Thread Rating:
  • 27 Vote(s) - 3.26 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Romance জীবন যে রকম ( সম্পূর্ণ ধারাবাহিক উপন্যাস) By Lekhak
#21
শুভেন্দু বললো, আমার ধমক খেয়ে ব্যাচারা রাস্তায় হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করেদিল।  ওকে বললাম, একী এভাবে কাঁদিস নালোকে আমাকে খারাপ ভাববেনে, এবার চোখের জল মোছআর আমাকে বল, তোর জন্য আমাকে কি করতে হবে?
চোখের পাতা এক করে আমি শুভেন্দুর কথাগুলো শুনছিলামওকে বললাম, তারপর?
শুভেন্দু বললো, বিদিশার মুখটা দেখেই বুঝলাম, ও খুব কষ্টে আছেসেই হাসি নেই মুখেঝলমলে রূপটাও যেনো কত ম্লান হয়ে গেছেকলেজে যখন তোদের দুজনকে পাশাপাশি দেখতাম, কি মধুর আর মনোরম লাগতোসেই বিদিশার চোখের তলায় কালির দাগের মত ছিটছিটে দাগমনে হচ্ছিল, বিদিশাকে কেউ খুব কষ্টে রেখেছেওর মুখের দিকে তাকাতেই আমার কেমন যেন লাগছিলমনে হচ্ছিল মেয়েটা, কোনো অন্যায় অবিচার নীরবে সহ্য করে যাচ্ছেকোনো নারীকে যদি কোনো পুরুষমানুষ পশুর মত আচরণ করে, তাহলে সেই নারীর নারীত্ম বলে তো কিছু আর থাকে নাভালোবাসার জিনিষকে যত্ন করে রাখতে হয়তুই তো বলেছিলিস আমাকে, প্রেম করতে করতে মনে নেই? তবে কেন?
আমি বললাম, বিদিশার এমন অবস্থা কে করেছে? ওর স্বামী?
শুভেন্দু বললো, করেনি শুধুএখনো করছেরীতিমতন টর্চার করছে ওর সঙ্গেওর স্বামীর কবল থেকে ওকে মুক্ত করে আনতে হবে
আমার মনে হল, ব্যাপারটা বড়ই অদ্ভূতসামান্য একটা ঘটনায় বিদিশা আমাকে ছেড়ে চলে গেলআর ওর স্বামী ওর ওপর এতো অত্যাচার করছে, সেই বিদিশা ওর স্বামীকে ছেড়ে আসতে পারছে না? কেন? কি অসুবিধা রয়েছে?
শুভেন্দুকে বললাম, ডিভোর্স কি তাহলে হয় নি? তাহলে শুক্লা যে বললো-
 
শুভেন্দু বললো, শুক্লাকে বলতে গিয়েও হয়তো বলতে পারেনি বিদিশাএই শুক্লাই তো, তোর হয়ে কত করে মিনতি করেছিল বিদিশার কাছে।  তুই না জানলেও আমি তো সেটা জানিনিজের দূঃখ কষ্টের কথা বলতে চায়নি শুক্লার কাছেমেয়েরা আবার মেয়েদের কষ্টের কথা শুনলে অত দরদী হয় নাযতটা আমাদের মত পুরুষেরা দরদ দেখাতে পারি, মেয়েদের জন্যতার ওপর শুক্লা যদি তোর ওপর পাগল হয়ে গিয়ে থাকেতাহলে তো আরোই কোনো লাভ হবে না বললেআমাকে বিদিশা প্রানখুলে যতটা বলতে পেরেছে, শুক্লাকে সেভাবে হয়তো বলতে পারেনি, মনের দূঃখটা
প্রায় অথৈ জলে পড়ার মতন আমি বলে উঠলাম, তাহলে কি হবে?
শুভেন্দু বললো, কি হবে তাহলে বল? তুই কিছু কি করতে পারবি?
ভেবে পাচ্ছিলাম না, এমন পরিস্থিতিতে আমার কি করণীয়? শুভেন্দুকে বললাম, তাহলে ওর স্বামী এখন কোথায়?
শুভেন্দু বললো, স্বামী, স্বামীর জায়গাতেই আছেবিদিশা তো কদিন বাপের বাড়ী থাকবে বলে এখানে এসেছেকদিন কাটিয়েই আবার ওকে পশুটার কাছে ফেরত চলে যেতে হবেযাবার আগে, বিদিশার জন্য আমাদের সবাকেই কিছু না কিছু করতে হবেএখন বল, তুই কি করবি?
মনটা ভীষন বিষন্ন হয়ে গেলোভাবছি, সমস্যার সমাধান কি করে করা যায়? তাহলে কি? ওকে-
 হঠাৎ দেখলাম, রনি মুখ টিপে টিপে হাসছেকঠিন একটা পরিস্থিতিঅথচ ওর ওই হাসি দেখে আমার ভীষন গা জ্বালা করছিল
 
শুভেন্দু রনিকে গালাগাল দিলোবললো, এটা হাসার সময়? সিরিয়াস একটা ব্যাপার এসে দাঁড়িয়েছে আর তুই হাসছিস?
 
রনি আরও হাসতে লাগলো
 
আমি কিছুই বুঝতে পারলাম নাশুভেন্দু বললো, বিদিশা কিন্তু একটু পরেই আসছেতোকে কিন্তু তার আগেই সিদ্ধান্তটা নিতে হবে
 
আমি মুখ কাচুমুচু করে বললাম, কি সিদ্ধান্ত নেবো? আগে তো বিদিশাকে আসতে দেওর সাথে কথা বলি?
 
শুভেন্দু বললো, যা যা আমি তোকে বললাম, বিদিশা তোকে তাই ই বলবেএখন তোর ওপর সব কিছু নির্ভর করছে
 
রনিকে দেখলাম, এরপরে হো হো করে হাসতে শুরু করেছেমাধুরী সেইসময় ঘরে ঢুকেছে বুঝতে পারছে না, ওর কর্তার হাসির কারণটা কি?
আমি দেখলাম, শুভেন্দুও এবার মুচকি মুচকি হাসছেহাসিটা চেপে না রাখতে পেরে এবার একটু বেশী করেই হাসতে শুরু করলো শুভেন্দু।  কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিলাম নাশুভেন্দু বললো, আসলে আমরা একটু পরীক্ষা করে দেখছিলাম, তুই সত্যি বিদিশাকে আগের মতন ভালোবাসিস কিনা? তোকে একটু পট্টী মারছিলামওসব টর্চার ফর্চার কিছু নয়বিদিশা ওর স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে এখন এখানেই ওর বাবা মায়ের কাছে রয়েছেও দিব্যি আছেশুধু ভালোবাসার জন্য তোকে শুধু দরকার
 
অনেকদিন বাদে মুখ দিয়ে একটা কাঁচা খিস্তী বেরিয়ে গেলো আমারশুভেন্দুকে বললাম,শালা ঢ্যামনাএরকম ভাবে কেই ইয়ার্কী মারতে পারে? তুই কি রে শুভেন্দু
 
রনি হাসছে, শুভেন্দু হাসছে, মাধুরীও হাসছেওদের দেখে আমিও হাসতে লাগলামমনে হল, সেই কলেজের আনন্দের দিনগুলোই যেন আবার ফিরে এসেছে নতুন করে
 
[+] 4 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#22
aar koi?
Like Reply
#23
Waiting for start
Like Reply
#24
Waiting for new update
Like Reply
#25
(02-07-2021, 12:19 AM)babu03 Wrote: aar koi?

আছে। আজকেই পোস্ট হবে।
Like Reply
#26
(02-07-2021, 12:45 AM)raja05 Wrote: Waiting for start

আজকেই নতুন লেখা পড়তে পারবেন।
Like Reply
#27
(02-07-2021, 06:58 AM)Avenger boy Wrote: Waiting for new update

নিশ্চই। আজকেই দেবো।
Like Reply
#28
brother, apnar lekha triptir tripti ekta novel ache na???
seita jodi abar shuru korten!!!
Like Reply
#29
সাত
 
শুভেন্দু বললো, ‘বিদিশার সঙ্গে আমার দেখা হয়ে যাওয়াটা বিরাট একটা ভাগ্যের ব্যাপার, জানিস তো দেবএকে তো আমার ফোন নম্বর বিদিশার কাছে নেইকলকাতায় এতদিন বাদে ও ফিরে এসেছে, পুরোনো এক কলেজ বন্ধুর সঙ্গে হঠাৎই গড়িয়াহাট মোড়ে তার দেখা হয়ে যাবে, না বিদিশা ভেবেছিলো, না আমি ভেবেছিলাম
আমি শুভেন্দুকে বললাম, বিদিশা, তোকে দেখতে পেয়েছিল? না তুই বিদিশাকে?
শুভেন্দু বললো, ‘বিদিশা যখন তোর সাথে প্রেম করতো, তখনো আমি তোর সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলামআর এখনো তোর সাথে আমার সেই সম্পর্কটাই রয়েছে।। আমাকে বিদিশা দেখে স্বভাবতই খুব খুশিজানে শুভেন্দুর সাথে দেখা হওয়া মানে দেবের খবর শুভেন্দুই তাকে দিতে পারবে একটা দোকানে দাঁড়িয়ে আমি তখন কিছু জিনিষ কিনছি, হঠাৎই শুনলাম, পেছন থেকে কে যেন আমাকে ডাকছে, গলাটা খুব চেনা চেনা মনে হল এ ডাক বিদিশার না হয়ে অন্যকারুর হতেই পারে না।’
আমি খুব আগ্রহ নিয়ে শুনছিলাম শুভেন্দুর কথা ওকে বললাম, তারপর?
শুভেন্দু বললো, ‘তারপর আর কি? শুরুটা করলো এইভাবে প্রথমেই আমাকে বললো, ‘কতদিন বাদে তোকে দেখলাম রে শুভেন্দুআমাকে দেখে চিন্তে পারছিস?
 
‘আমি তো ওকে দেখে একেবারেই অবাকভাবতেই পারিনি বিদিশাকে এতদিন বাদে দেখবোআমার কাছে এগিয়ে এলো বিদিশাআমাকে বললো, এই ‘দেব’ কেমন আছে জানিস? আগে যে বাড়ীটায় ওরা থাকতো, দেব কি ওখানেই এখন থাকে? না অন্য কোথাও?
শুভেন্দু বললো, ‘বিদিশার মুখে তোর নামটা শুনে আমি কেমন প্রফুল্ল মতন হয়ে গেলামআহা, সেই যে কত মিষ্টি মিষ্টি করে কলেজে তোকে নাম ধরে ডাকতো, একেবারে সেইরকম
আমি হাসতে হাসতে বললাম, তারপর?
শুভেন্দু বললো, ‘বিদিশাকে দেখে আমি সত্যি অবাকএতবছর পরে ওর সঙ্গে দেখা, কিন্তু এখনও ওর সৌন্দর্যে একটুকুও ভাটা পড়েনি, বিদিশার যে রূপ, সেই রূপ তার অক্ষতকি সুন্দর লাগছিল ওকে দেখতেআমি তো কোন ছার, যে কেউ প্রেমে পড়বে ওর ওই মিষ্টি হাসিটা দেখলেমনে হল, আমি কি ঠিক শুনছি? এতদিন বাদে ও তোর কথা জিজ্ঞাসা করছে, তোর খোঁজ খবর নিচ্ছে, বিদিশার কি লাভ এসব জেনে? তারপরেই মনে হল, ‘দেব’ হচ্ছে এমন একটা ছেলে, যাকে ভুলেও কেউ ভুলতে পারবে না সহজেবিদিশা প্রথমেই আমাকে বলো, এই দেবের ফোন নম্বরটা আমাকে দিবি? ভীষন দরকার।’
শুভেন্দু বললো, ‘আমি তো আরোই অবাক ও তোর ফোন নম্বর চাইছে দেখেবিদিশাকে বললাম, কি হবে তোর দেবের ফোন নম্বর নিয়ে? তুই তো কবেই ওকে ছেড়ে চলে গেছিসব্যাচারাকে ফোন করবি, আর ও আবার তোর কথা ভেবে পাগল হবে।’
 
মনে হল, শুভেন্দুকে বলি, ‘চাইলো যখন, তুই বিদিশাকে আমার ফোন নম্বরটা দিতে পারতিসবিরহের জ্বালায় এতদিন মরছিলামফোনটা পেলে মনে একটা শান্তি আসতো।’
 শুভেন্দু নিজে থেকেই বললো, আমি জানি, বিদিশাকে তোর ফোন নম্বর না দিলে তুই আবার আমার ওপরে রেগে হম্বিতম্বি করবিএতদিন ধরে তোকে দেখে আসছি, তোর দূঃখ কষ্টটা বোঝার মতন ক্ষমতা তো আমার হয়েছে, আমি এই ভুলটা কিছুতেই করবো নাওকে তোর ফোন নম্বরটা দিলামআশ্চর্য, বিদিশা তখুনি তোকে ফোন করতে চাইছিল
 
আমি শুভেন্দুকে বললাম, তাই? কই এই কথাটাতো তো তুই আমাকে আগে বলিসনিতাহলে তো আমি আগে থেকেই সব জেনে যেতে পারতাম
 
শুভেন্দু বললো, ‘এটার জন্য অবশ্য তুই আমাকে গালাগাল দিতেই পারিসকারণ আমিই বিদিশাকে তখন বারণ করেছিলাম।’
 
মনে হল, শুভেন্দুকে কাঁচা গিলে খাই, ওকে বললাম, কেন? তুই ওকে বারণ করলি কেন?
 
শুভেন্দু বললো, ‘সব কথা বিদিশার মুখ থেকে শোনার পর, আমার কেন জানি মনে হচ্ছিলো, তোর জন্য এটা তাহলে একটা সারপ্রাইজ থাকবিদিশা তোর কাছে আসবে, কিন্তু একটা চমক হয়ে আসবে।  তুই যেন আগে থেকে কিছু জানিস নাআমি ওকে সেইভাবেই রাজী করালাম
বিদিশাকে বললাম, ‘তোর কথা দেবকে আমি আগে থেকে কিছু জানাবো না তুইও এখন ফোন করিস নাতুই যে ফিরে এসেছিস, এটা দেব তোকে নিজের চোখেই দেখুক।’
আমাকে অবাক করে দিয়ে শুভেন্দু বললো, আচ্ছা দেব, বিদিশা যদি তোর বাড়ী নিজে থেকে চলে যেতো, তোর কেমন লাগতো? হঠাৎই কলিংবেলের শব্দ শুনে তুই ই দরজাটা খুললিদেখলি বিদিশা দাঁড়িয়ে আছে তোর সামনেসেই হারিয়ে যাওয়া মুখ, মনকাড়া চাউনি, সেই আকূলতাদেবকে পাওয়ার জন্য যার এত ছটফটানিএতদিন বাদে একেবারে তোর বাড়ীর দোরগোড়ায়তোর মনে হত না এ আমি কি দেখছি সামনে?
 
শুভেন্দু এমন ভাবে কথাটা বললো, আমার মনে হল বিদিশা যেন সত্যি আসতে চেয়েছিল আমার বাড়ীতেশুভেন্দুকে বললাম, তুই ওকে না করলি কেন?
শুভেন্দু বললো, ‘আমি না করিনিনা করবোই বা কেন? যে মেয়েটার মধ্যে একটা অনুশোচনা রয়েছেএকদিন তোকে ভুল বুঝে সে ছেড়ে চলে গিয়েছিল, আবার সে ফিরে এসেছে তোর সাথে দেখা করতে চাইছেমনের মধ্যে একটু লজ্জ্বাও রয়েছেকিন্তু তবু যেন তোর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে বলে তারমনে কোনো দ্বিধাবোধ নেই।  এতবছর পরে বিদিশার মধ্যে যেন সেই কলেজে পড়ুয়া বিদিশাকেই আমি খুঁজে পাচ্ছিলামআমাকে নির্দ্ধিদায় ও বললো, আমি দেবের বাড়ীতে যেতে চাই, শুভেন্দুওর সাথে দেখা করতে চাইতুই কি আমার মনে একটু সাহস জোগাবি শুভেন্দু? দেব আমাকে দেখলে রেগে যাবে না?’
শুভেন্দু বললো, আমি বিদিশাকে বললাম, এক কাজ কর, তুই বরং আমার বাড়ীতেই চলে আয়আমি ওখানেই দেবকে ডেকে নিচ্ছিএকসাথে সবাই মিলে আড্ডা দেবোআবার মজা হবে, সেই কলেজের মতনরনি আর মাধুরীকেও আসতে বলছি
 আমি খুব আগ্রহ নিয়ে শুভেন্দুর কথাগুলো শুনছিলামমাধুরী একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল আমার দিকেআমাকে বললো, সত্যি দেবদাএখনো তুমি বিদিশাকে কত ভালোবাসোতোমার মত কজনে হয়?

রনি বললো, দেব হচ্ছে, সত্যিকারের প্রেমিকও ব্যর্থ প্রেমিক নয়বিদিশার কপাল ভালো, দেব ব্যাচারা বিয়ে করেনিনইলে-

শুভেন্দু বললো, দেব হচ্ছে এমন একটা ছেলে, যতক্ষণ নিজে থেকে কেউ ভুলটা না বুঝতে পারছে, ও জোর করে কারুর ভুল ধরাতে যাবে নাএই বিদিশাকেই দেখ, যখন নিজের ভুলটা বুঝতে পারলো, তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে

আমি বললাম, ছাড় ছাড়আমার সন্মন্ধে আর অত ভালো কথা বলতে হবে নাবিদিশা কখন আসছে, তাই বল

শুভেন্দু হেসে বললো, ‘দেখেছিস তো, বিদিশার কথা শুনে এবার তোর কেমন ছটফটানিটা শুরু হয়ে গেছেআসছে আসছে অত ব্যাকূল হোস নাএকটু পরেই এসে পড়বেবিদিশাকে আমি ফোন করেছিলাম একটু আগে, ও  ট্যাক্সি নিয়ে রওনা দিয়ে দিয়েছে হয়তো এসে পড়বে আর দশ মিনিটের মধ্যেই।’

মাধুরী বললো, ‘এক কাজ করলে হয় না? বিদিশা আসার আগে, আমরা বরং দেবদাকে অন্য কোথাও লুকিয়ে রাখিও এসে দেবদাকে খুঁজে পাবে না আর দেবদার মত বিদিশাও একটু ছটফট করবেমজা হবে একটু।’

শুভেন্দু বললো, ‘আইডিয়াটা মন্দ নয়তবে দেব কি তাতে রাজী হবে? দেখ ওর মুখের দিকে চেয়ে দেখএখনই কেমন ফ্যাকাসে মতন হয়ে গেলব্যাচারা বিদিশাকে না দেখতে পেলে, নিজেই যে কষ্ট পাবে।’

ওরা সবাই হাসতে লাগল।  শুভেন্দুকে রনি বললো, ‘আজ হচ্ছে ঐতিহাসিক দিনদুটি প্রেমিক প্রেমিকা এতদিন পরে আবার কাছাকাছি হচ্ছে দুজনেএই ঐতিহাসিক দিনে আমরাও আজ উপস্থিতদেব আর বিদিশার পুনর্মিলন কি জয় হোক।’

মাধুরী বললো, ‘হ্যাঁ দেবদাএবারে কিন্তু বড়সড় একটা পার্টী দিতে হবে তোমাকেপার্কস্ট্রীট বা বড় কোনো রেস্টুরেন্টে দেওয়া চাইঅনেক নোট খসবে তোমার তৈরী থেকো

মনে হল, দম নিঃশ্বেস হওয়া ঘড়িকে যেমন দম দিয়ে আবার শক্তির যোগান দেওয়া হয়।  ঠিক তেমনি বিদিশার আগমনের খবরটাও আমার ভেতরের শক্তিটাকে যেন অনেক বর্দ্ধিত করে দিয়েছেঠিক যেন জীবনের মরুভূমিতে বৃষ্টিপাতের মতনসেই উদ্দামতা, সেই আবেগ আবার ফিরে পাচ্ছি বিদিশা এখনো এসে পৌঁছোয়নি, কিন্তু ওর উপস্থিতি, ওর আবির্ভাব, শরীরে শরীরের স্পর্ষ আমি যেন আগে থেকেই টের পাচ্ছিমনে হচ্ছে, বিদিশা যেন আমার ঠিক পাশেই বসে রয়েছে, আর আমাকে বলছে, ‘কি গো তাকাবে না আমার দিকে? রাগ করেছো বুঝিদেখো আমি তো তোমার কাছেই আবার ফিরে এসেছি।’

জীবন খাতার প্রতি পাতায় বিদিশার নামটা লিখে রাখবো বলে আমি ঠিক করে রেখেছিলাম আমার জীবন থেকে বিদিশা কোথায় হারিয়ে গেলপাতাগুলোও সব শূন্য থেকে গেলআজ আবার বিদিশাকে আমি ফিরে পেলামমনে হল শূন্য পাতাগুলোকে ভরাট করার জন্য আমি যেন আবার পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠলাম
 
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#30
শুভেন্দু ঘড়ি দেখছে, রনিও ঘড়ি দেখছেনিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ঠিক সাতটা বেজে পঁচিশ মিনিটবিদিশা আসার কথা ছিল, সন্ধ্যে সাতটা নাগাদঅথচ এখনো অবধি এসে পৌঁছোলো নামাধুরী তখন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার ছটফটানিটা ধরে ফেলেছেশুভেন্দুকে বললো, ‘এই ছোড়দা, বিদিশাকে একবার ফোন করে দেখ না, এখনো এসে পৌঁছোলো না কেন? দেবদা চিন্তা করছে।’
শুভেন্দু বকা লাগালো মাধুরীকেওকে বললো, ‘ব্যস্ত কেন হচ্ছিস? ও ঠিক এসে পড়বেবললাম তো, ট্যাক্সি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেহয়তো রাস্তা জ্যাম আছেএসে পড়বে এক্ষুনি।’
 
আমি একটু উতলা মতন হয়ে শুভেন্দুর কাছে একটা সিগারেট চাইলামশুভেন্দু বললো, ‘একি রে দেব? তোর টেনশন হচ্ছে না কি? সিগারেট খাওয়া তো তুই কবেই ছেড়ে দিয়েছিসআবার যে সিগারেট খেতে চাইছিস?
 
আমি শুভেন্দুর কথা শুনলাম নাজোর করে ওর প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে নিয়ে ঠোঁটে গুঁজলাম একটা সিগারেট ধরাতে গিয়ে আমার এমন অবস্থা হল, যা জীবনে কোনোদিন হয় নিদেশলাইয়ের সাত আটটা কাঠি নষ্ট হলশুভেন্দু রনিকে বললো, ‘দেখ দেবের অবস্থা দেখ, এখনো সিগারেট ধরাতে পারছে নাব্যাচারা।’
 
রনি বললো, ‘বুঝতে পারছি, বিদিশার আসছে শুনে দেবের ভেতরটা এখন কিরকম তোলপাড় চলছেযতক্ষণ না ও এসে পৌঁছোবে দেবের এরকমই চলবে।’
 
জানি এতদিন বাদে বিদিশাকে দেখতে পাবো বলে মনের ভেতরে একটা অস্থিরতা কাজ করছেকলেজের সেই পুরোনো স্মৃতিগুলো বারে বারে মনে পড়ছে আর আমি যেন আরো ব্যাকুল হয়ে উঠছি বিদিশার জন্যজীবনে প্রেম আমি একবারই করেছি, শুধু এই বিদিশার সঙ্গেইকলেজে পড়া, বিদিশার সঙ্গে একসাথে ঘোরাঘুরি করাযখন কোনো তরুনের মন, স্বপ্নময় প্রেমের অজস্র রূপরেখার ভিড়ের মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চায়, প্রেমভাবনায় নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে চায়, আমি যেন সেভাবেই দিনগুলো অতিবাহিত করেছিলাম ঠিক স্বপ্নের মতইবিদিশার চিন্তাকে আমি তাই মন থেকে দূর করতে পারিনামনে হয় ও নেইতবুও ও যেন আমার কত কাছেই রয়েছে
 
সিগারেটটা ধরিয়ে বেশ কয়েকবার জোরে জোরে টান দিলামধোঁয়াটা গলায় আটকে গিয়ে খুক খুক করে কাশি হলো আমারশুভেন্দু বললো, ‘এই তুই কি শুরু করলি বলতোনা আমাকে দেখছি, এবার বিদিশাকে একটা ফোন করতেই হবে।’
 
সেলফোনটা হাতে নিয়ে শুভেন্দু সঙ্গে সঙ্গে কল করলো বিদিশাকেদু’বার রিং হওয়ার পর, বিদিশাই ধরলোশুভেন্দু, বিদিশাকে বললো, কিরে বিদিশা? এখনো এসে পৌঁছোলি না? কোথায় তুই?’
 বিদিশা বললো, ‘আমি এসে গেছিআর হয়তো বড়জোড় দশ মিনিট।’
 
শুভেন্দু বললো, ‘তোর জন্য এখানে একজন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, ভীষন উতলা হয়ে পড়েছেতাড়াতাড়ি দেখা দে মাআর কখন আসবি?’
 
বিদিশা বুঝতে পেরেছে, শুভেন্দু আমার কথাই বলছেওর কথা শুনে আমিও হাসবো না কাঁদবো, তাই ভাবছিলামশুভেন্দু বললো, জানিস বিদিশা, দেব আমার ওপরে রেগে কত খাপ্পা হয়ে রয়েছেআমার দোষ কি? না আমি তোকে দেবকে ফোন করতে বারণ করেছিলামতুই শীগগীর আয়নইলে দেব আর আমাকে আস্তো রাখবে না বলছে।’
 
বিদিশা কি বলতে চাইছিল, শুভেন্দু বললো, ‘নে তোর এক্সলাভারের সাথে একটু কথা বলদেবও তোর সাথে কথা বলে একটু শান্তি পাক।’
 
নিজের সেলফোনটা হঠাৎই আমার হাতে ধরিয়ে দিল শুভেন্দু।  আমার বাঁ হাতে তখন জ্বলন্ত সিগারেটআচমকা ফোনটা ওভাবে বাড়িয়ে দেওয়াতে সিগারেটটা আমার হাত ফস্কে পড়ে গেল হঠাৎইকোথায় পড়েছে বুঝতে পারছি নামাধুরী চেঁচিয়ে উঠে বললো, ‘এই দেবদা ওঠো, ওঠোতোমার জামার ওপরে পড়েছে সিগারেটএখুনি জামাটা পুড়ে যাবে।’
সোফা থেকে তড়াক করে লাফিয়ে উঠলামএবার জামা থেকে সিগারেটটা মাটিতে গিয়ে পড়লোরনি বললো, ‘বিদিশা আসুকআজ তোর হবেযা শুরু করেছিস তুই।’
 
ফোনটা কানের পাশে নিয়ে বিদিশাকে কি বলবো, তাই ভাবছিভাবলাম, শুরুটা এরকম ভাবে করি, বিদিশাকে বলি, ‘তুমি কেমন আছো বিদিশা? বিদিশাও তখন আমাকে বলবে, আগে বলো তুমি কেমন আছো? আমি জবাবে কিছু একটা বলবোএই ভেবে ফোনটা কিছুক্ষণ কানের পাশেই ধরে রাখলামশুভেন্দু বললো, ‘হ্যা রেআবার ভাবুক হয়ে গেলি তুই? বল কিছু, ও তো ফোনটা ধরেই আছে তোর জন্য।’
 
অনেকদিন বাদে বিদিশাকে ফিরে পেয়েছি, ভাবলাম, বিদিশাকে বলি, বিদিশা তুমি ফি্রে এসেছোকত ভালো লাগছেসেই পুরোনো আনন্দের দিনগুলো, ভালোবাসার মূহূর্তগুলোবিদিশা কলেজের দিনগুলোর কথা তোমার মনে আছে? তুমি যে আমাকে ভুলে যেতে পারবে না আমি জানতাম, বিদিশা ও বিদিশাশুনতে পারছো আমার কথা? বিদিশা-
এবার শুভেন্দুর মুখ থেকে একটা বড় ধ্যাতানি খেলামচেঁচিয়ে উঠে বললো, ‘কিছু বলবি তো? তখন থেকে ফোনটা কানে ধরে শুধু বসে আছিস যা বলার বিদিশাকে সব বলে ফেলমনের মধ্যে কিছু রাখিস না।’
অতজোড়ে ধ্যাতানি খাবার পর আমার যেন চেতনা ফিরলোমুখ দিয়ে শুধু বেরিয়ে এলো, হ্যালো
বিদিশা বললো, ‘কখন এসেছো?’
 -‘এই কিছুক্ষণ আগে।’
 
-’অনেক কষ্ট পেয়েছো না? এইকটা দিন।?  বিদিশাকে শুধু খারাপ ভেবেছো।’
 
- ‘না ভাবিনিকেন ভাববো? তুমি তো খারাপ নও।’
 
-’শুনে খুশি হয়েছো? আমি ফিরে এসেছি বলে।’
 
-’তা তো হয়েছি কিছুটা।’
 
-’কিছুটা কেন? অনেকটা নয়?’
 
-’হ্যাঁ অনেকটাইআমি ভীষন খুশি হয়েছি।’
 
-’আমার কথা কেউ বলেছে তোমাকে?’
 
-হ্যাঁশুভেন্দু বলেছে, শুক্লাও বলেছে।’
 
হঠাৎই ফোনের ও প্রান্তে বিদিশার গলাটা কেমন আস্তে হয়ে গেলমনে হল বলতে গিয়ে ওর গলাটা অনুশোচনায় কেমন কেঁপে গেলোআমাকে বললো, ‘দেব’ তুমি কি আমাকে সেই আগের মতই ভালোবাসো? যে ভালোবাসার দাম দিতে না পেরে আমি তোমাকে ছেড়ে একদিন চলে গিয়েছিলাম
 
বিদিশাকে বললাম, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি, এই কথাটা জীবনে কোনদিন তোমাকে ছাড়া আর কাউকে কখনো বলিনিহয়তো প্রতিদানে যেটা পেতে চেয়েছিলাম, সেটা পাইনি ওটা আমার ভাগ্যের দোষেকিন্তু তোমাকেও আমি দোষ দিতে চাইনিভালোবাসাটাকে বুকের মধ্যেই আঁকড়ে ধরে রেখেছিলাম এতদিনভেবেছিলাম, হয়তো যদি তুমি কোনদিন, আমার কাছেই আবার ফিরে আসোবিদিশার প্রতি দেবের ভালোবাসা এখনো যে তাই মরেনি।’
 
মনে হল,অনুতপ্ত হয়ে বিদিশা যেন ফোনেই কাঁদতে শুরু করে দিয়েছেগলাটা ভারী ভারী করে বললো, ‘দেব? তুমি এখনো সেই আগের মতন? তোমাকে যেমনটি আমি দেখে গিয়েছিলাম?
 
বিদিশাকে বললাম, ‘এই বোকা মেয়ে কাঁদছো কেন? তাড়াতাড়ি এসোআমি তো তোমার জন্যই অপেক্ষা করছি।’
 
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#31
বিদিশার সাথে কথা বলার পরে ফোনটা ছেড়ে দিলামঠিক তার পাঁচ মিনিট পরেই শুভেন্দুদের গলির মুখটায় একটা কালো রঙের ট্যাক্সি এসে দাঁড়ালো।  মাধুরী ট্যাক্সির আওয়াজ শুনেই দৌড় লাগালোআমাদেরকে বললো, ‘বিদিশা এসেছে মনে হয়আমি ওকে এখানে নিয়ে আসছি।’
ট্যাক্সি থেকে বিদিশা নামছেআমি ঘরের জানলা দিয়ে বিদিশাকে দেখতে পাচ্ছিলামএকটা ময়ুরকন্ঠী রঙের ছাপা শাড়ী পড়েছে বিদিশাহাতে ওর সাদা রঙের একটা ভ্যানিটি ব্যাগগলির ল্যাম্পপোষ্টের উজ্জ্বল আলোতে বিদিশার মুখটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলামমাধুরী ঘর থেকে বেরিয়ে ওর সামনে যেতেই বিদিশা ওকে জড়িয়ে ধরলোদুজনের দুজনকে জড়িয়ে ধরেই কি যেন একটু কথা হলদুজনে তারপর হেঁটে এগিয়ে আসতে লাগলো শুভেন্দুদের বাড়ীর দিকে
 
ঘরের মধ্যে আমি শুভেন্দু আর রনি বসেশুভেন্দু বললো, শোন দেব, ‘তোকে আর বিদিশাকে কিন্তু আমরা আধঘন্টার জন্য আলাদা ছেড়ে দেবোতারপরে কিন্তু পুরো সময়টাই আমাদেরআজকে অনেক গল্প হবে, আনন্দ হবেআর তুই কিন্তু ভালো ভালো কয়েকটা গান গাইবিনইলে তোকে কিন্তু ছাড়বো না আজকে।’
 
আমি কিছু বলতে চাইছিলামরনি বললো, ‘ভ্যানতারা আর করিস না তোবিদিশা কি তোর পালিয়ে যাচ্ছে? এই তো এলোএবারে একেবারে তোর পার্মানেন্ট হয়ে গেলো।’
 
বারান্দা পেরিয়ে বিদিশা মাধুরীর সঙ্গে ঘরে ঢুকছেআমি মুখটা একটু নিচু করে নিলামমনে হল, এই বুঝি বিদিশা ঘরে ঢুকলোআর তার আগে থেকেই আমিও কেমন আড়ষ্ট মতন হয়ে গেলাম
মাধুরী বিদিশাকে ঘরে ঢুকিয়ে বললো, ‘দেখছো তো? ওখানে ওই সোফার ওপরে কে বসে আছেচেনো লোকটাকে? চিনে বলো দেখি, ওই ভদ্রলোকটি কে?
আমি মুখ তুলে বিদিশার মুখের দিকে তাকাতেই, বিদিশাও আমার মুখের দিকে তাকালোপ্রায় বেশ কিছু বছর পরে বিদিশাকে আবার খুব কাছ থেকে দেখছি, আমার মনে হল, সর্ব্বাঙ্গ সুন্দরী বিদিশা, চোখ দিয়ে যার সৌন্দর্য ও শরীরটাকে আকন্ঠে পান করা যায়, তাকে আবার এতো কাছ থেকে দেখছি আমিআমার যেন সব স্বপ্নের মতন মনে হচ্ছেঠিক যেন চোখের সামনে এক রূপমাধুরীঅথচ প্রথমদিন ওর এই রূপ দেখে আমি কিন্তু ওর প্রেমে পড়িনিবিদিশাই আমাকে প্রথম চিঠি দিলোতারপরেই আমাদের প্রেম শুরু হলমনের সঙ্গে মন মেলাতে লাগলো, দু একটা দিনতারপরে যখন ওর রূপের প্রশংসা শুরু করলাম, বিদিশা বললো, ‘তাই বুঝি? আমি এতো সুন্দর? প্রথম দিনতো দেখে বলোনি আমাকে।’
প্রজাপতির মতো কোমল ওর সুন্দর ঠোঁটদুটোকে দেখছিলাম কলেজে পড়ার সময় ছেলেমানুষি উচ্ছ্বাসে কতবার যে আমার গলা জড়িয়ে আমার গালে চুমু খেয়েছিল ওই ঠোঁট দিয়ে, তার ইয়ত্তা নেইমনে হলো সৌন্দর্য ও মনের দিক থেকে বিদিশা যেন এখনো সেই তরুনীই আছেতরুনী নারীর মতোই ভালোবাসার জন্য উন্মুখ, হয়তো আমাকেই আবার সুখী করার জন্য তার হৃদয় মনে এক উজাড় আকাঙ্খাএই আকাঙ্খা অতীতের সেই আকাঙ্খার থেকেও তীব্র আরো উত্তপ্ত
 শুভেন্দু রনিকে বললো, ‘এই রনি, এদের দুজনের চোখদুটো যে দুজনের দিকে আটকে গেছে রেআমরা ঘরে বসে আছি, অথচ এদের দুজনের কারুর খেয়ালই নেইব্যাপারটা কিছু বুঝতে পারছিস?’
 
রনি আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না রে দেববিদিশা আসছে বলে, তোকে আমরা বাড়ীতে ডাকলামতাই বলে তুই?-
 
মাধুরী বিদিশাকে বললো, ‘বসো না বসোদাঁড়িয়ে আর কতক্ষণ থাকবে? পারো যদি ওই লোকটার পাশে গিয়ে বসো।’ বলে আমার দিকে আঙুল তুলে মাধুরী বিদিশাকে ইশারা করলো
 
যেটা হয়তো হবারই কথা ছিল নাশুভেন্দু আর রনি এবার সেটাই করে দেখালো দুজনেওরা দুজন এগিয়ে গেলো বিদিশার দিকেবিদিশার হাত দুটো দুপাশ থেকে দুজনে ধরলো, তারপর দুজনে ওকে টেনে নিয়ে এসে বসিয়ে দিলো আমার পাশে
 
শুভেন্দু বললো, ‘নে, এবার তোরা দুজনে পাশাপাশিএখন আর দুজনে দুজনের দিকে তাকাবি নাএখন আমাদের দিকেই তাকিয়ে থাকবি, আর আমাদের সাথেই কথা বলবি।’
 
মাধুরী রনিকে বললো, ‘তুমি আর ছোড়দা, তোমরা দুজনে এত হিংসুটে কেন গো? দেখোতো বিদিশা কি ভাবছেআর দেবদার মুখটাও কেমন অন্যরকম হয়ে গেছে।’
শুভেন্দু বললো, ‘এই ছুড়ী, বাজে বকিস নাদেব কে আমি ভালো করেই চিনিওকে মানা করলেও ও ঠিক চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বিদিশার দিকে তাকাবেআমাকে সামনে থেকে সব লক্ষ্য রাখতে হবে।’
 
রসিকতার মানে যে বোঝে, সে জানেবুঝতেই পারছিলাম, এই শুরু হল এবার শুভেন্দু আর রনি যা করবে, আমাকে আর বিদিশাকে, দুজনকেই এখন মেনে নিতে হবে
 
শুভেন্দু বললো, ‘আচ্ছা দেব, বিদিশা তো ফিরে এলোবড়সড় করে একটা পার্টী কবে দিচ্ছিস বল? আর বিয়ের ডেটটা যদি এখনি ঠিক করে ফেলিসতাহলে কিন্তু বৌভাতের রিসেপশনটা ভালো করে দিতে হবেমেনু কার্ডের আইটেম কি কি করবি, এখন থেকে ঠিক করে ফেলক্যাটারিং এর অর্ডারটা রনিকে দিয়ে দিচ্ছিও বিজলী গ্রীলের সাথে কথা বলে নেবে।’
মাধুরী বিদিশাকে বললো, ‘এই বিদিশা চা খাবে তো? সবার জন্য তাহলে চা করে আনছি।’
 
শুভেন্দু মাধুরীকে বললো, ‘এই দেবকেও ভালো করে একবার জিজ্ঞেসে করে নেবাবু তো একজনের জন্য চা ছেড়ে দিয়েছিলেন অনেকদিন আগে, যার জন্য ছেড়েছিলেন, তিনি এখন তার পাশেই বসে আছেনদেব এখন আবার তার সামনে চা খাবেন কিনা?
বলেই ও আমার দিকে তাকালো
 বিদিশা একটু লজ্জা করছিলশুভেন্দু বললো, ‘লজ্জ্বা কোরো না, লজ্জ্বা কোরো নাআমরা সবাই তোমাদের বন্ধুতোমাদের পুরোনো ইতিহাসটা আমরা তো সবাই জানিতাই বলছি।’
মাধুরী চুপ করে দাঁড়িয়েছিল হাঁ করেবিদিশা বললো, ‘তুমি যাও তো মাধুরীচা করে নিয়ে এসোতোমার এই দাদার কথা শুনো নাতোমার দাদাটা ভীষন দুষ্টু।’
রনি হাসছিল দাঁত বার করেশুভেন্দু কে বললো, ‘দেখলি? বিদিশা যেই হ্যাঁ বলে দিলো, অমনি দেবও না করলো নাকি গভীর প্রেম, একেবারে লায়লা মজনুর মতন।’
আমি রনিকে বললাম, ‘চা তো আমি খাইতবে আগে যেরকম ঘনঘন খেতাম, সেটা এখন খাই নাসকালে একবার খাইআর এই বিকেল বা সন্ধেবেলাটা একবার
শুভেন্দু বললো, ‘আগে ঘনঘন যখন খেতিস, তখন সেটাকে কমিয়ে দিলি কেন? কেউ তোকে বারণ করেছিলোসেটা বল না?’
বলেই ও বিদিশার দিকে তাকালো
আমি বললাম, বয়স হলে, সবই কমাতে হয় আসতে আসতেশরীরটার দিকেও তো খেয়াল রাখতে হবে
শুভেন্দু বললো, কত বয়স হয়েছে তোর? এমন ভাবে বলছিস, যেন তুই বুড়ো হয়ে গেছিসএই তো কলেজ পাশ করলাম কয়েক বছর আগেএখনো দিনগুলো সব মনে আছেসেই কফি হাউস, শিয়ালদহর কাফেটরিয়া, বসন্ত কেবিন, কলেজ স্কোয়ারের পাশে শরবতের দোকানটা, কি যেন নাম?
রনি বললো, প্যারামাউন্ট প্যারামাউন্ট ওখানে দেব, বিদিশাকে নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে যেতো মনে নেই?
শুভেন্দু বললো, হ্যাঁ কি না, বিদিশা শরবত খেতে খুব ভালোবাসে তারপরে যখন আমরা সবাই মিলে একদিন ওদের পিছু নিলাম, দেবের তারপরের দিন থেকে কলেজ স্কোয়ারে যাওয়াই বন্ধ করে দিলো ব্যাচারা খুব কষ্ট পেয়েছিল বিদিশার জন্য
শুভেন্দু আর রনি দুজনেই হো হো করে হাসতে লাগলোবুঝলাম, দুটোতে মিলে যা শুরু করেছে, পুরোনো কাসুন্দী সব ঘেঁটে বার করছেএবার না মিনুর কথাটাও আলোচনার মধ্যে এসে না যায়
বলতে বলতেই মাধুরী চা নিয়ে ঢুকলোএকটা বড় প্লেটে করে সবার জন্য চা নিয়ে এসেছেবিদিশা বললো, সেকীরে? এত তাড়াতাড়ি চা হয়ে গেল?
রনি বললো, ও খুব ফাস্টসব কিছুই খুব তাড়াতাড়ি করেরান্নাটাও তাড়াতাড়ি সারেসেই জন্য আমারো খুব সুবিধে হয়
থাক আর অত প্রশংসা করতে হবে নাএবার চা’ টা সবাই মিলে হাত বাড়িয়ে ধরো তো দেখিবলেই মাধুরী সবার দিকে চা বাড়িয়ে দিতে লাগলোবিদিশা হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপটা নিলোকিন্তু কাপটা প্রথমে আমাকেই দিলোশুভেন্দু উল্টো দিক থেকে সব লক্ষ্য করছিলোআমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলোতারপরেই বললো, দেব কিন্তু আজ গান শোনাবে বলেছে, তোরা সবাই মিলে ওকে আর একবার বলআর বিদিশা, তুমিও একটু বলোনইলে যে বাবু আবার-
চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিবিদিশা আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসলোআমাকে বললো, কি গাইবে না?
 
আমি বললাম, হ্যাঁগাইবো
[+] 4 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#32
শুভেন্দুদের বাড়ীতে আবার হারমোনিয়াম, তবলা কিছুই নেইমাধুরী ছোটবেলায় গীটার শিখতোআমি গীটারটাও বাজাতে পারতাম বলে, মাঝে মাঝে ওর গীটারের সাথে সুর ভাজতামমাধুরী বিয়ে করে এ বাড়ী ছেড়ে চলে গেলো, সেই সাথে গীটারও ওর সাথে চলে গেলআমি অবাক হলাম, যখন দেখলাম, পাশের ঘর থেকে রনি একটা স্কেল চেঞ্জিং হারমোনিয়াম নিয়ে এলো।  আমাকে বললো, ‘সব ব্যবস্থা করেছি আজকেতোর কোনো চিন্তা নেই।’
 
পাশের কোনো বাড়ী থেকে হয়তো হারমোনিয়ামটাকে নিয়ে এসেছেমাধুরী বললো, ‘এ কি এ কি দাঁড়াওএতদিন পরে বিদিশা এলো, দেবদার সাথে একটু কথা বলে নিকতারপরে তো গান বাজনা সব হবে।’
 
শুভেন্দুদের চারতলা বাড়ীর ছাদটা খুব সুন্দরচারিদিকে টব দিয়ে ঘেরামাঝখানে একটা দোলনা দুলছেশুভেন্দুর বাকী দাদারা সব বিবাহিতসবাই বউ নিয়ে এসে সন্ধেবেলা থেকে একঘন্টা করে ওখানে দোল খেয়ে যায়আমাকে শুভেন্দু বললো, ‘শোন ছাদটা, তোর আর বিদিশার জন্য আজ আধঘন্টা রিসার্ভওখানে কেউ যাবে নাএই আমরা তিনজনও নয়।  কিন্তু আধঘন্টার বেশী দেরী করবি নাতাহলে কিন্তু বামাল করবো গিয়েতোর গান শোনবার পর্বটা তারপরে হবেআমরা ততক্ষণ আমাদের লিকারের ব্যবস্থাটাও সেরে ফেলছি। ‘
চা খাবার পর, মাধুরী আমাকে আর বিদিশাকে ছাদে নিয়ে গেলোআমাদের দুজনকে বললো, ‘নাও আধঘন্টার জন্য তোমাদেরকে আমি এখানে ছেড়ে গেলামঠিক আধঘন্টা পরেই আমি আসছিএর মধ্যে দুজনের যা কথা বলবার, সেরে নাও।’
আমার থেকে চার পাঁচ হাত দূরে দাঁড়িয়ে তখন বিদিশামনে হচ্ছিলো, ও হয়তা চাইছে, আমি ওকে কাছে ডাকি, নয়তা ওর কাছেই এগিয়ে যাইবিদিশাকে বললাম, ‘দূরে কেন দাঁড়িয়ে রয়েছো? কাছে এসো।’
বিদিশা একটু এগিয়ে এলোমনে হল, দূরত্বটা কিছুটা হলেও কমলোকিন্তু এখন যেন অল্প একটু ফাঁক থেকে গেলো
দূরের আকাশে চাঁদ দেখা যাচ্ছে, একটু ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস বইছেবিদিশা বললো, বেশীক্ষণ কিন্তু ছাদে দাঁড়ানো যাবে নাতাহলে আবার ঠান্ডা লেগে যাবে।’
বিদিশাকে বললাম, ‘তুমি গরম কিছু পড়ে আসোনি? নইলে ফেরার সময় তো ঠান্ডা লেগে যাবে।’
বিদিশা বললো, ‘তুমিও তো কিছু পরে আসোনিএকটা হাফহাতা শোয়েটার অন্তত পড়ে আসতে পারতেতারপরেই বললো, মাধুরীকে বলবো, যাবার সময় একটা শাল জাতীয় কিছু দিয়ে দিতেকাল বা পরশু ওকে ফেরত দিয়ে দেবো।’
বিদিশাকে বললাম, তোমার বাবা মা এখন কেমন আছেন?
বিদিশা বললো, ‘ভালোতবে বাবার ব্যবসা করে অনেক লোকসান হয়ে গেছেআগের মতন বড়লোকীয়ানা ব্যাপারটা নেইআমাদের আর্থিক অবস্থা সেই আগের মতন নয়।’
শুনে একটু খারাপ লাগলোতবু বললাম, ‘তোমার বাবা মা লোক হিসেবেও খুব ভালো ছিলেনএকেবারে মাটীর মানুষআমি একবারই গিয়েছিলাম, আর ওনাদের দেখে এটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম।’
 বিদিশা বললো, মাসীমা কেমন আছেন? আমার কথা কখনো জিঞ্জেস করেন?
 
বললাম, ‘হ্যাঁমা ভালো আছেমাঝে মাঝে তোমার কথা জিজ্ঞাসা করে তো আমাকে।’
 
মনে হল, এই আলোচনার বাইরে বিদিশা যেন আরো একটু সপ্রতিভ হতে পারছে না আমার সাথেওকে সহজ করে দেবার জন্য বললাম, আমার সাথে তুমি দেখা করতে চেয়েছিলে, আমার বাড়ীতে তুমি আসতেও চেয়েছিলেশুভেন্দুর মুখে আমি সবই শুনলামতবুও আগের মতন পুরো হাসিটা কিন্তু এখনো আমি বিদিশার মুখে দেখতে পাচ্ছি নাতোমার মনে কি কোনো লজ্জ্বা বা দ্বিধা আছে এখনও? সেরকম কিছু থাকলে মন থেকে সেটা দূরে সরিয়ে দাওপুরোনো কথা আমিও কিছু মনে রাখি নাআর আশা করি তুমিও-
বিদিশা বললো, তুমি বিয়ে করো নি কেন?
 
মনে হল, মান্না দের গানটা গেয়ে ওকে উত্তরটা দিই আর ওকে বলি, হয়তো তোমারি জন্য, হয়েছি প্রেমে যে বন্য, জানি তুমি অনন্য আশার হাত বাড়াই যদি কখনো এ প্রান্তে, চেয়েছি তোমায় জানতে, শুরু থেকে শেষ প্রান্তে শুধু ছুটে গেছি তাই আমি যে নিজেই মত্ত, জানিনা তোমার শর্ত, যদি বা ঘটে অনর্থ, তবু তোমাকে চাই আমি যে দুরন্ত, দু’চোখে অনন্ত, ঝড়ের দিগন্ত জুড়েই, স্বপ্ন চড়াই তুমি তো বলনি মন্দ, তবু কেন প্রতিবন্ধ, রেখোনা মনের দ্বন্দ্ব, সব ছেড়ে চল যাই
বিদিশা চেয়ে আছে আমার মুখের দিকেযেন অনেক না বলা কথা আমাকে সে বলতে চায়নিষ্পাপ সরলা যুবতীর মতই সে দেবকে নতুন করে ভালোবাসতে চায়জীবনের প্রথম প্রেম, প্রেমের সুখানুভূতিতে একসময় শরীরে যেমন শিহরণ জাগতোঅসংখ্য স্বপ্ন আর আনন্দে জেগে উঠতো মনটাবিদিশা সেইভাবেই হারিয়ে যাওয়া প্রেমটা সমর্পন করে দিতে চাইছে আমার কাছে
আমার এবারে খুব কাছে এসে বিদিশা বললো, ‘আমাকে তুমি বিয়ে করবে দেব? আমি কিন্তু সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে তোমার কাছেই আবার ফিরে এসেছি।’ বিদিশার দিকে আমি দু’হাত বাড়ালামও আমার দুহাতের আলিঙ্গনে শরীরের সাথে আবিষ্ট হয়ে গেলবিদিশার ঠোঁটদুটো আমার খুব কাছে, ইচ্ছে হচ্ছিলো একটা চুমু খাই
মনে পড়ছিলো, ছোটোবেলার কথাএকটা হলদে প্রজাপতি ঘাসের ওপর দিয়ে নেচে নেচে উড়ে বেড়াচ্ছেআমি প্রজাপতিটাকে ধরার অনেক চেষ্টা করছি, কিছুতেই ধরতে পারছি নাপ্রজাপতিটা সেদিন উড়ে চলে গেলো বলে খুব মন খারাপ হয়েছিল, মা পরে বলেছিলো, ‘প্রজাপতি যেদিন নিজে থেকে তোর গায়ে এসে বসবে, বুঝবি তোর এবার বিয়ে হতে চলেছে।’ শুভেন্দুদের বাড়ীর ছাদে একটা নরম প্রজাপতি অনেকদিন পর আমাকে আবার জড়িয়ে ধরেছেআমার বুকে মুখ ঘসছে, গলায় মুখ রাখার চেষ্টা করছে, আমিও তাকে আদর করার চেষ্টা করছিমনে হচ্ছে, এই শীতকালের সন্ধে রাত্রে এ হল সেই উষ্ণতার পরশযেটা পেলে শরীর এমনি গরম হয়ে যায়, শোয়েটার বা শালহয়তো কিছুরই প্রয়োজন পড়ে না
হঠাৎই ছাদের দরজাটা সেইসময় খুলে গেলোদেখি মাধুরী ওখানে দাঁড়িয়েআমাদের দুজনকে বললো, ‘এই যে হারিয়ে যাওয়া প্রেমিক, প্রেমিকাটাইম হয়ে গেছেছোড়দা তোমাদের দুজনকে ডাকছেএবারে নিচে যেতে হবে।’
 আচমকা মাধুরীকে আবার ছাদে আসতে দেখে বিদিশা কিছুটা লজ্জ্বায় পড়ে গেছেআমার বুক থেকে মুখটা তুলে ও তখন নিজেকে একটু দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল, মাধুরী অন্ধকারে অত ভালো করে ঠাওর করতে পারে নি আমাদেরতারপরে যখন বুঝলো, বিদিশা আর আমি পরষ্পর দুজনকে জড়িয়ে ছাদের ওপরে দাঁড়িয়ে, ও খিল খিল করে হেসে উঠলোআমাদেরকে বললো, ধরা পড়ে গেছো তো? ভয় নেই ভয় নেই, আমি নিচে গিয়ে কাউকে কিছু বলছি নানাও আরো কিছুক্ষণ সময় এখানে থাকো, তারপরে নিচে চলে এসো
বিদিশা আমাকে বললো, ‘ধ্যাত, তুমি আমাকে বলবে তো? মাধুরী চলে এসেছে, আমি খেয়াল করিনি
আমি হেসে বললাম, ‘তো কি হল? শুভেন্দু এলে না হয় একটা কথা ছিলমাধুরী নিচে গিয়ে কিছু বলবে নাআমার ওর ওপরে ভরসা আছে।’
বিদিশা বললো, ‘চলো, চলো, নিচে যাইনইলে ওরা আবার-’
‘এই তো এতদিন বাদে তোমাকে এত কাছে পেলাম, এখনি চলে যাবো? দাঁড়াও না একটু।’
বিদিশার হাত ধরে টানতে লাগলাম, ওকে আবার বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলামবিদিশা বললো, ‘এবারে কিন্তু শুভেন্দু ওপরে উঠে আসবেতোমার আর আমার দফা রফা করবে এসে।’
বিদিশাকে বললাম, ‘কিছু করবে নাতাহলে প্যাঁদানি খাবে আমার কাছেতুমি শান্ত হও তো।’
আবার কয়েক মূহূর্তের জন্য প্রজাপতিটা কাছে পেয়েছিবিদিশা বললো, ‘তুমি এরকম ভালোবাসা আগে কখনো বাসো নিবেসেছো কি?’
বিদিশাকে জড়িয়ে ধরে বললাম, ‘না বাসিনি তোসত্যি কথাই বলছিআসলে তখন আমার বয়সটা কম ছিলো।’
বিদিশা বললো, ‘বয়স কম থাকলে বুঝি ভালোবাসতে নেই?’
বিদিশাকে বললাম, ‘এই বয়সেই তো মানুষ মরীয়া হয়ে কাউকে ভালোবাসতে পারেদেখছো না কেমন মরীয়া হয়ে উঠেছি এখন তোমার জন্য।’
বিদিশার ঠোঁটে একটা চুমু খেতে যাচ্ছিলামঠোঁটের ওপরে হাত রেখে মুখ চাপা দিয়ে বললো, এই কেউ দেখে ফেলবে
-কে দেখবে এখন? মাধুরী তো চলে গেছে
-না, তাও পরের বাড়ীতে লজ্জ্বা করে না বুঝি?
বিদিশাকে বললাম, ‘তোমাকে আর আমাকে নিরিবিলিতে ছাদে কেন শুভেন্দু পাঠিয়েছে, জানো না? যাতে চুমুটা ভালো করে খেতে পারিপরের বাড়ীতে যখন এ সুযোগ কেউ করে দেয়ে, তখন তাকে সদব্যবহার করে নিতে হয়।’
বিদিশা বুঝতেই পারছিল, আমি এবার সজোরে ওকে চুমুটা খাবোআমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড় লাগালো, ছাদের অন্যদিকেআমিও ওর পেছন পেছন দৌড়োতে লাগলামবেশ লম্বা বড় ছাদকিছুটা দৌড়োনোর পর, বিদিশা হাঁপিয়ে গেলএকটু সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে শ্বাস নেবার চেষ্টা করছেআমি সামনে যেতেই বললো, এই আমাকে কিন্ত জোর করে চুমু খেলে, আমি নিচে ছুট্টে চলে যাবোশুভেন্দু আর রনি এখন নিচে রয়েছে, ওরা তখন দুজনে মিলে জব্দ করবে তোমাকে।’ বলেই হাসতে লাগলো
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#33
কি জ্বালা! পরের বাড়ী আর নিজের বাড়ীর এই হোল তফাৎএতদিন বাদে যাও বা চুমুর সুযোগটা এলোতাও সেটাকে গ্রহন করতে পারবো না? আমি একেবারেই আপসেটমুখটা ঘুরিয়ে চলে গেলাম ছাদের একপাশটায়চুমু খাওয়ার সুযোগ যখন হয় নি অগত্যা আকাশের চাঁদ আর তারা দেখতে লাগলামসামনে একটা বড় নারকেল গাছ হাওয়াতে দুলছেমনে হল আমার শরীরেও কেমন একটা দুলুনি লাগছে, কারণ পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে বিদিশাপেছন থেকে আমার কোমরটা দু’হাতে জড়িয়ে ধরেছেআর আমার পিঠে একটার পর একটা চুমু খেয়ে যাচ্ছে
আমি বিদিশার দিকে মুখ ঘোরালামবিদিশা এবার একটা চুমু খেলো আমার গালেতারপর আলতো করে চুম্বনের স্পর্ষ দিলো ঠোঁটেশিশুরা যখন চুম্বন করে তখন তাদের নিঃশ্বাস আলতো ভাবে গায়ে এসে লাগেতেমনি ভাবে বিদিশার নিঃশ্বাসটাও আমার গায়ে এসে লাগছিলোঠোঁটটা বাড়িয়ে ওর ঠোঁটটাকে এবার আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করলামনিজেকে সম্পূর্ণ সমর্পণ করে এবার স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো বিদিশা
চুমুর পর চুমু দিয়ে বিদিশাকে আমি চুম্বনস্নাত করে দিচ্ছিহঠাৎই আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিদিশা বললো, ‘ওই মাধুরী এসেছে আবার।’
আমি পেছন ঘুরে তাকালাম, বিদিশাকে বললাম, কোথায় মাধুরী? কই কেউ নেই তো
দেখি বিদিশা হাসছে আমার দিকে তাকিয়েআমাকে বললো, ‘খেলে তো চুমুচলো এবার নিচে যাই।’
 
বিদিশা আর আমি নিচে যাবার পর শুভেন্দু বললো, ‘এই তোরা দুজনে এতক্ষণ ধরে কি করছিলিস রে? সেই যে উপরে উঠেছিস নিচে আসার নামই নেই
দেখি মাধুরী সামনে দাঁড়িয়ে মুখ টিপে হাসছেশুভেন্দু ওর হাসিটা দেখামাত্রই বুঝে গেলোবললো, ‘ও বুঝেছি বুঝেছিতোরা তোদের কাজটা করে এসেছিসআমারই ভুলটা হয়ে গেলকেন যে চুপি চুপি ছাদে গিয়ে একবার দেখে এলাম না।’
মাধুরী হাসছিলশুভেন্দুকে বললো, ছোড়দা, তুই না সত্যি, এতো ফাজলামী মারিস না
শুভেন্দুও তখন হাসছেআমার দিকে তাকিয়ে বললো, ঠিক হ্যায় তো বসতাহলে আমাকেও একটা থ্যাঙ্কু দাওদেখো, এইজন্যই তোমাকে বলেছিলাম আসতেসারপ্রাইজ মানে বিদিশার সারপ্রাইজতোমার জীবনে বিদিশার থেকে বড় সারপ্রাইজ কি আর কিছু আছে? আই অ্যাম অলওয়েজ উইথ ইউ মাই ফ্রেন্ডতোমার সুখে দূঃখে সবসময়ই তোমার পাশে ছিলামআর ভবিষ্যতেও থাকবো, এটা জেনে রেখো।’
মাধুরী বিদিশাকে নিয়ে একটু অন্যঘরে চলে গেলোশুভেন্দু বললো, ‘আমার দাদার বৌদের সাথে বিদিশার আলাপ করাবেমোটামুটি পনেরা কুড়ি মিনিট ধরে নেবৌদিরা এমনিতেই খুব কথা বলেতিন তিনটে বউ, সময় তো একটু লাগবেও আসার আগে চট করে দুপেগ মেরে নেসিগনেচার হূইস্কি এনেছে রনিগলাটা ভিজিয়ে নিয়ে তারপরে গান শুরু হবে।’
আমি বললাম, করেছিস কি? গানও গাইবো, আবার মদও খাবো?
শুভেন্দু বললো, ‘দূর ব্যাটা আজকেই তো খাবিআজকে তোর জীবনের স্পেশাল দিন নাবছরে কদিন মাল খাস? হাতে গুনে বলে দিতে পারবো, তুই কদিন খাসআজ একটু সেলিব্রেট করো বৎসবুঝতে পারছো না? তোমার জন্য আমাদেরও আজ কত আনন্দের দিন।’
 রনি আমার দিকে গ্লাসটা বাড়িয়ে বললো, নে চুমুক দেকাম অন, চীয়ার্স
আমি ঢোঁক ঢোঁক করে গ্লাসের অর্ধেক জল মেশানো হূইস্কিটা খেয়ে নিলামগলায় একটা আলতো ঝাঁঝ লাগলোমুখ দিয়ে আওয়াজ করলাম আ-
সঙ্গে সঙ্গে রনি আর শুভেন্দুও গ্লাসে চুমুক দিয়ে মুখ দিয়ে একসাথে আওয়াজ করলো আ- দুজনেই বললো, কি শান্তি আজকেতাই না? শান্তি শান্তিআজ যেন অনেক শান্তি
আমিও বললাম, হ্যা, ভীষন শান্তি
 
রনি বললো, ‘দেব’ বাড়ীতে মাসীমাকে একটা ফোন করে বলে দে, তোর কিন্তু ফিরতে ফিরতে আজ দেরী হবে।’
শুভেন্দুও সায় দিলো, আমাকে বললো, ‘হ্যাঁ, শুধু শুধু মাসীমার চিন্তা বাড়িয়ে লাভ নেইএকেবারে রাতের ডিনার সেরেই এখান থেকে বেরোবিতোর আর বিদিশার জন্য মাধুরী অনেক পদ রান্না করেছেতোদেরকে ও না খাইয়ে ছাড়বে না আজকে।’
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, এখন বাজে আটটাতারমানে গান বাজনা, গল্পগুজব আর খাওয়া দাওয়া সেরে এখান থেকে বেরোতে বেরোতে মোটামুটি রাত এগারোটা  হবে।  বিদিশাকে যদি ট্যাক্সী করে ওকে ওর বাড়ীতে ড্রপ করে দিই, তাহলে বাড়ী পৌঁছোতে পৌঁছোতে রাত বারোটাতো হবেইমাকে একটা ফোন করা অবশ্যই দরকারনইলে মা আবার চিন্তা করবে আমাকে নিয়ে
ফোনটা করা মাত্রই মা বললো, শুভেন্দুদের বাড়ীতে কি অনুষ্ঠান আছে আজকে? এত দেরী করে ফিরবি, কাল না আবার অফিস আছে তোর?
বিদিশার কথাটা মাকে বলতেই যাচ্ছিলাম, শুভেন্দু ইশারা করলো, বললো, ‘থাক থাক, এখন মাসীমাকে কিছু বলিস না।  ওটা পরে হবেবিদিশাই নিজে থেকেই তোর বাড়ীতে যাবে।’
‘বিদিশা’ নামটা মুখ থেকে বেরোতে গিয়েও শুভেন্দুর জন্য আটকে গেলো শেষ পর্যন্তফোনটা ছেড়ে দিয়ে ওকে বললাম, ‘মা কিন্তু বিদিশার ব্যাপারটা জানেসকালে শুক্লা যখন এসেছিল, বিদিশার কথা বলছিলো, মা আড়াল থেকে সবই শুনেছেতবে এখানে যে বিদিশা আসছে, সেটা মা জানে না।’
রনি, শুভেন্দুকে বললো, ‘শুক্লার ব্যাপারটা কি বলতো শুভেন্দু? হঠাৎ এতদিন বাদে ও দেবের বাড়ীতে? ওর যাবার কারণটাই বা কী? আর তোকে যে একটু আগে ফোনে এতোকথা বললো, তাতে তো মনে হচ্ছে কিছু একটা গোলমেলে ব্যাপার আছে নিশ্চইবিদিশার প্রতি শুক্লার এত বিদ্বেশ, এর কারণটা কি?
শুভেন্দু খুব চালাকরনিকে বললো, ‘শোন, সবকথা তো আর মেয়েরা কখনো খুলে বলে নাওটা বুঝে নিতে হয়, আমি বিদিশার সামনে এসব কথা আলোচনা করতে চাই নাতবে বিদিশার প্রতি শুক্লার বিদ্বেশটা শুনে মনে হলো, কিছুটা একটা ব্যাপার কাজ করছে শুক্লার মনেক ভেতরে ভেতরেহয় দেবের প্রতি ওর কোনো দূর্বলতা তৈরী হয়েছে এতদিন পরে, নয়তো দেবকে ও বিশেষ কোনো কাজে লাগাতে চাইছে, যেটা শুক্লা খুলে বলছে না।’
 
 রনি চোঁ চোঁ করে কিছুটা পেগ মেরে নিয়ে বললো, ‘এই শুক্লাটা বরাবরই অদ্ভূতকলেজে পড়তে পড়তে সৌগতর সাথে প্রেম করলো, বিনা কারনে সৌগতকে বাতিলও করে দিলো, তারপরে যাকে বিয়ে করে বসলো তার সাথেও ঘর করতে পারলো না।  এতদিন বাদে দেবের প্রতি তার প্রেম জেগেছে, বিদিশাকে ছেড়ে দিয়ে দেবও তার সাথে প্রেম শুরু করবে, এও কি সম্ভব নাকি? দরদ যেন উতলে পড়ছেকেন রে? বিদিশা ফিরে এসেছে বলে? ভালোবাসার কথা এতদিন তাহলে বলিস নি কেন?
আমি শুনে বললাম, ‘দরদ? দরদ মানে কিসের দরদ? শুক্লা আমার প্রতি দরদ দেখাবেই বা কেন?’
শুভেন্দু বললো, ‘কি জানি? ফোনে তো আমাকে বললো, ‘শোন, তোরা অত বিদিশা বিদিশা করে লাফাস নাবিদিশার দোষগুলো তো দেবতো কোনোদিন দেখবে নাতাই ওকে সেভাবে বলতেও পারি নাতবে তোকে আমি বলছি,  এতদিন বাদে বিদিশা যে আবার ফিরে এলো, কি ভালোবাসার মর্যাদা দিয়েছে ও দেবের জন্য?’ একবারও দেবকে ফোন করেছে ও? ছেলেটাকে ছেড়ে যখন বিদিশা চলে গেলো, তখন তো ভালোবাসার কথা একবারও মনে পড়েনি তারআজ যখন নিজের স্বামীর সাথে বিদিশার আবার বিচ্ছেদ।  ঠিক তখনই সুর সুর করে ফিরে এসেছে আবার ওই ভালোমানুষটাকে পাবে বলে। ‘
শুভেন্দু দেখলাম শুক্লার ওপর খুব চটেএকটু বিরক্ত হয়েই আমাকে বললো, তুই বল দেব, এসব কথার কি কোনো মানে হয়? বিয়ে তো তুইও করেছিলিতোর বরের সাথে, তুই অ্যাডযাস্ট করতে পারিস নিতাহলে বিদিশাকেই বা শুধু শুধু দোষ দিচ্ছিস কেন? তোর যেমন হয়েছে বিদিশারও তেমনই হয়েছেএই অবস্থায় দেবের কাছে ফিরে না এসে বিদিশা তাহলে কার কাছে যেতো? ও তো ভালোই করেছে
রনি বললো, ঠিক ঠিক, এই হল, একদম পারফেক্ট কথাশুভেন্দু যা বলেছে, এর মধ্যে কোনো ভুল নেইআমাকে রনি বললো, শোন দেব, শুক্লাকে অত পাত্তা দেবার দরকার নেইও যদি ফোন করে তোকে, বলবি কোনো কথা নেই তোর সাথেবিদিশার ব্যাপারে আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।’
ঢক ঢক করে একটা সীপ মেরে নিয়ে বললো, আহা রে, কচি খুকী যেনো, এতদিন বাদে দেবের জন্য ভীমরতি জেগেছে
আমি চুপ করে ওদের কথা শুনিছিলামশুভেন্দু রনিকে বললো, এই চুপ চুপ, বিদিশা এসে গেলে সব শুনতে পারবে
রনি চুপ করে গেলোশুভেন্দু বললো, তোরা ভাবিস, আমি তো জীবনে কোনোদিন প্রেম করিনিএকবার আমিও একজনের প্রেমে পড়তে যাচ্ছিলাম
শুভেন্দুর দিকে তাকিয়ে বললাম, তুই? প্রেম? যা বাজে বকিস না
শুভেন্দু বললো, হ্যাঁ রে আমি সত্যি বলছিসেকী দৃষ্টি, সেকী চাউনিনারীর দৃষ্টি মানে মোহিনী শক্তিপুরুষমানুষের মনের শান্তিকে কিভাবে না ওরা নষ্ট করে দেয়মনে হয়, তা যেন কত গভীর, কত আস্বাদে ভরাকি অসীম তার আহ্বানকেউ কেউ বলে এভাবে তাকিয়ে থেকে নাকি প্রেমিক যুগল পরষ্পরের হৃদয় পড়ে নেয়এটা অবশ্য আত্মম্ভরিতার কথামানুষ যদি সত্যিই অপরের মনের কথা পড়তে পারতো, তাহলে সে কী প্রচন্ড জ্ঞানীই না হতচোখ দেখেই বুঝে যেতো তার মধ্যে প্রেম আছে না নেই
আমি বললাম, এটা তো সত্যি কথাইতুই মেয়েটার দিকে তাকালেই তো বুঝতে পারতিস, ওর মধ্যে প্রেম আছে না নেই
শুভেন্দু বললো, তাকিয়েছিলাম তোরোজই আমি ওর দিকে তাকাতামও যেমন তাকিয়ে থাকতো, আমিও তেমন তাকিয়ে থাকতাম
আমি বললাম, তারপর?
[+] 2 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#34
Edited
Like Reply
#35
শুভেন্দু বললো, তারপর আর কি? একদিন আমাকে ও বলে বসলো, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি
আমি বললাম, তুই কি বললি তার জবাবে?
শুভেন্দু বললো, আমি বললাম, আমি তো বাসি না
রনি তাকিয়ে আছে শুভেন্দুর মুখের দিকেআমিও তাকিয়ে আছিশুভেন্দুকে বললাম, সেকীরে? তুই এইকথা বললি শেষপর্যন্ত? ওর দিকে এতো তাকিয়েও তোর ওর প্রতি প্রেম জাগলো না? তাহলে আর কি প্রেম ভালোবাসা হলো?
শুভেন্দু বললো, শোন, মুখে ভালোবাসি, এই কথাটা বলতেই যার সাতদিন লেগে যায়, সে আবার কি ভালোবাসবে আমাকে? সাতদিন ধরে তাকিয়েই তাকিয়েই শুধু সময় নষ্টও আবার কি ভালোবাসবে আমাকে?
আমার শুভেন্দুর কথা শুনে হাসতে হাসতে প্রায় পেট ফেটে যাবার মত অবস্থাওকে বললাম, কে মেয়েটা? আগে তো এ গল্পটা কোনদিন শুনিনি
রনি বললো, তুই ওর কথা বিশ্বাস করছিস? বানানো গল্প বলতে শুভেন্দু খুব ভালো পারেএকটার পর একটা বলে যাবে, সত্যি না মিথ্যে তুই ধরতেই পারবি না
আমি বললাম অনেক ক্ষেত্রে পরষ্পরকে বুঝে নিতে একটু সময় লেগে যায়, মেয়েটা তোকে হয়তো একটু পরখ করে দেখে নিচ্ছিলোওই জন্যই হয়তো সময়টা নিয়েছে
শুভেন্দু বললো, ঠিক বলেছিস, আসলে ও দেখে নিচ্ছিলো আমার মালকড়ি সেরকম আছে কিনা? মেয়েরা যদি দেখে পকেট ভারী, তাহলেই তোকে বলবে আমি তোমার ভালোবাসার নারীনইলে যাও আড়িশালা অমন ভালোবাসার পেছন মারী
আমি বললাম, এই যাঃ কি হচ্ছে টা কি? ব্যাচারা রনিও তো প্রেম ভালোবাসা করেছে মাধুরীর সঙ্গেমাধুরী কি তাহলে রনিদের টাকা দেখে ওকে বিয়ে করেছে? সবার ক্ষেত্রে এমনটা হয় না
শুভেন্দু হেসে বললো, রনি আর মাধুরীর ভালোবাসার একটা কাহিনী শুনবি? তাহলে তোর আরো পেট ফাটবে হাসতে হাসতে
রনি দেখি, চুপ করে রয়েছে, আর মুচকী মুচকী হাসছেবুঝতে পারছে শুভেন্দু এবার কি বোমা ফাটাবে
শুভেন্দু বললো, আমাদের বাড়ীর পেছনটায় কিছুটা এগিয়ে গেলে তুই একটা বাগান দেখতে পাবিবাগানটা এখন পাঁচিল দিয়ে ঘেরা হয়েছেআগে ওটা খোলা বাগান ছিলোরনি যখন প্রথম প্রথম আমাদের বাড়ী আসা শুরু করলো, তখন ও ছুঁড়ি কে নিয়ে ওই বাগানটায় ঘুরতে যেতোচারিদিকে সুন্দর সুন্দর নারকেল গাছ আর সুপারি গাছে ভর্তিপ্রেমিক প্রেমিকারা যেমন গাছের তলায় ছায়াতে বসে সুন্দর সুন্দর প্রেমের কথা আর মনের কথা বলে, ও আর ছুঁড়ি দুজনে মিলে বসে সেই কথাগুলোই বলতো
আমি বললাম তো? ভালোই তোবাড়ীর কাছেই বাগান, আর সেই বাগানে প্রেম মন্দ কি?
শুভেন্দু বললো, আরে বাবা সে তো বুঝলামকিন্তু আসল কথাটা তো তুই শুনলি না
আমি বললাম, কি আসল কথা?
শুভেন্দু বললো, দুজনে কথা বলবে কি? প্রেমের কথা শুরু করতেই তো একহপ্তা পারযে জায়গাটা ওরা বসতো, দুজনে শুধু গোল গোল করে ঘাস ছিঁড়ে যেতোএক হপ্তা পেরিয়ে গেলোবেশ খানিকটা ঘাস ছিঁড়ে, জায়গাটা ন্যাড়া মতন হয়ে গেলোএদের প্রেমের কথা আর বলা হল না
রনি গ্লাসে চুমুক দিয়েছে সবেএমন ভাবে শুভেন্দু কথাটা বলেছে, হাসিতে ভীষম খেয়ে রনির তখন যাচ্ছেতাই অবস্থা
হাসি আমিও চেপে রাখতে পারছিলাম নাশুভেন্দু বললো, এটা কিন্তু গুল নয়একেবারে সত্যি কথা
 বলতে বলতেই মাধুরী ঘরে এসে ঢুকলো বিদিশাকে সঙ্গে নিয়েরনির দিকে তাকিয়ে মাধুরী বললো, ও শুরু করে দিয়েছো বুঝি? সত্যি তোমাকে আর ছোড়দাকে কোথায় বাঁধিয়ে রাখবো বলো তো দেখি?
শুভেন্দু বললো, এই ছুঁড়ী, তুই আমাদের গার্জেন না কি রে? আজ শুধু আনন্দ আর ফুর্তী করবো, তবেই না জমবেদেবকে আমরা কতদিন বাদে পেলাম বল তো?
বিদিশা ঘরে ঢুকে আমার সামনেই বসলোমাধুরী আমার দিকে তাকিয়ে, চেঁচিয়ে বললো, ও তুমিও শুরু করে দিয়েছো? খাচ্ছো বসে এদের সঙ্গে?
আমি না বলার মত ঘাড় নাড়ছিলামমাধুরী বললো, ওই তো খালি গেলাস টাতোমার পাশেই দেখলামবিদিশা তোমার কাছে যাওয়া মাত্রই তুমি ওটাকে সোফার তলায় ঢুকিয়ে দিলেবিদিশার সামনে বুঝি মদ খাবে না?
বিদিশা তখন তখন সামনে বসে আমাদের তিনজনকেই দেখছেশুভেন্দু বললো, ব্যাটাছেলেরা চা খাবে না, সিগারেট খাবে না, মদ খাবে নাতো কি খাবে বল দেখিআমাদের বুঝি সখ আহ্লাদ কিছু নেই?
রনি মাধুরীর দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো, এই যে সহধর্মিনী আমারতুমি এখন চুপ করোদেব এখন গান শুরু করবে
শুভেন্দু সঙ্গে সঙ্গে হাত তুলে বললো, এই দাঁড়া দাঁড়া।  দেবের কিন্তু একটা স্বভাব আছে, সবাই জানিস তো?
রনি সঙ্গে সঙ্গে বললো কি?
শুভেন্দু বললো, ওকে কলেজে তো আমি দেখেছি, শেষের দিকে বিদিশার যে গানগুলো পছন্দ, সেইগুলোই বেশী বেশী করে গাইতোব্যাটা এমন ঢ্যামনাআজ কিন্তু ওসব চলবে নাআমাদের পছন্দের গান তোকে গাইতে হবে
আমি বললাম, কি গাইবো বল?
শুভেন্দু বললো, তুই ওটা দিয়ে শুরু কর। ‘এ রাতে এ মৌসম, নদীকা কিনারা এ চঞ্চল হাওয়া।’
আমি বললাম, এই গানটা কিন্তু বিদিশারও খুব পছন্দ
সঙ্গে সঙ্গে শুভেন্দু বললো, না, না, তাহলে বরঞ্চ তুই ওটা গা, এ মেরী জোহরা জেবীন, তুছে মালুম নেহী, তু অভীতক হ্যায় হাসীন, অউর ম্যায় জওয়ান, তুঝপে কুরবান মেরী জান মেরী জান
মাধুরী বললো, ছোড়দা তুই না? কবেকার সেই সেকেলে মার্কা গান, ভালো ভালো কত গান আছে তা না
রনি মাধুরীকে বললো, তুমি জানো না ডারলিং, দেবের কাছে যা স্টক আছে, গুনে গুনে শেষ করতে পারবে নানতুন পুরোনো, ক্ল্যাসিকাল, লাভ সঙ সব ও গলায় নিয়ে বসে আছেখালি একবার করে বিদিশার দিকে তাকাবে, আর মেহেফিল ভরিয়ে দেবে
বিদিশা চুপ করে বসেছিলো, আমি বললাম, আমি আজ কারুর পছন্দের গান গাইবো নাযে কটা গান গাইবো, তোদের সবারই ভালো লাগবে
শুভেন্দু বললো, সেই ভালো সেই ভালোতুই গা
মাধুরীকে রনি বললো, তুমি হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছো কেন? তুমিও বসো
 
 বিদিশা যেখানটা বসেছিল, মাধুরী ঠিক তার পাশে গিয়েই বসলোআমি স্কেল চেঞ্জিং হারমোনিয়ামটা হাতে নিয়ে আঙুলে সুর বেঁধে কিছুক্ষণ হূ হূ করলাম।  তারপর গাইতে শুরু করলাম, কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেলগুলো সেই, আজ আর নেই নিখিলেশ প্যারিসে, মঈদুল ঢাকাতে, নেই তারা আজ কোন খবরে গ্র্যাণ্ডের গীটারিস্ট গোয়ানীস ডিসুজা, ঘুমিয়ে আছে যে আজ কবরে কাকে যেন ভালোবেসে আঘাত পেয়ে যে শেষে, পাগলা গারদে আছে রমা রায়, অমলটা ধুঁকছে দুরন্ত ক্যানসারে জীবন করে নি তাকে ক্ষমা হায়……………………. কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই
গান গাইতে গাইতে আমি সবার দিকেই তাকাচ্ছিলাম একবার করেদেখলাম ওরা সব আমার গান শুনছে, আর সেই পুরোনো স্মৃতিতে ফিরে যাচ্ছেমনে পড়ছে কলেজ, কফিহাউস, সেই সোনালী দিনগুলো, যেগুলো কবেই আমরা সবাই হারিয়ে এসেছি
রনি বললো, তুই তো আজ কাঁদিয়ে ছাড়বি রে
আমি দ্বিতীয় গানটা ধরলাম, এতো রাগ নয়, এ যে অভিমান, এ শুধু তোমায় চাওয়ার, আরো বেশী কাছে পাওয়ার, ছল ভরা গান, এ যে অভিমান
দেখলাম বিদিশার চোখটা এবার ছল ছল করছেহঠাৎ রুমাল দিয়ে চোখটা বারে বারে মুছতে লাগলোশুভেন্দু বললো, এই বিদিশা তুই কাঁদছিস নাকি?
আমি তৃতীয় গানটা শুরু করলাম, জানি তোমার প্রেমের যোগ্য আমি তো নইপাছে ভালোবেসে ফেলো তাইদূরে দূরে রই
বিদিশা গানটা দু লাইন গাওয়া মাত্রই উঠে ছুট্টে দূরে কয়েক হাত চলে গেলদেওয়ালের দিকে মুখ ফিরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলোআমি গান থামিয়ে দিয়েছি, শুভেন্দু আর রনি দুজনেই অবাকমাধুরী কাছে গিয়ে বিদিশাকে জড়িয়ে ধরলো, কি হয়েছে বিদিশা তুমি কাঁদছো কেন?
কোনোরকমে রুমালটা দিয়ে চোখ মুছে বিদিশা বললো, খুব ভুল হয়ে গেছেদেবের মত নিষ্পাপ ভালো ছেলেকে আমি এভাবে ঠকাতে পারবো নাআমার ভীষন কষ্ট হচ্ছে
আমি গান থামিয়ে হতবাক হয়ে চেয়ে আছি বিদিশার দিকেমনে একটা প্রশ্নহঠাৎ বিদিশা একথা বললো কেন?
দেখলাম, তখনো বিদিশার ছলছলে দুটি চোখ, গালের ওপর দিয়ে জলের ধারাগুলো নামছে কোনোদিন বিদিশাকে এভাবে কাঁদতে কখনো দেখিনিগলায় দম আটকে যাওয়ার মতো একটা শব্দ বের হয়ে বিদিশার সমস্ত মুখটাই কেমন বিবর্ণ হয়ে উঠলোচোখের জলের ধারা স্তব্ধ করে দিলো আমাদের সবাইকে
একী বিদিশা, তুমি কাঁদছো কেন? মাধুরী বলে উঠলো, সেই সাথে আমরা সবাই
হারমোনিয়াম ছেড়ে উঠে গিয়ে আমি বিদিশার কাছে গেলামওর কাঁধের ওপর দু’হাত রাখলাম, বিদিশাকে বললাম, ‘কাঁদছো কেন বিদিশা? কি হয়েছে তোমার? কোনো অসুবিধে? বলবে আমায়?’
আমি জানি আমার জীবনের কাহিনীটা এতই করুনতর, এর থেকে প্রেরণা নেওয়ার মত কিছুই নেইতবু তো মানুষ একটা আশার আলো খোঁজেএকটা দিশাকে ধরে সে বাঁচতে চায়দিশা যদি আমার সেই বিদিশা হয়, তাহলে একটু আগে ও যা বললো, সেটা ও ফিরিয়ে নিক।  আমি জানিনা ঠিক কি হয়েছে, তবুও বিদিশা যে আমাকে কখনো ঠকাতে পারে আমি চিন্তাও করতে পারি না
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#36
চোখের জলটা রুমাল দিয়ে মুছে বিদিশা বললো, ‘ভালো গাইছিলে তুমি, গানটা শুধু শুধু আমি থামিয়ে দিলামহঠাৎ-’
দেখলাম, কষ্ট করেও ও একটু হাসবার চেষ্টা করছে, কিন্তু ভেতরে যেনো এখনো একটা চাঁপা অস্বস্তি রয়ে গেছে, মনের ভেতরে কোনো একটা বিষয় ভীষন তোলপাড় করছে বিদিশাকেআমাকে খুলে বলতে চাইছে হয়তো, কিন্তু সবার সামনে ঠিক বলতে পারছে না
আমি ওর হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে এসে সোফায় বসালামমাধুরী বললো, ‘হ্যাঁ বসোতো বসোকি এত দূঃখ তোমার? আমরা তো সবাই আছি
শুভেন্দু বললো, ‘এই বিদিশা, তুই যে কেঁদে কেটে ভাসালি, তাহলে আমাদের আসরটার এখন কি হবে?’
বিদিশা মুখ নিচু করে বললো, ‘ও যেমন গাইছিলো, গাক নাআমি কি বারণ করেছি?’
রনি বললো, ‘তুই এক কাজ কর, বাড়ীতে তুইও ফোন করে বলে দে, আজ আর বাড়ী ফিরছিস নাতারপরে দেবের সাথে তোকে ওর বাড়ী পাঠিয়ে দিচ্ছিসারারাত দেব তোকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে থাকবে, তুই কেঁদে কেটে ভাসাবি, আর দেব তোকে সান্তনা দেবে।’
মাধুরী ধমক লাগালো রনিকে। - ‘সব সময় এতো ফাজলামী মেরো না তো।  সিরিয়াস ব্যাপারের সময়েও তোমরা এতো ইয়ার্কী মারো না, ভালো লাগে না।’
শুভেন্দু বললো, ‘সত্যি বিদিশা, কোনো সিরিয়াস ব্যাপার আছে নাকি? আমাদের সামনে খুলে বলতে তোর কি কোনো অসুবিধে আছে? দেবের কাছে যদি শেয়ার করতে পারিস, তাহলে আমাদের কাছেও তো পারিসআমরাতো সবাই তোর বন্ধুঠিক কিনা? তোর কোনো বিপদ হলে আমরা যেমন তোকে হেল্প করতে পারিতেমনি তোকে সেই বিপদ থেকে বাঁচাতেও পারিবল কি হয়েছে বল?’
কিছুক্ষণ মাথাটা নিচু করে বিদিশা এবার পাথরের মত বসে রইলোশুভেন্দুকে ও বললো, ‘না আজ থাকএমন সুন্দর মুডটা তোদের নষ্ট করতে আমি চাই না।  সুযোগ হলে, পরে নিশ্চই বলবো।’
শুভেন্দু বললো, ‘তাহলে বল, দেব কে তুই বিয়েটা কবে করছিস? প্রেম, ছাড়াছাড়ি, মান অভিমান ওসব অনেক হয়েছে, এখন আর অপেক্ষা করা যাবে নাদিনখন সব পাকা করে ফেলতে হবে।’
রনি বললো, ‘হ্যাঁ লোক খাওয়ানোর সব ব্যাপাটাতো আমিই দায়িত্ব নিচ্ছিই।  শুধু বিয়ে আর বৌভাত মিলিয়ে মোট কজন লোক হবে, আমাকে শুধু বলে দিতে হবে।  বাকীটা রনির বাঁয়া হাত কা খেল।’
আমি দেখলাম বিদিশার মুখে হাসিটা এসেও দ্রুত মিলিয়ে যাচ্ছে চোখের পলকেঠিকভাবে যেনো প্রাণখুলে হাসতেও পারছে না মেয়েটাপুরোনো কোনো জমাট বাঁধা দূঃখ ওকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছেপ্রবল একটা অস্বস্তিতে রয়েছে বিদিশা, যেটা প্রকাশ করতে পারছে না সহজে
আমি বিদিশাকে যতটা কাছ থেকে দেখেছি, ওর সাথে মিশেছি, ওর চোখের ভাষা আমি পড়তে জানিজীবনে একবারই ও আমার কাছে কিছু লুকিয়েছিল সেটা ছিল বিদিশার জীবনের প্রথম প্রেমকিন্তু সে প্রেমকে প্রেম বলা যায় নাভালোবাসাটা একতরফা ছিলো বলে সেভাবে দানা বেধে ওঠেনিতাও বিদিশা তো আমার কাছে লুকোয় নি স্বীকার করেছে পরে, সত্যিটা সামনে তুলে ধরেছে।  দুদিনের প্রেমকে সেদিন না বললেও বিদিশার কিছু যায় আসতো না
কিন্তু আজ যখন এতদিন বাদে, আবার কোনো সত্যিকে চাঁপা দিতে চাইছে না বিদিশা মনের কথা বলতে গিয়েও বলতে পারছে নাকি এমন সেই সত্যি? যেটা বিদিশাকে হঠাৎই পাথর করে দিলো?
শুভেন্দু বললো, ‘এই শোন, এবার মনে হচ্ছে আমাকেই কিছু করতে হবেবলে হারমোনিয়ামটা কাছে নিয়ে হেঁড়ে গলায় ভ্যা ভ্যা করতে লাগলোবিদিশা ওই দেখে এবার হেসে ফেললোরনি বললো, ‘হ্যাঁ, এইবারে ঠিক হয়েছে মুড ঠিক হয়ে গেছেনাও দেব চলে এসো, এবারে তোমাকে কিছু হিন্দী গান গাইতে হবে।’
 ঘড়ির কাঁটা কখনো থেমে থাকে নাশুভেন্দু আর রনির ফরমাইশ অনুযায়ী একটার পর একটা গান গাইতে গাইতে, আমিও তখন ঘড়ির দিকে তাকাতেও ভুলে গেছিওরা দুজনে মাল খেযে নেশায় পুরো চুরআমার গানের তালে তালে মাঝে মাঝে নিজেরা দুলে দুলে উঠছেমাধুরী হাসছে, আমিও হাসছিবিদিশাও একটু আধতু হাসবার চেষ্টা করছে মাঝে মাঝে
ঠিক সাড়ে এগারোটার পর মাধুরী জোর করেই আমার গান থামালোশুভেন্দু আর রনিকে বললো, ‘তোমরা কি করছো বলোতো? দেবদা আর বিদিশাকে কি বাড়ী যেতে হবে না? নাও এবার শেষ করোআমি খাবারের ব্যবস্থা করছি।’
বিদিশা আর আমি পাশাপাশি বসে ডিনার খেলামশুভেন্দু বললো, ‘এরপরে তাহলে আমরা কবে আবার মিট করছি? মিটটা কোথায় হবে? দেবের বাড়ীতে না বিদিশার বাড়ীতে?’
রনি বললো, ‘এই শোন, তোরা কিন্তু আবার আমাদের ভুলে যাস নাকলেজ হলে তবু তোদের একটু চোখে চোখে রাখা যেতোএখানে তো সেটা হবে নাআমাদের ভুলে গেলে কিন্তু চলবে না।’
শুভেন্দু বললো, ‘দেব, বিদিশা দুজনের ওপরই আমার সে ভরসা আছেওরা দুজনেই আমার কথা রেখে আজ এখানে এসেছেআমি দারুন খুশী।’
বাড়ী থেকে বেরুবার সময় শুভেন্দু আমার হাতটা ধরলোওর খুব নেশা হয়ে গেছে আমি বুঝতে পারছি, তাও বন্ধু প্রীতি খুব বেশী বলে আমাকে একবার জড়িয়ে ধরলোআবেগ মতন হয়ে বললো, ‘কি দেব? তোর হাসিটা ফেরালাম তো? এরপরে কিন্তু তুই আমাকে চিরকাল মনে রাখবিরাখবি কিনা বল?’
আমিও শুভেন্দুকে জড়িয়ে ধরলামবিদিশা তখন মাধুরীর সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে পাশেশুভেন্দু কানে কানে আমাকে বললো, ‘ট্যাক্সিতে যেতে যেতে বিদিশার সাথে কথা বলে নিসআমাদের বলে নি তো কি হয়েছে? তোকে ঠিকই ও বলবে
আমি বুঝলাম, শুভেন্দুও খুব চিন্তায় আছে ওই ব্যাপারটা নিয়ে তবে আমাকে আবার আস্বস্তও করলো শুভেন্দুবললো, ‘সেরকম কিছু হবে না হয়তোআসলে তোর এতগুলো বছর শুধু শুধু নষ্ট করালো বিদিশাওইজন্যই মনে হয় দূঃখ আছে মনে।’
ঠিক বড় রাস্তার মোড়টা আসতেই আমি একটা ট্যাক্সি পেয়ে গেলামশুভেন্দু আমাকে ওর গাড়ীটা দিতে চেয়েছিলো আমি নিইনিঅনেকদিন গাড়ী চালাই না, সেভাবে অভ্যেস নেইতাছাড়া গাড়ী নিলে হ্যাপাও অনেকবাড়ীতে যেহেতু গ্যারাজ নেই, ওই গাড়ী আমি সারারাত বাড়ীর সামনে দাঁড় করিয়েও রাখতে পারবো না
ট্যাক্সিতে যেতে যেতে বিদিশা সেভাবে কথা বলছিলো না।  মনে হল, এই গাড়ীতে যেতে যেতে, ওর মুখ দিয়ে কিছু কথা যদি বলাতে না পারি, তাহলে আমারও মন ঠিক শান্ত হচ্ছে না
গাড়ীতে বিদিশার একটা হাত ধরলাম, ওকে বললাম, ‘তুমি তখন কাঁদছিলে কেন তা আমাকে বললে না?’
বিদিশা আমার মুখের দিকে তাকালোবললো, ‘দেব, তুমি তো একবারও আমাকে জিজ্ঞাসা করলে না? এই বিদিশা এতদিন কোথায় ছিল? কিভাবে ছিল? আর কেনই বা সব কিছু ছেড়েছুড়ে দিয়ে তোমার কাছেই ফিরে এলো?
-কি হবে ওসব জেনে? কি লাভ তাতে? তুমি ফিরে এসেছো, এটাই তো অনেক বড় আমার কাছে
-তুমি কত অদ্ভূত? কত সহজভাবে সবকিছু মেনে নিতে পারোবিশ্বাসকে কত সহজ ভাবে জয় করতে পারো তুমি
 বিদিশাকে বললাম, ‘পৃথিবীতে তো আমি আর একা নইএরকম কত লোকের জীবনেই তো কিছু না কিছু ঘটেছে।  This is a Part of a Life. সবার জীবনে সবকিছু সহজভাবে আসে না ভালো জিনিষ পেতে গেলে তারজন্য অনেক অপেক্ষা করতে হয় জীবনে অনেক দাম দিতে হয়।’

বিদিশা বললো, ‘আমি তোমার মত তো এত সরল নই ভালোবাসার দাম দিতে পারিনি, তোমাকে বিশ্বাস করতে পারিনি, আমি একটা স্বার্থপর ছাড়া কিছু নই।’

আমি বললাম, ‘কি হয়েছে তোমার? এত মন খারাপ কেন? সেই থেকে মুখ ভারকেঁদে কেটে আমাদেরকেও অস্বস্তিতে ফেলে দিলেযদি ভেতরের কথাটা খুলে না বলো, তাহলে তো জানতেও পারবো না।’

ট্যাক্সির মধ্যে যেন একটা অস্বস্তিকর পরিবেশগাড়ীতে পেছনের সীটে আমি আর বিদিশা, দুটি প্রানীমুখে কোনো কথা নেই, যেন বিরাজ করছে এক গভীর নিঃস্তব্ধতাআমি ভাবছি, বিদিশা হয়তো কিছু একটা বলবে, তাতে মনে হবে, ওকে ফিরে পেয়েও শেষ পর্যন্ত আর পাওয়া হল না আমার।  ও যেমনই দূরে চলে গিয়েছিল আমার জীবন থেকে, ঠিক তেমনি আবার দূরে চলে যাবে বিদিশাকে হয়তো এ জীবনে পাওয়া আর আমার হবে না

আমাকে অবাক করে বিদিশা বললো, ‘আমাকে অন্তত দু তিন দিন সময় দাও দেবআমি তোমার দিব্যি খেয়ে বলছি, শুধু শুধু তোমাকে আমি আর ঠকাতে চাই না।’

ল্যান্সডাউনে ওর বাড়ীর সামনে বিদিশাকে ড্রপ করে দেবার সময় ওর মুখ যেন তখন আরোই করুনএকটা আফশোস, গাড়ী থেকে নামার সময় জড়িয়ে ধরে একটা চুমুও খেতে পারলাম না বিদিশাকেশুধু অল্প একটু হাত নেড়ে বিদিশা চলে গেলোমনে হলো, যাও বা কিছু একটা পেলাম, তাও যেন সেটা কাছে এসেও আবার দূরে চলে গেলো

ট্যাক্সিতে একা একা বাড়ী ফিরছি আর ভাবছি, ভালোলাগা মূহূর্তগুলো, ভালোলাগা দিনগুলো, মানুষের জীবন থেকে কেন যে দূরে চলে যায়কিছুই আমরা ধরতে পারি নাকিছুই আমরা রাখতে পারি নাস্বাদ বুঝতে না বুঝতেই জীবনের সব আনন্দ অদৃশ্য হয়ে যায়

 
 
 
[+] 4 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#37
Wow!!! Osadharon update
Like Reply
#38
(02-07-2021, 02:53 PM)Avenger boy Wrote: Wow!!! Osadharon update

ধন্যবাদ।
Like Reply
#39
আট
 
বাড়ীতে ফিরলাম, মা’কে বিদিশার কথা সেভাবে আর কিছু বলা হল না বিছানায় শুয়ে শুয়ে ঘুমটা আসছে না সেই পুরোনো স্মৃতিগুলো আমার মনকে এখনও নাড়া দিয়ে যাচ্ছেমনে পড়ছিল, বিদিশার সাথে আমার বেশ কিছু অন্তরঙ্গ মূহূর্তের কথাএকদিন-
সেদিন তখন ঠিক সন্ধ্যে হবো হবো করছেজায়গাটা কলকাতার ডালহৌসীপাড়ায় কার্জন পার্কবিদিশার কোলে মাখা রেখে আমি শুয়ে আছি।  বিদিশা আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আমার চুলে হাত বুলিয়ে যাচ্ছিলোআমি ভাবছি, চুমু পাবার আর চুমু খাবার এত সুন্দর জায়গা, তাও বিদিশা ইতস্তত করছে কেন? আমি যেন বিদিশার কাছ থেকে চুমু পাওয়ারই প্রতীক্ষায়
বিদিশা বললো,-‘এই তুমি কি করছো বলোতো? তথন থেকে এসে অবধি মুখে কোনো কথা নেই, খালি আমার হাতের আদর খেয়ে যাচ্ছো?’
বিদিশাকে বললাম-‘না, না, এখন কি কথা বলার সময় নাকি? দেখছো না কেমন আরাম বোধ করছিতুমি চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছো, আঙুল চালিয়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছো, আমার তো মনে হচ্ছে, এইভাবেই যেনো তোমার কোলে আমি শুয়ে থাকি।’
-‘বাঃ বাঃ, শুয়ে খালি আদরই খেয়ে যাবেন উনি ? কটা বাজে খেয়াল আছে তোমার? দেখো ঘড়ি দেখো, বাড়ী যেতে হবে না বুঝি?
- ‘আচ্ছা বিদিশা, কদিন ধরেই দেখছি, তুমি সেভাবে আমাকে চুমুটুমু খাচ্ছো না ব্যাপারটা কি বলোতো?’
- ‘এই তুমি কিন্তু এখন আর চুমু খেতে বলবে না আমাকেএই জায়গাটা সেরকম ভালো নয়দূরে বসা ঐ লোকগুলোকে দেখছো? কেমন ঘুরঘুর করে আমাদের দিকে তাকাচ্ছেযেনো মেয়েছেলে কোনোদিন দেখেনি এভাবে।’
- ‘আরে দূর, এটা হলো কার্জন পার্কএখানে সবাই প্রেম করতে আসেপ্রেমিক প্রেমিকার গালে চুমু খায়, ঠোঁটে চুমু খায়প্রেমিকাও প্রতিদান দেয়আসলে তোমাকে দেখতে একটু বেশী সুন্দর কিনা? তাই ওরা তোমার দিকে তাকাচ্ছে।’
-’তুমি বাড়ী যাবে না দেব?’
- ‘যেতে তো ইচ্ছে করছে না বিদিশা, মনে হচ্ছে তোমাকে নিয়ে সারারাত শুধু ঘুরিএখান থেকে তোমাকে নিয়ে চলে যাই ইডেন গার্ডেন্স, তারপরে ময়দানএইভাবে আদর খেতে খেতে যদি সারাটা রাত কাটিয়ে দিই, তারপরে ভোর বেলা, তুমি আর আমি বাড়ী ফিরলাম, কেমন হবে?’
- ‘খুব ভালো হবেকাল থেকে কলেজে বাবা আমার আসা বন্ধ করে দেবেতুমি তো তাই ই চাইছো, তাই না?
- ‘আমি চাইছি এখন একটা দমদার কিসকিন্তু তুমি তো রাজী হোচ্ছো না।’
-’কিভাবে চুমু খেতে হয় ওটা আমি জানি না তো, ওগুলো তো তুমি পারো। ‘
-’তাই বুঝি? তাহলে মাথাটা নিচু করো, আমি একটা চুমু খেয়ে দেখাই তোমাকেএমন চুমু খাবো, তোমার দেহ ভেদ করে একেবারে শিরার ভেতরে গিয়ে প্রবেশ করবেএমনকি তোমার অস্থিমজ্জায় গিয়ে সেটা নাড়া দেবে।’
 -‘এই নাএখানে নয়কেউ দেখে ফেলবে না? কি অসভ্য তুমি।’
-’যা বাব্বা চুমু খেতে চাইলেই কেউ অসভ্য হয়ে যায় নাকি? ওটা তো প্রেমিক প্রেমিকার সহজাত প্রবৃত্তি।  ভালোবাসা যদি প্রগাঢ হয়, তখনই তো চুমু তুমি আমাকে চুমু খাবে, আমি তোমাকে চুমু খাবোতখনই তো ভালোবাসা আরো নিবিড় হবে।’
বিদিশা হঠাই প্রসঙ্গটা ঘুরিয়ে দিলো, আমাকে বললো-’এই জানো সৌগতটা কি অসভ্যশুক্লাকে কি বলেছে-’
- ‘কি বলেছে সৌগত?’
- ‘শুক্লা কালকে আমাকে বললো, ওকে নিয়ে নাকি দুদিন আগে বোটানিকাল গার্ডেনে ঘুরতে গিয়েছিল সৌগতগাছতলায় শুক্লাকে পেয়ে ওর সারা শরীরটায় চুমু খেয়েছে।’
- ‘ভালোই তো করেছেআমি হলেও তাই করতামসৌগত ঠিক কাজ করেছে।’
- ‘আর ও যে নামকরণ গুলো দিয়েছে, তুমি হলে কি দিতে?’
আমি একটু অবাক হলাম, বিদিশাকে বললাম- ‘নামকরণ? কিসের নামকরণ?’
বিদিশা বললো, ‘শুক্লা ওকে নাকি বলেছে বোটানিকাল গার্ডেন্সে গিয়ে ওকে জড়িয়ে সৌগত নাকি এমন চুমু খাওয়া শুরু করেছিল, শুক্লার খুব সেক্স উঠে যায়, আমাকে বললো, জানিস বিদিশা, সৌগত এমনভাবে আমার বুকে চুমু খেতে শুরু করেছে, দেখি আমার জামার বোতামও খুলে ফেলেছে বেশ কয়েকটাচুমু খেতে খেতে আমাকে বললো, শুক্লা আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, তাই তোমার শিহরণ জাগানো এই শরীরটায় প্রতিটায় জায়গায় আমি একটা করে চুমুর স্পর্ষ দেবো, আর সেই সাথে আমার মত করে আমি এই এই জায়গাগুলোর একটা একটা করে নামকরণ দেবো।’
বিদিশাকে বললাম, সৌগত নামকরণ করবে- ‘তাই? ব্যাপারটা কিরকম?’
বিদিশার কোল থেকে মাথা তুলে আমি তখন উঠে বসেছি, সৌগতর দেওয়া ওই নামগুলো শোনার জন্য উসখুস করছি
বিদিশা বললো,কি অসভ্যশুক্লার বুক কিছুটা বেরিয়ে পড়েছিলো বলে ওখানে চুমু খেয়ে বলেছে, ওকে বলেছে, এটা হলো, উঁকি-মারা-মহাশয়, স্তনদুটোর মাঝখানে মুখ গুঁজে বলেছে, এটা হলো আমার বেড়াবার জায়গা।  আর চুমু খেয়ে শুক্লাকে প্রায় পাগল করে সবশেষে ওকে বলেছে, যেদিন তুমি আমাকে যাবার পথটা (যোনী) দেখিয়ে দেবে, সেদিন তোমাকে আমি স্বর্গরাজ্যে পৌঁছে দেবো
বিদিশার মুখ থেকে, শুক্লাকে দেওয়া সৌগতর ওই নামকরণ গুলো শুনে আমি হাসতে লাগলামবিদিশা বললো-তুমি হাসছো?
- ‘হ্যাঁ, আমিও ভাবছি, ওরকম কিছু নামকরণ দেওয়া যায় নাকি?’
- ‘আর নামকরণ করতে হবে না মহাশয় চলো এবার বাড়ী চলো
- ‘আচ্ছা বিদিশা তুমি কি এমন একটা চুমু আমাকে খেতে পারো না? যেটা এখনো অবধি কোনো প্রেমিকা তার প্রেমিককে খায় নি।  চুমুর মধ্যে বেশ উৎকৃ্ষ্টতা মেশানো থাকবে, অনেকক্ষণ ধরে সেই চুমুর রেশ থাকবে, মিষ্টতা থাকবে, সোহাগ থাকবে, আর আমি যতক্ষণ না তোমাকে না করছি, তুমি চুমু খেতেই থাকবে
- ‘বুঝেছি, বুঝেছি, এবার তোমাকে আমায় ফেলেই এখান থেকে চলে যেতে হবে ঠিক আছে তুমি এখন ঘাসের ওপর শুয়ে থাকো আমি যাচ্ছি।’
- ‘এই বিদিশা, যেও না দাঁড়াওআমি আসছি।’
 আরেকটা দিনের ঘটনাও মনে পড়ছিলোবিদিশার সাথে আমার প্রেম শুরু হওয়ার পরপরই একদিন কলেজের ক্যান্টিনে শুক্লা আর আমি পাশাপাশি বসে।  সেদিন বিদিশা কলেজে আসেনিশুনেছি, শরীরটা নাকি কাল থেকে ওর খুব খারাপ হয়েছেসকালে ফোন করে আমাকে বলেছে, আমি যেতে পারছি না আজকেতুমি মন খারাপ কোরো না
শুক্লা চা খাচ্ছিলো, আর বারবার আমার মুখের দিকে তাকাচ্ছিলোওর চোখে মুখে একটা কৌতূহলঅনেক্ষণ বাদে, আমার মনের ভাবটাকে বোঝবার জন্য একটা প্রশ্ন করে বসলো-
- ‘দেব একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো, মনে কিছু করবি না বল?’
- ‘কি কথা বল? মনে কেন করবো?’
- ‘না, আগে তুই আমাকে কথা দে, মনে কিছু করবি না, তাহলেই বলবো।’
মনে হল, শুক্লার মনের ভেতরে আমাকে নিয়ে যেন একটা চিন্তা রয়েছে, হঠাৎই কোনো প্রশ্ন উঁকি দিয়েছে ওর মনে।  প্রশ্নটা যে বিদিশাকে নিয়ে সেটা জানতে পারলাম, ও বলার পর
- ‘দেব, তুই বিদিশা ছাড়া, আগে কখনো কারুর সাথে প্রেম করেছিস? এই কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে, আর কোনো মেয়ের সাথে ভাব ভালোবাসা হয় নি তোর?’
- ‘না রে শুক্লাসেভাবে দেখতে গেলে, বিদিশাই আমার জীবনে প্রথম প্রেমএর আগে সেরকম কোনো সুযোগই হয় নি বলতে পারিস।’
- ‘তুই তো বিদিশাকে খুব ভালোবাসিস, জানি বিদিশাও তোকে খুব ভালোবাসেযদি তোদের এই ভালোবাসার তারটা কোনোদিন ছিঁড়ে যায়, কষ্ট পাবি না?’
- ‘আমি এসব কথা চিন্তাই করতে পারি না শুক্লা, এসব কখনও হবে না।’
- ‘না ধর, এমনও তো হতে পারে, বিদিশার বাড়ী থেকে ওর বাবা মা দুজনেই বেঁকে বসলোতোকে তারা জামাই হিসেবে গ্রহন করতে রাজী হল নাতখন?’
- ‘জানি না, সেটা কোনোদিন হবে কি নাতবে ওর বাড়ী থেকে আপত্তি করবে বলে মনে হয় না আমার।  আর বিদিশাও ওর বাবা মার কথা শুনবে নাও কথা দিয়েছে আমাকেবিদিশাকে আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।’
- ‘দেব, তুই না বড্ড সরল, তুই একটু বেশী রোমান্টিকআমার তো মনে হয়, বিদিশা যতটা না তোকে ভালোবাসে, তুই তার থেকেও বেশী ওকে ভালোবাসিস।’
- ‘হতে পারে, আমি তো কোনদিন, ভালোবাসাটাকে খেলনা বলে ভাবিনি।  আমার কাছে ভালোবাসা ঠুনকো নয়ভালোবাসা কখনও অভিনয় দিয়ে হয় না।’ 
- ‘জানিস আমার এক পিসতুতো দিদি আছে, রাঙাদি বলেআমাকে বলতো, জীবনে প্রথম ভালোবাসা নাকি বড়ই মধুরকাঁঠালের আঠার মতলাগলে পড়ে ছাড়তেই চায় নাকিন্তু আসতে আসতে ভালোবাসাটা যথন ফিকে হয়ে যায়, ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে যায়, তখন সেভাবে কাউকে আর ভালোবাসতে ইচ্ছে করে নামানুষের জীবনে দ্বিতীয় প্রেম বলে কিছু নেই, প্রথম ভালোবাসার মধ্যে যে গভীরতা আর আবেগ থাকে, দ্বিতীয় প্রেমে সেই আবেগটাই নাকি আসে নাযদি বিদিশা আর তোর প্রেম শেষ পর্যন্ত টিকে না থাকে, নতুন করে তুই কাউকে ভালোবাসতে পারবি? সেই আবেগের টান, ব্যাকুলতা তুই দেখাতে পারবি?’
শুক্লাকে বললাম- ‘কেন? একথা বলছিস কেন? আমাকে নিয়ে তোর বুঝি কোনো চিন্তা হয়?’
- ‘তোকে নিয়ে আমার বড় ভয় হয় দেবতোর মধ্যে এতো গুন আছে, এতো কোয়ালিটি আছে, অথচ মনে হয় কোনোদিন যদি আঘাতে জর্জরিত হয়ে তোর এই গুনগুলো সব নষ্ট হয়ে যায়।  সেদিন তুই কি করবি? কাউকে ভালোবেসে তো আর জীবনকে নষ্ট করে দেওয়া যায় না।’
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply
#40
- ‘তুই বড্ড চিন্তা করিস আমাকে নিয়েআগে থেকে এতো নেগেটিভ চিন্তা করে নাকি রে বোকাজীবনের সব কিছুই ভালো হয়খারাপ বলে এই পৃথিবীতে কিছু নেই। ‘
- ‘আমি তোর কথা একটু বেশী চিন্তা করি বলেই তুই আমাকে খারাপ ভাবছিস তাই না?’
- ‘কেন? কোনোদিন দেখেছিস, আমি তোকে কখনও খারাপ বলেছি?’
- ‘আসলে এই কথাগুলো মনে এল, তোকে বললাম, কেন জানিস তো? তুই আমার খুব ভালো বন্ধুআমি জানি, দেবের কখনও খারাপ হতে পারে নাও যখন কারুর খারাপ চায় নাভগবান ওর ক্ষতি করতে পারে না।  তবে যদি দেখি, তুই কখনো কষ্ট পাচ্ছিস, আঘাত পাচ্ছিস, তাহলে তোর জন্য আমিও খুব কষ্ট পাবো, এটা জেনে রাখিস
শুক্লাকে বললাম, প্রথম প্রথম আমিও ভাবতাম, প্রেম টেম আবার কি? ওতো কিছু সময় নষ্টজীবনে প্রেম ভালোবাসার কোনো দাম নেইকেরিয়ার গড়াটাই মূল লক্ষ্যকিন্তু বিদিশা আমার ধারণাটাকে পুরো ভেঙে দিলজানিস তো শুক্লাকি মেয়ে ওওর সাথে যে প্রেম করে, সে বুঝতে পারেএবার তুই ও একটা প্রেম কর আমার মতন
শুক্লা বললো-ওসব প্রেম টেম আমার ধাতে সইবে না বাবাকলেজে সবাই আমার বন্ধুযেমন তুই বন্ধু, শুভেন্দু, রনি বন্ধুসবাই আমার বন্ধু
-আর সৌগত?
-ওর ব্যাপারটা তো আমি ভেবেই উঠতে পারছি নাযাকে আমি বন্ধু হিসেবেই ভাবছি, সে আমাকে তার প্রেমিকা হিসেবে ভাবছেমনের মিল না হলে কি প্রেম করবো বল দেখি?
আমি বললাম,-আরে একদিনে কি মন মেলে নাকি? প্রেম শুরু করআসতে আসতে দেখবি, সব ঠিক হয়ে যাচ্ছে
শুক্লা বললো-আচ্ছা দেব, বিদিশা যে সবসময় আমাকে তোর সাথে কথা বলতে দেখে, ও কিছু বলে না তোকে? কিছু মাইন্ড করে না?
-কেন? মাইন্ড করবে কেন? বিদিশা তো জানে, তুই আমার শুধু বন্ধুওর মনে সেরকম কোনো সন্দেহ বা আশঙ্কা নেই
-এই দেবআমি একদিন বিদিশার সাথে একটু মজা করবো? তুই যদি কিছু মনে না করিস
-কি?
-বিদিশাকে বলবো, তুমি যে দেবের সাথে প্রেম করো, জানো দেব আমার কথা ছাড়া, একপাও নড়চড় হয় নাওকে যদি আমি বলি তোমার সাথে প্রেম চালিয়ে যেতে, তবেই ও তোমার সাথে দেখা করবে, কথা বলবে, নচেৎ নয়দেব আমার কথায় ওঠে বসে
শুক্লাকে বললাম-তুই বলে দেখতে পারিসতবে মনে হয় বিদিশা তোর কথা বিশ্বাস করবে নাকারণ ও বুঝেই যাবে, তুই ওর সাথে ইয়ার্কী মারছিস
-ঠিকই বলেছিস তুইও বুঝে যাবেআমাকে মনে হয় অন্যকিছু বলতে হবে
-কি বলবি?
-বলবো, তুমি যে দেবের সাথে প্রেম শুরু করেছো, জানো দেব আমার সাথেও প্রেম করে
-ভাগ, কি যাতা বলছিস
-ভয় পেয়ে গেলি? আরে আমি তো ইয়ার্কী মারছি
 কলেজে মিনুর সাথে যেদিন আমার প্রথম চোখাচুখিক্যান্টিনে একবার ওর দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারলাম, মিনুর দৃষ্টিটা কিরকম বাজে।  মিনু আমার প্রতি আকর্ষিতআমার ফর্সা চেহারা, টিকোলো নাক, গমগমে কন্ঠস্বর মিনুকে তখন এক অমোঘ আকর্ষনের ডাক দিয়েছে
শুভেন্দু এসে একদিন বললো, এই মিনুটা কি রে? জানে তুই বিদিশার সাথে প্রেম করিস, তাও তোর পেছনে পড়ে আছেসৌগতকে ধরেছে, তোকে নাকি ওর বোনকে গান শেখাতে হবেএই অন্যায় আবদারের কোনো মানে হয়? আর সৌগতটাই বা কিরকম? শুধু শুধু মিনুর কথা শুনে তোরও মাথা খারাপ করছে
-আমি জানি, সৌগত সব আমাকে বলেছে
-আমার তো মিনুকে একটা সস্তা মেয়েছেলে বলেই মনে হয়কলেজে ঢ্যাড়া পিটিয়ে বেড়াচ্ছেতোর নামে কিসব বলে বেড়াচ্ছে
-কি বলেছে মিনু?
- ‘তোর গান নাকি ওর রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে তুই হলি গানের জাদুকর গান গেয়ে মেয়েদের মন চুরি করার বিদ্যা যে তুই জানিস, আর কেউ জানে না মিনু তোর জন্য পাগল সে এখন খাওয়াদাওয়া ভুলে গেছে, সব ভুলে গেছে সে এখন উন্মাদিনীশোন দেব, আমার তো মনে হয়, মিনু হল, শয়তানি লোভী মাকড়শা।  সহজে নিস্তার দেবে না তোকেওর সাথে কথা বলে, তুই ব্যাপারটা পরিষ্কার করে দেতোর জীবনে বিদিশা ছাড়া আর কোনো মেয়ে নেইকাউকেই তুই সে জায়গায় বসাতে পারবি না।’
পরের দিন মিনুকে ডাকলাম, ক্যান্টিনেবললাম, কি ব্যাপার মিনু? কিসব শুনছি?
মিনু যেন কিছুই জানে না, আকাশ থেকে পড়ার মতন ভাব করলো, আমাকে বললো, কি শুনেছিস? কলেজে মিনু রোজই খবরেআমাকে নিয়ে রোজই কিছু না কিছু কথা হয়নতুন কি শুনেছিস সেটা শুনি
-মিনু আমি চাই নাআমার নাম জড়িয়ে তুই কলেজে কাউকে কিছু বলিসএটা ঠিক নয়, আমার সন্মন্ধে আর একজন খারাপ ভাবতে পারে
-কে ভাববে তোকে খারাপ? দেব, আমি তোর ফ্যানকলেজে বাকীরা যেমন তোর গান মুগ্ধের মত শোনে, আমিও তেমন শুনিতোকে তো বলেছি, বোনটাকে তুই যদি গান শেখাতে রাজী হয়ে যাস, আমি তাহলে ধন্য হয়ে যাবো তোর কাছে কৃতার্থ থাকবো দেবএগুলো যারা বলেছে, তারা সব বাড়িয়ে বলেছেসেরকম কিছু নয়
চকিতে মিনু সেদিন মনের মধ্যে পাপটা রেখে পাল্টি খেয়ে গেলোআমি ধরতেও পারলাম না, মিনু হল সুযোগ সন্ধানিযেদিন সুযোগ পাবে, মোক্ষম চাল দিয়ে ও আমাকে ঘায়েল করবে
আমি শুয়ে শুয়ে পুরোনো কথা সব চিন্তা করছি, অথচ মনে হলো, কে যেন আমার ভেতরে হাতুরী দিয়ে ঘা পিটছে দুমদুম করে আওয়াজ করছে আমার দু’গালে ঠাসঠাস করে দুটো চড় মেরে দিয়ে অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে সে, আমার জামার বোতাম ছিড়ে রাগে দূঃখে, চেঁচিয়ে বলছে, ভালোমানুষের অভিনয়? ভালোই পারো তুমি তাই না? এসব গল্প লিখে লোককে বোকা বানাচ্ছোনিজে ভালো সেজে কখনো মিনুকে খারাপ করছো, কখনো শুক্লাকে খারাপ করছো তুমি কি? আদর্শ প্রেমিক? একটা মেয়েকে ভালোবেসে, শুধু তার কথা ভেবেই জীবনকে অতিবাহিত করে ফেললে।  এসব কি বিশ্বাস যোগ্য? আবার সেই মেয়েটাই যখন তোমার জীবনে ফিরে এলোতার জন্য তোমার দরদ একেবারে উথলে পড়ছেতাকে ছাড়া তুমি বাঁচবে না।  একেবারে সাধুপুরুষ যুধিষ্ঠীর তুমি? সবাই তোমার গল্প পড়ে, তুমি যা বলো, সত্যি কথাটাই তারা ধরে নেয়সত্যের আড়ালেও যে কিছু থাকেতাকে গোপণ কেন করো? মিথ্যেবাদী তুমি লেখকযা হয়েছে ঠিক হয়েছেবিদিশা এই জন্যই তোমার জীবনে কোনদিন ফিরবে না
 আমি কিছুই বুঝতে পারছি নাভাবছি, যা লিখেছি, এর মধ্যে তো কোন মিথ্যে নেইআমি তো কিছুই গোপণ করিনি।  আমি তো মিনুর সাথে সেভাবে কোনদিন কিছু করিনিশুক্লার সাথেও আমার সেভাবে ঘনিষ্ঠতা হয় নিতাহলে কেন? এভাবে-
 
হঠাৎই অনুভব করলাম, মা আমাকে ধাক্কা দিচ্ছেজোরে জোরে আমার গায়ে ঠেলা মারছে।  চেঁচিয়ে বলছে, একি রে দেব? সকাল হয়েছে, ঘুম থেকে ওঠআপন মনে কি সব বিড়বিড় করছিস?
মা’র ঠেলা খেয়ে আমি ধরমড় করে বিছানা ছেড়ে উঠেছি
ঠিক যেভাবে খারাপ স্বপ্ন দেখলে মানুষের মনটা খারাপ হয়ে যায়, মনে হয়, এটা দেখার কি সত্যি কোনো প্রয়োজন ছিল? আমারও ঘুমটা ভাঙার পর, খুব বাজে লাগছিলোমনে হল, বিদিশাকে নিয়ে কাল বাড়ী ফেরার পর থেকে এতো চিন্তা করেছি, তারই প্রভাব পড়েছে স্বপ্নেমা’র সাথে কাল বাড়ী ফিরে সেভাবে কথা বলিনিসকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে মা জিজ্ঞাসা করছে, ‘এতদিন বাদে, তুই শুভেন্দুদের বাড়ীতে গেলি, হঠাৎ ও তোকে নেমতন্ন করলো, কি কারণ সেটা তো বললি না?’
মা’র কাছে বিদিশার নামটা মুখ থেকে আবার উচ্চারণ করতে গিয়েও করতে পারলাম নামনে হল, বিদিশা যখন কাল আবার আমাকে একটা ধাঁধায় ফেলে গেছে, তখন এই নিয়ে কথা তুলে কোনো লাভ নেই, শুধু শুধু মা’রও আবার টেনশন বাড়বেআগে তো সমস্যার সমাধান হোকতারপর বিদিশার কথা মা’কে খুলে বলতে অসুবিধে নেই।  বিদিশাও আমার কাছ থেকে দুদিন টাইম চেয়েছেসুতরাং এই দুদিন আমাকেও একটু ধৈর্য রাখতে হবে
মা দেখি আমার ঘুম ভাঙিয়ে দেবার পর একদৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে আছেমা’কে বললাম, ‘না মা, এমনি কোনো কারন নয়তুমি তো জানো, শুভেন্দুটা কি রকম করে আমি গেলেএতদিন পরে গেছি, না খাইয়ে কি আমাকে ছাড়বে? এত পীড়াপিড়ী করলো, যে আমাকেও শেষপর্যন্ত ওর কথাটা রাখতে হলো।’
মা বললো, ‘আর কি কেউ এসেছিলো?’
আমি বললাম, ‘রনি আর মাধুরী এসেছিলোআর তো কেউ আসেনি।’
আমার দিকে তাকিয়ে মা এমন ভাবে হাসলো, মনে হল, মা যেন সবই জানেআমাকে বললো, ‘সারাদিনে বিদিশার নামটা আপন মনে কতবার উচ্চারণ করিস তুই? আর আমি যখন কিছু জিজ্ঞাসা করি, তখন আমার কাছে সব চেপে যাসকাল যে বিদিশাও ওখানে ছিলো, আমি ভালমতনই জানি তাতুই ঘুমের ঘোরে বকবক করছিলিস, বিদিশার নামটা বারে বারে উচ্চারণ করছিলিস, আমি সব শুনে নিয়েছি।’
আমাকে যেন বিদিশা রোগে পেয়েছেমা বললো, ‘জানি না বাপুকি তুই চাস? তবে শুধু শুধু এভাবে জীবনটা নষ্ট করিস নাও যদি তোকে এতদিনেও বুঝতে না পারে, তাহলে আর কবে বুঝবে? আমি তো বলবো, আমার ছেলেকে বোঝার জন্য ওকে জন্মজন্মান্তর তপস্যা করতে হবে, তবেই ও তোকে বুঝতে পারবেতার আগে নয়।’
আমি বললাম, ‘না মা, বিদিশার কোনো দোষ নেইওর হয়তো কিছু সমস্যা আছে, যেটা ও খুলে বলছে নাইচ্ছে থাকলেও ওর বিবেক ওকে বাঁধা দিচ্ছেআমি অনেক কষ্ট করেছি বলেই, ও নিজের স্বার্থটাকে বড় করে দেখছে নাএমনও হতে পারে, সেই সমাধানের পথটাও খুলে গেলো, আর বিদিশাও পুরোপুরি আমার হয়ে গেলো।’
[+] 3 users Like Lekhak is back's post
Like Reply




Users browsing this thread: 5 Guest(s)