Thread Rating:
  • 11 Vote(s) - 3.18 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
Non-erotic সমাহার by নীললোহিত
#21
মাস্টারমশাই.... অসাধারণ একটি গল্প. এই গল্পটা পড়তে পড়তে আমার প্রচেত গুপ্তের মাস্টারমশাই গল্পটা মনে পড়ে গেলো. যদিও দুইয়ে মিল নেই কিন্তু দায়িত্ব ভালোবাসা শ্রদ্ধা টান এগুলো যেন আবার মনে পড়ে গেলো ❤
[+] 1 user Likes Baban's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.
#22
অসতী

আজ সারাদিনটা ভয়ে ভয়েই কেটে গেল মালতির। এখন বিকেল গড়িয়ে প্রায় সন্ধ্যে হব হব। ঘড়ির কাঁটা যত এগোচ্ছে, ভয়টা ততই জমাট পাথরের মত চেপে বসছে বুকের মধ্যে। কাজে বারবার ভুল হচ্ছে। নমিতা বৌদি এইমাত্র তাড়া দিয়ে গেল কাচের প্লেটগুলোর জন্য। একঘর লোক বসে আছে, অথচ তাদেরকে খাবার দেওয়া যাচ্ছেনা। আজকে নমিতা বৌদির বড়মেয়ে মৌমিতাদির দেখাশোনা। অনেকে মিলে দেখতে এসেছে মৌদিকে। আজ মৌদি সেজেছেও দারুণ। বাসন্তী রঙের শাড়িতে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে ওকে। মৌদিকে শাড়ি পরলে খুব সুন্দর লাগে। একথা আগেও ওকে বলেছে মালতি। শোনেনি। বরং হেসেই উড়িয়ে দিয়েছে সে কথা। আজকালকার মেয়েরা ঠিক করে শাড়ি পরতেই জানে না। কি সব জামাকাপড় পরে। কোনোটা বগল কাটা। কোনোটা বুক কাটা বা পিঠ কাটা। সেদিন মৌদি একটা প্যান্ট পরে বেরোল, তার সর্বাঙ্গ ছেঁড়া। মালতি বলল, “ দিদি, ছেঁড়া প্যান্টটা পরে কোথায় যাচ্ছো? লোকে দেখলে কি ভাববে?” ওর কথা শুনে মৌদি তো হেসে কুটোকুটি। বলল, “উফ্ মালতি, তোকে নিয়ে আর পারা যায়না। প্যান্টটা ছেঁড়া না। এইকরমই। এটাই এখন ফ্যাশান। আমার এরকম অনেক প্যান্ট আছে। তোকে একটা দেবো, পরে কাজ করতে আসবি।শুনে নাক সিঁটকে মালতি বলেছিল, “ইস্ মাগো, জিনিস আমি পরতে পারবনি। সর্বাঙ্গ দেখা যাচ্ছে! ছিঃ!” শুনে মৌদির কি হাসি। আজকে শাড়ি পরে মৌদিকে একদম অন্যরকম লাগছে। চেনাই যাচ্ছেনা। আজকে মৌদির দেখাশোনার কারণে ওর নিজের বিয়ের কথাটা মনে পড়ে যাচ্ছে বারবার। সে আজ থেকে চার-পাঁচবছর আগের কথা। মালতি গ্রামের মেয়ে। হুগলী জেলার কামারপুকুরে ওর বাড়ি। ক্লাস ফোর পর্যন্ত বিদ্যে। তারপরেই পড়াশোনায় ইতি। তবে নিজের নামটা লিখতে পারে, ছোটখাট হিসাব করতে পারে। তবে ওর বর রতন মোটেও ইকলেজের ধার মাড়ায়নি। বারো-তেরো বছর বয়স থেকেই মালতি পরের বাড়িতে কাজ করছে। তখন থেকেই ওর সাথে রতনের প্রেম। চিন্তার মাঝেই রান্নাঘরে ঢুকল নমিতা বৌদি। প্লেট হাতে মালতিকে তন্ময় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এসে চাপাগলায় বলল, “অ্যাই মালতি কি তখন থেকে চারটে প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস? তাড়াতাড়ি কর্। ওদিকে যে ওনাদেরকে কখন থেকে বসিয়ে রেখেছি। নয়তো সর্, আমিই বাকীগুলো ধুয়ে নিই।বৌদির কথায় লজ্জা পেয়ে বলল, “না, না, তোমাকে ধুতে হবেনে। আমি ধুয়ে দিচ্ছি।বলে বাকী প্লেটগুলো তাড়াতাড়ি করে ধুয়ে বৌদির হাতে দিয়ে দিল। বৌদি প্লেটগুলোতে নানারকম খাবার সাজিয়ে প্লেটগুলো একটা ট্রেতে তুলে নিল। তারপর ট্রেটা নিজের হাতে তুলে নিয়ে বলল, “আমি এটা নিয়ে যাচ্ছি। তুই জলের গ্লাসগুলো ট্রেটায় তুলে নিয়ে আয়। আবার দেখিস ফেলে গ্লাসগুলোকে ভাঙ্গিস না যেন। অনেক দাম। সাবধানে নিয়ে আসিস।ঘাড় নেড়ে বৌদিকে আশ্বস্ত করল ও। বৌদি খাবারের ট্রেটা নিয়ে চলে গেল। মালতি কাপড়ের আঁচলটাকে ভাল করে গাছ কোমর করে বেঁধে নিয়ে, গ্লাসভর্তি ট্রেটা তুলে নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এল। বসার ঘর থেকে হাসির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। মালতি ট্রেটা নিয়ে ঢুকল। তবু কেউ ওর দিকে তাকাল না। বাড়ির ঝির দিকে কেই বা কবে ভাল করে দেখেছে। বৌদি একটা ছোট্ট টেবিলের উপর খাবারের প্লেটগুলো নামিয়ে রাখছিল। একজন মোটা করে মহিলা তা দেখে বলল, “একি করেছেন দিদি! এই অসময়ে কে এত খাবে! আমরা এতকিছু খেতে পারব না।তাই শুনে বৌদি হেসে বলল, “খুব পারবেন, দিদি। ঐতো সামান্য টা মিষ্টি।মালতিও বৌদির দেখাদেখি জলের গ্লাসগুলো সাবধানে টেবিলে নামিয়ে রাখল। বৌদি চোখের ইশারায় ওকে চলে যেতে বলল। যাওয়ার আগে ছেলেটিকে দেখে নিল মালতি। কেমন যেন নাড়ু গোপাল ধরনের। তবে দেখতে সুন্দর। রঙটা মৌদির মত না হলেও ফর্সাই বলা চলে। আবার রান্নাঘরে চলে এল। ছেলেটাকে দেখে পাঁচবছর আগের রতনের কথা মনে পড়ে গেল ওর। রতনের বাবা রিক্শা চালাত। একদিন বড় রাস্তায় রিক্শা চালাতে গিয়ে লরীর চাকায় পিষে গেল রতনের বাবা। সেই খবর পেয়ে রতনের মা কেমন যেন পাগলের মত হয়ে গেল। নিজের মনে বকত। কখনো হাসত, কখনও বা গলা ছেড়ে কাঁদত। রতন ছিল বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। কোনো ভাই বা বোন ছিলনা। বাবা যখন মারা যায় তখন রতনের চোদ্দ কি পনেরো। তখন থেকেই বাবার রিক্শাটা চালাতে শুরু করল ও। বাড়িতে পাগলী মা আর রতন। তারপর একদিন হঠাৎ মা কোথায় যেন চলে গেল। কেউ বলল পালিয়ে গেছে, কেউ বলল মারা গেছে। আরো কত কি। তখন থেকেই ওর সাথে মালতির প্রেম। রতন ওর গ্রামের ছেলে হলেও, আলাদা পাড়ায় বাড়ি। তবে রাস্তাঘাটে প্রায়ই দেখা হত দুজনের। সওয়ারী নিয়ে ওর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি ছুঁড়ে দিয়ে যেত রতন। রঙটা কালো হলেও হাসিটা চিরকালই খুব মিষ্টি রতনের। অন্তত মালতির তো তাই মনে হয়। প্রথম প্রথম রাগ হত মালতির। তারপর আস্তে আস্তে ভাল লেগে গেল ছেলেটাকে একদিন সন্ধ্যেবেলা সামনা সামনি দেখা হয়ে গেল দুজনের। তখন রতনের রিক্শাতে কোন সওয়ারী নেই। রিক্শাতে চড়ে বসল মালতি। বলল, “চল্।” “কোথায়?” “বড়মাঠে।গ্রামের একদম শেষপ্রান্তে একটি মাঠ আছে। সবাই বলে বড়মাঠ। রথের মেলা বসে। ফুটবল টুর্ণামেন্ট বসে। শীতকালে যাত্রাপালা হয়। তবে সন্ধ্যের পর ওখানে বড় কেউ একটা যায়না। মালতিকে গন্তব্যে পৌঁছে দিল রতন। রিক্শা থেকে নেমে রতনকে বলল, “আয়।বিনা বাক্যব্যয়ে ওর সাথে যেতে লাগল রতন। মাঠের একধারে পাশাপাশি বসল দুজনে। কিছুক্ষণ কারোর মুখেই কোন কথা নেই। প্রথম কথা বলল মালতি।অ্যাই, তুই আমাকে দেখে হাসিস কেন রে?” “এমনি।” “এমনি? মামাবাড়ি পেয়েছিস নাকি? জানিস আমি কে?” মালতির কথা শুনে মুচকি হেসে রতন বলল, “এমন ভাবে বলছিস, যেন লাটসাহেবের নাতনি! খুব জানি। পাড়ার পঞ্চা দুলের মেজমেয়ে মালতি। তোর বাপ প্রতিদিন ভরসন্ধ্যেয় বাংলা খেয়ে হাটতলায় বাওয়াল করে।রতনের মুখে নিজের বাপের অপমান শুনে মালতিও চুপ থাকেনা। সেও বলে, “আর তোর কি? বাপটা মরল লরীর চাকায়, আর মাটা যে কোন চুলোয় তা ভগবানও জানেনা।রতন বলল, “তুই কি ঝগড়া করবি বলে আমাকে এখানে নিয়ে এলি?” মালতি বলল, “তুইই তো শুরু করলি।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#23
এইভাবে ঝগড়া দিয়ে ওদের দুজনের প্রেমের শুরু। তারপর একে অপরকে ভাললাগা। সেই ভাললাগা কখন যে ভালবাসায় পরিণত হয়েছে, তা ওরা কেউই বুঝতে পারেনি। লুকিয়ে সন্ধ্যের পর বড়মাঠে দেখা করা। ফুচকা খাওয়া, টিকিট কেটে সলমন খানের সিনেমা দেখা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওদের প্রেমটা গাঢ়ত্ব পাচ্ছিল। প্রথম প্রথম একটা সন্দেহ ছিল। সেটা অবশ্য মালতির মায়ের। গত কয়েকমাস ধরে নিজের মেজমেয়েটির হাবভাব বেশ সন্দেহজনক লাগছিল তার। অবশেষে একদিন বাপের হাতে ধরা পড়ে গেল মালতি। পেটে বাংলা পড়লে মানুষটার দেহে দানবের শক্তি ভর করে। মাথাটাও ঠিক রাখতে পারেনা। হাটতলার মাঝখান থেকে একরাশ লোকের সামনে পঞ্চা দুলে ওর মেজমেয়েটাকে চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে, দৃশ্য সেদিন অনেকেই দেখেছিল। এরপর সবার সঙ্গে যা হয়, তা সবই হয়েছিল মালতির সঙ্গে। নির্মম মারের মুখে পড়েও সে বলতে ভোলেনি, রতনকে ভালবাসে। এরপর থেকে মালতির বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। অথচ কেউ বুঝতে পারেনি ঠিক কি কারণে রতনকে পছন্দ নয় পঞ্চার আর ওর বউয়ের। ঠিক এই সময়েই একজন জ্ঞাতির পরিচয়ে একটি ছেলেকে পছন্দ হয়ে গেল পঞ্চার। এক সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ের ঠিক হয়ে গেল। অথচ মালতির তখন সবে সতেরো। কিন্তু সে বিয়েটা হয়নি। হঠাৎ নমিতা বৌদির ডাকে হুঁশ ফিরল মালতির। বসার ঘর থেকে ডাকছে। মালতি তাড়াতাড়ি রান্নাঘর থেকে বসার ঘরে এল। দেখল এর মধ্যেই ছেলের বাড়ির লোকগুলো চলে গেছে। মালতিকে দেখে বৌদি বলল, “মালতি, প্লেট আর গ্লাসগুলো সাবধানে নিয়ে গিয়ে বেসিনে রাখ্।মালতি বলল, “বৌদি, ওরা কি চলে গেল?” “হ্যাঁ।” “কি বলল গো? মৌদিকে পছন্দ হয়েছে ওদের?” বৌদি ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল, “কি জানি বাপু। কিছুই তো বলল না। বলল পরে খবর দেবে।মালতি উৎসাহে বলল, “ছেলেটা দেখতে কিন্তু বেশ। মৌদির সঙ্গে মানাবে কিন্তু।” “দাঁড়া বাপু, গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল। কি বলে দেখি। নে, নে, তাড়াতাড়ি কর্। প্লেটগুলো বেসিনে নিয়ে যা। আর মেজে ফেল। দেখিস, আবার ভাঙ্গিস না যেন।বৌদির তাড়াতে আর কোনো কথা না বলে গ্লাস আর প্লেটগুলোকে তুলে নিয়ে আসে। তারপর রান্নাঘরের বেসিনে সেগুলো রেখে একএক করে মাজতে থাকে। কিন্তু ওর মনটা আবার ফিরে যেতে থাকে পিছনে। ফেলে আসা অতীতে। বাপ-মায়ের ঠিক করা ছেলের সাথে বিয়ের দিন তিনেক আগে এক রাতে রতনের সাথে পালিয়ে যায় মালতি। যোগাযোগটা করিয়ে দেয় মালতির ছোটবেলার বন্ধু পদ্মা। রিক্শাটা আগেই বিক্রি করে দিয়েছিল রতন। সেই টাকায় মালতিকে কলকাতায় নিয়ে চলে আসে। ওঠে শিয়ালদার কাছের একটা বস্তিতে। ওখানে ওর এক মাসতুতো দাদা আর বৌদি থাকে। তাদের দয়াতে মাথার উপর একটা ছাদের খোঁজ পায় ওরা। পরেরদিনই কালীঘাটে নিয়ে গিয়ে মালতির সিঁথিতে সিঁদুর ঘষে দেয় রতন। এটা প্রায় পাঁচ বছর আগের কথা। দাদার কথায় একটা গ্যারাজে চাকরি পায় রতন আর বৌদি দু’-তিন ঘরের কাজ পাইয়ে দেয় মালতিকে। এভাবেই দুজনের পথচলা শুরু।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#24
দেড়বছরের মাথায় মালতি মা হয়। জন্ম হয় ওদের সন্তানের। ওদের মেয়ের। দেখতে দেখতে তারই বয়স হয়ে গেল সাড়ে তিনবছর। মায়ের খুব ন্যাওটা। পাশের বাড়ির দিদির কাছে রেখে যখন কাজে বের হয় তখন মেয়েটা খুব কাঁদে। মনটা মালতিরও খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু কোনো উপায় নেই। কাজে যে ওকে বেরোতেই হবে। নাহলে মেয়ের মুখে খাবার জোগাবে কি করে। জীবন সবসময় এক লয়ে বয় না। মাসছয়েক আগে হঠাৎ করে গ্যারাজে অজ্ঞান হয়ে যায় রতন। গ্যারাজের লোকেরাই ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরীক্ষার পর জানা যায় ছোটবেলা থেকেই রতনের হার্টটা খুবই দূর্বল। একটা ভাল্ভ বন্ধ। আগে কোনো অসুবিধা না হলেও এখন যত বয়স বাড়ছে, ততই কমজোরী হয়ে পড়ছে রতনের হৃৎপিণ্ড। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেশন করাতেই হবে। নাহলে আরোও নিস্তেজ হয়ে যাবে রতন এবং ওর হৃৎপিণ্ড। কিন্তু টাকার অঙ্কটা তো কম নয়। দেড় লক্ষ টাকা এই মাসেও জোগাড় করে উঠতে পারেনি মালতি। চোখের সামনে একটু একটু করে দূর্বল হয়ে পড়ে রতন। মাস খানেক থেকে তো একপ্রকার শয্যাশায়ী সে। সংসারের জোয়াল পুরোপুরি ভাবেই মালতির ঘাড়ে। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছে ও। কিন্তু ইদানিং মনে মনে হচ্ছে হেরে যাচ্ছে ও। পাঁচটা বাড়ির কাজ করেও অতগুলো টাকা জমা করতে পারেনি। নিজের ভালবাসাকে একটু একটু করে মৃত্যুর কাছে চলে যেতে দেখছে। ডাক্তার আর মাত্র একমাস সময় দিয়েছে। তারমধ্যে অপারেশন হয়ে গেলে রতন আবার আগের মত সুস্থ, স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। আর তা না হলে..... ভাবতে গেলেও শিউড়ে ওঠে মালতি। রতনকে ছেড়ে, নিজের ভালবাসাকে ছাড়া বাঁচবে না। বাঁচতে পারেনা। কখন যে বৌদি ওর কাছে এসে দাঁড়িয়েছে বুঝতেই পারেনা। কাঁধে বৌদির হাতের স্পর্শ টের পেয়ে ঘুরে তাকায় ও। ভিজে আসা চোখের কোলদুটোকে মুছে নিয়ে বলে, “এই তো হয়ে গেছে, বৌদি। আর দুটো আছে। তাহলেই হয়ে যাবে।” “তুই আবার উল্টোপাল্টা কিছু ভাবছিলিস? একদম ভাবিস না। কিছু না কিছু উপায় একটা হয়ে যাবে।উপায় যে একটা হয়ে গেছে সেটা বলতে গিয়েও বলতে পারেনা মালতি। চুপ করে থাকে। বৌদি বলে, “প্লেটগুলো ধুয়ে দিয়ে তুই চলে যা। অনেক রাত হয়ে গেল। মেয়েটা আবার কাঁদবে। আর শোন্, তোদের জন্য কিছু খাবার দিয়ে দেব, নিয়ে যাস। রাতে গিয়ে আর রান্না করতে হবেনা।নমিতা বৌদিদের বাড়ি থেকে যখন বের হল তখন রাত আটটা বাজে। হাতে আর মাত্র ঘন্টা দুয়েক বাকি। তারপরেই.... রতনের অসুখটা ধরা পড়ার পর প্রায় পাগলের মত হয়ে পড়ে মালতি। হেন লোক থাকেনি, যার কাছে হাত পাতেনি। প্রত্যেকেই যে যার সাধ্যমত সাহায্য করেছে। ঠিক দিন পনেরো আগে রত্নাদি নতুন একটা কাজের সন্ধান আনে। পাকড়াশি বলে একজনের বাড়িতে কাজ করতে হবে। না বলেনি ও। ওর যে এখন অনেক, অনেক টাকার দরকার। পাকড়াশি খুব বড়লোক। বড় গাড়ি করে প্রতিদিন অফিস যায়। কিন্তু ওর বউ নেই। মারা গেছে অনেকদিন। তাই এমন একজনকে খুঁজছে যে রান্নাবান্না করে দেবে। মাইনে পত্র ভাল। মালতি কাজে বহাল হয়ে যায়। মানুষটা বেশ ভাল। নরম করে কথা বলে ওর সঙ্গে। হঠাৎ হপ্তা খানেক আগে রান্না করছে এমন সময় পাকড়াশি অফিস থেকে ফিরে ওকে ডাকল। পাকড়াশি চা খায়না। কফি খায়। কফি তৈরি করে ওকে দেয় মালতি। কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলে, “তোমার সঙ্গে একটা কথা আছে।ভয় পেয়ে যায় মালতি। ওকে ছাড়িয়ে দেবে নাতো? কি কিছু ভুল করেছে? কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “বলুন।” “কাজে ঢোকার সময় বলছিলে না, যে তোমার স্বামীর কি হয়েছে। অপারেশন করাতে হবে। অনেক টাকার দরকার। আমি একটা ব্যবস্থা করতে পারি।এইপর্যন্ত বলে কফির কাপে চুমুক দেয় পাকড়াশি। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মালতি তখন মনে মনে ঠাকুর ডাকছে। একটা যেন ব্যবস্থা হয়ে যায়।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#25
একবার মালতির মুখের দিকে তাকিয়ে পাকড়াশি বলল, “তবে টাকাটা আমি দেবো না। তুমি নিজেই সেটা রোজগার করবে।” “কীভাবে?” “বলছি। তার আগে তোমাকে কয়েকটা কথা বলি, কিছু মনে কোরোনা যেন। তোমার বয়স বেশ কম, আর দেখতেও মোটামুটি খারাপ নয়।মালতি ওর কথা ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা। তবুও চুপ করে পাকড়াশির কথা শুনে চলে। বলতে থাকে, “আমি আমার অফিসের কয়েকজনকে তোমার কথা, মানে তোমার অবস্থার কথা জানাই। তারা তোমাকে সাহায্য করতে চায়।আবার কফির কাপে চুমুক দেয় সে। এইটুকুই শুনে মালতির মনটা খুশিতে ভরে ওঠে। এতদিন পর একটা ব্যবস্থা হল। এবার রতনের চিকিৎসা করাতে পারবে। পাকড়াশি আবার বলতে শুরু করলতবে একটা কথা কি জানো এইসময়ে কেউ কাউকেই এমনি এমনি কিছু দেয়না। সবাই কিছু না কিছু ফেরত চায়। আমার চার বন্ধু এবং আমি তোমাকে ত্রিশ হাজার টাকা করে অর্থাৎ মোট দেড় লাখ টাকা তোমাকে দেব। তার বদলে তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।” “কি কাজ?” “আমাকে ভুল ভেবো না। আমরা পাঁচজন একটা পার্টি করব। তোমাকে তার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।” “কি করতে হবে আমাকে?” “বেশি কিছু না। পার্টির সমস্ত ব্যবস্থা তোমাকে করে দিতে হবে। তবে একটা জিনিস অবশ্যই থাকতে হবে।” “কি?” “তুমি।” “মানে?” “তুমি একটা রাত আমাদের সঙ্গে থাকবে, আনন্দ করবে। সকাল হতেই আমরা তোমরা হাতে দেড়লাখ টাকা দিয়ে দেব।কথাটা শুনে পায়ের তলা থেকে মাটিটা সরে যায় মালতির। ছিঃ! তার অসহায়তার সুযোগ নিচ্ছে নোংরা লোকটা। ইচ্ছে করছে লোকটার গালে ঠাটিয়ে একটা চড় মারতে। কিন্তু সাহস হয় না। পাকড়াশি আবার বলতে শুরু করে, “জানি তুমি আমাকে খারাপ ভাবছো। কিন্তু বিশ্বাস করো, কেউই তোমাকে এমনি এমনি অতগুলো টাকা দিতে রাজি নয়।চুপ করে থাকে মালতি। কি বা বলার থাকতে পারে ওর? পাকড়াশি আবার বলতে শুরু করে, “আমি তোমাকে কোনোমতেই জোর করব না। তুমি ভাবো। যা ঠিক করবে, আমাকে জানিয়ে দেবে। তোমার কোনো ভয় নেই। এই সিদ্ধান্ত কেবল তোমার।সেদিন মালতি পাকড়াশিকে কোনো কথা বলেনি। দুদিন রতনকেও বলতে পারেনি কথাটা। অবশেষে বাধ্য হয়েই কথাটা জানায় ওকে। রতন একেবারেই রাজি হয় না। বলে ওর গায়ে শক্তি থাকলে কুত্তাটাকে বঁটি দিয়ে কুচি কুচি কেটে ফেলত। অনেক কষ্টে ওকে শান্ত করে মালতি। দুদিন পর নিজেই সিদ্ধান্ত নেয় ও। সেকথা রতনকে জানিয়ে দেয়। শুনে খেপে যায় ও।তুই কি পাগল হয়ে গেছিস, মালতি? তোকে এটা আমি করতে দেবনি।মালতি কেঁদে বলে, “কেন বুঝতে পারছিস নি, এটাই আমার শেষ সুযোগ। নাহলে যে.....” “নাহলে কি? আমি মরে যাব, এই তো? মরে যেতে দে আমাকে। তবু যতক্ষণ বেঁচে আছি, তোকে এই কাজ করতে দেবনি।” “কিন্তু আমি যে তোকে মরে যেতে দেখতে পারবনি। তুই মরে গেলে আমি কি করে থাকব?” “তবু...” রতনকে মাঝপথেই থামিয়ে দিয়ে মালতি বলে, “আর কোনো কথা নয়। আমি এটা করবোই। ব্যাস।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#26
এর পরেরদিনই পাকড়াশিকে মালতি জানিয়ে দেয় যে, রাজি। গতকাল পাকড়াশি ওকে বলেছে, আজকে রাতে হবে ওদের পার্টি। ওকে ঠিক দশটার সময় তৈরী হয়ে পাকড়াশির বাড়িতে যেতে হবে। তবে তৈরী হয়ে। বস্তিতে যখন পৌঁছাল ততক্ষণে মেয়েটা কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়েছে। পাশের বাড়ি দিদি ওকে জোর করে একটু খাইয়ে দিয়েছে। ঘরে ঢুকে দেখল রতন বিছানায় শুয়ে আছে। ওকে দেখে উঠে বসল।এত দেরী হল যে?” খাবারের প্যাকেটটা রেখে মালতি বলল, “আজ নমিতা বৌদির মেয়ের দেখাশোনা ছিল। তাই দেরী হয়ে গেল।রতন কিছু বলল না। মালতি তাড়াতাড়ি দুজনের খাবার বেড়ে নিল। দেরি করা ঠিক হবেনা। খাওয়া শেষ হতে রতন শুয়ে পড়ল। মালতি গেল তৈরী হতে। প্রথমে গা ধুয়ে এল। বাক্স থেকে একটা নতুন শাড়ি বের করে পরল। শাড়িটা রতন ওকে গত বছর কিনে দিয়েছিল। পরা হয়নি। আজ পরল। কি মনে হতে সিঁথিতে সিঁদুরটা একটু গাঢ় করেই লাগাল। এবার সে তৈরী। তবে মনে সাহস পাচ্ছে না। ভয়টা যেন ওকে আরো বেশী করে আঁকড়ে ধরছে। মনে মনে সাহস আনল। দেখল রতন ওর দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। মালতি বলল, “কি হল?” “তোকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।একটু চুপ করে থেকে রতন বলল, “যদি যেতে ইচ্ছে না হয়, ছেড়ে দে। যা হওয়ার হবে।মৃদু হেসে মালতি বলল, “যেতে তো আমাকে হবেই। এছাড়া কোনো উপায় নেই।ভিজে আসা চোখের কোলদুটোকে আলগোছে মুছে নিয়ে বলল, “শুধু একটাই চিন্তা।” “কি?” “কাল থেকে আমি আর তোর সেই আগের মালতি থাকবনি। আমি যে অসতি হয়ে যাব।কান্নায় ভেঙ্গে পড়া মালতির চোখদুটোকে মুছিয়ে দিয়ে রতন বলল, “একটা কথা মনে রাখবি। ওরা শুধু তোর শরীরটাকেই ছোঁবে। তোর মনটাকে নয়। তোর মনটা আজকে যেমন পবিত্র আছে, কাল সকালেও ঠিক তেমনটাই থাকবে। আর তুই যদি অসতী হোস, তাহলে পৃথিবীর সমস্ত মেয়েই অসতী।মালতি কোন কথা বলে না। কেবল রতনকে একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। অন্ধকারের মধ্যে একজন নারী, একজন স্ত্রী হাঁটতে শুরু করে। নতুন আলোর সন্ধানে।
[+] 4 users Like ddey333's post
Like Reply
#27
web archive থেকে এসব খুঁজে খুঁজে বার করতে প্রচুর প্রচুর ধৈর্য এবং সময় লাগে ...
এক একটা পাতা খুঁজে কপি করতে কখনো এক ঘন্টা লেগে যায় ..

কিন্তু এটা বোঝা যাচ্ছেনা যে কেউ আদৌ পড়ছে বা কারোর ভালো লাগছে কিনা !!

কোনো মন্ত্যব্য নেই কারো ......    
Like Reply
#28
(23-06-2021, 09:25 AM)ddey333 Wrote: web archive থেকে এসব খুঁজে খুঁজে বার করতে প্রচুর প্রচুর ধৈর্য এবং সময় লাগে ...
এক একটা পাতা খুঁজে কপি করতে কখনো এক ঘন্টা লেগে যায় ..

কিন্তু এটা বোঝা যাচ্ছেনা যে কেউ আদৌ পড়ছে বা কারোর ভালো লাগছে কিনা !!

কোনো মন্ত্যব্য নেই কারো ......    

আপনার এই কষ্ট করে এই ফোরাম কে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা কে সম্মান জানাচ্ছি। আগের গল্প দুটো ( মাস্টারমশাই আর অনাহুত ) পড়েছি । এটা সময় পেলেই পড়বো।  Namaskar
[Image: 20220401-214720.png]
Like Reply
#29
অনাহুত গল্পটা বেশ আবেগী. মানুষের বিবেক, মনুষ্যত্ব কে নাড়া দেয়.

মাষ্টারমশাই গল্পটাও বেশ, সত্যিই এমন খাঁটি মানুষের বড়ই অভাব সমাজে
Like Reply
#30
valo laglo
Like Reply
#31
অগ্নিপরীক্ষা

রাত প্রায় দেড়টা বাজে। কিছুক্ষণ আগেই দাহকার্য শেষ করে বাড়ি ফিরেছি। মনটা খুবই খারাপ। আজ আমার জলজ্যান্ত মেয়েটা মারা গেল। বয়স বেশী নয়, মাত্র ছাব্বিশ। আগুনে পুড়ে সমস্ত শরীরটা ঝলসে গিয়েছিল। কেবলমাত্র একটা মাংসের দলা। যে মেয়েটাকে ভয়ে আমি রান্নাঘরে পাঠাতাম না, সেই মেয়েটাই যখন দাউদাউ করে আগুনে জ্বলছিল, তখন কি করে সহ্য করেছিল ও। কি চিৎকার করছিল নাকি মুখ বুজে নিজেকে নিয়তির হাতে সঁপে দিয়েছিল? তা আমি জানি না। রামায়ণে পড়েছিলাম নিজের সতীত্ব প্রমাণ করার জন্য সীতাকেও অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছিল। কিন্তু সত্যি বলছি, একবারের জন্যও ভাবিনি যে আমার মেয়েটাকেও এইভাবে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে। আমার ফুলের মত মেয়েটা একটু একটু করে পুড়ে মরছিল, আমার জানোয়ার জামাই আর তার ভাই আর মা ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা লুটছিল। চিন্তার জালটা ছিঁড়ে গেল। আবার শুরু হল কান্না। না, আমার নয়। আমার মেয়ের মেয়ে। মানে আমার নাতনি। যত নষ্টের কারণ ও। - আমার মেয়েটাকে খেয়েছে। যদি আমার মেয়ের গর্ভে জন্ম নিয়ে এই পৃথিবীতে না আসত, তাহলে আজ আমার মেয়েটাকে এইভাবে দগ্ধে দগ্ধে মরতে হত না। কিছুটা দূরেই দোলনাতে শুয়ে আছে ও। যে দোলনাতে একদিন আমার মেয়ে শুয়ে থাকত, খেলা করত। ঘুম ভেঙ্গে এই মাঝরাতে আবার কান্না জুড়েছে। এই তো কিছুক্ষণ আগে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়ানো হয়েছিল। এইমধ্যেই আবার খিদে পেয়ে গেল? এই রাক্ষসী খিদে নিয়েই তো পৃথিবীতে এসে প্রথমে মাকে খেল। তাতেও খিদে মেটেনি ওর? দোলনার দিকে না তাকিয়েই চেঁচিয়ে উঠলাম, “অ্যাই কে আছিস, চুপ করা না মেয়েটাকে।কেই একজন এসে মেয়েটাকে দোলনা থেকে তুলে নিয়ে ঘরের ভিতর চলে গেল। আমি একা বসে আছি। আশেপাশে কেউ কোত্থাও নেই। জানলার গরাদ ঠেলে একচিলতে চাঁদের আলো এসে পড়েছে আমার পায়ের কাছে। চোখদুটো হু হু করে উঠল। আমি আজ কাঁদছে চাইছি। আজ আমার প্রাণের চেয়ে প্রিয় মেয়েটা নেই, এটা ভাবতেই পারছি না। একবার মনে হচ্ছে সব মিথ্যে। সব। আমি যা দেখছি, আমি যা শুনছি, আমি যা ভাবছি, সব মিথ্যে। আমার মেয়ে আছে। সে বেঁচে আছে। কাল সকালেই ফোন করবে। বলবে, “বাবা নিয়ম করে প্রেশারের ট্যাবলেটটা খাচ্ছো তো? মনে করে খাবে কিন্তু, ভুলে যেও না যেন। আর বিকেলবেলায় প্রতিদিন হাঁটতে বেরোচ্ছ তো? ওটা আবার বন্ধ করে দিওনা যেন। মনে আছে তো, ডাক্তার তোমাকে তিন কিলোমিটার করে হাঁটতে বলেছে?”
আর আমি বলব, “আমার কথা ছাড়্, তুই কবে আসবি বল্? তোকে অনেকদিন দেখিনি মা, খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।
এই তো বাবা, পরের সপ্তাহেই যাব। তোমার জামাই আমাকে ট্রেনে তুলে দেবে।
একা একা আসতে পারবি তো? তার চেয়ে জামাইকেই বল্ না, একদিনের জন্য হলেও তোকে যেন দিয়ে যায়।
ওরে বাবা! তার খুব কাজের চাপ। ছুটি পাবেনা। আর বাবা, তুমি না সারাজীবন সেই এক রয়ে গেলে। কতবার আমি একা একা যাতায়াত করেছি বলোতো? তোমার ভয় আর গেল না।
আমি তোর বাবা, চিন্তা তো একটু হবেই, মা। নিজে তো এখন মা হয়েছিস, এবার বুঝতে পারবি সন্তানের জন্য চিন্তা কাকে বলে।

[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#32
কথায় বলে মেয়েরা বাপ-ন্যাওটা বেশী হয়। আমার মেয়েটাও তার ব্যতিক্রম নয়। ছোটবেলা থেকেই বাবা বলতে অজ্ঞান ও। রাত্রিবেলা আমার কাছে ছাড়া ঘুমাতে চাইত না। প্রতিদিন রাত্রিবেলা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতাম, তবে ঘুমাত। জন্মের সময় ওর ছোট্ট এক পুঁচকি, ফর্সা তুলোর মত নরম শরীরটাকে হাতে নিয়েও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, আমিও বাবা হয়েছি। ওর ছোট্ট শরীর, ধুকপুক করতে থাকা একটুকরো হৃৎপিণ্ড আমাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিল আমার দুহিতার সঙ্গে। ছোটবেলা থেকেই মেয়েটা আমার খুব শান্ত আর চাপা স্বভাবের। দুষ্টুমি খুব একটা করত না। তবুও যদি কখনও মায়ের কাছে বকা বা মার খেত, কাঁদত না। বরং সারাদিন গুম হয়ে থাকত। সন্ধ্যাবেলা অফিস থেকে ফিরলে আমার কাছে চুপচাপ নালিশ জানাত। ওর সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিলাম আমি। আমার কাছেই ওর যত গল্প। আন্টিদের কথা, স্যারেদের গল্প, বন্ধুদের সাথে করা দুষ্টুমির কথা, সব বলত আমায়। একদমে বকবক করে যেত , আর আমি একাগ্রচিত্তে ওর সেই বকবকানি শুনে যেতাম। আমার মতন এমন বাধ্য শ্রোতা আর কখনও পায়নি। পড়াশোনায় খুব ভাল ছিল ও। প্রতিবারে প্রথম পাঁচজনের মধ্যে রেজাল্ট থাকত ওর। বাড়ি এসে ওর মাকে কখনও রেজাল্ট দেখাত না। বাড়ি এসে আমিই প্রথম রেজাল্ট দেখতাম। পড়াশোনা বাদে একটা বিষয়ে ওর ভয়ানক ন্যাক ছিল। না, নাচ বা গান নয়। খুব সুন্দর আঁকতে পারত ও। কিন্তু কোনদিন কারোর কাছেই আঁকা শেখেনি। যতটুকু আঁকত নিজের চেষ্টায়। তা সত্ত্বেও কি অবলীলায় এঁকে ফেলত সুন্দর সুন্দর দৃশ্য। কিন্তু কোনদিন ওকে কোনও প্রতিযোগীতায় নাম দেওয়াতে পারিনি। এতটাই লাজুক ছিল ও। নিজের মনে আঁকতেই ভালবাসত ও। সময় নিজের ছন্দে বয়ে চলছিল। আর ছোট কন্যাটি কখন যে ছোট থেকে বড় হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। কলেজ শেষ করে কলেজে ঢুকল। একা একা কলেজে যাতায়াত করতে শুরু করল। আমারও দুশ্চিন্তা বাড়তে লাগল। দুএকবার বলেছিলাম যে আমিই ওকে কলেজে ছেড়ে আসব। শুনে বলেছিল, “উফ্ বাবা, তোমাকে নিয়ে আর পারা যায় না। কলেজে আবার কেউ ছাড়তে যায় নাকি? আমি একাই যাতায়াত করতে পারব।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#33
দেখতে দেখতে সময় বয়ে যায়। কলেজের পড়াও শেষ হয়ে যায়। আমি চারিদিকে একজন ভাল ছেলের খোঁজ করতে থাকি। দুএকজন দেখেও যায় ওকে। অনুযোগ করত আমার কাছে, “এত তাড়াতাড়ি এসবের কি দরকার, বাবা?” আমি বলতাম, “আর দুবছরের মধ্যে রিটায়ার করব, মা। তার আগে তোর বিয়েটা দিয়ে দিই।এরপর আর কোন কথা বলেনি ও। সবকিছুই ধীরলয়ে চলছিল। যেসব ছেলেরা আমার মেয়েটাকে দেখতে এসেছিল, তাদের কাউকেই আমার পছন্দ হয়নি। অবশেষে আমার এক আত্মীয় একটা সম্বন্ধ নিয়ে এল। ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। বাড়িতে দুভাই আর মা ছোট ভাই কলেজে পড়াশোনা করছে। বাবা নেই। বছর কয়েক আগে স্ট্রোকে মারা গেছেন। আমাদের পালটি ঘর। কোনো অসুবিধা নেই। ছবি দেখে আমার আর আমার স্ত্রীর একপ্রকার পছন্দ হয়ে গেল ছেলেটাকে। মেয়েকেও ছবিটা দেখেছিলাম। হ্যাঁ, না কিছুই বলেনি। শুধু বলেছিল, “আমি কিছু জানি না, তোমরা যা ভাল বুঝবে, করো।তারপর একদিন ছেলের বাড়ি থেকে ওকে দেখতে এল। মেয়েকে দেখে ওদেরও পছন্দ হয়ে গেল। তারপর একদিন আশীর্বাদ এবং অবশেষে বিয়ে। ছেলের মা বলেছিল ওদের কিছুই লাগবে না। তবুও আমার সাধ্যমত সবকিছু দিয়ে আমার মেয়েটাকে সাজিয়ে তুলেছিলাম। বারবার চোখের সামনে ওর ছোট্টবেলার নানান স্মৃতি ঘোরাফেরা করছিল। আমার ছোট্ট রাজকুমারী আজ বিয়ে করে বুড়ো বাপকে একা করে অন্য বাড়ির বউ হয়ে চলে যাচ্ছে। বিয়ের পরেরদিন গাড়িতে ওঠার সময় আমার বুকে মাথা রেখে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, “বাবা, আমাকে পর করে দিলে?” আমি ছোটবেলার মত ওর মাথায় হাত বোলাতে বলেছিলাম, “ছিঃ মা, এভাবে বলতে নেই। সব মেয়েকেই একদিন না একদিন বিয়ে করে পরের বাড়ি যেতে হয়।বিয়ের পর থেকে সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু গণ্ডগোলটা শুরু হল এক বছর পর থেকে। বিয়ের পর প্রথম প্রথম মেয়ে-জামাই দুজনে একসঙ্গে আসত। কয়েকদিন থাকত, গল্পগুজব করত। আবার ফিরে যেত। লক্ষ্য করতাম মেয়েটা খুব সুখে আছে। আনন্দে আছে। ওর খুশী দেখে, ওর আনন্দ দেখে আমিও খুশী হয়ে উঠতাম। তার মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে সুখে আছে, এর থেকে আনন্দের কথা একজন বাবার কাছে আর কিছু হতে পারেনা। ওকে আড়ালে জিজ্ঞাসা করতাম, “তুই ওখানে সুখে আছিস তো মা?” বলত, “আমি খুব সুখে আছি, বাবা।পরম শান্তিতে ওর মাথাটা নিজের বুকে টেনে নিয়ে হাত বুলিয়ে দিতাম। যখন ফিরে যেত, তখন মনটা একটু খারাপ হত ঠিকই। কিন্তু এটা ভেবে শান্তি পেতাম যে মেয়েটা ওখানে সুখেই আছে। কিন্তু এরপর থেকে আস্তে আস্তে জামাইয়ের আসা কমে গেল। তারপর একটা সময় একদম বন্ধই হয়ে গেল। মেয়েটা আমার অতদূর থেকে একলা একলা আসত। আমি বলতাম জামাই কি সঙ্গে আসতে পারেনা? বলত জামাইয়ের নাকি কাজের চাপ, তাই আসতে পারেনা। লক্ষ্য করতাম ওর শরীরটা কেমন যেন খারাপ হয়ে গেছে। চোখের তলায় কালিও পড়েছে দেখেছিলাম। জিজ্ঞাসা করলে বলত, “ কিছু নয়, বাবা। তুমি চিন্তা কোরোনা। শরীরটা একটু খারাপ লাগছে। দিন রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে। মুখে বলত বটে কিন্তু লক্ষ্য করতাম আমার আগের সেই হাসিখুশী, প্রাণোচ্ছল মেয়েটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। যে দিন থাকত, গুম হয়ে থাকত। জিজ্ঞাসা করলেও পাশ কাটিয়ে যেত। আমার মনে কেমন যেন শঙ্কার একটা ঝড় উঠতে শুরু করেছিল। শেষবার এসেছিল প্রায় মাস আষ্টেক আগে। তখন ওর চেহারা দেখে আঁতকে উঠেছিলাম আমি। একি চেহারা হয়েছে ওর! মনে হচ্ছে যেন কোনো ভারী রোগ হয়েছে। বারবার জিজ্ঞাসা করতেও কিছু বলল না। বুঝলাম এভাবে হবেনা। যা চাপা স্বভাবের মেয়ে আমার। ওর মাকে বললাম, যেন কথায় কথায় যেন জেনে নেয় ব্যাপারটা কি। ওর মা জেনেছিল। আমাকেও জানিয়েছিল। সবকথা জানতে পেরে সমস্ত শরীর রাগে কাঁপতে শুরু করেছিল আমার। ছিঃ, কোনো মানুষ এতটা নীচে নামতে পারে! মাকে বলেছিল ইদানীং জামাইয়ের নাকি মতিগতি ঠিক নেই। কথায় কথায় রেগে যায়। গালিগালাজ করে। প্রতিদিন রাতে নাকি মদ খেয়ে বাড়ি ফেরে।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
#34
কয়েকবার নাকি ওর গায়ে হাতও তুলেছে। জামাইয়ের এভাবে বদলে যাওয়ার কারণ কি সেটা বুঝতে পারেনি। তবে নাকি মাঝে মাঝে বলত, “তোর বাবা বিয়ের সময় যদি মোটা পণ দিত, তাহলে কোনো চিন্তাই ছিল না।মেয়ে বলেছিল, “আমার বাবা তো দিতেই চেয়েছিল, তোমরাই তো বড় মুখ করে বলেছিলে যে, আমাদের যে কিছু চাই না।” “আমরা কি করে জানব যে, তোর বাবা এরকম ছোটোলোক যে নিজের মেয়েটাকে পর্যন্ত কিছু দেবেনা।” “বাজে কথা বোলো না। বাবা বিয়েতে আমাকে যথাসাধ্য দিয়েছে।” “চুপ কর্ শালী। নাহলে মেরে পুঁতে দেব।ইত্যাদি, ইত্যাদি। আমি তখনই জামাইয়ের সঙ্গে কথা বলব ঠিক করেছিলাম। আমার হাতদুটো ধরে বলেছিল, “আমার দিব্যি, বাবা, তুমি ওর সঙ্গে কোনো কথা বলবে না। হয়ত তোমাকেও ছোটবড় কথা শোনাতে পারে। তা আমি সহ্য করতে পারব না।আমি কিছু করতে পারিনি। তবে একটা সুখবর দিয়েছিল। নাকি মা হতে যাচ্ছে। বলেছিল, “তুমি দেখো, বাবা। সন্তানের মুখ দেখে সব ভুলে আবার আগের মত হয়ে যাবে।ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেছিলাম, “তাই যেন হয়, মা, তাই যেন হয়।সেই ওর শেষ আসা। তারপর ওকে আর আসতে দেয়নি। কত অনুরোধ, কত উপরোধ করেছি যেন কয়েকটা দিনের জন্য মেয়েটাকে আসতে দেয়। শোনেনি। তবে একবার ফোন করে ওর মাকে বলেছিল জামাইয়ের নাকি ছেলেই চাই। ওদের বংশে কখনো কারো মেয়ে হয়নি। আমরা বলেছিলাম ছেলে হোক বা মেয়ে সবই ভগবানের ইচ্ছা। বাবা-মায়ের কাছে সন্তান কখনো আলাদা হয়না। তারপর যথাসময়ে ওকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আমরা ওখানে থাকতে পারিনি। তবে - ফোন করে সুখবরটা দিয়েছিল। মেয়ে হয়েছে। খুব সুন্দর দেখতে। খুব আনন্দ হয়েছিল শুনে। সাথে একটু ভয়ও হয়েছিল। তবে বলেছিল জামাই নাকি কিছু বলেনি। ভেবেছিলাম হয়তো মেনে নিয়েছে। ভুল ভেবেছিলাম আমি। সাতদিন পর ওকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল। কথা ছিল একমাস পর মেয়েকে নিয়ে এখানে আসবে। খুব খুশী ছিলাম আমি। অনেকদিন পর মেয়ের মুখ দেখব, নাতনির মুখ দেখব। খালি ওদের আসার দিন গুনতাম। কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক। ওদের আসার মাত্র চারদিন আগে হঠাৎ করে খবর এল যে মেয়েটাকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অজানা আশঙ্কায় বুকটা কেঁপে উঠল। কাল পর্যন্ত তো সব ঠিক ছিল। হঠাৎ কি এমন হল যে ওকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হল। আর দেরি না করে ছুটে গেলাম। হাসপাতালে পুলিশ দেখে আশঙ্কা আরো বেড়ে গেল। তারপর সব শুনে পায়ের তলা থেকে মাটিটা সরে গেল। আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। বসে পড়েছিলাম। পুলিশ জানালো মেয়েটাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ওরা ওর উপর অকথ্য অত্যাচার চালাতে থাকে। ওর উপর চাপ দিতে থাকে। মেয়েটাকে মেরে ফেলতে হবে। শোনেনি। তার ফলে অত্যাচারের মাত্রা আরোও বাড়তে থাকে। কিন্তু কোনো মতেই নিজের সন্তানের ক্ষতি হতে দেয়নি। ওর সঙ্গে না পেরে উঠে ওর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। জানালা দিয়ে ধোঁয়া বেরোতে দেখে প্রতিবেশীরা ছুটে যায়। জামাই পালিয়ে যায়। কিন্তু ওর মা আর ভাইকে ধরে ফেলে সবাই। ওরাই দরজা ভেঙ্গে মেয়েটাকে উদ্ধার করে। তারপর হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। পুলিশ আসে, জামাইয়ের মা আর ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে। জামাইয়ের খোঁজ চলছে। আমি তখন সেসব কথ শুনতে চাইনি। আমি শুধু এটুকু শুনতে চাইছিলাম যে আমার মেয়েটা ঠিক আছে তো। কিন্তু ডাক্তার কোনো আশার কথা শোনাতে পারল না। বলল অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল। ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। বাঁচার আশা খুব কম। আমি আর শুনতে পারিনি। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলাম। এমন সময় একজন নার্স এসে বলল ওকে বলা হয়েছে যে আমরা এসেছি। তা শুনে আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইছে। আমি গেলাম। একটা বেডের উপর শুয়ে আছে ও। দেখে চিনতে পারলাম। যেন একদলা মাংস। বোঝা যাচ্ছে না বেঁচে আছে কিনা। খুব ভাল করে লক্ষ্য করলে কেবল বুকের ওঠানামা টের পাওয়া যায়। ওটুকুই ওর বেঁচে থাকার প্রমাণ। নার্স বলল ওর কথা বলতে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। আমি যেন ওকে বেশি কথা না বলাই। আমি ঘাড় নেড়ে সায় দিলাম। নার্স চলে গেল। আমি ওর বেডের পাশে গিয়ে বসলাম। গলা দিয়ে ঘড়ঘড় করে আওয়াজ বের হল, “বাবা!” আমি আর কান্না চেপে রাখতে পারলাম না। বলল, “কেঁদো না বাবা। শুধু আমার মেয়েটাকে দেখো। তোমরা ছাড়া ওর যে আর কেউ নেই। তুমি যেন ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না। তাহলে আমি মরেও শান্তি পাবো না, বাবা।” “ওসব কথা বলিস না, মা। সব ঠিক হয়ে যাবে।” “তুমি আমাকে কথা দাও, বাবা, তুমি ওকে এখান থেকে নিয়ে যাবে। কথা দাও।কোনোরকমে কান্না চাপতে চাপতে বললাম, “কথা দিলাম, মা।” “খুব শান্তি পেলাম, বাবা। এবার আমি নিশ্চিন্তে মরতে পারব।ব্যাস। এটাই ওর শেষ কথা। আরো কয়েকঘন্টা যন্ত্রণার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থেকে অবশেষে মারা যায় আমার মেয়ে। আমার মেয়ের মত আরোও আরোও মেয়েরা কিন্তু মরছে। আমরা মুখে যতই মেয়েদের পক্ষে কথা বলিনা কেন, আমরা কিন্তু নিজেদের হাতে তাদের মারছি। আর মেয়েরা? সীতা কেবল একবার অগ্নিপরীক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে প্রত্যেকটা মেয়ে প্রত্যেক দিন, প্রত্যেক মুহুর্ত, প্রত্যেক ক্ষণ তাদের অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে চলেছে। কখনও মায়ের গর্ভে, কখনও বাড়িতে, কখনও কলেজে, কখনও পাড়ার গলির মোড়ে, আবার কখনও শ্বশুরঘরে। সর্বত্র আমরা তাদের অগ্নিপরীক্ষা নিচ্ছি। আর ওরা মুখ বুজে সেইসব অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে চলেছে। চিন্তার জালটা ছিন্ন করে আমার স্ত্রী পাশে এসে বসল। কোলে মেয়েটা। আমি মুখটা ঘুরিয়ে নিলাম। এখনও পর্যন্ত ওর মুখ আমি দেখিনি। আর দেখতেও চাইনা। যার কারণে আমার মেয়েটা এই পৃথিবী থেকে চলে গেল, তার মুখদর্শন আমি করব না। হঠাৎ আমার স্ত্রীর গলা কানে গেল, “দেখো, একদম মায়ের মত মুখ পেয়েছে মেয়েটা।বজ্রাহতের মত ঘুরে তাকালাম। তারপর মেয়েটাকে নিজের কোলে নিয়ে নিলাম। ঘুমাচ্ছে। নিশ্চিন্তের ঘুম। ভাঙ্গালাম না। প্রথমবার ভাল করে ওর মুখের দিকে তাকালাম। একদম মায়ের মত দেখতে হয়েছে। ছাব্বিশ বছর আগে ওর মাকেও এইভাবে আমার কোলে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে দেখেছি। আর আজও দেখছি। এই প্রথমবার মনে হল, না, আমার মেয়ে মরেনি। বেঁচে আছে। এই ছোট্ট মেয়েটার মধ্যে বেঁচে আছে। প্রথমবারে আমি ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু এবার ওকে আমি কোনো অগ্নিপরীক্ষা দিতে দেবো না। কোনোমতেই না।


সমাপ্ত
[+] 7 users Like ddey333's post
Like Reply
#35
অসাধারণ .. আর কিছু বলার নেই 

[Image: Animation-resize-gif-f3b601eb23d95beeb4e...911ac0.gif]


Like Reply
#36
এই থ্রেড এখানেই শেষ , আর কোনো গল্প ছিলোনা ....

thanks
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply
#37
অগ্নিপরীক্ষা........ জীবনের কঠোরতম বাস্তব যেটা এই লেখার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে. জীবনচক্র.... কি অদ্ভুত. আর আত্মা সেতো অমর. এক জীবন ফুরিয়ে যেন আরেক জীবনের মধ্যে নতুন করে বড়ো হতে থাকে. অসাধারণ এই কাহিনী.
Like Reply




Users browsing this thread: