়ে দেখলো সেই মেয়েটা যাচ্ছে। দেবলীনার ধরণের চাল চলন সে মোটেই পছন্দ করতো না। সে নাক সিঁটকিয়ে আবার জলে ডুব দিলো।
Like Reply
#4
বীণা দেবলীনার দিকে তাকিয়ে রইলো। দেবলীনা হীরামতিঝিলটার পাশের বড় চওড়া রাস্তাটা দিয়ে সোজা গেলো। দেবলীনাকে ভাবে দেখলে বীণার কিন্তু মোটেই খারাপ লাগেনা বরঞ্চ তার আনন্দ হয়।
ক্রমে ক্রমে আসর জমে উঠলো।
দানার বউ এলো, বিন্দুবালা এলো, বিমলা এলো। বিন্দুবালার চুল পেকছে, বিমলার একরকম বলতে গেলে কাঁচা বয়েস কিন্তু দুজনের মধ্যে মিল অনেক।
বিন্দুবালা কোমর জলে নেমে বলতে লাগলো, শুনেছিস বিমলা মুখপুড়ী মেয়েটার সঙ্গে আর আমাদের উকিলবাবুর ছেলের সঙ্গে নাকে বিয়ে।
বিমলা বললো - কার কথা বলছো পিসি ?
-
যে লা, ঐযে কোট পেন্ট পরে সাইকেলে চেপে..
-
! দেবলীনা? বিমলা বললো।
বিন্দুবালা মুখটা হাঁড়ির মতো করে বললো - হ্যাঁ লো হ্যাঁ দেবলীনার সঙ্গেই নাকি আমাদের সৌরভের বিয়ে।
বিমলার চোখ দুটো বড় হয়ে ওঠে - বলো কি পিসি! উকিলবাবু কি মেয়েটার চরিত্তির জানেন না ?
বিন্দুবালা বলে - আমিও তো তোকে সেই কথাই জিজ্ঞেস করছি। অমন একটা ঢিংগী মেয়ে, যে নাকি সমস্ত গ্রামখানায় চৈ চৈ করে বেড়ায়, তার সঙ্গে কিনা সৌরভের বিয়ে।
বিমলা বললো - ঘর জ্বালিয়ে খাবে।
বিন্ধুবালা যেন ইন্ধন পেয়ে বলে ওঠে - জ্বালিয়ে খাবে মানে দুদিনও যাবে না সব ছারখার করে দেবে। লোক চিনতে আর আমার বাকী নেই। এই করে মাথার চুল পেকে গেলো।
মংলীর মা হঠাৎ জল থেকে মুখ উঁচু করে বলে উঠলো - এইতো এইমাত্র গেলো মেয়েটা সাইকেলে চেপে।
বিন্দুবালা বললে - যাবে না ? রোজই তো যায় এখান দিয়ে। ওর কি আর লজ্জাশরম আছে। বলি, তুই কি সাইকেল ছাড়া হেঁটে যেতে পারিস না? ঐসব ইংরেজী পোষাক ছাড়া কাপড় পরতে পারিস নে ?
বীণা বিন্দুপিসির চোখ মুখের ভাব দেখে আর সহ্য করতে না পেরে বলে উঠলো - তাতেও কি তোমরা ওকে নিস্তার দিতে পিসি ?
বিন্দুপিসি এক ধমক দিয়ে বললো - তুই থামতো বীণা, তোতে আর ওতে কোন তফাৎ নেই। তোরও কি লজ্জাশরম আছে ?
বীণা চুপ করে গেলো।
বিমলা বললো - জানো পিসি দেবলীনা একবার আমার বাড়ী গিয়ছিলো আমার মেয়েকে চাইতে। বললে কিসের ভিলেন্টিয়ার করবো। কথাটা শুনে আমার এতো গা জ্বালা করে উঠলো! সহ্য করতে না পেরে আমি অমনি দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছি। আমার সোমত্ত মেয়েকে ওই ঢিঙ্গি মেয়ের সাথে বার হতে দোবো আমার কি মাথা খারাপ হয়েছে গা।
বিন্দুবালা বললো - ঠিক করেছিস বিমলা। ওর সঙ্গে গ্রামের মেয়েদের মেলা মেশা করতে না দেওয়াই ভালো। মেয়েরা সব ওর মতো উচ্ছন্নে যাবে।
মংলির মা বললো - কিন্তু আমি বলছি উকিলবাবুর কথা। উকিলবাবু কি মেয়েটার চরিত্তি সম্বন্ধে জানেন না? মেয়েটা তো তার বাড়ীর পাশের রাস্তা দিয়েই যায়। তিনি সবই দেখেন, জানেন শোনেন তবে কেন তিনি নিজের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে চলেছেন, ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারলাম না পিসি।
বিন্দুপিসি বলে - আর আমি কি করে বোঝাবো বল। বড় লোকের বড় ব্যাপার, ওদের কথা ছেড়ে দে। ওদের সবই শোভা পায়।
মংলীর মা চুপ করে মনে মনে আর একটা কিছু ভাবতে থাকে।
সুশীল সেনের বউ সুমিত্রা এলো ঘাটে পেছনে পেছনে তার সাত-আট বছরের মেয়ে শিপ্রা। তার বাবরিওয়ালা কোঁকড়ানো লম্বা লম্বা কালো কুচকুচে চুলগুলো কাঁধ ছাপিয়ে চলে গেছে।
বিমলা বললো - এই যে এসেছে, বড়লোকের ঝি।
মংলীর মা জল থেকে মুখ তুলে সুমিত্রাকে একবার দেখে নিলো।
বিন্দুবালাও মুখ চোখ বাঁকিয়ে কোমর এলিয়ে একবার সুমিত্রাকে দেখে নিলো।
সুমিত্রা এসব রোজই দেখে কিন্তু নজর দেয় না, আজও তাই সে এসব কিছু লক্ষ না করে সোজাসুজি ঘাটে নেমে চান করতে লাগলো।
Like Reply
#5
শিপ্রা সাবানটা অনেক্ষণ ধরে হাতে ঘসে ঘসে মুখে লাগালো। বীণার সঙ্গে শিপ্রার খুব ভাব। সে শিপ্রাকে বললো - এই সাবানটা নষ্ট করছিস কেন? দেতো আমি একটু মুখে লাগাই।শিপ্রার ভাব দেখে বীণা হেঁসে ফেললো। নিমাইয়ের বোন আসতে দুজনে জলে ঝাঁপ দিলো।
সেনেদের বাড়ীর ঠাকুমা এলো।
শিপ্রা চুপ করে বীণার সাঁতার দেখছিলো মনে মনে ভীষণ আনন্দ হচ্ছিলো ওর।
সেনেদের বাড়ির ঠাকুমা বললো - কি, মা শিপু কি হচ্ছে?
শিপ্রা বললো - দেখোনা ঠাকুমা বীণাদি কি সুন্দর সাঁতার কাটছে।
ঠাকুমা একগাল হেসে বললো তুমিও বীণাদিকে বলো না তোমায় সাঁতার শিখিয়ে দেবে। তখন তুমিও কি সুন্দর করে সাঁতার কাটতে পারবে।
শিপ্রার চুলগুলি আনন্দে নড়ে ওঠে! হাত নেড়ে বলে বীণাদি বীণাদি...
বীণা দূর থেকে হাত তুলে বলে, শিপু...
শিপ্রার মনে হয় সে এখনই জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

অন্ধকার মন মাতানো চঞ্চল গতি নিয়ে পৃথিবীর বুকে সুপ্ত আবেশ জাগিয়ে দিতে ছুটে আসছে। একটু পরেই হীরামতিঝিল, ঘন বনানী, শ্যামল প্রান্তর সব শূন্য হয়ে পড়ে থাকবে কোটি কোটি তারা ভরা নীল আকাশটার নীচে।
আবার সেই সাইকেলের ঘন্টার আওয়াজ শোনা গেলো।
বিমলা বললো - নিশ্চয়ই দেবলীনা।
মংলীর মা জল থেকে মাথা উঁচু করে বললো - সেকি আর বলতে। ছাড়া আর কে এমন সময় সাইকেল চালিয়ে যাবে ?
দেবলীনা এতক্ষনে ঘাটের কাছাকাছি চলে এসেছে। বীণা ভিজে কাপড়ে দৌড়তে দৌড়তে ডাকলো, দেবলীনাদি দেবলীনাদি।
নিমাইয়ের বোন গেলো।
বীণাকে যেতে দেখে শিপ্রাও ছুটলো।
দেবলীনা শিপ্রাকে সাইকেলে চাপিয়ে নিলো।
মংলির মা অতটা সহ্য করতে না পেরে জ্বালায় ফেটে পড়লো গলার সুরটা কাঁপিয়ে বললো - ঢং দেখে আর বাঁচি নে।
সেনেদের বাড়ীর ঠাকুমার কথাটা বেশী সুবিধে মনে হলো না। তিনি প্রত্যুত্তর দিয়ে বললেন - কেন লা, অমন কথা বলছিস কেন দেবলীনা কি ঢং দেখিয়েছে?
-
গ্রামের কোন মেয়েকে অমন ফুলপ্যান্ট পরে সাইকেলে চড়ে যেতে দেখেছো ঠাকুমা, মংলির মা হাত নেড়ে নেড়ে উত্তর দিলো।
ঠাকুমা বললো - তাতো বুঝলাম কিন্তু গ্রামের কটা মেয়ে অমন নেখাপড়া জানে বলতে পারিস তুই?
মংলির মা চুপ করে যায়। ঠাকুমার সঙ্গে কারো বেশী কথা বলতে সাহস হয়না, বিন্দুবালা পর্যন্ত বলে না।
ঠাকুমা বলতে থাকেন তোদের সবটাতেই বাড়াবাড়ি। লোকের একটু ভালো দেখলেই তার পিছনে লাগতে আরম্ভ করিস।
বিমলা বলে উঠলো ঠাকুমা একটা কথাই শিখে রেখেছে। কোন কথা হলেই কথাটা বলা চাই।
ঠাকুমা জোর করে একটা ধমক দিয়ে বলেন - চুপ করতো বিমলা। তুই, বিন্দু,মংলির মা সব একরকম। তোরা ঘাটে আসিস কখন আর যাস কখন খেয়াল রাখিস ?
আজকের মতো সকলেই চুপ করে গেলো ঠাকুমার ধমকে।
ঠাকুমা বললো - সুমিত্রা অন্ধকার হয়ে এলো চল তোকে বাড়ী দিয়ে আসি।
অন্ধকারের নাম শুনে মংলীর মা লাফ দিয়ে ঘাটে উঠে এসে বসলো।
সুমিত্রা সেনেদের বাড়ীর ঠাকুমার সঙ্গে পথ চলতে লাগলো
Like Reply
#6
দুই


গ্রামের যে মেয়ের চাল চলন দেখে সকলে এতদিন লজ্জাশরমে মরেছে সেই নির্লজ্জ মেয়েটির সঙ্গে আজ নামকরা উকিল সঞ্জীববাবুর ছেলে সৌরভের সঙ্গে দেবলীনার বিয়ে হয়ে গেলো।
মনে পড়ে মাত্র কয়েক মাস আগের কথা। সেদিন সবে সূর্য পূব আকাশে সিঁদুরমাখা রঙ নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে।
সঞ্জীববাবু বাইরের ছাদখোলা লনটায় বসেছিলেন। দূর থেকে ভেসে আসা একটা প্রভাতী মৃদুমন্দ বাতাসের উৎফুল্ল স্রোত যেন তার মনকে মাতলামী নেশার মতো জরিয়ে ধরতে চাইছে। হঠাৎই তার এই নেশার ঝোঁক কেটে গেল। একটা সাইকেলের ঘন্টার আওয়াজ পেতেই তিনি চেয়ে দেখলেন, তাঁর বাড়ির পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা সোজা সামনের দিকে চলে গেছে, সেই রাস্তাটা দিয়েই একটি মেয়ে সাইকেলে চেপে এগিয়ে আসছে।পরনে ফুলপ্যান্ট।গায়ে পকেট ছাড়া পুরুষদের মত হাফসার্ট।
সঞ্জীববাবু কিন্তু মেয়েটির পোষাক চালচলন দেখে কোনরুপ বিরক্ত বোধ করলেন না।
মুহুর্তের মধ্যে মেয়েটি সামনে দিয়ে চলে গেলো।
সঞ্জীববাবু অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলেন। এতো সুন্দরী!! যেনো লক্ষ্মী প্রতীমা, মেয়েটির সৌন্দর্য সঞ্জীববাবুকে অভিভূতো করে দিলো।
তিনি একটু ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। মেয়েটিকে যে কোন প্রকারে তার ছেলের বউ করতেই হবে। ঠিক এরকম একটি মেয়ের সন্ধানে তিনি এতদিন অপেক্ষা করছিলেন, আজ বুঝি তার সে ইচ্ছা পূর্ণ হবে !
কিন্তু কে মেয়েটি? আর কোনদিন তিনি একে রাস্তায় দেখেন নি তো ! সঞ্জীববাবু ভাবতে লাগলেন। পুরানো চাকর বংকু ফুল গাছে জল দিচ্ছিলো সে সব দেখেছিলো। তাকে ডেকে বললেন - বংকু এইমাত্র সাইকেলে চেপে এখান দিয়ে যে একটি মেয়ে চলে গেলো তাকে কি তুই দেখেছিস ?
-
দেখেছি বাবু।
-
কে এই মেয়েটি, তুই চিনিস?
-
চিনি বাবু। আমাদেরই তিন চারখানা গ্রামের পর মোহিত গ্রামে থাকে।
-
মোহিত গ্রামে ! বাবার নাম কি ?
-
তা জানিনে বাবু। তবে শুনেছি মেয়েটির বাবা নাকি ভারি পন্ডিত ব্যাক্তি ছিলেন। আমাদের দেশে থাকতেন না, নানান দেশ বিদেশে ঘোরাঘুরি করতেন। বাবা মরে যেতে এখানে ওনারা নতুন বাড়ি করে এই দু তিন মাস হলো এইছেন।
-
আজ বিকেলে আমার সঙ্গে যাবি বাড়িটা চিনিয়ে দিতে। ভাবছি সৌরভের সঙ্গে ......
-
সে আপনার প্রথম কথার ভাবেই বুঝতে পেরেছি বাবু কিন্তু ....
-
আবার কিন্তু কি ?
-
মানে গ্রামের লোকেরা ঠিক সুনজরে দেখে না।
-
কেন ?
-
মেয়েটির চালচলন দেখে বাবু। সকলে বলে নির্লজ্জ ভবঘুরে মেয়ে। যে ঘরে যাবে জ্বালাবে।
-
! বলে সঞ্জীববাবু হো হো করে হেসে উঠলেন।
বংকু কোন কথা না বলে চুপ করে থাকে।
সঞ্জীববাবুও বংকুর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন, তারপর স্বাভাবিক অবস্থা টেনে এনে বললেন আরে আজকালকার ছেলে মেয়েদের প্রথম অবস্থায় এরকম একটু হয়। তারপর বিয়ে হলে ওসব দোষ সেরে যায়, বুঝলি ?
-
আজ্ঞে বাবু
সঞ্জীববাবু এরপর আর কোন কথা না বলে চুপ করে ভাবতে লাগলেন। বংকু আবার গাছের গোড়ায় জল দিতে লাগলেন
Like Reply
#7
তিন


বেলা তখন পড়ে এসেছে। তারই ফাঁকে ফাঁকে পশ্চিম দিকের সোনালী আকাশে তখন ছোট-ছোট মেঘের সংঘর্ষ চলেছে অবিরাম। রাস্তার দুই পাশের সবুজ গাছগুলো ডানা বিস্তার করে দিয়েছে অদূর নিবিড় কালো রাত্রির দিকে আঁখি তুলে।
সঞ্জীববাবু চলেছেন বংকুকে নিয়ে দেবলীনাকে দেখতে। যদি সম্ভব হয়, আজই তিনি পাকাপাকি সব রকম ব্যবস্থা করে আসবেন।
কালো ভ্রমরের মতো গাড়ীটা চলেছে ঘরঘর শব্দ করতে করতে মোহিত গ্রামে।

দেবলীনার বাবা ছিলেন সাংবাদিক। সপরিবারে বেশির ভাগ সময় তিনি বাংলার বাইরেই থাকতেন। সঙ্গে থাকতো তার ছোট ভাই বিশ্বনাথ। দেবলীনার বাবার মৃত্যুর পর তিনি যা কিছু টাকা পয়সা রেখে গিয়েছিলেন সেই টাকা দিয়ে দেবলীনার মা অরুণা দেবীর ইচ্ছা মতো বিশ্বনাথবাবু মোহিতপুর গাঁয়ে স্থায়ী বাসিন্দা হবেন বলে এই বাড়ীটি নতুন তৈরী করেছেন।
দেবলীনা যদিও ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করেছে তবু তার শিক্ষাগুরু দীক্ষাগুরু বলতে গেলে তার বাবা আর তার বাবার একান্ত বন্ধু অধ্যাপক চন্দ। বাবার বলিষ্ঠ চরিত্র আর মানবতার আদর্শে সে সব সময় নিজেকে অনুপ্রানিত করতে চেয়েছে।

গাড়ীটা দেবলীনাদের বাড়ীর দরজায় এসে গঁ গঁ শব্দ করতে করতে একরাশ ধূয়ো ছেড়ে থেমে গেলো।
দেবলীনা গ্রামের কতগুলো ছোট ছোট ছেলে মেয়ের সাথে ফুল বাগানটায় লুকোচুরি খেলছিলো, হঠাৎ গাড়ীটার সামনে এসে ভীড় করলো।
সঞ্জীবাবু গাড়ী থেকে নেমেই তাঁর মানস কন্যাকে দেখতে পেলেন। ভিতরে তাঁর আনন্দ-স্রোত উত্তাল বেগে বইতে লাগলো।
কেউ কিছু বলার আগেই বিশ্বনাথবাবুও ভিতর থেকে গাড়ীর শব্দ পেয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। তিনিই সঞ্জীববাবুকে জিজ্ঞাসা করলেন - আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না।
সঞ্জীববাবুর মুখ যেন একটা ঈষৎ হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো !
বিশ্বনাথবাবু বললেন - আসুন ভিতরে আসুন।
বংকু গাড়ীতে বসে রইলো, সঞ্জীববাবু ভিতরে গেলেন।
দেবলীনা নিজে এসে আসন পেতে দিলো।
সঞ্জীববাবু আগে কোন সংবাদ দিয়ে আসেন নি সুতরাং তাকে সব কথাই আগাগোড়া খুলে বলতে হলো।
এতে গররাজী হবার কিছু নেই। দেবলীনার মা অরুণা দেবী কাকা বিশ্বনাথবাবু দুজনেই রাজি হয়ে গেলেন। কথাবার্তা সব ঠিক হলো। দেবলীনাকে সেই কাপড়েই সঞ্জীববাবুর সামনে নিয়ে আসা হলো।
সঞ্জীববাবু বললেন - মেয়ে আমার দেখা আমি শুধু আশীর্বাদ করে যাবো। তবু সঞ্জীববাবু ভাবী পুত্রবধূকে আর একবার স্নেহের চোখে দেখে নিলেন। মন তার আনন্দের অতিশয্যে ডুবে গেলো।
দেবলীনার মাথায় হাত রেখে বললেন - তোমার নাম ?
-
দেবলীনা দত্ত।
সঞ্জীববাবু যেন আর কিছু জিজ্ঞেস করার কথা মনেই আনতে পারলেন না। তিনি জানেন মেয়েকে আর কিছু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন পড়বে না। মেয়ে তাঁর সব দিক দিয়েই পছন্দ হয়ে গেছে। কিন্তু মেয়েরও তো মতামত কিছু নেওয়া দরকার। তিনি দেবলীনাকে বললেন - হ্যাঁ মা, তোমার কি মত? সৌরভ এম, , বি, এল এখন সে ওকালতিই করে। ভগবানের কৃপায় যশ, সন্মান এর মধ্যে সে সবই পেয়েছে। নেবে মা আমার আশীর্বাদ ?
দেবলীনার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হয় না। নির্বাক হয়ে মাটির দিকে চেয়ে বসে থাকে সে।
সঞ্জীববাবু আবার বললেন - আমি জোর করে বলতে পারি, আমার আশীর্বাদ গ্রহন করলে জীবনে কোনদিন তুমি অসুখি হবে না।
বাতাসে ঝিরঝির করা গাছগুলোর মতো দেবলীনা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো
সঞ্জীববাবুরই আজ জয় হলো। তিনি আনন্দের সাথে দেবলীনাকে মাথায় ধান দুলপো কপালে চন্দনের টিকা দিয়ে প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করলেন
Like Reply
#8
চার


যে ছিল এতদিন নির্লজ্জ শহুরে মেয়ে, সে হল আজ মোহিত গ্রামের বউদি, গ্রাম্য বউ।
গ্রামের মেয়ে ছেলেরা সব দল বেঁধে নতুন বউ দেবলীনা বউদিকে দেখতে এলো। মংলীর মা, বিন্দুবালা, বিমলা এরাও সবাই এসেছে।
যে মেয়ে দুদিন আগেও গ্রামের পাকা রাস্তা দিয়ে ফুলপ্যান্ট পরে সাইকেলে চেপে দৌড়িয়েছে, সে মেয়ে আজ কি পোষাকে স্বামীর ঘরে এলো, সকলের মনেই এই কৌতুহল এই প্রশ্নই নাড়াচাড়া দিয়ে উঠেছে।
অনেকে বলাবলি করছে সঞ্জীববাবুর কাজটা করা উচিত হয়নি। মেয়ে দেখে পছন্দ হলে কি হবে মেয়ে কি ঘরে থাকবে, না স্বামীর ঘর করবে। অমন ছেলের সঙ্গে অমন মেয়ের বিয়ে দেওয়াটা উচিত হয় নি।
সঞ্জীববাবু সব জেনে শুনেও কেন কাজটা করলেন ?
কেউ ভেবে ঠিক করতে পারে না। সৌরভের মাও এই বিয়েতে ঠিক মনের ভিতর থেকে মত দিতে পারেন নি। স্বামীর কোন কাজের বিরোধীতা করবেন না, এই মনে করেই তিনি সম্মতি জানিয়েছেন।
কথাটা অবশ্য প্রকাশ হয়ে পড়েছে বিয়ের পর।
সঞ্জীববাবু এজন্য এতটুকুও ভ্রুক্ষেপ করেন না, তিনি যা করেছেন তা ভালভাবে বিবেচনা করেই করেছেন।
সকাল দশটার একটু পরেই বাড়ীর দরজায় ঘন ঘন শঙ্খ বেজে উঠলো। গাড়ীটা বর-কনে নিয়ে বাড়ীর দরজায় এসে দাঁড়ালো।
সকলেরই নজর বউর দিকে।
কেউ বলছে দেখনা কনের পোষাকটা কি! কাপড় না প্যান্ট ?
আবার কেউ বলছে, দেখ তো ঘোমটা দিয়েছে নাকি ?
মংলীর মা বললো - কপালে সিঁদুর আছে তো ?
হাতে শাঁখা ? বলতে গিয়ে আর একজন আর একজনের ঘাড়ের ওপর দিয়ে মুখ তুলে দিলো।
এসব ব্যাপার নিয়ে একটা যেন হৈ চৈ পড়ে গেলো।

সঞ্জীববাবু এগিয়ে এলেন। ছেলে মেয়েকে ভিতরে নিয়ে যাবার জন্য।
মেয়েরা সব সরে দাঁড়ালো।
মুহুর্তে সকলের চোখের সামনে নতুন বউ বেড়িয়ে এলো। সকলেই বিস্ময়ে দেখলো নতুন বউর কপালে সিঁদুর আছে, পরনে বেনারসী শাড়ী, মাথায় ঘোমটা, হাতে শাঁখা। এমনটি যেন আর কারো বিয়েতে দেখেনি।
সকলেই বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়লো। যেমনটি তারা মনে মনে কল্পনা করেছিলো যেন সব তার উল্টো।
বাড়ীর সমস্ত উঠানটায় বাড়ীর সব মেয়েরা সারাদিন বসে বসে আলপনা এঁকেছে।
উঠানের মাঝখানে বিচিত্র বর্ণ পিঁড়ির ওপর বর-কনে এসে দাঁড়ালো।
প্রথমে সৌরভের মা আশীর্ব্বাদ করলেন।
সকলেই উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে রইলো, কনে শাশুরীকে প্রণাম করে কি না।একে মুহূর্তের জন্য কোলাহলমুখর সম্পূর্ণ বাড়ীটা যেন দৃশ্য দেখার জন্য নিস্তব্ধ হয়ে গেলো।
কিন্তু সকলের বিস্ময়ে বাদ সাধলো কনে। দেবলীনা আস্তে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে শাশুড়ীকে প্রণাম করলো।
সকলের আর একবার কৌতুহল নিবৃত্ত হলো।
এবার আশীর্ব্বাদ করলেন সঞ্জীববাবু।
দেবলীনা শ্বশুরকেও তেমনি ভাবে নমস্কার করলো।
এমনি করে সকল পূজনীয়গণকেই দেবলীনা প্রণাম করলো।
এবার সকলেই বলাবলি করতে লাগলো, না মেয়ে রুপে-গুণে সমান হয়েছে। উকিলবাবুর রুচিজ্ঞান আছে।
সেদিনকার দুয়ারের সানাইয়ের ধ্বনি এমনি করে সার্থক করে তুলেছিলো দেবলীনা কিন্তু মংলির মা, বিন্দুবালা, বিমলার মন কিছুতেই উঠলো না।

যে মেয়ে একদিন প্রকৃতির সঙ্গে চলে ফিরে বেড়াতো সমাজ সেবা বক্তৃতা ইত্যাদি কাজের মধ্যে যে সবসময় নিজেকে ব্যস্ত রাখতো, সে মেয়ে আজ সৌরভের স্ত্রী হয়ে ঘরে এসেছে।
সঞ্জীববাবু দেবলীনাকে বউমা হিসেবে মনেপ্রাণে চেয়েছিলেন তাই হয়তো মিলন একান্তভাবে সম্ভব হলো।
দেবলীনা শুধু সৌরভের বউ নয় সঞ্জীববাবু স্বর্ণময়ীর পুত্রবধূ, মোটকথা বাড়ীর গৃহিণী বাড়ীর জীবনের সঙ্গে তার জীবন মিলিয়ে চলতে হবে
Like Reply
#9
কি হচ্ছে এসব?
একবার নীললোহিত তো একবার মনোজ ম
এবার শুধু শরৎচন্দ্র আর রবীন্দ্রনাথ আসার অপেক্ষা
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
#10
পাঁচ


দেখতে দেখতে একটা বছর কেটে গেলো।
অনেকেই ভেবেছিলো মেয়ে নতুন নতুন ভাল হলেও, পরে ভাল হবে বলে মনে হয় না। এই বউ নিয়ে ঘর করা বেশী সুখের হবে না। ঠিক মানিয়ে চলতে পারবে না।
তাছাড়া সব থেকে বড় কথা দেবলীনা ঠাকুর দেবতা মানে না। স্বর্ণময়ী ঠাকুর মানেন। তাঁর ঘরে ঠাকুর দেবতা আছে, তাই বউয়ের সঙ্গে তিনি কি করে মানিয়ে চলবেন।
কিন্তু সকলে যা যা ভেবেছিলো এক বছরের মধ্যে সকলে দেখলো ফল হয়েছে তার উল্টো।
বিয়ে হবার পর দেবলীনা আর কোনদিন ফুলপ্যান্ট পরে নি। কাপড়ই এখন তার একমাত্র পোষাক। প্রতিদিন সে শাশুড়ীর অনুমতি নিয়ে নিজের হাতে সব কাজ করে। লাল পেড়ে শান্তিপুরী শাড়ী, কপালে বড় করে সিঁদুরের ফোঁটা সিঁথিতে সিঁদুর আঁকা এগুলো দুবেলা সে যত্নের সঙ্গে নিজেই করে। স্বর্ণময়ী এসব দেখে আশ্চর্য হয়ে যেতেন। তিনি যেন এরকম একটি বউমাই মনে মনে আশা করেছিলেন, ভগবান তাঁর জীবনে তাই এমন বউ মিলিয়ে দিয়েছেন।
দেবলীনা যে এমন খাঁটি বউ হবে, তা কে আগে ভেবেছিলো? স্বর্ণময়ীও ভাবতে পারেন নি।
যখন তার ওপর ঠাকুর পজোর ভার পড়ে, তখন দেবলীনা যেন উল্লাসে নেচে ওঠে! কত সুন্দর ভাবে কত নিষ্ঠার সঙ্গেই না সে ঠাকুর পূজো করে যায়, স্বর্ণময়ী তাও বার বার লক্ষ করেছেন।
এমন বউকে না ভালোবেসে কে থাকতে পারে? স্বর্ণময়ী যেন প্রথমে দেবলীনাকে একরকম আবছা কাচের চক্ষে দেখেছিলেন, কিন্তু সে কাচ স্নেহের ঘর্ষণে ক্ষয়ে যাওয়ায় এখন দেবলীনা শাশুড়ীর চোখে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ হয়ে এসেছে।
দেবলীনাকে স্বর্ণময়ীর ভালোবাসতে হয়নি, দেবলীনাই স্বর্ণময়ীর মন প্রাণ চুরি করে নিয়েছে। দেবলীনার বিনয়, মহত্ত্ব, সরলতার কাছে ধরা না দিয়ে পারেন নি স্বর্ণময়ী।
যে বউকে তিনি মনে মনে প্রথমে মেনে নিতে পারেন নি, সে বউকেই কি ভাবে যেন তিনি মনের গোপন দ্বার দিয়ে আজ আবার ভালোবেসে ফেললেন।
সন্ধ্যার সুন্দর মলিন দক্ষিনা হাওয়ার মতো স্বর্ণময়ীর সমস্ত মনটুকুতে জুড়ে বসলো দেবলীনা।
দেবলীনা নামে দুষ্টু মেয়েটি যেন কি যাদু জানে !
এখন ঠাকুর পূজোর ভার স্বর্ণময়ী বউমার হাতেই তুলে দিয়েছেন। বাড়ীর সকলের চেয়ে দেবলীনাই নাকি ঠাকুর পূজো ভাল করে, একথা একদিন স্বর্ণময়ী উৎফুল্ল হয়ে হাসতে হাসতে স্বামীকে বলে ফেলেছিলেন। সেই থেকে ঠাকুর ঘরের ভার দেবলীনার ওপর।
দেবলীনা প্রতিদিন স্নান সেরে ধোয়া কাপড় পরে ঠাকুর সাজাতে আরম্ভ করে। যতক্ষন না তার মনের মত হয় ততক্ষন সে ঠাকুর ঘর থেকে বের হয় না। রোজ রোজ নতুন নতুন অর্ডার আসে বাবার কাছে। আজ ঠাকুরের জন্য চাই চাই। ঠাকুরের ঘাগরীটা পুরানো হয়ে গেছে। একটা নতুন ঘাগরী করে আনতে হবে। ঠাকুরের জন্য একসেট নতুন গয়না চাই।
আগে কে ভাবতে পেরেছিলো, সেই দেবলীনার মধ্যেও এই দেবলীনার প্রাণ ছিল? নইলে যাকে নিয়মিত দেখা যেত পথে ঘাটে সাইকেলে ঘুরে বেরাতে বিয়ের পর থেকে আর তাকে একদিনও কেউ কোথাও দেখে নি। সে অমন সংসারী হয়ে পড়েছে।
Like Reply
#11
(25-06-2021, 11:39 PM)satyakam Wrote: কি হচ্ছে এসব?
একবার নীললোহিত তো একবার মনোজ ম
এবার শুধু শরৎচন্দ্র আর রবীন্দ্রনাথ আসার অপেক্ষা

Smile
Like Reply
#12
সংসারের কাজ, শ্বশুর শাশুড়ীর সেবা ছাড়াও দেবলীনার আর একটা দিক ছিল, যে দিকটাকে সে মনে প্রাণে ভালোবাসে। তাদের দুজনের দাম্পত্য জীবন। দেবলীনা সে কথা কোনদিন ভুলতে পারে না, পারবে না। স্বামীকে সে অন্তরের দেবতা বানিয়েছে।
বিকালে দেবলীনা তাদের সেই হুট খোলা গাড়ীটায় করে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যেতো দূরে খোলা একটা মাঠে।
সেখানে দেবলীনা স্বামীর কোলে মাথা রেখে যেন ঘুমিয়ে পড়তো। সৌরভ ওর মাথার সামনের চুলগুলোতে হাত বুলাতো আস্তে আস্তে। দুজনে দুজনার মধ্যে হারিয়ে যেত।
একদিন সৌরভ দেবলীনাকে নাড়া দিয়ে বললো - এই শুনছো
দেবলীনা আবেশের সুরে বললো - বলো
-
এই দেখো, একটা কি সুন্দর ডালিয়া ফুল।
দেবলীনা স্বামীর কোল থেকে উঠে পড়লো। বললো - কৈ দেখি দেখি
সৌরভ পাতা সমেত লাল টকটকে ডালিয়া ফুলটা ওর হাতে দিলো।
দেবলীনা আবার সৌরভের হাতে দিয়ে বললো দাও আমার খোপায় তুমি পড়িয়ে দাও।
দেবলীনা পিছন ফিরে সৌরভের সামনে এসে দাঁড়ালো।
সৌরভ ফুলটি খোপায় গুঁজে দিয়ে দেবলীনাকে সামনের দিকে ঘুরিয়ে নিল।
কি অপরূপ এই সৌন্দর্য। ভগবানের এই অপূর্ব নারীসৃষ্টির কাছে সব কিছু হার মানে সব কিছুই তুচ্ছ মনে হয়।স্বয়ং ঋষি বিশ্বামিত্র মুনি অপ্সরা মেনকার রুপসৌন্দর্যে মোহিত হয়েছিলেন। নিজের তপস্যা ছেড়ে মেনকার রূপসুধা পান করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছিলেন আর সে একজন সাধারন মানব। সৌরভ একদৃষ্টে দেবলীনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
-
কি দেখছো? শান্ত স্বরে বললো দেবলীনা।
সৌরভের মনে হলো তার কানে বীণার মধূর সূর বেজে উঠলো।
-
তোমায়।
-
আগে দেখোনি বুঝি।

তোমার দুচোখে যেদিন
আমার দুচোখ পড়েছে,
পৃথিবীটা সেই থেকে
আমার ভালো লেগেছে।।
তুমি হাঁসো তাই বুঝি
চাঁদ হাঁসে আকাশে,
তোমার মনের মাধূরী নিয়ে
সুরভি ছরায় ফুল বাতাসে।।
তোমার প্রেমের পরশে আজ
আমার হৃদয় রেঙেছে,
তোমার ভালোবাসার ছোঁয়ায় আজ
পৃথিবীর সব কিছু সুন্দর হয়েছে।।

আর কোন কথা নেই। দেবলীনা সৌরভের বুকের মধ্যেই নিজেকে সঁপে দিয়েছে। নিরবতাই অনেক না বলা কথা বলে দেয়। ভালোবাসার উষ্ণ ছোঁয়া লেগে যায় পরস্পরের মধ্যে।
ক্রমে সন্ধ্যার আবছা কালোছায়া গ্রামের পথে ঘাটে ছড়িয়ে পড়েছে, শীতের জমাট কুয়াসা অন্তরকে নাড়াচাড়া দিয়ে গেছে, তবু যেন তারা দুজনে বাড়ী ফিরে আসতে চায়না। দুজনে দুজনার দিকে অব্যক্ত ভাষা নিয়ে চেয়ে সময় কাটিয়ে দেয়। মনে মনে শুধু ভগবানের কাছে তারা প্রার্থনা করে বলেছে, আমাদের দুটি অবিচ্ছিন্ন জীবন যেন বিচ্ছিন্ন না হয় ভগবান। সারাজীবন যেন এভাবেই একে অপরকে ভালোবেসে যেতে পারি
Like Reply
#13
ছয়


সঞ্জীববাবু আজ মর্মে মর্মে বুঝতে পেরেছেন যে সকলে মিলে তাকে কিভাবে ঠকাতে চেষ্টা করেছিলো। দেবলীনাকে যদি তিনি পুত্রবধূরুপে ঘরে না আনতেন তবে এর চেয়ে পরিতাপের বিষয় আর কিছুই থাকতো না। দেবলীনাকে ঘরে এনে তিনি যতখানি লাভবান হয়েছেন এর চেয়ে লাভবান যেন তিনি আর কিছুতে কোনদিন হতে পারেন নি।
তার মনে পড়ে যেদিন তিনি পাকাপাকি কথাবার্তা বলে, আশীর্বাদ করে বাড়ী ফিরছেন পথে পুলিশ ইন্সপেক্টর মিঃ গুপ্তর সঙ্গে দেখা। তিনিও পথ দিয়ে গাড়ীতে ফিরছিলেন। হঠাৎ ইন্সপেক্টর মশায় সঞ্জীববাবুকে চিনতে পেরে হাত জোড় করে বলে উঠলেন, নমস্কার। কি ব্যাপার, এদিকে কোথায় ?
সঞ্জীববাবু গাড়ীটা থামিয়ে বললেন আপনি ?
-
এদিকে একটা কেস ছিল। তাই....
সঞ্জীববাবু বাধা দিয়ে বললেন - আমি গিয়েছিলাম ছেলের ভাবি বউকে আশীর্বাদ করতে।
মিঃ গুপ্ত একটু অবাক হয়ে সঞ্জীববাবুর দিকে তাকালেন।
সঞ্জীববাবু আবার বললেন - মানে বুঝতে পারলেন না? ছেলের বিয়ের সব ঠিক করলাম। আজই তার আশীর্বাদ হলো।
মিঃ গুপ্ত হেসে বললেন - তাই নাকি! সেতো খুব ভালো কথা, তা মেয়ে কোথাকার ?
-
মোহিত গ্রামের।
মিঃ গুপ্ত কথাটা একটু মনে মনে চিন্তা করে বললেন - মোহিত গ্রামে? কোন বাড়ীটা বলুন তো? মেয়ের নাম কি ?
-
দেবলীনা দত্ত।
-
দেবলীনা দত্ত ?
-
হ্যাঁ। মেয়ের বাবা নেই, মা আর কাকা আছেন।
-
আচ্ছা এবার বুঝতে পেরেছি। দেবলীনা দত্ত। গুপ্ত একটু থেমে বললেন এইমাত্র কি আশীর্বাদ করে এলেন ?
-
হ্যাঁ। কিন্তু আপনার মনে দ্বিধা দেখছি কি ব্যাপার বলুন তো ?
-
যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলি।
-
না না বলুন।
-
মেয়ের সাথে সম্পর্ক করতে যাচ্ছেন বটে কিন্তু ওর প্রতি তো পুলিশের নজর রয়েছে।
-
তাই নাকি? কেন বলুন তো? আপনাদের কাছে কোন খারাপ রিপোর্ট আছে নাকি ?
-
না না সেসব কিছু নেই। তবে গ্রামের লোকদের, পুলিশের কোন গুডউইল মেয়েটির উপর নেই। শোনা যায় মেয়েটি নাকি পার্টির সঙ্গে যুক্ত আছে। তাই পুলিশ মেয়েটির কাজকর্মের দিকে নজর রাখার চেষ্টা করছে।
তাই নাকি। কথাটা শুনে সঞ্জীববাবু একটু ঘাবড়ে গেলেন। তিনি মিঃ গুপ্তকে প্রশ্ন করলেন - আচ্ছা এসব ধারনা কি আপনারা গ্রামের লোকদের মতোই করেন, না কোন কিছু অন্ততঃ সামান্য প্রমাণও পেয়েছেন ?
-
না সেরকম কোন প্রমাণ আমরা এখনো পাইনি তবে কথাটা যে মিথ্যা নয়, এটা আমাদের বিশ্বাস।
-
আমার বিশ্বাস আপনাদের ধারণা ভুল।
মিঃ গুপ্ত একটু হেসে বললেন - তাই নাকি। বেশ তাই যদি হয়, তবেই সুখের হবে। আচ্ছা নমস্কার।
গাড়ীটা মুহুর্তে স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো কিন্তু সঞ্জীববাবু সেখানেই গাড়ী নিয়ে বসে রইলেন। আজকের এই শুভদিনে গুপ্ত তার মনটাকে যেন একটা এ্যাকসিডেন্টের মতোই ভেঙে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়ে গেলো।
সঞ্জীববাবু ভাবছেন দেবলীনার নামে গ্রামে এর মধ্যেই যে বিশ্রী জনরব ছড়িয়ে পড়েছে তাকি একেবারে মিথ্যা হয়ে যাবে। বিশেষ করে যখন পুলিশের নজর পড়েছে তখন কিছু না কিছু সত্য হবেই
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#14
সাত


সঞ্জীববাবু নিজে উকিল কিন্তু ব্যাবসার খাতিরে বা কোনদিন প্রচুর উপার্জনের লোভে আদালতে কখনও তিনি মিথ্যা বক্তৃতা করেননি। যে কেস হাতে নিয়েছেন, তা প্রকৃত সত্য কি না এসব অন্তরের সঙ্গে বেশ বুঝে পড়ে নিয়েছেন। এমনি করে সর্বদা তিনি নিজের মনকে পরিষ্কার রাখতে চেয়েছেন।
তবে আজ তিনি তার নিজের ঘটনাটিকেই যাচাই করতে পারছেন না কেন? সত্য মিথ্যা যাচাই করার শক্তি কি তাঁর ভিতর থেকে নিঃশেষিত হয়ে গেলো।
জীবনে তার অভিজ্ঞতা অনেক।
কতো মিথ্যা সাজানো ঘটনার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি আদালতে কতো কেস প্রসিড করেছেন, তার শেষ নেই। তাছাড়া ঠিক এমনি মিথ্যা সাজানো ঘটনায় কতো লোকের কতো ক্ষতিও হয়েছে, আজও হচ্ছে। তাঁর নিজের গ্রামেই এসব দৃষ্টান্তের অভাব নেই।

একটা ঘটনা তাঁর জলন্ত মনে পড়ে গেলো। এই গ্রামেরই লোকেদের কীর্তি। একটি মেয়ের জীবন নিয়ে কি ভাবে ছিনিমিনি খেলা করেছে তারা।
তাঁর গাড়িটা যেখানে দাঁড়িয়েছে, তার বাঁদিকে ঠিক সোজা মাঠের ওপারে যে বাড়ীটা সেখানে থাকতো রাধারাণী।
রাধারাণীর বাপ বুড়ো হয়ে পড়েছিলেন। তার ভাই কোলকাতা চাকরী করতো। দুমাস চারমাস পর বাড়ী আসতো বাবাকে দেখতে। মাসে মাসে বাবা বোনের জন্য টাকা পাঠিয়ে দিতো।
রাধারাণী অবিবাহিত থাকতে সংসারটা বেশ সাজানো গোছানো ছিলো, কোনই অসুবিধা ছিলো না। বুড়ো বাপের দেখাশুনা রাধারাণীই করতো। মাঝে মাঝে ভাই কোলকাতা থেকে এসে খবর নিয়ে যেতো।
পাশের ঘরে থাকতো তার কাকী বিমলা, তার সন্তান সন্ততি অনেক। বাড়ীর মেয়েরাই ঘরের সব কাজ করতো তবু কখনো কোনদিন প্রচুর সময় হাতে থাকলেও সে একবার দিনান্তেও রাধারাণী কিংবা তার বুড়ো বাপের খোঁজ নিতনা।
যে দরজাটা দিয়ে রাধারাণীদের ঘর সোজা দেখা যায় সে দরজাটা বিমলা সবসময় বন্ধ করে রাখতো।
রাধারাণীর কোন সুখ সে সহ্য করতে পারতো না। কোনদিন একটু ভাল রান্নার গন্ধ পেলেই খবরটা সঙ্গে সঙ্গে তা আশে পাশের বাড়ীতে গিয়ে রঙ চড়িয়ে ছড়িয়ে দিয়ে আসতো। বলতো - দেখে এলুম রাধারাণীদের ঘরে পায়েস রান্না হচ্ছে। তা হ্যাঁগা, আমাদের ঘরে তো পায়েস বছরে একবারো হয়না। রাধারাণীর ঘরে দেখি প্রতিদিনই হয়। অত যারা গরীব তারা রোজ রোজ পায়েস খায় কি করে? সব বাজে কথা। আমি এক বিন্দুও ওর বাবার কথা বিশ্বাস করি নে। এক সঙ্গে থাকতে কি ওর বাবা ভাগের কম টাকা পয়সা লুকিয়ে চুরিয়ে রেখেছে।
বিমলার এসব কথার দু একজন অংশীদারও ছিলো। তারা বিমলার কথা দস্তুর মত সমর্থন করতো।
বিন্দুবালা বিমলার পরমভক্ত। সে বলতো - মেয়ে বিয়ে দেবার জন্যি নাকি টাকা নেই। তা হ্যাঁগা কথাও কি বিশ্বাস করার মত? যারা প্রতিদিন দুধ, ঘি খেতে পারে পায়েস খেতে পারে তারা কিনা মেয়ে বিয়ে দিতে পারে না। আরে, আসল ব্যাপারটা কি জানো........ বিন্দুবালা রাধারাণীর কাকী বিমলার কানে ফিসফিস করে কি যেন বলতো, অমনি বিমলার চোখ দুটোও বড় হয়ে উঠতো।
বিমলা ছুটে যেতো অমনি আর একজনের বাড়ী একথা বলতে। এমনি করে পাড়ায় পাড়ায় বিমলা রাধারাণী তার বাপ ভাই এর নামে কুৎসা রটিয়ে বেড়াতো
Like Reply
#15
আট


কিছুদিন পর রাধার সঙ্গে যার বিয়ে হলো, সে ছেলের আপন জন বলতে কেউ ছিলো না। অত্যন্ত সাধাসিধে ভালোমানুষ। তার আপনজন বলতে এখন থেকে রাধারানী একমাত্র।
দুবছর রাধা স্বামী নিয়ে কি সুখেই না ঘর করলো। স্বামীর অফুরন্ত ভালোবাসার আলিঙ্গন পেয়ে তার সমস্ত দেহ মন যেন শুদ্ধ হয়ে উঠলো।
কিন্তু দীর্ঘ দুবছর পর রাধার স্বামী অফিসের কাজে উচ্চশিক্ষার জন্য জার্ম্মাণ চলে গেলো। জার্ম্মাণিতে তাকে কয়েক বছর থাকতে হবে। রাধারানী তাই গ্রামে বাবার কাছে ফিরে এলো।
রাধার মনে হলো এই দুবছরে গ্রামের অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। কিন্তু কাকীমার একটা মেয়েরও বিয়ে হয়নি, বিয়ে দেবার কোন চেষ্টাও করেন না। সংসারে সেই আগের মতোই অভাব লেগেই আছে।
কাকীমার অবস্থার কথা মনে পড়লে রাধার মন ব্যাথায় ভার হয়ে ওঠে।

বিয়ের আগে রাধারানী গ্রামের শুধু একটি ছেলের সাথেই কথা বলত। অশোক। পড়াশুনায় অত্যন্ত মেধাবী এই ছেলেটিকে রাধা মনে মনে পছন্দ করতো কিন্তু হায়রে বিধীর বিধান সমাজ এটা ভালো চোখে দেখেনি।
রাধার সুখ বিমলা কোনদিন সহ্য করতে পারেনি। অশোক রাধার নামে এমন কুৎসিত সব ঘটনা রটাতে লাগলো যে অশোকের এই গ্রামে থাকাই দুঃবিস্বহ হয়ে উঠলো। অশোককে গ্রাম থেকে তাড়িয়েই যেন তার শরীর জুড়োবে।
সেই অশোক মরে নি। বাড়ী ফিরে এসেছে। সে এখন লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে নিজেদের জমির টুকটাক কাজ করছে।
একদিন পুকুর ঘাটে অশোককে দেখে রাধারাণী হেসে ফেললো।
অশোক চলে যাচ্ছিল। রাধা ডেকে বললো - কি অশোকদা চলে যাচ্ছ কেন ?
অশোক থমকে দাঁড়ালো।
রাধা আবার বললো - ভালো আছো?
অশোক অস্পষ্ট সুরে বললো - হ্যাঁ
রাধা বললো - জানো তো আমার বিয়ে হয়ে গেছে। এখন তোমার সঙ্গে কথা বলতে আমার আর কোন ভয় নেই।
অশোক হঠাৎ এর প্রতিধ্বনি করে যেন আর্তকন্ঠে বলে উঠলো - না--না-- রাধা-- তুমি জান না। গাঁয়ের লোকদের তুমি ভালো করেই চেন এরা একটুও বদলায়নি। ওরা সব করতে পারে দরকার হলে এখনও তারা অনেক কিছু বলতে পারে।
রাধা নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। অশোকদা ঠিকই বলেছে, রাধা তো আগে এতোটা তলিয়ে দেখে নি।
সেদিন সে নানা চিন্তা মাথায় নিয়ে বাড়ী ফিরলো।
অশোকের সঙ্গে কথা বলতে তার খুব লোভ হয়।
অশোক তার জন্য মিথ্যা অনেক দুঃখ ভোগ করেছে, রাধা নিজেও অনেক লাঞ্ছিতা হয়েছে কিন্তু তবুও দুজনার ভালোবাসা আজও অটুট রয়েছে। উভয়েই উভয়ের জন্য ব্যথিত।
অশোক রাধাকে আর অপমানিতা লাঞ্ছিতা হতে দেবে না তাই সে আজও দূরে দূরে থাকে।
রাধা একথা বোঝে কিন্তু ছোটবেলার বন্ধু খেলার সাথীকে সে কি করে ভুলবে।
আশ্চর্য! অশোকদা হয়তো এখনো জানে না রাধার কার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। রাধা অন্তঃসত্বা একথা কি অশোকদা জানে? ওঃ! জানলে কি আনন্দই না পাবে।
রাধার ইচ্ছা স্বামী জার্ম্মান থেকে ফিরে এলে অশোকদাকে একবার নিমন্ত্রন করে নিজের বাড়ী নিয়ে যাবে।
কিন্তু অশোকদা যা লাজুক সে হয়তো যাবেই না।
এসব নানা কথা ভাবতে ভাবতে রাধা ঘাট থেকে বাড়ী ফিরে এলো
Like Reply
#16
নয়


কয়েক মাস পরে রাধার একটি ফুটফুটে সুন্দর ছেলে হলো।
দেখতে দেখতে ছেলের বয়সও এক বৎসর হয়ে গেলো।
কিন্তু রাধার জীবনে আবার সেই পুরানো ঝড় নেমে এলো।
অশোককে নিয়ে তার কাকী বিমলা আগের মতো সেই কুৎসিত ইঙ্গিত করতে লাগলো।
গাঁয়ের অনেকেই বিমলার দেখাদেখি পথেঘাটে আবার সে সব নোংরা আলোচনা শুরু করে দিলো।
রাধারাণীর ছেলে দেখে বিমলার হিংসায় বুক ফেটে যেতে লাগলো।
পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ঘুরে সকলের কাছে বলতে লাগলো, তাইতো বলি এতো তাড়াতাড়ি ছেলে হলো কি করে। একালে কে আর সতীর যুগ আছে গা? নইলে অভাগী বলে ওর স্বামী নাকি বিদেশ গেছে। এসব কথা কি কখনো বিশ্বাসের কথা? এতদিন কেউ কখনো কি নিজের স্ত্রীকে ছেড়ে বিদেশ বিভুঁইয়ে থাকতে পারে ?
ওপাড়ার নন্দীর বউ আবার রেশ টেনে বলে - কথাটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
-
মেয়েটা বলে আমার স্বামী বিদেশ গেছে। আরে এসব কথাত ছেলে ভোলানো কথা, অবুঝকে বোঝানোর কথা। রোজ রোজ গোছা গোছা পত্র আসে আমরা কি বুঝি না ওসব কার লেখা ?
-
যতই বলুক বাপু, আমার মনে হয় ছুঁড়ির বিয়েই হয়নি।
-
আরে আমিও তাই বলি। ওর সব কথাই বাজে। ওর দাদা কোলকাতায় নিয়ে গিয়ে কোন এক ছোঁড়ার সাথে দিয়ে দিয়েছিলো, এখন সব জানতে পেরে ছেড়ে মেরে পালিয়েছে। নইলে অমন মেয়েকে আবার কেউ জেনে শুনে বিয়ে করে নাকি।
-
যা বলেছিস। নইলে আমি হলুম কাকী আমি জানলুম নি ছেলে কে--কোথায় থাকে--কি করে। এমন বিয়ে কোথাও দেখেছিস নাকি ?

আগে ছিল রাধা অবিবাহিতা, এখন যে সে বিবাহিতা। এক সন্তানের জননী। অপবাদ সে কি করে সহ্য করবে !
জার্মাণ থেকে চিঠি এসেছে, রামতনু শীগগীরই দেশে ফিরবে।
চিঠিটা বুকে নিয়ে রাধা অনেক্ষণ কেঁদেছে। স্বামী ফিরে এলে সে যদি সমস্ত মিথ্যা কুৎসিত অপবাদ গুলো শোনে। কি ভাববে।
এক ভীষণ আর্তনাদ বেরিয়ে আসে তার ভিতর থেকে। কিছুতেই সে নিজের হৃদস্পন্দন চেপে রাখতে পারে না।
এতদিন এতো দুঃখের মধ্যেও রাধার যে কথা মনে হয়নি আজ হঠাৎ সে কথাই রাধার মনে বিকাশ লাভ করতে লাগলো। এই যে বাড়ীর অনতিদূরে কানায় কানায় ভরা ঝিলটা রয়েছে জলে জীবন দিলে কেমন হয়। কিন্তু তাতেও কি তার কলংক দূর হবে, না রামতনু জানতে পারবে যে রাধার মনে কোন পাপই ছিলো না ? কিন্তু তবু যেন মৃত্যু তাকে সকল জ্বালা জুড়াতে বার বার আকর্ষণ করছে।
সে দিন উকিলবাবুই রাধাকে বাঁচিয়েছিলেন। রাধা সঞ্জীববাবুর পায়ে ধরে বলেছিলো - আমাকে বাঁচান। আপনি আমায় বাঁচান।
জীবনের জন্য বেঁচে থাকার জন্য সে কি নিদারুণ আকুল প্রার্থনা রাধার।
সঞ্জীববাবু রাধার মাথায় হাত দিয়ে বলেছিলেন - তোমার কোন ভয় নেই মা। আমি তোমায় বাঁচাবো।
সে কথা সঞ্জীববাবুর আজও স্পষ্ট মনে আছে।
রামতনু দেশে ফেরার কয়েকদিন আগে উকিলবাবু রাধাকে নিয়ে কোলকাতায় গিয়ে একটা বাসা ভাড়া করে, সেখানে তিনি নিজে রাধার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন।
তিনি রামতনুকে চন্দন গাঁয়ের স্টেশনে আর নামতে না দিয়ে পত্র মারফত সোজা কোলকাতায় বাসায় নিয়ে এলেন।
সেখানেই রাধার সঙ্গে রামতনুর মিলন হলো।
রাধা চোখে জল মুছে রামতনুর বুকে আশ্রয় নিলো। রামতনুও নিজের ছেলেকে আবেগে চুম্বন করে কোলে তুলে নিলো
Like Reply
#17
দশ


সঞ্জীববাবু ঘটনা কোনদিন ভুলতে পারবেন না। ভোলা সম্ভবও নয়।
সমস্ত ঘটনা ওলট পালট করে দেখতে গেলে বিমলা, বিন্দুবালা, মংলীর মায়ের মতো মেয়েরা কি না করতে পারে। জ্যান্ত মানুষকে মরা, মরা মানুষকে জ্যান্ত করতেও এদের কোন অসুবিধা হয় না।
রাধারাণীর মতো মেয়ের নামে যারা অপবাদ দিতে পারে, দেবলীনার মতো মেয়েকে তারা অপবাদ দেবে আর বেশী কথা কি ?
এদের কথার ওপর বিশ্বাস রেখে বিয়ে ভেঙে দেওয়া উচিত হতো না।
সঞ্জীববাবু কথাটা কেবল ভেবেছেন।
তাছাড়া মেয়ের দোষটাই বা কি? মেয়ে যদি প্রকৃতই চঞ্চল বা আধুনিকা হয়, এটা কি একটা অপরাধ ?
এসব কথায় কেনই বা আমি আমার সিদ্ধান্ত নড়চড় করবো? এসব প্রশ্ন নানাভাবে সঞ্জীববাবুকে নাড়াচাড়া দিয়ে তুলেছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি বিয়ে দেওয়াটাই সমীচীন বলে মনে করেছিলেন।

আজ সঞ্জীববাবুর মনে পড়ে দেবলীনাকে ঘরে না আনা একটা কতো বড় ভুল হতো।লোকের কথা বিশ্বাস করাটা তাঁর কতো বড় শাস্তি হতো।
দেবলীনা এসেই নিজেকে কি সুন্দর মিশিয়ে দিয়েছে বাড়ীর সঙ্গে। যারা ওকে নির্লজ্জ আধুনিকা বলতো মেয়ে ঘরে থাকবার মতো নয়, তারা কত বড়ো মিথ্যাবাদী।
সংসার ছাড়া সে আর কোন কথাই চিন্তা করে না। তার কথা চলাফেরায় কোনদিন কোন অসংলগ্ন বা খারাপ কিছুর আভাষ পান নি।
দেবলীনার প্রতি এখন তার যে ভালোবাসা জন্মেছে, তারই উদ্বেলিত ধারা সঞ্জীববাবুকে এই বৃদ্ধ বয়সেও আর এক নতুন ধরনের মানুষ করে গড়ে তুলেছে। বয়সে সংসারের মধ্যে আবার তিনি এত সজীব হয়ে পড়বেন সংসারকে আবার এত সুন্দর চোখে দেখবেন তা কোনদিন কল্পনাও করতে পারেন নি।

এই দুবছরে গ্রামের অবস্থারও অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে।
গ্রামের লোকেরা সব দেখে শুনে এখন আর দেবলীনার নিন্দা করে না।
আজ কোথায় গেছে সে সব জনরব। হঠাৎ যেন বৃষ্টির জলের মতোই ধুয়ে মুছে নিয়ে গেছে সে সব।
দুবছরে আজ আবার এক নতুন মানুষ হয়ে ধরা দিয়েছে দেবলীনা এই গ্রাম্যমানুষদেরই চোখে।
যারাই একদিন ওকে অতি আধুনিকা বেহায়া শহুরে বলে আখ্যা দিয়েছিলো তাদের এখন সে সব কথা মুখেই ওঠে না।
মনে পড়লেও যেন পাপ হয়। আজ শত মুখে তারা দেবলীনার প্রশংসা করে।
গ্রামের যে মেয়ে বউরা একদিন নিভ নিভ রৌদ্রে ঘাটে জল নিতে এসে দেবলীনাকে নিয়ে ভালো মন্দ মিলিয়ে নানান আলোচনা করতো তারাই আবার আজ সেই স্যাঁতসেঁতে ঘাটে এসে সুর পাল্টে বলে - অমন মেয়ে হয় না। রামায়ন মহাভারতেও ওর তুলনা মেলে না।
সকলেই অবাক হয়ে শুনতো।
কথাটা মন্দ বলে নি।
বীণা এদের সবার কথা শুনে একটা মুচকি হাঁসি দিতো।
যে দেবলীনাকে একদিন পথেঘাটে দেখা যেতো, পুকুর ঘাটের পাশের চওড়া রাস্তাটা দিয়ে যে মেয়ে ঠিক এমনি সময় রোজ প্যান্টুল পরে সাইকেল চালিয়ে হু হু করে বেরিয়ে যেতো, সে মেয়ের কিনা দু বছরের মধ্যে তারা কেউ একদিনও মুখ পর্যন্ত দেখতে পায় নি। অমন মেয়ে যে এমন সংসারী হবে তা আগে কে বুঝেছিলো।
নতুন পুরানো সকলেই বলাবলি করতে লাগলো, ধন্যি মেয়ে। অমন মেয়ে হয় না
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#18
কারো কোনো সাড়াশব্দ নেই , ভালো কি খারাপ লাগছে কোনো মন্তব্য নেই  , কোনো লাইক নেই , কোনো রেপু নেই ...

মিছে মিছে খেটে মরছি !!



বন্ধ রইলো এই থ্রেডের অগ্রগতি .......
Like Reply
#19
(28-06-2021, 10:45 AM)ddey333 Wrote: কারো কোনো সাড়াশব্দ নেই , ভালো কি খারাপ লাগছে কোনো মন্তব্য নেই  , কোনো লাইক নেই , কোনো রেপু নেই ...

মিছে মিছে খেটে মরছি !!



বন্ধ রইলো এই থ্রেডের অগ্রগতি .....খ
খুব সুন্দর একটা গল্পের শুরু হয়েছে। অনেক শুভেচ্ছা রইল।
Like Reply
#20
এগারো


বারান্দায় একটা চেয়ারে বসে সঞ্জীবাবু বিশ্রাম করছিলেন। দেবলীনা ফুলদানিতে কতকগুলো ফুল সাজাতে সাজাতে বললো - বাবা আপনাকে একখানা বই এনে দেবো ?
-
বই, না। আজ যেন পড়তে ভালো লাগছে না। শুধু বসে থাকতে ভাল লাগছে।

দেবলীনা হেঁসে বললো - বেশ তো আজ শুধু বিশ্রামই করুন না।
সঞ্জীবাবু একটু থেমে বললেন - হ্যাঁ মা, ভালো কথা। তোমাকে বলতেই ভুলে গিয়েছিলাম। আগামী সোমবার আমাদের গ্রামে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমাকে সভাপতিত্ব করার জন্য নিমন্ত্রণ করে গেছে। বলো কি করি? বড় চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।
-
কেন বাবা এতে আর চিন্তার কি আছে ?
সঞ্জীবাবু একগাল হেঁসে বললেন - চিন্তা নেই? দেখো মা, আমি উকিল মানুষ। কোনদিন এধরণের অনুষ্ঠানে যোগদান করি নি। অবশ্য এসব দেখতে শুনতে আমার উৎসাহ চিরকালেরই আর ছোটবেলায় এর পেছনে পয়সাও কম যায় নি।
-
আমি বলি কি বাবা, আপনি অমত করবেন না। রাজী হয়ে যান।
-
বলছো বটে কিন্তু আমি তো এসব সম্বন্ধে কিছুই বুঝি না। অন্ততঃ একটা বক্তৃতাও তো দিতে হবে।
-
সময় মতো সব ঠিক হয়ে যাবে। দেবলীনা বললো।

সঞ্জীবাবু একটু আবদারের সুরে বললেন - তা বললে হবে না মা। বক্তৃতাটা তাহলে তোমাকেই লিখে দিতে হবে।
-
আমি !! দেবলীনার মন যেন কেঁপে উঠলো।
-
হ্যাঁ, তুমি। এবং আমার সঙ্গে তুমিও চলো না কেন ?
দেবলীনা যেন একটা অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে যায়। সে নিজেকে এখান থেকে লুকাতে পারলে যেন বাঁচে। অস্পষ্ট সুরে বললো - না--বাবা--না। আমাকে যাবার জন্য বলবেন না।
-
কেন মা ?
প্রশ্নটা যেন দেবলীনার প্রাণে ঝংকার দিয়ে উঠলো। কেন সে যেতে রাজী নয়, সেকথা দেবলীনা নিজেও চট করে বুঝতে পারছে না।

কুমারী জীবনে সে কি না করেছে? এসব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তার নাম লেগেই ছিলো। তাছাড়া আজ সভা কাল সভা। সব জায়গায়তেই বক্তৃতা দিতে হতো তাকে কিন্তু আজ সে সংসারী হয়েছে। স্বামী পেয়েছে, ঘর পেয়েছে, আবার পাবে সন্তান। আর কতই বা দেরী তার মা সাজতে। এখন কি এসব করা সাজে ?
দেবলীনার মনে পড়ে যায় এসব যেন মদে আক্রান্ত নেশার মতো। একবার ধরলে সহজে সবের আক্রমণ থেকে নিজেকে নিস্কৃতি দেওয়া যায় না।

দেবলীনার অবিবাহিত জীবনটা ঠিক এমনি এক নেশায় মত্ত হয়েছিলো। রাত নেই,দিন নেই এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়ে মত্ত হয়ে থাকতো। একবার যে পথ থেকে সে অতি কষ্টে মুক্তি পেয়েছে আর সে পথে পা বাড়াতে চায় না।

নিরুত্তর দেখে সঞ্জীবাবু নিজেই বললেন - ওসব ওজর আপত্তি আমি শুনবো না মা। আমাকে সভাপতি হবার অনুমতি যখন দিয়েছো, তখন তোমাকেও সাহায্য করার জন্য যেতে হবে।
দেবলীনা তখনো চুপ করে রইলো

Like Reply




Users browsing this thread: